মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
লেখকঃ ড. মুহাম্মদ ইবন আব্দুল্লাহ ইবন সালেহ আস-সুহাইম
১৪
বিদ্যমান ধর্মগুলোর অবস্থা
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/14/14
বড় বড় ধর্মসমূহ ও এ সকল ধর্মের প্রাচীন গ্রন্থ ও শরী‘আতগুলো তামাশাকারী ও খেলাকারী মানুষদের শিকার, বিকৃতকারী এবং কপট লোকদের হাতের ক্রীড়া, রক্তাক্ত ঘটনাবলী এবং গুরুতর দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়েছে। অবশেষে সেটি তার আত্মারূপ মূল ও বাইরের আকার সবই হারিয়ে ফেলে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, যদি ঐ সমস্ত ধর্মের প্রাথমিক অনুসারী এবং তাদের নবীগনকে পুনরায় পাঠানো হয়, তারাও এগুলোকে অস্বীকার করবেন এবং এগুলো তাদের প্রবর্তিত দীন, কিতাব ও শরী‘আত নয় বলতে দ্বিধা করতেন না।
যেমন, ইয়াহূদী ধর্ম বর্তমানে বহু ধর্মীয় প্রথা ও রীতিনীতির সমাহার, যার মধ্যে না আছে কোনো আধ্যাত্মিক দিক আর না আছে কোনো জীবন; বরং সেটা বাদ দিলেও দেখা যাবে যে, এটি পরিণত হয়েছে একটি বংশগত ধর্মে, একটি জাতি ও গোষ্ঠীর সাথে সম্পৃক্ত। যা মূলত জগতের জন্য কোনো কল্যাণকর মিশন বহন করে না, না তাতে আছে কোনো জাতির প্রতি দাওয়াত, আর না তাতে রয়েছে মানবতার জন্য কোনো কৃপা।
এ ধর্ম তার মৌলিক সঠিক আকীদা-বিশ্বাসচ্যুত হয়ে ভ্রষ্ট হয়, অথচ ধর্ম ও জাতিসমূহের মাঝে এটির একটি নাম-ডাক ছিল। তাতে ছিল এর মর্যাদার আসল রহস্য, অর্থাৎ আকীদাতুত তাওহীদ (একত্ববাদের বিশ্বাস) যার অসিয়ত তাদেরকে করেছিলেন ইবরাহীম তার সন্তানদেরকে অনুরূপভাবে ইয়া‘কুবও। কিন্তু ইয়াহূদীরা তাদের পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জাতি অথবা যারা তাদেরকে অধিনস্থ করেছিল তাদের অনেক বাতিল বা ভ্রান্ত বিশ্বাস ও রীতিনীতি গ্রহণ করে নিয়েছিল, যা মূলত ছিল পৌত্তলিক মূর্খতায় পরিপূর্ণ। এ বাস্তবতা স্বীকার করেন ইনসাফপ্রিয় ইয়াহূদী ঐতিহাসিকগণ। যেমন, “দায়েরাতুল মা‘আরিফ আল-ইয়াহুদিয়্যাহ” নামক গ্রন্থে এসেছে, যার অর্থ হলো-
‘মূর্তিপূজার প্রতি নবীগণের রাগ ও ক্রোধই প্রমাণ করে যে, মূর্তিপূজা ও বহু উপাস্যের উপাসনা, ইসরাঈলীদের অন্তরে চুপিসারে ঢুকে পড়েছিল এবং তারা বিভিন্ন প্রকার শির্কী ও কুসংস্কারমূলক বিশ্বাস গ্রহণ করে নিয়েছিল। তালমুদও নির্দিষ্ট করে সাক্ষ্য দেয় যে, পৌত্তলিকতার প্রতি ইয়াহূদীদের বিশেষ আকর্ষণ ছিল।’ [বিস্তারিত দেখুন: স্যামুয়েল ইবন ইয়াহয়া আল-মাগরিবী নামক এক ইয়াহূদী যিনি পরবর্তীতে মুসলিম হন তার লিখিত “ইফহামুল ইয়াহুদ’’ গ্রন্থ।]
আর তালমুদে বাবেল [তালমূদ শব্দের অর্থ- ইয়াহূদীদের ধর্ম ও আদব শিক্ষার কিতাব। যা মূলত বিভিন্ন সময়ে ইয়াহূদী পণ্ডিতদের দ্বারা “মাশনা” তথা শরী‘আত” কিতাবের ওপর লিখিত বিভিন্ন ব্যাখ্যা ও টিকার সমষ্টি। [মূল ভাষ্যকে “মাশনা” আর টীকাগুলোকে ‘জামারাহ’ বলা হয়, ভাষ্য ও ব্যাখ্যা এ দুটো মিলেই হলো ‘তালমূদ’]] কিতাব, ইয়াহূদীরা যে কিতাবকে অত্যন্ত পবিত্র মনে করে থাকে, এমনকি কখনও কখনও সেটাকে তাওরাতের উপরেও প্রাধান্য দিয়ে থাকে, উক্ত কিতাবটি খ্রিষ্টীয় ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে ইয়াহূদীদের মাঝে ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল। এ কিতাবটিতে বিবেকের স্বল্পতা, ফালতু কথা, আল্লাহর ওপর দুঃসাহস করে কথা বলা, বাস্তব বিবর্জিত, দীন ও বিবেক নিয়ে তামাশা জনিত এমনসব উদ্ভট কথার সমাহার ঘটেছে, যা ঐ সময়ে ইয়াহূদী সমাজে জ্ঞানের অবক্ষয় ও দীনের ব্যাপারে বাতিল গ্রহণের প্রবণতা কোন পর্যায়ে পৌঁছেছিল তা প্রমাণ করে। [বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুন: ড. রুহলাঞ্জ রচিত ‘আল-ইয়াহূদী আলা হাসাবিত তালমূদ’ এবং ড. ইউসুফ হান্না নাসরুল্লাহ কর্তৃক ফ্রান্স থেকে আরবী ভাষায় ঐ গ্রন্থটির অনুবাদ গ্রন্থ ‘আল-কানযুল মারসূদ ফী কাওয়াইদিত তালমূদ’।]
পক্ষান্তরে খ্রিস্টান ধর্ম [বিস্তারিত দেখুন: শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ রচিত ‘আল-জাওয়াবুস সহীহ লিমান বাদ্দালা দীনাল মাসীহ’ এবং রাহমাতুল্লাহ ইবন খলীল হিন্দী রচিত ‘ইযহারুল হক্ব’ ও আব্দুল্লাহ তরজুমান যিনি খ্রিষ্টান ছিলেন, পরে মুসলিম হন তার লিখিত ‘তুহফাতুল আরীব ফির-রদ্দি ‘আলা উব্বাদিস সলীব’ গ্রন্থসমূহ।], যা প্রথম যুগ থেকেই সীমালঙ্ঘনকারীদের বিকৃতি, অজ্ঞদের অপব্যাখ্যা এবং রোমান মূর্তিপূজক খ্রিষ্টানদের ফিতনার শিকার হয়। [দেখুন: দারাবুর নামে প্রসিদ্ধ এক ইউরোপীয় লেখকের ‘আস-সেরা‘ বাইনাদ দীনি ওয়াল ইলমি ৪০ও ৪১ নং পৃষ্ঠা।] আর এসব কিছু এমন এক স্তূপে পরিণত হয় যার নীচে ‘ঈসা ‘আলাইহিস সালামের মহান শিক্ষা দাফন হয়ে যায় এবং এগুলোর ঘন মেঘের আড়ালে তাওহীদ বা আল্লাহর এককত্বের আলো ও একমাত্র আল্লাহর জন্য যে ইবাদত হওয়ার কথা তার একনিষ্ঠতা ঢাকা পড়ে যায়।
এক খ্রিষ্টান লেখক, চতুর্থ খ্রিষ্টাব্দের শেষ দিক থেকে তাদের সমাজে ত্রিত্ববাদে বিশ্বাস কীভাবে ছেয়ে বসেছিল তার বর্ণনায় বলেন:
“এ বিশ্বাস যে, এক মা‘বুদ তিন সত্তার সমন্বয়ে গঠিত [খ্রিষ্টানদের মতে এই তিন ব্যক্তি হলো- পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্মা। —অনুবাদক।] এ মতবাদ খ্রিষ্টান বিশ্বের জীবনের অভ্যন্তরে ও তাদের চিন্তায় অনুপ্রবেশ ঘটে চতুর্থ খ্রিষ্টাব্দের শেষ চতুর্থাংশে। আর তা খ্রিষ্টীয় বিশ্বের সর্বত্র প্রথাগত নির্ভরযোগ্য আকীদা-বিশ্বাস হিসেবে চলতে থাকে। আর ত্রিত্ববাদের আকীদাহ’র ক্রমবিকাশ ও তার গোপন রহস্য উন্মোচিত হয় খ্রিষ্টীয় উনিশ শতাব্দীর মাঝামাঝি এসে।” [দায়েরাতুল মা‘আরিফ আল-কাথুলিকিয়্যাহ নাম গ্রন্থ থেকে সংক্ষেপিত, গবেষণাপত্রের শিরোনাম, ‘আস-সালূসুল মুকাদ্দাস, খণ্ড ১৪, পৃ. ২৯৫।]
‘‘তারীখুল মাসীহিয়্যাহ ফী দ্বওইল ইলমিল মু‘আসির” বা “বর্তমান জ্ঞানের আলোকে খ্রিষ্টান ধর্মের ইতিহাস” নামক গ্রন্থে সমসাময়িক এক খ্রিষ্টান ঐতিহাসিক তাদের সমাজে বিভিন্ন রূপরেখায়, বিভিন্ন ধরণ ও প্রক্রিয়ায় পৌত্তলিকতা আবির্ভূত হওয়া, অন্ধ অনুসরণ-অনুকরণ, বিস্ময় ও মূর্খ নীতির মাধ্যমে অন্যান্য জাতি ও শির্কে সুপ্রতিষ্ঠিত ধর্মসমূহের অনেক নিদর্শন, প্রথা, উৎসব এবং মূর্তিপূজায় তাদের মিশে যাওয়া সম্পর্কে উল্লেখ করে বলেন:
“পৌত্তলিকতা শেষ হয়েছে, কিন্তু তা পরিপূর্ণভাবে নির্মূল হয়নি, বরং তা অন্তরে প্রোথিত হয়ে গেছে এবং খ্রিষ্ট ধর্মের নামে ও তার আড়ালে তার সবকিছু অব্যাহত আছে। ফলে যারা তাদের উপাস্য ও বীরদের পরিত্যাগ করেছে এবং মুক্ত হয়েছে, তারাই আবার তাদের শহীদদের মধ্য হতে কাউকে গ্রহণ করে নিয়েছে এবং তাদেরকে উপাস্যের বিশেষণে ভূষিত করেছে। তারপর তাদের মূর্তি তৈরি করে। এভাবেই এই শির্ক ও মূর্তিপূজার প্রচলন ঐ সমস্ত আঞ্চলিক শহীদদের দিকে পরিবর্তিত হয়। আর এই শতাব্দী শেষ হতে না হতেই তাদের মাঝে শহীদ ও সৎ ব্যক্তিদের উপাসনা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং নতুন আকীদাহ-বিশ্বাস রচিত হয়; আর তা হচ্ছে, ওলীগণ আল্লাহর বৈশিষ্ট্য বহন করেন এবং ঐ সমস্ত ওলী তথা আল্লাহর সৎ ব্যক্তি ও সাধকগণ আল্লাহ ও মানুষের মাঝে মাধ্যম সৃষ্টি হিসেবে দেখা দেন। মূর্তিপূজা উৎসবের নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম রাখা হয়। অবশেষে খ্রিষ্টীয় চারশ’ শতাব্দীতে প্রাচীন ‘ঈদুশ শামস’ সূর্য দেবতার উৎসব তার নাম পরিবর্তন করে নাম হয়ে যায়, ‘ঈদু মীলাদিল মাসীহ’ বা ঈসা মাসীহ এর জন্ম উৎসবে।” [Rev. Jamecs Houstoin Baxter in the History of Christionity in the Light of Modern Knowledge. Glasgow, 1929 p 407.]
আর অগ্নি-উপাসকগণ, বহু পূর্ব যুগ থেকেই তাদের মাঝে প্রাকৃতিক বস্তুর উপাসনার পরিচয় পাওয়া যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় হলো আগুন। সবশেষে তারা এর উপাসনায় লেগে যায়, এজন্য তারা প্রতিমূর্তি ও মন্দির তৈরি করে। ফলে দেশের সর্বত্র ‘অগ্নি উপাসনার ঘর’ ছড়িয়ে পড়ে এবং অগ্নিপূজা ও সূর্যপূজা ছাড়া তাদের যাবতীয় আকীদাহ-বিশ্বাস ও দীনের যাবতীয় বিধান নিঃশেষ হয়ে যায়। তাদের কাছে ধর্ম নিছক বিভিন্ন প্রকার আচার-অনুষ্ঠান ও প্রথা পালনের সমষ্টিতে পরিণত হয়, যা নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় তারা পালন করে। [দেখুন: ডেনমার্কের কোপনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচ্য ভাষাবিদ ও ইরানের ইতিহাস বিশেষজ্ঞ প্রফেসর আর্থার কৃষ্টান সীন রচিত “ইরান ফী আহদিস সাসানিয়্যীন” এবং শাহীন মাকারিউস আল মাজূসী লিখিত “ইরানের ইতিহাস” গ্রন্থদ্বয়।]
“ইরান ফী ‘আহদিস সাসানিয়্যীন” এর লেখক ডেনমার্কের প্রফেসর আর্থার কৃষ্টান সীন তাদের ধর্ম প্রধানদের স্তর এবং তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য বর্ণনা করে বলেন: ‘ঐ সমস্ত কর্মকর্তাদের উপরে দিনে চার বার সূর্যের উপাসনা করা আবশ্যক ছিল এবং তার সাথে চন্দ্র, আগুন ও পানির উপাসনাও যুক্ত করা হত। আর তারা আদিষ্ট ছিল আগুন যেন নিভে না যায়, পানি ও আগুন যেন এক সাথে স্পর্শ না করে এবং খনিজ পদার্থে যেন মরীচা পড়ার মতো; কারণ খনিজ পদার্থসমূহ তাদের নিকট পবিত্র ছিল।’ [ইরান ফী ‘আহদিস সাসানিয়্যীন, পৃ. ১৫৫।]
তারা সকল যুগেই দুই ইলাহে বিশ্বাসের নীতির অনুগত ছিল এবং এটা তাদের প্রতীকে পরিণত হয়। তারা দুই উপাস্যে বিশ্বাস রাখে। একজন নূর বা কল্যাণের দেবতা, যাকে তারা ‘আহোরা মাযদা বা ইয়াযদান’ নামে অভিহিত করে। আর দ্বিতীয়জন অন্ধকার বা অকল্যাণের দেবতা, তার নাম আহরমান। এদের উভয় দেবতার মাঝে সংঘাত ও লড়াই সর্বদায় অব্যাহত আছে। [পূর্বোক্ত উৎস, বাবুদ দিন আয-যারাদাশতি, দিয়ানাতুল হুকূমাহ, পৃ. ১৮৩-২৩৩।]
আর বৌদ্ধধর্ম, এই ধর্মটি ভারত ও মধ্য এশিয়ায় বিস্তার লাভ করেছে, পৌত্তলিক একটি ধর্ম। এ ধর্মের অনুসারীরা যেখানেই যায় এবং যেখানেই অবস্থান করে সেখানেই তারা তাদের মূর্তি নিয়ে যায়, মন্দির তৈরি করে এবং গৌতম বৌদ্ধের প্রতিকৃতি দাঁড় করায়। [দেখুন: হায়দ্রাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারতীয় সভ্যতার ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক ‘ঈশ্বর তূবা’ এর ‘আল হিন্দুল ক্বাদীমাহ বা প্রাচীন ভারত’ এবং সাবেক ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহার লাল নেহেরু লিখিত ‘ইকতেশাফুল হিন্দ, ২০১- ২০২ নং পৃষ্ঠা।]
আর হিন্দুধর্ম, ভারতের ধর্ম, বহু উপাস্য ও দেবতার ধর্ম হিসেবে খ্যাত। খ্রিষ্টীয় ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে এর পৌত্তলিকতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছিল। তখন তাদের দেবতার সংখ্যা ৩৩ কোটিতে পৌঁছে। [দেখুন: আর দত্তের লিখিত ‘আল হিন্দুল ক্বাদীমাহ (বা প্রাচীন ভারত) গ্রন্থ, ৩য় খণ্ড, ২৭৬ নং পৃষ্ঠা এবং ও.এস.এস.আই মালের লিখিত ‘আল-হান্দাকিয়্যাতুস সায়িদাহ, ৬-৭ নং পৃষ্ঠা।] পৃথিবীর সকল সুন্দর বস্তু, সকল ভয়ঙ্কর বস্তু এবং সকল কল্যাণকর বস্তুই তাদের উপাস্য বা দেবতায় পরিণত হয়েছে যাদের তারা উপাসনা করে। আর উক্ত যুগে প্রতিমা নির্মাণও বেড়ে যায় এবং নির্মাণ শিল্পীরা এতে খুব সুন্দর শিল্প দক্ষতা প্রদর্শন করে।
সি,ভি, বৈদ্য, হিন্দু তার ‘মধ্য ভারতের ইতিহাস’ নামক গ্রন্থে সম্রাট হর্ষবর্ধনের শাসনকাল ৬০৬-৬৪৮ খ্রিষ্টাব্দ সাল অর্থাৎ যে যুগটি আরবে ইসলামের আবির্ভাবের নিকটবর্তী ঐ যুগে মানুষের ধর্মীয় অবস্থান কেমন ছিল সে সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন:
‘হিন্দুধর্ম এবং বৌদ্ধধর্ম দু’টিই পৌত্তলিকতার ধর্ম, যারা উভয়েই সমান ছিল। বরং সম্ভবত বৌদ্ধধর্মই পৌত্তলিকতায় নিমজ্জিত হওয়ার ক্ষেত্রে হিন্দুধর্মকে ছাড়িয়ে যায়। এ ধর্মের সূচনা হয় উপাস্যকে অস্বীকার করার মাধ্যমে কিন্তু তারা পর্যায়ক্রমে গৌতম বুদ্ধকেই বড় উপাস্য বানিয়ে নেয়। অতঃপর তার সাথে আরও অনেক উপাস্যকে যুক্ত করে যেমন বৌদ্ধস্তুপ [বৌদ্ধস্তুপ বলতে উপসনালায়, তাদের মতে তা গৌতম বুদ্ধের দেহ, বাণী ও আত্মার প্রতিনিধিত্ব করে।], বস্তুত ভারতে তখন পৌত্তলিকতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছিল। এমনকি প্রাচ্যের কতক ভাষাতে বুদ্ধ Buddha শব্দটি মূর্তি ও প্রতিমার সমার্থ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
আর এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, পৌত্তলিকতা বর্তমানে সমগ্র পৃথিবীতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে আটলান্টিক মহাসাগর থেকে প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত তথা সমগ্র পৃথিবী পৌত্তলিকতায় নিমজ্জিত। বরং খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ এবং বিভিন্ন সেমেটিক ধর্মগুলো মূর্তিকে সম্মানপ্রদর্শন ও পবিত্র করার ক্ষেত্রে যেন পরস্পর প্রতিযোগিতা করছে। তারা যেন সবাই প্রতিযোগিতার ঘোড়ার মতো একই ময়দানে দৌড়াচ্ছে। [C.V. Vidya: History of Mediavel Hindu India Vol I (poone 1921).]
অন্য আরেক হিন্দু তার লিখিত ‘আল হিন্দুকিয়্যাতুস সায়িদাহ’ নামক গ্রন্থে বর্ণনা করে যে, মূর্তি তৈরির কাজ এখানেই শেষ হত না বরং ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে এই ‘উপাস্য পল্লীতে’ অনেক বেশি সংখ্যায় ছোট ছোট উপাস্য অন্তর্ভুক্তিকরণ চলতে থাকে। এমনকি তাদের সংখ্যা এতবেশি হয়ে গেল যে তা গণনা করে শেষ করা যাবে না। [দেখুন: আবুল হাসান নদভীর আস-সীরাতুন নববীয়্যাহ, ১৯-২৮ নং পৃষ্ঠা।]
এ তো হলো ধর্মগুলোর অবস্থা। পক্ষান্তরে সভ্য দেশগুলোতে (!), যেখানে বিশাল শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে বিভিন্ন ধরনের জ্ঞান-বিজ্ঞান ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে সভ্যতা, শিল্প ও সাহিত্যের ঠিকানা বলে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে, সে সব দেশ এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে, সেখানকার ধর্মসমূহ বিকৃত হয়ে পড়েছে। সেসব দেশ তার মৌলিকত্ব, শক্তি-সাহস হারিয়েছে। সংস্কারকরা হারিয়ে গিয়েছে। শিক্ষকশূণ্য হয়ে পড়েছে। নাস্তিকতা সেখানে ঘোষণা দিয়ে ঝেঁকে বসেছে। ফেতনা ফ্যাসাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। ভাল-মন্দের মানদণ্ড পরিবর্তিত হয়েছে। মানুষ নিজেই নিজেকে অপমানিত করেছে। যার কারণে আত্মহত্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। পারিবারিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়েছে। সামাজিক বন্ধন ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। মানসিক রোগীদের সংখ্য এত বেড়ে গেছে যে মানসিক ডাক্তারদের চেম্বার রোগীতে গিজগিজ করছে। যাদুকর ও ভেলকিবাজদের বাজার কায়েম হয়েছে। সেখানে মানুষ প্রত্যেক উপভোগ ও প্রমোদের জিনিস পরীক্ষা করে দেখছে। প্রত্যেকে যা ইচ্ছে নব্য মতবাদ গ্রহণ করছে, এই আশায় যে, তার তার আত্মাকে পরিতৃপ্ত ও সুখী করবে এবং অন্তর প্রশান্তি লাভ করবে। কিন্তু সেসব আনন্দ-প্রমোদ, ধর্ম এবং মতবাদ কোনো সফলতাই তাদের জন্য বয়ে আনতে পারেনি। বস্তুত এ মানসিক হতাশা-দুঃখ-কষ্ট-ক্লেশ, আত্মিক শাস্তি ও দূর্ভোগ তার চলতেই থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সাথে সংযুক্ত না হবে এবং তিনি তার নিজের জন্য যে পদ্ধতি পছন্দ করেছেন ও তাঁর রাসূলগণকে যার আদেশ করেছিলেন সে মোতাবেক তাঁর ইবাদাত না করবে। মূলত যে ব্যক্তি তার রব হতে বিমুখ হয় এবং অন্যের নিকট হিদায়াত চায়, আল্লাহ তা‘আলা পরিষ্কারভাবে তাদের অবস্থা উল্লেখ করে বলেন,
“আর যারা ভাগ্যবান হয়েছে তারা থাকবে জান্নাতে, সেখানে তারা স্থায়ী হবে, যতদিন আকাশমণ্ডলী ও যমীন বিদ্যমান থাকবে, যদি না আপনার রব অন্যরূপ ইচ্ছে করেন; এটা এক নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার।” [সূরা হূদ, আয়াত: ১০৮]
ইসলাম ছাড়া বাকী অন্যান্য সকল ধর্মের ক্ষেত্রে যদি সত্য দীনের মূলনীতিসমূহ প্রয়োগ করি, যা ইতোপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে, তাহলে আমরা দেখতে পাব যে, ঐ সমস্ত উপাদানের অধিকাংশই সেগুলোতে অনুপস্থিত, যেমন এ সম্পর্কে উপস্থাপিত সংক্ষিপ্ত আলোচনার মধ্যে তা স্পষ্ট হয়েছে।
এই ধর্মগুলো সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি বাদ দেয় তা হলো তাওহীদ তথা আল্লাহর একত্ববাদ। এ ধর্মগুলোর অনুসারীরা আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যদেরকে অংশীদার স্থির করে। তেমনিভাবে এই বিকৃত ধর্মগুলো মানুষের সামনে এমন শরী‘আত পেশ করেনি যা সকল যুগে ও সকল স্থানের জন্য উপযুক্ত, যা মানুষের দীন, সম্মান, সন্তান-সন্ততি, ধন-সম্পদ ও রক্তসমূহের হিফাযত করবে। আর ঐসব ধর্ম তাদেরকে আল্লাহর নির্দেশিত শরী‘আতের দিকেও পরিচালিত করে না এবং তার অনুসারীদেরকে প্রশান্তি ও সুখ প্রদান করে না। কারণ এগুলোর মাঝে অনেক বৈপরীত্য ও অসঙ্গতি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
পক্ষান্তরে দীন ইসলাম, যার আলোচনা পরবর্তী অধ্যায়গুলোতে আসছে, যাতে পরিষ্কার হবে যে, তা (ইসলাম) আল্লাহর মনোনীত সত্য ও কিয়ামত অবধি স্থায়ী দীন; যার প্রতি তিনি স্বয়ং সন্তুষ্ট এবং সকল মানবগোষ্ঠীর জন্যও তার পছন্দকৃত।
আর এ পরিচ্ছেদ শেষে নবুওয়াতের হাকীকত, তার নিদর্শনাবলি, মানুষের জন্য তার প্রয়োজনীয়তা, রাসূলগণের দা‘ওয়াতের নীতিমালা এবং সর্বশেষ রিসালাতের পরিসমাপ্তকারী ও চিরস্থায়ী রিসালাতের হাকীকত আলোচনা করা উপযোগী হবে বলে আমি মনে করছি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/14/14
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।