HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
মীকাত ও এহরাম বিষয়ক মাসায়েল
লেখকঃ মুহাম্মদ শামসুল হক সিদ্দিক
বেশ দূর থেকে এহরাম বেঁধে রওয়ানা হওয়া আল্লাহর পানে ছুটে যাওয়ার ইচ্ছা-আগ্রহকে আরো মজবুত, আরো পরিপক্ব করে তোলে। নিজের ঈমানি জোশ-জযবাকে শতগুণ বাড়িয়ে ধীরে ধীরে বায়তুল্লাহ শরীফের দিকে এগিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ককে বহুগুণে দৃঢ় করে দেয় এ ধরনের প্রস্ত্ততি। এ জন্যই, হয়তো, হজে মীকাতের নিয়ম রাখা হয়েছে। মীকাত সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সীমানা বেঁধে দিয়েছেন—মদিনাবাসীদের জন্য যুল হুলায়ফা, শামবাসীদের জন্য জুহফাহ, নাজদবাসীদের জন্য কারনুল মানাযিল, ইয়েমেনবাসীদের জন্য য়ালামলাম, এগুলো তাদের জন্য এবং যারা অন্যত্র থেকে ওই পথে আসে হজ ও উমরা আদায়ের ইচ্ছা নিয়ে তাদের জন্য। আর যারা এ সীমার অভ্যন্তরে বসবাস করবে তাদের স্বস্থানই তাদের এহরামের জায়গা। তদ্রূপভাবে মক্কাবাসী মক্কা থেকে। অন্য এক হাদিসে ইরাকবাসীদের মীকাত যাতু ইর্ক নির্ধারণ করা হয়েছে।
যুল হুলায়ফা: মক্কা থেকে ৪২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বর্তমানে আবয়ারে আলী বলে জায়গাটি পরিচিত। মদিনাবাসী এবং ওই পথ হয়ে যারা আসেন যুল হুলায়ফা তাদের মীকাত।
জুহফাহ: এই জায়গাটি বর্তমানে পরিত্যক্ত হওয়ায় রাবেগ থেকে মানুষেরা এহরাম বাঁধে। মক্কা থেকে রাবেগের দূরত্ব ১৮৬ কিলোমিটার। সৌদি আরবের উত্তরাঞ্চলীয় এলাকার লোকজন, পশ্চিম ও উত্তর আফ্রিকার লোকজন, লেবানন, সিরিয়া, জর্ডান ও ফিলিস্তিনবাসীরা এই জায়গা হতে এহরাম বাঁধেন।
কারনুল মানাযেল: এই জায়গার অন্য নাম আস্সাইলুল কাবির। মক্কা থেকে এর দূরত্ব ৭৮ কিলোমিটার। ইরাক ইরান ও অন্যান্য উপসাগরীয় অঞ্চলের লোকদের মীকাত হল এই কারনুল মানাযেল।
য়ালামলাম: মক্কা থেকে এর দূরত্ব ১২০ কিলোমিটার। ইয়েমেনবাসী ও পাক-ভারত-বাংলাসহ প্রাচ্য ও দূর প্রাচ্য হতে আগমনকারীদের জন্য মীকাত হল এই য়ালামলাম।
যাতু ইরক: মক্কা থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বর্তমানে এই মীকাতটি পরিত্যক্ত। কেননা ওই পথ হয়ে বর্তমানে কোনো রাস্তা নেই। স্থল পথে আসা পূর্বাঞ্চলীয় হাজিরা বর্তমানে সাইল অথবা যুল-হুলায়ফা থেকে এহরাম বাঁধেন।
হাদিস অনুযায়ী মীকাতের বাইরে থেকে আসা হাজিদের জন্য মীকাত থেকে এহরাম বাঁধা ওয়াজিব। তবে যারা মীকাতের সীমানার অভ্যন্তরে বসবাস করেন তাদের অবস্থানের জায়গাটাই হল তাদের মীকাত। অর্থাৎ যে যেখানে আছে সেখান থেকেই হজের এহরাম বাঁধবে। তবে মক্কার হারাম এরিয়ার ভেতরে বসবাসকারী ব্যক্তি যদি উমরা করতে চায় তা হলে তাকে হারাম এরিয়ার বাইরে- যেমন তানয়ীম তথা আয়শা মসজিদে গিয়ে এহরাম বাঁধতে হবে।
জুহফাহ: এই জায়গাটি বর্তমানে পরিত্যক্ত হওয়ায় রাবেগ থেকে মানুষেরা এহরাম বাঁধে। মক্কা থেকে রাবেগের দূরত্ব ১৮৬ কিলোমিটার। সৌদি আরবের উত্তরাঞ্চলীয় এলাকার লোকজন, পশ্চিম ও উত্তর আফ্রিকার লোকজন, লেবানন, সিরিয়া, জর্ডান ও ফিলিস্তিনবাসীরা এই জায়গা হতে এহরাম বাঁধেন।
কারনুল মানাযেল: এই জায়গার অন্য নাম আস্সাইলুল কাবির। মক্কা থেকে এর দূরত্ব ৭৮ কিলোমিটার। ইরাক ইরান ও অন্যান্য উপসাগরীয় অঞ্চলের লোকদের মীকাত হল এই কারনুল মানাযেল।
য়ালামলাম: মক্কা থেকে এর দূরত্ব ১২০ কিলোমিটার। ইয়েমেনবাসী ও পাক-ভারত-বাংলাসহ প্রাচ্য ও দূর প্রাচ্য হতে আগমনকারীদের জন্য মীকাত হল এই য়ালামলাম।
যাতু ইরক: মক্কা থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বর্তমানে এই মীকাতটি পরিত্যক্ত। কেননা ওই পথ হয়ে বর্তমানে কোনো রাস্তা নেই। স্থল পথে আসা পূর্বাঞ্চলীয় হাজিরা বর্তমানে সাইল অথবা যুল-হুলায়ফা থেকে এহরাম বাঁধেন।
হাদিস অনুযায়ী মীকাতের বাইরে থেকে আসা হাজিদের জন্য মীকাত থেকে এহরাম বাঁধা ওয়াজিব। তবে যারা মীকাতের সীমানার অভ্যন্তরে বসবাস করেন তাদের অবস্থানের জায়গাটাই হল তাদের মীকাত। অর্থাৎ যে যেখানে আছে সেখান থেকেই হজের এহরাম বাঁধবে। তবে মক্কার হারাম এরিয়ার ভেতরে বসবাসকারী ব্যক্তি যদি উমরা করতে চায় তা হলে তাকে হারাম এরিয়ার বাইরে- যেমন তানয়ীম তথা আয়শা মসজিদে গিয়ে এহরাম বাঁধতে হবে।
যদি কারও পথে দুটি মীকাত পড়ে তাহলে প্রথম মীকাত থেকেই এহরাম বাঁধা উত্তম। তবে দ্বিতীয় মীকাত থেকেও এহরাম বাঁধা চলে। বাংলাদেশ থেকে মদিনা হয়ে মক্কায় গমনকারী হাজিগণ এই মাসআলার আওতায় পড়েন। অতঃপর তারা জেদ্দা বিমান বন্দরের পূর্বে যে মীকাত আসে সেখান থেকে এহরাম না বেঁধে মদিনা থেকে মক্কা যাওয়ার পথে যে মীকাত পড়ে—যুল হুলায়ফা—সেখান থেকে এহরাম বাঁধেন।
যদি কোনো ব্যক্তি এহরাম না বেঁধে মীকাত অতিক্রম করত: ভেতরে চলে আসে তার উচিত হবে মীকাতে ফিরে গিয়ে এহরাম বাঁধা। এমতাবস্থায় তার ওপর ক্ষতিপূরণ হিসেবে ‘দম’ দেয়া ওয়াজিব হবে না। মীকাতে ফিরে না গিয়ে যেখানে আছে সেখান থেকে এহরাম বাঁধলে হজ-উমরা হয়ে যাবে বটে তবে ‘দম’ দেয়া ওয়াজিব হবে। স্মরণ করিয়ে দেওয়া ভাল যে, এহরাম না বেঁধে মীকাত অতিক্রম করে ফেললে ভেতরে ঢুকে মসজিদে আয়শায় গিয়ে হজের এহরাম বাঁধলে চলবে না, কেননা মসজিদে আয়শা হেরেম এলাকার অভ্যন্তরে বসবাসকারীদের উমরার মীকাত।
যদি কোনো ব্যক্তি এহরাম না বেঁধে মীকাত অতিক্রম করত: ভেতরে চলে আসে তার উচিত হবে মীকাতে ফিরে গিয়ে এহরাম বাঁধা। এমতাবস্থায় তার ওপর ক্ষতিপূরণ হিসেবে ‘দম’ দেয়া ওয়াজিব হবে না। মীকাতে ফিরে না গিয়ে যেখানে আছে সেখান থেকে এহরাম বাঁধলে হজ-উমরা হয়ে যাবে বটে তবে ‘দম’ দেয়া ওয়াজিব হবে। স্মরণ করিয়ে দেওয়া ভাল যে, এহরাম না বেঁধে মীকাত অতিক্রম করে ফেললে ভেতরে ঢুকে মসজিদে আয়শায় গিয়ে হজের এহরাম বাঁধলে চলবে না, কেননা মসজিদে আয়শা হেরেম এলাকার অভ্যন্তরে বসবাসকারীদের উমরার মীকাত।
পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হজ হয় নির্দিষ্ট কয়েকটি মাসে’।
এ নির্দিষ্ট মাসগুলো হল—শাওয়াল, যিলকদ ও জিলহজ মাসের ১০ তারিখ পর্যন্ত। কারও কারও মতে জিলহজ মাসের পুরোটাই হজের মাস।
শাওয়াল মাস থেকে যেহেতু হজের মাস শুরু হয় তাই শাওয়াল মাসের পূর্বে হজের এহরাম বাঁধা উচিত হবে না। তা বরং খেলাফে সুন্নত ও মাকরুহে তাহরীমি হবে।
এ নির্দিষ্ট মাসগুলো হল—শাওয়াল, যিলকদ ও জিলহজ মাসের ১০ তারিখ পর্যন্ত। কারও কারও মতে জিলহজ মাসের পুরোটাই হজের মাস।
শাওয়াল মাস থেকে যেহেতু হজের মাস শুরু হয় তাই শাওয়াল মাসের পূর্বে হজের এহরাম বাঁধা উচিত হবে না। তা বরং খেলাফে সুন্নত ও মাকরুহে তাহরীমি হবে।
হজ অথবা উমরার উদ্দেশ্যে সৌদি আরব গমন করলে এহরাম ব্যতীত নির্দিষ্ট সীমারেখা—মীকাত—পার হওয়া যায় না, এ বিষয়ে আগেই আলোচনা হয়েছে বাংলাদেশ থেকে হজে যাওয়ার সময় বিমানে থাকা অবস্থাতেই মীকাত এসে যায়। মীকাত নিকটবর্তী হলে বিমানে কর্তব্যরত ব্যক্তিরা হাজি সাহেবদেরকে এ ব্যাপারে ঘোষণা দিয়ে জানিয়ে দেন। সে সময়ই এহরামের নিয়ত করা উত্তম। কেননা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মীকাতের পূর্বে এহরামের নিয়ত করেননি। তবে বিমানে আরোহণের পূর্বেই এহরামের যাবতীয় প্রস্ত্ততি সম্পন্ন করে নেবেন। শুধুমাত্র নিয়তটা বাকি রাখবেন। বিমানে আরোহণের পূর্বেও এহরামের নিয়ত করতে পারেন, তবে তা খেলাফে সুন্নত হওয়ায় কেউ কেউ মাকরুহ বলেছেন। আপনি যদি প্রথমে মদিনায় যাওয়ার নিয়ত করে থাকেন তাহলে এসময় এহরামের নিয়ত করার দরকার নেই। কেননা মদিনা থেকে মক্কায় আসার পথে আরেকটি মীকাত পড়বে, সেখান থেকে এহরাম বাঁধলেই চলবে।
বাংলাদেশ থেকে যারা হজ করতে যান তাদের অধিকাংশই তামাত্তু হজ করে থাকেন। তামাত্তু হজের জন্য দু’বার এহরাম বাঁধতে হয়। প্রথমবার শুধু উমরার নিয়ত করে মীকাত থেকে। দ্বিতীয়বার ৮ জিলহজ তারিখে মক্কা শরীফে যে জায়গায় আপনি আছেন সে জায়গা থেকে। উভয় এহরাম সম্পর্কে বিস্তারিত নিয়ম-কানুন নীচে উল্লেখ করা হল।
শুরুতে আপনি ক্ষৌরকর্ম অর্থাৎ বগল ও নাভির নীচের চুল পরিষ্কার করুন। নখ কাটুন। মাথার চুল ছোট না করে যেভাবে আছে সেভাবেই রেখে দিন, কেননা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও সাহাবায়ে কেরাম এহরামের পূর্বে মাথার চুল কেটেছেন বা মাথা মুন্ডন করেছেন বলে কোনো বর্ণনায় পাওয়া যায় না। ধুলো-বালি লেগে অতিমাত্রায় উসকোখুসকো হওয়ার আশঙ্কা থাকলে— বর্তমান যুগের যন্ত্র-চালিত সফরে এ ধরনের আশঙ্কা নেই বললেই চলে—বিশেষ পদার্থ ব্যবহার করে চুলকে স্থিরকৃত আকারে রাখার জন্য হাদিসে ‘তালবিদ’ করার কথা আছে। তবে এহরামের পূর্বে মাথা মুন্ডন করে ফেলা বা চুল ছোট করে ফেলার কথা নেই।
ক্ষৌরকর্ম সেরে সাবান মাখিয়ে গোসল করুন। গোসল করা সম্ভব না হলে ওজু করুন। ওজু-গোসল কোনটাই যদি করার সুযোগ না থাকে তাহলেও কোনো সমস্যা নেই। এক্ষেত্রে তায়াম্মুম করতে হবে না। এরপর শরীরে, মাথায় ও দাঁড়িতে উত্তম সুগন্ধি মাখুন। স্বাভাবিক সেলাই করা কাপড় পরে এহরামের কাপড় আলাদা একটি ব্যাগে ঢুকিয়ে হজ ক্যাম্প অথবা বিমান বন্দরে চলে যান। আপনার ফ্লাইটের সময়সূচি জেনে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সেরে গাড়িতে ওঠার আগে এহরামের কাপড় পরে নিন। ফরজ নামাজের সময় হলে এহরাম পরার পর নামাজ আদায় করুন। আর ফরজ সালাতের সময় না হলে তাহিয়াতুল ওজুর দু’রাকাত সালাত আদায় করুন। সালাতের পর এহরামের নিয়ত না করে বিমানে আরোহণ করুন। যেহেতু নিয়ত করেননি তাই তালবিয়া পাঠ করা থেকেও বিরত থাকুন। জেদ্দা বিমান বন্দরে পৌঁছার পূর্বে যখন মীকাতের ব্যাপারে ঘোষণা হবে তখন মনে মনে উমরার নিয়ত করুন ও মুখে বলুন لَبَّيْكَ عُمْرةً (লাববাইকা উমরাতান্), এরপর পুরা তালবিয়া-
لَبَّيْكَ اَللّهُمَّ لّبَّيْكْ ، لَبَّيْكّ لا شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكْ ، ِإنَّ الْحّمْدّ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكْ، لا شَرِيْكَ لَكْ
—পড়ে নিন। মাথায় টুপি থাকলে নিয়ত করার পূর্বেই তা সরিয়ে নিন।
সালাতের পর এহরাম বাধা মুস্তাহাব। যদি ফরজ সালাতের পর এহরাম বাধা হয়, তাহলে স্বতন্ত্র নামাজের প্রয়োজন নেই। অন্য সময় এহরাম বাধলে দু রাকাত সালাত আদায় করে নিবে। এ আদায়কৃত নামাজ কি এহরামের নামাজ না তাহিয়্যাতুল ওজুর—এ ব্যাপারে উলামাদের মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ একে এহরামের নামাজ বলেছেন। তবে বিশুদ্ধতম মত হল, এটি তাহিয়্যাতুল ওজু হিসেবে আদায় করা হবে। বিমানের ভেতরে এহরামের নিয়ত করা যদি ঝামেলা মনে করেন তাহলে বিমানে ওঠার পূর্বেই ফরজ সালাত অথবা দু’রাকাত তাহিয়াতুল ওজুর সালাত আদায় করে সালাম ফেরানোর পর মাথায় টুপি থাকলে তা খুলে উপরে যেভাবে বলা হয়েছে সেভাবে উমরার নিয়ত করুন ও তালবিয়া পাঠ করুন। এহরামের আলাদা কোনো সালাত নেই। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ফরজ সালাতের পর এহরামের নিয়ত করেছিলেন।
এহরামে প্রবেশের পর বেশি বেশি তালবিয়া পড়ুন ও জিকির আযকারে ব্যস্ত থাকুন। এহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ সকল জিনিস থেকে বিরত থাকুন যার বিস্তারিত বর্ণনা একটু পরে আসছে।
ক্ষৌরকর্ম সেরে সাবান মাখিয়ে গোসল করুন। গোসল করা সম্ভব না হলে ওজু করুন। ওজু-গোসল কোনটাই যদি করার সুযোগ না থাকে তাহলেও কোনো সমস্যা নেই। এক্ষেত্রে তায়াম্মুম করতে হবে না। এরপর শরীরে, মাথায় ও দাঁড়িতে উত্তম সুগন্ধি মাখুন। স্বাভাবিক সেলাই করা কাপড় পরে এহরামের কাপড় আলাদা একটি ব্যাগে ঢুকিয়ে হজ ক্যাম্প অথবা বিমান বন্দরে চলে যান। আপনার ফ্লাইটের সময়সূচি জেনে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সেরে গাড়িতে ওঠার আগে এহরামের কাপড় পরে নিন। ফরজ নামাজের সময় হলে এহরাম পরার পর নামাজ আদায় করুন। আর ফরজ সালাতের সময় না হলে তাহিয়াতুল ওজুর দু’রাকাত সালাত আদায় করুন। সালাতের পর এহরামের নিয়ত না করে বিমানে আরোহণ করুন। যেহেতু নিয়ত করেননি তাই তালবিয়া পাঠ করা থেকেও বিরত থাকুন। জেদ্দা বিমান বন্দরে পৌঁছার পূর্বে যখন মীকাতের ব্যাপারে ঘোষণা হবে তখন মনে মনে উমরার নিয়ত করুন ও মুখে বলুন لَبَّيْكَ عُمْرةً (লাববাইকা উমরাতান্), এরপর পুরা তালবিয়া-
لَبَّيْكَ اَللّهُمَّ لّبَّيْكْ ، لَبَّيْكّ لا شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكْ ، ِإنَّ الْحّمْدّ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكْ، لا شَرِيْكَ لَكْ
—পড়ে নিন। মাথায় টুপি থাকলে নিয়ত করার পূর্বেই তা সরিয়ে নিন।
সালাতের পর এহরাম বাধা মুস্তাহাব। যদি ফরজ সালাতের পর এহরাম বাধা হয়, তাহলে স্বতন্ত্র নামাজের প্রয়োজন নেই। অন্য সময় এহরাম বাধলে দু রাকাত সালাত আদায় করে নিবে। এ আদায়কৃত নামাজ কি এহরামের নামাজ না তাহিয়্যাতুল ওজুর—এ ব্যাপারে উলামাদের মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ একে এহরামের নামাজ বলেছেন। তবে বিশুদ্ধতম মত হল, এটি তাহিয়্যাতুল ওজু হিসেবে আদায় করা হবে। বিমানের ভেতরে এহরামের নিয়ত করা যদি ঝামেলা মনে করেন তাহলে বিমানে ওঠার পূর্বেই ফরজ সালাত অথবা দু’রাকাত তাহিয়াতুল ওজুর সালাত আদায় করে সালাম ফেরানোর পর মাথায় টুপি থাকলে তা খুলে উপরে যেভাবে বলা হয়েছে সেভাবে উমরার নিয়ত করুন ও তালবিয়া পাঠ করুন। এহরামের আলাদা কোনো সালাত নেই। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ফরজ সালাতের পর এহরামের নিয়ত করেছিলেন।
এহরামে প্রবেশের পর বেশি বেশি তালবিয়া পড়ুন ও জিকির আযকারে ব্যস্ত থাকুন। এহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ সকল জিনিস থেকে বিরত থাকুন যার বিস্তারিত বর্ণনা একটু পরে আসছে।
মক্কা শরীফ যাওয়ার পর উমরা আদায়ের পর মাথার চুল খাটো করে অথবা মাথা মুন্ডন করে এহরাম খুলে ফেলে স্বাভাবিক পোশাক-আশাক পরে ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকুন ও যত বেশি সম্ভব বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করুন। ৮ জিলহজ আবার আপনাকে এহরাম বাঁধতে হবে। এবারের এহরাম হবে হজের নিয়তে। এ এহরামের জন্য কোথাও যেতে হবে না। আপনি যে বাসায় বা হোটেলে আছেন সেখান থেকেই এহরাম বাঁধুন। পূর্বের ন্যায় ক্ষৌরকর্ম সেরে নিয়ে গোসল করে নিন। শরীরে, দাড়িতে ও মাথায় আতর মাখুন। এহরামের কাপড় পড়ে নিন। ফরজ সালাতের সময় হলে ফরজ সালাত আদায় করুন। অন্যথায় তাহিয়াতুল ওজুর দু’রাকাত সালাত আদায় করুন। এরপর মনে মনে হজের নিয়ত করুন, ও মুখে বলুন لَبَّيْكَ حَجًّا (লাববাইকা হাজ্জান) এরপর পুরা তালবিয়া পড়ে নিন।
এহরাম বাধার পর গভীর মনোনিবেশের সাথে আল্লাহর আজমত- বড়োত্ব, রহমত-মাগফিরাত ইত্যাদির কথা ক্ষণে ক্ষণে স্মরণ করুন। বেশি বেশি দোয়া-দরুদ পড়ুন। তালবিয়া পড়ুন। তালবিয়া কোনো উঁচু জায়গায় ওঠার সময়, নিচু জায়গায় নামার সময়, বসা থেকে উঠে দাঁড়ানোর সময়, দাঁড়ানো অবস্থা থেকে বসার সময়, কারও কাছে বেড়াতে গেলে সশব্দে তালবিয়া পড়ুন। কুরআন তিলাওয়াত করুন। হজ-উমরা বিষয়ক বই-পুস্তক পড়ুন। কোনো হক্কানি আলেম আলোচনা করতে থাকলে মনোযোগ দিয়ে শুনুন।
পাঁচ ওয়াক্ত সালাত জামাতের সাথে আদায় করুন। বিমানে আরোহণরত অবস্থায় সালাতের সময় হলে একাকীই সালাত আদায় করে নিন। ওজু না থাকলে তায়াম্মুম করুন। সালাত কাজা করার অপেক্ষায় থাকবেন না।
৮ জিলহজ এহরাম বাধার পর যেহেতু মূল হজ শুরু হবে তাই এহরাম খোলা পর্যন্ত নিজেকে কঠিনভাবে নিয়ন্ত্রণ করুণ। অন্যান্য হাজিদেরকেও নসিহত করুন, যেন সবাই তাওবা ইস্তিগফারের মধ্যে সময় কাটায়। যারা হজের কার্যক্রম সম্পর্কে অজ্ঞ তাদেরকে আপনি যতটুকু জানেন সেইটুকু বলুন। হজ পালনের জন্য সহিহ-শুদ্ধ কোনো বই সাথে থাকলে তা পড়ে শুনান। এভাবে পুরা সময়টাকে ঈমানি ভাবগাম্ভীর্যের আওতায় কাটান।
পাঁচ ওয়াক্ত সালাত জামাতের সাথে আদায় করুন। বিমানে আরোহণরত অবস্থায় সালাতের সময় হলে একাকীই সালাত আদায় করে নিন। ওজু না থাকলে তায়াম্মুম করুন। সালাত কাজা করার অপেক্ষায় থাকবেন না।
৮ জিলহজ এহরাম বাধার পর যেহেতু মূল হজ শুরু হবে তাই এহরাম খোলা পর্যন্ত নিজেকে কঠিনভাবে নিয়ন্ত্রণ করুণ। অন্যান্য হাজিদেরকেও নসিহত করুন, যেন সবাই তাওবা ইস্তিগফারের মধ্যে সময় কাটায়। যারা হজের কার্যক্রম সম্পর্কে অজ্ঞ তাদেরকে আপনি যতটুকু জানেন সেইটুকু বলুন। হজ পালনের জন্য সহিহ-শুদ্ধ কোনো বই সাথে থাকলে তা পড়ে শুনান। এভাবে পুরা সময়টাকে ঈমানি ভাবগাম্ভীর্যের আওতায় কাটান।
তালবিয়ার মাধ্যমেই কার্যত হজ ও উমরায় প্রবেশের ঘোষণা দেয়া হয়। সে হিসেবে তালবিয়াকে হজের স্লোগান বলা হয়েছে তালবিয়ার শব্দমালা নিম্নরূপ—
لَبَّيْكَ اللّهُمَّ لَبَّيْكْ، لَبَّيْكَ لا شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكْ ، إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكْ ، لا شَرِيْكَ لَكْ
‘আমি হাজির, হে আল্লাহ! আমি হাজির। তোমার কোনো শরিক নেই। নিশ্চয়ই প্রশংসা ও নেয়ামত তোমার এবং রাজতবও, তোমার কোনো শরিক নেই।’ ইবনে ওমর বলেন: ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এ-শব্দমালায় আর কিছু বাড়াতেন না’ আবু হুরায়রা () এর বর্ণনা মতে তালবিয়ায় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন لَبَّيْكَ إِلهَ اْلَحقِّ لَبَّيْكَ ‘আমি হাজির সত্য ইলাহ আমি হাজির’।
এক আল্লাহর সান্নিধ্যে হাজিরা দেয়া, ও তাঁর লা-শরিক হওয়ার ঘোষণা বার বার উচ্চারিত হয় তালবিয়ার শব্দমালায়। তালবিয়া যেন সকল পৌত্তলিকতা, প্রতিমা-পূজা, অথবা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন সত্তার সমীপে হীনতা দীনতা প্রকাশের বিরুদ্ধে এক অমোঘ ঘোষণা যা নবী-রাসূল পাঠানোর পিছনে প্রধান উদ্দেশ্য হিসেবে বিবেচিত। যে ঘোষণার সার্থক রূপায়ণ ঘটতে দেখা যায় রাসূলুল্লাহর (ﷺ) শিরক ও মুশরিকদের সকল কর্মকান্ড থেকে দায়-মুক্তি ও তাদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা পড়ে শোনানোর মাধ্যমে।
শুধু তালবিয়া নয় বরং অন্যান্য হজকর্মেও তাওহীদ চর্চা প্রচন্ডভাবে দৃশ্যমান। তাওয়াফ শেষে যে দু’রাকাত সালাত আদায় করতে হয় সেখানেও তাওহীদ চর্চার বিষয়টি প্রকাশমান। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এ দু রাকাত সালাত আদায়ের সময় ‘সূরা ইখলাস’ ও ‘সূরা আল-কাফিরুন’ পাঠ করেছেন, এ দুটি সূরাতে তাওহীদের বাণী স্পষ্ট আকারে উচ্চারিত হয়েছে। জাবের (রা) বলেন: ‘‘তিনি (ﷺ) এ-দু’রাকাতে তাওহীদভিত্তিক সূরা ও ‘কুল য়্যা আইয়ুহাল কাফিরুন’ তিলাওয়াত করলেন’’। অন্য এক বর্ণনায় তিনি ইখলাসের দুই সূরা ‘‘কুল য়্যা আইয়ুহাল কাফিরুন’ ও ‘কুল হুআল্লাহু আহাদ’, তিলাওয়াত করেন’’।
সাফা ও মারওয়ায় তাওহীদনির্ভর দোয়া একত্ববাদের সাথে হজের অচ্ছেদ্য সম্পর্ককে নির্দেশ করে। জাবেরের () এক বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন, ‘অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সাফায় আরোহণ করলেন, কাবা দৃষ্টিগ্রাহ্য হল, তিনি কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর একত্বের কথা বললেন, তাঁর বড়োত্বের ঘোষণা দিলেন। তিনি বললেন—
لَا إِلهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ اْلَحمْدُ وَهَوُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ، لَا إِلهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ، أَنْجَزَ وَعْدَهُ ، وَنَصَرَ عَبْدَهُ ، وَهَزَمَ الْأَحْزَابَ وَحْدَهُ .
আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তিনি একক, তাঁর কোনো শরিক নেই। রাজত্ব তাঁরই। প্রশংসাও তাঁর। তিনি সকল বিষয়ের ওপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরিক নেই। তিনি তাঁর অঙ্গীকার পূরণ করেছেন, তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন, ও শত্রু দলকে একাই পরাভূত করেছেন।’ মারওয়াতে গিয়েও তিনি অনুরূপ করলেন।
আরাফার দোয়া ও রিজিকসমূহেও তাওহীদের বাণী উচ্চারিত হয়েছে। হাদিসে এসেছে, ‘উত্তম দোয়া আরাফা দিবসের দোয়া, আর আমি ও আমার পূর্ববর্তী নবীদের সর্বোত্তম কথাটি হলো:
لَا إِلهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ اْلَحمْدُ وَهَوُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ .
‘আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরিক নেই। রাজত্ব তাঁরই। প্রশংসাও তাঁর। তিনি সকল বিষয়ের ওপর ক্ষমতাবান।
হজকারীদের—এমন কি ব্যাপকার্থে—মুসলমানদের অবস্থার প্রতি দৃষ্টি দিলে দেখা যাবে বিচিত্র ধরনের বেদআত, কুসংস্কার ও শিরকের ধূম্রজালে জড়িয়ে রয়েছে অনেকেই। এই জন্য ওলামা ও আল্লাহর পথে আহবায়কদের উচিত তালবিয়ার ভাব ও আদর্শ হাজি সাহেবদেরকে বেশি বেশি বলা। তালবিয়ার ঘোষণা অনুযায়ী সবাইকে জীবন গড়তে উৎসাহিত করা।
لَبَّيْكَ اللّهُمَّ لَبَّيْكْ، لَبَّيْكَ لا شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكْ ، إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكْ ، لا شَرِيْكَ لَكْ
‘আমি হাজির, হে আল্লাহ! আমি হাজির। তোমার কোনো শরিক নেই। নিশ্চয়ই প্রশংসা ও নেয়ামত তোমার এবং রাজতবও, তোমার কোনো শরিক নেই।’ ইবনে ওমর বলেন: ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এ-শব্দমালায় আর কিছু বাড়াতেন না’ আবু হুরায়রা () এর বর্ণনা মতে তালবিয়ায় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন لَبَّيْكَ إِلهَ اْلَحقِّ لَبَّيْكَ ‘আমি হাজির সত্য ইলাহ আমি হাজির’।
এক আল্লাহর সান্নিধ্যে হাজিরা দেয়া, ও তাঁর লা-শরিক হওয়ার ঘোষণা বার বার উচ্চারিত হয় তালবিয়ার শব্দমালায়। তালবিয়া যেন সকল পৌত্তলিকতা, প্রতিমা-পূজা, অথবা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন সত্তার সমীপে হীনতা দীনতা প্রকাশের বিরুদ্ধে এক অমোঘ ঘোষণা যা নবী-রাসূল পাঠানোর পিছনে প্রধান উদ্দেশ্য হিসেবে বিবেচিত। যে ঘোষণার সার্থক রূপায়ণ ঘটতে দেখা যায় রাসূলুল্লাহর (ﷺ) শিরক ও মুশরিকদের সকল কর্মকান্ড থেকে দায়-মুক্তি ও তাদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা পড়ে শোনানোর মাধ্যমে।
শুধু তালবিয়া নয় বরং অন্যান্য হজকর্মেও তাওহীদ চর্চা প্রচন্ডভাবে দৃশ্যমান। তাওয়াফ শেষে যে দু’রাকাত সালাত আদায় করতে হয় সেখানেও তাওহীদ চর্চার বিষয়টি প্রকাশমান। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এ দু রাকাত সালাত আদায়ের সময় ‘সূরা ইখলাস’ ও ‘সূরা আল-কাফিরুন’ পাঠ করেছেন, এ দুটি সূরাতে তাওহীদের বাণী স্পষ্ট আকারে উচ্চারিত হয়েছে। জাবের (রা) বলেন: ‘‘তিনি (ﷺ) এ-দু’রাকাতে তাওহীদভিত্তিক সূরা ও ‘কুল য়্যা আইয়ুহাল কাফিরুন’ তিলাওয়াত করলেন’’। অন্য এক বর্ণনায় তিনি ইখলাসের দুই সূরা ‘‘কুল য়্যা আইয়ুহাল কাফিরুন’ ও ‘কুল হুআল্লাহু আহাদ’, তিলাওয়াত করেন’’।
সাফা ও মারওয়ায় তাওহীদনির্ভর দোয়া একত্ববাদের সাথে হজের অচ্ছেদ্য সম্পর্ককে নির্দেশ করে। জাবেরের () এক বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন, ‘অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সাফায় আরোহণ করলেন, কাবা দৃষ্টিগ্রাহ্য হল, তিনি কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর একত্বের কথা বললেন, তাঁর বড়োত্বের ঘোষণা দিলেন। তিনি বললেন—
لَا إِلهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ اْلَحمْدُ وَهَوُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ، لَا إِلهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ، أَنْجَزَ وَعْدَهُ ، وَنَصَرَ عَبْدَهُ ، وَهَزَمَ الْأَحْزَابَ وَحْدَهُ .
আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তিনি একক, তাঁর কোনো শরিক নেই। রাজত্ব তাঁরই। প্রশংসাও তাঁর। তিনি সকল বিষয়ের ওপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরিক নেই। তিনি তাঁর অঙ্গীকার পূরণ করেছেন, তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন, ও শত্রু দলকে একাই পরাভূত করেছেন।’ মারওয়াতে গিয়েও তিনি অনুরূপ করলেন।
আরাফার দোয়া ও রিজিকসমূহেও তাওহীদের বাণী উচ্চারিত হয়েছে। হাদিসে এসেছে, ‘উত্তম দোয়া আরাফা দিবসের দোয়া, আর আমি ও আমার পূর্ববর্তী নবীদের সর্বোত্তম কথাটি হলো:
لَا إِلهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ اْلَحمْدُ وَهَوُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ .
‘আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরিক নেই। রাজত্ব তাঁরই। প্রশংসাও তাঁর। তিনি সকল বিষয়ের ওপর ক্ষমতাবান।
হজকারীদের—এমন কি ব্যাপকার্থে—মুসলমানদের অবস্থার প্রতি দৃষ্টি দিলে দেখা যাবে বিচিত্র ধরনের বেদআত, কুসংস্কার ও শিরকের ধূম্রজালে জড়িয়ে রয়েছে অনেকেই। এই জন্য ওলামা ও আল্লাহর পথে আহবায়কদের উচিত তালবিয়ার ভাব ও আদর্শ হাজি সাহেবদেরকে বেশি বেশি বলা। তালবিয়ার ঘোষণা অনুযায়ী সবাইকে জীবন গড়তে উৎসাহিত করা।
তালবিয়া হজের স্লোগান। তাই তালবিয়া পাঠের কোনো বিকল্প নেই। তালবিয়া পাঠ ফরজ না ওয়াজিব না সুন্নত এই নিয়ে ফেকাহবিদদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। হানাফি মাজহাব অনুযায়ী এহরাম বাধার সময় তালবিয়া অথবা অন্য কোনো জিকির একবার পাঠ করা ফরজ, এবং একাধিকবার পাঠ করা সুন্নত।
উমরার ক্ষেত্রে তালবিয়ার শুরু এহরামের নিয়ত করার সময় থেকে এবং শেষ বায়তুল্লাহর তাওয়াফ শুরু করার সময়ে। আর হজের ক্ষেত্রে এহরামের নিয়ত করার সময় থেকে ১০ জিলহজ বড় জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে বর্ণিত আরবি শব্দমালা ব্যবহার করে তালবিয়া পড়া সুন্নত। তবে যদি কেউ আল্লাহর আজমত ও বড়োত্ব প্রকাশক আরো কিছু শব্দ এর সাথে যুক্ত করতে চায় তাহলে তা জায়েয হবে। যেমনটি করেছেন ওমর ()। তিনি উল্লেখিত তালবিয়ার শব্দমালা পড়ার পর বলতেন।
لَبَّيْكَ اْللَّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ، وَالَخيْرَ فِيْ يَدَيْكَ، وَالرَّغْبَاءُ إِلَيْكَ وَالْعَمَلُ .
‘আমি হাজির হে আল্লাহ আমি হাজির, আমি হাজির একমাত্র তোমারই সন্তুষ্টি কল্পে। কল্যাণ তোমার হাতে, আমল ও প্রেরণা তোমারই কাছে সমর্পিত।’
তবে আমাদের উচিত হবে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও সাহাবাদের ব্যবহৃত শব্দমালার বাইরে না যাওয়া।
যদি কেউ আরবি তালবিয়া আদৌ উচ্চারণ করতে না পারে, তাহলে বাংলা ভাষায় তালবিয়ার অনুবাদ মুখস্থ করে পড়লেও দায়িত্ব আদায় হয়ে যাবে। তবে যেহেতু আরবি তালবিয়াটিই হজের শেয়া’র বা স্লোগান তাই হজ পালনেচ্ছু ব্যক্তিমাত্রেরই উচিত হবে মেহনত করে শুদ্ধভাবে আরবি তালবিয়াটি শিখে নেয়া।
তালবিয়া মুখে উচ্চারণ করা জরুরি। যদি কেউ মনে মনে তালবিয়া পড়ে, তবে তা যথেষ্ট হবে না। কেননা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও সাহাবাগণ মুখে উচ্চারণ করে উচ্চ স্বরে তালবিয়া পড়েছেন। হাদিসে এসেছে, ‘আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাথে বের হলাম হজের তালবিয়া চিৎকার করে বলে বলে। আর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হজ বিষয়ে নির্দেশ করে বলেছেন, ‘ لِـتَأْخُذُوْا عَنِّىْ مَنَاسِكَكُم - আমার কাছ থেকে তোমরা যেন তোমাদের হজকর্মসমূহ জেনে নাও।’ তালবিয়ার ক্ষেত্রে সশব্দে উচ্চারণ করে পড়া ব্যতীত অন্য কোনো পদ্ধতি আমাদের জানা নেই, তাই সশব্দে উচ্চারণ করে তালবিয়া না পড়লে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর আদর্শের অনুসরণ হবে না।
বর্তমানে দেখা যায় যে হাজি সাহেবদের মধ্যে একজন প্রথমে তালবিয়ার কিছু শব্দ উচ্চারণ করেন, পরে অন্যান্য হাজিগণ তাকে অনুসরণ করে সমস্বরে তালবিয়া পড়েন। এভাবে একবার তালবিয়া শেষ হলে আবার শুরু করেন। এরূপ করা সুন্নতের বিপরীত। তালবিয়া পাঠের সময় সুন্নত তরিকা হল প্রত্যেকেই আলাদা আলাদা তালবিয়া পাঠ করবে। হাঁ যদি তালবিয়া শেখানোর প্রয়োজনে সাময়িকভাবে তালকিন করা হয়, তবে তার অনুমতি রয়েছে।
নারীদের জন্য জোরে তালবিয়া পড়া নিষিদ্ধ। নারীরা এতটুকু শব্দে তালবিয়া পাঠ করবেন যাতে পাশে থাকা সঙ্গিনী কেবল শুনতে পান। কোন বেগানা পুরুষ শুনতে পায় এমন উচ্চারণে নারীদের তালবিয়া পাঠ অবৈধ।
তালবিয়া বেশি বেশি পড়া মুস্তাহাব। দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে, চলন্ত অবস্থায়, ওজু ও বে-ওজু—সর্বাবস্থায় তালবিয়া পড়া যায়। বিশেষ করে ব্যক্তির অবস্থা পরিবর্তনের সময় তালবিয়া পড়া মুস্তাহাব। যেমন দাঁড়ানো অবস্থা থেকে বসার সময়, বসা থেকে উঠে দাঁড়ানোর সময়, ঘর থেকে বের হওয়ার সময়, ঘরে প্রবেশের সময়, গাড়িতে উঠার সময়, গাড়ি থেকে নামার সময় তালবিয়া পড়া মুস্তাহাব। মসজিদুল হারাম, মিনার মসজিদে খাইফ, আরাফার মসজিদে নামিরায় তালবিয়া পড়া মুস্তাহাব। তবে মসজিদে নিচু স্বরে তালবিয়া পাঠ বাঞ্ছনীয়।
উমরার ক্ষেত্রে তালবিয়ার শুরু এহরামের নিয়ত করার সময় থেকে এবং শেষ বায়তুল্লাহর তাওয়াফ শুরু করার সময়ে। আর হজের ক্ষেত্রে এহরামের নিয়ত করার সময় থেকে ১০ জিলহজ বড় জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে বর্ণিত আরবি শব্দমালা ব্যবহার করে তালবিয়া পড়া সুন্নত। তবে যদি কেউ আল্লাহর আজমত ও বড়োত্ব প্রকাশক আরো কিছু শব্দ এর সাথে যুক্ত করতে চায় তাহলে তা জায়েয হবে। যেমনটি করেছেন ওমর ()। তিনি উল্লেখিত তালবিয়ার শব্দমালা পড়ার পর বলতেন।
لَبَّيْكَ اْللَّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ، وَالَخيْرَ فِيْ يَدَيْكَ، وَالرَّغْبَاءُ إِلَيْكَ وَالْعَمَلُ .
‘আমি হাজির হে আল্লাহ আমি হাজির, আমি হাজির একমাত্র তোমারই সন্তুষ্টি কল্পে। কল্যাণ তোমার হাতে, আমল ও প্রেরণা তোমারই কাছে সমর্পিত।’
তবে আমাদের উচিত হবে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও সাহাবাদের ব্যবহৃত শব্দমালার বাইরে না যাওয়া।
যদি কেউ আরবি তালবিয়া আদৌ উচ্চারণ করতে না পারে, তাহলে বাংলা ভাষায় তালবিয়ার অনুবাদ মুখস্থ করে পড়লেও দায়িত্ব আদায় হয়ে যাবে। তবে যেহেতু আরবি তালবিয়াটিই হজের শেয়া’র বা স্লোগান তাই হজ পালনেচ্ছু ব্যক্তিমাত্রেরই উচিত হবে মেহনত করে শুদ্ধভাবে আরবি তালবিয়াটি শিখে নেয়া।
তালবিয়া মুখে উচ্চারণ করা জরুরি। যদি কেউ মনে মনে তালবিয়া পড়ে, তবে তা যথেষ্ট হবে না। কেননা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও সাহাবাগণ মুখে উচ্চারণ করে উচ্চ স্বরে তালবিয়া পড়েছেন। হাদিসে এসেছে, ‘আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাথে বের হলাম হজের তালবিয়া চিৎকার করে বলে বলে। আর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হজ বিষয়ে নির্দেশ করে বলেছেন, ‘ لِـتَأْخُذُوْا عَنِّىْ مَنَاسِكَكُم - আমার কাছ থেকে তোমরা যেন তোমাদের হজকর্মসমূহ জেনে নাও।’ তালবিয়ার ক্ষেত্রে সশব্দে উচ্চারণ করে পড়া ব্যতীত অন্য কোনো পদ্ধতি আমাদের জানা নেই, তাই সশব্দে উচ্চারণ করে তালবিয়া না পড়লে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর আদর্শের অনুসরণ হবে না।
বর্তমানে দেখা যায় যে হাজি সাহেবদের মধ্যে একজন প্রথমে তালবিয়ার কিছু শব্দ উচ্চারণ করেন, পরে অন্যান্য হাজিগণ তাকে অনুসরণ করে সমস্বরে তালবিয়া পড়েন। এভাবে একবার তালবিয়া শেষ হলে আবার শুরু করেন। এরূপ করা সুন্নতের বিপরীত। তালবিয়া পাঠের সময় সুন্নত তরিকা হল প্রত্যেকেই আলাদা আলাদা তালবিয়া পাঠ করবে। হাঁ যদি তালবিয়া শেখানোর প্রয়োজনে সাময়িকভাবে তালকিন করা হয়, তবে তার অনুমতি রয়েছে।
নারীদের জন্য জোরে তালবিয়া পড়া নিষিদ্ধ। নারীরা এতটুকু শব্দে তালবিয়া পাঠ করবেন যাতে পাশে থাকা সঙ্গিনী কেবল শুনতে পান। কোন বেগানা পুরুষ শুনতে পায় এমন উচ্চারণে নারীদের তালবিয়া পাঠ অবৈধ।
তালবিয়া বেশি বেশি পড়া মুস্তাহাব। দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে, চলন্ত অবস্থায়, ওজু ও বে-ওজু—সর্বাবস্থায় তালবিয়া পড়া যায়। বিশেষ করে ব্যক্তির অবস্থা পরিবর্তনের সময় তালবিয়া পড়া মুস্তাহাব। যেমন দাঁড়ানো অবস্থা থেকে বসার সময়, বসা থেকে উঠে দাঁড়ানোর সময়, ঘর থেকে বের হওয়ার সময়, ঘরে প্রবেশের সময়, গাড়িতে উঠার সময়, গাড়ি থেকে নামার সময় তালবিয়া পড়া মুস্তাহাব। মসজিদুল হারাম, মিনার মসজিদে খাইফ, আরাফার মসজিদে নামিরায় তালবিয়া পড়া মুস্তাহাব। তবে মসজিদে নিচু স্বরে তালবিয়া পাঠ বাঞ্ছনীয়।
প্রথমত: মুন্ডন কিংবা অন্য কোন উপায়ে মাথার চুল ফেলে দেয়া। আল্লাহ তা’আলা তার পবিত্র কালামে স্পষ্ট বর্ণনার মাধ্যমে মাথার চুল ফেলে দেয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। কুরআনে এসেছে—
وَلَا تَحْلِقُوا رُءُوسَكُمْ حَتَّى يَبْلُغَ الْهَدْيُ مَحِلَّهُ
অর্থ: যে পর্যন্ত না হাদির পশু তার স্থানে পোঁছায়, তোমরা মাথা মুন্ডন কর না।
অসুস্থতা কিংবা মাথায় উকুন জনিত যন্ত্রণার ফলে যে ব্যক্তি মাথার চুল ফেলতে বাধ্য হবে, তার প্রদেয় ফিদয়া সম্পর্কেও আল্লাহ তা’আলা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। কুরআনে এসেছে—
فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَرِيضًا أَوْ بِهِ أَذًى مِنْ رَأْسِهِ فَفِدْيَةٌ مِنْ صِيَامٍ أَوْ صَدَقَةٍ أَوْ نُسُكٍ
অর্থ: তোমাদের মাঝে যে অসুস্থ হবে, কিংবা যার মাথায় যন্ত্রণা থাকবে, (এবং চুল ফেলতে বাধ্য হবে) সে যেন সিয়াম বা সদকা অথবা পশু জবাই দ্বারা ফিদয়া প্রদান করে।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত বিষয়টি বিশদ করেছেন এভাবে—
কাব বিন আজরা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমার মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছিল, আমি রাসূলের নিকট উপস্থিত হলাম, তখন আমার মুখে উকুন ঝরে পড়ছিল। দেখে রাসূল বললেন :
ما كنت أرى أن الجهد قد بلغ منك ما أرى، أ تجد شاةً ؟
তুমি এতটা কষ্ট পাচ্ছ এটা আমার ধারণা ছিল না। তোমার কাছে কোন বকরি আছে ? আমি বললাম, না। অত:পর নাজিল হল—
فَفِدْيَةٌ مِنْ صِيَامٍ أَوْ صَدَقَةٍ أَوْ نُسُكٍ .
তবে সিয়াম, বা সদকা অথবা কোরবানি দ্বারা ফিদয়া প্রদান করবে। তিনি বলেন: তা হচ্ছে তিন দিন রোজা রাখা, কিংবা ছয় জন মিসকিনকে আহার করানো। প্রতি মিসকিনের জন্য অর্ধ সা’ খাবার।
এ হাদিস ফিদয়া সংক্রান্ত আয়াতকে স্পষ্ট করে দিচ্ছে পূর্ণভাবে। স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে উল্লেখিত আয়াতের সিয়ামের সংখ্যা হচ্ছে তিন। সদকার পরিমাণ হচ্ছে ছয় জন মিসকিনের জন্য তিন সা’। প্রতি মিসকিনের জন্য অর্ধ সা’ (অর্থাৎ এক কেজি বিশ গ্রাম)। পশু জবাইয়ের ইচ্ছা করলে বকরির চেয়ে বড় যে কোন পশু জবেহ করে দেবে। এ তিনটির যে কোন একটি ফিদয়া হিসেবে প্রদানের সুযোগ রয়েছে। আয়াতটি এ ব্যাপারে উত্তম দলিল। কুরআন ও সহিহ হাদিসের স্পষ্ট প্রামাণ্যতার ফলে এ ব্যাপারে পিছ-পা হওয়ার কোন সুযোগ নেই। অধিকাংশ শরিয়তবিদ এ বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করেছেন। পশু জবাই করে ফিদয়ার ক্ষেত্রে এমন বকরি হওয়া বাঞ্ছনীয়, যা কোরবানির উপযুক্ত। পশুটির অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যাবতীয় ত্রুটি হতে মুক্ত হতে হবে। আলেমগণ একে ‘ফিদয়াতুল আযা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন, কারণ আল্লাহ তা’আলা একে পবিত্র কুরআনে أَوْ بِهِ أَذًى مِنْ رَأْسِهِ বলে বর্ণনা করেছেন।
মস্তক ব্যতীত দেহের অন্য কোন স্থানের লোম মুন্ডন করলে বিজ্ঞ আলেমগণের ইজতিহাদ অনুযায়ী বিষয়টি নানারূপে বিভক্ত হবে। কিছু ক্ষেত্রে ফিদয়া প্রদান করতে হবে, কিছু ক্ষেত্রে দিতে হবে দম। কারণ, মাথা মুন্ডন করার ফলে যেমন পরিচ্ছন্নতা ও স্বাচ্ছনদ্য অনুভব হয়, তেমনি দেহের লোম ফেললেও এক প্রকার স্বস্তি অনুভূত হয়। তাই উভয়টিকে একই হুকুমের আওতাভুক্ত করা হয়েছে।
দ্বিতীয়ত: নখ উপড়ে ফেলা, কর্তন করা কিংবা ছাঁটা—চুল মুন্ডন করার হুকুমের ভিত্তিকে—ইত্যাদি এহরাম অবস্থায় নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য হারাম। ইবনে মুনযির বলেন: আলেমগণ এ ব্যাপারে এক মত যে, নখ কাটা মুহরিমের জন্য হারাম। হাত কিংবা পায়ের নখ—উভয়ের ক্ষেত্রেই একই হুকুম। তবে, যদি নখ ফেটে যায় এবং তাতে যন্ত্রণা হয় তবে যন্ত্রণাদায়ক স্থানটিকে ছেঁটে দেয়ায় কোন ক্ষতি নেই। এ কারণে কোন ফিদয়া ওয়াজিব হবে না।
তৃতীয়ত: এহরাম বাধার পর শরীর, কাপড় কিংবা এ দুটির সাথে সম্পৃক্ত অন্য কিছুতে আতর ব্যবহার করা। ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত হাদিস দ্বারা জানা যায় মুহরিমের ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন
لا يلبس ثوبا مسه زعفران ولا ورس
জাফরান কিংবা ওয়ারাস (এক জাতীয় সুগন্ধি) মিশ্রিত কাপড় পরিধান করবে না। অপর এক হাদিসে তিনি আরাফায় অবস্থান কালে বাহনে পিষ্ট হয়ে মৃত্যুবরণকারী এক সাহাবি সম্পর্কে এরশাদ করেন:
لا تقربوه طيبا
তোমরা তার কাছে আতর নিয়ো না। অপর রেওয়ায়েতে এসেছে
ولا يمس طيبا
আতর স্পর্শ করো না। এর কারণে উল্লেখ করে তিনি বলেন:
فإنه يبعث يوم القيامة ملبيا
কারণ, কেয়ামত দিবসে তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় তার পুনরুত্থান ঘটবে। মুহরিমের জন্য বৈধ নয় সুগন্ধি গ্রহণ, পানীয়ের সাথে জাফরান মিশ্রিত করা যা পানীয়ের স্বাদে ও গন্ধে প্রভাব সৃষ্টি করে, অথবা চায়ের সাথে এতটা গোলাপ জল মিশ্রণ করা, যা তার স্বাদে ও গন্ধে পরিবর্তন ঘটায়। মুহরিম ব্যক্তি সুগন্ধি মিশ্রিত সাবান ব্যবহার করবে না। এহরামের পূর্বে ব্যবহৃত সুগন্ধিতে কোন সমস্যা নেই। আয়েশা রা. হতে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে,
كنت أنظر إلى وبيص المسك في مفارق رسول الله صلى الله عليه وسلم وهو محرم
এহরাম অবস্থাতেই আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মস্তকের সিঁথিতে মেশকের উজ্জ্বলতার দিকে দৃষ্টি দিচ্ছিলাম।
চতুর্থত: জমহুর ওলামার মতানুসারে বিবাহ এহরাম অবস্থায় অবৈধ। কারণ, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন : মুহরিম বিবাহ করবে না, বিবাহ দেবে না এবং প্রস্তাবও পাঠাবে না।
সুতরাং, কোন মুহরিমের পক্ষে বৈধ নয় বিয়ে করা, কিংবা অলি ও উকিল হয়ে কারো বিয়ের ব্যবস্থা করা অথবা এহরাম হতে মুক্ত হওয়া অবধি কাউকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠানো। এমনিভাবে নারী মুহরিমের জন্যও একই হুকুম। সে কোন পুরুষকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতে পারবে না।
পঞ্চমত: এহরাম অবস্থায় মুহরিমের জন্য সহবাস অবৈধ। শরিয়তবিদদের মাঝে এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই যে, এহরাম অবস্থায় অবৈধ বিষয়গুলোর মাঝে কেবল সহবাস হজকে নষ্ট করে দেয়। কুরআনে বর্ণিত আয়াত,
فَمَنْ فَرَضَ فِيهِنَّ الْحَجَّ فَلَا رَفَثَ وَلَا فُسُوقَ وَلَا جِدَالَ فِي الْحَجِّ
(যে এই মাসগুলোতে হজ করা স্থির করে, তার জন্য হজের সময়ে স্ত্রী সম্ভোগ, অন্যায় আচরণ ও কলহ-বিবাদ বিধেয় নয়।)
আয়াতে উল্লেখিত الرفث শব্দটি একই সাথে সহবাস ও সহবাস জাতীয় যাবতীয় বিষয়কেই সন্নিবেশ করে। এহরামের অবৈধ বিষয়গুলোর মাঝে সহবাসই সব চেয়ে বেশি ক্ষতিকর অনিষ্টকারী। এর কয়েকটি অবস্থা রয়েছে:
প্রথম অবস্থা : ওকুফে আরাফার পূর্বে মুহরিম ব্যক্তির স্ত্রী-সম্ভোগে লিপ্ত হওয়া। আলেমদের কারো মাঝেই এ ব্যাপারে বিরোধ নেই যে, এর মাধ্যমে তার হজ নষ্ট হয়ে যাবে। তবে তার কর্তব্য হচ্ছে, আরম্ভ করা হজটি সমাপ্ত করা, এবং পরবর্তীতে তা কাজা করা। তাকে হাদী (পশু কোরবানি) দিতে হবে। পশুটি কেমন হবে এ ব্যাপারে জমহুরের মত হচ্ছে তার কর্তব্য একটি উট জবেহ করা। ।
দ্বিতীয় অবস্থা: ওকুফে আরাফার পরে, জামরায়ে আকাবা ও তাওয়াফে এফাদার পূর্বে যদি সহবাস সংঘটিত হয়, তবে ইমাম মালেক, শাফেয়ি ও আহমদসহ জমহুর ফুকাহাদের মতে তার হজ ফাসেদ হিসেবে গণ্য হবে। এ অবস্থায় তার উপর দুটি হুকুম আরোপিত হবে। এক: তার উপর ফিদয়া ওয়াজিব হবে। সে ফিদয়া আদায় করতে হবে একটি উট বা গাভি দ্বারা, যা কোরবানি করার উপযুক্ত। এবং সব গোশত মিসকিনদের মাঝে বিলিয়ে দিতে হবে, নিজে কিছুই গ্রহণ করবে না। দ্বিতীয়: সহবাসের ফলে হজটি নষ্ট হয়েছে বলে গণ্য হবে। তবে নষ্ট হজটিই পূরণ করা তার কর্তব্য এবং বিলম্ব না করে পরবর্তী বছরেই নষ্ট হজটির কাজা আদায় করতে হবে। ইমাম মালেক তার রচিত মুআত্তায় বলেন: ‘আমি জানতে পেরেছি যে, উমর, আলী এবং আবু হুরায়রা রা.-কে এমন ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল, যে মুহরিম থাকা অবস্থায় স্ত্রীর সাথে সহবাসে লিপ্ত হয়েছে। তারা ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে বললেন যে, তারা আপন গতিতে হজ শেষ করবে। এবং পরবর্তী বছরে হজ আদায় করবে এবং কোরবানি প্রদান করবে।
তিনি বলেন, আলী রা. বলেছেন: পরবর্তী বছর যখন তারা হজের এহরাম বাঁধবে, তখন হজ শেষ করা অবধি একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকবে।
তৃতীয় অবস্থা: যদি জামরায়ে আকাবা আদায়ের পর এবং তাওয়াফে এফাদার পূর্বে সহবাস সংঘটিত হয়, তবে সকলের মতানুসারেই তার হজটি শুদ্ধ। মোটকথা, সর্বসম্মত মত হল ওকুফে আরাফার পূর্বে সহবাস হজকে বিনষ্ট করে দেয়। জামরায়ে আকাবার পর এবং তাওয়াফে এফাদার পূর্বে যদি সহবাস সংঘটিত হয়, তবে এ ক্ষেত্রেও সকলের ঐক্যমত হল হজ নষ্ট হবে না। যদি ওকুফে আরাফার পর এবং জামরার পূর্বে সহবাস হয়, জমহুর আইম্মার মতে হজ নষ্ট হয়ে যাবে। এহরাম বিরোধী অন্যান্য বিষয়গুলো হজকে সমূলে নষ্ট করবে না।
দ্বিতীয় অবস্থা: জামরায়ে আকাবা ও মস্তক মুন্ডনের পর এবং তাওয়াফে এফাদার পূর্বে যদি সহবাস সংঘটিত হয়, তবে হজটি শুদ্ধ হিসেবে গণ্য হবে। তবে প্রসিদ্ধ মতানুসারে তার উপর দুটি বিষয় ওয়াজিব হবে।
একটি বকরি দ্বারা ফিদয়া প্রদান করা যার সমুদয় গোশত গরিব মিসকিনদের মাঝে বিলিয়ে দেয়া হবে। ফিদয়া দানকারী কিছুই গ্রহণ করবে না।
হাজি এহরামের এলাকার বাইরে গমন করবে এবং নতুন করে এহরাম বাঁধবে এবং মুহরিম অবস্থায় তাওয়াফে এফাদার জন্য ইজার ও চাদর পড়ে নিবে।
এহরাম অবস্থায় কামোত্তেজনাসহ স্বামী-স্ত্রীর মেলামেশা নিষিদ্ধ। যেমন চুম্বন, স্পর্শ ইত্যাদি। কুরআনে এসেছে,
مَنْ فَرَضَ فِيهِنَّ الْحَجَّ فَلَا رَفَثَ وَلَا فُسُوقَ وَلَا جِدَالَ فِي الْحَجِّ
অর্থ: যে এই মাসগুলোতে হজ করা স্থির করে নিল, তার জন্য হজের সময়ে যৌন-সম্ভোগ, অন্যায় আচরণ ও কলহ-বিবাদ বিধেয় নয়।
আয়াতে উল্লেখিত الرفث শব্দটি একই সাথে নানা অর্থের সন্নিবেশ করে। ১. সহবাস—ইতিপূর্বে আমরা এর সবিস্তার ব্যাখ্যা দিয়েছি। ২. সহবাস পূর্ব মেলামেশা—যেমন কামোত্তেজনার সাথে চুম্বন, স্পর্শ ও আমোদ ইত্যাদি। সুতরাং মুহরিমের পক্ষে কামোত্তেজনার সাথে স্বামী-স্ত্রীর চুম্বন, স্পর্শ আমোদ-প্রমোদ ইত্যাদি কোনভাবেই বৈধ নয়। এমনিভাবে, মুহরিম অবস্থায় স্ত্রীর জন্য তার স্বামীকে সুযোগ করে দেয়াও বৈধ নয়। কামভাব নিয়ে স্ত্রীর প্রতি নজর করাও নিষিদ্ধ, কারণ, এর মাধ্যমে সহবাসের অনুরূপ সম্ভোগ হয়। ৩. সহবাস সম্পর্কিত কথপোকথন—যেমন স্বামী তার স্ত্রীকে বলল, আমরা এহরাম থেকে মুক্ত হয়ে এমন এমন করব।
আয়াতে উল্লেখিত الفسوق শব্দটি একই সাথে আল্লাহর আনুগত্যের যাবতীয় অনুষঙ্গ থেকে নিজেকে প্রত্যাহারকে বুঝায়।
সপ্তম: এহরাম অবস্থায় শিকার অবৈধ। হজ কিংবা উমরা—যে কোন অবস্থাতেই মুহরিমের জন্য স্থলজ প্রাণী শিকার নিষিদ্ধ—এ ব্যাপারে আলেমগণ একমত। তবে ঐকমত্য সংঘটিত হয়েছে এমন সব প্রাণীর ক্ষেত্রে যার গোশত খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা যায়, এবং যা বন্য প্রাণী-ভুক্ত। উক্ত ‘শিকার’-এর সংজ্ঞা হল এমন সব প্রাণী যা স্থলজ, হালাল, এবং প্রাকৃতিকভাবেই বন্য, যেমন হরিণ, হরিণ-শাবক, খরগোশ, কবুতর ইত্যাদি। কারণ, পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক এরশাদ করেছেন—
وَحُرِّمَ عَلَيْكُمْ صَيْدُ الْبَرِّ مَا دُمْتُمْ حُرُمًا
অর্থ: যতক্ষণ তোমরা এহরামে থাকবে, ততক্ষণ তোমাদের জন্য স্থলের শিকার হারাম। অপর স্থানে এসেছে—
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تَقْتُلُوا الصَّيْدَ وَأَنْتُمْ حُرُمٌ
অর্থ: হে মুমিনগণ! এহরামে থাকাবস্থায় তোমরা শিকার-জন্তু হত্যা করো না।
সুতরাং, শিকার-জন্তু এহরাম অবস্থায় হত্যা করা বৈধ নয়। একই রূপে উল্লিখিত ধরনের জন্তু হত্যার ক্ষেত্রে কারণ হওয়াও নিষিদ্ধ, যেমন দেখিয়ে দেয়া, ইশারা করা, বা অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করার মাধ্যমে হত্যায় সহযোগিতা করা।
আবু কাতাদা হতে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে—তিনি কতিপয় সাহাবির সাথে ছিলেন, যারা ছিলেন মুহরিম, পক্ষান্তরে তিনি ছিলেন হালাল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন তাদের সম্মুখে। আবু কাতাদা জুতো সেলাইয়ে ব্যস্ত ছিলেন। তারা তাকে অবহিত করেননি। তারা চাচ্ছিলেন যেন তিনি তা দেখতে পান। তিনি তা দেখতে পেলেন এবং ঘোড়ার লাগাম ধরলেন। অত:পর ঘোড়ায় চড়লেন কিন্তু ভুলে তীর-ধনুক রেখে গেলেন। তিনি তাদের উদ্দেশ্য করে বললেন, আমাকে তীর ধনুক দাও। তারা উত্তর করল: আমরা, আল্লাহর কসম! তোমাকে সাহায্য করতে পারব না। এতে তিনি রাগান্বিত হয়ে নেমে এলেন এবং তীর-ধনুক নিয়ে ঘোড়ায় চড়লেন ও গাধার উপর আক্রমণ করলেন। অত:পর জংলি গাধাটিকে জবেহ করে নিয়ে এলেন। ইতিমধ্যে সেটি মরে গিয়েছিল। সকলে আহার করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ল...।
শিকার করা জন্তু দ্বারা আহার গ্রহণের তিন হুকুম।
প্রথমত: এমন জন্তু যা মুহরিম ব্যক্তি হত্যা করেছে কিংবা হত্যায় শরিক হয়েছে। এমন জন্তু খাওয়া মুহরিম ও অন্য সকলের জন্য হারাম।
দ্বিতীয়ত: মুহরিমের সাহায্য নিয়ে কোনো হালাল ব্যক্তি যে জন্তুকে হত্যা করেছে, যেমন মুহরিম ব্যক্তি শিকার দেখিয়ে দিয়েছে, অথবা শিকারের অস্ত্র এগিয়ে দিয়েছে—এমন জন্তু কেবল মুহরিমের জন্য হারাম—অন্য সকলের জন্য হালাল।
তৃতীয়ত: হালাল ব্যক্তি যে জন্তু মুহরিমের জন্য হত্যা করেছে। এমন জন্তুও মুহরিমের জন্য হারাম। অন্য সকলের জন্য হালাল। কারণ, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন—
صيد البر لكم حلال ما لم تصيدوه أو يصد لكم
অর্থ: স্থলের শিকার তোমাদের জন্য হালাল যতক্ষণ না তোমরা নিজেরা তা শিকার কর, কিংবা তোমাদের উদ্দেশে শিকার করা হয়।
আবু কাতাদা হতে বর্ণিত, তিনি একটি জংলি গাধা শিকার করলেন। আবু কাতাদা মুহরিম ছিলেন না। তার সঙ্গীরা সকলেই মুহরিম ছিলেন। সকলে তা হতে আহার গ্রহণ করেছিল। পরে তাদের আহারের ব্যাপারে মতানৈক্য হল। এ ব্যাপারে তারা রাসূলকে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি বললেন: কেউ কি ইঙ্গিত করেছে বা কোন কিছুর নির্দেশ দিয়েছে? তারা উত্তর করল: না। তিনি বললেন: তবে তোমরা খাও।
মুহরিম ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে শিকার হত্যা করে, তবে এর জন্য তাকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কারণ, আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেছে,
وَمَنْ قَتَلَهُ مِنْكُمْ مُتَعَمِّدًا فَجَزَاءٌ مِثْلُ مَا قَتَلَ مِنَ النَّعَمِ يَحْكُمُ بِهِ ذَوَا عَدْلٍ مِنْكُمْ هَدْيًا بَالِغَ الْكَعْبَةِ أَوْ كَفَّارَةٌ طَعَامُ مَسَاكِينَ أَوْ عَدْلُ ذَلِكَ صِيَامًا
অর্থ: তোমাদের মাঝে কেউ তা ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করলে, তার বিনিময় হচ্ছে অনুরূপ গৃহপালিত জন্তু, যার ফয়সালা করবে তোমাদের মাঝে দুজন ন্যায়বান লোক, কাবায় প্রেরণ করা হাদী (কোরবানি) রূপে। কিংবা তার কাফফারা হচ্ছে দরিদ্রকে খাদ্য দান করা অথবা সমসংখ্যক সিয়াম পালন করা।
সুতরাং যদি কোন ব্যক্তি কবুতর হত্যা করে তবে তার বিনিময় হচ্ছে একটি বকরি জবেহ করা, কবুতরের ফিদয়া স্বরূপ যা দরিদ্রদের মাঝে বিলিয়ে দেবে। কিংবা বকরির মূল্য নির্ধারণ করে সমপরিমাণ খাদ্য মিসকিনদের দিয়ে দেবে। (যতজন মিসকিনকে সম্ভব) প্রতি মিসকিনকে অর্ধ সা’ আহার প্রদান করবে। অথবা প্রতি মিসকিনের খাদ্যের পরিবর্তে একদিন রোজা রাখবে। এ তিন পদ্ধতির যে কোন একটি অবলম্বন ইচ্ছাধিকার থাকবে।
পক্ষান্তরে ক্ষতিকর পোকা-মাকড় কিংবা হিংস্র প্রাণীকে শিকার-জন্তু হিসেবে গণ্য করা হবে না। সুতরাং হারাম এলাকা কিংবা অন্য যে কোন স্থানে মুহরিম বা হালাল, সকলের জন্য তা হত্যা করা বৈধ। প্রমাণ: আবু সাইদ খুদরি হতে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহরিমের জন্য হত্যা-বৈধ প্রাণীর উল্লেখ করে বলেন: সাপ, বিচ্ছু, ক্ষতিকর কীট-পতঙ্গ—আর কাককে ঢিল ছুঁড়ে তাড়িয়ে দেবে, হত্যা করবে না—লোলুপ কুকুর, মাংসাশী পাখি, হিংস্র পশু।
আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: হারাম, কিংবা হালাল উভয় এলাকায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঁচ প্রকার প্রাণী হত্যার বৈধতা প্রদান করেছেন, কাক, মাংসাশী পাখি, বিচ্ছু, ইঁদুর এবং লোলুপ কুকুর। ভিন্ন রেওয়ায়েতে আছে ‘সাদা কাক’।
ইবনে মাসঊদের হাদিসও এক্ষেত্রে প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ্য, তিনি বর্ণনা করেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিনায় এক মুহরিমকে সাপ হত্যার অনুমতি প্রদান করেছেন।
এহরামের কারণে বৃক্ষ কর্তন মুহরিমের জন্য নিষিদ্ধ নয়। কারণ, এতে এহরামে কোন প্রকার প্রভাব সৃষ্টি হয় না। তবে তা যদি হারামের নির্দিষ্ট সীমার ভিতরে হয়, তবে মুহরিম হোক কিংবা হালাল—সকলের জন্য হারাম। এই মৌলনীতির ভিত্তিতে আরাফায় মুহরিম কিংবা হালাল, উভয়ের জন্য বৃক্ষ কর্তন বৈধ; মুযদালেফা ও মিনায় অবৈধ। কারণ, আরাফা হারামের বাইরে, মুযদালেফা ও মিনা হারামের সীমা-ভুক্ত।
এ সাতটি এহরাম বিরোধী বিষয় নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য হারাম।
বিশেষভাবে পুরুষের জন্য নিষিদ্ধ আরো দুটি বিষয় রয়েছে, তা নিম্নরূপ:
১. মাথা আবৃত করা। কারণ, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফায় বাহনে পিষ্ট মুহরিম ব্যক্তির ক্ষেত্রে এরশাদ করেন : তাকে পানি ও বড়ই পাতা দ্বারা গোসল দাও এবং তার দুই কাপড় দ্বারা কাফন পরাও এবং তার মস্তক আবৃত করো না। ভিন্ন রেওয়ায়েতে আছে—
لا تخمروا رأسه و لا وجهه .
তার মস্তক ও মুখমন্ডল আবৃত করো না।
সুতরাং, পুরুষ মুহরিমের জন্য পাগড়ি, টুপি ও রুমাল জাতীয় কাপড় দিয়ে মস্তক আবৃত করা বৈধ নয়, যা তার দেহের সাথে লেগে থাকে। এবং মুসলিমের বর্ণনা মোতাবেকে মুখও আবৃত করা বৈধ নয়। আর যা মস্তকের সাথে লেগে থাকে না; যেমন ছাতা, গাড়ির হুড, তাঁবু ইত্যাদি ব্যবহারে কোন অসুবিধা নেই। প্রমাণ: উম্মে হাসিন হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : আমরা রাসূলের সাথে হজ পালন করলাম- যখন তিনি আকাবার কঙ্কর নিক্ষেপ করলেন। অত:পর তিনি বাহনে চড়ে প্রত্যাবর্তন করলেন, তার সাথে ছিলেন বেলাল ও উসামা। তাদের একজন বাহন চালাচ্ছিলেন, অপরজন রাসূলের মস্তকের উপরে কাপড় উঁচিয়ে রেখেছিলেন, যা তাকে সূর্য থেকে ছায়া দিচ্ছিল।
অন্য রেওয়ায়েতে আছে, তাকে তাপ হতে ঢেকে রাখছিল, যতক্ষণ না তিনি আকাবার কঙ্কর নিক্ষেপ সমাপ্ত করলেন।
মাথায় আসবাব-পত্র বহন করা অবৈধ নয়, যদিও তা মাথার কিছু অংশ ঢেকে ফেলে। কারণ, সাধারণত এর মাধ্যমে কেউ মাথা আবৃত করার উদ্দেশ্য করে না। পানিতে ডুব দেয়াতে কোন অসুবিধা নেই, যদিও তা মাথাকে সম্পূর্ণ আবৃত করে নেয়।
২. স্বাভাবিক অবস্থায় যে পোশাক পরিধান করা হয়, তা পরিধান পুরুষের জন্য বৈধ নয়। হোক তা জোববার মত পুরো শরীর ঢেকে নেয়ার মত পোশাক কিংবা পাজামার মত অর্ধাঙ্গ ঢাকে এমন পোশাক। প্রমাণ: উমর রা. বর্ণিত হাদিস—রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মুহরিমের পরিধেয় পোশাক সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন : সে জামা, পাগড়ি, ঝুল কোট, পাজামা, মোজা এবং এমন কাপড় পরিধান করতে পারবে না, যাতে জাফরান ও ওয়ারাস (এক প্রকার সুগন্ধি) ব্যবহার করা হয়েছে।
তবে, যদি ইজার ক্রয় করার মত টাকা না থাকে, তবে পাজামাই পরিধান করে নিবে। এবং জুতো কেনার মত সংগতি না থাকলে মোজা পরে নিবে, সাথে অন্য কিছু পরিধান করবে না। প্রমাণ: ইবনে আববাস রা. হতে বর্ণিত হাদিস, তিনি বলেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আরাফার ময়দানে খুতবা প্রদান করতে শুনেছি, তিনি বলছেন : যে ইজার পাবে না, সে যেন পাজামা পরে নেয়। যে জুতো পাবে না, সে যেন মোজা পরে নেয়।
পরিধান ব্যতীত জামা শরীরের সাথে কেবল পেঁচিয়ে রাখাতে কোন দোষ নেই।
স্বাভাবিক অবস্থায় ঝুল জামা যেভাবে পরিধান করা হয়, সেভাবে পরিধান না করে চাদর হিসেবে ব্যবহারে কোন দোষ নেই।
জোড়া-তালি যুক্ত চাদর বা লুঙ্গি পরিধানে কোন বাধা নেই।
ইজারের উপর রশি বাধা নিষিদ্ধ নয়।
আংটি, হাত-ঘড়ি, চশমা, শ্রবণযন্ত্র ব্যবহার বৈধ। গলায় পানির মশক এবং দান-পাত্র ঝুলাতে পারবে। যদি চাদর খুলে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, তবে তা বেধে রাখতে পারবে, কারণ, এ সমস্ত বিষয়ে রাসূলের পক্ষ হতে কোন স্পষ্ট কিংবা ইঙ্গিতসূচক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি। কেবল যখন রাসূলকে মুহরিমের পরিধেয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তখন তিনি এরশাদ করেছিলেন: সে জামা, পাগড়ি, ঝুল কোট, পাজামা, এবং মোজা পরিধান করবে না।
পরিধেয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার পর যখন রাসূল পরিধানের ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ বিষয় সম্পর্কে জানালেন, তখন প্রমাণিত হয় যে, উল্লেখিত পরিধেয় ছাড়া অন্য যাবতীয় পোশাক মুহরিম ব্যক্তি পরিধান করতে পারবে।
জুতো না থাকলে পায়ের সুরক্ষার জন্য তিনি মুহরিম ব্যক্তির জন্য মোজা ব্যবহার বৈধতা প্রদান করেছেন। সুতরাং, এর উপর ভিত্তি করে আমরা বলতে পারি, চোখের সুরক্ষার জন্য চশমা ব্যবহারও বৈধ।
শেষোক্ত নিষিদ্ধ বিষয় দুটো কেবল পুরুষের ক্ষেত্রেই বিশিষ্ট। নারীর জন্য তার মস্তক আবৃত করে রাখতে পারবে, এবং এহরাম অবস্থায় যে কোন ধরনের পোশাকই পরতে পারবে। তবে, অত্যধিক সাজ-সজ্জা করবে না, হাত মোজা ব্যবহার করবে না। মুখমন্ডল ঢেকে রাখবে না, তবে পুরুষের সামনে মুখ ঢেকে রাখবে। কারণ, মাহরাম ব্যতীত পর-পুরুষের সামনে মুখমন্ডল উন্মুক্ত করা নারীদের জন্য বৈধ নয়। এহরামে পরিধান করা বৈধ, এমন যে কোন পোশাক নারী-পুরুষ উভয় মুহরিমই পরিবর্তন করে পরিধান করতে পারবে।
মুহরিম ব্যক্তি যদি উল্লেখিত সহবাস, শিকার হত্যা বা এ জাতীয় যে কোন একটি এহরাম বিরোধী কাজ করে, তবে এ ক্ষেত্রে তিন অবস্থা হবে:
প্রথমত: হয়তো সে তা ভুলে, না জেনে, বাধ্য হয়ে কিংবা নিদ্রিত অবস্থায় করবে। এ ক্ষেত্রে তার উপর কোন কিছুই ওয়াজিব হবে না। তার কোন পাপ হবে না, ফিদয়া ওয়াজিব হবে না, কিংবা তার হজও নষ্ট হবে না। কারণ, কুরআনে আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেছেন
رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا .
হে রব! আমরা যদি বিস্মৃত হই, কিংবা ভুল করি, তবে আমাদের পাকড়াও করবেন না। অপর স্থানে এসেছে
وَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ فِيمَا أَخْطَأْتُمْ بِهِ وَلَكِنْ مَا تَعَمَّدَتْ قُلُوبُكُمْ
তোমরা ভুল করলে তোমাদের কোন অপরাধ নেই, কিন্তু তোমাদের অন্তরে ইচ্ছা থাকলে অপরাধ হবে। ভিন্ন এক আয়াতে এসেছে
مَنْ كَفَرَ بِاللَّهِ مِنْ بَعْدِ إِيمَانِهِ إِلَّا مَنْ أُكْرِهَ وَقَلْبُهُ مُطْمَئِنٌّ بِالْإِيمَانِ وَلَكِنْ مَنْ شَرَحَ بِالْكُفْرِ صَدْرًا فَعَلَيْهِمْ غَضَبٌ مِنَ اللَّهِ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ .
যে ঈমান আনার পর কুফুরে নিমজ্জিত হল, এবং কুফুরির জন্য হৃদয় উন্মুক্ত রাখল, তার উপর আল্লাহর গজব আপতিত হবে এবং তার জন্য আছে মহা-শাস্তি। তবে তার জন্য নয়, যাকে কুফুরিতে বাধ্য করা হয়, কিন্তু তার হৃদয় ঈমানে অবিচলিত।
বাধ্য করার পর যদি কুফুরির হুকুমই রহিত হয়ে যায়, তবে কুফুরি ব্যতীত অন্যান্য পাপের ক্ষেত্রে কী হুকুম হবে, তা সহজেই অনুমেয়। এ আয়াতগুলো স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, বাধ্য হয়ে কিংবা ওজরের কারণে যদি এহরামের নিষিদ্ধ বিষয় সংঘটিত হয়ে যায়, তবে হুকুমের আওতাভুক্ত হবে না। বরং, তা ক্ষমা করে দেয়া হবে। শিকার হত্যা সংক্রান্ত নিষিদ্ধ বিষয় সম্পর্কে আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন
مَنْ قَتَلَهُ مِنْكُمْ مُتَعَمِّدًا فَجَزَاءٌ مِثْلُ مَا قَتَلَ مِنَ النَّعَمِ
তোমাদের মাঝে কেউ তা ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করলে, তার বিনিময় হচ্ছে অনুরূপ গৃহপালিত জন্তু।
এ আয়াতে বিনিময় ওয়াজিব হওয়ার জন্য আল্লাহ পাক ইচ্ছাকৃতভাবে করাকে শর্ত করেছেন। শাস্তি ও জামানত আরোপ করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে করা শর্ত। যদি ইচ্ছাকৃতভাবে না করে, তবে তাকে বিনিময়ও দিতে হবে না, এবং সে পাপীও হবে না। তবে যখন ওজর দূরীভূত হবে, এবং অজ্ঞাত ব্যক্তি জ্ঞাত হবে, বিস্মৃত ব্যক্তি স্মরণ করতে সক্ষম হবে, নিদ্রিত ব্যক্তি জাগ্রত হবে, তৎক্ষণাৎ তাকে নিষিদ্ধ বিষয় হতে নিজেকে মুক্ত করে নিতে হবে। ওজর দূর হওয়ার পরও যদি সে তাতে যুক্ত থাকে, তবে সে পাপী হবে, সন্দেহ নেই। এবং যথারীতি তাকে ফিদয়া প্রদান করতে হবে। উদাহরণত: ঘুমন্ত অবস্থায় মুহরিম যদি মাথা ঢেকে নেয়, তাহলে যতক্ষণ নিদ্রিত থাকবে, ততক্ষণ তার উপর কিছুই ওয়াজিব হবে না। জাগ্রত হওয়ার সাথে সাথে তার কর্তব্য হল মস্তক আবৃত করা। জেনে বুঝেও যদি ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর মস্তক আবৃত রেখে দেয়, তবে এ জন্য তাকে ফিদয়া প্রদান করতে হবে।
দ্বিতীয়ত: নিষিদ্ধ বিষয় ইচ্ছাকৃতভাবে, কিন্তু ওজর সাপেক্ষে ঘটানো। এ ক্ষেত্রে তাকে ওয়াজিব প্রদেয় আদায় করতে হবে, এবং সে পাপী হবে না। প্রমাণ: আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন
وَلَا تَحْلِقُوا رُءُوسَكُمْ حَتَّى يَبْلُغَ الْهَدْيُ مَحِلَّهُ فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَرِيضًا أَوْ بِهِ أَذًى مِنْ رَأْسِهِ فَفِدْيَةٌ مِنْ صِيَامٍ أَوْ صَدَقَةٍ أَوْ نُسُكٍ
যে পর্যন্ত না কোরবানির পশু তার স্থানে উপনীত হয়, তোমরা মস্তক মুন্ডন কর না। তবে তোমাদের মাঝে যে অসুস্থ হবে, কিংবা যার মস্তকে যন্ত্রণা থাকবে, (এবং চুল ফেলতে বাধ্য হবে) সে যেন সিয়াম বা সদকা অথবা কোরবানি দ্বারা ফিদয়া দেবে।
তৃতীয়ত: নিষিদ্ধ বিষয় ইচ্ছাকৃতভাবে, বৈধ কোন ওজর ব্যতীত সংঘটিত করা। এ ক্ষেত্রে তাকে প্রদেয় প্রদান করতে হবে, এবং পাপীও হবে।
وَلَا تَحْلِقُوا رُءُوسَكُمْ حَتَّى يَبْلُغَ الْهَدْيُ مَحِلَّهُ
অর্থ: যে পর্যন্ত না হাদির পশু তার স্থানে পোঁছায়, তোমরা মাথা মুন্ডন কর না।
অসুস্থতা কিংবা মাথায় উকুন জনিত যন্ত্রণার ফলে যে ব্যক্তি মাথার চুল ফেলতে বাধ্য হবে, তার প্রদেয় ফিদয়া সম্পর্কেও আল্লাহ তা’আলা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। কুরআনে এসেছে—
فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَرِيضًا أَوْ بِهِ أَذًى مِنْ رَأْسِهِ فَفِدْيَةٌ مِنْ صِيَامٍ أَوْ صَدَقَةٍ أَوْ نُسُكٍ
অর্থ: তোমাদের মাঝে যে অসুস্থ হবে, কিংবা যার মাথায় যন্ত্রণা থাকবে, (এবং চুল ফেলতে বাধ্য হবে) সে যেন সিয়াম বা সদকা অথবা পশু জবাই দ্বারা ফিদয়া প্রদান করে।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত বিষয়টি বিশদ করেছেন এভাবে—
কাব বিন আজরা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমার মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছিল, আমি রাসূলের নিকট উপস্থিত হলাম, তখন আমার মুখে উকুন ঝরে পড়ছিল। দেখে রাসূল বললেন :
ما كنت أرى أن الجهد قد بلغ منك ما أرى، أ تجد شاةً ؟
তুমি এতটা কষ্ট পাচ্ছ এটা আমার ধারণা ছিল না। তোমার কাছে কোন বকরি আছে ? আমি বললাম, না। অত:পর নাজিল হল—
فَفِدْيَةٌ مِنْ صِيَامٍ أَوْ صَدَقَةٍ أَوْ نُسُكٍ .
তবে সিয়াম, বা সদকা অথবা কোরবানি দ্বারা ফিদয়া প্রদান করবে। তিনি বলেন: তা হচ্ছে তিন দিন রোজা রাখা, কিংবা ছয় জন মিসকিনকে আহার করানো। প্রতি মিসকিনের জন্য অর্ধ সা’ খাবার।
এ হাদিস ফিদয়া সংক্রান্ত আয়াতকে স্পষ্ট করে দিচ্ছে পূর্ণভাবে। স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে উল্লেখিত আয়াতের সিয়ামের সংখ্যা হচ্ছে তিন। সদকার পরিমাণ হচ্ছে ছয় জন মিসকিনের জন্য তিন সা’। প্রতি মিসকিনের জন্য অর্ধ সা’ (অর্থাৎ এক কেজি বিশ গ্রাম)। পশু জবাইয়ের ইচ্ছা করলে বকরির চেয়ে বড় যে কোন পশু জবেহ করে দেবে। এ তিনটির যে কোন একটি ফিদয়া হিসেবে প্রদানের সুযোগ রয়েছে। আয়াতটি এ ব্যাপারে উত্তম দলিল। কুরআন ও সহিহ হাদিসের স্পষ্ট প্রামাণ্যতার ফলে এ ব্যাপারে পিছ-পা হওয়ার কোন সুযোগ নেই। অধিকাংশ শরিয়তবিদ এ বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করেছেন। পশু জবাই করে ফিদয়ার ক্ষেত্রে এমন বকরি হওয়া বাঞ্ছনীয়, যা কোরবানির উপযুক্ত। পশুটির অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যাবতীয় ত্রুটি হতে মুক্ত হতে হবে। আলেমগণ একে ‘ফিদয়াতুল আযা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন, কারণ আল্লাহ তা’আলা একে পবিত্র কুরআনে أَوْ بِهِ أَذًى مِنْ رَأْسِهِ বলে বর্ণনা করেছেন।
মস্তক ব্যতীত দেহের অন্য কোন স্থানের লোম মুন্ডন করলে বিজ্ঞ আলেমগণের ইজতিহাদ অনুযায়ী বিষয়টি নানারূপে বিভক্ত হবে। কিছু ক্ষেত্রে ফিদয়া প্রদান করতে হবে, কিছু ক্ষেত্রে দিতে হবে দম। কারণ, মাথা মুন্ডন করার ফলে যেমন পরিচ্ছন্নতা ও স্বাচ্ছনদ্য অনুভব হয়, তেমনি দেহের লোম ফেললেও এক প্রকার স্বস্তি অনুভূত হয়। তাই উভয়টিকে একই হুকুমের আওতাভুক্ত করা হয়েছে।
দ্বিতীয়ত: নখ উপড়ে ফেলা, কর্তন করা কিংবা ছাঁটা—চুল মুন্ডন করার হুকুমের ভিত্তিকে—ইত্যাদি এহরাম অবস্থায় নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য হারাম। ইবনে মুনযির বলেন: আলেমগণ এ ব্যাপারে এক মত যে, নখ কাটা মুহরিমের জন্য হারাম। হাত কিংবা পায়ের নখ—উভয়ের ক্ষেত্রেই একই হুকুম। তবে, যদি নখ ফেটে যায় এবং তাতে যন্ত্রণা হয় তবে যন্ত্রণাদায়ক স্থানটিকে ছেঁটে দেয়ায় কোন ক্ষতি নেই। এ কারণে কোন ফিদয়া ওয়াজিব হবে না।
তৃতীয়ত: এহরাম বাধার পর শরীর, কাপড় কিংবা এ দুটির সাথে সম্পৃক্ত অন্য কিছুতে আতর ব্যবহার করা। ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত হাদিস দ্বারা জানা যায় মুহরিমের ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন
لا يلبس ثوبا مسه زعفران ولا ورس
জাফরান কিংবা ওয়ারাস (এক জাতীয় সুগন্ধি) মিশ্রিত কাপড় পরিধান করবে না। অপর এক হাদিসে তিনি আরাফায় অবস্থান কালে বাহনে পিষ্ট হয়ে মৃত্যুবরণকারী এক সাহাবি সম্পর্কে এরশাদ করেন:
لا تقربوه طيبا
তোমরা তার কাছে আতর নিয়ো না। অপর রেওয়ায়েতে এসেছে
ولا يمس طيبا
আতর স্পর্শ করো না। এর কারণে উল্লেখ করে তিনি বলেন:
فإنه يبعث يوم القيامة ملبيا
কারণ, কেয়ামত দিবসে তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় তার পুনরুত্থান ঘটবে। মুহরিমের জন্য বৈধ নয় সুগন্ধি গ্রহণ, পানীয়ের সাথে জাফরান মিশ্রিত করা যা পানীয়ের স্বাদে ও গন্ধে প্রভাব সৃষ্টি করে, অথবা চায়ের সাথে এতটা গোলাপ জল মিশ্রণ করা, যা তার স্বাদে ও গন্ধে পরিবর্তন ঘটায়। মুহরিম ব্যক্তি সুগন্ধি মিশ্রিত সাবান ব্যবহার করবে না। এহরামের পূর্বে ব্যবহৃত সুগন্ধিতে কোন সমস্যা নেই। আয়েশা রা. হতে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে,
كنت أنظر إلى وبيص المسك في مفارق رسول الله صلى الله عليه وسلم وهو محرم
এহরাম অবস্থাতেই আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মস্তকের সিঁথিতে মেশকের উজ্জ্বলতার দিকে দৃষ্টি দিচ্ছিলাম।
চতুর্থত: জমহুর ওলামার মতানুসারে বিবাহ এহরাম অবস্থায় অবৈধ। কারণ, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন : মুহরিম বিবাহ করবে না, বিবাহ দেবে না এবং প্রস্তাবও পাঠাবে না।
সুতরাং, কোন মুহরিমের পক্ষে বৈধ নয় বিয়ে করা, কিংবা অলি ও উকিল হয়ে কারো বিয়ের ব্যবস্থা করা অথবা এহরাম হতে মুক্ত হওয়া অবধি কাউকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠানো। এমনিভাবে নারী মুহরিমের জন্যও একই হুকুম। সে কোন পুরুষকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতে পারবে না।
পঞ্চমত: এহরাম অবস্থায় মুহরিমের জন্য সহবাস অবৈধ। শরিয়তবিদদের মাঝে এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই যে, এহরাম অবস্থায় অবৈধ বিষয়গুলোর মাঝে কেবল সহবাস হজকে নষ্ট করে দেয়। কুরআনে বর্ণিত আয়াত,
فَمَنْ فَرَضَ فِيهِنَّ الْحَجَّ فَلَا رَفَثَ وَلَا فُسُوقَ وَلَا جِدَالَ فِي الْحَجِّ
(যে এই মাসগুলোতে হজ করা স্থির করে, তার জন্য হজের সময়ে স্ত্রী সম্ভোগ, অন্যায় আচরণ ও কলহ-বিবাদ বিধেয় নয়।)
আয়াতে উল্লেখিত الرفث শব্দটি একই সাথে সহবাস ও সহবাস জাতীয় যাবতীয় বিষয়কেই সন্নিবেশ করে। এহরামের অবৈধ বিষয়গুলোর মাঝে সহবাসই সব চেয়ে বেশি ক্ষতিকর অনিষ্টকারী। এর কয়েকটি অবস্থা রয়েছে:
প্রথম অবস্থা : ওকুফে আরাফার পূর্বে মুহরিম ব্যক্তির স্ত্রী-সম্ভোগে লিপ্ত হওয়া। আলেমদের কারো মাঝেই এ ব্যাপারে বিরোধ নেই যে, এর মাধ্যমে তার হজ নষ্ট হয়ে যাবে। তবে তার কর্তব্য হচ্ছে, আরম্ভ করা হজটি সমাপ্ত করা, এবং পরবর্তীতে তা কাজা করা। তাকে হাদী (পশু কোরবানি) দিতে হবে। পশুটি কেমন হবে এ ব্যাপারে জমহুরের মত হচ্ছে তার কর্তব্য একটি উট জবেহ করা। ।
দ্বিতীয় অবস্থা: ওকুফে আরাফার পরে, জামরায়ে আকাবা ও তাওয়াফে এফাদার পূর্বে যদি সহবাস সংঘটিত হয়, তবে ইমাম মালেক, শাফেয়ি ও আহমদসহ জমহুর ফুকাহাদের মতে তার হজ ফাসেদ হিসেবে গণ্য হবে। এ অবস্থায় তার উপর দুটি হুকুম আরোপিত হবে। এক: তার উপর ফিদয়া ওয়াজিব হবে। সে ফিদয়া আদায় করতে হবে একটি উট বা গাভি দ্বারা, যা কোরবানি করার উপযুক্ত। এবং সব গোশত মিসকিনদের মাঝে বিলিয়ে দিতে হবে, নিজে কিছুই গ্রহণ করবে না। দ্বিতীয়: সহবাসের ফলে হজটি নষ্ট হয়েছে বলে গণ্য হবে। তবে নষ্ট হজটিই পূরণ করা তার কর্তব্য এবং বিলম্ব না করে পরবর্তী বছরেই নষ্ট হজটির কাজা আদায় করতে হবে। ইমাম মালেক তার রচিত মুআত্তায় বলেন: ‘আমি জানতে পেরেছি যে, উমর, আলী এবং আবু হুরায়রা রা.-কে এমন ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল, যে মুহরিম থাকা অবস্থায় স্ত্রীর সাথে সহবাসে লিপ্ত হয়েছে। তারা ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে বললেন যে, তারা আপন গতিতে হজ শেষ করবে। এবং পরবর্তী বছরে হজ আদায় করবে এবং কোরবানি প্রদান করবে।
তিনি বলেন, আলী রা. বলেছেন: পরবর্তী বছর যখন তারা হজের এহরাম বাঁধবে, তখন হজ শেষ করা অবধি একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকবে।
তৃতীয় অবস্থা: যদি জামরায়ে আকাবা আদায়ের পর এবং তাওয়াফে এফাদার পূর্বে সহবাস সংঘটিত হয়, তবে সকলের মতানুসারেই তার হজটি শুদ্ধ। মোটকথা, সর্বসম্মত মত হল ওকুফে আরাফার পূর্বে সহবাস হজকে বিনষ্ট করে দেয়। জামরায়ে আকাবার পর এবং তাওয়াফে এফাদার পূর্বে যদি সহবাস সংঘটিত হয়, তবে এ ক্ষেত্রেও সকলের ঐক্যমত হল হজ নষ্ট হবে না। যদি ওকুফে আরাফার পর এবং জামরার পূর্বে সহবাস হয়, জমহুর আইম্মার মতে হজ নষ্ট হয়ে যাবে। এহরাম বিরোধী অন্যান্য বিষয়গুলো হজকে সমূলে নষ্ট করবে না।
দ্বিতীয় অবস্থা: জামরায়ে আকাবা ও মস্তক মুন্ডনের পর এবং তাওয়াফে এফাদার পূর্বে যদি সহবাস সংঘটিত হয়, তবে হজটি শুদ্ধ হিসেবে গণ্য হবে। তবে প্রসিদ্ধ মতানুসারে তার উপর দুটি বিষয় ওয়াজিব হবে।
একটি বকরি দ্বারা ফিদয়া প্রদান করা যার সমুদয় গোশত গরিব মিসকিনদের মাঝে বিলিয়ে দেয়া হবে। ফিদয়া দানকারী কিছুই গ্রহণ করবে না।
হাজি এহরামের এলাকার বাইরে গমন করবে এবং নতুন করে এহরাম বাঁধবে এবং মুহরিম অবস্থায় তাওয়াফে এফাদার জন্য ইজার ও চাদর পড়ে নিবে।
এহরাম অবস্থায় কামোত্তেজনাসহ স্বামী-স্ত্রীর মেলামেশা নিষিদ্ধ। যেমন চুম্বন, স্পর্শ ইত্যাদি। কুরআনে এসেছে,
مَنْ فَرَضَ فِيهِنَّ الْحَجَّ فَلَا رَفَثَ وَلَا فُسُوقَ وَلَا جِدَالَ فِي الْحَجِّ
অর্থ: যে এই মাসগুলোতে হজ করা স্থির করে নিল, তার জন্য হজের সময়ে যৌন-সম্ভোগ, অন্যায় আচরণ ও কলহ-বিবাদ বিধেয় নয়।
আয়াতে উল্লেখিত الرفث শব্দটি একই সাথে নানা অর্থের সন্নিবেশ করে। ১. সহবাস—ইতিপূর্বে আমরা এর সবিস্তার ব্যাখ্যা দিয়েছি। ২. সহবাস পূর্ব মেলামেশা—যেমন কামোত্তেজনার সাথে চুম্বন, স্পর্শ ও আমোদ ইত্যাদি। সুতরাং মুহরিমের পক্ষে কামোত্তেজনার সাথে স্বামী-স্ত্রীর চুম্বন, স্পর্শ আমোদ-প্রমোদ ইত্যাদি কোনভাবেই বৈধ নয়। এমনিভাবে, মুহরিম অবস্থায় স্ত্রীর জন্য তার স্বামীকে সুযোগ করে দেয়াও বৈধ নয়। কামভাব নিয়ে স্ত্রীর প্রতি নজর করাও নিষিদ্ধ, কারণ, এর মাধ্যমে সহবাসের অনুরূপ সম্ভোগ হয়। ৩. সহবাস সম্পর্কিত কথপোকথন—যেমন স্বামী তার স্ত্রীকে বলল, আমরা এহরাম থেকে মুক্ত হয়ে এমন এমন করব।
আয়াতে উল্লেখিত الفسوق শব্দটি একই সাথে আল্লাহর আনুগত্যের যাবতীয় অনুষঙ্গ থেকে নিজেকে প্রত্যাহারকে বুঝায়।
সপ্তম: এহরাম অবস্থায় শিকার অবৈধ। হজ কিংবা উমরা—যে কোন অবস্থাতেই মুহরিমের জন্য স্থলজ প্রাণী শিকার নিষিদ্ধ—এ ব্যাপারে আলেমগণ একমত। তবে ঐকমত্য সংঘটিত হয়েছে এমন সব প্রাণীর ক্ষেত্রে যার গোশত খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা যায়, এবং যা বন্য প্রাণী-ভুক্ত। উক্ত ‘শিকার’-এর সংজ্ঞা হল এমন সব প্রাণী যা স্থলজ, হালাল, এবং প্রাকৃতিকভাবেই বন্য, যেমন হরিণ, হরিণ-শাবক, খরগোশ, কবুতর ইত্যাদি। কারণ, পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক এরশাদ করেছেন—
وَحُرِّمَ عَلَيْكُمْ صَيْدُ الْبَرِّ مَا دُمْتُمْ حُرُمًا
অর্থ: যতক্ষণ তোমরা এহরামে থাকবে, ততক্ষণ তোমাদের জন্য স্থলের শিকার হারাম। অপর স্থানে এসেছে—
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تَقْتُلُوا الصَّيْدَ وَأَنْتُمْ حُرُمٌ
অর্থ: হে মুমিনগণ! এহরামে থাকাবস্থায় তোমরা শিকার-জন্তু হত্যা করো না।
সুতরাং, শিকার-জন্তু এহরাম অবস্থায় হত্যা করা বৈধ নয়। একই রূপে উল্লিখিত ধরনের জন্তু হত্যার ক্ষেত্রে কারণ হওয়াও নিষিদ্ধ, যেমন দেখিয়ে দেয়া, ইশারা করা, বা অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করার মাধ্যমে হত্যায় সহযোগিতা করা।
আবু কাতাদা হতে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে—তিনি কতিপয় সাহাবির সাথে ছিলেন, যারা ছিলেন মুহরিম, পক্ষান্তরে তিনি ছিলেন হালাল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন তাদের সম্মুখে। আবু কাতাদা জুতো সেলাইয়ে ব্যস্ত ছিলেন। তারা তাকে অবহিত করেননি। তারা চাচ্ছিলেন যেন তিনি তা দেখতে পান। তিনি তা দেখতে পেলেন এবং ঘোড়ার লাগাম ধরলেন। অত:পর ঘোড়ায় চড়লেন কিন্তু ভুলে তীর-ধনুক রেখে গেলেন। তিনি তাদের উদ্দেশ্য করে বললেন, আমাকে তীর ধনুক দাও। তারা উত্তর করল: আমরা, আল্লাহর কসম! তোমাকে সাহায্য করতে পারব না। এতে তিনি রাগান্বিত হয়ে নেমে এলেন এবং তীর-ধনুক নিয়ে ঘোড়ায় চড়লেন ও গাধার উপর আক্রমণ করলেন। অত:পর জংলি গাধাটিকে জবেহ করে নিয়ে এলেন। ইতিমধ্যে সেটি মরে গিয়েছিল। সকলে আহার করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ল...।
শিকার করা জন্তু দ্বারা আহার গ্রহণের তিন হুকুম।
প্রথমত: এমন জন্তু যা মুহরিম ব্যক্তি হত্যা করেছে কিংবা হত্যায় শরিক হয়েছে। এমন জন্তু খাওয়া মুহরিম ও অন্য সকলের জন্য হারাম।
দ্বিতীয়ত: মুহরিমের সাহায্য নিয়ে কোনো হালাল ব্যক্তি যে জন্তুকে হত্যা করেছে, যেমন মুহরিম ব্যক্তি শিকার দেখিয়ে দিয়েছে, অথবা শিকারের অস্ত্র এগিয়ে দিয়েছে—এমন জন্তু কেবল মুহরিমের জন্য হারাম—অন্য সকলের জন্য হালাল।
তৃতীয়ত: হালাল ব্যক্তি যে জন্তু মুহরিমের জন্য হত্যা করেছে। এমন জন্তুও মুহরিমের জন্য হারাম। অন্য সকলের জন্য হালাল। কারণ, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন—
صيد البر لكم حلال ما لم تصيدوه أو يصد لكم
অর্থ: স্থলের শিকার তোমাদের জন্য হালাল যতক্ষণ না তোমরা নিজেরা তা শিকার কর, কিংবা তোমাদের উদ্দেশে শিকার করা হয়।
আবু কাতাদা হতে বর্ণিত, তিনি একটি জংলি গাধা শিকার করলেন। আবু কাতাদা মুহরিম ছিলেন না। তার সঙ্গীরা সকলেই মুহরিম ছিলেন। সকলে তা হতে আহার গ্রহণ করেছিল। পরে তাদের আহারের ব্যাপারে মতানৈক্য হল। এ ব্যাপারে তারা রাসূলকে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি বললেন: কেউ কি ইঙ্গিত করেছে বা কোন কিছুর নির্দেশ দিয়েছে? তারা উত্তর করল: না। তিনি বললেন: তবে তোমরা খাও।
মুহরিম ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে শিকার হত্যা করে, তবে এর জন্য তাকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কারণ, আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেছে,
وَمَنْ قَتَلَهُ مِنْكُمْ مُتَعَمِّدًا فَجَزَاءٌ مِثْلُ مَا قَتَلَ مِنَ النَّعَمِ يَحْكُمُ بِهِ ذَوَا عَدْلٍ مِنْكُمْ هَدْيًا بَالِغَ الْكَعْبَةِ أَوْ كَفَّارَةٌ طَعَامُ مَسَاكِينَ أَوْ عَدْلُ ذَلِكَ صِيَامًا
অর্থ: তোমাদের মাঝে কেউ তা ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করলে, তার বিনিময় হচ্ছে অনুরূপ গৃহপালিত জন্তু, যার ফয়সালা করবে তোমাদের মাঝে দুজন ন্যায়বান লোক, কাবায় প্রেরণ করা হাদী (কোরবানি) রূপে। কিংবা তার কাফফারা হচ্ছে দরিদ্রকে খাদ্য দান করা অথবা সমসংখ্যক সিয়াম পালন করা।
সুতরাং যদি কোন ব্যক্তি কবুতর হত্যা করে তবে তার বিনিময় হচ্ছে একটি বকরি জবেহ করা, কবুতরের ফিদয়া স্বরূপ যা দরিদ্রদের মাঝে বিলিয়ে দেবে। কিংবা বকরির মূল্য নির্ধারণ করে সমপরিমাণ খাদ্য মিসকিনদের দিয়ে দেবে। (যতজন মিসকিনকে সম্ভব) প্রতি মিসকিনকে অর্ধ সা’ আহার প্রদান করবে। অথবা প্রতি মিসকিনের খাদ্যের পরিবর্তে একদিন রোজা রাখবে। এ তিন পদ্ধতির যে কোন একটি অবলম্বন ইচ্ছাধিকার থাকবে।
পক্ষান্তরে ক্ষতিকর পোকা-মাকড় কিংবা হিংস্র প্রাণীকে শিকার-জন্তু হিসেবে গণ্য করা হবে না। সুতরাং হারাম এলাকা কিংবা অন্য যে কোন স্থানে মুহরিম বা হালাল, সকলের জন্য তা হত্যা করা বৈধ। প্রমাণ: আবু সাইদ খুদরি হতে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহরিমের জন্য হত্যা-বৈধ প্রাণীর উল্লেখ করে বলেন: সাপ, বিচ্ছু, ক্ষতিকর কীট-পতঙ্গ—আর কাককে ঢিল ছুঁড়ে তাড়িয়ে দেবে, হত্যা করবে না—লোলুপ কুকুর, মাংসাশী পাখি, হিংস্র পশু।
আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: হারাম, কিংবা হালাল উভয় এলাকায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঁচ প্রকার প্রাণী হত্যার বৈধতা প্রদান করেছেন, কাক, মাংসাশী পাখি, বিচ্ছু, ইঁদুর এবং লোলুপ কুকুর। ভিন্ন রেওয়ায়েতে আছে ‘সাদা কাক’।
ইবনে মাসঊদের হাদিসও এক্ষেত্রে প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ্য, তিনি বর্ণনা করেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিনায় এক মুহরিমকে সাপ হত্যার অনুমতি প্রদান করেছেন।
এহরামের কারণে বৃক্ষ কর্তন মুহরিমের জন্য নিষিদ্ধ নয়। কারণ, এতে এহরামে কোন প্রকার প্রভাব সৃষ্টি হয় না। তবে তা যদি হারামের নির্দিষ্ট সীমার ভিতরে হয়, তবে মুহরিম হোক কিংবা হালাল—সকলের জন্য হারাম। এই মৌলনীতির ভিত্তিতে আরাফায় মুহরিম কিংবা হালাল, উভয়ের জন্য বৃক্ষ কর্তন বৈধ; মুযদালেফা ও মিনায় অবৈধ। কারণ, আরাফা হারামের বাইরে, মুযদালেফা ও মিনা হারামের সীমা-ভুক্ত।
এ সাতটি এহরাম বিরোধী বিষয় নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য হারাম।
বিশেষভাবে পুরুষের জন্য নিষিদ্ধ আরো দুটি বিষয় রয়েছে, তা নিম্নরূপ:
১. মাথা আবৃত করা। কারণ, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফায় বাহনে পিষ্ট মুহরিম ব্যক্তির ক্ষেত্রে এরশাদ করেন : তাকে পানি ও বড়ই পাতা দ্বারা গোসল দাও এবং তার দুই কাপড় দ্বারা কাফন পরাও এবং তার মস্তক আবৃত করো না। ভিন্ন রেওয়ায়েতে আছে—
لا تخمروا رأسه و لا وجهه .
তার মস্তক ও মুখমন্ডল আবৃত করো না।
সুতরাং, পুরুষ মুহরিমের জন্য পাগড়ি, টুপি ও রুমাল জাতীয় কাপড় দিয়ে মস্তক আবৃত করা বৈধ নয়, যা তার দেহের সাথে লেগে থাকে। এবং মুসলিমের বর্ণনা মোতাবেকে মুখও আবৃত করা বৈধ নয়। আর যা মস্তকের সাথে লেগে থাকে না; যেমন ছাতা, গাড়ির হুড, তাঁবু ইত্যাদি ব্যবহারে কোন অসুবিধা নেই। প্রমাণ: উম্মে হাসিন হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : আমরা রাসূলের সাথে হজ পালন করলাম- যখন তিনি আকাবার কঙ্কর নিক্ষেপ করলেন। অত:পর তিনি বাহনে চড়ে প্রত্যাবর্তন করলেন, তার সাথে ছিলেন বেলাল ও উসামা। তাদের একজন বাহন চালাচ্ছিলেন, অপরজন রাসূলের মস্তকের উপরে কাপড় উঁচিয়ে রেখেছিলেন, যা তাকে সূর্য থেকে ছায়া দিচ্ছিল।
অন্য রেওয়ায়েতে আছে, তাকে তাপ হতে ঢেকে রাখছিল, যতক্ষণ না তিনি আকাবার কঙ্কর নিক্ষেপ সমাপ্ত করলেন।
মাথায় আসবাব-পত্র বহন করা অবৈধ নয়, যদিও তা মাথার কিছু অংশ ঢেকে ফেলে। কারণ, সাধারণত এর মাধ্যমে কেউ মাথা আবৃত করার উদ্দেশ্য করে না। পানিতে ডুব দেয়াতে কোন অসুবিধা নেই, যদিও তা মাথাকে সম্পূর্ণ আবৃত করে নেয়।
২. স্বাভাবিক অবস্থায় যে পোশাক পরিধান করা হয়, তা পরিধান পুরুষের জন্য বৈধ নয়। হোক তা জোববার মত পুরো শরীর ঢেকে নেয়ার মত পোশাক কিংবা পাজামার মত অর্ধাঙ্গ ঢাকে এমন পোশাক। প্রমাণ: উমর রা. বর্ণিত হাদিস—রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মুহরিমের পরিধেয় পোশাক সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন : সে জামা, পাগড়ি, ঝুল কোট, পাজামা, মোজা এবং এমন কাপড় পরিধান করতে পারবে না, যাতে জাফরান ও ওয়ারাস (এক প্রকার সুগন্ধি) ব্যবহার করা হয়েছে।
তবে, যদি ইজার ক্রয় করার মত টাকা না থাকে, তবে পাজামাই পরিধান করে নিবে। এবং জুতো কেনার মত সংগতি না থাকলে মোজা পরে নিবে, সাথে অন্য কিছু পরিধান করবে না। প্রমাণ: ইবনে আববাস রা. হতে বর্ণিত হাদিস, তিনি বলেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আরাফার ময়দানে খুতবা প্রদান করতে শুনেছি, তিনি বলছেন : যে ইজার পাবে না, সে যেন পাজামা পরে নেয়। যে জুতো পাবে না, সে যেন মোজা পরে নেয়।
পরিধান ব্যতীত জামা শরীরের সাথে কেবল পেঁচিয়ে রাখাতে কোন দোষ নেই।
স্বাভাবিক অবস্থায় ঝুল জামা যেভাবে পরিধান করা হয়, সেভাবে পরিধান না করে চাদর হিসেবে ব্যবহারে কোন দোষ নেই।
জোড়া-তালি যুক্ত চাদর বা লুঙ্গি পরিধানে কোন বাধা নেই।
ইজারের উপর রশি বাধা নিষিদ্ধ নয়।
আংটি, হাত-ঘড়ি, চশমা, শ্রবণযন্ত্র ব্যবহার বৈধ। গলায় পানির মশক এবং দান-পাত্র ঝুলাতে পারবে। যদি চাদর খুলে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, তবে তা বেধে রাখতে পারবে, কারণ, এ সমস্ত বিষয়ে রাসূলের পক্ষ হতে কোন স্পষ্ট কিংবা ইঙ্গিতসূচক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি। কেবল যখন রাসূলকে মুহরিমের পরিধেয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তখন তিনি এরশাদ করেছিলেন: সে জামা, পাগড়ি, ঝুল কোট, পাজামা, এবং মোজা পরিধান করবে না।
পরিধেয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার পর যখন রাসূল পরিধানের ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ বিষয় সম্পর্কে জানালেন, তখন প্রমাণিত হয় যে, উল্লেখিত পরিধেয় ছাড়া অন্য যাবতীয় পোশাক মুহরিম ব্যক্তি পরিধান করতে পারবে।
জুতো না থাকলে পায়ের সুরক্ষার জন্য তিনি মুহরিম ব্যক্তির জন্য মোজা ব্যবহার বৈধতা প্রদান করেছেন। সুতরাং, এর উপর ভিত্তি করে আমরা বলতে পারি, চোখের সুরক্ষার জন্য চশমা ব্যবহারও বৈধ।
শেষোক্ত নিষিদ্ধ বিষয় দুটো কেবল পুরুষের ক্ষেত্রেই বিশিষ্ট। নারীর জন্য তার মস্তক আবৃত করে রাখতে পারবে, এবং এহরাম অবস্থায় যে কোন ধরনের পোশাকই পরতে পারবে। তবে, অত্যধিক সাজ-সজ্জা করবে না, হাত মোজা ব্যবহার করবে না। মুখমন্ডল ঢেকে রাখবে না, তবে পুরুষের সামনে মুখ ঢেকে রাখবে। কারণ, মাহরাম ব্যতীত পর-পুরুষের সামনে মুখমন্ডল উন্মুক্ত করা নারীদের জন্য বৈধ নয়। এহরামে পরিধান করা বৈধ, এমন যে কোন পোশাক নারী-পুরুষ উভয় মুহরিমই পরিবর্তন করে পরিধান করতে পারবে।
মুহরিম ব্যক্তি যদি উল্লেখিত সহবাস, শিকার হত্যা বা এ জাতীয় যে কোন একটি এহরাম বিরোধী কাজ করে, তবে এ ক্ষেত্রে তিন অবস্থা হবে:
প্রথমত: হয়তো সে তা ভুলে, না জেনে, বাধ্য হয়ে কিংবা নিদ্রিত অবস্থায় করবে। এ ক্ষেত্রে তার উপর কোন কিছুই ওয়াজিব হবে না। তার কোন পাপ হবে না, ফিদয়া ওয়াজিব হবে না, কিংবা তার হজও নষ্ট হবে না। কারণ, কুরআনে আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেছেন
رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا .
হে রব! আমরা যদি বিস্মৃত হই, কিংবা ভুল করি, তবে আমাদের পাকড়াও করবেন না। অপর স্থানে এসেছে
وَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ فِيمَا أَخْطَأْتُمْ بِهِ وَلَكِنْ مَا تَعَمَّدَتْ قُلُوبُكُمْ
তোমরা ভুল করলে তোমাদের কোন অপরাধ নেই, কিন্তু তোমাদের অন্তরে ইচ্ছা থাকলে অপরাধ হবে। ভিন্ন এক আয়াতে এসেছে
مَنْ كَفَرَ بِاللَّهِ مِنْ بَعْدِ إِيمَانِهِ إِلَّا مَنْ أُكْرِهَ وَقَلْبُهُ مُطْمَئِنٌّ بِالْإِيمَانِ وَلَكِنْ مَنْ شَرَحَ بِالْكُفْرِ صَدْرًا فَعَلَيْهِمْ غَضَبٌ مِنَ اللَّهِ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ .
যে ঈমান আনার পর কুফুরে নিমজ্জিত হল, এবং কুফুরির জন্য হৃদয় উন্মুক্ত রাখল, তার উপর আল্লাহর গজব আপতিত হবে এবং তার জন্য আছে মহা-শাস্তি। তবে তার জন্য নয়, যাকে কুফুরিতে বাধ্য করা হয়, কিন্তু তার হৃদয় ঈমানে অবিচলিত।
বাধ্য করার পর যদি কুফুরির হুকুমই রহিত হয়ে যায়, তবে কুফুরি ব্যতীত অন্যান্য পাপের ক্ষেত্রে কী হুকুম হবে, তা সহজেই অনুমেয়। এ আয়াতগুলো স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, বাধ্য হয়ে কিংবা ওজরের কারণে যদি এহরামের নিষিদ্ধ বিষয় সংঘটিত হয়ে যায়, তবে হুকুমের আওতাভুক্ত হবে না। বরং, তা ক্ষমা করে দেয়া হবে। শিকার হত্যা সংক্রান্ত নিষিদ্ধ বিষয় সম্পর্কে আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন
مَنْ قَتَلَهُ مِنْكُمْ مُتَعَمِّدًا فَجَزَاءٌ مِثْلُ مَا قَتَلَ مِنَ النَّعَمِ
তোমাদের মাঝে কেউ তা ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করলে, তার বিনিময় হচ্ছে অনুরূপ গৃহপালিত জন্তু।
এ আয়াতে বিনিময় ওয়াজিব হওয়ার জন্য আল্লাহ পাক ইচ্ছাকৃতভাবে করাকে শর্ত করেছেন। শাস্তি ও জামানত আরোপ করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে করা শর্ত। যদি ইচ্ছাকৃতভাবে না করে, তবে তাকে বিনিময়ও দিতে হবে না, এবং সে পাপীও হবে না। তবে যখন ওজর দূরীভূত হবে, এবং অজ্ঞাত ব্যক্তি জ্ঞাত হবে, বিস্মৃত ব্যক্তি স্মরণ করতে সক্ষম হবে, নিদ্রিত ব্যক্তি জাগ্রত হবে, তৎক্ষণাৎ তাকে নিষিদ্ধ বিষয় হতে নিজেকে মুক্ত করে নিতে হবে। ওজর দূর হওয়ার পরও যদি সে তাতে যুক্ত থাকে, তবে সে পাপী হবে, সন্দেহ নেই। এবং যথারীতি তাকে ফিদয়া প্রদান করতে হবে। উদাহরণত: ঘুমন্ত অবস্থায় মুহরিম যদি মাথা ঢেকে নেয়, তাহলে যতক্ষণ নিদ্রিত থাকবে, ততক্ষণ তার উপর কিছুই ওয়াজিব হবে না। জাগ্রত হওয়ার সাথে সাথে তার কর্তব্য হল মস্তক আবৃত করা। জেনে বুঝেও যদি ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর মস্তক আবৃত রেখে দেয়, তবে এ জন্য তাকে ফিদয়া প্রদান করতে হবে।
দ্বিতীয়ত: নিষিদ্ধ বিষয় ইচ্ছাকৃতভাবে, কিন্তু ওজর সাপেক্ষে ঘটানো। এ ক্ষেত্রে তাকে ওয়াজিব প্রদেয় আদায় করতে হবে, এবং সে পাপী হবে না। প্রমাণ: আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন
وَلَا تَحْلِقُوا رُءُوسَكُمْ حَتَّى يَبْلُغَ الْهَدْيُ مَحِلَّهُ فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَرِيضًا أَوْ بِهِ أَذًى مِنْ رَأْسِهِ فَفِدْيَةٌ مِنْ صِيَامٍ أَوْ صَدَقَةٍ أَوْ نُسُكٍ
যে পর্যন্ত না কোরবানির পশু তার স্থানে উপনীত হয়, তোমরা মস্তক মুন্ডন কর না। তবে তোমাদের মাঝে যে অসুস্থ হবে, কিংবা যার মস্তকে যন্ত্রণা থাকবে, (এবং চুল ফেলতে বাধ্য হবে) সে যেন সিয়াম বা সদকা অথবা কোরবানি দ্বারা ফিদয়া দেবে।
তৃতীয়ত: নিষিদ্ধ বিষয় ইচ্ছাকৃতভাবে, বৈধ কোন ওজর ব্যতীত সংঘটিত করা। এ ক্ষেত্রে তাকে প্রদেয় প্রদান করতে হবে, এবং পাপীও হবে।
ফিদয়া হিসেবে নিষিদ্ধ বিষয় চার ভাগে বিভক্ত: যথা ১. যাতে কোন ফিদয়া নেই, তা হচ্ছে বিবাহের আকদ সংঘটিত হওয়া। ২. যার ফিদয়া একটি উট। তা হচ্ছে প্রথম হালালের পূর্বে হজ চলাকালীন সহবাস করা। ৩. যার ফিদয়া হচ্ছে বিনিময় বা সমতুল্য অন্য কিছু। যেমন শিকার হত্যা। ৪. যার ফিদয়া সিয়াম, সদকা, কিংবা কোরবানি। যেমন মস্তক মুন্ডন। আলেমগণ প্রথম তিন প্রকারে উল্লেখিত নিষিদ্ধ বিষয় ছাড়া অন্য যাবতীয় নিষিদ্ধ বিষয়কে চতুর্থটির সাথে সংযুক্ত করে দেন।
ইচ্ছাকৃত, অনিচ্ছাকৃত, ভুলবশত অথবা জবরদস্তিমূলক পরিস্থিতি, সকল অবস্থায় ক্ষতিপূরণ দিতে হবে বলে যে একটা কথা আছে তা কেবলই কেয়াস ও ধারণানির্ভর। যেমন বলা হয়েছে, ভুলবশত যদি কেউ কোনো ব্যক্তিকে হত্যা করে তবে তাকে দিয়াত আদায় করে ভুলের মাশুল দিতে হবে। যা প্রমাণ করে যে ভুল করে কোনো কাজ করে ফেললেও তাতে কাফফারা দিতে হবে। তবে কথা হল যে মানুষ হত্যা করা হক্কুল ইবাদ, মুয়ামালাতের ব্যাপার। আর মুয়ামালাতের ক্ষেত্রে ভুল হলেও ভুলের মাশুল দিতে হয়। ইবাদতের ক্ষেত্রে ভুলে গেলে ক্ষতিপূরণ না দেয়ার উদাহরণ হল ভুলবশত খেয়ে ফেললে রোজা ভঙ্গ না হওয়া।
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন