HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
মানত সম্পর্কে আমরা কী জানি
লেখকঃ আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
মানত বা মান্নত আমাদের সমাজে বহুল প্রচলিত একটি শব্দ। যেমন, আমরা কখনো কখনো বলি, যদি আমি পরীক্ষায় পাশ করি তাহলে মাদরাসায় একটি ছাগল দান করব। এটি একটি মানত।
অতএব, কোনো বিষয় অর্জিত হওয়ার শর্তে কোনো কিছু করার ওয়াদাকে সাধারণত আমরা মানত বলে থাকি। কেউ বলে মানত, আবার কেউ বলে মান্নত। তবে এটি শর্তযুক্ত মানত।
আবার শর্তহীন মানতও আছে। যেমন, আনন্দের খবর শুনে কেউ বলল, আমি এটা লাভ করেছি? তাই আমি মসজিদে একটি ফ্যান দান করব। এটাও মানত। তবে শর্তহীন।
অতএব, কোনো বিষয় অর্জিত হওয়ার শর্তে কোনো কিছু করার ওয়াদাকে সাধারণত আমরা মানত বলে থাকি। কেউ বলে মানত, আবার কেউ বলে মান্নত। তবে এটি শর্তযুক্ত মানত।
আবার শর্তহীন মানতও আছে। যেমন, আনন্দের খবর শুনে কেউ বলল, আমি এটা লাভ করেছি? তাই আমি মসজিদে একটি ফ্যান দান করব। এটাও মানত। তবে শর্তহীন।
আমরা বাংলাতে বলি মানত। আরবিতে বলা হয় نذر (নযর) বহুবচনে নুযুর।
মানত বা নযরের আভিধানিক অর্থ হল, নিজের দায়িত্বে নেওয়া। যা নিজের দায়িত্ব নয় তা অপরিহার্য করে নেওয়া।
শর‘ঈ পরিভাষায় মানত বলা হয় : নিজের ওপর এমন কিছু ওয়াজিব (আবশ্যিক) করে নেওয়া যা আসলে ওয়াজিব ছিল না। সেটা শর্তযুক্তও হতে পারে আবার শর্তমুক্তও হতে পারে।
মানত বা নযরের আভিধানিক অর্থ হল, নিজের দায়িত্বে নেওয়া। যা নিজের দায়িত্ব নয় তা অপরিহার্য করে নেওয়া।
শর‘ঈ পরিভাষায় মানত বলা হয় : নিজের ওপর এমন কিছু ওয়াজিব (আবশ্যিক) করে নেওয়া যা আসলে ওয়াজিব ছিল না। সেটা শর্তযুক্তও হতে পারে আবার শর্তমুক্তও হতে পারে।
মানত করার বিধান কী? ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাত না মুস্তাহাব?
আসলে মানত করা ঠিক নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানত করতে নিষেধ করেছেন। তিনি এ ব্যাপারে সব সময় উম্মতদের নিরুৎসাহিত করেছেন। বিষয়টি আমরা অনেকেই জানি না। বরং মনে করি মানত করা খুব সাওয়াবের কাজ। আসলে এটি কোনো সাওয়াবের কাজ নয়। বরং মাকরূহ। অধিকাংশ ইমাম ও ফিকহবিদের অভিমত এটাই। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানত করতে নিষেধ করেছেন।
তবে যদি কেউ মানত করে ফেলে তাহলে তাকে তা পালন করতেই হবে। তবে এক্ষেত্রে কিছু শর্তাবলী ও নিয়ম-নীতি আছে। খানিক পর আমরা সে বিষয়ে আলোচনা করব।
আসলে মানত করা ঠিক নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানত করতে নিষেধ করেছেন। তিনি এ ব্যাপারে সব সময় উম্মতদের নিরুৎসাহিত করেছেন। বিষয়টি আমরা অনেকেই জানি না। বরং মনে করি মানত করা খুব সাওয়াবের কাজ। আসলে এটি কোনো সাওয়াবের কাজ নয়। বরং মাকরূহ। অধিকাংশ ইমাম ও ফিকহবিদের অভিমত এটাই। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানত করতে নিষেধ করেছেন।
তবে যদি কেউ মানত করে ফেলে তাহলে তাকে তা পালন করতেই হবে। তবে এক্ষেত্রে কিছু শর্তাবলী ও নিয়ম-নীতি আছে। খানিক পর আমরা সে বিষয়ে আলোচনা করব।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানত করতে নিষেধ করেছেন:
হাদীসে এসেছে: আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন:
«أَخَذَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَوْمًا يَنْهَانَا عَنِ النَّذْرِ وَيَقُولُ " إِنَّهُ لاَ يَرُدُّ شَيْئًا وَإِنَّمَا يُسْتَخْرَجُ بِهِ مِنَ الشَّحِيحِ»
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আমাদের মানত করতে নিষেধ করেছেন। আর বলেছেন: মানত কোনো কিছুকে ফেরাতে পারে না। তবে মানতের মাধ্যমে কৃপণ ব্যক্তির সম্পদ বের করা হয়।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৩২৫।]
হাদীসে আরো এসেছে: আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«النَّذْرُ لاَ يُقَدِّمُ شَيْئًا وَلاَ يُؤَخِّرُهُ وَإِنَّمَا يُسْتَخْرَجُ بِهِ مِنَ الْبَخِيلِ» .
“মানত কোনো কিছুকে আগেও করে না, পিছেও করে না। বরং এর দ্বারা কেবল কৃপণ ব্যক্তি থেকে বের করা হয়।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৩২৬, সহীহ সুনান নাসাঈ।]
হাদীসে আরো এসেছে: আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত,
«أَنَّهُ نَهَى عَنِ النَّذْرِ وَقَالَ " إِنَّهُ لاَ يَأْتِي بِخَيْرٍ وَإِنَّمَا يُسْتَخْرَجُ بِهِ مِنَ الْبَخِيلِ »
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানত করতে নিষেধ করেছেন। আর বলেছেন: মানত কোনো কল্যাণ বয়ে আনে না। এটা শুধু কৃপণ ব্যক্তি থেকে মাল খসায়।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৩২৭, আহমাদ।]
হাদীসে আরো বর্ণিত হয়েছে : আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لاَ تَنْذُرُوا فَإِنَّ النَّذْرَ لاَ يُغْنِي مِنَ الْقَدَرِ شَيْئًا وَإِنَّمَا يُسْتَخْرَجُ بِهِ مِنَ الْبَخِيلِ» .
“তোমরা মানত করবে না। কেননা মানত তাকদীরের কোনো কিছু-কে ফেরাতে পারে না। এটা শুধু কৃপণ থেকে সম্পদ খসায়।” [সহীহ বুখারী ও মুসলিম, হাদীস নং ৪৩২৯; সহীহ সুনান তিরমিযী, সহীহ সুনান নাসাঈ।]
হাদীসে আরো এসেছে: আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إِنَّ النَّذْرَ لاَ يُقَرِّبُ مِنِ ابْنِ آدَمَ شَيْئًا لَمْ يَكُنِ اللَّهُ قَدَّرَهُ لَهُ وَلَكِنِ النَّذْرُ يُوَافِقُ الْقَدَرَ فَيُخْرَجُ بِذَلِكَ مِنَ الْبَخِيلِ مَا لَمْ يَكُنِ الْبَخِيلُ يُرِيدُ أَنْ يُخْرِجَ» .
“যেই বস্তু মহান আল্লাহ আদম সন্তানের জন্য নির্ধারণ করেননি মানত সেটি তার নিকটবর্তী করে না। বরং তাকদীরে যা আছে মানত সেটাই নিয়ে আসে। এর মাধ্যমে কৃপণ ব্যক্তির সম্পদ বের করা হয় যা সে খরচ করতে চায় নি।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৩৩১।]
উদ্ধৃত হাদীসগুলো থেকে আমরা জানতে পারলাম
এক. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানত করতে নিষেধ করেছেন। অতএব, মানত করা ঠিক নয়। আমরা অনেকে বিপদ-আপদে পতিত হলে মানত করে থাকি। আর মনে করি এটা সাওয়াবের কাজ। আল্লাহ খুশী হবেন। কিন্তু আসলে তা সাওয়াবের কাজ নয়। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা করতে নিষেধ করেছেন তাতে আল্লাহ খুশী হবেন না। এবং এতে কোনো সাওয়াবও হয় না। তাই আমাদের উচিৎ হবে কোনো অবস্থায় মানত না করা। অবশ্য মানত করে ফেললে তা পালন করতেই হবে কারণ মানত করলে তা পূর্ণ করা ওয়াজিব হয়ে যায়।
দুই. মানত করার মাধ্যমে কৃপণ ব্যক্তির সম্পদ বের করা হয়। এ কথা বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুঝিয়েছেন, মানত করা একটি অনর্থক কাজ। সাধারণত কৃপণ স্বভাবের লোকেরা মানত করে থাকে। তারা সুস্থ ও নিরাপদ থাকা কালে দান-সদকা করে না। কিন্তু বিপদে পড়লে আল্লাহর পথে খরচ বা দান সদকা করার বড় বড় মানত করে।
তিন. তাকদীরে যা লেখা আছে তা হবেই। মানত করার মাধ্যমে তাকদীরের লেখা পরিবর্তন করা যায় না। তাকদীরের প্রতি যাদের যথাযথ ঈমান নেই সাধারণত তারাই মানত করে থাকে।
চার. মানত করা হোক বা না হোক। ফলাফল একই হবে। তাকদীরে যা লেখা আছে সেটাই আসবে অবধারিতভাবে।
পাঁচ. আলোচিত সবগুলো হাদীসই মানত না করার জন্য মুসলিমদের-কে নিরুৎসাহিত ও নিষেধ করেছে। বলেছে, এটি কোনো ফল বয়ে আনে না বরং শুধু কৃপণের সম্পদ খরচ করায়।
এ সকল বিষয় জানার পর কোনো মুসলিমের পক্ষে কোনো প্রকার মানত করা উচিৎ নয় ।
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, যে কাজটি করতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন, আমরা সেটাকে সুন্নাত মনে করি।
বহু আলেম-ওলামাকে বলতে শুনা যায়: আপনি এখানে মানত করেন, তাহলে উদ্দেশ্য সিদ্ধ হবে, বিপদ দূর হয়ে যাবে। অনেক খানকাহ ও দরবার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা তাদের দরবারে বা খানকায় মানত করার জন্য মুসলিম জনগণকে উৎসাহিত করে থাকে। দরাজ গলায় বলে, আমাদের এই মাদরাসায় বা এই খানকায় মানত করে কেউ বিফল হয় নি।
এমনটি যারা করেন তারা নিজেরাও এ বিষয়ে বিভ্রান্ত। সাথে সাথে অন্যদেরও বিভ্রান্ত করে থাকেন। আল্লাহ আমাদের সকলকে হিফাযত করুন! দীনে ইসলামের সঠিক বুঝ দান করুন!
ছয়. হাদীসগুলো পাঠ করে কেউ বলতে পারেন, এ সকল হাদীসে আর্থিক বিষয়াদি তথা ব্যয় ও দান- সদকা করার মানত করা থেকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। অতএব, কেউ যদি সালাত, সাওম, হজ, উমরা কিংবা কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি ইবাদত বিষয়ক মানত করে তবে দোষের কিছু হবে না।
আমরা বলব, কথাটি ঠিক নয়। কেননা হাদীসের অর্থ ব্যাপক। তখনকার মানুষ সাধারণত খরচ বা দান-সদকা করার মানত করত। তাই এটাকে সামনে আনা হয়েছে।
তাছাড়া আর্থিক মানতের মাঝে বহুবিদ উপকার নিহিত রয়েছে। মানতকারী ছাড়াও অন্য লোকেরা দান-সদাকা গ্রহণ করে উপকৃত হয়। তা সত্ত্বেও এটা যদি নিষিদ্ধ হয় তাহলে যে মানতে এমন বহুমাত্রিক উপকার নেই, তা অনুমোদিত হবার প্রশ্নই আসে না। তাই সালাত, সাওম, কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি নফল ইবাদতের মানত করাও ঠিক নয়।
হাদীসে এসেছে: আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন:
«أَخَذَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَوْمًا يَنْهَانَا عَنِ النَّذْرِ وَيَقُولُ " إِنَّهُ لاَ يَرُدُّ شَيْئًا وَإِنَّمَا يُسْتَخْرَجُ بِهِ مِنَ الشَّحِيحِ»
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আমাদের মানত করতে নিষেধ করেছেন। আর বলেছেন: মানত কোনো কিছুকে ফেরাতে পারে না। তবে মানতের মাধ্যমে কৃপণ ব্যক্তির সম্পদ বের করা হয়।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৩২৫।]
হাদীসে আরো এসেছে: আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«النَّذْرُ لاَ يُقَدِّمُ شَيْئًا وَلاَ يُؤَخِّرُهُ وَإِنَّمَا يُسْتَخْرَجُ بِهِ مِنَ الْبَخِيلِ» .
“মানত কোনো কিছুকে আগেও করে না, পিছেও করে না। বরং এর দ্বারা কেবল কৃপণ ব্যক্তি থেকে বের করা হয়।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৩২৬, সহীহ সুনান নাসাঈ।]
হাদীসে আরো এসেছে: আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত,
«أَنَّهُ نَهَى عَنِ النَّذْرِ وَقَالَ " إِنَّهُ لاَ يَأْتِي بِخَيْرٍ وَإِنَّمَا يُسْتَخْرَجُ بِهِ مِنَ الْبَخِيلِ »
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানত করতে নিষেধ করেছেন। আর বলেছেন: মানত কোনো কল্যাণ বয়ে আনে না। এটা শুধু কৃপণ ব্যক্তি থেকে মাল খসায়।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৩২৭, আহমাদ।]
হাদীসে আরো বর্ণিত হয়েছে : আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لاَ تَنْذُرُوا فَإِنَّ النَّذْرَ لاَ يُغْنِي مِنَ الْقَدَرِ شَيْئًا وَإِنَّمَا يُسْتَخْرَجُ بِهِ مِنَ الْبَخِيلِ» .
“তোমরা মানত করবে না। কেননা মানত তাকদীরের কোনো কিছু-কে ফেরাতে পারে না। এটা শুধু কৃপণ থেকে সম্পদ খসায়।” [সহীহ বুখারী ও মুসলিম, হাদীস নং ৪৩২৯; সহীহ সুনান তিরমিযী, সহীহ সুনান নাসাঈ।]
হাদীসে আরো এসেছে: আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إِنَّ النَّذْرَ لاَ يُقَرِّبُ مِنِ ابْنِ آدَمَ شَيْئًا لَمْ يَكُنِ اللَّهُ قَدَّرَهُ لَهُ وَلَكِنِ النَّذْرُ يُوَافِقُ الْقَدَرَ فَيُخْرَجُ بِذَلِكَ مِنَ الْبَخِيلِ مَا لَمْ يَكُنِ الْبَخِيلُ يُرِيدُ أَنْ يُخْرِجَ» .
“যেই বস্তু মহান আল্লাহ আদম সন্তানের জন্য নির্ধারণ করেননি মানত সেটি তার নিকটবর্তী করে না। বরং তাকদীরে যা আছে মানত সেটাই নিয়ে আসে। এর মাধ্যমে কৃপণ ব্যক্তির সম্পদ বের করা হয় যা সে খরচ করতে চায় নি।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৩৩১।]
উদ্ধৃত হাদীসগুলো থেকে আমরা জানতে পারলাম
এক. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানত করতে নিষেধ করেছেন। অতএব, মানত করা ঠিক নয়। আমরা অনেকে বিপদ-আপদে পতিত হলে মানত করে থাকি। আর মনে করি এটা সাওয়াবের কাজ। আল্লাহ খুশী হবেন। কিন্তু আসলে তা সাওয়াবের কাজ নয়। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা করতে নিষেধ করেছেন তাতে আল্লাহ খুশী হবেন না। এবং এতে কোনো সাওয়াবও হয় না। তাই আমাদের উচিৎ হবে কোনো অবস্থায় মানত না করা। অবশ্য মানত করে ফেললে তা পালন করতেই হবে কারণ মানত করলে তা পূর্ণ করা ওয়াজিব হয়ে যায়।
দুই. মানত করার মাধ্যমে কৃপণ ব্যক্তির সম্পদ বের করা হয়। এ কথা বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুঝিয়েছেন, মানত করা একটি অনর্থক কাজ। সাধারণত কৃপণ স্বভাবের লোকেরা মানত করে থাকে। তারা সুস্থ ও নিরাপদ থাকা কালে দান-সদকা করে না। কিন্তু বিপদে পড়লে আল্লাহর পথে খরচ বা দান সদকা করার বড় বড় মানত করে।
তিন. তাকদীরে যা লেখা আছে তা হবেই। মানত করার মাধ্যমে তাকদীরের লেখা পরিবর্তন করা যায় না। তাকদীরের প্রতি যাদের যথাযথ ঈমান নেই সাধারণত তারাই মানত করে থাকে।
চার. মানত করা হোক বা না হোক। ফলাফল একই হবে। তাকদীরে যা লেখা আছে সেটাই আসবে অবধারিতভাবে।
পাঁচ. আলোচিত সবগুলো হাদীসই মানত না করার জন্য মুসলিমদের-কে নিরুৎসাহিত ও নিষেধ করেছে। বলেছে, এটি কোনো ফল বয়ে আনে না বরং শুধু কৃপণের সম্পদ খরচ করায়।
এ সকল বিষয় জানার পর কোনো মুসলিমের পক্ষে কোনো প্রকার মানত করা উচিৎ নয় ।
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, যে কাজটি করতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন, আমরা সেটাকে সুন্নাত মনে করি।
বহু আলেম-ওলামাকে বলতে শুনা যায়: আপনি এখানে মানত করেন, তাহলে উদ্দেশ্য সিদ্ধ হবে, বিপদ দূর হয়ে যাবে। অনেক খানকাহ ও দরবার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা তাদের দরবারে বা খানকায় মানত করার জন্য মুসলিম জনগণকে উৎসাহিত করে থাকে। দরাজ গলায় বলে, আমাদের এই মাদরাসায় বা এই খানকায় মানত করে কেউ বিফল হয় নি।
এমনটি যারা করেন তারা নিজেরাও এ বিষয়ে বিভ্রান্ত। সাথে সাথে অন্যদেরও বিভ্রান্ত করে থাকেন। আল্লাহ আমাদের সকলকে হিফাযত করুন! দীনে ইসলামের সঠিক বুঝ দান করুন!
ছয়. হাদীসগুলো পাঠ করে কেউ বলতে পারেন, এ সকল হাদীসে আর্থিক বিষয়াদি তথা ব্যয় ও দান- সদকা করার মানত করা থেকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। অতএব, কেউ যদি সালাত, সাওম, হজ, উমরা কিংবা কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি ইবাদত বিষয়ক মানত করে তবে দোষের কিছু হবে না।
আমরা বলব, কথাটি ঠিক নয়। কেননা হাদীসের অর্থ ব্যাপক। তখনকার মানুষ সাধারণত খরচ বা দান-সদকা করার মানত করত। তাই এটাকে সামনে আনা হয়েছে।
তাছাড়া আর্থিক মানতের মাঝে বহুবিদ উপকার নিহিত রয়েছে। মানতকারী ছাড়াও অন্য লোকেরা দান-সদাকা গ্রহণ করে উপকৃত হয়। তা সত্ত্বেও এটা যদি নিষিদ্ধ হয় তাহলে যে মানতে এমন বহুমাত্রিক উপকার নেই, তা অনুমোদিত হবার প্রশ্নই আসে না। তাই সালাত, সাওম, কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি নফল ইবাদতের মানত করাও ঠিক নয়।
মানত করা জায়েয নয়। কিন্তু কেউ যদি কোনো ভালো কাজ করার মানত করে তাহলে তাকে তা পালন করতে হবে। যাকে আমরা বলি মানত পূর্ণ করা। মানত পূর্ণ করা ওয়াজিব। না করলে গুনাহ হবে। মানত পূর্ণ করা একটি ইবাদত।
যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :
﴿وَلۡيُوفُواْ نُذُورَهُمۡ﴾ [ الحج : ٢٩ ]
“তারা যেন তাদের মানতসমূহ পূরণ করে।” [সূরা আল-হজ, আয়াত: ২৯]
আল্লাহ আরো বলেন:
﴿وَمَآ أَنفَقۡتُم مِّن نَّفَقَةٍ أَوۡ نَذَرۡتُم مِّن نَّذۡرٖ فَإِنَّ ٱللَّهَ يَعۡلَمُهُۥۗ﴾ [ البقرة : ٢٧٠ ]
“তোমরা যা কিছু ব্যয় কর অথবা যে কোনো মানত কর তা অবশ্যই আল্লাহ জানেন।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৭০]
আল্লাহ তা‘আলা সৎকর্মশীল ঈমানদারদের প্রশংসায় বলেন,
﴿يُوفُونَ بِٱلنَّذۡرِ﴾ [ الانسان : ٧ ]
“তারা মানত পূরণ করে।” [সূরা আল-ইনসান, আয়াত: ৭]
এ সকল আয়াত থেকে স্পষ্টত প্রতিভাত হয়,
এক. মানত করলে তা পূরণ করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা মানত পূরণ করতে হুকুম করেছেন।
দুই. এ সকল আয়াতের কোথাও আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানত করতে আদেশ করেননি বা উৎসাহ দেননি। অন্য কোনো আয়াতেও দিয়েছেন এমনটি পাওয়া যায় না।
তিন. মানত পূরণ করা সৎকর্মশীল ঈমানদারদের একটি গুণ হিসাবে আল্লাহ তা‘আলা উল্লেখ করেছেন। তাই মানত পূরণ করলে সাওয়াব অর্জিত হবে, প্রতিদান পাওয়া যাবে।
চার. মানুষ মানত করলে কিংবা কোনো খরচ করলে আল্লাহ তা ভালোভাবেই জানেন। তাই মানত পূরণ না করে কোনো উপায় নেই।
পাঁচ. মানত পূরণ করা যখন একটি ইবাদত, তখন তা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়তে করতে হবে।
মানত পূরণ করা সম্পর্কে হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«من نذر أن يطيع الله فليطعه، ومن نذر أن يعصي الله فلا يعصه»
“যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য করার মানত করে সে যেন (তা পূরণ করে) তাঁর আনুগত্য করে। আর যে অবাধ্যতার কোনো বিষয়ে মানত করে সে যেন তাঁর অবাধ্যতা না করে।” [সহীহ বুখারী, আবু দাউদ, ইবন মাজাহ, নাসাঈ।]
আমরা এই হাদীস থেকে জানতে পারলাম, ভালো কাজের মানত করলে শর্ত পূরণ হলে সেই মানত পূরণ করতে হয়। তাছাড়া এতে আমরা মানতের প্রকার সম্পর্কেও ইঙ্গিত পেলাম, যা নিম্নে আলোচিত হলো।
যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :
﴿وَلۡيُوفُواْ نُذُورَهُمۡ﴾ [ الحج : ٢٩ ]
“তারা যেন তাদের মানতসমূহ পূরণ করে।” [সূরা আল-হজ, আয়াত: ২৯]
আল্লাহ আরো বলেন:
﴿وَمَآ أَنفَقۡتُم مِّن نَّفَقَةٍ أَوۡ نَذَرۡتُم مِّن نَّذۡرٖ فَإِنَّ ٱللَّهَ يَعۡلَمُهُۥۗ﴾ [ البقرة : ٢٧٠ ]
“তোমরা যা কিছু ব্যয় কর অথবা যে কোনো মানত কর তা অবশ্যই আল্লাহ জানেন।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৭০]
আল্লাহ তা‘আলা সৎকর্মশীল ঈমানদারদের প্রশংসায় বলেন,
﴿يُوفُونَ بِٱلنَّذۡرِ﴾ [ الانسان : ٧ ]
“তারা মানত পূরণ করে।” [সূরা আল-ইনসান, আয়াত: ৭]
এ সকল আয়াত থেকে স্পষ্টত প্রতিভাত হয়,
এক. মানত করলে তা পূরণ করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা মানত পূরণ করতে হুকুম করেছেন।
দুই. এ সকল আয়াতের কোথাও আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানত করতে আদেশ করেননি বা উৎসাহ দেননি। অন্য কোনো আয়াতেও দিয়েছেন এমনটি পাওয়া যায় না।
তিন. মানত পূরণ করা সৎকর্মশীল ঈমানদারদের একটি গুণ হিসাবে আল্লাহ তা‘আলা উল্লেখ করেছেন। তাই মানত পূরণ করলে সাওয়াব অর্জিত হবে, প্রতিদান পাওয়া যাবে।
চার. মানুষ মানত করলে কিংবা কোনো খরচ করলে আল্লাহ তা ভালোভাবেই জানেন। তাই মানত পূরণ না করে কোনো উপায় নেই।
পাঁচ. মানত পূরণ করা যখন একটি ইবাদত, তখন তা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়তে করতে হবে।
মানত পূরণ করা সম্পর্কে হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«من نذر أن يطيع الله فليطعه، ومن نذر أن يعصي الله فلا يعصه»
“যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য করার মানত করে সে যেন (তা পূরণ করে) তাঁর আনুগত্য করে। আর যে অবাধ্যতার কোনো বিষয়ে মানত করে সে যেন তাঁর অবাধ্যতা না করে।” [সহীহ বুখারী, আবু দাউদ, ইবন মাজাহ, নাসাঈ।]
আমরা এই হাদীস থেকে জানতে পারলাম, ভালো কাজের মানত করলে শর্ত পূরণ হলে সেই মানত পূরণ করতে হয়। তাছাড়া এতে আমরা মানতের প্রকার সম্পর্কেও ইঙ্গিত পেলাম, যা নিম্নে আলোচিত হলো।
উপরোক্ত হাদীস থেকে আমরা যেসব বিষয় জানতে পারলাম,
এক. মানত দুই প্রকার।
(ক) মানতের বিষয় হবে শরী‘আত অনুমোদিত ভালো কাজ। যেমন, কেউ বলল, যদি আমি সুস্থ হই তাহলে তিনটি সাওম পালন করবো। এখানে মানতের বিষয়টি শরী‘আত অনুমোদিত একটি ইবাদত ও আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্যের বিষয়। শর্ত পূরণ হলে এ মানত আদায় করতে হবে।
(খ) শরী‘আত নিষিদ্ধ-মন্দ ও আল্লাহর অবাধ্যতামূলক কাজ করার মানত। যেমন, কেউ বলল, আজ যদি অমুক দল খেলায় জিতে যায় তাহলে আমি তোমাদেরকে মদ পান করাব। এ মানত পূরণ করা মোটেই জায়েয নয়। মানতের শর্ত পূরণ হোক বা না হোক। কারণ এতে আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্যতা বিদ্যমান।
এ ছাড়াও আরেক প্রকার মানত আছে যা অনর্থক কাজ ছাড়া আর কিছু নয়। সেটাও পালন করতে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন, কেউ বলল, আমি যদি রোগমুক্ত হই তাহলে ময়মনসিংহ থেকে পায়ে হেটে ঢাকা যাব। এ মানত একটি অনর্থক। ময়মনসিংহ থেকে ঢাকা পর্যন্ত হেটে যাওয়ার মধ্যে নিজেকে কষ্ট দেওয়া ছাড়া আর কোনো লাভ নেই। কাজেই এ ধরনের মানত পূরণ করা হবে অর্থহীন কাজ তাই তা পূরণ করা হবে না। যেমন, হাদীসে এসেছে: আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,
«أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم رَأَىَ شَيْخًا يُهَادَى بَيْنَ ابْنَيْهِ فَقَالَ مَا بَالُ هَذَا . قَالُوا نَذَرَ أَنْ يَمْشِيَ . قَالَ " إِنَّ اللَّهَ عَنْ تَعْذِيبِ هَذَا نَفْسَهُ لَغَنِيٌّ " . وَأَمَرَهُ أَنْ يَرْكَبَ» .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক বৃদ্ধ ব্যক্তিকে দেখলেন, সে তার দুই ছেলের কাঁধে ভর দিয়ে হাঁটছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জিজ্ঞেস করলেন, এর কী হয়েছে? তারা উত্তরে বলল, তিনি পায়ে হেঁটে চলার মানত করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: এ ব্যক্তি নিজেকে কষ্ট দেওয়ায় আল্লাহর কোনো লাভ নেই এবং তাকে বাহনে চড়ার নির্দেশ দিলেন।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৩৩৬।]
হাদীসে আমরা দেখতে পেলাম, লোকটি এমন একটি কাজের মানত করেছিল, যা আদায়ে তার কোনো লাভ নেই। কিংবা অন্য কারোও কোনো উপকার নেই। এটি একটি অনর্থক কাজ। যা করে নিজেকে কষ্ট দেওয়া ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায় না। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এ মানত পালন থেকে নিষেধ করেছেন। অতএব, এ ধরনের মানত কেউ করলে তা পূরণ করা যাবে না।
আরেকটি হাদীস দেখুন: আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«بيْنما النَّبِيُّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم يَخْطُبُ إِذَا هُوَ بِرجُلٍ قَائِمٍ، فسأَلَ عَنْهُ فَقَالُوا : أَبُو إِسْرائيلَ نَذَر أَنْ يَقُومَ فِي الشَّمْس وَلا يقْعُدَ، ولا يستَظِلَّ ولا يتَكَلَّمَ، ويصومَ، فَقالَ النَّبِيُّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم : «مُرُوهُ فَلْيَتَكَلَّمْ ولْيَستَظِلَّ ولْيُتِمَّ صوْمَهُ»
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার খুৎবা দিচ্ছিলেন। হঠাৎ দেখতে পেলেন এক ব্যক্তি রোদে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে সাহাবিগণ বললেন, আবু ইসরাইল। মানত করেছে যে, রোদে দাঁড়িয়ে থাকবে, বসবে না। ছায়ায় (বিশ্রামে) যাবে না, কারো সাথে কথা বলবে না এবং রোযা রাখবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুনে বললেন: তোমরা তাকে আদেশ দাও যেন কথা বলে, ছায়াতে যায় এবং রোযা পূর্ণ করে।” [সহীহ বুখারী।]
এ হাদীস থেকে আমরা জানতে পারলাম
এক. নিজ সত্তা বা ধর্মের জন্য ক্ষতিকর এমন মানত করলে তা আদায় করা যাবে না। যেমন, আলোচ্য ব্যক্তি রোদে দাঁড়িয়ে থাকা, ছায়ায় না বসা, কথা না বলার মানত করেছিল। পাশাপাশি সাওম রাখারও মানত করেছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে শুধু সাওম রাখতে বললেন আর অন্যগুলো পালন করতে নিষেধ করলেন। এমনিভাবে মানত করার মাধ্যমে কোনো বৈধ বিষয়কে নিজের জন্য অবৈধ করা যায় না। তদ্রূপ অবৈধ কোনো কিছুকে বৈধ করা যায় না। যেমন কেউ মানত করলো আমি ইলেকশনে জিতে গেলে একটি গানের আসর করব। এ ধরনের মানত পালনযোগ্য নয়।
দুই. কৃত মানত যদি সাওয়াবের বিষয় হয় তবে তা আদায় করতে হবে। আর যদি অনর্থক কোনো বিষয় হয় তবে আদায় করবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«من نذر أن يطيع الله فليطعه ، ومن نذر أن يعصي الله فلا يعصه»
“যে আল্লাহর আনুগত্য করার মানত করেছে সে যেন তাঁর আনুগত্য করে। আর যে আল্লাহর নাফরমানি করার মানত করেছে সে যেন তাঁর নাফরমানি না করে।”
তিন. কোনো বিষয়েই মানত করা উচিৎ নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানত করতে নিরুৎসাহিত করেছেন। কিন্তু মানত করলে তা পূরণ করতেই হবে। কারণ, এ বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা নির্দেশ দিয়েছেন।
চার. ইবাদত-বন্দেগী ও মানতের নামে নিজের ওপর কোনো কঠোরতা আরোপ করা উচিৎ নয়। এটি একটি চরমপন্থা। ইসলামের মধ্যপন্থার পরিপন্থী। আবূ ইসরাইল ছায়ায় না বসা, রোদে দাঁড়িয়ে থাকা ও কথা না বলার যে মানত করেছিল সেটা ছিল মধ্যপন্থার বিপরীত। তাই তা পরিত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হলো।
পাঁচ. খুৎবার সময় দাঁড়িয়ে থাকা উচিৎ নয়। তাইতো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দাঁড়িয়ে থাকার কারণ জিজ্ঞেস করলেন।
ছয়. খুৎবার সময় খতীব প্রয়োজনে কথা বলতে পারেন। কাউকে কোনো কিছুর আদেশ বা নিষেধ করতে পারেন।
এক. মানত দুই প্রকার।
(ক) মানতের বিষয় হবে শরী‘আত অনুমোদিত ভালো কাজ। যেমন, কেউ বলল, যদি আমি সুস্থ হই তাহলে তিনটি সাওম পালন করবো। এখানে মানতের বিষয়টি শরী‘আত অনুমোদিত একটি ইবাদত ও আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্যের বিষয়। শর্ত পূরণ হলে এ মানত আদায় করতে হবে।
(খ) শরী‘আত নিষিদ্ধ-মন্দ ও আল্লাহর অবাধ্যতামূলক কাজ করার মানত। যেমন, কেউ বলল, আজ যদি অমুক দল খেলায় জিতে যায় তাহলে আমি তোমাদেরকে মদ পান করাব। এ মানত পূরণ করা মোটেই জায়েয নয়। মানতের শর্ত পূরণ হোক বা না হোক। কারণ এতে আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্যতা বিদ্যমান।
এ ছাড়াও আরেক প্রকার মানত আছে যা অনর্থক কাজ ছাড়া আর কিছু নয়। সেটাও পালন করতে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন, কেউ বলল, আমি যদি রোগমুক্ত হই তাহলে ময়মনসিংহ থেকে পায়ে হেটে ঢাকা যাব। এ মানত একটি অনর্থক। ময়মনসিংহ থেকে ঢাকা পর্যন্ত হেটে যাওয়ার মধ্যে নিজেকে কষ্ট দেওয়া ছাড়া আর কোনো লাভ নেই। কাজেই এ ধরনের মানত পূরণ করা হবে অর্থহীন কাজ তাই তা পূরণ করা হবে না। যেমন, হাদীসে এসেছে: আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,
«أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم رَأَىَ شَيْخًا يُهَادَى بَيْنَ ابْنَيْهِ فَقَالَ مَا بَالُ هَذَا . قَالُوا نَذَرَ أَنْ يَمْشِيَ . قَالَ " إِنَّ اللَّهَ عَنْ تَعْذِيبِ هَذَا نَفْسَهُ لَغَنِيٌّ " . وَأَمَرَهُ أَنْ يَرْكَبَ» .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক বৃদ্ধ ব্যক্তিকে দেখলেন, সে তার দুই ছেলের কাঁধে ভর দিয়ে হাঁটছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জিজ্ঞেস করলেন, এর কী হয়েছে? তারা উত্তরে বলল, তিনি পায়ে হেঁটে চলার মানত করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: এ ব্যক্তি নিজেকে কষ্ট দেওয়ায় আল্লাহর কোনো লাভ নেই এবং তাকে বাহনে চড়ার নির্দেশ দিলেন।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৩৩৬।]
হাদীসে আমরা দেখতে পেলাম, লোকটি এমন একটি কাজের মানত করেছিল, যা আদায়ে তার কোনো লাভ নেই। কিংবা অন্য কারোও কোনো উপকার নেই। এটি একটি অনর্থক কাজ। যা করে নিজেকে কষ্ট দেওয়া ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায় না। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এ মানত পালন থেকে নিষেধ করেছেন। অতএব, এ ধরনের মানত কেউ করলে তা পূরণ করা যাবে না।
আরেকটি হাদীস দেখুন: আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«بيْنما النَّبِيُّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم يَخْطُبُ إِذَا هُوَ بِرجُلٍ قَائِمٍ، فسأَلَ عَنْهُ فَقَالُوا : أَبُو إِسْرائيلَ نَذَر أَنْ يَقُومَ فِي الشَّمْس وَلا يقْعُدَ، ولا يستَظِلَّ ولا يتَكَلَّمَ، ويصومَ، فَقالَ النَّبِيُّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم : «مُرُوهُ فَلْيَتَكَلَّمْ ولْيَستَظِلَّ ولْيُتِمَّ صوْمَهُ»
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার খুৎবা দিচ্ছিলেন। হঠাৎ দেখতে পেলেন এক ব্যক্তি রোদে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে সাহাবিগণ বললেন, আবু ইসরাইল। মানত করেছে যে, রোদে দাঁড়িয়ে থাকবে, বসবে না। ছায়ায় (বিশ্রামে) যাবে না, কারো সাথে কথা বলবে না এবং রোযা রাখবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুনে বললেন: তোমরা তাকে আদেশ দাও যেন কথা বলে, ছায়াতে যায় এবং রোযা পূর্ণ করে।” [সহীহ বুখারী।]
এ হাদীস থেকে আমরা জানতে পারলাম
এক. নিজ সত্তা বা ধর্মের জন্য ক্ষতিকর এমন মানত করলে তা আদায় করা যাবে না। যেমন, আলোচ্য ব্যক্তি রোদে দাঁড়িয়ে থাকা, ছায়ায় না বসা, কথা না বলার মানত করেছিল। পাশাপাশি সাওম রাখারও মানত করেছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে শুধু সাওম রাখতে বললেন আর অন্যগুলো পালন করতে নিষেধ করলেন। এমনিভাবে মানত করার মাধ্যমে কোনো বৈধ বিষয়কে নিজের জন্য অবৈধ করা যায় না। তদ্রূপ অবৈধ কোনো কিছুকে বৈধ করা যায় না। যেমন কেউ মানত করলো আমি ইলেকশনে জিতে গেলে একটি গানের আসর করব। এ ধরনের মানত পালনযোগ্য নয়।
দুই. কৃত মানত যদি সাওয়াবের বিষয় হয় তবে তা আদায় করতে হবে। আর যদি অনর্থক কোনো বিষয় হয় তবে আদায় করবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«من نذر أن يطيع الله فليطعه ، ومن نذر أن يعصي الله فلا يعصه»
“যে আল্লাহর আনুগত্য করার মানত করেছে সে যেন তাঁর আনুগত্য করে। আর যে আল্লাহর নাফরমানি করার মানত করেছে সে যেন তাঁর নাফরমানি না করে।”
তিন. কোনো বিষয়েই মানত করা উচিৎ নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানত করতে নিরুৎসাহিত করেছেন। কিন্তু মানত করলে তা পূরণ করতেই হবে। কারণ, এ বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা নির্দেশ দিয়েছেন।
চার. ইবাদত-বন্দেগী ও মানতের নামে নিজের ওপর কোনো কঠোরতা আরোপ করা উচিৎ নয়। এটি একটি চরমপন্থা। ইসলামের মধ্যপন্থার পরিপন্থী। আবূ ইসরাইল ছায়ায় না বসা, রোদে দাঁড়িয়ে থাকা ও কথা না বলার যে মানত করেছিল সেটা ছিল মধ্যপন্থার বিপরীত। তাই তা পরিত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হলো।
পাঁচ. খুৎবার সময় দাঁড়িয়ে থাকা উচিৎ নয়। তাইতো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দাঁড়িয়ে থাকার কারণ জিজ্ঞেস করলেন।
ছয়. খুৎবার সময় খতীব প্রয়োজনে কথা বলতে পারেন। কাউকে কোনো কিছুর আদেশ বা নিষেধ করতে পারেন।
এ বিষয়ে আলোচনা শুরু করার পূর্বে একটি ঘটনা না বলে পারছি না।
লোকটি ধর্মপরায়ণ। নিয়মিত সালাত আদায় করেন, সাওম পালন করেন, হজ করেছেন। আবার একটি মসজিদ কমিটির সেক্রেটারী।
রিক্সায় আমারা এক সাথে যাচ্ছিলাম। পথে একটি মাজার পড়ল। তিনি রিকসা চালককে রিক্সা থামাতে বললেন। রিক্সা থেকে নেমে তিনি মাজারের কাছে গেলেন। পকেট থেকে চারটি মুরগীর ডিম বের করে মাজারে রেখে চলে আসলেন।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, কি ব্যাপার! আপনার মতো মানুষ মাজারে ডিম দেয়? তিনি বললেন, আরে আমার স্ত্রী মানত করেছিল মাজারে এক হালি ডিম দিবে। আমি জানি এটা ঠিক নয়। তবুও স্ত্রী বলেছে তাই দিলাম।
আমি তাকে বললাম, কাজটি কত মারাত্মক আপনি তা জানেন? এটা তো শির্ক। আপনার স্ত্রী কেন, আপনার মা বললেও তো আপনি তা করতে পারেন না।
তিনি বললেন, আমার নিয়ত ঠিক ছিল। আমি জানি মাজারে শায়িত ওলী আমার কোনো উপকার বা ক্ষতি করতে পারবে না। শুধু আল্লাহর পক্ষ থেকে সাওয়াব পাওয়ার আশায়ই ডিম দান করেছি।
আমি বললাম, আচ্ছা ঠিক আছে। মানলাম আপনার কথা, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়তে কাজটা করেছেন। তো মাজারে দান কেন? আল্লাহ কি বলেছেন, মাজারে দিলে আমি সন্তুষ্ট হই? মাজার ব্যতীত কোনো দরিদ্র-অভাবী মানুষকে দান করলে আমি কম সন্তুষ্ট হই? তা ছাড়া মানতকারী আপনার স্ত্রীর নিয়তটা কি ছিল তা কি জিজ্ঞেস করেছেন?
তিনি উত্তর দিলেন, মাজারে দান বা মানত করার মাধ্যমে মাজারে শায়িত ব্যক্তির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয়। এতে আল্লাহ খুশী হন। আল্লাহর ওলীকে সম্মানও করা হলো, আবার দানও করা হলো। এক কাজে দুই সাওয়াব।
আমি বললাম, এই তো আসল কথায় এসেছেন। এ ধারণাটাই তো শির্ক। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়ত করার সাথে সাথে ওলীকে সম্মানের নিয়ত করে তাকে ইবাদতে অংশীদার করা হলো।
যারা মাজারে দান, সদকা, মানত ইত্যাদি করে থাকে তারা তিনটি নিয়তের বাহিরে চতুর্থ কোনো নিয়ত করে না।
প্রথম প্রকার নিয়ত : তারা মনে করে মাজারে মানত বা দান করলে মাজারে শায়িত ওলী খুশী হন। তিনি খুশী হলে আমার মনের আশা পূরণ হবে। বিপদ দূর হবে।
মানতকারীর ধারণায় মাজারে মানত করলে মাজারের ওলীর দোয়ায় বা তাঁর নেক নজরে আমার বিপদ কেটে যাবে বা উদ্দেশ্য অর্জন হবে।
দ্বিতীয় প্রকার নিয়ত : মাজারে মানত বা দান করছি আল্লাহর জন্যই। তবে মাজারে শায়িত ওলীর সুপারিশে আমার মনের আশা পূরণ হবে। ওলীর অসীলায় বা শাফা‘আতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আমি মাজারে মানত বা দান করলাম।
তৃতীয় প্রকার নিয়ত: আমি জানি যে ওলী ভালো-মন্দ করার ক্ষমতা রাখেন না। তার দো‘আ বা নেক নজর পাওয়ার নিয়তও আমি করি না। তাঁর শাফা‘আত বা অসীলাও আমার উদ্দেশ্য নয়। তবে তিনি আল্লাহর ওলী, তাকে সম্মান করা সাওয়াবের কাজ এ জন্য আমি মাজারে মানত করি। দান-সদকা পাঠাই।
সম্মানিত পাঠক!
উপরের তিনটির যে কোনো একটি নিয়তে আপনি মাজারে মানত বা দান করবেন তো, তা শির্ক হবে।
আপনি যখন জীবিত মানুষ বাদ দিয়ে মৃত মানুষের কবর-মাজারে দান করেন, তখন অবশ্যই একটি নিয়ত পোষণ করেন, যদিও তা প্রকাশ করেন না। বা অন্যের কাছ থেকে লুকাতে চান। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা অন্তর্যামী। তাঁর কাছ থেকে লুকানো কি সম্ভব?
মানত আদায় করা একটি ইবাদত। এটি আল্লাহ ব্যতীত অন্যের জন্য নিবেদন করা শির্ক। তেমনি এটা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়তের সাথে সাথে অন্যের সুপারিশ, শাফা‘আত, অসীলা বা তার মর্যাদার প্রতি সম্মান দেখানোও শির্ক। এটাই তো ইবাদতে আল্লাহর সাথে অন্যকে অংশীদার করা। এমন করলে ইবাদতটি শতভাগ আল্লাহর জন্য নিবেদিত হয় না। আর যে ইবাদত শতভাগ আল্লাহর জন্য নিবেদিত নয় তা শির্ক, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
মনে রাখতে হবে, যে সকল কথা ও কাজ ইবাদত বলে গণ্য তা আল্লাহ ব্যতীত অন্যের জন্য নিবেদন করা শির্ক। এমনিভাবে আল্লাহর জন্য নিবেদন করার সাথে সাথে অন্য কোনো সত্তার সন্তুষ্টি, সম্মান, দৃষ্টি আকর্ষণের নিয়ত করাও শির্ক। শির্ক মানে তো অংশ দেওয়া। এ ধরনের কথা ও কাজে আল্লাহ তা‘আলার সাথে অন্যকে অংশীদার করা হয়।
হাদীসে এসেছে :
«أن رجلا على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم نذر أن ينحر إبلا ببوانة ، فأتى رسول الله صلى الله عليه وآله وسلم فقال : إني نذرت أن أنحر إبلا ببوانة ، فقال له النبي صلى الله عليه وسلم : هل كان فيها وثن من أوثان الجاهلية يعبد ؟ قالوا : لا ، قال : فهل كان فيها عيد من أعيادهم ؟ قالوا : لا ، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم أوف بنذرك فإنه لا وفاء لنذر في معصية الله ولا فيما لا يملك ابن آدم»
“এক ব্যক্তি বুওয়ানা (ইয়ালামলাম পাহাড়ের পাদ দেশে অবস্থিত) নামক স্থানে একটি উট জবেহ করার মানত করেছিল। সে তার মানত আদায় করার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: যে স্থানের উদ্দেশ্যে মানত করেছ সেখানে কি জাহেলী যুগে কোনো প্রতিমা ছিল? লোকেরা বলল, না, ছিল না। তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, সেখানে কি মুশরিকদের কোনো উৎসব বা মেলা হয়? লোকেরা উত্তর দিল, না, তা হয় না। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তাহলে তোমার মানত পূর্ণ করতে পার। আর আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্যতায় কোনো মানত পূর্ণ করা হবে না। আর যে মানত পূরণ করতে মানুষ সমর্থ নয় তাও পূরণ করা হবে না।” [আবূ দাউদ: কিতাব আল আইমান ওয়ান-নুযূর।]
হাদীস থেকে আমরা জানতে পারলাম,
এক. নির্দিষ্ট স্থানে পশু জবেহ করার মানত পূর্ণ করা জায়েয। এমনিভাবে নির্দিষ্ট স্থান বা সময়ের জন্য কৃত মানত পূর্ণ করাও জায়েয। তবে তা যেন কোনো উৎসবের স্থান, পূজার বেদী, কবর-মাজার, দরবার না হয়। কেননা মাজার ও পীরদের দরবার উৎসব পালনের একটি স্থান। আর এ হাদীসে অনৈসলামিক উৎসব পালনের স্থান বা সময়ে মানত পূর্ণ করার অনুমতি দেয় নি। মনে রাখতে হবে, কবর কেন্দ্রিক সকল উৎসব-অনুষ্ঠান জাহেলি যুগের মেলার মতো। এগুলো মুশরিকদের উৎসব।
দুই. মানতের মধ্যে যদি আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশের বিপরীত কিছু থাকে তাহলে সে মানত পূর্ণ করা যাবে না।
তিন. মানত যদি এমন হয় যা পূর্ণ করা মানতকারীর পক্ষে অসম্ভব, তাহলে সে মানত পূর্ণ করার দরকার নেই।
চার. আমাদের দেশে মাজার, দরগা, পীরদের দরবারে যে উরস, ঈসালে সাওয়াব মাহফিল ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হয় সেগুলো মুশরিকদের উৎসব। তাই এ সকল স্থানের জন্য গরু, ছাগল ইত্যাদি জাতীয় কোনো কিছু মানত করা যাবে না। কেননা বর্ণিত হাদীসে দেখা যায়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানতে চেয়েছেন, সেখানে মুশরিকদের কোনো উৎসব বা অনুষ্ঠান হয় কি-না। যদি হত তাহলে তিনি সেখানে মানত পূর্ণ করতে অনুমতি দিতেন না।
মাজার, কবর, দরগা, পূজার বেদীতে আল্লাহ তা‘আলার নামে মানত করলেও তা গ্রহণযোগ্য হবে না। এমনিভাবে ঐ সকল স্থানে পশু জবেহ করলে তা আল্লাহ নামে জবেহ বলে গণ্য হবে না। যদিও জবেহ করার সময় আল্লাহর নাম নেওয়া হয়। আমরা দেখলাম বর্ণিত হাদীসে লোকটি কিন্তু আল্লাহর নামেই জবেহ করত, কেননা তিনি ছিলেন সাহাবী। তা সত্ত্বেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্থানটি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। বুঝা গেল আল্লাহর নামে মানত ও জবেহ যদি আপত্তিকর স্থানে অনুষ্ঠিত হয় তবুও তা শির্ক।
পাঁচ. এ হাদীসে দেখা যায় মানত পূর্ণ করার সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে। এর অর্থ হল, কেউ যদি এ রকম স্থান তথা মাজার, দরগা, দরবারের জন্য মানত করে থাকে তাহলেও তা সে স্থানে পূর্ণ করা হবে না। যখন মানত পূর্ণ করার ব্যাপারেই নিষেধাজ্ঞা আছে তখন মানত করা তো আরো বড় অন্যায়। তাই এ সকল স্থানে মানত করা যেমন যাবে না। তেমনি মানত করে থাকলে তা পূর্ণও করা যাবে না। তবে অন্য স্থানে মানত পূর্ণ করতে হবে।
যেমন কেউ মানত করল, আমার ছেলে পরীক্ষায় পাশ করলে আমি খানজাহান আলীর মাজারে একটি ছাগল দান করব। ছেলে পরীক্ষায় পাশ করল। কিন্তু সে জানতে পারল, মাজারে মানত করা শির্ক। এখন কি করবে? এখন সে অন্য স্থানে, অথবা নিজের এলাকায় গরীবদের মধ্যে একটি ছাগল সদকা করে দেবে।
লোকটি ধর্মপরায়ণ। নিয়মিত সালাত আদায় করেন, সাওম পালন করেন, হজ করেছেন। আবার একটি মসজিদ কমিটির সেক্রেটারী।
রিক্সায় আমারা এক সাথে যাচ্ছিলাম। পথে একটি মাজার পড়ল। তিনি রিকসা চালককে রিক্সা থামাতে বললেন। রিক্সা থেকে নেমে তিনি মাজারের কাছে গেলেন। পকেট থেকে চারটি মুরগীর ডিম বের করে মাজারে রেখে চলে আসলেন।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, কি ব্যাপার! আপনার মতো মানুষ মাজারে ডিম দেয়? তিনি বললেন, আরে আমার স্ত্রী মানত করেছিল মাজারে এক হালি ডিম দিবে। আমি জানি এটা ঠিক নয়। তবুও স্ত্রী বলেছে তাই দিলাম।
আমি তাকে বললাম, কাজটি কত মারাত্মক আপনি তা জানেন? এটা তো শির্ক। আপনার স্ত্রী কেন, আপনার মা বললেও তো আপনি তা করতে পারেন না।
তিনি বললেন, আমার নিয়ত ঠিক ছিল। আমি জানি মাজারে শায়িত ওলী আমার কোনো উপকার বা ক্ষতি করতে পারবে না। শুধু আল্লাহর পক্ষ থেকে সাওয়াব পাওয়ার আশায়ই ডিম দান করেছি।
আমি বললাম, আচ্ছা ঠিক আছে। মানলাম আপনার কথা, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়তে কাজটা করেছেন। তো মাজারে দান কেন? আল্লাহ কি বলেছেন, মাজারে দিলে আমি সন্তুষ্ট হই? মাজার ব্যতীত কোনো দরিদ্র-অভাবী মানুষকে দান করলে আমি কম সন্তুষ্ট হই? তা ছাড়া মানতকারী আপনার স্ত্রীর নিয়তটা কি ছিল তা কি জিজ্ঞেস করেছেন?
তিনি উত্তর দিলেন, মাজারে দান বা মানত করার মাধ্যমে মাজারে শায়িত ব্যক্তির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয়। এতে আল্লাহ খুশী হন। আল্লাহর ওলীকে সম্মানও করা হলো, আবার দানও করা হলো। এক কাজে দুই সাওয়াব।
আমি বললাম, এই তো আসল কথায় এসেছেন। এ ধারণাটাই তো শির্ক। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়ত করার সাথে সাথে ওলীকে সম্মানের নিয়ত করে তাকে ইবাদতে অংশীদার করা হলো।
যারা মাজারে দান, সদকা, মানত ইত্যাদি করে থাকে তারা তিনটি নিয়তের বাহিরে চতুর্থ কোনো নিয়ত করে না।
প্রথম প্রকার নিয়ত : তারা মনে করে মাজারে মানত বা দান করলে মাজারে শায়িত ওলী খুশী হন। তিনি খুশী হলে আমার মনের আশা পূরণ হবে। বিপদ দূর হবে।
মানতকারীর ধারণায় মাজারে মানত করলে মাজারের ওলীর দোয়ায় বা তাঁর নেক নজরে আমার বিপদ কেটে যাবে বা উদ্দেশ্য অর্জন হবে।
দ্বিতীয় প্রকার নিয়ত : মাজারে মানত বা দান করছি আল্লাহর জন্যই। তবে মাজারে শায়িত ওলীর সুপারিশে আমার মনের আশা পূরণ হবে। ওলীর অসীলায় বা শাফা‘আতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আমি মাজারে মানত বা দান করলাম।
তৃতীয় প্রকার নিয়ত: আমি জানি যে ওলী ভালো-মন্দ করার ক্ষমতা রাখেন না। তার দো‘আ বা নেক নজর পাওয়ার নিয়তও আমি করি না। তাঁর শাফা‘আত বা অসীলাও আমার উদ্দেশ্য নয়। তবে তিনি আল্লাহর ওলী, তাকে সম্মান করা সাওয়াবের কাজ এ জন্য আমি মাজারে মানত করি। দান-সদকা পাঠাই।
সম্মানিত পাঠক!
উপরের তিনটির যে কোনো একটি নিয়তে আপনি মাজারে মানত বা দান করবেন তো, তা শির্ক হবে।
আপনি যখন জীবিত মানুষ বাদ দিয়ে মৃত মানুষের কবর-মাজারে দান করেন, তখন অবশ্যই একটি নিয়ত পোষণ করেন, যদিও তা প্রকাশ করেন না। বা অন্যের কাছ থেকে লুকাতে চান। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা অন্তর্যামী। তাঁর কাছ থেকে লুকানো কি সম্ভব?
মানত আদায় করা একটি ইবাদত। এটি আল্লাহ ব্যতীত অন্যের জন্য নিবেদন করা শির্ক। তেমনি এটা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়তের সাথে সাথে অন্যের সুপারিশ, শাফা‘আত, অসীলা বা তার মর্যাদার প্রতি সম্মান দেখানোও শির্ক। এটাই তো ইবাদতে আল্লাহর সাথে অন্যকে অংশীদার করা। এমন করলে ইবাদতটি শতভাগ আল্লাহর জন্য নিবেদিত হয় না। আর যে ইবাদত শতভাগ আল্লাহর জন্য নিবেদিত নয় তা শির্ক, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
মনে রাখতে হবে, যে সকল কথা ও কাজ ইবাদত বলে গণ্য তা আল্লাহ ব্যতীত অন্যের জন্য নিবেদন করা শির্ক। এমনিভাবে আল্লাহর জন্য নিবেদন করার সাথে সাথে অন্য কোনো সত্তার সন্তুষ্টি, সম্মান, দৃষ্টি আকর্ষণের নিয়ত করাও শির্ক। শির্ক মানে তো অংশ দেওয়া। এ ধরনের কথা ও কাজে আল্লাহ তা‘আলার সাথে অন্যকে অংশীদার করা হয়।
হাদীসে এসেছে :
«أن رجلا على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم نذر أن ينحر إبلا ببوانة ، فأتى رسول الله صلى الله عليه وآله وسلم فقال : إني نذرت أن أنحر إبلا ببوانة ، فقال له النبي صلى الله عليه وسلم : هل كان فيها وثن من أوثان الجاهلية يعبد ؟ قالوا : لا ، قال : فهل كان فيها عيد من أعيادهم ؟ قالوا : لا ، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم أوف بنذرك فإنه لا وفاء لنذر في معصية الله ولا فيما لا يملك ابن آدم»
“এক ব্যক্তি বুওয়ানা (ইয়ালামলাম পাহাড়ের পাদ দেশে অবস্থিত) নামক স্থানে একটি উট জবেহ করার মানত করেছিল। সে তার মানত আদায় করার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: যে স্থানের উদ্দেশ্যে মানত করেছ সেখানে কি জাহেলী যুগে কোনো প্রতিমা ছিল? লোকেরা বলল, না, ছিল না। তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, সেখানে কি মুশরিকদের কোনো উৎসব বা মেলা হয়? লোকেরা উত্তর দিল, না, তা হয় না। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তাহলে তোমার মানত পূর্ণ করতে পার। আর আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্যতায় কোনো মানত পূর্ণ করা হবে না। আর যে মানত পূরণ করতে মানুষ সমর্থ নয় তাও পূরণ করা হবে না।” [আবূ দাউদ: কিতাব আল আইমান ওয়ান-নুযূর।]
হাদীস থেকে আমরা জানতে পারলাম,
এক. নির্দিষ্ট স্থানে পশু জবেহ করার মানত পূর্ণ করা জায়েয। এমনিভাবে নির্দিষ্ট স্থান বা সময়ের জন্য কৃত মানত পূর্ণ করাও জায়েয। তবে তা যেন কোনো উৎসবের স্থান, পূজার বেদী, কবর-মাজার, দরবার না হয়। কেননা মাজার ও পীরদের দরবার উৎসব পালনের একটি স্থান। আর এ হাদীসে অনৈসলামিক উৎসব পালনের স্থান বা সময়ে মানত পূর্ণ করার অনুমতি দেয় নি। মনে রাখতে হবে, কবর কেন্দ্রিক সকল উৎসব-অনুষ্ঠান জাহেলি যুগের মেলার মতো। এগুলো মুশরিকদের উৎসব।
দুই. মানতের মধ্যে যদি আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশের বিপরীত কিছু থাকে তাহলে সে মানত পূর্ণ করা যাবে না।
তিন. মানত যদি এমন হয় যা পূর্ণ করা মানতকারীর পক্ষে অসম্ভব, তাহলে সে মানত পূর্ণ করার দরকার নেই।
চার. আমাদের দেশে মাজার, দরগা, পীরদের দরবারে যে উরস, ঈসালে সাওয়াব মাহফিল ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হয় সেগুলো মুশরিকদের উৎসব। তাই এ সকল স্থানের জন্য গরু, ছাগল ইত্যাদি জাতীয় কোনো কিছু মানত করা যাবে না। কেননা বর্ণিত হাদীসে দেখা যায়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানতে চেয়েছেন, সেখানে মুশরিকদের কোনো উৎসব বা অনুষ্ঠান হয় কি-না। যদি হত তাহলে তিনি সেখানে মানত পূর্ণ করতে অনুমতি দিতেন না।
মাজার, কবর, দরগা, পূজার বেদীতে আল্লাহ তা‘আলার নামে মানত করলেও তা গ্রহণযোগ্য হবে না। এমনিভাবে ঐ সকল স্থানে পশু জবেহ করলে তা আল্লাহ নামে জবেহ বলে গণ্য হবে না। যদিও জবেহ করার সময় আল্লাহর নাম নেওয়া হয়। আমরা দেখলাম বর্ণিত হাদীসে লোকটি কিন্তু আল্লাহর নামেই জবেহ করত, কেননা তিনি ছিলেন সাহাবী। তা সত্ত্বেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্থানটি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। বুঝা গেল আল্লাহর নামে মানত ও জবেহ যদি আপত্তিকর স্থানে অনুষ্ঠিত হয় তবুও তা শির্ক।
পাঁচ. এ হাদীসে দেখা যায় মানত পূর্ণ করার সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে। এর অর্থ হল, কেউ যদি এ রকম স্থান তথা মাজার, দরগা, দরবারের জন্য মানত করে থাকে তাহলেও তা সে স্থানে পূর্ণ করা হবে না। যখন মানত পূর্ণ করার ব্যাপারেই নিষেধাজ্ঞা আছে তখন মানত করা তো আরো বড় অন্যায়। তাই এ সকল স্থানে মানত করা যেমন যাবে না। তেমনি মানত করে থাকলে তা পূর্ণও করা যাবে না। তবে অন্য স্থানে মানত পূর্ণ করতে হবে।
যেমন কেউ মানত করল, আমার ছেলে পরীক্ষায় পাশ করলে আমি খানজাহান আলীর মাজারে একটি ছাগল দান করব। ছেলে পরীক্ষায় পাশ করল। কিন্তু সে জানতে পারল, মাজারে মানত করা শির্ক। এখন কি করবে? এখন সে অন্য স্থানে, অথবা নিজের এলাকায় গরীবদের মধ্যে একটি ছাগল সদকা করে দেবে।
মানত পূরণ করা একটি ইবাদত। তাই মানত করতে হবে শুধুমাত্র আল্লাহ তা‘আলার উদ্দেশ্যে। মানত পূরণ করতে হবে তারই সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়তে। সুতরাং কোনো ওলীআল্লাহ, পীর-বুযুর্গ, নবী-রাসূলদের নামে মানত করা যাবে না। মানত করলে তা শির্ক হবে। অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় হলো, এখন মুসলিমরা শুধু মৃত ওলী-আউলিয়া, পীর-দরবেশের নামে মানত করে তৃপ্ত নয়, বরং তাদের মাজারের কচ্ছপ, কুমির, মাছের নামেও মানত করে থাকে। কতবড় নিকৃষ্ট শির্কের দিকে আমাদের জাতি ধাবিত হচ্ছে। শির্ক থেকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুসলিম জাতিকে রক্ষা করুন।
কোনো ব্যক্তি বড় একটি মানত করল। যেমন বলল, এ কাজটি অর্জিত হলো আমি আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য দশ লক্ষ টাকা দিয়ে একটি মসজিদ নির্মাণ করে দেব। কাজটি অর্জিত হল, কিন্তু দেখা গেল, এত টাকা দিয়ে তার মসজিদ নির্মাণের সামর্থ্য নেই। হয়ত মানত করার সময়ও সামর্থ্য ছিল না। তখন সে কী করবে?
তখন সে ব্যক্তি কসম ভাঙ্গার কাফফারার হিসাবে মানতের কাফফারা আদায় করবে।
সহীহ মুসলিমে উকবা ইবন আমের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে,
«كفارة النذر كفارة اليمين» .
“মানতের কাফফরা হল কসম ভঙ্গের কাফফারার মতো।”
কিন্তু যে কোনো মানত পূর্ণ না করলে কি কাফফারা দিতে হয়?
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন:
«من نذر نذراً لا يطيقه فكفارته كفارة اليمين»
“যে ব্যক্তি এমন মানত করল যা পূর্ণ করার সামর্থ্য তার নেই, সে কসমের কাফফারা আদায় করবে।” [হাদীসটি আবু দাউদ বর্ণনা করেছেন। আর হাফেয ইবন হাজার রহ. বুলুগুল মারাম কিতাবে এর সূত্রকে বিশুদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন। শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া রহ. তার ৩৩/৪৯ নং ফাতওয়ায় বলেছেন: যখন কোনো ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্যের মধ্যে থেকে মানত করে তখন তা পূর্ণ করতেই হয়। কিন্তু যদি পূর্ণ করতে অক্ষম হয়ে যায় তাহলে কসম ভঙ্গের কাফফারা আদায় করবে। পূর্ববর্তী অধিকাংশ আলেম-উলামার অভিমত এটাই।]
তখন সে ব্যক্তি কসম ভাঙ্গার কাফফারার হিসাবে মানতের কাফফারা আদায় করবে।
সহীহ মুসলিমে উকবা ইবন আমের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে,
«كفارة النذر كفارة اليمين» .
“মানতের কাফফরা হল কসম ভঙ্গের কাফফারার মতো।”
কিন্তু যে কোনো মানত পূর্ণ না করলে কি কাফফারা দিতে হয়?
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন:
«من نذر نذراً لا يطيقه فكفارته كفارة اليمين»
“যে ব্যক্তি এমন মানত করল যা পূর্ণ করার সামর্থ্য তার নেই, সে কসমের কাফফারা আদায় করবে।” [হাদীসটি আবু দাউদ বর্ণনা করেছেন। আর হাফেয ইবন হাজার রহ. বুলুগুল মারাম কিতাবে এর সূত্রকে বিশুদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন। শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া রহ. তার ৩৩/৪৯ নং ফাতওয়ায় বলেছেন: যখন কোনো ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্যের মধ্যে থেকে মানত করে তখন তা পূর্ণ করতেই হয়। কিন্তু যদি পূর্ণ করতে অক্ষম হয়ে যায় তাহলে কসম ভঙ্গের কাফফারা আদায় করবে। পূর্ববর্তী অধিকাংশ আলেম-উলামার অভিমত এটাই।]
দশজন অভাবী মানুষকে খাদ্য বা পোশাক দান করা কিংবা একটি দাস মুক্ত করে দেওয়া।
নিজেদের নিয়মিত খাবারের মধ্যম ধরনের খাবার দশ জনের প্রত্যেককে দিতে হবে।
প্রতি জনের খাদ্যের পরিমাণ হবে কমপক্ষে অর্ধ সা অর্থাৎ কাছাকাছি দেড় কেজি।
যদি সে এ তিন পদ্ধতির কোনো একটি দিয়ে কাফফারা আদায় করতে না পারে তাহলে তিন দিন রোযা পালন করবে। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿لَا يُؤَاخِذُكُمُ ٱللَّهُ بِٱللَّغۡوِ فِيٓ أَيۡمَٰنِكُمۡ وَلَٰكِن يُؤَاخِذُكُم بِمَا عَقَّدتُّمُ ٱلۡأَيۡمَٰنَۖ فَكَفَّٰرَتُهُۥٓ إِطۡعَامُ عَشَرَةِ مَسَٰكِينَ مِنۡ أَوۡسَطِ مَا تُطۡعِمُونَ أَهۡلِيكُمۡ أَوۡ كِسۡوَتُهُمۡ أَوۡ تَحۡرِيرُ رَقَبَةٖۖ فَمَن لَّمۡ يَجِدۡ فَصِيَامُ ثَلَٰثَةِ أَيَّامٖۚ ذَٰلِكَ كَفَّٰرَةُ أَيۡمَٰنِكُمۡ إِذَا حَلَفۡتُمۡۚ وَٱحۡفَظُوٓاْ أَيۡمَٰنَكُمۡۚ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ ٱللَّهُ لَكُمۡ ءَايَٰتِهِۦ لَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُونَ ٨٩﴾ [ المائدة : ٨٩ ]
“আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করেন না তোমাদের অর্থহীন কসমের ব্যাপারে, কিন্তু যে কসম তোমরা দৃঢ়ভাবে কর সে কসমের জন্য তোমাদেরকে পাকড়াও করেন। সুতরাং এর কাফফারা হলো দশজন মিসকীনকে খাবার দান করা, মধ্যম ধরনের খাবার, যা তোমরা স্বীয় পরিবারকে খাইয়ে থাক অথবা তাদের বস্ত্র দান, কিংবা একজন দাস মুক্ত করা। অতঃপর যে সামর্থ্য রাখে না তবে তিন দিন সিয়াম পালন করা। এটা তোমাদের কসমের কাফ্ফারা, যদি তোমরা কসম কর, আর তোমরা তোমাদের কসম হিফাযত কর। এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ বর্ণনা করেন যাতে তোমরা শোকর আদায় কর।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৮৯]
তবে মনে রাখতে হবে, যে মানত পূরণ জায়েয নয় তা পালন না করার কারণে কাফফারা দিতে হয় না।
কোনো কোনো ইমাম বলেছেন, যে মানত নির্দিষ্ট করা হয় নি তারও কাফফারা দিতে হবে। যেমন কেউ বলল, আমি মানত করলাম বা আমার উপরে মানত আছে। কিন্তু কি মানত করল বা তার দায়িত্বে কি মানত আছে তা নির্দিষ্ট করল না। তাহলে তাকে মানত পূর্ণ না করে কসম ভঙ্গের কাফফারা দিতে হবে। তাদের দলীল হলো:
أخرج الترمذي وابن ماجه حديث عقبة بلفظ «كفارة النذر إذا لم يسم كفارة يمين» ولفظ ابن ماجه «من نذر نذرا لم يسمه " , وفي حديث ابن عباس يرفعه «من نذر نذرا لم يسمه فكفارته كفارة يمين» أخرجه أبو داود
তিরমিযী ও ইবন মাজাহ উদ্ধৃত, সাহাবী উকবা ইবন আমের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাদীসে এসেছে, যখন মানত নির্ধারণ করা হয় না তখন তার কাফফারা হলো, কসম ভঙ্গের কাফফারা। আবু দাউদ এ রকম একটি বর্ণনা উল্লেখ করেছেন ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে।
তবে এ মাসআলাটিতে ফিকাহবিদদের মধ্যে মতভেদ আছে।
অধিকাংশ ফিকাহবিদের মত হলো, যদি কেউ মানত করল কিন্তু নির্ধারণ করল না, তাহলে তার সামনে দু’টো অবকাশ থাকে। সে ইচ্ছা করলে মানত পূর্ণ করতে পারে আবার কাফফারাও দিতে পারে।
আর যদি (মানত পূর্ণ করা ওয়াজিব হয়েছে কিন্তু সামর্থ্য নেই) এমনটি হয়, তাহলে কসম ভঙ্গের কাফফারার মতো কাফফারা দিবে। এ মাসআলাটি সর্বসম্মত।
ফিকাহবিদদের একটি দল বলেছেন, যে কোনো মানত, গুনাহের কাজের হোক বা অসমর্থ কাজের হোক তা আদায় না করে কাফফারা দিতে হবে। তাদের মতে কোনো মানত বৃথা যাবে না। হয়ত পূর্ণ করতে হবে। পূর্ণ করতে না পারলে কাফফারা দিতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা ভালো জানেন।
সমাপ্ত
নিজেদের নিয়মিত খাবারের মধ্যম ধরনের খাবার দশ জনের প্রত্যেককে দিতে হবে।
প্রতি জনের খাদ্যের পরিমাণ হবে কমপক্ষে অর্ধ সা অর্থাৎ কাছাকাছি দেড় কেজি।
যদি সে এ তিন পদ্ধতির কোনো একটি দিয়ে কাফফারা আদায় করতে না পারে তাহলে তিন দিন রোযা পালন করবে। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿لَا يُؤَاخِذُكُمُ ٱللَّهُ بِٱللَّغۡوِ فِيٓ أَيۡمَٰنِكُمۡ وَلَٰكِن يُؤَاخِذُكُم بِمَا عَقَّدتُّمُ ٱلۡأَيۡمَٰنَۖ فَكَفَّٰرَتُهُۥٓ إِطۡعَامُ عَشَرَةِ مَسَٰكِينَ مِنۡ أَوۡسَطِ مَا تُطۡعِمُونَ أَهۡلِيكُمۡ أَوۡ كِسۡوَتُهُمۡ أَوۡ تَحۡرِيرُ رَقَبَةٖۖ فَمَن لَّمۡ يَجِدۡ فَصِيَامُ ثَلَٰثَةِ أَيَّامٖۚ ذَٰلِكَ كَفَّٰرَةُ أَيۡمَٰنِكُمۡ إِذَا حَلَفۡتُمۡۚ وَٱحۡفَظُوٓاْ أَيۡمَٰنَكُمۡۚ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ ٱللَّهُ لَكُمۡ ءَايَٰتِهِۦ لَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُونَ ٨٩﴾ [ المائدة : ٨٩ ]
“আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করেন না তোমাদের অর্থহীন কসমের ব্যাপারে, কিন্তু যে কসম তোমরা দৃঢ়ভাবে কর সে কসমের জন্য তোমাদেরকে পাকড়াও করেন। সুতরাং এর কাফফারা হলো দশজন মিসকীনকে খাবার দান করা, মধ্যম ধরনের খাবার, যা তোমরা স্বীয় পরিবারকে খাইয়ে থাক অথবা তাদের বস্ত্র দান, কিংবা একজন দাস মুক্ত করা। অতঃপর যে সামর্থ্য রাখে না তবে তিন দিন সিয়াম পালন করা। এটা তোমাদের কসমের কাফ্ফারা, যদি তোমরা কসম কর, আর তোমরা তোমাদের কসম হিফাযত কর। এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ বর্ণনা করেন যাতে তোমরা শোকর আদায় কর।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৮৯]
তবে মনে রাখতে হবে, যে মানত পূরণ জায়েয নয় তা পালন না করার কারণে কাফফারা দিতে হয় না।
কোনো কোনো ইমাম বলেছেন, যে মানত নির্দিষ্ট করা হয় নি তারও কাফফারা দিতে হবে। যেমন কেউ বলল, আমি মানত করলাম বা আমার উপরে মানত আছে। কিন্তু কি মানত করল বা তার দায়িত্বে কি মানত আছে তা নির্দিষ্ট করল না। তাহলে তাকে মানত পূর্ণ না করে কসম ভঙ্গের কাফফারা দিতে হবে। তাদের দলীল হলো:
أخرج الترمذي وابن ماجه حديث عقبة بلفظ «كفارة النذر إذا لم يسم كفارة يمين» ولفظ ابن ماجه «من نذر نذرا لم يسمه " , وفي حديث ابن عباس يرفعه «من نذر نذرا لم يسمه فكفارته كفارة يمين» أخرجه أبو داود
তিরমিযী ও ইবন মাজাহ উদ্ধৃত, সাহাবী উকবা ইবন আমের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাদীসে এসেছে, যখন মানত নির্ধারণ করা হয় না তখন তার কাফফারা হলো, কসম ভঙ্গের কাফফারা। আবু দাউদ এ রকম একটি বর্ণনা উল্লেখ করেছেন ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে।
তবে এ মাসআলাটিতে ফিকাহবিদদের মধ্যে মতভেদ আছে।
অধিকাংশ ফিকাহবিদের মত হলো, যদি কেউ মানত করল কিন্তু নির্ধারণ করল না, তাহলে তার সামনে দু’টো অবকাশ থাকে। সে ইচ্ছা করলে মানত পূর্ণ করতে পারে আবার কাফফারাও দিতে পারে।
আর যদি (মানত পূর্ণ করা ওয়াজিব হয়েছে কিন্তু সামর্থ্য নেই) এমনটি হয়, তাহলে কসম ভঙ্গের কাফফারার মতো কাফফারা দিবে। এ মাসআলাটি সর্বসম্মত।
ফিকাহবিদদের একটি দল বলেছেন, যে কোনো মানত, গুনাহের কাজের হোক বা অসমর্থ কাজের হোক তা আদায় না করে কাফফারা দিতে হবে। তাদের মতে কোনো মানত বৃথা যাবে না। হয়ত পূর্ণ করতে হবে। পূর্ণ করতে না পারলে কাফফারা দিতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা ভালো জানেন।
সমাপ্ত
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন