HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
জান্নাত ও জাহান্নাম
লেখকঃ শায়েখ আলী ইবনে আব্দুর রহমান আল-হুজাইফী
পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল, মহাগুণগ্রাহী ও পরম সহনশীল আল্লাহর জন্য সকল প্রশংসা। ﴾ ‘তিনি জানেন যমীনে যা কিছু প্রবেশ করে এবং তা থেকে যা কিছু বের হয়; আর আসমান থেকে যা কিছু অবতীর্ণ হয় এবং তাতে যা কিছু উত্থিত হয়। তোমরা যেখানেই থাকো না কেন তিনি তোমাদের সাথে আছেন। তোমরা যা করো আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা। আসমান ও যমীনের রাজত্ব তাঁরই এবং তাঁর দিকেই সবকিছু প্রত্যাবর্তিত হবে। তিনি রাতকে দিনের মধ্যে প্রবেশ করান আর দিনকে রাতের মধ্যে প্রবেশ করান। তিনি অন্তরের বিষয় সম্পর্কে সম্যক অবগত।’﴿- [আল-হাদীদঃ- ৪-৬]
আমার রবের প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। তার দিকেই ফিরে যাচ্ছি ও তার সমীপেই ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং তার কোন শরীক নেই। তিনি সুউচ্চ ও সুমহান। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার প্রিয় বান্দা এবং রহমত ও আলোকবর্তিকাসহ প্রেরিত রাসূল।
হে আল্লাহ! আপনার প্রিয় বান্দা ও রাসূল মুহাম্মাদ, তার পরিবার এবং সাথীবর্গের ওপর রহমত ও বরকত অবতীর্ণ করুন ।
বন্ধুরা! আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করুন। কেননা আল্লাহর ভয় তার আযাব থেকে মুক্তি দেয় এবং তার মহা পুরষ্কার লাভে সহায়ক হয়।
মুসলিম ভাই ও বন্ধুগণ! আপনারা দুনিয়াতে যে বাড়িতে বাস করেন সে বাড়ি ছাড়াও আপনাদের আরেকটি বাড়ি আছে। সে বাড়িটি হয়তো চিরসুখের হবে নয়তো চির দুখের। অতিসত্বর সেখানে আপনাদের যেতে হবে। দিনের পরে রাত আসছে আর রাতের পরে দিন । এভাবে সময় গড়িয়ে যাচ্ছে। আর সময়ের এ বিবর্তনের সাথে সাথে আমরা প্রত্যেকে একটি নির্দিষ্ট কালের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আর সে নির্দিষ্ট কাল যখন এসে পৌঁছবে তখন সকলকেই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন - ﴾ ‘যমীনের ওপর যা কিছু রয়েছে সবই ধ্বংসশীল। মহামহিম ও মহানুভব তোমার রবের সত্তাই কেবল অবিনশ্বর।’﴿ -সুরা আর রাহমানঃ ২৬-২৭ ।
মৃত্যু এমন পরম সত্য যে কেউ তা অস্বীকার করে না। তবে সৎকর্মশীল মুমিন সর্বদা মৃত্যুর জন্য প্রস্ত্ততি গ্রহণ করে। আর পাপাচারী আশা আকাঙ্ক্ষার মাঝে ডুবে গিয়ে মৃত্যুর জন্য প্রস্ত্ততি গ্রহণ করার ফুরসত পায় না। তাই হঠাৎ অপ্রস্ত্তত অবস্থায় মৃত্যু এসে তাকে পাকড়াও করে ফেলে। ভালো কাজ করলে দুনিয়ার জীবনও সুন্দর ও সুখময় হয়। আর খারাপ কাজ করলে দুনিয়ার এ জীবনও তিক্ত হয়ে যায়। আল্লাহ তায়ালা বলেন - ﴾ ‘যে মুমিন অবস্থায় নেক আমল করবে, পুরুষ হোক বা নারী, আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং তারা যা করত তার তুলনায় অবশ্যই আমি তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দেব।’ ﴿ -[সুরা আন নাহ্লঃ ৯৭]
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন - ﴾ আর সত্য যদি তাদের কামনা বাসনার অনুগামি হত, তবে আসমান যমীন ও এতদুভয়ের মাঝে যা কিছু আছে সব বিপর্যস্ত হয়ে যেত।...﴿ -[সুরা আল মুমিনুনঃ ৭১]
তার দুনিয়ার জীবন কত সুন্দর যে একে নেক আমল দিয়ে সজ্জিত করে! আর তার জীবন কত কদাকার যে কু প্রবৃত্তি ও কামনা বাসনার অনুগামী হয়ে যায়। আল্লাহ তায়ালা বলেন-
﴾‘আসমান এবং যমীনে যা কিছু রয়েছে সব আল্লাহ তায়ালারই। যারা মন্দ করে তিনি তাদের মন্দ কাজের প্রতিফল দেবেন, আর যারা সৎ কাজ করে তিনি তাদেরকে উত্তম প্রতিদানে ভূষিত করবেন।’ ﴿ -[সুরা আন নাজ্মঃ ৩১]
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন - ﴾ হে মানবসমাজ, নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য। অতএব দুনিয়ার জীবন যেন তোমাদেরকে ধোকা না দেয় আর মহাপ্রবঞ্চক [শয়তান]ও যেন তোমাদেরকে প্রতারিত করতে না পারে।﴿ -[সুরা ফাতিরঃ ৫]
যে আল্লাহর হুকুম আহকাম মেনে চলে ও নিষিদ্ধ কাজসমূহ থেকে দূরে থাকে সে দুনিয়াতেই জান্নাতের অনাবিল সুখ ও আত্মিক প্রশান্তি অনূভব করতে পারে। এটা পরকালিন জান্নাতের একটা পার্থিব নমুনা মাত্র। যে এতে প্রবেশ করে সে পরকালিন জান্নাতেও প্রবেশ করবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন - ﴾ ‘তোমাদের সৎকর্মের প্রতিদানস্বরূপ তোমাদেরকে সে জান্নাতের অধিকারি করা হয়েছে।’ ﴿ -[আযযুখরুফ ৭২]
আর যে কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করে কামনা বাসনার ময়দানে বিচরন করে সে দুনিয়াতেই জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করে । দুনিয়াতে যে জাহান্নামে ডুবে থাকে পরকালে তার ঠিকানা জাহান্নাম ছাড়া আর কী হবে?। হাদিসে আছে- ‘জান্নাতের চারপাশে কষ্ট ক্লেশ ও বাধা বিপত্তির বেড়াজাল । আর জাহান্নামের চতুর্পাশে রয়েছে কামনা বাসনার হাতছানি।’ [বোখারি ও মুসলিম।]
হে আল্লাহর বান্দারা ! সুন্নাত তরীকায় ও ইখলাসের সাথে সৎকর্ম করে জান্নাত লাভে সচেষ্ট হোন। আমলের ক্ষেত্রে ইখলাস ও সুন্নাত উভয়টি প্রয়োজন। ইখলাসবিহীন কিংবা সুন্নাতের বিপরীত কোন আমল আল্লাহর নিকট কষ্মিনকালেও গ্রহণযোগ্য নয়। জান্নাত লাভে সচেষ্ট হওয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালা বান্দাদেরকে নানাভাবে উৎসাহিত করেছেন। জান্নাতের মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের বিবরণ দিয়েছেন। জান্নাতবাসীদের অনাবিল ও অফুরন্ত সুখ শান্তির কথা বলেছেন। তারা কী কী আমল করে জান্নাত লাভে ধন্য হয়েছে তা বর্ণনা করেছেন।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও তার উম্মতকে জান্নাতের আমলের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি বলেছেন- ‘জান্নাতের প্রত্যাশি কেউ আছে কি? জান্নাত হলো অনুপম ও তুলনাহীন সুখ শান্তির জায়গা। আল্লাহর কসম! জান্নাতে রয়েছে চোখ ঝলসানো আলোর ফোয়ারা, মন মাতানো ফুলের সৌরভ, সুরম্য প্রাসাদ, সবেগে বয়ে চলা প্রস্রবন, সুপক্ক ফল ফলাদি, লাবন্যময়ী জীবন সঙ্গি, অসংখ্য পরিচ্ছদ এবং সুখ-শান্তি আরাম-আয়েশ ও আনন্দ- ফূর্তির সাথে সুউচ্চ অট্টালিকায় নির্বিঘ্নে জীবনযাপনের নিশ্চয়তা। সাহাবায়ে কেরাম বললেন- হ্যাঁ ইয়া রাসুলাল্লাহ , আমরা জান্নাত লাভ করতে প্রস্ত্তত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- তোমরা ان شاء الله বলো। তখন সবাই ان شاء الله বললো। (উসামা বিন যায়েদ এর সূত্রে- ইবনে মাজা ও ইবনে হিববান )
আবু হুরাইরা রা.এর সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জান্নাতের নির্মাণশৈলি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন- জান্নাতের একটি ইট স্বর্ণের অপরটি রৌপ্যের। দুই ইটের মধ্যবর্তী মসলা হলো মেশকের। জান্নাতের নুড়ি ও কাঁকর হলো, মুক্তা ও নীলকান্তমণি। এর মাটি হলো সুগন্ধময় জাফরানের। জান্নাতে যে প্রবেশ করবে সে চিরদিন সুখে থাকবে, দুঃখ কখনো তাকে স্পর্শ করবে না। জান্নাতীরা জান্নাতে চিরকাল থাকবে। তাদের কখনো মৃত্যু হবে না। তাদের পরিধেয় পোশাক কখনো পুরোনো হবে না। তাদের যৌবন কোনদিন লোপ পাবে না। (আহমাদ ও তিরমিযি )
জাবির রা.এর সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- জান্নাতীরা জান্নাতে প্রচুর পানাহার করবে কিন্তু তাদের মল-মূত্র ত্যাগ করতে হবে না। তবে খাবারের পর মেশকের সুঘ্রানযুক্ত একটি ঢেকুর আসবে। এর ফলে তাদের মলমূত্র ত্যাগের প্রাকৃতিক প্রয়োজন মিটে যাবে। তাদের নাক থেকে শ্লেষ্মা বের হবে না। তাদের শ্বাস প্রশ্বাসের সাথে সাথে সুবহানাল্লাহ ও আলহামদুলিল্লাহ উচ্চারিত হবে। (মুসলিম)
আনাস রা.হতে বর্ণিত- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- এক সকাল অথবা এক বিকাল আল্লাহর জন্য ব্যয় করা দুনিয়া ও দুনিয়াতে যা কিছু আছে সবকিছুর চেয়ে উত্তম। জান্নাতের কোন রমণী যদি দুনিয়ায় উঁকি মারে তাহলে দুনিয়া ও জান্নাতের মধ্যবর্তী সবকিছু সুরভিত হয়ে যাবে। জান্নাতের কোন রমণীর মাথার ওড়না দুনিয়া ও দুনিয়াতে যা কিছু আছে সবকিছুর চেয়ে উত্তম। (বুখারি ও মুসলিম)
জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ রা. হতে বর্ণিত- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- ‘জান্নাতে তোমরা তোমাদের রবকে সরাসরি দেখতে পাবে, যেমন দুনিয়াতে তোমরা চাঁদ দেখতে পাও। তাকে দেখতে গিয়ে তোমাদের ভিড় ঠেলে যেতে হবে না।’ (বুখারি ও মুসলিম)
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- সর্বশেষ কে জাহান্নাম হতে বের হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে তার সম্পর্কে আমি জানি। এক লোক জাহান্নাম থেকে হামাগুড়ি দিয়ে বের হবে। আল্লাহ তায়ালা তাকে বলবেন- ‘যাও জান্নাতে প্রবেশ করো।’ সে জান্নাতের দিকে এগিয়ে যাবে। তার কাছে মনে হবে জান্নাত লোকজনে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে, সেখানে কোন জায়গা নেই। ফলে সে ফিরে এসে বলবে- ‘হে আমার রব, জান্নাত তো লোকে লোকারণ্য। সেখানে তো কোন জায়গা নেই।’ তখন আল্লাহ তায়ালা বলবেন- ‘যাও জান্নাতে প্রবেশ করো, তুমি যে দুনিয়ায় বাস করেছিলে সে দুনিয়ার চেয়ে দশগুণ বড় জান্নাত তোমাকে দেয়া হলো।’ তখন সে বলবে- ‘হে আমার রব, হে সারা জাহানের অধিপতি, আপনি কি আমার সাথে উপহাস করছেন?’ [এ কথা বলে ] রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এত হেঁসেছেন যে তার মাঁড়ির দাত পর্যন্ত দেখা গেছে। তখন তিনি বলছিলেন- এ লোক সবচেয়ে নিম্ন পর্যায়ের জান্নাতি।’’ (বুখারি ও মুসলিম)
এই সত্য ওয়াদা, বাস্তব প্রতিদান ও চিরসুখের বাসস্থানের জন্যই আমাদের পূর্বসূরীরা অর্থ-সম্পদ, জীবন-জীবিকা ও পরিবার পরিজন সব লুটিয়ে দিতেন। ঘরবাড়ি ছেড়ে অজানার পথে পাড়ি জমাতেন। সৎ স্বভাবে ভূষিত হতেন। মন্দ স্বভাব হতে দূরে থাকতেন। সৃষ্টির প্রতি দয়া করতেন। কাউকে ভালবাসলে আল্লাহর জন্যই ভালোবাসতেন আর কারো প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করলে আল্লাহর জন্যই তা করতেন। কাউকে কিছু দিলে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই দিতেন আর কাউকে কোন কিছু দেওয়া থেকে বিরত থাকলে তাও আল্লাহর জন্যই করতেন। তাদের সকল কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত লাভের নিমিত্তেই হতো। তারা কখনো নিরাশ হতেন না, তাদের আমলের ধারা কখনো বন্ধ হতো না। আল্লাহর প্রতি আশা ও ভয়ের ভারসাম্যপূর্ণ মানদন্ড কখনো একদিকে হেলে পড়তো না। সর্বোপরি তারা কখনো আল্লাহর কথা ভুলে যেতেন না।
আমার বন্ধুরা, আপনারা যারা দুনিয়ার মায়াজালে জড়িয়ে আখেরাতের কথা ভুলে গেছেন, আল্লাহ ধৈর্যশীল বলে যারা অন্যায় অপরাধ করতে দুঃসাহস করে আল্লাহর আদেশসমূহ লঙ্ঘন করেন, যারা ধনসম্পদ ও নেয়ামত পেয়ে এর যথাযথ হক আদায় করেন না তাদেরকে বলছি- সত্য ও ন্যায়ের পথে ফিরে আসুন। দুনিয়ার মোহ ও মায়ার সকল ঈন্দ্রজাল ছিন্ন করে সচেতন হোন। অলসতার ঘুম থেকে জেগে উঠুন। মৃত্যু ও মৃত্যুর বিভীষিকা বেশি দূরে নয়, নিকটে অতি নিকটে। কবর ও কবরের অন্ধকার মিথ্যা নয়, কাছে খুবই কাছে। যা অন্যদের নিকট এসেছিল তা তোমার নিকটও অতিসত্বর ধেয়ে আসবে। তোমার মাঝে আর জান্নাত কিংবা জাহান্নামের মাঝে মৃত্যু ছাড়া ভিন্ন কোন প্রাচীর নেই। অতএব পরম করুণাময় রবের দিকে দৌড়ে যাও। তার শরনাপন্ন হও। আর লাঞ্ছনা গঞ্জনা ও যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির কেন্দ্র জাহান্নাম থেকে শতক্রোশ দূরে থাকতে সচেষ্ট হও। কেননা আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে এ ব্যাপারে বিভিন্নভাবে সতর্ক করেছেন এবং এমনভাবে জাহান্নামের মর্মন্তুদ শাস্তির বিবরণ দিয়েছেন যে, তা যে কারো চোখের সামনে মূর্ত হয়ে ফুটে ওঠে। সাথে সাথে জাহান্নামীদের কর্মকান্ড ও জাহান্নামে যাওয়ার কার্যকারণ উল্লেখ করেছেন যেন আমরা জাহান্নাম থেকে বেঁচে থাকতে পারি।
আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও জাহান্নামের কঠিন শাস্তির ব্যাপারে সতর্কবাণী করেছেন। তিনি বলেছেন- ‘জাহান্নামে সবচেয়ে হালকা আযাব হবে ঐ ব্যক্তির ওপর যাকে আগুনের দুটি চপ্পল পরানো হবে, এর ফলে তার মাথার মগজ টগবগ করতে থাকবে, যেমন উনানে পাতিল টগবগ করে। সে মনে করবে তারচেয়ে কঠিন আযাব আর কারো হচ্ছে না। অথচ জাহান্নামীদের মধ্যে তার আযাবই সবচেয়ে হালকা হবে।’
নোমান ইবনে বাশীর রা. হতে বর্ণিত- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- জাহান্নামে সবচেয়ে কঠিন শাস্তি হলো- মহা বিপর্যয়। কাটাবিশিষ্ট গুল্ম ও তিক্ত খাবার। রক্ত, পুঁজ ও গলিত ধাতুর পানীয়। আলকাতরা ও আগুনের পোশাক।
আল্লাহ তায়ালা বলেন - ﴾ ‘তাদের জন্য থাকবে জাহান্নামের বিছানা এবং তাদের উপরে থাকবে (আগুনের) আচ্ছাদন। আর এভাবেই আমি যালিমদেরকে প্রতিদান দেই।’﴿ -[আল আরাফঃ ৪১]
আল্লাহ তায়ালা আমাকে এবং আপনাদেরকে আল কুরআনুল কারীমের মাধ্যমে বরকত দান করুন এবং আমাদের সবাইকে এর দ্বারা উপকৃত করুন। সাইয়্যিদুল মুরসালীন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দিক নির্দেশনা ও বাণী আমাদের চলার পথে পাথেয় হোক।
পরিশেষে মহান রাববুল আলামীনের দরবারে বিনীত হৃদয়ে সকল গোনাহ খাতা হতে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। নিশ্চয় তিনিই মহা ক্ষমাশীল ও পরম করুণাময়।
আমার রবের প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। তার দিকেই ফিরে যাচ্ছি ও তার সমীপেই ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং তার কোন শরীক নেই। তিনি সুউচ্চ ও সুমহান। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার প্রিয় বান্দা এবং রহমত ও আলোকবর্তিকাসহ প্রেরিত রাসূল।
হে আল্লাহ! আপনার প্রিয় বান্দা ও রাসূল মুহাম্মাদ, তার পরিবার এবং সাথীবর্গের ওপর রহমত ও বরকত অবতীর্ণ করুন ।
বন্ধুরা! আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করুন। কেননা আল্লাহর ভয় তার আযাব থেকে মুক্তি দেয় এবং তার মহা পুরষ্কার লাভে সহায়ক হয়।
মুসলিম ভাই ও বন্ধুগণ! আপনারা দুনিয়াতে যে বাড়িতে বাস করেন সে বাড়ি ছাড়াও আপনাদের আরেকটি বাড়ি আছে। সে বাড়িটি হয়তো চিরসুখের হবে নয়তো চির দুখের। অতিসত্বর সেখানে আপনাদের যেতে হবে। দিনের পরে রাত আসছে আর রাতের পরে দিন । এভাবে সময় গড়িয়ে যাচ্ছে। আর সময়ের এ বিবর্তনের সাথে সাথে আমরা প্রত্যেকে একটি নির্দিষ্ট কালের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আর সে নির্দিষ্ট কাল যখন এসে পৌঁছবে তখন সকলকেই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন - ﴾ ‘যমীনের ওপর যা কিছু রয়েছে সবই ধ্বংসশীল। মহামহিম ও মহানুভব তোমার রবের সত্তাই কেবল অবিনশ্বর।’﴿ -সুরা আর রাহমানঃ ২৬-২৭ ।
মৃত্যু এমন পরম সত্য যে কেউ তা অস্বীকার করে না। তবে সৎকর্মশীল মুমিন সর্বদা মৃত্যুর জন্য প্রস্ত্ততি গ্রহণ করে। আর পাপাচারী আশা আকাঙ্ক্ষার মাঝে ডুবে গিয়ে মৃত্যুর জন্য প্রস্ত্ততি গ্রহণ করার ফুরসত পায় না। তাই হঠাৎ অপ্রস্ত্তত অবস্থায় মৃত্যু এসে তাকে পাকড়াও করে ফেলে। ভালো কাজ করলে দুনিয়ার জীবনও সুন্দর ও সুখময় হয়। আর খারাপ কাজ করলে দুনিয়ার এ জীবনও তিক্ত হয়ে যায়। আল্লাহ তায়ালা বলেন - ﴾ ‘যে মুমিন অবস্থায় নেক আমল করবে, পুরুষ হোক বা নারী, আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং তারা যা করত তার তুলনায় অবশ্যই আমি তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দেব।’ ﴿ -[সুরা আন নাহ্লঃ ৯৭]
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন - ﴾ আর সত্য যদি তাদের কামনা বাসনার অনুগামি হত, তবে আসমান যমীন ও এতদুভয়ের মাঝে যা কিছু আছে সব বিপর্যস্ত হয়ে যেত।...﴿ -[সুরা আল মুমিনুনঃ ৭১]
তার দুনিয়ার জীবন কত সুন্দর যে একে নেক আমল দিয়ে সজ্জিত করে! আর তার জীবন কত কদাকার যে কু প্রবৃত্তি ও কামনা বাসনার অনুগামী হয়ে যায়। আল্লাহ তায়ালা বলেন-
﴾‘আসমান এবং যমীনে যা কিছু রয়েছে সব আল্লাহ তায়ালারই। যারা মন্দ করে তিনি তাদের মন্দ কাজের প্রতিফল দেবেন, আর যারা সৎ কাজ করে তিনি তাদেরকে উত্তম প্রতিদানে ভূষিত করবেন।’ ﴿ -[সুরা আন নাজ্মঃ ৩১]
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন - ﴾ হে মানবসমাজ, নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য। অতএব দুনিয়ার জীবন যেন তোমাদেরকে ধোকা না দেয় আর মহাপ্রবঞ্চক [শয়তান]ও যেন তোমাদেরকে প্রতারিত করতে না পারে।﴿ -[সুরা ফাতিরঃ ৫]
যে আল্লাহর হুকুম আহকাম মেনে চলে ও নিষিদ্ধ কাজসমূহ থেকে দূরে থাকে সে দুনিয়াতেই জান্নাতের অনাবিল সুখ ও আত্মিক প্রশান্তি অনূভব করতে পারে। এটা পরকালিন জান্নাতের একটা পার্থিব নমুনা মাত্র। যে এতে প্রবেশ করে সে পরকালিন জান্নাতেও প্রবেশ করবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন - ﴾ ‘তোমাদের সৎকর্মের প্রতিদানস্বরূপ তোমাদেরকে সে জান্নাতের অধিকারি করা হয়েছে।’ ﴿ -[আযযুখরুফ ৭২]
আর যে কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করে কামনা বাসনার ময়দানে বিচরন করে সে দুনিয়াতেই জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করে । দুনিয়াতে যে জাহান্নামে ডুবে থাকে পরকালে তার ঠিকানা জাহান্নাম ছাড়া আর কী হবে?। হাদিসে আছে- ‘জান্নাতের চারপাশে কষ্ট ক্লেশ ও বাধা বিপত্তির বেড়াজাল । আর জাহান্নামের চতুর্পাশে রয়েছে কামনা বাসনার হাতছানি।’ [বোখারি ও মুসলিম।]
হে আল্লাহর বান্দারা ! সুন্নাত তরীকায় ও ইখলাসের সাথে সৎকর্ম করে জান্নাত লাভে সচেষ্ট হোন। আমলের ক্ষেত্রে ইখলাস ও সুন্নাত উভয়টি প্রয়োজন। ইখলাসবিহীন কিংবা সুন্নাতের বিপরীত কোন আমল আল্লাহর নিকট কষ্মিনকালেও গ্রহণযোগ্য নয়। জান্নাত লাভে সচেষ্ট হওয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালা বান্দাদেরকে নানাভাবে উৎসাহিত করেছেন। জান্নাতের মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের বিবরণ দিয়েছেন। জান্নাতবাসীদের অনাবিল ও অফুরন্ত সুখ শান্তির কথা বলেছেন। তারা কী কী আমল করে জান্নাত লাভে ধন্য হয়েছে তা বর্ণনা করেছেন।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও তার উম্মতকে জান্নাতের আমলের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি বলেছেন- ‘জান্নাতের প্রত্যাশি কেউ আছে কি? জান্নাত হলো অনুপম ও তুলনাহীন সুখ শান্তির জায়গা। আল্লাহর কসম! জান্নাতে রয়েছে চোখ ঝলসানো আলোর ফোয়ারা, মন মাতানো ফুলের সৌরভ, সুরম্য প্রাসাদ, সবেগে বয়ে চলা প্রস্রবন, সুপক্ক ফল ফলাদি, লাবন্যময়ী জীবন সঙ্গি, অসংখ্য পরিচ্ছদ এবং সুখ-শান্তি আরাম-আয়েশ ও আনন্দ- ফূর্তির সাথে সুউচ্চ অট্টালিকায় নির্বিঘ্নে জীবনযাপনের নিশ্চয়তা। সাহাবায়ে কেরাম বললেন- হ্যাঁ ইয়া রাসুলাল্লাহ , আমরা জান্নাত লাভ করতে প্রস্ত্তত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- তোমরা ان شاء الله বলো। তখন সবাই ان شاء الله বললো। (উসামা বিন যায়েদ এর সূত্রে- ইবনে মাজা ও ইবনে হিববান )
আবু হুরাইরা রা.এর সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জান্নাতের নির্মাণশৈলি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন- জান্নাতের একটি ইট স্বর্ণের অপরটি রৌপ্যের। দুই ইটের মধ্যবর্তী মসলা হলো মেশকের। জান্নাতের নুড়ি ও কাঁকর হলো, মুক্তা ও নীলকান্তমণি। এর মাটি হলো সুগন্ধময় জাফরানের। জান্নাতে যে প্রবেশ করবে সে চিরদিন সুখে থাকবে, দুঃখ কখনো তাকে স্পর্শ করবে না। জান্নাতীরা জান্নাতে চিরকাল থাকবে। তাদের কখনো মৃত্যু হবে না। তাদের পরিধেয় পোশাক কখনো পুরোনো হবে না। তাদের যৌবন কোনদিন লোপ পাবে না। (আহমাদ ও তিরমিযি )
জাবির রা.এর সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- জান্নাতীরা জান্নাতে প্রচুর পানাহার করবে কিন্তু তাদের মল-মূত্র ত্যাগ করতে হবে না। তবে খাবারের পর মেশকের সুঘ্রানযুক্ত একটি ঢেকুর আসবে। এর ফলে তাদের মলমূত্র ত্যাগের প্রাকৃতিক প্রয়োজন মিটে যাবে। তাদের নাক থেকে শ্লেষ্মা বের হবে না। তাদের শ্বাস প্রশ্বাসের সাথে সাথে সুবহানাল্লাহ ও আলহামদুলিল্লাহ উচ্চারিত হবে। (মুসলিম)
আনাস রা.হতে বর্ণিত- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- এক সকাল অথবা এক বিকাল আল্লাহর জন্য ব্যয় করা দুনিয়া ও দুনিয়াতে যা কিছু আছে সবকিছুর চেয়ে উত্তম। জান্নাতের কোন রমণী যদি দুনিয়ায় উঁকি মারে তাহলে দুনিয়া ও জান্নাতের মধ্যবর্তী সবকিছু সুরভিত হয়ে যাবে। জান্নাতের কোন রমণীর মাথার ওড়না দুনিয়া ও দুনিয়াতে যা কিছু আছে সবকিছুর চেয়ে উত্তম। (বুখারি ও মুসলিম)
জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ রা. হতে বর্ণিত- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- ‘জান্নাতে তোমরা তোমাদের রবকে সরাসরি দেখতে পাবে, যেমন দুনিয়াতে তোমরা চাঁদ দেখতে পাও। তাকে দেখতে গিয়ে তোমাদের ভিড় ঠেলে যেতে হবে না।’ (বুখারি ও মুসলিম)
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- সর্বশেষ কে জাহান্নাম হতে বের হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে তার সম্পর্কে আমি জানি। এক লোক জাহান্নাম থেকে হামাগুড়ি দিয়ে বের হবে। আল্লাহ তায়ালা তাকে বলবেন- ‘যাও জান্নাতে প্রবেশ করো।’ সে জান্নাতের দিকে এগিয়ে যাবে। তার কাছে মনে হবে জান্নাত লোকজনে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে, সেখানে কোন জায়গা নেই। ফলে সে ফিরে এসে বলবে- ‘হে আমার রব, জান্নাত তো লোকে লোকারণ্য। সেখানে তো কোন জায়গা নেই।’ তখন আল্লাহ তায়ালা বলবেন- ‘যাও জান্নাতে প্রবেশ করো, তুমি যে দুনিয়ায় বাস করেছিলে সে দুনিয়ার চেয়ে দশগুণ বড় জান্নাত তোমাকে দেয়া হলো।’ তখন সে বলবে- ‘হে আমার রব, হে সারা জাহানের অধিপতি, আপনি কি আমার সাথে উপহাস করছেন?’ [এ কথা বলে ] রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এত হেঁসেছেন যে তার মাঁড়ির দাত পর্যন্ত দেখা গেছে। তখন তিনি বলছিলেন- এ লোক সবচেয়ে নিম্ন পর্যায়ের জান্নাতি।’’ (বুখারি ও মুসলিম)
এই সত্য ওয়াদা, বাস্তব প্রতিদান ও চিরসুখের বাসস্থানের জন্যই আমাদের পূর্বসূরীরা অর্থ-সম্পদ, জীবন-জীবিকা ও পরিবার পরিজন সব লুটিয়ে দিতেন। ঘরবাড়ি ছেড়ে অজানার পথে পাড়ি জমাতেন। সৎ স্বভাবে ভূষিত হতেন। মন্দ স্বভাব হতে দূরে থাকতেন। সৃষ্টির প্রতি দয়া করতেন। কাউকে ভালবাসলে আল্লাহর জন্যই ভালোবাসতেন আর কারো প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করলে আল্লাহর জন্যই তা করতেন। কাউকে কিছু দিলে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই দিতেন আর কাউকে কোন কিছু দেওয়া থেকে বিরত থাকলে তাও আল্লাহর জন্যই করতেন। তাদের সকল কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত লাভের নিমিত্তেই হতো। তারা কখনো নিরাশ হতেন না, তাদের আমলের ধারা কখনো বন্ধ হতো না। আল্লাহর প্রতি আশা ও ভয়ের ভারসাম্যপূর্ণ মানদন্ড কখনো একদিকে হেলে পড়তো না। সর্বোপরি তারা কখনো আল্লাহর কথা ভুলে যেতেন না।
আমার বন্ধুরা, আপনারা যারা দুনিয়ার মায়াজালে জড়িয়ে আখেরাতের কথা ভুলে গেছেন, আল্লাহ ধৈর্যশীল বলে যারা অন্যায় অপরাধ করতে দুঃসাহস করে আল্লাহর আদেশসমূহ লঙ্ঘন করেন, যারা ধনসম্পদ ও নেয়ামত পেয়ে এর যথাযথ হক আদায় করেন না তাদেরকে বলছি- সত্য ও ন্যায়ের পথে ফিরে আসুন। দুনিয়ার মোহ ও মায়ার সকল ঈন্দ্রজাল ছিন্ন করে সচেতন হোন। অলসতার ঘুম থেকে জেগে উঠুন। মৃত্যু ও মৃত্যুর বিভীষিকা বেশি দূরে নয়, নিকটে অতি নিকটে। কবর ও কবরের অন্ধকার মিথ্যা নয়, কাছে খুবই কাছে। যা অন্যদের নিকট এসেছিল তা তোমার নিকটও অতিসত্বর ধেয়ে আসবে। তোমার মাঝে আর জান্নাত কিংবা জাহান্নামের মাঝে মৃত্যু ছাড়া ভিন্ন কোন প্রাচীর নেই। অতএব পরম করুণাময় রবের দিকে দৌড়ে যাও। তার শরনাপন্ন হও। আর লাঞ্ছনা গঞ্জনা ও যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির কেন্দ্র জাহান্নাম থেকে শতক্রোশ দূরে থাকতে সচেষ্ট হও। কেননা আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে এ ব্যাপারে বিভিন্নভাবে সতর্ক করেছেন এবং এমনভাবে জাহান্নামের মর্মন্তুদ শাস্তির বিবরণ দিয়েছেন যে, তা যে কারো চোখের সামনে মূর্ত হয়ে ফুটে ওঠে। সাথে সাথে জাহান্নামীদের কর্মকান্ড ও জাহান্নামে যাওয়ার কার্যকারণ উল্লেখ করেছেন যেন আমরা জাহান্নাম থেকে বেঁচে থাকতে পারি।
আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও জাহান্নামের কঠিন শাস্তির ব্যাপারে সতর্কবাণী করেছেন। তিনি বলেছেন- ‘জাহান্নামে সবচেয়ে হালকা আযাব হবে ঐ ব্যক্তির ওপর যাকে আগুনের দুটি চপ্পল পরানো হবে, এর ফলে তার মাথার মগজ টগবগ করতে থাকবে, যেমন উনানে পাতিল টগবগ করে। সে মনে করবে তারচেয়ে কঠিন আযাব আর কারো হচ্ছে না। অথচ জাহান্নামীদের মধ্যে তার আযাবই সবচেয়ে হালকা হবে।’
নোমান ইবনে বাশীর রা. হতে বর্ণিত- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- জাহান্নামে সবচেয়ে কঠিন শাস্তি হলো- মহা বিপর্যয়। কাটাবিশিষ্ট গুল্ম ও তিক্ত খাবার। রক্ত, পুঁজ ও গলিত ধাতুর পানীয়। আলকাতরা ও আগুনের পোশাক।
আল্লাহ তায়ালা বলেন - ﴾ ‘তাদের জন্য থাকবে জাহান্নামের বিছানা এবং তাদের উপরে থাকবে (আগুনের) আচ্ছাদন। আর এভাবেই আমি যালিমদেরকে প্রতিদান দেই।’﴿ -[আল আরাফঃ ৪১]
আল্লাহ তায়ালা আমাকে এবং আপনাদেরকে আল কুরআনুল কারীমের মাধ্যমে বরকত দান করুন এবং আমাদের সবাইকে এর দ্বারা উপকৃত করুন। সাইয়্যিদুল মুরসালীন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দিক নির্দেশনা ও বাণী আমাদের চলার পথে পাথেয় হোক।
পরিশেষে মহান রাববুল আলামীনের দরবারে বিনীত হৃদয়ে সকল গোনাহ খাতা হতে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। নিশ্চয় তিনিই মহা ক্ষমাশীল ও পরম করুণাময়।
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি জগৎসমূহের সৃষ্টিকর্তা, রক্ষাকর্তা ও পালনকর্তা। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি জাজ্বল্যমান ও প্রকৃত অর্থে অধিপতি। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার প্রিয় বান্দা ও রাসুল। তিনি ছিলেন আল আমীন ও সত্য ওয়াদাকারী। হে আল্লাহ রহমত ও বরকত নাযিল করুন আপনার প্রিয় বান্দা ও রাসুল মুহাম্মাদ এর ওপর এবং তার সাহাবায়ে কেরাম ও পরিবারবর্গের ওপর।
অত:পর শুনুন, বন্ধুগণ, আল্লাহকে যথাযোগ্য ভয় করুন। ইসলামকে শক্ত করে ধারন করুন। আল্লাহ তায়ালা বলেন - ﴾ ‘তেমরা তোমাদের রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা ও সেই জান্নাতের দিকে প্রতিযোগীতায় অবতীর্ণ হও, যার প্রশস্ততা আসমান ও যমীনের প্রশস্ততার সমান। আল্লাহ ও রাসুলগণের প্রতি যারা ঈমান রাখে তাদের জন্য তা প্রস্ত্তত করা হয়েছে। এটা আল্লাহর অনুগ্রহ। তিনি যাকে ইচ্ছা তা দান করেন। আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল।’﴿ -[আল হাদীদঃ ২১]
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন - ﴾ ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সে আগুন হতে বাঁচাও যার জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর; যেখানে রয়েছে নির্মম ও কঠোর ফেরেশতাকূল, যারা কখনো আল্লাহর আদেশের অবাধ্য হয় না। তাদেরকে যে আদেশ করা হয় তারা তাই করে।’﴿ -[আত তাহরীমঃ ০৬]
আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন-‘আমি ভেবে পাই না, যারা জাহান্নামের ভয়ে ভীত ও জান্নাত লাভের প্রত্যাশায় অধীর তারা কিভাবে সুখনিদ্রায় রাত কাটায়?’ (তিরমিযি)
মুসলমান ভাই ও বন্ধুগণ! আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- হালাল বিষয়গুলো যেমন পরিষ্কার তেমনি হারাম বিষয়সমূহও সুস্পষ্ট। তবে এতদুভয়ের মাঝে অনেক সন্দেহজনক বিষয় রয়েছে। যে সম্পর্কে অনেকেই জানে না। এই সন্দেহজনক বিষয়সমূহ থেকে যে সংযম অবলম্বন করে চলে সে তার দীন ও মান রক্ষা করতে সচেষ্ট হয়। আর যে এ সন্দেহজনক বিষয়সমূহে জড়িয়ে পড়ে সে পরিনামে হারামে লিপ্ত হয়ে যায়।
অতএব আপনারা জান্নাতে যাওয়ার উপযোগী আমল করুন। জান্নাতে যেতে পারবেন। যে কাজের কারণে জাহান্নামে যেতে হয় সে কাজ থেকে বিরত থাকুন। যেন জাহান্নামে যেতে না হয়। এ জন্য বেশি বেশি দোয়া করা উচিৎ। এটাই মুসলমানদের চূড়ান্ত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ।
জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেন- ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি আর মুয়ায বিড়বিড় করে যে দীর্ঘ দোয়া করেন তা আমি পারি না। তবে আমি আল্লাহর কাছে জান্নাত প্রার্থনা করি ও জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাই। তখন নবী কারীম সা.বললেন- আমরা এ বিষয়েই বিড়বিড় করি।’
হে আল্লাহর বান্দারা! কুরঅনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালা বলেন - ﴾ ‘নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা নবীর প্রশংসা করেন এবং তার ফেরেশতাগণ নবীর জন্য দোয়া করে। হে মুমিনগণ, তোমরা নবীর প্রতি দরূদ ও সালাম পাঠ করো।’﴿ আল আহযাবঃ ৫৬
রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন-‘যে আমার প্রতি একবার দরুদ পাঠ করে আল্লাহ তায়ালা তার প্রতি দশটি রহমত নাযিল করেন।’ অতএব ইমামুল মুরসালিন নবীয়ে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি বেশি বেশি দরুদ ও সালাম পাঠ করতে থাকুন।
اللهم صل علي محمد و علي ﺁ ل محمد كما صليت علي ابراهيم و علي ﺁ ل ابراهيم انك حميد مجيد ,
اللهم و بارك علي محمد و علي ﺁ ل محمد كما باركت علي ابراهيم و علي ﺁ ل ابراهيم انك حميد مجيد , و سلم تسليما كثيرا .
اللهم و ارض عن الصحابة أجمعين , و عن التابعين و من تبعهم باحسان الي يوم الدين .. اللهم و ارض عنا بمنك و كرمك و رحمتك يا أرحم الراحمين , اللهم و ارض عن الخلفاء الراشدين الأئمة المهديين أبي بكر و عمر و عثمان و علي و عن سائر أصحاب نبيك أجمعين .
হে আল্লাহ, ইসলাম ও মুসলমানদের মান- সম্মান বাড়িয়ে দিন। হে আল্লাহ ইসলাম ও মুসলমানদের প্রভাব- প্রতিপত্তি বাড়িয়ে দিন। হে আল্লাহ ইসলাম ও মুসলমানদের শান-শওকত বাড়িয়ে দিন। হে আল্লাহ শির্ক ও মুশরিকদেরকে লাঞ্ছিত ও অপদস্থ করুন । হে আল্লাহ, হে দয়াময় প্রভু, হে মহা শক্তিশালী, হে পরাক্রমশালী, তোমার দ্বীন, তোমার কিতাব ও তোমার নবীর জীবনাদর্শকে সাহায্য করুন। হে আল্লাহ, আমাদেরকে তথা সকল মুসলমানকে দ্বীনের জ্ঞান দান করুন। হে আল্লাহ, আমাদেরকে তথা সকল মুসলমানকে দ্বীনের বুঝ দান করুন। হে আল্লাহ, আমাদেরকে তথা সকল মুসলমানকে দ্বীনের প্রজ্ঞা দান করুন।
হে আল্লাহ, হে রাহমানুর রাহীম, আমাদের তাওবা কবুল করে নিন। হে আল্লাহ, আমাদের সামনের, পিছনের, প্রকাশ্য, গোপন ও জানা অজানা সকল গোনাহ ক্ষমা করে দিন। আপনিই অনাদি আপনিই অনন্ত। আপনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই।
হে আল্লাহ, আমাদের সকল কাজের পরিণাম শুভ করে দিন। আমাদেরকে দুনিয়ার লাঞ্ছনা ও আখেরাতের আযাব হতে মুক্তি দান করুন। হে চিরঞ্জীব, হে নিয়ন্ত্রক, আমাদের সকল কাজ ও কর্ম সুন্দর করে দিন। এক মুহূর্তের জন্যও আমাদেরকে আমাদের ওপর ছেড়ে দেবেন না। হে আল্লাহ আমাদের জীবিত ও মৃত সকলকে ক্ষমা করে দিন। মৃতদের কবরকে আলোকিত করে দিন। তাদের নেক কাজসমূহকে বহু গুণ বাড়িয়ে দিন। তাদের গোনাহসমূহকে ক্ষমা করে দিন।
হে আল্লাহ আমাদের দেশ ও অন্যান্য মুসলিম দেশসমূহকে নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন রাখুন। হে আল্লাহ, আমাদেরকে প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য সকল ফেতনা ও দুর্যোগ থেকে রক্ষা করুন। হে আল্লাহ, মুসলমানদের মধ্যে যারা বিপদগ্রস্ত তাদেরকে বিপদমুক্ত করে দিন। যারা ঋণগ্রস্ত তাদের ঋন পরিশোধের ব্যবস্থা করে দিন। যারা অসুস্থ তাদেরকে দ্রুত সুস্থতা দান করুন। হে আল্লাহ আমাদেরকে ও আমাদের সন্তানদেরকে শয়তান ও তার বাহিনীর ধোকা হতে রক্ষা করুন। নিশ্চয় আপনি সকল বিষয়ে ক্ষমতাবান।
হে আল্লাহ, হে মহামহিম ও মহানুভব, আপনি আমাদেরকে পরিত্রান দিন। হে আল্লাহ , আপনিই আমাদের একমাত্র ইলাহ, আপনি ছাড়া আমাদের আর কোন ইলাহ নেই । আপনি দুনিয়া ও আখেরাতে রহমান ও রহীম। আদি অন্ত সকলের ইলাহ। আপনি মহা ক্ষমতাশালী। আপনি রিযিকদাতা ও অসীম শক্তিধর। আপনি সকলের ওপর প্রবল। হে আরহামুর রাহিমীন, আমাদেরকে নাজাত দিন। আমাদেরকে নাজাত দিন। আমাদেরকে নাজাত দিন।
হে আমাদের রব, আমাদের নির্বোধদের অন্যায়ের কারণে আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না। কেননা আপনিই তো মহা ক্ষমাশীল ও পরম করুণাময়। হে আল্লাহ, আমাদের শাসনকর্তাকে আপনার পছন্দনীয় কাজের তাওফীক দিন। হে আল্লাহ তাঁকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন। হে আল্লাহ, তাঁর সকল কাজ তোমার সন্তুষ্টির নিমিত্তে করে দিন। হে আল্লাহ, তাকে দ্বীন দুনিয়ার সকল কাজে সাহায্য করুন। হে আল্লাহ, তার জন্য এমন শুভাকাঙ্ক্ষি ও সৎকর্মশীল উপদেষ্টার ব্যবস্থা করে দিন যে তাকে ভালো কাজের পরামর্শ দেবে ও সর্বতোভাবে সাহায্য করবে। ইসলামের জন্য যা কল্যাণকর তাকে সে কাজের তাওফীক দিয়ে দিন। তার সহকারীকেও ইসলামের জন্য কল্যাণকর ও আপনার পছন্দনীয় কাজের তাওফীক দিন। তাঁদের স্বাস্থ্য ভালো রাখুন। নিশ্চয় আপনি সকল বিষয়ে ক্ষমতাবান।
হে আল্লাহ, হে সারা জাহানের রব, মুসলিম শাসনকর্তাদেরকে তাদের দেশ ও জাতির অনুকূলে কাজ করার হিম্মত দিন। মুসলমানদের মাঝে একতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি করে দিন। তাদেরকে শান্তির পথে পরিচালিত করুন। তাদেরকে অন্ধকার হতে আলোর পথে ফিরিয়ে আনুন।
হে আল্লাহ আমাদের শত্রুদের সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিন। হে আল্লাহ, আমাদের শত্রুদের সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিন। হে আল্লাহ, আমাদেরকে বিধির অকল্যাণ, শত্রুর হাঁসি ও দুর্ভাগ্যের কবল থেকে মুক্তি দিন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন - ﴾ ‘নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফ, সদাচার,ও নিকটাত্মীয়দের দান করার আদেশ দেন। এবং অশ্লীলতা, মন্দ কাজ ও সীমালঙ্ঘন থেকে নিষেধ করেন। তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো। আর যখন তোমরা অঙ্গীকার করো তখন অঙ্গীকার পূর্ণ কর। তোমরা পাকাপোক্ত অঙ্গীকার করার পর তা ভঙ্গ করো না। কেননা তোমরা নিজেদের জন্য আল্লাহকে যিম্মাদার বানিয়েছ। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের কাজকর্ম সম্পর্কে জানেন।’﴿ -[সুরা আন নাহল- ৯০,৯১]
তোমরা মহান আল্লাহকে স্মরণ করো আল্লাহ তোমাদেরকে স্মরণ করবেন। তার নেয়ামতের শোকর আদায় করো , তিনি নেয়ামত আরো বাড়িয়ে দেবেন। বস্ত্তত আল্লাহর স্মরণ অনেক বড়। তোমরা যা করো আল্লাহ তা জানেন।
-সমাপ্ত-
অত:পর শুনুন, বন্ধুগণ, আল্লাহকে যথাযোগ্য ভয় করুন। ইসলামকে শক্ত করে ধারন করুন। আল্লাহ তায়ালা বলেন - ﴾ ‘তেমরা তোমাদের রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা ও সেই জান্নাতের দিকে প্রতিযোগীতায় অবতীর্ণ হও, যার প্রশস্ততা আসমান ও যমীনের প্রশস্ততার সমান। আল্লাহ ও রাসুলগণের প্রতি যারা ঈমান রাখে তাদের জন্য তা প্রস্ত্তত করা হয়েছে। এটা আল্লাহর অনুগ্রহ। তিনি যাকে ইচ্ছা তা দান করেন। আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল।’﴿ -[আল হাদীদঃ ২১]
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন - ﴾ ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সে আগুন হতে বাঁচাও যার জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর; যেখানে রয়েছে নির্মম ও কঠোর ফেরেশতাকূল, যারা কখনো আল্লাহর আদেশের অবাধ্য হয় না। তাদেরকে যে আদেশ করা হয় তারা তাই করে।’﴿ -[আত তাহরীমঃ ০৬]
আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন-‘আমি ভেবে পাই না, যারা জাহান্নামের ভয়ে ভীত ও জান্নাত লাভের প্রত্যাশায় অধীর তারা কিভাবে সুখনিদ্রায় রাত কাটায়?’ (তিরমিযি)
মুসলমান ভাই ও বন্ধুগণ! আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- হালাল বিষয়গুলো যেমন পরিষ্কার তেমনি হারাম বিষয়সমূহও সুস্পষ্ট। তবে এতদুভয়ের মাঝে অনেক সন্দেহজনক বিষয় রয়েছে। যে সম্পর্কে অনেকেই জানে না। এই সন্দেহজনক বিষয়সমূহ থেকে যে সংযম অবলম্বন করে চলে সে তার দীন ও মান রক্ষা করতে সচেষ্ট হয়। আর যে এ সন্দেহজনক বিষয়সমূহে জড়িয়ে পড়ে সে পরিনামে হারামে লিপ্ত হয়ে যায়।
অতএব আপনারা জান্নাতে যাওয়ার উপযোগী আমল করুন। জান্নাতে যেতে পারবেন। যে কাজের কারণে জাহান্নামে যেতে হয় সে কাজ থেকে বিরত থাকুন। যেন জাহান্নামে যেতে না হয়। এ জন্য বেশি বেশি দোয়া করা উচিৎ। এটাই মুসলমানদের চূড়ান্ত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ।
জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেন- ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি আর মুয়ায বিড়বিড় করে যে দীর্ঘ দোয়া করেন তা আমি পারি না। তবে আমি আল্লাহর কাছে জান্নাত প্রার্থনা করি ও জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাই। তখন নবী কারীম সা.বললেন- আমরা এ বিষয়েই বিড়বিড় করি।’
হে আল্লাহর বান্দারা! কুরঅনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালা বলেন - ﴾ ‘নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা নবীর প্রশংসা করেন এবং তার ফেরেশতাগণ নবীর জন্য দোয়া করে। হে মুমিনগণ, তোমরা নবীর প্রতি দরূদ ও সালাম পাঠ করো।’﴿ আল আহযাবঃ ৫৬
রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন-‘যে আমার প্রতি একবার দরুদ পাঠ করে আল্লাহ তায়ালা তার প্রতি দশটি রহমত নাযিল করেন।’ অতএব ইমামুল মুরসালিন নবীয়ে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি বেশি বেশি দরুদ ও সালাম পাঠ করতে থাকুন।
اللهم صل علي محمد و علي ﺁ ل محمد كما صليت علي ابراهيم و علي ﺁ ل ابراهيم انك حميد مجيد ,
اللهم و بارك علي محمد و علي ﺁ ل محمد كما باركت علي ابراهيم و علي ﺁ ل ابراهيم انك حميد مجيد , و سلم تسليما كثيرا .
اللهم و ارض عن الصحابة أجمعين , و عن التابعين و من تبعهم باحسان الي يوم الدين .. اللهم و ارض عنا بمنك و كرمك و رحمتك يا أرحم الراحمين , اللهم و ارض عن الخلفاء الراشدين الأئمة المهديين أبي بكر و عمر و عثمان و علي و عن سائر أصحاب نبيك أجمعين .
হে আল্লাহ, ইসলাম ও মুসলমানদের মান- সম্মান বাড়িয়ে দিন। হে আল্লাহ ইসলাম ও মুসলমানদের প্রভাব- প্রতিপত্তি বাড়িয়ে দিন। হে আল্লাহ ইসলাম ও মুসলমানদের শান-শওকত বাড়িয়ে দিন। হে আল্লাহ শির্ক ও মুশরিকদেরকে লাঞ্ছিত ও অপদস্থ করুন । হে আল্লাহ, হে দয়াময় প্রভু, হে মহা শক্তিশালী, হে পরাক্রমশালী, তোমার দ্বীন, তোমার কিতাব ও তোমার নবীর জীবনাদর্শকে সাহায্য করুন। হে আল্লাহ, আমাদেরকে তথা সকল মুসলমানকে দ্বীনের জ্ঞান দান করুন। হে আল্লাহ, আমাদেরকে তথা সকল মুসলমানকে দ্বীনের বুঝ দান করুন। হে আল্লাহ, আমাদেরকে তথা সকল মুসলমানকে দ্বীনের প্রজ্ঞা দান করুন।
হে আল্লাহ, হে রাহমানুর রাহীম, আমাদের তাওবা কবুল করে নিন। হে আল্লাহ, আমাদের সামনের, পিছনের, প্রকাশ্য, গোপন ও জানা অজানা সকল গোনাহ ক্ষমা করে দিন। আপনিই অনাদি আপনিই অনন্ত। আপনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই।
হে আল্লাহ, আমাদের সকল কাজের পরিণাম শুভ করে দিন। আমাদেরকে দুনিয়ার লাঞ্ছনা ও আখেরাতের আযাব হতে মুক্তি দান করুন। হে চিরঞ্জীব, হে নিয়ন্ত্রক, আমাদের সকল কাজ ও কর্ম সুন্দর করে দিন। এক মুহূর্তের জন্যও আমাদেরকে আমাদের ওপর ছেড়ে দেবেন না। হে আল্লাহ আমাদের জীবিত ও মৃত সকলকে ক্ষমা করে দিন। মৃতদের কবরকে আলোকিত করে দিন। তাদের নেক কাজসমূহকে বহু গুণ বাড়িয়ে দিন। তাদের গোনাহসমূহকে ক্ষমা করে দিন।
হে আল্লাহ আমাদের দেশ ও অন্যান্য মুসলিম দেশসমূহকে নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন রাখুন। হে আল্লাহ, আমাদেরকে প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য সকল ফেতনা ও দুর্যোগ থেকে রক্ষা করুন। হে আল্লাহ, মুসলমানদের মধ্যে যারা বিপদগ্রস্ত তাদেরকে বিপদমুক্ত করে দিন। যারা ঋণগ্রস্ত তাদের ঋন পরিশোধের ব্যবস্থা করে দিন। যারা অসুস্থ তাদেরকে দ্রুত সুস্থতা দান করুন। হে আল্লাহ আমাদেরকে ও আমাদের সন্তানদেরকে শয়তান ও তার বাহিনীর ধোকা হতে রক্ষা করুন। নিশ্চয় আপনি সকল বিষয়ে ক্ষমতাবান।
হে আল্লাহ, হে মহামহিম ও মহানুভব, আপনি আমাদেরকে পরিত্রান দিন। হে আল্লাহ , আপনিই আমাদের একমাত্র ইলাহ, আপনি ছাড়া আমাদের আর কোন ইলাহ নেই । আপনি দুনিয়া ও আখেরাতে রহমান ও রহীম। আদি অন্ত সকলের ইলাহ। আপনি মহা ক্ষমতাশালী। আপনি রিযিকদাতা ও অসীম শক্তিধর। আপনি সকলের ওপর প্রবল। হে আরহামুর রাহিমীন, আমাদেরকে নাজাত দিন। আমাদেরকে নাজাত দিন। আমাদেরকে নাজাত দিন।
হে আমাদের রব, আমাদের নির্বোধদের অন্যায়ের কারণে আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না। কেননা আপনিই তো মহা ক্ষমাশীল ও পরম করুণাময়। হে আল্লাহ, আমাদের শাসনকর্তাকে আপনার পছন্দনীয় কাজের তাওফীক দিন। হে আল্লাহ তাঁকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন। হে আল্লাহ, তাঁর সকল কাজ তোমার সন্তুষ্টির নিমিত্তে করে দিন। হে আল্লাহ, তাকে দ্বীন দুনিয়ার সকল কাজে সাহায্য করুন। হে আল্লাহ, তার জন্য এমন শুভাকাঙ্ক্ষি ও সৎকর্মশীল উপদেষ্টার ব্যবস্থা করে দিন যে তাকে ভালো কাজের পরামর্শ দেবে ও সর্বতোভাবে সাহায্য করবে। ইসলামের জন্য যা কল্যাণকর তাকে সে কাজের তাওফীক দিয়ে দিন। তার সহকারীকেও ইসলামের জন্য কল্যাণকর ও আপনার পছন্দনীয় কাজের তাওফীক দিন। তাঁদের স্বাস্থ্য ভালো রাখুন। নিশ্চয় আপনি সকল বিষয়ে ক্ষমতাবান।
হে আল্লাহ, হে সারা জাহানের রব, মুসলিম শাসনকর্তাদেরকে তাদের দেশ ও জাতির অনুকূলে কাজ করার হিম্মত দিন। মুসলমানদের মাঝে একতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি করে দিন। তাদেরকে শান্তির পথে পরিচালিত করুন। তাদেরকে অন্ধকার হতে আলোর পথে ফিরিয়ে আনুন।
হে আল্লাহ আমাদের শত্রুদের সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিন। হে আল্লাহ, আমাদের শত্রুদের সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিন। হে আল্লাহ, আমাদেরকে বিধির অকল্যাণ, শত্রুর হাঁসি ও দুর্ভাগ্যের কবল থেকে মুক্তি দিন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন - ﴾ ‘নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফ, সদাচার,ও নিকটাত্মীয়দের দান করার আদেশ দেন। এবং অশ্লীলতা, মন্দ কাজ ও সীমালঙ্ঘন থেকে নিষেধ করেন। তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো। আর যখন তোমরা অঙ্গীকার করো তখন অঙ্গীকার পূর্ণ কর। তোমরা পাকাপোক্ত অঙ্গীকার করার পর তা ভঙ্গ করো না। কেননা তোমরা নিজেদের জন্য আল্লাহকে যিম্মাদার বানিয়েছ। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের কাজকর্ম সম্পর্কে জানেন।’﴿ -[সুরা আন নাহল- ৯০,৯১]
তোমরা মহান আল্লাহকে স্মরণ করো আল্লাহ তোমাদেরকে স্মরণ করবেন। তার নেয়ামতের শোকর আদায় করো , তিনি নেয়ামত আরো বাড়িয়ে দেবেন। বস্ত্তত আল্লাহর স্মরণ অনেক বড়। তোমরা যা করো আল্লাহ তা জানেন।
-সমাপ্ত-
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন