HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

কুরআন আপনার পক্ষের কিংবা বিপক্ষের দলিল

লেখকঃ মুহাম্মদ ইবন আহমদ ইবন মুহাম্মদ আল-ইম্মারি

কিতাবের নাম/ লেখক/ অনুবাদক/ সম্পাদক
কুরআন আপনার পক্ষের কিংবা বিপক্ষের দলিল

মুহাম্মদ ইবন আহমদ ইবন মুহাম্মদ আল-ইম্মারি

অনুবাদ : সানাউল্লাহ নজির আহমদ

সম্পাদনা : ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী

কুরআন আপনার পক্ষের কিংবা বিপক্ষের দলিল
সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য, যিনি কলম দ্বারা শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন সেসব বিষয়, যা সে জানত না। তার জন্যই সকল প্রশংসা, তিনি মানুষকে সৃষ্টি করে ভাষাজ্ঞান দান করেছেন। সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক সে নবীর প্রতি, যিনি নিজ থেকে কোনো কথা বলেন না, তার কথা শুধুই অহি ও আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে প্রত্যাদেশ।

আবু মালিক আশ‘আরি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«الْقُرْآنُ حُجَّةٌ لَكَ أَوْ عَلَيْكَ»

“কুরআন তোমার পক্ষের কিংবা বিপক্ষের দলিল”। [সহিহ মুসলিম: (১/১৪০), হাদিস নং (৫৫৬), (খ.১/পৃ.১৪০), অজুর ফজিলত অধ্যায়।] কুরআন যার পক্ষের দলিল হবে সে জান্নাতী, কুরআন যার বিপক্ষের দলিল হবে সে জাহান্নামী, মধ্যবর্তী কোনো পথ নেই।

আপনি যদি কুরআন বুঝেন, তাহলে কুরআন আপনার পক্ষের দলিল হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿أَفَمَن يَعۡلَمُ أَنَّمَآ أُنزِلَ إِلَيۡكَ مِن رَّبِّكَ ٱلۡحَقُّ كَمَنۡ هُوَ أَعۡمَىٰٓۚ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُوْلُواْ ٱلۡأَلۡبَٰبِ ١٩ ﴾ [ الرعد : ١٩ ]

“যে ব্যক্তি জানে তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার প্রতি যা নাযিল হয়েছে, তা সত্য, সে কি তার মত, যে অন্ধ? শুধু বুদ্ধিমানরাই উপদেশ গ্রহণ করে”। [সূরা রাদ: (১৯)]

আর যদি আপনি কুরআন না বুঝেন, তাহলে কুরআন আপনার পক্ষের দলিল হবে না, বরং বিপক্ষের দলিল হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿ أَمِ ٱتَّخَذُواْ مِن دُونِهِۦٓ ءَالِهَةٗۖ قُلۡ هَاتُواْ بُرۡهَٰنَكُمۡۖ هَٰذَا ذِكۡرُ مَن مَّعِيَ وَذِكۡرُ مَن قَبۡلِيۚ بَلۡ أَكۡثَرُهُمۡ لَا يَعۡلَمُونَ ٱلۡحَقَّۖ فَهُم مُّعۡرِضُونَ ٢٤ ﴾ [ الانبياء : ٢٤ ]

“তারা কি তাঁকে ছাড়া অনেক ইলাহ গ্রহণ করেছে? বল, ‘তোমাদের প্রমাণ নিয়ে আস। আমার সাথে যারা আছে এটি তাদের জন্য উপদেশ এবং আমার পূর্বে যারা ছিল তাদের জন্যও এটাই ছিল উপদেশ’। কিন্তু তাদের বেশীরভাগই প্রকৃত সত্যকে জানে না; তাই তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়”। [সূরা আম্বিয়া: (২৪)]

আপনি যদি কুরআন মুখস্থ করেন, তাহলে কুরআন আপনার পক্ষের দলিল হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿ بَلۡ هُوَ ءَايَٰتُۢ بَيِّنَٰتٞ فِي صُدُورِ ٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡعِلۡمَۚ وَمَا يَجۡحَدُ بِ‍َٔايَٰتِنَآ إِلَّا ٱلظَّٰلِمُونَ ٤٩ ﴾ [ العنكبوت : ٤٩ ]

“বরং যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে, তাদের অন্তরে তা সুস্পষ্ট নিদর্শন। আর যালিমরা ছাড়া আমার আয়াতসমূহকে কেউ অস্বীকার করে না”। [সূরা আনকাবুত: (৪৯)] জায়েদ ইবনে সাবেত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:

« نَضَّرَ اللَّهُ امْرَأً سَمِعَ مِنَّا حَدِيثًا فَحَفِظَهُ حَتَّى يُبَلِّغَهُ فَرُبَّ حَامِلِ فِقْهٍ إِلَى مَنْ هُوَ أَفْقَهُ مِنْهُ وَرُبَّ حَامِلِ فِقْهٍ لَيْسَ بِفَقِيهٍ » .

“আল্লাহ তাকে উজ্জলতা দান করুন, যে আমাদের থেকে কোনো বাণী শ্রবণ করল, অতঃপর তা হিফয করে রাখল অপরকে শুনিয়ে দেওয়া পর্যন্ত। অনেক ফিকাহ ধারণকারী তার চেয়ে বড় ফকিহের নিকট ফিকাহ পৌঁছায়; আবার অনেক ফিকাহ ধারণকারী ফকিহ নয়”। আবু দাউদ রাহিমাহুল্লাহ সহি সনদে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। [আবু দাউদ, হাদিস নং: (৩৬৬২), (খ.৩/পৃ.৩৬০)]

আর আপনি যদি কুরআন মুখস্থ করার পরিবর্তে তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন, তাহলে কুরআন আপনার বিপক্ষের দলিল হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿وَقَدۡ ءَاتَيۡنَٰكَ مِن لَّدُنَّا ذِكۡرٗا ٩٩ مَّنۡ أَعۡرَضَ عَنۡهُ فَإِنَّهُۥ يَحۡمِلُ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ وِزۡرًا ١٠٠ ﴾ [ طه : ٩٩، ١٠٠ ]

“আর আমি তোমাকে আমার পক্ষ থেকে উপদেশ দান করেছি। তা থেকে যে বিমুখ হবে, অবশ্যই সে কিয়ামতের দিন পাপের বোঝা বহন করবে”। [সূরা ত্বহা: (৯৯-১০০)]

আপনি যদি কুরআন তিলাওয়াত করেন, তাহলে কুরআন আপনার পক্ষের দলিল হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَتۡلُونَ كِتَٰبَ ٱللَّهِ وَأَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَأَنفَقُواْ مِمَّا رَزَقۡنَٰهُمۡ سِرّٗا وَعَلَانِيَةٗ يَرۡجُونَ تِجَٰرَةٗ لَّن تَبُورَ ٢٩ لِيُوَفِّيَهُمۡ أُجُورَهُمۡ وَيَزِيدَهُم مِّن فَضۡلِهِۦٓۚ إِنَّهُۥ غَفُورٞ شَكُورٞ ٣٠ ﴾ [ فاطر : ٢٩، ٣٠ ]

“নিশ্চয় যারা আল্লাহর কিতাব অধ্যয়ন করে, সালাত কায়েম করে এবং আল্লাহ যে রিযক দিয়েছেন তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসার আশা করতে পারে যা কখনো ধ্বংস হবে না। যাতে তিনি তাদেরকে তাদের পূর্ণ প্রতিফল দান করেন এবং নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে আরো বাড়িয়ে দেন। নিশ্চয় তিনি অতি ক্ষমাশীল, মহাগুণগ্রাহী”। [সূরা ফাতির: (২৯-৩০)]

আবু উমামাহ আল-বাহেলি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:

« اقْرَءُوا الْقُرْآنَ فَإِنَّهُ يَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ شَفِيعًا لِأَصْحَابِهِ » .

“তোমরা কুরআন তিলাওয়াত কর, কারণ কিয়ামতের দিন কুরআন তার পাঠকারীর জন্য সুপারিশকারী হিসেবে উপস্থিত হবে”। [মুসলিম, হাদিস নং: (২৫২), (খ.১/পৃ.৫৫৩)]

আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« مَنْ قَرَأَ حَرْفًا مِنْ كِتَابِ اللَّهِ فَلَهُ بِهِ حَسَنَةٌ، وَالحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا، لَا أَقُولُ الم حَرْفٌ، وَلَكِنْ أَلِفٌ حَرْفٌ وَلَامٌ حَرْفٌ وَمِيمٌ حَرْفٌ » .

“আল্লাহর কিতাব থেকে যে একটি হরফ পাঠ করল, তার বিনিময়ে তার জন্য একটি নেকি হবে, আর একটি নেকি তার অনুরূপ দশটি নেকির সমান। আমি বলি না যে, الم একটি হরফ, বরং أَلِفٌ [আলিফ] একটি হরফ, لَامٌ [লাম] একটি হরফ এবং مِيمٌ [মীম] একটি হরফ”। ইমাম তিরমিযি রাহিমাহুল্লাহ হাদিসটি বর্ণনা করেছেন [দেখুন: আহমদ শাকের কর্তৃক তাহকীককৃত সুনানে তিরমিযি, হাদিস নং: (২৯১০), (খ.৫/পৃ.১৭৫)] এবং আলবানি রাহিমাহুল্লাহ তা সহি বলেছেন। [সহি আত-তারগীব ও আত-তারহীব, হাদিস নং: (১৪১৬), (খ.২/পৃ.৭৭)]

আব্দুল্লাহ ইবন ‘‘আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« يُقَالُ لِصَاحِبِ الْقُرْآنِ : اقْرَأْ، وَارْتَقِ، وَرَتِّلْ كَمَا كُنْتَ تُرَتِّلُ فِي الدُّنْيَا، فَإِنَّ مَنْزِلَكَ عِنْدَ آخِرِ آيَةٍ تَقْرَؤُهَا » .

“কুরআনের ধারককে বলা হবে: পড় ও উপরে উঠ, এবং তারতীলসহ কুরআন তিলাওয়াত কর যেভাবে তুমি দুনিয়াতে পড়তে, কারণ পড়তে পড়তে সর্বশেষ আয়াতের নিকটে যেখানে গিয়ে তুমি থামবে, (জান্নাতের) সেখানেই হবে তোমার ঠিকানা”। ইমাম আবু দাউদ রাহিমাহুল্লাহ হাদিসটি বর্ণনা করেছেন [সুনানু আবু দাউদ, হাদিস নং: (১৪৬৪), (খ.২/পৃ.৭৩)] এবং আলবানি রাহিমাহুল্লাহ তা সহি বলেছেন [সহি আত-তারগীব ও আত-তারহীব, হাদিস নং: (১৪২৬), (খ.২/পৃ.৭৯)]।

আর আপনি যদি কুরআন তিলাওয়াত থেকে বিরত থাকেন, তাহলে কুরআন আপনার বিপক্ষের দলিল হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿ وَمَنۡ أَعۡرَضَ عَن ذِكۡرِي فَإِنَّ لَهُۥ مَعِيشَةٗ ضَنكٗا وَنَحۡشُرُهُۥ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ أَعۡمَىٰ ١٢٤ ﴾ [ طه : ١٢٤ ]

“আর যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জন্য হবে নিশ্চয় এক সংকুচিত জীবন এবং আমি তাকে কিয়ামত দিবসে উঠাবো অন্ধ অবস্থায়”। [সূরা ত্বহা: (১২৪)]

আপনি যদি কুরআন তিলাওয়াত করেন ও বুঝেন, তাহলে কুরআন আপনার পক্ষের দলিল হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿ ٱلَّذِينَ ءَاتَيۡنَٰهُمُ ٱلۡكِتَٰبَ يَتۡلُونَهُۥ حَقَّ تِلَاوَتِهِۦٓ أُوْلَٰٓئِكَ يُؤۡمِنُونَ بِهِۦۗ وَمَن يَكۡفُرۡ بِهِۦ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡخَٰسِرُونَ ١٢١ ﴾ [ البقرة : ١٢١ ]

“যাদেরকে আমি কিতাব দিয়েছি, তারা তা পাঠ করে যথার্থভাবে। তারাই তার প্রতি ঈমান আনে। আর যে তা অস্বীকার করে, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত”। [সূরা বাকারা: (১২১)] অপর আয়াতে তিনি ইরশাদ করেন:

﴿وَٱلَّذِينَ إِذَا ذُكِّرُواْ بِ‍َٔايَٰتِ رَبِّهِمۡ لَمۡ يَخِرُّواْ عَلَيۡهَا صُمّٗا وَعُمۡيَانٗا ٧٣﴾ [ الفرقان : ٧٣ ]

“আর যারা তাদের রবের আয়াতসমূহ স্মরণ করিয়ে দিলে অন্ধ ও বধিরদের মত পড়ে থাকে না”। [সূরা ফুরকান: (৭৩)]

আর আপনি যদি শুধু কুরআন তিলাওয়াত করেন, কিন্তু বুঝেন না, তাহলে কুরআন আপনার বিপক্ষের দলিল হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿وَمِنۡهُمۡ أُمِّيُّونَ لَا يَعۡلَمُونَ ٱلۡكِتَٰبَ إِلَّآ أَمَانِيَّ وَإِنۡ هُمۡ إِلَّا يَظُنُّونَ ٧٨﴾ [ البقرة : ٧٨ ]

“আর তাদের মধ্যে আছে নিরক্ষর, তারা মিথ্যা আকাঙ্ক্ষা ছাড়া কিতাবের কোন জ্ঞান রাখে না এবং তারা শুধুই ধারণা করে থাকে”। [সূরা বাকারা: (৭৮)]

আবু সা ‌‍‍ ‘ঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« لَتَتَّبِعُنَّ سَنَنَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ شِبْرًا بِشِبْرٍ وَذِرَاعًا بِذِرَاعٍ حَتَّى لَوْ دَخَلُوا فِى جُحْرِ ضَبٍّ لاَتَّبَعْتُمُوهُمْ » . قُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ آلْيَهُودَ وَالنَّصَارَى قَالَ « فَمَنْ » .

“তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তীদের আদর্শের অনুসরণ করবে এক বিঘত এক বিঘত করে ও এক হাত এক হাত করে, এমন কি তারা যদি গুঁই সাপের গর্তেও ঢুকে, তবুও তোমরা তাদের অনুসরণ করবে”। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল ইহুদি ও নাসারা? তিনি বললেন: “আর কারা”। হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম বুখারি [বুখারি, হাদিস নং: (৭৩২০), (খ.১৮/৩০৭)] ও ইমাম মুসলিম [মুসলিম, হাদিস নং: (৬৯৫২), (খ.৮/পৃ.৫৭)]।

আপনি যদি কুরআন পড়েন ও তাতে চিন্তা করেন, তাহলে কুরআন আপনার পক্ষের দলিল হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿كِتَٰبٌ أَنزَلۡنَٰهُ إِلَيۡكَ مُبَٰرَكٞ لِّيَدَّبَّرُوٓاْ ءَايَٰتِهِۦ وَلِيَتَذَكَّرَ أُوْلُواْ ٱلۡأَلۡبَٰبِ ٢٩﴾ [ص : ٢٩ ]

“আমি তোমার প্রতি নাযিল করেছি এক বরকতময় কিতাব, যাতে তারা এর আয়াতসমূহ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে এবং যাতে বুদ্ধিমানগণ উপদেশ গ্রহণ করে”। [সূরা সাদ: (২৯)]

আর আপনি যদি শুধু পড়েন, কিন্তু তাতে চিন্তা করা ত্যাগ করেন, তাহলে কুরআন আপনার বিপক্ষের দলিল হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿ أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ ٱلۡقُرۡءَانَۚ وَلَوۡ كَانَ مِنۡ عِندِ غَيۡرِ ٱللَّهِ لَوَجَدُواْ فِيهِ ٱخۡتِلَٰفٗا كَثِيرٗا ٨٢ ﴾ [ النساء : ٨٢ ]

“তারা কি কুরআন নিয়ে গবেষণা করে না? আর যদি তা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো পক্ষ থেকে হত, তবে অবশ্যই তারা এতে অনেক বৈপরীত্য দেখতে পেত”। [সূরা নিসা: (৮২)] অপর আয়াতে তিনি বলেন:

﴿ أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ ٱلۡقُرۡءَانَ أَمۡ عَلَىٰ قُلُوبٍ أَقۡفَالُهَآ ٢٤ ﴾ [ محمد : ٢٤ ]

“তবে কি তারা কুরআন নিয়ে গভীর চিন্তা-ভাবনা করে না? নাকি তাদের অন্তরসমূহে তালা রয়েছে”? [সূরা মুহাম্মদ: (২৪)]

আপনার নিকট যদি কুরআন পড়া হয়, আর আপনি তা মনোযোগসহ শ্রবণ করেন, তাহলে কুরআন আপনার পক্ষের দলিল হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿وَإِذَا قُرِئَ ٱلۡقُرۡءَانُ فَٱسۡتَمِعُواْ لَهُۥ وَأَنصِتُواْ لَعَلَّكُمۡ تُرۡحَمُونَ ٢٠٤﴾ [ الاعراف : ٢٠٣ ]

“আর যখন কুরআন পাঠ করা হয়, তখন তা মনোযোগ দিয়ে শোন এবং চুপ থাক, যাতে তোমরা রহমত লাভ কর”। [সূরা আরাফ: (২০৪)]

আর আপনার নিকট কুরআন পড়া হলে আপনি যদি মনোযোগসহ শ্রবণ না করেন, তাহলে আপনার বিপক্ষের দলিল হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿ وَإِذَا تُتۡلَىٰ عَلَيۡهِ ءَايَٰتُنَا وَلَّىٰ مُسۡتَكۡبِرٗا كَأَن لَّمۡ يَسۡمَعۡهَا كَأَنَّ فِيٓ أُذُنَيۡهِ وَقۡرٗاۖ فَبَشِّرۡهُ بِعَذَابٍ أَلِيمٍ ٧ ﴾ [ لقمان : ٧ ]

“আর তার কাছে যখন আমার আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন সে দম্ভভরে মুখ ফিরিয়ে নেয়, যেন সে শুনতে পায়নি তার দু’কানে যেন বধিরতা; সুতরাং তাকে যন্ত্রণাদায়ক আযাবের সুসংবাদ দাও”। [সূরা লুকমান: (৭)] অপর আয়াতে তিনি ইরশাদ করেন:

﴿ يَسۡمَعُ ءَايَٰتِ ٱللَّهِ تُتۡلَىٰ عَلَيۡهِ ثُمَّ يُصِرُّ مُسۡتَكۡبِرٗا كَأَن لَّمۡ يَسۡمَعۡهَاۖ فَبَشِّرۡهُ بِعَذَابٍ أَلِيمٖ ٨ ﴾ [ الجاثية : ٨ ]

“সে আল্লাহর আয়াতসমূহ শোনে-যা তার সামনে তিলাওয়াত করা হচ্ছে, তারপর সে ঔদ্ধত্যের সাথে অবিচল থাকে, যেন সে তা শুনতে পায়নি। অতএব তুমি তাকে এক যন্ত্রণাদায়ক আযাবের সুসংবাদ দাও”। [সূরা জাসিয়াহ: (৮)]

আপনি যদি কুরআনের উপর আমল করেন, তাহলে কুরআন আপনার পক্ষের দলিল হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿ قُلۡ ءَامِنُواْ بِهِۦٓ أَوۡ لَا تُؤۡمِنُوٓاْۚ إِنَّ ٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡعِلۡمَ مِن قَبۡلِهِۦٓ إِذَا يُتۡلَىٰ عَلَيۡهِمۡ يَخِرُّونَۤ لِلۡأَذۡقَانِۤ سُجَّدٗاۤ ١٠٧ وَيَقُولُونَ سُبۡحَٰنَ رَبِّنَآ إِن كَانَ وَعۡدُ رَبِّنَا لَمَفۡعُولٗا ١٠٨ وَيَخِرُّونَ لِلۡأَذۡقَانِ يَبۡكُونَ وَيَزِيدُهُمۡ خُشُوعٗا۩ ١٠٩ ﴾ [ الاسراء : ١٠٧، ١٠٩ ]

“বল, ‘তোমরা এতে ঈমান আন বা ঈমান না আন, নিশ্চয় এর পূর্বে যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে, তাদের কাছে যখন এটা পাঠ করা হয় তখন তারা সিজদাবনত হয়ে লুটিয়ে পড়ে। আর তারা বলে, ‘পবিত্র মহান আমাদের রব! আমাদের রবের ওয়াদা অবশ্যই কার্যকর হয়ে থাকে’। ‘আর তারা কাঁদতে কাঁদতে লুটিয়ে পড়ে এবং এটা তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে”। [সূরা ইসরা: (১০৭-১০৯)] অপর আয়াতে তিনি ইরশাদ করেন:

﴿ وَمِنَ ٱلَّيۡلِ فَتَهَجَّدۡ بِهِۦ نَافِلَةٗ لَّكَ عَسَىٰٓ أَن يَبۡعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامٗا مَّحۡمُودٗا ٧٩ ﴾ [ الاسراء : ٧٩ ]

“আর রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ আদায় কর তোমার অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে। আশা করা যায়, তোমার রব তোমাকে প্রশংসিত অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করবেন”। [সূরা ইসরা: (৭৯)]

নাউওয়াস ইবনে সাম‘আন থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:

« يُؤْتَى بِالْقُرْآنِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَأَهْلِهِ الَّذِينَ كَانُوا يَعْمَلُونَ بِهِ تَقْدُمُهُ سُورَةُ الْبَقَرَةِ وَآلُ عِمْرَانَ تُحَاجَّانِ عَنْ صَاحِبِهِمَا » .

“কিয়ামতের দিন কুরআন ও কুরআনের অনুসারীকে উপস্থিত করা হবে- যারা তার উপর আমল করত। সূরা বাকারা ও সূরা আলে-ইমরান এর অগ্রভাগে থাকবে, তারা উভয়ে তাদের ধারকদের পক্ষে তর্কে লিপ্ত হবে”। হাদিসটি ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেছেন। [সহি মুসলিম, হাদিস নং: (১৯১২), (খ.২/পৃ.১৯৭)]

আর আপনি যদি কুরআনের উপর আমল পরিত্যাগ করেন, তাহলে কুরআন আপনার বিপক্ষের দলিল হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿ وَٱتۡلُ عَلَيۡهِمۡ نَبَأَ ٱلَّذِيٓ ءَاتَيۡنَٰهُ ءَايَٰتِنَا فَٱنسَلَخَ مِنۡهَا فَأَتۡبَعَهُ ٱلشَّيۡطَٰنُ فَكَانَ مِنَ ٱلۡغَاوِينَ ١٧٥ وَلَوۡ شِئۡنَالَرَفَعۡنَٰهُ بِهَا وَلَٰكِنَّهُۥٓ أَخۡلَدَ إِلَى ٱلۡأَرۡضِ وَٱتَّبَعَ هَوَىٰهُۚ فَمَثَلُهُۥ كَمَثَلِ ٱلۡكَلۡبِ إِن تَحۡمِلۡ عَلَيۡهِ يَلۡهَثۡ أَوۡ تَتۡرُكۡهُ يَلۡهَثۚ ذَّٰلِكَ مَثَلُ ٱلۡقَوۡمِ ٱلَّذِينَ كَذَّبُواْ بِ‍َٔايَٰتِنَاۚ فَٱقۡصُصِ ٱلۡقَصَصَ لَعَلَّهُمۡ يَتَفَكَّرُونَ ١٧٦ ﴾ [ الاعراف : ١٧٤، ١٧٥ ]

“আর তুমি তাদের উপর সে ব্যক্তির সংবাদ পাঠ কর, যাকে আমি আমার আয়াতসমূহ দিয়েছিলাম। অতঃপর সে তা হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল এবং শয়তান তার পেছনে লেগেছিল। ফলে সে বিপথগামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গিয়েছিল। আর আমি ইচ্ছা করলে উক্ত নিদর্শনাবলীর মাধ্যমে তাকে অবশ্যই উচ্চ মর্যাদা দিতাম, কিন্তু সে পৃথিবীর প্রতি ঝুঁকে পড়েছে এবং নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করেছে। সুতরাং তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে কুকুরের মত। যদি তার উপর বোঝা চাপিয়ে দাও তাহলে সে জিহ্বা বের করে হাঁপাবে অথবা যদি তাকে ছেড়ে দাও তাহলেও সে জিহ্বা বের করে হাঁপাবে। এটি হচ্ছে সে কওমের দৃষ্টান্ত যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে। অতএব তুমি কাহিনী বর্ণনা কর, যাতে তারা চিন্তা করে”। [সূরা আরাফ: (১৭৫-১৭৬)] অপর আয়াতে তিনি ইরশাদ করেন:

﴿مَثَلُ ٱلَّذِينَ حُمِّلُواْ ٱلتَّوۡرَىٰةَ ثُمَّ لَمۡ يَحۡمِلُوهَا كَمَثَلِ ٱلۡحِمَارِ يَحۡمِلُ أَسۡفَارَۢاۚ بِئۡسَ مَثَلُ ٱلۡقَوۡمِ ٱلَّذِينَ كَذَّبُواْ بِ‍َٔايَٰتِ ٱللَّهِۚ وَٱللَّهُ لَا يَهۡدِي ٱلۡقَوۡمَ ٱلظَّٰلِمِينَ ٥﴾ [ الجمعة : ٥ ]

“যাদেরকে তাওরাতের দায়িত্বভার দেয়া হয়েছিল তারপর তারা তা বহন করেনি, তারা গাধার মত! যে বহু কিতাবের বোঝা বহন করে। সে সম্প্রদায়ের উপমা কতইনা নিকৃষ্ট, যারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে। আর আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে হিদায়েত করেন না”। [সূরা জুম‘আহ: (৫)]

আবু সা‘ঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« لَتَتَّبِعُنَّ سَنَنَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ شِبْرًا بِشِبْرٍ وَذِرَاعًا بِذِرَاعٍ حَتَّى لَوْ دَخَلُوا فِى جُحْرِ ضَبٍّ لاَتَّبَعْتُمُوهُمْ » . قُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ آلْيَهُودَ وَالنَّصَارَى قَالَ « فَمَنْ » .

“তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তীদের আদর্শের অনুসরণ করবে এক বিঘত এক বিঘত করে ও এক হাত এক হাত করে, এমন কি তারা যদি গুঁই সাপের গর্তেও ঢুকে, তবুও তোমরা তাদের অনুসরণ করবে”। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল ইহুদি ও নাসারা? তিনি বললেন: “আর কারা”। হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম বুখারি [বুখারি, হাদিস নং: (৭৩২০), (খ.১৮/৩০৭)] ও ইমাম মুসলিম [মুসলিম, হাদিস নং: (৬৯৫২), (খ.৮/পৃ.৫৭)]।

আপনি যদি কুরআন শিখেন ও মানুষকে শিক্ষা দেন, তাহলে কুরআন আপনার পক্ষের দলিল হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿ وَلَٰكِن كُونُواْ رَبَّٰنِيِّ‍ۧنَ بِمَا كُنتُمۡ تُعَلِّمُونَ ٱلۡكِتَٰبَ وَبِمَا كُنتُمۡ تَدۡرُسُونَ ٧٩ ﴾ [ ال عمران : ٧٩ ]

“বরং তোমরা রব্বানী হও, যেহেতু তোমরা কিতাব শিক্ষা দিতে এবং তা অধ্যয়ন করতে”। [সূরা আলে-ইমরান: (৭৯)] অপর আয়াতে তিনি ইরশাদ করেন:

﴿وَقُرۡءَانٗا فَرَقۡنَٰهُ لِتَقۡرَأَهُۥ عَلَى ٱلنَّاسِ عَلَىٰ مُكۡثٖ وَنَزَّلۡنَٰهُ تَنزِيلٗا ١٠٦﴾ [ الاسراء : ١٠٦ ]

“আর কুরআন আমি নাযিল করেছি কিছু কিছু করে, যেন তুমি তা মানুষের কাছে পাঠ করতে পার ধীরে ধীরে এবং আমি তা নাযিল করেছি পর্যায়ক্রমে”। [সূরা ইসরা: (১০৬)] অপর আয়াতে তিনি ইরশাদ করেন:

﴿ لَقَدۡ مَنَّ ٱللَّهُ عَلَى ٱلۡمُؤۡمِنِينَ إِذۡ بَعَثَ فِيهِمۡ رَسُولٗا مِّنۡ أَنفُسِهِمۡ يَتۡلُواْ عَلَيۡهِمۡ ءَايَٰتِهِۦ وَيُزَكِّيهِمۡ وَيُعَلِّمُهُمُ ٱلۡكِتَٰبَ وَٱلۡحِكۡمَةَ وَإِن كَانُواْ مِن قَبۡلُ لَفِي ضَلَٰلٖ مُّبِينٍ ١٦٤ ﴾ [ ال عمران : ١٦٤ ]

“অবশ্যই আল্লাহ মুমিনদের উপর অনুগ্রহ করেছেন, যখন তিনি তাদের মধ্য থেকে তাদের প্রতি একজন রাসূল পাঠিয়েছেন, যে তাদের কাছে তাঁর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করে আর তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয়। যদিও তারা ইতঃপূর্বে স্পষ্ট ভ্রান্তিতে ছিল”। [সূরা আলে-ইমরান: (১৬৪)] অপর আয়াতে তিনি ইরশাদ করেন:

﴿وَأُمِرۡتُ أَنۡ أَكُونَ مِنَ ٱلۡمُسۡلِمِينَ ٩١ وَأَنۡ أَتۡلُوَاْ ٱلۡقُرۡءَانَۖ فَمَنِ ٱهۡتَدَىٰ فَإِنَّمَا يَهۡتَدِي لِنَفۡسِهِۦۖ وَمَن ضَلَّ فَقُلۡ إِنَّمَآ أَنَا۠ مِنَ ٱلۡمُنذِرِينَ٩٢﴾ [ النمل 91-92]

“আর আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আমি যেন মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত হই। আর আমি যেন আল-কুরআন অধ্যয়ন করি, অতঃপর যে হিদায়েত লাভ করল সে নিজের জন্য হিদায়েত লাভ করল; আর যে পথভ্রষ্ট হল তাকে বল, ‘আমি তো সতর্ককারীদের অন্তর্ভুক্ত”। [সূরা নামাল: (৯১-৯২)] অপর আয়াতে তিনি ইরশাদ করেন:

﴿وَأَنزَلۡنَآ إِلَيۡكَ ٱلذِّكۡرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيۡهِمۡ وَلَعَلَّهُمۡ يَتَفَكَّرُونَ٤٤﴾ [ النحل : ٤٤ ]

“এবং তোমার প্রতি নাযিল করেছি কুরআন, যাতে তুমি মানুষের জন্য স্পষ্ট করে দিতে পার, যা তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে। আর যাতে তারা চিন্তা করে”। [সূরা নাহাল: (৪৪)]

উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ القُرْآنَ وَعَلَّمَهُ» .

“তোমাদের মধ্য সর্বোত্তম সে ব্যক্তি, যে কুরআন শিখেছে ও তা শিক্ষা দিয়েছে”। ইমাম বুখারি হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। [বুখারি, হাদিস নং: (৫০২৭), (খ.৬/১৯২)]

আর আপনি যদি কুরআন মানুষকে শিক্ষা না দেন, তাহলে কুরআন আপনার বিপক্ষের দলিল হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ يَكۡتُمُونَ مَآ أَنزَلۡنَا مِنَ ٱلۡبَيِّنَٰتِ وَٱلۡهُدَىٰ مِنۢ بَعۡدِ مَا بَيَّنَّٰهُ لِلنَّاسِ فِي ٱلۡكِتَٰبِ أُوْلَٰٓئِكَ يَلۡعَنُهُمُ ٱللَّهُ وَيَلۡعَنُهُمُ ٱللَّٰعِنُونَ ١٥٩ إِلَّا ٱلَّذِينَ تَابُواْ وَأَصۡلَحُواْ وَبَيَّنُواْ فَأُوْلَٰٓئِكَ أَتُوبُ عَلَيۡهِمۡ وَأَنَا ٱلتَّوَّابُ ٱلرَّحِيمُ ١٦٠﴾ [ البقرة : ١٥٩، ١٦٠ ]

“নিশ্চয় যারা গোপন করে সু-স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ ও হিদায়েত যা আমি নাযিল করেছি, কিতাবে মানুষের জন্য তা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করার পর, তাদেরকে আল্লাহ লা’নত করেন এবং লা’নতকারীগণও তাদেরকে লা’নত করে। তারা ছাড়া, যারা তওবা করেছে, শুধরে নিয়েছে এবং স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছে। অতএব, আমি তাদের তওবা কবুল করব। আর আমি তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু”। [সূরা বাকারা: (১৫৯-১৬০)] অপর আয়াতে তিনি ইরশাদ করেন:

﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَكۡتُمُونَ مَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ مِنَ ٱلۡكِتَٰبِ وَيَشۡتَرُونَ بِهِۦ ثَمَنٗا قَلِيلًا أُوْلَٰٓئِكَ مَا يَأۡكُلُونَ فِي بُطُونِهِمۡ إِلَّا ٱلنَّارَ وَلَا يُكَلِّمُهُمُ ٱللَّهُ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ وَلَا يُزَكِّيهِمۡ وَلَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٌ ١٧٤ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ ٱشۡتَرَوُاْ ٱلضَّلَٰلَةَ بِٱلۡهُدَىٰ وَٱلۡعَذَابَ بِٱلۡمَغۡفِرَةِۚ فَمَآ أَصۡبَرَهُمۡ عَلَى ٱلنَّارِ ١٧٥ ﴾ [ البقرة : ١٧٤، ١٧٥ ]

“নিশ্চয় যারা গোপন করে যে কিতাব আল্লাহ নাযিল করেছেন এবং এর বিনিময়ে সামান্য মূল্য গ্রহণ করে, তারা শুধু আগুনই তাদের পেটে ভর্তি করে। আর আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাদের সাথে কথা বলবেন না, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব। তারাই হিদায়াতের পরিবর্তে পথভ্রষ্টতা এবং মাগফিরাতের পরিবর্তে আযাব ক্রয় করেছে। আগুনের উপর তারা কতই না ধৈর্যশীল”! [সূরা বাকারা: (১৭৪-১৭৫)]

আপনি যদি পূর্ণ কুরআনের উপর ঈমান আনয়ন করেন, তাহলে কুরআন আপনার পক্ষের দলিল হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿وَتُؤۡمِنُونَ بِٱلۡكِتَٰبِ كُلِّهِۦ ١١٩ ﴾ [ ال عمران : ١١٩ ]

“এবং তোমরা পূর্ণ কিতাবের প্রতি ঈমান রাখ”। [সূরা আলে-ইমরান: (১১৯)]

আর আপনি যদি কুরআনের কতক অংশের উপর ঈমান আনয়ন করেন ও কতক অংশের উপর ঈমান ত্যাগ করেন, তাহলে কুরআন আপনার বিপক্ষের দলিল হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿أَفَتُؤۡمِنُونَ بِبَعۡضِ ٱلۡكِتَٰبِ وَتَكۡفُرُونَ بِبَعۡضٖۚ فَمَا جَزَآءُ مَن يَفۡعَلُ ذَٰلِكَ مِنكُمۡ إِلَّا خِزۡيٞ فِي ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَاۖ وَيَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ يُرَدُّونَ إِلَىٰٓ أَشَدِّ ٱلۡعَذَابِۗ وَمَا ٱللَّهُ بِغَٰفِلٍ عَمَّا تَعۡمَلُونَ ٨٥ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ ٱشۡتَرَوُاْ ٱلۡحَيَوٰةَ ٱلدُّنۡيَا بِٱلۡأٓخِرَةِۖ فَلَا يُخَفَّفُ عَنۡهُمُ ٱلۡعَذَابُ وَلَا هُمۡ يُنصَرُونَ ٨٦ ﴾ [ البقرة : ٨٥، ٨٦ ]

“তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশে ঈমান রাখ আর কিছু অংশ অস্বীকার কর? সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা তা করে দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনা ছাড়া তাদের কী প্রতিদান হতে পারে? আর কিয়ামতের দিনে তাদেরকে কঠিনতম আযাবে নিক্ষেপ করা হবে। আর তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে গাফিল নন। তারা আখিরাতের বিনিময়ে দুনিয়ার জীবনকে খরিদ করেছে। সুতরাং তাদের থেকে আযাব হালকা করা হবে না এবং তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না”। [সূরা বাকারা: (৮৫-৮৬)]

আপনি যদি কুরআনের মুতাশাবেহ আয়াতের উপর ঈমান এনে তার মুহকাম আয়াতের উপর আমল করেন, তাহলে কুরআন আপনার পক্ষের দলিল হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿ هُوَ ٱلَّذِيٓ أَنزَلَ عَلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ مِنۡهُ ءَايَٰتٞ مُّحۡكَمَٰتٌ هُنَّ أُمُّ ٱلۡكِتَٰبِ وَأُخَرُ مُتَشَٰبِهَٰتٞۖ فَأَمَّا ٱلَّذِينَ فِي قُلُوبِهِمۡ زَيۡغٞ فَيَتَّبِعُونَ مَا تَشَٰبَهَ مِنۡهُ ٱبۡتِغَآءَ ٱلۡفِتۡنَةِ وَٱبۡتِغَآءَ تَأۡوِيلِهِۦۖ وَمَا يَعۡلَمُ تَأۡوِيلَهُۥٓ إِلَّا ٱللَّهُۗ وَٱلرَّٰسِخُونَ فِي ٱلۡعِلۡمِ يَقُولُونَ ءَامَنَّا بِهِۦ كُلّٞ مِّنۡ عِندِ رَبِّنَاۗ وَمَا يَذَّكَّرُ إِلَّآ أُوْلُواْ ٱلۡأَلۡبَٰبِ ٧ ﴾ [ ال عمران : ٧ ]

“তিনিই তোমার উপর কিতাব নাযিল করেছেন, তার মধ্যে আছে মুহকাম আয়াতসমূহ। সেগুলো কিতাবের মূল, আর অন্যগুলো মুতাশাবেহ্। ফলে যাদের অন্তরে রয়েছে সত্যবিমুখ প্রবণতা, তারা ফিতনার উদ্দেশ্যে এবং ভুল ব্যাখ্যার অনুসন্ধানে মুতাশাবিহ্ আয়াতগুলোর পেছনে লেগে থাকে। অথচ আল্লাহ ছাড়া কেউ তার ব্যাখ্যা জানে না। আর যারা জ্ঞানে পরিপক্ব, তারা বলে, আমরা এগুলোর প্রতি ঈমান আনলাম, সবগুলো আমাদের রবের পক্ষ থেকে। আর বিবেক সম্পন্নরাই উপদেশ গ্রহণ করে”। [সূরা আলে-ইমরান: (৭)]

আর আপনি যদি কুরআনের মুতাশাবেহ আয়াতের অনুসরণ করেন, তাহলে কুরআন আপনার বিপক্ষের দলিল হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿ فَأَمَّا ٱلَّذِينَ فِي قُلُوبِهِمۡ زَيۡغٞ فَيَتَّبِعُونَ مَا تَشَٰبَهَ مِنۡهُ ٱبۡتِغَآءَ ٱلۡفِتۡنَةِ وَٱبۡتِغَآءَ تَأۡوِيلِهِۦۖ وَمَا يَعۡلَمُ تَأۡوِيلَهُۥٓ إِلَّا ٱللَّهُۗ ٧ ﴾ [ ال عمران : ٧ ]

“আর যাদের অন্তরে রয়েছে সত্যবিমুখ প্রবণতা, তারা ফিতনার উদ্দেশ্যে এবং ভুল ব্যাখ্যার অনুসন্ধানে মুতাশাবিহ্ আয়াতগুলোর পেছনে লেগে থাকে। অথচ আল্লাহ ছাড়া কেউ তার ব্যাখ্যা জানে না”। [সূরা আলে-ইমরান: (৭)]

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্র আয়াত তিলাওয়াত শেষে বলেন:

« إِذَا رَأَيْتِ الَّذِينَ يَتَّبِعُونَ مَا تَشَابَهَ مِنْهُ فَأُولَئِكِ الَّذِينَ سَمَّى اللَّهُ فَاحْذَرُوهُمْ » .

“যখন তাদেরকে দেখ, যারা কুরআনের মুতাশাবেহ আয়াতের অনুসরণ করে, [মনে রেখ] তাদেরই নাম নিয়েছেন আল্লাহ তা‘আলা [এখানে], অতএব তাদের থেকে সতর্ক থাক”। হাদিসটি ইমাম বুখারি [বুখারি, হাদিস নং: (৪৫৪৭), (খ.১১/পৃ.১০৩)] ও ইমাম মুসলিম [মুসলিম, হাদিস নং: (৬৯৪৬), (খ.৮/পৃ.৫৬)] বর্ণনা করেছেন।

আপনি যদি এরূপ হন যে, আপনাকে কুরআন দ্বারা উপদেশ দেওয়া হলে আপনি উপদেশ গ্রহণ করেন, তাহলে কুরআন আপনার পক্ষের দলিল হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿فَذَكِّرۡ بِٱلۡقُرۡءَانِ مَن يَخَافُ وَعِيدِ ٤٥﴾ [ق: ٤٥ ]

“সুতরাং যে আমার শাস্তিকে ভয় করে তাকে কুরআনের সাহায্যে উপদেশ দাও”। [সূরা ক্বাফ: (৪৫)] অপর আয়াতে তিনি ইরশাদ করেন:

﴿وَإِنَّهُۥ لَتَذۡكِرَةٞ لِّلۡمُتَّقِينَ ٤٨ وَإِنَّا لَنَعۡلَمُ أَنَّ مِنكُم مُّكَذِّبِينَ ٤٩﴾ [ الحاقة : ٤٨، ٤٩ ]

“আর এটি তো মুত্তাকীদের জন্য এক নিশ্চিত উপদেশ। আর আমি অবশ্যই জানি যে, তোমাদের মধ্যে কতক রয়েছে মিথ্যারোপকারী”। [সূরা হাক্কাহ: (৪৮-৪৯)] অপর আয়াতে তিনি ইরশাদ করেন:

﴿ كَلَّآ إِنَّهُۥ تَذۡكِرَةٞ ٥٤ ﴾ [ المدثر : ٥٤ ]

“কখনও না! এটি তো উপদেশ মাত্র”। [সূরা মুদ্দাসসির: (৫৪)]

আর আপনি যদি কুরআন থেকে উপদেশ গ্রহণ না করেন, তাহলে কুরআন আপনার বিপক্ষের দলিল হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿ فَمَا لَهُمۡ عَنِ ٱلتَّذۡكِرَةِ مُعۡرِضِينَ ٤٩ كَأَنَّهُمۡ حُمُرٞ مُّسۡتَنفِرَةٞ ٥٠ فَرَّتۡ مِن قَسۡوَرَةِۢ ٥١ ﴾ [ المدثر : ٤٩، ٥١ ]

“আর তাদের কী হয়েছে যে, তারা উপদেশ বাণী হতে বিমুখ? তারা যেন ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পলায়নরত বন্য গাধা, যারা সিংহের ভয়ে পলায়ন করেছে”। [সূরা মুদ্দাসসির: (৪৯-৫১)] অপর আয়াতে তিনি ইরশাদ করেন:

﴿وَلَقَدۡ صَرَّفۡنَا فِي هَٰذَا ٱلۡقُرۡءَانِ لِيَذَّكَّرُواْ وَمَا يَزِيدُهُمۡ إِلَّا نُفُورٗا٤١﴾ [ الاسراء : ٤١ ]

“আর অবশ্যই আমি এ কুরআনে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছি, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে; কিন্তু তা কেবল তাদের বিমুখতাই বৃদ্ধি করে”। [সূরা ইসরা: (৪১)]

আপনি যদি কুরআনের মাধ্যমে মানুষের মাঝে ফয়সালা করেন, তাহলে কুরআন আপনার পক্ষের দলিল হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿وَأَنِ ٱحۡكُم بَيۡنَهُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ وَلَا تَتَّبِعۡ أَهۡوَآءَهُمۡ وَٱحۡذَرۡهُمۡ أَن يَفۡتِنُوكَ عَنۢ بَعۡضِ مَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ إِلَيۡكَۖ فَإِن تَوَلَّوۡاْ فَٱعۡلَمۡ أَنَّمَا يُرِيدُ ٱللَّهُ أَن يُصِيبَهُم بِبَعۡضِ ذُنُوبِهِمۡۗ وَإِنَّ كَثِيرٗا مِّنَ ٱلنَّاسِ لَفَٰسِقُونَ ٤٩﴾ [ المائ‍دة : ٤٩ ]

“আর তাদের মধ্যে ফয়সালা কর, যা আল্লাহ নাযিল করেছেন তার মাধ্যমে এবং তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। আর তাদের থেকে সতর্ক থাক যে, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তার কিছু থেকে তারা তোমাকে বিচ্যুত করবে। অতঃপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে জেনে রাখ যে, আল্লাহ তো কেবল তাদেরকে তাদের কিছু পাপের কারণেই আযাব দিতে চান। আর মানুষের অনেকেই ফাসিক”। [সূরা মায়েদাহ: (৪৯)]

আর আপনি যদি কুরআন ব্যতীত অন্য কোনো বিধান দ্বারা ফয়সালা করেন, তাহলে কুরআন আপনার বিপক্ষের দলিল হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿ وَمَن لَّمۡ يَحۡكُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡكَٰفِرُونَ ٤٤ ﴾ [ المائ‍دة : ٤٤ ]

“আর আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার মাধ্যমে যারা ফয়সালা করে না, তারাই কাফির”। [সূরা মায়েদাহ: (৪৪)] অপর আয়াতে তিনি ইরশাদ করেন:

﴿ وَمَن لَّمۡ يَحۡكُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلظَّٰلِمُونَ ٤٥ ﴾ [ المائ‍دة : ٤٥ ]

“আর আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার মাধ্যমে যারা ফয়সালা করে না, তারাই যালিম”। [সূরা মায়েদাহ: (৪৪)] অপর আয়াতে তিনি ইরশাদ করেন:

﴿وَمَن لَّمۡ يَحۡكُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡفَٰسِقُونَ ٤٧ ﴾ [ المائ‍دة : ٤٧ ]

“আর আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার মাধ্যমে যারা ফয়সালা করে না, তারাই ফাসিক”। [সূরা মায়েদাহ: (৪৪)]

আপনি যদি কুরআনের ফয়সালা দাবি করেন, তাহলে কুরআন আপনার পক্ষের দলিল হবে, আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿ وَمَا ٱخۡتَلَفۡتُمۡ فِيهِ مِن شَيۡءٖ فَحُكۡمُهُۥٓ إِلَى ٱللَّهِۚ ١٠ ﴾ [ الشورى : ١٠ ]

“আর যে কোনো বিষয়ে তোমরা মত বিরোধ কর, তার ফয়সালা আল্লাহর কাছে”। [সূরা শুরা: (১০)] অপর আয়াতে তিনি ইরশাদ করেন:

﴿ فَإِن تَنَٰزَعۡتُمۡ فِي شَيۡءٖ فَرُدُّوهُ إِلَى ٱللَّهِ وَٱلرَّسُولِ إِن كُنتُمۡ تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِۚ ذَٰلِكَ خَيۡرٞ وَأَحۡسَنُ تَأۡوِيلًا ٥٩ ﴾ [ النساء : ٥٩ ]

“অতঃপর কোন বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে ফেরাও-যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখ। এটি উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর”। [সূরা নিসা: (৫৯)] অপর আয়াতে তিনি ইরশাদ করেন:

﴿ إِنَّمَا كَانَ قَوۡلَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ إِذَا دُعُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ لِيَحۡكُمَ بَيۡنَهُمۡ أَن يَقُولُواْ سَمِعۡنَا وَأَطَعۡنَاۚ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ٥١ ﴾ [ النور : ٥١ ]

“মুমিনদেরকে যখন আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি এ মর্মে আহ্বান করা হয় যে, তিনি তাদের মধ্যে বিচার, মীমাংসা করবেন, তাদের কথা তো এই হয় যে, তখন তারা বলে: ‘আমরা শুনলাম ও আনুগত্য করলাম’। আর তারাই সফলকাম”। [সূরা নূর: (৫১)]

আর আপনি যদি কুরআনের ফয়সালা ব্যতীত অন্য কোনো ফয়সালা দাবি করেন, তাহলে কুরআন আপনার বিপক্ষের দলিল হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿أَفَحُكۡمَ ٱلۡجَٰهِلِيَّةِ يَبۡغُونَۚ وَمَنۡ أَحۡسَنُ مِنَ ٱللَّهِ حُكۡمٗا لِّقَوۡمٖ يُوقِنُونَ٥٠﴾ [ المائ‍دة : ٥٠ ]

“তারা কি তবে জাহিলিয়্যাতের বিধান চায়? আর নিশ্চিত বিশ্বাসী কওমের জন্য বিধান প্রদানে আল্লাহর চেয়ে কে অধিক উত্তম”? [সূরা মায়েদাহ: (৫০)] অপর আয়াতে তিনি ইরশাদ করেন:

﴿ أَلَمۡ تَرَ إِلَى ٱلَّذِينَ يَزۡعُمُونَ أَنَّهُمۡ ءَامَنُواْ بِمَآ أُنزِلَ إِلَيۡكَ وَمَآ أُنزِلَ مِن قَبۡلِكَ يُرِيدُونَ أَن يَتَحَاكَمُوٓاْ إِلَى ٱلطَّٰغُوتِ وَقَدۡ أُمِرُوٓاْ أَن يَكۡفُرُواْ بِهِۦۖ وَيُرِيدُ ٱلشَّيۡطَٰنُ أَن يُضِلَّهُمۡ ضَلَٰلَۢا بَعِيدٗا ٦٠ ﴾ [ النساء : ٦٠ ]

“তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা দাবী করে যে, নিশ্চয় তারা ঈমান এনেছে তার উপর, যা নাযিল করা হয়েছে তোমার প্রতি এবং যা নাযিল করা হয়েছে তোমার পূর্বে। তারা তাগূতের কাছে বিচার নিয়ে যেতে চায় অথচ তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাকে অস্বীকার করতে। আর শয়তান চায় তাদেরকে ঘোর বিভ্রান্তিতে পতিত করতে”। [সূরা নিসা: (৬০)] অপর আয়াতে তিনি ইরশাদ করেন:

﴿ وَإِذَا دُعُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ لِيَحۡكُمَ بَيۡنَهُمۡ إِذَا فَرِيقٞ مِّنۡهُم مُّعۡرِضُونَ ٤٨ وَإِن يَكُن لَّهُمُ ٱلۡحَقُّ يَأۡتُوٓاْ إِلَيۡهِ مُذۡعِنِينَ ٤٩ أَفِي قُلُوبِهِم مَّرَضٌ أَمِ ٱرۡتَابُوٓاْ أَمۡ يَخَافُونَ أَن يَحِيفَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِمۡ وَرَسُولُهُۥۚ بَلۡ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلظَّٰلِمُونَ ٥٠ ﴾ [ النور : ٤٨، ٥٠ ]

“আর যখন তাদেরকে আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি এ মর্মে আহ্বান করা হয় যে, তিনি তাদের মধ্যে বিচার-মীমাংসা করবেন, তখন তাদের একটি দল মুখ ফিরিয়ে নেয়, কিন্তু যদি সত্য তাদের পক্ষে থাকে, তাহলে তারা তার কাছে একান্ত বিনীতভাবে ছুটে আসে। তাদের অন্তরে কি ব্যাধি রয়েছে? নাকি তারা সন্দেহ পোষণ করে, না তারা ভয় করে যে, আল্লাহ ও তার রাসূল তাদের উপর যুলম করবেন? বরং তারাই তো যালিম”। [সূরা নূর: (৪৮-৫০)]

আপনি যদি শুধু কুরআনের অনুসরণ করেন, তাহলে কুরআন আপনার পক্ষের দলিল হবে। আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

﴿وَهَٰذَا كِتَٰبٌ أَنزَلۡنَٰهُ مُبَارَكٞ فَٱتَّبِعُوهُ وَٱتَّقُواْ لَعَلَّكُمۡ تُرۡحَمُونَ ١٥٥﴾ [ الانعام : ١٥٥ ]

“আর এটি কিতাব- যা আমি নাযিল করেছি- বরকতময়, সুতরাং তোমরা তার অনুসরণ কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, যাতে তোমরা রহমত প্রাপ্ত হও”। [সূরা আনআম: (১৫৫)]

আর আপনি যদি কুরআনের সাথে অন্য কিছুর অনুসরণ করেন, তাহলে কুরআন আপনার বিপক্ষের দলিল হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿ أَوَ لَمۡ يَكۡفِهِمۡ أَنَّآ أَنزَلۡنَا عَلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ يُتۡلَىٰ عَلَيۡهِمۡۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَرَحۡمَةٗ وَذِكۡرَىٰ لِقَوۡمٖ يُؤۡمِنُونَ ٥١ ﴾ [ العنكبوت : ٥١ ]

“এটা কি তাদের জন্য যথেষ্ট নয় যে, নিশ্চয় আমি তোমার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি, যা তাদের নিকট তিলাওয়াত করা হয়? নিশ্চয় এর মধ্যে রহমত ও উপদেশ রয়েছে সেই কওমের জন্য, যারা ঈমান আনে”। [সূরা আনকাবুত: (৫১)]

আপনি যদি আল্লাহকে এবং আল্লাহর দীন ও নবীকে জানার ক্ষেত্রে কুরআনের অনুসরণ করেন, তাহলে কুরআন আপনার পক্ষের দলিল হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿ فَمَنِ ٱتَّبَعَ هُدَايَ فَلَا يَضِلُّ وَلَا يَشۡقَىٰ ١٢٣ ﴾ [ طه : ١٢٣ ]

“অতএব যে আমার হিদায়াতের অনুসরণ করবে সে বিপথগামী হবে না এবং দুর্ভাগাও হবে না”। [সূরা ত্বহা: (১২৩)] অপর আয়াতে তিনি ইরশাদ করেন:

﴿ الٓرۚ كِتَٰبٌ أَنزَلۡنَٰهُ إِلَيۡكَ لِتُخۡرِجَ ٱلنَّاسَ مِنَ ٱلظُّلُمَٰتِ إِلَى ٱلنُّورِ بِإِذۡنِ رَبِّهِمۡ إِلَىٰ صِرَٰطِ ٱلۡعَزِيزِ ٱلۡحَمِيدِ ١ ﴾ [ ابراهيم : ١ ]

“আলিফ-লাম-রা; এই কিতাব, যা আমি তোমার প্রতি নাযিল করেছি, যাতে তুমি মানুষকে তাদের রবের অনুমতিক্রমে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আন, পরাক্রমশালী সর্ব প্রশংসিতের পথের দিকে”। [সূরা ইবরাহিম: (১)]

জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:

« وَقَدْ تَرَكْتُ فِيكُمْ مَا لَنْ تَضِلُّوا بَعْدَهُ إِنْ اعْتَصَمْتُمْ بِهِ كِتَابُ اللَّهِ » .

“আমি তোমাদের মাঝে এমন বস্তু রেখে দিয়েছি, তার পরে তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না যদি তা আঁকড়ে ধর, [আর তা হচ্ছে] আল্লাহর কিতাব”। হাদিসটি ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেছেন। [মুসলিম, হাদিস নং: (২১৩৭), (খ.৬/পৃ.২৪৫)]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« تَرَكْتُ فِيكُمْ أَمْرَيْنِ لَنْ تَضِلُّوا مَا تَمَسَّكْتُمْ بِهِمَا كِتَابَ اللَّهِ وَسُنَّةَ نَبِيِّهِ » . أخرجه مالك مرسلا والحاكم مسندا وصححه .

“আমি তোমাদের মাঝে দু’টি বস্তু রেখে দিয়েছি, যতক্ষণ তোমরা সেগুলো আঁকড়ে থাকবে কখনো গোমরাহ হবে না: আল্লাহর কিতাব ও তার নবীর সুন্নত”। হাদিসটি ইমাম মালেক [মুয়াত্তা মালেক, হাদিস নং: (১৩৯৫), (খ.৫/পৃ.৩৭১)] ‘মুরসাল’ ও ইমাম হাকেম ‘মুসনাদ’ বর্ণনা করেছেন, এবং তিনি সহি বলেছেন।

আর আপনি যদি আল্লাহকে এবং আল্লাহর দীন ও নবীকে জানার ক্ষেত্রে কুরআন ত্যাগ করে শয়তানের অনুসরণ করেন, তাহলে কুরআন আপনার বিপক্ষের দলিল হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يُجَٰدِلُ فِي ٱللَّهِ بِغَيۡرِ عِلۡمٖ وَيَتَّبِعُ كُلَّ شَيۡطَٰنٖ مَّرِيدٖ ٣ كُتِبَ عَلَيۡهِ أَنَّهُۥ مَن تَوَلَّاهُ فَأَنَّهُۥ يُضِلُّهُۥ وَيَهۡدِيهِ إِلَىٰ عَذَابِ ٱلسَّعِيرِ ٤﴾ [ الحج : ٣، ٤ ]

“মানুষের মধ্যে কতক আল্লাহ সম্পর্কে তর্ক-বিতর্ক করে না জেনে এবং সে অনুসরণ করে প্রত্যেক বিদ্রোহী শয়তানের। তার সম্পর্কে নির্ধারণ করা হয়েছে যে, যে তার সাথে বন্ধুত্ব করবে সে অবশ্যই তাকে পথভ্রষ্ট করবে এবং তাকে প্রজ্বলিত আগুনের শাস্তির দিকে পরিচালিত করবে”। [সূরা হজ্ব: (৩-৪)] অপর আয়াতে তিনি ইরশাদ করেন:

﴿ وَلَمَّا جَآءَهُمۡ رَسُولٞ مِّنۡ عِندِ ٱللَّهِ مُصَدِّقٞ لِّمَا مَعَهُمۡ نَبَذَ فَرِيقٞ مِّنَ ٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡكِتَٰبَ كِتَٰبَ ٱللَّهِ وَرَآءَ ظُهُورِهِمۡ كَأَنَّهُمۡ لَا يَعۡلَمُونَ ١٠١ وَٱتَّبَعُواْ مَا تَتۡلُواْ ٱلشَّيَٰطِينُ ١٠٢ ﴾ [ البقرة : ١٠١، ١٠٢ ]

“আর যখন তাদের নিকট আল্লাহর কাছ থেকে একজন রাসূল এলো, তাদের সাথে যা আছে তা সমর্থন করে, তখন আহলে কিতাবের একটি দল আল্লাহর কিতাবকে তাদের পেছনে ফেলে দিল, এভাবে যে, মনে হয় যেন তারা জানে না। আর তারা অনুসরণ করেছে, যা শয়তানরা পাঠ করত”। [সূরা বাকারা: (১০১-১০২)]

অনুরূপ আপনি যদি আল্লাহকে এবং আল্লাহর দীন ও নবীকে জানার ক্ষেত্রে কুরআন ত্যাগ করে বিবেকের অনুসরণ করেন, তাহলে কুরআন আপনার বিপক্ষের দলিল হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿ وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يُجَٰدِلُ فِي ٱللَّهِ بِغَيۡرِ عِلۡمٖ وَلَا هُدٗى وَلَا كِتَٰبٖ مُّنِيرٖ ٨ ثَانِيَ عِطۡفِهِۦ لِيُضِلَّ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِۖ لَهُۥ فِي ٱلدُّنۡيَا خِزۡيٞۖ وَنُذِيقُهُۥ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ عَذَابَ ٱلۡحَرِيقِ ٩ ﴾ [ الحج : ٨، ٩ ]

“আর মানুষের মধ্যে কতক আল্লাহ সম্পর্কে বিতর্ক করে কোন জ্ঞান ছাড়া, কোন হিদায়াত ছাড়া এবং দীপ্তিমান কিতাব ছাড়া। সে বিতর্ক করে ঘাড় বাঁকিয়ে, মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে ভ্রষ্ট করার উদ্দেশ্যে, তার জন্য রয়েছে দুনিয়াতে লাঞ্ছনা এবং কিয়ামতের দিন আমি তাকে দহন যন্ত্রণা আস্বাদন করাব”। [সূরা হজ্ব: (৮-৯)]

অনুরূপ আপনি যদি আল্লাহকে এবং আল্লাহর দীন ও নবীকে জানার ক্ষেত্রে কুরআন ত্যাগ করে প্রবৃত্তির অনুসরণ করেন, তাহলে কুরআন আপনার বিপক্ষের দলিল হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿ وَلَا تَتَّبِعِ ٱلۡهَوَىٰ فَيُضِلَّكَ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَضِلُّونَ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ لَهُمۡ عَذَابٞ شَدِيدُۢ بِمَا نَسُواْ يَوۡمَ ٱلۡحِسَابِ ٢٦ ﴾ [ص : ٢٦ ]

“অতএব তুমি মানুষের মধ্যে ন্যায়বিচার কর আর প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না, কেননা তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করবে। নিশ্চয় যারা আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হয় তাদের জন্য কঠিন আযাব রয়েছে। কারণ তারা হিসাব দিবসকে ভুলে গিয়েছিল”। [সূরা সাদ: (২৬)] অপর আয়াতে তিনি ইরশাদ করেন:

﴿وَإِنَّ كَثِيرٗا لَّيُضِلُّونَ بِأَهۡوَآئِهِم بِغَيۡرِ عِلۡمٍۚ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعۡلَمُ بِٱلۡمُعۡتَدِينَ١١٩﴾ [ الانعام : ١١٩ ]

“এবং নিশ্চয় অনেকে না জেনে তাদের খেয়াল-খুশি দ্বারা পথভ্রষ্ট করে। নিশ্চয় তোমার রব সীমালঙ্ঘনকারীদের সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত”। [সূরা আনআম: (১১৯)] অপর আয়াতে তিনি ইরশাদ করেন:

﴿فَإِن لَّمۡ يَسۡتَجِيبُواْ لَكَ فَٱعۡلَمۡ أَنَّمَا يَتَّبِعُونَ أَهۡوَآءَهُمۡۚ وَمَنۡ أَضَلُّ مِمَّنِ ٱتَّبَعَ هَوَىٰهُ بِغَيۡرِ هُدٗى مِّنَ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَهۡدِي ٱلۡقَوۡمَ ٱلظَّٰلِمِينَ ٥٠﴾ [ القصص : ٥٠ ]

“অতঃপর তারা যদি তোমার আহবানে সাড়া না দেয়, তাহলে জেনে রাখ, তারা তো নিজদের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করে। আর আল্লাহর দিকনির্দেশনা ছাড়া যে নিজের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করে তার চেয়ে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে? নিশ্চয় আল্লাহ যালিম কওমকে হিদায়াত করেন না”। [সূরা কাসাস: (৫০)]

অনুরূপ আপনি যদি আল্লাহকে এবং আল্লাহর দীন ও নবীকে জানার ক্ষেত্রে কুরআন ত্যাগ করে মানুষের মতামত অনুসরণ করেন, তাহলে কুরআন আপনার বিপক্ষের দলিল হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿ إِن يَتَّبِعُونَ إِلَّا ٱلظَّنَّ وَمَا تَهۡوَى ٱلۡأَنفُسُۖ وَلَقَدۡ جَآءَهُم مِّن رَّبِّهِمُ ٱلۡهُدَىٰٓ ٢٣﴾ [ النجم : ٢٣ ]

“তারা তো কেবল অনুমান এবং নিজেরা যা চায়, তার অনুসরণ করে। অথচ তাদের কাছে তাদের রবের পক্ষ থেকে হিদায়াত এসেছে”। [সূরা নাজম: (২৩)] অপর আয়াতে তিনি ইরশাদ করেন:

﴿ وَمَا يَتَّبِعُ أَكۡثَرُهُمۡ إِلَّا ظَنًّاۚ إِنَّ ٱلظَّنَّ لَا يُغۡنِي مِنَ ٱلۡحَقِّ شَيۡ‍ًٔاۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلِيمُۢ بِمَا يَفۡعَلُونَ ٣٦ ﴾ [ يونس : ٣٦ ]

“আর তাদের অধিকাংশ কেবল ধারণার অনুসরণ করে। নিশ্চয় সত্যের বিপরীতে ধারণা কোন কার্যকারিতা রাখে না। তারা যা করে সে সম্পর্কে নিশ্চয় আল্লাহ সম্যক অবগত”। [সূরা ইউনুস: (৩৬)]

আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:

« إِنَّ اللَّهَ لَا يَنْزِعُ الْعِلْمَ بَعْدَ أَنْ أَعْطَاكُمُوهُ انْتِزَاعًا وَلَكِنْ يَنْتَزِعُهُ مِنْهُمْ مَعَ قَبْضِ الْعُلَمَاءِ بِعِلْمِهِمْ فَيَبْقَى نَاسٌ جُهَّالٌ يُسْتَفْتَوْنَ فَيُفْتُونَ بِرَأْيِهِمْ فَيُضِلُّونَ وَيَضِلُّونَ » .

“নিশ্চয় তোমাদেরকে ইলম দান করার পর আল্লাহ ছিনিয়ে নেওয়ার মত করে তা উঠিয়ে নিবেন না, তবে আলেমদেরকে তাদের ইলমের সাথে উঠিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে তিনি তা উঠিয়ে নিবেন, ফলে জাহেল মানুষেরা অবশিষ্ট থাকবে, তাদের নিকট জানতে চাওয়া হবে, তারা নিজের ধারণা থেকে ফাতওয়া দিবে, ফলে তারা গোমরাহ করবে ও গোমরাহ হবে”। হাদিসটি ইমাম বুখারি বর্ণনা করেছেন। [বুখারি, হাদিস নং: (৭৩০৭), (খ.১৮/পৃ.২৮৮)]

অনুরূপ আপনি যদি আল্লাহকে এবং আল্লাহর দীন ও নবীকে জানার ক্ষেত্রে কুরআন ত্যাগ করে ফাসেক আলেম ও ইবাদতকারীদের কথা, কর্ম ও জীবনী অনুসরণ করেন, তাহলে কুরআন আপনার বিপক্ষের দলিল হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿وَلَا تَتَّبِعۡ أَهۡوَآءَهُمۡ وَٱحۡذَرۡهُمۡ أَن يَفۡتِنُوكَ عَنۢ بَعۡضِ مَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ إِلَيۡكَۖ ٤٩﴾ [ المائ‍دة : ٤٩ ]

“এবং তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। আর তাদের থেকে সতর্ক থাক যে, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তার কিছু থেকে তারা তোমাকে বিচ্যুত করবে”। [সূরা মায়েদাহ: (৪৯)] অপর আয়াতে তিনি ইরশাদ করেন:

﴿وَلَا تَتَّبِعُوٓاْ أَهۡوَآءَ قَوۡمٖ قَدۡ ضَلُّواْ مِن قَبۡلُ وَأَضَلُّواْ كَثِيرٗا وَضَلُّواْ عَن سَوَآءِ ٱلسَّبِيلِ ٧٧ ﴾ [ المائ‍دة : ٧٧ ]

“এবং এমন কওমের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না, যারা পূর্বে পথভ্রষ্ট হয়েছে, আর অনেককে পথভ্রষ্ট করেছে এবং সোজা পথ বিচ্যুত হয়েছে”। [সূরা মায়েদাহ: (৭৭)] অপর আয়াতে তিনি ইরশাদ করেন:

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِنَّ كَثِيرٗا مِّنَ ٱلۡأَحۡبَارِ وَٱلرُّهۡبَانِ لَيَأۡكُلُونَ أَمۡوَٰلَ ٱلنَّاسِ بِٱلۡبَٰطِلِ وَيَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِۗ ٣٤﴾ [ سورة التوبة : ٣٤ ]

“হে ঈমানদারগণ, নিশ্চয় পণ্ডিত ও সংসার বিরাগীদের অনেকেই মানুষের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে, আর তারা আল্লাহর পথে বাধা দেয়”। [সূরা তাওবা: (৩৪)]

অনুরূপ আপনি যদি আল্লাহকে এবং আল্লাহর দীন ও নবীকে জানার ক্ষেত্রে কুরআন ত্যাগ করে নেককার আলেম ও ইবাদতকারীদের কথা, কর্ম ও জীবনী অনুসরণ করেন, তাহলে কুরআন আপনার বিপক্ষের দলিল হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿ٱتَّخَذُوٓاْ أَحۡبَارَهُمۡ وَرُهۡبَٰنَهُمۡ أَرۡبَابٗا مِّن دُونِ ٱللَّهِ وَٱلۡمَسِيحَ ٱبۡنَ مَرۡيَمَ وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُوٓاْ إِلَٰهٗا وَٰحِدٗاۖ لَّآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَۚ سُبۡحَٰنَهُۥ عَمَّا يُشۡرِكُونَ ٣١﴾ [ سورة التوبة : ٣١ ]

“তারা আল্লাহকে ছেড়ে তাদের পণ্ডিত ও সংসার বিরাগীদের রব হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং মারইয়ামপুত্র মাসীহকেও। অথচ তারা এক ইলাহের ইবাদত করার জন্যই আদিষ্ট হয়েছে, তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। তারা যে শরীক করে তিনি তা থেকে পবিত্র”। [সূরা তাওবা: (৩১)]

আবু সায়িদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« لَتَتَّبِعُنَّ سَنَنَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ شِبْرًا بِشِبْرٍ وَذِرَاعًا بِذِرَاعٍ حَتَّى لَوْ دَخَلُوا فِى جُحْرِ ضَبٍّ لاَتَّبَعْتُمُوهُمْ » . قُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ آلْيَهُودَ وَالنَّصَارَى قَالَ « فَمَنْ » .

“তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তীদের আদর্শের অনুসরণ করবে বিঘতে বিঘতে ও হাতে হাতে, এমন কি তারা যদি গুঁই সাপের গর্তেও ঢুকে, তবুও তোমরা তাদের অনুসরণ করবে”। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল ইহুদি ও নাসারা? তিনি বললেন: “আর কারা”। হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম বুখারি [বুখারি, হাদিস নং: (৭৩২০), (খ.১৮/৩০৭)] ও ইমাম মুসলিম [মুসলিম, হাদিস নং: (৬৯৫২), (খ.৮/পৃ.৫৭)]।

অনুরূপ আপনি যদি আল্লাহকে এবং আল্লাহর দীন ও নবীকে জানার ক্ষেত্রে কুরআন ত্যাগ করে নেতৃবর্গ ও প্রভাবশালীদের কথা, কর্ম ও জীবনী অনুসরণ করেন, তাহলে কুরআন আপনার বিপক্ষের দলিল হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿ يَوۡمَ تُقَلَّبُ وُجُوهُهُمۡ فِي ٱلنَّارِ يَقُولُونَ يَٰلَيۡتَنَآ أَطَعۡنَا ٱللَّهَ وَأَطَعۡنَا ٱلرَّسُولَا۠ ٦٦ وَقَالُواْ رَبَّنَآ إِنَّآ أَطَعۡنَا سَادَتَنَا وَكُبَرَآءَنَا فَأَضَلُّونَا ٱلسَّبِيلَا۠ ٦٧ رَبَّنَآ ءَاتِهِمۡ ضِعۡفَيۡنِ مِنَ ٱلۡعَذَابِ وَٱلۡعَنۡهُمۡ لَعۡنٗا كَبِيرٗا ٦٨ ﴾ [ الاحزاب : ٦٦، ٦٨ ]

“যেদিন তাদের চেহারাগুলো আগুনে উপুড় করে দেয়া হবে, তারা বলবে, ‘হায়, আমরা যদি আল্লাহর আনুগত্য করতাম এবং রাসূলের আনুগত্য করতাম’! তারা আরো বলবে, ‘হে আমাদের রব, আমরা আমাদের নেতৃবর্গ ও বিশিষ্ট লোকদের আনুগত্য করেছিলাম, তখন তারা আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল। হে আমাদের রব, আপনি তাদেরকে দ্বিগুণ আযাব দিন এবং তাদেরকে বেশী করে লা’নত করুন”। [সূরা আযাব: (৬৬-৬৮)]

অনুরূপ আপনি যদি আল্লাহকে এবং আল্লাহর দীন ও নবীকে জানার ক্ষেত্রে কুরআন ত্যাগ করে পূর্বপুরুষদের কথা, কর্ম ও জীবনী অনুসরণ করেন, তাহলে কুরআন আপনার বিপক্ষের দলিল হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿وَإِذَا قِيلَ لَهُمۡ تَعَالَوۡاْ إِلَىٰ مَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ وَإِلَى ٱلرَّسُولِ قَالُواْ حَسۡبُنَا مَا وَجَدۡنَا عَلَيۡهِ ءَابَآءَنَآۚ أَوَلَوۡ كَانَ ءَابَآؤُهُمۡ لَا يَعۡلَمُونَ شَيۡ‍ٔٗا وَلَا يَهۡتَدُونَ ١٠٤﴾ [ المائ‍دة : ١٠٤ ]

“আর যখন তাদেরকে বলা হয়, ‘আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার দিকে ও রাসূলের দিকে আস’, তারা বলে, ‘আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদের যার উপর পেয়েছি তাই আমাদের জন্য যথেষ্ট’। যদিও তাদের পিতৃপুরুষরা কিছুই জানত না এবং হিদায়েতপ্রাপ্ত ছিল না তবুও”? [সূরা মায়েদাহ: (১০৪)]

অনুরূপ আপনি যদি আল্লাহকে এবং আল্লাহর দীন ও নবীকে জানার ক্ষেত্রে কুরআন ত্যাগ করে অধিকাংশ মানুষের কথা, কর্ম ও জীবনী অনুসরণ করেন, তাহলে কুরআন আপনার বিপক্ষে দলিল হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿ وَإِن تُطِعۡ أَكۡثَرَ مَن فِي ٱلۡأَرۡضِ يُضِلُّوكَ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِۚ إِن يَتَّبِعُونَ إِلَّا ٱلظَّنَّ وَإِنۡ هُمۡ إِلَّا يَخۡرُصُونَ ١١٦ ﴾ [ الانعام : ١١٦ ]

“আর যদি তুমি যারা জমিনে আছে তাদের অধিকাংশের আনুগত্য কর, তবে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করবে। তারা শুধু ধারণারই অনুসরণ করে এবং তারা শুধু অনুমানই করে”। [সূরা আনআম: (১১৬)]

আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« فأَمَّا الْمُنَافِقُ , وَالْكَافِرُ فَيُقَالُ لَهُ مَا كُنْتَ تَقُولُ فِي هَذَا الرَّجُلِ ؟ فَيَقُولُ لَا أَدْرِي كُنْتُ أَقُولُ مَا يَقُولُ النَّاسُ فَيُقَالُ لَا دَرَيْتَ وَلَا تَلَيْتَ وَيُضْرَبُ بِمَطَارِقَ مِنْ حَدِيدٍ ضَرْبَةً فَيَصِيحُ صَيْحَةً يسْمَعُهَا مَنْ يَلِيهِ غَيْرَ الثَّقَلَيْنِ » .

“আর মুনাফিক ও কাফিরকে বলা হবে: তুমি এ ব্যক্তি সম্পর্কে কি বলতে? সে বলবে: আমি জানি না, মানুষ যা বলত আমিও তাই বলেছি। তাকে বলা হবে, তুমি বুঝনি-তিলাওয়াতও করনি, অতঃপর তাকে লোহার হাতুড়ি দ্বারা প্রচণ্ড আঘাত করা হবে, ফলে সে বিকট চিৎকার করবে, যা তার পার্শ্ববর্তী সবাই শুনতে পাবে জিন ও মানুষ ব্যতীত”। ইমাম বুখারি হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। [বুখারি, হাদিস নং: (১৩৭৪), (খ.৩/পৃ.৩৬২)]

অনুরূপ আপনি যদি আল্লাহকে এবং আল্লাহর দীন ও নবীকে জানার ক্ষেত্রে কুরআন ত্যাগ করে অধিকাংশ মুসলিমের কথা, কর্ম ও জীবনী অনুসরণ করেন, তাহলে কুরআন আপনার বিপক্ষের দলিল হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿ وَمَا يُؤۡمِنُ أَكۡثَرُهُم بِٱللَّهِ إِلَّا وَهُم مُّشۡرِكُونَ ١٠٦ ﴾ [ يوسف : ١٠٥ ]

“তাদের অধিকাংশ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করে, তবে ইবাদতে শিরক করা অবস্থায়”। [সূরা ইউসূফ: (১০৫)]

মুয়াবিয়া ইবন আবু সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« إِنَّ هَذِهِ الْمِلَّةَ سَتَفْتَرِقُ عَلَى ثَلاَثٍ وَسَبْعِينَ ثِنْتَانِ وَسَبْعُونَ فِى النَّارِ وَوَاحِدَةٌ فِى الْجَنَّةِ وَهِىَ الْجَمَاعَةُ » .

“নিশ্চয় এ উম্মত অতিসত্বর তিয়াত্তর ভাগে বিভক্ত হবে, বায়াত্তরটি জাহান্নামে এবং একটি জান্নাতে, আর তাই হচ্ছে জামাত”। ইমাম আবু দাউদ হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। [সুনানু আবি দাউদ, হাদিস নং: (৪৫৯৯), (খ.৪/পৃ.৩২৪)] এ হাদিস হাসান লি গায়রিহি।

আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« تَفَتَرقُ أَمَّتِي عَلَى ثَلاَثٍ وَسَبْعِيْنَ مِلَّةً كُلُّهُمْ فِي النَّارِ إِلا مِلَةً وَاحَدَةً قَالُوا وَمَنْ هِيَ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصَحَابِي » .

“আমার উম্মত তিয়াত্তরটি দলে বিভক্ত হবে, সব ক’টি দলই জাহান্নামী শুধু একটি দল ব্যতীত, তারা বলল: হে আল্লাহর রাসূল সে দল কোনটি? তিনি বললেন: যার উপর আমি এবং আমার সাহাবিগণ আছি [এটিই সে দল]”। ইমাম তিরমিযি হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। [সুনানু তিরমিযি, হাদিস নং: (২৬৪১), (খ.৫/প.২৬)] এ হাদিস হাসান লি গায়রিহি।

অনুরূপ আপনি যদি আল্লাহকে এবং আল্লাহর দীন ও নবীকে জানার ক্ষেত্রে কুরআন ও পূর্বসূরিদের বর্ণিত হাদিস ত্যাগ করে তাদের মতামত অনুসরণ করেন, তাহলে কুরআন আপনার বিপক্ষের দলিল হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿ بَلۡ قَالُواْ مِثۡلَ مَا قَالَ ٱلۡأَوَّلُونَ ٨١ ﴾ [ المؤمنون : ٨١ ]

“বরং তারা তাই বলে যেমনটি পূর্ববর্তীরা বলত”। [সূরা মুমিনুন: (৮১)] অপর আয়াতে তিনি ইরশাদ করেন:

﴿أَفَلَمۡ يَدَّبَّرُواْ ٱلۡقَوۡلَ أَمۡ جَآءَهُم مَّا لَمۡ يَأۡتِ ءَابَآءَهُمُ ٱلۡأَوَّلِينَ ٦٨﴾ [ المؤمنون : ٦٨ ]

“তারা কি এ বাণী সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করে না? নাকি তাদের কাছে এমন কিছু এসেছে যা তাদের পূর্ববর্তী পিতৃপুরুষদের কাছে আসেনি”? [সূরা মুমিনুন: (৬৮)]

অনুরূপ আপনি যদি আল্লাহকে এবং আল্লাহর দীন ও নবীকে জানার ক্ষেত্রে কুরআন ত্যাগ করে পরবর্তীদের মতামত অনুসরণ করেন, তাহলে কুরআন আপনার বিপক্ষের দলিল হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿وَلَا تَتَّبِعۡ أَهۡوَآءَهُمۡ وَٱحۡذَرۡهُمۡ أَن يَفۡتِنُوكَ عَنۢ بَعۡضِ مَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ إِلَيۡكَۖ ٤٩﴾ [ المائ‍دة : ٤٩ ]

“এবং তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। আর তাদের থেকে সতর্ক থাক যে, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তার কিছু থেকে তারা তোমাকে বিচ্যুত করবে”। [সূরা মায়েদাহ: (৪৯)] অপর আয়াতে তিনি ইরশাদ করেন:

﴿ وَلَا تَتَّبِعُوٓاْ أَهۡوَآءَ قَوۡمٖ قَدۡ ضَلُّواْ مِن قَبۡلُ وَأَضَلُّواْ كَثِيرٗا وَضَلُّواْ عَن سَوَآءِ ٱلسَّبِيلِ ٧٧ ﴾ [ المائ‍دة : ٧٧ ]

“এবং এমন কওমের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না, যারা পূর্বে পথভ্রষ্ট হয়েছে, আর অনেককে পথভ্রষ্ট করেছে এবং সোজা পথ বিচ্যুত হয়েছে”। [সূরা মায়েদাহ: (৭৭)]

আবু সা‘ঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« لَتَتَّبِعُنَّ سَنَنَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ شِبْرًا بِشِبْرٍ وَذِرَاعًا بِذِرَاعٍ حَتَّى لَوْ دَخَلُوا فِى جُحْرِ ضَبٍّ لاَتَّبَعْتُمُوهُمْ » . قُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ آلْيَهُودَ وَالنَّصَارَى قَالَ « فَمَنْ » .

“তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তীদের আদর্শের অনুসরণ করবে একটু একটু করে, এমন কি তারা যদি গুঁই সাপের গর্তেও ঢুকে, তবুও তোমরা তাদের অনুসরণ করবে”। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল ইহুদি ও নাসারা? তিনি বললেন: “আর কারা”। হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম বুখারি [বুখারি, হাদিস নং: (৭৩২০), (খ.১৮/৩০৭)] ও ইমাম মুসলিম [মুসলিম, হাদিস নং: (৬৯৫২), (খ.৮/পৃ.৫৭)]।

অনুরূপ আপনি যদি আল্লাহকে এবং আল্লাহর দীন ও নবীকে জানার ক্ষেত্রে কুরআন ত্যাগ করে কোনো সম্প্রদায় ও দলের অনুসরণ করেন, তাহলে কুরআন আপনার বিপক্ষের দলিল হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿ فَتَقَطَّعُوٓاْ أَمۡرَهُم بَيۡنَهُمۡ زُبُرٗاۖ كُلُّ حِزۡبِۢ بِمَا لَدَيۡهِمۡ فَرِحُونَ ٥٣ فَذَرۡهُمۡ فِي غَمۡرَتِهِمۡ حَتَّىٰ حِينٍ ٥٤ ﴾ [ المؤمنون : ٥٣، ٥٤ ]

“তারপর লোকেরা তাদের মাঝে তাদের দীনকে বহুভাগে বিভক্ত করেছে। প্রত্যেক দলই তাদের কাছে যা আছে তা নিয়ে উৎফুল্ল, সুতরাং কিছু সময়ের জন্য তাদেরকে স্বীয় বিভ্রান্তিতে থাকতে দাও”। [সূরা মুমিনুন: (৫৩-৫৪)]

সাধারণত প্রত্যেক দল নিজ নিজ গঠনতন্ত্রের উপর অটল থাকে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿ وَإِذَا قِيلَ لَهُمۡ ءَامِنُواْ بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ قَالُواْ نُؤۡمِنُ بِمَآ أُنزِلَ عَلَيۡنَا وَيَكۡفُرُونَ بِمَا وَرَآءَهُۥ وَهُوَ ٱلۡحَقُّ مُصَدِّقٗا لِّمَا مَعَهُمۡۗ قُلۡ فَلِمَ تَقۡتُلُونَ أَنۢبِيَآءَ ٱللَّهِ مِن قَبۡلُ إِن كُنتُم مُّؤۡمِنِينَ ٩١ ﴾ [ البقرة : ٩١ ]

“আর যখন তাদেরকে বলা হয়, ‘আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তোমরা তার প্রতি ঈমান আন’। তারা বলে, ‘আমাদের প্রতি যা নাযিল হয়েছে আমরা তা বিশ্বাস করি’। আর এর বাইরে যা আছে তারা তা অস্বীকার করে। অথচ তা সত্য, তাদের সাথে যা আছে তার সত্যায়নকারী। বল, ‘তবে কেন তোমরা আল্লাহর নবীদেরকে পূর্বে হত্যা করতে, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক”? [সূরা বাকারা: (৯১)]

দ্বিতীয়ত দলের নেতৃবর্গ সেসব বিষয় প্রত্যাখ্যান করতে উদ্বুদ্ধ করে, যা তাদের কিতাবে নেই, যদিও তা সত্য হয়, তারা বলে:

﴿ وَلَا تُؤۡمِنُوٓاْ إِلَّا لِمَن تَبِعَ دِينَكُمۡ قُلۡ إِنَّ ٱلۡهُدَىٰ هُدَى ٱللَّهِ أَن يُؤۡتَىٰٓ أَحَدٞ مِّثۡلَ مَآ أُوتِيتُمۡ أَوۡ يُحَآجُّوكُمۡ عِندَ رَبِّكُمۡۗ قُلۡ إِنَّ ٱلۡفَضۡلَ بِيَدِ ٱللَّهِ يُؤۡتِيهِ مَن يَشَآءُۗ وَٱللَّهُ وَٰسِعٌ عَلِيمٞ ٧٣ ﴾ [ ال عمران : ٧٣ ]

“আর তোমরা কেবল তাদেরকে বিশ্বাস কর, যারা তোমাদের দীনের অনুসরণ করে’। বল, ‘নিশ্চয় আল্লাহর হিদায়াতই হিদায়াত। এটা এ জন্য যে, কোন ব্যক্তিকে দেয়া হবে যেরূপ তোমাদেরকে দেয়া হয়েছে। অথবা তারা তোমাদের রবের নিকট তোমাদের সাথে বিতর্ক করবে’। বল, ‘নিশ্চয় অনুগ্রহ আল্লাহর হাতে, তিনি যাকে চান, তা দান করেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ”। [সূরা আলে-ইমরান: (৭৩)]

আবু সা‘ঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« لَتَتَّبِعُنَّ سَنَنَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ شِبْرًا بِشِبْرٍ وَذِرَاعًا بِذِرَاعٍ حَتَّى لَوْ دَخَلُوا فِى جُحْرِ ضَبٍّ لاَتَّبَعْتُمُوهُمْ » . قُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ آلْيَهُودَ وَالنَّصَارَى قَالَ « فَمَنْ » .

“তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তীদের আদর্শের অনুসরণ করবে একটু একটু করে, এমন কি তারা যদি দাব্বের গর্তেও ঢুকে, তবুও তোমরা তাদের অনুসরণ করবে”। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল ইহুদি ও নাসারা? তিনি বললেন: “আর কারা”। হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম বুখারি [বুখারি, হাদিস নং: (৭৩২০), (খ.১৮/৩০৭)] ও ইমাম মুসলিম [মুসলিম, হাদিস নং: (৬৯৫২), (খ.৮/পৃ.৫৭)]।

অনুরূপ আপনি যদি কুরআন ত্যাগ করে অহমিকার অনুসরণ করেন, তাহলে কুরআন আপনার বিপক্ষের দলিল হবে। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:

«كَانَتِ امْرَأَةٌ تُظْهِرُ فِي الإِسْلاَم ِ الْسُّوْءَ فَقَالَ الْنَّبِيُّ صَلى الله عَلَيْه وسَلمَ : لَوْ رَجَمْتُ أَحَداً بِغَيْرِ بَيِّنَةٍ لَرَجَمْتُ هَذِهِ » .

“জনৈক নারী ইসলাম গ্রহণ করেও বদ অভ্যাস জাহির করে বেড়াত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “আমি যদি কাউকে প্রমাণ ব্যতীত রজম করতাম, তাহলে অবশ্যই তাকে রজম [প্রস্তরাঘাতে হত্যা] করতাম”। ইমাম বুখারি হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। [বুখারি, হাদিস নং: (৪৮৯৮), (খ.১৬/পৃ.৩৬৯)]

অনুরূপ আপনি যদি কুরআন ত্যাগ করে উত্তেজনার অনুসরণ করেন, তাহলে কুরআন আপনার বিপক্ষের দলিল হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تُحَرِّمُواْ طَيِّبَٰتِ مَآ أَحَلَّ ٱللَّهُ لَكُمۡ وَلَا تَعۡتَدُوٓاْۚ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُحِبُّ ٱلۡمُعۡتَدِينَ ٨٧ ﴾ [ المائ‍دة : ٨٧ ]

“হে মুমিনগণ, আল্লাহ যেসব পবিত্র বস্তু তোমাদের জন্য হালাল করেছেন, তোমরা তা হারাম করো না এবং তোমরা সীমালঙ্ঘন করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না”। [সূরা মায়েদাহ: (৮৭)]

আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:

« جَاءَ ثَلَاثَةُ رَهْطٍ إِلَى بُيُوتِ أَزْوَاجِ النَّبِيِّ صَلى الله عَلَيْه وسَلمَ يَسْأَلُونَ عَنْ عِبَادَةِ النَّبِيِّ صَلى الله عَلَيْه وسَلمَ فَلَمَّا أُخْبِرُوا كَأَنَّهُمْ تَقَالُّوهَا فَقَالُوا وَأَيْنَ نَحْنُ مِنْ النَّبِيِّ صَلى الله عَلَيْه وسَلمَ قَدْ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَمَا تَأَخَّرَ قَالَ أَحَدُهُمْ أَمَّا أَنَا فَإِنِّي أُصَلِّي اللَّيْلَ أَبَدًا وَقَالَ آخَرُ أَنَا أَصُومُ الدَّهْرَ وَلَا أُفْطِرُ وَقَالَ آخَرُ أَنَا أَعْتَزِلُ النِّسَاءَ فَلَا أَتَزَوَّجُ أَبَدًا فَجَاءَ رَسُولُ اللَّهِ صَلى الله عَلَيْه وسَلمَ إِلَيْهِمْ فَقَالَ أَنْتُمْ الَّذِينَ قُلْتُمْ كَذَا وَكَذَا أَمَا وَاللَّهِ إِنِّي لَأَخْشَاكُمْ لِلَّهِ وَأَتْقَاكُمْ لَهُ لَكِنِّي أَصُومُ وَأُفْطِرُ وَأُصَلِّي وَأَرْقُدُ وَأَتَزَوَّجُ النِّسَاءَ فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي » .

“তিনজন ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইবাদত সম্পর্কে জানার নিমিত্তে তার স্ত্রীদের বাড়িতে আসল, যখন তাদেরকে তা বলা হল, মনে হল যেন, তারা তার ইবাদতকে স্বল্প জ্ঞান করল। তারা বলল, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোথায় আর আমরা কোথায়, তার তো পূর্বাপর সকল পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। তাদের একজন বলল: আমি সর্বদা পূর্ণরাত ইবাদত করব। অপর ব্যক্তি বলল: আমি সর্বদা সিয়াম পালন করব, কখনো ইফতার [দিনের খাবার গ্রহণ] করব না। অপর ব্যক্তি বলল: আমি নারীদের থেকে পৃথক থাকব, কখনো বিবাহ করব না। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিকট আসলেন, অতঃপর বললেন: তোমরাই তারা-যারা এরূপ এরূপ বলেছ? জেনে রাখ, আল্লাহর শপথ, নিশ্চয় আমি তোমাদের মধ্যে আল্লাহকে অধিক ভয় করি এবং তার অধিক তাকওয়ার অধিকারী, কিন্তু আমি সিয়াম রাখি ও সিয়াম ভঙ্গ করি, সালাত আদায় করি ও শয়ন করি, এবং নারীদের বিবাহ করি। অতএব যে আমার সুন্নত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো, সে আমার অন্তর্ভুক্ত নয়”। হাদিসটি ইমাম বুখারি বর্ণনা করেছেন। [বুখারি, হাদিস নং: (৫০৬৩), (খ.১২/পৃ.৫৩৪)]

ওমর ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি হুদাবিয়ার সন্ধি সম্পর্কে বলেন:

« أَتَيْتُ نَبِيَّ اللَّهِ صَلى الله عَلَيْه وسَلمَ فَقُلْتُ أَلَسْتَ نَبِيَّ اللَّهِ حَقًّا قَالَ بَلَى قُلْتُ أَلَسْنَا عَلَى الْحَقِّ وَعَدُوُّنَا عَلَى الْبَاطِلِ قَالَ بَلَى قُلْتُ فَلِمَ نُعْطِي الدَّنِيَّةَ فِي دِينِنَا إِذًا قَالَ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ وَلَسْتُ أَعْصِيهِ وَهُوَ نَاصِرِي » .

“আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বলি, আপনি আল্লাহর সত্য নবী নন? তিনি বললেন: অবশ্যই। আমি বললাম: আমরা সত্যের উপর ও আমাদের শত্রুরা কি বাতিলের উপর নয়? তিনি বললেন: অবশ্যই। আমি বললাম: তাহলে কেন আমরা আমাদের দীনে অপমান বরদাস্ত করব? তিনি বললেন: আমি নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল, আমি তার অবাধ্যতা করছি না, তিনি অবশ্যই আমাকে সাহায্য করবেন”। হাদিসটি ইমাম বুখারি বর্ণনা করেছেন। [বুখারি, হাদিস নং: (২৭৩২), (খ.৭/পৃ.১০১)]

অনুরূপ আপনি যদি আল্লাহকে এবং আল্লাহর দীন ও নবীকে জানার ক্ষেত্রে কুরআন ত্যাগ করে ইন্দ্রিয়ের অনুসরণ করেন, যেমন চোখে দেখছি, কানে শ্রবণ করেছি ও মুখের স্বাদে বলেছি, তাহলে কুরআন আপনার বিপক্ষে দলিল হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿ وَإِنَّ ٱلشَّيَٰطِينَ لَيُوحُونَ إِلَىٰٓ أَوۡلِيَآئِهِمۡ لِيُجَٰدِلُوكُمۡۖ وَإِنۡ أَطَعۡتُمُوهُمۡ إِنَّكُمۡ لَمُشۡرِكُونَ ١٢١ ﴾ [ الانعام : ١٢١ ]

“এবং শয়তানরা তাদের বন্ধুদেরকে প্ররোচনা দেয়, যাতে তারা তোমাদের সাথে বিবাদ করে। আর যদি তোমরা তাদের আনুগত্য কর, তবে নিশ্চয় তোমরা মুশরিক”। [সূরা আনআম: (১২১)] কারণ শয়তান তার অনুসারীদের নিকট বিদআত, শিরক ও কুফর সশব্দে অহি করে, যা তারা নিজের কানে শুনতে পায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ وَٱسۡتَفۡزِزۡ مَنِ ٱسۡتَطَعۡتَ مِنۡهُم بِصَوۡتِكَ ٦٤ ﴾ [ الاسراء : ٦٤ ]

“তোমার কণ্ঠ দিয়ে তাদের মধ্যে যাকে পারো প্ররোচিত কর”। [সূরা ইসরা: (৬৪)]

শয়তান তার অনুসারীদের নিকট সেসব লোকদের আকৃতিতে গোচরীভূত হয়, যাদেরকে তারা ইবাদত করে অথবা যাদেরকে তারা সম্মান করে, ফলে তারা তাকে নিজ চোখে দেখতে পায়। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿ إِن يَدۡعُونَ مِن دُونِهِۦٓ إِلَّآ إِنَٰثٗا وَإِن يَدۡعُونَ إِلَّا شَيۡطَٰنٗا مَّرِيدٗا ١١٧ لَّعَنَهُ ٱللَّهُۘ وَقَالَ لَأَتَّخِذَنَّ مِنۡ عِبَادِكَ نَصِيبٗا مَّفۡرُوضٗا ١١٨ ﴾ [ النساء : ١١٧، ١١٨ ]

“আল্লাহ ছাড়া তারা শুধু নারীমূর্তিকে ডাকে এবং কেবল অবাধ্য শয়তানকে ডাকে। আল্লাহ তাকে লা’নত করেছেন এবং সে বলেছে, ‘অবশ্যই আমি তোমার বান্দাদের এক নির্দিষ্ট অংশকে (অনুসারী হিসেবে) গ্রহণ করব”। [সূরা নিসা: (১১৭-১১৮)] অপর আয়াতে তিনি ইরশাদ করেন:

﴿ قَالَ فَبِمَآ أَغۡوَيۡتَنِي لَأَقۡعُدَنَّ لَهُمۡ صِرَٰطَكَ ٱلۡمُسۡتَقِيمَ ١٦ ثُمَّ لَأٓتِيَنَّهُم مِّنۢ بَيۡنِ أَيۡدِيهِمۡ وَمِنۡ خَلۡفِهِمۡ وَعَنۡ أَيۡمَٰنِهِمۡ وَعَن شَمَآئِلِهِمۡۖ وَلَا تَجِدُ أَكۡثَرَهُمۡ شَٰكِرِينَ ١٧ قَالَ ٱخۡرُجۡ مِنۡهَا مَذۡءُومٗا مَّدۡحُورٗاۖ لَّمَن تَبِعَكَ مِنۡهُمۡ لَأَمۡلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنكُمۡ أَجۡمَعِينَ ١٨ ﴾ [ الاعراف : ١٦، ١٨ ]

“সে বলল, ‘আপনি আমাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, সে কারণে অবশ্যই আমি তাদের জন্য আপনার সোজা পথে বসে থাকব। ‘তারপর অবশ্যই তাদের নিকট উপস্থিত হব, তাদের সামনে থেকে ও তাদের পেছন থেকে এবং তাদের ডান দিক থেকে ও তাদের বাম দিক থেকে। আর আপনি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবেন না’। তিনি বললেন, ‘তুমি এখান থেকে বের হও লাঞ্ছিত বিতাড়িত অবস্থায়। অবশ্যই তাদের মধ্য থেকে যে তোমার অনুসরণ করবে, আমি তোমাদের সবাইকে দিয়ে জাহান্নাম ভরে দেবই”। [সূরা আরাফ: (১৬-১৮)]

শয়তান তার অনুসারীদের নিকট শিরক, বিদআত ও কুফরির চাহিদা সৃষ্টি করে দেয়। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿ أَفَمَن زُيِّنَ لَهُۥ سُوٓءُ عَمَلِهِۦ فَرَءَاهُ حَسَنٗاۖ ٨ ﴾ [ فاطر : ٨ ]

“কাউকে যদি তার অসৎ কাজ সুশোভিত করে দেখানো হয় অতঃপর সে ওটাকে ভাল মনে করে, [সে কি ঐ ব্যক্তির সমান যে ভালকে ভাল এবং মন্দকে মন্দ দেখে]”? [সূরা ফাতির : (৮)]

অনুরূপ আপনি যদি আল্লাহকে এবং আল্লাহর দীন ও নবীকে জানার ক্ষেত্রে কুরআন ত্যাগ করে পছন্দ ও রুচির অনুসরণ করেন, তাহলে কুরআন আপনার বিপক্ষের দলিল হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿ أَفَمَن كَانَ عَلَىٰ بَيِّنَةٖ مِّن رَّبِّهِۦ كَمَن زُيِّنَ لَهُۥ سُوٓءُ عَمَلِهِۦ وَٱتَّبَعُوٓاْ أَهۡوَآءَهُم ١٤ ﴾ [ محمد : ١٤ ]

“যে ব্যক্তি তার রবের পক্ষ থেকে আগত সুস্পষ্ট প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত সে কি তার মত, যার মন্দ আমল তার জন্য চাকচিক্যময় করে দেয়া হয়েছে এবং যারা তাদের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করে”? [সূরা মুহাম্মদ: (১৪)] অপর আয়াতে তিনি বলেন:

﴿وَزَيَّنَ لَهُمُ ٱلشَّيۡطَٰنُ أَعۡمَٰلَهُمۡ فَصَدَّهُمۡ عَنِ ٱلسَّبِيلِ وَكَانُواْ مُسۡتَبۡصِرِينَ ٣٨ ﴾ [ العنكبوت : ٣٨ ]

“আর শয়তান তাদের কাজ তাদের চোখে শোভিত করে তাদেরকে সৎপথ থেকে বিরত রেখেছিল, যদিও তারা ছিল বিদগ্ধ”। [সূরা আনকাবুত: (৩৮)] অপর আয়াতে তিনি বলেন:

﴿ تَٱللَّهِ لَقَدۡ أَرۡسَلۡنَآ إِلَىٰٓ أُمَمٖ مِّن قَبۡلِكَ فَزَيَّنَ لَهُمُ ٱلشَّيۡطَٰنُ أَعۡمَٰلَهُمۡ فَهُوَ وَلِيُّهُمُ ٱلۡيَوۡمَ وَلَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٞ ٦٣ ﴾ [ النحل : ٦٣ ]

“আল্লাহর শপথ, আমি তোমার পূর্বে বহু জাতির নিকট রাসূল প্রেরণ করেছি। অতঃপর শয়তান তাদের জন্য তাদের কর্মকে শোভিত করেছে। তাই আজ সে তাদের অভিভাবক। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব”। [সূরা নাহাল: (৬৩)]

অনুরূপ আপনি যদি আল্লাহকে এবং আল্লাহর দীন ও নবীকে জানার ক্ষেত্রে কুরআন ত্যাগ করে যুক্তির অনুসরণ করেন, তাহলে কুরআন আপনার বিপক্ষের দলিল হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿ وَمَا يَتَّبِعُ أَكۡثَرُهُمۡ إِلَّا ظَنًّاۚ إِنَّ ٱلظَّنَّ لَا يُغۡنِي مِنَ ٱلۡحَقِّ شَيۡ‍ًٔاۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلِيمُۢ بِمَا يَفۡعَلُونَ ٣٦ ﴾ [ يونس : ٣٦ ]

“আর তাদের অধিকাংশ কেবল ধারণার অনুসরণ করে। নিশ্চয় সত্যের বিপরীতে ধারণা কোন কার্যকারিতা রাখে না, তারা যা করে সে সম্পর্কে নিশ্চয় আল্লাহ সম্যক অবগত”। [সূরা ইউনুস: (৩৬)]

অনুরূপ আপনি যদি আল্লাহকে এবং আল্লাহর দীন ও নবীকে জানার ক্ষেত্রে কুরআন ত্যাগ করে আভিধানিক অর্থকে প্রাধান্য দেন, তাহলে কুরআন আপনার বিপক্ষের দলিল হবে, কারণ সরাসরি কুরআন ও হাদিস থাকা সত্ত্বেও আভিধানিক অর্থ নেওয়া বিদআতের নামান্তর ও প্রবৃত্ত পূজারিদের নীতি। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿ وَلَا تَتَّبِعۡ أَهۡوَآءَهُمۡ وَٱحۡذَرۡهُمۡ أَن يَفۡتِنُوكَ عَنۢ بَعۡضِ مَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ إِلَيۡكَۖ ٤٩ ﴾ [ المائ‍دة : ٤٩ ]

“এবং তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। আর তাদের থেকে সতর্ক থাক যে, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তার কিছু থেকে তারা তোমাকে বিচ্যুত করবে”। [সূরা মায়েদাহ: (৪৯)]

তারা জানে না যে, কুরআন ও সুন্নায় আল্লাহর কালামের উদ্দেশ্য একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন, যেমন ঈসা ‘আলাইহিস সালাম বলেছেন: “আমার অন্তরে যা আছে আপনি জানেন, কিন্তু আপনার অন্তরে যা আছে আমি জানি না”। তাই আল্লাহর উদ্দেশ্য আল্লাহ নিজে বলে দিয়েছেন, কারো দায়িত্বে ছেড়ে দেননি, তিনি ইরশাদ করেন:

﴿ ثُمَّ إِنَّ عَلَيۡنَا بَيَانَهُۥ ١٩ ﴾ [ القيامة : ١٩ ]

“তারপর তার বর্ণনার দায়িত্ব আমারই”। [সূরা কিয়ামাহ: (১৯)] অপর আয়াতে তিনি বলেন:

﴿وَكَذَٰلِكَ نُصَرِّفُ ٱلۡأٓيَٰتِ وَلِيَقُولُواْ دَرَسۡتَ وَلِنُبَيِّنَهُۥ لِقَوۡمٖ يَعۡلَمُونَ ١٠٥﴾ [ الانعام : ١٠٥ ]

“আর এভাবেই আমি নানাভাবে আয়াতসমূহ বিস্তারিত বর্ণনা করি এবং যাতে তারা বলে, তুমি পাঠ করেছ এবং আমি যাতে বর্ণনা করি, এ কুরআন এমন কওমের জন্য যারা জানে”। [সূরা আন‘আম: (১০৫)]

আল্লাহ রাসূল প্রেরণ করেছেন এবং তাদেরকে নিজ উদ্দেশ্য জানিয়ে দিয়েছেন, যেন তারা মানব জাতিকে তা জানিয়ে দেয়, অপরের উপর তার ব্যাখ্যা ছেড়ে দেননি। তিনি ইরশাদ করেন:

﴿ وَمَآ أَرۡسَلۡنَا مِن رَّسُولٍ إِلَّا بِلِسَانِ قَوۡمِهِۦ لِيُبَيِّنَ لَهُمۡۖ فَيُضِلُّ ٱللَّهُ مَن يَشَآءُ وَيَهۡدِي مَن يَشَآءُۚ وَهُوَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡحَكِيمُ ٤ ﴾ [ ابراهيم : ٤ ]

“আর আমি প্রত্যেক রাসূলকে তার কওমের ভাষাতেই পাঠিয়েছি, যাতে সে তাদের কাছে বর্ণনা দেয়, সুতরাং আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা সঠিক পথ দেখান। আর তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়”। [সূরা ইবরাহিম: (৪)] অপর স্থানে তিনি বলেন:

﴿وَأَنزَلۡنَآ إِلَيۡكَ ٱلذِّكۡرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيۡهِمۡ وَلَعَلَّهُمۡ يَتَفَكَّرُونَ ٤٤ ﴾ [ النحل : ٤٤ ]

“এবং তোমার প্রতি নাযিল করেছি কুরআন, যাতে তুমি মানুষের জন্য স্পষ্ট করে দিতে পার, যা তাদের প্রতি নাযিল হয়েছে। আর যাতে তারা চিন্তা করে”। [সূরা নাহাল: (৪৪)]

আল্লাহ তা'আলা আভিধানিক অর্থকে শরীয়তের উপর প্রাধান্য দিতে নিষেধ করেছেন। তিনি ইরশাদ করেন:

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تُقَدِّمُواْ بَيۡنَ يَدَيِ ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦۖ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَۚ إِنَّ ٱللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٞ ١ ﴾ [ الحجرات : ١ ]

“হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সামনে অগ্রবর্তী হয়ো না এবং তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ”। [সূরা হুজুরাত: (১)]

শরীয়তের ব্যাখ্যা থাকা সত্যেও প্রবৃত্তির অনুসারী ব্যতীত কেউ আভিধানিক অর্থের অনুসরণ করে না। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿فَإِن لَّمۡ يَسۡتَجِيبُواْ لَكَ فَٱعۡلَمۡ أَنَّمَا يَتَّبِعُونَ أَهۡوَآءَهُمۡۚ وَمَنۡ أَضَلُّ مِمَّنِ ٱتَّبَعَ هَوَىٰهُ بِغَيۡرِ هُدٗى مِّنَ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَهۡدِي ٱلۡقَوۡمَ ٱلظَّٰلِمِينَ ٥٠﴾ [ القصص : ٥٠ ]

“অতঃপর তারা যদি তোমার আহবানে সাড়া না দেয়, তাহলে জেনে রাখ, তারা তো নিজদের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করে। আর আল্লাহর দিকনির্দেশনা ছাড়া যে নিজের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করে তার চেয়ে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে? নিশ্চয় আল্লাহ যালিম কওমকে হিদায়েত করেন না”। [সূরা কাসাস: (৫০)]

অনুরূপ আপনি যদি আল্লাহ এবং তার দীন ও নবীকে জানার ক্ষেত্রে কুরআন ত্যাগ করে যুক্তির অনুসরণ করেন, তাহলে কুরআন আপনার বিপক্ষের দলিল হবে, কারণ দলিল থাকা সত্যেও যুক্তির অনুসরণ করা বিদআতিদের নীতি, আর তাদের নেতা হচ্ছে ইবলিস। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿ قَالَ مَا مَنَعَكَ أَلَّا تَسۡجُدَ إِذۡ أَمَرۡتُكَۖ قَالَ أَنَا۠ خَيۡرٞ مِّنۡهُ خَلَقۡتَنِي مِن نَّارٖ وَخَلَقۡتَهُۥ مِن طِينٖ ١٢ قَالَ فَٱهۡبِطۡ مِنۡهَا فَمَا يَكُونُ لَكَ أَن تَتَكَبَّرَ فِيهَا فَٱخۡرُجۡ إِنَّكَ مِنَ ٱلصَّٰغِرِينَ ١٣ ﴾ [ الاعراف : ١٢، ١٣ ]

“তিনি বললেন, ‘কিসে তোমাকে বাধা দিয়েছে যে, সিজদা করছ না, যখন আমি তোমাকে নির্দেশ দিয়েছি’? সে বলল, ‘আমি তার চেয়ে উত্তম। আপনি আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন, আর তাকে সৃষ্টি করেছেন কাদামাটি থেকে’। তিনি বললেন, ‘সুতরাং তুমি এখান থেকে নেমে যাও। তোমার এ অধিকার নেই যে, এখানে তুমি অহংকার করবে। সুতরাং বের হও। নিশ্চয় তুমি লাঞ্ছিতদের অন্তর্ভুক্ত”। [সূরা আরাফ: (১২-১৩)]

প্রবৃত্তির অনুসারী ব্যতীত কেউ শরীয়তের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও যুক্তির অনুসরণ করে না। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تُقَدِّمُواْ بَيۡنَ يَدَيِ ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦۖ ١ ﴾ [ الحجرات : ١ ]

“হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সামনে অগ্রবর্তী হয়ো না”। [সূরা হুজুরাত: (১)] অপর আয়াতে তিনি বলেন:

﴿فَإِن لَّمۡ يَسۡتَجِيبُواْ لَكَ فَٱعۡلَمۡ أَنَّمَا يَتَّبِعُونَ أَهۡوَآءَهُمۡۚ وَمَنۡ أَضَلُّ مِمَّنِ ٱتَّبَعَ هَوَىٰهُ بِغَيۡرِ هُدٗى مِّنَ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَهۡدِي ٱلۡقَوۡمَ ٱلظَّٰلِمِينَ٥٠﴾ [ القصص : ٥٠ ]

“অতঃপর তারা যদি তোমার আহবানে সাড়া না দেয়, তাহলে জেনে রাখ, তারা তো নিজদের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করে। আর আল্লাহর দিকনির্দেশনা ছাড়া যে নিজের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করে তার চেয়ে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে? নিশ্চয় আল্লাহ যালিম কওমকে হিদায়েত করেন না”। [সূরা কাসাস: (৫০)] অপর আয়াতে তিনি বলেন:

﴿ وَإِنَّ كَثِيرٗا لَّيُضِلُّونَ بِأَهۡوَآئِهِم بِغَيۡرِ عِلۡمٍۚ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعۡلَمُ بِٱلۡمُعۡتَدِينَ ١١٩ ﴾ [ الانعام : ١١٩ ]

“এবং নিশ্চয় অনেকে না জেনে তাদের খেয়াল-খুশি দ্বারা অন্যদেরকে পথভ্রষ্ট করে। নিশ্চয় তোমার রব সীমালঙ্ঘনকারীদের সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত”। [সূরা আনআম: (১১৯)]

অনুরূপ আপনি যদি কুরআন ত্যাগ করে আমাদের পূর্বের শরীয়ত অনুসরণ করেন, তাহলে কুরআন আপনার বিপক্ষের দলিল হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿ وَأَنزَلۡنَآ إِلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ بِٱلۡحَقِّ مُصَدِّقٗا لِّمَا بَيۡنَ يَدَيۡهِ مِنَ ٱلۡكِتَٰبِ وَمُهَيۡمِنًا عَلَيۡهِۖ فَٱحۡكُم بَيۡنَهُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُۖ وَلَا تَتَّبِعۡ أَهۡوَآءَهُمۡ عَمَّا جَآءَكَ مِنَ ٱلۡحَقِّۚ لِكُلّٖ جَعَلۡنَا مِنكُمۡ شِرۡعَةٗ وَمِنۡهَاجٗاۚ ٤٨ ﴾ [ المائ‍دة : ٤٨ ]

“আর আমি তোমার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি যথাযথভাবে, এর পূর্বের কিতাবের সত্যায়নকারী ও এর উপর তদারককারীরূপে। সুতরাং আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তুমি তার মাধ্যমে ফয়সালা কর এবং তোমার নিকট যে সত্য এসেছে, তা ত্যাগ করে তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। তোমাদের প্রত্যেকের জন্য আমি নির্ধারণ করেছি শরীআত ও স্পষ্ট পন্থা”। [সূরা মায়েদাহ: (৪৮)]

আব্দুল্লাহ ইবনে সাবেত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: ওমর ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বলেন:

« يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي مَرَرْتُ بِأَخٍ لِي مِنْ بَنِي قُرَيْظَةَ فَكَتَبَ لِي جَوَامِعَ مِنْ التَّوْرَاةِ أَلَا أَعْرِضُهَا عَلَيْكَ قَالَ فَتَغَيَّرَ وَجْهُ رَسُولِ اللَّهِ صَلى الله عَلَيْه وسَلمَ وقَالَ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَوْ أَصْبَحَ فِيكُمْ مُوسَى ثُمَّ اتَّبَعْتُمُوهُ وَتَرَكْتُمُونِي لَضَلَلْتُمْ إِنَّكُمْ حَظِّي مِنْ الْأُمَمِ وَأَنَا حَظُّكُمْ مِنْ النَّبِيِّينَ» . حديث حسن لغيره .

“হে আল্লাহর রাসূল, বনু কুরাজাইর আমার এক বন্ধুর পাশ দিয়ে আমি যাচ্ছিলাম, সে আমাকে তাওরাতের কিছু সংক্ষিপ্ত বাণী লিখে দিল, আমি কি আপনার সামনে তা পেশ করব? তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারা পরিবর্তন হয়ে গেল, এবং তিনি বললেন: সে সত্ত্বার কসম, যার হাতে আমার নফস, যদি মুসাও তোমাদের মাঝে আগমন করে, অতঃপর তোমরা তার অনুসরণ কর ও আমাকে ত্যাগ কর, তাহলে অবশ্যই তোমরা গোমরাহ হবে। জাতিসমূহ থেকে তোমরা আমার ভাগের এবং নবীদের থেকে আমি তোমাদের ভাগের”। ইমাম আহমদ হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। [মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং: (১৫৮৬৪), (খ.২৫/পৃ.১৯৮)] এ হাদিস হাসান লি গায়রিহি।

জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:

«أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ رضي الله عنه أَتَى النَّبِيَّ صَلى الله عَلَيْه وسَلمَ بِكِتَابٍ أَصَابَهُ مِنْ بَعْضِ أَهْلِ الْكُتُبِ فَقَرَأَهُ النَّبِيُّ صَلى الله عَلَيْه وسَلمَ فَغَضِبَ فَقَالَ أَمُتَهَوِّكُونَ فِيهَا يَا ابْنَ الْخَطَّابِ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَقَدْ جِئْتُكُمْ بِهَا بَيْضَاءَ نَقِيَّةً وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَوْ أَنَّ مُوسَى صَلى الله عَلَيْه وسَلمَ كَانَ حَيًّا مَا وَسِعَهُ إِلَّا أَنْ يَتَّبِعَنِيِ » . رواه أحمد حديث حسن لغيره .

“ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আহলে কিতাবের জনৈক ব্যক্তি থেকে প্রাপ্ত একখানা কিতাব নিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লামের নিকট আসেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম তা পাঠ করে রাগান্বিত হলেন ও বললেন: হে ইবনে খাত্তাব, তোমরা কি তাতে [তাওরাতে] দ্বিধাগ্রস্ত, সে সত্ত্বার শপথ, যার হাতে আমার নফস, নিশ্চয় আমি তোমাদের নিকট সুস্পষ্ট পবিত্র কিতাব নিয়ে এসেছি, যদি মুসা জীবিত থাকতেন, তাহলে আমার অনুসরণ ব্যতীত তারও উপায় ছিল না”। হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম আহমদ। [মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং: (১৫১৫৬), (খ.২৩/পৃ.৩৪৯)] এ হাদিস হাসান লি গায়রিহি।

অনুরূপ আপনি যদি আল্লাহকে এবং আল্লাহর দীন ও নবীকে জানার ক্ষেত্রে কুরআন ত্যাগ করে মাজহাব ও মতবাদের অনুসরণ করেন, তাহলে কুরআন আপনার বিপক্ষে দলিল হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿ٱتَّخَذُوٓاْ أَحۡبَارَهُمۡ وَرُهۡبَٰنَهُمۡ أَرۡبَابٗا مِّن دُونِ ٱللَّهِ وَٱلۡمَسِيحَ ٱبۡنَ مَرۡيَمَ وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُوٓاْ إِلَٰهٗا وَٰحِدٗاۖ لَّآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَۚ سُبۡحَٰنَهُۥ عَمَّا يُشۡرِكُونَ ٣١﴾ [ سورة التوبة : ٣١ ]

“তারা আল্লাহকে ছেড়ে তাদের পণ্ডিত ও সংসার বিরাগীদের রব হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং মারইয়ামপুত্র মাসীহকেও। অথচ তারা এক ইলাহের ইবাদত করার জন্যই আদিষ্ট হয়েছে, তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। তারা যে শরীক করে তিনি তা থেকে পবিত্র”। [সূরা তাওবা: (৩১)]

আবু সা‘ঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«لَتَتَّبِعُنَّ سَنَنَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ شِبْرًا بِشِبْرٍ وَذِرَاعًا بِذِرَاعٍ حَتَّى لَوْ دَخَلُوا فِى جُحْرِ ضَبٍّ لاَتَّبَعْتُمُوهُمْ » . قُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ آلْيَهُودَ وَالنَّصَارَى قَالَ « فَمَنْ » . رواه البخاري ومسلم

“তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তীদের আদর্শের অনুসরণ করবে একটু্ একটু করে, এমন কি তারা যদি গুঁই সাপের গর্তেও ঢুকে, তবুও তোমরা তাদের অনুসরণ করবে”। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, ইহুদি ও নাসারা? তিনি বললেন: “আর কারা”। হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম বুখারি [বুখারি, হাদিস নং: (৭৩২০), (খ.১৮/৩০৭)] ও ইমাম মুসলিম [মুসলিম, হাদিস নং: (৬৯৫২), (খ.৮/পৃ.৫৭)]।

অনুরূপ আপনি যদি আল্লাহকে এবং আল্লাহর দীন ও নবীকে জানার ক্ষেত্রে কুরআন ত্যাগ করে স্বপ্ন, কল্পনা ও কারামতের অনুসরণ করেন, তাহলে কুরআন আপনার বিপক্ষের দলিল হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿إِن يَتَّبِعُونَ إِلَّا ٱلظَّنَّ وَمَا تَهۡوَى ٱلۡأَنفُسُۖ وَلَقَدۡ جَآءَهُم مِّن رَّبِّهِمُ ٱلۡهُدَىٰٓ ٢٣ ﴾ [ النجم : ٢٣ ]

“তারা তো কেবল অনুমান এবং নিজেরা যা চায়, তার অনুসরণ করে, অথচ তাদের কাছে তাদের রবের পক্ষ থেকে হিদায়াত এসেছে”। [সূরা নাজম: (২৩)] অপর আয়াতে তিনি বলেন:

﴿ مَا لَهُم بِهِۦ مِنۡ عِلۡمٍ إِلَّا ٱتِّبَاعَ ٱلظَّنِّۚ ١٥٧ ﴾ [ النساء : ١٥٧ ]

“ধারণার অনুসরণ ছাড়া এ ব্যাপারে তাদের কোন জ্ঞান নেই”। [সূরা নিসা: (১৫৭)] অপর আয়াতে তিনি বলেন:

﴿ وَمَا يَتَّبِعُ أَكۡثَرُهُمۡ إِلَّا ظَنًّاۚ إِنَّ ٱلظَّنَّ لَا يُغۡنِي مِنَ ٱلۡحَقِّ شَيۡ‍ًٔاۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلِيمُۢ بِمَا يَفۡعَلُونَ ٣٦ ﴾ [ يونس : ٣٦ ]

“আর তাদের অধিকাংশ কেবল ধারণার অনুসরণ করে। নিশ্চয় সত্যের বিপরীতে ধারণা কোন কার্যকারিতা রাখে না। তারা যা করে নিশ্চয় আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক অবগত”। [সূরা ইউনুস: (৩৬)]

অনুরূপ আপনি যদি আল্লাহকে এবং আল্লাহর দীন ও নবীকে জানার ক্ষেত্রে কুরআন ত্যাগ করে সূফী দরবেশদের পদ্ধতির অনুসরণ করেন, তাহলে কুরআন আপনার বিপক্ষের দলিল হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿ أَمِ ٱتَّخَذُواْ مِن دُونِهِۦٓ أَوۡلِيَآءَۖ فَٱللَّهُ هُوَ ٱلۡوَلِيُّ وَهُوَ يُحۡيِ ٱلۡمَوۡتَىٰ وَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٞ ٩ ﴾ [ الشورى : ٩ ]

“তারা কি তাঁকে বাদ দিয়ে বহু অভিভাবক গ্রহণ করেছে? কিন্তু আল্লাহ, তিনিই হলেন প্রকৃত অভিভাবক; তিনি মৃতকে জীবিত করেন আর তিনি সকল বিষয়ে সর্বক্ষমতাবান”। [সূরা শুরা: (৯)] অপর আয়াতে তিনি বলেন:

﴿وَقَالُواْ لَا تَذَرُنَّ ءَالِهَتَكُمۡ وَلَا تَذَرُنَّ وَدّٗا وَلَا سُوَاعٗا وَلَا يَغُوثَ وَيَعُوقَ وَنَسۡرٗا٢٣ وَقَدۡ أَضَلُّواْ كَثِيرٗاۖ وَلَا تَزِدِ ٱلظَّٰلِمِينَ إِلَّا ضَلَٰلٗا ٢٤ ﴾ [ نوح : ٢٣، ٢٤ ]

“আর তারা বলে, ‘তোমরা তোমাদের উপাস্যদের বর্জন করো না; বর্জন করো না ওয়াদ, সুওয়া‘, ইয়াগূছ, ইয়া‘ঊক ও নাসরকে’। বস্তুত তারা অনেককে পথভ্রষ্ট করেছে, আর (হে আল্লাহ) আপনি যালিমদেরকে ভ্রষ্টতা ছাড়া আর কিছুই বাড়াবেন না”। [সূরা নুহ: (২৩-২৪)]

‘ওয়াদ’ একজন নেককার লোক ছিলেন, তার মৃত্যুর পর তার কওম তার প্রতি প্রথম-প্রথম সম্মান প্রদর্শন করে পরবর্তীতে তার ইবাদতে লিপ্ত হয়। অনুরূপ ‘সুয়া’ একজন নেককার লোক ছিলেন, তার মৃত্যুর পর তার কওম প্রথম-প্রথম তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে পরবর্তীতে তার ইবাদতে লিপ্ত হয়। অনুরূপ ‘ইয়াগুস’ একজন নেককার লোক ছিলেন, তার মৃত্যুর পর তার কওম প্রথম-প্রথম তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে পরবর্তীতে তার ইবাদতে লিপ্ত হয়। অনুরূপ ‘ইয়াউক’ একজন নেককার লোক ছিলেন, তার মৃত্যুর পর তার কওম শুরুতে তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে পরবর্তীতে তার ইবাদতে লিপ্ত হয়। অনুরূপ ‘নাসর’ একজন নেককার লোক ছিলেন, তার মৃত্যুর পর তার কওম প্রথমে তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে পরবর্তীতে তার ইবাদতে লিপ্ত হয়।

কতিপয় লোক আসহাবে কাহাফের যুবকদের প্রতি প্রথম-প্রথম সম্মান প্রদর্শন করে, অতঃপর তাদের উপর মসজিদ নির্মাণ করে তাদের ইবাদতে লিপ্ত হয়। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿ قَالَ ٱلَّذِينَ غَلَبُواْ عَلَىٰٓ أَمۡرِهِمۡ لَنَتَّخِذَنَّ عَلَيۡهِم مَّسۡجِدٗا ٢١ ﴾ [ الكهف : ٢١ ]

“যারা গুহাবাসীদের উপর প্রাধান্য লাভ করেছিল, তারা বলল, ‘আমরা অবশ্যই তাদের উপর একটি মসজিদ নির্মাণ করব”। [সূরা কাহাফ: (২১)]

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উম্মে সালামাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট হাবশায় দেখা গির্জার বর্ণনা দিলেন, যেগুলোকে ‘মারিয়াহ’ বলা হয়। তিনি সেখানে দেখা কতক ছবির বর্ণনা দিলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:

« أُولَئِكَ قَوْمٌ إِذَا مَاتَ فِيهِمْ الْعَبْدُ الصَّالِحُ أَوْ الرَّجُلُ الصَّالِحُ بَنَوْا عَلَى قَبْرِهِ مَسْجِدًا وَصَوَّرُوا فِيهِ تِلْكَ الصُّوَرَ أُولَئِكَ شِرَارُ الْخَلْقِ عِنْدَ اللَّهِ» . رواه البخاري ومسلم

“তারা এমন জাতি, যখন তাদের মাঝে নেক বান্দা অথবা ভালো লোক মারা যেত, তারা তার কবরের উপর মসজিদ নির্মাণ করত এবং তাতে তাদের ছবি অঙ্কন করত। তারা আল্লাহর নিকট নিকৃষ্ট জাতি”। ইমাম বুখারি [সহি বুখারি, হাদিস নং: (৪১৬), (খ.২/পৃ.২১৪)] ও ইমাম মুসলিম [মুসলিম, হাদিস নং: (৮২২), (খ.৩/পৃ.১২২)] হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুমূর্ষু অবস্থায় উপনীত হলেন, স্বীয় কাপড় চেহারার উপর বারবার রাখছিলেন, যখন তার কারণে দম বন্ধ হয়ে আসত, চেহারা থেকে তা সরিয়ে নিতেন, এমতাবস্থায় তিনি বলেন: ইহুদি ও খৃস্টানদের উপর আল্লাহর লানত, তারা তাদের নবীদের কবরকে মসজিদ বানিয়েছে। তিনি তাদের কর্ম থেকে সতর্ক করতে ছিলেন”। [বুখারি: (৪১৭), (খ.২/পৃ.২১৫), মুসলিম: (৮২৬), (খ.৩/পৃ.১২৬)]

অনুরূপ আপনি যদি গায়েব জানার জন্য কুরআন ত্যাগ করেন, এবং মুজাহাদা ও শারীরিক কসরতের মাধ্যমে আল্লাহকে, তার দীন ও নবীকে জানার জন্য গায়েবকে দৃশ্যমান করতে চান, তাহলে কুরআন আপনার বিপক্ষের দলিল হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿ وَمَا كَانَ ٱللَّهُ لِيُطۡلِعَكُمۡ عَلَى ٱلۡغَيۡبِ وَلَٰكِنَّ ٱللَّهَ يَجۡتَبِي مِن رُّسُلِهِۦ مَن يَشَآءُۖ فَ‍َٔامِنُواْ بِٱللَّهِ وَرُسُلِهِۦۚ وَإِن تُؤۡمِنُواْ وَتَتَّقُواْ فَلَكُمۡ أَجۡرٌ عَظِيمٞ ١٧٩ ﴾ [ ال عمران : ١٧٩ ]

“আর আল্লাহ এমন নন যে, তিনি তোমাদেরকে গায়েব সম্পর্কে জানাবেন। তবে আল্লাহ তাঁর রাসূলদের মধ্য থেকে যাকে চান বেছে নেন। সুতরাং তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আন। আর যদি তোমরা ঈমান আন এবং তাকওয়া অবলম্বন কর তবে তোমাদের জন্য রয়েছে মহাপ্রতিদান”। [সূরা আলে-ইমরান: (১৭৯)] অন্যত্র তিনি বলেন:

﴿ عَٰلِمُ ٱلۡغَيۡبِ فَلَا يُظۡهِرُ عَلَىٰ غَيۡبِهِۦٓ أَحَدًا ٢٦ إِلَّا مَنِ ٱرۡتَضَىٰ مِن رَّسُولٖ فَإِنَّهُۥ يَسۡلُكُ مِنۢ بَيۡنِ يَدَيۡهِ وَمِنۡ خَلۡفِهِۦ رَصَدٗا ٢٧ ﴾ [ الجن : ٢٦، ٢٧ ]

“তিনি অদৃশ্যের জ্ঞানী, আর তিনি তাঁর অদৃশ্যের জ্ঞান কারো কাছে প্রকাশ করেন না। তবে তাঁর মনোনীত রাসূল ছাড়া। আর তিনি তখন তার সামনে ও তার পিছনে প্রহরী নিযুক্ত করবেন”। [সূরা জিন: (২৬-২৭)] অন্যত্র তিনি বলেন:

﴿ قُل لَّآ أَقُولُ لَكُمۡ عِندِي خَزَآئِنُ ٱللَّهِ وَلَآ أَعۡلَمُ ٱلۡغَيۡبَ وَلَآ أَقُولُ لَكُمۡ إِنِّي مَلَكٌۖ إِنۡ أَتَّبِعُ إِلَّا مَا يُوحَىٰٓ إِلَيَّۚ قُلۡ هَلۡ يَسۡتَوِي ٱلۡأَعۡمَىٰ وَٱلۡبَصِيرُۚ أَفَلَا تَتَفَكَّرُونَ ٥٠ ﴾ [ الانعام : ٥٠ ]

“বল, ‘তোমাদেরকে আমি বলি না, আমার কাছে আল্লাহর ভাণ্ডারসমূহ রয়েছে এবং আমি গায়েব জানি এবং তোমাদেরকে বলি না যে, নিশ্চয় আমি ফেরেশতা। আমি কেবল তাই অনুসরণ করি যা আমার কাছে অহি প্রেরণ করা হয়। বল, ‘অন্ধ আর চক্ষুষ্মান কি সমান হতে পারে? অতএব তোমরা কি চিন্তা করবে না”? [সূরা আনআম: (৫০)]

অতঃপর লেখক বলেন:

ثم إلي هنا قد انتهيت وتم ما بجمعه عنيت

والحمد لله على انتهائي كما حمدت الله في ابتدائي

এখানেই আমি শেষ করলাম এবং আমি যা জমা করার ইচ্ছা করেছি তা পূর্ণ হয়েছে। আর সমাপ্তিতে আল্লাহর জন্যই সকল প্রশংসা, যেমন আমি প্রারম্ভেও আল্লাহর প্রশংসা করেছিলাম।

وصلى الله على نبينا محمد وعلى آله وصحبه وسلم

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন