HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

রাসূল অবমাননার পরিণাম ও শাস্তি আমাদের করণীয়

লেখকঃ হাবীবুল্লাহ মুহাম্মাদ ইকবাল

কিতাবের নাম/ লেখক/ অনুবাদক/ সম্পাদক
রাসূল অবমাননার পরিণাম ও শাস্তি: আমাদের করণীয়

হাবীবুল্লাহ মুহাম্মাদ ইকবাল

সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

সংক্ষিপ্ত বর্ণনা... .. .
প্রবন্ধে লেখক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অবমাননা করার ভয়ংকর পরিণতি ও শাস্তির কথা কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে তুলে ধরেছেন। অতঃপর এ ব্যাপারে আমাদের করণীয় কী তা নির্দেশ করেছেন।

ভূমিকা
إن الحمد لله والصلاة والسلام على رسول الله وعلى آله وصحبه أجمعين أما بعد :

আল্লাহ তা‘আলা মানবজাতির হিদায়াতের জন্য যুগে যুগে রাসূল প্রেরণ করেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশ্ব মানবগোষ্ঠীর জন্য সর্বশেষ রাসূল। তিনি সকল জনগোষ্ঠীর জন্য প্রেরিত নবী। আরবী, অনারবী, সাদা-কালো সবার জন্য তিনি নবী ও রাসূল। তিনি সকল নবী ও রাসূলেরও নেতা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿لَقَدۡ مَنَّ ٱللَّهُ عَلَى ٱلۡمُؤۡمِنِينَ إِذۡ بَعَثَ فِيهِمۡ رَسُولٗا مِّنۡ أَنفُسِهِمۡ يَتۡلُواْ عَلَيۡهِمۡ ءَايَٰتِهِۦ وَيُزَكِّيهِمۡ وَيُعَلِّمُهُمُ ٱلۡكِتَٰبَ وَٱلۡحِكۡمَةَ وَإِن كَانُواْ مِن قَبۡلُ لَفِي ضَلَٰلٖ مُّبِينٍ ١٦٤﴾ [ ال عمران : ١٦٤ ]

“অবশ্যই আল্লাহ মুমিনদের ওপর অনুগ্রহ করেছেন, যখন তিনি তাদের মধ্য থেকে তাদের প্রতি একজন রাসূল পাঠিয়েছেন, যে তাদের কাছে তাঁর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করে আর তাদেরকে কিতাব ও হিকমাত শিক্ষা দেয়। যদিও তারা ইতোপূর্বে স্পষ্ট ভ্রান্তিতে ছিল।” [সূরা আলে ইমরান: ১৬৪] বর্তমানে বিভিন্নভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবমাননা করা হচ্ছে, অথচ আমরা জানি না যে, এর পরিণাম কত ভয়াবহ। এ বিষয়ে আমাদের সঠিক জ্ঞান থাকা খুবই জরুরী। আলোচ্য প্রবন্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবমাননার পরিণাম ও শাস্তি সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মান ও মর্যাদা:
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মান ও মর্যাদা আল্লাহ তা‘আলা নির্ধারণ করেছেন। তাই ইচ্ছা করে তার মর্যাদা কেউ বাড়াতে বা কমাতে পারবে না। তারা নবীকে নিয়ে যতই কটূক্তি এবং অবমাননা করেছে আল্লাহ ততই তাঁর মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন। আল্লাহ বলেন,

﴿وَرَفَعۡنَا لَكَ ذِكۡرَكَ ٤ ﴾ [ الشرح : ٤ ]

“আর আমরা আপনার খ্যাতিকে উচ্চ মর্যাদা দান করেছি।” [সূরা আল-ইনশিরাহ, আয়াত: ৪] প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের আযানে বিশ্বব্যাপী মসজিদে মসজিদে তাঁর নাম উচ্চারিত হচ্ছে। মুয়াজ্জিন ঘোষণা দিচ্ছে,

«أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ»

(আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্) “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল।” নিম্নে তাঁর সম্মান ও মর্যাদা সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো:

এক. উত্তম চরিত্র ও মাধুর্যপূর্ণ আচরণের অধিকারী
আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন উত্তম চরিত্র ও মাধুর্যপূর্ণ আচরণের অধিকারী। এ বিষয়ে স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলাই প্রশংসা করে বলেন,

﴿وَإِنَّكَ لَعَلَىٰ خُلُقٍ عَظِيمٖ ٤﴾ [ القلم : ٤ ]

“আর অবশ্যই তুমি মহান চরিত্রের ওপর প্রতিষ্ঠিত। [সূরা আল-কালাম, আয়াত: ৪] অনুরূপভাবে আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِنَّمَا بُعِثْتُ لأُتَمِّمَ مَكَارِمَ الأَخْلاَقِ»

“নিশ্চয় আমি মহৎ চারিত্রিক গুণাবলীর পূর্ণতা দান করার উদ্দেশ্যে প্রেরিত হয়েছি।” [সুনান বায়হাকী, হাদীস নং ২০৫৭১।]

দুই. তিনি বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ
আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শুধু মানবমণ্ডলী নয় সকল সৃষ্টিকুলের জন্যই রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمَآ أَرۡسَلۡنَٰكَ إِلَّا رَحۡمَةٗ لِّلۡعَٰلَمِينَ ١٠٧ ﴾ [ الانبياء : ١٠٧ ]

“আর আমরা তোমাকে বিশ্ববাসীর জন্যে কেবল রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি।” [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ১০৭]

আবূ সালেহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ডেকে বলতেন,

«يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّمَا أَنَا رَحْمَةٌ مُهْدَاةٌ»

“নিশ্চয় আমি উপহারস্বরূপ প্রদত্ত রহমত বিশেষ।” [মুসতাদরাক লিল-হাকিম, হাদীস নং ১০০।]

তিন. তিনি শেষ নবী
তাঁর বৈশিষ্ট্যের অন্যতম একটি দিক হচ্ছে, তিনি হচ্ছেন নবী পরস্পরা পরিসমাপ্তকারী-শেষ নবী। তারপর আর কোনো নবী আসবেন না। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা‘আলা ঘোষণা করেন,

﴿مَّا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَآ أَحَدٖ مِّن رِّجَالِكُمۡ وَلَٰكِن رَّسُولَ ٱللَّهِ وَخَاتَمَ ٱلنَّبِيِّ‍ۧنَۗ وَكَانَ ٱللَّهُ بِكُلِّ شَيۡءٍ عَلِيمٗا ٤٠﴾ [ الاحزاب : ٤٠ ]

“মুহাম্মাদ তোমাদের কোনো পুরুষের পিতা নন, বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী। আর আল্লাহ সবকিছু সম্পর্কে সর্বজ্ঞ।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৪০]

চার. সকল নবী-রাসূলদের ওপর তাঁকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে
যুগে যুগে যেসব নবী ও রাসূল আগমন করেছেন তাদের ওপর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শ্রেষ্ঠত্ব দেওয়া হয়েছে। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«فُضِّلْتُ عَلَى الأَنْبِيَاءِ بِسِتٍّ أُعْطِيتُ جَوَامِعَ الْكَلِمِ وَنُصِرْتُ بِالرُّعْبِ وَأُحِلَّتْ لِىَ الْغَنَائِمُ وَجُعِلَتْ لِىَ الأَرْضُ طَهُورًا وَمَسْجِدًا وَأُرْسِلْتُ إِلَى الْخَلْقِ كَافَّةً وَخُتِمَ بِىَ النَّبِيُّونَ»

“ছয়টি দিক থেকে সকল নবীদের ওপর আমাকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে। আমাকে জাওয়ামি‘উল কালিম তথা ব্যাপক অর্থবোধক সংক্ষিপ্ত বাক্য বলার যোগ্যতা দেওয়া হয়েছে, আমাকে ভীতি (শত্রুর অন্তরে আমার ব্যাপারে ভয়ের সঞ্চার করা) দ্বারা সাহায্য করা হয়েছে, গনীমতের মাল (যুদ্ধলব্ধ সম্পদ) আমার জন্যে বৈধ করা হয়েছে, আমার জন্যে সকল ভূমিকে পবিত্র ও সাজদার উপযুক্ত করা হয়েছে, আমি সকল মানুষের তরে প্রেরিত হয়েছি এবং আমার মাধ্যমে নবুওয়াত পরস্পরা শেষ করা হয়েছে।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৯৫।]

পাঁচ. তাঁকে নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালবাসা ঈমানের দাবী
যে ব্যক্তির মধ্যে রাসূলের ভালোবাসা থাকবে না, সে কোনো দিন মুমিন হতে পারবে না। এমনকি নিজের জীবন থেকেও তার প্রতি বেশি ভালোবাসা থাকতে হবে। কুরআনে বলা হয়েছে,

﴿ٱلنَّبِيُّ أَوۡلَىٰ بِٱلۡمُؤۡمِنِينَ مِنۡ أَنفُسِهِمۡۖ﴾ [ الاحزاب : ٦ ]

“নবী, মুমিনদের কাছে তাদের নিজদের চেয়ে ঘনিষ্ঠতর”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৬]

এ বিষয়ে নিম্নোক্ত হাদীসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ:

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ»

“তোমাদের কেউ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার সন্তান, পিতা ও সমগ্র মানুষ থেকে প্রিয়তম হবো।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪।] অর্থাৎ সবার চেয়ে তাঁকে বেশি ভালোবাসতে হবে।

১০
ছয়. তাঁর শাফা‘আত কবুল হবে
কিয়ামতের কঠিন মুসীবতের দিনে আল্লাহ তা‘আলার অনুমতিক্রমে তিনি গুনাহগার উম্মাতের জন্য শাফা‘আত করবেন। আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেন,

«أَنَا سَيِّدُ وَلَدِ آدَمَ، وَلاَ فَخْرَ، وَأَنَا أَوَّلُ مَنْ تَنْشَقُّ الأَرْضُ عَنْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَلاَ فَخْرَ، وَأَنَا أَوَّلُ شَافِعٍ، وَأَوَّلُ مُشَفَّعٍ، وَلاَ فَخْرَ، وَلِوَاءُ الْحَمْدِ بِيَدِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَلاَ فَخْرَ»

“কিয়ামতের দিন আমি সকল আদম সন্তানের নেতা। এতে কোনো গর্ব-অহঙ্কার নেই। সেদিন আমার হাতে প্রশংসার ঝাণ্ডা থাকবে তাতে কোনো গর্ব-অহঙ্কার নেই। আদম থেকে নিয়ে যত নবী-রাসূল আছেন সকলেই আমার ঝাণ্ডার নিচে থাকবেন। আমি হচ্ছি প্রথম সুপারিশকারী এবং আমার সুপারিশই সর্বপ্রথম কবুল করা হবে। এতে কোনো গর্ব-অহঙ্কার নেই।” [ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৪৩০৮।]

১১
সাত. তিনিই সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশকারী ব্যক্তি
তিনিই সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশকারী ব্যক্তি হবেন। এ বিষয়ে আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«آتِى بَابَ الْجَنَّةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَأَسْتَفْتِحُ فَيَقُولُ الْخَازِنُ مَنْ أَنْتَ فَأَقُولُ مُحَمَّدٌ . فَيَقُولُ بِكَ أُمِرْتُ لاَ أَفْتَحُ لأَحَدٍ قَبْلَكَ»

“জান্নাতের দরজায় আমিই সর্বপ্রথম করাঘাত করব, তখন খাযেন (প্রহরী) জিজ্ঞেস করবে, কে আপনি? আমি বলব, মুহাম্মাদ। সে বলবে, আপনার জন্যেই খোলার ব্যাপারে নির্দেশিত হয়েছি, আপনার পূর্বে কারো জন্যে খুলব না।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫০৭।]

১২
আট. তাঁর আদর্শই সর্বোত্তম
যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি, জান্নাতের আশা এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি প্রত্যাশা করেন তিনি তাদের সকলের জন্যে উত্তম আদর্শ। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿لَّقَدۡ كَانَ لَكُمۡ فِي رَسُولِ ٱللَّهِ أُسۡوَةٌ حَسَنَةٞ لِّمَن كَانَ يَرۡجُواْ ٱللَّهَ وَٱلۡيَوۡمَ ٱلۡأٓخِرَ وَذَكَرَ ٱللَّهَ كَثِيرٗا ٢١﴾ [ الاحزاب : ٢١ ]

“যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্যে রাসূলুল্লাহর মাঝেই রয়েছে উত্তম আদর্শ।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ২১]

১৩
নয়. সকল ক্ষেত্রে তাঁর অনুসরণ ঈমানদার হওয়ার শর্ত
তিনি যেসব বিষয়ে আদেশ করেছেন তা পালন করা এবং যা নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা তা ঈমানদার হওয়ার শর্ত। কুরআনে মাজীদে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمَآ ءَاتَىٰكُمُ ٱلرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَىٰكُمۡ عَنۡهُ فَٱنتَهُواْۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَۖ إِنَّ ٱللَّهَ شَدِيدُ ٱلۡعِقَابِ ٧ ﴾ [ الحشر : ٧ ]

“আর রাসূল তোমাদের জন্য যা দিয়েছেন তা তোমরা গ্রহণ কর, আর যা থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও।” [সূরা আল-হাশর, আয়াত: ৭]

আবদুল্লাহ ইবন ‘আমর ইবনুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«لا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى يَكُونَ هَوَاهُ تَبَعًا لِمَا جِئْتُ بِهِ»

“তোমাদের কেউ পরিপূর্ণ মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ না তোমাদের প্রবৃত্তি আমার অনুসরণ করে।” [সারহুস সুন্নাহ, হাদীস নং ১০৪, তবে এর সনদ দুর্বল।]

১৪
দশ. তাঁর নাম শুনলে সালাত ও সালাম দিতে হয়
আল্লাহ তা‘আলা তার মর্যাদাকে সমুন্নত করার জন্য সালাত ও সালাম পাঠের নির্দেশ প্রদান করেছেন। সূরা আল-আহযাবের ৫৬ নং আয়াতে বলা হয়েছে,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ صَلُّواْ عَلَيۡهِ وَسَلِّمُواْ تَسۡلِيمًا ٥٦﴾ [ الاحزاب : ٥٦ ]

“হে মুমিনগণ, তোমরাও নবীর ওপর দুরূদ পাঠ কর এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৬]

অনুরূপভাবে আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ صَلَّى عَلَيَّ صَلاَةً وَاحِدَةً صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ عَشْرَ صَلَوَاتٍ ، وَحَطَّ عَنْهُ بِهَا عَشْرَ سَيِّئَاتٍ ، وَرَفَعَهُ بِهَا عَشْرَ دَرَجَاتٍ»

“যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার সালাত পাঠ করবে আল্লাহ তাকে দশবার সালাত পাঠ করেন, দশটি গুনাহ মুছে দিবেন এবং দশটি মর্যাদায় ভূষিত করবেন।” [সুনান নাসাঈ, হাদীস নং ১২৯৭।]

১৫
এগারো. তাঁর ওপর কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে
আল্লাহ তা‘আলা যুগে যুগে মানবতার হিদায়াতের জন্য যেসব কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, তার মধ্যে আল-কুরআন হলো সর্বশেষ আসমানী কিতাব, যা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর অবতীর্ণ হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন

﴿وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ وَءَامَنُواْ بِمَا نُزِّلَ عَلَىٰ مُحَمَّدٖ وَهُوَ ٱلۡحَقُّ مِن رَّبِّهِمۡ كَفَّرَ عَنۡهُمۡ سَيِّ‍َٔاتِهِمۡ وَأَصۡلَحَ بَالَهُمۡ ٢﴾ [ محمد :٢]

“আর যারা ঈমান এনেছে, সৎকর্ম করেছে এবং মুহাম্মাদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তাতে ঈমান এনেছে, আর তা তাদের রবের পক্ষ থেকে (প্রেরিত) সত্য, তিনি তাদের থেকে তাদের মন্দ কাজগুলো দূর করে দিবেন এবং তিনি তাদের অবস্থা সংশোধন করে দেবেন।” [সুরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ২]

১৬
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবমাননা:
বিশ্ব মানবণ্ডলীর হিদায়াতের জন্য আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণ করা হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এই যে, তিনি বিভিন্ন সময় নানা রকমের বাধা বিপত্তি ও অবমাননার শিকার হয়েছেন। এ বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَكَذَٰلِكَ جَعَلۡنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوّٗا شَيَٰطِينَ ٱلۡإِنسِ وَٱلۡجِنِّ يُوحِي بَعۡضُهُمۡ إِلَىٰ بَعۡضٖ زُخۡرُفَ ٱلۡقَوۡلِ غُرُورٗاۚ وَلَوۡ شَآءَ رَبُّكَ مَا فَعَلُوهُۖ فَذَرۡهُمۡ وَمَا يَفۡتَرُونَ ١١٢﴾ [ الانعام : ١١٢ ]

“আর এমনিভাবেই আমরা প্রত্যেক নবীর জন্যে বহু শয়তানকে শত্রুরূপে সৃষ্টি করেছি, তাদের কতক শয়তান মানুষের মধ্যে এবং কতক শয়তান জিন্নদের মধ্য থেকে হয়ে থাকে, এরা একে অপরকে কতগুলো মনোমুগ্ধকর, ধোঁকাপূর্ণ ও প্রতারণাময় কথা দ্বারা প্ররোচিত করে থাকে, আর আপনার রবের ইচ্ছা হলে তারা এমন কাজ করতে পারত না। সুতরাং আপনি তাদেরকে এবং তাদের মিথ্যা রচনাগুলোকে বর্জন করে চলুন।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১১২]

তাঁর ওপর নবুওয়াতী জীবনের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত বিভিন্ন রকমের কটূক্তি, অবমাননা এমনকি তাঁর পরিবারের ওপর অপবাদ দেওয়া হয়েছে। তাঁর নাম বিকৃতি করা, তার চরিত্র নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করা, বিভিন্ন ইবাদত নিয়ে ব্যঙ্গ করাসহ নানাভাবে পত্রিকা, ব্লগ, ফেসবুক ও বিভিন্ন মিডিয়ায় তাঁকে অবমাননা করা হচ্ছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবমাননা কত বড় জঘন্য অপরাধ তা নিম্নোক্ত বিষয় থেকে আরো সুস্পষ্ট হয়।

১৭
এক. মানবাধিকার লঙ্ঘন
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর অপবাদ ও তাঁর ব্যাপারে কুৎসা রটনা মানবাধিকার লঙ্ঘন। এ ধরনের জঘন্য কাজ কোনো বিবেকবান মানুষ করতে পারে না। যারা এ ধরণের কাজে লিপ্ত থাকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে তাদেরেকে দণ্ডিত হতে হবে।

১৮
দুই. রাসূলের অবমাননা অনৈতিক কাজ
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কর্মময় জীবনে সদা ব্যস্ত ছিলেন -কীভাবে মানুষের কল্যাণ লাভ করা যায়। তার গোটা জীবন ছিল মানব কল্যাণে নিবেদিত। অপরের কষ্ট সহ্য করতেন না তিনি। কুরআনুল কারীমে এসেছে,

﴿لَقَدۡ جَآءَكُمۡ رَسُولٞ مِّنۡ أَنفُسِكُمۡ عَزِيزٌ عَلَيۡهِ مَا عَنِتُّمۡ حَرِيصٌ عَلَيۡكُم بِٱلۡمُؤۡمِنِينَ رَءُوفٞ رَّحِيمٞ ١٢٨ ﴾ [ التوبة : ١٢٨ ]

“তোমাদের নিকট একজন রাসূল এসেছে, যে তোমাদের মধ্যেরই একজন। তোমাদের ক্ষতি হওয়া তাঁর পক্ষে দুঃসহ কষ্টদায়ক, তোমাদের সার্বিক কল্যাণেরই সে কামনাকারী। ঈমানদার লোকদের জন্য সে সহানুভূতি সম্পন্ন ও করুণাসিক্ত।” [সূরা আত-তাওবাহ্‌, আয়াত: ১২৮]

১৯
তিন. রাসূলের অবমাননা শাস্তিযোগ্য অপরাধ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অবজ্ঞা করা, তুচ্ছ জ্ঞান করা, তার শানে বেয়াদবী করা, অর্থাৎ তার প্রতি অবমাননাকর কোনো উক্তি করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। প্রসিদ্ধ আলেম কাজী ইয়ায রহ. বলেন,

أجمعت الأمة على قتل متنقصه من المسلمين و سابه و كذلك حكي عن غير واحد الإجماع على قتله و تكفيره

“উম্মতের ওলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে একমত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গালি দেওয়া বা তাকে অসম্মান করার শাস্তি হচ্ছে হত্যা করা। এ ব্যাপারে সকলের ইজমা হয়েছে, যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গালি দিবে বা তার অসম্মান করবে সে কাফের হয়ে যাবে এবং তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।” [আস-সারিমুল মাসলূল: (১/৯)।]

২০
চার. রাসূলের প্রতি অবমাননা একটি ফিতনাহ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শানে অবমাননা একটি ফিতনাহ-ফাসাদ তুল্য অপরাধ। কারণ, এর লক্ষ্য হলো মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা ও সমাজে অশান্তি তৈরি করা। ভিন্নধর্মাবলম্বীদের প্রতি হিংসার আগুন জ্বালিয়ে দেওয়াসহ ধর্মপ্রিয় মানুষকে আঘাত করা।

২১
পাচ. রাসূলের অবমাননা একটি যুলুম
চরিত্র হচ্ছে মানব জীবনের এক অমূল্য সম্পদ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। যে রাসূলের চারিত্রিক সার্টিফিকেট স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন দিয়েছেন তার ব্যাপারে অবমাননাকর উক্তি করা চরম যুলুম ভিন্ন অন্য কিছুই নয়। সুতরাং তাঁর চরিত্রের বিরুদ্ধে কথা বলা কত বড় যুলুম তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

২২
ছয়. রাসূলের অবমাননা রাষ্ট্রদ্রোহীতার শামিল
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৪১ নং ধারায় প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার ধর্ম পালন ও সংরক্ষণের অধিকার দেওয়া হয়েছে। অন্য কোনো ধর্ম বা কোনো ধর্মের নেতার বিষয়ে কটূক্তি করা সংবিধান তথা রাষ্ট্রবিরোধী কাজ। সুতরাং যারাই এ কাজটি করবে তারা রাষ্ট্রদ্রোহীতার অপরাধে অপরাধী।

২৩
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবমাননার পরিণাম ও শাস্তি:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবমাননা এবং তাঁকে বিদ্রূপ করার অধিকার কারো নেই। যে রাসূলকে অবমাননা এবং তাঁকে বিদ্রূপ করবে তার পরিণাম হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। আর এ অপরাধের জন্য তাকে শাস্তিও পেতে হবে। নিম্নোক্ত আলোচনায় রাসূলের অবমাননার পরিণাম সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো :

২৪
এক. কাফির ও মুরতাদ বা ধর্মত্যাগী হয়ে যাবে
যে রাসূলের অবমাননা করবে সে মুরতাদ বা ধর্মত্যাগী এবং কাফির হিসেবে বিবেচিত হবে। এ বিষয়ে কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে,

﴿يَحۡذَرُ ٱلۡمُنَٰفِقُونَ أَن تُنَزَّلَ عَلَيۡهِمۡ سُورَةٞ تُنَبِّئُهُم بِمَا فِي قُلُوبِهِمۡۚ قُلِ ٱسۡتَهۡزِءُوٓاْ إِنَّ ٱللَّهَ مُخۡرِجٞ مَّا تَحۡذَرُونَ ٦٤ وَلَئِن سَأَلۡتَهُمۡ لَيَقُولُنَّ إِنَّمَا كُنَّا نَخُوضُ وَنَلۡعَبُۚ قُلۡ أَبِٱللَّهِ وَءَايَٰتِهِۦ وَرَسُولِهِۦ كُنتُمۡ تَسۡتَهۡزِءُونَ ٦٥ لَا تَعۡتَذِرُواْ قَدۡ كَفَرۡتُم بَعۡدَ إِيمَٰنِكُمۡۚ إِن نَّعۡفُ عَن طَآئِفَةٖ مِّنكُمۡ نُعَذِّبۡ طَآئِفَةَۢ بِأَنَّهُمۡ كَانُواْ مُجۡرِمِينَ ٦٦﴾ [ التوبة : ٦٤، ٦٦ ]

“মুনাফিকরা ভয় করে যে, তাদের বিষয়ে এমন একটি সূরা অবতীর্ণ হবে, যা তাদের অন্তরের বিষয়গুলো জানিয়ে দিবে। বল, ‘তোমরা উপহাস করতে থাক। নিশ্চয় আল্লাহ বের করবেন, তোমরা যা ভয় করছ। আর যদি তুমি তাদেরকে প্রশ্ন কর, অবশ্যই তারা বলবে, ‘আমরা আলাপচারিতা ও খেল-তামাশা করছিলাম। বল, ‘আল্লাহ, তাঁর আয়াতসমূহ ও তাঁর রাসূলের সাথে তোমরা বিদ্রূপ করছিলে? তোমরা ওযর পেশ করো না। তোমরা তোমাদের ঈমানের পর অবশ্যই কুফুরী করেছ। যদি আমরা তোমাদের থেকে একটি দলকে ক্ষমা করে দিই, তবে অপর দলকে আযাব দিব। কারণ, তারা হচ্ছে অপরাধী।” [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৬৫-৬৬]

২৫
দুই. দুনিয়াতে আল্লাহর লা‘নতপ্রাপ্ত ও আখিরাতে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে
যে রাসূলের অবমাননা করবে সে দুনিয়াতে আল্লাহর লা‘নতপ্রাপ্ত ও আখিরাতে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে। এ বিষয়ে কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে,

﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ يُؤۡذُونَ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ لَعَنَهُمُ ٱللَّهُ فِي ٱلدُّنۡيَا وَٱلۡأٓخِرَةِ وَأَعَدَّ لَهُمۡ عَذَابٗا مُّهِينٗا ٥٧﴾ [ الاحزاب : ٥٧ ]

“নিশ্চয় যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদের প্রতি দুনিয়া ও আখিরাতে অভিসম্পাত করেন এবং তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন অবমাননাকর শাস্তি।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৭] আর রাসূলকে অবমাননা এবং তাঁকে বিদ্রূপ করার মাধ্যমে তাঁকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে হাদীসে এসেছে, আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ رَجُلٌ نَصْرَانِيًّا فَأَسْلَمَ، وَقَرَأَ البَقَرَةَ وَآلَ عِمْرَانَ، فَكَانَ يَكْتُبُ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَعَادَ نَصْرَانِيًّا، فَكَانَ يَقُولُ : مَا يَدْرِي مُحَمَّدٌ إِلَّا مَا كَتَبْتُ لَهُ فَأَمَاتَهُ اللَّهُ فَدَفَنُوهُ، فَأَصْبَحَ وَقَدْ لَفَظَتْهُ الأَرْضُ، فَقَالُوا : هَذَا فِعْلُ مُحَمَّدٍ وَأَصْحَابِهِ لَمَّا هَرَبَ مِنْهُمْ، نَبَشُوا عَنْ صَاحِبِنَا فَأَلْقَوْهُ، فَحَفَرُوا لَهُ فَأَعْمَقُوا، فَأَصْبَحَ وَقَدْ لَفَظَتْهُ الأَرْضُ، فَقَالُوا : هَذَا فِعْلُ مُحَمَّدٍ وَأَصْحَابِهِ، نَبَشُوا عَنْ صَاحِبِنَا لَمَّا هَرَبَ مِنْهُمْ فَأَلْقَوْهُ، فَحَفَرُوا لَهُ وَأَعْمَقُوا لَهُ فِي الأَرْضِ مَا اسْتَطَاعُوا، فَأَصْبَحَ وَقَدْ لَفَظَتْهُ الأَرْضُ، فَعَلِمُوا : أَنَّهُ لَيْسَ مِنَ النَّاسِ، فَأَلْقَوْهُ»

“এক ব্যক্তি নাসারা ছিল, সে ইসলাম গ্রহণ করল এবং সূরা আল-বাকারা ও আলে ইমরান শিখল। সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট কেরানীর কাজ করত। সে পুনরায় নাসারা হয়ে গেল এবং বলতে লাগল মুহাম্মদ আমি যা লিখি তাই বলে, এর বাহিরে সে আর কিছুই জানে না। এরপর সে মারা গেল, তখন তার সাথীরা তাকে দাফন করল, সকালে উঠে দেখল তার লাশ বাইরে পড়ে আছে, তখন নাসারারা বলতে লাগল, মুহাম্মদের সাথীরা এই কাজ করেছে; কেননা সে তাদের দীন ত্যাগ করেছিল। তখন তারা আরো গভীর করে কবর খনন করে তাকে আবার দাফন করল, আবার সকালে উঠে দেখল তার লাশ বাইরে পড়ে আছে। তখন তারা বলল, এটা মুহাম্মদ এবং তাঁর সাথীদের কাজ; কেননা সে তাদের দীন ত্যাগ করে এসেছিল। তখন তারা আবার আরো গভীর করে কবর খনন করল এবং তাকে দাফন করল, আবার সকালে উঠে দেখল তার লাশ আবার বাইরে পড়ে আছে, তখন তারা বুঝল, এটা কোনো মানুষের কাজ নয়, তখন তারা তার লাশ বাইরেই পড়ে থাকতে দিল”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৬১৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭৮১।]

২৬
তিন. মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হবে
যদি কোনো ব্যক্তি বিচারের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, সে রাসূলের অবমাননা করেছে, তবে তাকে মুরতাদ হিসেবে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে। এ বিষয়ে উম্মাতের সকল আলেম একমত হয়েছেন। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ بَدَّلَ دِينَهُ فَاقْتُلُوهُ»

“যে ব্যক্তি তার দীন (ইসলামকে) পরিবর্তন করলো তাকে তোমরা হত্যা কর।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩০১৭, ৬৯২২; তিরমিযী, হাদীস নং ১৪৫৮; আবূ দাউদ, হাদীস নং ৪৩৫৩; নাসাঈ, হাদীস নং ৪০৭০।]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে কটাক্ষ ও বিদ্রূপ করার কারণে একজন সাহাবী তার নিজ দাসীকেও হত্যা করেছেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জেনে খুশি হয়েছেন। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে এভাবে:

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«أَنَّ أَعْمَى كَانَتْ لَهُ أُمُّ وَلَدٍ تَشْتُمُ النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- وَتَقَعُ فِيهِ فَيَنْهَاهَا فَلاَ تَنْتَهِى وَيَزْجُرُهَا فَلاَ تَنْزَجِرُ - قَالَ - فَلَمَّا كَانَتْ ذَاتَ لَيْلَةٍ جَعَلَتْ تَقَعُ فِى النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- وَتَشْتِمُهُ فَأَخَذَ الْمِغْوَلَ فَوَضَعَهُ فِى بَطْنِهَا وَاتَّكَأَ عَلَيْهَا فَقَتَلَهَا فَوَقَعَ بَيْنَ رِجْلَيْهَا طِفْلٌ فَلَطَخَتْ مَا هُنَاكَ بِالدَّمِ فَلَمَّا أَصْبَحَ ذُكِرَ ذَلِكَ لِرَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- فَجَمَعَ النَّاسَ فَقَالَ : «أَنْشُدُ اللَّهَ رَجُلاً فَعَلَ مَا فَعَلَ لِى عَلَيْهِ حَقٌّ إِلاَّ قَامَ» . فَقَامَ الأَعْمَى يَتَخَطَّى النَّاسَ وَهُوَ يَتَزَلْزَلُ حَتَّى قَعَدَ بَيْنَ يَدَىِ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَنَا صَاحِبُهَا كَانَتْ تَشْتِمُكَ وَتَقَعُ فِيكَ فَأَنْهَاهَا فَلاَ تَنْتَهِى وَأَزْجُرُهَا فَلاَ تَنْزَجِرُ وَلِى مِنْهَا ابْنَانِ مِثْلُ اللُّؤْلُؤَتَيْنِ وَكَانَتْ بِى رَفِيقَةً فَلَمَّا كَانَتِ الْبَارِحَةَ جَعَلَتْ تَشْتِمُكَ وَتَقَعُ فِيكَ فَأَخَذْتُ الْمِغْوَلَ فَوَضَعْتُهُ فِى بَطْنِهَا وَاتَّكَأْتُ عَلَيْهَا حَتَّى قَتَلْتُهَا . فَقَالَ النَّبِىُّ -صلى الله عليه وسلم- «أَلاَ اشْهَدُوا أَنَّ دَمَهَا هَدَرٌ»

“একজন অন্ধ ব্যক্তির একটি উম্মে ওয়ালাদ (যে দাসীর গর্ভে মালিকের সন্তান জন্মগ্রহণ করেছে) দাসী ছিল। ঐ দাসী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অযথা কটূক্তি করতো। অন্ধ ব্যক্তি তাকে বিরত থাকার নির্দেশ দিতেন ও নিবৃত করার চেষ্টা করতেন। কিন্তু দাসী কিছুতেই বিরত হতো না। এক রাতে দাসী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে কটূক্তি ও গালি-গালাজ করতে লাগলো। তখন লোকটি একটি কোদাল দিয়ে তার পেটে আঘাত করলো এবং তাকে হত্যা করলো। এ অবস্থায় তার একটি সন্তান তার দু পায়ের মাঝখানে পড়ে গেল এবং রক্তে ভিজে গেল। সকাল বেলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বিষয়টি জানানো হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের জড়ো করলেন এবং ঘোষণা দিলেন, আল্লাহর কসম! যে ব্যক্তি আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ করেছে সে যেন অবশ্যই দাঁড়ায়। তার প্রতি আমারও একটি হক রয়েছে। তখন অন্ধ লোকটি কাঁপতে কাঁপতে মানুষের কাঁতার ভেদ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গিয়ে বসে পড়লো। অতঃপর লোকটি বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ঐ ঘটনার ব্যক্তিটি আমি। আমার দাসীটি আপনাকে গালি-গালাজ করতো এবং অযথা তর্কে লিপ্ত হতো। আমি তাকে বারণ করলেও সে বারণ হতো না। তার থেকে আমার মুক্তোর মতো দু’টি ছেলে রয়েছে। তার সাথে আমার দীর্ঘ দিনের সুসম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু গত রাতে সে যখন আপনাকে গালমন্দ করতে লাগলো আমি তখন তাকে একটি কুঠার নিয়ে তার পেটে আঘাত করি এবং তাকে হত্যা করি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্থিত লোকদের বললেন, তোমরা সাক্ষি থাক! তার রক্ত মূল্যহীন ঘোষণা করা হলো (তাকে হত্যা করার জন্য হত্যাকারী অন্যায়কারী হিসেবে বিবেচিত হবে না)।” [আবূ দাউদ, হাদীস নং ৪৩৬৩; ত্ববারানী, হাদীস নং ১১৯৮৪; বুলুগুল মারাম, হাদীস নং ১২০৪; দারাকুতনী, হাদীস নং ৮৯।]

২৭
চার. শাস্তি না দিলে গোটা জাতি আল্লাহর গযবে পতিত হবে
রাসূলের অবমাননা করার পর যদি সামর্থ থাকার পরও শাস্তি না দেওয়া হয় তবে গোটা জাতি আল্লাহর গযবে পতিত হবে। আল-কুরআনে এসেছে,

﴿فَلۡيَحۡذَرِ ٱلَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنۡ أَمۡرِهِۦٓ أَن تُصِيبَهُمۡ فِتۡنَةٌ أَوۡ يُصِيبَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٌ ٦٣ ﴾ [ النور : ٦٣ ]

“অতএব যারা তাঁর নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা যেন তাদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা যন্ত্রণাদায়ক আযাব পৌঁছার ভয় করে।” [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৬৩]

২৮
পাচ. তার সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে
যারা রাসুলের অবমাননার কাজে জড়িত থাকবে তাদের সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمَن يَرۡتَدِدۡ مِنكُمۡ عَن دِينِهِۦ فَيَمُتۡ وَهُوَ كَافِرٞ فَأُوْلَٰٓئِكَ حَبِطَتۡ أَعۡمَٰلُهُمۡ فِي ٱلدُّنۡيَا وَٱلۡأٓخِرَةِۖ وَأُوْلَٰٓئِكَ أَصۡحَٰبُ ٱلنَّارِۖ هُمۡ فِيهَا خَٰلِدُونَ ٢١٧ ﴾ [ البقرة : ٢١٧ ]

“আর যে তোমাদের মধ্য থেকে তাঁর দীন থেকে ফিরে যাবে, অতঃপর কাফির অবস্থায় মারা যাবে, বস্তুতঃ এদের আমলসমূহ দুনিয়া ও আখিরাতে বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং তারাই আগুনের অধিবাসী।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২১৭]

২৯
আমাদের করণীয়:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে কটাক্ষ ও বিদ্রূপ করার মত জঘন্য অপরাধ সংগঠিত হওয়ার পর নিশ্চুপ থাকার কোনো সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে একজন ঈমানদার বান্দাহ হিসেবে প্রত্যেকরই যোগ্যতা অনুযায়ী ভূমিকা রাখতে হবে। যেসব করণীয় রয়েছে সেগুলো হলো:

৩০
এক. প্রতিবাদ করা
আমাদের প্রধান করণীয় হলো, যারা রাসূলের অবমাননা করে তাদের বিরুদ্ধে সামর্থ অনুযায়ী প্রতিবাদ করা। একজন মুসলিম কখনও এমন হতে পারে না যে, সে মহানবীর অবমাননা হওয়ার কথা জানার পরও নিশ্চুপ বসে থাকবে। কেননা এটি একটি মহা অন্যায় কাজ। আর ঈমানের লক্ষণ হলো অন্যায়ের প্রতিবাদ করা।

﴿وَٱلۡمُؤۡمِنُونَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتُ بَعۡضُهُمۡ أَوۡلِيَآءُ بَعۡضٖۚ يَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ﴾ [ التوبة : ٧١ ]

“আর মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীরা একে অপরের বন্ধু, তারা ভালো কাজের আদেশ দেয় আর অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করে।” [সূরা আত-তাওবাহ: ৭১]

এ বিষয়ে হাদীসে এসেছে, আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,

«مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ وَذَلِكَ أَضْعَفُ الإِيمَانِ»

“তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোনো অন্যায় কাজ হতে দেখে, তবে সে যেন তা নিজের হাত দ্বারা পরিবর্তন করে দেয়। আর যদি সে সক্ষম না হয়, তাহলে সে যেন মুখ দ্বারা প্রতিহত করে। আর যদি সে এতেও সক্ষম না হয়, তাহলে সে যেন অন্তর দিয়ে তা প্রতিহত করার চেষ্টা করে। আর এটা সবচেয়ে দুর্বল ঈমানের পরিচয়।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮২।]

৩১
দুই. শাস্তির ব্যবস্থা করা
মহানবীর অবমাননাকারীদের বিচারের মাধ্যমে শাস্তির ব্যবস্থা করা ঈমানের দাবী। এক শ্রেণির নামধারী মুসলিম তারা বলে, এ বিচার আল্লাহ করবেন। অতএব, আমাদের কিছুই করার দরকার নেই। ঈমানদার হিসেবে এ ধরণের কথা বলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা রাসূল নিজেই তাকে অবমাননা করার শাস্তি কার্যকর করেছেন এবং সাহাবায়ে কেরামও তা বাস্তবায়ন করেছেন। তাই যে মহানবীর অবমাননা করে তাকে দুনিয়াতেই শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ইবন খাতাল রাসূলের প্রতি কটূক্তি করেছিল, সেজন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে হত্যা করার নির্দেশ দিলেন। এ বিষয়ে হাদীসে এসেছে, আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,

«أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم دَخَلَ عَامَ الْفَتْحِ، وَعَلَى رَأْسِهِ الْمِغْفَرُ فَلَمَّا نَزَعَهُ جَاءَ رَجُلٌ فَقَالَ إِنَّ ابْنَ خَطَلٍ مُتَعَلِّقٌ بِأَسْتَارِ الْكَعْبَةِ فَقَالَ : «اقْتُلُوهُ»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিন মক্কায় প্রবেশ করে মাত্র মাথায় যে হেলমেট পরা ছিল তা খুললেন, এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি এসে বললো, ইবন খাতাল (বাঁচার জন্য) কা‘বার গিলাফ ধরে ঝুলে আছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (ঐ অবস্থায়ই) তাকে হত্যা করো।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৪৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৩৭৪।]

৩২
তিন. জাতিকে সতর্ক করা
মহানবীর অবমাননা করার ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে জাতিকে সতর্ক করা সময়ের দাবী। কেননা জেনে-না জেনে, বুঝে-না বুঝে নানানভাবে মহানবীর অবমাননা করা হচ্ছে। এর কারণে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে। সেজন্য আমাদের প্রত্যেকেরই উচিৎ জাতিকে সতর্ক করা। আল্লাহ তা‘আলা সতর্ক করে বলেন,

﴿وَلَقَدِ ٱسۡتُهۡزِئَ بِرُسُلٖ مِّن قَبۡلِكَ فَحَاقَ بِٱلَّذِينَ سَخِرُواْ مِنۡهُم مَّا كَانُواْ بِهِۦ يَسۡتَهۡزِءُونَ ٤١ ﴾ [ الانبياء : ٤١ ]

“আর তোমার পূর্বেও অনেক রাসূলকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা হয়েছিল; পরিণামে তারা যা নিয়ে ঠাট্টা করত তাই বিদ্রূপকারীদেরকে ঘিরে ফেলেছিল।” [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ৪১]

﴿بَلۡ نَقۡذِفُ بِٱلۡحَقِّ عَلَى ٱلۡبَٰطِلِ فَيَدۡمَغُهُۥ فَإِذَا هُوَ زَاهِقٞۚ وَلَكُمُ ٱلۡوَيۡلُ مِمَّا تَصِفُونَ ١٨ ﴾ [ الانبياء : ١٨ ]

“বরং আমরা মিথ্যার ওপর সত্য নিক্ষেপ করি; ফলে তা মিথ্যাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয় এবং নিমিষেই তা বিলুপ্ত হয়। আর তোমাদের জন্য রয়েছে দুর্ভোগ তোমরা যা বলছ তার জন্য।” [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ১৮]

৩৩
চার. ঐক্যবদ্ধ হওয়া
রাসূলের অবমাননা বন্ধে ঈমানদার ব্যক্তিদের মধ্যে কোনো বিরোধ থাকতে পারবে না। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। নিজেদের মধ্যে কর্মপন্থা নিয়ে মতভেদ থাকতে পারে। কিন্তু রাসূলের অবমাননার মতো ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ঐক্যবদ্ধভাবে কর্মসূচি পালনে কোনো ধরণের সংশয় রাখা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না। কারণ, এ বিষয়ে কুরআন মাজীদে ঘোষণা এসেছে এভাবে,

﴿وَلَا تَكُونُواْ كَٱلَّذِينَ تَفَرَّقُواْ وَٱخۡتَلَفُواْ مِنۢ بَعۡدِ مَا جَآءَهُمُ ٱلۡبَيِّنَٰتُۚ وَأُوْلَٰٓئِكَ لَهُمۡ عَذَابٌ عَظِيمٞ ١٠٥ ﴾ [ ال عمران : ١٠٥ ]

“আর তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা বিভক্ত হয়েছে এবং মতবিরোধ করেছে তাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ আসার পর। আর তাদের জন্যই রয়েছে কঠোর আযাব।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০৫]

৩৪
পাঁচ. আল্লাহর নিকট বেশি বেশি ক্ষমা চাওয়া
রাসূলের অবমাননা করার কারণে যে কোনো সময় গোটা জাতির ওপর আল্লাহর গযব আসতে পারে। সেজন্য আল্লাহর নিকট বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَٱتَّقُواْ فِتۡنَةٗ لَّا تُصِيبَنَّ ٱلَّذِينَ ظَلَمُواْ مِنكُمۡ خَآصَّةٗۖ وَٱعۡلَمُوٓاْ أَنَّ ٱللَّهَ شَدِيدُ ٱلۡعِقَابِ ٢٥ ﴾ [ الانفال : ٢٥ ]

“আর তোমরা ভয় কর ফিতনাকে যা তোমাদের মধ্য থেকে বিশেষভাবে শুধু যালিমদের ওপরই আপতিত হবে না। আর জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ আযাব প্রদানে কঠোর।” [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ২৫]

৩৫
ছয়. তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা
যারা অবমাননা করে তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। এ বিষয়ে কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে,

﴿وَقَدۡ نَزَّلَ عَلَيۡكُمۡ فِي ٱلۡكِتَٰبِ أَنۡ إِذَا سَمِعۡتُمۡ ءَايَٰتِ ٱللَّهِ يُكۡفَرُ بِهَا وَيُسۡتَهۡزَأُ بِهَا فَلَا تَقۡعُدُواْ مَعَهُمۡ حَتَّىٰ يَخُوضُواْ فِي حَدِيثٍ غَيۡرِهِۦٓ إِنَّكُمۡ إِذٗا مِّثۡلُهُمۡۗ إِنَّ ٱللَّهَ جَامِعُ ٱلۡمُنَٰفِقِينَ وَٱلۡكَٰفِرِينَ فِي جَهَنَّمَ جَمِيعًا ١٤٠﴾ [ النساء : ١٤٠ ]

“আর তিনি তো কিতাবে তোমাদের প্রতি নাযিল করেছেন যে, যখন তোমরা শুনবে আল্লাহর আয়াতসমূহ অস্বীকার করা হচ্ছে এবং সেগুলো নিয়ে উপহাস করা হচ্ছে, তাহলে তোমরা তাদের সাথে বসবে না, যতক্ষণ না তারা অন্য কথায় নিবিষ্ট হয়, তা না হলে তোমরাও তাদের মতো হয়ে যাবে। নিশ্চয় আল্লাহ মুনাফিক ও কাফিরদের সকলকে জাহান্নামে একত্রকারী।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৪০]

৩৬
সাত. রাসূলের সম্মান ও মর্যাদা নিশ্চিত করা
রাসূলের বিরুদ্ধে কোনো অপপ্রচার এবং তাঁর মর্যাদার হানী করে এমন কোনো কাজ পরিচালিত হলে উম্মাতের দায়িত্ব হলো তার সমস্ত শক্তি দিয়ে তা প্রতিহত করা। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সম্মানকে উচ্চ করেছেন। অতএব, তাকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা প্রত্যেক উম্মাতের দায়িত্ব ও কর্তব্য। কুরআনে মজীদে আল্লাহ তা‘আলা ঘোষণা করেছেন,

﴿إِنَّآ أَرۡسَلۡنَٰكَ شَٰهِدٗا وَمُبَشِّرٗا وَنَذِيرٗا ٨ لِّتُؤۡمِنُواْ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ وَتُعَزِّرُوهُ وَتُوَقِّرُوهُۚ وَتُسَبِّحُوهُ بُكۡرَةٗ وَأَصِيلًا ٩ ﴾ [ الفتح : ٨، ٩ ]

“নিশ্চয় আমরা তোমাকে প্রেরণ করেছি সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে। (হে মুমিনগণ!) যাতে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আন, তাকে সাহায্য কর ও সম্মান কর। আর আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা কর সকাল-সন্ধ্যায়।” [সূরা আল-ফাতহ, আয়াত: ৮-৯]

সাহাবায়ে কেরাম রাসূলকে যথাযথ মর্যাদা দিয়ে প্রমাণ করে গেছেন। যখন কুরআনের এ আয়াত আবতীর্ণ হলো,

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَرۡفَعُوٓاْ أَصۡوَٰتَكُمۡ فَوۡقَ صَوۡتِ ٱلنَّبِيِّ وَلَا تَجۡهَرُواْ لَهُۥ بِٱلۡقَوۡلِ كَجَهۡرِ بَعۡضِكُمۡ لِبَعۡضٍ أَن تَحۡبَطَ أَعۡمَٰلُكُمۡ وَأَنتُمۡ لَا تَشۡعُرُونَ ٢ ﴾ [ الحجرات : ٢ ]

“হে ঈমানদারগণ, তোমরা নবীর আওয়াজের ওপর তোমাদের আওয়াজ উঁচু করো না এবং তোমরা নিজেরা পরস্পর যেমন উচ্চস্বরে কথা বল, তাঁর সাথে সে রকম উচ্চস্বরে কথা বলো না। এ আশঙ্কায় যে তোমাদের সকল আমল নিষ্ফল হয়ে যাবে অথচ তোমরা উপলব্ধিও করতে পারবে না।” [সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ২]

আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আল্লাহর কসম, আমি নিতান্তই আপনার সাথে ক্ষীণ আওয়াজ ব্যতীত কথা বলব না।

৩৭
আট. রাসূলের কটূক্তিকারীদের ঘৃণা করা
যারা রাসূলকে কটূক্তি করে তাদেরকে রাসূলের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে ঘৃণা করা ঈমানের দাবী। অনেকে রাসূলের উম্মাত দাবী করে কিন্তু রাসূলের শত্রুদের সাথে উঠা-বসা ও তাদের সাথে বন্ধুত্ব করে, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কুরআনের ঘোষণা হলো,

﴿لَّا تَجِدُ قَوۡمٗا يُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِ يُوَآدُّونَ مَنۡ حَآدَّ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَلَوۡ كَانُوٓاْ ءَابَآءَهُمۡ أَوۡ أَبۡنَآءَهُمۡ أَوۡ إِخۡوَٰنَهُمۡ أَوۡ عَشِيرَتَهُمۡۚ﴾ [ المجادلة : ٢٢ ]

“তুমি আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাসী এমন কোনো সম্প্রদায় পাবে না যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচারীদের ভালোবাসে। হোক না এ বিরুদ্ধাচারীরা তাদের পিতা, পুত্র, ভ্রাতা অথবা তাদের জ্ঞাতি-গোত্র।” [সূরা আল-মুজাদালাহ, আয়াত: ২২]

৩৮
নয়. রাসূলের আদর্শ জাতির সামনে ব্যাপকভাবে তুলে ধরা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের প্রিয় নেতা। তাঁর উম্মাত হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হলো তার আদর্শ জাতির সামনে তুলে ধরা। এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে নিম্নোক্ত হাদীসে:

আবদুল্লাহ ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুলুাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«بَلِّغُوا عَنِّي وَلَوْ آيَةً»

“একটি বাণী হলেও আমার পক্ষ থেকে পৌঁছিয়ে দাও।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৪৬১।]

৩৯
দশ. নিজের অবস্থান স্পষ্ট করা
আজকে অনেক মুসলিম নিজের অবস্থান কোনো দিকে তা স্পস্ট করে না। যেহেতু কিছু লোক রাসুলের অবমাননাকারীর পক্ষাবলম্বন করেছে, সেহেতু নিজের অবস্থান কোনো পক্ষে তা ঘোষণা দিতে হবে। কেননা রাসুলের অবমাননা হলে কোনো ঈমানদার ব্যক্তির অবস্থান অস্পষ্ট হতে পারে না। যে এমনটি করবে সে মুনাফিক। কুরআন মাজীদে এসেছে,

﴿مُّذَبۡذَبِينَ بَيۡنَ ذَٰلِكَ لَآ إِلَىٰ هَٰٓؤُلَآءِ وَلَآ إِلَىٰ هَٰٓؤُلَآءِۚ وَمَن يُضۡلِلِ ٱللَّهُ فَلَن تَجِدَ لَهُۥ سَبِيلٗا ١٤٣ ﴾ [ النساء : ١٤٣ ]

“তারা এর মধ্যে দোদুল্যমান, না এদের দিকে আর না ওদের দিকে। আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তুমি কখনো তার জন্য কোনো পথ পাবে না।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৪৩]

৪০
সরকারের করণীয়:
সরকার একটি রাষ্ট্রের পরিচালক এবং অভিভাবক। সরকারের অন্যতম কাজ হলো শিষ্টের লালন আর দুষ্টের দমন। অতএব, সরকারের দায়িত্ব হলো, যারা রাসূলের বিরুদ্ধে কটূক্তি করেছে তাদের সবাইকে এবং যারা তাদের সহযোগী তাদেরকেও গ্রেফতার করে বিচারের সস্মুখীন করা। কোনো ধরণের অজুহাত তৈরি করে প্রকৃত ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা থেকে বিরত থাকা। কুরআন মাজীদে সরকারের দায়িত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে,

﴿ٱلَّذِينَ إِن مَّكَّنَّٰهُمۡ فِي ٱلۡأَرۡضِ أَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَوُاْ ٱلزَّكَوٰةَ وَأَمَرُواْ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَنَهَوۡاْ عَنِ ٱلۡمُنكَرِۗ وَلِلَّهِ عَٰقِبَةُ ٱلۡأُمُورِ ٤١﴾ [ الحج : ٤١ ]

“তারা এমন যাদেরকে আমরা যমীনে ক্ষমতা দান করলে তারা সালাত কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং সৎকাজের আদেশ দিবে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে; আর সব কাজের পরিণাম আল্লাহরই অধিকারে।” [সূরা আল-হাজ্জ, আয়াত: ৪১]

৪১
শেষ কথা:
প্রায় শতকরা ৯০ ভাগ মুসলিমের দেশে আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে কটূক্তি ও অবমাননাকর বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে, বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও ব্লগে প্রিয় নবীকে নিয়ে এমনসব কথা লেখা হচ্ছে, যা কোনো সামান্যতম ঈমানের অধিকারী মুমিনকেও নাড়া না দিয়ে পারে না। এমতাবস্থায় আমাদের একেবারে বসে থাকার সুযোগ নেই। প্রিয় নবীর উম্মাত হিসেবে প্রত্যেককে তার নিজ নিজ জায়গা থেকে সাধ্য অনুযায়ী ভূমিকা পালন করতে হবে। ঈমানের দাবী হলো, লিখনী, বক্তব্য, আলোচনা, খুতবা, জনসংযোগ, মিডিয়াসহ সর্বস্তরে শরী‘আহসম্মত বিভিন্ন উপায়ে প্রতিবাদ করার মাধ্যমে এ ধরণের মহা অন্যায় কাজের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে ঈমানী দায়িত্ব পালন করার তাওফীক দিন। আমীন!

وصلى الله على نبينا محمد وعلي اله وأصحابه ومن تبعهم بإحسان إلى يوم الدين- وأخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন