HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবিবৃন্দ
লেখকঃ ইকবাল হোসাইন মাসুম
সাহাবা, সাহাবির বহু বচন। সাহাবি বলতে সে সকল পুণ্যাত্মা মুসলমানদের বলা হয় যারা নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ঈমানের সাথে দেখেছেন এবং ঈমান নিয়ে মৃত্যু বরণ করেছেন :
هو من لقي النبي صلى الله عليه وسلم مؤمنا به ومات على ذلك .
ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিকোণে তাদের সম্পর্কে যে বিশ্বাস ও আক্বিদা পোষণ করা ওয়াজিব তা হচ্ছে—তারা উম্মতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ, সর্বাপেক্ষা মর্যাদাবান। উম্মতের মধ্যে মর্যাদা ও সম্মানের দিক দিয়ে কেউ তাদের সমান হতে পারবে না। তাদের যুগই সর্বশ্রেষ্ঠ যুগ। ঐ যুগের মর্যাদা সকল যুগ অপেক্ষা বেশি। এর কারণ হল, তারা ইসলাম গ্রহণ করেছেন সবার আগে, এ দিকটির বিবেচনায় তারা পরবর্তীদের তুলনায় অনেক এগিয়ে।
তারা আললাহর রাসূল, নবী-শ্রেষ্ঠ মুহাম্মদ এর সোহবত-সাহচর্য ও শিষ্যত্বের জন্য বিশেষভাবে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। তার সাথে মিলে জেহাদ করেছেন। তার পক্ষ থেকে শরিয়তের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। পরবতীদের নিকট তাবলীগ ও প্রচার করেছেন। আল্লাহ তাআলা স্বীয় কিতাবে তাদের প্রশংসা করে আয়াত অবতীর্ণ করেছেন। এরশাদ হচ্ছে :—
وَالسَّابِقُونَ الْأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنْصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُمْ بِإِحْسَانٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي تَحْتَهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ . ( التوبة :100)
‘মুহাজির ও আনসারদের মাঝে যারা প্রথম ও অগ্রগামী এবং যারা নিষ্ঠার সাথে তাদের অনুসরণ করে, আল্লাহ তাদের প্রতি প্রসন্ন এবং তারাও তার প্রতি সন্তুষ্ট। তাদের জন্য প্রস্ত্তত করেছেন জান্নাত, যার নিম্নদেশে প্রবাহিত নির্ঝরিণীসমূহ। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। এটি একটি মহা সাফল্য।
এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুহাজির ও আনসারদের প্রশংসা করেছেন। এবং তাদের গুণাগুণ বর্ণনা করে বলেছেন যে তারা কল্যাণ ও নেকির ক্ষেত্রে অগ্রগামী। আল্লাহ তাদের প্রতি প্রসন্ন এবং নেয়ামতের আধার জান্নাত তাদের উদ্দেশ্যে প্রস্ত্তত করেছেন। অন্যত্র আল্লাহ বলেন:-
مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ وَالَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ تَرَاهُمْ رُكَّعًا سُجَّدًا يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِنَ اللَّهِ وَرِضْوَانًا سِيمَاهُمْ فِي وُجُوهِهِمْ مِنْ أَثَرِ السُّجُودِ ذَلِكَ مَثَلُهُمْ فِي التَّوْرَاةِ وَمَثَلُهُمْ فِي الْإِنْجِيلِ كَزَرْعٍ أَخْرَجَ شَطْأَهُ فَآَزَرَهُ فَاسْتَغْلَظَ فَاسْتَوَى عَلَى سُوقِهِ يُعْجِبُ الزُّرَّاعَ لِيَغِيظَ بِهِمُ الْكُفَّارَ وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آَمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ مِنْهُمْ مَغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا ﴿29﴾. ( الفتح :29)
মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল, তার সহচরবৃন্দ কাফেরদের প্রতি কঠোর। নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় আপনি তাদেরকে রুকূ ও সেজদারত দেখবেন। তাদের চেহারায় রয়েছে সেজদার চিহ্ন। তাওরাতে তাদের অবস্থা এরূপই। আর ইঞ্জিলে তাদের বর্ণনা হচেছ এরকমই। যেমন একটি চারাগাছ যা থেকে নির্গত হয় কিশলয়। অত:পর তা শক্ত ও মজবুত হয় এবং কান্ডের উপর দাঁড়ায় দৃঢ়ভাবে। চাষীকে আনন্দে অভিভূত করে—যাতে আল্লাহ তাদের দ্বারা কাফেরদের অন্তর্জ্বালা সৃষ্টি করেন। তাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা ও মহা পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এ আয়াতে আল্লাহ তাদের গুণাগুণ বর্ণনা করে প্রশংসা করেছেন যে, তারা পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং কাফেরদের বিরুদ্ধে কঠোর ও নির্মম। তারা অধিক রুকু সেজদা কারী এবং আত্ম সংশোধনে অধিক তৎপর। তাদেরকে ঈমান ও আনুগত্যের বিশেষ নিদর্শনের মাধ্যমে চেনা যায়। আললাহ তাআলা স্বীয় নবীর সাহচর্য গ্রহণের জন্য তাদের নির্বাচন করেছেন, যাতে তাদের দ্বারা তার দুশমন কাফেরদের অন্তর্জ্বালায় দগ্ধ করতে পারেন। আল্লাহ তাআলা বলেন:—
لِلْفُقَرَاءِ الْمُهَاجِرِينَ الَّذِينَ أُخْرِجُوا مِنْ دِيارِهِمْ وَأَمْوَالِهِمْ يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِنَ اللَّهِ وَرِضْوَانًا وَيَنْصُرُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ أُولَئِكَ هُمُ الصَّادِقُونَ ﴿8﴾ وَالَّذِينَ تَبَوَّءُوا الدَّارَ وَالْإِيمَانَ مِنْ قَبْلِهِمْ يُحِبُّونَ مَنْ هَاجَرَ إِلَيْهِمْ وَلَا يَجِدُونَ فِي صُدُورِهِمْ حَاجَةً مِمَّا أُوتُوا وَيُؤْثِرُونَ عَلَى أَنْفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ وَمَنْ يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ ﴿9﴾. ( الحشر :8-9)
‘এই সম্পদ দেশত্যাগী নি:স্বদের জন্য, যারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি লাভের অন্বেষণে এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের সাহায্যার্থে নিজেদের বাস্ত্তভিটা ও ধন-সম্পদ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন। তারাই সত্যবাদী। এবং যারা মুহাজিরদের আগমনের পূর্বেই মদিনায় বসবাস করছিল এবং ঈমান এনেছিল, তারা মুহাজিরদের ভালবাসে, মুহাজিরদেরকে যা দেয়া হয়েছে, তার জন্য তারা অন্তরে ঈর্ষা পোষণ করে না ; এবং নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও তাদেরকে অগ্রাধিকার দান করে। যারা মনের কার্পণ্য থেকে মুক্ত তারাই সফলকাম।’
এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুহাজিরদের প্রশংসা করেছেন যে, তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও অনুগ্রহের অন্বেষণ এবং তার দ্বীনের সাহায্যার্থে নিজেদের বসত-ভিটা, ধন-সম্পদ ত্যাগ করেছেন এবং এ বিষয়ে তারা সত্যবাদী, আর আনসারদের প্রশংসা করেছেন যে, তারা পূর্ব হতেই দারুল হিজরত মদিনায় বসবাসকারী, নির্ভেজাল খাঁটি ঈমানদার ও প্রশস্তমন সম্পন্ন সাহায্যকারী। তাদের আরো গুণাগুণ বর্ণনা করে বলেছেন যে, তারা স্বীয় দ্বীনি ভাই মুহাজিরদের নি:স্বার্থ ভাবে ভালবাসে, নিজেদের চাহিদার উপর তাদের চাহিদা প্রাধান্য দেয়। সর্বাবস্থায় তাদের সমবেদনা ও সহযোগিতা মনে লালন করে। তারা মানসিক কার্পণ্য মুক্ত। আর এ গুনের মাধ্যমেই তারা সফলতা অর্জন করেছে।
এগুলো তাদের সাধারণ মর্যাদার অংশ বিশেষ। এ ধরনের মর্যাদায় সকলেই অন্তর্ভুক্ত। তাদের বেলায় কিছু বিশেষ মর্যাদা ও শ্রেণি বিন্যাস রয়েছে ; সেক্ষেত্রে কেউ কেউ অন্যদের চেয়ে অধিক মর্যাদা সম্পন্ন ও শ্রেষ্ঠতর। আর এ স্তর বিন্যাস ও মর্যাদার তারতম্যের মাপকাঠি হচ্ছে ইসলাম গ্রহণ, জেহাদ ও হিজরতের ক্ষেত্রে অগ্রবর্তিতা : যিনি আগে ইসলাম গ্রহণ করেছেন তিনি তার পরে গ্রহণকারীর তুলনায় অধিক মর্যাদা সম্পন্ন। অন্যান্য ক্ষেত্রেও একই বিধি প্রযোজ্য। ইমাম তাহাবী রহ. বলেন:—
ونحب أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم، ولا نفرط في حب أحد منهم، ولا نتبرأ من أحد منهم، و نبغض من يبغضهم، و بغير الخير يذكرهم، ولا نذكرهم إلا بخير وحبهم دين وإيمان وإحسان، بغضهم كفر ونفاق وطغيان .
‘আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সকল সাহাবিদের ভালবাসি। তাদের কারো ভালোবাসার ক্ষেত্রে অবাঞ্ছিত বাড়াবাড়ি করি না আবার শৈথিল্য ও অবহেলাও করি না। যারা তাদের ঘৃণা ও অবজ্ঞা করে, সমালোচনা করে, আমরা তাদের সাথে সম্পর্ক রাখি না। ভাল ভিন্ন তাদের আলোচনা করি না। তাদের ভালোবাসা ও মুহববত করা হচ্ছে—দ্বীন, ঈমান এবং এহসান, আর তাদের ঘৃণা করা-অপসন্দ করা হচ্ছে, কুফর, নিফাক ও সীমা লঙ্ঘন।’
সাহাবাদের মর্যাদার শ্রেণি বিন্যাস:—
সামগ্রিক বিচারে সাহাবারা সকলে অন্য সকল উম্মত অপেক্ষা উত্তম। তবে সাহাবারা নিজেরা কিন্তু সকলে একই স্তরের নন। বরং কেউ কেউ মর্যাদায় অন্যদের চেয়ে উত্তম। তাদের নিজেদের মধ্যে মর্যাদার দিক থেকে বিভিন্ন শ্রেণি-বিন্যাস ও স্তর রয়েছে। নিম্নে তাদের মর্যাদার ক্রমধারা প্রদত্ত হল। সাহাবাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হচ্ছেন চার খলিফা। অর্থাৎ আবু বকর অত:পর ওমর এর পর উসমান এবং তার পর আলী রাদিআল্লা আনহুম এদের পরবর্তী স্তরে আছেন অবশিষ্ট আশারায়ে মুবাশ্শারা (জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত দশ সাহাবি) তথা—তালহা, যুবায়ের, আব্দুর রহমান বিন আউফ, আবু উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ, সা’দ বিন আবী ওয়াক্কাস, সাইদ বিন যায়দ রাদি:। মুহাজির সাহাবাবৃন্দ আনসারদের চেয়ে উত্তম। বদর যুদ্ধে ও বায়আতে রিদওয়ানে অংশগ্রহণকারীরা অন্যদের চেয়ে মর্যাদাবান ও উত্তম। অনুরূপভাবে মক্কা বিজয়ের পূর্বে ইসলাম গ্রহণ ও যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য সাহাবাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন:—
وَمَا لَكُمْ أَلَّا تُنْفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلِلَّهِ مِيرَاثُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ لَا يَسْتَوِي مِنْكُمْ مَنْ أَنْفَقَ مِنْ قَبْلِ الْفَتْحِ وَقَاتَلَ أُولَئِكَ أَعْظَمُ دَرَجَةً مِنَ الَّذِينَ أَنْفَقُوا مِنْ بَعْدُ وَقَاتَلُوا وَكُلًّا وَعَدَ اللَّهُ الْحُسْنَى وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ . ( الحديد :10)
‘তোমাদের কি হল ? তোমরা আল্লাহর পথে কেন ব্যয় কর না ? অথচ আকাশমন্ডলি ও পৃথিবীর মালিকানা তো আল্লাহরই। তোমাদের মধ্যে যারা মক্কা বিজয়ের পূর্বে ব্যয় করেছে ও জেহাদ করেছে, তারা এবং পরবর্তীরা সমান নয়। এরা মর্যাদায় তাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ, যারা পরে ব্যয় করেছে ও জেহাদ করেছে। তবে আল্লাহ তাআলা উভয়ের কল্যাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত।’
সাহাবাদের সম্পর্কে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের আক্বিদা হচ্ছে : তাদের ব্যাপারে উম্মতের অন্তর এবং জিহবা (বাক শক্তি) সম্পূর্ণ পরিষ্কার ও নিরাপদ থাকবে। আল্লাহ তাআলা এ প্রসঙ্গে তাদের মানষিকতা সম্পর্কে বলেন :—
وَالَّذِينَ جَاءُوا مِنْ بَعْدِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِي قُلُوبِنَا غِلًّا لِلَّذِينَ آَمَنُوا رَبَّنَا إِنَّكَ رَءُوفٌ رَحِيمٌ . ( حشر :10)
‘এবং যারা তাদের পরে এসেছে, তারা বলে : হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদেরকে এবং ঈমানে অগ্রণী আমাদের ভ্রাতাবৃন্দকে ক্ষমা কর। এবং ঈমানদারদের বিরুদ্ধে আমদের অন্তরে কোন বিদ্বেষ রেখো না। হে প্রতিপালক ! আপনি দয়ালু, পরম করুণাময়।’ এ ব্যাপারে রাসূলের নির্দেশ ও বিশেষ প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন :—
لاتسبوا أصحابي، فلو أن أحدكم أنفق مثل أحد ذهبا ما بلغ مد أحدهم و لا نصيفه .
‘তোমরা আমার সাহাবিদের গালি দিওনা। তোমাদের কেউ যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ আল্লাহর পথে খরচ করে সেটি তাদের খরচকৃত এক মুদ বা তার অর্ধেকেরও সমানও হবে না।’ (সওয়াবের দিক থেকে)।
যারা সাহাবাদের গালি দেয়, মন্দ বলে, সমালোচনা করে, তাদের ঘৃণা করে, তাদের মর্যাদা অস্বীকার করে এবং তাদের অধিকাংশকে কাফের বলে মন্তব্য করে, আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআত তাদের থেকে মুক্ত। কোরআন মাজীদ ও সহীহ হাদিসসমূহে সাহাবিদের যে সকল গুণাবলি ও মর্যাদা বর্ণনা করা হয়েছে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআত সে সব গুলোকে গ্রহণ করে, তারা বিশ্বাস করে যে সাহাবারা রাসূল ও নবীদের পর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব। তাদের যুগই সর্বশ্রেষ্ঠ যুগ। ইমরান বিন হোসাইন রা. বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বক্তব্যও সেটি প্রমাণ করে। তিনি বলেন :—
خيركم قرني، ثم الذين يلونهم، ثم الذين يلونهم .
‘আমার যুগের লোকেরাই তোমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ অত:পর যারা তাদের পরে এসেছে, এর পর যারা তাদের পরে এসেছে।’ অর্থাৎ সাহাবারা হচ্ছেন উম্মতের মধ্যে মর্যাদায় সর্বশ্রেষ্ঠ এর পর তাবেয়ীনরা এর পর তাবে তাবেয়ীনরা। ইমরান বলেন: নবী সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরে দুই যুগ বলেছেন না তিন যুগ বলেছেন এটি আমার জানা নেই। ইমাম আবু যুর আল রাযী বলেন:—তুমি কাউকে যে কোন একজন সাহাবির ব্যাপারে মর্যাদা হানিকর কিছু বলতে বা করতে দেখলে বিশ্বাস করবে যে এ লোক নাস্তিক ও অবিশ্বাসী ; মুসলমান নয়। কারণ বিভিন্ন অকাট্য দলিলাদির দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে কোরআন হক, রাসূল হক, তিনি যা নিয়ে এসেছেন সেগুলোও হক, আর এ সকল বিষয় আমাদেরকে জানিয়েছেন একমাত্র সাহাবায়ে কেরাম। এখন যারা পবিত্রাত্মা সাহাবাদের সম্পর্কে মর্যাদাহানীকর মন্তব্য করে তাদের মর্যাদা ও আস্থাশীলতাকে ক্ষতবিক্ষত করতে চায়, তাদের উদ্দেশ্য কোরআন সুন্নাহকে ধ্বংস ও আস্থাহীন করা ভিন্ন অন্য কিছু নয়। তাহলে এসব লোকদের সমালোচনা করা, নাস্তিক ও পথভ্রষ্টতার রায় দেয়া খুবই সংগত এবং ইনসাফ প্রসূত।
আল্লামা ইবনে হামদান বলেন :— যে ব্যক্তি একজন সাহাবিকেও মন্দ বলা বৈধ মনে করে, শরিয়তের দৃষ্টিতে সে কাফের বলে বিবেচিত হবে। আর বৈধ মনে না করে বললে ফাসেক বলে সাব্যস্ত হবে। আর অন্য একমত অনুযায়ী উভয় অবস্থাতেই কাফের বলে বিবেচিত হবে। যারা সাহাবাদেরকে ফাসেক বলবে অথবা তাদের দ্বীনদারী নিয়ে প্রশ্ন তুলবে অপবাদ দেবে অথবা কাউকে কাফের বলে মন্তব্য করবে, আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের নিকট তারা কাফের বলে বিবেচিত হবে। মর্যাদা ও ফজিলতের দিক থেকে সাহাবিদের পরবর্তী স্তরে রয়েছেন হেদায়াতের রাহবার তাবেয়ীনবৃন্দ এবং মর্যাদা প্রাপ্ত তিন যুগের তাদের অনুসারীরা। এর পর তাদের পরে আগত নিষ্ঠার সাথে সাহাবাদের অনুসরণ কারীরা...যেমন আল্লাহ তাআলা বলেছেন :—
وَالسَّابِقُونَ الْأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنْصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُمْ بِإِحْسَانٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ . ( التوبة :100)
‘মুহাজির ও আনসারদের মাঝে যারা প্রথম ও অগ্রগামী এবং যারা নিষ্ঠার সাথে তাদের অনুসরণ করে। আল্লাহ তাদের প্রতি প্রসন্ন এবং তারাও তার প্রতি সন্তুষ্ট।
অতএব তাদের ব্যাপারেও মন্দ বলা যাবে না। মানহানীকর কিছু করা যাবে না তাদের সম্মান হ্রাস পায় এমন কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা তারা হচ্ছেন أعلام الهدى হেদায়াতের নিদর্শন। এরশাদ হচ্ছে—
وَمَنْ يُشَاقِقِ الرَّسُولَ مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَى وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّى وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ وَسَاءَتْ مَصِيرًا . ( النساء :115)
‘কারো নিকট সৎপথ ও হেদায়াতের রাস্তা প্রকাশ হওয়ার পর যদি সে রাসূল-এর বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মোমিনদের পথ বাদ দিয়ে অন্য পথ অনুসরণ করে, আমি তাকে সে দিকেই ফেরাব যে দিক সে অবলম্বন করেছে। এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব।’
আল্লামা ইবনে আবিল ইয হানাফী রহ. বলেন:—প্রত্যেক মুসলমানের উপর আল্লাহ ও রাসূলের বন্ধুত্বের পর মোমিনের সাথে বন্ধুত্ব ও সম্পর্ক স্থাপন করা ওয়াজিব। কোরআন এ নির্দেশই দিয়েছে। বিশেষ করে যারা নবীদের ওয়ারিস ও উত্তরসুরী, যাদেরকে আল্লাহ তাআলা নক্ষত্র সদৃশ করে বানিয়েছেন, যাদের মাধ্যমে জলস্থলের অন্ধকার ও গোমরাহি থেকে পরিত্রাণের দিশা পাওয়া যায় ; সকল মুসলমান তাদের হেদায়াত ও জ্ঞানবুদ্ধির ব্যাপারে একমত। আমাদের উপর তাদের দয়া ও অনুগ্রহ রয়েছে ; কারণ তারা ঈমানের ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগামী এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে শরিয়ত ও দায়িত্ব নিয়ে প্রেরিত হয়েছেন, সে গুলো তারাই আমাদের নিকট প্রকাশ ও স্পষ্ট করেছেন। আল্লাহ তাদের উপর প্রসন্ন হন এবং তাদেরকে সন্তুষ্ট করুন।
رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِي قُلُوبِنَا غِلًّا لِلَّذِينَ آَمَنُوا رَبَّنَا إِنَّكَ رَءُوفٌ رَحِيمٌ . ( الحشر :10)
‘হে আমাদের প্রভু ! আমাদেরকে এবং ঈমানে অগ্রণী আমাদের ভ্রাতাবৃন্দকে ক্ষমা করে দিন। মোমিনদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে হিংসা বিদ্বেষ রাখবেন না। হে আমাদের প্রতিপালক আপনি তো দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু ।’
তারা উম্মতের জন্য রাসূলের প্রতিনিধি। রাসূলের নির্জীব ও বিলুপ্ত আদর্শকে তারাই জীবন্ত করেছেন। তাদের মাধ্যমে কোরআন বাস্তবায়িত হয়েছে এবং তারা কোরআন-এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। কোরআন তাদের সম্পর্কে বলেছে এবং তারাও কোরআনের কথা বলেছেন। তারা সকলেই রাসূলের ইত্তেবা ও অনুসরণ ওয়াজিব হওয়ার বিষয়ে নি:সংশয়ভাবে একমত।
তবে তাদের কারো পক্ষ থেকে যদি এমন কোন মত পাওয়া যায়, যার বিপরীত সহীহ হাদিস বিদ্যমান, তাহলে এ হাদিস পরিত্যাগ করার পিছনে নিশ্চয়ই কোন ওজর আছে। এসব ক্ষেত্রে তাদের ওজর তিন ধরনের:—
(এক) নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা বলেছেন—মর্মে বিশ্বাস না থাকা।
(দুই) ঐ মন্তব্য দ্বারা তিনি সেই মাসআলাই বুঝিয়েছেন—এ বিশ্বাস না করা।
(তিন) হুকুমটি মানসুক (রহিত) মর্মে বিশ্বাস করা।
ওলামাদের কারো কারো থেকে ইজতিহাদ জনিত ভুল-ভ্রান্তি সংঘটিত হওয়ার কারণে তাদের মর্যাদা হ্রাস করা তো বেদআতিদের পন্থা। এবং মুসলমানদের শত্রুদের ষড়যন্ত্রের অংশ-বিশেষ, যারা বিভিন্নভাবে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে করে আসছে। যেমন—যে কোন উপায়ে দ্বীন ইসলামে সন্দেহ সংশয় সৃষ্টি করে দেয়া, মুসলমানদের নিজেদের মাঝে শত্রুতা সৃষ্টি করে দেয়া, উম্মতের পরবর্তীদেরকে পূর্ববর্তীদের মত ও পথ থেকে বিচ্ছিন্ন ও আলাদা করে দেয়া। ওলামা ও সর্বসাধারণের মাঝে বিভেদ ও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দেয়া—যা কখনো কখনো হয়ে থাকে। সুতরাং বর্তমান যুগের কতিপয় তালেবে ইলম, যারা ফিকহে ইসলামি এবং এ শাস্ত্রে অভিজ্ঞ ফোকাহাদের মান মর্যাদা হ্রাস করনে সদা তৎপর যার কারণে তা অধ্যয়ন ও এতে বর্ণিত হক গ্রহণ করে উপকৃত হওয়ার প্রতি নিরাসক্ত ও বিমুখ, তাদের সতর্ক হয়ে এ পথ থেকে ফিরে আসা উচিত। স্বীয় ফেকহ নিয়ে গর্ববোধ এবং ফেকহবিদদের যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা দেয়া উচিত। ধ্বংসাত্মক ও বিভ্রান্তকারী প্রচার ও প্রচারণার মাধ্যমে প্রতারিত হওয়া থেকে সতর্ক হওয়া উচিত। আল্লাহ সকলকে তাওফিক দিন।
সমাপ্ত
هو من لقي النبي صلى الله عليه وسلم مؤمنا به ومات على ذلك .
ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিকোণে তাদের সম্পর্কে যে বিশ্বাস ও আক্বিদা পোষণ করা ওয়াজিব তা হচ্ছে—তারা উম্মতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ, সর্বাপেক্ষা মর্যাদাবান। উম্মতের মধ্যে মর্যাদা ও সম্মানের দিক দিয়ে কেউ তাদের সমান হতে পারবে না। তাদের যুগই সর্বশ্রেষ্ঠ যুগ। ঐ যুগের মর্যাদা সকল যুগ অপেক্ষা বেশি। এর কারণ হল, তারা ইসলাম গ্রহণ করেছেন সবার আগে, এ দিকটির বিবেচনায় তারা পরবর্তীদের তুলনায় অনেক এগিয়ে।
তারা আললাহর রাসূল, নবী-শ্রেষ্ঠ মুহাম্মদ এর সোহবত-সাহচর্য ও শিষ্যত্বের জন্য বিশেষভাবে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। তার সাথে মিলে জেহাদ করেছেন। তার পক্ষ থেকে শরিয়তের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। পরবতীদের নিকট তাবলীগ ও প্রচার করেছেন। আল্লাহ তাআলা স্বীয় কিতাবে তাদের প্রশংসা করে আয়াত অবতীর্ণ করেছেন। এরশাদ হচ্ছে :—
وَالسَّابِقُونَ الْأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنْصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُمْ بِإِحْسَانٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي تَحْتَهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ . ( التوبة :100)
‘মুহাজির ও আনসারদের মাঝে যারা প্রথম ও অগ্রগামী এবং যারা নিষ্ঠার সাথে তাদের অনুসরণ করে, আল্লাহ তাদের প্রতি প্রসন্ন এবং তারাও তার প্রতি সন্তুষ্ট। তাদের জন্য প্রস্ত্তত করেছেন জান্নাত, যার নিম্নদেশে প্রবাহিত নির্ঝরিণীসমূহ। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। এটি একটি মহা সাফল্য।
এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুহাজির ও আনসারদের প্রশংসা করেছেন। এবং তাদের গুণাগুণ বর্ণনা করে বলেছেন যে তারা কল্যাণ ও নেকির ক্ষেত্রে অগ্রগামী। আল্লাহ তাদের প্রতি প্রসন্ন এবং নেয়ামতের আধার জান্নাত তাদের উদ্দেশ্যে প্রস্ত্তত করেছেন। অন্যত্র আল্লাহ বলেন:-
مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ وَالَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ تَرَاهُمْ رُكَّعًا سُجَّدًا يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِنَ اللَّهِ وَرِضْوَانًا سِيمَاهُمْ فِي وُجُوهِهِمْ مِنْ أَثَرِ السُّجُودِ ذَلِكَ مَثَلُهُمْ فِي التَّوْرَاةِ وَمَثَلُهُمْ فِي الْإِنْجِيلِ كَزَرْعٍ أَخْرَجَ شَطْأَهُ فَآَزَرَهُ فَاسْتَغْلَظَ فَاسْتَوَى عَلَى سُوقِهِ يُعْجِبُ الزُّرَّاعَ لِيَغِيظَ بِهِمُ الْكُفَّارَ وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آَمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ مِنْهُمْ مَغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا ﴿29﴾. ( الفتح :29)
মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল, তার সহচরবৃন্দ কাফেরদের প্রতি কঠোর। নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় আপনি তাদেরকে রুকূ ও সেজদারত দেখবেন। তাদের চেহারায় রয়েছে সেজদার চিহ্ন। তাওরাতে তাদের অবস্থা এরূপই। আর ইঞ্জিলে তাদের বর্ণনা হচেছ এরকমই। যেমন একটি চারাগাছ যা থেকে নির্গত হয় কিশলয়। অত:পর তা শক্ত ও মজবুত হয় এবং কান্ডের উপর দাঁড়ায় দৃঢ়ভাবে। চাষীকে আনন্দে অভিভূত করে—যাতে আল্লাহ তাদের দ্বারা কাফেরদের অন্তর্জ্বালা সৃষ্টি করেন। তাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা ও মহা পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এ আয়াতে আল্লাহ তাদের গুণাগুণ বর্ণনা করে প্রশংসা করেছেন যে, তারা পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং কাফেরদের বিরুদ্ধে কঠোর ও নির্মম। তারা অধিক রুকু সেজদা কারী এবং আত্ম সংশোধনে অধিক তৎপর। তাদেরকে ঈমান ও আনুগত্যের বিশেষ নিদর্শনের মাধ্যমে চেনা যায়। আললাহ তাআলা স্বীয় নবীর সাহচর্য গ্রহণের জন্য তাদের নির্বাচন করেছেন, যাতে তাদের দ্বারা তার দুশমন কাফেরদের অন্তর্জ্বালায় দগ্ধ করতে পারেন। আল্লাহ তাআলা বলেন:—
لِلْفُقَرَاءِ الْمُهَاجِرِينَ الَّذِينَ أُخْرِجُوا مِنْ دِيارِهِمْ وَأَمْوَالِهِمْ يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِنَ اللَّهِ وَرِضْوَانًا وَيَنْصُرُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ أُولَئِكَ هُمُ الصَّادِقُونَ ﴿8﴾ وَالَّذِينَ تَبَوَّءُوا الدَّارَ وَالْإِيمَانَ مِنْ قَبْلِهِمْ يُحِبُّونَ مَنْ هَاجَرَ إِلَيْهِمْ وَلَا يَجِدُونَ فِي صُدُورِهِمْ حَاجَةً مِمَّا أُوتُوا وَيُؤْثِرُونَ عَلَى أَنْفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ وَمَنْ يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ ﴿9﴾. ( الحشر :8-9)
‘এই সম্পদ দেশত্যাগী নি:স্বদের জন্য, যারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি লাভের অন্বেষণে এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের সাহায্যার্থে নিজেদের বাস্ত্তভিটা ও ধন-সম্পদ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন। তারাই সত্যবাদী। এবং যারা মুহাজিরদের আগমনের পূর্বেই মদিনায় বসবাস করছিল এবং ঈমান এনেছিল, তারা মুহাজিরদের ভালবাসে, মুহাজিরদেরকে যা দেয়া হয়েছে, তার জন্য তারা অন্তরে ঈর্ষা পোষণ করে না ; এবং নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও তাদেরকে অগ্রাধিকার দান করে। যারা মনের কার্পণ্য থেকে মুক্ত তারাই সফলকাম।’
এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুহাজিরদের প্রশংসা করেছেন যে, তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও অনুগ্রহের অন্বেষণ এবং তার দ্বীনের সাহায্যার্থে নিজেদের বসত-ভিটা, ধন-সম্পদ ত্যাগ করেছেন এবং এ বিষয়ে তারা সত্যবাদী, আর আনসারদের প্রশংসা করেছেন যে, তারা পূর্ব হতেই দারুল হিজরত মদিনায় বসবাসকারী, নির্ভেজাল খাঁটি ঈমানদার ও প্রশস্তমন সম্পন্ন সাহায্যকারী। তাদের আরো গুণাগুণ বর্ণনা করে বলেছেন যে, তারা স্বীয় দ্বীনি ভাই মুহাজিরদের নি:স্বার্থ ভাবে ভালবাসে, নিজেদের চাহিদার উপর তাদের চাহিদা প্রাধান্য দেয়। সর্বাবস্থায় তাদের সমবেদনা ও সহযোগিতা মনে লালন করে। তারা মানসিক কার্পণ্য মুক্ত। আর এ গুনের মাধ্যমেই তারা সফলতা অর্জন করেছে।
এগুলো তাদের সাধারণ মর্যাদার অংশ বিশেষ। এ ধরনের মর্যাদায় সকলেই অন্তর্ভুক্ত। তাদের বেলায় কিছু বিশেষ মর্যাদা ও শ্রেণি বিন্যাস রয়েছে ; সেক্ষেত্রে কেউ কেউ অন্যদের চেয়ে অধিক মর্যাদা সম্পন্ন ও শ্রেষ্ঠতর। আর এ স্তর বিন্যাস ও মর্যাদার তারতম্যের মাপকাঠি হচ্ছে ইসলাম গ্রহণ, জেহাদ ও হিজরতের ক্ষেত্রে অগ্রবর্তিতা : যিনি আগে ইসলাম গ্রহণ করেছেন তিনি তার পরে গ্রহণকারীর তুলনায় অধিক মর্যাদা সম্পন্ন। অন্যান্য ক্ষেত্রেও একই বিধি প্রযোজ্য। ইমাম তাহাবী রহ. বলেন:—
ونحب أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم، ولا نفرط في حب أحد منهم، ولا نتبرأ من أحد منهم، و نبغض من يبغضهم، و بغير الخير يذكرهم، ولا نذكرهم إلا بخير وحبهم دين وإيمان وإحسان، بغضهم كفر ونفاق وطغيان .
‘আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সকল সাহাবিদের ভালবাসি। তাদের কারো ভালোবাসার ক্ষেত্রে অবাঞ্ছিত বাড়াবাড়ি করি না আবার শৈথিল্য ও অবহেলাও করি না। যারা তাদের ঘৃণা ও অবজ্ঞা করে, সমালোচনা করে, আমরা তাদের সাথে সম্পর্ক রাখি না। ভাল ভিন্ন তাদের আলোচনা করি না। তাদের ভালোবাসা ও মুহববত করা হচ্ছে—দ্বীন, ঈমান এবং এহসান, আর তাদের ঘৃণা করা-অপসন্দ করা হচ্ছে, কুফর, নিফাক ও সীমা লঙ্ঘন।’
সাহাবাদের মর্যাদার শ্রেণি বিন্যাস:—
সামগ্রিক বিচারে সাহাবারা সকলে অন্য সকল উম্মত অপেক্ষা উত্তম। তবে সাহাবারা নিজেরা কিন্তু সকলে একই স্তরের নন। বরং কেউ কেউ মর্যাদায় অন্যদের চেয়ে উত্তম। তাদের নিজেদের মধ্যে মর্যাদার দিক থেকে বিভিন্ন শ্রেণি-বিন্যাস ও স্তর রয়েছে। নিম্নে তাদের মর্যাদার ক্রমধারা প্রদত্ত হল। সাহাবাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হচ্ছেন চার খলিফা। অর্থাৎ আবু বকর অত:পর ওমর এর পর উসমান এবং তার পর আলী রাদিআল্লা আনহুম এদের পরবর্তী স্তরে আছেন অবশিষ্ট আশারায়ে মুবাশ্শারা (জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত দশ সাহাবি) তথা—তালহা, যুবায়ের, আব্দুর রহমান বিন আউফ, আবু উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ, সা’দ বিন আবী ওয়াক্কাস, সাইদ বিন যায়দ রাদি:। মুহাজির সাহাবাবৃন্দ আনসারদের চেয়ে উত্তম। বদর যুদ্ধে ও বায়আতে রিদওয়ানে অংশগ্রহণকারীরা অন্যদের চেয়ে মর্যাদাবান ও উত্তম। অনুরূপভাবে মক্কা বিজয়ের পূর্বে ইসলাম গ্রহণ ও যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য সাহাবাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন:—
وَمَا لَكُمْ أَلَّا تُنْفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلِلَّهِ مِيرَاثُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ لَا يَسْتَوِي مِنْكُمْ مَنْ أَنْفَقَ مِنْ قَبْلِ الْفَتْحِ وَقَاتَلَ أُولَئِكَ أَعْظَمُ دَرَجَةً مِنَ الَّذِينَ أَنْفَقُوا مِنْ بَعْدُ وَقَاتَلُوا وَكُلًّا وَعَدَ اللَّهُ الْحُسْنَى وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ . ( الحديد :10)
‘তোমাদের কি হল ? তোমরা আল্লাহর পথে কেন ব্যয় কর না ? অথচ আকাশমন্ডলি ও পৃথিবীর মালিকানা তো আল্লাহরই। তোমাদের মধ্যে যারা মক্কা বিজয়ের পূর্বে ব্যয় করেছে ও জেহাদ করেছে, তারা এবং পরবর্তীরা সমান নয়। এরা মর্যাদায় তাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ, যারা পরে ব্যয় করেছে ও জেহাদ করেছে। তবে আল্লাহ তাআলা উভয়ের কল্যাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত।’
সাহাবাদের সম্পর্কে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের আক্বিদা হচ্ছে : তাদের ব্যাপারে উম্মতের অন্তর এবং জিহবা (বাক শক্তি) সম্পূর্ণ পরিষ্কার ও নিরাপদ থাকবে। আল্লাহ তাআলা এ প্রসঙ্গে তাদের মানষিকতা সম্পর্কে বলেন :—
وَالَّذِينَ جَاءُوا مِنْ بَعْدِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِي قُلُوبِنَا غِلًّا لِلَّذِينَ آَمَنُوا رَبَّنَا إِنَّكَ رَءُوفٌ رَحِيمٌ . ( حشر :10)
‘এবং যারা তাদের পরে এসেছে, তারা বলে : হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদেরকে এবং ঈমানে অগ্রণী আমাদের ভ্রাতাবৃন্দকে ক্ষমা কর। এবং ঈমানদারদের বিরুদ্ধে আমদের অন্তরে কোন বিদ্বেষ রেখো না। হে প্রতিপালক ! আপনি দয়ালু, পরম করুণাময়।’ এ ব্যাপারে রাসূলের নির্দেশ ও বিশেষ প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন :—
لاتسبوا أصحابي، فلو أن أحدكم أنفق مثل أحد ذهبا ما بلغ مد أحدهم و لا نصيفه .
‘তোমরা আমার সাহাবিদের গালি দিওনা। তোমাদের কেউ যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ আল্লাহর পথে খরচ করে সেটি তাদের খরচকৃত এক মুদ বা তার অর্ধেকেরও সমানও হবে না।’ (সওয়াবের দিক থেকে)।
যারা সাহাবাদের গালি দেয়, মন্দ বলে, সমালোচনা করে, তাদের ঘৃণা করে, তাদের মর্যাদা অস্বীকার করে এবং তাদের অধিকাংশকে কাফের বলে মন্তব্য করে, আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআত তাদের থেকে মুক্ত। কোরআন মাজীদ ও সহীহ হাদিসসমূহে সাহাবিদের যে সকল গুণাবলি ও মর্যাদা বর্ণনা করা হয়েছে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআত সে সব গুলোকে গ্রহণ করে, তারা বিশ্বাস করে যে সাহাবারা রাসূল ও নবীদের পর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব। তাদের যুগই সর্বশ্রেষ্ঠ যুগ। ইমরান বিন হোসাইন রা. বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বক্তব্যও সেটি প্রমাণ করে। তিনি বলেন :—
خيركم قرني، ثم الذين يلونهم، ثم الذين يلونهم .
‘আমার যুগের লোকেরাই তোমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ অত:পর যারা তাদের পরে এসেছে, এর পর যারা তাদের পরে এসেছে।’ অর্থাৎ সাহাবারা হচ্ছেন উম্মতের মধ্যে মর্যাদায় সর্বশ্রেষ্ঠ এর পর তাবেয়ীনরা এর পর তাবে তাবেয়ীনরা। ইমরান বলেন: নবী সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরে দুই যুগ বলেছেন না তিন যুগ বলেছেন এটি আমার জানা নেই। ইমাম আবু যুর আল রাযী বলেন:—তুমি কাউকে যে কোন একজন সাহাবির ব্যাপারে মর্যাদা হানিকর কিছু বলতে বা করতে দেখলে বিশ্বাস করবে যে এ লোক নাস্তিক ও অবিশ্বাসী ; মুসলমান নয়। কারণ বিভিন্ন অকাট্য দলিলাদির দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে কোরআন হক, রাসূল হক, তিনি যা নিয়ে এসেছেন সেগুলোও হক, আর এ সকল বিষয় আমাদেরকে জানিয়েছেন একমাত্র সাহাবায়ে কেরাম। এখন যারা পবিত্রাত্মা সাহাবাদের সম্পর্কে মর্যাদাহানীকর মন্তব্য করে তাদের মর্যাদা ও আস্থাশীলতাকে ক্ষতবিক্ষত করতে চায়, তাদের উদ্দেশ্য কোরআন সুন্নাহকে ধ্বংস ও আস্থাহীন করা ভিন্ন অন্য কিছু নয়। তাহলে এসব লোকদের সমালোচনা করা, নাস্তিক ও পথভ্রষ্টতার রায় দেয়া খুবই সংগত এবং ইনসাফ প্রসূত।
আল্লামা ইবনে হামদান বলেন :— যে ব্যক্তি একজন সাহাবিকেও মন্দ বলা বৈধ মনে করে, শরিয়তের দৃষ্টিতে সে কাফের বলে বিবেচিত হবে। আর বৈধ মনে না করে বললে ফাসেক বলে সাব্যস্ত হবে। আর অন্য একমত অনুযায়ী উভয় অবস্থাতেই কাফের বলে বিবেচিত হবে। যারা সাহাবাদেরকে ফাসেক বলবে অথবা তাদের দ্বীনদারী নিয়ে প্রশ্ন তুলবে অপবাদ দেবে অথবা কাউকে কাফের বলে মন্তব্য করবে, আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের নিকট তারা কাফের বলে বিবেচিত হবে। মর্যাদা ও ফজিলতের দিক থেকে সাহাবিদের পরবর্তী স্তরে রয়েছেন হেদায়াতের রাহবার তাবেয়ীনবৃন্দ এবং মর্যাদা প্রাপ্ত তিন যুগের তাদের অনুসারীরা। এর পর তাদের পরে আগত নিষ্ঠার সাথে সাহাবাদের অনুসরণ কারীরা...যেমন আল্লাহ তাআলা বলেছেন :—
وَالسَّابِقُونَ الْأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنْصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُمْ بِإِحْسَانٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ . ( التوبة :100)
‘মুহাজির ও আনসারদের মাঝে যারা প্রথম ও অগ্রগামী এবং যারা নিষ্ঠার সাথে তাদের অনুসরণ করে। আল্লাহ তাদের প্রতি প্রসন্ন এবং তারাও তার প্রতি সন্তুষ্ট।
অতএব তাদের ব্যাপারেও মন্দ বলা যাবে না। মানহানীকর কিছু করা যাবে না তাদের সম্মান হ্রাস পায় এমন কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা তারা হচ্ছেন أعلام الهدى হেদায়াতের নিদর্শন। এরশাদ হচ্ছে—
وَمَنْ يُشَاقِقِ الرَّسُولَ مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَى وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّى وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ وَسَاءَتْ مَصِيرًا . ( النساء :115)
‘কারো নিকট সৎপথ ও হেদায়াতের রাস্তা প্রকাশ হওয়ার পর যদি সে রাসূল-এর বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মোমিনদের পথ বাদ দিয়ে অন্য পথ অনুসরণ করে, আমি তাকে সে দিকেই ফেরাব যে দিক সে অবলম্বন করেছে। এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব।’
আল্লামা ইবনে আবিল ইয হানাফী রহ. বলেন:—প্রত্যেক মুসলমানের উপর আল্লাহ ও রাসূলের বন্ধুত্বের পর মোমিনের সাথে বন্ধুত্ব ও সম্পর্ক স্থাপন করা ওয়াজিব। কোরআন এ নির্দেশই দিয়েছে। বিশেষ করে যারা নবীদের ওয়ারিস ও উত্তরসুরী, যাদেরকে আল্লাহ তাআলা নক্ষত্র সদৃশ করে বানিয়েছেন, যাদের মাধ্যমে জলস্থলের অন্ধকার ও গোমরাহি থেকে পরিত্রাণের দিশা পাওয়া যায় ; সকল মুসলমান তাদের হেদায়াত ও জ্ঞানবুদ্ধির ব্যাপারে একমত। আমাদের উপর তাদের দয়া ও অনুগ্রহ রয়েছে ; কারণ তারা ঈমানের ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগামী এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে শরিয়ত ও দায়িত্ব নিয়ে প্রেরিত হয়েছেন, সে গুলো তারাই আমাদের নিকট প্রকাশ ও স্পষ্ট করেছেন। আল্লাহ তাদের উপর প্রসন্ন হন এবং তাদেরকে সন্তুষ্ট করুন।
رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِي قُلُوبِنَا غِلًّا لِلَّذِينَ آَمَنُوا رَبَّنَا إِنَّكَ رَءُوفٌ رَحِيمٌ . ( الحشر :10)
‘হে আমাদের প্রভু ! আমাদেরকে এবং ঈমানে অগ্রণী আমাদের ভ্রাতাবৃন্দকে ক্ষমা করে দিন। মোমিনদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে হিংসা বিদ্বেষ রাখবেন না। হে আমাদের প্রতিপালক আপনি তো দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু ।’
তারা উম্মতের জন্য রাসূলের প্রতিনিধি। রাসূলের নির্জীব ও বিলুপ্ত আদর্শকে তারাই জীবন্ত করেছেন। তাদের মাধ্যমে কোরআন বাস্তবায়িত হয়েছে এবং তারা কোরআন-এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। কোরআন তাদের সম্পর্কে বলেছে এবং তারাও কোরআনের কথা বলেছেন। তারা সকলেই রাসূলের ইত্তেবা ও অনুসরণ ওয়াজিব হওয়ার বিষয়ে নি:সংশয়ভাবে একমত।
তবে তাদের কারো পক্ষ থেকে যদি এমন কোন মত পাওয়া যায়, যার বিপরীত সহীহ হাদিস বিদ্যমান, তাহলে এ হাদিস পরিত্যাগ করার পিছনে নিশ্চয়ই কোন ওজর আছে। এসব ক্ষেত্রে তাদের ওজর তিন ধরনের:—
(এক) নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা বলেছেন—মর্মে বিশ্বাস না থাকা।
(দুই) ঐ মন্তব্য দ্বারা তিনি সেই মাসআলাই বুঝিয়েছেন—এ বিশ্বাস না করা।
(তিন) হুকুমটি মানসুক (রহিত) মর্মে বিশ্বাস করা।
ওলামাদের কারো কারো থেকে ইজতিহাদ জনিত ভুল-ভ্রান্তি সংঘটিত হওয়ার কারণে তাদের মর্যাদা হ্রাস করা তো বেদআতিদের পন্থা। এবং মুসলমানদের শত্রুদের ষড়যন্ত্রের অংশ-বিশেষ, যারা বিভিন্নভাবে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে করে আসছে। যেমন—যে কোন উপায়ে দ্বীন ইসলামে সন্দেহ সংশয় সৃষ্টি করে দেয়া, মুসলমানদের নিজেদের মাঝে শত্রুতা সৃষ্টি করে দেয়া, উম্মতের পরবর্তীদেরকে পূর্ববর্তীদের মত ও পথ থেকে বিচ্ছিন্ন ও আলাদা করে দেয়া। ওলামা ও সর্বসাধারণের মাঝে বিভেদ ও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দেয়া—যা কখনো কখনো হয়ে থাকে। সুতরাং বর্তমান যুগের কতিপয় তালেবে ইলম, যারা ফিকহে ইসলামি এবং এ শাস্ত্রে অভিজ্ঞ ফোকাহাদের মান মর্যাদা হ্রাস করনে সদা তৎপর যার কারণে তা অধ্যয়ন ও এতে বর্ণিত হক গ্রহণ করে উপকৃত হওয়ার প্রতি নিরাসক্ত ও বিমুখ, তাদের সতর্ক হয়ে এ পথ থেকে ফিরে আসা উচিত। স্বীয় ফেকহ নিয়ে গর্ববোধ এবং ফেকহবিদদের যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা দেয়া উচিত। ধ্বংসাত্মক ও বিভ্রান্তকারী প্রচার ও প্রচারণার মাধ্যমে প্রতারিত হওয়া থেকে সতর্ক হওয়া উচিত। আল্লাহ সকলকে তাওফিক দিন।
সমাপ্ত
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন