HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
বন্ধুত্ব ও শত্রুতা ইসলামী দৃষ্টিকোণে
লেখকঃ কামাল উদ্দিন মোল্লা
‘আল-ওয়ালা ওয়াল বারা’ ইসলামী ধর্ম-বিশ্বাসের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ দিক। ‘আল-ওয়ালা’ শব্দের অর্থ বন্ধুত্ব স্থাপন ও আল-বারা শব্দের অর্থ শত্রুতা বা সম্পর্কচ্ছেদ।
মুসলমানের বাস্তব জীবনে আল্লাহর জন্য ওয়ালা এবং বারা বা আল্লাহর জন্য কারো সাথে বন্ধুত্ব এবং আল্লাহর জন্যই কারো সাথে শত্রুতার যে ঐতিহ্য বিদ্যমান ছিল, তা মুছে যাওয়া এবং দুর্বল হয়ে যাওয়ার বড় কারন হল আল্লাহর জন্য মুসলমানের ইবাদাত এবং মুহববত কমে যাওয়া। কারণ আল্লাহর ইবাদত ও তার জন্য ভালোবাসা হলো সবকিছুর মুল। এ থেকেই মুহাববত বা কারো সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং ঘৃণা বা কারো সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করন বেরিয়ে আসে। যখনই কোন ব্যক্তির মধ্যে আল্লাহর জন্য ইবাদত এবং মুহাববতে পূর্ণতা আসে, তখনই সে ওয়ালা এবং বারার ক্ষেত্রে অধিকতর কার্যকর ভুমিকা রাখে। যখনই মুসলমানের মধ্যে পদ, নারী এবং সম্পদের আসক্তি গভীর ভাবে প্রবেশ করল, এবং মনচাই জীবন যাপনের টোপ তারা গিলে ফেলল, তখন তারা মনের ইচ্ছা এবং প্রবৃত্তি মতো যার তার সাথে বন্ধুত্ব এবং সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা শুরু করে দিল। ঐ সকল জাগতিক প্রিয় বস্ত্তর মধ্যে নিমগ্ন হওয়ার কারণে আল্লাহর জন্য উবুদিয়্যাত বা দাসত্বিতে দুর্বলতা আসল।
বন্ধ হয়ে পড়ল তাদের মধ্যে আল্লাহর এবাদত এবং মুহাববত। অতঃপর আল্লাহর জন্য শত্রুতার যে ঐতিহ্য তাদের মধ্যে ছিল তা মারাত্মক ভাবে কমে গেল। অতএব আমরা বলতে পারি আল্লাহর জন্য বন্ধুত্ব আল্লাহর জন্যই শত্রুতা এবং তার উপকরণ সমূহের মূলত: জন্মই হয় আল্লাহর মুহাববত ও ইবাদত থেকে।
জানা উচিত ওয়ালা ও বারা ঈমানের অংশ। বরং ঈমানের জন্য শর্ত। আল্লাহ তাআলা বলেন—
تَرَى كَثِيرًا مِنْهُمْ يَتَوَلَّوْنَ الَّذِينَ كَفَرُوا لَبِئْسَ مَا قَدَّمَتْ لَهُمْ أَنْفُسُهُمْ أَنْ سَخِطَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ وَفِي الْعَذَابِ هُمْ خَالِدُونَ ﴿80﴾ وَلَوْ كَانُوا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالنَّبِيِّ وَمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِ مَا اتَّخَذُوهُمْ أَوْلِيَاءَ وَلَكِنَّ كَثِيرًا مِنْهُمْ فَاسِقُونَ ﴿81﴾.
‘‘আপনি তাদের অনেককে দেখবেন কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব করে। তারা নিজেদের জন্য যা পাঠিয়েছে তা অবশ্যই মন্দ। তা এই যে, তাদের প্রতি আল্লাহ তাআলা ক্রোধান্বিত হয়েছেন এবং তারা চিরকাল আযাবে থাকবে। যদি তারা আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করত এবং যা রাসূলের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে তার প্রতি তবে তারা কাফেরেদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করত না। কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকেই দুরাচার। [সুরা আল মায়েদাহ- ৮০-৮১]
আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রহ. এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, শর্তবোধক বাক্যের দাবি হল শর্ত পাওয়া গেলে শর্তাধীন বস্ত্তটিও পাওয়া যাবে। অন্যথায় নয়। যা আল্লাহর বাণী
وَلَوْ كَانُوا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالنَّبِيِّ وَمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِ مَا اتَّخَذُوهُمْ أَوْلِيَاءَ وَلَكِنَّ كَثِيرًا مِنْهُمْ فَاسِقُونَ ﴿ ألمائدة :81﴾.
মধ্যে আরবী হরফ لو (লাও) থেকে বোঝায়। যার অর্থ: যদি তারা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন ও রাসূলের প্রতি অবতীর্ণ বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করত তবে কাফেরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহন করত না। এতে বুঝা যায় অন্তরে আল্লাহর প্রতি ঈমান এবং কাফেরদের সাথে সম্পর্ক এক সঙ্গে অবস্থান করতে পারে না। আরো বুঝা যায়, যারা কাফেরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছে তারা আল্লাহ এবং নবী স. এবং নবীর প্রতি অবতীর্ণ কিতাবের উপর ঈমানের যে দাবী, তা তারা পালন করছে না।
আরো জানা উচিত যে, আল-ওয়ালা এবং আল-বারা ঈমানের অধিকতর নিরাপদ বন্ধন। যেমনটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
أوثق عرى الإيمان الحب في الله والبغض في الله ( رواه أحمد والحاكم )
অর্থাৎ ঈমানের অধিকতর নিরাপদ বন্ধন হলো আল্লাহর জন্য বন্ধুত্ব এবং আল্লাহর জন্য শত্রুতা। [আহমদ, হাকেম]
‘দ্বীনের পূর্ণতা, জিহাদি ঝান্ডার প্রতিষ্ঠা অথবা সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের প্রতিরোধ মিশন সফল হবে না, যতক্ষণ না আল্লাহর জন্য বন্ধুত্ব, আল্লাহর জন্য শত্রুতার নীতি গ্রহণ করা হবে। শত্রু-মিত্রের বিচার না করে সব মানুষ যদি সঠিক পথের অনুসারী হতো তবে হক্ব-বাতিল, ঈমান-কুফুর, আল্লাহর বন্ধু এবং শয়তানের বন্ধুর মাঝে কোন পার্থক্য যুগ যুগ ধরে চলে আসত না'’। [আওসাক আল-ওরাল ঈমান : শায়খ সুলাইমান বিন আব্দুল্লাহ]
আবু ওয়াফা বিন আক্বীল (মৃত্যু: ৫১৩ হি:) এর একটি বাক্য লক্ষ্য করুন। তিনি বলেন—
‘‘কোন জনপদের অধিবাসীদের ইসলাম সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে যদি ইচ্ছে করেন, তবে মসজিদে তাদের ভীড় দেখে এবং আরাফার মাঠে গিয়ে প্রকম্পিত আওয়াজে তাদের লাববাইক আওয়াজ দেখে নয়। বরং এজন্য দৃষ্টি দিবে ইসলামী শরীয়তের শত্রুদের সাথে তাদের অবস্থানের উপর।’’
ইবনে আল রুয়ান্দি, আল মুয়ারী তাদের উপর আল্লাহর অভিশাপ, তারা গদ্যে এবং পদ্যে নাস্তিকতা ছড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করত। মেলাতে আসা মাত্রই চড়া দামে তাদের বই বিক্রয় হয়ে যেত। ভোগ বিলাসে তাদের জীবন কেটেছে। তাদের সমাধিতে স্মৃতিসৌধও নির্মান হয়েছিল। এ সব তাদের ও ঐ জনপদের অধিবাসীদের ঈমানের প্রদিপ শীতল হওয়ার প্রমাণ বহন করে। [মানলি আদাবিশ্শরিয়া ১ম খন্ড]
মুসলমানের বাস্তব জীবনে আল্লাহর জন্য ওয়ালা এবং বারা বা আল্লাহর জন্য কারো সাথে বন্ধুত্ব এবং আল্লাহর জন্যই কারো সাথে শত্রুতার যে ঐতিহ্য বিদ্যমান ছিল, তা মুছে যাওয়া এবং দুর্বল হয়ে যাওয়ার বড় কারন হল আল্লাহর জন্য মুসলমানের ইবাদাত এবং মুহববত কমে যাওয়া। কারণ আল্লাহর ইবাদত ও তার জন্য ভালোবাসা হলো সবকিছুর মুল। এ থেকেই মুহাববত বা কারো সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং ঘৃণা বা কারো সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করন বেরিয়ে আসে। যখনই কোন ব্যক্তির মধ্যে আল্লাহর জন্য ইবাদত এবং মুহাববতে পূর্ণতা আসে, তখনই সে ওয়ালা এবং বারার ক্ষেত্রে অধিকতর কার্যকর ভুমিকা রাখে। যখনই মুসলমানের মধ্যে পদ, নারী এবং সম্পদের আসক্তি গভীর ভাবে প্রবেশ করল, এবং মনচাই জীবন যাপনের টোপ তারা গিলে ফেলল, তখন তারা মনের ইচ্ছা এবং প্রবৃত্তি মতো যার তার সাথে বন্ধুত্ব এবং সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা শুরু করে দিল। ঐ সকল জাগতিক প্রিয় বস্ত্তর মধ্যে নিমগ্ন হওয়ার কারণে আল্লাহর জন্য উবুদিয়্যাত বা দাসত্বিতে দুর্বলতা আসল।
বন্ধ হয়ে পড়ল তাদের মধ্যে আল্লাহর এবাদত এবং মুহাববত। অতঃপর আল্লাহর জন্য শত্রুতার যে ঐতিহ্য তাদের মধ্যে ছিল তা মারাত্মক ভাবে কমে গেল। অতএব আমরা বলতে পারি আল্লাহর জন্য বন্ধুত্ব আল্লাহর জন্যই শত্রুতা এবং তার উপকরণ সমূহের মূলত: জন্মই হয় আল্লাহর মুহাববত ও ইবাদত থেকে।
জানা উচিত ওয়ালা ও বারা ঈমানের অংশ। বরং ঈমানের জন্য শর্ত। আল্লাহ তাআলা বলেন—
تَرَى كَثِيرًا مِنْهُمْ يَتَوَلَّوْنَ الَّذِينَ كَفَرُوا لَبِئْسَ مَا قَدَّمَتْ لَهُمْ أَنْفُسُهُمْ أَنْ سَخِطَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ وَفِي الْعَذَابِ هُمْ خَالِدُونَ ﴿80﴾ وَلَوْ كَانُوا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالنَّبِيِّ وَمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِ مَا اتَّخَذُوهُمْ أَوْلِيَاءَ وَلَكِنَّ كَثِيرًا مِنْهُمْ فَاسِقُونَ ﴿81﴾.
‘‘আপনি তাদের অনেককে দেখবেন কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব করে। তারা নিজেদের জন্য যা পাঠিয়েছে তা অবশ্যই মন্দ। তা এই যে, তাদের প্রতি আল্লাহ তাআলা ক্রোধান্বিত হয়েছেন এবং তারা চিরকাল আযাবে থাকবে। যদি তারা আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করত এবং যা রাসূলের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে তার প্রতি তবে তারা কাফেরেদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করত না। কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকেই দুরাচার। [সুরা আল মায়েদাহ- ৮০-৮১]
আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রহ. এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, শর্তবোধক বাক্যের দাবি হল শর্ত পাওয়া গেলে শর্তাধীন বস্ত্তটিও পাওয়া যাবে। অন্যথায় নয়। যা আল্লাহর বাণী
وَلَوْ كَانُوا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالنَّبِيِّ وَمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِ مَا اتَّخَذُوهُمْ أَوْلِيَاءَ وَلَكِنَّ كَثِيرًا مِنْهُمْ فَاسِقُونَ ﴿ ألمائدة :81﴾.
মধ্যে আরবী হরফ لو (লাও) থেকে বোঝায়। যার অর্থ: যদি তারা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন ও রাসূলের প্রতি অবতীর্ণ বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করত তবে কাফেরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহন করত না। এতে বুঝা যায় অন্তরে আল্লাহর প্রতি ঈমান এবং কাফেরদের সাথে সম্পর্ক এক সঙ্গে অবস্থান করতে পারে না। আরো বুঝা যায়, যারা কাফেরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছে তারা আল্লাহ এবং নবী স. এবং নবীর প্রতি অবতীর্ণ কিতাবের উপর ঈমানের যে দাবী, তা তারা পালন করছে না।
আরো জানা উচিত যে, আল-ওয়ালা এবং আল-বারা ঈমানের অধিকতর নিরাপদ বন্ধন। যেমনটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
أوثق عرى الإيمان الحب في الله والبغض في الله ( رواه أحمد والحاكم )
অর্থাৎ ঈমানের অধিকতর নিরাপদ বন্ধন হলো আল্লাহর জন্য বন্ধুত্ব এবং আল্লাহর জন্য শত্রুতা। [আহমদ, হাকেম]
‘দ্বীনের পূর্ণতা, জিহাদি ঝান্ডার প্রতিষ্ঠা অথবা সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের প্রতিরোধ মিশন সফল হবে না, যতক্ষণ না আল্লাহর জন্য বন্ধুত্ব, আল্লাহর জন্য শত্রুতার নীতি গ্রহণ করা হবে। শত্রু-মিত্রের বিচার না করে সব মানুষ যদি সঠিক পথের অনুসারী হতো তবে হক্ব-বাতিল, ঈমান-কুফুর, আল্লাহর বন্ধু এবং শয়তানের বন্ধুর মাঝে কোন পার্থক্য যুগ যুগ ধরে চলে আসত না'’। [আওসাক আল-ওরাল ঈমান : শায়খ সুলাইমান বিন আব্দুল্লাহ]
আবু ওয়াফা বিন আক্বীল (মৃত্যু: ৫১৩ হি:) এর একটি বাক্য লক্ষ্য করুন। তিনি বলেন—
‘‘কোন জনপদের অধিবাসীদের ইসলাম সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে যদি ইচ্ছে করেন, তবে মসজিদে তাদের ভীড় দেখে এবং আরাফার মাঠে গিয়ে প্রকম্পিত আওয়াজে তাদের লাববাইক আওয়াজ দেখে নয়। বরং এজন্য দৃষ্টি দিবে ইসলামী শরীয়তের শত্রুদের সাথে তাদের অবস্থানের উপর।’’
ইবনে আল রুয়ান্দি, আল মুয়ারী তাদের উপর আল্লাহর অভিশাপ, তারা গদ্যে এবং পদ্যে নাস্তিকতা ছড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করত। মেলাতে আসা মাত্রই চড়া দামে তাদের বই বিক্রয় হয়ে যেত। ভোগ বিলাসে তাদের জীবন কেটেছে। তাদের সমাধিতে স্মৃতিসৌধও নির্মান হয়েছিল। এ সব তাদের ও ঐ জনপদের অধিবাসীদের ঈমানের প্রদিপ শীতল হওয়ার প্রমাণ বহন করে। [মানলি আদাবিশ্শরিয়া ১ম খন্ড]
ওয়ালা অর্থ : হৃদ্যতা, বন্ধুত্ব ঘনিষ্ঠতা।
বারা অর্থ: ঘৃণা, শত্রুতা, দূরত্ব। মূলত: ওয়ালা এবং বারা হচ্ছে মনের বিষয়। তবে তা মুখে এবং অঙ্গ-পত্যঙ্গে তা প্রকাশ পায়। ওয়ালা বা বন্ধুত্ব আল্লাহ
তাআলা, তার রাসুল সা. এবং মুমিনদের জন্য হয়ে থাকে—
إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آَمَنُوا ﴿ألمائدة :55 ﴾
‘‘নিশ্চয় তোমাদের বন্ধু হল আল্লাহ, তার রাসুল এবং যারা ঈমানদার’’। [সূরা : আল মায়েদা - ৫৫]
মুমিনদের প্রতি বন্ধুত্ব প্রকাশের মাধ্যম হলো ঈমানের কারনে তাদেরকে ভালবাসা, তাদেরকে সাহায্য করা, তাদের উপর অনুগ্রহ করা, তাদের জন্য কল্যাণ কামনা করা, তাদের জন্য দোয়া করা, তাদেরকে সালাম দেয়া, তাদের অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া, তাদের মৃত ব্যক্তির কাফন দাফনের ব্যবস্থা করা, তাদের সার্বিক খোজ খবর রাখার ইত্যাদি।
কাফেরদের সাথে শত্রুতা প্রকাশের নীতির উদ্দেশ্য হল তারা কাফের এজন্য ঘৃণা প্রকাশ করা, মুসলমানদের বিরুদ্ধে তাদের সাহায্য না করা, তাদেরকে আগে সালাম না দেওয়া, তাদের অনুগত না হওয়া, অথবা তাদের কারণে গর্ববোধ প্রকাশ না করা, তাদের অনুকরন থেকে দুরে থাকা, ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক হাত, মুখ এবং সম্পদের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা, প্রয়োজনে কুফুরী রাষ্ট্র বা সরকার থেকে ইসলামী রাষ্ট্র বা সরকারে হিজরত করা। এছাড়া কাফের হওয়ার কারণে শত্রুতা প্রকাশের আরো যত মাধ্যম আছে তা ব্যবহার করে শত্রুতা প্রকাশ করা। বিস্তারিত আল্লামা কাহতানীর আল-ওয়ালা ওয়াল-বারা অথবা আল্লামা জালউদ এর ‘কিতাবুল মুআলাত ওয়াল মুআদাত’ দেখুন।
বারা অর্থ: ঘৃণা, শত্রুতা, দূরত্ব। মূলত: ওয়ালা এবং বারা হচ্ছে মনের বিষয়। তবে তা মুখে এবং অঙ্গ-পত্যঙ্গে তা প্রকাশ পায়। ওয়ালা বা বন্ধুত্ব আল্লাহ
তাআলা, তার রাসুল সা. এবং মুমিনদের জন্য হয়ে থাকে—
إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آَمَنُوا ﴿ألمائدة :55 ﴾
‘‘নিশ্চয় তোমাদের বন্ধু হল আল্লাহ, তার রাসুল এবং যারা ঈমানদার’’। [সূরা : আল মায়েদা - ৫৫]
মুমিনদের প্রতি বন্ধুত্ব প্রকাশের মাধ্যম হলো ঈমানের কারনে তাদেরকে ভালবাসা, তাদেরকে সাহায্য করা, তাদের উপর অনুগ্রহ করা, তাদের জন্য কল্যাণ কামনা করা, তাদের জন্য দোয়া করা, তাদেরকে সালাম দেয়া, তাদের অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া, তাদের মৃত ব্যক্তির কাফন দাফনের ব্যবস্থা করা, তাদের সার্বিক খোজ খবর রাখার ইত্যাদি।
কাফেরদের সাথে শত্রুতা প্রকাশের নীতির উদ্দেশ্য হল তারা কাফের এজন্য ঘৃণা প্রকাশ করা, মুসলমানদের বিরুদ্ধে তাদের সাহায্য না করা, তাদেরকে আগে সালাম না দেওয়া, তাদের অনুগত না হওয়া, অথবা তাদের কারণে গর্ববোধ প্রকাশ না করা, তাদের অনুকরন থেকে দুরে থাকা, ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক হাত, মুখ এবং সম্পদের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা, প্রয়োজনে কুফুরী রাষ্ট্র বা সরকার থেকে ইসলামী রাষ্ট্র বা সরকারে হিজরত করা। এছাড়া কাফের হওয়ার কারণে শত্রুতা প্রকাশের আরো যত মাধ্যম আছে তা ব্যবহার করে শত্রুতা প্রকাশ করা। বিস্তারিত আল্লামা কাহতানীর আল-ওয়ালা ওয়াল-বারা অথবা আল্লামা জালউদ এর ‘কিতাবুল মুআলাত ওয়াল মুআদাত’ দেখুন।
আহলেসুন্নত ওয়াল-জামাত মানুষকে দয়া করেন। এবং তারা হক বাতিলের মধ্যে পার্থক্য করতে পারেন। মুমিনদের প্রতি তারা যত্নবান। তারা মধ্যপন্থী, সহানুভূতিশীল, কল্যাণকামী ও সুপরামর্শদাতা। তারা সকল মুসলমানকে একটি দেহ মনে করেন। যখনই দেহের কোন অংশে ব্যথা হয় তখন সমস্ত দেহে তা অনুভব হয়। আল্লামা আইয়্যুব সাখতীয়ানী বলেন;
إنه ليبلغني عن الرجل من أهل السنة إنه مات فكأنما فقدت بعض أعضائي . ( الحجة في بيان المحجة للأصفهاني ( قوام السنة ) ২/৪৮৭.
যখন আমার কাছে কোন আহলেসুন্নাত ওয়ালজামাতের মৃত্যুর সংবাদ পৌঁছে। তখন আমার মনে হয় আমি আমার একটি অঙ্গ হারিয়ে ফেলেছি। [আল হু্জ্জাতু ফি বায়ানিল মাহাজ্জাহ ২য় খন্ড, ৪৮৭পৃষ্ঠা]
(কাওয়ামুস সুন্নাহ) বা হাদীসের অভিভাবক বলে সুপ্রসিদ্ব আল্লামা ইসমাঈল আল আসফাহানী বলেন —
و على المرء محبة أهل السنة في أي موضع كانوا رجاء محبة الله له .... ( رواه مالك :১৫০৩ وأحمد : ২১০২১)
একজন ব্যক্তির জন্য অবশ্যই কর্তব্য হকপন্থী আলেম সমাজকে মুহাববত করা। সে যেখানে থাকুক না কেন। এ আশায় যে আল্লাহ তাআলা তাকে মুহাববত করবেন। রাসুল (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন: আমার মুহাববত তাদের জন্য ওয়াজিব যারা আমার জন্য পরস্পরের সাথে উঠা বসা করে আমার জন্য পরস্পরের সাথে সাক্ষাত করে। [মালেক: ১৫০৩, আহমাদ: ২১০২১]
এমনিভাবে একজন ব্যাক্তির অবশ্যই কর্তব্য বিদাআতপন্থীদের ঘৃণা করা, সে যেখানেই থাকুকনা কেন।
যেন সে আল্লাহর জন্য কাউকে মুহাববত, আল্লাহর জন্য কাউকে ঘৃণা করে এমন ব্যক্তিবর্গের মধ্যে অর্ন্তভূক্ত হতে পারে। [আল হু্জ্জাতু ফি বায়ানিল মাহাজ্জাহ ২য় খন্ড, ৪৮৭পৃষ্ঠা]
হকপন্থীদের মধ্যে আল-ওয়ালা এর উপস্থিতির কারণ হল, তাদের মানহাজ বা কর্মপন্থা এক, প্রমাণ উপস্থাপন এবং গ্রহণের পথও অভিন্ন। আক্বীদাহ বা ধর্ম বিশ্বাস, শরীয়ত ও আচরণেও তারা একই মত পোষণ করে থাকেন।
উল্লেখ্য যে, আল-ওয়ালা দ্বারা ঈমানের বন্ধন অব্যাহত থাকে এবং স্থায়ী হয়। কারণ আল-ওয়ালা এবং আল-বারা দ্বারা উদ্দেশ্য হয় আল্লাহর সন্তুষ্টি। আর আল্লাহ তাআলা হলেন, আলআখির বা যার পর আর কিছু নেই। যার লয় নেই, ক্ষয় নেই। আল্লাহ ছাড়া অন্যের সাথে সম্পর্ক এরূপ হয় না। ঐ সকল সম্পর্ক খুব দ্রুত পরিবর্তন হয়। এবং ইহকাল, পরকাল উভয় জগতে এ সকল বন্ধুত্ব শত্রুতায় পরিণত হতে পারে।
إنه ليبلغني عن الرجل من أهل السنة إنه مات فكأنما فقدت بعض أعضائي . ( الحجة في بيان المحجة للأصفهاني ( قوام السنة ) ২/৪৮৭.
যখন আমার কাছে কোন আহলেসুন্নাত ওয়ালজামাতের মৃত্যুর সংবাদ পৌঁছে। তখন আমার মনে হয় আমি আমার একটি অঙ্গ হারিয়ে ফেলেছি। [আল হু্জ্জাতু ফি বায়ানিল মাহাজ্জাহ ২য় খন্ড, ৪৮৭পৃষ্ঠা]
(কাওয়ামুস সুন্নাহ) বা হাদীসের অভিভাবক বলে সুপ্রসিদ্ব আল্লামা ইসমাঈল আল আসফাহানী বলেন —
و على المرء محبة أهل السنة في أي موضع كانوا رجاء محبة الله له .... ( رواه مالك :১৫০৩ وأحمد : ২১০২১)
একজন ব্যক্তির জন্য অবশ্যই কর্তব্য হকপন্থী আলেম সমাজকে মুহাববত করা। সে যেখানে থাকুক না কেন। এ আশায় যে আল্লাহ তাআলা তাকে মুহাববত করবেন। রাসুল (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন: আমার মুহাববত তাদের জন্য ওয়াজিব যারা আমার জন্য পরস্পরের সাথে উঠা বসা করে আমার জন্য পরস্পরের সাথে সাক্ষাত করে। [মালেক: ১৫০৩, আহমাদ: ২১০২১]
এমনিভাবে একজন ব্যাক্তির অবশ্যই কর্তব্য বিদাআতপন্থীদের ঘৃণা করা, সে যেখানেই থাকুকনা কেন।
যেন সে আল্লাহর জন্য কাউকে মুহাববত, আল্লাহর জন্য কাউকে ঘৃণা করে এমন ব্যক্তিবর্গের মধ্যে অর্ন্তভূক্ত হতে পারে। [আল হু্জ্জাতু ফি বায়ানিল মাহাজ্জাহ ২য় খন্ড, ৪৮৭পৃষ্ঠা]
হকপন্থীদের মধ্যে আল-ওয়ালা এর উপস্থিতির কারণ হল, তাদের মানহাজ বা কর্মপন্থা এক, প্রমাণ উপস্থাপন এবং গ্রহণের পথও অভিন্ন। আক্বীদাহ বা ধর্ম বিশ্বাস, শরীয়ত ও আচরণেও তারা একই মত পোষণ করে থাকেন।
উল্লেখ্য যে, আল-ওয়ালা দ্বারা ঈমানের বন্ধন অব্যাহত থাকে এবং স্থায়ী হয়। কারণ আল-ওয়ালা এবং আল-বারা দ্বারা উদ্দেশ্য হয় আল্লাহর সন্তুষ্টি। আর আল্লাহ তাআলা হলেন, আলআখির বা যার পর আর কিছু নেই। যার লয় নেই, ক্ষয় নেই। আল্লাহ ছাড়া অন্যের সাথে সম্পর্ক এরূপ হয় না। ঐ সকল সম্পর্ক খুব দ্রুত পরিবর্তন হয়। এবং ইহকাল, পরকাল উভয় জগতে এ সকল বন্ধুত্ব শত্রুতায় পরিণত হতে পারে।
কাফির সম্প্রদায় আমাদের শত্রু অতীতেও ছিল বর্তমানেও আছে। চাই তা জাতিগত ভাবে হোক। যেমন: ইহুদী এবং খ্রীষ্টান অথবা স্বধর্মত্যাগী হোক। আল্লাহ তাআলা বলেন :—
لَا يَتَّخِذِ الْمُؤْمِنُونَ الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاءَ مِنْ دُونِ الْمُؤْمِنِينَ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ فَلَيْسَ مِنَ اللَّهِ فِي شَيْءٍ إِلَّا أَنْ تَتَّقُوا مِنْهُمْ تُقَاةً وَيُحَذِّرُكُمُ اللَّهُ نَفْسَهُ وَإِلَى اللَّهِ الْمَصِيرُ ﴿28﴾ ( آل عمران : ২৮).
মুমিনগণ যেন অন্য মুমিন ছেড়ে কাফেরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যারা এরূপ করবে আল্লাহর সাথে তাদের কোন সম্পর্ক থাকবে না। তবে যদি তোমরা তাদের পক্ষ থেকে কোন অনিষ্টের আশঙ্কা কর, তবে তাদের সাথে সাবধানতার সাথে থাকবে। আল্লাহ তাআলা, তার সম্পর্কে তোমাদের সর্তক করেছেন এবং সবাইকে তার কাছেই ফিরে যেতে হবে। [সূরা : আল ইমরান - ২৮]
‘‘এই আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লাম ইবনুল কাসীর রহ. বলেন, আল্লাহ তাআলা ঈমানদারদের নিষেধ করেছেন কাফেরদের পক্ষ সমর্থন করতে। তাদের ভালবাসতে, গোপনে তাদের কাছে বন্ধুত্বের বার্তা পাঠাতে। অত:পর আল্লাহ তাআলা এই বলে অঙ্গীকার করেছেন, যারা এইরূপ করবে, আল্লাহর সাথে তাদের কোন সম্পর্ক থাকবে না। অর্থাৎ যে ওয়ালা এবং বারার ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআ’লার হুকুম মান্য করেনা, আল্লাহ তাআলা তার কোন দায়ভার নিবেন না। আল্লাহ তাআলা বলেন—
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاءَ مِنْ دُونِ الْمُؤْمِنِينَ أَتُرِيدُونَ أَنْ تَجْعَلُوا لِلَّهِ عَلَيْكُمْ سُلْطَانًا مُبِينًا . ( النساء :144)
অর্থ: হে ঈমানদারগন! তোমরা মুমিনগন ব্যতীত কাফেরদেরকে বন্ধু বানিওনা। তোমরা কি এমনটি করে নিজের উপর আল্লাহ তাআলার প্রকাশ্য দলীল কায়েম করে দিবে? [সূরা আল নিসা-১৪৪]
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন—
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى أَوْلِيَاءَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ ﴿ألمائدة : 51﴾
অর্থ: হে মুমিনগণ! তোমরা ইহুদী ও খৃষ্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভূক্ত। [সূরা : আল মায়েদা- ৫১ ( ইবনু কাসীর ১ম খন্ড:৩৫৭)]
এটাই সত্য ও বাস্তবতা যার বিপরীত আজ অবধি লক্ষ্য করা যায়নি। যে কাফের সম্প্রদায় আমাদের শত্রু, আমাদের প্রতিপক্ষ, যা পবিত্র কোরআনের বহু আয়াত দ্বারা স্থির করা হয়েছে। আল্লাহ তাদের সম্পর্কে বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন—
إِنَّ الْكَافِرِينَ كَانُوا لَكُمْ عَدُوًّا مُبِينًا ﴿101﴾ ( النساء :101)
অর্থ: নিশ্চয় কাফের সম্প্রদায় তোমাদের জন্য প্রকাশ্য শত্রু। [সূরা : আন নিসা- ১০১]
আল্লাহ তাআলা বলেন—
لَا يَرْقُبُونَ فِي مُؤْمِنٍ إِلًّا وَلَا ذِمَّةً وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُعْتَدُونَ ﴿10﴾ ( التوبة :10)
অর্থ: তারা মর্যাদা দেয় না কোন মুসলমানের ক্ষেত্রে আত্মীয়তার আর না অঙ্গীকারের। আর তারাই সীমা লঙ্গনকারী। []
আল্লাহ তাআলা বলেন—
مَا يَوَدُّ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ وَلَا الْمُشْرِكِينَ أَنْ يُنَزَّلَ عَلَيْكُمْ مِنْ خَيْرٍ مِنْ رَبِّكُمْ ﴿105﴾ ( البقرة : 105)
অর্থ: আহলে কিতাব (ইহুদী ও খৃষ্টান) ও মুশরিকদের মধ্যে যারা কাফের তাদের মন:পুত নয় যে, তোমাদের পালনককর্তার পক্ষ থেকে তোমাদের প্রতি কোন কল্যাণ অবতীর্ণ হোক। [সূরা আল বাক্বারা-১০৫]
আল্লাহ বলেন—
وَدَّ كَثِيرٌ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ لَوْ يَرُدُّونَكُمْ مِنْ بَعْدِ إِيمَانِكُمْ كُفَّارًا حَسَدًا مِنْ عِنْدِ أَنْفُسِهِمْ مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ الْحَقُّ ﴿109﴾ ( البقرة : 109)
অর্থ: আহলে কিতাব (ইহুদী ও খৃষ্টান) দের অনেকেই প্রতিহিংসাবশত: চায় যে, মুসলমান হবার পর তোমাদেরকে কোন রকমে কাফের বানিয়ে দেয়। তাদের কাছে সত্য প্রমাণিত হবার পর। [সূরা আল বাক্বারা- ১০৯]
এইভাবে আল্লাহ তাআলা কাফিরদের থেকে আমাদের কে সতর্ক করেছেন।
أَلَا يَعْلَمُ مَنْ خَلَقَ وَهُوَ اللَّطِيفُ الْخَبِيرُ ﴿14﴾ ( الملك : 14)
অর্থ: তিনি কি জানবেন না, যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি সূক্ষ্ম জ্ঞানী, সম্যক জ্ঞাত। [সূরা আল মুলক-১৪]
আপনার হৃদয়কে বুঝানোর জন্য আপনি অতীত ও বর্তমানের ইতিহাস দেখতে পারেন। দেখতে পাবেন, অতীতে কাফের সম্প্রদায় কি করেছে, বর্তমানে কি করছে এবং ভবিষ্যতে তারা কি না করবে? আল্লাহ তাআলা ইমাম ইবনুল কাইয়্যুমকে রহম করুন, যখন তিনি তার কিতাবে বিভিন্ন অধ্যায় করতে লাগলেন, তন্মধ্যে একটি অধ্যায় করলেন এভাবে :
فصل في سياق الآيات الدالة على غش أهل الذمة للمسلمين، وعداوتهم وخيانتهم وتمنيهم السوء لهم، معاداة الرب تعالى لمن أعزهم أو والاهم أوولاهم أمر المسلمين ( أحكام أهل الذمة ১/২৩৮)
অর্থ: এই অধ্যায় ইসলামী রাষ্ট্রে বসবাসরত অমুসলিম সম্প্রদায় কর্তৃক মুসলামানদের সাথে প্রতারণা, শত্রুতা, বিশ্বাসঘাতকতা, বিপদ কামনা, মুসলমানদের কাউকে আল্লাহ তাআলা কর্তৃক সম্মানিত অথবা তার বন্ধু অথবা মুসলমানদের রাষ্ট্রপ্রধান বানানোর কারণে আল্লাহ তাআলার সাথে দুশমনি সম্বলিত পবিত্র কোরআনের আয়াত প্রসঙ্গে। [আহকামু আহলিজ্জিমা ১ম খন্ড:২৩৮]
لَا يَتَّخِذِ الْمُؤْمِنُونَ الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاءَ مِنْ دُونِ الْمُؤْمِنِينَ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ فَلَيْسَ مِنَ اللَّهِ فِي شَيْءٍ إِلَّا أَنْ تَتَّقُوا مِنْهُمْ تُقَاةً وَيُحَذِّرُكُمُ اللَّهُ نَفْسَهُ وَإِلَى اللَّهِ الْمَصِيرُ ﴿28﴾ ( آل عمران : ২৮).
মুমিনগণ যেন অন্য মুমিন ছেড়ে কাফেরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যারা এরূপ করবে আল্লাহর সাথে তাদের কোন সম্পর্ক থাকবে না। তবে যদি তোমরা তাদের পক্ষ থেকে কোন অনিষ্টের আশঙ্কা কর, তবে তাদের সাথে সাবধানতার সাথে থাকবে। আল্লাহ তাআলা, তার সম্পর্কে তোমাদের সর্তক করেছেন এবং সবাইকে তার কাছেই ফিরে যেতে হবে। [সূরা : আল ইমরান - ২৮]
‘‘এই আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লাম ইবনুল কাসীর রহ. বলেন, আল্লাহ তাআলা ঈমানদারদের নিষেধ করেছেন কাফেরদের পক্ষ সমর্থন করতে। তাদের ভালবাসতে, গোপনে তাদের কাছে বন্ধুত্বের বার্তা পাঠাতে। অত:পর আল্লাহ তাআলা এই বলে অঙ্গীকার করেছেন, যারা এইরূপ করবে, আল্লাহর সাথে তাদের কোন সম্পর্ক থাকবে না। অর্থাৎ যে ওয়ালা এবং বারার ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআ’লার হুকুম মান্য করেনা, আল্লাহ তাআলা তার কোন দায়ভার নিবেন না। আল্লাহ তাআলা বলেন—
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاءَ مِنْ دُونِ الْمُؤْمِنِينَ أَتُرِيدُونَ أَنْ تَجْعَلُوا لِلَّهِ عَلَيْكُمْ سُلْطَانًا مُبِينًا . ( النساء :144)
অর্থ: হে ঈমানদারগন! তোমরা মুমিনগন ব্যতীত কাফেরদেরকে বন্ধু বানিওনা। তোমরা কি এমনটি করে নিজের উপর আল্লাহ তাআলার প্রকাশ্য দলীল কায়েম করে দিবে? [সূরা আল নিসা-১৪৪]
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন—
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى أَوْلِيَاءَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ ﴿ألمائدة : 51﴾
অর্থ: হে মুমিনগণ! তোমরা ইহুদী ও খৃষ্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভূক্ত। [সূরা : আল মায়েদা- ৫১ ( ইবনু কাসীর ১ম খন্ড:৩৫৭)]
এটাই সত্য ও বাস্তবতা যার বিপরীত আজ অবধি লক্ষ্য করা যায়নি। যে কাফের সম্প্রদায় আমাদের শত্রু, আমাদের প্রতিপক্ষ, যা পবিত্র কোরআনের বহু আয়াত দ্বারা স্থির করা হয়েছে। আল্লাহ তাদের সম্পর্কে বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন—
إِنَّ الْكَافِرِينَ كَانُوا لَكُمْ عَدُوًّا مُبِينًا ﴿101﴾ ( النساء :101)
অর্থ: নিশ্চয় কাফের সম্প্রদায় তোমাদের জন্য প্রকাশ্য শত্রু। [সূরা : আন নিসা- ১০১]
আল্লাহ তাআলা বলেন—
لَا يَرْقُبُونَ فِي مُؤْمِنٍ إِلًّا وَلَا ذِمَّةً وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُعْتَدُونَ ﴿10﴾ ( التوبة :10)
অর্থ: তারা মর্যাদা দেয় না কোন মুসলমানের ক্ষেত্রে আত্মীয়তার আর না অঙ্গীকারের। আর তারাই সীমা লঙ্গনকারী। []
আল্লাহ তাআলা বলেন—
مَا يَوَدُّ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ وَلَا الْمُشْرِكِينَ أَنْ يُنَزَّلَ عَلَيْكُمْ مِنْ خَيْرٍ مِنْ رَبِّكُمْ ﴿105﴾ ( البقرة : 105)
অর্থ: আহলে কিতাব (ইহুদী ও খৃষ্টান) ও মুশরিকদের মধ্যে যারা কাফের তাদের মন:পুত নয় যে, তোমাদের পালনককর্তার পক্ষ থেকে তোমাদের প্রতি কোন কল্যাণ অবতীর্ণ হোক। [সূরা আল বাক্বারা-১০৫]
আল্লাহ বলেন—
وَدَّ كَثِيرٌ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ لَوْ يَرُدُّونَكُمْ مِنْ بَعْدِ إِيمَانِكُمْ كُفَّارًا حَسَدًا مِنْ عِنْدِ أَنْفُسِهِمْ مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ الْحَقُّ ﴿109﴾ ( البقرة : 109)
অর্থ: আহলে কিতাব (ইহুদী ও খৃষ্টান) দের অনেকেই প্রতিহিংসাবশত: চায় যে, মুসলমান হবার পর তোমাদেরকে কোন রকমে কাফের বানিয়ে দেয়। তাদের কাছে সত্য প্রমাণিত হবার পর। [সূরা আল বাক্বারা- ১০৯]
এইভাবে আল্লাহ তাআলা কাফিরদের থেকে আমাদের কে সতর্ক করেছেন।
أَلَا يَعْلَمُ مَنْ خَلَقَ وَهُوَ اللَّطِيفُ الْخَبِيرُ ﴿14﴾ ( الملك : 14)
অর্থ: তিনি কি জানবেন না, যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি সূক্ষ্ম জ্ঞানী, সম্যক জ্ঞাত। [সূরা আল মুলক-১৪]
আপনার হৃদয়কে বুঝানোর জন্য আপনি অতীত ও বর্তমানের ইতিহাস দেখতে পারেন। দেখতে পাবেন, অতীতে কাফের সম্প্রদায় কি করেছে, বর্তমানে কি করছে এবং ভবিষ্যতে তারা কি না করবে? আল্লাহ তাআলা ইমাম ইবনুল কাইয়্যুমকে রহম করুন, যখন তিনি তার কিতাবে বিভিন্ন অধ্যায় করতে লাগলেন, তন্মধ্যে একটি অধ্যায় করলেন এভাবে :
فصل في سياق الآيات الدالة على غش أهل الذمة للمسلمين، وعداوتهم وخيانتهم وتمنيهم السوء لهم، معاداة الرب تعالى لمن أعزهم أو والاهم أوولاهم أمر المسلمين ( أحكام أهل الذمة ১/২৩৮)
অর্থ: এই অধ্যায় ইসলামী রাষ্ট্রে বসবাসরত অমুসলিম সম্প্রদায় কর্তৃক মুসলামানদের সাথে প্রতারণা, শত্রুতা, বিশ্বাসঘাতকতা, বিপদ কামনা, মুসলমানদের কাউকে আল্লাহ তাআলা কর্তৃক সম্মানিত অথবা তার বন্ধু অথবা মুসলমানদের রাষ্ট্রপ্রধান বানানোর কারণে আল্লাহ তাআলার সাথে দুশমনি সম্বলিত পবিত্র কোরআনের আয়াত প্রসঙ্গে। [আহকামু আহলিজ্জিমা ১ম খন্ড:২৩৮]
ওয়ালা এবং বারার মানদন্ডে মানুষ তিন প্রকার।
(এক) প্রকৃত ঈমানদার এবং সুযোগ্য ব্যক্তিবর্গ। আমাদের অবশ্যই কর্তব্য হচ্ছে তাদেরকে মুহাববত করা। তাদের সাথে সুসম্পর্ক রাখা।
(দুই) কাফির এবং মুনাফেক। আমাদের কর্তব্য হচ্ছে তাদেরকে অপছন্দ করা। তাদের থেকে নিরাপদ থাকা।
(তিন) দোষ-ত্রুটি মিশ্রিত। যাদের জীবনে ভালো এবং মন্দ উভয়টা বিরাজ করছে। আমাদের কর্তব্য হচ্ছে তাদের ঈমান তাক্বওয়া ও পরহেজগারী অনুপাতে তাদের মুহাববত করা। আবার গুনাহে পাপাচারে জড়িত হবার কারণে সে অনুপাতে তাদের অপছন্দ করা এবং বিরোধিতা করা।
(এক) প্রকৃত ঈমানদার এবং সুযোগ্য ব্যক্তিবর্গ। আমাদের অবশ্যই কর্তব্য হচ্ছে তাদেরকে মুহাববত করা। তাদের সাথে সুসম্পর্ক রাখা।
(দুই) কাফির এবং মুনাফেক। আমাদের কর্তব্য হচ্ছে তাদেরকে অপছন্দ করা। তাদের থেকে নিরাপদ থাকা।
(তিন) দোষ-ত্রুটি মিশ্রিত। যাদের জীবনে ভালো এবং মন্দ উভয়টা বিরাজ করছে। আমাদের কর্তব্য হচ্ছে তাদের ঈমান তাক্বওয়া ও পরহেজগারী অনুপাতে তাদের মুহাববত করা। আবার গুনাহে পাপাচারে জড়িত হবার কারণে সে অনুপাতে তাদের অপছন্দ করা এবং বিরোধিতা করা।
কাফিরদের সাথে বন্ধুত্বের বিভিন্ন শাখা এবং রূপ রয়েছে। আল্লামা আব্দুল লতিফ বিন আব্দুর রহমান বিন হাসান এই প্রসঙ্গে বলেন, মুআলাত বা বন্ধুত্ব নামক কাজটি বিভিন্ন মানের হতে পারে।
(এক) বন্ধুত্বটি সমপূর্ণভাবে ইসলাম থেকে বাহির এবং স্বধর্মত্যাগকে অপরিহার্য করে দেয়।
(দুই) বন্ধুত্বটি মানের দিক দিয়ে প্রথমটির চেয়ে নিম্নে, যা দ্বারা হারাম কাজ এবং কবিরা গোনাহে জড়িয়ে পড়ে। [আল দুরারুস সুন্নিয়্যাহ:৭ম খন্ড:১৫৯]
কাফিরদের সাথে যে সব সম্পর্ক স্বধর্ম থেকে বাহির হওয়াকে অপরিহার্য করে দেয়।
(১) তন্মধ্যে মুশরিকদের সমর্থন করা এবং মুসলমানদের বিপক্ষে তাদের সহায়তা করা। যেমনটি আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ ( المائدة : 51)
অর্থ: তাদের সাথে যে বন্ধুত্ব করবে সে তাদেরই অর্ন্তভূক্ত হবে। [সূরা মায়েদা: ৫১]
(২) আরেকটি হলো কাফেরদের কাফের না বলা। তাদের কুফুরীর ব্যাপারে নিরব থাকা। অথবা সন্দিহান হওয়া। এবং তাদের মতামতকে সবল করা । [আশ-শিফা:২য় খন্ড-১০৭১]
(৩) এমনিভাবে কুফুরী করার কারণে কাফেরদেরকে মুহাববত করা। [আল ওয়ালা ওয়াল আদাউ ফিল ইসলাম:২৩১]
(৪) মুসলমানদের বিরুদ্ধে তাদের বিজয় কামনা করা। [আল ওয়ালা ওয়াল আদাউ ফিল ইসলাম:৬৮]
(এক) বন্ধুত্বটি সমপূর্ণভাবে ইসলাম থেকে বাহির এবং স্বধর্মত্যাগকে অপরিহার্য করে দেয়।
(দুই) বন্ধুত্বটি মানের দিক দিয়ে প্রথমটির চেয়ে নিম্নে, যা দ্বারা হারাম কাজ এবং কবিরা গোনাহে জড়িয়ে পড়ে। [আল দুরারুস সুন্নিয়্যাহ:৭ম খন্ড:১৫৯]
কাফিরদের সাথে যে সব সম্পর্ক স্বধর্ম থেকে বাহির হওয়াকে অপরিহার্য করে দেয়।
(১) তন্মধ্যে মুশরিকদের সমর্থন করা এবং মুসলমানদের বিপক্ষে তাদের সহায়তা করা। যেমনটি আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ ( المائدة : 51)
অর্থ: তাদের সাথে যে বন্ধুত্ব করবে সে তাদেরই অর্ন্তভূক্ত হবে। [সূরা মায়েদা: ৫১]
(২) আরেকটি হলো কাফেরদের কাফের না বলা। তাদের কুফুরীর ব্যাপারে নিরব থাকা। অথবা সন্দিহান হওয়া। এবং তাদের মতামতকে সবল করা । [আশ-শিফা:২য় খন্ড-১০৭১]
(৩) এমনিভাবে কুফুরী করার কারণে কাফেরদেরকে মুহাববত করা। [আল ওয়ালা ওয়াল আদাউ ফিল ইসলাম:২৩১]
(৪) মুসলমানদের বিরুদ্ধে তাদের বিজয় কামনা করা। [আল ওয়ালা ওয়াল আদাউ ফিল ইসলাম:৬৮]
এ নীতির উপর অবস্থানের উপকার হল:
(১) ঈমানের দৃঢ়তা অর্জন, দয়াময় করুনাময় আল্লাহর সন্তুষ্টি দ্বারা সাফল্য লাভ, এবং মহা প্রতাপশালী আল্লাহর অসন্তুষ্টি হতে মুক্তিলাভ করা। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেছেন-
تَرَى كَثِيرًا مِنْهُمْ يَتَوَلَّوْنَ الَّذِينَ كَفَرُوا لَبِئْسَ مَا قَدَّمَتْ لَهُمْ أَنْفُسُهُمْ أَنْ سَخِطَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ وَفِي الْعَذَابِ هُمْ خَالِدُونَ ﴿80﴾ وَلَوْ كَانُوا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالنَّبِيِّ وَمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِ مَا اتَّخَذُوهُمْ أَوْلِيَاءَ وَلَكِنَّ كَثِيرًا مِنْهُمْ فَاسِقُونَ ﴿81﴾. ( المائدة : 80-81)
আপনি তাদের অনেককে দেখবেন কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব করে। তারা নিজেদের জন্য যা পাঠিয়েছে, তা অবশ্যই মন্দ। তা এই যে, তাদের প্রতি আল্লাহ ক্রোধান্বিত হয়েছেন। এবং চিরকাল তারা শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। যদি তারা আল্লাহর প্রতি এবং রাসূলের প্রতি এবং রাসূলের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে বিশ্বাস স্থাপন করত, তবে কাফেরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করত না। কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকেই দুরাচার। [সূরা : আল মায়েদা-৮০-৮১]
(২) বিপদাপদ থেকে নিরাপত্তা লাভ।
وَالَّذِينَ كَفَرُوا بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ إِلَّا تَفْعَلُوهُ تَكُنْ فِتْنَةٌ فِي الْأَرْضِ وَفَسَادٌ كَبِيرٌ ( الأنفال : 73)
অর্থ: আর যারা কুফরী করেছে তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। তোমরা যদি (উপরোক্ত) বিধান কার্যকর না কর তবে পৃথিবীতে ফিৎনা ও মহাবিপর্যয় দেখা দিবে। [সূরা আনফাল : ৭৩]
আল্লামা ইবনু কাসীর রহ. এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন: অর্থাৎ মুশরিক থেকে তোমরা সকলে দূরে থাকবে। মুমিনদের বন্ধু বানাবে। না হয় মানুষের মধ্যে ফেৎনা বিস্তার করবে। আর তাহলো কাজ দূর্বোধ্য হওয়া এবং কাফিরদের সাথে মুমিনদের গোলমাল সৃষ্টি হওয়া। এতে করে মানুষের মধ্যে ফাসাদ অরাজগতা দীর্ঘ সময় অবস্থান করে। [ইবনু কাসির ২য় খন্ড: ৩১৬।]
(৩) দুনিয়াতে সচ্ছলতা সমৃদ্ধি অর্জন ও উভয় জগতে সম্মানজনক অবস্থান লাভ।
জনৈক বিদ্ধান বলেন- আল্লাহ তাআলা ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম সম্পর্কে যে বর্ননা দিয়েছেন তাতে একটু চিন্তা করুন। আল্লাহ বলেন-
فَلَمَّا اعْتَزَلَهُمْ وَمَا يَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ وَهَبْنَا لَهُ إِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ وَكُلًّا جَعَلْنَا نَبِيًّا ﴿49﴾ وَوَهَبْنَا لَهُمْ مِنْ رَحْمَتِنَا وَجَعَلْنَا لَهُمْ لِسَانَ صِدْقٍ عَلِيًّا ﴿50﴾. ( مريم :49-50)
অর্থঃ অতঃপর তিনি যখন তাদেরকে এবং তারা আল্লাহ ব্যতীত যাদের এবাদত করত, তাদের সবাইকে পরিত্যাগ করলেন, তখন আমি তাকে দান করলাম ইসহাক ও ইয়াকুব এবং প্রত্যেককে নবী করলাম। আমি তাদেরকে দান করলাম আমার অনুগ্রহ এবং তাদেরকে দিলাম সমুচ্চ সু-খ্যাতি। [সূরা মারয়াম : ৪৯-৫০]
এতে প্রতীয়মান হয় যে, কাফের থেকে দূরে থাকা সকল সচ্ছলতা ও সম্মানের কারণ। তিনি আরো বললেন, জেনে রাখুন আল্লাহর শত্রুদের থেকে দূরে থাকা, তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করার মধ্যেই দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতা।
এটা আল্লাহর বাণী—
وَلَا تَرْكَنُوا إِلَى الَّذِينَ ظَلَمُوا فَتَمَسَّكُمُ النَّارُ وَمَا لَكُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ مِنْ أَوْلِيَاءَ ثُمَّ لَا تُنْصَرُونَ . ( هود :১১৩) أضواء البيان للشنقيطي : ২/৪৮৫
‘আর তোমরা জালেমদের প্রতি ঝুঁকে পড়ো না, অন্যথায় তোমাদের দোযখের আগুন স্পর্ষ করবে, আর আল্লাহ ছাড়া তোমাদের কেউ সহায় হবে না, অতঃপর তোমাদের কোন সাহায্যও করা হবে না। [সূরা হুদ : ১১৩]
এটা সুস্পষ্ট উম্মতের যে সকল মহান ব্যক্তিবর্গ কথায় ও কাজে এই বিষয়টি বাস্তবায়ন করেছেন, আজো আমরা তাদের জন্য দোয়া করি, তাদেরকে ভালো ভাবে স্মরণ করি। এবং সারা জাহানে মানুষের আলোচনায় ভালো হিসাবেই আলোচিত হয়। আল্লাহর সাহায্য এবং পরিণতিতে তাদের বিজয় তো আছেই।
আমিরুল মোমিনীন আবু বকর রা. এর অবস্থানকে চিন্তা করুন। তিনি ধর্মত্যাগী ও জাকাত প্রদানে অস্বীকারকারীর বিরুদ্ধে যখন অবস্থান নিলেন আল্লাহ তাকে সাহায্য করলেন এবং তার এই পদক্ষেপের উসিলায় দ্বীনে ইসলামকে শক্তিশালী করলেন।
আহলুস সুন্নাহর ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহ. এর অবস্থান দেখুন: তিনি বেদআতী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা নিয়ে ছিলেন। তিনি তাদের সাথে তেল মাখামাখি করেননি, আপোষ করেননি, ও নিজ অবস্থান থেকে একটুও নড়েননি। আল্লাহ তাআলা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতকে বিজয় দান করেন। বাতিলকে পরাজিত করেন।
মহাবীর সালাহুদ্দীন আইয়্যুবীর অবস্থান লক্ষ করুন। তিনি মুসলমান জাতির এই ঐতিহ্য প্রতিষ্ঠার জন্যই ক্রসেডারদের বিরুদ্ধে লড়াই করেন। আল্লাহ তাআলা তাকে বিজয় দান করেন এবং কাফেরদের ধ্বংস করেন। এ রকম উদাহরণ অনেক পাওয়া যাবে।
(১) ঈমানের দৃঢ়তা অর্জন, দয়াময় করুনাময় আল্লাহর সন্তুষ্টি দ্বারা সাফল্য লাভ, এবং মহা প্রতাপশালী আল্লাহর অসন্তুষ্টি হতে মুক্তিলাভ করা। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেছেন-
تَرَى كَثِيرًا مِنْهُمْ يَتَوَلَّوْنَ الَّذِينَ كَفَرُوا لَبِئْسَ مَا قَدَّمَتْ لَهُمْ أَنْفُسُهُمْ أَنْ سَخِطَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ وَفِي الْعَذَابِ هُمْ خَالِدُونَ ﴿80﴾ وَلَوْ كَانُوا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالنَّبِيِّ وَمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِ مَا اتَّخَذُوهُمْ أَوْلِيَاءَ وَلَكِنَّ كَثِيرًا مِنْهُمْ فَاسِقُونَ ﴿81﴾. ( المائدة : 80-81)
আপনি তাদের অনেককে দেখবেন কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব করে। তারা নিজেদের জন্য যা পাঠিয়েছে, তা অবশ্যই মন্দ। তা এই যে, তাদের প্রতি আল্লাহ ক্রোধান্বিত হয়েছেন। এবং চিরকাল তারা শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। যদি তারা আল্লাহর প্রতি এবং রাসূলের প্রতি এবং রাসূলের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে বিশ্বাস স্থাপন করত, তবে কাফেরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করত না। কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকেই দুরাচার। [সূরা : আল মায়েদা-৮০-৮১]
(২) বিপদাপদ থেকে নিরাপত্তা লাভ।
وَالَّذِينَ كَفَرُوا بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ إِلَّا تَفْعَلُوهُ تَكُنْ فِتْنَةٌ فِي الْأَرْضِ وَفَسَادٌ كَبِيرٌ ( الأنفال : 73)
অর্থ: আর যারা কুফরী করেছে তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। তোমরা যদি (উপরোক্ত) বিধান কার্যকর না কর তবে পৃথিবীতে ফিৎনা ও মহাবিপর্যয় দেখা দিবে। [সূরা আনফাল : ৭৩]
আল্লামা ইবনু কাসীর রহ. এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন: অর্থাৎ মুশরিক থেকে তোমরা সকলে দূরে থাকবে। মুমিনদের বন্ধু বানাবে। না হয় মানুষের মধ্যে ফেৎনা বিস্তার করবে। আর তাহলো কাজ দূর্বোধ্য হওয়া এবং কাফিরদের সাথে মুমিনদের গোলমাল সৃষ্টি হওয়া। এতে করে মানুষের মধ্যে ফাসাদ অরাজগতা দীর্ঘ সময় অবস্থান করে। [ইবনু কাসির ২য় খন্ড: ৩১৬।]
(৩) দুনিয়াতে সচ্ছলতা সমৃদ্ধি অর্জন ও উভয় জগতে সম্মানজনক অবস্থান লাভ।
জনৈক বিদ্ধান বলেন- আল্লাহ তাআলা ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম সম্পর্কে যে বর্ননা দিয়েছেন তাতে একটু চিন্তা করুন। আল্লাহ বলেন-
فَلَمَّا اعْتَزَلَهُمْ وَمَا يَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ وَهَبْنَا لَهُ إِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ وَكُلًّا جَعَلْنَا نَبِيًّا ﴿49﴾ وَوَهَبْنَا لَهُمْ مِنْ رَحْمَتِنَا وَجَعَلْنَا لَهُمْ لِسَانَ صِدْقٍ عَلِيًّا ﴿50﴾. ( مريم :49-50)
অর্থঃ অতঃপর তিনি যখন তাদেরকে এবং তারা আল্লাহ ব্যতীত যাদের এবাদত করত, তাদের সবাইকে পরিত্যাগ করলেন, তখন আমি তাকে দান করলাম ইসহাক ও ইয়াকুব এবং প্রত্যেককে নবী করলাম। আমি তাদেরকে দান করলাম আমার অনুগ্রহ এবং তাদেরকে দিলাম সমুচ্চ সু-খ্যাতি। [সূরা মারয়াম : ৪৯-৫০]
এতে প্রতীয়মান হয় যে, কাফের থেকে দূরে থাকা সকল সচ্ছলতা ও সম্মানের কারণ। তিনি আরো বললেন, জেনে রাখুন আল্লাহর শত্রুদের থেকে দূরে থাকা, তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করার মধ্যেই দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতা।
এটা আল্লাহর বাণী—
وَلَا تَرْكَنُوا إِلَى الَّذِينَ ظَلَمُوا فَتَمَسَّكُمُ النَّارُ وَمَا لَكُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ مِنْ أَوْلِيَاءَ ثُمَّ لَا تُنْصَرُونَ . ( هود :১১৩) أضواء البيان للشنقيطي : ২/৪৮৫
‘আর তোমরা জালেমদের প্রতি ঝুঁকে পড়ো না, অন্যথায় তোমাদের দোযখের আগুন স্পর্ষ করবে, আর আল্লাহ ছাড়া তোমাদের কেউ সহায় হবে না, অতঃপর তোমাদের কোন সাহায্যও করা হবে না। [সূরা হুদ : ১১৩]
এটা সুস্পষ্ট উম্মতের যে সকল মহান ব্যক্তিবর্গ কথায় ও কাজে এই বিষয়টি বাস্তবায়ন করেছেন, আজো আমরা তাদের জন্য দোয়া করি, তাদেরকে ভালো ভাবে স্মরণ করি। এবং সারা জাহানে মানুষের আলোচনায় ভালো হিসাবেই আলোচিত হয়। আল্লাহর সাহায্য এবং পরিণতিতে তাদের বিজয় তো আছেই।
আমিরুল মোমিনীন আবু বকর রা. এর অবস্থানকে চিন্তা করুন। তিনি ধর্মত্যাগী ও জাকাত প্রদানে অস্বীকারকারীর বিরুদ্ধে যখন অবস্থান নিলেন আল্লাহ তাকে সাহায্য করলেন এবং তার এই পদক্ষেপের উসিলায় দ্বীনে ইসলামকে শক্তিশালী করলেন।
আহলুস সুন্নাহর ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহ. এর অবস্থান দেখুন: তিনি বেদআতী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা নিয়ে ছিলেন। তিনি তাদের সাথে তেল মাখামাখি করেননি, আপোষ করেননি, ও নিজ অবস্থান থেকে একটুও নড়েননি। আল্লাহ তাআলা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতকে বিজয় দান করেন। বাতিলকে পরাজিত করেন।
মহাবীর সালাহুদ্দীন আইয়্যুবীর অবস্থান লক্ষ করুন। তিনি মুসলমান জাতির এই ঐতিহ্য প্রতিষ্ঠার জন্যই ক্রসেডারদের বিরুদ্ধে লড়াই করেন। আল্লাহ তাআলা তাকে বিজয় দান করেন এবং কাফেরদের ধ্বংস করেন। এ রকম উদাহরণ অনেক পাওয়া যাবে।
আল্লাহ তাআলা এই মহা ঐতিহ্য, এবং এই ক্ষেত্রে তার প্রেরিত নবী-রাসূলগণ তার আদেশ কিভাবে কার্যকর করেছেন, তা মহাগ্রন্থ আল কোরআনে বিভিন্ন স্থানে উল্লেখ করেছেন। তন্মধ্যে আল্লাহর বাণী-
قُلْ إِنَّمَا هُوَ إِلَهٌ وَاحِدٌ وَإِنَّنِي بَرِيءٌ مِمَّا تُشْرِكُونَ ﴿19﴾ ( الانعام : 19)
‘আপনি বলে দিন তিনি একমাত্র উপাস্য। আমি অবশ্যই তোমাদের শিরক থেকে মু্ক্ত। [সূরা আল আনআম-১৯]
ইব্রাহিম আ: সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন:
قَالَ يَا قَوْمِ إِنِّي بَرِيءٌ مِمَّا تُشْرِكُونَ ﴿78﴾ الأنعام : ৭৮)
‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা যে সব বিষয়কে শিরক কর, আমি ঐ সব থেকে মুক্ত। [সূরা আল আনআম:৭৮]
قَدْ كَانَتْ لَكُمْ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ فِي إِبْرَاهِيمَ وَالَّذِينَ مَعَهُ إِذْ قَالُوا لِقَوْمِهِمْ إِنَّا بُرَآَءُ مِنْكُمْ وَمِمَّا تَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ كَفَرْنَا بِكُمْ وَبَدَا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةُ وَالْبَغْضَاءُ أَبَدًا حَتَّى تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَحْدَهُ إِلَّا قَوْلَ إِبْرَاهِيمَ لِأَبِيهِ لَأَسْتَغْفِرَنَّ لَكَ وَمَا أَمْلِكُ لَكَ مِنَ اللَّهِ مِنْ شَيْءٍ رَبَّنَا عَلَيْكَ تَوَكَّلْنَا وَإِلَيْكَ أَنَبْنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ ﴿4﴾. ( الممتحنة : 4)
‘তোমাদের জন্য ইব্রাহিম এবং তার অনুসারীদের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ; তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিলঃ তোমাদের সাথে এবং তোমরা আল্লাহ তাআলার পরিবর্তে যার এবাদত কর, তার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদেরকে মানিনা। তোমাদের ও আমাদের মধ্যে সৃষ্টি হল শত্রুতা ও বিদ্বেষ চিরকালের জন্য, যদি না তোমরা এক আল্লাহ তাআলার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর। তবে ব্যতিক্রম তার পিতার প্রতি ইব্রাহিম এর উক্তিঃ আমি নিশ্চয়ই তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করব এবং তোমার ব্যাপারে আমি আল্লাহর নিকট কোন অধিকার রাখি না। হে আমাদের পালনকর্তা! আমারা তো আপনারই উপর নির্ভর করেছি। আপনারই অভিমুখী হয়েছি এবং প্রত্যাবর্তন তো আপনারই নিকট। [সূরা আল মুমতাহিনা- ৪]
অতএব মুসলমানদের জন্য ইব্রাহিমের মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে। তা হলো, আল্লাহ তাআলার সাথে এবং তার মুমিন বান্দাদের সাথে বন্ধুত্ব সৃষ্টি আর কাফের ও মুশরিকদের প্রত্যাখ্যান ক্ষেত্রে। শুধু মাত্র একটি বিষয় ব্যতীত, আর তা হল ইব্রাহিম আ: তার কাফের পিতার জন্য আল্লাহ তাআলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা। এক্ষেত্রে তার অনুসরণ করা হবে না। অন্য আয়াতে ইব্রাহিম আ: তার পিতার জন্য যে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন সে সম্পর্কে আল্লাহ বলেন-
وَمَا كَانَ اسْتِغْفَارُ إِبْرَاهِيمَ لِأَبِيهِ إِلَّا عَنْ مَوْعِدَةٍ وَعَدَهَا إِيَّاهُ فَلَمَّا تَبَيَّنَ لَهُ أَنَّهُ عَدُوٌّ لِلَّهِ تَبَرَّأَ مِنْهُ إِنَّ إِبْرَاهِيمَ لَأَوَّاهٌ حَلِيمٌ . ( التوبة : 114)
অর্থ: আর ইব্রাহিম কর্তৃক স্বীয় পিতার মাগফেরাত কামনা ছিল কেবল সেই প্রতিশ্রুতির কারণে, যা তিনি তার সাথে করেছিলেন। অত:পর যখন তার কাছে এ কথা প্রকাশ পেল যে, সে আল্লাহ তাআলার শত্রু, তখন তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে নিলেন। নি:সন্দেহে ইব্রাহিম ছিলেন বড় কোমল হৃদয়, সহনশীল। [সূরা আত তাওবাহ-১৪৪]
এ আয়াত দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহর নবী ইব্রাহিম আ. আল-ওয়ালা এবং আল-বারাকে খুবই গুরুত্বের সাথে বাস্তবায়ন করেছেন। এমনকি যখন তার নিকট পরিষ্কার হল যে তার পিতা আল্লাহ তাআলার শত্রু তৎক্ষনাত তিনি তার সাথে সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দিলেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন—
أَمْ يَقُولُونَ افْتَرَاهُ قُلْ إِنِ افْتَرَيْتُهُ فَعَلَيَّ إِجْرَامِي وَأَنَا بَرِيءٌ مِمَّا تُجْرِمُونَ ﴿35﴾ ( هود : 35)
‘তারা কি বলে, আপনি কোরআন রচনা করে এনেছেন? আপনি বলে দিন আমি যদি রচনা করে এনে থাকি, তবে সে অপরাধ আমার উপর বর্তাবে। আর তোমরা যে সব অপরাধ কর, তার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। [সূরা হুদ-৩৫]
প্রখ্যাত তাফসীরকারক আল্লামা শেখ সাআদী বলেন, এই আয়াত দ্বারা নূহ আ. ও উদ্দেশ্য হতে পারেন। এবং আমাদের নবী মুহাম্মদ সা. ও উদ্দেশ্য হতে পারেন। [তাইসিরুল কারিমির রাহমান- ৩৮১]
এমনিভাবে আল্লাহ তাআলা ফেরআউনকে মুসা আ. এর শত্রু বলে বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
أَنِ اقْذِفِيهِ فِي التَّابُوتِ فَاقْذِفِيهِ فِي الْيَمِّ فَلْيُلْقِهِ الْيَمُّ بِالسَّاحِلِ يَأْخُذْهُ عَدُوٌّ لِي وَعَدُوٌّ لَهُ . ( طه : ৩৯)
‘যে তুমি মুসাকে সিন্দুকে রাখ, অত:পর তা দরিয়ায় ভাসিয়ে দাও। অত:পর দরিয়া তাকে তীরে ঠেলে দিবে। তাকে আমার শত্রু ও তার শত্রু উঠিয়ে নিবে। [সূরা ত্বোহা-৩৯]
এরকমই ছিল পূর্বেকার নবী রাসূল আ. দের বৈশিষ্ট। আল্লাহ তাআলা বলেন,
أُولَئِكَ الَّذِينَ هَدَى اللَّهُ فَبِهُدَاهُمُ اقْتَدِهِ ﴿90﴾ ( الانعام : ৯০)
এরা এমন ছিল যাদেরকে আল্লাহ তাআলা পথ প্রদর্শন করেছিলেন। অতএব আপনিও তাদের পথ অনুসরন করুন। [সূরা আল আনআম-৯০]
এমনিভাবে আল-ওয়ালা এবং আল-বারা বাস্তবায়নে মুহাম্মদ সা. এর গৌরবময় জীবনীতে বিস্ময়কর দৃষ্টান্তের সমাবেশ ঘটেছিল। আল্লাহ তাআলা বলেন,
مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ وَالَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ ( الفتح : ২৯)
অর্থ: মুহাম্মদ আল্লাহ তাআলার রাসূল এবং তার সহচরগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর, নিজেদের মধ্যে পরষ্পর সহানুভুতিশীল। [সূরা আল ফাতহ-২৯]
তিনি ছিলেন, অনুকম্পার নবী, বীরত্বের নবী। হ্যাঁ মোমেনদের সাথে তার বন্ধুত্বের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন,
لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مِنْ أَنْفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُمْ بِالْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌ رَحِيمٌ ﴿128﴾ التوبة : 128)
‘তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রাসূল। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মোমেনদের প্রতি স্নেহশীল, দয়াময়। [সূরা : আত তাওবা-১২৮]
জারীর বিন আব্দুল্লাহ বাজালী রা. বলেন, আমরা সকাল বেলা রাসূল সা. এর নিকট অবস্থান করেছিলাম। ইতিমধ্যে নগ্ন পা, প্রায় উলঙ্গ এবং গলায় তলোয়ার ঝুলিয়ে মুযার গোত্রের সকল লোক অথবা বেশীর ভাগ নবী সা. এর কাছে উপস্থিত হলেন। নবীজী তাদের মধ্যে অভাব অনটন লক্ষ্য করে অস্থির হয়ে গেলেন। ভিতরে প্রবেশ করলেন, আবার বের হলেন। এর মধ্যে সালাতের সময় হলে বিলাল রা. কে আযানের আদেশ দিলেন। এবং সালাত কায়েম করে সাহাবাদের উদ্দেশ্যে এই মর্মে ভাষণ দিলেন, ‘হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর। যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গিনীকে সৃষ্টি করেছেন। আর বিস্তার করেছেন তাদের দুজন থেকে অগনিত পুরুষ ও নারী। আর আল্লাহকে ভয় কর, যার নামে তোমরা একে অপরের নিকট আবেদন করে থাক এবং আত্মীয় স্বজনদের ব্যাপারে সর্তকতা অবলম্বন কর। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে সচেতন রয়েছেন। মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত আগামীকালের জন্য সে কি প্রেরণ করে তা চিন্তা করা। আল্লাহ তাআলা কে ভয় করতে থাক। তোমরা যা কর আল্লাহ তাআলা সে সম্পর্কে খবর রাখেন। কোন ব্যক্তি দিনার, কোন ব্যক্তি দিরহাম, কেহ কাপড় কেহ গম কেহ খেজুর দান করলেন। নবী সা. বললেন, খেজুরের অংশ বিশেষ হলেও দান কর। বর্ণনাকারী বলেন, জনৈক আনসারী সাহাবীও খাদ্যের এক স্ত্তপ যা বহন করতে তার খুব কষ্ট হচ্ছিল, নিয়ে হাজির হলেন। অত:পর ধারাবাহিকভাবে মানুষ আসতেই থাকল। আমি খাদ্যের একটি এবং কাপড়ের একটি টিলা নবীজির সামনে দেখতে পেলাম। নবীজির মুখমন্ডল দেখলাম যেন স্বর্ণের পলকে আলোকিত হয়ে গেল। অত:পর রাসূল সা. বলেন, যে ব্যক্তি ইসলামে কোন ভাল রীতি প্রবর্তন করে, এই জন্য সে সাওয়াব পাবে। এবং তার পর তার এই রীতি অনুযায়ী কেহ কাজ করলে ঐ সাওয়াবও সে পাবে। তবে তাদের সাওয়াব হতে নূন্যতম কমানো হবে না। [মুসলিম -১০১৭]
আল্লামা নববী রাহ: বলেন, নবী সা. খুশি হবার কারণ হল, সাহাবাদের দ্রুত আল্লাহর অনুগত্য করা, আল্লাহর জন্য তাদের সম্পদ দান করা, আল্লাহর রাসূলের আদেশ পালন করা, আগত অভাবী লোকদের অভাব দূর করা, মুসলমানেরা একে অপরের প্রতি সহানুভূতি দেখানো এবং ভাল ও নেককাজে সহায়তা করা, মানুষের উচিত এই জাতীয় কোন কিছুতে দৃষ্টি পড়লে খুশি হওয়া, আনন্দ প্রকাশ করা, এবং মানুষের খুশি-আনন্দ উল্লেখিত কারণেই হওয়া উচিত। আর আল্লাহর শত্রুদের সাথে এবং নবী সা: এর দুশমনদের সাথে ঘৃণা প্রকাশ করা, এ ব্যাপারে আল্লাহ তার নবী এবং তার অনুসারী সাহাবীদের সম্পর্কে বলেন:
مَثَلُهُمْ فِي التَّوْرَاةِ وَمَثَلُهُمْ فِي الْإِنْجِيلِ كَزَرْعٍ أَخْرَجَ شَطْأَهُ فَآَزَرَهُ فَاسْتَغْلَظَ فَاسْتَوَى عَلَى سُوقِهِ يُعْجِبُ الزُّرَّاعَ لِيَغِيظَ بِهِمُ الْكُفَّارَ وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آَمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ مِنْهُمْ مَغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا . ( الفتح : 29)
‘তাওরাতে তাদের অবস্থা এরূপ এবং ইঞ্জিলে তাদের অবস্থা যেমন একটি চারা গাছ। যা থেকে নির্গত হয় কিশলয়, অত:পর তা শক্ত ও মজবুত হয়। এবং কান্ডের উপর দাড়ায় দৃঢ়ভাবে। চাষীকে আনন্দে অভিভূত করে। যাতে আল্লাহ তাদের দ্বারা কাফেরদের অর্ন্তজ^ালা সৃষ্টি করেন। তাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা ও মহা পুরষ্কারের ওয়াদা দিয়েছেন। [সূরা আল ফাতহ-২৯]
হুদায়বিয়ার সন্ধিতে রাসূল সা. যে সকল উট যবেহ করেছিলেন, তন্মধ্যে একটি ছিল আবু জাহেলের। উদ্দেশ্য ছিল তার মাধ্যমে মুশরিকদের অর্ন্তজ্বালা সৃষ্টি করা। আর এই উট বদর যুদ্ধে নবী সা. যুদ্ধলভ্য সম্পদ হিসাবে পেয়েছিলেন। [যাদুল মাআ’দ ১ম খন্ড:১৩৪]
এই ঘটনা হতে আল্লামা ইবনুল কাইয়্যুম উদ্ধাবন করেছেন, আল্লাহ তাআ’লার শত্রুদের সাথে ক্রোধান্বিত হওয়া উত্তম। [যাদুল মাআ’দ ২য় খন্ড-৩০১]
উদ্দেশ্য হল আমরা নবী সা. এর নির্দেশনায় ব্যাপক এবং সার্বিক দিকে দৃষ্টি দিব। তিনি শুধু রহমতের নবী, উদারতার নবী, হৃদ্যতার নবী বলে আমরা মনে করবো না, তেমনি তার বিপরিতও মনে করবো না। বরং তার পবিত্র জীবনী হতে আমরা উভয় দিক গ্রহণ করব। এবং আল-ওয়ালা এবং আল-বারাকে প্রকৃত রূপ দান করবো। অনুরূপভাবে এই নীতি আমাদের জীবনে এবং মানুষের মধ্যে বিশ্বাসে, কথায়, কাজে আমরা বাস্তবায়ন করবো। আর এটা সম্ভব হবে, আল্লাহর কিতাব এবং নবী সা. এর সুন্নাতের সাথে সম্পৃক্ত হবার মাধ্যমে। ইতিহাস অধ্যয়ন করা, হক্ব এবং বাতিলের সংঘাতের ইতিহাস পর্যালোচনা করা, এই উম্মতের পরিচয় এবং ধর্মকে নি:শেষ করার শত্রুদের প্রতারণা ও চক্রান্ত উদঘাটন করা। আল-ওয়ালা এবং আল-বারাকে প্রকৃত রূপদানে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। যেমন আল্লাহর পথে দান করা। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত বা হক্বপন্থি লোকদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলা। পৃথিবীর যে কোন প্রান্তেই হোক তাদের খোজ-খবর নেয়া।
সমাপ্ত
قُلْ إِنَّمَا هُوَ إِلَهٌ وَاحِدٌ وَإِنَّنِي بَرِيءٌ مِمَّا تُشْرِكُونَ ﴿19﴾ ( الانعام : 19)
‘আপনি বলে দিন তিনি একমাত্র উপাস্য। আমি অবশ্যই তোমাদের শিরক থেকে মু্ক্ত। [সূরা আল আনআম-১৯]
ইব্রাহিম আ: সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন:
قَالَ يَا قَوْمِ إِنِّي بَرِيءٌ مِمَّا تُشْرِكُونَ ﴿78﴾ الأنعام : ৭৮)
‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা যে সব বিষয়কে শিরক কর, আমি ঐ সব থেকে মুক্ত। [সূরা আল আনআম:৭৮]
قَدْ كَانَتْ لَكُمْ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ فِي إِبْرَاهِيمَ وَالَّذِينَ مَعَهُ إِذْ قَالُوا لِقَوْمِهِمْ إِنَّا بُرَآَءُ مِنْكُمْ وَمِمَّا تَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ كَفَرْنَا بِكُمْ وَبَدَا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةُ وَالْبَغْضَاءُ أَبَدًا حَتَّى تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَحْدَهُ إِلَّا قَوْلَ إِبْرَاهِيمَ لِأَبِيهِ لَأَسْتَغْفِرَنَّ لَكَ وَمَا أَمْلِكُ لَكَ مِنَ اللَّهِ مِنْ شَيْءٍ رَبَّنَا عَلَيْكَ تَوَكَّلْنَا وَإِلَيْكَ أَنَبْنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ ﴿4﴾. ( الممتحنة : 4)
‘তোমাদের জন্য ইব্রাহিম এবং তার অনুসারীদের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ; তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিলঃ তোমাদের সাথে এবং তোমরা আল্লাহ তাআলার পরিবর্তে যার এবাদত কর, তার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদেরকে মানিনা। তোমাদের ও আমাদের মধ্যে সৃষ্টি হল শত্রুতা ও বিদ্বেষ চিরকালের জন্য, যদি না তোমরা এক আল্লাহ তাআলার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর। তবে ব্যতিক্রম তার পিতার প্রতি ইব্রাহিম এর উক্তিঃ আমি নিশ্চয়ই তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করব এবং তোমার ব্যাপারে আমি আল্লাহর নিকট কোন অধিকার রাখি না। হে আমাদের পালনকর্তা! আমারা তো আপনারই উপর নির্ভর করেছি। আপনারই অভিমুখী হয়েছি এবং প্রত্যাবর্তন তো আপনারই নিকট। [সূরা আল মুমতাহিনা- ৪]
অতএব মুসলমানদের জন্য ইব্রাহিমের মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে। তা হলো, আল্লাহ তাআলার সাথে এবং তার মুমিন বান্দাদের সাথে বন্ধুত্ব সৃষ্টি আর কাফের ও মুশরিকদের প্রত্যাখ্যান ক্ষেত্রে। শুধু মাত্র একটি বিষয় ব্যতীত, আর তা হল ইব্রাহিম আ: তার কাফের পিতার জন্য আল্লাহ তাআলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা। এক্ষেত্রে তার অনুসরণ করা হবে না। অন্য আয়াতে ইব্রাহিম আ: তার পিতার জন্য যে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন সে সম্পর্কে আল্লাহ বলেন-
وَمَا كَانَ اسْتِغْفَارُ إِبْرَاهِيمَ لِأَبِيهِ إِلَّا عَنْ مَوْعِدَةٍ وَعَدَهَا إِيَّاهُ فَلَمَّا تَبَيَّنَ لَهُ أَنَّهُ عَدُوٌّ لِلَّهِ تَبَرَّأَ مِنْهُ إِنَّ إِبْرَاهِيمَ لَأَوَّاهٌ حَلِيمٌ . ( التوبة : 114)
অর্থ: আর ইব্রাহিম কর্তৃক স্বীয় পিতার মাগফেরাত কামনা ছিল কেবল সেই প্রতিশ্রুতির কারণে, যা তিনি তার সাথে করেছিলেন। অত:পর যখন তার কাছে এ কথা প্রকাশ পেল যে, সে আল্লাহ তাআলার শত্রু, তখন তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে নিলেন। নি:সন্দেহে ইব্রাহিম ছিলেন বড় কোমল হৃদয়, সহনশীল। [সূরা আত তাওবাহ-১৪৪]
এ আয়াত দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহর নবী ইব্রাহিম আ. আল-ওয়ালা এবং আল-বারাকে খুবই গুরুত্বের সাথে বাস্তবায়ন করেছেন। এমনকি যখন তার নিকট পরিষ্কার হল যে তার পিতা আল্লাহ তাআলার শত্রু তৎক্ষনাত তিনি তার সাথে সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দিলেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন—
أَمْ يَقُولُونَ افْتَرَاهُ قُلْ إِنِ افْتَرَيْتُهُ فَعَلَيَّ إِجْرَامِي وَأَنَا بَرِيءٌ مِمَّا تُجْرِمُونَ ﴿35﴾ ( هود : 35)
‘তারা কি বলে, আপনি কোরআন রচনা করে এনেছেন? আপনি বলে দিন আমি যদি রচনা করে এনে থাকি, তবে সে অপরাধ আমার উপর বর্তাবে। আর তোমরা যে সব অপরাধ কর, তার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। [সূরা হুদ-৩৫]
প্রখ্যাত তাফসীরকারক আল্লামা শেখ সাআদী বলেন, এই আয়াত দ্বারা নূহ আ. ও উদ্দেশ্য হতে পারেন। এবং আমাদের নবী মুহাম্মদ সা. ও উদ্দেশ্য হতে পারেন। [তাইসিরুল কারিমির রাহমান- ৩৮১]
এমনিভাবে আল্লাহ তাআলা ফেরআউনকে মুসা আ. এর শত্রু বলে বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
أَنِ اقْذِفِيهِ فِي التَّابُوتِ فَاقْذِفِيهِ فِي الْيَمِّ فَلْيُلْقِهِ الْيَمُّ بِالسَّاحِلِ يَأْخُذْهُ عَدُوٌّ لِي وَعَدُوٌّ لَهُ . ( طه : ৩৯)
‘যে তুমি মুসাকে সিন্দুকে রাখ, অত:পর তা দরিয়ায় ভাসিয়ে দাও। অত:পর দরিয়া তাকে তীরে ঠেলে দিবে। তাকে আমার শত্রু ও তার শত্রু উঠিয়ে নিবে। [সূরা ত্বোহা-৩৯]
এরকমই ছিল পূর্বেকার নবী রাসূল আ. দের বৈশিষ্ট। আল্লাহ তাআলা বলেন,
أُولَئِكَ الَّذِينَ هَدَى اللَّهُ فَبِهُدَاهُمُ اقْتَدِهِ ﴿90﴾ ( الانعام : ৯০)
এরা এমন ছিল যাদেরকে আল্লাহ তাআলা পথ প্রদর্শন করেছিলেন। অতএব আপনিও তাদের পথ অনুসরন করুন। [সূরা আল আনআম-৯০]
এমনিভাবে আল-ওয়ালা এবং আল-বারা বাস্তবায়নে মুহাম্মদ সা. এর গৌরবময় জীবনীতে বিস্ময়কর দৃষ্টান্তের সমাবেশ ঘটেছিল। আল্লাহ তাআলা বলেন,
مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ وَالَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ ( الفتح : ২৯)
অর্থ: মুহাম্মদ আল্লাহ তাআলার রাসূল এবং তার সহচরগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর, নিজেদের মধ্যে পরষ্পর সহানুভুতিশীল। [সূরা আল ফাতহ-২৯]
তিনি ছিলেন, অনুকম্পার নবী, বীরত্বের নবী। হ্যাঁ মোমেনদের সাথে তার বন্ধুত্বের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন,
لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مِنْ أَنْفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُمْ بِالْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌ رَحِيمٌ ﴿128﴾ التوبة : 128)
‘তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রাসূল। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মোমেনদের প্রতি স্নেহশীল, দয়াময়। [সূরা : আত তাওবা-১২৮]
জারীর বিন আব্দুল্লাহ বাজালী রা. বলেন, আমরা সকাল বেলা রাসূল সা. এর নিকট অবস্থান করেছিলাম। ইতিমধ্যে নগ্ন পা, প্রায় উলঙ্গ এবং গলায় তলোয়ার ঝুলিয়ে মুযার গোত্রের সকল লোক অথবা বেশীর ভাগ নবী সা. এর কাছে উপস্থিত হলেন। নবীজী তাদের মধ্যে অভাব অনটন লক্ষ্য করে অস্থির হয়ে গেলেন। ভিতরে প্রবেশ করলেন, আবার বের হলেন। এর মধ্যে সালাতের সময় হলে বিলাল রা. কে আযানের আদেশ দিলেন। এবং সালাত কায়েম করে সাহাবাদের উদ্দেশ্যে এই মর্মে ভাষণ দিলেন, ‘হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর। যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গিনীকে সৃষ্টি করেছেন। আর বিস্তার করেছেন তাদের দুজন থেকে অগনিত পুরুষ ও নারী। আর আল্লাহকে ভয় কর, যার নামে তোমরা একে অপরের নিকট আবেদন করে থাক এবং আত্মীয় স্বজনদের ব্যাপারে সর্তকতা অবলম্বন কর। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে সচেতন রয়েছেন। মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত আগামীকালের জন্য সে কি প্রেরণ করে তা চিন্তা করা। আল্লাহ তাআলা কে ভয় করতে থাক। তোমরা যা কর আল্লাহ তাআলা সে সম্পর্কে খবর রাখেন। কোন ব্যক্তি দিনার, কোন ব্যক্তি দিরহাম, কেহ কাপড় কেহ গম কেহ খেজুর দান করলেন। নবী সা. বললেন, খেজুরের অংশ বিশেষ হলেও দান কর। বর্ণনাকারী বলেন, জনৈক আনসারী সাহাবীও খাদ্যের এক স্ত্তপ যা বহন করতে তার খুব কষ্ট হচ্ছিল, নিয়ে হাজির হলেন। অত:পর ধারাবাহিকভাবে মানুষ আসতেই থাকল। আমি খাদ্যের একটি এবং কাপড়ের একটি টিলা নবীজির সামনে দেখতে পেলাম। নবীজির মুখমন্ডল দেখলাম যেন স্বর্ণের পলকে আলোকিত হয়ে গেল। অত:পর রাসূল সা. বলেন, যে ব্যক্তি ইসলামে কোন ভাল রীতি প্রবর্তন করে, এই জন্য সে সাওয়াব পাবে। এবং তার পর তার এই রীতি অনুযায়ী কেহ কাজ করলে ঐ সাওয়াবও সে পাবে। তবে তাদের সাওয়াব হতে নূন্যতম কমানো হবে না। [মুসলিম -১০১৭]
আল্লামা নববী রাহ: বলেন, নবী সা. খুশি হবার কারণ হল, সাহাবাদের দ্রুত আল্লাহর অনুগত্য করা, আল্লাহর জন্য তাদের সম্পদ দান করা, আল্লাহর রাসূলের আদেশ পালন করা, আগত অভাবী লোকদের অভাব দূর করা, মুসলমানেরা একে অপরের প্রতি সহানুভূতি দেখানো এবং ভাল ও নেককাজে সহায়তা করা, মানুষের উচিত এই জাতীয় কোন কিছুতে দৃষ্টি পড়লে খুশি হওয়া, আনন্দ প্রকাশ করা, এবং মানুষের খুশি-আনন্দ উল্লেখিত কারণেই হওয়া উচিত। আর আল্লাহর শত্রুদের সাথে এবং নবী সা: এর দুশমনদের সাথে ঘৃণা প্রকাশ করা, এ ব্যাপারে আল্লাহ তার নবী এবং তার অনুসারী সাহাবীদের সম্পর্কে বলেন:
مَثَلُهُمْ فِي التَّوْرَاةِ وَمَثَلُهُمْ فِي الْإِنْجِيلِ كَزَرْعٍ أَخْرَجَ شَطْأَهُ فَآَزَرَهُ فَاسْتَغْلَظَ فَاسْتَوَى عَلَى سُوقِهِ يُعْجِبُ الزُّرَّاعَ لِيَغِيظَ بِهِمُ الْكُفَّارَ وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آَمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ مِنْهُمْ مَغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا . ( الفتح : 29)
‘তাওরাতে তাদের অবস্থা এরূপ এবং ইঞ্জিলে তাদের অবস্থা যেমন একটি চারা গাছ। যা থেকে নির্গত হয় কিশলয়, অত:পর তা শক্ত ও মজবুত হয়। এবং কান্ডের উপর দাড়ায় দৃঢ়ভাবে। চাষীকে আনন্দে অভিভূত করে। যাতে আল্লাহ তাদের দ্বারা কাফেরদের অর্ন্তজ^ালা সৃষ্টি করেন। তাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা ও মহা পুরষ্কারের ওয়াদা দিয়েছেন। [সূরা আল ফাতহ-২৯]
হুদায়বিয়ার সন্ধিতে রাসূল সা. যে সকল উট যবেহ করেছিলেন, তন্মধ্যে একটি ছিল আবু জাহেলের। উদ্দেশ্য ছিল তার মাধ্যমে মুশরিকদের অর্ন্তজ্বালা সৃষ্টি করা। আর এই উট বদর যুদ্ধে নবী সা. যুদ্ধলভ্য সম্পদ হিসাবে পেয়েছিলেন। [যাদুল মাআ’দ ১ম খন্ড:১৩৪]
এই ঘটনা হতে আল্লামা ইবনুল কাইয়্যুম উদ্ধাবন করেছেন, আল্লাহ তাআ’লার শত্রুদের সাথে ক্রোধান্বিত হওয়া উত্তম। [যাদুল মাআ’দ ২য় খন্ড-৩০১]
উদ্দেশ্য হল আমরা নবী সা. এর নির্দেশনায় ব্যাপক এবং সার্বিক দিকে দৃষ্টি দিব। তিনি শুধু রহমতের নবী, উদারতার নবী, হৃদ্যতার নবী বলে আমরা মনে করবো না, তেমনি তার বিপরিতও মনে করবো না। বরং তার পবিত্র জীবনী হতে আমরা উভয় দিক গ্রহণ করব। এবং আল-ওয়ালা এবং আল-বারাকে প্রকৃত রূপ দান করবো। অনুরূপভাবে এই নীতি আমাদের জীবনে এবং মানুষের মধ্যে বিশ্বাসে, কথায়, কাজে আমরা বাস্তবায়ন করবো। আর এটা সম্ভব হবে, আল্লাহর কিতাব এবং নবী সা. এর সুন্নাতের সাথে সম্পৃক্ত হবার মাধ্যমে। ইতিহাস অধ্যয়ন করা, হক্ব এবং বাতিলের সংঘাতের ইতিহাস পর্যালোচনা করা, এই উম্মতের পরিচয় এবং ধর্মকে নি:শেষ করার শত্রুদের প্রতারণা ও চক্রান্ত উদঘাটন করা। আল-ওয়ালা এবং আল-বারাকে প্রকৃত রূপদানে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। যেমন আল্লাহর পথে দান করা। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত বা হক্বপন্থি লোকদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলা। পৃথিবীর যে কোন প্রান্তেই হোক তাদের খোজ-খবর নেয়া।
সমাপ্ত
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন