HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামী আকীদা বিষয়ক কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা

লেখকঃ শায়খ মুহাম্মাদ জামীল যাইনু

কিতাবের নাম/ লেখক/ অনুবাদক/ সম্পাদক
ইসলামী আকীদা বিষয়ক কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা

লেখক: শায়খ মুহাম্মাদ জামীল যাইনু

অনুবাদ: মুহাম্মাদ আব্দুর রব আফ্ফান

সম্পাদনা: সানাউল্লাহ নজির আহমদ

আমাদের সৃষ্টির উদ্দেশ্য
১। প্রশ্ন : আল্লাহ্ আমাদের কেন সৃষ্টি করেছেন?

১। উত্তর : আল্লাহ্ আমাদের সৃষ্টি করেছেন এ জন্য যে, আমরা তাঁর ইবাদত করব, তাঁর আনুহগত্য করব এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করব না। তিনি বলেন :

وَمَا خَلَقْتُ الَجِنَّ وَالإِنْسَ إِلاَّ لِيَعْبُدُوْنِ

‘‘আমি জ্বিন এবং মানব জাতি এজন্য সৃষ্টি করেছি যে, তারা শুধু আমার ইবাদত করবে।’’ সূরা আজ-জারিয়াত : ৫৬

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : ‘‘বান্দার উপর আল্লাহ্র হক হচ্ছে, তারা তাঁর ইবাদত করবে এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না।’’ (বুখারী ও মুসলিম)

২। প্রশ্ন : ইবাদত বলতে কি বুঝায়?

২। উত্তর : ইবাদত একটি ব্যাপক বিষয়। ইসলামি আকিদা, আল্লাহর পছন্দনীয় প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য কথা ও কাজ, সব কিছু এর অন্তর্ভুক্ত। যেমন : দোয়া, নামায, বিনয়, তাকওয়া ইত্যাদি।

আল্লাহ্ তাআলা বলেন :

قُلْ إِنَّ صَلاَتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَا وَمَمَاتِيْ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ

‘‘বলুন : আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও মরণ বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহ্র জন্য।’’ সূরা আল-আন‘আম : ৬২

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : আল্লাহ্ তাআলা বলেছেন :

‘‘আমি আমার বান্দার উপর যা ফরজ করেছি, তার চেয়ে অধিক প্রিয় কোনো জিনিসের মাধ্যমে বান্দা আমার সান্নিধ্য লাভ করতে পারেনি। আর আমার বান্দা নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকে।’’(হাদীসে ক্বদসী - বুখারী)

৩। প্রশ্ন : ইবাদত কত প্রকার ?

৩। উত্তর : ইবাদতের অনেক প্রকার রয়েছে। যেমন : দোয়া, আল্লাহর ভয়, তাঁর নিকট প্রত্যাশা, তাঁর

ওপর ভরসা, তাঁর নিকট আকাঙ্ক্ষা, তাঁর উদ্দেশ্যে জবেহ-মান্নত-রুকু-সিজদা-তাওয়াফ ও শপথ ইত্যাদি। এর ভেতর কোন একটি জিনিস আল্লাহর জন্য না হলে ইবাদত বলে গণ্য হবে না।

৪। প্রশ্ন : আল্লাহ্ রাসূললগণকে কেন প্রেরণ করেছেন ?

৪। উত্তর : আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের তাওহীদ ও ইবাদতের দিকে আহবান জানাতে রাসূলগণকে প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ্ তাআলা বলেন :

وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِيْ كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُوْلاً أَنِ اعْبُدُوْا اللهَ وَاجْتَنِبُواْ الطَّاغُوْتَ

‘‘আমি প্রত্যেক জাতির কাছে রাসূল পাঠিয়েছি এই জন্য যে, তোমরা আল্লাহ্র ইবাদত করবে এবং ‘ত্বাগুত’’ বর্জন করবে।’’ সূরা আন-নাহাল : ৩৬

ত্বাগুত : আল্লাহ্ ব্যতীত মানুষ সেচ্ছায়-সন্তুষ্টি চিত্তে যার ইবাদত করে, যাকে আহবান করে সেই ত্বাগুত।

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : ‘‘...নাবীগণ ভাই-ভাই...আর তাঁদের দ্বীন এক’’ অর্থাৎ প্রত্যেক নবী আল্লাহ্র একত্ববাদের আহ্বান জানিয়েছেন। (বুখারী - মুসলিম)

তাওহীদ বা একত্ববাদের প্রকার :
৫। প্রশ্ন : তাওহীদে রুবুবিয়্যাত বা আল্লাহর ‘রব’ সিফাতে তাওহীদ বলতে কি বুঝায়?

৫। উত্তর : আল্লাহর কার্যাবলীতে কাউকে অংশিদার না করা। অর্থাৎ একমাত্র তিনি সৃষ্টিকর্তা, রিযিক দাতা, জীবন-মৃত্যু ও উপকার-অপকারের মালিক ইত্যাদি।

আল্লাহ্ তাআলার বাণী :

اَلْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ

অর্থ : ‘‘সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহ্র জন্য।’’ সূরা আল-ফাতেহা : ২

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহকে সম্বোধন করে বলেন: ‘‘...তুমি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর প্রতিপালক...।’’ (বুখারী - মুসলিম)

৬। প্রশ্ন : ইবাদতে তাওহীদ বলতে কি বুঝায় ?

৬। উত্তর : ইবাদতের মালিক শুধু আল্লাহকেই জ্ঞান করা এবং সকল ইবাদত তাঁর জন্য উৎসর্গ করা। যেমন : দুআ, জবেহ্, মান্নত, বিনয়াবনত অবস্থা, প্রার্থনা, নামাজ, তাওয়াক্কুল ও ফয়সালা ইত্যাদির মালিক আল্লাহকে স্বীকার করা এবং শুধু তাঁর জন্যই সম্পাদন করা।

আল্লাহ্ তাআলা বলেন :

وَإِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَّاحِدٌ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيْمُ

অর্থ : ‘‘আর তোমাদের ইলাহ একজন-ই, তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই, তিনি দয়াময় অতি দয়ালু।’’ সূরা আল-বাকারাহ্ : ১৬৩

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : ‘‘সর্ব প্রথম তাদেরকে এ সাক্ষ্য দেয়ার প্রতি আহবান করবে যে, আল্লাহ্ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।’’ (বুখারী - মুসলিম)

বুখারীর অন্য বর্ণনায় রয়েছে : ‘‘আল্লাহ্র একত্ববাদের ঈমানের প্রতি তাদেরকে আহ্বান করবে।’’

৭। প্রশ্ন : রুবুবিয়্যাত ও ইবাদতের ক্ষেত্রে তাওহীদের লক্ষ্য কি?

৭। উত্তর : রুবুবিয়্যাত বা আল্লাহর সিফাতে ‘রব’ এবং ইবাদতে তাওহীদের লক্ষ্য হল, মানুষ আল্লাহর বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব অন্তরে ধারণ করত সকল ইবাদত তাঁর জন্য উৎসর্গ করবে। নিজ কর্ম ও আচরণে তাঁর অনুসরণ করবে। অন্তরে ঈমান সু-দৃঢ় রাখবে এবং পৃথিবীতে আল্লাহ্র বিধান প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করবে।

৮। প্রশ্ন : আল্লাহ্র নাম ও গুনাবলিতে তাওহীদ বলতে কি বুঝায় ?

৮। উত্তর : আল্লাহ্ তাআলা তাঁর কিতাবে নিজেকে যেসব গুণে গুণান্বিত করেছেন অথবা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশুদ্ধ হাদীসে তাঁর যেসব গুণাবলি বর্ণনা করেছেন তা প্রকৃত অর্থে, কোনরূপ অপব্যাখ্যা, তাঁর কোন সৃষ্টির সাথে সাদৃশ্য স্থাপন, তাঁর প্রকৃত গুণকে নিষ্ক্রিয় করা এবং কোন বিশেষ আকৃতি ধারনা করা ব্যতীত যথাযথ রূপেই বর্ণিত গুণাবলি তাঁর জন্য স্থির করা বুঝায়। যেমন : আরশে আসীন হওয়া, অবতরণ করা, হাত ইত্যাদি আল্লাহ্র পরিপূর্ণ শানের উপযোগী পর্যায়ে সাব্যস্ত কর বুঝা যায়। পবিত্র কুরআনের বাণী:

لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْبَصِيْرُ

‘‘কোন কিছুই তাঁর সাদৃশ্য নয়, তিনি সর্ব শ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’’ সূরা আশ-শুরা : ১১

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : ‘‘আমাদের রব পৃথিবীর আকাশে প্রত্যেক রাতে অবতরণ করেন।’’ (বুখারী - মুসলিম) পৃথিবীর আকাশে আল্লাহ্ নিজস্ব শান ও স্বাতন্ত্রতা বজায় রেখে অবতরণ করেন, যার সাথে অন্য কোন কিছুর তুলনা হয় না।

সব চেয়ে বড় পাপ
৯। প্রশ্ন : আল্লাহ্র নিকট সবচেয়ে বড় পাপ কি?

৯। উত্তর : শিরকে আকবার। আল্লাহ্ তাআলা লোকমানের উপদেশ উল্লেখ করে বলেন :

وَإِذْ قَالَ لُقْمَانُ لِابْنِهِ وَهُوَ يَعِظُهُ يَا بُنَيَّ لَا تُشْرِكْ بِاللَّهِ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ

‘‘আর যখন লোকমান তার পুত্রকে বলল, হে বৎস ! আল্লাহ্র সাথে শরীক করো না, নিশ্চয় শিরক বড় জুলুম।’’ সূরা লোকমান : ১৩

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হল, সবচেয়ে বড়পাপ কি ? তিনি বললেন : ‘‘যে আল্লাহ তোমাকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর সাথে শরীক করা।’’ (বুখারী - মুসলিম)

১০। প্রশ্ন : বড় শিরক কি ?

১০। উত্তর : যে কোন ইবাদত আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারো জন্য নিবেদন করা। যেমন : দুআ, জবেহ্ ইত্যাদি। আল্লাহ্ তাআলা বলেন :

وَلاَ تَدْعُ مِنْ دُوْنِ اللهِ مَا لاَ يَنْفَعُكَ وَلاَ يَضُرُّكَ فَإِنْ فَعَلْتَ فَإِنَّكَ إِذًا مِّنَ الظَّالِمِيْنَ

‘‘আর আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য এমন কাউকে ডাকবেনা যে তোমার উপকারও করে না, ক্ষতিও করে না, আর যদি তুমি তা কর তবে অবশ্যই জালিমদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবে।’’ অর্থাৎ মুশরিকদের মধ্যে গণ্য হবে। সূরা ইউনুস : ১০৬

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : ‘‘কবীরা গুনার ভেতর সবচেয়ে বড় গুনাহ্ হল আল্লাহ্র সাথে শরীক করা, পিতা-মাতার নাফারমানী করা এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া।’’ বুখারী

১১। প্রশ্ন : বড় শিরকের পরিণাম কি ?

১১। উত্তর : চিরস্থায়ী জাহান্নাম। আল্লাহ্ তাআলা বলেন :

إِنَّهُ مَنْ يُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأوَاهُ النَّارَ وَمَا لِلظَّالِمِيْنَ مِنْ أَنْصَارٍ

‘‘যে কেউ আল্লাহ্র সাথে শরীক করবে আল্লাহ্ তার ওপর জান্নাত অবশ্যই হারাম করবেন, এবং তার ঠিকানা জাহান্নাম, আর জালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই।’’ সূরা আল মায়েদা : ৭২

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্র সাথে কোন কিছু শরীক করে মৃত্যুবরণ করল সে জাহান্নামে যাবে।’’ মুসলিম

১২। প্রশ্ন : আল্লাহ্র সাথে শরীক করা অবস্থায় সৎকর্ম কাজে আসবে কি ?

১২। উত্তর : শিরকের সাথে সৎকর্ম কোন উপকারে আসবে না। কেননা আল্লাহ্ তাআলা বলেন :

وَلَوْ أَشْرَكُوْا لَحَبِطَ عَنْهُمَ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ

‘‘তারা যদি শিরক করত তবে তাদের সমস্তকৃতকর্ম নষ্ট হয়ে যেত।’’ সূরা আল-আন্আম : ৮৮

আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : ‘‘আল্লাহ্ তাআলা বলেছেন : ‘আমি শরীকদের শিরিক থেকে অনেক দূরে, যে ব্যক্তি তার কৃতকর্মে আমার সাথে অন্যকে শরীক করল আমি তাকে ও তার শিরিককে অগ্রাহ্য করি।’’ হাদীসে কুদসী – মুসিলম

বড় শিরকের প্রকারভেদ
১৩। প্রশ্ন : আমরা মৃত বা অনুপস্থিত ব্যক্তিদের নিকট ফরিয়াদ করব কি ?

১৩। উত্তর : না, আমরা মৃত বা অনুপস্থিত ব্যক্তির নিকট ফরিয়াদ করব না বরং আল্লাহ্র নিকট ফরিয়াদ করব। আল্লাহ্ তাআলা বলেন :

وَالَّذِينَ يَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ لَا يَخْلُقُونَ شَيْئًا وَهُمْ يُخْلَقُونَ ﴿20﴾ أَمْوَاتٌ غَيْرُ أَحْيَاءٍ وَمَا يَشْعُرُونَ أَيَّانَ يُبْعَثُونَ ﴿21﴾

‘‘তারা আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য যাদেরকে ডাকে তারা কিছুই সৃষ্টি করে না বরং তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়। তারা নিষ্প্রাণ, নির্জীব এবং কখন তাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে সে বিষয়ে তাদের কোন চেতনা নেই।’’ সূরা আন-নাহাল : ২০-২১

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : ‘‘হে চিরঞ্জীব, সবার ধারক ও বাহক, আমি তোমার রহ্মত ফরিয়াদ করি।’’ তিরমিজী

১৪। প্রশ্ন : আমরা কি জীবিত ব্যক্তির নিকট ফরিয়াদ করতে পারি ?

১৪। উত্তর : হ্যাঁ ! যেসব ক্ষেত্রে জীবিত ব্যক্তি সামর্থ রাখে সে সব ব্যাপারে সাহায্যের ফরিয়াদ করা যাবে। আল্লাহ্ তাআলা মুসা আলাইহিস্ সালামের ঘটনা বর্ণনা করে বলেন :

فَاسْتَغَاثَهُ الَّذِيْ مِنْ شِيْعَتِهِ عَلَى الَّذِيْ مِنْ عَدُوِّهِ فَوَكَزَهُ مُوْسَى فَقَضَى عَلَيْهِ

‘‘মুসার দলের লোকটি তার শত্রুর বিরুদ্ধে তাঁর সাহায্য কামনা করল, তখন মুসা তাকে ঘুষি মারল, যার ফলে সে মরে গেল।’’ সূরা আল-কাসাস : ১৫

১৫। প্রশ্ন : আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যের সাহায্য প্রার্থনা কি জায়েয ?

১৫। উত্তর : যে সব ক্ষেত্রে আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যের কোন ক্ষমতা নেই সে ক্ষেত্রে জায়েয নয়। আল্লাহ্ তাআলার বাণী :

إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِيْنَ

‘‘আমরা শুধু তোমারই ইবাদত করি, শুধু তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।’’ সূরা আল-ফাতেহা : ৫

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : ‘‘যখন প্রার্থনা করবে শুধু আল্লাহ্র নিকট করবে, যখন সাহায্য কামনা করবে আল্লাহ্র কাছেই করবে।’’ তিরমিজী

১৬। প্রশ্ন : আমরা জীবিত ব্যক্তির নিকট সাহায্য প্রার্থনা করব কি ?

১৬। উত্তর : হ্যাঁ, যে সব ক্ষেত্রে জীবিত লোক সামর্থ রাখে। যেমন : ঋণ বা কোন বস্ত্ত প্রার্থনা করা। আল্লাহ্ তাআলা বলেন:

وَتَعَاوَنُوْا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى

‘‘সৎকর্ম ও আল্লাহ্ ভীতিতে তোমরা পরস্পর সাহায্য করবে।’’ সূরা আল -মায়েদাহ্ : ২

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :

‘‘আল্লাহ্ ঐ বান্দার সাহায্যে আছেন যে বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্যে থাকে।’’ (মুসলিম)

কিন্তু রোগ মুক্তি, হিদায়াত, রুযী ও এ ধরনের অন্য কিছু আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যের নিকট চাওয়া যাবে না। কেননা জীবিত ব্যক্তিও এসব ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির মত অপারগ।

ইব্রাহীমের কথা বর্ণনা করে আল্লাহ্ তাআলা বলেন :

اَلَّذِيْ خَلَقَنِيْ فَهُوَ يَهْدِيْنِ وَالَّذِيْ هُوَ يُطْعِمُنِيْ وَيَسْقِيْنِ وَإِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِيْنِ

‘‘যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, তিনিই আমাকে পথ প্রদর্শন করেন। তিনিই আমাকে পানাহার করান এবং রোগাক্রান্ত হলে তিনিই আমাকে রোগ মুক্ত করেন।’’ সূরা আশ-শু‘আরা : ৭৮,৭৯,৮০

১৭। প্রশ্ন : আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যের উদ্দেশ্যে মান্নত করা জায়েয কি ?

১৭। উত্তর : আললাহ্ ব্যতীত অন্যের উদ্দেশ্যে মান্নত করা জায়েয নয়। আল্লাহ্ তাআলা ইমরানের স্ত্রীর কথা বর্ণনা করে বলেন :

رَبِّ إِنِّيْ نَذَرْتُ لَكَ مَا فِيْ بَطْنِيْ مُحَرَّراً

‘‘হে আমার প্রতিপালক ! আমার গর্ভে যা আছে তা একান্ত তোমার জন্য আমি উৎসর্গ করলাম।’’ সূরা আলে-ইমরান : ৩৫

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্র আনুগত্যের মান্নত করল সে যেন তাঁর আনুগত্য করে, আর যে আল্লাহ্র অবাধ্যতার মান্নত করল সে যেন তাঁর অবাধ্যতা না করে।’’ বুখারী

জাদুর বিধান
১৮। প্রশ্ন : জাদুর বিধান কি ?

১৮। উত্তর : জাদু কাবীরা গুনার অন্তর্ভুক্ত, কখনো কুফরী হতে পারে। আল্লাহ্ তাআলা বলেন :

وَلَكِنَّ الشَّيَاطِيْنَ كَفَرُوْا يُعَلِّمُوْنَ النَّاسَ السِّحْرَ

‘‘বরং শয়তানরাই কুফরী করেছিল, তারা মানুষকে জাদু শিক্ষা দিত।’’ সূরা আল-বাকারা : ১০২

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : ‘‘সাতটি ধ্বংসাত্নক পাপ থেকে দূরে থাক : আল্লাহ্র সাথে শিরক করা, জাদু...।’’ (মুসলিম)

জাদুকর কখনো মুশরিক, কখনো কাফের ও কখনো ফাসাদ সৃষ্টিকারী হয়ে থাকে। ইসলামি বিধান মোতাবেক তাকে তার কৃতকর্মের শাস্তি স্বরূপ হত্যা করা ওয়াজিব। জাদুকরের কৃতকর্ম নিম্নরূপ হয়ে থাকে : কোন কিছু নষ্টকরা, ইন্দ্রজাল বা ভেল্কিবাজি, দ্বীন থেকে পথভ্রষ্ট করা, পরস্পরে বিবাদ সৃষ্টি করা, কৃত অপরাধ গোপন করা, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা, কোন জীবন নষ্ট করা, অথবা জ্ঞান শুন্য করে ফেলা ইত্যাদি যা অনেক খারাপ ফলাফল বয়ে নিয়ে আসে।

১৯। প্রশ্ন : আমরা গায়েবের ব্যাপারে গণক এবং ভবিষ্যৎ বেত্তাদের খবর বিশ্বাস করব কি ?

১৯। উত্তর : আমরা তাদেরকে বিশ্বাস করব না, কেননা আল্লাহ্ তাআলা বলেন :

قُلْ لاَ يَعْلَمُ مَنْ فِيْ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ الْغَْبَ إِلاَّ اللهُ

‘‘বল, আল্লাহ্ ব্যতীত গায়েব বা অদৃশ্যের খবর আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে কেউ রাখে না।’’ সূরা আন-নামল : ৬৫

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : ‘‘যে ব্যক্তি গণক বা ভবিষ্যৎ বেত্তার নিকট আসল এবং তার কথা বিশ্বাস করল, সে নিশ্চয় মুহাম্মাদের উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তার সাথে কুফরী করল।’’ মুসনাদে আহ্মাদ

ছোট শিরক
২০। প্রশ্ন : ছোট শিরক বলতে কি বুঝায় ?

২০। উত্তর : ছোট শিরক কবিরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। তবে ছোট শিরিককারী জাহান্নামে চিরদিন থাকবে না। ছোট শিরিক কয়েক প্রকার। যেমন : ‘রিয়া’ বা লোক দেখানো আমল। আল্লাহ্ তাআলা বলেন :

فَمَنْ كَانَ يَرْجُوْ لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلاً صَالْحاً وَلاَ يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَداً

‘‘...সুতরাং যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে ও তার প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকে শরীক না করে।’’ সূরা আল-কাহ্ফ : ১১০

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : ‘‘আমি তোমাদের জন্য সবচেয়ে বেশী যে পাপের ভয় পাই তা হলো ছোট শিরিক তথা ‘রিয়া’। (রিয়া : যে সকল আমল আল্লাহর জন্য করা হয়, তা মানুষকে দেখানোর উদ্দেশ্যে সম্পাদন করা।) (মুসনাদে আহ্মাদ)

২১। প্রশ্ন : আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যের নামে শপথ করা জায়েয কি ?

২১। উত্তর : আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যের নামে শপথ করা জায়েয নয়। আল্লাহ্ তাআলা বলেন :

قُلْ بَلَى وَرَبِّيْ لَتُبْعَثُنَّ

‘‘বল, নিশ্চয় আমার রবের শপথ ! তোমরা অবশ্যই পুনরুত্থিত হবে।’’ সূরা তাগাবুন : ৭

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ‘‘যে আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যের নামে শপথ করল সে অবশ্যই শিরক করল।’’ মুসনাদে আহ্মাদ

তিনি আরো বলেন : ‘‘কারো যদি শপথ করার প্রয়োজন হয় সে যেন আল্লাহ্র নামে শপথ করে অথবা চুপ থাকে।’’

কিন্তু কেউ যদি কোন ওলীর ব্যাপারে এ বিশ্বাস পোষণ করে শপথ করে যে, তার ক্ষতি করার ক্ষমতা রয়েছে তবে তা বড় শিরকের অন্তুর্ভুক্ত। কারণ এতে প্রতিয়মান হয়, সে উক্ত ওলীর নামে মিথ্যা শপথে ভয় পায়, তাই সে তার নামে শপথ করছে।

২২। প্রশ্ন : আরোগ্য লাভের জন্য সুতা বা বালা ব্যবহার করা যায় কি ?

২২। উত্তর : আরোগ্যের জন্য সুতা বা বালা ব্যবহার করা যাবে না, কেননা আল্লাহ্ তাআলা বলেন:

وَإِنْ يَّمْسَسْكَ اللهُ بِضُرٍّ فَلاَ كَاشِفَ لَهُ إِلاَّ هُوَ

‘‘আর আল্লাহ্ যদি তোমাকে কোন কষ্ট দেন, তবে তিনি ব্যতীত তা মোচনকারী আর কেউ নেই, পক্ষান্তরে তিনি যদি তোমার কল্যাণ করেন, তবে তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।’’ সূরা আল আন্আম : ১৭

প্রখ্যাত সাহাবী হুজাইফা থেকে বর্ণিত, তিনি এক ব্যক্তিকে জ্বর থেকে বাঁচার জন্য হাতে সুতা পরিহিত অবস্থায় দেখেন, তখন উক্ত সুতা কেটে ফেলে আল্লাহ্র এই বাণী পড়েন :

وَمَا يُؤْمِنُ أَكْثَرُهُمْ بِاللهِ إِلاَّ وَهُمْ مُّشْرِكُوْنَ

‘‘তাদের অধিকাংশ আল্লাহ্কে বিশ্বাস করে, কিন্তু তাঁর সাথে শরীক করে।’’ সূরা ইউসুফ : ১০৬

২৩। প্রশ্ন : কুনজর থেকে বাঁচার জন্য পুঁতি, কড়ি বা এ ধরনের অন্য কোন বস্ত্ত ঝুলানো যায় কি?

২৩। উত্তর : কুনজর থেকে বাঁচার জন্য এগুলি ঝুলানো যাবে না, কেননা আল্লাহ্ তাআলা বলেন :

وَإِنْ يَّمْسَسْكَ اللهُ بَضُرٍّ فَلاَ كَاشِفَ لَهْ إِلاَّ هُوَ

‘‘আর আল্লাহ্ যদি তোমাকে কোন কষ্ট দেন, তবে তিনি ব্যতীত তা মোচনকারী আর কেউ নেই।’’ সূরা আন্আম : ১৭

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : ‘‘যে ব্যক্তি তাবীজ-কবচ ঝুলাল সে শিরক করল।’’ মুসনাদে আহ্মাদ

অসীলা ও তার প্রকারভেদ
২৪। প্রশ্ন: কিসের মাধ্যমে আল্লাহ্র অসীলা বা নৈকট্যের মাধ্যম গ্রহণ করা যায়?

২৪। উত্তর : অসীলা বা নৈকট্য গ্রহণের উপায় দুই ধরনের হয়ে থাকে, (১) বৈধ (২) অবৈধ।

(১) বৈধ ও পালনীয় অসীলা গ্রহণের উপায় হলো :

(ক) আল্লাহ্ তাআলার নাম ও গুনাবলির মাধ্যমে

(খ) সৎ কর্মের মাধ্যমে ও

(গ) জীবিত সৎ ব্যক্তিদের দুআর মাধ্যমে

আল্লাহ্ তাআলা বলেন :

وَلِلَّهِ الأَسْمَاءُ الْحُسْنَى فَادْعُوْهُ بِهَا

‘‘আল্লাহ্র জন্য রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম, অতএব তোমরা তাঁকে সেই সব নামেই ডাকবে।’’ সূরা আল আ‘রাফ : ১৮০

يَأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا اتَّقُوْا اللهَ وَابْتَغُوْا إِلَيْهِ الْوَسِيْلَةَ

‘‘হে মু‘মিনগণ! আল্লাহ্কে ভয় কর, তাঁর নৈকট্য লাভের উপায় অন্বেষণ কর।’’ আল-মায়িদাহ্ : ৩৫

(অর্থাৎ তাঁর আনুগত্য এবং তাঁর পছন্দনীয় কাজের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য লাভ কর।)

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহ্ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : ‘‘(হে আল্লাহ্ !) আমি তোমার নিকট ঐ সমস্ত নামের (অসীলায়) মাধ্যমে প্রার্থনা করি যে সমস্ত নামে তুমি নিজের নামকরন করেছ।’’ (মুসনাদে আহ্মাদ)

রাসূল এবং অলীদের প্রতি আল্লাহ্র ভালবাসার ওসীলা এবং রাসূল ও অলীদের প্রতি আমাদের ভালবাসার ওসীলা গ্রহণ জায়েয। কেননা তাদের ভালবাসাও সৎকর্মের অন্তর্ভুক্ত।

অতএব, আমরা এভাবে বলতে পারি : (হে আল্লাহ্ ! তোমার রাসূল ও অলীদের প্রতি ভালবাসার ওসীলায় আমাদেরকে সাহায্য কর এবং তোমার রাসূল ও অলীদের প্রতি তোমার ভালবাসার অসীলায় আমাদের রোগ মুক্ত কর।)’’

২। অবৈধ অসীলা গ্রহণের রূপ : মৃত ব্যক্তির নিকট প্রার্থনা, তাঁর নিকট প্রয়োজনীয় বস্ত্ত চাওয়া। যেমন বর্তমানে কতক মুসলিম দেশে তা রয়েছে, এটি বড় শিরকের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ্ তাআলা বলেন :

لاَ تَدْعُوْ مِنْ دُوْنِ اللهِ مَا لاَ يَنْفَعُكَ وَلاَ يَضُرُّكَ فَإِنْ فَعَلْتَ فَإِنَّكَ إِذًا مِنَ الظَّالِمِيْنَ

‘‘আর আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কাউকে ডাকবে না, যা তোমার উপকারও করে না, অপকারও করে না। যদি তা কর তবে তুমি অবশ্যই জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’’ সূরা ইউনুস : ১০৬ অর্থাৎ মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হবে।

পক্ষান্তরে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মর্যাদার অসীলা গ্রহণ করা। যেমন, কেউ বলল : ‘‘হে আল্লাহ, মুহাম্মাদের মর্যাদার ওসীলায় আমার রোগ মুক্ত কর।’’ এ ধরনের কথাতেও চিন্তার বিষয় রয়েছে। কারণ, সাহাবায়ে কেরাম কখনো এ ধরনের অসীলা করেননি। খলীফা ওমর রা. রাসূলের মৃত্যুর পর তাঁর ওসীলা গ্রহণ না করে তাঁর জীবিত চাচা আববাসের দোআর অসীলা গ্রহণ করেছেন। অতএব, অতএব কেউ যদি বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ্ কোন ব্যক্তির মধ্যস্থতার মুখাপেক্ষী, তবে উক্ত ওসীলা শিরকের পর্যায়ে যেতে পারে। যেমন : আমীর ও রাষ্ট্র প্রধান মধ্যস্থতার মুখাপেক্ষী। এটা প্রকৃত পক্ষে সৃষ্টিকর্তার সাথে সৃষ্টি জীবের সাদৃশ্য স্থাপন করার ন্যায়।

ইমাম আবু হানীফা বলেন : ‘‘আমি আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যের মাধ্যমে প্রার্থনা করা মাকরূহ মনে করি।’’ (দুররে মুখতার)

দুআ ও তার বিধান
২৫। প্রশ্ন : দুআ কবুল হওয়ার জন্য কোন সৃষ্টিজীবকে মাধ্যম করা কি জরূরী?

২৫। উত্তর : দুআর জন্য কোন সৃষ্টিজীবকে মাধ্যম করার প্রয়োজন নেই। আল্লাহ্ তাআলা বলেন :

وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِيْ عَنِّيْ فَإِنِّيْ قَرِيْبٌ

‘‘আমার বান্দাগণ যখন তোমাকে আমার সম্মন্ধে প্রশ্ন করে, আমি তো নিকটেই।’’ সূরা আল-বাকারা : ১৮৬

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহ্ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : ‘‘নিশ্চয় তোমরা নিকটতম সর্বশ্রোতাকে ডাকছ, যিনি তোমাদের সাথেই রয়েছেন।’’ (মুসলিম) অর্থাৎ তিনি তোমাদের সব কিছু শুনেন ও দেখেন।)

২৬। প্রশ্ন : জীবিত ব্যক্তির নিকটে প্রার্থনা জায়েয কি?

২৬। উত্তর : হ্যাঁ, প্রার্থনা মৃত ব্যক্তির নিকট নয়, জীবিত (উপস্থিত) ব্যক্তির নিকট জায়েয।

আল্লাহ্ তাআলা রাসূলের জীবদ্দশায় তাঁকে সম্মোধন করে বলেন:

وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِيْنِ وَالْمُؤْمِنَاتِ

‘‘আর ক্ষমা প্রার্থনা কর তোমার এবং মু‘মিন নর-নারীদের পাপের জন্য।’’ সূরা মুহাম্মাদ : ১৯

তিরমিজী বর্ণীত সহীহ্ হাদীসে এসেছে : ‘‘দৃষ্টি শক্তিহীন এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এসে বলল : আল্লাহ্র কাছে দুআ করেন যেন আল্লাহ্ আমাকে আরোগ্য দান করেন। তিনি বলেন : যদি তুমি চাও দুআ করব, আর যদি চাও ধৈর্যধারন কর, তবে তাই তোমার জন্য উত্তম।

২৭। প্রশ্ন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শাফাআত কার নিকট চাইতে হবে ?

২৭। উত্তর : রাসূলের শাফায়াত আল্লাহ্র নিকট চাইতে হবে। আল্লাহ্ তাআলা বলেন :

قَلْ لِلَّهِ الشَّفَاعَةُ جَمِيْعاً

‘‘বল, সকল সুপারিশ আল্লাহ্রই ইখতিয়ারে...’’ সূরা যুমার : ৪৪

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক সাহাবীকে শিক্ষাদান কল্পে বলেন, বল, ‘‘হে আল্লাহ, তাঁকে আমার সুপারিশকারী নিয়োগ কর।’’ অর্থাৎ রাসূলকে আমার সুপারিশকারী বানাও। (তিরমিজী: হাসান, সহীহ)

তিনি আরো বলেন : ‘‘আমি আমার উম্মতের জন্য কিয়ামত পর্যন্ত আমার সুপারিশের প্রার্থনা গোপন রেখেছি। আল্লাহ্র ইচ্ছায় কিয়ামত দিবসে এ সুপারিশ আমার উম্মতের প্রত্যেক ঐ ব্যক্তি প্রাপ্ত হবে, যে আল্লাহ্র সাথে কোন কিছু শরীক না করে মৃত্যুবরণ করল।’’ মুসলিম

২৮। প্রশ্ন : জীবিত ব্যক্তির নিকট কি সুপারিশ চাওয়া যাবে ?

২৮। উত্তর : জীবিত ব্যক্তির নিকট পার্থিব্য জগতের ব্যাপারে সুপারিশ চাওয়া যাবে। আল্লাহ্ তাআলা বলেন :

مَنْ يَّشْقَعْ شَفَاعَةً حَسَنَةُ يَكُنْ لَّهُ نَصِيْبٌ مِّنْهَا وَمَنْ يَّشْفَعْ شَفَاعَةً سَيِّئَةُ يَكُنْ لَّهُ كِفْلٌ مِّنْهَا

‘‘কেউ কোন ভাল কাজের সুপারিশ করলে তাতে তার অংশ থাকবে এবং কেউ কোন মন্দ কাজের সুপারিশ করলে তাতে তার অংশ থাকবে...।’’ সূরা আন-নিসা : ৮৫ (অর্থাৎ সে তার ভাল-মন্দ সুপারিশের জন্য প্রতিদান পাবে)

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহ্ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ‘‘সুপারিশ কর প্রতিদান পাবে।’’ আবু দাউদ

১০
সূফীবাদ ও তার ভয়াবহতা
২৯। প্রশ্ন : সূফী ত্বত্তের ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান কি?

২৯। উত্তর : সূফীবাদ রাসূল, সাহাবা ও তাবিয়ীদের যুগে ছিল না। পরবর্তী যুগে ইউনান তথা গ্রীক দর্শন আরবী ভাষায় অনুবাদ হওয়ার পর তা প্রকাশ পায়।

ইসলামের সাথে সূফীবাদের বহুক্ষেত্রে বিরোধ রয়েছে। যেমন :

১। আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যের নিকট প্রার্থনা : অধিকাংশ সূফীগণ আল্লাহ্ ব্যতীত মৃত ব্যক্তির নিকট প্রার্থনা করে, অথচ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহ্ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : ‘‘দুআই হলো ইবাদত।’’ (তিরমিজী) কারণ, আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যের নিকট প্রার্থনা করা বড় শিরকের অন্তর্ভুক্ত যা সমস্ত সৎকর্ম নষ্ট করে দেয়।

২। অধিকাংশ সূফীগণ বিশ্বাস করে যে, আল্ললাহ্ তাআলা স্বীয় স্বত্ত্বায় সর্বস্থানে বিরাজমান। অথচ তা কুরআন বিরোধী। ইরশাদ হচ্ছে :

اَلرَّحْمَنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى

‘‘দয়াময় ‘আরশে’ সমাসীন।’’ (তা-হা : ৫) (এর ব্যাখ্যায় বুখারীর ভাষ্য অনুযায়ী তিনি ওপরে ও উচ্চে অধিষ্টিত।)

৩। কতিপয় সূফীর বিশ্বাস, আল্লাহ্ তাআলা তাঁর সৃষ্টি জীবের ভিতরে অবতরণ করেন। যেমন ভ্রান্ত সূফী সম্রাট ইব্নে আরাবী -যার কবর সিরিয়ার দামেস্কে- বলেন :

‘‘বান্দাই তো রব আর রবই তো বান্দা। হায়! কিছুই বুঝিনা, কে আমল করার জন্য আদিষ্ট?’’

তাদের আরেক তাগুত বলে: ‘‘কুকুর হোক আর শুকর হোক, সেই তো আমাদের মা‘বুদ।’’

৪। অধিকাংশ সূফীর ধারনা যে আল্লাহ্ তাআলা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য দুনিয়া সৃষ্টি করেছেন। অথচ এটা কুরআন বিরোধী আক্বীদা। ইরশাদ হচ্ছে :

وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالإِنْسَ إِلاَّ لِيَعْبُدُوْنِ

‘‘আমি জ্বিন ও মানুষকে ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি।’’ সূরা আজ-জারিয়াত : ৫৬

অন্যত্র বলেন :

وَإِنَّ لَنَا لَلآخِرَةَ وَالأُوْلَى

‘‘আমি তো পরকাল ও ইহ্কালের মালিক।’’ সূরা আল-লাইল : ১৩

৫। অধিকাংশ সূফীর ধারণা আল্লাহ্ মুহাম্মাদকে স্বীয় নূর দ্বারা এবং মুহাম্মাদের নূর দ্বারা সব কিছু সৃষ্টি করেছেন, মুহাম্মাদই হচ্ছে আল্লাহ্র প্রথম সৃষ্টি। তাদের এ ধারণা কুরআন বিরোধী।

৬। সুফীদের ইসলাম বিরোধী আকীদার কতিপয় নমুনা। যেমন: অলীদের নামে মান্নত করা, ওলীদের কবরের চারিপাশে তওয়াফ করা, কবরের ওপর নির্মাণ কার্য করা, আল্লাহ্ ও রাসূল থেকে বর্ণিত হয়নি এমন বিশেষ পন্থায় জিকির করা, জিকরের সময় নাচা-নাচি, ধুমপান বা গাঁজা খাওয়া, তাবীজ-কবচ, জাদু, ভেল্কিবাজী, অন্যের মাল-সম্পদ নানা প্রতারনায় ভক্ষণ এবং তাদের উপর বিভিন্ন ছলনা, বাহানা করা প্রভৃতি অনেক ধরনের ভ্রামত আক্বীদা ও কার্যকলাপ দেখা যায় তাদের মধ্যে।

১১
আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের কথার ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান
৩০। প্রশ্ন : আমরা আল্লাহ্ এবং তার রাসূলের কথার ওপর কারো কোন কথাকে অগ্রাধিকার দেব কি?

৩০। উত্তর : আমরা আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলের কথার ওপর কারো কোন কথা অগ্রাধিকার দেব না। আল্লাহ্ তাআলা বলেন :

َيأَيُّهَا الَْذِيْنَ آمَنُوْا لاَ تُقَدِّمُوْا بَيْنَ يَدَيِ اللهِ وَرَسُوْلِهِ

‘‘হে মু‘মিনগণ! আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের সামনে তোমরা কোন বিষয়ে আগে বেড়ে যেও না।’’ সূরা আল-হুজুরাত : ১

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : ‘‘সৃষ্টিকর্তার অবাধ্যতায় কোন সৃষ্টিজীবের আনুগত্য চলবে না।’’ মুসনাদে আহ্মাদ

সাহাবী ইব্নে আববাস রা. বলেন : ‘‘আমি তাদেরকে দেখছি, তারা অতি সত্বর ধ্বংস হয়ে যাবে। আমি বলি ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন’, এর বিপরীতে তারা বলে, ‘আবু বকর-ওমর বলেছে!’’ মুসনাদে আহ্মাদ ও অন্যান্য কিতাব

৩১। প্রশ্ন : দ্বীনের ক্ষেত্রে মতবিরোধ হলে আমাদের করণীয় কি?

৩১। উত্তর : আমরা কুরআন ও সহীহ হাদীসের আশ্রয় গ্রহণ করব। আল্লাহ্ তাআলা বলেন :

فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِيْ شَيْءٍ فَرُدُّوْهَ إِلَى اللهِ وَالرَّسُوْلِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الآخِرَ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيْلاً

‘‘কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটলে তা আল্লাহ্ ও রাসূলের দিকে উপস্থাপিত কর, যদি তোমরা আল্লাহ্ ও কিয়ামত দিবসের ওপর বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর এটাই কল্যাণ কর এবং পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম।’’ সূরা আননিসা : ৫৯

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : ‘‘আমি তোমাদের মধ্যে দুটি বস্ত্তই রেখে গেলাম, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা এই দুটি বস্ত্তকে মজবুতভাবে ধরে থাকবে কোনক্রমেই পথভ্রষ্ট হবে না। আল্লাহ্র কিতাব আর আমার সুন্নাত।’’ হাদীসটি ইমাম মালেক বর্ণনা করেছেন এবং আল-বানী তাঁর সহীহ্ জামেতে সহীহ বলেছেন।

৩২। প্রশ্ন : কেউ যদি মনে করে তার প্রতি শরীয়তের আদেশ-নিষেধ রক্ষা করা জরুরী নয়, তবে তার বিধান কি ?

৩২। উত্তর : উক্ত ব্যক্তি কাফের, মুরতাদ এবং মিল্লাতে ইসলাম বহির্ভুত। কারণ, দাসত্ব একমাত্র আল্লাহ্র জন্য। যা কালেমায়ে শাহাদাতের স্বীকারোক্তির মাধ্যমে প্রমাণ হয়। তাই যতক্ষণ পর্যন্ত বাস্তব জগতে আল্লাহ্র পরিপূর্ণ ইবাদত না করা হবে ততক্ষণ তাঁর দাসত্ব প্রমাণ হবে না। যার ভেতর রয়েছে ইসলামের মৌলিক আকীদা, ইবাদতের নিদর্শনসমূহ, শরীয়ত ভিত্তিক ফয়সালা, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহ্র বিধান বাস্তবায়ন ইত্যাদি। আল্লাহ্র নাজিলকৃত বিধানের বাইরে হালাল-হারাম সাব্যস্ত করা সরাসরি শিরকের অন্তর্ভূক্ত এবং তা ইবাদতে শিরিক করার সমতুল্যও বটে।

১২
কবর যিয়ারত ও তার আদব
৩৩। প্রশ্ন : কবর যিয়ারতের বিধান কি ? এবং আমরা কেন কবর যিয়ারত করি?

৩৩। উত্তর : মহিলা ব্যতীত শুধু পুরুষের জন্য কবর যিয়ারত সাধারণত মুস্তাহাব।

কবর যিয়ারতের কিছু উপকারীতা ও কতিপয় আদব নিম্নে বিধৃত হল :

১। জিয়ারতকারীর জন্য কবর যিয়ারত উপদেশ ও নসীহত স্বরূপ। এর ফলে মৃত্যুর কথা স্বরণ হয়, যা সৎকর্মের জন্য সহায়ক।

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : ‘‘আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত নিষেধ করেছিলাম, তবে এখন তোমরা যিয়ারত করতে পারো।’’ (মুসলিম)

মুসনাদে আহ্মাদ ও অন্য কিতাবে একটি বর্ণনায় এসেছে : ‘‘কবর যিয়ারত তোমাদেরকে পরকাল স্বরণ করিয়ে দেয়।’’

২। আমরা কবরস্থানে গিয়ে মৃতদের জন্য এস্তেগফার করব, ক্ষমা চাইব। আল্লাহ্কে বাদ দিয়ে তাদের নিকট কোন প্রার্থনা কিংবা তাদের কোন দুআ কামনা করব না।

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদেরকে কবরস্থানে গিয়ে নিম্নের দোয়াটি পড়ার দীক্ষা দিয়েছেন :

" اَلسَّلاَمُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُسْلِمِيْنَ ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ لَلاَحِقُوْنَ ، أَسْاَلُ اللهَ لَنَا وَلَكُمُ الْعَافِيَةَ "

অর্থ ‘‘হে মু‘মিন ও মুসলিম কবরবাসীগণ তোমাদের প্রতি সালাম, ইন্শাআল্লাহ্ আমরাও তোমাদের সাথে অবশ্যই মিলিত হবো, আমি আল্লাহ্র নিকট আমাদের ও তোমাদের জন্য শান্তি কামনা করছি।’’ (মুসলিম)

৩। কবরের ওপর বসা ও তার দিক ফিরে নামায পড়া নিষেধ। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : ‘‘কবরের ওপর তোমরা বসবে না এবং তার দিকে ফিরে নামায আদায় করবে না।’’ (মুসলিম)

৪। কবরস্থানে কোরআন মজীদ এমনকি সূরা ফাতেহাও পড়া যাবে না। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : ‘‘তোমরা তোমাদের ঘর-বাড়ীকে কবরস্থান বানিয়ে নিওনা, কেননা যে ঘরে সূরা বাকারা পড়া হয় শয়তান সে ঘর থেকে পলায়ন করে।’’ (মুসলিম)

উল্লেখিত হাদীস থেকে প্রমাণ হয় যে, কবরস্থান কোরআন তেলাওয়াতের স্থান নয়, কোরআন তেলাওয়াতের স্থান বাড়ী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবা থেকে কোন প্রমাণ নেই যে, তাঁরা মৃতদের জন্য কোরআন পড়েছেন; হ্যাঁ, তাঁরা মৃতদের জন্য দুআ করেছেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মৃত ব্যক্তির দাফন সম্পন্ন করতেন, তার নিকট দাঁড়িয়ে বলতেন : ‘‘তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তার সুদৃঢ় হওয়ার জন্য দুআ কর। যেহেতু এখন সে জিজ্ঞাসিত হবে।’’ (হাকেম)

৫। কবরে বা মাজারে পুষ্পমাল্য বা ফুল অর্পণ করা যাবে না। এ আমল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবাগণ থেকে প্রমাণিত নয়, এটা খৃষ্টানদের কালচার। আমরা যদি উক্ত পুস্পমাল্যের খরচটা ফকীর-মিসকীনকে দেই তবে তাতে মৃত ব্যক্তি ও ফকীর-মিসকীন উভয়ে লাভবান হবে।

৬। কবর প্লাষ্টার, পেইন্ট ও উঁচু করা এবং কবরে নির্মাণ কার্য করা নিষেধ। হাদীসে বর্ণিত : ‘‘রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরে নির্মাণ কাজ ও প্লাষ্টার করতে নিষেধ করেছেন।’’ মুসলিম

৭। প্রিয় মুসলিম ভাই! মৃত ব্যক্তির নিকট দুআ চাওয়া ও তাদের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা থেকে বিরত থাকুন। মৃতরা সামর্থহীন, বরং এক আল্লাহ্কে ডাকুন, তিনি সর্ব শক্তিমান ও দুআ কবুল করেন। উপরুন্তু মৃত ব্যক্তিদের নিকট কিছু প্রার্থনা করা শিরকে আকবরের অন্তর্ভুক্ত।

১৩
কবরে সিজদা ও তাওয়াফ করা
৩৪। প্রশ্ন : কবরে সিজদা ও সেখানে জবেহ্ করার বিধান কি ?

৩৪। উত্তর : কবরে সিজদা ও পশু জবেহ করা জাহেলী যুগের মুর্তিপুজা তুল্য এবং বড় শিরক। কারণ, সিজদা ও পশু উৎসর্গ করা ইবাদত, যা এক আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারো জন্য বৈধ নয়। যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কাউকে সেজদা করল কিংবা অন্য কারো উদ্দেশ্যে জবেহ করল, সে মুশরিক হয়ে গেল।

আল্লাহ্ তাআলা বলেন :

قُلْ إِنَّ صَلاَتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَا وَمَمَاتِيْ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ لاَ شَرِيْكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِيْنَ

‘‘বল, নিশ্চয় আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মৃত্যু, জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ্র জন্য নিবেদিত। তাঁর কোন শরীক নেই, আর আমি এর প্রতি আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম মুসলমান।’’ সূরা আল-আন্আম : ১৬২ - ১৬৩)

আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেন :

إِنَّا أَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ

‘‘আমি অবশ্যই তোমাকে (হাউজে) কাওসার দান করেছি, সুতরাং তুমি তোমার রবের উদ্দেশ্যে নামায আদায় কর এবং কুরবানী কর।’’ সূরা আল-কাওসার : ১-২

এছাড়া আরো বহু আয়াত রয়েছে যার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সিজদা, পশু উৎসর্গ করে জবেহ করা ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত, যা আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারো উদ্দেশ্যে করা শিরকে আকবর।

৩৫। প্রশ্ন : অলীদের কবরের চারিপার্শ্বে তাওয়াফ করার বিধান কি ? অলীদের উদ্দেশ্যে পশু উৎসর্গ বা জবেহ করা অথবা মান্নত করার বিধান কি ? ইসলামের দৃষ্টিতে জীবিত বা মৃত অলীদের নিকট দুআ প্রার্থনা কি জায়েয?

৩৫। উত্তর : মৃত অলীদের উদ্দেশ্যে পশু উৎসর্গ বা জবেহ করা ও মান্নত করা শিরকে আকবর। অলী বলতে বুঝায় যে ব্যক্তি তাকওয়া অবলম্বনের মাধ্যমে আল্লাহ্র বন্ধুত্ব লাভ করেছে এবং শরীয়তের বিধি-নিষেধগুলো যথাযথ পালন করে। যদিও তার থেকে কোন কারামত প্রকাশ না পায়।

মৃত অলী বা অন্যদের কাছে দুআ প্রার্থনা জায়েজ নয়, জীবিত সৎ ব্যক্তিদের নিকট দুআ চাওয়া জায়েয। কবরের চতুর্পাশে তাওয়াফ করা জায়েয নয়, তা একমাত্র কা‘বা শরীফের বৈশিষ্ট। কেউ যদি কবরবাসীর নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশ্যে তাওয়াফ করে তবে তা বড় শিরকের অন্তর্ভুক্ত বলেই গণ্য। আল্লাহ্র নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্য হলেও এটা জঘন্যতম বিদয়াত। কারণ, কবর ত্বওয়াফ কিংবা নামাজের জন্য নয়। যদিও আল্লাহ্র সন্তুষ্টি কামনা উদ্দেশ্য হয়।

১৪
আল্লাহ্র পথে দাওয়াতের বিধান
৩৬। প্রশ্ন : আল্লাহ্র পথে দাওয়াত এবং ইসলামের জন্য কাজ করার বিধান কি ?

৩৬। উত্তর : আল্লাহর পথে দাওয়াত দেয়া প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব। কুরআন-হাদীস কর্তৃক প্রত্যেকেই এর দায়িত্বপ্রাপ্ত। এর জন্য আল্লাহর সরাসরি নিদের্শও বিদ্যমান রয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন :

اُدْعُ إِلَى سَبِيْلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ

‘‘তুমি তোমার রবের পথে হিকমত ও উত্তম ওয়াজ-নসিহতের মাধ্যমে আহবান কর।’’ সূরা আন-নাহাল : ১২৫

আল্লাহ্ আরো বলেন :

وَجَاهِدُوْا فِيْ اللهِ حَقَّ جِهَادِهِ

‘‘তোমরা আল্লাহ্র পথে জিহাদ কর যেভাবে জিহাদ করা উচিত।’’ সূরা আল-হজ : ৭৮

অতএব, প্রত্যেক মুসলমানের উচিত সার্বিকভাবে জিহাদে অংশ নেয়া। এবং সামর্থের সবটুকু উজাড় করে দেয়া।

বিশেষ করে বর্তমান যুগে ইসলামের কাজ করা, আল্লাহ্র পথে দাওয়াত ও তাঁর পথে জিহাদ করা অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে বরং প্রত্যেক মুসলমানের জন্য তা আবশ্যক হয়ে গেছে। অতএব, এর থেকে বিমুখ ব্যক্তি আল্লাহ্র দরবারে পাপী-গুনাহ্গার বলে বিবেচিত হবে।

৩৭। প্রশ্ন : নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কবর বা অন্য নবী এবং সৎ ব্যক্তিদের কবর স্পর্শ করা এমনিভাবে মাকামে ইব্রাহীম, কাবা ঘরের দেয়াল-গেলাফ এবং দরজা স্পর্শ করার বিধান কি ?

৩৮। উত্তর : কবর স্পর্শ করার ব্যাপারে আবুল আববাস রাহেমাহুল্লাহ্ বর্ণনা করেন :

উলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে একমত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা অন্য কোন নবী বা সৎ ব্যক্তিদের কবর যিয়ারত করার সময় হাত দিয়ে স্পর্শ কিংবা মুখ দিয়ে চুম্বন করা যাবে না। দুনিয়াতে জড় পদার্থের মধ্যে হজরে আসওয়াদ (কালো পাথর) ব্যতীত কোন বস্ত্ত চুম্বন দেয়া বৈধ নয়। বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, ওমর রাযিয়াল্লাহু আনহু হজরে আসওয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলেন : ‘‘আল্লাহ্র শপথ ! নিশ্চয় আমি জানি যে, তুমি একটি পাথর মাত্র। তুমি ক্ষতিও করতে পারবে না উপকারও করতে পারবে না। অতএব, আমি যদি রাসূলুল্লাহকে চুম্বন দিতে না দেখতাম তবে আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না।’’ আর চুম্বন দেয়া ও স্পর্শ করা শুধুমাত্র বায়তুল্লাহ্র (কাবা শরীফের) কোণের জন্য নির্ধারিত। অতএব আল্লাহ্র ঘরের সাথে সৃষ্টি জীবের ঘরের তুলনা করা যাবে না।

ইমাম গায্যালী রাহেমাহুল্লাহ্ বলেন : ‘‘কবর স্পর্শ করা ইহুদী ও খৃষ্টানদের অভ্যাস।’’

মাকামে ইব্রাহীমের ব্যাপারে কাতাদা বলেন : ‘‘মাকামে ইব্রাহীমের নিকট নামায পড়ার জন্য আদেশ করা হয়েছে তা স্পর্শ করার জন্য আদেশ করা হয়নি।’’

ইমাম নবভী বলেন : ‘‘মাকামে ইব্রাহীম চুম্বন ও স্পর্শ করা যাবে না, এটা বিদআত।’’

কাবা ঘরের অন্যান্য অংশ সম্পর্কে আবুল আববাস বর্ণনা করেন: চার ইমাম ও অন্যান্য ইমামদের মতে রুকনে ইয়ামানীকে শুধু হাত দিয়ে স্পর্শ এবং হজরে আসওয়াদকে মুখ দিয়ে চুম্বন ও হাত দিয়ে স্পর্শ করা যাবে। এ ছাড়া অবশিষ্ট দুই কোণ বা কাবা শরীফের অন্যান্য অংশ চুম্বন কিংবা স্পর্শ করা যাবে না। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকনে ইয়ামানী ও হজরে আসওয়াদ ব্যতীত অন্য কিছু স্পর্শ করেননি।

অতএব, যেখানে উক্ত দুই কোণ ব্যতীত কাবার অন্য কোন অংশ স্পর্শ ও চুম্বন জায়েয নেই, অথচ তা বাইতুল্লাহর অংশ, সেখানে কাবা শরীফের গেলাফ, দরজা ও মক্কা-মদীনা মসজিদের দরজাসমূহ স্পর্শ ও চুম্বন করার বৈধতার প্রশ্নই আসে না।

সমাপ্ত

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন