HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

সহীহ হাদীসের আলোকে সাওম বিশ্বকোষ

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন আল-আযহারী

কিতাবের নাম/ লেখক/ অনুবাদক/ সম্পাদক
সহীহ হাদীসের আলোকে সাওম বিশ্বকোষ

আব্দুল্লাহ আল মামুন আল-আযহারী

সম্পাদক: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

ভূমিকা
সকল প্রশংসা আল্লাহর, আমরা তাঁর প্রশংসা করছি, তাঁরই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছি, তাঁর নিকট ক্ষমা চাচ্ছি, তাঁর কাছে তাওবা করছি। তাঁর কাছে আমাদের অন্তরের সব কলুষিতা ও সব পাপ কাজ থেকে পানাহ চাই। তিনি যাকে হিদায়াত দান করেন কেউ তাকে গোমরাহ করতে পারে না আর তিনি যাকে পথ-ভ্রষ্ট করেন কেউ তাকে হিদায়াত দিতে পারে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি এক, তাঁর কোনো শরীক নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। আল্লাহ তাকে হিদায়াত ও সত্য দীনসহ প্রেরণ করেছেন, যাতে তা সব দীনের ওপর বিজয় লাভ করে। তিনি তাঁর রিসালাহ (দাওয়াত) পৌঁছেছেন, আমানত আদায় করেছেন, উম্মতকে উপদেশ দিয়েছেন, আল্লাহর পথে যথাযথ প্রচেষ্টা করেছেন। তাঁর উম্মতকে সুস্পষ্ট দলিল প্রমাণের রেখে গেছেন, যার দিবারাত্রি সমানভাবেই স্পষ্ট, একমাত্র ধ্বংসপ্রাপ্ত ছাড়া কেউ সে পথ থেকে সরে যায় না। তাই আল্লাহর সালাত ও সালাম তাঁর ওপর, তাঁর পরিবার পরিজন, সাহাবীগণ ও কিয়ামত পর্যন্ত একনিষ্ঠার সাথে যারা তাঁর অনুসরণ করবে সকলের ওপর বর্ষিত হোক। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন আমাকে ও আপনাদেরকে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সব কাজে তাঁর অনুসারী করেন। যিনি যেন তাঁর নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দলের অন্তর্ভুক্ত করে আমাদেরকে মৃত্যু দান করেন। তাঁর উম্মতের কাতারে যেন হাশরের দিনে একত্রিত করেন। তাঁর শাফা‘আতের অন্তর্ভুক্ত করেন এবং তিনি যেন আমাদেরকে চিরস্থায়ী জান্নাতে তাঁর সাথে ও সে সব নবী রাসূল, সিদ্দিকীন, শুহাদা ও সালেহীন বান্দাদের সাথে একত্রিত করেন যাদের ওপর আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন।

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِۦ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسۡلِمُونَ ١٠٢﴾ [ ال عمران : ١٠٢ ]

“হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, যথাযথ তাকওয়া। আর তোমরা মুসলিম হওয়া ছাড়া মারা যেও না”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০২]

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ ٱتَّقُواْ رَبَّكُمُ ٱلَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفۡسٖ وَٰحِدَةٖ وَخَلَقَ مِنۡهَا زَوۡجَهَا وَبَثَّ مِنۡهُمَا ٗا كَثِيرٗا وَنِسَآءٗۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ ٱلَّذِي تَسَآءَلُونَ بِهِۦ وَٱلۡأَرۡحَامَۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ عَلَيۡكُمۡ رَقِيبٗا ١﴾ [ النساء : ١ ]

“হে মানুষ, তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক নফস থেকে। আর তা থেকে সৃষ্টি করেছেন তার স্ত্রীকে এবং তাদের থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী। আর তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, যার মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে চেয়ে থাক। আর তাকওয়া অবলম্বন কর রক্ত-সম্পর্কিত আত্মীয়ের ব্যাপারে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ওপর পর্যবেক্ষক”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১]

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَقُولُواْ قَوۡلٗا سَدِيدٗا ٧٠ يُصۡلِحۡ لَكُمۡ أَعۡمَٰلَكُمۡ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوبَكُمۡۗ وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَقَدۡ فَازَ فَوۡزًا عَظِيمًا ٧١ ﴾ [ الاحزاب : ٧٠، ٧١ ]

“হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং সঠিক কথা বল। তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের কাজগুলোকে শুদ্ধ করে দেবেন এবং তোমাদের পাপগুলো ক্ষমা করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই এক মহা সাফল্য অর্জন করল”। [সূরা: আল-আহযাব, আয়াত: ৭০-৭১]

মহান আল্লাহ তা‘আলা বান্দাকে শয়তানের ধোঁকা থেকে বাঁচার জন্য কিছু ইবাদত প্রবর্তন করে তাদের ওপর অনুগ্রহ ও দয়া করেছেন। যেহেতু তিনি সাওমকে বান্দাহর জন্য দূর্গ ও ঢাল স্বরূপ করেছেন। সাওমের মাধ্যমে তিনি জান্নাতের পথ সুপ্রশস্ত করেছেন। মানুষের অন্তরের কুপ্রবৃত্তি দমন করে তাকে করেছেন পবিত্র। সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ জাগরণ, দরিদ্র ও অসহায় মানুষের কষ্ট উপলব্ধি, শারীরিক সুস্থতা, সর্বোপরি মহান আল্লাহর নৈকট্যলাভ ইত্যাদি হলো সাওমের সওগাত। সাওমের অপরিসীম ফযিলতের কারণেই আল্লাহ বলেছেন, “সাওম আমার জন্য, আর এর প্রতিদান আমি নিজেই দিব”।

ইসলামী কিতাবের ভাণ্ডারের দিকে কেউ তাকালে দেখবে সাওম সম্পর্কে অসংখ্য কিতাব বিভিন্ন ভাষায় রচিত হয়েছে। এ সব কিতাবে সহীহ ও দ‘য়ীফ হাদীস সন্নিবেশিত হয়েছে, ফলে সাধারণ মানুষের জন্য সহীহ হাদীসের ওপর ‘আমল করা কঠিন হয়ে পড়ে। এসব কথা বিবেচনা করেই বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য ‘আলেম, আমার সম্মানিত উস্তাদ আমাকে “সহীহ হাদীসের আলোকে সাওম বিশ্বকোষ” সংকলনের নির্দেশ দেন। শাইখের আদেশেই আমি এ কিতাবখানা ‘আলেম ওলামা ও সাধারণ মানুষের জন্য লিপিবদ্ধ করেছি।

সংকলনের ক্ষেত্রে আমি নিম্নের পদ্ধতি অনুসরণ করেছি

১- সহীহ বুখারীকে এ কিতাবের মূল হিসেবে রেখেছি। বুখারীর সব হাদীস হুবহু উল্লেখ করেছি। এমনকি বুখারীর ‘তালিকসমূহও অনেক ক্ষেত্রে উল্লেখ করেছি।

২- বুখারীর বাবের সাথে অন্যান্য সহীহ হাদীসের কিতাব থেকে হাদীস সংযোগ করেছি এবং প্রয়োজনে আরো বাব সংযোজন করেছি।

৩- বুখারীর সাথে মুসলিমেরও হাদীসসমূহ উল্লেখ করেছি।

৪- তাখরীজ ও হুকুমের ক্ষেত্রে বুখারী ও মুসলিম থেকে হাদীস উল্লেখ করলে শুধু এ কিতাবের নাম উল্লেখ করেছি। আলাদা কোনো হুকুম উল্লেখ করি নি। কেননা সব ‘আলেমদের ঐক্যমতে এ দুই কিতাবের হাদীসসমূহ সহীহ। কখনও কখনও শুধু বুখারী বা শুধু মুসলিম উল্লেখ করেছি। অর্থাৎ এ দু’কিতাবের যে কোনো একটির নাম উল্লেখ করা মানেই হাদীসটি সহীহ প্রমাণিত হয়।

৫- বুখারী ও মুসলিম ছাড়া অন্যান্য হাদীসের কিতাব থেকে হাদীস উল্লেখ করলে সে হাদীসের হুকুম উক্ত কিতাবসমূহে পাওয়া গেলে তা উল্লেখ করেছি। তাদের দেওয়া হুকুমকে আরো শক্তিশালী করতে সাথে সাথে সুনানের ক্ষেত্রে আল্লামা আলবানী রহ. ও মুসনাদে আহমদ ও ইবন হিব্বানের ক্ষেত্রে শাইখ শু‘আইব আরনাঊত-এর দেওয়া হুকুমও বর্ণনা করেছি।

৬- বুখারী, মুসলিম, সুনান, মুসতাদরাক হাকিম, ইবন হিব্বান, মুসনাদে আহমদ ইত্যাদি হাদীসের কিতাবের ক্ষেত্রে হাদীস নম্বর উল্লেখ করেছি। কেননা বর্তমানে হাদীস নম্বর দিয়ে সহজেই সাধারণ মানুষ উক্ত কিতাবের কাঙ্ক্ষিত হাদীসে পৌঁছতে পারে। যেসব কিতাবের হাদীস নম্বর পাওয়া যায় নি সে ক্ষেত্রে কিতাবের খণ্ড ও পৃষ্ঠা নম্বর উল্লেখ করেছি।

৭- কোনো কোনো সময় টীকাতে হাদীসের সাথে সম্পৃক্ত মাসআলা থাকলে তা উল্লেখ করেছি, তবে এগুলো খুবই স্বল্প। আমার মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষ সরাসরি সহীহ হাদীসের ওপর আমল করুক। তাই ফিকহি মাসআলা বেশি উল্লেখ করি নি।

৮- কিতাবের শুরুতে সাওমের সংজ্ঞা, তাৎপর্য, নানা ধর্মে সাওম পালন নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করেছি, যাতে সাধারণ মানুষ সাওম সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পায়।

৯- কিতাবের শেষে সাওম সম্পর্কিত জরুরী কিছু মাসআলা উল্লেখ করেছি।

১০- কিতাবটি আটটি অধ্যায়ে সন্নিবেশিত হয়েছে। প্রথম অধ্যায়ে সাওমের পরিচয়, ইতিহাস ও তাৎপর্য, দ্বিতীয় অধ্যায়ে সহীহ হাদীসের আলোকে সাওম, তৃতীয় অধ্যায়ে সালাতুত তারাবীহ, চতুর্থ অধ্যায়ে ই‘তিকাফ,পঞ্চম অধ্যায়ে সদকাতুল ফিতর, ষষ্ঠ অধ্যায়ে ঈদের সালাত, সপ্তম অধ্যায়ে সংক্ষেপে পবিত্র রমযান মাসে আমাদের করণীয় ‘আমল এবং অষ্টম অধ্যায়ে সাওম সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা উল্লেখ করেছি।

পরিশেষে সম্মানিত ‘আলেম, তালিবে ইলম ও অন্যান্য সবার কাছে অনুরোধ থাকবে এ কিতাবে কোনো দ‘য়ীফ হাদীস পাওয়া গেলে অনুগ্রহ করে জানাবেন। পরবর্তী সংস্করণে তা সংশোধন করে দেওয়া হবে ইনশাআল্লাহ। কেননা আমি সহীহ হাদীসের আলোকেই কিতাবটি সাজিয়েছি। কিতাবটির নামকরণ করেছি, “সহীহ হাদীসের আলোকে সাওম বিশ্বকোষ”। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে এ দো‘আ করছি যে, তিনি যেন আমাদেরকে সহীহ হাদীসের ওপর সর্বদা ‘আমল করার তাওফীক দান করেন। বিদ‘আত, দুর্বল ও জাল হাদীসের ওপর ‘আমল করা থেকে বিরত রাখেন। কিয়ামতের দিন এ ক্ষুদ্র কাজটি নাজাতের অসীলা করে দিন। সব মুসলিম যেন এ কিতাবটি থেকে উপকৃত হন। আমীন।

প্রথম অধ্যায়: সাওমের পরিচয়, ইতিহাস ও তাৎপর্য
সাওমের পরিচয়,সাওমের অভিধানিক অর্থ:

সাওম ( الصَّوْمُ ) শব্দটি আরবী, একবচন, এর বহু বচন হলো ( الصِّيَام ) সাওম। সাওম পালনকারীকে ‘সায়েম’ বলা হয়। ফার্সিতে বলা হয় রোযা এবং রোযা পালনকারীকে বলা হয় রোযাদার। এর শাব্দিক অর্থ হলো, পানাহার ও নির্জনবাস থেকে বিরত থাকা। অভিধানে শব্দটির অর্থ সম্পর্কে বলা হয়েছে,

الصَّوْمُ فِي اللُّغَة : الإمساكُ عَن الشيءِ والتَّرْكُ لَهُ . وَقيل للصائمِ صَائِم : لإمساكه عَن الْمطعم وَالْمشْرَب والمنكح .

“কোনো কিছু থেকে বিরত থাকা, সাওম পালনকারীকে ‘সায়েম’ বলা হয় এজন্য যে, সে খাদ্য, পানীয় ও জৈবিক চাহিদা থেকে বিরত থেকেছে।”

وَقيل للصامت : صَائِم، لإمساكه عَن الْكَلَام . وَقيل للفرسِ : صَائِم، لإمساكه عَن العَلَف مَعَ قِيَامه .

“চুপ থাকা ব্যক্তিকে ‘সায়েম’ বলা হয়, কেননা সে কথা বলা থেকে বিরত থেকেছে। এমনিভাবে যে ঘোড়া খাদ্য খাওয়া থেকে বিরত রয়েছে তাকেও ‘সায়েম’ বলা হয়।”

ইবন ‘আরাবী রহ. বলেছেন,

وصامَ الرجلُ : إِذا تَظَلَّلَ بالصَّوْم، وَهُوَ شجر؛ قالهُ ابْن الْأَعرَابِي .

“কোনো ব্যক্তি যখন গাছের নিচে ছায়া নিচ্ছে তাকে বলা হয় ‘সমার রজুল।” (লোকটি ছায়ায় থেকে চলাফেরা থেকে বিরত থেকেছে)।

লাইস রহ. বলেছেন,

الصَّوْمُ : تَرْكُ الْأكل وترْكُ الْكَلَام .

“সাওম হলো খাদ্য ও কথা বলা থেকে বিরত থাকা।” যেমন কুরআনে এসেছে,

﴿فَكُلِي وَٱشۡرَبِي وَقَرِّي عَيۡنٗاۖ فَإِمَّا تَرَيِنَّ مِنَ ٱلۡبَشَرِ أَحَدٗا فَقُولِيٓ إِنِّي نَذَرۡتُ لِلرَّحۡمَٰنِ صَوۡمٗا فَلَنۡ أُكَلِّمَ ٱلۡيَوۡمَ إِنسِيّٗا ٢٦﴾ [ مريم : ٢٦ ]

“অতঃপর তুমি খাও, পান কর এবং চোখ জুড়াও। আর যদি তুমি কোনো লোককে দেখতে পাও তাহলে বলে দিও, ‘আমি পরম করুণাময়ের জন্য চুপ থাকার মানত করেছি। অতএব, আজ আমি কোনো মানুষের সাথে কিছুতেই কথা বলব না।” [সূরা মারইয়াম, আয়াত: ২৬]

وَصَامَ الفَرَس على آرِيِّه : إِذا لم يَعْتَلِف . والصومُ : قِيَامٌ بِلَا عَمل . وصامَتِ الرِّيحُ : إِذا رَكَدَتْ .

“ঘোড়া যখন খাদ্য খাওয়া থেকে বিরত থাকে তাকে বলা হয় ‘সমাল ফারাস’, আবার সাওম অর্থ কোনো কাজ না করা। বলা হয়, ‘সমাতির রিহ’ বাতাস যখন থেমে থাকে।”

সুফিয়ান ইবন ‘উয়াইনাহ রহ. বলেছেন,

الصَّوْمُ هُو الصَّبْرُ، يَصْبِرُ الإِنسانُ عَلَى الطَّعَامِ وَالشَّرَابِ وَالنِّكَاحِ، ثُمَّ قَرَأَ : إِنَّما يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسابٍ .

“সাওম অর্থ ধৈর্য। কেননা মানুষ খাদ্য, পানীয় ও স্ত্রী সহবাস থেকে ধৈর্য ধারণ করে। অতঃপর তিনি এ আয়াতটি পড়েন,

﴿إِنَّمَا يُوَفَّى ٱلصَّٰبِرُونَ أَجۡرَهُم بِغَيۡرِ حِسَابٖ ١٠﴾ [ الزمر : ١٠ ]

“কেবল ধৈর্যশীলদেরকেই তাদের প্রতিদান পূর্ণরূপে দেওয়া হবে কোনো হিসাব ছাড়াই”। [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ১০] [দেখুন, তাহযীবুল লুগাহ ১২/১৮২, লিসানুল ‘আরব: ১২/৩৫০।]

সাওমের পারিভাষিক সংজ্ঞা:

আল-কামুসুল ফিকহি গ্রন্থে বলা হয়েছে,

الصوم هو إمساك عن المفطرات، حقيقة، أو حكما، في وقت مخصوص، من شخص مخصوص، مع النية .

وقيل : الصوم هو إمساك المكلف بالنية من الليل من تناول المطعم .

“সাওম হলো, নির্দিষ্ট সময় সুনির্দিষ্ট কার্যাবলী থেকে নিয়তসহ সাওম ভঙ্গকারী হাকীকী ও হুকমী (খাওয়া, পান করা এবং যৌনসম্ভোগ) বিষয় থেকে বিরত থাকা।” [আল-কামুসুল ফিকহি, পৃ: ৩৫০।]

কারও কারও মতে, ‘সাওম হচ্ছে মুকাল্লাফ তথা শরী‘আতের নির্দেশনা প্রযোজ্য এমন লোকের পক্ষ থেকে নিয়তসহ রাত থেকে খাবার-পানীয় থেকে বিরত থাকা।

যুরযানী রহ. বলনে,

عبارة عن إمساك مخصوص وهو الإمساك عن الأكل والشرب والجماع من الصبح إلى المغرب مع النية .

“সুবহে সাদিক থেকে মাগরিব পর্যন্ত খাদ্য গ্রহণ এবং যৌনাচার থেকে নিয়তের সাথে বিরত থকার নাম হলো সাওম।” [তা‘রিফাত লিল জুরজানী, পৃ: ১৭৮।]

বদরুদ্দীন ‘আইনী রহ. বলেন,

الصوم هو الإمساك عن المفطرات الثلاثة نهاراً مع النية .

“খাওয়া, পান করা এবং যৌনসম্ভোগ -এ তিনটি কাজ থেকে নিয়তসহ বিরত থাকার নাম হলো সাওম।” [আল বিনায়া শরহে হিদায়া, ৪/৩।]

শরী‘আতের দৃষ্টিতে সুবহে সাদিক থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, যৌন সম্ভোগ ও শরী‘আত নির্ধারিত বিধি-নিষেধ থেকে নিয়তসহ বিরত থাকাকে সাওম বলে। শরী‘আতে ঈমান, সালাত ও যাকাতের পরেই সাওমের স্থান। যা ইসলামের চতুর্থ রুকন।

সাওমের ইতিহাস ও তাৎপর্য, যুগে যুগে বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ে সাওম:
সাওম বা রোযা নাম ও ধরণভেদে বিভিন্ন জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে বহুল প্রচলিত একটি ধর্মীয় বিধান, যা মুসলিমদের জন্য অবশ্য পালনীয় (ফরয) একটি ইবাদত। শেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শরী‘আতে যেমন আল্লাহর পক্ষ থেকে সাওমের বিধান দেওয়া হয়েছে, তেমনি সাওমের বিধান দেওয়া হয়েছিল পূর্ববর্তী নবীদের শরী‘আতেও; পূর্ববর্তী জাতিগুলোর ধর্ম-কর্মেও। আসমানী ধর্ম ছাড়াও মানব রচিত বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ে সাওমের বিধান রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ١٨٣﴾ [ البقرة : ١٨٣ ]

“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর সাওম ফরয করা হয়েছে। যেরূপ ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর। যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৩]

এ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, পূর্ববর্তী প্রত্যেক নবী ও প্রত্যেক জাতির মধ্যেই প্রচলিত ছিল ‘সাওম’ বা রোযা নামের এই ধর্মানুষ্ঠান।

তাফসীরে কুরতুবীতে উক্ত আয়াতের ব্যাখায় বলা হয়েছে,

الْمَعْنَى : كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيامُ أَيْ فِي أَوَّلِ الْإِسْلَامِ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ وَيَوْمَ عَاشُورَاءَ، كَما كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَهُمُ الْيَهُودُ- فِي قَوْلِ ابْنِ عَبَّاسٍ- ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ وَيَوْمَ عَاشُورَاءَ . ثُمَّ نُسِخَ هَذَا فِي هَذِهِ الْأُمَّةِ بِشَهْرِ رَمَضَانَ . وَقَالَ مُعَاذُ بن جبل : نسخ ذلك ب أَيَّامٍ مَعْدُوداتٍ ثُمَّ نُسِخَتِ الْأَيَّامُ بِرَمَضَانَ .

“আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমার মতে, ইসলামের প্রাথমিক যুগে প্রত্যেক মাসে তিন দিন ও আশুরার দিনে সাওম ফরয ছিল, যেমনিভাবে তোমাদের পূর্ববর্তী ইয়াহূদী সম্প্রদায়ের ওপর মাসে তিন দিন ও ‘আশুরার দিনে সাওম ফরয ছিল। পরবর্তীতে রমযান মাসের দ্বারা এ সাওম রহিত হয়। মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, উক্ত তিন দিনের সাওম নির্দিষ্ট কয়েক দিনের সাওমের দ্বারা রহিত হয়। অতঃপর উক্ত কয়েক দিনের সাওম আবার রমযানের সাওম দ্বারা রহিত হয়। [দেখুনঃ তাফসীরে কুরতবী: ২/২৭৫।]

ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«صَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَاشُورَاءَ، وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ فَلَمَّا فُرِضَ رَمَضَانُ تُرِكَ»، وَكَانَ عَبْدُ اللَّهِ لاَ يَصُومُهُ إِلَّا أَنْ يُوَافِقَ صَوْمَهُ»

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আশুরার দিন সাওম পালন করেছেন এবং এ সিয়ামের জন্য আদেশও পালন করেছে। পরে যখন রমযানের সাওম ফরয হলো তখন তা ছেড়ে দেওয়া হয়। ‘আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এ সাওম পালিন করতেন না, তবে মাসের যে দিনগুলোতে সাধারন সাওম পালন করতেন, তাঁর সাথে মিল হলে করতেন। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৯২।]

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«أَنَّ قُرَيْشًا كَانَتْ تَصُومُ يَوْمَ عَاشُورَاءَ فِي الجَاهِلِيَّةِ، ثُمَّ أَمَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِصِيَامِهِ حَتَّى فُرِضَ رَمَضَانُ، وَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «مَنْ شَاءَ فَلْيَصُمْهُ وَمَنْ شَاءَ أَفْطَرَ»

“জাহেলী যুগে কুরাইশগন ‘আশুরার দিন সাওম পালন করত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও পরে এ সাওম পালনের নির্দেশ দেন। অবশেষে রমযানের সাওম ফরয হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যার ইচ্ছা ‘আশুরার সাওম পালন করবে এবং যার ইচ্ছা সে সাওম পালন করবে না।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৯৩।]

আমরা এখানে আদি পিতা আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত বিভিন্ন আসমানী ধর্মে ও মানব রচিত অন্যান্য ধর্ম ও সম্প্রদায়ের যুগে যুগে সাওমের বিধান ও ধরণ নিয়ে আলোচনা করব।

আদম আলাইহিস সালামের শরী‘আতে সাওম:

প্রথম নবী আদম আলাইহিস সালামের শরী‘আতে সিয়ামের বিধান দেওয়া হয়েছিল বলে তাফসীর গ্রন্থে উল্লেখ পাওয়া যায়। অবশ্য সেই সিয়ামের ধরণ ও প্রকৃতি কেমন ছিল তা আমাদের জানা নেই। এ বিষয়ে বাইবেল, কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদীসের কিতাব একেবারে নিশ্চুপ। বলা হয়ে থাকে, পূর্ববর্তী প্রত্যেক নবীর শরী‘আতেই চান্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে সিয়ামের বিধান ছিল। এ সাওম আইয়্যামে বীদ বা শুভ্ররাত্রিগুলোর দিনের সাওম নামে খ্যাত।

নূহ আলাইহিস সালামের সাওম:

তাফসীরে ইবন কাসীরে এসেছে,

قَدْ كَانَ هَذَا فِي ابْتِدَاءِ الْإِسْلَامِ يَصُومُونَ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ، ثُمَّ نُسِخَ ذَلِكَ بِصَوْمِ شَهْرِ رَمَضَانَ، كَمَا سَيَأْتِي بَيَانُهُ . وَقَدْ رُوي أَنَّ الصِّيَامَ كَانَ أَوَّلًا كَمَا كَانَ عَلَيْهِ الْأُمَمُ قَبْلَنَا، مِنْ كُلِّ شَهْرٍ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ -عَنْ مُعَاذٍ، وَابْنِ مَسْعُودٍ، وَابْنِ عَبَّاسٍ، وَعَطَاءٍ، وَقَتَادَةَ، وَالضَّحَّاكِ بْنِ مُزَاحِمٍ . وَزَادَ : لَمْ يَزَلْ هَذَا مَشْرُوعًا مِنْ زَمَانِ نُوحٍ إِلَى أَنْ نَسَخ اللَّهُ ذَلِكَ بِصِيَامِ شَهْرِ رَمَضَانَ .

“প্রসিদ্ধ তাফসীরবিদ মু‘য়ায, আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ, ‘আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু, ‘আতা, কাতাদা ও দাহহাক রহ. বর্ণনা করেন, নূহ আলাইহিস সালাম হতে শেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত প্রত্যেক নবীর যুগেই প্রতি মাসে তিনটি করে সিয়ামের বিধান ছিল। পরবর্তীতে ইহা রমযানের সাওম দ্বারা রহিত হয়। [দেখুনঃ তাফসীরে ইবনে কাসীর: (১/৪৯৭), তাফসীরে কুরতবীঃ (২/২৭৫), তাফসীরে ত্বাবারীঃ (৩/৪১১), তাফসীরে মানারঃ (২/১১৬।]

আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ : «صَامَ نُوحٌ الدَّهْرَ، إِلَّا يَوْمَ الْفِطْرِ وَيَوْمَ الْأَضْحَى»

“আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, নূহ আলাইহিস সালাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন বাদে সারা বছর সাওম পালন করতেন।” [ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ১৭১৪, আলবানী রহ. বলেছেন হাদীসটি দ‘য়ীফ। কেননা এর সনদে ابن لهيعة রয়েছেন, যিনি দ‘য়ীফ।]

ইবরাহীম আলাইহিস সালামের সাওম:

মুসলিম মিল্লাতের পিতা সহিফাপ্রাপ্ত নবী ইবরাহীম আলাইহিস সালামের যুগে ৩০টি সাওম ছিল বলে কেউ কেউ লিখেছেন।

দাউদ আলাইহিস সালামের সাওম:

আসমানী কিতাব ‘যবুর’ প্রাপ্ত বিখ্যাত নবী দাউদ আলাইহিস সালামের যুগেও সাওমের প্রচলন ছিল।

আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

« «صُمْ أَفْضَلَ الصِّيَامِ عِنْدَ اللهِ، صَوْمَ دَاوُدَ عَلَيْهِ السَّلَام كَانَ يَصُومُ يَوْمًا وَيُفْطِرُ يَوْمًا»

“আল্লাহর কাছে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ সাওম দাউদ আলাইহিস সালামের সাওম -তিনি এক দিন সাওম পালন করতেন এবং এক দিন বিনা সাওমে থাকতেন”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৫৯।]

মূসা আলাইহিস সালাম ও ইয়াহূদী ধর্মে সাওম:

ইয়াহূদীদের ওপর প্রতি শনিবার, বছরের মধ্যে মহররমের ১০ তারিখে আশুরার দিন এবং অন্যান্য সময় সাওম ফরয ছিল। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«قَدِمَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ المَدِينَةَ فَرَأَى اليَهُودَ تَصُومُ يَوْمَ عَاشُورَاءَ، فَقَالَ : مَا هَذَا؟ قَالُوا : هَذَا يَوْمٌ صَالِحٌ هَذَا يَوْمٌ نَجَّى اللَّهُ بَنِي إِسْرَائِيلَ مِنْ عَدُوِّهِمْ، فَصَامَهُ مُوسَى، قَالَ : فَأَنَا أَحَقُّ بِمُوسَى مِنْكُمْ، فَصَامَهُ، وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় হিজরত করে ইয়াহূদীদের আশুরার দিনে সাওম অবস্থায় পেলেন। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘আজকে তোমরা কিসের সাওম করছ?’ তারা বলল, ‘এটা সেই মহান দিন যেদিন আল্লাহ তা‘আলা মূসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর কওম বনী ইসরাইল ফির‘আউনের কবল থেকে মুক্ত করেছিলেন। ফলে শুকরিয়াস্বরূপ মূসা আলাইহিস সালাম ঐ দিনে সাওম রেখেছিলেন, তাই আমরা আজকে সাওম করছি।’ এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আমি তোমাদের অপেক্ষা মূসা আলাইহিস সালামের অধিক নিকটবর্তী। এরপর তিনি এ দিন সাওম পালন করেন এবং সবাইকে সাওম রাখার নির্দেশ দেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০০৪, ও সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৩০।]

মূসা আলাইহিস সালাম তুর পাহাড়ে আল্লাহর কাছ থেকে তাওরাতপ্রাপ্তির আগে ৪০ দিন পানাহার ত্যাগ করেছিলেন। ইয়াহূদীদের ধর্মগ্রন্থ তাওরাতে বর্ণিত আছে, মূসা আলাইহিস সালাম তুর পাহাড়ে ৪০ দিন পানাহার না করে কাটিয়েছিলেন। তাই ইয়াহূদীরা সাধারণভাবে মূসা আলাইহিস সালামের অনুসরণে ৪০টি সাওম রাখা ভালো মনে করত। তন্মধ্যে ৪০তম দিনটিতে তাদের ওপর সাওম রাখা ফরয ছিল। যা ইয়াহূদীদের সপ্তম মাস তিশরিনের দশম তারিখে পড়ত। এ জন্য ঐ দিনটিকে আশুরা বা দশম দিন বলা হয়। এ ছাড়া ইয়াহূদী সহিফাতে অন্যান্য সাওমেরও সুস্পষ্ট হুকুম রয়েছে। ইয়াহূদীরা বর্তমানে ৯ আগস্ট ইয়াহূদী হাইকাল বাইতুল মুকাদ্দাস ধ্বংস দিবসে সাওম রাখে, এ দিন তারা খাদ্য, স্ত্রী সহবাস ও জুতা পরিধান থেকে বিরত থাকে। এছাড়াও ১৩ নভেম্বর, ১৭ জুলাই, ১৩ মার্চ ও বিভিন্ন দিবসে সাওম পালন করে।

ঈসা আলাইহিস সালাম ও খ্রিস্টান ধর্মে সাওম:

আসমানী কিতাব ‘ইঞ্জিল’ প্রাপ্ত বিশিষ্ট নবী ‘ঈসা আলাইহিস সালামের যুগে সাওমের প্রমাণ পাওয়া যায়। ঈসা আলাইহিস সালামের অনুসারী সম্প্রদায় সাওম রাখতেন। বর্তমানে তাদের দু’ধরণের সাওম আছে।

প্রথম হলো, তাদের ফাদারের উপদেশে নির্দিষ্ট কয়েক দিন খাদ্য পানীয় থেকে বিরত থাকা আর ইফতার হবে নিরামিষ দিয়ে। মাছ, মাংস ও দুগ্ধজাত জিনিস খাওয়া যাবে না। যেমন, বড় দিনের সাওম, তাওবার সাওম যা ৫৫ দিন পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হয়। এমনিভাবে সপ্তাহে বুধ ও শুক্রবারে সাওম।

দ্বিতীয় ধরণের সাওম হলো খাদ্য থেকে বিরত থাকা, তবে মাছ ভক্ষণ করা যাবে। এ সাওমের মধ্যে ছোট সাওম বা জন্মদিনের সাওম, ইহা ৪৩ দিন দীর্ঘায়িত হয়, দূতগণের সাওম, মারিয়ামের সাওম ইত্যাদি। তবে তাদের ধর্মে কোনো সাওমই ফরয নয়; বরং কেউ ইচ্ছা করলে রাখতে পারে।

গ্রীক ও রোমানদের সাওম:

গ্রীস ও রোমানরা যুদ্ধের আগে সাওম রাখত যাতে ক্ষুধা ও কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। খ্রিস্টান পাদরীদের ও পারসিক অগ্নিপূজকদের এবং হিন্দু যোগী ইত্যাকার ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে সাওমের বিধান ছিল। পারসিক ও হিন্দু যোগীদের সাওমের ধরন ছিল এরূপ -তারা সাওম থাকা অবস্থায় মাছ-মাংস, পাখি ইত্যাদি ভক্ষণ করা থেকে বিরত থাকত বটে; কিন্তু ফল-মূল এবং সামান্য পানীয় গ্রহণ করত। মূর্তিপূজক ঋষীরা সাওমের ব্যাপারে এতই কঠোর ছিল যে, তারা সাওম থাকা অবস্থায় মাছ-মাংস, পাখি ইত্যাদি ভক্ষণ করা থেকে বিরত থাকত, স্ত্রী সহবাস করত না। সারা বছর সাওম রেখে আত্মার কষ্ট দিত আর এভাবে তারা পবিত্রতা অর্জনের সাধনা করত। প্রাচীন চীনা সম্প্রদায়ের লোকরা একাধারে কয়েক সপ্তাহ সাওম রাখত।

জাহেলী যুগে সাবে‘ঈ সম্প্রদায়ের সাওম:

ইবন নাদিম তার ‘ফিহরাসাত’ কিতাবের নবম খণ্ডে উল্লেখ করেন, সাবে‘ঈ সম্প্রদায়ের লোকেরা (যারা গ্রহ-নক্ষত্র পূজা করে) ত্রিশ দিন সাওম পালন করত। আযার মাসের ৮দিন অতিবাহিত হলে এ সাওম শুরু হতো, কানুনে আউয়াল মাসে ৯টি, শাবাত মাসে ৭টি সাওম। এ সাত সাওম পালনের পরে তারা ঈদুল ফিতর উদযাপন করত। সাওম অবস্থায় তারা খাদ্য, পানীয় ও স্ত্রী সহবাস ইত্যাদি থেকে বিরত থাকত।

হিন্দু ধর্মে সাওম বা উপবাস:

বেদের অনুসারী ভারতের হিন্দুদের মধ্যেও ব্রত অর্থাৎ উপবাস ছিল। প্রত্যেক হিন্দি মাসের ১১ তারিখে ব্রাহ্মণদের ওপর ‘একাদশীর’ উপবাস রয়েছে। এ হিসাবে তাদের উপবাস ২৪টি হয়। কোনো কোনো ব্রাহ্মণ কার্তিক মাসে প্রত্যেক সোমবার উপবাস করেন। কখনো হিন্দু যোগীরা ৪০ দিন পানাহার ত্যাগ করে চল্লিশে ব্রত পালন করেন। হিন্দু মেয়েরা তাদের স্বামীদের মঙ্গল কামনায় কার্তিক মাসের ১৮তম দিবসে ‘কারওয়া চাওত’ নামে উপবাস রাখে।

বৌদ্ধ ধর্মে সাওম বা উপবাস:

তারা তাদের চন্দ্রমাসের Upisata মাসে ১, ৯, ১৫ ও ২২ তারিখে ৪দিন উপবাস পালন করে। এছাড়া বৌদ্ধ গুরুরা দুপুরের খাবারের পর থেকে সব ধরণের খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকে। তারা এভাবে খাদ্য থেকে বিরত থেকে সংযম ও শারীরিক নিয়ন্ত্রণ করে।

মংগোলীরা প্রতি ১০দিন অন্তর ও যারাদাশতিরা প্রতি ৫দিন অন্তর সাওম পালন করত।

জাহেলী যুগে সাওম:

ইসলামের সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াত লাভের আগে আরবের মুশরিকদের মধ্যেও সিয়ামের প্রচলন ছিল। যেমন আশুরার দিনে কুরাইশরা জাহেলী যুগে সাওম রাখত এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাহেলী যুগে ঐ সাওম রাখতেন।

ইসলামে সাওম

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ١٨٣﴾ [ البقرة : ١٨٣ ]

“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর সাওম ফরয করা হয়েছে। যেরূপ ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর। যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৩]

ইসলামে সাওমের রয়েছে কতিপয় শর্ত ও বৈশিষ্ট্য। সুর্যোদয় থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত ইবাদাতের নিয়তে যাবতীয় পানাহার, স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকার নাম সাওম। সাহরী খাওয়া ইসলামী শরী‘আতের সাওমের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ইসলামে রমযানের সাওম ফরয, অন্যান্য সাওম মুস্তাহাব, যেমন, ‘আরাফার সাওম, মহররমের সাওম, শবে বরাতের সাওম, প্রতি চন্দ্র মাসে ১৩, ১৪, ১৫ তারিখের সাওম ইত্যাদি।

সাওমের তাৎপর্য
সংযম অর্জন:

সাওমের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে যে বিষয়টি বেরিয়ে আসে তা হচ্ছে সংযম। মূলত সংযম ও আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে যুগে যুগে বিভিন্ন ধর্ম ও সমাজে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য সাওমের প্রচলন ছিল। ইসলামী শরী‘আতে ফরযকৃত সাওম সেই লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সহায়ক। তাই প্রতিটি মুমিনের জন্য কর্তব্য হলো সাওমের মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভে ব্রতী হওয়া।

আমাদের প্রিয় নবী মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, রমযান মাস হলো ধৈর্যের মাস আর ধৈর্যের প্রতিদান হলো জান্নাত। এ মাসেই আমাদেরকে পরিপূর্ণভাবে ধৈর্যের প্রশিক্ষণ নিতে হবে। যাতে রমযান পরবর্তী সময়ে প্রতিটি মুহূর্তে, কথায় কাজে ও জীবনের সকল ক্ষেত্রে এর বাস্তব প্রতিফলন ঘটানোর জন্যই সাওম।

তাকওয়া অর্জন:

সাওমের মূল লক্ষ্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লাহ তায়া‘লা বলেছেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ١٨٣﴾ [ البقرة : ١٨٣ ]

“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর সাওম ফরয করা হয়েছে। যেরূপ ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর; যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৩]

( لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ ) যাতে তোমরা তাকওয়াবান হও। এখানেই সমাজ গঠনে সাওমের ভূমিকা স্পষ্ট হয়ে উঠে। তাকওয়ার ভিত্তির ওপর যে সমাজ গঠিত হবে সেখানে থাকবে না কোনো হিংসা বিদ্বেষ, মারামারি, কাটাকাটি, দুর্নীতি ও রাহাজানি। সাওমের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে তাকওয়া অর্জন করা। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সকল প্রকার নাফরমানী কাজ থেকে দূরে থাকার নামই তাকওয়া। মানুষের মনের গোপন কোণে যে কামনা-বাসনা আছে, আল্লাহ তা‘আলা সে সম্পর্কেও জ্ঞাত। আল্লাহর কাছে বান্দার মান-মর্যাদা নির্ধারণের একমাত্র উপায় তাকওয়া। এ তাকওয়াই মানুষের মনে সৎ মানবিক গুণাবলি সৃষ্টি করে। সুতরাং যাবতীয় অন্যায় কাজ থেকে বিরত থেকে ভালো কাজ করতে পারলেই সাওম পালন সফল ও সার্থক হবে। এভাবে সাওম পালনের মাধ্যমে অর্জিত প্রশিক্ষণ দ্বারা নিজেদের একজন সৎ, আল্লাহভীরু নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সচেষ্ট থেকে হবে।

সাওম থেকে তাকওয়া শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। তাকওয়া অর্জন করার ক্ষেত্রে সাওমের কোনো বিকল্প নেই। সাওমের শিক্ষা নিয়ে তাকওয়ার গুণাবলি অর্জনের মধ্য দিয়ে মানুষ ইহকালীন কল্যাণ ও পারলৌকিক মুক্তি লাভ করতে পারে। ঈমান ও আত্মবিশ্লেষণের সঙ্গে সাওম রাখলে জীবনের সব গুনাহ মাফ হয়ে যায়। এ শিক্ষা যদি বাকি ১১ মাস কাজে লাগানো যেত, তাহলে পৃথিবীতে এত অশান্তি, অনাচার থাকত না। পবিত্র কুরআনে এসেছে,

﴿قَدۡ أَفۡلَحَ مَن تَزَكَّىٰ ١٤﴾ [ الأعلى : ١٤ ]

“যে সংশোধিত হলো, সেই সফলকাম হলো”। [সূরা আল-আ‘লা, আয়াত: ১৪] 

আত্মিক ও দৈহিক সুস্থতা অর্জন:

সাওম মানুষের ভেতর ও বাহির -দুই দিকের সংশোধন করে। মানুষের ভেতরের অবস্থা পরিবর্তন করা অর্থাৎ আলোকিত করা এবং তার স্বভাব, চরিত্র, আচার-আচরণ সংশোধনপূর্বক প্রকাশ্যভাবে সুন্দর করে গড়ে তোলা সাওমের গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য। এ পরিপ্রেক্ষিতে সাওম মানুষকে পার্থিব লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, পরচর্চা, পরনিন্দা, মিথ্যাচার, প্রতারণা, অতিরিক্ত সম্পদ অর্জনের আকাঙ্ক্ষা প্রভৃতি থেকে দূরে সরিয়ে রেখে আত্মসংযমের শিক্ষা দেয়।

মানুষের শারীরিক অবকাঠামো ঠিক রাখতে বর্তমানে চিকিৎসকেরা সাওম রাখার নির্দেশ দিয়ে থাকেন। শরীর ঠিক তো মন ঠিক। সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে শারীরিক সুস্থতা অত্যাবশ্যকীয়।

ইবন সিনা সাওমকে দুরারোগ্য সব রোগের চিকিৎসা বলতেন। মিশরে নেপোলিয়ানের আগ্রাসন পরবর্তী যুগে হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসার জন্য সাওম রাখতে বলা হতো।

সুন্দর সমাজ গঠন:

সাওমের মাধ্যমে দরিদ্র ও অভুক্ত মানুষের দুঃখ দুর্দশা অনুধাবন করা যায়, ফলে সমাজে এর প্রভাব সুদূর প্রসারী। সাওম সাধনা সহমর্মিতা শিক্ষা জাগ্রত করার কার্যকর মাধ্যম। অনাহার কাকে বলে, খাদ্যাভাব কাকে বলে যারা অনুভব করে নি, তারা সমাজের বঞ্চিত ও পীড়িত মানুষের কষ্ট কীভাবে বুঝবে? সাওম রাখার কারণে এই মানুষগুলো ক্ষুধার যন্ত্রণা সম্পর্কে সামান্য হলেও ধারণা পাবে। ফলে প্রতিবেশি ও কাছে অবস্থানকারীদের কষ্টের জীবন কিছুটা অনুধাবন করা সহজ হবে। সাওম রাখার কারণে শরীরের শক্তি কমে আসবে। তখন অধীনস্থদের কাজের ভার লাঘব করার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হবে। আর এতে মনিব-ভৃত্যের দূরত্ব কমে একে অপরের পরিপূরক মনে করার পরিবেশ সৃষ্টি হবে। মালিক পক্ষ ও শ্রমিক পক্ষের মধ্যে বৈরিতা থাকবে না।

সাওম পালনের দ্বারা মানুষের মধ্যে পারস্পরিক স্নেহ, ভালোবাসা, মায়া-মমতা, আন্তরিকতা, দানশীলতা, বদান্যতা, উদারতা, ক্ষমা, পরোপকারিতা, সহানুভূতি, সমবেদনা প্রভৃতি সদাচরণ জন্মায়। সাওমের এ মহান শিক্ষা গ্রহণ করে আমাদের সমাজ ও পারিবারিক জীবনে শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। রমযান মাস আসলে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশি বেশি দান সদকা করতেন। যেমন হাদীসে এসেছে, ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَجْوَدَ النَّاسِ بِالخَيْرِ، وَكَانَ أَجْوَدُ مَا يَكُونُ فِي رَمَضَانَ حِينَ يَلْقَاهُ جِبْرِيلُ، وَكَانَ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ يَلْقَاهُ كُلَّ لَيْلَةٍ فِي رَمَضَانَ، حَتَّى يَنْسَلِخَ، يَعْرِضُ عَلَيْهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ القُرْآنَ، فَإِذَا لَقِيَهُ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ، كَانَ أَجْوَدَ بِالخَيْرِ مِنَ الرِّيحِ المُرْسَلَةِ»

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধন সম্পদ ব্যয় করার ব্যাপারে সকলের চেয়ে দানশীল ছিলেন। রমযানে জিবরীল আলাইহিস সালাম যখন তাঁর সাথে দেখা করতেন, তখন তিনি আরো অধিক দান করতেন। রমযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি রাতেই জিবরীল আলাইহিস সালাম তাঁর সাথে একবার সাক্ষাৎ করতেন। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে কুরআন শোনাতেন। জিবরীল আলাইহিস সালাম যখন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন তখন তিনি রহমত প্রেরিত বায়ূর চেয়ে অধিক ধন-সম্পদ দান করতেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯০২।]

তাই সাওম পালনের দ্বারা সমাজের দারিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত। প্রকৃতপক্ষে সাওম প্রতিটি মানুষের ব্যক্তিগত জীবন থেকে পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক জীবনসহ সর্বস্তরে অনুশীলনের দীক্ষা দিয়ে যায়। তাই আসুন, সাওমের প্রকৃত শিক্ষা ও উদ্দেশ্যের প্রতি যত্নবান হয়ে সাওম পালনের মাধ্যমে নিজেদের মনুষ্যত্ববোধকে জাগ্রত করি, মানবিক গুণাবলিতে জীবনকে আলোকিত করি; তাহলে আমাদের সাওম সাধনা অর্থবহ হবে। তখন মানুষের মধ্যে গড়ে উঠবে সুমধুর সম্পর্ক, বিদায় নেবে অরাজকতা, অন্যায়-অনাচার এবং দুর্নীতি ও ভেজালমুক্ত হয়ে আদর্শ জাতি হিসেবে আমরা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারব। সাওমের মাসের পরিসমাপ্তি বয়ে আনুক সমাজ জীবনে আমূল পরিবর্তন, আল্লাহভীতি, আত্মসংযম ও মানবপ্রেম। সাওমের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের আলোকে যেন সারা জীবন সৎভাবে অতিবাহিত করে আল্লাহর অশেষ করুণা ও ক্ষমা লাভ এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেতে পারি, আল্লাহ পাক আমাদের সে তাওফীক দান করুন। আমীন।

দ্বিতীয় অধ্যায়: সহীহ হাদীসের আলোকে সাওম রমযানের সাওম ফরয হওয়া প্রসঙ্গে
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ١٨٣﴾ [ البقرة : ١٨٣ ]

“হে মুমিনগণ, তোমাদের ওপর সাওম ফরয করা হয়েছে, যেভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৩]

তালহা ইবন উবাইদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,

«أَنَّ أَعْرَابِيًّا جَاءَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثَائِرَ الرَّأْسِ، فَقَالَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ أَخْبِرْنِي مَاذَا فَرَضَ اللَّهُ عَلَيَّ مِنَ الصَّلاَةِ؟ فَقَالَ : «الصَّلَوَاتِ الخَمْسَ إِلَّا أَنْ تَطَّوَّعَ شَيْئًا»، فَقَالَ : أَخْبِرْنِي مَا فَرَضَ اللَّهُ عَلَيَّ مِنَ الصِّيَامِ؟ فَقَالَ : «شَهْرَ رَمَضَانَ إِلَّا أَنْ تَطَّوَّعَ شَيْئًا»، فَقَالَ : أَخْبِرْنِي بِمَا فَرَضَ اللَّهُ عَلَيَّ مِنَ الزَّكَاةِ؟ فَقَالَ : فَأَخْبَرَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَرَائِعَ الإِسْلاَمِ، قَالَ : وَالَّذِي أَكْرَمَكَ، لاَ أَتَطَوَّعُ شَيْئًا، وَلاَ أَنْقُصُ مِمَّا فَرَضَ اللَّهُ عَلَيَّ شَيْئًا، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «أَفْلَحَ إِنْ صَدَقَ، أَوْ دَخَلَ الجَنَّةَ إِنْ صَدَقَ»

“এলোমেলো চুলবিশিষ্ট একজন গ্রাম্য আরব রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এলেন। তারপর বললেন, ইয়া  রাসূলুল্লাহ! আমাকে বলুন, আল্লাহ তা‘আলা আমার ওপর কত (ওয়াক্ত) সালাত ফরয করেছেন? তিনি বলেন, পাঁচ (ওয়াক্ত) সালাত; তবে তুমি যদি কিছু নফল আদায় কর তা স্বতন্ত্র কথা। এরপর তিনি বললেন, বলুন, আমার ওপর কত সাওম আল্লাহ তা‘আলা ফরয করেছেন?  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, রমযান মাসের সাওম; তবে তুমি যদি কিছু নফল কর তবে তা স্বতন্ত্র কথা। এরপর তিনি বললেন, বলুন, আল্লাহ আমার ওপর কী পরিমাণ যাকাত ফরয করেছেন? বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে ইসলামের বিধান জানিয়ে দিলেন। এরপর তিনি বললেন, ঐ সত্তার কসম, যিনি আপনাকে সত্য দিয়ে সম্মানিত করেছেন, আল্লাহ আমার ওপর যা ফরয করেছেন, আমি এর মাঝে কিছু বাড়াব না এবং কমাবও না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে সত্য বলে থাকলে সফলতা লাভ করল কিংবা বলেছেন, সে সত্য বলে থাকলে জান্নাত লাভ করল।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৯১।]

ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«صَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَاشُورَاءَ، وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ فَلَمَّا فُرِضَ رَمَضَانُ تُرِكَ»، وَكَانَ عَبْدُ اللَّهِ لاَ يَصُومُهُ إِلَّا أَنْ يُوَافِقَ صَوْمَهُ»

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আশুরার দিন সাওম পালন করেছেন এবং এ সিয়ামের জন্য আদেশও করেছেন। পরে যখন রমযানের সাওম ফরয হলো তখন তা ছেড়ে দেওয়া হয়। ‘আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এ সাওম পালন করতেন না, তবে মাসের যে দিনগুলোতে সাধারন সাওম পালন করতেন, তাঁর সাথে মিল হলে করতেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৯২।]

আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«بَيْنَمَا نَحْنُ جُلُوسٌ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي المَسْجِدِ، دَخَلَ رَجُلٌ عَلَى جَمَلٍ، فَأَنَاخَهُ فِي المَسْجِدِ ثُمَّ عَقَلَهُ، ثُمَّ قَالَ لَهُمْ : أَيُّكُمْ مُحَمَّدٌ؟ وَالنَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُتَّكِئٌ بَيْنَ ظَهْرَانَيْهِمْ، فَقُلْنَا : هَذَا الرَّجُلُ الأَبْيَضُ المُتَّكِئُ . فَقَالَ لَهُ الرَّجُلُ : يَا ابْنَ عَبْدِ المُطَّلِبِ فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «قَدْ أَجَبْتُكَ» . فَقَالَ الرَّجُلُ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : إِنِّي سَائِلُكَ فَمُشَدِّدٌ عَلَيْكَ فِي المَسْأَلَةِ، فَلاَ تَجِدْ عَلَيَّ فِي نَفْسِكَ؟ فَقَالَ : «سَلْ عَمَّا بَدَا لَكَ» فَقَالَ : أَسْأَلُكَ بِرَبِّكَ وَرَبِّ مَنْ قَبْلَكَ، آللَّهُ أَرْسَلَكَ إِلَى النَّاسِ كُلِّهِمْ؟ فَقَالَ : «اللَّهُمَّ نَعَمْ» . قَالَ : أَنْشُدُكَ بِاللَّهِ، آللَّهُ أَمَرَكَ أَنْ نُصَلِّيَ الصَّلَوَاتِ الخَمْسَ فِي اليَوْمِ وَاللَّيْلَةِ؟ قَالَ : «اللَّهُمَّ نَعَمْ» . قَالَ : أَنْشُدُكَ بِاللَّهِ، آللَّهُ أَمَرَكَ أَنْ نَصُومَ هَذَا الشَّهْرَ مِنَ السَّنَةِ؟ قَالَ : «اللَّهُمَّ نَعَمْ» . قَالَ : أَنْشُدُكَ بِاللَّهِ، آللَّهُ أَمَرَكَ أَنْ تَأْخُذَ هَذِهِ الصَّدَقَةَ مِنْ أَغْنِيَائِنَا فَتَقْسِمَهَا عَلَى فُقَرَائِنَا؟ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «اللَّهُمَّ نَعَمْ» . فَقَالَ الرَّجُلُ : آمَنْتُ بِمَا جِئْتَ بِهِ، وَأَنَا رَسُولُ مَنْ وَرَائِي مِنْ قَوْمِي، وَأَنَا ضِمَامُ بْنُ ثَعْلَبَةَ أَخُو بَنِي سَعْدِ بْنِ بَكْرٍ وَرَوَاهُ مُوسَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ، وَعَلِيُّ بْنُ عَبْدِ الحَمِيدِ، عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ المُغِيرَةِ، عَنْ ثَابِتٍ، عَنْ أَنَسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِهَذَا»

“একবার আমরা রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে মসজিদে বসা ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি সওয়ার অবস্থায় ঢুকল। মসজিদে (প্রাঙ্গণে) সে তার উটটি বসিয়ে বেঁধে রাখল। এরপর সাহাবীদের লক্ষ্য করে বলল, ‘তোমাদের মধ্যে আল্লাহর রাসূল কে?’ রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তার সামনেই হেলান দিয়ে বসা ছিলেন। আমরা বললাম, ‘এই হেলান দিয়ে বসা ফর্সা রঙের ব্যক্তিই হলেন তিনি।’ তারপর লোকটি তাঁকে লক্ষ্য করে বলল, ‘হে আব্দুল মুত্তালিবের পুত্র!’ রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আমি তোমার জওয়াব দিচ্ছি।’ লোকটি বলল, ‘আমি আপনাকে কিছু প্রশ্ন করব এবং সে প্রশ্ন করার ব্যাপারে কঠোর হব, এতে আপনি রাগ করবেন না।’ তিনি বললেন, ‘তোমার যেমন ইচ্ছা প্রশ্ন কর।’ সে বলল, ‘আমি আপনাকে  আপনার রব ও আপনার পূর্ববর্তীদের রবের কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, আল্লাহই কি আপনাকে সব মানুষের জন্য রাসূলরূপে পাঠিয়েছেন?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহ সাক্ষী, হ্যাঁ।’ সে বলল, ‘আমি আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, আল্লাহ্ই কি আপনাকে দিন ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করতে নির্দেশ দিয়েছেন?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহ সাক্ষী, হ্যাঁ। সে বলল, ‘আমি আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, আল্লাহই কি আপনাকে বছরের এ মাসে (রমযান) সাওম পালনের নির্দেশ দিয়েছেন?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহ সাক্ষী, হ্যাঁ।’ সে বলল, ‘আমি আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, আল্লাহ্ই কি আপনাকে নির্দেশ দিয়েছেন, আমাদের ধনীদের থেকে সদকা (যাকাত) উসূল করে গরীবদের মধ্যে ভাগ করে দিতে?’ রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আল্লাহ সাক্ষী, হ্যাঁ।’ এরপর লোকটি বলল, ‘আমি ঈমান আনলাম আপনি যা (যে শরী‘আত) এনেছেন তার ওপর। আর আমি আমার কওমের রেখে আসা লোকজনের পক্ষে প্রতিনিধি, আমার নাম যিমাম ইবন সা‘লাবা, বনী সা‘দ ইবন বকর গোত্রের একজন। মূসা ও আলী ইবন আব্দুল হামীদ রহ. আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সূত্রেও এরূপ বর্ণনা করেছেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৩, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩।]

আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«نُهِينَا أَنْ نَسْأَلَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ شَيْءٍ، فَكَانَ يُعْجِبُنَا أَنْ يَجِيءَ الرَّجُلُ مِنْ أَهْلِ الْبَادِيَةِ الْعَاقِلُ، فَيَسْأَلَهُ، وَنَحْنُ نَسْمَعُ، فَجَاءَ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْبَادِيَةِ، فَقَالَ : يَا مُحَمَّدُ، أَتَانَا رَسُولُكَ فَزَعَمَ لَنَا أَنَّكَ تَزْعُمُ أَنَّ اللهَ أَرْسَلَكَ، قَالَ : «صَدَقَ»، قَالَ : فَمَنْ خَلَقَ السَّمَاءَ؟ قَالَ : «اللهُ»، قَالَ : فَمَنْ خَلَقَ الْأَرْضَ؟ قَالَ : «اللهُ»، قَالَ : فَمَنْ نَصَبَ هَذِهِ الْجِبَالَ، وَجَعَلَ فِيهَا مَا جَعَلَ؟ قَالَ : «اللهُ»، قَالَ : فَبِالَّذِي خَلَقَ السَّمَاءَ، وَخَلَقَ الْأَرْضَ، وَنَصَبَ هَذِهِ الْجِبَالَ، آللَّهُ أَرْسَلَكَ؟ قَالَ : «نَعَمْ»، قَالَ : وَزَعَمَ رَسُولُكَ أَنَّ عَلَيْنَا خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِي يَوْمِنَا، وَلَيْلَتِنَا، قَالَ : «صَدَقَ»، قَالَ : فَبِالَّذِي أَرْسَلَكَ، آللَّهُ أَمَرَكَ بِهَذَا؟ قَالَ : «نَعَمْ»، قَالَ : وَزَعَمَ رَسُولُكَ أَنَّ عَلَيْنَا زَكَاةً فِي أَمْوَالِنَا، قَالَ : «صَدَقَ»، قَالَ : فَبِالَّذِي أَرْسَلَكَ، آللَّهُ أَمَرَكَ بِهَذَا؟ قَالَ : «نَعَمْ»، قَالَ : وَزَعَمَ رَسُولُكَ أَنَّ عَلَيْنَا صَوْمَ شَهْرِ رَمَضَانَ فِي سَنَتِنَا، قَالَ : «صَدَقَ»، قَالَ : فَبِالَّذِي أَرْسَلَكَ، آللَّهُ أَمَرَكَ بِهَذَا؟ قَالَ : «نَعَمْ»، قَالَ : وَزَعَمَ رَسُولُكَ أَنَّ عَلَيْنَا حَجَّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا، قَالَ : «صَدَقَ»، قَالَ : ثُمَّ وَلَّى، قَالَ : وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ، لَا أَزِيدُ عَلَيْهِنَّ، وَلَا أَنْقُصُ مِنْهُنَّ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «لَئِنْ صَدَقَ لَيَدْخُلَنَّ الْجَنَّةَ»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কোনো বিষয়ে প্রশ্ন করার ব্যাপারে আমাদের নিষেধ করা হয়েছিল। তাই আমরা চাইতাম যে, গ্রাম থেকে কোনো বুদ্ধিমান ব্যক্তি এসে তাঁকে প্রশ্ন করুক আর আমরা তা শুনি। তারপর একদিন গ্রাম থেকে এক ব্যক্তি এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল, হে মুহাম্মদ! আমাদের কাছে আপনার দূত এসে বলেছে, আপনি দাবি করেছেন যে, আল্লাহ আপনাকে রাসুল হিসাবে পাঠিয়েছেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সত্যই বলেছে। আগন্তুক বলল, আসমান কে সৃষ্টি করেছেন? তিনি বললেন, আল্লাহ। আগন্তুক বলল, জমিন কে সৃষ্টি করেছেন? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,  আল্লাহ। আগন্তুক বলল, এসব পর্বতমালা কে স্থাপন করেছেন এবং এর মধ্যে যা কিছু আছে তা কে সৃষ্টি করেছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ। আগন্তুক বলল, কসম সেই সত্তার! যিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন এবং এসব পর্বতমালা স্থাপন করেছেন। আল্লাহই আপনাকে রাসুলরূপে পাঠিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। আগন্তুক বলল, আপনার দূত বলে যে, আমাদের ওপর দিনে ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সত্যই বলেছে। আগন্তুক বলল, যিনি আপনাকে রাসুলরূপে পাঠিয়েছেন তাঁর কসম, আল্লাহ-ই কি আপনাকে এর নির্দেশ দিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। আগন্তুক বলল, আপনার দূত বলে যে, আমাদের ওপর আমাদের মালের যাকাত দেওয়া ফরয। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঠিকই বলেছো আগন্তুক বলল, যিনি আপনাকে রাসুলরূপে পাঠিয়েছেন, তাঁর কসম, আল্লাহ-ই কি আপনাকে এর নির্দেশ দিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। আগন্তুক বলল, আপনার দূত বলে যে, প্রতি বছর রমযান মাসের সাওম পালন করা আমাদের ওপর ফরয। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সত্যই বলেছে। আগন্তুক বলল, যিনি আপনাকে রাসুল হিসেবে পাঠিয়েছেন, তার কসম, আল্লাহ-ই কি আপনাকে এর  নির্দেশ দিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। আগন্তুক বলল, আপনার দূত বলে যে, আমাদের মধ্যে যে  বায়তুল্লায় যেতে সক্ষম তার ওপর হজ ফরয। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সত্যি বলেছে। বর্ণনাকারী বলেন যে, তারপর আগন্তুক চলে যেতে যেতে বলল, যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন তার কসম, আমি এর অতিরিক্তও করব না এবং এর কমও করব না। এ কথা শুনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, লোকটি সত্য বলে থাকলে অবশ্যই সে জান্নাতে যাবে।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২।]

ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«صَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَاشُورَاءَ، وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ فَلَمَّا فُرِضَ رَمَضَانُ تُرِكَ»، وَكَانَ عَبْدُ اللَّهِ لاَ يَصُومُهُ إِلَّا أَنْ يُوَافِقَ صَوْمَهُ»

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আশুরার দিন সাওম পালন করেছেন এবং এ সিয়ামের জন্য আদেশও করেছেন। পরে যখন রমযানের সাওম ফরয হলো তখন তা ছেড়ে দেওয়া হয়। ‘আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এ সাওম পালন করতেন না, তবে মাসের যে দিনগুলোতে সাধারণ সাওম পালন করতেন, তাঁর সাথে মিল হলে করতেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৯২, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১২৬।]

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত,

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، : أَنَّ قُرَيْشًا كَانَتْ تَصُومُ يَوْمَ عَاشُورَاءَ فِي الجَاهِلِيَّةِ، ثُمَّ أَمَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِصِيَامِهِ حَتَّى فُرِضَ رَمَضَانُ، وَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «مَنْ شَاءَ فَلْيَصُمْهُ وَمَنْ شَاءَ أَفْطَرَ»

“জাহেলী যুগে কুরাইশগণ ‘আশুরার দিন সাওম পালন করত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও পরে এ সাওম পালনের নির্দেশ দেন। অবশেষে রমযানের সাওম ফরয হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যার ইচ্ছা ‘আশুরার সাওম পালন করবে এবং যার ইচ্ছা সে সাওম পালন করবে না।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৯৩।]

ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ " بُنِيَ الإِسْلاَمُ عَلَى خَمْسٍ : شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، وَإِقَامِ الصَّلاَةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَالحَجِّ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ»

“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি। আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং নিশ্চয় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল -এ কথার সাক্ষ্য দান, সালাত কায়েম করা, যাকাত দেওয়া, হজ করা এবং রমযানের সাওম পালন করা।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬।]

আবু জামরা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كُنْتُ أَقْعُدُ مَعَ ابْنِ عَبَّاسٍ يُجْلِسُنِي عَلَى سَرِيرِهِ فَقَالَ : أَقِمْ عِنْدِي حَتَّى أَجْعَلَ لَكَ سَهْمًا مِنْ مَالِي فَأَقَمْتُ مَعَهُ شَهْرَيْنِ، ثُمَّ قَالَ : إِنَّ وَفْدَ عَبْدِ القَيْسِ لَمَّا أَتَوُا النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : «مَنِ القَوْمُ؟ - أَوْ مَنِ الوَفْدُ؟ -» قَالُوا : رَبِيعَةُ . قَالَ : «مَرْحَبًا بِالقَوْمِ، أَوْ بِالوَفْدِ، غَيْرَ خَزَايَا وَلاَ نَدَامَى»، فَقَالُوا : يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّا لاَ نَسْتَطِيعُ أَنْ نَأْتِيكَ إِلَّا فِي الشَّهْرِ الحَرَامِ، وَبَيْنَنَا وَبَيْنَكَ هَذَا الحَيُّ مِنْ كُفَّارِ مُضَرَ، فَمُرْنَا بِأَمْرٍ فَصْلٍ، نُخْبِرْ بِهِ مَنْ وَرَاءَنَا، وَنَدْخُلْ بِهِ الجَنَّةَ، وَسَأَلُوهُ عَنِ الأَشْرِبَةِ : فَأَمَرَهُمْ بِأَرْبَعٍ، وَنَهَاهُمْ عَنْ أَرْبَعٍ، أَمَرَهُمْ : بِالإِيمَانِ بِاللَّهِ وَحْدَهُ، قَالَ : «أَتَدْرُونَ مَا الإِيمَانُ بِاللَّهِ وَحْدَهُ» قَالُوا : اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، قَالَ : «شَهَادَةُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، وَإِقَامُ الصَّلاَةِ، وَإِيتَاءُ الزَّكَاةِ، وَصِيَامُ رَمَضَانَ، وَأَنْ تُعْطُوا مِنَ المَغْنَمِ الخُمُسَ» وَنَهَاهُمْ عَنْ أَرْبَعٍ : عَنِ الحَنْتَمِ وَالدُّبَّاءِ وَالنَّقِيرِ وَالمُزَفَّتِ " ، وَرُبَّمَا قَالَ : «المُقَيَّرِ» وَقَالَ : «احْفَظُوهُنَّ وَأَخْبِرُوا بِهِنَّ مَنْ وَرَاءَكُمْ»

“আমি ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার সঙ্গে বসতাম। তিনি আমাকে তাঁর আসনে বসাতেন। একবার তিনি বললেন, তুমি আমার কাছে থেকে যাও, আমি তোমাকে আমার সম্পদ থেকে কিছু অংশ দেব। আমি দু’মাস তাঁর সঙ্গে অবস্থান করলাম। তারপর একদিন তিনি বললেন, আব্দুল কায়েসের একটি প্রতিনিধি দল রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কোন কওমের? অথবা কোন প্রতিনিধি দলের? তারা বলল, রাবী‘আ গোত্রের।’ তিনি বললেন, মারহাবা সে গোত্র বা সে প্রতিনিধি দলের প্রতি, যারা অপদস্থ ও লজ্জিত না হয়েই এসেছে। তারা বলল, ইয়া রাসূলুল্লহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! নিষিদ্ধ মাসসমূহ ছাড়া অন্য কোনো সময় আমরা আপনার কাছে আসতে পারি না। (কারণ) আমাদের এবং আপনার মাঝখানে মুদার গোত্রীয় কাফিরদের বসবাস। তাই আমাদের কিছু স্পষ্ট হুকুম দিন, যাতে আমরা যাদের পিছনে রেখে এসেছি তাদের জানিয়ে দিতে পারি এবং যাতে আমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি। তারা পানীয় সম্পর্কেও জিজ্ঞাসা করল। তখন তিনি তাদের চারটি জিনিসের নির্দেশ এবং চারটি জিনিস থেকে নিষেধ করলেন। তাদের এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার আদেশ দিয়ে বললেন, ‘এক আল্লাহ্‌ প্রতি ঈমান আনা কিভাবে হয় তা কি তোমরা জান?’ তাঁরা বলল, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন।’ তিনি বললেন, ‘তা হলো এ সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল এবং সালাত কায়েম করা, যাকাত দেওয়া, রমযানের সাওম পালন করা আর তোমরা গণীমতের মাল থেকে এক-পঞ্চমাংশ প্রদান করবে। তিনি তাদেরকে চারটি জিনিস থেকে নিষেধ করলেন। তা হলো সবুজ কলসী, শুকনো লাউয়ের খোল, খেজুর গাছের গুঁড়ি থেকে তৈরিকৃত পাত্র এবং আলকাতরার পালিশকৃত পাত্র। বর্ণনাকারী বলেন, বর্ণনাকারী ( المُزَفَّتِ এর স্থলে) কখনও المُقَيَّرِ উল্লেখ করেছেন (উভয় শব্দের অর্থ একই)। তিনি আরো বলেন, তোমরা এগুলো ভালো করে আয়ত্ত করে নাও এবং অন্যদেরও এগুলি জানিয়ে দিও।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৩, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭।]

আবু সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেন যে,

«أَنَّ أُنَاسًا مِنْ عَبْدِ الْقَيْسِ قَدِمُوا عَلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالُوا : يَا نَبِيَّ اللهِ، إِنَّا حَيٌّ مِنْ رَبِيعَةَ، وَبَيْنَنَا وَبَيْنَكَ كُفَّارُ مُضَرَ، وَلَا نَقْدِرُ عَلَيْكَ إِلَّا فِي أَشْهُرِ الْحُرُمِ، فَمُرْنَا بِأَمْرٍ نَأْمُرُ بِهِ مَنْ وَرَاءَنَا، وَنَدْخُلُ بِهِ الْجَنَّةَ إِذَا نَحْنُ أَخَذْنَا بِهِ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " آمُرُكُمْ بِأَرْبَعٍ، وَأَنْهَاكُمْ عَنْ أَرْبَعٍ : اعْبُدُوا اللهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا، وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ، وَآتُوا الزَّكَاةَ، وَصُومُوا رَمَضَانَ»

“আব্দুল কায়স গোত্রের কয়েকজন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থিত হয়ে আরয করল, হে আল্লাহর নবী! আমরা রাবী’আ গোত্রের লোক। আপনার ও আমাদের মধ্যবতী যাতায়াত পথে মুদার গোত্রের কাফিররা অবস্থান করায় ‘হারাম মাস’ ছাড়া আমরা আপনার কাছে আসতে পারি না। অতএব, আপনি আমাদের এমন কাজের আদেশ দিন, আমাদের যারা আসে নি তাদের জানাতে পারি এবং যা পালন করে আমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের চারটি বিষয় পালনের এবং চারটি বিষয় থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিচ্ছি। পালনীয় চারটি বিষয় হলো, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সাথে অন্য কাউকে শরীক করবে না, সালাত কায়েম করবে, যাকাত দিবে, রমযানের সাওম পালন করবে এবং গনীমতের এক-পঞ্চমাংশ প্রদান করবে।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮।]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَارِزًا يَوْمًا لِلنَّاسِ، فَأَتَاهُ جِبْرِيلُ فَقَالَ : مَا الإِيمَانُ؟ قَالَ : «الإِيمَانُ أَنْ تُؤْمِنَ بِاللَّهِ وَمَلاَئِكَتِهِ، وَكُتُبِهِ، وَبِلِقَائِهِ، وَرُسُلِهِ وَتُؤْمِنَ بِالْبَعْثِ» . قَالَ : مَا الإِسْلاَمُ؟ قَالَ : " الإِسْلاَمُ : أَنْ تَعْبُدَ اللَّهَ، وَلاَ تُشْرِكَ بِهِ شَيْئًا، وَتُقِيمَ الصَّلاَةَ، وَتُؤَدِّيَ الزَّكَاةَ المَفْرُوضَةَ، وَتَصُومَ رَمَضَانَ ". قَالَ : مَا الإِحْسَانُ؟ قَالَ : «أَنْ تَعْبُدَ اللَّهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ، فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ»، قَالَ : مَتَى السَّاعَةُ؟ قَالَ : " مَا المَسْئُولُ عَنْهَا بِأَعْلَمَ مِنَ السَّائِلِ، وَسَأُخْبِرُكَ عَنْ أَشْرَاطِهَا : إِذَا وَلَدَتِ الأَمَةُ رَبَّهَا، وَإِذَا تَطَاوَلَ رُعَاةُ الإِبِلِ البُهْمُ فِي البُنْيَانِ، فِي خَمْسٍ لاَ يَعْلَمُهُنَّ إِلَّا اللَّهُ " ثُمَّ تَلاَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ﴿ إِنَّ ٱللَّهَ عِندَهُۥ عِلۡمُ ٱلسَّاعَةِ﴾ [ لقمان : ٣٤ ] ، ثُمَّ أَدْبَرَ فَقَالَ : «رُدُّوهُ» فَلَمْ يَرَوْا شَيْئًا، فَقَالَ : «هَذَا جِبْرِيلُ جَاءَ يُعَلِّمُ النَّاسَ دِينَهُمْ» قَالَ أَبُو عَبْدِ اللَّهِ : جَعَلَ ذَلِكَ كُلَّهُ مِنَ الإِيمَانِ»

“একদিন রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনসমক্ষে বসা ছিলেন, এমন সময় তাঁর কাছে এক ব্যক্তি এসে জিজ্ঞাসা করলেন ‘ঈমান কী?’ তিনি বললেন, ‘ঈমান হলো, আপনি বিশ্বাস রাখবেন আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফিরিশতাগণের প্রতি, (কিয়ামতের দিন) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের প্রতি এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি। আপনি আরো বিশ্বাস রাখবেন পুনরুত্থানের প্রতি।’ তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইসলাম কী?’ তিনি বললেন, ‘ইসলাম হলো, আপনি আল্লাহর ইবাদত করবেন এবং তাঁর সঙ্গে শরীক করবেন না, সালাত কায়েম করবেন, ফরয যাকাত আদায় করবেন এবং রমযানের সাওম পালন করবেন।’ ঐ ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইহসান কী?’ তিনি বললেন, ‘আপনি এমন ভাবে আল্লাহর ইবাদত করবেন যেন আপনি তাঁকে দেখছেন, আর যদি আপনি তাঁকে দেখতে না পান তবে (বিশ্বাস রাখবেন যে) তিনি আপনাকে দেখছেন।’ ঐ ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কিয়ামত কবে?’ তিনি বললেন, ‘এ ব্যাপারে যাকে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে, তিনি জিজ্ঞাসাকারী অপেক্ষা বেশি জানেন না। তবে আমি আপনাকে কিয়ামতের আলামতসমূহ বলে দিচ্ছি: বাঁদী যখন তার প্রভুকে প্রসব করবে এবং উটের নগণ্য রাখালেরা যখন বড় বড় অট্টালিকা নির্মাণে প্রতিযোগিতা করবে। (কিয়ামতের বিষয়) সেই পাঁচটি জিনিসের অন্তর্ভূক্ত, যা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।’ এরপর রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই আয়াতটি শেষ পর্যন্ত তিলাওয়াত করলেন,

﴿إِنَّ ٱللَّهَ عِندَهُۥ عِلۡمُ ٱلسَّاعَةِ﴾ [ لقمان : ٣٤ ]

“কিয়ামতের জ্ঞান কেবল আল্লাহই নিকট..।” [সূরা লুকমান, আয়াত: ৩৪], এরপর ঐ ব্যক্তি চলে গেলে তিনি বললেন, ‘তোমরা তাকে ফিরিয়ে আন।’ তারা কিছুই দেখতে পেল না। তখন তিনি বললেন, ‘ইনি জিবরীল আলাইহিস সালাম। লোকদের দীন শেখাতে এসেছিলেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫০, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯।]

রমযান ও সাওমের ফযীলত
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«الصِّيَامُ جُنَّةٌ فَلاَ يَرْفُثْ وَلاَ يَجْهَلْ، وَإِنِ امْرُؤٌ قَاتَلَهُ أَوْ شَاتَمَهُ فَلْيَقُلْ : إِنِّي صَائِمٌ مَرَّتَيْنِ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَخُلُوفُ فَمِ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللَّهِ تَعَالَى مِنْ رِيحِ المِسْكِ» «يَتْرُكُ طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ وَشَهْوَتَهُ مِنْ أَجْلِي الصِّيَامُ لِي، وَأَنَا أَجْزِي بِهِ وَالحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا»

“সাওম ঢালস্বরূপ। সুতরাং অশ্লীলতা করবে না এবং মুর্খের মতো কাজ করবে না। যদি কেউ তাঁর সাথে ঝগড়া করতে চায়, তাঁকে গালি দেয়, তবে সে যেন দুই বার বলে, আমি সাওম পালন করছি। ঐ সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ, অবশ্যই সাওম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিসকের গন্ধের চেয়েও উৎকৃষ্ট। সে আমার জন্য আহার, পান ও কামাচার পরিত্যাগ করে। সাওম আমারই জন্য। তাই এর পুরষ্কার আমি নিজেই দান করব। আর প্রত্যেক নেক কাজের বিনিময় দশ গুণ”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৯৪, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৫১।]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إِذَا جَاءَ رَمَضَانُ فُتِّحَتْ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ، وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ النَّارِ، وَصُفِّدَتِ الشَّيَاطِينُ»

“যখন রমযান আসে তখন জান্নাতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানগুলোকে শিকলে বন্দী করা হয়”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০৭৯।]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إِذَا كَانَ رَمَضَانُ فُتِّحَتْ أَبْوَابُ الرَّحْمَةِ، وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ جَهَنَّمَ، وَسُلْسِلَتِ الشَّيَاطِينُ»

“রমযান মাস আসলে জান্নাতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়, জাহান্নমের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানগুলোকে শিকলে বন্দী করা হয়”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০৭৯।]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে আরও বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إِذَا كَانَ أَوَّلُ لَيْلَةٍ مِنْ شَهْرِ رَمَضَانَ صُفِّدَتِ الشَّيَاطِينُ، وَمَرَدَةُ الجِنِّ، وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ النَّارِ، فَلَمْ يُفْتَحْ مِنْهَا بَابٌ، وَفُتِّحَتْ أَبْوَابُ الجَنَّةِ، فَلَمْ يُغْلَقْ مِنْهَا بَابٌ، وَيُنَادِي مُنَادٍ : يَا بَاغِيَ الخَيْرِ أَقْبِلْ، وَيَا بَاغِيَ الشَّرِّ أَقْصِرْ، وَلِلَّهِ عُتَقَاءُ مِنَ النَّارِ، وَذَلكَ كُلُّ لَيْلَةٍ» .

“শয়তান ও দুষ্ট জিন্নদেরকে রমযান মাসের প্রথম রাতেই শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করা হয় এবং এর একটি দরজাও তখন আর খোলা হয় না, খুলে দেওয়া হয় জান্নাতের দরজাগুলো এবং এর একটি দরজাও তখন আর বন্ধ করা হয় না। (এ মাসে) একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দিতে থাকেন, হে কল্যাণ অন্বেষণকারী! অগ্রসর হও। হে পাপাসক্ত! বিরত হও। আর বহু লোককে আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে এ মাসে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে দেওয়া হয় এবং প্রত্যেক রাতেই এরূপ থেকে থাকে।” [তিরমিযী, হাদীস নং ৬৮২, ইমাম তিরমিযী রহ. বলেছেন, এ পরিচ্ছেদে আব্দুর রহমান ইবন ‘আউফ, ইবন মাস‘ঊদ ও সালমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম থেকে হাদীস বর্ণিত আছে। ইবন মাজাহ, ১৬৪২। আলবানী রহ. বলেছেন, হাদীসটি সহীহ। নাসায়ী, ২১০৭।]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«أَتَاكُمْ رَمَضَانُ شَهْرٌ مُبَارَكٌ فَرَضَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ عَلَيْكُمْ صِيَامَهُ، تُفْتَحُ فِيهِ أَبْوَابُ السَّمَاءِ، وَتُغْلَقُ فِيهِ أَبْوَابُ الْجَحِيمِ، وَتُغَلُّ فِيهِ مَرَدَةُ الشَّيَاطِينِ، لِلَّهِ فِيهِ لَيْلَةٌ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ، مَنْ حُرِمَ خَيْرَهَا فَقَدْ حُرِمَ»

“তোমাদের নিকট রমযান উপস্থিত হয়েছে, যা একটি বরকতময় মাস। তোমাদের ওপরে আল্লাহ তা‘আলা অত্র মাসের সাওম ফরয করেছেন। এ মাস আগমনের কারণে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়, আর আল্লাহর অবাধ্য শয়তানদের গলায় লোহার বেড়ী পরানো হয়। এ মাসে একটি রাত রয়েছে যা এক হাজার মাস অপেক্ষাও উত্তম। যে ব্যক্তি সে রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত রয়ে গেল সে প্রকৃত বঞ্চিত রয়ে গেল।” [নাসায়ী, হাদীস নং ২১০৬, আলবানী রহ. বলেছেন, হাদীসটি সহীহ। মুসনাদে আহমদ, ৭১৪৮, শু ‘আইব আরনাঊত বলেছেন, হাদীসটি সহীহ।]

ওয়াসিলা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«أُنْزِلَتْ صُحُفُ إِبْرَاهِيمَ أَوَّلَ لَيْلَةٍ مِنْ شَهْرِ رَمَضَانَ، وَأُنْزِلَتِ التَّوْرَاةُ لِسِتٍّ مَضَيْنَ مِنْ رَمَضَانَ وَأُنْزِلَ الْإِنْجِيلُ لِثَلَاثَ عَشْرَةَ مَضَتْ مِنْ رَمَضَانَ، وَأُنْزِلَ الزَّبُورُ لِثَمَانَ عَشْرَةَ خَلَتْ مِنْ رَمَضَانَ، وَأُنْزِلَ الْقُرْآنُ لِأَرْبَعٍ وَعِشْرِينَ خَلَتْ مِنْ رَمَضَانَ»

“রমযানের প্রথম রাত্রিতে ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ওপর সহীফা নাযিল হয়, রমযানের ছয় দিন অতিবাহিত হলে (মূসা আলাইহিস সালামের ওপর) তাওরাত নাযিল হয়, তের রমযান শেষে (ঈসা আলাইহিস সালামের ওপর) ইঞ্জিল নাযিল হয়, আঠারো রমযান শেষ হলে (দাউদ আলাইহিস সালামের ওপর) যাবুর নাযিল হয় এবং চব্বিশ রমযান শেষে (মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর) কুরআন নাযিল হয়।” [আল ‘মুজামুল কাবীর লিততবরানী, হাদীস নং ১৮৫। জামে‘উস সগীর ওয়াযিয়াদাহ, হাদীস নং ২৩৭৭। আলবানী রহ. বলেছেন, হাদীসটি হাসান, দেখুন, সহীহ জামে‘উস সগীর, হাদীস নং ১৪৯৭। শু‘আবুল ঈমান লিলবাইহাকী, ২০৫৩। অধিকাংশ বর্ণনায় ২৪শে রমাদানের কথা উল্লেখ আছে, অর্থাৎ ২৫শে রমাদান রাতে কুরআন নাযিল হয়েছে। তবে মু‘জামুল কাবীর এর বর্ণনায় ২৪শে রমাদানের পরিবর্তে ১৪ই রমাদান এসেছে।]

কা‘ব ইবন উজরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার বললেন,

«احْضَرُوا الْمِنْبَرَ فَحَضَرْنَا فَلَمَّا ارْتَقَى دَرَجَةً قَالَ : آمِينَ ، فَلَمَّا ارْتَقَى الدَّرَجَةَ الثَّانِيَةَ قَالَ : «آمِينَ» فَلَمَّا ارْتَقَى الدَّرَجَةَ الثَّالِثَةَ قَالَ : آمِينَ، فَلَمَّا نَزَلَ قُلْنَا : يَا رَسُولَ اللَّهِ لَقَدْ سَمِعْنَا مِنْكَ الْيَوْمَ شَيْئًا مَا كُنَّا نَسْمَعُهُ قَالَ : إِنَّ جِبْرِيلَ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَرَضَ لِي فَقَالَ : بُعْدًا لِمَنْ أَدْرَكَ رَمَضَانَ فَلَمْ يَغْفَرْ لَهُ قُلْتُ : آمِينَ، فَلَمَّا رَقِيتُ الثَّانِيَةَ قَالَ : بُعْدًا لِمَنْ ذُكِرْتُ عِنْدَهُ فَلَمْ يُصَلِّ عَلَيْكَ قُلْتُ : آمِينَ، فَلَمَّا رَقِيتُ الثَّالِثَةَ قَالَ : بُعْدًا لِمَنْ أَدْرَكَ أَبَوَاهُ الْكِبَرَ عِنْدَهُ أَوْ أَحَدُهُمَا فَلَمْ يُدْخِلَاهُ الْجَنَّةَ قُلْتُ : آمِينَ»

“তোমরা মিম্বার নিয়ে আসো, ফলে আমরা মিম্বার নিয়ে আসলাম। যখন তিনি মিম্বারের প্রথম সিঁড়িতে উঠলেন, বললেন, আমীন। দ্বিতীয় সিঁড়িতে উঠে আবার বললেন, আমীন। অনুরূ পভাবে তৃতীয় সিঁড়িতে উঠে বললেন, আমীন। তিনি মিম্বার থেকে নেমে আসলে আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার কাছে আমরা আজ যা শুনলাম ইতোপূর্বে কখনও এরূপ শুনি নি। তিনি বললেন, জিবরীল আলাইহিস সালাম আমার কাছে আসলেন, তিনি বললেন, সে ব্যক্তি ধ্বংস হোক যে রমযান পেলো অথচ নিজের গুনাহ মাফ করাতে পারল না, আমি বললাম, আমীন। আমি যখন দ্বিতীয় সিঁড়িতে উঠলাম জিবরীল আলাইহিস সালাম বললেন, সে ব্যক্তি ধ্বংস হোক যার কাছে আপনার নাম উল্লেখ করা হলো অথচ সে আপনার ওপর দুরুদ ও সালাম পেশ করল না। আমি বললাম, আমীন। আবার আমি যখন তৃতীয় সিঁড়িতে উঠলাম তখন জিবরীল আলাইহিস সালাম বললেন, সে ব্যক্তি ধ্বংস হোক যে বৃদ্ধ অবস্থায় তার পিতামাতা দু’জনকে বা একজনকে পেল অথচ তাদের সেবা যত্ন করে জান্নাতে যেতে পারল না। আমি বললাম, আমীন।” [মুসতাদরাক হাকিম, হাদীস নং ৭২৫৬, ইমাম হাকিম রহ. বলেছেন, হাদীসের সনদটি সহীহ, তবে বুখারী ও মুসলিম কেউ উল্লেখ করেননি। ইমাম যাহাবী রহ. সহীহ বলেছেন। আবূ হুরাইরা, আনাস ও জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে অনুরূপ বর্ণনা আছে। দেখুন, তিরমিযী, হাদীস নং ৩৫৪৫। ইমাম তিরমিযী রহ. বলেছেন, হাদীসটি হাসান সহীহ। আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]

মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كُنْتُ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سَفَرٍ، فَأَصْبَحْتُ يَوْمًا قَرِيبًا مِنْهُ وَنَحْنُ نَسِيرُ، فَقُلْتُ : يَا رَسُولَ اللهِ أَخْبِرْنِي بِعَمَلٍ يُدْخِلُنِي الجَنَّةَ وَيُبَاعِدُنِي عَنِ النَّارِ، قَالَ : لَقَدْ سَأَلْتَنِي عَنْ عَظِيمٍ، وَإِنَّهُ لَيَسِيرٌ عَلَى مَنْ يَسَّرَهُ اللَّهُ عَلَيْهِ، تَعْبُدُ اللَّهَ وَلاَ تُشْرِكْ بِهِ شَيْئًا، وَتُقِيمُ الصَّلاَةَ، وَتُؤْتِي الزَّكَاةَ، وَتَصُومُ رَمَضَانَ، وَتَحُجُّ البَيْتَ , ثُمَّ قَالَ : أَلاَ أَدُلُّكَ عَلَى أَبْوَابِ الخَيْرِ : الصَّوْمُ جُنَّةٌ، وَالصَّدَقَةُ تُطْفِئُ الخَطِيئَةَ كَمَا يُطْفِئُ الْمَاءُ النَّارَ، وَصَلاَةُ الرَّجُلِ مِنْ جَوْفِ اللَّيْلِ قَالَ : ثُمَّ تَلاَ ﴿ تَتَجَافَىٰ جُنُوبُهُمۡ عَنِ ٱلۡمَضَاجِعِ﴾ [ السجدة : ١٦ ] حَتَّى بَلَغَ يَعْمَلُونَ , ثُمَّ قَالَ : أَلاَ أُخْبِرُكَ بِرَأْسِ الأَمْرِ كُلِّهِ وَعَمُودِهِ، وَذِرْوَةِ سَنَامِهِ؟ قُلْتُ : بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ، قَالَ : رَأْسُ الأَمْرِ الإِسْلاَمُ، وَعَمُودُهُ الصَّلاَةُ، وَذِرْوَةُ سَنَامِهِ الجِهَادُ , ثُمَّ قَالَ : أَلاَ أُخْبِرُكَ بِمَلاَكِ ذَلِكَ كُلِّهِ؟ قُلْتُ : بَلَى يَا نَبِيَّ اللهِ، فَأَخَذَ بِلِسَانِهِ قَالَ : كُفَّ عَلَيْكَ هَذَا، فَقُلْتُ : يَا نَبِيَّ اللهِ، وَإِنَّا لَمُؤَاخَذُونَ بِمَا نَتَكَلَّمُ بِهِ؟ فَقَالَ : ثَكِلَتْكَ أُمُّكَ يَا مُعَاذُ، وَهَلْ يَكُبُّ النَّاسَ فِي النَّارِ عَلَى وُجُوهِهِمْ أَوْ عَلَى مَنَاخِرِهِمْ إِلاَّ حَصَائِدُ أَلْسِنَتِهِمْ» .

“আমি একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে এক সফরে ছিলাম। একদিন চলার সময় আমি তাঁর নিকটবর্তী হয়ে গেলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন একটি ‘আমল সম্পর্কে অবহিত করুন যা আমাকে জান্নাতে দাখিল করবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে সরিয়ে দিবে। তিনি বললেন, তুমি তো বিরাট একটা বিষয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করলে। তবে আল্লাহ তা‘আলা যার জন্য তা সহজ করে দেন তার জন্য বিষয়টি অবশ্য সহজ। আল্লাহর ইবাদত করবে, তার সঙ্গে কোনো কিছু শরীক করবে না। সালাত কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবে, রমযানের সাওম পালন করবে, বায়তুল্লাহর হজ করবে। এরপর তিনি বললেন, সব কল্যাণের দ্বার (দরজা) সম্পর্কে কি আমি তোমাকে দিক-নির্দেশনা দিব? সাওম হলো ঢালস্বরূপ, পানি যেমন আগুন নিভিয়ে দেয় তেমনি সদকাও গুনাহসমূহকে নিশ্চি‎হ্ন করে দেয়  আর হলো মধ্য রাতের সালাত। এরপর তিনি তিলাওয়াত করলেন, 

﴿ تَتَجَافَىٰ جُنُوبُهُمۡ عَنِ ٱلۡمَضَاجِعِ﴾ [ السجدة : ١٦ ]

“তারা (মুমিনরা গভীর রাতে) শয্যা ত্যাগ করে।” [সূরা আস-সাজদা, আয়াত: ১৬] তারপর বললেন, তোমাকে এই সব কিছুর মাথা ও বুনিয়াদ এবং সর্বোচ্চ শীর্ষদেশ স্বরূপ আমল সম্পর্কে অবহিত করব কি? এরপর বললেন, অবশ্যই, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বললেন, সব কিছুর মাথা হলো ইসলাম, বুনিয়াদ হলো সালাত আর সর্বোচ্চ শীর্ষ হলো জিহাদ। এরপর বললেন, এ সব কিছুর মূল পুঁজি সম্পর্কে তোমাকে অবহিত করব কি? আমি বললাম, অবশ্যই, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি তাঁর জিহ্বা ধরে বললেন, এটিকে সংযত রাখ। আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী, আমরা যে কথাবার্তা বলি সে কারণেও কি আমাদের পাকড়াও করা হবে? তিনি বললেন, তোমাদের মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক, হে মু‘আয! লোকদের অধঃমুখে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়ার জন্য এ যবানের কামাই ছাড়া আর কি কিছু আছে নাকি?” [তিরমিযী, হাদীস নং ২৬১৬, ইমাম তিরমিযী রহ. বলেছেন, হাদীসটি হাসান সহীহ। আলবানী রহ. বলেছেন, হাদীসটি সহীহ। ইবন মাজাহ, ৩৯৭৩। মুসনাদে আহমাদ, ২২০১৬। মুহাক্কিক শু ‘আইব আরনাঊত বলেছেন, হাদীসটি বিভিন্ন সনদে সহীহ।]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَبِرَسُولِهِ، وَأَقَامَ الصَّلاَةَ، وَصَامَ رَمَضَانَ كَانَ حَقًّا عَلَى اللَّهِ أَنْ يُدْخِلَهُ الجَنَّةَ، جَاهَدَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَوْ جَلَسَ فِي أَرْضِهِ الَّتِي وُلِدَ فِيهَا، فَقَالُوا : يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَفَلاَ نُبَشِّرُ النَّاسَ؟ قَالَ : إِنَّ فِي الجَنَّةِ مِائَةَ دَرَجَةٍ، أَعَدَّهَا اللَّهُ لِلْمُجَاهِدِينَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ، مَا بَيْنَ الدَّرَجَتَيْنِ كَمَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالأَرْضِ، فَإِذَا سَأَلْتُمُ اللَّهَ، فَاسْأَلُوهُ الفِرْدَوْسَ، فَإِنَّهُ أَوْسَطُ الجَنَّةِ وَأَعْلَى الجَنَّةِ - أُرَاهُ - فَوْقَهُ عَرْشُ الرَّحْمَنِ، وَمِنْهُ تَفَجَّرُ أَنْهَارُ الجَنَّةِ» قَالَ مُحَمَّدُ بْنُ فُلَيْحٍ، عَنْ أَبِيهِ : وَفَوْقَهُ عَرْشُ الرَّحْمَنِ»

“আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি যে ঈমান আনল, সালাত আদায় করল ও রমযানের সাওম পালন করল সে আল্লাহর পথে জিহাদ করুক কিংবা স্বীয় জন্মভূমিতে বসে থাকুক, তাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া আল্লাহর দায়িত্ব হয়ে যায়। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমরা কি লোকদের এ সুসংবাদ পৌঁছে দিব না? তিনি বলেন, আল্লাহর পথে মুজাহিদদের জন্য আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতে একশটি মর্যাদার স্তর প্রস্তুত রেখেছেন। দু’টি স্তরের ব্যবধান আসমান ও জমিনের দুরত্বের ন্যায়। তোমরা আল্লাহর কাছে চাইলে ফেরদাউস চাইবে। কেননা এটাই হলো সবচেয়ে উত্তম ও সর্বোচ্চ জান্নাত। আমার মনে হয়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ-ও বলেছেন, এর উপরে রয়েছে ‘আরশে রহমান। আর সেখান থেকে জান্নাতের নহরসমূহ প্রবাহিত হচ্ছে। মুহাম্মদ ইবন ফুলাইহ্ রহ. তাঁর পিতার সূত্রে (নিঃসন্দেহে) বলেন, এর উপরে রয়েছে ‘আরশে রহমান।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৭৯০।]

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,

«قَدِمَ وَفْدُ عَبْدِ القَيْسِ فَقَالُوا : يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّا هَذَا الحَيَّ مِنْ رَبِيعَةَ، بَيْنَنَا وَبَيْنَكَ كُفَّارُ مُضَرَ، فَلَسْنَا نَصِلُ إِلَيْكَ إِلَّا فِي الشَّهْرِ الحَرَامِ، فَمُرْنَا بِأَمْرٍ نَأْخُذُ بِهِ وَنَدْعُو إِلَيْهِ مَنْ وَرَاءَنَا، قَالَ : " آمُرُكُمْ بِأَرْبَعٍ، وَأَنْهَاكُمْ عَنْ أَرْبَعٍ، الإِيمَانِ بِاللَّهِ : شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، - وَعَقَدَ بِيَدِهِ - وَإِقَامِ الصَّلاَةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَصِيَامِ رَمَضَانَ، وَأَنْ تُؤَدُّوا لِلَّهِ خُمُسَ مَا غَنِمْتُمْ، وَأَنْهَاكُمْ : عَنِ الدُّبَّاءِ، وَالنَّقِيرِ، وَالحَنْتَمِ، وَالمُزَفَّتِ»

“আব্দুল কায়স গোত্রের প্রতিনিধি দল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমরা রাবী‘আ গোত্রের একটি উপদল। আপনার ও আমাদের মাঝে মুদার (কাফির) গোত্রের বসবাস। তাই আমরা আপনার নিকট নিষিদ্ধ মাসসমূহ ব্যতীত অন্য সময় আসতে পারি না। কাজেই আপনি আমাদের এমন কাজের আদেশ করুন, যার ওপর আমরা আমল করব এবং আমাদের পশ্চাতে যারা রয়ে গেছে, তাদে কেও তা আমল করতে আহবান জানাবো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি তোমদেরকে চারটি কাজের আদেশ করছি এবং চারটি কাজ থেকে নিষেধ করছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাতের অঙ্গুলে তা গণনা করে বলেন, আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ঈমান আন। আর তা হচ্ছে এ সাক্ষ্য দান করা যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো ইলাহ নেই আর সালাত প্রতিষ্ঠা করা, যাকাত দান করা, রমযান মাসে সাওম পালন করা এবং আল্লাহর জন্য গনীমাত লব্ধ সম্পদের এক পঞ্চমাংশ আদায় করা। আর আমি তোমাদের শুল্ক লাউয়ের খোলে তৈরি পাত্র, খেজুর গাছের মূল দ্বারা তৈরি পাত্র, সবুজ মটকা, আলকাতরা প্রলিপ্ত মটকা ব্যবহার করতে নিষেধ করছি।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩০৯৫।]

আল্লাহর রাস্তায় সাওমের ফযীলত
আবু সঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,

«مَنْ صَامَ يَوْمًا فِي سَبِيلِ اللَّهِ، بَعَّدَ اللَّهُ وَجْهَهُ عَنِ النَّارِ سَبْعِينَ خَرِيفًا»

“যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় এক দিনও সাওম পালন করে, আল্লাহ তার মুখমণ্ডলকে (অর্থাৎ তাকে) জাহান্নামের আগুন থেকে সত্তর বছরের রাস্তা দূরে সরিয়ে নেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৮৪০, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৫৩।]

সাওম গুনাহের কাফফারা
হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«قَالَ عُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، مَنْ يَحْفَظُ حَدِيثًا عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الفِتْنَةِ؟ قَالَ حُذَيْفَةُ أَنَا سَمِعْتُهُ يَقُولُ : «فِتْنَةُ الرَّجُلِ فِي أَهْلِهِ وَمَالِهِ وَجَارِهِ، تُكَفِّرُهَا الصَّلاَةُ وَالصِّيَامُ وَالصَّدَقَةُ»، قَالَ : لَيْسَ أَسْأَلُ عَنْ ذِهِ، إِنَّمَا أَسْأَلُ عَنِ الَّتِي تَمُوجُ كَمَا يَمُوجُ البَحْرُ، قَالَ : وَإِنَّ دُونَ ذَلِكَ بَابًا مُغْلَقًا، قَالَ : فَيُفْتَحُ أَوْ يُكْسَرُ؟ قَالَ : يُكْسَرُ، قَالَ : ذَاكَ أَجْدَرُ أَنْ لاَ يُغْلَقَ إِلَى يَوْمِ القِيَامَةِ، فَقُلْنَا لِمَسْرُوقٍ : سَلْهُ أَكَانَ عُمَرُ يَعْلَمُ مَنِ البَابُ؟ فَسَأَلَهُ فَقَالَ : نَعَمْ، كَمَا يَعْلَمُ أَنَّ دُونَ غَدٍ اللَّيْلَةَ»

“একদিন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ফিতনা সম্পর্কিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসটি কার মুখস্ত আছে? হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, পরিবার, ধন-সম্পদ এবং প্রতিবেশিই মানুষের জন্য ফিতনা। সালাত, সাওম এবং সদকা এর কাফফারা হয়ে যায়। উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, এ ফিতনা সম্পর্কে আমি জিজ্ঞাসা করছি না, আমি তো জিজ্ঞাসা করেছি ঐ ফিতনা সম্পর্কে, যা সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো আন্দোলিত থেকে থাকবে। হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, এ ফিতনার সামনে বন্ধ দরজা আছে। উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, এ দরজা কি খুলে যাবে, না ভেঙ্গে যাবে? হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ভেঙ্গে যাবে। উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, তাহলে তো তা কিয়ামত পর্যন্ত বন্ধ হবে না। আমরা মাসরূক রহ. কে বললাম, হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে জিজ্ঞেস করুন, উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কি জানতেন, কে সেই দরজা? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তিনি এরূপ জানতেন যেরূপ আগামীকালের দিনের পূর্বে আজকের রাত।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৯৫।]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন,

«الصَّلَوَاتُ الْخَمْسُ، وَالْجُمْعَةُ إِلَى الْجُمْعَةِ، وَرَمَضَانُ إِلَى رَمَضَانَ، مُكَفِّرَاتٌ مَا بَيْنَهُنَّ إِذَا اجْتَنَبَ الْكَبَائِرَ»

“পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, এক জুমু‘আ থেকে আরেক জুমু‘আ পর্যন্ত এবং এক রমযান থেকে অপর রমযান পর্যন্ত এসব তাদের মধ্যবর্তী সময়ের জন্য কাফফারা হয়ে যাবে, যদি সে কবীরা গুনাহ থেকে বিরত থাকে।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৩৩।]

১০
সাওম ঢালস্বরূপ
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«الصِّيَامُ جُنَّةٌ فَلاَ يَرْفُثْ وَلاَ يَجْهَلْ، وَإِنِ امْرُؤٌ قَاتَلَهُ أَوْ شَاتَمَهُ فَلْيَقُلْ : إِنِّي صَائِمٌ مَرَّتَيْنِ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَخُلُوفُ فَمِ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللَّهِ تَعَالَى مِنْ رِيحِ المِسْكِ يَتْرُكُ طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ وَشَهْوَتَهُ مِنْ أَجْلِي الصِّيَامُ لِي، وَأَنَا أَجْزِي بِهِ وَالحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا»

“সাওম ঢালস্বরূপ। সুতরাং অশ্লীলতা করবে না এবং মুর্খের মতো কাজ করবে না। যদি কেউ তাঁর সাথে ঝগড়া করতে চায়, তাঁকে গালি দেয়, তবে সে যেন দুই বার বলে, আমি সাওম পালন করছি। ঐ সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ, অবশ্যই সাওম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিশকের ঘ্রাণের চাইতেও উৎকৃষ্ট, সে আমার জন্য আহার, পান ও কামাচার পরিত্যাগ করে। সাওম আমারই জন্য। তাই এর পুরষ্কার আমি নিজেই দান করব। আর প্রত্যেক নেক কাজের বিনিময় দশ গুন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৯৪, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৫১।]

সা‘ঈদ ইবন আবু হিন্দ রহ. থেকে বর্ণিত,

«أَنَّ مُطَرِّفًا، رَجُلًا مِنْ بَنِي عَامِرِ بْنِ صَعْصَعَةَ، حَدَّثَهُ أَنَّ عُثْمَانَ بْنَ أَبِي الْعَاصِ، دَعَا لَهُ بِلَبَنٍ لِيَسْقِيَهُ، فَقَالَ مُطَرِّفٌ : إِنِّي صَائِمٌ، فَقَالَ عُثْمَانُ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ : «الصِّيَامُ جُنَّةٌ كَجُنَّةِ أَحَدِكُمْ مِنَ الْقِتَالِ»

“বনী ‘আমের ইবন সা‘আসা‘আ গোত্রের মুতাররিফ রহ. তাকে হাদীস বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, ওসমান ইবন আবু ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু দুধ পান করার জন্য তাকে দুধ নিয়ে আসতে বললেন। তখন মুতাররিফ রহ. বললেন, আমি সাওম পালনকারী। ওসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, সাওম এমন ঢালস্বরূপ, তোমাদের যুদ্ধে ব্যবহৃত ঢালের ন্যায়।” [সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ২২৩০, সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীস নং ৩৬৪৯। হাদীসটি সহীহ।]

১১
সাওম পালনকারীর জন্য জান্নাতে রাইয়্যান দরজা
সাহল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِنَّ فِي الجَنَّةِ بَابًا يُقَالُ لَهُ الرَّيَّانُ، يَدْخُلُ مِنْهُ الصَّائِمُونَ يَوْمَ القِيَامَةِ، لاَ يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ، يُقَالُ : أَيْنَ الصَّائِمُونَ؟ فَيَقُومُونَ لاَ يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ، فَإِذَا دَخَلُوا أُغْلِقَ فَلَمْ يَدْخُلْ مِنْهُ أَحَدٌ»

“জান্নাতে রাইয়্যান নামক একটি দরজা আছে। এ দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন সাওম পালনকারীরাই প্রবেশ করবে। তাঁদের ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা দেওয়া হবে, সাওম পালনকারীরা কোথায়? তখন তারা দাঁড়াবে। তাঁরা ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। তাঁদের প্রবেশের পরই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। যাতে এ দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ না করে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৯৬।]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ أَنْفَقَ زَوْجَيْنِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ، نُودِيَ مِنْ أَبْوَابِ الجَنَّةِ : يَا عَبْدَ اللَّهِ هَذَا خَيْرٌ، فَمَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الصَّلاَةِ دُعِيَ مِنْ بَابِ الصَّلاَةِ، وَمَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الجِهَادِ دُعِيَ مِنْ بَابِ الجِهَادِ، وَمَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الصِّيَامِ دُعِيَ مِنْ بَابِ الرَّيَّانِ، وَمَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الصَّدَقَةِ دُعِيَ مِنْ بَابِ الصَّدَقَةِ " ، فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ : بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا عَلَى مَنْ دُعِيَ مِنْ تِلْكَ الأَبْوَابِ مِنْ ضَرُورَةٍ، فَهَلْ يُدْعَى أَحَدٌ مِنْ تِلْكَ الأَبْوَابِ كُلِّهَا، قَالَ : «نَعَمْ وَأَرْجُو أَنْ تَكُونَ مِنْهُمْ»

“যে কেউ আল্লাহর পথে জোড়া জোড়া ব্যয় করবে তাঁকে জান্নাতের দরজাসমূহ থেকে ডাকা হবে, হে আল্লাহর বান্দা! এটাই উত্তম। অতএব, যে সালাত আদায়কারী, তাঁকে সালাতের দরজা থেকে ডাকা হবে। সে মুজাহিদ তাঁকে জিহাদের দরজা থেকে ডাকা হবে, যে সাওম পালনকারী, তাঁকে রাইয়্যাব দরজা থেকে ডাকা হবে। যে সদকা দানকারী তাঁকে সদকা দরজা থেকে ডাকা হবে। এরপর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনার জন্য আমার পিতা-মাতা কুরবান, সব দরজা থেকে কাউকে ডাকার কোনো প্রয়োজন নেই, তবে কি কাউকে সব দরজা থেকে ডাকা হবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। আমি আশা করি তুমি তাঁদের মধ্যে হবে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৯৭।]

১২
রমযান নাকি রমযান মাস বলা হবে? কেউ কেউ বলেছেন, উভয়টি বলা যাবে?
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إِذَا جَاءَ رَمَضَانُ فُتِحَتْ أَبْوَابُ الجَنَّةِ»

“যখন রমযান আসে তখন জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৯৮।]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলতেন, রাসূলুল্লাহ বলেছেন,

«إِذَا دَخَلَ شَهْرُ رَمَضَانَ فُتِّحَتْ أَبْوَابُ السَّمَاءِ، وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ جَهَنَّمَ، وَسُلْسِلَتِ الشَّيَاطِينُ»

“রমযান আসলে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয় আর শয়তানকে শৃঙ্খলিত করে দেওয়া হয়।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৯৯।]

১৩
রমযানের চাঁদ দেখা
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,

«إِذَا رَأَيْتُمُوهُ فَصُومُوا، وَإِذَا رَأَيْتُمُوهُ فَأَفْطِرُوا، فَإِنْ غُمَّ عَلَيْكُمْ فَاقْدُرُوا لَهُ» وَقَالَ غَيْرُهُ : عَنِ اللَّيْثِ، حَدَّثَنِي عُقَيْلٌ، وَيُونُسُ : لِهِلاَلِ رَمَضَانَ»

“যখন তোমরা তা (চাঁদ) দেখবে তখন সাওম পালন করবে, আবার যখন তা দেখবে তখন ইফতার করবে। আর যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে তাহলে তাঁর সময় হিসাব করে (ত্রিশ দিন) পূর্ণ করবে। ইয়াহইয়া ইবন বুকায়র রহ. ব্যতীত অন্যরা লায়স রহ. থেকে উকায়লা এবং ইউনুস রহ. সূত্রে বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথাটি বলেছেন রমযানের চাঁদ সম্পর্কে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯০০।]

১৪
যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় নিয়তের সাথে সাওম পালন করবে
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন,

«يُبْعَثُونَ عَلَى نِيَّاتِهِمْ»

“তারা (সাওম পালনকারী) তাদের নিয়ত অনুসারে কিয়ামতের দিন উত্থিত হবেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২১১৮।]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ قَامَ لَيْلَةَ القَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ، وَمَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ»

“যে ব্যক্তি লাইলাতুল ক্বাদরে ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রাত জেগে ইবাদাত করে, তাঁর পিছনের সমস্ত গুনাহ মাপ করা হবে। আর যে ব্যক্তি ঈমানসহ সওয়াবের আশায় রমযানের সাওম পালন করবে, তাঁরও অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করা হবে” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯০১।]

১৫
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসে অধিক দান করতেন
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَجْوَدَ النَّاسِ بِالخَيْرِ، وَكَانَ أَجْوَدُ مَا يَكُونُ فِي رَمَضَانَ حِينَ يَلْقَاهُ جِبْرِيلُ، وَكَانَ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ يَلْقَاهُ كُلَّ لَيْلَةٍ فِي رَمَضَانَ، حَتَّى يَنْسَلِخَ، يَعْرِضُ عَلَيْهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ القُرْآنَ، فَإِذَا لَقِيَهُ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ، كَانَ أَجْوَدَ بِالخَيْرِ مِنَ الرِّيحِ المُرْسَلَةِ»

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধন সম্পদ ব্যয় করার ব্যাপারে সকলের চেয়ে দানশীল ছিলেন। রমযানে জিবরীল আলাইহিস সালাম যখন তাঁর সাথে দেখা করতেন, তখন তিনি আরো অধিক দান করতেন। রমযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি রাতেই জিবরীল আলাইহিস সালাম তাঁর একবার সাক্ষাৎ করতেন। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে কুরআন শোনাতেন। জিবরীল আলাইহিস সালাম যখন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন তখন তিনি রহমত প্রেরিত বায়ূর চেয়ে অধিক ধন-সম্পদ দান করতেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯০২।]

১৬
যে ব্যক্তি সাওম পালনের সময় মিথ্যা বলা ও সে অনুযায়ী আমল বর্জন করেনি
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ لَمْ يَدَعْ قَوْلَ الزُّورِ وَالعَمَلَ بِهِ، فَلَيْسَ لِلَّهِ حَاجَةٌ فِي أَنْ يَدَعَ طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ»

“যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও সে অনুযায়ী আমল বর্জন করেনি, তাঁর এ পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯০৩।]

আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«رُبَّ صَائِمٍ حَظُّهُ مِنْ صِيَامِهِ الْجُوعُ وَالْعَطَشُ، وَرُبَّ قَائِمٍ حَظُّهُ مِنْ قِيَامِهِ السَّهَرُ»

“কিছু সাওম পালনকারীর সাওমের বিনিময়ে ক্ষুধা ও পিপাসা ছাড়া কিছুই পায় না, আবার রাতে জাগরণকারী কিছু সালাত আদায়কারীর রাত্রি জাগরণ ব্যতীত কিছুই পায় না।” [ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৬৯০, ইবন খুযাইমা, হাদীস নং ১৯৯৭, ইবন হিব্বান, হাদীস নং ৩৪৮১। হাদীসটির সনদ সহীহ।]

১৭
কাউকে গালি দেওয়া হলে সে কি বলবে, আমি সাওম পালনকারী?
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«قَالَ اللَّهُ : كُلُّ عَمَلِ ابْنِ آدَمَ لَهُ، إِلَّا الصِّيَامَ، فَإِنَّهُ لِي وَأَنَا أَجْزِي بِهِ، وَالصِّيَامُ جُنَّةٌ، وَإِذَا كَانَ يَوْمُ صَوْمِ أَحَدِكُمْ فَلاَ يَرْفُثْ وَلاَ يَصْخَبْ، فَإِنْ سَابَّهُ أَحَدٌ أَوْ قَاتَلَهُ، فَلْيَقُلْ إِنِّي امْرُؤٌ صَائِمٌ وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ، لَخُلُوفُ فَمِ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللَّهِ مِنْ رِيحِ المِسْكِ لِلصَّائِمِ فَرْحَتَانِ يَفْرَحُهُمَا : إِذَا أَفْطَرَ فَرِحَ، وَإِذَا لَقِيَ رَبَّهُ فَرِحَ بِصَوْمِهِ»

“আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, সাওম ব্যতীত আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই তাঁর নিজের জন্য, কিন্তু সাওম আমার জন্য, তাই আমি এর প্রতিদান দেব। সাওম ঢালস্বরূপ। তোমাদের কেউ যেন সাওম পালনের দিন অশ্লীলতায় লিপ্ত না হয় এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে। কেউ যদি তাঁকে গালি দেয় অথবা তাঁর সঙ্গে ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, আমি একজন সাওম পালনকারী। যার হাতে মুহাম্মদের প্রাণ তাঁর শপথ! সাওম পালনকারীর মুখের (না খাওয়াজনিত) ঘ্রাণ আল্লাহর নিকট মিশকের ঘ্রাণের চেয়েও বেশি উত্তম। সাওম পালনকারীর জন্য রয়েছে দু’টি খুশী যা তাঁকে খুশী করে। যখন সে ইফতার করে, সে খুশী হয় এবং যখন সে তাঁর রবের সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন সাওমের বিনিময়ে আনন্দিত হবে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯০৪।]

১৮
অবিবাহিত ব্যক্তি যে নিজের ওপর ফিতনার আশংকা করে তার জন্য সাওম পালন করা
আলকামা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«بَيْنَا أَنَا أَمْشِي، مَعَ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، فَقَالَ : كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ : مَنِ اسْتَطَاعَ البَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ، فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ، وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ، وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ، فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ»

“আমি আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সঙ্গে চলতে ছিলাম তখন তিনি বললেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ছিলাম, তিনি বললেন, যে ব্যক্তির সামর্থ্য আছে, সে যেন বিবাহ করে নেয়। কেননা বিবাহ চোখকে অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করে। আর যার সামর্থ্য নেই, সে যেন সাওম পালন করে। কেননা সাওম তাঁর প্রবৃত্তিকে দমন করে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯০৫।]

১৯
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী, তোমরা চাঁদ দেখে সাওম পালন শুরু করবে, আবার চাঁদ দেখে সাওম থেকে বিরত থাকবে
আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত,

«أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَكَرَ رَمَضَانَ فَقَالَ : لاَ تَصُومُوا حَتَّى تَرَوُا الْهِلَالَ، وَلاَ تُفْطِرُوا حَتَّى تَرَوْهُ، فَإِنْ غُمَّ عَلَيْكُمْ فَاقْدُرُوا لَهُ»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের কথা আলোচনা করে বললেন, চাঁদ না দেখে তোমরা সাওম পালন করবে না এবং চাঁদ না দেখে ইফতার করবে না। যদি মেঘাছন্ন থাকে তাহলে তাঁর সময় (ত্রিশ দিন) পরিমাণ পূর্ণ করবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯০৬।]

আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«الشَّهْرُ تِسْعٌ وَعِشْرُونَ لَيْلَةً، فَلاَ تَصُومُوا حَتَّى تَرَوْهُ، فَإِنْ غُمَّ عَلَيْكُمْ فَأَكْمِلُوا العِدَّةَ ثَلاَثِينَ»

“মাস ঊনত্রিশ রাত বিশিষ্ট হয়। তাই তোমরা চাঁদ না দেখে সাওম শুরু করবে না। যদি আকাশ মেঘাবৃত থাকে তাহলে তোমরা ত্রিশ দিন পূর্ণ করবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯০৭।]

ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (দু’হাতের অঙ্গুলী তুলে ইশারা করে) বলেন,

«الشَّهْرُ هَكَذَا وَهَكَذَا» وَخَنَسَ الإِبْهَامَ فِي الثَّالِثَةِ»

“মাস এত এত দিনে হয় এবং তৃতীয় বার বৃদ্ধাঙ্গুলীটি বন্ধ করে নিলেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯০৮।]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অথবা আবুল কাসিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«صُومُوا لِرُؤْيَتِهِ وَأَفْطِرُوا لِرُؤْيَتِهِ، فَإِنْ غُبِّيَ عَلَيْكُمْ فَأَكْمِلُوا عِدَّةَ شَعْبَانَ ثَلاَثِينَ»

“তোমরা চাঁদ দেখে সাওম আরম্ভ করবে এবং চাঁদ দেখে ইফতার করবে। আকাশ যদি মেঘে ঢাকা থাকে তাহলে শা‘বানের গণনা ত্রিশ দিন পুরা করবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯০৯।]

উম্মে সালমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ آلَى مِنْ نِسَائِهِ شَهْرًا، فَلَمَّا مَضَى تِسْعَةٌ وَعِشْرُونَ يَوْمًا، غَدَا أَوْ رَاحَ فَقِيلَ لَهُ : إِنَّكَ حَلَفْتَ أَنْ لاَ تَدْخُلَ شَهْرًا، فَقَالَ : إِنَّ الشَّهْرَ يَكُونُ تِسْعَةً وَعِشْرِينَ يَوْمًا»

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মাসের জন্য তাঁর স্ত্রীদের সঙ্গে ঈলা (পণ করা) করলেন। ঊনত্রিশ দিন পার হওয়ার পর সকালে বা সন্ধায় তিনি তাঁদের নিকট গেলেন। তাঁকে প্রশ্ন করা হলো, আপনি তো এক মাস পর্যন্ত না আসার শপথ করেছিলেন? তিনি বলেলেন, মাস ঊনত্রিশ হয়েও থাকে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯১০।]

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«آلَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ نِسَائِهِ، وَكَانَتْ انْفَكَّتْ رِجْلُهُ، فَأَقَامَ فِي مَشْرُبَةٍ تِسْعًا وَعِشْرِينَ لَيْلَةً، ثُمَّ نَزَلَ فَقَالُوا : يَا رَسُولَ اللَّهِ آلَيْتَ شَهْرًا، فَقَالَ : إِنَّ الشَّهْرَ يَكُونُ تِسْعًا وَعِشْرِينَ»

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্ত্রীদের সঙ্গে ঈলা (পণ করা) করলেন। এ সময় তাঁর পা মচকে গিয়েছিল। তখন তিনি উপরের কামরায় উনত্রিশ রাত অবস্থান করেন। এরপর অবতরণ করলে ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি তো এক মাসের জন্য ঈলা করেছিলেন। তিনি বললেন, মাস ঊনত্রিশ দিনেও হয়ে থাকে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯১১।]

যুহরী রহ. থেকে বর্ণিত যে,

«أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَقْسَمَ أَنْ لَا يَدْخُلَ عَلَى أَزْوَاجِهِ شَهْرًا، قَالَ الزُّهْرِيُّ : فَأَخْبَرَنِي عُرْوَةُ، عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ : لَمَّا مَضَتْ تِسْعٌ وَعِشْرُونَ لَيْلَةً أَعُدُّهُنَّ، دَخَلَ عَلَيَّ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - قَالَتْ بَدَأَ بِي - فَقُلْتُ : يَا رَسُولَ اللهِ، إِنَّكَ أَقْسَمْتَ أَنْ لَا تَدْخُلَ عَلَيْنَا شَهْرًا، وَإِنَّكَ دَخَلْتَ مِنْ تِسْعٍ وَعِشْرِينَ أَعُدُّهُنَّ، فَقَالَ : إِنَّ الشَّهْرَ تِسْعٌ وَعِشْرُونَ»

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পণ করলেন যে, তিনি এক মাস পর্যন্ত তাঁর বিবিদের কাছে যাবেন না। যুহরী রহ. উরওয়া রহ. এর সুত্রে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, যখন ঊনত্রিশ রাত্র অতিবাহিত হয়ে গেল, আমি তা হিসাব রাখছিলাম, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট আসলেন এবং আমার থেকেই আরম্ভ করলেন। এ সময় আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি তো একমাস পর্যন্ত আমাদের নিকট না আসার শপথ করেছেন অথচ আপনি ঊনত্রিশ তারিখের পরই চলে আসলেন আমি তো গুণে রেখেছি। তখন তিনি বললেন, মাস তো উনত্রিশ দিনেও হয়ে থাকে।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০৮৩।]

জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اعْتَزَلَ نِسَاءَهُ شَهْرًا، فَخَرَجَ إِلَيْنَا فِي تِسْعٍ وَعِشْرِينَ، فَقُلْنَا : إِنَّمَا الْيَوْمُ تِسْعٌ وَعِشْرُونَ، فَقَالَ : إِنَّمَا الشَّهْرُ وَصَفَّقَ بِيَدَيْهِ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ، وَحَبَسَ إِصْبَعًا وَاحِدَةً فِي الْآخِرَةِ»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মাসের জন্য তাঁর স্ত্রীদের থেকে পৃথক হয়ে গেলেন। এরপর ঊনত্রিশ দিন পর তিনি আমাদের নিকট বের হয়ে এলেন। আমরা বললাম আজ তো ঊনত্রিশতম দিবস। তখন তিনি তাঁর উভয় হাত দিয়ে তিনবার ইশারা করে শেষবার একটি আঙ্গূল গুটিয়ে রেখে বললেন, মাস তো এভাবেও হয়ে থাকে।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০৮৪।]

জাবির ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«اعْتَزَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نِسَاءَهُ شَهْرًا، فَخَرَجَ إِلَيْنَا صَبَاحَ تِسْعٍ وَعِشْرِينَ، فَقَالَ بَعْضُ الْقَوْمِ : يَا رَسُولَ اللهِ، إِنَّمَا أَصْبَحْنَا لِتِسْعٍ وَعِشْرِينَ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " إِنَّ الشَّهْرَ يَكُونُ تِسْعًا وَعِشْرِينَ ثُمَّ طَبَّقَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدَيْهِ ثَلَاثًا : مَرَّتَيْنِ بِأَصَابِعِ يَدَيْهِ كُلِّهَا، وَالثَّالِثَةَ بِتِسْعٍ مِنْهَا»

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীদের থেকে এক মাসের জন্য পৃথক হয়ে গেলেন। তারপর ঊনত্রিশতম দিবসে ভোর বেলা তিনি আমাদের নিকট আসলেন। কেউ কেউ বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আজ তো ঊনত্রিশতম দিনের ভোরবেলা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু বললেন, মাস ঊনত্রিশ দিনেও হয়ে থাকে। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উভয় হাতের সমস্ত আঙ্গুল খুলে দু’বার ইঙ্গিত করলেন এবং তৃতীয়বার ইঙ্গিত করলেন নয় আঙ্গুল দ্বারা।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০৮৪।]

সা‘দ ইবন আবু ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«ضَرَبَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدِهِ عَلَى الْأُخْرَى، فَقَالَ : الشَّهْرُ هَكَذَا وَهَكَذَا ثُمَّ نَقَصَ فِي الثَّالِثَةِ إِصْبَعًا»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর এক হাত অপর হাতের ওপর মেরে বললেন, মাস এভাবে এভাবে হয়ে থাকে। তৃতীয়বার তিনি একটি আঙ্গুল গুটিয়ে রাখলেন”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০৮৬।]

২০
চাঁদ দেখার ব্যাপারে সাক্ষ্য গ্রহণ
আবু উমাইর ইবন আনাস ইবন মালিক রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«حَدَّثَنِي عُمُومَتِي، مِنَ الْأَنْصَارِ مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالُوا : أُغْمِيَ عَلَيْنَا هِلَالُ شَوَّالٍ، فَأَصْبَحْنَا صِيَامًا، فَجَاءَ رَكْبٌ مِنْ آخِرِ النَّهَارِ، فَشَهِدُوا عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُمْ رَأَوُا الْهِلَالَ بِالْأَمْسِ، فَأَمَرَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يُفْطِرُوا، وَأَنْ يَخْرُجُوا إِلَى عِيدِهِمْ مِنَ الْغَدِ»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবী এবং আনসার সম্প্রদায়ভুক্ত আমার এক চাচা আমার নিকট বর্ণনা করেন, মেঘের কারণে আমরা শাওয়ালের নতুন চাঁদ দেখতে পাই নি। আমরা (পরের দিন) সাওম রাখলাম। দিনের শেষভাগে একটি কাফেলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে গতকাল চাঁদ দেখার সাক্ষ্য দিলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদেরকে ইফতার (সাওম ভঙ্গ) করার এবং পরের দিন ঈদগাহে যাওয়ার নির্দেশ দেন।” [ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৬৫৩, আবু দাউদ, ১১৫৬। হাদীসটি সহীহ।]

২১
চাঁদ দেখতে কতজন সাক্ষ্য লাগবে?
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«تَرَاءَى النَّاسُ الْهِلَالَ، فَأَخْبَرْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنِّي رَأَيْتُهُ فَصَامَه وَأَمَرَ النَّاسَ بصيامه» .

“একবার লোকজন চাঁদ দেখল। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গিয়ে বললাম যে, আমি চাঁদ দেখেছি, ফলে তিনি নিজে সাওম পালন করলেন এবং লোকদেরকেও সাওম পালন করতে নির্দেশ দিলেন।” [আবু দাউদ, ২৩৪২, ইবন হিব্বান, ৩৪৪৭, মুসতাদরাক হাকিম, ১৫৪১। ইমাম হাকিম রহ. বলেছেন, হাদীসটি মুসলিমের শর্তে সহীহ, তবে বুখারী ও মুসলিম কেউ তাখরিজ করেন নি।]

২২
প্রত্যেক দেশে আলাদা আলাদাভাবে চাঁদ দেখা, এক দেশে চাঁদ দেখলে তার হুকুম অন্যের জন্য যথেষ্ট নয়
কুরায়ব রহ. থেকে বর্ণিত যে,

«أَنَّ أُمَّ الْفَضْلِ بِنْتَ الْحَارِثِ، بَعَثَتْهُ إِلَى مُعَاوِيَةَ بِالشَّامِ، قَالَ : فَقَدِمْتُ الشَّامَ، فَقَضَيْتُ حَاجَتَهَا، وَاسْتُهِلَّ عَلَيَّ رَمَضَانُ وَأَنَا بِالشَّامِ، فَرَأَيْتُ الْهِلَالَ لَيْلَةَ الْجُمُعَةِ، ثُمَّ قَدِمْتُ الْمَدِينَةَ فِي آخِرِ الشَّهْرِ، فَسَأَلَنِي عَبْدُ اللهِ بْنُ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، ثُمَّ ذَكَرَ الْهِلَالَ فَقَالَ : مَتَى رَأَيْتُمُ الْهِلَالَ؟ فَقُلْتُ : رَأَيْنَاهُ لَيْلَةَ الْجُمُعَةِ، فَقَالَ : أَنْتَ رَأَيْتَهُ؟ فَقُلْتُ : نَعَمْ، وَرَآهُ النَّاسُ، وَصَامُوا وَصَامَ مُعَاوِيَةُ، فَقَالَ : " لَكِنَّا رَأَيْنَاهُ لَيْلَةَ السَّبْتِ، فَلَا نَزَالُ نَصُومُ حَتَّى نُكْمِلَ ثَلَاثِينَ، أَوْ نَرَاهُ، فَقُلْتُ : أَوَ لَا تَكْتَفِي بِرُؤْيَةِ مُعَاوِيَةَ وَصِيَامِهِ؟ فَقَالَ : لَا، هَكَذَا أَمَرَنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ " وَشَكَّ يَحْيَى بْنُ يَحْيَى فِي نَكْتَفِي أَوْ تَكْتَفِي»

“উম্মুল ফযল বিনত হারিস তাকে সিরিয়ায় মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট পাঠালেন। (কুরায়ব বলেন) আমি সিরিয়ায় পৌঁছলাম এবং তার প্রয়োজনীয় কাজটি সমাধা করে নিলাম। আমি সিরিয়া থাকা অবস্থায়ই রমযানের চাঁদ দেখা গেল। জুমু‘আর দিন সন্ধ্যায় আমি চাঁদ দেখলাম। এরপর রমযানের শেষ ভাগে আমি মদীনায় ফিরলাম। আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আমার নিকট জিজ্ঞাসা করলেন এবং চাঁদ সম্পর্কে আলোচনা করলেন। এরপর জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কোনো দিন চাঁদ দেখেছ? আমি বললাম, আমরা তো জুমু‘আর দিন সন্ধায় চাঁদ দেখেছি। তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি নিজে দেখেছ কি? আমি বললাম, হ্যাঁ, আমি দেখেছি এবং লোকেরাও দেখেছে। তারা সাওম পালন করেছে এবং মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুও সাওম পালন করেছেন। তিনি বললেন, আমরা কিন্তু শনিবার সন্ধ্যায় চাঁদ দেখেছি। আমরা সাওম পালন করতে থাকব, শেষ পর্যন্ত ত্রিশ দিন পূর্ণ করব অথবা চাঁদ দেখব। আমি বললাম, মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর চাঁদ দেখা এবং তাঁর সাওম পালন করা আপনার জন্য যথেষ্ট নয় কি? তিনি বললেন, না, যথেষ্ট নয়। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এরূপ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০৮৭।]

২৩
চাঁদ ছোট বা বড় দেখা ধর্তব্য নয়, আল্লাহ তা‘আলা দেখার জন্য বর্ধিত করে দিয়েছেন। আর যদি মেঘের কারণে দেখা না যায় তবে ত্রিশ দিন পূর্ণ করবে
আবুল বাখতারী রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«خَرَجْنَا لِلْعُمْرَةِ، فَلَمَّا نَزَلْنَا بِبَطْنِ نَخْلَةَ قَالَ : تَرَاءَيْنَا الْهِلَالَ، فَقَالَ بَعْضُ الْقَوْمِ : هُوَ ابْنُ ثَلَاثٍ، وَقَالَ بَعْضُ الْقَوْمِ : هُوَ ابْنُ لَيْلَتَيْنِ، قَالَ : فَلَقِينَا ابْنَ عَبَّاسٍ، فَقُلْنَا : إِنَّا رَأَيْنَا الْهِلَالَ، فَقَالَ بَعْضُ الْقَوْمِ : هُوَ ابْنُ ثَلَاثٍ، وَقَالَ بَعْضُ الْقَوْمِ : هُوَ ابْنُ لَيْلَتَيْنِ، فَقَالَ : أَيَّ لَيْلَةٍ رَأَيْتُمُوهُ؟ قَالَ فَقُلْنَا : لَيْلَةَ كَذَا وَكَذَا، فَقَالَ : إِنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ : إِنَّ اللهَ مَدَّهُ لِلرُّؤْيَةِ، فَهُوَ لِلَيْلَةٍ رَأَيْتُمُوهُ»

“আমরা ‘উমরা করার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম এবং ‘বাতনে নাখলা’ নামক স্থানে উপস্থিত হলাম তখন আমরা (রমযানের) চাঁদ! দেখতে পেলাম। এ সময় কেউ কেউ বলতে লাগলেন এ তো তিন তারিখের চাঁদ। আবার কেউ কেউ বললেন, এ তো দুই তারিখের চাঁদ। তারপর আমরা ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সাথে সাক্ষাৎ করলাম এবং বললাম, আমরা তো চাঁদ দেখেছি। কিন্তু আমাদের কেউ কেউ বলছেন, এ দু’রাত্রির চাঁদ। আবার কেউ কেউ বললেন, এ এক রাত্রির চাঁদ। তখন তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কোনো রাত্রে চাঁদ দেখেছ? আমরা বললাম, অমুক অমুক রাত্রে। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দেখার সুবিধার্থে আল্লাহ একে বঁর্ধিত করে করেছেন। মূলত এ ঐ রাত্রিরই চাঁদ যে রাত্রে তোমরা দেখেছো।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০৮৮।]

২৪
ঈদের দু’মাস কম হয় না
আবু বাকরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«شَهْرَانِ لاَ يَنْقُصَانِ، شَهْرَا عِيدٍ : رَمَضَانُ، وَذُو الحَجَّةِ»

“দু’টি মাস কম হয় না। তা হলো ঈদের দু’মাস রমযানের মাস ও যিলহজের মাস।” আবু ‘আব্দুল্লাহ রহ. বলেছেন, আহমদ ইবন হাম্বল রহ. বলেন, রমযান ঘাটতি হলে যিলহজ পূর্ণ হবে। আর যিলহজ ঘাটতি হলে রমযান পূর্ণ হবে। আবুল হাসান রহ. বলেন, ইসহাক ইবন রাহওয়াই রহ. বলেন, ফযীলতের দিক থেকে এ দুই মাসে ঘাটতি নেই, মাস ঊনত্রিশ দিনে হোক বা ত্রিশ দিনে হোক। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯১২।]

২৫
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: আমরা লিখি না এবং হিসাবও করি না
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إِنَّا أُمَّةٌ أُمِّيَّةٌ، لاَ نَكْتُبُ وَلاَ نَحْسُبُ، الشَّهْرُ هَكَذَا وَهَكَذَا» يَعْنِي مَرَّةً تِسْعَةً وَعِشْرِينَ، وَمَرَّةً ثَلاَثِينَ»

“আমরা উম্মী জাতি, আমরা লিখি না এবং হিসাবও করি না। মাস এরূপ এরূপ হয়। অর্থাৎ কখনও ঊনত্রিশ আবার কখনও ত্রিশ দিন হয়ে থাকে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯১৩, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০৮০।]

২৬
রমযানের একদিন বা দু’দিন আগে সাওম শুরু করবে না
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«لاَ يَتَقَدَّمَنَّ أَحَدُكُمْ رَمَضَانَ بِصَوْمِ يَوْمٍ أَوْ يَوْمَيْنِ، إِلَّا أَنْ يَكُونَ رَجُلٌ كَانَ يَصُومُ صَوْمَهُ، فَلْيَصُمْ ذَلِكَ اليَوْمَ»

“তোমরা কেউ রমযানের একদিন কিংবা দুই দিন আগে থেকে সাওম শুরু করবে না। তবে কেউ যদি এ সময় সাওম পালনে অভ্যস্ত থাকে তাহলে সে সেদিন সাওম করতে পারবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯১৪।]

২৭
ইয়াওমুশ-শক বা সন্দেহের দিনে সাওম পালন করা
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«لاَ يَتَقَدَّمَنَّ أَحَدُكُمْ رَمَضَانَ بِصَوْمِ يَوْمٍ أَوْ يَوْمَيْنِ، إِلَّا أَنْ يَكُونَ رَجُلٌ كَانَ يَصُومُ صَوْمَهُ، فَلْيَصُمْ ذَلِكَ اليَوْمَ»

“তোমরা কেউ রমযানের একদিন কিংবা দুই দিন আগে থেকে সাওম শুরু করবে না। তবে কেউ যদি এ সময় সাওম পালনে অভ্যস্ত থাকে তাহলে সে সেদিন সাওম করতে পারবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯১৪।]

সিলা ইবন যুফার রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كُنَّا عِنْدَ عَمَّارِ بْنِ يَاسِرٍ فَأُتِيَ بِشَاةٍ مَصْلِيَّةٍ، فَقَالَ : كُلُوا، فَتَنَحَّى بَعْضُ القَوْمِ، فَقَالَ : إِنِّي صَائِمٌ، فَقَالَ عَمَّارٌ : مَنْ صَامَ اليَوْمَ الَّذِي يَشُكُّ فِيهِ النَّاسُ فَقَدْ عَصَى أَبَا القَاسِمِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ» .

“আম্মার ইবন ইয়াসির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকটে আমরা উপস্থিত ছিলাম। একটি ভুনা বকরি (খাবারের উদ্দেশ্যে) নিয়ে আসা হলে তিনি বললেন, তোমরা সকলেই খাও। কিন্তু কোনো এক লোক দূরে সরে গিয়ে বলল, আমি সাওম পালনকারী। ‘আম্মার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, সন্দেহযুক্ত দিনে যে লোক সাওম পালন করে, সে লোক আবুল কাসিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নাফরমানি করে”। [তিরমিযি, হাদীস নং ৬৮৬, হাদীসটি হাসান সহীহ, নাসায়ী, ২১৮৮, আলবনী রহ. বলেন, হাদীসটি সহীহ। ইবন হিব্বান, ৩৫৮৫।]

২৮
অর্ধ শা‘বানের পরে নফল সাওম পালন করা
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِذَا بَقِيَ نِصْفٌ مِنْ شَعْبَانَ فَلاَ تَصُومُوا» .

“শা‘বানের অর্ধাংশ যখন বাকী থাকে তখন আর তোমরা সাওম পালন করবে না”। [তিরমিযি, হাদীস নং ৭৩৮, হাদীসটি হাসান সহীহ। ইবন মাজাহ, ১৬৫১, ইবন হিব্বান, ৩৫৮৯।]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِذَا كَانَ النِّصْفُ مِنْ شَعْبَانَ فَلَا صَوْمَ حَتَّى يَجِيءَ رَمَضَانُ»

“শা‘বানের অর্ধাংশ চলে গেলে তোমরা রমযান না আসা পর্যন্ত আর সাওম পালন করবে না”। [ইবন মাজাহ, ১৬৫১। আলবানী রহ. বলেন, হাদীসটি সহীহ।]

আল্লাহর বাণী:

﴿أُحِلَّ لَكُمۡ لَيۡلَةَ ٱلصِّيَامِ ٱلرَّفَثُ إِلَىٰ نِسَآئِكُمۡۚ هُنَّ لِبَاسٞ لَّكُمۡ وَأَنتُمۡ لِبَاسٞ لَّهُنَّۗ عَلِمَ ٱللَّهُ أَنَّكُمۡ كُنتُمۡ تَخۡتَانُونَ أَنفُسَكُمۡ فَتَابَ عَلَيۡكُمۡ وَعَفَا عَنكُمۡۖ فَٱلۡـَٰٔنَ بَٰشِرُوهُنَّ وَٱبۡتَغُواْ مَا كَتَبَ ٱللَّهُ لَكُمۡۚ﴾ [ البقرة : ١٨٧ ]

“সিয়ামের রাতে তোমাদের জন্য তোমাদের স্ত্রীদের নিকট গমন হালাল করা হয়েছে। তারা তোমাদের জন্য পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের জন্য পরিচ্ছদ। আল্লাহ জেনেছেন যে, তোমরা নিজদের সাথে খিয়ানত করছিলে। অতঃপর তিনি তোমাদের তাওবা কবূল করেছেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করেছেন। অতএব, এখন তোমরা তাদের সাথে মিলিত হও এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা লিখে দিয়েছেন, তা অনুসন্ধান কর। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৭]

বারা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ أَصْحَابُ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا كَانَ الرَّجُلُ صَائِمًا، فَحَضَرَ الإِفْطَارُ، فَنَامَ قَبْلَ أَنْ يُفْطِرَ لَمْ يَأْكُلْ لَيْلَتَهُ وَلاَ يَوْمَهُ حَتَّى يُمْسِيَ، وَإِنَّ قَيْسَ بْنَ صِرْمَةَ الأَنْصَارِيَّ كَانَ صَائِمًا، فَلَمَّا حَضَرَ الإِفْطَارُ أَتَى امْرَأَتَهُ، فَقَالَ لَهَا : أَعِنْدَكِ طَعَامٌ؟ قَالَتْ : لاَ وَلَكِنْ أَنْطَلِقُ فَأَطْلُبُ لَكَ، وَكَانَ يَوْمَهُ يَعْمَلُ، فَغَلَبَتْهُ عَيْنَاهُ، فَجَاءَتْهُ امْرَأَتُهُ، فَلَمَّا رَأَتْهُ قَالَتْ : خَيْبَةً لَكَ، فَلَمَّا انْتَصَفَ النَّهَارُ غُشِيَ عَلَيْهِ، فَذُكِرَ ذَلِكَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَنَزَلَتْ هَذِهِ الآيَةُ : ﴿أُحِلَّ لَكُمۡ لَيۡلَةَ ٱلصِّيَامِ ٱلرَّفَثُ إِلَىٰ نِسَآئِكُمۡۚ ﴾ [ البقرة : ١٨٧ ] فَفَرِحُوا بِهَا فَرَحًا شَدِيدًا، وَنَزَلَتْ : ﴿وَكُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَكُمُ ٱلۡخَيۡطُ ٱلۡأَبۡيَضُ مِنَ ٱلۡخَيۡطِ ٱلۡأَسۡوَدِ مِنَ ٱلۡفَجۡرِۖ﴾ [ البقرة : ١٨٧ ]

“মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণের অবস্থা এই ছিল যে, যদি তাঁদের কেউ সাওম পালন করতেন ইফতারে সময় হলে ইফতার না করে ঘুমিয়ে গেল সে রাতে এবং পরের সন্ধ্যা পর্যন্ত কিছুই খেতেন না। কায়স ইবন সিরমা আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সাওম পালন করেছিলেন। ইফতারের সময় তিনি তাঁর স্ত্রীর নিকট এসে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নিকট কিছু খাবার আছে কি? তিনি বললেন, না, তবে আমি যাচ্ছি, দেখি আপনার জন্য কিছু তালাশ করে আনি। তিনি কাজে রত থাকতেন। তাই ঘুমে তাঁর চোখ বুজে গেল। এরপর স্ত্রী এসে যখন তাকে দেখলেন, তখন তাঁকে বললেন, হায়, তোমার জন্য বঞ্ছনা! পরদিন দুপুর হলে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন। এ ঘটনাটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উল্লেখ করা হলে এ আয়াতটি নাযিল হয়,

﴿أُحِلَّ لَكُمۡ لَيۡلَةَ ٱلصِّيَامِ ٱلرَّفَثُ إِلَىٰ نِسَآئِكُمۡۚ ﴾ [ البقرة : ١٨٧ ]

“সিয়ামের রাত্রে তোমাদের স্ত্রী সম্ভোগ হালাল করা হয়েছে”। [সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৭] এ হুকুম সমন্ধে অবহিত হয়ে সাহাবীগণ খুবই আনন্দিত হলেন। এরপর নাযিল হলো,

﴿وَكُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَكُمُ ٱلۡخَيۡطُ ٱلۡأَبۡيَضُ مِنَ ٱلۡخَيۡطِ ٱلۡأَسۡوَدِ مِنَ ٱلۡفَجۡرِۖ﴾ [ البقرة : ١٨٧ ]

“তোমরা পানাহার কর যতক্ষণ রাতের কালো রেখা থেকে (ভোরের) সাদা রেখা স্পষ্ট তোমাদের নিকট প্রতিভাত না হয়”। [সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৭] [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯১৫।]

﴿وَكُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَكُمُ ٱلۡخَيۡطُ ٱلۡأَبۡيَضُ مِنَ ٱلۡخَيۡطِ ٱلۡأَسۡوَدِ مِنَ ٱلۡفَجۡرِۖ ثُمَّ أَتِمُّواْ ٱلصِّيَامَ إِلَى ٱلَّيۡلِۚ﴾ [ البقرة : ١٨٧ ]

“আর আহার কর ও পান কর যতক্ষণ না ফজরের সাদা রেখা কালো রেখা থেকে স্পষ্ট হয়। অতঃপর রাত পর্যন্ত সাওম পূর্ণ কর। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৭]

‘আদী ইবন হাতিম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«لَمَّا نَزَلَتْ : ﴿حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَكُمُ ٱلۡخَيۡطُ ٱلۡأَبۡيَضُ مِنَ ٱلۡخَيۡطِ ٱلۡأَسۡوَدِ مِنَ ٱلۡفَجۡرِۖ﴾ [ البقرة : ١٨٧ ] عَمَدْتُ إِلَى عِقَالٍ أَسْوَدَ، وَإِلَى عِقَالٍ أَبْيَضَ، فَجَعَلْتُهُمَا تَحْتَ وِسَادَتِي، فَجَعَلْتُ أَنْظُرُ فِي اللَّيْلِ، فَلاَ يَسْتَبِينُ لِي، فَغَدَوْتُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَذَكَرْتُ لَهُ ذَلِكَ فَقَالَ : «إِنَّمَا ذَلِكَ سَوَادُ اللَّيْلِ وَبَيَاضُ النَّهَارِ»

যখন এই আয়াত নাযিল হলো,

﴿حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَكُمُ ٱلۡخَيۡطُ ٱلۡأَبۡيَضُ مِنَ ٱلۡخَيۡطِ ٱلۡأَسۡوَدِ مِنَ ٱلۡفَجۡرِۖ﴾ [ البقرة : ١٨٧ ]

“তোমরা পানাহার কর রাত্রির কালো রেখা থেকে সাদা রেখা যতক্ষণ স্পষ্ট রূপে তোমাদের নিকট প্রতিভাত না হয়।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৭] ততক্ষণ আমি একটি কালো এবং একটি সাদা রশি নিলাম এবং উভয়টিকে আমার বালিশের নিচে রেখে দিলাম। রাতে আমি এগুলোর দিকে বারবার তাকাতে থাকি; কিন্তু আমার নিকট পার্থক্য প্রকাশিত হলো না। তাই সকালেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গিয়ে এ বিষয় বললাম। তিনি বললেন, এতো রাতের আধাঁর এবং দিনের আলো”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯১৬।]

সাহল ইবন সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«أُنْزِلَتْ : ﴿وَكُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَكُمُ ٱلۡخَيۡطُ ٱلۡأَبۡيَضُ مِنَ ٱلۡخَيۡطِ ٱلۡأَسۡوَدِ﴾ [ البقرة : ١٨٧ ] وَلَمْ يَنْزِلْ ﴿مِنَ ٱلۡفَجۡرِۖ﴾ [ البقرة : ١٨٧ ] ، فَكَانَ رِجَالٌ إِذَا أَرَادُوا الصَّوْمَ رَبَطَ أَحَدُهُمْ فِي رِجْلِهِ الخَيْطَ الأَبْيَضَ وَالخَيْطَ الأَسْوَدَ، وَلَمْ يَزَلْ يَأْكُلُ حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَهُ رُؤْيَتُهُمَا، فَأَنْزَلَ اللَّهُ بَعْدُ : ﴿مِنَ ٱلۡفَجۡرِۖ﴾ [ البقرة : ١٨٧ ] فَعَلِمُوا أَنَّهُ إِنَّمَا يَعْنِي اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ »

“যখন এ আয়াত নাযিল হলো, ‘’তোমরা পানাহার কর, যতক্ষণ না কালো রেখা সাদা রেখা স্পষ্টরূপে তোমাদের নিকট প্রতিভাত না হয়। কিন্তু তখনো কথাটি নাযিল হয় নি। তখন সাওম পালন করতে ইচ্ছুক লোকেরা নিজেদের দুই পায়ে একটি কাল এবং একটি সাদা সুতলি বেধে  নিতেন এবং সাদা কালো এ দু’টির পার্থক্য না দেখা পর্যন্ত তাঁরা পানাহার করতে থাকতেন। এরপর আল্লাহ তা‘আলা শব্দটি নাযিল করলে সকলেই বুঝতে পারলেন যে, এ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো রাত (এর আধার) এবং দিন (এর আলো)।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯১৭।]

২৯
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: বিলালের আযান যেন তোমাদেরকে সাহরী থেকে বিরত না রাখে
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা এবং কাসিম ইবব মুহাম্মদ রহ. ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণনা করেন,

«أَنَّ بِلاَلًا كَانَ يُؤَذِّنُ بِلَيْلٍ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : كُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى يُؤَذِّنَ ابْنُ أُمِّ مَكْتُومٍ، فَإِنَّهُ لاَ يُؤَذِّنُ حَتَّى يَطْلُعَ الفَجْرُ، قَالَ القَاسِمُ : وَلَمْ يَكُنْ بَيْنَ أَذَانِهِمَا إِلَّا أَنْ يَرْقَى ذَا وَيَنْزِلَ ذَا»

“বিলাল (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) রাতে আযান দিতেন। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইবন উম্মে মাকতূম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আযান দেওয়া পর্যন্ত তোমরা পানাহার কর। কেননা সে ফজর না হওয়া পর্যন্ত আযান দেয় না। কাসিম রহ. বলেন, এদের উভয়ের মাঝে শুধু এতটুকু ব্যবধান ছিল যে, একজন নামতেন এবং অন্যজন উঠতেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯১৮।]

সামুরা ইবন জুনদুব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لَا يَغُرَّنَّكُمْ نِدَاءُ بِلَالٍ، وَلَا هَذَا الْبَيَاضُ حَتَّى يَبْدُوَ الْفَجْرُ أَوْ قَالَ حَتَّى يَنْفَجِرَ الْفَجْرُ»

“বিলালের আযান ও এ শুভ্ররেখা যেন তোমাদেরকে ধোকায় না ফেলে যতক্ষণ পর্যন্ত না সুবহে সাদিক সুস্পষ্টরূপে প্রতিভাত হয়”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০৯৪।]

সামুরা ইবন জুনদুব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«لَا يَغُرَّنَّكُمْ مِنْ سَحُورِكُمْ أَذَانُ بِلَالٍ، وَلَا بَيَاضُ الْأُفُقِ الْمُسْتَطِيلُ هَكَذَا، حَتَّى يَسْتَطِيرَ هَكَذَا وَحَكَاهُ حَمَّادٌ بِيَدَيْهِ، قَالَ : يَعْنِي مُعْتَرِضًا

“বিলালের আযান এবং আকাশ প্রান্তে এ লাল রেখা যেন তোমাদেরকে সাহরী খাওয়ার ব্যাপারে ধোকায় না ফেলে যতক্ষণ পর্যন্ত না এ শুভ্র রেখা পূর্বাকাশে এভাবে বিস্তৃত হয়। হাম্মাদ রহ. বলেন, এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উভয় হাত দ্বারা আড়াআড়ি হওয়ার প্রতি ইংগিত করেছেন”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০৯৪।]

সামুরা ইবন জুনদুব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«لَا يَغُرَّنَّكُمْ أَذَانُ بِلَالٍ، وَلَا هَذَا الْبَيَاضُ - لِعَمُودِ الصُّبْحِ - حَتَّى يَسْتَطِيرَ هَكَذَا»

“বিলালের আযান এবং আকাশ প্রান্তে এ লাল রেখা যেন তোমাদেরকে সাহরী খাওয়ার ব্যাপারে ধোকায় না ফেলে যতক্ষণ পর্যন্ত না এ শুভ্র রেখা পূর্বাকাশে এভাবে বিস্তৃত হয়”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০৯৪।]

সামুরা ইবন জুনদুব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে,

«لَا يَغُرَّنَّ أَحَدَكُمْ نِدَاءُ بِلَالٍ مِنَ السَّحُورِ، وَلَا هَذَا الْبَيَاضُ حَتَّى يَسْتَطِيرَ»

“বিলালের আযান যেন তোমাদেরকে ধোকায় না ফেলে এবং শুভ্র রেখা যা স্তম্ভের মতো দেখা যায় যতক্ষণ না তা বিস্তৃতভাবে উদ্ভাসিত হবে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০৯৪।]

৩০
সাহরী খাওয়ায় তাড়াতাড়ি করা
সাহল ইবন সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كُنْتُ أَتَسَحَّرُ فِي أَهْلِي، ثُمَّ تَكُونُ سُرْعَتِي أَنْ أُدْرِكَ السُّجُودَ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ»

“আমি আমার পরিবার-পরিজনের মধ্যে সাহরী খেতাম। এরপর  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সালাতে শরীক হওয়ার জন্য তাড়াতাড়ি করতাম”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯১৯।]

যির রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«قُلْنَا لِحُذَيْفَةَ : أَيَّ سَاعَةٍ تَسَحَّرْتَ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ : «هُوَ النَّهَارُ إِلَّا أَنَّ الشَّمْسَ لَمْ تَطْلُعْ»

“আমরা হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কাছে বললাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে আপনি কখন সাহরী খেতেন? তিনি বললেন, খুব ভোরেই। তবে হ্যাঁ, তখনো সূর্য উদয় হত না (ভোর রাত্রের শেষের দিকে)।” [নাসায়ী, হাদীস নং ২১৫২, ইবন মাজাহ, ১৬৯৫। আলবনী রহ. বলেছেন, হাদীসটি হাসান। এ হাদীসের ব্যাখায় পরের হাদীস দ্বারা করা হয়েছে।]

‘আদী রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি যির ইবন হুবাইস রহ.কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন যে,

«تَسَحَّرْتُ مَعَ حُذَيْفَةَ، ثُمَّ خَرَجْنَا إِلَى الصَّلَاةِ، فَلَمَّا أَتَيْنَا الْمَسْجِدَ صَلَّيْنَا رَكْعَتَيْنِ، وَأُقِيمَتِ الصَّلَاةُ وَلَيْسَ بَيْنَهُمَا إِلَّا هُنَيْهَةٌ»

“আমি হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সাথে সাহরী খেলাম। অতঃপর সালাত আদায় করার জন্য বের হলাম। যখন আমরা মসজিদে পৌছে দু’রাকা‘আত সালাত আদায় করলাম (ফজরের সুন্নাত)। তখনই (জামা‘আতের) ইকামাত বলা হলো। উভয়ের মাঝখানে মাত্র অল্প কিছুক্ষণ সময়ের ব্যবধান ছিল।” [নাসায়ী, হাদীস নং ২১৫৩, আলবনী রহ. বলেছেন, হাদীসটি সহীহ।]

মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক রহ. বর্ণনায় এসেছে যে,

«فَشَرِبْتُ، وَالْمُؤَذِّنُ يُؤَذِّنُ فِي الْمَسْجِدِ قَالَ : «فَلَمَّا دَخَلْنَا الْمَسْجِدَ أُقِيمَتِ الصَّلَاةُ، وَهُمْ يَغْلِسُونَ»

“আমি পানি পান করছিলাম, তখন মসজিদে মুয়াজ্জিন আযান দিচ্ছিল। আমরা যখন মসজিদে প্রবেশ করলাম তখন সালাতের ইকামত দেওয়া হলো, লোকজন তখন অন্ধকারে সালাত আদায় করছিল”। [মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক, ৭৬০৬।]

৩১
সাহরী ও ফজরের সালাতের মাঝে ব্যবধানের পরিমাণ
যায়েদ ইবন সাবিত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«تَسَحَّرْنَا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ قَامَ إِلَى الصَّلاَةِ»، قُلْتُ : كَمْ كَانَ بَيْنَ الأَذَانِ وَالسَّحُورِ؟ " قَالَ : «قَدْرُ خَمْسِينَ آيَةً»

“আমরা রাসূলুল্লাহ  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সাহরী খাই, এরপর তিনি সালাতের জন্য দাঁড়ান। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা জিজ্ঞেসা করলাম আযান ও সাহরীর মাঝে কতটুকু ব্যবধান ছিল? তিনি বললেন, পঞ্চাশ আয়াত (পাঠ করা) পরিমান”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯২০।]

৩২
সাহরীতে রয়েছে অনেক বরকত কিন্তু তা ওয়াজিব নয়। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ একটানা সাওম পালন করেছেন অথচ সেখানে সাহরীর উল্লেখ নেই
‘আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,

«أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَاصَلَ، فَوَاصَلَ النَّاسُ، فَشَقَّ عَلَيْهِمْ فَنَهَاهُمْ، قَالُوا : إِنَّكَ تُوَاصِلُ، قَالَ : لَسْتُ كَهَيْئَتِكُمْ إِنِّي أَظَلُّ أُطْعَمُ وَأُسْقَى»

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটানা সাওম পালন করতে থাকলে লোকেরাও একটানা সাওম পালন করতে শুরু করে। এ কাজ তাদের জন্য কষ্টকর হয়ে দাঁড়াল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিষেধ করলেন। তারা বলল, আপনি যে একনাগাড়ে সাওম পালন করছেন? তিনি বললেন, আমি তো তোমাদের মতো নই। আমাকে খাওয়ানো হয় ও পান করানো হয়”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯২২।]

আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু খেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«تَسَحَّرُوا فَإِنَّ فِي السَّحُورِ بَرَكَةً»

“তোমরা সাহরী খাও, কেননা সাহরীতে বরকত রয়েছে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯২৩।]

‘আমর ইবনু ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«فَصْلُ مَا بَيْنَ صِيَامِنَا وَصِيَامِ أَهْلِ الْكِتَابِ، أَكْلَةُ السَّحَرِ»

“আমাদের ও আহলে কিতাবীদের সিয়ামের মধ্যে পার্থক্য হলো সাহরী খাওয়া”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০৯৬।]

৩৩
সাহরীতে যা খাওয়া মুস্তাহাব
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : «نِعْمَ سَحُورُ الْمُؤْمِنِ التَّمْرُ»

“মুমিনের উত্তম সাহরী হলো খেজুর দ্বারা সাহরী খাওয়া”। [আবু দাউদ, ২৩৩৫, ইবন হিব্বান, ৩৪৭৫। আলবানী রহ. বলেছেন, হাদীসটি সহীহ।]

৩৪
আযান দেওয়া অবস্থায় কারো হাতে খাবারের পাত্র থাকলে কী করবে?
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إِذَا سَمِعَ أَحَدُكُمُ النِّدَاءَ وَالْإِنَاءُ عَلَى يَدِهِ، فَلَا يَضَعْهُ حَتَّى يَقْضِيَ حَاجَتَهُ مِنْهُ»

“তোমাদের কেউ যখন ফজরের আযান শ্রবণ করে আর এ সময় তার হাতে খাদ্যের পাত্র থাকে, সে যেন আযানের কারণে খাদ্য গ্রহণ বন্ধ না করে যতক্ষণ না সে তদ্বারা স্বীয় প্রয়োজন পূর্ণ না করে”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ২৩৫০, আলবানী রহ. বলেছেন, হাদীসটি হাসান সহীহ। মুসতাদরাক হাকিম, হাদীস নং ৭২৯। তিনি বলেছেন, এটি মুসলিমের শর্তে সহীহ, ইমাম যাহাবী রহ. তাঁর সাথে ঐক্যমত পোষন করেছেন, (৭২৯)।এ হাদীসের অর্থ হলো, যখন কেউ শরী‘য়ত নির্দেশিত আযান শ্রবন করে আর তখন খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করছে তাহলে তার মুখের ভিতরের খাবার ও পানীয় শেষ করবে। তবে বর্তমানে কিছু সাধারণ মানুষ প্রথম আযান শুনে ইমসাক তথা খাবার থেকে বিরত থাকে। প্রথম আযান শুনে তারা খাদ্য গ্রহণ থেকে নিজেদেরকে বঞ্চিত করে, অথচ এতে বিলম্বে সাহরী খাওয়ার সুন্নত থেকে তারা বঞ্চিত হয়, কেননা প্রথন আযান হলো মানুষকে সাহরীর সময় শেষ হওয়া সম্পর্কে সতর্ক করা। তাছাড়াও দ্বিতীয় আযান শুরু হলেও কারো মুখে খাবার বা পানীয় থাকলে তা ফেলে না দিয়ে পূর্ণ করবে, তাহলে প্রথম আযান শুনে যারা খাবার থেকে বিরত থাকে তারা কতটুকু সঠিক কাজ করে?]

৩৫
দিনের বেলায় (নফল) সাওমের নিয়ত করলে
উম্মে দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলতেন,

«عِنْدَكُمْ طَعَامٌ؟ فَإِنْ قُلْنَا : لاَ، قَالَ : «فَإِنِّي صَائِمٌ يَوْمِي هَذَا وَفَعَلَهُ أَبُو طَلْحَةَ، وَأَبُو هُرَيْرَةَ، وَابْنُ عَبَّاسٍ، وَحُذَيْفَةُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ»

“ঘরে কি খাদ্য আছে? যদি আমরা বলতাম না, তবে তিনি বলতেন তাহলে আজকে আমি সাওম পালনকারী। এমনিভাবে আবু তালহা, আবু হুরাইরা, ইবন আব্বাস ও হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম এ কাজ করতেন।” [বুখারী, তালিক, ৩/২৯।]

সালামাহ ইবন আকওয়া‘ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,

«أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعَثَ رَجُلًا يُنَادِي فِي النَّاسِ يَوْمَ عَاشُورَاءَ إِنَّ مَنْ أَكَلَ فَلْيُتِمَّ أَوْ فَلْيَصُمْ، وَمَنْ لَمْ يَأْكُلْ فَلاَ يَأْكُلْ»

“আশুরার দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে এ বলে লোকদের মধ্যে ঘোষণা দেওয়ার জন্য পাঠালেন, যে ব্যক্তি খেয়ে ফেলেছে সে যেন পূর্ণ করে নেয় অথবা বলেছেন, সে যেন সাওম আদায় করে নেয় আর যে এখনো খায় নি সে যেন আর না খায়”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯২৪, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৩৫।]

৩৬
সাওম পালনকারী জুনূবী (অপবিত্র) অবস্থায় সকাল করলে
মারওয়ান রহ. থেকে বর্ণিত যে, ‘আয়শা এবং উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা তাকে সংবাদ দিয়েছেন,

«أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُدْرِكُهُ الفَجْرُ وَهُوَ جُنُبٌ مِنْ أَهْلِهِ، ثُمَّ يَغْتَسِلُ، وَيَصُومُ»

“নিজ নিজ স্ত্রীর সাথে মিলনজনিত জুনূবী অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ফজরের সময় হয়ে যেত। তখন তিনি গোসল করতেন এবং সাওম পালন করতেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯২৬।]

আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে তাঁর আলোচনায় বলতে শুনেছি যে,

«مَنْ أَدْرَكَهُ الْفَجْرُ جُنُبًا فَلَا يَصُمْ»، فَذَكَرْتُ ذَلِكَ لِعَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ الْحَارِثِ لِأَبِيهِ فَأَنْكَرَ ذَلِكَ، فَانْطَلَقَ عَبْدُ الرَّحْمَنِ وَانْطَلَقْتُ مَعَهُ، حَتَّى دَخَلْنَا عَلَى عَائِشَةَ وَأُمِّ سَلَمَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، فَسَأَلَهُمَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ عَنْ ذَلِكَ، قَالَ : فَكِلْتَاهُمَا قَالَتْ : كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصْبِحُ جُنُبًا مِنْ غَيْرِ حُلُمٍ، ثُمَّ يَصُومُ قَالَ : فَانْطَلَقْنَا حَتَّى دَخَلْنَا عَلَى مَرْوَانَ، فَذَكَرَ ذَلِكَ لَهُ عَبْدُ الرَّحْمَنِ، فَقَالَ مَرْوَانُ : عَزَمْتُ عَلَيْكَ إِلَّا مَا ذَهَبْتَ إِلَى أَبِي هُرَيْرَةَ، فَرَدَدْتَ عَلَيْهِ مَا يَقُولُ : قَالَ : فَجِئْنَا أَبَا هُرَيْرَةَ، وَأَبُو بَكْرٍ حَاضِرُ ذَلِكَ كُلِّهِ، قَالَ : فَذَكَرَ لَهُ عَبْدُ الرَّحْمَنِ، فَقَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ : أَهُمَا قَالَتَاهُ لَكَ؟ قَالَ : نَعَمْ، قَالَ : هُمَا أَعْلَمُ، ثُمَّ رَدَّ أَبُو هُرَيْرَةَ مَا كَانَ يَقُولُ فِي ذَلِكَ إِلَى الْفَضْلِ بْنِ الْعَبَّاسِ، فَقَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ : سَمِعْتُ ذَلِكَ مِنَ الْفَضْلِ، وَلَمْ أَسْمَعْهُ مِنَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ : فَرَجَعَ أَبُو هُرَيْرَةَ عَمَّا كَانَ يَقُولُ فِي ذَلِكَ، قُلْتُ لِعَبْدِ الْمَلِكِ : أَقَالَتَا : فِي رَمَضَانَ؟ قَالَ : كَذَلِكَ كَانَ يُصْبِحُ جُنُبًا مِنْ غَيْرِ حُلُمٍ ثُمَّ يَصُومُ»

“জানাবাত (অপবিত্র) অবস্থায় কারো ভোর হলে তার সাওম হবে না। এরপর এ কথাটি আমি আবদুর রহমান ইবন হারিস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট বর্ণনা করলাম। কিন্তু তিনি তা অস্বীকার করলেন। তারপর আব্দুর রহমান চললেন। আমিও তাঁর সাথে সাথে চললাম। আমরা ‘আয়েশা এবং উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার নিকট গেলাম। এরপর আব্দুর রহমান তাঁদের উভয়কে এ সমন্ধে জিজ্ঞাসা করলেন। তারা বললেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহতিলাম ব্যাতিরেকে ও জানাবাতের অবস্থায় ভোর করতেন এবং সাওম পালন করতেন। এরপর আমরা মারওয়ানের নিকট আসলাম এবং আব্দুর রহমান তার সাথে এ নিয়ে আলোচনা করলেন। এরপর মারওয়ান বললেন আমি তোমাকে কসম দিয়ে বলছি, তুমি আবু হুরায়রার নিকট যাও এবং তার কথাটি রদ করে দাও। এরপর আমি আবু হুরায়রার নিকট গেলাম। এ সময় আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আবদুর রহমানের সাথে ছিলেন। আব্দুর রহমান এ নিয়ে আবু হুরায়রার সঙ্গে আলোচনা করলেন। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, তোমার নিকট তাঁরা উভয়েই কি এ কথা বলেছেন? তিনি বললেন হ্যাঁ, তাঁরা উভয়েই এ কথা বলেছেন। তখন আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, বস্তুত তাঁরাই সর্বাধিক অবগত। তারপর আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁর এ কথাটিকে ফযল ইবন আব্বাসের প্রতি সম্পর্কিত করে বললেন আমি এ কথাটি ফযলের (ইবন আব্বাস) থেকে শুনেছিলাম, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনি নি। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এ বিষয়ে তাঁর মত পরিবর্তন করেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি আব্দুল মালিককে জিজ্জাসা করলাম। তারা রমযানের কথা বলেছে কি? তিনি বললেন হ্যাঁ অনুরূপই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহতিলাম ব্যতিরেকেও জানাবাত অবস্থায় ভোর করতেন। এরপর সাওম পালন করতেন।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১০৯।]

আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«أَنَّ مَرْوَانَ أَرْسَلَهُ إِلَى أُمِّ سَلَمَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا يَسْأَلُ عَنِ الرَّجُلِ يُصْبِحُ جُنُبًا، أَيَصُومُ؟ فَقَالَتْ : «كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصْبِحُ جُنُبًا مِنْ جِمَاعٍ، لَا مِنْ حُلُمٍ، ثُمَّ لَا يُفْطِرُ وَلَا يَقْضِي»

“একদা মারওয়ান তাকে উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার নিকট পাঠালেন ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার জন্য যার জানাবাত অবস্থায় ভোর হলো, সে সাওম পালন করতে পারবে কি? তিনি বললেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইহতিলাম ব্যতিরেকে স্ত্রী সহবাসের কারণে গোসল ফরয হওয়া অবস্থায় ভোর হতো। এরপর সাওম ভেঙ্গে ইফতারও করতেন করতেন না এবং সাওমের কাযাও করতেন না”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১০৯।]

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«أَنَّ رَجُلًا جَاءَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْتَفْتِيهِ، وَهِيَ تَسْمَعُ مِنْ وَرَاءِ الْبَابِ، فَقَالَ : يَا رَسُولَ اللهِ، تُدْرِكُنِي الصَّلَاةُ وَأَنَا جُنُبٌ، أَفَأَصُومُ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «وَأَنَا تُدْرِكُنِي الصَّلَاةُ وَأَنَا جُنُبٌ فَأَصُومُ» فَقَالَ : لَسْتَ مِثْلَنَا، يَا رَسُولَ اللهِ، قَدْ غَفَرَ اللهُ لَكَ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِكَ وَمَا تَأَخَّرَ، فَقَالَ : «وَاللهِ، إِنِّي لَأَرْجُو أَنْ أَكُونَ أَخْشَاكُمْ لِلَّهِ، وَأَعْلَمَكُمْ بِمَا أَتَّقِي»

“ফতোয়া জিজ্ঞাসা করার জন্য এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসলো। এ সময় তিনি দরজার পেছন থেকে কথাগুলো শুনছিলেন। লোকটি বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! জানাবাত অবস্থায় আমার ফজরের সালাতের সময় হয়ে যায়, এমতাবস্থায় আমি সাওম পালন করতে পারি কি? উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, জানাবাত অবস্থায় আমারও ফজরের সালাতের সময় হয়ে যায় আমি তো সাওম পালন করি। এরপর লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি তো আমাদের মতো নন। আল্লাহ তা‘আলা আপনার পূর্বাপর সমুদয় গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। তখন তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ! আমার আশা, আমি আল্লাহকে তোমাদের চেয়ে সর্বাধিক ভয় করি এবং আমি সর্বাধিক অবগত ঐ বিষয় সম্পর্কে যা থেকে আমার বিরত থাকা আবশ্যক”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১১০।]

সুলাইমান ইবন ইয়াসার থেকে বর্ণিত,

«أَنَّهُ سَأَلَ أُمَّ سَلَمَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا، عَنِ الرَّجُلِ يُصْبِحُ جُنُبًا أَيَصُومُ، قَالَتْ : كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصْبِحُ جُنُبًا مِنْ غَيْرِ احْتِلَامٍ، ثُمَّ يَصُومُ»

“তিনি উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন যে জানাবাত অবস্থায় ভোর করলো। সে কি সাওম পালন করবে? তিনি (উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) বলেন, রমযান মাসে ইহতিলাম ছাড়াই স্ত্রী সহবাসের কারণে জানাবাত অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভোর হতো, এরপর তিনি সাওম পালন করতেন”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১০৯।]

৩৭
সাওম অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করা
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন,

«يَحْرُمُ عَلَيْهِ فَرْجُهَا»

“যৌনাঙ্গ দিয়ে সহবাস করা হারাম।”

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُقَبِّلُ وَيُبَاشِرُ وَهُوَ صَائِمٌ، وَكَانَ أَمْلَكَكُمْ لِإِرْبِهِ، وَقَالَ : قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ ﴿مَ‍َٔارِبُ﴾ [ طه : ١٨ ] حَاجَةٌ، قَالَ طَاوُسٌ : ﴿غَيۡرِ أُوْلِي ٱلۡإِرۡبَةِ﴾ [ النور : ٣١ ] الأَحْمَقُ لاَ حَاجَةَ لَهُ فِي النِّسَاءِ»

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওমের অবস্থায় চুমু খেতেন এবং গায়ে গা লাগাতেন। তবে তিনি তাঁর প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণে তোমাদের চাইতে অধিক সক্ষম ছিলেন। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, مَ‍َٔارِبُ মানে হাজত বা চাহিদা। তাউস রহ. বলেন, غَيۡرِ أُوْلِي ٱلۡإِرۡبَةِ মানে বোধহীন, যার মেয়েদের প্রতি কোনো খাহিশ নেই।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯২৭।]

৩৮
সাওম অবস্থায় চুম্বন করা
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«إِنْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيُقَبِّلُ بَعْضَ أَزْوَاجِهِ وَهُوَ صَائِمٌ، ثُمَّ ضَحِكَتْ»

“সাওম পালন অবস্থায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কোনো কোনো স্ত্রীকে চুমু খেতেন। (এ কথা বলে) ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা হেসে দিলেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯২৮।]

উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«بَيْنَمَا أَنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الخَمِيلَةِ، إِذْ حِضْتُ فَانْسَلَلْتُ، فَأَخَذْتُ ثِيَابَ حِيضَتِي، فَقَالَ : مَا لَكِ أَنَفِسْتِ؟ قُلْتُ : نَعَمْ، فَدَخَلْتُ مَعَهُ فِي الخَمِيلَةِ وَكَانَتْ هِيَ وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَغْتَسِلاَنِ مِنْ إِنَاءٍ وَاحِدٍ وَكَانَ يُقَبِّلُهَا وَهُوَ صَائِمٌ»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে একই চাঁদরে আমি ছিলাম। এমন সময় আমার হায়েয শুরু হলো। তখন আমি আমার হায়েযের কাপড় পরিধান করলাম। তিনি বললেন, তোমার কী হলো? তোমার কি হায়েয দেখো দিয়েছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তারপর আমি আবার তাঁর সঙ্গে চাঁদরের ভিতর ঢুকে পড়লাম। তিনি এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই পাত্র থেকে গোসল করতেন এবং সাওম পালন অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে চুমু দিতেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯২৯।]

হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُقَبِّلُ وَهُوَ صَائِمٌ»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওম অবস্বায় চুমু দিতেন।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১০৭।]

উমার ইবন আবু সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,

«أَنَّهُ سَأَلَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : أَيُقَبِّلُ الصَّائِمُ؟ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «سَلْ هَذِهِ» لِأُمِّ سَلَمَةَ فَأَخْبَرَتْهُ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصْنَعُ ذَلِكَ، فَقَالَ : يَا رَسُولَ اللهِ، قَدْ غَفَرَ اللهُ لَكَ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِكَ وَمَا تَأَخَّرَ، فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «أَمَا وَاللهِ، إِنِّي لَأَتْقَاكُمْ لِلَّهِ، وَأَخْشَاكُمْ لَهُ»

“একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, সাওম পালনকারী ব্যক্তি চুম্বন করতে পারে কি? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, কথাটি উম্মে সালমাকে জিজ্ঞাসা কর। (তাকে জিজ্ঞাসা করার পর) তিনি বললেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ করেন। এরপর তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহ তো আপনার আগে পরের সমূদয় গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, শোন! আল্লাহর শপথ! আমি আল্লাহ তা‘আলাকে তোমাদের সকলের চেয়ে অধিক ভয় করি”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১০৮।]

৩৯
স্বামীর অনুমতিক্রমে স্ত্রীর নফল সাওম পালন
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বলেন,

«لاَ تَصُومُ المَرْأَةُ وَبَعْلُهَا شَاهِدٌ إِلَّا بِإِذْنِهِ»

“কোনো স্ত্রী স্বামীর উপস্থিতিতে তাঁর অনুমতি ছাড়া নফল সাওম রাখবে না”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫১৯২, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০২৬।]

আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, 

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ قَالَ : جَاءَتِ امْرَأَةٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَنَحْنُ عِنْدَهُ، فَقَالَتْ : يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّ زَوْجِي صَفْوَانَ بْنَ الْمُعَطَّلِ، يَضْرِبُنِي إِذَا صَلَّيْتُ، وَيُفَطِّرُنِي إِذَا صُمْتُ، وَلَا يُصَلِّي صَلَاةَ الْفَجْرِ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ، قَالَ وَصَفْوَانُ عِنْدَهُ، قَالَ : فَسَأَلَهُ عَمَّا قَالَتْ، فَقَالَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَمَّا قَوْلُهَا يَضْرِبُنِي إِذَا صَلَّيْتُ، فَإِنَّهَا تَقْرَأُ بِسُورَتَيْنِ وَقَدْ نَهَيْتُهَا، قَالَ : فَقَالَ : «لَوْ كَانَتْ سُورَةً وَاحِدَةً لَكَفَتِ النَّاسَ»، وَأَمَّا قَوْلُهَا : يُفَطِّرُنِي، فَإِنَّهَا تَنْطَلِقُ فَتَصُومُ، وَأَنَا رَجُلٌ شَابٌّ، فَلَا أَصْبِرُ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَئِذٍ : «لَا تَصُومُ امْرَأَةٌ إِلَّا بِإِذْنِ زَوْجِهَا»، وَأَمَّا قَوْلُهَا : إِنِّي لَا أُصَلِّي حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ، فَإِنَّا أَهْلُ بَيْتٍ قَدْ عُرِفَ لَنَا ذَاكَ، لَا نَكَادُ نَسْتَيْقِظُ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ، قَالَ : «فَإِذَا اسْتَيْقَظْتَ فَصَلِّ»

“জনৈকা মহিলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে আগমন করে এবং এ সময় আমরাও তাঁর নিকট উপস্থিত ছিলাম। সে মহিলা বলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমার স্বামী সাফওয়ান ইবন মু‘আত্তাল, যখন আমি সালাত পড়ি তখন আমাকে মারধর করে আর আমি সাওম পালন করলে সে আমাকে সাওম ভাঙ্গতে বলে। অথচ সে সে সূর্যোদয়ের পূর্বে কখনো ফজরের সালাত পড়ে না। বর্ণনাকারী বলেন, সাফওয়ানও তাঁর নিকট উপস্থিত ছিলেন। তিনি তাঁর নিকট উক্ত মহিলার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! তার বক্তব্য ‘আমাকে মারধর করে, যখন আমি সালাত আদায় করি।’ প্রকৃত ব্যাপার এই যে, সে এমন (দীর্ঘ) দু’টি সূরা (সালাতের মধ্যে) পড়ে, যা যা পড়তে তাকে আমি নিষেধ করি। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি বলেছেন, যদি কেউ (ছোট) একটি সূরা পড়ে, তবে তা তার জন্য যথেষ্ট হবে। আর তার বক্তব্য ‘আমি সাওম পালন করলে সে তা ভাঙ্গতে বলে।’ ব্যাপার এই যে, সে সব সময়ই (নফল) সাওম রাখে। আর আমি যুবক হওয়ার কারণে (স্ত্রী সহবাস ব্যতীত) থাকতে পারি না। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আজ থেকে কোনো স্ত্রীলোক স্বামীর অনুমতি ব্যতীত (নফল) সাওম রাখতে পারবে না। আর তার বক্তব্য যে, ‘আমি সূর্যোদয়ের পূর্বে (ফজরের) সালাত আদায় করি না।’ এ সম্পর্কে আমার বক্তব্য এই যে, আমরা পানি সরবরাহকারী পরিবারের লোক। রাতের প্রথম ভাগে কাজ করি, শেষ রাতে নিদ্রা যাই এবং এটাই আমাদের অভ্যাস। এ জন্য আমরা সূর্যোদয় হওয়া ব্যতীত নিদ্রা থেকে জাগ্রত হতে পারি না। তিনি বলেন, তুমি যখই নিদ্রা থেকে জাগ্রত হবে তখনই সালাত পড়ে নিবে।” [আবু দাউদ, হাদীস নং ২৪৫৯, আলবানী রহ. বলেছেন, হাদীসটি সহীহ। ইবন হিব্বান, ১৪৮৮, মুসতাদরাক হাকিম, ১৫৯৪, ইমাম হাকিম রহ. বলেন, এটি বুখারী ও মুসলিমের শর্তে সহীহ, তবে তারা কেউ উল্লেখ করেন নি।]

৪০
সাওম পালনকারীর গোসল করা
সাওমরত অবস্থায় ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা একটি কাপড় ভিজিয়ে গায়ে দিতেন। শা‘বী রহ. গোসলখানায় প্রবেশ করেছেন। (অর্থাৎ পানি দিযে গোসল করেছেন।) ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, হাঁড়ি থেকে কিছু বা অন্য কোনো জিনিস চেটে স্বাদ দেখায় কোনো দোষ নেই। হাসান রহ. বলেন, সাওম পালনকারীর কুলি করা এবং ঠাণ্ডা লাগান দোষনীয় নয়। ইবন মাস‘ঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, তোমাদের কেউ সাওম পালন করলে সে যেন সকালে তেল লাগায় এবং চুল আঁচড়িয়ে নেয়। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমার একটি হাউজ আছে, আমি সাওম পালন অবস্থায় তাতে প্রবেশ করি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত যে, তিনি সাওম পালন অবস্থায় মিসওয়াক করতেন। ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সাওম পালন অবস্থায় দিনের প্রথম ভাগে এবং শেষ ভাগে মিসওয়াক করতেন। ‘আতা রহ. বলেন, থুতু গিলে ফেললে সাওম ভঙ্গ হয়েছে বলা যায় না। ইবন সীরীন রহ. বলেন, কাঁচা বা ভেজা মিসওয়াক ব্যবহারে কোনো দোষ নেই। তাকে প্রশ্ন করা হলো, কাঁচা মিসওয়াকের তো স্বাদ রয়েছে? তিনি বলেন, পানিরও তো স্বাদ আছে অথচ এ পানি দিয়েই তুমি কুলি কর। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু, হাসান রহ. ও ইবরাহীম রহ. সাওম পালনকারীর সুরমা ব্যবহারে কোনো দোষ মনে করতেন না। [বুখারী, ৩/৩০।]

‘উরওয়াহ এবং আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন,

«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «يُدْرِكُهُ الفَجْرُ فِي رَمَضَانَ مِنْ غَيْرِ حُلْمٍ، فَيَغْتَسِلُ وَيَصُومُ»

“রমযান মাসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ভোর হতো ইহতিলাম ব্যতীত (জুনুবী অবস্থায়)। তখন তিনি গোসল করতেন এবং সাওম পালন করতেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৩০, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১০৯।]

আবু বাকর ইবন ‘আব্দুর রহমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كُنْتُ أَنَا وَأَبِي فَذَهَبْتُ مَعَهُ حَتَّى دَخَلْنَا عَلَى عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ : أَشْهَدُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنْ كَانَ لَيُصْبِحُ جُنُبًا مِنْ جِمَاعٍ غَيْرِ احْتِلاَمٍ، ثُمَّ يَصُومُهُ ثُمَّ دَخَلْنَا عَلَى أُمِّ سَلَمَةَ فَقَالَتْ : مِثْلَ ذَلِكَ»

“আমি আমার পিতার সঙ্গে রওয়ানা হয়ে ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার নিকট পৌছলাম। তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে সাক্ষ্য দিচ্ছি, তিনি ইহতিলাম ছাড়া স্ত্রী সহবাসের কারণে জুনূবী অবস্থায় সকাল পর্যন্ত থেকেছেন এবং এরপর সাওম পালন করেছেন। তারপর আমরা উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার নিকট গেলাম। তিনিও অনুরূপ কথাই বললেন।

আবু জা‘ফর বলেন, ‘আব্দুল্লাহ রহ.-কে আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কোনো ব্যক্তি সাওম ভঙ্গ করলে সে কি স্ত্রী সহবাসকারীর মতো কাফফারা আদায় করবে? তিনি বললেন, না; তুমি কি সে হাদীসগুলো সম্পর্কে জান না যাতে বর্ণিত আছে যে, যুগ যুগ ধরে সাওম পালন করলেও তার কাযা আদায় হবে না? [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৩১-১৯৩২, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১০৯।]

৪১
সাওম পালনকারী যদি ভুলে কিছু খেলে বা পান করলে
‘আতা রহ. বলেন, নাকে পানি দিতে গিয়ে যদি তা কন্ঠনালীতে ঢুকে যায়, আর সে ফিরাতে সক্ষম না হয় তা হলে কোনো দোষ নেই। হাসান রহ. বলেন, সাওম পালনকারী ব্যক্তির কন্ঠনালীতে মাছি ঢুকে পড়লে তাঁর কিছু করতে হবে না। হাসান ও মুজাহিদ রহ. বলেছেন, সাওম পালনকারী ব্যক্তি যদি ভুলবশতঃ স্ত্রী সহবাস করে ফেলে, তবে তাঁর কিছু করতে হবে না।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন,

«إِذَا نَسِيَ فَأَكَلَ وَشَرِبَ، فَلْيُتِمَّ صَوْمَهُ، فَإِنَّمَا أَطْعَمَهُ اللَّهُ وَسَقَاهُ»

“সাওমদার ভুলক্রমে যদি আহার করে বা পান করে ফেলে তাহলে সে যেন তার সাওম পুরা করে নেয়। কেননা আল্লাহই তাকে পানাহার করিয়েছেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৩৩।]

৪২
সাওম পালনকারীর শুকনো ও ভেজা মিসওয়াক ব্যবহার করার হুকুম
‘আমির ইবন রবী‘আ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সাওম পালন অবস্থায় অসংখ্য বার মিসওয়াক করতে দেখেছি। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমার উম্মতের জন্য যদি কষ্টকর মনে না করতাম তবে প্রতিবার অযুর সময় আমি তাদেরকে মিসওয়াকের নির্দেশ দিতাম। জাবির ও যায়েদ ইবন খালিদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে এবং তিনি সাওম পালনকারী ও সাওম পালনকারী নয়, তাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য করেন নি। ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, মিসওয়াক করায় রয়েছে মুখের পবিত্রতা ও আল্লাহর সন্তুষ্টি। ‘আতা ও কাতাদাহ রহ. বলেছেন, সাওম পালনকারী তার মুখের থুতু গিলে ফেলতে পারে।

হুমরান রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«رَأَيْتُ عُثْمَانَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، تَوَضَّأَ فَأَفْرَغَ عَلَى يَدَيْهِ ثَلاَثًا، ثُمَّ تَمَضْمَضَ وَاسْتَنْثَرَ، ثُمَّ غَسَلَ وَجْهَهُ ثَلاَثًا، ثُمَّ غَسَلَ يَدَهُ اليُمْنَى إِلَى المَرْفِقِ ثَلاَثًا، ثُمَّ غَسَلَ يَدَهُ اليُسْرَى إِلَى المَرْفِقِ ثَلاَثًا، ثُمَّ مَسَحَ بِرَأْسِهِ، ثُمَّ غَسَلَ رِجْلَهُ اليُمْنَى ثَلاَثًا، ثُمَّ اليُسْرَى ثَلاَثًا، ثُمَّ قَالَ : رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَوَضَّأَ نَحْوَ وَضُوئِي هَذَا ثُمَّ قَالَ : مَنْ تَوَضَّأَ وُضُوئِي هَذَا، ثُمَّ يُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ لاَ يُحَدِّثُ نَفْسَهُ فِيهِمَا بِشَيْءٍ، إِلَّا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ»

“আমি ওসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে অযু করতে দেখেছি। তিনি তিনবার হাতের উপর পানি ঢাললেন। এরপর তিনি কুলি করলেন, নাকে পানি দিলেন। তারপর তিনবার চেহারা (মুখমণ্ডল) ধৌত করলেন। এরপর ডান হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধৌত করলেন এবং বামহাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধৌত করলেন। এরপর তিনি মাথা মাসেহ করলেন। তারপর ডান পা তিনবার ধৌত করলেন তারপর বাম পা  তিনবার ধৌত করলেন। এরপর বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অযু করতে দেখেছি আমার এ অযুর মতোই। এরপর তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার এ অযুর মতো অযু করে দুই রাকা‘আত সালাত আদায় করবে এবং মনে মনে কোনো কিছুর চিন্তা ভাবনায় লিপ্ত হবে না, তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৩৪, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২৬।]

৪৩
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: যখন অযু করবে তখন নাকের ছিদ্র দিয়ে পানি টেনে নিবে
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে সাওম পালনকারী ও সাওম পালনকারী নয় এতদোভয়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য করেন নি। হাসান রহ. বলেন, সাওম পালনকারীর জন্য নাকে ঔষধ ব্যবহার করায় দোষ নেই যদি তা কণ্ঠনালীতে না পৌঁছে এবং সে সুরমা ব্যবহার করতে পারবে। ‘আতা রহ. বলেন, কুলি করে মুখের পানি ফেলে দেওয়ার পর থুতু এবং মুখের অবশিষ্ট পানি গিলে ফেলায় কোনো ক্ষতি নেই এবং সাওম পালনকারী গোন্দ (আঠা) চিবাবে না। গোন্দ চিবিয়ে যদি কেউ থুতু গিলে ফেলে, তাহলে তার সাওম নষ্ট হয়ে যাবে, আমি এ কথা বলছি না, তবে এরূপ করা থেকে নিষেধ করা উচিত।

লাকীত ইবন সাবিরা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি তাঁর পিতা বর্ণনা করেন,

«قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ، أَخْبِرْنِي عَنِ الوُضُوءِ؟ قَالَ : أَسْبِغِ الوُضُوءَ، وَخَلِّلْ بَيْنَ الأَصَابِعِ، وَبَالِغْ فِي الاِسْتِنْشَاقِ، إِلاَّ أَنْ تَكُونَ صَائِمًا» .

“আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে অযু সম্পর্কে জ্ঞাত করুন। তিনি বললেন, অযু পরিপূর্ণভাবে করবে। আঙ্গুলসমূহের মাঝে খিলাল করবে। খুব উত্তমরূপে নাকে পানি ব্যবহার করবে, তবে সাওমরত থাকলে ভিন্ন কথা।” [তিরমিযি, হাদীস নং ৭৮৮, ইমাম তিরমিযি রহ. বলেছেন, হাদীসটি হাসান সহীহ। নাসায়ী, হাদীস নং ৮৭, আলবানী রহ. বলেছেন, হাদীসটি সহীহ। সহীহ ইবন খুযাইমাহ, হাদীস নং ১৫০, ‘আযমী রহ. বলেছেন, হাদীসের সনদটি সহীহ। মুসতাদরাক হাকিম, ৫২২, ইমাম হাকিম রহ. বলেছেন, হাদীসটি সহীহ, তবে ইমাম বুখারী ও মুসলিম তাদের কিতাবে উল্লেখ করেননি, ইমাম যাহাবী রহ. ও হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]

৪৪
রমযানে দিনের বেলায় সহবাস করলে
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে একটি মরফু‘ হাদীস বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি ওযর এবং রোগ ব্যতীত রমযানের একটি সাওম ভেঙ্গে ফেলল, তার সারা জীবনের সাওমের দ্বারাও এর কাযা আদায় হবে না, যদিও সে সারা জীবন সাওম পালন করে। ইবন মাস‘ঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুও অনুরূপ কথাই বলেছেন। সা‘ঈদ ইবন মুসায়্যিব, শা‘বী, ইবন যোবায়ের, ইবরাহীম, কাতাদা ও হাম্মাদ রহ. বলেছেন, তার স্থলে একদিন কাযা করবে।

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«إِنَّ رَجُلًا أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ : إِنَّهُ احْتَرَقَ، قَالَ : «مَا لَكَ؟»، قَالَ : أَصَبْتُ أَهْلِي فِي رَمَضَانَ، فَأُتِيَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمِكْتَلٍ يُدْعَى العَرَقَ، فَقَالَ : أَيْنَ المُحْتَرِقُ» قَالَ : أَنَا، قَالَ : تَصَدَّقْ بِهَذَا»

“এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বলল, সে তো জ্বলে গেছে। তিনি বললেন, তোমার কি হয়েছে? লোকটি বলল, রমযানে আমি স্ত্রী সহবাস করে ফেলেছি। এ সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে (খেজুর ভর্তি) ঝুড়ি আসলো, যাকে ‘আরাক (১৫ সা‘ পরিমাণ) বলা হয়। তখন নবীসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, অগ্নিদগ্ধ লোকটি কোথায়? লোকটি বলল, আমি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এগুলো সদকা করে দাও”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৩৫, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১১২।]

৪৫
রমযানে দিনের বেলায় স্ত্রী সহবাস করলে সদকা দেওয়ার কিছু না থাকলে, সে যেন নিজে নিজেকে সদকা দিয়ে কাফফারাস্বরূপ আদায় করে
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«بَيْنَمَا نَحْنُ جُلُوسٌ عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، إِذْ جَاءَهُ رَجُلٌ فَقَالَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلَكْتُ . قَالَ : «مَا لَكَ؟ قَالَ : وَقَعْتُ عَلَى امْرَأَتِي وَأَنَا صَائِمٌ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : هَلْ تَجِدُ رَقَبَةً تُعْتِقُهَا؟ قَالَ : لاَ، قَالَ : فَهَلْ تَسْتَطِيعُ أَنْ تَصُومَ شَهْرَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ، قَالَ : لاَ، فَقَالَ : فَهَلْ تَجِدُ إِطْعَامَ سِتِّينَ مِسْكِينًا . قَالَ : لاَ، قَالَ : فَمَكَثَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَبَيْنَا نَحْنُ عَلَى ذَلِكَ أُتِيَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِعَرَقٍ فِيهَا تَمْرٌ وَالعَرَقُ المِكْتَلُ قَالَ : أَيْنَ السَّائِلُ؟ فَقَالَ : أَنَا، قَالَ : «خُذْهَا، فَتَصَدَّقْ بِهِ فَقَالَ الرَّجُلُ : أَعَلَى أَفْقَرَ مِنِّي يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ فَوَاللَّهِ مَا بَيْنَ لاَبَتَيْهَا - يُرِيدُ الحَرَّتَيْنِ أَهْلُ بَيْتٍ أَفْقَرُ مِنْ أَهْلِ بَيْتِي، فَضَحِكَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى بَدَتْ أَنْيَابُهُ، ثُمَّ قَالَ : «أَطْعِمْهُ أَهْلَكَ»

“আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বসা ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি ধ্বংস হয়ে গিয়েছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার কী হয়েছে? সে বলল, আমি সাওম পালন অবস্থায় আমার স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়েছি। রাসূলুল্লাহ বললেন, আযাদ করার মতো কোনো ক্রীতদাস তুমি পাবে কি? সে বলল, না। তিনি বললেন, তুমি কি একাধারে দু’মাস সাওম পালন করতে পারবে? সে বলল, না। এরপর তিনি বললেন, ষাটজন মিসকীন খাওয়াতে পারবে কি? সে বলল, না। বর্ণনাকারী বলেন, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেমে গেলেন, আমরাও এ অবস্থায় ছিলাম। এ সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এক ‘আরাক পেশ করা হলো যাতে খেজুর ছিল। ‘আরাক হলো ঝুড়ি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, প্রশ্নকারী কোথায়? সে বলল, আমি। তিনি বললেন, এগুলো নিয়ে সদকা করে দাও। তখন লোকটি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার চেয়েও বেশি অভাবগ্রস্ত কে সদকা করব? আল্লাহর শপথ, মদীনার উভয় লাবা অর্থাৎ উভয় (কালো পাথর বিশিষ্ট) প্রান্তের মধ্যে আমার পরিবারের চেয়ে অভাবগ্রস্ত কেউ নেই। রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে উঠলেন এবং তাঁর দাঁত (আনইয়াব) দেখা গেল। এরপর তিনি বললেন এগুলো তোমার পরিবারকে খাওয়াও”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৩৬, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১১১।]

৪৬
রমযানে সাওম পালনকারী অবস্থা যে ব্যক্তি স্ত্রী সহবাস করেছে সে ব্যক্তি কি কাফফারা থেকে তার অভাবগ্রস্ত পরিবারকে খাওয়াতে পারবে?
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ : إِنَّ الآخَرَ وَقَعَ عَلَى امْرَأَتِهِ فِي رَمَضَانَ، فَقَالَ : أَتَجِدُ مَا تُحَرِّرُ رَقَبَةً؟ قَالَ : لاَ، قَالَ : فَتَسْتَطِيعُ أَنْ تَصُومَ شَهْرَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ؟ قَالَ : لاَ، قَالَ : أَفَتَجِدُ مَا تُطْعِمُ بِهِ سِتِّينَ مِسْكِينًا؟ قَالَ : لاَ، قَالَ : فَأُتِيَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِعَرَقٍ فِيهِ تَمْرٌ، وَهُوَ الزَّبِيلُ، قَالَ : أَطْعِمْ هَذَا عَنْكَ قَالَ : عَلَى أَحْوَجَ مِنَّا، مَا بَيْنَ لاَبَتَيْهَا أَهْلُ بَيْتٍ أَحْوَجُ مِنَّا، قَالَ : فَأَطْعِمْهُ أَهْلَكَ»

“এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, এই হতভাগা রমযানে স্ত্রী সহবাস করেছে। তিনি বললেন, তুমি কি একটি গোলাম আযাদ করতে পারবে? লোকটি বলল, না। তিনি বললেন, তুমি কি ক্রমাগত দু’মাস সাওম পালন করতে পারবে? লোকটি বলল, না। তিনি বললেন, তুমি কি ষাটজন মিসকীন খাওয়াতে পারবে? সে বলল, না। এমতাবস্থায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এক ‘আরাক অর্থাৎ এক ঝুড়ি খেজুর এল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এগুলো তোমার তরফ থেকে লোকদেরকে আহার করাও। লোকটি বলল, আমার চেয়েও বেশি অভাবগ্রস্তকে? অথচ মদীনার উভয় লাবার অর্থাৎ হররার মধ্যবর্তী স্থলে আমার পরিবারের চেয়ে অধিক অভাবগ্রস্ত কেউ নেই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে তোমার পরিবারকেই খাওয়াও”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৩৭।]

৪৭
সাওম অবস্থায় শিঙ্গা লাগানো ও বমি করা
ইমাম বুখারী রহ. বলেছেন, ইয়াহইয়া ইবন সালিহ রহ. আমাকে বলেছেন, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বমি করলে সাওম ভঙ্গ হয় না। কেননা এতে কিছু বের হয়, ভিতরে প্রবেশ করে না। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে এও বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেন, সাওম ভঙ্গ হয়ে যাবে। প্রথম উক্তিটি বেশি সহীহ। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও ‘ইকরিমা রহ. বলেন, কোনো কিছু ভিতরে প্রবেশ করলে সাওম নষ্ট হয়। কিন্তু বের হওয়ার কারণে নষ্ট হয় না। ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা সাওম পালন অবস্থায় শিঙ্গা লাগাতেন। অবশ্য পরবর্তী সময় তিনি দিনে শিঙ্গা লাগানো ছেড়ে দিয়ে রাতে শিঙ্গা লাগাতেন। আবু মূসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাতে শিঙ্গা লাগিয়েছেন। সা‘ঈদ, যায়েদ, ইবন আরকাম ও উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তারা সকলেই সাওম অবস্থায় শিঙ্গা লাগাতেন। বুকায়র রহ. উম্মে ‘আলকামা রহ. থেকে বর্ণনা করেন যে, আমরা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার সামনে শিঙ্গা লাগাতাম, তিনি আমাদের নিষেধ করতেন না। হাসান রহ. থেকে একাধিক বর্ণনাকারী সূত্রে মারফু‘ হাদীসে আছে যে, শিঙ্গা প্রয়োগকারী এবং গ্রহণকারী উভয়ের সাওমই নষ্ট হয়ে যাবে। ইমাম বুখারী রহ. বলেন, ‘আইয়াশ রহ. হাসান রহ. থেকে আমার নিকট অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, এ কি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত? তিনি বললেন, হ্যাঁ। এরপর তিনি বললেন, আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞাত।

ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ احْتَجَمَ وَهُوَ مُحْرِمٌ، وَاحْتَجَمَ وَهُوَ صَائِمٌ»

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহরিম অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন এবং সাওম পালন অবস্থায়ও সিংগা লাগিয়েছেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৩৮, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২০২।]

ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«احْتَجَمَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ صَائِمٌ»

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওম পালন অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৩৯।]

আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে প্রশ্ন করা হলো,

«أَكُنْتُمْ تَكْرَهُونَ الحِجَامَةَ لِلصَّائِمِ؟ قَالَ : «لاَ، إِلَّا مِنْ أَجْلِ الضَّعْفِ»، وَزَادَ شَبَابَةُ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَلَى عَهْدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ»

“আপনারা কি সাওম পালনকারীর শিঙ্গা লাগানো অপছন্দ করতেন? তিনি বললেন, না। তবে দূর্বল হয়ে যাবার কারণে অপছন্দ করতাম। শাবাবা রহ. শু’বা, রহ. থেকে عَلَى عَهْدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে কথাটি অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৪০।]

৪৮
সফর অবস্থায় সাওম পালন করা ও না করা
আবু ইসহাক আশ-শায়বানী থেকে বর্ণিত, তিনি ইবন আবু আওফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে শুনেছেন, তিনি বলেন,

«مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سَفَرٍ فَقَالَ لِرَجُلٍ : انْزِلْ فَاجْدَحْ لِي، قَالَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ، الشَّمْسُ؟ قَالَ : انْزِلْ فَاجْدَحْ لِي»، قَالَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ الشَّمْسُ؟ قَالَ : انْزِلْ فَاجْدَحْ لِي، فَنَزَلَ فَجَدَحَ لَهُ فَشَرِبَ، ثُمَّ رَمَى بِيَدِهِ هَا هُنَا، ثُمَّ قَالَ : إِذَا رَأَيْتُمُ اللَّيْلَ أَقْبَلَ مِنْ هَا هُنَا، فَقَدْ أَفْطَرَ الصَّائِمُ، تَابَعَهُ جَرِيرٌ، وَأَبُو بَكْرِ بْنُ عَيَّاشٍ، عَنِ الشَّيْبَانِيِّ، عَنْ ابْنِ أَبِي أَوْفَى قَالَ : كُنْتُ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سَفَرٍ»

“কোনো এক সফরে আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ছিলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যাক্তিকে বললেন, সওয়ারী থেকে নেমে আমার জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। সে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! সূর্য এখনো ডুবে নি। তিনি বললেন, সওয়ারী থেকে নামো এবং আমার জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। তারপর সে সওয়ারী থেকে নেমে ছাতু গুলিয়ে আনলে তিনি তা পান করলেন এবং হাতের ইশারায় বললেন, যখন দেখবে রাত এদিক থেকে ঘনিয়ে আসছে তখন বুঝবে, সাওম পালনকারী ব্যক্তির ইফতারের সময় হয়েছে। জাবীর এবং আবু বকর ইবন ‘আইয়াশ শায়বানী থেকে, তিনি ইবন আবু ‘আওফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, কোনো এক সফরে আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ছিলাম”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৪২, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১০১।]

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত,

«أَنَّ حَمْزَةَ بْنَ عَمْرٍو الأَسْلَمِيَّ قَالَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي أَسْرُدُ الصَّوْمَ»

“হামযা ইবন ‘আমর আসলামী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি ক্রমাগত সাওম পালন করছি”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৪২।]

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত,

«أَنَّ حَمْزَةَ بْنَ عَمْرٍو الأَسْلَمِيَّ قَالَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : أَأَصُومُ فِي السَّفَرِ؟ وَكَانَ كَثِيرَ الصِّيَامِ ، فَقَالَ : إِنْ شِئْتَ فَصُمْ، وَإِنْ شِئْتَ فَأَفْطِرْ»

“হামযা ইবন ‘আমর আসলামী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু অধিক সাওম পালনে অভ্যস্থ ছিলেন। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, আমি সফরেও কি সাওম পালন করতে পারি? তিনি বললেন, ইচ্ছা করলে তুমি সাওম পালন করতে পার, আবার ইচ্ছা করলে নাও করতে পার”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৪৩, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১২১।]

হামযা ইবন আমর আল-আসলামী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বললেন,

«يَا رَسُولَ اللهِ، أَجِدُ بِي قُوَّةً عَلَى الصِّيَامِ فِي السَّفَرِ، فَهَلْ عَلَيَّ جُنَاحٌ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : هِيَ رُخْصَةٌ مِنَ اللهِ، فَمَنْ أَخَذَ بِهَا، فَحَسَنٌ وَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يَصُومَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ» قَالَ هَارُونُ فِي حَدِيثِهِ هِيَ رُخْصَةٌ وَلَمْ يَذْكُرْ : مِنَ اللهِ

“হে আল্লাহর রাসূল! সফর অবস্থায়ও আমি আমার মধ্যে সাওম রাখার মতো শক্তি রাখি। সাওম রাখলে কি আমার কোনো অসুবিধা আছে? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সাওম না রাখা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি সুযোগ বিশেষ। অতঃপর যে ব্যক্তি তা গ্রহণ করলো তার জন্য তা উত্তম। আর যে ব্যক্তি সাওম রাখতে পছন্দ করল তার প্রতি এতে কোনো প্রকার গুনাহ হবে না। হারুনের বর্ণিত হাদীসে هِيَ رُخْصَةٌ এরপর مِنَ اللهِ শব্দের উল্লেখ নেই”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং হাদীস নং ১১২১।]

কাযা‘আ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«أَتَيْتُ أَبَا سَعِيدٍ الْخُدْرِيَّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، وَهُوَ مَكْثُورٌ عَلَيْهِ، فَلَمَّا تَفَرَّقَ النَّاسُ عَنْهُ، قُلْتُ : إِنِّي لَا أَسْأَلُكَ عَمَّا يَسْأَلُكَ هَؤُلَاءِ عَنْهُ سَأَلْتُهُ : عَنِ الصَّوْمِ فِي السَّفَرِ؟ فَقَالَ : سَافَرْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى مَكَّةَ وَنَحْنُ صِيَامٌ، قَالَ : فَنَزَلْنَا مَنْزِلًا، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : إِنَّكُمْ قَدْ دَنَوْتُمْ مِنْ عَدُوِّكُمْ، وَالْفِطْرُ أَقْوَى لَكُمْ» فَكَانَتْ رُخْصَةً، فَمِنَّا مَنْ صَامَ، وَمِنَّا مَنْ أَفْطَرَ، ثُمَّ نَزَلْنَا مَنْزِلًا آخَرَ، فَقَالَ : إِنَّكُمْ مُصَبِّحُو عَدُوِّكُمْ، وَالْفِطْرُ أَقْوَى لَكُمْ، فَأَفْطِرُوا وَكَانَتْ عَزْمَةً، فَأَفْطَرْنَا، ثُمَّ قَالَ : لَقَدْ رَأَيْتُنَا نَصُومُ، مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعْدَ ذَلِكَ، فِي السَّفَرِ»

“একবার আমি আবু সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট গেলাম। তাঁর নিকট মানুষের খুব ভিড় ছিল। যখন লোকজন পৃথক হয়ে এদিক ওদিক চলে গেল তখন আমি বললাম, আমি আপনার নিকট ঐসব কথা জিজ্ঞাসা করব, না যা লোকেরা জিজ্ঞাসা করেছে। আমি তাকে সফরের অবস্থায় সাওম পালন করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সাওমরত অবস্থায় মক্কার দিকে রওনা করলাম। এরপর একস্থানে আমরা অবতরণ করলাম। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এখন তোমরা শত্রুদের নিকটবর্তী হয়ে গিয়েছ। এখন ইফতারই তোমাদের জন্য শক্তিশালী থাকার উপায় এবং এ তোমাদের জন্য বিশেষ এক অবকাশ। তখন আমাদের কতক লোক সাওম পালন করল আবার কতক লোক সাওম ভঙ্গ করল। এরপর আমরা অন্য এক স্থানে অবতরণ করলাম। তখন তিনি বললেন ভোরেই তোমরা শত্রুর মুকাবিলা করবে। সুতরাং সাওম ভঙ্গ করা তোমাদের জন্য শক্তি বর্ধক। তাই তোমরা সাওম ভঙ্গ কর। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ নির্দেশ অবশ্য পালনীয় ছিল। তাই আমরা সকলে সওম ভঙ্গ করলাম। এরপর আমরা দেখেছি আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামমের সাথে সফর অবস্থায় সাওম পালন করতাম”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১২০।]

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سَفَرٍ، فَصَامَ بَعْضٌ، وَأَفْطَرَ بَعْضٌ فَتَحَزَّمَ الْمُفْطِرُونَ وَعَمِلُوا وَضَعُفَ الصُّوَّامُ، عَنْ بَعْضِ الْعَمَلِ، قَالَ : فَقَالَ فِي ذَلِكَ : ذَهَبَ الْمُفْطِرُونَ الْيَوْمَ بِالْأَجْرِ»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো এক সফরে ছিলেন। তখন কেউ কেউ সাওম পালন করলেন আবার কেউ কেউ সাওম ছেড়ে দিলেন। এরপর যারা সাওম ছেড়ে দিয়েছিলেন তারা শক্তিমত্তার সাথে কাজ করলেন এবং সাওম পালনকারী ব্যক্তিগণ সহজে দুর্বল হয়ে পড়লেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আজ সাওম পরিত্যাগকারীরা নেকী অর্জন করে নিল”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১২০।]

আবু সা‘ঈদ খুদরী ও জাবির ইবন আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তারা উভয়ে বলেন,

«سَافَرْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَيَصُومُ الصَّائِمُ، وَيُفْطِرُ الْمُفْطِرُ، فَلَا يَعِيبُ بَعْضُهُمْ عَلَى بَعْضٍ»

“আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সফর করেছিলাম। এমতাবস্থায় সাওম পালনকারী সাওম পালন করেছেন এবং সাওম ভঙ্গকারী সাওম ভঙ্গ করেছেন। কিন্তু এতে কেউ একে অন্যের প্রতি দোষারোপ করেন নি”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১১৭।]

৪৯
সফর অবস্থায় কোনো কাজের দায়িত্ব পালন করাকালীন সাওম ভঙ্গ করলে তার প্রতিদান
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَكْثَرُنَا ظِلًّا الَّذِي يَسْتَظِلُّ بِكِسَائِهِ، وَأَمَّا الَّذِينَ صَامُوا فَلَمْ يَعْمَلُوا شَيْئًا، وَأَمَّا الَّذِينَ أَفْطَرُوا فَبَعَثُوا الرِّكَابَ وَامْتَهَنُوا وَعَالَجُوا، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ذَهَبَ المُفْطِرُونَ اليَوْمَ بِالأَجْرِ»

“আমরা (কোনো এক সফরে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ছিলাম। আমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তির ছায়াই ছিল সর্বাধিক  যে তার চাঁদর দ্বারা ছায়া গ্রহণ করছিল। যারা সাওম পালন করছিল তারা কোনো কাজই করতে পারছিল না। যারা সাওমরত ছিল না, তারা উটের তত্তাবধান করছিল, খেদমতের দায়িত্ব পালন করছিল এবং পরিশ্রমের কাজ করছিল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘যারা সাওম পালন করে নি তারাই আজ অধিক সওয়াব হাসিল করল”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৮৯০, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১১৯।]

কাযা‘আ রহ. বলেন,

«أَتَيْتُ أَبَا سَعِيدٍ الْخُدْرِيَّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، وَهُوَ مَكْثُورٌ عَلَيْهِ، فَلَمَّا تَفَرَّقَ النَّاسُ عَنْهُ، قُلْتُ : إِنِّي لَا أَسْأَلُكَ عَمَّا يَسْأَلُكَ هَؤُلَاءِ عَنْهُ سَأَلْتُهُ : عَنِ الصَّوْمِ فِي السَّفَرِ؟ فَقَالَ : سَافَرْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى مَكَّةَ وَنَحْنُ صِيَامٌ، قَالَ : فَنَزَلْنَا مَنْزِلًا، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «إِنَّكُمْ قَدْ دَنَوْتُمْ مِنْ عَدُوِّكُمْ، وَالْفِطْرُ أَقْوَى لَكُمْ» فَكَانَتْ رُخْصَةً، فَمِنَّا مَنْ صَامَ، وَمِنَّا مَنْ أَفْطَرَ، ثُمَّ نَزَلْنَا مَنْزِلًا آخَرَ، فَقَالَ : «إِنَّكُمْ مُصَبِّحُو عَدُوِّكُمْ، وَالْفِطْرُ أَقْوَى لَكُمْ، فَأَفْطِرُوا» وَكَانَتْ عَزْمَةً، فَأَفْطَرْنَا، ثُمَّ قَالَ : لَقَدْ رَأَيْتُنَا نَصُومُ، مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعْدَ ذَلِكَ، فِي السَّفَرِ

“একদা আমি আবু সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট গেলাম। তাঁর নিকট মানুষের খুব ভিড় ছিল। যখন লোকজন পৃথক হয়ে এদিক ওদিক চলে গেল তখন আমি বললাম, আমি আপনার নিকট ঐসব কথা জিজ্ঞাসা করব না যা লোকেরা জিজ্ঞাসা করেছে। আমি তাকে সফরের অবস্থায় সাওম পালন করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সাওমরত অবস্থায় মক্কার দিকে রওনা করলাম। এরপর একস্থানে আমরা অবতরণ করলাম। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এখন তোমরা শত্রুদের নিকটবর্তী হয়ে গিয়েছ। এখন ইফতারই তোমাদের জন্য শক্তিশালী থাকার উপায় এবং এ তোমাদের জন্য বিশেষ এক অবকাশ। তখন আমাদের কতক লোক সাওম পালন করল আবার কতক লোক ইফতার করল। এরপর আমরা অন্য এক স্থানে অবতরণ করলাম। তখন তিনি বললেন ভোরেই তোমরা শত্রুর মুকাবিলা করবে। সুতরাং ইফতার তোমাদের জন্য শক্তি বর্ধক। তাই তোমরা ইফতার কর। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ নির্দেশ অবশ্য পালনীয় ছিল। তাই আমরা সকলে ইফতার করলাম। এরপর আমরা দেখেছি আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সফরের অবস্থায় সাওম পালন করতাম”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১২০।]

৫০
রমযানে কয়েকদিন সাওম পালন করে যদি কেউ সফর আরম্ভ করে
ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত যে,

«أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «خَرَجَ إِلَى مَكَّةَ فِي رَمَضَانَ، فَصَامَ حَتَّى بَلَغَ الكَدِيدَ، أَفْطَرَ»، فَأَفْطَرَ النَّاسُ، قَالَ أَبُو عَبْدِ اللَّهِ : وَالكَدِيدُ : مَاءٌ بَيْنَ عُسْفَانَ وَقُدَيْدٍ»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওম অবস্থায় কোনো এক রমযানে মক্কার পথে যাত্রা করলেন। ‘কাদীদ’ নামক স্থানে পৌঁছার পর তিনি সাওম ভঙ্গ করে ফেললে লোকেরা সকলেই সাওম ভঙ্গ করলেন। আবু ‘আব্দুল্লাহ রহ. বলেন, ‘উসফান ও কুদায়দ নামক দুই স্থানের মধ্যে কাদীদ একটি ঝর্ণা।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৪৪, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১১৩।]

আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«خَرَجْنَا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي بَعْضِ أَسْفَارِهِ فِي يَوْمٍ حَارٍّ حَتَّى يَضَعَ الرَّجُلُ يَدَهُ عَلَى رَأْسِهِ مِنْ شِدَّةِ الحَرِّ، وَمَا فِينَا صَائِمٌ إِلَّا مَا كَانَ مِنَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَابْنِ رَوَاحَةَ»

“কোনো এক সফরে প্রচন্ড গরমের দিনে আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে রওয়ানা হলাম। গরম এত প্রচন্ড ছিল যে, প্রত্যেকেই নিজ নিজ হাত মাথার উপরে তুলে ধরেছিলেন। এ সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং ইবন রাওয়াহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ছাড়া আমাদের কেউই সাওম পালনকারী ছিল না”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৪৫, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১২২।]

৫১
প্রচণ্ড গরমের কারণে যে ব্যক্তির উপর ছায়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে তার সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: সফরে সাওম পালনে কোনো নেকী নেই
জাবির ইবন ‘আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سَفَرٍ، فَرَأَى زِحَامًا وَرَجُلًا قَدْ ظُلِّلَ عَلَيْهِ، فَقَالَ : «مَا هَذَا؟»، فَقَالُوا : صَائِمٌ، فَقَالَ : لَيْسَ مِنَ البِرِّ الصَّوْمُ فِي السَّفَرِ»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সফরে ছিলেন, হঠাৎ তিনি লোকের জটলা এবং ছায়ার নিচে এক ব্যক্তিকে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, এর কী হয়েছে? লোকেরা বলল, সে সাওম পালনকারী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সফরে সাওম পালনে কোনো নেকী নেই”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৪৬, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১১৫।]

৫২
সফর অবস্থায় সাওম পালনের ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ একে অন্যকে দোষারোপ করতেন না
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كُنَّا نُسَافِرُ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمْ يَعِبِ الصَّائِمُ عَلَى المُفْطِرِ، وَلاَ المُفْطِرُ عَلَى الصَّائِمِ»

“আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সফরে যেতাম। সাওম পালনকারী ব্যক্তি যে সাওম পালন করছে না, এবং যে সাওম পালন করছে না, সে সাওম পালনকারীকে দোষারোপ করতো না”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৪৭, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১১৮।]

আবু সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كُنَّا نَغْزُو مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي رَمَضَانَ، فَمِنَّا الصَّائِمُ وَمِنَّا الْمُفْطِرُ، فَلَا يَجِدُ الصَّائِمُ عَلَى الْمُفْطِرِ، وَلَا الْمُفْطِرُ عَلَى الصَّائِمِ، يَرَوْنَ أَنَّ مَنْ وَجَدَ قُوَّةً فَصَامَ، فَإِنَّ ذَلِكَ حَسَنٌ وَيَرَوْنَ أَنَّ مَنْ وَجَدَ ضَعْفًا، فَأَفْطَرَ فَإِنَّ ذَلِكَ حَسَنٌ»

“রমযান মাসে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ষুদ্ধে অংশ গ্রহণ করতাম। এ সময় আমাদের কেউ সাওম পালন করেছেন আবার কেউ সাওম ছেড়েও দিয়েছেন। কিন্তু সাওম পালনকারী সাওম ভঙ্গকারীকে খারাপ মনে করতেন না এরং সাওম ভঙ্গকারীও সাওম পালনকারীকে খারাপ মনে করতেন না। তারা মনে করতেন, যার সামর্থ্য আছে সেই সাওম পালন করছে, এটাই তার জন্য উত্তম। আর যে দুর্বল সে সাওম ছেড়ে দিয়েছে, এটাও তার জন্য উত্তম”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১১৬।]

আবু সা‘ঈদ খুদরী ও জাবির ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তারা উভয়ে বলেন,

«سَافَرْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَيَصُومُ الصَّائِمُ، وَيُفْطِرُ الْمُفْطِرُ، فَلَا يَعِيبُ بَعْضُهُمْ عَلَى بَعْضٍ»

“আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সফর করেছিলাম। এমতাবস্থায় সাওম পালনকারী সাওম পালন করেছেন এবং সাওম ভঙ্গকারী সাওম ভঙ্গ করেছেন। কিন্তু এতে কেউ একে অন্যের প্রতি দোষারোপ করেন নি”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১১৭।]

৫৩
সফর অবস্থায় সাওম ভঙ্গ করা, যাতে লোকেরা দেখতে পায়
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

» خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، مِنَ المَدِينَةِ إِلَى مَكَّةَ، فَصَامَ حَتَّى بَلَغَ عُسْفَانَ، ثُمَّ دَعَا بِمَاءٍ فَرَفَعَهُ إِلَى يَدَيْهِ لِيُرِيَهُ النَّاسَ، فَأَفْطَرَ حَتَّى قَدِمَ مَكَّةَ، وَذَلِكَ فِي رَمَضَانَ ، فَكَانَ ابْنُ عَبَّاسٍ يَقُولُ : قَدْ صَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَفْطَرَ، فَمَنْ شَاءَ صَامَ وَمَنْ شَاءَ أَفْطَرَ»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনা থেকে মক্কায় রওয়ানা হলেন। তখন তিনি সাওম পালন করছিলেন। ‘উসফানে পৌছার পর তিনি পানি আনার জন্য আদেশ করলেন। তারপর তিনি লোকদেরকে দেখানোর জন্য পানি হাতের উপর উচুঁ করে ধরে সাওম ভঙ্গ করলেন এবং এ অবস্থায় মক্কায় পৌঁছলেন। এ ছিল রমযান মাসে। তাই ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলতেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওম পালন করেছেন এবং সাওম ভঙ্গও করেছেন। যার ইচ্ছা সাওম পালন করতে পারে আর যার ইচ্ছা সাওম ভঙ্গ করতে পারে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৪৮, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১১৩।]

জাবির ইবন আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত,

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَرَجَ عَامَ الْفَتْحِ إِلَى مَكَّةَ فِي رَمَضَانَ فَصَامَ حَتَّى بَلَغَ كُرَاعَ الْغَمِيمِ، فَصَامَ النَّاسُ، ثُمَّ دَعَا بِقَدَحٍ مِنْ مَاءٍ فَرَفَعَهُ، حَتَّى نَظَرَ النَّاسُ إِلَيْهِ، ثُمَّ شَرِبَ، فَقِيلَ لَهُ بَعْدَ ذَلِكَ : إِنَّ بَعْضَ النَّاسِ قَدْ صَامَ، فَقَالَ : «أُولَئِكَ الْعُصَاةُ، أُولَئِكَ الْعُصَاةُ»

“মক্কা বিজয়ের বছর রমযান মাসে সাওমরত অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার উদ্দেশ্যে বের হলেন। এরপর যখন তিনি ‘কুরা‘উল গামীম’ নামক স্থানে পৌঁছলেন তখন লোকেরাও সাওমরত ছিল। এরপর তিনি একটি পানির পাত্র চাইলেন। এমনকি লোকেরা তার দিকে তাকাতে লাগল। এরপর তিনি পানি পান করলেন। তখন তাঁকে বলা হলো কতিপয় লোক সাওমরত রয়েছে। তিনি বললেন তারা অবাধ্য তারা অবাধ্য”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১১৪।]

৫৪
যাদের সাওম পালন অতিশয় কষ্ট দেয় তাদের সাওমের পরিবর্তে ফিদইয়া তথা একজন মিসকীনকে খাদ্য দেওয়া
ইবন উমার ও সালামা ইবন আকওয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন,

بابٌ ﴿وَعَلَى ٱلَّذِينَ يُطِيقُونَهُ﴾ [ البقرة : ١٨٤ ] نَسَخَتْهَا ﴿شَهۡرُ رَمَضَانَ ٱلَّذِيٓ أُنزِلَ فِيهِ ٱلۡقُرۡءَانُ هُدٗى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَٰتٖ مِّنَ ٱلۡهُدَىٰ وَٱلۡفُرۡقَانِۚ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ ٱلشَّهۡرَ فَلۡيَصُمۡهُۖ وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوۡ عَلَىٰ سَفَرٖ فَعِدَّةٞ مِّنۡ أَيَّامٍ أُخَرَۗ يُرِيدُ ٱللَّهُ بِكُمُ ٱلۡيُسۡرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ ٱلۡعُسۡرَ وَلِتُكۡمِلُواْ ٱلۡعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُواْ ٱللَّهَ عَلَىٰ مَا هَدَىٰكُمۡ وَلَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُونَ ١٨٥﴾ [ البقرة : ١٨٥

“অধ্যায়: ﴿وَعَلَى ٱلَّذِينَ يُطِيقُونَهُ﴾ [ البقرة : ١٨٤ ] “আর যাদের জন্য তা (ফিদিয়া প্রদান) সম্ভব হবে।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৪] উক্ত আয়াতকে রহিত করেছে এ আয়াত: “রমযান মাস, যাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হিদায়াতস্বরূপ এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সাওম পালন করে। আর যে অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে তবে অন্যান্য দিবসে সংখ্যা পূরণ করে নেবে। আল্লাহ তোমাদের সহজ চান এবং কঠিন চান না। আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেন, তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা শোকর কর”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৫]

«وَقَالَ ابْنُ نُمَيْرٍ، حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ، حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ مُرَّةَ، حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي لَيْلَى، حَدَّثَنَا أَصْحَابُ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : نَزَلَ رَمَضَانُ فَشَقَّ عَلَيْهِمْ، فَكَانَ مَنْ أَطْعَمَ كُلَّ يَوْمٍ مِسْكِينًا تَرَكَ الصَّوْمَ مِمَّنْ يُطِيقُهُ، وَرُخِّصَ لَهُمْ فِي ذَلِكَ، فَنَسَخَتْهَا : ﴿وَأَن تَصُومُواْ خَيۡرٞ لَّكُمۡ﴾ [ البقرة : ١٨٤ ] فَأُمِرُوا بِالصَّوْمِ»

“ইবন নুমায়ের রহ. ইবন আবু লায়লা রহ. থেকে (সনদসহ) বর্ণনা করেন যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন, রমযানের হুকুম নাযিল হলে তা পালন করা তাদের জন্য কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। তাই তাদের মধ্যে কেউ কেউ সাওম পালনে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও সাওম ত্যাগ করে প্রতিদিনের পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাওয়াতো। এ ব্যাপারে তাদের অনুমতিও দেওয়া হয়েছিল। তারপর وَأَن تَصُومُواْ خَيۡرٞ لَّكُمۡ “সাওম পালন করাই তোমাদের জন্য উত্তম” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৪] এ আয়াতটি পূর্বের হুকুমকে রহিত করে দেয় এবং সবাইকে সাওম পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়।” [বুখারী, তা‘লিক, ৩/৩৪।]

ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত,

قَرَأَ : فِدْيَةُ طَعَامِ مَسَاكِينَ قَالَ : هِيَ مَنْسُوخَةٌ

“তিনি فِدْيَةُ طَعَامِ مَسَاكِينَ আয়াতটি পড়ে বলেছেন যে, এটি রহিত।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৪৯।]

عَنْ عَطَاءٍ، سَمِعَ ابْنَ عَبَّاسٍ، يَقْرَأُ وَعَلَى الَّذِينَ يُطَوَّقُونَهُ فَلاَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ : «لَيْسَتْ بِمَنْسُوخَةٍ هُوَ الشَّيْخُ الكَبِيرُ، وَالمَرْأَةُ الكَبِيرَةُ لاَ يَسْتَطِيعَانِ أَنْ يَصُومَا، فَيُطْعِمَانِ مَكَانَ كُلِّ يَوْمٍ مِسْكِينًا»

‘আতা থেকে বর্ণিত, তিনি ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমাকে বলতে শুনেছেন যে তিনি পড়ছেন, وَعَلَى الَّذِينَ يُطَوَّقُونَهُ فَلاَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ অর্থাৎ ‘আর যাদের উপর সাওম কষ্টকর হবে এবং তা আদায় করতে অসমর্থ হবে তারা মিসকীনকে ফিদইয়া হিসেবে খাবার খাওয়াবে।’ “ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আয়াতটি রহিত নয়, বরং তা অতিশয় বৃদ্ধ, অত্যন্ত বৃদ্ধার জন্য, যারা সাওম রাখতে সমর্থ নয়, তারা প্রতিদিনের সাওমের পরিবর্তে একজন মিসকীন খাওয়াবে।” [বস্তুত: وَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ এর يُطِيقُونَهُ অর্থ নির্ধারণের মধ্যেই এ মতভেদ নির্ভরশীল। এর দু’টি পরস্পর বিরোধী অর্থ করা সম্ভব। [সম্পাদক]]

ইমাম আতা রহ. বলেন, সর্বপ্রকার রোগেই সাওম ভঙ্গ করা যাবে। যেমন আল্লাহ বলেছেন। পক্ষান্তরে ইমাম হাসান ও ইবরাহীম রহ. বলেন, সন্তানের দাত্রী এবং গর্ভবতী স্ত্রীলোক যখন নিজ প্রাণ অথবা তাদের সন্তানের জীবনের প্রতি হুমকির আশংকা করে তখন তারা উভয়ে সাওম ভঙ্গ করতে পারবে। পরে তা আদায় করে নিতে হবে। অতিবৃদ্ধ ব্যক্তি যখন সাওম পালনে অক্ষম হয়ে পড়ে (তখন ফিদইয়া আদায় করবে।) [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৫০৫।]

৫৫
রমযানের কাযা সাওম কখন আদায় করা হবে?
ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, পৃথক পৃথক রাখলে কোনো ক্ষতি নেই। কেননা আল্লাহ বলেছেন, ‘অন্যদিনে এর সংখ্যা পূর্ণ করবে’। সা‘ঈদ ইবন মুসায়্যাব রহ. বলেছেন, রমযানের কাযা আদায় না করে যিলহজ মাসের প্রথম দশকে সাওম পালন করা উচিত নয়। ইবরাহীম নাখ‘ঈ রহ. বলেন, অবহেলার কারণে যদি রমযান এসে যায় তাহলে উভয় রমযানের সাওম এক সাথে আদায় করবে। মিসকীন খাওয়াতে হবে বলে তিনি মনে করেন না। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত একটি মুরসাল হাদীসে এবং ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, সে খাওয়াবে অথচ আল্লাহ তা‘আলা খাওয়ানোর কথাটি উল্লেখ করেন নি; বরং তিনি বলেছেন ‘অন্য দিনে এ সংখ্যা পূরণ করবে’।

আবু সালামা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন,

«كَانَ يَكُونُ عَلَيَّ الصَّوْمُ مِنْ رَمَضَانَ، فَمَا أَسْتَطِيعُ أَنْ أَقْضِيَ إِلَّا فِي شَعْبَانَ، قَالَ يَحْيَى : الشُّغْلُ مِنَ النَّبِيِّ أَوْ بِالنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

“আমার ওপর রমযানের যে কাযা থেকে যেতো তা পরবর্তী শা‘বান ছাড়া আমি আদায় করতে পারতাম না। ইয়াহিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যস্ততার কারণে কিংবা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ব্যস্ততার কারণে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৫০, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৪৬।]

৫৬
ঋতুবতী মহিলা সালাত ও সাওম উভয়ই ত্যাগ করবে
আবু যিনাদ রহ. বলেন, শরী‘আতের হুকুম-আহকাম অনেক সময় কিয়াসের বিপরীতও হয়ে থাকে। মুসলিমের জন্য এর অনুসরণ ছাড়া কোনো উপায় নেই। এর একটি উদাহরণ হলো ঋতুবতী মহিলা সাওমের কাযা করবে কিন্তু সালাতের কাযা করবে না।

আবু সা‘ঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«أَلَيْسَ إِذَا حَاضَتْ لَمْ تُصَلِّ وَلَمْ تَصُمْ، فَذَلِكَ نُقْصَانُ دِينِهَا»

“এ কথা কি ঠিক নয় যে, হায়েয শুরু হলে মেয়েরা সালাত আদায় করে না এবং সাওমও পালন করে না। এ হলো তাদের দীনেরই ত্রুটি”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৫১, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৯-৮০।]

৫৭
ঋতুবতী মহিলা সাওমের কাযা করবে কিন্তু সালাতের কাযা করবে না
মু’আজা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে জিজ্ঞাসা করলাম,

«عَنْ مُعَاذَةَ، قَالَتْ : سَأَلْتُ عَائِشَةَ فَقُلْتُ : مَا بَالُ الْحَائِضِ تَقْضِي الصَّوْمَ، وَلَا تَقْضِي الصَّلَاةَ . فَقَالَتْ : أَحَرُورِيَّةٌ أَنْتِ؟ قُلْتُ : لَسْتُ بِحَرُورِيَّةٍ، وَلَكِنِّي أَسْأَلُ . قَالَتْ : كَانَ يُصِيبُنَا ذَلِكَ، فَنُؤْمَرُ بِقَضَاءِ الصَّوْمِ، وَلَا نُؤْمَرُ بِقَضَاءِ الصَّلَاةِ»

“আমাদের কেউ কি তার হায়েযের দিনগুলোর সালাত কাযা করবে? ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বললেন, তুমি কি হারুরিয়্যা (খারেজী)? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে আমাদের কারো হায়েয হলে পরে তাকে (সালাত) কাযা করার নির্দেশ দেওয়া হত না।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩২১, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৩৫।]

৫৮
সাওমের কাযা যিম্মায় রেখে যে ব্যক্তি মারা গেল
হাসান রহ. বলেছেন, তার পক্ষ থেকে ত্রিশজন লোক একদিন সাওম পালন করলে হবে।

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ مَاتَ وَعَلَيْهِ صِيَامٌ صَامَ عَنْهُ وَلِيُّهُ»

“সাওমের কাযা যিম্মায় রেখে যদি কোনো ব্যক্তি মারা যায় তাহলে তার অভিভাবকের পক্ষ থেকে সাওম আদায় করবে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৫২, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৪৭।]

ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ أُمِّي مَاتَتْ وَعَلَيْهَا صَوْمُ شَهْرٍ، أَفَأَقْضِيهِ عَنْهَا؟ قَالَ : نَعَمْ، قَالَ : فَدَيْنُ اللَّهِ أَحَقُّ أَنْ يُقْضَى، قَالَ سُلَيْمَانُ : فَقَالَ الحَكَمُ، وَسَلَمَةُ، وَنَحْنُ جَمِيعًا جُلُوسٌ حِينَ حَدَّثَ مُسْلِمٌ بِهَذَا الحَدِيثِ قَالاَ : سَمِعْنَا مُجَاهِدًا، يَذْكُرُ هَذَا، عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ، وَيُذْكَرُ عَنْ أَبِي خَالِدٍ، حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ، عَنِ الحَكَمِ، وَمُسْلِمٍ البَطِينِ، وَسَلَمَةَ بْنِ كُهَيْلٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، وَعَطَاءٍ، وَمُجَاهِدٍ، عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ : قَالَتِ امْرَأَةٌ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : إِنَّ أُخْتِي مَاتَتْ، وَقَالَ يَحْيَى، وَأَبُو مُعَاوِيَةَ : حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ، عَنْ مُسْلِمٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ : قَالَتِ امْرَأَةٌ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : إِنَّ أُمِّي مَاتَتْ، وَقَالَ عُبَيْدُ اللَّهِ : عَنْ زَيْدِ بْنِ أَبِي أُنَيْسَةَ، عَنِ الحَكَمِ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ : قَالَتِ امْرَأَةٌ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : إِنَّ أُمِّي مَاتَتْ وَعَلَيْهَا صَوْمُ نَذْرٍ، وَقَالَ أَبُو حَرِيزٍ، حَدَّثَنَا عِكْرِمَةُ، عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ : قَالَتِ امْرَأَةٌ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : مَاتَتْ أُمِّي وَعَلَيْهَا صَوْمُ خَمْسَةَ عَشَرَ يَوْمًا»

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এক ব্যক্তি এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার মা এক মাসের সাওম জিম্মায় রেখে মারা গেছেন, আমি কি তার পক্ষ থেকে সাওম কাযা করতে পারি? তিনি বলেন: হ্যাঁ, আল্লাহর ঋণ পরিশোধ করাই হলো অধিক যোগ্য। সুলায়মান রহ. বলেন, হাকাম এবং সালামা রহ. বলেছেন, মুসলিম রহ. এ হাদীস বর্ণনা করার সময় আমরা সকলেই এক সাথে উপবিষ্ট ছিলাম। তাঁরা উভয়েই বলেছেন যে, ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে মুজাহিদ রহ.-কে এ হাদীস বর্ণনা করতে আমরা শুনেছি। আবু খালিদ আহমার রহ. ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একজন মহিলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলল, আমার বোন মারা গেছে। ইয়াহইয়া রহ. ও আবু ম‘আবিয়া ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, এক মহিলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল, আমার মা মারা গেছেন। ‘উবায়দুল্লাহ রহ. ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, এক মহিলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল, আমার মা মারা গেছেন অথচ তার যিম্মায় মানতের সাওম রয়েছে। আবু হারীয রহ. ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, এক মহিলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল, আমার মা মারা গেছেন অথচ তার যিম্মায় পনেরো দিনের সাওম রয়ে গেছে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৫৩।]

আব্দুল্লাহ ইবন বুরায়দা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন,

«بَيْنَا أَنَا جَالِسٌ عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، إِذْ أَتَتْهُ امْرَأَةٌ، فَقَالَتْ : إِنِّي تَصَدَّقْتُ عَلَى أُمِّي بِجَارِيَةٍ، وَإِنَّهَا مَاتَتْ، قَالَ : فَقَالَ : «وَجَبَ أَجْرُكِ، وَرَدَّهَا عَلَيْكِ الْمِيرَاثُ قَالَتْ : يَا رَسُولَ اللهِ، إِنَّهُ كَانَ عَلَيْهَا صَوْمُ شَهْرٍ، أَفَأَصُومُ عَنْهَا؟ قَالَ : «صُومِي عَنْهَا قَالَتْ : إِنَّهَا لَمْ تَحُجَّ قَطُّ، أَفَأَحُجُّ عَنْهَا؟ قَالَ : حُجِّي عَنْهَا»

“আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বসা ছিলাম। এমতাবস্থায় জনৈকা মহিলা এসে বললেন! আমি আমার মায়ের জন্য একটি দাসী সদকা করেছিলাম। তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। একথা শুনে তিনি বললেন, তুমি তো তোমার সওয়াব পেয়ে গিয়েছ। তবে উত্তরাধিকার তোমার নিকট তা ফিরিয়ে দিয়েছে। তখন ঐ মহিলা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! তার ওপর এক মাসের সাওমের কাযা রয়েছে। আমি তার পক্ষ থেকে ঐ সাওম আদায় করতে পারি কি? তিনি বললেন, তুমি তার পক্ষ থেকে সাওম পালন কর। অতঃপর মহিলা বললেন, তিনি তো তখনও হজও আদায় করেন নি আমি তার পক্ষ থেকে হজ আদায় করতে পারি কি? তিনি বললেন, তুমি তার পক্ষ থেকে হজ আদায় কর”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৪৯।]

৫৯
সাওম পালনকারীর জন্য কখন ইফতার করা হালাল
সূর্যের গোলাকার বৃত্ত অদৃশ্য হওয়ার সাথে সাথেই আবু সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ইফতার করতেন।

উমার ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «إِذَا أَقْبَلَ اللَّيْلُ مِنْ هَا هُنَا، وَأَدْبَرَ النَّهَارُ مِنْ هَا هُنَا، وَغَرَبَتِ الشَّمْسُ فَقَدْ أَفْطَرَ الصَّائِمُ»

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যখন রাত্র এ দিক থেকে ঘনিয়ে আসে ও দিন এদিক থেকে চলে যায় এবং সূর্য ডুবে যায়, তখন সাওম পালনকারী ইফতার করবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৫৪, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১০০।]

‘আব্দুল্লাহ ইবন আবু আওফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سَفَرٍ وَهُوَ صَائِمٌ، فَلَمَّا غَرَبَتِ الشَّمْسُ قَالَ لِبَعْضِ القَوْمِ : يَا فُلاَنُ قُمْ فَاجْدَحْ لَنَا، فَقَالَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ لَوْ أَمْسَيْتَ؟ قَالَ : انْزِلْ فَاجْدَحْ لَنَا قَالَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ، فَلَوْ أَمْسَيْتَ؟ قَالَ : انْزِلْ، فَاجْدَحْ لَنَا، قَالَ : إِنَّ عَلَيْكَ نَهَارًا، قَالَ : انْزِلْ فَاجْدَحْ لَنَا، فَنَزَلَ فَجَدَحَ لَهُمْ، فَشَرِبَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ قَالَ : إِذَا رَأَيْتُمُ اللَّيْلَ قَدْ أَقْبَلَ مِنْ هَا هُنَا، فَقَدْ أَفْطَرَ الصَّائِمُ»

“কোনো এক সফরে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ছিলাম। আর তিনি ছিলেন সাওম পালনকারী। যখন সূর্য ডুবে গেল তখন তিনি দলের কাউকে বললেন, হে অমুক! উঠ। আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। সে বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! সন্ধ্যা হলে ভালো হতো। তিনি বললেন, নেমে যাও এবং আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। সে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সন্ধ্যা হলে ভালো হতো। তিনি বললেন, নেমে যাও এবং আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। সে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সন্ধ্যা হলে ভালো হতো। তিনি বললেন, নেমে যাও এবং আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। সে বলল, দিন তো আপনার এখনো রয়েছে। তিনি বললেন, তুমি নামো এবং আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। তারপর সে নামলো এবং তাঁদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আনলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা পান করলেন, তারপর বললেন, যখন তোমরা দেখবে, রাত একদিক থেকে ঘনিয়ে আসছে, তখন সাওম পালনকারী ইফতার করবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৫৫, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১০১।]

৬০
পানি বা সহজলভ্য অন্য কিছু দিয়ে ইফতার করবে
‘আব্দুল্লাহ ইবন আবু আওফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«سِرْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ صَائِمٌ، فَلَمَّا غَرَبَتِ الشَّمْسُ قَالَ : انْزِلْ فَاجْدَحْ لَنَا، قَالَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ لَوْ أَمْسَيْتَ؟ قَالَ : انْزِلْ فَاجْدَحْ لَنَا، قَالَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّ عَلَيْكَ نَهَارًا، قَالَ : انْزِلْ فَاجْدَحْ لَنَا»، فَنَزَلَ فَجَدَحَ ثُمَّ قَالَ : إِذَا رَأَيْتُمُ اللَّيْلَ أَقْبَلَ مِنْ هَا هُنَا، فَقَدْ أَفْطَرَ الصَّائِمُ وَأَشَارَ بِإِصْبَعِهِ قِبَلَ المَشْرِقِ»

“আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে রওয়ানা দিলাম এবং তিনি সাওমদার ছিলেন। সূর্য অস্ত যেতেই তিনি বললেন, তুমি সওয়ারী থেকে নেমে আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। তিনি বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আর একটু সন্ধ্যা থেকে দিন। তিনি বললেন, তুমি নেমে যাও এবং আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। তিনি বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এখনো তো আপনার সামনে দিন রয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি নেমে যাও এবং আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। তারপর তিনি সওয়ারী থেকে নামলেন এবং ছাতু গুলিয়ে আনলেন। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আঙ্গুল দ্বারা পূর্বদিকে ইশারা করে বললেন, যখন তোমরা দেখবে যে, রাত এদিক থেকে আসছে, তখনই সাওমদারদের ইফতারের সময় হয়ে গেলো”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৫৬, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১০১।]

৬১
ইফতার ত্বরান্বিত করা
সাহল ইবন সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«لاَ يَزَالُ النَّاسُ بِخَيْرٍ مَا عَجَّلُوا الفِطْرَ»

“লোকেরা যতদিন যাবৎ ওয়াক্ত হওয়া মাত্র ইফতার করবে, ততদিন তারা কল্যাণের ওপর থাকবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৫৭, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০৯৮।]

ইবন আবু আওফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كُنْتُ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سَفَرٍ، فَصَامَ حَتَّى أَمْسَى قَالَ لِرَجُلٍ : انْزِلْ فَاجْدَحْ لِي قَالَ : لَوِ انْتَظَرْتَ حَتَّى تُمْسِيَ؟ قَالَ : انْزِلْ فَاجْدَحْ لِي، إِذَا رَأَيْتَ اللَّيْلَ قَدْ أَقْبَلَ مِنْ هَا هُنَا، فَقَدْ أَفْطَرَ الصَّائِمُ»

“এক সফরে আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ছিলাম। তিনি সন্ধ্যা পর্যন্ত সাওম পালন করেন। এরপর এক ব্যাক্তিকে বললেন, সওয়ারী থেকে নেমে ছাতু গুলিয়ে আন। লোকটি বলল, আপনি যদি (পূর্ণ সন্ধ্যা হওয়া পর্যন্ত) অপেক্ষা করতেন। তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পুনরায় বললেন, নেমে আমার জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যখন তুমি এদিক (পূর্বদিক) থেকে রাত্রির আগমন দেখতে পাবে তখন সাওম পালনকারী ইফতার করবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৫৮, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১০১।]

আবু ‘আতিয়্যা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«دَخَلْتُ أَنَا وَمَسْرُوقٌ، عَلَى عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا، فَقَالَ لَهَا مَسْرُوقٌ : رَجُلَانِ مِنْ أَصْحَابِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، كِلَاهُمَا لَا يَأْلُو عَنِ الْخَيْرِ، أَحَدُهُمَا يُعَجِّلُ الْمَغْرِبَ وَالْإِفْطَارَ، وَالْآخَرُ يُؤَخِّرُ الْمَغْرِبَ وَالْإِفْطَارَ، فَقَالَتْ : مَنْ يُعَجِّلُ الْمَغْرِبَ وَالْإِفْطَارَ؟ قَالَ : عَبْدُ اللهِ، فَقَالَتْ : هَكَذَا كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصْنَعُ»

“আমি ও মাসরুক রহ. ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার নিকট গেলাম। এরপর মাসরুক রহ. তাকে বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের মধ্যে দুই ব্যক্তি যারা কল্যাণজনক কাজে কোনো প্রকার অবহেলা প্রদর্শন করে না। তাঁদের একজন মাগরিব এবং ইফতারের মধ্যে ত্বরা করেন। আর অপর জন মাগরিব ও ইফতারে বিলম্ব করেন। তিনি (‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) বললেন সে কোনো ব্যক্তি যে মাগরিব ও ইফতার ত্বরা করেন? তিনি বললেন, তিনি হলেন ‘আব্দুল্লাহ। ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ করতেন।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০৯৯।]

৬২
মাগরিবের সালাতের পূর্বে ইফতার করা মুস্তাহাব এবং যে সব জিনিস দ্বারা ইফতার করা মুস্তাহাব
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«مَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَطُّ صَلَّى صَلَاةَ الْمَغْرِبِ حَتَّى يُفْطِرَ وَلَوْ على شربة من ماء»

৬৩
“আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কখনও মাগরিবের সালাত ইফতারের পূর্বে পড়তে দেখি নি, কমপক্ষে এক ঢোক পানি পান করে হলেও আগে ইফতার করতেন।” [সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীস নং ৩৫০৪। শুয়া‘ইব আরনাবূত বলেন, হাদীসটি বুখারী ও মুসলিমের শর্তে সহীহ। আলবানী রহ. ‘তা‘লিকাতুল হাসান ‘আলা সহীহ ইবন হিব্বান’ এ একে সহীহ বলেছেন।]
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُفْطِرُ قَبْلَ أَنْ يُصَلِّيَ عَلَى رُطَبَاتٍ، فَإِنْ لَمْ تَكُنْ رُطَبَاتٌ فَتُمَيْرَاتٌ، فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تُمَيْرَاتٌ حَسَا حَسَوَاتٍ مِنْ مَاءٍ» .

“তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মাগরিবের) সালাত আদায়ের আগেই কিছু তাজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। তাজা খেজুর না পেলে কিছু শুকনা খেজুর দিয়ে ইফতার করে নিতেন। আর যদি শুকনা খেজুর না পেতেন তবে কয়েক ঢোক পানি পান করে নিতেন।” [তিরমিযী, হাদীস নং ৬৯৬, ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, হাদীসটি হাসান গরীব। আবূ দাউদ, ২৩৫৬, আলবানী রহ. বলেন, হাদীসটি হাসান সহীহ। সহীহ ইবন হিব্বান, ১৫৭৬। ইমাম হাকিম ও যাহাবী রহ. একে সহীহ বলেছেন।]

৬৪
রমযানে ইফতার করার পরে যদি সূর্য দেখা দেয়
আসমা বিনতে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«أَفْطَرْنَا عَلَى عَهْدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ غَيْمٍ، ثُمَّ طَلَعَتِ الشَّمْسُ، قِيلَ لِهِشَامٍ : فَأُمِرُوا بِالقَضَاءِ؟ قَالَ : لاَ بُدَّ مِنْ قَضَاءٍ وَقَالَ مَعْمَرٌ : سَمِعْتُ هِشَامًا لاَ أَدْرِي أَقَضَوْا أَمْ لاَ

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে একবার মেঘাচ্ছন্ন দিনে আমরা ইফতার করলাম, এরপর সূর্য দেখা যায়। বর্ণনাকারী হিশামকে জিজ্ঞাসা করা হলো, তাদের কি কাযা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল? হিশাম রহ. বললেন, কাযা ছাড়া উপায় কি? (অপর বর্ণনাকারী) মা‘মার রহ. বলেন, আমি হিশামকে বলতে শুনেছি, তাঁরা কাযা করেছিলেন কিনা তা আমি জানি না।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৫৯।]

৬৫
বাচ্চাদের সাওম পালন করা
উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রমযানে এক নেশাগ্রস্ত ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে বললেন, আমাদের বাচ্চারা পর্যন্ত সাওম পালন করছে। তোমার সর্বনাশ হোক! অতঃপর উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাকে প্রহর করলেন।

রুবায়্যি‘ বিনতে মু‘আব্বিয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«أَرْسَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غَدَاةَ عَاشُورَاءَ إِلَى قُرَى الأَنْصَارِ : مَنْ أَصْبَحَ مُفْطِرًا، فَلْيُتِمَّ بَقِيَّةَ يَوْمِهِ وَمَنْ أَصْبَحَ صَائِمًا، فَليَصُمْ»، قَالَتْ : فَكُنَّا نَصُومُهُ بَعْدُ، وَنُصَوِّمُ صِبْيَانَنَا، وَنَجْعَلُ لَهُمُ اللُّعْبَةَ مِنَ العِهْنِ، فَإِذَا بَكَى أَحَدُهُمْ عَلَى الطَّعَامِ أَعْطَيْنَاهُ ذَاكَ حَتَّى يَكُونَ عِنْدَ الإِفْطَارِ»

“আশুরার সকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারদের সকল পল্লীতে এ নির্দেশ দিলেন, যে ব্যক্তি সাওম পালন করে নি সে যেন দিনের বাকী অংশ না খেয়ে থাকে আর যার সাওম অবস্থায় সকাল হয়েছে, সে যেন সাওম পূর্ণ করে। তিনি (রুবায়্যি‘) বলেন, পরবর্তীতে আমরা ঐ দিন সাওম রাখতাম এবং আমাদের শিশুদের সাওম রাখাতাম। আমরা তাদের জন্য পশমের খেলনা তৈরি করে দিতাম। তাদের কেউ খাবারের জন্য কাঁদলে তাকে ঐ খেলনা দিয়ে ইফতার পর্যন্ত ভুলিয়ে রাখতাম”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৬০, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৩৬।]

৬৬
সাওমে বেসাল বা বিরতিহীনভাবে সাওম পালন করা
আল্লাহর বাণী ﴿أَتِمُّواْ ٱلصِّيَامَ إِلَى ٱلَّيۡلِۚ﴾ [ البقرة : ١٨٧ ] “তোমরা রাতের আগমন পর্যন্ত সাওম পালন কর। [সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৭] এর পরিপ্রেক্ষিতে রাতে সাওম পালন করা যাবে না বলে যারা অভিমত ব্যক্ত করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতের ওপর দয়াপরবশত হয়ে ও তাদের স্বাস্থ্য রক্ষার খাতিরে সাওমে বেসাল বা বিরতিহীনভাবে সাওম পালন করতে নিষেধ করেছেন এবং কোনো বিষয়ে বাড়াবাড়ি করা নিন্দনীয়।

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«لاَ تُوَاصِلُوا، قَالُوا : إِنَّكَ تُوَاصِلُ، قَالَ : لَسْتُ كَأَحَدٍ مِنْكُمْ إِنِّي أُطْعَمُ، وَأُسْقَى، أَوْ إِنِّي أَبِيتُ أُطْعَمُ وَأُسْقَى»

“তোমরা সাওমে বেসাল পালন করবে না। লোকেরা বলল, আপনি যে সাওমে বেসাল করেন? তিনি বললেন, আমি তোমাদের মতো নই। আমাকে পানাহার করানো হয়, (অথবা বললেন) আমি পানাহার অবস্থায় রাত অতিবাহিত করি”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৬১, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১০৪।]

‘আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الوِصَالِ، قَالُوا : إِنَّكَ تُوَاصِلُ، قَالَ : إِنِّي لَسْتُ مِثْلَكُمْ إِنِّي أُطْعَمُ وَأُسْقَى»

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওমে বেসাল পালন করতে নিষেধ করেছেন। তখন লোকেরা তাঁকে বলল, আপনি যে সাওমে বেসাল করেন? তিনি বললেন, আমি তোমাদের মতো নই। আমাকে পানাহার করানো হয়, (অথবা বললেন) আমি পানাহার অবস্থায় রাত অতিবাহিত করি”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৬২, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১০২।]

আবু সা‘ঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন যে,

«لاَ تُوَاصِلُوا، فَأَيُّكُمْ إِذَا أَرَادَ أَنْ يُوَاصِلَ، فَلْيُوَاصِلْ حَتَّى السَّحَرِ، قَالُوا : فَإِنَّكَ تُوَاصِلُ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ : إِنِّي لَسْتُ كَهَيْئَتِكُمْ إِنِّي أَبِيتُ لِي مُطْعِمٌ يُطْعِمُنِي، وَسَاقٍ يَسْقِينِ»

“তোমরা সাওমে বেসাল পালন করবে না। তোমাদের কেউ সাওমে বেসাল পালন করতে চাইলে সে যেন সাহরীর সময় পর্যন্ত করে। লোকেরা বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি যে সাওমে বেসাল পালন করেন? তিনি বললেন, আমি তোমাদের মতো নই, আমি রাত্রি যাপন করি এরূপ অবস্থায় যে, আমার জন্য একজন খাদ্য পরিবেশনকারী থাকেন যিনি আমাকে আহার করান এবং একজন পানীয় পরিবেশনকারী আমাকে পান করান”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৬৩।]

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الوِصَالِ رَحْمَةً لَهُمْ، فَقَالُوا : إِنَّكَ تُوَاصِلُ، قَالَ : إِنِّي لَسْتُ كَهَيْئَتِكُمْ إِنِّي يُطْعِمُنِي رَبِّي وَيَسْقِينِ، قَالَ أَبُو عَبْدِ اللَّهِ : لَمْ يَذْكُرْ عُثْمَانُ رَحْمَةً لَهُمْ»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের ওপর দয়াপরবশ হয়ে তাদেরকে সাওমে বেসাল থেকে নিষেধ করলে তারা বলল, আপনি যে সাওমে বেসাল করে থাকেন! তিনি বললেন, আমি তোমাদের মতো নই, আমার রব আমাকে পানাহার করান”। আবু ‘আব্দুল্লাহ বুখারী রহ. বলেন, বর্ণনাকারী ‘উসমান রহ. ‘তাদের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে’ কথাটি উল্লেখ করেন নি।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৬৪, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১০৫।]

৬৭
যে অধিক পরিমাণ সাওমে বেসাল পালন করে তাঁকে শাস্তি প্রদান
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ বর্ণনা করেছেন।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الوِصَالِ فِي الصَّوْمِ» فَقَالَ لَهُ رَجُلٌ مِنَ المُسْلِمِينَ : إِنَّكَ تُوَاصِلُ يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ : وَأَيُّكُمْ مِثْلِي، إِنِّي أَبِيتُ يُطْعِمُنِي رَبِّي وَيَسْقِينِ، فَلَمَّا أَبَوْا أَنْ يَنْتَهُوا عَنِ الوِصَالِ، وَاصَلَ بِهِمْ يَوْمًا، ثُمَّ يَوْمًا، ثُمَّ رَأَوُا الْهِلَالَ، فَقَالَ : لَوْ تَأَخَّرَ لَزِدْتُكُمْ كَالتَّنْكِيلِ لَهُمْ حِينَ أَبَوْا أَنْ يَنْتَهُوا»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিরতিহীন সাওম পালন করতে নিষেধ করলে মুসলিমদের এক ব্যক্তি তাঁকে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি যে বিরতীহীন সাওম পালন করেন? তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে আমার মত কে আছ? আমি এমনভাবে রাত যাপন করি যে, আমার রব আমাকে পানাহার করান। এরপর যখন লোকেরা সাওমে বেসাল করা থেকে বিরত থাকল না, তখন তিনি তাদেরকে নিয়ে দিনের পর দিন সাওমে বেসাল করতে থাকলেন। এরপর লোকেরা যখন চাঁদ দেখতে পেল তখন তিনি বললেন, যদি চাঁদ উঠতে আরও দেরী হতো তবে আমি তোমাদেরকে নিয়ে আরও বেশি দিন সাওমে বেসাল করতাম। এ কথা তিনি তাদেরকে শাস্তি প্রদানস্বরূপ বলেছিলেন, যখন তারা বিরত থাকতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৬৫, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১০৩।]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,

«إِيَّاكُمْ وَالوِصَال مَرَّتَيْنِ قِيلَ : إِنَّكَ تُوَاصِلُ، قَالَ : إِنِّي أَبِيتُ يُطْعِمُنِي رَبِّي وَيَسْقِينِ، فَاكْلَفُوا مِنَ العَمَلِ مَا تُطِيقُونَ»

“তোমরা সাওমে বেসাল পালন করা থেকে বিরত থাক (বাক্যটি তিনি) দু’বার বললেন। তাঁকে বলা হলো, আপনি তো সাওমে বেসাল করেন। তিনি বললেন, আমি এভাবে রাত যাপন করি যে, আমার রব আমাকে পানাহার করিয়ে থাকেন। তোমরা তোমাদের সাধ্যানুযায়ী ‘আমল করার দায়িত্ব গ্রহণ করো”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৬৬।]

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يُصَلِّي فِي رَمَضَانَ، فَجِئْتُ فَقُمْتُ إِلَى جَنْبِهِ وَجَاءَ رَجُلٌ آخَرُ، فَقَامَ أَيْضًا حَتَّى كُنَّا رَهْطًا فَلَمَّا حَسَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّا خَلْفَهُ جَعَلَ يَتَجَوَّزُ فِي الصَّلَاةِ، ثُمَّ دَخَلَ رَحْلَهُ، فَصَلَّى صَلَاةً لَا يُصَلِّيهَا عِنْدَنَا، قَالَ : قُلْنَا لَهُ : حِينَ أَصْبَحْنَا أَفَطَنْتَ لَنَا اللَّيْلَةَ قَالَ : فَقَالَ : نَعَمْ، ذَاكَ الَّذِي حَمَلَنِي عَلَى الَّذِي صَنَعْتُ قَالَ : فَأَخَذَ يُوَاصِلُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَذَاكَ فِي آخِرِ الشَّهْرِ، فَأَخَذَ رِجَالٌ مِنْ أَصْحَابِهِ يُوَاصِلُونَ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : مَا بَالُ رِجَالٍ يُوَاصِلُونَ، إِنَّكُمْ لَسْتُمْ مِثْلِي، أَمَا وَاللهِ، لَوْ تَمَادَّ لِي الشَّهْرُ لَوَاصَلْتُ وِصَالًا يَدَعُ الْمُتَعَمِّقُونَ تَعَمُّقَهُمْ»

“রমযান মাসে একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করছিলেন। আমি তাঁর পাশে এসে দাঁড়ালাম! এরপর অন্য এক ব্যক্তি এসেও তাঁর পাশে দাঁড়ালেন। এভাবে আমরা এক দল লোক হয়ে গেলাম। এরপর নরী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বুঝতে পারলেন যে আমরা তাঁর পেছনে আছি তখন তিনি সালাত সংক্ষেপ করে ফেললেন। তারপর তিনি আপন গৃহে চলে গেলেন এবং এমন (দীর্ঘ) সালাত আদায় করলেন যে, এভাবে তিনি আমাদের সাথে সালাত আদায় করতেন না। সকালে আমরা তাকে বললাম, রাত্রে আপনি আমাদের সম্পর্কে বুঝতে পেরেছিলেন কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তাইতো আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে ঐ কাজের যা আমি করেছি। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষভাগে আবার সাওমে বেসাল করতে আরম্ভ করলেন। এ দেখে কতিপয় সাহাবীও সাওমে বেসাল শুরু করলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, লোকদের কি হলো তারা যে সাওমে বেসাল আরম্ভ করেছে! তোমরা তো আমার মত নও। আল্লাহর শপথ! যদি মাস দীর্ঘায়িত হতো তবে আমি এমনভাবে সাওমে বিসাল করতাম যার ফলে সীমালংঘনকারীগণ সাওমে বেসাল করা ছেড়ে দিত”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১০৪।]

৬৮
সাহরীর সময় পর্যন্ত সাওমে বেসাল পালন করা
আবু সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু খেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন যে,

«لاَ تُوَاصِلُوا، فَأَيُّكُمْ أَرَادَ أَنْ يُوَاصِلَ، فَلْيُوَاصِلْ حَتَّى السَّحَرِ، قَالُوا : فَإِنَّكَ تُوَاصِلُ يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ : لَسْتُ كَهَيْئَتِكُمْ إِنِّي أَبِيتُ لِي مُطْعِمٌ يُطْعِمُنِي، وَسَاقٍ يَسْقِينِ»

“তোমরা সাওমে বেসাল করবে না। তোমাদের কেউ যদি সাওমে বেসাল করতে চায়, তবে যেন সাহরীর সময় পর্যন্ত করে। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি তো সাওমে বেসাল পালন করেন। তিনি বললেন, আমি তোমাদের মতো নই। আমি এভাবে রাত যাপন করি যে, আমার জন্য একজন আহারদাতা রয়েছেন যিনি আমাকে আহার করান, একজন পানীয় দানকারী আছেন যিনি আমাকে পান করান”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৬৭।]

৬৯
কোনো ব্যক্তি তার ভাইয়ের নফল সাওম ভঙ্গের জন্য কসম দিলে এবং তার জন্য এ সাওমের কাযা ওয়াজিব মনে না করলে, যখন সাওম পালন না করা তার জন্য উত্তম হয়
আউন ইবন আবু জুহায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,

«آخَى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَيْنَ سَلْمَانَ، وَأَبِي الدَّرْدَاءِ، فَزَارَ سَلْمَانُ أَبَا الدَّرْدَاءِ، فَرَأَى أُمَّ الدَّرْدَاءِ مُتَبَذِّلَةً، فَقَالَ لَهَا : مَا شَأْنُكِ؟ قَالَتْ : أَخُوكَ أَبُو الدَّرْدَاءِ لَيْسَ لَهُ حَاجَةٌ فِي الدُّنْيَا، فَجَاءَ أَبُو الدَّرْدَاءِ فَصَنَعَ لَهُ طَعَامًا، فَقَالَ : كُلْ؟ قَالَ : فَإِنِّي صَائِمٌ، قَالَ : مَا أَنَا بِآكِلٍ حَتَّى تَأْكُلَ، قَالَ : فَأَكَلَ، فَلَمَّا كَانَ اللَّيْلُ ذَهَبَ أَبُو الدَّرْدَاءِ يَقُومُ، قَالَ : نَمْ، فَنَامَ، ثُمَّ ذَهَبَ يَقُومُ فَقَالَ : نَمْ، فَلَمَّا كَانَ مِنْ آخِرِ اللَّيْلِ قَالَ : سَلْمَانُ قُمِ الآنَ، فَصَلَّيَا فَقَالَ لَهُ سَلْمَانُ : إِنَّ لِرَبِّكَ عَلَيْكَ حَقًّا، وَلِنَفْسِكَ عَلَيْكَ حَقًّا، وَلِأَهْلِكَ عَلَيْكَ حَقًّا، فَأَعْطِ كُلَّ ذِي حَقٍّ حَقَّهُ، فَأَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَذَكَرَ ذَلِكَ لَهُ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «صَدَقَ سَلْمَانُ»

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালমান ও আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার মাঝে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন করে দেন। (একবার) সালমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সাথে সাক্ষাৎ করতে এসে উম্মে দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে মলিন কাপড় পরিহিত দেখতে পান। তিনি এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে উম্মে দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বললেন, আপনার ভাই আবু দারদার পার্থিব কোনো কিছুর প্রতি মোহ নেই। কিছুক্ষণ পরে আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এলেন। তারপর তিনি সালমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর জন্য আহার্য প্রস্তুত করান এবং বলেন, আপনি খেয়ে নিন, আমি সাওম পালন করছি। সালমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আপনি না খেলে আমি খাবো না। এরপর আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সালমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সঙ্গে খেলেন। রাত হলে আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু (সালাত আদায়ে) দাঁড়াতে গেলেন। সালমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, এখন ঘুমিয়ে যান। আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ঘুমিয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পরে আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আবার সালাতে দাঁড়াতে উদ্যত হলেন, সালমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ঘুমিয়ে যান। যখন রাতের শেষভাগ হলো, সালমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বললেন, এখন দাঁড়ান। এরপর তারা দু’জনে সালাত আদায় করলেন। পরে সালমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁকে বললেন, আপনার রবের হক আপনার ওপর আছে। আপনার নিজেরও হক আপনার ওপর রয়েছে। আবার আপনার পরিবারেরও হক রয়েছে। প্রত্যেক হকদারকে তার হক প্রদান করুন। এরপর আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উপস্থিত হয়ে এ ঘটনা বর্ণনা করলেন। (সব শুনে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সালমান ঠিকই বলেছে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৬৮।]

৭০
সাওমের নিয়ত করা এবং যে ব্যক্তি রাতের বেলায় রমযানের সাওমের নিয়ত করবে না তার সাওম আদায় হবে না
হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,  

«مَنْ لَمْ يُبَيِّتِ الصِّيَامَ قَبْلَ الْفَجْرِ فَلَا صِيَامَ لَهُ»

“যে ব্যক্তি (রমযানের সাওম ব্যতীত) রাত্রে সাওমের নিয়ত না করে তার সাওম পালন করা হবে না”। [নাসায়ী, হাদীস নং ২৩৩১, আলবানী রহ. বলেছেন, হাদীসটি সহীহ। আবূ দাউদ, ২৪৫৪, তিরমিযী, ৭৩০।]

হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«مَنْ لَمْ يُجْمِعِ الصِّيَامَ قَبْلَ طُلُوعِ الْفَجْرِ، فَلَا يَصُومُ»

“যে ব্যক্তি ফজর উদয়ের পূর্বেই রাত্রে সাওমের নিয়ত না করে তার সাওম পালন হবে না”। [নাসায়ী, হাদীস নং ২৩৩৩, আলবানী রহ. বলেছেন, হাদীসটি সহীহ। সহীহ ইবন খুযাইমা, ১৯৩৩, ‘আযমী রহ. বলেছেন, হাদীসের সনদটি সহীহ।]

৭১
নফল সাওমের নিয়ত দিনের বেলায় সূর্য হেলে যাওয়ার পূর্বে করা জায়েয এবং নফল সাওম পালনকারীকে ওযর ব্যতীতই সাওম ভঙ্গ করানো জায়েয
উম্মুল মুমিনীন ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«قَالَ لِي رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ذَاتَ يَوْمٍ يَا عَائِشَةُ، هَلْ عِنْدَكُمْ شَيْءٌ؟ قَالَتْ : فَقُلْتُ : يَا رَسُولَ اللهِ، مَا عِنْدَنَا شَيْءٌ قَالَ : فَإِنِّي صَائِمٌ قَالَتْ : فَخَرَجَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأُهْدِيَتْ لَنَا هَدِيَّةٌ أَوْ جَاءَنَا زَوْرٌ قَالَتْ : فَلَمَّا رَجَعَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللهِ، أُهْدِيَتْ لَنَا هَدِيَّةٌ أَوْ جَاءَنَا زَوْرٌ وَقَدْ خَبَأْتُ لَكَ شَيْئًا، قَالَ : مَا هُوَ؟» قُلْتُ : حَيْسٌ، قَالَ : «هَاتِيه فَجِئْتُ بِهِ فَأَكَلَ، ثُمَّ قَالَ : قَدْ كُنْتُ أَصْبَحْتُ صَائِمًا قَالَ طَلْحَةُ : فَحَدَّثْتُ مُجَاهِدًا بِهَذَا الْحَدِيثِ، فَقَالَ : ذَاكَ بِمَنْزِلَةِ الرَّجُلِ يُخْرِجُ الصَّدَقَةَ مِنْ مَالِهِ، فَإِنْ شَاءَ أَمْضَاهَا وَإِنْ شَاءَ أَمْسَكَهَا»

“একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, হে আয়েশা! তোমার নিকট (খাওয়ার মতো) কোনো কিছু আছে কি? আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার নিকট কিছুই নেই। তখন তিনি বললেন, তাহলে আমি সাওম পালন করছি। ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাইরে চলে গেলেন। ইত্যবসরে আমাদের নিকট কিছু হাদিয়া আসলো কিংবা তিনি বলেছেন, দর্শনার্থী কতিপয় লোক আমাদের নিকট আসলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে আসলে আমি বললাম, ইয়া রাসুলল্লাহ! আমাদের কিছু হাদিয়া দেওয়া হয়েছে কিংবা তিনি বলেছেন, কতিপয় দর্শনার্থী আমাদের নিকট এসেছেন। আমি আপনার জন্য কিছু খাবার সযত্নে রেখে দিয়েছি। তিনি বললেন, তা কী? আমি বললাম, হায়স অর্থাৎ ঘি এবং পনির মিশ্রিত খেজুর। তিনি বললেন, নিয়ে আস। তখন আমি তা নিয়ে এলাম। তিনি তা খেলেন। তারপর বললেন, আমি ভোরে সাওম পালনের নিয়ত করেছিলাম। বর্ণনাকারী তালহা রহ. বলেন, আমি এ হাদীস মুজাহিদ রহ.-এর নিকট বর্ণনা করার পর তিনি বললেন, এ কাজটি ঐ ব্যক্তির মতো যে তার মাল থেকে সদকা বের করলো। সে ইচ্ছা করলে তা দান করতে পারেন আর ইচ্ছা করলে রেখেও দিতে পারে।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৫৪।]

৭২
শা‘বান মাসের সাওম
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ " يَصُومُ حَتَّى نَقُولَ : لاَ يُفْطِرُ، وَيُفْطِرُ حَتَّى نَقُولَ : لاَ يَصُومُ، فَمَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اسْتَكْمَلَ صِيَامَ شَهْرٍ إِلَّا رَمَضَانَ، وَمَا رَأَيْتُهُ أَكْثَرَ صِيَامًا مِنْهُ فِي شَعْبَانَ»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাধারে (এত বেশি) সাওম পালন করতেন যে, আমরা বলাবলি করতাম, তিনি আর সাওম পরিত্যাগ করবেন না। (আবার কখনো এত বেশি) সাওম পালন না করা অবস্থায় একাধারে কাটাতেন যে, আমরা বলাবলি করতাম, তিনি আর (নফল) সাওম পালন করবেন না। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রমযান ব্যতীত কোনো পুরা মাসের সাওম পালন করতে দেখি নি এবং শা’বান মাসের চেয়ে কোনো মাসে বেশি (নফল) সাওম পালন করতে দেখি নি”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৬৯, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৫৬।]

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«لَمْ يَكُنِ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصُومُ شَهْرًا أَكْثَرَ مِنْ شَعْبَانَ، فَإِنَّهُ كَانَ يَصُومُ شَعْبَانَ كُلَّهُ وَكَانَ يَقُولُ : خُذُوا مِنَ العَمَلِ مَا تُطِيقُونَ، فَإِنَّ اللَّهَ لاَ يَمَلُّ حَتَّى تَمَلُّوا، وَأَحَبُّ الصَّلاَةِ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا دُووِمَ عَلَيْهِ وَإِنْ قَلَّتْ، وَكَانَ إِذَا صَلَّى صَلاَةً دَاوَمَ عَلَيْهَا»

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শা‘বান মাসের চেয়ে বেশি (নফল) সাওম কোনো মাসে পালন করতেন না। তিনি (প্রায়) পুরা শা’বান মাসই সাওম পালন করতেন এবং বলতেন, তোমাদের সাধ্যে যতটুকু সাধ্য আছে ততটুকু (নফল) আমল কর। কারণ, তোমরা (আমল করতে করতে) ক্লান্ত হয়ে না পড়া পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা (সওয়াব দান) বন্ধ করেন না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে সর্বাপেক্ষা প্রিয় সালাতই ছিল তাই যা যথাযথ নিয়মে সর্বদা আদায় করা হত। যদিও তা পরিমাণে কম হো এবং তিনি যখন কোনো (নফল) সালাত আদায় করতেন পরবর্তীতে তা অব্যাহত রাখতেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৭০, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৮২।]

৭৩
মুহাররম মাসের সাওম পালনের ফযীলত
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«أَفْضَلُ الصِّيَامِ، بَعْدَ رَمَضَانَ، شَهْرُ اللهِ الْمُحَرَّمُ، وَأَفْضَلُ الصَّلَاةِ، بَعْدَ الْفَرِيضَةِ، صَلَاةُ اللَّيْلِ»

“রমযানের সিয়ামের পর সর্বোত্তম সাওম হচ্ছে আল্লাহর মাস মুহাররমের সাওম এবং ফরয সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হচ্ছে রাতের সালাত”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৬৩।]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«سُئِلَ : أَيُّ الصَّلَاةِ أَفْضَلُ بَعْدَ الْمَكْتُوبَةِ؟ وَأَيُّ الصِّيَامِ أَفْضَلُ بَعْدَ شَهْرِ رَمَضَانَ؟ فَقَالَ : أَفْضَلُ الصَّلَاةِ، بَعْدَ الصَّلَاةِ الْمَكْتُوبَةِ، الصَّلَاةُ فِي جَوْفِ اللَّيْلِ، وَأَفْضَلُ الصِّيَامِ بَعْدَ شَهْرِ رَمَضَانَ، صِيَامُ شَهْرِ اللهِ الْمُحَرَّمِ»

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে জিজ্ঞাসা করা হলো, ফরয সালাতসমূহের পর কোনো সালাত এবং রমযান মাসের সিয়ামের পর কোনো সাওম সর্বোত্তম? বললেন, ফরয সালাতসমূহের পর গভীর রাতের সালাত সর্বোত্তম এবং রমযান মাসের সিয়ামের পর আল্লাহর মাস মুহাররমের সাওম সর্বোত্তম”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৬৩।]

৭৪
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাওম পালন করা ও না করার বর্ণনা
ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«مَا صَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَهْرًا كَامِلًا قَطُّ غَيْرَ رَمَضَانَ، وَيَصُومُ حَتَّى يَقُولَ القَائِلُ : لاَ وَاللَّهِ لاَ يُفْطِرُ، وَيُفْطِرُ حَتَّى يَقُولَ القَائِلُ : لاَ وَاللَّهِ لاَ يَصُومُ»

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান ব্যতীত কোনো মাসে পুরা মাসের সাওম পালন করেন নাই। তিনি এমনভাবে (নফল) সাওম পালন করতেন যে, কেউ বলতে চাইলে বলতে পারতো, আল্লাহর কসম! তিনি আর সাওম পালন পরিত্যাগ করবেন না। আবার এমনভাবে (নফল) সাওম ছেড়ে দিতেন যে, কেউ বলতে চাইলে বলতে পারতো আল্লাহর কসম! তিনি আর সাওম পালন করবেন না”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৭১, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৫৭।]

হুমাইদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলতে শুনেছেন,

«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُفْطِرُ مِنَ الشَّهْرِ حَتَّى نَظُنَّ أَنْ لاَ يَصُومَ مِنْهُ، وَيَصُومُ حَتَّى نَظُنَّ أَنْ لاَ يُفْطِرَ مِنْهُ شَيْئًا، وَكَانَ لاَ تَشَاءُ تَرَاهُ مِنَ اللَّيْلِ مُصَلِّيًا إِلَّا رَأَيْتَهُ، وَلاَ نَائِمًا إِلَّا رَأَيْتَهُ وَقَالَ سُلَيْمَانُ، عَنْ حُمَيْدٍ، أَنَّهُ سَأَلَ أَنَسًا فِي الصَّوْمِ»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো মাসে এভাবে সাওম ছেড়ে দিতেন যে, আমরা মনে করতাম, তিনি এ মাসে আর সাওম পালন করবেন না। আবার কোনো মাসে এভাবে সাওম পালন করতেন যে, আমরা মনে করতাম তিনি এ মাসে আর সাওম ছাড়বেন না। আর তুমি যদি তাঁকে রাতে সালাত আদায়রত অবস্থায় দেখতে চাইতে তবে তা দেখতে পেতে, আবার যদি তুমি তাঁকে ঘুমন্ত দেখতে চাইতে তবে তাও দেখতে পেতে। সুলায়মান রহ. হুমায়দ রহ. সূত্রে বলেন যে, তিনি আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে সাওম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৭২, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৫৮।]

হুমাইদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নফল সাওমের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন,

«مَا كُنْتُ أُحِبُّ أَنْ أَرَاهُ مِنَ الشَّهْرِ صَائِمًا إِلَّا رَأَيْتُهُ، وَلاَ مُفْطِرًا إِلَّا رَأَيْتُهُ، وَلاَ مِنَ اللَّيْلِ قَائِمًا إِلَّا رَأَيْتُهُ، وَلاَ نَائِمًا إِلَّا رَأَيْتُهُ، وَلاَ مَسِسْتُ خَزَّةً وَلاَ حَرِيرَةً، أَلْيَنَ مِنْ كَفِّ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَلاَ شَمِمْتُ مِسْكَةً، وَلاَ عَبِيرَةً أَطْيَبَ رَائِحَةً مِنْ رَائِحَةِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ»

“যে  কোনো মাসে আমি তাঁকে  সাওম পালনরত অবস্থায় দেখতে চেয়েছি, তাঁকে সে অবস্থায় দেখেছি, আবার তাঁকে সাওম পালন না করা অবস্থায় দেখতে চাইলে তাও দেখতে পেয়েছি। রাতে যদি তাঁকে সালাত আদায়রত অবস্থায় দেখতে চেয়েছি, তা প্রত্যক্ষ করেছি। আবার ঘুমন্ত দেখতে চাইলে তাও দেখতে পেয়েছি। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাত মোবারক থেকে নরম কোনো পশমী বা রেশমী কাপড় স্পর্শ করি নি। আর আমি তাঁর (শরীরের) ঘ্রাণ থেকে অধিক সুগন্ধযুক্ত কোনো মিশক বা আম্বর পাই নি”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৭৩, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৫৮।]

আব্দুল্লাহ ইবন শাকীক রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«سَأَلْتُ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا، عَنْ صَوْمِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَتْ : كَانَ يَصُومُ حَتَّى نَقُولَ : قَدْ صَامَ، قَدْ صَامَ، وَيُفْطِرُ حَتَّى نَقُولَ : قَدْ أَفْطَرَ، قَدْ أَفْطَرَ، قَالَتْ : وَمَا رَأَيْتُهُ صَامَ شَهْرًا كَامِلًا، مُنْذُ قَدِمَ الْمَدِينَةَ، إِلَّا أَنْ يَكُونَ رَمَضَانَ»

“আমি ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার কাছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাওম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, তিনি সাওম পালন করতেন, এমনকি আমরা বলতাম তিনি সাওম পালন করেই যাবেন। আবার তিনি ইফতার অবস্থায় থাকতেন এমনকি আমরা বলাবলি করতাম, তিনি সাওম ভঙ্গ করেই চলেছেন (আর সাওম পালন করবেন না)। তিনি (আরও) বলেন, মদীনায় তাশরীফ নেওয়া পর্যন্ত আমি তাঁকে রমযান ব্যতীত পূর্ণ মাস সাওম পালন করতে দেখি নি।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৫৬।]

‘আব্দুল্লাহ ইবন শাকীক রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«قُلْتُ لِعَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا : هَلْ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصُومُ شَهْرًا مَعْلُومًا سِوَى رَمَضَانَ؟ قَالَتْ : وَاللهِ، إِنْ صَامَ شَهْرًا مَعْلُومًا سِوَى رَمَضَانَ، حَتَّى مَضَى لِوَجْهِهِ، وَلَا أَفْطَرَهُ حَتَّى يُصِيبَ مِنْهُ»

“আমি ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার কাছে জিজ্ঞাসা করলাম, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান ব্যতীত অন্য কোনো সময়ে পূর্ণ মাস সাওম পালন করেছেন কি? তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! রমযান ব্যতীত অন্য সময়ে তিনি পূর্ণ মাস সাওম পালন করেন নি, এমনকি তিনি ইন্তেকাল করেছেন। আবার পুরো মাসও সাওম ভঙ্গকারী হতেন না, বরং তা থেকে কিছু না কিছু সাওম পালন করতেন।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৫৬।]

৭৫
নফল সাওম পালনের ব্যাপারে মেহমানের হক
‘আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমর ইবনুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«دَخَلَ عَلَيَّ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَذَكَرَ الحَدِيثَ يَعْنِي إِنَّ لِزَوْرِكَ عَلَيْكَ حَقًّا، وَإِنَّ لِزَوْجِكَ عَلَيْكَ حَقًّا، فَقُلْتُ : وَمَا صَوْمُ دَاوُدَ؟ قَالَ : نِصْفُ الدَّهْرِ»

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে এলেন। এরপর তিনি (‘আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) হাদীসটি বর্ণনা করেন অর্থাৎ তোমার ওপর মেহমানের হক আছে, তোমার ওপর তোমার স্ত্রীর হক আছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, সাওমে দাউদ আলাইহিস সালাম কী? তিনি বললেন, ‘অর্ধেক বছর’-এর সাওম পালন করা”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৭৪, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৫৯।]

৭৬
নফল সাওমে শরীরের হক
‘আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমর ইবনুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «يَا عَبْدَ اللَّهِ، أَلَمْ أُخْبَرْ أَنَّكَ تَصُومُ النَّهَارَ، وَتَقُومُ اللَّيْلَ؟»، فَقُلْتُ : بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ : «فَلاَ تَفْعَلْ صُمْ وَأَفْطِرْ، وَقُمْ وَنَمْ، فَإِنَّ لِجَسَدِكَ عَلَيْكَ حَقًّا، وَإِنَّ لِعَيْنِكَ عَلَيْكَ حَقًّا، وَإِنَّ لِزَوْجِكَ عَلَيْكَ حَقًّا، وَإِنَّ لِزَوْرِكَ عَلَيْكَ حَقًّا، وَإِنَّ بِحَسْبِكَ أَنْ تَصُومَ كُلَّ شَهْرٍ ثَلاَثَةَ أَيَّامٍ، فَإِنَّ لَكَ بِكُلِّ حَسَنَةٍ عَشْرَ أَمْثَالِهَا، فَإِنَّ ذَلِكَ صِيَامُ الدَّهْرِ كُلِّهِ، فَشَدَّدْتُ، فَشُدِّدَ عَلَيَّ قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي أَجِدُ قُوَّةً قَالَ : فَصُمْ صِيَامَ نَبِيِّ اللَّهِ دَاوُدَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ، وَلاَ تَزِدْ عَلَيْهِ»، قُلْتُ : وَمَا كَانَ صِيَامُ نَبِيِّ اللَّهِ دَاوُدَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ؟ قَالَ : نِصْفَ الدَّهْرِ، فَكَانَ عَبْدُ اللَّهِ يَقُولُ بَعْدَ مَا كَبِرَ : يَا لَيْتَنِي قَبِلْتُ رُخْصَةَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, হে আব্দুল্লাহ! আমি এ সংবাদ পেয়েছি যে, তুমি প্রতিদিন সাওম পালন কর এবং সারা রাত সালাত আদায় করে থাক। আমি বললাম, ঠিক (শুনেছেন) ইয়া রাসূলুল্লাহ! তিনি বললেন, এরূপ করবে না (বরং মাঝে মাঝে) সাওম পালন কর আবার সাওম ছেড়েও দাও। (রাতে) সালাত আদায় কর আবার ঘুমাও। কেননা তোমার ওপর তোমার শরীরের হক আছে, তোমার চোখের হক রয়েছে, তোমার ওপর তোমার স্ত্রীর হক আছে, তোমার মেহমানের হক আছে। তোমার জন্য যথেষ্ট যে, তুমি প্রত্যেক মাসে তিন দিন সাওম পালন করবে। কেননা নেক আমলের পরিবর্তে তোমার জন্য রয়েছে দশগুণ নেকী। এভাবে সারা বছরের সাওম হয়ে যায়। আমি বললাম আমি এর চেয়েও কঠোর ‘আমল করতে সক্ষম। তখন আমাকে আরও কঠিন আমলের অনুমতি দেওয়া হলো। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আরো বেশি শক্তি রাখি। তিনি বললেন, তবে আল্লাহর নবী দাঊদ আলাইহিস সালামের সাওম পালন কর, এর থেকে বেশি করতে যেয়ো না। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আল্লাহর নবী দাঊদ আলাইহিস সালামের সাওম কেমন? তিনি বললেন, অর্ধেক বছর। বর্ণনাকারী বলেন, ‘আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বৃদ্ধ বয়সে বলতেন, আহা! আমি যদি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদত্ত রুখসত (সহজতর বিধান) কবুল করে নিতাম!” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৭৫, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৫৯।]

৭৭
সারা বছর সাওম পালন করা
‘আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে (সনদসহ) বর্ণিত, তিনি বলেন,

«عَنِ الزُّهْرِيِّ، قَالَ : أَخْبَرَنِي سَعِيدُ بْنُ المُسَيِّبِ، وَأَبُو سَلَمَةَ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَمْرٍو، قَالَ : أُخْبِرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنِّي أَقُولُ : وَاللَّهِ لَأَصُومَنَّ النَّهَارَ، وَلَأَقُومَنَّ اللَّيْلَ مَا عِشْتُ، فَقُلْتُ لَهُ : قَدْ قُلْتُهُ بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي قَالَ : «فَإِنَّكَ لاَ تَسْتَطِيعُ ذَلِكَ، فَصُمْ وَأَفْطِرْ، وَقُمْ وَنَمْ، وَصُمْ مِنَ الشَّهْرِ ثَلاَثَةَ أَيَّامٍ، فَإِنَّ الحَسَنَةَ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا، وَذَلِكَ مِثْلُ صِيَامِ الدَّهْرِ، قُلْتُ : إِنِّي أُطِيقُ أَفْضَلَ مِنْ ذَلِكَ، قَالَ : «فَصُمْ يَوْمًا وَأَفْطِرْ يَوْمَيْنِ، قُلْتُ : إِنِّي أُطِيقُ أَفْضَلَ مِنْ ذَلِكَ، قَالَ : فَصُمْ يَوْمًا وَأَفْطِرْ يَوْمًا، فَذَلِكَ صِيَامُ دَاوُدَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ، وَهُوَ أَفْضَلُ الصِّيَامِ، فَقُلْتُ : إِنِّي أُطِيقُ أَفْضَلَ مِنْ ذَلِكَ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ لاَ أَفْضَلَ مِنْ ذَلِكَ»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আমার সম্পর্কে এ কথা পৌছে যায় যে, আমি বলেছি, আল্লাহর কসম, আমি যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন সাওম পালন করব এবং রাতভর সালাত আদায় করব। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করায় আমি বললাম, আপনার ওপর আমার পিতা-মাতা কুরবান হোক! আমি একথা বলেছি। তিনি বললেন, তুমি তো এরূপ করতে সক্ষম হবে না। বরং তুমি সাওম পালন কর ও ছেড়েও দাও, (রাতে) সালাত আদায় কর ও নিদ্রা যাও। তুমি মাসে তিন দিন করে সাওম পালন কর। কারণ নেক কাজের ফল তার দশ গুন, এভাবেই সারা বছরের সাওম পালন হয়ে যাবে। আমি বললাম, আমি এর থেকে বেশি করার সামর্থ্য রাখি। তিনি বললেন, তাহলে একদিন সাওম পালন কর এবং দু’দিন ছেড়ে দাও। আমি বললাম আমি এর থেকে বেশি করার সামর্থ্য রাখি। তিনি বললেন, তাহলে একদিন সাওম পালন কর এবং একদিন ছেড়ে দাও। এটা হলো দাঊদ আলাইহিস সালামের সাওম এবং এই হলো সর্বোত্তম (সাওম)। আমি বললাম, আমি এর চেয়ে বেশি করার সামর্থ্য রাখি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এর চেয়ে উত্তম সাওম (রাখার পদ্ধতি) আর নেই”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৭৬, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৫৯।]

আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«جَاءَ ثَلاَثَةُ رَهْطٍ إِلَى بُيُوتِ أَزْوَاجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَسْأَلُونَ عَنْ عِبَادَةِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَلَمَّا أُخْبِرُوا كَأَنَّهُمْ تَقَالُّوهَا، فَقَالُوا : وَأَيْنَ نَحْنُ مِنَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَدْ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَمَا تَأَخَّرَ، قَالَ أَحَدُهُمْ : أَمَّا أَنَا فَإِنِّي أُصَلِّي اللَّيْلَ أَبَدًا، وَقَالَ آخَرُ : أَنَا أَصُومُ الدَّهْرَ وَلاَ أُفْطِرُ، وَقَالَ آخَرُ : أَنَا أَعْتَزِلُ النِّسَاءَ فَلاَ أَتَزَوَّجُ أَبَدًا، فَجَاءَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَيْهِمْ، فَقَالَ : «أَنْتُمُ الَّذِينَ قُلْتُمْ كَذَا وَكَذَا، أَمَا وَاللَّهِ إِنِّي لَأَخْشَاكُمْ لِلَّهِ وَأَتْقَاكُمْ لَهُ، لَكِنِّي أَصُومُ وَأُفْطِرُ، وَأُصَلِّي وَأَرْقُدُ، وَأَتَزَوَّجُ النِّسَاءَ، فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي»

“তিন জনের একটি দল রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইবাদত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিবিগণের গৃহে আগমন করলো। যখন তাঁদেরকে এ সম্পর্কে অবহিত করা হলো, তখন তারা এ ইবাদতের পরিমাণ যেন কম মনে করল এবং বলল, আমরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমকক্ষ থেকে পারি না। কারণ, তার আগে ও পরের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়েছে। এমন সময় তাদের মধ্য থেকে একজন বলল, আমি সারা জীবন রাতে সালাত আদায় করতে থাকব। অপর একজন বলল, আমি সারা বছর সাওম পালন করব এবং কখনও বিরতি দিব না। অপরজন বলল, আমি নারী বিবর্জিত থাকব, কখনও শাদী করব না। এরপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিকট এলেন এবং বললেন, “তোমরা ঐ সকল ব্যক্তি যারা এরূপ কথাবার্তা বলেছ? আল্লাহর কসম! আমি আল্লাহকে তোমাদের চেয়ে বেশি ভয় করি এবং তোমাদের চেয়ে তাঁর প্রতি আমি বেশ আনুগত্যশীল অথচ আমি সাওম পালন করি, আবার সাওম থেকে বিরতও থাকি। সালাত আদায় করি এবং ঘুমাই ও বিয়ে-শাদী করি। সুতরাং যারা আমার সুন্নাতের প্রতি বিরাগ ভাব পোষণ করবে, তারা আমার দলভুক্ত নয়”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫০৬৩, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৪০১।]

আবু আইয়্যুব আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَنْ صَامَ رَمَضَانَ ثُمَّ أَتْبَعَهُ سِتًّا مِنْ شَوَّالٍ، كَانَ كَصِيَامِ الدَّهْرِ»

“রমযান মাসের সাওম পালন করে পরে শাওয়াল মাসে ছয় দিন সাওম পালন করা সারা বছর সাওম রাখার মতো”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৬৪।]

আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ أَبُو طَلْحَةَ لاَ يَصُومُ عَلَى عَهْدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ أَجْلِ الغَزْوِ، فَلَمَّا قُبِضَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمْ أَرَهُ مُفْطِرًا إِلَّا يَوْمَ فِطْرٍ أَوْ أَضْحَى»

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনকালে আবু তালহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু জিহাদের কারেণে সাওম পালন করতেন না। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তেকালের পর ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা ব্যতীত তাকে কখনো সাওম ছেড়ে দিতে দেখি নি।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৮২৮।]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে,

«شَهْرُ الصَّبْرِ، وَثَلَاثَةُ أَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ صَوْمُ الدَّهْرِ»

“ধৈর্যের মাস হলো রমযান মাস। আর প্রত্যেক মাসে তিন দিন সাওম পালন করা সারা বছর সাওম পালন করার সমতুল্য”। [নাসায়ী, হাদীস নং ২৪০৮, আলবানী রহ. বলেছেন, হাদীসটি সহীহ। ইবন হিব্বান, ৩৬৫৯।]

৭৮
সাওম পালনের ব্যাপারে পরিবার পরিজনের হক
‘আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত,

«بَلَغَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنِّي أَسْرُدُ الصَّوْمَ، وَأُصَلِّي اللَّيْلَ، فَإِمَّا أَرْسَلَ إِلَيَّ وَإِمَّا لَقِيتُهُ، فَقَالَ : أَلَمْ أُخْبَرْ أَنَّكَ تَصُومُ وَلاَ تُفْطِرُ، وَتُصَلِّي؟ فَصُمْ وَأَفْطِرْ، وَقُمْ وَنَمْ، فَإِنَّ لِعَيْنِكَ عَلَيْكَ حَظًّا، وَإِنَّ لِنَفْسِكَ وَأَهْلِكَ عَلَيْكَ حَظًّا، قَالَ : إِنِّي لَأَقْوَى لِذَلِكَ، قَالَ : فَصُمْ صِيَامَ دَاوُدَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ» قَالَ : وَكَيْفَ؟ قَالَ : كَانَ يَصُومُ يَوْمًا وَيُفْطِرُ يَوْمًا، وَلاَ يَفِرُّ إِذَا لاَقَى، قَالَ : مَنْ لِي بِهَذِهِ يَا نَبِيَّ اللَّهِ؟- قَالَ عَطَاءٌ : لاَ أَدْرِي كَيْفَ ذَكَرَ صِيَامَ الأَبَدِ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «لاَ صَامَ مَنْ صَامَ الأَبَدَ مَرَّتَيْنِ»

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এ সংবাদ পৌছে যে, আমি একটানা সাওম পালন করি এবং রাতভর সালাত আদায় করি। এরপর হয়ত তিনি আমার কাছে লোক পাঠালেন অথবা আমি তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম। তিনি বললেন, আমি কি এ কথা ঠিক শুনি নাই যে, তুমি সাওম পালন করতে থাক আর ছাড় না এবং তুমি (রাতভর) সালাত আদায় করতে থাক আর ঘুমাও না? (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন), তুমি সাওম পালন কর এবং মাঝে মাঝে তা ছেড়েও দাও। রাতে সালাত আদায় কর এবং নিদ্রাও যাও। কেননা তোমার ওপর তোমার চোখের হক রয়েছে এবং তোমার নিজের শরীরের ও তোমার পরিবারের হক তোমার ওপর আছে। ‘আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমি এর চেয়ে বেশি শক্তি রাখি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে তুমি দাঊদ আলাইহিস সালামের সাওম পালন কর। বর্ণনাকারী বলেন, ‘আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, তা কীভাবে? তিনি বললেন, দাঊদ আলাইহিস সালাম একদিন সাওম পালন করতেন, একদিন ছেড়ে দিতেন এবং তিনি (শত্রুর) সম্মুখীন হলে পলায়ন করতেন না। ‘আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, হে আল্লাহর নবী, আমাকে এ শক্তি কে যোগাবে? বর্ণনাকারী ‘আতা রহ. বলেন, (এ হাদীসে) কীভাবে সব সময়ের সিয়ামের প্রসঙ্গ আসে সে কথাটুকু আমার মনে নেই (অবশ্য) এতটুকু মনে আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’বার এ কথাটি বলেছেন, “সব সময়ের সাওম কোনো সাওম নয়”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৭৭, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৫৯।]

৭৯
একদিন সাওম পালন করা একদিন ছেড়ে দেওয়া
‘আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«صُمْ مِنَ الشَّهْرِ ثَلاَثَةَ أَيَّامٍ، قَالَ : أُطِيقُ أَكْثَرَ مِنْ ذَلِكَ، فَمَا زَالَ حَتَّى قَالَ : صُمْ يَوْمًا وَأَفْطِرْ يَوْمًا فَقَالَ : اقْرَإِ القُرْآنَ فِي كُلِّ شَهْرٍ، قَالَ : إِنِّي أُطِيقُ أَكْثَرَ فَمَا زَالَ، حَتَّى قَالَ : فِي ثَلاَثٍ»

“তুমি প্রতি মাসে তিন দিন সাওম পালন কর। ‘আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমি এর চাইতে বেশি করার শক্তি রাখি। এভাবে তিনি বৃদ্ধির আবেদন করতে লাগলেন যে, অবশেষে রাসূলুল্লাহ বললেন, একদিন সাওম পালন কর এবং একদিন ছেড়ে দাও এবং আরও বললেন, প্রতি মাসে (এক খতম) কুরআন পাঠ কর। তিনি বললেন আমি এর চেয়ে বেশি শক্তি রাখি। এভাবে বলতে লাগলেন, অবশেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে তিন দিনে (পাঠ কর)”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৭৮, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৫৯।]

৮০
দাউদ আলাইহিস সালামের সাওম
‘আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমর ইবনুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন,

«إِنَّكَ لَتَصُومُ الدَّهْرَ، وَتَقُومُ اللَّيْلَ؟، فَقُلْتُ : نَعَمْ، قَالَ : «إِنَّكَ إِذَا فَعَلْتَ ذَلِكَ هَجَمَتْ لَهُ العَيْنُ، وَنَفِهَتْ لَهُ النَّفْسُ، لاَ صَامَ مَنْ صَامَ الدَّهْرَ، صَوْمُ ثَلاَثَةِ أَيَّامٍ صَوْمُ الدَّهْرِ كُلِّهِ، قُلْتُ : فَإِنِّي أُطِيقُ أَكْثَرَ مِنْ ذَلِكَ، قَالَ : فَصُمْ صَوْمَ دَاوُدَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ، كَانَ يَصُومُ يَوْمًا وَيُفْطِرُ يَوْمًا، وَلاَ يَفِرُّ إِذَا لاَقَى»

“তুমি কি সব সময় সাওম পালন কর এবং রাতভর সালাত আদায় করে থাক? আমি বললাম, জী হ্যাঁ। তিনি বললেন, তুমি এরূপ করলে চোখ বসে যাবে এবং শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে। যে সারা বছর সাওম পালন করে সে যেন সাওম পালন করে না। মাসে তিন দিন করে সাওম পালন করা সারা বছর সাওম পালনের সমতূল্য। আমি বললাম, আমি এর চেয়ে বেশি করার সামর্থ্য রাখি। তিনি বললেন, তাহলে তুমি দাউদ আলাইহিস সালামের সাওম পালন কর, তিনি একদিন সাওম পালন করতেন আর একদিন ছেড়ে দিতেন এবং যখন শত্রুর সম্মুখীন থেকেন তখন পলায়ন করতেন না”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৭৯, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৫৯।]

«عَنْ أَبِي قِلاَبَةَ، قَالَ : أَخْبَرَنِي أَبُو المَلِيحِ، قَالَ : دَخَلْتُ مَعَ أَبِيكَ عَلَى عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، فَحَدَّثَنَا : أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذُكِرَ لَهُ صَوْمِي، فَدَخَلَ عَلَيَّ، فَأَلْقَيْتُ لَهُ وِسَادَةً مِنْ أَدَمٍ حَشْوُهَا لِيفٌ، فَجَلَسَ عَلَى الأَرْضِ، وَصَارَتِ الوِسَادَةُ بَيْنِي وَبَيْنَهُ، فَقَالَ : أَمَا يَكْفِيكَ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ ثَلاَثَةُ أَيَّامٍ؟ قَالَ : قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ : خَمْسًا، قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ : سَبْعًا، قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ : تِسْعًا، قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ : إِحْدَى عَشْرَةَ، ثُمَّ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : لاَ صَوْمَ فَوْقَ صَوْمِ دَاوُدَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ شَطْرَ الدَّهَرِ، صُمْ يَوْمًا، وَأَفْطِرْ يَوْمًا»

‘আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আমার সাওমের আলোচনা করায় তিনি আমার এখানে আগমন করেন। আমি তাঁর জন্য খেজুরের ছালে পরিপূর্ণ চামড়ার বালিশ (হেলান দিয়ে বসার জন্য) পেশ করলাম। তিনি মাটিতে বসে পড়লেন। বালিশটি তাঁর ও আমার মাঝে পড়ে থাকল। তিনি বললেন, প্রতি মাসে তুমি তিন দিন সাওম রাখলে হয় না? ‘আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! (আরো)। তিনি বললেন সাতদিন। আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! (আরো)। তিনি বললেন, নয় দিন। আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! (আরো)। তিনি বললেন, এগারো দিন। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, দাঊদ আলাইহিস সালামের সাওমের চেয়ে উত্তম সাওম আর হয় না। অর্ধেক বছর, একদিন সাওম পালন কর ও একদিন ছেড়ে দাও”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৮০, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৫৯।]

৮১
সাওমে বীয বা প্রতিমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে সাওম পালন করা
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«أَوْصَانِي خَلِيلِي صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِثَلاَثٍ : صِيَامِ ثَلاَثَةِ أَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ، وَرَكْعَتَيِ الضُّحَى، وَأَنْ أُوتِرَ قَبْلَ أَنْ أَنَامَ»

“আমার বন্ধু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তিনটি বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন, প্রতি মাসে তিন দিন করে সাওম পালন করা এবং দু’রাক‘আত সালাতুদ-দোহা এবং ঘুমানোর পূর্বে বিতর সালাত আদায় করা”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৮১, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭২১।]

عَنْ عَائِشَة زَوْج النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «أَكَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصُومُ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ؟» قَالَتْ : «نَعَمْ»، فَقُلْتُ لَهَا : «مِنْ أَيِّ أَيَّامِ الشَّهْرِ كَانَ يَصُومُ؟» قَالَتْ : «لَمْ يَكُنْ يُبَالِي مِنْ أَيِّ أَيَّامِ الشَّهْرِ يَصُومُ»

এক তাবে‘ঈ বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার কাছে জানতে চাইলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি প্রতি মাসে তিন দিন সাওম পালন করতেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি পূনরায় তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, মাসের কোনো কোনো দিন তিনি সাওম পালন করতেন? ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বললেন, তিনি মাসের যে কোনো দিন সাওম পালন করতে দ্বিধা করতেন না। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৬০।]

৮২
সাওম পালনকারী কারো দাওয়াতে সাড়া দেওয়া
عَنْ ابْن عُمَر كَانَ إِذَا دُعِيَ ذَهَبَ إِلَى الدَّاعِي , فَإِنْ كَانَ صَائِمًا , دَعَا بِالْبَرَكَةِ , ثُمَّ انْصَرَفَ , وَإِنْ كَانَ مُفْطِرًا جَلَسَ فَأَكَلَ .

قَالَ نَافِعٌ : قَالَ ابْنُ عُمَرَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " إذا دعيتم إلى كراع فأجيبوا»

ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কেউ দাওয়াত দিলে তিনি সেখানে যেতেন। সাওম পালনকারী হলে সেখানে গিয়ে বরকতের দো‘আ করে ফিরে আসতেন আর সাওম পালনকারী না হলে বসতেন এবং খেতেন।

নাফি‘ রহ. বলেন, ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন তোমাদের বকরীর পায়া খাওয়ার জন্যও দাওয়াত দেওয়া হয় তবুও তোমরা তাতে সাড়া দিও”। [ইবন হিব্বান, হাদীস নং ৫২৯০। হাদীসটির দ্বিতীয় অংশ মুসলিমে আছে। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৪২৯।]

জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إِذَا دُعِيَ أَحَدُكُمْ إِلَى طَعَامٍ، فَلْيُجِبْ، فَإِنْ شَاءَ طَعِمَ، وَإِنْ شَاءَ تَرَكَ، وَلَمْ يَذْكُرِ ابْنُ الْمُثَنَّى : إِلَى طَعَامٍ»

“যখন তোমাদের কাউকে খাওয়ার জন্য দাওয়াত দেওয়া হয়, তখন সে যেন দাওয়াতে সাড়া দেয়। তারপর ইচ্ছা করলে আহার করবে, না হয় না করবে। ইবন মুসান্না রহ. তার বর্ণনায় পানাহারের দিকে কথাটি উল্লেখ করেন নি।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৪৩০।]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إِذَا دُعِيَ أَحَدُكُمْ، فَلْيُجِبْ، فَإِنْ كَانَ صَائِمًا، فَلْيُصَلِّ، وَإِنْ كَانَ مُفْطِرًا، فَلْيَطْعَمْ»

“যখন তোমাদের কাউকে দাওয়াত দেওয়া হয় সে যেন তাতে সাড়া দেয়। যদি সে সাওম পালনকারী হয় তাহলে সে (ওখানে গিয়ে) দো‘আ ও সালাতরত থাকবে। আর যদি সাওম পালনকারী না হয় তাহলে সে আহার করবে।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৪৩১।]

৮৩
সাওম পালনকারীকে খাবারের জন্য ডাকলে সে যেন বলে, আমি সাওম পালনকারী
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إِذَا دُعِيَ أَحَدُكُمْ إِلَى طَعَامٍ، وَهُوَ صَائِمٌ، فَلْيَقُلْ : إِنِّي صَائِمٌ»

“তোমাদের সাওমরত কোনো ব্যক্তিকে যদি খানা খাওয়ার জন্য আহ্বান করা হয়, তবে তার বলা উচিতৎ আমি সাওম পালনকারী”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৫০।]

৮৪
কারো সাথে দেখা করতে গেলে নফল সাওম ভঙ্গ না করা
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«دَخَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، عَلَى أُمِّ سُلَيْمٍ، فَأَتَتْهُ بِتَمْرٍ وَسَمْنٍ، قَالَ : أَعِيدُوا سَمْنَكُمْ فِي سِقَائِهِ، وَتَمْرَكُمْ فِي وِعَائِهِ، فَإِنِّي صَائِمٌ ثُمَّ قَامَ إِلَى نَاحِيَةٍ مِنَ البَيْتِ، فَصَلَّى غَيْرَ المَكْتُوبَةِ، فَدَعَا لِأُمِّ سُلَيْمٍ وَأَهْلِ بَيْتِهَا، فَقَالَتْ أُمُّ سُلَيْمٍ : يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّ لِي خُوَيْصَّةً، قَالَ : مَا هِيَ؟ قَالَتْ : خَادِمُكَ أَنَسٌ، فَمَا تَرَكَ خَيْرَ آخِرَةٍ وَلاَ دُنْيَا إِلَّا دَعَا لِي بِهِ، قَالَ : اللَّهُمَّ ارْزُقْهُ مَالًا وَوَلَدًا، وَبَارِكْ لَهُ فِيهِ، فَإِنِّي لَمِنْ أَكْثَرِ الأَنْصَارِ مَالًا، وَحَدَّثَتْنِي ابْنَتِي أُمَيْنَةُ : أَنَّهُ دُفِنَ لِصُلْبِي مَقْدَمَ حَجَّاجٍ البَصْرَةَ بِضْعٌ وَعِشْرُونَ وَمِائَةٌ، حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي مَرْيَمَ، أَخْبَرَنَا يَحْيَى بْنُ أَيُّوبَ، قَالَ : حَدَّثَنِي حُمَيْدٌ، سَمِعَ أَنَسًا رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ»

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমার মাতা) উম্মে সুলাইম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার ঘরে আগমান করলেন। তিনি তাঁর সামনে খেজুর ও ঘি পেশ করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের ঘি মশকে এবং খেজুর তার বরতনে রেখে দাও। কারণ আমি সাওম পালনকারী। এরপর তিনি ঘরের এক পাশে গিয়ে নফল সালাত আদায় করলেন এবং উম্মে সুলাইম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা ও তাঁর পরিজনের জন্য দো‘আ করলেন। উম্মে সুলাইম আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার একটি ছোট ছেলে আছে। তিনি বললেন, কে সে? উম্মে সুলাইম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বললেন, আপনার খাদেম আনাস। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার জন্য দুনিয়া ও আখেরাতের যাবতীয় কল্যাণের দো‘আ করলেন। তিনি বললেন, হে আল্লাহ! তুমি তাকে মাল ও সন্তান-সন্ততি দান কর এবং তাকে বরকত দাও। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি আনসারগণের মধ্যে অধিক সম্পদশালীদের একজন এবং আমার কন্যা আমাকে জানিয়েছে যে, হাজ্জাজ (ইবন ইউসুফ) এর বসরায় আগমনের পূর্ব পর্যন্ত একশত বিশের অধিক আমার সন্তান মারা গেছে।

ইবন আবু মারইয়াম রহ. হুমায়দ রহ. আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৮২।]

৮৫
সাওম পালনকারীকে ইফতার করানোর সাওয়াব
যায়েদ ইবন খালিদ আল-জুহানী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَنْ فَطَّرَ صَائِمًا كَانَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِهِمْ، مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا»

“কেউ যদি কোনো সাওম পালনকারীকে ইফতার করায় তবে তার জন্যও অনুরূপ (সিয়ামের) সাওয়াব হবে। কিন্তু এতে সাওম পালনকারীর সাওয়াবে কোনো ঘাটতি হবে না”। [তিরমিযী, হাদীস নং ৮০৭, ইমাম তিরমিযী রহ. বলেছেন, হাদীসটি হাসান সহীহ। ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৭৪৬, ইমাম আলবানী রহ. বলেছেন, হাদীসটি সহীহ। ইবন হিব্বান, ৩৪২৯।]

৮৬
মাসের শেষ ভাগে সাওম পালন
‘ইমরান ইবন হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত,

عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : أَنَّهُ سَأَلَهُ أَوْ سَأَلَ رَجُلًا وَعِمْرَانُ يَسْمَعُ، فَقَالَ : يَا أَبَا فُلاَنٍ، أَمَا صُمْتَ سَرَرَ هَذَا الشَّهْرِ؟ قَالَ : أَظُنُّهُ قَالَ : يَعْنِي رَمَضَانَ، قَالَ الرَّجُلُ : لاَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ : فَإِذَا أَفْطَرْتَ فَصُمْ يَوْمَيْنِ، لَمْ يَقُلِ الصَّلْتُ : أَظُنُّهُ يَعْنِي رَمَضَانَ، قَالَ أَبُو عَبْدِ اللَّهِ : وَقَالَ ثَابِتٌ : عَنْ مُطَرِّفٍ، عَنْ عِمْرَانَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : مِنْ سَرَرِ شَعْبَانَ»

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে অথবা (বর্ণনাকারী বলেন) অন্য এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করেন এবং ‘ইমরান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তা শুনেছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে অমুকের পিতা! তুমি কি এ মাসের শেষ ভাগে সাওম পালন কর নি? (বর্ণনাকারী) বলেন, আমার মনে হয় (আমার ওস্তাদ) বলেছেন, অর্থাৎ রমযান। লোকটি উত্তর দিল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! না। তিনি বললেন, যখন সাওম পালন শেষ করবে তখন দু’দিন সাওম পালন করে নিবে। আমার মনে হয় সালত রহ. রমযান শব্দটি বর্ণনা করেন নি। সাবিত রহ. ‘ইমরান সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শা‘বানের শেষভাগে বলে উল্লেখ করেছেন। আবু ‘আব্দুল্লাহ বুখারী রহ. বলেন, শা’বান শব্দটি অধিকতর সহীহ।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৮৩, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৬১।]

৮৭
জুমু‘আর দিনে সাওম পালন
মুহাম্মদ ইবন ‘আব্বাদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জাবির ইবন ‘আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে,

«نَهَى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ صَوْمِ يَوْمِ الجُمُعَةِ؟ قَالَ : نَعَمْ، زَادَ غَيْرُ أَبِي عَاصِمٍ، يَعْنِي : أَنْ يَنْفَرِدَ بِصَوْمٍ»

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি জুমু‘আর দিনে (নফল) সাওম পালন করতে নিষেধ করেছেন? উত্তরে তিনি বললেন, হ্যাঁ। আবু ‘আসিম রহ. ব্যতীত অন্যেরা অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, পৃথকভাবে জুমু‘আর দিনের সাওম পালনকে নিষেধ করেছেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৮৪, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৪৩।]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে,

«لاَ يَصُومَنَّ أَحَدُكُمْ يَوْمَ الجُمُعَةِ، إِلَّا يَوْمًا قَبْلَهُ أَوْ بَعْدَهُ»

“তোমাদের কেউ যেন শুধু জুমু‘আর দিনে সাওম পালন না করে; কিন্তু তার আগে একদিন বা পরের দিন (যদি পালন করে তবে জুমু‘আর দিনে পালন করা যায়)”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৮৫, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৪৪।]

জুয়াইরিয়া বিনতে হারিস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، دَخَلَ عَلَيْهَا يَوْمَ الجُمُعَةِ وَهِيَ صَائِمَةٌ، فَقَالَ : أَصُمْتِ أَمْسِ؟ قَالَتْ : لاَ، قَالَ : تُرِيدِينَ أَنْ تَصُومِي غَدًا؟ قَالَتْ : لاَ، قَالَ : فَأَفْطِرِي، وَقَالَ حَمَّادُ بْنُ الجَعْدِ : سَمِعَ قَتَادَةَ، حَدَّثَنِي أَبُو أَيُّوبَ، أَنَّ جُوَيْرِيَةَ، حَدَّثَتْهُ : فَأَمَرَهَا فَأَفْطَرَتْ»

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু‘আর দিনে তাঁর নিকট প্রবেশ করেন তখন তিনি (জুযাইরিয়া) সাওম পালনরত ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি গতকাল সাওম পালন করেছিলে? তিনি বললেন, না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি আগামীকাল সাওম পালনের ইচ্ছা রাখ? তিনি বললেন, না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে সাওম ভেঙ্গে ফেল। হাম্মাদ ইবনুল জা‘দ রহ. স্বীয় সূত্রে জুয়াইরিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে আদেশ দেন এবং তিনি সাওম ভঙ্গ করেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৮৬।]

৮৮
সাওম পালনের ব্যাপারে কোনো দিন কি নির্দিষ্ট করা যায়?
‘আলকামা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«قُلْتُ لِعَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا : هَلْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَخْتَصُّ مِنَ الأَيَّامِ شَيْئًا؟ قَالَتْ : لاَ، كَانَ عَمَلُهُ دِيمَةً، وَأَيُّكُمْ يُطِيقُ مَا كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُطِيقُ»

“আমি ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি কোনো দিন কোনো কাজের জন্য নির্দিষ্ট করে নিতেন? উত্তরে তিনি বলেলেন, না; বরং তাঁর ‘আমল স্থায়ী হতো এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সব ‘আমল করার শক্তি সামর্থ্য রাখতেন তোমাদের মধ্যে কে আছে যে সে সবের সামর্থ্য রাখে?” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৮৭।]

৮৯
শাওয়াল মাসে ছয়টি সাওম পালন
আবু আইয়্যুব আল-আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَنْ صَامَ رَمَضَانَ ثُمَّ أَتْبَعَهُ سِتًّا مِنْ شَوَّالٍ، كَانَ كَصِيَامِ الدَّهْرِ»

“রমযান মাসের সাওম পালন করে পরে শাওয়াল মাসে ছয় দিন সাওম পালন করা সারা বছর সাওম রাখার মত”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৬৪।]

৯০
যিলহজ মাসের সাওম পালন
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«مَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَائِمًا فِي الْعَشْرِ قَطُّ»

“আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে (যিলহজ্জের) দশম তারিখে কখনও সাওম পালন করতে দেখি নি।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৭৬।]

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত যে,

«أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمْ يَصُمِ الْعَشْرَ»

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (যিলহজ্জের) দশ তারিখে সাওম পালন করেন নি”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৭৬।]

ইবন ‘আববাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 

«مَا مِنْ أَيَّامٍ الْعَمَلُ الصَّالِحُ فِيهَا أَحَبُّ إِلَى اللَّهِ مِنْ هَذِهِ الْأَيَّامِ» يَعْنِي أَيَّامَ الْعَشْرِ، قَالُوا : يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَلَا الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ؟ قَالَ : وَلَا الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ، إِلَّا رَجُلٌ خَرَجَ بِنَفْسِهِ وَمَالِهِ، فَلَمْ يَرْجِعْ مِنْ ذَلِكَ بِشَيْءٍ»

“আল্লাহ তা‘আলার নিকট দিনসমুহের মধ্যে যিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনের ‘আমল অধিক প্রিয়। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করাও কি ঐরূপ উত্তম আমল নয়? তিনি বলেন না, আল্লাহ রাস্তায় জিহাদ করাও নয়। অবশ্য যে ব্যক্তি স্বীয় জানমালসহ রাস্তায় বের হওয়ার পর আর প্রত্যাবর্তন করে না, তার ব্যাপারটি স্বতন্ত্র”। [তিরমিযী, ৭৫৭, ইমাম তিরমিযী রহ. বলেছেন, হাদীসটি হাসান সহীহ গরীব। আবূ দাউদ, হাদীস নং ২৪৩৮, ইমাম আলবানী রহ. বলেছেন, হাদীসটি সহীহ। ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৭২৭। উল্লেখ্য যে, এ হাদীসটি ‘কিতাবুস সাওম’ এর মধ্যে না আনাই ভালো। কেননা এ হাদীসটিতে দিনের মর্যাদা বুঝানো হয়েছে। নির্দিষ্ট করে সাওমের কথা বলা হয় নি; বরং সাওমের ব্যাপারে যে হাদিসটি এসেছে তা দ‘ঈফ। হাদীসটি হলো, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «مَا مِنْ أَيَّامٍ أَحَبُّ إِلَى اللهِ أَنْ يُتَعَبَّدَ لَهُ فِيهَا مِنْ عَشْرِ ذِي الحِجَّةِ، يَعْدِلُ صِيَامُ كُلِّ يَوْمٍ مِنْهَا بِصِيَامِ سَنَةٍ، وَقِيَامُ كُلِّ لَيْلَةٍ مِنْهَا بِقِيَامِ لَيْلَةِ القَدْرِ» .“এমন কোনো দিন নাই যে দিনসমূহের ইবাদত আল্লাহর নিকট যিলহজ মাসের দশ দিনের ইবাদত অপেক্ষা অধিক প্রিয়। এর প্রতিটি দিনের সিয়াম এক বছরের সিয়ামের সমতুল্য। এর প্রতিটি রাতের ইবাদত লায়লাতুল কাদরের ইবাদতের সমতুল্য।” (তিরমিযী, হাদীস নং ১৭২৮) আলবানী রহ. হাদীসটিকে দ‘য়ীফ বলেছেন। ইবন মাজাহ, ৭৫৮।]

৯১
‘আরাফাহ দিবসে সাওম পালন
উম্মুল ফাদল বিনতে হারিস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা সূত্রে বর্ণনা করেন যে,

«أَنَّ نَاسًا تَمَارَوْا عِنْدَهَا يَوْمَ عَرَفَةَ فِي صَوْمِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ بَعْضُهُمْ : هُوَ صَائِمٌ، وَقَالَ بَعْضُهُمْ : لَيْسَ بِصَائِمٍ، فَأَرْسَلَتْ إِلَيْهِ بِقَدَحِ لَبَنٍ وَهُوَ وَاقِفٌ عَلَى بَعِيرِهِ، فَشَرِبَهُ»

“কিছুসংখ্যক লোক ‘আরাফাতের দিনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাওম পালন সম্পর্কে তাঁর কাছে সন্দেহ প্রকাশ করে। তাদের কেউ বলল, তিনি সাওম পালন করেছেন। আর কেউ বলল, না, তিনি করেন নি। এতে উম্মুল ফাদল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এক পেয়ালা দুধ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট পাঠিয়ে দিলেন এবং তিনি তা পান করে নিলেন। এ সময় তিনি উঠের পিঠে (‘আরাফাতে) উকূফ অবস্থায় ছিলেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৮৮, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১২৩।]

মায়মূনা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত যে, তিনি বললেন,

«إِنَّ النَّاسَ شَكُّوا فِي صِيَامِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ عَرَفَةَ، فَأَرْسَلَتْ إِلَيْهِ مَيْمُونَةُ بِحِلَابِ اللَّبَنِ، وَهُوَ وَاقِفٌ فِي الْمَوْقِفِ، فَشَرِبَ مِنْهُ وَالنَّاسُ يَنْظُرُونَ إِلَيْهِ»

“কিছু সংখ্যক লোক ‘আরাফাতের দিনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাওম পালন সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করলে তিনি স্বল্প পরিমাণ দুধ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট পাঠিয়ে দিলে তিনি তা পান করলেন ও লোকেরা তা প্রত্যক্ষ করছিল। তখন তিনি (‘আরাফাতে) অবস্থান স্থলে উকূফ করছিলেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৮৯, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১২৪।]

আবু কাতাদা আল-আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,

» أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُئِلَ عَنْ صَوْمِهِ؟ قَالَ : فَغَضِبَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ عُمَرُ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ : رَضِينَا بِاللهِ رَبًّا، وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا، وَبِمُحَمَّدٍ رَسُولًا، وَبِبَيْعَتِنَا بَيْعَةً . قَالَ : فَسُئِلَ عَنْ صِيَامِ الدَّهْرِ؟ فَقَالَ : لَا صَامَ وَلَا أَفْطَرَ أَوْ مَا صَامَ وَمَا أَفْطَرَ قَالَ : فَسُئِلَ عَنْ صَوْمِ يَوْمَيْنِ وَإِفْطَارِ يَوْمٍ؟ قَالَ : وَمَنْ يُطِيقُ ذَلِكَ» قَالَ : وَسُئِلَ عَنْ صَوْمِ يَوْمٍ، وَإِفْطَارِ يَوْمَيْنِ؟ قَالَ : لَيْتَ أَنَّ اللهَ قَوَّانَا لِذَلِكَ» قَالَ : وَسُئِلَ عَنْ صَوْمِ يَوْمٍ، وَإِفْطَارِ يَوْمٍ؟ قَالَ : ذَاكَ صَوْمُ أَخِي دَاوُدَ - عَلَيْهِ السَّلَام قَالَ : وَسُئِلَ عَنْ صَوْمِ يَوْمِ الِاثْنَيْنِ؟ قَالَ : «ذَاكَ يَوْمٌ وُلِدْتُ فِيهِ، وَيَوْمٌ بُعِثْتُ أَوْ أُنْزِلَ عَلَيَّ فِيهِ قَالَ : فَقَالَ : صَوْمُ ثَلَاثَةٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ، وَرَمَضَانَ إِلَى رَمَضَانَ، صَوْمُ الدَّهْرِ قَالَ : وَسُئِلَ عَنْ صَوْمِ يَوْمِ عَرَفَةَ؟ فَقَالَ : يُكَفِّرُ السَّنَةَ الْمَاضِيَةَ وَالْبَاقِيَةَ قَالَ : وَسُئِلَ عَنْ صَوْمِ يَوْمِ عَاشُورَاءَ؟ فَقَالَ : يُكَفِّرُ السَّنَةَ الْمَاضِيَةَ وَفِي هَذَا الْحَدِيثِ مِنْ رِوَايَةِ شُعْبَةَ قَالَ : وَسُئِلَ عَنْ صَوْمِ يَوْمِ الِاثْنَيْنِ وَالْخَمِيسِ؟ فَسَكَتْنَا عَنْ ذِكْرِ الْخَمِيسِ لَمَّا نُرَاهُ وَهْمًا»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাওম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো। এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্তুষ্ট হলেন। তখন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমরা আল্লাহর ওপর (আমাদের) রব হিসেবে, ইসলামের ওপর (আমাদের) দীন হিসেবে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর (আমাদের) রাসূল হিসেবে এবং আমাদের কৃত বায়‘আতের ওপর আমরা সন্তুষ্ট। অতঃপর সারা বছর সাওম পালন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো। তিনি বললেন, সে ব্যক্তি সাওম পালন করে নি, ইফতারও করে নি বা সে ব্যক্তি সাওম পালন করে নি এবং সাওমহীনও থাকে নি। অতঃপর একাধারে দুই দিন সাওম পালন করা ও এক দিন সাওম পালন না করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো। তিনি বললেন এভাবে সাওম পালনের সামর্থ্য কার আছে? অতঃপর একদিন সাওম পালন ও দু দিন সাওম ত্যাগ করা সস্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো। তিনি বললেন, আল্লাহ যেন আমাদের এরূপ সাওম পালনের সামর্থ্য দান করেন। অতঃপর একদিন সাওম পালন করা ও একদিন না করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো। তিনি বললেন, তা আমার ভাই দাঊদ আলাইহিস সালামের সাওম। অতঃপর সোমবারের সাওম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, এই দিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং এই দিনই আমি নবুওয়াত প্রাপ্ত হয়েছি বা আমার ওপর (কুরআন) নাযিল করা হয়েছে। আরও বললেন, প্রতি মাসে তিন দিন এবং গোটা রমযান মাস সাওম পালন করাই হলো সারা বছর সাওম পালনের সমতুল্য। অতঃপর ‘আরাফাহ দিবসের সাওম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, তাতে পূর্ববর্তী বছর ও পরবর্তী বছরের শুনাহের কাফফারা হয়ে যাবে। অতঃপর ‘আশুরার সাওম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, তাতে বিগত বছরের গুনাহের কাফফারা হয়ে যাবে। এই হাদীসে শু‘বা রহ.-এর বর্ণনায় আরও আছে, অতঃপর সোমবার ও বৃহস্প্রতিবারের সাওম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো। কিন্তু আমাদের মতে বৃহস্পতিবারের কথা ভুলবশত বর্ণিত হয়েছে, তাই আমরা তার উল্লেখ থেকে বিরত থাকলাম।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৬২। ইবন হিব্বান, ৩৬৩৯।]

৯২
ঈদের দিনে সাওম পালন
বনু আযহারের আযাদকৃত গোলাম আবু ‘উবায়দ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«شَهِدْتُ العِيدَ مَعَ عُمَرَ بْنِ الخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، فَقَالَ : «هَذَانِ يَوْمَانِ نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ صِيَامِهِمَا : يَوْمُ فِطْرِكُمْ مِنْ صِيَامِكُمْ، وَاليَوْمُ الآخَرُ تَأْكُلُونَ فِيهِ مِنْ نُسُكِكُمْ»

“আমি একবার ঈদে উমার ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সঙ্গে ছিলাম, তখন তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দুই দিনে সাওম পালন করতে নিষেধ করেছেন। (ঈদুল ফিতরের দিন) যে দিন তোমরা তোমাদের সাওম ছেড়ে দাও। আরেক দিন, যেদিন তোমরা তোমাদের কুরবানীর গোশত খাও।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৯০, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৩৭।]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنْ صِيَامِ يَوْمَيْنِ يَوْمِ الْأَضْحَى، وَيَوْمِ الْفِطْرِ»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’দিন সাওম পালন করতে নিষেধ করেছেন। এক হলো কুরবানীর দিন আর দ্বিতীয় হলো ঈদুল ফিতরের দিন।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৩৮।]

কাযাআ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«سَمِعْتُ مِنْهُ حَدِيثًا فَأَعْجَبَنِي، فَقُلْتُ لَهُ : آنْتَ سَمِعْتَ هَذَا مِنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ : فَأَقُولُ عَلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا لَمْ أَسْمَعْ؟ قَالَ : سَمِعْتُهُ يَقُولُ : لَا يَصْلُحُ الصِّيَامُ فِي يَوْمَيْنِ : يَوْمِ الْأَضْحَى وَيَوْمِ الْفِطْرِ، مِنْ رَمَضَانَ»

“আমি আবু সা‘ঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে একটি হাদীস শ্রবণ করেছি। হাদীসটি আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। তখন আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আপনি এ হাদীস শুনেছেন কি? তিনি বললেন, যে কথা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনি নি এমন কথা তাঁর দিকে সম্বোধন করে আমি বলতে পারি কি? আমি শুনেছি তিনি বলেছেন, দু’দিন সাওম পালন করা শুদ্ধ নয়, ঈদুল আযহার দিন এবং ঈদুল ফিতরের দিন।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮২৭।]

আবু সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,

«أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنْ صِيَامِ يَوْمَيْنِ، يَوْمِ الْفِطْرِ، وَيَوْمِ النَّحْرِ»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’দিন অর্থাৎ ঈদুল ফিতরের দিন এবং কুরবানীর দিন সাওম পালন করতে নিষেধ করেছেন।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৩৮।]

যিয়াদ ইবন জুবায়র রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«جَاءَ رَجُلٌ إِلَى ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، فَقَالَ : إِنِّي نَذَرْتُ أَنْ أَصُومَ يَوْمًا، فَوَافَقَ يَوْمَ أَضْحَى أَوْ فِطْرٍ، فَقَالَ ابْنُ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا : أَمَرَ اللهُ تَعَالَى بِوَفَاءِ النَّذْرِ، وَنَهَى رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ صَوْمِ هَذَا الْيَوْمِ»

“এক ব্যক্তি ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট এসে বললেন, আমি এক দিন সাওম পালন করার মানত করেছিলাম। ঘটনাক্রমে তা ঈদুল আযহা বা ঈদুল ফিতরের দিন হয়ে গেছে। তখন তিনি বললেন, আল্লাহ তা‘আলা মানত পূর্ণ করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দিন সাওম পালন করতে নিষেধ করেছেন।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৩৯।]

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«نَهَى رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ صَوْمَيْنِ : يَوْمِ الْفِطْرِ، وَيَوْمِ الْأَضْحَى»

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা -এ দু’দিন সাওম পালন করতে নিষেধ করেছেন।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৪০।]

আবু সা‘ঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«نَهَى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ صَوْمِ يَوْمِ الفِطْرِ وَالنَّحْرِ، وَعَنِ الصَّمَّاءِ، وَأَنْ يَحْتَبِيَ الرَّجُلُ فِي ثَوْبٍ وَاحِدٍ، وَعَنْ صَلاَةٍ بَعْدَ الصُّبْحِ وَالعَصْرِ»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন এবং কুরবানীর ঈদের দিন সাওম পালন করা থেকে, ‘সাম্মা’ ধরনের কাপড় পরিধান করতে, এক কাপড় পরিধানরত অবস্থায় দুই হাঁটু তুলে নিতম্বের উপর বসতে (কেননা এতে সতর প্রকাশ পাওয়ার আশংকা রয়েছে) এবং ফজর ও ‘আসরের পরে সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৯১।]

৯৩
কুরবানীর দিনে সাওম পালন
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«يُنْهَى عَنْ صِيَامَيْنِ، وَبَيْعَتَيْنِ : الفِطْرِ وَالنَّحْرِ، وَالمُلاَمَسَةِ وَالمُنَابَذَةِ»

“দু’দিনের সাওম ও দু’প্রকারের ক্রয়-বিক্রয় নিষেধ করা হয়েছে, ঈদুল ফিতর ও কুরবানীর (দিনের) সাওম এবং মুলামাসা (পণ্য স্পর্শ করলেই ক্রয় বাধ্য হয়ে যাওয়া)ও মুনাবাযা (ক্রেতার প্রতি নিক্ষেপ করলেই ক্রয় বাধ্য হওয়া) পদ্ধতিতে ক্রয়-বিক্রয় থেকে নিষেধ করা হয়েছে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৯৩, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫১১ (সংক্ষিপ্তাকারে)।]

যিয়াদ ইবন জুবাইর রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«جَاءَ رَجُلٌ إِلَى ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، فَقَالَ : رَجُلٌ نَذَرَ أَنْ يَصُومَ يَوْمًا، قَالَ : أَظُنُّهُ قَالَ : الِاثْنَيْنِ، فَوَافَقَ ذَلِكَ يَوْمَ عِيدٍ، فَقَالَ ابْنُ عُمَرَ : أَمَرَ اللَّهُ بِوَفَاءِ النَّذْرِ وَنَهَى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ صَوْمِ هَذَا اليَوْمِ»

“এক ব্যক্তি এসে ‘আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলল যে, এক ব্যক্তি কোনো এক দিনের সাওম পালন করার মানত করেছে, আমার মনে হয় সে সোমবারের কথা বলেছিল। ঘটনাক্রমে ঐ দিন ঈদের দিন পড়ে যায়। ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আল্লাহ তা‘আলা মানত পুরা করার নির্দেশ দিয়েছেন আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ (ঈদের) দিনে সাওম পালন করতে নিষেধ করেছেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৯৪, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৩৯।]

আবু সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে (সনদসহ) বর্ণিত, যিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে বারোটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন, তিনি বলেন,

«حَدَّثَنَا عَبْدُ المَلِكِ بْنُ عُمَيْرٍ، قَالَ : سَمِعْتُ قَزَعَةَ قَالَ : سَمِعْتُ أَبَا سَعِيدٍ الخُدْرِيَّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ : وَكَانَ غَزَا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثِنْتَيْ عَشْرَةَ غَزْوَةً قَالَ : سَمِعْتُ أَرْبَعًا مِنَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَعْجَبْنَنِي، قَالَ : لاَ تُسَافِرِ المَرْأَةُ مَسِيرَةَ يَوْمَيْنِ إِلَّا وَمَعَهَا زَوْجُهَا أَوْ ذُو مَحْرَمٍ، وَلاَ صَوْمَ فِي يَوْمَيْنِ : الفِطْرِ وَالأَضْحَى، وَلاَ صَلاَةَ بَعْدَ الصُّبْحِ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ، وَلاَ بَعْدَ العَصْرِ حَتَّى تَغْرُبَ، وَلاَ تُشَدُّ الرِّحَالُ إِلَّا إِلَى ثَلاَثَةِ مَسَاجِدَ : مَسْجِدِ الحَرَامِ، وَمَسْجِدِ الأَقْصَى، وَمَسْجِدِي هَذَا»

“আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে চারটি কথা শুনেছি, যা আমার খুব ভাল লেগেছে। তিনি বলেছেন, স্বামী অথবা মাহরাম (যার সঙ্গে বিবাহ নিষিদ্ধ) পুরুষ ছাড়া কোনো নারী যেন দুই দিনের দূরত্বের সফর না করে। ঈদুল ফিতর ও কুরবানীর দিনে সাওম নেই। ফজরের সালাতের পরে সূর্যোদয় এবং ‘আসরের সালাতের পরে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোনো সালাত নেই। মসজিদে হারাম, মসজিদে আকসা ও আমার এই মসজিদ ব্যতীত অন্য কোনো মসজিদের উদ্দেশ্যে কেউ যেন সফর না করে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৯৫, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮২৭।]

৯৪
আইয়ামুত তাশরিকে সাওম পালন
হিশাম রহ. তার পিতার থেকে বর্ণনা করেন যে,

«كَانَتْ عَائِشَةُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا تَصُومُ أَيَّامَ التَّشْرِيقِ بِمِنًى، وَكَانَ أَبُوهَا يَصُومُهَا»

“আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা আইয়ামুত তাশরিকে মিনায় সাওম পালন করতেন, তার পিতাও সে দিন গুলোতে সাওম পালন করতেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৯৬,]

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তাঁরা উভয়ে বলেন,

«لَمْ يُرَخَّصْ فِي أَيَّامِ التَّشْرِيقِ أَنْ يُصَمْنَ، إِلَّا لِمَنْ لَمْ يَجِدِ الهَدْيَ»

“যাঁর নিকট কুরবানীর পশু নেই তিনি ছাড়া অন্য কারও জন্য আইয়্যামে তাশরীকে সাওম পালন করার অনুমতি দেওয়া হয় নি”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৯৭।]

ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«الصِّيَامُ لِمَنْ تَمَتَّعَ بِالعُمْرَةِ إِلَى الحَجِّ إِلَى يَوْمِ عَرَفَةَ، فَإِنْ لَمْ يَجِدْ هَدْيًا وَلَمْ يَصُمْ، صَامَ أَيَّامَ مِنًى»

“যে ব্যক্তি একই সঙ্গে হজ ও ‘উমরা পালনের সুযোগ লাভ করলো সে ‘আরাফাত দিবস পর্যন্ত সাওম পালন করবে। সে যদি কুরবানী না করতে পারে এবং সাওমও পালন না করে  থাকে তবে মিনার দিনগুলোতে সাওম পালন করবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৯৯।]

নুবাইশা আল-হুযালী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«أَيَّامُ التَّشْرِيقِ أَيَّامُ أَكْلٍ وَشُرْبٍ»

“আইয়্যামে তাশরীক পানাহারের দিন”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৪১।]

কা‘ব ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,

أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعَثَهُ وَأَوْسَ بْنَ الْحَدَثَانِ أَيَّامَ التَّشْرِيقِ، فَنَادَى «أَنَّهُ لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ إِلَّا مُؤْمِنٌ وَأَيَّامُ مِنًى أَيَّامُ أَكْلٍ وَشُرْبٍ»

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এবং আউস ইবন হাদসান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমাকে আইয়্যামে তাশরীকের সময় পাঠালেন এবং বলে দিলেন তোমরা ঘোষণা করে দাও যে, মুমিনগণই জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং আইয়্যামে মিনা (আইয়্যামে তাশরীক) পানাহার করবার দিন।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৪২।]

৯৫
আশুরার দিনে সাওম পালন
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَتْ قُرَيْشٌ تَصُومُ عَاشُورَاءَ فِي الْجَاهِلِيَّةِ، وَكَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصُومُهُ، فَلَمَّا هَاجَرَ إِلَى الْمَدِينَةِ، صَامَهُ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ، فَلَمَّا فُرِضَ شَهْرُ رَمَضَانَ قَالَ : «مَنْ شَاءَ صَامَهُ وَمَنْ شَاءَ تَرَكَهُ»

“জাহেলী যুগে কুরাইশের লোকেরা ‘আশুরার দিন সাওম পালন করতো। রমযানের সাওম ফরয হওয়ার পূর্বে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং মুসলিমগণ এ দিন সাওম রাখতেন। অতঃপর মদীনায় হিজরত করার পরার পর যখন রমযানের সাওম ফরয হলো তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “যে চায় ঐ দিনের সাওম রাখতে পারে আর যে চায় নাও রাখতে পারে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০০০, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১২৬।]

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«أَنَّ يَوْمَ عَاشُورَاءَ كَانَ يُصَامُ فِي الْجَاهِلِيَّةِ، فَلَمَّا جَاءَ الْإِسْلَامُ مَنْ شَاءَ صَامَهُ وَمَنْ شَاءَ تَرَكَهُ»

“রমযানের সাওম ফরয হওয়ার পূর্বে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আশুরার দিনে সাওম পালন করার নির্দেশ দিতেন। যখন রমযানের সাওম ফরয করা হলো তখন যার ইচ্ছা সে আশুরার দিনে সাওম পালন করতো আর যার ইচ্ছা সে তা ছেড়ে দিতো”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০০১, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১২৫।]

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْمُرُ بِصِيَامِهِ قَبْلَ أَنْ يُفْرَضَ رَمَضَانُ، فَلَمَّا فُرِضَ رَمَضَانُ، كَانَ مَنْ شَاءَ صَامَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَمَنْ شَاءَ أَفْطَرَ»

“কুরায়শরা জাহিলী যুগে ‘আশুরার দিন সাওম পালন করত। রমযানের সাওম ফরয হওয়ার পূর্বে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও এদিন সাওম পালন করার নির্দেশ দিতেন। রমযানের সাওম ফরয হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “যার ইচ্ছা, সে এদিন সাওম পালন করবে, আর যার ইচ্ছা সে তা ছেড়ে দেবে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১২৫।]

‘আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে (সনদসহ) বর্ণিত,

«عَنْ نَافِعٍ، أَخْبَرَنِي عَبْدُ اللهِ بْنُ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، أَنَّ أَهْلَ الْجَاهِلِيَّةِ كَانُوا يَصُومُونَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ، وَأَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَامَهُ، وَالْمُسْلِمُونَ قَبْلَ أَنْ يُفْتَرَضَ رَمَضَانُ، فَلَمَّا افْتُرِضَ رَمَضَانُ، قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «إِنَّ عَاشُورَاءَ يَوْمٌ مِنْ أَيَّامِ اللهِ، فَمَنْ شَاءَ صَامَهُ وَمَنْ شَاءَ تَرَكَهُ»

“জাহেলী যুগে লোকেরা আশুরার দিন সাওম রাখতো। রমযানের সাওম ফরয হওয়ার পূর্বে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং মুসলিমগণ এ দিন সাওম রাখতেন। অতঃপর যখন রমযানের সাওম ফরয হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর দিনগুলোর মধ্যে ‘আশুরাও একটি দিন। কাজেই যে চায় ঐ দিনের সাওম রাখতে পারে আর যে চায় নাও রাখতে পারে।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১২৬।]

ইবন ‘উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত,

«أَنَّهُ ذُكِرَ عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمُ عَاشُورَاءَ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «كَانَ يَوْمًا يَصُومُهُ أَهْلُ الْجَاهِلِيَّةِ، فَمَنْ أَحَبَّ مِنْكُمْ أَنْ يَصُومَهُ فَلْيَصُمْهُ، وَمَنْ كَرِهَ فَلْيَدَعْهُ»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে ‘আশুরা সর্ম্পকে কথা উঠলো। তিনি বললেন, “জাহেলী যুগের লোকেরা ঐ দিন সাওম রাখতো। সুতরাং এখন তোমাদের কেউ যদি ঐ দিন সাওম রাখা পছন্দ করে তাহলে সে ঐ দিন সাওম রাখতে পারে। আর অপছন্দ করলে সে নাও রাখতে পারে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১২৬।]

নাফে‘ বলেন, ‘আব্দুল্লাহ ‘উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তার কাছে বর্ণনা করেছেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ‘আশুরার দিন বলতে শুনেছেন,

«إِنَّ هَذَا يَوْمٌ كَانَ يَصُومُهُ أَهْلُ الْجَاهِلِيَّةِ، فَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يَصُومَهُ فَلْيَصُمْهُ، وَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يَتْرُكَهُ فَلْيَتْرُكْهُ» وَكَانَ عَبْدُ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ لَا يَصُومُهُ، إِلَّا أَنْ يُوَافِقَ صِيَامَهُ "

“আজকের এ দিনে জাহেলী যুগের লোকেরা সাওম রাখতো। সুতরাং যে ব্যক্তি এ দিনের সাওম রাখা পছন্দ করে সে যেন (এ দিনে) সাওম রাখে। আর যে ব্যক্তি অপছন্দ করে সে যেন এ দিনের সাওম থেকে বিরত থাকে। আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ঐ দিন সাওম রাখলো না। কিন্তু যেসব দিনে তিনি সাওম রাখার অভ্যস্ত ছিলেন এর কোনো একদিন ‘আশুরা হলে তিনি সেদিনও সাওম রাখতেন”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১২৬।]

‘আব্দুর রহমান ইবন ইয়াযীদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«دَخَلَ الْأَشْعَثُ بْنُ قَيْسٍ عَلَى عَبْدِ اللهِ، وَهُوَ يَتَغَدَّى فَقَالَ : يَا أَبَا مُحَمَّدٍ ادْنُ إِلَى الْغَدَاءِ، فَقَالَ : أَوَلَيْسَ الْيَوْمُ يَوْمَ عَاشُورَاءَ؟ قَالَ : وَهَلْ تَدْرِي مَا يَوْمُ عَاشُورَاءَ؟ قَالَ : وَمَا هُوَ؟ قَالَ : إِنَّمَا هُوَ يَوْمٌ كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصُومُهُ قَبْلَ أَنْ يَنْزِلَ شَهْرُ رَمَضَانَ، فَلَمَّا نَزَلَ شَهْرُ رَمَضَانَ تُرِكَ» وقَالَ أَبُو كُرَيْبٍ تَرَكَهُ» .

“আশ‘আস ইবন কায়স রহ. আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট গেলেন, তখন তিনি দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন। তিনি বললেন, হে আবু মুহাম্মদ! তুমি খাবার জন্য কাছে এসো। তিনি বললেন, আজ কি ‘আশুরার দিন নয়? তিনি বললেন, তুমি কি জানো ‘আশুরা দিবস কী? আশ‘আস রহ. বললেন, সে আবার কী? তিনি বললেন, রমযানের সাওম ফরয হওয়ার পূর্বে এ দিনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওম পালন করতেন। যখন রমযানের সাওম ফরয হলো তখন তা ছেড়ে দেওয়া হলো”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১২৭।]

কায়স ইবন সাকান রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«أَنَّ الْأَشْعَثَ بْنَ قَيْسٍ، دَخَلَ عَلَى عَبْدِ اللهِ يَوْمَ عَاشُورَاءَ، وَهُوَ يَأْكُلُ، فَقَالَ : يَا أَبَا مُحَمَّدٍ ادْنُ فَكُلْ، قَالَ : إِنِّي صَائِمٌ، قَالَ : كُنَّا نَصُومُهُ ثُمَّ تُرِكَ»

“আশুরার দিন আশ‘আস ইবন কায়স রহ. আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কাছে আসলেন। এ সময় তিনি আহার করছিলেন। তিনি আশ‘আসকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আবু মুহাম্মদ! নিকটে এসো, খানা খাও। তিনি বললেন, আমি তো সাওম পালন করছি। এ কথা শুনে ‘আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমরা এ সাওম পালন করতাম। পরে তা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১২৭।]

‘আলকামা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«دَخَلَ الْأَشْعَثُ بْنُ قَيْسٍ عَلَى ابْنِ مَسْعُودٍ وَهُوَ يَأْكُلُ يَوْمَ عَاشُورَاءَ فَقَالَ : يَا أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ، إِنَّ الْيَوْمَ يَوْمُ عَاشُورَاءَ فَقَالَ : قَدْ كَانَ يُصَامُ قَبْلَ أَنْ يَنْزِلَ رَمَضَانُ، فَلَمَّا نَزَلَ رَمَضَانُ، تُرِكَ، فَإِنْ كُنْتَ مُفْطِرًا فَاطْعَمْ»

“আশ‘আস ইবন কায়স রহ. ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট গেলেন। সেটা ‘আশুরার দিন ছিল। তখন তিনি খানা খাচ্ছিলেন। এ দেখে আশ‘আস রহ. বললেন, হে ‘আব্দুর রহমানের পিতা! আজ তো ‘আশুরার দিন। তিনি বললেন, রমযানের সাওম ফরয হওয়ার পূর্বে এ দিনে সাওম পালন”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১২৭।]

জাবির ইবন সামুরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْمُرُنَا بِصِيَامِ يَوْمِ عَاشُورَاءَ، وَيَحُثُّنَا عَلَيْهِ، وَيَتَعَاهَدُنَا عِنْدَهُ، فَلَمَّا فُرِضَ رَمَضَانُ، لَمْ يَأْمُرْنَا، وَلَمْ يَنْهَنَا وَلَمْ يَتَعَاهَدْنَا عِنْدَهُ»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আশুরার দিন আমাদেরকে সাওম পালনের নির্দেশ দিতেন। তিনি এ ব্যাপারে আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করতেন এবং এ বিষয়ে তিনি আমাদের খোঁজ-খবর নিতেন। কিন্তু যখন রমযানের সাওম ফরয হলো, তখন তিনি আমাদেরকে আদেশও করেন নি, বাধ্যও করেন নি এবং কোনো খোঁজ-খবর আর নেন নি।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১২৮।]

হুমাইদ ইবন ‘আব্দুর রহমান রহ. থেকে (সনদসহ) বর্ণিত,

«عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، أَخْبَرَنِي حُمَيْدُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، أَنَّهُ سَمِعَ مُعَاوِيَةَ بْنَ أَبِي سُفْيَانَ، خَطِيبًا بِالْمَدِينَةِ يَعْنِي فِي قَدْمَةٍ قَدِمَهَا خَطَبَهُمْ يَوْمَ عَاشُورَاءَ، فَقَالَ : أَيْنَ عُلَمَاؤُكُمْ؟ يَا أَهْلَ الْمَدِينَةِ، سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ : لِهَذَا الْيَوْمِ هَذَا يَوْمُ عَاشُورَاءَ، وَلَمْ يَكْتُبِ اللهُ عَلَيْكُمْ صِيَامَهُ، وَأَنَا صَائِمٌ، فَمَنْ أَحَبَّ مِنْكُمْ أَنْ يَصُومَ فَلْيَصُمْ، وَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يُفْطِرَ فَلْيُفْطِرْ»

“তিনি একদিন মু‘আবিয়া ইবন আবু সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে মদীনায় খুতবায় বলতে শুনলেন অর্থাৎ যখন মদীনায় এসেছিলেন তখন ‘আশুরার দিবসে তিনি তাদের উদ্দেশ্যে খুতবা দিয়েছিলেন। তাতে তিনি বলেছিলেন, হে মদীনাবাসী! তোমাদের ‘আলেমগণ কোথায়? আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ দিন সম্পর্কে বলতে শুনেছি যে, এ হলো ‘আশুরা দিবস। তোমাদের ওপর এ দিনের সাওম ফরয করেন নি। তবে আমি সাওম পালন করছি। তাই তোমাদের মধ্যে যে সাওম পালন করতে পছন্দ করে, সে পালন করবে আর যে পছন্দ করে নি সে করবে না।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১২৯।]

ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«قَدِمَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِينَةَ، فَوَجَدَ الْيَهُودَ يَصُومُونَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ فَسُئِلُوا عَنْ ذَلِكَ؟ فَقَالُوا : هَذَا الْيَوْمُ الَّذِي أَظْهَرَ اللهُ فِيهِ مُوسَى، وَبَنِي إِسْرَائِيلَ عَلَى فِرْعَوْنَ، فَنَحْنُ نَصُومُهُ تَعْظِيمًا لَهُ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : نَحْنُ أَوْلَى بِمُوسَى مِنْكُمْ فَأَمَرَ بِصَوْمِهِ»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (হিজরত করে) মদীনায় এলেন এবং তিনি ইয়াহূদীদেরকে ‘আশুরার দিন সাওম পালন করতে দেখতে পেলেন। এরপর তাদেরকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার পর তারা বলল, এ সে দিন যে দিন আল্লাহ মূসা আলাইহিস সালাম ও বনী ইসরাঈলকে ফির‘আউনের ওপর বিজয়ী করেছিলেন। তাঁর সম্মানার্থে আমরা সাওম পালন করে থাকি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “আমরা তোমাদের চেয়েও মূসা আলাইহিস সালামের অধিক নিকটবর্তী। অতঃপর তিনি এ দিনে সাওম পালন করার নির্দেশ দিলেন”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৩০।]

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدِمَ الْمَدِينَةَ فَوَجَدَ الْيَهُودَ صِيَامًا، يَوْمَ عَاشُورَاءَ، فَقَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «مَا هَذَا الْيَوْمُ الَّذِي تَصُومُونَهُ؟» فَقَالُوا : هَذَا يَوْمٌ عَظِيمٌ، أَنْجَى اللهُ فِيهِ مُوسَى وَقَوْمَهُ، وَغَرَّقَ فِرْعَوْنَ وَقَوْمَهُ، فَصَامَهُ مُوسَى شُكْرًا، فَنَحْنُ نَصُومُهُ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «فَنَحْنُ أَحَقُّ وَأَوْلَى بِمُوسَى مِنْكُمْ فَصَامَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ»

ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় হিজরত করে ইয়াহূদীদেরকে ‘আশুরার দিন সাওম পালনরত দেখতে পেলেন। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কোনো দিনের সাওম পালন করছ? তারা বলল, এ মহান দিন আল্লাহ মুসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর সম্প্রদায়কে মুক্তি দিয়েছেন এবং ফির‘আউন ও তার জাতিকে ডুবিয়ে দিয়েছেন। এরপর মুসা আলাইহিস সালাম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার লক্ষ্যে এ দিনে সাওম পালন করেছেন। তাই আমরাও এ দিনে সাওম পালন করছি। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “আমরা তো তোমাদের থেকে মূসা আলাইহিস সালামের অধিক নিকটবর্তী এবং হকদার। অতপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওম পালন করলেন এবং সাওম পালন করার জন্য সকলকে নির্দেশ দিলেন”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৩০।]

আবু মূসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ يَوْمُ عَاشُورَاءَ يَوْمًا تُعَظِّمُهُ الْيَهُودُ، وَتَتَّخِذُهُ عِيدًا، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : صُومُوهُ أَنْتُمْ»

“ইয়াহূদী সম্প্রদায় ‘আশুরা দিবসের সম্মান প্রদর্শন করতো এবং তারা এ দিনকে ঈদ বলে গণ্য করতো। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা এ দিনে সাওম পালন কর”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৩১।]

আবু মূসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ أَهْلُ خَيْبَرَ يَصُومُونَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ، يَتَّخِذُونَهُ عِيدًا وَيُلْبِسُونَ نِسَاءَهُمْ فِيهِ حُلِيَّهُمْ وَشَارَتَهُمْ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «فَصُومُوهُ أَنْتُمْ»

“খায়বারের ইয়াহূদীরা ‘আশুরার দিন সাওম পালন করত, তারা এ দিনকে ঈদরূপে বরণ করত এবং তারা তাদের মহিলাদেরকে অলঙ্কার ও উত্তম পোশাকে সুসজ্জিত করত। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা এ দিনে সাওম পালন কর”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৩১।]

‘উবায়দুল্লাহ ইবন আবু ইয়াযীদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমাকে শুনেছেন,

«وَسُئِلَ عَنْ صِيَامِ يَوْمِ عَاشُورَاءَ فَقَالَ : مَا عَلِمْتُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَامَ يَوْمًا يَطْلُبُ فَضْلَهُ عَلَى الْأَيَّامِ إِلَّا هَذَا الْيَوْمَ وَلَا شَهْرًا إِلَّا هَذَا الشَّهْرَ يَعْنِي رَمَضَانَ» .

“ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমাকে ‘আশুরার দিনে সাওম পালন করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার পর তিনি বললেন, এ দিন ব্যতীত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো দিনকে অন্য দিনের তূলনায় উত্তম মনে করে সেদিনে সাওম পালন করেছেন বলে আমার জানা নেই। অনুরূপভাবে রমযান ব্যতীত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো মাসকে অন্য মাসের তুলনায় শ্রেষ্ঠ মনে করে সাওম পালন করেছেন বলেও আমার জানা নেই।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৩২।]

হাকাম ইবন ‘আরাজ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«انْتَهَيْتُ إِلَى ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، وَهُوَ مُتَوَسِّدٌ رِدَاءَهُ فِي زَمْزَمَ، فَقُلْتُ لَهُ : أَخْبِرْنِي عَنْ صَوْمِ عَاشُورَاءَ، فَقَالَ : إِذَا رَأَيْتَ هِلَالَ الْمُحَرَّمِ فَاعْدُدْ، وَأَصْبِحْ يَوْمَ التَّاسِعِ صَائِمًا، قُلْتُ : هَكَذَا كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصُومُهُ قَالَ : نَعَمْ»

“আমি ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার কাছে পৌঁছলাম। এ সময় তিনি যমযমের কাছে চাদর বিছানো অবস্থায় বসা ছিলেন। তখন আমি তাঁকে বললাম! আমাকে ‘আশুরা দিবসের সাওম পালন সম্পর্কে সংবাদ দিন। উত্তরে তিনি বললেন, মুহাররম মাসের চাঁদ দেখার পর তুমি এর তারিখগুলো গুণে রাখবে। এরপর নবম তারিখে সাওম অবস্থায় তোমার যেন ভোর হয়। তখন আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি সেদিন সাওম পালন করেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, করেছেন”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৩৩।]

‘আব্দুল্লাহ ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«حِينَ صَامَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ قَالُوا : يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّهُ يَوْمٌ تُعَظِّمُهُ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : فَإِذَا كَانَ الْعَامُ الْمُقْبِلُ إِنْ شَاءَ اللهُ صُمْنَا الْيَوْمَ التَّاسِعَ قَالَ : فَلَمْ يَأْتِ الْعَامُ الْمُقْبِلُ، حَتَّى تُوُفِّيَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ‘আশুরার দিন সাওম পালন করেন এবং লোকদেরকে সাওম পালনের নির্দেশ দেন তখন সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! ইয়াহূদী এবং নাসারা এ দিনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে থাকে। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইনশাআল্লাহ আগামী বছর আমরা নবম তারিখেও সাওম পালন করব। বর্ণনাকারী বলেন, এখনো আগামী বছর আসে নি, এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যু হয়ে যায়।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৩৪।]

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «لَئِنْ بَقِيتُ إِلَى قَابِلٍ لَأَصُومَنَّ التَّاسِعَ» وَفِي رِوَايَةِ أَبِي بَكْرٍ : قَالَ : يَعْنِي يَوْمَ عَاشُورَاءَ

‘আব্দুল্লাহ ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আমি যদি আগামী বছর বেচে থাকি তবে মুহাররমের নবম তারিখেও সাওম পালন করব”। আবু বকর রহ. বলেন, নবম তারিখই হচ্ছে ‘আশুরার দিন। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৩৪।]

সালামা ইবন আকও‘য়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«بَعَثَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلًا مِنْ أَسْلَمَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ، فَأَمَرَهُ أَنْ يُؤَذِّنَ فِي النَّاسِ : «مَنْ كَانَ لَمْ يَصُمْ، فَلْيَصُمْ وَمَنْ كَانَ أَكَلَ، فَلْيُتِمَّ صِيَامَهُ إِلَى اللَّيْلِ»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আশুরার দিন আসলাম গোত্রের এক ব্যক্তিকে নির্দেশ দিয়ে পাঠালেন, সে যেন লোকদের মধ্যে এ কথা ঘোষণা করে যে যে সাওম পালন করেনি, সে যেন সাওম পালন করে এবং যে আহার করেছে, সে যেন রাত পর্যন্ত তার সাওম স্পর্শ করে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৩৫।]

রুবায়্যি‘ বিনত মু‘য়াওয়ায ইবন ‘আফরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«أَرْسَلَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غَدَاةَ عَاشُورَاءَ إِلَى قُرَى الْأَنْصَارِ، الَّتِي حَوْلَ الْمَدِينَةِ : مَنْ كَانَ أَصْبَحَ صَائِمًا، فَلْيُتِمَّ صَوْمَهُ، وَمَنْ كَانَ أَصْبَحَ مُفْطِرًا، فَلْيُتِمَّ بَقِيَّةَ يَوْمِهِ فَكُنَّا، بَعْدَ ذَلِكَ نَصُومُهُ، وَنُصَوِّمُ صِبْيَانَنَا الصِّغَارَ مِنْهُمْ إِنْ شَاءَ اللهُ، وَنَذْهَبُ إِلَى الْمَسْجِدِ، فَنَجْعَلُ لَهُمُ اللُّعْبَةَ مِنَ الْعِهْنِ، فَإِذَا بَكَى أَحَدُهُمْ عَلَى الطَّعَامِ أَعْطَيْنَاهَا إِيَّاهُ عِنْدَ الْإِفْطَارِ»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আশুরার দিন ভোরে এক ব্যক্তিকে মদীনার পার্শবর্তী আনসারী সাহাবীদের জনপদে এ নির্দেশ দিয়ে পাঠালেন, সে যেন এ ঘোষণা করে দেয় যে, সাওমরত অবস্থায় যার ভোর হয়েছে, সে যেন তার দিনকে পূর্ণ করে। আর যার ইফতার অবস্থায় ভোর হয়েছে, সে যেন তার দিনের অবশিষ্ট অংশ পানাহার থেকে বিরত অবস্থায় পূর্ণ করে। এরপর আমরা এ দিন সাওম পালন করতাম এবং আমাদের ছোট ছোট সন্তানদেরকেও আল্লাহ চাহে তো সাওম পালনে অভ্যস্ত করে তুলতাম। আমরা তাদেরকে মসজিদে নিয়ে যেতাম এবং তাদের জন্য পশমের খেলনা বানিয়ে দিতাম। যখন তারা খাওয়ার জন্য কাঁদত, তখন আমরা তাদেরকে সে খেলনা প্রদান করতাম। এমনি করে ইফতারের সময় হয়ে যেত।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৩৬।]

৯৬
সোমবার ও বৃহস্পতিবার সাওম পালন
আবু কাতাদা আল-আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,

«أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُئِلَ عَنْ صَوْمِ الِاثْنَيْنِ؟ فَقَالَ : فِيهِ وُلِدْتُ وَفِيهِ أُنْزِلَ عَلَيَّ»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে সোমবারের সাওম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ঐ দিন আমার জন্ম হয়েছে এবং ঐ দিন আমার ওপর (কুরআন) নাযিল হয়েছে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৬২।]

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَحَرَّى صَوْمَ الاِثْنَيْنِ وَالخَمِيسِ» .

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সোম ও বৃহস্পতিবারের সাওমের প্রতি খুবই খেয়াল রাখতেন”। [তিরমিযী, হাদীস নং ৭৪৫, ইমাম তিরমিযী রহ. বলেছেন, হাদিসটি হাসান গরীব। ইবন মাজাহ, ১৭৩৯, আলবানী রহ. বলেছেন, হাদীসটি সহীহ। নাসায়ী, ২৩৬০।]

৯৭
কেউ স্বাভাবিক সাওমের সাথে অন্য কিছু যেমন চুপ থাকা ইত্যাদি মিশ্রিত করে
ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«بَيْنَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْطُبُ، إِذَا هُوَ بِرَجُلٍ قَائِمٍ، فَسَأَلَ عَنْهُ فَقَالُوا : أَبُو إِسْرَائِيلَ، نَذَرَ أَنْ يَقُومَ وَلاَ يَقْعُدَ، وَلاَ يَسْتَظِلَّ، وَلاَ يَتَكَلَّمَ، وَيَصُومَ . فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : مُرْهُ فَلْيَتَكَلَّمْ وَلْيَسْتَظِلَّ وَلْيَقْعُدْ، وَلْيُتِمَّ صَوْمَهُ، قَالَ عَبْدُ الوَهَّابِ، حَدَّثَنَا أَيُّوبُ، عَنْ عِكْرِمَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ»

“একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা প্রদান করছিলেন। এক ব্যক্তিকে দাঁড়ানো দেখে তার সম্পর্কে লোকদের কাছে জিজ্ঞাসা করলেন। লোকেরা বলল যে, এ লোকটির নাম আবু ইসরাঈল। সে মানত করেছে যে, দাঁড়িয়ে থাকবে, বসবে না, ছায়াতে যাবে না, কারও সঙ্গে কথা বলবে না এবং সাওম পালন করবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, লোকটিকে বলে দাও সে যেন কথা বলে, ছায়াতে যায়, বসে এবং তার সাওম সমাপ্ত করে। ‘আব্দুল ওয়াহহাব, আইউব ও ‘ইকরামা রহ. এর সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অত্র হাদীস বর্ণনা করেছেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৭০৪।]

৯৮
রমযানে ‘উমরা পালনের ফযীলত
ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«أَرَادَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْحَجَّ فَقَالَتْ : امْرَأَةٌ لِزَوْجِهَا أَحِجَّنِي مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى جَمَلِكَ، فَقَالَ : مَا عِنْدِي مَا أُحِجُّكِ عَلَيْهِ، قَالَتْ : أَحِجَّنِي عَلَى جَمَلِكَ فُلَانٍ، قَالَ : ذَاكَ حَبِيسٌ فِي سَبِيلِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ، فَأَتَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ : إِنَّ امْرَأَتِي تَقْرَأُ عَلَيْكَ السَّلَامَ وَرَحْمَةَ اللَّهِ، وَإِنَّهَا سَأَلَتْنِي الْحَجَّ مَعَكَ، قَالَتْ : أَحِجَّنِي مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقُلْتُ : مَا عِنْدِي مَا أُحِجُّكِ عَلَيْهِ، فَقَالَتْ أَحِجَّنِي عَلَى جَمَلِكَ فُلَانٍ، فَقُلْتُ : ذَاكَ حَبِيسٌ فِي سَبِيلِ اللَّهِ، فَقَالَ : أَمَا إِنَّكَ لَوْ أَحْجَجْتَهَا عَلَيْهِ كَانَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ؟ قَالَ : وَإِنَّهَا أَمَرَتْنِي أَنْ أَسْأَلَكَ مَا يَعْدِلُ حَجَّةً مَعَكَ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : أَقْرِئْهَا السَّلَامَ وَرَحْمَةَ اللَّهِ وَبَرَكَاتِهِ، وَأَخْبِرْهَا أَنَّهَا تَعْدِلُ حَجَّةً مَعِي يَعْنِي عُمْرَةً فِي رَمَضَانَ»

“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজের (বিদায় হজ) ইচ্ছা পোষণ করলে জনৈকা মহিলা (উম্মে মা‘কাল) তার স্বামীকেবলেন, আমাকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার নিকট এমন কোনো উট নেই, যার দ্বারা আমি তোমাকে হজে গমনের ব্যবস্থা করতে পারি।তখন সে স্ত্রীলোক বলেন, আমাকে আপনার অমুক উটের দ্বারা হজে প্রেরণের ব্যবস্থা করুন।জবাবে তিনি (স্বামী) বললেন, এটা (উক্ত উট) তো আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের জন্য আবদ্ধ। তখন উক্ত ব্যক্তি (স্বামী) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে উপস্থিত হয়ে বলেন, আমার স্ত্রী আপনাকে সালাম বলেছেন। আর তিনি আমার নিকট আপনার সাথে হজে যাওয়ার জন্য বায়না ধরেছেন এবং বলেছেন, আমাকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে হজে গমনের ব্যবস্থা করে দিন। তখন আমি তাকে বলছি, আমার নিকট এমন কিছু নেই, যার দ্বারা আমি তোমাকে হজে পাঠাতে পারি। তখন সে বলেছে, আমাকে আপনার অমুক উষ্ট্রযোগেহজে প্রেরণ করুন। তখন আমি তাকে বলি, এ উট তো আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের জন্য আবদ্ধ অর্থাৎ নির্ধারিত। এতদশ্রবণে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার পক্ষ থেকে তাকে সালাম দেবে এবং বলবে, রমযানে উমরা পালন আমার সাথে হজের সওয়াবের সমতুল্য হবে।” [আবু দাউদ, হাদীস নং ১৯৯০, আলবানী রহ. বলেছেন, হাদীসটি হাসান সহীহ।]

৯৯
তৃতীয় অধ্যায়: সালাতুত তারাবীহ রমযানে ঈমান ও সাওয়াবের আশায় যে রাত জেগে ইবাদত করে তার ফযীলত
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  বলেছেন,

«مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ»

“যে ব্যক্তি রমযানের রাতে সওয়াবের আশায় রাত জেগে ইবাদত করে, তার পূর্বের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৭, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৫৯।]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রমযান সম্পর্কে বলতে শুনেছি,

«مَنْ قَامَهُ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ»

“যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াব লাভের আশায় কিয়ামে রমযান অর্থ্যাৎ তারাবীর সালাত আদায় করবে তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০০৮, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৫৯।]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ বলেছেন,

«مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ»، قَالَ ابْنُ شِهَابٍ : فَتُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالأَمْرُ عَلَى ذَلِكَ، ثُمَّ كَانَ الأَمْرُ عَلَى ذَلِكَ فِي خِلاَفَةِ أَبِي بَكْرٍ، وَصَدْرًا مِنْ خِلاَفَةِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا»

“যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াব লাভের আশায় তারাবীর সালাতে দাঁড়াবে তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হবে। হাদীসের বর্ণনাকারী ইবন শিহাব রহ. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করেন এবং তারাবীর ব্যাপারটি এ ভাবেই চালু ছিল। এমনকি আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর খিলাফতকালে ও উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর খিলাফতের প্রথম ভাগে এরূপই ছিল।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০০৯, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৫৯।]

উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَّى ذَاتَ لَيْلَةٍ فِي المَسْجِدِ، فَصَلَّى بِصَلاَتِهِ نَاسٌ، ثُمَّ صَلَّى مِنَ القَابِلَةِ، فَكَثُرَ النَّاسُ، ثُمَّ اجْتَمَعُوا مِنَ اللَّيْلَةِ الثَّالِثَةِ أَوِ الرَّابِعَةِ، فَلَمْ يَخْرُجْ إِلَيْهِمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَلَمَّا أَصْبَحَ قَالَ : «قَدْ رَأَيْتُ الَّذِي صَنَعْتُمْ وَلَمْ يَمْنَعْنِي مِنَ الخُرُوجِ إِلَيْكُمْ إِلَّا أَنِّي خَشِيتُ أَنْ تُفْرَضَ عَلَيْكُمْ وَذَلِكَ فِي رَمَضَانَ»

“রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক রাতে মসজিদে সালাত আদায় করছিলেন, কিছু লোক তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করলো। পরবর্তী রাতেও তিনি সালাত আদায় করলেন এবং লোক আরো বেড়ে গেল। এরপর তৃতীয় কিংবা চতুর্থ রাতে লোকজন সমবেত হলেন; কিন্তু রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হলেন না। সকাল হলে তিনি বললেন, তোমাদের কার্যকলাপ আমি লক্ষ্য করেছি। তোমাদের কাছে বেরিয়ে আসার ব্যাপারে শুধু এ আশংকাই আমাকে বাধা দিয়েছে যে, তোমাদের ওপর তা ফরয হয়ে যাবে। আর ঘটনাটি ছিল রমযান মাসের (তারাবীর সালাতের)।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭১৬।]

‘আব্দুর রাহমান ইবন ‘আবদ আল-ক্বারী রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«خَرَجْتُ مَعَ عُمَرَ بْنِ الخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، لَيْلَةً فِي رَمَضَانَ إِلَى المَسْجِدِ، فَإِذَا النَّاسُ أَوْزَاعٌ مُتَفَرِّقُونَ، يُصَلِّي الرَّجُلُ لِنَفْسِهِ، وَيُصَلِّي الرَّجُلُ فَيُصَلِّي بِصَلاَتِهِ الرَّهْطُ، فَقَالَ عُمَرُ : إِنِّي أَرَى لَوْ جَمَعْتُ هَؤُلاَءِ عَلَى قَارِئٍ وَاحِدٍ، لَكَانَ أَمْثَلَ» ثُمَّ عَزَمَ، فَجَمَعَهُمْ عَلَى أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ، ثُمَّ خَرَجْتُ مَعَهُ لَيْلَةً أُخْرَى، وَالنَّاسُ يُصَلُّونَ بِصَلاَةِ قَارِئِهِمْ، قَالَ عُمَرُ : نِعْمَ البِدْعَةُ هَذِهِ، وَالَّتِي يَنَامُونَ عَنْهَا أَفْضَلُ مِنَ الَّتِي يَقُومُونَ» يُرِيدُ آخِرَ اللَّيْلِ وَكَانَ النَّاسُ يَقُومُونَ أَوَّلَهُ»

“আমি রমযানের এক রাতে উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সঙ্গে মসজিদে নববীতে গিয়ে দেখতে পাই যে, লোকেরা বিক্ষিপ্ত জামা‘আতে বিভক্ত। কেউ একাকী সালাত আদায় করছে আবার কোনো ব্যক্তি সালাত আদায় করছে এবং তার ইক্তেদা করে একদল লোক সালাত আদায় করছে। উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমি মনে করি যে, এই লোকদের যদি আমি একজন ক্বারীর (ইমামের) পিছনে একত্রিত করে দিই, তবে তা উত্তম হবে। এরপর তিনি উবাই ইবন কা‘ব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর পিছনে সকলকে একত্রিত করে দিলেন। পরে আর এক রাতে আমি তাঁর (উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর) সঙ্গে বের হই। তখন লোকেরা তাদের ইমামের সাথে সালাত আদায় করছিল। উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, কত না সুন্দর এই নতুন ব্যবস্থা! তোমরা রাতের যে অংশে ঘুমিয়ে থাক তা রাতের ঐ অংশ অপেক্ষা উত্তম যে অংশে তোমরা সালাত আদায় কর, এর দ্বারা তিনি শেষ রাত বুঝিয়েছেন, কেননা তখন রাতের প্রথম ভাগে লোকেরা সালাত আদায় করত”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০১০।]

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে (সনদসহ) বর্ণিত, তিনি বলেন,

«عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، أَخْبَرَنِي عُرْوَةُ، أَنَّ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، أَخْبَرَتْهُ : أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَرَجَ لَيْلَةً مِنْ جَوْفِ اللَّيْلِ، فَصَلَّى فِي المَسْجِدِ، وَصَلَّى رِجَالٌ بِصَلاَتِهِ، فَأَصْبَحَ النَّاسُ فَتَحَدَّثُوا، فَاجْتَمَعَ أَكْثَرُ مِنْهُمْ فَصَلَّى فَصَلَّوْا مَعَهُ، فَأَصْبَحَ النَّاسُ فَتَحَدَّثُوا، فَكَثُرَ أَهْلُ المَسْجِدِ مِنَ اللَّيْلَةِ الثَّالِثَةِ، فَخَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَصَلَّى فَصَلَّوْا بِصَلاَتِهِ، فَلَمَّا كَانَتِ اللَّيْلَةُ الرَّابِعَةُ عَجَزَ المَسْجِدُ عَنْ أَهْلِهِ، حَتَّى خَرَجَ لِصَلاَةِ الصُّبْحِ، فَلَمَّا قَضَى الفَجْرَ أَقْبَلَ عَلَى النَّاسِ، فَتَشَهَّدَ، ثُمَّ قَالَ : أَمَّا بَعْدُ، فَإِنَّهُ لَمْ يَخْفَ عَلَيَّ مَكَانُكُمْ، وَلَكِنِّي خَشِيتُ أَنْ تُفْتَرَضَ عَلَيْكُمْ، فَتَعْجِزُوا عَنْهَا»، فَتُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالأَمْرُ عَلَى ذَلِكَ»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গভীর রাতে বের হয়ে মসজিদে সালাত আদায় করেন, কিছু সংখ্যক পুরুষ তাঁর পিছনে সালাত আদায় করেন। সকালে লোকেরা এ সম্পর্কে আলোচনা করেন, ফলে লোকেরা অধিক সংখ্যায় সমবেত হন। তিনি সালাত আদায় করেন এবং লোকেরা তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করেন। সকালে তাঁরা এ বিষয়ে আলাপ আলেঅচনা করেন। তৃতীয় রাতে মসজিদে মুসল্লীর সংখ্যা আরো বেড়ে যায়। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে সালাত আদায় করেন ও লোকেরা তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করেন। চতুর্থ রাতে  মসজিদে মুসল্লীর সংকুলান হলো না। কিন্তু তিনি রাতে আর বের না হয়ে ফজরের সালাতে বেরিয়ে আসলেন এবং সালাত শেষে লোকদের দিকে ফিরে প্রথমে তাওহীদ ও রিসালতের সাক্ষ্য দেওয়ার পর বললেন, শোন! তোমাদের (গত রাতের) অবস্থান আমার অজানা ছিল না; কিন্তু আমি এই সালাত তোমাদের ওপর ফরয হয়ে যাবার আশংকা করছি (বিধায় বের হই নাই)। কেননা তোমরা তা আদায় করায় অপারগ হয়ে পড়তে। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যু হলো আর ব্যাপারটি এভাবেই থেকে যায়।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০১২, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৬১।]

আবু সালামা ইবন ‘আব্দুর রাহমান রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে জিজ্ঞাসা করেন যে,

«كَيْفَ كَانَتْ صَلاَةُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي رَمَضَانَ؟ فَقَالَتْ : مَا كَانَ يَزِيدُ فِي رَمَضَانَ وَلاَ فِي غَيْرِهِ عَلَى إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً، يُصَلِّي أَرْبَعًا، فَلاَ تَسَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ، ثُمَّ يُصَلِّي أَرْبَعًا، فَلاَ تَسَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ، ثُمَّ يُصَلِّي ثَلاَثًا» فَقُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَتَنَامُ قَبْلَ أَنْ تُوتِرَ؟ قَالَ : يَا عَائِشَةُ، إِنَّ عَيْنَيَّ تَنَامَانِ وَلاَ يَنَامُ قَلْبِي»

“রমযানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সালাত কিরূপ ছিল? তিনি বললেন, রমযান মাসে ও রমযান ছাড়া অন্য সময়ে (রাতে) তিনি এগারো রাকা‘আত থেকে বৃদ্ধি করতেন না। তিনি চার রাকা‘আত সালাত আদায় করতেন, সে চার রাকা‘আতের সৌন্দর্য ও দৈর্ঘ্য ছিল প্রশ্নাতীত। এরপর চার রাক‘আত সালাত আদায় করতেন, সে চার রাকা‘আতের সৌন্দর্য ও দৈর্ঘ্য ছিল প্রশ্নাতীত। এরপর  তিন রাকা‘আত সালাত আদায় করতেন। আমি (‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি বিতর আদায়ের আগে ঘুমিয়ে যাবেন? তিনি বললেন, হে ‘আয়েশা! আমার দু’চোখ ঘুমায় বটে; কিন্তু আমার কালব নিদ্রাভিভূত হয় না।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০১৩, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৩৮।]

আবু যার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«صُمْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمْ يُصَلِّ بِنَا، حَتَّى بَقِيَ سَبْعٌ مِنَ الشَّهْرِ، فَقَامَ بِنَا حَتَّى ذَهَبَ ثُلُثُ اللَّيْلِ، ثُمَّ لَمْ يَقُمْ بِنَا فِي السَّادِسَةِ، وَقَامَ بِنَا فِي الخَامِسَةِ، حَتَّى ذَهَبَ شَطْرُ اللَّيْلِ، فَقُلْنَا لَهُ : يَا رَسُولَ اللهِ، لَوْ نَفَّلْتَنَا بَقِيَّةَ لَيْلَتِنَا هَذِهِ؟ فَقَالَ : إِنَّهُ مَنْ قَامَ مَعَ الإِمَامِ حَتَّى يَنْصَرِفَ كُتِبَ لَهُ قِيَامُ لَيْلَةٍ , ثُمَّ لَمْ يُصَلِّ بِنَا حَتَّى بَقِيَ ثَلاَثٌ مِنَ الشَّهْرِ، وَصَلَّى بِنَا فِي الثَّالِثَةِ، وَدَعَا أَهْلَهُ وَنِسَاءَهُ، فَقَامَ بِنَا حَتَّى تَخَوَّفْنَا الفَلاَحَ، قُلْتُ لَهُ : وَمَا الفَلاَحُ، قَالَ : السُّحُورُ .

“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে আমরা সাওম পালন করেছি। তিনি রমযান মাসে আমাদের নিয়ে (নফল) সালাত আদায় করেন নি। অবশেষে সাত দিন বাকী তিনি আমাদের নিয়ে সালাত দাড়ালেন। এমনকি রাতের এক তৃতীয়াংশ এতে অতিবাহিত হয়ে গেল। এরপর আর ষষ্ঠ রাত আমাদের নিয়ে সালাতে দাড়ালেন না। কিন্তু প্রথম রাত থাকতে আবার আমাদের নিয়ে সালাতে দাঁড়ালেন। এমনকি এতে অর্ধেক রাত অতিবাহিত হয়ে গেল। আমরা তাঁকে বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাদের অবশিষ্ট রাতটিও যদি নফল আদায় করে অতিবাহিত করে দিতেন! তিনি বললেন, কেউ যদি ইমামের সঙ্গে (ফরয) সালাতে দাঁড়ায় এবং ইমামের শেষ করা পর্যন্ত তার সাথে দাঁড়ায় তবে তার জন্য সারারাত (নফল) সালাত আদায়ের সওয়াব লেখা হয়। এরপর তিন মাসের তিন রাত অবশিষ্ট থাকা পর্যন্ত আমাদের নিয়ে সালাতে দাঁড়ালেন না। তৃতীয় (২৭ শে) রাত থাকতে আবার তিনি আমাদের নিয়ে সালাতে দাঁড়ালেন। এই রাত তিনি তাঁর পরিজন ও স্ত্রীগণকেও ডেকে তুললেন। অনন্তর তিনি এত দীর্ঘক্ষণ সালাত আদায় করলেন যে, আমাদের ফালাহ এর ব্যাপারে এর আশংকা সৃষ্টি হয়ে গেল। বর্ণনাকারী জুবাইর ইবন নুফাইর রহ. বলেন যে, আমি আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বললাম, ফালাহ কি? তিনি বললেন, সাহরী খাওয়া।” [তিরমিযী, হাদীস নং ৮০৬, ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, হাদীসটি হাসান সহীহ। নাসায়ী, হাদীস নং ১৬০৫, আলবানী রহ. বলেছেন, হাদীসটি সহীহ। ইবন খুযাইমা, হাদীস নং ২২০৬, ‘আযামী রহ. বলেছেন, হাদীসের সনদটি সহীহ। ইবন হিব্বান, ২৫৪৭। শু‘আইব আরনাঊত বলেছেন, হাদীসের সনদটি মুসলিমের শর্তে সহীহ।]

যায়িদ ইবন সাবিত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে,

«أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اتَّخَذَ حُجْرَةً قَالَ : حَسِبْتُ أَنَّهُ قَالَ مِنْ حَصِيرٍ فِي رَمَضَانَ، فَصَلَّى فِيهَا لَيَالِيَ، فَصَلَّى بِصَلاَتِهِ نَاسٌ مِنْ أَصْحَابِهِ، فَلَمَّا عَلِمَ بِهِمْ جَعَلَ يَقْعُدُ، فَخَرَجَ إِلَيْهِمْ فَقَالَ : قَدْ عَرَفْتُ الَّذِي رَأَيْتُ مِنْ صَنِيعِكُمْ، فَصَلُّوا أَيُّهَا النَّاسُ فِي بُيُوتِكُمْ، فَإِنَّ أَفْضَلَ الصَّلاَةِ صَلاَةُ المَرْءِ فِي بَيْتِهِ إِلَّا المَكْتُوبَةَ قَالَ عَفَّانُ : حَدَّثَنَا وُهَيْبٌ، حَدَّثَنَا مُوسَى، سَمِعْتُ أَبَا النَّضْرِ، عَنْ بُسْرٍ، عَنْ زَيْدٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ»

“রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রমযান মাসে একটি ছোট কামরা বানালেন। তিনি (বুসর ইবন সা‘ঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, মনে হয়, যায়িদ ইবন সাবিত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কামরাটি চাটাইর তৈরি ছিল বলে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি সেখানে কয়েক রাত সালাত আদায় করেন। আর তাঁর সাহাবীগণের মধ্যে কিছু সাহাবীও তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করতেন। তিনি যখন তাঁদের সম্বন্ধে জানতে পারলেন, তখন তিনি বসে থাকলেন। পড়ে তিনি তাদের কাছে এসে বললেন, তোমাদের কার্যকলাপ দেখে আমি বুঝতে পেরেছি। হে লোকেরা! তোমরা তোমাদের ঘরেই সালাত আদায় কর। কেননা, ফজর সালাত ব্যতীত লোকেরা ঘরে যে সালাত আদায় করে তা-ই উত্তম। আফফান রহ. যায়িদ ইবন সাবিত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বলেছেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৩১।]

১০০
রমযানে রাতে কত রাকা‘আত সালাত?
আবু সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,

«أَتَيْتُ عَائِشَةَ، فَقُلْتُ : أَيْ أُمّهْ أَخْبِرِينِي عَنْ صَلَاةِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَتْ : كَانَتْ صَلَاتُهُ فِي شَهْرِ رَمَضَانَ وَغَيْرِهِ ثَلَاثَ عَشْرَةَ رَكْعَةً بِاللَّيْلِ، مِنْهَا رَكْعَتَا الْفَجْرِ»

“আমি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার কাছে গিয়ে বললাম, হে আম্মাজান! আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সালাত সস্পর্কে অবহিত করুন। তিনি বললেন, তাঁর সালাত ছিল রমযান এবং রমযান ছাড়া অন্যান্য মাসে রাতের বেলায় তের রাকা‘আত। এর মধ্যে ফজরের দু’রাকা‘আত (সুন্নাত) ও রয়েছে।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৩৮।]

ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত,

«أَنَّ رَجُلًا سَأَلَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ صَلاَةِ اللَّيْلِ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ عَلَيْهِ السَّلاَمُ : صَلاَةُ اللَّيْلِ مَثْنَى مَثْنَى، فَإِذَا خَشِيَ أَحَدُكُمُ الصُّبْحَ صَلَّى رَكْعَةً وَاحِدَةً تُوتِرُ لَهُ مَا قَدْ صَلَّى»

“এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট রাতের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, রাতের সালাত দুই দুই রাকা’আত করে। আর তোমাদের মধ্যে কেউ যদি ফজর হওয়ার আশংকা করে, সে যেন এক রাকা’আত মিলিয়ে সালাত আদায় করে নেয়। আর সে যে সালাত আদায় করল, তা তার জন্য বিতর হয়ে যাবে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৯০, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৪৯।]

আবু সালমা ইবন ‘আবদুর রাহমান রহ. থেকে বর্ণিত যে, তিনি ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে জিজ্ঞাসা করলেন,

«كَيْفَ كَانَتْ صَلاَةُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي رَمَضَانَ؟ قَالَتْ : مَا كَانَ يَزِيدُ فِي رَمَضَانَ وَلاَ فِي غَيْرِهِ عَلَى إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً، يُصَلِّي أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ، فَلاَ تَسْأَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ، ثُمَّ يُصَلِّي أَرْبَعًا، فَلاَ تَسْأَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ، ثُمَّ يُصَلِّي ثَلاَثًا، فَقُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ تَنَامُ قَبْلَ أَنْ تُوتِرَ؟ قَالَ : «تَنَامُ عَيْنِي وَلاَ يَنَامُ قَلْبِي»

“রমযান মাসে (রাতে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সালাত কীভাবে ছিল? ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসে ও অন্যান্য সব মাসের রাতে এগারো রাকা’আতের বেশি সালাত আদায় করতেন না। প্রথমে চার রাকা’আত সালাত আদায় করতেন। এ চার রাকা’আত আদায়ের সৌন্দর্য ও দৈঘ্যের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করো না (ইহা বর্ণনাতীত)। তারপর আরো চার রাকা’আত সালাত আদায় করতেন। তারপর তিন রাকা’আত (বিতর) আদায় করতেন। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি বিতর সালাত আদয়ের পূর্বে ঘুমিয়ে পড়েন? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার চক্ষু ঘুমায় তবে আমার অন্তর ঘুমায় না।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৫৬৯, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৩৮।]

১০১
লাইলাতুল কদরের মর্যাদা
﴿إِنَّآ أَنزَلۡنَٰهُ فِي لَيۡلَةِ ٱلۡقَدۡرِ ١ وَمَآ أَدۡرَىٰكَ مَا لَيۡلَةُ ٱلۡقَدۡرِ ٢ لَيۡلَةُ ٱلۡقَدۡرِ خَيۡرٞ مِّنۡ أَلۡفِ شَهۡرٖ ٣ تَنَزَّلُ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ وَٱلرُّوحُ فِيهَا بِإِذۡنِ رَبِّهِم مِّن كُلِّ أَمۡرٖ ٤ سَلَٰمٌ هِيَ حَتَّىٰ مَطۡلَعِ ٱلۡفَجۡرِ ٥﴾ [ القدر : ١، ٥ ]

“নিশ্চয় আমরা এটি (কুরআন) নাযিল করেছি ‘লাইলাতুল কদরে। তোমাকে কিসে জানাবে ‘লাইলাতুল কদর’ কী? ‘লাইলাতুল কদর’ হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফিরিশতারা ও রূহ (জিবরীল) তাদের রবের অনুমতিক্রমে সকল সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ করে। শান্তিময় সেই রাত, ফজরের সূচনা পর্যন্ত।” [সূরা আল-কাদর, আয়াত: ১-৫]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ، وَمَنْ قَامَ لَيْلَةَ القَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ»، تَابَعَهُ سُلَيْمَانُ بْنُ كَثِيرٍ، عَنِ الزُّهْرِيِّ»

“যে ব্যক্তি রমযানে ঈমানের সাথে ও সাওয়াব লাভের আশায় সাওম পালন করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয় এবং যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াব লাভের আশায় লাইলাতুল কদরে রাত জেগে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয়। সুলায়মান ইবন কাসীর রহ. যুহরী রহ. থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০১৪, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৬০।]

১০২
শেষ সাত রাতে লাইলাতুল কদর তালাশ করবে
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত যে,

«أَنَّ رِجَالًا مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أُرُوا لَيْلَةَ القَدْرِ فِي المَنَامِ فِي السَّبْعِ الأَوَاخِرِ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : أَرَى رُؤْيَاكُمْ قَدْ تَوَاطَأَتْ فِي السَّبْعِ الأَوَاخِرِ، فَمَنْ كَانَ مُتَحَرِّيهَا فَلْيَتَحَرَّهَا فِي السَّبْعِ الأَوَاخِرِ»

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কতিপয় সাহাবীকে স্বপ্নযোগে রমযানের শেষের সাত রাতে লাইলাতুল কদর দেখানো হয়। (এ শোনে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমাকেও তোমাদের স্বপ্নের অনুরূপ দেখানো হয়েছে। (তোমাদের দেখা ও আমার দেখা) শেষ সাত দিনের ক্ষেত্রে মিলে গেছে। অতএব, যে ব্যক্তি এর সন্ধান প্রত্যাশী, সে যেন শেষ সাত রাতে সন্ধান করে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০১৫, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৬৫।]

আবু সা‘ঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«اعْتَكَفْنَا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ العَشْرَ الأَوْسَطَ مِنْ رَمَضَانَ، فَخَرَجَ صَبِيحَةَ عِشْرِينَ فَخَطَبَنَا، وَقَالَ : «إِنِّي أُرِيتُ لَيْلَةَ القَدْرِ، ثُمَّ أُنْسِيتُهَا - أَوْ نُسِّيتُهَا - فَالْتَمِسُوهَا فِي العَشْرِ الأَوَاخِرِ فِي الوَتْرِ، وَإِنِّي رَأَيْتُ أَنِّي أَسْجُدُ فِي مَاءٍ وَطِينٍ، فَمَنْ كَانَ اعْتَكَفَ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَلْيَرْجِعْ»، فَرَجَعْنَا وَمَا نَرَى فِي السَّمَاءِ قَزَعَةً، فَجَاءَتْ سَحَابَةٌ فَمَطَرَتْ حَتَّى سَالَ سَقْفُ المَسْجِدِ، وَكَانَ مِنْ جَرِيدِ النَّخْلِ، وَأُقِيمَتِ الصَّلاَةُ، فَرَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْجُدُ فِي المَاءِ وَالطِّينِ، حَتَّى رَأَيْتُ أَثَرَ الطِّينِ فِي جَبْهَتِهِ

“আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে রমযানের মধ্যক দশকে ই‘তিকাফ করি। তিনি বিশ তারিখের সকালে বের হয়ে আমাদেরকে সম্বোধন করে বললেন, “আমাকে লাইলাতুল কদর (এর সঠিক তারিখ) দেখানো হয়েছিল, পরে আমাকে তা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। তোমরা শেষ দশকের বেজোড় রাতে তার সন্ধান কর। আমি দেখতে পেয়েছি যে, আমি (ঐ রাতে) কাদা পানিতে সিজদা করছি। অতএব, যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ই‘তিকাফ করেছে সে যেন ফিরে আসে (মসজিদ থেকে বের হয়ে না যায়)। আমরা সকালে ফিরে আসলাম (থেকে গেলাম)। আমরা আকাশে হালকা মেঘ খন্ডও দেখতে পাই নাই। পরে মেঘ দেখা দিল ও এমন জোরে বৃষ্টি হলো যে, খেজুরের শাখায় তৈরি মসজিদের ছাদ দিয়ে পানি ঝরতে লাগল। সালাত শুরু করা হলে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কাদা পানিতে সিজদা করতে দেখলাম। পরে তাঁর কপালে আমি কাঁদার চিহ্ন দেখতে পাই”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০১৬, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৬৭।]

১০৩
শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদর তালাশ করা
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«تَحَرَّوْا لَيْلَةَ القَدْرِ فِي الوِتْرِ، مِنَ العَشْرِ الأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ»

“তোমরা রমযানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদরের সন্ধান কর”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০১৭, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৬৯।]

আবু সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُجَاوِرُ فِي رَمَضَانَ العَشْرَ الَّتِي فِي وَسَطِ الشَّهْرِ، فَإِذَا كَانَ حِينَ يُمْسِي مِنْ عِشْرِينَ لَيْلَةً تَمْضِي، وَيَسْتَقْبِلُ إِحْدَى وَعِشْرِينَ رَجَعَ إِلَى مَسْكَنِهِ، وَرَجَعَ مَنْ كَانَ يُجَاوِرُ مَعَهُ، وَأَنَّهُ أَقَامَ فِي شَهْرٍ جَاوَرَ فِيهِ اللَّيْلَةَ الَّتِي كَانَ يَرْجِعُ فِيهَا، فَخَطَبَ النَّاسَ، فَأَمَرَهُمْ مَا شَاءَ اللَّهُ، ثُمَّ قَالَ : كُنْتُ أُجَاوِرُ هَذِهِ العَشْرَ، ثُمَّ قَدْ بَدَا لِي أَنْ أُجَاوِرَ هَذِهِ العَشْرَ الأَوَاخِرَ، فَمَنْ كَانَ اعْتَكَفَ مَعِي فَلْيَثْبُتْ فِي مُعْتَكَفِهِ، وَقَدْ أُرِيتُ هَذِهِ اللَّيْلَةَ، ثُمَّ أُنْسِيتُهَا، فَابْتَغُوهَا فِي العَشْرِ الأَوَاخِرِ، وَابْتَغُوهَا فِي كُلِّ وِتْرٍ، وَقَدْ رَأَيْتُنِي أَسْجُدُ فِي مَاءٍ وَطِينٍ، فَاسْتَهَلَّتِ السَّمَاءُ فِي تِلْكَ اللَّيْلَةِ فَأَمْطَرَتْ، فَوَكَفَ المَسْجِدُ فِي مُصَلَّى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْلَةَ إِحْدَى وَعِشْرِينَ، فَبَصُرَتْ عَيْنِي رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَنَظَرْتُ إِلَيْهِ انْصَرَفَ مِنَ الصُّبْحِ وَوَجْهُهُ مُمْتَلِئٌ طِينًا وَمَاءً»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসের মাঝের দশকে ই‘তিকাফ করেন। বিশ তারিখ অতীত হওয়ার সন্ধ্যায় এবং একুশ তারিখের শুরুতে তিনি এবং তাঁর সঙ্গে যারা ই‘তিকাফ করেছিলেন সকলেই নিজ নিজ বাড়ীতে প্রস্থান করেন। এরপর তিনি যে মাসে ই‘তিকাফ করেন ঐ মাসের যে রাতে ফিরে যান সে রাতে লোকদের সামনে ভাষণ দেন। আর তাতে মাশাআল্লাহ, তাদেরকে বহু নির্দেশ দান করেন। তারপর বলেন যে, আমি এ দশকে ই‘তিকাফ করেছিলাম। এরপর আমি সিদ্ধান্ত করেছি যে, শেষ দশকে ই‘তিকাফ করব। যে আমার সঙ্গে ই‘তিকাফ করেছিল সে যেন তার ই‘তিকাফ স্থলে থেকে যায়। আমাকে সে রাত দেখানো হয়েছিল, পরে তা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, শেষ দশকে ঐ রাতের তালাশ কর এবং প্রত্যেক বেজোড় রাতে তা তালাশ কর। আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, মসজিদে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সালাতের স্থানেও বৃষ্টির পানি পড়তে থাকে। এটা ছিল একুশ তারিখের রাত। যখন তিনি ফজরের সালাত শেষে ফিরে বসেন তখন আমি তাঁর দিয়ে তাকিয়ে দেখতে পাই যে, তাঁর মুখমণ্ডল কাদা-পানি মাখা।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০১৮, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৬৭।]

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে,

«التَمِسُوا»

“তোমরা (লাইলাতুল কদর) তালাশ কর”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০১৯।]

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُجَاوِرُ فِي العَشْرِ الأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ وَيَقُولُ : تَحَرَّوْا لَيْلَةَ القَدْرِ فِي العَشْرِ الأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ দশকে ই‘তিকাফ করতেন এবং বলতেন, তোমরা শেষ দশকে লাইলাতুল কদর তালাশ কর”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০২০, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৬৯।]

ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«التَمِسُوهَا فِي العَشْرِ الأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ لَيْلَةَ القَدْرِ، فِي تَاسِعَةٍ تَبْقَى، فِي سَابِعَةٍ تَبْقَى، فِي خَامِسَةٍ تَبْقَى»

“তোমরা তা (লাইলাতুল কাদর) রমযানের শেষ দশকে তালাশ কর। লাইলাতুল কাদর (শেষ দিক থেকে গনণায়) নবম, সপ্তম বা পঞ্চম রাত অবশিষ্ট থাকে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০২১।]

ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«هِيَ فِي العَشْرِ الأَوَاخِرِ، هِيَ فِي تِسْعٍ يَمْضِينَ، أَوْ فِي سَبْعٍ يَبْقَيْنَ» يَعْنِي لَيْلَةَ القَدْرِ، وَعَنْ خَالِدٍ، عَنْ عِكْرِمَةَ، عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ التَمِسُوا فِي أَرْبَعٍ وَعِشْرِينَ

“তা শেষ দশকে, তা অতিবাহিত নবম রাতে অথবা অবশিষ্ট সপ্তম রাতে অর্থাৎ লাইলাতুল কদর। ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে অন্য সূত্রে বর্ণিত যে, তোমরা ২৪ তম রাতে তালাশ কর”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০২২।]

সালিম রহ. তার পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি (পিতা) বলেন,

«رَأَى رَجُلٌ أَنَّ لَيْلَةَ الْقَدْرِ لَيْلَةُ سَبْعٍ وَعِشْرِينَ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : أَرَى رُؤْيَاكُمْ فِي الْعَشْرِ الْأَوَاخِرِ، فَاطْلُبُوهَا فِي الْوِتْرِ مِنْهَا»

“এক ব্যক্তি (রমযানের) ২৭তম রাতে লাইলাতুল কদর দেখতে পেল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমাকেও তোমাদের মতো স্বপ্ন দেখানো হয়েছে যে, তা রমযানের শেষ দশকে নিহিত আছে। অতএব, এর বেজোড় রাতগুলোতে তা অনুসন্ধ্যান কর”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৬৫।]

সালিম ইবন ‘আব্দুল্লাহ ইবন উমার রহ. থেকে (সনদসহ) বর্ণিত, তার পিতা ‘আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছেন,

«عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، أَخْبَرَنِي سَالِمُ بْنُ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ، أَنَّ أَبَاهُ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، قَالَ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ لِلَيْلَةِ الْقَدْرِ : إِنَّ نَاسًا مِنْكُمْ قَدْ أُرُوا أَنَّهَا فِي السَّبْعِ الْأُوَلِ، وَأُرِيَ نَاسٌ مِنْكُمْ أَنَّهَا فِي السَّبْعِ الْغَوَابِرِ، فَالْتَمِسُوهَا فِي الْعَشْرِ الْغَوَابِرِ»

“আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লাইলাতুল কদর সস্পর্কে বলতে শুনেছি, তোমাদের কতিপয় লোককে দেখানো হলো যে, তা রমযানের প্রথম সাত দিনের মধ্যে, আবার কতিপয় লোককে দেখানো হয়েছে যে, তা শেষ সাত দিনের মধ্যে। অতএব, (রমযানের) শেষ দশকের মধ্যে তা অন্বেষণ কর”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৬৫।]

‘উকবা ইবন হুরাইস রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমাকে বলতে শুনেছি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«الْتَمِسُوهَا فِي الْعَشْرِ الْأَوَاخِرِ يَعْنِي لَيْلَةَ الْقَدْرِ فَإِنْ ضَعُفَ أَحَدُكُمْ أَوْ عَجَزَ، فَلَا يُغْلَبَنَّ عَلَى السَّبْعِ الْبَوَاقِي»

“তোমরা রমযানের শেষ দশদিনে কদরের রাত অনুসন্ধান কর। তোমাদের কেউ যদি দুর্বল অথবা অপারগ হয়ে পরে, তবে সে যেন শেষ সাত রাতে অলসতা না করে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৬৫।]

ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«تَحَيَّنُوا لَيْلَةَ الْقَدْرِ فِي الْعَشْرِ الْأَوَاخِرِ» أَوْ قَالَ «فِي التِّسْعِ الْأَوَاخِرِ»

“তোমরা (রমযানের) শেষ দশকে কদরের রাত অনুসন্ধান কর অথবা তিনি বলেছেন, শেষের সাত রাতে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৬৫।]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«أُرِيتُ لَيْلَةَ الْقَدْرِ، ثُمَّ أَيْقَظَنِي بَعْضُ أَهْلِي، فَنُسِّيتُهَا فَالْتَمِسُوهَا فِي الْعَشْرِ الْغَوَابِرِ وقَالَ حَرْمَلَةُ : فَنَسِيتُهَا»

“আমাকে স্বপ্নে কদরের রাত দেখনি হয়েছিল। অতঃপর আমার পরিবারের কেউ আমাকে ঘুম থেকে জাগানোর ফলে আমাকে তা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং তোমরা তা শেষ দশকে অম্বেষণ কর”। বর্ণনাকারী হারমালা রহ. বলেছেন, আমি তা ভুলে গেছি।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৬৬।]

‘আব্দুল্লাহ ইবন উনায়স রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«أُرِيتُ لَيْلَةَ الْقَدْرِ، ثُمَّ أُنْسِيتُهَا، وَأَرَانِي صُبْحَهَا أَسْجُدُ فِي مَاءٍ وَطِينٍ» قَالَ : فَمُطِرْنَا لَيْلَةَ ثَلَاثٍ وَعِشْرِينَ، فَصَلَّى بِنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَانْصَرَفَ وَإِنَّ أَثَرَ الْمَاءِ وَالطِّينِ عَلَى جَبْهَتِهِ وَأَنْفِهِ قَالَ : وَكَانَ عَبْدُ اللهِ بْنُ أُنَيْسٍ يَقُولُ : ثَلَاثٍ وَعِشْرِينَ»

“আমাকে কদরের রাত দেখান হয়েছিল। অতঃপর তা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাকে ঐ রাতের ভোর সম্পর্কে স্বপ্নে আরও দেখান হয়েছে যে, আমিপানি ও কাদার মধ্যে সিজদা করছি। বর্ণনাকারী বলেন, অতএব, ২৩তম রাতে বৃষ্টি হলো এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সাথে (ফজরের) সালাত আদায় করে যখন ফিরলেন, তখন আমরা তাঁর কপাল ও নাকের ডগায় কাদা ও পানির চিহ্ন দেখতে পেলাম। বর্ণনাকারী বলেন, ‘আব্দুল্লাহ ইবন উনায়স রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলতেন, তা ছিল ২৩তম।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৬৮।]

উয়াইনা ইবন আবদুর রহমান বলেন, আমার পিতা আবদুর রহমান বলেন,

ذُكِرَتْ لَيْلَةُ القَدْرِ عِنْدَ أَبِي بَكْرَةَ فَقَالَ : مَا أَنَا مُلْتَمِسُهَا لِشَيْءٍ سَمِعْتُهُ مِنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلاَّ فِي العَشْرِ الأَوَاخِرِ، فَإِنِّي سَمِعْتُهُ يَقُولُ : التَمِسُوهَا فِي تِسْعٍ يَبْقَيْنَ، أَوْ فِي سَبْعٍ يَبْقَيْنَ، أَوْ فِي خَمْسٍ يَبْقَيْنَ، أَوْ فِي ثَلاَثِ أَوَاخِرِ لَيْلَةٍ، وَكَانَ أَبُو بَكْرَةَ يُصَلِّي فِي العِشْرِينَ مِنْ رَمَضَانَ كَصَلاَتِهِ فِي سَائِرِ السَّنَةِ، فَإِذَا دَخَلَ العَشْرُ اجْتَهَدَ .

আবু বাকরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কাছে একবার লাইলাতুল ক্বাদর সম্পর্কে আলোচনা হলো। তিনি বললেন, আমি লাইলাতুল ক্বাদর রামাযানের শেষ দশ দিন ছাড়া অন্য কোনো রাতে অনুসন্ধান করব না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে একটি বাণী শোনার কারণে তাকে বলতে শুনেছি যে, তোমরা এ রাতটিকে রমযানের নয় দিন বাকী থাকতে বা সাতদিন বাকী থাকতে বা পাঁচ দিন বাকী থাকতে বা তিন দিন বাকী থাকতে বা এর শেষ রাতে অণ্বেষণ কর। বর্ণনাকারী বলেন, আবু বাকরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রামাযানের বিশ দিন পর্যন্ত অন্যান্য সুন্নাতের মতোই সালাত আদায় করতেন। কিন্তু শেষ দশ দিনের ক্ষেত্রে খুবই প্রচেষ্টা চালাতেন।” [তিরমিযী, ৭৯৪, ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, হাদীসটি হাসান সহীহ। ইবন হিব্বান, ৩৬৮৬, শু‘য়াইব আরনাঊত বলেছেন, হাদীসের সনদটি সহীহ। মুসতাদরাকে হাকিম, ১৫৯৮, ইমাম হাকিম রহ. বলেছেন, হাদীসটির সনদ সহীহ, তবে ইমাম বুখারী ও মুসলিম রহ. তাখরিজ করেননি।]

১০৪
মানুষের ঝগড়ার কারণে লাইলাতুল কদরের নির্দিষ্ট তারিখ হারিয়ে যায়
‘উবাদা ইবন সামিত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«خَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِيُخْبِرَنَا بِلَيْلَةِ القَدْرِ فَتَلاَحَى رَجُلاَنِ مِنَ المُسْلِمِينَ فَقَالَ : خَرَجْتُ لِأُخْبِرَكُمْ بِلَيْلَةِ القَدْرِ، فَتَلاَحَى فُلاَنٌ وَفُلاَنٌ، فَرُفِعَتْ وَعَسَى أَنْ يَكُونَ خَيْرًا لَكُمْ، فَالْتَمِسُوهَا فِي التَّاسِعَةِ، وَالسَّابِعَةِ، وَالخَامِسَةِ»

“একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে লাইলাতুল কাদরের (নির্দিষ্ট তারিখের) অবহিত করার জন্য বের হয়েছিলেন। তখন দু’জন মুসলিম ঝগড়া করছিল। তা দেখে তিনি বললেন, আমি তোমাদেরকে লাইলাতুল কদরের সংবাদ দিবার জন্য বের হয়েছিলাম, তখন অমুক অমুক ঝগড়া করছিল, ফলে তার (নির্দিষ্ট তারিখের) পরিচয় হারিয়ে যায়। সম্ভবত এর মধ্যে তোমাদের জন্য কল্যাণ নিহিত রয়েছে। তোমরা নবম, সপ্তম ও পঞ্চম রাতে তা তালাশ কর”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০২৩।]

১০৫
লাইলাতুল কদরের ‘আলামত
যির ইবন হুবাইশ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি উবাই ইবন কা’ব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বললাম,

«إِنَّ أَخَاكَ ابْنَ مَسْعُودٍ يَقُولُ : مَنْ يَقُمِ الْحَوْلَ يُصِبْ لَيْلَةَ الْقَدْرِ؟ فَقَالَ رَحِمَهُ اللهُ : أَرَادَ أَنْ لَا يَتَّكِلَ النَّاسُ، أَمَا إِنَّهُ قَدْ عَلِمَ أَنَّهَا فِي رَمَضَانَ، وَأَنَّهَا فِي الْعَشْرِ الْأَوَاخِرِ، وَأَنَّهَا لَيْلَةُ سَبْعٍ وَعِشْرِينَ، ثُمَّ حَلَفَ لَا يَسْتَثْنِي، أَنَّهَا لَيْلَةُ سَبْعٍ وَعِشْرِينَ، فَقُلْتُ : بِأَيِّ شَيْءٍ تَقُولُ ذَلِكَ؟ يَا أَبَا الْمُنْذِرِ، قَالَ : بِالْعَلَامَةِ، أَوْ بِالْآيَةِ الَّتِي أَخْبَرَنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهَا تَطْلُعُ يَوْمَئِذٍ، لَا شُعَاعَ لَهَا»

“আপনার ভাই আব্দুল্লাহ ইবন মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, যে ব্যক্তি গোটা বছর রাত জাগরণ করে সে কদরের রাতের সন্ধান পাবে। তিনি (উবাই) বললেন, আল্লাহ তাকে রহম করুন, এর দ্বারা তিনি একথা বুঝাতে চাচ্ছেন যে, লোকেরা যেন কেবল একটি রাতের ওপর ভরসা করে বসে না থাকে। অথচ তিনি অবশ্যই জানেন যে, তা রমযান মাসে শেষের দশ দিনের মধ্যে এবং ২৭তম রজনী। অতঃপর তিনি শপথ করে বললেন! তা ২৭তম রজনী। আমি (যির) বললাম, হে আবুল মুনযির! আপনি কিসের ভিত্তিতে তা বলছেন? তিনি বললেন, বিভিন্ন আলামত ও নিদর্শনের ভিত্তিতে যে সস্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের অবহিত করেছেন। যেমন, সেদিন সূর্য উঠবে কিন্তু তাতে আলোক রশ্মি থাকবে না।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৬২।]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«تَذَاكَرْنَا لَيْلَةَ الْقَدْرِ عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ : «أَيُّكُمْ يَذْكُرُ حِينَ طَلَعَ الْقَمَرُ، وَهُوَ مِثْلُ شِقِّ جَفْنَةٍ؟»

“আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে কদরের রাত সস্পর্কে আলাপ আলোচনা করছিলাম। তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে কে সেই (রাত) স্মরণ রাখবে, যখন চাঁদ উদিত হয়ে থালার একটি টুকরার ন্যায় হবে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৭০।]

১০৬
লাইলাতুল কদরে যেসব দো‘আ পড়া মুস্তাহাব
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَرَأَيْتَ إِنْ وَافَقْتُ لَيْلَةَ الْقَدْرِ مَا أَدْعُو؟ قَالَ : تَقُولِينَ : اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي»

“ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি যদি কদরের রাত পেয়ে যাই তবে কী দো‘আ পড়বো? তিনি বলেন, তুমি বলবে, হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাকারী, তুমি ক্ষমা করতেই ভালোবাসো। অতএব, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।” [তিরমিযী, ৩৫৩১, ইমাম তিরমিযী রহ. বলেছেন, হাদীসটি হাসান সহীহ। ইবন মাজাহ, ৩৮৫০, আলবানী রহ. বলেছেন, হাদীসটি সহীহ। মুসতাদরাক হাকিম, ১৯৪২, ইমাম হাকিম রহ. বলেছেন, হাদিসটি বুখারী ও মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহীহ, তবে তারা কেউ তাখরিজ করেননি।]

১০৭
রমযানের শেষ দশকের ‘আমল
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ العَشْرُ شَدَّ مِئْزَرَهُ، وَأَحْيَا لَيْلَهُ، وَأَيْقَظَ أَهْلَهُ»

“যখন রমযানের শেষ দশক আসতো তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর লুঙ্গি কষে নিতেন (বেশি বেশি ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন) এবং রাত্রে জেগে থাকতেন ও পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০২৪, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৭৪।]

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন,

«كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَجْتَهِدُ فِي الْعَشْرِ الْأَوَاخِرِ، مَا لَا يَجْتَهِدُ فِي غَيْرِهِ»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যান্য সময়ের তুলনায় রমযানের শেষ দিকে অধিক পরিমানে এমনভাবে সচেষ্ট থাকতেন যা অন্য সময়ে থাকতেন না।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৭৫।]

১০৮
চতুর্থ অধ্যায় : ই‘তিকাফ রমযানের শেষ দশকে ই‘তিকাফ করা, সব মসজিদে ই‘তিকাফ করা
﴿وَلَا تُبَٰشِرُوهُنَّ وَأَنتُمۡ عَٰكِفُونَ فِي ٱلۡمَسَٰجِدِۗ تِلۡكَ حُدُودُ ٱللَّهِ فَلَا تَقۡرَبُوهَاۗ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ ٱللَّهُ ءَايَٰتِهِۦ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمۡ يَتَّقُونَ ١٨٧﴾ [ البقرة : ١٨٧ ]

“আর তোমরা মাসজিদে ই‘তিকাফরত অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে মিলিত হয়ো না। এটা আল্লাহর সীমারেখা। সুতরাং তোমরা তার নিকটবর্তী হয়ো না। এভাবেই আল্লাহ তাঁর আয়াতসমূহ মানুষের জন্য স্পষ্ট করেন, যাতে তারা তাকওয়া অবলম্বন করে”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৭]

‘আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَعْتَكِفُ العَشْرَ الأَوَاخِرَ مِنْ رَمَضَانَ»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ দশক ই‘তিকাফ করতেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০২৫, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৭১।]

নবী সহধর্মিণী ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত যে,

«أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، كَانَ يَعْتَكِفُ العَشْرَ الأَوَاخِرَ مِنْ رَمَضَانَ حَتَّى تَوَفَّاهُ اللَّهُ، ثُمَّ اعْتَكَفَ أَزْوَاجُهُ مِنْ بَعْدِهِ»

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ দশক ই‘তিকাফ করতেন। তাঁর ওফাত পর্যন্ত এই নিয়মই ছিল। এরপর তাঁর স্ত্রীগণও (সে দিনগুলোতে) ই‘তিকাফ করতেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০২৬, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৭২।]

আবু সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে,

«أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَعْتَكِفُ فِي العَشْرِ الأَوْسَطِ مِنْ رَمَضَانَ، فَاعْتَكَفَ عَامًا، حَتَّى إِذَا كَانَ لَيْلَةَ إِحْدَى وَعِشْرِينَ، وَهِيَ اللَّيْلَةُ الَّتِي يَخْرُجُ مِنْ صَبِيحَتِهَا مِنَ اعْتِكَافِهِ، قَالَ : مَنْ كَانَ اعْتَكَفَ مَعِي، فَلْيَعْتَكِفِ العَشْرَ الأَوَاخِرَ، وَقَدْ أُرِيتُ هَذِهِ اللَّيْلَةَ ثُمَّ أُنْسِيتُهَا، وَقَدْ رَأَيْتُنِي أَسْجُدُ فِي مَاءٍ وَطِينٍ مِنْ صَبِيحَتِهَا، فَالْتَمِسُوهَا فِي العَشْرِ الأَوَاخِرِ، وَالتَمِسُوهَا فِي كُلِّ وِتْرٍ»، فَمَطَرَتِ السَّمَاءُ تِلْكَ اللَّيْلَةَ وَكَانَ المَسْجِدُ عَلَى عَرِيشٍ، فَوَكَفَ المَسْجِدُ، فَبَصُرَتْ عَيْنَايَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى جَبْهَتِهِ أَثَرُ المَاءِ وَالطِّينِ، مِنْ صُبْحِ إِحْدَى وَعِشْرِينَ»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের মধ্যম দশকে ই‘তিকাফ করতেন। এক বছর এরূপ ই‘তিকাফ করেন, যখন একুশের রাত আসলো, যে রাতের সকালে তিনি তাঁর ই‘তিকাফ থেকে বের হবেন, তিনি বললেন, যারা আমার সঙ্গে ই‘তিকাফ করেছে তারা যেন শেষ দশক ই‘তিকাফ করে। আমাকে স্বপ্নে এই রাত (লাইলাতুল কাদর) দেখানো হয়েছিল। পরে আমাকে তা (সঠিক তারিখ) ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। অবশ্য আমি স্বপ্নে দেখতে পেয়েছি যে, ঐ রাতের সকালে আমি কাদা পানির মাঝে সিজদা করছি। তোমরা তা শেষ দশকে তালাশ কর এবং প্রত্যেক বেজোড় রাতে তালাশ কর। পরে এই রাতে আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষিত হলো, মসজিদের ছাদ ছিল খেজুর পাতার ছাউনির। ফলে মসজিদে টপটপ করে বৃষ্টি পড়তে লাগল। একুশের রাতের সকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কপালে কাদা পানির চিহ্ন আমার দু’চোখ দেখতে পায়।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০২৭, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৬৭।]

১০৯
হায়েয মহিলা ই‘তিকাফকারীর চুল আঁচড়ানো
নবী সহধর্মিণী ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصْغِي إِلَيَّ رَأْسَهُ وَهُوَ مُجَاوِرٌ فِي المَسْجِدِ، فَأُرَجِّلُهُ وَأَنَا حَائِضٌ»

“মসজিদে ই‘তিকাফরত অবস্থায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার দিকে তাঁর মাথা ঝুকিয়ে দিতেন আর আমি ঋতুবতী অবস্থায় তাঁর চুল আঁচড়িয়ে দিতাম”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০২৮, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৯৭।]

১১০
ই‘তিকাফকারী প্রয়োজন ব্যতীত গৃহে প্রবেশ না করা
নবী সহধর্মিণী ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«وَإِنْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «لَيُدْخِلُ عَلَيَّ رَأْسَهُ وَهُوَ فِي المَسْجِدِ، فَأُرَجِّلُهُ، وَكَانَ لاَ يَدْخُلُ البَيْتَ إِلَّا لِحَاجَةٍ إِذَا كَانَ مُعْتَكِفًا»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে থাকাবস্থায় আমার দিকে মাথা বাড়িয়ে দিতেন আর আমি তা আঁচড়িয়ে দিতাম এবং তিনি যখন ই‘তিকাফে থাকতেন তখন (প্রাকৃতিক) প্রয়োজন ছাড়া ঘরে প্রবেশ করতেন না।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০২৯, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৯৭।]

১১১
ই‘তিকাফকারীর গোসল
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُبَاشِرُنِي وَأَنَا حَائِضٌ، وَكَانَ يُخْرِجُ رَأْسَهُ مِنَ المَسْجِدِ وَهُوَ مُعْتَكِفٌ، فَأَغْسِلُهُ وَأَنَا حَائِضٌ»

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঋতুবতী অবস্থায় আমার সঙ্গে কাটাতেন এবং তিনি ই‘তিকাফরত অবস্থায় মসজিদ থেকে তাঁর মাথা বের করে দিতেন। আমি ঋতুবতী অবস্থায় তা ধুয়ে দিতাম।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০৩০, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৯৭।]

১১২
রাতে ই‘তিকাফ করা
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত,

«أَنَّ عُمَرَ سَأَلَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ : كُنْتُ نَذَرْتُ فِي الجَاهِلِيَّةِ أَنْ أَعْتَكِفَ لَيْلَةً فِي المَسْجِدِ الحَرَامِ، قَالَ : «فَأَوْفِ بِنَذْرِكَ»

“উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেন যে, আমি জাহিলিয়্যা যুগে মসজিদুল হারামে এক রাত ই‘তিকাফ করার মানত করেছিলাম। তিনি (উত্তরে) বললেন, তোমার মানত পুরা কর”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০৩২, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬৬৫।]

১১৩
মহিলাদের ই‘তিকাফ
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَعْتَكِفُ فِي العَشْرِ الأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ، فَكُنْتُ أَضْرِبُ لَهُ خِبَاءً فَيُصَلِّي الصُّبْحَ ثُمَّ يَدْخُلُهُ، فَاسْتَأْذَنَتْ حَفْصَةُ عَائِشَةَ أَنْ تَضْرِبَ خِبَاءً، فَأَذِنَتْ لَهَا، فَضَرَبَتْ خِبَاءً، فَلَمَّا رَأَتْهُ زَيْنَبُ ابْنَةُ جَحْشٍ ضَرَبَتْ خِبَاءً آخَرَ، فَلَمَّا أَصْبَحَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأَى الأَخْبِيَةَ، فَقَالَ : «مَا هَذَا؟» فَأُخْبِرَ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : أَلْبِرَّ تُرَوْنَ بِهِنَّ فَتَرَكَ الِاعْتِكَافَ ذَلِكَ الشَّهْرَ، ثُمَّ اعْتَكَفَ عَشْرًا مِنْ شَوَّالٍ»

“রমযানের শেষ দশকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ই‘তিকাফ করতেন। আমি তাবু তৈরি করে দিতাম। তিনি ফজরের সালাত আদায় করে তাতে প্রবেশ করতেন। (নবী স্ত্রী) হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা তাঁবু খাটাবার জন্য ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার কাছে অনুমিতি চাইলেন। তিনি তাঁকে অনুমতি দিলে হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা তাবুঁ খাটালেন। (নবী স্ত্রী) যয়নাব বিনতে জাহাশ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা তা দেখে আরেকটি তাবুঁ তৈরি করলেন। সকালে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবুঁগুলো দেখলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন এগুলো কী? তাঁকে জানানো হলে তিনি বললেন, তোমরা কি মনে কর এগুলো দিয়ে নেকী হাসিল হবে? এ মাসে তিনি ই‘তিকাফ ত্যাগ করলেন এবং পরে শাওয়াল মাসে ১০ দিন (কাযাস্বরূপ) ই‘তিকাফ করেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০৩৩, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৭৩।]

১১৪
মসজিদে ই‘তিকাফ করার উদ্দেশ্যে তাঁবু খাটানো
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা খেকে বর্ণিত যে,

«أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَرَادَ أَنْ يَعْتَكِفَ، فَلَمَّا انْصَرَفَ إِلَى المَكَانِ الَّذِي أَرَادَ أَنْ يَعْتَكِفَ إِذَا أَخْبِيَةٌ خِبَاءُ عَائِشَةَ، وَخِبَاءُ حَفْصَةَ، وَخِبَاءُ زَيْنَبَ، فَقَالَ : أَلْبِرَّ تَقُولُونَ بِهِنَّ» ثُمَّ انْصَرَفَ، فَلَمْ يَعْتَكِفْ حَتَّى اعْتَكَفَ عَشْرًا مِنْ شَوَّالٍ»

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ই‘তিকাফ করার ইচ্ছা করলেন। এরপর যে স্থানে ই‘তিকাফ করার ইচ্ছা করেছিলেন সেখানে এসে কয়েকটি তাঁবু দেখতে পেলেন। (তাঁবুগুলো হলো নবী সহধর্মিণী) ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা, হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা ও যায়নাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার তাঁবু। তখন তিনি বললেন, তোমরা কি এগুলো দিয়ে নেকী হাসিলের ধারণা কর? এরপর তিনি চলে গেলেন আর ই‘তিকাফ করলেন না। পরে শাওয়াল মাসে দশ দিনের ই‘তিকাফ করলেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০৩৪, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৭৩।]

১১৫
ই‘তিকাফকারী কি প্রয়োজনে মসজিদের দরজায় বের থেকে পারবে?
ইমাম যুহরী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আলী ইবন হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা আমাকে নবী স্ত্রী সাফিয়্যা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে সংবাদ দিয়েছেন যে,

«أَنَّهَا جَاءَتْ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَزُورُهُ فِي اعْتِكَافِهِ فِي المَسْجِدِ فِي العَشْرِ الأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ، فَتَحَدَّثَتْ عِنْدَهُ سَاعَةً، ثُمَّ قَامَتْ تَنْقَلِبُ، فَقَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَعَهَا يَقْلِبُهَا، حَتَّى إِذَا بَلَغَتْ بَابَ المَسْجِدِ عِنْدَ بَابِ أُمِّ سَلَمَةَ، مَرَّ رَجُلاَنِ مِنَ الأَنْصَارِ، فَسَلَّمَا عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ لَهُمَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «عَلَى رِسْلِكُمَا، إِنَّمَا هِيَ صَفِيَّةُ بِنْتُ حُيَيٍّ»، فَقَالاَ : سُبْحَانَ اللَّهِ يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَكَبُرَ عَلَيْهِمَا، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : إِنَّ الشَّيْطَانَ يَبْلُغُ مِنَ الإِنْسَانِ مَبْلَغَ الدَّمِ، وَإِنِّي خَشِيتُ أَنْ يَقْذِفَ فِي قُلُوبِكُمَا شَيْئًا»

“একবার তিনি রমযানের শেষ দশকে মসজিদে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে হাযির হন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ই‘তিকাফরত ছিলেন। তিনি তাঁর সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা-বার্তা বলেন। তারপর ফিরে যাবার জন্য উঠে দাঁড়ান। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে উঠে দাঁড়ালেন। যখন তিনি (উম্মুল মুমিনীন) উম্মে সালমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার গৃহ সংলগ্ন মসজিদের দরজা পর্যন্ত পৌছলেন, তখন দু’জন আনসারী সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁরা উভয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাম করলেন। তাদের দু’জনকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা দু’জন থামো। ইনি তো (আমার স্ত্রী) সাফিয়্যা বিনতে হুয়াই। এতে তারা দু’জনে সুবহানাল্লাহ ইয়া রাসূলুল্লাহ বলে উঠলেন এবং তাঁরা বিব্রতবোধ করলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘শয়তান মানুষের রক্ত শিরায় চলাচল করে। আমি আশংকা করলাম যে, সে তোমাদের মনে সন্দেহের সৃষ্টি করতে পারে’।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০৩৫, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২১৭৫।]

১১৬
ই‘তিকাফ অধ্যায়, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশ তারিখ সকালে ই‘তিকাফের উদ্দেশ্যে বের হয়েছেন
আবু সালমা ইবন ‘আব্দুর রাহমান রহ. বলেন, আমি আবু সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে জিজ্ঞাসা করলাম,

«هَلْ سَمِعْتَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَذْكُرُ لَيْلَةَ القَدْرِ؟ قَالَ : نَعَمِ، اعْتَكَفْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ العَشْرَ الأَوْسَطَ مِنْ رَمَضَانَ، قَالَ : فَخَرَجْنَا صَبِيحَةَ عِشْرِينَ، قَالَ : فَخَطَبَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَبِيحَةَ عِشْرِينَ فَقَالَ : إِنِّي أُرِيتُ لَيْلَةَ القَدْرِ، وَإِنِّي نُسِّيتُهَا، فَالْتَمِسُوهَا فِي العَشْرِ الأَوَاخِرِ فِي وِتْرٍ، فَإِنِّي رَأَيْتُ أَنِّي أَسْجُدُ فِي مَاءٍ وَطِينٍ، وَمَنْ كَانَ اعْتَكَفَ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلْيَرْجِعْ، فَرَجَعَ النَّاسُ إِلَى المَسْجِدِ وَمَا نَرَى فِي السَّمَاءِ قَزَعَةً، قَالَ : فَجَاءَتْ سَحَابَةٌ، فَمَطَرَتْ، وَأُقِيمَتِ الصَّلاَةُ، فَسَجَدَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الطِّينِ وَالمَاءِ حَتَّى رَأَيْتُ أَثَرَ الطِّينِ فِي أَرْنَبَتِهِ وَجَبْهَتِهِ»

“আপনি কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লাইলাতুল কাদর প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমরা রমযানের মধ্যম দশকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ই‘তিকাফ করেছিলাম। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর আমরা বিশ তারিখের সকালে বের থেকে চাইলাম। তিনি বিশ তারিখের সকালে আমাদেরকে সম্বোধন করে ভাষণ দিলেন। তিনি বললেন, আমাকে (স্বপ্নযোগে) লাইলাতুল কাদর (এর নির্দিষ্ট তারিখ) দেখানো হয়েছিল। পরে আমাকে তা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। তোমরা শেষ দশকের বিজোড় তারিখে তা তালাশ কর। আমি দেখেছি যে, আমি পানি ও কাদার মধ্যে সিজদা করছি। অতএব যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ই‘তিকাফ করেছে সে যেন ফিরে আসে (বের হওয়া থেকে বিরত থাকে)। লোকেরা মসজিদে ফিরে এল। আমরা তখন আকাশে একখণ্ড মেঘও দেখতে পাই নি। একটু পরে একখণ্ড মেঘ দেখা দিল ও বর্ষণ হলো এবং সালাত শুরু হলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাদা পানির মাঝে সিজদা করলেন। এমনকি আমি তাঁর কপালে ও নাকে কাদার চিহ্ন দেখতে পেলাম।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০৩৬, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৬৭।]

১১৭
মুস্তাহাযা বা রোগাক্রান্ত নারীর ই‘তিকাফ করা
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«اعْتَكَفَتْ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ امْرَأَةٌ مِنْ أَزْوَاجِهِ مُسْتَحَاضَةٌ، فَكَانَتْ تَرَى الحُمْرَةَ، وَالصُّفْرَةَ، فَرُبَّمَا وَضَعْنَا الطَّسْتَ تَحْتَهَا وَهِيَ تُصَلِّي»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে তাঁর এক মুস্তাহাযা স্ত্রী ই‘তিকাফ করেন। তিনি লাল ও হলুদ রংয়ের স্রাব নির্গত থেকে দেখতে পেতেন। অনেক সময় আমরা তাঁর নিচে একটি গামলা রেখে দিতাম আর তিনি উহার উপর সালাত আদায় করতেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০৩৭।]

১১৮
ই‘তিকাফকারী স্বামীকে স্ত্রী দেখতে যাওয়া
‘আলী ইবন হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত,

«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي المَسْجِدِ وَعِنْدَهُ أَزْوَاجُهُ فَرُحْنَ، فَقَالَ لِصَفِيَّةَ بِنْتِ حُيَيٍّ لاَ تَعْجَلِي حَتَّى أَنْصَرِفَ مَعَكِ، وَكَانَ بَيْتُهَا فِي دَارِ أُسَامَةَ، فَخَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَعَهَا، فَلَقِيَهُ رَجُلاَنِ مِنَ الأَنْصَارِ فَنَظَرَا إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ أَجَازَا، وَقَالَ لَهُمَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «تَعَالَيَا إِنَّهَا صَفِيَّةُ بِنْتُ حُيَيٍّ»، قَالاَ : سُبْحَانَ اللَّهِ يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ : «إِنَّ الشَّيْطَانَ يَجْرِي مِنَ الإِنْسَانِ مَجْرَى الدَّمِ، وَإِنِّي خَشِيتُ أَنْ يُلْقِيَ فِي أَنْفُسِكُمَا شَيْئًا»

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী সাফিয়্যা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ই‘তিকাফ অবস্থায়) মসজিদে অবস্থান করছিলেন, ঐ সময়ে তাঁর নিকট স্বীয় স্ত্রীগণ উপস্থিত ছিলেন। তারা যাওয়ার জন্য রওয়ানা হন। তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাফিয়্যা বিনতে হুয়াইকে বললেন, তুমি তাড়াতাড়ি করো না। আমি তোমার সাথে যাবো। তার (সাফিয়্যা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা)-এর ঘর ছিল উসামার বাড়ীতে। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে সঙ্গে করে বের হলেন। এমতাবস্থায় দু’জন আনসার ব্যক্তির সাক্ষাত ঘটলে তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখতে পেয়ে (দ্রুত) আগে বেড়ে গেলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের দু’জনকে বললেন, তোমরা এদিকে আসো। এ তো সাফিয়্যা বিনত হুয়াই। তাঁরা দু’জন বলে উঠলেন, সুবহানাল্লাহ ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বললেন, শয়তান মানব দেহে রক্তের মতো চলাচল করে। আমি আশংকাবোধ করলাম যে, সে তোমাদের মনে কিছু সন্দেহ ঢুকিয়ে দেয়। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০৩৮, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২১৭৫।]

১১৯
ই‘তিকাফকারী কি নিজের থেকে সন্দেহ দূর করবে?
আলী ইবন হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত,

«أَنَّ صَفِيَّةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، أَتَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ مُعْتَكِفٌ، فَلَمَّا رَجَعَتْ مَشَى مَعَهَا، فَأَبْصَرَهُ رَجُلٌ مِنَ الأَنْصَارِ، فَلَمَّا أَبْصَرَهُ دَعَاهُ فَقَالَ : تَعَالَ هِيَ صَفِيَّةُ وَرُبَّمَا قَالَ سُفْيَانُ : هَذِهِ صَفِيَّةُ، فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَجْرِي مِنَ ابْنِ آدَمَ مَجْرَى الدَّمِ، قُلْتُ لِسُفْيَانَ : أَتَتْهُ لَيْلًا قَالَ : وَهَلْ هُوَ إِلَّا لَيْلٌ»

“সাফিয়্যা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ই‘তিকাফ অবস্থায় তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করতে আসেন। তিনি যখন ফিরে যান তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাথে কিছু দূর হেঁটে আসেন। ঐ সময়ে এক আনসার ব্যক্তি তাঁকে দেখতে পায়। তিনি যখন তাকে দেখতে পেলেন তখন তাকে ডাক দিলেন ও বললেন, এসো, এ তো সাফিয়্যা বিনত হুয়াই। শয়তান মানব দেহে রক্তের মত চলাচল করে থাকে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বললাম, তিনি রাতে এসেছিলেন? তিনি বললেন, রাতে ছাড়া আর কি? [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০৩৯, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২১৭৫।]

১২০
যে ব্যক্তি প্রত্যুষে ই‘তিকাফ থেকে ফিরে আসে
আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«اعْتَكَفْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، العَشْرَ الأَوْسَطَ، فَلَمَّا كَانَ صَبِيحَةَ عِشْرِينَ نَقَلْنَا مَتَاعَنَا، فَأَتَانَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ : «مَنْ كَانَ اعْتَكَفَ، فَلْيَرْجِعْ إِلَى مُعْتَكَفِهِ، فَإِنِّي رَأَيْتُ هَذِهِ اللَّيْلَةَ وَرَأَيْتُنِي أَسْجُدُ فِي مَاءٍ وَطِينٍ»، فَلَمَّا رَجَعَ إِلَى مُعْتَكَفِهِ وَهَاجَتِ السَّمَاءُ، فَمُطِرْنَا، فَوَالَّذِي بَعَثَهُ بِالحَقِّ لَقَدْ هَاجَتِ السَّمَاءُ مِنْ آخِرِ ذَلِكَ اليَوْمِ، وَكَانَ المَسْجِدُ عَرِيشًا، فَلَقَدْ رَأَيْتُ عَلَى أَنْفِهِ وَأَرْنَبَتِهِ أَثَرَ المَاءِ وَالطِّينِ»

“আমরা রমযানের মধ্য দশকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ই‘তিকাফ করেছিলাম। বিশ তারিখে সকালে ই‘তিকাফ শেষ করে চলে আসার উদ্দেশ্যে আমরা আমাদের আসবাব পত্র সরিয়ে ফেলি। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট এস বললেন, যে ব্যক্তি ই‘তিকাফ করেছে সে যেন তার ই‘তিকাফস্থলে ফিরে যায়। কারণ আমি এই রাতে লাইলাতুল কদর দেখতে পেয়েছি এবং আরোও দেখেছি যে, আমি পানি ও কাদায় সিজদা। এরপর যখন তিনি তাঁর ই‘তিকাফস্থলে ফিরে গেলেন ও আকাশে মেঘ দেখা দিল, তখন আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষিত।সেই সত্তার কসম! যিনি তাঁকেখেজুর পাতার ছাউনির। আমি তাঁর নাকের অগ্রভাগে পানি ও কাদার চিহ্ন দেখেছিলাম।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০৪০, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৬৭।]

১২১
শাওয়াল মাসে ই‘তিকাফ করা
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَعْتَكِفُ فِي كُلِّ رَمَضَانٍ، وَإِذَا صَلَّى الغَدَاةَ دَخَلَ مَكَانَهُ الَّذِي اعْتَكَفَ فِيهِ، قَالَ : فَاسْتَأْذَنَتْهُ عَائِشَةُ أَنْ تَعْتَكِفَ، فَأَذِنَ لَهَا، فَضَرَبَتْ فِيهِ قُبَّةً، فَسَمِعَتْ بِهَا حَفْصَةُ، فَضَرَبَتْ قُبَّةً، وَسَمِعَتْ زَيْنَبُ بِهَا، فَضَرَبَتْ قُبَّةً أُخْرَى، فَلَمَّا انْصَرَفَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنَ الغَدَاةِ أَبْصَرَ أَرْبَعَ قِبَابٍ، فَقَالَ : «مَا هَذَا؟»، فَأُخْبِرَ خَبَرَهُنَّ، فَقَالَ : «مَا حَمَلَهُنَّ عَلَى هَذَا؟ آلْبِرُّ؟ انْزِعُوهَا فَلاَ أَرَاهَا»، فَنُزِعَتْ، فَلَمْ يَعْتَكِفْ فِي رمَضَانَ حَتَّى اعْتَكَفَ فِي آخِرِ العَشْرِ مِنْ شَوَّالٍ»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি রমযানে ই‘তিকাফ করতেন। ফজরের সালাত শেষে ই‘তিকাফের নির্দিষ্ট স্থানে প্রবেশ করতেন। ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা তাঁর কাছে ই‘তিকাফ করার অনুমতি চাইলে তিনি অনুমতি দিলেন। ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা মসজিদে (নিজের জন্য) একটি তাবু করে নিলেন। হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা তা শুনে (নিজের জন্য) একটি তাবু তৈরি করে নিলেন এবং যায়নাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা ও তা শুনে (নিজের জন্য) আর একটি তাঁবু তৈরি করে নিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত শেষে এসে চারটি তাবু দেখতে পেয়ে বললেন, একি? তাঁকে তাঁদের ব্যাপারে জানানো হলে, তিনি বললেন, নেক আমলের প্রেরণা তাদেরকে এ কাজে উদ্বুদ্ধ করে নি। সব খুলে ফেলা হলো। তিনি সেই রমযানে আর ই‘তিকাফ করলেন না। পরে শাওয়াল মাসের শেষ দশকে ই‘তিকাফ করেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০৪১, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৭৩।]

১২২
যারা সাওম ব্যতীত ই‘তিকাফ করা বৈধ মনে করেন
উমার ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي نَذَرْتُ فِي الجَاهِلِيَّةِ أَنْ أَعْتَكِفَ لَيْلَةً فِي المَسْجِدِ الحَرَامِ، فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «أَوْفِ نَذْرَكَ فَاعْتَكَفَ لَيْلَةً»

“ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি জাহেলিয়্যাতের যুগে মসজিদে হারামে এক রাত ই‘তিকাফ করার মানত করেছিলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, তোমার মানত পুরা কর। তিনি এক রাতের ই‘তিকাফ করলেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০৪২, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬৫৬।]

১২৩
যে ব্যক্তি জাহেলী যুগে ই‘তিকাফের মানত করেছে সে তা ইসলামে প্রবেশ করলে তা আদায় করবে
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«أَنَّ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ نَذَرَ فِي الجَاهِلِيَّةِ أَنْ يَعْتَكِفَ فِي المَسْجِدِ الحَرَامِ قَالَ : أُرَاهُ قَالَ لَيْلَةً : ، قَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «أَوْفِ بِنَذْرِكَ»

“উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু জাহিলিয়্যাতের যুগে মসজিদে হারামে ই‘তিকাফ করার মানত করেছিলেন। (বর্ণনাকারী) বলেন, আমার মনে হয় তিনি এক রাতের কথা উল্লেখ করেছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, তোমার মানত পুরা কর।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০৪৩, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬৫৬।]

১২৪
রমযানের মধ্য দশকে ই‘তিকাফ করা
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «يَعْتَكِفُ فِي كُلِّ رَمَضَانٍ عَشَرَةَ أَيَّامٍ، فَلَمَّا كَانَ العَامُ الَّذِي قُبِضَ فِيهِ اعْتَكَفَ عِشْرِينَ يَوْمًا»

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি রমযানে দশ দিনের ই‘তিকাফ করতেন। যে বছর তিনি ইন্তেকাল করেন সে বছর তিনি বিশ দিনের ই‘তিকাফ করেছিলেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০৪৪।]

১২৫
ই‘তিকাফের নিয়ত করে ই‘তিকাফ না করা
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত,

«أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ذَكَرَ أَنْ يَعْتَكِفَ العَشْرَ الأَوَاخِرَ مِنْ رَمَضَانَ فَاسْتَأْذَنَتْهُ عَائِشَةُ، فَأَذِنَ لَهَا، وَسَأَلَتْ حَفْصَةُ عَائِشَةَ أَنْ تَسْتَأْذِنَ لَهَا، فَفَعَلَتْ، فَلَمَّا رَأَتْ ذَلِكَ زَيْنَبُ ابْنَةُ جَحْشٍ أَمَرَتْ بِبِنَاءٍ، فَبُنِيَ لَهَا قَالَتْ : وَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا صَلَّى انْصَرَفَ إِلَى بِنَائِهِ، فَبَصُرَ بِالأَبْنِيَةِ، فَقَالَ : «مَا هَذَا؟» قَالُوا : بِنَاءُ عَائِشَةَ، وَحَفْصَةَ، وَزَيْنَبَ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «أَلْبِرَّ أَرَدْنَ بِهَذَا، مَا أَنَا بِمُعْتَكِفٍ»، فَرَجَعَ، فَلَمَّا أَفْطَرَ اعْتَكَفَ عَشْرًا مِنْ شَوَّالٍ»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ দশকে ই‘তিকাফ করার অভিপ্রায় প্রকাশ করলে ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা তাঁর কাছে ই‘তিকাফ করার অনুমতি প্রার্থনা করায় তিনি তাঁকে অনুমতি দিলেন। এরপর হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার নিকট অনুমতি চাইলে তিনি তাঁকে অনুমতি দিলেন। তা দেখে যায়নাব বিনত জাহাশ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা নিজের জন্য তাঁবু লাগানোর নির্দেশ দিলে তা পালন করা হলো। ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত আদায় করে নিজের তাঁবুতে ফিরে এসে কয়েকটি তাবু দেখতে পেলেন। তখন তিনি বললেন, এ কি ব্যাপার? লোকেরা বলল, ‘আয়েশা, হাফসা ও যায়নাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুন্নার তাঁবু। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তারা কি নেকী পেতে চায়? আমি আর ই‘তিকাফ করব না। এরপর তিনি ফিরে আসলেন। পরে সাওম শেষ করে শাওয়াল মাসের দশ দিন ই‘তিকাফ করেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০৪৫, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৭৩।]

১২৬
রোগ বা সফরের কারণে রমযানে ই‘তিকাফ করতে না পারলে
উবাই ইবন কা‘ব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

عَنْ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ : «يَعْتَكِفُ الْعَشْرَ الْأَوَاخِرَ مِنْ رَمَضَانَ، فَسَافَرَ عَامًا، فَلَمَّا كَانَ مِنَ الْعَامِ الْمُقْبِلِ اعْتَكَفَ عِشْرِينَ يَوْمًا»

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রামাযানের শেষ দশ দিন ই‘তিকাফ করতেন। কিন্তু এক বছর তিনি ই‘তিকাফ করতে পারেন নি। ফলে পরবর্তী বছর তিনি বিশ দিন ই‘তিকাফ করেন।” [তিরমিযী, হাদীস নং ৮০৩। ইমাম তিরমিযী রহ. বলেছেন, হাদীসটি হাসান সহীহ গরীব। ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৭৭০, আলবানী রহ. বলেছেন, হাদীসটি সহীহ। আবূ দাউদ, ২৪৬৩। ইবন হিব্বান, ৩৬৬৩, মুহাক্কিক শু‘য়াইব আরনাঊত বলেছেন, হাদীসটি মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহীহ।]

আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَعْتَكِفُ فِي الْعَشْرِ الْأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ فَلَمْ يَعْتَكِفْ عَامًا، فَلَمَّا كَانَ الْعَامُ الْمُقْبِلُ اعْتَكَفَ عِشْرِينَ»

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রামাযানের শেষ দশ দিন ই‘তিকাফ করতেন। কিন্তু এক বছর তিনি ই‘তিকাফ করতে পারেন নি। ফলে পরবর্তী বছর তিনি বিশ দিন ই‘তিকাফ করেন।” [তিরমিযী, হাদীস নং ৮০৩। ইমাম তিরমিযী রহ. বলেছেন, হাদীসটি হাসান সহীহ গরীব। ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৭৭০, আলবানী রহ. বলেছেন, হাদীসটি সহীহ। আবূ দাউদ, ২৪৬৩, মুসতাদরাক হাকিম, ১৬০১, ইমাম হাকিম রহ. বলেছেন, হাদীসটি বুখারী ও মুসলিমের শর্তে সহীহ, তবে তারা তাখরিজ করেননি। ইবন হিব্বান, ৩৬৬৪, মুহাক্কিক শু‘য়াইব আরনাঊত বলেছেন, হাদীসটি মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহীহ।]

১২৭
ই‘তিকাফকারী গোসলের জন্য মাথা ঘরে ঢুকিয়ে দেওয়া
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত,

«أَنَّهَا كَانَتْ تُرَجِّلُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَهِيَ حَائِضٌ وَهُوَ مُعْتَكِفٌ فِي المَسْجِدِ وَهِيَ فِي حُجْرَتِهَا يُنَاوِلُهَا رَأْسَهُ»

“তিনি ঋতুবর্তী অবস্থায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চুল আঁচড়িয়ে দিতেন। ঐ সময়ে তিনি মসজিদে ই‘তিকাফ অবস্থায় থাকতেন আর ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা তাঁর হুজরায় অবস্থান করতেন। তিনি ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার দিকে তাঁর মাথা বাড়িয়ে দিতেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০৪৬, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৯৭।]

১২৮
ই‘তিকাফকারী কখন ই‘তিকাফের স্থানে প্রবেশ করবে
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَعْتَكِفُ فِي العَشْرِ الأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ، فَكُنْتُ أَضْرِبُ لَهُ خِبَاءً فَيُصَلِّي الصُّبْحَ ثُمَّ يَدْخُلُهُ، فَاسْتَأْذَنَتْ حَفْصَةُ عَائِشَةَ أَنْ تَضْرِبَ خِبَاءً، فَأَذِنَتْ لَهَا، فَضَرَبَتْ خِبَاءً، فَلَمَّا رَأَتْهُ زَيْنَبُ ابْنَةُ جَحْشٍ ضَرَبَتْ خِبَاءً آخَرَ، فَلَمَّا أَصْبَحَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأَى الأَخْبِيَةَ، فَقَالَ : «مَا هَذَا؟» فَأُخْبِرَ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «أَلْبِرَّ تُرَوْنَ بِهِنَّ» فَتَرَكَ الِاعْتِكَافَ ذَلِكَ الشَّهْرَ، ثُمَّ اعْتَكَفَ عَشْرًا مِنْ شَوَّالٍ»

“রমযানের শেষ দশকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ই‘তিকাফ করতেন। আমি তাবু তৈরি করে দিতাম। তিনি ফজরের সালাত আদায় করে তাতে প্রবেশ করতেন। (নবী স্ত্রী) হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা তাঁবু খাটাবার জন্য ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার কাছে অনুমতি চাইলেন। তিনি তাঁকে অনুমতি দিলে হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা তাবুঁ খাটালেন। (নবী স্ত্রী যয়নাব বিনতে জাহাশ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) তা দেখে আরেকটি তাবুঁ তৈরি করলেন। সকালে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবুঁগুলো দেখলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন এগুলো কী? তাকেঁ জানানো হলে তিনি বললেন, তোমরা কি মনে কর এগুলো দিয়ে নেকী হাসিল হবে? এ মাসে তিনি ই‘তিকাফ ত্যাগ করলেন এবং পরে শাওয়াল মাসে ১০ দিন (কাযাস্বরূপ) ই‘তিকাফ করেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০৩৩, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৭৩।]

১২৯
পঞ্চম অধ্যায়: সদকাতুল ফিতর সদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হওয়া প্রসঙ্গে
আবু ‘আলীয়া রহ. বলেছেন, সদাকাতুল ফিতর ফরয।

ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«فَرَضَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ زَكَاةَ الفِطْرِ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ شَعِيرٍ عَلَى العَبْدِ وَالحُرِّ، وَالذَّكَرِ وَالأُنْثَى، وَالصَّغِيرِ وَالكَبِيرِ مِنَ المُسْلِمِينَ، وَأَمَرَ بِهَا أَنْ تُؤَدَّى قَبْلَ خُرُوجِ النَّاسِ إِلَى الصَّلاَةِ»

“প্রত্যেক গোলাম, আযাদ, পুরুষ, নারী, প্রাপ্ত বয়স্ক, অপ্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিমের ওপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সদকাতুল ফিতর হিসাবে খেজুর হোক অথবা যব হোক এক সা‘ পরিমাণ আদায় করা ফরয করেছেন এবং লোকজনের ঈদের সালাত বের হওয়ার পূর্বেই তা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫০৩।]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«وَكَّلَنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِحِفْظِ زَكَاةِ رَمَضَانَ فَأَتَانِي آتٍ فَجَعَلَ يَحْثُو مِنَ الطَّعَامِ فَأَخَذْتُهُ، فَقُلْتُ لَأَرْفَعَنَّكَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - فَذَكَرَ الحَدِيثَ -، فَقَالَ : إِذَا أَوَيْتَ إِلَى فِرَاشِكَ فَاقْرَأْ آيَةَ الكُرْسِيِّ، لَنْ يَزَالَ عَلَيْكَ مِنَ اللَّهِ حَافِظٌ، وَلاَ يَقْرَبُكَ شَيْطَانٌ حَتَّى تُصْبِحَ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «صَدَقَكَ وَهُوَ كَذُوبٌ ذَاكَ شَيْطَانٌ»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে রমযানের যাকাত (সদকায়ে ফিতরের) হিফাজতের দায়িত্ব প্রদান করলেন। এরপর আমার নিকট একজন লোক আসলো। সে তার দু’হাতের কোষ ভরে খাদ্যশস্য গ্রহণ করতে লাগলো। তখন আমি তাকে ধরে ফেললাম এবং বললাম, আমি অবশ্যই তোমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট নিয়ে যাব। তখন সে একটি হাদীস উল্লেখ করল এবং বলল, যখন তুমি বিছানায় শুতে যাবে, তখন আয়াতুল কুরসী পড়বে। তাহলে সর্বদা আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমার জন্য একজন হিফাজতকারী থাকবে এবং ভোর হওয়া পর্যন্ত তোমার কাছে শয়তান আসতে পারবে না। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে তোমাকে সত্য বলেছে অথচ সে মিথ্যাবাদী এবং শয়তান ছিল।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩২৭৫।]

১৩০
মুসলিমদের গোলাম ও অন্যান্যের পক্ষ থেকে সদকাতুল ফিতর আদায় করা
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত,

«أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَرَضَ زَكَاةَ الفِطْرِ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ شَعِيرٍ عَلَى كُلِّ حُرٍّ، أَوْ عَبْدٍ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى مِنَ المُسْلِمِينَ»

মুসলিমদের প্রত্যেক আযাদ, গোলাম পুরুষ ও নারীর পক্ষ থেকে সদকাতুল ফিতর হিসাবে খেজুর অথবা যব থেকে এক সা‘ পরিমাণ আদায় করা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরয করেছেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫০৪।]

১৩১
সদকাতুল ফিতর এক সা‘ পরিমাণ যব
আবু সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كُنَّا نُطْعِمُ الصَّدَقَةَ صَاعًا مِنْ شَعِيرٍ»

“আমরা এক সা‘ পরিমাণ যব দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করতাম।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫০৫।]

আবু সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,

«كُنَّا نُخْرِجُ إِذْ كَانَ فِينَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ زَكَاةَ الْفِطْرِ، عَنْ كُلِّ صَغِيرٍ، وَكَبِيرٍ، حُرٍّ أَوْ مَمْلُوكٍ، صَاعًا مِنْ طَعَامٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ أَقِطٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ شَعِيرٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ زَبِيبٍ» فَلَمْ نَزَلْ نُخْرِجُهُ حَتَّى قَدِمَ عَلَيْنَا مُعَاوِيَةُ بْنُ أَبِي سُفْيَانَ حَاجًّا، أَوْ مُعْتَمِرًا فَكَلَّمَ النَّاسَ عَلَى الْمِنْبَرِ، فَكَانَ فِيمَا كَلَّمَ بِهِ النَّاسَ أَنْ قَالَ : «إِنِّي أَرَى أَنَّ مُدَّيْنِ مِنْ سَمْرَاءِ الشَّامِ، تَعْدِلُ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ» فَأَخَذَ النَّاسُ بِذَلِكَ قَالَ أَبُو سَعِيدٍ : «فَأَمَّا أَنَا فَلَا أَزَالُ أُخْرِجُهُ كَمَا كُنْتُ أُخْرِجُهُ، أَبَدًا مَا عِشْتُ»

“আমরা সদকাতুল ফিতর বাবদ এক সা‘ খাদ্য গম অথবা এক সা‘ যব অথবা এক সা‘ খেজুর অথবা এক সা‘ পনির কিংবা এক ‘সা কিসমিস প্রদান করতাম।

‘আব্দুল্লাহ ইবন মাসলামা ইবন কা‘নাব রহ. এর সনদে আবু সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আমাদের মধ্যে ছিলেন, তখন আমরা ছোট ও বড় স্বাধীন ও ক্রীতদাস প্রত্যেকের পক্ষ থেকে সদকাতুল ফিতর বাবদ এক সা‘ পরিমাণ খাদ্য অথবা এক সা‘ পনির অথবা এক সা‘ যব অথবা এক সা‘ খেজুর অথবা এক সা‘ কিশমিশ প্রদান করতাম। এভাবেই আমরা তা আদায় করতে থাকি। পরে মু‘আবিয়া ইবন আবু সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হজ অথবা ‘উমরার উদ্দেশ্যে যখন আমাদের নিকট আসলেন তখন তিনি মিম্বরে আরোহণ করে উপস্থিত লোকদের সাথে এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করলেন। আলোচনার এক পর্যায়ে তিনি বললেন, আমার মতে সিরিয়ার দু-মুদ গম এক সা‘ খেজুরের সামান। লোকেরা তা গ্রহণ করে নিলেন। আবু সা‘ঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি তো যত দিন জীবিত থাকব ঐ ভাবেই সদকাতুল ফিতর আদায় করব, যে ভাবে আমি সদকাতুল ফিতর আদায় করে আসছিলাম। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৮৫।]

ইসমাঈল ইবন উমাইয়্যাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে ইয়ায ইবন আব্দুল্লাহ ইবন সা‘দ ইবন আবু সারহ সংবাদ দিয়েছেন, তিনি আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলতে শুনেছেন যে,

«كُنَّا نُخْرِجُ زَكَاةَ الْفِطْرِ وَرَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِينَا، عَنْ كُلِّ صَغِيرٍ وَكَبِيرٍ، حُرٍّ وَمَمْلُوكٍ، مِنْ ثَلَاثَةِ أَصْنَافٍ : صَاعًا مِنْ تَمْرٍ، صَاعًا مِنْ أَقِطٍ، صَاعًا مِنْ شَعِيرٍ " فَلَمْ نَزَلْ نُخْرِجُهُ كَذَلِكَ، حَتَّى كَانَ مُعَاوِيَةُ : «فَرَأَى أَنَّ مُدَّيْنِ مِنْ بُرٍّ تَعْدِلُ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ» قَالَ أَبُو سَعِيدٍ : «فَأَمَّا أَنَا فَلَا أَزَالُ أُخْرِجُهُ كَذَلِكَ»

“রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আমাদের মধ্যে ছিলেন, তখন আমরা ছোট ও বড়, স্বাধীন ও ক্রীতদাস প্রত্যেকের পক্ষ থেকে তিন প্রকার বস্তু থেকে সদকাতুল ফিতর বাবদ এক সা‘ খেজুর, এক সা‘ পনির অথবা এক সা‘  যব প্রদান করতাম। এভাবে আমরা সদকাতুল ফিতর আদায় করছিলাম।  অতঃপর মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সময় আসলো। তখন তিনি দু মুদ এক সা‘ খেজুরের সমান ধার্য করেন। আবু সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি তো সর্বদা পূর্বের ন্যায়ই আদায় করতে থাকব।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৮৫।]

আবু সা‘ঈদ খুদুরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كُنَّا نُخْرِجُ زَكَاةَ الْفِطْرِ مِنْ ثَلَاثَةِ أَصْنَافٍ : الْأَقِطِ، وَالتَّمْرِ، وَالشَّعِيرِ»

“আমরা পনির, খেজুর ও যব -এ তিন প্রকার বস্তু থেকে সদকাতুর ফিতর আদায় করতাম।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৮৫।]

আবু সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,

«أَنَّ مُعَاوِيَةَ، لَمَّا جَعَلَ نِصْفَ الصَّاعِ مِنَ الْحِنْطَةِ، عَدْلَ صَاعٍ مِنْ تَمْرٍ، أَنْكَرَ ذَلِكَ أَبُو سَعِيدٍ، وَقَالَ : لَا أُخْرِجُ فِيهَا إِلَّا الَّذِي كُنْتُ أُخْرِجُ فِي عَهْدِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «صَاعًا مِنْ تَمْرٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ زَبِيبٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ شَعِيرٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ أَقِطٍ»

“মুআবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যখন অর্ধ সা‘ গমকে এক সা‘ খেজুরের সমপরিমাণ নির্ধারণ করলেন, তখন আবু সা‘ঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তা মেনে নিলেন না এবং বললেন, আমি সদকাতুল ফিতর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময়ে যা আদায় করতাম এখনও তাই আদায় করব। এক সা‘ খেজুর অথবা এক সা‘ কিশমিশ অথবা এক সা‘ যব কিংবা এক সা‘ পনির”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৮৫।]

১৩২
সদকাতুল ফিতর এক সা‘ পরিমাণ খাদ্য
ইয়ায ইবন আব্দুল্লাহ ইবন সা‘দ ইবন আবু সারহ আল-‘আমেরী তিনি আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলতে শুনেছেন যে,

«كُنَّا نُخْرِجُ زَكَاةَ الفِطْرِ صَاعًا مِنْ طَعَامٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ شَعِيرٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ أَقِطٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ زَبِيبٍ»

“আমরা এক সা‘ পরিমাণ কিসমিস দিয়ে সদকাতুল ফিতর আদায় করতাম।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫০৬।]

১৩৩
সদকাতুল ফিতর এক সা‘ পরিমাণ খেজুর
‘আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন,

«أَمَرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِزَكَاةِ الفِطْرِ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ شَعِيرٍ» قَالَ عَبْدُ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ : «فَجَعَلَ النَّاسُ عِدْلَهُ مُدَّيْنِ مِنْ حِنْطَةٍ»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সদকাতুল ফিতর হিসাবে এক সা‘ পরিমাণ খেজুর বা এক সা‘ পরিমাণ যব দিয়ে আদায় করতে নির্দেশ দেন। ‘আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘তারপর লোকেরা যবের সমপরিমাণ হিসেবে দু’ মুদ (অর্থ সা‘) গম আদায় করতে থাকে’।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫০৭।]

১৩৪
সদকাতুল ফিতর এক সা‘ পরিমাণ কিসমিস থেকে
আবু সা‘ঈদ খুদুরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كُنَّا نُعْطِيهَا فِي زَمَانِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَاعًا مِنْ طَعَامٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ شَعِيرٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ زَبِيبٍ»، فَلَمَّا جَاءَ مُعَاوِيَةُ وَجَاءَتِ السَّمْرَاءُ، قَالَ : «أُرَى مُدًّا مِنْ هَذَا يَعْدِلُ مُدَّيْنِ»

“আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে এক সা‘ খাদ্যদ্রব্য বা এক সা‘ খেজুর বা এক সা‘ যব বা এক সা‘ কিসমিস দিয়ে সদকাতুল ফিতর আদায় করতাম। মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর যুগে যখন গম আমদানী হলো তখন তিনি বললেন, এক মুদ গম (পূর্বোক্তগুলোর) দু’ মুদ-এর সমপরিমাণ বলে আমার মনে হয়।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫০৮।]

১৩৫
ঈদের সালাতের পূর্বেই সদকাতুল ফিতর আদায় করা
‘আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত যে,

«أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمَرَ بِزَكَاةِ الفِطْرِ قَبْلَ خُرُوجِ النَّاسِ إِلَى الصَّلاَةِ»

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদেরকে ঈদের সালাতের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পূর্বেই সদকাতুল ফিতর আদায় করার নির্দেশ দেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫০৯।]

আবু সা‘ঈদ খুদুরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كُنَّا نُخْرِجُ فِي عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الفِطْرِ صَاعًا مِنْ طَعَامٍ»، وَقَالَ أَبُو سَعِيدٍ : «وَكَانَ طَعَامَنَا الشَّعِيرُ وَالزَّبِيبُ وَالأَقِطُ وَالتَّمْرُ»

“আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে ঈদের দিন এক সা‘ পরিমাণ খাদ্য সদকাতুল ফিতর হিসাবে আদায় করতাম। আবু সা‘ঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমাদের খাদ্যদ্রব্য ছিল যব, কিসমিস, পনির ও খেজুর।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫১০।]

১৩৬
স্বাধীন ও গোলামের পক্ষ থেকে সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব
যুহরী রহ. বলেছেন, বানিজ্যিক পণ্য হিসেবে ব্যবসায়ের জন্য ক্রয় করা গোলামের যাকাত দিতে হবে এবং তাদের সদাকাতুল ফিতরও দিতে হবে।

ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«فَرَضَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَدَقَةَ الفِطْرِ أَوْ قَالَ : رَمَضَانَ عَلَى الذَّكَرِ، وَالأُنْثَى، وَالحُرِّ، وَالمَمْلُوكِ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ شَعِيرٍ «فَعَدَلَ النَّاسُ بِهِ نِصْفَ صَاعٍ مِنْ بُرٍّ، فَكَانَ ابْنُ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا،» يُعْطِي التَّمْرَ «، فَأَعْوَزَ أَهْلُ المَدِينَةِ مِنَ التَّمْرِ، فَأَعْطَى شَعِيرًا»، فَكَانَ ابْنُ عُمَرَ «يُعْطِي عَنِ الصَّغِيرِ، وَالكَبِيرِ، حَتَّى إِنْ كَانَ لِيُعْطِي عَنْ بَنِيَّ»، وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا «يُعْطِيهَا الَّذِينَ يَقْبَلُونَهَا، وَكَانُوا يُعْطُونَ قَبْلَ الفِطْرِ بِيَوْمٍ أَوْ يَوْمَيْنِ»

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক পুরুষ, মহিলা, আযাদ ও গোলামের পক্ষ থেকে সদকাতুল ফিতর অথবা (বলেছেন) সদকা-ই-রামাযান হিসাবে এক সা‘ খেজুর বা এক এক সা‘ যব আদায় করা ফরয করেছেন। তারপর লোকেরা অর্ধ সা‘ গমকে এক সা‘ খেজুরের সমমান দিতে লাগল। (বর্ণনাকারী নাফে’ বলেন) ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু খেজুর (সদকাতুল ফিতর হিসাবে) দিতেন। এক সময় মদীনায় খেজুর দুর্লভ হলে যব দিয়ে তা আদায় করেন। ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু প্রাপ্ত বয়স্ক ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক সকলের পক্ষ থেকেই সদকাতুল ফিতর আদায় করতেন, এমনকি আমার সন্তানদের পক্ষ থেকেও সদকার দ্রব্য গ্রহীতাদেরকে দিয়ে দিতেন এবং ঈদের এক-দু’ দিন পূর্বেই আদায় করে দিতেন।” আবু ‘আব্দুল্লাহ রহ. বলেন, আমার সন্তান অর্থাৎ নাফে’ রহ. এর সন্তান। তিনি আরও বলেন, সদকার মাল একত্রিত করার জন্য দিতেন, ফকীরদের দেওয়ার জন্য নয়। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫১১।]

১৩৭
অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও প্রাপ্ত বয়স্কদের পক্ষ থেকে সদাকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব
আবু ‘আমর রহ. বলেন, উমার, আলী, ইবন উমার, জাবির, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম, তাউস, ‘আতা ও ইবন সীরীন রহ. ইয়াতিমের মাল থেকে সদাকাতুল ফিতর আদায় করার অভিমত ব্যক্ত করেছেন। যুহুরী রহ. বলেন, পাগলের মাল থেকে সদাকাতুল ফিতর আদায় করা হবে।

ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«فَرَضَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَدَقَةَ الفِطْرِ صَاعًا مِنْ شَعِيرٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ عَلَى الصَّغِيرِ وَالكَبِيرِ، وَالحُرِّ وَالمَمْلُوكِ»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপ্রাপ্ত বয়স্ক, প্রাপ্ত বয়স্ক, আযাদ ও গোলাম প্রত্যেকের পক্ষ থেকে এক সা‘ যব অথবা এক সা‘ খেজুর সদকাতুল ফিতর হিসাবে আদায় করা ফরয করে দিয়েছেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫১২।]

১৩৮
ষষ্ঠ অধ্যায়: ঈদের সালাত দু’ঈদ ও সুন্দর পোশাক পরিধান করা
‘আব্দুল্লাহ ইবন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন,

«أَخَذَ عُمَرُ جُبَّةً مِنْ إِسْتَبْرَقٍ تُبَاعُ فِي السُّوقِ، فَأَخَذَهَا، فَأَتَى بِهَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ، ابْتَعْ هَذِهِ تَجَمَّلْ بِهَا لِلْعِيدِ وَالوُفُودِ، فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «إِنَّمَا هَذِهِ لِبَاسُ مَنْ لاَ خَلاَقَ لَهُ» فَلَبِثَ عُمَرُ مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَلْبَثَ، ثُمَّ أَرْسَلَ إِلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِجُبَّةِ دِيبَاجٍ، فَأَقْبَلَ بِهَا عُمَرُ، فَأَتَى بِهَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ : إِنَّكَ قُلْتَ : «إِنَّمَا هَذِهِ لِبَاسُ مَنْ لاَ خَلاَقَ لَهُ» وَأَرْسَلْتَ إِلَيَّ بِهَذِهِ الجُبَّةِ، فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «تَبِيعُهَا أَوْ تُصِيبُ بِهَا حَاجَتَكَ»

“বাজারে বিক্রি হচ্ছিল এমন একটি রেশমী জুব্বা নিয়ে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনি এটি কিনে নিন। ঈদের সময় এবং প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাতকালে এটি দিয়ে নিজেকে সজ্জিত করবেন। তথন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, এটি তো তার পোষাক যার (আখিরাতে) কল্যাণের কোনো অংশ নেই। এ ঘটনার পর উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আল্লাহর যত দিন ইচ্ছা ততদিন অতিবহিত করলেন। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিকট একটি রেশমী জুব্বা পাঠালেন, উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তা গ্রহণ করেন এবং সেটি নিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি তো বলেছিলেন, এটা তার পোষাক যার (আখিরাতে) কল্যাণের কোনো অংশ নাই। অথচ আপনি এ জু্ব্বা আমার নিকট পাঠিয়েছেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি এটি বিক্রি করে দাও এবং বিক্রয়লব্ধ অর্থে তোমার প্রয়োজন মিটাও।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৪৮।]

১৩৯
ঈদের দিন বর্শা ও ঢালের খেলা
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«دَخَلَ عَلَيَّ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعِنْدِي جَارِيَتَانِ تُغَنِّيَانِ بِغِنَاءِ بُعَاثَ، فَاضْطَجَعَ عَلَى الفِرَاشِ، وَحَوَّلَ وَجْهَهُ، وَدَخَلَ أَبُو بَكْرٍ، فَانْتَهَرَنِي وَقَالَ : مِزْمَارَةُ الشَّيْطَانِ عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَقْبَلَ عَلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ عَلَيْهِ السَّلاَمُ فَقَالَ : «دَعْهُمَا»، فَلَمَّا غَفَلَ غَمَزْتُهُمَا فَخَرَجَتَا، وَكَانَ يَوْمَ عِيدٍ، يَلْعَبُ السُّودَانُ بِالدَّرَقِ وَالحِرَابِ، فَإِمَّا سَأَلْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَإِمَّا قَالَ : «تَشْتَهِينَ تَنْظُرِينَ؟» فَقُلْتُ : نَعَمْ، فَأَقَامَنِي وَرَاءَهُ، خَدِّي عَلَى خَدِّهِ، وَهُوَ يَقُولُ : «دُونَكُمْ يَا بَنِي أَرْفِدَةَ» حَتَّى إِذَا مَلِلْتُ، قَالَ : «حَسْبُكِ؟» قُلْتُ : نَعَمْ، قَالَ : «فَاذْهَبِي»

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে এলেন তখন আমার নিকট দু’টি মেয়ে বু’আস যুদ্ধ সংক্রান্ত কবিতা আবৃত্তি করছিল। তিনি বিছানায় শুয়ে পড়লেন এবং চেহারা অন্যদিকে ফিরিয়ে রাখলেন। এ সময় আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এলেন, তিনি আমাকে ধমক দিয়ে বললেন, শয়তানী বাদ্যযন্ত্র (দফ) বাজান হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন, তাদের ছেড়ে দাও। তারপর তিনি যখন অন্য দিকে ফিরলেন তখন আমি তাদের ইঙ্গিত করলাম এবং তারা বের হয়ে গেল। আর ঈদের দিন সুদানীরা বর্শা ও ঢালের দ্বারা খেলা করত। আমি নিজে (একবার) রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কছে আরয করেছিলাম অথবা তিনি নিজেই বলেছিলেন, তুমি কি তাদের খেলা দেখতে চাও? আমি বললাম, হ্যাঁ, তারপর তিনি আমাকে তাঁর পিছনে এমনভাবে দাঁড় করিয়ে দিলেন যে, আমার গাল ছিল তার গালের সাথে লাগান। তিনি তাদের বললেন, তোমরা যা করতে ছিলে তা করতে থাক, হে বনু আরফিদা। পরিশেষে আমি যখন ক্লান্ত হয়ে পড়লাম, তথন তিনি আমাকে বললেন, তোমার কি দেখা শেষ হয়েছে? আমি বললাম, হ্যাঁ, তিনি বললেন, তাহলে চলে যাও।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৪৯।]

১৪০
মুসলিমদের জন্য উভয় ঈদের রীতিনীতি
বারা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খুতবা দিতে শুনেছি। তিনি বলেছেন,

«إِنَّ أَوَّلَ مَا نَبْدَأُ مِنْ يَوْمِنَا هَذَا أَنْ نُصَلِّيَ، ثُمَّ نَرْجِعَ، فَنَنْحَرَ فَمَنْ فَعَلَ فَقَدْ أَصَابَ سُنَّتَنَا»

“আমাদের আজকের এ দিনে আমরা যে কাজ প্রথম শুরু করব, তা হলো সালাত আদায় করা। এরপর ফিরে আসব এবং কুরবানী করব। তাই যে এরূপ করে সে আমাদের রীতিনীতি সঠিকভাবে পালন করল।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৫১।]

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«دَخَلَ أَبُو بَكْرٍ وَعِنْدِي جَارِيَتَانِ مِنْ جَوَارِي الأَنْصَارِ تُغَنِّيَانِ بِمَا تَقَاوَلَتِ الأَنْصَارُ يَوْمَ بُعَاثَ، قَالَتْ : وَلَيْسَتَا بِمُغَنِّيَتَيْنِ، فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ : أَمَزَامِيرُ الشَّيْطَانِ فِي بَيْتِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَذَلِكَ فِي يَوْمِ عِيدٍ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «يَا أَبَا بَكْرٍ، إِنَّ لِكُلِّ قَوْمٍ عِيدًا وَهَذَا عِيدُنَا»

“(একদিন আমার ঘরে) আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এলেন তখন আমার নিকট আনসার দু’টি মেয়ে বু’আস যুদ্ধের দিন আনসারীগণ পরস্পর যা বলেছিলেন সে সম্পর্কে কবিতা আবৃত্তি করছিল। তিনি বলেন, তারা কোনো পেশাগত গায়িকা ছিল না। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘরে শয়তানী বাদ্যযন্ত্র। আর এটি ছিল ঈদের দিন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আবু বকর! প্রত্যেক জাতির জন্যই আনন্দ উৎসব রয়েছে আর এ হলো আমাদের আনন্দ।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৫২।]

১৪১
ঈদুল ফিতরের দিন সালাতে বের হওয়ার আগে আহার করা
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু খেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَ يَغْدُو يَوْمَ الفِطْرِ حَتَّى يَأْكُلَ تَمَرَاتٍ» وَقَالَ مُرَجَّأُ بْنُ رَجَاءٍ، حَدَّثَنِي عُبَيْدُ اللَّهِ، قَالَ : حَدَّثَنِي أَنَسٌ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، «وَيَأْكُلُهُنَّ وِتْرًا»

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন কিছু খেজুর না খেয়ে বের থেকেন না। অপর এক বর্ণনায় আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি তা বেজোড় সংখ্যক খেতেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৫৩।]

১৪২
কুরবানীর দিন আহার করা
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ ذَبَحَ قَبْلَ الصَّلاَةِ، فَلْيُعِدْ»، فَقَامَ رَجُلٌ فَقَالَ : هَذَا يَوْمٌ يُشْتَهَى فِيهِ اللَّحْمُ، وَذَكَرَ مِنْ جِيرَانِهِ، فَكَأَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَدَّقَهُ، قَالَ : وَعِنْدِي جَذَعَةٌ أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ شَاتَيْ لَحْمٍ، فَرَخَّصَ لَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَلاَ أَدْرِي أَبَلَغَتِ الرُّخْصَةُ مَنْ سِوَاهُ أَمْ لاَ»

“সালাতের আগে যে যবেহ করবে তাকে আবার যবেহ (কুরবানী) করতে হবে। তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, আজকের এদিন গোশত খাওয়ার আকাংক্ষা করা হয়। সে তার প্রতিবেশিদের অবস্থা উল্লেখ করল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেন তার কথার সত্যতা স্বীকার করলেন। সে বলল, আমার নিকট এখন ছয় মাসের এমন একটি মেষ শাবক আছে, যা আমার কাছে দু’টি হৃষ্টপুষ্ট বকরীর চেয়েও বেশি পচন্দনীয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সেটা কুরবানী করার অনুমতি দিলেন। অবশ্য আমি জানি না, এ অনুমতি তাকে ছাড়া অন্যদের জন্যও কি না?” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৫৪।]

বারা ইবন ‘আযিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«خَطَبَنَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الأَضْحَى بَعْدَ الصَّلاَةِ، فَقَالَ : «مَنْ صَلَّى صَلاَتَنَا، وَنَسَكَ نُسُكَنَا، فَقَدْ أَصَابَ النُّسُكَ، وَمَنْ نَسَكَ قَبْلَ الصَّلاَةِ، فَإِنَّهُ قَبْلَ الصَّلاَةِ وَلاَ نُسُكَ لَهُ»، فَقَالَ أَبُو بُرْدَةَ بْنُ نِيَارٍ خَالُ البَرَاءِ : يَا رَسُولَ اللَّهِ، فَإِنِّي نَسَكْتُ شَاتِي قَبْلَ الصَّلاَةِ، وَعَرَفْتُ أَنَّ اليَوْمَ يَوْمُ أَكْلٍ وَشُرْبٍ، وَأَحْبَبْتُ أَنْ تَكُونَ شَاتِي أَوَّلَ مَا يُذْبَحُ فِي بَيْتِي، فَذَبَحْتُ شَاتِي وَتَغَدَّيْتُ قَبْلَ أَنْ آتِيَ الصَّلاَةَ، قَالَ : «شَاتُكَ شَاةُ لَحْمٍ» قَالَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ، فَإِنَّ عِنْدَنَا عَنَاقًا لَنَا جَذَعَةً هِيَ أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ شَاتَيْنِ، أَفَتَجْزِي عَنِّي؟ قَالَ : «نَعَمْ وَلَنْ تَجْزِيَ عَنْ أَحَدٍ بَعْدَكَ»

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল আযহার দিন সালাতের পর আমাদের উদ্দেশ্যে খুতবা দান করেন। খুতবায় বলেন, যে আমাদের মতো সালাত আদায় করল এবং আমাদের মতো কুরবানী করল, সে কুরবানীর রীতিনীতি যথাযথ পালন করল। আর যে সালাতের আগে কুরবানী করল তা সালাতের আগে হয়ে গেল, কিন্তু এতে তার কুরবানী হবে না। বারা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর মামা আবু বুরদাহ ইবন নিয়ার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তখন বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার জানামতে আজকের দিনটি পানাহারের দিন। তাই আমি পচন্দ করলাম যে, আমার ঘরে সর্বপ্রথম যবেহ করা হোক আমার বকরীই। তাই আমি আমার বকরীটি যবেহ করেছি এবং সালাতে আসার পূর্বে তা দিয়ে নাশতাও করেছি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার বকরীটি গোশতের উদ্দেশ্যে যবেহ করা হয়েছে। তখন তিনি আরয করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমাদের কাছে এমন একটি ছয় মাসের শেষ শাবক আছে যা আমার কাছে দু’টি বকরীর চাইতেও পচন্দীয়। এটি (কুরবানী দিলে) কি আমার জন্য যথেষ্ট হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তবে তুমি ব্যতীত অন্য কারো জন্য যথেষ্ট কবে না।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৫৫।]

১৪৩
মিম্বার না নিয়ে ঈদগাহে গমন
আবু সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْرُجُ يَوْمَ الفِطْرِ وَالأَضْحَى إِلَى المُصَلَّى، فَأَوَّلُ شَيْءٍ يَبْدَأُ بِهِ الصَّلاَةُ، ثُمَّ يَنْصَرِفُ، فَيَقُومُ مُقَابِلَ النَّاسِ، وَالنَّاسُ جُلُوسٌ عَلَى صُفُوفِهِمْ فَيَعِظُهُمْ، وَيُوصِيهِمْ، وَيَأْمُرُهُمْ، فَإِنْ كَانَ يُرِيدُ أَنْ يَقْطَعَ بَعْثًا قَطَعَهُ، أَوْ يَأْمُرَ بِشَيْءٍ أَمَرَ بِهِ، ثُمَّ يَنْصَرِفُ» قَالَ أَبُو سَعِيدٍ : «فَلَمْ يَزَلِ النَّاسُ عَلَى ذَلِكَ حَتَّى خَرَجْتُ مَعَ مَرْوَانَ - وَهُوَ أَمِيرُ المَدِينَةِ - فِي أَضْحًى أَوْ فِطْرٍ، فَلَمَّا أَتَيْنَا المُصَلَّى إِذَا مِنْبَرٌ بَنَاهُ كَثِيرُ بْنُ الصَّلْتِ، فَإِذَا مَرْوَانُ يُرِيدُ أَنْ يَرْتَقِيَهُ قَبْلَ أَنْ يُصَلِّيَ، فَجَبَذْتُ بِثَوْبِهِ، فَجَبَذَنِي، فَارْتَفَعَ، فَخَطَبَ قَبْلَ الصَّلاَةِ»، فَقُلْتُ لَهُ : غَيَّرْتُمْ وَاللَّهِ، فَقَالَ أَبَا سَعِيدٍ : «قَدْ ذَهَبَ مَا تَعْلَمُ»، فَقُلْتُ : مَا أَعْلَمُ وَاللَّهِ خَيْرٌ مِمَّا لاَ أَعْلَمُ، فَقَالَ : «إِنَّ النَّاسَ لَمْ يَكُونُوا يَجْلِسُونَ لَنَا بَعْدَ الصَّلاَةِ، فَجَعَلْتُهَا قَبْلَ الصَّلاَةِ»

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন ঈদগাহে গমন করে সেখানে তিনি প্রথম যে কাজ শুরু করতেন তা হলো সালাত। আর সালাত শেষ করে তিনি লোকদের দিকে মুখ করে দাঁড়াতেন এবং তারা তাঁদের কাতারে বসে থাকতেন। তিনি তাদের নসীহত করতেন, উপদেশ দিতেন এবং নির্দেশ দান করতেন। যদি তিনি কোনো সেনাদল পাঠাবার ইচ্ছা করতেন, তবে তাদের আলাদা করে নিতেন অথবা যদি কোনো বিষয়ে নির্দেশ জারী করার ইচ্ছা করতেন তবে তা জারি করতেন। তারপর তিনি ফিরে যেতেন। আবু সা‘ঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, লোকেরা বরাবর এই নিয়ম অনুসরণ করে আসছিল। অবশেষে যখন মারওয়ান মদীনার আমীর হলেন, তখন ঈদুল আযহা বা ঈদুল ফিতরের উদ্দেশ্যে আমি তার সঙ্গে বের হলাম। আমরা যখন ঈদগাহে পৌঁছলাম তখন সেখানে একটি মিম্বর দেখতে পেলাম, সেটি কাসীর ইবন সালত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তৈরি করেছিলেন। মারওয়ান সালাত আদায়ের আগেই এর উপর আরোহণ করতে উদ্যত হলেন। আমি তার কাপড় টেনে ধরলাম। কিন্তু কাপড় ছাড়িয়ে খুতবা দিলেন। আমি তাকে বললাম, আল্লাহর কসম! তোমরা (রাসুলের সুন্নাত) পরিবর্তন করে ফেলেছ। সে বলল, হে আবু সা‘ঈদ! তোমরা যা জানতে, তা গত হয়ে গিয়েছে। আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমি যা জানি, তা তার চেয়ে ভালো, যা আমি জানি না। সে তখন বলল, লোকজন সালাতের পর আমাদের জন্য বসে থাকে না, তাই আমি খুতবা সালাতের আগেই দিয়েছি।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৫৬।]

১৪৪
পায়ে হেঁটে বা সাওয়ারীতে আরোহণ করে ঈদের জামা‘আতে যাওয়া এবং আযান ও ইকামত ছাড়া খুতবার পূর্বে সালাত আদায় করা
‘আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,

«أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُصَلِّي فِي الأَضْحَى وَالفِطْرِ، ثُمَّ يَخْطُبُ بَعْدَ الصَّلاَةِ»

“রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরের দিন সালাত আদায় করতেন। আর সালাত শেষে খুতবা দিতেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৫৭।]

জাবির ইবন ‘আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,

يَقُولُ : «إِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَرَجَ يَوْمَ الفِطْرِ، فَبَدَأَ بِالصَّلاَةِ قَبْلَ الخُطْبَةِ»

তিনি বলেন, “রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন বের থেকেন। এরপর খুতবার আগে সালাত শুরু করেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৫৮।]

«أخبرني عطاء : أن عباس أرسل إلى ابن الزبير في أول ما بويع له إنه لم يكن يؤذن بالصلاة يوم الفطر إنما الخطبة بعد الصلاة»

বর্ণনাকারী বলেন, আমাকে আতা রহ. বলেছেন যে, ইবন যুবায়র রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর বাই‘আত গ্রহণের প্রথম দিকে ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এ বলে লোক পাঠালেন যে, ঈদুল ফিতরের সালাতে আযান দেওয়া হত না এবং খুতবা দেওয়া হতো সালাতের পরে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৫৯।]

ইবন ‘আব্বাস ও জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তারা উভয়ে বলেন,

«لَمْ يَكُنْ يُؤَذَّنُ يَوْمَ الفِطْرِ وَلاَ يَوْمَ الأَضْحَى»

“ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আদহার সালাতে আযান দেওয়া হতো না”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৬০।]

জাবির ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে,

يَقُولُ : «إِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَامَ فَبَدَأَ بِالصَّلاَةِ، ثُمَّ خَطَبَ النَّاسَ بَعْدُ، فَلَمَّا فَرَغَ نَبِيُّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَزَلَ، فَأَتَى النِّسَاءَ، فَذَكَّرَهُنَّ وَهُوَ يَتَوَكَّأُ عَلَى يَدِ بِلاَلٍ، وَبِلاَلٌ بَاسِطٌ ثَوْبَهُ يُلْقِي فِيهِ النِّسَاءُ صَدَقَةً» قُلْتُ لِعَطَاءٍ : أَتَرَى حَقًّا عَلَى الإِمَامِ الآنَ : أَنْ يَأْتِيَ النِّسَاءَ فَيُذَكِّرَهُنَّ حِينَ يَفْرُغُ؟ قَالَ : «إِنَّ ذَلِكَ لَحَقٌّ عَلَيْهِمْ وَمَا لَهُمْ أَنْ لاَ يَفْعَلُوا»

“তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে প্রথমে সালাত আদায় করলেন এবং পরে লোকদের উদ্দেশ্যে খুতবা দিলেন। যখন রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা শেষ করলেন, তিনি (মিম্বর থেকে) নেমে মহিলাগণের (কাতারে) আসলেন এবং তাদের নসীহত করলেন। তখন তিনি বিলাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাতে ভর করেছিলেন এবং বিলাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তার কাপড় জড়িয়ে ধরলে, মহিলাগণ এতে সদকার বস্তু দিতে লাগলেন। আমি আতা রহ.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কি এখনো জরুরী মনে করেন যে, ইমাম খুতবা শেষ করে মহিলাগণের নিকট এসে তাদের নসীহত করবেন? তিনি বললেন, নিশ্চয় তা তাদের জন্য অবশ্যই জরুরী। তাদের কী হয়েছে যে, তারা তা করবে না?” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৬১।]

১৪৫
ঈদের সালাতের পরে খুতবা দেওয়া
ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«شَهِدْتُ العِيدَ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَأَبِي بَكْرٍ، وَعُمَرَ، وَعُثْمَانَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ، فَكُلُّهُمْ كَانُوا يُصَلُّونَ قَبْلَ الخُطْبَةِ»

“আমি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বকর, উমার এবং ‘উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম-এর সঙ্গে সালাতে হাযির ছিলাম। তারা সবাই খুতবার আগে সালাত আদায় করতেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৬২।]

ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَأَبُو بَكْرٍ، وَعُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، يُصَلُّونَ العِيدَيْنِ قَبْلَ الخُطْبَةِ»

“রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বকর এবং উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা উভয় ঈদের সালাত খুতবার পূর্বে আদায় করতেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৬৩।]

ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত যে,

«أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَّى يَوْمَ الفِطْرِ رَكْعَتَيْنِ لَمْ يُصَلِّ قَبْلَهَا وَلاَ بَعْدَهَا، ثُمَّ أَتَى النِّسَاءَ وَمَعَهُ بِلاَلٌ، فَأَمَرَهُنَّ بِالصَّدَقَةِ، فَجَعَلْنَ يُلْقِينَ تُلْقِي المَرْأَةُ خُرْصَهَا وَسِخَابَهَا»

“রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরে দু রাকা‘আত সালাত আদায় করেন। এর আগে ও পরে কোনো সালাত আদায় করেন নি। তারপর বিলাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে সঙ্গে নিয়ে মহিলাদের কাছে এলেন এবং সদকা প্রদানের জন্য তাদের নির্দেশ দিলেন। তখন তারা দিতে লাগলেন। কেউ দিলেন আংটি, আবার কেউ দিলেন গলার হার।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৬৪।]

বারাআ ইবন ‘আযিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إِنَّ أَوَّلَ مَا نَبْدَأُ فِي يَوْمِنَا هَذَا أَنْ نُصَلِّيَ، ثُمَّ نَرْجِعَ فَنَنْحَرَ، فَمَنْ فَعَلَ ذَلِكَ فَقَدْ أَصَابَ سُنَّتَنَا، وَمَنْ نَحَرَ قَبْلَ الصَّلاَةِ فَإِنَّمَا هُوَ لَحْمٌ قَدَّمَهُ لِأَهْلِهِ، لَيْسَ مِنَ النُّسْكِ فِي شَيْءٍ» فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الأَنْصَارِ يُقَالُ لَهُ أَبُو بُرْدَةَ بْنُ نِيَارٍ : يَا رَسُولَ اللَّهِ، ذَبَحْتُ وَعِنْدِي جَذَعَةٌ خَيْرٌ مِنْ مُسِنَّةٍ، فَقَالَ : «اجْعَلْهُ مَكَانَهُ وَلَنْ تُوفِيَ أَوْ تَجْزِيَ عَنْ أَحَدٍ بَعْدَكَ»

“আজকের এ দিনে আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে সালাত আদায় করা। এরপর আমরা (বাড়ি) ফিরে আসব এবং কুরবানী করব। কাজেই যে ব্যক্তি তা করল, সে আমাদের নিয়ম পালন করল। যে ব্যক্তি সালাতের আগে কুরবানী করল, তা শুধু গোশত বলেই গন্য হবে, যা সে পরিবারবর্গের জন্য আগেই করে ফেলেছে। এতে কুরবানী কিছুই নেই। তখন আবু বুরদা ইবন নিয়ার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নামক এক আনসারী বললেন, ইয়া রাসূলল্লাহ! আমি তো (আগেই) যবেহ করে ফেলেছি। এখন আমার নিকট এমন একটি মেষ শাবক আছে যা এক বছর বয়সের মেষের চেয়ে উত্তম। তিনি বললেন, সেটির স্থলে এটিকে যবেহ করে ফেল। তবে তোমার পর অন্য কারো জন্য তা যথেষ্ট হবে না।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৬৫।]

১৪৬
ঈদের জামা‘আতে এবং হারাম শরীফে অস্ত্র বহন নিষিদ্ধ
হাসান বসরী রহ. বলেছেন, শত্রুর ভয় ব্যতীত ঈদের দিনে অস্ত্র বহন করতে তাদের নিষেধ করা হয়েছে।

সা‘ঈদ ইবন জুবাইর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كُنْتُ مَعَ ابْنِ عُمَرَ حِينَ أَصَابَهُ سِنَانُ الرُّمْحِ فِي أَخْمَصِ قَدَمِهِ، فَلَزِقَتْ قَدَمُهُ بِالرِّكَابِ، فَنَزَلْتُ، فَنَزَعْتُهَا وَذَلِكَ بِمِنًى، فَبَلَغَ الحَجَّاجَ فَجَعَلَ يَعُودُهُ، فَقَالَ الحَجَّاجُ : لَوْ نَعْلَمُ مَنْ أَصَابَكَ، فَقَالَ ابْنُ عُمَرَ : «أَنْتَ أَصَبْتَنِي» قَالَ : وَكَيْفَ؟ قَالَ : «حَمَلْتَ السِّلاَحَ فِي يَوْمٍ لَمْ يَكُنْ يُحْمَلُ فِيهِ، وَأَدْخَلْتَ السِّلاَحَ الحَرَمَ وَلَمْ يَكُنِ السِّلاَحُ يُدْخَلُ الحَرَمَ»

“আমি ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সঙ্গে ছিলাম যখন বর্শার অগ্রভাগ তার পায়ের তলদেশে বিদ্ধ হয়েছিল। ফলে তার পা রেকাবের সাথে আটকে গিয়েছিল। আমি তখন নেমে সেটি টেনে বের করে ফেললাম। এ ঘটে ছিল মিনায়। এ সংবাদ হাজ্জাজের নিকট পৌঁছলে তিনি তাকে দেখতে আসেন। হাজ্জাজ বলল, যদি আমি জানতে পারতাম কে আপনাকে আঘাত করেছে, (তাকে আমি শাস্তি দিতাম)। তখন ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, তুমিই আমাকে আঘাত করেছে। সে বলল, তা কীভাবে? ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বললেন, তুমিই সেদিন (ঈদের দিন) অস্ত্র ধারণ করেছ, যে দিন অস্ত্র ধারণ করা হত না। তুমিই অস্ত্রকে হারাম শরীফে প্রবেশ করিয়েছ অথচ হারাম শরীফে কখনো অস্ত্র প্রবেশ করা হয় না।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৬৬।]

সা‘ঈদ ইবন ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

عَنْ سَعِيدِ بْنِ العَاصِ، قَالَ : دَخَلَ الحَجَّاجُ عَلَى ابْنِ عُمَرَ وَأَنَا عِنْدَهُ، فَقَالَ : كَيْفَ هُوَ؟ فَقَالَ : صَالِحٌ، فَقَالَ : مَنْ أَصَابَكَ؟ قَالَ : «أَصَابَنِي مَنْ أَمَرَ بِحَمْلِ السِّلاَحِ فِي يَوْمٍ لاَ يَحِلُّ فِيهِ حَمْلُهُ» يَعْنِي الحَجَّاجَ

“ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার নিকট হাজ্জাজ এলো। আমি তখন তার কাছে ছিলাম। হাজ্জাজ জিজ্ঞাসা করলো, তিনি কেমন আছেন? ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বললেন, ভালো। হাজ্জাজ জিজ্ঞাসা করলো, আপনাকে কে আঘাত করেছে? তিনি বললেন, আমাকে সে ব্যক্তি আঘাত করেছে, যে সেদিন (ঈদের) অস্ত্র ধারণের আদেশ দিয়েছে, যে দিন তা ধারণ করা বৈধ নয়। অর্থাৎ হাজ্জাজ।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৬৭।]

১৪৭
ঈদের সালাতের জন্য সকাল সকাল রওয়ানা হওয়া
আব্দুল্লাহ ইবন বুসর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছেন, আমরা চাশতের সালাতের সময় ঈদের সালাত সমাপ্ত করতাম।

বারা ইবন ‘আযিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«خَطَبَنَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ النَّحْرِ، قَالَ : «إِنَّ أَوَّلَ مَا نَبْدَأُ بِهِ فِي يَوْمِنَا هَذَا أَنْ نُصَلِّيَ، ثُمَّ نَرْجِعَ، فَنَنْحَرَ فَمَنْ فَعَلَ ذَلِكَ فَقَدْ أَصَابَ سُنَّتَنَا، وَمَنْ ذَبَحَ قَبْلَ أَنْ يُصَلِّيَ، فَإِنَّمَا هُوَ لَحْمٌ عَجَّلَهُ لِأَهْلِهِ لَيْسَ مِنَ النُّسُكِ فِي شَيْءٍ»، فَقَامَ خَالِي أَبُو بُرْدَةَ بْنُ نِيَارٍ، فَقَالَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَنَا ذَبَحْتُ قَبْلَ أَنْ أُصَلِّيَ وَعِنْدِي جَذَعَةٌ خَيْرٌ مِنْ مُسِنَّةٍ قَالَ : " اجْعَلْهَا مَكَانَهَا - أَوْ قَالَ : اذْبَحْهَا - وَلَنْ تَجْزِيَ جَذَعَةٌ عَنْ أَحَدٍ بَعْدَكَ»

“রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর দিন আমাদের উদ্দেশ্যে খুতবা দিতেন। তিনি বলেন, আজাকের দিনে আমাদের প্রথম কাজ হলো সালাত আদায় করা। তারপর ফিরে এসে কুরবানী করা। যে ব্যক্তি এরূপ করবে সে আমাদের নিয়ম পালন করল। আর যে ব্যক্তি সালাতের আগেই যবেহ করবে, তা শুধু গোশতের জন্যই হবে, যা সে পরিবারের জন্য তাড়াতাড়ি করে ফেলেছে। কুরবানীর সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। তখন আমার মামা আবু বুরদা ইবন নিয়ার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু দাঁড়িয়ে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি তো সালাতের আগেই যবেহ করে ফেলেছি। তবে এখন আমার নিকট এমন একটি ছয় মাসের (জায‘আ) মেষশাবক আছে যা এক বছরের (মুসিন্না) মেষের চাইতেও উত্তম। তখন রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তার স্থলে এটিই কুরবানী করে নাও। অথবা তিনি বললেন, এটিই যবেহ কর। তবে তুমি ব্যতীত আর কারো জন্যই মেষশাবক যথেষ্ঠ হবে না।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৬৮।]

১৪৮
ঈদের দিন বর্শা সামনে পুতে সালাত আদায় করা
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত,

«أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ تُرْكَزُ الحَرْبَةُ قُدَّامَهُ يَوْمَ الفِطْرِ وَالنَّحْرِ، ثُمَّ يُصَلِّي»

“ঈদুল ফিতর ও কুরবানীর দিন রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে বর্শা পুতে দেওয়া হতো। তারপর তিনি সালাত আদায় করতেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৭২।]

১৪৯
ঈদের দিন ইমামের সামনে বল্লম বা বর্শা বহন করা
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَغْدُو إِلَى المُصَلَّى وَالعَنَزَةُ بَيْنَ يَدَيْهِ تُحْمَلُ، وَتُنْصَبُ بِالْمُصَلَّى بَيْنَ يَدَيْهِ، فَيُصَلِّي إِلَيْهَا»

“রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সকাল বেলায় ঈদগাহে যেতেন, তথন তার সামনে বর্শা বহন করা হতো এবং তার সামনে ঈদগাহে তা স্থাপন করা হতো এবং একে সামনে রেখে তিনি সালাত আদায় করতেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৭৩।]

১৫০
মহিলাদের ও ঋতুবতীদের ঈদগাহে গমন
উম্মে ‘আতীয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«أَمَرَنَا نَبِيُّنَا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِأَنْ نُخْرِجَ العَوَاتِقَ وَذَوَاتِ الخُدُورِ» وَعَنْ أَيُّوبَ، عَنْ حَفْصَةَ بِنَحْوِهِ وَزَادَ فِي حَدِيثِ حَفْصَةَ، قَالَ : أَوْ قَالَتْ : «العَوَاتِقَ وَذَوَاتِ الخُدُورِ، وَيَعْتَزِلْنَ الحُيَّضُ المُصَلَّى»

“(ঈদের সালাতের উদ্দেশ্যে) যুবতী ও পর্দানশীন মেয়েদের নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের আদেশ করা হতো। আইয়্যুব রহ. থেকে হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা সূত্রে অনুরূপ বর্ণিত আছে এবং হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার বর্ণনায় অতিরিক্ত আছে যে, ঈদগাহে ঋতুবতী মহিলারা আলাদা থাকতেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৭৪।]

১৫১
বালকদের ঈদগাহে গমন
আব্দুর রহমান ইবন ‘আবেস থেকে বর্ণিদ, তিনি বলেন, আমি ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমাকে শুনেছি, তিনি বলেন,

«خَرَجْتُ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ فِطْرٍ أَوْ أَضْحَى فَصَلَّى، ثُمَّ خَطَبَ، ثُمَّ أَتَى النِّسَاءَ، فَوَعَظَهُنَّ، وَذَكَّرَهُنَّ، وَأَمَرَهُنَّ بِالصَّدَقَةِ»

“রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ঈদুল ফিতর বা আযহার দিন বের হলাম। তিনি সালাত আদায় করলেন। এরপর খুতবা দিলেন। তারপর মহিলাগণের কাছে গিয়ে তাদের উপদেশ দিলেন, তাদের নসীহত করলেন এবং তাদেরকে সদকা দানের নির্দেশ দিলেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৭৫।]

১৫২
ঈদের খুতবা দেওয়ার সময় মুসল্লীদের দিকে ইমামের মুখ করে দাঁড়ানো
আবু সা‘ঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসল্লীগণের দিকে মুখ করে দাঁড়াতেন।

বারা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«خَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ أَضْحًى إِلَى البَقِيعِ، فَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ، ثُمَّ أَقْبَلَ عَلَيْنَا بِوَجْهِهِ، وَقَالَ : «إِنَّ أَوَّلَ نُسُكِنَا فِي يَوْمِنَا هَذَا، أَنْ نَبْدَأَ بِالصَّلاَةِ، ثُمَّ نَرْجِعَ، فَنَنْحَرَ، فَمَنْ فَعَلَ ذَلِكَ فَقَدْ وَافَقَ سُنَّتَنَا، وَمَنْ ذَبَحَ قَبْلَ ذَلِكَ، فَإِنَّمَا هُوَ شَيْءٌ عَجَّلَهُ لِأَهْلِهِ لَيْسَ مِنَ النُّسُكِ فِي شَيْءٍ» فَقَامَ رَجُلٌ، فَقَالَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنِّي ذَبَحْتُ وَعِنْدِي جَذَعَةٌ خَيْرٌ مِنْ مُسِنَّةٍ؟ قَالَ : «اذْبَحْهَا، وَلاَ تَفِي عَنْ أَحَدٍ بَعْدَكَ»

“একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল আযহার দিন বাকী’ (নামক কবরস্থানে) গমন করেন। তারপর তিনি দু’রাকা‘আত সালাত আদায় করেন এরপর আমাদের দিকে মুখ করে দাঁড়ালেন এবং তিনি বলেন, আজকের দিনের প্রথম ইবাদাত হলো সালাত আদায় করা। এরপর (বাড়ি) ফিরে গিয়ে কুরবানী করা। যে ব্যক্তি এরূপ করবে সে আমাদের নিয়ম অনুযায়ী কাজ করবে। আর যে এর পূর্বেই যবেহ করবে তা হলে তার যবেহ হবে এমন একটি কাজ, যা সে নিজের পরিবারবর্গের জন্যই তাড়াতাড়ি করে ফেলেছে, এর সাথে কুরবানীর কোনো সম্পর্ক নেই। তখন এক ব্যক্তি (আবু বুরদা ইবন নিয়ার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) দাড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি (তো সালাতের পূর্বেই) যবেহ করে ফেলেছি। এখন আমার নিকট এমন একটি মেষশাবক আছে যা পূর্ণবয়স্ক মেষের চেয়ে উত্তম। (এটা কুরবানী করা যাবে কি?) তিনি বললেন, এটাই যবেহ কর। তবে তোমার পর আর কারো জন্য তা যথেষ্ট হবে না।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৭৬।]

১৫৩
ঈদগাহে চিহ্ন রাখা
বর্ণনাকারী বলেন, আব্দুর রহমান ইবন ‘আবেস আমার নিকট হাদীস বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমাকে শুনেছি,

قِيلَ لَهُ : أَشَهِدْتَ العِيدَ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ : «نَعَمْ، وَلَوْلاَ مَكَانِي مِنَ الصِّغَرِ مَا شَهِدْتُهُ حَتَّى أَتَى العَلَمَ الَّذِي عِنْدَ دَارِ كَثِيرِ بْنِ الصَّلْتِ، فَصَلَّى، ثُمَّ خَطَبَ، ثُمَّ أَتَى النِّسَاءَ وَمَعَهُ بِلاَلٌ، فَوَعَظَهُنَّ، وَذَكَّرَهُنَّ، وَأَمَرَهُنَّ بِالصَّدَقَةِ، فَرَأَيْتُهُنَّ يَهْوِينَ بِأَيْدِيهِنَّ يَقْذِفْنَهُ فِي ثَوْبِ بِلاَلٍ، ثُمَّ انْطَلَقَ هُوَ وَبِلاَلٌ إِلَى بَيْتِهِ»

“তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, আপনি কি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে কখনো ঈদে উপস্থিত হয়েছেন? তিনি বললেন হ্যাঁ। যদি তার কাছে আমার মর্যাদা না থাকত তা হলে কম বয়সী হওয়ার কারণে আমি ঈদে উপস্থিত থেকে পারতাম না। তিনি বের হয়ে কাসীর ইবন সালতের গৃহের কাছে স্থাপিত নিশানার কাছে এলেন এবং সালাত আদায় করলেন। এরপর খুতবা দিলেন। তারপর তিনি মহিলাগনের নিকট উপস্থিত হলেন। তখন তার সংঙ্গে বিলাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ছিলেন। তিনি তখন মহিলাদের উপদেশ দিলেন, নসীহত করলেন এবং দান সদকা করার জন্য নির্দেশ দিলেন। আমি তখন মহিলাদের নিজ নিজ হাত বাড়িয়ে বিলাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কাপড়ে দান সামগ্রী ফেলতে দেখলাম। এরপর তিনি এবং বিলাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নিজ বাড়ির দিকে চলে গেলেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৭৭।]

১৫৪
ঈদের দিন মহিলাগণের উদ্দেশ্যে ঈমামের উপদেশ দেওয়া
জাবির ইবন ‘আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«قَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الفِطْرِ فَصَلَّى، فَبَدَأَ بِالصَّلاَةِ، ثُمَّ خَطَبَ، فَلَمَّا فَرَغَ نَزَلَ، فَأَتَى النِّسَاءَ، فَذَكَّرَهُنَّ وَهُوَ يَتَوَكَّأُ عَلَى يَدِ بِلاَلٍ، وَبِلاَلٌ بَاسِطٌ ثَوْبَهُ يُلْقِي فِيهِ النِّسَاءُ الصَّدَقَةَ» قُلْتُ لِعَطَاءٍ : زَكَاةَ يَوْمِ الفِطْرِ، قَالَ : لاَ، وَلَكِنْ صَدَقَةً يَتَصَدَّقْنَ حِينَئِذٍ، تُلْقِي فَتَخَهَا، وَيُلْقِينَ، قُلْتُ : أَتُرَى حَقًّا عَلَى الإِمَامِ ذَلِكَ، وَيُذَكِّرُهُنَّ؟ قَالَ : إِنَّهُ لَحَقٌّ عَلَيْهِمْ، وَمَا لَهُمْ لاَ يَفْعَلُونَهُ؟

রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করলেন, পরে খুতবা দিলেন। খুতবা শেষে নেমে মহিলাগণের নিকট আসলেন এবং তাদের নসীহত করলেন। তখন তিনি বিলাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাতের উপর ভর দিয়ে ছিলেন এবং বিলাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তার কাপড় প্রসারিত করে ধরলেন। মহিলাগণ এতে দান সামগ্রী ফেলতে লাগলেন (আমি ইবন জুরাইজ) আতা রহ.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, এ কি ঈদুল ফিতরের সদকা? তিনি বললেন না; বরং এ সাধারণ সদকা যা তারা ঐ সময় দিচ্ছিলেন। কোনো মহিলা তার আংটি দান করলে অন্যান্য মহিলাগণও তাদের আংটি দান করতে লাগলেন। আমি আতা রহ.-কে আবার জিজ্ঞাস করলাম, মহিলাগণকে উপদেশ দেওয়া কি ইমামের জন্য জরুরী? তিনি বললেন, অবশ্যই, তাদের ওপর তা জরুরী। তাদের (ইমামগণ) কী হয়েছে যে, তারা এরূপ করবেন না?” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৭৮।]

ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন,

«شَهِدْتُ الفِطْرَ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبِي بَكْرٍ، وَعُمَرَ، وَعُثْمَانَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ يُصَلُّونَهَا قَبْلَ الخُطْبَةِ، ثُمَّ يُخْطَبُ بَعْدُ، خَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَيْهِ حِينَ يُجَلِّسُ بِيَدِهِ، ثُمَّ أَقْبَلَ يَشُقُّهُمْ حَتَّى جَاءَ النِّسَاءَ مَعَهُ بِلاَلٌ، فَقَالَ : ﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ إِذَا جَآءَكَ ٱلۡمُؤۡمِنَٰتُ يُبَايِعۡنَكَ﴾ [ الممتحنة : ١٢ ] ثُمَّ قَالَ حِينَ فَرَغَ مِنْهَا : «آنْتُنَّ عَلَى ذَلِكِ؟» قَالَتِ امْرَأَةٌ وَاحِدَةٌ مِنْهُنَّ، لَمْ يُجِبْهُ غَيْرُهَا : نَعَمْ، لاَ يَدْرِي حَسَنٌ مَنْ هِيَ قَالَ : «فَتَصَدَّقْنَ» فَبَسَطَ بِلاَلٌ ثَوْبَهُ، ثُمَّ قَالَ : «هَلُمَّ، لَكُنَّ فِدَاءٌ أَبِي وَأُمِّي» فَيُلْقِينَ الفَتَخَ وَالخَوَاتِيمَ فِي ثَوْبِ بِلاَلٍ قَالَ عَبْدُ الرَّزَّاقِ : " الفَتَخُ : الخَوَاتِيمُ العِظَامُ كَانَتْ فِي الجَاهِلِيَّةِ»

“আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আবু বকর, উমার ও ‘উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমের সংঙ্গে ঈদুল ফিতরে আমি উপস্থিত ছিলাম। তারা খুতবার আগে সালাত আদায় করতেন, পরে খুতবা দিতেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হলেন, আমি যেন দেখতে পাচ্ছি তিনি হাতের ইশারায় (লোকদের) বসিয়ে দিচ্ছেন। এরপর তাদের কাতার ফাঁক করে অগ্রসর হয়ে মহিলাদের কাছে এলেন। বিলাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তার সঙ্গে ছিলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনের এ আয়াত পাঠা করলেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ إِذَا جَآءَكَ ٱلۡمُؤۡمِنَٰتُ يُبَايِعۡنَكَ﴾ [ الممتحنة : ١٢ ]

“হে নবী যখন ঈমানদার মহিলাগণ আপনার নিকট এ শর্তে বায়’আত করতে আসেন” [সূরা আল-মুমতাহিনা, আয়াত: ১২] এ আয়াত শেষ করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা এ বাই‘আতের ওপর আছ? তদের মধ্যে একজন মহিলা বলল, হ্যাঁ, সে ছাড়া আর কেউ এর জবাব দিল না। হাসান রহ. জানেন না, সে মহিলা কে? এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা সদকা কর। সে সময় বিলাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তার কাপড় প্রসারিত করে বললেন, আমার মা-বাপ আপনাদের জন্য কুরবান হোক, আসুন, আপনারা দান করুন। তখন মহিলাগণ তাদের ছোট-বড় আংটিগুলো বিলাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কাপড়ের মধ্যে ফেলতে লাগলেন। ‘আব্দুর রাযযাক রহ. বলেন, الفَتَخُ হলো বড় আংটি যা জাহেলী যুগে ব্যবহৃত হত।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৭৯।]

১৫৫
ঈদের সালাতে যাওয়ার জন্য মহিলাদের ওড়না না থাকলে
হাফসা বিনত সীরীন রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كُنَّا نَمْنَعُ جَوَارِيَنَا أَنْ يَخْرُجْنَ يَوْمَ العِيدِ، فَجَاءَتِ امْرَأَةٌ، فَنَزَلَتْ قَصْرَ بَنِي خَلَفٍ، فَأَتَيْتُهَا، فَحَدَّثَتْ أَنَّ زَوْجَ أُخْتِهَا غَزَا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثِنْتَيْ عَشْرَةَ غَزْوَةً، فَكَانَتْ أُخْتُهَا مَعَهُ فِي سِتِّ غَزَوَاتٍ، فَقَالَتْ : فَكُنَّا نَقُومُ عَلَى المَرْضَى، وَنُدَاوِي الكَلْمَى، فَقَالَتْ : يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَعَلَى إِحْدَانَا بَأْسٌ إِذَا لَمْ يَكُنْ لَهَا جِلْبَابٌ أَنْ لاَ تَخْرُجَ؟ فَقَالَ : «لِتُلْبِسْهَا صَاحِبَتُهَا مِنْ جِلْبَابِهَا، فَلْيَشْهَدْنَ الخَيْرَ وَدَعْوَةَ المُؤْمِنِينَ» قَالَتْ حَفْصَةُ : فَلَمَّا قَدِمَتْ أُمُّ عَطِيَّةَ أَتَيْتُهَا فَسَأَلْتُهَا : أَسَمِعْتِ فِي كَذَا وَكَذَا؟ قَالَتْ : نَعَمْ بِأَبِي، وَقَلَّمَا ذَكَرَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَّا قَالَتْ : بِأَبِي قَالَ : " لِيَخْرُجِ العَوَاتِقُ ذَوَاتُ الخُدُورِ - أَوْ قَالَ : العَوَاتِقُ وَذَوَاتُ الخُدُورِ، شَكَّ أَيُّوبُ - وَالحُيَّضُ، وَيَعْتَزِلُ الحُيَّضُ المُصَلَّى، وَلْيَشْهَدْنَ الخَيْرَ وَدَعْوَةَ المُؤْمِنِينَ " قَالَتْ : فَقُلْتُ لَهَا : الحُيَّضُ؟ قَالَتْ : نَعَمْ، أَلَيْسَ الحَائِضُ تَشْهَدُ عَرَفَاتٍ، وَتَشْهَدُ كَذَا، وَتَشْهَدُ كَذَا»

“আমরা ঈদের দিন আমাদের যুবতীদের বের থেকে নিষেধ করতাম। একবার জনৈক মহিলা এলেন এবং বনু খালাফের প্রাসাদে অবস্থান করলেন। আমি তার নিকট গেলে বললেন, তার ভগ্নিপতি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে বারটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন, এর মধ্যে ছয়টি যুদ্ধে স্বয়ং তার বোনও স্বামীর সাথে অংশ গ্রহণ করেছেন, (মহিলা বলেন) আমার বোন বলেছেন, আমরা রুগ্নদের সেবা করতাম, আহতদের সেবা করতাম। একবার তিনি প্রশ্ন করেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যদি আমাদের কারো ওড়না না থাকে, তখন কি সে বের হবে? রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ অবস্থায় তার বান্ধবী যেন তাকে নিজ ওড়না পরিধান করতে দেয় এবং এভাবে মহিলাগণ যেন কল্যাণকর কাজে ও মুমিনদের দো‘আয় অংশগ্রহণ করেন। হাফসা রহ. বলেন, যখন উম্মে ‘আতিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা এলেন, তখন আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, আপনি কি এসব ব্যাপারে কিছু শুনছেন? তিনি বললেন হ্যাঁ, হাফসা রহ. বলেন, আমার পিতা, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য উৎসর্গিত হোক এবং তিনি যখনই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম উল্লেখ করতেন, তখনই এ কথা বলতেন। তাবুতে অবস্থানকারিনী যুবতীগণ এবং ঋতুবতী মহিলাগণ যেন বের হন। তবে ঋতুবতী মহিলাগণ যেন সালাতের স্থান থেকে সরে থাকেন। তারা সকলেই যেন কল্যাণকর কাজে ও মুমিনদের দো‘আয় অংশগ্রহণ করেন। হাফসা রহ. বলেন, আমি তাকে বললাম ঋতুবতী মহিলাগণও? তিনি বললেন, হ্যাঁ, ঋতুবতী মহিলা কি ‘আরাফাত এবং অন্যান্য স্থানে উপস্থিত হয় না?” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৮০।]

১৫৬
ঈদগাহে ঋতুবতী মহিলারা পৃথক অবস্থান করবে
মুহাম্মাদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উম্মে ‘আতিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন,

«أُمِرْنَا أَنْ نَخْرُجَ فَنُخْرِجَ الحُيَّضَ، وَالعَوَاتِقَ، وَذَوَاتِ الخُدُورِ قَالَ ابْنُ عَوْنٍ : أَوِ العَوَاتِقَ ذَوَاتِ الخُدُورِ فَأَمَّا الحُيَّضُ : فَيَشْهَدْنَ جَمَاعَةَ المُسْلِمِينَ، وَدَعْوَتَهُمْ وَيَعْتَزِلْنَ مُصَلَّاهُمْ »

“(ঈদের দিন) আমাদেরকে বের হওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তাই আমরা ঋতুবতী, যুবতী এবং তাবুতে অবস্থানকারীনী মহিলাগণকে নিয়ে বের হতাম। ইবন ‘আওন রহ.-এর এক বর্ণনায় রয়েছে, অথবা তাবুতে অবস্থানকারীনী যুবতী মহিলাগণকে নিয়ে বের হতাম। অতঃপর ঋতুবতী মহিলাগণ মুসলিমদের জামা‘আত এবং তাদের দো‘আতে অংশ গ্রহণ করতেন। তবে ঈদগাহে পৃথকভাবে অবস্থান করতেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৮১।]

১৫৭
ঈদের দিন ফিরার সময় যে ব্যক্তি ভিন্ন পথে আসে
জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا كَانَ يَوْمُ عِيدٍ خَالَفَ الطَّرِيقَ»

“রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিন (বাড়ি ফেরার সময়) ভিন্ন পথে আসতেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৮৬।]

১৫৮
কেউ ঈদের সালাত না পেলে সে দু’রাকা‘আত সালাত আদায় করবে
মহিলা ও যারা বাড়ি ও পল্লীতে অবস্থান করে তারাও এরূপ করবে। কেননা, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “হে মুসলিমগণ! এ হলো আমাদের ঈদ।” আর আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যাবিরা নামক স্থানে তার আযাদকৃত গোলাম ইবন আবু উতবাকে এ আদেশ করেছিলেন। তাই তার পরিবারবর্গ ও সন্তান সন্ততিদের নিয়ে শহরের অধিবাসীদের ন্যায় তাকবীরসহ সালাত আদায় করেন। ‘ইকরিমা রহ. বলেছেন, গ্রামের অধিবাসীরা ঈদের দিন সমবেত হয়ে ইমামের ন্যায় দু’ রাকা‘আত সালাত আদায় করবে। ‘আতা রহ. বলেন, যখন কারো ঈদের সালাত ছুটে যায় তখন সে দু’রাকা‘আত সালাত আদায় করবে।

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত,

«أَنَّ أَبَا بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، دَخَلَ عَلَيْهَا وَعِنْدَهَا جَارِيَتَانِ فِي أَيَّامِ مِنَى تُدَفِّفَانِ، وَتَضْرِبَانِ، وَالنَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُتَغَشٍّ بِثَوْبِهِ، فَانْتَهَرَهُمَا أَبُو بَكْرٍ، فَكَشَفَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ وَجْهِهِ، فَقَالَ : «دَعْهُمَا يَا أَبَا بَكْرٍ، فَإِنَّهَا أَيَّامُ عِيدٍ، وَتِلْكَ الأَيَّامُ أَيَّامُ مِنًى»، وَقَالَتْ عَائِشَةُ : رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْتُرُنِي وَأَنَا أَنْظُرُ إِلَى الحَبَشَةِ وَهُمْ يَلْعَبُونَ فِي المَسْجِدِ فَزَجَرَهُمْ عُمَرُ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «دَعْهُمْ أَمْنًا بَنِي أَرْفِدَةَ» يَعْنِي مِنَ الأَمْنِ»

“আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তার নিকট এলেন। এ সময় মিনার দিবসগুলোর এক দিবসে তার নিকট দু’টি মেয়ে দফ বাজাচ্ছিল, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার চাদর আবৃত অবস্থায় ছিলেন। তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু মেয়ে দুটিকে ধমক দিলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুখমন্ডল থেকে কাপড় সরিয়ে নিয়ে বললেন, হে আবু বকর! ওদের বাধা দিও না। কেননা, এসব ঈদের দিন। আর সে দিনগুলো ছিল মিনার দিন। ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা আরো বলেছেন, হাবশীরা যখন মসজিদে (এর প্রাঙ্গনে) খেলাধুলা করছিল, তখন আমি তাদের দেখছিলাম এবং আমি দেখছি, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আড়াল করে রেখেছেন। উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হাবশীদের ধমক দিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ওদের ধমক দিও না। হে বনু আরফিদা! তোমরা যা করছিলে তা নিশ্চিন্তে কর।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৮৭-৯৮৮।]

১৫৯
ঈদের সালাতের পূর্বে ও পরে সালাত আদায় করা
আবু মু‘আল্লা রহ. বলেন, আমি সায়ীদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বলতে শুনেছি যে, তিনি ঈদের পূর্বে সালাত আদায় করা মাকরূহ মনে করতেন।

ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত,

«أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَرَجَ يَوْمَ الفِطْرِ، فَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ لَمْ يُصَلِّ قَبْلَهَا وَلاَ بَعْدَهَا وَمَعَهُ بِلاَلٌ»

“রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে সঙ্গে নিয়ে ঈদুল ফিতরের দিন বের হয়ে দু’রাকা‘আত সালাত আদায় করেন। তিনি এর আগে ও পরে কোনো সালাত আদায় করেন নি।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৮৯।]

১৬০
সপ্তম অধ্যায়: সংক্ষেপে পবিত্র রমযান মাসে আমাদের করণীয়
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ١٨٣﴾ [ البقرة : ١٨٣ ]

“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর সাওম ফরয করা হয়েছে। যেরূপ ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর। যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার” [সূরা আল-বাক্বারা, আয়াত: ১৮৩]

ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের মধ্যে পবিত্র রমযান মাসের সাওম পালন একটি অন্যতম স্তম্ভ। শারীরিক ও মানসিক উৎকর্ষতা সাধন, সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ জাগ্রত, আল্লাহর অফুরন্ত নিয়ামত প্রাপ্ত ও সর্বত্র আল্লাহভীতি পরিষ্ফুটিত হওয়া ইত্যাদির মহান বার্তা নিয়ে প্রতি বছর আমাদের দুয়ারে আসে কুরআন নাযিলের মহিমান্বিত মাস রমযান। রহমত, মাগফিরাত আর জাহান্নাম থেকে মুক্তির মহাপয়গাম নিয়ে সারা বিশ্বে নেমে এসেছে রমযান, যার ছোঁয়ায় মানুষ আজ ছোট্ট শিশুর ন্যায় আল্লাহ তা‘আলার দরবারে দু’হাত তুলে অঝোর ধারায় কাঁদছে। রমযান আজ মানুষের মাঝে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন জাগ্রত করে তুলেছে। তাই স্বাগতম হে রমযান! তোমাকে সুস্বাগতম। সময়ের আবর্তমানে প্রতিবছর আসে রমযান। আবার সে চলে যায় নিজ দেশে। কিন্তু আমরা কি তার কাঙ্খিত নি‘আমত অর্জন করেত পেরেছি? মানব জীবনের পঞ্চাশ-ষাট বছরে পঞ্চাশ-ষাট বার রমযান আসবে, তন্মধ্যে দশ-পনের বছর আমরা থাকি অপ্রাপ্ত। সব মিলিয়ে কতটা রমযানই বা পাই? এই স্বল্প পরিসরেও যদি আমরা রমযানের মত মহামূল্যবান নি‘আমত হারিয়ে ফেলি তবে আমাদের মত হতভাগা আর কে থেকে পরে?

তাই আসুন রমযান মাসে আমরা কী কী ইবাদত-বন্দেগী করে পবিত্র রমযানের পুরষ্কার অর্জন করতে পারি তা নিয়ে কিচ্ছুক্ষণ চিন্তা-ভাবনা করা যাক।

১৬১
১. নিয়তের পরিশুদ্ধিতা:
সমস্ত কাজ নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। তাই প্রথমেই আমাদের নিয়তকে পরিশুদ্ধ করতে হবে। রমযানে আমরা যে ভালো কাজই করি না কেন তা সবই আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি লাভের জন্য করবো। সাওম পালন, তাহাজ্জুদ পড়া, তারাবীহ পড়া, দান-সদকা করা, সাওম পালনকারীকে ইফতারী করানো, ঈদের হাদিয়া, যাকাত-ফিতরা ইত্যাদি বিতরণ সব ‘আমলের পেছনে একমাত্র উদ্দেশ্য থাকবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সন্তুষ্টি ও ভালোবাসা অর্জন।

১৬২
২. কর্মসূচী গ্রহণ:
শা‘বান মাসের শেষের দিকে রমযানের জন্য একটি কর্মসূচী প্রণয়ণ করতে হবে। রমযানে পড়া-শুনা, অফিসে যাওয়া, কুরআন তিলাওয়াত, তাসবীহ-তাহলীল, সালাত, আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখাশুনা করা ও বিশ্রাম ইত্যাদি নিয়ে একটি কর্মসূচী প্রস্তুত করা এবং সে মোতাবেক কাজ করা।

১৬৩
৩. পরিবারের সবাই সাওম পালন করা:
প্রাপ্ত বয়স্ক, সুস্থ, মুক্বীম সকল মুসলিম নর-নারীর ওপর সাওম পালন ফরয। তাই নিজে যেমন সাওম পালন করবে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরকেও সাওম পালনের আদেশ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, রমযান মাসে সাওম পালনই সর্বোৎকৃষ্ট ইবাদাত। এভাবে ছোটদেরকে সাওম পালনের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ صَامَ رَمَضَانَ، إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ»

“যে ব্যক্তি ঈমানসহ সওয়াবের আশায় রমযানের সাওম পালন করে, তার পূর্বের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৮।]

১৬৪
৪. জামা‘আতের সাথে সালাত আদায়:
দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা ফরয। আর রমযান মাসে কোনো নেক ‘আমল সত্তর গুণ বা ততোধিক বৃদ্ধি পায়। তাই পাঁচ ওয়াক্ত সালাত জামা‘আতের সাথে আদায় করার আপ্রাণ চেষ্টা করা।

১৬৫
৫. আল্লাহভীতি অর্জন:
সাওমের মূল লক্ষ্য হচ্ছে আল্লাহভীতি তথা তাকওয়াহ অর্জন। পবিত্র কুরআনের ভাষায়:

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ١٨٣﴾ [ البقرة : ١٨٣ ]

“হে ঈমিনদারগণ! তোমাদের ওপর সাওম ফরয করা হয়েছে। যেরূপ ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর। যেন তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পার”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৩]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ لَمْ يَدَعْ قَوْلَ الزُّورِ وَالعَمَلَ بِهِ، فَلَيْسَ لِلَّهِ حَاجَةٌ فِي أَنْ يَدَعَ طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ»

“যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও সে অনুযায়ী আমল বর্জন করেনি, তাঁর এ পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯০৩।]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«قَالَ اللَّهُ : كُلُّ عَمَلِ ابْنِ آدَمَ لَهُ، إِلَّا الصِّيَامَ، فَإِنَّهُ لِي وَأَنَا أَجْزِي بِهِ، وَالصِّيَامُ جُنَّةٌ، وَإِذَا كَانَ يَوْمُ صَوْمِ أَحَدِكُمْ فَلاَ يَرْفُثْ وَلاَ يَصْخَبْ، فَإِنْ سَابَّهُ أَحَدٌ أَوْ قَاتَلَهُ، فَلْيَقُلْ إِنِّي امْرُؤٌ صَائِمٌ " «وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ، لَخُلُوفُ فَمِ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللَّهِ مِنْ رِيحِ المِسْكِ» " لِلصَّائِمِ فَرْحَتَانِ يَفْرَحُهُمَا : إِذَا أَفْطَرَ فَرِحَ، وَإِذَا لَقِيَ رَبَّهُ فَرِحَ بِصَوْمِهِ "

“আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, সাওম ব্যতীত আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই তাঁর নিজের জন্য; কিন্তু সাওম আমার জন্য, তাই আমি এর প্রতিদান দেবো। সাওম ঢালস্বরূপ। তোমাদের কেউ যেন সাওম পালনের দিন অশ্লীলতায় লিপ্ত না হয় এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে। কেউ যদি তাঁকে গালি দেয় অথবা তাঁর সঙ্গে ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, আমি একজন সাওম পালনকারী। যার হাতে মুহাম্মদের প্রাণ, তাঁর শপথ! সাওম পালনকারীর মুখের (না খাওয়াজনিত) ঘ্রাণ আল্লাহর নিকট মিসকের ঘ্রাণের চেয়েও উত্তম। সাওম পালনকারীর জন্য রয়েছে দু’টি খুশী যা তাঁকে খুশী করে। যখন সে ইফতার করে, সে খুশী হয় এবং যখন সে তাঁর রবের সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন সাওমের বিনিময়ে আনন্দিত হবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯০৪।]

অন্য মাসের মতো রমযান মাসেও কোনো মুমিন সুদ-ঘুষ, চুরি-ডাকাতি, চাঁদাবাজি-ছিনতাই, সন্ত্রাসী, যুলুম, অত্যাচার ইত্যাদি করতে পারে না। ঈদে স্ত্রী-পুত্রের জন্য দামী-দামী পোষাক কেনার জন্য আমাদের দেশের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ঘুষ ও চাঁদাবাজি করা ঐতিহ্যে পরিণত হয়ে গেছে। তাই আসুন আর সুদ-ঘুষ নয়, দুর্নীতি মুক্ত সমাজ গঠনের দৃঢ় প্রত্যয় এ রমযানেই গ্রহণ করি।

১৬৬
৬. কুরআন তিলাওয়াত:
রমযান মাসেই হেরার পাদদেশ থেকে মানবতার মুক্তির দূত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানবকুলের হিদায়াতর জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে মহাগ্রন্থ আল-কুরআন প্রাপ্ত হন। আল-কুরআনের ভাষায়:

﴿شَهۡرُ رَمَضَانَ ٱلَّذِيٓ أُنزِلَ فِيهِ ٱلۡقُرۡءَانُ هُدٗى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَٰتٖ مِّنَ ٱلۡهُدَىٰ وَٱلۡفُرۡقَانِۚ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ ٱلشَّهۡرَ فَلۡيَصُمۡهُۖ وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوۡ عَلَىٰ سَفَرٖ فَعِدَّةٞ مِّنۡ أَيَّامٍ أُخَرَۗ يُرِيدُ ٱللَّهُ بِكُمُ ٱلۡيُسۡرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ ٱلۡعُسۡرَ وَلِتُكۡمِلُواْ ٱلۡعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُواْ ٱللَّهَ عَلَىٰ مَا هَدَىٰكُمۡ وَلَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُونَ ١٨٥ ﴾ [ البقرة : ١٨٥ ]

“রমযান মাস, যাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হিদায়াতস্বরূপ এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সাওম পালন করে। আর যে অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে তবে অন্যান্য দিবসে সংখ্যা পূরণ করে নেবে। আল্লাহ তোমাদের সহজ চান এবং কঠিন চান না। আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেন, তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা শোকর কর”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৫]

সুতরাং রমযান মাসে বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা উচিত।

১৬৭
৭. বিলম্ব করে সাহরী খাওয়া:
রমযান মাসে সাহরী খাওয়া মুস্তাহাব। কেননা, আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«تَسَحَّرُوا فَإِنَّ فِي السَّحُورِ بَرَكَةً»

“তোমরা সাহরী খাও, কেননা সাহরীতে রয়েছে বরকত”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯২৩, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০৯৫।]

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত,

«أَنَّ بِلاَلًا كَانَ يُؤَذِّنُ بِلَيْلٍ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «كُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى يُؤَذِّنَ ابْنُ أُمِّ مَكْتُومٍ، فَإِنَّهُ لاَ يُؤَذِّنُ حَتَّى يَطْلُعَ الفَجْرُ»، قَالَ القَاسِمُ : وَلَمْ يَكُنْ بَيْنَ أَذَانِهِمَا إِلَّا أَنْ يَرْقَى ذَا وَيَنْزِلَ ذَا

“বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু রাতে আযান দিতেন। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ইবন উম্মে মাকতূম-এর আযান দেওয়া পর্যন্ত তোমরা পানাহার কর। কেননা ফজর না হওয়া পর্যন্ত যা আযান দেয় না। কাসিম রহ. বলেন, এদের উভয়ের মাঝে শুধু এতটুকু ব্যবধান ছিল যে, একজন নামতেন এবং অন্যজন উঠতেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯১৮।]

তাছাড়া বিলম্ব করে সাহরী খাওয়া মুস্তাহাব। তবে অবশ্যই ফজরের আযানের পূর্বেই শেষ করতে হবে।

১৬৮
৮. আযানের সাথ সাথে ইফতার করা:
সূর্যাস্তের সাথে সাথেই ইফতার করা মুস্তাহাব। সাহল ইবন সা‘দ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«لاَ يَزَالُ النَّاسُ بِخَيْرٍ مَا عَجَّلُوا الفِطْرَ»

“লোকেরা যতদিন যাবৎ ওয়াক্ত হওয়া মাত্র ইফতার করবে, ততদিন তারা কল্যাণের ওপর থাকবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৫৭।]

উমর ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «إِذَا أَقْبَلَ اللَّيْلُ مِنْ هَا هُنَا، وَأَدْبَرَ النَّهَارُ مِنْ هَا هُنَا، وَغَرَبَتِ الشَّمْسُ فَقَدْ أَفْطَرَ الصَّائِمُ»

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন রাত্র সে দিক থেকে ঘনিয়ে আসে ও দিন এদিক থেকে চলে যায় এবং সূর্য ডুবে যায়, তখন সাওম পালনকারী ইফতার করবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৫৪।]

১৬৯
৯. ইফতারের সময় দো‘আ করা:
সাওম পালনকারীর জন্য সুন্নাত হচ্ছে ইফতারের পূর্ব মুহূর্তে দো‘আ করা। কারণ এ সময় দো‘আ কবুল হয়। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«ثَلاَثٌ لاَ تُرَدُّ دَعْوَتُهُمْ، الإِمَامُ العَادِلُ، وَالصَّائِمُ حِينَ يُفْطِرُ، وَدَعْوَةُ الْمَظْلُومِ»

“তিন ব্যক্তির দো‘আ ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। সাওম পালনকারী যখন ইফতার করে, ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ এবং নির্যাতিত ব্যাক্তির দো‘আ”। [তিরমিযী, হাদীস নং ২৫২৬, ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ১৭৫২। ইফতারের সময় পঠিত নিম্নোক্ত দো‘আ হাদিসটি দ‘য়ীফ। عَنْ مُعَاذِ بْنِ زُهْرَةَ، أَنَّهُ بَلَغَهُ «أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا أَفْطَرَ قَالَ : «اللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ، وَعَلَى رِزْقِكَ أَفْطَرْتُ» আবূ দাউদ, হাদীস নং ২৩৫৮। আলবানী রহ. হাদীদটিকে দ‘য়ীফ বলেছেন। তবে নিন্মোক্ত হাদীসটি হাসান, «ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوقُ، وَثَبَتَ الْأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ» “তৃষ্ণা চলে গেছে, শিরাগুলো আদ্র হয়েছে আর ছাওয়াব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্যত্র বলেছেন, ‘নিশ্চয় ইফতারের সময় সাওমদারের দো‘আ ফিরিয়ে দেওয়া হয় না।” (আবু দাউদ, হাদীস নং ২৩৫৭। আলবানী রহ. হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।)]

১৭০
১০. সাওম পালনকারীকে ইফতার করানো:
সাওম পালনকারীকে ইফতার করানো রমযানে একটি বিশেষ সাওয়াবের কাজ। যায়েদ ইবন খালেদ আল-জুহানী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে,

«مَنْ فَطَّرَ صَائِمًا، كُتِبَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِهِ، إِلَّا أَنَّهُ لَا يَنْقُصُ مِنْ أَجْرِ الصَّائِمِ شَيْءٌ»

“যে ব্যক্তি কোনো সাওম পালনকারীকে ইফতার করাবে সে সাওম পালনকারীর সমপরিমাণ সাওয়াব পাবে। তবে সাওম পালনকারীর সাওয়াব কমানো হবে না।” [তিরমিযী, হাদীস নং ৮০৭, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ১৭০৩৩।]

১৭১
১১. তারাবীহর সালাত আদায়:
রমযানে তারাবীহর সালাত আদায় করা সুন্নাত। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ»

“যে ব্যক্তি রমযানের রাতে সওয়াবের আশায় রাত জেগে ইবাদত করে, তার পূর্বের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৭, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৫৯।]

‘আব্দুর রাহমান ইবন ‘আবদ আল -ক্বারী রহ. বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,

«خَرَجْتُ مَعَ عُمَرَ بْنِ الخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، لَيْلَةً فِي رَمَضَانَ إِلَى المَسْجِدِ، فَإِذَا النَّاسُ أَوْزَاعٌ مُتَفَرِّقُونَ، يُصَلِّي الرَّجُلُ لِنَفْسِهِ، وَيُصَلِّي الرَّجُلُ فَيُصَلِّي بِصَلاَتِهِ الرَّهْطُ، فَقَالَ عُمَرُ : «إِنِّي أَرَى لَوْ جَمَعْتُ هَؤُلاَءِ عَلَى قَارِئٍ وَاحِدٍ، لَكَانَ أَمْثَلَ» ثُمَّ عَزَمَ، فَجَمَعَهُمْ عَلَى أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ، ثُمَّ خَرَجْتُ مَعَهُ لَيْلَةً أُخْرَى، وَالنَّاسُ يُصَلُّونَ بِصَلاَةِ قَارِئِهِمْ، قَالَ عُمَرُ : «نِعْمَ البِدْعَةُ هَذِهِ، وَالَّتِي يَنَامُونَ عَنْهَا أَفْضَلُ مِنَ الَّتِي يَقُومُونَ» يُرِيدُ آخِرَ اللَّيْلِ وَكَانَ النَّاسُ يَقُومُونَ أَوَّلَهُ»

“আমি রমযানের এক রাতে উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহুর সঙ্গে মসজিদে নববীতে গিয়ে দেখতে পাই যে, লোকেরা বিক্ষিপ্ত জামা‘আতে বিভক্ত। কেউ একাকী সালাত আদায় করছে আবার কোনো ব্যক্তি সালাত আদায় করছে এবং তার ইকতেদা করে একদল লোক সালাত আদায় করছে। উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি মনে করি যে, এ লোকদের যদি আমি একজন ক্বারীর (ইমামের) পিছনে একত্রিত করে দিই, তবে তা উত্তম হবে। এরপর তিনি উবাই ইবন কা‘ব রাদিয়াল্লাহু আনহুর পিছনে সকলকে একত্রিত করে দিলেন। পরে আর এক রাতে আমি তার (উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু) সঙ্গে বের হই। তখন লোকেরা তাদের ইমামের সাথে সালাত আদায় করছিল। উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, কত না সুন্দর এ নতুন ব্যবস্থা! তোমরা রাতের যে অংশে ঘুমিয়ে থাক তা রাতের ঐ অংশ অপেক্ষা উত্তম যে অংশে তোমরা সালাত আদায় কর -এর দ্বারা তিনি শেষ রাত বুঝিয়েছেন। কেননা তখন রাতের প্রথমভাগে লোকেরা সালাত আদায় করত। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০১০।]

তারাবীর সালাতে কুরআন খতম করা মুস্তাহাব।

১৭২
১২. তাহাজ্জুদের সালাত পড়া:
নীরবে নির্জনে গভীর রজনীতে আল্লাহ তা‘আলার সামনে দাঁড়ালে পৃথিবীর সব সুখ যেন তখন উপভোগ করা যায়। এ সময় বান্দা কিছু প্রর্থনা করলে আল্লাহ ফিরিয়ে দেন না। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন “ফরয সালাতের পর সর্বোৎকৃষ্ট সালাত হচ্ছে তাহাজ্জুদের সালাত।” (সহীহ মুসলিম)

১৭৩
১৩. শেষ দশদিন ই‘তিকাফ করা:
দুনিয়ার মায়াজাল ছিন্ন করে আল্লাহ তা‘আলার সান্নিধ্য লাভের উদ্দেশ্যে রমযানের শেষ দশ দিন কোনো জামে মসজিদে একাগ্রচিত্তে যিকির-আযকার, সালাত, কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি ইবাদত-বন্দেগীর মাঝে কেটে দেওয়া হলো ই‘তিকাফ। ই‘তিকাফ করা সান্নাতে মুয়াক্কাদা (কিফায়াহ) হাদীছ শরীফে এসেছে: “রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত রমযানের শেষ দশ দিন ই‘তিকাফ করেছেন। তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর স্ত্রীগণ ই‘তিকাফ করেছেন”। ই‘তিকাফকারী লাইলাতুল ক্বদরের সৌভাগ্য প্রাপ্ত থেকে পারেন।

১৭৪
১৪. রমযান মাসে যাকাত আদায় করা:
যাকাত ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ। সালাতের পরেই এর স্থান। প্রত্যেক ধনবান ব্যক্তি যার সম্পদ যাকাতের নিসাব পরিমাণ হয়েছে তাদের যাকাত আদায় করা ফরয। রমযানে একটি ফরয আদায় করলে সত্তরটি ফরয আদায় করার সাওয়াব। তাই এ মাসে যাকাত আদায় করলে অতিরিক্ত সাওয়াবের অধিকারী হওয়া যায়।

১৭৫
১৫. সাধ্যমত দান-সদকা করা:
রমযান মাসে বেশি বেশি নফল দান-সদকাহ করা উচিত। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সবচেয়ে বেশি দানশীল ব্যক্তি। আর রমযান আসলে তিনি আরো বেশি দানশীল থেকেন। হাদীসে এসেছে, ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন,

«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَجْوَدَ النَّاسِ بِالخَيْرِ، وَكَانَ أَجْوَدُ مَا يَكُونُ فِي رَمَضَانَ حِينَ يَلْقَاهُ جِبْرِيلُ، وَكَانَ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ يَلْقَاهُ كُلَّ لَيْلَةٍ فِي رَمَضَانَ، حَتَّى يَنْسَلِخَ، يَعْرِضُ عَلَيْهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ القُرْآنَ، فَإِذَا لَقِيَهُ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ، كَانَ أَجْوَدَ بِالخَيْرِ مِنَ الرِّيحِ المُرْسَلَةِ»

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধন-সম্পদ ব্যয় করার ব্যাপারে সকলের চেয়ে দানশীল ছিলেন। রমযানে জিবরীল আলাইহিস সালাম যখন তাঁর সাথে দেখা করতেন, তখন তিনি আরো অধিক দান করতেন। রমযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি রাতেই জিবরীল তাঁর একবার সাক্ষাৎ করতেন। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে কুরআন শোনাতেন। জিবরীল যখন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন তখন তিনি রহমত প্রেরিত বায়ূর চেয়ে অধিক ধন-সম্পদ দান করতেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯০২।]

তাই সামর্থবানদের উচিত পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন, গরীব-দুঃখী সবাইকে সাধ্যমত দান-সদকা দিয়ে সহযোগিতা করা।

১৭৬
১৬. সদকাতুল ফিতর আদায় করা:
সাওমের পবিত্রতাস্বরূপ সাওম পালনকারীকে সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। এ সদকা দ্বারা আমরা গরীব মিসকীনদেরকে ঈদের আনন্দে শামিল করতে পারি। ঈদের সালাতের পূর্বেই এই ফিতরা আদায় করা সুন্নাত। তবে বিলম্ব হলে ঈদের পরেও তা আদায় করা যায়।

১৭৭
১৭. রমযানে ‘উমরা পালন:
রমযানে ওমরাহ পালন করার ফযীলত অনেক। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “রমযানে ওমরাহ পালন হজ্জের সমান।” (বুখারী ও মুসলিম) অন্য আরেক হাদীসে এসেছে: “রমযানে ওমরাহ পালন হজ আদায়ের সমান বা আমার সাথে হজ আদায়ের সমান।” (সহীহ মুসলিম) তাই যাদের ওমরাহ পালনের নিয়ত আছে তাদের উচিত রমযানে ওমরাহ পালন করা।

১৭৮
১৮. লাইলাতুর ক্বদর তালাশ করা:
আল্লাহ তা‘আ বলেন

﴿إِنَّآ أَنزَلۡنَٰهُ فِي لَيۡلَةِ ٱلۡقَدۡرِ ١ وَمَآ أَدۡرَىٰكَ مَا لَيۡلَةُ ٱلۡقَدۡرِ ٢ لَيۡلَةُ ٱلۡقَدۡرِ خَيۡرٞ مِّنۡ أَلۡفِ شَهۡرٖ ٣ تَنَزَّلُ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ وَٱلرُّوحُ فِيهَا بِإِذۡنِ رَبِّهِم مِّن كُلِّ أَمۡرٖ ٤ سَلَٰمٌ هِيَ حَتَّىٰ مَطۡلَعِ ٱلۡفَجۡرِ ٥﴾ [ القدر : ١، ٥ ]

“নিশ্চয় আমরা এটি (কুরআন) নাযিল করেছি ‘লাইলাতুল কদরে।’ তোমাকে কিসে জানাবে ‘লাইলাতুল কদর’ কী? ‘লাইলাতুল কদর’ হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফিরিশতারা ও রূহ (জিবরীল) তাদের রবের অনুমতিক্রমে সকল সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ করে। শান্তিময় সেই রাত, ফজরের সূচনা পর্যন্ত”। [সূরা আল-কাদর, আয়াত: ১-৫]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ يَقُمْ لَيْلَةَ القَدْرِ، إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ»

“যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় লায়লাতুল কদর-এ ইবাদতে রাত্রি জাগরণ করবে, তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৫।]

যর রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উবাই ইবন কা‘ব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলতে শুনেছি,

عَنْ زِرٍّ، قَالَ : سَمِعْتُ أُبَيَّ بْنَ كَعْبٍ، يَقُولُ : وَقِيلَ لَهُ إِنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ مَسْعُودٍ، يَقُولُ : «مَنْ قَامَ السَّنَةَ أَصَابَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ»، فَقَالَ أُبَيٌّ : «وَاللهِ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ، إِنَّهَا لَفِي رَمَضَانَ، يَحْلِفُ مَا يَسْتَثْنِي، وَوَاللهِ إِنِّي لَأَعْلَمُ أَيُّ لَيْلَةٍ هِيَ، هِيَ اللَّيْلَةُ الَّتِي أَمَرَنَا بِهَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِقِيَامِهَا، هِيَ لَيْلَةُ صَبِيحَةِ سَبْعٍ وَعِشْرِينَ، وَأَمَارَتُهَا أَنْ تَطْلُعَ الشَّمْسُ فِي صَبِيحَةِ يَوْمِهَا بَيْضَاءَ لَا شُعَاعَ لَهَا»

যখন তাকে বলা হলো যে, আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, যে ব্যক্তি সারা বছর (ইবাদতে) রাত্রি জাগরণ করবে সে লাইলাতুল-কাদর পাবে। তখন উবাই রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, সেই আল্লাহর কসম তিনি ব্যতীত আর কোনো মা‘বুদ নেই। তা অবশ্যই রমযানে রয়েছে। তিনি কসম করে বলেছিলেন এবং তিনি কোনো ব্যতিক্রম ছাড়াই কসম করে বলেছিলেন। আবার তিনি আল্লাহর কসম খেয়ে বললেন, ভালো করেই জানি যে, সেটি কোন রাত? সেটি হলো সে রাত, যে রাত জেগে ইবাদত করার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম আমাদের হুকুম করেছিলেন। যে রাতের ভোর হয়, সাতাশে রমযান। আর সে রাতের ‘আলামত হলো এই যে, দিনের সূর্য উদিত হয় উজ্জল হয়ে তাতে (কিরণের) তীব্রতা থাকে না”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৬২।]

তাই রমযানের শেষ দশ দিন বিশেষ করে বেজোড় রাত্রিতে ইবাদতের মাধ্যমে কদরের রাত্রি তালাশ করা উচিত।

১৭৯
১৯. সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ জাগিয়ে তোলা:
দীর্ঘ এক মাস সাওম পালন করার দ্বারা মানুষ বুঝতে পারে দুঃখীজনের ক্ষুধা-তৃষ্ণার মর্মবেদনা। তাই ইসলাম রমযানের সাওম ফরয করে সমাজের অবহেলিত মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধ গড়ে তুলেছে তা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। আর্তমানবতার সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার শিক্ষাই দিয়ে যায় রমযান।

১৮০
২০. ইসলামী রাষ্ট্রের ভালোবাসায় অনুপ্রাণিত হওয়া:
রমযান মাস হলো আল্লাহ তা‘আলার সাহায্যের মাস। এ মাসে আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদেরকে যুগে যুগে শত্রুর মোকাবেলায় বিজয় দান করেছেন। ইসলামের ইতিহাসে ঐতিহাসিক বদরের যুদ্ধে সতেরই রমযান মদীনা রাষ্ট্রের স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখতে ইসলামের বিজয় কল্পে মক্কার কাফিরদের বিরুদ্ধে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও মুসলিমগণ ঐতিহাসিক বিজয় লাভ করেন। আল্লাহ বলেছেন,

﴿وَلَقَدۡ نَصَرَكُمُ ٱللَّهُ بِبَدۡرٖ وَأَنتُمۡ أَذِلَّةٞۖ فَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ لَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُونَ ١٢٣ إِذۡ تَقُولُ لِلۡمُؤۡمِنِينَ أَلَن يَكۡفِيَكُمۡ أَن يُمِدَّكُمۡ رَبُّكُم بِثَلَٰثَةِ ءَالَٰفٖ مِّنَ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةِ مُنزَلِينَ ١٢٤ بَلَىٰٓۚ إِن تَصۡبِرُواْ وَتَتَّقُواْ وَيَأۡتُوكُم مِّن فَوۡرِهِمۡ هَٰذَا يُمۡدِدۡكُمۡ رَبُّكُم بِخَمۡسَةِ ءَالَٰفٖ مِّنَ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةِ مُسَوِّمِينَ ١٢٥ ﴾ [ ال عمران : ١٢٣، ١٢٥ ]

“আর অবশ্যই আল্লাহ তোমাদেরকে বদরে সাহায্য করেছেন অথচ তোমরা ছিলে হীনবল। অতএব, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, আশা করা যায়, তোমরা শোকরগুজার হবে। স্মরণ কর, যখন তুমি মুমিনদেরকে বলছিলে, ‘তোমাদের জন্য কি যথেষ্ট নয় যে, তোমাদের রব তোমাদেরকে তিন হাজার নাযিলকৃত ফিরিশতা দ্বারা সাহায্য করবেন’? হ্যাঁ, যদি তোমরা ধৈর্য ধর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, আর তারা হঠাৎ তোমাদের মুখোমুখি এসে যায়, তবে তোমাদের রব পাঁচ হাজার চি ‎‎ হ্নিত ফিরিশতা দ্বারা তোমাদেরকে সাহায্য করবেন”। [সূরা আলে ইমরান, আযাত: ১২৩-১২৫]

তাই প্রতি বছর রমযান আমাদেরকে দেশপ্রেম শিক্ষা দেয়। বহিরাগত শত্রুর মোকাবেলায় প্রিয় মাতৃভূমিকে টিকে রাখার দৃঢ় সংকল্প আমরা রমযান মাসে গ্রহণ করবো।

১৮১
২১. রমযানে শরীরের যত্ন নেওয়া:
সুস্বাস্থ্য সকল সুখের মূল। ইবাদত করার জন্য চাই শারীরিক সুস্থতা। প্রবাদে বালা হয়: ‘তোমরা সাওম পালন করো, সুস্থ থাক।’ তাই রমযানে পরিমাণ মতো পানাহার করা উচিত। অন্যদিকে সাওমের কারণে মানুষের অনেক রোগ-ব্যাধি দূর হয়। যেমন, খাদ্য নিয়ন্ত্রণের ফলে মেদ, ডায়াবেটিস, গ্যাষ্ট্রিক, ব্লাড প্রেসার, হৃদরোগ ও মানসিক অস্থিরতা দূর হয়।

১৮২
২২. আত্মসমালোচনা করা:
রমযানে চাঁদ উদিত হলেই রহমতের দরজা খোলা হয়। প্রতিটি দিন অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে হিসাব করতে হবে আমি কতটুকু ভালো বা খারাপ কাজ করেছি। মনে রাখতে হবে জীবনে কতটি রমযানই বা পাবো। আগামী রমযানে আমি কি বেঁচে থাকবো? পর পারের জন্য আমি কতটুকু সম্বল অর্জন করেছি? এভাবে প্রতিটি দিন হিসেব করলে একটি সফল রমযান অতিবাহিত করা সম্ভব।

১৮৩
২৩. রমযান পরবর্তী কর্মসূচী গ্রহণ:
রমযানের পরে বাকী এগারটি মাস কীভাবে চলবো সে সিদ্ধান্ত রমযান মাসেই নিতে হবে। শাওয়ালের ছয় সাওম, রমযানের পরে পুনরায় পাপের জগতে ফিরে না যাওয়া ইত্যাদি বিষয়ে অটল অবিচল পরিকল্পনা রমযান মাসেই গ্রহণ করা।

হে ঘুমন্ত! জেগে ওঠ, আর কত কাল এভাবে ঘুমাবে? মৃত্যুর পরে কবরে হাজার হাজার বছর ঘুমাতে পারবে। রমযান বিদায় নিচ্ছে তুমি কি তার নি‘আমত প্রাপ্ত হয়েছো? সালাত-সাওম, দান-সদকা, কুরআন তিলাওয়াত, সৎকাজে আদেশ, অসৎ কাজে নিষেধ ইত্যাদির মাধ্যমে রমযানকে স্বাগত জানাও। আল্লাহ আমাদের সবাইকে কবুল করুন। আমীন।

১৮৪
অষ্টম অধ্যায়: সাওম সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা প্রশ্ন: কার ওপর সাওম ফরয?
জওয়াব: প্রত্যেক সুস্থ মস্তিষ্ক বালেগ মুসলিমের ওপর রমযানের সাওম পালন করা ফরয। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ ٱلشَّهۡرَ فَلۡيَصُمۡهُۖ﴾ [ البقرة : ١٨٥ ]

“সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তিই এ মাস পাবে সে যেন অবশ্যই সাওম পালন করে”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৫]

১৮৫
প্রশ্ন: সাওম ফরয হওয়ার শর্ত কী কী?
জওয়াব: সাওম ফরয হওয়ার শর্ত হলো:

১ - ইসলাম: অতএব, অমুসলিমের ওপর সাওম পালন ফরয নয়।

২ - প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া: অতএব, অপ্রাপ্তবয়স্কের ওপর সাওম পালন ফরয নয়। তবে যদি অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক-বালিকা সাওম পালন করতে সক্ষম হয় তবে সাওম পালনের অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য এ ব্যাপারে তাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হবে।

৩- সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী হওয়া: অতএব, পাগলের ওপর সাওম পালন ফরয নয়।

৪ - সাওম পালন রাখতে সক্ষম হওয়া: অতএব, যে সাওম পালন করতে অপারগ তার ওপর সাওম পালন ফরয নয়।

১৮৬
প্রশ্ন: সাওম কয় প্রকার?
জওয়াব: সাওমের প্রকারভেদ। সাওম প্রথমত দু’প্রকার:

১- বাধ্যতামূলক সাওম। আর তা দু’প্রকার:

ক. আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক বান্দার ওপর মৌলিকভাবে ফরয করে দেওয়া সাওম আর তা হলো রমযানের সাওম। এ সাওম ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একটি।

খ. এমন সাওম যা বান্দা নিজের ওপর ওয়াজিব করে নিয়েছে, যেমন মানত ও কাফফারার সাওম।

২- মুস্তাহাব সাওম। আর তা হলো প্রত্যেক ওই সাওম যা শরী‘আত প্রবর্তকের কাছে পছন্দনীয়। যেমন সোমবার ও বৃহস্পতিবারের সাওম, প্রতিমাসে তিন ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের সাওম, আশুরার সাওম, যিলহজ মাসের প্রথম দশকের সাওম ও ‘আরাফা দিবসের সাওম।

১৮৭
প্রশ্ন: সাওমের নিয়ত করার হুকুম কী?
জওয়াব: ফরয ও ওয়াজিব সাওমর ক্ষেত্রে রাত থেকে সাওমর নিয়ত করা আবশ্যক। আর যদি নফল সাওম হয়, তবে রাত থেকে নিয়ত করা ওয়াজিব নয়; বরং দিনের বেলায় সূর্য ঢলে যাওয়ার পূর্বে নিয়ত করে নিলেই সাওম রাখা শুদ্ধ হবে, যদি সুবেহ সাদেকের পর থেকে এমনকিছু গ্রহণ না করা হয় যা সাওম ভেঙ্গে দেয়। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে আসলেন ও জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমাদের কাছে কি কোনো (খাবার) আছে?’ আমরা বললাম, ‘না, নেই।’ তিনি বললেন, তাহলে আমি সাওম রাখলাম।’ (সহীহ মুসলিম)।

১৮৮
প্রশ্ন : হতে পারে আজ রমযানের ১লা তারিখ ইহা মনে করে শাবান মাসের শেষ দিন সতর্কতাস্বরূপ সাওম পালনের হুকুম কী?
জওয়াব: সন্দেহের দিন বলতে শা‘বান মাসের ৩০ তারিখকে বুঝায়। ঐ দিন সতর্কতা অবলম্বন করে সাওম পালনের হুকুম সম্পর্কে বিশুদ্ধতম মত হলো ঐ দিন সাওম পালন হারাম। আম্মার বিন ইয়াসার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছেন,

«من صام اليوم الذي يشك فيه فقد عصى أبا القاسم صلى الله عليه وسلم»

“যে ব্যক্তি সন্দেহের দিন সাওম পালন করল সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবাধ্য হলো”।

তাছাড়া সন্দেহের দিন সাওম পালনকারী আল্লাহর দেওয়া সীমা অতিক্রম করল। কেননা আল্লাহ তা‘আলার সীমা হলো, কেহ রমযানের চাঁদ না দেখে বা চাঁদ প্রমাণিত না হলে রমযানের সাওম পালন করবে না। তাই তো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«لا يتقدمن أحدكم رمضان بصيام يوم أو يومين، إلا رجل كان يصوم صوما فليصمه»

“তোমাদের কেহ যেন রমযান মাসকে এক বা দু‘দিন বাড়িয়ে না দেয়। তবে যার অন্য কোনো নিয়মিত সাওম সে দিনে হয়ে যায়, তার কথা আলাদা”। (রমযানের ১লা তারিখ সন্দেহ করে সাওম পালন করা যাবে না)

১৮৯
প্রশ্ন : এমন বৃদ্ধ লোক যে সাওম পালন করলে তার স্বাস্থ্যের ক্ষতি হবে, সে কি সাওম পালন করবে?
জওয়াব: যদি সাওম পালনে তার ক্ষতি হয়, তার জন্য সাওম পালন জায়েয নয়। কারণ, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,

﴿وَلَا تَقۡتُلُوٓاْ أَنفُسَكُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ بِكُمۡ رَحِيمٗا﴾ [ النساء : ٢٩ ]

“তোমরা নিজেদের হত্যা করো না। আল্লাহ অবশ্যই তোমাদের প্রতি দয়াশীল।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ২৯]

আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন আরো বলেন,

﴿وَلَا تُلۡقُواْ بِأَيۡدِيكُمۡ إِلَى ٱلتَّهۡلُكَةِ﴾ [ البقرة : ١٩٥ ]

“তোমরা নিজেদের ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিওনা।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৯৫]

তাই যে বৃদ্ধ ব্যক্তির স্বাস্থ্যের জন্য সাওম ক্ষতিকর তার জন্য সাওম পালন জায়েয নয়। এর সাথে ভবিষ্যতে সাওম পালনের সামর্থ্যবান হওয়ার সম্ভাবনা যদি না থাকে তাহলে সে প্রত্যেকটি সাওমের পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাদ্য খাওয়াবে বা দান করবে। এতেই সে সিয়ামের দায় থেকে মুক্ত হবে।

১৯০
প্রশ্ন: সাওমের রুকনসমূহ কী কী?
জওয়াব: সাওমের রুকনসমূহ:

১- সুবেহ সাদেক উদয় হওয়ার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সাওমভঙ্গকারী বিষয় থেকে বিরত থাকা। আল্লাহ বলেছেন,

﴿وَكُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَكُمُ ٱلۡخَيۡطُ ٱلۡأَبۡيَضُ مِنَ ٱلۡخَيۡطِ ٱلۡأَسۡوَدِ مِنَ ٱلۡفَجۡرِۖ ثُمَّ أَتِمُّواْ ٱلصِّيَامَ إِلَى ٱلَّيۡلِۚ﴾ [ البقرة : ١٨٧ ]

“এবং তোমরা আহার কর ও পান কর যতক্ষণ না ফজরের সাদা রেখা কালো রেখা থেকে স্পষ্ট হয়। অতঃপর রাত পর্যন্ত সাওম পূর্ণ কর।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৭]

সাদা ও কালো রেখার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, দিনের শুভ্রতা ও রাতের কৃষ্ণতা।

২- নিয়ত। অর্থাৎ সাওমদার ব্যক্তি সাওমভঙ্গকারী বিষয়সমূহ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার ইবাদত করার নিয়ত করবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয় আমল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল আর প্রত্যেকের জন্য তাই নির্ধারিত যা সে নিয়ত করেছে।’

১৯১
প্রশ্ন: সাওম অবস্থায় কী কী করা বৈধ?
জওয়াব: সাওম অবস্থায় যা যা করা বৈধ:

১ - গোসল করা, ঠাণ্ডা পানিতে বসা।

২ – মুখের থুতু ও কাশ গিলে ফেলা।

৩ - জিহ্বা দিয়ে কোনো খাদ্যের কেবল স্বাদ পরীক্ষা করে দেখা। তবে শর্ত হলো কোনোকিছুই যেন কন্ঠের নিচে প্রবেশ না করে।

৪- আতর-সুগন্ধি ইত্যাদির ঘ্রাণ নেওয়া।

৫- সাওমদারের মিসওয়াক ব্যবহার। যেকোনো সময় মিসওয়াক ব্যবহার করা বৈধ, হোক তা সূর্যে ঢলে যাওয়ার পূর্বে অথবা পরে। হোক তা তাজা অথবা শুষ্ক। তবে মিসওয়াক তাজা হওয়ার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে তা যেন কন্ঠের নিচে চলে না যায়। কেননা এরূপ হলে সাওম ভেঙ্গে যাবে।

১৯২
প্রশ্ন: সাওমের সুন্নত ও মুস্তাহাবসমূহ কী কী?
জওয়াব: সাওমের সুন্নত ও মুস্তাহাবসমূহ:

১ - সাহরী খাওয়া এবং তা দেরী করে ফজরের আযানের কিছু সময় পূর্বে খাওয়া।

হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা সাহরী খাও। কেননা সাহরীতে বরকত রয়েছে।’

২ - দ্রুত ইফতার করা।

সাওমদারের জন্য মুস্তাহাব হলো দ্রুত ইফতার করা। অর্থাৎ সূর্যাস্ত যাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হলে সাথে সাথে ইফতার করা। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মানুষ ভালো থাকবে যতক্ষণ তারা দ্রুত ইফতার করে যাবে।’

তাজা খেজুর দিয়ে ইফতার করা মুস্তাহাব। তাজা খেজুর না পাওয়া গেলে শুকনো খেজুর দিয়ে ইফতার করা। খেজুর বেজোড় সংখ্যায় হওয়া। যদি খেজুর না পাওয়া যায় তবে কয়েক ঢোক পানি দিয়ে ইফতার করা। আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত এক হাদীসে এসেছে, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের পূর্বে বেজোড় সংখ্যক তাজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। তাজা খেজুর না পেলে শুকনো খেজুর দিয়ে। আর খেজুর না পেলে তিনি কয়েক ঢোক পানি পান করে ইফতার করতেন।’

৩- ইফতারের সময় দো‘আ পড়া। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ইফতার করতেন, বলতেন,

«ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوقُ، وَثَبَتَ الْأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ»

“তৃষ্ণা চলে গেছে, শিরাগুলো আদ্র হয়েছে আর ছাওয়াব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।”

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনত্র বলেছেন, ‘নিশ্চয় ইফতারের সময় সাওমদারের দো‘আ ফিরিয়ে দেওয়া হয় না।’ (আবু দাউদ, হাদীস নং ২৩৫৭। আলবানী রহ. হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।)

৪- অহেতুক ও অশ্লীল কথা পরিত্যাগ করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«وَإِذَا كَانَ يَوْمُ صَوْمِ أَحَدِكُمْ فَلاَ يَرْفُثْ،وَلاَ يَصْخَبْ ، فَإِنْ سَابَّهُ أَحَدٌ، أَوْ قَاتَلَهُ فَلْيَقُلْ : إِنِّى امْرُؤٌ صَائِمٌ» .

“তোমাদের কেউ যখন সাওম পালন করবে তখন সে যেন অশ্লীল কথা, ঝগড়া ও হট্টগোল বর্জন করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা তার সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত হয় তখন সে যেন বলে, আমি সাওম পালনকারী।”

৫- বেশি বেশি ইবাদত করা। যেমন, কুরআন তিলাওয়াত, আল্লাহর যিকর করা, তারাবীর সালাত পড়া, তাহাজ্জুদের সালাত পড়া, লাইলাতুল কদর যাপন করা, ফরয সালাতের আগে-পড়ের সুন্নতগুলো আদায় করা, দান-সদকা করা, ভালো কাজ সম্পাদনে অর্থ ও শ্রম ব্যয় করা, সাওমদারদেরকে ইফতার করানো ও মাহে রমযানে উমরা আদায় করা; কেননা মাহে রমযানে নেক আমলের ছাওয়াব বাড়িয়ে দেওয়া হয়। ইবন ‘আব্বাস রারিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব থেকে বেশি দানশীল ছিলেন, আর তিনি রমযান মাসে সমধিক দানশীল থেকেন, যখন জিবরীল আলাইহিস সালাম তার সাথে সাক্ষাৎ করতেন। আর জিবরীল আলাইহিস সালাম রমযানের প্রতি রাতেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সাক্ষাৎ করতেন এবং তাঁকে কুরআন চর্চা করাতেন। যখন জিবরীল আলাইহিস সালাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সাক্ষাৎ করতেন তখন তিনি দান খয়রাতে উন্মুক্ত বাতাস থেকেও অধিক বেগবান থেকেন।

১৯৩
প্রশ্ন: সাওম অবস্থায় কী কী কাজ করা মাকরূহ?
জওয়াব: সাওম অবস্থায় যেসব কাজ করা মাকরূহ:

১ - কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়ায় অতিরঞ্জিত করা। কেননা এরূপ করলে পেটে পানি চলে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। এতদসংক্রান্ত এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«وَبَالِغْ في الاِسْتِنْشَاقِ إِلاَّ أَنْ تَكُونَ صَائِمًا » .

“আর নাকে পানি দেওয়ায় তুমি অতিরঞ্জিত করো, তবে যদি সাওমদার হও।”

২ - যৌনোত্তেজনাসহ চুম্বন করা। সাওমদার ব্যক্তি যদি বীর্যপাত অথবা উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করে তবে তার পক্ষে চুম্বন করা মাকরূহ হবে। আর সাওমদার ব্যক্তির উচিত হবে এমন সব বিষয় বর্জন করা যার দ্বারা যৌনাত্তেজনা আন্দোলিত হয়। হ্যাঁ, যদি সাওম ভঙ্গ হবে না বলে আত্মবিশ্বাস থাকে, তবে তার কথা ভিন্ন। ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ النبي يُقَبِّلُ، وَيُبَاشِرُ وَهُوَ صَائِمٌ، وَكَانَ أَمْلَكَكُمْ لإِرْبِهِ»

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওম রাখা অবস্থায় চুম্বন করতেন, আলিঙ্গন করতেন। আর তিনি ছিলেন তোমাদের মধ্যে সব থেকে বেশি তার প্রয়োজনকে নিয়ন্ত্রণকারী।” এ কারণেই যুবকদের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর একে অন্যের সাথে জড়িয়ে থাকা মাকরূহ। অবশ্য বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে মাকরূহ নয়। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, ‘এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে স্বামী-স্ত্রীর একে অন্যের সাথে জড়িয়ে থাকা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি তাকে অনুমতি দিলেন। অন্য এক ব্যক্তি এসে অভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করল, তবে তিনি তাকে নিষেধ করলেন। দেখা গেল, তিনি যাকে অনুমতি দিলেন সে ছিল বৃদ্ধ। আর যাকে অনুমতি দিলেন না সে ছিল যুবক।’

১৯৪
প্রশ্ন: কী কী কারণে সাওম ভঙ্গ হয়ে যায়?
জওয়াব: যেসব কারণে সাওম ভঙ্গ হয়ে যায়:

১ - সাওম রাখাবস্থায় ইচ্ছা করে খাবার ও পানীয় গ্রহণ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَكُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَكُمُ ٱلۡخَيۡطُ ٱلۡأَبۡيَضُ مِنَ ٱلۡخَيۡطِ ٱلۡأَسۡوَدِ مِنَ ٱلۡفَجۡرِۖ ثُمَّ أَتِمُّواْ ٱلصِّيَامَ إِلَى ٱلَّيۡلِۚ﴾ [ البقرة : ١٨٧ ]

“এবং তোমরা আহার কর ও পান কর যতক্ষণ না ফজরের সাদা রেখা কালো রেখা থেকে স্পষ্ট হয়। অতঃপর রাত পর্যন্ত সাওম পূর্ণ কর।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৭]

২ – সহবাস করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ أُحِلَّ لَكُمۡ لَيۡلَةَ ٱلصِّيَامِ ٱلرَّفَثُ إِلَىٰ نِسَآئِكُمۡۚ﴾ [ البقرة : ١٨٧ ]

“সিয়ামের রাতে তোমাদের জন্য তোমাদের স্ত্রীদের নিকট গমন হালাল করা হয়েছে।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৭]

৩- খাদ্যজাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা সাওম ভঙ্গের কারণ। তবে ইনসোলিন ইনজেকশন সাওমভঙ্গকারী নয়।

খাদ্যজাতীয় ইনজেকশনও সাওম ভঙ্গের কারণ। ইনহেইলার সাওম ভঙ্গের কারণ নয়। চোখের ড্রপ সাওমভঙ্গকারী নয়। তাছাড়া সুরমা সাওম ভঙ্গকারী নয়।

৪- বিড়ি-সিগারেট সাওমভঙ্গকারী।

১৯৫
প্রশ্ন: সাওম ভঙ্গের ওযরসমূহ কী কী?
জওয়াব: যেসব ওযরে সাওম ভঙ্গ করা যায়:

১ – অসুস্থতা: অসুস্থ ব্যক্তির জন্য রমযান মাসে সাওম ভঙ্গ করা বৈধ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿فَمَن كَانَ مِنكُم مَّرِيضًا أَوۡ عَلَىٰ سَفَرٖ فَعِدَّةٞ مِّنۡ أَيَّامٍ أُخَرَۚ﴾ [ البقرة : ١٨٤ ]

“আর যে অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে তবে অন্যান্য দিবসে সংখ্যা পূরণ করে নেবে।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৪]

যে অসুস্থতার কারণে রমযান মাসে সাওম ভঙ্গ করা চলে তা হলো এমন অসুস্থতা যার কারণে সাওম রাখা অনেক কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায় অথবা সাওম রাখলে নিশ্চিত ক্ষতির আশঙ্কা থাকে।

২ – সফর: মুসাফির ব্যক্তির জন্য রমযান মাসে সাওম ভঙ্গ করা বৈধ। তবে ভাঙ্গা সাওমগুলো পরবর্তীতে অবশ্যই কাযা করতে হবে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿فَمَن كَانَ مِنكُم مَّرِيضًا أَوۡ عَلَىٰ سَفَرٖ فَعِدَّةٞ مِّنۡ أَيَّامٍ أُخَرَۚ﴾ [ البقرة : ١٨٤ ]

“আর যে অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে তবে অন্যান্য দিবসে সংখ্যা পূরণ করে নেবে।” [সূরা আল-বাকারা, আযাত: ১৮৪]

যে সফরে সাওম ভঙ্গ করা চলে তা হলো একই ধরনের সফর যার কারণে সালাত কসর করা চলে।

কিন্তু যদি মুসাফির ব্যক্তি সাওম রাখে তবে তার সাওম শুদ্ধ হবে। আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সফর করতাম। যে ব্যক্তি সাওম রাখত তাকেও তিনি দোষারোপ করতেন না, আবার যে সাওম রাখত না তাকেও দোষারোপ করতেন না।’

তবে শর্ত হলো সাওম যেন মুসাফিরের জন্য খুব কষ্টকর না হয়। আর যদি সাওম রাখা খুব কষ্টকর হয় অথবা ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাহলে সাওম ভঙ্গ করাই উত্তম হবে। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরাবস্থায় এক সাওমদার ব্যক্তিকে দেখলেন যে প্রচণ্ড গরমের কারণে তাকে ছায়া দেওয়া হচ্ছে এবং লোকজন তার চারপাশে ভিড় করছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘সফর অবস্থায় সাওম রাখা উত্তম কাজের মধ্যে শামিল নয়।’

৩- গর্ভ ও দুগ্ধদান: গর্ভাবস্থা অথবা দুগ্ধদান অবস্থায় নারী যদি তার ক্ষতির আশঙ্কা করে, তবে তার জন্য সাওম ভঙ্গ করা বৈধ হবে। তবে তাকে কাযা করতে হবে অসুস্থ ব্যক্তির মতো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা মুসাফির ব্যক্তির ওপর থেকে সাওম এবং সালাতের একাংশ উঠিয়ে নিয়েছেন। আর গর্ভধারী ও দুগ্ধদানকারী নারীর ওপর থেকে তিনি সাওম উঠিয়ে নিয়েছেন।’

আর যদি নিজের ক্ষতির কোনো ভয় না থাকে; কিন্তু বাচ্চার ক্ষতির আশঙ্কা থাকে তাহলেও সাওম ভঙ্গ করা বৈধ হবে, তবে তাকে কাযা করতে হবে ও প্রতিদিনের সাওমর পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাদ্যদান করতে হবে। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘দুগ্ধদানকারী ও গর্ভধারী নারী যদি তার সন্তানের ব্যাপারে আশঙ্কা করে তাহলে সে সাওম ভঙ্গ করবে ও মিসকীনকে খাদ্যদান করবে।’

৪- হায়েয ও নিফাস: যে নারী হায়েয ও নিফাসগ্রস্ত হয়েছে সে আবশ্যিকভাবে সাওম ভঙ্গ করবে। এ অবস্থায় সাওম রাখা হারাম হবে। এমতাবস্থায় সাওম রাখলে তা শুদ্ধ হবে না। তবে ভাঙ্গা সাওমগুলো পরবর্তীতে কাযা করতে হবে। এর প্রমাণ, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে হায়েযগ্রস্ত নারী সাওম কাযা করবে কিনা -এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমাদেরকেও স্পর্শ করত, অতঃপর আমাদেরকে সাওম কাযা করার নির্দেশ দেওয়া হতো, তবে সালাত কাযা করার নির্দেশ দেওয়া হতো না।’

১৯৬
প্রশ্ন : এক ব্যক্তি কঠিন হাপানী রোগে ভুগছে। দু বছর পর্যন্ত তার চিকিৎসা চলছে। ডাক্তার তাকে রমযানে সাওম পালন করতে নিষেধ করেছে। তাকে বলেছে যদি সে সাওম পালন করে তবে রোগ বৃদ্ধি পাবে। এ অবস্থায় সাওম বর্জনের হুকুম কী?
জওয়াব: আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন বলেন,

﴿فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ ٱلشَّهۡرَ فَلۡيَصُمۡهُۖ وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوۡ عَلَىٰ سَفَرٖ فَعِدَّةٞ مِّنۡ أَيَّامٍ أُخَرَۗ﴾ [ البقرة : ١٨٥ ]

“যে কেউ রমযান মাস পাবে সে যেন সাওম পালন করে। আর যে রোগাক্রান্ত অথবা সফরে থাকে সে যেন অন্য সময়ে আদায় করে নেয়।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৫]

অর্থাৎ রোগের কারণে সাওম পালনে যদি কষ্ট হয় অথবা সুস্থতা লাভে বিঘ্ন ঘটে তাহলে সে রমযানে সাওম পালন না করে অন্য সময়ে আদায় করবে। তাই তো আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿يُرِيدُ ٱللَّهُ بِكُمُ ٱلۡيُسۡرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ ٱلۡعُسۡرَ﴾ [ البقرة : ١٨٥ ]

“আল্লাহ তোমাদের জন্য যা সহজ তা চান, যা কষ্টকর তা চান না।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৫]

ওলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে, যদি ডাক্তার মুসলিম ও সৎ-ন্যায়পরায়ণ হন এবং বলেন সাওম রোগের ক্ষতি করবে অথবা সুস্থতা লাভে দেরী হবে তবে সাওম পালন না করা জায়েয আছে। আর যদি ডাক্তার মুসলিম না হন অথবা মুসলিম কিন্তু সৎ নন তাহলে তার কথা গ্রহণযোগ্য নয়। তবে হ্যা, রোগী যদি অনুভব করে যে সাওম তার জন্য ক্ষতির কারণ হবে তাহলে সে সাওম পালনে বিরত থাকতে পারবে। পরে সুযোগ মতো সময়ে কাযা আদায় করে নিবে। কাফফারা দেওয়ার প্রয়োজন হবে না।

১৯৭
রমযান মাসে ইসলাম গ্রহণকরীর সিয়ামের বিধান প্রশ্ন : রমযানের কয়েকদিন অতিবাহিত হওয়ার পর যদি কেহ ইসলাম গ্রহণ করে তাহলে তাকে কি চলে যাওয়া সাওম আদায় করতে বলা হবে?
জওয়াব: না তাকে পিছনের সাওম আদায় করতে হবে না। কেননা সে তখন কাফের ছিল। আর কাফের থাকাকালীন সময়ে যে নেক কাজ অতিবাহিত হয়ে গেছে তাকে তা আদায় করতে হবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿قُل لِّلَّذِينَ كَفَرُوٓاْ إِن يَنتَهُواْ يُغۡفَرۡ لَهُم مَّا قَدۡ سَلَفَ﴾ [ الانفال : ٣٨ ]

“যারা কাফির তাদের বলে দাও যদি তোমরা কুফুরীর অবসান ঘটাও তাহলে তিনি তোমাদের অতীতে যা কিছু গেছে তা ক্ষমা করে দিবেন” [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৩৮]

দ্বিতীয়ত: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে তাদের কাউকে অতীতের সালাত, সাওম, যাকাত আদায় করতে নির্দেশ দেওয়া হয় নি। কিন্তু কথা থেকে যায়, যে রমযানের দিনের মধ্যবর্তী সময়ে ইসলাম গ্রহণ করে তাহলে তাকে কি খাওয়া-দাওয়া, যৌনসম্ভোগ থেকে বিরত থাকতে হবে, না কাযা আদায় করতে হবে -এ ব্যাপারে ওলামাদের মধ্যে মতভেদ আছে। তবে বিশুদ্ধতম মতো হলো তাকে দিনের বাকী সময়টা খাওয়া-দাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কাযা আদায় করতে হবে না। কেননা দিনের শুরুতে যখন সাওম ওয়াজিব হওয়ার সময় এসেছে তখন তার ওপর তা ওয়াজিব হয় নি। তার মাসআলাটা ঐ কিশোরের মতো যে দিনের মধ্যবর্তী সময়ে বালেগ হয়েছে। তাকে বিরত থাকতে হবে। কাযা করতে হবে না।

১৯৮
প্রশ্ন : মেয়েদের হায়েয ও নিফাস অবস্থায় সাওম পালনের বিধান কী? তারা যদি এক রমযানের সিয়ামের কাযা অন্য রমযান পর্যন্ত বিলম্বিত করেন তা হলে কোনো অসুবিধা আছে কিনা?
জওয়াব: হায়েয ও নিফাছ অবস্থায় মেয়েদের জন্য ওয়াজিব হলো সাওম বর্জন করা। এ অবস্থায় সালাত ও সাওম কোনোটাই আদায় করা জায়েয হবে না। সুস্থতার পর তাদের সাওম কাযাযা আদায় করতে হবে। সালাতের কাযা আদায় করতে হবে না। হাদীসে এসেছে, ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত যে, তাকে জিজ্ঞেস করা হলো,

«هل تقضي الحائض الصوم والصلاة؟ فقالت : كنا نؤمر بقضاء الصوم ولا نؤمر بقضاء الصلاة» . متفق عليه .

“হায়েয থেকে পবিত্রতার পর মহিলারা কি সালাত ও সাওমের কাযা আদায় করবে? তিনি বললেন, এ অবস্থায় আমাদের সিয়ামের কাযা আদায় করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সালাতের নয়।” (বুখারী ও মুসলিম)।

সাওম কাযা করা আর সালাত কাযা না করা সম্পর্কে ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা যা বলেছেন সকল ওলামায়ে কেরাম তার সাথে একমত পোষণ করেছেন অর্থাৎ ইজমা বা ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

এ বিধানে আল্লাহর এক অনুগ্রহের প্রকাশ ঘটেছে। সাওম বছরের একবার আসে বলে তা কাযা করা কষ্টকর হয় না। কিন্তু সালাত কাযা করার হুকুম হলে তা কষ্টকর হয়ে যেত।

যদি শর‘ঈ ওযর (সংগত কারণ) ব্যতীত কেউ এক রমযানের সিয়ামের কাযা অন্য আরেক রমযানের পর পর্যন্ত বিলম্বিত করে তাহলে সে এ কাজের জন্য তাওবা করবে। কাযা আদায় করবে এবং প্রত্যেকটি সাওমের পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাদ্য দান করবে। এমনিভাবে অসুস্থ ব্যক্তি ও মুসাফির যার ওপর সিয়ামের কাযা আদায় করা সহ কাফফারা দিতে হবে অর্থাৎ প্রতিটি সাওমের পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাদ্য দান করতে হবে এবং তওবা করবে।

১৯৯
প্রশ্ন : সাওম পালন রত অবস্থায় যদি থুতু গিলে ফেলে তাতে অসুবিধা আছে কিনা?
জওয়াব: সাওম পালনকারী যদি মুখে অবস্থিত থুতু গিলে ফেলে তাতে কোনো অসুবিধা নেই। আর এ মাসআলায় ওলামাদের মধ্যে কোনো মতানৈক্য নেই। কেননা বারবার থুতু ফেলা যেমন কষ্টকর তেমনি থুতু না গিলে থাকাও সম্ভব নয়। কিন্তু কাশি ও শ্লেষ্মা যদি মুখে এসে যায় তবে তা ফেলে দিতে হবে। সাওম পালনরত অবস্থায় উহা গিলে ফেলা জায়েয নয়। কেননা কাশি ও শ্লেষ্মা থুথুর মতো নয়।

২০০
প্রশ্ন: সাওম পালনকারী কি রমযানের দিনের বেলায় টুথপেস্ট বা টুথপাউডার ব্যবহার করতে পারবেন?
জওয়াব: যদি গলার মধ্যে না যায় তবে টুথপেস্ট ও পাউডার ব্যবহার করতে কোনো অসুবিধা নেই। এমনিভাবে দিনের শুরুতে ও শেষে যে কোনো সময়ে মিসওয়াক করতে কোনো অসুবিধা নেই।

কতিপয় আলেম দুপুরের পর মিসওয়াক করাকে মাকরূহ বলেছেন। অবশ্য এ মত শুদ্ধ নয়। সঠিক কথা হলো যে কোনো সময় মিসওয়াক করা যায়। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিসওয়াক সম্পর্কে যা বলেছেন তা “আম” অর্থাৎ ব্যাপক। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«السواك مطهرة للفم مرضاة للرب»

“মিসওয়াক মুখকে পবিত্র ও আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে।” (নাসায়ী)

তিনি আরো বলেছেন,

«لولا أن أشق على أمتى لأمرتهم بالسواك عند كل صلاة» . متفق عليه

“যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্টকর না হত তাহলে আমি প্রত্যেক সালাতে মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।” (বুখারী ও মুসলিম)

আর এ হাদীস জোহর ও আছরের সালাতকেও শামিল করে। কারণ এ দুই সালাত দুপুরের পরেই হয়ে থাকে।

২০১
গর্ভবতী ও শিশুকে দুধ দানকারী মহিলার সাওম না রাখা প্রসঙ্গ প্রশ্ন : গর্ভবতী মহিলা কি রমযানে সাওম থেকে বিরত থাকতে পারে?
জওয়াব: গর্ভবতী মহিলার দুই অবস্থার যে কোনো এক অবস্থা থাকবে। হয়তো সে শক্তিশালী হবে। সিয়ামের কারণে তার কষ্ট হবে না ও গর্ভস্থিত বাচ্চার ওপর তার প্রভাব পড়বে না। এমতাবস্থায় তার সাওম পালন করতে হবে।

আর যদি সে দুর্বল হয়। সাওম সে বরদাশত করতে পারবে না বলে মনে হয় তাহলে সে সাওম আদায় করবে না। বাচ্চার ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে সাওম বর্জন করা তার জন্য ওয়াজিব হবে। বাচ্চা প্রসবের পর সে কাযা আদায় করবে। সাওম পালন করলে অনেক সময় বাচ্চাকে দুধ পান করানোর সমস্যা দেখা দেয়। কেননা দুগ্ধ দানকারী মায়ের খাবার-দাবার গ্রহণের প্রয়োজন। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে যখন দিন বড় হয়ে থাকে। তখন সে সাওম বর্জন করতে বাধ্য হয়ে পড়ে। অন্যথায় তার বাচ্চার ক্ষতি হয়ে যাবে।

أفطري وإذا زال عنك العذر فإنك تقضين ما فاتك من الصوم

“এমতাবস্থায় আমরা তাকে বলব আপনি সাওম থেকে বিরত থাকুন। যখন আপনি সমস্যা মুক্ত হবেন তখন কাযা আদায় করবেন।”

কোনো কোনো ‘আলেম বলেছেন গর্ভবতী ও দুগ্ধ দানকারী মহিলা সাওম থেকে বিরত থাকতে পারেন যখন সিয়ামের কারণে বাচ্চার ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা হয়, নিজের ক্ষতির কারণে নয়। তাই তার জন্য ওয়াজিব হবে কাযা আদায় করা ও কাফফারা। তবে কাফফারা ঐ ব্যক্তি আদায় করবেন যার দায়িত্বে রয়েছে এ সন্তানের ভরন-পোষণ। কিন্তু বিশুদ্ধ মত হলো কাফফারা আদায়ের প্রয়োজন হবে না।

আর যে ব্যক্তি অন্য কাউকে পানি বা আগুন থেকে উদ্ধার করার জন্য সাওম ভঙ্গ করেছে তার হুকুমও ঐ মহিলার মতো, যে তার বাচ্চার ক্ষতির আশঙ্কায় সাওম থেকে বিরত থাকল অর্থাৎ সে সাওম থেকে বিরত থাকবে ও পরে কাযা আদায় করবে।

উদাহরণ: আপনি দেখলেন একটি ঘরে আগুন লেগেছে। সে ঘরের ভিতর মুসলিমগণ আছেন তখন তাদের উদ্ধার করার জন্য সাওম ভঙ্গ করে খাবার গ্রহণ করে শক্তি অর্জন করত তাদের উদ্ধারের জন্য প্রচেষ্টা চালাবেন। এটা শুধু জায়েয নয়; বরং ওয়াজিব।

২০২
প্রশ্ন : রমযানে সাওম পালনের উদ্দেশ্যে ট্যাবলেট ইত্যাদি খেয়ে মাসিক বন্ধ রাখা জায়েয কিনা?
জওয়াব: রমযানে সাওম যেন ত্যাগ করতে না হয় এ উদ্দেশ্যে মাসিক (হায়েয) বন্ধ রাখার জন্য ঔষধ গ্রহণ করা মহিলাদের জন্য জায়েয আছে। তবে শর্ত হলো সৎ-নেককার চিকিৎসকের দ্বারা জেনে নিতে হবে যে, এটা তার স্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি করবে না এবং তার জরায়ুতে কোনো প্রতিক্রিয়া বা সমস্যা সৃষ্টি করবে না। কিন্তু এ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ না করা উত্তম। যখন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সাওম থেকে বিরত থেকে অন্য সময় আদায় করার সুযোগ দিয়েছেন তখন তা সন্তুষ্ট চিত্তে গ্রহণ করাই ভালো।

২০৩
না জেনে ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার পর খাবার গ্রহণ করার বিধান প্রশ্ন : আমি সাহরী খাওয়ার জন্য জাগ্রত হয়ে পানি পান করলাম। তারপর দেখলাম বেশ আগেই ফজরের ওয়াক্ত হয়ে গেছে। এ অবস্থায় আমার সাওম বাতিল হবে কিনা?
জওয়াব: ফজরের ওয়াক্ত হয়ে গেছে অথচ আপনি এখনও সাহরীর সময় আছে মনে করে পানাহার করেছেন। এ অবস্থায় আপনার কোনো গুনাহ হবে না এবং সাওমের কাযা আদায় করা দরকার হবে না। কেননা কুরআন ও হাদীসের অনেক প্রমানাদি দ্বারা একথা স্পষ্ট যে মানুষের ভুলে যাওয়া ও অবগতি না থাকার কারণে শাস্তি দেওয়া হবে না। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«من نسي وهو صائم فأكل أو شرب فليتم صومه فإنما أطعمه الله وسقاه»

“যে ব্যক্তি ভুলে গেল যে আমি সাওম অবস্থায় আছি অতঃপর খাওয়া দাওয়া করল সে যেন তার সাওম অব্যাহত রেখে পূর্ণ করে (ভেঙে না ফেলে)। কেননা আল্লাহ তা‘আলা তাকে আহার করিয়েছেন।”

২০৪
প্রশ্ন : যদি কোনো পুরুষ রমযানে দিনের বেলা তার স্ত্রীকে চুমো দেয় বা আলিঙ্গন করে তা হলে তার সাওম কি নষ্ট হয়ে যাবে?
জওয়াব: যদি সাওম অবস্থায় স্বামী তার স্ত্রীকে সহবাস ব্যতীত চুমো দেয় বা আলিঙ্গন করে তবে তা জায়েয। এতে সাওমের কোনো অসুবিধা হয় না। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওম অবস্থায় স্ত্রীকে চুমো দিতেন, আলিঙ্গন করতেন। তবে এতে যদি সহবাসে লিপ্ত হয়ে পরার আশঙ্কা থাকে তবে তা মাকরূহ হবে। আর চুমো বা আলিঙ্গনের কারণে যদি বীর্যপাত হয়ে যায় তবে দিনের বাকী অংশ সাওম অবস্থায় থেকে পরে সাওমের কাযা আদায় করবে। কাফফারা আদায় করতে হবে না। এটা অধিকাংশ আলেমদের মত। চুমো বা আলিঙ্গনের কারণে যদি মজী বের হয় তবে এতে সাওমের কোনো ক্ষতি করে না। এটা অধিকতর বিশুদ্ধ মত।

২০৫
প্রশ্ন : নাকে চোখে ড্রপ ব্যবহার, সুরমা ব্যবহার অথবা কানে ঔষধ ব্যবহার কি সাওম ভঙ্গ করে?
জওয়াব: নাকে দেওয়া ঔষধ যদি পেটে পৌঁছে যায় অথবা গলায় চলে যায় তা হলে সাওম ভেঙে যায়।

লকীত ইবন সাবুরা থেকে বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«بالغ في الإستنشاق، إلا أن تكون صائما»

“তোমরা ভালো করে নাকে পানি পৌঁছাও। কিন্তু সাওম পালনরত অবস্থায় নয়।”

অতএব, সাওম পালনকারীর জন্য নাকে এমন ঔষধ ব্যবহার করা জায়েয নেই যা গলা অথবা পেটে চলে যায়। যদি পেটে বা গলায় না যায় তবে অসুবিধা নেই। আর চোখে বা কানে ঔষধ ব্যবহার করলে অথবা চোখে সুরমা ব্যবহার করলে সাওমের কোনো ক্ষতি হয় না। কেননা এতে সাওম ভঙ্গের ব্যাপারে কুরআন-হাদীসের কোনো দলীল নেই। চোখ বা কান দ্বারা কখনো খাদ্য গ্রহণ করা যায় না। চোখ, কান শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মতোই। ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, যদি কেউ পা দ্বারা খাদ্য পিষে আর খাদ্যের স্বাদ সে মুখে অনুভব করে তবুও তার সাওম নষ্ট হবে না। কেননা পা দ্বারা খাবার গ্রহণ সম্ভব নয়।

এমনিভাবে চোখে কানে ঔষধ দিলে অথবা সুরমা ব্যবহার করলে তার স্বাদ যদি অনুভূত হয় তবে সাওম নষ্ট হবে না। এমনি নির্দেশ যদি কেউ গায়ে তেল ব্যবহার করে তার স্বাদ অনুভব করে তার সাওমের কোনো ক্ষতি হবে না।

২০৬
প্রশ্ন : যে কিশোরের বয়স পনেরো বছর পর্যন্ত পৌঁছে নি তাকে কি সাওম পালনের নির্দেশ দেওয়া হবে, যেমন তাকে সালাত আদায়ের নির্দেশ দেওয়া হয়ে থাকে?
জওয়াব: হ্যাঁ, এ ধরনের কিশোর-কিশোরীদের সাওম আদায়ের নির্দেশ দেওয়া হবে, যদি তারা সাওম পালনের সামর্থ্য রাখে। আর সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম তাদের সন্তানদেরকে সাওম পালনের নির্দেশ দিতেন।

ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, অভিভাবক তার অধীনস্থ সকল অপ্রাপ্ত বয়স্কদের সাওম আদায়ের নির্দেশ দিবেন। যাতে তারা শিশু কাল থেকে ইসলামী আচার-আকীদায় অভ্যস্ত হয়ে যায় ও এর প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। সাওম পালন যদি তাদের কষ্টের কারণ হয় তবে জোর-জবরদস্তি করবে না।

অনেক পিতা-মাতা আদরের বশবতী হয়ে তাদের অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানদের সাওম থেকে বারণ করেন। এটা মোটেই উচিত নয়। কারণ এটা সাহাবায়ে কেরামের ‘আমলের খেলাফ। সন্তানদের ইসলামী শরী‘আতের অনুশীলন ও তাতে অভ্যস্ত করাই মূলত তাদের সত্যিকার ভালোবাসার দাবি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إن الرجل راع في أهل بيته، ومسئول عن رعيتة»

“প্রত্যেক ব্যক্তি তার পরিবার বর্গের জিম্মাদার ও তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।” তাই পরিবারের কর্তার উচিত পরিবারের সকলকে আল্লাহকে ভয় ও তার হুকুম আহকাম পালনের নির্দেশ দেওয়া।

২০৭
প্রশ্ন : যদি দেখা যায় রমযানের দিনের বেলা কোনো সাওম পালনকারী ভুলে খাওয়া দাওয়া করছে তখন কি তাকে সাওমের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হবে?
জওয়াব: যদি কেউ দেখে রমযানে দিনের বেলায় কোনো সাওম পালনকারী ব্যক্তি পানাহার করছে তখন তাকে সাওমের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া ওয়াজিব। কেননা এটা অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখার (নাহী আনিল মুনকার) অন্তর্ভুক্ত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«من رأى منكم منكرا فليغيره بيده، فإن لم يستطع فبلسانه، فإن لم يستطع فبقلبه»

“তোমাদের মধ্যে যে অন্যায় কাজ থেকে দেখবে সে যেন হাত দ্বারা তা প্রতিরোধ করে। যদি সে এর সামর্থ্য না রাখে তবে যেন মুখ দ্বারা বাধা দেয়। যদি এরও সামর্থ্য না রাখে তবে অন্তর দ্বারা।”

আর এতে কোনো সন্দেহ নেই যে সাওম রত অবস্থায় পানাহার করা একটি অন্যায় কাজ। কিন্তু তার ভুলে যাওয়ার কারণে সে ক্ষমা প্রাপ্ত। কিন্তু যে দেখে বাধা না দেবে সে দায়িত্ব এড়াতে পারবে না। অতএব, সাওম পালনকারীকে কিছু খেতে দেখলে তাকে স্মরণ করিয়ে দিতে হবে।

স্মরণ হওয়ার পর সাওম পালনকারীর উচিত হবে তাড়াতাড়ি খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া। সে এ ভুলকে খাওয়া-দাওয়া করার সুযোগ মনে করে তা যেন অব্যাহত না রাখে। যদি মুখে খাবার থাকে তবে তাড়াতাড়ি ফেলে দেবে। স্মরণ হওয়ার পর গিলে ফেলা জায়েয হবে না।

তাই বলছি তিনটি অবস্থায় সাওম ভঙ্গকারী বিষয়গুলো সংঘটিত হওয়া সত্ত্বেও তা সাওম ভঙ্গ করে না।

১. যখন সাওমের কথা ভুলে যায়।

২. যখন অজ্ঞ হয়ে যায়।

৩. যখন অনিচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করে।

যদি সাওমের কথা ভুলে যেয়ে পানাহার করে তবে তার সাওম পূর্ণ থেকে কোনো অসুবিধা হবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«من نسي وهو صائم فأكل أو شرب فليتم صومه فإنه أطعمه الله وسقاه»

“যে সাওমের কথা ভুলে যেয়ে পানাহার করে সে যেন তার সাওম অব্যাহত রাখে। কারণ তাকে আল্লাহ তা‘আলা পানাহার করিয়েছেন।”

“যখন অজ্ঞ হয়ে যায়” এর উদাহরণ হলো, যেমন কেউ মনে করল যে, এখনও ফজরের ওয়াক্ত হয় নি। তাই সে সাহরী খেল অথবা মনে করল সূর্য অস্ত গেছে অথচ তা অস্ত যায় নি। তাই সে ইফতার করল তাহলে তার সাওম সহীহ হবে। আসমা বিনতে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন,

«أفطرنا في عهد النبي صلى الله عليه وسلم في يوم غيم ثم طلعت الشمس» .

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে এক মেঘাচ্ছন্ন দিনে সূর্যাস্ত হয়েছে মনে করে আমরা ইফতার করলাম। তারপর সূর্য দেখা গেল।” অথচ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সাওম কাযা করতে বলেন নি। যদি কাযা করা ওয়াজিব হতো তবে তিনি অবশ্যই কাযা করতে আদেশ দিতেন। আর যদি আদেশ দিতেন তা অবশ্যই আমাদের কাছে পৌঁছে যেত। কেননা তিনি কোনো কিছুর আদেশ করলে তা আল্লাহর শরী‘আতে পরিণত হয়ে যায় আর তার শরী‘আত কিয়ামত পর্যন্ত রক্ষিত ও সকলের কাছে পৌঁছে গেছে।

আর অনিচ্ছাকৃত ভাবে পানাহার করার দৃষ্টান্ত যেমন কেহ কুলি করার সময় পানি ভিতরে চলে গেল এতে সাওম ভাঙবে না। কেননা সে পান করার ইচ্ছা করে নি। এমনিভাবে কারো স্বপ্নদোষ হয়ে বীর্যপাত হলো এতে তার সাওমের কোনো ক্ষতি হবে না। কেননা সে নিদ্রায় ছিল, ইচ্ছা করে নি। আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন বলেন,

﴿وَلَيۡسَ عَلَيۡكُمۡ جُنَاحٞ فِيمَآ أَخۡطَأۡتُم بِهِۦ وَلَٰكِن مَّا تَعَمَّدَتۡ قُلُوبُكُمۡۚ﴾ [ الاحزاب : ٥ ]

“তোমরা কোনো ভুল করলে কোনো অপরাধ নেই। কিন্তু তোমাদের অন্তর ইচ্ছা করলে অপরাধ হবে।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫]

২০৮
প্রশ্ন : যদি কেউ রমযানের দিনের বেলা ইচ্ছা করে বীর্যপাত করে তাহলে তার করণীয় কি? তাকে কি এ দিনের সাওমের কাযা আদায় করতে হবে? যদি কাযা আদায় করার দরকার হয় কিন্তু সে পরবর্তী রমযান আসার আগেও কাযা আদায় করল না তাহলে তার হুকুম কী?
জওয়াব: প্রথমত: নিজ স্ত্রী ব্যতীত অন্য কোনো ভাবে বীর্যপাত করা হারাম। আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন বলেন,

﴿وَٱلَّذِينَ هُمۡ لِفُرُوجِهِمۡ حَٰفِظُونَ ٥ إِلَّا عَلَىٰٓ أَزۡوَٰجِهِمۡ أَوۡ مَا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُهُمۡ فَإِنَّهُمۡ غَيۡرُ مَلُومِينَ ٦ فَمَنِ ٱبۡتَغَىٰ وَرَآءَ ذَٰلِكَ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡعَادُونَ ٧﴾ [ المؤمنون : ٥، ٧ ]

“(মুমিন তারা) যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে। নিজেদের স্ত্রী অথবা অধিকারভুক্ত দাসীগণ ব্যতীত। এতে তারা নিন্দনীয় হবে না। এদের ছাড়া অন্য কিছু কামনা করলে তারা সীমা লঙ্ঘনকারী হবে।” [সূরা আল-মুমিনূন, আয়াত: ৫-৭]

আর এ ধরনের কাজে শরীরেরও ক্ষতি। রমযানের দিনের বেলা কোনো সাওম পালনকারী যদি এ ধরনের কাজ ইচ্ছাকৃত ভাবে করে ফেলে তাহলে সে গুনাহগার হবে। তার ঐ দিনের সাওম কাযা করতে হবে। কারণ বীর্যপাত করা সহবাসের মতোই।

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেনে,

«كان رسول صلى الله عليه وسلم يقبل وهو صائم، وكان أملككم لإربه» .

“আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওম অবস্থায় স্ত্রীকে চুমো দিতেন। কিন্তু তিনি নিজেকে নিয়ন্ত্রণে সামর্থ্য ছিলেন।” (সহীহ বুখারী)

একথার দ্বারা বুঝে আসে যে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না রমযানের দিনের বেলা সাওম অবস্থায় তার চুমো দেওয়া জায়েয নেই। চুমো দিতে যেয়ে কামাবেগে যদি বীর্যপাত হয়ে যায় তাহলে সাওম নষ্ট হয়ে যাবে। তবে কাফফারা আদায় করতে হবে না। কাযা আদায় ও তওবা করতে হবে।

দ্বিতীয়ত: যার ওপর সাওমের কাযা ওয়াজিব সে পরবর্তী রমযান আসার আগে যদি কাযা আদায় না করে তবে তার এ অলসতার জন্য তওবা ইস্তিগফার করতে হবে, কাযা আদায় করতে হবে ও প্রতিটি সাওমের পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাদ্য দান করতে হবে। সাহাবায়ে কেরামের এক জামা‘আত এ ফতোওয়া দিয়েছেন। একটি সাওমের কাফফারা হলো অর্ধ সা‘ খাদ্য যা বর্তমানে প্রায় এক কেজি পাঁচশ গ্রাম পরিমাণ হয়ে থাকে।

২০৯
প্রশ্ন : তারাবীর সালাতের হুকুম কী?
জওয়াব: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উম্মতের জন্য তারাবীহকে সুন্নত করেছেন। তিনি তার সাহাবীদের নিয়ে তিন রাত্রি তারাবীহ আদায় করেছেন। উম্মতের ওপর ফরয হয়ে যেতে পারে এ আশঙ্কায় পরের দিন তিনি আর জামা‘আতের সাথে তারাবীহ আদায় করেন নি। মুসলিমগণ আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর খেলাফতকাল ও উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর খেলাফতের প্রথম দিকে এ অবস্থায়ই ছিল। এরপর উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তামীম আদদারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও উবাই ইবন কা‘আব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর ইমামতিতে তারাবীহের জামা‘আতের ব্যবস্থা করেন। যা আজ পর্যন্ত কায়েম আছে। আলহামদুলিল্লাহ! এ তারাবীহের জামা‘আত শুধু রমযান মাসেই সুন্নাত।

২১০
প্রশ্ন : দেখা যায় কোনো কোনো মুক্তাদী কেরাআতে ইমাম সাহেবের ভুল সংশোধনের জন্য তাবর্ণনাকারীতে কুরআন মজীদ বহন করেন অথচ ইমাম সাহেবের ভুল সংশোধনের দরকার নেই। কারণ, তিনিও কুরআন মজীদ দেখে দেখে তেলাওয়াত করছেন। এ সম্পর্কে নির্দেশ কী?
জওয়াব: সালাতে কুরআন মজীদ বহন করা উচিত নয়। তবে যদি প্রয়োজন দেখা দেয় তবে অন্য কথা। যেমন, ইমাম সাহেব কাউকে বললেন, আমি ভালো করে তেলাওয়াত করতে জানি না, আমি চাই তুমি কুরআন মজীদ নিয়ে আমার পিছনে থাকবে যদি আমি কোনো ভুল করি তবে তা ধরিয়ে দেবে। এ ধরনের কারণ ছাড়া মুক্তাদীর কুরআন বহন করা ঠিক নয়। কারণ, এতে মন অন্য দিকে চলে যায়। তা ছাড়া বুকের উপর ডান হাত বাম হাতের ওপর রাখার যে সুন্নত রয়েছে, তা আদায় করতে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। উত্তম হলো বর্ণিত কারণ ব্যতীত এ কাজ পরিহার করা।

২১১
প্রশ্ন : সদকাতুল ফিতরে কী হিকমত বা কল্যাণ আছে? তার পরিমাণ কত? এবং কার ওপর ওয়াজিব ?
জওয়াব: প্রত্যেক মুসলিমের ওপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব। মহিলা, পুরুষ, ছোট, বড়, স্বাধীন, অধীন সকলের জন্য ওয়াজিব।

ঈদের দিনে যদি কোনো মুসলিম ও তার পরিবার বর্গের খাবারের চেয়ে এক সা (প্রায় ৩ কেজি) খাবার অতিরিক্ত থাকে, তাহলে তার ওপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হয়ে যায়।

একজন মুসলিম সে নিজের পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করবে তেমনি নিজে যাদের ভরন-পোষণের দায়িত্ব পালন করে তাদের পক্ষ থেকেও আদায় করবে।

ফিতরার পরিমাণ হলো মাথা পিছু এক সা‘ খেজুর অথবা এক সা‘ আটা বা কিসমিস অথবা গম।

সকদাতুল ফিতর প্রবর্তনের হিকমত অনেক। আমরা যা দেখছি তা হলো:

১. সদকাতুল ফিতর শরীরের যাকাত।

২. এ দ্বারা দরিদ্র মুসলিমদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করা হয়। ঈদে আনন্দ উপভোগে তাদের সাহায্য করা হয়। যাতে ধনী- দরিদ্র সকলে ঈদের আনন্দে শামিল থেকে পারে। রাসূলুল্লাহ্সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«أغنوهم عن المسألة في هذا اليوم» .

“এ দিনের জন্য তোমরা তাদের ধনী করে দাও”।

৩. আল্লাহ তা আলা যে সাওম আদায়ের তাওফিক দিয়েছেন এর শুকরিয়া আদায় করা হয় সদকাতুল ফিতর আদায় করে।

৪. যদি সাওম পালনে কোনো ভুল- ত্রুটি হয়ে থাকে তাহলে এর পূর্ণতার জন্য সদকাতুল ফিতরের ভূমিকা আছে।

২১২
মহিলাদের ঈদের সালাতে গমন প্রশ্ন: ঈদুল ফিতরের জামা‘আতে মহিলাদের অংশ গ্রহণ জায়েয কিনা?
জওয়াব: হ্যাঁ জায়েয। বরং তাদের ঈদের জামা‘আতে অংশ গ্রহণের প্রতি জোর দেওয়া হয়েছে।

উম্মে আতীয়াহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:

«أمرنا أن نخرج الحيض يوم العيدين وذوات الخدور فيشهدن جماعة المسلمين ودعوتهم، ويعتزل الحيض عن مصلاهن، قالت امرأة : يارسول الله، إحدانا ليس لها جلباب، قال : لتلبسها صاحبتها من جلبابها» .

“আমাদের মহিলাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে মহিলাগণ মুসলিমদের জামা‘আতে প্রত্যক্ষ করতে পারেন ও তাদের সাথে সালাতে শরীক হন।

মাসিকগ্রস্ত মহিলাগণ ঈদগাহ থেকে দুরে থাকবে। এক মহিলা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের একজনের ওড়না নেই, সে কীভাবে যাবে? তিনি বললেন, সে তাদের এক সাথীর ওড়না নিয়ে পরিধান করবে ও যাবে।” কিন্তু মহিলাগণ সুগন্ধি ও চাকচিক্যময় বেশ-ভূষা এবং পুরুষদের সাথে একত্রিত হওয়া পরিহার করবেন।

সমাপ্ত

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন