HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

তাওবা

লেখকঃ সিরাজুল ইসলাম আলী আকবর

গুনাহের খারাপ পরিণতি ও ক্ষতিকর দিকসমূহ:
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ, মনে রাখতে হবে, গুনাহ মানুষের দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জগতের জন্যই ক্ষতিকর। গুনাহের কারণে মানুষ দুনিয়াতে লাঞ্ছনা-বঞ্চনা, অপমান- অপদস্থের শিকার হয়। দুনিয়ার জীবনে তার অশান্তির অন্ত থাকে না। অনেক সময় দুনিয়ার জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ে। ফলে দুনিয়াতেও গুনাহের কারণে তাকে নানাবিধ শাস্তি ও আজাব-গজবের মুখোমুখি হতে হয় এবং আখেরাতে তো তার জন্য রয়েছে অবর্ণনীয়- সীমাহীন দুর্ভোগ। এ ছাড়া গুনাহ কেবল মানুষের আত্মার জন্যই ক্ষতিকর নয় বরং আত্মা ও দেহ দুটির জন্যই ক্ষতিকর। গুনাহ মানুষের জন্য কঠিন এক ভয়ানক পরিণতি ডেকে আনে। গুনাহ মানুষের আত্মার জন্য এমন ক্ষতিকর যেমনিভাবে বিষ দেহের জন্য ক্ষতিকর। গুনাহের কয়েকটি ক্ষতিকর দিক ও খারাব পরিণতি নিম্নে আলোচনা করা হল। যাতে আমরা এগুলো জেনে গুনাহ হতে বিরত থাকতে সচেষ্ট হই।



ইলম তথা দ্বীনি জ্ঞান লাভ থেকে বঞ্চিত হওয়া। কারণ, ইলম হল নূর যা আল্লাহ মানুষের অন্তরে স্থাপন করেন কিন্তু গুনাহ-পাপাচার এ নূরকে নিভিয়ে দেয়। সুতরাং গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তি কখনো ইলম তথা শরিয়তের জ্ঞান লাভে ধন্য হতে পারে না। ইলম হল, আল্লাহর নূর আর গুনাহ হলো অন্ধকার। আর এ কথা স্পষ্ট যে, আলো ও অন্ধাকার কখনো একত্র হতে পারে না।

রিযিক থেকে বঞ্চিত হওয়া। মুসনাদে বর্ণিত হয়েছে,

إن العبد ليحرم الزرق بالذنب يصيبه

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, বান্দা গুনাহে লিপ্ত হওয়ার কারণে রিযিক হতে বঞ্চিত হয়। মানুষের রিযিকে সংকীর্ণতা দেখা দেয়। সুতরাং, রিযিকের স্বচ্ছলতা কামনাকারীদের জন্য গুনাহের কাজ ছেড়ে দিতে হবে।

গুনাহ দেহ ও আত্মাকে দুর্বল করে দেয়। ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন- নিশ্চয় নেক আমলের কারণে মানুষের চোহারা উজ্জ্বল হয়, অন্তর আলোকিত হয়, রিযিক বৃদ্ধি পায়, দেহের শক্তি ও মনোবল চাঙ্গা হয়, মানুষের অন্তরে মুহববত বৃদ্ধি পায়। পক্ষান্তরে খারাপ কাজে মানুষের চেহারা কুৎসিত হয়, অন্তর অন্ধকার হয়, দেহ দুর্বল হয়, রিযিক সংকীর্ণ হয় এবং মানুষের অন্তরে তার প্রতি ঘৃণা জন্মায়।

আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য হতে বঞ্চিত হয়। যদি গুনাহের কারণে তাকে কোন শাস্তি নাও দেয়া হয়, কিন্তু সে আল্লাহর বিশেষ ইবাদত বন্দেগী হতে বঞ্চিত হবে।

গুনাহকে ঘৃণা বা খারাপ জানার অনুভূতি হারিয়ে ফেলে। ফলে গুনাহের কাজে সে অভ্যস্ত হয়ে যায় এবং সমস্ত মানুষও যদি তাকে দেখে ফেলে বা তার সামলোচনা করে এতে সে লজ্জাবোধ বা গুনাহ করাকে খারাব ও অন্যায় মনে করে না। এ ধরনের মানুষকে আল্লাহ ক্ষমা করেন না এবং তাদের তওবার দরজাও বন্ধ হয়ে যায়।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন -

كل أمتي معافى إلا المجاهرين ، وإن من المجاهرة أن يعمل الرجل بالليل عملا، ثم يصبح وقد ستر الله عليه ، فيقول : يا فلان ، عملت البارحة كذا وكذا ، وقد بات يستره ربه، ويصبح يكشف ستر الله عليه . متفق عليه

‘‘আমার সকল উম্মতকে ক্ষমা করা হবে একমাত্র ঘোষণা দানাকারী ছাড়া। আর ঘোষণা হল, কোন ব্যক্তি রাতে কোন পাপ করল আর আল্লাহ তার অপকর্মকে গোপন রাখলেন কিন্তু লোকটি সকালে লোকদের ডেকে ঘোষণা করতে লাগল, হে অমুক আমি রাতে এই এই... কাজ করেছি। রাতে তার রব তাকে গোপন করল আর সকালে সে আল্লাহর গোপন করা বিষয় প্রকাশ করে দিল। (বুখারী ও মুসলিম)

বান্দা গুনাহ করতে করতে গুনাহ তার জন্য সহজ হয়ে যায়, অন্তরে সে গুনাহকে ছোট মনে করতে থাকে। তার মধ্যে অপরাধ বোধ অবশিষ্ট থাকে না। ফলে সে কোন অপরাধকে অপরাধ মনে করে না। আর এটাই হল একজন মানুষের জন্য ধ্বংসের নিদর্শন। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-

إن المؤمن يرى ذنوبه كأنه في أصل جبل يخاف أن يقع عليه وأن الفاجر يرى ذنوبه كذباب رفع على أنفه فقال به هكذا فطار ذكر البخاري في الصحيح )

‘‘মুমিন নিজ গুনাহগুলোকে এমনভাবে দেখে যে, যেন একটি পাহাড়ের পাদদেশে বসে আছে আশঙ্কা করছে যে সেটি তার উপর পতিত হবে আর পাপী নিজ গুনাহসমূহকে মাছির মত মনে করে যা তার নাকের উপর পড়েছে একটু পর উড়ে গিয়েছে। (বুখারী)

গুনাহ লাঞ্ছনা ও অপমানের কারণ হয়ে থাকে। কারণ হল, সকল প্রকার ইজ্জত একমাত্র আল্লাহর আনুগত্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আল্লাহর আনুগত্যের বাহিরে কোথাও ইজ্জত সম্মান পাওয়া যাবে না। তিনি যাকে ইচ্ছা ইজ্জত দান করেন আর যাকে ইচ্ছা বে-ইজ্জত করেন। আল্লাহ বলেন-

(আরবি)

‘‘কেউ ইজ্জতের আশা করলে মনে রাখতে হবে যে, সমস্ত ইজ্জত আল্লাহরই।’’ (সূরা ফাতের: ১০)

অর্থাৎ, ইজ্জত আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমেই তালাশ করা উচিত, কারণ, আল্লাহর আনুগত্য ছাড়া কোথাও ইজ্জত খুঁজে পাওয়া যাবে না। আল্লাহর আনুগত্যের বাহিরে যে ইজ্জত তালাশ করবে তাকে অবশ্যই বে-ইজ্জত হতে হবে। তাকে ভোগ করতে হবে লাঞ্ছনা, বঞ্চনা আর হতাশার গ্লানী। তাই আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমেই ইজ্জত তালাশ করতে হবে।

গুনাহ মানুষের জ্ঞান বুদ্ধিকে ধ্বংস করে দেয়। কারণ মানুষের জ্ঞান বুদ্ধির জন্য একটি আলো বা নূর থাকে আর গুনাহ ঐ নূর বা আলোকে নিভিয়ে দেয় , ফলে জ্ঞান বুদ্ধি ধ্বংস হয়ে যায়।

গুনাহ গুনাহকারীর অন্তরকে কাবু করে ফেলে এবং সে ধীরে ধীরে অলসদের অর্ন্তভুক্ত হয়। যেমন আল্লাহ বলেন-

(আরবি)

অর্থাৎ ‘‘কখনো না, বরং তারা যা করে তাই তাদের হদয়ে মরিচা ধরিয়ে দিয়েছে।’’ (মুতাফফিফীন:১৪)

এ আয়াত সম্পর্কে ওলামায়ে কেরাম বলেন, বার বার গুনাহ করার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়ে থাকে। তখন তার অন্তর আর ভাল কিছু গ্রহণ করে না। ভাল কাজ, ভাল কোন উপদেশ এবং মনীষীদের বাণী সবই তার কাছে অসহনীয় ও বিরক্তিকর মনে হয়। ফলে সে তার মনের ইচ্ছা ও খেয়াল খুশি মত যা ইচ্ছা তাই করতে থাকে। কোন অন্যায় অপরাধ তার নিকট অন্যায় মনে হয় না। গুনাহ তার নিকট আর গুনাহ বলে বিবেচিত হয় না। এ ধরনের লোকের সংখ্যা বর্তমান সমাজে অসংখ্য রয়েছে। তারা সালাত আদায় করে না, সওম পালন করে না, যাকাত প্রদান করে না...। কিন্তু এ সব যে প্রতিটিই মারাত্মক অপরাধ তা তাদের মনে একটুও রেখাপাত করে না। তারা যে অপরাধী, গুনাহগার ও পাপী এ ধরনের কোন অনুভূতি তাদের মনষ্পটে জাগ্রত হয় না এবং তাদের বিবেক বিন্দু পরিমাণও নাড়া দেয় না। ফলে তাদের অন্তর পাথরের চেয়ে বেশি কঠিন হয়ে যায়। তাদের অন্তরসমূহ হককে গ্রহণ করার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলে। ফলে এক পর্যায়ে ঈমান হারা হয়ে মারা যায়। আল্লাহ আমাদেরকে এ ধরনের পরিণতি হতে হেফাজত করুন।

গুনাহ বান্দাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অভিশাপের অর্ন্তভুক্ত করে। কারণ, তিনি গুনাহগারদের উপর অভিশাপ দিয়েছেন। যেমন - সুদ গ্রহীতা, দাতা, লেখক ও সাক্ষী- সকলের উপর অভিশাপ করেছেন। এমনিভাবে অভিশাপ করেছেন চোরের উপর। গাইরুল্লাহর নামে জাবেহকারী, জীবের ছবি অংকনকারী, মদ্যপানকারীসহ বিভিন্ন গুনাহের উপর তিনি অভিশাপ করেছেন। সুতরাং, মনে রাখতে হবে, যে গুনাহের কারণে আল্লাহ ও তার রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অভিশাপ করেছেন সে সব গুনাহে লিপ্ত হলে তাকে অবশ্যই আল্লাহ ও তার রাসূলের অভিশাপের ভাগিদার হতে হবে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসূলের অভিশাপের ভাগিদার হয় তার পরিণতি যে কী হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

গুনাহ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার ফেরেশতাদের দু’আ হতে বঞ্চিত হওয়ার কারণ হয়। কেননা, আল্লাহ তার নবীকে বান্দা বান্দীদের জন্য দু’আ করার আদেশ দিয়েছেন।

সুপ্রিয় পাঠক, ইবাদত-আনুগত্যের জন্য মহান আল্লাহ আমাদের পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। বাঁচিয়ে রেখেছেন নানা নেয়ামতরাজী দ্বারা। সুতরাং আনুগত্য করাই আমাদের কাজ। কল্যাণ ও কামিয়াবির পথ এটিই। তার পরও নফস-শয়তানের প্রবঞ্চনায় অন্যায়-অপরাধ হতে পারে, হয়ে যায়। কিন্তু রহমানুর রাহীম মহান আল্লাহর করুণা সীমাহীন। তিনি বান্দাকে অপরাধ মুক্ত হিসাবে হাশরে উপস্থিত দেখতে চান। তাই অন্যায় হয়ে গেলেও তার প্রতিকারের সুন্দর ব্যবস্থা রেখেছেন। নবীজী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, পাপ থেকে তওবাকারী এমন হয়ে যায় যেন সে পাপই করেনি। তিনি আরো বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ মৃত্যুর লক্ষণ শুরু হওয়া অবধি বান্দার তওবা কবুল করেন। তাই সুবিবেচনা ও নিজের প্রতি ইনসাফের পরিচয় হবে, সর্বদা পাপমুক্ত থাকার সর্বাত্মক চেষ্টা করা। যদি পাপ হয়ে যায় তাহলে অবশ্যই তওবা সুযোগ গ্রহণ করা। তওবাতে আল্লাহ অনেক খুশি হন। আল্লাহ আমাদেরকে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক কল্যাণের পথে পূর্ণঅবিচল থাকার তাওফীক দান করুন। আমীন।

সমাপ্ত

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন