HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
যে সকল হারামকে মানুষ হালকা মনে করে
লেখকঃ মুহাম্মাদ ছালেহ আল-মুনাজ্জিদ
যে সকল হারামকে মানুষ হালকা মনে করে
যা থেকে বেঁচে থাক ওয়াজিব
মূল : মুহাম্মাদ ছালেহ আল-মুনাজ্জিদ
অনুবাদ : মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
প্রকাশক : হাদীছ ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ
নওদাপাড়া, রাজশাহী-৬২০৩,
হা.ফা.বা. প্রকাশনা- ৩০
ফোন ও ফ্যাক্স : ০৭২১-৮৬১৩৬৫,
মোবাইল : ০১৭৭০-৮০০৯০০
১ম প্রকাশ : ফেব্রুয়ারী ২০১৩ খ্রিঃ
২য় সংস্করণ : জুন ২০১৩ খ্রিঃ
নির্ধারিত মূল্য : ৩৫ (পঁয়ত্রিশ) টাকা মাত্র।
যা থেকে বেঁচে থাক ওয়াজিব
মূল : মুহাম্মাদ ছালেহ আল-মুনাজ্জিদ
অনুবাদ : মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
প্রকাশক : হাদীছ ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ
নওদাপাড়া, রাজশাহী-৬২০৩,
হা.ফা.বা. প্রকাশনা- ৩০
ফোন ও ফ্যাক্স : ০৭২১-৮৬১৩৬৫,
মোবাইল : ০১৭৭০-৮০০৯০০
১ম প্রকাশ : ফেব্রুয়ারী ২০১৩ খ্রিঃ
২য় সংস্করণ : জুন ২০১৩ খ্রিঃ
নির্ধারিত মূল্য : ৩৫ (পঁয়ত্রিশ) টাকা মাত্র।
بسم الله الرحمن الرحيم
الحمد لله والصلاة والسلام علي من لا نبي بعده، أما بعد :
আল্লাহর অশেষ রহমতে আমরা সঊদী আরবের সমকালীন ইসলামী বিদ্বান ও সুপ্রসিদ্ধ ফৎওয়া ওয়েবসাইট www.islamqa.com-এর কর্ণধার মুহাম্মাদ ছালেহ আল-মুনাজ্জিদ (জন্ম : রিয়ায, ১৯৬০ খ্রিঃ) রচিত محرمات استهان بها الناس يجب الحذر منها পুস্তকটির বঙ্গানুবাদ সম্মানিত পাঠকদের হাতে তুলে দিতে সক্ষম হ’লাম। ফালিল্লাহিল হাম্দ। ইতিপূর্বে মাসিক ‘আত-তাহরীক’-এ ধারাবাহিকভাবে (জুলাই ২০০৩-মার্চ ২০০৪ খ্রিঃ) পুস্তকটির বঙ্গানুবাদ প্রকাশিত হয়েছিল।
বইটিতে বিজ্ঞ লেখক ইসলামী জীবনব্যবস্থার বিভিন্ন দিক ও বিভাগসমূহে যে সকল বিষয় হারাম বা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে তা অত্যন্ত সংক্ষেপে ও বোধগম্য ভাষায় উপস্থাপন করেছেন। যে বিষয়গুলি সম্পর্কে অনেকেই তেমন স্পষ্ট ধারণা রাখেন না। অথচ প্রত্যেক মুসলিমের জন্য বিষয়গুলি জানা একান্ত যরূরী। আশা করি বইটি পাঠককে দ্বীনের হালাল-হারাম সংক্রান্ত বিষয়গুলি সম্পর্কে সুস্পষ্ট জ্ঞান দান করবে এবং তাদেরকে যাবতীয় হারাম থেকে বেঁচে থাকতে উদ্বুদ্ধ করবে।
জনাব আব্দুল মালেক (ঝিনাইদহ) বইটি সুন্দরভাবে অনুবাদ করে আমাদের কৃতজ্ঞতাভাজন হয়েছেন। বইটি হাদীছ ফাউন্ডেশন গবেষণা বিভাগ কর্তৃক পরিমার্জিত হয়েছে। বইটি সুখপাঠ্য হিসাবে পাঠকের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে বলে আমাদের একান্ত বিশ্বাস।
এ বইয়ের মাধ্যমে আল্লাহর বান্দারা আল্লাহকৃত হারাম বস্ত্তসমূহ থেকে বিরত থাকলে আমাদের শ্রম সার্থক হয়েছে বলে মনে করব। আল্লাহ আমাদের এই ক্ষুদ্র খিদমতটুকু কবুল করুন এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে উত্তম জাযা প্রদান করুন- আমীন!
সচিব
হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ
الحمد لله والصلاة والسلام علي من لا نبي بعده، أما بعد :
আল্লাহর অশেষ রহমতে আমরা সঊদী আরবের সমকালীন ইসলামী বিদ্বান ও সুপ্রসিদ্ধ ফৎওয়া ওয়েবসাইট www.islamqa.com-এর কর্ণধার মুহাম্মাদ ছালেহ আল-মুনাজ্জিদ (জন্ম : রিয়ায, ১৯৬০ খ্রিঃ) রচিত محرمات استهان بها الناس يجب الحذر منها পুস্তকটির বঙ্গানুবাদ সম্মানিত পাঠকদের হাতে তুলে দিতে সক্ষম হ’লাম। ফালিল্লাহিল হাম্দ। ইতিপূর্বে মাসিক ‘আত-তাহরীক’-এ ধারাবাহিকভাবে (জুলাই ২০০৩-মার্চ ২০০৪ খ্রিঃ) পুস্তকটির বঙ্গানুবাদ প্রকাশিত হয়েছিল।
বইটিতে বিজ্ঞ লেখক ইসলামী জীবনব্যবস্থার বিভিন্ন দিক ও বিভাগসমূহে যে সকল বিষয় হারাম বা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে তা অত্যন্ত সংক্ষেপে ও বোধগম্য ভাষায় উপস্থাপন করেছেন। যে বিষয়গুলি সম্পর্কে অনেকেই তেমন স্পষ্ট ধারণা রাখেন না। অথচ প্রত্যেক মুসলিমের জন্য বিষয়গুলি জানা একান্ত যরূরী। আশা করি বইটি পাঠককে দ্বীনের হালাল-হারাম সংক্রান্ত বিষয়গুলি সম্পর্কে সুস্পষ্ট জ্ঞান দান করবে এবং তাদেরকে যাবতীয় হারাম থেকে বেঁচে থাকতে উদ্বুদ্ধ করবে।
জনাব আব্দুল মালেক (ঝিনাইদহ) বইটি সুন্দরভাবে অনুবাদ করে আমাদের কৃতজ্ঞতাভাজন হয়েছেন। বইটি হাদীছ ফাউন্ডেশন গবেষণা বিভাগ কর্তৃক পরিমার্জিত হয়েছে। বইটি সুখপাঠ্য হিসাবে পাঠকের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে বলে আমাদের একান্ত বিশ্বাস।
এ বইয়ের মাধ্যমে আল্লাহর বান্দারা আল্লাহকৃত হারাম বস্ত্তসমূহ থেকে বিরত থাকলে আমাদের শ্রম সার্থক হয়েছে বলে মনে করব। আল্লাহ আমাদের এই ক্ষুদ্র খিদমতটুকু কবুল করুন এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে উত্তম জাযা প্রদান করুন- আমীন!
সচিব
হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ
আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় বান্দাদের উপরে কিছু জিনিস ফরয করেছেন, যা পরিত্যাগ করা জায়েয নয়, কিছু সীমা বেঁধে দিয়েছেন, যা অতিক্রম করা বৈধ নয় এবং কিছু জিনিস হারাম করেছেন, যার ধারে কাছে যাওয়াও ঠিক নয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন-
مَا أَحَلَّ اللهُ فِىْ كِتَابِهِ فَهُوَ حَلاَلٌ وَمَا حَرَّمَ فَهُوَ حَرَامٌ وَمَا سَكَتَ عَنْهُ فَهُوَ عَافِيَةٌ فَاقْبَلُوْا مِنَ اللهِ الْعَافِيَةَ، فَإِنَّ اللهَ لَمْ يَكُنْ نَسِيًّا . ثُمَّ تَلاَ هَذِهِ الآيَةَ ( وَمَا كَانَ رَبُّكَ نَسِيًّا )-
‘আল্লাহ তা‘আলা তার কিতাবে যা হালাল করেছেন তা হালাল, যা হারাম করেছেন তা হারাম, আর যে বিষয়ে তিনি নীরব থেকেছেন তা ক্ষমা। সুতরাং তোমরা আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমাকে গ্রহণ কর। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বিস্মৃত হন না। তারপর তিনি এ আয়াত পাঠ করেন, ‘তোমার প্রতিপালক বিস্মৃত হন না’ (মারিয়াম ১৯/৬৪)।[1]
আর এই হারাম সমূহই আল্লাহ তা‘আলার সীমারেখা। আল্লাহ বলেন, تِلْكَ حُدُودُ اللهِ فَلاَ تَقْرَبُوهَا ‘এসব আল্লাহর সীমারেখা। সুতরাং তোমরা এগুলির নিকটেও যেয়ো না’ (বাক্বারাহ ১৮৭)।
আল্লাহর নির্ধারিত সীমা লংঘনকারী ও হারাম অবলম্বনকারীদেরকে আল্লাহ তা‘আলা ভীতি প্রদর্শন করেছেন। তিনি বলেছেন,
وَمَن يَعْصِ اللهَ وَرَسُولَهُ وَيَتَعَدَّ حُدُودَهُ يُدْخِلْهُ نَارًا خَالِداً فِيْهَا وَلَهُ عَذَابٌ مُّهِيْنٌ -
‘যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশের অবাধ্যতা করে এবং তাঁর সীমারেখাসমূহ লংঘন করে আল্লাহ তাকে আগুনে প্রবেশ করাবেন। সেখানে সে চিরস্থায়ী হবে। আর তার জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি’ (নিসা ১৪)।
এজন্যেই হারাম থেকে বিরত থাকা ফরয। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
مَا نَهَيْتُكُمْ عَنْهُ فَاجْتَنِبُوهُ وَمَا أَمَرْتُكُمْ بِهِ فَافْعَلُوا مِنْهُ مَا اسْتَطَعْتُمْ -
‘আমি তোমাদেরকে যা কিছু নিষেধ করি তোমরা সেসব থেকে বিরত থাক। আর যা কিছু আদেশ করি তা যথাসাধ্য পালন কর’।[2]
লক্ষ্যণীয় যে, প্রবৃত্তিপূজারী, দুর্বলমনা ও স্বল্প জ্ঞানের অধিকারী কিছু লোক যখন এক সঙ্গে কিছু হারামের কথা শুনতে পায় তখন আঁতকে ওঠে এবং বিরক্তির সুরে বলে, ‘সবই তো হারাম হয়ে গেল। তোমরা তো দেখছি আমাদের জন্য হারাম ছাড়া কিছুই বাকী রাখলে না। তোমরা আমাদের জীবনটাকে সংকীর্ণ করে ফেললে, মনটাকে বিষিয়ে দিলে! জীবনটা একেবারে মাটি হয়ে গেল। কোন কিছুর সাধ-আহলাদই আমরা ভোগ করতে পারলাম না। শুধু হারাম হারাম ফৎওয়া দেয়া ছাড়া তোমাদের দেখছি আর কোন কাজ নেই। অথচ আল্লাহর দ্বীন সহজ-সরল। তিনি নিজেও ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আর শরী‘আতের গন্ডিও ব্যাপকতর। সুতরাং হারাম এত সংখ্যক হ’তে পারে না’।
এদের জবাবে আমরা বলব, ‘আল্লাহ তা‘আলা যা ইচ্ছা আদেশ করতে পারেন। তাঁর আদেশকে খন্ডন করার কেউ নেই। তিনি প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ। সুতরাং তিনি যা ইচ্ছা হালাল করেছেন এবং যা ইচ্ছা হারাম করেছেন। তিনি পূত-পবিত্র। আল্লাহর দাস হিসাবে আমাদের নীতি হবে তাঁর আদেশের প্রতি সন্তুষ্ট থাকা এবং সর্বান্তঃকরণে তা মেনে নেয়া। কেননা তাঁর দেয়া বিধানাবলী জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও ইনছাফ মুতাবেকই প্রকাশ পেয়েছে। সেগুলি নিরর্থক ও খেলনার বস্ত্ত নয়। যেমন তিনি বলেছেন, وَتَمَّتْ كَلِمَتُ رَبِّكَ صِدْقاً وَّعَدْلاً لاَّ مُبَدِّلِ لِكَلِمَاتِهِ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ ‘তোমার প্রতিপালকের বাণী সত্য ও ন্যায়ের দিক দিয়ে পরিপূর্ণ হ’ল। তাঁর বাণীসমূহকে পরিবর্তনকারী কেউ নেই। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ’ (আন‘আম ১১৫)।
যে নিয়মের ভিত্তিতে হালাল-হারাম নির্ণিত হয়েছে আল্লাহ তা‘আলা তাও আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, وَيُحِلُّ لَهُمُ الطَّيِّبَاتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْخَبَآئِثَ ‘তিনি পবিত্র বস্ত্তকে তাদের জন্য হালাল এবং অপবিত্র বস্ত্তকে হারাম করেন’ (আ‘রাফ ১৫৭)।
সুতরাং যা পবিত্র তা হালাল এবং যা অপবিত্র তা হারাম। কোন কিছু হালাল ও হারাম করার অধিকার একমাত্র আল্লাহরই। কোন মানুষ নিজের জন্য তা দাবী করলে কিংবা কেউ তা অন্যের জন্য সাব্যস্ত করলে সে হবে একজন বড় কাফির ও মুসলিম উম্মাহ বহির্ভূত ব্যক্তি। আল্লাহ বলেন, أَمْ لَهُمْ شُرَكَاءُ شَرَعُوْا لَهُم مِّنَ الدِّيْنِ مَا لَمْ يَأْذَنْ بِهِ اللهُ - ‘তবে কি তাদের এমন সব উপাস্য রয়েছে, যারা তাদের জন্য দ্বীনের এমন সব বিধান দিয়েছে যার অনুমতি আল্লাহ দেননি’ (শূরা ২১)।
কুরআন-হাদীছে পারদর্শী আলেমগণ ব্যতীত হালাল-হারাম সম্পর্কে কথা বলার অধিকার অন্য কারো নেই। যে ব্যক্তি না জেনে হালাল-হারাম সম্পর্কে কথা বলে আল-কুরআনে তার সম্পর্কে কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারিত হয়েছে। আল্লাহ বলেন-
وَلَا تَقُولُوا لِمَا تَصِفُ أَلْسِنَتُكُمُ الْكَذِبَ هَذَا حَلاَلٌ وَهَذَا حَرَامٌ لِتَفْتَرُوا عَلَى اللهِ الْكَذِبَ -
‘তোমাদের জিহবায় মিথ্যা উচ্চারিত হয় বলে তোমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপের মানসে বল না যে, এটা হালাল, ওটা হারাম’ (নাহল ১১৬)।
যেসব বস্ত্ত অখন্ডনীয়ভাবে হারাম তা কুরআন ও হাদীছে উল্লেখ আছে। যেমন আল্লাহ বলেছেন-
قُلْ تَعَالَوْا أَتْلُ مَا حَرَّمَ رَبُّكُمْ عَلَيْكُمْ أَلاَّ تُشْرِكُواْ بِهِ شَيْئاً وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَاناً وَلاَ تَقْتُلُواْ أَوْلاَدَكُم مِّنْ إمْلاَقٍ -
‘আপনি বলুন, এসো, তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের উপর যা হারাম করেছেন তা পড়ে শুনাই। তোমরা তার সঙ্গে কাউকে শরীক করো না, মাতা-পিতার সাথে সদাচরণ করবে আর দারিদ্রে্যর কারণে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করো না’ (আন‘আম ১৫১)।
অনুরূপভাবে হাদীছেও বহু হারাম জিনিসের বিবরণ এসেছে। যেমন- রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন - إِنَّ اللهَ حَرَّمَ بَيْعَ الْخَمْرِ وَالْمَيْتَةِ وَالْخِنْزِيرِ وَالأَصْنَامِ ‘আল্লাহ তা‘আলা মদ, মৃত প্রাণী, শূকর ও মূর্তি কেনা-বেচা হারাম করেছেন’।[3]
অপর হাদীছে এসেছে, إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ إِذَا حَرَّمَ شَيْئاً حَرَّمَ ثَمَنَهُ ‘আল্লাহ যখন কোন কিছু হারাম করেন তখন তার মূল্য তথা কেনা-বেচাও হারাম করে দেন’।[4]
কোন কোন আয়াতে কখনো একটি বিশেষ শ্রেণীর হারামের আলোচনা দেখতে পাওয়া যায়। যেমন হারাম খাদ্যদ্রব্য প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেছেন,
حُرِّمَتْ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةُ وَالدَّمُ وَلَحْمُ الْخِنْزِيْرِ وَمَا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللهِ بِهِ وَالْمُنْخَنِقَةُ وَالْمَوْقُوْذَةُ وَالْمُتَرَدِّيَةُ وَالنَّطِيْحَةُ وَمَا أَكَلَ السَّبُعُ إِلاَّ مَا ذَكَّيْتُمْ وَمَا ذُبِحَ عَلَى النُّصُبِ وَأَن تَسْتَقْسِمُوْا بِالْأَزْلاَمِ -
‘তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত প্রাণী, রক্ত, শূকরের গোশত, আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে যবেহকৃত প্রাণী, গলা টিপে হত্যাকৃত প্রাণী, পাথরের আঘাতে নিহত প্রাণী, উপর থেকে নীচে পড়ে গিয়ে মৃত প্রাণী, শিং এর আঘাতে মৃত প্রাণী, হিংস্র প্রাণীর ভক্ষিত প্রাণী। অবশ্য (উল্লেখিত ক্ষেত্রগুলিতে যে সব হালাল প্রাণীকে) তোমরা যবেহ করতে সক্ষম হও সেগুলি হারাম হবে না। আর (তোমাদের জন্য হারাম) সেইসব প্রাণী যেগুলি পূজার বেদীমূলে যবেহ করা হয় এবং ভাগ্য নির্ণায়ক তীরের সাহায্যে যে গোশত তোমরা বণ্টন কর’ (মায়েদাহ ৩)।
হারাম বিবাহ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন,
حُرِّمَتْ عَلَيْكُمْ أُمَّهَاتُكُمْ وَبَنَاتُكُمْ وَأَخَوَاتُكُمْ وَعَمَّاتُكُمْ وَخَالاَتُكُمْ وَبَنَاتُ الْأَخِ وَبَنَاتُ الْأُخْتِ وَأُمَّهَاتُكُمُ اللاَّتِيْ أَرْضَعْنَكُمْ وَأَخَوَاتُكُم مِّنَ الرَّضَاعَةِ وَأُمَّهَاتُ نِسَآئِكُمْ -
‘তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতৃকুল, কন্যাকুল, ভগ্নিকুল, ফুফুকুল, খালাকুল, ভ্রাতুষ্পুত্রীকুল, ভগ্নিকন্যাকুল, স্তন্যদাত্রী মাতৃকুল, স্তন্যপান সম্পর্কিত ভগ্নীকুল ও শাশুড়ীদেরকে’ (নিসা ২৩)।
উপার্জন বিষয়ক হারাম সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন - أَحَلَّ اللهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا ‘আল্লাহ তা‘আলা কেনা-বেচা হালাল করেছেন এবং সূদকে হারাম করেছেন’ (বাক্বারাহ ২৭৫)।
বস্ত্ততঃ মানুষের প্রতি পরম দয়ালু আল্লাহ তা‘আলা আমাদের জন্য সংখ্যা ও শ্রেণীগতভাবে এত পবিত্র জিনিস হালাল করেছেন যে, তা গুণে শেষ করা সম্ভব নয়। এ কারণেই তিনি হালাল জিনিসগুলির বিস্তারিত বিবরণ দেননি। কিন্তু হারামের সংখ্যা যেহেতু সীমিত এবং সেগুলি জানার পর মানুষ যেন তা থেকে বিরত থাকতে পারে সেজন্য তিনি উহার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেছেন। আল্লাহ বলেন, وَقَدْ فَصَّلَ لَكُم مَّا حَرَّمَ عَلَيْكُمْ إِلاَّ مَا اضْطُرِرْتُمْ إِلَيْهِ ‘তিনি তোমাদের উপর যা হারাম করেছেন তার বিস্তারিত বিবরণ তোমাদেরকে দান করেছেন। তবে তোমরা যে হারামটা বাধ্য হয়ে বা ঠেকায় পড়ে করে ফেল তা ক্ষমার্হ’ (আন‘আম ১১৯)।
হারামকে এভাবে বিস্তারিত পেশের কথা বললেও হালালকে কিন্তু সংক্ষেপে সাধারণভাবে তুলে ধরা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا النَّاسُ كُلُواْ مِمَّا فِي الْأَرْضِ حَلاَلاً طَيِّباً ‘হে মানবকুল! তোমরা যমীনের বুকে যা কিছু হালাল ও উৎকৃষ্ট সেগুলি খাও’ (বাক্বারাহ ১৬৮)।
হারামের দলীল সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত সব জিনিসের মূল হুকুম হালাল হওয়াটা মহান আল্লাহর পরম করুণা। এটা মহান আল্লাহর অনুগ্রহ এবং তাঁর বান্দাদের উপর সহজীকরণের নিদর্শন স্বরূপ। সুতরাং তাঁর আনুগত্য প্রকাশ, প্রশংসা ও শুকরিয়া জ্ঞাপন করা আমাদের অপরিহার্য কর্তব্য।
কিন্তু পূর্বোল্লেখিত ঐসব লোক যখন তাদের সামনে হারামগুলি বিস্তারিত দেখতে পায় তখন শরী‘আতের বিধি-বিধানের ব্যাপারে তাদের মন সংকীর্ণতায় ভোগে। এটা তাদের ঈমানী দুর্বলতা ও শরী‘আত সম্পর্কে অনুধাবন শক্তির স্বল্পতার ফসল।
আসলে তারা কি চায় যে, হালালের শ্রেণীবিভাগগুলিও তাদের সামনে এক এক করে গণনা করা হোক যাতে তারা দ্বীন যে একটা সহজ বিষয় তা জেনে আত্মতৃপ্ত হতে পারে?
তারা কি চায় যে, নানা শ্রেণীর পবিত্র জিনিসগুলি তাদের সামনে এক এক করে তুলে ধরা হোক, যাতে তারা নিশ্চিত হতে পারে যে, শরী‘আত তাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে দেয়নি। তারা কি চায় যে এভাবে বলা হোক?-
-উট, গরু, ছাগল, খরগোশ, হরিণ, পাহাড়ী ছাগল, মুরগী, কবুতর, হাঁস, রাজহাঁস, উটপাখি ইত্যাকার যবেহকৃত প্রাণীর গোশত হালাল।
-মৃত পঙ্গপাল ও মাছ হালাল।
-শাক-সবজি, ফলমূল, সকল দানাশস্য ও উপকারী ফল-ফুল হালাল। পানি, দুধ, মধু, তেল ও শিরকা হালাল। লবণ, মরিচ ও মসলা হালাল।
-লোহা, বালু, খোয়া, প্লাস্টিক, কাঁচ ও রাবার ইত্যাদি ব্যবহার হালাল।
-খাট, চেয়ার, টেবিল, সোফা, তৈজসপত্র, আসবাবপত্র ইত্যাদি ব্যবহার হালাল।
-জীবজন্তু, মোটরগাড়ী, রেলগাড়ী, নৌকা, জাহাজ ও বিমানে আরোহণ হালাল।
-এয়ারকন্ডিশন, রেফ্রিজারেটর, ওয়াশিং মেশিন, পানি শুকানোর যন্ত্র, পেষণ যন্ত্র, আটা খামির করার যন্ত্র, কিমা তৈরীর যন্ত্র, ব্লেন্ডার মেশিন, সবরকমের ডাক্তারী, ইঞ্জিনিয়ারিং যন্ত্রপাতি, জাহাজ তৈরী, নির্মাণ বিষয়ক যন্ত্রপাতি, হিসাব রক্ষণ, পর্যবেক্ষণ যন্ত্রপাতি, কম্পিউটার এবং পানি, পেট্রোল, খনিজদ্রব্য উত্তোলন ও শোধন, মুদ্রণ যন্ত্রপাতি ইত্যাদি হালাল।
-সূতী, কাতান, পশম, নাইলন, পলেস্টার ও বৈধ চামড়ার তৈরী বস্ত্র হালাল।
-বিবাহ, বেচা-কেনা, যিম্মাদারী, চেক, ড্রাফট, মনিঅর্ডার, ইজারা বা ভাড়া প্রদান হালাল।
-বিভিন্ন পেশা যেমন কাঠমিস্ত্রীগিরি, কর্মকারগিরি, যন্ত্রপাতি মেরামত, ছাগপালের রাখালী ইত্যাদি হালাল।
এভাবে গুনলে আর বর্ণনা করলে পাঠকের কি মনে হয় আমরা হালালের ফিরিস্তি দিয়ে শেষ করতে পারব? তাহলে এসব লোকের কি হ’ল যে, তারা যে কোন কথাই বুঝতে চায় না?
দ্বীন যে সহজ তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবুও একথা বলে যারা সব কিছুই হালাল প্রমাণ করতে চায় তাদের কথা সত্য, কিন্তু উদ্দেশ্য খারাপ। কেননা দ্বীনের মধ্যে কোন কিছু মানুষের মর্যি মাফিক সহজ হয় না। তা কেবল শরী‘আতে যেভাবে বর্ণিত হয়েছে সেভাবেই নির্ধারিত হবে। অপর দিকে ‘দ্বীন সহজ’ এরূপ বাতিল দলীল দিয়ে হারাম কাজ করা আর শরী‘আতের অবকাশমূলক দিক গ্রহণ করার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। অবকাশমূলক কাজের উদাহরণ হ’ল সফরে দু’ওয়াক্তের ছালাত একত্রে পড়া, ক্বছর করা, সফরে ছিয়াম ভঙ্গ করা, মুক্বীমের জন্য একদিন এক রাত এবং মুসাফিরের জন্য তিনদিন তিন রাত মোযার উপর মাসেহ করা, পানি ব্যবহারের অসুবিধা থাকলে তায়াম্মুম করা, অসুস্থ হ’লে কিংবা বৃষ্টি নামলে দু’ওয়াক্তের ছালাত একত্রে পড়া, বিবাহের প্রস্তাবদাতার জন্য গায়ের মাহরাম মহিলাকে দেখা, শপথের কাফফারায় দাস মুক্তি, আহার করানো, বস্ত্র দান, ছিয়াম পালনের যে কোন একটি ব্যবস্থা গ্রহণ করা (মায়েদা ৮৯), নিরূপায় হলে মৃত প্রাণীর গোশত ভক্ষণ করা ইত্যাদি।
মোটকথা, শরী‘আতে যখন হারাম আছে তখন সকল মুসলমানের জন্যই উহার মধ্যে যে গূঢ় রহস্য বা তত্ত্ব লুকিয়ে আছে তা জানা দরকার। যেমন-
(১) আল্লাহ তা‘আলা হারাম দ্বারা তার বান্দাদের পরীক্ষা করেন। তারা এ সম্পর্কে কেমন আচরণ করে তা তিনি লক্ষ্য করেন।
(২) কে জান্নাতবাসী হবে আর কে জাহান্নামবাসী হবে হারামের মাধ্যমে তা নির্ণয় করা চলে। যারা জাহান্নামী তারা সর্বদা প্রবৃত্তির পূজায় মগ্ন থাকে, যা দিয়ে জাহান্নামকে ঘিরে রাখা হয়েছে। আর যারা জান্নাতী তারা দুঃখ-কষ্টে ধৈর্য ধারণ করে, যে দুঃখ-কষ্ট দিয়ে জান্নাতকে বেষ্টন করে রাখা হয়েছে। এ পরীক্ষা না থাকলে বাধ্য হ’তে অবাধ্যকে পৃথক করা যেত না।
(৩) যারা ঈমানদার তারা হারাম ত্যাগজনিত কষ্ট সহ্য করাকে সাক্ষাৎ পুণ্য এবং আল্লাহ তা‘আলার যে কোন নির্দেশ পালনকে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উপায় বলে মনে করে। ফলে কষ্ট স্বীকার করা তাদের জন্য সহজ হয়ে যায়। পক্ষান্তরে যারা কপট ও মুনাফিক্ব তারা কষ্ট সহ্য করাকে যন্ত্রণা, বেদনা ও বঞ্চনা বলে মনে করে। ফলে ইসলামের পথে চলা তাদের জন্য কঠিন এবং সৎ কাজ সম্পাদন ও আনুগত্য স্বীকার করা ততধিক কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়।
(৪) একজন সৎ লোক আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনার্থে হারাম পরিহার করলে বিনিময়ে তার চেয়ে যে উত্তম কিছু পাওয়া যায় তা ভালমত অনুধাবন করতে পারে। এভাবে সে তার মনোরাজ্যে ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করতে পারে।
আলোচ্য পুস্তকের মধ্যে সম্মানিত পাঠক শরী‘আতে হারাম বলে গণ্য এমন কিছু সংখ্যক নিষিদ্ধ বিষয়ের বিবরণ পাবেন কুরআন-সুন্নাহ থেকে সেগুলো হারাম হওয়ার দলীলসহ। এসব হারাম এমনই যা আমাদের সমাজে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এবং বহুসংখ্যক মুসলমান নির্দ্বিধায় তা হরহামেশা করে চলেছে। আমরা কেবল মানুষের কল্যাণ কামনার্থে তাদের সামনে এগুলি তুলে ধরেছি অতি সংক্ষেপে।
[1]. হাকেম, দারাকুৎনী; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২২৫৬।
[2]. মুসলিম, হা/১৩৩৭ ‘ফাযায়েল’ অধ্যায়।
[3]. আবুদাঊদ হা/৩৪৮৬, সনদ ছহীহ।
[4]. দারাকুৎনী, ইবনু হিববান হা/৪৯৩৮, সনদ ছহীহ।
مَا أَحَلَّ اللهُ فِىْ كِتَابِهِ فَهُوَ حَلاَلٌ وَمَا حَرَّمَ فَهُوَ حَرَامٌ وَمَا سَكَتَ عَنْهُ فَهُوَ عَافِيَةٌ فَاقْبَلُوْا مِنَ اللهِ الْعَافِيَةَ، فَإِنَّ اللهَ لَمْ يَكُنْ نَسِيًّا . ثُمَّ تَلاَ هَذِهِ الآيَةَ ( وَمَا كَانَ رَبُّكَ نَسِيًّا )-
‘আল্লাহ তা‘আলা তার কিতাবে যা হালাল করেছেন তা হালাল, যা হারাম করেছেন তা হারাম, আর যে বিষয়ে তিনি নীরব থেকেছেন তা ক্ষমা। সুতরাং তোমরা আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমাকে গ্রহণ কর। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বিস্মৃত হন না। তারপর তিনি এ আয়াত পাঠ করেন, ‘তোমার প্রতিপালক বিস্মৃত হন না’ (মারিয়াম ১৯/৬৪)।[1]
আর এই হারাম সমূহই আল্লাহ তা‘আলার সীমারেখা। আল্লাহ বলেন, تِلْكَ حُدُودُ اللهِ فَلاَ تَقْرَبُوهَا ‘এসব আল্লাহর সীমারেখা। সুতরাং তোমরা এগুলির নিকটেও যেয়ো না’ (বাক্বারাহ ১৮৭)।
আল্লাহর নির্ধারিত সীমা লংঘনকারী ও হারাম অবলম্বনকারীদেরকে আল্লাহ তা‘আলা ভীতি প্রদর্শন করেছেন। তিনি বলেছেন,
وَمَن يَعْصِ اللهَ وَرَسُولَهُ وَيَتَعَدَّ حُدُودَهُ يُدْخِلْهُ نَارًا خَالِداً فِيْهَا وَلَهُ عَذَابٌ مُّهِيْنٌ -
‘যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশের অবাধ্যতা করে এবং তাঁর সীমারেখাসমূহ লংঘন করে আল্লাহ তাকে আগুনে প্রবেশ করাবেন। সেখানে সে চিরস্থায়ী হবে। আর তার জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি’ (নিসা ১৪)।
এজন্যেই হারাম থেকে বিরত থাকা ফরয। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
مَا نَهَيْتُكُمْ عَنْهُ فَاجْتَنِبُوهُ وَمَا أَمَرْتُكُمْ بِهِ فَافْعَلُوا مِنْهُ مَا اسْتَطَعْتُمْ -
‘আমি তোমাদেরকে যা কিছু নিষেধ করি তোমরা সেসব থেকে বিরত থাক। আর যা কিছু আদেশ করি তা যথাসাধ্য পালন কর’।[2]
লক্ষ্যণীয় যে, প্রবৃত্তিপূজারী, দুর্বলমনা ও স্বল্প জ্ঞানের অধিকারী কিছু লোক যখন এক সঙ্গে কিছু হারামের কথা শুনতে পায় তখন আঁতকে ওঠে এবং বিরক্তির সুরে বলে, ‘সবই তো হারাম হয়ে গেল। তোমরা তো দেখছি আমাদের জন্য হারাম ছাড়া কিছুই বাকী রাখলে না। তোমরা আমাদের জীবনটাকে সংকীর্ণ করে ফেললে, মনটাকে বিষিয়ে দিলে! জীবনটা একেবারে মাটি হয়ে গেল। কোন কিছুর সাধ-আহলাদই আমরা ভোগ করতে পারলাম না। শুধু হারাম হারাম ফৎওয়া দেয়া ছাড়া তোমাদের দেখছি আর কোন কাজ নেই। অথচ আল্লাহর দ্বীন সহজ-সরল। তিনি নিজেও ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আর শরী‘আতের গন্ডিও ব্যাপকতর। সুতরাং হারাম এত সংখ্যক হ’তে পারে না’।
এদের জবাবে আমরা বলব, ‘আল্লাহ তা‘আলা যা ইচ্ছা আদেশ করতে পারেন। তাঁর আদেশকে খন্ডন করার কেউ নেই। তিনি প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ। সুতরাং তিনি যা ইচ্ছা হালাল করেছেন এবং যা ইচ্ছা হারাম করেছেন। তিনি পূত-পবিত্র। আল্লাহর দাস হিসাবে আমাদের নীতি হবে তাঁর আদেশের প্রতি সন্তুষ্ট থাকা এবং সর্বান্তঃকরণে তা মেনে নেয়া। কেননা তাঁর দেয়া বিধানাবলী জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও ইনছাফ মুতাবেকই প্রকাশ পেয়েছে। সেগুলি নিরর্থক ও খেলনার বস্ত্ত নয়। যেমন তিনি বলেছেন, وَتَمَّتْ كَلِمَتُ رَبِّكَ صِدْقاً وَّعَدْلاً لاَّ مُبَدِّلِ لِكَلِمَاتِهِ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ ‘তোমার প্রতিপালকের বাণী সত্য ও ন্যায়ের দিক দিয়ে পরিপূর্ণ হ’ল। তাঁর বাণীসমূহকে পরিবর্তনকারী কেউ নেই। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ’ (আন‘আম ১১৫)।
যে নিয়মের ভিত্তিতে হালাল-হারাম নির্ণিত হয়েছে আল্লাহ তা‘আলা তাও আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, وَيُحِلُّ لَهُمُ الطَّيِّبَاتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْخَبَآئِثَ ‘তিনি পবিত্র বস্ত্তকে তাদের জন্য হালাল এবং অপবিত্র বস্ত্তকে হারাম করেন’ (আ‘রাফ ১৫৭)।
সুতরাং যা পবিত্র তা হালাল এবং যা অপবিত্র তা হারাম। কোন কিছু হালাল ও হারাম করার অধিকার একমাত্র আল্লাহরই। কোন মানুষ নিজের জন্য তা দাবী করলে কিংবা কেউ তা অন্যের জন্য সাব্যস্ত করলে সে হবে একজন বড় কাফির ও মুসলিম উম্মাহ বহির্ভূত ব্যক্তি। আল্লাহ বলেন, أَمْ لَهُمْ شُرَكَاءُ شَرَعُوْا لَهُم مِّنَ الدِّيْنِ مَا لَمْ يَأْذَنْ بِهِ اللهُ - ‘তবে কি তাদের এমন সব উপাস্য রয়েছে, যারা তাদের জন্য দ্বীনের এমন সব বিধান দিয়েছে যার অনুমতি আল্লাহ দেননি’ (শূরা ২১)।
কুরআন-হাদীছে পারদর্শী আলেমগণ ব্যতীত হালাল-হারাম সম্পর্কে কথা বলার অধিকার অন্য কারো নেই। যে ব্যক্তি না জেনে হালাল-হারাম সম্পর্কে কথা বলে আল-কুরআনে তার সম্পর্কে কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারিত হয়েছে। আল্লাহ বলেন-
وَلَا تَقُولُوا لِمَا تَصِفُ أَلْسِنَتُكُمُ الْكَذِبَ هَذَا حَلاَلٌ وَهَذَا حَرَامٌ لِتَفْتَرُوا عَلَى اللهِ الْكَذِبَ -
‘তোমাদের জিহবায় মিথ্যা উচ্চারিত হয় বলে তোমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপের মানসে বল না যে, এটা হালাল, ওটা হারাম’ (নাহল ১১৬)।
যেসব বস্ত্ত অখন্ডনীয়ভাবে হারাম তা কুরআন ও হাদীছে উল্লেখ আছে। যেমন আল্লাহ বলেছেন-
قُلْ تَعَالَوْا أَتْلُ مَا حَرَّمَ رَبُّكُمْ عَلَيْكُمْ أَلاَّ تُشْرِكُواْ بِهِ شَيْئاً وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَاناً وَلاَ تَقْتُلُواْ أَوْلاَدَكُم مِّنْ إمْلاَقٍ -
‘আপনি বলুন, এসো, তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের উপর যা হারাম করেছেন তা পড়ে শুনাই। তোমরা তার সঙ্গে কাউকে শরীক করো না, মাতা-পিতার সাথে সদাচরণ করবে আর দারিদ্রে্যর কারণে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করো না’ (আন‘আম ১৫১)।
অনুরূপভাবে হাদীছেও বহু হারাম জিনিসের বিবরণ এসেছে। যেমন- রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন - إِنَّ اللهَ حَرَّمَ بَيْعَ الْخَمْرِ وَالْمَيْتَةِ وَالْخِنْزِيرِ وَالأَصْنَامِ ‘আল্লাহ তা‘আলা মদ, মৃত প্রাণী, শূকর ও মূর্তি কেনা-বেচা হারাম করেছেন’।[3]
অপর হাদীছে এসেছে, إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ إِذَا حَرَّمَ شَيْئاً حَرَّمَ ثَمَنَهُ ‘আল্লাহ যখন কোন কিছু হারাম করেন তখন তার মূল্য তথা কেনা-বেচাও হারাম করে দেন’।[4]
কোন কোন আয়াতে কখনো একটি বিশেষ শ্রেণীর হারামের আলোচনা দেখতে পাওয়া যায়। যেমন হারাম খাদ্যদ্রব্য প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেছেন,
حُرِّمَتْ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةُ وَالدَّمُ وَلَحْمُ الْخِنْزِيْرِ وَمَا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللهِ بِهِ وَالْمُنْخَنِقَةُ وَالْمَوْقُوْذَةُ وَالْمُتَرَدِّيَةُ وَالنَّطِيْحَةُ وَمَا أَكَلَ السَّبُعُ إِلاَّ مَا ذَكَّيْتُمْ وَمَا ذُبِحَ عَلَى النُّصُبِ وَأَن تَسْتَقْسِمُوْا بِالْأَزْلاَمِ -
‘তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত প্রাণী, রক্ত, শূকরের গোশত, আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে যবেহকৃত প্রাণী, গলা টিপে হত্যাকৃত প্রাণী, পাথরের আঘাতে নিহত প্রাণী, উপর থেকে নীচে পড়ে গিয়ে মৃত প্রাণী, শিং এর আঘাতে মৃত প্রাণী, হিংস্র প্রাণীর ভক্ষিত প্রাণী। অবশ্য (উল্লেখিত ক্ষেত্রগুলিতে যে সব হালাল প্রাণীকে) তোমরা যবেহ করতে সক্ষম হও সেগুলি হারাম হবে না। আর (তোমাদের জন্য হারাম) সেইসব প্রাণী যেগুলি পূজার বেদীমূলে যবেহ করা হয় এবং ভাগ্য নির্ণায়ক তীরের সাহায্যে যে গোশত তোমরা বণ্টন কর’ (মায়েদাহ ৩)।
হারাম বিবাহ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন,
حُرِّمَتْ عَلَيْكُمْ أُمَّهَاتُكُمْ وَبَنَاتُكُمْ وَأَخَوَاتُكُمْ وَعَمَّاتُكُمْ وَخَالاَتُكُمْ وَبَنَاتُ الْأَخِ وَبَنَاتُ الْأُخْتِ وَأُمَّهَاتُكُمُ اللاَّتِيْ أَرْضَعْنَكُمْ وَأَخَوَاتُكُم مِّنَ الرَّضَاعَةِ وَأُمَّهَاتُ نِسَآئِكُمْ -
‘তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতৃকুল, কন্যাকুল, ভগ্নিকুল, ফুফুকুল, খালাকুল, ভ্রাতুষ্পুত্রীকুল, ভগ্নিকন্যাকুল, স্তন্যদাত্রী মাতৃকুল, স্তন্যপান সম্পর্কিত ভগ্নীকুল ও শাশুড়ীদেরকে’ (নিসা ২৩)।
উপার্জন বিষয়ক হারাম সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন - أَحَلَّ اللهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا ‘আল্লাহ তা‘আলা কেনা-বেচা হালাল করেছেন এবং সূদকে হারাম করেছেন’ (বাক্বারাহ ২৭৫)।
বস্ত্ততঃ মানুষের প্রতি পরম দয়ালু আল্লাহ তা‘আলা আমাদের জন্য সংখ্যা ও শ্রেণীগতভাবে এত পবিত্র জিনিস হালাল করেছেন যে, তা গুণে শেষ করা সম্ভব নয়। এ কারণেই তিনি হালাল জিনিসগুলির বিস্তারিত বিবরণ দেননি। কিন্তু হারামের সংখ্যা যেহেতু সীমিত এবং সেগুলি জানার পর মানুষ যেন তা থেকে বিরত থাকতে পারে সেজন্য তিনি উহার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেছেন। আল্লাহ বলেন, وَقَدْ فَصَّلَ لَكُم مَّا حَرَّمَ عَلَيْكُمْ إِلاَّ مَا اضْطُرِرْتُمْ إِلَيْهِ ‘তিনি তোমাদের উপর যা হারাম করেছেন তার বিস্তারিত বিবরণ তোমাদেরকে দান করেছেন। তবে তোমরা যে হারামটা বাধ্য হয়ে বা ঠেকায় পড়ে করে ফেল তা ক্ষমার্হ’ (আন‘আম ১১৯)।
হারামকে এভাবে বিস্তারিত পেশের কথা বললেও হালালকে কিন্তু সংক্ষেপে সাধারণভাবে তুলে ধরা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا النَّاسُ كُلُواْ مِمَّا فِي الْأَرْضِ حَلاَلاً طَيِّباً ‘হে মানবকুল! তোমরা যমীনের বুকে যা কিছু হালাল ও উৎকৃষ্ট সেগুলি খাও’ (বাক্বারাহ ১৬৮)।
হারামের দলীল সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত সব জিনিসের মূল হুকুম হালাল হওয়াটা মহান আল্লাহর পরম করুণা। এটা মহান আল্লাহর অনুগ্রহ এবং তাঁর বান্দাদের উপর সহজীকরণের নিদর্শন স্বরূপ। সুতরাং তাঁর আনুগত্য প্রকাশ, প্রশংসা ও শুকরিয়া জ্ঞাপন করা আমাদের অপরিহার্য কর্তব্য।
কিন্তু পূর্বোল্লেখিত ঐসব লোক যখন তাদের সামনে হারামগুলি বিস্তারিত দেখতে পায় তখন শরী‘আতের বিধি-বিধানের ব্যাপারে তাদের মন সংকীর্ণতায় ভোগে। এটা তাদের ঈমানী দুর্বলতা ও শরী‘আত সম্পর্কে অনুধাবন শক্তির স্বল্পতার ফসল।
আসলে তারা কি চায় যে, হালালের শ্রেণীবিভাগগুলিও তাদের সামনে এক এক করে গণনা করা হোক যাতে তারা দ্বীন যে একটা সহজ বিষয় তা জেনে আত্মতৃপ্ত হতে পারে?
তারা কি চায় যে, নানা শ্রেণীর পবিত্র জিনিসগুলি তাদের সামনে এক এক করে তুলে ধরা হোক, যাতে তারা নিশ্চিত হতে পারে যে, শরী‘আত তাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে দেয়নি। তারা কি চায় যে এভাবে বলা হোক?-
-উট, গরু, ছাগল, খরগোশ, হরিণ, পাহাড়ী ছাগল, মুরগী, কবুতর, হাঁস, রাজহাঁস, উটপাখি ইত্যাকার যবেহকৃত প্রাণীর গোশত হালাল।
-মৃত পঙ্গপাল ও মাছ হালাল।
-শাক-সবজি, ফলমূল, সকল দানাশস্য ও উপকারী ফল-ফুল হালাল। পানি, দুধ, মধু, তেল ও শিরকা হালাল। লবণ, মরিচ ও মসলা হালাল।
-লোহা, বালু, খোয়া, প্লাস্টিক, কাঁচ ও রাবার ইত্যাদি ব্যবহার হালাল।
-খাট, চেয়ার, টেবিল, সোফা, তৈজসপত্র, আসবাবপত্র ইত্যাদি ব্যবহার হালাল।
-জীবজন্তু, মোটরগাড়ী, রেলগাড়ী, নৌকা, জাহাজ ও বিমানে আরোহণ হালাল।
-এয়ারকন্ডিশন, রেফ্রিজারেটর, ওয়াশিং মেশিন, পানি শুকানোর যন্ত্র, পেষণ যন্ত্র, আটা খামির করার যন্ত্র, কিমা তৈরীর যন্ত্র, ব্লেন্ডার মেশিন, সবরকমের ডাক্তারী, ইঞ্জিনিয়ারিং যন্ত্রপাতি, জাহাজ তৈরী, নির্মাণ বিষয়ক যন্ত্রপাতি, হিসাব রক্ষণ, পর্যবেক্ষণ যন্ত্রপাতি, কম্পিউটার এবং পানি, পেট্রোল, খনিজদ্রব্য উত্তোলন ও শোধন, মুদ্রণ যন্ত্রপাতি ইত্যাদি হালাল।
-সূতী, কাতান, পশম, নাইলন, পলেস্টার ও বৈধ চামড়ার তৈরী বস্ত্র হালাল।
-বিবাহ, বেচা-কেনা, যিম্মাদারী, চেক, ড্রাফট, মনিঅর্ডার, ইজারা বা ভাড়া প্রদান হালাল।
-বিভিন্ন পেশা যেমন কাঠমিস্ত্রীগিরি, কর্মকারগিরি, যন্ত্রপাতি মেরামত, ছাগপালের রাখালী ইত্যাদি হালাল।
এভাবে গুনলে আর বর্ণনা করলে পাঠকের কি মনে হয় আমরা হালালের ফিরিস্তি দিয়ে শেষ করতে পারব? তাহলে এসব লোকের কি হ’ল যে, তারা যে কোন কথাই বুঝতে চায় না?
দ্বীন যে সহজ তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবুও একথা বলে যারা সব কিছুই হালাল প্রমাণ করতে চায় তাদের কথা সত্য, কিন্তু উদ্দেশ্য খারাপ। কেননা দ্বীনের মধ্যে কোন কিছু মানুষের মর্যি মাফিক সহজ হয় না। তা কেবল শরী‘আতে যেভাবে বর্ণিত হয়েছে সেভাবেই নির্ধারিত হবে। অপর দিকে ‘দ্বীন সহজ’ এরূপ বাতিল দলীল দিয়ে হারাম কাজ করা আর শরী‘আতের অবকাশমূলক দিক গ্রহণ করার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। অবকাশমূলক কাজের উদাহরণ হ’ল সফরে দু’ওয়াক্তের ছালাত একত্রে পড়া, ক্বছর করা, সফরে ছিয়াম ভঙ্গ করা, মুক্বীমের জন্য একদিন এক রাত এবং মুসাফিরের জন্য তিনদিন তিন রাত মোযার উপর মাসেহ করা, পানি ব্যবহারের অসুবিধা থাকলে তায়াম্মুম করা, অসুস্থ হ’লে কিংবা বৃষ্টি নামলে দু’ওয়াক্তের ছালাত একত্রে পড়া, বিবাহের প্রস্তাবদাতার জন্য গায়ের মাহরাম মহিলাকে দেখা, শপথের কাফফারায় দাস মুক্তি, আহার করানো, বস্ত্র দান, ছিয়াম পালনের যে কোন একটি ব্যবস্থা গ্রহণ করা (মায়েদা ৮৯), নিরূপায় হলে মৃত প্রাণীর গোশত ভক্ষণ করা ইত্যাদি।
মোটকথা, শরী‘আতে যখন হারাম আছে তখন সকল মুসলমানের জন্যই উহার মধ্যে যে গূঢ় রহস্য বা তত্ত্ব লুকিয়ে আছে তা জানা দরকার। যেমন-
(১) আল্লাহ তা‘আলা হারাম দ্বারা তার বান্দাদের পরীক্ষা করেন। তারা এ সম্পর্কে কেমন আচরণ করে তা তিনি লক্ষ্য করেন।
(২) কে জান্নাতবাসী হবে আর কে জাহান্নামবাসী হবে হারামের মাধ্যমে তা নির্ণয় করা চলে। যারা জাহান্নামী তারা সর্বদা প্রবৃত্তির পূজায় মগ্ন থাকে, যা দিয়ে জাহান্নামকে ঘিরে রাখা হয়েছে। আর যারা জান্নাতী তারা দুঃখ-কষ্টে ধৈর্য ধারণ করে, যে দুঃখ-কষ্ট দিয়ে জান্নাতকে বেষ্টন করে রাখা হয়েছে। এ পরীক্ষা না থাকলে বাধ্য হ’তে অবাধ্যকে পৃথক করা যেত না।
(৩) যারা ঈমানদার তারা হারাম ত্যাগজনিত কষ্ট সহ্য করাকে সাক্ষাৎ পুণ্য এবং আল্লাহ তা‘আলার যে কোন নির্দেশ পালনকে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উপায় বলে মনে করে। ফলে কষ্ট স্বীকার করা তাদের জন্য সহজ হয়ে যায়। পক্ষান্তরে যারা কপট ও মুনাফিক্ব তারা কষ্ট সহ্য করাকে যন্ত্রণা, বেদনা ও বঞ্চনা বলে মনে করে। ফলে ইসলামের পথে চলা তাদের জন্য কঠিন এবং সৎ কাজ সম্পাদন ও আনুগত্য স্বীকার করা ততধিক কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়।
(৪) একজন সৎ লোক আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনার্থে হারাম পরিহার করলে বিনিময়ে তার চেয়ে যে উত্তম কিছু পাওয়া যায় তা ভালমত অনুধাবন করতে পারে। এভাবে সে তার মনোরাজ্যে ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করতে পারে।
আলোচ্য পুস্তকের মধ্যে সম্মানিত পাঠক শরী‘আতে হারাম বলে গণ্য এমন কিছু সংখ্যক নিষিদ্ধ বিষয়ের বিবরণ পাবেন কুরআন-সুন্নাহ থেকে সেগুলো হারাম হওয়ার দলীলসহ। এসব হারাম এমনই যা আমাদের সমাজে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এবং বহুসংখ্যক মুসলমান নির্দ্বিধায় তা হরহামেশা করে চলেছে। আমরা কেবল মানুষের কল্যাণ কামনার্থে তাদের সামনে এগুলি তুলে ধরেছি অতি সংক্ষেপে।
[1]. হাকেম, দারাকুৎনী; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২২৫৬।
[2]. মুসলিম, হা/১৩৩৭ ‘ফাযায়েল’ অধ্যায়।
[3]. আবুদাঊদ হা/৩৪৮৬, সনদ ছহীহ।
[4]. দারাকুৎনী, ইবনু হিববান হা/৪৯৩৮, সনদ ছহীহ।
আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা যে কোন বিচারে সবচেয়ে বড় হারাম ও মহাপাপ। আবু বাকরা (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে এসেছে-
قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلىَّ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : أَلاَ أُنَبِّئُكُمْ بِأَكْبَرِ الْكَبَائِرِ ( ثلاثا ). قُلْنَا بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ . قَالَ : الإِشْرَاكُ بِاللهِ -
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে বৃহত্তম কবীরা গুনাহ সম্পর্কে অবহিত করব না (তিনবার)’? ছাহাবীগণ বললেন, ‘অবশ্যই বলবেন, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে শিরক করা ...’।[1]
শিরক ব্যতীত প্রত্যেক পাপের ক্ষেত্রেই আল্লাহ তা‘আলার ক্ষমা প্রাপ্তির একটি সম্ভাবনা আছে। তওবাই উহার একমাত্র প্রতিকার। আল্লাহ বলেছেন,
إِنَّ اللهَ لاَ يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَن يَشَاءُ
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তার সঙ্গে কৃত শিরককে ক্ষমা করবেন না। তাছাড়া যত গুনাহ আছে তা তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন’ (নিসা ৪৮)।
এমন বড় শিরক রয়েছে যা দ্বীন ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। এরূপ শিরককারী ব্যক্তি যদি ঐ অবস্থায় মারা যায় তাহলে সে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে।
দুঃখজনক হ’লেও সত্য, অনেক মুসলিম দেশেই আজ শিরকের প্রাদুর্ভাব ছিড়িয়ে পড়ছে।
[1]. বুখারী হা/৫৯৭৬; মুসলিম হা/৮৭।
قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلىَّ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : أَلاَ أُنَبِّئُكُمْ بِأَكْبَرِ الْكَبَائِرِ ( ثلاثا ). قُلْنَا بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ . قَالَ : الإِشْرَاكُ بِاللهِ -
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে বৃহত্তম কবীরা গুনাহ সম্পর্কে অবহিত করব না (তিনবার)’? ছাহাবীগণ বললেন, ‘অবশ্যই বলবেন, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে শিরক করা ...’।[1]
শিরক ব্যতীত প্রত্যেক পাপের ক্ষেত্রেই আল্লাহ তা‘আলার ক্ষমা প্রাপ্তির একটি সম্ভাবনা আছে। তওবাই উহার একমাত্র প্রতিকার। আল্লাহ বলেছেন,
إِنَّ اللهَ لاَ يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَن يَشَاءُ
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তার সঙ্গে কৃত শিরককে ক্ষমা করবেন না। তাছাড়া যত গুনাহ আছে তা তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন’ (নিসা ৪৮)।
এমন বড় শিরক রয়েছে যা দ্বীন ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। এরূপ শিরককারী ব্যক্তি যদি ঐ অবস্থায় মারা যায় তাহলে সে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে।
দুঃখজনক হ’লেও সত্য, অনেক মুসলিম দেশেই আজ শিরকের প্রাদুর্ভাব ছিড়িয়ে পড়ছে।
[1]. বুখারী হা/৫৯৭৬; মুসলিম হা/৮৭।
মৃত ওলী-আউলিয়া মানুষের অভাব পূরণ করেন, বিপদাপদ দূর করেন, তাঁদের অসীলায় সাহায্য প্রার্থনা ও ফরিয়াদ করা যাবে ইত্যাকার কথা বিশ্বাস করা শিরক। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, وَقَضَى رَبُّكَ أَلاَّ تَعْبُدُواْ إِلاَّ إِيَّاهُ ‘তোমার প্রভু চূড়ান্ত ফয়ছালা দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁকে ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করবে না’ (বনী ইসরাঈল ২৩)। অনুরূপভাবে শাফা‘আতের নিমিত্তে কিংবা বালা-মুছীবত থেকে মুক্তির লক্ষ্যে মৃত নবী-ওলী প্রমুখের নিকট দো‘আ করাও শিরক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
أَمَّنْ يُّجِيْبُ الْمُضْطَرَّ إِذَا دَعَاهُ وَيَكْشِفُ السُّوْءَ وَيَجْعَلُكُمْ خُلَفَاءَ الْأَرْضِ أَإِلَهٌ مَّعَ اللهِ -
‘বল তো কে নিঃসহায়ের আহবানে সাড়া দেন যখন সে তাঁকে আহবান জানায় এবং দুঃখ-কষ্ট দূর করেন আর পৃথিবীতে তোমাদেরকে পূর্ববর্তীদের স্থলাভিষিক্ত করেন? আল্লাহর সঙ্গে কি অন্য কোন ইলাহ আছে’? (নামল ৬২)।
অনেকেই উঠতে, বসতে, বিপদাপদে পীর-মুরশিদ, ওলী-আউলিয়া, নবী-রাসূল ইত্যাকার মহাজনদের নাম নেয়া অভ্যাসে পরিণত করে নিয়েছে। যখনই তারা কোন বিপদে বা সংকটে পড়ে তখনই বলে ইয়া মুহাম্মাদ, ইয়া আলী, ইয়া হুসাইন, ইয়া বাদাভী, ইয়া জীলানী, ইয়া শাযেলী, ইয়া রিফাঈ। কেউ যদি ডাকে আইদারুসকে তো অন্যজন ডাকে মা যায়নাবকে, আরেকজন ডাকে ইবনু উলওয়ানকে। অথচ আল্লাহ বলেন, إِنَّ الَّذِيْنَ تَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ عِبَادٌ أَمْثَالُكُمْ ‘আল্লাহ ব্যতীত আর যাদেরকে তোমরা ডাক তারা তোমাদেরই মত দাস’ (আ‘রাফ ১৯৪)।
কিছু কবরপূজারী আছে যারা কবরকে তাওয়াফ করে, কবরগাত্র চুম্বন করে, কবরে হাত বুলায়, লাল শালুতে মাথা ঠেকিয়ে পড়ে থাকে, কবরের মাটি তাদের গা-গতরে মাখে, কবরকে সিজদা করে, উহার সামনে মিনতিভরে দাঁড়ায়, নিজের উদ্দেশ্য ও অভাবের কথা তুলে ধরে। সুস্থতা কামনা করে, সন্তান চায় অথবা প্রয়োজনাদি পূরণ কামনা করে। অনেক সময় কবরে শায়িত ব্যক্তিকে ডেকে বলে, ‘বাবা হুযূর, আমি আপনার হুযূরে অনেক দূর থেকে হাযির হয়েছি। কাজেই আপনি আমাকে নিরাশ করবেন না’। অথচ আল্লাহ বলেন,
وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنْ يَدْعُوْ مِنْ دُوْنِ اللهِ مَنْ لاَّ يَسْتَجِيْبُ لَهُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَهُمْ عَنْ دُعَائِهِمْ غَافِلُوْنَ -
‘তাদের থেকে অধিকতর দিকভ্রান্ত আর কে আছে, যারা আল্লাহ ব্যতীত এমন সব উপাস্যকে ডাকে যারা ক্বিয়ামত পর্যন্তও তাদের ডাকে সাড়া দেবে না। অধিকন্তু তারা ওদের ডাকাডাকি সম্বন্ধে কোন খবর রাখে না’ (আহক্বাফ ৫)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ مَاتَ وَهُوَ يَدْعُو مِنْ دُونِ اللهِ نِدًّا دَخَلَ النَّارَ
‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে তার সমকক্ষ বা অংশীদার মনে করে তার নিকট দো‘আ প্রার্থনা করে, আর ঐ অবস্থায় মারা যায় সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে’।[1]
কবরপূজারীরা অনেকেই কবরের পাশে মাথা মুন্ডন করে।[2] তারা অনেকে ‘মাযার যিয়ারতের নিয়মাবলী’ নামের বই সাথে রাখে। এসব মাযার বলতে তারা ওলী-আউলিয়া বা সাধু-সন্তুদের কবরকে বুঝিয়ে থাকে। অনেকের আবার বিশ্বাস, ওলী-আউলিয়াগণ সৃষ্টিজগতের উপর প্রভাব খাটিয়ে থাকেন, তাঁরা ক্ষতিও করেন; উপকারও করেন। অথচ আল্লাহ বলেন,
وَإِنْ يَّمْسَسْكَ اللهُ بِضُرٍّ فَلاَ كَاشِفَ لَهُ إِلاَّ هُوَ وَإِن يُرِدْكَ بِخَيْرٍ فَلاَ رَآدَّ لِفَضْلِهِ -
‘আর যদি আপনার প্রতিপালক আপনাকে কোন অমঙ্গলের স্পর্শে আনেন, তবে তিনি ব্যতীত অন্য কেউ উহার বিমোচক নেই। আর যদি তিনি আপনার কোন মঙ্গল করতে চান, তাহলে তাঁর অনুগ্রহকে তিনি ব্যতীত রুখবারও কেউ নেই’ (ইউনুস ১০৭)।
একইভাবে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে মানত করাও শিরক। মাযার ও দরগার নামে মোমবাতি, আগরবাতি মানত করে অনেকেই এরূপ শিরকে জড়িয়ে পড়ছে।
[1]. বুখারী হা/৪৪৯৭।
[2]. আমাদের দেশে শিশুদের মাথার চুল মাযারের নামে মানত করার নিয়ম চালু আছে। নির্দিষ্ট দিনে মাযারে গিয়ে এই চুল মুন্ডন করা হয়, যা শিরকের অন্তর্ভুক্ত-অনুবাদক।
أَمَّنْ يُّجِيْبُ الْمُضْطَرَّ إِذَا دَعَاهُ وَيَكْشِفُ السُّوْءَ وَيَجْعَلُكُمْ خُلَفَاءَ الْأَرْضِ أَإِلَهٌ مَّعَ اللهِ -
‘বল তো কে নিঃসহায়ের আহবানে সাড়া দেন যখন সে তাঁকে আহবান জানায় এবং দুঃখ-কষ্ট দূর করেন আর পৃথিবীতে তোমাদেরকে পূর্ববর্তীদের স্থলাভিষিক্ত করেন? আল্লাহর সঙ্গে কি অন্য কোন ইলাহ আছে’? (নামল ৬২)।
অনেকেই উঠতে, বসতে, বিপদাপদে পীর-মুরশিদ, ওলী-আউলিয়া, নবী-রাসূল ইত্যাকার মহাজনদের নাম নেয়া অভ্যাসে পরিণত করে নিয়েছে। যখনই তারা কোন বিপদে বা সংকটে পড়ে তখনই বলে ইয়া মুহাম্মাদ, ইয়া আলী, ইয়া হুসাইন, ইয়া বাদাভী, ইয়া জীলানী, ইয়া শাযেলী, ইয়া রিফাঈ। কেউ যদি ডাকে আইদারুসকে তো অন্যজন ডাকে মা যায়নাবকে, আরেকজন ডাকে ইবনু উলওয়ানকে। অথচ আল্লাহ বলেন, إِنَّ الَّذِيْنَ تَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ عِبَادٌ أَمْثَالُكُمْ ‘আল্লাহ ব্যতীত আর যাদেরকে তোমরা ডাক তারা তোমাদেরই মত দাস’ (আ‘রাফ ১৯৪)।
কিছু কবরপূজারী আছে যারা কবরকে তাওয়াফ করে, কবরগাত্র চুম্বন করে, কবরে হাত বুলায়, লাল শালুতে মাথা ঠেকিয়ে পড়ে থাকে, কবরের মাটি তাদের গা-গতরে মাখে, কবরকে সিজদা করে, উহার সামনে মিনতিভরে দাঁড়ায়, নিজের উদ্দেশ্য ও অভাবের কথা তুলে ধরে। সুস্থতা কামনা করে, সন্তান চায় অথবা প্রয়োজনাদি পূরণ কামনা করে। অনেক সময় কবরে শায়িত ব্যক্তিকে ডেকে বলে, ‘বাবা হুযূর, আমি আপনার হুযূরে অনেক দূর থেকে হাযির হয়েছি। কাজেই আপনি আমাকে নিরাশ করবেন না’। অথচ আল্লাহ বলেন,
وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنْ يَدْعُوْ مِنْ دُوْنِ اللهِ مَنْ لاَّ يَسْتَجِيْبُ لَهُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَهُمْ عَنْ دُعَائِهِمْ غَافِلُوْنَ -
‘তাদের থেকে অধিকতর দিকভ্রান্ত আর কে আছে, যারা আল্লাহ ব্যতীত এমন সব উপাস্যকে ডাকে যারা ক্বিয়ামত পর্যন্তও তাদের ডাকে সাড়া দেবে না। অধিকন্তু তারা ওদের ডাকাডাকি সম্বন্ধে কোন খবর রাখে না’ (আহক্বাফ ৫)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ مَاتَ وَهُوَ يَدْعُو مِنْ دُونِ اللهِ نِدًّا دَخَلَ النَّارَ
‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে তার সমকক্ষ বা অংশীদার মনে করে তার নিকট দো‘আ প্রার্থনা করে, আর ঐ অবস্থায় মারা যায় সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে’।[1]
কবরপূজারীরা অনেকেই কবরের পাশে মাথা মুন্ডন করে।[2] তারা অনেকে ‘মাযার যিয়ারতের নিয়মাবলী’ নামের বই সাথে রাখে। এসব মাযার বলতে তারা ওলী-আউলিয়া বা সাধু-সন্তুদের কবরকে বুঝিয়ে থাকে। অনেকের আবার বিশ্বাস, ওলী-আউলিয়াগণ সৃষ্টিজগতের উপর প্রভাব খাটিয়ে থাকেন, তাঁরা ক্ষতিও করেন; উপকারও করেন। অথচ আল্লাহ বলেন,
وَإِنْ يَّمْسَسْكَ اللهُ بِضُرٍّ فَلاَ كَاشِفَ لَهُ إِلاَّ هُوَ وَإِن يُرِدْكَ بِخَيْرٍ فَلاَ رَآدَّ لِفَضْلِهِ -
‘আর যদি আপনার প্রতিপালক আপনাকে কোন অমঙ্গলের স্পর্শে আনেন, তবে তিনি ব্যতীত অন্য কেউ উহার বিমোচক নেই। আর যদি তিনি আপনার কোন মঙ্গল করতে চান, তাহলে তাঁর অনুগ্রহকে তিনি ব্যতীত রুখবারও কেউ নেই’ (ইউনুস ১০৭)।
একইভাবে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে মানত করাও শিরক। মাযার ও দরগার নামে মোমবাতি, আগরবাতি মানত করে অনেকেই এরূপ শিরকে জড়িয়ে পড়ছে।
[1]. বুখারী হা/৪৪৯৭।
[2]. আমাদের দেশে শিশুদের মাথার চুল মাযারের নামে মানত করার নিয়ম চালু আছে। নির্দিষ্ট দিনে মাযারে গিয়ে এই চুল মুন্ডন করা হয়, যা শিরকের অন্তর্ভুক্ত-অনুবাদক।
আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে পশু যবেহ ও বলি দেয়া শিরকে আকবর বা বড় শিরক-এর অন্যতম। আল্লাহ বলেন, فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ ‘আপনার প্রভুর উদ্দেশ্যে ছালাত আদায় করুন এবং যবেহ করুন’ (কাওছার ২)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, لَعَنَ اللهُ مَنْ ذَبَحَ لِغَيْرِ اللهِ ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে যবেহ করে তার উপর আল্লাহর লা‘নত’।[1]
যবেহ-এর সঙ্গে জড়িত হারাম দু’প্রকার। যথাঃ (১) আললাহ ছাড়া অন্যের উদ্দেশ্যে যবেহ করা। যেমন- দেবতার কৃপা লাভের জন্য (২) আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নাম নিয়ে যবেহ করা। উভয় প্রকার যবেহকৃত পশুর গোশত খাওয়া হারাম।
জাহেলী আরবে জিনের উদ্দেশ্যে প্রাণী যবেহ-এর রেওয়ায ছিল, যা আজও বিভিন্ন আঙ্গিকে কোন কোন মুসলিম দেশে চালু আছে। সে সময়ে কেউ বাড়ী ক্রয় করলে কিংবা তৈরী করলে অথবা কূপ খনন করলে তাদের উপরে জিনের উপদ্রব হতে পারে ভেবে পূর্বাহ্নেই তারা সেখানে বা দরজার চৌকাঠের উপরে প্রাণী যবেহ করত। এরূপ যবেহ সম্পূর্ণরূপে হারাম।[2]
[1]. মুসলিম হা/১৯৭৮; মিশকাত হা/৪০৭০।
[2]. আমাদের দেশে এক শ্রেণীর মানুষ সন্তান লাভ, রোগমুক্তি, মুশকিল আসান, মামলা-মোকদ্দমায় জয়লাভ কিংবা অন্যবিধ উদ্দেশ্য পূরণের জন্য দরগা, মাযার ও কুদরতী মসজিদে (?) গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগী, চাউল, মিষ্টান্ন, টাকা-পয়সা প্রভৃতি দিয়ে থাকে। তারা বিশ্বাস করে যে, এসব জায়গায় এগুলি দেওয়ার ফলে দরগাহ ও মাযারের সাথে সংশ্লিষ্ট মৃত মহাজন বা কুদরতী মসজিদ তাদের সব সমস্যা দূর করে দেবে। এরূপ বিশ্বাস সরাসরি শিরক। দেবতার নামে নরবলী দেওয়ার প্রথাও নানা ধর্মে অতীতকাল থেকেই চালু আছে। কেউ তা করলে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত হবে- অনুবাদক।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, لَعَنَ اللهُ مَنْ ذَبَحَ لِغَيْرِ اللهِ ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে যবেহ করে তার উপর আল্লাহর লা‘নত’।[1]
যবেহ-এর সঙ্গে জড়িত হারাম দু’প্রকার। যথাঃ (১) আললাহ ছাড়া অন্যের উদ্দেশ্যে যবেহ করা। যেমন- দেবতার কৃপা লাভের জন্য (২) আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নাম নিয়ে যবেহ করা। উভয় প্রকার যবেহকৃত পশুর গোশত খাওয়া হারাম।
জাহেলী আরবে জিনের উদ্দেশ্যে প্রাণী যবেহ-এর রেওয়ায ছিল, যা আজও বিভিন্ন আঙ্গিকে কোন কোন মুসলিম দেশে চালু আছে। সে সময়ে কেউ বাড়ী ক্রয় করলে কিংবা তৈরী করলে অথবা কূপ খনন করলে তাদের উপরে জিনের উপদ্রব হতে পারে ভেবে পূর্বাহ্নেই তারা সেখানে বা দরজার চৌকাঠের উপরে প্রাণী যবেহ করত। এরূপ যবেহ সম্পূর্ণরূপে হারাম।[2]
[1]. মুসলিম হা/১৯৭৮; মিশকাত হা/৪০৭০।
[2]. আমাদের দেশে এক শ্রেণীর মানুষ সন্তান লাভ, রোগমুক্তি, মুশকিল আসান, মামলা-মোকদ্দমায় জয়লাভ কিংবা অন্যবিধ উদ্দেশ্য পূরণের জন্য দরগা, মাযার ও কুদরতী মসজিদে (?) গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগী, চাউল, মিষ্টান্ন, টাকা-পয়সা প্রভৃতি দিয়ে থাকে। তারা বিশ্বাস করে যে, এসব জায়গায় এগুলি দেওয়ার ফলে দরগাহ ও মাযারের সাথে সংশ্লিষ্ট মৃত মহাজন বা কুদরতী মসজিদ তাদের সব সমস্যা দূর করে দেবে। এরূপ বিশ্বাস সরাসরি শিরক। দেবতার নামে নরবলী দেওয়ার প্রথাও নানা ধর্মে অতীতকাল থেকেই চালু আছে। কেউ তা করলে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত হবে- অনুবাদক।
কোন কিছু হালাল কিংবা হারাম করার একচ্ছত্র মালিক আল্লাহ রাববুল আলামীন। কোন মানুষ আল্লাহর দেওয়া হালালকে হারাম ও হারামকে হালাল করার অধিকার রাখে না। তবুও অনধিকার চর্চা বশে মানুষ কর্তৃক আল্লাহকৃত হালালকে হারাম ও হারামকে হালাল করণের বহু দৃষ্টান্ত দেখা যায়। নিঃসন্দেহে এটি একটি হারাম কাজ। আর আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো হালাল-হারাম করার অধিকার আছে বলে বিশ্বাস করাও শিরক। জাহেলী তথা অনৈসলামী আইন-কানূন দ্বারা পরিচালিত বিচারালয়ের নিকট সন্তুষ্ট চিত্তে, স্বেচ্ছায় ও বৈধ জ্ঞানে বিচার প্রার্থনা করা এবং এরূপ বিচার প্রার্থনার বৈধতা আছে বলে আক্বীদা পোষণ করা বড় শিরকের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে এই মারাত্মক শিরক প্রসঙ্গে বলেন,
اِتَّخَذُواْ أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَاباً مِّنْ دُوْنِ اللهِ -
‘আল্লাহর পরিবর্তে তারা তাদের আলেম ও সাধু-দরবেশদেরকে প্রভু বানিয়ে নিয়েছে’ (তওবা ৩১)।
আদী বিন হাতেম (রাঃ) আল্লাহর নবীকে এ আয়াত পাঠ করতে শুনে বলেছিলেন, إِنَّهُمْ لَمْ يَكُونُوا يَعْبُدُونَهُمْ ‘ওরা তো তাদের ইবাদত করে না’। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছিলেন, وَلَكِنَّهُمْ كَانُوا إِذَا أَحَلُّوا لَهُمْ شَيْئًا اسْتَحَلُّوهُ وَإِذَا حَرَّمُوا عَلَيْهِمْ شَيْئًا حَرَّمُوهُ ‘তা বটে। কিন্তু আল্লাহ যা হারাম করেছেন তারা ওদেরকে তা হালাল করে দিলে ওরা তা হালালই মনে করে। একইভাবে আল্লাহ যা হালাল করেছেন তারা ওদেরকে তা হারাম করে দিলে ওরা তা হারামই মনে করে। এটাই তাদের ইবাদত করা’।[1]
আল্লাহ পবিত্র কুরআনে মুশরিকদের আচরণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,
وَلاَ يُحَرِّمُوْنَ مَا حَرَّمَ اللهُ وَرَسُولُهُ وَلاَ يَدِيْنُوْنَ دِيْنَ الْحَقِّ -
‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা হারাম করেছেন তারা তাকে হারাম গণ্য করে না এবং সত্য দ্বীনকে তাদের দ্বীন হিসাবে গ্রহণ করে না’ (তওবা ২৯)।
অন্যত্র তিনি বলেন,
قُلْ أَرَأَيْتُمْ مَّا أَنْزَلَ اللهُ لَكُم مِّن رِّزْقٍ فَجَعَلْتُمْ مِّنْهُ حَرَاماً وَحَلاَلاً قُلْ اللهُ أَذِنَ لَكُمْ أَمْ عَلَى اللهِ تَفْتَرُونَ -
‘আপনি বলুন, আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে যে রূযী দান করেছেন, তন্মধ্যে তোমরা যে সেগুলির কতক হারাম ও কতক হালাল করে নিয়েছ, তা কি তোমরা ভেবে দেখেছ? আপনি বলুন, আল্লাহ কি তোমাদেরকে এতদ্বিষয়ে অনুমতি দিয়েছেন, নাকি তোমরা আল্লাহর নামে মনগড়া কথা বলছ’ (ইউনুস ৫৯)।[2]
[1]. তিরমিযী হা/৩০৯৫, সনদ হাসান।
[2]. অধুনা অনেক মুসলিম দেশে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, জাতীয়তাবাদ ইত্যাদি মানব রচিত মতবাদের স্বার্থে কুরআন-সুন্নাহকে সম্পূর্ণ পাশ কাটিয়ে আইন পরিষদে এমন সব আইন পাশ করা হচ্ছে, যার ফলে আল্লাহর দেয়া বহু হারাম হালাল হয়ে যাচ্ছে এবং বহু হালাল হারাম হয়ে যাচ্ছে। যেমন মদ-জুয়া, বেশ্যাবৃত্তি, লটারী, সূদ-ঘুষ ইত্যাদিকে লাইসেন্সের মাধ্যমে বৈধ করা হয়েছে। অথচ ইসলামে এগুলি কঠোরভাবে হারাম। অপরদিকে শরী‘আহ মোতাবেক রাষ্ট্র পরিচালনা, ইসলামী ফৌজদারী ও দেওয়ানী আইন, সৎ কাজের আদেশ, অসৎ কাজের নিষেধ ইত্যাদি হালাল ও যরূরী বিষয়কে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ সকল আইন প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লোকজনের অধিকাংশই মুসলিম বলে নিজেদেরকে দাবী করে। যাদের উপর এসব আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে তারাও সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম। তারা কেউ ইসলাম বিরোধী এসব আইনের প্রতিবাদ করে না; বরং স্বাচ্ছন্দ্যে এগুলি গ্রহণ করে নিচ্ছে। প্রশ্ন দাঁড়ায়, উপরোক্ত বর্ণনার আলোকে আমরা কি মুসলিম? -অনুবাদক।
اِتَّخَذُواْ أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَاباً مِّنْ دُوْنِ اللهِ -
‘আল্লাহর পরিবর্তে তারা তাদের আলেম ও সাধু-দরবেশদেরকে প্রভু বানিয়ে নিয়েছে’ (তওবা ৩১)।
আদী বিন হাতেম (রাঃ) আল্লাহর নবীকে এ আয়াত পাঠ করতে শুনে বলেছিলেন, إِنَّهُمْ لَمْ يَكُونُوا يَعْبُدُونَهُمْ ‘ওরা তো তাদের ইবাদত করে না’। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছিলেন, وَلَكِنَّهُمْ كَانُوا إِذَا أَحَلُّوا لَهُمْ شَيْئًا اسْتَحَلُّوهُ وَإِذَا حَرَّمُوا عَلَيْهِمْ شَيْئًا حَرَّمُوهُ ‘তা বটে। কিন্তু আল্লাহ যা হারাম করেছেন তারা ওদেরকে তা হালাল করে দিলে ওরা তা হালালই মনে করে। একইভাবে আল্লাহ যা হালাল করেছেন তারা ওদেরকে তা হারাম করে দিলে ওরা তা হারামই মনে করে। এটাই তাদের ইবাদত করা’।[1]
আল্লাহ পবিত্র কুরআনে মুশরিকদের আচরণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,
وَلاَ يُحَرِّمُوْنَ مَا حَرَّمَ اللهُ وَرَسُولُهُ وَلاَ يَدِيْنُوْنَ دِيْنَ الْحَقِّ -
‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা হারাম করেছেন তারা তাকে হারাম গণ্য করে না এবং সত্য দ্বীনকে তাদের দ্বীন হিসাবে গ্রহণ করে না’ (তওবা ২৯)।
অন্যত্র তিনি বলেন,
قُلْ أَرَأَيْتُمْ مَّا أَنْزَلَ اللهُ لَكُم مِّن رِّزْقٍ فَجَعَلْتُمْ مِّنْهُ حَرَاماً وَحَلاَلاً قُلْ اللهُ أَذِنَ لَكُمْ أَمْ عَلَى اللهِ تَفْتَرُونَ -
‘আপনি বলুন, আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে যে রূযী দান করেছেন, তন্মধ্যে তোমরা যে সেগুলির কতক হারাম ও কতক হালাল করে নিয়েছ, তা কি তোমরা ভেবে দেখেছ? আপনি বলুন, আল্লাহ কি তোমাদেরকে এতদ্বিষয়ে অনুমতি দিয়েছেন, নাকি তোমরা আল্লাহর নামে মনগড়া কথা বলছ’ (ইউনুস ৫৯)।[2]
[1]. তিরমিযী হা/৩০৯৫, সনদ হাসান।
[2]. অধুনা অনেক মুসলিম দেশে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, জাতীয়তাবাদ ইত্যাদি মানব রচিত মতবাদের স্বার্থে কুরআন-সুন্নাহকে সম্পূর্ণ পাশ কাটিয়ে আইন পরিষদে এমন সব আইন পাশ করা হচ্ছে, যার ফলে আল্লাহর দেয়া বহু হারাম হালাল হয়ে যাচ্ছে এবং বহু হালাল হারাম হয়ে যাচ্ছে। যেমন মদ-জুয়া, বেশ্যাবৃত্তি, লটারী, সূদ-ঘুষ ইত্যাদিকে লাইসেন্সের মাধ্যমে বৈধ করা হয়েছে। অথচ ইসলামে এগুলি কঠোরভাবে হারাম। অপরদিকে শরী‘আহ মোতাবেক রাষ্ট্র পরিচালনা, ইসলামী ফৌজদারী ও দেওয়ানী আইন, সৎ কাজের আদেশ, অসৎ কাজের নিষেধ ইত্যাদি হালাল ও যরূরী বিষয়কে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ সকল আইন প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লোকজনের অধিকাংশই মুসলিম বলে নিজেদেরকে দাবী করে। যাদের উপর এসব আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে তারাও সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম। তারা কেউ ইসলাম বিরোধী এসব আইনের প্রতিবাদ করে না; বরং স্বাচ্ছন্দ্যে এগুলি গ্রহণ করে নিচ্ছে। প্রশ্ন দাঁড়ায়, উপরোক্ত বর্ণনার আলোকে আমরা কি মুসলিম? -অনুবাদক।
জাদু ও ভাগ্যগণনা কুফর ও শিরকের পর্যায়ভুক্ত হারাম। জাদু তো পরিষ্কার কুফর এবং সাতটি ধ্বংসাত্মক কবীরা গুনাহর অন্যতম। জাদু শুধু ক্ষতিই করে, কোন উপকার করে না। জাদু শিক্ষা করা প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, وَيَتَعَلَّمُونَ مَا يَضُرُّهُمْ وَلاَ يَنفَعُهُمْ ‘তারা এমন জিনিস (জাদু) শিক্ষা করে, যা তাদের অপকারই করে, কোন উপকার করে না’ (বাক্বারাহ ১০২)।
তিনি আরো বলেন, وَلاَ يُفْلِحُ السَّاحِرُ حَيْثُ أَتَى ‘জাদুকর যেভাবেই আসুক না কেন সে সফল হবে না’ (ত্বোয়াহা ৬৯)।
জাদু চর্চাকারী কাফের। মহান আল্লাহ বলেন,
وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَانُ وَلَـكِنَّ الشَّيَاطِينَ كَفَرُواْ يُعَلِّمُونَ النَّاسَ السِّحْرَ وَمَا أُنزِلَ عَلَى الْمَلَكَيْنِ بِبَابِلَ هَارُوتَ وَمَارُوتَ وَمَا يُعَلِّمَانِ مِنْ أَحَدٍ حَتَّى يَقُولاَ إِنَّمَا نَحْنُ فِتْنَةٌ فَلاَ تَكْفُرْ -
‘সুলায়মান কুফরী করেননি। কিন্তু কুফরী করেছে শয়তানেরা। তারা মানুষকে শিক্ষা দেয় জাদু এবং বাবেলে হারূত-মারূত নামের দু’জন ফেরেশতার উপর যা অবতীর্ণ করা হয়েছিল তা। ঐ ফেরেশতাদ্বয় কাউকে একথা না বলে কিছু শিক্ষা দেয়নি যে, আমরা এক মহাপরীক্ষার জন্য। সুতরাং তুমি (জাদু শিখে) কুফরী করো না’ (বাক্বারাহ ১০২)।
ইসলামী বিধানে জাদুকরকে হত্যা করার কথা বলা হয়েছে। জাদুকরের উপার্জন অপবিত্র ও হারাম। জ্ঞানপাপী, অত্যাচারী ও দুর্বল ঈমানের লোকেরা অন্যের সঙ্গে শত্রুতা ও জিঘাংসা চরিতার্থ করার জন্য জাদুকরদের নিকটে যায়।
অনেকে আবার জাদুর ক্রিয়া দূর করার জন্য জাদুকরের শরণাপন্ন হয়। এজন্যে যাওয়াও হারাম। বরং তাদের উচিত ছিল আল্লাহর শরণাপন্ন হওয়া এবং আল্লাহর কালাম যেমন সূরা নাস, ফালাক্ব ইত্যাদি দিয়ে আরোগ্য লাভের চেষ্টা করা।
গণক ও ভবিষ্যদ্বক্তা উভয়েই আল্লাহ তা‘আলাকে অস্বীকারকারী কাফিরদের দলভুক্ত। কারণ তারা উভয়েই গায়েব বা অদৃশ্যের কথা জানার দাবী করে। অথচ আল্লাহ ছাড়া কেউ গায়েব জানে না।
অনেক সময় তারা সরলমনা লোকদের সম্পদ লুটে নেয়ার জন্য তাদেরকে মোহাচ্ছন্ন করে ফেলে। এজন্য তারা বালুর উপর আঁকি-বুঁকি, চটা (বাটি বা থালা) চালান, হাতের তালুতে ফুঁক, চায়ের পেয়ালা, কাঁচের গুলী, আয়না ইত্যাদি উপকরণ ব্যবহার করে থাকে। এসব লোকের কথা একটা যদি সত্য হয় তো নিরানববইটাই হয় মিথ্যা। কিন্তু গাফিলরা এসব ধোঁকাবাজ-মিথ্যুকদের এক সত্যকেই হাযার সত্য গণ্য করে নিজেদের ভবিষ্যৎ ভাগ্য, বিয়ে-শাদী, ব্যবসা-বাণিজ্যের শুভাশুভ তাদের নিকট জানতে চায়। তারা হারানো জিনিস কোথায় কিভাবে পাওয়া যাবে তা জানার জন্য তাদের নিকটে ছুটে যায়। যারা তাদের কাছে গিয়ে তাদের কথা বিশ্বাস করে, তারা কাফের এবং ইসলাম থেকে বহির্ভূত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
مَنْ أَتَى كَاهِناً أَوْ عَرَّافاً فَصَدَّقَهُ بِمَا يَقُولُ فَقَدْ كَفَرَ بِمَا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ -
‘যে ব্যক্তি গণক কিংবা ভবিষ্যদ্বক্তার নিকটে যায় এবং সে যা বলে তা বিশ্বাস করে, সে নিশ্চিতভাবেই মুহাম্মাদের উপর যা নাযিল হয়েছে তা অস্বীকার করে’।[1]
যে ব্যক্তি তারা গায়েব জানে না বলে বিশ্বাস করে কিন্তু অভিজ্ঞতা কিংবা অনুরূপ কিছু অর্জনের জন্য তাদের নিকটে যায় সে কাফির হবে না বটে, তবে তার চল্লিশ দিনের ছালাত কবুল হবে না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
مَنْ أَتَى عَرَّافًا فَسَأَلَهُ عَنْ شَىْءٍ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلاَةٌ أَرْبَعِينَ لَيْلَةً
‘যে ব্যক্তি কোন ভবিষ্যদ্বক্তার নিকটে যায় এবং তাকে কিছু জিজ্ঞেস করে, তার চল্লিশ দিনের ছালাত কবুল হবে না’।[2] তবে তাকে ছালাত অবশ্যই আদায় করতে হবে এবং বিশেষভাবে তওবা করতে হবে।
[1]. আহমাদ হা/৯৫৩২; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩৩৮৭।
[2]. মুসলিম হা/২২৩০; মিশকাত হা/৪৫৯৫।
তিনি আরো বলেন, وَلاَ يُفْلِحُ السَّاحِرُ حَيْثُ أَتَى ‘জাদুকর যেভাবেই আসুক না কেন সে সফল হবে না’ (ত্বোয়াহা ৬৯)।
জাদু চর্চাকারী কাফের। মহান আল্লাহ বলেন,
وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَانُ وَلَـكِنَّ الشَّيَاطِينَ كَفَرُواْ يُعَلِّمُونَ النَّاسَ السِّحْرَ وَمَا أُنزِلَ عَلَى الْمَلَكَيْنِ بِبَابِلَ هَارُوتَ وَمَارُوتَ وَمَا يُعَلِّمَانِ مِنْ أَحَدٍ حَتَّى يَقُولاَ إِنَّمَا نَحْنُ فِتْنَةٌ فَلاَ تَكْفُرْ -
‘সুলায়মান কুফরী করেননি। কিন্তু কুফরী করেছে শয়তানেরা। তারা মানুষকে শিক্ষা দেয় জাদু এবং বাবেলে হারূত-মারূত নামের দু’জন ফেরেশতার উপর যা অবতীর্ণ করা হয়েছিল তা। ঐ ফেরেশতাদ্বয় কাউকে একথা না বলে কিছু শিক্ষা দেয়নি যে, আমরা এক মহাপরীক্ষার জন্য। সুতরাং তুমি (জাদু শিখে) কুফরী করো না’ (বাক্বারাহ ১০২)।
ইসলামী বিধানে জাদুকরকে হত্যা করার কথা বলা হয়েছে। জাদুকরের উপার্জন অপবিত্র ও হারাম। জ্ঞানপাপী, অত্যাচারী ও দুর্বল ঈমানের লোকেরা অন্যের সঙ্গে শত্রুতা ও জিঘাংসা চরিতার্থ করার জন্য জাদুকরদের নিকটে যায়।
অনেকে আবার জাদুর ক্রিয়া দূর করার জন্য জাদুকরের শরণাপন্ন হয়। এজন্যে যাওয়াও হারাম। বরং তাদের উচিত ছিল আল্লাহর শরণাপন্ন হওয়া এবং আল্লাহর কালাম যেমন সূরা নাস, ফালাক্ব ইত্যাদি দিয়ে আরোগ্য লাভের চেষ্টা করা।
গণক ও ভবিষ্যদ্বক্তা উভয়েই আল্লাহ তা‘আলাকে অস্বীকারকারী কাফিরদের দলভুক্ত। কারণ তারা উভয়েই গায়েব বা অদৃশ্যের কথা জানার দাবী করে। অথচ আল্লাহ ছাড়া কেউ গায়েব জানে না।
অনেক সময় তারা সরলমনা লোকদের সম্পদ লুটে নেয়ার জন্য তাদেরকে মোহাচ্ছন্ন করে ফেলে। এজন্য তারা বালুর উপর আঁকি-বুঁকি, চটা (বাটি বা থালা) চালান, হাতের তালুতে ফুঁক, চায়ের পেয়ালা, কাঁচের গুলী, আয়না ইত্যাদি উপকরণ ব্যবহার করে থাকে। এসব লোকের কথা একটা যদি সত্য হয় তো নিরানববইটাই হয় মিথ্যা। কিন্তু গাফিলরা এসব ধোঁকাবাজ-মিথ্যুকদের এক সত্যকেই হাযার সত্য গণ্য করে নিজেদের ভবিষ্যৎ ভাগ্য, বিয়ে-শাদী, ব্যবসা-বাণিজ্যের শুভাশুভ তাদের নিকট জানতে চায়। তারা হারানো জিনিস কোথায় কিভাবে পাওয়া যাবে তা জানার জন্য তাদের নিকটে ছুটে যায়। যারা তাদের কাছে গিয়ে তাদের কথা বিশ্বাস করে, তারা কাফের এবং ইসলাম থেকে বহির্ভূত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
مَنْ أَتَى كَاهِناً أَوْ عَرَّافاً فَصَدَّقَهُ بِمَا يَقُولُ فَقَدْ كَفَرَ بِمَا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ -
‘যে ব্যক্তি গণক কিংবা ভবিষ্যদ্বক্তার নিকটে যায় এবং সে যা বলে তা বিশ্বাস করে, সে নিশ্চিতভাবেই মুহাম্মাদের উপর যা নাযিল হয়েছে তা অস্বীকার করে’।[1]
যে ব্যক্তি তারা গায়েব জানে না বলে বিশ্বাস করে কিন্তু অভিজ্ঞতা কিংবা অনুরূপ কিছু অর্জনের জন্য তাদের নিকটে যায় সে কাফির হবে না বটে, তবে তার চল্লিশ দিনের ছালাত কবুল হবে না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
مَنْ أَتَى عَرَّافًا فَسَأَلَهُ عَنْ شَىْءٍ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلاَةٌ أَرْبَعِينَ لَيْلَةً
‘যে ব্যক্তি কোন ভবিষ্যদ্বক্তার নিকটে যায় এবং তাকে কিছু জিজ্ঞেস করে, তার চল্লিশ দিনের ছালাত কবুল হবে না’।[2] তবে তাকে ছালাত অবশ্যই আদায় করতে হবে এবং বিশেষভাবে তওবা করতে হবে।
[1]. আহমাদ হা/৯৫৩২; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩৩৮৭।
[2]. মুসলিম হা/২২৩০; মিশকাত হা/৪৫৯৫।
যায়েদ বিন খালিদ আল-জুহানী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হুদায়বিয়াতে এক রাতে আকাশে একটি চিহ্ন পরিলক্ষিত হয়। সেদিন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ফজর ছালাত শেষে লোকদের দিকে ফিরে বসেন এবং বলেন, ‘তোমাদের প্রতিপালক কি বলেছেন তা কি তোমরা জান’? তারা বলল, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই অধিক জ্ঞাত। তিনি বললেন, আল্লাহ বলেছেন, ‘আমার কিছু বান্দা আমার উপর বিশ্বাসী হয়ে এবং কিছু বান্দা অবিশ্বাসী হয়ে ভোরে ওঠে। যারা বলে, আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহে বৃষ্টি হয়েছে তারা আমার প্রতি বিশ্বাসী ও গ্রহ-নক্ষত্রে অবিশ্বাসী। আর যারা বলে, অমুক অমুক গ্রহের প্রভাবে বৃষ্টি হয়েছে তারা আমার প্রতি অবিশ্বাসী ও গ্রহ-নক্ষত্রে বিশ্বাসী’।[1]
গ্রহ-নক্ষত্রের প্রভাবে বৃষ্টি হওয়ার কথা বিশ্বাস করা যেমন কুফরী, তেমনি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত রাশিফলের আশ্রয় নেওয়াও কুফরী। যে ব্যক্তি রাশিফলের উপর গ্রহ-নক্ষত্রের প্রভাবের কথা বিশ্বাস করবে, সে সরাসরি মুশরিক হয়ে যাবে। পত্র-পত্রিকা ও বই-পুস্তকে রাশিফলের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে সেগুলি পাঠ করা শিরক। তবে বিশ্বাস না করে কেবল মানসিক সান্ত্বনা অর্জনের জন্য পড়লে তাতে শিরক হবে না বটে, কিন্তু সে গোনাহগার হবে। কেননা শিরকী কোন কিছু পাঠ করে সান্ত্বনা লাভ করা বৈধ নয়। তাছাড়া শয়তান কর্তৃক তার মনে উক্ত বিশ্বাস জন্মিয়ে দিতে কতক্ষণ? তখন এ পড়াই তার শিরকের মাধ্যম হয়ে দাঁড়াবে।
[1]. বুখারী হা/৮৪৬; মিশকাত হা/৪৫৯৬।
গ্রহ-নক্ষত্রের প্রভাবে বৃষ্টি হওয়ার কথা বিশ্বাস করা যেমন কুফরী, তেমনি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত রাশিফলের আশ্রয় নেওয়াও কুফরী। যে ব্যক্তি রাশিফলের উপর গ্রহ-নক্ষত্রের প্রভাবের কথা বিশ্বাস করবে, সে সরাসরি মুশরিক হয়ে যাবে। পত্র-পত্রিকা ও বই-পুস্তকে রাশিফলের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে সেগুলি পাঠ করা শিরক। তবে বিশ্বাস না করে কেবল মানসিক সান্ত্বনা অর্জনের জন্য পড়লে তাতে শিরক হবে না বটে, কিন্তু সে গোনাহগার হবে। কেননা শিরকী কোন কিছু পাঠ করে সান্ত্বনা লাভ করা বৈধ নয়। তাছাড়া শয়তান কর্তৃক তার মনে উক্ত বিশ্বাস জন্মিয়ে দিতে কতক্ষণ? তখন এ পড়াই তার শিরকের মাধ্যম হয়ে দাঁড়াবে।
[1]. বুখারী হা/৮৪৬; মিশকাত হা/৪৫৯৬।
আল্লাহ তা‘আলা এই বিশ্ব ও তার মধ্যস্থিত যাবতীয় বস্ত্ত সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু তিনি যে কল্যাণ যে বস্ত্তর মধ্যে রাখেননি, ঐ বস্ত্ত সেই উপকারই করতে পারে বলে অনেকে বিশ্বাস করে। এরূপ বিশ্বাস শিরকের পর্যায়ভুক্ত। যেমন, বহু লোক তাবীয-তুমার, শিরকী ঝাড়-ফুঁক, বিভিন্ন প্রকার তাগা ও খনিজ পাথর ব্যবহার করে থাকে। তাদের বিশ্বাস, এতে রোগ-বালাই কাছে ভিড়তে পারে না। আর যদি রোগ হয়েই থাকে তবে এগুলি ব্যবহারে সুস্থতা ফিরে আসে। এগুলি ব্যবহারের পিছনে গণক, জাদুকর প্রমুখ শ্রেণীর পরামর্শ অথবা যুগ পরম্পরায় চলে আসা বিশ্বাস কাজ করে।
অনেকে বদ নযর এড়ানোর জন্য বাচ্চা ও বড়দের গলায় এসব ঝুলিয়ে দেয়, শরীরের অন্যত্রও বেঁধে রাখে (যেমন গলা, হাত ও কোমরে)। গাড়ী-বাড়ীতেও তাবীয ও দো‘আ-কালাম লিখিত কাগজ ঝুলিয়ে রাখার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এতে গাড়ী-বাড়ী দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে যায় বলে তাদের বিশ্বাস।
অনেকে আবার রোগের হাত থেকে উদ্ধার পেতে কিংবা রোগ যাতে হতে না পারে সেজন্য কয়েক প্রকার ধাতু নির্মিত আংটি পরে থাকে (যেমন অষ্টধাতুর আংটি প্রভৃতি)। এর ফলে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল বা নির্ভরতা হরাস পায় এবং হারাম জিনিস দ্বারা চিকিৎসার প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায়।
এসব তাবীযের অনেকগুলিতেই স্পষ্ট শিরকী কথা, জিনের নিকট ফরিয়াদ, সূক্ষ্ম নকশা ও অবোধ্য কথা লেখা থাকে। অনেক জ্ঞানপাপী শিরকী মন্ত্রের সাথে কুরআনের আয়াত মিশিয়ে দেয়। কেউ কেউ নাপাক দ্রব্য, ঋতুস্রাবের রক্ত ইত্যাদি দিয়েও তাবীয লেখে। এ ধরনের তাবীয, তাগা, আংটি ঝুলানো কিংবা বাঁধা স্পষ্ট হারাম। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ عَلَّقَ تَمِيمَةً فَقَدْ أَشْرَكَ ‘যে ব্যক্তি তাবীয লটকাল নিশ্চয়ই সে শিরক করল’।[1]
তাবীয ব্যবহারকারী যদি বিশ্বাস করে যে, এসব জিনিস আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়াই উপকার কিংবা অপকার করে, তাহলে সে বড় শিরক করার দোষে দুষ্ট হবে। আর যদি সে বিশ্বাস করে যে, এগুলি উপকার-অপকারের একটি উপকরণ মাত্র। অথচ আল্লাহ তা‘আলা এগুলিকে রোগ বিনাশ সংক্রান্ত কোন উপকার বা অপকারের উপকরণ করেননি, সেক্ষেত্রে সে ছোট গুনাহ করার দোষে দুষ্ট হবে। আর তখন এটি কারণ উদ্ভূত শিরকের ( شرك الأسباب ) পর্যায়ভুক্ত হবে।
[1]. আহমাদ হা/১৭৪৫৮; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৪৯২।
অনেকে বদ নযর এড়ানোর জন্য বাচ্চা ও বড়দের গলায় এসব ঝুলিয়ে দেয়, শরীরের অন্যত্রও বেঁধে রাখে (যেমন গলা, হাত ও কোমরে)। গাড়ী-বাড়ীতেও তাবীয ও দো‘আ-কালাম লিখিত কাগজ ঝুলিয়ে রাখার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এতে গাড়ী-বাড়ী দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে যায় বলে তাদের বিশ্বাস।
অনেকে আবার রোগের হাত থেকে উদ্ধার পেতে কিংবা রোগ যাতে হতে না পারে সেজন্য কয়েক প্রকার ধাতু নির্মিত আংটি পরে থাকে (যেমন অষ্টধাতুর আংটি প্রভৃতি)। এর ফলে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল বা নির্ভরতা হরাস পায় এবং হারাম জিনিস দ্বারা চিকিৎসার প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায়।
এসব তাবীযের অনেকগুলিতেই স্পষ্ট শিরকী কথা, জিনের নিকট ফরিয়াদ, সূক্ষ্ম নকশা ও অবোধ্য কথা লেখা থাকে। অনেক জ্ঞানপাপী শিরকী মন্ত্রের সাথে কুরআনের আয়াত মিশিয়ে দেয়। কেউ কেউ নাপাক দ্রব্য, ঋতুস্রাবের রক্ত ইত্যাদি দিয়েও তাবীয লেখে। এ ধরনের তাবীয, তাগা, আংটি ঝুলানো কিংবা বাঁধা স্পষ্ট হারাম। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ عَلَّقَ تَمِيمَةً فَقَدْ أَشْرَكَ ‘যে ব্যক্তি তাবীয লটকাল নিশ্চয়ই সে শিরক করল’।[1]
তাবীয ব্যবহারকারী যদি বিশ্বাস করে যে, এসব জিনিস আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়াই উপকার কিংবা অপকার করে, তাহলে সে বড় শিরক করার দোষে দুষ্ট হবে। আর যদি সে বিশ্বাস করে যে, এগুলি উপকার-অপকারের একটি উপকরণ মাত্র। অথচ আল্লাহ তা‘আলা এগুলিকে রোগ বিনাশ সংক্রান্ত কোন উপকার বা অপকারের উপকরণ করেননি, সেক্ষেত্রে সে ছোট গুনাহ করার দোষে দুষ্ট হবে। আর তখন এটি কারণ উদ্ভূত শিরকের ( شرك الأسباب ) পর্যায়ভুক্ত হবে।
[1]. আহমাদ হা/১৭৪৫৮; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৪৯২।
আল্লাহ তা‘আলার নিকটে আমল কবুল হওয়ার জন্য রিয়া বা লৌকিকতা মুক্ত এবং কুরআন-সুন্নাহ নির্দেশিত নিয়মে হওয়া অপরিহার্য। যে ব্যক্তি লোক দেখানোর জন্য ইবাদত করবে, সে ছোট শিরক করার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হবে এবং তার আমল বরবাদ হয়ে যাবে। যেমন লোক দেখানো ছালাত। আল্লাহ তা‘আলা এ সম্পর্কে বলেন, إِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ يُخَادِعُوْنَ اللهَ وَهُوَ خَادِعُهُمْ وَإِذَا قَامُوْا إِلَى الصَّلاَةِ قَامُوْا كُسَالَى يُرَآؤُوْنَ النَّاسَ وَلاَ يَذْكُرُونَ اللهَ إِلاَّ قَلِيْلاً - ‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা আল্লাহর সঙ্গে প্রতারণা করতে চায়। অথচ তিনিও তাদের সাথে প্রতারণা করতে সক্ষম। যখন তারা ছালাতে দাঁড়ায় তখন আলস্যভরে দাঁড়ায়। তারা লোকদের দেখায় যে তারা ছালাত আদায় করছে, কিন্তু আল্লাহকে তারা কমই স্মরণ করে’ (নিসা ১৪২)।
স্বীয় কাজের কথা চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ুক এবং লোকেরা শুনে বাহবা দিক এ নিয়তে যে কাজ করবে সে শিরকে নিপতিত হবে। এরূপ বাসনাকারী সম্পর্কে কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করা হয়েছে। ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীছে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ سَمَّعَ سَمَّعَ اللهُ بِهِ وَمَنْ رَاءَى رَاءَى اللهُ بِهِ ‘যে ব্যক্তি মানুষকে শুনানোর জন্য কাজ করে আল্লাহ তার বদলে তাকে (কিয়ামতের দিন) শুনিয়ে দিবেন। আর যে লোক দেখানোর জন্য কাজ করে আল্লাহ তার বদলে তাকে (কিয়ামতের দিন) দেখিয়ে দিবেন’।[1] অর্থাৎ তিনি এসব লোককে কিয়ামতের দিন মানুষের সামনে অপমানিত করবেন এবং কঠোর শাস্তি দিবেন।
যে আল্লাহ ও মানুষ উভয়ের সন্তুষ্টিকল্পে ইবাদত করবে তার আমল বরবাদ হয়ে যাবে। হাদীছে কুদসীতে এসেছে, মহান আল্লাহ বলেন,
أَنَا أَغْنَى الشُّرَكَاءِ عَنِ الشِّرْكِ، مَنْ عَمِلَ عَمَلاً أَشْرَكَ فِيْهِ مَعِى غَيْرِى تَرَكْتُهُ وَشِرْكَهُ
‘আমি অংশীবাদিতা (শিরক) হতে সকল অংশীদারের তুলনায় বেশী মুখাপেক্ষীহীন। যে কেউ কোন আমল করে এবং তাতে অন্যকে আমার সাথে শরীক করে, আমি তাকে ও তার আমল উভয়কেই বর্জন করি’।[2]
তবে কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টির নিমিত্তে কোন আমল শুরু করার পর যদি তার মধ্যে লোক দেখানো ভাব জাগ্রত হয় এবং সে তা ঘৃণা করে ও তা থেকে সরে আসতে চেষ্টা করে, তাহলে তার ঐ আমল শুদ্ধ হবে। কিন্তু যদি সে তা না করে; বরং লোক দেখানো ভাব মনে উদয় হওয়ার জন্য প্রশান্তি ও আনন্দ অনুভব করে, তাহলে অধিকাংশ আলিমের মতে তার ঐ আমল বাতিল হয়ে যাবে।
[1]. বুখারী হা/৬৪৯৯, মুসলিম হা/২৯৮৬; মিশকাত হা/৫৩১৬।
[2]. মুসলিম হা/২৯৮৫, মিশকাত হা/৫৩১৫।
স্বীয় কাজের কথা চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ুক এবং লোকেরা শুনে বাহবা দিক এ নিয়তে যে কাজ করবে সে শিরকে নিপতিত হবে। এরূপ বাসনাকারী সম্পর্কে কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করা হয়েছে। ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীছে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ سَمَّعَ سَمَّعَ اللهُ بِهِ وَمَنْ رَاءَى رَاءَى اللهُ بِهِ ‘যে ব্যক্তি মানুষকে শুনানোর জন্য কাজ করে আল্লাহ তার বদলে তাকে (কিয়ামতের দিন) শুনিয়ে দিবেন। আর যে লোক দেখানোর জন্য কাজ করে আল্লাহ তার বদলে তাকে (কিয়ামতের দিন) দেখিয়ে দিবেন’।[1] অর্থাৎ তিনি এসব লোককে কিয়ামতের দিন মানুষের সামনে অপমানিত করবেন এবং কঠোর শাস্তি দিবেন।
যে আল্লাহ ও মানুষ উভয়ের সন্তুষ্টিকল্পে ইবাদত করবে তার আমল বরবাদ হয়ে যাবে। হাদীছে কুদসীতে এসেছে, মহান আল্লাহ বলেন,
أَنَا أَغْنَى الشُّرَكَاءِ عَنِ الشِّرْكِ، مَنْ عَمِلَ عَمَلاً أَشْرَكَ فِيْهِ مَعِى غَيْرِى تَرَكْتُهُ وَشِرْكَهُ
‘আমি অংশীবাদিতা (শিরক) হতে সকল অংশীদারের তুলনায় বেশী মুখাপেক্ষীহীন। যে কেউ কোন আমল করে এবং তাতে অন্যকে আমার সাথে শরীক করে, আমি তাকে ও তার আমল উভয়কেই বর্জন করি’।[2]
তবে কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টির নিমিত্তে কোন আমল শুরু করার পর যদি তার মধ্যে লোক দেখানো ভাব জাগ্রত হয় এবং সে তা ঘৃণা করে ও তা থেকে সরে আসতে চেষ্টা করে, তাহলে তার ঐ আমল শুদ্ধ হবে। কিন্তু যদি সে তা না করে; বরং লোক দেখানো ভাব মনে উদয় হওয়ার জন্য প্রশান্তি ও আনন্দ অনুভব করে, তাহলে অধিকাংশ আলিমের মতে তার ঐ আমল বাতিল হয়ে যাবে।
[1]. বুখারী হা/৬৪৯৯, মুসলিম হা/২৯৮৬; মিশকাত হা/৫৩১৬।
[2]. মুসলিম হা/২৯৮৫, মিশকাত হা/৫৩১৫।
কুলক্ষণ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
فَإِذَا جَاءَتْهُمُ الْحَسَنَةُ قَالُوْا لَنَا هَـذِهِ وَإِنْ تُصِبْهُمْ سَيِّئَةٌ يَطَّيَّرُوْا بِمُوْسَى وَمَن مَّعَهُ -
‘যখন তাদের (ফের‘আউন ও তার প্রজাদের) কোন কল্যাণ দেখা দিত তখন তারা বলত, এটা আমাদের জন্য হয়েছে। আর যদি কোন অকল্যাণ হ’ত, তারা তখন মূসা ও তাঁর সাথীদের অলুক্ষণে বলে গণ্য করত’ (আ‘রাফ ১৩১)।
আরবরা যাত্রা ইত্যাদি কাজের প্রাক্কালে পাখি উড়িয়ে দিয়ে তার শুভাশুভ নির্ণয় করত। পাখি ডাইনে গেলে শুভ মনে করে সে কাজে নেমে পড়ত। আর বামে গেলে অশুভ মনে করে তা হতে বিরত থাকত। এভাবে শুভাশুভ নির্ণয়ের বিধান প্রসঙ্গে মহানবী (ছাঃ) বলেন, اَلطِّيَرَةُ شِرْكٌ ‘কুলক্ষণে বিশ্বাস করা শিরক’।[1]
মাস, দিন, সংখ্যা, নাম ইত্যাদিকে দুর্ভাগ্য বা অশুভ প্রতীক হিসাবে চিহ্নিত করাও তাওহীদ পরিপন্থী হারাম আক্বীদার অন্তর্ভুক্ত। যেমন অনেক দেশে হিজরী সনের ছফর মাসে বিবাহ করা থেকে বিরত থাকা হয় ও প্রতি মাসের শেষ বুধবারকে চিরস্থায়ী কুলক্ষণ মনে করা হয়। বিশ্বজুড়ে আজ ১৩ সংখ্যাকে ‘অলুক্ষণে তের’ বা Unluckey thirteen বলা হয়। কেউ যদি তের ক্রমিকে একবার পড়ে যায় তাহলে তার আর দুশ্চিন্তার সীমা থাকে না। অনেকে কানা-খোঁড়া, পাগল ইত্যাকার প্রতিবন্ধীদের কাজের শুরুতে দেখলে মাথায় হাত দিয়ে বসে। দোকান খুলতে গিয়ে পথে এমনিতর কোন কানা-খোঁড়াকে দেখতে পেলে তার আর দোকান খোলা হয় না। অশুভ মনে করে সে ফিরে আসে। অথচ এ জাতীয় আক্বীদা পোষণ করা হারাম ও শিরক। এজন্য যারা কুলক্ষণে বিশ্বাসী রাসূল (ছাঃ) তাদেরকে তাঁর উম্মতের অন্তর্ভুক্ত গণ্য করেননি। ইমরান বিন হুছাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
لَيْسَ مِنَّا مَنْ تَطَيَّرَ، أَوْ تُطُيِّرَ لَهُ أَوْ تَكَهَّنَ، أَوْ تُكُهِّنَ لَهُ أَوْ سَحَرَ، أَوْ سُحِرَ لَهُ -
‘যে ব্যক্তি নিজে কুলক্ষণে বিশ্বাস করে ও যার কারণে অন্যের মাঝে কুলক্ষণের প্রতি বিশ্বাসের প্রবণতা সৃষ্টি হয় এবং যে ব্যক্তি ভাগ্য গণনা করে ও যার জন্য ভাগ্য গণনা করা হয় (বর্ণনাকারী মনে করেন যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এ সম্পর্কেও বলেছিলেন) এবং যে জাদু করে ও যার কারণে জাদু করা হয় সেই ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়’।[2]
কেউ কোন বিষয়ে কুলক্ষণে নিপতিত হ’লে তাকে এজন্য কাফফারা দিতে হবে। কাফফারা এখানে কোন অর্থ কিংবা ইবাদত নয়; বরং পাপ বিমোচক একটি দো‘আ, যা আব্দুল্লাহ বিন আমর বর্ণিত হাদীছে এসেছে। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একদা বললেন, কুলক্ষণ যে ব্যক্তিকে কোন কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখে, নিশ্চয়ই সে শিরক করে। ছাহাবীগণ আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! উহার কাফফারা কি হবে? তিনি বললেন, ঐ ব্যক্তি বলবে-
اَللَّهُمَّ لاَ خَيْرَ إِلاَّ خَيْرُكَ وَلاَ طَيْرَ إِلاَّ طَيْرُكَ وَلاَ إِلَهَ غَيْرُكَ -
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা লা খায়রা ইল্লা খায়রুকা ওয়ালা ত্বায়রা ইল্লা ত্বায়রুকা ওয়ালা ইলা-হা গায়রুকা।
‘হে আল্লাহ! আপনার কল্যাণ ছাড়া কোন কল্যাণ নেই। আপনার সৃষ্ট কুলক্ষণ ছাড়া কোন কুলক্ষণ নেই। আর আপনি ছাড়া কোন (হক) মা‘বূদও নেই’।[3]
তবে সুলক্ষণ-কুলক্ষণের ধারণা মনে জন্ম নেয়া স্বভাবগত ব্যাপার, যা সময়ে বাড়ে ও কমে। এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল বা নির্ভর করা। যেমন ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেছেন,
وَمَا مِنَّا إِلاَّ ( أَيْ إِلاَّ وَيَقَعُ فِيْ نَفْسِهِ شَيْءٌ مِّنْ ذَلِكَ ) وَلَكِنَّ اللهَ يُذْهِبُهُ بِالتَّوَكُّلِ -
‘আমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে, মনে কুলক্ষণ সংক্রান্ত কিছুই উঁকি দেয় না। কিন্তু তাওয়াক্কুল (আল্লাহর উপর নির্ভরতা) দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা তা দূর করে দেন’।[4]
[1]. আবুদাঊদ, তিরমিযী; মিশকাত হা/৪৫৮৪।
[2]. তাবারাণী, সিলসিলা ছহীহাহ হা/২১৯৫।
[3]. আহমাদ হা/৭০৪৫; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১০৬৫।
[4]. আবুদাঊদ হা/৩৯১০; মিশকাত হা/৪৫৮৪।
فَإِذَا جَاءَتْهُمُ الْحَسَنَةُ قَالُوْا لَنَا هَـذِهِ وَإِنْ تُصِبْهُمْ سَيِّئَةٌ يَطَّيَّرُوْا بِمُوْسَى وَمَن مَّعَهُ -
‘যখন তাদের (ফের‘আউন ও তার প্রজাদের) কোন কল্যাণ দেখা দিত তখন তারা বলত, এটা আমাদের জন্য হয়েছে। আর যদি কোন অকল্যাণ হ’ত, তারা তখন মূসা ও তাঁর সাথীদের অলুক্ষণে বলে গণ্য করত’ (আ‘রাফ ১৩১)।
আরবরা যাত্রা ইত্যাদি কাজের প্রাক্কালে পাখি উড়িয়ে দিয়ে তার শুভাশুভ নির্ণয় করত। পাখি ডাইনে গেলে শুভ মনে করে সে কাজে নেমে পড়ত। আর বামে গেলে অশুভ মনে করে তা হতে বিরত থাকত। এভাবে শুভাশুভ নির্ণয়ের বিধান প্রসঙ্গে মহানবী (ছাঃ) বলেন, اَلطِّيَرَةُ شِرْكٌ ‘কুলক্ষণে বিশ্বাস করা শিরক’।[1]
মাস, দিন, সংখ্যা, নাম ইত্যাদিকে দুর্ভাগ্য বা অশুভ প্রতীক হিসাবে চিহ্নিত করাও তাওহীদ পরিপন্থী হারাম আক্বীদার অন্তর্ভুক্ত। যেমন অনেক দেশে হিজরী সনের ছফর মাসে বিবাহ করা থেকে বিরত থাকা হয় ও প্রতি মাসের শেষ বুধবারকে চিরস্থায়ী কুলক্ষণ মনে করা হয়। বিশ্বজুড়ে আজ ১৩ সংখ্যাকে ‘অলুক্ষণে তের’ বা Unluckey thirteen বলা হয়। কেউ যদি তের ক্রমিকে একবার পড়ে যায় তাহলে তার আর দুশ্চিন্তার সীমা থাকে না। অনেকে কানা-খোঁড়া, পাগল ইত্যাকার প্রতিবন্ধীদের কাজের শুরুতে দেখলে মাথায় হাত দিয়ে বসে। দোকান খুলতে গিয়ে পথে এমনিতর কোন কানা-খোঁড়াকে দেখতে পেলে তার আর দোকান খোলা হয় না। অশুভ মনে করে সে ফিরে আসে। অথচ এ জাতীয় আক্বীদা পোষণ করা হারাম ও শিরক। এজন্য যারা কুলক্ষণে বিশ্বাসী রাসূল (ছাঃ) তাদেরকে তাঁর উম্মতের অন্তর্ভুক্ত গণ্য করেননি। ইমরান বিন হুছাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
لَيْسَ مِنَّا مَنْ تَطَيَّرَ، أَوْ تُطُيِّرَ لَهُ أَوْ تَكَهَّنَ، أَوْ تُكُهِّنَ لَهُ أَوْ سَحَرَ، أَوْ سُحِرَ لَهُ -
‘যে ব্যক্তি নিজে কুলক্ষণে বিশ্বাস করে ও যার কারণে অন্যের মাঝে কুলক্ষণের প্রতি বিশ্বাসের প্রবণতা সৃষ্টি হয় এবং যে ব্যক্তি ভাগ্য গণনা করে ও যার জন্য ভাগ্য গণনা করা হয় (বর্ণনাকারী মনে করেন যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এ সম্পর্কেও বলেছিলেন) এবং যে জাদু করে ও যার কারণে জাদু করা হয় সেই ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়’।[2]
কেউ কোন বিষয়ে কুলক্ষণে নিপতিত হ’লে তাকে এজন্য কাফফারা দিতে হবে। কাফফারা এখানে কোন অর্থ কিংবা ইবাদত নয়; বরং পাপ বিমোচক একটি দো‘আ, যা আব্দুল্লাহ বিন আমর বর্ণিত হাদীছে এসেছে। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একদা বললেন, কুলক্ষণ যে ব্যক্তিকে কোন কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখে, নিশ্চয়ই সে শিরক করে। ছাহাবীগণ আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! উহার কাফফারা কি হবে? তিনি বললেন, ঐ ব্যক্তি বলবে-
اَللَّهُمَّ لاَ خَيْرَ إِلاَّ خَيْرُكَ وَلاَ طَيْرَ إِلاَّ طَيْرُكَ وَلاَ إِلَهَ غَيْرُكَ -
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা লা খায়রা ইল্লা খায়রুকা ওয়ালা ত্বায়রা ইল্লা ত্বায়রুকা ওয়ালা ইলা-হা গায়রুকা।
‘হে আল্লাহ! আপনার কল্যাণ ছাড়া কোন কল্যাণ নেই। আপনার সৃষ্ট কুলক্ষণ ছাড়া কোন কুলক্ষণ নেই। আর আপনি ছাড়া কোন (হক) মা‘বূদও নেই’।[3]
তবে সুলক্ষণ-কুলক্ষণের ধারণা মনে জন্ম নেয়া স্বভাবগত ব্যাপার, যা সময়ে বাড়ে ও কমে। এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল বা নির্ভর করা। যেমন ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেছেন,
وَمَا مِنَّا إِلاَّ ( أَيْ إِلاَّ وَيَقَعُ فِيْ نَفْسِهِ شَيْءٌ مِّنْ ذَلِكَ ) وَلَكِنَّ اللهَ يُذْهِبُهُ بِالتَّوَكُّلِ -
‘আমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে, মনে কুলক্ষণ সংক্রান্ত কিছুই উঁকি দেয় না। কিন্তু তাওয়াক্কুল (আল্লাহর উপর নির্ভরতা) দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা তা দূর করে দেন’।[4]
[1]. আবুদাঊদ, তিরমিযী; মিশকাত হা/৪৫৮৪।
[2]. তাবারাণী, সিলসিলা ছহীহাহ হা/২১৯৫।
[3]. আহমাদ হা/৭০৪৫; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১০৬৫।
[4]. আবুদাঊদ হা/৩৯১০; মিশকাত হা/৪৫৮৪।
আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সৃষ্টির মধ্য হতে যার নামে ইচ্ছা কসম করতে পারেন। কিন্তু সৃষ্টির জন্য আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে কসম করা জায়েয নেই। তা সত্ত্বেও অনেক মানুষের মুখেই নির্বিবাদে গায়রুল্লাহর নামে কসম উচ্চারিত হয়। কসম মূলতঃ এক প্রকার সম্মান, যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ পাওয়ার যোগ্য নয়। ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
أَلاَ إِنَّ اللهَ يَنْهَاكُمْ أَنْ تَحْلِفُوا بِآبَائِكُمْ، مَنْ كَانَ حَالِفًا بِاللهِ فَلْيَحْلِفْ بِاللهِ أَوْ لِيَصْمُتْ -
‘সাবধান! নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে তোমাদের পিতৃপুরুষের নামে শপথ করতে নিষেধ করেছেন। কারো যদি শপথ করতেই হয়, তবে সে যেন আল্লাহর নামে শপথ করে অথবা চুপ থাকে’।[1]
ইবনু ওমর (রাঃ) বর্ণিত আরেকটি হাদীছে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ حَلَفَ بِغَيْرِ اللهِ فَقَدْ أَشْرَكَ ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে কসম করল, সে শিরক করল’।[2]
অপর এক হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ حَلَفَ بِالْأَمَانَةِ فَلَيْسَ مِنَّا ‘যে আমানত বা গচ্ছিত দ্রব্যের নামে কসম করে, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়’।[3]
সুতরাং কা‘বা, আমানত, মর্যাদা, সাহায্য, অমুকের বরকত, অমুকের জীবন, নবীর মর্যাদা, অলীর মর্যাদা, পিতা-মাতা ও সন্তানের মাথা ইত্যাদি দিয়ে কসম খাওয়া নিষিদ্ধ।
কেউ যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে কসম করে তবে তার কাফফারা হ’ল কালেমা ত্বাইয়েবা ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ পাঠ করা। যেমন ছহীহ হাদীছে এসেছে-
مَنْ حَلَفَ فَقَالَ فِىْ حَلِفِهِ بِاللاَّتِ وَالْعُزَّى . فَلْيَقُلْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ -
‘যে ব্যক্তি শপথ করতে গিয়ে লাত ও উযযার নামে শপথ করে বসে, সে যেন বলে, ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’।[4]
উল্লিখিত অবৈধ শপথের ধাঁচে কিছু শিরকী ও হারাম কথা কতিপয় মুসলমানের মুখে উচ্চারিত হ’তে শোনা যায়। যেমন বলা হয়, ‘আমি আল্লাহ ও আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি’। ‘আল্লাহ আর আপনার উপরই ভরসা’। ‘এটা আল্লাহ ও তোমার পক্ষ হতে হয়েছে’। ‘আল্লাহ ও আপনি ছাড়া আমার আর কেউ নেই’। ‘আমার জন্য উপরে আল্লাহ আর নীচে আপনি আছেন’। ‘উপরে খোদা, নীচে হুদা’। ‘আল্লাহ ও অমুক যদি না থাকত’।[5] ‘আমি ইসলাম থেকে মুক্ত বা ইসলামের ধার ধারি না’। ‘হায় কালের চক্র, আমার সব শেষ করে দিল’। ‘এখন আমার দুঃসময় চলছে’। ‘এ সময়টা অলুক্ষণে’। ‘সময় বিশ্বাসঘাতকতা করেছে’ ইত্যাদি।
উল্লেখ্য, সময়কে গালি দিলে সময়ের স্রষ্টা আল্লাহকেই গালি দেয়া হয় বলে হাদীছে কুদসীতে এসেছে।[6] সুতরাং সময়কে গালি দেওয়া নিষিদ্ধ।
আল্লাহ ব্যতীত অন্যের সাথে عبد বা দাস অর্থবোধক শব্দ এ পর্যায়ে পড়ে। যেমন আবদুল মসীহ, আবদুর রাসূল, আবদুন নবী, আবদুল হুসাইন, গোলাম রাসূল ইত্যাদি।
আধুনিক কিছু শব্দ ও পরিভাষাও রয়েছে যা তাওহীদের পরিপন্থী। যেমন ইসলামী সমাজতন্ত্র, ইসলামী গণতন্ত্র, জনগণের ইচ্ছাই আল্লাহর ইচ্ছা, দশ যেখানে আল্লাহ সেখানে, দ্বীন আল্লাহর দেশ সকল মানুষের, বিপ্লবের নামে শপথ করে বলছি, খাঁটি আরব হওয়ার নামে শপথ করে বলছি ইত্যাদি।
কোন রাজা-বাদশাহকে ‘শাহানশাহ’ বা ‘রাজাধিরাজ’ বলাও হারাম (শাহজাহান ও জাহাঙ্গীরও এ পর্যায়ভুক্ত)। একইভাবে কোন মানুষকে ‘কাযীউল কুযাত’ বা ‘বিচারকদের উপরস্থ বিচারক’ বলা যাবে না। কেননা ‘কাযীউল কুযাত’ একমাত্র আল্লাহ।
কোন কাফির বা মুনাফিকের ক্ষেত্রে সম্মানসূচক ‘সাইয়িদ’ তথা ‘জনাব’ বা অন্য ভাষার অনুরূপ কোন শব্দ ব্যবহার করাও সিদ্ধ নয়।
আফসোস, অনুশোচনা ও বিরাগ প্রকাশের জন্য ‘যদি এটা করতাম তাহলে ওটা হত না’, ‘হে আল্লাহ! তুমি চাইলে আমাকে ক্ষমা করো’ এ জাতীয় কথা বলাও বৈধ নয়। কারণ এমন কথা বললে শয়তানের খপ্পরে পড়ে যেতে হয়।
[1]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৩৪০৭।
[2]. আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৩৪১৯।
[3]. আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৩৪২০।
[4]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩৪০৯।
[5]. এসব ক্ষেত্রে অতঃপর শব্দ প্রয়োগ করতে হবে। যেমন আল্লাহ অতঃপর আপনি যা চান ( مَا شَاءَ اللهُ ثُمَّ شِئْتَ ) ইত্যাদি -অনুবাদক।
[6]. বুখারী হা/৬১৮১।
أَلاَ إِنَّ اللهَ يَنْهَاكُمْ أَنْ تَحْلِفُوا بِآبَائِكُمْ، مَنْ كَانَ حَالِفًا بِاللهِ فَلْيَحْلِفْ بِاللهِ أَوْ لِيَصْمُتْ -
‘সাবধান! নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে তোমাদের পিতৃপুরুষের নামে শপথ করতে নিষেধ করেছেন। কারো যদি শপথ করতেই হয়, তবে সে যেন আল্লাহর নামে শপথ করে অথবা চুপ থাকে’।[1]
ইবনু ওমর (রাঃ) বর্ণিত আরেকটি হাদীছে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ حَلَفَ بِغَيْرِ اللهِ فَقَدْ أَشْرَكَ ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে কসম করল, সে শিরক করল’।[2]
অপর এক হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ حَلَفَ بِالْأَمَانَةِ فَلَيْسَ مِنَّا ‘যে আমানত বা গচ্ছিত দ্রব্যের নামে কসম করে, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়’।[3]
সুতরাং কা‘বা, আমানত, মর্যাদা, সাহায্য, অমুকের বরকত, অমুকের জীবন, নবীর মর্যাদা, অলীর মর্যাদা, পিতা-মাতা ও সন্তানের মাথা ইত্যাদি দিয়ে কসম খাওয়া নিষিদ্ধ।
কেউ যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে কসম করে তবে তার কাফফারা হ’ল কালেমা ত্বাইয়েবা ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ পাঠ করা। যেমন ছহীহ হাদীছে এসেছে-
مَنْ حَلَفَ فَقَالَ فِىْ حَلِفِهِ بِاللاَّتِ وَالْعُزَّى . فَلْيَقُلْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ -
‘যে ব্যক্তি শপথ করতে গিয়ে লাত ও উযযার নামে শপথ করে বসে, সে যেন বলে, ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’।[4]
উল্লিখিত অবৈধ শপথের ধাঁচে কিছু শিরকী ও হারাম কথা কতিপয় মুসলমানের মুখে উচ্চারিত হ’তে শোনা যায়। যেমন বলা হয়, ‘আমি আল্লাহ ও আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি’। ‘আল্লাহ আর আপনার উপরই ভরসা’। ‘এটা আল্লাহ ও তোমার পক্ষ হতে হয়েছে’। ‘আল্লাহ ও আপনি ছাড়া আমার আর কেউ নেই’। ‘আমার জন্য উপরে আল্লাহ আর নীচে আপনি আছেন’। ‘উপরে খোদা, নীচে হুদা’। ‘আল্লাহ ও অমুক যদি না থাকত’।[5] ‘আমি ইসলাম থেকে মুক্ত বা ইসলামের ধার ধারি না’। ‘হায় কালের চক্র, আমার সব শেষ করে দিল’। ‘এখন আমার দুঃসময় চলছে’। ‘এ সময়টা অলুক্ষণে’। ‘সময় বিশ্বাসঘাতকতা করেছে’ ইত্যাদি।
উল্লেখ্য, সময়কে গালি দিলে সময়ের স্রষ্টা আল্লাহকেই গালি দেয়া হয় বলে হাদীছে কুদসীতে এসেছে।[6] সুতরাং সময়কে গালি দেওয়া নিষিদ্ধ।
আল্লাহ ব্যতীত অন্যের সাথে عبد বা দাস অর্থবোধক শব্দ এ পর্যায়ে পড়ে। যেমন আবদুল মসীহ, আবদুর রাসূল, আবদুন নবী, আবদুল হুসাইন, গোলাম রাসূল ইত্যাদি।
আধুনিক কিছু শব্দ ও পরিভাষাও রয়েছে যা তাওহীদের পরিপন্থী। যেমন ইসলামী সমাজতন্ত্র, ইসলামী গণতন্ত্র, জনগণের ইচ্ছাই আল্লাহর ইচ্ছা, দশ যেখানে আল্লাহ সেখানে, দ্বীন আল্লাহর দেশ সকল মানুষের, বিপ্লবের নামে শপথ করে বলছি, খাঁটি আরব হওয়ার নামে শপথ করে বলছি ইত্যাদি।
কোন রাজা-বাদশাহকে ‘শাহানশাহ’ বা ‘রাজাধিরাজ’ বলাও হারাম (শাহজাহান ও জাহাঙ্গীরও এ পর্যায়ভুক্ত)। একইভাবে কোন মানুষকে ‘কাযীউল কুযাত’ বা ‘বিচারকদের উপরস্থ বিচারক’ বলা যাবে না। কেননা ‘কাযীউল কুযাত’ একমাত্র আল্লাহ।
কোন কাফির বা মুনাফিকের ক্ষেত্রে সম্মানসূচক ‘সাইয়িদ’ তথা ‘জনাব’ বা অন্য ভাষার অনুরূপ কোন শব্দ ব্যবহার করাও সিদ্ধ নয়।
আফসোস, অনুশোচনা ও বিরাগ প্রকাশের জন্য ‘যদি এটা করতাম তাহলে ওটা হত না’, ‘হে আল্লাহ! তুমি চাইলে আমাকে ক্ষমা করো’ এ জাতীয় কথা বলাও বৈধ নয়। কারণ এমন কথা বললে শয়তানের খপ্পরে পড়ে যেতে হয়।
[1]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৩৪০৭।
[2]. আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৩৪১৯।
[3]. আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৩৪২০।
[4]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩৪০৯।
[5]. এসব ক্ষেত্রে অতঃপর শব্দ প্রয়োগ করতে হবে। যেমন আল্লাহ অতঃপর আপনি যা চান ( مَا شَاءَ اللهُ ثُمَّ شِئْتَ ) ইত্যাদি -অনুবাদক।
[6]. বুখারী হা/৬১৮১।
দুর্বল ঈমানের অনেক মানুষই পাপাচারী ও দুষ্কৃতিকারীদের সঙ্গে স্বেচ্ছায় উঠাবসা করে। এমনকি আল্লাহর দ্বীন ও তার অনুসারীদের প্রতি যারা অহরহ ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করে, তাদের সঙ্গেও তারা দহরম-মহরম সম্পর্ক রেখে চলে, তাদের মোসাহেবী করে। অথচ এ কাজ যে হারাম তাতে কোন সন্দেহ নেই। আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
وَإِذَا رَأَيْتَ الَّذِينَ يَخُوضُونَ فِيْ آيَاتِنَا فَأَعْرِضْ عَنْهُمْ حَتَّى يَخُوضُوا فِيْ حَدِيثٍ غَيْرِهِ وَإِمَّا يُنْسِيَنَّكَ الشَّيْطَانُ فَلاَ تَقْعُدْ بَعْدَ الذِّكْرَى مَعَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ -
‘যখন আপনি তাদেরকে আমার কোন আয়াত বা বিধান সম্পর্কে উপহাসমূলক আলোচনায় মগ্ন দেখতে পান তখন আপনি তাদের থেকে সরে থাকুন, যে পর্যন্ত না তারা অন্য প্রসঙ্গে লিপ্ত হয়। আর যদি শয়তান আপনাকে ভুলিয়ে দেয়, তাহলে স্মরণে আসার পর যালিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে আপনি আর বসবেন না’ (আন‘আম ৬৮)।
সুতরাং ফাসিক-মুনাফিকদের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক যত গভীরই হৌক কিংবা তাদের সাথে সমাজ-সামাজিকতায় যতই মজা লাগুক এবং তাদের কণ্ঠ যতই মধুর হৌক তাদের সঙ্গে উঠাবসা করা বৈধ নয়।
হাঁ, যে ব্যক্তি তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত প্রদান করে, তাদের বাতিল আক্বীদার প্রতিবাদ করে কিংবা তাদেরকে অন্যায় থেকে নিষেধ করার জন্য তাদের নিকট গমনাগমন করে সে উক্ত নির্দেশের আওতাভুক্ত হবে না। স্বেচ্ছায়, খুশীমনে ও কোন কিছু না বলে নীরবে তাদের সাথে মিলতাল রাখাতেই সব গোল। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
فَإِنْ تَرْضَوْا عَنْهُمْ فَإِنَّ اللهَ لاَ يَرْضَى عَنِ الْقَوْمِ الْفَاسِقِينَ -
‘যদি তোমরা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট থাক, তবে (জেনে রেখ) আল্লাহ ফাসিক বা দুষ্কৃতিকারী সম্প্রদায়ের প্রতি সন্তুষ্ট নন’ (তওবা ৯৬)।
وَإِذَا رَأَيْتَ الَّذِينَ يَخُوضُونَ فِيْ آيَاتِنَا فَأَعْرِضْ عَنْهُمْ حَتَّى يَخُوضُوا فِيْ حَدِيثٍ غَيْرِهِ وَإِمَّا يُنْسِيَنَّكَ الشَّيْطَانُ فَلاَ تَقْعُدْ بَعْدَ الذِّكْرَى مَعَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ -
‘যখন আপনি তাদেরকে আমার কোন আয়াত বা বিধান সম্পর্কে উপহাসমূলক আলোচনায় মগ্ন দেখতে পান তখন আপনি তাদের থেকে সরে থাকুন, যে পর্যন্ত না তারা অন্য প্রসঙ্গে লিপ্ত হয়। আর যদি শয়তান আপনাকে ভুলিয়ে দেয়, তাহলে স্মরণে আসার পর যালিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে আপনি আর বসবেন না’ (আন‘আম ৬৮)।
সুতরাং ফাসিক-মুনাফিকদের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক যত গভীরই হৌক কিংবা তাদের সাথে সমাজ-সামাজিকতায় যতই মজা লাগুক এবং তাদের কণ্ঠ যতই মধুর হৌক তাদের সঙ্গে উঠাবসা করা বৈধ নয়।
হাঁ, যে ব্যক্তি তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত প্রদান করে, তাদের বাতিল আক্বীদার প্রতিবাদ করে কিংবা তাদেরকে অন্যায় থেকে নিষেধ করার জন্য তাদের নিকট গমনাগমন করে সে উক্ত নির্দেশের আওতাভুক্ত হবে না। স্বেচ্ছায়, খুশীমনে ও কোন কিছু না বলে নীরবে তাদের সাথে মিলতাল রাখাতেই সব গোল। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
فَإِنْ تَرْضَوْا عَنْهُمْ فَإِنَّ اللهَ لاَ يَرْضَى عَنِ الْقَوْمِ الْفَاسِقِينَ -
‘যদি তোমরা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট থাক, তবে (জেনে রেখ) আল্লাহ ফাসিক বা দুষ্কৃতিকারী সম্প্রদায়ের প্রতি সন্তুষ্ট নন’ (তওবা ৯৬)।
সবচেয়ে বড় চুরি হচ্ছে ছালাতে চুরি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
أَسْوَأُ النَّاسِ سَرِقَةً الَّذِى يَسْرِقُ مِنْ صَلاَتِهِ . قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ وَكَيْفَ يَسْرِقُ مِنْ صَلاَتِهِ قَالَ : لاَ يُتِمُّ رُكُوعَهَا وَلاَ سُجُودَهَا -
‘সবচেয়ে নিকৃষ্ট চোর সেই ব্যক্তি যে ছালাতে চুরি করে। ছাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে কিভাবে ছালাতে চুরি করে? তিনি বললেন, সে রুকূ-সিজদা পরিপূর্ণভাবে করে না’।[1]
আজকাল অধিকাংশ মুছল্লীকে দেখা যায় যে তারা ছালাতে ধীরস্থির ভাব বজায় রাখে না। ধীরে-সুস্থে রুকূ-সিজদা করে না। রুকূ থেকে যখন মাথা তোলে তখন পিঠ সোজা করে দাঁড়ায় না এবং দু’সিজদার মাঝে পিঠ টান করে বসে না। খুব কম মসজিদই এমন পাওয়া যাবে যেখানে এ জাতীয় দু’চারজন পাওয়া যাবে না। অথচ ছালাতে ধীরস্থিরতা বজায় রাখা ছালাতের অন্যতম রুকন। স্বেচ্ছায় তা পরিহার করলে কোন মতেই ছালাত শুদ্ধ হবে না। সুতরাং বিষয়টি বেশ গুরুতর। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
لاَ تُجْزِئُ صَلاَةُ الرَّجُلِ حَتَّى يُقِيمَ ظَهْرَهُ فِى الرُّكُوعِ وَالسُّجُودِ -
‘কোন ব্যক্তি যে পর্যন্ত না রুকূ-সিজদায় তার পৃষ্ঠদেশ সোজা করবে, সে পর্যন্ত তার ছালাত যথার্থ হবে না’।[2]
কাজটি যে অবৈধ এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। যে মুছল্লী এরূপ করে সে ভৎর্সনার যোগ্য। আবু আব্দুল্লাহ আশ‘আরী (রাঃ) বর্ণিত একটি হাদীছে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একদা ছাহাবীদের সাথে ছালাত আদায়ের পর তাদের একটি দলের সাথে বসেছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে ছালাতে দাঁড়াল। সে রুকূ করছিল আর সিজদায় গিয়ে ঠোকর মারছিল। তা দেখে নবী করীম (ছাঃ) বললেন, ‘তোমরা কি এই লোকটিকে লক্ষ্য করেছ? এভাবে ছালাত আদায় করে কেউ যদি মারা যায়, তবে সে মুহাম্মাদের মিল্লাত থেকে খারিজ হয়ে মারা যাবে। কাক যেমন রক্তে ঠোকর মারে সে তেমনি করে তার ছালাতে ঠোকর মারছে। যে ব্যক্তি রুকূ করে আর সিজদায় গিয়ে ঠোকর মারে তার দৃষ্টান্ত সেই ক্ষুধার্ত লোকের ন্যায়, যে একটি দু’টির বেশী খেজুর খেতে পায় না। দু’টি খেজুরে তার কতটুকু ক্ষুধা মিটাতে পারে?’।[3]
যায়েদ বিন ওয়াহাব হতে বর্ণিত আছে, একবার হুযায়ফা (রাঃ) জনৈক ব্যক্তিকে দেখতে পেলেন যে, সে রুকূ-সিজদা পূর্ণাঙ্গরূপে আদায় করছে না। তিনি তাকে বললেন, ‘তুমি ছালাত আদায় করনি। আর এ অবস্থায় যদি তুমি মৃত্যুবরণ কর, তাহলে যে দ্বীন সহ আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে পাঠিয়েছিলেন তুমি তার বাইরে মৃত্যুবরণ করবে’।[4]
যে ব্যক্তি ছালাতে ধীরস্থিরতা বজায় রাখে না, সে যখন উহার বিধান জানতে পারবে তখনকার ওয়াক্তের ফরয ছালাত তাকে আবার পড়তে হবে। আর অতীতে যা ভুল হয়ে গেছে সেজন্য তওবা করবে, সেগুলি আর পুনরায় পড়তে হবে না। যেমন হাদীছে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একদিন জনৈক দ্রুত ছালাত আদায়কারীকে লক্ষ্য করে বললেন, اِرْجِعْ فَصَلِّ ، فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ ‘যাও, ছালাত আদায় কর। কেননা তুমি তো ছালাত আদায় করনি’।[5] এখানে অতীত ছালাত কাযা করার কথা বলা হয়নি।
[1]. আহমাদ, মিশকাত হা/৮৮৫।
[2]. আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৯৭৮।
[3]. ছহীহ ইবনে খুযায়মা হা/৬৬৫; আলবানী, ছিফাতু ছালাতিন নাবী, পৃঃ ১৩১।
[4]. আহমাদ, বুখারী হা/৭৯১, ফাতহুল বারী ২/২৭৪ পৃঃ।
[5]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৭৯০।
أَسْوَأُ النَّاسِ سَرِقَةً الَّذِى يَسْرِقُ مِنْ صَلاَتِهِ . قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ وَكَيْفَ يَسْرِقُ مِنْ صَلاَتِهِ قَالَ : لاَ يُتِمُّ رُكُوعَهَا وَلاَ سُجُودَهَا -
‘সবচেয়ে নিকৃষ্ট চোর সেই ব্যক্তি যে ছালাতে চুরি করে। ছাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে কিভাবে ছালাতে চুরি করে? তিনি বললেন, সে রুকূ-সিজদা পরিপূর্ণভাবে করে না’।[1]
আজকাল অধিকাংশ মুছল্লীকে দেখা যায় যে তারা ছালাতে ধীরস্থির ভাব বজায় রাখে না। ধীরে-সুস্থে রুকূ-সিজদা করে না। রুকূ থেকে যখন মাথা তোলে তখন পিঠ সোজা করে দাঁড়ায় না এবং দু’সিজদার মাঝে পিঠ টান করে বসে না। খুব কম মসজিদই এমন পাওয়া যাবে যেখানে এ জাতীয় দু’চারজন পাওয়া যাবে না। অথচ ছালাতে ধীরস্থিরতা বজায় রাখা ছালাতের অন্যতম রুকন। স্বেচ্ছায় তা পরিহার করলে কোন মতেই ছালাত শুদ্ধ হবে না। সুতরাং বিষয়টি বেশ গুরুতর। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
لاَ تُجْزِئُ صَلاَةُ الرَّجُلِ حَتَّى يُقِيمَ ظَهْرَهُ فِى الرُّكُوعِ وَالسُّجُودِ -
‘কোন ব্যক্তি যে পর্যন্ত না রুকূ-সিজদায় তার পৃষ্ঠদেশ সোজা করবে, সে পর্যন্ত তার ছালাত যথার্থ হবে না’।[2]
কাজটি যে অবৈধ এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। যে মুছল্লী এরূপ করে সে ভৎর্সনার যোগ্য। আবু আব্দুল্লাহ আশ‘আরী (রাঃ) বর্ণিত একটি হাদীছে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একদা ছাহাবীদের সাথে ছালাত আদায়ের পর তাদের একটি দলের সাথে বসেছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে ছালাতে দাঁড়াল। সে রুকূ করছিল আর সিজদায় গিয়ে ঠোকর মারছিল। তা দেখে নবী করীম (ছাঃ) বললেন, ‘তোমরা কি এই লোকটিকে লক্ষ্য করেছ? এভাবে ছালাত আদায় করে কেউ যদি মারা যায়, তবে সে মুহাম্মাদের মিল্লাত থেকে খারিজ হয়ে মারা যাবে। কাক যেমন রক্তে ঠোকর মারে সে তেমনি করে তার ছালাতে ঠোকর মারছে। যে ব্যক্তি রুকূ করে আর সিজদায় গিয়ে ঠোকর মারে তার দৃষ্টান্ত সেই ক্ষুধার্ত লোকের ন্যায়, যে একটি দু’টির বেশী খেজুর খেতে পায় না। দু’টি খেজুরে তার কতটুকু ক্ষুধা মিটাতে পারে?’।[3]
যায়েদ বিন ওয়াহাব হতে বর্ণিত আছে, একবার হুযায়ফা (রাঃ) জনৈক ব্যক্তিকে দেখতে পেলেন যে, সে রুকূ-সিজদা পূর্ণাঙ্গরূপে আদায় করছে না। তিনি তাকে বললেন, ‘তুমি ছালাত আদায় করনি। আর এ অবস্থায় যদি তুমি মৃত্যুবরণ কর, তাহলে যে দ্বীন সহ আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে পাঠিয়েছিলেন তুমি তার বাইরে মৃত্যুবরণ করবে’।[4]
যে ব্যক্তি ছালাতে ধীরস্থিরতা বজায় রাখে না, সে যখন উহার বিধান জানতে পারবে তখনকার ওয়াক্তের ফরয ছালাত তাকে আবার পড়তে হবে। আর অতীতে যা ভুল হয়ে গেছে সেজন্য তওবা করবে, সেগুলি আর পুনরায় পড়তে হবে না। যেমন হাদীছে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একদিন জনৈক দ্রুত ছালাত আদায়কারীকে লক্ষ্য করে বললেন, اِرْجِعْ فَصَلِّ ، فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ ‘যাও, ছালাত আদায় কর। কেননা তুমি তো ছালাত আদায় করনি’।[5] এখানে অতীত ছালাত কাযা করার কথা বলা হয়নি।
[1]. আহমাদ, মিশকাত হা/৮৮৫।
[2]. আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৯৭৮।
[3]. ছহীহ ইবনে খুযায়মা হা/৬৬৫; আলবানী, ছিফাতু ছালাতিন নাবী, পৃঃ ১৩১।
[4]. আহমাদ, বুখারী হা/৭৯১, ফাতহুল বারী ২/২৭৪ পৃঃ।
[5]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৭৯০।
ছালাতে অনর্থক কাজ ও বেশী বেশী নড়াচড়া করা এমন এক আপদ, যা থেকে অনেক মুছল্লীই বাঁচতে পারে না। কারণ তারা আল্লাহর নিম্নোক্ত আদেশ প্রতিপালন করে না - وَقُومُوْا لِلَّهِ قَانِتِيْنَ ‘তোমরা আল্লাহর জন্য অনুগত হয়ে দাঁড়াও’ (বাক্বারাহ ২৩৮)।
মহান আল্লাহ বলেন,
قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ- الَّذِينَ هُمْ فِيْ صَلاَتِهِمْ خَاشِعُونَ -
‘নিশ্চয়ই সেই সকল মুমিন সফলকাম, যারা নিজেদের ছালাতে বিনীত থাকে’ (মুমিনূন ১-২)।
কিন্তু উক্ত লোকেরা আল্লাহর এ বাণীর গূঢ়ার্থ বুঝে না। তাই ছালাতে আদবের পরিপন্থী অনেক কিছুই তারা করে থাকে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে সিজদার মধ্যে মাটি সমান করা যাবে কি-না জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেছিলেন,
لاَ تَمْسَحْ وَأَنْتَ تُصَلِّى فَإِنْ كُنْتَ لاَ بُدَّ فَاعِلاً فَوَاحِدَةً تَسْوِيَةَ الْحَصَى -
‘ছালাত অবস্থায় তুমি কিছু মুছতে পারবে না। একান্তই যদি করতেই হয় তাহলে কংকরাদি একবার সমান করতে পারবে’।[1]
আলেমগণ বলেছেন, ছালাতে নিষ্প্রয়োজনে বেশী মাত্রায় লাগাতারভাবে নড়াচড়া করলে ছালাত বাতিল হয়ে যাবে। সুতরাং যারা ছালাতে নিরর্থক খেলায় লিপ্ত হয় তাদের অবস্থা কেমন হতে পারে? তাদের তো দেখা যায়, তারা আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়েছে। অথচ ঘড়ির সময় নিরীক্ষণ করছে কিংবা কাপড় সোজা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। অথবা আঙ্গুল দিয়ে নাক পরিষ্কার করছে। অনেকে আবার ছালাতে দাঁড়িয়ে ডানে-বামে অথবা উপরের দিকে তাকাতে থাকে। অথচ তাদের চোখ যে উপড়ে ফেলা হতে পারে কিংবা শয়তান ছালাতে তাদের মনোযোগ নষ্ট করে দিতে পারে, সে সম্পর্কে তাদের মনে কোনই উদ্বেগ নেই।[2]
[1]. আবুদাঊদ হা/৯৪৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৪৫২।
[2]. মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মুসলিম, মিশকাত হা/৯৮২-৮৩, ‘ছালাতে অসিদ্ধ ও সিদ্ধ কর্ম সমূহ’ অনুচ্ছেদ-১৯।
মহান আল্লাহ বলেন,
قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ- الَّذِينَ هُمْ فِيْ صَلاَتِهِمْ خَاشِعُونَ -
‘নিশ্চয়ই সেই সকল মুমিন সফলকাম, যারা নিজেদের ছালাতে বিনীত থাকে’ (মুমিনূন ১-২)।
কিন্তু উক্ত লোকেরা আল্লাহর এ বাণীর গূঢ়ার্থ বুঝে না। তাই ছালাতে আদবের পরিপন্থী অনেক কিছুই তারা করে থাকে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে সিজদার মধ্যে মাটি সমান করা যাবে কি-না জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেছিলেন,
لاَ تَمْسَحْ وَأَنْتَ تُصَلِّى فَإِنْ كُنْتَ لاَ بُدَّ فَاعِلاً فَوَاحِدَةً تَسْوِيَةَ الْحَصَى -
‘ছালাত অবস্থায় তুমি কিছু মুছতে পারবে না। একান্তই যদি করতেই হয় তাহলে কংকরাদি একবার সমান করতে পারবে’।[1]
আলেমগণ বলেছেন, ছালাতে নিষ্প্রয়োজনে বেশী মাত্রায় লাগাতারভাবে নড়াচড়া করলে ছালাত বাতিল হয়ে যাবে। সুতরাং যারা ছালাতে নিরর্থক খেলায় লিপ্ত হয় তাদের অবস্থা কেমন হতে পারে? তাদের তো দেখা যায়, তারা আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়েছে। অথচ ঘড়ির সময় নিরীক্ষণ করছে কিংবা কাপড় সোজা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। অথবা আঙ্গুল দিয়ে নাক পরিষ্কার করছে। অনেকে আবার ছালাতে দাঁড়িয়ে ডানে-বামে অথবা উপরের দিকে তাকাতে থাকে। অথচ তাদের চোখ যে উপড়ে ফেলা হতে পারে কিংবা শয়তান ছালাতে তাদের মনোযোগ নষ্ট করে দিতে পারে, সে সম্পর্কে তাদের মনে কোনই উদ্বেগ নেই।[2]
[1]. আবুদাঊদ হা/৯৪৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৪৫২।
[2]. মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মুসলিম, মিশকাত হা/৯৮২-৮৩, ‘ছালাতে অসিদ্ধ ও সিদ্ধ কর্ম সমূহ’ অনুচ্ছেদ-১৯।
যে কোন কাজে তাড়াহুড়া করা মানুষের জন্মগত স্বভাব। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, كَانَ الْإِنْسَانُ عَجُولًا ‘মানুষ খুব দ্রুততা প্রিয়’ (বণী ইসরাঈল ১১)। নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, اَلْأَنَاةُ مِنَ اللهِ وَالْعَجَلَةُ مِنَ الشَّيْطَانِ ‘ধীরস্থিরতা আল্লাহর পক্ষ থেকে আর তাড়াহুড়া শয়তানের পক্ষ থেকে’।[1]
জামা‘আতের মধ্যে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, ডানে-বামে অনেক মুছল্লী ইমামের রুকূ-সিজদায় যাওয়ার আগেই রুকূ-সিজদায় চলে যাচ্ছে। এমনকি লক্ষ্য করলে নিজের মধ্যেও এই প্রবণতা দেখা যায়। উঠা-বসার তাকবীরগুলিতে তো এটা হরহামেশাই হতে দেখা যায়। এমনকি অনেকে ইমামের আগে সালামও ফিরিয়ে ফেলে। বিষয়টি অনেকের নিকটই গুরুত্ব পায় না। অথচ নবী করীম (ছাঃ) এজন্য কঠোর শাস্তির হুমকি শুনিয়েছেন। তিনি বলেন,
أَمَا يَخْشَى الَّذِى يَرْفَعُ رَأْسَهُ قَبْلَ الإِمَامِ أَنْ يُحَوِّلَ اللهُ رَأْسَهُ رَأْسَ حِمَارٍ -
‘সাবধান! যে ব্যক্তি ইমামের আগে মাথা তোলে তার কি ভয় হয় না যে, আল্লাহ তার মাথাটা গাধার মাথায় রূপান্তরিত করতে পারেন?’[2]
একজন মুছল্লীকে যখন ধীরে-সুস্থে ছালাতে উপস্থিত হওয়ার কথা বলা হয়েছে এবং তাড়াতাড়ি বা দ্রুত পায়ে যেতে নিষেধ করা হয়েছে[3], তখন স্বীয় ছালাত যে ধীরে-সুস্থে আদায় করতে হবে তাতে আর সন্দেহ কি? আবার কিছু লোকের নিকট ইমামের আগে গমন ও পিছনে পড়ে থাকার বিষয়টি তালগোল পাকিয়ে যায়। তাই মুজতাহিদগণ এজন্য একটি সুন্দর নিয়ম উল্লেখ করেছেন। তা হ’ল, ইমাম যখন তাকবীর শেষ করবেন মুক্তাদী তখন নড়াচড়া শুরু করবে। ইমাম ‘আল্লাহু আকবার’ এর ‘র’ বর্ণ উচ্চারণ করা মাত্রই মুক্তাদী রুকূ-সিজদায় যাওয়ার জন্য মাথা নীচু করা শুরু করবে। অনুরূপভাবে রুকূ হতে মাথা তোলার সময় ইমামের ‘সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ’-এর ‘হ’ বর্ণ উচ্চারণ শেষ হলে মুক্তাদী মাথা তুলবে। এর আগেও করবে না, পরেও না। এভাবে সমস্যাটা দূর হয়ে যাবে।
ছাহাবীগণ যাতে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর আগে চলে না যান সে বিষয়ে খুব সতর্ক ও সচেষ্ট থাকতেন। বারা বিন আযিব (রাঃ) বলেন, ছাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পিছনে ছালাত আদায় করতেন। যখন তিনি রুকূ হতে মাথা তুলতেন তখন আমি এমন একজনকেও দেখিনি যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কপাল মাটিতে রাখার আগে তার পিঠ বাঁকা করেছে। তিনি সিজদায় গিয়ে সারলে তারা তখন সিজদায় লুটিয়ে পড়তেন।[4]
নবী করীম (ছাঃ) যখন একটু বুড়িয়ে যান এবং তাঁর নড়াচড়ায় মন্থরতা দেখা দেয় তখন তিনি তাঁর পিছনের মুক্তাদীদের এই বলে সতর্ক করে দেন যে, يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّى قَدْ بَدَّنْتُ فَلاَ تَسْبِقُونِى بِالرُّكُوعِ وَالسُّجُودِ ‘হে লোকেরা! আমার দেহ ভারী হয়ে গেছে। সুতরাং তোমরা রুকূ-সিজদায় আমার আগে চলে যেও না’।[5]
অপরদিকে ইমামকেও ছালাতের তাকবীরে সুন্নাত মুতাবেক আমল করা যরূরী। এ সম্পর্কে আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত একটি হাদীছে এসেছে,
كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلىَّ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا قَامَ إِلَى الصَّلاَةِ يُكَبِّرُ حِينَ يَقُومُ ، ثُمَّ يُكَبِّرُ حِينَ يَرْكَعُ ..... ثُمَّ يُكَبِّرُ حِينَ يَهْوِى ، ثُمَّ يُكَبِّرُ حِينَ يَرْفَعُ رَأْسَهُ ، ثُمَّ يُكَبِّرُ حِينَ يَسْجُدُ ، ثُمَّ يُكَبِّرُ حِينَ يَرْفَعُ رَأْسَهُ ، ثُمَّ يَفْعَلُ ذَلِكَ فِى الصَّلاَةِ كُلِّهَا حَتَّى يَقْضِيَهَا ، وَيُكَبِّرُ حِينَ يَقُومُ مِنَ الثِّنْتَيْنِ بَعْدَ الْجُلُوسِ -
‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন ছালাতে দাঁড়াতেন তখন শুরুতে তাকবীর বলতেন। তারপর যখন রুকূতে যেতেন তখন তাকবীর বলতেন। যখন সিজদায় যেতেন তখন তাকবীর বলতেন। অতঃপর যখন (দ্বিতীয়) সিজদায় যেতেন তখন তাকবীর বলতেন, সিজদা থেকে মাথা তুলতে তাকবীর বলতেন। এভাবে ছালাত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকবীর বলতেন। আর দ্বিতীয় রাক‘আতে বৈঠক শেষে দাঁড়ানোর সময়ও তাকবীর বলতেন’।[6]
সুতরাং এভাবে ইমাম যখন ছালাতে উঠা-বসার সঙ্গে তার তাকবীরকে সমন্বিত করে একই সাথে আদায় করবেন এবং মুক্তাদীগণও উল্লিখিত নিয়ম মেনে চলবে তখন সবারই জামা‘আতের বিধান ঠিক হয়ে যাবে।
[1]. তিরমিযী, মিশকাত হা/৫০৫৫; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৭৯৫।
[2]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/১১৪১।
[3]. বুখারী হা/৬৩৬, আহমাদ হা/১০৯০৬।
[4]. মুসলিম হা/৪৭৪।
[5]. বায়হাক্বী, সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৭২৫।
[6]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৭৯৯।
জামা‘আতের মধ্যে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, ডানে-বামে অনেক মুছল্লী ইমামের রুকূ-সিজদায় যাওয়ার আগেই রুকূ-সিজদায় চলে যাচ্ছে। এমনকি লক্ষ্য করলে নিজের মধ্যেও এই প্রবণতা দেখা যায়। উঠা-বসার তাকবীরগুলিতে তো এটা হরহামেশাই হতে দেখা যায়। এমনকি অনেকে ইমামের আগে সালামও ফিরিয়ে ফেলে। বিষয়টি অনেকের নিকটই গুরুত্ব পায় না। অথচ নবী করীম (ছাঃ) এজন্য কঠোর শাস্তির হুমকি শুনিয়েছেন। তিনি বলেন,
أَمَا يَخْشَى الَّذِى يَرْفَعُ رَأْسَهُ قَبْلَ الإِمَامِ أَنْ يُحَوِّلَ اللهُ رَأْسَهُ رَأْسَ حِمَارٍ -
‘সাবধান! যে ব্যক্তি ইমামের আগে মাথা তোলে তার কি ভয় হয় না যে, আল্লাহ তার মাথাটা গাধার মাথায় রূপান্তরিত করতে পারেন?’[2]
একজন মুছল্লীকে যখন ধীরে-সুস্থে ছালাতে উপস্থিত হওয়ার কথা বলা হয়েছে এবং তাড়াতাড়ি বা দ্রুত পায়ে যেতে নিষেধ করা হয়েছে[3], তখন স্বীয় ছালাত যে ধীরে-সুস্থে আদায় করতে হবে তাতে আর সন্দেহ কি? আবার কিছু লোকের নিকট ইমামের আগে গমন ও পিছনে পড়ে থাকার বিষয়টি তালগোল পাকিয়ে যায়। তাই মুজতাহিদগণ এজন্য একটি সুন্দর নিয়ম উল্লেখ করেছেন। তা হ’ল, ইমাম যখন তাকবীর শেষ করবেন মুক্তাদী তখন নড়াচড়া শুরু করবে। ইমাম ‘আল্লাহু আকবার’ এর ‘র’ বর্ণ উচ্চারণ করা মাত্রই মুক্তাদী রুকূ-সিজদায় যাওয়ার জন্য মাথা নীচু করা শুরু করবে। অনুরূপভাবে রুকূ হতে মাথা তোলার সময় ইমামের ‘সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ’-এর ‘হ’ বর্ণ উচ্চারণ শেষ হলে মুক্তাদী মাথা তুলবে। এর আগেও করবে না, পরেও না। এভাবে সমস্যাটা দূর হয়ে যাবে।
ছাহাবীগণ যাতে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর আগে চলে না যান সে বিষয়ে খুব সতর্ক ও সচেষ্ট থাকতেন। বারা বিন আযিব (রাঃ) বলেন, ছাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পিছনে ছালাত আদায় করতেন। যখন তিনি রুকূ হতে মাথা তুলতেন তখন আমি এমন একজনকেও দেখিনি যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কপাল মাটিতে রাখার আগে তার পিঠ বাঁকা করেছে। তিনি সিজদায় গিয়ে সারলে তারা তখন সিজদায় লুটিয়ে পড়তেন।[4]
নবী করীম (ছাঃ) যখন একটু বুড়িয়ে যান এবং তাঁর নড়াচড়ায় মন্থরতা দেখা দেয় তখন তিনি তাঁর পিছনের মুক্তাদীদের এই বলে সতর্ক করে দেন যে, يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّى قَدْ بَدَّنْتُ فَلاَ تَسْبِقُونِى بِالرُّكُوعِ وَالسُّجُودِ ‘হে লোকেরা! আমার দেহ ভারী হয়ে গেছে। সুতরাং তোমরা রুকূ-সিজদায় আমার আগে চলে যেও না’।[5]
অপরদিকে ইমামকেও ছালাতের তাকবীরে সুন্নাত মুতাবেক আমল করা যরূরী। এ সম্পর্কে আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত একটি হাদীছে এসেছে,
كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلىَّ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا قَامَ إِلَى الصَّلاَةِ يُكَبِّرُ حِينَ يَقُومُ ، ثُمَّ يُكَبِّرُ حِينَ يَرْكَعُ ..... ثُمَّ يُكَبِّرُ حِينَ يَهْوِى ، ثُمَّ يُكَبِّرُ حِينَ يَرْفَعُ رَأْسَهُ ، ثُمَّ يُكَبِّرُ حِينَ يَسْجُدُ ، ثُمَّ يُكَبِّرُ حِينَ يَرْفَعُ رَأْسَهُ ، ثُمَّ يَفْعَلُ ذَلِكَ فِى الصَّلاَةِ كُلِّهَا حَتَّى يَقْضِيَهَا ، وَيُكَبِّرُ حِينَ يَقُومُ مِنَ الثِّنْتَيْنِ بَعْدَ الْجُلُوسِ -
‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন ছালাতে দাঁড়াতেন তখন শুরুতে তাকবীর বলতেন। তারপর যখন রুকূতে যেতেন তখন তাকবীর বলতেন। যখন সিজদায় যেতেন তখন তাকবীর বলতেন। অতঃপর যখন (দ্বিতীয়) সিজদায় যেতেন তখন তাকবীর বলতেন, সিজদা থেকে মাথা তুলতে তাকবীর বলতেন। এভাবে ছালাত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকবীর বলতেন। আর দ্বিতীয় রাক‘আতে বৈঠক শেষে দাঁড়ানোর সময়ও তাকবীর বলতেন’।[6]
সুতরাং এভাবে ইমাম যখন ছালাতে উঠা-বসার সঙ্গে তার তাকবীরকে সমন্বিত করে একই সাথে আদায় করবেন এবং মুক্তাদীগণও উল্লিখিত নিয়ম মেনে চলবে তখন সবারই জামা‘আতের বিধান ঠিক হয়ে যাবে।
[1]. তিরমিযী, মিশকাত হা/৫০৫৫; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৭৯৫।
[2]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/১১৪১।
[3]. বুখারী হা/৬৩৬, আহমাদ হা/১০৯০৬।
[4]. মুসলিম হা/৪৭৪।
[5]. বায়হাক্বী, সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৭২৫।
[6]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৭৯৯।
কাঁচা পেঁয়াজ, কাঁচা রসুন, সিগারেট ও বিড়ি খেলে মুখে এমন দুর্গন্ধ হয় যে তার নিকটে অবস্থান করা দায় হয়ে পড়ে। মসজিদের পূত-পবিত্র পরিবেশ কলুষিত হয়, সৌন্দর্য বিঘ্নিত হয়। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
يَا بَنِي آدَمَ خُذُوا زِينَتَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ -
‘হে বনু আদম! তোমরা প্রতি ছালাতের সময় তোমাদের সৌন্দর্যকে ধারণ কর’ (আ‘রাফ ৩১)। অর্থাৎ তোমরা পোশাক পরিধান কর ও শালীন পরিবেশ বজায় রাখ। কিন্তু দুর্গন্ধ পরিবেশকে কলুষিত করে তোলে।
হযরত জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
مَنْ أَكَلَ ثُومًا أَوْ بَصَلاً فَلْيَعْتَزِلْنَا، أَوْ قَالَ : فَلْيَعْتَزِلْ مَسْجِدَنَا ، وَلْيَقْعُدْ فِى بَيْتِهِ -
‘যে ব্যক্তি রসুন কিংবা পেঁয়াজ খাবে, সে যেন আমাদের থেকে দূরে থাকে। অথবা তিনি বলেছেন, সে যেন আমাদের মসজিদ থেকে দূরে থাকে এবং নিজ বাড়ীতে বসে থাকে’।[1]
মুসলিম শরীফের বর্ণনায় এসেছে, مَنْ أَكَلَ الْبَصَلَ وَالثُّومَ وَالْكُرَّاثَ، فَلاَ يَقْرَبَنَّ مَسْجِدَنَا فَإِنَّ الْمَلاَئِكَةَ تَتَأَذَّى مِمَّا يَتَأَذَّى مِنْهُ بَنُو آدَمَ ‘যে ব্যক্তি পেঁয়াজ, রসুন ও কুর্রাছ[2] খাবে, সে যেন কখনই আমাদের মসজিদ পানে না আসে। কেননা বনী আদম যাতে কষ্ট পায় ফিরিশতারাও তাতে কষ্ট পায়’।[3]
হযরত ওমর (রাঃ) একদা জুম‘আর খুৎবায় বলেছিলেন, হে লোক সকল! তোমরা দু’টি গাছ খেয়ে থাক। আমি ঐ দু’টিকে কদর্য ছাড়া অন্য কিছু মনে করি না। সে দু’টি হচ্ছে পেঁয়াজ ও রসুন। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে দেখেছি, إِذَا وَجَدَ رِيحَهُمَا مِنَ الرَّجُلِ فِى الْمَسْجِدِ أَمَرَ بِهِ فَأُخْرِجَ إِلَى الْبَقِيعِ ‘কারো মুখ থেকে তিনি এ দু’টির গন্ধ পেলে তাকে মসজিদ থেকে বের করে দেওয়ার নির্দেশ দিতেন। ফলে তাকে বাক্বী গোরস্থানের দিকে বের করে দেওয়া হ’ত। সুতরাং কাউকে তা খেতে হলে সে যেন পাকিয়ে খায়’।[4]
অনেকেই কাজ-কর্ম শেষে হাত-মুখ ধুয়ে তা ঠান্ডা হওয়ার আগেই মসজিদে ঢুকে পড়ে। এদিকে ঘামের জন্য তার বগল ও মোযা দিয়ে বিশ্রী রকমের গন্ধ বের হতে থাকে। এ ধরনের লোকও উক্ত বিধানের আওতায় পড়বে। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট হল ধূমপায়ীরা। তারা হারাম ধূমপান করতে করতে মুখে চরম দুর্গন্ধ জন্মিয়ে নেয়। এ অবস্থায় মসজিদে ঢুকে তারা আল্লাহর মুছল্লী বান্দা ও ফেরেশতাদের কষ্ট দেয়।
[1]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৪১৭৯।
[2]. কুর্রাছ এক প্রকার গন্ধযুক্ত সব্জি। এর কতক পেঁয়াজ ও কতক রসুনের মত দেখায়। উর্দূতে একে ‘গন্দনা’ বলে-অনুবাদক।
[3]. মুসলিম হা/৫৬৪।
[4]. মুসলিম হা/৫৬৭।
يَا بَنِي آدَمَ خُذُوا زِينَتَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ -
‘হে বনু আদম! তোমরা প্রতি ছালাতের সময় তোমাদের সৌন্দর্যকে ধারণ কর’ (আ‘রাফ ৩১)। অর্থাৎ তোমরা পোশাক পরিধান কর ও শালীন পরিবেশ বজায় রাখ। কিন্তু দুর্গন্ধ পরিবেশকে কলুষিত করে তোলে।
হযরত জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
مَنْ أَكَلَ ثُومًا أَوْ بَصَلاً فَلْيَعْتَزِلْنَا، أَوْ قَالَ : فَلْيَعْتَزِلْ مَسْجِدَنَا ، وَلْيَقْعُدْ فِى بَيْتِهِ -
‘যে ব্যক্তি রসুন কিংবা পেঁয়াজ খাবে, সে যেন আমাদের থেকে দূরে থাকে। অথবা তিনি বলেছেন, সে যেন আমাদের মসজিদ থেকে দূরে থাকে এবং নিজ বাড়ীতে বসে থাকে’।[1]
মুসলিম শরীফের বর্ণনায় এসেছে, مَنْ أَكَلَ الْبَصَلَ وَالثُّومَ وَالْكُرَّاثَ، فَلاَ يَقْرَبَنَّ مَسْجِدَنَا فَإِنَّ الْمَلاَئِكَةَ تَتَأَذَّى مِمَّا يَتَأَذَّى مِنْهُ بَنُو آدَمَ ‘যে ব্যক্তি পেঁয়াজ, রসুন ও কুর্রাছ[2] খাবে, সে যেন কখনই আমাদের মসজিদ পানে না আসে। কেননা বনী আদম যাতে কষ্ট পায় ফিরিশতারাও তাতে কষ্ট পায়’।[3]
হযরত ওমর (রাঃ) একদা জুম‘আর খুৎবায় বলেছিলেন, হে লোক সকল! তোমরা দু’টি গাছ খেয়ে থাক। আমি ঐ দু’টিকে কদর্য ছাড়া অন্য কিছু মনে করি না। সে দু’টি হচ্ছে পেঁয়াজ ও রসুন। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে দেখেছি, إِذَا وَجَدَ رِيحَهُمَا مِنَ الرَّجُلِ فِى الْمَسْجِدِ أَمَرَ بِهِ فَأُخْرِجَ إِلَى الْبَقِيعِ ‘কারো মুখ থেকে তিনি এ দু’টির গন্ধ পেলে তাকে মসজিদ থেকে বের করে দেওয়ার নির্দেশ দিতেন। ফলে তাকে বাক্বী গোরস্থানের দিকে বের করে দেওয়া হ’ত। সুতরাং কাউকে তা খেতে হলে সে যেন পাকিয়ে খায়’।[4]
অনেকেই কাজ-কর্ম শেষে হাত-মুখ ধুয়ে তা ঠান্ডা হওয়ার আগেই মসজিদে ঢুকে পড়ে। এদিকে ঘামের জন্য তার বগল ও মোযা দিয়ে বিশ্রী রকমের গন্ধ বের হতে থাকে। এ ধরনের লোকও উক্ত বিধানের আওতায় পড়বে। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট হল ধূমপায়ীরা। তারা হারাম ধূমপান করতে করতে মুখে চরম দুর্গন্ধ জন্মিয়ে নেয়। এ অবস্থায় মসজিদে ঢুকে তারা আল্লাহর মুছল্লী বান্দা ও ফেরেশতাদের কষ্ট দেয়।
[1]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৪১৭৯।
[2]. কুর্রাছ এক প্রকার গন্ধযুক্ত সব্জি। এর কতক পেঁয়াজ ও কতক রসুনের মত দেখায়। উর্দূতে একে ‘গন্দনা’ বলে-অনুবাদক।
[3]. মুসলিম হা/৫৬৪।
[4]. মুসলিম হা/৫৬৭।
বংশ, ইযযত ও সম্ভ্রম রক্ষা করা ইসলামী শরী‘আতের অন্যতম লক্ষ্য। এজন্য ইসলাম ব্যভিচারকে হারাম করেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَلاَ تَقْرَبُوا الزِّنَا إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا ‘তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। নিশ্চয়ই তা একটি অশ্লীল কাজ ও খারাপ পন্থা’ (বনী ইসরাঈল ৩২)।
শরী‘আত পর্দা ফরয করেছে, নারী-পুরুষ উভয়কে দৃষ্টি সংযত রাখতে বলেছে এবং গায়ের মাহরাম স্ত্রীলোকদের সঙ্গে নির্জনে মিলিত হওয়াকে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। এভাবে ব্যভিচারের সকল উপায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও কেউ ব্যভিচার করে বসলে তাকে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।
বিবাহিত ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীকে না মরা পর্যন্ত পাথর নিক্ষেপ করতে হবে। এভাবে সে তার কাজের উপযুক্ত পরিণাম ভোগ করবে এবং হারাম কাজে তার প্রতিটি অঙ্গ যেমন করে মজা উপভোগ করেছিল এখন তেমনি করে যন্ত্রণা উপভোগ করবে। আর অবিবাহিত ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীদেরকে একশত বেত্রাঘাত করতে হবে। বেত্রাঘাতের ক্ষেত্রে এটাই শরী‘আতের সর্বোচ্চ শাস্তি। একদল মুমিনের সামনে অর্থাৎ জনতার সামনে খোলা ময়দানে এ শাস্তি কার্যকর করতে হবে, যাতে সে অপমানের চূড়ান্ত হয়। একই সঙ্গে তাকে এক বৎসরের জন্য অপরাধ সংঘটিত এলাকা থেকে বহিষ্কার করতে হবে। এরূপ ব্যবস্থা চালু হলে ব্যভিচারের মাত্রা প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে বলে আশা করা যায়।
ব্যভিচারী নর-নারী বারযাখ[1] জগতেও কঠিন শাস্তি পোহাবে। তারা এমন একটি অগ্নিকুন্ডের মধ্যে থাকবে যার ঊর্ধাংশ হবে সংকীর্ণ কিন্তু নিম্নাংশ হবে প্রশস্ত। তার নীচ থেকে আগুন জ্বালানো হবে। সেই আগুনের মধ্যে তারা উলঙ্গ, বিবস্ত্র অবস্থায় থাকবে আর যন্ত্রণায় চিৎকার করতে থাকবে। ঐ আগুন এতই উত্তপ্ত হবে যে তার তোড়ে তারা উপরের দিকে উঠে আসবে। এমনকি তারা প্রায় বেরিয়ে আসার উপক্রম করবে। যখনই এমন হবে তখনই আগুন নিভিয়ে দেয়া হবে। ফলে তারা আবার অগ্নিকুন্ডের তলদেশে ফিরে যাবে। ক্বিয়ামত পর্যন্ত তাদের জন্য এ ব্যবস্থা চলতে থাকবে।[2]
ব্যভিচারের বিষয়টি আরও কদর্য ও ঘৃণিত হয়ে দাঁড়ায় তখন, যখন কোন ব্যক্তি বয়সে ভারী ও এক পা কবরে চলে যাওয়ার পরও হরদম ব্যভিচার করে যায়। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে মারফূ‘ সূত্রে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
ثَلاَثَةٌ لاَ يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلاَ يُزَكِّيهِمْ وَلاَ يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ شَيْخٌ زَانٍ وَمَلِكٌ كَذَّابٌ وَعَائِلٌ مُسْتَكْبِرٌ -
‘ক্বিয়ামত দিবসে তিন ব্যক্তির সঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা কথা বলবেন না, তাদেরকে পবিত্র করবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না; বরং তাদের জন্য থাকবে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। তারা হ’ল বয়োবৃদ্ধ ব্যভিচারী, মিথ্যাবাদী রাষ্ট্রনায়ক ও অহংকারী দরিদ্র’।[3]
অনেকে ব্যভিচার বা পতিতাবৃত্তিকে পেশা হিসাবে গ্রহণ করে। অথচ পতিতাবৃত্তি থেকে অর্জিত আয় নিকৃষ্ট উপার্জনাদিরই একটি। যে পতিতা তার ইয্যত বেঁচে খায় সে মধ্যরাতে যখন দো‘আ কবুলের জন্য আকাশের দরজা উন্মোচিত হয় তখন দো‘আ কবুল হওয়া থেকে বঞ্চিত হয়।[4] অভাব ও দারিদ্র্য আল্লাহর বিধান লংঘন করার জন্য কোন শারঈ ওযর হতে পারে না।
আমাদের যুগে তো অশ্লীলতার সকল দুয়ার খুলে দেয়া হয়েছে। শয়তান ও তার দোসরদের চক্রান্তে অশ্লীলতার পথ ও পন্থাগুলি সহজলভ্য হয়ে গেছে। পাপী-ব্যভিচারীরা এখন খোলাখুলি শয়তানের অনুসরণ করছে। মেয়েরা দ্বিধাহীনচিত্তে ব্যাপকভাবে বাইরে পর্দাহীনভাবে যাতায়াত করে তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বেড়াচ্ছে। মোড়ে মোড়ে বখাটে ছেলেদের বক্র চাহনি ও হা করে মেয়েদের পানে তাকিয়ে থাকা তো নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবাধ মেলা-মেশা, পর্ণোগ্রাফি ও ব্লু ফ্লিমে দেশ ভরে গেছে। ফ্রি সেক্সের দেশগুলিতে মানুষের ভ্রমণের চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে। কে কত বেশী খোলামেলা হ’তে পারে যেন তার প্রতিযোগিতা চলছে। ধর্ষণ ও বলাৎকারে দেশ ছেয়ে যাচ্ছে। জারজ সন্তানের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। ক্লিনিকে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে অবৈধ গর্ভপাতের মাধ্যমে মানব সন্তানদের হত্যা করা হচ্ছে।
হে আল্লাহ! আমরা তোমার নিকট দয়া, অনুগ্রহ ও গোপনীয়তা প্রার্থনা করছি এবং এমন সম্ভ্রম কামনা করছি যার বদৌলতে তুমি আমাদেরকে সকল অশ্লীলতা থেকে রক্ষা করবে। আমরা তোমার নিকট আমাদের মনের পবিত্রতা ও ইযযতের হেফাযত প্রার্থনা করছি। দয়া করে তুমি আমাদের মাঝে ও হারামের মাঝে একটি সুদৃঢ় অন্তরাল তৈরী করে দাও। আমীন!
[1]. মৃত্যুর পর থেকে পুনরুত্থানের পূর্ব পর্যন্ত মানুষ যে জগতে অবস্থান করবে তাকে বারযাখ বলে -অনুবাদক।
[2]. বুখারী; মিশকাত হা/৪৬২১।
[3]. মুসলিম, মিশকাত হা/৫১০৯।
[4]. ছহীহুল জামে‘ হা/২৯৭১।
শরী‘আত পর্দা ফরয করেছে, নারী-পুরুষ উভয়কে দৃষ্টি সংযত রাখতে বলেছে এবং গায়ের মাহরাম স্ত্রীলোকদের সঙ্গে নির্জনে মিলিত হওয়াকে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। এভাবে ব্যভিচারের সকল উপায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও কেউ ব্যভিচার করে বসলে তাকে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।
বিবাহিত ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীকে না মরা পর্যন্ত পাথর নিক্ষেপ করতে হবে। এভাবে সে তার কাজের উপযুক্ত পরিণাম ভোগ করবে এবং হারাম কাজে তার প্রতিটি অঙ্গ যেমন করে মজা উপভোগ করেছিল এখন তেমনি করে যন্ত্রণা উপভোগ করবে। আর অবিবাহিত ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীদেরকে একশত বেত্রাঘাত করতে হবে। বেত্রাঘাতের ক্ষেত্রে এটাই শরী‘আতের সর্বোচ্চ শাস্তি। একদল মুমিনের সামনে অর্থাৎ জনতার সামনে খোলা ময়দানে এ শাস্তি কার্যকর করতে হবে, যাতে সে অপমানের চূড়ান্ত হয়। একই সঙ্গে তাকে এক বৎসরের জন্য অপরাধ সংঘটিত এলাকা থেকে বহিষ্কার করতে হবে। এরূপ ব্যবস্থা চালু হলে ব্যভিচারের মাত্রা প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে বলে আশা করা যায়।
ব্যভিচারী নর-নারী বারযাখ[1] জগতেও কঠিন শাস্তি পোহাবে। তারা এমন একটি অগ্নিকুন্ডের মধ্যে থাকবে যার ঊর্ধাংশ হবে সংকীর্ণ কিন্তু নিম্নাংশ হবে প্রশস্ত। তার নীচ থেকে আগুন জ্বালানো হবে। সেই আগুনের মধ্যে তারা উলঙ্গ, বিবস্ত্র অবস্থায় থাকবে আর যন্ত্রণায় চিৎকার করতে থাকবে। ঐ আগুন এতই উত্তপ্ত হবে যে তার তোড়ে তারা উপরের দিকে উঠে আসবে। এমনকি তারা প্রায় বেরিয়ে আসার উপক্রম করবে। যখনই এমন হবে তখনই আগুন নিভিয়ে দেয়া হবে। ফলে তারা আবার অগ্নিকুন্ডের তলদেশে ফিরে যাবে। ক্বিয়ামত পর্যন্ত তাদের জন্য এ ব্যবস্থা চলতে থাকবে।[2]
ব্যভিচারের বিষয়টি আরও কদর্য ও ঘৃণিত হয়ে দাঁড়ায় তখন, যখন কোন ব্যক্তি বয়সে ভারী ও এক পা কবরে চলে যাওয়ার পরও হরদম ব্যভিচার করে যায়। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে মারফূ‘ সূত্রে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
ثَلاَثَةٌ لاَ يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلاَ يُزَكِّيهِمْ وَلاَ يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ شَيْخٌ زَانٍ وَمَلِكٌ كَذَّابٌ وَعَائِلٌ مُسْتَكْبِرٌ -
‘ক্বিয়ামত দিবসে তিন ব্যক্তির সঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা কথা বলবেন না, তাদেরকে পবিত্র করবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না; বরং তাদের জন্য থাকবে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। তারা হ’ল বয়োবৃদ্ধ ব্যভিচারী, মিথ্যাবাদী রাষ্ট্রনায়ক ও অহংকারী দরিদ্র’।[3]
অনেকে ব্যভিচার বা পতিতাবৃত্তিকে পেশা হিসাবে গ্রহণ করে। অথচ পতিতাবৃত্তি থেকে অর্জিত আয় নিকৃষ্ট উপার্জনাদিরই একটি। যে পতিতা তার ইয্যত বেঁচে খায় সে মধ্যরাতে যখন দো‘আ কবুলের জন্য আকাশের দরজা উন্মোচিত হয় তখন দো‘আ কবুল হওয়া থেকে বঞ্চিত হয়।[4] অভাব ও দারিদ্র্য আল্লাহর বিধান লংঘন করার জন্য কোন শারঈ ওযর হতে পারে না।
আমাদের যুগে তো অশ্লীলতার সকল দুয়ার খুলে দেয়া হয়েছে। শয়তান ও তার দোসরদের চক্রান্তে অশ্লীলতার পথ ও পন্থাগুলি সহজলভ্য হয়ে গেছে। পাপী-ব্যভিচারীরা এখন খোলাখুলি শয়তানের অনুসরণ করছে। মেয়েরা দ্বিধাহীনচিত্তে ব্যাপকভাবে বাইরে পর্দাহীনভাবে যাতায়াত করে তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বেড়াচ্ছে। মোড়ে মোড়ে বখাটে ছেলেদের বক্র চাহনি ও হা করে মেয়েদের পানে তাকিয়ে থাকা তো নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবাধ মেলা-মেশা, পর্ণোগ্রাফি ও ব্লু ফ্লিমে দেশ ভরে গেছে। ফ্রি সেক্সের দেশগুলিতে মানুষের ভ্রমণের চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে। কে কত বেশী খোলামেলা হ’তে পারে যেন তার প্রতিযোগিতা চলছে। ধর্ষণ ও বলাৎকারে দেশ ছেয়ে যাচ্ছে। জারজ সন্তানের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। ক্লিনিকে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে অবৈধ গর্ভপাতের মাধ্যমে মানব সন্তানদের হত্যা করা হচ্ছে।
হে আল্লাহ! আমরা তোমার নিকট দয়া, অনুগ্রহ ও গোপনীয়তা প্রার্থনা করছি এবং এমন সম্ভ্রম কামনা করছি যার বদৌলতে তুমি আমাদেরকে সকল অশ্লীলতা থেকে রক্ষা করবে। আমরা তোমার নিকট আমাদের মনের পবিত্রতা ও ইযযতের হেফাযত প্রার্থনা করছি। দয়া করে তুমি আমাদের মাঝে ও হারামের মাঝে একটি সুদৃঢ় অন্তরাল তৈরী করে দাও। আমীন!
[1]. মৃত্যুর পর থেকে পুনরুত্থানের পূর্ব পর্যন্ত মানুষ যে জগতে অবস্থান করবে তাকে বারযাখ বলে -অনুবাদক।
[2]. বুখারী; মিশকাত হা/৪৬২১।
[3]. মুসলিম, মিশকাত হা/৫১০৯।
[4]. ছহীহুল জামে‘ হা/২৯৭১।
অতীতে হযরত লূত (আঃ)-এর জাতি পুংমৈথুনে অভ্যস্ত ছিল। তাদের প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَلُوطًا إِذْ قَالَ لِقَوْمِهِ إِنَّكُمْ لَتَأْتُونَ الْفَاحِشَةَ مَا سَبَقَكُمْ بِهَا مِنْ أَحَدٍ مِنَ الْعَالَمِينَ- أَئِنَّكُمْ لَتَأْتُونَ الرِّجَالَ وَتَقْطَعُونَ السَّبِيلَ وَتَأْتُونَ فِيْ نَادِيكُمُ الْمُنْكَرَ
‘লূতের কথা স্মরণ করুন! যখন তিনি তাঁর কওমকে বললেন, তোমরা নিশ্চয়ই এমন অশ্লীল কাজ করছ যা তোমাদের পূর্বে বিশ্বে আর কেউ করেনি, তোমরাই তো পুরুষে উপগত হচ্ছ, তোমরাই তো রাহাজানি করছ, তোমরাই তো ভরা মজলিসে অন্যায় কাজ করছ’ (আনকাবূত ২৮-২৯)।
যেহেতু এই অপরাধ ছিল জঘন্য, অত্যন্ত মারাত্মক ও কদর্যপূর্ণ তাই আল্লাহ তা‘আলা লূত (আঃ)-এর জাতিকে একবারেই চার প্রকার শাস্তি দিয়েছিলেন। এ জাতীয় এতগুলি শাস্তি একবারে অন্য কোন জাতিকে ভোগ করতে হয়নি। ঐ শাস্তিগুলি ছিল- তাদের চক্ষু উৎপাটন, উঁচু জনপদকে নীচু করে দেয়া, অবিরাম কঙ্কর পাত ও হঠাৎ নিনাদের ধ্বনি আগমন।
পুংমৈথুনের শাস্তি হিসাবে ইসলামী শরী‘আতের পন্ডিতগণের অগ্রাধিকার প্রাপ্ত মত হ’ল, স্বেচ্ছায় মৈথুনকারী ও মৈথুনকৃত ব্যক্তি উভয়কেই তরবারীর আঘাতে শিরচ্ছেদ করতে হবে। ইবনু আববাস (রাঃ) মারফূ সূত্রে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে,
مَنْ وَجَدْتُمُوهُ يَعْمَلُ عَمَلَ قَوْمِ لُوطٍ فَاقْتُلُوا الْفَاعِلَ وَالْمَفْعُولَ بِهِ
‘তোমরা লূতের সম্প্রদায়ের ন্যায় পুংমৈথুনের কাজ কাউকে করতে দেখলে মৈথুনকারী ও মৈথুনকৃত উভয়কেই হত্যা করবে’।[1]
মৈথুন বা সমকামিতার প্রাকৃতিক কুফলও কম নয়। এসব নির্লজ্জ বেহায়াপনার কারণেই আমাদের কালে এমন কিছু রোগ-ব্যাধি মহামারী আকারে দেখা দিয়েছে যা পূর্বকালে ছিল না। বর্তমান পৃথিবীর মহাত্রাস ঘাতক ব্যাধি এইডস যার জ্বলন্ত উদাহরণ। এইডসই প্রমাণ করে যে, সমকামিতা রোধে ইসলামের কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ যথার্থ হয়েছে।
[1]. তিরমিযী, ইবনু মাজাহ; মিশকাত হা/৩৫৭৫।
وَلُوطًا إِذْ قَالَ لِقَوْمِهِ إِنَّكُمْ لَتَأْتُونَ الْفَاحِشَةَ مَا سَبَقَكُمْ بِهَا مِنْ أَحَدٍ مِنَ الْعَالَمِينَ- أَئِنَّكُمْ لَتَأْتُونَ الرِّجَالَ وَتَقْطَعُونَ السَّبِيلَ وَتَأْتُونَ فِيْ نَادِيكُمُ الْمُنْكَرَ
‘লূতের কথা স্মরণ করুন! যখন তিনি তাঁর কওমকে বললেন, তোমরা নিশ্চয়ই এমন অশ্লীল কাজ করছ যা তোমাদের পূর্বে বিশ্বে আর কেউ করেনি, তোমরাই তো পুরুষে উপগত হচ্ছ, তোমরাই তো রাহাজানি করছ, তোমরাই তো ভরা মজলিসে অন্যায় কাজ করছ’ (আনকাবূত ২৮-২৯)।
যেহেতু এই অপরাধ ছিল জঘন্য, অত্যন্ত মারাত্মক ও কদর্যপূর্ণ তাই আল্লাহ তা‘আলা লূত (আঃ)-এর জাতিকে একবারেই চার প্রকার শাস্তি দিয়েছিলেন। এ জাতীয় এতগুলি শাস্তি একবারে অন্য কোন জাতিকে ভোগ করতে হয়নি। ঐ শাস্তিগুলি ছিল- তাদের চক্ষু উৎপাটন, উঁচু জনপদকে নীচু করে দেয়া, অবিরাম কঙ্কর পাত ও হঠাৎ নিনাদের ধ্বনি আগমন।
পুংমৈথুনের শাস্তি হিসাবে ইসলামী শরী‘আতের পন্ডিতগণের অগ্রাধিকার প্রাপ্ত মত হ’ল, স্বেচ্ছায় মৈথুনকারী ও মৈথুনকৃত ব্যক্তি উভয়কেই তরবারীর আঘাতে শিরচ্ছেদ করতে হবে। ইবনু আববাস (রাঃ) মারফূ সূত্রে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে,
مَنْ وَجَدْتُمُوهُ يَعْمَلُ عَمَلَ قَوْمِ لُوطٍ فَاقْتُلُوا الْفَاعِلَ وَالْمَفْعُولَ بِهِ
‘তোমরা লূতের সম্প্রদায়ের ন্যায় পুংমৈথুনের কাজ কাউকে করতে দেখলে মৈথুনকারী ও মৈথুনকৃত উভয়কেই হত্যা করবে’।[1]
মৈথুন বা সমকামিতার প্রাকৃতিক কুফলও কম নয়। এসব নির্লজ্জ বেহায়াপনার কারণেই আমাদের কালে এমন কিছু রোগ-ব্যাধি মহামারী আকারে দেখা দিয়েছে যা পূর্বকালে ছিল না। বর্তমান পৃথিবীর মহাত্রাস ঘাতক ব্যাধি এইডস যার জ্বলন্ত উদাহরণ। এইডসই প্রমাণ করে যে, সমকামিতা রোধে ইসলামের কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ যথার্থ হয়েছে।
[1]. তিরমিযী, ইবনু মাজাহ; মিশকাত হা/৩৫৭৫।
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
إِذَا دَعَا الرَّجُلُ امْرَأَتَهُ إِلَى فِرَاشِهِ فَأَبَتْ، فَبَاتَ غَضْبَانَ عَلَيْهَا، لَعَنَتْهَا الْمَلاَئِكَةُ حَتَّى تُصْبِحَ -
‘যখন কোন স্বামী তার স্ত্রীকে স্বীয় শয্যা গ্রহণ বা দৈহিক মিলনের জন্য আহবান জানায়, কিন্তু স্ত্রী তা অস্বীকার করায় স্বামী তার উপর ক্রুদ্ধ হয়ে রাত কাটায়, তখন ফেরেশতাগণ সকাল পর্যন্ত ঐ স্ত্রীর উপর অভিশাপ দিতে থাকে’।[1]
অনেক মহিলাকেই দেখা যায় স্বামী-স্ত্রীতে একটু খুনসুটি হলেই স্বামীকে শাস্তি দেয়ার মানসে তার সঙ্গে দৈহিক মেলামেশা বন্ধ করে বসে। এতে অনেক রকম ক্ষতি দেখা দেয়। পারিবারিক অশান্তির সৃষ্টি হয়। স্বামী দৈহিক তৃপ্তির জন্য অবৈধ পথও বেছে নেয়। অন্য স্ত্রী গ্রহণের চিন্তাও তাকে পেয়ে বসে। এভাবে বিষয়টি হিতে বিপরীত হয়ে দাঁড়াতে পারে। সুতরাং স্ত্রীর কর্তব্য হবে স্বামী ডাকামাত্রই তার ডাকে সাড়া দেওয়া। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, إِذَا دَعَا الرَّجُلُ امْرَأَتَهُ إِلىَ فِرَاشِهِ فَلْتُجِبْ وَإِنْ كَانَتْ عَلَى ظَهْرِ قَتَبٍ ‘যখন কোন পুরুষ তার স্ত্রীকে তার সঙ্গে দৈহিক মিলনের জন্য ডাকবে, তখনই যেন সে তার ডাকে সাড়া দেয়। এমনকি সে জ্বলন্ত উনুনের পাশে থাকলেও’।[2]
স্বামীরও কর্তব্য হবে, স্ত্রী রোগাক্রান্ত, গর্ভবতী কিংবা অন্য কোন অসুবিধায় পতিত হলে তার অবস্থা বিবেচনা করা। এতে করে তাদের মধ্যে সৌহার্দ বজায় থাকবে এবং মনোমালিন্য সৃষ্টি হবে না।
[1]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৩২৪৬।
[2]. যাওয়াইদুল বায্যার ২/১৮১ পৃঃ; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৪৭।
إِذَا دَعَا الرَّجُلُ امْرَأَتَهُ إِلَى فِرَاشِهِ فَأَبَتْ، فَبَاتَ غَضْبَانَ عَلَيْهَا، لَعَنَتْهَا الْمَلاَئِكَةُ حَتَّى تُصْبِحَ -
‘যখন কোন স্বামী তার স্ত্রীকে স্বীয় শয্যা গ্রহণ বা দৈহিক মিলনের জন্য আহবান জানায়, কিন্তু স্ত্রী তা অস্বীকার করায় স্বামী তার উপর ক্রুদ্ধ হয়ে রাত কাটায়, তখন ফেরেশতাগণ সকাল পর্যন্ত ঐ স্ত্রীর উপর অভিশাপ দিতে থাকে’।[1]
অনেক মহিলাকেই দেখা যায় স্বামী-স্ত্রীতে একটু খুনসুটি হলেই স্বামীকে শাস্তি দেয়ার মানসে তার সঙ্গে দৈহিক মেলামেশা বন্ধ করে বসে। এতে অনেক রকম ক্ষতি দেখা দেয়। পারিবারিক অশান্তির সৃষ্টি হয়। স্বামী দৈহিক তৃপ্তির জন্য অবৈধ পথও বেছে নেয়। অন্য স্ত্রী গ্রহণের চিন্তাও তাকে পেয়ে বসে। এভাবে বিষয়টি হিতে বিপরীত হয়ে দাঁড়াতে পারে। সুতরাং স্ত্রীর কর্তব্য হবে স্বামী ডাকামাত্রই তার ডাকে সাড়া দেওয়া। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, إِذَا دَعَا الرَّجُلُ امْرَأَتَهُ إِلىَ فِرَاشِهِ فَلْتُجِبْ وَإِنْ كَانَتْ عَلَى ظَهْرِ قَتَبٍ ‘যখন কোন পুরুষ তার স্ত্রীকে তার সঙ্গে দৈহিক মিলনের জন্য ডাকবে, তখনই যেন সে তার ডাকে সাড়া দেয়। এমনকি সে জ্বলন্ত উনুনের পাশে থাকলেও’।[2]
স্বামীরও কর্তব্য হবে, স্ত্রী রোগাক্রান্ত, গর্ভবতী কিংবা অন্য কোন অসুবিধায় পতিত হলে তার অবস্থা বিবেচনা করা। এতে করে তাদের মধ্যে সৌহার্দ বজায় থাকবে এবং মনোমালিন্য সৃষ্টি হবে না।
[1]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৩২৪৬।
[2]. যাওয়াইদুল বায্যার ২/১৮১ পৃঃ; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৪৭।
এমন অনেক স্ত্রীলোক আছে যারা স্বামীর সঙ্গে একটু ঝগড়া-বিবাদ হলেই কিংবা তার চাওয়া-পাওয়ার একটু ব্যত্যয় ঘটলেই তার নিকট তালাক দাবী করে। অনেক সময় স্ত্রী তার কোন নিকট আত্মীয় কিংবা অসৎ প্রতিবেশী কর্তৃক এরূপ অনিষ্টকর কাজে প্ররোচিত হয়। কখনো সে স্বামীকে লক্ষ্য করে তার জাত্যভিমান উষ্কে দেওয়ার মত শব্দ উচ্চারণ করে। যেমন সে বলে, ‘যদি তুমি পুরুষ হয়ে থাক তাহলে আমাকে তালাক দাও’। কিন্তু তালাকের যে কি বিষময় ফল তা সবার জানা আছে। তালাকের কারণে একটি পরিবারে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়। সন্তানরা ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। এজন্য অনেক সময় স্ত্রীর মনে অনুশোচনা জাগতে পারে। কিন্তু তখন তো আর করার কিছুই থাকে না। এসব কারণে শরী‘আত কথায় কথায় তালাক প্রার্থনাকে হারাম করে সমাজের যে উপকার করেছে তা সহজেই অনুমেয়। হযরত ছাওবান (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, أَيُّمَا امْرَأَةٍ سَأَلَتْ زَوْجَهَا الطَّلاَقَ مِنْ غَيْرِ مَا بَأْسٍ فَحَرَامٌ عَلَيْهَا رَائِحَةُ الْجَنَّةِ ‘কোন মহিলা যদি বিনা দোষে স্বামীর নিকট তালাক প্রার্থনা করে, তাহলে জান্নাতের সুগন্ধি তার জন্য হারাম হয়ে যাবে’।[1]
হযরত উক্ববা বিন আমের (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, اَلْمُخْتَلِعَاتُ وَالْمُنْتَزِعَاتُ هُنَّ الْمُنَافِقَاتُ ‘খোলাকারিণী ও সম্পর্ক ছিন্নকারিণী রমণীগণ মুনাফিক’।[2]
হাঁ যদি কোন শারঈ ওযর থাকে যেমন- স্বামী ছালাত আদায় করে না, অনবরত নেশা করে কিংবা স্ত্রীকে হারাম কাজের আদেশ দেয়, অন্যায়ভাবে মারধর করে, স্ত্রীর শারঈ অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করে। কিন্তু স্বামীকে নছীহত করেও ফেরানো যাচ্ছে না এবং সংশোধনেরও কোন উপায় নেই সেক্ষেত্রে তালাক দাবী করায় স্ত্রীর কোন দোষ হবে না। বরং দ্বীন ও জীবন রক্ষার্থে তখন সে তালাক প্রার্থনা করতে পারে।
[1]. আহমাদ, তিরমিযী; মিশকাত হা/৩২৭৯।
[2]. আহমাদ, ছহীহাহ হা/৬৩২।
হযরত উক্ববা বিন আমের (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, اَلْمُخْتَلِعَاتُ وَالْمُنْتَزِعَاتُ هُنَّ الْمُنَافِقَاتُ ‘খোলাকারিণী ও সম্পর্ক ছিন্নকারিণী রমণীগণ মুনাফিক’।[2]
হাঁ যদি কোন শারঈ ওযর থাকে যেমন- স্বামী ছালাত আদায় করে না, অনবরত নেশা করে কিংবা স্ত্রীকে হারাম কাজের আদেশ দেয়, অন্যায়ভাবে মারধর করে, স্ত্রীর শারঈ অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করে। কিন্তু স্বামীকে নছীহত করেও ফেরানো যাচ্ছে না এবং সংশোধনেরও কোন উপায় নেই সেক্ষেত্রে তালাক দাবী করায় স্ত্রীর কোন দোষ হবে না। বরং দ্বীন ও জীবন রক্ষার্থে তখন সে তালাক প্রার্থনা করতে পারে।
[1]. আহমাদ, তিরমিযী; মিশকাত হা/৩২৭৯।
[2]. আহমাদ, ছহীহাহ হা/৬৩২।
জাহেলী যুগ থেকে চলে আসা যা কিছু এই উম্মতের মধ্যে প্রবিষ্ট হয়েছে ‘যিহার’[1] তার একটি।
যেসব শব্দে যিহার হয় তার কতগুলি নিম্নরূপ:
স্বামী স্ত্রীকে বলবে, ‘তুমি আমার জন্য আমার মায়ের পৃষ্ঠতুল্য’। ‘আমার বোন যেমন আমার জন্য হারাম, তুমিও তেমনি আমার জন্য হারাম’। ‘তোমার এক চতুর্থাংশ আমার জন্য আমার ধাত্রীমায়ের মত হারাম’ ইত্যাদি।
যিহারের ফলে নারীরা ভীষণভাবে অত্যাচারিত হয়। যিহার একটি অমানবিক কাজ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
اَلَّذِينَ يُظَاهِرُونَ مِنْكُمْ مِنْ نِسَائِهِمْ مَا هُنَّ أُمَّهَاتِهِمْ إِنْ أُمَّهَاتُهُمْ إِلاَّ اللاَّئِي وَلَدْنَهُمْ وَإِنَّهُمْ لَيَقُولُونَ مُنْكَرًا مِنَ الْقَوْلِ وَزُورًا وَإِنَّ اللهَ لَعَفُوٌّ غَفُورٌ -
‘তোমাদের মধ্যে যারা নিজেদের স্ত্রীদের সঙ্গে যিহার করে তারা যেন জেনে রাখে যে, তারা তাদের মা নয়। তাদের মা তো তারাই যারা তাদের প্রসব করেছে। তারা তো কেবল অসঙ্গত ও মিথ্যা কথা বলে। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও মার্জনাকারী’ (মুজাদালাহ ২)।
ইসলাম রামাযান মাসে দিনের বেলায় স্বেচ্ছায় সহবাসে ছিয়াম ভঙ্গের কাফফারা, ভুলক্রমে হত্যার কাফফারা যেভাবে দিতে বলেছে, যিহারের জন্যও ঠিক একইভাবে কাফফারা দিতে বলেছে। কাফফারা পরিশোধ না করা পর্যন্ত যিহারকারী স্ত্রীকে স্পর্শ করতে পারবে না। আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
وَالَّذِينَ يُظَاهِرُونَ مِنْ نِسَائِهِمْ ثُمَّ يَعُودُونَ لِمَا قَالُوا فَتَحْرِيرُ رَقَبَةٍ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَتَمَاسَّا ذَلِكُمْ تُوعَظُونَ بِهِ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ- فَمَنْ لَمْ يَجِدْ فَصِيَامُ شَهْرَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَتَمَاسَّا فَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَإِطْعَامُ سِتِّينَ مِسْكِينًا ذَلِكَ لِتُؤْمِنُوا بِاللهِ وَرَسُولِهِ وَتِلْكَ حُدُودُ اللهِ وَلِلْكَافِرِينَ عَذَابٌ أَلِيمٌ -
‘যারা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে যিহার করে, তারপর তাদের উক্তি প্রত্যাহার করে নেয়, তাদের জন্য পারস্পরিক স্পর্শের পূর্বে একজন দাস মুক্তির বিধান দেয়া হল। এটা তোমাদের জন্য নির্দেশ। আর তোমরা যা কিছু কর তৎসম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত। অনন্তর যে উহার সামর্থ্য রাখে না তাকে পারস্পরিক স্পর্শের পূর্বে একটানা দু’মাস ছিয়াম রাখতে হবে। যে তারও সামর্থ্য রাখে না তাকে ষাটজন মিসকীনকে খাওয়াতে হবে। এই বিধান এজন্য যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপরে তোমরা যেন ঈমান রাখ। এটা আল্লাহর সীমারেখা। আর কাফিরদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি’ (মুজাদালা ৩-৪)।
[1]. নিজের স্ত্রীকে অথবা তার কোন অঙ্গকে ‘মা’-এর সাথে অথবা ‘স্থায়ীভাবে বিবাহ হারাম’ এমন কোন মহিলার পৃষ্ঠদেশ তুল্য বলে আখ্যায়িত করাকে যিহার বলে। একথা বলার উদ্দেশ্য হল, মায়ের সঙ্গে মেলামেশা যেমন হারাম স্ত্রীর সঙ্গে মেলামেশাও তদ্রুপ হারাম করা। ভারতীয় উপমহাদেশে যিহারের প্রচলন খুব একটা নেই। আরবে জাহেলী যুগ হতে যিহার প্রথা চলে আসছে। জাহেলী যুগে যিহারকে তালাক বলে গণ্য করা হ’ত। যিহারের পর স্ত্রীকে আর ফিরিয়ে নেয়ার অবকাশ ছিল না। কিন্তু ইসলামী বিধানে যিহার দ্বারা তালাক হয় না; কেবল কাফফারা ফরয হয়। কাফফারা পরিশোধ না করা পর্যন্ত স্ত্রী সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ থাকে। কাফফারা পরিশোধের পর যথারীতি ঘর সংসার করা যায়।- অনুবাদক।
যেসব শব্দে যিহার হয় তার কতগুলি নিম্নরূপ:
স্বামী স্ত্রীকে বলবে, ‘তুমি আমার জন্য আমার মায়ের পৃষ্ঠতুল্য’। ‘আমার বোন যেমন আমার জন্য হারাম, তুমিও তেমনি আমার জন্য হারাম’। ‘তোমার এক চতুর্থাংশ আমার জন্য আমার ধাত্রীমায়ের মত হারাম’ ইত্যাদি।
যিহারের ফলে নারীরা ভীষণভাবে অত্যাচারিত হয়। যিহার একটি অমানবিক কাজ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
اَلَّذِينَ يُظَاهِرُونَ مِنْكُمْ مِنْ نِسَائِهِمْ مَا هُنَّ أُمَّهَاتِهِمْ إِنْ أُمَّهَاتُهُمْ إِلاَّ اللاَّئِي وَلَدْنَهُمْ وَإِنَّهُمْ لَيَقُولُونَ مُنْكَرًا مِنَ الْقَوْلِ وَزُورًا وَإِنَّ اللهَ لَعَفُوٌّ غَفُورٌ -
‘তোমাদের মধ্যে যারা নিজেদের স্ত্রীদের সঙ্গে যিহার করে তারা যেন জেনে রাখে যে, তারা তাদের মা নয়। তাদের মা তো তারাই যারা তাদের প্রসব করেছে। তারা তো কেবল অসঙ্গত ও মিথ্যা কথা বলে। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও মার্জনাকারী’ (মুজাদালাহ ২)।
ইসলাম রামাযান মাসে দিনের বেলায় স্বেচ্ছায় সহবাসে ছিয়াম ভঙ্গের কাফফারা, ভুলক্রমে হত্যার কাফফারা যেভাবে দিতে বলেছে, যিহারের জন্যও ঠিক একইভাবে কাফফারা দিতে বলেছে। কাফফারা পরিশোধ না করা পর্যন্ত যিহারকারী স্ত্রীকে স্পর্শ করতে পারবে না। আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
وَالَّذِينَ يُظَاهِرُونَ مِنْ نِسَائِهِمْ ثُمَّ يَعُودُونَ لِمَا قَالُوا فَتَحْرِيرُ رَقَبَةٍ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَتَمَاسَّا ذَلِكُمْ تُوعَظُونَ بِهِ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ- فَمَنْ لَمْ يَجِدْ فَصِيَامُ شَهْرَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَتَمَاسَّا فَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَإِطْعَامُ سِتِّينَ مِسْكِينًا ذَلِكَ لِتُؤْمِنُوا بِاللهِ وَرَسُولِهِ وَتِلْكَ حُدُودُ اللهِ وَلِلْكَافِرِينَ عَذَابٌ أَلِيمٌ -
‘যারা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে যিহার করে, তারপর তাদের উক্তি প্রত্যাহার করে নেয়, তাদের জন্য পারস্পরিক স্পর্শের পূর্বে একজন দাস মুক্তির বিধান দেয়া হল। এটা তোমাদের জন্য নির্দেশ। আর তোমরা যা কিছু কর তৎসম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত। অনন্তর যে উহার সামর্থ্য রাখে না তাকে পারস্পরিক স্পর্শের পূর্বে একটানা দু’মাস ছিয়াম রাখতে হবে। যে তারও সামর্থ্য রাখে না তাকে ষাটজন মিসকীনকে খাওয়াতে হবে। এই বিধান এজন্য যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপরে তোমরা যেন ঈমান রাখ। এটা আল্লাহর সীমারেখা। আর কাফিরদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি’ (মুজাদালা ৩-৪)।
[1]. নিজের স্ত্রীকে অথবা তার কোন অঙ্গকে ‘মা’-এর সাথে অথবা ‘স্থায়ীভাবে বিবাহ হারাম’ এমন কোন মহিলার পৃষ্ঠদেশ তুল্য বলে আখ্যায়িত করাকে যিহার বলে। একথা বলার উদ্দেশ্য হল, মায়ের সঙ্গে মেলামেশা যেমন হারাম স্ত্রীর সঙ্গে মেলামেশাও তদ্রুপ হারাম করা। ভারতীয় উপমহাদেশে যিহারের প্রচলন খুব একটা নেই। আরবে জাহেলী যুগ হতে যিহার প্রথা চলে আসছে। জাহেলী যুগে যিহারকে তালাক বলে গণ্য করা হ’ত। যিহারের পর স্ত্রীকে আর ফিরিয়ে নেয়ার অবকাশ ছিল না। কিন্তু ইসলামী বিধানে যিহার দ্বারা তালাক হয় না; কেবল কাফফারা ফরয হয়। কাফফারা পরিশোধ না করা পর্যন্ত স্ত্রী সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ থাকে। কাফফারা পরিশোধের পর যথারীতি ঘর সংসার করা যায়।- অনুবাদক।
মাসিকের সময় স্ত্রী সহবাস কুরআন-হাদীছ উভয়ের আলোকেই নিষিদ্ধ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الْمَحِيضِ قُلْ هُوَ أَذًى فَاعْتَزِلُوا النِّسَاءَ فِيْ الْمَحِيضِ وَلاَ تَقْرَبُوهُنَّ حَتَّى يَطْهُرْنَ -
‘তারা আপনাকে মাসিক সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আপনি বলুন, উহা অশুচি। সুতরাং মাসিকের সময় তোমরা স্ত্রীদের থেকে দূরে থাক এবং তারা পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তাদের নিকটে যেও না’ (বাক্বারাহ ২২২)।
পবিত্রতা লাভের পর তারা গোসল না করা পর্যন্ত তাদের নিকটে যাওয়া বৈধ নয়। কেননা একই সাথে আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেছেন, فَإِذَا تَطَهَّرْنَ فَأْتُوهُنَّ مِنْ حَيْثُ أَمَرَكُمُ اللهُ ‘যখন তারা ভালমত পাক-পবিত্র হয়ে যাবে তখন তোমরা তাদের নিকটে আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক গমন কর’ (বাক্বারাহ ২২২)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, اِصْنَعُوا كُلَّ شَىْءٍ إِلاَّ النِّكَاحَ ‘সহবাস ব্যতীত তোমরা তাদের সাথে সব কিছুই কর’।[1]
মাসিকের সময় সহবাস যে কঠিন পাপ তা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিম্নোক্ত বাণী হ’তে প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন, مَنْ أَتَى حَائِضًا أَوِ امْرَأَةً فِى دُبُرِهَا أَوْ كَاهِنًا فَقَدْ كَفَرَ بِمَا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ ‘যে ব্যক্তি কোন ঋতুবতীর সাথে মিলিত হয় কিংবা কোন মহিলার পশ্চাৎদ্বারে সঙ্গম করে অথবা কোন গণকের নিকটে যায়, নিশ্চয়ই সে মুহাম্মাদের উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তা অস্বীকার করে’।[2]
অজ্ঞতাবশতঃ যদি কোন ব্যক্তি মাসিকের সময় স্ত্রী সহবাস করে তাহলে তাকে এজন্য কোন কাফফারা দিতে হবে না। কিন্তু জেনেশুনে যারা এ কাজ করবে তাদেরকে নির্ধারিত এক দীনার বা অর্ধ দিনার কাফফারা দিতে হবে। এ সম্বন্ধে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে হাদীছ বর্ণিত আছে।[3]
[1]. মুসলিম, মিশকাত হা/৫৪৫।
[2]. তিরমিযী; মিশকাত হা/৫৫১।
[3]. তিরমিযী হা/১২৫, আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৫৫৩, সনদ ছহীহ।
وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الْمَحِيضِ قُلْ هُوَ أَذًى فَاعْتَزِلُوا النِّسَاءَ فِيْ الْمَحِيضِ وَلاَ تَقْرَبُوهُنَّ حَتَّى يَطْهُرْنَ -
‘তারা আপনাকে মাসিক সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আপনি বলুন, উহা অশুচি। সুতরাং মাসিকের সময় তোমরা স্ত্রীদের থেকে দূরে থাক এবং তারা পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তাদের নিকটে যেও না’ (বাক্বারাহ ২২২)।
পবিত্রতা লাভের পর তারা গোসল না করা পর্যন্ত তাদের নিকটে যাওয়া বৈধ নয়। কেননা একই সাথে আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেছেন, فَإِذَا تَطَهَّرْنَ فَأْتُوهُنَّ مِنْ حَيْثُ أَمَرَكُمُ اللهُ ‘যখন তারা ভালমত পাক-পবিত্র হয়ে যাবে তখন তোমরা তাদের নিকটে আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক গমন কর’ (বাক্বারাহ ২২২)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, اِصْنَعُوا كُلَّ شَىْءٍ إِلاَّ النِّكَاحَ ‘সহবাস ব্যতীত তোমরা তাদের সাথে সব কিছুই কর’।[1]
মাসিকের সময় সহবাস যে কঠিন পাপ তা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিম্নোক্ত বাণী হ’তে প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন, مَنْ أَتَى حَائِضًا أَوِ امْرَأَةً فِى دُبُرِهَا أَوْ كَاهِنًا فَقَدْ كَفَرَ بِمَا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ ‘যে ব্যক্তি কোন ঋতুবতীর সাথে মিলিত হয় কিংবা কোন মহিলার পশ্চাৎদ্বারে সঙ্গম করে অথবা কোন গণকের নিকটে যায়, নিশ্চয়ই সে মুহাম্মাদের উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তা অস্বীকার করে’।[2]
অজ্ঞতাবশতঃ যদি কোন ব্যক্তি মাসিকের সময় স্ত্রী সহবাস করে তাহলে তাকে এজন্য কোন কাফফারা দিতে হবে না। কিন্তু জেনেশুনে যারা এ কাজ করবে তাদেরকে নির্ধারিত এক দীনার বা অর্ধ দিনার কাফফারা দিতে হবে। এ সম্বন্ধে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে হাদীছ বর্ণিত আছে।[3]
[1]. মুসলিম, মিশকাত হা/৫৪৫।
[2]. তিরমিযী; মিশকাত হা/৫৫১।
[3]. তিরমিযী হা/১২৫, আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৫৫৩, সনদ ছহীহ।
দুর্বল ঈমানের কিছু লোক তাদের স্ত্রীদের সাথে পশ্চাৎদ্বার দিয়ে মেলামেশা করতে দ্বিধা করে না। অথচ এটা কবীরা গোনাহ। যারা এ কাজ করে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদের উপর অভিসম্পাত করেছেন।
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَلْعُونٌ مَنْ أَتَى امْرَأَةً فِى دُبُرِهَا ‘যে পশ্চাৎদ্বার দিয়ে স্ত্রীগমন করে সে অভিশপ্ত’।[1]
পূর্বেও উল্লিখিত হয়েছে যে, তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোন ঋতুবতী রমণীর সাথে মিলিত হয় কিংবা পশ্চাৎদ্বারে সঙ্গম করে অথবা কোন গণকের নিকটে যায়, নিশ্চয়ই সে মুহাম্মাদের উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে, তা অস্বীকার করে’।[2]
অবশ্য কিছু সতী-সাধ্বী স্ত্রী তাদের স্বামীদেরকে এ কাজে বাধা দিয়ে থাকে। কিন্তু অনেক স্বামীই তাদের কথা না মানলে তালাকের হুমকি দেয়। আবার যেসকল স্ত্রী আলেমদেরকে জিজ্ঞেস করতে লজ্জাবোধ করে তাদেরকে প্রতারণাচ্ছলে ধারণা দেয় যে, এ জাতীয় কাজ বৈধ। কারণ আল্লাহ বলেন, نِسَاؤُكُمْ حَرْثٌ لَكُمْ فَأْتُوا حَرْثَكُمْ أَنَّى شِئْتُمْ ‘তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের জন্য ক্ষেত স্বরূপ। সুতরাং তোমরা তোমাদের ক্ষেতে যে পন্থায় ইচ্ছা গমন কর’ (বাক্বারাহ ২২৩)।
অথচ নবী করীম (ছাঃ) উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, ‘স্বামী স্ত্রীর সামনে দিয়ে, পিছন দিয়ে, যেকোন ভাবে যেতে পারবে, যতক্ষণ তা সন্তান প্রসবের দ্বারের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকবে’।[3] আর এটা অবিদিত নয় যে, পশ্চাৎদ্বার দিয়ে সন্তান প্রসব হয় না। সুতরাং আয়াতে সঙ্গমের বিভিন্ন ক্ষেত্রের কথা বলা হয়নি; বরং একই ক্ষেত্রে বিভিন্ন কৌশল বা পদ্ধতির মধ্যে যেটা ইচ্ছা সেটা অবলম্বনের কথা বলা হয়েছে। এসব অপরাধের মূলে রয়েছে বিবাহিত শালীন জীবনের পাশাপাশি গণিকাগমনের জাহেলী প্রথা, সমকামিতা এবং যত্রতত্র প্রদর্শিত অশ্লীল নীল ছবি। নিঃসন্দেহে এ জাতীয় কাজ হারাম। উভয়পক্ষ রাযী থাকলেও তা হারাম হবে। কেননা পারস্পরিক সম্মতিতে কোন হারাম হালাল হয়ে যায় না।
[1]. আহমাদ, আবুদাঊদ; মিশকাত হা/৩১৯৩।
[2]. তিরমিযী; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৯১৮।
[3]. আবুদাঊদ হা/২১৬৪, সনদ হাসান।
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَلْعُونٌ مَنْ أَتَى امْرَأَةً فِى دُبُرِهَا ‘যে পশ্চাৎদ্বার দিয়ে স্ত্রীগমন করে সে অভিশপ্ত’।[1]
পূর্বেও উল্লিখিত হয়েছে যে, তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোন ঋতুবতী রমণীর সাথে মিলিত হয় কিংবা পশ্চাৎদ্বারে সঙ্গম করে অথবা কোন গণকের নিকটে যায়, নিশ্চয়ই সে মুহাম্মাদের উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে, তা অস্বীকার করে’।[2]
অবশ্য কিছু সতী-সাধ্বী স্ত্রী তাদের স্বামীদেরকে এ কাজে বাধা দিয়ে থাকে। কিন্তু অনেক স্বামীই তাদের কথা না মানলে তালাকের হুমকি দেয়। আবার যেসকল স্ত্রী আলেমদেরকে জিজ্ঞেস করতে লজ্জাবোধ করে তাদেরকে প্রতারণাচ্ছলে ধারণা দেয় যে, এ জাতীয় কাজ বৈধ। কারণ আল্লাহ বলেন, نِسَاؤُكُمْ حَرْثٌ لَكُمْ فَأْتُوا حَرْثَكُمْ أَنَّى شِئْتُمْ ‘তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের জন্য ক্ষেত স্বরূপ। সুতরাং তোমরা তোমাদের ক্ষেতে যে পন্থায় ইচ্ছা গমন কর’ (বাক্বারাহ ২২৩)।
অথচ নবী করীম (ছাঃ) উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, ‘স্বামী স্ত্রীর সামনে দিয়ে, পিছন দিয়ে, যেকোন ভাবে যেতে পারবে, যতক্ষণ তা সন্তান প্রসবের দ্বারের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকবে’।[3] আর এটা অবিদিত নয় যে, পশ্চাৎদ্বার দিয়ে সন্তান প্রসব হয় না। সুতরাং আয়াতে সঙ্গমের বিভিন্ন ক্ষেত্রের কথা বলা হয়নি; বরং একই ক্ষেত্রে বিভিন্ন কৌশল বা পদ্ধতির মধ্যে যেটা ইচ্ছা সেটা অবলম্বনের কথা বলা হয়েছে। এসব অপরাধের মূলে রয়েছে বিবাহিত শালীন জীবনের পাশাপাশি গণিকাগমনের জাহেলী প্রথা, সমকামিতা এবং যত্রতত্র প্রদর্শিত অশ্লীল নীল ছবি। নিঃসন্দেহে এ জাতীয় কাজ হারাম। উভয়পক্ষ রাযী থাকলেও তা হারাম হবে। কেননা পারস্পরিক সম্মতিতে কোন হারাম হালাল হয়ে যায় না।
[1]. আহমাদ, আবুদাঊদ; মিশকাত হা/৩১৯৩।
[2]. তিরমিযী; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৯১৮।
[3]. আবুদাঊদ হা/২১৬৪, সনদ হাসান।
আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে পুরুষদেরকে স্ত্রীদের মধ্যে সমতা বিধানের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন,
وَلَنْ تَسْتَطِيعُوا أَنْ تَعْدِلُوا بَيْنَ النِّسَاءِ وَلَوْ حَرَصْتُمْ فَلاَ تَمِيلُوا كُلَّ الْمَيْلِ فَتَذَرُوهَا كَالْمُعَلَّقَةِ وَإِنْ تُصْلِحُوا وَتَتَّقُوا فَإِنَّ اللهَ كَانَ غَفُورًا رَحِيمًا -
‘তোমরা যতই আগ্রহ পোষণ কর না কেন তোমরা কখনো স্ত্রীদের প্রতি সমান ব্যবহার করতে পারবে না। তবে তোমরা কোন একজনের দিকে সম্পূর্ণরূপে ঝুঁকে পড় না ও অপরকে ঝুলন্ত অবস্থায় রেখ না। যদি তোমরা নিজেদেরকে সংশোধন কর ও সাবধান হও তবে আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (নিসা ১২৯)।
এখানে কাম্য হ’ল, রাত্রি যাপনে স্ত্রীদের মধ্যে সমতা রক্ষা করা, পর্যায়ক্রমে প্রত্যেকের নিকট এক রাত করে যাপন করা এবং প্রত্যেকের থাকা, খাওয়া ও পরার যথোপযুক্ত বন্দোবস্ত করা। অন্তরের ভালবাসা সবার জন্য সমান হতে হবে এমন বিধান শরী‘আত দেয়নি। কেননা তা মানুষের ইখতিয়ার বহির্ভূত।
কিছু মানুষ আছে, যারা তাদের একাধিক স্ত্রীর একজনকে নিয়ে পড়ে থাকে, অন্যজনের দিকে ভ্রুক্ষেপও করে না; একজনের নিকট বেশী বেশী রাত কাটায় কিংবা বেশী খরচ করে, অন্যজনের কোন খোঁজই নেয় না। নিঃসন্দেহে এরূপ একপেশে আচরণ হারাম। ক্বিয়ামত দিবসে তাদের যে অবস্থা দাঁড়াবে তার একটি চিত্র আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত নিম্নোক্ত হাদীছে আমরা পাই। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
مَنْ كَانَتْ لَهُ امْرَأَتَانِ فَمَالَ إِلَى إِحْدَاهُمَا جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَشِقُّهُ مَائِلٌ -
‘যার দু’জন স্ত্রী আছে, কিন্তু সে তাদের একজনের প্রতি ঝুঁকে পড়ে, ক্বিয়ামত দিবসে সে অর্ধাঙ্গবিহীন অবস্থায় উঠবে’।[1]
[1]. আবুদাঊদ হা/২১৩৩, সনদ ছহীহ।
وَلَنْ تَسْتَطِيعُوا أَنْ تَعْدِلُوا بَيْنَ النِّسَاءِ وَلَوْ حَرَصْتُمْ فَلاَ تَمِيلُوا كُلَّ الْمَيْلِ فَتَذَرُوهَا كَالْمُعَلَّقَةِ وَإِنْ تُصْلِحُوا وَتَتَّقُوا فَإِنَّ اللهَ كَانَ غَفُورًا رَحِيمًا -
‘তোমরা যতই আগ্রহ পোষণ কর না কেন তোমরা কখনো স্ত্রীদের প্রতি সমান ব্যবহার করতে পারবে না। তবে তোমরা কোন একজনের দিকে সম্পূর্ণরূপে ঝুঁকে পড় না ও অপরকে ঝুলন্ত অবস্থায় রেখ না। যদি তোমরা নিজেদেরকে সংশোধন কর ও সাবধান হও তবে আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (নিসা ১২৯)।
এখানে কাম্য হ’ল, রাত্রি যাপনে স্ত্রীদের মধ্যে সমতা রক্ষা করা, পর্যায়ক্রমে প্রত্যেকের নিকট এক রাত করে যাপন করা এবং প্রত্যেকের থাকা, খাওয়া ও পরার যথোপযুক্ত বন্দোবস্ত করা। অন্তরের ভালবাসা সবার জন্য সমান হতে হবে এমন বিধান শরী‘আত দেয়নি। কেননা তা মানুষের ইখতিয়ার বহির্ভূত।
কিছু মানুষ আছে, যারা তাদের একাধিক স্ত্রীর একজনকে নিয়ে পড়ে থাকে, অন্যজনের দিকে ভ্রুক্ষেপও করে না; একজনের নিকট বেশী বেশী রাত কাটায় কিংবা বেশী খরচ করে, অন্যজনের কোন খোঁজই নেয় না। নিঃসন্দেহে এরূপ একপেশে আচরণ হারাম। ক্বিয়ামত দিবসে তাদের যে অবস্থা দাঁড়াবে তার একটি চিত্র আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত নিম্নোক্ত হাদীছে আমরা পাই। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
مَنْ كَانَتْ لَهُ امْرَأَتَانِ فَمَالَ إِلَى إِحْدَاهُمَا جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَشِقُّهُ مَائِلٌ -
‘যার দু’জন স্ত্রী আছে, কিন্তু সে তাদের একজনের প্রতি ঝুঁকে পড়ে, ক্বিয়ামত দিবসে সে অর্ধাঙ্গবিহীন অবস্থায় উঠবে’।[1]
[1]. আবুদাঊদ হা/২১৩৩, সনদ ছহীহ।
মানুষের মধ্যে ফিতনা ও অশান্তি সৃষ্টি করতে শয়তান সদা তৎপর। কি করে তাদের দ্বারা হারাম কাজ করানো যায় এ চিন্তা তার অহর্নিশ। তাই আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সতর্ক করতে গিয়ে বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لاَ تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ وَمَنْ يَتَّبِعْ خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ فَإِنَّهُ يَأْمُرُ بِالْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ -
‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কর না। যে শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে তাকে তো সে অশ্লীল ও অন্যায় কাজেরই হুকুম দেয়’ (নূর ২১)।
শয়তান মানুষের শিরা-উপশিরায় চলাচল করে।[1] কোন গায়ের মাহরাম মহিলার সাথে একাকী অবস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে অশ্লীল কাজে লিপ্ত করা শয়তানেরই একটি চক্রান্ত। এজন্যই শরী‘আত উক্ত রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
لاَ يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ إِلاَّ كَانَ ثَالِثَهُمَا الشَّيْطَانُ -
‘কোন পুরুষ একজন মহিলার সাথে নির্জনে মিলিত হলে তাদের তৃতীয় সঙ্গী হয় শয়তান’।[2] ইবনু ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
لاَ يَدْخُلَنَّ رَجُلٌ بَعْدَ يَوْمِى هَذَا عَلَى مُغِيبَةٍ إِلاَّ وَمَعَهُ رَجُلٌ أَوِ اثْنَانِ -
‘আমার আজকের এই দিন থেকে কোন পুরুষ একজন কিংবা দু’জন পুরুষকে সঙ্গে করে ব্যতীত কোন স্বামী থেকে দূরে থাকা মহিলা বা প্রোষিতভর্তৃকার সাথে নির্জনে দেখা করতে পারবে না’।[3]
সুতরাং স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়েই হোক, আর বাড়ীর কক্ষেই হোক, কিংবা মোটর গাড়ীতেই হোক, কোথাও কোন পুরুষ লোক বিবাহ বৈধ এমন কোন মহিলার সাথে একাকী থাকতে পারবে না। নিজের ভাবী, পরিচারিকা, রুগিনী ইত্যাকার কারও সাথেই নির্জনবাস বৈধ নয়।
অনেক মানুষ আছে যারা আত্মবিশ্বাসের বলে হোক কিংবা দ্বিতীয় পক্ষের উপর নির্ভর করেই হোক উপরোক্ত মহিলাদের সাথে একাকী অবস্থানে খুবই উদার মনোভাব পোষণ করে। তারা এভাবে মেলামেশাকে খারাপ কিছুই মনে করে না। অথচ এরই মধ্য দিয়ে ব্যভিচারের সূত্রপাত হয়, সমাজ দেহ কলুষিত হয় এবং সমাজে অবৈধ সন্তানদের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়।
[1]. মুসলিম হা/২১৭৫।
[2]. তিরমিযী, মিশকাত হা/৩১১৮।
[3]. মুসলিম হা/২১৭৩।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لاَ تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ وَمَنْ يَتَّبِعْ خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ فَإِنَّهُ يَأْمُرُ بِالْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ -
‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কর না। যে শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে তাকে তো সে অশ্লীল ও অন্যায় কাজেরই হুকুম দেয়’ (নূর ২১)।
শয়তান মানুষের শিরা-উপশিরায় চলাচল করে।[1] কোন গায়ের মাহরাম মহিলার সাথে একাকী অবস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে অশ্লীল কাজে লিপ্ত করা শয়তানেরই একটি চক্রান্ত। এজন্যই শরী‘আত উক্ত রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
لاَ يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ إِلاَّ كَانَ ثَالِثَهُمَا الشَّيْطَانُ -
‘কোন পুরুষ একজন মহিলার সাথে নির্জনে মিলিত হলে তাদের তৃতীয় সঙ্গী হয় শয়তান’।[2] ইবনু ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
لاَ يَدْخُلَنَّ رَجُلٌ بَعْدَ يَوْمِى هَذَا عَلَى مُغِيبَةٍ إِلاَّ وَمَعَهُ رَجُلٌ أَوِ اثْنَانِ -
‘আমার আজকের এই দিন থেকে কোন পুরুষ একজন কিংবা দু’জন পুরুষকে সঙ্গে করে ব্যতীত কোন স্বামী থেকে দূরে থাকা মহিলা বা প্রোষিতভর্তৃকার সাথে নির্জনে দেখা করতে পারবে না’।[3]
সুতরাং স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়েই হোক, আর বাড়ীর কক্ষেই হোক, কিংবা মোটর গাড়ীতেই হোক, কোথাও কোন পুরুষ লোক বিবাহ বৈধ এমন কোন মহিলার সাথে একাকী থাকতে পারবে না। নিজের ভাবী, পরিচারিকা, রুগিনী ইত্যাকার কারও সাথেই নির্জনবাস বৈধ নয়।
অনেক মানুষ আছে যারা আত্মবিশ্বাসের বলে হোক কিংবা দ্বিতীয় পক্ষের উপর নির্ভর করেই হোক উপরোক্ত মহিলাদের সাথে একাকী অবস্থানে খুবই উদার মনোভাব পোষণ করে। তারা এভাবে মেলামেশাকে খারাপ কিছুই মনে করে না। অথচ এরই মধ্য দিয়ে ব্যভিচারের সূত্রপাত হয়, সমাজ দেহ কলুষিত হয় এবং সমাজে অবৈধ সন্তানদের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়।
[1]. মুসলিম হা/২১৭৫।
[2]. তিরমিযী, মিশকাত হা/৩১১৮।
[3]. মুসলিম হা/২১৭৩।
আজকের সমাজে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা অবারিতভাবে চলছে। ফলে অনেক নারী-পুরুষই নিজেকে আধুনিক হিসাবে যাহির করার জন্য শরী‘আতের সীমালংঘন করে পরস্পরে মুছাফাহা করছে। তাদের ভাষায় এটা হ্যান্ডশেক বা করমর্দন। আল্লাহর নিষেধকে থোড়াই কেয়ার করে বিকৃত রুচি ও নগ্ন সভ্যতার অন্ধ অনুকরণে তারা এ কাজ করছে এবং নিজেদেরকে প্রগতিবাদী বলে যাহির করছে। আপনি তাদেরকে যতই বুঝান না কেন বা দলীল-প্রমাণ যতই দেখান না কেন তারা তা কখনই মানবে না। উল্টো আপনাকে প্রতিক্রিয়াশীল, সন্দেহবাদী, মোহাচ্ছন্ন, আত্মীয়তা ছিন্নকারী ইত্যাদি বিশেষণে আখ্যায়িত করবে।
চাচাত বোন, ফুফাত বোন, মামাত বোন, খালাত বোন, ভাবী, চাচী, মামী প্রমুখ আত্মীয়ের সঙ্গে মুছাফাহা করা তো তাদের নিকট পানি পানের চেয়েও সহজ কাজ। শরী‘আতের দৃষ্টিতে কাজটি কত ভয়াবহ তা যদি তারা দূরদৃষ্টি দিয়ে দেখত তাহলে কখনই তারা এ কাজ করত না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
لَأَنْ يُطْعَنَ في رَأْسِ أَحَدِكُمْ بِمِخْيَطٍ مِنْ حَدِيدٍ خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَنْ يَّمَسَّ امْرَأَةً لاَ تَحِلُّ لَهُ -
‘নিশ্চয়ই তোমাদের কারো মাথায় লোহার পেরেক ঠুকে দেয়া ঐ মহিলাকে স্পর্শ করা থেকে অনেক শ্রেয়, যে তার জন্য হালাল নয়’।[1]
নিঃসন্দেহে এটা হাতের যিনা। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
اَلْعَيْنَانِ تَزْنِيَانِ وَالْيَدَانِ تَزْنِيَانِ وَالرِّجْلاَنِ تَزْنِيَانِ وَالْفَرْجُ يَزْنِى -
‘দু’চোখ যিনা করে, দু’হাত যিনা করে, দু’পা যিনা করে এবং লজ্জাস্থানও যিনা করে’।[2]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে অধিক পবিত্র মনের মানুষ আর কে আছে? অথচ তিনি বলেছেন, إِنِّى لاَ أُصَافِحُ النِّسَاءَ ‘আমি নারীদের সাথে মুছাফাহা করি না’।[3] তিনি আরও বলেছেন, إِنِّي لاَ أَمَسُّ أَيْدِيَ النِّسَاءِ ‘আমি নারীদের হাত স্পর্শ করি না’।[4]
মা আয়েশা (রাঃ) বলেছেন,
لاَ وَاللهِ مَا مَسَّتْ يَدُ رَسُولِ اللهِ صَلىَّ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدَ امْرَأَةٍ قَطُّ غَيْرَ أَنَّهُ يُبَايِعُهُنَّ بِالْكَلاَمِ -
‘আল্লাহর শপথ, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর হাত কখনই কোন বেগানা নারীর হাত স্পর্শ করেনি। তিনি মৌখিক বাক্যের মাধ্যমে তাদের বায়‘আত নিতেন’।[5]
সুতরাং আধুনিক সাজতে গিয়ে যারা নিজেদের বন্ধুদের সাথে মুছাফাহা না করলে স্ত্রীদের তালাক দেয়ার হুমকি দেয় তারা যেন হুঁশিয়ার হয়। জানা আবশ্যক যে, মুছাফাহা কোন আবরণের সাহায্যে হোক বা আবরণ ছাড়া হোক উভয় অবস্থাতেই হারাম।
[1]. তাবারাণী, সিলসিলা ছহীহাহ হা/২২৬।
[2]. আহমাদ হা/৩৯১২; ছহীহুল জামে‘ হা/৪১২৬।
[3]. আহমাদ হা/২৭৫৩; ছহীহাহ হা/২৫০৯।
[4]. তাবারাণী কাবীর, ২৪/৩৪২; ছহীহুল জামে‘, হা/৭১৭৭।
[5]. মুসলিম হা/১৮৬৬।
চাচাত বোন, ফুফাত বোন, মামাত বোন, খালাত বোন, ভাবী, চাচী, মামী প্রমুখ আত্মীয়ের সঙ্গে মুছাফাহা করা তো তাদের নিকট পানি পানের চেয়েও সহজ কাজ। শরী‘আতের দৃষ্টিতে কাজটি কত ভয়াবহ তা যদি তারা দূরদৃষ্টি দিয়ে দেখত তাহলে কখনই তারা এ কাজ করত না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
لَأَنْ يُطْعَنَ في رَأْسِ أَحَدِكُمْ بِمِخْيَطٍ مِنْ حَدِيدٍ خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَنْ يَّمَسَّ امْرَأَةً لاَ تَحِلُّ لَهُ -
‘নিশ্চয়ই তোমাদের কারো মাথায় লোহার পেরেক ঠুকে দেয়া ঐ মহিলাকে স্পর্শ করা থেকে অনেক শ্রেয়, যে তার জন্য হালাল নয়’।[1]
নিঃসন্দেহে এটা হাতের যিনা। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
اَلْعَيْنَانِ تَزْنِيَانِ وَالْيَدَانِ تَزْنِيَانِ وَالرِّجْلاَنِ تَزْنِيَانِ وَالْفَرْجُ يَزْنِى -
‘দু’চোখ যিনা করে, দু’হাত যিনা করে, দু’পা যিনা করে এবং লজ্জাস্থানও যিনা করে’।[2]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে অধিক পবিত্র মনের মানুষ আর কে আছে? অথচ তিনি বলেছেন, إِنِّى لاَ أُصَافِحُ النِّسَاءَ ‘আমি নারীদের সাথে মুছাফাহা করি না’।[3] তিনি আরও বলেছেন, إِنِّي لاَ أَمَسُّ أَيْدِيَ النِّسَاءِ ‘আমি নারীদের হাত স্পর্শ করি না’।[4]
মা আয়েশা (রাঃ) বলেছেন,
لاَ وَاللهِ مَا مَسَّتْ يَدُ رَسُولِ اللهِ صَلىَّ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدَ امْرَأَةٍ قَطُّ غَيْرَ أَنَّهُ يُبَايِعُهُنَّ بِالْكَلاَمِ -
‘আল্লাহর শপথ, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর হাত কখনই কোন বেগানা নারীর হাত স্পর্শ করেনি। তিনি মৌখিক বাক্যের মাধ্যমে তাদের বায়‘আত নিতেন’।[5]
সুতরাং আধুনিক সাজতে গিয়ে যারা নিজেদের বন্ধুদের সাথে মুছাফাহা না করলে স্ত্রীদের তালাক দেয়ার হুমকি দেয় তারা যেন হুঁশিয়ার হয়। জানা আবশ্যক যে, মুছাফাহা কোন আবরণের সাহায্যে হোক বা আবরণ ছাড়া হোক উভয় অবস্থাতেই হারাম।
[1]. তাবারাণী, সিলসিলা ছহীহাহ হা/২২৬।
[2]. আহমাদ হা/৩৯১২; ছহীহুল জামে‘ হা/৪১২৬।
[3]. আহমাদ হা/২৭৫৩; ছহীহাহ হা/২৫০৯।
[4]. তাবারাণী কাবীর, ২৪/৩৪২; ছহীহুল জামে‘, হা/৭১৭৭।
[5]. মুসলিম হা/১৮৬৬।
আজকাল আতর, সেন্ট ইত্যাদি নানা প্রকার সুগন্ধি মেখে নারীরা ঘরে-বাইরে পুরুষদের মাঝে চলাফেলা করছে। অথচ মহানবী (ছাঃ) এ বিষয়ে কঠোর সাবধান বাণী উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেন,
أَيُّمَا امْرَأَةٍ اسْتَعْطَرَتْ ثُمَّ مَرَّتْ عَلَى الْقَوْمِ لِيَجِدُوا رِيحَهَا فَهِىَ زَانِيَةٌ -
‘পুরুষরা গন্ধ পাবে এমন উদ্দেশ্যে আতর মেখে কোন মহিলা যদি পুরুষদের মাঝে গমন করে তাহলে সে একজন ব্যভিচারিণী বলে গণ্য হবে’।[1]
অনেক মহিলা তো এ ব্যাপারে একেবারে উদাসীন কিংবা তারা বিষয়টিকে লঘুভাবে গ্রহণ করছে। তারা সেজেগুজে সুগন্ধি মেখে ড্রাইভারের সাথে গাড়ীতে উঠছে, দোকানে যাচ্ছে, স্কুল-কলেজে যাচ্ছে, কিন্তু শরী‘আতের নিষেধাজ্ঞার দিকে বিন্দুমাত্র ভ্রূক্ষেপ করছে না। নারীদের বাইরে গমনকালে শরী‘আত এমন কঠোরতা আরোপ করেছে যে, তারা সুগন্ধি মেখে থাকলে নাপাকী হেতু ফরয গোসলের ন্যায় গোসল করতে হবে। এমনকি যদি মসজিদে যায় তবুও। নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,
أَيُّمَا امْرَأَةٍ تَطَيَّبَتْ ثُمَّ خَرَجَتْ إِلَى الْمَسْجِدِ لِيُوجَدَ رِيحُهَا لَمْ يُقْبَلْ مِنْهَا صَلاَةٌ حَتَّى تَغْتَسِلَ اغْتِسَالَهَا مِنَ الْجَنَابَةِ -
‘যে মহিলা গায়ে সুগন্ধি মেখে মসজিদের দিকে বের হয় এজন্য যে, তার সুবাস পাওয়া যাবে, তাহলে তার ছালাত তদবধি গৃহীত হবে না যে পর্যন্ত না সে নাপাকীর নিমিত্ত ফরয গোসলের ন্যায় গোসল করে’।[2]
হাটে-বাজারে, যানবাহনাদিতে, বিয়ে-শাদীর অনুষ্ঠানে, নানা ধরনের মানুষের সমাবেশে তথা সর্বত্র মহিলারা যে সুগন্ধিযুক্ত প্রসাধনী আতর, সেন্ট, আগর, ধূনা, চন্দনকাঠ ইত্যাদি নিয়ে যাতায়াত করছে তার বিরুদ্ধে একমাত্র আল্লাহর কাছেই সকল অভিযোগ। আল্লাহর নিকটে আমাদের প্রার্থনা, তিনি যেন আমাদের উপর ক্রুদ্ধ না হন। অপগন্ড নর-নারীর কাজের জন্য সৎ লোকদের পাকড়াও না করেন এবং সবাইকে ছিরাতুল মুস্তাক্বীমে পরিচালিত করেন। আমীন!
[1]. আহমাদ, নাসাঈ; মিশকাত হা/১০৬৫।
[2]. আহমাদ ২/৪৪৪; ছহীহুল জামে‘ হা/২৭০৩।
أَيُّمَا امْرَأَةٍ اسْتَعْطَرَتْ ثُمَّ مَرَّتْ عَلَى الْقَوْمِ لِيَجِدُوا رِيحَهَا فَهِىَ زَانِيَةٌ -
‘পুরুষরা গন্ধ পাবে এমন উদ্দেশ্যে আতর মেখে কোন মহিলা যদি পুরুষদের মাঝে গমন করে তাহলে সে একজন ব্যভিচারিণী বলে গণ্য হবে’।[1]
অনেক মহিলা তো এ ব্যাপারে একেবারে উদাসীন কিংবা তারা বিষয়টিকে লঘুভাবে গ্রহণ করছে। তারা সেজেগুজে সুগন্ধি মেখে ড্রাইভারের সাথে গাড়ীতে উঠছে, দোকানে যাচ্ছে, স্কুল-কলেজে যাচ্ছে, কিন্তু শরী‘আতের নিষেধাজ্ঞার দিকে বিন্দুমাত্র ভ্রূক্ষেপ করছে না। নারীদের বাইরে গমনকালে শরী‘আত এমন কঠোরতা আরোপ করেছে যে, তারা সুগন্ধি মেখে থাকলে নাপাকী হেতু ফরয গোসলের ন্যায় গোসল করতে হবে। এমনকি যদি মসজিদে যায় তবুও। নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,
أَيُّمَا امْرَأَةٍ تَطَيَّبَتْ ثُمَّ خَرَجَتْ إِلَى الْمَسْجِدِ لِيُوجَدَ رِيحُهَا لَمْ يُقْبَلْ مِنْهَا صَلاَةٌ حَتَّى تَغْتَسِلَ اغْتِسَالَهَا مِنَ الْجَنَابَةِ -
‘যে মহিলা গায়ে সুগন্ধি মেখে মসজিদের দিকে বের হয় এজন্য যে, তার সুবাস পাওয়া যাবে, তাহলে তার ছালাত তদবধি গৃহীত হবে না যে পর্যন্ত না সে নাপাকীর নিমিত্ত ফরয গোসলের ন্যায় গোসল করে’।[2]
হাটে-বাজারে, যানবাহনাদিতে, বিয়ে-শাদীর অনুষ্ঠানে, নানা ধরনের মানুষের সমাবেশে তথা সর্বত্র মহিলারা যে সুগন্ধিযুক্ত প্রসাধনী আতর, সেন্ট, আগর, ধূনা, চন্দনকাঠ ইত্যাদি নিয়ে যাতায়াত করছে তার বিরুদ্ধে একমাত্র আল্লাহর কাছেই সকল অভিযোগ। আল্লাহর নিকটে আমাদের প্রার্থনা, তিনি যেন আমাদের উপর ক্রুদ্ধ না হন। অপগন্ড নর-নারীর কাজের জন্য সৎ লোকদের পাকড়াও না করেন এবং সবাইকে ছিরাতুল মুস্তাক্বীমে পরিচালিত করেন। আমীন!
[1]. আহমাদ, নাসাঈ; মিশকাত হা/১০৬৫।
[2]. আহমাদ ২/৪৪৪; ছহীহুল জামে‘ হা/২৭০৩।
ইবনু আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, لاَ تُسَافِرِ الْمَرْأَةُ إِلاَّ مَعَ ذِى مَحْرَمٍ ‘কোন মহিলা স্থায়ীভাবে বিবাহ হারাম এমন কোন আত্মীয়কে সাথে না নিয়ে যেন ভ্রমণ না করে’।[1]
এই নির্দেশ সকল প্রকার সফরের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য; এমনকি হজ্জের সফরের ক্ষেত্রেও। মাহরাম কোন পুরুষ তাদের সাথে না থাকলে দুশ্চরিত্রের লোকদের মনে তাদের প্রতি কুচিন্তা জাগ্রত হওয়া অসম্ভব কিছু নয়। এভাবে তারা তাদের পিছু নিতে পারে। আর নারীরা তো প্রকৃতিগতভাবেই দুর্বল। তারা তাদের মান, ইযযত, আব্রু নিয়ে সামান্যতেই বিব্রত বোধ করে। এমতাবস্থায় দুষ্টলোকেরা তাদের পিছু নিলে বাধা দেওয়া বা আত্মরক্ষামূলক কিছু করা তাদের জন্য কষ্টকর তো বটেই।
অনেক মহিলাকে বিমান কিংবা অন্য যানবাহনে উঠার সময় বিদায় জানাতে দু’একজন মাহরাম নিকটজন হাযির থাকে, আবার তাকে স্বাগত জানাতেও এমন দু’একজন হাযির থাকে। কিন্তু পুরো সফরে তার পাশে থাকে কে? যদি বিমানে কোন ত্রুটি দেখা দেয় এবং তা অন্য কোন বিমানবন্দরে অবতরণে বাধ্য হয়, কিংবা নির্দিষ্ট বিমানবন্দরে অবতরণে বিলম্ব ঘটে বা উড্ডয়নের সময়সূচী পরিবর্তন হয়, তাহলে তখন অবস্থা কি দাঁড়াবে? ট্রেন, বাস, স্টীমার প্রভৃতি সফরেও এরূপ ঘটনা হর-হামেশা ঘটে। তখন কী যে অবস্থার সৃষ্টি হয় তা ভুক্তভোগী ছাড়া বুঝিয়ে বলা কষ্টকর। সুতরাং সাথে একজন মাহরাম পুরুষ থাকা একান্ত দরকার, যে তার পাশে বসবে এবং আপদে-বিপদে ও উঠা-নামায় সাহায্য করবে।
মাহরাম হওয়ার জন্য চারটি শর্ত রয়েছে। যথা- মুসলমান হওয়া, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া, সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন হওয়া ও পুরুষ হওয়া। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, أَبُوهَا أَوِ ابْنُهَا أَوْ زَوْجُهَا أَوْ أَخُوهَا أَوْ ذُو مَحْرَمٍ مِنْهَا ... ‘মহিলার পিতা, তার পুত্র, তার স্বামী, তার ভাই অথবা তার কোন মাহরাম পুরুষ তার সঙ্গে থাকবে’।[2]
[1]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৫১৫ ‘হজ্জ’ অধ্যায়।
[2]. মুসলিম হা/১৩৪০।
এই নির্দেশ সকল প্রকার সফরের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য; এমনকি হজ্জের সফরের ক্ষেত্রেও। মাহরাম কোন পুরুষ তাদের সাথে না থাকলে দুশ্চরিত্রের লোকদের মনে তাদের প্রতি কুচিন্তা জাগ্রত হওয়া অসম্ভব কিছু নয়। এভাবে তারা তাদের পিছু নিতে পারে। আর নারীরা তো প্রকৃতিগতভাবেই দুর্বল। তারা তাদের মান, ইযযত, আব্রু নিয়ে সামান্যতেই বিব্রত বোধ করে। এমতাবস্থায় দুষ্টলোকেরা তাদের পিছু নিলে বাধা দেওয়া বা আত্মরক্ষামূলক কিছু করা তাদের জন্য কষ্টকর তো বটেই।
অনেক মহিলাকে বিমান কিংবা অন্য যানবাহনে উঠার সময় বিদায় জানাতে দু’একজন মাহরাম নিকটজন হাযির থাকে, আবার তাকে স্বাগত জানাতেও এমন দু’একজন হাযির থাকে। কিন্তু পুরো সফরে তার পাশে থাকে কে? যদি বিমানে কোন ত্রুটি দেখা দেয় এবং তা অন্য কোন বিমানবন্দরে অবতরণে বাধ্য হয়, কিংবা নির্দিষ্ট বিমানবন্দরে অবতরণে বিলম্ব ঘটে বা উড্ডয়নের সময়সূচী পরিবর্তন হয়, তাহলে তখন অবস্থা কি দাঁড়াবে? ট্রেন, বাস, স্টীমার প্রভৃতি সফরেও এরূপ ঘটনা হর-হামেশা ঘটে। তখন কী যে অবস্থার সৃষ্টি হয় তা ভুক্তভোগী ছাড়া বুঝিয়ে বলা কষ্টকর। সুতরাং সাথে একজন মাহরাম পুরুষ থাকা একান্ত দরকার, যে তার পাশে বসবে এবং আপদে-বিপদে ও উঠা-নামায় সাহায্য করবে।
মাহরাম হওয়ার জন্য চারটি শর্ত রয়েছে। যথা- মুসলমান হওয়া, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া, সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন হওয়া ও পুরুষ হওয়া। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, أَبُوهَا أَوِ ابْنُهَا أَوْ زَوْجُهَا أَوْ أَخُوهَا أَوْ ذُو مَحْرَمٍ مِنْهَا ... ‘মহিলার পিতা, তার পুত্র, তার স্বামী, তার ভাই অথবা তার কোন মাহরাম পুরুষ তার সঙ্গে থাকবে’।[2]
[1]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৫১৫ ‘হজ্জ’ অধ্যায়।
[2]. মুসলিম হা/১৩৪০।
আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ -
‘হে নবী! আপনি মুমিনদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নীচু করে রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানকে হেফাযত করে। এ ব্যবস্থা তাদের জন্য পবিত্রতর। নিশ্চয়ই তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত আছেন’ (নূর ৩০)।
মহানবী (ছাঃ) বলেছেন, زِنَا الْعَيْنِ النَّظَرُ ‘চোখের যিনা দৃষ্টিপাত’।[1]
অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা যে সব স্ত্রীলোককে দেখা হারাম করে দিয়েছেন তাদেরকে দেখা হল চোখের যিনা। তবে শারঈ অনুমোদন রয়েছে এমন সব প্রয়োজনে তাদের প্রতি তাকানো যাবে এবং যতটুকু দেখা দরকার তা দেখা যাবে। যেমন বিবাহের জন্য কনে দেখা ও ডাক্তার কর্তৃক রুগিণীকে দেখা নিষিদ্ধ নয়।
পুরুষদের ন্যায় মহিলারাও বেগানা পুরুষের পানে কুমতলবে তাকাতে পারবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ
‘হে নবী! আপনি বিশ্বাসী রমণীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নীচু রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থান হেফাযত করে’ (নূর ৩১)।
অনুরূপভাবে পুরুষের সতর পুরুষের দেখা এবং নারীর সতর নারী কর্তৃক দেখাও হারাম। আর যে সতর দেখা জায়েয নেই তা স্পর্শ করাও জায়েয নেই। এমনকি কোন আবরণ যোগে হলেও জায়েয নেই।
কিছু লোক শয়তানী ফেরেবে পড়ে পত্র-পত্রিকা ও সিনেমার ছবি দেখে থাকে। তাদের দাবী, ‘এসব ছবির কোন বাস্তবতা নেই। সুতরাং এগুলি দেখলে দোষ হবে না’। অথচ এগুলির ক্ষতিকর এবং যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী প্রভাব খুবই স্পষ্ট। সুতরাং এগুলিও যে হারাম তাতে কোন সন্দেহ নেই।
[1]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৮৬।
قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ -
‘হে নবী! আপনি মুমিনদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নীচু করে রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানকে হেফাযত করে। এ ব্যবস্থা তাদের জন্য পবিত্রতর। নিশ্চয়ই তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত আছেন’ (নূর ৩০)।
মহানবী (ছাঃ) বলেছেন, زِنَا الْعَيْنِ النَّظَرُ ‘চোখের যিনা দৃষ্টিপাত’।[1]
অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা যে সব স্ত্রীলোককে দেখা হারাম করে দিয়েছেন তাদেরকে দেখা হল চোখের যিনা। তবে শারঈ অনুমোদন রয়েছে এমন সব প্রয়োজনে তাদের প্রতি তাকানো যাবে এবং যতটুকু দেখা দরকার তা দেখা যাবে। যেমন বিবাহের জন্য কনে দেখা ও ডাক্তার কর্তৃক রুগিণীকে দেখা নিষিদ্ধ নয়।
পুরুষদের ন্যায় মহিলারাও বেগানা পুরুষের পানে কুমতলবে তাকাতে পারবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ
‘হে নবী! আপনি বিশ্বাসী রমণীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নীচু রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থান হেফাযত করে’ (নূর ৩১)।
অনুরূপভাবে পুরুষের সতর পুরুষের দেখা এবং নারীর সতর নারী কর্তৃক দেখাও হারাম। আর যে সতর দেখা জায়েয নেই তা স্পর্শ করাও জায়েয নেই। এমনকি কোন আবরণ যোগে হলেও জায়েয নেই।
কিছু লোক শয়তানী ফেরেবে পড়ে পত্র-পত্রিকা ও সিনেমার ছবি দেখে থাকে। তাদের দাবী, ‘এসব ছবির কোন বাস্তবতা নেই। সুতরাং এগুলি দেখলে দোষ হবে না’। অথচ এগুলির ক্ষতিকর এবং যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী প্রভাব খুবই স্পষ্ট। সুতরাং এগুলিও যে হারাম তাতে কোন সন্দেহ নেই।
[1]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৮৬।
যে নারী বা পুরুষ পর্দা মানে না তাকে ‘দাইয়ূছ’ বলা হয়। ইবনু ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
ثَلاَثَةٌ قَدْ حَرَّمَ اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى عَلَيْهِمُ الْجَنَّةَ : مُدْمِنُ الْخَمْرِ وَالْعَاقُّ وَالدَّيُّوثُ الَّذِى يُقِرُّ فِى أَهْلِهِ الْخُبْثَ -
‘তিন ব্যক্তির জন্য আল্লাহ জান্নাত হারাম করেছেন। লাগাতার শরাব পানকারী, মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান এবং দাইয়ূছ, যে নিজ পরিবারের মধ্যে বেহায়াপনাকে জিইয়ে রাখে’।[1]
আমাদের যুগে পর্দাহীনতার নিত্যনতুন সংস্করণ বের হচ্ছে। বাড়ীতে কন্যা কিংবা স্ত্রীকে একজন বেগানা পুরুষের পাশে বসে আলাপ করতে দেখেও বাড়ীর কর্তা পুরুষটি কিছুই বলেন না। বরং তিনি যেন এরূপ একাকী আলাপে খুশীই হন। মহিলাদের কোন বেগানা পুরুষের সাথে একাকী বাইরে যাওয়াও দাইয়ূছী। ড্রাইভারের সাথে অনেক স্ত্রীলোককে এভাবে একাকী বাইরে যেতে দেখা যায়। বিনা পর্দায় তাদেরকে বাইরে যেতে দেওয়াও দাইয়ূছী। এভাবে বাইরে বের হলে পুরুষের লোলুপ দৃষ্টি তাদের প্রতি পড়ে।
আবার ফিল্ম কিংবা যে সকল পত্রিকা পরিবেশকে কলুষিত করে ও অশ্লীলতার বিস্তার ঘটায় সেগুলি আমদানী করা এবং বাড়ীতে স্থান দেয়াও দাইয়ূছী। সুতরাং এসব হারাম থেকে আমাদের অবশ্যই বেঁচে থাকতে হবে।
[1]. আহমাদ, নাসাঈ; মিশকাত হা/৩৬৫৫।
ثَلاَثَةٌ قَدْ حَرَّمَ اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى عَلَيْهِمُ الْجَنَّةَ : مُدْمِنُ الْخَمْرِ وَالْعَاقُّ وَالدَّيُّوثُ الَّذِى يُقِرُّ فِى أَهْلِهِ الْخُبْثَ -
‘তিন ব্যক্তির জন্য আল্লাহ জান্নাত হারাম করেছেন। লাগাতার শরাব পানকারী, মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান এবং দাইয়ূছ, যে নিজ পরিবারের মধ্যে বেহায়াপনাকে জিইয়ে রাখে’।[1]
আমাদের যুগে পর্দাহীনতার নিত্যনতুন সংস্করণ বের হচ্ছে। বাড়ীতে কন্যা কিংবা স্ত্রীকে একজন বেগানা পুরুষের পাশে বসে আলাপ করতে দেখেও বাড়ীর কর্তা পুরুষটি কিছুই বলেন না। বরং তিনি যেন এরূপ একাকী আলাপে খুশীই হন। মহিলাদের কোন বেগানা পুরুষের সাথে একাকী বাইরে যাওয়াও দাইয়ূছী। ড্রাইভারের সাথে অনেক স্ত্রীলোককে এভাবে একাকী বাইরে যেতে দেখা যায়। বিনা পর্দায় তাদেরকে বাইরে যেতে দেওয়াও দাইয়ূছী। এভাবে বাইরে বের হলে পুরুষের লোলুপ দৃষ্টি তাদের প্রতি পড়ে।
আবার ফিল্ম কিংবা যে সকল পত্রিকা পরিবেশকে কলুষিত করে ও অশ্লীলতার বিস্তার ঘটায় সেগুলি আমদানী করা এবং বাড়ীতে স্থান দেয়াও দাইয়ূছী। সুতরাং এসব হারাম থেকে আমাদের অবশ্যই বেঁচে থাকতে হবে।
[1]. আহমাদ, নাসাঈ; মিশকাত হা/৩৬৫৫।
কোন মুসলমানের জন্য স্বীয় পিতা ব্যতীত অন্যকে পিতা বলে পরিচয় দেওয়া শরী‘আতে বৈধ নয়। অনুরূপভাবে এক গোত্রের লোক হয়ে নিজেকে অন্য গোত্রের লোক বলে দাবী করাও জায়েয নয়। বস্ত্তগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য অনেকে এভাবে অপরকে নিজের পিতা হিসাবে পরিচয় দিয়ে থাকে। সরকারী তালিকায় তাদের মিথ্যা বংশ পরিচয় তুলে ধরে। শৈশবে যে পিতা তাকে ত্যাগ করেছে তার প্রতি বিদ্বেষবশতঃ অনেকে লালন-পালনকারীকে পিতা বলে ডাকে। কিন্তু এসবই হারাম। এর ফলে নানাক্ষেত্রে বিশৃংখলা দেখা দেয়। যেমন মাহরাম পুরুষ, মীরাছ, বিয়ে-শাদী ইত্যাদির বিধানে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়। হযরত সা‘দ ও আবু বাকরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হতে বর্ণনা করেন,
مَنِ ادَّعَى إِلَى غَيْرِ أَبِيهِ ، وَهُوَ يَعْلَمُ أَنَّهُ غَيْرُ أَبِيهِ ، فَالْجَنَّةُ عَلَيْهِ حَرَامٌ -
‘জেনে-শুনে যে নিজ পিতা ব্যতীত অন্যকে পিতা বলে পরিচয় দেয়, তার উপর জান্নাত হারাম’।[1]
যে সকল নিয়ম ও কাজ বংশকে অর্থহীন করে তোলে কিংবা মিথ্যা সাব্যস্ত করে শরী‘আতে এগুলি সবই হারাম। কেউ আছে, স্ত্রীর সাথে ঝগড়া বাঁধলে একেবারে দিশাহীন হয়ে তার বিরুদ্ধে যিনার অপবাদ আনয়ন করে এবং কোন প্রমাণ ছাড়াই নিজ সন্তানের পরিচয় অস্বীকার করে; অথচ সে ভালমতই জানে যে, সন্তানটি তারই ঔরসে জন্ম নিয়েছে। আবার অনেক মহিলা আছে, যারা স্বামীর আমানতের খেয়ানত করে অন্যের দ্বারা গর্ভবতী হয় এবং সেই জারজকে স্বামীর বৈধ সন্তান হিসাবে তার বংশভুক্ত করে দেয়। এসবই হারাম। এ বিষয়ে কঠোর তিরস্কার উচ্চারিত হয়েছে। লি‘আনের আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
أَيُّمَا امْرَأَةٍ أَدْخَلَتْ عَلَى قَوْمٍ مَنْ لَيْسَ مِنْهُمْ فَلَيْسَتْ مِنَ اللهِ فِى شَىْءٍ وَلَنْ يُدْخِلَهَا اللهُ جَنَّتَهُ وَأَيُّمَا رَجُلٍ جَحَدَ وَلَدَهُ وَهُوَ يَنْظُرُ إِلَيْهِ احْتَجَبَ اللهُ مِنْهُ وَفَضَحَهُ عَلَى رُءُوسِ الأَوَّلِينَ وَالآخِرِينَ -
‘যে মহিলা কোন সন্তানকে এমন কোন গোত্রভুক্ত করে দেয় যে আসলে ঐ গোত্রভুক্ত নয়, আল্লাহর নিকট তার কোনই মূল্য নেই এবং আল্লাহ তাকে কখনই জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না। আর যে পুরুষ জেনে-শুনে নিজ সন্তানের পিতৃত্ব অস্বীকার করবে আল্লাহ তার থেকে পর্দা করে নিবেন এবং পূর্ববর্তী-পরবর্তী সকল লোকের সামনে তাকে অপদস্থ করবেন’।[2]
[1]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৩৩১৪।
[2]. আবুদাঊদ হা/২২৬৩; মিশকাত হা/৩৩১৬, সনদ যঈফ।
مَنِ ادَّعَى إِلَى غَيْرِ أَبِيهِ ، وَهُوَ يَعْلَمُ أَنَّهُ غَيْرُ أَبِيهِ ، فَالْجَنَّةُ عَلَيْهِ حَرَامٌ -
‘জেনে-শুনে যে নিজ পিতা ব্যতীত অন্যকে পিতা বলে পরিচয় দেয়, তার উপর জান্নাত হারাম’।[1]
যে সকল নিয়ম ও কাজ বংশকে অর্থহীন করে তোলে কিংবা মিথ্যা সাব্যস্ত করে শরী‘আতে এগুলি সবই হারাম। কেউ আছে, স্ত্রীর সাথে ঝগড়া বাঁধলে একেবারে দিশাহীন হয়ে তার বিরুদ্ধে যিনার অপবাদ আনয়ন করে এবং কোন প্রমাণ ছাড়াই নিজ সন্তানের পরিচয় অস্বীকার করে; অথচ সে ভালমতই জানে যে, সন্তানটি তারই ঔরসে জন্ম নিয়েছে। আবার অনেক মহিলা আছে, যারা স্বামীর আমানতের খেয়ানত করে অন্যের দ্বারা গর্ভবতী হয় এবং সেই জারজকে স্বামীর বৈধ সন্তান হিসাবে তার বংশভুক্ত করে দেয়। এসবই হারাম। এ বিষয়ে কঠোর তিরস্কার উচ্চারিত হয়েছে। লি‘আনের আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
أَيُّمَا امْرَأَةٍ أَدْخَلَتْ عَلَى قَوْمٍ مَنْ لَيْسَ مِنْهُمْ فَلَيْسَتْ مِنَ اللهِ فِى شَىْءٍ وَلَنْ يُدْخِلَهَا اللهُ جَنَّتَهُ وَأَيُّمَا رَجُلٍ جَحَدَ وَلَدَهُ وَهُوَ يَنْظُرُ إِلَيْهِ احْتَجَبَ اللهُ مِنْهُ وَفَضَحَهُ عَلَى رُءُوسِ الأَوَّلِينَ وَالآخِرِينَ -
‘যে মহিলা কোন সন্তানকে এমন কোন গোত্রভুক্ত করে দেয় যে আসলে ঐ গোত্রভুক্ত নয়, আল্লাহর নিকট তার কোনই মূল্য নেই এবং আল্লাহ তাকে কখনই জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না। আর যে পুরুষ জেনে-শুনে নিজ সন্তানের পিতৃত্ব অস্বীকার করবে আল্লাহ তার থেকে পর্দা করে নিবেন এবং পূর্ববর্তী-পরবর্তী সকল লোকের সামনে তাকে অপদস্থ করবেন’।[2]
[1]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৩৩১৪।
[2]. আবুদাঊদ হা/২২৬৩; মিশকাত হা/৩৩১৬, সনদ যঈফ।
আল্লাহ তা‘আলা সূদখোর ব্যতীত আর কারো বিরুদ্ধে স্বয়ং যুদ্ধের ঘোষণা দেননি। তিনি বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَذَرُوا مَا بَقِيَ مِنَ الرِّبَا إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ- فَإِنْ لَمْ تَفْعَلُوا فَأْذَنُوا بِحَرْبٍ مِنَ اللهِ وَرَسُولِهِ -
‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সূদের যা অবশিষ্ট আছে, তা পরিত্যাগ কর যদি তোমরা ঈমানদার হও। আর যদি তোমরা তা না কর, তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ হতে যুদ্ধের ঘোষণা শোন’ (বাক্বারাহ ২৭৮-২৭৯)।
আল্লাহর নিকট সূদ খাওয়া যে কত মারাত্মক অপরাধ তা অনুধাবনের জন্য উক্ত আয়াতদ্বয়ই যথেষ্ট। সূদবৃত্তি দারিদ্র্য, মন্দা, ঋণ পরিশোধে অক্ষমতা, অর্থনৈতিক স্থবিরতা, বেকারত্ব বৃদ্ধি, বহু কোম্পানী ও প্রতিষ্ঠানের দেউলিয়াত্ব ইত্যাদির ন্যায় কত যে জঘন্য ক্ষতি ও ধ্বংসের দিকে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রকে ঠেলে দিচ্ছে তা পর্যবেক্ষক মাত্রই অনুধাবন করতে সক্ষম। প্রতিদিনের ঘাম ঝরানো শ্রমের বিনিময়ে যা অর্জিত হয়, সূদের অতলগহবর পূরণেই তা নিঃশেষ হয়ে যায়। সূদের ফলে সমাজে একটি বিশেষ শ্রেণীর উদ্ভব হয়। মুষ্টিমেয় কিছু লোকের হাতে ব্যাপক সম্পদ পুঞ্জীভূত হয়ে পড়ে। সম্ভবতঃ এসব কারণেই আল্লাহ তা‘আলা সূদীকারবারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন।
সূদী কারবারে মূল দু’পক্ষ, মধ্যস্থতাকারী, সহযোগিতাকারী ইত্যাকার যারাই এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, তারা সবাই মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর যবানীতে অভিশপ্ত। জাবির (রাঃ) বলেন,
لَعَنَ رَسُولُ اللهِ صَلىَّ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ آكِلَ الرِّبَا وَمُوكِلَهُ وَكَاتِبَهُ وَشَاهِدَيْهِ وَقَالَ هُمْ سَوَاءٌ -
‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সূদ গ্রহীতা, সূদ দাতা, সূদের লেখক এবং তার সাক্ষীদ্বয়কে অভিসম্পাত করেছেন। তিনি বলেছেন, তারা সবাই সমান অপরাধী’।[1]
এ কারণেই সূদ লিপিবদ্ধ করা, এর আদান-প্রদানে সহায়তা করা, সূদী দ্রব্য গচ্ছিত রাখা ও এর পাহারাদারীর কাজে নিযুক্ত হওয়া জায়েয নেই। মোটকথা, সূদের কাজে অংশগ্রহণ ও যেকোনভাবে এর সাহায্য-সহযোগিতা করা হারাম।
নবী করীম (ছাঃ) এই মহাঅপরাধের কদর্যতা ফুটিয়ে তুলতে বড়ই আগ্রহী ছিলেন। আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
اَلرِّبَا ثَلاَثَةٌ وَسَبْعُونَ بَابًا أَيْسَرُهَا مِثْلُ أَنْ يَنْكِحَ اَلرَّجُلُ أُمَّهُ، وَإِنَّ أَرْبَى اَلرِّبَا عِرْضُ الرَّجُلِ الْمُسْلِمِ -
‘সূদের ৭৩টি দ্বার বা স্তর রয়েছে। তন্মধ্যে সহজতর স্তর হ’ল, নিজ মায়ের সাথে ব্যভিচারের সমতুল্য। আর সবচেয়ে কঠিনতম স্তর হল, মুসলিম ব্যক্তির মানহানি’।[2]
আব্দুল্লাহ বিন হানযালা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, دِرْهَمُ رِبًا يَأْكُلُهُ الرَّجُلُ وَهُوَ يَعْلَمُ أَشَدُّ مِنْ سِتَّةٍ وَثَلاَثِينَ زَنْيَةً ‘জেনেশুনে কোন লোকের সূদের এক টাকা ভক্ষণ করা ৩৬ বার ব্যভিচার করা থেকেও কঠিন’।[3]
সূদ ধনী-গরীব নির্বিশেষে সবার জন্য সর্বদা হারাম। সবাইকে তা পরিহার করতে হবে। কত ধনিক-বণিক যে এই সূদের কারণে দেউলিয়া হয়ে গেছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। সূদের সর্বনিম্ন ক্ষতি হল, মালের বরকত উঠে যাবে, পরিমাণে তা যতই স্ফীত হৌক না কেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, اَلرِّبَا وَإِنْ كَثُرَ فَإِنَّ عَاقِبَتَهُ تَصِيرُ إِلَى قُلٍّ ‘সূদের দ্বারা সম্পদ যতই বৃদ্ধি পাক না কেন তার শেষ পরিণতি হ’ল নিঃস্বতা’।[4] সূদের হার কমই হোক আর চড়াই হোক সবই হারাম।
যেমন করে শয়তান দুনিয়াতে তার স্পর্শে কাউকে পাগল করে দেয়, তেমনি সূদখোর ব্যক্তি পাগল হয়ে হাশরের ময়দানে উত্থিত হবে (বাক্বারা ২/২৭৫)। যদিও সূদের লেনদেন গুরুতর অন্যায় তবুও মহান রাববুল আলামীন দয়াপরবশ হয়ে বান্দাকে তা থেকে তওবার উপায় বলে দিয়েছেন। তিনি বলেন,
وَإِنْ تُبْتُمْ فَلَكُمْ رُءُوسُ أَمْوَالِكُمْ لاَ تَظْلِمُونَ وَلاَ تُظْلَمُونَ -
‘যদি তোমরা তওবা কর, তবে তোমরা তোমাদের মূলধন ফিরে পাবে। তোমরা না অত্যাচার করবে, আর না অত্যাচারিত হবে’ (বাক্বারাহ ২৭৯)।
মুমিনের অন্তরে সূদের প্রতি ঘৃণা এবং তার খারাপ দিকগুলি সম্পর্কে তীব্র অনুভূতি থাকা একান্ত আবশ্যক। এমনকি যারা টাকা-পয়সা ও মূল্যবান সম্পদ চুরি হয়ে যাওয়া কিংবা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ভয়ে সূদী ব্যাংকে জমা রাখে, তাদের মধ্যেও নিতান্ত দায়েপড়া ব্যক্তির ন্যায় অনুভূতি থাকতে হবে, যেন তারা মৃত জীব ভক্ষণ কিংবা তার থেকেও কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে। তাই তারা সব সময় আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে এবং সূদী ব্যাংকের বিকল্প সূদবিহীন ভাল কোন উপায় অবলম্বনের চেষ্টা করবে। তাদের আমানতের বিপরীতে সূদী ব্যাংকের নিকট সূদ দাবী করা জায়েয হবে না; বরং যদি সূদ তাদের হিসাবে যুক্ত করে দেওয়া হয়, তাহলে জায়েয উপায়ে তার থেকে নিষ্কৃতি লাভের চেষ্টা করবে, উহা (ছওয়াবের নিয়তে) দান করবে না। কেননা আল্লাহ পবিত্র। পবিত্র বস্ত্ত ছাড়া তিনি দানের স্বীকৃতি দেন না। নিজের কোন কাজে সূদের অর্থ ব্যয় করা যাবে না। না পানাহারে, না পরিধেয়ে, না সওয়ারীতে, না বাড়ী-ঘর তৈরীতে, না পুত্র-পরিজন, স্বামী-স্ত্রী, মাতা-পিতার ভরণ-পোষণে, না যাকাত আদায়ে, না ট্যাক্স পরিশোধে, না নিজের উপর অন্যায়ভাবে আরোপিত অর্থ পরিশোধে। সূদের অর্থ কেবল আল্লাহর শাস্তির ভয়ে দায় মুক্তির জন্য এমনিতেই কাউকে দিয়ে দিতে হবে।
[1]. মুসলিম; মিশকাত হা/২৮০৭।
[2]. মুস্তাদরাকে হাকেম হা/২২৫৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৫৩৯।
[3]. আহমাদ; মিশকাত হা/২৮২৫।
[4]. ইবনু মাজাহ, আহমাদ; মিশকাত হা/২৮২৭।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَذَرُوا مَا بَقِيَ مِنَ الرِّبَا إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ- فَإِنْ لَمْ تَفْعَلُوا فَأْذَنُوا بِحَرْبٍ مِنَ اللهِ وَرَسُولِهِ -
‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সূদের যা অবশিষ্ট আছে, তা পরিত্যাগ কর যদি তোমরা ঈমানদার হও। আর যদি তোমরা তা না কর, তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ হতে যুদ্ধের ঘোষণা শোন’ (বাক্বারাহ ২৭৮-২৭৯)।
আল্লাহর নিকট সূদ খাওয়া যে কত মারাত্মক অপরাধ তা অনুধাবনের জন্য উক্ত আয়াতদ্বয়ই যথেষ্ট। সূদবৃত্তি দারিদ্র্য, মন্দা, ঋণ পরিশোধে অক্ষমতা, অর্থনৈতিক স্থবিরতা, বেকারত্ব বৃদ্ধি, বহু কোম্পানী ও প্রতিষ্ঠানের দেউলিয়াত্ব ইত্যাদির ন্যায় কত যে জঘন্য ক্ষতি ও ধ্বংসের দিকে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রকে ঠেলে দিচ্ছে তা পর্যবেক্ষক মাত্রই অনুধাবন করতে সক্ষম। প্রতিদিনের ঘাম ঝরানো শ্রমের বিনিময়ে যা অর্জিত হয়, সূদের অতলগহবর পূরণেই তা নিঃশেষ হয়ে যায়। সূদের ফলে সমাজে একটি বিশেষ শ্রেণীর উদ্ভব হয়। মুষ্টিমেয় কিছু লোকের হাতে ব্যাপক সম্পদ পুঞ্জীভূত হয়ে পড়ে। সম্ভবতঃ এসব কারণেই আল্লাহ তা‘আলা সূদীকারবারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন।
সূদী কারবারে মূল দু’পক্ষ, মধ্যস্থতাকারী, সহযোগিতাকারী ইত্যাকার যারাই এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, তারা সবাই মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর যবানীতে অভিশপ্ত। জাবির (রাঃ) বলেন,
لَعَنَ رَسُولُ اللهِ صَلىَّ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ آكِلَ الرِّبَا وَمُوكِلَهُ وَكَاتِبَهُ وَشَاهِدَيْهِ وَقَالَ هُمْ سَوَاءٌ -
‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সূদ গ্রহীতা, সূদ দাতা, সূদের লেখক এবং তার সাক্ষীদ্বয়কে অভিসম্পাত করেছেন। তিনি বলেছেন, তারা সবাই সমান অপরাধী’।[1]
এ কারণেই সূদ লিপিবদ্ধ করা, এর আদান-প্রদানে সহায়তা করা, সূদী দ্রব্য গচ্ছিত রাখা ও এর পাহারাদারীর কাজে নিযুক্ত হওয়া জায়েয নেই। মোটকথা, সূদের কাজে অংশগ্রহণ ও যেকোনভাবে এর সাহায্য-সহযোগিতা করা হারাম।
নবী করীম (ছাঃ) এই মহাঅপরাধের কদর্যতা ফুটিয়ে তুলতে বড়ই আগ্রহী ছিলেন। আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
اَلرِّبَا ثَلاَثَةٌ وَسَبْعُونَ بَابًا أَيْسَرُهَا مِثْلُ أَنْ يَنْكِحَ اَلرَّجُلُ أُمَّهُ، وَإِنَّ أَرْبَى اَلرِّبَا عِرْضُ الرَّجُلِ الْمُسْلِمِ -
‘সূদের ৭৩টি দ্বার বা স্তর রয়েছে। তন্মধ্যে সহজতর স্তর হ’ল, নিজ মায়ের সাথে ব্যভিচারের সমতুল্য। আর সবচেয়ে কঠিনতম স্তর হল, মুসলিম ব্যক্তির মানহানি’।[2]
আব্দুল্লাহ বিন হানযালা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, دِرْهَمُ رِبًا يَأْكُلُهُ الرَّجُلُ وَهُوَ يَعْلَمُ أَشَدُّ مِنْ سِتَّةٍ وَثَلاَثِينَ زَنْيَةً ‘জেনেশুনে কোন লোকের সূদের এক টাকা ভক্ষণ করা ৩৬ বার ব্যভিচার করা থেকেও কঠিন’।[3]
সূদ ধনী-গরীব নির্বিশেষে সবার জন্য সর্বদা হারাম। সবাইকে তা পরিহার করতে হবে। কত ধনিক-বণিক যে এই সূদের কারণে দেউলিয়া হয়ে গেছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। সূদের সর্বনিম্ন ক্ষতি হল, মালের বরকত উঠে যাবে, পরিমাণে তা যতই স্ফীত হৌক না কেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, اَلرِّبَا وَإِنْ كَثُرَ فَإِنَّ عَاقِبَتَهُ تَصِيرُ إِلَى قُلٍّ ‘সূদের দ্বারা সম্পদ যতই বৃদ্ধি পাক না কেন তার শেষ পরিণতি হ’ল নিঃস্বতা’।[4] সূদের হার কমই হোক আর চড়াই হোক সবই হারাম।
যেমন করে শয়তান দুনিয়াতে তার স্পর্শে কাউকে পাগল করে দেয়, তেমনি সূদখোর ব্যক্তি পাগল হয়ে হাশরের ময়দানে উত্থিত হবে (বাক্বারা ২/২৭৫)। যদিও সূদের লেনদেন গুরুতর অন্যায় তবুও মহান রাববুল আলামীন দয়াপরবশ হয়ে বান্দাকে তা থেকে তওবার উপায় বলে দিয়েছেন। তিনি বলেন,
وَإِنْ تُبْتُمْ فَلَكُمْ رُءُوسُ أَمْوَالِكُمْ لاَ تَظْلِمُونَ وَلاَ تُظْلَمُونَ -
‘যদি তোমরা তওবা কর, তবে তোমরা তোমাদের মূলধন ফিরে পাবে। তোমরা না অত্যাচার করবে, আর না অত্যাচারিত হবে’ (বাক্বারাহ ২৭৯)।
মুমিনের অন্তরে সূদের প্রতি ঘৃণা এবং তার খারাপ দিকগুলি সম্পর্কে তীব্র অনুভূতি থাকা একান্ত আবশ্যক। এমনকি যারা টাকা-পয়সা ও মূল্যবান সম্পদ চুরি হয়ে যাওয়া কিংবা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ভয়ে সূদী ব্যাংকে জমা রাখে, তাদের মধ্যেও নিতান্ত দায়েপড়া ব্যক্তির ন্যায় অনুভূতি থাকতে হবে, যেন তারা মৃত জীব ভক্ষণ কিংবা তার থেকেও কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে। তাই তারা সব সময় আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে এবং সূদী ব্যাংকের বিকল্প সূদবিহীন ভাল কোন উপায় অবলম্বনের চেষ্টা করবে। তাদের আমানতের বিপরীতে সূদী ব্যাংকের নিকট সূদ দাবী করা জায়েয হবে না; বরং যদি সূদ তাদের হিসাবে যুক্ত করে দেওয়া হয়, তাহলে জায়েয উপায়ে তার থেকে নিষ্কৃতি লাভের চেষ্টা করবে, উহা (ছওয়াবের নিয়তে) দান করবে না। কেননা আল্লাহ পবিত্র। পবিত্র বস্ত্ত ছাড়া তিনি দানের স্বীকৃতি দেন না। নিজের কোন কাজে সূদের অর্থ ব্যয় করা যাবে না। না পানাহারে, না পরিধেয়ে, না সওয়ারীতে, না বাড়ী-ঘর তৈরীতে, না পুত্র-পরিজন, স্বামী-স্ত্রী, মাতা-পিতার ভরণ-পোষণে, না যাকাত আদায়ে, না ট্যাক্স পরিশোধে, না নিজের উপর অন্যায়ভাবে আরোপিত অর্থ পরিশোধে। সূদের অর্থ কেবল আল্লাহর শাস্তির ভয়ে দায় মুক্তির জন্য এমনিতেই কাউকে দিয়ে দিতে হবে।
[1]. মুসলিম; মিশকাত হা/২৮০৭।
[2]. মুস্তাদরাকে হাকেম হা/২২৫৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৫৩৯।
[3]. আহমাদ; মিশকাত হা/২৮২৫।
[4]. ইবনু মাজাহ, আহমাদ; মিশকাত হা/২৮২৭।
একবার রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বাজারের মধ্যে এক খাদ্যস্তূপের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি স্তূপের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে দিলে আঙ্গুলে আর্দ্রতা ধরা পড়ল। তিনি বিক্রেতাকে বললেন, ‘হে খাদ্য বিক্রেতা! ব্যাপার কি? সে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! এতে বৃষ্টির পানি লেগেছে’। তিনি বললেন, ‘তুমি এগুলো স্তূপের উপরিভাগে রাখলে না কেন? তাহলে লোকে দেখতে পেত। মনে রেখো যে প্রতারণা করে, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়’ ( مَنْ غَشَّ فَلَيْسَ مِنَّا )।[1]
আজকাল আল্লাহর প্রতি ভয়ভীতি শূন্য অনেক বিক্রেতাই ভাল পণ্যের সঙ্গে ত্রুটিযুক্ত কিংবা নিম্নমানের পণ্য মিশিয়ে বিক্রয় করে থাকে। কেউ কেউ ত্রুটিযুক্ত পণ্যগুলিকে গাইট কিংবা কন্টেইনারের নীচে রাখে। অনেকে রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে নিম্নমানের দ্রব্যকে বাহ্যদৃষ্টিতে উন্নতমানের ও আকর্ষণীয় করে তোলে। কেউ কেউ আবার পণ্য ব্যবহারের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার পর তা পরিবর্তন করে নতুন মেয়াদকালের ছাপ মেরে দেয়। কোন কোন বিক্রেতা ক্রেতাকে পণ্য নিরীক্ষণ ও যাচাই-বাছাই করতে দেয় না। মোটরগাড়ী, মেশিনারী যন্ত্রপাতি বিক্রেতাদেরও অনেকে রয়েছে, যারা ক্রেতাদের সামনে সেগুলির ত্রুটি ও অসুবিধা তুলে ধরে না।
উল্লিখিত পদ্ধতির সকল কেনা-বেচাই হারাম। নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, اَلْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ وَلاَ يَحِلُّ لِمُسْلِمٍ بَاعَ مِنْ أَخِيهِ بَيْعًا فِيْهِ عَيْبٌ إِلاَّ بَيَّنَهُ لَهُ ‘এক মুসলমান অন্য মুসলমানের ভাই। একজন মুসলমানের জন্য তার ভাইয়ের নিকট কোন ত্রুটিপূর্ণ পণ্য বিক্রয়ের সময় পণ্যের ক্রটি বর্ণনা না করা পর্যন্ত তা বিক্রয় করা বৈধ নয়’।[2]
অনেকে প্রকাশ্য নিলামে দ্রব্য বিক্রয়কালে ‘এটা অমুক জিনিস’ ‘এটা অমুক জিনিস’ এতটুকু বলেই অব্যাহতি পেতে চায়। দৃষ্টান্তস্বরূপ লোহার রড বিক্রেতা বলে ‘এটা লোহার গাদা’... ‘এটা লোহার গাদা’ ইত্যাদি। কিন্তু গাদার মধ্যে যে ত্রুটি আছে তা বলে না। তার এই বিক্রয় বরকতশূন্য হয়ে পড়বে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
اَلْبَيِّعَانِ بِالْخِيَارِ مَا لَمْ يَتَفَرَّقَا- فَإِنْ صَدَقَا وَبَيَّنَا بُورِكَ لَهُمَا فِى بَيْعِهِمَا ، وَإِنْ كَتَمَا وَكَذَبَا مُحِقَتْ بَرَكَةُ بَيْعِهِمَا -
‘দৈহিকভাবে পৃথক হওয়া কিংবা বিক্রয় প্রস্তাব ও গ্রহণে মতান্তর না হওয়া পর্যন্ত ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েরই বিক্রয় কার্যকর করার কিংবা বাতিল করার অধিকার থাকে। যদি তারা সত্য বলে ও দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করে, তবে তাদের কেনা-বেচায় বরকত হয়। আর যদি দু’জনে মিথ্যা বলে ও পণ্য বা মুদ্রার দোষ গোপন করে, তবে তাদের কেনা-বেচার বরকত নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়’।[3]
[1]. মুসলিম হা/১০২; মিশকাত হা/২৮৬০।
[2]. ইবনু মাজাহ হা/২২৪৬, সনদ ছহীহ।
[3]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/২৮০২।
আজকাল আল্লাহর প্রতি ভয়ভীতি শূন্য অনেক বিক্রেতাই ভাল পণ্যের সঙ্গে ত্রুটিযুক্ত কিংবা নিম্নমানের পণ্য মিশিয়ে বিক্রয় করে থাকে। কেউ কেউ ত্রুটিযুক্ত পণ্যগুলিকে গাইট কিংবা কন্টেইনারের নীচে রাখে। অনেকে রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে নিম্নমানের দ্রব্যকে বাহ্যদৃষ্টিতে উন্নতমানের ও আকর্ষণীয় করে তোলে। কেউ কেউ আবার পণ্য ব্যবহারের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার পর তা পরিবর্তন করে নতুন মেয়াদকালের ছাপ মেরে দেয়। কোন কোন বিক্রেতা ক্রেতাকে পণ্য নিরীক্ষণ ও যাচাই-বাছাই করতে দেয় না। মোটরগাড়ী, মেশিনারী যন্ত্রপাতি বিক্রেতাদেরও অনেকে রয়েছে, যারা ক্রেতাদের সামনে সেগুলির ত্রুটি ও অসুবিধা তুলে ধরে না।
উল্লিখিত পদ্ধতির সকল কেনা-বেচাই হারাম। নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, اَلْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ وَلاَ يَحِلُّ لِمُسْلِمٍ بَاعَ مِنْ أَخِيهِ بَيْعًا فِيْهِ عَيْبٌ إِلاَّ بَيَّنَهُ لَهُ ‘এক মুসলমান অন্য মুসলমানের ভাই। একজন মুসলমানের জন্য তার ভাইয়ের নিকট কোন ত্রুটিপূর্ণ পণ্য বিক্রয়ের সময় পণ্যের ক্রটি বর্ণনা না করা পর্যন্ত তা বিক্রয় করা বৈধ নয়’।[2]
অনেকে প্রকাশ্য নিলামে দ্রব্য বিক্রয়কালে ‘এটা অমুক জিনিস’ ‘এটা অমুক জিনিস’ এতটুকু বলেই অব্যাহতি পেতে চায়। দৃষ্টান্তস্বরূপ লোহার রড বিক্রেতা বলে ‘এটা লোহার গাদা’... ‘এটা লোহার গাদা’ ইত্যাদি। কিন্তু গাদার মধ্যে যে ত্রুটি আছে তা বলে না। তার এই বিক্রয় বরকতশূন্য হয়ে পড়বে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
اَلْبَيِّعَانِ بِالْخِيَارِ مَا لَمْ يَتَفَرَّقَا- فَإِنْ صَدَقَا وَبَيَّنَا بُورِكَ لَهُمَا فِى بَيْعِهِمَا ، وَإِنْ كَتَمَا وَكَذَبَا مُحِقَتْ بَرَكَةُ بَيْعِهِمَا -
‘দৈহিকভাবে পৃথক হওয়া কিংবা বিক্রয় প্রস্তাব ও গ্রহণে মতান্তর না হওয়া পর্যন্ত ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েরই বিক্রয় কার্যকর করার কিংবা বাতিল করার অধিকার থাকে। যদি তারা সত্য বলে ও দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করে, তবে তাদের কেনা-বেচায় বরকত হয়। আর যদি দু’জনে মিথ্যা বলে ও পণ্য বা মুদ্রার দোষ গোপন করে, তবে তাদের কেনা-বেচার বরকত নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়’।[3]
[1]. মুসলিম হা/১০২; মিশকাত হা/২৮৬০।
[2]. ইবনু মাজাহ হা/২২৪৬, সনদ ছহীহ।
[3]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/২৮০২।
এমন অনেক লোক আছে যাদের পণ্য কেনার মোটেও ইচ্ছা নেই। কিন্তু অন্য লোকে যাতে ঐ পণ্য বেশী দামে কিনতে উদ্বুদ্ধ হয় সেজন্য পণ্যের পাশে ঘুরাঘুরি করে ও বাড়িয়ে বাড়িয়ে দাম বলতে থাকে। এটাই প্রতারণামূলক দালালী।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, وَلاَ تَنَاجَشُوا ‘ক্রেতার ভান করে তোমরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিও না’।[1] এটা নিঃসন্দেহে এক শ্রেণীর প্রতারণা। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরও বলেন, اَلْمَكْرُ وَالْخَدِيعَةُ فِي النَّارِ ‘চালবাজী ও ধোঁকাবাজী জাহান্নামে নিয়ে যায়’।[2]
পশু বিক্রয়, নিলামে বিক্রয় ও গাড়ী প্রদর্শনীতে অনেক দালালকে দেখতে পাওয়া যায়, যাদের আয়-রোযগার সবই হারাম। কেননা এই উপার্জনের সাথে নানা রকম অবৈধ উপায় জড়িয়ে আছে। যেমন: প্রতারণামূলক দাম বৃদ্ধি বা মিথ্যা দালালী, ক্রেতার সাথে প্রতারণা, বিক্রেতাকে ধোঁকায় ফেলে পথিমধ্যেই তার পণ্য অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে খরীদ করা ইত্যাদি।
অনেক সময় বিক্রেতারা একে অপরের জন্য দালাল সাজে কিংবা দালাল নিয়োগ করে। তারা ক্রেতার বেশে খরিদ্দারদের মধ্যে ঢুকে পড়ে এবং পণ্যের দাম ক্রমাগত বাড়িয়ে দেয়। এভাবে তারা আল্লাহর বান্দাদেরকে ধোঁকা দেয় ও তাদেরকে কষ্টের মধ্যে নিক্ষেপ করে। যেসব দেশে নিলাম বিক্রয়ের প্রচলন রয়েছে, সেখানেই এরূপ দালালীর প্রবণতা বেশী দেখতে পাওয়া যায়।[3]
[1]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৫০২৮।
[2]. সিলসিলা ছহীহাহ হা/১০৫৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৭২৫।
[3]. এদেশের সরকারী টেন্ডার ক্রয়-বিক্রয়ে এক ধরনের দালালী লক্ষ্য করা যায়। কিছু ঠিকাদার নিজেদের মধ্যে সলাপরামর্শ করে পণ্যের যথোচিৎ মূল্য না হেঁকে সবাই ন্যূনতম দাম হাঁকে। ফলে কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে ঐ দামেই বিক্রয় করে নতুবা টেন্ডার বাতিল করে দেয়। অনেকে টেন্ডারদাতার সঙ্গে যোগসাজশে নিজ প্রতিষ্ঠানের সাথে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া দরপত্র দাখিল করে নিজের নামে তা করে নেয়। -অনুবাদক।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, وَلاَ تَنَاجَشُوا ‘ক্রেতার ভান করে তোমরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিও না’।[1] এটা নিঃসন্দেহে এক শ্রেণীর প্রতারণা। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরও বলেন, اَلْمَكْرُ وَالْخَدِيعَةُ فِي النَّارِ ‘চালবাজী ও ধোঁকাবাজী জাহান্নামে নিয়ে যায়’।[2]
পশু বিক্রয়, নিলামে বিক্রয় ও গাড়ী প্রদর্শনীতে অনেক দালালকে দেখতে পাওয়া যায়, যাদের আয়-রোযগার সবই হারাম। কেননা এই উপার্জনের সাথে নানা রকম অবৈধ উপায় জড়িয়ে আছে। যেমন: প্রতারণামূলক দাম বৃদ্ধি বা মিথ্যা দালালী, ক্রেতার সাথে প্রতারণা, বিক্রেতাকে ধোঁকায় ফেলে পথিমধ্যেই তার পণ্য অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে খরীদ করা ইত্যাদি।
অনেক সময় বিক্রেতারা একে অপরের জন্য দালাল সাজে কিংবা দালাল নিয়োগ করে। তারা ক্রেতার বেশে খরিদ্দারদের মধ্যে ঢুকে পড়ে এবং পণ্যের দাম ক্রমাগত বাড়িয়ে দেয়। এভাবে তারা আল্লাহর বান্দাদেরকে ধোঁকা দেয় ও তাদেরকে কষ্টের মধ্যে নিক্ষেপ করে। যেসব দেশে নিলাম বিক্রয়ের প্রচলন রয়েছে, সেখানেই এরূপ দালালীর প্রবণতা বেশী দেখতে পাওয়া যায়।[3]
[1]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৫০২৮।
[2]. সিলসিলা ছহীহাহ হা/১০৫৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৭২৫।
[3]. এদেশের সরকারী টেন্ডার ক্রয়-বিক্রয়ে এক ধরনের দালালী লক্ষ্য করা যায়। কিছু ঠিকাদার নিজেদের মধ্যে সলাপরামর্শ করে পণ্যের যথোচিৎ মূল্য না হেঁকে সবাই ন্যূনতম দাম হাঁকে। ফলে কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে ঐ দামেই বিক্রয় করে নতুবা টেন্ডার বাতিল করে দেয়। অনেকে টেন্ডারদাতার সঙ্গে যোগসাজশে নিজ প্রতিষ্ঠানের সাথে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া দরপত্র দাখিল করে নিজের নামে তা করে নেয়। -অনুবাদক।
আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلاَةِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ -
‘হে ঈমানদারগণ! জুম‘আ দিবসে যখন ছালাতের জন্য আহবান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও এবং বেচা-কেনা ছেড়ে দাও। এটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর যদি তোমরা জ্ঞান রাখ’ (জুম‘আ ৯)।
অত্র আয়াতদৃষ্টে আলিমগণ আযান হতে ফরয ছালাত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেনা-বেচা ও অন্যান্য সকল কাজকর্ম হারাম বলে উল্লেখ করেছেন। অনেক দোকানদারকে দেখা যায় তারা আযানের সময়ও নিজেদের দোকানে কিংবা মসজিদের সামনে কেনা-বেচা চালিয়ে যেতে থাকে। যারা এ সময় কেনা-কাটায় অংশ নেয়, তারাও তাদের সাথে পাপে শরীক হয়। এমনকি তুচ্ছ একটি মিসওয়াক কেনা-বেচা করলেও ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই তাতে গোনাহগার হবে। আলিমগণের জোরালো মতানুসারে এ সময়ের কেনা-বেচা বাতিল বলে গণ্য হবে।
অনেক হোটেল, বেকারী, ফ্যাক্টরী, কলকারখানা ইত্যাদির লোকেরা জুম‘আর ছালাতের সময় তাদের শ্রমিকদের কাজ চালিয়ে যেতে বাধ্য করে। তাতে বাহ্যতঃ তাদের কিছু লাভ দেখা গেলেও প্রকৃত প্রস্তাবে ক্ষতিই বৃদ্ধি পায়। এক্ষেত্রে শ্রমিকদের রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিম্নোক্ত উক্তি মোতাবেক আমল করা কর্তব্য - لاَ طَاعَةَ لِمَخْلُوقٍ في مَعْصِيَةِ الخَالِقِ ‘স্রষ্টার অবাধ্যতায় সৃষ্টির কোন আনুগত্য নেই’।[1]
[1]. বুখারী, মুসলিম, আহমাদ হা/১১৬৫; মিশকাত হা/৩৬৯৬।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلاَةِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ -
‘হে ঈমানদারগণ! জুম‘আ দিবসে যখন ছালাতের জন্য আহবান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও এবং বেচা-কেনা ছেড়ে দাও। এটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর যদি তোমরা জ্ঞান রাখ’ (জুম‘আ ৯)।
অত্র আয়াতদৃষ্টে আলিমগণ আযান হতে ফরয ছালাত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেনা-বেচা ও অন্যান্য সকল কাজকর্ম হারাম বলে উল্লেখ করেছেন। অনেক দোকানদারকে দেখা যায় তারা আযানের সময়ও নিজেদের দোকানে কিংবা মসজিদের সামনে কেনা-বেচা চালিয়ে যেতে থাকে। যারা এ সময় কেনা-কাটায় অংশ নেয়, তারাও তাদের সাথে পাপে শরীক হয়। এমনকি তুচ্ছ একটি মিসওয়াক কেনা-বেচা করলেও ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই তাতে গোনাহগার হবে। আলিমগণের জোরালো মতানুসারে এ সময়ের কেনা-বেচা বাতিল বলে গণ্য হবে।
অনেক হোটেল, বেকারী, ফ্যাক্টরী, কলকারখানা ইত্যাদির লোকেরা জুম‘আর ছালাতের সময় তাদের শ্রমিকদের কাজ চালিয়ে যেতে বাধ্য করে। তাতে বাহ্যতঃ তাদের কিছু লাভ দেখা গেলেও প্রকৃত প্রস্তাবে ক্ষতিই বৃদ্ধি পায়। এক্ষেত্রে শ্রমিকদের রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিম্নোক্ত উক্তি মোতাবেক আমল করা কর্তব্য - لاَ طَاعَةَ لِمَخْلُوقٍ في مَعْصِيَةِ الخَالِقِ ‘স্রষ্টার অবাধ্যতায় সৃষ্টির কোন আনুগত্য নেই’।[1]
[1]. বুখারী, মুসলিম, আহমাদ হা/১১৬৫; মিশকাত হা/৩৬৯৬।
আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلاَمُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ -
‘নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, বেদী, ভাগ্য নির্ণায়ক তীর অপবিত্র শয়তানী কাজ। সুতরাং তোমরা তা থেকে বিরত থাক। তাতে তোমরা সফলকাম হবে’ (মায়েদা ৯০)।
জাহেলী যুগের লোকেরা জুয়া খেলায় ভীষণ অভ্যস্ত ছিল। জুয়ার যে পদ্ধতি তাদের মধ্যে প্রসিদ্ধ ছিল তা হ’ল, তারা দশ জনে সমান অংক দিয়ে একটা উট ক্রয় করত, সেই উটের গোশত ভাগ-বাঁটোয়ারার জন্য জুয়ার তীর ব্যবহার করা হ’ত। এটা এক প্রকার লটারী। ১০টি তীরের ৭টিতে কম-বেশী করে বিভিন্ন অংশ লেখা থাকত এবং তিনটিতে কোন অংশই লেখা থাকত না। ফলে তিনজন কোন অংশ পেত না এবং অন্য সাত জন তাদের প্রচলিত নিয়মে কম-বেশী অংশ পেত। এভাবে তারা দশ জনের টাকায় কেনা উট সাত জনে ভাগ করে নিত।
বর্তমানে জুয়ার নানা পদ্ধতি বের হয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকটি নিম্নরূপ।-
লটারী : লটারী খুবই প্রসিদ্ধ জুয়া। লটারী নানা রকম আছে। তন্মধ্যে ব্যাপকতর হচ্ছে, নির্দিষ্ট অংকের টাকা কিংবা দ্রব্য পুরস্কারের নামে প্রদানের বিনিময়ে নির্দিষ্ট নম্বরের কুপন ক্রয়-বিক্রয়। নির্দিষ্ট তারিখে বিক্রিত কুপনগুলির ড্র অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম যে নম্বরের কুপনটি ওঠে সে প্রথম পুরস্কার পায়। এভাবে ক্রমানুযায়ী উদ্দিষ্ট সংখ্যক পুরস্কার দেয়া হয়। পুরস্কারের অংকগুলিতে প্রায়শঃ তারতম্য থাকে। এই লটারী হারাম, যদিও আয়োজকরা একে ‘কল্যাণকর’ মনে করে।
বীমা : বর্তমানে বাজারে নানারকম বীমা বা ইনস্যুরেন্স চালু আছে। যেমন জীবন বীমা, যানবাহন বীমা, পণ্য বীমা, অগ্নি বীমা ইত্যাদি। এমনকি অনেক গায়ক তাদের কণ্ঠস্বর পর্যন্ত বীমা করে থাকে। নানান ঝুঁকি হতে নিরাপত্তার জন্য এ ব্যবসা এখন জমজমাটভাবে চলছে।
পণ্যের মধ্যে অজ্ঞাত সংকেত : কোন কোন পণ্যের মধ্যে অজ্ঞাত নম্বর কিংবা সংকেত দেওয়া থাকে। ক্রেতারা ঐসব পণ্য খরিদের পর সেই বস্ত্ত কিংবা নম্বরটা পেলে কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট কয়েকজনকে পুরস্কৃত করার জন্য ঐসব বস্ত্ত বা নম্বরের লটারী করে থাকে। অনেক সময় কোন কোন উৎপাদক কোম্পানী তাদের উৎপাদিত পণ্যের বহুল প্রসারের জন্য হাযার হাযার পণ্যের কোন একটিতে পুরস্কারের সংকেত রেখে দেয়। সেই সংকেতটি পাওয়ার আশায় বহু মানুষ তা কেনায় মেতে ওঠে। পরে দেখা যায় দু’একজনের বেশী কেউ পায় না। এরূপ বিক্রয়ে ক্রেতারা প্রতারিত হয় এবং সেই সাথে প্রতিযোগী কোম্পানী সমূহের ব্যবসায়ে ক্ষতি করা হয়।
উল্লিখিত জুয়া ছাড়াও যত প্রকার জুয়া আছে সবই কুরআনে বর্ণিত ‘মাইসির’-এর অন্তর্ভুক্ত হবে। বর্তমানে জুয়ার জন্য বিশেষভাবে অনেক আসর বসে, যা কোথাও ‘হাউজি’ কোথাও ‘সবুজ টেবিল’ নামে পরিচিত। ফুটবল ও অন্যান্য খেলাধূলার প্রতিযোগিতায় যে বাজী ধরা হয় তাও জুয়ার অন্তর্গত। আবার খেলাধূলার এমন অনেক দোকান ও বিনোদন কেন্দ্র আছে যেখানে জুয়ার চিন্তাধারায় গড়ে উঠা নানারকম খেলনা সামগ্রী রয়েছে। যেমন- ফ্লাস, পাশা ইত্যাদি।
আর মানুষ যেসব প্রতিযোগিতা করে থাকে তা তিন প্রকার। যথা :
এক : শারঈ লক্ষ্য-উদ্দেশ্য প্রসূত প্রতিযোগিতা। যেমন উট ও ঘোড়দৌড়ের প্রতিযোগিতা, তীরন্দাযী ও নিশানার প্রতিযোগিতা ইত্যাদি। শারঈ বিদ্যা যেমন কুরআন হিফয প্রতিযোগিতাও আলিমদের অগ্রাধিকারযোগ্য মতানুসারে এ শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত।
এ জাতীয় প্রতিযোগিতা পুরস্কার সহ কিংবা পুরস্কারবিহীন যেভাবেই হৌক মুবাহ বা বৈধ হবে।
দুই : মূলে মুবাহ এমন সব প্রতিযোগিতা। যেমন ফুটবল প্রতিযোগিতা, দৌড় প্রতিযোগিতা। তবে এগুলি হারাম শূন্য হতে হবে। যেমন এসব খেলা করতে কিংবা দেখতে গিয়ে ছালাত বিনষ্ট করা কিংবা সতর খোলা হারাম। পুরস্কার ছাড়া এসব প্রতিযোগিতা জায়েয।
তিন : মূলে হারাম কিংবা মাধ্যম হারাম এমন সব প্রতিযোগিতা। যেমন বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতার নামে নষ্ট প্রতিযোগিতা, রেসলিং বা মুষ্টিযুদ্ধের প্রতিযোগিতা। মুষ্টিযুদ্ধ প্রতিযোগিতায় মুখমন্ডলে আঘাত করা হয়, অথচ মুখমন্ডলে আঘাত করা হারাম।[1] সুতরাং মুষ্টিযুদ্ধ হারামের মাধ্যম একটি প্রতিযোগিতা। অনুরূপভাবে মেষের লড়াই, মোরগের লড়াই, ষাঁড়ের লড়াই ইত্যাদিও এ শ্রেণীভুক্ত।
[1]. বুখারী হা/২৫৫৯, মুসলিম, মিশকাত হা/৩৫২৫।
إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلاَمُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ -
‘নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, বেদী, ভাগ্য নির্ণায়ক তীর অপবিত্র শয়তানী কাজ। সুতরাং তোমরা তা থেকে বিরত থাক। তাতে তোমরা সফলকাম হবে’ (মায়েদা ৯০)।
জাহেলী যুগের লোকেরা জুয়া খেলায় ভীষণ অভ্যস্ত ছিল। জুয়ার যে পদ্ধতি তাদের মধ্যে প্রসিদ্ধ ছিল তা হ’ল, তারা দশ জনে সমান অংক দিয়ে একটা উট ক্রয় করত, সেই উটের গোশত ভাগ-বাঁটোয়ারার জন্য জুয়ার তীর ব্যবহার করা হ’ত। এটা এক প্রকার লটারী। ১০টি তীরের ৭টিতে কম-বেশী করে বিভিন্ন অংশ লেখা থাকত এবং তিনটিতে কোন অংশই লেখা থাকত না। ফলে তিনজন কোন অংশ পেত না এবং অন্য সাত জন তাদের প্রচলিত নিয়মে কম-বেশী অংশ পেত। এভাবে তারা দশ জনের টাকায় কেনা উট সাত জনে ভাগ করে নিত।
বর্তমানে জুয়ার নানা পদ্ধতি বের হয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকটি নিম্নরূপ।-
লটারী : লটারী খুবই প্রসিদ্ধ জুয়া। লটারী নানা রকম আছে। তন্মধ্যে ব্যাপকতর হচ্ছে, নির্দিষ্ট অংকের টাকা কিংবা দ্রব্য পুরস্কারের নামে প্রদানের বিনিময়ে নির্দিষ্ট নম্বরের কুপন ক্রয়-বিক্রয়। নির্দিষ্ট তারিখে বিক্রিত কুপনগুলির ড্র অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম যে নম্বরের কুপনটি ওঠে সে প্রথম পুরস্কার পায়। এভাবে ক্রমানুযায়ী উদ্দিষ্ট সংখ্যক পুরস্কার দেয়া হয়। পুরস্কারের অংকগুলিতে প্রায়শঃ তারতম্য থাকে। এই লটারী হারাম, যদিও আয়োজকরা একে ‘কল্যাণকর’ মনে করে।
বীমা : বর্তমানে বাজারে নানারকম বীমা বা ইনস্যুরেন্স চালু আছে। যেমন জীবন বীমা, যানবাহন বীমা, পণ্য বীমা, অগ্নি বীমা ইত্যাদি। এমনকি অনেক গায়ক তাদের কণ্ঠস্বর পর্যন্ত বীমা করে থাকে। নানান ঝুঁকি হতে নিরাপত্তার জন্য এ ব্যবসা এখন জমজমাটভাবে চলছে।
পণ্যের মধ্যে অজ্ঞাত সংকেত : কোন কোন পণ্যের মধ্যে অজ্ঞাত নম্বর কিংবা সংকেত দেওয়া থাকে। ক্রেতারা ঐসব পণ্য খরিদের পর সেই বস্ত্ত কিংবা নম্বরটা পেলে কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট কয়েকজনকে পুরস্কৃত করার জন্য ঐসব বস্ত্ত বা নম্বরের লটারী করে থাকে। অনেক সময় কোন কোন উৎপাদক কোম্পানী তাদের উৎপাদিত পণ্যের বহুল প্রসারের জন্য হাযার হাযার পণ্যের কোন একটিতে পুরস্কারের সংকেত রেখে দেয়। সেই সংকেতটি পাওয়ার আশায় বহু মানুষ তা কেনায় মেতে ওঠে। পরে দেখা যায় দু’একজনের বেশী কেউ পায় না। এরূপ বিক্রয়ে ক্রেতারা প্রতারিত হয় এবং সেই সাথে প্রতিযোগী কোম্পানী সমূহের ব্যবসায়ে ক্ষতি করা হয়।
উল্লিখিত জুয়া ছাড়াও যত প্রকার জুয়া আছে সবই কুরআনে বর্ণিত ‘মাইসির’-এর অন্তর্ভুক্ত হবে। বর্তমানে জুয়ার জন্য বিশেষভাবে অনেক আসর বসে, যা কোথাও ‘হাউজি’ কোথাও ‘সবুজ টেবিল’ নামে পরিচিত। ফুটবল ও অন্যান্য খেলাধূলার প্রতিযোগিতায় যে বাজী ধরা হয় তাও জুয়ার অন্তর্গত। আবার খেলাধূলার এমন অনেক দোকান ও বিনোদন কেন্দ্র আছে যেখানে জুয়ার চিন্তাধারায় গড়ে উঠা নানারকম খেলনা সামগ্রী রয়েছে। যেমন- ফ্লাস, পাশা ইত্যাদি।
আর মানুষ যেসব প্রতিযোগিতা করে থাকে তা তিন প্রকার। যথা :
এক : শারঈ লক্ষ্য-উদ্দেশ্য প্রসূত প্রতিযোগিতা। যেমন উট ও ঘোড়দৌড়ের প্রতিযোগিতা, তীরন্দাযী ও নিশানার প্রতিযোগিতা ইত্যাদি। শারঈ বিদ্যা যেমন কুরআন হিফয প্রতিযোগিতাও আলিমদের অগ্রাধিকারযোগ্য মতানুসারে এ শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত।
এ জাতীয় প্রতিযোগিতা পুরস্কার সহ কিংবা পুরস্কারবিহীন যেভাবেই হৌক মুবাহ বা বৈধ হবে।
দুই : মূলে মুবাহ এমন সব প্রতিযোগিতা। যেমন ফুটবল প্রতিযোগিতা, দৌড় প্রতিযোগিতা। তবে এগুলি হারাম শূন্য হতে হবে। যেমন এসব খেলা করতে কিংবা দেখতে গিয়ে ছালাত বিনষ্ট করা কিংবা সতর খোলা হারাম। পুরস্কার ছাড়া এসব প্রতিযোগিতা জায়েয।
তিন : মূলে হারাম কিংবা মাধ্যম হারাম এমন সব প্রতিযোগিতা। যেমন বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতার নামে নষ্ট প্রতিযোগিতা, রেসলিং বা মুষ্টিযুদ্ধের প্রতিযোগিতা। মুষ্টিযুদ্ধ প্রতিযোগিতায় মুখমন্ডলে আঘাত করা হয়, অথচ মুখমন্ডলে আঘাত করা হারাম।[1] সুতরাং মুষ্টিযুদ্ধ হারামের মাধ্যম একটি প্রতিযোগিতা। অনুরূপভাবে মেষের লড়াই, মোরগের লড়াই, ষাঁড়ের লড়াই ইত্যাদিও এ শ্রেণীভুক্ত।
[1]. বুখারী হা/২৫৫৯, মুসলিম, মিশকাত হা/৩৫২৫।
আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
وَالسَّارِقُ وَالسَّارِقَةُ فَاقْطَعُوا أَيْدِيَهُمَا جَزَاءً بِمَا كَسَبَا نَكَالاً مِنَ اللهِ وَاللهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ -
‘পুরুষ ও নারী চোর চুরি করলে তোমরা তাদের উভয়ের হাত কেটে দাও। এটা তাদের কৃতকর্মের ফল এবং আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত আদর্শদন্ড। আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’ (মায়েদা ৩৮)।
চুরির মধ্যে মহাচুরি হ’ল, হজ্জ ও ওমরার উদ্দেশ্যে বায়তুল্লাহ শরীফে আগমনকারীদের দ্রব্যাদি চুরি করা। পৃথিবীর সর্বোত্তম স্থানে চুরি করা আল্লাহর বিধানের প্রতি চরমভাবে বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন। এতে আল্লাহর বিধানকে থোড়াই কেয়ার করা হয়। এজন্য মহানবী (ছাঃ) সূর্য গ্রহণের ছালাতের ঘটনায় বলেছিলেন,
لَقَدْ جِىءَ بِالنَّارِ وَذَلِكُمْ حِينَ رَأَيْتُمُونِى تَأَخَّرْتُ مَخَافَةَ أَنْ يُصِيبَنِى مِنْ لَفْحِهَا وَحَتَّى رَأَيْتُ فِيْهَا صَاحِبَ الْمِحْجَنِ يَجُرُّ قُصْبَهُ فِى النَّارِ، كَانَ يَسْرِقُ الْحَاجَّ بِمِحْجَنِهِ فَإِنْ فُطِنَ لَهُ قَالَ إِنَّمَا تَعَلَّقَ بِمِحْجَنِى، وَإِنْ غُفِلَ عَنْهُ ذَهَبَ بِهِ -
‘(আমার সামনে) জাহান্নামকে হাযির করা হয়। এটা সেই সময়ে হয়েছিল যখন তোমরা আমাকে পিছু হটতে দেখছিলে, আমি উহার লেলিহান শিখায় আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে পিছিয়ে আসছিলাম। এমনি সময় আমি উহার মধ্যে একজন বাঁকা মাথা বিশিষ্ট লাঠিওয়ালাকে দেখতে পেলাম, যে আগুনের মধ্যে তার পেট ধরে টানছে। সে বাঁকা মাথাবিশিষ্ট লাঠি দিয়ে হাজীদের জিনিসপত্র চুরি করত। ধরা পড়লে বলত, আমার লাঠির সাথে চলে এসেছিল বলে এমন হয়েছে। আর না ধরা পড়লে তা নিয়ে কেটে পড়ত’।[1]
সরকারী সম্পদ চুরি করাও বড় আকারের চুরির অন্তর্ভুক্ত। কিছু লোক এ জাতীয় চুরিতে অভ্যস্ত। তারা বলে থাকে, অন্যরা চুরি করে তাই আমরাও করি। অথচ তারা জানেনা, এতে সকল মুসলমান বা জনগণের সম্পদ চুরি করা হচ্ছে। আর যারা আল্লাহকে ভয় করে না তাদের কাজ কোন দলীল হতে পারে না; তাদের অনুকরণও করা যাবে না।
কেউ কেউ কাফিরদের সম্পদ এ যুক্তিতে চুরি করে যে, লোকটা কাফির, তার সম্পদ মুসলমানের জন্য মুবাহ। অথচ তাদের ধারণা ভ্রান্তিপূর্ণ। কেননা যে সকল কাফির মুসলমানদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত কেবল তাদের সম্পদ মুসলমানদের জন্য বৈধ। কাফিরদের সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এর অন্তর্ভুক্ত নয়।
অন্য লোকের পকেট থেকে কিছু তুলে নেওয়া বা পকেটমারাও চুরি। অনেকেই কারো সঙ্গে দেখা করতে তার বাড়ীতে যায় এবং চুরি করে আসে। অনেকে মেহমানদের ব্যাগ হাতড়িয়ে টাকা-পয়সা নিয়ে নেয়। আবার অনেক চোর বিপণীবিতানগুলোতে প্রবেশ করে পকেট কিংবা থলিতে দু’একটা দ্রব্য তুলে নেয়। অনেক মহিলা আছে, যারা তাদের পরিধেয়ের মধ্যে অনেক কিছুই লুকিয়ে নিয়ে যায়। কেউ কেউ সামান্য কিংবা সস্তা কোন কিছু চুরি করাকে অপরাধ মনে করেন না। অথচ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
لَعَنَ اللهُ السَّارِقَ، يَسْرِقُ الْبَيْضَةَ فَتُقْطَعُ يَدُهُ، وَيَسْرِقُ الْحَبْلَ فَتُقْطَعُ يَدُهُ -
‘সে চোরের উপর আল্লাহর লা‘নত, যে একটি ডিম চুরি করার ফলে তার হাত কাটা হয় এবং যে এক গাছি রশি চুরি করার ফলে তার হাত কাটা যায়’।[2]
যে যাই চুরি করুক না কেন আল্লাহর নিকটে তওবা করার সাথে সাথে তাকে ঐ চুরির দ্রব্য মালিকের নিকটে ফিরিয়ে দেওয়া ওয়াজিব। চাই প্রকাশ্যে হৌক কিংবা গোপনে হৌক, সরাসরি হৌক কিংবা কারো মাধ্যমে হৌক। কিন্তু অনেক চেষ্টার পরও যদি মালিক কিংবা তার ওয়ারিছদের খুঁজে না পাওয়া যায় তাহলে চুরির মাল মালিকের নামে দান করে দিতে হবে।
[1]. মুসলিম, মিশকাত হা/২৯৪২।
[2]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৩৫৯২।
وَالسَّارِقُ وَالسَّارِقَةُ فَاقْطَعُوا أَيْدِيَهُمَا جَزَاءً بِمَا كَسَبَا نَكَالاً مِنَ اللهِ وَاللهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ -
‘পুরুষ ও নারী চোর চুরি করলে তোমরা তাদের উভয়ের হাত কেটে দাও। এটা তাদের কৃতকর্মের ফল এবং আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত আদর্শদন্ড। আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’ (মায়েদা ৩৮)।
চুরির মধ্যে মহাচুরি হ’ল, হজ্জ ও ওমরার উদ্দেশ্যে বায়তুল্লাহ শরীফে আগমনকারীদের দ্রব্যাদি চুরি করা। পৃথিবীর সর্বোত্তম স্থানে চুরি করা আল্লাহর বিধানের প্রতি চরমভাবে বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন। এতে আল্লাহর বিধানকে থোড়াই কেয়ার করা হয়। এজন্য মহানবী (ছাঃ) সূর্য গ্রহণের ছালাতের ঘটনায় বলেছিলেন,
لَقَدْ جِىءَ بِالنَّارِ وَذَلِكُمْ حِينَ رَأَيْتُمُونِى تَأَخَّرْتُ مَخَافَةَ أَنْ يُصِيبَنِى مِنْ لَفْحِهَا وَحَتَّى رَأَيْتُ فِيْهَا صَاحِبَ الْمِحْجَنِ يَجُرُّ قُصْبَهُ فِى النَّارِ، كَانَ يَسْرِقُ الْحَاجَّ بِمِحْجَنِهِ فَإِنْ فُطِنَ لَهُ قَالَ إِنَّمَا تَعَلَّقَ بِمِحْجَنِى، وَإِنْ غُفِلَ عَنْهُ ذَهَبَ بِهِ -
‘(আমার সামনে) জাহান্নামকে হাযির করা হয়। এটা সেই সময়ে হয়েছিল যখন তোমরা আমাকে পিছু হটতে দেখছিলে, আমি উহার লেলিহান শিখায় আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে পিছিয়ে আসছিলাম। এমনি সময় আমি উহার মধ্যে একজন বাঁকা মাথা বিশিষ্ট লাঠিওয়ালাকে দেখতে পেলাম, যে আগুনের মধ্যে তার পেট ধরে টানছে। সে বাঁকা মাথাবিশিষ্ট লাঠি দিয়ে হাজীদের জিনিসপত্র চুরি করত। ধরা পড়লে বলত, আমার লাঠির সাথে চলে এসেছিল বলে এমন হয়েছে। আর না ধরা পড়লে তা নিয়ে কেটে পড়ত’।[1]
সরকারী সম্পদ চুরি করাও বড় আকারের চুরির অন্তর্ভুক্ত। কিছু লোক এ জাতীয় চুরিতে অভ্যস্ত। তারা বলে থাকে, অন্যরা চুরি করে তাই আমরাও করি। অথচ তারা জানেনা, এতে সকল মুসলমান বা জনগণের সম্পদ চুরি করা হচ্ছে। আর যারা আল্লাহকে ভয় করে না তাদের কাজ কোন দলীল হতে পারে না; তাদের অনুকরণও করা যাবে না।
কেউ কেউ কাফিরদের সম্পদ এ যুক্তিতে চুরি করে যে, লোকটা কাফির, তার সম্পদ মুসলমানের জন্য মুবাহ। অথচ তাদের ধারণা ভ্রান্তিপূর্ণ। কেননা যে সকল কাফির মুসলমানদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত কেবল তাদের সম্পদ মুসলমানদের জন্য বৈধ। কাফিরদের সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এর অন্তর্ভুক্ত নয়।
অন্য লোকের পকেট থেকে কিছু তুলে নেওয়া বা পকেটমারাও চুরি। অনেকেই কারো সঙ্গে দেখা করতে তার বাড়ীতে যায় এবং চুরি করে আসে। অনেকে মেহমানদের ব্যাগ হাতড়িয়ে টাকা-পয়সা নিয়ে নেয়। আবার অনেক চোর বিপণীবিতানগুলোতে প্রবেশ করে পকেট কিংবা থলিতে দু’একটা দ্রব্য তুলে নেয়। অনেক মহিলা আছে, যারা তাদের পরিধেয়ের মধ্যে অনেক কিছুই লুকিয়ে নিয়ে যায়। কেউ কেউ সামান্য কিংবা সস্তা কোন কিছু চুরি করাকে অপরাধ মনে করেন না। অথচ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
لَعَنَ اللهُ السَّارِقَ، يَسْرِقُ الْبَيْضَةَ فَتُقْطَعُ يَدُهُ، وَيَسْرِقُ الْحَبْلَ فَتُقْطَعُ يَدُهُ -
‘সে চোরের উপর আল্লাহর লা‘নত, যে একটি ডিম চুরি করার ফলে তার হাত কাটা হয় এবং যে এক গাছি রশি চুরি করার ফলে তার হাত কাটা যায়’।[2]
যে যাই চুরি করুক না কেন আল্লাহর নিকটে তওবা করার সাথে সাথে তাকে ঐ চুরির দ্রব্য মালিকের নিকটে ফিরিয়ে দেওয়া ওয়াজিব। চাই প্রকাশ্যে হৌক কিংবা গোপনে হৌক, সরাসরি হৌক কিংবা কারো মাধ্যমে হৌক। কিন্তু অনেক চেষ্টার পরও যদি মালিক কিংবা তার ওয়ারিছদের খুঁজে না পাওয়া যায় তাহলে চুরির মাল মালিকের নামে দান করে দিতে হবে।
[1]. মুসলিম, মিশকাত হা/২৯৪২।
[2]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৩৫৯২।
কারো হক বিনষ্ট করা কিংবা কোন অন্যায়কে কার্যকর করার জন্য বিচারক কিংবা শাসককে ঘুষ দেওয়া মারাত্মক অপরাধ। কেননা ঘুষের ফলে বিচারক প্রভাবিত হয়, হকদারের প্রতি অবিচার করা হয়, বিচার ও প্রশাসন ব্যবস্থায় ধস নেমে আসে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَلاَ تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ وَتُدْلُوا بِهَا إِلَى الْحُكَّامِ لِتَأْكُلُوا فَرِيقًا مِنْ أَمْوَالِ النَّاسِ بِالْإِثْمِ وَأَنْتُمْ تَعْلَمُونَ -
‘তোমরা অন্যায়ভাবে পরস্পরের সম্পদ ভক্ষণ করো না এবং জেনে-বুঝে মানুষের সম্পদ হতে ভক্ষণের জন্য বিচারকদের দরবারে উহার আরযী পেশ করো না’ (বাক্বারাহ ১৮৮)।
আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, لَعَنَ اللهُ الرَّاشِىَ وَالْمُرْتَشِىَ فِى الْحُكْمِ ‘বিচার-ফায়ছালায় ঘুষ দাতা ও ঘুষগ্রহীতা উভয়ের উপরে আল্লাহ তা‘আলা লা‘নত করেছেন’।[1]
তবে যদি ঘুষ প্রদান ব্যতীত নিজের পাওনা বা অধিকার আদায় সম্ভব না হয় কিংবা ঘুষ না দিলে যুলুম-অত্যাচারের শিকার হতে হয় তবে ঐ অধিকার আদায় ও যুলুম নিরোধ কল্পে ঘুষ দিলে ঘুষদাতা উক্ত শাস্তির আওতায় পড়বে না।
বর্তমানে ঘুষের বিস্তার রীতিমত উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এমনকি অনেক চাকুরের নিকট মূল বেতনের চেয়ে তা রীতিমত আয়ের এক বড় উৎস। অনেক অফিস ও কোম্পানী নানা নামে-উপনামের ছদ্মাবরণে ঘুষকে আয়ের বাহানা বানিয়ে নিয়েছে। অনেক কাজই এখন ঘুষ ছাড়া শুরু ও শেষ হয় না। এতে গরীব ও অসহায়রা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক চুক্তি ও প্রতিশ্রুতি ঘুষের কারণে ভঙ্গ হয়ে যায়। ঘুষ না দিলে ভাল সার্ভিসের আশা করা বাতুলতা মাত্র। যে ঘুষ দিতে পারে না তার জন্য নিকৃষ্ট মানের সার্ভিস অপেক্ষা করে। হয়ত তাকে বারবার ঘুরানো হয়, নয়ত তার দরখাস্ত বা ফাইল একেবারে গায়েব করে দেওয়া হয়। আর যে ঘুষ দিতে পারে সে পরে এসেও ঘুষ দিতে অক্ষম ব্যক্তির নাকের ডগার উপর দিয়ে বহু আগেই কাজ সমাধা করে চলে যায়। অথচ ঘুষের কারণে যে অর্থ কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পাওয়ার কথা ছিল তা তাদের হাতে না পৌঁছে বরং ঘুষখোর কর্মকর্তা-কর্মচারীর পকেটস্থ হয়।
এসব নানাবিধ কারণে নবী করীম (ছাঃ) ঘুষের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সবার বিরুদ্ধে বদ দো‘আ করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হতে বর্ণনা করেন, لَعْنَةُ اللهِ عَلَى الرَّاشِى وَالْمُرْتَشِى ‘ঘুষদাতা ও গ্রহীতা উভয়ের উপর আল্লাহর লা‘নত’।[2]
[1]. আহমাদ হা/৯০১১; ছহীহুল জামে‘ হা/৫০৯৩।
[2]. ইবনু মাজাহ হা/২৩১৩; ছহীহুল জামে‘ হা/৫১১৪।
وَلاَ تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ وَتُدْلُوا بِهَا إِلَى الْحُكَّامِ لِتَأْكُلُوا فَرِيقًا مِنْ أَمْوَالِ النَّاسِ بِالْإِثْمِ وَأَنْتُمْ تَعْلَمُونَ -
‘তোমরা অন্যায়ভাবে পরস্পরের সম্পদ ভক্ষণ করো না এবং জেনে-বুঝে মানুষের সম্পদ হতে ভক্ষণের জন্য বিচারকদের দরবারে উহার আরযী পেশ করো না’ (বাক্বারাহ ১৮৮)।
আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, لَعَنَ اللهُ الرَّاشِىَ وَالْمُرْتَشِىَ فِى الْحُكْمِ ‘বিচার-ফায়ছালায় ঘুষ দাতা ও ঘুষগ্রহীতা উভয়ের উপরে আল্লাহ তা‘আলা লা‘নত করেছেন’।[1]
তবে যদি ঘুষ প্রদান ব্যতীত নিজের পাওনা বা অধিকার আদায় সম্ভব না হয় কিংবা ঘুষ না দিলে যুলুম-অত্যাচারের শিকার হতে হয় তবে ঐ অধিকার আদায় ও যুলুম নিরোধ কল্পে ঘুষ দিলে ঘুষদাতা উক্ত শাস্তির আওতায় পড়বে না।
বর্তমানে ঘুষের বিস্তার রীতিমত উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এমনকি অনেক চাকুরের নিকট মূল বেতনের চেয়ে তা রীতিমত আয়ের এক বড় উৎস। অনেক অফিস ও কোম্পানী নানা নামে-উপনামের ছদ্মাবরণে ঘুষকে আয়ের বাহানা বানিয়ে নিয়েছে। অনেক কাজই এখন ঘুষ ছাড়া শুরু ও শেষ হয় না। এতে গরীব ও অসহায়রা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক চুক্তি ও প্রতিশ্রুতি ঘুষের কারণে ভঙ্গ হয়ে যায়। ঘুষ না দিলে ভাল সার্ভিসের আশা করা বাতুলতা মাত্র। যে ঘুষ দিতে পারে না তার জন্য নিকৃষ্ট মানের সার্ভিস অপেক্ষা করে। হয়ত তাকে বারবার ঘুরানো হয়, নয়ত তার দরখাস্ত বা ফাইল একেবারে গায়েব করে দেওয়া হয়। আর যে ঘুষ দিতে পারে সে পরে এসেও ঘুষ দিতে অক্ষম ব্যক্তির নাকের ডগার উপর দিয়ে বহু আগেই কাজ সমাধা করে চলে যায়। অথচ ঘুষের কারণে যে অর্থ কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পাওয়ার কথা ছিল তা তাদের হাতে না পৌঁছে বরং ঘুষখোর কর্মকর্তা-কর্মচারীর পকেটস্থ হয়।
এসব নানাবিধ কারণে নবী করীম (ছাঃ) ঘুষের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সবার বিরুদ্ধে বদ দো‘আ করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হতে বর্ণনা করেন, لَعْنَةُ اللهِ عَلَى الرَّاشِى وَالْمُرْتَشِى ‘ঘুষদাতা ও গ্রহীতা উভয়ের উপর আল্লাহর লা‘নত’।[2]
[1]. আহমাদ হা/৯০১১; ছহীহুল জামে‘ হা/৫০৯৩।
[2]. ইবনু মাজাহ হা/২৩১৩; ছহীহুল জামে‘ হা/৫১১৪।
যখন মানুষের মন থেকে আল্লাহভীতি উঠে যায় তখন তার শক্তি, বুদ্ধি সবই তার জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়ায়। সে এগুলিকে নির্বিচারে যুলুম-নিপীড়নে ব্যবহার করে। যেমন শক্তির বলে অন্যের সম্পদ কুক্ষিগত করা। ভূমি জবরদখল এরই একটি অংশ। এর পরিণাম খুবই মারাত্মক। আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
مَنْ أَخَذَ مِنَ الأَرْضِ شَيْئًا بِغَيْرِ حَقِّهِ خُسِفَ بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِلَى سَبْعِ أَرَضِينَ -
‘যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কারো জমির কিয়দংশ জবরদখল করবে, ক্বিয়ামত দিবসে এজন্য তাকে সপ্ত যমীন পর্যন্ত পুঁতে দেওয়া হবে’।[1]
ইয়ালা ইবনু মুররাহ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
أَيُّمَا رَجُلٍ ظَلَمَ شِبْراً مِنَ الأَرْضِ كَلَّفَهُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ أَنْ يَحْفِرَهُ حَتَّى يَبْلُغَ آخِرَ سَبْعِ أَرَضِينَ ثُمَّ يُطَوَّقَهُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ حَتَّى يُقْضَى بَيْنَ النَّاسِ -
‘যে ব্যক্তি এক বিঘত পরিমাণ জমি জবরদখল করবে আল্লাহ তাকে যমীনের সপ্ত স্তর পর্যন্ত তা খনন করতে বাধ্য করবেন। অতঃপর ক্বিয়ামত দিবসে তা তার গলায় বেড়ী করে রাখা হবে, যে পর্যন্ত না মানুষের মাঝে বিচারকার্য শেষ হয়’।[2]
জমির সীমানা বা আইল পরিবর্তন করাও এ হুকুমের অন্তর্ভুক্ত হবে। এ সম্পর্কে নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, لَعَنَ اللهُ مَنْ غَيَّرَ مَنَارَ الأَرْضِ ‘যে ব্যক্তি জমির নিশানা বা আইল পরিবর্তন করে আল্লাহ তার উপর অভিসম্পাত করেন’।[3]
[1]. বুখারী; মিশকাত হা/২৯৫৮।
[2]. আহমাদ, মিশকাত হা/২৯৬০, সনদ ছহীহ।
[3]. মুসলিম, মিশকাত হা/৪০৭০।
مَنْ أَخَذَ مِنَ الأَرْضِ شَيْئًا بِغَيْرِ حَقِّهِ خُسِفَ بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِلَى سَبْعِ أَرَضِينَ -
‘যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কারো জমির কিয়দংশ জবরদখল করবে, ক্বিয়ামত দিবসে এজন্য তাকে সপ্ত যমীন পর্যন্ত পুঁতে দেওয়া হবে’।[1]
ইয়ালা ইবনু মুররাহ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
أَيُّمَا رَجُلٍ ظَلَمَ شِبْراً مِنَ الأَرْضِ كَلَّفَهُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ أَنْ يَحْفِرَهُ حَتَّى يَبْلُغَ آخِرَ سَبْعِ أَرَضِينَ ثُمَّ يُطَوَّقَهُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ حَتَّى يُقْضَى بَيْنَ النَّاسِ -
‘যে ব্যক্তি এক বিঘত পরিমাণ জমি জবরদখল করবে আল্লাহ তাকে যমীনের সপ্ত স্তর পর্যন্ত তা খনন করতে বাধ্য করবেন। অতঃপর ক্বিয়ামত দিবসে তা তার গলায় বেড়ী করে রাখা হবে, যে পর্যন্ত না মানুষের মাঝে বিচারকার্য শেষ হয়’।[2]
জমির সীমানা বা আইল পরিবর্তন করাও এ হুকুমের অন্তর্ভুক্ত হবে। এ সম্পর্কে নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, لَعَنَ اللهُ مَنْ غَيَّرَ مَنَارَ الأَرْضِ ‘যে ব্যক্তি জমির নিশানা বা আইল পরিবর্তন করে আল্লাহ তার উপর অভিসম্পাত করেন’।[3]
[1]. বুখারী; মিশকাত হা/২৯৫৮।
[2]. আহমাদ, মিশকাত হা/২৯৬০, সনদ ছহীহ।
[3]. মুসলিম, মিশকাত হা/৪০৭০।
মানুষের মান-মর্যাদা ও পদাধিকার বান্দার উপর আল্লাহর অনুগ্রহরাজির অন্যতম। এই অনুগ্রহের শুকরিয়া আদায় করা কর্তব্য। মুসলমানদের উপকারে তাদের পদ ও মর্যাদাকে কাজে লাগানো উক্ত শুকরিয়ারই অংশবিশেষ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَنْ يَنْفَعَ أَخَاهُ فَلْيَفْعَلْ ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তার ভাইকে উপকার করতে সক্ষম, সে যেন তা করে’।[1]
যে ব্যক্তি তার পদের মাধ্যমে কোন মুসলিম ভাইকে যুলুম থেকে রক্ষা করে কিংবা তার কোন কল্যাণ সাধন করে এবং তা করতে গিয়ে কোন হারাম উপায় অবলম্বন করে না বা কারো অধিকার ক্ষুণ্ণ করে না, সে ব্যক্তির নিয়ত বিশুদ্ধ হলে আল্লাহর নিকট সে পারিতোষিক পাওয়ার যোগ্য। যেমন নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, اِشْفَعُوا تُؤْجَرُوا ‘তোমরা সুফারিশ কর, বিনিময়ে তোমরা ছওয়াব পাবে’।[2]
এই সুফারিশ ও মধ্যস্থতার জন্য কোন বিনিময় গ্রহণ করা জায়েয নয়। আবু উমামাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
مَنْ شَفَعَ لِأَخِيْهِ بِشَفَاعَةٍ فَأَهْدَى لَهُ هَدِيَّةً عَلَيْهَا فَقَبِلَهَا فَقَدْ أَتَى بَابًا عَظِيمًا مِنْ أَبْوَابِ الرِّبَا -
‘সুফারিশ করার দরুন যে ব্যক্তি সুফারিশকারীকে উপহার দেয় এবং (তার থেকে) সে ঐ উপহার গ্রহণ করে তাহলে সে ব্যক্তি সূদের দ্বারদেশগুলোর মধ্য থেকে একটি বৃহৎ দ্বারে উপনীত হয়’।[3]
এক শ্রেণীর মানুষ আর্থিক স্বার্থের বিনিময়ে তাদের পদমর্যাদাকে কাজে লাগাতে চায় বা মধ্যস্থতা করতে সম্মত হয়। যেমন- কোন একজন লোককে চাকরি দেওয়া অথবা কাউকে কোন প্রতিষ্ঠান বা এলাকা হতে অন্য প্রতিষ্ঠান বা এলাকায় বদলি করে দেওয়া, কিংবা কোন অসুস্থ ব্যক্তিকে চিকিৎসা করে দেওয়া ইত্যাদির জন্য অর্থলাভের শর্ত আরোপ করে। কিন্তু এরূপ স্বার্থের জন্য শর্তারোপ ও তার সুযোগ গ্রহণ করা হারাম। উপরোক্ত হাদীছই তার জ্বলন্ত প্রমাণ। বরং যে কোন কিছু গ্রহণ করাই এই হাদীছের বাহ্যিক দিকের আওতায় পড়ে, চাই পূর্বে কোন কিছুর শর্ত আরোপ না করা হৌক। আসলে ভাল কাজের কর্মীর জন্য আল্লাহর পারিতোষিকই যথেষ্ট, যা সে ক্বিয়ামত দিবসে পাবে।
জনৈক ব্যক্তি কোন এক প্রয়োজনে হাসান বিন সাহলের নিকট এসে তাঁর সুফারিশ প্রার্থনা করে। তিনি তার প্রয়োজন পূরণ করে দেন। ফলে লোকটি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে লাগল। তখন হাসান বিন সাহল তাকে বললেন, ‘কি জন্য তুমি আমাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছ? আমরা তো মনে করি পদেরও যাকাত আছে, যেমন অর্থ-সম্পদের যাকাত আছে’।[4]
এখানে এই পার্থক্যের দিকে ইঙ্গিত করা যথার্থ হবে যে, কোন কার্য সম্পাদনের জন্য ব্যক্তি বিশেষকে পারিশ্রমিক দিয়ে নিযুক্ত করা এবং শর্ত সাপেক্ষে বৈধ মজুরী প্রদান শ্রেণীভুক্ত হবে। পক্ষান্তরে আর্থিক সুযোগ-সুবিধার বিনিময়ে নিজ পদমর্যাদা ও মধ্যস্থতাকে কাজে লাগিয়ে সুফারিশের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। এটা নিষিদ্ধ। মূলতঃ উভয় প্রক্রিয়া এক নয়।
[1]. মুসলিম; মিশকাত হা/৪৫২৯।
[2]. বুখারী হা/২৪৩২;আবুদাঊদ হা/৫১৩২।
[3]. আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৩৭৫৭।
[4]. ইবনু মুফলিহ, আল-আদাবুশ শার‘ঈয়্যাহ ২/১৭৬ পৃঃ।
যে ব্যক্তি তার পদের মাধ্যমে কোন মুসলিম ভাইকে যুলুম থেকে রক্ষা করে কিংবা তার কোন কল্যাণ সাধন করে এবং তা করতে গিয়ে কোন হারাম উপায় অবলম্বন করে না বা কারো অধিকার ক্ষুণ্ণ করে না, সে ব্যক্তির নিয়ত বিশুদ্ধ হলে আল্লাহর নিকট সে পারিতোষিক পাওয়ার যোগ্য। যেমন নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, اِشْفَعُوا تُؤْجَرُوا ‘তোমরা সুফারিশ কর, বিনিময়ে তোমরা ছওয়াব পাবে’।[2]
এই সুফারিশ ও মধ্যস্থতার জন্য কোন বিনিময় গ্রহণ করা জায়েয নয়। আবু উমামাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
مَنْ شَفَعَ لِأَخِيْهِ بِشَفَاعَةٍ فَأَهْدَى لَهُ هَدِيَّةً عَلَيْهَا فَقَبِلَهَا فَقَدْ أَتَى بَابًا عَظِيمًا مِنْ أَبْوَابِ الرِّبَا -
‘সুফারিশ করার দরুন যে ব্যক্তি সুফারিশকারীকে উপহার দেয় এবং (তার থেকে) সে ঐ উপহার গ্রহণ করে তাহলে সে ব্যক্তি সূদের দ্বারদেশগুলোর মধ্য থেকে একটি বৃহৎ দ্বারে উপনীত হয়’।[3]
এক শ্রেণীর মানুষ আর্থিক স্বার্থের বিনিময়ে তাদের পদমর্যাদাকে কাজে লাগাতে চায় বা মধ্যস্থতা করতে সম্মত হয়। যেমন- কোন একজন লোককে চাকরি দেওয়া অথবা কাউকে কোন প্রতিষ্ঠান বা এলাকা হতে অন্য প্রতিষ্ঠান বা এলাকায় বদলি করে দেওয়া, কিংবা কোন অসুস্থ ব্যক্তিকে চিকিৎসা করে দেওয়া ইত্যাদির জন্য অর্থলাভের শর্ত আরোপ করে। কিন্তু এরূপ স্বার্থের জন্য শর্তারোপ ও তার সুযোগ গ্রহণ করা হারাম। উপরোক্ত হাদীছই তার জ্বলন্ত প্রমাণ। বরং যে কোন কিছু গ্রহণ করাই এই হাদীছের বাহ্যিক দিকের আওতায় পড়ে, চাই পূর্বে কোন কিছুর শর্ত আরোপ না করা হৌক। আসলে ভাল কাজের কর্মীর জন্য আল্লাহর পারিতোষিকই যথেষ্ট, যা সে ক্বিয়ামত দিবসে পাবে।
জনৈক ব্যক্তি কোন এক প্রয়োজনে হাসান বিন সাহলের নিকট এসে তাঁর সুফারিশ প্রার্থনা করে। তিনি তার প্রয়োজন পূরণ করে দেন। ফলে লোকটি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে লাগল। তখন হাসান বিন সাহল তাকে বললেন, ‘কি জন্য তুমি আমাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছ? আমরা তো মনে করি পদেরও যাকাত আছে, যেমন অর্থ-সম্পদের যাকাত আছে’।[4]
এখানে এই পার্থক্যের দিকে ইঙ্গিত করা যথার্থ হবে যে, কোন কার্য সম্পাদনের জন্য ব্যক্তি বিশেষকে পারিশ্রমিক দিয়ে নিযুক্ত করা এবং শর্ত সাপেক্ষে বৈধ মজুরী প্রদান শ্রেণীভুক্ত হবে। পক্ষান্তরে আর্থিক সুযোগ-সুবিধার বিনিময়ে নিজ পদমর্যাদা ও মধ্যস্থতাকে কাজে লাগিয়ে সুফারিশের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। এটা নিষিদ্ধ। মূলতঃ উভয় প্রক্রিয়া এক নয়।
[1]. মুসলিম; মিশকাত হা/৪৫২৯।
[2]. বুখারী হা/২৪৩২;আবুদাঊদ হা/৫১৩২।
[3]. আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৩৭৫৭।
[4]. ইবনু মুফলিহ, আল-আদাবুশ শার‘ঈয়্যাহ ২/১৭৬ পৃঃ।
নবী করীম (ছাঃ) শ্রমিকের পাওনা দ্রুত পরিশোধে জোর তাকীদ দিয়েছেন। তিনি বলেন, أَعْطُوا الأَجِيرَ أَجْرَهُ قَبْلَ أَنْ يَجِفَّ عَرَقُهُ ‘তোমরা শ্রমিকের গায়ের ঘাম শুকিয়ে যাওয়ার পূর্বেই তার পাওনা পরিশোধ কর’।[1]
শ্রমিক, কর্মচারী, দিনমজুর যেই হৌক না কেন তার থেকে শ্রম আদায়ের পর যথারীতি তার পাওনা পরিশোধ না করা মহা যুলম। এ যুলম এখন হর-হামেশাই হচ্ছে। শ্রমিকদের প্রতি যুলমের বিচিত্র রূপ রয়েছে। যেমন-
১. শ্রমিক স্বীয় কাজের স্বপক্ষে কোন প্রমাণ পেশ করতে না পারায় তার পাওনাকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করা। এক্ষেত্রে দুনিয়াতে তার হক্ব নষ্ট হলেও ক্বিয়ামতে তা বৃথা যাবে না। ক্বিয়ামতের দিন যালিমের পুণ্য থেকে মাযলূমের পাওনা পরিমাণ পুণ্য প্রদান করা হবে। যদি তার পুণ্য নিঃশেষ হয়ে যায় তাহলে মাযলূমের পাপ যালিমের ঘাড়ে চাপানো হবে, তারপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।[2]
২. যে পরিমাণ অংক মজুরী দেওয়ার জন্য চুক্তি হয়েছে তার থেকে কম দেওয়া। এ বিষয়ের সমূহ ক্ষতি প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা হুঁশিয়ারী বাণী উচ্চারণ করে বলেছেন, وَيْلٌ لِلْمُطَفِّفِيْنَ ‘যারা ওযনে কম দেয় তাদের জন্য দুর্ভোগ রয়েছে’ (মুতাফ্ফিফীন ১)।
অনেক নিয়োগকর্তা দেশ-বিদেশ থেকে নির্দিষ্ট বেতন বা মজুরীর চুক্তিতে শ্রমিক নিয়োগ করে থাকে। তারপর তারা যখন কাজে যোগদান করে তখন সে একতরফাভাবে চুক্তিপত্র পরিবর্তন করে বেতন বা মজুরীর পরিমাণ অনেক কমিয়ে দেয়। অনিচ্ছা সত্ত্বেও ঐসব শ্রমিক তখন কাজ করতে বাধ্য হয়। অনেক সময় শ্রমিকরা তাদের অধিকারের স্বপক্ষে প্রমাণ পেশ করতে পারে না। তখন কেবল আল্লাহর নিকট অভিযোগ দায়ের করা ছাড়া তাদের আর কোন উপায় থাকে না। এক্ষেত্রে যদি নিয়োগকর্তা মুসলমান ও নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তি কাফির হয় তবে বেতন মজুরী হরাসে ঐ শ্রমিকের ইসলাম গ্রহণে বাধা সৃষ্টি হয়। ফলশ্রুতিতে ক্বিয়ামত দিবসে ঐ কাফিরের পাপ তাকে বহন করতে হবে।
৩. বেতন বা মজুরী বৃদ্ধি না করে কেবল কাজের পরিমাণ কিংবা সময় বৃদ্ধি করা। এতে শ্রমিককে তার অতিরিক্ত কাজের পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত করা হয়।
৪. বেতন বা মজুরী পরিশোধে গড়িমসি করা। অনেক চেষ্টা-প্রচেষ্টা, তদবীর-তাগাদা, অভিযোগ-অনুযোগ ও মামলা-মোকদ্দমার পর তবেই প্রাপ্য অর্থ আদায় সম্ভব হয়। অনেক সময় নিয়োগকারী শ্রমিককে ত্যক্ত-বিরক্ত করার উদ্দেশ্যে টাল-বাহানা করে, যেন সে পাওনা ছেড়ে দেয় এবং কোন দাবী না তুলে চলে যায়। আবার কখনও তাদের টাকা খাটিয়ে মালিকের তহবিল স্ফীত করার কুমতলব থাকে। অনেকে তা সূদী কারবারেও খাটায়। অথচ সেই শ্রমিক না নিজে খেতে পাচ্ছে, না নিজের পুত্র-পরিজনদের জন্য কিছু পাঠাতে পারছে। যদিও তাদের মুখে দু’মুঠো অন্ন তুলে দেওয়ার জন্যই সে এই দূর দেশে পড়ে আছে। এজন্যই এ সকল যালিমের জন্য এক কঠিন দিনের শাস্তি অপেক্ষা করছে।
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন যে, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
ثَلاَثَةٌ أَنَا خَصْمُهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، رَجُلٌ أَعْطَى بِى ثُمَّ غَدَرَ، وَرَجُلٌ بَاعَ حُرًّا فَأَكَلَ ثَمَنَهُ، وَرَجُلٌ اسْتَأْجَرَ أَجِيرًا فَاسْتَوْفَى مِنْهُ، وَلَمْ يُعْطِ أَجْرَهُ -
‘ক্বিয়ামত দিবসে আমি তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে বাদী হব। (১) যে ব্যক্তি আমার অনুগত হওয়ার পর বিশ্বাসঘাতকতা করে (২) যে ব্যক্তি কোন স্বাধীন বা মুক্ত লোককে ধরে বিক্রয় করে তার মূল্য ভোগ করে (৩) যে ব্যক্তি কোন মজুরকে নিয়োগের পর তার থেকে পুরো কাজ আদায় করেও তার পাওনা পরিশোধ করে না’।[3]
[1]. ইবনু মাজাহ; মিশকাত হা/২৯৮৭।
[2]. মুসলিম হা/২৫৮১; মিশকাত হা/৫১২৭।
[3]. বুখারী; মিশকাত হা/২৯৮৪।
শ্রমিক, কর্মচারী, দিনমজুর যেই হৌক না কেন তার থেকে শ্রম আদায়ের পর যথারীতি তার পাওনা পরিশোধ না করা মহা যুলম। এ যুলম এখন হর-হামেশাই হচ্ছে। শ্রমিকদের প্রতি যুলমের বিচিত্র রূপ রয়েছে। যেমন-
১. শ্রমিক স্বীয় কাজের স্বপক্ষে কোন প্রমাণ পেশ করতে না পারায় তার পাওনাকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করা। এক্ষেত্রে দুনিয়াতে তার হক্ব নষ্ট হলেও ক্বিয়ামতে তা বৃথা যাবে না। ক্বিয়ামতের দিন যালিমের পুণ্য থেকে মাযলূমের পাওনা পরিমাণ পুণ্য প্রদান করা হবে। যদি তার পুণ্য নিঃশেষ হয়ে যায় তাহলে মাযলূমের পাপ যালিমের ঘাড়ে চাপানো হবে, তারপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।[2]
২. যে পরিমাণ অংক মজুরী দেওয়ার জন্য চুক্তি হয়েছে তার থেকে কম দেওয়া। এ বিষয়ের সমূহ ক্ষতি প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা হুঁশিয়ারী বাণী উচ্চারণ করে বলেছেন, وَيْلٌ لِلْمُطَفِّفِيْنَ ‘যারা ওযনে কম দেয় তাদের জন্য দুর্ভোগ রয়েছে’ (মুতাফ্ফিফীন ১)।
অনেক নিয়োগকর্তা দেশ-বিদেশ থেকে নির্দিষ্ট বেতন বা মজুরীর চুক্তিতে শ্রমিক নিয়োগ করে থাকে। তারপর তারা যখন কাজে যোগদান করে তখন সে একতরফাভাবে চুক্তিপত্র পরিবর্তন করে বেতন বা মজুরীর পরিমাণ অনেক কমিয়ে দেয়। অনিচ্ছা সত্ত্বেও ঐসব শ্রমিক তখন কাজ করতে বাধ্য হয়। অনেক সময় শ্রমিকরা তাদের অধিকারের স্বপক্ষে প্রমাণ পেশ করতে পারে না। তখন কেবল আল্লাহর নিকট অভিযোগ দায়ের করা ছাড়া তাদের আর কোন উপায় থাকে না। এক্ষেত্রে যদি নিয়োগকর্তা মুসলমান ও নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তি কাফির হয় তবে বেতন মজুরী হরাসে ঐ শ্রমিকের ইসলাম গ্রহণে বাধা সৃষ্টি হয়। ফলশ্রুতিতে ক্বিয়ামত দিবসে ঐ কাফিরের পাপ তাকে বহন করতে হবে।
৩. বেতন বা মজুরী বৃদ্ধি না করে কেবল কাজের পরিমাণ কিংবা সময় বৃদ্ধি করা। এতে শ্রমিককে তার অতিরিক্ত কাজের পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত করা হয়।
৪. বেতন বা মজুরী পরিশোধে গড়িমসি করা। অনেক চেষ্টা-প্রচেষ্টা, তদবীর-তাগাদা, অভিযোগ-অনুযোগ ও মামলা-মোকদ্দমার পর তবেই প্রাপ্য অর্থ আদায় সম্ভব হয়। অনেক সময় নিয়োগকারী শ্রমিককে ত্যক্ত-বিরক্ত করার উদ্দেশ্যে টাল-বাহানা করে, যেন সে পাওনা ছেড়ে দেয় এবং কোন দাবী না তুলে চলে যায়। আবার কখনও তাদের টাকা খাটিয়ে মালিকের তহবিল স্ফীত করার কুমতলব থাকে। অনেকে তা সূদী কারবারেও খাটায়। অথচ সেই শ্রমিক না নিজে খেতে পাচ্ছে, না নিজের পুত্র-পরিজনদের জন্য কিছু পাঠাতে পারছে। যদিও তাদের মুখে দু’মুঠো অন্ন তুলে দেওয়ার জন্যই সে এই দূর দেশে পড়ে আছে। এজন্যই এ সকল যালিমের জন্য এক কঠিন দিনের শাস্তি অপেক্ষা করছে।
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন যে, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
ثَلاَثَةٌ أَنَا خَصْمُهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، رَجُلٌ أَعْطَى بِى ثُمَّ غَدَرَ، وَرَجُلٌ بَاعَ حُرًّا فَأَكَلَ ثَمَنَهُ، وَرَجُلٌ اسْتَأْجَرَ أَجِيرًا فَاسْتَوْفَى مِنْهُ، وَلَمْ يُعْطِ أَجْرَهُ -
‘ক্বিয়ামত দিবসে আমি তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে বাদী হব। (১) যে ব্যক্তি আমার অনুগত হওয়ার পর বিশ্বাসঘাতকতা করে (২) যে ব্যক্তি কোন স্বাধীন বা মুক্ত লোককে ধরে বিক্রয় করে তার মূল্য ভোগ করে (৩) যে ব্যক্তি কোন মজুরকে নিয়োগের পর তার থেকে পুরো কাজ আদায় করেও তার পাওনা পরিশোধ করে না’।[3]
[1]. ইবনু মাজাহ; মিশকাত হা/২৯৮৭।
[2]. মুসলিম হা/২৫৮১; মিশকাত হা/৫১২৭।
[3]. বুখারী; মিশকাত হা/২৯৮৪।
আমাদের সমাজে এমন অনেক মাতা-পিতা আছেন, যারা এক সন্তানকে ‘হেবা’ বা উপহার দিলে অন্যান্য সন্তানকে দেন না। নিয়ম হ’ল, সন্তানদের সবাইকে বিশেষ কোন উপহার সমান হারে দিতে হবে; আর না হলে কাউকে দেয়া যাবে না। নিয়ম লংঘন করে সন্তান বিশেষকে দেয়া ও অন্যদের বঞ্চিত করা ঠিক নয়। শারঈ কারণ ব্যতীত এরূপ দান করলে তা হারাম বলে গণ্য হবে। শারঈ কারণ বলতে সন্তানদের একজনের এমন প্রয়োজন দেখা দিয়েছে, যা অন্যদের নেই। যেমন- সে অসুস্থ, কিংবা বেকার, অথবা ছাত্র, কিংবা সংসারে তার সদস্য সংখ্যা অনেক তথা সে পোষ্য ভারাক্রান্ত, অথবা সে কুরআন মুখস্থ করেছে তাই উৎসাহ ধরে রাখতে কিছু দেয়া ইত্যাদি। পিতা এরূপ শারঈ কারণবশতঃ কোন সন্তানকে কিছু দেয়ার সময় নিয়ত করবে যে, অন্য কোন সন্তানের যদি এরূপ প্রয়োজন দেখা দেয় তাহলে তাকেও তিনি তার প্রয়োজন মত দিবেন। এ কথার সাধারণ দলীল আল্লাহর বাণী - اِعْدِلُوا هُوَ أَقْرَبُ لِلتَّقْوَى وَاتَّقُوا اللهَ ‘তোমরা সুবিচার কর। ইহা আল্লাহভীতির অধিকতর নিকটবর্তী। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর’ (মায়েদাহ ৮)। আর বিশেষ দলীল হল রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর হাদীছ। একদা নু‘মান বিন বাশীর (রাঃ)-এর পিতা তাকে রাসূল (ছাঃ)-এর দরবারে নিয়ে গিয়ে বললেন, ‘আমি আমার এই পুত্রকে একটা দাস দান করেছি’। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একথা শুনে বললেন, ‘তোমার সকল সন্তানকে কি তার মত করে দান করেছ? পিতা বললেন, ‘না’। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ‘তাহলে উক্ত দান ফেরত নাও’। অন্য বর্ণনায় আছে, ‘তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমাদের সন্তানদের মধ্যে সুবিচার কর’। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি বাড়ী ফিরে এসে ঐ দাস ফেরত নেন। অপর এক বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, فَلاَ تُشْهِدْنِى إِذًا فَإِنِّى لاَ أَشْهَدُ عَلَى جَوْرٍ ‘তাহলে তুমি আমাকে সাক্ষী করো না। কেননা যুলুমের সাক্ষী আমি হতে পারি না’।[1]
কোন কোন পিতাদের দেখা যায় যে, তারা সন্তান বিশেষকে অহেতুক অগ্রাধিকার দানে আল্লাহকে ভয় করেন না। এর ফলে সন্তানদের মধ্যে মন কষাকষির সৃষ্টি হয়। তারা একে অপরের প্রতি শত্রু ও বিদ্বেষ ভাবাপন্ন হয়ে ওঠে। কখনো কোন সন্তানকে পিতৃকুলের আকৃতি পাওয়ার জন্য দেওয়া হয়, অন্য সন্তানকে মাতৃকুলের আকৃতি পাওয়ার জন্য বঞ্চিত করা হয়। এক স্ত্রীর সন্তানকে দেওয়া হয়, অন্য স্ত্রীর সন্তানদের দেওয়া হয় না। আবার অনেক সময় তাদের একজনের সন্তানদেরকে বিশেষ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করা হয়, কিন্তু অন্যজনের সন্তানদের ক্ষেত্রে অনুরূপ ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এর কুফল অচিরেই ঐসব মাতা-পিতাকে ভোগ করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রেই ঐসব বঞ্চিত সন্তান ভবিষ্যতে তাদের পিতার সঙ্গে সদাচরণ করে না।
সন্তানদের মধ্যে দান-দক্ষিণায় কাউকে বেশী গুরুত্ব দেয়া ব্যক্তি সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, أَلَيْسَ يَسُرُّكَ أَنْ يَكُونُوا إِلَيْكَ فِى الْبِرِّ سَوَاءً ‘তোমার সন্তানেরা তোমার সাথে সমান সদাচরণ করুক তা কি তোমাকে আনন্দিত করবে না’?।[2] সুতরাং সন্তানদের প্রতি দান-দক্ষিণায় সমতা রক্ষা করা অপরিহার্য।
[1]. মুসলিম হা/১৬২৩; মিশকাত হা/৩০৯০।
[2]. ইবনু মাজাহ হা/২৩৭৫; আবুদাঊদ হা/৩৫৪২।
কোন কোন পিতাদের দেখা যায় যে, তারা সন্তান বিশেষকে অহেতুক অগ্রাধিকার দানে আল্লাহকে ভয় করেন না। এর ফলে সন্তানদের মধ্যে মন কষাকষির সৃষ্টি হয়। তারা একে অপরের প্রতি শত্রু ও বিদ্বেষ ভাবাপন্ন হয়ে ওঠে। কখনো কোন সন্তানকে পিতৃকুলের আকৃতি পাওয়ার জন্য দেওয়া হয়, অন্য সন্তানকে মাতৃকুলের আকৃতি পাওয়ার জন্য বঞ্চিত করা হয়। এক স্ত্রীর সন্তানকে দেওয়া হয়, অন্য স্ত্রীর সন্তানদের দেওয়া হয় না। আবার অনেক সময় তাদের একজনের সন্তানদেরকে বিশেষ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করা হয়, কিন্তু অন্যজনের সন্তানদের ক্ষেত্রে অনুরূপ ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এর কুফল অচিরেই ঐসব মাতা-পিতাকে ভোগ করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রেই ঐসব বঞ্চিত সন্তান ভবিষ্যতে তাদের পিতার সঙ্গে সদাচরণ করে না।
সন্তানদের মধ্যে দান-দক্ষিণায় কাউকে বেশী গুরুত্ব দেয়া ব্যক্তি সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, أَلَيْسَ يَسُرُّكَ أَنْ يَكُونُوا إِلَيْكَ فِى الْبِرِّ سَوَاءً ‘তোমার সন্তানেরা তোমার সাথে সমান সদাচরণ করুক তা কি তোমাকে আনন্দিত করবে না’?।[2] সুতরাং সন্তানদের প্রতি দান-দক্ষিণায় সমতা রক্ষা করা অপরিহার্য।
[1]. মুসলিম হা/১৬২৩; মিশকাত হা/৩০৯০।
[2]. ইবনু মাজাহ হা/২৩৭৫; আবুদাঊদ হা/৩৫৪২।
সাহল বিন হানযালিয়াহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
مَنْ سَأَلَ وَعِنْدَهُ مَا يُغْنِيهِ فَإِنَّمَا يَسْتَكْثِرُ مِنْ جَمْرِ جَهَنَّمَ- فَقَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ وَمَا الْغِنَى الَّذِى لاَ تَنْبَغِى مَعَهُ الْمَسْأَلَةُ قَالَ : قَدْرُ مَا يُغَدِّيهِ وَيُعَشِّيهِ -
‘যার নিকট অভাব মোচনের মত সামগ্রী আছে অথচ সে ভিক্ষা করে, সে জাহান্নামের অঙ্গারকেই কেবল বর্ধিষ্ণু করে। ছাহাবীগণ আরয করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)! কতটুকু সম্পদ থাকলে ভিক্ষা করা উচিৎ নয়? উত্তরে তিনি বললেন, সকাল-সন্ধ্যায় খাওয়া চলে এমন পরিমাণ সম্পদ’।[1]
ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ سَأَلَ وَلَهُ مَا يُغْنِيهِ جَاءَتْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ خُمُوشٌ أَوْ خُدُوشٌ أَوْ كُدُوحٌ فِى وَجْهِهِ ‘অভাবমুক্ত হয়েও যে ব্যক্তি ভিক্ষা করে, ক্বিয়ামত দিবসে সে মুখে গোশত শূন্য হয়ে উঠবে’।[2]
অনেক ভিক্ষুক মসজিদে আল্লাহর বান্দাদের সামনে দাঁড়িয়ে তাদের অভাব-অভিযোগের ফিরিস্তি আওড়াতে থাকে। এতে মুছল্লীদের তাসবীহ-তাহলীলে ছেদ পড়ে। অনেকে মিথ্যা বলে এবং ভুয়া কার্ড ও কাগজপত্র দেখায়। অনেকে আবার মনগড়া কাহিনী বলে ভিক্ষা করে। কোন কোন ভিক্ষুক স্বীয় পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন মসজিদ ও জনসমাগম স্থলে ভাগ করে দেয়। দিন শেষে তারা একস্থানে একত্রিত হয়ে নিজেদের আয় গুণে দেখে। এভাবে তারা যে কত ধনী হয়েছে তা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। যখন তারা মৃত্যুবরণ করে, তখন জানা যায় কি পরিমাণ সম্পদ তারা রেখে গেছে।
পক্ষান্তরে একদল প্রকৃতই অভাবী রয়েছে। যাদের সংযম দেখে তাদের অবস্থা সম্পর্কে অজ্ঞ লোকেরা তাদেরকে ধনী বলেই মনে করে। তারা কাকুতি-মিনতি করে লোকদের নিকটে চায় না। ফলে তাদের অবস্থা যেমন জানার বাইরে থেকে যায়, তেমনি তাদের কিছু দেওয়াও হয় না।
[1]. আবুদাঊদ; মিশকাত হা/১৮৪৮।
[2]. আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১৮৪৭।
مَنْ سَأَلَ وَعِنْدَهُ مَا يُغْنِيهِ فَإِنَّمَا يَسْتَكْثِرُ مِنْ جَمْرِ جَهَنَّمَ- فَقَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ وَمَا الْغِنَى الَّذِى لاَ تَنْبَغِى مَعَهُ الْمَسْأَلَةُ قَالَ : قَدْرُ مَا يُغَدِّيهِ وَيُعَشِّيهِ -
‘যার নিকট অভাব মোচনের মত সামগ্রী আছে অথচ সে ভিক্ষা করে, সে জাহান্নামের অঙ্গারকেই কেবল বর্ধিষ্ণু করে। ছাহাবীগণ আরয করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)! কতটুকু সম্পদ থাকলে ভিক্ষা করা উচিৎ নয়? উত্তরে তিনি বললেন, সকাল-সন্ধ্যায় খাওয়া চলে এমন পরিমাণ সম্পদ’।[1]
ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ سَأَلَ وَلَهُ مَا يُغْنِيهِ جَاءَتْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ خُمُوشٌ أَوْ خُدُوشٌ أَوْ كُدُوحٌ فِى وَجْهِهِ ‘অভাবমুক্ত হয়েও যে ব্যক্তি ভিক্ষা করে, ক্বিয়ামত দিবসে সে মুখে গোশত শূন্য হয়ে উঠবে’।[2]
অনেক ভিক্ষুক মসজিদে আল্লাহর বান্দাদের সামনে দাঁড়িয়ে তাদের অভাব-অভিযোগের ফিরিস্তি আওড়াতে থাকে। এতে মুছল্লীদের তাসবীহ-তাহলীলে ছেদ পড়ে। অনেকে মিথ্যা বলে এবং ভুয়া কার্ড ও কাগজপত্র দেখায়। অনেকে আবার মনগড়া কাহিনী বলে ভিক্ষা করে। কোন কোন ভিক্ষুক স্বীয় পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন মসজিদ ও জনসমাগম স্থলে ভাগ করে দেয়। দিন শেষে তারা একস্থানে একত্রিত হয়ে নিজেদের আয় গুণে দেখে। এভাবে তারা যে কত ধনী হয়েছে তা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। যখন তারা মৃত্যুবরণ করে, তখন জানা যায় কি পরিমাণ সম্পদ তারা রেখে গেছে।
পক্ষান্তরে একদল প্রকৃতই অভাবী রয়েছে। যাদের সংযম দেখে তাদের অবস্থা সম্পর্কে অজ্ঞ লোকেরা তাদেরকে ধনী বলেই মনে করে। তারা কাকুতি-মিনতি করে লোকদের নিকটে চায় না। ফলে তাদের অবস্থা যেমন জানার বাইরে থেকে যায়, তেমনি তাদের কিছু দেওয়াও হয় না।
[1]. আবুদাঊদ; মিশকাত হা/১৮৪৮।
[2]. আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১৮৪৭।
মহান রাববুল আলামীনের নিকটে বান্দার হক অতীব গুরুত্ববহ। আল্লাহর হক নষ্ট করলে তওবার মাধ্যমে ক্ষমা পাওয়া যায়। কিন্তু বান্দার হক নষ্ট করলে সংশ্লিষ্ট বান্দার নিকট থেকে ক্ষমা না পেলে ক্ষমা লাভের কোন উপায় নেই। যেকোন মূল্যে তার হক আদায় করতে হবে ঐদিন আসার পূর্বে যেদিন টাকা-পয়সার কোন কারবার হবে না। সেদিন হকদারের পাপ হক আত্মসাৎকারীকে দেওয়া হবে এবং হক আত্মসাৎকারীর নেকী হকদারকে দেওয়া হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, إِنَّ اللهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تُؤَدُّوا الأَمَانَاتِ إِلَى أَهْلِهَا ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে এই মর্মে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা আমানতকে তার প্রাপকের নিকটে অর্পণ করবে’ (নিসা ৫৮)।
বর্তমান সমাজে ঋণ গ্রহণ একটি মামুলী ও গুরুত্বহীন বিষয় বলে বিবেচিত। অনেকে অভাবের জন্য নয়; বরং প্রাচুর্য সৃষ্টি ও অন্যের সাথে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে নতুন নতুন বাড়ী, গাড়ী, আসবাবপত্র ইত্যাদি ক্রয়ের জন্য ঋণ নিয়ে থাকে। অনেক সময় এরা কিস্তিতে বেচা-কেনা করে থাকে, যার অনেকাংশই সন্দেহপূর্ণ বা হারাম।
ঋণ পরিশোধকে লঘু বা সাধারণভাবে নিলে প্রায়শই সেখানে টালবাহানা ও গড়িমসি সৃষ্টি হয়। ক্ষেত্রবিশেষে তাতে অপরের সম্পদ বিনষ্ট করা হয়। এর শোচনীয় পরিণতি বর্ণনা করতে গিয়ে নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,
مَنْ أَخَذَ أَمْوَالَ النَّاسِ يُرِيدُ أَدَاءَهَا أَدَّى اللهُ عَنْهُ ، وَمَنْ أَخَذَ يُرِيدُ إِتْلاَفَهَا أَتْلَفَهُ اللهُ
‘যে ব্যক্তি পরিশোধের নিয়তে মানুষের সম্পদ গ্রহণ করে, আল্লাহ তা‘আলা তার পক্ষ থেকে তা পরিশোধ করে দেন। আর যে তা বিনষ্ট করার নিয়তে গ্রহণ করে থাকে, আল্লাহ তাকে বিনষ্ট করে দেন’।[1]
মানুষ ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে বড় উদাসীন। তারা এটাকে খুবই তুচ্ছ মনে করে। অথচ আল্লাহর নিকট তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি আল্লাহর রাস্তায় শহীদ ব্যক্তি এতসব মর্যাদা ও অগণিত ছওয়াবের অধীকারী হওয়া সত্ত্বেও ঋণ পরিশোধের দায় থেকে সে অব্যাহতি পায়নি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
سُبْحَانَ اللهِ مَاذَا أَنْزَلَ مِنَ التَّشْدِيدِ فِي الدَّيْنِ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَوْ أَنَّ رَجُلًا قُتِلَ فِيْ سَبِيلِ اللهِ ثُمَّ أُحْيِيَ ثُمَّ قُتِلَ ثُمَّ أُحْيِيَ ثُمَّ قُتِلَ وَعَلَيْهِ دَيْنٌ مَا دَخَلَ الْجَنَّةَ حَتَّى يُقْضَى عَنْهُ دَيْنُهُ -
‘সুবহানাল্লাহ! ঋণ প্রসঙ্গে কী কঠোর বাণীই না আল্লাহ তা‘আলা অবতীর্ণ করেছেন। যার হাতে আমার জীবন তাঁর শপথ, ঋণগ্রস্ত অবস্থায় কেউ যদি আল্লাহর পথে শহীদ হয় তারপর জীবিত হয়, তারপর শহীদ হয়, তারপর জীবিত হয়, তারপর আবার শহীদ হয় তবুও ঋণ পরিশোধ না করা পর্যন্ত সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না’।[2] এরপরও কি ঋণ পরিশোধে টালবাহানাকারী মতলববাজদের হুঁশ ফিরবে না?
[1]. বুখারী; মিশকাত হা/২৯১০।
[2]. নাসাঈ হা/৪৬৮৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৬০০।
বর্তমান সমাজে ঋণ গ্রহণ একটি মামুলী ও গুরুত্বহীন বিষয় বলে বিবেচিত। অনেকে অভাবের জন্য নয়; বরং প্রাচুর্য সৃষ্টি ও অন্যের সাথে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে নতুন নতুন বাড়ী, গাড়ী, আসবাবপত্র ইত্যাদি ক্রয়ের জন্য ঋণ নিয়ে থাকে। অনেক সময় এরা কিস্তিতে বেচা-কেনা করে থাকে, যার অনেকাংশই সন্দেহপূর্ণ বা হারাম।
ঋণ পরিশোধকে লঘু বা সাধারণভাবে নিলে প্রায়শই সেখানে টালবাহানা ও গড়িমসি সৃষ্টি হয়। ক্ষেত্রবিশেষে তাতে অপরের সম্পদ বিনষ্ট করা হয়। এর শোচনীয় পরিণতি বর্ণনা করতে গিয়ে নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,
مَنْ أَخَذَ أَمْوَالَ النَّاسِ يُرِيدُ أَدَاءَهَا أَدَّى اللهُ عَنْهُ ، وَمَنْ أَخَذَ يُرِيدُ إِتْلاَفَهَا أَتْلَفَهُ اللهُ
‘যে ব্যক্তি পরিশোধের নিয়তে মানুষের সম্পদ গ্রহণ করে, আল্লাহ তা‘আলা তার পক্ষ থেকে তা পরিশোধ করে দেন। আর যে তা বিনষ্ট করার নিয়তে গ্রহণ করে থাকে, আল্লাহ তাকে বিনষ্ট করে দেন’।[1]
মানুষ ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে বড় উদাসীন। তারা এটাকে খুবই তুচ্ছ মনে করে। অথচ আল্লাহর নিকট তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি আল্লাহর রাস্তায় শহীদ ব্যক্তি এতসব মর্যাদা ও অগণিত ছওয়াবের অধীকারী হওয়া সত্ত্বেও ঋণ পরিশোধের দায় থেকে সে অব্যাহতি পায়নি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
سُبْحَانَ اللهِ مَاذَا أَنْزَلَ مِنَ التَّشْدِيدِ فِي الدَّيْنِ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَوْ أَنَّ رَجُلًا قُتِلَ فِيْ سَبِيلِ اللهِ ثُمَّ أُحْيِيَ ثُمَّ قُتِلَ ثُمَّ أُحْيِيَ ثُمَّ قُتِلَ وَعَلَيْهِ دَيْنٌ مَا دَخَلَ الْجَنَّةَ حَتَّى يُقْضَى عَنْهُ دَيْنُهُ -
‘সুবহানাল্লাহ! ঋণ প্রসঙ্গে কী কঠোর বাণীই না আল্লাহ তা‘আলা অবতীর্ণ করেছেন। যার হাতে আমার জীবন তাঁর শপথ, ঋণগ্রস্ত অবস্থায় কেউ যদি আল্লাহর পথে শহীদ হয় তারপর জীবিত হয়, তারপর শহীদ হয়, তারপর জীবিত হয়, তারপর আবার শহীদ হয় তবুও ঋণ পরিশোধ না করা পর্যন্ত সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না’।[2] এরপরও কি ঋণ পরিশোধে টালবাহানাকারী মতলববাজদের হুঁশ ফিরবে না?
[1]. বুখারী; মিশকাত হা/২৯১০।
[2]. নাসাঈ হা/৪৬৮৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৬০০।
যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে না সে কোথা থেকে অর্থ উপার্জন করল এবং কোথায় ব্যয় করল তার কোন পরোয়া করে না। তার একটাই ইচ্ছা সম্পদ বৃদ্ধি করা। চাই তা হারাম, অবৈধ যে পথেই হৌক। এজন্য সে ঘুষ, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, আত্মসাৎ, হারাম দ্রব্য ক্রয়-বিক্রয়, সূদ, ইয়াতীমের মাল ভক্ষণ, জ্যোতিষী, বেশ্যাবৃত্তি, গান-বাজনা ইত্যাদি হারাম কাজের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন, এমনকি মুসলমানদের সরকারী কোষাগার কিংবা জনগণের সম্পদ কুক্ষিগত করা, মানুষকে সংকটে ফেলে তার সম্পদ বাগিয়ে নেওয়া, ভিক্ষাবৃত্তি ইত্যাদি যেকোন উপায়ে অর্থ উপার্জন করে। অতঃপর সে ঐ অর্থ হতে খায়, পরিধান করে, গাড়িতে চড়ে, বাড়ী-ঘর তৈরী করে কিংবা বাড়ী ভাড়া নিয়ে দামী আসবাবপত্র দিয়ে সাজায়। এভাবে হারাম দিয়ে তার উদর পূর্তি করে। অথচ নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, كُلُّ لَحْمٍ نَبَتَ مِنْ سُحْتٍ إِلاَّ كَانَتِ النَّارُ أَوْلَى بِهِ ‘শরীরের যতটুকু গোশত হারাম হতে উৎপন্ন হয়েছে, তা জাহান্নামের জন্যই সবচেয়ে বেশী উপযুক্ত’।[1] আর ক্বিয়ামতের দিনেও তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, কোথা থেকে সে ধন-সম্পদ উপার্জন করেছে এবং কোথায় ব্যয় করেছে।[2] সুতরাং এই শ্রেণীর লোকদের জন্য শুধু ধবংসই অপেক্ষা করছে।
[1]. আহমাদ, তিরমিযী; মিশকাত হা/২৭৭২।
[2]. তিরমিযী; মিশকাত হা/৫১৯৭।
[1]. আহমাদ, তিরমিযী; মিশকাত হা/২৭৭২।
[2]. তিরমিযী; মিশকাত হা/৫১৯৭।
আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, মূর্তি ও ভাগ্য নির্ণায়ক তীর বা লটারী অপবিত্র শয়তানী কাজ ছাড়া আর কিছু নয়। সুতরাং তোমরা এগুলি থেকে বিরত থাক। আশা করা যায় তোমরা সফলকাম হবে’ (মায়েদাহ ৯০)।
মদ্যপান হতে বিরত থাকার আদেশ প্রদান তা হারাম হওয়ার অন্যতম শক্তিশালী দলীল। আল্লাহ তা‘আলা অত্র আয়াতে মদের সঙ্গে মূর্তির কথা উল্লেখ করেছেন। মূর্তি কাফেরদের উপাস্য ও দেব-দেবীর সাধারণ নাম। মূর্তি পূজা হারাম হেতু মদ্যপানও হারাম। তাই উক্ত আয়াতে আল্লাহ উল্লিখিত জিনিসগুলো হারাম করেননি বরং বিরত থাকতে বলেছেন বলে এত্থেকে গা বাঁচানোর কোন উপায় নেই।
মদ্যপান সম্পর্কে হাদীছেও কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
إِنَّ عَلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ عَهْدًا لِمَنْ يَشْرَبُ الْمُسْكِرَ أَنْ يَسْقِيَهُ مِنْ طِينَةِ الْخَبَالِ . قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ وَمَا طِينَةُ الْخَبَالِ؟ قَالَ : عَرَقُ أَهْلِ النَّارِ أَوْ عُصَارَةُ أَهْلِ النَّارِ -
‘যে ব্যক্তি মদ্যপান করে তার জন্য আল্লাহর অঙ্গীকার হল, তিনি তাকে ‘ত্বীনাতুল খাবাল’ পান করাবেন। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) ‘ত্বীনাতুল খাবাল’ কি? তিনি বললেন, জাহান্নামীদের ঘাম অথবা পুঁজ-রক্ত’।[2]
ইবনু আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مُدْمِنُ الْخَمْرِ إِنْ مَاتَ لَقِىَ اللهَ كَعَابِدِ وَثَنٍ ‘শরাবপায়ীরূপে যে মারা যাবে, (ক্বিয়ামতে) সে একজন মূর্তিপূজকের ন্যায় আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে’।[3]
আমাদের যুগে হরেক রকম মদ ও নেশা জাতীয় দ্রব্যাদি বেরিয়েছে। তাদের নামও আরবী, আজমী বিভিন্ন প্রকার রয়েছে। যেমন- বিয়ার, হুইস্কি, চুয়ানি, তাড়ি, ভদকা, শ্যাম্পেন, কোডিন, মরফিন, প্যাথেড্রিন, হেরোইন, ড্রাগ ইত্যাদি।
নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, لَيَشْرَبَنَّ نَاسٌ مِنْ أُمَّتِى الْخَمْرَ يُسَمُّونَهَا بِغَيْرِ اسْمِهَا ‘নিশ্চয়ই আমার উম্মতের কিছু লোক মদ পান করবে, তারা উহার ভিন্ন নামকরণ করে নেবে’।[4]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী উক্ত নাম পাল্টিয়ে মদ পানকারী মুসলমানও বর্তমান যামানায় প্রকাশ পেয়েছে। তারা উহার নাম দিয়েছে ‘রুহানী টনিক’ বা ‘জীবনী সুধা’। অথচ এটা নিছক মিথ্যার উপর প্রলেপ প্রদান ও প্রতারণা মাত্র। এই সমস্ত প্রতারকদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,
يُخَادِعُونَ اللهَ وَالَّذِينَ آمَنُوا وَمَا يَخْدَعُونَ إِلاَ أَنْفُسَهُمْ وَمَا يَشْعُرُونَ -
‘তারা আল্লাহ ও ঈমানদারদের সাথে প্রতারণা করে অথচ তারা যে নিজেদের সাথেই প্রতারণা করছে তা তারা অনুধাবন করতে পারছে না’ (বাক্বারাহ ৯)।
মদ কি এবং তার বিধান কি হবে শরী‘আতে তার পরিপূর্ণ নীতিমালা তুলে ধরা হয়েছে, যাতে ফিৎনা ও দ্বন্দ্বের মূলোৎপাটন করা হয়েছে। এই নীতিমালা হ’ল - كُلُّ مُسْكِرٍ خَمْرٌ وَكُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ ‘প্রত্যেক নেশার দ্রব্যই ‘খামর’ বা মদ এবং প্রত্যেক নেশার দ্রব্যই হারাম’।[5]
সুতরাং যা কিছু মস্তিষ্কের সঙ্গে মিশে জ্ঞান-বুদ্ধিকে নেশাগ্রস্ত করে তোলে তাই হারাম। চাই তা কম হৌক বা বেশী হৌক;[6] তরল পদার্থ হৌক কিংবা কঠিন পদার্থ হৌক। এসব নেশার দ্রব্যের নাম যাই হৌক মূলতঃ এগুলো সবই এক এবং এসবের বিধানও এক।
পরিশেষে মদ্যপায়ীদের উদ্দেশ্যে নবী করীম (ছাঃ)-এর একটি উপদেশবাণী তুলে ধরা হল। তিনি বলেছেন,
مَنْ شَرِبَ الْخَمْرَ وَسَكِرَ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلاَةٌ أَرْبَعِينَ صَبَاحًا وَإِنْ مَاتَ دَخَلَ النَّارَ فَإِنْ تَابَ تَابَ اللهُ عَلَيْهِ وَإِنْ عَادَ فَشَرِبَ فَسَكِرَ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلاَةٌ أَرْبَعِينَ صَبَاحًا فَإِنْ مَاتَ دَخَلَ النَّارَ فَإِنْ تَابَ تَابَ اللهُ عَلَيْهِ وَإِنْ عَادَ فَشَرِبَ فَسَكِرَ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلاَةٌ أَرْبَعِينَ صَبَاحًا فَإِنْ مَاتَ دَخَلَ النَّارَ فَإِنْ تَابَ تَابَ اللهُ عَلَيْهِ وَإِنْ عَادَ كَانَ حَقًّا عَلَى اللهِ أَنْ يَسْقِيَهُ مِنْ رَدْغَةِ الْخَبَالِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ . قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ وَمَا رَدْغَةُ الْخَبَالِ؟ قَالَ : عُصَارَةُ أَهْلِ النَّارِ -
‘যে ব্যক্তি মদ পান করে ও নেশাগ্রস্ত হয় তার চল্লিশ দিনের ছালাত কবুল হবে না। যদি সে ঐ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে তাহলে জাহান্নামে যাবে। আর যদি তওবা করে তবে আল্লাহ তার তওবা কবুল করবেন। পুনরায় যদি সে মদ পান করে ও নেশাগ্রস্ত হয় তবে তার চল্লিশ দিনের ছালাত কবুল হবে না। যদি সে ঐ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে তাহলে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। পুনরায় সে যদি মদ পান করে ও নেশাগ্রস্ত হয় তবে তার চল্লিশ দিনের ছালাত কবুল হবে না। যদি সে ঐ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে তাহলে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। পুনরায় যদি সে মদ পান করে তবে তাকে ক্বিয়ামত দিবসে ‘রাদগাতুল খাবাল’ পান করানো আল্লাহর জন্য কর্তব্য হয়ে দাঁড়াবে। ছাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)! ‘রাদগাতুল খাবাল’ কি? তিনি বললেন, জাহান্নামীদের দেহ নিঃসৃত পুঁজ-রক্ত’।[7]
এই যদি হয় সাধারণ নেশায় অভ্যস্ত ব্যক্তিদের পরিণতি, তবে ঐ সমস্ত লোকদের পরিণতি কেমন হবে, যারা গুরুতরভাবে নেশার দ্রব্যে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে এবং অবিরতভাবে তা পান করে থাকে।
[1]. মদ তথা নেশার দ্রব্যাদি আধুনিক সভ্যতার এক নিদারুণ অভিশাপ। নেশার আবেশে আজকের পৃথিবী তলিয়ে যাচ্ছে। যতই আইন-কানূন করে ও বিরুদ্ধ প্রচার চালিয়ে বন্ধের চেষ্টা করা হচ্ছে, ততই যেন প্রতিনিয়ত তা প্রসার লাভ করছে। বর্তমান সভ্যতার মুখে এ এক নির্লজ্জ চপেটাঘাত। অথচ বহু পূর্বেই ইসলাম শুধু মদ পান করাই হারাম করেনি; বরং এর উৎপাদন ও বেচা-কেনা পর্যন্ত হারাম করেছে এবং পানকারীর জন্য দৈহিক শাস্তি নির্ধারণ করেছে। -অনুবাদক
[2]. মুসলিম; মিশকাত হা/৩৬৩৯।
[3]. আহমাদ; মিশকাত হা/৩৬৫৬, সনদ হাসান।
[4]. আবুদাঊদ, ইবনু মাজাহ; মিশকাত হা/৪২৯২।
[5]. মুসলিম; মিশকাত হা/৩৬৩৮।
[6]. ( مَا أَسْكَرَ كَثِيرُهُ فَقَلِيلُهُ حَرَامٌ ) আবুদাঊদ; মিশকাত হা/৩৬৪৫।
[7]. ইবনু মাজাহ হা/৩৩৭৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৩১৩।
মদ্যপান হতে বিরত থাকার আদেশ প্রদান তা হারাম হওয়ার অন্যতম শক্তিশালী দলীল। আল্লাহ তা‘আলা অত্র আয়াতে মদের সঙ্গে মূর্তির কথা উল্লেখ করেছেন। মূর্তি কাফেরদের উপাস্য ও দেব-দেবীর সাধারণ নাম। মূর্তি পূজা হারাম হেতু মদ্যপানও হারাম। তাই উক্ত আয়াতে আল্লাহ উল্লিখিত জিনিসগুলো হারাম করেননি বরং বিরত থাকতে বলেছেন বলে এত্থেকে গা বাঁচানোর কোন উপায় নেই।
মদ্যপান সম্পর্কে হাদীছেও কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
إِنَّ عَلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ عَهْدًا لِمَنْ يَشْرَبُ الْمُسْكِرَ أَنْ يَسْقِيَهُ مِنْ طِينَةِ الْخَبَالِ . قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ وَمَا طِينَةُ الْخَبَالِ؟ قَالَ : عَرَقُ أَهْلِ النَّارِ أَوْ عُصَارَةُ أَهْلِ النَّارِ -
‘যে ব্যক্তি মদ্যপান করে তার জন্য আল্লাহর অঙ্গীকার হল, তিনি তাকে ‘ত্বীনাতুল খাবাল’ পান করাবেন। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) ‘ত্বীনাতুল খাবাল’ কি? তিনি বললেন, জাহান্নামীদের ঘাম অথবা পুঁজ-রক্ত’।[2]
ইবনু আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مُدْمِنُ الْخَمْرِ إِنْ مَاتَ لَقِىَ اللهَ كَعَابِدِ وَثَنٍ ‘শরাবপায়ীরূপে যে মারা যাবে, (ক্বিয়ামতে) সে একজন মূর্তিপূজকের ন্যায় আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে’।[3]
আমাদের যুগে হরেক রকম মদ ও নেশা জাতীয় দ্রব্যাদি বেরিয়েছে। তাদের নামও আরবী, আজমী বিভিন্ন প্রকার রয়েছে। যেমন- বিয়ার, হুইস্কি, চুয়ানি, তাড়ি, ভদকা, শ্যাম্পেন, কোডিন, মরফিন, প্যাথেড্রিন, হেরোইন, ড্রাগ ইত্যাদি।
নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, لَيَشْرَبَنَّ نَاسٌ مِنْ أُمَّتِى الْخَمْرَ يُسَمُّونَهَا بِغَيْرِ اسْمِهَا ‘নিশ্চয়ই আমার উম্মতের কিছু লোক মদ পান করবে, তারা উহার ভিন্ন নামকরণ করে নেবে’।[4]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী উক্ত নাম পাল্টিয়ে মদ পানকারী মুসলমানও বর্তমান যামানায় প্রকাশ পেয়েছে। তারা উহার নাম দিয়েছে ‘রুহানী টনিক’ বা ‘জীবনী সুধা’। অথচ এটা নিছক মিথ্যার উপর প্রলেপ প্রদান ও প্রতারণা মাত্র। এই সমস্ত প্রতারকদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,
يُخَادِعُونَ اللهَ وَالَّذِينَ آمَنُوا وَمَا يَخْدَعُونَ إِلاَ أَنْفُسَهُمْ وَمَا يَشْعُرُونَ -
‘তারা আল্লাহ ও ঈমানদারদের সাথে প্রতারণা করে অথচ তারা যে নিজেদের সাথেই প্রতারণা করছে তা তারা অনুধাবন করতে পারছে না’ (বাক্বারাহ ৯)।
মদ কি এবং তার বিধান কি হবে শরী‘আতে তার পরিপূর্ণ নীতিমালা তুলে ধরা হয়েছে, যাতে ফিৎনা ও দ্বন্দ্বের মূলোৎপাটন করা হয়েছে। এই নীতিমালা হ’ল - كُلُّ مُسْكِرٍ خَمْرٌ وَكُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ ‘প্রত্যেক নেশার দ্রব্যই ‘খামর’ বা মদ এবং প্রত্যেক নেশার দ্রব্যই হারাম’।[5]
সুতরাং যা কিছু মস্তিষ্কের সঙ্গে মিশে জ্ঞান-বুদ্ধিকে নেশাগ্রস্ত করে তোলে তাই হারাম। চাই তা কম হৌক বা বেশী হৌক;[6] তরল পদার্থ হৌক কিংবা কঠিন পদার্থ হৌক। এসব নেশার দ্রব্যের নাম যাই হৌক মূলতঃ এগুলো সবই এক এবং এসবের বিধানও এক।
পরিশেষে মদ্যপায়ীদের উদ্দেশ্যে নবী করীম (ছাঃ)-এর একটি উপদেশবাণী তুলে ধরা হল। তিনি বলেছেন,
مَنْ شَرِبَ الْخَمْرَ وَسَكِرَ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلاَةٌ أَرْبَعِينَ صَبَاحًا وَإِنْ مَاتَ دَخَلَ النَّارَ فَإِنْ تَابَ تَابَ اللهُ عَلَيْهِ وَإِنْ عَادَ فَشَرِبَ فَسَكِرَ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلاَةٌ أَرْبَعِينَ صَبَاحًا فَإِنْ مَاتَ دَخَلَ النَّارَ فَإِنْ تَابَ تَابَ اللهُ عَلَيْهِ وَإِنْ عَادَ فَشَرِبَ فَسَكِرَ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلاَةٌ أَرْبَعِينَ صَبَاحًا فَإِنْ مَاتَ دَخَلَ النَّارَ فَإِنْ تَابَ تَابَ اللهُ عَلَيْهِ وَإِنْ عَادَ كَانَ حَقًّا عَلَى اللهِ أَنْ يَسْقِيَهُ مِنْ رَدْغَةِ الْخَبَالِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ . قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ وَمَا رَدْغَةُ الْخَبَالِ؟ قَالَ : عُصَارَةُ أَهْلِ النَّارِ -
‘যে ব্যক্তি মদ পান করে ও নেশাগ্রস্ত হয় তার চল্লিশ দিনের ছালাত কবুল হবে না। যদি সে ঐ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে তাহলে জাহান্নামে যাবে। আর যদি তওবা করে তবে আল্লাহ তার তওবা কবুল করবেন। পুনরায় যদি সে মদ পান করে ও নেশাগ্রস্ত হয় তবে তার চল্লিশ দিনের ছালাত কবুল হবে না। যদি সে ঐ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে তাহলে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। পুনরায় সে যদি মদ পান করে ও নেশাগ্রস্ত হয় তবে তার চল্লিশ দিনের ছালাত কবুল হবে না। যদি সে ঐ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে তাহলে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। পুনরায় যদি সে মদ পান করে তবে তাকে ক্বিয়ামত দিবসে ‘রাদগাতুল খাবাল’ পান করানো আল্লাহর জন্য কর্তব্য হয়ে দাঁড়াবে। ছাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)! ‘রাদগাতুল খাবাল’ কি? তিনি বললেন, জাহান্নামীদের দেহ নিঃসৃত পুঁজ-রক্ত’।[7]
এই যদি হয় সাধারণ নেশায় অভ্যস্ত ব্যক্তিদের পরিণতি, তবে ঐ সমস্ত লোকদের পরিণতি কেমন হবে, যারা গুরুতরভাবে নেশার দ্রব্যে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে এবং অবিরতভাবে তা পান করে থাকে।
[1]. মদ তথা নেশার দ্রব্যাদি আধুনিক সভ্যতার এক নিদারুণ অভিশাপ। নেশার আবেশে আজকের পৃথিবী তলিয়ে যাচ্ছে। যতই আইন-কানূন করে ও বিরুদ্ধ প্রচার চালিয়ে বন্ধের চেষ্টা করা হচ্ছে, ততই যেন প্রতিনিয়ত তা প্রসার লাভ করছে। বর্তমান সভ্যতার মুখে এ এক নির্লজ্জ চপেটাঘাত। অথচ বহু পূর্বেই ইসলাম শুধু মদ পান করাই হারাম করেনি; বরং এর উৎপাদন ও বেচা-কেনা পর্যন্ত হারাম করেছে এবং পানকারীর জন্য দৈহিক শাস্তি নির্ধারণ করেছে। -অনুবাদক
[2]. মুসলিম; মিশকাত হা/৩৬৩৯।
[3]. আহমাদ; মিশকাত হা/৩৬৫৬, সনদ হাসান।
[4]. আবুদাঊদ, ইবনু মাজাহ; মিশকাত হা/৪২৯২।
[5]. মুসলিম; মিশকাত হা/৩৬৩৮।
[6]. ( مَا أَسْكَرَ كَثِيرُهُ فَقَلِيلُهُ حَرَامٌ ) আবুদাঊদ; মিশকাত হা/৩৬৪৫।
[7]. ইবনু মাজাহ হা/৩৩৭৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৩১৩।
আধুনিক কালে গার্হস্থ্য জিনিসপত্রের এমন কোন দোকান পাওয়া যাবে না, যেখানে সোনা-রূপার পাত্র অথবা সোনা-রূপার প্রলেপযুক্ত পাত্রাদি নেই। ধনীদের গৃহে এমনকি অনেক হোটেলেও এসব পাত্র পরিবেশন করা হয়। এ জাতীয় পাত্র বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রদত্ত মূল্যবান উপঢৌকনে পরিণত হয়েছে। অনেকে নিজ বাড়িতে সোনা-রূপার পাত্র রাখে না বটে কিন্তু অন্যের বাড়ীতে ‘ওয়ালীমা’ ইত্যাদি অনুষ্ঠানে পরিবেশিত সোনা-রূপার পাত্র ব্যবহারে কুণ্ঠাবোধ করে না। অথচ নিজ বাড়ীতে হৌক কিংবা অন্যের বাড়ীতে হৌক, শরী‘আতে এসব পাত্র ব্যবহার হারাম ঘোষিত হয়েছে। এ জাতীয় পাত্র ব্যবহারে কঠোর শাস্তির কথা হাদীছে এসেছে। উম্মু সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
إِنَّ الَّذِى يَأْكُلُ أَوْ يَشْرَبُ فِى آنِيَةِ الْفِضَّةِ وَالذَّهَبِ إِنَّمَا يُجَرْجِرُ فِيْ بَطْنِهِ نَارَ جَهَنَّمَ
‘যে ব্যক্তি রূপা ও সোনার পাত্রে খাবে কিংবা পান করবে তার পেটে জাহান্নামের আগুন ঢক ঢক করে ঢুকিয়ে দেওয়া হবে’।[1]
এ বিধান খাবারের পাত্র সহ যেকোন ধরনের সোনা-রূপার পাত্রের জন্য প্রযোজ্য। যেমন- প্লেট, ডিস, কাঁটা চামচ, চামচ, ছুরি, মেহমানদারীর জন্য প্রস্ত্তত খাদ্য প্রদানের পাত্র, বিবাহ ইত্যাদিতে মিষ্টি প্রভৃতি পরিবেশনের ডালা বা বারকোশ ইত্যাদি।
কিছু লোক শোকেসের মধ্যে সোনা-রূপার পাত্র রেখে বলে, এগুলি আমরা ব্যবহার করি না, কেবল সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য রেখে দিয়েছি। হারামের পথ রুদ্ধ করার জন্য তাদের উক্ত কাজও অনুমোদনযোগ্য নয়।
[1]. মুসলিম হা/২০৬৫।
إِنَّ الَّذِى يَأْكُلُ أَوْ يَشْرَبُ فِى آنِيَةِ الْفِضَّةِ وَالذَّهَبِ إِنَّمَا يُجَرْجِرُ فِيْ بَطْنِهِ نَارَ جَهَنَّمَ
‘যে ব্যক্তি রূপা ও সোনার পাত্রে খাবে কিংবা পান করবে তার পেটে জাহান্নামের আগুন ঢক ঢক করে ঢুকিয়ে দেওয়া হবে’।[1]
এ বিধান খাবারের পাত্র সহ যেকোন ধরনের সোনা-রূপার পাত্রের জন্য প্রযোজ্য। যেমন- প্লেট, ডিস, কাঁটা চামচ, চামচ, ছুরি, মেহমানদারীর জন্য প্রস্ত্তত খাদ্য প্রদানের পাত্র, বিবাহ ইত্যাদিতে মিষ্টি প্রভৃতি পরিবেশনের ডালা বা বারকোশ ইত্যাদি।
কিছু লোক শোকেসের মধ্যে সোনা-রূপার পাত্র রেখে বলে, এগুলি আমরা ব্যবহার করি না, কেবল সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য রেখে দিয়েছি। হারামের পথ রুদ্ধ করার জন্য তাদের উক্ত কাজও অনুমোদনযোগ্য নয়।
[1]. মুসলিম হা/২০৬৫।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
فَاجْتَنِبُوا الرِّجْسَ مِنَ الْأَوْثَانِ وَاجْتَنِبُوا قَوْلَ الزُّورِ- حُنَفَاءَ لِلَّهِ غَيْرَ مُشْرِكِينَ بِهِ -
‘সুতরাং তোমরা পূতিগন্ধ অর্থাৎ মূর্তি, প্রতিমা থেকে দূরে থাক এবং মিথ্যা কথন থেকে দূরে থাক, আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ হয়ে ও তাঁর সঙ্গে শিরক না করে’ (হজ্জ ৩০-৩১)।
হাদীছে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِى بَكْرَةَ عَنْ أَبِيهِ قَالَ : كُنَّا عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صَلىَّ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ : أَلاَ أُنَبِّئُكُمْ بِأَكْبَرِ الْكَبَائِرِ ثَلاَثًا- قَالُوا بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ- قَالَ : الإِشْرَاكُ بِاللهِ، وَعُقُوقُ الْوَالِدَيْنِ- وَجَلَسَ وَكَانَ مُتَّكِئًا فَقَالَ : أَلاَ وَقَوْلُ الزُّورِ وَشَهَادَةُ الزُّورِ- قَالَ فَمَا زَالَ يُكَرِّرُهَا حَتَّى قُلْنَا لَيْتَهُ سَكَتَ -
‘আবু বাকরা (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মজলিসে ছিলাম। এমন সময় তিনি আমাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে বৃহত্তম কবীরা গুনাহ সম্পর্কে অবহিত করব না? কথাটি তিনি তিনবার বললেন। ছাহাবীগণ বললেন, অবশ্যই বলবেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! (উত্তরে তিনি বললেন) আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা, মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া। তিনি হেলান দেওয়া অবস্থায় কথাগুলি বলছিলেন। অতঃপর সোজা হয়ে বসে বললেন, শুনে রাখ! আর মিথ্যা বলা ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া। এ কথাটি তিনি এতবার বলতে থাকলেন যে আমরা শেষ পর্যন্ত বলে ফেললাম, যদি তিনি এবার ক্ষান্ত হ’তেন!’ [1]
আলোচ্য হাদীছে মিথ্যা সাক্ষ্যের ভয়াবহতা বুঝাতে পুনঃপুনঃ কথাটি বলা হয়েছে। কেননা মানুষ এ বিষয়টিকে হালকাভাবে নিয়ে থাকে। মিথ্যা সাক্ষ্য নিষিদ্ধ হওয়ার পেছনে অনেক কারণও রয়েছে। যেমন শত্রুতা, হিংসা ইত্যাদি। মিথ্যা সাক্ষ্যের ফলে ক্ষয়-ক্ষতিও হয় প্রচুর। মিথ্যা সাক্ষ্যের ফলে কত হক্ব যে বিনষ্ট হয়ে গেছে, কত নির্দোষ লোক যুলুম-নিপীড়নের শিকার হচ্ছে, কত লোক যে জিনিসের উপর তাদের কোন অধিকার নেই তাতে অধিকার প্রতিষ্ঠা করছে, কতজন যে বংশের মানুষ নয় সে বংশের সন্তান গণ্য হচ্ছে- তার কোন ইয়ত্তা নেই।
কিছু লোক বিচার-ফায়ছালার জন্য অন্য লোককে এই বলে স্বপক্ষে টেনে আনে যে, তুমি আমার পক্ষে অমুক বিষয়ে আদালতে সাক্ষ্য দিবে, তোমার প্রয়োজনে আমিও তোমার পক্ষে সাক্ষ্য দিব। সাক্ষ্য দিতে হলে যেখানে ঘটনা প্রত্যক্ষ করা অপরিহার্য সেখানে হয়ত এই লোকটির সঙ্গে তার কোর্টের বারান্দায় কিংবা বাড়ীর দহলিজে মাত্র দেখা হয়েছে। মূল ঘটনার সময় হয়ত সে আদৌ উপস্থিত ছিল না। তা সত্ত্বেও সে তার পক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করে। তার এই মিথ্যা সাক্ষ্যের ফলে কোন ভূমি কিংবা বাড়ীর মালিকানা প্রকৃত মালিকের হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। কিংবা কোন দোষী ব্যক্তি বেকসুর খালাস পেয়ে যেতে পারে। এসব সাক্ষ্য ডাহা মিথ্যা। সুতরাং না দেখে না জেনে কোন প্রকারেই সাক্ষ্য দেওয়া যাবে না। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, وَمَا شَهِدْنَا إِلاَ بِمَا عَلِمْنَا ‘আমরা যা জানি তার বাইরে সাক্ষ্য দিতে পারি না’ (ইউসুফ ৮১)।
[1]. বুখারী হা/২৬৫৪, ৫৯৭৬; মুসলিম হা/৮৭।
فَاجْتَنِبُوا الرِّجْسَ مِنَ الْأَوْثَانِ وَاجْتَنِبُوا قَوْلَ الزُّورِ- حُنَفَاءَ لِلَّهِ غَيْرَ مُشْرِكِينَ بِهِ -
‘সুতরাং তোমরা পূতিগন্ধ অর্থাৎ মূর্তি, প্রতিমা থেকে দূরে থাক এবং মিথ্যা কথন থেকে দূরে থাক, আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ হয়ে ও তাঁর সঙ্গে শিরক না করে’ (হজ্জ ৩০-৩১)।
হাদীছে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِى بَكْرَةَ عَنْ أَبِيهِ قَالَ : كُنَّا عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صَلىَّ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ : أَلاَ أُنَبِّئُكُمْ بِأَكْبَرِ الْكَبَائِرِ ثَلاَثًا- قَالُوا بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ- قَالَ : الإِشْرَاكُ بِاللهِ، وَعُقُوقُ الْوَالِدَيْنِ- وَجَلَسَ وَكَانَ مُتَّكِئًا فَقَالَ : أَلاَ وَقَوْلُ الزُّورِ وَشَهَادَةُ الزُّورِ- قَالَ فَمَا زَالَ يُكَرِّرُهَا حَتَّى قُلْنَا لَيْتَهُ سَكَتَ -
‘আবু বাকরা (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মজলিসে ছিলাম। এমন সময় তিনি আমাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে বৃহত্তম কবীরা গুনাহ সম্পর্কে অবহিত করব না? কথাটি তিনি তিনবার বললেন। ছাহাবীগণ বললেন, অবশ্যই বলবেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! (উত্তরে তিনি বললেন) আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা, মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া। তিনি হেলান দেওয়া অবস্থায় কথাগুলি বলছিলেন। অতঃপর সোজা হয়ে বসে বললেন, শুনে রাখ! আর মিথ্যা বলা ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া। এ কথাটি তিনি এতবার বলতে থাকলেন যে আমরা শেষ পর্যন্ত বলে ফেললাম, যদি তিনি এবার ক্ষান্ত হ’তেন!’ [1]
আলোচ্য হাদীছে মিথ্যা সাক্ষ্যের ভয়াবহতা বুঝাতে পুনঃপুনঃ কথাটি বলা হয়েছে। কেননা মানুষ এ বিষয়টিকে হালকাভাবে নিয়ে থাকে। মিথ্যা সাক্ষ্য নিষিদ্ধ হওয়ার পেছনে অনেক কারণও রয়েছে। যেমন শত্রুতা, হিংসা ইত্যাদি। মিথ্যা সাক্ষ্যের ফলে ক্ষয়-ক্ষতিও হয় প্রচুর। মিথ্যা সাক্ষ্যের ফলে কত হক্ব যে বিনষ্ট হয়ে গেছে, কত নির্দোষ লোক যুলুম-নিপীড়নের শিকার হচ্ছে, কত লোক যে জিনিসের উপর তাদের কোন অধিকার নেই তাতে অধিকার প্রতিষ্ঠা করছে, কতজন যে বংশের মানুষ নয় সে বংশের সন্তান গণ্য হচ্ছে- তার কোন ইয়ত্তা নেই।
কিছু লোক বিচার-ফায়ছালার জন্য অন্য লোককে এই বলে স্বপক্ষে টেনে আনে যে, তুমি আমার পক্ষে অমুক বিষয়ে আদালতে সাক্ষ্য দিবে, তোমার প্রয়োজনে আমিও তোমার পক্ষে সাক্ষ্য দিব। সাক্ষ্য দিতে হলে যেখানে ঘটনা প্রত্যক্ষ করা অপরিহার্য সেখানে হয়ত এই লোকটির সঙ্গে তার কোর্টের বারান্দায় কিংবা বাড়ীর দহলিজে মাত্র দেখা হয়েছে। মূল ঘটনার সময় হয়ত সে আদৌ উপস্থিত ছিল না। তা সত্ত্বেও সে তার পক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করে। তার এই মিথ্যা সাক্ষ্যের ফলে কোন ভূমি কিংবা বাড়ীর মালিকানা প্রকৃত মালিকের হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। কিংবা কোন দোষী ব্যক্তি বেকসুর খালাস পেয়ে যেতে পারে। এসব সাক্ষ্য ডাহা মিথ্যা। সুতরাং না দেখে না জেনে কোন প্রকারেই সাক্ষ্য দেওয়া যাবে না। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, وَمَا شَهِدْنَا إِلاَ بِمَا عَلِمْنَا ‘আমরা যা জানি তার বাইরে সাক্ষ্য দিতে পারি না’ (ইউসুফ ৮১)।
[1]. বুখারী হা/২৬৫৪, ৫৯৭৬; মুসলিম হা/৮৭।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيلِ اللهِ -
‘মানুষের মাঝে কেউ কেউ এমন আছে, যে আল্লাহর রাস্তা (ইসলাম) হতে বিচ্যুত করার জন্য অসার কথা খরিদ করে’ (লুক্বমান ৬)।
ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) আল্লাহর কসম করে বলেছেন, উক্ত আয়াতে ‘অসার কথা’ বলতে গানকে বুঝানো হয়েছে।[2]
আবূ আমির ও আবূ মালিক আল-আশ‘আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, لَيَكُونَنَّ مِنْ أُمَّتِى أَقْوَامٌ يَسْتَحِلُّونَ الْحِرَ وَالْحَرِيرَ وَالْخَمْرَ وَالْمَعَازِفَ ‘অবশ্যই আমার উম্মতের মধ্যে এমন অনেক গোষ্ঠী হবে, যারা স্বাধীন মানুষের কেনা-বেচা, রেশম ব্যবহার, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল গণ্য করবে’।[3]
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, لَيَكُونَنَّ فِيْ هذِهِ الأُمَّةِ خَسْفٌ وَقَذْفٌ وَمَسْخٌ وَذلِكَ إِذَا شَرِبُوا الخُمُورَ وَاتَّخَذُوا الْقَيْنَاتِ وَضَرَبُوا بِالمَعَازِفِ - ‘অবশ্যই এই উম্মতের মধ্যে ভূমিধ্বস, আসমান থেকে নিক্ষিপ্ত গযব ও দৈহিক রূপান্তরের শাস্তির প্রাদুর্ভাব দেখা দিবে। এসব তখনই ঘটবে যখন তারা মদ্যপান শুরু করবে, গায়িকা রাখবে ও বাদ্যযন্ত্র বাজাবে’।[4]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঢোল-তবলা বাজাতে নিষেধ করেছেন[5] এবং বাঁশিকে দুষ্ট লোক ও বোকার কণ্ঠস্বর নামে আখ্যায়িত করেছেন[6]।
পূর্বসূরি আলেমগণ যেমন ইমাম আহমাদ (রহঃ) প্রমুখ পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, অসার ক্রীড়া-কৌতুক, গান-বাজনা এবং তাতে ব্যবহৃত যন্ত্রাদি হারাম। যেমন সারেঙ্গী, তানপুরা, রাবাব, মন্দিরা, বাঁশি, ফ্লুট বাঁশি, তবলা ইত্যাদি।
আধুনিক বাদ্যযন্ত্রসমূহ নিঃসন্দেহে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিষেধ বাণীর আওতায় পড়ে। যেমন- বেহালা, একতারা, দোতারা, হার্প, পিয়ানো, গিটার, ম্যান্ডেলিন ইত্যাদি। এই যন্ত্রগুলি বরং হাদীছে নিষিদ্ধ তৎকালীন অনেক যন্ত্র থেকে অনেক বেশী মোহ ও তন্ময়তা সৃষ্টি করে। এমনকি বাদ্যযন্ত্রের নেশা মদের নেশা থেকেও অনেক বড় হয়ে দাঁড়ায়।
আর যদি বাদ্যযন্ত্রের সাথে গান ও সুর সংযোজিত হয় তাহলে পাপের পরিধি বেড়ে যাবে, হারামও কঠিন হবে। সেই সাথে গানের কথাগুলি যদি প্রেম-ভালবাসা, রূপচর্চা, যৌন উদ্দীপনা সৃষ্টিকারী ইত্যাদি বিষয়ে হয় তাহলে তো মুছীবতের কোন শেষ নেই।
এ কারণেই আলেমগণ বলেছেন, গান ব্যভিচারের বার্তাবাহক এবং অন্তরে কপটতা সৃষ্টিকারী। মোটকথা, বর্তমান কালে গানের কথা, সুর ও বাদ্য এক বিরাট ফিৎনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মিউজিকের এই সর্বগ্রাসী থাবা এখন শুধু গানেই সীমাবদ্ধ নেই; বরং তা ঘড়ি, ঘণ্টা, ভেঁপু, শিশুখেলনা, কম্পিউটার ও টেলিফোন ও মোবাইলের মাঝেও বিস্তৃত হয়েছে। মনের দৃঢ় সংকল্প না থাকলে এসব থেকে বাঁচা বড়ই দুষ্কর। وَاللهُ الْمُسْتَعَانُ ‘আল্লাহই সাহায্যস্থল’।
[1]. গান-বাজনার সঙ্গে পরিচিত নয় এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। গানের বিভিন্ন প্রকার রয়েছে। কিন্তু কম্বলের লোম বাছা যেমন কষ্টকর তেমনি অসংখ্য হারাম গানের মধ্য হতে দু’একটি হালাল গান বের করাও কষ্টকর। গান দ্বারা যদি আল্লাহ ও রাসূলের প্রশংসা করা হয়, জিহাদের প্রতি অনুপ্রাণিত করা হয়, ইসলামের অনুশাসন মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ করা হয়, চরিত্র গঠনের চেষ্টা করা হয়, পাপ-পংকিলতা থেকে নিরুৎসাহিত করা হয়, তাহলে বাদ্যযন্ত্রবিহীন এ জাতীয় গান বৈধ হবে। উল্লিখিত ও অনুরূপ বিষয় ছাড়া গান হারাম -অনুবাদক।
[2]. তাফসীরে ইবনু কাছীর ৬/৩৩৩ পৃঃ।
[3]. বুখারী; মিশকাত হা/৫৩৪৩।
[4]. তিরমিযী হা/২১৮৫; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২২০৩।
[5]. বায়হাক্বী, মিশকাত হা/৪৫০৩; ছহীহুল জামে‘ হা/১৭৪৭-৪৮।
[6]. তিরমিযী হা/১০০৫; ছহীহুল জামে‘ হা/৫১৯৪।
‘মানুষের মাঝে কেউ কেউ এমন আছে, যে আল্লাহর রাস্তা (ইসলাম) হতে বিচ্যুত করার জন্য অসার কথা খরিদ করে’ (লুক্বমান ৬)।
ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) আল্লাহর কসম করে বলেছেন, উক্ত আয়াতে ‘অসার কথা’ বলতে গানকে বুঝানো হয়েছে।[2]
আবূ আমির ও আবূ মালিক আল-আশ‘আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, لَيَكُونَنَّ مِنْ أُمَّتِى أَقْوَامٌ يَسْتَحِلُّونَ الْحِرَ وَالْحَرِيرَ وَالْخَمْرَ وَالْمَعَازِفَ ‘অবশ্যই আমার উম্মতের মধ্যে এমন অনেক গোষ্ঠী হবে, যারা স্বাধীন মানুষের কেনা-বেচা, রেশম ব্যবহার, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল গণ্য করবে’।[3]
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, لَيَكُونَنَّ فِيْ هذِهِ الأُمَّةِ خَسْفٌ وَقَذْفٌ وَمَسْخٌ وَذلِكَ إِذَا شَرِبُوا الخُمُورَ وَاتَّخَذُوا الْقَيْنَاتِ وَضَرَبُوا بِالمَعَازِفِ - ‘অবশ্যই এই উম্মতের মধ্যে ভূমিধ্বস, আসমান থেকে নিক্ষিপ্ত গযব ও দৈহিক রূপান্তরের শাস্তির প্রাদুর্ভাব দেখা দিবে। এসব তখনই ঘটবে যখন তারা মদ্যপান শুরু করবে, গায়িকা রাখবে ও বাদ্যযন্ত্র বাজাবে’।[4]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঢোল-তবলা বাজাতে নিষেধ করেছেন[5] এবং বাঁশিকে দুষ্ট লোক ও বোকার কণ্ঠস্বর নামে আখ্যায়িত করেছেন[6]।
পূর্বসূরি আলেমগণ যেমন ইমাম আহমাদ (রহঃ) প্রমুখ পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, অসার ক্রীড়া-কৌতুক, গান-বাজনা এবং তাতে ব্যবহৃত যন্ত্রাদি হারাম। যেমন সারেঙ্গী, তানপুরা, রাবাব, মন্দিরা, বাঁশি, ফ্লুট বাঁশি, তবলা ইত্যাদি।
আধুনিক বাদ্যযন্ত্রসমূহ নিঃসন্দেহে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিষেধ বাণীর আওতায় পড়ে। যেমন- বেহালা, একতারা, দোতারা, হার্প, পিয়ানো, গিটার, ম্যান্ডেলিন ইত্যাদি। এই যন্ত্রগুলি বরং হাদীছে নিষিদ্ধ তৎকালীন অনেক যন্ত্র থেকে অনেক বেশী মোহ ও তন্ময়তা সৃষ্টি করে। এমনকি বাদ্যযন্ত্রের নেশা মদের নেশা থেকেও অনেক বড় হয়ে দাঁড়ায়।
আর যদি বাদ্যযন্ত্রের সাথে গান ও সুর সংযোজিত হয় তাহলে পাপের পরিধি বেড়ে যাবে, হারামও কঠিন হবে। সেই সাথে গানের কথাগুলি যদি প্রেম-ভালবাসা, রূপচর্চা, যৌন উদ্দীপনা সৃষ্টিকারী ইত্যাদি বিষয়ে হয় তাহলে তো মুছীবতের কোন শেষ নেই।
এ কারণেই আলেমগণ বলেছেন, গান ব্যভিচারের বার্তাবাহক এবং অন্তরে কপটতা সৃষ্টিকারী। মোটকথা, বর্তমান কালে গানের কথা, সুর ও বাদ্য এক বিরাট ফিৎনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মিউজিকের এই সর্বগ্রাসী থাবা এখন শুধু গানেই সীমাবদ্ধ নেই; বরং তা ঘড়ি, ঘণ্টা, ভেঁপু, শিশুখেলনা, কম্পিউটার ও টেলিফোন ও মোবাইলের মাঝেও বিস্তৃত হয়েছে। মনের দৃঢ় সংকল্প না থাকলে এসব থেকে বাঁচা বড়ই দুষ্কর। وَاللهُ الْمُسْتَعَانُ ‘আল্লাহই সাহায্যস্থল’।
[1]. গান-বাজনার সঙ্গে পরিচিত নয় এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। গানের বিভিন্ন প্রকার রয়েছে। কিন্তু কম্বলের লোম বাছা যেমন কষ্টকর তেমনি অসংখ্য হারাম গানের মধ্য হতে দু’একটি হালাল গান বের করাও কষ্টকর। গান দ্বারা যদি আল্লাহ ও রাসূলের প্রশংসা করা হয়, জিহাদের প্রতি অনুপ্রাণিত করা হয়, ইসলামের অনুশাসন মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ করা হয়, চরিত্র গঠনের চেষ্টা করা হয়, পাপ-পংকিলতা থেকে নিরুৎসাহিত করা হয়, তাহলে বাদ্যযন্ত্রবিহীন এ জাতীয় গান বৈধ হবে। উল্লিখিত ও অনুরূপ বিষয় ছাড়া গান হারাম -অনুবাদক।
[2]. তাফসীরে ইবনু কাছীর ৬/৩৩৩ পৃঃ।
[3]. বুখারী; মিশকাত হা/৫৩৪৩।
[4]. তিরমিযী হা/২১৮৫; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২২০৩।
[5]. বায়হাক্বী, মিশকাত হা/৪৫০৩; ছহীহুল জামে‘ হা/১৭৪৭-৪৮।
[6]. তিরমিযী হা/১০০৫; ছহীহুল জামে‘ হা/৫১৯৪।
মুসলমানদের গীবত ও তাদের মান-ইযযতে অহেতুক নাক গলানো এখন একটি জনপ্রিয় বিষয়ে পরিণত হয়েছে। অথচ গীবত করতে আল্লাহ তা‘আলা কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। মানুষ যাতে গীবতকে ঘৃণা করে এবং তাতে নিরুৎসাহ হয় সেজন্য আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যাদেশ করেছেন। সর্বোপরি তিনি গীবতকে এমন ঘৃণ্যভাবে চিত্রিত করেছেন, যে কোন মনই তার প্রতি বিতৃষ্ণ হবে। তিনি বলেছেন,
وَلاَ يَغْتَبْ بَعْضُكُمْ بَعْضًا أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَنْ يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ -
‘তোমরা একে অপরের যেন গীবত না কর। তোমাদের কেউ কি স্বীয় মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ পসন্দ করে? অনন্তর তোমরা তা অপসন্দ কর’ (হুজুরাত ১২)।
‘গীবত’-এর পরিচয় প্রসঙ্গে নবী করীম (ছাঃ) ছাহাবীগণকে লক্ষ্য করে বলেছেন,
أَتَدْرُونَ مَا الْغِيبَةُ؟ قَالُوا اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ . قَالَ : ذِكْرُكَ أَخَاكَ بِمَا يَكْرَهُ . قِيلَ أَفَرَأَيْتَ إِنْ كَانَ فِى أَخِى مَا أَقُولُ؟ قَالَ : إِنْ كَانَ فِيْهِ مَا تَقُولُ فَقَدِ اغْتَبْتَهُ وَإِنْ لَمْ يَكُنْ فِيْهِ فَقَدْ بَهَتَّهُ -
‘তোমরা কি জান ‘গীবত’ কী? তাঁরা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই অধিক জ্ঞাত। তিনি বললেন, তোমার ভাই যে কথা অপসন্দ করে তার সম্পর্কে সে কথা বলার নাম গীবত। জিজ্ঞেস করা হ’ল, আমি যা বলছি তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তুমি যা বলছ তা যদি তার মধ্যে বিদ্যমান থাকে তবেই তুমি তার ‘গীবত’ করলে। আর যদি না থাকে তাহলে তুমি তাকে অপবাদ দিলে’।[1]
সুতরাং মানুষের মধ্যে যে দোষ আছে এবং যার চর্চা সে অপসন্দ করে তা আলোচনা করাই গীবত। চাই সে দোষ তার শরীর সংক্রান্ত হৌক কিংবা দ্বীন ও চরিত্র বিষয়ক হৌক কিংবা আকার-আকৃতি বিষয়ক হৌক। গীবত করার আঙ্গিক বা ধরনও নানারকম রয়েছে। যেমন ব্যক্তির দোষ আলোচনা করা, বিদ্রুপাত্মক ভঙ্গিতে তার কর্মকান্ড তুলে ধরা ইত্যাদি।
আল্লাহ পাকের নিকটে গীবত বড়ই কদর্য ও খারাপ কাজ হওয়া সত্ত্বেও মানুষ গীবতের ব্যাপারে খুবই উদাসীনতা দেখিয়ে থাকে। এজন্য গীবতের ভয়াবহতা প্রসঙ্গে নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,
اَلرِّبَا اثْنَانِ وَسَبْعُونَ بَابًا أَدْنَاهَا مِثْلُ إِتْيَانِ الرَّجُلِ أُمَّهُ وَأَرْبَا الرِّبَا اسْتِطَالَةُ الرَّجُلِ فِيْ عِرْضِ أَخِيهِ -
‘সূদের (পাপের) ৭২টি দরজা বা স্তর রয়েছে। তন্মধ্যে নিম্নতম স্তর হচ্ছে স্বীয় মায়ের সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া তুল্য পাপ এবং ঊর্ধ্বতম স্তর হ’ল কোন ব্যক্তি কর্তৃক তার এক ভাইয়ের মান-সম্ভ্রমের হানি ঘটান তুল্য পাপ’।[2]
যে মজলিসে কারও গীবত করা হয় সেখানে যে ব্যক্তিই উপস্থিত থাকুক তাকে তা নিষেধ করা ওয়াজিব। যে ভাইয়ের গীবত করা হয় তার পক্ষ নিয়ে সাধ্যমত তাকে সহযোগিতা করাও আবশ্যক। সম্ভব হলে ঐ মজলিসেই গীবতের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,
مَنْ رَدَّ عَنْ عِرْضِ أَخِيهِ رَدَّ اللهُ عَنْ وَجْهِهِ النَّارَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ -
‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের মান-সম্ভ্রমের বিরুদ্ধে কৃত হামলাকে প্রতিহত করবে, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা তার থেকে জাহান্নামের আগুনকে প্রতিহত করবেন’।[3]
[1]. মুসলিম; মিশকাত হা/৪৮২৮।
[2]. তাবারাণী; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৮৭১।
[3]. আহমাদ হা/২৭৫৮৩; তিরমিযী হা/১৯৩১।
وَلاَ يَغْتَبْ بَعْضُكُمْ بَعْضًا أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَنْ يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ -
‘তোমরা একে অপরের যেন গীবত না কর। তোমাদের কেউ কি স্বীয় মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ পসন্দ করে? অনন্তর তোমরা তা অপসন্দ কর’ (হুজুরাত ১২)।
‘গীবত’-এর পরিচয় প্রসঙ্গে নবী করীম (ছাঃ) ছাহাবীগণকে লক্ষ্য করে বলেছেন,
أَتَدْرُونَ مَا الْغِيبَةُ؟ قَالُوا اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ . قَالَ : ذِكْرُكَ أَخَاكَ بِمَا يَكْرَهُ . قِيلَ أَفَرَأَيْتَ إِنْ كَانَ فِى أَخِى مَا أَقُولُ؟ قَالَ : إِنْ كَانَ فِيْهِ مَا تَقُولُ فَقَدِ اغْتَبْتَهُ وَإِنْ لَمْ يَكُنْ فِيْهِ فَقَدْ بَهَتَّهُ -
‘তোমরা কি জান ‘গীবত’ কী? তাঁরা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই অধিক জ্ঞাত। তিনি বললেন, তোমার ভাই যে কথা অপসন্দ করে তার সম্পর্কে সে কথা বলার নাম গীবত। জিজ্ঞেস করা হ’ল, আমি যা বলছি তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তুমি যা বলছ তা যদি তার মধ্যে বিদ্যমান থাকে তবেই তুমি তার ‘গীবত’ করলে। আর যদি না থাকে তাহলে তুমি তাকে অপবাদ দিলে’।[1]
সুতরাং মানুষের মধ্যে যে দোষ আছে এবং যার চর্চা সে অপসন্দ করে তা আলোচনা করাই গীবত। চাই সে দোষ তার শরীর সংক্রান্ত হৌক কিংবা দ্বীন ও চরিত্র বিষয়ক হৌক কিংবা আকার-আকৃতি বিষয়ক হৌক। গীবত করার আঙ্গিক বা ধরনও নানারকম রয়েছে। যেমন ব্যক্তির দোষ আলোচনা করা, বিদ্রুপাত্মক ভঙ্গিতে তার কর্মকান্ড তুলে ধরা ইত্যাদি।
আল্লাহ পাকের নিকটে গীবত বড়ই কদর্য ও খারাপ কাজ হওয়া সত্ত্বেও মানুষ গীবতের ব্যাপারে খুবই উদাসীনতা দেখিয়ে থাকে। এজন্য গীবতের ভয়াবহতা প্রসঙ্গে নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,
اَلرِّبَا اثْنَانِ وَسَبْعُونَ بَابًا أَدْنَاهَا مِثْلُ إِتْيَانِ الرَّجُلِ أُمَّهُ وَأَرْبَا الرِّبَا اسْتِطَالَةُ الرَّجُلِ فِيْ عِرْضِ أَخِيهِ -
‘সূদের (পাপের) ৭২টি দরজা বা স্তর রয়েছে। তন্মধ্যে নিম্নতম স্তর হচ্ছে স্বীয় মায়ের সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া তুল্য পাপ এবং ঊর্ধ্বতম স্তর হ’ল কোন ব্যক্তি কর্তৃক তার এক ভাইয়ের মান-সম্ভ্রমের হানি ঘটান তুল্য পাপ’।[2]
যে মজলিসে কারও গীবত করা হয় সেখানে যে ব্যক্তিই উপস্থিত থাকুক তাকে তা নিষেধ করা ওয়াজিব। যে ভাইয়ের গীবত করা হয় তার পক্ষ নিয়ে সাধ্যমত তাকে সহযোগিতা করাও আবশ্যক। সম্ভব হলে ঐ মজলিসেই গীবতের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,
مَنْ رَدَّ عَنْ عِرْضِ أَخِيهِ رَدَّ اللهُ عَنْ وَجْهِهِ النَّارَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ -
‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের মান-সম্ভ্রমের বিরুদ্ধে কৃত হামলাকে প্রতিহত করবে, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা তার থেকে জাহান্নামের আগুনকে প্রতিহত করবেন’।[3]
[1]. মুসলিম; মিশকাত হা/৪৮২৮।
[2]. তাবারাণী; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৮৭১।
[3]. আহমাদ হা/২৭৫৮৩; তিরমিযী হা/১৯৩১।
মানুষের মাঝে ফেতনা-ফাসাদ সৃষ্টি ও সম্পর্কের অবনতি ঘটানোর মানসে একজনের কথা অন্যজনের নিকটে লাগানোকে চোগলখুরী বলে। চোগলখুরীর ফলে মানুষের সম্পর্কে ফাটল ধরে এবং তাদের মাঝে হিংসা-বিদ্বেষ ও শত্রুতার বহ্নিশিখা জ্বলে ওঠে। চোগলখুরীর নিন্দায় আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
وَلاَ تُطِعْ كُلَّ حَلَّافٍ مَهِينٍ - هَمَّازٍ مَّشَّاءٍ بِنَمِيمٍ -
‘যে অধিক শপথ করে, যে লাঞ্ছিত, যে পশ্চাতে নিন্দা করে, একের কথা অন্যের নিকটে লাগায় আপনি তার আনুগত্য করবেন না’ (ক্বলম ১০-১১)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَتَّاتٌ ‘চোগলখোর ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না’।[1]
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ مَرَّ النَّبِىُّ صَلىَّ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِحَائِطٍ مِنْ حِيطَانِ الْمَدِينَةِ، فَسَمِعَ صَوْتَ إِنْسَانَيْنِ يُعَذَّبَانِ فِى قُبُورِهِمَا، فَقَالَ النَّبِىُّ صَلىَّ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : يُعَذَّبَانِ، وَمَا يُعَذَّبَانِ فِى كَبِيرٍ ، ثُمَّ قَالَ : بَلَى، [ وَفِىْ رِوَايَةٍ : وَإِنَّهُ لَكَبِيْرٌ ] كَانَ أَحَدُهُمَا لاَ يَسْتَتِرُ مِنْ بَوْلِهِ، وَكَانَ الآخَرُ يَمْشِى بِالنَّمِيمَةِ -
ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একদা মদীনার একটি খেজুর বাগান দিয়ে যাচ্ছিলেন, তথায় তিনি দু’জন লোকের আহাজারী শুনতে পেলেন। তখন তাদেরকে কবরে শাস্তি দেওয়া হচ্ছিল। নবী করীম (ছাঃ) বললেন, ‘এ দু’জনকে আযাব দেওয়া হচ্ছে। তবে বড় কোন কারণে নয়। অবশ্য এগুলি কবীরা গুনাহ। তাদের একজন পেশাব থেকে পবিত্রতা অর্জন করত না। অন্যজন চোগলখুরী করে বেড়াত’।[2]
চোগলখুরীর একটি নিকৃষ্ট প্রক্রিয়া হ’ল, স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীকে এবং স্ত্রীর বিরুদ্ধে স্বামীকে ক্ষেপিয়ে তুলে তাদের সম্পর্কে ফাটল ধরানো। অনুরূপভাবে অনেক কর্মজীবি অফিসের বস কিংবা দায়িত্বশীলের নিকট অন্য কোন কর্মজীবির কথা তুলে ধরে। এতে তার উদ্দেশ্য উক্ত কর্মজীবির ক্ষতি সাধন করা এবং নিজেকে উক্ত দায়িত্বশীলের শুভার্থী বা খয়েরখাঁ হিসাবে তুলে ধরা। এসব কাজ চোগলখুরী হিসাবে গণ্য এবং তা হারাম।
[1]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৪৮২৩।
[2]. বুখারী হা/৬০৫৫, মুসলিম; মিশকাত হা/৬০৭৫।
وَلاَ تُطِعْ كُلَّ حَلَّافٍ مَهِينٍ - هَمَّازٍ مَّشَّاءٍ بِنَمِيمٍ -
‘যে অধিক শপথ করে, যে লাঞ্ছিত, যে পশ্চাতে নিন্দা করে, একের কথা অন্যের নিকটে লাগায় আপনি তার আনুগত্য করবেন না’ (ক্বলম ১০-১১)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَتَّاتٌ ‘চোগলখোর ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না’।[1]
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ مَرَّ النَّبِىُّ صَلىَّ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِحَائِطٍ مِنْ حِيطَانِ الْمَدِينَةِ، فَسَمِعَ صَوْتَ إِنْسَانَيْنِ يُعَذَّبَانِ فِى قُبُورِهِمَا، فَقَالَ النَّبِىُّ صَلىَّ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : يُعَذَّبَانِ، وَمَا يُعَذَّبَانِ فِى كَبِيرٍ ، ثُمَّ قَالَ : بَلَى، [ وَفِىْ رِوَايَةٍ : وَإِنَّهُ لَكَبِيْرٌ ] كَانَ أَحَدُهُمَا لاَ يَسْتَتِرُ مِنْ بَوْلِهِ، وَكَانَ الآخَرُ يَمْشِى بِالنَّمِيمَةِ -
ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একদা মদীনার একটি খেজুর বাগান দিয়ে যাচ্ছিলেন, তথায় তিনি দু’জন লোকের আহাজারী শুনতে পেলেন। তখন তাদেরকে কবরে শাস্তি দেওয়া হচ্ছিল। নবী করীম (ছাঃ) বললেন, ‘এ দু’জনকে আযাব দেওয়া হচ্ছে। তবে বড় কোন কারণে নয়। অবশ্য এগুলি কবীরা গুনাহ। তাদের একজন পেশাব থেকে পবিত্রতা অর্জন করত না। অন্যজন চোগলখুরী করে বেড়াত’।[2]
চোগলখুরীর একটি নিকৃষ্ট প্রক্রিয়া হ’ল, স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীকে এবং স্ত্রীর বিরুদ্ধে স্বামীকে ক্ষেপিয়ে তুলে তাদের সম্পর্কে ফাটল ধরানো। অনুরূপভাবে অনেক কর্মজীবি অফিসের বস কিংবা দায়িত্বশীলের নিকট অন্য কোন কর্মজীবির কথা তুলে ধরে। এতে তার উদ্দেশ্য উক্ত কর্মজীবির ক্ষতি সাধন করা এবং নিজেকে উক্ত দায়িত্বশীলের শুভার্থী বা খয়েরখাঁ হিসাবে তুলে ধরা। এসব কাজ চোগলখুরী হিসাবে গণ্য এবং তা হারাম।
[1]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৪৮২৩।
[2]. বুখারী হা/৬০৫৫, মুসলিম; মিশকাত হা/৬০৭৫।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لاَ تَدْخُلُوا بُيُوتًا غَيْرَ بُيُوتِكُمْ حَتَّى تَسْتَأْنِسُوا وَتُسَلِّمُوا عَلَى أَهْلِهَا
‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা নিজ গৃহ ব্যতীত অন্য গৃহে তার মালিকের অনুমতি ও সালাম প্রদান ব্যতীত প্রবেশ করো না’ (নূর ২৭)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) খুব স্পষ্ট করে বলেছেন, إِنَّمَا جُعِلَ الاِسْتِئْذَانُ مِنْ أَجْلِ الْبَصَرِ ‘দৃষ্টিপাতের কারণেই কেবল অনুমতির ব্যবস্থা দেওয়া হয়েছে’।[1]
আধুনিক কালের বাড়ীগুলি পাশাপাশি গড়ে উঠেছে। তাদের বিল্ডিং বা ঘরগুলি একটা অপরটার সাথে লাগিয়ে, দরজা-জানালাও সামনা-সামনি তৈরী। এমতাবস্থায় এক প্রতিবেশীর সামনে অন্য প্রতিবেশীর সতর প্রকাশিত হয়ে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। কুরআনে মুমিন নর-নারীর চক্ষু সংযত করে রাখার নির্দেশ থাকলেও অনেকে তা মেনে চলে না। অনেকে উপর তলার জানালা কিংবা ছাদ থেকে নীচের অধিবাসীদের সতর ইচ্ছে করে দেখে। নিঃসন্দেহে এটা খিয়ানত, প্রতিবেশীর সম্মানে আঘাত এবং হারাম পথের মাধ্যম। এর ফলে অনেক রকম বিপদাপদ ও ফিৎনা দেখা দেয়। এরূপ গোয়েন্দাগিরি যে কত ভয়াবহ তার প্রমাণ হ’ল, শরী‘আত ঐ ব্যক্তির চোখ ফুঁড়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
مَنِ اطَّلَعَ فِى بَيْتِ قَوْمٍ بِغَيْرِ إِذْنِهِمْ فَقَدْ حَلَّ لَهُمْ أَنْ يَفْقَئُوا عَيْنَهُ- وفي رواية- فَفَقَئُوا عَيْنَهُ فَلاَ دِيَةَ لَهُ وَلاَ قِصَاصَ -
‘যে ব্যক্তি কারো বাড়ীতে তাদের অনুমতি ব্যতীত উঁকি দেয় তাদের জন্য তার চোখ ফুঁড়ে দেওয়া বৈধ হয়ে যাবে’।[2] অন্য বর্ণনায় এসেছে, যদি তারা তার চোখ ফুঁড়ে দেয় তাহলে সেজন্য কোন দিয়াত বা রক্তমূল্য ও ক্বিছাছ দিতে হবে না’।[3]
[1]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৩৫১৫।
[2]. মুসলিম হা/ ২১৫৮।
[3]. নাসাঈ হা/৪৮৬০, সনদ ছহীহ।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لاَ تَدْخُلُوا بُيُوتًا غَيْرَ بُيُوتِكُمْ حَتَّى تَسْتَأْنِسُوا وَتُسَلِّمُوا عَلَى أَهْلِهَا
‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা নিজ গৃহ ব্যতীত অন্য গৃহে তার মালিকের অনুমতি ও সালাম প্রদান ব্যতীত প্রবেশ করো না’ (নূর ২৭)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) খুব স্পষ্ট করে বলেছেন, إِنَّمَا جُعِلَ الاِسْتِئْذَانُ مِنْ أَجْلِ الْبَصَرِ ‘দৃষ্টিপাতের কারণেই কেবল অনুমতির ব্যবস্থা দেওয়া হয়েছে’।[1]
আধুনিক কালের বাড়ীগুলি পাশাপাশি গড়ে উঠেছে। তাদের বিল্ডিং বা ঘরগুলি একটা অপরটার সাথে লাগিয়ে, দরজা-জানালাও সামনা-সামনি তৈরী। এমতাবস্থায় এক প্রতিবেশীর সামনে অন্য প্রতিবেশীর সতর প্রকাশিত হয়ে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। কুরআনে মুমিন নর-নারীর চক্ষু সংযত করে রাখার নির্দেশ থাকলেও অনেকে তা মেনে চলে না। অনেকে উপর তলার জানালা কিংবা ছাদ থেকে নীচের অধিবাসীদের সতর ইচ্ছে করে দেখে। নিঃসন্দেহে এটা খিয়ানত, প্রতিবেশীর সম্মানে আঘাত এবং হারাম পথের মাধ্যম। এর ফলে অনেক রকম বিপদাপদ ও ফিৎনা দেখা দেয়। এরূপ গোয়েন্দাগিরি যে কত ভয়াবহ তার প্রমাণ হ’ল, শরী‘আত ঐ ব্যক্তির চোখ ফুঁড়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
مَنِ اطَّلَعَ فِى بَيْتِ قَوْمٍ بِغَيْرِ إِذْنِهِمْ فَقَدْ حَلَّ لَهُمْ أَنْ يَفْقَئُوا عَيْنَهُ- وفي رواية- فَفَقَئُوا عَيْنَهُ فَلاَ دِيَةَ لَهُ وَلاَ قِصَاصَ -
‘যে ব্যক্তি কারো বাড়ীতে তাদের অনুমতি ব্যতীত উঁকি দেয় তাদের জন্য তার চোখ ফুঁড়ে দেওয়া বৈধ হয়ে যাবে’।[2] অন্য বর্ণনায় এসেছে, যদি তারা তার চোখ ফুঁড়ে দেয় তাহলে সেজন্য কোন দিয়াত বা রক্তমূল্য ও ক্বিছাছ দিতে হবে না’।[3]
[1]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৩৫১৫।
[2]. মুসলিম হা/ ২১৫৮।
[3]. নাসাঈ হা/৪৮৬০, সনদ ছহীহ।
আমাদের সভা-সমিতিগুলির জন্য একটা বড় বিপদ হ’ল ব্যক্তি বিশেষকে বাদ দিয়ে অন্য দু’একজন নিয়ে শলাপরামর্শ করা। এতে শয়তানের পদাংক অনুসরণ করা হয়। কেননা এ জাতীয় কাজের ফলে মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয় এবং একের প্রতি অন্যের মন বিষিয়ে ওঠে। এরূপ শলাপরামর্শের অবৈধতার বিধান ও কারণ দর্শাতে গিয়ে নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,
إِذَا كُنْتُمْ ثَلاَثَةً فَلاَ يَتَنَاجَى رَجُلاَنِ دُونَ الآخَرِ ، حَتَّى تَخْتَلِطُوا بِالنَّاسِ ، أَجْلَ أَنْ يُحْزِنَهُ -
‘যখন তোমরা তিনজন হবে তখন যেন দু’জন লোক অন্য একজনকে বাদ রেখে গোপনে কথা না বলে। তবে তোমরা অনেক মানুষের সাথে একাকার হয়ে গেলে ভিন্ন কথা। কারণ তৃতীয় জনকে বাদ দিয়ে কৃত গোপন পরামর্শ ঐ ব্যক্তিকে ব্যথিত করবে’।[1]
এভাবে চারজনের মধ্যে একজনকে বাদ রেখে তিন জনে পরামর্শ করাও নিষিদ্ধ। অনুরূপভাবে তৃতীয় জন বোঝে না এমন ভাষায় দু’জনের শলা-পরামর্শ করাও বৈধ নয়। কারণ এক্ষেত্রে তৃতীয় জনকে বাদ দেওয়ায় তার প্রতি এক প্রকার তাচ্ছিল্য ভাব দেখানো হয়। কিংবা তারা দু’জনে যে তার প্রসঙ্গে কোন খারাপ সিদ্ধান্ত নিচ্ছে এরূপ ধারণা তার মনে বদ্ধমূল হতে পারে। সুতরাং কারো মনে ব্যথা না দিয়ে সবাই মিলে পরামর্শ করতে হবে। মোটকথা, একটি সভার কিছু সদস্যকে বাদ রেখে অন্য সদস্যগণের নিয়ে পরামর্শ করা কোন প্রকারেই জায়েয নয়।
[1]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৪৯৬৫।
إِذَا كُنْتُمْ ثَلاَثَةً فَلاَ يَتَنَاجَى رَجُلاَنِ دُونَ الآخَرِ ، حَتَّى تَخْتَلِطُوا بِالنَّاسِ ، أَجْلَ أَنْ يُحْزِنَهُ -
‘যখন তোমরা তিনজন হবে তখন যেন দু’জন লোক অন্য একজনকে বাদ রেখে গোপনে কথা না বলে। তবে তোমরা অনেক মানুষের সাথে একাকার হয়ে গেলে ভিন্ন কথা। কারণ তৃতীয় জনকে বাদ দিয়ে কৃত গোপন পরামর্শ ঐ ব্যক্তিকে ব্যথিত করবে’।[1]
এভাবে চারজনের মধ্যে একজনকে বাদ রেখে তিন জনে পরামর্শ করাও নিষিদ্ধ। অনুরূপভাবে তৃতীয় জন বোঝে না এমন ভাষায় দু’জনের শলা-পরামর্শ করাও বৈধ নয়। কারণ এক্ষেত্রে তৃতীয় জনকে বাদ দেওয়ায় তার প্রতি এক প্রকার তাচ্ছিল্য ভাব দেখানো হয়। কিংবা তারা দু’জনে যে তার প্রসঙ্গে কোন খারাপ সিদ্ধান্ত নিচ্ছে এরূপ ধারণা তার মনে বদ্ধমূল হতে পারে। সুতরাং কারো মনে ব্যথা না দিয়ে সবাই মিলে পরামর্শ করতে হবে। মোটকথা, একটি সভার কিছু সদস্যকে বাদ রেখে অন্য সদস্যগণের নিয়ে পরামর্শ করা কোন প্রকারেই জায়েয নয়।
[1]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৪৯৬৫।
মানুষ যেসব কাজকে লঘু মনে করে অথচ আল্লাহর নিকটে সেগুলি খুবই গুরুতর, তন্মধ্যে টাখনুর নীচে কাপড় পরিধান করা একটি। অনেকের কাপড় এত লম্বা যে, তা মাটি স্পর্শ করে। কেউবা আবার পরিধেয় বস্ত্র দ্বারা পিছন থেকে মাটি সমান করতে করতে যায়। টাখনুর নীচে এভাবে কাপড় ঝুলিয়ে পরা হারাম। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
ثَلاَثَةٌ لاَ يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلاَ يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ وَلاَ يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ- الْمُسْبِلُ ( وفي رواية إزاره ) وَالْمَنَّانُ [ وفى رواية : اَلَّذِىْ لاَ يُعْطِىْ شَيْئًا إِلاَّ مِنْهُ ] وَالْمُنَفِّقُ سِلْعَتَهُ بِالْحَلِفِ الْكَاذِبِ -
‘তিন প্রকার লোকের সাথে আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাদেরকে পবিত্র করবেন না; বরং তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি। তারা হ’ল- টাখনুর নীচে কাপড় (অন্য বর্ণনায় লুঙ্গী) পরিধানকারী, খোঁটাদানকারী (অন্য বর্ণনায় এসেছে, যে খোঁটা না দিয়ে কোন কিছু দান করে না) ও মিথ্যা কসমের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয়কারী’।[1]
যে বলে, ‘আমার টাখনুর নীচে কাপড় পরা অহংকারের প্রেক্ষিতে নয়’ তার এ সাফাই গাওয়া গ্রহণযোগ্য নয়। টাখনুর নীচে কাপড় পরিধান করা অহংকার বশেই হৌক, আর এমনিতেই হৌক শাস্তি তাতে সমানই হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَا تَحْتَ الْكَعْبَيْنِ مِنَ الإِزَارِ فَفِى النَّارِ ‘টাখনুর নীচে কাপড়ের যেটুকু থাকবে তা জাহান্নামে যাবে’।[2]
এই হাদীছে অহংকার ও নিরহংকারের মধ্যে কোন পার্থক্য করা হয়নি। আর জাহান্নামে গেলে শরীরের কোন অংশবিশেষ যাবে না; বরং সমগ্র দেহই যাবে। অবশ্য অহংকার বশে যে টাখনুর নীচে কাপড় পরবে তার শাস্তি তুলনামূলকভাবে কঠোর ও বেশী হবে। এ কথাই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর বাণীতে এসেছে,
مَنْ جَرَّ ثَوْبَهُ خُيَلاَءَ لَمْ يَنْظُرِ اللهُ إِلَيْهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ -
‘যে ব্যক্তি অহংকার বশে তার লুঙ্গি মাটির সাথে টেনে নিয়ে বেড়াবে, ক্বিয়ামত দিবসে আল্লাহ তা‘আরা তার প্রতি দৃষ্টি দিবেন না’।[3] বেশী শাস্তি এজন্য হবে যে, সে এক সঙ্গে দু’টি হারাম কাজ করেছে। এক- টাখনুর নীচে কাপড় পরা, দুই- অহংকার প্রদর্শন। পরিমিত পরিমাণ থেকে নীচে ঝুলিয়ে যেকোন বস্ত্র পরিধান করাই ‘ইসবালে’র আওতাভুক্ত এবং তা হারাম। ইবনু ওমর (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,
اَلْإِسْبَالُ فِى الإِزَارِ وَالْقَمِيصِ وَالْعِمَامَةِ، مَنْ جَرَّ مِنْهَا شَيْئًا خُيَلاَءَ لَمْ يَنْظُرِ اللهُ إِلَيْهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ -
‘লুঙ্গি, জামা ও পাগড়ীতে ইসবাল (ঝুলিয়ে পরা) রয়েছে। এগুলি থেকে যেকোন একটিকে কোন ব্যক্তি অহংকার বশে টেনে-ছেঁচড়ে নিয়ে বেড়ালে ক্বিয়ামত দিবসে আল্লাহ তার প্রতি সদয় দৃষ্টি দিবেন না’।[4]
স্ত্রীলোকদের জন্য পায়ের সতরের সুবিধার্থে এক বিঘত কিংবা এক হাত পরিমাণ ঝুলিয়ে দেবার অবকাশ আছে। কেননা বাতাস বা অন্য কোন কারণে সতর খোলার ভয় থাকলে অতিরিক্ত কাপড়ে তা বহুলাংশে রোধ হবে। তবে সীমালংঘন করা তাদের জন্যও বৈধ হবে না। যেমন বিয়ে-শাদীতে পরিহিত বস্ত্রের ক্ষেত্রে মেয়েদের সীমালংঘন করতে দেখা যায়। সেগুলি পরিমিত পরিমাণ থেকে কয়েক বিঘত এমনকি কয়েক মিটার লম্বা হয়। অনেক সময় পেছন থেকে তা বয়ে নিয়ে যেতে দেখা যায়।
[1]. মুসলিম হা/১০৬; মিশকাত হা/২৭৯৫।
[2]. নাসাঈ হা/৫৩৩০; আহমাদ হা/২০১৮০।
[3]. বুখারী হা/৩৬৬৫, মুসলিম; মিশকাত হা/৪৩১১।
[4]. আবুদাঊদ, নাসাঈ; মিশকাত হা/৪৩৩২।
ثَلاَثَةٌ لاَ يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلاَ يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ وَلاَ يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ- الْمُسْبِلُ ( وفي رواية إزاره ) وَالْمَنَّانُ [ وفى رواية : اَلَّذِىْ لاَ يُعْطِىْ شَيْئًا إِلاَّ مِنْهُ ] وَالْمُنَفِّقُ سِلْعَتَهُ بِالْحَلِفِ الْكَاذِبِ -
‘তিন প্রকার লোকের সাথে আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাদেরকে পবিত্র করবেন না; বরং তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি। তারা হ’ল- টাখনুর নীচে কাপড় (অন্য বর্ণনায় লুঙ্গী) পরিধানকারী, খোঁটাদানকারী (অন্য বর্ণনায় এসেছে, যে খোঁটা না দিয়ে কোন কিছু দান করে না) ও মিথ্যা কসমের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয়কারী’।[1]
যে বলে, ‘আমার টাখনুর নীচে কাপড় পরা অহংকারের প্রেক্ষিতে নয়’ তার এ সাফাই গাওয়া গ্রহণযোগ্য নয়। টাখনুর নীচে কাপড় পরিধান করা অহংকার বশেই হৌক, আর এমনিতেই হৌক শাস্তি তাতে সমানই হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَا تَحْتَ الْكَعْبَيْنِ مِنَ الإِزَارِ فَفِى النَّارِ ‘টাখনুর নীচে কাপড়ের যেটুকু থাকবে তা জাহান্নামে যাবে’।[2]
এই হাদীছে অহংকার ও নিরহংকারের মধ্যে কোন পার্থক্য করা হয়নি। আর জাহান্নামে গেলে শরীরের কোন অংশবিশেষ যাবে না; বরং সমগ্র দেহই যাবে। অবশ্য অহংকার বশে যে টাখনুর নীচে কাপড় পরবে তার শাস্তি তুলনামূলকভাবে কঠোর ও বেশী হবে। এ কথাই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর বাণীতে এসেছে,
مَنْ جَرَّ ثَوْبَهُ خُيَلاَءَ لَمْ يَنْظُرِ اللهُ إِلَيْهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ -
‘যে ব্যক্তি অহংকার বশে তার লুঙ্গি মাটির সাথে টেনে নিয়ে বেড়াবে, ক্বিয়ামত দিবসে আল্লাহ তা‘আরা তার প্রতি দৃষ্টি দিবেন না’।[3] বেশী শাস্তি এজন্য হবে যে, সে এক সঙ্গে দু’টি হারাম কাজ করেছে। এক- টাখনুর নীচে কাপড় পরা, দুই- অহংকার প্রদর্শন। পরিমিত পরিমাণ থেকে নীচে ঝুলিয়ে যেকোন বস্ত্র পরিধান করাই ‘ইসবালে’র আওতাভুক্ত এবং তা হারাম। ইবনু ওমর (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,
اَلْإِسْبَالُ فِى الإِزَارِ وَالْقَمِيصِ وَالْعِمَامَةِ، مَنْ جَرَّ مِنْهَا شَيْئًا خُيَلاَءَ لَمْ يَنْظُرِ اللهُ إِلَيْهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ -
‘লুঙ্গি, জামা ও পাগড়ীতে ইসবাল (ঝুলিয়ে পরা) রয়েছে। এগুলি থেকে যেকোন একটিকে কোন ব্যক্তি অহংকার বশে টেনে-ছেঁচড়ে নিয়ে বেড়ালে ক্বিয়ামত দিবসে আল্লাহ তার প্রতি সদয় দৃষ্টি দিবেন না’।[4]
স্ত্রীলোকদের জন্য পায়ের সতরের সুবিধার্থে এক বিঘত কিংবা এক হাত পরিমাণ ঝুলিয়ে দেবার অবকাশ আছে। কেননা বাতাস বা অন্য কোন কারণে সতর খোলার ভয় থাকলে অতিরিক্ত কাপড়ে তা বহুলাংশে রোধ হবে। তবে সীমালংঘন করা তাদের জন্যও বৈধ হবে না। যেমন বিয়ে-শাদীতে পরিহিত বস্ত্রের ক্ষেত্রে মেয়েদের সীমালংঘন করতে দেখা যায়। সেগুলি পরিমিত পরিমাণ থেকে কয়েক বিঘত এমনকি কয়েক মিটার লম্বা হয়। অনেক সময় পেছন থেকে তা বয়ে নিয়ে যেতে দেখা যায়।
[1]. মুসলিম হা/১০৬; মিশকাত হা/২৭৯৫।
[2]. নাসাঈ হা/৫৩৩০; আহমাদ হা/২০১৮০।
[3]. বুখারী হা/৩৬৬৫, মুসলিম; মিশকাত হা/৪৩১১।
[4]. আবুদাঊদ, নাসাঈ; মিশকাত হা/৪৩৩২।
আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ أَحَلَّ لِإِنَاثِ أُمَّتِى الْحَرِيرَ وَالذَّهَبَ وَحَرَّمَهُ عَلَى ذُكُورِهَا ‘আল্লাহ তা‘আলা আমার উম্মতের নারীদের জন্য রেশম ও স্বর্ণ হালাল করেছেন এবং পুরুষদের জন্য হারাম করেছেন’।[1]
আজকাল বাজারে পুরুষদের জন্য স্বর্ণের তৈরী নানা ডিজাইনের ঘড়ি, চশমা, বোতাম, কলম, চেইন, মেডেল ইত্যাদি পাওয়া যায়। এগুলির কতক সম্পূর্ণ স্বর্ণের তৈরী আবার কতক স্বর্ণের প্রলেপযুক্ত। অনেক প্রতিযোগিতায় পুরস্কার হিসাবে পুরুষদের স্বর্ণের বিভিন্ন বস্ত্ত দেয়া হয়। এগুলি ঘোরতর অন্যায়।
ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একবার এক ব্যক্তির হাতে সোনার আংটি দেখতে পেয়ে তা খুলে নেন এবং ছুঁড়ে ফেলে দেন। অতঃপর বলেন, يَعْمِدُ أَحَدُكُمْ إِلَى جَمْرَةٍ مِنْ نَارٍ فَيَجْعَلُهَا فِى يَدِهِ؟ ‘তোমাদের কেউ কি ইচ্ছে করে আগুনের অঙ্গার তুলে নিয়ে স্ব হস্তে রাখতে পারে’? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সেখান থেকে চলে যাওয়ার পর জনৈক ব্যক্তি লোকটিকে বলল, তোমার আংটিটা তুলে নাও এবং তা (অন্য) কাজে লাগাও। লোকটি বলল, لاَ، وَاللهِ لاَ آخُذُهُ أَبَدًا وَقَدْ طَرَحَهُ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‘আল্লাহ্র কসম, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যা ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন আমি তা কখনই গ্রহণ করব না’।[2]
[1]. নাসাঈ হা/৫২৬৫, সনদ ছহীহ।
[2]. মুসলিম; মিশকাত হা/৪৩৮৫।
আজকাল বাজারে পুরুষদের জন্য স্বর্ণের তৈরী নানা ডিজাইনের ঘড়ি, চশমা, বোতাম, কলম, চেইন, মেডেল ইত্যাদি পাওয়া যায়। এগুলির কতক সম্পূর্ণ স্বর্ণের তৈরী আবার কতক স্বর্ণের প্রলেপযুক্ত। অনেক প্রতিযোগিতায় পুরস্কার হিসাবে পুরুষদের স্বর্ণের বিভিন্ন বস্ত্ত দেয়া হয়। এগুলি ঘোরতর অন্যায়।
ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একবার এক ব্যক্তির হাতে সোনার আংটি দেখতে পেয়ে তা খুলে নেন এবং ছুঁড়ে ফেলে দেন। অতঃপর বলেন, يَعْمِدُ أَحَدُكُمْ إِلَى جَمْرَةٍ مِنْ نَارٍ فَيَجْعَلُهَا فِى يَدِهِ؟ ‘তোমাদের কেউ কি ইচ্ছে করে আগুনের অঙ্গার তুলে নিয়ে স্ব হস্তে রাখতে পারে’? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সেখান থেকে চলে যাওয়ার পর জনৈক ব্যক্তি লোকটিকে বলল, তোমার আংটিটা তুলে নাও এবং তা (অন্য) কাজে লাগাও। লোকটি বলল, لاَ، وَاللهِ لاَ آخُذُهُ أَبَدًا وَقَدْ طَرَحَهُ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‘আল্লাহ্র কসম, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যা ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন আমি তা কখনই গ্রহণ করব না’।[2]
[1]. নাসাঈ হা/৫২৬৫, সনদ ছহীহ।
[2]. মুসলিম; মিশকাত হা/৪৩৮৫।
বর্তমানে যেসব জিনিস দ্বারা আমাদের শত্রুরা আমাদের বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে তন্মধ্যে একটি হ’ল, তাদের উদ্ভাবিত নানা ডিজাইনের পোশাক-পরিচ্ছদের সাহায্যে তারা মুসলমানদের চরিত্র ধ্বংসের কঠিন অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। পোশাকগুলির কতক খুবই খাট মাপের কতক আঁটসাঁট করে তৈরী, আবার কতক এত পাতলা যে তা দিয়ে শরীরের সব অঙ্গ দেখা যায়। ফলে পোশাক পরার আসল লক্ষ্য সতর ঢাকা হয় না। এসব পোশাকের অনেক ডিজাইন পরিধান করা মোটেও বৈধ নয়। এমনকি মহিলাদের মাঝে এবং মাহরাম পুরুষদের মাঝেও নয়।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
صِنْفَانِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ لَمْ أَرَهُمَا قَوْمٌ مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَأَذْنَابِ الْبَقَرِ يَضْرِبُونَ بِهَا النَّاسَ وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيلاَتٌ مَائِلاَتٌ رُءُوسُهُنَّ كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ الْمَائِلَةِ لاَ يَدْخُلْنَ الْجَنَّةَ وَلاَ يَجِدْنَ رِيحَهَا وَإِنَّ رِيحَهَا لَتُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ كَذَا وَكَذَا -
‘দু’শ্রেণীর জাহান্নামীকে আমি দেখিনি। প্রথম শ্রেণী-যাদের হাতে থাকবে গরুর লেজের ন্যায় ছড়ি, তা দ্বারা তারা লোকদেরকে প্রহার করবে। দ্বিতীয় শ্রেণী- ঐ সকল রমণী, যারা বস্ত্র পরিহিতা অথচ উলঙ্গ, পুরুষদেরকে নিজেদের প্রতি আকৃষ্টকারিণী এবং নিজেরাও পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট। তাদের মাথা হবে লম্বা গ্রীবাবিশিষ্ট উটের চুঁটির ন্যায়। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং তার সুগন্ধও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধি এত এত দূরত্ব থেকেও পাওয়া যাবে’।[1]
যেসকল মহিলা নীচের দিকে বা অন্যান্য দিকে দীর্ঘ ফাঁড়া পোশাক পরিধান করে তারাও উক্ত হাদীছের বিধানভুক্ত হবে। এগুলি পরে বসলে তাদের সতরের অংশবিশেষ প্রকাশ হয়ে পড়ে। এতে সতর প্রকাশের পাশাপাশি কাফিরদের সাথে সাদৃশ্য, তাদের কৃষ্টি-কালচারের অন্ধ অনুকরণ ও তাদের উদ্ভাবিত অশালীন পোশাকের অনুসরণ করা হয়।
কোন কোন পোশাকে আবার অশালীন ছবিও অঙ্কিত থাকে। যেমন- গায়কদের ছবি, বাদক দলের ছবি, মদপাত্রের ছবি, প্রাণীর ছবি, ক্রশের ছবি, অবৈধ সংস্থা ও ক্লাবের ছবি ইত্যাদি। অনেক পোশাকে মান-ইযযত বিনষ্টকারী কথাও লিখা থাকে। বিদেশী ভাষাতেও এসব লিখা থাকে। এ জাতীয় পোশাক পরিহার করা আবশ্যক।
[1]. মুসলিম; মিশকাত হা/৩৫২৪।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
صِنْفَانِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ لَمْ أَرَهُمَا قَوْمٌ مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَأَذْنَابِ الْبَقَرِ يَضْرِبُونَ بِهَا النَّاسَ وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيلاَتٌ مَائِلاَتٌ رُءُوسُهُنَّ كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ الْمَائِلَةِ لاَ يَدْخُلْنَ الْجَنَّةَ وَلاَ يَجِدْنَ رِيحَهَا وَإِنَّ رِيحَهَا لَتُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ كَذَا وَكَذَا -
‘দু’শ্রেণীর জাহান্নামীকে আমি দেখিনি। প্রথম শ্রেণী-যাদের হাতে থাকবে গরুর লেজের ন্যায় ছড়ি, তা দ্বারা তারা লোকদেরকে প্রহার করবে। দ্বিতীয় শ্রেণী- ঐ সকল রমণী, যারা বস্ত্র পরিহিতা অথচ উলঙ্গ, পুরুষদেরকে নিজেদের প্রতি আকৃষ্টকারিণী এবং নিজেরাও পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট। তাদের মাথা হবে লম্বা গ্রীবাবিশিষ্ট উটের চুঁটির ন্যায়। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং তার সুগন্ধও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধি এত এত দূরত্ব থেকেও পাওয়া যাবে’।[1]
যেসকল মহিলা নীচের দিকে বা অন্যান্য দিকে দীর্ঘ ফাঁড়া পোশাক পরিধান করে তারাও উক্ত হাদীছের বিধানভুক্ত হবে। এগুলি পরে বসলে তাদের সতরের অংশবিশেষ প্রকাশ হয়ে পড়ে। এতে সতর প্রকাশের পাশাপাশি কাফিরদের সাথে সাদৃশ্য, তাদের কৃষ্টি-কালচারের অন্ধ অনুকরণ ও তাদের উদ্ভাবিত অশালীন পোশাকের অনুসরণ করা হয়।
কোন কোন পোশাকে আবার অশালীন ছবিও অঙ্কিত থাকে। যেমন- গায়কদের ছবি, বাদক দলের ছবি, মদপাত্রের ছবি, প্রাণীর ছবি, ক্রশের ছবি, অবৈধ সংস্থা ও ক্লাবের ছবি ইত্যাদি। অনেক পোশাকে মান-ইযযত বিনষ্টকারী কথাও লিখা থাকে। বিদেশী ভাষাতেও এসব লিখা থাকে। এ জাতীয় পোশাক পরিহার করা আবশ্যক।
[1]. মুসলিম; মিশকাত হা/৩৫২৪।
عَنْ أَسْمَاءَ بِنْتِ أَبِى بَكْرٍ قَالَتْ جَاءَتِ امْرَأَةٌ إِلَى النَّبِىِّ صَلىَّ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَتْ يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّ لِى ابْنَةً عُرَيِّسًا أَصَابَتْهَا حَصْبَةٌ فَتَمَرَّقَ شَعْرُهَا أَفَأَصِلُهُ فَقَالَ لَعَنَ اللهُ الْوَاصِلَةَ وَالْمُسْتَوْصِلَةَ -
আসমা বিনতে আবু বকর (রাঃ) বলেন, জনৈকা মহিলা নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমার একটি সদ্য বিবাহিতা কন্যা আছে। হাম হওয়ার কারণে তার মাথার চুল পড়ে গেছে। আমি কি তাকে পরচুলা লাগিয়ে দেব? তিনি বললেন, ‘যে পরচুলা লাগিয়ে দেয় এবং যে লাগাতে চায় আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে অভিশাপ দিয়েছেন’।[2]
জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, زَجَرَ النَّبِىُّ صَلىَّ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ تَصِلَ الْمَرْأَةُ بِرَأْسِهَا شَيْئًا ‘নবী করীম (ছাঃ) মহিলাদের মাথার চুলে কোন কিছু সংযোজন করার জন্য ধমক দিয়েছেন’।[3]
[1]. যাদের টাক কিংবা পাতলা চুল রয়েছে তারা লোক-লজ্জার কারণে কিংবা নিজেকে অল্প বয়সী হিসাবে যাহির করার জন্য মাথায় পরচুলা ব্যবহার করে থাকে। পরচুলা মানুষের মাথার চুল থেকেও তৈরী হয় আবার কৃত্রিমভাবেও তৈরী হয়। উভয় প্রকার পরচুলাই ব্যবহার করা হারাম -অনুবাদক।
[2]. মুসলিম হা/২১২২।
[3]. মুসলিম হা/২১২৬।
আসমা বিনতে আবু বকর (রাঃ) বলেন, জনৈকা মহিলা নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমার একটি সদ্য বিবাহিতা কন্যা আছে। হাম হওয়ার কারণে তার মাথার চুল পড়ে গেছে। আমি কি তাকে পরচুলা লাগিয়ে দেব? তিনি বললেন, ‘যে পরচুলা লাগিয়ে দেয় এবং যে লাগাতে চায় আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে অভিশাপ দিয়েছেন’।[2]
জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, زَجَرَ النَّبِىُّ صَلىَّ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ تَصِلَ الْمَرْأَةُ بِرَأْسِهَا شَيْئًا ‘নবী করীম (ছাঃ) মহিলাদের মাথার চুলে কোন কিছু সংযোজন করার জন্য ধমক দিয়েছেন’।[3]
[1]. যাদের টাক কিংবা পাতলা চুল রয়েছে তারা লোক-লজ্জার কারণে কিংবা নিজেকে অল্প বয়সী হিসাবে যাহির করার জন্য মাথায় পরচুলা ব্যবহার করে থাকে। পরচুলা মানুষের মাথার চুল থেকেও তৈরী হয় আবার কৃত্রিমভাবেও তৈরী হয়। উভয় প্রকার পরচুলাই ব্যবহার করা হারাম -অনুবাদক।
[2]. মুসলিম হা/২১২২।
[3]. মুসলিম হা/২১২৬।
পুরুষকে আল্লাহ তা‘আলা যে পুরুষালী স্বভাবে সৃষ্টি করেছেন তাকে তা বজায় রাখা এবং নারীকে যে নারীত্ব দিয়ে সৃষ্টি করেছেন তাকে তা ধরে রাখাই আল্লাহর বিধান। এটা এমনি এক ব্যবস্থা, যা না হলে মানব জীবন ঠিকঠাক চলবে না। পুরুষের নারীর বেশ ধারণ এবং নারীর পুরুষের বেশ ধারণ স্বভাববিরুদ্ধ কাজ। এর ফলে অশান্তির দুয়ার খুলে যায় এবং সমাজে উচ্ছৃংখলতা ও বেলেল্লাপনা ছড়িয়ে পড়ে। শরী‘আতে এ জাতীয় কাজকে হারাম গণ্য করা হয়েছে। কোন ব্যক্তিকে যে আমল করার দরুন শারঈ দলীলে অভিশাপ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে সেই দলীলই প্রমাণ করে যে উক্ত কাজ হারাম ও কবীরা গুনাহ। ইবনু আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত,
لَعَنَ رَسُولُ اللهِ صَلىَّ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمُتَشَبِّهِينَ مِنَ الرِّجَالِ بِالنِّسَاءِ، وَالْمُتَشَبِّهَاتِ مِنَ النِّسَاءِ بِالرِّجَالِ -
‘রাসূল (ছাঃ) পুরুষদের মধ্যে নারীর বেশ ধারণকারীদের এবং নারীদের মধ্যে পুরুষের বেশ ধারণকারিণীদের অভিশাপ দিয়েছেন’।[1] ইবনু আববাস (রাঃ) হতে আরও বর্ণিত আছে,
لَعَنَ النَّبِىُّ صَلىَّ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمُخَنَّثِينَ مِنَ الرِّجَالِ ، وَالْمُتَرَجِّلاَتِ مِنَ النِّسَاءِ
‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নারীবেশী পুরুষদেরকে এবং পুরুষবেশী নারীদেরকে অভিশাপ দিয়েছেন’।[2]
এই অনুকরণ উঠাবসা, চলাফেরা, কথাবার্তা ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। যেমন দৈহিকভাবে মেয়েলী বেশ ধারণ করা, কথাবার্তা ও চলাফেরায় মেয়েলীপনা অবলম্বন করা কিংবা পুরুষের বেশ ধারণ করা ইত্যাদি।
পোশাক ও অলংকার পরিধানেও অনুকরণ রয়েছে। সুতরাং পুরুষের জন্য গলার হার, হাতের চুড়ি, পায়ের মল, কানের দুল পরা চলবে না। অনুরূপভাবে মহিলারাও পুরুষদের জামা, পাজামা, প্যান্ট, শার্ট, পাঞ্জাবী পরতে পারবে না। নারীদের পোশাকের ডিজাইন পুরুষদের থেকে ভিন্নতর হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, لَعَنَ رَسُولُ اللهِ صَلىَّ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الرَّجُلَ يَلْبَسُ لِبْسَةَ الْمَرْأَةِ وَالْمَرْأَةَ تَلْبَسُ لِبْسَةَ الرَّجُلِ - ‘আল্লাহ তা‘আলার লা‘নত সেই পুরুষের উপর যে মেয়েলী পোশাক পরিধান করে এবং সেই নারীর উপর, যে পুরুষের পোশাক পরিধান করে’।[3]
সুতরাং উভয়ের কারো জন্যই স্ব স্ব বেশভূষা বদল করা জায়েয হবে না।
[1]. বুখারী; মিশকাত হা/৪৪২৯।
[2]. বুখারী; মিশকাত হা/৪৪২৮।
[3]. আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪৪৬৯।
لَعَنَ رَسُولُ اللهِ صَلىَّ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمُتَشَبِّهِينَ مِنَ الرِّجَالِ بِالنِّسَاءِ، وَالْمُتَشَبِّهَاتِ مِنَ النِّسَاءِ بِالرِّجَالِ -
‘রাসূল (ছাঃ) পুরুষদের মধ্যে নারীর বেশ ধারণকারীদের এবং নারীদের মধ্যে পুরুষের বেশ ধারণকারিণীদের অভিশাপ দিয়েছেন’।[1] ইবনু আববাস (রাঃ) হতে আরও বর্ণিত আছে,
لَعَنَ النَّبِىُّ صَلىَّ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمُخَنَّثِينَ مِنَ الرِّجَالِ ، وَالْمُتَرَجِّلاَتِ مِنَ النِّسَاءِ
‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নারীবেশী পুরুষদেরকে এবং পুরুষবেশী নারীদেরকে অভিশাপ দিয়েছেন’।[2]
এই অনুকরণ উঠাবসা, চলাফেরা, কথাবার্তা ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। যেমন দৈহিকভাবে মেয়েলী বেশ ধারণ করা, কথাবার্তা ও চলাফেরায় মেয়েলীপনা অবলম্বন করা কিংবা পুরুষের বেশ ধারণ করা ইত্যাদি।
পোশাক ও অলংকার পরিধানেও অনুকরণ রয়েছে। সুতরাং পুরুষের জন্য গলার হার, হাতের চুড়ি, পায়ের মল, কানের দুল পরা চলবে না। অনুরূপভাবে মহিলারাও পুরুষদের জামা, পাজামা, প্যান্ট, শার্ট, পাঞ্জাবী পরতে পারবে না। নারীদের পোশাকের ডিজাইন পুরুষদের থেকে ভিন্নতর হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, لَعَنَ رَسُولُ اللهِ صَلىَّ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الرَّجُلَ يَلْبَسُ لِبْسَةَ الْمَرْأَةِ وَالْمَرْأَةَ تَلْبَسُ لِبْسَةَ الرَّجُلِ - ‘আল্লাহ তা‘আলার লা‘নত সেই পুরুষের উপর যে মেয়েলী পোশাক পরিধান করে এবং সেই নারীর উপর, যে পুরুষের পোশাক পরিধান করে’।[3]
সুতরাং উভয়ের কারো জন্যই স্ব স্ব বেশভূষা বদল করা জায়েয হবে না।
[1]. বুখারী; মিশকাত হা/৪৪২৯।
[2]. বুখারী; মিশকাত হা/৪৪২৮।
[3]. আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪৪৬৯।
সাদা চুলকে কালো রঙে রঞ্জিত করা হারাম। হাদীছে কালো খেযাব সম্পর্কে যে হুঁশিয়ারী উচ্চারিত হয়েছে তাতে একথাই প্রমাণিত হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
يَكُونُ قَوْمٌ يَخْضِبُونَ فِى آخِرِ الزَّمَانِ بِالسَّوَادِ كَحَوَاصِلِ الْحَمَامِ لاَ يَرِيحُونَ رَائِحَةَ الْجَنَّةِ -
‘শেষ যামানায় একদল লোক কবুতরের বুকের ন্যায় কাল খেযাব ব্যবহার করবে। তারা জান্নাতের কোন সুগন্ধি পাবে না’।[1]
অনেক চুলপাকা ব্যক্তিকে এ কাজ করতে দেখা যায়। তারা কাল রং দ্বারা সাদা চুল রাঙিয়ে নিজেদেরকে যুবক কিংবা অপেক্ষাকৃত কম বয়সী বলে যাহির করে। এতে প্রতারণা, আল্লাহর সৃষ্টিকে গোপন করা ও মিথ্যা আত্মতৃপ্তি ব্যতীত আর কিছু হয় না। এর ফলে ব্যক্তিগত চালচলনের উপর নিঃসন্দেহে এক প্রকার কুপ্রভাব পড়ে। অন্য মানুষ তাতে প্রতারিত হয়।
নবী করীম (ছাঃ) পাকা চুল খেযাব করেছেন মেহেদি বা অনুরূপ কোন জিনিস দ্বারা। যাতে হলুদ, লাল ইত্যাদি মৌলিক রং ফুটে ওঠে। তবে কাল রং দিয়ে কখনোই নয়।
আবুবকর (রাঃ)-এর পিতা আবু কুহাফা (রাঃ)-কে মক্কা বিজয়ের দিন যখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সামনে হাযির করা হয় তখন তার চুল-দাড়ি এত সাদা হয়ে গিয়েছিল যে, তা ‘ছাগামা’ (কাশ) ফুলের ন্যায় ধবধবে দেখাচ্ছিল। তিনি তাকে দেখে বললেন, غَيِّرُوا هَذَا بِشَىْءٍ وَاجْتَنِبُوا السَّوَادَ ‘তোমরা কোন কিছু দ্বারা এটা পরিবর্তন করে দাও। তবে কাল রং থেকে বিরত থাকো’।[2] নারীদের বিধান পুরুষদের অনুরূপ। তারাও পাকা চুল কালো রঙে রাঙাতে পারবে না।
[1]. আবুদাঊদ হা/৪২১২; ছহীহুল জামে‘ হা/৮১৫৩।
[2]. মুসলিম; মিশকাত হা/৪৪২৪।
يَكُونُ قَوْمٌ يَخْضِبُونَ فِى آخِرِ الزَّمَانِ بِالسَّوَادِ كَحَوَاصِلِ الْحَمَامِ لاَ يَرِيحُونَ رَائِحَةَ الْجَنَّةِ -
‘শেষ যামানায় একদল লোক কবুতরের বুকের ন্যায় কাল খেযাব ব্যবহার করবে। তারা জান্নাতের কোন সুগন্ধি পাবে না’।[1]
অনেক চুলপাকা ব্যক্তিকে এ কাজ করতে দেখা যায়। তারা কাল রং দ্বারা সাদা চুল রাঙিয়ে নিজেদেরকে যুবক কিংবা অপেক্ষাকৃত কম বয়সী বলে যাহির করে। এতে প্রতারণা, আল্লাহর সৃষ্টিকে গোপন করা ও মিথ্যা আত্মতৃপ্তি ব্যতীত আর কিছু হয় না। এর ফলে ব্যক্তিগত চালচলনের উপর নিঃসন্দেহে এক প্রকার কুপ্রভাব পড়ে। অন্য মানুষ তাতে প্রতারিত হয়।
নবী করীম (ছাঃ) পাকা চুল খেযাব করেছেন মেহেদি বা অনুরূপ কোন জিনিস দ্বারা। যাতে হলুদ, লাল ইত্যাদি মৌলিক রং ফুটে ওঠে। তবে কাল রং দিয়ে কখনোই নয়।
আবুবকর (রাঃ)-এর পিতা আবু কুহাফা (রাঃ)-কে মক্কা বিজয়ের দিন যখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সামনে হাযির করা হয় তখন তার চুল-দাড়ি এত সাদা হয়ে গিয়েছিল যে, তা ‘ছাগামা’ (কাশ) ফুলের ন্যায় ধবধবে দেখাচ্ছিল। তিনি তাকে দেখে বললেন, غَيِّرُوا هَذَا بِشَىْءٍ وَاجْتَنِبُوا السَّوَادَ ‘তোমরা কোন কিছু দ্বারা এটা পরিবর্তন করে দাও। তবে কাল রং থেকে বিরত থাকো’।[2] নারীদের বিধান পুরুষদের অনুরূপ। তারাও পাকা চুল কালো রঙে রাঙাতে পারবে না।
[1]. আবুদাঊদ হা/৪২১২; ছহীহুল জামে‘ হা/৮১৫৩।
[2]. মুসলিম; মিশকাত হা/৪৪২৪।
আব্দুল্লাহ বিন মাস‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, إِنَّ أَشَدَّ النَّاسِ عَذَابًا عِنْدَ اللهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الْمُصَوِّرُونَ ‘নিশ্চয়ই ক্বিয়ামত দিবসে আল্লাহর বিচারে কঠোর শাস্তি প্রাপ্তরা হবে ছবি নির্মাতাগণ’।[1]
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ ذَهَبَ يَخْلُقُ كَخَلْقِى ، فَلْيَخْلُقُوا حَبَّةً ، وَلْيَخْلُقُوا ذَرَّةً -
‘যারা আমার সৃষ্টির ন্যায় সৃষ্টি করতে তৎপর হয় তাদের থেকে বড় যালেম আর কে আছে? এতই যদি পারে তো তারা একটা শস্য দানা সৃষ্টি করুক কিংবা অণু সৃষ্টি করুক’।[2]
ইবনু আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
كُلُّ مُصَوِّرٍ فِى النَّارِ يَجْعَلُ لَهُ بِكُلِّ صُورَةٍ صَوَّرَهَا نَفْسًا فَتُعَذِّبُهُ فِى جَهَنَّمَ -
‘প্রত্যেক ছবি নির্মাতা জাহান্নামে যাবে। সে যত ছবি অঙ্কন করেছে তার প্রত্যেকটির বিনিময়ে তার জন্য একটি করে প্রাণী তৈরী করা হবে। সে জাহান্নামে (তাকে) শাস্তি দেবে। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, ‘তোমাদেরকে যদি ছবি আঁকতেই হয় তাহলে বৃক্ষ ও যার ‘রূহ’ নেই তার ছবি আঁক’।[3]
এ সকল হাদীছ হতে প্রমাণ মেলে যে, মানুষ, পশু ইত্যাকার যে কোন প্রাণীর ছবি আঁকা হারাম। চাই তার ছায়া থাকুক বা না থাকুক, তা ছাপা হৌক, কিংবা খোদাইকৃত হৌক, কিংবা অঙ্কিত হৌক বা ভাষ্কর্য হৌক কিংবা ছাঁচে ঢালাই করা হৌক। কেননা ছবি হারাম সংক্রান্ত হাদীছের আওতায় এ সবই পড়ে। আর যে ব্যক্তি মুসলমান সে তো শরী‘আতের কথা অকুণ্ঠচিত্তে মেনে নিবে। সে এ বিতর্ক করতে যাবে না যে, আমি তো উহার পূজা করি না বা উহাকে সিজদা করি না। একজন জ্ঞানী লোক যদি অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে আমাদের যুগে ব্যাপক বিস্তার লাভকারী ছবির মধ্যে নিহিত একটি ক্ষতির কথাও চিন্তা করেন তাহলে শরী‘আতে ছবি হারামের তাৎপর্য তিনি অনুধাবন করতে পারবেন। বর্তমানে এমন অনেক ছবি আছে যার কারণে কুপ্রবৃত্তি মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে, কামনার জোয়ার সৃষ্টি হয়। এমনকি ছবির জন্য যিনায় লিপ্ত হওয়াও বিচিত্র নয়।
এছাড়া মুসলমানরা নিজেদের ঘরে প্রাণীর ছবি রাখবে না। কেননা প্রাণীর ছবি থাকলে গৃহে ফেরেশতা প্রবেশ করে না। নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, لاَ تَدْخُلُ الْمَلاَئِكَةُ بَيْتًا فِيْهِ كَلْبٌ وَلاَ تَصَاوِيرُ ‘যে বাড়ীতে কুকুর ও ছবি থাকে সেই বাড়ীতে ফেরেশতা প্রবেশ করে না’।[4]
কোন কোন বাড়ীতে কাফিরদের দেব-দেবীর ছবি দেখতে পাওয়া যায়। বলা হয় যে, এগুলি আমরা সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য রেখেছি। অন্যান্য ছবির তুলনায় এগুলি আরও কঠোর হারাম। অনুরূপভাবে প্রাচীর গাত্রে টাঙানো ছবিও বেশী ক্ষতিকারক। এসব ছবি কত যে সম্মান পায়, কত যে দুঃখ জাগরুক করে, কত যে গর্ব বয়ে আনে তার কোন ইয়ত্তা নেই।
ছবিকে কখনো স্মৃতি বলা যায় না। কেননা, মুসলিম আত্মীয় ও প্রিয়জনের স্মৃতি তো অন্তরে বিরাজ করে। একজন মুসলমান তাদের জন্য রাববুল আলামীনের নিকটে রহমত ও মাগফেরাত কামনা করবে। তাতেই তাদের স্মৃতি জাগরুক থাকবে।
সুতরাং সর্বপ্রকার প্রাণীর ছবি বাড়ী থেকে সরিয়ে দেওয়া ও নিশ্চিহ্ন করে ফেলা আবশ্যক। হ্যাঁ, যেগুলি নিশ্চিহ্ন করা দুষ্কর ও আয়াসসাধ্য সেগুলি ব্যতিক্রম বলে গণ্য হবে। যেমন সাধারণ্যে প্রচলিত কৌটাবদ্ধ খাদ্যদ্রব্য বা টিনজাত খাদ্য সমগ্রী ও অন্যান্য নানা ধরনের বস্ত্ততে অঙ্কিত ছবি, অভিধান, রেফারেন্স বুক ও অন্যান্য পাঠ্য বইয়ের ছবি ইত্যাদি। তবে যথাসম্ভব সেগুলি অপসারিত করা গেলে করবে। বিশেষ করে মন্দ ছবি রাখবে না।
পরিচয়পত্রে ব্যবহৃত ছবি হারামের আওতাভুক্ত হবে না। কেননা সফরে উহার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। এছাড়া কোন কোন বিদ্বানের মতে, যে সব ছবির ক্বদর নেই; বরং তা পদদলিত করার ন্যায় গণ্য, সে সব ছবি প্রয়োজনে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। আল্লাহ বলেছেন, فَاتَّقُوا اللهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ ‘তোমরা সাধ্যমত আল্লাহকে ভয় কর’ (তাগাবুন ১৬)।
[1]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৪৪২৯।
[2]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৪৪৯৬।
[3]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৪৪৯৮।
[4]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৪৪৮৯।
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ ذَهَبَ يَخْلُقُ كَخَلْقِى ، فَلْيَخْلُقُوا حَبَّةً ، وَلْيَخْلُقُوا ذَرَّةً -
‘যারা আমার সৃষ্টির ন্যায় সৃষ্টি করতে তৎপর হয় তাদের থেকে বড় যালেম আর কে আছে? এতই যদি পারে তো তারা একটা শস্য দানা সৃষ্টি করুক কিংবা অণু সৃষ্টি করুক’।[2]
ইবনু আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
كُلُّ مُصَوِّرٍ فِى النَّارِ يَجْعَلُ لَهُ بِكُلِّ صُورَةٍ صَوَّرَهَا نَفْسًا فَتُعَذِّبُهُ فِى جَهَنَّمَ -
‘প্রত্যেক ছবি নির্মাতা জাহান্নামে যাবে। সে যত ছবি অঙ্কন করেছে তার প্রত্যেকটির বিনিময়ে তার জন্য একটি করে প্রাণী তৈরী করা হবে। সে জাহান্নামে (তাকে) শাস্তি দেবে। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, ‘তোমাদেরকে যদি ছবি আঁকতেই হয় তাহলে বৃক্ষ ও যার ‘রূহ’ নেই তার ছবি আঁক’।[3]
এ সকল হাদীছ হতে প্রমাণ মেলে যে, মানুষ, পশু ইত্যাকার যে কোন প্রাণীর ছবি আঁকা হারাম। চাই তার ছায়া থাকুক বা না থাকুক, তা ছাপা হৌক, কিংবা খোদাইকৃত হৌক, কিংবা অঙ্কিত হৌক বা ভাষ্কর্য হৌক কিংবা ছাঁচে ঢালাই করা হৌক। কেননা ছবি হারাম সংক্রান্ত হাদীছের আওতায় এ সবই পড়ে। আর যে ব্যক্তি মুসলমান সে তো শরী‘আতের কথা অকুণ্ঠচিত্তে মেনে নিবে। সে এ বিতর্ক করতে যাবে না যে, আমি তো উহার পূজা করি না বা উহাকে সিজদা করি না। একজন জ্ঞানী লোক যদি অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে আমাদের যুগে ব্যাপক বিস্তার লাভকারী ছবির মধ্যে নিহিত একটি ক্ষতির কথাও চিন্তা করেন তাহলে শরী‘আতে ছবি হারামের তাৎপর্য তিনি অনুধাবন করতে পারবেন। বর্তমানে এমন অনেক ছবি আছে যার কারণে কুপ্রবৃত্তি মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে, কামনার জোয়ার সৃষ্টি হয়। এমনকি ছবির জন্য যিনায় লিপ্ত হওয়াও বিচিত্র নয়।
এছাড়া মুসলমানরা নিজেদের ঘরে প্রাণীর ছবি রাখবে না। কেননা প্রাণীর ছবি থাকলে গৃহে ফেরেশতা প্রবেশ করে না। নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, لاَ تَدْخُلُ الْمَلاَئِكَةُ بَيْتًا فِيْهِ كَلْبٌ وَلاَ تَصَاوِيرُ ‘যে বাড়ীতে কুকুর ও ছবি থাকে সেই বাড়ীতে ফেরেশতা প্রবেশ করে না’।[4]
কোন কোন বাড়ীতে কাফিরদের দেব-দেবীর ছবি দেখতে পাওয়া যায়। বলা হয় যে, এগুলি আমরা সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য রেখেছি। অন্যান্য ছবির তুলনায় এগুলি আরও কঠোর হারাম। অনুরূপভাবে প্রাচীর গাত্রে টাঙানো ছবিও বেশী ক্ষতিকারক। এসব ছবি কত যে সম্মান পায়, কত যে দুঃখ জাগরুক করে, কত যে গর্ব বয়ে আনে তার কোন ইয়ত্তা নেই।
ছবিকে কখনো স্মৃতি বলা যায় না। কেননা, মুসলিম আত্মীয় ও প্রিয়জনের স্মৃতি তো অন্তরে বিরাজ করে। একজন মুসলমান তাদের জন্য রাববুল আলামীনের নিকটে রহমত ও মাগফেরাত কামনা করবে। তাতেই তাদের স্মৃতি জাগরুক থাকবে।
সুতরাং সর্বপ্রকার প্রাণীর ছবি বাড়ী থেকে সরিয়ে দেওয়া ও নিশ্চিহ্ন করে ফেলা আবশ্যক। হ্যাঁ, যেগুলি নিশ্চিহ্ন করা দুষ্কর ও আয়াসসাধ্য সেগুলি ব্যতিক্রম বলে গণ্য হবে। যেমন সাধারণ্যে প্রচলিত কৌটাবদ্ধ খাদ্যদ্রব্য বা টিনজাত খাদ্য সমগ্রী ও অন্যান্য নানা ধরনের বস্ত্ততে অঙ্কিত ছবি, অভিধান, রেফারেন্স বুক ও অন্যান্য পাঠ্য বইয়ের ছবি ইত্যাদি। তবে যথাসম্ভব সেগুলি অপসারিত করা গেলে করবে। বিশেষ করে মন্দ ছবি রাখবে না।
পরিচয়পত্রে ব্যবহৃত ছবি হারামের আওতাভুক্ত হবে না। কেননা সফরে উহার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। এছাড়া কোন কোন বিদ্বানের মতে, যে সব ছবির ক্বদর নেই; বরং তা পদদলিত করার ন্যায় গণ্য, সে সব ছবি প্রয়োজনে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। আল্লাহ বলেছেন, فَاتَّقُوا اللهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ ‘তোমরা সাধ্যমত আল্লাহকে ভয় কর’ (তাগাবুন ১৬)।
[1]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৪৪২৯।
[2]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৪৪৯৬।
[3]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৪৪৯৮।
[4]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৪৪৮৯।
মানুষের মাঝে মর্যাদার আসন লাভ, আলোচনার পাত্র হওয়া, আর্থিক সুবিধা লাভ কিংবা শত্রুকে ভীতচকিত করার মানসে মিথ্যা স্বপ্ন বলার অভ্যাস কিছু মানুষের আছে। জনসাধারণের অনেকেই স্বপ্নে বিশ্বাসী। স্বপ্নের সাথে তাদের সম্পর্ক খুবই নিবিড়। তারা একে বাস্তব মনে করে ও এ মিথ্যা স্বপ্ন দ্বারা প্রতারিত হয়। ফলে এসব মিথ্যা স্বপ্ন যে বলে বেড়ায় তার জন্য কঠোর শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
إِنَّ مِنْ أَعْظَمِ الْفِرَى أَنْ يَدَّعِىَ الرَّجُلُ إِلَى غَيْرِ أَبِيهِ، أَوْ يُرِىَ عَيْنَهُ مَا لَمْ تَرَ، أَوْ يَقُولُ عَلَى رَسُولِ اللهِ صَلىَّ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا لَمْ يَقُلْ -
‘সবচেয়ে বড় মনগড়া বা মিথ্যার মধ্যে রয়েছে ঐ ব্যক্তি, যে নিজেকে স্বীয় পিতা ব্যতীত অন্যের সন্তান হিসাবে আখ্যায়িত করে, যে স্বপ্ন সে দেখেনি তা দেখার দাবী করে এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যা বলেননি তাঁর নামে তা বলা’।[1]
তিনি আরও বলেছেন,
مَنْ تَحَلَّمَ بِحُلُمٍ لَمْ يَرَهُ، كُلِّفَ أَنْ يَعْقِدَ بَيْنَ شَعِيرَتَيْنِ، وَلَنْ يَفْعَلَ -
‘যে ব্যক্তি স্বপ্নে যা দেখেনি তা দেখার ভান বা দাবী করে তাকে দু’টি চুলে গিরা দিতে বাধ্য করা হবে। কিন্তু সে তা কখনই করতে পারবে না’।[2]
দু’টি চুলে গিরা দেওয়া একটি অসাধ্য কাজ। সুতরাং কাজ যেমন হবে তার ফলও তেমন হবে।
[1]. বুখারী হা/৩৫০৯।
[2]. বুখারী; মিশকাত হা/৪৪৯৯।
إِنَّ مِنْ أَعْظَمِ الْفِرَى أَنْ يَدَّعِىَ الرَّجُلُ إِلَى غَيْرِ أَبِيهِ، أَوْ يُرِىَ عَيْنَهُ مَا لَمْ تَرَ، أَوْ يَقُولُ عَلَى رَسُولِ اللهِ صَلىَّ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا لَمْ يَقُلْ -
‘সবচেয়ে বড় মনগড়া বা মিথ্যার মধ্যে রয়েছে ঐ ব্যক্তি, যে নিজেকে স্বীয় পিতা ব্যতীত অন্যের সন্তান হিসাবে আখ্যায়িত করে, যে স্বপ্ন সে দেখেনি তা দেখার দাবী করে এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যা বলেননি তাঁর নামে তা বলা’।[1]
তিনি আরও বলেছেন,
مَنْ تَحَلَّمَ بِحُلُمٍ لَمْ يَرَهُ، كُلِّفَ أَنْ يَعْقِدَ بَيْنَ شَعِيرَتَيْنِ، وَلَنْ يَفْعَلَ -
‘যে ব্যক্তি স্বপ্নে যা দেখেনি তা দেখার ভান বা দাবী করে তাকে দু’টি চুলে গিরা দিতে বাধ্য করা হবে। কিন্তু সে তা কখনই করতে পারবে না’।[2]
দু’টি চুলে গিরা দেওয়া একটি অসাধ্য কাজ। সুতরাং কাজ যেমন হবে তার ফলও তেমন হবে।
[1]. বুখারী হা/৩৫০৯।
[2]. বুখারী; মিশকাত হা/৪৪৯৯।
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
لَأَنْ يَجْلِسَ أَحَدُكُمْ عَلَى جَمْرَةٍ فَتُحْرِقَ ثِيَابَهُ فَتَخْلُصَ إِلَى جِلْدِهِ خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَنْ يَجْلِسَ عَلَى قَبْرٍ -
‘যদি তোমাদের কারো অঙ্গারের উপর বসার দরুন তার কাপড় পুড়ে দেহের চামড়া পর্যন্ত পৌঁছে যায় তবুও তা তার জন্য কবরের উপর বসা থেকে উত্তম’।[1]
কবর পা দিয়ে মাড়ানোর কাজ অনেকেই করে থাকে। তারা যখন নিজেদের কাউকে কবরস্থানে দাফন করতে নিয়ে আসে, তখন দেখা যায় পার্শ্ববর্তী কবরগুলি মাড়াচ্ছে, কখনও আবার জুতা পায়ে মাড়াচ্ছে, কোন পরোয়াই করছে না। অন্যান্য মৃতদের প্রতি যেন তাদের সম্মানবোধই নেই। অথচ এই সকল মৃত ব্যক্তির সম্মানে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
لَأَنْ أَمْشِىَ عَلَى جَمْرَةٍ أَوْ سَيْفٍ أَوْ أَخْصِفَ نَعْلِى بِرِجْلِى أَحَبُّ إِلَىَّ مِنْ أَنْ أَمْشِىَ عَلَى قَبْرِ مُسْلِمٍ -
‘আগুনের অঙ্গার কিংবা তরবারির উপর দিয়ে আমার হেঁটে যাওয়া কিংবা আমার পায়ের চামড়া দ্বারা আমার চটি তৈরী করা একজন মুসলমানের কবরের উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া থেকে আমার নিকট অধিক প্রিয়’।[2]
সুতরাং যে ব্যক্তি কোন কবরস্থানের মালিক হয়ে সেখানে ব্যবসা কেন্দ্র কিংবা বাড়ী-ঘর গড়ে তোলে তার অবস্থা কি দাঁড়াবে? কিছু লোকের কবরস্থানে পেশাব-পায়খানা করার অভ্যাস আছে। তাদের যখন পেশাব-পায়খানার প্রয়োজন দেখা দেয় তখন তারা কবরস্থানের প্রাচীর টপকিয়ে কিংবা খোলাস্থান দিয়ে ঢুকে পড়ে এবং মল-মূত্রের নাপাকী ও গন্ধ দ্বারা মৃতদের কষ্ট দেয়। কবরের উপর পেশাব-পায়খানা করা প্রসঙ্গে নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,
مَا أُبَالِي أَوَسَطَ الْقَبْرِ قَضَيْتُ حَاجَتِي أَوْ وَسَطَ السُّوقِ -
‘কবরস্থানের মাঝে মল-মূত্র ত্যাগ করতে পারলে বাজারের মধ্যস্থলে মল-মূত্র ত্যাগের কোন পরোয়া করি না’।[3]
অর্থাৎ কবরস্থানে মল-মূত্র ত্যাগের কদর্যতা আর বাজারের মধ্যে জনগণের সামনে সতর খোলা ও মল-মূত্র ত্যাগের কদর্যতা একই সমান। সুতরাং কবরস্থানে মল-মূত্র ত্যাগ গুনাহ তো বটেই এমনকি তা লোকালয়ে মল-মূত্র ত্যাগের ন্যায় লজ্জাকরও বটে। যারা ইচ্ছে করে কবরস্থানে ময়লা-আবর্জনা ইত্যাকার জিনিস ফেলে তারাও এই ভৎর্সনায় শামিল হবে। এছাড়া কবর যিয়ারতকালে কবরসমূহের মাঝ দিয়ে যাতায়াতের সময় জুতা খুলে রাখাই আদবের পরিচয়।
[1]. মুসলিম; মিশকাত হা/১৬৯৯।
[2]. ইবনু মাজাহ হা/১৫৭৬, সনদ ছহীহ।
[3]. ইবনু মাজাহ হা/১৫৬৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৫০৩৮।
لَأَنْ يَجْلِسَ أَحَدُكُمْ عَلَى جَمْرَةٍ فَتُحْرِقَ ثِيَابَهُ فَتَخْلُصَ إِلَى جِلْدِهِ خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَنْ يَجْلِسَ عَلَى قَبْرٍ -
‘যদি তোমাদের কারো অঙ্গারের উপর বসার দরুন তার কাপড় পুড়ে দেহের চামড়া পর্যন্ত পৌঁছে যায় তবুও তা তার জন্য কবরের উপর বসা থেকে উত্তম’।[1]
কবর পা দিয়ে মাড়ানোর কাজ অনেকেই করে থাকে। তারা যখন নিজেদের কাউকে কবরস্থানে দাফন করতে নিয়ে আসে, তখন দেখা যায় পার্শ্ববর্তী কবরগুলি মাড়াচ্ছে, কখনও আবার জুতা পায়ে মাড়াচ্ছে, কোন পরোয়াই করছে না। অন্যান্য মৃতদের প্রতি যেন তাদের সম্মানবোধই নেই। অথচ এই সকল মৃত ব্যক্তির সম্মানে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
لَأَنْ أَمْشِىَ عَلَى جَمْرَةٍ أَوْ سَيْفٍ أَوْ أَخْصِفَ نَعْلِى بِرِجْلِى أَحَبُّ إِلَىَّ مِنْ أَنْ أَمْشِىَ عَلَى قَبْرِ مُسْلِمٍ -
‘আগুনের অঙ্গার কিংবা তরবারির উপর দিয়ে আমার হেঁটে যাওয়া কিংবা আমার পায়ের চামড়া দ্বারা আমার চটি তৈরী করা একজন মুসলমানের কবরের উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া থেকে আমার নিকট অধিক প্রিয়’।[2]
সুতরাং যে ব্যক্তি কোন কবরস্থানের মালিক হয়ে সেখানে ব্যবসা কেন্দ্র কিংবা বাড়ী-ঘর গড়ে তোলে তার অবস্থা কি দাঁড়াবে? কিছু লোকের কবরস্থানে পেশাব-পায়খানা করার অভ্যাস আছে। তাদের যখন পেশাব-পায়খানার প্রয়োজন দেখা দেয় তখন তারা কবরস্থানের প্রাচীর টপকিয়ে কিংবা খোলাস্থান দিয়ে ঢুকে পড়ে এবং মল-মূত্রের নাপাকী ও গন্ধ দ্বারা মৃতদের কষ্ট দেয়। কবরের উপর পেশাব-পায়খানা করা প্রসঙ্গে নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,
مَا أُبَالِي أَوَسَطَ الْقَبْرِ قَضَيْتُ حَاجَتِي أَوْ وَسَطَ السُّوقِ -
‘কবরস্থানের মাঝে মল-মূত্র ত্যাগ করতে পারলে বাজারের মধ্যস্থলে মল-মূত্র ত্যাগের কোন পরোয়া করি না’।[3]
অর্থাৎ কবরস্থানে মল-মূত্র ত্যাগের কদর্যতা আর বাজারের মধ্যে জনগণের সামনে সতর খোলা ও মল-মূত্র ত্যাগের কদর্যতা একই সমান। সুতরাং কবরস্থানে মল-মূত্র ত্যাগ গুনাহ তো বটেই এমনকি তা লোকালয়ে মল-মূত্র ত্যাগের ন্যায় লজ্জাকরও বটে। যারা ইচ্ছে করে কবরস্থানে ময়লা-আবর্জনা ইত্যাকার জিনিস ফেলে তারাও এই ভৎর্সনায় শামিল হবে। এছাড়া কবর যিয়ারতকালে কবরসমূহের মাঝ দিয়ে যাতায়াতের সময় জুতা খুলে রাখাই আদবের পরিচয়।
[1]. মুসলিম; মিশকাত হা/১৬৯৯।
[2]. ইবনু মাজাহ হা/১৫৭৬, সনদ ছহীহ।
[3]. ইবনু মাজাহ হা/১৫৬৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৫০৩৮।
মানব প্রকৃতিকে দুরস্ত করার যত উপায়-উপকরণ আছে ইসলাম তার সবই উপস্থাপন করেছে। এটি ইসলামের একটি বড় সৌন্দর্য। নাপাকী দূর করা এসব উপায়ের একটি। এ কারণেই ‘ইসতিনজা’ বা শৌচকার্য বিধিবদ্ধ করা হয়েছে এবং কিভাবে পাক-পবিত্রতা অর্জিত হবে তার নিয়ম বাতলে দেওয়া হয়েছে।
অনেকে নাপাকী দূরীকরণে অলসতা করে থাকে। যার ফলে তাদের কাপড় ও দেহ অপবিত্র হয়ে যায় এবং ফলশ্রুতিতে তাদের ছালাত হয় না। নবী করীম (ছাঃ) উহাকে কবর আযাবের অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করেছেন। ইবনু আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) মদীনার একটি খেজুর বাগানের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। সেখানে তিনি দু’জন (মৃত) ব্যক্তির কণ্ঠস্বর শুনতে পান। কবরে তাদেরকে শাস্তি দেয়া হচ্ছিল। তা শুনে তিনি বললেন, এই দু’টো লোককে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বড় কোন কারণে নয়। অবশ্য গুনাহ হিসাবে এগুলি কবীরা। তাদের একজন পেশাব শেষে পবিত্র হত না আর অন্যজন চোগলখুরী করে বেড়াত’।[1] নবী করীম (ছাঃ) বরং এতদূর বলেছেন যে, أَكْثَرُ عَذَابِ الْقَبْرِ فِى الْبَوْلِ ‘বেশীরভাগ কবর আযাব পেশাবের কারণে হয়’।[2]
পেশাবের ফোঁটা বন্ধ না হতেই যে দ্রুত পেশাব হতে উঠে পড়ে কিংবা এমন কায়দায় বা স্থানে পেশাব করে যেখান থেকে পেশাবের ছিঁটা এসে গায়ে বা কাপড়ে লাগে সেও এ শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত হবে।
কাফেরদের দেখাদেখি আমাদের মধ্যে অনেকস্থানেই দেওয়ালের সঙ্গে সেঁটে টয়লেট তৈরী করা হয়। এগুলি খোলামেলাও হয়। মানুষ কোন লজ্জা-শরম না করেই চলাচলকারী মানুষের সামনে সেখানে দাঁড়িয়ে পেশাব করতে শুরু করে। তারপর পেশাবের নাপাকী সমেতই কাপড় পরে নেয়। এতে দু’টি বিশ্রী হারাম একত্রিত হয়। এক- সে তার লজ্জাস্থানকে মানুষের দৃষ্টি থেকে হেফাযত করে না। দুই- সে পেশাব হতে পবিত্রতা অর্জন করে না।
[1]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৬০৭৫।
[2]. আহমাদ হা/৮৩১৩, ছহীহ তারগীব হা/১৫৮।
অনেকে নাপাকী দূরীকরণে অলসতা করে থাকে। যার ফলে তাদের কাপড় ও দেহ অপবিত্র হয়ে যায় এবং ফলশ্রুতিতে তাদের ছালাত হয় না। নবী করীম (ছাঃ) উহাকে কবর আযাবের অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করেছেন। ইবনু আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) মদীনার একটি খেজুর বাগানের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। সেখানে তিনি দু’জন (মৃত) ব্যক্তির কণ্ঠস্বর শুনতে পান। কবরে তাদেরকে শাস্তি দেয়া হচ্ছিল। তা শুনে তিনি বললেন, এই দু’টো লোককে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বড় কোন কারণে নয়। অবশ্য গুনাহ হিসাবে এগুলি কবীরা। তাদের একজন পেশাব শেষে পবিত্র হত না আর অন্যজন চোগলখুরী করে বেড়াত’।[1] নবী করীম (ছাঃ) বরং এতদূর বলেছেন যে, أَكْثَرُ عَذَابِ الْقَبْرِ فِى الْبَوْلِ ‘বেশীরভাগ কবর আযাব পেশাবের কারণে হয়’।[2]
পেশাবের ফোঁটা বন্ধ না হতেই যে দ্রুত পেশাব হতে উঠে পড়ে কিংবা এমন কায়দায় বা স্থানে পেশাব করে যেখান থেকে পেশাবের ছিঁটা এসে গায়ে বা কাপড়ে লাগে সেও এ শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত হবে।
কাফেরদের দেখাদেখি আমাদের মধ্যে অনেকস্থানেই দেওয়ালের সঙ্গে সেঁটে টয়লেট তৈরী করা হয়। এগুলি খোলামেলাও হয়। মানুষ কোন লজ্জা-শরম না করেই চলাচলকারী মানুষের সামনে সেখানে দাঁড়িয়ে পেশাব করতে শুরু করে। তারপর পেশাবের নাপাকী সমেতই কাপড় পরে নেয়। এতে দু’টি বিশ্রী হারাম একত্রিত হয়। এক- সে তার লজ্জাস্থানকে মানুষের দৃষ্টি থেকে হেফাযত করে না। দুই- সে পেশাব হতে পবিত্রতা অর্জন করে না।
[1]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৬০৭৫।
[2]. আহমাদ হা/৮৩১৩, ছহীহ তারগীব হা/১৫৮।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَلاَ تَجَسَّسُوا ‘তোমরা গোয়েন্দাগিরি করনা’ (হুজুরাত ১২)। ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
مَنِ اسْتَمَعَ إِلَى حَدِيثِ قَوْمٍ وَهُمْ لَهُ كَارِهُونَ أَوْ يَفِرُّونَ مِنْهُ ، صُبَّ فِى أُذُنِهِ الآنُكُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ -
‘যে ব্যক্তি লোকদের অনীহা বা তার কাছ থেকে পালানো সত্ত্বেও তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনে ক্বিয়ামতের দিন তার দু’কানে গলিত সীসা ঢেলে দেওয়া হবে’।[1]
আর যদি ক্ষতি করার মানসে তাদের থেকে শোনা কথা তাদের অগোচরে মানুষের নিকট বলে বেড়ায়, তাহ’লে গোয়েন্দাগিরি পাপের সাথে কুটনামির পাপও জড়িত হবে। কেননা নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَتَّاتٌ ‘চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করবে না’।[2]
[1]. বুখারী; মিশকাত হা/৪৪৯৯।
[2]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৪৮২৩।
مَنِ اسْتَمَعَ إِلَى حَدِيثِ قَوْمٍ وَهُمْ لَهُ كَارِهُونَ أَوْ يَفِرُّونَ مِنْهُ ، صُبَّ فِى أُذُنِهِ الآنُكُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ -
‘যে ব্যক্তি লোকদের অনীহা বা তার কাছ থেকে পালানো সত্ত্বেও তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনে ক্বিয়ামতের দিন তার দু’কানে গলিত সীসা ঢেলে দেওয়া হবে’।[1]
আর যদি ক্ষতি করার মানসে তাদের থেকে শোনা কথা তাদের অগোচরে মানুষের নিকট বলে বেড়ায়, তাহ’লে গোয়েন্দাগিরি পাপের সাথে কুটনামির পাপও জড়িত হবে। কেননা নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَتَّاتٌ ‘চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করবে না’।[2]
[1]. বুখারী; মিশকাত হা/৪৪৯৯।
[2]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৪৮২৩।
প্রতিবেশীদের সাথে সদ্ব্যবহারের প্রতি জোর তাকীদ দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেছেন,
وَاعْبُدُوا اللهَ وَلاَ تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَبِذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَى وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالْجَنْبِ وَابْنِ السَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ إِنَّ اللهَ لاَ يُحِبُّ مَنْ كَانَ مُخْتَالاً فَخُورًا -
‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, তার সঙ্গে কাউকে শরীক করো না এবং মাতা-পিতার সঙ্গে সদাচরণ কর। আর সদাচরণ কর নিকটাত্মীয়, অনাথ, নিঃস্ব, নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী, পার্শ্বস্থিত সঙ্গী, পথিক ও তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের সঙ্গে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাদের ভালবাসেন না যারা গর্বে স্ফীত অহংকারী’ (নিসা ৩৬)।
প্রতিবেশীর হক্ব অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিধায় তাকে কষ্ট দেওয়া হারাম। আবু শুরাইহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
وَاللهِ لاَ يُؤْمِنُ، وَاللهِ لاَ يُؤْمِنُ، وَاللهِ لاَ يُؤْمِنُ . قِيلَ وَمَنْ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ الَّذِى لاَ يَأْمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ -
‘আল্লাহর শপথ সে মুমিন নয়, আল্লাহর শপথ সে মুমিন নয়, আল্লাহর শপথ সে মুমিন নয়। জিজ্ঞেস করা হল, কে সে জন ইয়া রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)? তিনি বললেন, যার প্রতিবেশী তার অত্যাচার হতে নিরাপদে থাকতে পারে না’।[1]
নবী করীম (ছাঃ) এক প্রতিবেশী কর্তৃক অন্য প্রতিবেশীর প্রশংসা ও নিন্দা করাকে ভাল ও মন্দ আচরণের মাপকাঠি গণ্য করেছেন। এ প্রসঙ্গে ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)! আমি ভাল আচরণ করলাম না মন্দ আচরণ করলাম তা কী করে বুঝব? তিনি বললেন,
إِذَا سَمِعْتَ جِيرَانَكَ يَقُولُونَ قَدْ أَحْسَنْتَ فَقَدْ أَحْسَنْتَ وَإِذَا سَمِعْتَهُمْ يَقُولُونَ : قَدْ أَسَأْتَ فَقَدْ أَسَأْتَ -
‘যখন তুমি তোমার প্রতিবেশীদেরকে বলতে শুনবে যে, তারা তোমার সম্পর্কে বলাবলি করছে, ‘তুমি ভাল আচরণ কর’ তখন বুঝবে, তুমি নিশ্চয়ই ভাল আচরণ করছ। আর যখন তাদেরকে বলাবলি করতে শুনবে যে, ‘তুমি মন্দ আচরণ কর’ তখন বুঝবে, তুমি নিশ্চয়ই মন্দ আচরণ করছ’।[2]
প্রতিবেশীর সঙ্গে মন্দ আচরণ নানাভাবে হতে পারে। যেমন- প্রতিবেশীর সাথে যৌথভাবে নির্মিত বাড়ীর প্রাচীরের উপর কাঠ কিংবা বাঁশ পুঁততে বাধা দেওয়া, প্রতিবেশীর অনুমতি না নিয়ে তার বাড়ী হতে নিজ বাড়ীকে উঁচু বা বহুতল করে তার বাড়ীতে আলো-বাতাস চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করা, প্রতিবেশীর বাড়ী বরাবর জানালা তৈরী করে তার বাড়ীর লোকদের সতর দেখতে চেষ্টা করা, বিরক্তিকর শব্দ দ্বারা তাকে কষ্ট দেওয়া, বিশেষ করে ঘুম ও আরামের সময়ে চেঁচামেচি ও খটখট আওয়াজ করা, প্রতিবেশীর সন্তানদের মারধোর করা কিংবা তার বাড়ীর দরজায় ময়লা-আবর্জনা ফেলা ইত্যাদি।
তাছাড়া প্রতিবেশীর হক্বের উপর চড়াও হলে পাপের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,
لأَنْ يَزْنِىَ الرَّجُلُ بِعَشْرِ نِسْوَةٍ أَيْسَرُ عَلَيْهِ مِنْ أَنْ يَّزْنِىَ بِامْرَأَةِ جَارِهِ . لَأَنْ يَّسْرِقَ الرَّجُلُ مِنْ عَشْرَةِ أَبْيَاتٍ أَيْسَرُ عَلَيْهِ مِنْ أَنْ يَسْرِقَ مِنْ جَارِهِ -
‘কোন ব্যক্তির পক্ষে অন্য দশজন মহিলার সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া স্বীয় প্রতিবেশীর স্ত্রীর সঙ্গে ব্যভিচারের তুলনায় অনেক সহজ। অনুরূপভাবে অন্য দশ বাড়ীতে চুরি করা কোন ব্যক্তির স্বীয় প্রতিবেশীর বাড়ীতে চুরি করা অপেক্ষা অনেক সহজ’।[3]
অনেক অসাধু ব্যক্তি আছে, যারা প্রতিবেশীর অনুপস্থিতির সুযোগে রাতে তাদের গৃহে প্রবেশ করে এবং অপকর্মে লিপ্ত হয়। এসব লোকের জন্য এক বিভীষিকাময় দিনের শাস্তি অপেক্ষা করছে।
[1]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৪৯৬২।
[2]. ইবনু মাজাহ; মিশকাত হা/৪৯৮৮।
[3]. আহমাদ হা/২৩৯০৫; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৬৫।
وَاعْبُدُوا اللهَ وَلاَ تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَبِذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَى وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالْجَنْبِ وَابْنِ السَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ إِنَّ اللهَ لاَ يُحِبُّ مَنْ كَانَ مُخْتَالاً فَخُورًا -
‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, তার সঙ্গে কাউকে শরীক করো না এবং মাতা-পিতার সঙ্গে সদাচরণ কর। আর সদাচরণ কর নিকটাত্মীয়, অনাথ, নিঃস্ব, নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী, পার্শ্বস্থিত সঙ্গী, পথিক ও তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের সঙ্গে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাদের ভালবাসেন না যারা গর্বে স্ফীত অহংকারী’ (নিসা ৩৬)।
প্রতিবেশীর হক্ব অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিধায় তাকে কষ্ট দেওয়া হারাম। আবু শুরাইহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
وَاللهِ لاَ يُؤْمِنُ، وَاللهِ لاَ يُؤْمِنُ، وَاللهِ لاَ يُؤْمِنُ . قِيلَ وَمَنْ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ الَّذِى لاَ يَأْمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ -
‘আল্লাহর শপথ সে মুমিন নয়, আল্লাহর শপথ সে মুমিন নয়, আল্লাহর শপথ সে মুমিন নয়। জিজ্ঞেস করা হল, কে সে জন ইয়া রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)? তিনি বললেন, যার প্রতিবেশী তার অত্যাচার হতে নিরাপদে থাকতে পারে না’।[1]
নবী করীম (ছাঃ) এক প্রতিবেশী কর্তৃক অন্য প্রতিবেশীর প্রশংসা ও নিন্দা করাকে ভাল ও মন্দ আচরণের মাপকাঠি গণ্য করেছেন। এ প্রসঙ্গে ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)! আমি ভাল আচরণ করলাম না মন্দ আচরণ করলাম তা কী করে বুঝব? তিনি বললেন,
إِذَا سَمِعْتَ جِيرَانَكَ يَقُولُونَ قَدْ أَحْسَنْتَ فَقَدْ أَحْسَنْتَ وَإِذَا سَمِعْتَهُمْ يَقُولُونَ : قَدْ أَسَأْتَ فَقَدْ أَسَأْتَ -
‘যখন তুমি তোমার প্রতিবেশীদেরকে বলতে শুনবে যে, তারা তোমার সম্পর্কে বলাবলি করছে, ‘তুমি ভাল আচরণ কর’ তখন বুঝবে, তুমি নিশ্চয়ই ভাল আচরণ করছ। আর যখন তাদেরকে বলাবলি করতে শুনবে যে, ‘তুমি মন্দ আচরণ কর’ তখন বুঝবে, তুমি নিশ্চয়ই মন্দ আচরণ করছ’।[2]
প্রতিবেশীর সঙ্গে মন্দ আচরণ নানাভাবে হতে পারে। যেমন- প্রতিবেশীর সাথে যৌথভাবে নির্মিত বাড়ীর প্রাচীরের উপর কাঠ কিংবা বাঁশ পুঁততে বাধা দেওয়া, প্রতিবেশীর অনুমতি না নিয়ে তার বাড়ী হতে নিজ বাড়ীকে উঁচু বা বহুতল করে তার বাড়ীতে আলো-বাতাস চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করা, প্রতিবেশীর বাড়ী বরাবর জানালা তৈরী করে তার বাড়ীর লোকদের সতর দেখতে চেষ্টা করা, বিরক্তিকর শব্দ দ্বারা তাকে কষ্ট দেওয়া, বিশেষ করে ঘুম ও আরামের সময়ে চেঁচামেচি ও খটখট আওয়াজ করা, প্রতিবেশীর সন্তানদের মারধোর করা কিংবা তার বাড়ীর দরজায় ময়লা-আবর্জনা ফেলা ইত্যাদি।
তাছাড়া প্রতিবেশীর হক্বের উপর চড়াও হলে পাপের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,
لأَنْ يَزْنِىَ الرَّجُلُ بِعَشْرِ نِسْوَةٍ أَيْسَرُ عَلَيْهِ مِنْ أَنْ يَّزْنِىَ بِامْرَأَةِ جَارِهِ . لَأَنْ يَّسْرِقَ الرَّجُلُ مِنْ عَشْرَةِ أَبْيَاتٍ أَيْسَرُ عَلَيْهِ مِنْ أَنْ يَسْرِقَ مِنْ جَارِهِ -
‘কোন ব্যক্তির পক্ষে অন্য দশজন মহিলার সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া স্বীয় প্রতিবেশীর স্ত্রীর সঙ্গে ব্যভিচারের তুলনায় অনেক সহজ। অনুরূপভাবে অন্য দশ বাড়ীতে চুরি করা কোন ব্যক্তির স্বীয় প্রতিবেশীর বাড়ীতে চুরি করা অপেক্ষা অনেক সহজ’।[3]
অনেক অসাধু ব্যক্তি আছে, যারা প্রতিবেশীর অনুপস্থিতির সুযোগে রাতে তাদের গৃহে প্রবেশ করে এবং অপকর্মে লিপ্ত হয়। এসব লোকের জন্য এক বিভীষিকাময় দিনের শাস্তি অপেক্ষা করছে।
[1]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৪৯৬২।
[2]. ইবনু মাজাহ; মিশকাত হা/৪৯৮৮।
[3]. আহমাদ হা/২৩৯০৫; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৬৫।
শরী‘আতের একটি অন্যতম নীতি لاَ ضَرَرَ وَلاَ ضِرَارَ ‘নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হব না, অন্যের ক্ষতি করব না’।[1] এ জাতীয় ক্ষতি করার একটি উপমা হল, শরী‘আত স্বীকৃত ওয়ারিছগণের সবাইকে অথবা বিশেষ কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত করা। কেউ এমন করলে সে নবী করীম (ছাঃ) প্রদত্ত হুঁশিয়ারীর আওতায় পড়বে। তিনি বলেছেন,
مَنْ ضَارَّ أَضَرَّ اللهُ بِهِ وَمَنْ شَاقَّ شَاقَّ اللهُ عَلَيْهِ -
‘যে কারো ক্ষতি করবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবেন। আর যে শত্রুতা ও বিরোধিতা করবে আল্লাহ তাকে দুঃখ-কষ্টে নিপতিত করবেন।[2]
অছিয়তের মাধ্যমে নানাভাবে ক্ষতি হতে পারে। যেমন- কোন ওয়ারিছকে তার ন্যায্য অংশ হতে বঞ্চিত করা। অথবা একজন ওয়ারিছকে শরী‘আত যেটুকু দিয়েছে তার বিপরীতে তার জন্য অছিয়ত করা কিংবা এক তৃতীয়াংশের বেশী অছিয়ত করা ইত্যাদি।
যে সব দেশে ইসলামী বিচার ব্যবস্থা চালু নেই সেখানে একজন পাওনাদার অনেক ক্ষেত্রেই মানব রচিত বিধানের কারণে তার শরী‘আত প্রদত্ত অধিকার লাভে সমর্থ হয় না। মানব রচিত বিচার ব্যবস্থা তাকে উকিলের মাধ্যমে লিখিত অন্যায় অছিয়ত কার্যকর করতে আদেশ দেয় এবং সে তা কার্যকর করতে বাধ্য হয়। সুতরাং বড়ই পরিতাপ তাদের স্বহস্তে রচিত আইনের জন্য এবং বড়ই পরিতাপ তারা যে পাপ কামাই করছে তার জন্য!
[1]. ইবনু মাজাহ হা/২৩৪০, সনদ ছহীহ।
[2]. আবুদাঊদ, ইবনু মাজাহ; মিশকাত হা/৫০৪২।
مَنْ ضَارَّ أَضَرَّ اللهُ بِهِ وَمَنْ شَاقَّ شَاقَّ اللهُ عَلَيْهِ -
‘যে কারো ক্ষতি করবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবেন। আর যে শত্রুতা ও বিরোধিতা করবে আল্লাহ তাকে দুঃখ-কষ্টে নিপতিত করবেন।[2]
অছিয়তের মাধ্যমে নানাভাবে ক্ষতি হতে পারে। যেমন- কোন ওয়ারিছকে তার ন্যায্য অংশ হতে বঞ্চিত করা। অথবা একজন ওয়ারিছকে শরী‘আত যেটুকু দিয়েছে তার বিপরীতে তার জন্য অছিয়ত করা কিংবা এক তৃতীয়াংশের বেশী অছিয়ত করা ইত্যাদি।
যে সব দেশে ইসলামী বিচার ব্যবস্থা চালু নেই সেখানে একজন পাওনাদার অনেক ক্ষেত্রেই মানব রচিত বিধানের কারণে তার শরী‘আত প্রদত্ত অধিকার লাভে সমর্থ হয় না। মানব রচিত বিচার ব্যবস্থা তাকে উকিলের মাধ্যমে লিখিত অন্যায় অছিয়ত কার্যকর করতে আদেশ দেয় এবং সে তা কার্যকর করতে বাধ্য হয়। সুতরাং বড়ই পরিতাপ তাদের স্বহস্তে রচিত আইনের জন্য এবং বড়ই পরিতাপ তারা যে পাপ কামাই করছে তার জন্য!
[1]. ইবনু মাজাহ হা/২৩৪০, সনদ ছহীহ।
[2]. আবুদাঊদ, ইবনু মাজাহ; মিশকাত হা/৫০৪২।
লোকসমাজে প্রচলিত অনেক খেলাধূলার সাথেই হারাম জড়িত আছে। দাবা এমনই একটি খেলা। দাবা থেকে আরো অনেক রকম খেলার প্রতি ঝোঁক সৃষ্টি হয়। যেমন পাশা খেলা প্রভৃতি। জুয়া ও বাজির দ্বার উন্মোচনকারী এই দাবা সম্পর্কে নবী করীম (ছাঃ) সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন,
مَنْ لَعِبَ بِالنَّرْدَشِيرِ فَكَأَنَّمَا صَبَغَ يَدَهُ فِى لَحْمِ خِنْزِيرٍ وَدَمِهِ -
‘যে ব্যক্তি দাবা খেলে সে যেন শূকরের রক্ত-মাংসে স্বীয় হাত রঞ্জিত করে’।[1]
আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
مَنْ لَعِبَ بِالنَّرْدِ فَقَدْ عَصَى اللهَ وَرَسُولَهُ -
‘যে ব্যক্তি দাবা খেলে সে আল্লাহ ও তার রাসূলের বিধানকে অমান্য করে’।[2]
সুতরাং দাবা ও তার আনুসঙ্গিক খেলা যেমন তাস, পাশা, ফ্লাশ ইত্যাদি সম্বন্ধে অবশ্যই শরী‘আতের আদেশ মানতে হবে।
[1]. মুসলিম; মিশকাত হা/৪৫০০।
[2]. আহমাদ, আবুদাঊদ; মিশকাত হা/৪৫০৫।
مَنْ لَعِبَ بِالنَّرْدَشِيرِ فَكَأَنَّمَا صَبَغَ يَدَهُ فِى لَحْمِ خِنْزِيرٍ وَدَمِهِ -
‘যে ব্যক্তি দাবা খেলে সে যেন শূকরের রক্ত-মাংসে স্বীয় হাত রঞ্জিত করে’।[1]
আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
مَنْ لَعِبَ بِالنَّرْدِ فَقَدْ عَصَى اللهَ وَرَسُولَهُ -
‘যে ব্যক্তি দাবা খেলে সে আল্লাহ ও তার রাসূলের বিধানকে অমান্য করে’।[2]
সুতরাং দাবা ও তার আনুসঙ্গিক খেলা যেমন তাস, পাশা, ফ্লাশ ইত্যাদি সম্বন্ধে অবশ্যই শরী‘আতের আদেশ মানতে হবে।
[1]. মুসলিম; মিশকাত হা/৪৫০০।
[2]. আহমাদ, আবুদাঊদ; মিশকাত হা/৪৫০৫।
অনেকেই রাগের সময় জিহবাকে সংযত রাখতে পারে না। ফলে বেদিশা হয়ে লা‘নত করে বসে। তাদের লা‘নতের কোন ঠিক-ঠিকানা নেই। মানুষ, পশু, জড় পদার্থ, দিন-ক্ষণ এমনকি নিজের সন্তান-সন্ততিদেরও তারা লা‘নত করে বসে। দেখা যায়, স্বামী স্বীয় স্ত্রীকে লা‘নত করে, আবার স্ত্রীও স্বামীকে লা‘নত করে। এটি একটি মারাত্মক অন্যায়। আবু যায়েদ ছাবিত বিন যাহহাক আনছারী (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ لَعَنَ مُؤْمِنًا فَهُوَ كَقَتْلِهِ ، وَمَنْ رَمَى مُؤْمِنًا بِكُفْرٍ فَهْوَ كَقَتْلِهِ ‘যে ব্যক্তি কোন মুমিনকে লা‘নত করল বা কাফের বলে গালি দিল, সে যেন তাকে হত্যা করল’।[2]
মহিলাদেরকে বেশী বেশী লা‘নত করতে দেখা যায়। এজন্যে নবী করীম (ছাঃ) মহিলাদের জাহান্নামী হওয়ার নানা কারণের মধ্যে এটি একটি বলে উল্লেখ করেছেন।[3] এমনিভাবে লা‘নতকারীরা ক্বিয়ামত দিবসে সুফারিশকারীও হতে পারবে না।
সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার এই যে, অন্যায়ভাবে লা‘নত করলে তা লা‘নতকারীর উপর বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে। তাতে লা‘নতকারী মূলতঃ নিজকেই আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত করার জন্য প্রার্থনাকারী হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং খুব নিরুপায় না হলে ও শারঈ অনুমোদন ক্ষেত্র ব্যতীত লা‘নত করা ঠিক নয়।
[1]. লা‘নত অর্থ রহমত বা দয়া থেকে দূর করে দেওয়া। উহার বাংলা প্রতিশব্দ অভিশাপ। কাউকে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত করার জন্য বদ দো‘আকে এক কথায় লা‘নত বলে। অহেতুক লা‘নত এজন্যই মারাত্মক অপরাধ ও হারাম।-অনুবাদক
[2]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৩৪১০।
[3]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/১৯।
মহিলাদেরকে বেশী বেশী লা‘নত করতে দেখা যায়। এজন্যে নবী করীম (ছাঃ) মহিলাদের জাহান্নামী হওয়ার নানা কারণের মধ্যে এটি একটি বলে উল্লেখ করেছেন।[3] এমনিভাবে লা‘নতকারীরা ক্বিয়ামত দিবসে সুফারিশকারীও হতে পারবে না।
সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার এই যে, অন্যায়ভাবে লা‘নত করলে তা লা‘নতকারীর উপর বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে। তাতে লা‘নতকারী মূলতঃ নিজকেই আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত করার জন্য প্রার্থনাকারী হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং খুব নিরুপায় না হলে ও শারঈ অনুমোদন ক্ষেত্র ব্যতীত লা‘নত করা ঠিক নয়।
[1]. লা‘নত অর্থ রহমত বা দয়া থেকে দূর করে দেওয়া। উহার বাংলা প্রতিশব্দ অভিশাপ। কাউকে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত করার জন্য বদ দো‘আকে এক কথায় লা‘নত বলে। অহেতুক লা‘নত এজন্যই মারাত্মক অপরাধ ও হারাম।-অনুবাদক
[2]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৩৪১০।
[3]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/১৯।
অনেক মহিলা আছে যারা চেঁচিয়ে কাঁদে, মৃতের গুণাবলী উল্লেখ করে মাতম করে, গালে-মুখে থাপ্পড় মারে। এগুলি বড় অন্যায়। অনুরূপভাবে কাপড় ও পকেট ছিঁড়ে, চুল উপড়িয়ে, বেনী বেঁধে বা জড়িয়ে ধরে বিলাপ করাও মহা অন্যায়। এতে আল্লাহর ফায়ছালার প্রতি অসন্তোষ ও বিপদে অধৈর্যের পরিচয় মেলে। যে এমন করবে নবী করীম (ছাঃ) তার প্রতি লা‘নত করেছেন। এ সম্পর্কে আবু উমামা (রাঃ) বলেন,
أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلىَّ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَعَنَ الْخَامِشَةَ وَجْهَهَا وَالشَّاقَّةَ جَيْبَهَا وَالدَّاعِيَةَ بِالْوَيْلِ وَالثُّبُورِ -
‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মুখমন্ডল ক্ষত-বিক্ষতকারিণী, পকেট ফাড়নে ওয়ালী এবং দুর্ভোগ ও ধ্বংস প্রার্থনাকারিণীর উপর লা‘নত করেছেন’।[1]
ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন,
لَيْسَ مِنَّا مَنْ لَطَمَ الْخُدُودَ ، وَشَقَّ الْجُيُوبَ ، وَدَعَا بِدَعْوَى الْجَاهِلِيَّةِ -
‘যে গালে থাপ্পড় মারে, পকেট ছিঁড়ে ফেলে ও জাহেলিয়াতের রীতি-নীতির প্রতি আহবান জানায় সে আমাদের দলভুক্ত নয়’।[2]
তিনি আরো বলেছেন,
اَلنَّائِحَةُ إِذَا لَمْ تَتُبْ قَبْلَ مَوْتِهَا تُقَامُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَعَلَيْهَا سِرْبَالٌ مِنْ قَطِرَانٍ وَدِرْعٌ مِنْ جَرَبٍ -
‘মাতমকারিণী মৃত্যুর পূর্বে তওবা না করলে ক্বিয়ামত দিবসে তাকে আলকাতরার পাজামা ও মরিচাযুক্ত বর্ম পরিহিতা অবস্থায় তোলা হবে’।[3]
সুতরাং কারো মৃত্যু বা বিপদে বিলাপ-মাতম ও আহাজারী করা বড়ই অন্যায়।
[1]. ইবনু মাজাহ হা/১৫৮৫ সনদ ছহীহ।
[2]. বুখারী হা/১২৯৪।
[3]. মুসলিম; মিশকাত হা/১৭২৭।
أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلىَّ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَعَنَ الْخَامِشَةَ وَجْهَهَا وَالشَّاقَّةَ جَيْبَهَا وَالدَّاعِيَةَ بِالْوَيْلِ وَالثُّبُورِ -
‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মুখমন্ডল ক্ষত-বিক্ষতকারিণী, পকেট ফাড়নে ওয়ালী এবং দুর্ভোগ ও ধ্বংস প্রার্থনাকারিণীর উপর লা‘নত করেছেন’।[1]
ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন,
لَيْسَ مِنَّا مَنْ لَطَمَ الْخُدُودَ ، وَشَقَّ الْجُيُوبَ ، وَدَعَا بِدَعْوَى الْجَاهِلِيَّةِ -
‘যে গালে থাপ্পড় মারে, পকেট ছিঁড়ে ফেলে ও জাহেলিয়াতের রীতি-নীতির প্রতি আহবান জানায় সে আমাদের দলভুক্ত নয়’।[2]
তিনি আরো বলেছেন,
اَلنَّائِحَةُ إِذَا لَمْ تَتُبْ قَبْلَ مَوْتِهَا تُقَامُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَعَلَيْهَا سِرْبَالٌ مِنْ قَطِرَانٍ وَدِرْعٌ مِنْ جَرَبٍ -
‘মাতমকারিণী মৃত্যুর পূর্বে তওবা না করলে ক্বিয়ামত দিবসে তাকে আলকাতরার পাজামা ও মরিচাযুক্ত বর্ম পরিহিতা অবস্থায় তোলা হবে’।[3]
সুতরাং কারো মৃত্যু বা বিপদে বিলাপ-মাতম ও আহাজারী করা বড়ই অন্যায়।
[1]. ইবনু মাজাহ হা/১৫৮৫ সনদ ছহীহ।
[2]. বুখারী হা/১২৯৪।
[3]. মুসলিম; মিশকাত হা/১৭২৭।
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
نَهَى رَسُولُ اللهِ صَلىَّ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الضَّرْبِ فِى الْوَجْهِ وَعَنِ الْوَسْمِ فِى الْوَجْهِ -
‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মুখমন্ডলে আঘাত করতে এবং মুখমন্ডলে দাগ দিতে নিষেধ করেছেন’।[1]
মুখমন্ডলে আঘাতের বিষয়টি কিছু মাতা-পিতা ও শিক্ষকদের থেকে বেশী প্রত্যক্ষ করা যায়। তারা সন্তানদের বা ছাত্রদের শাসন করার জন্য হাত কিংবা অন্য কিছু দ্বারা মুখমন্ডলে মেরে থাকে। অনেকে বাড়ীর চাকরদের সাথে এরূপ করে থাকে। এতে আল্লাহ তা‘আলা যে চেহারার বদৌলতে মানুষকে সম্মানিত করেছেন তাকে অমর্যাদা করার সাথে সাথে অনেক সময় মুখমন্ডলের কোন একটি ইন্দ্রিয় অকেজো হয়ে পড়তে পারে। ফলে অনুশোচনা ছাড়াও ক্ষেত্রবিশেষে ক্বিছাছ দেওয়া লাগতে পারে।
পশুর মুখমন্ডলে দাগ দেওয়া কাজটি পশু মালিকদের সাথে জড়িত। তারা স্ব স্ব পশু চেনা ও হারিয়ে গেলে ফিরে পাওয়ার জন্য পশুগুলির মুখে দাগ দিয়ে থাকে। এটা হারাম। এতে পশুর চেহারা ক্ষত করা ছাড়াও উহাকে কষ্ট দেওয়া হয়। কেউ যদি দাবী করে যে, এরূপ দাগ দেওয়া তাদের গোত্রের একটি রীতি এবং গোত্রের বিশেষ চিহ্ন, তাহলে এটুকু করার অবকাশ থাকতে পারে যে শরীরের অন্য কোথাও দাগ বা কোন চিহ্ন দিবে; মুখমন্ডলে নয়।
[1]. মুসলিম; মিশকাত হা/৪০৭৭।
نَهَى رَسُولُ اللهِ صَلىَّ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الضَّرْبِ فِى الْوَجْهِ وَعَنِ الْوَسْمِ فِى الْوَجْهِ -
‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মুখমন্ডলে আঘাত করতে এবং মুখমন্ডলে দাগ দিতে নিষেধ করেছেন’।[1]
মুখমন্ডলে আঘাতের বিষয়টি কিছু মাতা-পিতা ও শিক্ষকদের থেকে বেশী প্রত্যক্ষ করা যায়। তারা সন্তানদের বা ছাত্রদের শাসন করার জন্য হাত কিংবা অন্য কিছু দ্বারা মুখমন্ডলে মেরে থাকে। অনেকে বাড়ীর চাকরদের সাথে এরূপ করে থাকে। এতে আল্লাহ তা‘আলা যে চেহারার বদৌলতে মানুষকে সম্মানিত করেছেন তাকে অমর্যাদা করার সাথে সাথে অনেক সময় মুখমন্ডলের কোন একটি ইন্দ্রিয় অকেজো হয়ে পড়তে পারে। ফলে অনুশোচনা ছাড়াও ক্ষেত্রবিশেষে ক্বিছাছ দেওয়া লাগতে পারে।
পশুর মুখমন্ডলে দাগ দেওয়া কাজটি পশু মালিকদের সাথে জড়িত। তারা স্ব স্ব পশু চেনা ও হারিয়ে গেলে ফিরে পাওয়ার জন্য পশুগুলির মুখে দাগ দিয়ে থাকে। এটা হারাম। এতে পশুর চেহারা ক্ষত করা ছাড়াও উহাকে কষ্ট দেওয়া হয়। কেউ যদি দাবী করে যে, এরূপ দাগ দেওয়া তাদের গোত্রের একটি রীতি এবং গোত্রের বিশেষ চিহ্ন, তাহলে এটুকু করার অবকাশ থাকতে পারে যে শরীরের অন্য কোথাও দাগ বা কোন চিহ্ন দিবে; মুখমন্ডলে নয়।
[1]. মুসলিম; মিশকাত হা/৪০৭৭।
মুসলমানে মুসলমানে সম্পর্ক বিনষ্ট করা শয়তানের অন্যতম চক্রান্ত। শয়তানের পদাঙ্ক অনুসারী অনেকেই শারঈ কোন কারণ ছাড়াই মুসলিম ভাইদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে। নেহায়েত বস্ত্তগত কারণে কিংবা দুর্বল কোন বিষয়ের উপর ভিত্তি করে ছিন্ন সম্পর্ক যুগ যুগ ধরে চলতে থাকে। তারা কেউ একে অপরের সঙ্গে কথা না বলার শপথ করে, তার বাড়ীতে প্রবেশ না করার সিদ্ধান্ত নেয়। রাস্তায় দেখা হলে পাশ কেটে চলে যায়। মজলিসে হাযির হলে তার আগে-পিছের লোকদের সঙ্গে করমর্দন করে কিন্তু তাকে এড়িয়ে যায়। ইসলামী সমাজে দুর্বলতা অনুপ্রবেশের এটি অন্যতম কারণ। এর শারঈ হুকুম চূড়ান্ত ও পরকালীন শাস্তি কঠোর। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
لاَ يَحِلُّ لِمُسْلِمٍ أَنْ يَهْجُرَ أَخَاهُ فَوْقَ ثَلاَثٍ فَمَنْ هَجَرَ فَوْقَ ثَلاَثٍ فَمَاتَ دَخَلَ النَّارَ -
‘কোন মুসলমানের জন্য তার ভাইয়ের সাথে তিন দিনের ঊর্ধ্বে সম্পর্ক ছিন্ন করে থাকা বৈধ নয়। যে মুসলমান তিন দিনের ঊর্ধ্বে সম্পর্ক ছেদ করে থাকে। অতঃপর মারা যায় সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে’।[1]
অন্যত্র তিনি বলেন, مَنْ هَجَرَ أَخَاهُ سَنَةً فَهُوَ كَسَفْكِ دَمِهِ ‘যে ব্যক্তি তার ভাইকে এক বৎসর অবধি পরিত্যাগ করে থাকে সে তার রক্তপাতকারী সমতুল্য’।[2]
মুসলমানদের পারস্পরিক সম্পর্ক ছিন্ন করার পরিণাম এত মারাত্মক যে, উহার ফলে আল্লাহর ক্ষমা হতে বঞ্চিত হতে হয়। আবু হুরায়রা (রাঃ) এ প্রসঙ্গে নবী করীম (ছাঃ) থেকে নিম্নোক্ত হাদীছ বর্ণনা করেছেন,
تُعْرَضُ أَعْمَالُ النَّاسِ فِى كُلِّ جُمُعَةٍ مَرَّتَيْنِ يَوْمَ الاِثْنَيْنِ وَيَوْمَ الْخَمِيسِ فَيُغْفَرُ لِكُلِّ عَبْدٍ مُؤْمِنٍ إِلاَّ عَبْدًا بَيْنَهُ وَبَيْنَ أَخِيهِ شَحْنَاءُ فَيُقَالُ اتْرُكُوا أَوِ ارْكُوا هَذَيْنِ حَتَّى يَفِيْئَا -
‘প্রতি সপ্তাহে বান্দার আমল আল্লাহর সমীপে দু’বার করে পেশ করা হয়। সোমবারে একবার ও বৃহস্পতিবারে একবার। তখন সকল বিশ্বাসী বান্দাকেই ক্ষমা করা হয়; কেবল সেই লোককে ক্ষমা করা হয় না, যার সাথে তার ভাইয়ের শত্রুতা আছে। তাদের দু’জন সম্পর্কে বলা হয়, ‘এ দু’জনকে বাদ রাখ কিংবা অবকাশ দাও, যে পর্যন্ত না তারা দু’জন আল্লাহর পথে ফিরে আসে’।[3]
অর্থাৎ শত্রুতা পরিহার না করা পর্যন্ত তাদের ক্ষমা করা নিষিদ্ধ।
বিবাদকারীদ্বয়ের মধ্যে যে তওবা করবে, তাকে তার সঙ্গীর নিকটে গিয়ে সাক্ষাত করা ও সালাম প্রদান করা যরূরী। যদি সে তা করে কিন্তু তার সঙ্গী সাক্ষাত না দেয় কিংবা সালামের জবাব না দেয় তবে সে দোষমুক্ত হয়ে যাবে এবং দন্ড যা কিছু তা অস্বীকারকারীর উপরে পতিত হবে।
আবু আইয়ূব আনছারী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেন,
لاَ يَحِلُّ لِرَجُلٍ أَنْ يَهْجُرَ أَخَاهُ فَوْقَ ثَلاَثِ لَيَالٍ ، يَلْتَقِيَانِ فَيُعْرِضُ هَذَا وَيُعْرِضُ هَذَا وَخَيْرُهُمَا الَّذِى يَبْدَأُ بِالسَّلاَمِ -
‘কোন ব্যক্তির জন্য তার ভাইয়ের সাথে তিন দিনের বেশী সম্পর্ক ছেদ করে থাকা বৈধ নয়। (সম্পর্কছেদের চিহ্ন স্বরূপ) তাদের দু’জনের সাক্ষাত হলে দু’জনই মুখ ফিরিয়ে নেয়। তাদের দু’জনের মধ্যে সে-ই উত্তম হবে, যে প্রথমে তার সঙ্গীকে সালাম দিবে’।[4]
হাঁ, যদি সম্পর্কছেদ করার শারঈ কোন কারণ পাওয়া যায়। যেমন- সে ছালাত আদায় করে না কিংবা বেপরোয়াভাবে অন্যায়-অশ্লীল কাজ করে চলে তাহলে লক্ষ্য করতে হবে, সম্পর্কচ্ছেদই তার জন্য মঙ্গলজনক না সম্পর্ক রক্ষাই মঙ্গলজনক। যদি সম্পর্ক ছেদে তার মঙ্গল হয় এবং সে সৎপথে ফিরে আসে তাহলে সম্পর্কছেদ করা ফরয হয়ে দাঁড়াবে। আর যদি মঙ্গলজনক না হয়ে বরং আরো বিগড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়, তার মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি ও পাপ প্রবণতা বেড়ে যায় তাহলে সম্পর্ক ছিন্ন করা ঠিক হবে না। কেননা তাতে সংশোধন না হয়ে বরং বিশৃঙ্খলা আরো বেড়ে যাবে। সুতরাং তার সঙ্গে সংস্রব বজায় রেখে যথাসাধ্য নছীহত করে যেতে হবে।[5]
سبحانك اللهم وبحمدك أشهد أن لا إله إلا أنت أستغفرك وأتوب إليك -
اللهم اغفرلى ولوالدىّ وللمؤمنين يوم يقوم الحساب -
[1]. আহমাদ, আবুদাঊদ; মিশকাত হা/৫০৩৫।
[2]. আবুদাঊদ; মিশকাত হা/৫০৩৬; সনদ ছহীহ।
[3]. মুসলিম; মিশকাত হা/৫০৩০।
[4]. বুখারী হা/৬০৭৭।
[5]. যেমন- নবী করীম (ছাঃ) কা‘ব বিন মালিক (রাঃ)-এর সঙ্গে তাবুক যুদ্ধে বিনা কারণে অংশ না নেয়ার জন্য ৫০ দিনের জন্য সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন। এই সম্পর্কছেদ তার জন্য মঙ্গলজনক ছিল। কিন্তু মুনাফিক নেতা আব্দুল্লাহ বিন উবাই ও তার সঙ্গীদের সাথে এক দিনের তরেও তিনি সম্পর্ক ছিন্ন করেননি। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক বিনষ্ট না করাই তুলনামূলক বেশী মঙ্গল ছিল।
لاَ يَحِلُّ لِمُسْلِمٍ أَنْ يَهْجُرَ أَخَاهُ فَوْقَ ثَلاَثٍ فَمَنْ هَجَرَ فَوْقَ ثَلاَثٍ فَمَاتَ دَخَلَ النَّارَ -
‘কোন মুসলমানের জন্য তার ভাইয়ের সাথে তিন দিনের ঊর্ধ্বে সম্পর্ক ছিন্ন করে থাকা বৈধ নয়। যে মুসলমান তিন দিনের ঊর্ধ্বে সম্পর্ক ছেদ করে থাকে। অতঃপর মারা যায় সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে’।[1]
অন্যত্র তিনি বলেন, مَنْ هَجَرَ أَخَاهُ سَنَةً فَهُوَ كَسَفْكِ دَمِهِ ‘যে ব্যক্তি তার ভাইকে এক বৎসর অবধি পরিত্যাগ করে থাকে সে তার রক্তপাতকারী সমতুল্য’।[2]
মুসলমানদের পারস্পরিক সম্পর্ক ছিন্ন করার পরিণাম এত মারাত্মক যে, উহার ফলে আল্লাহর ক্ষমা হতে বঞ্চিত হতে হয়। আবু হুরায়রা (রাঃ) এ প্রসঙ্গে নবী করীম (ছাঃ) থেকে নিম্নোক্ত হাদীছ বর্ণনা করেছেন,
تُعْرَضُ أَعْمَالُ النَّاسِ فِى كُلِّ جُمُعَةٍ مَرَّتَيْنِ يَوْمَ الاِثْنَيْنِ وَيَوْمَ الْخَمِيسِ فَيُغْفَرُ لِكُلِّ عَبْدٍ مُؤْمِنٍ إِلاَّ عَبْدًا بَيْنَهُ وَبَيْنَ أَخِيهِ شَحْنَاءُ فَيُقَالُ اتْرُكُوا أَوِ ارْكُوا هَذَيْنِ حَتَّى يَفِيْئَا -
‘প্রতি সপ্তাহে বান্দার আমল আল্লাহর সমীপে দু’বার করে পেশ করা হয়। সোমবারে একবার ও বৃহস্পতিবারে একবার। তখন সকল বিশ্বাসী বান্দাকেই ক্ষমা করা হয়; কেবল সেই লোককে ক্ষমা করা হয় না, যার সাথে তার ভাইয়ের শত্রুতা আছে। তাদের দু’জন সম্পর্কে বলা হয়, ‘এ দু’জনকে বাদ রাখ কিংবা অবকাশ দাও, যে পর্যন্ত না তারা দু’জন আল্লাহর পথে ফিরে আসে’।[3]
অর্থাৎ শত্রুতা পরিহার না করা পর্যন্ত তাদের ক্ষমা করা নিষিদ্ধ।
বিবাদকারীদ্বয়ের মধ্যে যে তওবা করবে, তাকে তার সঙ্গীর নিকটে গিয়ে সাক্ষাত করা ও সালাম প্রদান করা যরূরী। যদি সে তা করে কিন্তু তার সঙ্গী সাক্ষাত না দেয় কিংবা সালামের জবাব না দেয় তবে সে দোষমুক্ত হয়ে যাবে এবং দন্ড যা কিছু তা অস্বীকারকারীর উপরে পতিত হবে।
আবু আইয়ূব আনছারী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেন,
لاَ يَحِلُّ لِرَجُلٍ أَنْ يَهْجُرَ أَخَاهُ فَوْقَ ثَلاَثِ لَيَالٍ ، يَلْتَقِيَانِ فَيُعْرِضُ هَذَا وَيُعْرِضُ هَذَا وَخَيْرُهُمَا الَّذِى يَبْدَأُ بِالسَّلاَمِ -
‘কোন ব্যক্তির জন্য তার ভাইয়ের সাথে তিন দিনের বেশী সম্পর্ক ছেদ করে থাকা বৈধ নয়। (সম্পর্কছেদের চিহ্ন স্বরূপ) তাদের দু’জনের সাক্ষাত হলে দু’জনই মুখ ফিরিয়ে নেয়। তাদের দু’জনের মধ্যে সে-ই উত্তম হবে, যে প্রথমে তার সঙ্গীকে সালাম দিবে’।[4]
হাঁ, যদি সম্পর্কছেদ করার শারঈ কোন কারণ পাওয়া যায়। যেমন- সে ছালাত আদায় করে না কিংবা বেপরোয়াভাবে অন্যায়-অশ্লীল কাজ করে চলে তাহলে লক্ষ্য করতে হবে, সম্পর্কচ্ছেদই তার জন্য মঙ্গলজনক না সম্পর্ক রক্ষাই মঙ্গলজনক। যদি সম্পর্ক ছেদে তার মঙ্গল হয় এবং সে সৎপথে ফিরে আসে তাহলে সম্পর্কছেদ করা ফরয হয়ে দাঁড়াবে। আর যদি মঙ্গলজনক না হয়ে বরং আরো বিগড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়, তার মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি ও পাপ প্রবণতা বেড়ে যায় তাহলে সম্পর্ক ছিন্ন করা ঠিক হবে না। কেননা তাতে সংশোধন না হয়ে বরং বিশৃঙ্খলা আরো বেড়ে যাবে। সুতরাং তার সঙ্গে সংস্রব বজায় রেখে যথাসাধ্য নছীহত করে যেতে হবে।[5]
سبحانك اللهم وبحمدك أشهد أن لا إله إلا أنت أستغفرك وأتوب إليك -
اللهم اغفرلى ولوالدىّ وللمؤمنين يوم يقوم الحساب -
[1]. আহমাদ, আবুদাঊদ; মিশকাত হা/৫০৩৫।
[2]. আবুদাঊদ; মিশকাত হা/৫০৩৬; সনদ ছহীহ।
[3]. মুসলিম; মিশকাত হা/৫০৩০।
[4]. বুখারী হা/৬০৭৭।
[5]. যেমন- নবী করীম (ছাঃ) কা‘ব বিন মালিক (রাঃ)-এর সঙ্গে তাবুক যুদ্ধে বিনা কারণে অংশ না নেয়ার জন্য ৫০ দিনের জন্য সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন। এই সম্পর্কছেদ তার জন্য মঙ্গলজনক ছিল। কিন্তু মুনাফিক নেতা আব্দুল্লাহ বিন উবাই ও তার সঙ্গীদের সাথে এক দিনের তরেও তিনি সম্পর্ক ছিন্ন করেননি। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক বিনষ্ট না করাই তুলনামূলক বেশী মঙ্গল ছিল।
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন