hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী প্রবর্তন ও প্রবর্তক একটি ঐতিহাসিক পর্যালোচনা

লেখকঃ প্রফেসর ড. খন্দকার আ.ন.ম আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর

১৬
খ) প্রবর্তক: ব্যক্তি ও জীবন:
আগেই বলেছি যে, মিশরের শিয়া শাসকগণ প্রথম ঈদে মীলাদুন্নবীর প্রবর্তন করেন। ৬ষ্ঠ হিজরী শতকের শেষ দিকে মিশরের বাইরেও কোন কোন ধর্মপ্রান মানুষ ব্যক্তিগত পর্যায়ে প্রতি বৎসর রবিউল আউয়াল মাসের প্রথম দিকে ঈদে মীলাদুন্নবী পালন করতে শুরু করেন। তবে ইরবিলের শাসক আবু সাঈদ কূকুবূরীর মাধ্যমেই এই উৎসবকে সুন্নী জগতে এবং সমগ্র মুসলিম বিশ্বে জনপ্রিয় উৎসবে পরিণত হয়। এজন্য বিভিন্ন সীরাতুন্নবী বিশেষজ্ঞ ও ঐতিহাসিকগণ তাঁকেই ঈদে মীলাদুন্নবীর প্রবর্তক হিসাবে উল্লেখ করেছেন; কারণ তিনিই প্রথম এই উৎসবকে বৃহৎ আকারে পালন করতে শুরু করেন এবং সাধারণের মধ্যে এই উৎসবের প্রচলন ঘটান। আল্লামা মুহাম্মাদ ইবন ইউসূফ সালেহী শামী (মৃত্যু: ৯৪২হি: ১৫৩৬খ্রি:) তার প্রখ্যাত সীরাতুন্নবী গ্রন্থে- (সীরাহ শামীয়া) ঈদেমীলাদুন্নবী পালনের আহবান জানাতে যেয়ে আলোচনার প্রথম দিকে লিখছেন: ‘‘সর্বপ্রথম যে বাদশাহ এই উৎসব উদ্ভাবন করেন তিন হলেন, ইরবিলের শাসক আবু সাঈদ কূকুবূরী...’’ [আস-সালেহী, সীরাত, প্রাগুক্ত, ১/৩৬২।]

আল্লামা যাহাবী কুকবূরীর পরিচিতি প্রদান করতে গিয়ে লিখছেন: ‘‘ধার্মিক সুলতান সম্মানিত বাদশাহ মুযাফ্ফরুদ্দীন আবু সাঈদ কূকুবুরী ইবনে আলী ইবনে বাকতাকীন ইবনে মুহাম্মাদ আল-তুরকমানী’’ [যাহাবী, নুবালা’, প্রাগুক্ত, ২২/৩৩৪।]। তাঁরা তুকী বংশোদ্ভুত। তাঁর নামটিও তুর্কী। তুকী ভাষায় কূকুবুরী শব্দের অর্থ ‘‘নীল নেকড়ে’’। [ইবনে খাল্লিকান, ওয়াইয়াতুল আ’ইয়ান, প্রাগুক্ত, ৪/১২১।]

তাঁর পিতা আলী ইবনে বাকতাকীন ছিলেন ইরাকের ইরবিল অঞ্চলের শাসক। তিনি অত্যন্ত সাহসী ও বীর যোদ্ধা ছিলেন। ক্রুসেড যোদ্ধাদের থেকে অনেক এলাকা জয় করে তাঁর শাসনাধীনে নিয়ে আসেন। তিনি ধার্মিকতার জন্য প্রসিদ্ধ ছিলেন। অনেক মাদ্রাসা ও জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান তিনি প্রতিষ্ঠা করেন।

বীরত্ব ও ধার্মিকতার এই পরিবেশে কূকুবুরী ৫৪৯ হি: সনে (১১৫৪ খ্রি:) জন্মগ্রহণ করেণ। [যিরিকলী, মুহম্মদ খাইরুদ্দীন, আল-আ’লাম, প্রাগুক্ত, ৫/২২৭।] তাঁর বয়স যখন মাত্র ১৪ বৎসর তখন ৫৬৩ হি: সনে (১১৬৮ খ্রি:) তাঁর পিতা মারা যান। [যাহাবী, নুবালা’, প্রাগুক্ত, ২২/৩২৫; আল-ই‘বার, প্রাগুক্ত, ৩/৪০, ২০৮পৃ।] পিতার মৃত্যুর পরে কূকুবূরী ইরবিলের শাসনভার গ্রহণ করেন। [যাহাবী, আল-ই‘বার , প্রাগুক্ত, ৩/২০৮পৃ।] তিনি অল্পবয়স্ক হওয়ার কারণে আতাবিক মুজাহিদ উদ্দীন কায়মায তাঁর অভিভাবক হিসাবে নিযুক্ত হন। [যাহাবী, নুবালা’, প্রাগুক্ত, ২২/৩৩৫।] উক্ত অভিভাবক কিছুদিনের মধ্যেই কুকুবুরীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন এবং কুকুবুরীকে শাসনকার্য পরিচালনায় অযোগ্যতার অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত করে তাঁর ভাই ইউসুফকে ক্ষমতায় বসান। [প্রাগুক্ত।] কূকুবুরী তখন ইরবিল ত্যাগ করে ইরাকের মাওসিল অঞ্চলের শাসক সাইফুদ্দীন গাযী ইবনে মাউদূদের নিকট গমন করেন। তিনি কুকুবুরীকে মাউসিলের শাসনাধীন হাররান অঞ্চলের শাসক হিসাবে নিয়োগ করেন। [প্রাগুক্ত।] কিছুদিন হাররানে অবস্থান করার পরে তিনি যে যুগের প্রসিদ্ধ বীর, মিসর ও সিরিয়ার শাসক গাজী সালাহুদ্দীন আল-আইউবীর দরবারে যোগ দেন। তিনি সালাহুদ্দীনের সাথে বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। সালাহুদ্দীন কুকুবুরীর বীরত্বে ও কর্তব্যনিষ্ঠায় এতই মুগ্ধ হন যে, তিনি তাঁর বোন রাবীয়া খাতুনের সাথে কুকবুরীর বিবাহ দেন এবং তাকে হাররান ও রুহা অঞ্চলের শাসক নিযুক্ত করেন। [প্রাগুক্ত। সালাহুদ্দীন আইউবীরা ৬ভাই ও দুই বোন ছিলেন। যাহবী, আল-ইবার , প্রাগুক্ত, ৩/৫৪।] ৫৮৩ হিজরীতে (১১৮৭খ্রি:) হিত্তীনের যুদ্ধে সালাহুদ্দীন আইউবীর মুসলিম বাহিনী সম্মিলিত খৃষ্টান ক্রুসেড বাহিনীকে শোচনীয়রূপে পরাজিত করে এবং জেরুজালেম ও সমগ্র্ প্যালেষ্টাইন থেকে ইউরোপীয় বাহিনীর চুড়ান্ত পরাজয়ের সূচনা করে। [যাহাবী, আল-ইবার , প্রাগুক্ত, ৩/৮৫, ইবনে কাসীর, আল-বিদায়া, প্রাগুক্ত, ৮/৪৭০-৪৭৩, মাহমূদ শাকির, আত-তারীখুল ইসলামী, প্রাগুক্ত, ৬/৩৩২।] এই যুদ্ধে কুকুবুরী অতুলনীয় বীরত্ব প্রদর্শন করেন। এ সময়ে তাঁর ভাই ইরবিলের শাসক ইউসুফ মারা যান। তখন সালাহুদ্দীন কুকুবুরীকে পুনরায় ইরবিলের শাসনক্ষমতা প্রদান করেন। [যাহাবী, নুবালা’, প্রাগুক্ত, ২২/৩৩৫, আল-ইবার , প্রাগুক্ত, ৩/২০৮।]

কুকবুরী অত্যন্ত ধার্মীক ছিলেন। পরবতী শতাব্দীর প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ইমাম যাহাবী (মৃ: ৭৪৮ হি:) বলেন: ‘‘যদিও তিনি (কুকবুরী) একটি ছোট্ট রাজ্যের রাজা ছিলেন, তিনি ছিলেন সচেচেয়ে বেশী ধার্মিক, সবচেয়ে বেশী দানশীল, সমাজকল্যানেব্রত ও মানবসেবী বাদশাহদের অন্যতম। প্রতি বছর ঈদে মীলাদুন্নবী উদযাপনের জন্য তিনি যে পরিমান অর্থব্যয় করতেন তা সবার মুখে প্রবাদের মত উচ্চারিত হত।’’ [যাহাবী, প্রাগুক্ত, ৩/২০৮।] তিনি শাসন কার্য পরিচালনার ফাঁকে ফাঁকে আলেমদের নিকট থেকে জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করতেন। [আল-যিরিকলী, আ’’লাম, প্রাগুক্ত, ৫/২৩৭।]

আবু সাঈদ কুকবুরীর সমসাময়িক ঐতিহাসিক আল্লামা ইয়াকুত আল-হামাবী (মৃত্যু ৬২৬হি:) কুকবুরীর বর্ণনা দিকে গিয়ে লিখেছেন: ‘‘আমীর মুযাফ্ফরুদ্দীন কূকুবূরী এই ইরবিল শহরের উন্নয়নমূলক প্রভুত কর্ম করেন। এই আমীরের চরিত্র বৈপরিত্যময়। একদিকে তিনি প্রজাদের উপর অনেক জুলুম অত্যাচার করেন, অবৈধভাবে প্রজাদের নিকট থেকে সম্পদ সংগ্রহ করেন। অপরদিকে তিনি কুরআন পাঠক ও ধার্মিক মানুষদের সাহায্য করেন, দরিদ্র ও অসহায়দের জন্য তাঁর দানের হাত খুবই প্রশস্ত। কল্যাণকর্মে তিন মুক্তহস্তে ব্যয় করেন, অমুসলিমদের নিকট বন্দী মুসলিমদেরকে টাকার বিনিময়ে মুক্ত করেন...।’’ [ইয়াকুত আল-হামাবী, মু’জামুল বুলদান (বৈরুত, দারু এহইয়াইত তুরাস আল-আরাবী, ১৯৭৯) ১/১৩৮।]

কর্মময় জীবনের সমাপ্তি ঘটিয়ে প্রায় ৮২ বৎসর বয়সে কুকবূরী ৬৩০ হিজরীর ৪ঠা রমযান (১৩/৬/১২৩৩ খ্রি:) মারা যান। [যাহাবী, আল-ইবার ৩/২০৮, নুবালা ২২/৩৩৭, ইবনে কাসীর, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৯/১৮।] তাঁর সুদীর্ঘ কর্মময় জীবনের অন্যতম কর্ম যা তাকে সমসাময়িক সকল শাসক থেকে পৃথক করে রেখেছে এবং ইতিহাসে তাকে বিশেষভাবে স্মরণীয় করে রেখেছে তা হলো ঈদে মীলাদুন্নবী উদযাপনের প্রচলন। তিনি ৫৮৩ থেকে ৬৩০ পর্যন্ত দীঘ প্রায় ৪৫ বৎসরের শাসনামলের কোন বছরে প্রথম এই অনুষ্ঠান শুরু করেন তা সঠিক ভাবে জানতে পারিনি। প্রখ্যাত বাঙ্গালী আলেমে দীন, মাওলানা মোহাম্মদ বেশারতুল্লাহ মেদিনীপুরী উল্লেখ করেছেন যে, হিজরী ৬০৪ সাল থেকে কূকুবূরী মীলাদ উদযাপন শুরু করেন।ু [মোহাম্মদ বেশারাতুল্লাহ, হাকিকতে মোহাম্মাদী ও মীলাদে আহমাদী (পার্বত্য চট্টগ্রাম, মোহাম্মদ মুশতাকুর রহমান, প্রথম সংস্করণ) ৩০১-৩০২পৃ।] তিনি তাঁর এই তথ্যের কোন সূত্র প্রদান করেন নি। ঐতিহাসিকদের বর্ণনা থেকে প্রতিয়মান হয় যে, ৬০৪ হিজরীর আগেই কূকুবূরী মীলাদ উদযাপন শুরু করেন। ইবনে খাল্লিকান লিখেছেন: ‘‘৬০৪ হিজরীতে ইবনে দেহিয়া খোরাসান যাওয়ার পথে ইরবিলে আসেন। সেখানে তিনি দেখেন যে, বাদশাহ মুযাফফরুদ্দীন কূকুবূরী অতীব আগ্রহ ও উদ্দীপনার সাথে মীলাদ উদযাপন করেন এবং এ উপলক্ষ্যে বিশাল উৎসব করেন। তখন তিনি তাঁর জন্য এ বিষয়ে একটি গ্রন্থ রচনা করেন...।’’ [ইবনে খাল্লিকান ৩/৪৪৯। আরো দেখুন: ১/২১১, ৪/১১৯]

এ থেকে স্পষ্ট যে, ইবনে দেহিয়া ৬০৪ হিজরীতে ইরবিলে আগমনের কিছু পূর্বেই কূকুবূরী মীলাদ উদযাপন শুরু করেন, এজন্যই ইবনে দেহিয়া ইরবিলে এসে তাকে এই অনুষ্ঠান উদযাপন করতে দেখতে পান। তবে উদযাপনটি ৬০৪ হিজরীর বেশী আগে শুরু হয়নি বলেই মনে হয়, কারণ বিষয়টি ইবনে দেহিয়া আগে জানতেন না, এতে বোঝা যায় তখনো তা পার্শবর্তী দেশগুলিতে প্রসিদ্ধি লাভ করেনি। এতে আমরা অনুমান করতে পারি যে, কূকুবূরী ৬ষ্ঠ হিজরী শতকের শেষ দিকে বা ৭ম হিজরী শতকের শুরুতে (৫৯৫-৬০৩ হিজরী) মীলাদ পালন শুরু করেন।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন