HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

মুহররম মাসে শিয়া সম্প্রদায়ের মাতম বিষয়ক বিদয়াত

লেখকঃ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আযিয আহমদ আত-তুয়াইজিরী

কিতাবের নাম/ লেখক/ অনুবাদক/ সম্পাদক
মুহররম মাসে শিয়া সম্প্রদায়ের মাতম বিষয়ক বিদয়াত

মুল : আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আযিয আহমদ আত-তুয়াইজিরী

অনুবাদক :

ইকবাল হোছাইন মাসুম

কামাল উদ্দিন মোল্লা

আবুল কালাম আজাদ

সানাউল্লাহ নজির

সম্পাদনা : নুমান বিন আবুল বাশার

মুহররম মাসে রাফিযী সম্প্রদায়ের শোক প্রকাশে বিদয়াতি কান্ড
মুহররম মাসের দশম দিবস, যে দিবস আশুরা নামে পরিচিত, আল্লাহ তা-আলা হুসাইন বিন আলী বিন আবুতালিব - রাদিয়াল্লাহু আনহুমা- কে শহীদের মর্যাদা দান করেছিলেন. এটা হয়েছিল হিজরি ৬১ সনে . শহীদ হওয়া ছিল আল্লাহর পক্ষ হতে তার উঁচু সম্মান ও মর্যাদার বিষয়, কারণ তিনি এবং তার ভাই হাসান জান্নাতি যুবকদের নেতা. সুউচ্চ মাকাম- সম্মান অর্জিত হয় পরীক্ষা দ্বারা. নবী ―সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ―প্রশ্ন করা হয়েছিল―

أي الناس أشد بلاء؟ فقال : الأنبياء ثم الصالحون ثم الأمثل فالأمثل، يبتلى الرجل على حسب دينه، فإن كان في دينه صلابة زيد في بلائه، وإن كان في دينه رقة خفف عنه، ولا يزال البلاء بالمؤمن حتى يمشي على الأرض وليس عليه خطيئة .( رواه أحمد :১৪০০)

সবচে‘ বেশি পরীক্ষা কোন মানুষের? বললেন― ‘ নবীগণের, তারপর সৎকর্মশীলদের, তারপর যারা উৎকৃষ্ট তাদের এবং এভাবেই. ব্যক্তিকে তার ধর্মের উপর দৃঢ়তানুযায়ী পরীক্ষা করা হয় , যদি সে তার ধর্মে অবিচল থাকে তার পরীক্ষা কঠিন হয়, আর যদি সে ধর্মের বিষয়ে নমনীয় হয় পরীক্ষা ও হয় তুলনামূলক সহজ, আর মুমিনের উপর পরীক্ষা, নির্যাতন চলতেই থাকবে এরই মাঝে এমন এক সময় আসবে, সে জমিনে বিচরণ করছে, অথচ তার আমলনামাতে একটিও গুনাহ

নেই.’

হাসান-হুসাইন ―রাদিয়াল্লাহু আনহুমা― এর মর্যাদা ও সুউচ্চ মাকাম যা আল্লাহ তা-আলার নিকট পূর্ব থেকেই নির্ধারিত ছিল, তাদের পূর্বসূরিদের ন্যায় ইতিপূর্বে তারা কোন পরীক্ষার সম্মুখীন হন নি। তাদের জন্ম গৌরবময় ইসলামে হয়েছে, লালিত হয়েছেন মহিমান্বিত ইসলামের শীতল ছায়াতলে, মুসলিমগণ তাদের সম্মান করতেন, মর্যাদা দিতেন, প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইন্তেকাল করেছেন , তখনও তাদের ভালো-মন্দ পার্থক্যের বুঝটুকু পূর্ণতা লাভ করেনি, তো এ পরীক্ষা তাদের ওপর আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ, যাতে তারা তাদের পূর্বসূরিদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন. যেমন তাদের থেকে শ্রেষ্ঠ, আলী বিন আবুতালিব পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছিলেন, যে তাঁকে শাহাদাত বরণ করতে হয়েছিল।

হুসাইন এর হত্যাকান্ড জনগণের মাঝে গোলযোগের ও বিদ্রোহের জন্ম দিয়েছিল, যেমন উসমান বিন আফ্ফানের হত্যাকান্ড মহা বিপদ ও ফিতনা ছড়িয়েছিল যা আজকে মুসলিম উম্মাহর বিভক্তির বড় কারণ.

আব্দুর রহমান বিন মুলজিম যখন আমিরুল মুমিনীন আলী বিন আবুতালেব ―রাদিয়াল্লাহু আনহু― কে হত্যা করল, এবং সাহাবা আজমাঈন তার সুযোগ্য সন্তান হাসান রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেন. যার শানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন―

إن ابني هذا سيد، وسيصلح الله به بين فئتين عظيمتين من المسلمين . ( رواه البخاري :2505)

‘আমার এ দৌহিত্র সাইয়্যেদ- নেতা. অচিরেই আল্লাহ তা-আলা এর মাধ্যমে মুসলমানের বৃহৎ দুটি দলে আপোশ করাবেন.’ তিনি অভিভাবক রূপে অবতরণ করলেন এবং আল্লাহ তাকে দিয়ে বৃহৎ দুটি দলে আপোশ করিয়ে দিলেন. অত:পর তিনি ইন্তেকাল করলেন, কতিপয় দল হুসাইন ―রাদিয়াল্লাহু আনহুর― নিকট পত্র লিখলেন, যদি তিনি খেলাফতের দায়িত্ব কবুল করেন তাহলে তারা তাকে সাহায্য সহযোগিতা করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিলেন, এ লোক গুলো আসলে ভালো লোক ছিল না. বরং যখন তার চাঁচাত ভাইকে তাদের কাছে প্রেরণ করলেন, তারা অঙ্গীকার ভঙ্গকরল, চুক্তিলঙ্গন করল. তাঁর বিরুদ্ধে শত্রুকে সহায়তা করল তাঁকে নিধন করতে, এবং তার বিরুদ্ধে লড়াই করতে.

প্রকৃত বুদ্ধিমান যারা হুসাঈন রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ভালোবাসতেন, যেমন আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর প্রমুখ, তাঁকে আকারে- ইঙ্গিতে বলেছিলেন ও , তিনি যেন তাদের কাছে না যান এবং তাদের সহযোগিতা গ্রহণ না করেন, তারা মনে করতেন তাদের নিকট তার যাওয়াটা মঙ্গল ও সুখকর হবে না, বাস্তবেও তারা যা বলেছিলেন তাই হয়েছে, বস্ত্তত আল্লাহর নির্ধারিত নিয়তি এমনি ছিল.

যখন হুসাঈন রা. বের হলেন এবং অবলোকন করলেন যে বিষয় সম্পূর্ণ বিপরীত, প্রার্থনা করলেন তারা যেন তাঁকে ছেড়ে দেয় , তিনি ফিরে যাবেন অথবা নিকটাত্মীয়দের সাথে সাক্ষাৎ করবেন. তারা উভয় প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করল, এবং তাকে অবরুদ্ধ করে তাদের সাথে লড়াই করতে বাধ্য করল, তিনি লড়াই করলেন,এক পর্যায় তারা তাকে এবং তার সাথিদের হত্যা করল, যুক্ত হলেন আহলে বাইতের অন্যান্য পবিত্র আত্মার সাথে.এবং এ ঘটনায় যারা তার উপর জুলুম করেছে- সীমা লঙ্ঘন করেছে তাদের আল্লাহ তা-আলা লাঞ্ছিত করেন- শাস্তি দেন.

এ হত্যাকান্ড মানুষের ক্ষতিকে অপরিহার্য করে তোলে, সৃষ্টি হয়, অত্যাচারী অজ্ঞ গোষ্ঠীর অর্থাৎ নাস্তিক চাটুকার অথবা বিভ্রান্ত প্রতারক দলের. যারা হুসাইন রা.এর জন্যে বন্ধুত্ব প্রকাশ করে, প্রকাশ করে আহলে বাইতের জন্য, আশুরা দিবসকে মৃতের জন্য শোক, মাতম, বিলাপ দিবস হিসেবে গ্রহণ করে, এবং এতে জাহেলী কর্মকান্ড প্রকাশ করে. যেমন তাযিয়ামিছিল,মুখে ও শরীরে আঘাত, পরিধেয় পোষক ছেঁড়া ইত্যাদি.

শায়খুল ইসলাম ইবনে তাই-মিয়া বলেন―‘ হুসাইন ― রাদিয়াল্লাহু আনহুর― হত্যাকান্ডের কারণে শয়তান মানুষের মাঝে দু‘টি বিদয়াত চালু করে; আশুরা দিবসে শোক প্রকাশ এবং বিলাপ করা. শরীরে আঘাত , আহাজারী,কান্না, পিপাসার ভান, তাজিয়া-মিছিল করার মাধ্যমে. এবং এর সাথে মিলিত হয়, সালাফে সালেহীনদের গালি দেওয়া,অভিশাপ দেওয়া, এবং নির্দোষ ব্যক্তিবর্গকে দোষারোপ করা এমকি আবু বকর , ওমর ―রাদিয়াল্লাহু আনহুমার― মত ব্যক্তিত্বকে গালি দেওয়া, অপমানজনক তথ্য পরিবেশন যা মিথ্যা মিশ্রিত. যে এসব প্রথা চালু করেছে তার উদ্দেশ্য ছিল উম্মতের মাঝে ফিতনা এবং দলাদলি সৃষ্টি. কারণ মুসলিম উম্মাহর সর্বসম্মত মত হলো এসব কর্মকান্ড ওয়াজিব , মুস্তাহাব কোন পর্যায় পড়ে না, বরং পুরাতন দু:খ,দুর্ঘটনা নিয়ে শোক প্রকাশ, আহজারীকরা আল্লাহ এবং তার রসুলের নিষিদ্ধকৃত বস্ত্তর মধ্য থেকে একটি.’

এসবই আল্লাহর শরিয়তের বিরোধী, আল্লাহ এবং তার রাসূল ―সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম― বিপদ - আপদ যদি নতুন হয়, সে ক্ষেত্রে আমাদের বলেছেন, ধৈর্য ধারণ, ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পাঠ, এবং ছাওয়াবের আশা করতে . যেমন আল্লাহ তা-আলা বলেছেন―

. . . وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ ﴿155﴾ الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُمْ مُصِيبَةٌ قَالُوا إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ ﴿156﴾ أُولَئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَوَاتٌ مِنْ رَبِّهِمْ وَرَحْمَةٌ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُهْتَدُونَ ﴿157﴾ البقرة

ঐ সব ধৈর্যশীলকে সু সংবাদ প্রদান কর, যাদের উপর কোন বিপদ আপতিত হলে তারা বলে: নিশ্চয় আমরা আল্লাহরই জন্যে এবং নিশ্চয় আমরা তারই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী. এদের উপর তাদের প্রভুর পক্ষ হতে শান্তি ও করুণা বর্ষিত হবে এবং এরাই সুপথগামী.

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন

ليس منا من لطم الخدود، وشق الجيوب، ودعا بدعوى الجاهلية ( رواه البخاري :1212)

‘ শোকে বেহাল হয়ে যে ব্যক্তি গাল চাপড়ায়, কাপড় ছিঁড়ে ফেলে এবং জাহিলি যুগের মত আচরণ করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়.’.

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন―

أنا بريء من الصالقة والحالقة والشاقة . ( رواه مسلم :149)

যে মৃতের জন্যে শোক প্রকাশার্থে আহজারীকরে, গালে আঘাতকরে, কাপড় ছিঁড়ে আমি তার দায়মুক্ত.

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাললাম আরো বলেছেন―

النائحة إذا لم تتب قبل موتها تقام يوم القيامة، وعليها سربال من قطران ودرع من جرب .( رواه مسلم :1550)

‘বিলাপ ও রোদনকারী নারী যদি তাওবা না করে মারা যায়, তাহলে কিয়ামতের দিন তাকে মরিচাযুক্ত বর্ম এবং আলকাতরার পোশাক পরিহিত অবস্থায় দাঁড় করিয়ে রাখা হবে।

নবী আকরাম সাললহু আলাইহি ওয়াসালম থেকে বিশুদ্ধ সনদে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। রাসূলহ সাললহু আলাইহি ওয়াসালম বলেন :

ما من مسلم يصاب بمصيبة فيقول : إنا لله وإنا إليه راجعون، أللهم آجرني في مصيبتي، وأخلف لي خيرا منها . إلا آجره الله في مصيبته وأخلفه خيرا منها . ( رواه ابن ماجة :1587)

কোন মুসলমান বিপদ-মুসিবতে আক্রান্ত হয়ে যদি বলে-

إنا لله وإنا إليه راجعون، أللهم آجرني في مصيبتي، وأخلف لي خيرا منها .

-নিশ্চয় আমরা আলহর জন্যে এবং আমরা সকলে তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাব। হে আলহ তুমি আমাকে আমার এ মুসিবতে প্রতিদান দাও এবং এর চেয়ে উত্তম বস্ত্ত দান কর- তাহলে আলহ তা-আলা ঐ মুসিবতের কারণে তাকে ছাওয়াব দেবেন এবং তার চেয়ে উত্তম প্রতিদান দান করবেন।

রাসূলুলহ সাললহু আলাইহি ওয়াসালম অন্যত্র বলেন :

أربع في أمتي من أمر الجاهلية لايتركونهن : الفخر بالأحساب، والطعن في الأنساب، والاستسقاء بالنجوم، والنياحة . ( رواه مسلم :1550)

আমার উম্মতের মধ্যে জাহেলী যুগের চারটি প্রথা পাওয়া যাবে, তারা এগুলো পরিত্যাগ করবে না। বংশ নিয়ে গৌরব, কুল বংশের উপর অপবাদ আরোপ, নক্ষত্র রাজীর মাধ্যমে বৃষ্টি প্রার্থনা এবং মৃত ব্যক্তির জন্যে বিলাপ-রোদন।

এর সাথে যদি মুমিনদের উপর জুলুম-নির্যাতন, অভিসম্পাত-গালাগাল এবং দ্বীনের মধ্যে ফ্যাসাদ-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে দ্বীন নির্মূলের উদ্দেশ্যে যেসব বেদ্বীন-নাস্তিক প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে তাদের সহযোগিতা করা হয় তাহলে ব্যাপারটি কত মারাত্মক ও বেদনাদায়ক?

আসলে পুরা ব্যাপারটিই হচ্ছে শয়তানের মন্দ কারসাজি, সে বিভ্রান্ত ও গুমরাহদের নিকট নিম্নোক্ত বিষয়গুলোকে সুন্দর করে দেখিয়েছে।

আশুরাকে মাতম ও শোক দিবস হিসাবে গ্রহণ করে বিলাপ-রোদন করা, শোক গাঁথা কবিতা রচনা করা, মিথ্যা সর্বস্ব ঘটনাপুঞ্জী বর্ণনা করা -তাতে অবশ্য অল্পকিছু সত্য আছে, কিন্তু ঐ টুকু সত্যতো শুধুমাত্র দুঃখকষ্ট নতুন করে বাড়িয়ে দেয়, গোড়ামী ও স্বজন প্রীতি বৃদ্ধি করে, শত্রুতা ও যুদ্ধের উসকানি দেয়, মুসলমানদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ফিতনার উদয় ঘটে এবং (ঐ গুলোর মাধ্যমে) পূর্ববর্তীদের গালাগাল করার রাস্তা তৈরি হয়, দ্বীনের মধ্যে মিথ্যাচার ও দন্দের উদ্ভব হয়-।

মুসলমানবৃন্দ ইসলামি ইতিহাসের শুরু থেকে নিয়ে অদ্যাবধি মিথ্যাচার, ধন্দ-ফিতনা সৃষ্টি এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাফেরদের সাহায্য সহযোগিতার ক্ষেত্রে এ বিভ্রান্ত দলের চেয়ে অধিক কর্ম তৎপর আর কাউকে পায়নি। তারা ধর্মত্যাগী খারেজিদের চেয়েও নিকৃষ্ট-দুষ্ট।

এদের সম্পর্কেই নবী করিম সাললহু আলাইহি ওয়া সালম বলেছেন,

يقتلون أهل الإسلام ويدعون أهل الأوثان . ( رواه : البخاري :3095)

মুসলমানদের হত্যা করবে আর জড়বাদী-পৌত্তলিকদের ছেড়ে দেবে।

তারা নবী পরিবার এবং তাঁর উম্মত-সাধারণ মুমিনদের বিরুদ্ধে ইয়াহুদী, খৃষ্টান এবং মূর্তি-পূজক জড়বাদী -মুশরিকদের সহযোগিতা করে আসছে।

যেমন বাগদাদ সহ অন্যান্য স্থানে ইসলাম ও মুসলমানদের চরম শত্রু মুশরিকদেরকে নবী পরিবার, রিসালাতের ভান্ডার, আববাস বিন আব্দুল মুত্তালিবের বংশধর সহ অন্যান্য আহলে বাইত এবং সাধারণ মুমিনদের হত্যা, নির্যাতন, বন্দী, বাড়ি ঘর ভাঙচুর, ধ্বংস ইত্যাদিতে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেছিল। ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে তাদের অনিষ্ট ও ক্ষতি এতই ব্যাপক যে একজন সু সাহিত্যিক কথা শিল্পী বর্ণনা করে শেষ করতে পারবে না।

এ দলটিই হচ্ছে (সে দল) যাদের রাফেযী বলা হয়। তারা সর্বজন শ্রদ্ধেয় পুণ্যাত্মা খলিফা-দ্বয় আবু বকর ও ওমর রা. কে গালাগাল, অভিসম্পাত, ঘৃণা করে এবং কাফের বলে মন্তব্য করে বরং এ বিষয়ে ইসলাম বিদ্বেষী সকল দলকে ছাড়িয়ে গেছে। একারণেই ইমাম আহমদকে রাফেযীদের পরিচয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে উত্তরে বলেছিলেন, الذي يسب أبا بكر وعمر যারা আবু বকর ও ওমর রা. কে গালমন্দ করে।

তাদের রাফেযী বলার আরেকটি কারণ হল,(আরবি শব্দ رفض অর্থ প্রত্যাখ্যান করা ) যায়েদ বিন আলী রহ. আবু বকর ও ওমর রা. কে খলিফা রূপে গ্রহণ করায় তারা তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। কারণ তারা খলিফা-দ্বয়কে ঘৃণা করত। তাঁদের প্রতি শত্রুতা পোষণ করত। সুতরাং খলিফা দ্বয়ের শত্রু তা পোষণ কারীই হচ্ছে রাফেযী।

আবার কেউ কেউ বলেছেন, আবু বকর ও ওমর রা. কে প্রত্যাখ্যান করার কারণে তাদেরকে রাফেযী বলা হয়।

রাফেযী ফিরকার উৎপত্তি হয়েছে ধর্মত্যাগী মুনাফেকদের থেকে। আর এর সূচনা করেছে আব্দুলহ বিন সাবা। সে আলী রা. কে ইমাম এবং নিষ্পাপ দাবি করে, তাঁর ব্যাপারে বাড়বাড়ি করেছিল। আর এর থেকেই মূলত এ মতের উৎপত্তি হয়। যেহেতু রাফেযী ফিরকার উৎপত্তি হচ্ছে নিফাক থেকে তাই সালাফে সালেহীনদের কেউ কেউ বলেছেন,

حب أبي بكر وعمر إيمان، وبغضهما نفاق، وحب بني هاشم إيمان، وبغضهم نفاق .

আবু বকর ও ওমর রা. কে ভালোবাসা হচ্ছে ঈমান এবং তাদের ঘৃণা করা নিফাক। বনী হাশেমকে ভালোবাসা ঈমান, তাদের ঘৃণা করা নিফাক।

এ ফিরকার পরিচয় দিতে গিয়ে শায়খুল ইসলাম ইবনে তাই-মিয়া রহ. বলেন- ‘‘ফেরকায়ে রাফেযাহ এমন একটি জাতি যাদের কোন সঠিক বোধ-বিচার নেই, তাদের সমর্থনে বিশুদ্ধ কোন সনদ নেই, গ্রহণযোগ্য কোন ধর্ম ও মতবাদ নেই, সাহায্য করা হবে এমন পৃথিবী নেই, বরং মূর্খতা ও মিথ্যাচারের দিক থেকে তারা হচ্ছে পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা বড় দল। তাদের ধর্মমতে প্রত্যেক ধর্মত্যাগী-যিন্দিক মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত। যেমন নাসীরিয়্যাহ, ইসমাঈলিয়্যাহ ইত্যাদি (তাদের মতে) মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত। কারণ তারা উম্মতের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্বদের সাথে দুশমনি পোষণ করে এবং আলহর দুশমন ইয়াহুদী, খৃষ্টান এবং মুশরিকদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করে। তাদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করে। প্রতিষ্ঠিত, সর্বজন গ্রাহ্য, বেধিত সত্যকে চাপা দেয় আর মিথ্যা বানোয়াট বিষয়-বলীকে সমর্থন করে- প্রতিষ্ঠিত করে, আলমা শা’বী রহ. তাদের সম্পর্কে যথার্থই বলেছেন : -তিনি তাদের সম্পর্কে খুব ভাল জানতেন- ‘‘তারা যদি (মানুষ না হয়ে) চতুষ্পদ জন্তু হত তাহলে হত গাধা আর যদি পাখি হত তাহলে হত শকুন।

বর্তমান সময়ের অবস্থা :
বর্তমান বিশ্বের কোন কোন শহরে মুসলমান নামধারী কিছু ব্যক্তি আছে, যারা মুহররম মাসকে দুঃখ, শোক, বিভিন্ন কু-সংস্কার ও বিদয়াত পালনের মাস হিসাবে গ্রহণ করে এবং বাঁশ, কাঠ দ্বারা একটি কবর তৈরি করে বিভিন্ন রং বেরংয়ের কাগজ দ্বারা সজ্জিত করে, এ কবরের নাম দেয় হোসাইনের সমাধি।

অথবা (প্রতীকী) কারবালা নির্মাণ করে তাতে দুটি কবর তৈরি করে এবং তার উপর ‘তাজিয়া’ করে। ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা সবুজ বা গোলাপি রংয়ের পোশাক পরে একত্রিত হয়। তাদের বলা হয় হোসাইনের ফকিরবৃন্দ মাসের প্রথম দিনে বাড়ি ঘর ধোয়া, মোছা করে পরিষ্কার করা হয়, অতঃপর এক জায়গায় কিছু খাবার রাখা হয়। তাতে সূরা ফাতেহা, সূরা বাকারার প্রথম কয়েকটি আয়াত, সূরা কাফেরূন, ইখলাস, ফালাক এবং সূরা নাস অতঃপর দরুদ পড়া হয়। এরপর খাবারের ছাওয়াব মৃত ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে (হা দিয়া) পাঠানো হয়।

এ মাসে সাজ-সজ্জাকে নিষিদ্ধ করা হয়, ফলে নারীরা সাজ-সজ্জা ও অলংকারাদি খুলে রাখে। লোকেরা গোস্ত খায় না। বৈধ উৎসব ও খানা পেনার আয়োজন করা হয় না বরং এ মাসে বিবাহ শাদি পর্যন্ত সম্পন্ন করা হয় না। নতুন বিয়ের পর এ মাস আসার পূর্বে দুই বা ততোধিক মাস অতিবাহিত না হলে স্বামী-স্ত্রীকে একত্রিত হতে দেয়া হয় না।

এ মাসে শোক প্রকাশ স্বরূপ বুক, চেহারা চপড়ানো, জেব-জামা ছেঁড়া, মাতম-রোদন ইত্যাদি অতিমাত্রায় বেড়ে যায়। সাহাবি মু’আবিয়া, তাঁর সাথিবৃন্দ, ইয়াযীদ এবং সকল সাহাবিদের অভিসম্পাত- ভৎর্সনা করা হয়।

মুহররমের প্রথম দশকে আগুন প্রজ্বলিত করা হয়। লোকজন তার চার পাশে ভিড় জমায়। ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা মিছিলসহ ইয়া হুসাইন, ইয়া হুসাইন স্লোগান দিতে দিতে রাস্তা-ঘাট প্রদক্ষিণ করে। তাদের বিশ্বাস, এ মাসে জন্ম গ্রহণ কারি প্রতিটি সন্তান ভাগ্যহত, কুলক্ষণে। কোথাও কোথাও ঢোল, তবলা, হারমোনিয়াম ইত্যাদি বাজানো হয়। স্থাপন করা হয় পতাকা, কৃত্রিম সমাধি। নারী-পুরুষ ছোট-বড় সকলেই বরকতের জন্য একে স্পর্শ আর এর নীচ দিয়ে আসা-যাওয়া করে। তাদের ধারণা, এতে বয়স বৃদ্ধি পায়, বিপদ দূর হয়। আবার কোথাও কতক লোক চোখ বেধে রাস্তায় রাস্তায় ঘোরে, সূর্যাস্তের সময় বাড়ি ফিরে।

আশু রার দিন বিশেষ ধরনের খানা তৈরি করা হয়। একটি স্থানকে ‘কারবালা’ নামকরণ করে সেখানে সমাধি স্থাপন করা হয় । গ্রাম ও শহর থেকে সমবেত লোক তার পাশে চক্কর কাটে, ঢোল-তবলা নিয়ে মত্ত থাকে, সূর্যাস্তের সাথে সাথে তা মাটিতে পুতে কিংবা পানিতে নিক্ষেপ করে ঘর মুখী হয় । এদিকে রাস্তায় রাস্তায় পানীয় নিয়ে বসে পড়ে কতিপয় স্বেচ্ছাসেবী। তারা বিনামূল্যে পথিকদের পানি পান করায়। আর কতক ওয়ায়েয হুসাইন রা. এর গুণগান বর্ণনা করে উপদেশ নসিহত প্রদান করেন। মুয়াবিয়া রা. ও ইয়াজিদের কুৎসা রটনা করেন এবং তাদের অভিসম্পাত দেন। আশুরা, মুহররম ইত্যাদির ব্যাপারে দুর্বল, বানোয়াট আর জাল হাদিস বর্ণনা করেন। বড় অংকের টাকা জমা করে আশুরা পরবর্তী চল্লিশায় মাহফিলের আয়োজন এবং বিভিন্ন মহলের লোক দাওয়াত দিয়ে বিশেষ ভোজের ব্যবস্থা করে।

এ সকল বেদআতের প্রচলন অনেক দেশেই বিদ্যমান। যেমন, ইরাক, ইরান, বাহরাইন এবং পাকিস্তান, হিন্দুস্থানের শিয়া অধ্যুষিত অঞ্চল বিশেষভাবে উল্লেখ যোগ্য।

মুহররম মাসের আশুরা ও তার প্রাক্কালে এ সকল মাহফিল, তাজিয়া, মর্সিয়া, চিত্রাঙ্কন এবং বুক চপড়ানোর দ্বারা তারা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন এবং বিগত বৎসরগুলোতে কৃত অপরাধ সমূহ মোচন করতে চায়। অথচ এ সকল কর্ম তাদেরকে আল্লাহর দরবার হতে বিতাড়িত আর তার রহমত হতে বঞ্চিত করছে।

আল্লাহ বলেন,

أَفَمَنْ زُيِّنَ لَهُ سُوءُ عَمَلِهِ فَرَآَهُ حَسَنًا فَإِنَّ اللَّهَ يُضِلُّ مَنْ يَشَاءُ وَيَهْدِي مَنْ يَشَاءُ . ﴿ فاطر : 8﴾

‘যাকে তার মন্দ ও খারাপ কর্মসমূহ সজ্জিত করে দেখানো হয়েছে আর সে তা ভালই জ্ঞান করছে, (সে কি ঐ ব্যক্তির সমান হতে পারে, যে সত্যকে সত্য আর মিথ্যাকে মিথ্যা জ্ঞান করতে সক্ষম হয়েছে) সত্যিই আল্লাহ যাকে ইচ্ছে গুমরাহ করেন এবং যাকে ইচ্ছে সৎ পথ প্রদর্শন করেন।’ (ফাতের : ৮)

আল্লাহ তা-আলা আরো বলেন,

قُلْ هَلْ نُنَبِّئُكُمْ بِالْأَخْسَرِينَ أَعْمَالًا . الَّذِينَ ضَلَّ سَعْيُهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ يَحْسَبُونَ أَنَّهُمْ يُحْسِنُونَ صُنْعًا ﴿الكهف : 104﴾

‘আপনি বলে দিন, আমি কি তোমাদের স্বীয় কর্ম ও শ্রমে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের কথা জানিয়ে দেব?- পার্থিব জগতে কৃত সমস্ত আমলই যাদের পন্ডশ্রম হয়েছে। অথচ তাদের ধারণা, খুব ভালো কাজই করে যাচ্ছে তারা।’ (কাহাফ : ১০৩-১০৪)

আশুরার দিন নাসিবিয়্যাহ সম্প্রদায়ের উদ্ভাবিত বিদআতসমূহ
এতক্ষণ আমরা আশু রার দিনে শিয়া-রাফেযিদের মাতম-মর্সিয়া ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করলাম। এ অধ্যায়ে শিয়া বিরোধী কতক গোড়া পন্থীদের কীর্তি-কলাপ নিয়ে আলোচনা করব। যারা শিয়া-রাফেযিদের বিপরীতে আশু রার দিন উৎসবের ঘোষণা করে। এরা হুসাইন এবং রসুল সা. এর পরিবারের ব্যাপারে সমালোচনায় সিদ্ধহস্ত। এদের সব চেয়ে বড় মূর্খতা হলো, এরা বা-তেলকে বাতিল, মিথ্যাকে মিথ্যা, খারাপকে খারাপ আর এক বেদআতকে অন্য বেদআতের মাধ্যমে প্রতিহত করার চেষ্টা করে। তারা আনন্দ, বিনোদনের জন্য আশু রার দিন হরেক রকম সাজ-সজ্জা ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। যেমন, চোখে সুরমা লাগানো, দাঁড়িতে খেজাব দেয়া, পরিবারের জন্য ভালো খাবার -দাবারসহ স্বাভাবিক

নিয়মের ব্যতিক্রম কিছুর ব্যবস্থা করা। যা সাধারণত: ঈদ, আনন্দ অনুষ্ঠানের সময় করা হয়। তারা মূলত: আশুরাকে ঈদে পরিণত করেছে।

এর সূচনা রসুল সা. এর যুগেই হয়েছিল। যার সূত্রপাত আবু সাঈদ খুদরি রা এর বর্ণনা মতে এমন ছিল: আলী রা. রসুল সা. এর নিকট সামান্য স্বর্ণ পাঠান। রসুল সা. সেগুলো চার জন ব্যক্তির মাঝে বণ্টন করে দেন। অর্থাৎ ১. আকরা ইবনে হাবেস আল-হান্জালী, আল-মুজাশেয়ী, ২. উয়াইনাহ ইবনে বদর আল-ফাজারী, ৩. জায়েদ আত্তায়ী, ৪. আলকামা ইবনে আলাসাহ আল-আমেরী। যার প্রেক্ষিতে কুরাইশ এবং আনসারগণ অসন্তুষ্ট হল। তারা বলল, নজদের নেত্রী পর্যায়ের লোকদের দেয়, আর আমাদের বিমুখ করে! রসুল বললেন, আমি তাদের মন-জয় করার চেষ্টা করি মাত্র। ইতোমধ্যে চোখ খাঁদে, ভরা গাল, উঁচু ললাটের এক ব্যক্তি অগ্রসর হয়ে বলল, মুহাম্মদ! আল্লাহকে ভয় কর (রসুল বললেন, আমি যদি আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ করি, তবে আল্লাহর আনুগত্য করবে কে? আল্লাহ আমাকে দুনিয়ার বিশ্বস্ত জানেন, আর তোমরা আমাকে বিশ্বস্ত মনে করো না) একজন সাহাবি তাকে হত্যা করার অনুমতি প্রার্থনা করল - আমার ধারণায় খালেদ ইবনে ওলিদ - তিনি তাকে বিরত রাখলেন। যখন সে প্রস্থান করল, রসুল সা. বললেন, এর বংশে/পশ্চাতে একটি সম্প্রদায় রয়েছে, যারা কুরআন পড়বে কিন্তু তাদের গলার নীচ পর্যন্ত অতিক্রম করবে না। একটি তীর স্বীয় লক্ষ্য ভেদ করে যে রূপ বের হয়ে যায়, তারাও সে রূপ দ্বীন থেকে বের হয়ে যাবে। তারা মুসলমানদের হত্যা করবে, মূর্তিপূজকদের ছেড়ে দেবে। আমি তাদের পেলে আদ সম্প্রদায়ের ন্যায় হত্যা করব।

মুসলিমের একটি বর্ণনায় আছে, রসুল সা. কিছু বণ্টন করতে ছিলেন, আমরা তার নিকটেই ছিলাম। এমতাবস্থায় বনু তামিমের খুওয়াইসারা নামক এক ব্যক্তি তার নিকট এসে বলল, আল্লাহর রসুল; ইনসাফ করুন! (রসুল সা. বললেন, নিপাত যাও তুমি, আমি যদি ইনসাফ না করি তবে আর কে করবে ইনসাফ? আমি ইনসাফ না করলে, তুমি ধ্বংস ও নিশ্চিত ক্ষতিগ্রস্ত হতে ) ওমর রা. বললেন, আল্লাহর রসুল, তাকে হত্যার অনুমতি দিন। রসুল সা. বললেন, (ছেড়ে দাও তাকে, তার এমন কিছু সাথি-সঙ্গী রয়েছে, যাদের নামাজের সাথে তোমাদের নামাজ, যাদের রোজার সাথে তোমাদের রোজা তুচ্ছ মনে করবে। তারা কুরআন তিলাওয়াত করবে, অথচ তাদের কণ্ঠনালি অতিক্রম করবে না। তীর লক্ষ্য ভেদ করে যেমন বের হয়ে যায়, তারাও ইসলাম থেকে সে রূপ বের হয়ে যাবে। অগ্রভাগ দেখা হবে, পিষ্ট দেশ দেখা হবে, মেরুদন্ড দেখা হবে এবং সম্মুখ পানে তাকানো হবে, কোথাও বিন্দু মাত্র চিহ্ন পাওয়া যাবে না, নাড়ি-ভুঁড়ি আর রক্ত এ ভাবেই ভেদ করে যাবে। তাদের আলামত হল, এদের ভিতর এক ব্যক্তি কালো, যার এক হাত নারীর স্তনের ন্যায়। অথবা গোস্তের টুকরার ন্যায় দরফর করবে। মানুষের অপ্রস্ত্তত আর অন্যমনস্কতার মধ্যেই তারা বের হবে।

আবু সাইদ রা. বলেন : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, রাসূল সা. থেকে এটি শুনেছি, আর আলী ইবনে আবু তালেব রা. তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন, আমিও তার সাথে উপস্থিত ছিলাম। তিনি সে ব্যক্তিকে উপস্থিত করার আদেশ করলে তাকে ধরে আনা হলো। আমি লোকটিকে রাসূল সাললহু আলাইহি ওয়া সালমের বর্ণনা অনুযায়ী পেলাম।

শায়খুল ইসলাম ইবনে তাই-মিয়া রাহ. বলেন : কুফা নগরীতে শিয়াদের একটি গোষ্ঠী ছিল, যারা হুসাইন রা. এর পক্ষের লোক ছিল। তাদের নেতা ছিল মোখতার ইবনে উবাইদ আল-কাজ্জাব। সেখানে আলী রা. ও তাঁর ছেলেদের বিদ্বেষী নাসেবা গোত্রের একদল লোক ছিল। তাদের মধ্যে ছিল হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ সাকাফী। সহি বুখারি বর্ণিত, রাসূল সাললহু আলাইহি ওয়া সালম বলেন :

سيكون في ثقيف كذاب ومبير . ( رواه الترمذي :6146)

‘‘ অচিরেই সাকীফ গোত্রে একজন মিথ্যাবাদী ও একজন নাশকতা সৃষ্টিকারীর আবির্ভাব ঘটবে।’’

মোক্ষতার ইবনে উবাইদ ছিল কাজ্জাব তথা মিথ্যাবাদী। আর নাসেবী গোত্রের লোকটি ছিল মুবীর তথা নাশকতা সৃষ্টিকারী।

ওরা শোক প্রকাশ প্রথার সূচনা করেছে আর এরা খুশি উৎসব প্রথার হাওয়া চালু করেছে। হুসাইন রা. এর বিরুদ্ধে যা করা হয়েছে তা-ও বিদয়াত, আর তাঁর পক্ষে যা করা হয়েছে তাও বিদয়াত।

প্রতিটি বিদয়াতই ভ্রষ্টতা। চার ইমামের কেউই ইহা - উহা কোনটিই সমর্থন করেননি। এগুলো পছন্দ করার শরয়ি কোন দলিল নেই।

নাসেবী ও রাফেযীরা বিদয়াতপন্থী ও সুন্নত বহির্ভূত হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। রাসূল সাললহু আলাইহি ওয়া সালম বলেন :

عليكم بسنتي وسنة الخلفاء الراشدين المهديين، تمسكوا بها، وعضوا عليها بالنواجذ، وإياكم ومحدثات الأمور، فإن كل محدثة بدعة، وكل بدعة ضلالة . ( رواه أبو داود 3991)

তোমরা আমার সুন্নত ও আমার পরবর্তী খলিফাগণের সুন্নত আঁকড়ে ধর। সেগুলো তোমরা মজবুত ভাবে আঁকড়ে ধর। আর তোমরা দ্বীনের ব্যাপারে যে কোন নব আবিষ্কার থেকে বিরত থাক। কেননা প্রত্যেক নব আবিষ্কারই বিদয়াত, আর প্রতিটি বিদয়াতই ভ্রষ্টতা।

আশুরা উপলক্ষে রাসূল সাললহু আলাইহি ওয়া সালম অথবা তাঁর খলিফাগণ উল্লেখিত আমলের কোনটিই চালু করেননি। কোনরূপ দুঃখ-বেদনার প্রতীকও রেখে যাননি অথবা খুশি কিংবা উল্লসের প্রতীকও চালু করে যাননি।

কিন্তু রাসূল সাললহু আলাইহি ওয়া সালম যখন মদিনায় আসেন তখন দেখতে পেলেন ইহুদিরা আশুরা দিবসে রোজা পালন করে। তিনি তাদেরকে বললেন : এ দিনের রোজাটি কি জন্যে ? উত্তরে তারা বলল : এটি একটি মহান দিবস, যে দিবসে মুসা আ. কে আল্লহ তা-আলা দরিয়ায় ডুবে যাওয়া থেকে হেফাজত করেছেন। তাই আমরা এদিন রোজা রাখি। একথা শুনে রাসূল সাললহু আলাইহি ওয়া সালম বললেন : আমরাই মুসা আ. এর অনুসরণের বেশি উপযুক্ত। অতঃপর রাসূল সাললহু আলাইহি ওয়া সালম ঐ দিনটিতে রোজা রাখলেন এবং অন্যদেরকেও তা করার আদেশ করলেন।

কুরাইশরাও জাহেলী যুগে এ দিবসটির সম্মান ও শ্রদ্ধা করত। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, রাসূল সাললহু আলাইহি ওয়া সালম সাহাবীগণকে আশুরা উপলক্ষে একটি রোজারই আদেশ করেছেন। কেননা তিনি মদিনায় এসেছেন রবিউল আউয়াল মাসে। এর পরবর্তী বছর তিনি আশু রার রোজা পালন করলেন এবং সাহাবিগণকে রোজা পালনের আদেশ করলেন। অতঃপর উক্ত বছরই রমজানের রোজা ফরজ হল, এবং আশু রার ওয়াজিব রহিত হল।

আশু রার রোজা ওয়াজিব ছিল, না-কি মুস্তাহাব ছিল এ ব্যাপারে আলেমগণের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে। প্রসিদ্ধ দু’টি অভিমতের মধ্যে সঠিক হলো- রোজা ওয়াজিব ছিল । পরবর্তীতে মুস্তাহাবে রূপান্তরিত হয়, এখন যার ইচ্ছা রাখবে, আর যার ইচ্ছা রাখবে না। তখন আর রাসূল সাললহু আলাইহি ওয়া সালম লোকজনকে ঐ দিনে রোজা পালনের আদেশ করতেন না। তিনি আরো বলেন:

هذا يوم عاشوراء، وأنا صائم فيه، فمن شاء صام . متفق عليه . ( رواه البخاري :1864)

এটি আশুরা দিবস, আমি এতে রোজা রেখেছি। যার ইচ্ছা রোজা রাখতে পারে। (বুখারি, মুসলিম)

তিনি আরো বলেন :

صوم يوم عاشوراء يكفر سنة، وصوم يوم عرفة يكفر سنتين .

আশুরা দিবসের রোজা এক বছরের এবং আরাফা দিবসের রোজা দুই বছরের গুনাহ ক্ষমা করিয়ে দেয়।

রাসূল সাললহু আলাইহি ওয়া সালম জীবনের শেষ ভাগে এসে যখন শুনলেন ইয়াহুদীরাও এ দিনটি উদযাপন করে থাকে তখন তিনি বললেন :

لئن عشت إلى قابل لأصومن التاسع . ( رواه مسلم :1917)

যদি আমি আগামীতে বেঁচে থাকি তাহলে নয় তারিখেও একটি রোজা রাখব - যাতে করে ইয়াহুদীদের সাথে মিল না থাকে ।

সাহাবাদের মাঝে আবার কেউ কেউ আশু রার রোজা পালন করতেন না। বরং তারা আশুরা উপলক্ষে একটিমাত্র রোজা রাখা মাকরূহ মনে করতেন। কোন কোন আলেমও আশু রার রোজা মুস্তাহাব মনে করেন না। তবে সঠিক অভিমত অনুযায়ী রোজাটি মুস্তাহাব এবং সাথে নয় তারিখে রোজা রাখাও মুস্তাহাব। কেননা এটিই ছিল রাসূল সাললদু আলাইহি ওয়া সালম এর এ সম্পর্কে শেষ কথা -

لئن عشت إلى قابل لأصومن التاسع . ( رواه مسلم :১৯১৭)

এটিই রাসূল সাললদু আলাইহি ওয়া সালম এর সুন্নত।

এদিকে আশুরাকে কেন্দ্র করে অন্যান্য যে সকল কাজের আবিষ্কার করা হয়েছে- যেমন- নতুন কোন খাদ্য অথবা বস্ত্র তৈরি, সেদিন সংসারে বেশি খরচ করা, সারা বছরের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র খরিদ করা, নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে ইবাদত করা, সুরমা লাগানো, খেজাব লাগানো, গোসল করা, মুসাফা হা করা, বিভিন্ন মসজিদ কিংবা গুরুত্বপূর্ণ স্থান যিয়ারত ইত্যাদি ইত্যাদি। এগুলো সবই বিদয়াত। রাসূল সাললহু আলাইহি ওয়া সালম অথবা সাহাবাগণ এর কোনটিই চালু করেননি বা করতে বলেননি। কোন ইমামও এগুলো সমর্থন করেননি।

অতএব, প্রত্যেক মুসলমানের উচিত আলহ ও রাসূলের আনুগত্য করা, দ্বীন ও ধর্মের ব্যাপারে দলিল-প্রমাণের অনুসরণ করা। দ্বীন ইসলামের নিয়ামতের জন্যে আলহর প্রশংসা করা। এরশাদ হচ্ছে ,

لَقَدْ مَنَّ اللَّهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولًا مِنْ أَنْفُسِهِمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آَيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِنْ كَانُوا مِنْ قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُبِينٍ ﴿ آل عمران 164﴾

আলহ তা-আলা মুমিনদের মধ্য থেকে নির্বাচন করে রাসূল প্রেরণ করে তাদের উপর অনুগ্রহ করেছেন, তিনি তাদেরকে আয়াত পাঠ করে শুনান, তাদের আত্মশুদ্ধির চেষ্টা করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন। যদিও তারা ইতিপূর্বে প্রকাশ্য ভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত ছিল।

রাসূল সাললহু আলাইহি ওয়া সালম বলেন :

إن خير الكلام كلام الله، وخير الهدي هدي محمد، وشر الأمور محدثاتها، وكل بدعة ضلالة . ( رواه البخاري :3735)

নিশ্চয়ই সর্বোত্তম বাণী আলহর বাণী, আর সর্বোত্তম আদর্শ মুহাম্মদ সা. এর আদর্শ, সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হচ্ছে দ্বীনি ব্যাপারে নব আবিষ্কারসমূহ, আর প্রতিটি বিদয়াতই ভ্রষ্টতা।

সমাপ্ত

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন