HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

মৃত-ব্যক্তির জন্য করণীয় কাজের মাসনূন পদ্ধতি

লেখকঃ আ.শ.ম শোয়াইব আহমাদ

মৃত-ব্যক্তির প্রতি সাওয়াব প্রেরণের মাসনূন পদ্ধতি
মৃত্যু পরবর্তী জীবনের সফলতা, মুক্তি, শান্তি ও নেয়ামত লাভের ইচ্ছা ও চেষ্টা সকল ধর্মের অনুসারিগণই করেন। এই জাতীয় সকল কর্ম একান্তই ধর্মীয় ও বিশ্বাসভিত্তিক। বিভিন্ন জাতির মধ্যে ধর্মহীনতা ও অজ্ঞানতার প্রসারের ফলে এ বিষয়ে অনেক কুসংস্কার ও উদ্ভট ধারণা বিরাজমান। যেমন, অনেক সমাজে মনে করা হয়, মৃতের জীবিত আত্মীয়স্বজনের দান, খাদ্য প্রদান বা কিছু অনুষ্ঠান পালনের উপরে মৃতব্যক্তির পারলৌকিক মুক্তি নির্ভরশীল।

ইসলামে এ সকল কুসংস্কারের মূলোৎপাটন করা হয়েছে। ইসলামের শিক্ষা অনুসারে মানুষের পারলৌকিক মুক্তি, শান্তি ও সফলতা নির্ভর করে তার নিজের কর্মের উপরে। সৎকর্মশীল মানুষের মৃত্যুর পরে বিশ্বের কোথাও কিছু না করা হলে, এমনকি তাঁর দেহের সৎকার করা না হলেও তাঁর কিছুই আসে যায় না। অপরদিকে জীবদ্দশায় যিনি শির্ক, কুফর, ইসলাম বিরোধিতা, ইসলামের বিধিনিষেধের ও ইসলামী কর্ম ও আচরণের প্রতি অবজ্ঞা, জুলুম, অত্যাচার, অবৈধ উপার্জন, ফাঁকি, ধোঁকা ইত্যাদিতে লিপ্ত থেকেছেন তার জন্য তার মৃত্যুর পরে বিশ্বের সকল মানুষ একযোগে সকল প্রকার ‘শ্রাদ্ধ’, অনুষ্ঠান, ‘প্রার্থনা’ ইত্যাদি করলেও তার কোনো লাভ হবে না।

তবে যদি কোনো ব্যক্তি বিশুদ্ধ ঈমানসহ ইসলামের ছায়াতলে থেকে সৎকর্ম করে মৃত্যুবরণ করেন, তাহলে জীবিত ব্যক্তিগণ তাঁর জন্য প্রার্থনা করলে প্রার্থনার কারণে দয়াময় আল্লাহ তাঁর সাধারণ অপরাধ ক্ষমা করতে পারেন বা তাকে সাওয়াব ও করুনা দান করতে পারেন। এছাড়া এই ধরনের মানুষের কল্যাণের উদ্দেশ্যে কোনো জীবিত মানুষ দান বা জনকল্যাণমূলক কর্ম করলে সেই কর্মের সাওয়াব করুনাময় আল্লাহ উক্ত মৃতব্যক্তিকে প্রদান করতে পারেন। এই ধরনের কর্মকে সাধারণত আরবিতে ‘‘ঈসালে সাওয়াব’’ ও ফারসিতে ‘‘সাওয়াব রেসানী’’ বলা হয় যার অর্থ: সাওয়াব পৌঁছানো।

তাহলে আমরা দেখছি যে, মানুষের মুক্তি নির্ভর করে মূলত নিজের কর্মের উপর। তবে বিশুদ্ধ ঈমানদার সৎ মানুষদের জন্য দু‘আও দান করা যায়। কুরআন কারীমে মৃত ব্যক্তির জন্য দু‘আ করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। হাদীস শরীফে মৃত ব্যক্তির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা, দু‘আ ও দান-সদকা করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের উদ্দেশ্যে জীবিত ব্যক্তির এ সকল কর্মের সাওয়াব তাঁরা লাভ করবেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া মৃতের দায়িত্বে হজ্জপালন বাকি থাকলে তা তাঁর পক্ষ থেকে পালন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এগুলি সাধারণ নির্দেশনা ও ফযীলতমূলক হাদীস। এখন আমাদের দেখতে হবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবায়ে কেরাম এই ফযীলতের কর্মটি কী-ভাবে পালন করেছেন। অর্থাৎ এই কর্মটির ক্ষেত্রে ‘সুন্নাত’ কী তা জানতে হবে।

এখানে উল্লেখ্য যে, দু‘আ বা দান-সদকার জন্য কোনো প্রকার সমাবেশ, অনুষ্ঠান বা দিন তারিখের কোনো প্রকারের ফযীলত বা গুরুত্ব আছে - সে কথা কোনো হাদীসে কখনো বলা হয় নি। এছাড়া কুরআন খতম, কালেমা খতম ইত্যাদি ইবাদত পালন করে মৃত ব্যক্তিদের জন্য সাওয়াব দান করলে তাঁরা এ সকল ইবাদতের সাওয়াব পাবেন বলে কোনো হাদীসে কোনো প্রকারে বলা হয় নি।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীদের যুগে কারো ইন্তেকালের পরে তার জন্য দু‘আ করার উদ্দেশ্যে পরবর্তী সময়ে কখনো কোনোভাবে তাঁরা জমায়েত হন নি। কারো মৃত্যু হলে নিকটাত্মীয়গণের জন্য তিন দিন শোক প্রকাশের বিধান রয়েছে ইসলামে। এই তিন দিনে সমাজের মানুষেরা মৃতের আত্মীয়গণকে সমবেদনা জানাতে ও শোক প্রকাশ করতে তাঁদের বাড়িতে আসতেন। এছাড়া মৃত ব্যক্তির জানাযার নামাযের ও দাফনের পরে আর কখনো তাঁকে কেন্দ্র করে ৩ দিনে, ৭ দিনে, ৪০ দিনে বা মৃত্যুদিনে বা অন্য কোনো সময়ে মাসিক, বাৎসরিক বা কোনোভাবে তাঁর কবরের কাছে, অথবা বাড়িতে বা অনুষ্ঠানকারীর বাড়িতে বা অন্য কোথাও কোনোভাবে তাঁরা কোনো অনুষ্ঠান করেননি বা কোনো জমায়েতও করেন নি।

মৃত ওলী, প্রিয়জন বা বুজুর্গের জন্য দু‘আ ও ঈসালে সাওয়াবের ক্ষেত্রে তাঁদের সুন্নাত ছিল ব্যক্তিগতভাবে দু‘আ করা এবং সুযোগ সুবিধা ও আগ্রহ অনুযায়ী ব্যক্তিগতভাবে তাঁদের জন্য দান-সাদকা ও হজ্ব ওমরা বা কুরবানি করা। সুযোগমত কোন প্রকারের আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া তাঁদের কবর যিয়ারত করে তাঁদেরকে সালাম দেওয়া ও তাঁদের জন্য দু‘আ করা।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মৃত্যুর পরে প্রায় একশত বৎসরের মধ্যে খুলাফায়ে রাশেদীন ও সাহাবীগণ একটিবারও তাঁর কুলখানী, ইসালে সাওয়াব, ওরস ইত্যাদি উপলক্ষ্যে তাঁর ওফাত দিনে বা অন্য কোনো দিনে, কোনো রকম দিন নির্ধারণ করে বা না-করে, মদীনায় বা অন্য কোথাও কখনোই কোনো অনুষ্ঠান, সমাবেশ, মাহফিল, খানাপিনা কিছুই করেন নি।

মৃত বুজুর্গ বা প্রিয়জনদের জন্য দু‘আ করার ও সাওয়াব প্রেরণের আগ্রহ ও প্রয়োজনীয়তা তাঁদের ছিল। এ বিষয়ের হাদীসগুলি তাঁরা জানতেন। এজন্য জমায়েত হওয়া, বিভিন্ন দিনে, নিয়মিত বা অনিয়মিত মৃতের কবরে, বাড়িতে বা অন্য কোথাও কোনো অনুষ্ঠান করা তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল। কিন্তু কখনই তাঁরা তা করেন নি। তাঁরা সকল প্রকারের জমায়েত, আনুষ্ঠানিকতা বর্জন করেছেন। কোনো প্রকারের দিন তারিখ মাস বার পালন-করা বর্জন করেছেন। সকল প্রকারের কুলখানী, ওরস, জমায়েত বা অনুষ্ঠান তাঁরা বর্জন করেছেন। তাঁরা ব্যক্তিগত ও অনানুষ্ঠানিক দু‘আ ও দানকেই এ সকল ক্ষেত্রে একমাত্র পদ্ধতি বলে মনে করেছেন।

প্রকৃতপক্ষে মৃত বুজুর্গ বা প্রিয়জনের জন্য সদা সর্বদা সুযোগ ও আবেগ অনুসারে দু‘আ করাই ছিল তাঁদের স্থায়ী ও নিয়মিত সুন্নাত। এছাড়া কোনো কিছুই তাঁরা নিয়মিত করেন নি। কারো পিতামাতা বা কোনো আপনজন মারা গেলে হয়ত মৃত্যুর পরেই তাঁদের জন্য কিছু দান করেছেন, জমি ওয়াকফ করেছেন বা অনুরূপ জনকল্যাণমূলক কোনো কাজ করেছেন। কেউ বা তাঁদের হজ্ব বাকি থাকলে হজ্ব আদায় করে দিয়েছেন। ঈসালে সাওয়াব বা মৃতের জন্য সাওয়াব প্রেরণের জন্য সর্বদা দু‘আ করাই ছিল তাঁদের নিয়মিত সুন্নাত। এ ক্ষেত্রে নিম্নের হাদীসসমূহ প্রনিধানযোগ্য।

প্রথমত: ব্যক্তির মৃত্যুর পরও যে সব আমলের সাওয়াব সে অব্যাহতভাবে পেতে থাকে এবং জীবিতরাও মৃতের জন্য এ সকল কাজের আঞ্জাম দিতে পারে এ সম্পর্কে হাদীসে এসেছে –

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ «إِذَا مَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلَاثَةٍ إِلَّا مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ»

‘‘আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন যে, মানুষ যখন মারা যায় তখন তিনটি আমল ব্যতীত তার সকল আমলই বন্ধ হয়ে যায়। ১. সাদাকায়ে জারিয়া, ২. মানুষ উপকৃত হয় এমন ‘ইলম এবং ৩. নেক সন্তান, যে তার জন্য দু‘আ করে।’’ [মুসলিম, কিতাবুল ওয়াসিয়্যাহ, হাদীস নং ৩০৮৪।]

অপর এক হাদীসে এসেছে –

عَنْ أَبِي أُمَامَةَ الْبَاهِلِيِّ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ «أَرْبَعَةٌ تَجْرِي عَلَيْهِمْ أُجُورُهُمْ بَعْدَ الْمَوْتِ مُرَابِطٌ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَمَنْ عَمِلَ عَمَلًا أُجْرِيَ لَهُ مِثْلُ مَا عَمِلَ وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ فَأَجْرُهَا لَهُ مَا جَرَتْ وَرَجُلٌ تَرَكَ وَلَدًا صَالِحًا فَهُوَ يَدْعُو لَهُ»

‘‘আবু উমামাহ আল বাহিলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন যে, চারটি বিষয়ের সাওয়াব প্রাপ্তি মানুষের মৃত্যর পরও অব্যাহত থাকে। ১. আল্লাহর রাস্তায় সীমান্ত প্রহরী, ২. ব্যক্তির এমন (মাসনূন) আমল যা অন্যেরাও অনুসরণ করে, ৩. এমন সাদাকাহ যা সে স্থায়ীভাবে জারী করে দিয়েছে, ৪. এমন নেক সন্তান রেখে যাওয়া যে তার জন্য দু‘আ করে।’’ [আহমদ, বাকী মুসনাদিল আনসার, হাদীস নং ২১২১৭। ৫/২৬০। সহীহ লিগাইরিহী।]

দ্বিতীয়ত সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম তাঁদের মৃত পিতা-মাতার প্রতি সাওয়াব প্রেরণের জন্য কী ব্যবস্থা প্রহণ করতেন নিম্নের হাদীসসমূহ থেকে আমরা আরো স্পষ্ট নির্দেশনা পেতে পারি:

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَجُلًا قَالَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «إِنَّ أَبِي مَاتَ وَتَرَكَ مَالًا وَلَمْ يُوصِ فَهَلْ يُكَفِّرُ عَنْهُ أَنْ أَتَصَدَّقَ عَنْهُ قَالَ نَعَمْ»

‘‘আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট জানতে চাইলেন যে, আমার পিতা কিছু সম্পদ রেখে মারা গেছেন কিন্তু তিনি কোনো ওসীয়ত করে যান নি। আমি কি তাঁর জন্য কিছু সাদাকাহ করতে পারি; যাতে তাঁর গুনাহের কাফফারা হতে পারে ? তিনি বললেন, হ্যা পার।’’ [মুসলিম, কিতাবুল ওসীয়্যাহ, হাদীস নং ৩০৮১।]

অপর এক হাদীসে এসেছে :

عَنْ سَعْدِ ابْنِ عُبَادَةَ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ أُمِّي مَاتَتْ أَفَأَتَصَدَّقُ عَنْهَا قَالَ «نَعَمْ قُلْتُ فَأَيُّ الصَّدَقَةِ أَفْضَلُ قَالَ سَقْيُ الْمَاءِ»

‘‘সা‘দ ইবন ‘উবাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার আম্মা মারা গেছেন। আমি কি তাঁর জন্য কিছু সাদাকাহ করতে পারি? তিনি বললেন, হ্যাঁ পার। আমি বললাম, কোন সাদাকাহ উত্তম? তিনি বলরেন, পানি পান করানো (অর্থাৎ কূপ খনন করে দেয়া)।’’ [নাসাঈ, কিতাবুর ওয়াসায়া, হাদীস নং ৩৬০৪।]

অপর এক হাদীসে এসেছে :

» أَنَّ سَعْدَ بْنَ عُبَادَةَ رَضِي اللَّه عَنْه تُوُفِّيَتْ أُمُّهُ وَهُوَ غَائِبٌ عَنْهَا فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ أُمِّي تُوُفِّيَتْ وَأَنَا غَائِبٌ عَنْهَا أَيَنْفَعُهَا شَيْءٌ إِنْ تَصَدَّقْتُ بِهِ عَنْهَا قَالَ نَعَمْ قَالَ فَإِنِّي أُشْهِدُكَ أَنَّ حَائِطِيَ الْمِخْرَافَ صَدَقَةٌ عَلَيْهَا»

‘‘সা‘দ ইবন ‘উবাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু এর মা তার অনুপস্থিতিতে মারা যান। পরে তিনি বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আমার অনুপস্থিতিতে আম্মা মারা গেছেন। আমি যদি তাঁর জন্য কিছু সাদাকাহ করি তবে কি তা তাঁর উপকারে আসবে ? তিনি বললেন, হ্যা। তিনি বললেন, আপনি সাক্ষী, আমার মিখরাফ নামক বাগানটি তাঁর জন্য সাদাকাহ করলাম।’’ [বুখারী, কিতাবুর ওয়াসায়া, হাদীস নং ২৫৫১।]

তৃতীয়ত মৃত্যুর পরও পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের কিছু দায়িত্বের কথা নিম্নের হাদীসগুলো থেকে জানতে পারি :

عَنْ عَائِشَةَ رَضِي اللَّه عَنْهَا أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ «مَنْ مَاتَ وَعَلَيْهِ صِيَامٌ صَامَ عَنْهُ وَلِيُّهُ»

‘‘আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি রোজা আদায় না করে মারা গেল, তার পক্ষ থেকে তার ওলী (দায়িত্বশীল) সে রোজা আদায় করবে।’’ [মুসলিম, কিতাবুস-সাওম, হাদীস নং ১৮১৬।]

অপর এক হাদীসে এসেছে :

عَنْ أَبِي أُسَيْدٍ مَالِكِ بْنِ رَبِيعَةَ قَالَ بَيْنَمَا نَحْنُ عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذْ جَاءَهُ رَجُلٌ مِنْ بَنِي سَلَمَةَ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَبَقِيَ مِنْ بِرِّ أَبَوَيَّ شَيْءٌ أَبَرُّهُمَا بِهِ مِنْ بَعْدِ مَوْتِهِمَا قَالَ «نَعَمِ الصَّلَاةُ عَلَيْهِمَا وَالِاسْتِغْفَارُ لَهُمَا وَإِيفَاءٌ بِعُهُودِهِمَا مِنْ بَعْدِ مَوْتِهِمَا وَإِكْرَامُ صَدِيقِهِمَا وَصِلَةُ الرَّحِمِ الَّتِي لَا تُوصَلُ إِلَّا بِهِمَا»

‘‘আবু উসায়দ মালিক ইবন রবী‘আহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ছিলাম, এমতাবস্থায় বনী সালামার এক ব্যক্তি এসে বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার পিতা-মাতার মৃত্যুর পর এমন কোন সদাচরণ কি বাকী আছে যা আমি তাঁদের সাথে করতে পারি ? তিনি বললেন, হ্যা, তাঁদের জন্য দু‘আ ও ক্ষমা প্রার্থনা করা, তাঁদের মৃত্যুর পর তাঁদের কৃত প্রতিশ্রুতিগুলো পূর্ণ করা, তাঁদের বন্ধু-বান্ধবদের সম্মান করা এবং সে আত্মীয়গুলো রক্ষা করা, যেগুলো শুধু তাঁদের বন্ধনের কারনেই রক্ষা করা হয়ে থাকে।’’ [ইবন মাজাহ, কিতাবুল আদব, হাদীস নং ৩৬৫৪।]

অপর এক হাদীসে এসেছে :

عَنِ الْحَجَّاجِ ْبنِ دِيْنَارٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله ُعَلَيْهِ وَسَلَّمَ «أَنَّ مِنَ الْبِرِّ بَعْدَ الْبِرِّ أَنْ تُصَلِّي عَلَيْهِمَا مَعَ صَلاَتِكَ وَأَنْ تَصُوْمَ عَنْهُمَا مَعَ صِيَامِكَ وَأَنْ تُصَدِّقَ عَنْهُمَا مَعَ صَدَقَتِكَ

‘‘হাজ্জাজ ইবন দীনার হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (পিতা-মাতার প্রতি জীবিতাবস্থায়) সদাচরণের পর (মৃত্যু পরবর্তী) সদাচরণ হলো - তোমার নামাযের সাথে তাদের পক্ষ থেকেও নামায পড়া, রোজার সাথে তাদের পক্ষ থেকেও রোজা রাখা এবং তোমার সাদাকার সাথে তাদের জন্যও কিছু সাদাকাহ করা।’’ [মুসান্নিফু ইবনি আবী শায়বা, ৩খ, ৫৯পৃ, হাদীস নং ১২০৮৪।]

অপর এক হাদীসে এসেছে :

عَنْ عَطَاءَ قَالَ «يُقْضَى عَنِ الْمَيِّتِ َأْرَبعٌ َالْعِتَقُ وَالصَّدَقَةُ وَالْحَجُّ وَالْعُمْرَةُ» .

‘‘আতা (রহ.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, মৃতের পক্ষ হতে চারটি কাজ করণীয়: গোলাম আযাদ করা, সাদাকাহ করা, হজ্জ করা এবং ওমরা করা।’’ [মুসান্নিফু ইবনি আবী শায়বা, ৩খ, ৫৯পৃ, হাদীস নং ১২০৮৫।]

এছাড়াও সাদাকার পুরস্কার সম্পর্কে এক হাদীসে এসেছে :

«ظِلُّ الْمُؤْمِنِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ صَدَقَتُهُ»

‘‘সাদাকাহ কিয়ামতের দিন মু‘মিনের ছায়া হবে।’’ [আহমদ, বাকী মুসনাদিল আনসার, হাদীস নং ২২৩৯২।]

উপরোক্ত হাদীসসমূহের সারসংক্ষেপ যা দাড়ায় তা হলো :

মৃত্যুর পরও মৃত ব্যক্তি পাঁচটি কাজের সাওয়াব পেতে থাকে। কাজগুলো হলো : সাদাকায়ে জারিয়া করে যাওয়া, উপকারী ইলম রেখে যাওয়া, এমন নেক সন্তান রেখে যাওয়া যে তার জন্য দু‘আ করবে, জীবিত থাকাকালে আল্লাহর রাস্তায় সীমান্ত পাহারা দেয়া এবং মৃত ব্যক্তির এমন (মাসনূন) আমল যা পরবর্তীতে অন্যরা অনুসরণ করে।

সাহাবায়ে কেরাম তাঁদের পিতা-মাতার মৃত্যুর পর তাঁদের জন্য সাদাকায়ে জারিয়ার ব্যবস্থা করতেন। যেমন- ফসলের বাগান ওয়াকফ করতেন, পানির কূপ খনন করে দিতেন ইত্যাদি।

তাঁদের রোজা বাকী থাকলে তাঁদের পক্ষ হতে তাঁরা তা আদায় করতেন।

তাঁরা তাঁদের জন্য দু‘আ ও ক্ষমা প্রার্থনা করতেন, তাঁদের কৃত প্রতিশ্রুতিগুলো পূর্ণ করতেন, তাঁদের বন্ধু-বান্ধবদের সম্মান করতেন এবং সে আত্মীয়গুলোও রক্ষা করতেন, যেগুলো তাঁদের বন্ধনের কারণে সৃষ্টি হয়েছে।

তাঁরা তাঁদের পক্ষ হতে গোলাম আযাদ করতেন, হজ্জ করা বাকী থাকলে হজ্জ এবং ওমরা করতেন। এ ছাড়াও তাঁরা তাঁদের জন্য নফল নামায এবং নফল রোজাও করতেন বলে জানা যায়।

এখন আমাদের সমাজে মৃতব্যক্তিদের জন্য দু‘আর উদ্দেশ্যে অথবা তাদের জন্য দান-সদকার সময়ে বিভিন্ন পদ্ধতিতে আমরা জমায়েত হই ও অনুষ্ঠান করি। এ সকল অনুষ্ঠান নিঃসন্দেহে খেলাফে-সুন্নাত বা সুন্নাত বিরোধী। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে যে, কেউ যদি পূর্ণ সুন্নাত অনুযায়ী অনানুষ্ঠানিকভাবে দান-সাদকা ও দু‘আ করেন তাহলে অনেক মুসলিম তাঁর কর্মকে খুবই অপছন্দ করবেন। এভাবে তাঁরা ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সুন্নাতকে’ অপছন্দ করছেন।

আমাদের সমাজের মুসলিমগণ কিভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাত অপছন্দ ও অবহেলা করেন তার কিছু নমুনা এখানে আলোচনা করছি :

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন