HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

শবে বরাত ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা

লেখকঃ ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

দ্বিতীয় প্রশ্ন: শাবানের মধ্যরাত্রি উদযাপন করা যাবে কিনা?
উত্তর: শাবানের মধ্যরাত্রি পালন করার কী হুকুম এ নিয়ে আলেমদের মধ্যে তিনটি মত রয়েছে:

এক. শাবানের মধ্য রাত্রিতে মাসজিদে জামাতের সাথে সালাত ও অন্যান্য ইবাদত করা জায়েয। প্রসিদ্ধ তাবেয়ী খালেদ ইবন মিদান, লুকমান ইবন আমের সুন্দর পোশাক পরে, আতর-খুশবু, সুরমা মেখে মাসজিদে গিয়ে মানুষদের নিয়ে এ রাত্রিতে সালাত আদায় করতেন। এ মতটি ইমাম ইসহাক ইবন রাহওয়ীয়াহ থেকেও বর্ণিত হয়েছে। (লাতায়েফুল মাআরেফ পৃ:- ১৪৪)

তারা তাদের মতের পক্ষে কোনো দলীল পেশ করেন নি। আল্লামা ইবন রাজাব (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাদের মতের পক্ষে দলীল হিসাবে বলেনঃ তাদের কাছে এ ব্যাপারে ইসরাইলি তথা পূর্ববর্তী উম্মাতদের থেকে বিভিন্ন বর্ণনা এসেছিল, সে অনুসারে তারা আমল করেছিলেন। তবে পূর্বে বর্ণিত বিভিন্ন দুর্বল হাদীস তাদের দলীল হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকবে।

দুই. শাবানের মধ্যরাত্রিতে ব্যক্তিগতভাবে ইবাদত বন্দেগী করা জায়েয। ইমাম আওযায়ী, শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া এবং আল্লামা ইবন রজব রাহমাতুল্লাহি আলাইহিম এ মত পোষণ করেন।

যে সমস্ত হাদীস দ্বারা এ রাত্রির ফযিলত বর্ণিত হয়েছে সে সমস্ত সাধারণ হাদীসের উপর ভিত্তি করে তারা তাদের মতের পক্ষে ব্যক্তিগতভাবে ইবাদত করাকে জায়েয মনে করেন।

তিন. এ ধরনের ইবাদত সম্পূর্ণরূপে বিদআত- চাই তা ব্যক্তিগতভাবে হোক বা সামষ্টিকভাবে। ইমাম আতা ইবন আবি রাবাহ, ইবন আবি মুলাইকা, মদীনার ফুকাহাগণ, ইমাম মালেকের ছাত্রগণ ও অন্যান্য আরো অনেকেই এ মত পোষণ করেছেন। এমনকি ইমাম আওযায়ী যিনি শাম তথা সিরিয়াবাসীদের ইমাম বলে প্রসিদ্ধ তিনিও এ ধরনের ঘটা করে মাসজিদে ইবাদত পালন করাকে বিদআত বলে ঘোষণা করেছেন।

তাদের মতের পক্ষে যুক্তি হলো:

১. এ রাত্রির ফযিলত সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোনো দলীল নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ রাত্রিতে কোনো সুনির্দিষ্ট ইবাদত করেছেন বলে সহীহ হাদীসে প্রমাণিত হয়নি। অনুরূপভাবে তার কোনো সাহাবী থেকেও কিছু বর্ণিত হয়নি। তাবেয়ীনদের মধ্যে তিনজন ব্যতীত আর কারো থেকে বর্ণিত হয়নি।

আল্লামা ইবন রজব রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, শাবানের রাত্রিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অথবা তার সাহাবাদের থেকে কোনো সালাত পড়া প্রমাণিত হয়নি। যদিও শামদেশীয় সুনির্দিষ্ট কোনো কোনো তাবেয়ীন থেকে তা বর্ণিত হয়েছে। (লাতায়েফুল মাআরিফ : ১৪৫)

শাইখ আব্দুল আযীয ইবন বায রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এ রাত্রির ফযিলত বর্ণনায় কিছু দুর্বল হাদীস এসেছে যার উপর ভিত্তি করা জায়েয নেই, আর এ রাত্রিতে সালাত আদায়ে বর্ণিত যাবতীয় হাদীসই বানোয়াট, আলেমগণ এ ব্যাপারে সতর্ক করে গেছেন।

২. হাফেজ ইবন রজব রাহমাতুল্লাহি আলাইহি যিনি কোনো কোনো তাবেয়ীনদের থেকে এ রাত্রির ফযিলত রয়েছে বলে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন, ঐ সমস্ত তাবেয়ীনদের কাছে দলীল হলো যে তাদের কাছে এ ব্যাপারে ইসরাইলি কিছু বর্ণনা এসেছে।

তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, যারা এ রাত পালন করেছেন তাদের দলীল হলো যে তাদের কাছে ইসরাইলি বর্ণনা এসেছে, আমাদের প্রশ্ন: ইসরাইলি বর্ণনা এ উম্মাতের জন্য কিভাবে দলীল হতে পারে?

৩. যে সমস্ত তাবেয়ী থেকে এ রাত উদযাপনের সংবাদ এসেছে তাদের সমসাময়িক প্রখ্যাত ফুকাহা ও মুহাদ্দিসীনগণ তাদের এ সব কর্মকান্ডের নিন্দা করেছেন। যারা তাদের নিন্দা করেছেন তাদের মধ্যে প্রখ্যাত হলেন- ইমাম আতা ইবন আবি রাবাহ, যিনি তার যুগের সর্বশ্রেষ্ট মুফতি ছিলেন, আর যার সম্পর্কে সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেছিলেন, তোমরা আমার কাছে প্রশ্নের জন্য একত্রিত হও, অথচ তোমাদের কাছে ইবন আবি রাবাহ রয়েছে।

সুতরাং যদি ঐ রাত্রি উদযাপনকারীদের পক্ষে কোনো দলীল থাকত, তাহলে তারা আতা ইবন আবি রাবাহর বিপক্ষে তা অবশ্যই পেশ করে তাদের কর্মকাণ্ডের যথার্থতা প্রমাণ করার চেষ্টা করতেন, অথচ এরকম করেছেন বলে প্রমাণিত হয়নি।

৪. পূর্বেই বর্ণিত হয়েছে যে, যে সমস্ত দুর্বল হাদীসে ঐ রাত্রির ফযিলত বর্ণিত হয়েছে, তাতে শুধুমাত্র সে রাত্রিতে আল্লাহর অবতীর্ণ হওয়া এবং ক্ষমা করা প্রমাণিত হয়েছে, এর বাইরে কিছুই বর্ণিত হয়নি। মূলতঃ এ অবতীর্ণ হওয়া ও ক্ষমা চাওয়ার আহবান প্রতি রাতেই আল্লাহ তা‘আলা করে থাকেন। যা সুনির্দিষ্ট কোনো রাত বা রাতসমূহের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়।

এর বাইরে দুর্বল হাদীসেও অতিরিক্ত কোনো ইবাদত করার নির্দেশ নেই।

৫. আর যারা এ রাত্রিতে ব্যক্তিগতভাবে আমল করা জায়েয বলে মন্তব্য করেছেন তাদের মতের পক্ষে কোনো দলীল নেই। কেননা এ রাত্রিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বা তার সাহাবা কারো থেকেই ব্যক্তিগত কিংবা সামষ্টিক কোনো ভাবেই কোনো প্রকার ইবাদত করেছেন বলে বর্ণিত হয়নি।

এর বিপরীতে শরীয়তের সাধারণ অনেক দলীল এ রাত্রিকে ইবাদতের জন্য নির্দিষ্ট করাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করছে, তম্মধ্যে রয়েছে:

আল্লাহ বলেন,

﴿ٱلۡيَوۡمَ أَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِينَكُمۡ ﴾ [ المائ‍دة : ٣ ]

“আজকের দিনে আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম”। [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৩]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ، فَهُوَ رَدٌّ» .

“যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনের মধ্যে এমন নতুন কিছুর উদ্ভব ঘটাবে যা এর মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত”। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৬৯৭)

তিনি আরো বলেছেন,

«مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ» .

“যে ব্যক্তি এমন কোনো কাজ করবে যার উপর আমাদের দ্বীনের মধ্যে কোনো নির্দেশ নেই তা অগ্রহণযোগ্য”। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭১৮)

শাইখ আব্দুল আজীজ ইবন বায রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আর ইমাম আওযায়ী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি যে এ রাতে ব্যক্তিগত ইবাদত করা ভাল মনে করেছেন, আর যা হাফেয ইবন রাজাব পছন্দ করেছেন, তাদের এ মত অত্যন্ত আশ্চর্যজনক বরং দুর্বল; কেননা কোনো কিছু যতক্ষণ পর্যন্ত না শরীয়তের দলীলের মাধ্যমে জায়েয বলে সাব্যস্ত হবে ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো মুসলিমের পক্ষেই দ্বীনের মধ্যে তার অনুপ্রবেশ ঘটানো বৈধ হবে না। চাই তা ব্যক্তিগতভাবে করুক বা সামষ্টিক- দলবদ্ধভাবে। চাই গোপনে করুক বা প্রকাশ্যে। কারণ বিদআতকর্ম অস্বীকার করে এবং তা থেকে সাবধান করে যে সমস্ত প্রমাণাদি এসেছে সেগুলো সাধারণভাবে তার বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছে। (আত্‌তাহযীর মিনাল বিদআ: ১৩)

৬. শাইখ আব্দুল আযীয ইবন বায রাহমাতুল্লাহি আলাইহি আরো বলেন, সহীহ মুসলিমে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«لَا تَخْتَصُّوا لَيْلَةَ الْجُمُعَةِ بِقِيَامٍ مِنْ بَيْنِ اللَّيَالِي، وَلَا تَخُصُّوا يَوْمَ الْجُمُعَةِ بِصِيَامٍ مِنْ بَيْنِ الْأَيَّامِ، إِلَّا أَنْ يَكُونَ فِي صَوْمٍ يَصُومُهُ أَحَدُكُمْ» .

“তোমরা জুম‘আর রাত্রিকে অন্যান্য রাত থেকে ক্বিয়াম/ সালাতের জন্য সুনির্দিষ্ট করে নিও না, আর জুম‘আর দিনকেও অন্যান্য দিনের থেকে আলাদা করে সাওমের জন্য সুনির্দিষ্ট করে নিও না, তবে যদি কারো সাওমের দিনে সে দিন ঘটনাচক্রে এসে যায় সেটা ভিন্ন কথা”। (মুসলিম, হাদীস নং: ১১৪৪, ১৪৮)। যদি কোনো রাতকে ইবাদতের জন্য সুনির্দিষ্ট করা জায়েয হতো তবে অবশ্যই জুম‘আর রাতকে ইবাদতের জন্য বিশেষভাবে সুনির্দিষ্ট করা জায়েয হতো; কেননা জুম‘আর দিনের ফযিলত সম্পর্কে হাদীসে এসেছে যে,

«خَيْرُ يَوْمٍ طَلَعَتْ عَلَيْهِ الشَّمْسُ يَوْمُ الْجُمُعَةِ » .

“সূর্য যে দিনগুলোতে উদিত হয় তম্মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ দিন, জুমু‘আর দিন”। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৮৪)। সুতরাং যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমআর দিনকে বিশেষভাবে ক্বিয়াম/ সালাতের জন্য সুনির্দিষ্ট করা থেকে নিষেধ করেছেন সেহেতু অন্যান্য রাতগুলোকে অবশ্যই ইবাদতের জন্য সুনির্দিষ্ট করে নেয়া জায়েয হবে না। তবে যদি কোনো রাত্রের ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোনো দলীল এসে যায় সেটা ভিন্ন কথা। আর যেহেতু লাইলাতুল ক্বাদর এবং রমযানের রাতের ক্বিয়াম/ সালাত পড়া জায়েয সেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ রাতগুলোর ব্যাপারে স্পষ্ট হাদীস এসেছে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন