মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
“তোমাদের কেউ কি কোনো স্বপ্ন দেখেছে? তখন কেউ কেহ তাদের দেখা স্বপ্নের বিবরণ দিতেন। একদিন সকালে তিনি আমাদের বললেন, গত রাতে আমার কাছে দু’জন আগন্তুক আসলো। তারা আমাকে জাগালো আর বলল, চলেন। আমি তাদের সাথে চললাম। আমরা এক ব্যক্তির কাছে আসলাম, দেখলাম সে শুয়ে আছে আর তার কাছে এক ব্যক্তি পাথর নিয়ে দাড়িয়ে আছে। সে পাথর দিয়ে তার মাথায় আঘাত করছে ফলে তার মাথা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। একটু পর তার মাথা ভালো হয়ে যাচ্ছে। আবার সে পাথরটি নিয়ে তার মাথায় আঘাত করছে। তার মাথা পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে আবার আঘাত করছে। এভাবেই চলছে। আমি তাদের বললাম, সুবহানাল্লাহ! এ দু’ব্যক্তি কে? তারা আমাকে বলল, সামনে চলুন। আমরা চলতে থাকলাম। অতঃপর এক ব্যক্তির কাছে আসলাম, দেখলাম সে চিৎ হয়ে শুয়ে আছে। আরেক ব্যক্তি তার মাথার কাছে কুঠার নিয়ে দাড়িয়ে আছে। তাকে উলট পালট করে তার শরীর চিরছে। একবার চিৎ করছে আরেকবার উপুর করছে। যখন পিঠের দিকটা এ রকম করছে তখন সামনের দিকটা ভালো হয়ে যাচ্ছে। আবার যখন সামনের দিকটায় এমন করছে তখন পিঠের দিকটা ভালো হয়ে যাচ্ছে। আমি দেখে বললাম, সুবহানাল্লাহ! এ দু’ব্যক্তি কে? তারা বলল, আপনি সামনে চলুন। আমি তাদের সাথে চলতে থাকলাম। এসে বিশাল চুলার মত একটি গর্তের কাছে পৌঁছলাম। তার মধ্যে শুনলাম চিৎকার। ভিতরের দিকে তাকালাম। দেখলাম তার মধ্যে কিছু উলঙ্গ নারী ও পুরুষ। তাদের নীচ থেকে আগুনে শিখা তাদের উপর আছরে পড়ে। তারা চিৎকার দিয়ে উঠে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এরা কারা? তারা আমাকে বলল, সামনে চলুন! সামনে চলুন!! আমি চলতে থাকলাম। আমি একটি নদীর কাছে আসলাম। নদীটির পানি রক্তের মত লাল। দেখলাম এক ব্যক্তি নদীটির মধ্যে সাতার কাটছে। নদীর তীরে এক ব্যক্তি দাড়ানো আছে। তার কাছে অনেকগুলো পাথর জমানো। যখন সে তীরের দিক আসে তখন তার মুখ খুলে যায়। মুখে একটি পাথর নিক্ষেপ করা হয় আর সে তা গিলে ফেলে। আবার সাতার কাটতে শুরু করে। আবার তার প্রতি পাথর নিক্ষেপ করা হয়। যখনই সে তীরে ফিরে আসে তখনই তার প্রতি পাথর নিক্ষেপ করে আর সে তা গিলে ফেলে আবার সাতার কাটতে থাকে। আমি তাদের প্রশ্ন করলাম, কারা এ দু’ব্যক্তি? তারা আমাকে বলল, সামনে চলুন। আমরা সামনে চললাম। এমন ব্যক্তির কাছে আসলাম যাকে দেখতে খুবই খারাপ। তার মতো খারাপ চেহারা লোক তুমি কখনো দেখোনি। তার কাছে আগুন আছে আর সে তাতে অনবরত ফুক দিয়ে জালিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। আমি তাদের জিজ্ঞেস করলাম, কে এই ব্যক্তি? তারা আমাকে বলল, সামনে চলুন। আমরা সামনে চললাম। এরপর আমরা একটি একটি উদ্যানে আসলাম, যেখানে আছে বিশাল বিশাল গাছ। আর আছে প্রত্যেক প্রকারের বসন্তকালীন ফুল। দেখলাম সেই উদ্যানে একজন দীর্ঘকায় মানুষ। আমি তার মত দীর্ঘ মানুষ দেখি নি। তার চতুর্পাশে দেখলাম বহু সংখ্যক শিশু-কিশোর। আমি আমার সঙ্গীদের জিজ্ঞেস করলাম, এরা কারা? তারা আমাকে বলল, সামনে চলুন! সামনে চলুন!! আমরা চলতে থাকলাম। এসে পৌঁছলাম এমন একটি সুন্দর উদ্যানে যার মত সুন্দর উদ্যান আমি কখনো দেখি নি। আমাকে বলল, উপরের দিকে উঠুন। আমি উঠলাম। এসে পৌঁছলাম এমন একটি শহরে যার বাড়ীঘরগুলো স্বর্ণ ও রৌপ্যের ইট দ্বারা নির্মিত। আমরা শহরের গেটে এসে পৌছলাম। দরজা খোলার জন্য বললাম। দরজা খুলে দেওয়া হলো। দেখলাম সেখানে কিছু মানুষ আছে যাদের শরীর অর্ধেক অংশ অত্যন্ত সুন্দর আর অর্ধেক অতি কুৎসিত। আমার সঙ্গীদ্বয় তাদের বলল, তোমরা ঐ নদীতে যাও। নদীর পানি অত্যন্ত স্বচ্ছ। তারা নদীতে ঝাপ দিয়ে ফিরে আসল। দেখা গেল তাদের পুরো শরীর সুন্দর হয়ে গেছে। সঙ্গীদ্বয় আমাকে বলল, এটা হলো জান্নাতে আদন। আর ঐগুলো হলো আপনার বাসস্থান। আমার দৃষ্টি উপরে উঠে গেল। আমি দেখলাম সাদা মেঘের মতো শুভ্র একটি প্রাসাদ। আমাকে বলল, এটা আপনার ঘর। এরপর আমি তাদের উভয়কে বললাম, আল্লাহ তোমাদের বরকত দিন, আমাকে একটু সুযোগ দাও আমি প্রবেশ করি। তারা আমাকে বলল, এখন তো সম্ভব নয়। তবে আপনি তো সেখানে প্রবেশ করবেন। এরপর আমি তাদের উভয়কে বললাম, রাত থেকে শুরু করে আমি আশ্চর্যজনক অনেক বিষয় দেখলাম। যা দেখলাম তা কী? তারা বলল, আমরা আপনাকে এখনই বলছি। তা হলো: যার মাথায় আপনি পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করতে দেখেছেন সে হলো এমন ব্যক্তি যে আল কুরআন গ্রহণ করেছিলো কিন্তু পরে তা ছেড়ে দিয়েছে ও ফরয সালাত রেখে ঘুমিয়ে থেকেছে। আর যার মাথায় কুঠার দিয়ে আঘাত করতে দেখেছেন, সে হলো এমন ব্যক্তি যে সকাল বেলা ঘর থেকে বের হত আর মিথ্যা ছড়িয়ে বেড়াতো পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে। আর যে চুলোর মধ্যে উলঙ্গ নারী ও পুরুষ দেখেছেন তারা হলো ব্যভিচারী নর নারী। আর যাকে দেখেছেন রক্ত নদীতে সাতার কাটছে সে হলো সুদখোর। আর যাকে আগুন ফুকতে দেখেছেন সে হলো জাহান্নামের রক্ষী। আর উদ্যানে যে দীর্ঘকায় মানুষটিকে দেখেছেন, তিনি হলেন, ইবরাহীম আলাইহিস সালাম, আর তার চারিদিকের শিশু-কিশোররা হলো, যারা স্বভাব ধর্মের ওপর শিশু অবস্থায় মারা গেছে। এ কথা বলার সময় অনেকে প্রশ্ন করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! মুশরিকদের শিশু সন্তাদেরও কি এ অবস্থা হবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মুশরিকদের শিশু সন্তানদেরও এ অবস্থা হবে। আর যে সকল মানুষকে দেখেছেন যে, তাদের কিছু অংশ কুৎসিত আর কিছু অংশ সুন্দর, তারা হলো এমন মানুষ যারা সৎকর্ম করেছে আবার পাপাচারেও লিপ্ত হয়েছে। আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দিলেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭০৪৭।]
“যাকে কুঠার দিয়ে মাথায় আঘাত করা হচ্ছে সে হলো এমন ব্যক্তি যে মিথ্যা রচনা করত আর তা বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দিত। কিয়ামত পর্যন্ত তাকে এভাবে শাস্তি দেওয়া হবে। আর যার মাথায় কুঠার দিয়ে আঘাত করা হচ্ছে সে হলো এমন ব্যক্তি যে আল কুরআন শিখেছে আর রাত নিদ্রায় কাটিয়েছে এবং দিনে কুরআন অনুযায়ী আমল করে নি”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৪৩।]
কিয়ামত পর্যন্ত তাকে এভাবে শাস্তি দেওয়া হবে।
হাদীসটি থেকে আমরা যা শিখতে পারলাম:
১- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি স্বপ্নের বিবরণ হলো এ হাদীস। আমরা জানি নবী ও রাসূলদের স্বপ্ন আমাদের স্বপ্নের মত নয়। তাদের স্বপ্ন এক ধরনের অহী বা আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ।
২- কিয়ামত পর্যন্ত তাকে এভাবে শাস্তি দেওয়া হবে, হাদীসের এ বক্তব্য দ্বারা স্পষ্ট হলো যে, এ শাস্তিটি বরযখ জীবনের শাস্তি। কিয়ামতের পর হিসাব নিকাশ ও বিচারের পর তার চুরান্ত গন্তব্য স্থির করা হবে।
৩- আল কুরআন ধারন করে আবার তা ত্যাগ করার শাস্তি জানা গেল। আল কুরআন অধ্যায়ন করে সে মোতাবেক জীবন পরিচালনা না করার পরিণাম জানতে পারলাম।
৪- যে ব্যক্তি মিথ্যা খবর প্রচার করে তার শাস্তির কথা জানতে পারলাম।
৫- ব্যাভিচারী নারী ও পুরুষের শাস্তির চিত্র আমরা অনুভব করলাম।
৬- সুদ খাওয়া ও সুদী লেনদেন করার শাস্তির একটি চিত্র আমরা অবগত হলাম।
৬- যে সকল শিশু -কিশোর বয়:প্রাপ্ত হওয়ার আগেই মুত্যুবরণ করে তারা জান্নাতে থাকবে। তারা কাফির পিতা-মাতা সন্তান হলেও। কারণ প্রতিটি শিশু স্বভাবধর্ম ইসলাম নিয়ে জন্ম গ্রহণ করে। পিতা-মাতা তাকে ইয়াহূদী বানায়। খৃষ্টান বানায় বা পৌত্তলিক হতে পথ দেখায়।
৭- যে সকল মুসলিম পাপাচার করে ও সৎকর্ম করে তারা একদিন না একদিন অবশ্যই জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করে জান্নাতে প্রবেশ করবে। কেউ আল্লাহ তা‘আলার ক্ষমা লাভ করে শাস্তি ভোগ ব্যতীত মুক্তি পাবে। কেউ শাস্তি ভোগ করে মুক্তি পাবে।
হাদীসে এসেছে: আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“যখন আমার রব আমাকে উর্ধ্বে আরোহণ (মি‘রাজে গমন) করালেন তখন আমি এমন একদল মানুষ দেখলাম যাদের হাতে তামার বড় বড় নখ। এ নখ দিয়ে তারা তাদের মুখমণ্ডল ও বক্ষ খামচাচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে জিবরীল! এরা কারা? সে বলল, এরা হলো ঐ সকল মানুষ যারা মানুষের গোশত খেত, তাদের সম্মানহানী ঘটাতো”। [মুসনাদে আহমাদ, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ আল জামে আস সগীর কিতাবে সহীহ বলেছেন।]
হাদীসটি থেকে আমরা যা শিখতে পারলাম:
১- মি‘রাজের সময়ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বরযখ, জাহান্নামের শাস্তি ও জান্নাতের কিছু চিত্র দেখানো হয়েছে।
২- মানুষের গোশত খাওয়ার অর্থ হলো তাদের দোষ চর্চা করা, গীবত করা, তাদের দোষ প্রচার করে সমাজে তাদের কে হেয় প্রতিপন্ন বা মানহানী করা। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“তোমরা একে অপরের গীবত করো না। তোমাদের মধ্য কেউ কি নিজ মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? তোমরাতো তা অপছন্দই করে থাকো”। [সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ১২]
এ আয়াতে অপরের দোষ চর্চাকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নিজ মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সাথে তুলনা করেছেন। যারা এটা করে তারা মূলতঃ নিজ মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার মত নিকৃষ্ট কাজ করে। এটা এমন একটি অপরাধ যা আল্লাহ নিজে ক্ষমা করবেন না। যতক্ষণ না যার গীবত করা হয়েছে সে তাকে ক্ষমা না করে। এটা ইসলামী বিধানে একটি মানবাধিকার। যারা গীবত করে, অপরের দোষ চর্চা করে সমাজে তাকে অপমান করে ততারা এ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অপরাধে অপরাধী। আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন না। যার গীবত করা হয়েছে, যাকে অপমান করা হয়েছে তার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে অথবা তাকে যথাযথ ক্ষতিপুরণ দিয়ে দায়মুক্ত হতে হবে।
৩- অপর মানুষের মান সম্মান রক্ষা করা মুমিনদের দায়িত্ব। অন্যের মান সম্মানে আঘাত করা ইসলামে হারাম করা হয়েছে। অপরের গোপন দোষ প্রচার করা, মিথ্যা অপবাদ দেওয়া ইত্যাদি হারাম। তবে যথাযথ কর্তৃপক্ষ বা আদালতের কাছে সংশোধনের উদ্দেশ্যে অপরাধীর বিরুদ্ধে অভিযোগ বা সত্য স্বাক্ষ্য প্রদান করা নিষেধ নয়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/301/10
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।