HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

তাওহীদ

লেখকঃ সানাউল্লাহ নজির আহমদ

কিতাবের নাম/ লেখক/ অনুবাদক/ সম্পাদক
তাওহীদ

লেখক : সানাউল্লাহ নজির আহমদ

সম্পাদনা : নুমান বিন আবুল বাশার

তাওহীদের সংজ্ঞা
তওহিদ : আল্লাহ তাআলা মানুষের জন্য এক ও একক সর্বাধিপতি প্রতিপালক। তিনি রাজত্ব, সৃষ্টি, ধন-সম্পদ ও কর্তৃত্বের অধিপতি। এতে কোন অংশীদার নেই। এককভাবে তিনিই প্রভু। এবাদত, আনুগত্য, আশা-ভরসা, সাহায্য ও ফরিয়াদের ক্ষেত্রে অন্য কাউকে তার সাথে অংশীদার করা জায়েজ নেই। তিনি সুন্দর নামসমূহ ও মহান গুণাবলির অধিকারী, তার সদৃশ কোন জিনিস নেই। তিনি সর্ব-শ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।

তাওহীদের মর্যাদা ও আলামত
১. তওহিদ আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভ ও তার আনুগত্যের সর্বোত্তম ও সর্ব শ্রেষ্ঠ পদ্ধতি। এ তাওহীদের বার্তা দিয়েই তিনি রাসূলদের প্রেরণ করেছেন এবং এর ব্যাখ্যার জন্য কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। এরশাদ হচ্ছে—

كِتَابٌ أَنْزَلْنَاهُ إِلَيْكَ لِتُخْرِجَ النَّاسَ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ . ( سورة إبراهيم :১)

‘এটি একটি গ্রন্থ, যা আমি আপনার প্রতি নাজিল করেছি—যাতে আপনি মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন।’

অর্থাৎ শিরকের অন্ধকার হতে তাওহীদের আলোতে।

২. তিনি তাওহীদের পরীক্ষা নেয়ার লক্ষ্যে জিন জাতি, মানবজাতি, ইহকাল-পরকাল, জান্নাত-জাহান্নাম সৃষ্টি করেছেন। যে এ তাওহীদ গ্রহণ করবে সে সৌভাগ্যবান, চিরসুখী। আর যে তাওহীদ প্রত্যাখ্যান করবে সে হতভাগা, চির দুঃখী।

৩. তাওহীদ বিহীন আমল যত বড় কিংবা যত ভালই হোক—অগ্রাহ্য, পরিত্যক্ত ও মূল্যহীন। এরশাদ হচ্ছে—

وَلَوْ أَشْرَكُوا لَحَبِطَ عَنْهُمْ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ . ( سورة الأنعام :৮৮)

‘যদি তারা শিরক করত, তবে তাদের কাজকর্ম তাদের জন্যে ব্যর্থ হয়ে যেত।’

৪. নবী-রাসূলগণ তাওহীদের অনুশীলন, বাস্তবায়ন ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে কষ্ট সহ্য করেছেন, তাদের অনুসারীগণ পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছেন। কেউ নিজের প্রাণ উৎসর্গ করেছেন। কেউ ত্যাগ করেছেন নিজের ধন-সম্পদ ও ইজ্জত ও মান-সম্ভ্রম। কেউ তার প্রয়োজনীয় আহার হতে বঞ্চিত হয়েছেন। কেউ বিসর্জন দিয়েছেন আল্লাহ তাআলার রাস্তায় নিজের আত্মমর্যাদা পর্যন্ত। কেউ স্বীয় দেশ ত্যাগে বাধ্য হয়েছেন...ইত্যাদি।

তাওহীদের নিদর্শন বা আলামত
যেহেতু অনন্য সাধারণ বৈশিষ্ট্য মন্ডিত তাওহিদ—কল্যাণকর, হিতকর ও সুউচ্চ স্থানের অধিকারী সেহেতু তার আল্লাহ প্রদত্ত বিস্তৃত কল্যাণ, প্রচুর সুফল ও অনেক উপকার দুনিয়া-আখেরাত তথা উভয় জগতে মোহনীয়, আকর্ষণীয় ও লোভনীয়। নিম্নে প্রধান প্রধান কতিপয় সুফলের নমুনা তুলে ধরা হল :—

প্রথমত : দুনিয়াবী সুফল :
তাওহীদের বদৌলতে আমরা বিস্তর-বেহিসাব, সুফল-কল্যাণ অর্জন করে থাকি। তার উল্লেখযোগ্য উদাহরণ নিম্নরূপ :

১. তাওহিদ মানে সত্য ও সততাকে আঁকড়ে ধরে ন্যায় ও ইনসাফের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা। সঠিক ও সরল পথে পরিচালিত হওয়া। মূর্খতা, কুসংস্কার, ধারণাব্রতীতা ও ভ্রান্তির ঊর্ধ্বে থাকা। এরশাদ হচ্ছে—

ذَلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ هُوَ الْحَقُّ وَأَنَّ مَا يَدْعُونَ مِنْ دُونِهِ الْبَاطِلُ . ( سورة لقمان :৩০)

‘এ দ্বারাই প্রমাণ যে, আল্লাহ তাআলাই সত্য এবং আল্লাহ তাআলা ব্যতীত তারা যাদের পূজা করে সব মিথ্যা।’

২. তাওহিদ মানে জান-মালের পূর্ণ নিরাপত্তা অর্জন করা। অবৈধভাবে কারো উপর অত্যাচার বা সীমা-লঙ্ঘন করা হতে সম্পূর্ণ রূপে বিরত থাকা। রাসূল সা. বলেন—

أمرت أن أقاتل الناس، حتى يقولوا لا إله إلا الله، فإذا قالوها عصموا مني دماءهم وأموالهم إلا بحقها .

‘আমি মানুষের সাথে জেহাদ করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি—যতক্ষণ পর্যন্ত তারা لاإله إلا الله না বলবে। যখন তারা لاإله إلا الله বলবে, আমার থেকে তাদের জান-মাল নিরাপদ করে নিবে। তবে শরিয়তের বিধি মোতাবেক—শাস্তির উপযুক্ত—হলে ভিন্ন কথা।’

৩. তাওহিদ মানে উৎকৃষ্ট জীবন ও প্রভূত কল্যাণ অর্জন করা। এরশাদ হচ্ছে—

مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً . ( سورة النحل :৯৭)

‘যে সৎকর্ম সম্পাদন করে সে ঈমানদের পুরুষ হোক বা নারী আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব।’

পক্ষান্তরে তাওহিদ প্রত্যাখ্যান করে যে নিমজ্জিত থাকে শিরকের অন্ধকারের অতল গহবরে—সে খুবই ভাগ্যহত, আল্লাহ তাআলার রহমত হতে বিতাড়িত এবং সংকীর্ণতার দুর্বিষহ জীবন যাপনে বাধ্য। এরশাদ হচ্ছে—

وَمَنْ أَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنْكًا وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَى .( سورة طه :১২৪)

‘এবং যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব।’

৪. তাওহিদ মানে সাম্য-মৈত্রী ও ন্যায়-ইনসাফের বাস্তব অনুশীলন। কারণ তাওহিদ অনুসারীদের সামনে থাকে এক পরম ও অভীষ্ট লক্ষ, মহৎ উদ্দেশ্য—যার জন্য সে দুর্গম পথ অতিক্রম করছে। অর্থাৎ আল্লাহ সুবহানাহু ও তায়ালার অপার সান্নিধ্য। তদুপরি তার থাকে সঠিক ও নির্ভুল দিক নির্দেশনা যার উপর দিয়ে সে নির্বিঘ্নে পথ চলে ; অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার কিতাব, রাসূল সা. এর সুন্নত। সে উভয়ের মাঝে সামঞ্জস্য বিধান করে পারংগমতার সাথে স্বীয় ব্রত পালন করে। এরশাদ হচ্ছে—

إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ . ( الحجرات :১৩)

‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলার নিকট সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেজগার।’ রাসূল সা. বলেন—

إن الله لاينظر إلى صوركم وأجسامكم، ولكن ينظر إلى قلوبكم وأعمالكم .

‘আল্লাহ তাআলা তোমাদের চেহারা ও শরীর পর্যবেক্ষণ করেন না। তিনি পর্যবেক্ষণ করেন তোমাদের অন্তর ও আমল সমূহ।’

৫. তাওহিদ মানে মানুষকে মানুষের দাসত্ব হতে মুক্ত ও স্বাধীন করা। কারণ তাওহিদ বা একত্ববাদ-এর অর্থ একমাত্র আল্লাহ তাআলার বশ্যতা, অধীনতা ও দীনতা স্বীকার করা। তার সৃষ্টি জীবের আনুগত্য ও পূজ্যতা পরিহার করা। তদুপরি তাওহিদ মানুষের বিবেক-বুদ্ধি ও বোধশক্তিকে বিশ্বজগৎ ও এর ভিতর সৃষ্ট যাবতীয় বস্ত্ত—জীব-উদ্ভিদ সম্পর্কে মুশরিক বা পৌত্তলিকদের আবিষ্কৃত-অনুসৃত কুসংস্কার ও বানোয়াট কল্প-কাহিনী হতে মুক্ত ও পরিশুদ্ধ করে। মানুষের চিত্ত ও চেতনাকে পরাক্রমশালী আল্লাহ ব্যতীত সকলের সামনে হীনতা নীচতা ও আত্মসমর্পণ হতে বিরত রাখে। সর্বোপরি মানুষের জীবন চক্রকে সীমা-লঙ্ঘনে অভ্যস্ত, প্রভুত্বের দাবিদার ও নববী আহবানের সাথে যুদ্ধ ঘোষণাকারীদের আধিপত্য হতে মুক্ত করে।

৬. তাওহিদ মানে ভারসাম্যপূর্ণ পরিশীলিত, পরিমার্জিত ব্যক্তিত্ব গঠন করা। কারণ তাওহিদ সৃষ্টি কুলের সামনে এমন এক লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও গন্তব্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছে—যা আল্লাহমুখী ও তার সন্তুষ্টির জিম্মাদার। তাওহিদে বিশ্বাসী ব্যক্তি মন-মস্তিষ্ক ও সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে—যা তার অন্তরে প্রশান্তি, হৃদয়ে অবিচলতা ও আত্মায় অনাবিল সুখ সযত্নে নিয়ে আসে। পক্ষান্তরে মূর্তিপূজকদের উপাস্য-হাজারো প্রভু তাদের অন্তরসমূহকে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন বহুধা বিভক্ত করে রাখে। তারা সর্বদাই নানান পদ্ধতিতে তাদের উপাস্য-প্রভুদের সন্তুষ্ট করার নিমিত্তে কিংকর্তব্যবিমূঢ় থাকে। আল্লাহ তাআলা ইউসুফ আ.-এর উপদেশ উল্লেখ করেন—

يَا صَاحِبَيِ السِّجْنِ أَأَرْبَابٌ مُتَفَرِّقُونَ خَيْرٌ أَمِ اللَّهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ . ( سورة يوسف :৩৯)

‘হে কারাগারের সঙ্গীরা! পৃথক পৃথক অনেক উপাস্য ভাল, না পরাক্রমশালী এক আল্লাহ?’ অন্যত্র বলেন—

ضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا رَجُلًا فِيهِ شُرَكَاءُ مُتَشَاكِسُونَ وَرَجُلًا سَلَمًا لِرَجُلٍ هَلْ يَسْتَوِيَانِ مَثَلًا الْحَمْدُ لِلَّهِ بَلْ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُونَ . ( سورة الزمر :২৯)

‘আল্লাহ তাআলা এক দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন : এক লোকের উপর বিরোধী ক’জন মালিক রয়েছে, আরেক ব্যক্তির প্রভু মাত্র একজন—তাদের উভয়ের অবস্থা কি সমান ? সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআলার। কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানে না।’

৭. তাওহিদ আস্থাশীল দৃঢ় অন্তকরণ তৈরি করে। কারণ, তাওহিদ কানায় কানায় পূর্ণ করে দেয় মানুষের অন্তকরণকে আল্লাহ তাআলার আস্থা ও তার উপর নির্ভরতা দ্বারা। সে তার নিঃসঙ্গতা ও গোপনীয়তায় একমাত্র আল্লাহ তাআলা ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করে না। যেহেতু সে জানে আল্লাহ তাআলা ছাড়া এ বিশ্ব পরিমন্ডলে কেউ হস্তক্ষেপের অধিকার রাখে না। কিংবা উপকার বা অপকার কিছুই করতে পারে না। আল্লাহ তাআলা ছাড়া মানবজাতি যাদের এবাদত-উপাসনা করে তারা স্বয়ং নিজেদের লাভ ক্ষতির যোগ্যতা রাখে না। অন্যদের কল্যাণ-অকল্যাণ করার কোন প্রশ্নই আসে না। আল্লাহ তাআলার ওলীগণ নির্বিঘ্ন অন্তর ও আস্থাশীলতার অধিকারী হয়ে থাকেন, যার বাস্তব নমুনা আল্লাহ তাআলার নবী নূহ আ.। তিনি তার সম্প্রদায়কে বলেছেন—

يَا قَوْمِ إِنْ كَانَ كَبُرَ عَلَيْكُمْ مَقَامِي وَتَذْكِيرِي بِآَيَاتِ اللَّهِ فَعَلَى اللَّهِ تَوَكَّلْتُ فَأَجْمِعُوا أَمْرَكُمْ وَشُرَكَاءَكُمْ ثُمَّ لَا يَكُنْ أَمْرُكُمْ عَلَيْكُمْ غُمَّةً ثُمَّ اقْضُوا إِلَيَّ وَلَا تُنْظِرُونِ . ( سورة يونس :৭১)

‘হে আমার সম্প্রদায়, যদি তোমাদের মাঝে আমার অবস্থান এবং আল্লাহ তাআলার আয়াতসমূহের মাধ্যমে নসিহত করা ভারী বলে মনে হয়ে থাকে, তবে আমি আল্লাহ তাআলার উপর ভরসা করছি। এখন তোমরা সবাই মিলে নিজেদের কর্ম সাব্যস্ত কর এবং এতে তোমাদের শরিকদেরকে সমবেত করে নাও। যাতে তোমাদের মাঝে নিজেদের কাজের ব্যাপারে কোন সন্দেহ-সংশয় না থাকে। অতঃপর আমার সম্পর্কে যা কিছু করার করে ফেল এবং আমাকে অবকাশ দিয়ো না।’

এর উত্তম নমুনা আল্লাহ তাআলার নবী ইব্রাহীম আ.। যখন তার সম্প্রদায় মূর্তি নিয়ে সংঘটিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাকে শাসাচ্ছিল ও ভীতি প্রদর্শন করছিল। তখন তিনি বলেছেন—

وَلَا أَخَافُ مَا تُشْرِكُونَ بِهِ إِلَّا أَنْ يَشَاءَ رَبِّي شَيْئًا وَسِعَ رَبِّي كُلَّ شَيْءٍ عِلْمًا أَفَلَا تَتَذَكَّرُونَ ﴿80﴾ وَكَيْفَ أَخَافُ مَا أَشْرَكْتُمْ وَلَا تَخَافُونَ أَنَّكُمْ أَشْرَكْتُمْ بِاللَّهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِ عَلَيْكُمْ سُلْطَانًا فَأَيُّ الْفَرِيقَيْنِ أَحَقُّ بِالْأَمْنِ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ ﴿81﴾ الَّذِينَ آَمَنُوا وَلَمْ يَلْبِسُوا إِيمَانَهُمْ بِظُلْمٍ أُولَئِكَ لَهُمُ الْأَمْنُ وَهُمْ مُهْتَدُونَ . ( سورة الأنعام :৮০-৮২)

‘তোমরা যাদেরকে শরিক কর, আমি তাদেরকে ভয় করি না—তবে আমার পালনকর্তাই যদি ভিন্ন কিছু ইচ্ছা করেন (তবে ভিন্ন কথা)। আমার পালনকর্তাই প্রত্যেক বস্ত্তকে স্বীয় জ্ঞান দ্বারা বেষ্টন করে আছেন। তোমরা কি চিন্তা কর না ? যাদেরকে তোমরা আল্লার তাআলার সাথে শরিক করে রেখেছ, তাদেরকে কীরূপে ভয় করব, অথচ তোমরা ভয় করোনা যে তোমরা আল্লাহ তাআলার সাথে এমন বস্ত্তকে শরিক করছ, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য কোন প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি। অতএব, উভয় সম্প্রদায়ের মাঝে শাস্তি লাভের অধিক যোগ্য কে, যদি তোমরা জ্ঞানী হয়ে থাক ? যারা ঈমান আনে এবং স্বীয় বিশ্বাসকে শেরেকীর সাথে মিশ্রিত করে না, তাদের জন্যই শান্তি এবং তারাই সুপথগামী।’ আরো নমুনা নবী হুদ আ.। যখন তাকে বলা হয়েছিল—

إِنْ نَقُولُ إِلَّا اعْتَرَاكَ بَعْضُ آَلِهَتِنَا بِسُوءٍ . ( سورة هود :৫৪)

‘বরং আমরা তো বলি যে আমাদের কোন দেবতা তোমার উপরে শোচনীয় ভূত চাপিয়ে দিয়েছে।’ তিনি এর উত্তরে বলেনে—

إِنِّي أُشْهِدُ اللَّهَ وَاشْهَدُوا أَنِّي بَرِيءٌ مِمَّا تُشْرِكُونَ ﴿54﴾ مِنْ دُونِهِ فَكِيدُونِي جَمِيعًا ثُمَّ لَا تُنْظِرُونِ ﴿55﴾ إِنِّي تَوَكَّلْتُ عَلَى اللَّهِ رَبِّي وَرَبِّكُمْ مَا مِنْ دَابَّةٍ إِلَّا هُوَ آَخِذٌ بِنَاصِيَتِهَا إِنَّ رَبِّي عَلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ ﴿سورة هود : 54-56﴾

‘হুদ বললেন- আমি আল্লাহ তাআলাকে সাক্ষী করেছি আর তোমরাও সাক্ষী থাক যে, আমার কোন সম্পর্ক নাই তাদের সাথে যাদেরকে তোমরা শরিক করছ: তাকে ছাড়া, তোমরা সবাই মিলে আমার অনিষ্ট করার প্রয়াস চালাও, অতঃপর আমাকে কোন অবকাশ দিয়ো না। আমি আল্লাহ তাআলার উপর নিশ্চিত ভরসা করেছি যিনি আমার এবং তোমাদের পরওয়ারদেগার। পৃথিবীর বুকে বিচরণকারী এমন কোন প্রাণী নেই যা তার পূর্ণ আয়ত্তাধীণ নয়। আমার পালনকর্তার সরল পথে সন্দেহ নেই।’

দ্বিতীয়ত : পরকালীন সুফল :
যার প্রধান প্রধান কতিপয় শুভ পরিণাম নিম্নে তুলে ধরা হল :

১. তওহিদ মানে জান্নাতে প্রবেশাধিকার ও জাহান্নাম হতে মুক্তির নিশ্চয়তা :

যে তাওহীদের উপর মৃত্যু বরণ করবে এবং যার নেকির পাল্লা গুনাহের পাল্লা হতে ভারী হবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। এরশাদ হচ্ছে-

وَالْوَزْنُ يَوْمَئِذٍ الْحَقُّ فَمَنْ ثَقُلَتْ مَوَازِينُهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ ( سورة الأعراف :৮)

‘আর সে দিন যথার্থই ওজন করা হবে। অতঃপর যাদের পাল্লা ভারী হবে তারাই সফলকাম হবে।’

তাওহীদের উপর মারা যাওয়ার পরেও যে ব্যক্তির গুনাহের পাল্লা ভারী হবে, সে আল্লাহ তাআলার ইচ্ছাধীন। চাইলে নিরেট মেহেরবাণী দ্বারা তাকে মাফ করে দিতে পারেন। অথবা তারই অনুমতিতে কোন সন্তুষ্ট ভাজনের সুপারিশের মাধ্যমে জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারেন। আর চাইলে তাকে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত করতে পারেন, যাতে সে গুনাহ থেকে পাক-সাফ হতে পারে। অতঃপর সে জাহান্নাম হতে বেরিয়ে আসবে। সেখানে স্থায়ীভাবে অবস্থান করবে না। বরং জান্নাতে প্রবেশ করবে। অনুরূপ ভাষ্যই শাফায়াতের হাদিসে পাওয়া যায়। রাসূল সা. বলেন-

فأقول : يارب ائذن لي في من قال لاإله إلا الله، قال : ليس ذلك لك، أو قال : ليس ذاك إليك- ولكن وعزتي وكبريائي وعظمتي لأخرجن من قال لا إله إلا الله .

‘‘আমি বলব, হে আমার রব, যারা لاإله إلا الله বলেছে তাদের ব্যাপারে আমাকে সুপারিশ করার অনুমতি দিন। আল্লাহ তাআলা বলবেন, এ কাজ তোমার নয় বা তাদের ব্যাপার নিয়ে তোমার চিন্তা করতে হবে না। তবে আমার ইজ্জত, অহমিকা ও বড়ত্বের শপথ, যারা لاإله إلا الله বলেছে তাদেরকে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করাব।

তাওহীদের বিপরীত হচ্ছে শিরক: শিরক মুশরিক কিংবা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করার পথ রুদ্ধ করে দেয়। সে স্থায়ীভাবে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। সে যত আমল সম্পাদন করুক তার কোনো কাজে আসবে না। এরশাদ হচ্ছে-

إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنْصَارٍ . ( سورة المائدة :৭২)

‘নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার সাথে অংশীদার স্থির করে, আল্লাহ তাআলা তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন এবং তার বাসস্থান হয় জাহান্নাম। অত্যাচারীদের কোন সাহায্যকারী নেই।’ আয়েশা রা. এর হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন-

قلت يا رسول الله ! ابن جدعان، كان في الجاهلية يصل الرحم ويطعم المسكين فهل ذلك نافعه؟ قال : ( لاينفعه، إنه لم يقل يوما : رب اغقر لي خطيئتي يوم الدين .)

‘আমি বলেছি হে আল্লাহর রাসূল সা. ইবনে জাদআন ইসলাম পূর্বযুগে- জাহিলিয়াতে- আত্মীয়তার বন্ধন প্রতিষ্ঠিত করতো, অভাব গ্রস্তদের খাদ্য প্রদান করতো, এর দ্বারা কি সে উপকৃত হবে? তিনি উত্তর দিলেন: এ আমলগুলো তাকে কোন উপকৃত করতে পারবে না। যেহেতু সে কোন দিন বলেনি, رب اغفر لي خطيئتي يوم الدين (হে আমার রব! কেয়ামতের দিন আমার গুনাহ মাফ কর।)

২.তাওহীদের বদৌলতে নেক কাজের মূল্যায়ন ও গ্রহণযোগ্যতা মিলে :

তাওহিদ দ্বীন বা ধর্মের মূল ভিত্তি এবং ঐ মূল স্তম্ভ যার উপর মিল্লাত বা ধর্মের গোড়াপত্তন হয়েছে। যে ব্যক্তি কেয়ামতের দিন তাওহিদ নিয়ে আসবে তার অন্যান্য আমলের মূল্যায়ন করা হবে। আর যে তাওহিদসহ আসতে পারবে না, তার সমস্ত আমল বিনষ্ট হবে এবং তা অস্তিত্বহীন গণ্য করা হবে। এরশাদ হচ্ছে-

وَلَوْ أَشْرَكُوا لَحَبِطَ عَنْهُمْ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ . ( سورة الأنعام :৮৮)

‘যদি তারা শিরক করে, তবে তাদের কাজকর্ম তাদের জন্যে ব্যর্থ হয়ে যাবে।’

৩. তাওহীদের ফলে গুনাহ মাফ ও অপরাধ মোচন হয় :

যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের নিকট নির্ভেজাল তাওহিদ ও শিরকের দূরতম সম্পর্ক মুক্ত খাটি আমল নিয়ে আসবে- তার সমস্ত পাপ মোচন করা হবে। তার সকল অপরাধ মাফ করা হবে। আল্লাহ তাআলা হাদিসে কুদসীতে বলেন-

ياابن آدم لو أتيتني بقراب الأرض خطايا، ثم لقيتني لا تشرك بي شيئا لأتيك بقرابها مغفرة .

‘হে আদম সন্তান তুমি যদি দুনিয়ার সমতুল্য পাত্রপূর্ণ অপরাধ নিয়ে আমার কাছে আস, অতঃপর আমার সঙ্গে কোন জিনিসকে শরীক করা থেকে মুক্ত হয়ে আমার সাথে সাক্ষাৎ কর, আমি দুনিয়ার সমতুল্য পাত্রপূর্ণ ক্ষমা নিয়ে তোমার নিকট উপস্থিত হব।’

তদ্রুপ সুসংবাদ এসেছে আমলনামা সংক্রান্ত হাদিসে, যে টিকেটে لاإله إلا الله . অর্থাৎ কালেমায়ে তাওহিদ থাকবে সে টিকেটটি ওজনের পাল্লাতে গুনাহের নিরানববইটি নথিপত্রের উপর ভারী হবে। প্রত্যেকটি নথিপত্রের দৈর্ঘ্য হবে দৃষ্টি সীমা পর্যন্ত।

তাওহীদের প্রকার :
ওলামায়ে কেরাম তওহিদকে দু’ভাগে ভাগ করেছেন :

প্রথমত :
আল্লাহ তাআলার সত্তা, তার কার্যাবলী, তার বিশেষ্য ও বিশেষণ সমূহকে প্রতিষ্ঠিত করণ ও প্রতিপন্নকরণ। এ প্রকার তওহিদকে ওলামায়ে কেরাম নামকরণ করেছেন - توحيد المعرفة والإثبات হিসেবে। (অর্থ:আল্লাহ তাআলার পরিচয় লাভ করা। তার প্রতিনিধি হিসেবে তদীয় সমস্ত বিধানাবলী মননে ও শরীরে, নিজের ভিতর ও অন্যের ভিতর সফল রূপায়ণ ও যথার্থ বাস্তবায়ন করা।)

কতেক ওলামায়ে কেরাম এ প্রকার তওহিদকে আবার দু’ভাগে ভাগ করেছেন:

১. ( توحيد الربوبية )তওহিদুর রুবুবিয়্যাত বা প্রভূত্ব ও প্রতিপালন সম্পর্কিত একত্ববাদ। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার অস্তিত্বের স্বীকারোক্তি প্রদান। তার প্রত্যক্ষ ও স্বনিয়ন্ত্রিত কর্মসমূহে একমাত্র তাকেই সম্পাদনকারী জ্ঞান করা। যেমন-রাজত্ব, পরিকল্পনা, সৃষ্টি, কল্যাণ-অকল্যাণ, রিজিক প্রদান, জীবিত করণ ও মৃত্যুদান ইত্যাদি কর্মসমূহ আল্লাহ তাআলা পরিকল্পনা করেন এবং প্রত্যক্ষ ও সক্রিয় ভাবে একক সিদ্ধান্তে সম্পাদন করেন।

আরেকটু পরিষ্কার করে বলা যায়: توحيد الربوبية দুইটি বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে। যথা:

(এক) আসমান-জমিন, জিন-ইনসান, পাহাড়-পর্বত, সাগর-মহাসাগর, আলো-বাতাস, চন্দ্র-সূর্যসহ যাবতীয় সৃষ্টি জীব একমাত্র আল্লাহ তাআলার পরিকল্পনা, তত্ত্বাবধান ও প্রত্যক্ষ নির্দেশ ( كن ) এর মাধ্যমে সৃজিত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কারো থেকে সামান্যতম সাহায্য গ্রহণ করা হয়নি। সৃষ্টির অণুপরিমাণ বস্ত্তের সৃষ্টির ভিতর কারো অংশীদারিত্বও নেই।

(দুই) যাবতীয় সৃষ্টিজগত পরিচালনা করার দায়িত্ব ও ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ তাআলা সংরক্ষণ করেন। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক আইন-কানুন প্রণয়ন, মুসলমান-মুসলমান, মুসলমান-অমুসলমান, অমুসলমান-অমুসলমান এর ভিতর সম্পর্ক-উন্নয়ন, সম্পর্ক-ছিন্নকরণ, লেন-দেন, উদারনীতি-কঠোরনীতি নির্নয় করণ, এবং এ সমস্ত জিনিসের প্রকৃতি ও ধরন ব্যাখ্যা করণ, এককমাত্র আল্লাহ তাআলার অধিকার। এর বিরুদ্ধাচারন করে কেউ যদি নিজেকে আংশিক বা সামগ্রিক অধিকার সংরক্ষণকারী মনে করে- সে বাস্তবে রুবুবিয়্যাতের দাবীদার। কাফের। যেমন ফেরআউন, নমরূদ। আবার কেউ যদি এর সামগ্রিক বা আংশিক অধিকারের অন্য কাউকে অংশীদার মনে করে, সে মুশরিক বা পৌত্তলিক। যেমন- মক্কার আবু জাহেল, আবু লাহাব ও বর্তমান যুগের পৌত্তলিক সম্প্রদায়। হোক না সে অংশিদারকৃত বস্ত্ত সামাজিক সংঘঠন, রাষ্ট্রিয় পার্লামেন্ট কিংবা আর্ন্তজাতিক কোন সংস্থা।

সুতরাং একজন মুসলমানকে রব হিসেবে একমাত্র আল্লাহ তাআলাকে মেনে নিতে হবে। তাকে স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে ঘোষণা করতে হবে: আল্লাহ তাআলাকে আমি রব হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছি। ইসলামকে আমি ধর্ম বা জীবন বিধান হিসেবে গ্রহণ করেছি। মুহাম্মদ সা.কে আমি নবী হিসেবে মেনে নিয়েছি। তাকে দৃঢ়চিত্তে আরো ঘোষণা দিতে হবে: আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মরণ একমাত্র আল্লাহ তাআলার জন্য, যিনি উভয় জাহানের পালনকর্তা।

এর পরেই সে প্রবেশ করবে শান্তির শামিয়ানায়। আরোহন করবে মুক্তির তরীতে। তাওহিদ তথা ইসলামের কিস্তিতে। অতঃপর বিশ্বাসের এ তরীকে অবিশ্বাসের প্রলয়ংকারী ঝড়, উত্তাল তরঙ্গ ও সমূহ প্রতিকুলতা হতে হেফাজত করার জন্য জীবন মরণ শপথ গ্রহণ করতে হবে। প্রশান্তচিত্ত, পূর্ণ বিশ্বাস, আর দৃঢ় আস্থা নিয়ে তাওহিদ তথা ইসলামের তরী বর্হিভূত সকল মানবজাতি: যারা শিরক-কুফর আর পথভ্রষ্টতার মহা সমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছে, যারা নাজাতের এ তরীকে বিপদ সঙ্কুল, দূর্ভেদ্য দেয়ালঘেরা শাস্তি কুন্ড, মানুষের স্বাধীনতা হরণকারী ভাসমান জেলখানা, আধুনিকতা বির্বজিত সেকেলে সভ্যতার বাহক সমুদ্র পিষ্ঠে এক প্রাচীন দীপ মনে করে আছে, তাদেরকে এ তরীতে উঠার উদাত্ত্ব আহবান জানাতে হবে। তবেই পরিগণিত হবে সে আল্লাহর সমীপে আত্নসমর্পনকারী পরিপূর্ণ মুসলমান। পরকালে বিশ্বাসী খাটি মুমিন।

২. ( توحيد الأسماء والصفات ) অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা যে সব সত্তাগত বা গুণগত (বিশেষ্য ও বিশেষণ মূলক) নামসমূহ নিজের জন্য নির্বাচন করেছেন, অথবা রাসূল সা. যে সব সত্তাগত বা গুণগত (বিশেষ্য ও বিশেষণ মূলক) নামসমূহ আল্লাহর জন্য বলে উল্লেখ করেছেন, সেগুলোকে কোন ধরনের রূপদান বা সামঞ্জস্য বিধান, অপব্যাখ্যা বা বিকৃতি সাধন, কর্মহীনকরণ বা নিরর্থকরণ, দৃষ্টান্ত প্রদান বা সাদৃশ্য বর্ণনা ব্যতিরেকে বাস্তব সম্মত ও যথার্থভাবে একমাত্র আল্লাহ তাআলার জন্য উপযুক্ত মনে করা এবং সে হিসেবে মনে প্রাণে বিশ্বাস করা।

দ্বিতীয়ত :
কথা, কাজ এবং নিয়্যত ও ইচ্ছার সমন্বিত এবাদত একমাত্র আল্লাহ তাআলাকে উৎসর্গ করা। যেমন- মহববত, ভয়, আশা, মান্নত, কুরবানী, তওবা, নামায বা সালাত, রোজা বা সিয়াম সাধনা, যাকাত, হজ্ব...ইত্যাদি। এবাদত গুলো একমাত্র আল্লাহ তাআলার প্রাপ্য জ্ঞান করা। এটাই কালেমায়ে তাওহিদ لاإله إلا الله এর অর্থ ও আবেদন। এ প্রকার তাওহিদকে ওলামায়ে কেরাম নামকরণ করেছেন( توحيد القصد والطلب ) বলে। (অর্থ:একমাত্র আল্লাহ তাআলাকে চাওয়া এবং এবাদতের মাধ্যমে শুধু তাকে পাওয়ার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা করা।)

আল্লাহ তাআলা এ প্রকার তাওহিদসহ রাসূলদের প্রেরণ করেছেন এবং এর জন্য আসমান হতে কিতাব নাজিল করেছেন। তবে রাসূলগন এবং তাদের দাওয়াতী সম্প্রদায়ের মাঝে তাওহীদের প্রথম প্রকার নিয়ে কোন বিবাদ, সংঘাত বা দ্বন্ধ ছিল না। কারণ এ প্রকার তাওহিদ তারা স্বীকার করতো, অস্বীকার করতো না। উদাহরণত ঐ সমস্ত মুশরেকগণ যাদের নিকট দাওয়াতের জন্য রাসূল সা.কে প্রেরণ করা হয়েছিল তারা বিশ্বাস করতো- আল্লাহ তাআলা সৃষ্টিকর্তা, রিযিক দাতা, জীবন দানকারী, মৃত্যু প্রদানকারী, সার্বিক ও সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। যেমন- পবিত্র কুরআনে তাদের ব্যাপারে বলা হয়েছে:

১.এরশাদ হচ্ছে-

وَلَئِنْ سَأَلْتَهُمْ مَنْ خَلَقَهُمْ لَيَقُولُنَّ اللَّهُ فَأَنَّى يُؤْفَكُونَ ﴿ سورة الزخرف : 87﴾

‘আপনি যদি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন কে তাদেরকে সৃষ্টি করেছে? তবে অবশ্যই তারা বলবে, আল্লাহ।’

২.আরো এরশাদ হচ্ছে-

وَلَئِنْ سَأَلْتَهُمْ مَنْ نَزَّلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَحْيَا بِهِ الْأَرْضَ مِنْ بَعْدِ مَوْتِهَا لَيَقُولُنَّ اللَّهُ . ( سورة العنكبوت : 63)

‘যদি আপনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, কে আকাশ থেকে বারি বর্ষণ করে, অতঃপর তা দ্বারা মৃত্তিকাকে উহার মৃত হওয়ার পর সঞ্জীবিত করে? তবে তারা অবশ্যই বলবে আল্লাহ!’

৩.আরো এরশাদ হচ্ছে-

قُلْ مَنْ يَرْزُقُكُمْ مِنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ أَمَّنْ يَمْلِكُ السَّمْعَ وَالْأَبْصَارَ وَمَنْ يُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَيُخْرِجُ الْمَيِّتَ مِنَ الْحَيِّ وَمَنْ يُدَبِّرُ الْأَمْرَ فَسَيَقُولُونَ اللَّهُ فَقُلْ أَفَلَا تَتَّقُونَ . ( سورة يونس :৩১)

‘তুমি জিজ্ঞেস কর, কে রুযীদান করে তোমাদেরকে আসমান থেকে ও যমীন থেকে, কিংবা কে তোমাদের কান ও চোখের মালিক? তা ছাড়া কে জীবিতকে মৃতের ভেতর থেকে বের করেন? এবং কে মৃতকে জীবিতের মধ্য হতে থেকে বের করেন? কে করেন কর্মসম্পাদনের ব্যবস্থাপনা? তখন তারা বলে উঠবে, আল্লাহ! তখন তুমি বলো তারপরেও ভয় করছ না?।’

হ্যাঁ, ঝগড়ার মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল: توحيد القصد والطلب (অর্থ:একমাত্র আল্লাহ তাআলাকে চাওয়া এবং এবাদতের মাধ্যমে শুধু তাকে পাওয়ার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা করা।) অর্থাৎ এক উপাস্য নির্ধারণ করার ব্যাপারে, শুধু আল্লাহর জন্য এবাদত সীমিত করনের ভিতর এবং لاإله إلا الله এর সাক্ষ্যকে বাস্তবায়ন করা নিয়েই মূল ঝগড়া। আল্লাহ তাআলা আরবের কাফেরদের কথা উল্লেখ করেছেন। তারা বলেছে:

أَجَعَلَ الْآَلِهَةَ إِلَهًا وَاحِدًا إِنَّ هَذَا لَشَيْءٌ عُجَابٌ ﴿5﴾ وَانْطَلَقَ الْمَلَأُ مِنْهُمْ أَنِ امْشُوا وَاصْبِرُوا عَلَى آَلِهَتِكُمْ إِنَّ هَذَا لَشَيْءٌ يُرَادُ ﴿6﴾ مَا سَمِعْنَا بِهَذَا فِي الْمِلَّةِ الْآَخِرَةِ إِنْ هَذَا إِلَّا اخْتِلَاقٌ ﴿ سورة ص : ৫-৭﴾

‘সে কি বহু উপাস্যের পরির্বতে এক উপাস্যের উপাসনা সাব্যস্ত করে দিয়েছে। নিশ্চয় এটা এক বিস্ময়কর ব্যাপার। কতিপয় বিশিষ্ট ব্যক্তি একথা বলে প্রস্থান করে যে, তোমরা চলে যাও এবং তোমাদের উপাস্যদের পুজায় দৃঢ় থাক। নিশ্চয় এ বক্তব্য কোন বিশেষ উদ্দেশ্যে প্রণোদিত। আমরা সাবেক ধর্মে এ ধরনের কথা শুনিনি। এটা মনগড়া ব্যাপার বৈ নয়।’ আরো এরশাদ হচ্ছে-

إِنَّهُمْ كَانُوا إِذَا قِيلَ لَهُمْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ يَسْتَكْبِرُونَ ﴿35﴾ وَيَقُولُونَ أَئِنَّا لَتَارِكُوا آَلِهَتِنَا لِشَاعِرٍ مَجْنُونٍ ﴿36﴾ بَلْ جَاءَ بِالْحَقِّ وَصَدَّقَ الْمُرْسَلِينَ ﴿ سورة الصفت : ৩৫-৩৬﴾

‘তাদের যখন বলা হত আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, তখন তারা ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করত এবং বলত, আমরা কি এক উন্মাদ কবির কথায় আমাদের উপাস্যদেরকে পরিত্যাগ করব?’

وَقَالُوا لَا تَذَرُنَّ آَلِهَتَكُمْ وَلَا تَذَرُنَّ وَدًّا وَلَا سُوَاعًا وَلَا يَغُوثَ وَيَعُوقَ وَنَسْرًا ﴿ سورة نوح : 23﴾

‘তারা বলেছে : তোমরা তোমদের উপাস্যদেরকে ত্যাগ করো না এবং ত্যাগ করো না ওয়াদ, সুয়া, ইয়াগুস, ইয়াউক ও নসরকে।’

বরং কুরআনের ভাষানুযায়ী বুঝা যায় যে, আল্লাহ তাআলা শুধুমাত্র এ প্রকার তাওহীদের প্রতি দাওয়াত দেয়ার জন্য রাসূলদের স্ব স্ব সম্প্রদায় ও কওমের নিকট প্রেরণ করেছেন। এরশাদ হচ্ছে-

وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اُعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ . ﴿ سورة النحل : 36﴾

‘আমি প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসূল প্রেরন করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর এবং তাগুত থেকে নিরাপদ থাক।’ (আন নাহল:৬৩)

وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَسُولٍ إِلَّا نُوحِي إِلَيْهِ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدُونِ ﴿الأنبياء : ২৫﴾

‘আপনার পূর্বে আমি যে রসূলই প্রেরণ করেছি, তাকে এ আদেশেই প্রেরণ করেছি যে আমি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই । সুতরাং আমারই এবাদত কর।’

তবে অবশ্যই পরকালের নাজাতের জন্য উভয় তাওহীদের বাস্তবায়ন করতে ও মানতে হবে। যে ব্যক্তি শুধুমাত্র প্রথম প্রকার তাওহিদ ( توحيد المعرفة والإثبات ) নিয়ে আসবে। দ্বিতীয় প্রকার তাওহিদ ( توحيد القصد والطلب )পরিত্যাগ করবে -যা অধিকাংশ মুশরিকদের অবস্থা- সে কোনো ভাবেই উপকৃত হবে না। এ তাওহিদ তাকে মুক্তি দিতে পারবে না। পবিত্র কুরআন তাদের কাফের ঘোষণা করেছে এবং শিরকের দ্বারা বিশেষায়িত করেছে। এরশাদ হচ্ছে-

وَمَا يُؤْمِنُ أَكْثَرُهُمْ بِاللَّهِ إِلَّا وَهُمْ مُشْرِكُونَ ﴿106﴾. ( سورة يوسف :১০৬)

‘অনেক মানুষ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, কিন্তু সাথে সাথে শিরক করে।’

অত্র আয়াতে ঈমান গ্রহণের অর্থ- আল্লাহ তাআলার অস্তিত্ব, তিনি সৃষ্টিকর্তা, রিযিক দাতা, জীবন দানকারী, মৃত্যুদান কারী, বিশ্বজাহানের মালিক ও পরিকল্পনাকারীর উপর ঈমান আনা বা বিশ্বাস স্থাপন করা। শিরক করার অর্থ: এবাদতের ভিতর আল্লাহ তাআলার অংশীদার সাব্যস্ত করা। একটি উদাহরণ- মক্কার মুশরিকগণ কা’বা ঘরের তওয়াফ করার সময় তালবিয়ার ভিতর বলতো:

لبيك لاشريك لك، إلا شريكا هو لك تملكه وما ملك .

‘হে আল্লাহ ! আমি উপস্থিত। তোমার কোনো অংশীদার নেই। তবে যে সমস্ত অংশিদারগণ একমাত্র তোমারই জন্য- তারা ছাড়া । যাদের মালিক তুমি এবং তাদের মালিকাধীন জিনিসের মালিক ও তুমি।’

১০
তাওহীদের উপর একটি পর্যালোচনা ১. তওহিদ তাওক্বীফী বা ওহীর উপর নির্ভরশীল :
বান্দা হিসেবে আমরা যখনই তওহিদ নিয়ে পর্যালোচনা করবো, আল্লাহ তাআলা ও তার রসূলের বর্ণনাকৃত নির্ধারিত সীমা রেখার ভিতর সীমাবদ্ধ থাকবো। কারণ এখানে বাড়ানো-কমানো, বিকৃতকরণ ও পরিবর্তনের কোন সুযোগ নেই। শুধুমাত্র কুরআনুল কারীম ও নির্ভরযোগ্য সনদে প্রাপ্ত হাদীস হতেই তাওহিদ গ্রহণ করতে হবে। রাসূল সা. তাওহীদের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে গেছেন। সুতরাং যে কোন ব্যক্তির তাওহিদ নিয়ে যে কোনো মন্তব্য করার অধিকার নেই। তদুপরি কুরআন বা হাদীস বুঝার জন্য কুরআনের অপর আয়াত বা অপর আরেকটি হাদীসের - যেখানে আলোচিত আয়াত বা হাদীসের ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে- শরাণাপন্ন হতে হবে। সাথে সাথে সাহাবায়ে কেরাম ও আদর্শ পূর্বসুরীগণের ইলম ও ব্যাখ্যার দিকে প্রত্যাগমন করতে হবে।

যেহেতু তাওহিদ ওহী নির্ভর, যেখানে যুক্তি, অনুমান বা কল্পনার বিন্ধুমাত্র দখল নেই। সেহেতু তাওহীদের শিক্ষা গ্রহণ করার গুরুত্ব ও শিক্ষা দেয়ার অপরিহার্যতা সহজেই অনুমেয় ও বোধগম্য। এও সুষ্পষ্ট যে বিশুদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য ওহী ব্যতীত তাওহীদের জ্ঞান অর্জন করার বিকল্প নেই। কারণ মানুষ যদি না জানে তাওহীদের দ্বারা কি উদ্দেশ্য? তাহলে সে কিভাবে তাওহিদবাদী বা একত্ববাদী হবে?

১১
২. তাওহীদকে তার সার্বজননীতা ও ব্যাপকতা সহকারে গ্রহণ করতে হবে :
রাসূল সা.দের উভয় প্রকার তাওহিদ অর্থাৎ توحيد المعرفة والإثبات এবং توحيد القصد والطلب সহকারে প্রেরণ করা হয়েছে। উভয় প্রকার গ্রহণ করা ছাড়া কোন বান্দার ভিতর তাওহিদ পূর্ণতা পাবে না। কিন্তু বাস্তব ময়দানে আমরা যখন আলেমদের ও দ্বীনের পথে আহবান কারীদের প্রতি দৃষ্টি দেই, সুস্পষ্ট ত্রুটি ও ফাটল দেখতে পাই। কেউ কেউ তাওহীদের কোনো এক প্রকারে গুরুত্বারোপ করে অপর প্রকারকে গুরুত্বহীন রেখে দিয়েছে।

কতিপয় লোকের অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তাওহীদের কিয়দাংশ তাওহিদ থেকে বের করে দিয়ে তাওহীদের অঙ্গহানী করেছে। বরং যে অন্যদের পরিত্যাগকৃত তাওহীদের অংশকে শিক্ষা দেয় তাকে তারা বেদ’আতের অভিযোগে অভিযুক্ত করে। কারণ তারা বিশ্বাস করে নিয়েছে পরিত্যাগকৃত অংশ তাওহীদের অর্ন্তভূক্ত নয়।

উদাহরণ স্বরূপ: কেউ কেউ মনে করে আছেন- নিয়ত ও এবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলাকে কামনা করাই হল মূল তাওহিদ। যেমন- আল্লাহ তাআলা জন্য কুরবানী করা, শুধু তার নামেই শপথ করা, তার জন্য মান্নত করা এবং তার কাছে দোয়া করা। তারা তাওহীদের বাকি অংশকে হিসেবে আনে না, কখনো আনলে তেমন গুরুত্ব দেয় না। যেমন- ফয়সালার জন্য একমাত্র আল্লাহর নিকট তথা কুরআনের শরনাপন্ন হওয়া। তাগুতের মীমাংসার সমাধান কামনা না করা।

কেউ কেউ আল্লাহ তাআলার সার্বভৌমত্বের তাওহিদ এবং মীমাংসার জন্য একমাত্র তার শরণাপন্ন হওয়ার তাওহিদে গুরুত্ব প্রদান করেন। তাওহীদের অন্যান্য প্রকারকে গুরুত্ব প্রদান করেন না। যেমন- একমাত্র আল্লাহ তাআলার নিকট দোয়া করা, মান্নত করলে তাঁর জন্য করা, তার নামে শপথ করা, পূর্ণ অর্থবোথক, সুন্দর সুন্দর বিশেষ্য ও বিশেষণ মূলক নামসমূহকে একমাত্র আল্লাহ তাআলার জন্য নির্দিষ্ট করা।

উল্লেখিত সকল গ্রুপেই তাওহিদ বুঝার ক্ষেত্রে ভুল আছে। কারণ তারা তাওহিদকে যে ভাবে বুঝেছে তাওহিদ তার চেয়ে ব্যাপক ও ব্যাপকতর। যে তাওহীদের কোনো এক প্রকারে ভুল করল সে মূল বিষয়ে ভুল করল। এরশাদ হচ্ছে-

أَفَتُؤْمِنُونَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُونَ بِبَعْضٍ فَمَا جَزَاءُ مَنْ يَفْعَلُ ذَلِكَ مِنْكُمْ إِلَّا خِزْيٌ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرَدُّونَ إِلَى أَشَدِّ الْعَذَابِ وَمَا اللَّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ ﴿85﴾ . ( سورة البقرة :৮৫)

‘তবে কি তোমরা গ্রন্থের কিয়দাংশ বিশ্বাস কর এবং কিয়দাংশ অবিশ্বাস কর! যারা এরূপ করে, পার্থিব জীবনে দুর্গতি ছাড়া তাদের আর কোনই পথ নেই। ক্বিয়ামতের দিন তাদের কঠোরতম শাস্তির দিকে পৌছেঁ দেয়া হবে। আল্লাহ তাআলা তোমাদের কাজ-কর্ম সম্পর্ক বেখবর নন।’

উল্লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে বিশেষ দল, কোন আলেম অথবা দ্বীনের প্রতি আহবানকারীদের প্রত্যাখ্যান বা অস্বীকার করা হচ্ছেনা। বরং অভিযোগ হল তাদের বিরুদ্ধে যাদের মধ্যে রয়েছে গুরুত্ব প্রদানকৃত অংশে তাওহিদকে সীমাবদ্ধ করন এবং তাওহীদের অপর অংশের ক্ষেত্রে তাদের অবহেলা প্রদর্শন এবং যারা অপর অংশের প্রতি গুরুত্ব দেয় তাদেরকে গোমরাহ, পথভ্রষ্ট ও বিকৃত অভিযোগে অভিযুক্ত করা।

১২
৩. তাওহীদের শুধু তাত্ত্বিক জ্ঞানই যথেষ্ট নয় :
অধিকাংশ মানুষের নিকট তাওহীদের তাত্ত্বিক জ্ঞান এখন আর অসম্পূর্ণ বা অস্পষ্ট নয়। শরয়ি দৃষ্টিকোণ থেকে ইহা জরুরীও বটে । কিন্তু এতটুকু তাত্ত্বিক জ্ঞান যথেষ্ট নয়। বরং সে তাত্ত্বিক জ্ঞানানুযায়ী অনুপ্রাণীত হওয়া, তার কাছে আত্নসম্পর্ণ করা এবং সে অনুযায়ী আমল করা কর্তব্য।

যেমন আল্লাহ তাআলা রিযিক দাতা, সুসংহত সুদৃঢ় ক্ষমতার অধিকার- শুধু এতটুকু যথেষ্ট নয়। বরং এর সাথে আভ্যন্তরীন সক্রিয়া অনুভুতির প্রয়োজন আছে। অর্থাৎ তাকদীরের উপর বিশ্বাস করত হাতছাড়া হয়ে যাওয়া জিনিসের জন্য বিষন্ন না হওয়া। নাজায়েয বা অবৈধ পন্থায় সম্পদ অর্জনের প্রচেষ্টা না করা। ধর্মীয় দায় দায়িত্ব ও অবশ্য কর্তব্যকে জলাঞ্জলী দিয়ে অর্থ উপার্জনের জন্যে আপাদ-মস্তক আত্ননিয়োগ না করা। হালাল ও বৈধ সম্পদ উপার্জনের জন্যে আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত্ব পন্থা ও পদ্ধতিকে অবহেলা কিংবা পরিত্যাগ না করা।

সমাপ্ত

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন