HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
তাকওয়ার উপকারিতা
লেখকঃ মুহাম্মদ ইব্ন সালেহ আল-উসাইমীন
৩
প্রথমত: তাকওয়ার ইহকালীন উপকারিতা:১. তাকওয়ার ফলে পার্থিব জগতে আল্লাহ মানুষের কাজগুলো সহজ করে দেন, তারা তাদের জরুরী প্রয়োজন সহজে সম্পাদন করতে সক্ষম হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّهُۥ مِنۡ أَمۡرِهِۦ يُسۡرٗا ٤ ﴾ [ الطلاق : ٤ ] وقال تعالى : ﴿ فَأَمَّا مَنۡ أَعۡطَىٰ وَٱتَّقَىٰ ٥ وَصَدَّقَ بِٱلۡحُسۡنَىٰ ٦ فَسَنُيَسِّرُهُۥ لِلۡيُسۡرَىٰ ٧ ﴾ [ الليل : ٥، ٧ ]
“যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য তার কাজকে সহজ করে দেন।” [সূরা তালাক: (৪)] তিনি আরো বলেন: “সুতরাং যে দান করেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করেছে, আর উত্তমকে সত্য বলে বিশ্বাস করেছে, আমি তার জন্য সহজ পথে চলা সুগম করে দেব।” [সূরা লাইল: (৫-৭)]
২. তাকওয়া পার্থিব জগতে মানুষকে শয়তানের সব অনিষ্ট থেকে সুরক্ষা দেয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ ٱتَّقَوۡاْ إِذَا مَسَّهُمۡ طَٰٓئِفٞ مِّنَ ٱلشَّيۡطَٰنِ تَذَكَّرُواْ فَإِذَا هُم مُّبۡصِرُونَ ٢٠١ ﴾ [ الاعراف : ٢٠٠ ]
“নিশ্চয় যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে যখন তাদেরকে শয়তানের পক্ষ থেকে কোন কুমন্ত্রণা স্পর্শ করে তখন তারা আল্লাহকে স্মরণ করে। তখনই তাদের দৃষ্টি খুলে যায়।” [সূরা আরাফ: (২০১)]
৩. দুনিয়াবাসীর তাকওয়ার ফলে আসমান ও যমিনের বরকত উন্মুক্ত হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَلَوۡ أَنَّ أَهۡلَ ٱلۡقُرَىٰٓ ءَامَنُواْ وَٱتَّقَوۡاْ لَفَتَحۡنَا عَلَيۡهِم بَرَكَٰتٖ مِّنَ ٱلسَّمَآءِ وَٱلۡأَرۡضِ ٩٦ ﴾ [ الاعراف : ٩٥ ]
“আর যদি জনপদসমূহের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত তাহলে আমি অবশ্যই আসমান ও যমিন থেকে বরকতসমূহ তাদের উপর খুলে দিতাম।” [সূরা আরাফ: (৯৬)]
৪. বান্দা তাকওয়ার ফলে হক ও বাতিলের মাঝে পার্থক্য করতে সক্ষম হয় ও তা বুঝার তাওফিক লাভ করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِن تَتَّقُواْ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّكُمۡ فُرۡقَانٗا ٢٩ ﴾ [ الانفال : ٢٩ ]
وقال تعالى : ﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَءَامِنُواْ بِرَسُولِهِۦ يُؤۡتِكُمۡ كِفۡلَيۡنِ مِن رَّحۡمَتِهِۦ وَيَجۡعَل لَّكُمۡ نُورٗا تَمۡشُونَ بِهِۦ ٢٨ ﴾ [ الحديد : ٢٨ ]
“হে মুমিনগণ, যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর তাহলে তিনি তোমাদের জন্য ফুরকান প্রদান করবেন।” [সূরা ফুরকান: (২৯)] ফুরকান অর্থ হক ও বাতিল এবং সত্য ও মিথ্যা পার্থক্য করার জ্ঞান। তিনি আরো বলেন: “হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আন, তিনি স্বীয় রহমতে তোমাদেরকে দ্বিগুণ পুরস্কার দেবেন, আর তোমাদেরকে নূর দেবেন যার সাহায্যে তোমরা চলতে পারবে।” [সূরা হাদীদ: (২৮)]
৫. তাকওয়া অর্জনকারী মুত্তাকী ব্যক্তি তার তাকওয়ার ফলে কষ্টের জীবন থেকে মুক্তি পায় এবং এমন জায়গা থেকে রিযক লাভ করে, যা তার কল্পনার ঊর্ধ্বে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّهُۥ مَخۡرَجٗا ٢ وَيَرۡزُقۡهُ مِنۡ حَيۡثُ لَا يَحۡتَسِبُۚ ٣ ﴾ [ الطلاق : ٢، ٣ ]
“যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরি করে দেন। এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিযক দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না।” সূরা তালাক: (২-৩)
৬. তাকওয়ার দ্বারা পার্থিব জগতে বান্দা আল্লাহর বন্ধুত্ব অর্জন করতে সক্ষম হয়। কারণ তিনি মুত্তাকীদের বন্ধু ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ إِنۡ أَوۡلِيَآؤُهُۥٓ إِلَّا ٱلۡمُتَّقُونَ ٣٤ ﴾ [ الأنفال : ٣٤ ] وقال تعالى : ﴿ وَإِنَّ ٱلظَّٰلِمِينَ بَعۡضُهُمۡ أَوۡلِيَآءُ بَعۡضٖۖ وَٱللَّهُ وَلِيُّ ٱلۡمُتَّقِينَ ١٩ ﴾ [ الجاثية : ١٩ ]
“তার অভিভাবক (বন্ধু) তো শুধু মুত্তাকীগণ।” [সূরা আনফাল: (৩৪)] তিনি আরো বলেন: “আর নিশ্চয় যালিমরা মূলত একে অপরের বন্ধু এবং আল্লাহ মুত্তাকীদের বন্ধু।” [সূরা জাসিয়া: (১৯)]
৭. পার্থিব জগতে মুত্তাকী তাকওয়ার ফলে কাফেরদের অনিষ্ট থেকে নিরাপত্তা লাভ করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَإِن تَصۡبِرُواْ وَتَتَّقُواْ لَا يَضُرُّكُمۡ كَيۡدُهُمۡ شَيًۡٔاۗ ١٢٠ ﴾ [ ال عمران : ١٢٠ ]
“আর যদি তোমরা ধৈর্য ধর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, তাহলে তাদের ষড়যন্ত্র তোমাদের কোন ক্ষতি করবে না।” [সূরা আলে ইমরান: (১২০)]
৮. তাকওয়ার ফলে মুসিবত ও দুশমনের মোকাবিলার মুহূর্তে আসমান থেকে সাহায্য অবতীর্ণ হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَلَقَدۡ نَصَرَكُمُ ٱللَّهُ بِبَدۡرٖ وَأَنتُمۡ أَذِلَّةٞۖ فَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ لَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُونَ ١٢٣ إِذۡ تَقُولُ لِلۡمُؤۡمِنِينَ أَلَن يَكۡفِيَكُمۡ أَن يُمِدَّكُمۡ رَبُّكُم بِثَلَٰثَةِ ءَالَٰفٖ مِّنَ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةِ مُنزَلِينَ ١٢٤ بَلَىٰٓۚ إِن تَصۡبِرُواْ وَتَتَّقُواْ وَيَأۡتُوكُم مِّن فَوۡرِهِمۡ هَٰذَا يُمۡدِدۡكُمۡ رَبُّكُم بِخَمۡسَةِ ءَالَٰفٖ مِّنَ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةِ مُسَوِّمِينَ ١٢٥﴾ [ ال عمران : ١٢٣، ١٢٥ ]
“আর অবশ্যই আল্লাহ তোমাদেরকে বদরে সাহায্য করেছেন অথচ তোমরা ছিলে হীনবল। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, আশা করা যায়, তোমরা শোকরগুজার হবে। স্মরণ কর, যখন তুমি মুমিনদেরকে বলছিলে, ‘তোমাদের জন্য কি যথেষ্ট নয় যে, তোমাদের রব তোমাদেরকে তিন হাজার নাযিলকৃত ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য করবেন’? হ্যাঁ, যদি তোমরা ধৈর্য ধর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, আর তারা হঠাৎ তোমাদের মুখোমুখি এসে যায়, তবে তোমাদের রব পাঁচ হাজার চিহ্নিত ফেরেশতা দ্বারা তোমাদেরকে সাহায্য করবেন।” [সূরা আলে ইমরান: (১২৩-১২৫)] সাহায্য ও শক্তিবৃদ্ধির ঘোষণা একটি সুসংবাদ, যার ফলে অন্তর প্রশান্ত হয় এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্যের ঘোষণার কারণে নিজেদের মনোবল বাড়ে ও শক্তি সঞ্চয় হয়। এরপর আল্লাহ বলেন:
﴿ وَمَا جَعَلَهُ ٱللَّهُ إِلَّا بُشۡرَىٰ لَكُمۡ وَلِتَطۡمَئِنَّ قُلُوبُكُم بِهِۦۗ وَمَا ٱلنَّصۡرُ إِلَّا مِنۡ عِندِ ٱللَّهِ ٱلۡعَزِيزِ ٱلۡحَكِيمِ ١٢٦ ﴾ [ ال عمران : ١٢٦ ]
“আর আল্লাহ তোমাদের জন্য তা কেবল সুসংবাদস্বরূপ নির্ধারণ করেছেন এবং যাতে তোমাদের অন্তরসমূহ এর দ্বারা প্রশান্ত হয়। আর সাহায্য কেবল পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময় আল্লাহর পক্ষ থেকে।” [সূরা আলে ইমরান: (১২৬)]
৯. তাকওয়ার ফলে আল্লাহর বান্দাগণ মুসিবত ও সীমালঙ্ঘন থেকে নিরাপত্তা লাভ করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَتَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡبِرِّ وَٱلتَّقۡوَىٰۖ وَلَا تَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡإِثۡمِ وَٱلۡعُدۡوَٰنِۚ ٢ ﴾ [ المائدة : ٢ ] وقال تعالى في قصة مريم : ﴿ فَأَرۡسَلۡنَآ إِلَيۡهَا رُوحَنَا فَتَمَثَّلَ لَهَا بَشَرٗا سَوِيّٗا ١٧ قَالَتۡ إِنِّيٓ أَعُوذُ بِٱلرَّحۡمَٰنِ مِنكَ إِن كُنتَ تَقِيّٗا ١٨ ﴾ [ مريم : ١٧، ١٨ ]
“সৎকর্ম ও তাকওয়ায় তোমরা পরস্পরের সহযোগিতা কর। মন্দকর্ম ও সীমালঙ্ঘনে পরস্পরের সহযোগিতা করো না।” [সূরা মায়েদা: (২)] মারইয়াম আলাইহিস সালামের ঘটনায় আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “তখন আমি তার নিকট আমার রূহ (জিবরীল)কে প্রেরণ করলাম। অতঃপর সে তার সামনে পূর্ণ মানবের রূপ ধারণ করল। মারইয়াম বলল, ‘আমি তোমার থেকে পরম করুণাময়ের আশ্রয় চাচ্ছি, যদি তুমি মুত্তাকী হও।” [সূরা মারইয়াম: (১৭-১৮)]
১০. তাকওয়া অর্জনকারী প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর নিদর্শনাবলীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَمَن يُعَظِّمۡ شَعَٰٓئِرَ ٱللَّهِ فَإِنَّهَا مِن تَقۡوَى ٱلۡقُلُوبِ ٣٢ ﴾ [ الحج : ٣٢ ]
“এটাই হল আল্লাহর বিধান; যে আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে সম্মান করে, নিঃসন্দেহে তা অন্তরের তাকওয়া থেকেই।” [সূরা হাজ্জ: (৩২)]
১১. তাকওয়ার ফলে আমল বিশুদ্ধ হয় ও গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে এবং পাপ মোচন হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَقُولُواْ قَوۡلٗا سَدِيدٗا ٧٠ يُصۡلِحۡ لَكُمۡ أَعۡمَٰلَكُمۡ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوبَكُمۡۗ ٧١ ﴾ [ الأحزاب : ٧٠، ٧١ ]
“হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল। তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের কাজগুলোকে শুদ্ধ করে দেবেন এবং তোমাদের পাপগুলো ক্ষমা করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই এক মহা সাফল্য অর্জন করল।” [সূরা আহযাব: (৭০-৭১)]
১২. মুত্তাকী তার তাকওয়ার কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে আদব প্রদর্শনে সক্ষম হয়, অর্থাৎ তার সামনে তার আওয়াজ অনুচ্চ থাকে। জীবিত অবস্থায় তো বটেই, মৃত্যুর পরও তার নির্দেশ অতিক্রম করে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَغُضُّونَ أَصۡوَٰتَهُمۡ عِندَ رَسُولِ ٱللَّهِ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ ٱمۡتَحَنَ ٱللَّهُ قُلُوبَهُمۡ لِلتَّقۡوَىٰۚ ٣ ﴾ [ الحجرات : ٣ ]
“নিশ্চয় যারা আল্লাহর রাসূলের নিকট নিজদের আওয়াজ অবনমিত করে, আল্লাহ তাদেরই অন্তরগুলোকে তাকওয়ার জন্য বাছাই করেছেন।” [সূরা হুজুরাত: (৩)]
১৩. তাকওয়ার দ্বারা আল্লাহর মহব্বত লাভ হয়। এ মহব্বত যেমন দুনিয়াতে লাভ হয়, অনুরূপ আখেরাতেও লাভ হবে। হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ বলেন:
«ما تقرّب إليّ عبدٌ بشيء بأفضل مما افترضته عليه، ولا يزال عبدي يتقرّب إليّ بالنوافل حتى أحبه، فإذا أحببته كنت سمعه الذي يسمع به، وبصره الذي يبصر به، ويده التي يبطش بها، ورجله التي يمشي بها، ولئن سألني لأعطينه، ولئن استعاذ بي لأعيذنه»
“আমি বান্দার উপর যা ফরয করেছি, তার চেয়ে উত্তম জিনিসের মাধ্যমে কোন বান্দা আমার নৈকট্য অর্জন করতে পারেনি। বান্দা নফলের মাধ্যমে আমার নৈকট্য অর্জন করতে থাকে, এক সময় আমি তাকে মহব্বত করি। আমি যখন তাকে মহব্বত করি, তখন আমি তার কর্ণে পরিণত হই, যে কর্ণ দিয়ে সে শ্রবণ করে, তার দৃষ্ট শক্তিতে পরিণত হই, যা দিয়ে সে দেখে, তার হাতে পরিণত হই যা দিয়ে সে পাকড়াও করে এবং তার পায়ে পরিণত হই যা দিয়ে সে চলে। [অর্থাৎ তার কর্ণ, দৃষ্টিশক্তি, হাত ও পা আমার সন্তুষ্টির বাইরে চলে না। সে তখন শুধু আমার নির্দেশনা অনুসারেই চলে। যেভাবে সে নিজের অঙ্গসমূহের সংরক্ষণ করে সেভাবে আমি তার অঙ্গসমূহের সংরক্ষণ করি। এটিই হচ্ছে হাদীসের সঠিক অর্থ। এ অর্থের বাইরে অন্য কোন অর্থ গ্রহণ করা যাবে না। কখনও এটা বলা যাবে না যে আল্লাহ বান্দার কোন অংশ প্রবেশ করেন, নাউযুবিল্লাহ। [সম্পাদক]] সে যদি আমার কাছে প্রার্থনা করে আমি তাকে অবশ্যই দেব এবং সে যদি আমার ওসিলায় আশ্রয় প্রার্থনা করে আমি তাকে অবশ্যই আশ্রয় প্রদান করব।” [বুখারী: ৬৫০২]
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ بَلَىٰۚ مَنۡ أَوۡفَىٰ بِعَهۡدِهِۦ وَٱتَّقَىٰ فَإِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلۡمُتَّقِينَ ٧٦ ﴾ [ ال عمران : ٧٦ ]
‘হ্যাঁ, অবশ্যই যে নিজ প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করে এবং তাকওয়া অবলম্বন করে, তবে নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকীদেরকে ভালবাসেন।” [সূরা আলে ইমরান: (৭৬)]
১৪. তাকওয়ার ফলে ইলম ও জ্ঞান অর্জন হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَۖ وَيُعَلِّمُكُمُ ٱللَّهُۗ ٢٨٢ ﴾ [ البقرة : ٢٨٢ ]
“আর তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং আল্লাহ তোমাদেরকে শিক্ষা দেবেন।” [সূরা বাকারা: (২৮২)]
১৫. আল্লাহর অনুগ্রহে ইসলামের হিদায়েত লাভ করার পর কেউ যদি পূর্ণ তাকওয়া অবলম্বন করে, তাহলে তার দ্বীনের সঠিক বুঝ অর্জন হয় ও সে পথভ্রষ্টতা থেকে সুরক্ষা পায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَأَنَّ هَٰذَا صِرَٰطِي مُسۡتَقِيمٗا فَٱتَّبِعُوهُۖ وَلَا تَتَّبِعُواْ ٱلسُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمۡ عَن سَبِيلِهِۦۚ ذَٰلِكُمۡ وَصَّىٰكُم بِهِۦ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ١٥٣ ﴾ [ الانعام : ١٥٣ ]
“আর এটি তো আমার সোজা পথ। সুতরাং তোমরা তার অনুসরণ কর এবং অন্যান্য পথ অনুসরণ করো না, তাহলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। এগুলো তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর।” সূরা আনআম: (১৫৩)
১৬. তাকওয়া দ্বারা আল্লাহর রহমত লাভ হয়। এ রহমত যেরূপ দুনিয়াতে লাভ হবে, অনুরূপ আখেরাতেও লাভ হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَرَحۡمَتِي وَسِعَتۡ كُلَّ شَيۡءٖۚ فَسَأَكۡتُبُهَا لِلَّذِينَ يَتَّقُونَ وَيُؤۡتُونَ ٱلزَّكَوٰةَ وَٱلَّذِينَ هُم بَِٔايَٰتِنَا يُؤۡمِنُونَ ١٥٦ ﴾ [ الاعراف : ١٥٥ ]
“আর আমার রহমত সব বস্তুকে পরিব্যাপ্ত করেছে। সুতরাং আমি তা লিখে দেব তাদের জন্য যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং যাকাত প্রদান করে। আর যারা আমার আয়াতসমূহের প্রতি ঈমান আনে।” [সূরা আরাফ: (১৫৬)]
১৭. তাকওয়ার ফলে পার্থিব জগতে আল্লাহর সংঘ ও সাথীত্ব অর্জন হয়। বান্দার সাথে আল্লাহর সাথীত্ব দু’প্রকার। সাধারণ সাথীত্ব: এটা আল্লাহর সব বান্দার জন্য ব্যাপক, যেমন তার শুনা, দেখা ও জানা সবার জন্য সমান। তিনি সবার কাজকর্ম সমানভাবে প্রত্যক্ষ করেন, সব কিছু শুনেন ও সবার অবস্থা সম্পর্কে সম্যক অবগত রয়েছেন। তিনি বলেন:
﴿ وَهُوَ مَعَكُمۡ أَيۡنَ مَا كُنتُمۡۚ ٤ ﴾ [ الحديد : ٤ ] وقال تعالى : ﴿ أَلَمۡ تَرَ أَنَّ ٱللَّهَ يَعۡلَمُ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِۖ مَا يَكُونُ مِن نَّجۡوَىٰ ثَلَٰثَةٍ إِلَّا هُوَ رَابِعُهُمۡ وَلَا خَمۡسَةٍ إِلَّا هُوَ سَادِسُهُمۡ وَلَآ أَدۡنَىٰ مِن ذَٰلِكَ وَلَآ أَكۡثَرَ إِلَّا هُوَ مَعَهُمۡ أَيۡنَ مَا كَانُواْۖ ٧ ﴾ [ المجادلة : ٧ ]
“আর তোমরা যেখানেই থাক না কেন, তিনি তোমাদের সাথেই আছেন।” [সূরা হাদীদ: (৪)] তিনি আরো বলেন: “তুমি কি লক্ষ্য করনি যে, আসমানসমূহ ও জমিনে যা কিছু আছে নিশ্চয় আল্লাহ তা জানেন? তিন জনের কোন গোপন পরামর্শ হয় না যাতে চতুর্থজন হিসেবে আল্লাহ থাকেন না, আর পাঁচ জনেরও হয় না, যাতে ষষ্ঠজন হিসেবে তিনি থাকেন না। এর চেয়ে কম হোক কিংবা বেশি হোক, তিনি তো তাদের সঙ্গেই আছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন।” [সূরা মুজাদিলা: (৭)] এসব আয়াতে আল্লাহর সাথীত্ব বা সাথে থাকার অর্থ তিনি বান্দার অবস্থা জানেন, তাদের কথা শ্রবণ করেন, তাদের সবকিছু তার নিকট স্পষ্ট।
দ্বিতীয় সাথীত্ব: এটা হচ্ছে আল্লাহর বিশেষ সংঘ বা সাথীত্ব: এ সাথীত্ব আল্লাহর সাহায্য, সমর্থন ও সহায়তার অর্থ প্রদান করে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿لَا تَحۡزَنۡ إِنَّ ٱللَّهَ مَعَنَاۖ ٤٠﴾التوبة : ٤٠ وقال تعالى : ﴿ قَالَ لَا تَخَافَآۖ إِنَّنِي مَعَكُمَآ أَسۡمَعُ وَأَرَىٰ ٤٦ ﴾ [ طه : ٤٦ ]
“তুমি পেরেশান হয়ো না, নিশ্চয় আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন।” সূরা তওবা: (৪০) অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে: “তিনি বললেন, ‘তোমরা ভয় করো না। আমি তো তোমাদের সাথেই আছি। আমি সবকিছু শুনি ও দেখি।” সূরা ত্বহা: (৪৬) এসব আয়াতে আল্লাহ সাথে আছেন বা তার সাথীত্ব অর্থ হচ্ছে সাহায্য ও সমর্থন। আল্লাহর এ জাতীয় সাথীত্ব একমাত্র তার বিশেষ বান্দাদের সাথে খাস। যেমন তিনি বলেন:
﴿ إِنَّ ٱللَّهَ مَعَ ٱلَّذِينَ ٱتَّقَواْ وَّٱلَّذِينَ هُم مُّحۡسِنُونَ ١٢٨ ﴾ [ النحل : ١٢٨ ] وقال تعالى : ﴿ وَٱعۡلَمُوٓاْ أَنَّ ٱللَّهَ مَعَ ٱلۡمُتَّقِينَ ١٩٤ ﴾ [ البقرة : ١٩٤ ]
“নিশ্চয় আল্লাহ তাদের সাথে, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং যারা সৎকর্মশীল।” [সূরা নাহাল: (১২৮)] তিনি আরো বলেন: “এবং জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে আছেন।” [সূরা বাকারা: (১৯৪)]
১৮. শুভ পরিণতি বা শেষ ফল তাকওয়ার অধিকারী আল্লাহর মুত্তাকী বান্দাগণ লাভ করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَٱلۡعَٰقِبَةُ لِلتَّقۡوَىٰ ١٣٢ ﴾ [ طه : ١٣٢ ] وقال تعالى : ﴿ وَإِنَّ لِلۡمُتَّقِينَ لَحُسۡنَ مََٔابٖ ٤٩ ﴾ [ص: ٤٩ ] وقال تعالى : ﴿ إِنَّ ٱلۡعَٰقِبَةَ لِلۡمُتَّقِينَ ٤٩ ﴾ [ هود : ٤٩ ]
“আর শুভ পরিণাম তো মুত্তাকীদের জন্য।” [সূরা ত্বহা: (১৩২)] তিনি অন্যত্র বলেন: “আর মুত্তাকীদের জন্য অবশ্যই রয়েছে উত্তম নিবাস।” [সূরা সাদ: (৪৯)] তিনি আরো বলেন: “নিশ্চয় শুভ পরিণাম কেবল মুত্তাকীদের জন্য।” [সূরা হুদ: (৪৯)]
১৯. তাকওয়ার অধিকারী মুত্তাকীগণ পার্থিব জগতে সুসংবাদ লাভ করেন। যেমন সে ভাল স্বপ্ন দেখল অথবা মানুষের ব্যাপক মহব্বত, প্রশংসা ও সম্মান লাভ করল ইত্যাদি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَكَانُواْ يَتَّقُونَ ٦٣ لَهُمُ ٱلۡبُشۡرَىٰ فِي ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا وَفِي ٱلۡأٓخِرَةِۚ ٦٤ ﴾ [ يونس : ٦٣، ٦٤ ]
“যারা ঈমান এনেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করত। তাদের জন্যই সুসংবাদ দুনিয়াবি জীবনে এবং আখিরাতে।” সূরা ইউনুস: (৬৩-৬৪)
ইমাম আহমদ আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন: لَهُمُ الْبُشْرَى فِي الْحَياةِ الدُّنْيَا এর ব্যাখ্যায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন এর অর্থ: “ভাল স্বপ্ন যা মুসলিম দেখে অথবা তাকে দেখানো হয়।”
আবুযর গিফারী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: হে আল্লাহর রাসূল, কেউ কোন আমল করার পর মানুষেরা তার প্রশংসা করে ও তার গুণকীর্তন গায়, (এর হুকুম কি)? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: { تلك عاجل بشرى المؤمن }. এটা হচ্ছে মুমিনের নগদ সুসংবাদ।
২০. নারীরা যদি তাকওয়া অবলম্বন করে এবং কথা ও কাজে তার বাস্তবায়ন ঘটায়, তাহলে যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে তারা তাদের ওপর লোভ করার সুযোগ ও সাহস পায় না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ يَٰنِسَآءَ ٱلنَّبِيِّ لَسۡتُنَّ كَأَحَدٖ مِّنَ ٱلنِّسَآءِ إِنِ ٱتَّقَيۡتُنَّۚ فَلَا تَخۡضَعۡنَ بِٱلۡقَوۡلِ فَيَطۡمَعَ ٱلَّذِي فِي قَلۡبِهِۦ مَرَضٞ وَقُلۡنَ قَوۡلٗا مَّعۡرُوفٗا ٣٢ ﴾ [ الاحزاب : ٣٢ ]
“হে নবীÑপতিœগণ, তোমরা অন্য কোন নারীর মত নও। যদি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে (পরপুরুষের সাথে) কোমল কণ্ঠে কথা বলো না, তাহলে যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে সে প্রলুব্ধ হয়। আর তোমরা ন্যায়সঙ্গত কথা বলবে।” [সূরা আহযাব: (৩২)]
২১. যাদের অন্তরে তাকওয়া রয়েছে, তারা অসিয়ত ও ভাগ-বণ্টনে কারো ওপর যুলুম করে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ كُتِبَ عَلَيۡكُمۡ إِذَا حَضَرَ أَحَدَكُمُ ٱلۡمَوۡتُ إِن تَرَكَ خَيۡرًا ٱلۡوَصِيَّةُ لِلۡوَٰلِدَيۡنِ وَٱلۡأَقۡرَبِينَ بِٱلۡمَعۡرُوفِۖ حَقًّا عَلَى ٱلۡمُتَّقِينَ ١٨٠ ﴾ [ البقرة : ١٨٠ ]
“তোমাদের উপর ফরয করা হয়েছে যে, যখন তোমাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হবে, যদি সে কোন সম্পদ রেখে যায়, তবে পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়দের জন্য ন্যায়ভিত্তিক অসিয়ত করবে। এটি মুত্তাকীদের দায়িত্ব।” [সূরা বাকারা: (১৮০)]
২২. পুরুষের মধ্যে তাকওয়া থাকলে তালাক প্রাপ্ত নারী তার জরুরী খোর-পোষ ও বরণ-পোষণ লাভ করে। অর্থাৎ মুত্তাকী পুরুষেরা তাদের তালাক প্রাপ্তা স্ত্রীদের ওপর শরীয়তের নির্দেশ মোতাবেক খরচ করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَلِلۡمُطَلَّقَٰتِ مَتَٰعُۢ بِٱلۡمَعۡرُوفِۖ حَقًّا عَلَى ٱلۡمُتَّقِينَ ٢٤١ ﴾ [ البقرة : ٢٤١ ]
“আর তালাকপ্রাপ্তা নারীদের জন্য থাকবে বিধি মোতাবেক ভরণ-পোষণ। (এটি) মুত্তাকীদের উপর আবশ্যক।” [সূরা বাকারা : (২৪১)]
২৩. তাকওয়ার ফলে দুনিয়া ও আখেরাতের কোন প্রতিদান নষ্ট হয় না। ইউসুফ আলাইহিস সালাম তার ভাই ও পরিবারের সাথে একত্র হয়ে বলেন:
﴿ إِنَّهُۥ مَن يَتَّقِ وَيَصۡبِرۡ فَإِنَّ ٱللَّهَ لَا يُضِيعُ أَجۡرَ ٱلۡمُحۡسِنِينَ ٩٠ ﴾ [ يوسف : ٨٩ ]
“নিশ্চয় যে ব্যক্তি তাকওয়া অবলম্বন করে এবং সবর করে, তবে অবশ্যই আল্লাহ সৎকর্মশীলদের প্রতিদান বিনষ্ট করেন না।” [সূরা ইউসুফ: (৯০)]
২৪. তাকওয়ার ফলে হিদায়েত লাভ হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ الٓمٓ ١ ذَٰلِكَ ٱلۡكِتَٰبُ لَا رَيۡبَۛ فِيهِۛ هُدٗى لِّلۡمُتَّقِينَ ٢ ﴾ [ البقرة : ١، ٢ ]
“আলিফ-লাম-মীম। এই সেই কিতাব, যাতে কোন সন্দেহ নেই, মুত্তাকীদের জন্য হিদায়েত।” [সূরা বাকারা: (১-২)]
﴿ وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّهُۥ مِنۡ أَمۡرِهِۦ يُسۡرٗا ٤ ﴾ [ الطلاق : ٤ ] وقال تعالى : ﴿ فَأَمَّا مَنۡ أَعۡطَىٰ وَٱتَّقَىٰ ٥ وَصَدَّقَ بِٱلۡحُسۡنَىٰ ٦ فَسَنُيَسِّرُهُۥ لِلۡيُسۡرَىٰ ٧ ﴾ [ الليل : ٥، ٧ ]
“যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য তার কাজকে সহজ করে দেন।” [সূরা তালাক: (৪)] তিনি আরো বলেন: “সুতরাং যে দান করেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করেছে, আর উত্তমকে সত্য বলে বিশ্বাস করেছে, আমি তার জন্য সহজ পথে চলা সুগম করে দেব।” [সূরা লাইল: (৫-৭)]
২. তাকওয়া পার্থিব জগতে মানুষকে শয়তানের সব অনিষ্ট থেকে সুরক্ষা দেয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ ٱتَّقَوۡاْ إِذَا مَسَّهُمۡ طَٰٓئِفٞ مِّنَ ٱلشَّيۡطَٰنِ تَذَكَّرُواْ فَإِذَا هُم مُّبۡصِرُونَ ٢٠١ ﴾ [ الاعراف : ٢٠٠ ]
“নিশ্চয় যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে যখন তাদেরকে শয়তানের পক্ষ থেকে কোন কুমন্ত্রণা স্পর্শ করে তখন তারা আল্লাহকে স্মরণ করে। তখনই তাদের দৃষ্টি খুলে যায়।” [সূরা আরাফ: (২০১)]
৩. দুনিয়াবাসীর তাকওয়ার ফলে আসমান ও যমিনের বরকত উন্মুক্ত হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَلَوۡ أَنَّ أَهۡلَ ٱلۡقُرَىٰٓ ءَامَنُواْ وَٱتَّقَوۡاْ لَفَتَحۡنَا عَلَيۡهِم بَرَكَٰتٖ مِّنَ ٱلسَّمَآءِ وَٱلۡأَرۡضِ ٩٦ ﴾ [ الاعراف : ٩٥ ]
“আর যদি জনপদসমূহের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত তাহলে আমি অবশ্যই আসমান ও যমিন থেকে বরকতসমূহ তাদের উপর খুলে দিতাম।” [সূরা আরাফ: (৯৬)]
৪. বান্দা তাকওয়ার ফলে হক ও বাতিলের মাঝে পার্থক্য করতে সক্ষম হয় ও তা বুঝার তাওফিক লাভ করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِن تَتَّقُواْ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّكُمۡ فُرۡقَانٗا ٢٩ ﴾ [ الانفال : ٢٩ ]
وقال تعالى : ﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَءَامِنُواْ بِرَسُولِهِۦ يُؤۡتِكُمۡ كِفۡلَيۡنِ مِن رَّحۡمَتِهِۦ وَيَجۡعَل لَّكُمۡ نُورٗا تَمۡشُونَ بِهِۦ ٢٨ ﴾ [ الحديد : ٢٨ ]
“হে মুমিনগণ, যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর তাহলে তিনি তোমাদের জন্য ফুরকান প্রদান করবেন।” [সূরা ফুরকান: (২৯)] ফুরকান অর্থ হক ও বাতিল এবং সত্য ও মিথ্যা পার্থক্য করার জ্ঞান। তিনি আরো বলেন: “হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আন, তিনি স্বীয় রহমতে তোমাদেরকে দ্বিগুণ পুরস্কার দেবেন, আর তোমাদেরকে নূর দেবেন যার সাহায্যে তোমরা চলতে পারবে।” [সূরা হাদীদ: (২৮)]
৫. তাকওয়া অর্জনকারী মুত্তাকী ব্যক্তি তার তাকওয়ার ফলে কষ্টের জীবন থেকে মুক্তি পায় এবং এমন জায়গা থেকে রিযক লাভ করে, যা তার কল্পনার ঊর্ধ্বে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّهُۥ مَخۡرَجٗا ٢ وَيَرۡزُقۡهُ مِنۡ حَيۡثُ لَا يَحۡتَسِبُۚ ٣ ﴾ [ الطلاق : ٢، ٣ ]
“যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরি করে দেন। এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিযক দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না।” সূরা তালাক: (২-৩)
৬. তাকওয়ার দ্বারা পার্থিব জগতে বান্দা আল্লাহর বন্ধুত্ব অর্জন করতে সক্ষম হয়। কারণ তিনি মুত্তাকীদের বন্ধু ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ إِنۡ أَوۡلِيَآؤُهُۥٓ إِلَّا ٱلۡمُتَّقُونَ ٣٤ ﴾ [ الأنفال : ٣٤ ] وقال تعالى : ﴿ وَإِنَّ ٱلظَّٰلِمِينَ بَعۡضُهُمۡ أَوۡلِيَآءُ بَعۡضٖۖ وَٱللَّهُ وَلِيُّ ٱلۡمُتَّقِينَ ١٩ ﴾ [ الجاثية : ١٩ ]
“তার অভিভাবক (বন্ধু) তো শুধু মুত্তাকীগণ।” [সূরা আনফাল: (৩৪)] তিনি আরো বলেন: “আর নিশ্চয় যালিমরা মূলত একে অপরের বন্ধু এবং আল্লাহ মুত্তাকীদের বন্ধু।” [সূরা জাসিয়া: (১৯)]
৭. পার্থিব জগতে মুত্তাকী তাকওয়ার ফলে কাফেরদের অনিষ্ট থেকে নিরাপত্তা লাভ করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَإِن تَصۡبِرُواْ وَتَتَّقُواْ لَا يَضُرُّكُمۡ كَيۡدُهُمۡ شَيًۡٔاۗ ١٢٠ ﴾ [ ال عمران : ١٢٠ ]
“আর যদি তোমরা ধৈর্য ধর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, তাহলে তাদের ষড়যন্ত্র তোমাদের কোন ক্ষতি করবে না।” [সূরা আলে ইমরান: (১২০)]
৮. তাকওয়ার ফলে মুসিবত ও দুশমনের মোকাবিলার মুহূর্তে আসমান থেকে সাহায্য অবতীর্ণ হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَلَقَدۡ نَصَرَكُمُ ٱللَّهُ بِبَدۡرٖ وَأَنتُمۡ أَذِلَّةٞۖ فَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ لَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُونَ ١٢٣ إِذۡ تَقُولُ لِلۡمُؤۡمِنِينَ أَلَن يَكۡفِيَكُمۡ أَن يُمِدَّكُمۡ رَبُّكُم بِثَلَٰثَةِ ءَالَٰفٖ مِّنَ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةِ مُنزَلِينَ ١٢٤ بَلَىٰٓۚ إِن تَصۡبِرُواْ وَتَتَّقُواْ وَيَأۡتُوكُم مِّن فَوۡرِهِمۡ هَٰذَا يُمۡدِدۡكُمۡ رَبُّكُم بِخَمۡسَةِ ءَالَٰفٖ مِّنَ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةِ مُسَوِّمِينَ ١٢٥﴾ [ ال عمران : ١٢٣، ١٢٥ ]
“আর অবশ্যই আল্লাহ তোমাদেরকে বদরে সাহায্য করেছেন অথচ তোমরা ছিলে হীনবল। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, আশা করা যায়, তোমরা শোকরগুজার হবে। স্মরণ কর, যখন তুমি মুমিনদেরকে বলছিলে, ‘তোমাদের জন্য কি যথেষ্ট নয় যে, তোমাদের রব তোমাদেরকে তিন হাজার নাযিলকৃত ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য করবেন’? হ্যাঁ, যদি তোমরা ধৈর্য ধর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, আর তারা হঠাৎ তোমাদের মুখোমুখি এসে যায়, তবে তোমাদের রব পাঁচ হাজার চিহ্নিত ফেরেশতা দ্বারা তোমাদেরকে সাহায্য করবেন।” [সূরা আলে ইমরান: (১২৩-১২৫)] সাহায্য ও শক্তিবৃদ্ধির ঘোষণা একটি সুসংবাদ, যার ফলে অন্তর প্রশান্ত হয় এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্যের ঘোষণার কারণে নিজেদের মনোবল বাড়ে ও শক্তি সঞ্চয় হয়। এরপর আল্লাহ বলেন:
﴿ وَمَا جَعَلَهُ ٱللَّهُ إِلَّا بُشۡرَىٰ لَكُمۡ وَلِتَطۡمَئِنَّ قُلُوبُكُم بِهِۦۗ وَمَا ٱلنَّصۡرُ إِلَّا مِنۡ عِندِ ٱللَّهِ ٱلۡعَزِيزِ ٱلۡحَكِيمِ ١٢٦ ﴾ [ ال عمران : ١٢٦ ]
“আর আল্লাহ তোমাদের জন্য তা কেবল সুসংবাদস্বরূপ নির্ধারণ করেছেন এবং যাতে তোমাদের অন্তরসমূহ এর দ্বারা প্রশান্ত হয়। আর সাহায্য কেবল পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময় আল্লাহর পক্ষ থেকে।” [সূরা আলে ইমরান: (১২৬)]
৯. তাকওয়ার ফলে আল্লাহর বান্দাগণ মুসিবত ও সীমালঙ্ঘন থেকে নিরাপত্তা লাভ করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَتَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡبِرِّ وَٱلتَّقۡوَىٰۖ وَلَا تَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡإِثۡمِ وَٱلۡعُدۡوَٰنِۚ ٢ ﴾ [ المائدة : ٢ ] وقال تعالى في قصة مريم : ﴿ فَأَرۡسَلۡنَآ إِلَيۡهَا رُوحَنَا فَتَمَثَّلَ لَهَا بَشَرٗا سَوِيّٗا ١٧ قَالَتۡ إِنِّيٓ أَعُوذُ بِٱلرَّحۡمَٰنِ مِنكَ إِن كُنتَ تَقِيّٗا ١٨ ﴾ [ مريم : ١٧، ١٨ ]
“সৎকর্ম ও তাকওয়ায় তোমরা পরস্পরের সহযোগিতা কর। মন্দকর্ম ও সীমালঙ্ঘনে পরস্পরের সহযোগিতা করো না।” [সূরা মায়েদা: (২)] মারইয়াম আলাইহিস সালামের ঘটনায় আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “তখন আমি তার নিকট আমার রূহ (জিবরীল)কে প্রেরণ করলাম। অতঃপর সে তার সামনে পূর্ণ মানবের রূপ ধারণ করল। মারইয়াম বলল, ‘আমি তোমার থেকে পরম করুণাময়ের আশ্রয় চাচ্ছি, যদি তুমি মুত্তাকী হও।” [সূরা মারইয়াম: (১৭-১৮)]
১০. তাকওয়া অর্জনকারী প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর নিদর্শনাবলীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَمَن يُعَظِّمۡ شَعَٰٓئِرَ ٱللَّهِ فَإِنَّهَا مِن تَقۡوَى ٱلۡقُلُوبِ ٣٢ ﴾ [ الحج : ٣٢ ]
“এটাই হল আল্লাহর বিধান; যে আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে সম্মান করে, নিঃসন্দেহে তা অন্তরের তাকওয়া থেকেই।” [সূরা হাজ্জ: (৩২)]
১১. তাকওয়ার ফলে আমল বিশুদ্ধ হয় ও গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে এবং পাপ মোচন হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَقُولُواْ قَوۡلٗا سَدِيدٗا ٧٠ يُصۡلِحۡ لَكُمۡ أَعۡمَٰلَكُمۡ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوبَكُمۡۗ ٧١ ﴾ [ الأحزاب : ٧٠، ٧١ ]
“হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল। তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের কাজগুলোকে শুদ্ধ করে দেবেন এবং তোমাদের পাপগুলো ক্ষমা করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই এক মহা সাফল্য অর্জন করল।” [সূরা আহযাব: (৭০-৭১)]
১২. মুত্তাকী তার তাকওয়ার কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে আদব প্রদর্শনে সক্ষম হয়, অর্থাৎ তার সামনে তার আওয়াজ অনুচ্চ থাকে। জীবিত অবস্থায় তো বটেই, মৃত্যুর পরও তার নির্দেশ অতিক্রম করে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَغُضُّونَ أَصۡوَٰتَهُمۡ عِندَ رَسُولِ ٱللَّهِ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ ٱمۡتَحَنَ ٱللَّهُ قُلُوبَهُمۡ لِلتَّقۡوَىٰۚ ٣ ﴾ [ الحجرات : ٣ ]
“নিশ্চয় যারা আল্লাহর রাসূলের নিকট নিজদের আওয়াজ অবনমিত করে, আল্লাহ তাদেরই অন্তরগুলোকে তাকওয়ার জন্য বাছাই করেছেন।” [সূরা হুজুরাত: (৩)]
১৩. তাকওয়ার দ্বারা আল্লাহর মহব্বত লাভ হয়। এ মহব্বত যেমন দুনিয়াতে লাভ হয়, অনুরূপ আখেরাতেও লাভ হবে। হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ বলেন:
«ما تقرّب إليّ عبدٌ بشيء بأفضل مما افترضته عليه، ولا يزال عبدي يتقرّب إليّ بالنوافل حتى أحبه، فإذا أحببته كنت سمعه الذي يسمع به، وبصره الذي يبصر به، ويده التي يبطش بها، ورجله التي يمشي بها، ولئن سألني لأعطينه، ولئن استعاذ بي لأعيذنه»
“আমি বান্দার উপর যা ফরয করেছি, তার চেয়ে উত্তম জিনিসের মাধ্যমে কোন বান্দা আমার নৈকট্য অর্জন করতে পারেনি। বান্দা নফলের মাধ্যমে আমার নৈকট্য অর্জন করতে থাকে, এক সময় আমি তাকে মহব্বত করি। আমি যখন তাকে মহব্বত করি, তখন আমি তার কর্ণে পরিণত হই, যে কর্ণ দিয়ে সে শ্রবণ করে, তার দৃষ্ট শক্তিতে পরিণত হই, যা দিয়ে সে দেখে, তার হাতে পরিণত হই যা দিয়ে সে পাকড়াও করে এবং তার পায়ে পরিণত হই যা দিয়ে সে চলে। [অর্থাৎ তার কর্ণ, দৃষ্টিশক্তি, হাত ও পা আমার সন্তুষ্টির বাইরে চলে না। সে তখন শুধু আমার নির্দেশনা অনুসারেই চলে। যেভাবে সে নিজের অঙ্গসমূহের সংরক্ষণ করে সেভাবে আমি তার অঙ্গসমূহের সংরক্ষণ করি। এটিই হচ্ছে হাদীসের সঠিক অর্থ। এ অর্থের বাইরে অন্য কোন অর্থ গ্রহণ করা যাবে না। কখনও এটা বলা যাবে না যে আল্লাহ বান্দার কোন অংশ প্রবেশ করেন, নাউযুবিল্লাহ। [সম্পাদক]] সে যদি আমার কাছে প্রার্থনা করে আমি তাকে অবশ্যই দেব এবং সে যদি আমার ওসিলায় আশ্রয় প্রার্থনা করে আমি তাকে অবশ্যই আশ্রয় প্রদান করব।” [বুখারী: ৬৫০২]
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ بَلَىٰۚ مَنۡ أَوۡفَىٰ بِعَهۡدِهِۦ وَٱتَّقَىٰ فَإِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلۡمُتَّقِينَ ٧٦ ﴾ [ ال عمران : ٧٦ ]
‘হ্যাঁ, অবশ্যই যে নিজ প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করে এবং তাকওয়া অবলম্বন করে, তবে নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকীদেরকে ভালবাসেন।” [সূরা আলে ইমরান: (৭৬)]
১৪. তাকওয়ার ফলে ইলম ও জ্ঞান অর্জন হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَۖ وَيُعَلِّمُكُمُ ٱللَّهُۗ ٢٨٢ ﴾ [ البقرة : ٢٨٢ ]
“আর তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং আল্লাহ তোমাদেরকে শিক্ষা দেবেন।” [সূরা বাকারা: (২৮২)]
১৫. আল্লাহর অনুগ্রহে ইসলামের হিদায়েত লাভ করার পর কেউ যদি পূর্ণ তাকওয়া অবলম্বন করে, তাহলে তার দ্বীনের সঠিক বুঝ অর্জন হয় ও সে পথভ্রষ্টতা থেকে সুরক্ষা পায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَأَنَّ هَٰذَا صِرَٰطِي مُسۡتَقِيمٗا فَٱتَّبِعُوهُۖ وَلَا تَتَّبِعُواْ ٱلسُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمۡ عَن سَبِيلِهِۦۚ ذَٰلِكُمۡ وَصَّىٰكُم بِهِۦ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ١٥٣ ﴾ [ الانعام : ١٥٣ ]
“আর এটি তো আমার সোজা পথ। সুতরাং তোমরা তার অনুসরণ কর এবং অন্যান্য পথ অনুসরণ করো না, তাহলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। এগুলো তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর।” সূরা আনআম: (১৫৩)
১৬. তাকওয়া দ্বারা আল্লাহর রহমত লাভ হয়। এ রহমত যেরূপ দুনিয়াতে লাভ হবে, অনুরূপ আখেরাতেও লাভ হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَرَحۡمَتِي وَسِعَتۡ كُلَّ شَيۡءٖۚ فَسَأَكۡتُبُهَا لِلَّذِينَ يَتَّقُونَ وَيُؤۡتُونَ ٱلزَّكَوٰةَ وَٱلَّذِينَ هُم بَِٔايَٰتِنَا يُؤۡمِنُونَ ١٥٦ ﴾ [ الاعراف : ١٥٥ ]
“আর আমার রহমত সব বস্তুকে পরিব্যাপ্ত করেছে। সুতরাং আমি তা লিখে দেব তাদের জন্য যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং যাকাত প্রদান করে। আর যারা আমার আয়াতসমূহের প্রতি ঈমান আনে।” [সূরা আরাফ: (১৫৬)]
১৭. তাকওয়ার ফলে পার্থিব জগতে আল্লাহর সংঘ ও সাথীত্ব অর্জন হয়। বান্দার সাথে আল্লাহর সাথীত্ব দু’প্রকার। সাধারণ সাথীত্ব: এটা আল্লাহর সব বান্দার জন্য ব্যাপক, যেমন তার শুনা, দেখা ও জানা সবার জন্য সমান। তিনি সবার কাজকর্ম সমানভাবে প্রত্যক্ষ করেন, সব কিছু শুনেন ও সবার অবস্থা সম্পর্কে সম্যক অবগত রয়েছেন। তিনি বলেন:
﴿ وَهُوَ مَعَكُمۡ أَيۡنَ مَا كُنتُمۡۚ ٤ ﴾ [ الحديد : ٤ ] وقال تعالى : ﴿ أَلَمۡ تَرَ أَنَّ ٱللَّهَ يَعۡلَمُ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِۖ مَا يَكُونُ مِن نَّجۡوَىٰ ثَلَٰثَةٍ إِلَّا هُوَ رَابِعُهُمۡ وَلَا خَمۡسَةٍ إِلَّا هُوَ سَادِسُهُمۡ وَلَآ أَدۡنَىٰ مِن ذَٰلِكَ وَلَآ أَكۡثَرَ إِلَّا هُوَ مَعَهُمۡ أَيۡنَ مَا كَانُواْۖ ٧ ﴾ [ المجادلة : ٧ ]
“আর তোমরা যেখানেই থাক না কেন, তিনি তোমাদের সাথেই আছেন।” [সূরা হাদীদ: (৪)] তিনি আরো বলেন: “তুমি কি লক্ষ্য করনি যে, আসমানসমূহ ও জমিনে যা কিছু আছে নিশ্চয় আল্লাহ তা জানেন? তিন জনের কোন গোপন পরামর্শ হয় না যাতে চতুর্থজন হিসেবে আল্লাহ থাকেন না, আর পাঁচ জনেরও হয় না, যাতে ষষ্ঠজন হিসেবে তিনি থাকেন না। এর চেয়ে কম হোক কিংবা বেশি হোক, তিনি তো তাদের সঙ্গেই আছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন।” [সূরা মুজাদিলা: (৭)] এসব আয়াতে আল্লাহর সাথীত্ব বা সাথে থাকার অর্থ তিনি বান্দার অবস্থা জানেন, তাদের কথা শ্রবণ করেন, তাদের সবকিছু তার নিকট স্পষ্ট।
দ্বিতীয় সাথীত্ব: এটা হচ্ছে আল্লাহর বিশেষ সংঘ বা সাথীত্ব: এ সাথীত্ব আল্লাহর সাহায্য, সমর্থন ও সহায়তার অর্থ প্রদান করে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿لَا تَحۡزَنۡ إِنَّ ٱللَّهَ مَعَنَاۖ ٤٠﴾التوبة : ٤٠ وقال تعالى : ﴿ قَالَ لَا تَخَافَآۖ إِنَّنِي مَعَكُمَآ أَسۡمَعُ وَأَرَىٰ ٤٦ ﴾ [ طه : ٤٦ ]
“তুমি পেরেশান হয়ো না, নিশ্চয় আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন।” সূরা তওবা: (৪০) অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে: “তিনি বললেন, ‘তোমরা ভয় করো না। আমি তো তোমাদের সাথেই আছি। আমি সবকিছু শুনি ও দেখি।” সূরা ত্বহা: (৪৬) এসব আয়াতে আল্লাহ সাথে আছেন বা তার সাথীত্ব অর্থ হচ্ছে সাহায্য ও সমর্থন। আল্লাহর এ জাতীয় সাথীত্ব একমাত্র তার বিশেষ বান্দাদের সাথে খাস। যেমন তিনি বলেন:
﴿ إِنَّ ٱللَّهَ مَعَ ٱلَّذِينَ ٱتَّقَواْ وَّٱلَّذِينَ هُم مُّحۡسِنُونَ ١٢٨ ﴾ [ النحل : ١٢٨ ] وقال تعالى : ﴿ وَٱعۡلَمُوٓاْ أَنَّ ٱللَّهَ مَعَ ٱلۡمُتَّقِينَ ١٩٤ ﴾ [ البقرة : ١٩٤ ]
“নিশ্চয় আল্লাহ তাদের সাথে, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং যারা সৎকর্মশীল।” [সূরা নাহাল: (১২৮)] তিনি আরো বলেন: “এবং জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে আছেন।” [সূরা বাকারা: (১৯৪)]
১৮. শুভ পরিণতি বা শেষ ফল তাকওয়ার অধিকারী আল্লাহর মুত্তাকী বান্দাগণ লাভ করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَٱلۡعَٰقِبَةُ لِلتَّقۡوَىٰ ١٣٢ ﴾ [ طه : ١٣٢ ] وقال تعالى : ﴿ وَإِنَّ لِلۡمُتَّقِينَ لَحُسۡنَ مََٔابٖ ٤٩ ﴾ [ص: ٤٩ ] وقال تعالى : ﴿ إِنَّ ٱلۡعَٰقِبَةَ لِلۡمُتَّقِينَ ٤٩ ﴾ [ هود : ٤٩ ]
“আর শুভ পরিণাম তো মুত্তাকীদের জন্য।” [সূরা ত্বহা: (১৩২)] তিনি অন্যত্র বলেন: “আর মুত্তাকীদের জন্য অবশ্যই রয়েছে উত্তম নিবাস।” [সূরা সাদ: (৪৯)] তিনি আরো বলেন: “নিশ্চয় শুভ পরিণাম কেবল মুত্তাকীদের জন্য।” [সূরা হুদ: (৪৯)]
১৯. তাকওয়ার অধিকারী মুত্তাকীগণ পার্থিব জগতে সুসংবাদ লাভ করেন। যেমন সে ভাল স্বপ্ন দেখল অথবা মানুষের ব্যাপক মহব্বত, প্রশংসা ও সম্মান লাভ করল ইত্যাদি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَكَانُواْ يَتَّقُونَ ٦٣ لَهُمُ ٱلۡبُشۡرَىٰ فِي ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا وَفِي ٱلۡأٓخِرَةِۚ ٦٤ ﴾ [ يونس : ٦٣، ٦٤ ]
“যারা ঈমান এনেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করত। তাদের জন্যই সুসংবাদ দুনিয়াবি জীবনে এবং আখিরাতে।” সূরা ইউনুস: (৬৩-৬৪)
ইমাম আহমদ আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন: لَهُمُ الْبُشْرَى فِي الْحَياةِ الدُّنْيَا এর ব্যাখ্যায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন এর অর্থ: “ভাল স্বপ্ন যা মুসলিম দেখে অথবা তাকে দেখানো হয়।”
আবুযর গিফারী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: হে আল্লাহর রাসূল, কেউ কোন আমল করার পর মানুষেরা তার প্রশংসা করে ও তার গুণকীর্তন গায়, (এর হুকুম কি)? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: { تلك عاجل بشرى المؤمن }. এটা হচ্ছে মুমিনের নগদ সুসংবাদ।
২০. নারীরা যদি তাকওয়া অবলম্বন করে এবং কথা ও কাজে তার বাস্তবায়ন ঘটায়, তাহলে যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে তারা তাদের ওপর লোভ করার সুযোগ ও সাহস পায় না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ يَٰنِسَآءَ ٱلنَّبِيِّ لَسۡتُنَّ كَأَحَدٖ مِّنَ ٱلنِّسَآءِ إِنِ ٱتَّقَيۡتُنَّۚ فَلَا تَخۡضَعۡنَ بِٱلۡقَوۡلِ فَيَطۡمَعَ ٱلَّذِي فِي قَلۡبِهِۦ مَرَضٞ وَقُلۡنَ قَوۡلٗا مَّعۡرُوفٗا ٣٢ ﴾ [ الاحزاب : ٣٢ ]
“হে নবীÑপতিœগণ, তোমরা অন্য কোন নারীর মত নও। যদি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে (পরপুরুষের সাথে) কোমল কণ্ঠে কথা বলো না, তাহলে যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে সে প্রলুব্ধ হয়। আর তোমরা ন্যায়সঙ্গত কথা বলবে।” [সূরা আহযাব: (৩২)]
২১. যাদের অন্তরে তাকওয়া রয়েছে, তারা অসিয়ত ও ভাগ-বণ্টনে কারো ওপর যুলুম করে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ كُتِبَ عَلَيۡكُمۡ إِذَا حَضَرَ أَحَدَكُمُ ٱلۡمَوۡتُ إِن تَرَكَ خَيۡرًا ٱلۡوَصِيَّةُ لِلۡوَٰلِدَيۡنِ وَٱلۡأَقۡرَبِينَ بِٱلۡمَعۡرُوفِۖ حَقًّا عَلَى ٱلۡمُتَّقِينَ ١٨٠ ﴾ [ البقرة : ١٨٠ ]
“তোমাদের উপর ফরয করা হয়েছে যে, যখন তোমাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হবে, যদি সে কোন সম্পদ রেখে যায়, তবে পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়দের জন্য ন্যায়ভিত্তিক অসিয়ত করবে। এটি মুত্তাকীদের দায়িত্ব।” [সূরা বাকারা: (১৮০)]
২২. পুরুষের মধ্যে তাকওয়া থাকলে তালাক প্রাপ্ত নারী তার জরুরী খোর-পোষ ও বরণ-পোষণ লাভ করে। অর্থাৎ মুত্তাকী পুরুষেরা তাদের তালাক প্রাপ্তা স্ত্রীদের ওপর শরীয়তের নির্দেশ মোতাবেক খরচ করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَلِلۡمُطَلَّقَٰتِ مَتَٰعُۢ بِٱلۡمَعۡرُوفِۖ حَقًّا عَلَى ٱلۡمُتَّقِينَ ٢٤١ ﴾ [ البقرة : ٢٤١ ]
“আর তালাকপ্রাপ্তা নারীদের জন্য থাকবে বিধি মোতাবেক ভরণ-পোষণ। (এটি) মুত্তাকীদের উপর আবশ্যক।” [সূরা বাকারা : (২৪১)]
২৩. তাকওয়ার ফলে দুনিয়া ও আখেরাতের কোন প্রতিদান নষ্ট হয় না। ইউসুফ আলাইহিস সালাম তার ভাই ও পরিবারের সাথে একত্র হয়ে বলেন:
﴿ إِنَّهُۥ مَن يَتَّقِ وَيَصۡبِرۡ فَإِنَّ ٱللَّهَ لَا يُضِيعُ أَجۡرَ ٱلۡمُحۡسِنِينَ ٩٠ ﴾ [ يوسف : ٨٩ ]
“নিশ্চয় যে ব্যক্তি তাকওয়া অবলম্বন করে এবং সবর করে, তবে অবশ্যই আল্লাহ সৎকর্মশীলদের প্রতিদান বিনষ্ট করেন না।” [সূরা ইউসুফ: (৯০)]
২৪. তাকওয়ার ফলে হিদায়েত লাভ হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ الٓمٓ ١ ذَٰلِكَ ٱلۡكِتَٰبُ لَا رَيۡبَۛ فِيهِۛ هُدٗى لِّلۡمُتَّقِينَ ٢ ﴾ [ البقرة : ١، ٢ ]
“আলিফ-লাম-মীম। এই সেই কিতাব, যাতে কোন সন্দেহ নেই, মুত্তাকীদের জন্য হিদায়েত।” [সূরা বাকারা: (১-২)]
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন