HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

মসজিদের ইমামদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান

লেখকঃ আব্দুল আযীয ইবন মুহাম্মদ ইবন আব্দুল্লাহ আস-সাদহান

কিতাবের নাম/ লেখক/ অনুবাদক/ সম্পাদক
মসজিদের ইমামদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান

আব্দুল আযীয ইবন মুহাম্মদ ইবন আব্দুল্লাহ আস-সাদহান

অনুবাদ: জাকের উল্লাহ আবুল খায়ের

সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

কভার পেইজ থেকে
বইটিতে মসজিদের ইমামদের দায়িত্ব ও কর্তব্য আলোচনা করা হয়েছে। আর মসজিদে কী কী কার্যক্রম ও অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মসজিদের হক্ব আদায় করা যায় ও সমাজ সংশোধন করা যায় তাও বর্ণিত হয়েছে। গ্রন্থটি সংকলন করেছেন ‘আবদুল হামীদ আল-হামদান’।

মসজিদের ইমামদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান
সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য যিনি সমগ্র জগতের স্রষ্টা ও প্রতিপালক। আর সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক আল্লাহ তা‘আলার প্রেরিত রাসূলের ওপর যিনি সত্যিকার আমানতদার। অতঃপর, আমি মুসলিমদের অবগতির জন্য বলছি-

হে মুসলিম ভাইয়েরা...!

তোমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, আল্লাহ তা‘আলা মসজিদসমূহকে মহা মর্যাদা ও সুউচ্চ মর্তবার অধিকারী বানিয়েছেন। ইসলামে মুসলিমদের জন্য মসজিদসমূহ হলো তাদের যাবতীয় কাজের কেন্দ্র-বিন্দু। ইসলামের প্রথম যুগে মসজিদ থেকেই মুসলিমদের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হতচ কিন্তু বর্তমানে আমরা মসজিদের মর্যাদা, সম্মান ও ভূমিকা সম্পর্কে একেবারেই বেখবর। যদিও আল্লাহ তা‘আলা মসজিদের সম্মান ও তার মর্যাদা সম্পর্কে জানার জন্য আমাদের বিশেষ কিছু বিধান নির্ধারণ করে দিয়েছেন, তা সত্ত্বেও আমরা তা উপলব্ধি করতে পারি না। যেমন, মসজিদে প্রবেশের পর বসার পূর্বে তাহিয়্যাতুল মসজিদ দু রাকাত সালাত আদায়, মসজিদের ভিতর যিকির করা, সালাতের উদ্দেশ্য ছাড়া মসজিদকে হাটা-চলার পথ বানানো নিষিদ্ধ হওয়া ও মসজিদে বেচা-কেনা হতে বিরত থাকার নির্দেশ ইত্যাদি মসজিদের বিধান আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন।

এ-ছাড়াও মনে রাখতে হবে, যেহেতু মসজিদ সাধারণত ইসলামের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত ফরয সালাত আদায় ও অন্যান্য দ্বীনি কাজগুলো আঞ্জাম দেওয়ার জন্য মুসলিমদের মিলনকেন্দ্র, তাই ইসলামে মসজিদের গুরুত্ব, ফযীলত ও মর্যাদা অপরিসীম।

শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবন তাইমিয়্যাহ্ রহ. বলেন, মসজিদগুলো উম্মতের প্রাণ কেন্দ্র ও ইমামদের অবস্থান স্থল। মদীনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র মসজিদে নববীকে তাকওয়ার ভিত্তিতেই নির্মাণ করা হয়েছিল। তাতে সালাত আদায়, কুরআন তিলাওয়াত, যিকির, তা‘লীম ও খুতবা সবই করা হত। এ ছাড়াও তখনকার যুগের রাজনীতি, পরামর্শ, মতামত গ্রহণ আমীর নির্বাচন ও সম্মানী লোকদের সম্বর্ধনা ও পরিচিতি অনুষ্ঠান সব মসজিদেই অনুষ্ঠিত হত। মুসলিমদের দীন ও দুনিয়ার ব্যাপারে কোন প্রকার বিপদ-আপদ, দুর্ভোগ বা দুশ্চিন্তা দেখা দিলে তখন সবাই মসজিদে এসে একত্র হত এবং তা নিরসনের বিষয়ে মসজিদ থেকেই সমাধানের চিন্তা করা হত।

হে মুসলিম ভাইয়েরা...!

বর্তমান যুগে মসজিদের ভূমিকা খুবই সীমিত। যদি মসজিদের ভূমিকা উল্লেখিত পর্যায়ের গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হত, অবশ্যই আমাদের বলতে হত যে, এ মর্যাদা ও গুরুত্বের ধারক বাহক হিসেবে সর্বাধিক উত্তম ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তারাই যারা মসজিদসমূহে ইমামতি করে এবং যারা মুসলিমদের একত্র হওয়ার কেন্দ্র-বিন্দুতে পরিণত হয়ে থাকে। কারণ, নফল সালাত বা অন্যান্য কাজের কথা বাদ দিলেও লোকেরা কম পক্ষে দৈনিক পাঁচবার তাদের পিছনে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে এবং মসজিদে একত্র হয়।

মনে রাখতে হবে, মসজিদের একজন ইমামের মর্যাদা, সাওয়াব ও বিনিময়ের দিক বিবেচনায় বিশিষ্ট ও অধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হওয়ার দাবি রাখে। কারণ, একজন ইমামের দ্বারা উপকার লাভ বা ত্রুটির কারণে ক্ষতি সম্মুখীন হওয়া শুধু তার নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তাদের পিছনে যারা সালাত আদায় করে তাদের মধ্যেও একজন ইমামের প্রভাব বিদ্যমান থাকে এবং তাদের ওপর উপকার বা ক্ষতির প্রভাব পড়ে। এ কারণেই এ বিষয়ে হাদীসে অনেক দিক নির্দেশনা ও বিভিন্ন ধরনের বিধান রাখা হয়েছে।

আবু হুরায়র রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ইমাম হলো, দায়িত্বশীল আর মুয়ায্যিন হলো, আমানতদার। হে আল্লাহ! তুমি ইমামদের সঠিক পথে পরিচালনা কর এবং মুয়ায্যিনদের তুমি ক্ষমা কর। [আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিযী।]

উকবা ইবন আমের থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি কোন জামা‘আতের ইমামতি করে এবং সে ইমামতির পুরো হক আদায় করে, তাহলে সে পরিপূর্ণ সাওয়াব পাবে এবং মুসল্লীরাও পরিপূর্ণ সাওয়াব পাবে। আর যদি সে পুরো হক আদায় করতে না পারে, তাহলে মুসল্লীরা পুরো সাওয়াব পাবে এবং ইমাম গুনাহগার হবে। [আহমদ।]

আবি উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তিন ব্যক্তির সালাত তাদের কানও অতিক্রম করে না। এক- পলাতক দাস ফিরে না আসা পর্যন্ত। দুই- যে মহিলার ওপর তার স্বামী যৌক্তিক কারণে নাখোশ ও ক্ষুব্ধ। তিন-যে ইমামকে (শরী‘আতসম্মত কারণে) মুসল্লীরা অপছন্দ করে।

মসজিদের ইমামদের প্রতি পয়গাম...

হে ইমামগণ...!

একজন ইমামের জন্য সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো, সে তার মসজিদের মুসল্লীদের সাথে এমন ব্যবহার করবে, যাতে সমাজে সে একজন অনুকরণীয় ও আদর্শ পুরুষ হিসেবে সকলের নিকট সমাদৃত ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিতে পরিণত হয়। আর তার জন্য তাকে যা করতে হবে তা হলো, আলেমদের সম্মান, বড়দের ইজ্জত, ছোটদের আদর, রোগীদের দেখতে যাওয়া, দুর্বলদের খোঁজ খবর নেয়া, অসহায় লোকদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসা, তাদের কল্যাণের জন্য সর্বদা সচেষ্ট হওয়া ইত্যাদি। এ সব সামাজিক কাজগুলো একজন ইমামকে অবশ্যই করতে হবে। তাহলেই সে সমাজে গ্রহণযোগ্যতা পাবে এবং সমাজের মানুষ তাকে সম্মান করবে।

হে ইমামগণ...!

তোমরা একটি কথা মনে রাখবে-আল্লাহ তোমাদের হিফাযত করুক- তোমরা যদি আদর্শবান ও সত্যানুসারী হও, তবে তার প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া তাদের মধ্যেও সৃষ্টি হবে, যাদের নিকট তোমরা দাওয়াত পৌছাও, যারা তোমাদের মজলিশে উপস্থিত থাকে এবং তোমাদের কথা ও ওয়ায-নসীহত শোনে। ফলে আনুগত্যশীলের আনুগত্য আরও বৃদ্ধি পাবে এবং যারা অলস প্রকৃতির তাদেরও আল্লাহর প্রতি আনুগত্য ও বশ্যতা আরও জোরদার হবে।

হে ইমামগণ! (আল্লাহ তোমাদের হিফাযত করুন) তোমরা সর্বাবস্থায় উত্তম আদর্শের অধিকারী হওয়ার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ কর এবং তোমাদের যাতে কোনো প্রকার পদস্খলন না হয় সে ব্যাপারে তোমরা অধিক সতর্ক থাকবে। তোমরা যাবতীয় উত্তম গুণাবলীর সমাহার তোমাদের মধ্যে ঘটিয়ে আল্লাহর রঙে নিজেদের রাঙ্গাও।

অতঃপর তোমাদের সুনাম ও সুখ্যাতি নষ্ট করে এ ধরনের কোন অন্যায় ও অশ্লীল কাজ করা হতে তোমরা সম্পূর্ণ বিরত থাকবে। কারণ, তোমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি ও তার প্রভাব শুধু তোমাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না; বরং যারা তোমাদের থেকে শ্রবণ করে ও তোমাদের অনুকরণ করে তাদের মধ্যেও তার প্রভাব বিস্তার করে।

মোটকথা, সব ধরনের অন্যায় কাজ হতে বিরত থাকবে। বিশেষ করে চারিত্রিক ত্রুটি-বিচ্যুতি হতে তোমাদের সম্পূর্ণ মুক্ত থাকতে হবে, যাতে লোকেরা তোমাদের দোষ- ত্রুটি আলোচনা করে তোমাদেরকে তাদের মুখের লোকমা ও তাদের মজলিশের ফল বানাতে না পারে। তোমাদের থেকে চারিত্রিক কোনো পদস্খলন প্রকাশ পেলে মানুষের অন্তরে তোমাদের প্রতি বিদ্বেষ ও ঘৃণা সৃষ্টি হবে। ফলে তারা তোমাদের পিছনে সালাত আদায় করাকে অপছন্দ করবে, তোমাদের ওয়ায-নসীহত ও আখলাক দ্বারা প্রভাবিত হবে না এবং তোমাদের আমলের প্রতি তারা কোন প্রকার মনোযোগী হবে না। বরং তারা তোমাদের নসীহত শোনতে অনাগ্রহী হবে এবং তোমরা যখন বক্তব্য দিবে তখন তারা মজলিশ হতে চলে যাওয়ার জন্য তাড়াহুড়া করবে।

হে ইমামগণ...!

মনে রাখবে (আল্লাহ তোমাদের হিফাযত করুন) তোমাদের ঘাড়ে রয়েছে বিশাল আমানত; অতীব গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। তোমরা এ আমানত ও গুরু দায়িত্বের যথাযথ হিফাযত করবে, আমানতদারী রক্ষা ও গুরু-দায়িত্ব আদায়ে যেন তোমাদের কোনো প্রকার ত্রুটি-বিচ্যুতি ও অসাবধানতা প্রকাশ না পায়। আর সমাজে তোমাদের যে সুনাম ও পরিচিতি রয়েছে তোমরা প্রাণপণ চেষ্টা করবে যাতে তোমাদের পরিচিতি ও সুনাম যেন অক্ষত থাকে এবং কলঙ্কিত না হয়।

সমাজের লোকেরা তাদের দীনের বিষয়ে তোমাদের প্রতি সন্তুষ্টি জ্ঞাপন করছে, তাই তোমরা তাদের সু-ধারণাকে সমুন্নত রাখতে বদ্ধপরিকর হবে। এমন কোন কাজ করবে না যা তোমাদের সুখ্যাতি ও সু-ধারণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলে। শুধু তাই নয়, বরং তাদের ধারণার চেয়েও তোমাকে আরও অধিক খ্যাতি ও সুনাম অর্জন করতে হবে। তোমার ভাবমূর্তি যাতে ক্ষুণ্ন না হয় সেদিকে তোমাকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

ইমামতি করা যে কত বড় দায়িত্ব, তার প্রতি তোমাদের অনুভূতিশীল হতে হবে। এ মহান দায়িত্বকে যথাযথভাবে আদায় করতে ও পরিপূর্ণরূপে পালনে তোমাদের থেকে যেন কোন প্রকার ত্রুটি-বিচ্যুতি প্রকাশ না পায়, সে ব্যাপারে তোমাদের অবশ্যই অধিক দায়িত্বশীল হতে হবে।

সালাতে তোমরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাচনিক ও কার্যগত সুন্নাতগুলোর যথাসাধ্য অনুসরণ করবে এবং তোমরা তোমাদের সালাতে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণীর পরিপূর্ণ অনুসরণ করতে যথা সম্ভব চেষ্টা করবে। তিনি বলেন,

«صلوا كما رأيتموني أصلي»

“তোমরা যেভাবে আমাকে সালাত আদায় করতে দেখ, ঠিক সেভাবে সালাত আদায় কর।” [সহীহ বুখারী।]

সালাতে তোমরা রুকু সাজদাগুলো সুন্নাত মোতাবেক পরিপূর্ণরূপে আদায় করবে, রুকু সেজদা আদায় করতে কোন প্রকার তাড়াহুড়া করবে না। কারণ, পরিপূর্ণরূপে রুকু সাজদাহ আদায় না করে তাতে তাড়াহুড়ো করে সালাত আদায়কৃত সালাতকে হাদীসে কাকের ঠোকর বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আর সালাত আদায়ে কাকের ঠোকরের মত ঠোকর দেওয়াকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অনেক ইমাম মনে করে, রুকু সেজদায় তাড়াহুড়া করা মুক্তাদিদের অবস্থার বিবেচনা করেই হয়ে থাকে যা শরীয়তসম্মত। বাস্তবে তাদের এ ধরনের ধারণা সম্পূর্ণ ভুল ও সালাত আদায়ের সঠিক পদ্ধতির একেবারেই পরিপন্থী। কারণ, শরী‘আত নির্দেশিত ‘সংক্ষিপ্ত করণ’ অর্থাৎ হাদীসে সালাতকে সংক্ষিপ্ত করার যে নির্দেশ দিয়েছে, তা সুন্নাতের অনুসরণের মাধ্যমেই হয়ে থাকে। সুন্নাতকে বাদ দিয়ে সংক্ষিপ্ত করতে বলা হয় নি।

আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,

«كان رسول الله يوجز الصلاة ويكملها»

‘‘রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত সংক্ষিপ্ত করতেন এবং তা পরিপূর্ণরূপে আদায় করতেন’’।

আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম রহ. সালাত সংক্ষিপ্তকরণ ও পরিপূর্ণকরণ এ দু’টির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে যে ধরনের সংক্ষিপ্ত করত, তার অর্থ সে ব্যক্তির ধারণা মত নয়, যে তার সালাতে একটি রুকন আদায়ের সমপরিমাণ সময়ও অপেক্ষা করে না এবং সালাতে তাড়াহুড়া করে।

মনে রাখতে হবে, সংক্ষিপ্তকরণ এমন একটি বিষয়, যা আপেক্ষিক হয়ে থাকে। আর সুন্নাতের অনুসরণ করাই হলো এর শেষ গন্তব্য। ইমাম তার পিছনে মুক্তাদিদের চাহিদানুযায়ী সালাত আদায় করার মাধ্যমে সংক্ষিপ্তকরণ হয় না। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের জেনে শোনে আমল করার তাওফীক দান করুন।

হে ইমামগণ...

তোমরা অবশ্যই মনে রাখবে, একজন ইমামের বাহ্যিক দৃশ্য যেন হয়, সে যে সত্বার সম্মুখে দণ্ডায়মান হয়েছে তার শানের উপযুক্ত। তার পোশাক-আশাক হবে পরিষ্কার -পরিচ্ছন্ন, বাহ্যিক দৃশ্য হবে সুন্দর, তার শরীর থাকবে সুগন্ধীযুক্ত এবং তার মুখ থাকবে দুগর্ন্ধমুক্ত। সে সর্বদা পাক-পবিত্র থাকবে। সালাতের পূর্ব মুহূর্তে মিসওয়াক করে মুখের দুর্গন্ধ দূর করে নিবে। আর এ ধরনের সাজ-সজ্জা অবলম্বন করা আল্লাহর নির্দেশেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿يَٰبَنِيٓ ءَادَمَ خُذُواْ زِينَتَكُمۡ عِندَ كُلِّ مَسۡجِدٖ﴾ [ الاعراف : ٣١ ]

‘‘হে আদম সন্তান তোমরা প্রত্যেক সালাতের সময় তোমাদের সৌন্দর্য অবলম্বন কর’’। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৩১]

হাদীসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إن الله أحق من تزين له»

যাদের জন্য সাজ-সজ্জা গ্রহণ করা হয়, তাদের থেকে আল্লাহ তা‘আলাই সর্বাধিক উপযুক্ত।

সাজ-সজ্জা তথা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করার মধ্যে আল্লাহর রাজি-খুশি ও সন্তুষ্টি রয়েছে, এটি সালাতে খুশূ‘ তথা একাগ্রতার উপকরণ এবং ইমামের দ্বারা মুক্তাদিদের প্রভাবিত হওয়ার প্রতিও একরকম আহবান। অর্থাৎ, ইমাম যখন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকবে তখন মুক্তাদিরা তার অনুকরণ করবে।

হে ইমামগণ...

তোমরা সালাতের কাতারগুলো ঠিক করার প্রতি অধিক যত্নবান হও। কাতার ঠিক করার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। আর মনে রাখবে এ ক্ষেত্রে শুধু এদিক সেদিক তাকানোই যথেষ্ট নয়। অনেক ইমামকে দেখা যায়, শুধু এদিক সেদিক তাকিয়েই সালাতে দাঁড়িয়ে যায় অথচ সালাতের কাতারগুলো এখনো আঁকা-বাঁকা রয়ে গেছে। বরং তোমরা মুসল্লীদের সঠিকভাবে দাঁড়ানো ও একসাথে একজন অপর জনের সাথে মিশে দাঁড়ানোর জন্য নির্দেশ দেবে। কোনো মুসল্লী কাতারের অগ্রে চলে আসলে তাকে পিছনে যেতে বলবে, আবার কেউ পিছনে থাকলে তাকে সামনে আসতে বলবে। প্রয়োজনে ইমাম কাতারের ভিতরে প্রবেশ করে হলেও সালাতের কাতার ঠিক করবে। তাদের তুমি পরস্পরের সাথে মিলে দাঁড়ানো ও ফাঁকা বন্ধ করতে উৎসাহ প্রদান করবে। আর এটিই হলো, সালাতের পূর্ণতা ও সম্পন্নতা।

যেমন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«سووا صفوفكم فإن تسوية الصفوف من إقامة الصلاة»

‘‘তোমরা তোমাদের কাতারসমূহ সোজা কর। কারণ, সালাতে কাতার ঠিক করা সালাত কায়েমেরই অন্তর্ভুক্ত’’। [শাইখান (বুখারী ও মুসলিম) হাদীসটি আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন।]

হে ইমামগণ... তোমরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কীভাবে সালাত আদায় করতেন এবং তিনি সালাতে কি পড়তেন তা জেনে তদনুযায়ী সালাত আদায় করতে সচেষ্ট হবে।

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«من توضأ كما أمر وصلى كما أمر غفر له ما تقدم من ذنبه»

‘‘যে ব্যক্তি যেভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সেভাবে ওজু করে এবং সালাত আদায় করে, তার অতীত জীবনের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়’’।

হে ইমামগণ...

শরী‘আতের বিধানাবলিতে যাতে কোনো প্রকার বিকৃতি না ঘটে, সে জন্য তোমরা সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবে। সমাজে কোনো ধরনের বিদ‘আত ও কুসংস্কার প্রকাশ পাওয়ার উপক্রম হলে তোমরা তাড়াতাড়ি করে সে বিষয় সম্পর্কে মসজিদে বয়ান দেবে, যাতে মানুষ বিদ‘আত থেকে নিজেকে রক্ষা করে। আর কোনো অশ্লীল কাজ প্রসার লাভ করতে আরম্ভ করলে তখনও তোমরা মানুষকে তা হতে বাঁচানোর জন্য নসীহত করবে। মসজিদে তার খারাপ দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করবে।

মিথ্যা সংবাদের ওপর ভিত্তি করে প্রকাশিত সংবাদপত্র সম্পর্কে তোমরা জাতিকে সতর্ক করবে। সংবাদ পত্রের সব কথাই যেন তারা সত্য মনে না করে। কারণ, বর্তমানে সংবাদ পত্রগুলোতে নাস্তিক মুরতাদদের প্রভাব বলবৎ থাকাতে সেগুলো সর্বদা ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।

তোমরা সমাজে যে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে আছ, সে সম্পর্কে তোমাদের অবশ্যই সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে। তোমাদের কথা-কাজ ও সতর্কীকরণ যেন রোগ বিস্তার লাভের পূর্বেই রোগীর চিকিৎসা হয়। আর তোমরা এসব কাজগুলো তখন করতে পারবে, যখন তোমরা নিজেরা যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে সতর্ক ও ওয়াকেফহাল হবে এবং উম্মতের অবস্থা সম্পর্কে তোমরা অবগত থাকবে। আর তার জন্যে প্রয়োজন ইসলামী শরী‘আত ও কুরআন-হাদীস সম্পর্কে তোমাদের সম্যক জ্ঞান।

একটি মসজিদকে কেন্দ্র করে অসংখ্য কার্যক্রম হাতে নেওয়া যেতে পারে
হে ইমামগণ...

মনে রাখতে হবে, একটি মসজিদকে কেন্দ্র করে অসংখ্য কার্যক্রম হাতে নেওয়া যেতে পারে, যদি একজন ইমাম তার স্বীয় এলাকায় এগুলো বাস্তবায়ন করতে পারে, তাহলে সে অবশ্যই তার সুফল পাবে এবং তার চেষ্টা ফলপ্রসূ হবে। নিম্নে এ ধরনের কিছু কার্যক্রমের আলোচনা সংক্ষিপ্তাকারে প্রদান করা হলো:

হে ইমামগণ... অবশ্যই তোমাদের মসজিদের আশ-পাশে কিছু গরীব মিসকীন, অসহায় ও অভাবী লোকজন রয়েছে। তাদের খোঁজ খবর নেওয়া তোমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

তোমরা তোমাদের সাধ্যানুযায়ী তাদের প্রতি তোমাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে আন্তরিক ও সচেষ্ট হবে। তুমি যদি তোমার নিজের থেকে টাকা পয়সা দিয়ে সহযোগিতা করতে না পার, তবে তোমরা মসজিদের মুসল্লীদের থেকে যারা সচ্ছল ও ধনী তাদেরকে গরীব, মিসকীন ও অসহায় লোকদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসার জন্য উদ্বুদ্ধ কর। তোমরা তাদের বুঝাও এবং স্মরণ করিয়ে দাও রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী। তিনি বলেন,

«من فرج عن مسلم كربة فرج الله عنه كربة من كرب يوم القيامة» ...

‘‘যে ব্যক্তি একজন মুসলিমের দুঃখ-দুর্দশা ও বিপদ-আপদ লাঘব করবে, আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তার অসংখ্য দুঃখ-দুর্দশা ও বিপদাপদ দূর করবে’’।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,

«من دل على خير فله مثل أجر فاعله»

‘‘যে ব্যক্তি কোনো ভালো কাজের পথ দেখায়, তার জন্য কাজটি যে পালন করবে তার সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে’’।

উল্লিখিত আলোচনা দ্বারা অন্যের উপকার করা যে, কত লাভজনক তা স্পষ্ট প্রমাণিত। সুতরাং এ ব্যাপারে ইমামরা শুধু অন্যদের বুঝালে চলবে না; বরং তাদের নিজেদের অবশ্যই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।

হে ইমামগণ... মসজিদের আরেকটি কার্যক্রম হলো, একজন ইমাম মসজিদে তার মুসল্লীদের ইসলাম বিষয়ে যাবতীয় মাস’আলা- মাসায়েল শিক্ষাদানের জন্য তালিম-তরবিয়্যাত ও ওয়ায-নসীহতের বিশেষ ব্যবস্থা করবে। আর তালীমের মজলিসে এমন কিতাবসমূহ পড়বে, যা তার মসজিদের মুসল্লীদের উপকারে লাগে এবং সমসাময়িক বিভিন্ন সমস্যার সমাধান তার মধ্যে অবশ্যই থাকতে হবে। এমন সব ওয়ায-নসীহত করবে যা তাদের যাবতীয় কাজকর্মে কল্যাণ বয়ে আনে এবং দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় মাসআলাগুলো তাদের নিকট স্পষ্ট হয়। এখানে একটি কথা মনে রাখতে হবে, ইমামরা যেন না জেনে কোনো ফাতওয়া না দেয় এবং অনির্ভরযোগ্য কোনো কথা তাদের মুসল্লীদের মধ্যে না বলে। এতে তাদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হবে এবং তার প্রতি মুসল্লীদের ভক্তি, শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস কমে যাবে। ফলে তার তালিমের মজলিসে কেউ বসতে আগ্রহী হবে না। এ ছাড়াও নির্ভরযোগ্য ও বিশিষ্ট আলেমদের ফাতওয়ার কিতাবগুলো মসজিদে পাঠ করার প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করবে। কারণ, তাদের ফাতওয়ার কিতাবসমূহে মানুষ দৈনন্দিন জীবনে যে সব সমস্যার সম্মুখীন হয়, সে সব সমস্যাবলীর নিখুঁত ও সঠিক সমাধান খুঁজে পায়। ইমাম যদি কোনটি মানুষের জন্য উপকারী তা নির্ধারণ করতে পারে তাহলে তা অবশ্যই শুভ লক্ষণ ও মুসল্লীদের জন্য কল্যাণকর। সে অনুযায়ী ইমাম তাদের তালীমের ব্যবস্থা করবে। আর যদি ইমাম এ ধরনের যোগ্যতাসম্পন্ন না হয়, তাহলে যে সব আলেম তার চেয়ে বয়সে বড় ও অভিজ্ঞ তাদের থেকে পরামর্শ নিবে। তাদের পরামর্শানুযায়ী মসজিদে তালীমের ব্যবস্থা করবে। আর ইমাম অজানা বিষয়গুলো তাদের থেকে জেনে নেবে। তাদের থেকে জেনে নিতে এবং তাদের পরামর্শ গ্রহণ করতে সে যেন কোনো প্রকার কুণ্ঠাবোধ ও সংকোচ মনে না করে। আর ইমাম সাহেব তার মসজিদে বড় বড় আলিমদেরকে মুসল্লীদের কল্যাণে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে আসবে এবং তাদের জন্য আলোচনা ও ওয়ায-নসীহতের ব্যবস্থা করবে। আর তারা এসে তাদের জন্য এমন ভাষণ দেবেন যা তাদের উপকারে আসে। এ ছাড়াও তারা তাদের বিভিন্ন প্রশ্ন, সমসাময়িক সমস্যাবলী ও নানাবিধ আপত্তি গুলোর সঠিক সমাধান ও উত্তর দিবে। তা‘লীমের ক্ষেত্রে আরও একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো, ইমাম তাদের জন্য প্রশ্নোত্তরের ব্যবস্থা করতে পারে। প্রশ্ন ও উত্তরের মাধ্যমে শিক্ষা দানটি মুসল্লীদের জন্য অধিক কার্যকর।

হে ইমামগণ...

মসজিদের আরেকটি শিক্ষণীয় কার্যক্রম হলো, বিভিন্ন প্রকার উপকারী ও কল্যাণকর পুস্তিকা, কিতাসমূহ ও বিভিন্ন ধরনের ওয়ায-নসীহতের অডিও-ভিডিও ক্যাসেট মুসল্লীদের মধ্যে বিতরণ করার ব্যবস্থা করবে। বিশেষ করে বিভিন্ন মওসুমে বিষয়ভিত্তিক বই পুস্তক পাওয়া যায়, সে গুলো সংগ্রহ করে মুসল্লীদের মধ্যে বিতরণ করবে। যেমন, রমযানের সময় রমযানের বই, হজের সময় হজের বই, আশুরার সময় আশুরার বই ইত্যাদি। মুসল্লীদের মধ্যে প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করে এ ধরনের বই পুস্তক পুরষ্কার হিসেবেও বিতরণ করা যেতে পারে। এ ছাড়াও যখন কোন বিপদ- আপদ দেখা দেয়, তখন ঐ বিষয়ের ওপর দিক নির্দেশনা সম্বলিত বই বিতরণ ও ওয়ায নসীহত করে তাদের শোনাবে। যেমন, চন্দ্র গ্রহণ ও সূর্য গ্রহণ ইত্যাদি সময়ে সে বিষয়ে বক্তব্য পেশ করবে এবং এ বিষয়ের ওপর কুরআন হাদীসের দিক নির্দেশনা সম্পর্কে তাদের অবহিত করবে।

মসজিদের শিক্ষণীয় কার্যক্রমের আরেকটি কার্যক্রম হলো, বিভিন্ন শিক্ষণীয় বিষয়ে মুসল্লীদের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানাদির ব্যবস্থা করা। এতে তাদের মধ্যে অজানাকে জানার বিশেষ আগ্রহ তৈরি হবে। অনুরূপভাবে সাধারণ শিক্ষিত মানুষের জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এতে মুসল্লীদের সাহস বাড়বে, মন মানসিকতার উন্নতি হবে এবং তারা ইসলাম সম্পর্কে জানতে প্রত্যয়ী হবে। প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে এমন সব প্রশ্ন তৈরি করবে যে গুলো সাধারণত মানুষের উপকারে আসে এবং দৈনন্দিন জীবনে কাজে লাগে। বিশেষ করে যে সব প্রশ্ন মানুষের জন্য খুব প্রয়োজন সে গুলোকে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে মুসল্লীদের সামনে নিয়ে আসবে। যেমন, ঈমান-আক্বীদা, ইবাদাত, লেনদেন ও আচার-আচরণ বিষয়ে যেগুলো মানুষের দৈনন্দিন জীবনে খুবই প্রয়োজন তা মুসল্লীদের মধ্যে ছেড়ে দিয়ে তাদের থেকে উত্তর চাওয়া।

মসজিদের আরেকটি কার্যক্রম হলো, মসজিদের অধীনে লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা করা। এতে বিভিন্ন ধরনের কিতাবসমূহ ও অডিও-ভিডিও ক্যাসেট সংরক্ষণ করবে। ফলে যারা বিভিন্ন বিষয়ে জানতে আগ্রহী তাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের কিতাবসমূহ ও ক্যাসেটগুলো সহজে পাওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। এতে মসজিদের মুসল্লীরা জ্ঞান অর্জন ও বিভিন্ন ধরনের ওয়ায-নসিহত শুনতে আগ্রহী হবে এবং আলিমদের মজলিশে উপস্থিত হতে তারা উৎসাহী হবে। মুসল্লীরা মসজিদে এসে বসে না থেকে যাতে এখান থেকে কিছু শিখতে পারে সে ব্যবস্থা থাকবে।

হে ইমামগণ...

মসজিদের আরেকটি কার্যক্রম হলো, পর্দার আড়ালে মা-বোনদের দীন ও ইসলাম বিষয়ে শিক্ষা দেওয়ার প্রতি বিশেষ যত্ন নেয়া ও তাদের কাছে দীন- ইসলামের সঠিক দাওয়াত পৌঁছে দিতে আপ্রাণ চেষ্টা করা। একজন ইমামের জন্য মসজিদের মুসল্লীদের মাধ্যমে তাদের স্ত্রীদের নিকট ঈমান-আক্বীদা সম্বলিত বই পুস্তক, বিভিন্ন ধরনের ক্যাসেট ও সিডি পৌঁছে দিবে। যাতে তারা ঘরে বসে দীন সম্পর্কে জানতে ও শিখতে পারে। এর জন্য প্রয়োজন হলে ইমামরা তাদের ঘরের মহিলাদের ভাষা সম্পর্কে তথ্য নিবে এবং তারা যে ভাষা পড়তে পারে ও বুঝে সে ভাষার কিতাবসমূহ ও ক্যাসেট বিভিন্ন সংস্থা থেকে সংগ্রহ করে তাদের নিকট বিনা মূল্যে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে। আর যদি তা সম্ভব না হয়, তবে মসজিদের মুসল্লীদের থেকে টাকা তুলে তা দিয়ে বই পুস্তক কিনে তাদের নিকট পৌঁছানোর ব্যবস্থা করবে। আর মুসল্লীদের এ ধরনের কল্যাণমূলক ও শিক্ষণীয় কাজে সহযোগিতা করার লাভ ও সাওয়াব সম্পর্কে বোঝাবে।

হে ইমামগণ! আমরা জানি, কোন কোন মসজিদে গরীব, মিসকীন, অভাবী ও অসহায় রোজাদারদের জন্য ইফতারির ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। আর এ বরকতময় মৌসুমে লোকেরা সওয়াবের আশায় ও ভাল কাজের প্রতি আগ্রহী হয়ে টাকা পয়সা অধিক হারে দান খয়রাত করে এবং বেশি বেশি নেক আমল করে। তোমরা যারা ইমাম তোমাদের উচিত হলো, এ মাহফিলকে কাজে লাগানো। তাদের সকলকে দ্বীনের দাওয়াতের আওতায় এনে বিভিন্ন ধরনের লোকদের একত্রীকরণের যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তা কাজে লাগানোর জন্য সকল চেষ্টা ব্যয় করা। বিশেষ করে আক্বীদাগত বিষয়গুলোকে তাদের শিক্ষাদানে অধিক গুরুত্বারোপ করবে। কারণ, বর্তমানে অধিকাংশ মানুষের কথা ও কাজে আক্বীদাগত ভ্রান্তি রয়েছে। আর একজন ঈমানদারের আক্বীদাই যদি ঠিক না থাকে, তাহলে অন্যান্য আমল তো মূল্যহীন। এ জন্য আক্বীদার বিষয়ে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে, যাতে মানুষের মধ্যে কোন প্রকার গোমরাহি অবশিষ্ট না থাকে।

হে ইমামগণ...

রমযান মাসটি কর্মকর্তা- কর্মচারীদের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা বাড়িয়ে দেয়। কারণ, তারা অন্য সময় মূলতঃ শেখার জন্য কোন সময় পায় না। আবার তাদের কতক এমন আছে যারা মনে করে তারা অবশ্যই সঠিক পথের ওপর আছে তাদের শিখার প্রয়োজন নাই এবং তাদের দিক নির্দেশনা দেওয়ারও কোনো প্রয়োজন নাই। এ সব তাদের নিজেদের প্রতি সু-ধারণা ও উত্তম নিয়তের কারণেই হয়ে থাকে।

হে ইমামগণ..!

তোমাদের কর্তব্য হলো, তোমরা তোমাদের সাধ্যমত তাদের মধ্যে কল্যাণকর বিষয়গুলো প্রচার করবে ও তাদের দীন শিখানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাবে। তাদের মধ্যে ওয়ায-নসীহতের ক্যাসেট, বই পুস্তক বিতরণ ও ওয়ায-নছিহত চালিয়ে যাবে। তারা যে ভাষার লোক তাদের বুঝানোর জন্য সে ভাষার লোকদের উপস্থিত করে তাদের তালীমের ব্যবস্থা করবে। এতে তোমাদের জন্য রয়েছে অসীম কল্যাণ ও মহান প্রতিদান। আল্লাহ আমাদের সকলকে তাওফীক দান করুন। আমীন।

মসজিদের আরেকটি কার্যক্রম হলো, ইমাম সাহেব মুসল্লীদেরকে তাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত ধন-সম্পদ হতে ব্যয় করতে উদ্বুদ্ধ করবে। অর্থাৎ থাকা, খাওয়া, লেবাস, পোশাক ও চিকিৎসা ব্যয়ের পর, যে সব অতিরিক্ত ধন-সম্পদ ও পোশাক-আশাক তাদের থাকে, তা হতে আল্লাহর রাহে ব্যয় করার জন্য মুসল্লীদের উৎসাহ দেবে। অর্থাৎ যাকাত, ফিতরা ও কুরবানি ইত্যাদির প্রতি তাদের আকৃষ্ট করবে। তাদের থেকে তাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত কাপড়-চোপড় সংগ্রহ করে তা ইমাম সাহেব ও তার সহযোগীরা মিলে, তাদের জানা মতে সেসব অভাবী, গরীব, মিসকীন ও অসহায় লোকদের নিকট পৌঁছাবে যারা এ সব পোশাক-আশাক ও জুতা-স্যান্ডেল ইত্যাদিকে তাদের জীবনোপকরণ বলে মনে করে। যদি ইমাম সাহেব এ দায়িত্ব পালনে কোন কারণে অক্ষম হয়, তখন সে তার মুসল্লীদের উৎসাহ দেবে, যাতে তারা এ সব অনুদান ও দান-খয়রাত সে সব দাতাগণের নিকট পৌঁছে দেয়, যেগুলো গরীব দুখী, অভাবী, মিসকীন ও অসহায় লোকদের সহযোগিতা করার দায়িত্ব পালন করে থাকে।

মসজিদের আরেকটি কার্যক্রম হলো: মহল্লায় বসবাসরত নারীদের শিক্ষাদানের প্রতি গুরুত্বারোপ করা। মসজিদে নারীদের সাথে খাস এমন বিষয়ে তালীম করা। যাতে পুরুষরা মসজিদ থেকে শোনে গিয়ে তাদের ঘরের মহিলাদের তালীম দিতে পারে। অনুরূপভাবে নারীদের বিষয়ে প্রকাশিত বিভিন্ন ধরনের বই পুস্তক মুসল্লীদের মধ্যে বিতরণ করা। এ ক্ষেত্রে শিক্ষণীয় বিষয়ের প্রতি অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। আর নারীদের সাথে সম্পর্ক রাখে, এমন বিষয়ে নারীদের মধ্যে প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করা। পুরুষরা তাদের নারীদের মধ্যে প্রতিযোগিতার প্রশ্নগুলো পৌঁছানের ব্যবস্থা করবে। আর ইমাম সাহেব নারীদের পবিত্রতা অর্জন ও ইবাদত করতে গিয়ে দৈনন্দিন যে সব বিষয়াবলী জানার প্রয়োজন পড়ে, সে সব বিষয়ের ওপর প্রশ্ন করবে এবং তাদের সে সব বিষয়ে উত্তর জানিয়ে দেবে।

মসজিদের আরেকটি কার্যক্রম হলো, ছোটদের প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখা। তাদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য সকালে অথবা বিকালে পবিত্র কোরান শিক্ষার ব্যবস্থা করা। তাদের আক্বীদা-বিশ্বাস শিখতে সুবিধা হয়, এমন কিছু সংক্ষিপ্ত মাসলা-মাসায়েল শিক্ষা দেবে এবং নামায, রোযা ও তাদের জন্য প্রয়োজন এমন বিষয়ে তাদের কিছু মাসলা-মাসায়েল শিক্ষা দেবে। এ ছাড়া আদাব, আখলাক, মানুষের সাথে ব্যবহার, মাতা- পিতার হক, প্রতিবেশীর হক ও বড়দের সাথে কীভাবে কথা বলতে হয়, তা তাদের বিশেষভাবে শিক্ষা দেবে। অনুরূপভাবে মজলিসের আদব ও সালামের নিয়ম তাদের শিখিয়ে দেবে। তাদেরকে সালাম দেওয়ার প্রতি অধিক হারে উৎসাহ প্রদান করবে। যাতে তারা সালাম দিতে অভ্যস্ত হয়ে যায়।

মসজিদের আরেকটি কর্মসূচী হলো, মসজিদের আশ-পাশে লোকদের মধ্য হতে যারা শরীয়ত পরিপন্থী ব্যবসা বাণিজ্য করে তাদের বিশেষ উপদেশ দেবে, যাতে তারা এ সব অনৈতিক ব্যবসা-বাণিজ্য হতে বিরত থাকে এবং হালাল ব্যবসার প্রতি আগ্রহী হয়। যেমন, অনেকে আছে যারা মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত, অশ্লীল ম্যাগাজিন ও পুস্তিকা বিক্রির সাথে জড়িত। তাদেরকে এ সব ব্যবসা থেকে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করবে।

হে ইমামগণ...! তোমাদের একটি কথা মনে রাখতে হবে, (তা‘আলা তোমাদের সংশোধন করুক) তোমাদের মুসল্লীদের মধ্যে এমন কতক লোক থাকতে পারে, যাদের হয়তো ইমামের বিপক্ষে কোন অভিযোগ বা অনুরাগ রয়েছে। কিন্তু তারা তা প্রকাশ না করে তোমার ওপর বিক্ষুব্ধ হয়ে আছে, বা ফিতনার ভয়ে তারা নীরব রয়েছে, অথবা যদি সে ইমামের বিষয়ে কথা বলে ইমাম তার প্রতি বিরূপ ধারণা পোষণ করবে সে আশঙ্কায় সে চুপ করে আছে।

হে ইমামগণ..!

যদি এ ধরনের কোনো বিষয়ের অবতারণা হয়, তোমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণীর অনুকরণ কর। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, الدين النصيحة “দীন হলো, নছিহত”। [সহীহ মুসলিম।]

যদি তোমাদের মধ্যে কোন দুর্বলতা, ভুল-ত্রুটি থেকে থাকে, তবে তোমরা তাদের মধ্য হতে যাকে ভালো বলে জান তার সাথে কথাবার্তা বলে তার থেকে উপদেশ চাও। তাকে বল আমার যদি কোন অপরাধ থাকে তবে আমাকে উপদেশ দিন, যাতে আমি সংশোধন হতে পারি অথবা তাদেরকে একত্র করেও তাদের থেকে উপদেশ চাইতে পার। মনে রাখবে, এতে শুধু বিরোধই মিটবে না বরং এতে তোমাদের জন্য অসংখ্য কল্যাণ রয়েছে। অপরের নিকট নসীহত তালাশ করা আল্লাহর নৈকট্য আর নিজের কোন ভুল-ভ্রান্তির ওপর সতর্ক হওয়া বা বুঝতে পারাও আল্লাহর নি‘আমত। আর নিজের ভুল স্বীকার করা ও ভুল হতে ফিরে আসার অর্থই হলো, উচ্চ মর্যাদার অধিকারী হওয়া। যখন তোমরা তোমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি বুঝতে পারবে, তখন নসীহত কবুল করা হতে বিরত থাকা তোমাদের বুদ্ধিমত্তার পরিচয় বহন করে না। সুতরাং কোন প্রকার হঠকারিতা তোমাদের থেকে কাম্য হতে পারে না। হঠকারিতা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকতে হবে।

হে ইমামগণ.... মুসল্লীগণ তোমাদের যেসব বিষয়কে খারাপ মনে করে থাকে, তা হলো তোমরা তোমাদের মসজিদের কতক মুসল্লীদের সাথে অবাধ চলা ফেরা কর এবং তাদের সাথে গল্পগুজব করে সময় নষ্ট কর। ফলে তা তোমাদের ভাবমূর্তি ও ভাবগাম্ভীর্যের পরিপন্থী ও তোমাদের মান-মর্যাদার খেলাফ বিবেচিত হয়ে থাকে এবং কারণে অন্য মুসল্লীরা তোমাদের থেকে দীন শেখা হতে দূরে থাকে এবং তারা বঞ্চিত হয়। যেমন, ইমাম তার মসজিদের মুসল্লীদের সাথে ওয়ায-নসীহত বা শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্য ছাড়াই কোন হাসি-ঠাট্টা ইত্যাদির মজলিশে উপস্থিত হলো, চায়ের দোকানে বসে গল্প করতে থাকল অথবা কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষে অবস্থান নিলো ইত্যাদি। এতে অন্যান্য মুসল্লীদের মধ্যেও তাদের মজলিশে তার বিপক্ষে আলোচনা সমালোচনা হতে থাকে। সে অনুষ্ঠানটি এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে যায় যা লজ্জা শরমের সম্পূর্ণ পরিপন্থী হয়ে যায়।

মনে রাখতে হবে, এতে দু‘ ধরনের ক্ষতি রয়েছে: এক- মুসল্লীদের অন্তর থেকে ইমামের প্রতি ভক্তি শ্রদ্ধা ও সম্মান দূর হয়ে যায়। দুই- এটি হলো, সর্বাধিক মারাত্মক! শয়তান তার কথার মধ্যে উদারতার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। ফলে অনেক সময় দেখা যায়, সে বিভিন্ন ধরনের হারাম কাজ ও শরীয়ত বিরোধী কাজ যেমন, গীবত, সমালোচনা, পরনিন্দা ও ঠাট্টা বিদ্রূপ ইত্যাদিতে লিপ্ত হতে কোনো প্রকার দ্বিধাবোধ করে না। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে এর ক্ষতি যে কত ভয়াবহ তা জিজ্ঞাসা করার অবকাশ রাখে না। আর এর ক্ষতি শুধু তার একার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং তা তার জন্যও ক্ষতি এবং তার সাথে যারা উঠা-বসা করে ও শোনে তারাও এর ক্ষতি ও মন্দ পরিণতি হতে মুক্ত হতে পারে না।

হে ইমামগণ...!

তোমরা এসব বিষয়ে অধিক বাড়াবাড়ি করা হতে বিরত থাকবে এবং একেবারে শৈথিল্য প্রদর্শন ও নমনীয়তা দেখানো কোন বুদ্ধিমানের কাজ নয়। শরীয়তের লক্ষ্য হলো, প্রতি কাজে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা। তোমার করণীয় হলো, তুমি তোমার দীন, ইজ্জত-সম্মান ও সুনামকে সমুন্নত রাখতে সর্বদা চেষ্টা করবে। একজন ইমামের প্রতি মানুষের অভক্তি ও দোদুল্যমানতা তখন সৃষ্টি হয়, যখন সে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে কোনো প্রকার চিন্তা ফিকির ও আলিমদের জিজ্ঞাসা করা ছাড়াই তাড়াহুড়ো করে একটি কথা বলে। কোনো বিষয়ে হুট করে সিদ্ধান্ত দেওয়া কোনো বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

হে ইমামগণ...! তোমাদের একটি কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে, তোমরা তোমাদের মসজিদের মুসল্লীদের জন্য অনুকরণীয় ও আদর্শ ব্যক্তি। তারা তোমাদের নিকট দীন শিখতে আসবে এবং তোমাদের থেকে দীনি বিষয় শোনে ঘরে ফিরে যাবে। সুতরাং তোমরা তোমাদের মুসল্লীদের বিষয়ে আল্লাহকে ভয় কর! বিজ্ঞ আলেমদের থেকে জিজ্ঞাসাবাদ না করে শরী‘আতের কোনো বিষয়ে মন্তব্য করা ও সিদ্ধান্ত দেওয়া হতে তোমরা সম্পূর্ণ বিরত থাক। কখনোই কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে তাড়াহুড়ো করবে না। তোমরা খুব সতর্কের সাথে মাসলা-মাসায়েল আলোচনা করবে। না জেনে কোনো মাসলা দেবে না। তোমরা অত্যন্ত নমনীয়তা ও ধীর গতিতে সামনের দিকে অগ্রসর হবে। যদি কোন ইমাম সম্পর্কে এ কথা প্রচার হয় যে, সে কোনো বিষয়ে না জানার কারণে চুপ ছিল, তা তার জন্য অধিক উত্তম বিজ্ঞ আলিমের নিকট জিজ্ঞাসা না করে অথবা না জেনে ভুল ফতাওয়া দেওয়া হতে। কারণ, না জেনে ফতাওয়া দেওয়া তাকে গুনাহ ও অপরাধের দিক টেনে নেবে, বরং কখনো সময় এমন হতে পারে, এর গুনাহ এত মারাত্মক হবে যে, তা সামলানো তার জন্য সম্ভব হবে না, তার ক্ষতি আরও অধিক বিস্তৃত হবে যখন লোকেরা তার ফাতওয়াটি একে অপরের নিকট বলতে থাকবে এবং প্রচার করতে থাকবে। তখন দেখা যাবে একটি ভুল মাসআলা সমাজে ছড়িয়ে পড়বে। এতে কতক লোক বিভ্রান্ত হবে। একজন ইমামের জন্য উচিত হলো, তার কথাবার্তার মাপকাঠি যেন হয়- আল্লাহর তা‘আলার বাণী ও রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلَا تَقۡفُ مَا لَيۡسَ لَكَ بِهِۦ عِلۡمٌۚ إِنَّ ٱلسَّمۡعَ وَٱلۡبَصَرَ وَٱلۡفُؤَادَ كُلُّ أُوْلَٰٓئِكَ كَانَ عَنۡهُ مَسۡ‍ُٔولٗا ٣٦﴾ [ الاسراء : ٣٦ ]

“আর যে বিষয় তোমার জানা নাই তার অনুসরণ করো না। নিশ্চয় কান, চোখ ও অন্তঃকরণ- এদের প্রতিটির ব্যাপারে সে জিজ্ঞাসিত হবে।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৩৬]

হে ইমামগণ...!

ইমামদের একটি সমস্যা হলো, তারা মুয়ায্‌যিনদের কোনো প্রকার খবর দেওয়া অথবা যে মুয়ায্‌যিনের নিকট সংবাদ পৌঁছাবে এমন কোনো ব্যক্তিকে অবহিত করা ছাড়াই জামাতে উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত থাকে। ফলে মুসল্লীদের জামা‘আত কায়েম করতে অসুবিধায় পড়তে হয়। তারা মনে করে ইমাম সাহেব উপস্থিত আছে এবং জামাতে আসবে, তাই তারা তার অপেক্ষা করতে থাকে, এতে সালাত আদায়ে বিলম্ব হয় এবং মুসল্লীরা ইমামের ওপর বিরক্ত হয়। আবার কখনো সময় মুয়াযযিন ইমাম সাহেবের ভর্ৎসনার ভয়ে ইকামাত দেয় না। বিষয়টি আরও প্রকট হয়, যখন ইমাম সাহেবের অভ্যাস দেরী করা হয়ে থাকে। অর্থাৎ তিনি প্রায়ই দেরী করে জামা‘আতে উপস্থিত হন। সুতরাং যে ব্যক্তির অভ্যাস ও অবস্থা এমন হয়ে থাকে তাকে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে এবং আল্লাহকে ভয় করতে হবে। তাকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তা তার সাধ্যানুযায়ী সুন্দরভাবে আদায় করতে সচেষ্ট হতে হবে। যদি কোনো কারণে সে মসজিদে উপস্থিত হতে না পারে, অথবা বৃষ্টি, অসুস্থতা, সফর বা অন্য যে কোনো সমস্যার কারণে মসজিদে উপস্থিত থাকা সম্ভব না হয়, তাকে অবশ্যই মসজিদের মুয়াযযিনকে খবর দিতে হবে অথবা মসজিদের কোন লোককে জানিয়ে দিবে যে মুয়াযযিনকে অবহিত করবে। সবচেয়ে উত্তম হলো, ইমাম সাহেব মুয়াযযিনের সাথে মিলে ইকামতের জন্য একটি সময় নির্ধারণ করে নিবে এবং মুয়াযযিনকে বলে দেবে যে, এ সময়ের মধ্যে আমি না আসলে আপনি জামা‘আতে দাড়িয়ে যাবেন। তখন নির্ধারিত সময়ে ইমাম এসে উপস্থিত হলে ভাল, অন্যথায় মানুষের সুবিধার প্রতি লক্ষ্য রেখে মুয়াযযিন জামা‘আতে দাঁড়িয়ে যাবে। তাতে ইমামের কষ্ট কমে যাবে এবং সে গুনাহ হতেও বাঁচতে পারবে। আর ইমামকে মুসল্লীদের রোষানলে পড়তে হবে না।

হে মুসলিম ভাইয়েরা....!

এ ক্ষেত্রে একটি কথা মনে রাখতে হবে যে, অনেক সময় দেখা যায় কতক মুসল্লী এমন আছে, যারা সব সময় ইমামের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করে এবং তারা সব সময় ইমামের দোষ ত্রুটি তালাশ করে বেড়ায়। অনেক সময় তারা অন্যায়ভাবেও তার দুর্নাম ও সমালোচনা করে বেড়ায়। তার কোনো দোষ-ত্রুটি তাদের চোখে পড়লে তারা মসজিদের মুসল্লী ও এলাকাবাসীর মধ্যে তা প্রচার করতে থাকে। মনে রাখতে হবে, এটি একটি মারাত্মক অপরাধ ও অন্যায় এবং একজন ইমামের প্রতি যুলুম বৈ কিছুই নয়।

হে মুসলিম ভাইয়েরা... এর কারণ এ হতে পারে যে, এ ধরনের লোকদের মধ্যে হয়ত: গোত্রীয় বা প্রাদেশিক বা আঞ্চলিকতার টান থাকার কারণে তারা অন্য গোত্র, অঞ্চল ও ভিন দেশের লোককে ইমাম হিসেবে মেনে নিতে পারে না, ফলে তারা তার পিছনে লেগে থাকে। আবার অনেক সময় ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণেও কেউ কেউ ইমামের বিরোধিতা করে থাকে। আবার অনেকে আছে ইমাম সাহেব বয়স্ক হওয়ার কারণে তার প্রতি অনীহা প্রকাশ করে এবং তার দোষ-ত্রুটি মানুষের নিকট বলে বেড়ায়। এ ছাড়াও আরও অনেক অজ্ঞাত কারণ আছে, যার জন্য কিছু লোক অনর্থক কোনো প্রকার যৌক্তিক কারণ ছাড়াই ইমাম সাহেবের বিরোধিতা করতে থাকে।

সাবধান! যার মধ্যে এ ধরনের চরিত্র পাওয়া যাবে তাকে অবশ্যই আল্লাহকে ভয় করতে হবে। তাকে মনে রাখতে হবে, সে অবশ্যই তার অপর ভাইয়ের প্রতি যুলুমকারী ও অন্যায়কারী। একজন ইমামের প্রতি যুলুম করা অত্যন্ত অমানবিক ও মারাত্মক অপরাধ। একজন ইমামের সুনাম ও সুখ্যাতি বিনষ্ট করা অন্যদের তুলনায় অবশ্যই ভিন্ন। কারণ, একজন ইমামের মর্যাদা, মান-সম্মান ও ইয্‌যত অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি।

মসজিদের মুসল্লীদের কর্তব্য হলো, তারা একজন ইমামের প্রতি হিতাকাঙ্ক্ষী হবে। তার কল্যাণ ও সার্বিক সুযোগ সুবিধা বিবেচনা করবে। তার ক্ষতি হয় এমন কোনো কাজ করা হতে বিরত থাকবে। আর যারা তার পিছনে লেগে থাকে সদুপদেশ দেবে এবং আল্লাহর কথা স্মরণ করে দেবে যে, সে একজন ইমামের প্রতি যুলুম করছে এবং তার বিষয়ে অহেতুক বাড়াবাড়ি করছে। লোকটি যদি সংশোধন হয়ে যায় তবে তা তার জন্য, মুসল্লীদের ও মহল্লাবাসীর জন্য উত্তম।

আর যদি লোকটি তার অন্যায়ের ওপর অটল থাকে এবং হঠকারিতা করতেই থাকে, তাহলে তা তার জন্য অবশ্যই ক্ষতির কারণ হবে। আর মুসল্লীদের জন্য তা অবশ্যই কল্যাণ হবে এবং তাদের উচিত হলো, তারা তাদের ইমামকে জানিয়ে দেবে যে, তারা এ খারাপ লোকটিকে কোনো রকম বিশ্বাস না করে। তার অন্যায় অবিচার ও যুলুম নির্যাতনকে যেন তারা সমর্থন না করে । তার অপপ্রচারে কিছু আসে যায় না।

আর এ সব তখনই যখন দেখে যে, ইমাম সত্যিকার অর্থে নির্যাতিত। আর যদি বাস্তবে ইমাম অন্যায়কারী বা এমন কোনো ভুলের মধ্যে থাকে, যার ওপর ভিত্তি করে পারস্পরিক শত্রুতা সৃষ্টি হয়, তাহলে মুসল্লীদের করণীয় হলো, তারা তাদের ইমামকে সার্বিকভাবে সতর্ক করবে এবং তাকে বিভিন্ন ধরনের উপদেশ দিয়ে বোঝাতে চেষ্টা করবে। তবে তারা সতর্ক করা বা উপদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে সুন্নাতের অনুসরণ করবে, সঠিক নিয়ম পদ্ধতি পালন করবে ও পূর্বতন মনীষীদের আদর্শ মেনে চলবে। যদি তার সাথে বসার প্রয়োজন পড়ে, তবে তারা তার সাথে বসবে এবং ইমামের যে সব ভুল-ত্রুটি আছে তা তাকে জানিয়ে দেবে। সে যদি সংশোধন হয় এবং অন্যায় ও ভুল হতে ফিরে আসে, তাহলে সে তার নিজের ও অন্যদের দায়মুক্ত করল। আর যদি ইমাম ফিরে না আসে এবং সে তার ভুলের ওপর অবিচল থাকে তাহলে সে দায়মুক্ত হতে পারবে না। তবে মুসল্লীরা তাদের ওপর আরোপিত দায়িত্ব আদায় করাতে দায় মুক্ত হবে।

হে আল্লাহ, তুমি ইমামদের সঠিক পথ দেখাও...

হে আল্লাহ, তুমি তাদের হিদায়াতপ্রাপ্ত ও বিভ্রান্ত জাতির জন্য পথ-প্রদর্শক বানিয়ে দাও...

হে আল্লাহ, তুমি ইমামদের ইমামতিকে বরকতপূর্ণ কর, তাদের আখলাক ও চরিত্রে উন্নতি দান কর, তাদের যাবতীয় কর্মে বরকত দাও এবং সর্বাবস্থায় তাদের সহযোগিতা কর। আমীন॥

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন