HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
মসজিদের ইমামদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান
লেখকঃ আব্দুল আযীয ইবন মুহাম্মদ ইবন আব্দুল্লাহ আস-সাদহান
৩
মসজিদের ইমামদের প্রতি উদাত্ত আহ্বানসকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য যিনি সমগ্র জগতের স্রষ্টা ও প্রতিপালক। আর সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক আল্লাহ তা‘আলার প্রেরিত রাসূলের ওপর যিনি সত্যিকার আমানতদার। অতঃপর, আমি মুসলিমদের অবগতির জন্য বলছি-
হে মুসলিম ভাইয়েরা...!
তোমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, আল্লাহ তা‘আলা মসজিদসমূহকে মহা মর্যাদা ও সুউচ্চ মর্তবার অধিকারী বানিয়েছেন। ইসলামে মুসলিমদের জন্য মসজিদসমূহ হলো তাদের যাবতীয় কাজের কেন্দ্র-বিন্দু। ইসলামের প্রথম যুগে মসজিদ থেকেই মুসলিমদের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হতচ কিন্তু বর্তমানে আমরা মসজিদের মর্যাদা, সম্মান ও ভূমিকা সম্পর্কে একেবারেই বেখবর। যদিও আল্লাহ তা‘আলা মসজিদের সম্মান ও তার মর্যাদা সম্পর্কে জানার জন্য আমাদের বিশেষ কিছু বিধান নির্ধারণ করে দিয়েছেন, তা সত্ত্বেও আমরা তা উপলব্ধি করতে পারি না। যেমন, মসজিদে প্রবেশের পর বসার পূর্বে তাহিয়্যাতুল মসজিদ দু রাকাত সালাত আদায়, মসজিদের ভিতর যিকির করা, সালাতের উদ্দেশ্য ছাড়া মসজিদকে হাটা-চলার পথ বানানো নিষিদ্ধ হওয়া ও মসজিদে বেচা-কেনা হতে বিরত থাকার নির্দেশ ইত্যাদি মসজিদের বিধান আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন।
এ-ছাড়াও মনে রাখতে হবে, যেহেতু মসজিদ সাধারণত ইসলামের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত ফরয সালাত আদায় ও অন্যান্য দ্বীনি কাজগুলো আঞ্জাম দেওয়ার জন্য মুসলিমদের মিলনকেন্দ্র, তাই ইসলামে মসজিদের গুরুত্ব, ফযীলত ও মর্যাদা অপরিসীম।
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবন তাইমিয়্যাহ্ রহ. বলেন, মসজিদগুলো উম্মতের প্রাণ কেন্দ্র ও ইমামদের অবস্থান স্থল। মদীনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র মসজিদে নববীকে তাকওয়ার ভিত্তিতেই নির্মাণ করা হয়েছিল। তাতে সালাত আদায়, কুরআন তিলাওয়াত, যিকির, তা‘লীম ও খুতবা সবই করা হত। এ ছাড়াও তখনকার যুগের রাজনীতি, পরামর্শ, মতামত গ্রহণ আমীর নির্বাচন ও সম্মানী লোকদের সম্বর্ধনা ও পরিচিতি অনুষ্ঠান সব মসজিদেই অনুষ্ঠিত হত। মুসলিমদের দীন ও দুনিয়ার ব্যাপারে কোন প্রকার বিপদ-আপদ, দুর্ভোগ বা দুশ্চিন্তা দেখা দিলে তখন সবাই মসজিদে এসে একত্র হত এবং তা নিরসনের বিষয়ে মসজিদ থেকেই সমাধানের চিন্তা করা হত।
হে মুসলিম ভাইয়েরা...!
বর্তমান যুগে মসজিদের ভূমিকা খুবই সীমিত। যদি মসজিদের ভূমিকা উল্লেখিত পর্যায়ের গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হত, অবশ্যই আমাদের বলতে হত যে, এ মর্যাদা ও গুরুত্বের ধারক বাহক হিসেবে সর্বাধিক উত্তম ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তারাই যারা মসজিদসমূহে ইমামতি করে এবং যারা মুসলিমদের একত্র হওয়ার কেন্দ্র-বিন্দুতে পরিণত হয়ে থাকে। কারণ, নফল সালাত বা অন্যান্য কাজের কথা বাদ দিলেও লোকেরা কম পক্ষে দৈনিক পাঁচবার তাদের পিছনে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে এবং মসজিদে একত্র হয়।
মনে রাখতে হবে, মসজিদের একজন ইমামের মর্যাদা, সাওয়াব ও বিনিময়ের দিক বিবেচনায় বিশিষ্ট ও অধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হওয়ার দাবি রাখে। কারণ, একজন ইমামের দ্বারা উপকার লাভ বা ত্রুটির কারণে ক্ষতি সম্মুখীন হওয়া শুধু তার নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তাদের পিছনে যারা সালাত আদায় করে তাদের মধ্যেও একজন ইমামের প্রভাব বিদ্যমান থাকে এবং তাদের ওপর উপকার বা ক্ষতির প্রভাব পড়ে। এ কারণেই এ বিষয়ে হাদীসে অনেক দিক নির্দেশনা ও বিভিন্ন ধরনের বিধান রাখা হয়েছে।
আবু হুরায়র রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ইমাম হলো, দায়িত্বশীল আর মুয়ায্যিন হলো, আমানতদার। হে আল্লাহ! তুমি ইমামদের সঠিক পথে পরিচালনা কর এবং মুয়ায্যিনদের তুমি ক্ষমা কর। [আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিযী।]
উকবা ইবন আমের থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি কোন জামা‘আতের ইমামতি করে এবং সে ইমামতির পুরো হক আদায় করে, তাহলে সে পরিপূর্ণ সাওয়াব পাবে এবং মুসল্লীরাও পরিপূর্ণ সাওয়াব পাবে। আর যদি সে পুরো হক আদায় করতে না পারে, তাহলে মুসল্লীরা পুরো সাওয়াব পাবে এবং ইমাম গুনাহগার হবে। [আহমদ।]
আবি উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তিন ব্যক্তির সালাত তাদের কানও অতিক্রম করে না। এক- পলাতক দাস ফিরে না আসা পর্যন্ত। দুই- যে মহিলার ওপর তার স্বামী যৌক্তিক কারণে নাখোশ ও ক্ষুব্ধ। তিন-যে ইমামকে (শরী‘আতসম্মত কারণে) মুসল্লীরা অপছন্দ করে।
মসজিদের ইমামদের প্রতি পয়গাম...
হে ইমামগণ...!
একজন ইমামের জন্য সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো, সে তার মসজিদের মুসল্লীদের সাথে এমন ব্যবহার করবে, যাতে সমাজে সে একজন অনুকরণীয় ও আদর্শ পুরুষ হিসেবে সকলের নিকট সমাদৃত ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিতে পরিণত হয়। আর তার জন্য তাকে যা করতে হবে তা হলো, আলেমদের সম্মান, বড়দের ইজ্জত, ছোটদের আদর, রোগীদের দেখতে যাওয়া, দুর্বলদের খোঁজ খবর নেয়া, অসহায় লোকদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসা, তাদের কল্যাণের জন্য সর্বদা সচেষ্ট হওয়া ইত্যাদি। এ সব সামাজিক কাজগুলো একজন ইমামকে অবশ্যই করতে হবে। তাহলেই সে সমাজে গ্রহণযোগ্যতা পাবে এবং সমাজের মানুষ তাকে সম্মান করবে।
হে ইমামগণ...!
তোমরা একটি কথা মনে রাখবে-আল্লাহ তোমাদের হিফাযত করুক- তোমরা যদি আদর্শবান ও সত্যানুসারী হও, তবে তার প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া তাদের মধ্যেও সৃষ্টি হবে, যাদের নিকট তোমরা দাওয়াত পৌছাও, যারা তোমাদের মজলিশে উপস্থিত থাকে এবং তোমাদের কথা ও ওয়ায-নসীহত শোনে। ফলে আনুগত্যশীলের আনুগত্য আরও বৃদ্ধি পাবে এবং যারা অলস প্রকৃতির তাদেরও আল্লাহর প্রতি আনুগত্য ও বশ্যতা আরও জোরদার হবে।
হে ইমামগণ! (আল্লাহ তোমাদের হিফাযত করুন) তোমরা সর্বাবস্থায় উত্তম আদর্শের অধিকারী হওয়ার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ কর এবং তোমাদের যাতে কোনো প্রকার পদস্খলন না হয় সে ব্যাপারে তোমরা অধিক সতর্ক থাকবে। তোমরা যাবতীয় উত্তম গুণাবলীর সমাহার তোমাদের মধ্যে ঘটিয়ে আল্লাহর রঙে নিজেদের রাঙ্গাও।
অতঃপর তোমাদের সুনাম ও সুখ্যাতি নষ্ট করে এ ধরনের কোন অন্যায় ও অশ্লীল কাজ করা হতে তোমরা সম্পূর্ণ বিরত থাকবে। কারণ, তোমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি ও তার প্রভাব শুধু তোমাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না; বরং যারা তোমাদের থেকে শ্রবণ করে ও তোমাদের অনুকরণ করে তাদের মধ্যেও তার প্রভাব বিস্তার করে।
মোটকথা, সব ধরনের অন্যায় কাজ হতে বিরত থাকবে। বিশেষ করে চারিত্রিক ত্রুটি-বিচ্যুতি হতে তোমাদের সম্পূর্ণ মুক্ত থাকতে হবে, যাতে লোকেরা তোমাদের দোষ- ত্রুটি আলোচনা করে তোমাদেরকে তাদের মুখের লোকমা ও তাদের মজলিশের ফল বানাতে না পারে। তোমাদের থেকে চারিত্রিক কোনো পদস্খলন প্রকাশ পেলে মানুষের অন্তরে তোমাদের প্রতি বিদ্বেষ ও ঘৃণা সৃষ্টি হবে। ফলে তারা তোমাদের পিছনে সালাত আদায় করাকে অপছন্দ করবে, তোমাদের ওয়ায-নসীহত ও আখলাক দ্বারা প্রভাবিত হবে না এবং তোমাদের আমলের প্রতি তারা কোন প্রকার মনোযোগী হবে না। বরং তারা তোমাদের নসীহত শোনতে অনাগ্রহী হবে এবং তোমরা যখন বক্তব্য দিবে তখন তারা মজলিশ হতে চলে যাওয়ার জন্য তাড়াহুড়া করবে।
হে ইমামগণ...!
মনে রাখবে (আল্লাহ তোমাদের হিফাযত করুন) তোমাদের ঘাড়ে রয়েছে বিশাল আমানত; অতীব গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। তোমরা এ আমানত ও গুরু দায়িত্বের যথাযথ হিফাযত করবে, আমানতদারী রক্ষা ও গুরু-দায়িত্ব আদায়ে যেন তোমাদের কোনো প্রকার ত্রুটি-বিচ্যুতি ও অসাবধানতা প্রকাশ না পায়। আর সমাজে তোমাদের যে সুনাম ও পরিচিতি রয়েছে তোমরা প্রাণপণ চেষ্টা করবে যাতে তোমাদের পরিচিতি ও সুনাম যেন অক্ষত থাকে এবং কলঙ্কিত না হয়।
সমাজের লোকেরা তাদের দীনের বিষয়ে তোমাদের প্রতি সন্তুষ্টি জ্ঞাপন করছে, তাই তোমরা তাদের সু-ধারণাকে সমুন্নত রাখতে বদ্ধপরিকর হবে। এমন কোন কাজ করবে না যা তোমাদের সুখ্যাতি ও সু-ধারণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলে। শুধু তাই নয়, বরং তাদের ধারণার চেয়েও তোমাকে আরও অধিক খ্যাতি ও সুনাম অর্জন করতে হবে। তোমার ভাবমূর্তি যাতে ক্ষুণ্ন না হয় সেদিকে তোমাকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
ইমামতি করা যে কত বড় দায়িত্ব, তার প্রতি তোমাদের অনুভূতিশীল হতে হবে। এ মহান দায়িত্বকে যথাযথভাবে আদায় করতে ও পরিপূর্ণরূপে পালনে তোমাদের থেকে যেন কোন প্রকার ত্রুটি-বিচ্যুতি প্রকাশ না পায়, সে ব্যাপারে তোমাদের অবশ্যই অধিক দায়িত্বশীল হতে হবে।
সালাতে তোমরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাচনিক ও কার্যগত সুন্নাতগুলোর যথাসাধ্য অনুসরণ করবে এবং তোমরা তোমাদের সালাতে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণীর পরিপূর্ণ অনুসরণ করতে যথা সম্ভব চেষ্টা করবে। তিনি বলেন,
«صلوا كما رأيتموني أصلي»
“তোমরা যেভাবে আমাকে সালাত আদায় করতে দেখ, ঠিক সেভাবে সালাত আদায় কর।” [সহীহ বুখারী।]
সালাতে তোমরা রুকু সাজদাগুলো সুন্নাত মোতাবেক পরিপূর্ণরূপে আদায় করবে, রুকু সেজদা আদায় করতে কোন প্রকার তাড়াহুড়া করবে না। কারণ, পরিপূর্ণরূপে রুকু সাজদাহ আদায় না করে তাতে তাড়াহুড়ো করে সালাত আদায়কৃত সালাতকে হাদীসে কাকের ঠোকর বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আর সালাত আদায়ে কাকের ঠোকরের মত ঠোকর দেওয়াকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অনেক ইমাম মনে করে, রুকু সেজদায় তাড়াহুড়া করা মুক্তাদিদের অবস্থার বিবেচনা করেই হয়ে থাকে যা শরীয়তসম্মত। বাস্তবে তাদের এ ধরনের ধারণা সম্পূর্ণ ভুল ও সালাত আদায়ের সঠিক পদ্ধতির একেবারেই পরিপন্থী। কারণ, শরী‘আত নির্দেশিত ‘সংক্ষিপ্ত করণ’ অর্থাৎ হাদীসে সালাতকে সংক্ষিপ্ত করার যে নির্দেশ দিয়েছে, তা সুন্নাতের অনুসরণের মাধ্যমেই হয়ে থাকে। সুন্নাতকে বাদ দিয়ে সংক্ষিপ্ত করতে বলা হয় নি।
আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
«كان رسول الله ﷺ يوجز الصلاة ويكملها»
‘‘রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত সংক্ষিপ্ত করতেন এবং তা পরিপূর্ণরূপে আদায় করতেন’’।
আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম রহ. সালাত সংক্ষিপ্তকরণ ও পরিপূর্ণকরণ এ দু’টির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে যে ধরনের সংক্ষিপ্ত করত, তার অর্থ সে ব্যক্তির ধারণা মত নয়, যে তার সালাতে একটি রুকন আদায়ের সমপরিমাণ সময়ও অপেক্ষা করে না এবং সালাতে তাড়াহুড়া করে।
মনে রাখতে হবে, সংক্ষিপ্তকরণ এমন একটি বিষয়, যা আপেক্ষিক হয়ে থাকে। আর সুন্নাতের অনুসরণ করাই হলো এর শেষ গন্তব্য। ইমাম তার পিছনে মুক্তাদিদের চাহিদানুযায়ী সালাত আদায় করার মাধ্যমে সংক্ষিপ্তকরণ হয় না। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের জেনে শোনে আমল করার তাওফীক দান করুন।
হে ইমামগণ...
তোমরা অবশ্যই মনে রাখবে, একজন ইমামের বাহ্যিক দৃশ্য যেন হয়, সে যে সত্বার সম্মুখে দণ্ডায়মান হয়েছে তার শানের উপযুক্ত। তার পোশাক-আশাক হবে পরিষ্কার -পরিচ্ছন্ন, বাহ্যিক দৃশ্য হবে সুন্দর, তার শরীর থাকবে সুগন্ধীযুক্ত এবং তার মুখ থাকবে দুগর্ন্ধমুক্ত। সে সর্বদা পাক-পবিত্র থাকবে। সালাতের পূর্ব মুহূর্তে মিসওয়াক করে মুখের দুর্গন্ধ দূর করে নিবে। আর এ ধরনের সাজ-সজ্জা অবলম্বন করা আল্লাহর নির্দেশেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَٰبَنِيٓ ءَادَمَ خُذُواْ زِينَتَكُمۡ عِندَ كُلِّ مَسۡجِدٖ﴾ [ الاعراف : ٣١ ]
‘‘হে আদম সন্তান তোমরা প্রত্যেক সালাতের সময় তোমাদের সৌন্দর্য অবলম্বন কর’’। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৩১]
হাদীসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إن الله أحق من تزين له»
যাদের জন্য সাজ-সজ্জা গ্রহণ করা হয়, তাদের থেকে আল্লাহ তা‘আলাই সর্বাধিক উপযুক্ত।
সাজ-সজ্জা তথা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করার মধ্যে আল্লাহর রাজি-খুশি ও সন্তুষ্টি রয়েছে, এটি সালাতে খুশূ‘ তথা একাগ্রতার উপকরণ এবং ইমামের দ্বারা মুক্তাদিদের প্রভাবিত হওয়ার প্রতিও একরকম আহবান। অর্থাৎ, ইমাম যখন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকবে তখন মুক্তাদিরা তার অনুকরণ করবে।
হে ইমামগণ...
তোমরা সালাতের কাতারগুলো ঠিক করার প্রতি অধিক যত্নবান হও। কাতার ঠিক করার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। আর মনে রাখবে এ ক্ষেত্রে শুধু এদিক সেদিক তাকানোই যথেষ্ট নয়। অনেক ইমামকে দেখা যায়, শুধু এদিক সেদিক তাকিয়েই সালাতে দাঁড়িয়ে যায় অথচ সালাতের কাতারগুলো এখনো আঁকা-বাঁকা রয়ে গেছে। বরং তোমরা মুসল্লীদের সঠিকভাবে দাঁড়ানো ও একসাথে একজন অপর জনের সাথে মিশে দাঁড়ানোর জন্য নির্দেশ দেবে। কোনো মুসল্লী কাতারের অগ্রে চলে আসলে তাকে পিছনে যেতে বলবে, আবার কেউ পিছনে থাকলে তাকে সামনে আসতে বলবে। প্রয়োজনে ইমাম কাতারের ভিতরে প্রবেশ করে হলেও সালাতের কাতার ঠিক করবে। তাদের তুমি পরস্পরের সাথে মিলে দাঁড়ানো ও ফাঁকা বন্ধ করতে উৎসাহ প্রদান করবে। আর এটিই হলো, সালাতের পূর্ণতা ও সম্পন্নতা।
যেমন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«سووا صفوفكم فإن تسوية الصفوف من إقامة الصلاة»
‘‘তোমরা তোমাদের কাতারসমূহ সোজা কর। কারণ, সালাতে কাতার ঠিক করা সালাত কায়েমেরই অন্তর্ভুক্ত’’। [শাইখান (বুখারী ও মুসলিম) হাদীসটি আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন।]
হে ইমামগণ... তোমরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কীভাবে সালাত আদায় করতেন এবং তিনি সালাতে কি পড়তেন তা জেনে তদনুযায়ী সালাত আদায় করতে সচেষ্ট হবে।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«من توضأ كما أمر وصلى كما أمر غفر له ما تقدم من ذنبه»
‘‘যে ব্যক্তি যেভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সেভাবে ওজু করে এবং সালাত আদায় করে, তার অতীত জীবনের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়’’।
হে ইমামগণ...
শরী‘আতের বিধানাবলিতে যাতে কোনো প্রকার বিকৃতি না ঘটে, সে জন্য তোমরা সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবে। সমাজে কোনো ধরনের বিদ‘আত ও কুসংস্কার প্রকাশ পাওয়ার উপক্রম হলে তোমরা তাড়াতাড়ি করে সে বিষয় সম্পর্কে মসজিদে বয়ান দেবে, যাতে মানুষ বিদ‘আত থেকে নিজেকে রক্ষা করে। আর কোনো অশ্লীল কাজ প্রসার লাভ করতে আরম্ভ করলে তখনও তোমরা মানুষকে তা হতে বাঁচানোর জন্য নসীহত করবে। মসজিদে তার খারাপ দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করবে।
মিথ্যা সংবাদের ওপর ভিত্তি করে প্রকাশিত সংবাদপত্র সম্পর্কে তোমরা জাতিকে সতর্ক করবে। সংবাদ পত্রের সব কথাই যেন তারা সত্য মনে না করে। কারণ, বর্তমানে সংবাদ পত্রগুলোতে নাস্তিক মুরতাদদের প্রভাব বলবৎ থাকাতে সেগুলো সর্বদা ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।
তোমরা সমাজে যে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে আছ, সে সম্পর্কে তোমাদের অবশ্যই সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে। তোমাদের কথা-কাজ ও সতর্কীকরণ যেন রোগ বিস্তার লাভের পূর্বেই রোগীর চিকিৎসা হয়। আর তোমরা এসব কাজগুলো তখন করতে পারবে, যখন তোমরা নিজেরা যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে সতর্ক ও ওয়াকেফহাল হবে এবং উম্মতের অবস্থা সম্পর্কে তোমরা অবগত থাকবে। আর তার জন্যে প্রয়োজন ইসলামী শরী‘আত ও কুরআন-হাদীস সম্পর্কে তোমাদের সম্যক জ্ঞান।
হে মুসলিম ভাইয়েরা...!
তোমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, আল্লাহ তা‘আলা মসজিদসমূহকে মহা মর্যাদা ও সুউচ্চ মর্তবার অধিকারী বানিয়েছেন। ইসলামে মুসলিমদের জন্য মসজিদসমূহ হলো তাদের যাবতীয় কাজের কেন্দ্র-বিন্দু। ইসলামের প্রথম যুগে মসজিদ থেকেই মুসলিমদের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হতচ কিন্তু বর্তমানে আমরা মসজিদের মর্যাদা, সম্মান ও ভূমিকা সম্পর্কে একেবারেই বেখবর। যদিও আল্লাহ তা‘আলা মসজিদের সম্মান ও তার মর্যাদা সম্পর্কে জানার জন্য আমাদের বিশেষ কিছু বিধান নির্ধারণ করে দিয়েছেন, তা সত্ত্বেও আমরা তা উপলব্ধি করতে পারি না। যেমন, মসজিদে প্রবেশের পর বসার পূর্বে তাহিয়্যাতুল মসজিদ দু রাকাত সালাত আদায়, মসজিদের ভিতর যিকির করা, সালাতের উদ্দেশ্য ছাড়া মসজিদকে হাটা-চলার পথ বানানো নিষিদ্ধ হওয়া ও মসজিদে বেচা-কেনা হতে বিরত থাকার নির্দেশ ইত্যাদি মসজিদের বিধান আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন।
এ-ছাড়াও মনে রাখতে হবে, যেহেতু মসজিদ সাধারণত ইসলামের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত ফরয সালাত আদায় ও অন্যান্য দ্বীনি কাজগুলো আঞ্জাম দেওয়ার জন্য মুসলিমদের মিলনকেন্দ্র, তাই ইসলামে মসজিদের গুরুত্ব, ফযীলত ও মর্যাদা অপরিসীম।
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবন তাইমিয়্যাহ্ রহ. বলেন, মসজিদগুলো উম্মতের প্রাণ কেন্দ্র ও ইমামদের অবস্থান স্থল। মদীনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র মসজিদে নববীকে তাকওয়ার ভিত্তিতেই নির্মাণ করা হয়েছিল। তাতে সালাত আদায়, কুরআন তিলাওয়াত, যিকির, তা‘লীম ও খুতবা সবই করা হত। এ ছাড়াও তখনকার যুগের রাজনীতি, পরামর্শ, মতামত গ্রহণ আমীর নির্বাচন ও সম্মানী লোকদের সম্বর্ধনা ও পরিচিতি অনুষ্ঠান সব মসজিদেই অনুষ্ঠিত হত। মুসলিমদের দীন ও দুনিয়ার ব্যাপারে কোন প্রকার বিপদ-আপদ, দুর্ভোগ বা দুশ্চিন্তা দেখা দিলে তখন সবাই মসজিদে এসে একত্র হত এবং তা নিরসনের বিষয়ে মসজিদ থেকেই সমাধানের চিন্তা করা হত।
হে মুসলিম ভাইয়েরা...!
বর্তমান যুগে মসজিদের ভূমিকা খুবই সীমিত। যদি মসজিদের ভূমিকা উল্লেখিত পর্যায়ের গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হত, অবশ্যই আমাদের বলতে হত যে, এ মর্যাদা ও গুরুত্বের ধারক বাহক হিসেবে সর্বাধিক উত্তম ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তারাই যারা মসজিদসমূহে ইমামতি করে এবং যারা মুসলিমদের একত্র হওয়ার কেন্দ্র-বিন্দুতে পরিণত হয়ে থাকে। কারণ, নফল সালাত বা অন্যান্য কাজের কথা বাদ দিলেও লোকেরা কম পক্ষে দৈনিক পাঁচবার তাদের পিছনে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে এবং মসজিদে একত্র হয়।
মনে রাখতে হবে, মসজিদের একজন ইমামের মর্যাদা, সাওয়াব ও বিনিময়ের দিক বিবেচনায় বিশিষ্ট ও অধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হওয়ার দাবি রাখে। কারণ, একজন ইমামের দ্বারা উপকার লাভ বা ত্রুটির কারণে ক্ষতি সম্মুখীন হওয়া শুধু তার নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তাদের পিছনে যারা সালাত আদায় করে তাদের মধ্যেও একজন ইমামের প্রভাব বিদ্যমান থাকে এবং তাদের ওপর উপকার বা ক্ষতির প্রভাব পড়ে। এ কারণেই এ বিষয়ে হাদীসে অনেক দিক নির্দেশনা ও বিভিন্ন ধরনের বিধান রাখা হয়েছে।
আবু হুরায়র রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ইমাম হলো, দায়িত্বশীল আর মুয়ায্যিন হলো, আমানতদার। হে আল্লাহ! তুমি ইমামদের সঠিক পথে পরিচালনা কর এবং মুয়ায্যিনদের তুমি ক্ষমা কর। [আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিযী।]
উকবা ইবন আমের থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি কোন জামা‘আতের ইমামতি করে এবং সে ইমামতির পুরো হক আদায় করে, তাহলে সে পরিপূর্ণ সাওয়াব পাবে এবং মুসল্লীরাও পরিপূর্ণ সাওয়াব পাবে। আর যদি সে পুরো হক আদায় করতে না পারে, তাহলে মুসল্লীরা পুরো সাওয়াব পাবে এবং ইমাম গুনাহগার হবে। [আহমদ।]
আবি উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তিন ব্যক্তির সালাত তাদের কানও অতিক্রম করে না। এক- পলাতক দাস ফিরে না আসা পর্যন্ত। দুই- যে মহিলার ওপর তার স্বামী যৌক্তিক কারণে নাখোশ ও ক্ষুব্ধ। তিন-যে ইমামকে (শরী‘আতসম্মত কারণে) মুসল্লীরা অপছন্দ করে।
মসজিদের ইমামদের প্রতি পয়গাম...
হে ইমামগণ...!
একজন ইমামের জন্য সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো, সে তার মসজিদের মুসল্লীদের সাথে এমন ব্যবহার করবে, যাতে সমাজে সে একজন অনুকরণীয় ও আদর্শ পুরুষ হিসেবে সকলের নিকট সমাদৃত ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিতে পরিণত হয়। আর তার জন্য তাকে যা করতে হবে তা হলো, আলেমদের সম্মান, বড়দের ইজ্জত, ছোটদের আদর, রোগীদের দেখতে যাওয়া, দুর্বলদের খোঁজ খবর নেয়া, অসহায় লোকদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসা, তাদের কল্যাণের জন্য সর্বদা সচেষ্ট হওয়া ইত্যাদি। এ সব সামাজিক কাজগুলো একজন ইমামকে অবশ্যই করতে হবে। তাহলেই সে সমাজে গ্রহণযোগ্যতা পাবে এবং সমাজের মানুষ তাকে সম্মান করবে।
হে ইমামগণ...!
তোমরা একটি কথা মনে রাখবে-আল্লাহ তোমাদের হিফাযত করুক- তোমরা যদি আদর্শবান ও সত্যানুসারী হও, তবে তার প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া তাদের মধ্যেও সৃষ্টি হবে, যাদের নিকট তোমরা দাওয়াত পৌছাও, যারা তোমাদের মজলিশে উপস্থিত থাকে এবং তোমাদের কথা ও ওয়ায-নসীহত শোনে। ফলে আনুগত্যশীলের আনুগত্য আরও বৃদ্ধি পাবে এবং যারা অলস প্রকৃতির তাদেরও আল্লাহর প্রতি আনুগত্য ও বশ্যতা আরও জোরদার হবে।
হে ইমামগণ! (আল্লাহ তোমাদের হিফাযত করুন) তোমরা সর্বাবস্থায় উত্তম আদর্শের অধিকারী হওয়ার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ কর এবং তোমাদের যাতে কোনো প্রকার পদস্খলন না হয় সে ব্যাপারে তোমরা অধিক সতর্ক থাকবে। তোমরা যাবতীয় উত্তম গুণাবলীর সমাহার তোমাদের মধ্যে ঘটিয়ে আল্লাহর রঙে নিজেদের রাঙ্গাও।
অতঃপর তোমাদের সুনাম ও সুখ্যাতি নষ্ট করে এ ধরনের কোন অন্যায় ও অশ্লীল কাজ করা হতে তোমরা সম্পূর্ণ বিরত থাকবে। কারণ, তোমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি ও তার প্রভাব শুধু তোমাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না; বরং যারা তোমাদের থেকে শ্রবণ করে ও তোমাদের অনুকরণ করে তাদের মধ্যেও তার প্রভাব বিস্তার করে।
মোটকথা, সব ধরনের অন্যায় কাজ হতে বিরত থাকবে। বিশেষ করে চারিত্রিক ত্রুটি-বিচ্যুতি হতে তোমাদের সম্পূর্ণ মুক্ত থাকতে হবে, যাতে লোকেরা তোমাদের দোষ- ত্রুটি আলোচনা করে তোমাদেরকে তাদের মুখের লোকমা ও তাদের মজলিশের ফল বানাতে না পারে। তোমাদের থেকে চারিত্রিক কোনো পদস্খলন প্রকাশ পেলে মানুষের অন্তরে তোমাদের প্রতি বিদ্বেষ ও ঘৃণা সৃষ্টি হবে। ফলে তারা তোমাদের পিছনে সালাত আদায় করাকে অপছন্দ করবে, তোমাদের ওয়ায-নসীহত ও আখলাক দ্বারা প্রভাবিত হবে না এবং তোমাদের আমলের প্রতি তারা কোন প্রকার মনোযোগী হবে না। বরং তারা তোমাদের নসীহত শোনতে অনাগ্রহী হবে এবং তোমরা যখন বক্তব্য দিবে তখন তারা মজলিশ হতে চলে যাওয়ার জন্য তাড়াহুড়া করবে।
হে ইমামগণ...!
মনে রাখবে (আল্লাহ তোমাদের হিফাযত করুন) তোমাদের ঘাড়ে রয়েছে বিশাল আমানত; অতীব গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। তোমরা এ আমানত ও গুরু দায়িত্বের যথাযথ হিফাযত করবে, আমানতদারী রক্ষা ও গুরু-দায়িত্ব আদায়ে যেন তোমাদের কোনো প্রকার ত্রুটি-বিচ্যুতি ও অসাবধানতা প্রকাশ না পায়। আর সমাজে তোমাদের যে সুনাম ও পরিচিতি রয়েছে তোমরা প্রাণপণ চেষ্টা করবে যাতে তোমাদের পরিচিতি ও সুনাম যেন অক্ষত থাকে এবং কলঙ্কিত না হয়।
সমাজের লোকেরা তাদের দীনের বিষয়ে তোমাদের প্রতি সন্তুষ্টি জ্ঞাপন করছে, তাই তোমরা তাদের সু-ধারণাকে সমুন্নত রাখতে বদ্ধপরিকর হবে। এমন কোন কাজ করবে না যা তোমাদের সুখ্যাতি ও সু-ধারণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলে। শুধু তাই নয়, বরং তাদের ধারণার চেয়েও তোমাকে আরও অধিক খ্যাতি ও সুনাম অর্জন করতে হবে। তোমার ভাবমূর্তি যাতে ক্ষুণ্ন না হয় সেদিকে তোমাকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
ইমামতি করা যে কত বড় দায়িত্ব, তার প্রতি তোমাদের অনুভূতিশীল হতে হবে। এ মহান দায়িত্বকে যথাযথভাবে আদায় করতে ও পরিপূর্ণরূপে পালনে তোমাদের থেকে যেন কোন প্রকার ত্রুটি-বিচ্যুতি প্রকাশ না পায়, সে ব্যাপারে তোমাদের অবশ্যই অধিক দায়িত্বশীল হতে হবে।
সালাতে তোমরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাচনিক ও কার্যগত সুন্নাতগুলোর যথাসাধ্য অনুসরণ করবে এবং তোমরা তোমাদের সালাতে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণীর পরিপূর্ণ অনুসরণ করতে যথা সম্ভব চেষ্টা করবে। তিনি বলেন,
«صلوا كما رأيتموني أصلي»
“তোমরা যেভাবে আমাকে সালাত আদায় করতে দেখ, ঠিক সেভাবে সালাত আদায় কর।” [সহীহ বুখারী।]
সালাতে তোমরা রুকু সাজদাগুলো সুন্নাত মোতাবেক পরিপূর্ণরূপে আদায় করবে, রুকু সেজদা আদায় করতে কোন প্রকার তাড়াহুড়া করবে না। কারণ, পরিপূর্ণরূপে রুকু সাজদাহ আদায় না করে তাতে তাড়াহুড়ো করে সালাত আদায়কৃত সালাতকে হাদীসে কাকের ঠোকর বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আর সালাত আদায়ে কাকের ঠোকরের মত ঠোকর দেওয়াকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অনেক ইমাম মনে করে, রুকু সেজদায় তাড়াহুড়া করা মুক্তাদিদের অবস্থার বিবেচনা করেই হয়ে থাকে যা শরীয়তসম্মত। বাস্তবে তাদের এ ধরনের ধারণা সম্পূর্ণ ভুল ও সালাত আদায়ের সঠিক পদ্ধতির একেবারেই পরিপন্থী। কারণ, শরী‘আত নির্দেশিত ‘সংক্ষিপ্ত করণ’ অর্থাৎ হাদীসে সালাতকে সংক্ষিপ্ত করার যে নির্দেশ দিয়েছে, তা সুন্নাতের অনুসরণের মাধ্যমেই হয়ে থাকে। সুন্নাতকে বাদ দিয়ে সংক্ষিপ্ত করতে বলা হয় নি।
আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
«كان رسول الله ﷺ يوجز الصلاة ويكملها»
‘‘রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত সংক্ষিপ্ত করতেন এবং তা পরিপূর্ণরূপে আদায় করতেন’’।
আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম রহ. সালাত সংক্ষিপ্তকরণ ও পরিপূর্ণকরণ এ দু’টির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে যে ধরনের সংক্ষিপ্ত করত, তার অর্থ সে ব্যক্তির ধারণা মত নয়, যে তার সালাতে একটি রুকন আদায়ের সমপরিমাণ সময়ও অপেক্ষা করে না এবং সালাতে তাড়াহুড়া করে।
মনে রাখতে হবে, সংক্ষিপ্তকরণ এমন একটি বিষয়, যা আপেক্ষিক হয়ে থাকে। আর সুন্নাতের অনুসরণ করাই হলো এর শেষ গন্তব্য। ইমাম তার পিছনে মুক্তাদিদের চাহিদানুযায়ী সালাত আদায় করার মাধ্যমে সংক্ষিপ্তকরণ হয় না। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের জেনে শোনে আমল করার তাওফীক দান করুন।
হে ইমামগণ...
তোমরা অবশ্যই মনে রাখবে, একজন ইমামের বাহ্যিক দৃশ্য যেন হয়, সে যে সত্বার সম্মুখে দণ্ডায়মান হয়েছে তার শানের উপযুক্ত। তার পোশাক-আশাক হবে পরিষ্কার -পরিচ্ছন্ন, বাহ্যিক দৃশ্য হবে সুন্দর, তার শরীর থাকবে সুগন্ধীযুক্ত এবং তার মুখ থাকবে দুগর্ন্ধমুক্ত। সে সর্বদা পাক-পবিত্র থাকবে। সালাতের পূর্ব মুহূর্তে মিসওয়াক করে মুখের দুর্গন্ধ দূর করে নিবে। আর এ ধরনের সাজ-সজ্জা অবলম্বন করা আল্লাহর নির্দেশেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَٰبَنِيٓ ءَادَمَ خُذُواْ زِينَتَكُمۡ عِندَ كُلِّ مَسۡجِدٖ﴾ [ الاعراف : ٣١ ]
‘‘হে আদম সন্তান তোমরা প্রত্যেক সালাতের সময় তোমাদের সৌন্দর্য অবলম্বন কর’’। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৩১]
হাদীসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إن الله أحق من تزين له»
যাদের জন্য সাজ-সজ্জা গ্রহণ করা হয়, তাদের থেকে আল্লাহ তা‘আলাই সর্বাধিক উপযুক্ত।
সাজ-সজ্জা তথা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করার মধ্যে আল্লাহর রাজি-খুশি ও সন্তুষ্টি রয়েছে, এটি সালাতে খুশূ‘ তথা একাগ্রতার উপকরণ এবং ইমামের দ্বারা মুক্তাদিদের প্রভাবিত হওয়ার প্রতিও একরকম আহবান। অর্থাৎ, ইমাম যখন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকবে তখন মুক্তাদিরা তার অনুকরণ করবে।
হে ইমামগণ...
তোমরা সালাতের কাতারগুলো ঠিক করার প্রতি অধিক যত্নবান হও। কাতার ঠিক করার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। আর মনে রাখবে এ ক্ষেত্রে শুধু এদিক সেদিক তাকানোই যথেষ্ট নয়। অনেক ইমামকে দেখা যায়, শুধু এদিক সেদিক তাকিয়েই সালাতে দাঁড়িয়ে যায় অথচ সালাতের কাতারগুলো এখনো আঁকা-বাঁকা রয়ে গেছে। বরং তোমরা মুসল্লীদের সঠিকভাবে দাঁড়ানো ও একসাথে একজন অপর জনের সাথে মিশে দাঁড়ানোর জন্য নির্দেশ দেবে। কোনো মুসল্লী কাতারের অগ্রে চলে আসলে তাকে পিছনে যেতে বলবে, আবার কেউ পিছনে থাকলে তাকে সামনে আসতে বলবে। প্রয়োজনে ইমাম কাতারের ভিতরে প্রবেশ করে হলেও সালাতের কাতার ঠিক করবে। তাদের তুমি পরস্পরের সাথে মিলে দাঁড়ানো ও ফাঁকা বন্ধ করতে উৎসাহ প্রদান করবে। আর এটিই হলো, সালাতের পূর্ণতা ও সম্পন্নতা।
যেমন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«سووا صفوفكم فإن تسوية الصفوف من إقامة الصلاة»
‘‘তোমরা তোমাদের কাতারসমূহ সোজা কর। কারণ, সালাতে কাতার ঠিক করা সালাত কায়েমেরই অন্তর্ভুক্ত’’। [শাইখান (বুখারী ও মুসলিম) হাদীসটি আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন।]
হে ইমামগণ... তোমরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কীভাবে সালাত আদায় করতেন এবং তিনি সালাতে কি পড়তেন তা জেনে তদনুযায়ী সালাত আদায় করতে সচেষ্ট হবে।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«من توضأ كما أمر وصلى كما أمر غفر له ما تقدم من ذنبه»
‘‘যে ব্যক্তি যেভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সেভাবে ওজু করে এবং সালাত আদায় করে, তার অতীত জীবনের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়’’।
হে ইমামগণ...
শরী‘আতের বিধানাবলিতে যাতে কোনো প্রকার বিকৃতি না ঘটে, সে জন্য তোমরা সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবে। সমাজে কোনো ধরনের বিদ‘আত ও কুসংস্কার প্রকাশ পাওয়ার উপক্রম হলে তোমরা তাড়াতাড়ি করে সে বিষয় সম্পর্কে মসজিদে বয়ান দেবে, যাতে মানুষ বিদ‘আত থেকে নিজেকে রক্ষা করে। আর কোনো অশ্লীল কাজ প্রসার লাভ করতে আরম্ভ করলে তখনও তোমরা মানুষকে তা হতে বাঁচানোর জন্য নসীহত করবে। মসজিদে তার খারাপ দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করবে।
মিথ্যা সংবাদের ওপর ভিত্তি করে প্রকাশিত সংবাদপত্র সম্পর্কে তোমরা জাতিকে সতর্ক করবে। সংবাদ পত্রের সব কথাই যেন তারা সত্য মনে না করে। কারণ, বর্তমানে সংবাদ পত্রগুলোতে নাস্তিক মুরতাদদের প্রভাব বলবৎ থাকাতে সেগুলো সর্বদা ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।
তোমরা সমাজে যে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে আছ, সে সম্পর্কে তোমাদের অবশ্যই সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে। তোমাদের কথা-কাজ ও সতর্কীকরণ যেন রোগ বিস্তার লাভের পূর্বেই রোগীর চিকিৎসা হয়। আর তোমরা এসব কাজগুলো তখন করতে পারবে, যখন তোমরা নিজেরা যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে সতর্ক ও ওয়াকেফহাল হবে এবং উম্মতের অবস্থা সম্পর্কে তোমরা অবগত থাকবে। আর তার জন্যে প্রয়োজন ইসলামী শরী‘আত ও কুরআন-হাদীস সম্পর্কে তোমাদের সম্যক জ্ঞান।
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন