HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
ইবনুল কাইয়্যেম রহ.-এর কিতাবুর রূহ অবলম্বনে রূহ সম্পর্কিত সংক্ষিপ্ত মাসআলাসমূহ
লেখকঃ সুলাইমান ইবন সালিহ আল-খারাশী
এ সংক্ষিপ্ত পুস্তিকায় ইবনুল কাইয়্যেম রহ.-এর কিতাবুর রূহ অবলম্বনে রূহ সম্পর্কে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা আলোচনা করা হয়েছে। পাঠক এতে নিম্নোক্ত প্রশ্নের উত্তর পাবেন। যেমন, মৃত ব্যক্তি কি জীবিত ব্যক্তির যিয়ারত ও সালাম বুঝতে পারে? না-কি বুঝে না? মৃত ব্যক্তিদের রূহ কি পরম্পর মিলিত হয়, পরম্পর সাক্ষাৎ করে ও কথাবর্তা বলে? রূহ কি জীবিত ও মৃত উভয় ধরণের মানুষের রূহের সাথে মিলিত হয়? রূহ কি মারা যায়, নাকি শুধু শরীর মারা যায়? ইত্যাদি ইত্যাদি।
সমস্ত প্রশংসা সৃষ্টিকুলের রব মহান আল্লাহ তা‘আলার। সালাত ও সালাম নবী ও রাসূলগণের সর্বশ্রেষ্ঠ নবী আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর পরিবার-পরিজন ও তাঁর সাহাবীগণের ওপর বর্ষিত হোক।
অতঃপর, এটি কতিপয় সূক্ষ্ম মাসআলার সংক্ষিপ্ত পুস্তিকা যা আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম রহ. তার “কিতাবুর রূহ” তে উত্তর দিয়েছেন। আমি এতে আলিমগণের মতানৈক্য ও বিভিন্ন দলীল-প্রমাণ উল্লেখ ব্যতীত শুধু সঠিক জবাবগুলো সংক্ষেপে আলোচনা করেছি, যাতে তালিবে ইলম ও সাধারণ মুসলিমদের বুঝতে সহজ হয়।
আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেনো এ কিতাবটি দ্বারা লেখক ও পাঠক উভয়কে উপকৃত করেন। আল্লাহর রহমত আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর বর্ষিত হোক।
সুলাইমান ইবন সালিহ আল-খারাশী
অতঃপর, এটি কতিপয় সূক্ষ্ম মাসআলার সংক্ষিপ্ত পুস্তিকা যা আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম রহ. তার “কিতাবুর রূহ” তে উত্তর দিয়েছেন। আমি এতে আলিমগণের মতানৈক্য ও বিভিন্ন দলীল-প্রমাণ উল্লেখ ব্যতীত শুধু সঠিক জবাবগুলো সংক্ষেপে আলোচনা করেছি, যাতে তালিবে ইলম ও সাধারণ মুসলিমদের বুঝতে সহজ হয়।
আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেনো এ কিতাবটি দ্বারা লেখক ও পাঠক উভয়কে উপকৃত করেন। আল্লাহর রহমত আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর বর্ষিত হোক।
সুলাইমান ইবন সালিহ আল-খারাশী
জবাব: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«ما من مسلم يمر بقبر أخيه كان يعرفه في الدنيا فَيُسَلم عليه، إلا رد الله عليه روحه، حتى يرد عليه السلام» .
“যখন কোনো মুসলিম ব্যক্তি দুনিয়াতে পরিচিত তার কোনো মৃত্যু ভাইয়ের কবরের পাশ দিয়ে গমন করে এবং তাকে সালাম দিলে তখন তার সালামের উত্তর দেওয়ার জন্য আল্লাহ তার রূহকে ফেরত দেন।” [ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত উপরোক্ত হাদীসটি ইবন আব্দুল বার রহ. তার সনদে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। দেখুন, আল-ইসতিযকার, ১/১৮৫; আর-রূহ ফিল কালাম ‘আলা আরওয়াহিল আমওয়াতি ওয়াল আহইয়াই বিদ-দালায়িলি মিনাল কিতাব ওয়াস-সুন্নাহ, ইবনুল কাইয়্যিম রহ. পৃষ্ঠা ৫।] হাদীসের এ কথা দ্বারা প্রমাণিত যে, মৃত ব্যক্তি তাকে চিনতে পারেন এবং তার সালামের উত্তর দেন।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উম্মতকে শিক্ষা দিয়েছেন যে, কবরবাসীকে যখন তারা সালাম দিবেন তখন তাদেরকে মুখাতিব তথা উপস্থিত ব্যক্তিকে সম্বোধন করার শব্দ দ্বারা সালাম দিবেন। ফলে মুসলিম কবরবাসীকে সালামের সময় বলবে,
«السَّلَامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ» .
“তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক, হে মুমিনদের গৃহে বসবাসকারী।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪৯।]
মুতাওয়াতির সূত্রে সালাফদের থেকে অসংখ্য আসার (বাণী) বর্ণিত আছে যে, মৃত ব্যক্তি জীবিত ব্যক্তির যিয়ারত বুঝতে পারেন এবং এতে সে খুশী হন।
কবর যিয়ারতকারী মুসলিমকে যিয়ারতকারী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তারা যদি কারো উপস্থিতি অনুধাবন করতে না পারে তবে যিয়ারতকারীকে যায়ির তথা যিয়ারতকারী বলা হতো না। কেননা যার যিয়ারতের জন্য যাওয়া হয় সে যদি যিয়ারতকারীকে না জানে তবে এ কথা বলা শুদ্ধ হবে না যে, সে তার যিয়ারত করেছে। যিয়ারতের এ ব্যাপারটি সব জাতির কাছে জ্ঞাত ব্যাপার। এমনিভাবে কবরবাসীকে সালাম দেওয়া। কেননা যাকে সালাম দেওয়া হয় সে যদি তা বুঝতে না পারে এবং সালাম প্রদানকারীকে না জানে তাহলে উক্ত ব্যক্তিকে সালাম দেওয়াও অসম্ভব। সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, মৃত ব্যক্তির জানাযার পরে তার কবরের পাশে কিছুক্ষণ কারো অবস্থান করে থাকা সে পছন্দ করে ও ভালোবাসে। [দেখুন সহীহ মুসলিমের হাদীস নং ১২১। এতে ‘আমর ইবনুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু মৃত্যুর পূর্বে তার সন্তানকে বলেছিলেন, “আমাকে যখন দাফন করবে তখন আমার উপর আস্তে আস্তে মাটি ফেলবে এবং দাফন সেরে একটি উট যবাই করে তার গোশত বণ্টন করতে যে সময় লাগে, ততক্ষণ আমার কবরের পাশে অবস্থান করবে, যেনো তোমাদের উপস্থিতির কারণে আমি আতঙ্ক-মুক্ত অবস্থায় চিন্তা করতে পারি যে, আমার রবের দূতের (ফিরিশতার) কী জবাব দেবো।” -অনুবাদক]
«ما من مسلم يمر بقبر أخيه كان يعرفه في الدنيا فَيُسَلم عليه، إلا رد الله عليه روحه، حتى يرد عليه السلام» .
“যখন কোনো মুসলিম ব্যক্তি দুনিয়াতে পরিচিত তার কোনো মৃত্যু ভাইয়ের কবরের পাশ দিয়ে গমন করে এবং তাকে সালাম দিলে তখন তার সালামের উত্তর দেওয়ার জন্য আল্লাহ তার রূহকে ফেরত দেন।” [ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত উপরোক্ত হাদীসটি ইবন আব্দুল বার রহ. তার সনদে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। দেখুন, আল-ইসতিযকার, ১/১৮৫; আর-রূহ ফিল কালাম ‘আলা আরওয়াহিল আমওয়াতি ওয়াল আহইয়াই বিদ-দালায়িলি মিনাল কিতাব ওয়াস-সুন্নাহ, ইবনুল কাইয়্যিম রহ. পৃষ্ঠা ৫।] হাদীসের এ কথা দ্বারা প্রমাণিত যে, মৃত ব্যক্তি তাকে চিনতে পারেন এবং তার সালামের উত্তর দেন।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উম্মতকে শিক্ষা দিয়েছেন যে, কবরবাসীকে যখন তারা সালাম দিবেন তখন তাদেরকে মুখাতিব তথা উপস্থিত ব্যক্তিকে সম্বোধন করার শব্দ দ্বারা সালাম দিবেন। ফলে মুসলিম কবরবাসীকে সালামের সময় বলবে,
«السَّلَامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ» .
“তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক, হে মুমিনদের গৃহে বসবাসকারী।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪৯।]
মুতাওয়াতির সূত্রে সালাফদের থেকে অসংখ্য আসার (বাণী) বর্ণিত আছে যে, মৃত ব্যক্তি জীবিত ব্যক্তির যিয়ারত বুঝতে পারেন এবং এতে সে খুশী হন।
কবর যিয়ারতকারী মুসলিমকে যিয়ারতকারী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তারা যদি কারো উপস্থিতি অনুধাবন করতে না পারে তবে যিয়ারতকারীকে যায়ির তথা যিয়ারতকারী বলা হতো না। কেননা যার যিয়ারতের জন্য যাওয়া হয় সে যদি যিয়ারতকারীকে না জানে তবে এ কথা বলা শুদ্ধ হবে না যে, সে তার যিয়ারত করেছে। যিয়ারতের এ ব্যাপারটি সব জাতির কাছে জ্ঞাত ব্যাপার। এমনিভাবে কবরবাসীকে সালাম দেওয়া। কেননা যাকে সালাম দেওয়া হয় সে যদি তা বুঝতে না পারে এবং সালাম প্রদানকারীকে না জানে তাহলে উক্ত ব্যক্তিকে সালাম দেওয়াও অসম্ভব। সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, মৃত ব্যক্তির জানাযার পরে তার কবরের পাশে কিছুক্ষণ কারো অবস্থান করে থাকা সে পছন্দ করে ও ভালোবাসে। [দেখুন সহীহ মুসলিমের হাদীস নং ১২১। এতে ‘আমর ইবনুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু মৃত্যুর পূর্বে তার সন্তানকে বলেছিলেন, “আমাকে যখন দাফন করবে তখন আমার উপর আস্তে আস্তে মাটি ফেলবে এবং দাফন সেরে একটি উট যবাই করে তার গোশত বণ্টন করতে যে সময় লাগে, ততক্ষণ আমার কবরের পাশে অবস্থান করবে, যেনো তোমাদের উপস্থিতির কারণে আমি আতঙ্ক-মুক্ত অবস্থায় চিন্তা করতে পারি যে, আমার রবের দূতের (ফিরিশতার) কী জবাব দেবো।” -অনুবাদক]
জবাব: রূহ দু’প্রকার:
১- ‘আযাবপ্রাপ্ত রূহ – আল্লাহর কাছে পানাহ চাচ্ছি- এ ধরণের রূহ শাস্তি ভোগের কারণে ব্যস্ত থাকবে বলে পরস্পর দেখা সাক্ষাৎ ও মিলিত হওয়া থেকে বিরত থাকবে।
২- নি‘আমতপ্রাপ্ত রূহ। এসব রূহ বিচরণকারী হবে, এরা আবদ্ধ থাকবে না। তারা পরস্পর মিলিত হয়ে দুনিয়া ও দুনিয়ায় বসবাসকারীদের ব্যাপারে কথাবার্তা বলবেন এবং নিজেরা নিজেদের পরিচিতদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করবেন। প্রত্যেক রূহ তার আমল অনুযায়ী তার পরিচিত বন্ধুর সাথে থাকবেন। আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বোচ্চ বন্ধুর সাথে থাকবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَ فَأُوْلَٰٓئِكَ مَعَ ٱلَّذِينَ أَنۡعَمَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِم مِّنَ ٱلنَّبِيِّۧنَ وَٱلصِّدِّيقِينَ وَٱلشُّهَدَآءِ وَٱلصَّٰلِحِينَۚ وَحَسُنَ أُوْلَٰٓئِكَ رَفِيقٗا٦٩﴾ [ النساء : ٦٩ ]
“আর যারা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করে তারা তাদের সাথে থাকবে, আল্লাহ যাদের উপর অনুগ্রহ করেছেন নবী, সিদ্দীক, শহীদ ও সৎকর্মশীলদের মধ্য থেকে। আর সাথী হিসেবে তারা হবে অনেক উত্তম।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৬৯]
দুনিয়ায়, বারযাখে ও জান্নাতে এভাবে একত্রে থাকা সাব্যস্ত আছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿يَٰٓأَيَّتُهَا ٱلنَّفۡسُ ٱلۡمُطۡمَئِنَّةُ ٢٧ ٱرۡجِعِيٓ إِلَىٰ رَبِّكِ رَاضِيَةٗ مَّرۡضِيَّةٗ ٢٨ فَٱدۡخُلِي فِي عِبَٰدِي ٢٩ وَٱدۡخُلِي جَنَّتِي٣٠﴾ [ الفجر : ٢٧، ٣١ ]
“হে প্রশান্ত আত্মা! তুমি ফিরে এসো তোমার রবের প্রতি সন্তুষ্টচিত্তে, সন্তোষভাজন হয়ে। অতঃপর আমার বান্দাদের মধ্যে শামিল হয়ে যাও। আর প্রবেশ করো আমার জান্নাতে।” [সূরা আল-ফাজর, আয়াত: ২৭-৩১] অর্থাৎ তাদের সাথে শামিল হও এবং তাদের সাথে থাকো। আর এ কথা মৃত্যুর সময় আত্মাকে বলা হবে।
আল্লাহ তা‘আলা শহীদদের সম্পর্কে বলেছেন,
﴿أَحۡيَآءٌ عِندَ رَبِّهِمۡ يُرۡزَقُونَ ١٦٩﴾
“তারা তাদের রবের নিকট জীবিত। তাদেরকে রিযিক দেওয়া হয়।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৬৯]
আল্লাহ তা‘আলা শহীদদের সম্পর্কে আরও বলেছেন,
﴿يَسۡتَبۡشِرُونَ بِٱلَّذِينَ لَمۡ يَلۡحَقُواْ بِهِم مِّنۡ خَلۡفِهِمۡ﴾
“আর তারা উৎফুল্ল হয়, পরবর্তীদের থেকে যারা এখনো তাদের সাথে মিলিত হয় নি তাদের বিষয়ে।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৭০]
আল্লাহ তা‘আলা শহীদদের সম্পর্কে আরও বলেছেন,
﴿يَسۡتَبۡشِرُونَ بِنِعۡمَةٖ مِّنَ ٱللَّهِ وَفَضۡلٖ١٧١ ﴾ [ ال عمران : ١٦٩، ١٧١ ]
“তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে নি‘আমত ও অনুগ্রহ লাভ করে খুশি হয়।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৭১] এ আয়াতসমূহ দ্বারা তাদের পরস্পর মিলিত হওয়া তিনভাবে প্রমাণিত হয়:
১- তারা (শহীদগণ) জীবিত। আর জীবিতরা পরস্পর পরস্পরের সাথে মিলিত হয়, দেখা সাক্ষাৎ করে।
২- তারা তাদের পরবর্তীতে আগমনকারী ভাইদের আগমন ও তাদের সাথে দেখা হওয়ার ব্যাপারে আনন্দিত ও উৎফুল্ল।
৩ -﴿يَسۡتَبۡشِرُونَ﴾ শব্দ প্রমাণ করে যে, তারা পরস্পর পরস্পরে সুসংবাদ দেয় ও খুশি হয়।
১- ‘আযাবপ্রাপ্ত রূহ – আল্লাহর কাছে পানাহ চাচ্ছি- এ ধরণের রূহ শাস্তি ভোগের কারণে ব্যস্ত থাকবে বলে পরস্পর দেখা সাক্ষাৎ ও মিলিত হওয়া থেকে বিরত থাকবে।
২- নি‘আমতপ্রাপ্ত রূহ। এসব রূহ বিচরণকারী হবে, এরা আবদ্ধ থাকবে না। তারা পরস্পর মিলিত হয়ে দুনিয়া ও দুনিয়ায় বসবাসকারীদের ব্যাপারে কথাবার্তা বলবেন এবং নিজেরা নিজেদের পরিচিতদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করবেন। প্রত্যেক রূহ তার আমল অনুযায়ী তার পরিচিত বন্ধুর সাথে থাকবেন। আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বোচ্চ বন্ধুর সাথে থাকবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَ فَأُوْلَٰٓئِكَ مَعَ ٱلَّذِينَ أَنۡعَمَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِم مِّنَ ٱلنَّبِيِّۧنَ وَٱلصِّدِّيقِينَ وَٱلشُّهَدَآءِ وَٱلصَّٰلِحِينَۚ وَحَسُنَ أُوْلَٰٓئِكَ رَفِيقٗا٦٩﴾ [ النساء : ٦٩ ]
“আর যারা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করে তারা তাদের সাথে থাকবে, আল্লাহ যাদের উপর অনুগ্রহ করেছেন নবী, সিদ্দীক, শহীদ ও সৎকর্মশীলদের মধ্য থেকে। আর সাথী হিসেবে তারা হবে অনেক উত্তম।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৬৯]
দুনিয়ায়, বারযাখে ও জান্নাতে এভাবে একত্রে থাকা সাব্যস্ত আছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿يَٰٓأَيَّتُهَا ٱلنَّفۡسُ ٱلۡمُطۡمَئِنَّةُ ٢٧ ٱرۡجِعِيٓ إِلَىٰ رَبِّكِ رَاضِيَةٗ مَّرۡضِيَّةٗ ٢٨ فَٱدۡخُلِي فِي عِبَٰدِي ٢٩ وَٱدۡخُلِي جَنَّتِي٣٠﴾ [ الفجر : ٢٧، ٣١ ]
“হে প্রশান্ত আত্মা! তুমি ফিরে এসো তোমার রবের প্রতি সন্তুষ্টচিত্তে, সন্তোষভাজন হয়ে। অতঃপর আমার বান্দাদের মধ্যে শামিল হয়ে যাও। আর প্রবেশ করো আমার জান্নাতে।” [সূরা আল-ফাজর, আয়াত: ২৭-৩১] অর্থাৎ তাদের সাথে শামিল হও এবং তাদের সাথে থাকো। আর এ কথা মৃত্যুর সময় আত্মাকে বলা হবে।
আল্লাহ তা‘আলা শহীদদের সম্পর্কে বলেছেন,
﴿أَحۡيَآءٌ عِندَ رَبِّهِمۡ يُرۡزَقُونَ ١٦٩﴾
“তারা তাদের রবের নিকট জীবিত। তাদেরকে রিযিক দেওয়া হয়।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৬৯]
আল্লাহ তা‘আলা শহীদদের সম্পর্কে আরও বলেছেন,
﴿يَسۡتَبۡشِرُونَ بِٱلَّذِينَ لَمۡ يَلۡحَقُواْ بِهِم مِّنۡ خَلۡفِهِمۡ﴾
“আর তারা উৎফুল্ল হয়, পরবর্তীদের থেকে যারা এখনো তাদের সাথে মিলিত হয় নি তাদের বিষয়ে।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৭০]
আল্লাহ তা‘আলা শহীদদের সম্পর্কে আরও বলেছেন,
﴿يَسۡتَبۡشِرُونَ بِنِعۡمَةٖ مِّنَ ٱللَّهِ وَفَضۡلٖ١٧١ ﴾ [ ال عمران : ١٦٩، ١٧١ ]
“তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে নি‘আমত ও অনুগ্রহ লাভ করে খুশি হয়।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৭১] এ আয়াতসমূহ দ্বারা তাদের পরস্পর মিলিত হওয়া তিনভাবে প্রমাণিত হয়:
১- তারা (শহীদগণ) জীবিত। আর জীবিতরা পরস্পর পরস্পরের সাথে মিলিত হয়, দেখা সাক্ষাৎ করে।
২- তারা তাদের পরবর্তীতে আগমনকারী ভাইদের আগমন ও তাদের সাথে দেখা হওয়ার ব্যাপারে আনন্দিত ও উৎফুল্ল।
৩ -﴿يَسۡتَبۡشِرُونَ﴾ শব্দ প্রমাণ করে যে, তারা পরস্পর পরস্পরে সুসংবাদ দেয় ও খুশি হয়।
উত্তর: হ্যাঁ, রূহ জীবিত ও মৃত মানুষের রূহের সাথে সাক্ষাৎ করে ও মিলিত হয়, যেভাবে রূহ মৃত ব্যক্তির রূহের সাথে মিলিত হয় ও সাক্ষাৎ করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿ٱللَّهُ يَتَوَفَّى ٱلۡأَنفُسَ حِينَ مَوۡتِهَا وَٱلَّتِي لَمۡ تَمُتۡ فِي مَنَامِهَاۖ فَيُمۡسِكُ ٱلَّتِي قَضَىٰ عَلَيۡهَا ٱلۡمَوۡتَ وَيُرۡسِلُ ٱلۡأُخۡرَىٰٓ إِلَىٰٓ أَجَلٖ مُّسَمًّىۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَٰتٖ لِّقَوۡمٖ يَتَفَكَّرُونَ٤٢﴾ [ الزمر : ٤١ ]
“আল্লাহ জীবসমূহের প্রাণ হরণ করেন তাদের মৃত্যুর সময় এবং যারা মরে নি তাদের নিদ্রার সময়। তারপর যার জন্য তিনি মৃত্যুর ফয়সালা করেন তার প্রাণ তিনি রেখে দেন এবং অন্যগুলো ফিরিয়ে দেন একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল জাতির জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৪১] এ আয়াতের তাফসীরে ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেছেন, আমার কাছে এ সংবাদ পৌঁছেছে যে, “জীবিত ও মৃত ব্যক্তির রূহ স্বপ্নে মিলিত হয়ে পরস্পর পরস্পর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। অতঃপর আল্লাহ মৃত ব্যক্তির রূহ রেখে দেন এবং জীবিত ব্যক্তির রূহ তার শরীরে ফিরে দেন।” [আল-মু‘জাম আল-আওসাত, তাবরানী, ১/৪৫, হাদীস নং ১২২, ইমাম তাবরানী রহ. বলেছেন, এ হাদীসের সনদের বর্ণনাকারী মুতাররাফ থেকে শুধু মূসা ইবন আ‘ইয়ান বর্ণনা করেছেন। হাইসামী রহ. মাজমা‘উজ যাওয়ায়েদে ৭/১০০ হাদীসটির সনদের বর্ণনাকারীদেরকে ‘রিজালুস সহীহ’ বলেছেন।]
জীবিত ও মৃত ব্যক্তির আত্মা যে একত্রিত হয় এর প্রমাণ হলো, জীবিত ব্যক্তি স্বপ্নে মৃত ব্যক্তিকে দেখে, অতঃপর জেগে সে তা বর্ণনা করেন, মৃত ব্যক্তি জীবিত ব্যক্তিকে এমন সংবাদ দেয় যা জীবিত ব্যক্তি আগে জানত না। অতঃপর মৃত ব্যক্তির প্রদত্ত সংবাদ অতীতে বা ভবিষ্যতে প্রতিফলিত হয় যেভাবে সে সংবাদ দেয়। এ ধরণের অসংখ্য ঘটনা মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণিত আছে। রূহ, এর বিধান ও এর অবস্থা সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ ব্যক্তি ব্যতীত কেউ এ ব্যাপারটি অস্বীকার করে না।
﴿ٱللَّهُ يَتَوَفَّى ٱلۡأَنفُسَ حِينَ مَوۡتِهَا وَٱلَّتِي لَمۡ تَمُتۡ فِي مَنَامِهَاۖ فَيُمۡسِكُ ٱلَّتِي قَضَىٰ عَلَيۡهَا ٱلۡمَوۡتَ وَيُرۡسِلُ ٱلۡأُخۡرَىٰٓ إِلَىٰٓ أَجَلٖ مُّسَمًّىۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَٰتٖ لِّقَوۡمٖ يَتَفَكَّرُونَ٤٢﴾ [ الزمر : ٤١ ]
“আল্লাহ জীবসমূহের প্রাণ হরণ করেন তাদের মৃত্যুর সময় এবং যারা মরে নি তাদের নিদ্রার সময়। তারপর যার জন্য তিনি মৃত্যুর ফয়সালা করেন তার প্রাণ তিনি রেখে দেন এবং অন্যগুলো ফিরিয়ে দেন একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল জাতির জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৪১] এ আয়াতের তাফসীরে ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেছেন, আমার কাছে এ সংবাদ পৌঁছেছে যে, “জীবিত ও মৃত ব্যক্তির রূহ স্বপ্নে মিলিত হয়ে পরস্পর পরস্পর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। অতঃপর আল্লাহ মৃত ব্যক্তির রূহ রেখে দেন এবং জীবিত ব্যক্তির রূহ তার শরীরে ফিরে দেন।” [আল-মু‘জাম আল-আওসাত, তাবরানী, ১/৪৫, হাদীস নং ১২২, ইমাম তাবরানী রহ. বলেছেন, এ হাদীসের সনদের বর্ণনাকারী মুতাররাফ থেকে শুধু মূসা ইবন আ‘ইয়ান বর্ণনা করেছেন। হাইসামী রহ. মাজমা‘উজ যাওয়ায়েদে ৭/১০০ হাদীসটির সনদের বর্ণনাকারীদেরকে ‘রিজালুস সহীহ’ বলেছেন।]
জীবিত ও মৃত ব্যক্তির আত্মা যে একত্রিত হয় এর প্রমাণ হলো, জীবিত ব্যক্তি স্বপ্নে মৃত ব্যক্তিকে দেখে, অতঃপর জেগে সে তা বর্ণনা করেন, মৃত ব্যক্তি জীবিত ব্যক্তিকে এমন সংবাদ দেয় যা জীবিত ব্যক্তি আগে জানত না। অতঃপর মৃত ব্যক্তির প্রদত্ত সংবাদ অতীতে বা ভবিষ্যতে প্রতিফলিত হয় যেভাবে সে সংবাদ দেয়। এ ধরণের অসংখ্য ঘটনা মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণিত আছে। রূহ, এর বিধান ও এর অবস্থা সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ ব্যক্তি ব্যতীত কেউ এ ব্যাপারটি অস্বীকার করে না।
উত্তর: এ মাসআলার উত্তরে বলা যায়, আত্মার মৃত্যু হলো শরীর থেকে আলাদা হওয়া ও বের হয়ে যাওয়া। এ হিসেবে মৃত্যু ধরা হলে নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, আত্মা মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণকারী। আর যদি বলা হয় যে, আত্মা মরে যায় বলতে তা বিলীন হয়ে যায়, একেবারেই ধ্বংস হয়ে যায়, নিঃশেষ হয়ে যায়, তাহলে বলা হবে, এ দৃষ্টিকোণে আত্মা মারা যায় না; বরং তা শরীর থেকে বের হওয়ার পরে নি‘আমত বা ‘আযাব ভোগের স্থানে অবশিষ্ট থাকে।
উত্তর: রূহ শরীর থেকে আলাদা হওয়ার পরে তা শরীর থেকে এমন এক আকৃতি (প্রতিচ্ছবি) নিয়ে যায় যা উক্ত শরীররে সাথেই নির্দিষ্ট হয়ে যায়, অন্য শরীরের সাথে মিলিত হবে না। কেননা সে তার শরীর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যায় এবং শরীরে ফিরে আসে, যেভাবে শরীর তার রূহ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এবং রূহের কাছে ফিরে আসে। ফলে ভালো শরীর ভালো আত্মা থেকে উত্তম জিনিসগুলো লাভ করে, আবার খারাপ শরীর নিকৃষ্ট আত্মা থেকে নিকৃষ্ট জিনিস লাভ করে। এমনিভাবে উত্তম রূহ তার উত্তম শরীর থেকে এবং নিকৃষ্ট রূহ তার নিকৃষ্ট শরীর থেকে ভালো এবং খারাপ জিনিসগুলো অর্জন করে।
উত্তর: বারা ইবন ‘আযিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত সহীহ হাদীসে এসেছে,
خَرَجْنَا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فِي جِنَازَةِ رَجُلٍ مِنَ الْأَنْصَارِ، فَانْتَهَيْنَا إِلَى الْقَبْرِ، وَلَمَّا يُلْحَدْ، فَجَلَسَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَجَلَسْنَا حَوْلَهُ، كَأَنَّ عَلَى رُءُوسِنَا الطَّيْرَ، وَفِي يَدِهِ عُودٌ يَنْكُتُ فِي الْأَرْضِ، فَرَفَعَ رَأْسَهُ، فَقَالَ : «اسْتَعِيذُوا بِاللهِ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ مَرَّتَيْنِ، أَوْ ثَلَاثًا، " ، ثُمَّ قَالَ : " إِنَّ الْعَبْدَ الْمُؤْمِنَ إِذَا كَانَ فِي انْقِطَاعٍ مِنَ الدُّنْيَا وَإِقْبَالٍ مِنَ الْآخِرَةِ، نَزَلَ إِلَيْهِ مَلَائِكَةٌ مِنَ السَّمَاءِ بِيضُ الْوُجُوهِ، كَأَنَّ وُجُوهَهُمُ الشَّمْسُ، مَعَهُمْ كَفَنٌ مِنْ أَكْفَانِ الْجَنَّةِ، وَحَنُوطٌ مِنْ حَنُوطِ الْجَنَّةِ، حَتَّى يَجْلِسُوا مِنْهُ مَدَّ الْبَصَرِ، ثُمَّ يَجِيءُ مَلَكُ الْمَوْتِ، حَتَّى يَجْلِسَ عِنْدَ رَأْسِهِ، فَيَقُولُ : أَيَّتُهَا النَّفْسُ الطَّيِّبَةُ، اخْرُجِي إِلَى مَغْفِرَةٍ مِنَ اللهِ وَرِضْوَانٍ ". قَالَ : " فَتَخْرُجُ تَسِيلُ كَمَا تَسِيلُ الْقَطْرَةُ مِنْ فِي السِّقَاءِ، فَيَأْخُذُهَا، فَإِذَا أَخَذَهَا لَمْ يَدَعُوهَا فِي يَدِهِ طَرْفَةَ عَيْنٍ حَتَّى يَأْخُذُوهَا، فَيَجْعَلُوهَا فِي ذَلِكَ الْكَفَنِ، وَفِي ذَلِكَ الْحَنُوطِ، وَيَخْرُجُ مِنْهَا كَأَطْيَبِ نَفْحَةِ مِسْكٍ وُجِدَتْ عَلَى وَجْهِ الْأَرْضِ " قَالَ : " فَيَصْعَدُونَ بِهَا، فَلَا يَمُرُّونَ، يَعْنِي بِهَا، عَلَى مَلَإٍ مِنَ الْمَلَائِكَةِ، إِلَّا قَالُوا : مَا هَذَا الرُّوحُ الطَّيِّبُ؟ فَيَقُولُونَ : فُلَانُ بْنُ فُلَانٍ، بِأَحْسَنِ أَسْمَائِهِ الَّتِي كَانُوا يُسَمُّونَهُ بِهَا فِي الدُّنْيَا، حَتَّى يَنْتَهُوا بِهَا إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا، فَيَسْتَفْتِحُونَ لَهُ، فَيُفْتَحُ لَهُمْ فَيُشَيِّعُهُ مِنْ كُلِّ سَمَاءٍ مُقَرَّبُوهَا إِلَى السَّمَاءِ الَّتِي تَلِيهَا، حَتَّى يُنْتَهَى بِهِ إِلَى السَّمَاءِ السَّابِعَةِ، فَيَقُولُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ : اكْتُبُوا كِتَابَ عَبْدِي فِي عِلِّيِّينَ، وَأَعِيدُوهُ إِلَى الْأَرْضِ، فَإِنِّي مِنْهَا خَلَقْتُهُمْ، وَفِيهَا أُعِيدُهُمْ، وَمِنْهَا أُخْرِجُهُمْ تَارَةً أُخْرَى ". قَالَ : " فَتُعَادُ رُوحُهُ فِي جَسَدِهِ، فَيَأْتِيهِ مَلَكَانِ، فَيُجْلِسَانِهِ، فَيَقُولَانِ لَهُ : مَنْ رَبُّكَ؟ فَيَقُولُ : رَبِّيَ اللهُ، فَيَقُولَانِ لَهُ : مَا دِينُكَ؟ فَيَقُولُ : دِينِيَ الْإِسْلَامُ، فَيَقُولَانِ لَهُ : مَا هَذَا الرَّجُلُ الَّذِي بُعِثَ فِيكُمْ؟ فَيَقُولُ : هُوَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَيَقُولَانِ لَهُ : وَمَا عِلْمُكَ؟ فَيَقُولُ : قَرَأْتُ كِتَابَ اللهِ، فَآمَنْتُ بِهِ وَصَدَّقْتُ، فَيُنَادِي مُنَادٍ فِي السَّمَاءِ : أَنْ صَدَقَ عَبْدِي، فَأَفْرِشُوهُ مِنَ الْجَنَّةِ، وَأَلْبِسُوهُ مِنَ الْجَنَّةِ، وَافْتَحُوا لَهُ بَابًا إِلَى الْجَنَّةِ ". قَالَ : " فَيَأْتِيهِ مِنْ رَوْحِهَا، وَطِيبِهَا، وَيُفْسَحُ لَهُ فِي قَبْرِهِ مَدَّ بَصَرِهِ ". قَالَ : " وَيَأْتِيهِ رَجُلٌ حَسَنُ الْوَجْهِ، حَسَنُ الثِّيَابِ، طَيِّبُ الرِّيحِ، فَيَقُولُ : أَبْشِرْ بِالَّذِي يَسُرُّكَ، هَذَا يَوْمُكَ الَّذِي كُنْتَ تُوعَدُ، فَيَقُولُ لَهُ : مَنْ أَنْتَ؟ فَوَجْهُكَ الْوَجْهُ يَجِيءُ بِالْخَيْرِ، فَيَقُولُ : أَنَا عَمَلُكَ الصَّالِحُ، فَيَقُولُ : رَبِّ أَقِمِ السَّاعَةَ حَتَّى أَرْجِعَ إِلَى أَهْلِي، وَمَالِي» . قَالَ : «وَإِنَّ الْعَبْدَ الْكَافِرَ إِذَا كَانَ فِي انْقِطَاعٍ مِنَ الدُّنْيَا وَإِقْبَالٍ مِنَ الْآخِرَةِ، نَزَلَ إِلَيْهِ مِنَ السَّمَاءِ مَلَائِكَةٌ سُودُ الْوُجُوهِ، مَعَهُمُ الْمُسُوحُ، فَيَجْلِسُونَ مِنْهُ مَدَّ الْبَصَرِ، ثُمَّ يَجِيءُ مَلَكُ الْمَوْتِ، حَتَّى يَجْلِسَ عِنْدَ رَأْسِهِ، فَيَقُولُ : أَيَّتُهَا النَّفْسُ الْخَبِيثَةُ، اخْرُجِي إِلَى سَخَطٍ مِنَ اللهِ وَغَضَب . قَالَ : فَتُفَرَّقُ فِي جَسَدِهِ، فَيَنْتَزِعُهَا كَمَا يُنْتَزَعُ السَّفُّودُ مِنَ الصُّوفِ الْمَبْلُولِ، فَيَأْخُذُهَا، فَإِذَا أَخَذَهَا لَمْ يَدَعُوهَا فِي يَدِهِ طَرْفَةَ عَيْنٍ حَتَّى يَجْعَلُوهَا فِي تِلْكَ الْمُسُوحِ، وَيَخْرُجُ مِنْهَا كَأَنْتَنِ رِيحِ جِيفَةٍ وُجِدَتْ عَلَى وَجْهِ الْأَرْضِ، فَيَصْعَدُونَ بِهَا، فَلَا يَمُرُّونَ بِهَا عَلَى مَلَأٍ مِنَ الْمَلَائِكَةِ، إِلَّا قَالُوا : مَا هَذَا الرُّوحُ الْخَبِيثُ؟ فَيَقُولُونَ : فُلَانُ بْنُ فُلَانٍ بِأَقْبَحِ أَسْمَائِهِ الَّتِي كَانَ يُسَمَّى بِهَا فِي الدُّنْيَا، حَتَّى يُنْتَهَى بِهِ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا، فَيُسْتَفْتَحُ لَهُ، فَلَا يُفْتَحُ لَهُ " ، ثُمَّ قَرَأَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ﴿لَا تُفَتَّحُ لَهُمۡ أَبۡوَٰبُ ٱلسَّمَآءِ وَلَا يَدۡخُلُونَ ٱلۡجَنَّةَ حَتَّىٰ يَلِجَ ٱلۡجَمَلُ فِي سَمِّ ٱلۡخِيَاطِ٤٠﴾ [ الاعراف : ٤٠ ] فَيَقُولُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ : " اكْتُبُوا كِتَابَهُ فِي سِجِّينٍ فِي الْأَرْضِ السُّفْلَى، فَتُطْرَحُ رُوحُهُ طَرْحًا ". ثُمَّ قَرَأَ : ﴿وَمَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَكَأَنَّمَا خَرَّ مِنَ ٱلسَّمَآءِ فَتَخۡطَفُهُ ٱلطَّيۡرُ أَوۡ تَهۡوِي بِهِ ٱلرِّيحُ فِي مَكَانٖ سَحِيقٖ٣١﴾ [ الحج : ٣١ ] " فَتُعَادُ رُوحُهُ فِي جَسَدِهِ، وَيَأْتِيهِ مَلَكَانِ، فَيُجْلِسَانِهِ، فَيَقُولَانِ لَهُ : مَنْ رَبُّكَ؟ فَيَقُولُ : هَاهْ هَاهْ لَا أَدْرِي، فَيَقُولَانِ لَهُ : مَا دِينُكَ؟ فَيَقُولُ : هَاهْ هَاهْ لَا أَدْرِي، فَيَقُولَانِ لَهُ : مَا هَذَا الرَّجُلُ الَّذِي بُعِثَ فِيكُمْ؟ فَيَقُولُ : هَاهْ هَاهْ لَا أَدْرِي، فَيُنَادِي مُنَادٍ مِنَ السَّمَاءِ أَنْ كَذَبَ، فَافْرِشُوا لَهُ مِنَ النَّارِ، وَافْتَحُوا لَهُ بَابًا إِلَى النَّارِ، فَيَأْتِيهِ مِنْ حَرِّهَا، وَسَمُومِهَا، وَيُضَيَّقُ عَلَيْهِ قَبْرُهُ حَتَّى تَخْتَلِفَ فِيهِ أَضْلَاعُهُ، وَيَأْتِيهِ رَجُلٌ قَبِيحُ الْوَجْهِ، قَبِيحُ الثِّيَابِ، مُنْتِنُ الرِّيحِ، فَيَقُولُ : أَبْشِرْ بِالَّذِي يَسُوءُكَ، هَذَا يَوْمُكَ الَّذِي كُنْتَ تُوعَدُ، فَيَقُولُ : مَنْ أَنْتَ؟ فَوَجْهُكَ الْوَجْهُ يَجِيءُ بِالشَّرِّ، فَيَقُولُ : أَنَا عَمَلُكَ الْخَبِيثُ، فَيَقُولُ : رَبِّ لَا تُقِمِ السَّاعَةَ» .
“আমরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে একজন আনসারী সাহাবীর জানাযায় শরীক হই, এমনকি তার কবরের কাছে যাই, যা তখনও খোড়া হয় নি। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে বসলেন এবং আমরাও তাঁর সাথে তাঁর চারদিকে (শান্তভাবে) বসে পড়ি, যেন আমাদের মাথার উপর পাখী বসা। এ সময় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতে একখণ্ড কাঠ ছিল, যা দিয়ে তিনি জমিনের উপর আঘাত করছিলেন। এরপর তিনি মাথা উঁচু করে দুই বা তিনবার বললেন, “তোমরা কবরের ‘আযাব থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাও। অতঃপর তিনি বললেন, “মুমিন বান্দার যখন দুনিয়া ছেড়ে আখিরাতে যাওয়ার সময় হয় তখন আসমান থেকে সাদা চেহারার একদল ফিরিশতা জমিনে নেমে আসেন, যেনো সূর্যের মতো উজ্জ্বল তাদের চেহারা, তাদের কাছে থাকে জান্নাতের কাফন ও সুগন্ধি। তারা চক্ষুসীমার মধ্যে বসে পড়ে। অতঃপর মালাকুল মাউত (মৃত্যুর ফিরিশতা) আগমন করেন। তিনি তার মাথার কাছে বসেন। অতঃপর তিনি তাকে বলেন, হে পবিত্র আত্মা! আল্লাহর মাগফিরাত ও তার সন্তুষ্টির দিকে বেরিয়ে আসো। বর্ণনাকারী বলেন, ফলে আত্মাটি এমনভাবে প্রবাহিত হয়ে বেরিয়ে আসে যেমনিভাবে পানপাত্রের মুখ থেকে পানির ফোটা গড়িয়ে পড়ে। অতঃপর ফিরিশতারা আত্মাকে তাদের কাছে নিয়ে যায়। চোখের পলকের মধ্যেই তা কাফনের কাপড়ে ও জান্নাতী সুগন্ধিতে ভরে আসমানে নিয়ে যায়। তা থেকে তখন পৃথিবীর সবচেয়ে উত্তম মিসকের চেয়েও অধিক সুগন্ধ বের হতে থাকে। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর ফিরিশতারা সেটি নিয়ে আসমানে উঠতে থাকেন। তারা যখনই আত্মাটি নিয়ে ঊর্ধ্ব আসমানে উঠতে থাকেন তখন সেখানকার ফিরিশতারা জিজ্ঞেস করেন, এ পবিত্র আত্মা কার? তখন তারা বলেন, অমুকের ছেলে অমুক, দুনিয়াতে তারা পরস্পর যেসব সুন্দর নামে ডাকত সেসব সুন্দর নাম তাদেরকে বলবেন। ফিরিশতারা যখন দুনিয়ার আসমানের শেষপ্রান্তে পৌঁছবে তখন তারা তার জন্য আসমানের দরজা খুলতে বলবেন। তখন তাদের জন্য আসমানের দরজা খুলে দেওয়া হবে। প্রত্যেক আসমানের লোকেরা তাদের পরবর্তী আসমান পর্যন্ত পৌঁছে দিতে তাদেরকে বিদায় জানাতে তাদের পিছনে পিছনে চলবে। এভাবে সপ্তম আসমানে পৌঁছবে। মহান আল্লাহ তা‘আলা তখন বলেছেন, “আমার বান্দার আমলনামা ‘ইল্লিয়ীনে লিপিবদ্ধ করো এবং তাকে জমিনে ফিরিয়ে নিয়ে যাও। কেননা আমি তা থেকে তাদেরকে সৃষ্টি করেছি, জমিনে তাদেরকে ফিরিয়ে নিবো এবং জমিন থেকেই তাদেরকে পুনরুত্থিত করবো।” বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তার রূহ তার শরীরে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। অতঃপর তার কাছে দুজন ফিরিশতা আসেন, তারা তাকে বসান এবং তাকে প্রশ্ন করেন, তোমার রব কে? তখন সে বলবে, আমার রব আল্লাহ। তখন তারা তাকে জিজ্ঞাসা করবে, তোমার দীন কী? সে বলবে, আমার দীন ইসলাম। এরপর তারা তাকে জিজ্ঞাসা করবেন, এ ব্যক্তি কে, যাকে তোমাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল? তখন সে বলবে, ইনি হলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তখন ফিরিশতারা আবার জিজ্ঞাসা করবেন, তুমি কীরূপে এগুলো জানলে? তখন সে বলবে, আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছি, এর ওপর ঈমান এনেছি এবং একে সত্য বলে মনে করেছি। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর আসমান থেকে একজন আহ্বানকারী এরূপ ঘোষণা দিতে থাকবে, আমার বান্দা সত্য বলেছে, তার কবরে জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দাও, তাকে জান্নাতের দিকে একটা দরজা খুলে দাও। বর্ণনাকারী বলেন, তখন তার কবরে জান্নাতের মৃদুমন্দ বাতাস ও সুগন্ধ আসতে থাকে এবং সে ব্যক্তির কবরকে দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত বিস্তৃত করে দেওয়া হয়। বর্ণনাকারী বলেন, এরপরে তার কাছে সুন্দর কাপড় পরিহিত, সুগন্ধি ব্যবহৃত একজন সুন্দর চেহারার লোক আসবে, অতঃপর তাকে বলবে, তোমাকে আনন্দিত করবে এমন সুসংবাদে আনন্দিত হও, এটি সে দিন যে দিনের ব্যাপারে তোমাকে ওয়াদা দেওয়া হয়েছে। তখন লোকটিকে বলা হবে, আপনি কে? তখন সে সুন্দর চেহারা ধারণ করে বলবে, আমি তোমার সৎ আমল। তখন মৃত ব্যক্তি বলবে, হে আমার রব, কিয়ামত সংঘটিত করুন, যাতে আমি আমার পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদের কাছে যেতে পারি।
বর্ণনাকারী বলেন, এরপরে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাফির ব্যক্তির মৃত্যুর অবস্থা বর্ণনা করে। তিনি বলেন, কাফির বান্দার যখন দুনিয়া ছেড়ে আখিরাতে যাওয়ার সময় হবে তখন তার কাছে আসমান থেকে বীভৎস কালো চেহারার একদল ফিরিশতা অবতরণ করবে। তাদের সাথে থাকবে মোটা গরম পশমী কাপড়। তারা তার সামনে চোখের সীমানা জোড়া হয়ে বসবে। অতঃপর মালকুল মাউত এসে তার মাথার সামনে বসবে। অতঃপর সে বলবে, হে খবিশ আত্মা! আল্লাহর ক্রোধ ও অসন্তুষ্টির দিকে বের হও। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর রূহকে তার শরীর থেকে এমনভাবে বের করা হবে যেভাবে শিক কাঁচা চামড়া থেকে বের করা হয়। অতঃপর নিমিষেই তা উক্ত গরম পশমী কাপড়ে রাখবে, এর থেকে পৃথিবীতে সবচেয়ে নিকৃষ্ট মৃত পঁচা দুর্গন্ধের চেয়েও মারাত্মক দুর্গন্ধ বের হতে থাকবে। অতঃপর তারা রূহটি নিয়ে উপরে উঠতে থাকবে। যখনই তারা ফিরিশতাদের দলের কাছ দিয়ে অতিক্রম করবে তারা জিজ্ঞেস করবে, এ খবিশ রূহ কার? তারা বলবে, অমুকের ছেলে অমুকের, দুনিয়াতে তাকে সবচেয়ে খারাপ যে নামে ডাকা হতো সে নাম উল্লেখ করবে। এভাবে তারা প্রথম আসমানের দরজায় পৌঁছলে দরজা খুলতে আবেদন করবে; কিন্তু তার জন্য দরজা খোলা হবে না। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আয়াত তিলাওয়াত করেন,
﴿لَا تُفَتَّحُ لَهُمۡ أَبۡوَٰبُ ٱلسَّمَآءِ وَلَا يَدۡخُلُونَ ٱلۡجَنَّةَ حَتَّىٰ يَلِجَ ٱلۡجَمَلُ فِي سَمِّ ٱلۡخِيَاطِ٤٠﴾ [ الاعراف : ٤٠ ]
“তাদের জন্য আসমানের দরজাসমূহ খোলা হবে না এবং তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ না উট সূঁচের ছিদ্রতে প্রবেশ করে।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৪০] [এ দ্বারা তাদের জান্নাতে প্রবেশ করা অসম্ভব বুঝানো হয়েছে।] অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তার নাম জমিনের সর্বনিম্ন স্তরে সিজ্জীনে লিপিবদ্ধ করো। ফলে তার রূহ সেখান থেকে নিক্ষেপ করা হবে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আয়াত পাঠ করলেন,
﴿وَمَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَكَأَنَّمَا خَرَّ مِنَ ٱلسَّمَآءِ فَتَخۡطَفُهُ ٱلطَّيۡرُ أَوۡ تَهۡوِي بِهِ ٱلرِّيحُ فِي مَكَانٖ سَحِيقٖ٣١﴾ [ الحج : ٣١ ]
“আর যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, সে যেন আকাশ থেকে পড়ল। অতঃপর পাখি তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল কিম্বা বাতাস তাকে দূরের কোনো জায়গায় নিক্ষেপ করল।” [সূরা আল-হাজ্জ, আয়াত: ৩১]
অতঃপর তার শরীরে রূহ প্রবেশ করানো হবে। তখন দুজন ফিরিশতা এসে তাকে বসাবেন এবং প্রশ্ন করবেন, তোমার রব কে? তখন সে বলবে, হা-হা-লা-আদরী অর্থাৎ হায় আফসোস! আমি তো জানি না। এরপর তারা তাকে জিজ্ঞাসা করবেন, তোমার দীন কী? সে বলবে, হায় আফসোস! আমি জানি না। এরপর তারা তাকে জিজ্ঞাসা করবেন, এ ব্যক্তি কে, যাকে দুনিয়াতে তোমাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল? তখন সে বলবে, হায় আফসোস! আমি জানি না। তখন আসমান থেকে একজন ঘোষণাকারী এরূপ বলতে থাকবেন, সে মিথ্যা বলেছে। তার কবরে আগুনের বিছানা বিছিয়ে দাও, তাকে আগুনের পোশাক পরিয়ে দাও এবং তার কবর থেকে জাহান্নামের দিকে একটা দরজা খুলে দাও; যাতে তার কবরে জাহান্নামের আগুনের প্রচণ্ড তাপ ও ভাঁপ আসতে থাকে। এরপর কবর তার জন্য এতই সংকুচিত হয়ে যায় যে, তার পাঁজরের একপাশ অপরপাশে চলে যায়। এরপরে নোংরা কাপড় পরিহিত, দুর্গন্ধযুক্ত একজন কুৎসিত চেহারার লোক তার কাছে আসবে। সে বলবে, তোমাকে যে সংবাদ কষ্ট দিবে (তোমার জন্য বিপর্যয় বয়ে আনবে) সে সংবাদ শুনে খুশি হও! এটি সে দিন যে দিনের ওয়াদা তোমাকে দেওয়া হয়েছিল। তখন মৃত ব্যক্তি তাকে জিজ্ঞাসা করবে, তুমি কে? তোমার মতো কুৎসিত চেহারায় খারাপ কিছু আসে। তখন সে বলবে, আমি তোমার খারাপ আমল। তখন সে বলবে, হে আমার রব, কিয়ামত সংঘটিত করবেন না।” [মুসনাদ আহমাদ, ৩০/৪৯৯, হাদীস নং ১৮৫৩৪, মুসনাদের মুহাক্কিক শু‘আইব আরনাঊত বলেছেন, হাদীসের সনদটি সহীহ, সনদের বর্ণনাকারীগণ সহীহ হাদীসের বর্ণনাকারী; আবু দাউদ, হাদীস নং ৩২১২ (সংক্ষেপে), হাদীস নং ৪৭৫৩ (বিস্তারিত); নাসাঈ, হাদীস নং ২০৫৭; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৪২৬৯; আবু ‘আওয়ানা আল-ইসফারায়ীনী তার সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।]
আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত ও অন্যান্য সকলেই এ হাদীসের সাব্যস্ত বিষয়গুলোর কথা বলে থাকেন ও বিশ্বাস করেন।
خَرَجْنَا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فِي جِنَازَةِ رَجُلٍ مِنَ الْأَنْصَارِ، فَانْتَهَيْنَا إِلَى الْقَبْرِ، وَلَمَّا يُلْحَدْ، فَجَلَسَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَجَلَسْنَا حَوْلَهُ، كَأَنَّ عَلَى رُءُوسِنَا الطَّيْرَ، وَفِي يَدِهِ عُودٌ يَنْكُتُ فِي الْأَرْضِ، فَرَفَعَ رَأْسَهُ، فَقَالَ : «اسْتَعِيذُوا بِاللهِ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ مَرَّتَيْنِ، أَوْ ثَلَاثًا، " ، ثُمَّ قَالَ : " إِنَّ الْعَبْدَ الْمُؤْمِنَ إِذَا كَانَ فِي انْقِطَاعٍ مِنَ الدُّنْيَا وَإِقْبَالٍ مِنَ الْآخِرَةِ، نَزَلَ إِلَيْهِ مَلَائِكَةٌ مِنَ السَّمَاءِ بِيضُ الْوُجُوهِ، كَأَنَّ وُجُوهَهُمُ الشَّمْسُ، مَعَهُمْ كَفَنٌ مِنْ أَكْفَانِ الْجَنَّةِ، وَحَنُوطٌ مِنْ حَنُوطِ الْجَنَّةِ، حَتَّى يَجْلِسُوا مِنْهُ مَدَّ الْبَصَرِ، ثُمَّ يَجِيءُ مَلَكُ الْمَوْتِ، حَتَّى يَجْلِسَ عِنْدَ رَأْسِهِ، فَيَقُولُ : أَيَّتُهَا النَّفْسُ الطَّيِّبَةُ، اخْرُجِي إِلَى مَغْفِرَةٍ مِنَ اللهِ وَرِضْوَانٍ ". قَالَ : " فَتَخْرُجُ تَسِيلُ كَمَا تَسِيلُ الْقَطْرَةُ مِنْ فِي السِّقَاءِ، فَيَأْخُذُهَا، فَإِذَا أَخَذَهَا لَمْ يَدَعُوهَا فِي يَدِهِ طَرْفَةَ عَيْنٍ حَتَّى يَأْخُذُوهَا، فَيَجْعَلُوهَا فِي ذَلِكَ الْكَفَنِ، وَفِي ذَلِكَ الْحَنُوطِ، وَيَخْرُجُ مِنْهَا كَأَطْيَبِ نَفْحَةِ مِسْكٍ وُجِدَتْ عَلَى وَجْهِ الْأَرْضِ " قَالَ : " فَيَصْعَدُونَ بِهَا، فَلَا يَمُرُّونَ، يَعْنِي بِهَا، عَلَى مَلَإٍ مِنَ الْمَلَائِكَةِ، إِلَّا قَالُوا : مَا هَذَا الرُّوحُ الطَّيِّبُ؟ فَيَقُولُونَ : فُلَانُ بْنُ فُلَانٍ، بِأَحْسَنِ أَسْمَائِهِ الَّتِي كَانُوا يُسَمُّونَهُ بِهَا فِي الدُّنْيَا، حَتَّى يَنْتَهُوا بِهَا إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا، فَيَسْتَفْتِحُونَ لَهُ، فَيُفْتَحُ لَهُمْ فَيُشَيِّعُهُ مِنْ كُلِّ سَمَاءٍ مُقَرَّبُوهَا إِلَى السَّمَاءِ الَّتِي تَلِيهَا، حَتَّى يُنْتَهَى بِهِ إِلَى السَّمَاءِ السَّابِعَةِ، فَيَقُولُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ : اكْتُبُوا كِتَابَ عَبْدِي فِي عِلِّيِّينَ، وَأَعِيدُوهُ إِلَى الْأَرْضِ، فَإِنِّي مِنْهَا خَلَقْتُهُمْ، وَفِيهَا أُعِيدُهُمْ، وَمِنْهَا أُخْرِجُهُمْ تَارَةً أُخْرَى ". قَالَ : " فَتُعَادُ رُوحُهُ فِي جَسَدِهِ، فَيَأْتِيهِ مَلَكَانِ، فَيُجْلِسَانِهِ، فَيَقُولَانِ لَهُ : مَنْ رَبُّكَ؟ فَيَقُولُ : رَبِّيَ اللهُ، فَيَقُولَانِ لَهُ : مَا دِينُكَ؟ فَيَقُولُ : دِينِيَ الْإِسْلَامُ، فَيَقُولَانِ لَهُ : مَا هَذَا الرَّجُلُ الَّذِي بُعِثَ فِيكُمْ؟ فَيَقُولُ : هُوَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَيَقُولَانِ لَهُ : وَمَا عِلْمُكَ؟ فَيَقُولُ : قَرَأْتُ كِتَابَ اللهِ، فَآمَنْتُ بِهِ وَصَدَّقْتُ، فَيُنَادِي مُنَادٍ فِي السَّمَاءِ : أَنْ صَدَقَ عَبْدِي، فَأَفْرِشُوهُ مِنَ الْجَنَّةِ، وَأَلْبِسُوهُ مِنَ الْجَنَّةِ، وَافْتَحُوا لَهُ بَابًا إِلَى الْجَنَّةِ ". قَالَ : " فَيَأْتِيهِ مِنْ رَوْحِهَا، وَطِيبِهَا، وَيُفْسَحُ لَهُ فِي قَبْرِهِ مَدَّ بَصَرِهِ ". قَالَ : " وَيَأْتِيهِ رَجُلٌ حَسَنُ الْوَجْهِ، حَسَنُ الثِّيَابِ، طَيِّبُ الرِّيحِ، فَيَقُولُ : أَبْشِرْ بِالَّذِي يَسُرُّكَ، هَذَا يَوْمُكَ الَّذِي كُنْتَ تُوعَدُ، فَيَقُولُ لَهُ : مَنْ أَنْتَ؟ فَوَجْهُكَ الْوَجْهُ يَجِيءُ بِالْخَيْرِ، فَيَقُولُ : أَنَا عَمَلُكَ الصَّالِحُ، فَيَقُولُ : رَبِّ أَقِمِ السَّاعَةَ حَتَّى أَرْجِعَ إِلَى أَهْلِي، وَمَالِي» . قَالَ : «وَإِنَّ الْعَبْدَ الْكَافِرَ إِذَا كَانَ فِي انْقِطَاعٍ مِنَ الدُّنْيَا وَإِقْبَالٍ مِنَ الْآخِرَةِ، نَزَلَ إِلَيْهِ مِنَ السَّمَاءِ مَلَائِكَةٌ سُودُ الْوُجُوهِ، مَعَهُمُ الْمُسُوحُ، فَيَجْلِسُونَ مِنْهُ مَدَّ الْبَصَرِ، ثُمَّ يَجِيءُ مَلَكُ الْمَوْتِ، حَتَّى يَجْلِسَ عِنْدَ رَأْسِهِ، فَيَقُولُ : أَيَّتُهَا النَّفْسُ الْخَبِيثَةُ، اخْرُجِي إِلَى سَخَطٍ مِنَ اللهِ وَغَضَب . قَالَ : فَتُفَرَّقُ فِي جَسَدِهِ، فَيَنْتَزِعُهَا كَمَا يُنْتَزَعُ السَّفُّودُ مِنَ الصُّوفِ الْمَبْلُولِ، فَيَأْخُذُهَا، فَإِذَا أَخَذَهَا لَمْ يَدَعُوهَا فِي يَدِهِ طَرْفَةَ عَيْنٍ حَتَّى يَجْعَلُوهَا فِي تِلْكَ الْمُسُوحِ، وَيَخْرُجُ مِنْهَا كَأَنْتَنِ رِيحِ جِيفَةٍ وُجِدَتْ عَلَى وَجْهِ الْأَرْضِ، فَيَصْعَدُونَ بِهَا، فَلَا يَمُرُّونَ بِهَا عَلَى مَلَأٍ مِنَ الْمَلَائِكَةِ، إِلَّا قَالُوا : مَا هَذَا الرُّوحُ الْخَبِيثُ؟ فَيَقُولُونَ : فُلَانُ بْنُ فُلَانٍ بِأَقْبَحِ أَسْمَائِهِ الَّتِي كَانَ يُسَمَّى بِهَا فِي الدُّنْيَا، حَتَّى يُنْتَهَى بِهِ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا، فَيُسْتَفْتَحُ لَهُ، فَلَا يُفْتَحُ لَهُ " ، ثُمَّ قَرَأَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ﴿لَا تُفَتَّحُ لَهُمۡ أَبۡوَٰبُ ٱلسَّمَآءِ وَلَا يَدۡخُلُونَ ٱلۡجَنَّةَ حَتَّىٰ يَلِجَ ٱلۡجَمَلُ فِي سَمِّ ٱلۡخِيَاطِ٤٠﴾ [ الاعراف : ٤٠ ] فَيَقُولُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ : " اكْتُبُوا كِتَابَهُ فِي سِجِّينٍ فِي الْأَرْضِ السُّفْلَى، فَتُطْرَحُ رُوحُهُ طَرْحًا ". ثُمَّ قَرَأَ : ﴿وَمَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَكَأَنَّمَا خَرَّ مِنَ ٱلسَّمَآءِ فَتَخۡطَفُهُ ٱلطَّيۡرُ أَوۡ تَهۡوِي بِهِ ٱلرِّيحُ فِي مَكَانٖ سَحِيقٖ٣١﴾ [ الحج : ٣١ ] " فَتُعَادُ رُوحُهُ فِي جَسَدِهِ، وَيَأْتِيهِ مَلَكَانِ، فَيُجْلِسَانِهِ، فَيَقُولَانِ لَهُ : مَنْ رَبُّكَ؟ فَيَقُولُ : هَاهْ هَاهْ لَا أَدْرِي، فَيَقُولَانِ لَهُ : مَا دِينُكَ؟ فَيَقُولُ : هَاهْ هَاهْ لَا أَدْرِي، فَيَقُولَانِ لَهُ : مَا هَذَا الرَّجُلُ الَّذِي بُعِثَ فِيكُمْ؟ فَيَقُولُ : هَاهْ هَاهْ لَا أَدْرِي، فَيُنَادِي مُنَادٍ مِنَ السَّمَاءِ أَنْ كَذَبَ، فَافْرِشُوا لَهُ مِنَ النَّارِ، وَافْتَحُوا لَهُ بَابًا إِلَى النَّارِ، فَيَأْتِيهِ مِنْ حَرِّهَا، وَسَمُومِهَا، وَيُضَيَّقُ عَلَيْهِ قَبْرُهُ حَتَّى تَخْتَلِفَ فِيهِ أَضْلَاعُهُ، وَيَأْتِيهِ رَجُلٌ قَبِيحُ الْوَجْهِ، قَبِيحُ الثِّيَابِ، مُنْتِنُ الرِّيحِ، فَيَقُولُ : أَبْشِرْ بِالَّذِي يَسُوءُكَ، هَذَا يَوْمُكَ الَّذِي كُنْتَ تُوعَدُ، فَيَقُولُ : مَنْ أَنْتَ؟ فَوَجْهُكَ الْوَجْهُ يَجِيءُ بِالشَّرِّ، فَيَقُولُ : أَنَا عَمَلُكَ الْخَبِيثُ، فَيَقُولُ : رَبِّ لَا تُقِمِ السَّاعَةَ» .
“আমরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে একজন আনসারী সাহাবীর জানাযায় শরীক হই, এমনকি তার কবরের কাছে যাই, যা তখনও খোড়া হয় নি। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে বসলেন এবং আমরাও তাঁর সাথে তাঁর চারদিকে (শান্তভাবে) বসে পড়ি, যেন আমাদের মাথার উপর পাখী বসা। এ সময় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতে একখণ্ড কাঠ ছিল, যা দিয়ে তিনি জমিনের উপর আঘাত করছিলেন। এরপর তিনি মাথা উঁচু করে দুই বা তিনবার বললেন, “তোমরা কবরের ‘আযাব থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাও। অতঃপর তিনি বললেন, “মুমিন বান্দার যখন দুনিয়া ছেড়ে আখিরাতে যাওয়ার সময় হয় তখন আসমান থেকে সাদা চেহারার একদল ফিরিশতা জমিনে নেমে আসেন, যেনো সূর্যের মতো উজ্জ্বল তাদের চেহারা, তাদের কাছে থাকে জান্নাতের কাফন ও সুগন্ধি। তারা চক্ষুসীমার মধ্যে বসে পড়ে। অতঃপর মালাকুল মাউত (মৃত্যুর ফিরিশতা) আগমন করেন। তিনি তার মাথার কাছে বসেন। অতঃপর তিনি তাকে বলেন, হে পবিত্র আত্মা! আল্লাহর মাগফিরাত ও তার সন্তুষ্টির দিকে বেরিয়ে আসো। বর্ণনাকারী বলেন, ফলে আত্মাটি এমনভাবে প্রবাহিত হয়ে বেরিয়ে আসে যেমনিভাবে পানপাত্রের মুখ থেকে পানির ফোটা গড়িয়ে পড়ে। অতঃপর ফিরিশতারা আত্মাকে তাদের কাছে নিয়ে যায়। চোখের পলকের মধ্যেই তা কাফনের কাপড়ে ও জান্নাতী সুগন্ধিতে ভরে আসমানে নিয়ে যায়। তা থেকে তখন পৃথিবীর সবচেয়ে উত্তম মিসকের চেয়েও অধিক সুগন্ধ বের হতে থাকে। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর ফিরিশতারা সেটি নিয়ে আসমানে উঠতে থাকেন। তারা যখনই আত্মাটি নিয়ে ঊর্ধ্ব আসমানে উঠতে থাকেন তখন সেখানকার ফিরিশতারা জিজ্ঞেস করেন, এ পবিত্র আত্মা কার? তখন তারা বলেন, অমুকের ছেলে অমুক, দুনিয়াতে তারা পরস্পর যেসব সুন্দর নামে ডাকত সেসব সুন্দর নাম তাদেরকে বলবেন। ফিরিশতারা যখন দুনিয়ার আসমানের শেষপ্রান্তে পৌঁছবে তখন তারা তার জন্য আসমানের দরজা খুলতে বলবেন। তখন তাদের জন্য আসমানের দরজা খুলে দেওয়া হবে। প্রত্যেক আসমানের লোকেরা তাদের পরবর্তী আসমান পর্যন্ত পৌঁছে দিতে তাদেরকে বিদায় জানাতে তাদের পিছনে পিছনে চলবে। এভাবে সপ্তম আসমানে পৌঁছবে। মহান আল্লাহ তা‘আলা তখন বলেছেন, “আমার বান্দার আমলনামা ‘ইল্লিয়ীনে লিপিবদ্ধ করো এবং তাকে জমিনে ফিরিয়ে নিয়ে যাও। কেননা আমি তা থেকে তাদেরকে সৃষ্টি করেছি, জমিনে তাদেরকে ফিরিয়ে নিবো এবং জমিন থেকেই তাদেরকে পুনরুত্থিত করবো।” বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তার রূহ তার শরীরে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। অতঃপর তার কাছে দুজন ফিরিশতা আসেন, তারা তাকে বসান এবং তাকে প্রশ্ন করেন, তোমার রব কে? তখন সে বলবে, আমার রব আল্লাহ। তখন তারা তাকে জিজ্ঞাসা করবে, তোমার দীন কী? সে বলবে, আমার দীন ইসলাম। এরপর তারা তাকে জিজ্ঞাসা করবেন, এ ব্যক্তি কে, যাকে তোমাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল? তখন সে বলবে, ইনি হলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তখন ফিরিশতারা আবার জিজ্ঞাসা করবেন, তুমি কীরূপে এগুলো জানলে? তখন সে বলবে, আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছি, এর ওপর ঈমান এনেছি এবং একে সত্য বলে মনে করেছি। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর আসমান থেকে একজন আহ্বানকারী এরূপ ঘোষণা দিতে থাকবে, আমার বান্দা সত্য বলেছে, তার কবরে জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দাও, তাকে জান্নাতের দিকে একটা দরজা খুলে দাও। বর্ণনাকারী বলেন, তখন তার কবরে জান্নাতের মৃদুমন্দ বাতাস ও সুগন্ধ আসতে থাকে এবং সে ব্যক্তির কবরকে দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত বিস্তৃত করে দেওয়া হয়। বর্ণনাকারী বলেন, এরপরে তার কাছে সুন্দর কাপড় পরিহিত, সুগন্ধি ব্যবহৃত একজন সুন্দর চেহারার লোক আসবে, অতঃপর তাকে বলবে, তোমাকে আনন্দিত করবে এমন সুসংবাদে আনন্দিত হও, এটি সে দিন যে দিনের ব্যাপারে তোমাকে ওয়াদা দেওয়া হয়েছে। তখন লোকটিকে বলা হবে, আপনি কে? তখন সে সুন্দর চেহারা ধারণ করে বলবে, আমি তোমার সৎ আমল। তখন মৃত ব্যক্তি বলবে, হে আমার রব, কিয়ামত সংঘটিত করুন, যাতে আমি আমার পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদের কাছে যেতে পারি।
বর্ণনাকারী বলেন, এরপরে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাফির ব্যক্তির মৃত্যুর অবস্থা বর্ণনা করে। তিনি বলেন, কাফির বান্দার যখন দুনিয়া ছেড়ে আখিরাতে যাওয়ার সময় হবে তখন তার কাছে আসমান থেকে বীভৎস কালো চেহারার একদল ফিরিশতা অবতরণ করবে। তাদের সাথে থাকবে মোটা গরম পশমী কাপড়। তারা তার সামনে চোখের সীমানা জোড়া হয়ে বসবে। অতঃপর মালকুল মাউত এসে তার মাথার সামনে বসবে। অতঃপর সে বলবে, হে খবিশ আত্মা! আল্লাহর ক্রোধ ও অসন্তুষ্টির দিকে বের হও। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর রূহকে তার শরীর থেকে এমনভাবে বের করা হবে যেভাবে শিক কাঁচা চামড়া থেকে বের করা হয়। অতঃপর নিমিষেই তা উক্ত গরম পশমী কাপড়ে রাখবে, এর থেকে পৃথিবীতে সবচেয়ে নিকৃষ্ট মৃত পঁচা দুর্গন্ধের চেয়েও মারাত্মক দুর্গন্ধ বের হতে থাকবে। অতঃপর তারা রূহটি নিয়ে উপরে উঠতে থাকবে। যখনই তারা ফিরিশতাদের দলের কাছ দিয়ে অতিক্রম করবে তারা জিজ্ঞেস করবে, এ খবিশ রূহ কার? তারা বলবে, অমুকের ছেলে অমুকের, দুনিয়াতে তাকে সবচেয়ে খারাপ যে নামে ডাকা হতো সে নাম উল্লেখ করবে। এভাবে তারা প্রথম আসমানের দরজায় পৌঁছলে দরজা খুলতে আবেদন করবে; কিন্তু তার জন্য দরজা খোলা হবে না। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আয়াত তিলাওয়াত করেন,
﴿لَا تُفَتَّحُ لَهُمۡ أَبۡوَٰبُ ٱلسَّمَآءِ وَلَا يَدۡخُلُونَ ٱلۡجَنَّةَ حَتَّىٰ يَلِجَ ٱلۡجَمَلُ فِي سَمِّ ٱلۡخِيَاطِ٤٠﴾ [ الاعراف : ٤٠ ]
“তাদের জন্য আসমানের দরজাসমূহ খোলা হবে না এবং তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ না উট সূঁচের ছিদ্রতে প্রবেশ করে।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৪০] [এ দ্বারা তাদের জান্নাতে প্রবেশ করা অসম্ভব বুঝানো হয়েছে।] অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তার নাম জমিনের সর্বনিম্ন স্তরে সিজ্জীনে লিপিবদ্ধ করো। ফলে তার রূহ সেখান থেকে নিক্ষেপ করা হবে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আয়াত পাঠ করলেন,
﴿وَمَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَكَأَنَّمَا خَرَّ مِنَ ٱلسَّمَآءِ فَتَخۡطَفُهُ ٱلطَّيۡرُ أَوۡ تَهۡوِي بِهِ ٱلرِّيحُ فِي مَكَانٖ سَحِيقٖ٣١﴾ [ الحج : ٣١ ]
“আর যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, সে যেন আকাশ থেকে পড়ল। অতঃপর পাখি তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল কিম্বা বাতাস তাকে দূরের কোনো জায়গায় নিক্ষেপ করল।” [সূরা আল-হাজ্জ, আয়াত: ৩১]
অতঃপর তার শরীরে রূহ প্রবেশ করানো হবে। তখন দুজন ফিরিশতা এসে তাকে বসাবেন এবং প্রশ্ন করবেন, তোমার রব কে? তখন সে বলবে, হা-হা-লা-আদরী অর্থাৎ হায় আফসোস! আমি তো জানি না। এরপর তারা তাকে জিজ্ঞাসা করবেন, তোমার দীন কী? সে বলবে, হায় আফসোস! আমি জানি না। এরপর তারা তাকে জিজ্ঞাসা করবেন, এ ব্যক্তি কে, যাকে দুনিয়াতে তোমাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল? তখন সে বলবে, হায় আফসোস! আমি জানি না। তখন আসমান থেকে একজন ঘোষণাকারী এরূপ বলতে থাকবেন, সে মিথ্যা বলেছে। তার কবরে আগুনের বিছানা বিছিয়ে দাও, তাকে আগুনের পোশাক পরিয়ে দাও এবং তার কবর থেকে জাহান্নামের দিকে একটা দরজা খুলে দাও; যাতে তার কবরে জাহান্নামের আগুনের প্রচণ্ড তাপ ও ভাঁপ আসতে থাকে। এরপর কবর তার জন্য এতই সংকুচিত হয়ে যায় যে, তার পাঁজরের একপাশ অপরপাশে চলে যায়। এরপরে নোংরা কাপড় পরিহিত, দুর্গন্ধযুক্ত একজন কুৎসিত চেহারার লোক তার কাছে আসবে। সে বলবে, তোমাকে যে সংবাদ কষ্ট দিবে (তোমার জন্য বিপর্যয় বয়ে আনবে) সে সংবাদ শুনে খুশি হও! এটি সে দিন যে দিনের ওয়াদা তোমাকে দেওয়া হয়েছিল। তখন মৃত ব্যক্তি তাকে জিজ্ঞাসা করবে, তুমি কে? তোমার মতো কুৎসিত চেহারায় খারাপ কিছু আসে। তখন সে বলবে, আমি তোমার খারাপ আমল। তখন সে বলবে, হে আমার রব, কিয়ামত সংঘটিত করবেন না।” [মুসনাদ আহমাদ, ৩০/৪৯৯, হাদীস নং ১৮৫৩৪, মুসনাদের মুহাক্কিক শু‘আইব আরনাঊত বলেছেন, হাদীসের সনদটি সহীহ, সনদের বর্ণনাকারীগণ সহীহ হাদীসের বর্ণনাকারী; আবু দাউদ, হাদীস নং ৩২১২ (সংক্ষেপে), হাদীস নং ৪৭৫৩ (বিস্তারিত); নাসাঈ, হাদীস নং ২০৫৭; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৪২৬৯; আবু ‘আওয়ানা আল-ইসফারায়ীনী তার সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।]
আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত ও অন্যান্য সকলেই এ হাদীসের সাব্যস্ত বিষয়গুলোর কথা বলে থাকেন ও বিশ্বাস করেন।
১০
সপ্তম মাসআলা: কবরের ‘আযাব কি নফসের উপর হবে নাকি শরীরের উপর? নাকি শুধু নফসের উপর, শরীরের উপর নয়? অথবা শুধু শরীরের উপর, নফসের উপর নয়? নি‘আমত ও ‘আযাব ভোগে শরীর ও আত্মা কি অংশীদার থাকবে?উত্তর: উম্মতের সালাফে সালেহীন তথা সৎপূর্বসূরী ও আলিমগণের মতামত হচ্ছে, কেউ মারা গেলে সে নি‘আমত বা শাস্তি ভোগ করে। আর এ নি‘আমত ও শাস্তি তার রূহ ও শরীর উভয়ই ভোগ করে। রূহ শরীর থেকে আলাদা হওয়ার পরে নি‘আমত বা ‘আযাবের স্থানে অবস্থান করে। কখনও আবার তা শরীরের সাথে মিলিত হয়, তখন শরীরের সাথে রূহেরও নি‘আমত বা ‘আযাব ভোগ হয়। অতঃপর কিয়ামতের দিনে রূহসমূহ শরীরের মধ্যে ফেরত দেওয়া হবে এবং তারা কবর থেকে রাব্বুল আলামীনের কাছে উপস্থিত হবে।
কবরের ‘আযাব কুরআন ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। কেউ কবরে ‘আযাব প্রাপ্য হলে সে তার নির্ধারিত ‘আযাব ভোগ করবে, যদিও তাকে কবর দেওয়া হোক বা না হোক বা তাকে হিংস্র জানোয়ার খেয়ে ফেলুক, বা আগুনে জ্বলে ভস্মীভূত হোক, এমনকি সে যদি ছাই-বালুতে পরিণত হয়ে বাতাসে ছড়িয়ে দিলেও বা তাকে ফাঁসি দেওয়া হোক, বা সে সমুদ্রে ডুবে মারা যাক, সর্বাবস্থায়ই কবরে শাস্তির জন্য মহান আল্লাহর কুদরতে তার রূহ তার শরীরে প্রবেশ করবে।
কবরের ‘আযাব কুরআন ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। কেউ কবরে ‘আযাব প্রাপ্য হলে সে তার নির্ধারিত ‘আযাব ভোগ করবে, যদিও তাকে কবর দেওয়া হোক বা না হোক বা তাকে হিংস্র জানোয়ার খেয়ে ফেলুক, বা আগুনে জ্বলে ভস্মীভূত হোক, এমনকি সে যদি ছাই-বালুতে পরিণত হয়ে বাতাসে ছড়িয়ে দিলেও বা তাকে ফাঁসি দেওয়া হোক, বা সে সমুদ্রে ডুবে মারা যাক, সর্বাবস্থায়ই কবরে শাস্তির জন্য মহান আল্লাহর কুদরতে তার রূহ তার শরীরে প্রবেশ করবে।
১১
অষ্টম মাসআলা: কবরের ভয়াবহ ‘আযাব সম্পর্কে জানা এবং এর প্রতি ঈমান আনা; যাতে মানুষ এ ‘আযাব থেকে পরিত্রাণ পায়, এতো গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও আল-কুরআনে এব বর্ণনা উল্লেখ না থাকার হিকমত কী?উত্তর: এ প্রশ্নের উত্তর সংক্ষেপে ও বিস্তারিত দুভাবেই দেওয়া যায়:
সংক্ষেপে বলতে গেলে, আল্লাহ তাঁর রাসূলের প্রতি দু’ধরণের অহী নাযিল করেছেন এবং তিনি তাঁর বান্দার ওপর এসব অহীর প্রতি ঈমান আনা ও সে অনুযায়ী আমল করা ফরয করে দিয়েছেন। এ দু’ধরণের অহী হলো, আল-কুরআন ও হিকমাহ তথা সুন্নাহ। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَأَنزَلَ ٱللَّهُ عَلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ وَٱلۡحِكۡمَةَ١١٣﴾ [ النساء : ١١٣ ]
“আল্লাহ আপনার প্রতি কিতাব ও হিকমাহ নাযিল করেছেন।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১১৩] এ আয়াতে কিতাব দ্বারা আল-কুরআন ও হিকমাহ দ্বারা সুন্নাহকে বুঝানো হয়েছে বলে সব সালাফে সালেহীন তথা সৎপূর্বসূরীগণ মত দিয়েছেন। অতএব, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেসব সংবাদ দিয়েছেন সেসব সংবাদ সত্যায়ন করা ও এর প্রতি ঈমান আনা ফরয (অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরের ‘আযাব সম্পর্কে হাদীসে বর্ণনা করেছেন)।
আর বিস্তারিতভাবে বলতে গেলে বলা যায় যে, কবরের ‘আযাব সম্পর্কে কুরআনের অনেক আয়াতে উল্লেখ রয়েছে। তন্মধ্যে,
১- আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَلَوۡ تَرَىٰٓ إِذِ ٱلظَّٰلِمُونَ فِي غَمَرَٰتِ ٱلۡمَوۡتِ وَٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ بَاسِطُوٓاْ أَيۡدِيهِمۡ أَخۡرِجُوٓاْ أَنفُسَكُمُۖ ٱلۡيَوۡمَ تُجۡزَوۡنَ عَذَابَ ٱلۡهُونِ بِمَا كُنتُمۡ تَقُولُونَ عَلَى ٱللَّهِ غَيۡرَ ٱلۡحَقِّ وَكُنتُمۡ عَنۡ ءَايَٰتِهِۦ تَسۡتَكۡبِرُونَ٩٣﴾ [ الانعام : ٩٣ ]
“আর যদি আপনি দেখতেন, যখন যালিমরা মৃত্যু কষ্টে থাকে, এমতাবস্থায় ফিরিশতারা তাদের হাত প্রসারিত করে আছে (তারা বলে), ‘তোমাদের জান বের কর। আজ তোমাদেরকে প্রতিদান দেওয়া হবে লাঞ্ছনার ‘আযাব, কারণ তোমরা আল্লাহর উপর অসত্য বলতে এবং তোমরা তার আয়াতসমূহ সম্পর্কে অহঙ্কার করতে। [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৯৩] এ আয়াতে ( عذاب الهون ) বলতে কবরের ‘আযাবকে বুঝানো হয়েছে যা জাহান্নামের কঠিন ‘আযাবের আগে ভোগ করবে।
২- আল্লাহ তা‘আলা ফির‘আউনের বংশধরদের সম্পর্কে বলেছেন,
﴿ٱلنَّارُ يُعۡرَضُونَ عَلَيۡهَا غُدُوّٗا وَعَشِيّٗاۚ وَيَوۡمَ تَقُومُ ٱلسَّاعَةُ أَدۡخِلُوٓاْ ءَالَ فِرۡعَوۡنَ أَشَدَّ ٱلۡعَذَابِ٤٦﴾ [ غافر : ٤٦ ]
“আগুন, তাদেরকে সকাল-সন্ধ্যায় তার সামনে উপস্থিত করা হয়, আর যেদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে (সেদিন ঘোষণা করা হবে), ‘ফির‘আউনের অনুসারীদেরকে কঠোরতম ‘আযাবে প্রবেশ করাও।” [সূরা গাফির, আয়াত: ৪৬]
সংক্ষেপে বলতে গেলে, আল্লাহ তাঁর রাসূলের প্রতি দু’ধরণের অহী নাযিল করেছেন এবং তিনি তাঁর বান্দার ওপর এসব অহীর প্রতি ঈমান আনা ও সে অনুযায়ী আমল করা ফরয করে দিয়েছেন। এ দু’ধরণের অহী হলো, আল-কুরআন ও হিকমাহ তথা সুন্নাহ। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَأَنزَلَ ٱللَّهُ عَلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ وَٱلۡحِكۡمَةَ١١٣﴾ [ النساء : ١١٣ ]
“আল্লাহ আপনার প্রতি কিতাব ও হিকমাহ নাযিল করেছেন।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১১৩] এ আয়াতে কিতাব দ্বারা আল-কুরআন ও হিকমাহ দ্বারা সুন্নাহকে বুঝানো হয়েছে বলে সব সালাফে সালেহীন তথা সৎপূর্বসূরীগণ মত দিয়েছেন। অতএব, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেসব সংবাদ দিয়েছেন সেসব সংবাদ সত্যায়ন করা ও এর প্রতি ঈমান আনা ফরয (অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরের ‘আযাব সম্পর্কে হাদীসে বর্ণনা করেছেন)।
আর বিস্তারিতভাবে বলতে গেলে বলা যায় যে, কবরের ‘আযাব সম্পর্কে কুরআনের অনেক আয়াতে উল্লেখ রয়েছে। তন্মধ্যে,
১- আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَلَوۡ تَرَىٰٓ إِذِ ٱلظَّٰلِمُونَ فِي غَمَرَٰتِ ٱلۡمَوۡتِ وَٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ بَاسِطُوٓاْ أَيۡدِيهِمۡ أَخۡرِجُوٓاْ أَنفُسَكُمُۖ ٱلۡيَوۡمَ تُجۡزَوۡنَ عَذَابَ ٱلۡهُونِ بِمَا كُنتُمۡ تَقُولُونَ عَلَى ٱللَّهِ غَيۡرَ ٱلۡحَقِّ وَكُنتُمۡ عَنۡ ءَايَٰتِهِۦ تَسۡتَكۡبِرُونَ٩٣﴾ [ الانعام : ٩٣ ]
“আর যদি আপনি দেখতেন, যখন যালিমরা মৃত্যু কষ্টে থাকে, এমতাবস্থায় ফিরিশতারা তাদের হাত প্রসারিত করে আছে (তারা বলে), ‘তোমাদের জান বের কর। আজ তোমাদেরকে প্রতিদান দেওয়া হবে লাঞ্ছনার ‘আযাব, কারণ তোমরা আল্লাহর উপর অসত্য বলতে এবং তোমরা তার আয়াতসমূহ সম্পর্কে অহঙ্কার করতে। [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৯৩] এ আয়াতে ( عذاب الهون ) বলতে কবরের ‘আযাবকে বুঝানো হয়েছে যা জাহান্নামের কঠিন ‘আযাবের আগে ভোগ করবে।
২- আল্লাহ তা‘আলা ফির‘আউনের বংশধরদের সম্পর্কে বলেছেন,
﴿ٱلنَّارُ يُعۡرَضُونَ عَلَيۡهَا غُدُوّٗا وَعَشِيّٗاۚ وَيَوۡمَ تَقُومُ ٱلسَّاعَةُ أَدۡخِلُوٓاْ ءَالَ فِرۡعَوۡنَ أَشَدَّ ٱلۡعَذَابِ٤٦﴾ [ غافر : ٤٦ ]
“আগুন, তাদেরকে সকাল-সন্ধ্যায় তার সামনে উপস্থিত করা হয়, আর যেদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে (সেদিন ঘোষণা করা হবে), ‘ফির‘আউনের অনুসারীদেরকে কঠোরতম ‘আযাবে প্রবেশ করাও।” [সূরা গাফির, আয়াত: ৪৬]
উত্তর: এ মাসআলার উত্তর সংক্ষিপ্ত ও বিস্তারিত দু’ভাবে দেওয়া যায়:
সংক্ষেপে বললে, আল্লাহকে না চেনা, তাঁর আদেশ অমান্য করা এবং গুনাহের কাজে লিপ্ত হওয়া কবরের ‘আযাবের অন্যতম কারণ।
বিস্তারিতভাবে বলতে গেলে বলা যায়, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্নোক্ত লোকদের সম্পর্কে কবরের ‘আযাব ভোগের কথা বলেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো:
১- কুৎসাকারী, পরনিন্দুক।
২- যে ব্যক্তি পেশাব করা থেকে উত্তমরূপে পবিত্র হয় না।
৩- মিথ্যুক।
৪- যিনাকারী।
৫- সুদখোর।
এ ছাড়াও অনেকের কথা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ আমাদেরকে কবরের ‘আযাব থেকে রক্ষা করুন।
সংক্ষেপে বললে, আল্লাহকে না চেনা, তাঁর আদেশ অমান্য করা এবং গুনাহের কাজে লিপ্ত হওয়া কবরের ‘আযাবের অন্যতম কারণ।
বিস্তারিতভাবে বলতে গেলে বলা যায়, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্নোক্ত লোকদের সম্পর্কে কবরের ‘আযাব ভোগের কথা বলেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো:
১- কুৎসাকারী, পরনিন্দুক।
২- যে ব্যক্তি পেশাব করা থেকে উত্তমরূপে পবিত্র হয় না।
৩- মিথ্যুক।
৪- যিনাকারী।
৫- সুদখোর।
এ ছাড়াও অনেকের কথা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ আমাদেরকে কবরের ‘আযাব থেকে রক্ষা করুন।
উত্তর: এ প্রশ্নের উত্তরও সংক্ষিপ্ত ও বিস্তারিত দু’ভাবে দেওয়া যায়:
সংক্ষেপে বললে বলা যায়, কবরের ‘আযাবের কারণগুলো থেকে বিরত থাকাই কবরের ‘আযাব থেকে নিরাপদ থাকা ও নাজাত পাওয়ার উপায়। কবরের ‘আযাব থেকে মুক্ত থাকার সবচেয়ে উত্তম উপায় হচ্ছে একনিষ্ঠভাবে তাওবা করা এবং আত্ম-সমালোচনা করা।
বিস্তারিতভাবে বললে, অসংখ্য সহীহ হাদীসে কবরের ‘আযাব থেকে নাজাত পাওয়ার উপায় উল্লেখ করা হয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে:
১- আল্লাহর রাস্তায় নিজেকে বেঁধে রাখা (সর্বদা আল্লাহর রাস্তায় অটল থাকা)।
২- আল্লাহর পথে শহীদ হওয়া।
৩- সূরা মুলক (তাবারাকাল্লাযী) (বুঝে-শুনে) তিলাওয়াত করা।
৪- জুম‘আর দিনে বা রাতে মারা যাওয়া।
সংক্ষেপে বললে বলা যায়, কবরের ‘আযাবের কারণগুলো থেকে বিরত থাকাই কবরের ‘আযাব থেকে নিরাপদ থাকা ও নাজাত পাওয়ার উপায়। কবরের ‘আযাব থেকে মুক্ত থাকার সবচেয়ে উত্তম উপায় হচ্ছে একনিষ্ঠভাবে তাওবা করা এবং আত্ম-সমালোচনা করা।
বিস্তারিতভাবে বললে, অসংখ্য সহীহ হাদীসে কবরের ‘আযাব থেকে নাজাত পাওয়ার উপায় উল্লেখ করা হয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে:
১- আল্লাহর রাস্তায় নিজেকে বেঁধে রাখা (সর্বদা আল্লাহর রাস্তায় অটল থাকা)।
২- আল্লাহর পথে শহীদ হওয়া।
৩- সূরা মুলক (তাবারাকাল্লাযী) (বুঝে-শুনে) তিলাওয়াত করা।
৪- জুম‘আর দিনে বা রাতে মারা যাওয়া।
১৪
একাদশতম মাসআলা: কবরের প্রশ্ন কি মুসলিম, মুনাফিক ও কাফির সকলের জন্য সমান? নাকি মুসলিম ও মুনাফিকের জন্য আলাদা?উত্তর: কবরে সকলের জন্যই একই প্রশ্ন করা হবে। বারা ইবন ‘আযিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে,
«فإذا كان كافراً جاءه ملك الموت فجلس عند رأسه» .
“অতঃপর কাফির ব্যক্তির মৃত্যুর সময় মালাকুল মাউত এসে তার মাথার কাছে বসবে।” এ হাদীসে এরপরে এসেছে,
«وَيَأْتِيهِ مَلَكَانِ شَدِيدَا الِانْتِهَارِ فَيَنْتَهِرَانِهِ وَيُجْلِسَانِهِ، فَيَقُولَانِ : مَنْ رَبُّكَ» .
“তার কাছে ভয়ংকর চেহারার ধমকদানকারী দুজন ফিরিশতা আসবে, তারা ভর্ৎসনা করবে, তারা তাকে বসাবে, অতঃপর বলবে, তোমার রব কে?” [ইসবাতু আযাবিল কবর, বাইহাকী, পৃষ্ঠা ৩৭; মুসনাদ আবু দাউদ ত্বয়ালিসী, হাদীস নং ৭৮৯।]
আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কিতাবে বলেছেন যে, তিনি কিয়ামতের দিনে কাফিরদেরকে জিজ্ঞেস করবেন,
﴿وَيَوۡمَ يُنَادِيهِمۡ فَيَقُولُ مَاذَآ أَجَبۡتُمُ ٱلۡمُرۡسَلِينَ٦٥﴾ [ القصص : ٦٥ ]
“আর সেদিন আল্লাহ তাদেরকে ডেকে বলবেন, তোমরা রাসূলদেরকে কী জবাব দিয়েছিলে?” [সূরা আল-কাসাস, আয়াত: ৬৫]
﴿فَوَرَبِّكَ لَنَسَۡٔلَنَّهُمۡ أَجۡمَعِينَ٩٢ عَمَّا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ٩٣﴾ [ الحجر : ٩٢، ٩٣ ]
“অতএব তোমার রবের কসম, আমি তাদের সকলকে অবশ্যই জেরা করব, তারা যা করত, সে সম্পর্কে”। [সূরা আল-হিজর, আয়াত: ৯২-৯৩]
কিয়ামতের দিনে যেহেতু আল্লাহ কাফিরদেরকে জিজ্ঞেস করবেন, সেহেতু কবরে কীভাবে তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে না? (অবশ্যই জিজ্ঞাসা করা হবে)
«فإذا كان كافراً جاءه ملك الموت فجلس عند رأسه» .
“অতঃপর কাফির ব্যক্তির মৃত্যুর সময় মালাকুল মাউত এসে তার মাথার কাছে বসবে।” এ হাদীসে এরপরে এসেছে,
«وَيَأْتِيهِ مَلَكَانِ شَدِيدَا الِانْتِهَارِ فَيَنْتَهِرَانِهِ وَيُجْلِسَانِهِ، فَيَقُولَانِ : مَنْ رَبُّكَ» .
“তার কাছে ভয়ংকর চেহারার ধমকদানকারী দুজন ফিরিশতা আসবে, তারা ভর্ৎসনা করবে, তারা তাকে বসাবে, অতঃপর বলবে, তোমার রব কে?” [ইসবাতু আযাবিল কবর, বাইহাকী, পৃষ্ঠা ৩৭; মুসনাদ আবু দাউদ ত্বয়ালিসী, হাদীস নং ৭৮৯।]
আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কিতাবে বলেছেন যে, তিনি কিয়ামতের দিনে কাফিরদেরকে জিজ্ঞেস করবেন,
﴿وَيَوۡمَ يُنَادِيهِمۡ فَيَقُولُ مَاذَآ أَجَبۡتُمُ ٱلۡمُرۡسَلِينَ٦٥﴾ [ القصص : ٦٥ ]
“আর সেদিন আল্লাহ তাদেরকে ডেকে বলবেন, তোমরা রাসূলদেরকে কী জবাব দিয়েছিলে?” [সূরা আল-কাসাস, আয়াত: ৬৫]
﴿فَوَرَبِّكَ لَنَسَۡٔلَنَّهُمۡ أَجۡمَعِينَ٩٢ عَمَّا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ٩٣﴾ [ الحجر : ٩٢، ٩٣ ]
“অতএব তোমার রবের কসম, আমি তাদের সকলকে অবশ্যই জেরা করব, তারা যা করত, সে সম্পর্কে”। [সূরা আল-হিজর, আয়াত: ৯২-৯৩]
কিয়ামতের দিনে যেহেতু আল্লাহ কাফিরদেরকে জিজ্ঞেস করবেন, সেহেতু কবরে কীভাবে তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে না? (অবশ্যই জিজ্ঞাসা করা হবে)
১৫
দ্বাদশতম মাসআলা: মুনকার ও নাকীরের প্রশ্ন কি এ উম্মতের জন্যই খাস নাকি অন্যান্য উম্মতেও জিজ্ঞাসা করে হয়েছিল?উত্তর: আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞাত। প্রত্যেক জাতিই তাদের নবী সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। তাদেরকে প্রশ্ন করে ও তাদের বিরুদ্ধে দলীল প্রমাণিত হওয়ার পরেই কবরে শাস্তি দেওয়া হবে, যেভাবে কিয়ামতের দিনে তাদেরকে জেরা করা ও দলীল-প্রমাণ সাব্যস্ত করার পরে শাস্তি দেওয়া হবে।
উত্তর: না, শিশুরা কবরে জিজ্ঞাসিত হবে না। কেননা যাদের রাসূল ও রাসূলের আনিত জিনিস সম্পর্কে জ্ঞান আছে তাদেরকে প্রশ্ন করা হবে। ফলে তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে, তারা কি রাসূলের অনুসরণ করেছে, নাকি তার বিরুদ্ধাচরণ করেছে? পক্ষান্তরে শিশু ভালো-মন্দ কিছুই পার্থক্য করতে পারে না, তাহলে তাদেরকে কীভাবে জিজ্ঞেস করা হবে?
অন্য দিকে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি শিশুর জানাযার সালাত আদায় করলেন, তাকে এ দো‘আ পড়তে শোনা গেছে,
«اللَّهُمَّ قِهِ عَذَابَ الْقَبْرِ» .
“হে আল্লাহ আপনি তাকে কবরের ‘আযাব থেকে রক্ষা করুন।” [দো‘আ, ত্বাবরানী, পৃষ্ঠা ৩৫৮, হাদীস নং ১১৮৭; মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং ৭৭৬।] এখানে কবরের ‘আযাব দ্বারা শিশুকে আনুগত্য না করা বা গুনাহের কাজে লিপ্ত থাকার কারণে কবরে শাস্তি দেওয়া উদ্দেশ্য নয়; কেননা আল্লাহ কাউকে গুনাহ ব্যতীত শাস্তি দিবেন না। বরং এখানে কবরের ‘আযাব বলতে অন্যের কারণে মৃত ব্যক্তির যে কষ্ট হবে সে কষ্টের কথা বুঝানো হয়েছে; যদিও তার কর্মের কারণে কবরে শাস্তি হবে না।
এ ধরণের ‘আযাবের বর্ণনা অন্য হাদীসেও বর্ণিত আছে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«إِنَّ المَيِّتَ لَيُعَذَّبُ بِبُكَاءِ أَهْلِهِ عَلَيْهِ» .
“মৃত ব্যক্তিকে তার জন্য বিলাপের কারণে কবরে ‘আযাব দেওয়া হয়”। [মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১২৮৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯২৭।] অর্থাৎ সে জীবিত ব্যক্তির কান্নার কারণে ব্যথিত হয় ও কষ্ট পায়, জীবিত ব্যক্তির গুনাহের কারণে তাকে শাস্তি দেওয়া হয় না। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٞ وِزۡرَ أُخۡرَىٰ١٦٤﴾ [ الانعام : ١٦٤ ]
“আর কোনো ভারবহনকারী অন্যের ভার বহন করবে না।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১৬৪]
এমনিভাবে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«السَّفَرُ قِطْعَةٌ مِنَ العَذَابِ» .
“সফর ‘আযাবের অংশ বিশেষ।” [মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮০৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯২৭।] সুতরাং ‘আযাব শাস্তির চেয়ে ব্যাপক। নিঃসন্দেহে কবরে অনেক দুঃখ-কষ্ট, দুঃশ্চিন্তা, হতাশা থাকবে যার প্রভাব শিশুর মধ্যে পরিলক্ষিত হবে। অতএব আল্লাহর কাছে কবরের ‘আযাব থেকে শিশুর জন্য পানাহ চাওয়া মুসল্লির জন্য শরী‘আতসম্মত। আল্লাহই অধিক জ্ঞাত।
অন্য দিকে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি শিশুর জানাযার সালাত আদায় করলেন, তাকে এ দো‘আ পড়তে শোনা গেছে,
«اللَّهُمَّ قِهِ عَذَابَ الْقَبْرِ» .
“হে আল্লাহ আপনি তাকে কবরের ‘আযাব থেকে রক্ষা করুন।” [দো‘আ, ত্বাবরানী, পৃষ্ঠা ৩৫৮, হাদীস নং ১১৮৭; মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং ৭৭৬।] এখানে কবরের ‘আযাব দ্বারা শিশুকে আনুগত্য না করা বা গুনাহের কাজে লিপ্ত থাকার কারণে কবরে শাস্তি দেওয়া উদ্দেশ্য নয়; কেননা আল্লাহ কাউকে গুনাহ ব্যতীত শাস্তি দিবেন না। বরং এখানে কবরের ‘আযাব বলতে অন্যের কারণে মৃত ব্যক্তির যে কষ্ট হবে সে কষ্টের কথা বুঝানো হয়েছে; যদিও তার কর্মের কারণে কবরে শাস্তি হবে না।
এ ধরণের ‘আযাবের বর্ণনা অন্য হাদীসেও বর্ণিত আছে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«إِنَّ المَيِّتَ لَيُعَذَّبُ بِبُكَاءِ أَهْلِهِ عَلَيْهِ» .
“মৃত ব্যক্তিকে তার জন্য বিলাপের কারণে কবরে ‘আযাব দেওয়া হয়”। [মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১২৮৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯২৭।] অর্থাৎ সে জীবিত ব্যক্তির কান্নার কারণে ব্যথিত হয় ও কষ্ট পায়, জীবিত ব্যক্তির গুনাহের কারণে তাকে শাস্তি দেওয়া হয় না। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٞ وِزۡرَ أُخۡرَىٰ١٦٤﴾ [ الانعام : ١٦٤ ]
“আর কোনো ভারবহনকারী অন্যের ভার বহন করবে না।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১৬৪]
এমনিভাবে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«السَّفَرُ قِطْعَةٌ مِنَ العَذَابِ» .
“সফর ‘আযাবের অংশ বিশেষ।” [মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮০৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯২৭।] সুতরাং ‘আযাব শাস্তির চেয়ে ব্যাপক। নিঃসন্দেহে কবরে অনেক দুঃখ-কষ্ট, দুঃশ্চিন্তা, হতাশা থাকবে যার প্রভাব শিশুর মধ্যে পরিলক্ষিত হবে। অতএব আল্লাহর কাছে কবরের ‘আযাব থেকে শিশুর জন্য পানাহ চাওয়া মুসল্লির জন্য শরী‘আতসম্মত। আল্লাহই অধিক জ্ঞাত।
উত্তর: কবরের ‘আযাব দু’ধরণের।
১- সার্বক্ষণিক ‘আযাব। এর প্রমাণ আল্লাহ তা‘আলার বাণী,
﴿ٱلنَّارُ يُعۡرَضُونَ عَلَيۡهَا غُدُوّٗا وَعَشِيّٗا٤٦﴾ [ غافر : ٤٦ ]
“আগুন, তাদেরকে সকাল-সন্ধ্যায় তার সামনে উপস্থিত করা হয়।” [সূরা গাফের, আয়াত: ৪৬]
সামুরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরে ‘আযাবপ্রাপ্ত ব্যক্তি সম্পর্কে বলেছেন,
«فهو يُفْعَلُ بِهِ إِلَى يَوْمِ القِيَامَةِ» .
“তার সাথে এভাবে কিয়ামত পর্যন্ত করা হবে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৩৮৬।]
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরে ‘আযাবপ্রাপ্ত দু’জনের কবরে খেজুরের ডাল পুঁতে রেখেছেন। সেখানে তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«لَعَلَّهُ يُخَفِّفُ عَنْهُمَا مَا لَمْ يَيْبَسَا» .
“হয়ত এ ডালগুলো শুকনো থাকা পর্যন্ত তাদের কবরের ‘আযাব হালকা করা হবে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২১৮।] এ হাদীসে ‘আযাব হালকা হওয়া নির্দিষ্ট সময়ের সাথে নির্ধারণ করা হয়েছে, আর তা হলো সেগুলো যতক্ষণ ভিজা থাকবে। তাহলে মূল হলো, কবরের ‘আযাব সর্বদা চলতে থাকবে।
তবে কিছু হাদীসে বর্ণিত আছে যে, দু ফুঁৎকারের মাঝে তাদের কবরের ‘আযাব হালকা করা হবে। যেহেতু তারা যখন কবর থেকে উঠবে তখন তারা বলবে,
﴿قَالُواْ يَٰوَيۡلَنَا مَنۢ بَعَثَنَا مِن مَّرۡقَدِنَا ٥٢﴾ [ يس : ٥٢ ]
“তারা বলবে, হায় আমাদের দুর্ভোগ! কে আমাদেরকে আমাদের নিদ্রাস্থল থেকে উঠালো?” [সূরা ইয়াসীন, আয়াত: ৫২]
২- দ্বিতীয় প্রকারের কবরের ‘আযাব নির্দিষ্ট কিছু দিনের জন্য হয়ে বন্ধ হয়ে যাবে। আর তা হবে কতিপয় গুনাহগারের ‘আযাব; যাদের কিছু পাপ ছিল, সে অনুপাতে শাস্তি ভোগ করে তাদের ‘আযাব বন্ধ রাখা হবে।
১- সার্বক্ষণিক ‘আযাব। এর প্রমাণ আল্লাহ তা‘আলার বাণী,
﴿ٱلنَّارُ يُعۡرَضُونَ عَلَيۡهَا غُدُوّٗا وَعَشِيّٗا٤٦﴾ [ غافر : ٤٦ ]
“আগুন, তাদেরকে সকাল-সন্ধ্যায় তার সামনে উপস্থিত করা হয়।” [সূরা গাফের, আয়াত: ৪৬]
সামুরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরে ‘আযাবপ্রাপ্ত ব্যক্তি সম্পর্কে বলেছেন,
«فهو يُفْعَلُ بِهِ إِلَى يَوْمِ القِيَامَةِ» .
“তার সাথে এভাবে কিয়ামত পর্যন্ত করা হবে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৩৮৬।]
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরে ‘আযাবপ্রাপ্ত দু’জনের কবরে খেজুরের ডাল পুঁতে রেখেছেন। সেখানে তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«لَعَلَّهُ يُخَفِّفُ عَنْهُمَا مَا لَمْ يَيْبَسَا» .
“হয়ত এ ডালগুলো শুকনো থাকা পর্যন্ত তাদের কবরের ‘আযাব হালকা করা হবে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২১৮।] এ হাদীসে ‘আযাব হালকা হওয়া নির্দিষ্ট সময়ের সাথে নির্ধারণ করা হয়েছে, আর তা হলো সেগুলো যতক্ষণ ভিজা থাকবে। তাহলে মূল হলো, কবরের ‘আযাব সর্বদা চলতে থাকবে।
তবে কিছু হাদীসে বর্ণিত আছে যে, দু ফুঁৎকারের মাঝে তাদের কবরের ‘আযাব হালকা করা হবে। যেহেতু তারা যখন কবর থেকে উঠবে তখন তারা বলবে,
﴿قَالُواْ يَٰوَيۡلَنَا مَنۢ بَعَثَنَا مِن مَّرۡقَدِنَا ٥٢﴾ [ يس : ٥٢ ]
“তারা বলবে, হায় আমাদের দুর্ভোগ! কে আমাদেরকে আমাদের নিদ্রাস্থল থেকে উঠালো?” [সূরা ইয়াসীন, আয়াত: ৫২]
২- দ্বিতীয় প্রকারের কবরের ‘আযাব নির্দিষ্ট কিছু দিনের জন্য হয়ে বন্ধ হয়ে যাবে। আর তা হবে কতিপয় গুনাহগারের ‘আযাব; যাদের কিছু পাপ ছিল, সে অনুপাতে শাস্তি ভোগ করে তাদের ‘আযাব বন্ধ রাখা হবে।
উত্তর: আলিমগণ এ ব্যাপারে অনেক মতানৈক্য করেছেন। তাদের প্রত্যেকেরই দলীল রয়েছে। তাদের কেউ কেউ বলেছেন, মৃত্যুর পরে রূহ জান্নাতে থাকে। আবার কেউ বলেছেন, রূহ জান্নাতের দরজায় থাকে। আবার অন্য একদল বলেছেন, রূহ কবরে থাকে। আবার আরেকদল বলেছেন, রূহসমূহকে ছেড়ে দেওয়া হয়, সেগুলো যেভাবে ইচ্ছা ঘুরে বেড়ায়। কেউ কেউ বলেছেন, এগুলো আল্লাহর কাছে থাকে। আরেকদলের মত হলো, মুমিনের রূহ আদম ‘আলাইহিস সালামের ডান হাতে এবং কাফিরের রূহ আদম ‘আলাইহিস সালামের বাম হাতে থাকে।
মূলকথা হলো, রূহসমূহ স্তর অনুসারে বরযাখে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করে। কোনো রূহ ঊর্ধ্ব জগতের সর্বোচ্চ ‘ইল্লীয়ীনে অবস্থান করে। এগুলো হলো নবীদের রূহ। তাদের রূহও পরস্পর মর্যাদা অনুসারে বিভিন্ন অবস্থানে থাকে। যেমনটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মি‘রাজের রাতে দেখেছেন।
আবার কিছু রূহ সবুজ পাখির পাকস্থলিতে করে জান্নাতের যেখানে ইচ্ছা সেখানে উড়ে বেড়ায়। এগুলো শহীদের আত্মা, তবে সব শহীদের আত্মা এভাবে উড়তে পারে না, কেননা কিছু শহীদের আত্মা ঋণ বা অন্যের হকের কারণে জান্নাতের দরজায় আটকে যায়। যেমন মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত আছে, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হলে আমার জন্য কী রয়েছে?
«قَالَ : الْجَنَّةُ فَلَمَّا وَلَّى قَالَ : إِلَّا الدَّيْنُ، سَارَّنِي بِهِ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ آنِفًا» .
“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, জান্নাত। লোকটি যখন চলে যাচ্ছিলেন তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তবে ঋণ ব্যতীত। জিবরীল আলাইহিস সালাম এইমাত্র আমাকে এ কথা গোপনে জানিয়ে গেলেন।” [মুসনাদ আহমাদ, ২৮/৪৯১, হাদীস নং ১৭২৫৩। হাদীসের সনদটি সহীহ লিগাইরিহি। হাদীসটি মুসলিমে অন্য বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিত আছে, হাদীস নং ১৮৮৫।]
আবার কারো রূহ জান্নাতের দরজায় আটকা থাকবে। যেমন অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তি মারা গেলে তার সম্পর্কে বলেন,
«إِنَّ صَاحِبَكُمْ مَحْبُوسٌ عَنِ الْجَنَّةِ بِدَيْنِهِ» .
“নিশ্চয় তোমার ভাই ঋণের কারণে জান্নাতে প্রবেশ করা থেকে আটকে আছে।” [মুসনাদ আহমাদ, ৩৩/৩৭৫, হাদীস নং ২০২২২। হাদীসের সনদটি সহীহ, এর বর্ণনাকারীগণ বুখারী ও মুসলিমের বর্ণনাকারী।]
আবার কারো কারো রূহ কবরে আটকা থাকবে:
«كَلَّا وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، إِنَّ الشَّمْلَةَ الَّتِي أَخَذَهَا يَوْمَ خَيْبَرَ مِنَ المَغَانِمِ لَمْ تُصِبْهَا الْمَقَاسِمُ لَتَشْتَعِلُ عَلَيْهِ نَارًا» .
“কখনও নয়। যার হাতে আমার প্রাণ তাঁর কসম! ঐ কম্বল যা সে খাইবরের দিন গনীমতের মাল বন্টন হওয়ার পূর্বে আত্মসাৎ করেছিল, তা তার উপর আগুন হয়ে জ্বলছে।” [মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৭০৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৫।]
আবার কারো রূহ জান্নাতের দরজায় অবস্থান করবে। যেমন ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে,
«الشُّهَدَاءُ عَلَى بَارِقٍ - نَهْرٍ بِبَابِ الْجَنَّةِ - فِي قُبَّةٍ خَضْرَاءَ، يَخْرُجُ عَلَيْهِمْ رِزْقُهُمْ مِنَ الجَنَّةِ بُكْرَةً وَعَشِيًّا» .
“শহীদগণ জান্নাতের দরজায় দীপ্তমান নহরে সবুজ গম্বুজ বিশিষ্ট স্থানে থাকবে, সকাল-সন্ধ্যা তাদের জন্য জান্নাত থেকে খাবার আসবে।” [মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং ২৩৯০, হাদীসের সনদটি হাসান; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীস নং ৪৬৫৮, আলবানী রহ. হাদীসটির সনদকে হাসান বলেছেন (আত্ব-তা‘লীক আত্ব-তারগীব, ২/১৯৬।] তবে জা‘ফর ইবন আবু তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ক্ষেত্রে এটি ভিন্ন হবে। কেননা আল্লাহ তার দুহাতের বিনিময়ে দুটি ডানা দিয়েছেন, যা দ্বারা তিনি ইচ্ছামত জান্নাতের যেখানে খুশি সেখানে ঘুরে বেড়াতে পারেন।
আবার কারো রূহ জমিনে আবদ্ধ থাকে। তার রূহ ঊর্ধ্ব আসমানে যাবে না। কেননা এসব রূহ জমিনের নিম্নে থাকার রূহ। জমিনে অবস্থানরত রূহগুলো আসমানে অবস্থানরত রূহের সাথে মিলিত হবে না। যেমন, আসমানে অবস্থানরত রূহগুলো জমিনে অবস্থানরত রূহের সাথে মিলিত হবে না। যেসব রূহ দুনিয়াতে রবের পরিচয় লাভ করে নি, তাঁর ভালোবাসা অর্জন করে নি, তাঁর যিকর করে নি, তাঁর সাথে বন্ধুত্ব অর্জন করে নি, তাঁর নৈকট্য লাভ করে নি ইত্যাদি রূহ হলো জমিনে অবস্থানরত রূহ। মৃত্যুর পরে শরীর থেকে তাদের রূহ বের হলে তা জমিনেই অবস্থান করবে।
এমনিভাবে ঊর্ধ্বমুখী নফসসমূহ যা দুনিয়াতে আল্লাহর ভালোবাসা, যিকর, নৈকট্য লাভ ও বন্ধুত্ব স্থাপনে সর্বদা ব্যস্ত ছিলো সেগুলো শরীর থেকে আলাদা হওয়ার পরে তার উপযোগী ঊর্ধ্বজগতের রূহের সাথে মিলিত হবে। ব্যক্তি যাকে ভালোবাসে তার সাথে বারযাখে ও কিয়ামতে থাকবে। আল্লাহ তা‘আলা বারযাখে ও কিয়ামতের দিনে রূহসমূহকে একে অন্যের সাথে মিলিত করে দিবেন, যা ইতোপূর্বে বর্ণিত হাদীসে আলোচনা করা হয়েছে। তিনি মুমিনের রূহ তার অনুরূপ মুমিনের রূহের মধ্যে প্রবেশ করাবেন। অতএব, মৃত্যুর পরে রূহ শরীর থেকে আলাদা হলে তার আমল অনুযায়ী তার আকৃতির উপযোগী ও সমজাতীয় রূহের সাথেই থাকবে। তখন সেখানে তাদের সাথেই থাকবে।
আবার কিছু রূহ যিনাকারী ও যিনাকারীনির সাথে থাকবে, কিছু রূহ রক্তের নদীতে সাঁতার কাটবে, কিছু রূহকে পাথর গ্রাস করবে। অতএব, সব রূহ একই স্থানে সুখে বা দুঃখে থাকবে না; বরং কিছু রূহ ‘ইল্লীয়ীনের সর্বোচ্চ ঊর্ধ্বজগতে থাকবে, আর জমিনের নিম্ন স্তরের রূহসমূহ জমিন থেকে উপরে উঠতে পারবে না বরং জমিনের নিম্নস্তরে থাকবে।
মূলকথা হলো, রূহসমূহ স্তর অনুসারে বরযাখে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করে। কোনো রূহ ঊর্ধ্ব জগতের সর্বোচ্চ ‘ইল্লীয়ীনে অবস্থান করে। এগুলো হলো নবীদের রূহ। তাদের রূহও পরস্পর মর্যাদা অনুসারে বিভিন্ন অবস্থানে থাকে। যেমনটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মি‘রাজের রাতে দেখেছেন।
আবার কিছু রূহ সবুজ পাখির পাকস্থলিতে করে জান্নাতের যেখানে ইচ্ছা সেখানে উড়ে বেড়ায়। এগুলো শহীদের আত্মা, তবে সব শহীদের আত্মা এভাবে উড়তে পারে না, কেননা কিছু শহীদের আত্মা ঋণ বা অন্যের হকের কারণে জান্নাতের দরজায় আটকে যায়। যেমন মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত আছে, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হলে আমার জন্য কী রয়েছে?
«قَالَ : الْجَنَّةُ فَلَمَّا وَلَّى قَالَ : إِلَّا الدَّيْنُ، سَارَّنِي بِهِ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ آنِفًا» .
“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, জান্নাত। লোকটি যখন চলে যাচ্ছিলেন তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তবে ঋণ ব্যতীত। জিবরীল আলাইহিস সালাম এইমাত্র আমাকে এ কথা গোপনে জানিয়ে গেলেন।” [মুসনাদ আহমাদ, ২৮/৪৯১, হাদীস নং ১৭২৫৩। হাদীসের সনদটি সহীহ লিগাইরিহি। হাদীসটি মুসলিমে অন্য বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিত আছে, হাদীস নং ১৮৮৫।]
আবার কারো রূহ জান্নাতের দরজায় আটকা থাকবে। যেমন অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তি মারা গেলে তার সম্পর্কে বলেন,
«إِنَّ صَاحِبَكُمْ مَحْبُوسٌ عَنِ الْجَنَّةِ بِدَيْنِهِ» .
“নিশ্চয় তোমার ভাই ঋণের কারণে জান্নাতে প্রবেশ করা থেকে আটকে আছে।” [মুসনাদ আহমাদ, ৩৩/৩৭৫, হাদীস নং ২০২২২। হাদীসের সনদটি সহীহ, এর বর্ণনাকারীগণ বুখারী ও মুসলিমের বর্ণনাকারী।]
আবার কারো কারো রূহ কবরে আটকা থাকবে:
«كَلَّا وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، إِنَّ الشَّمْلَةَ الَّتِي أَخَذَهَا يَوْمَ خَيْبَرَ مِنَ المَغَانِمِ لَمْ تُصِبْهَا الْمَقَاسِمُ لَتَشْتَعِلُ عَلَيْهِ نَارًا» .
“কখনও নয়। যার হাতে আমার প্রাণ তাঁর কসম! ঐ কম্বল যা সে খাইবরের দিন গনীমতের মাল বন্টন হওয়ার পূর্বে আত্মসাৎ করেছিল, তা তার উপর আগুন হয়ে জ্বলছে।” [মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৭০৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৫।]
আবার কারো রূহ জান্নাতের দরজায় অবস্থান করবে। যেমন ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে,
«الشُّهَدَاءُ عَلَى بَارِقٍ - نَهْرٍ بِبَابِ الْجَنَّةِ - فِي قُبَّةٍ خَضْرَاءَ، يَخْرُجُ عَلَيْهِمْ رِزْقُهُمْ مِنَ الجَنَّةِ بُكْرَةً وَعَشِيًّا» .
“শহীদগণ জান্নাতের দরজায় দীপ্তমান নহরে সবুজ গম্বুজ বিশিষ্ট স্থানে থাকবে, সকাল-সন্ধ্যা তাদের জন্য জান্নাত থেকে খাবার আসবে।” [মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং ২৩৯০, হাদীসের সনদটি হাসান; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীস নং ৪৬৫৮, আলবানী রহ. হাদীসটির সনদকে হাসান বলেছেন (আত্ব-তা‘লীক আত্ব-তারগীব, ২/১৯৬।] তবে জা‘ফর ইবন আবু তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ক্ষেত্রে এটি ভিন্ন হবে। কেননা আল্লাহ তার দুহাতের বিনিময়ে দুটি ডানা দিয়েছেন, যা দ্বারা তিনি ইচ্ছামত জান্নাতের যেখানে খুশি সেখানে ঘুরে বেড়াতে পারেন।
আবার কারো রূহ জমিনে আবদ্ধ থাকে। তার রূহ ঊর্ধ্ব আসমানে যাবে না। কেননা এসব রূহ জমিনের নিম্নে থাকার রূহ। জমিনে অবস্থানরত রূহগুলো আসমানে অবস্থানরত রূহের সাথে মিলিত হবে না। যেমন, আসমানে অবস্থানরত রূহগুলো জমিনে অবস্থানরত রূহের সাথে মিলিত হবে না। যেসব রূহ দুনিয়াতে রবের পরিচয় লাভ করে নি, তাঁর ভালোবাসা অর্জন করে নি, তাঁর যিকর করে নি, তাঁর সাথে বন্ধুত্ব অর্জন করে নি, তাঁর নৈকট্য লাভ করে নি ইত্যাদি রূহ হলো জমিনে অবস্থানরত রূহ। মৃত্যুর পরে শরীর থেকে তাদের রূহ বের হলে তা জমিনেই অবস্থান করবে।
এমনিভাবে ঊর্ধ্বমুখী নফসসমূহ যা দুনিয়াতে আল্লাহর ভালোবাসা, যিকর, নৈকট্য লাভ ও বন্ধুত্ব স্থাপনে সর্বদা ব্যস্ত ছিলো সেগুলো শরীর থেকে আলাদা হওয়ার পরে তার উপযোগী ঊর্ধ্বজগতের রূহের সাথে মিলিত হবে। ব্যক্তি যাকে ভালোবাসে তার সাথে বারযাখে ও কিয়ামতে থাকবে। আল্লাহ তা‘আলা বারযাখে ও কিয়ামতের দিনে রূহসমূহকে একে অন্যের সাথে মিলিত করে দিবেন, যা ইতোপূর্বে বর্ণিত হাদীসে আলোচনা করা হয়েছে। তিনি মুমিনের রূহ তার অনুরূপ মুমিনের রূহের মধ্যে প্রবেশ করাবেন। অতএব, মৃত্যুর পরে রূহ শরীর থেকে আলাদা হলে তার আমল অনুযায়ী তার আকৃতির উপযোগী ও সমজাতীয় রূহের সাথেই থাকবে। তখন সেখানে তাদের সাথেই থাকবে।
আবার কিছু রূহ যিনাকারী ও যিনাকারীনির সাথে থাকবে, কিছু রূহ রক্তের নদীতে সাঁতার কাটবে, কিছু রূহকে পাথর গ্রাস করবে। অতএব, সব রূহ একই স্থানে সুখে বা দুঃখে থাকবে না; বরং কিছু রূহ ‘ইল্লীয়ীনের সর্বোচ্চ ঊর্ধ্বজগতে থাকবে, আর জমিনের নিম্ন স্তরের রূহসমূহ জমিন থেকে উপরে উঠতে পারবে না বরং জমিনের নিম্নস্তরে থাকবে।
উত্তর: হ্যাঁ, জীবিত মানুষের দুটি আমলের দ্বারা মৃত ব্যক্তির রূহ উপকৃত হয়, এ দুটি আমলের ব্যাপাবে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত একমত। সেগুলো হচ্ছে:
প্রথমত: ব্যক্তি জীবিত থাকাকালীন যেসব আমল তার মৃত্যুর পরে তার আমলনামায় সাওয়াব পাওয়ার কারণ, সেসব আমল করলে মৃত ব্যক্তির উপকারে আসে।
দ্বিতীয়ত: মুসলিমগণ তার জন্য যেসব দো‘আ, ইসতিগফার, সাদকা ও হজ আদায় করে তা তার উপকারে আসে।
তাছাড়া অন্যান্য শারীরিক আমল যেমন, সাওম, সালাত, কুরআন তিলাওয়াত, যিকর ইত্যাদির সাওয়াব মৃত ব্যক্তির কবরে পৌঁছে কি-না সে ব্যাপারে আলিমগণ মতানৈক্য করেছেন। সব ধরণের আমলের সাওয়াব মৃত ব্যক্তির কাছে পৌঁছে, এ মতকে ইবনুল কাইয়্যেম রহ. অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “হজ, সাদকা ও গোলাম আযাদের সাওয়াব যে কারণে পৌঁছে সেভাবেই অন্যান্য ইবাদত যেমন সাওম, সালাত, কুরআন তিলাওয়াত, ‘ইতিকাফ ইত্যাদির সাওয়াবও পৌঁছে। এটি তার জন্য জীবিত মানুষের হাদিয়া, আর কারো হাদিয়া তার কাছে পৌঁছানো তার জন্য এক ধরণের ইহসান।” [রূহ, ইবনুল কাইয়্যিম রহ. পৃষ্ঠা ৩৩৪।]
অতঃপর ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেছেন, “মাইয়্যেতের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ হাদিয়া হলো গোলাম আযাদ, সাদকা, তার জন্য ইস্তিগফার, দো‘আ ও তার পক্ষ থেকে হজ আদায়।” [রূহ, পৃষ্ঠা ৩৪৫।]
প্রথমত: ব্যক্তি জীবিত থাকাকালীন যেসব আমল তার মৃত্যুর পরে তার আমলনামায় সাওয়াব পাওয়ার কারণ, সেসব আমল করলে মৃত ব্যক্তির উপকারে আসে।
দ্বিতীয়ত: মুসলিমগণ তার জন্য যেসব দো‘আ, ইসতিগফার, সাদকা ও হজ আদায় করে তা তার উপকারে আসে।
তাছাড়া অন্যান্য শারীরিক আমল যেমন, সাওম, সালাত, কুরআন তিলাওয়াত, যিকর ইত্যাদির সাওয়াব মৃত ব্যক্তির কবরে পৌঁছে কি-না সে ব্যাপারে আলিমগণ মতানৈক্য করেছেন। সব ধরণের আমলের সাওয়াব মৃত ব্যক্তির কাছে পৌঁছে, এ মতকে ইবনুল কাইয়্যেম রহ. অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “হজ, সাদকা ও গোলাম আযাদের সাওয়াব যে কারণে পৌঁছে সেভাবেই অন্যান্য ইবাদত যেমন সাওম, সালাত, কুরআন তিলাওয়াত, ‘ইতিকাফ ইত্যাদির সাওয়াবও পৌঁছে। এটি তার জন্য জীবিত মানুষের হাদিয়া, আর কারো হাদিয়া তার কাছে পৌঁছানো তার জন্য এক ধরণের ইহসান।” [রূহ, ইবনুল কাইয়্যিম রহ. পৃষ্ঠা ৩৩৪।]
অতঃপর ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেছেন, “মাইয়্যেতের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ হাদিয়া হলো গোলাম আযাদ, সাদকা, তার জন্য ইস্তিগফার, দো‘আ ও তার পক্ষ থেকে হজ আদায়।” [রূহ, পৃষ্ঠা ৩৪৫।]
উত্তর: সমস্ত নবী-রাসূল একমত যে, রূহ আল্লাহর সৃষ্টি, তৈরি, তাঁর প্রতিপালিত ও তাঁরই হুকুমে পরিচালিত। এটি দীনের অত্যাবশ্যকীয় জ্ঞাতব্য বিষয়, যা কেউ অস্বীকার করতে পারে না। সাহাবী, তাবে‘ঈ ও তাবে-তাবে‘ঈদের যুগে এ ব্যাপারে কোন মতানৈক্য ছিলো না, আর এ তিনটি যুগ ছিলো সর্বোত্তম যুগ। এরপরে পথভ্রষ্ট ও বিদ‘আতীরা বলতে শুরু করল যে, রূহ আল্লাহর সৃষ্টি নয়; বরং কাদীম তথা সর্বদা ছিলো।
উত্তর: এ প্রশ্নের উত্তরে আলিমগণ কয়েকটি মত পেশ করেছেন। সেগুলো হলো:
১- একদল বলেছেন, রূহ শরীর সৃষ্টির আগে সৃষ্টি করা হয়েছে।
২- আরেকদল বলেছেন, শরীর রূহ সৃষ্টির আগে সৃষ্টি করা হয়েছে।
সঠিক মত হলো, দ্বিতীয় মতটিই অধিকতর সঠিক। অর্থাৎ শরীর আগে সৃষ্টি করা হয়েছে, অতঃপর রূহ সৃষ্টি করা হয়েছে। এ কথার দলীল হলো আল্লাহ তা‘আলা আদম আলাইহিস সালামকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তার মধ্যে রূহ ফুঁৎকার করেছেন। ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেছেন, কুরআন, হাদীস ও সাহাবীদের আসার বা বাণী প্রমাণ করে যে, আল্লাহ তা‘আলা শরীর সৃষ্টি করার পরে এর মধ্যে রূহ ফুঁৎকার করেছেন। [রূহ, ইবনুল কাইয়্যিম রহ. পৃষ্ঠা ৪১০।]
১- একদল বলেছেন, রূহ শরীর সৃষ্টির আগে সৃষ্টি করা হয়েছে।
২- আরেকদল বলেছেন, শরীর রূহ সৃষ্টির আগে সৃষ্টি করা হয়েছে।
সঠিক মত হলো, দ্বিতীয় মতটিই অধিকতর সঠিক। অর্থাৎ শরীর আগে সৃষ্টি করা হয়েছে, অতঃপর রূহ সৃষ্টি করা হয়েছে। এ কথার দলীল হলো আল্লাহ তা‘আলা আদম আলাইহিস সালামকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তার মধ্যে রূহ ফুঁৎকার করেছেন। ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেছেন, কুরআন, হাদীস ও সাহাবীদের আসার বা বাণী প্রমাণ করে যে, আল্লাহ তা‘আলা শরীর সৃষ্টি করার পরে এর মধ্যে রূহ ফুঁৎকার করেছেন। [রূহ, ইবনুল কাইয়্যিম রহ. পৃষ্ঠা ৪১০।]
উত্তর: এ মাসআলার ব্যাপারে আলিমগণ নানা দিক থেকে কথা বলেছেন, তাদের এক একজনের কথা আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে এবং ভুল-ত্রুটিও বেশি হয়েছে। আল্লাহ তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসারীদেরকে হিদায়াত দান করেছেন তারা হকের যে বিষয়ে মতানৈক্য করেছিল তাঁর অনুমতিক্রমে। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে সরল সঠিক পথের হিদায়াত দান করেন।
সঠিক মত হলো, রূহ এমন একটি আকৃতি (কাঠামো) যা বাহ্যিক শরীরের সত্তা (প্রকৃতি) থেকে আলাদা। রূহ নূরানী আকৃতি, ঊর্ধ্বমুখী, অতিসূক্ষ্ম, জীবিত ও চলনশীল। এটি শরীরের প্রধান কাজ করে, গোলাপের মধ্যে যেমন পানি গোপন থাকে তেমনিভাবে শরীরে রূহ গোপন থাকে; যাইতুনের মধ্যে যেমন তেল বিদ্যমান থাকে তেমনিভাবে শরীরের মধ্যে রূহ বিদ্যমান; কয়লার মধ্যে যেভাবে আগুন সূক্ষভাবে থাকে তেমনিভাবে রূহ শরীরের মধ্যে অতি সূক্ষ্মভাবে বিদ্যমান থাকে। যতক্ষণ শরীর প্রচুর পরিমাণে কাজ করার সামর্থ্য রাখে ততক্ষণ উক্ত সূক্ষ্ম শরীর (রূহ) এ শরীরের সাথে আঁকড়ে থাকে এবং রূহের এ প্রভাব তার অনুভূতি, ইচ্ছাকৃত চলাফেরায় পরিলক্ষিত হয়। আর এ শরীর যখন কঠোর মিশ্রন করার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং শরীরের মধ্যে কাজ করার যোগ্যতা বিলুপ্ত হয়, তখন রূহ শরীর থেকে বেরিয়ে যায় এবং রূহ জগতের সাথে মিলে আলাদা হয়ে যায়।
সঠিক মত হলো, রূহ এমন একটি আকৃতি (কাঠামো) যা বাহ্যিক শরীরের সত্তা (প্রকৃতি) থেকে আলাদা। রূহ নূরানী আকৃতি, ঊর্ধ্বমুখী, অতিসূক্ষ্ম, জীবিত ও চলনশীল। এটি শরীরের প্রধান কাজ করে, গোলাপের মধ্যে যেমন পানি গোপন থাকে তেমনিভাবে শরীরে রূহ গোপন থাকে; যাইতুনের মধ্যে যেমন তেল বিদ্যমান থাকে তেমনিভাবে শরীরের মধ্যে রূহ বিদ্যমান; কয়লার মধ্যে যেভাবে আগুন সূক্ষভাবে থাকে তেমনিভাবে রূহ শরীরের মধ্যে অতি সূক্ষ্মভাবে বিদ্যমান থাকে। যতক্ষণ শরীর প্রচুর পরিমাণে কাজ করার সামর্থ্য রাখে ততক্ষণ উক্ত সূক্ষ্ম শরীর (রূহ) এ শরীরের সাথে আঁকড়ে থাকে এবং রূহের এ প্রভাব তার অনুভূতি, ইচ্ছাকৃত চলাফেরায় পরিলক্ষিত হয়। আর এ শরীর যখন কঠোর মিশ্রন করার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং শরীরের মধ্যে কাজ করার যোগ্যতা বিলুপ্ত হয়, তখন রূহ শরীর থেকে বেরিয়ে যায় এবং রূহ জগতের সাথে মিলে আলাদা হয়ে যায়।
উত্তর: আল-কুরআনে নফস তথা আত্মাকে মানুষের পুরো সত্তাকে বুঝানোর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿فَسَلِّمُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِكُمۡ﴾ [ النور : ٦١ ]
“(তবে তোমরা যখন কোন ঘরে প্রবেশ করবে) তখন তোমরা নিজদের ওপর সালাম করবে।” [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৬১]
আল্লাহ তা‘আলা নফস সম্পর্কে আরও বলেছেন,
﴿وَلَا تَقۡتُلُوٓاْ أَنفُسَكُمۡ﴾ [ النساء : ٢٩ ]
“আর তোমরা নিজেরা নিজদেরকে হত্যা করো না।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ২৯]
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿يَوۡمَ تَأۡتِي كُلُّ نَفۡسٖ تُجَٰدِلُ عَن نَّفۡسِهَا١١١﴾ [ النحل : ١١١ ]
“(স্মরণ কর সে দিনের কথা) যেদিন প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের পক্ষে যুক্তি-তর্ক নিয়ে উপস্থিত হবে।” [সূরা আন-নাহাল, আয়াত: ১১১]
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿كُلُّ نَفۡسِۢ بِمَا كَسَبَتۡ رَهِينَةٌ٣٨﴾ [ المدثر : ٣٨ ]
“প্রতিটি প্রাণ নিজ অর্জনের কারণে দায়বদ্ধ।” [সূরা আল-মুদ্দাসসির, আয়াত: ৩৮]
আবার কুরআনে নফসকে শুধু রূহের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন,
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿يَٰٓأَيَّتُهَا ٱلنَّفۡسُ ٱلۡمُطۡمَئِنَّةُ٢٧﴾ [ الفجر : ٢٧ ]
“হে প্রশান্ত আত্মা!” [সূরা আল-ফাজর, আয়াত: ২৭]
﴿أَخۡرِجُوٓاْ أَنفُسَكُمُ﴾ [ الانعام : ٩٣ ]
“(এমতাবস্থায় ফিরিশতারা তাদের হাত প্রসারিত করে আছে, তারা বলে), তোমাদের জান বের কর।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৯৩]
অন্য দিকে রূহ কখনও শরীরের জন্য ব্যবহৃত হয় নি; একাকিও নয়, আবার নফসের সাথেও নয়। অতএব, নফস ও রূহের মধ্যে পার্থক্য হলো সিফাত তথা গুণের মধ্যে; যাতের মধ্যে পার্থক্য নেই।
﴿فَسَلِّمُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِكُمۡ﴾ [ النور : ٦١ ]
“(তবে তোমরা যখন কোন ঘরে প্রবেশ করবে) তখন তোমরা নিজদের ওপর সালাম করবে।” [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৬১]
আল্লাহ তা‘আলা নফস সম্পর্কে আরও বলেছেন,
﴿وَلَا تَقۡتُلُوٓاْ أَنفُسَكُمۡ﴾ [ النساء : ٢٩ ]
“আর তোমরা নিজেরা নিজদেরকে হত্যা করো না।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ২৯]
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿يَوۡمَ تَأۡتِي كُلُّ نَفۡسٖ تُجَٰدِلُ عَن نَّفۡسِهَا١١١﴾ [ النحل : ١١١ ]
“(স্মরণ কর সে দিনের কথা) যেদিন প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের পক্ষে যুক্তি-তর্ক নিয়ে উপস্থিত হবে।” [সূরা আন-নাহাল, আয়াত: ১১১]
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿كُلُّ نَفۡسِۢ بِمَا كَسَبَتۡ رَهِينَةٌ٣٨﴾ [ المدثر : ٣٨ ]
“প্রতিটি প্রাণ নিজ অর্জনের কারণে দায়বদ্ধ।” [সূরা আল-মুদ্দাসসির, আয়াত: ৩৮]
আবার কুরআনে নফসকে শুধু রূহের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন,
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿يَٰٓأَيَّتُهَا ٱلنَّفۡسُ ٱلۡمُطۡمَئِنَّةُ٢٧﴾ [ الفجر : ٢٧ ]
“হে প্রশান্ত আত্মা!” [সূরা আল-ফাজর, আয়াত: ২৭]
﴿أَخۡرِجُوٓاْ أَنفُسَكُمُ﴾ [ الانعام : ٩٣ ]
“(এমতাবস্থায় ফিরিশতারা তাদের হাত প্রসারিত করে আছে, তারা বলে), তোমাদের জান বের কর।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৯৩]
অন্য দিকে রূহ কখনও শরীরের জন্য ব্যবহৃত হয় নি; একাকিও নয়, আবার নফসের সাথেও নয়। অতএব, নফস ও রূহের মধ্যে পার্থক্য হলো সিফাত তথা গুণের মধ্যে; যাতের মধ্যে পার্থক্য নেই।
﴿يَٰٓأَيَّتُهَا ٱلنَّفۡسُ ٱلۡمُطۡمَئِنَّةُ٢٧﴾ [ الفجر : ٢٧ ]
“হে প্রশান্ত আত্মা!” [সূরা আল-ফাজর, আয়াত: ২৭]
﴿وَلَآ أُقۡسِمُ بِٱلنَّفۡسِ ٱللَّوَّامَةِ٢﴾ [ القيامة : ٢ ]
“আমি আরো কসম করছি আত্ম-ভৎর্সনাকারী আত্মার!” [সূরা আল-কিয়ামা, আয়াত: ২]
﴿إِنَّ ٱلنَّفۡسَ لَأَمَّارَةُۢ بِٱلسُّوٓءِ﴾ [ يوسف : ٥٢ ]
“নিশ্চয় নাফস মন্দ কজের নির্দেশ দিয়ে থাকে।” [সূরা ইউসুফ, আয়াত: ৫২] তাহলে নফস কি মুতমাইন্না, লাওয়ামাহ ও আম্মারাহ তিন রকমের?
উত্তর: নফস মূলত একটি, তবে এর অনেক সিফাত তথা গুণ রয়েছে। ফলে নফসের গুণের হিসেবে এক একটি নাম দেওয়া হয়েছে। একে মুতমাইন্না ( مطمئنة ) বলা হয়েছে, যেহেতু সে তার রবের ইবাদত ও ভালোবাসায় মুতমাইন্ন তথা প্রশান্ত। আবার একে লাওয়ামাহ( لوامة ) বলা হয়েছে, কেননা সে ব্যক্তির বাড়াবাড়িতে তাকে ভর্ৎসনা করে। আবার একে আম্মারাহ( أمّارة ) বলা হয়েছে, যেহেতু সে অন্যায় কাজের আদেশ দেয়। বস্তুত অন্যায় কাজের নির্দেশ দেওয়াই হলো নফসের প্রকৃতি, তবে আল্লাহ যাকে তাওফিক দান করেন, যাকে হিদায়াতের ওপর স্থির রাখেন এবং সাহায্য করেন তার কথা আলাদা।
আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছি তিনি যেন আমাদের নফসগুলোকে নফসে মুতমাইন্না( مطمئنة ) করে দেন এবং আমাদেরকে তাঁর ইবাদত ও ভালোবাসায় অন্তর্ভুক্ত করেন। আমীন।।
সালাত ও সালাম আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর পরিবার-পরিজন ও সমস্ত সাহাবীগণের ওপর বর্ষিত হোক।
“হে প্রশান্ত আত্মা!” [সূরা আল-ফাজর, আয়াত: ২৭]
﴿وَلَآ أُقۡسِمُ بِٱلنَّفۡسِ ٱللَّوَّامَةِ٢﴾ [ القيامة : ٢ ]
“আমি আরো কসম করছি আত্ম-ভৎর্সনাকারী আত্মার!” [সূরা আল-কিয়ামা, আয়াত: ২]
﴿إِنَّ ٱلنَّفۡسَ لَأَمَّارَةُۢ بِٱلسُّوٓءِ﴾ [ يوسف : ٥٢ ]
“নিশ্চয় নাফস মন্দ কজের নির্দেশ দিয়ে থাকে।” [সূরা ইউসুফ, আয়াত: ৫২] তাহলে নফস কি মুতমাইন্না, লাওয়ামাহ ও আম্মারাহ তিন রকমের?
উত্তর: নফস মূলত একটি, তবে এর অনেক সিফাত তথা গুণ রয়েছে। ফলে নফসের গুণের হিসেবে এক একটি নাম দেওয়া হয়েছে। একে মুতমাইন্না ( مطمئنة ) বলা হয়েছে, যেহেতু সে তার রবের ইবাদত ও ভালোবাসায় মুতমাইন্ন তথা প্রশান্ত। আবার একে লাওয়ামাহ( لوامة ) বলা হয়েছে, কেননা সে ব্যক্তির বাড়াবাড়িতে তাকে ভর্ৎসনা করে। আবার একে আম্মারাহ( أمّارة ) বলা হয়েছে, যেহেতু সে অন্যায় কাজের আদেশ দেয়। বস্তুত অন্যায় কাজের নির্দেশ দেওয়াই হলো নফসের প্রকৃতি, তবে আল্লাহ যাকে তাওফিক দান করেন, যাকে হিদায়াতের ওপর স্থির রাখেন এবং সাহায্য করেন তার কথা আলাদা।
আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছি তিনি যেন আমাদের নফসগুলোকে নফসে মুতমাইন্না( مطمئنة ) করে দেন এবং আমাদেরকে তাঁর ইবাদত ও ভালোবাসায় অন্তর্ভুক্ত করেন। আমীন।।
সালাত ও সালাম আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর পরিবার-পরিজন ও সমস্ত সাহাবীগণের ওপর বর্ষিত হোক।
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন