HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

মুসলিমের হক

লেখকঃ আলী হাসান তৈয়ব

আল্লাহর জন্য ভ্রাতৃত্বের অর্থ
আমরা জানি, মুসলিমরা আজ স্রোতে ভাসা খড়কুটার মতো মূল্যহীন হয়ে পড়েছে। মুসলিমদের কাতার হয়ে পড়েছে টুকরো টুকরো। তারা হয়ে পড়েছে শতধা বিভক্ত। মুসলিম উম্মাহর প্রতি সবলের চেয়ে দুর্বল, সম্মানির চেয়ে অসম্মানী ও কাছের চেয়ে দূরের লোকরা বেশি লালায়িত। দৃশ্যত উম্মাহ হয়ে পড়েছে বানর-শূকরের বংশধর পৃথিবীর হীন, তুচ্ছ ও ঘৃণ্যতর জাতির জন্য একটি বৈধ বাসনের মতো। যার ইচ্ছে তা ব্যবহার করতে পারে। যেখানে ইচ্ছে তাকে ফেলে রাখতে পারে। এর প্রধান কারণ, বর্তমান বিশ্ব সম্মান করে শুধু সবলকে। অথচ উম্মাহ হয়ে পড়েছে দুর্বল। কেননা বিভক্তি দুর্বলতা, ব্যর্থতা ও ধ্বংসের প্রতীক। পক্ষান্তরে শক্তি সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও একতার নিদর্শন।

এমন লাঞ্চনাকর ও অপমানজনকভাবে উম্মাহ তখনই বীর্যহীন অবস্থায় আবির্ভূত হয়েছে, যখন তাদের শক্তি ও ঐক্যের উৎস হারিয়ে গেছে। হ্যা, সেটি হলো- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক রচিত আল্লাহর জন্য ভ্রাতৃত্বের বাঁধন বা ‘আল-উখুওয়াহ ফিল্লাহ’। তাওহীদের এই নিরেট, পূর্ণাঙ্গ ও পরিব্যাপ্ত চেতনা ছাড়া বাস্তবে এই ভ্রাতৃত্বের বাঁধনকে পুনর্জীবন দান করা কিছুতেই সম্ভব নয়। যেমন এই ভ্রাতৃত্বচেতনা মুসলিমদের প্রথম জামাতকে মেষের রাখাল থেকে সকল জাতি ও সকল দেশের নেতা ও পরিচালকে রূপান্তরিত করেছিল। এ রূপান্তর ও পরিবর্তন তখনই সূচিত হয়েছিল যখন তাঁরা পূর্ণাঙ্গ ও পরিব্যপ্ত আকীদার বুনিয়াদে গড়া এই ভ্রাতৃত্বকে তাঁদের কর্ম ও জীবন পদ্ধতিতে বাস্তবে রূপায়িত করেছিলেন। এই উজ্জ্বল, দ্যুতিময় ও দীপান্বিত চিত্র সেদিন ভাস্কর হয়ে ওঠেছিল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম যেদিন মক্কায় তাওহীদের অনুসারীদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের উদ্বোধন করেছিলেন। বর্ণ ও গোত্র এবং ভাষা ও ভূমির ভিন্নতা সত্ত্বেও তাঁদের মধ্যে বপণ করেছিলেন এক অভূতপূর্ব ভ্রাতৃত্ব ও একতার বীজ। ভ্রাতৃত্বের এক সুতোয় বেঁধেছিলেন তিনি কুরাইশ বংশের হামযা, গিফারী বংশের আবূ যর আর পারস্যের সালমান, হাবশার বিলাল ও রোমের হুসাইব রা. প্রমুখকে। একতা ও ভালোবাসার বাঁধনে জড়িয়ে তাঁরা সবাই যেন অভিন্ন কণ্ঠে আবৃত্তি করছিলেন পবিত্র কুরআনের এ আয়াত :

إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ فَأَصْلِحُوا بَيْنَ أَخَوَيْكُمْ وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ (10)

‘নিশ্চয় মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই। কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপোষ-মীমাংসা করে দাও। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, আশা করা যায় তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হবে।’ [১. সূরা আল-হুজরাত : ১০।]

তারা যেন দুলে উঠলেন নিচের এই সুমিষ্ট পঙতির দোলায়-

أبى الإسلام لا أبَ لى سِوَاهُ

إذا افتخروا بقيسٍ أو تميمِ

কবিতাটির মর্মার্থ এমন- ‘যখন তারা কায়েস বা তামীম ইত্যাদি বংশ নিয়ে বড়াই করছিল, ইসলাম তখন বংশ নিয়ে গর্ব ত্যাগ করে বললো, ইসলামই আমার বাপ, ইসলাম ছাড়া আমার কোনো বংশ নেই।’

এটি ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভ্রাতৃত্ব রচনার প্রথম পর্ব। এরপর দ্বিতীয় পর্বে সুদীর্ঘ রক্তাক্ত যুদ্ধ ও বহুকাল ধরে চলমান সংঘাতের অবসান ঘটিয়ে তিনি ভ্রাতৃত্ব গড়ে দেন মদীনার আউস ও খাযরাজ গোত্রের মধ্যে! তারপর তৃতীয় পর্বে তিনি ভ্রাতৃত্ব রচনা করেন মদীনার আনসার ও মক্কার মুহাজিরগণের মাঝে। এ ছিল মৈত্রি ও ভালোবাসার এমন উৎসব, পুরো মানবেতিহাসে যার দ্বিতীয় উপমা নেই। হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের বন্ধন রচিত হলো। মনের সাথে মনের মিলন হলো। এমন হৃদয়কাড়া দৃশ্যও মঞ্চায়িত হলো বুখারী ও মুসলিমে যার বিবরণ এসেছে এভাবে :

আনাস রা. বলেন,

قَدِمَ عَلَيْنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عَوْفٍ وَآخَى رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم بَيْنَهُ وَبَيْنَ سَعْدِ بْنِ الرَّبِيعِ ، وَكَانَ كَثِيرَ الْمَالِ فَقَالَ سَعْدٌ قَدْ عَلِمَتِ الأَنْصَارُ أَنِّي مِنْ أَكْثَرِهَا مَالاً سَأَقْسِمُ مَالِي بَيْنِي وَبَيْنَكَ شَطْرَيْنِ وَلِي امْرَأَتَانِ فَانْظُرْ أَعْجَبَهُمَا إِلَيْكَ فَأُطَلِّقُهَا حَتَّى إِذَا حَلَّتْ تَزَوَّجْتَهَا فَقَالَ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بَارَكَ اللَّهُ لَكَ فِي أَهْلِكَ فَلَمْ يَرْجِعْ يَوْمَئِذٍ حَتَّى أَفْضَلَ شَيْئًا مِنْ سَمْنٍ وَأَقِطٍ فَلَمْ يَلْبَثْ إِلاَّ يَسِيرًا حَتَّى جَاءَ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم ، وَعَلَيْهِ وَضَرٌ مِنْ صُفْرَةٍ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَهْيَمْ قَالَ تَزَوَّجْتُ امْرَأَةً مِنَ الأَنْصَارِ فَقَالَ مَا سُقْتَ فِيهَا قَالَ وَزْنَ نَوَاةٍ مِنْ ذَهَبٍ ، أَوْ نَوَاةً مِنْ ذَهَبٍ فَقَالَ أَوْلِمْ وَلَوْ بِشَاةٍ .

‘আমাদের কাছে আবদুর রহমান বিন আউফ এলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ও সা‘দ বিন রাবী‘র মধ্যে ভ্রাতৃত্ব গড়ে দিলেন। তিনি ছিলেন বিত্তশালী। সা‘দ রা. বললেন, আনসাররা জানে আমি তাদের মধ্যে সবচে বেশি সম্পদশালী। আমি আপনার এবং আমার মাঝে নিজ সম্পদ দুই ভাগে ভাগ করে নেব। আমার দুইজন স্ত্রী আছে। আপনি দেখেন কাকে আপনার বেশি সুন্দরী মনে হয়। আমি তাকে তালাক দেব। তারপর তার ইদ্দত শেষ হলে আপনি তাকে বিয়ে করবেন। আবদুর রহমান বললেন, আল্লাহ আপনার সম্পদে বরকত দিন। আপনি আমাকে বাজার কোথায় দেখিয়ে দিন। বাজার থেকে তিনি কেবল তখনই ফিরে এলেন যখন তার কাছে অল্প কিছু মাখন ও পনির অবশিষ্ট রয়ে গেল। ক্ষণকাল বাদেই সেখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগমন করলেন। তাঁর ওপর ছিল ....। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুর রহমানের উদ্দেশ্যে বললেন, ‘(মাহইয়াম) ঘটনা কী?’ আবদুর রহমান বললেন, আমি এক আনসারী মহিলাকে বিবাহ করেছি। তিনি বললেন, ‘তাকে কী দিয়েছো’? বললেন, খেজুরের বিচি পরিমাণ স্বর্ণ অথবা বলেছেন, স্বর্ণের একটি বিচি। তিনি বললেন, ওলীমা করো, হোক না তা একটি ছাগল দিয়ে।’ [২. বুখারী : ৩৭৮১।]

আজ আমরা সা‘দ বিন রবী‘ রা. -এর যুগের কথা কল্পনা করে আফসোস করি আর বলি, কোথায় সেই সা‘দ বিন রবী‘ রা. যিনি নিজ সম্পদ ও সহধর্মীনিকে দুই ভাগে ভাগ করবেন?!! এর উত্তর হলো, সেদিন আর নেই। সেদিন তো তখনই বিদায় হয়েছে যেদিন আবদুর রহমান রা. বিদায় নিয়েছেন। তেমনি যখন জিজ্ঞেস করা হয় কোন সে ব্যক্তি যিনি সা‘দ রা.-এর মতো বদান্যতা ও মহানুভবতা দেখাবেন? তার জবাবে বলা হবে, কোথায় সেই ব্যক্তি যিনি আবদুর রহমান রা.-এর মতো অমুখাপেক্ষিতা প্রদর্শন করবেন?!!

আরেকটি সুন্দর ঘটনা : এক ব্যক্তি পূর্বসুরী এক বুযুর্গের কাছে গিয়ে বললেন, কোথায় তারা -

الَّذِينَ يُنْفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ سِرًّا وَعَلَانِيَةً

‘যারা তাদের সম্পদ ব্যয় করে রাতে ও দিনে এবং গোপনে ও প্রকাশ্যে’? [৩. সূরা আল-বাকারা : ২৭৪।] তিনি বললেন, তারা তো তাদের সাথেই অতীত হয়েছেন-

لَا يَسْأَلُونَ النَّاسَ إِلْحَافًا

‘যারা মানুষের কাছে নাছোড় হয়ে চায় না।’ [৪. সূরা আল-বাকারা : ২৭৩।]

প্রিয় পাঠক, এই হলো পূর্ণাঙ্গ ও পরিব্যপ্ত আকীদার বুনিয়াদে গড়া প্রকৃত ভ্রাতৃত্বের কিছু চিত্র। আল্লাহর কসম! এই হাদীসটি যদি সর্বোচ্চ স্তরের একটি শুদ্ধ হাদীস না হতো, তাহলে আমি নির্ঘাত একে একটি কাল্পনিক দৃশ্য বলে আখ্যায়িত করতাম।

হ্যা, এটিই নির্ভেজাল ভ্রাতৃত্ব। এই হলো প্রকৃত ভ্রাতৃত্ব। কারণ, আল্লাহর জন্য ভ্রাতৃত্ব গড়ে ওঠে কেবল আকীদার বাঁধন, ঈমানের বন্ধন ও আল্লাহর ভালোবাসার সম্পর্কের মধ্য দিয়ে, যার শিকড় কখনো উপড়ে পড়ে না।

ইসলামী ভ্রাতৃত্ব আল্লাহর পক্ষ থেকে দেয়া একটি সামগ্রিক নেয়ামত। এটি আল্লাহর এমন এক দান, প্রকৃত মুমিনদের প্রতি যা প্রচুর ধারায় প্রবাহিত হয়। আল্লাহর জন্য ভ্রাতৃত্ব শুভ্র ও পরিশুদ্ধ হৃদয়ের মুমিনদের জন্য শারাবান তহুরা বা পবিত্র পানীয় তুল্য।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন