HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

পবিত্র রমাদান মাসে আমাদের করণীয়

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল-মামুন আল-আযহারী

কিতাবের নাম/ লেখক/ অনুবাদক/ সম্পাদক
পবিত্র রমাদান মাসে আমাদের করণীয়

আব্দুল্লাহ আল-মামুন আল-আযহারী

সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

সংক্ষিপ্ত বর্ণনা… .. .
এ প্রবন্ধে রমাদান মাসে আমাদের করণীয় কাজ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। সাওম পালনে রয়েছে অপরিসীম সাওয়াব। কিন্তু সঠিকমত সাওম পালম না করলে আমরা সে সাওয়াব থেকে বঞ্চিত হই। তাই সকলের উচৎ রমাদানকে কাজে লাগিয়ে দুনিয়া ও আখেরাতের মহাসাফল্য অর্জন করা।

পবিত্র রমাদান মাসে আমাদের করণীয়
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ١٨٣﴾ [ البقرة : ١٨٣ ]

“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর সাওম ফরয করা হয়েছে। যেরূপ ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৮৩]

ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভের মধ্যে পবিত্র রমাদান মাসের সাওম পালন একটি অন্যতম স্তম্ভ। শারীরিক ও মানসিক উৎকর্ষতা সাধন, সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ জাগ্রত, আল্লাহর অফুরন্ত নি‘আমতপ্রাপ্ত ও সর্বত্র আল্লাহভীতি পরিষ্ফুটিত হওয়া ইত্যাদির মহান বার্তা নিয়ে প্রতি বছর আমাদের দুয়ারে আসে কুরআন নাযিলের মহিমান্বিত মাস রমাদান। রহমত, মাগফিরাত আর জাহান্নাম থেকে মুক্তির মহা পয়গাম নিয়ে সারা বিশ্বে নেমে এসেছে রমাদান, যার ছোঁয়ায় মানুষ আজ ছোট শিশুর ন্যায় আল্লাহ তা‘আলার দরবারে দু’হাত তুলে অঝোর ধারায় কাঁদছে। রমাদান আজ মানুষের মাঝে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন জাগ্রত করে তুলেছে। তাই স্বাগতম হে রমাদান! তোমাকে সুস্বাগতম। সময়ের আবর্তমানে প্রতি বছর আসে রমাদান। আবার সে চলে যায় নিজ দেশে। কিন্তু আমরা কি তার কাঙ্খিত নি‘আমত অর্জন করেত পেরেছি? মানব জীবনের পঞ্চাশ-ষাট বছরে পঞ্চাশ-ষাট বার রমাদান আসবে, তন্মধ্যে দশ-পনের বছর আমরা থাকি অপ্রাপ্ত। সব মিলিয়ে কতটা রমাদানই বা পাই? এই স্বল্প পরিসরেও যদি আমরা রমাদানের মতো মহা মূল্যবান নি‘আমত হারিয়ে ফেলি তবে আমাদের মতো হতভাগা আর কে হতে পরে?

রমাদান মাসে সাওম পালনে রয়েছে অপরিসীম ফযীলত। এ সম্পর্কে কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করব।

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«الصِّيَامُ جُنَّةٌ فَلاَ يَرْفُثْ وَلاَ يَجْهَلْ، وَإِنِ امْرُؤٌ قَاتَلَهُ أَوْ شَاتَمَهُ فَلْيَقُلْ : إِنِّي صَائِمٌ مَرَّتَيْنِ» «وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَخُلُوفُ فَمِ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللَّهِ تَعَالَى مِنْ رِيحِ المِسْكِ» «يَتْرُكُ طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ وَشَهْوَتَهُ مِنْ أَجْلِي الصِّيَامُ لِي، وَأَنَا أَجْزِي بِهِ وَالحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا»

“সিয়াম ঢালস্বরূপ। সুতরাং অশ্লীলতা করবে না এবং মুর্খের মতো কাজ করবে না। যদি কেউ তার সাথে ঝগড়া করতে চায়, তাকে গালি দেয়, তবে সে যেন দুই বার বলে, আমি সাওম পালন করছি। ঐ সত্ত্বার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ, অবশ্যই সাওম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিসকের গন্ধের চাইতেও উৎকৃষ্ট, সে আমার জন্য আহার, পান ও কামাচার পরিত্যাগ করে। সিয়াম আমারই জন্য। তাই এর পুরষ্কার আমি নিজেই দান করব। আর প্রত্যেক নেক কাজের বিনিময় দশ গুণ”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৯৪।]

সাওম গুনাহের কাফফারা:
হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্নিত, তিনি বলেন,

«قَالَ عُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، مَنْ يَحْفَظُ حَدِيثًا عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الفِتْنَةِ؟ قَالَ حُذَيْفَةُ أَنَا سَمِعْتُهُ يَقُولُ : «فِتْنَةُ الرَّجُلِ فِي أَهْلِهِ وَمَالِهِ وَجَارِهِ، تُكَفِّرُهَا الصَّلاَةُ وَالصِّيَامُ وَالصَّدَقَةُ»، قَالَ : لَيْسَ أَسْأَلُ عَنْ ذِهِ، إِنَّمَا أَسْأَلُ عَنِ الَّتِي تَمُوجُ كَمَا يَمُوجُ البَحْرُ، قَالَ : وَإِنَّ دُونَ ذَلِكَ بَابًا مُغْلَقًا، قَالَ : فَيُفْتَحُ أَوْ يُكْسَرُ؟ قَالَ : يُكْسَرُ، قَالَ : ذَاكَ أَجْدَرُ أَنْ لاَ يُغْلَقَ إِلَى يَوْمِ القِيَامَةِ، فَقُلْنَا لِمَسْرُوقٍ : سَلْهُ أَكَانَ عُمَرُ يَعْلَمُ مَنِ البَابُ؟ فَسَأَلَهُ فَقَالَ : نَعَمْ، كَمَا يَعْلَمُ أَنَّ دُونَ غَدٍ اللَّيْلَةَ»

“একদিন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ফিতনা সম্পর্কিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসটি কার মুখস্ত আছে? হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, পরিবার, ধন-সম্পদ এবং প্রতিবেশীই মানুষের জন্য ফিতনা। সালাত, সাওম এবং সদকা এর কাফফারা হয়ে যায়। উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, এ ফিতনা সম্পর্কে আমি জিজ্ঞাসা করছি না, আমি তো জিজ্ঞাসা করেছি ঐ ফিতনা সম্পর্কে, যা সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো আন্দোলিত হতে থাকবে। হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, এ ফিতনার সামনে বন্ধ দরজা আছে। উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, এ দরজা কি খুলে যাবে, না ভেঙ্গে যাবে? হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ভেঙ্গে যাবে। উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তাহলে তো তা কিয়ামত পর্যন্ত বন্ধ হবে না। আমার মাসরূক রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বললাম, হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞেস করুন, উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু কি জানতেন, কে সেই দরজা? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তিনি এরূপ জানতেন যেরূপ কালকের দিনের পূর্বে আজকের রাত”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৯৫।]

সাওম পালনকারীর জন্য রয়েছে জান্নাতে রাইয়্যান দরজা:
সাহল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্নিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِنَّ فِي الجَنَّةِ بَابًا يُقَالُ لَهُ الرَّيَّانُ، يَدْخُلُ مِنْهُ الصَّائِمُونَ يَوْمَ القِيَامَةِ، لاَ يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ، يُقَالُ : أَيْنَ الصَّائِمُونَ؟ فَيَقُومُونَ لاَ يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ، فَإِذَا دَخَلُوا أُغْلِقَ فَلَمْ يَدْخُلْ مِنْهُ أَحَدٌ»

“জান্নাতে রাইয়্যান নামক একটি দরজা আছে। এ দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন সাওম পালনকারীরাই প্রবেশ করবে। তাদের ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা দেওয়া হবে, সাওম পালনকারীরা কোথায়? তখন তারা দাঁড়াবে। তারা ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। তাদের প্রবেশের পরই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। যাতে এ দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ না করে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৯৬।]

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্নিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ أَنْفَقَ زَوْجَيْنِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ، نُودِيَ مِنْ أَبْوَابِ الجَنَّةِ : يَا عَبْدَ اللَّهِ هَذَا خَيْرٌ، فَمَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الصَّلاَةِ دُعِيَ مِنْ بَابِ الصَّلاَةِ، وَمَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الجِهَادِ دُعِيَ مِنْ بَابِ الجِهَادِ، وَمَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الصِّيَامِ دُعِيَ مِنْ بَابِ الرَّيَّانِ، وَمَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الصَّدَقَةِ دُعِيَ مِنْ بَابِ الصَّدَقَةِ " ، فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ : بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا عَلَى مَنْ دُعِيَ مِنْ تِلْكَ الأَبْوَابِ مِنْ ضَرُورَةٍ، فَهَلْ يُدْعَى أَحَدٌ مِنْ تِلْكَ الأَبْوَابِ كُلِّهَا، قَالَ : «نَعَمْ وَأَرْجُو أَنْ تَكُونَ مِنْهُمْ»

“যে কেউ আল্লাহর পথে জোড়া জোড়া ব্যয় করবে তাকে জান্নাতের দরজাসমূহ থেকে ডাকা হবে, হে আল্লাহর বান্দা! এটাই উত্তম। অতএব, যে ব্যক্তি সালাত আদায়কারী, তাকে সালাতের দরজা থেকে ডাকা হবে। সে মুজাহিদ তাকে জিহাদের দরজা থেকে ডাকা হবে, যে সিয়াম পালনকারী, তাকে রাইয়্যাব দরজা থেকে ডাকা হবে। যে সাদকা দানকারী তাকে সাদকা দরজা থেকে ডাকা হবে। এরপর আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনার জন্য আমার পিতা-মাতা কুরবান, সকল দরজা থেকে কাউকে ডাকার কোনো প্রয়োজন নেই, তবে কি কাউকে সব দরজা থেকে ডাকা হবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ । আমি আশা করি তুমি তাদের মধ্যে হবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৯৭।]

তাই আসুন রমাদান মাসে আমরা কি কি ইবাদাত-বন্দেগী করে পবিত্র রমাদানের পুরষ্কার অর্জন করতে পারি তা নিয়ে কিচ্ছুক্ষণ চিন্তা-ভাবনা করা যাক।

১. নিয়্যাতের পরিশুদ্ধিতা:
সমস্ত কাজ নিয়্যাতের উপর নির্ভরশীল। তাই প্রথমেই আমাদের নিয়্যাতকে পরিশুদ্ধ করতে হবে। রমাদানে আমরা যে ভালো কাজই করি না কেন তা সবই আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি লাভের জন্য করবো। সাওম পালন, তাহাজ্জুদ পড়া, তারাবীহ পড়া, দান-সাদকাহ করা, সাওম পালনকারীকে ইফতারী করানো, ঈদের হাদিয়া, যাকাত-ফিতরা ইত্যাদি বিতরণ সব আমলের পেছনে একমাত্র উদ্দেশ্য থাকবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সন্তুষ্টি ও ভালোবাসা অর্জন।

২. কর্মসূচী গ্রহণ:
শা‘বান মাসের শেষের দিকে রমাদানের জন্য একটি কর্মসূচী প্রণয়ন করতে হবে। রমাদানে পড়াশুনা, অফিসে যাওয়া, কুরআন তিলাওয়াত, তাসবীহ-তাহলীল, সালাত, আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখাশুনা করা ও বিশ্রাম ইত্যাদি নিয়ে একটি কর্মসূচী প্রস্তুত করা এবং সে মোতাবেক কাজ করা।

৩. পরিবারের সবাই সাওম পালন করা:
প্রাপ্ত বয়স্ক, সুস্থ, মুক্বীম সকল মুসলিম নর-নারীর ওপর সাওম পালন ফরয। তাই নিজে যেমন সাওম পালন করবে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরকেও সাওম পালনের আদেশ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, রমাদান মাসে সাওম পালনই সর্বোৎকৃষ্ট ইবাদাত। এভাবে ছোটদেরকে সাওম পালনের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ صَامَ رَمَضَانَ، إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ»

“যে ব্যক্তি ঈমানসহ সাওয়াবের আশায় রমযানের সাওম পালন করে, তার পূর্বের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৮।]

৪. জামা‘আতের সাথে সালাত আদায়:
দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা ফরয। আর রমাদান মাসে কোনো নেক আমল সত্তর গুণ বা ততোধিক বৃদ্ধি পায়। তাই পাঁচ ওয়াক্ত সালাত জামা‘আতের সাথে আদায় করার আপ্রাণ চেষ্টা করা।

১০
৫. আল্লাহভীতি অর্জন:
সাওমের মূল লক্ষ্য হচ্ছে আল্লাহভীতি তথা তাকওয়াহ অর্জন। পবিত্র কুরআনের ভাষায়:

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ١٨٣﴾ [ البقرة : ١٨٣ ]

“হে ঈমিনদারগণ! তোমাদের ওপর সাওম ফরয করা হয়েছে। যেরূপ ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর। যেন তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পার”। [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৮৩]

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ لَمْ يَدَعْ قَوْلَ الزُّورِ وَالعَمَلَ بِهِ، فَلَيْسَ لِلَّهِ حَاجَةٌ فِي أَنْ يَدَعَ طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ»

“যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও সে অনুযায়ী আমল বর্জন করে নি, তার এ পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯০৩।]

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«قَالَ اللَّهُ : كُلُّ عَمَلِ ابْنِ آدَمَ لَهُ، إِلَّا الصِّيَامَ، فَإِنَّهُ لِي وَأَنَا أَجْزِي بِهِ، وَالصِّيَامُ جُنَّةٌ، وَإِذَا كَانَ يَوْمُ صَوْمِ أَحَدِكُمْ فَلاَ يَرْفُثْ وَلاَ يَصْخَبْ، فَإِنْ سَابَّهُ أَحَدٌ أَوْ قَاتَلَهُ، فَلْيَقُلْ إِنِّي امْرُؤٌ صَائِمٌ " «وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ، لَخُلُوفُ فَمِ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللَّهِ مِنْ رِيحِ المِسْكِ» " لِلصَّائِمِ فَرْحَتَانِ يَفْرَحُهُمَا : إِذَا أَفْطَرَ فَرِحَ، وَإِذَا لَقِيَ رَبَّهُ فَرِحَ بِصَوْمِهِ»

“আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, সাওম ব্যতীত আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই তার নিজের জন্য, কিন্তু সাওম আমার জন্য, তাই আমি এর প্রতিদান দিব। সাওম ঢালস্বরূপ। তোমাদের কেউ যেন সাওম পালনের দিন অশ্লীলতায় লিপ্ত না হয় এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে। কেউ যদি তাকে গালি দেয় অথবা তার সঙ্গে ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, আমি একজন সাওম পালনকারী। যার কবজায় মুহাম্মাদের প্রাণ, তাঁর শপথ! সাওম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিসকের গন্ধের চাইতেও সুগন্ধি। সাওম পালনকারীর জন্য রয়েছে দূ’টি খুশী যা তাকে খুশী করে। যখন সে ইফতার করে, সে খুশী হয় এবং যখন সে তার রবের সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন সাওমের বিনিময়ে আনন্দিত হবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯০৪।]

অন্য মাসের মতো রমাদান মাসেও কোনো মুমিন সুদ-ঘুষ, চুরি-ডাকাতি, চাঁদাবাজি-ছিনতাই, সন্ত্রাসী, যুলুম, অত্যাচার ইত্যাদি করতে পারে না। ঈদে স্ত্রী-পুত্রের জন্য দামী-দামী পোষাক কেনার জন্য আমাদের দেশের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ঘুষ ও চাঁদাবাজি করা ঐতিহ্যে পরিণত হয়ে গেছে। তাই আসুন আর সুদ-ঘুষ নয়, দুর্নীতি মুক্ত সমাজ গঠনের দৃঢ় প্রত্যয় এ রমাদানেই গ্রহণ করি।

১১
৬. কুরআন তিলাওয়াত:
রমাদান মাসেই হেরার পাদদেশ থেকে মানবতার মুক্তির দূত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানবকুলের হিদায়াতর জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে মহাগ্রন্থ আল-কুরআন প্রাপ্ত হন। কুরআনের ভাষায়:

﴿شَهۡرُ رَمَضَانَ ٱلَّذِيٓ أُنزِلَ فِيهِ ٱلۡقُرۡءَانُ هُدٗى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَٰتٖ مِّنَ ٱلۡهُدَىٰ وَٱلۡفُرۡقَانِۚ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ ٱلشَّهۡرَ فَلۡيَصُمۡهُۖ وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوۡ عَلَىٰ سَفَرٖ فَعِدَّةٞ مِّنۡ أَيَّامٍ أُخَرَۗ يُرِيدُ ٱللَّهُ بِكُمُ ٱلۡيُسۡرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ ٱلۡعُسۡرَ وَلِتُكۡمِلُواْ ٱلۡعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُواْ ٱللَّهَ عَلَىٰ مَا هَدَىٰكُمۡ وَلَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُونَ ١٨٥﴾ [ البقرة : ١٨٥ ]

“রমাদান মাস, যাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হিদায়াতস্বরূপ এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সাওম পালন করে। আর যে অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে তবে অন্যান্য দিবসে সংখ্যা পূরণ করে নিবে। আল্লাহ তোমাদের সহজ চান এবং কঠিন চান না। আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেন, তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা শোকর আদায় কর”। [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৮৫]

সুতরাং রমাদান মাসে বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা উচিৎ।

১২
৭. বিলম্ব করে সাহরী গ্রহণ:
রমাদান মাসে সাহরী খাওয়া মুস্তাহাব। কেননা আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«تَسَحَّرُوا فَإِنَّ فِي السَّحُورِ بَرَكَةً»

“তোমরা সাহরী খাও, কেননা সাহরীতে রয়েছে বরকত”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯২৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০৯৫।]

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্নিত, তিনি বলেন,

أَنَّ بِلاَلًا كَانَ يُؤَذِّنُ بِلَيْلٍ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «كُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى يُؤَذِّنَ ابْنُ أُمِّ مَكْتُومٍ، فَإِنَّهُ لاَ يُؤَذِّنُ حَتَّى يَطْلُعَ الفَجْرُ»، قَالَ القَاسِمُ : وَلَمْ يَكُنْ بَيْنَ أَذَانِهِمَا إِلَّا أَنْ يَرْقَى ذَا وَيَنْزِلَ ذَا»

“বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু রাতে আযান দিতেন। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ইবন উম্মে মাকতূমের আযান দেওয়া পর্যন্ত তোমরা পানাহার কর। কেননা সে ফজর না হওয়া পর্যন্ত আযান দেয় না। কাসিম রহ. বলেন, এদের উভয়ের মাঝে শুধু এতটুকু ব্যবধান ছিল যে, একজন নামতেন এবং অন্যজন উঠতেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯১৮।]

তাছাড়া বিলম্ব করে সাহরী খাওয়া মুস্তাহাব। তবে অবশ্যই ফজরের আযানের পূর্বেই শেষ করতে হবে।

১৩
৮. আযানের সাথ সাথে ইফতার করা:
সূর্যাস্তের সাথে সাথেই ইফতারী করা মুস্তাহাব। সাহল ইবন সা’দ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«لاَ يَزَالُ النَّاسُ بِخَيْرٍ مَا عَجَّلُوا الفِطْرَ»

“লোকেরা যতদিন যাবৎ ওয়াক্ত হওয়া মাত্র ইফতার করবে, ততদিন তারা কল্যাণের ওপর থাকবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৫৭।]

উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

«إِذَا أَقْبَلَ اللَّيْلُ مِنْ هَا هُنَا، وَأَدْبَرَ النَّهَارُ مِنْ هَا هُنَا، وَغَرَبَتِ الشَّمْسُ فَقَدْ أَفْطَرَ الصَّائِمُ»

“যখন রাত্র সে দিক থেকে ঘনিয়ে আসে ও দিন এদিক থেকে চলে যায় এবং সূর্য ডুবে যায়, তখন সাওম পালনকারী ইফতার করবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৫৪।]

১৪
৯. ইফতারীর সময় দো‘আ করা:
সাওম পালনকারীর জন্য সুন্নাত হচ্ছে ইফতারের পূর্ব মুহূর্তে দো‘আ করা। কারণ, এ সময় দো‘আ কবুল হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«ثَلاَثٌ لاَ تُرَدُّ دَعْوَتُهُمْ، الإِمَامُ العَادِلُ، وَالصَّائِمُ حِينَ يُفْطِرُ، وَدَعْوَةُ الْمَظْلُومِ»

“তিন ব্যক্তির দো‘আ ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। সাওম পালনকারী যখন ইফতার করে, ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ এবং নির্যাতিত ব্যক্তির দো‘আ"। [তিরমিযী, হাদীস নং ২৫২৬; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৭৫২।]

১৫
১০. সাওম পালনকারীকে ইফতার করানো:
সাওম পালনকারীকে ইফতার করানো রমাদানে একটি বিশেষ সাওয়াবের কাজ। যায়েদ ইবন খালেদ আল-জুহানী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন:

«مَنْ فَطَّرَ صَائِمًا، كُتِبَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِهِ، إِلَّا أَنَّهُ لَا يَنْقُصُ مِنْ أَجْرِ الصَّائِمِ شَيْءٌ»

“যে ব্যক্তি কোনো সাওম পালনকারীকে ইফতার করাবে সে সাওম পালনকারীর সমপরিমাণ সাওয়াব পাবে। তবে সাওম পালনকারীর সাওয়াব কমানো হবে না”। [তিরমিযী, হাদীস নং ৮০৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ১৭০৩৩।]

১৬
১১. তারাবীর সালাত আদায়:
রমাদানে তারাবীর সালাত আদায় করা সুন্নাত। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ»

“যে ব্যক্তি রমযানের রাতে সাওয়াবের আশায় রাত জেগে ইবাদত করে, তার পূর্বের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৫৯।]

আব্দুর রহমান ইবন ‘আবদ আল-ক্বারী রহ. বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,

خَرَجْتُ مَعَ عُمَرَ بْنِ الخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، لَيْلَةً فِي رَمَضَانَ إِلَى المَسْجِدِ، فَإِذَا النَّاسُ أَوْزَاعٌ مُتَفَرِّقُونَ، يُصَلِّي الرَّجُلُ لِنَفْسِهِ، وَيُصَلِّي الرَّجُلُ فَيُصَلِّي بِصَلاَتِهِ الرَّهْطُ، فَقَالَ عُمَرُ : «إِنِّي أَرَى لَوْ جَمَعْتُ هَؤُلاَءِ عَلَى قَارِئٍ وَاحِدٍ، لَكَانَ أَمْثَلَ» ثُمَّ عَزَمَ، فَجَمَعَهُمْ عَلَى أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ، ثُمَّ خَرَجْتُ مَعَهُ لَيْلَةً أُخْرَى، وَالنَّاسُ يُصَلُّونَ بِصَلاَةِ قَارِئِهِمْ، قَالَ عُمَرُ : «نِعْمَ البِدْعَةُ هَذِهِ، وَالَّتِي يَنَامُونَ عَنْهَا أَفْضَلُ مِنَ الَّتِي يَقُومُونَ» يُرِيدُ آخِرَ اللَّيْلِ وَكَانَ النَّاسُ يَقُومُونَ أَوَّلَهُ

“আমি রমাদানের এক রাতে উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহুর সঙ্গে মসজিদে নববীতে গিয়ে দেখতে পাই যে, লোকেরা বিক্ষিপ্ত জামা‘আতে বিভক্ত। কেউ একাকী সালাত আদায় করছে আবার কোনো ব্যক্তি সালাত আদায় করছে এবং তার ইকতেদা করে একদল লোক সালাত আদায় করছে। উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি মনে করি যে, এই লোকদের যদি আমি একজন ক্বারীর (ইমামের) পিছনে একত্রিত করে দিই, তবে তা উত্তম হবে। এরপর তিনি উবাই ইবন কা‘ব রাদিয়াল্লাহু আনহুর পিছনে সকলকে একত্রিত করে দিলেন। পরে আর এক রাতে আমি তার (উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুর) সঙ্গে বের হই। তখন লোকেরা তাদের ইমামের সাথে সালাত আদায় করছিল। উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, কত না সুন্দর এই নতুন ব্যবস্থা! তোমরা রাতের যে অংশে ঘুমিয়ে থাক তা রাতের ঐ অংশ অপেক্ষা উত্তম যে অংশে তোমরা সালাত আদায় কর, এর দ্বারা তিনি শেষ রাত বুঝিয়েছেন, কেননা তখন রাতের প্রথমভাগে লোকেরা সালাত আদায় করত। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০১০।]

তারাবীর সালাতে কুরআন খতম করা মুস্তাহাব:

১৭
১২. তাহাজ্জুদের সালাত পড়া:
নীরবে নির্জনে গভীর রজনীতে আল্লাহ তা‘আলার সামনে দাঁড়ালে পৃথিবীর সব সুখ যেন তখন উপভোগ করা যায়। এ সময় বান্দা কিছু প্রর্থনা করলে আল্লাহ ফিরিয়ে দেন না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “ফরয সালাতের পর সর্বোৎকৃষ্ট সালাত হচ্ছে তাহাজ্জুদের সালাত”। [সহীহ মুসলিম।]

১৮
১৩. শেষ দশদিন ই‘তিকাফ করা:
দুনিয়ার মায়াজাল ছিন্ন করে আল্লাহ তা‘আলার সান্নিধ্য লাভের উদ্দেশ্যে রমাদানের শেষ দশদিন কোনো জামে মসজিদে একাগ্রচিত্তে যিকির-আযকার, সালাত, কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি ইবাদাত-বন্দেগীর মাঝে কেটে দেওয়া হলো ই‘তিকাফ। ই‘তিকাফ করা সান্নাতে মুয়াক্কাদা (কিফায়াহ) হাদীসে এসেছে: “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রমাদানের শেষ দশদিন ই‘তিকাফ করেছেন। তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর স্ত্রীগণ ই‘তিকাফ করেছেন”। ই'তিকাফকারী লাইলাতুল ক্বদরের সৌভাগ্য প্রাপ্ত হতে পারেন।

১৯
১৪. রমাদান মাসে যাকাত আদায় করা:
যাকাত ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ। সালাতের পরেই এর স্থান। প্রত্যেক ধনবান ব্যক্তি যার সম্পদ যাকাতের নেসাব পরিমাণ হয়েছে তাদের যাকাত আদায় করা ফরয। রমাদানে একটি ফরয আদায় করলে সত্তরটি ফরয আদায় করার সাওয়াব। তাই এ মাসে যাকাত আদায় করলে অতিরিক্ত সাওয়াবের অধিকারী হওয়া যায়।

২০
১৫. সাধ্যমত দান-সদকাহ করা:
রমাদান মাসে বেশি বেশি নফল দান-সাদকাহ করা উচিৎ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সবচেয়ে বেশি দানশীল ব্যক্তি। আর রমাদান আসলে তিনি আরো বেশি দানশীল হতেন। হাদীসে এসেছে, ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন,

«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَجْوَدَ النَّاسِ بِالخَيْرِ، وَكَانَ أَجْوَدُ مَا يَكُونُ فِي رَمَضَانَ حِينَ يَلْقَاهُ جِبْرِيلُ، وَكَانَ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ يَلْقَاهُ كُلَّ لَيْلَةٍ فِي رَمَضَانَ، حَتَّى يَنْسَلِخَ، يَعْرِضُ عَلَيْهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ القُرْآنَ، فَإِذَا لَقِيَهُ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ، كَانَ أَجْوَدَ بِالخَيْرِ مِنَ الرِّيحِ المُرْسَلَةِ»

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধন সম্পদ ব্যয় করার ব্যাপারে সকলের চেয়ে দানশীল ছিলেন। রমাদানে জিবরীল আলাইহিস সালাম যখন তাঁর সাথে দেখা করতেন, তখন তিনি আরো অধিক দান করতেন। রমাদান শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি রাতেই জিবরীল তাঁর একবার সাক্ষাৎ করতেন। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কুরআন শোনাতেন। জিবরীল যখন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন তখন তিনি রহমত প্রেরিত বায়ূর চেয়ে অধিক ধন-সম্পদ দান করতেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯০২।]

তাই সামর্থবানদের উচিৎ পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন, গরীব-দুঃখী সবাইকে সাধ্যমত দান-সাদকা দিয়ে সহযোগিতা করা।

২১
১৬. সদাকাতুল ফিতর আদায় করা:
সাওমের পবিত্রতাস্বরূপ সাওম পালনকারীকে সদাকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। এ সদাকা দ্বারা আমরা গরীব মিসকীনদেরকে ঈদের আনন্দে শামিল করতে পারি। ঈদের সালাতের পূর্বেই এই ফিতরা আদায় করা সুন্নাত। তবে বিলম্ব হলে ঈদের পরেও তা আদায় করা যায়।

২২
১৭. রমাদানে উমরা পালন:
রমাদানে উমরা পালন করার ফযীলত অনেক। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “রমাদানে উমরা পালন হজের সমান”। [সহীহ বুখারী ও মুসলিম।] অন্য আরেক হাদীসে এসেছে: “রমাদানে উমরা পালন হজ আদায়ের সমান বা আমার সাথে হজ আদায়ের সমান”। [সহীহ মুসলিম।] তাই যাদের উমরা পালনের নিয়্যাত আছে তাদের উচিৎ রমাদানে উমরা পালন করা।

২৩
১৮. লাইলাতুর ক্বদর তালাশ করা:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿إِنَّآ أَنزَلۡنَٰهُ فِي لَيۡلَةِ ٱلۡقَدۡرِ ١ وَمَآ أَدۡرَىٰكَ مَا لَيۡلَةُ ٱلۡقَدۡرِ ٢ لَيۡلَةُ ٱلۡقَدۡرِ خَيۡرٞ مِّنۡ أَلۡفِ شَهۡرٖ ٣ تَنَزَّلُ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ وَٱلرُّوحُ فِيهَا بِإِذۡنِ رَبِّهِم مِّن كُلِّ أَمۡرٖ ٤ سَلَٰمٌ هِيَ حَتَّىٰ مَطۡلَعِ ٱلۡفَجۡرِ ٥﴾ [ القدر : ١، ٥ ]

“নিশ্চয় আমরা এটি নাযিল করেছি ‘লাইলাতুল কদরে।’ তোমাকে কিসে জানাবে ‘লাইলাতুল কদর’ কী? ‘লাইলাতুল কদর’ হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফিরিশতারা ও রূহ (জিবরীল) তাদের রবের অনুমতিক্রমে সকল সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ করে। শান্তিময় সেই রাত, ফজরের সূচনা পর্যন্ত”। [সূরা আল-ক্বাদর, আয়াত: ১-৫]

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ يَقُمْ لَيْلَةَ القَدْرِ، إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ»

“যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদর-এ ইবদতে রাত্রি জাগরণ করবে, তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৫।]

যির থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উবাই ইবন কা‘ব রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলতে শুনেছি, যখন তাকে বলা হব যে, আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন,

«مَنْ قَامَ السَّنَةَ أَصَابَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ»، فَقَالَ أُبَيٌّ : «وَاللهِ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ، إِنَّهَا لَفِي رَمَضَانَ، يَحْلِفُ مَا يَسْتَثْنِي، وَوَاللهِ إِنِّي لَأَعْلَمُ أَيُّ لَيْلَةٍ هِيَ، هِيَ اللَّيْلَةُ الَّتِي أَمَرَنَا بِهَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِقِيَامِهَا، هِيَ لَيْلَةُ صَبِيحَةِ سَبْعٍ وَعِشْرِينَ، وَأَمَارَتُهَا أَنْ تَطْلُعَ الشَّمْسُ فِي صَبِيحَةِ يَوْمِهَا بَيْضَاءَ لَا شُعَاعَ لَهَا»

“যে ব্যক্তি সারা বছর (ইবাদতে) রাত্রি জাগরণ করবে সে লাইলাতুল-কাদর পাবে; তখন উবাই রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, সেই আল্লাহর কসম তিনি ব্যতীত আর কোনো মা‘বুদ নেই। তা অবশ্যই রমদানে রয়েছে। তিনি কসম করে বলেছিলেন এবং তিনি কোনো ব্যতিক্রম ছাড়াই কসম করে বলেছিলেন। আবার তিনি আল্লাহর কসম খেয়ে বললেন, ভালো করেই জানি যে, সেটি কোন রাত; সেটি হলো সে রাত যে রাত জেগে ইবাদত করার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম আমাদের হুকুম করেছিলেন। যে রাতের ভোর হয়, সাতাশে রমাদান। আর সে রাতের আলামত হলো এই যে, দিনের সূর্য উদিত হয় উজ্জল হয়ে তাতে (কিরণের) তীব্রতা থাকে না।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৬২।]

তাই রমাদানের শেষ দশদিন বিশেষ করে বেজোড় রাত্রিতে ইবাদাতের মাধ্যমে ক্বদরের রাত্রি তালাশ করা উচিৎ।

২৪
১৯. সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ জাগিয়ে তোলা:
দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার দ্বারা মানুষ বুঝতে পারে দুঃখীজনের ক্ষুধা-তৃষ্ণার মর্মবেদনা। তাই ইসলাম রমাদানের সাওম ফরয করে সমাজের অবহেলিত মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধ গড়ে তুলেছে তা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। আর্তমানবতার সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার শিক্ষাই দিয়ে যায় রমাদান।

২৫
২০. দেশাত্মবোধে অনুপ্রাণিত হওয়া:
রমাদান মাস হলো আল্লাহ তা‘আলার সাহায্যের মাস। এ মাসে আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদেরকে যুগে যুগে শত্রুর মোকাবেলায় বিজয় দান করেছেন। ইসলামের ইতিহাসে ঐতিহাসিক বদরের যুদ্ধে সতেরই রমাদান মদীনা রাষ্ট্রের স্বাধীনতা টিকে রাখতে ইসলামের বিজয় কল্পে মক্কার কাফিরদের বিরুদ্ধে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও মুসলিমগণ ঐতিহাসিক বিজয় লাভ করেন। আল্লাহ বলেছেন,

﴿وَلَقَدۡ نَصَرَكُمُ ٱللَّهُ بِبَدۡرٖ وَأَنتُمۡ أَذِلَّةٞۖ فَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ لَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُونَ ١٢٣ إِذۡ تَقُولُ لِلۡمُؤۡمِنِينَ أَلَن يَكۡفِيَكُمۡ أَن يُمِدَّكُمۡ رَبُّكُم بِثَلَٰثَةِ ءَالَٰفٖ مِّنَ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةِ مُنزَلِينَ ١٢٤ بَلَىٰٓۚ إِن تَصۡبِرُواْ وَتَتَّقُواْ وَيَأۡتُوكُم مِّن فَوۡرِهِمۡ هَٰذَا يُمۡدِدۡكُمۡ رَبُّكُم بِخَمۡسَةِ ءَالَٰفٖ مِّنَ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةِ مُسَوِّمِينَ ١٢٥﴾ [ ال عمران : ١٢٣، ١٢٥ ]

“আর অবশ্যই আল্লাহ তোমাদেরকে বদরে সাহায্য করেছেন অথচ তোমরা ছিলে হীনবল। অতএব, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, আশা করা যায়, তোমরা শোকরগুজার হবে। স্মরণ কর, যখন তুমি মুমিনদেরকে বলছিলে, ‘তোমাদের জন্য কি যথেষ্ট নয় যে, তোমাদের রব তোমাদেরকে তিন হাজার নাযিলকৃত ফিরিশতা দ্বারা সাহায্য করবেন’? হ্যাঁ, যদি তোমরা ধৈর্য ধর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, আর তারা হঠাৎ তোমাদের মুখোমুখি এসে যায়, তবে তোমাদের রব পাঁচ হাজার চি ‎‎ হ্নিত ফিরিশতা দ্বারা তোমাদেরকে সাহায্য করবেন”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১২৩-১২৫]

তাই প্রতি বছর রমাদান আমাদেরকে দেশপ্রেম শিক্ষা দেয়। বহিরাগত শত্রুর মোকাবেলায় প্রিয় মাতৃভূমিকে টিকে রাখার দৃঢ় সংকল্প আমরা রমাদান মাসে গ্রহণ করবো।

২৬
২১. রমাদানে শরীরের যত্ন নেওয়া:
সুস্বাথ্য সকল সুখের মূল। ইবাদত করার জন্য চাই শারীরিক সুস্থতা। প্রবাদে বালা হয়: “তোমরা সাওম পালন করো, সুস্থ থাক”। তাই রমাদানে পরিমাণ মত পানাহার করা উচিৎ। অন্যদিকে সাওমের কারণে মানুষের অনেক রোগ-ব্যাধি দূর হয়। যেমন, খাদ্য নিয়ন্ত্রনের ফলে মেদ, ডায়াবেটিস, গাষ্ট্রিক, ব্লাড প্রেসার, হৃদরোগ ও মানসিক অস্থিরতা দূর হয়।

২৭
২২. আত্মসমালোচনা করা:
রমাদানে চাঁদ উদিৎ হলেই রহমতের দরজা খোলা হয়। প্রতিটি দিন অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে হিসাব করতে হবে আমি কতটুকু ভালো বা খারাপ কাজ করেছি। মনে রাখতে হবে জীবনে কতটি রমাদানই বা পাবো। আগামী রমাদানে আমি কি বেঁচে থাকবো? পর পারের জন্য আমি কতটুকু সম্বল অর্জন করেছি? এভাবে প্রতিটি দিন হিসেব করলে একটি সফল রমাদান অতিবাহিত করা সম্ভব।

২৮
২৩. রমাদান পরবর্তী কর্মসূচী গ্রহণ:
রমাদানের পরে বাকি এগারটি মাস কীভাবে চলবো সে সিদ্ধান্ত রমাদান মাসেই নিতে হবে। শাওয়ালের ছয় সাওম, রমাদানের পরে পুনরায় পাপের জগতে ফিরে না যাওয়া ইত্যাদি বিষয়ে অটল অবিচল পরিকল্পনা রমাদান মাসেই গ্রহন করা।

হে ঘুমন্ত! জেগে ওঠ, আর কত কাল এভাবে ঘুমাবে? মৃত্যুর পরে কবরে হাজার হাজার বছর ঘুমাতে পারবে। রমাদান বিদায় নিচ্ছে তুমি কি তার নি‘আমত প্রাপ্ত হয়েছো? সালাত-সাওম, দান-সাদকাহ, কুরআন তিলাওয়াত, সৎকাজে আদেশ, অসৎ কাজে নিষেধ ইত্যাদির মাধ্যমে রমাদানকে স্বাগত জানাও। আল্লাহ আমাদের সবাইকে কবুল করুন। আমীন!

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন