HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
হজ্জ ও উমরাহের সংক্ষিপ্ত বিবরণ
লেখকঃ শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-উসাইমীন রহ.
৬
হজ্জের বিবরণঃ৮ই যিলহজ্জ তারওয়িয়ার দিন প্রথম প্রহরে ঐ স্থানে ইহরাম বাঁধবে যেখানে থেকে হজ্জ করার ইচ্ছা করবে। উমরাহের ইহরাম বাঁধতে যেভাবে গোসল, সুগন্ধি ব্যবহার ও সালাত আদায় করেছিল; তেমনি হজ্জের ইহরাম বাঁধার সময়ও করবে। এরপর হজ্জের ইহরামের নিয়ত করবে এবং এভাবে তালবিয়া পাঠ করবেঃ
«لبيك حجا لبيك اللهم لبيك لا شريك لك لبيك إن الحمد والنعمة لك والملك لا شريك لك»
উচ্চারণঃ লাব্বাইকা হাজ্জান লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা, লাব্বাইকা লা-শারীকা লাকা লাব্বাইকা ইন্নাল হামদা ওয়ান্নি‘মাতা লাকা ওয়াল মুলকা লা-শারীকা লাকা।
অর্থঃ ‘‘আমি তোমার ডাকে সাড়া দিয়ে হজ্জ আদায়ের জন্যে হাজির হয়েছি। আমি তোমার দরবারে হাজির, আমি তোমার দরবারে হাজির, তোমার কোনো শরীক নেই। আমি তোমার দরবারে হাজির। নিশ্চয়ই সমস্ত নিয়ামত এবং রাজত্ব তোমারই। তোমার কোনো শরীক নেই।’’
আর যদি হজ্জ সম্পাদন করতে কোনো বাধার আশংকা থাকে তাহলে শর্ত সাপেক্ষে নিয়ত করবে এবং বলবেঃ
«وإن حبسني حابس فمحلي حيث حبستني»
অর্থাৎ যদি কোনো বাধাদায়ক বস্তু আমাকে হজ্জ সম্পাদক করতে বাধা দেয়, তাহলে হে আল্লাহ! তুমি যেখানে আমাকে আটকিয়ে দিবে সেখানেই আমার হালাল হওয়ার স্থান হবে।
কিন্তু যদি হজ্জ সম্পাদন করতে কোনো বাধার আশংকা না থাকে তাহলে শর্তের নিয়ত করবে না বরং শর্ত ছাড়াই নিয়ত করবে। অতঃপর মিনার দিকে রওয়ানা দিবে। মিনায় পৌঁছে যোহর, আসর, মাগরিব, এশা এবং ফজর এই পাঁচ ওয়াক্ত সালাত নির্ধাতির সময়ে কছর করে পড়বে। জমা বা দুই ওয়াক্তের সালাত একত্রে পড়বে না। আরাফার দিন সূর্য উঠার পর মিনা থেকে আরাফার দিকে রওয়ানা দিবে। এবং সম্ভব হলে নামিরা নামক স্থানে অবস্থান করবে। আর তা যদি সম্ভব না হয় তাহলে কোনো ক্ষতি নেই। কেননা, নামিরায় অবস্থান করা সুন্নত। যখন সূর্য ঢলে যাবে, তখন যোহর ও আসরের সালাত একসাথে প্রথম ওয়াক্কতে দু-দু রাকাআত করে পড়বে। যেমনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছিলেন। সালাতের পর মহান ও মহীয়ান আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি, যিকর ও দো‘আয় সময়কে নিযুক্ত করবে। আর নিজ পছন্দানুযায়ী দু’হাত উঁচু করে কিবলামূখী হয়ে দো‘আ করবে। যদি জাবালে রাহমাত পিছনে পড়ে যায় তাহলে কোনো অসুবিধা নেই। কেননা, কিবলামূখী হওয়া সুন্নত, আর জাবালের দিকে মুখ করা সুন্নত নয়। এই মহান অবস্থান স্থলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশী বেশী করে এই দো‘আ পাঠ করতেনঃ
«لا إله إلا الله وحده لا شريك له له الملك وله الحمد وهو على كل شيئ قدير»
উচ্চারণঃ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা-কুল্লি শাইয়্যিন ক্বাদীর।
অর্থঃ ‘‘একমাত্র আল্লাহ ছাড়া সত্যিকারের কোনো মা‘বুদ নেই। তাঁর কোনো শরীক নেই। রাজত্ব তারই এবং তাঁরই জন্য সমস্ত প্রশংসা। এবং তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।’’
যদি কোনো ক্লান্তি অনুভূত হয় আর এই ক্লান্তি দূর করতে সাথীদের সাথে লাভজনক কথাবার্তা অথবা কল্যাণকর কিতাবাদি, বিশেষ করে যে সমস্ত কিতাব আল্লাহ তা‘আলার দয়া ও দান সম্পর্কে লিখিত ঐ সমস্ত কিতাব পাঠ করতে ইচ্ছা হয় তাহলে তা হবে উত্তম। অতঃপর বিনয়ের সাথে আল্লাহর দিকে রূজু হয়ে দো‘আ করবে। এবং দিনের শেষ ভাগটা দো‘আর মাধ্যমে কাটাবার সুযোগ গ্রহণ করবে। কেননা, আরাফার দো‘আ হল সর্বশ্রেষ্ঠ দো‘আ।
সূর্য অস্ত যাওয়ার পর মুজদালিফার দিকে যাত্রা করবে। সেখানে পৌঁছে মাগরিব ও এশার সালাত একত্রে করে পড়বে। হ্যাঁ যদি মুজদালিফায় এশার সময়ের পূর্বেই পৌঁছে যায় তাহলে মাগরিবের সালাত মাগরিবের সময় পড়ে নিবে এবং পরে এশার সালাত তার নির্ধারিত সময়ে পড়বে। তবে যদি ক্লান্তি বা পানির স্বল্পতার দরুন জমা বা একত্র করতেই হয় তাহলে কোনো অসুবিধা নেই, যদিও এশার সময় না হয়। আর যদি আশংকা হয় যে, অর্ধরাতের পূর্বে মুযদালিফায় পৌঁছাতে পারবে না তাহলে মুযদালিফায় পৌঁছার পূর্বে হলেও সালাত পড়ে নিবে, কেননা অর্ধরাত পর পর্যন্ত সালাত পিছিয়ে নেওয়া জায়েয নয়। আর মুযদালিফায় রাত্রিযাপন করবে এবং ফজরের সময় হওয়ার পরপরই আজান ও ইক্বামত দ্বারা সালাত আদায় করবে। অতঃপর মাশ‘আরে হারামে গিয়ে আল্লাহ তা‘আলার একত্ববাদ ও বড়ত্ব বর্ণনা করবে এবং সম্পূর্ণ ফর্সা হওয়া পর্যন্ত দো‘আয় মগ্ন থাকবে। যদি মাশ‘আরে হারামে যাওয়া সম্ভব না হয় তাহলে নিজ অবস্থান স্থলে থেকেই ক্বিবলামূখী হয়ে দু’হাত উঠিয়ে দো‘আ করবে। যখন পূর্ণ ফর্সা হয়ে যাবে তখন সূর্য উঠার পূর্বেই মিনার দিকে রওয়ানা দিবে এবং মুহাসসির নামক উপত্যাকায় আসলে দ্রুতগতিতে চলবে। মিনায় পৌঁছার পর নিকটবর্তী পরপর সাতটি কংকর নিক্ষেপ করবে। কংকরগুলি বুটের দানা পরিমাণ হতে হবে। প্রতিটি কংকর নিক্ষেপের সময় ‘‘আল্লাহু আকবার’’ বলবে। কংকর নিক্ষেপের পর কোরবাণীর পশু যবেহ করবে। তারপর পুরুষেরা মাথা মুণ্ডন করবে। আর মহিলারা আঙ্গুলির অগ্রভাগ পরিমাণ চুল ছোট করবে। এরপর মক্কায় গিয়ে হজ্জের তাওয়াফ ও সা‘ঈ করবে। কংকার নিক্ষেপ ও মাথা মুণ্ডনের পর যখন তাওয়াফ করার জন্য মক্কায় যাওয়ার মনস্থ করবে, তখন সুগন্ধি ব্যবহার করা সুন্নত। তাওয়াফ ও সা‘ঈ শেষে মিনায় ফিরে এসে ১১ ও ১২ তারিখের রাত্রি যাপন করবে এবং দিনে সূর্য ঢলার পর তিনটি জামরায় পর পর সাতটি কংকর নিক্ষেপ করবে। এই জামরাটি মক্কা থেকে সবচেয়ে দূরবর্তী মসজিদে খায়ফের নিকট অবস্থিত। প্রতিটি কংকর নিক্ষেপের সময় আল্লাহু আকবার ধ্বনি উচ্চারণ করবে। কংকর নিক্ষেপ শেষে সামান্য এগিয়ে নিজ পছন্দ মোতাবেক দীর্ঘক্ষণ ধরে দো‘আ করবে। যদি দো‘আর জন্য সময় কাটানো অসম্ভব হয় তাহলে সংক্ষেপে দো‘আ করে নিবে, যাতে সুন্নতের উপর আমল হয়ে যায়। তারপর মধ্যবর্তী জামরায় পরপর সাতটি কংকর নিক্ষেপ করবে। কংকর নিক্ষেপের পর বাম দিকে সামান্য এগিয়ে কিবলামূখী হয়ে দু’হাত উঁচু করে সম্ভব হলে সম্ভব হরে দীর্ঘক্ষণ ধরে দো‘আ করবে। আর না হয় সম্ভব পরিমাণ দাঁড়িয়ে দো‘আ করে নিবে। তারপর জামরায়ে আকাবায় পরপর সাতটি কংকর নিক্ষেপ করবে। প্রতিটি কংকর নিক্ষেপের সময় আল্লাহু আকবার বলবে। এই জামরায় কংকর নিক্ষেপের পর দো‘আর জন্য না থেকেই চলে যাবে। এভাবে ১২ তারিখে কংকর নিক্ষেপ করার পর যদি প্রত্যাবর্তন করতে ইচ্ছা হয়, তাহলে মিনা থেকে বের হয়ে যাবে। আর যদি ইচ্ছা হয়, তাহলে মিনায় ১৩ তারিখের রাত্রি যাপন করবে, এবং দিনে উপরোল্লেখিত নিয়ম অনুযায়ী তিনটি জামরায় কংকর নিক্ষেপ করবে। ১২ তারিখ সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বে মিনা থেকে বের না হয়, তাহলে আরেক দিন অবস্থান করে ১৩ তারিখ সূর্য ঢলার পর তিনটি জামরায় কংকর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব। যখন স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করার ইচ্ছা করবে, তখন তাওয়াফে বিদা বা বিদায়ী তাওয়াফ না করা পর্যন্ত প্রত্যাবর্তন করবে না। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, তোমাদের কেউ যেন তার সফরের শেষ আল্লাহর ঘরের সঙ্গে না করে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করে না। তবে ঋতুবতী ও নেফাসওয়ালী মহিলাদের উপর বিদায়ী তাওয়াফ নেই। আর তাদের পক্ষে বিদায়ের জন্য মসজিদে হারামের গেইটের পাশে অবস্থান করা উচিত নয়। নিম্নে বর্ণিত বিষয়গুলি হজ্জ ও উমরাহ্ আদায়কারীর উপর ওয়াজিবঃ
আল্লাহ তা‘আলা যে সমস্ত বিষয় ওয়াজিব করে দিয়েছেন তা পুংখানুপুংখরূপে সম্পাদন করা। সঠিক সময়ে জামাতের সাথে সালাত আদায় করা।
নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকা। যেমন, স্ত্রী সম্ভোগ, বেহুদা ও বিবাদ বিসংবাদমূলক কাজ ও কথা-বার্তা ইত্যাদি।
কথা ও কাজে কোনো মুসলমানকে কষ্ট না দেওয়া।
ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কার্যাদি থেকে দূরে থাকা।
এগুলো নিম্নরূপঃ
ক. চুল বা নখ না কাটা। তবে কাঁটা বিধলে তা খুলতে কোনো অসুবিধা নেই, যদিও রক্ত বের হয়ে যায়।
খ. শরীর, কাপড়, পানীয় বস্ত্ত অথবা খাদ্য দ্রব্যে সুগন্ধি ব্যবহার না করা। অনুরূপ সুগন্ধিযুক্ত সাবানও ব্যবহার করবে না। কিন্তু যদি ইহরামের পূর্বেকার ব্যবহৃত সুগন্ধি (শরীরে) থেকে যায়, তাতে কোনো দোষ নেই।
গ. কোনো হালাল স্থলচর জন্তু শিকার না করা।
ঘ. উত্তেজনাসহ স্ত্রীর গা স্পর্শ করবে না অথবা চুমু দিবে না। আর স্ত্রী-সহবাস এর চেয়েও দোষণীয়।
ঙ. নিজের জন্য কিংবা অপরের জন্য বিবাহের প্রস্তাব দিবে না, এবং আকদও করবে না।
চ. হাত মোজা ব্যবহার করবে না। তবে ছেঁড়া কাপড় দিয়ে তা বাঁধলে কোনো অসুবিধা নেই।
নিম্নে বর্ণিত বিষয়াদি বিশেষভাবে পুরুষের জন্য নিষিদ্ধঃ
ক. এমন কিছু দিয়ে মাথা ঢাকবে না, যা মাথায় লেগে যায়। তবে ছাতা ব্যবহার করা, গাড়ী ও তাঁবুতে অবস্থান করা, অথবা মাথায় বোঝা চাপানো দোষণীয় নয়।
খ. জামা, কাপড়, বুরনুস (এক প্রকার টুপি সংযুক্ত জামা), পায়জামা এবং মোজা ব্যবহার করবে না। তবে যদি লুঙ্গি না পায় তাহরে পাজামা ব্যবহার করতে পারবে। এমনিভাবে যদি জুতা না পায় তাহরে মোজা ব্যবহার করতে পারবে।
গ. উপরোল্লেখিত পরিধেয় বস্তুর সাথে যা সামঞ্জস্য রাখে তাও ব্যবহার করতে পারবে না। যেমন ‘আবা (এক প্রকার জামা), টুপি, গেঞ্জি ইত্যাদি। তবে জুতা, আংটি, চশমা, শোনার জন্য কানের মেশিন, হাতঘড়ি ব্যবহার এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও টাকা পয়সা রাখার জন্য কোমরবন্দ ও পেটি ব্যবহার করা জায়েয আছে। অনুরূপ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য এমন কিছুর ব্যবহার যাতে সুগন্ধি নেই তাও জায়েয আছে। মাথা ও শরীর ধোয়া জায়েয আছে। অনুরূপ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য এমন কিছুর ব্যবহার যাতে সুগন্ধি নেই জায়েয আছে। মাথা ও শরীর ধোয়া জায়েয আছে, এমতাবস্থায় যদি অনিচ্ছাবশতঃ চুল পড়ে যায় তাহলে কোনো ক্ষতি নেই। আর মহিলারা মুখাচ্ছাদন অথবা বোরকা পরিধান করবে না। ইহরাম অবস্থায় মহিলাদের জন্য মুখ খুলে রাখা সুন্নত। তবে পর পুরুষের সামনে মুখ ঢেকে রাখা ওয়াজিব। এখানে উল্লেখ্য যে, অমুহরিম অবস্থাতেও নারীদের জন্য পর পুরুষের সামনে মুখ ঢেকে রাখা ওয়াজিব।
«لبيك حجا لبيك اللهم لبيك لا شريك لك لبيك إن الحمد والنعمة لك والملك لا شريك لك»
উচ্চারণঃ লাব্বাইকা হাজ্জান লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা, লাব্বাইকা লা-শারীকা লাকা লাব্বাইকা ইন্নাল হামদা ওয়ান্নি‘মাতা লাকা ওয়াল মুলকা লা-শারীকা লাকা।
অর্থঃ ‘‘আমি তোমার ডাকে সাড়া দিয়ে হজ্জ আদায়ের জন্যে হাজির হয়েছি। আমি তোমার দরবারে হাজির, আমি তোমার দরবারে হাজির, তোমার কোনো শরীক নেই। আমি তোমার দরবারে হাজির। নিশ্চয়ই সমস্ত নিয়ামত এবং রাজত্ব তোমারই। তোমার কোনো শরীক নেই।’’
আর যদি হজ্জ সম্পাদন করতে কোনো বাধার আশংকা থাকে তাহলে শর্ত সাপেক্ষে নিয়ত করবে এবং বলবেঃ
«وإن حبسني حابس فمحلي حيث حبستني»
অর্থাৎ যদি কোনো বাধাদায়ক বস্তু আমাকে হজ্জ সম্পাদক করতে বাধা দেয়, তাহলে হে আল্লাহ! তুমি যেখানে আমাকে আটকিয়ে দিবে সেখানেই আমার হালাল হওয়ার স্থান হবে।
কিন্তু যদি হজ্জ সম্পাদন করতে কোনো বাধার আশংকা না থাকে তাহলে শর্তের নিয়ত করবে না বরং শর্ত ছাড়াই নিয়ত করবে। অতঃপর মিনার দিকে রওয়ানা দিবে। মিনায় পৌঁছে যোহর, আসর, মাগরিব, এশা এবং ফজর এই পাঁচ ওয়াক্ত সালাত নির্ধাতির সময়ে কছর করে পড়বে। জমা বা দুই ওয়াক্তের সালাত একত্রে পড়বে না। আরাফার দিন সূর্য উঠার পর মিনা থেকে আরাফার দিকে রওয়ানা দিবে। এবং সম্ভব হলে নামিরা নামক স্থানে অবস্থান করবে। আর তা যদি সম্ভব না হয় তাহলে কোনো ক্ষতি নেই। কেননা, নামিরায় অবস্থান করা সুন্নত। যখন সূর্য ঢলে যাবে, তখন যোহর ও আসরের সালাত একসাথে প্রথম ওয়াক্কতে দু-দু রাকাআত করে পড়বে। যেমনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছিলেন। সালাতের পর মহান ও মহীয়ান আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি, যিকর ও দো‘আয় সময়কে নিযুক্ত করবে। আর নিজ পছন্দানুযায়ী দু’হাত উঁচু করে কিবলামূখী হয়ে দো‘আ করবে। যদি জাবালে রাহমাত পিছনে পড়ে যায় তাহলে কোনো অসুবিধা নেই। কেননা, কিবলামূখী হওয়া সুন্নত, আর জাবালের দিকে মুখ করা সুন্নত নয়। এই মহান অবস্থান স্থলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশী বেশী করে এই দো‘আ পাঠ করতেনঃ
«لا إله إلا الله وحده لا شريك له له الملك وله الحمد وهو على كل شيئ قدير»
উচ্চারণঃ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা-কুল্লি শাইয়্যিন ক্বাদীর।
অর্থঃ ‘‘একমাত্র আল্লাহ ছাড়া সত্যিকারের কোনো মা‘বুদ নেই। তাঁর কোনো শরীক নেই। রাজত্ব তারই এবং তাঁরই জন্য সমস্ত প্রশংসা। এবং তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।’’
যদি কোনো ক্লান্তি অনুভূত হয় আর এই ক্লান্তি দূর করতে সাথীদের সাথে লাভজনক কথাবার্তা অথবা কল্যাণকর কিতাবাদি, বিশেষ করে যে সমস্ত কিতাব আল্লাহ তা‘আলার দয়া ও দান সম্পর্কে লিখিত ঐ সমস্ত কিতাব পাঠ করতে ইচ্ছা হয় তাহলে তা হবে উত্তম। অতঃপর বিনয়ের সাথে আল্লাহর দিকে রূজু হয়ে দো‘আ করবে। এবং দিনের শেষ ভাগটা দো‘আর মাধ্যমে কাটাবার সুযোগ গ্রহণ করবে। কেননা, আরাফার দো‘আ হল সর্বশ্রেষ্ঠ দো‘আ।
সূর্য অস্ত যাওয়ার পর মুজদালিফার দিকে যাত্রা করবে। সেখানে পৌঁছে মাগরিব ও এশার সালাত একত্রে করে পড়বে। হ্যাঁ যদি মুজদালিফায় এশার সময়ের পূর্বেই পৌঁছে যায় তাহলে মাগরিবের সালাত মাগরিবের সময় পড়ে নিবে এবং পরে এশার সালাত তার নির্ধারিত সময়ে পড়বে। তবে যদি ক্লান্তি বা পানির স্বল্পতার দরুন জমা বা একত্র করতেই হয় তাহলে কোনো অসুবিধা নেই, যদিও এশার সময় না হয়। আর যদি আশংকা হয় যে, অর্ধরাতের পূর্বে মুযদালিফায় পৌঁছাতে পারবে না তাহলে মুযদালিফায় পৌঁছার পূর্বে হলেও সালাত পড়ে নিবে, কেননা অর্ধরাত পর পর্যন্ত সালাত পিছিয়ে নেওয়া জায়েয নয়। আর মুযদালিফায় রাত্রিযাপন করবে এবং ফজরের সময় হওয়ার পরপরই আজান ও ইক্বামত দ্বারা সালাত আদায় করবে। অতঃপর মাশ‘আরে হারামে গিয়ে আল্লাহ তা‘আলার একত্ববাদ ও বড়ত্ব বর্ণনা করবে এবং সম্পূর্ণ ফর্সা হওয়া পর্যন্ত দো‘আয় মগ্ন থাকবে। যদি মাশ‘আরে হারামে যাওয়া সম্ভব না হয় তাহলে নিজ অবস্থান স্থলে থেকেই ক্বিবলামূখী হয়ে দু’হাত উঠিয়ে দো‘আ করবে। যখন পূর্ণ ফর্সা হয়ে যাবে তখন সূর্য উঠার পূর্বেই মিনার দিকে রওয়ানা দিবে এবং মুহাসসির নামক উপত্যাকায় আসলে দ্রুতগতিতে চলবে। মিনায় পৌঁছার পর নিকটবর্তী পরপর সাতটি কংকর নিক্ষেপ করবে। কংকরগুলি বুটের দানা পরিমাণ হতে হবে। প্রতিটি কংকর নিক্ষেপের সময় ‘‘আল্লাহু আকবার’’ বলবে। কংকর নিক্ষেপের পর কোরবাণীর পশু যবেহ করবে। তারপর পুরুষেরা মাথা মুণ্ডন করবে। আর মহিলারা আঙ্গুলির অগ্রভাগ পরিমাণ চুল ছোট করবে। এরপর মক্কায় গিয়ে হজ্জের তাওয়াফ ও সা‘ঈ করবে। কংকার নিক্ষেপ ও মাথা মুণ্ডনের পর যখন তাওয়াফ করার জন্য মক্কায় যাওয়ার মনস্থ করবে, তখন সুগন্ধি ব্যবহার করা সুন্নত। তাওয়াফ ও সা‘ঈ শেষে মিনায় ফিরে এসে ১১ ও ১২ তারিখের রাত্রি যাপন করবে এবং দিনে সূর্য ঢলার পর তিনটি জামরায় পর পর সাতটি কংকর নিক্ষেপ করবে। এই জামরাটি মক্কা থেকে সবচেয়ে দূরবর্তী মসজিদে খায়ফের নিকট অবস্থিত। প্রতিটি কংকর নিক্ষেপের সময় আল্লাহু আকবার ধ্বনি উচ্চারণ করবে। কংকর নিক্ষেপ শেষে সামান্য এগিয়ে নিজ পছন্দ মোতাবেক দীর্ঘক্ষণ ধরে দো‘আ করবে। যদি দো‘আর জন্য সময় কাটানো অসম্ভব হয় তাহলে সংক্ষেপে দো‘আ করে নিবে, যাতে সুন্নতের উপর আমল হয়ে যায়। তারপর মধ্যবর্তী জামরায় পরপর সাতটি কংকর নিক্ষেপ করবে। কংকর নিক্ষেপের পর বাম দিকে সামান্য এগিয়ে কিবলামূখী হয়ে দু’হাত উঁচু করে সম্ভব হলে সম্ভব হরে দীর্ঘক্ষণ ধরে দো‘আ করবে। আর না হয় সম্ভব পরিমাণ দাঁড়িয়ে দো‘আ করে নিবে। তারপর জামরায়ে আকাবায় পরপর সাতটি কংকর নিক্ষেপ করবে। প্রতিটি কংকর নিক্ষেপের সময় আল্লাহু আকবার বলবে। এই জামরায় কংকর নিক্ষেপের পর দো‘আর জন্য না থেকেই চলে যাবে। এভাবে ১২ তারিখে কংকর নিক্ষেপ করার পর যদি প্রত্যাবর্তন করতে ইচ্ছা হয়, তাহলে মিনা থেকে বের হয়ে যাবে। আর যদি ইচ্ছা হয়, তাহলে মিনায় ১৩ তারিখের রাত্রি যাপন করবে, এবং দিনে উপরোল্লেখিত নিয়ম অনুযায়ী তিনটি জামরায় কংকর নিক্ষেপ করবে। ১২ তারিখ সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বে মিনা থেকে বের না হয়, তাহলে আরেক দিন অবস্থান করে ১৩ তারিখ সূর্য ঢলার পর তিনটি জামরায় কংকর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব। যখন স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করার ইচ্ছা করবে, তখন তাওয়াফে বিদা বা বিদায়ী তাওয়াফ না করা পর্যন্ত প্রত্যাবর্তন করবে না। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, তোমাদের কেউ যেন তার সফরের শেষ আল্লাহর ঘরের সঙ্গে না করে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করে না। তবে ঋতুবতী ও নেফাসওয়ালী মহিলাদের উপর বিদায়ী তাওয়াফ নেই। আর তাদের পক্ষে বিদায়ের জন্য মসজিদে হারামের গেইটের পাশে অবস্থান করা উচিত নয়। নিম্নে বর্ণিত বিষয়গুলি হজ্জ ও উমরাহ্ আদায়কারীর উপর ওয়াজিবঃ
আল্লাহ তা‘আলা যে সমস্ত বিষয় ওয়াজিব করে দিয়েছেন তা পুংখানুপুংখরূপে সম্পাদন করা। সঠিক সময়ে জামাতের সাথে সালাত আদায় করা।
নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকা। যেমন, স্ত্রী সম্ভোগ, বেহুদা ও বিবাদ বিসংবাদমূলক কাজ ও কথা-বার্তা ইত্যাদি।
কথা ও কাজে কোনো মুসলমানকে কষ্ট না দেওয়া।
ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কার্যাদি থেকে দূরে থাকা।
এগুলো নিম্নরূপঃ
ক. চুল বা নখ না কাটা। তবে কাঁটা বিধলে তা খুলতে কোনো অসুবিধা নেই, যদিও রক্ত বের হয়ে যায়।
খ. শরীর, কাপড়, পানীয় বস্ত্ত অথবা খাদ্য দ্রব্যে সুগন্ধি ব্যবহার না করা। অনুরূপ সুগন্ধিযুক্ত সাবানও ব্যবহার করবে না। কিন্তু যদি ইহরামের পূর্বেকার ব্যবহৃত সুগন্ধি (শরীরে) থেকে যায়, তাতে কোনো দোষ নেই।
গ. কোনো হালাল স্থলচর জন্তু শিকার না করা।
ঘ. উত্তেজনাসহ স্ত্রীর গা স্পর্শ করবে না অথবা চুমু দিবে না। আর স্ত্রী-সহবাস এর চেয়েও দোষণীয়।
ঙ. নিজের জন্য কিংবা অপরের জন্য বিবাহের প্রস্তাব দিবে না, এবং আকদও করবে না।
চ. হাত মোজা ব্যবহার করবে না। তবে ছেঁড়া কাপড় দিয়ে তা বাঁধলে কোনো অসুবিধা নেই।
নিম্নে বর্ণিত বিষয়াদি বিশেষভাবে পুরুষের জন্য নিষিদ্ধঃ
ক. এমন কিছু দিয়ে মাথা ঢাকবে না, যা মাথায় লেগে যায়। তবে ছাতা ব্যবহার করা, গাড়ী ও তাঁবুতে অবস্থান করা, অথবা মাথায় বোঝা চাপানো দোষণীয় নয়।
খ. জামা, কাপড়, বুরনুস (এক প্রকার টুপি সংযুক্ত জামা), পায়জামা এবং মোজা ব্যবহার করবে না। তবে যদি লুঙ্গি না পায় তাহরে পাজামা ব্যবহার করতে পারবে। এমনিভাবে যদি জুতা না পায় তাহরে মোজা ব্যবহার করতে পারবে।
গ. উপরোল্লেখিত পরিধেয় বস্তুর সাথে যা সামঞ্জস্য রাখে তাও ব্যবহার করতে পারবে না। যেমন ‘আবা (এক প্রকার জামা), টুপি, গেঞ্জি ইত্যাদি। তবে জুতা, আংটি, চশমা, শোনার জন্য কানের মেশিন, হাতঘড়ি ব্যবহার এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও টাকা পয়সা রাখার জন্য কোমরবন্দ ও পেটি ব্যবহার করা জায়েয আছে। অনুরূপ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য এমন কিছুর ব্যবহার যাতে সুগন্ধি নেই তাও জায়েয আছে। মাথা ও শরীর ধোয়া জায়েয আছে। অনুরূপ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য এমন কিছুর ব্যবহার যাতে সুগন্ধি নেই জায়েয আছে। মাথা ও শরীর ধোয়া জায়েয আছে, এমতাবস্থায় যদি অনিচ্ছাবশতঃ চুল পড়ে যায় তাহলে কোনো ক্ষতি নেই। আর মহিলারা মুখাচ্ছাদন অথবা বোরকা পরিধান করবে না। ইহরাম অবস্থায় মহিলাদের জন্য মুখ খুলে রাখা সুন্নত। তবে পর পুরুষের সামনে মুখ ঢেকে রাখা ওয়াজিব। এখানে উল্লেখ্য যে, অমুহরিম অবস্থাতেও নারীদের জন্য পর পুরুষের সামনে মুখ ঢেকে রাখা ওয়াজিব।
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন