HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

আমি তাওবা করতে চাই

লেখকঃ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল-মুনাজ্জিদ

১৫
তাওবাকারীর জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফাত্ওয়া
আপনি হয়তো বলতে পারেন, আমি তাওবা করতে চাই কিন্তু আমি তাওবার হুকুম আহকাম সম্পর্কে অজ্ঞ। আমার মনে কতিপয় গুনাহের ব্যাপারে অনেক প্রশ্নের উদ্রেক হয় এর সঠিক তাওবার ব্যাপারে, আল্লাহর যে সব হক নষ্ট করেছি তা পূরণ করার ব্যাপারে এবং বান্দাদের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে যা আমি ইতিপূর্বে অন্যায়ভাবে গ্রহণ করেছি। এসব প্রশ্নের উত্তর কি আছে?

আল্লাহর পানে প্রত্যাবর্তনকারী ব্যক্তি! আপনার জন্য এসব প্রশ্নের উত্তর উল্লেখ করবো ইনশাআল্লাহ।

আমি তাওবা করতে চাই - 60

আমি তাওবা করতে চাই - 60

[প্রশ্ন নং ১] আমি পাপ করার পর তাওবা করি অতঃপর আমার কু-প্রবৃত্তি আমার উপর বিজয়ী হয়, যার ফলে আবার পাপের পথে ফিরে আসি, এর ফলে কি আমার পূর্বের তাওবা বাতিল হয়ে যাবে এবং আমার পূর্বের ও পরের গুনাহ বাকী রয়ে যাবে?

উত্তর: তাওবা সঠিক হওয়ার জন্য শর্ত হলো পাপ থেকে পূর্ণভাবে মুক্ত হওয়া এবং এজন্য অনুতপ্ত হওয়া, পুনরায় আর তা না করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হওয়া। এরপর যদি আবার কেউ পাপ করে ফেলে তাহলে সে যেন নতুনভাবে পাপ করল, এজন্য তাকে নতুনভাবে তাওবা করতে হবে এবং তার পূর্বের তাওবা ঠিক থাকবে।



[প্রশ্ন নং ২] একটি গুনাহের তাওবা সঠিক হবে কি অথচ আমি অন্য একটি গুনাহের উপর অটল আছি?

উত্তর: কোন একটি গুনাহের জন্য তাওবা করা ঠিক হবে যদিও সে অন্য গুনাহে লিপ্ত থাকে, যদি একই ধরণের গুনাহ না হয়ে থাকে এবং তা প্রথম পাপের সাথে সম্পৃক্ত না হয়। উদাহরণ স্বরূপ যদি কেউ সুদ থেকে তাওবা করে কিন্তু মদ্যপান করা থেকে তাওবা না করে, তাহলে সুদ থেকে তার তাওবা করাটা সঠিক হবে এবং এর উল্টোটিও সঠিক হবে। কিন্তু যদি সে সরল সুদ থেকে তাওবা করে চক্রবৃদ্ধি সুদের উপর অটল থাকে তাহলে তখন তার তাওবা কবুল হবে না। তেমনি ভাবে কেউ গাঁজা বা চরস খাওয়া থেকে তাওবা করল কিন্তু মদপান অব্যাহত রাখল বা এর বিপরীত করলো। তেমনি ভাবে কেউ হয়তো কোন এক বিশেষ মহিলার সাথে ব্যভিচার করা থেকে তাওবা করল কিন্তু অন্য মহিলার সাথে অব্যাহত রাখলো তাহলে এদের তাওবা সঠিক হবে না। তারা এতটুকু করলো যে এক পাপ থেকে ঐ ধরনের আরেকটি পাপের সাথে জড়িয়ে পড়ল। (দেখুন মাদারেজুস সালেকীন)

[প্রশ্ন নং ৩] অতীতে আমি আল্লাহর হক নষ্ট করেছি, নামায পড়িনি, রোজা রাখিনি, জাকাত দেইনি, এখন আমি কি করবো?

উত্তর: নামায পরিত্যাগ করার ব্যাপারে প্রসিদ্ধ মত হলো, এর কাজা আদায় করতে হবে না। কেননা এর সময় পার হয়ে গেছে এবং তা ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। এর ঘাটতি পূরণ করতে হবে বেশী বেশী তাওবা, এসতেগফার পাঠ করে, বেশী বেশী নফল নামায আদায় করে, আশা করা যায় যে মহান আল্লাহ তা ক্ষমা করে দিবেন।

আমি তাওবা করতে চাই কিন্তু - 62

আমি তাওবা করতে চাই কিন্তু - 62

কিন্তু রোজা ছেড়ে দেয়ার ব্যাপারে কথা হলো, রোজা ভঙ্গের সময় যদি সে মুসলমান থেকে থাকে তাহলে তার প্রতি প্রত্যেক রোজার জন্য একজন করে মিসকিনকে খাবার দেয়া ওয়াজিব হবে এবং পরবর্তী রমজান আসার পূর্বেই এই কাফ্ফারা প্রদান করতে হবে। এর চেয়ে দেরী করতে পারবে না যদি তার কোন শরয়ী ওজর না থাকে। পূর্বে যত দিনই বাকী আছে সবগুলোরই কাজা আদায় করতে হবে যদিও এর সংখ্যা কয়েক মাস গিয়ে পৌছে।

আমি তাওবা করতে চাই - 60

আমি তাওবা করতে চাই - 60

উদাহরণ: কোন ব্যক্তি ১৪০০ হিজরীতে ৩টি রোজা ভঙ্গ করলো এবং ১৪০১ হিজরীতে ৫টি রোজা ছেড়ে দিলো এরপর সে যদি তাওবা করে, তাহলে তাকে ৮টি রোজার কাজা আদায় করতে হবে। প্রত্যেক রোজার জন্য একজন করে মিসকিনের খানা দিতে হবে।

আরেকটি উদাহরণ: এক মেয়ে ১৪০০ হিজরীতে বালেগা হলো এবং সে লজ্জা করে তার পরিবারের লোকজনকে জানালো না। সে ঐ আট দিন (বা সাতদিন মাসিকের সময়) রোজা রাখল এবং পরে এর কাজা আদায় করলো না। তাহলে তার উপর ঐ আট দিনের রোজার কাজা আদায় করা কর্তব্য হয়ে গেল। এখানে একটি বিষয় অবশ্যই অবগত থাকতে হবে যে, নামায ছাড়া ও রোজা ভঙ্গ করার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে যা আহলে ইলমরা উল্লেখ করেছেন। ওলামাদের কেউ কেউ মনে করেন যে, কেউ যদি ইচ্ছা করে রোজা ভঙ্গ করে তবুও কাজা আদায় করতে হবে না।

কিন্তু জাকাত না দেয়া থাকলে অবশ্যই জাকাত প্রদান করতে হবে। কেননা জাকাত এক দিকে আল্লাহর হক এবং অন্য দিকে গরীব মিসকিনের হক। (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন মাদারেজুস সালেকীন ১/৩৮৩)

[প্রশ্ন নং ৪] যদি গুনাহ কোন ব্যক্তির হকের ব্যাপারে ঘটে থাকে তাহলে কিভাবে তাওবা হবে?

উত্তর: এ ব্যাপারে দলীল হলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ বাণী:

" مَنْ كَانَتْ عِنْدَهُ مَظْلَمَةٌ لِأَخِيهِ فَلْيَتَحَلَّلْهُ مِنْهَا؛ فَإِنَّهُ لَيْسَ ثَمَّ دِينَارٌ وَلَا دِرْهَمٌ، مِنْ قَبْلِ أَنْ يُؤْخَذَ لِأَخِيهِ مِنْ حَسَنَاتِهِ؛ فَإِنْ لَمْ يَكُنْ لَهُ حَسَنَاتٌ أُخِذَ مِنْ سَيِّئَاتِ أَخِيهِ فَطُرِحَتْ عَلَيْهِ " ( رواه البخاري : ৬৫৩৪)

‘‘কারো উপর তার ভাইয়ের কোন প্রকার দাবি থাকলে সে যেন তাতে থেকে মুক্ত হয়ে যায়। কেননা সেখানে (কিয়ামত দিবসে বা পরকালে) কোন দীনার-দিরহাম (টাকা-পয়সা) থাকবে না। তার অন্যায়ের সমপরিমাণ নেকী তার ভাইয়ের জন্য কেটে নেয়ার আগেই। তার যদি নেকী না থাকে তাহলে তার ভাইয়ের গুনাহগুলো নেয়া হবে, অতঃপর তার উপরে চাপিয়ে দেয়া হবে।’’ (বুখারী: ৬৫৩৪)

সুতরাং তাওবাকারীকে এই জুলুম থেকে বের হয়ে আসতে হবে, হয় তা ফিরিয়ে দিবে অথবা তার নিকট থেকে ক্ষমা চেয়ে নিবে। যদি ক্ষমা না করে তাহলে অবশ্যই ফেরত দিতে হবে।



[প্রশ্ন নং ৫] আমি এক ব্যক্তি বা একাধিক ব্যক্তির গীবত করেছি এবং অনেককে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছি অথচ তারা নির্দোষ। এখন তাদেরকে এ বিষয়গুলো অবহিত করে কি ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে? আর যদি তাদেরকে জানানো শর্ত না হয়ে থাকে তাহলে কিভাবে তাওবা করবো?

উত্তর: বিষয়টি নির্ভর করছে এর ভাল ও মন্দ দিকটি নির্ণয় করার উপর। যদি তাদেরকে গীবত করার বিষয়টি জানালে ক্রোধান্বিত না হন বা আপনার প্রতি কোন আক্রোশের সৃষ্টি না হয় তাহলে আপনি সরাসরি বলে ক্ষমা চেয়ে নিবেন। কোন রকমের বিস্তারিত বিষয় উল্লেখ না করে। যেমন হয়তো বললেন, আমি আপনার ব্যাপারে অতীতে ভুল করেছি বা আপনাকে কথার দ্বারা কষ্ট দিয়েছি, এখন আমি আল্লাহর নিকট তাওবা করেছি সুতরাং আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। তাহলে কোন অসুবিধা নেই।

আর যদি তাদেরকে জানালে ক্রোধ ও আক্রোশ বেশী হবার আশংকা থাকে, এটিই সাধারণত ঘটে থাকে বা তাদেরকে সাধারণ ভাবে বললে যদি ব্যাখ্যা দাবী করে এবং তা শুনলে আপনার প্রতি তাদের ঘৃণা বৃদ্ধির আশংকা থাকে, তাহলে তাদেরকে জানানো ওয়াজিব নয়। কেননা শরীয়ত ফেতনা ফাসাদের অনুমতি দেয় না। কাউকে কোন বিষয় জানানোর ফলে সম্পর্কের অবনতি ঘটলে সেটিও শরীয়তের কাম্য নয়। তাছাড়া দ্বীনের উদ্দেশ্য হলো মুসলমানদের মাঝে পারস্পারিক সম্পর্ক ও ভালবাসা বৃদ্ধি করা। তাকে জানানোর ফলে হয়তো শত্রুতা আরো বেড়ে যেতে পারে এবং সে হয়তো আপনার প্রতি খুবই আক্রোশী হয়ে উঠতে পারে। এ অবস্থায় তাওবা করার ক্ষেত্রে আপনার জন্য নিম্নোক্ত বিষয়গুলির প্রতি দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন:

১. অনুতপ্ত হওয়া এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করার সাথে সাথে এই অপরাধের কদর্যতা ও জঘন্যতার কথা চিন্তা করা এবং বিশ্বাস রাখা যে তা হারাম।

২. কারো গীবতের কথা শুনে বিশ্বাস করবে না এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নির্দোষ মনে করবে।

৩. যাদের গীবত করেছো তাদের ব্যাপারে বিভিন্ন মজলিসে সুনাম বর্ণনা করবে তাদের ভালো গুনাবলীর কথা উল্লেখ করবে।

৪. যাদের গীবত করেছো তাদের পক্ষ নিয়ে কথা বলবে এবং কেউ তাদের প্রতি কটাক্ষ করলে বা বদনাম করলে তা প্রতিহত করবে।

৫. তাদের জন্য গোপনে ক্ষমা প্রার্থনা করবে। (মাদারেজুস সালেকীন ১/২৯১, মুগনী ব্যাখ্যা সহ ১২/৭৮)

হে মুসলমান ভাই! আপনি আর্থিক অধিকার (হক) এবং শারীরিক অপরাধের মধ্যে পার্থক্য লক্ষ্য করুন, গীবত ও চোগলখোরীর মধ্যে পার্থক্য লক্ষ্য করুন। আর্থিক অধিকারের কথা জানালে এর দ্বারা মালিকেরা উপকৃত হবে এবং তাদের নিকট তা ফেরত দিলে তারা খুশী হবে, এজন্য তা গোপন করা জায়েয হবে না। তবে ইজ্জত আবরুর ব্যাপারটি এ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন, কেননা তা জানালে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, বিব্রতকর অবস্থায় পড়বে।

[প্রশ্ন নং ৬] ইচ্ছাকৃত ভাবে নর হত্যাকারী ব্যক্তি কিভাবে তাওবা করবে?

উত্তর: ইচ্ছাকৃত নর হত্যাকারীর উপর তিনটি হক বর্তায়:

আল্লাহর, নিহত ব্যক্তির ও ওয়ারিসদের হক।

আল্লাহর হক একমাত্র তাওবার দ্বারা আদায় করতে হবে। ওয়ারিসদের হক হলো তাদের নিকট নিজেকে সমর্পণ করতে হবে যেন তারা তার থেকে বদলা নিতে সমর্থ হয় (যদি শরয়ী বিধান কোন দেশে জারি থাকে)। হয় কেসাস নিয়ে অথবা মুক্তিপণ নিয়ে বা ক্ষমা করে দিয়ে। এরপর বাকী থাকে নিহত ব্যক্তির অধিকার যা এ দুনিয়ায় পূরণ করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে আহলে ইলমরা বলেন, যদি হত্যাকারীর তাওবা উত্তম হয়, তাহলে আল্লাহ তার উপর নিহত ব্যক্তির হক উঠিয়ে নিবেন এবং কিয়ামতের দিন নিজের তরফ থেকে নিহত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে দিবেন। আর এ অভিমতটিই সর্বোত্তম অভিমত। (মাদারেজুস সালেকীন ১/২৯৯)

[প্রশ্ন নং ৭] চোর কিভাবে তাওবা করবে?

উত্তর: যদি চুরি করা জিনিস তার কাছে থাকে তাহলে ফেরত দিবে। আর যদি নষ্ট হয়ে থাকে তাহলে তা ব্যবহার করার জন্য বা সময়ের কারণে মূল্যমান কমে গিয়ে থাকে তাহলে তার ক্ষতিপূরণ দেয়া ওয়াজিব, মালিক যদি না তাকে ক্ষমা করে দিয়ে থাকে। আর মালিক যদি ক্ষমা করে দেয় তাহলে কিছুই লাগবে না। সুতরাং আল্লাহর জন্যই সমস্ত প্রশংসা।

[প্রশ্ন নং ৮] আমি খুবই বিব্রতবোধ করি যখন মুখোমুখি হই যাদের কিছু চুরি করেছি, আমি তাদেরকে প্রকাশ্য ভাবে বলতেও পারি না এবং ক্ষমাও চাইতে পারি না, এখন আমি কি করবো?

উত্তর: আপনার জন্য এমন কোন পন্থা অন্বেষণ করতে অসুবিধে নেই যার দ্বারা আপনি এই বিব্রতকর অবস্থা থেকে বাঁচতে পারেন, যেমন হয়তো অন্য কোন লোকের মাধ্যমে তাদের কাছে তাদের প্রাপ্য ফেরত পাঠালেন এবং নাম উল্লেখ করতে নিষেধ করলেন অথবা কৌশল অবলম্বন করলেন এবং বললেন, আপনার এসব হক এক ব্যক্তির নিকট ছিল কিন্তু সে তার নাম উল্লেখ করতে চায়নি। মূল কথা হচ্ছে প্রাপকের নিকট তার অধিকার ফেরত দিতে হবে।

আমি তাওবা করতে চাই - 66

আমি তাওবা করতে চাই - 66

[প্রশ্ন নং ৯] আমি আমার আববার এবং নিকটাত্মীয়ের পকেট থেকে গোপনে টাকা পয়সা সরিয়ে নিতাম। আমি এখন তাওবা করতে চাই। আমি সঠিক ভাবে বলতে পারবো না যে, মোট কত টাকা নিয়েছি। আমি এদের সামনে যেতে খুবই বিব্রতবোধ করছি?

উত্তর: আপনি মোটামুটি একটা অনুমান করে নিবেন এবং ধারণা করবেন যে কত হতে পারে। আর আপনি যেমন গোপনে নিয়েছেন তেমনি গোপনে ফেরত দিলে কোন অসুবিধা নেই।

[প্রশ্ন নং ১০] আমি বিভিন্ন লোকের টাকা পয়সা চুরি করেছি, এখন আমি আল্লাহর কাছে তাওবা করেছি। যাদের টাকা পয়সা চুরি করেছি তাদের ঠিকানাও জানি না?

অন্য আরেকজন বলে, আমি এক বিদেশী কোম্পানীর কিছু টাকা পয়সা মেরে দিয়েছি। তাদের কাজকর্ম শেষ হয়ে গেছে এবং তারা দেশ ছেড়ে চলে গেছে?

তৃতীয় আরেকজন বলে, আমি এক দোকান থেকে কিছু মালপত্র চুরি করেছিলাম। বর্তমানে সে দোকানের স্থান পরিবর্তন হয়ে অন্যত্র চলে গেছে। নতুন ঠিকানাও জানি না!

উত্তর: আপনি যথা সম্ভব তাদের ঠিকানা তালাশ করুন। যদি পেয়ে যান তাহলে তাদের প্রাপ্য ফেরত দিবেন। (আলহামদু লিল্লাহ) যদি মালিক মারা গিয়ে থাকে তাহলে তার ওয়ারিসদেরকে ফেরত দিবেন। চেষ্টা করেও যদি তাদেরকে না পান, তাহলে এসব মাল আপনি তাদের নিয়তে দান করে দিবেন। তাদের জন্যই নিয়ত করবেন, যদিও কেউ কাফের হয়ে থাকে। কেননা আল্লাহ তাদেরকে এ দুনিয়ায় তার প্রতিদান দিবেন পরকালে তারা (কাফেরেরা) কিছুই পাবে না।

আমি তাওবা করতে চাই কিন্তু - 70

আমি তাওবা করতে চাই কিন্তু - 70

এই মাসআলাটির মত একটি মাসআলা ইবনুল কাইয়্যেম (রহেমাহুল্লাহ্) তাঁর মাদারেজুস সালেকীন নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। মুসলিম বাহিনীর এক সৈনিক গনীমাতের মাল চুরি করে। এর কিছুকাল পরে সে তাওবা করে। অতঃপর সে চুরি করা মালামাল নিয়ে সেনাপতির কাছে হাজির হয়। সেনাপতি তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করে বলেন, আমি কিভাবে সকল সৈন্যদের নিকট এসব পৌছাবো? (তারা তো বিভক্ত হয়ে গেছে)। এরপর সে সৈনিক হাজ্জাজ বিন শায়েরের নিকট এসে এ ব্যাপারে ফতওয়া চায়।

তিনি বলেন, হে লোক ! নিশ্চয়ই আল্লাহ সেনাবাহিনীর সকলকে জানেন, তাদের নামধামও অবগত এবং বংশ পরিচয়ও জানেন। সুতরাং তুমি পঞ্চমাংশ তার প্রাপককে দিয়ে দিবে এবং বাকী ওদের পক্ষ থেকে দান করে দাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা তাদের আমলনামায় নেকী পৌছে দিবেন। সে তখন সেভাবেই আমল করে বিষয়টি খলিফা মুয়াবিয়াকে জানায়। তখন তিনি বলেন, আমি যদি তোমাকে এভাবে ফাতওয়া দিতে পারতাম তাহলে তা আমার অর্ধেক সম্পদের চেয়েও আমার কাছে বেশী পছন্দনীয় হতো। ইমাম ইবনে তাইমিয়ার (রহেমাহুল্লাহ্) এ ধরনেরই একটি ফাতওয়া রয়েছে যা মাদারেজুস সালেকীনেও উল্লেখ করা হয়েছে।

[প্রশ্ন নং ১১] আমি ইয়াতীমের মাল আত্মসাত করি এবং তা দ্বারা ব্যবসা করে অনেক লাভবান হই। এখন আমি আল্লাহকে ভয় করছি, এ কাজের জন্য অনুতপ্ত, এখন কিভাবে তাওবা করবো?

উত্তর: এ ব্যাপারে আলেম-ওলামারা বিভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন, এর মধ্যে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য অভিমত হলো, আপনি মূল সম্পদ ইয়াতীমের নিকট ফেরত দিবেন এ ছাড়াও লাভের অর্ধেক দিয়ে দিবেন। তাহলে ইয়াতীমকে তার মূলধন ফেরত দেয়া হলো এবং পার্টনার হিসাবে অর্ধেক লাভও দেয়া হলো। তাহলে মূল ও লাভ সবই দেয়া গেল। এ বিষয়টি ইমাম আহমাদ (রাহেমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রাহেমাহুল্লাহ্) হতেও এ অভিমত বর্ণিত হয়েছে এবং তার বিশিষ্ট সাগরেদ ইবনুল কাইয়্যেম এ মতটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। (মাদারেজুস সালেকীন ১/৩৯২)

তেমনিভাবে যদি কেউ উটনী অথবা ছাগল ছিনিয়ে নিয়ে নেয় এবং তা থেকে বাচ্চা-কাচ্চা হয়, তাহলে সেটি ও তার অর্ধেক বাচ্চা প্রকৃত মালিককে ফেরত দিতে হবে। যদি তা মারা যায় তাহলে সেটির মূল্য এবং এর জন্মান বাচ্চার অর্ধেক মালিককে ফেরত দিতে হবে।



[প্রশ্ন নং ১২] এক ব্যক্তি বিমান বন্দরে চাকুরী করত। তার নিকট বিভিন্ন জনের মালপত্র আসতো। এসব থেকে সে নামধাম সহ কিছু জিনিসপত্র চুরি করে নেয়। এর বেশ কয়েক বছর পর সে তাওবা করে। এখন কি সেই জিনিস ফেরত দিবে, না তার মূল্য, না কি এ ধরণের কিছু ফেরত দিবে? এখানে উল্লেখ্য যে, চুরি করা মাল বর্তমান বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না।

আমি তাওবা করতে চাই কিন্তু - 72

আমি তাওবা করতে চাই কিন্তু - 72

উত্তর: সেই জিনিসই ফেরত দিবে এর সাথে যোগ করবে মূল্যমান যা ব্যবহার করার জন্য বা সময়ের ব্যবধানে কমেছে। এটার একটা মোটামুটি মূল্য ধরে নিবে যেন নিজের খুব বেশী কষ্ট না হয়। যদি তাকে পাওয়া কষ্টকর হয়ে থাকে তাহলে সে পরিমাণ টাকা পয়সা দান করে দিবে মূল মালিকের পক্ষ থেকে।



[প্রশ্ন নং ১৩] আমার কাছে কিছু সুদের মাল ছিল কিন্তু আমি তা সব খরচ করে ফেলেছি, বর্তমানে কিছুই অবশিষ্ট নেই, এখন তাওবা করছি, এক্ষেত্রে আমার করণীয় কি?

উত্তর: আপনাকে খালেস তাওবা করতে হবে। প্রকৃত পক্ষে সুদ হলো খুবই বিপজ্জনক জিনিস। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা’আলা একমাত্র সুদখোরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন। আর যেহেতু সুদী মালামাল সব শেষ হয়ে গেছে তাই এ ব্যাপারে অপর কোন কর্তব্যও আর অবশিষ্ট নেই।

[প্রশ্ন নং ১৪] আমি একটি গাড়ী কিনেছি এর মধ্যে কিছু আছে হালাল উপার্জন আর কিছু হারাম। গাড়ীটি বর্তমানে আমার কাছে রয়েছে।

উত্তর: যে ব্যক্তি এমন জিনিস কিনল যা বিভক্ত করা সম্ভব নয় যেমন ঘর অথবা গাড়ী, এমন টাকা দিয়ে যার কিছু হালাল এবং কিছু হারাম, তাহলে হারামের সমপরিমাণ মাল সাদকা করে দিবে ঐ মালকে পবিত্র করার জন্য। যদি এই অংশটি হারাম মালেরই হয়ে থাকে তাহলে তা অন্যের অংশই বটে যা তার প্রাপকের নিকট ফিরিয়ে দিতে হবে পূর্বোক্ত বর্ণনা মোতাবেক।

[প্রশ্ন নং ১৫] সেই মালের দ্বারা কি করবে যা ধুমপানের সামগ্রীর ব্যবসা থেকে লাভ হয়েছে, তেমনিভাবে যা তার অন্যান্য হালাল মালের সাথে সংমিশ্রণ ঘটে গেছে?

উত্তর: যে ব্যক্তি হারাম জিনিসের ব্যবসা করে যেমন বাদ্যযন্ত্র, হারাম ক্যাসেটের ব্যবসা, ধুমপানের সামগ্রী ইত্যাদি এবং এর হুকুমও জানে। অতঃপর তাওবা করে, তাহলে এই হারাম ব্যবসার লভ্যাংশ দান হিসেবে নয় বরং তা থেকে নিষ্কৃতি পাবার লক্ষ্যে বিলিয়ে দিবে। কেননা আল্লাহ তা’আলা পবিত্র, তিনি পূত-পবিত্র জিনিস ছাড়া গ্রহণ করেন না।

যদি এই হারাম মাল অন্যান্য হালাল মালের সাথে মিলে যায় যেমন ডিপার্টমেন্টাল স্টোর যাতে বিভিন্ন হালাল সওদার সাথে কিছু নাজায়েয জিনিসও বিক্রি করা হয়ে থাকে তাহলে সে এই মালের একটা যথাসম্ভব অনুমান করে মূল্য বের করে দিবে বাকী মালকে পবিত্র করার জন্য। আল্লাহ তাকে এর পরিবর্তে আরো ভালো কিছুর ব্যবস্থা করে দিবেন। তিনি হচ্ছেন প্রশংসার অধিকারী, সম্মানিত।

এখানে একটা বিষয় জেনে রাখা প্রয়োজন যে, যার নিকট হারাম উপার্জনের মাল রয়েছে এবং সে তাওবা করতে চায় তাহলে:

১. উপার্জন করার সময় যদি সে কাফের হয়ে থাকে তাহলে তাওবা করার সময় সেগুলো বের করার প্রয়োজন পড়বে না। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সাহাবাদের ইসলাম গ্রহণ করার সময় হারাম মাল বের করার জন্য বাধ্য করেননি।

২. কিন্তু যদি উপার্জন করার সময় যে ব্যক্তি মুসলমান থাকে এবং সেটি হারাম হওয়ার ব্যাপারটি অবগত থাকে তাহলে অবশ্যই তাওবা করার সময় হারাম মাল বের করে দিতে হবে।

[প্রশ্ন নং ১৬] এক ব্যক্তি ঘুষ নিত। অতঃপর আল্লাহ তাকে হেদায়েত দান করেন। সে এখন সঠিক পথে রয়েছে। সে যেসব ঘুষ নিয়েছে তার কি করবে?

উত্তর: এ ব্যক্তির অবস্থা এ দু’অবস্থার বাইরে নয়:

এক. হয়তো এমন এক ব্যক্তির নিকট থেকে ঘুষ নিয়েছে যিনি বাধ্য হয়ে নিজের হক রক্ষার স্বার্থে একে ঘুষ দিয়েছেন, এক্ষেত্রে ঘুষ গ্রহীতাকে অবশ্যই টাকা ফেরত দিতে হবে যার কাছ থেকে সে ঘুষ নিয়েছে। কেননা সে তাকে বাধ্য করে এ ঘুষ নিয়েছে, এর বিধান হলো জোর করে অর্থ আত্মসাতের হুকুম -এর মত, বেচারা নিরুপায় হয়ে তাকে ঘুষ দিয়েছেন।

দুই. ঘুষ গ্রহণ করেছে এক জালেমের কাছ থেকে, যেমন হয়তো কেউ ঘুষ দিয়ে অবৈধ স্বার্থ উদ্ধার করিয়ে নিয়েছে, এক্ষেত্রে তাকে কিছুই ফেরত দেয়া লাগবে না। তাওবাকারী এসব মালকে কল্যাণ মূলক কাজে খরচ করবে। যেমন হয়তো কোন ফকীর-মিসকীনকে দিয়ে দিলো। তেমনিভাবে সে আল্লাহর কাছে তাওবা ও ক্ষমা চাইতে থাকবে, কেননা সে অন্যায়ভাবে কাউকে কিছু অর্জন করার সুযোগ দিয়েছে।

[প্রশ্ন নং ১৭] আমি অবৈধ কাজ করে এর বিনিময়ে কিছু টাকা পয়সা গ্রহণ করি, বর্তমানে আমি তাওবা করেছি, এখন কি আমাকে এসব মাল ফেরত দিতে হবে?

উত্তর: যে ব্যক্তি হারাম কাজ করে বা হারাম খিদমত আঞ্জাম দেয় এবং এর বিনিময়ে পয়সা নেয়, যখন সে তাওবা করে আর তার কাছে যদি এসব টাকা পয়সা অবশিষ্ট থাকে তাহলে সে এসব থেকে মুক্ত হয়ে যাবে। তবে তা যার কাছ থেকে নিয়েছে তাকে ফেরত দিতে হবে না। যেমন জেনাকারিনী জেনার জন্য টাকা পয়সা নিয়েছে সে তা জেনাকারীর নিকট ফেরত দিবে না। গায়ক হারাম গান গেয়ে টাকা নিয়েছে, এ টাকা অনুষ্ঠানের আয়োজকদের নিকট ফেরত দিবে না। মদ বিক্রেতা বা মাদক দ্রব্য বিক্রেতা তাওবা করলে এসব যারা কিনেছিল তাদের নিকট ফেরত দিবে না। তেমনি মিথ্যা সাক্ষ্য দাতা তাওবা করলে যারা তাকে টাকার বিনিময়ে সাক্ষ্য দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল তাদের নিকট ফেরত দিবেনা। কারণ হলো পাপীর কাছে এসব মাল ফেরত দিলে সে হারামের বিনিময়ে হারাম জমা করল আবার এ টাকা পয়সা আরো হারাম কাজে ব্যবহৃত হওয়ার আশংকা বাড়িয়ে দেয়। এজন্য এসব থেকে মুক্ত হওয়া প্রয়োজন। এ অভিমতটিই ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রাহেমাহুল্লাহ্) গ্রহণ করেছেন এবং তাঁর ছাত্র ইবনুল কাইয়্যেমও এটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। (মাদারেজুস সালেকীন ১/৩৯০)

[প্রশ্ন নং ১৮] আমাকে একটি বিষয় খুবই উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত করছে, তাহলো আমি এক মহিলার সাথে ব্যভিচার করি। এখন কিভাবে তাওবা করবো?

অন্য একজন প্রশ্ন করে, আমি বিদেশে গিয়ে কুকর্মে লিপ্ত হই। আমার দ্বারা মহিলাটি গর্ভবতী হয়ে পড়ে। এখন কি সন্তানটি আমার হবে এবং তাকে কি আমি সন্তানের জন্য খরচা-পাতি পাঠাবো?

উত্তর: অশ্লীল কাজ সংক্রান্ত অনেক প্রশণমালা আসছে যার জন্য মুসলমানদের উপর জরুরী হয়ে পড়েছে বিষয়টির উপর গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করার এবং কুরআন হাদীস মোতাবেক নিজেদের সংশোধন করার এবং বিশেষ করে দৃষ্টি সংযত করার, নির্জন সাক্ষাৎ না করার এবং বেগানা মহিলাদের সাথে মুসাফাহা না করার আর পরিপূর্ণ শরয়ী পর্দা রক্ষা করে চলার। মেলামেশার বিপজ্জনকতা উপলব্ধি করা এবং কাফেরদের দেশে ভ্রমণে না যাওয়া। মুসলিম পারিবারিক ঐতিহ্য রক্ষা করে চলা, অল্প বয়সেই বিয়ে করা এবং এ ব্যাপারটি কঠোর না করে ফেলা।

যে ব্যক্তি কুকর্ম করেছে সেটি এ দু’অবস্থার বাইরে নয়:

১. হয়তো সে জোরপূর্বক জেনা করেছে এক্ষেত্রে তাকে মহরে মিস্ল্ প্রদান করতে হবে, তার যে ক্ষতি সাধন করেছে তা পূরণ করার লক্ষ্যে। সেই সাথে তাকে খালেস তাওবা করতে হবে এবং বিষয়টি যদি হাকেম বা বিচারক পর্যন্ত (ইসলামী বিচারক) গড়ায় তাহলে তার উপর হদ (শরয়ী শাস্তি বিধান) কায়েম করতে হবে। (বিস্তারিত দেখুন মাদারেজুস সালেকীন ১/৩৬৬)

২. উক্ত মহিলার সম্মতিতেই তার সাথে ব্যভিচার করেছে। এক্ষেত্রে তাকে শুধুমাত্র তাওবা করতে হবে। তার সাথে কখনো সন্তানকে সম্পৃক্ত করা হবে না এবং তাকে খরচও দিতে হবে না। কেননা সন্তান পরিচিত হবে মায়ের সাথে, কোনভাবেই জেনাকারীর সাথে সন্তান সম্পৃক্ত বা পরিচিত হবে না।



[প্রশ্ন নং ১৯] আমার দ্বারা কুকর্ম সম্পাদিত হয়েছে। এজন্য আমি আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি সে মেয়ের সাথে বিবাহ বন্ধনেও আবদ্ধ হয়েছি। এটা বেশ কয়েক বছর পূর্বের ঘটনা। আমরা উভয়ে খালেস তাওবা করেছি। এখন আমাদের কর্তব্য কি?

উত্তর: যখন দু’জনের পক্ষ থেকেই তাওবা হয়েছে এজন্য আপনাদের উভয়কে বিবাহ বন্ধনটা নতুন করে নিতে হবে শরিয়তের শর্ত মোতাবেক ওলী, সাক্ষীর উপস্থিতিতে (যদি এর আগে শরীয়তের শর্ত মোতাবেক বিবাহ না হয়ে থাকে তবেই)। এজন্য জরুরী নয় যে, কোর্টে গিয়ে হাজির হতে হবে বরং বাসার মধ্যে হলেই যথেষ্ট হবে।

[প্রশ্ন নং ২০] একজন মহিলা বলে, সে এক নেককার লোকের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। সে বিবাহের পূর্বে এমন কিছু কাজ করেছে যা আল্লাহ পছন্দ করেন না। এখন তার মনে বিষয়টি সর্বদা পীড়া দিচ্ছে। এখন তার প্রশ্ন, সে কি তার স্বামীকে পূর্বে যা কিছু ঘটেছে তা জানাবে?

উত্তর: স্বামী স্ত্রীর উভয়েরই কেউ অপরকে জানান ওয়াজিব নয় যে, অতীতে সে কি করেছে। কেউ যদি এসব পঙ্কিলতার দ্বারা পরীক্ষিত হয়ে থাকে তাহলে সে যেন তা আল্লাহর ওয়াস্তে গোপন করে। তার জন্য খালেস তাওবাই যথেষ্ট।

আমি তাওবা করতে চাই কিন্তু - 80

আমি তাওবা করতে চাই কিন্তু - 80

তবে কেউ যদি কুমারী মেয়েকে বিবাহ করে অতঃপর প্রকাশিত হয় যে, মেয়েটি প্রকৃত কুমারী নয়, অতীতে অপকর্ম করার কারণে, তাহলে সে যে মোহর দিয়েছে তা ফেরত নিয়ে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারে। আর যদি সে দেখে যে, সে তাওবা করেছে যার ফলে আল্লাহ তার দোষ গোপন রেখেছেন তাহলে যদি তাকে দাম্পত্যে রেখে দেয় তাহলে অবশ্যই মহান আল্লাহ কর্তৃক নেকী ও সোয়াবের ভাগী হবে।

[প্রশ্ন নং ২১ ] পুংমৈথুনকারী ব্যক্তি তাওবা করলে তার উপর কি ওয়াজিব হবে?

উত্তর: এ কাজ যে করেছে এবং যার সাথে করা হয়েছে উভয়কেই খুব বড় আকারের তাওবা করতে হবে। কেননা এটা জানা যায় যে, পরাক্রমশালী আল্লাহ লুত সম্প্রদায়ের উপর তাদের অপরাধের জঘন্যতার কারণে যত রকমের আযাব নাজিল করেছিলেন তা আর অন্য কোন জাতির উপর নাজিল করেননি।

১. তাদের দৃষ্টি শক্তি কেড়ে নিয়েছিলেন যার ফলে তারা অন্ধ হয়ে গিয়েছিল এবং তারা উদভ্রান্তের মত ছুটাছুটি করছিল। আল্লাহ বলেন:

(আরবি)

‘‘তাদের দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নেই’’। (আল-ক্বামার: ৩৭)

২. তাদের উপর বজ্রপাত হয়েছিল।

৩. তাদের বাড়ী-ঘরকে উল্টিয়ে দিয়েছিলেন যার ফলে উপর দিক নিচে আর নিচের দিক উপরে হয়ে গিয়েছিল।

৪. তাদের উপর পোড়ান পাথর নিক্ষেপ করা হয়েছিল। যার ফলে তারা সেখানেই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। এজন্যই এই অপকর্মকারীর উপর যে হদ কায়েম করা হয় তা হলো, বিবাহিত হোক বা অবিবাহিত, তাকে হত্যা করা।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘তোমরা যদি কেউ কাউকে লুত সম্প্রদায়ের কাজে লিপ্ত পাও তাহলে কর্তা ও যার সাথে এ কুকর্ম করা হয়েছে উভয়কে হত্যা কর।’’ (আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজা, ইমাম আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, ইরওয়াউল গালীল ২৩৫০)

[প্রশ্ন নং ২২] আমি আল্লাহর নিকট তাওবা করেছি। আমার নিকট হারাম জিনিসপত্র রয়েছে যেমন: বাদ্যযন্ত্র, ক্যাসেট, ফ্লিম ইত্যাদি। এসব জিনিস বিক্রি করা কি জায়েয হবে। বিশেষ করে এজন্য যে, এর মূল্য কিন্তু অনেক হবে?

উত্তর: হারাম জিনিস বিক্রি করা হারাম এবং এর মূল্যও হারাম। রাসূলুল্লাহ সাললাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ কোন কিছু হারাম করলে তার মূল্যও হারাম করেছেন।’’ (আবু দাউদ, হাদীসটি সহীহ)

আর আপনি জানেন যে, অন্যরা তা হারাম কাজেই ব্যবহার করবে, এজন্য তা বিক্রি করা জায়েয হবে না। কেননা আল্লাহ এ ব্যাপারে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন:

(আরবি)

‘‘এবং তোমরা গুনাহ ও অন্যায় কাজে একে অপরকে সহযোগিতা করো না।’’ আপনি দুনিয়াতে যতই ক্ষতিগ্রস্ত হননা কেন। আল্লাহর নিকট যা রয়েছে তা উত্তম ও দীর্ঘস্থায়ী। তিনি আপনাকে তাঁর দয়া ও করুণা দ্বারা উত্তম প্রতিফল দিবেন।

[প্রশ্ন নং ২৩] আমি একজন পথভ্রষ্ট মানুষ ছিলাম। ধর্ম নিরপেক্ষ মতবাদ ছড়াতাম এবং বিভিন্ন গল্প লিখার মাধ্যমে ইসলামের বিরুদ্ধে বিষাক্ত বাণী প্রচার করতাম। কবিতার মাধ্যমে অশ্লীলতা ছড়াতাম। মহান আল্লাহ আমাকে তার বিশেষ রহমতে রক্ষা করেছেন, অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে এসেছেন এবং হেদায়াত দান করেছেন, এখন কিভাবে তাওবা করবো?

উত্তর: এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে আপনার উপর বিরাট অনুগ্রহ ও নিয়ামত। এটিই প্রকৃতপক্ষে হেদায়েত। সুতরাং এজন্য আমি আল্লাহর প্রশংসা করছি এবং তার নিকট দু’আ করছি তিনি যেন আপনাকে মজবুত রাখেন এবং আরো বেশী অনুগ্রহ দান করেন। যে ব্যক্তি তার কথা ও কলমের দ্বারা ইসলামের বিরুদ্ধে ভ্রান্ত ধারণা বা বিদআত ও অশ্লীলতা ছড়ায় তাকে অবশ্যই একাজগুলো করতে হবে:

প্রথমত: সে যেন এসব থেকে তাওবা করে এবং ঘোষণা করে যে, সে এসব থেকে ফিরে এসেছে। যথাসম্ভব সব রকমের মাধ্যম ব্যবহার করে এ বিষয়টি ফুটিয়ে তুলে যে, এসব ভ্রান্ত ও বাতিল বিষয় ছিল তাহলে যারা তার কথায় বিভ্রান্ত হয়েছিল তারা সঠিক পথে ফিরে আসবে। এবং যেসব সনেদহ ও ধুম্রজাল ছড়িয়েছিল তা পরিষ্কার করে দিবে এবং তা থেকে মুক্ত হয়ে যাবে। এই ভাবে পরিষ্কার করে দেয়াটা ওয়াজিব, তাওবার ওয়াজিবের অন্তর্গত। মহান আল্লাহ বলেন:

(আরবি)

‘‘কিন্তু যারা তাওবা করেছে, নিজেদের সংশোধন করেছে এবং বর্ণনা করেছে তারা হলো সেই লোক যাদের তাওবা আমি কবুল করবো এবং আমিই একমাত্র তাওবা কবুলকারী, দয়ালু।’’ (সূরা আল বাকারা: ১৬০)

দ্বিতীয়ত: সে যেন তার কলম ও জবানকে ইসলাম প্রচারের কাজে নিয়োজিত করে এবং তার শক্তিকে ও সামর্থকে ইসলামকে বিজয়ী করার কাজে নিয়োজিত করে, আর মানুষের নিকট হক শিক্ষা এবং এর দাওয়াত পৌছায়।

তৃতীয়ত: এই শক্তিকে যেন ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে এবং তাদের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত তুলে ধরে, যেমন ভাবে এর পূর্বে তাদেরকে সাহায্য করত এবং ইসলামের শত্রুদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করত। সে যেন ইসলামের হকের অস্ত্র হয়ে যায় বাতিলের বিরুদ্ধে। এভাবে বিভিন্ন হারাম কাজের কদর্যতা বর্ণনা করে ইসলামের পথে মানুষকে আহবান করে। যেমন হয়তো একদিন সুদের পক্ষে কথা বলেছে, এখন সুদের বিরুদ্ধে কলম ধরবে, এর অপকারিতা ও ভয়াবহতা তুলে ধরে পূর্বের পাপের কাফ্ফারা আদায় করবে। মহান আল্লাহই প্রকৃত হেদায়েত দাতা।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন