hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

কবরের শাস্তি ও শান্তি সম্পর্কে কতিপয় মাসআলা বারযাখী জীবন

লেখকঃ শাইখ খালেদ ইবন আব্দুর রহমান আশ-শায়ে‘

কবরের শাস্তি ও শান্তি
প্রিয় ভাই সকল! আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের ইমামগণ কবরের শাস্তি এবং শান্তির ব্যাপারে ঈমান আনা ওয়াজিব হওয়ার যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তা এখানে তুলে ধরলাম।

প্রত্যেক মানুষ (নিম্নের) তিনটি স্তর অতিক্রম করে থাকে।

ইহকালীন জীবন

বারযাখী জীবন

পরকালীন জীবন বা চিরস্থায়ী জীবন, যার কোনো শেষ নেই।

বারযাখী জীবন একটি বিরাট জীবন, যেখানে পরীক্ষা নিরীক্ষা রয়েছে, হয় শান্তি না হয় শাস্তি, যা কুরআনের আয়াত এবং হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত। আর এটাই সালাফ এবং ইমামদের তরীকা যে, যখন কোনো ব্যক্তির মৃত্যু হয় তখন সে শান্তি না হয় শাস্তিতে থাকে।

রূহ শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর শাস্তিতে অথবা শান্তিতে বাকী থেকে যাবে, কখনো শরীরের সাথে সম্পৃক্ত হলে তখন রূহের সাথে শরীরেরও শান্তি বা শাস্তি হবে। অতঃপর যেদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে সে দিন রূহকে শরীরে ফিরিয়ে দেওয়া হলে তার রবের জন্য কবর থেকে উঠে দাঁড়াবে। [মাজমু‘আ ফাতাওয়া ইবন তাইমিয়া ৮/২৪৮।]

কুরআনের যে সকল আয়াত দ্বারা কবরের শাস্তি প্রমাণিত হয় তা এই: আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَحَاقَ بِ‍َٔالِ فِرۡعَوۡنَ سُوٓءُ ٱلۡعَذَابِ ٤٥ ٱلنَّارُ يُعۡرَضُونَ عَلَيۡهَا غُدُوّٗا وَعَشِيّٗاۚ وَيَوۡمَ تَقُومُ ٱلسَّاعَةُ أَدۡخِلُوٓاْ ءَالَ فِرۡعَوۡنَ أَشَدَّ ٱلۡعَذَابِ ٤٦﴾ [ غافر : ٤٥، ٤٦ ]

“ফির‘আউন গোত্রকে শোচনীয় ‘আযাব গ্রাস করল, সকাল সন্ধায় তাদেরকে আগুনের সম্মুখে পেশ করা হয় এবং যেদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে সে দিন আদেশ করা হবে, ফির‘আউন গোত্রকে কঠিনতম ‘‘আযাবে পেশ করাও।” [সূরা গাফির, আয়াত: ৪৫-৪৬]

হাফেজ ইবন হাজার রহ. এ আয়াতের তাফসীরে বলেন, ফির‘আউন এবং তার অনুসারীদের রূহসমূহ কিয়ামত পর্যন্ত সকাল-সন্ধায় আগুনের সম্মুখীন করা হবে, যখন কিয়ামত সংঘটিত হবে তখন তাদের রূহ এবং শরীর গুলো আগুনে একত্রিত করা হবে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿وَحَاقَ بِ‍َٔالِ فِرۡعَوۡنَ سُوٓءُ ٱلۡعَذَابِ ٤٥ ٱلنَّارُ يُعۡرَضُونَ عَلَيۡهَا غُدُوّٗا وَعَشِيّٗاۚ وَيَوۡمَ تَقُومُ ٱلسَّاعَةُ أَدۡخِلُوٓاْ ءَالَ فِرۡعَوۡنَ أَشَدَّ ٱلۡعَذَابِ ٤٦﴾ [ غافر : ٤٥، ٤٦ ]

“ফির‘আউন গোত্রকে শোচনীয় ‘আযাব গ্রাস করল, সকাল সন্ধায় তাদেরকে আগুনের সম্মুখে পেশ করা হয় এবং যেদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে সে দিন আদেশ করা হবে, ফির‘আউন গোত্রকে কঠিনতম ‘আযাবে পেশ করাও।” [সূরা গাফির, আয়াত: ৪৫-৪৬]

ব্যাখ্যা: যন্ত্রনার দিক দিয়ে কঠিন এবং অপমানের দিক দিয়ে বড়। এ আয়াতটি কবরে বারযাখের শাস্তির ওপর প্রমাণিত আহলে সুন্নাতের মূল দলীল। আর এটাই আল্লাহর বাণী:

﴿ٱلنَّارُ يُعۡرَضُونَ عَلَيۡهَا غُدُوّٗا وَعَشِيّٗاۚ﴾ [ غافر : ٤٦ ]

“সকাল সন্ধায় তাদেরকে আগুনের সম্মুখীন করা হবে।” [সূরা গাফির, আয়াত: ৪৬] [তাফসীর ইবন কাসীর ৪/৮৫।]

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿يَوۡمَ لَا يُغۡنِي عَنۡهُمۡ كَيۡدُهُمۡ شَيۡ‍ٔٗا وَلَا هُمۡ يُنصَرُونَ ٤٦ وَإِنَّ لِلَّذِينَ ظَلَمُواْ عَذَابٗا دُونَ ذَٰلِكَ وَلَٰكِنَّ أَكۡثَرَهُمۡ لَا يَعۡلَمُونَ ٤٧﴾ [ الطور : ٤٦، ٤٧ ]

“অতঃপর তাদেরকে সেদিন পর্যন্ত অবকাশ দিন, যেদিন তাদের ওপর বজ্রাঘাত পতিত হবে। সেদিন তাদের চক্রান্ত কোনো কাজে আসবে না এবং তাদেরকে কোনো সাহায্য করা হবে না। আর যালিমদের জন্য এ ছাড়াও রয়েছে অন্য শাস্তি। কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না।” [সূরা আত-তূর, আয়াত: ৪৫-৪৭]

আল্লাহর এ বাণী:

﴿وَإِنَّ لِلَّذِينَ ظَلَمُواْ عَذَابٗا دُونَ ذَٰلِكَ وَلَٰكِنَّ أَكۡثَرَهُمۡ لَا يَعۡلَمُونَ ٤٧﴾ [ الطور : ٤٧ ]

“আর যালিমদের জন্য এ ছাড়াও রয়েছে অন্য শাস্তি; কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না” [সূরা আত-তূর, আয়াত: ৪৭] দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যায় যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, বারযাখে শাস্তি হওয়া; যেমন ইবন কাইয়্যুম তার কিতাবে (আর-রূহে) ইঙ্গিত দিয়েছেন। [১/৩৩৮ দার ইবন তাইমিয়া প্রকাশনী।]

তিনি বলেন, এ আয়াত দ্বারা একটি বড় জামা‘আত কবরের ‘আযাবের ওপর দলীল সাব্যস্ত করেছে। তাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা একজন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যে সকল সহীহ হাদীস কবরের ‘আযাব সাব্যস্ত করে তা অনেক মুস্তাফিজ হাদীস (যার সনদে দু’জন করে সাহাবী রয়েছে) এবং কতিপয় উলামা তা মুতাওয়াতির বলেছেন। [মাজমু‘আ ফাতাওয়া ৪/২৮৫, আর-রূহ ১/২৮৪।] তার মধ্যে বারা ইবন ‘আযিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাদীস, যা সুনান (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ এবং ইবন মাজাহ) ও মুসনাদে এসেছে। আর আমি পূর্বে যা উল্লেখ করেছি তাই বর্ণনার ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ।

কবরের ‘আযাব সাব্যস্তকারী হাদীসগুলো নিম্নরূপ:

ইমাম বুখারী তার সহীহ বুখারীতে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার হাদীস নিয়ে এসেছেন, তিনি বলেন, একদা এক ইয়াহূদী মহিলা তার নিকট এসে কবরের ‘আযাবের কথা উল্লখ করলে তিনি বলেন, আল্লাহ তোমাকে কবরের ‘আযাব থেকে রক্ষা করুন। অতঃপর তিনি কবরের ‘আযাব সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, হ্যাঁ, কবরের ‘আযাব সত্য। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৩৭২।]

আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা বলেন, এর পর যখনই তাঁকে সালাত পড়তে দেখেছি তখনই তিনি কবরের ‘আযাব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন।

আসমা বিনতে আবূ বকর রাযিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবায় দাঁড়িয়ে কবরের ফিতনা উল্লেখ করেছেন, যেখানে মানুষ ফিতনার সম্মুখীন হবে। তা উল্লেখ করার সাথে সাথে সাহাবীগণ আর্তনাদ করতে শুরু করলেন। ইমাম নাসাঈ আসমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার কথাটি আরো সামান্য বৃদ্ধি করে বলেন যে, সাহাবীগণ চিৎকার করায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শেষ কথাটি আমার বুঝতে অসুবিধা হলো। তাদের চিৎকার একটু থামলে আমার নিকটবর্তী একজনকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, আল্লাহ তোমায় বরকত দিন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর শেষ কথায় কী বলেছেন? বললেন, তিনি বলেছেন, (আমার নিকট অহী এসেছে যে, নিশ্চয় তোমরা কবরে ফিতনার সম্মুখীন হবে, যা দাজ্জালের ফিতনার সমকক্ষ প্রায়। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৩৭৩।]

যায়েদ ইবন সাবেত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে বনী নাজ্জারের একটি বাগানে তাঁর খচ্চরের উপর ছিলেন। আমরাও তাঁর সাথে ছিলাম। হঠাৎ তাঁর খচ্চরটি এমনভাবে লাফাচ্ছিল যে, তাঁকে ফেলে দেওয়ার উপক্রম হলো। তখন তিনি সামনে ৪/৫টি বা ৬টি কবর দেখতে পেলেন। জিজ্ঞাসা করলেন, এ কবরবাসীদেরকে কেউ চেন কি?

এক ব্যক্তি বলল আমি চিনি।

তিনি বললেন: তারা কখন মারা গেছে?

বলল: মুশরিক অবস্থায় মারা গেছে।

তিনি বললেন: নিশ্চয় এ উম্মত কবরের পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। যদি তোমরা তাদেরকে দাফন না করতে তাহলে কবরের শাস্তি আমি যা শুনি তোমাদেরকেও তা শুনানোর জন্য আল্লাহর নিকট দো’আ করতাম। অতঃপর তিনি আমাদের দিকে ফিরে বললেন, তোমরা আল্লাহর নিকট কবরের ‘আযাব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা কর। তারা বলল, তখন আমরা আল্লাহর নিকট কবরের ‘আযাব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করলাম। তিনি বললেন, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ফিতনা থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাও। তারা বলল, তখন আমরা আশ্রয় চাইলাম। তিনি দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় চাইতে বললে আমরা আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইলাম। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৮৬৭।]

সহীহ মুসলিমে এবং সুনানের কিতাবসমূহে আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “যখন তোমাদের কেউ সালাতে শেষ তাশাহ্‌হুদ সমাপ্ত করবে তখন আল্লাহর নিকট চারটি জিনিস থেকে আশ্রয় চাইবে, (জাহান্নাম ও কবরের ‘আযাব থেকে, জীবন মৃত্যুর ফিতনা থেকে এবং মাসীহ দাজ্জালের ফিতনা থেকে)।” [সহীহ মুসলিম ৫৮৮, আবূ দাউদ ৭৮৩, নাসাঈ ৩/৫৮ এবং ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৯০৯।]

কবরের ‘আযাবের হাকীকতের ওপর প্রমাণীত দলীলসমূহ যা ইমাম মুসলিম রহ. তার সহীহ মুসলিমে ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণনা করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্নের দো‘আটি তাদেরকে এমনভাবে শিক্ষা দিতেন, যেমনভাবে কুরআনের কোনো সূরা শিক্ষা দিতেন। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৯০]

দো‘আটি হলো:

«اللهم إني أعوذبك من عذاب جهنم وأعوذبك من عذاب القبر واعوذبك من فتنة المحيا والممات واعوذبك من فتنة المسيح الدجال» .

“হে আল্লাহ আমি তোমার নিকট জাহান্নামের ‘আযাব, কবরের ‘আযাব, জীবন মৃত্যুর ফিতনা এবং মাসীহ দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি।”

বুখারী ও মুসলিমে আবূ আইয়ুব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা গোধূলির সময় বের হলে একটি আওয়াজ শুনতে পেয়ে তিনি বললেন, ইয়াহূদীদের কবরে শাস্তি হচ্ছে। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৩৭৫। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৮৬৯]

প্রিয় ভাইসকল, পূর্বের আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, কবরে মানুষের একটি অন্য রকম জীবন রয়েছে, যার বৈশিষ্ট্য আলাদা এবং এতে শরীরের সাথে রূহের যে সম্পর্ক তা একটি বিশেষ সম্পর্ক। মানুষের জীবনে শান্তি বা শাস্তি লাভ হবে পৃথিবী জীবনের প্রেরিত আমল অনুযায়ী।

বারযাখী জীবন একটি অদৃশ্য জীবন, কুরআন ও হাদীস দ্বারা যেভাবে প্রমাণিত হয় সেভাবেই ঈমান আনা আবশ্যক। আল্লাহ তা‘আলার তাওফীকে অতি শিঘ্রই তা বিশ্লেষণাকারে বর্ণনা করব। সেই সাথে কবরের ‘আযাব বা শাস্তিসহ এর সাথে সম্পৃক্ত কতগুলো মাসআলা বৃদ্ধি করে আলোচনা করব। আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি, যিনি দানশীল, তিনি যেন আমাদের এবং আমাদের পিতা-মাতাসহ সকল মুসলিম ভ্রাতৃবৃন্দের কবরকে জান্নাতের বাগিচা বানিয়ে দেন।

কবরের শাস্তি ও শান্তি সম্পর্কে কতিপয় ইমামদের মতামত

এ মাসআলা সাব্যস্ত করার ব্যাপারে কতিপয় উলামার কিছু মতামত পেশ করা হলো। আহলে সুন্নাতগণ ঐক্যমত পোষণ করেন যে, যখন কোনো ব্যক্তি মারা যায়, তখন সে শাস্তিতে না হয় শান্তিতে থাকে। আর তা আত্মা এবং শরীর উভয়ের ওপর সংঘটিত হয়, তেমনিভাবে রূহ শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর তা ভোগ করে থাকে। কখনো শরীরের সাথে মিলিত হয় তখন উভয়েরই শান্তি এবং শাস্তি হয়। অতঃপর যখন কিয়ামত সংঘটিত হবে তখন রূহসমূহ শরীরে ফিরিয়ে দিলে তারা তাদের কবর থেকে বিশ্ব প্রতিপালকের জন্য উঠে দাঁড়াবে।

শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া রহ. বলেন, হাদীস বিশারদগণ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের নিকট এ সকল বর্ণনা ঐক্যমত। [মাজমূয়া ফাতাওয়া ৮/২৮৪।]

ইবনুল কাইয়্যেম ইমাম আহমাদ রহ. থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, কবরের ‘আযাব সত্য, কেবল পথভ্রষ্টরা বা পথভ্রষ্টকারীই তা অস্বীকার করে থাকে।

হাম্বল ইবন আব্দুল্লাহ রহ. বলেন, আমি আবূ আব্দুল্লাহ (ইমাম আহমাদ) কে কবরের ‘আযাব সম্বন্ধে বললাম, তিনি বললেন, এ সকল হাদীস সহীহ। আমরা এর প্রতি ঈমান রাখি এবং তা স্বীকার করি। যখনই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কোনো বিশুদ্ধ সনদে হাদীস আসবে আমরা তা স্বীকার করব। তিনি যা নিয়ে এসেছেন আমরা যদি তা স্বীকার না করে ফিরিয়ে দেই তাহলে আমরা যেন আল্লাহর নির্দেশই তার ওপর ফিরিয়ে দিলাম। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمَآ ءَاتَىٰكُمُ ٱلرَّسُولُ فَخُذُوهُ﴾ [ الحشر : ٧ ]

“এবং রাসূল তোমাদের কাছে যা নিয়ে এসছেন তা গ্রহণ কর।” [সূরা আল-হাশর, আয়াত: ৭]

আমি তাকে বললাম, কবরের ‘আযাব কি সত্য? তিনি বললেন: হ্যাঁ সত্য, কবরে শাস্তি দেওয়া হবে। [আর রূহ- ইবনু কাইয়্যেম পৃষ্ঠা নং ১৬৬, দার ইবন কাসীর প্রকাশিত, টিকা টিপ্পনি/ ইউসুফ আলী বাদাবী।]

শাইখুল ইসলাম তার লিখিত কিতাবের বহু জায়গায় তা উল্লেখ করেছেন। তার মধ্যে ‘‘আল আকীদা আল ওয়াসিতিয়ায়’’ উল্লেখ করে বলেন, পরকালের প্রতি ঈমান আনার মধ্যে মৃত্যুর পরের ঘটনাবলী সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেসকল সংবাদ দিয়েছেন তার প্রতি ঈমান আনা। কাজেই কবরের ফিতনা, কবরের শাস্তি ও শান্তির প্রতি তারা ঈমান আনবে। অতঃপর ফিতনা সম্পর্কে বলেন, মানুষ তাদের কবরে ফিতনার সম্মুখীন হবে, প্রত্যেককেই জিজ্ঞাসা করা হবে যে, তোমার রব কে, তোমার দীন কী এবং তোমার নবী কে? আল্লাহ মুমিন বান্দাদেরকে পার্থিব ও পরকালীন জীবনে মজবুত বাক্য দ্বারা শক্তিশালী করেন। মুমিন ব্যক্তি বলবে, আমার রব আল্লাহ, আমার দীন ইসলাম এবং নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আর সন্দেহকারী ব্যক্তি বলবে, হায়! হায়! আমি জানি না; কিন্তু লোক মুখে যা শুনেছি আমিও তা বলেছি। তখন তাকে লোহার হাতুড়ী দ্বারা মারা হলে সে এমন ভাবে চিৎকার করবে যে, মানুষ ব্যতীত সকল সৃষ্টি জীবই তা শুনবে। মানুষ যদি তা শুনতো তবে ছিটকে পড়ে যেত।32

32

[আল আকীদা আল ওয়াসিতিয়াহ রওজা নাদিয়ার শরাহ, পৃষ্ঠা নং ৩১১, আল ওয়াতান প্রকাশনী, লেখক আল্লামা যায়েদ ইবন আব্দুল আযীয আল ফাইয়ায।]

আল্লামা ত্ব-হাবী আল হানাফী রহ. তার প্রসিদ্ধ সালাফী আকিদায় বলেন, আহলে সুন্নাত ও জামা‘আতগণ কবরের ‘আযাবের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে সেই ব্যক্তির জন্য যে ব্যক্তি এর উপযোগী এবং কবরে রব, দীন এবং নবী সম্পর্কে মুনকার নাকীর ফিরিশতার প্রশ্ন সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবীদের থেকে প্রাপ্ত খবর অনুপাতে তা সাব্যস্ত করে। কবর হয় জান্নাতের বাগিচা হবে নয়তো জাহান্নামের গুহা হবে। [শরহে আকিদা তাহাবিয়া পৃ. ৫৭২, আর রিসালা প্রকাশনী।]

আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম কবরের শাস্তি বা শান্তি সম্পর্কে বলেন, যা জানা উচিৎ তা হলো এই, নিশ্চয় কবরের ‘আযাবই হচ্ছে বারযাখের ‘আযাব। অতঃপর কারোর মৃত্যুর পর যদি ‘আযাবের উপযুক্ত হয়, তবে সে তার অংশ পাবে, চাই তাকে কবর দেওয়া হোক বা না হোক, যদিও তাকে কোনো হিংস্র পশু খেয়ে ফেলে বা আগুনে পুড়ে ছাই করে বাতাসে উড়িয়ে দেওয়া হয় বা শুলে দেওয়া হয়। এমনকি সমূদ্রে ডুবে মারা গেলেও তার শরীর এবং আত্মায় সেই ‘আযাবই পৌঁছাবে, যা কবরে পৌঁছে থাকে। [আর রূহ, পৃষ্ঠা নং ১৬৮।]

পৃথিবী এবং আখিরাতের মধ্যবর্তী এ বারযাখে যার মধ্যে এর অধিবাসীগণ পৃথিবী ও আখিরাতের ওপর ভিত্তি করে অবস্থান করবে এবং প্রত্যেকেই তাদের আমল অনুযায়ী বারযাখের ‘আযাব ভোগ করবে, যদিও তাদের শান্তি এবং শাস্তি ভিন্ন হয়। পূর্বে কিছু লোক ধারণা করতো যে, তাদের শরীর যদি আগুনে পুড়ে ছাই করে কিছু অংশ সমূদ্রে, কিছু অংশ প্রবল বাতাসের দিন স্থলে উড়িয়ে দেওয়া হয়, তবে সে তা থেকে মুক্তি পেয়ে যাবে। এ ধারণার ওপর এক লোক তার ছেলেদেরকে অসিয়ত করে বলল, “আমি মারা গেলে আমাকেও এ রকম করে দিবে। (তাকে এ রকম করা হলে) আল্লাহ সমুদ্র এবং মাটিকে নির্দেশ দিলেন তা জমা করার জন্য। তারপর আল্লাহ বললেন, দাঁড়াও! সাথে সাথে তাঁর সম্মুখে দাঁড়িয়ে গেলে আল্লাহ তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কে তোমাকে এ রকম করতে বলেছে? সে বলল, হে আল্লাহ! তুমি তো জান, একমাত্র তোমার ভয়। তখন তিনি নিজ অনুগ্রহে করে তাকে ক্ষমা করে দিলেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৪৮১।]

সুতরাং বারযাখের শাস্তি ও শান্তি ঐ সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গ থেকে বাদ পড়বে না যা ছাই হয়ে গিয়েছে। এমনকি যদি প্রবল বাতাসে বৃক্ষের চুড়ায় লাশকে টাঙ্গিয়ে রাখা হয় তবুও বারযাখের শাস্তি বা শান্তি রূহের সাথে শরীরেও পৌঁছাবে।

যদি কোনো পুণ্যবান ব্যক্তিকে আগুনের নিম্ন স্তরেও দাফন করা হয়, তবে সে বারযাখের প্রশান্তির অংশ তার রূহ ও শরীরে পৌঁছাবেই। আল্লাহ তা‘আলা আগুনকে তার জন্য শান্তিদায়ক শীতল করে দিবেন। কারণ, বিশ্বের সকল উপকরণ তার রব এবং সৃষ্টিকর্তার জন্যে নিবেদিত, তিনি যেভাবে চান সে ভাবেই পরিচালনা করেন। তাঁর ইচ্ছার বাহিরে কোনো কিছু অমত প্রকাশ করে না; বরং তাঁর ইচ্ছার অনুগত, তাঁর শক্তির নিকট অনুপ্রাণিত। আর যে কেউ তা অস্বীকার করবে, সে যেন বিশ্বের প্রতিপালককেই অস্বীকার করল, তাঁর সাথে কুফুরি করল এবং তাঁর একত্ববাদকে অস্বীকার করল। তা কিতাব আর রূহ থেকে সংকলন করা হয়েছে।

প্রকাশ থাকে যে, বারযাখের বিষয়টি একটি অদৃশ্য বিষয়, যা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর পক্ষে তা বিশ্বাস করা একান্ত আবশ্যক, যেখানে সংক্ষেপাকারে এসেছে সেখানে সংক্ষেপ আর যেখানে বিস্তারিত এসেছে সেখানে বিস্তারিত ভাবেই বিশ্বাস করতে হবে। যেমন কুরআন ও হাদীসে এসেছে সেভাবেই বিশ্বাস করতে হবে। কিন্তু কখনো কখনো আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কতক বান্দার জন্য কবরের অবস্থা প্রকাশ করে দেখিয়ে থাকেন।

শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া বলেন, বহু মানুষের জন্য কবরের অবস্থা প্রকাশিত হয়েছে, এমনকি তারা কবরবাসীদের কবরে শাস্তির আওয়াজও শুনতে পেয়েছেন। বহু নিদর্শনসহ স্বচক্ষে তাদের শাস্তি হতে দেখেছে। তবে সর্বদা যে শুধু শরীরেই শাস্তি হতে হবে তা আবশ্যক নয়; বরং তা কখনো শরীরে, কখনো রূহে আবার কখনো উভয়েরই পৌঁছাতে পারে। [মাজমু‘আ ফাতাওয়া ৪/২৯৬।]

দলীল: সহীহ বুখারীতে ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বা মাদীনার কোনো এক বাগানের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন; এমতাবস্থায় দু’জন লোকের কবরে শাস্তি হতে শুনে বললেন, কবরে তাদের শাস্তি হচ্ছে; কিন্তু কোনো বড় ধরনের পাপের জন্য নয় (এমন পাপের জন্য যা থেকে বেঁচে থাকা কঠিন ছিল না বা তাদের নিকট তা বড় ছিল না [ফতহুল বারী ১/৩১৮।]) অতঃপর বললেন, হ্যাঁ, বড়ই ছিল (আল্লাহর নিকট তা বড় বা সে পাপ সর্বদা করার কারণে বড় আকার ধারণ করেছে), একজন প্রস্রাব করে পবিত্রতা অর্জন করতো না, অপরজন মানুষের গীবত করে বেড়াতো।”

তারপর একটি খেজুরের ডাল আনতে বললেন, অতঃপর তা দ্বিখণ্ডিত করে প্রত্যেকের কবরে এক টুকরা করে গেড়ে দিলেন। এ রকম করার কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, এগুলো শুঁকানো পর্যন্ত হয়তো তাদের শাস্তি কিছুটা হালকা হবে।

ইমাম ত্ব-হাবী রহ. হাসান সনদে ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, “আল্লাহর কোনো এক বান্দাকে তার কবরে একশত দুররা মারার নির্দেশ দেওয়া হলে তিনি তার জন্য আল্লাহর নিকট আশ্রয় এবং দো‘আ করতে থাকলেন যতক্ষণ না তা কমিয়ে একটি করা হলো। অতঃপর তার কবরে মাত্র একটি দুররা মারা হলে তার কবর অগ্নিতে ভরপুর হয়ে গেল। যখন তার উপর থেকে আগুন দূর হয়ে গেল তখন সে বলল, কিসের জন্য আমাকে এভাবে মেরেছ? তারা বলল, তুমি একবার বিনা অযুতে সালাত পড়েছিলে এবং নির্যাতিত মানুষের পাশ দিয়ে অতিক্রম করেছিলে; কিন্তু তাকে সাহায্য কর নি। [শরহে মুশকিলুল আছার ৮/২১২ও ৩১৮৫।]

এ অধ্যায়ে আরো লক্ষণীয় বিষয় হলো, যা ইবন আবুদ দুনিয়া (কিতাব আল কুবূর) এ উল্লেখ করেছেন, তার নিকট থেকে আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম (কিতাব আর রূহে পৃষ্ঠা নং ৩১৯) নকল করেছেন, একজন দৃঢ় মজবুত তাবেঈ সু‘আইহিদ ইবন জুহাইর থেকে, তিনি বলেন, আমরা আমাদের এবং বসরার মধ্যবর্তী কতগুলো ঝরনার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। এমন সময় একটি গাধার ডাক শুনতে পেলাম, বললাম এ শব্দটি কিসের? তারা বলল, এ শব্দটি এক ব্যক্তির, সে আমাদের সাথে ছিল, একদা তার মা কোনো ব্যাপারে তার সাথে কথা বললে সে বলল, তুমি গাধার মতো চেচাচ্ছ কেন? তারপর সে যখন মারা গেল তখন থেকে প্রতি রাত্রে তার কবর থেকে এ আওয়াজ শুনা যায়।

এ ব্যাপারে বহু ঘটনা রয়েছে, জায়গা সংকীর্ণতার দরুন তা উল্লেখ করা হলো না। ঘটনা যাই হোক না কেন ঐ রকম কারণ যদিও দর্শকদের সামনে স্থির কিন্তু এর ভিতরে অন্য রকম। কারণ, এতে যেমন বহু লোক সাজাপ্রাপ্ত এবং বেহুশ হয়ে পড়ে আছে তেমনি বহু লোক হাসি খুশী ও শান্তিতে রয়েছে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন