HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

জান্নাতের প্রতি আগ্রহী ও জাহান্নাম থেকে পলায়নকারীর জন্য বিশেষ উপদেশ

লেখকঃ রাশেদ বিন আব্দুর রহমান আয-যাহরানী

জাহান্নাম ধ্বংসের ঘর
বান্দার ইহকালীন ও পরকালীন সফলতা অর্জন ও কৃতকার্য হওয়ার নিদর্শন হচ্ছে, তার অন্তকরণ আখেরাতের স্মরন, পরকালের ভাবনায় সঞ্জীবিত ও সিক্ত হয়ে যাওয়া। যেমন আল্লাহ তাআলা তার নৈকট্য-প্রাপ্ত বান্দা তথা অলি-আউলিয়াদের প্রশংসা করে বলেন :

إِنَّا أَخْلَصْنَاهُمْ بِخَالِصَةٍ ذِكْرَى الدَّارِ ﴿ص :46﴾

‘‘আমি তাদেরকে এক বিশেষগুন তথা পরকালের স্মরণ দ্বারা স্বাতন্ত্র প্রদান করেছি।’’ [সাদ:৪৬] অর্থাৎ পরকালীন জীবনের সুখ-দুঃখের ভাবনা।

পক্ষান্তরে পরকাল বিস্মৃতি ও আখেরাত ভুলে যাওয়া বান্দার ভাগ্যহীন হওয়ার আলামত। আল্লাহ তাআলা বলেন :

الَّذِينَ اتَّخَذُوا دِينَهُمْ لَهْوًا وَلَعِبًا وَغَرَّتْهُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا فَالْيَوْمَ نَنْسَاهُمْ كَمَا نَسُوا لِقَاءَ يَوْمِهِمْ هَذَا وَمَا كَانُوا بِآَيَاتِنَا يَجْحَدُونَ ﴿الأعراف :51﴾

‘‘তারা স্বীয় ধর্মকে তামাশা ও খেলা বানিয়ে নিয়েছিল এবং পার্থিব জীবন তাদেরকে ধোকায় ফেলে রেখেছিল। অতএব আমি আজকে তাদের ভুলে যাব, যেমন তারা এ দিনের সাক্ষ্যাৎ ভুলে গিয়েছিল, (আরেকটি কারণ) যেহেতু তারা আয়াতসমূহকে মিথ্যারোপ করত।’’ [আরাফ:৫১]

আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ, খাস রহমত; আমাদের অন্তরে পরকালের ভাবনা, আখেরাতের ফিকির উদয়-বৃদ্ধির জন্য হাজারো আলামত, প্রচুর নিদর্শন বিদ্যামান রেখেছেন এ পার্থিব জগতে। আল্লাহ তাআলা বলেন :

أَفَرَأَيْتُمُ النَّارَ الَّتِي تُورُونَ . أَأَنْتُمْ أَنْشَأْتُمْ شَجَرَتَهَا أَمْ نَحْنُ الْمُنْشِئُونَ . نَحْنُ جَعَلْنَاهَا تَذْكِرَةً وَمَتَاعًا لِلْمُقْوِينَ ﴿الواقعة :71-73﴾

‘‘তোমারা যে অগ্নি প্রজ্বলিত কর, সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছ কি? তোমরা কি এর বৃক্ষ সৃষ্টি করেছ, না আমি সৃষ্টি করেছি? আমিই সে বৃক্ষকে করেছি স্মরনিকা এবং মরুবাসীদের জন্য সামগ্রী।’’ [ওয়াকেয়া:৭১-৭২] যদিও এ বৃক্ষ গরমের উপকরণ, রান্নার ইন্ধন, তথাপি আমাদেরকে আখেরাতের অগ্নি স্মরণ করিয়ে দেওয়ারও স্মরনিকা। নিম্নোক্ত আয়াতের দ্বারা তিনি গ্রীষ্মের প্রচন্ড গরমকে জাহান্নমের অগ্নির সাথে তুলনা করে বিষয়টি আরো স্পষ্ট করে দিয়েছেন। এরশাদ হচ্ছে :

وَقَالُوا لَا تَنْفِرُوا فِي الْحَرِّ قُلْ نَارُ جَهَنَّمَ أَشَدُّ حَرًّا لَوْ كَانُوا يَفْقَهُونَ ﴿التوبة :81﴾

‘‘তারা বলেছে এই গরমের মধ্যে অভিযানে বের হয়ো না। বলে দাও উত্তাপে জাহান্নামের আগুন প্রচন্ডতম। যদি তাদের বিবেচনা শক্তি থাকত।’’ [তওবা:৮১] আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন :

أبردوا بالظهر فإن شدة الحر من فيح جهنم . ( البخاري )

‘‘তোমরা জোহরকে থান্ডা করে পড়, যেহেতু গরমের প্রচন্ডতা জাহান্নামের নিঃশ্বাস থেকে উৎসারিত।’’ [বুখারী] সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

اشتكت النار إلى ربها فقالت رب أكل بعضي بعضاً فأذن له بنفسين نفس في الشتاء ونفس في الصيف فهو ما تجدون من الحر وأشد ما تجدون من الزمهرير . ( متفق عليه )

‘‘জাহান্নাম তার প্রভুর কাছে অভিযোগ করেছে, হে আমার রব! আমার এক অংশ অপর অংশকে খেয়ে নিচ্ছে; অতঃপর আল্লাহ তাকে দুটি নিঃশ্বাস ত্যাগ করার অনুমতি দেন। একটি গ্রীষ্মকালে অপরটি শীতকালে। তোমরা যে প্রচন্ড গরম ও কনকনে শীত অনুভব কর, তাই সে নিঃশ্বাস।’’ [বুখারী ও মুসলিম]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন সময়ে সাহাবাদের ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ উপদেশ বাণী প্রদান করতেন, যার দ্বারা অন্তর বিগলিত হত, অশ্রুতে সিক্ত হয়ে যেত চক্ষুদ্বয়। এক বার তিনি নামাজ আদায় করে বলেন :

قد أريت الآن منذ صليت لكم الصلاة الجنة والنار ممثلين في قبلة هذا الجدار فلم أر كاليوم في الخير والشر . ( البخاري )

‘‘এ মাত্রযখন আমি তোমাদের নিয়ে নামাজরত ছিলাম দেয়ালের পাশে প্রতিবিম্বের আকৃতিতে আমাকে জান্নাত-জাহান্নাম দর্শন করানো হয়েছে। আজকের মত আর কোন দিন এতো মঙ্গল-অমঙ্গল, নিষ্ট-অনিষ্ট চোখে দেখিনি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা শুনে সাহাবাগণ অবনত মস্তক হয়ে গেলেন, তাদের অন্তরে কান্নার ডেকুর উঠল। তারা কাঁদতে ছিলেন। অথচ তাকওয়া, ইমান, ইসলামের দাওয়াত, জিহাদ ও রাসূলকে নিরাপত্তা বিধানের ক্ষেত্রে তারা আমাদের চেয়ে অধিক অগ্রগামী ছিলেন।

কারণ, এটা ভয়ংকর মাখলূখ (জাহান্নাম) সম্পর্কে সতর্কবাণী ও সাবধানিকরণ আগাম বার্তা। কেমন হবে সেদিন, যে দিন সত্তুর হাজার লাগামসহ জামান্নাম উপস্থিত করা হবে। প্রতিটি লাগামের সাথে একজন করে ফেরেশতা থাকবে, তারা এটাকে টেনে-হেছড়ে হাজির করবে। এতো বেশী পরিমাণ শক্তিশালী ফেরেশতাদের নিযুক্তি দ্বারাই জাহান্নামের বিশালত্ব ও ভয়াবহতার ধারণা করা যায়। এরশাদ হচ্ছে :

وَجِيءَ يَوْمَئِذٍ بِجَهَنَّمَ يَوْمَئِذٍ يَتَذَكَّرُ الْإِنْسَانُ وَأَنَّى لَهُ الذِّكْرَى ﴿الفجر :23﴾

‘‘যে দিন জাহান্নামকে আনা হবে, সে দিন মানুষ স্মরণ করবে, কিন্তু এ স্মরণ তার কি কাজে আসবে? [ফাজর:২৩] আল্লাহর নিন্মোক্ত বাণী আমাদের কাছে আরো গভীর চিন্তার আবেদন জানায় :

إِنَّهَا تَرْمِي بِشَرَرٍ كَالْقَصْرِ . كَأَنَّهُ جِمَالَةٌ صُفْرٌ ﴿المدثر :32-33﴾

‘‘এটা অট্রালিকা সাদৃশ বৃহৎ স্ফুলিঙ্গ নিক্ষেপ করবে, যেন সে পীতবন্য উষ্ট্রশ্রেনী।’’ [মুরসালাত:৩২-৩৩] জাহান্নাম নিজ ক্রোধের কারণে ভিষণ হয়ে উঠবে, তার অংশগুলো খন্ড-বিখন্ড হয়ে যাওয়ার উপক্রম হবে। আরো ভয়ঙ্কর হয়ে যাবে মহান আল্লাহর গোস্বার ধরুন। এরশাদ হচ্ছে :

إِذَا رَأَتْهُمْ مِنْ مَكَانٍ بَعِيدٍ سَمِعُوا لَهَا تَغَيُّظًا وَزَفِيرًا ﴿الفرقان :12﴾

‘‘অগ্নি যখন দূর থেকে তাদেরকে দেখবে, তখন তারা শুনতে পাবে তার গর্জন ও গুঙ্কার।’’ [ফোরকান:১২]

বর্তমান সমাজে জাহান্নামের আলোচনা প্রাণহীন বে-রস বিষয় বস্ত্তর ন্যায় পরিত্যক্ত হয়ে আছে। যে কারণে জাহান্নামের নাম শুনে অন্তরসমূহে ভীতির সৃষ্টি হয় না, চক্ষুসমূহ অশ্রু বিসর্জন করে না। যা সর্বগ্রাসী আত্মীক অবক্ষয়ের করুন চিত্র। যেন জাহান্নাম সম্পর্কে আল্লাহর কোন সতর্কবাণী আমরা শোনিনি। অথবা আমাদের অন্তরসমূহ শুষ্ক, উষর ও কঠিন হয়ে গেছে!

إنا لله وإنا إليه راجعون

এরূপ কঠিন অন্তর-ই যে কোন ব্যক্তির হতভাগ্য হওয়ার বড় আলামত। এ ধরণের বধির, কল্যাণশুন্য অন্তরসমূহ বিগলিত করার জন্যই জাহান্নামের অগ্নি প্রস্ত্তত করা হয়েছে।

মহান আল্লাহ তাআলা ধ্বংস-অপমানের স্থান জাহান্নাম সম্পর্কে কঠিনভাবে সতর্ক করে বলেছেন :

فَأَنْذَرْتُكُمْ نَارًا تَلَظَّى ﴿الليل :14﴾

‘‘অতএব আমি তোমাদেরকে প্রজ্বলিত অগ্নি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছি।’’ [লাইল:১৪]

অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে :

إِنَّهَالَإِحْدَى الْكُبَرِ . نَذِيرًا لِلْبَشَرِ ﴿المدثر :35-36﴾

‘‘নিশ্চয় জাহান্নাম গুরুতর বিপদ সমুহের অন্যতম। মানুষের জন্য সতর্ককারী।’’ [মুদ্দাসিসর:৩৫-৩৬]

আল্লাহর শপথ! জাহান্নাম থেকে ভয়ংকর কোন বস্ত্ত নেই। খোদ আল্লাহ তাআলা এর প্রজ্বলন-দাহন, খাদ্য-পানীয়, বেড়ি, ফুটন্তপানি, পুজ এবং তাতে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা ও সেখানকার পোশাকের ভয়াবহতার বর্ণনা দিয়েছেন। যাতে মানবজাতি এ নিয়ে চিন্তা-ফিকির করার সুযোগ পায়এই তো জাহান্নাম! এর অভ্যন্তরে জাহান্নামিরা কাত-চিত হয়ে পল্টি খাচ্ছে, এর ময়দানে তাদেরকে টানা-হেচড়া করা হচ্ছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও এর ভয়াবহতার বিষদ বর্ণনা দিয়েছেন। একদিন মেম্বারে দাঁড়িয়ে বার বার উচ্চারণ করেন :

أنذرتكم النار أنذرتكم النار أنذرتكم النار .

‘‘আমি তোমাদেরকে জাহান্নাম থেকে সতর্ক করছি। আমি তোমাদেরকে জাহান্নাম থেকে সতর্ক করছি। আমি তোমাদেরকে জাহান্নাম থেকে সতর্ক করছি।’’ সে দিন রাসূলের আওয়াজ পাশে অবস্থিত বাজারের লোকজনও শুনতে পেয়েছিল। অস্থিরতার ধরুন কাধের চাদর পর্যন্ত পড়ে গিয়েছিল। তিনি আরো বলতে ছিলেন :

ما رأيت كاالنار نام هاربها , ولا كالجنة نام طالبها . ( الترمذي )

‘‘আমি জাহান্নামের মত ভয়ংকর কোন জিনিস দেখিনি, যার পলায়নকারীরা ঘুমন্ত। জান্নাতের মত লোভনীয় কোন জিনিস দেখিনি, যার সন্ধানকারীরা ঘুমন্ত।’’ [তিরমিজী সহীহ]

হে মানবজাতি! মনে রেখ, জাহান্নাম সম্পর্কে তোমার অনুসন্ধিৎসা, মূলত একটি ভীতিকর বস্ত্ত সম্পর্কে-ই অনুসন্ধিৎসা। লক্ষ্য কর, যার সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

أوقد عليها ألف عام حتى ابيضت , ثم أوقد عليها ألف عالم حتى اسودت , فهي سوداء مظلمة يحطم بعضها بعضا . ( الترمذي )

‘‘যা দগ্ধ করা হয়েছে হাজার বছর, যার ফলে সে লাল হয়ে গেছে; পুনঃরায় দগ্ধ করা হয়েছে হাজার বৎসর, যার ফলে সে সাদা হয়ে গেছে; পুনঃরায় দগ্ধ করা হয়েছে হাজার বছর, যার ফলে সে কালো হয়ে গেছে। সে বিদঘুটে কালো; অন্ধকার; তার এক অংশ অপর অংশকে ভস্ব করে দিচ্ছে।’’ [তিরমিজী] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :

جزء واحد من سبعين جزءا منها . ( البخاري )

‘‘আমাদের এ আগুন, জাহান্নামের সত্তর ভাগের এক ভাগ।’’ [বুখারী-মুসলিম]

إن أهون أهل النار عذابا من كان له نعلان من نار يغلي منهما دماغه , ما يرى أن أحدا أشد منه عذابا وإنه لأهونهم عذابا . ( مسلم )

‘‘জাহান্নামের ভেতর সবচেয়ে হালকা শাস্তি হবে সে ব্যক্তির, যার দুটি আগুনের জুতো থাকবে, যার কারণে তার মস্তক টকবগ করবে, সে অন্য কাউকে তার চেয়ে বেশী শাস্তিভোগকারী মনে করবে না। অথচ সে-ই সবচেয়ে কম শাস্তিভোগকারী। [মুসীলম] জাহান্নমের সাতটি দরজা রয়েছে। সব কটি দরজা লোহার খুটি দ্বারা আটঁকে দিয়ে জাহান্নামিদের বন্ধি করে রাখা হবে। এরশাদ হচেছ :

إِنَّهَا عَلَيْهِمْ مُؤْصَدَةٌ . فِي عَمَدٍ مُمَدَّدَةٍ ﴿الهمزة :9﴾

‘‘নিশ্চয় তা’ (জাহান্নাম) তাদের ওপর বন্ধ করে দেয়া হবে। লম্বা লম্বা খুঁটিসমূহে।’’ [হুমাজাহ:৯]

জাহান্নামের অনেক স্তর রয়েছে। ওপরের স্তর থেকে নিচের স্তরগুলো তুলনামূলক কঠিন ও ভয়াবহ। এরশাদ হচ্ছে:

إِنَّ الْمُنَافِقِينَ فِي الدَّرْكِ الْأَسْفَلِ مِنَ النَّارِ ﴿النساء :145﴾

‘‘নিঃসন্দেহে মুনাফেকরা রয়েছে দোযখের সর্বনিন্ম স্তরে।’’ [নিসা:১৪৫]

জাহান্নামের গভীরতার পরিমাণ সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

يلقى الحجر العظيم من شفيرها فيهوي فيها سبعين سنة لا يدرك قعرها . ( مسلم )

‘‘তার মুখ থেকে একটি বিরাট পাথর নিক্ষেপ করা হবে, সত্তর বৎসর পর্যন্ত গভীরে যেতে থাকবে, তবুও তার গভীরতার নাগাল পাবে না।’’ যখন-ই কোন ব্যক্তিকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে, সে বলবে, আরো আছে কি? তবে নিশ্চিত আল্লাহ তাআলা নিজ ঘোষণা অনুযায়ী জাহান্নাম পূর্ণ করে দিবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন :

وَتَمَّتْ كَلِمَةُ رَبِّكَ لَأَمْلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ ﴿هود :119﴾

‘‘আর তোমার রবের কথাই পূর্ণ হল : অবশ্যই আমি জাহান্নামকে পূর্ণ করব, জিন ও মাবনজাতি দ্বারা।’’ [হুদ:১১৯]

চরম শাস্তি দেয়ার লক্ষ্যে জাহান্নামিদের ভয়ংকর ও বিশাল আকৃতিতে জাহান্নামে প্রবেশ করানো হবে। এরশাদ হচ্ছে :

فما بين منكبي الكافر مسيرة ثلاثة أيام للراكب المسرع . ( متفق عليه )

‘‘একজন কাফেরের দুকাঁধের মাঝখানের ব্যবধান হবে দ্রুতগামী অশ্বারোহী ব্যক্তির তিন দিন ভ্রমন পথের সমান।’’ [বুখারী]

وإن ضرسه مثل جبل أحد , وغلظ جلده مسيرة ثلاث ليال . ( مسلم )

‘‘তার মাঢ়ির দাত হবে উহুদ পাহাড়ের সমান। তার চামড়ার ঘনত্বের প্রস্থ হবে তিন রাত ভ্রমন করার পথের সমান।’’ [মুসলিম]

مقعده كما بين مكة و المدينة . ( الترمذي )

‘‘তার পাঁছা হবে মক্কা-মদিনার দূরত্বের সমান।’’ [তিরমিজী] জাহান্নাম খুবই খারাপ গন্তব্য, ঘৃণীত বাসস্থান। এতে খাদ্য হিসেবে থাকবে বিষাক্ত কন্টক আর যাক্কুম। যা মারাত্বক কদর্য ও যন্ত্রনাদায়ক। এর সৃষ্টিকর্তা, যিনি এর দ্বারা শাস্তি দেয়ার অঙ্গিকার করেছেন, তিনি নিজেই বলেছেন :

إِنَّ شَجَرَةَ الزَّقُّومِ . طَعَامُ الْأَثِيمِ . كَالْمُهْلِ يَغْلِي فِي الْبُطُونِ . كَغَلْيِ الْحَمِيمِ ﴿الدخان :43-46﴾

‘‘নিশ্চয যাক্কুম বৃক্ষ, পাপীদের খাদ্য। গলিত তন্ত্রের মত পেটে ফুটতে থাকবে, যেমন ফুটে গরম পানি।’’ [দুখান:৩৫-৩৬]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

لو أن قطرة من الزقوم قطرت في الدنيا لأفسدت على أهل الدنيا معايشهم بمن تكون طعامه . ( أحمد والترمذي وابن ماجة )

‘‘যদি যাক্কুমের এক ফোটা দুনিয়ায় টপকে পড়ত, তবে এতে বসবাসকারীদের জীবন-উপকরণ ধ্বংস হয়ে যেত। সে ব্যক্তির অবস্থা কেমন হবে, যার খাদ্য-ই হবে যাক্কুম’’? [আহমাদ, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ]

তাতে পান করার জন্য আছে, গরম টগবগে পানি, পুঁজ, গীসলীন অর্থাৎ জাহান্নামীদের গাঁ ধোয়া পানি, পূঁজ ও বমি। এরশাদ হচ্ছে :

وَخَابَ كُلُّ جَبَّارٍ عَنِيدٍ . مِنْ وَرَائِهِ جَهَنَّمُ وَيُسْقَى مِنْ مَاءٍ صَدِيدٍ . يَتَجَرَّعُهُ وَلَا يَكَادُ يُسِيغُهُ وَيَأْتِيهِ الْمَوْتُ مِنْ كُلِّ مَكَانٍ وَمَا هُوَ بِمَيِّتٍ وَمِنْ وَرَائِهِ عَذَابٌ غَلِيظٌ ﴿إبراهيم :15-17﴾

‘‘এবং প্রত্যেক উদ্ধত স্বৈরাচারী ব্যর্থ-কাম হল। তাদের প্রত্যেকের পশ্চাতে রয়েছে জাহান্নাম এবং তাদের প্রত্যেককে পান করানো হবে গলিত পুঁজ। যা সে অতিকষ্টে গলধঃকরণ করবে এবং তা গলধঃকরণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। সর্বদিক থেকে তার কাছে আসবে মৃত্যু অথচ সে মরবে না। তার পশ্চাতেও রয়েছে কঠোর আযাব।’’ [ইব্রাহিম:১৫-১৭]

وَإِنْ يَسْتَغِيثُوا يُغَاثُوا بِمَاءٍ كَالْمُهْلِ يَشْوِي الْوُجُوهَ بِئْسَ الشَّرَابُ وَسَاءَتْ مُرْتَفَقًا ﴿29﴾

‘‘যদি তারা ফরিয়াদ জানায়, তবে তাদেরকে এমন পানি দ্বারা জবাব দেয়া হবে, যা পুঁজের ন্যায়, যা তাদের মুখ-মন্ডল জ্বালিয়ে দিবে।’’ [কাহাফ:২৯] তাদের পেটে ক্ষুধার সৃষ্টি করা হবে, অতঃপর যখন তারা খানার ফরিয়াদ করবে, যাক্কুম খেতে দেয়া হবে, যা বক্ষণের ফলে পেটের ভেতর গরম পানির ন্যায় উতলানো শুরু করবে। এরশাদ হচ্ছে :

فيستغيثون يطلبون الماء، فيسقون ماء إذا أدني إليهم شوى وجوههم . ( أحمد والترمذي )

‘‘অতঃপর তারা পানি চেয়ে ফরিয়াদ করবে, ফলে তাদেরকে এমন পানি দেয়া হবে, যা তাদের নিকটবর্তী করা হলে তাদের চেহারা জ্বলে যাবে।’’ আর যখন তা পান করবে, তখন তাদের নাড়ি-ভূড়ি খন্ড-বিখন্ড হয়ে মলদ্বার দিয়ে বের হয়ে যাবে। এরশাদ হচ্ছে :

وَسُقُوا مَاءً حَمِيمًا فَقَطَّعَ أَمْعَاءَهُمْ ﴿محمد :15﴾

‘‘এবং তাদেরকে পান করানো হবে ফুটন্ত পানি, যা তাদের নাড়ি-ভূড়ি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দিবে।’’ [মুহাম্মদ:১৫]

আল্লাহ তাআলা তাদের পোশাকের ব্যাপারে বলেছেন, আলকাতরার এমন পোষাক পরিধান করানো হবে, যা আগুনে টগবগ করতে থাকবে আর দাহ্য হতে থাকবে। এরশাদ হচ্ছে :

سَرَابِيلُهُمْ مِنْ قَطِرَانٍ وَتَغْشَى وُجُوهَهُمُ النَّارُ ﴿إبراهيم :50﴾

‘‘তাদের জামা হবে আলকাতরার এবং তাদের মুখ মন্ডল আগুন আচ্ছন্ন করে রাখবে।’’ [ইব্রাহিম:৫০] আরো এরশাদ হচ্ছে :

فَالَّذِينَ كَفَرُوا قُطِّعَتْ لَهُمْ ثِيَابٌ مِنْ نَارٍ ﴿الحج :19﴾

‘‘যারা কুফরি করেছে, তাদের জন্য আগুনের পোষাক তৈরী করা হবে।’’ [হজ:১৯] ইবরাহিম তামিমি রহ. এ আয়াত তেলাওয়াত করার সময় বলতেন :

سبحان من خلق من النار ثيابا .

‘‘পবিত্র তিনি, যিনি আগুন দ্বারাও পোষাক তৈরি করেছেন।’’ [হজ:১৯] জাহান্নামের শিকল ও বেড়ি সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে এরশাদ হচ্ছে :

خُذُوهُ فَغُلُّوهُ . ثُمَّ الْجَحِيمَ صَلُّوهُ . ثُمَّ فِي سِلْسِلَةٍ ذَرْعُهَا سَبْعُونَ ذِرَاعًا فَاسْلُكُوهُ ﴿الدخان :30-32﴾

‘‘ধর তাকে; এবং বেড়ি পড়িয়ে দাও তার গলায়; অতঃপর নিক্ষেপ কর তাকে জাহান্নামে; পুনরায় তাকে বেঁধে ফেল এমন শৃঙ্খলে, যার দৈর্ঘ সত্তর গজ লম্বা।’’ [হা-ক্কাহ:৩২] তাদের হাত গর্দানের সাথে বেঁধে দেয়া হবে এবং চেহারার ওপর দাঁড় করে টেনে-হেচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এরশাদ হচ্ছে :

يَوْمَ يُسْحَبُونَ فِي النَّارِ عَلَى وُجُوهِهِمْ ذُوقُوا مَسَّ سَقَرَ ﴿القمر :48﴾

‘‘যে দিন তাদের উপুড় করে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে জাহান্নামের দিকে, (বলা হবে) জাহান্নামের যন্ত্রণা আস্বাদান কর।’’ [আল-কামার:৪৮] কপাল-পা একসাথে বেঁধে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এরশাদ হচ্ছে :

فَيُؤْخَذُ بِالنَّوَاصِي وَالْأَقْدَامِ ﴿الرحمن :41﴾

‘‘অতঃপর তাদের পাকঁড়াও করা হবে কপাল (চুলের ঝুঁটি) ও পা ধরে।’’ [রাহমান:৪১] এ কপাল মিথ্যুক, আল্লাহর জন্য সেজদা করেনি, তার বড়ত্বের সামনে অবনত হয়নি। এ পদযুগলও মিথ্যুক, সবসময় আল্লাহর অবাধ্যতায় চালিত হয়েছে।

জাহান্নামের আবহাওয়া বীষ; পানি টকবগে গরম; ছায়া ধুম্র কুঞ্জ; জাহান্নামের ধোঁয়া না-ঠান্ডা, না-সম্মানের। জাহান্নামিদের অবস্থা শোচনীয় পরাজয়ের, চুরান্ত অপমান জনক। তদুপরি তারা পাঁয়ে ভর করে পঞ্চাশ হাজার বৎসর দাঁড়িয়ে থাকবে। তারা ক্ষুধা-তৃষ্ণা নিবারণের জন্য এক মুঠো খাদ্য, সামান্য পানীয় পর্যন্ত পাবে না। তাদের গর্দান পিপাসায় ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হবে, ক্ষুধার তীব্রতায় কলিজায় দাহক্রিয়া আরাম্ভ হবে, অতঃপর এ হালতেই তাদের জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এরশাদ হচ্ছে :

تَلْفَحُ وُجُوهَهُمُ النَّارُ وَهُمْ فِيهَا كَالِحُونَ ﴿المؤمنون :104﴾

‘‘আগুন তাদের মুখ মন্ডল দগ্ধ করবে এবং তারা সেখানে থাকবে বীভৎস চেহারায়।’’ [মুমিনুন:১০৪]

জাহান্নাম খুব-ই সংকীর্ন, বিপদ সঙ্কুল, ধ্বংসের স্থান, অন্ধকারে ভরপুর, সব সময় এতে আগুন প্রজ্বলিত থাকবে, জাহান্নামিরা সর্বদা এখানেই আবদ্ধ থাকবে। পাষাণ হৃদয়, কঠোর স্বভাব, কালো ও অন্ধকারে ঢাকা চেহারা বিশিষ্ট ফেরেশতাদের মাধ্যমে, ভয়ংকর পদ্ধতিতে তাদেরকে জাহান্নামের প্রবেশ দ্বারে অভ্যর্থনা দেয়া হবে। যাদের চেহারা দর্শন শাস্তির ওপর অতিরিক্ত শাস্তি হিসেবে গণ্য হবে। তারা কঠোর, করুণাহীন, আরো ব্যবহার করবে লৌহদন্ড। তারা পিছন থেকে হাঁকিয়ে, ধমকিয়ে ধমকিয়ে জাহান্নামিদের নিয়ে যাবে জাহান্নামের দিকে, অতঃপর তার গভীর গর্তে নিক্ষেপ করবে। সেখানে তাদের সাপে দংশন করবে, জলন্ত পোষাক পরিধান করানো হবে, তাদের কোন ইচ্ছা-ই পূর্ণ হবে না, তাদের কেউ ত্রাণকর্তা থাকবে না। মাথা-পা একসাথে বাধাঁ হবে, পাপের কারণে চেহারা কালো হয়ে যাবে, তারা সর্বনাশ বলে চিৎকার করবে আর মৃত্যুকে আহবান করতে থাকবে। তাদের বলা হবে :

لَا تَدْعُوا الْيَوْمَ ثُبُورًا وَاحِدًا وَادْعُوا ثُبُورًا كَثِيرًا ﴿الفرقان :14﴾

‘‘আজ তোমরা এক মৃত্যুকে ডেক না, অনেক মৃত্যুকে ডাক।’’ [ফুরকান:১৪] তখন তারা নিজ বিকৃত মস্তিস্কের কথা স্বীকার করবে, যে কারণে তারা আজ এ পরিস্থিতির সম্মুখিন হয়েছে। এরশাদ হচ্ছে :

وَقَالُوا لَوْ كُنَّا نَسْمَعُ أَوْ نَعْقِلُ مَا كُنَّا فِي أَصْحَابِ السَّعِيرِ ﴿الملك :10﴾

‘‘এবং তারা বলবে, যদি আমরা কর্নপাত করতাম অথবা বুদ্ধি খাটাতাম, তাহলে আমরা জাহান্নামী হতাম না।’’ [মুলুক:১০] সব দিক থেকে জাহান্নাম তাদের বেষ্টন করে রাখবে। এরশাদ হচ্ছে :

لَهُمْ مِنْ جَهَنَّمَ مِهَادٌ وَمِنْ فَوْقِهِمْ غَوَاشٍ وَكَذَلِكَ نَجْزِي الظَّالِمِينَ ﴿الأعراف :41﴾

‘‘তাদের নিচে থাকবে জাহান্নামের আগুনের বিছানা এবং ওপরে থাকবে চাদর। আমি এভাবেই অত্যাচারীদের প্রতিদান দেই।’’ [আরাফ:৪১] তারা যেখানে যাবে, তাদের সাথে বিছানা-চাদরও সেখানে যাবে। এরশাদ হচ্ছে :

إِنَّ عَذَابَهَا كَانَ غَرَامًا ﴿الفرقان :65﴾

‘‘নিশ্চয় ওর শাস্তি তো আঁকড়ে থাকার জিনিস।’’ [ফুরকান:৬৫]

আললাহ বলেন :

وَإِنَّ جَهَنَّمَ لَمُحِيطَةٌ بِالْكَافِرِينَ ﴿التوبة :49﴾

‘‘নিশ্চয় জাহান্নাম কাফেরদের বেষ্টনকারী।’’ [তওবা:৪৯] কোথাও পালাবার জায়গা নেই। এরশাদ হচ্ছে :

يُصَبُّ مِنْ فَوْقِ رُءُوسِهِمُ الْحَمِيمُ . يُصْهَرُ بِهِ مَا فِي بُطُونِهِمْ وَالْجُلُودُ . وَلَهُمْ مَقَامِعُ مِنْ حَدِيدٍ . كُلَّمَا أَرَادُوا أَنْ يَخْرُجُوا مِنْهَا مِنْ غَمٍّ أُعِيدُوا فِيهَا وَذُوقُوا عَذَابَ الْحَرِيقِ ﴿الحج :19-22﴾

‘‘তাদের মাথার ওপর গরম পানি ঢালা হবে। যা দ্বারা, তাদের উদরে যা আছে তা এবং তাদের চর্ম বিগলিত করা হবে। আর তাদের থাকবে লোহার হাতুড়িসমূহ। যখনই তারা যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ হয়ে জাহান্নাম থেকে বের হতে চাইবে, তখনই তাদেরকে তাতে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। (বলা হবে) দহনের শাস্তি আস্বাদন কর।’’ [হজ:১৯-২২]

আল্লাহ তাআলা বলেন :

كُلَّمَا نَضِجَتْ جُلُودُهُمْ بَدَّلْنَاهُمْ جُلُودًا غَيْرَهَا لِيَذُوقُوا الْعَذَابَ ﴿النساء :56﴾

‘‘যখন তাদের চামড়া জ্বলে যাবে, আমি অন্য চামড়া দিয়ে তা পালটে দেব। যেন তারা আযাব আস্বাদান করতে পারে।’’ [নিসা:৫৬] অতঃপর বলবেন:

فَذُوقُوا فَلَنْ نَزِيدَكُمْ إِلَّا عَذَابًا ﴿النبأ :30﴾

‘‘তোমরা শাস্তি আস্বাদান কর, আমি কেবল তোমাদের শাস্তির বৃদ্ধি ঘটাব।’’ [নাবা:৩০] তারা জাহান্নামের ফেরেশতাদের মাধ্যমে সাহায্য চাইবে। এরশাদ হচ্ছে :

وَقَالَ الَّذِينَ فِي النَّارِ لِخَزَنَةِ جَهَنَّمَ ادْعُوا رَبَّكُمْ يُخَفِّفْ عَنَّا يَوْمًا مِنَ الْعَذَابِ . قَالُوا أَوَ لَمْ تَكُ تَأْتِيكُمْ رُسُلُكُمْ بِالْبَيِّنَاتِ قَالُوا بَلَى قَالُوا فَادْعُوا وَمَا دُعَاءُ الْكَافِرِينَ إِلَّا فِي ضَلَالٍ ﴿غافر :49-50﴾

‘‘আর যারা জাহান্নামে রয়েছে, তারা জাহান্নামের রক্ষিদের বলবে, তোমরা তোমাদের রবকে বল, তিনি যেন আমাদের থেকে এক দিনের আযাব হালকা করে দেন। রক্ষীরা বলবে : তোমাদের কাছে কি সুস্পষ্ট প্রমাণাদি নিয়ে তোমাদের রাসূলগণ আসেনি? তারা বলবে : অবশ্যই; তারা বলবে : তবে তোমরা-ই আহবান কর। বস্ত্তত কাফেরদের আহবান নিষ্ফল।’’ [গাফের:৪৯-৫০] একটু চিন্তা করুন, সে জগতের মানুষের অবস্থা কেমন হতে পারে, যারা সর্বশেষ ও চুরান্ত সিদ্ধান্ত হিসেবে মৃত্যু কামনা করবে। এরশাদ হচ্ছে :

وَنَادَوْا يَا مَالِكُ لِيَقْضِ عَلَيْنَا رَبُّكَ ﴿الزخرف :77﴾

‘‘তারা (জাহান্নামের দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতাকে) ডেকে বলবে, হে মালেক, (বলুন) তোমার রব আমাদের কিস্সা খতম করে দিন।’’ [যুখরুরফ:৭৭] ইবনে আববাস রা. বলেন : এক হাজার বৎসর পর তাদের কথার উত্তর খুব কঠোর ও ঘৃণিত ভাষায় দেয়া হবে। এরশাদ হচ্ছে :

قَالَ إِنَّكُمْ مَاكِثُونَ ﴿الزخرف :77﴾

‘‘সে বলবে : নিশ্চয় তোমরা চিরকাল থাকবে।’’ [যুখরুফ:৭৭] অতঃপর তারা আল্লাহর দরবারে স্বীয় আভিযোগ উত্থাপন করবে এবং বলবে :

رَبَّنَا غَلَبَتْ عَلَيْنَا شِقْوَتُنَا وَكُنَّا قَوْمًا ضَالِّينَ . رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْهَا فَإِنْ عُدْنَا فَإِنَّا ظَالِمُونَ ﴿المؤمنون :106-107﴾

‘‘হে আমাদের রব, আমাদের অনিষ্ট আমাদেরকে পরাভূত করেছে। আমরা ছিলাম বিভ্রান্ত জাতি। হে আমাদের রব, এ থেকে আমাদেরকে উদ্ধার কর, আমরা যদি পুনরায় তা করি, তাবে আমরা নিশ্চিত অত্যাচারী।’’ [মুমনিুন:১০৬-১০৭] দুনিয়ার দ্বিগুন বয়স পরিমাণ চুপ থাকার পর আল্লাহ তাআলা বললেন :

قَالَ اخْسَئُوا فِيهَا وَلَا تُكَلِّمُونِ ﴿المؤمنون :108﴾

‘‘আল্লাহ বলবেন, তোমরা ধিকৃত অবস্থায় এখানেই পড়ে থাক, এবং আমার সাথে কোনো কথা বল না’’ [যুখরুফ:১০৮] এ কথা শুনার পর নৈরাশ্য তাদের আচ্ছন্ন করে নিবে, তাদের হতাশা বেড়ে যাবে, রুদ্ধ হয়ে যাবে তাদের গলার আওয়াজ। শুধু বুকের ঢেকুর, চিৎকার, আর্তনাথ আর কান্নার শব্দ সর্বত্র ভেসে বেড়াবে। তবে সব চেয়ে বেশী দুঃখিত হবে জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা আল্লাহর দীদার থেকে বঞ্চিত হয়ে। এরশাদ হচ্ছে :

كَلَّا إِنَّهُمْ عَنْ رَبِّهِمْ يَوْمَئِذٍ لَمَحْجُوبُونَ . ثُمَّ إِنَّهُمْ لَصَالُو الْجَحِيمِ ﴿المطففين :15-16﴾

‘‘কখনো না, তারা সে দিন তাদের রব থেকে পর্দার আড়ালে থাকবে। অতঃপর তারা নিশ্চিত জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’’ [মুতাফফিফীন:১৫] যখন তারা চিন্তা করবে অল্প দিনের ভোগ-বিলাস আর প্রবৃত্তের জন্য এ দুঃখ-দুর্দশা, অপমান-গঞ্জনা; তখন তাদের আফসোসের অন্ত থাকবে না, বরং শাস্তির ওপর এটাও আরেকটি শাস্তি হিসেবে গণ্য হবে যে, আসমান-জমীন সমতুল্য জান্নাতের বিপরিতে সামান্য বিনিময়ে এ পরিস্থিতির সম্মুখিন হয়েছি। যে সামান্য দুনিয়া নিমিষেই শেষ হয়ে গেছে, যেন কখনো তার অস্তিত্ব ছিল না।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

يجاء بالموت كأنه كبش أملح فيوقف بين الجنة والنار , فيقال : يا أهل الجنة هل تعرفون هذا؟ فيشرئبون وينظرون , ويقولون : نعم هذا الموت , قال : فيؤمر به فيذبح . ثم يقال : يا أهل الجنة خلود فلا موت , ويا أهل النار خلود فلا موت . ثم قرأ الرسول صلى الله عليه وسلم . وَأَنْذِرْهُمْ يَوْمَ الْحَسْرَةِ إِذْ قُضِيَ الْأَمْرُ وَهُمْ فِي غَفْلَةٍ وَهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ ﴿مريم : 39﴾

‘‘কেয়ামতের দিন মৃত্যুকে কালো মেষ আকৃতিতে জান্নাত-জাহান্নামের মাঝখানে হাজির করা হবে। অতঃপর বলা হবে, হে জান্নাতবাসী, তোমরা একে চিন? তারা উঁকি দিয়ে তাকাবে এবং বলবে, হ্যাঁ, এ হলো মৃত্যু। এরপর তাকে জবাই করার নির্দেশ দেওয়া হবে। অতঃপর বলা হবে, হে জান্নাতবাসীগন, তোমরা চিরস্থায়ী, আর মুত্যু নেই। হে জাহান্নাম বাসীগণ, তোমরা চিরস্থায়ী, আর মৃত্যু নেই। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তেলাওয়াত করলেন : ‘‘তাদেরকে সতর্ক করে দাও পরিতাপের দিবস সম্বন্ধে, যখন সকল সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে; তারা অসাবধানতায় আছে, তারা ইমান আনছে না।’’ [বুখারী-মুসলিম] এ হলো জাহান্নাম ও জাহান্নামিদের অবস্থা।

আহ! সর্বনাশ সে ব্যক্তির, যে আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে শরীক করে : যাদুকরের নিকট যায়, যাদু বিশ্বাস করে ও মৃত ব্যক্তির নিকট র্প্রাথনা করে। এরশাদ হচ্ছে :

إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ ﴿المائدة :72﴾

‘‘নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরিক করে, আল্লাহ তার ওপর জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন, তার ঠিকানা নরকাগ্নি।’’ [মায়েদা:৭২] অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে:

وَلَا تَجْعَلْ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آَخَرَ فَتُلْقَى فِي جَهَنَّمَ مَلُومًا مَدْحُورًا ﴿الإسراء :39﴾

‘‘আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য স্থির কর না, তাহলে দোষী সাব্যস্ত ও বিতাড়িত হয়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।’’ [ইসরা:৩৯]

ধ্বংস সে ব্যক্তির জন্য, যে নামাজ পড়ে না। তারা কি জান্নাতিদের প্রশ্ন শ্রবন করেনি? যা জাহান্নামিদের লক্ষ্য করে করা হবে। এরশাদ হচ্ছে :

مَا سَلَكَكُمْ فِي سَقَرَ . قَالُوا لَمْ نَكُ مِنَ الْمُصَلِّينَ ﴿المعارج :42-43﴾

‘‘তোমাদেরকে জাহান্নামে কে হাজির করেছে? তারা বলবে আমরা নামাজ পড়তাম না।’’ [মুদ্দাসসির:৪২-৪৩] ফজরের আজান হয়, মুসলমানগণ মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে শ্রবন করে, ‘‘এশো নামাজের দিকে, এসো কল্যাণের দিকে’’ তার পরেও তারা ঘুম থেকে উঠে না, জামাতে শরিক হয় না, নামাজও পড়ে না! এভাবেই তারা আল্লাহ অবাধ্যতার মাধ্যমে দিনের শুরুটা আরম্ভ করে।

ধ্বংস তাদের জন্য যারা যাকাত আদায় করে না। এরশাদ হচ্ছে :

وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنْفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ أَلِيمٍ . يَوْمَ يُحْمَى عَلَيْهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوَى بِهَا جِبَاهُهُمْ وَجُنُوبُهُمْ وَظُهُورُهُمْ هَذَا مَا كَنَزْتُمْ لِأَنْفُسِكُمْ فَذُوقُوا مَا كُنْتُمْ تَكْنِزُونَ ﴿التوبة :34-35﴾

‘‘আর যারা স্বর্ণ ও রূপা জমা করে রাখে এবং তা ব্যয় করে না, তাদের কঠোর আযাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন। সে দিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দিয়ে তাদের ললাট-পার্শ্ব-পৃষ্ঠ দগ্ধকরা হবে। (সে দিন বলা হবে) এটাই, যা তোমরা জমা করে ছিলে নিজেদের জন্য। সুতরাং যা তোমরা জমা করতে এখন তা-ই আস্বাদান কর।’’ [তওবা:৩৫] ধ্বংস তাদের জন্য, যারা লোক দেখানোর নিয়তে জেহাদ করে, ইলম শিক্ষা দেয়, দাওয়াত ও তাবলিগের কাজ করে এবং সাদকার ন্যায় নেক আমলসমূহ সম্পাদন করে। কিয়ামতের দিন চুরান্ত ফয়সালা শেষে তাদেরকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। ধ্বংস তাদের জন্য, যারা অন্যায়ভাবে কোন মুসলমান হত্যা করে। এরশাদ হচ্ছে :

وَمَنْ يَقْتُلْ مُؤْمِنًا مُتَعَمِّدًا فَجَزَاؤُهُ جَهَنَّمُ خَالِدًا فِيهَا وَغَضِبَ اللَّهُ عَلَيْهِ وَلَعَنَهُ وَأَعَدَّ لَهُ عَذَابًا عَظِيمًا ﴿النساء :93﴾

‘‘যে ব্যক্তি সেচ্ছায় কোন মুসলমান হত্যা করে, তার শাস্তি জাহান্নাম, তাতেই সে চির কাল থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন, তাকে অভিসম্পাদ করেছেন এবং তার জন্য ভীষণ শাস্তি প্রস্ত্তত রেখেছেন।’’ [নিসা:৯৩] ধ্বংস তাদের জন্য, যারা সুদ খোর, ঘুষ খোর। কারণ, হারাম দ্বারা তৈরি গোস্তের স্থান জাহান্নাম। এরশাদ হচ্ছে :

الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرِّبَا لَا يَقُومُونَ إِلَّا كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوا إِنَّمَا الْبَيْعُ مِثْلُ الرِّبَا وَأَحَلَّ اللَّهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا فَمَنْ جَاءَهُ مَوْعِظَةٌ مِنْ رَبِّهِ فَانْتَهَى فَلَهُ مَا سَلَفَ وَأَمْرُهُ إِلَى اللَّهِ وَمَنْ عَادَ فَأُولَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ ﴿البقرة :275﴾

‘‘যারা সুদ খায়, তারা ঐ ব্যক্তির ন্যায় ব্যতীত দাঁড়াতে পারবে না, যাকে শয়তান আসর করে মোহাবিষ্ট করে দিয়েছে। এটা এ জন্য যে, তারা বলেছে বিকিকিনি তো সুদের মতই। অথচ আল্লাহ বিকিকিনি হালাল করেছেন আর সূদকে হারাম করেছেন। অতএব যার নিকট তার রবের পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং সে বিরত থেকেছে, তার বিষয়টি আল্লাহর ওপর ন্যাস্ত। আর যারা পুনরায় সূদের কারবার করবে, তারাই দোযখবাসী, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।’’ [বাকারা:২৭৫] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

ويل لمن خان وغل مالا عاما . ( متفق عليه )

‘‘ধ্বংস তার জন্য যে খেয়ানত করেছে এবং জনসাধারনের সম্পদ আত্মসাৎ করেছে।’’ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

ويل لمن اقتطع حق امرئ مسلم بيمينه ولو قضيبا من أراك فقد أوجل الله له النار . ( مسلم )

‘‘ধ্বংস তার জন্য, যে কোন মুসলামনের হক মিথ্যা কসম দ্বারা নিয়ে নিল। যদিও তা আরাক গাছের ছোট ডাল তুল্য হয়, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জাহান্নাম প্রজ্জলিত করে রেখেছেন। ধ্বংস তার জন্য, যে ইয়াতিমের ওপর জুলুম করে, তাকে সুষ্ঠু শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করে এবং তার সম্পদ ভক্ষণ করে। এরশাদ হচ্ছে :

إِنَّ الَّذِينَ يَأْكُلُونَ أَمْوَالَ الْيَتَامَى ظُلْمًا إِنَّمَا يَأْكُلُونَ فِي بُطُونِهِمْ نَارًا وَسَيَصْلَوْنَ سَعِيرًا ﴿النساء :10﴾

‘‘যারা ইয়াতীমের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে, তারা নিজদের পেটে আগুন ভর্তি করে, এবং তারা সত্তরই অগ্নিতে প্রবেশ করবে।’’ [নিসা:১০] ধ্বংস তাদের জন্য, যারা দাম্ভিক, অহংকারী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

ألا أخبركم بأهل النار كل عتل جواظ مستكبر . ( متفق عليه )

‘‘আমি কি তোমাদের জাহান্নামীদের ব্যাপারে বলে দিব!? : প্রত্যেক বদমেজাজ, কৃপন, অহংকারী।’’ [বুখারী-মুসলিম] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

ما أسفل من الكعبين من الإزار ففي النار . ( البخاري )

‘‘পরিধেয় কাপড় যতটুকু টাখনুর নিচে যাবে, টাখনুর ততটুকু স্থান জাহান্নামে থাকবে।’’ [বুখারী]

ধ্বংস তার জন্য, যে মাতা-পিতার অবাধ্য, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

لايدخل الجنة قاطع رحم . ( متفق عليه )

‘‘আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী জান্নাতে যাবে না।’’ [বুখারী-মুসলিম] ধ্বংস তার জন্য, যে পরনিন্দা, দোষ চর্চা, মিথ্যাচার ও মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

وهل يكب الناس في النار على وجوههم إلا حصائد ألسنتهم . ( متفق عليه )

‘‘মুখের পদস্খলন আর বিচ্যুতি-ই, মানুষকে উপুর হয়ে জাহান্নামে যেতে বাধ্য করবে।’’ [তিরমিজী] ধ্বংস তার জন্য, যে মাদকদ্রব্য সেবন করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

إن على الله عهدا لمن شرب المسكرات ليسقينه من طينة الخبال . قالوا يا رسول الله : وما طينة الخبال؟ قال قرق أهل النار , أو عصارة أهل النار . ( مسلم )

‘‘আল্লাহর প্রতিজ্ঞা, যে নেশাদ্রব্য সেবন করবে, তাকে তিনি ‘তীনাতে খাবাল’ পান করাবেন। সাহাবীরা জিজ্ঞাসা করলো ‘তীনাতে খাবাল’ কি? তিনি বললেন : জাহান্নামীদের নির্যাস-ঘাম।’’ [মুসলিম]

ধ্বংস তার জন্য, যে নিষিদ্ধ বস্ত্ত থেকে দৃষ্টি সংযত করে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

فإن العين تزني وزنا ها النظر . ( متفق عليه )

‘‘চোখও যেনা করে, তার যেনা হল দৃষ্টি।’’ [বুখারী] ধ্বংস সে নারীদের জন্য, যারা বস্ত্র পরিধান করেও বিবস্ত্র থাকে, অপরের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং অপরকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করে।

لايدخلن الجنة ولايجدن ريحها . ( مسلم )

‘‘তারা জাহান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং তার ঘ্রাণও পাবে না।’’ [মুসলিম]

হে বনি আদম! তোমার সামনে জাহান্নামের বর্ণনা তুলে ধরা হল, যা তুমি প্রতি বৎসর গ্রীষ্ম-শীতের নিঃশ্বাসের মাধ্যমে উপলব্দিও কর। আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর, আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর। আল্লাহর শপথ! এ দুনিয়ার পর জান্নাত-জাহান্নাম ভিন্ন অন্য কোন স্থান নেই। এরশাদ হচ্ছে :

فَفِرُّوا إِلَى اللَّهِ إِنِّي لَكُمْ مِنْهُ نَذِيرٌ مُبِينٌ ﴿الذاريات :50﴾

‘‘অতএব তোমরা আল্লাহর দিকে দৌঁড়ে যাও। আমি তার তরফ থেকে তোমাদের জন্য স্পষ্ট সতর্ককারী।’’ [জারিয়াত:৫০] অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে :

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا قُوا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ عَلَيْهَا مَلَائِكَةٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَا يَعْصُونَ اللَّهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ ﴿التحريم :6﴾

‘‘মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং স্বীয় পরিবার-পরিজনকে সে অগ্নি থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ আর পাথর। যাতে নিয়োজিত আছে পাষান হৃদয়, কঠোর স্বভাবের ফেরেশতাগণ, তারা আল্লাহর নির্দেশের ব্যতিক্রম করে না, এবং তা-ই সম্পাদন করে, যা তাদের আদেশ করা হয়।’’ [তাহরীম:৬]

হাসান বসরী রহ. বলেন :

لايدخل الجنة إلا من يرجوها ولا يسلم من النار إلا من يخافها .

‘‘যে ব্যক্তি জান্নাতের আশা করে না, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না এবং যে ব্যক্তি জাহান্নাম ভয় করে না, সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে না।’’ অন্তরের ভেতর সত্যিকার ভয় থাকলে, অঙ্গ-প্রতঙ্গ থেকে খালেস আমল বেড়িয়ে আসে। যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

من خاف أدلج ومن أدلج بلغ المنزل . ( الترمذي )

‘‘যার ভেতর ভয় ছিল সে প্রত্যুশে রওনা করেছে। আর যে প্রত্যুশে রওনা করেছে, সে অভিষ্ট লক্ষ্যেও পৌঁছেছে।’’ [তিরমিজী] মুনাফিকদের স্বভাব হচ্ছে জাহান্নাম পশ্চাতে থাকলেও বিশ্বাস না করা, যতক্ষণ-না তার গহবরে তারা পতিত হয়। মূলত জাহান্নামের বর্ণনা নেককার লোকদের ঘুম হারাম করে দিয়েছে। বিস্বাদ করে দিয়েছে তাদের খাবার-দাবার। রাসূল বলেছেন :

والله لو تعلمون ما أعلم لضحكتم قليلا , ولبكيتم كثيرا , وما تلذذتم بالنساء على الفرش , ولخرجتم إلى الصعدات تجأرون إلى الله تعالى . ( أحمد والترمذي وابن ما جه )

‘‘আল্লাহর শপথ! আমি যা জানি যদি তোমরা তা জানতে, কম হাসতে বেশী কদঁতে। বিছানায় স্ত্রীদের সম্ভোগ করার বোধ হারিয়ে ফেলতে। আল্লাহর সন্ধানে পাঁহাড়ে এবং উঁচুস্থানসমূহে বের হয়ে যেতে।’’ [আহমাদ, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ]

সুবহানাল্লাহ! আখেরাত বিষয়ে মানুষ কত উদাসীন! তার আলোচনা থেকে মানুষ কত গাফেল! এরশাদ হচ্ছে :

اقْتَرَبَ لِلنَّاسِ حِسَابُهُمْ وَهُمْ فِي غَفْلَةٍ مُعْرِضُونَ . مَا يَأْتِيهِمْ مِنْ ذِكْرٍ مِنْ رَبِّهِمْ مُحْدَثٍ إِلَّا اسْتَمَعُوهُ وَهُمْ يَلْعَبُونَ . لَاهِيَةً قُلُوبُهُمْ ﴿الحج :1-3﴾

‘‘মানুষের হিসাব-নিকাস অতি নিকটবর্তী, অথচ তারা বে-খবর, পশ্চাদমুখি। তাদের নিকট রবের পক্ষ থেকে যখন কোন উপদেশ আসে, তারা তা খেলার ছলে শ্রবন করে। তাদের অন্তরসমূহ তামাশায় মত্ত।’’ [আম্বিয়া:১-২] হে বনি আদম! হিসাব অতি নিকটে, তবে কেন এ উদাসীনতা!? কেন হৃদয় কম্পিত হয় না!? অন্তরের মরিচিকা সবচেয়ে বিপদজনক, তার মহর মারাত্বক কঠিন। এখনো কি কর্ণপাত করার সময় হয়নি!? চোখে দেখার সময় হয়নি!? অন্তরসমূহের ভীত হওয়ার সময় হয়নি? অঙ্গ-প্রতঙ্গের সংযত হওয়ার সময় হয়নি!?

أَلَمْ يَأْنِ لِلَّذِينَ آَمَنُوا أَنْ تَخْشَعَ قُلُوبُهُمْ لِذِكْرِ اللَّهِ وَمَا نَزَلَ مِنَ الْحَقِّ ﴿الحديد :16﴾

‘‘যারা ইমান এনেছে, তাদের অন্তর আল্লাহর স্মরণ এবং যে সত্য অবতীর্ণ হয়েছে, তার কারণে বিগলিত হওয়ার সময় এখনো আসেনি? [হাদীদ:১৬] ভুলে গেলে বিপদ ঘটবে, আমাদের প্রত্যেককে জাহান্নামের ওপর দিয়ে যেতে হবে। তবে সে-ই ভাগ্যবান যে এর থেকে মুক্তি পাবে। এরশাদ হচ্ছে :

وَإِنْ مِنْكُمْ إِلَّا وَارِدُهَا كَانَ عَلَى رَبِّكَ حَتْمًا مَقْضِيًّا . ثُمَّ نُنَجِّي الَّذِينَ اتَّقَوْا وَنَذَرُ الظَّالِمِينَ فِيهَا جِثِيًّا ﴿مريم :71-72﴾

‘‘তেমাদের প্রত্যেকে-ই তথায় পৌছঁবে। এটা তোমার রবের চুরান্তফয়সালা। অতঃপর আমি মুত্তাকিদের নাজাত দেব এবং অত্যাচারীদের নতজানু হালতে সেখানে ছেড়ে দিব।’’ [মারইয়াম:৭১-৭২]

হে বনি আদম! আর কতকাল গাফেল থাকবে!? আর কতদিন দুনিয়া সঞ্চয় করতে থাকবে!? আর কতদিন তার জন্য গর্ব করবে!? আল্লাহ তাআলা বলেন :

أَلْهَاكُمُ التَّكَاثُرُ . حَتَّى زُرْتُمُ الْمَقَابِرَ . كَلَّا سَوْفَ تَعْلَمُونَ . ثُمَّ كَلَّا سَوْفَ تَعْلَمُونَ . كَلَّا لَوْ تَعْلَمُونَ عِلْمَ الْيَقِينِ . لَتَرَوُنَّ الْجَحِيمَ . ثُمَّ لَتَرَوُنَّهَا عَيْنَ الْيَقِينِ . ثُمَّ لَتُسْأَلُنَّ يَوْمَئِذٍ عَنِ النَّعِيمِ ﴿التكاثر :1-8﴾

‘‘পরস্পর ধন-সম্পদের অহংকার তোমাদেরকে মোহাচ্ছন্ন করে রাখে। যতক্ষণ না তোমরা কবরসমূহে উপস্থিত হচ্ছ। এটা কখনো ঠিক নয়, শীঘ্রই তোমরা এটা জানতে পারবে। অতঃপর এটা কখনো ঠিক নয়, শীঘ্রই তোমরা জানতে পারবে। অতঃপর এটা কখনো ঠিন নয়, শীঘ্রই তোমরা এটা জানতে পারবে। সাবধান! যদি তোমরা নিশ্চিত জ্ঞান দ্বারা অবহিত হতে (তবে এমন কাজ করতে না)। তোমরা অবশ্যই জাহান্নাম দেখবে। অতঃপর তোমরা তা দিব্য-প্রতয়ে দেখবে। এর পর অবশ্যই সে দিন তোমরা নেয়ামত ম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।’’ [তাকাসুর:১-৮]

সুভসংবাদ তাদের জন্য, যারা জাহান্নামকে ভয় করে এবং যে কাজ করলে জাহান্নামে যেতে হবে, তা থেকে বিরত থাকে। এরশাদ হচ্ছে :

وَلِمَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ جَنَّتَانِ ﴿الرحمن :46﴾

‘‘যে ব্যক্তি তার রবের সামনে উপস্থিত হওয়াকে ভয় করে, তার জন্য রয়েছে দুটি জান্নাত।’’ [রাহমান:৪৬] আল্লাহ তাআলা বলেন :

أُولَئِكَ الَّذِينَ يَدْعُونَ يَبْتَغُونَ إِلَى رَبِّهِمُ الْوَسِيلَةَ أَيُّهُمْ أَقْرَبُ وَيَرْجُونَ رَحْمَتَهُ وَيَخَافُونَ عَذَابَهُ إِنَّ عَذَابَ رَبِّكَ كَانَ مَحْذُورًا ﴿الإسراء :57﴾

‘‘যাদেরকে তারা আহবান করে, তারা নিজেরাই তো তাদের রবের নৈকট্য লাভের জন্য উপায় সন্ধান করে যে, তাদের মধ্যে কে কত নিকট হতে পারে। তারা তার রহমত আশা করে এবং তার শাস্তিকে ভয় করে। নিশ্চয় তোমার রবের শাস্তি ভয়াবহ।’’ [ইসরা:৫৭] হে আল্লাহ! আমাদের সকলকে মুত্তাকি বানিয়ে দাও এবং তোমার রহমতের ছায়াতলে আশ্রয় দান কর। হে আল্লাহ! আমাদের জাহান্নামের অতল গহবরে ছেড়ে দিও না, আমাদের ঘার ধরে পাঁকড়াও করো না। হে আল্লাহ! আমাদের তওবা কবুল করুন এবং আমাদের সুন্দর সমাপ্তি প্রদান করুন। এরশাদ হচ্ছে :

رَبَّنَا اصْرِفْ عَنَّا عَذَابَ جَهَنَّمَ إِنَّ عَذَابَهَا كَانَ غَرَامًا . إِنَّهَا سَاءَتْ مُسْتَقَرًّا وَمُقَامًا ﴿الفرقان :65-66﴾

‘‘হে আমাদের রব! আমাদের থেকে জাহান্নামের শাস্তি হটাও। নিশ্চয় এর শাস্তি তো আঁকড়ে থাকার জিনিস। এটা খুব খারাপ স্থান ও থাকার জায়গা।’’ [ফূরকান:৬৫-৬৬]

رَبَّنَا إِنَّكَ مَنْ تُدْخِلِ النَّارَ فَقَدْ أَخْزَيْتَهُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنْصَارٍ ﴿192﴾

‘‘হে আমাদের রব! তুমি যাকে দোযখে নিক্ষেপ করবে, তার নিশ্চিত অপমান হবে। জালেমাদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই।’’ [আলে ইমরান:১৯২]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন