HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
জান্নাতের প্রতি আগ্রহী ও জাহান্নাম থেকে পলায়নকারীর জন্য বিশেষ উপদেশ
লেখকঃ রাশেদ বিন আব্দুর রহমান আয-যাহরানী
৩
জান্নাত নেককারদের ঘরএরশাদ হচ্ছে :
فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَا أُخْفِيَ لَهُمْ مِنْ قُرَّةِ أَعْيُنٍ جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ ﴿17﴾
‘‘কেউ জানে না তাদের জন্য কি কি নয়নাভিরাম গোপন রাখা হয়েছে। তাদের কৃতকর্মের প্রতিদান স্বরূপ।’’ [সাজদাহ:১৭]
হে মুসলমানগণ! এসো শান্তির রাজ্য-জান্নাতের আলোচনার মাধ্যমে আমাদের অন্তর উর্বর ও আন্দোলিত করি। হতে পারে তার আলোচনা ও স্মৃতিচারণ আমাদের অন্তরে জান্নাতের আগ্রহ সৃষ্টি করবে। যার ফলে আমরা সে সকল ভাগ্যবানদের অর্ন্তভূক্ত হতে পারব, যারা আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হলে ঘোষণা আসবে :
ادْخُلُوهَا بِسَلَامٍ آَمِنِينَ ﴿الحجر :46﴾
‘‘এতে শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে প্রবেশ কর।’’ [হিজর:৪৬]
জান্নাত একমাত্র অভিষ্ঠ লক্ষ্য, কাঙ্খিত বস্ত্ত। এর জন্য-ই আমাদের পূর্ব পুরুষগণ সব কিছু ত্যাগ করতে প্রস্ত্তত ছিলেন। আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্যের সর্ব শেষ নমুনা পেশ করতেন। তার দীনের জন্য উৎসর্গীত হতেন, তার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে শাহাদাত বরণ করতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ জান্নাতের মাধ্যমেই বদরের ময়দানে মুসলিম সৈন্যদের ভেতর প্রেরণার সৃষ্টি করে ছিলেন, তিরস্কার করে ছিলেন তাদের মন্থরতাকে। লক্ষ্য করুন তার উদাত্ব আহবান :
قوموا إلى جنة عرضها السموات والأرض . ( مسلم )
‘‘সে জান্নাতের জন্য প্রস্ত্তত হও, যার ব্যপ্তি আসামান-জমীন সমতুল্য।’’ [মুসলিম]
তিনি কোন পদমর্যাদা কিংবা সম্পদের ওয়াদা করেননি, শুধু জান্নাতের ওয়াদা করেছেন। সে ওয়াদাই তাদের জন্য যতেষ্ট ছিল। তাদের বিশ্বাসের দৃঢ়তার ফলে জান্নাত চাক্ষুষ দেখার ন্যায় সামানে বিদ্যমান ছিল, তাদের সামনে দুনিয়া বিদ্যমান থাকা সত্বেও অর্থহীন ছিল। এমনও হয়েছে, কেউ কেউ হাতে রাখা খেজুর পর্যন্ত ফেলে দিয়ে বলে ছিল, এ গুলো খাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করাও অনাকাঙ্খিত দীর্ঘ হায়াত নিয়ে বেচে থাকা বৈ কি। আবার কেউ কেউ বর্শ্ব বিদ্ধ হয়েও আনন্দের আতিশয্যে বলেছিল, ‘‘কাবার রবের কসম, আমি সফল হয়েছি।’’ আর জাফর ইবনে আবিতালিবের বিষয়টি আরো আশ্চর্য। জান্নাত তার জীবন সঙ্গীর ন্যায় ছিল। লক্ষ্য করুন তার কবিতা, যা তিনি আবৃতি করেছিলেন মুতার যুদ্ধে, জায়েদ বিন হারেছের শাহাদাতের পর তিন হাজার মুসলিম সৈন্যের নেতৃত্ব দানকালে, যারা দুই লক্ষ খৃষ্টান সৈন্যের মোকাবেলায় অবতীর্ন হয়েছিল।
يا حبذا الجنة واقترابها طيبة وبارد شرابها
والروم روم قد دنا عذابها كافرة بعيدة أنسابها
على إن لاقيتها ضرابها
স্বাগতম হে জান্নাত! যার আগমন- সুভলক্ষণ, যার পানীয় শীতল।
রোম তো রোম-ই যার শস্তি ঘনিয়েছে। কাফের, ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন তাদের বংশ।
যদি তাদের সাক্ষাত পাই।
এ কবিতা আবৃতি করেই তিনি শহিদ হন। আর দু’ডানায় ভর করে জান্নাতে উড়ে বেড়ান। তার পর আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা ইসলামের ঝান্ডা তুলে নেন। তিনিও কম যাননি। মৃত্যু অবধারিত দেখেও তিনি আবৃতি করেছিলেন।
أقسمت يا نفس لتنزلنه طائعة أو لتكرهنه
إن أجلب الناس وشدوا الرنة مالي أراك تكرهين الجنة
قد طال ما قد كنت مطمئنة هل أنت إلا نطفة في شنة
শপথ হে নফস, অবশ্যই সেথায় অবতরণ করবে-
ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায়।
মানুষ জড়ো হয়েছে, ক্রন্দনের প্রস্ত্ততি নিয়েছে,
আমি কেন লক্ষ্য করছি, তুমি জান্নাত অপছন্দ করছ।
নিরাপদ কাটিয়েছ, তুমি দীর্ঘ সময়,
অথচ তুমি সংকীর্ন জায়গার বীর্য মাত্র।
এ কবিতা আবৃতি করে তিনিও পূর্বের ন্যায় পরপারে পারি চলে যান। আল্লাহ তাদের সকলের উপর সস্ত্তষ্ট হোন।
জান্নাতুল ফেরদাউসের মর্যাদা :
ফেরদাউস সে জান্নাতের নাম, যেখানে প্রত্যেক মানুষ তার কাঙ্খিত বস্ত্ত লাভ করে ধন্য হবে। যার ভেতর প্রাসাদের উপর প্রাসাদ নির্মিত। যার কক্ষসমূহ নূরে শোভিত। তিনি পবিত্র যে এর এর পরিকল্পনা করেছেন, তিনি করুনাময় যে তা স্বহস্তে তৈরি করেছে। এটা রহমতের স্থান, সফলতার স্থান, এর রাজত্ব মহান, এর নেয়ামত স্থায়ী। এরশাদ হচ্ছে :
فَمَنْ زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ ﴿آل عمران :185﴾
‘‘যাকে দোযখ থেকে দুরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সে-ই সফল।’’ [আলে ইমরান:১৮৫] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
لموضع سوط أحدكم من الجنة خير من الدنيا وما فيها . ( البخاري )
‘‘তোমাদের কারো চাবুক পরিমাণ জান্নাতের জায়গা দুনিয়া এবং তার ভেতর যা কিছু আছে তার চেয়ে উত্তম।’’ [বুখারী] জান্নাতের নেয়ামতের মোকাবেলায় দুনিয়ার নেয়ামাতের কোন তুলনা হয় না। তবে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে তুলনা করেছেন, সেভাবে তুলনা করতে দোষ নেই। এরশাদ হচ্ছে :
مثل ما يجعل أحدكم إصبعه في اليم فيلينظر بم يرجع . ( مسلم )
‘‘যেমন, তোমাদের কারো আঙ্গুল সমুদ্রে রাখার মতই, অতঃপর দেখ কি পরিমাণ পানি আঙ্গুলে উঠে এসেছে।’’ [মুসলিম] এবার চিন্তা কারুন, যে পরিমাণ পানি সমুদ্র থেকে আঙ্গুলের সাথে ওপরে উঠে এসেছে, সে পরিমাণ হচ্ছে ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার নেয়ামত। আর যে পরিমাণ পানি মহাসমুদ্রে অবশিষ্ট আছে, তা হচ্ছে জান্নাতের নেয়ামত।
জান্নাতের আলোচনা প্রকৃত পক্ষে আমাদের রেখে আসার বাড়ীর আলোচনা। এখান থেকেই ইবলিস আদম-হাওয়াকে বের করে দিয়েছে। হয়তো তার আলোচনা পুনারায় জান্নাতে ফিরে যাওয়ার পথ সুগম করবে।
فحي على جنت عدن فإنها منازلك الأولى وفيها المخيم
ولكننا سبي العدو فهل ترى نعود إلى أوطاننا ونسلم
অতএব, আসো তুমি জনবসতির উদ্যানে, কারণ ইহা
তোমার প্রথম গৃহ, এবং এতেই রয়েছে তাবু।
কিন্তু আমরা শত্রুর বন্ধী, আছে কি কোন পথ?
আমাদের বাড়িতে ফিরে যাব, আর নিরাপদ হয়ে যাব।
জান্নাতের বর্ণনা ব্যাপক ভাষাশৈলী ও ভাবগাম্ভির্যতাসহ কুরআন-সুন্নায় বিধৃত হয়েছে। যার রহস্য উদঘাটন করা, যার প্রকৃত অবস্থা উপলব্দি করা প্রায় অসম্ভব। হাদীসে কুদসীতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : আল্লাহ তাআলা বলেছেন :
قال الله : تعالى : أعددت لعبادي الصالحين ما لا عين رأت و لا أذن سمعت و لا خطر على قلب بشر , واقرؤوا إن شئتم فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَا أُخْفِيَ لَهُمْ مِنْ قُرَّةِ أَعْيُنٍ جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ ﴿السجدة - 17﴾ ( متفق عليه )
‘‘আমি আমার নেককার বান্দাদের জন্য এমন জিনিস তৈরী করে রেখেছি, যা কোন চোখ দর্শন করেনি, কোন কর্ণ শ্রবন করেনি, এবং মানুষের অন্তরে যার কল্পনা পর্যন্ত হয়নি। দলিল স্বরূপ তোমরা তেলাওয়াত করতে পার। ‘‘কেউ জানে না, তাদের জন্য নয়নাভিরাম কি কি উহ্য রাখা হয়েছে, তাদেরই কর্মের প্রতিদান স্বরূপ।’’ [সাজদাহ:১৭] [বুখারী-মুসলিম] জান্নাতের ময়দান খুব প্রসস্ত, তার প্রাসাদ খুব বড় ও বহুতল বিশিষ্ট। এর সৃষ্টিকারী স্বয়ং আল্লাহ তাআলা বলছেন :
وَسَارِعُوا إِلَى مَغْفِرَةٍ مِنْ رَبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَوَاتُ وَالْأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ ﴿آل عمران :133﴾
‘‘তোমরা তোমাদের রবের ক্ষমা এবং জান্নাতের পানে ছুটে যাও, যার সীমানা হচ্ছে আসমান-যমীন, যা তৈরী করা হয়েছে পরহেযগারদের জন্য।’’ [আলে ইমরান:১৩৩] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
إن في الجنة لشجرة يسير الراكب الجلود المضمر السريع مائة سنة ما يقطعها . ( متفق عليه )
‘‘জান্নাতে একটি গাছ আছে, এক জন আশ্বারোহী সবল-দ্রুতগামী ঘোড়ায় চড়ে একশত বৎসর ভ্রমন করেও তা অতিক্রম করতে পারবে না।’’ [বুখারী-মুসলিম] জান্নাতের বড় বড় আটটি দরজা রয়েছে, যার দুই খুঁটির মাঝখানে দূরত্বের পরিমাণ চল্লিশ বৎসর ভ্রমনের পথ।’’ [আহমাদ]
জান্নাতের ভেতর প্রাসাদের উপর প্রাসাদ নির্মিত। তার প্রসাদ সমূহ বিভিন্ন ধরনের মানিক্য খচিত, একসাথে ভেতর-বাহির দৃশ্যমান। [সহীহ আল জামে] তার দেয়াল স্বর্ণ ও রূপার দ্বারা নির্মিত। তার প্লাষ্টার উন্নত মৃগনাভী, তার পাথর-কুচি প্রবাল ও মোতি এবং তার মাটি জাফরান।
তাতে রয়েছে মোতির অনেক তাবু। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
إن للمؤمن في الجنة لخيمة من لؤلؤة واحدة مجوفة طولها في السماء ستون ميلا , للمؤمن فيها أهلون , يطوف عليهم المؤمن فلا يرى بعضهم بعضا . ( متفق عليه )
‘‘মোমেনের জন্য জান্নাতের ভেতর পাথরের তৈরি বড় একটি তাবু রয়েছে, যার দৈর্ঘ আসমানের ভেতর ষাট মাইল। মোমেনের জন্য সেখানে পরিবার পরিজন থাকবে। মুমিন বান্দা তাদের চারপাশে ঘোরাফেরা করবে, তবে কেউ কাউকে দেখবে না।’’ [বুখারী-মুসলিম] এরশাদ হচ্ছে :
وَإِذَا رَأَيْتَ ثَمَّ رَأَيْتَ نَعِيمًا وَمُلْكًا كَبِيرًا ﴿الدهر :20﴾
‘‘যখন তুমি তা দেখবে, আবার যখন দেখবে, সেখানে নেয়ামতরাজী ও বিশাল রাজ্য লক্ষ্য করবে।’’ [দাহর:২০] এরশাদ হচ্ছে :
فِيهَا أَنْهَارٌ مِنْ مَاءٍ غَيْرِ آَسِنٍ وَأَنْهَارٌ مِنْ لَبَنٍ لَمْ يَتَغَيَّرْ طَعْمُهُ وَأَنْهَارٌ مِنْ خَمْرٍ لَذَّةٍ لِلشَّارِبِينَ وَأَنْهَارٌ مِنْ عَسَلٍ مُصَفًّى وَلَهُمْ فِيهَا مِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِ وَمَغْفِرَةٌ مِنْ رَبِّهِمْ ﴿محمد :15﴾
‘‘তাতে রয়েছে দুর্ঘন্ধহীন পানির নহর; সুস্বাদু দুধের নহর; সুপেয় শরাবের নহর এবং পরিশোধিত মধুর নহর। সেখানে তাদের জন্য আরো রয়েছে, রকমারী ফল-মূল এবং তাদের রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা।’’ [মোহাম্মাদ:১৫] তার কুটির সমূহ বন্ধু-বান্ধবদের মিলন মেলা। তার বাগান পর্যটকদের প্রমোদ স্থান। তার ছাদ আল্লাহর আরশ।
তার প্রসাদসমূহ সুদৃঢ়, তার প্রদীপসমূহ আলোকোজ্জল, তার ভেতর রয়েছে চিকন-মোটা সব ধরনের রেশন আর আছে প্রচুর ফল-মূল, যা কোন দিন শেষ হবে না, যা ক্ষেতে কোন দিন নিষেধও করাও হবে না। এরশাদ হচ্ছে :
يُحَلَّوْنَ فِيهَا مِنْ أَسَاوِرَ مِنْ ذَهَبٍ وَلُؤْلُؤًا وَلِبَاسُهُمْ فِيهَا حَرِيرٌ ﴿الدهر :23﴾
‘‘সেখানে তাদেরকে স্বর্ণ ও মুতি দ্বারা তৈরি চুরি দিয়ে সজ্জিত করা হবে এবং সেখানে তাদের পোষাক হবে রেশমের।’’ [হজ:২৩]
সেখানে তারা নিজ নিজ আসনে হেলান দিয়ে বসবে, একে অপরের পালং মুখোমুখি থাকবে। পরস্পর আলাপ-আলোচনায় নিরত থাকবে। এরশাদ হচেছ :
وَأَقْبَلَ بَعْضُهُمْ عَلَى بَعْضٍ يَتَسَاءَلُونَ . قَالُوا إِنَّا كُنَّا قَبْلُ فِي أَهْلِنَا مُشْفِقِينَ . فَمَنَّ اللَّهُ عَلَيْنَا وَوَقَانَا عَذَابَ السَّمُومِ . إِنَّا كُنَّا مِنْ قَبْلُ نَدْعُوهُ إِنَّهُ هُوَ الْبَرُّ الرَّحِيمُ ﴿الطور :25-28﴾
‘‘তারা পরস্পর জিজ্ঞাসাবাদ ও খবরাখবর নেয়ার জন্য একে অপরের মুখোমুখি হবে। তারা বলবে, ইতোপূর্বে আমরা নিজ পরিবারের মাঝে খুব শংকিত ছিলাম। আল্লাহ আমাদের দয়া করেছেন, তিনি আমাদেরকে বিষাক্ত আযাব থেকে নাজাত প্রদান করেছেন। এর আগেও আমরা তাকে আহবান করতাম। তিনি হিতাকাঙ্খি-দয়ালু।’’ [তুর:২৫-২৮]
তার ভেতর আরো আছে সুদীর্ঘ ছায়া, অনেক নেয়ামত, রুচিশীল ফল-ফলাদি, সুস্বাদু পাখির গোস্ত, তার পানাহার সব সময়ের জন্য উম্মুক্ত, কখনো শেষ হবে না। তার ছায়া কখনো নিঃশেষ হবে না। দীর্ঘ সময় তাতে আমোদ-প্রমোদ আয়োজন চলবে, তাতে ঘুম আসবে না, ঘুমের প্রয়োজনও হবে না। তার ফল মাখনের চেয়ে নরম, মধুর চেয়ে বেশী মিষ্টি। তার ফল হাতের নাগালে থাকবে, তার পানীয় সুস্বাদ্য, বৃক্ষরাজি অবনত, আনুগত্যশীল। এরশাদ হচ্ছে :
وَذُلِّلَتْ قُطُوفُهَا تَذْلِيلًا ﴿الدهر :14﴾
‘‘তার ফলসমূহ খুব নাগালের করে দেয়া হয়েছে।’’ [দাহর:১৪] আশা করার সাথে সাথেই ফলসমূহ সম্মুখে ঝুঁকে যাবে। এরশাদ হচ্ছে :
مُتَّكِئِينَ عَلَى فُرُشٍ بَطَائِنُهَا مِنْ إِسْتَبْرَقٍ وَجَنَى الْجَنَّتَيْنِ دَانٍ ﴿الرحمن :54﴾
‘‘রেশমের আস্তর বিশিষ্ট বিছানায় হেলান অবস্থায় থাকবে। উভয় উদ্যানের ফল অবনত থাকবে।’’ [রাহমান:৪৫]
يعطى أحدهم قوة مائة رجل في الأكل والشرب والجماع . ( الترمذي )
‘‘পানাহার ও সহবাসের ক্ষেত্রে প্রত্যেককে একশত ব্যক্তির শক্তি প্রদান করা হবে।’’ [তিরমিজী] পানাহার ক্ষুদা নিবারণ কিংবা তৃষ্ণা মিটানোর জন্য নয়, বরং স্বাদ আস্বাদন আর মস্তি করার জন্য। এরশাদ হচ্ছে :
إِنَّ لَكَ أَلَّا تَجُوعَ فِيهَا وَلَا تَعْرَى . وَأَنَّكَ لَا تَظْمَأُ فِيهَا وَلَا تَضْحَى ﴿طه :118-119﴾
‘‘তোমার জন্য; তুমি এতে ক্ষুদার্ধ হবে না এবং বস্ত্রহীনও হবে না। এবং তুমি এতে পিপাসার্থ হবে না, রৌদ্র কষ্টও পাবে না।’’ [ত্বহা:১১৮-১১৯] মুদ্দা কথা জান্নাতে কষ্টদায়ক কোন বস্ত্ত বিদ্যমান থাকবে না।
لايبصقون ولا يتمخطون ولا يتغوطون . ( متفق عيه )
‘‘তারা থুতু ফালাবে না, নাকের শ্লেশা ফালাবে না এবং পায়খানাও করবে না।’’ [বুখারী-মুসলিম]
تكون حاجة أحدهم جشاء كرشح المسك . ( مسلم )
‘‘তাদের কারো প্রয়োজন হবে শুধু ঢেকুর তোলার, মৃগ নাভী ছিটানোর ন্যায়।’’ [মুসলিম]
আল্লাহ মুত্তাকিদের আহবান করবেন, সম্মানিত মেহমানদের ন্যায় তারা সামনে অগ্রসর হবে এবং আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হবে। এরশাদ হচ্ছে :
يَا عِبَادِ لَا خَوْفٌ عَلَيْكُمُ الْيَوْمَ وَلَا أَنْتُمْ تَحْزَنُونَ ﴿الزخرف :68﴾
‘‘হে আমার বান্দাগণ, আজ তোমাদের কোন ভয় নাই এবং তোমরা চিন্তিতও হবে না।’’ [যুখরুফ:৬৮]
তারা দুনিয়ার ন্যায় সেখানেও তাদের নিজ নিজ বাড়ি-ঘর চিনবে। এরশাদ হচ্ছে :
وَيُدْخِلُهُمُ الْجَنَّةَ عَرَّفَهَا لَهُمْ ﴿محمد :6﴾
‘‘অতঃপর তিনি তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার পরিচয় তিনি তাদেরকে ইতোপূর্বে দিয়েছেন।’’ [মুহাম্মদ:৬] সম্মানিত ফেরেশতাগণ তাদেরকে নিরাপদ আগমন ও উত্তম গৃহের সুসংবাদ দিয়ে অর্ভ্যথনা জানাবে। এরশাদ হচ্ছে :
وَسِيقَ الَّذِينَ اتَّقَوْا رَبَّهُمْ إِلَى الْجَنَّةِ زُمَرًا حَتَّى إِذَا جَاءُوهَا وَفُتِحَتْ أَبْوَابُهَا وَقَالَ لَهُمْ خَزَنَتُهَا سَلَامٌ عَلَيْكُمْ طِبْتُمْ فَادْخُلُوهَا خَالِدِينَ ﴿الزمر :73﴾
‘‘যারা তাদের রবকে ভয় করেছে, তাদেরকে দলে দলে জান্নাতে নিয়ে যাওয়া হবে। অতঃপর যখন তারা তাতে আগমন করবে ও দরজাসমূহ খুলে দেয়া হবে, তখন তাদেরকে জান্নাতের রক্ষীরা বলবে : ‘তোমাদের প্রতি সালাম, তোমরা সুখি, অতএব তোমরা এতে স্থায়ীভাবে প্রবেশ কর।’’ [জুমার:৭৩] আর জান্নাতিরা বলবে :
وَقَالُوا الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي هَدَانَا لِهَذَا وَمَا كُنَّا لِنَهْتَدِيَ لَوْلَا أَنْ هَدَانَا اللَّهُ لَقَدْ جَاءَتْ رُسُلُ رَبِّنَا بِالْحَقِّ ﴿الأعراف :43﴾
‘‘তারা বলবে : সমস্ত প্রসংশা সে আল্লাহর, যিনি আমাদেরকে এর জন্য পথ দেখিয়েছেন। যদি আল্লাহ আমাদের পথ না দেখাতেন, তবে আমরা পথ পেতাম না। আমাদের নিকট আমাদের রবের রাসূলগণ সত্য নিয়ে এসেছেন। এরশাদ হচ্ছে :
وَنُودُوا أَنْ تِلْكُمُ الْجَنَّةُ أُورِثْتُمُوهَا بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ ﴿الأعراف :43﴾
‘‘এবং ঘোষণা দেয়া হবে, এটাই তোমাদের জান্নাত, তোমরা এর মালিক হয়েছ, তোমরা যে আমল করতে, তার বিনিময়ে।’’ [আরাফ:৪৩] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
أول زمرة منهم يدخلون الجنة على صورة القمر ليلة البدر , ثم الذين يلونهم على أشد كوكب دري . ( متفق عليه )
‘‘জান্নাতে তাদের প্রথম দলটি প্রবেশ করবে, পূণির্মার রাতের চাদের ন্যায়। অতঃপর তাদের দ্বিতীয় দলটি যাবে উজ্জল নক্ষত্রের ন্যায়।’’ [বুখারী-মুসলিম] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
يدخل أهل الجنة الجنة على صورة أبيهم آدم , طول الواحد منهم ستون ذراعا . ( متفق عليه )
‘‘জান্নাতিরা জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের পিতা আদম আলাইহিস সালাম এর আকৃতিতে। তাদের প্রত্যেকের উচ্চতা হবে ষাট হাত।’’ [বুখারী-মুসীরম] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
لا تباغض بينهم قلوبهم على قلب واحد . ( البخاري )
‘‘তাদের মাঝে পরস্পর কোন বিদ্বেষ থাকবে না, তাদের সবার অন্তর একটি অন্তরের ন্যায় থাকবে।’’ [বুখারী] এরশাদ হচ্ছে :
وَنَزَعْنَا مَا فِي صُدُورِهِمْ مِنْ غِلٍّ إِخْوَانًا عَلَى سُرُرٍ مُتَقَابِلِينَ ﴿الأعراف :47﴾
‘‘তাদের অন্তরে যে ব্যধি রয়েছে, আমি তা দূর করে দিব, তারা মুখোমুখি চেয়ারে উপবিষ্ট, সকলে ভাই-ভাই।’’ [হিজর:৪৭] এরশাদ হচ্ছে :
دَعْوَاهُمْ فِيهَا سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَتَحِيَّتُهُمْ فِيهَا سَلَامٌ ﴿يونس :10﴾
‘‘সেখানে তাদের প্রার্থনা হল ‘হে আল্লাহ! তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করছি।’ আর তাদের শুভেচ্ছা হচ্ছে ‘সালাম’। [ইউনুস:১০] একজন ঘোষণাকারী তাদের আহবান করে বলবে :
إن لكم أن تحيوا فلا تموتوا أبدا وإن لكم أن تصحوا فلا تسقموا أبدا وإن لكم أن تشبوا فلا تهرموا أبدا وإن لكم أن تنعموا فلا تبأسوا أبدا . ( مسلم )
‘‘তোমরা এখানে চিরঞ্জিব কখনো মুত্যু বরণ করবে না। তোমরা এখানে চির সুস্থ, কখনো অসুস্থ হবে না। তোমরা এখানে চির যুবক, কখনো বৃদ্ধ হবে না। তোমরা এখানে আনন্দ-ফূর্তি কর, কখনো দুঃখিত হবে না।’’ [মুসলিম] এরশাদ হচ্ছে :
يُطَافُ عَلَيْهِمْ بِصِحَافٍ مِنْ ذَهَبٍ وَأَكْوَابٍ وَفِيهَا مَا تَشْتَهِيهِ الْأَنْفُسُ وَتَلَذُّ الْأَعْيُنُ وَأَنْتُمْ فِيهَا خَالِدُونَ ﴿الزخرف :71﴾
‘‘স্বর্ণের প্লেট ও গ্লাসসহ তাদের চতুর্পাশে চক্কর দেয়া হবে। এবং তাতে আরো রয়েছে, যা মন চায় ও যার দ্বারা চোখ তৃপ্তি অনুভব করে, এবং তোমরা সেখানে সর্বদা থাকবে।’’ [যুখরূপ:৭১] এরশাদ হচ্ছে :
تَعْرِفُ فِي وُجُوهِهِمْ نَضْرَةَ النَّعِيمِ ﴿المطففين :24﴾
‘‘তুমি তাদের চোখে নেয়ামতের প্রতিক্রিয়া চিনতে পারবে।’’ [মুতাফফিফীন:২৪] এরশাদ হচ্ছে :
وَيَطُوفُ عَلَيْهِمْ غِلْمَانٌ لَهُمْ كَأَنَّهُمْ لُؤْلُؤٌ مَكْنُونٌ ﴿الطور :24﴾
‘‘কিশোররা তাদের আশ-পাশে চক্কর কাটবে। তারা দেখতে সুরক্ষিত মোতির ন্যায়।’’ [তুর:২৪] এ হলো সেবকদের অবস্থা, আর যাদের সেবা করা হবে, তাদের অবস্থা কেমন হবে, বর্ণনার অপেক্ষা রাখে না। তারা জান্নাতের দীর্ঘ ছায়ার নিচে জমা হবে, সিল করা পানির বোতল পরস্পর আদান-প্রাদান করবে আর জান্নাতের ভেতর প্রবাহিত সুপেয় মদির পান করবে। তাদের উপর পরপর দয়া-কল্যাণ ও অনুগ্রহ বর্ষিত হবে। তাদের থেকে চিন্তা-পেরেশানি ও কষ্ট চিরতরে বিদায় নিবে। এরশাদ হচ্ছে :
وَقَالُوا الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَذْهَبَ عَنَّا الْحَزَنَ إِنَّ رَبَّنَا لَغَفُورٌ شَكُورٌ . الَّذِي أَحَلَّنَا دَارَ الْمُقَامَةِ مِنْ فَضْلِهِ لَا يَمَسُّنَا فِيهَا نَصَبٌ وَلَا يَمَسُّنَا فِيهَا لُغُوبٌ ﴿الفاطر :34-35﴾
‘‘এবং, তারা বলবে সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদের দুঃখ দূর করেছেন। নিশ্চয় আমাদের রব ক্ষমাশীল, উত্তম বিনিময় প্রদানকারী। তিনি নিজ অনুগ্রহে আমাদের থাকার স্থান দিয়েছেন। যেখানে আমাদের কষ্ট স্পর্শ করবে না, ক্লান্তিও আমাদের কাছে ঘেসবে না।’’ [ফাতের:৩৪-৩৫] এরশাদ হচ্ছে :
لَا يَسْمَعُونَ فِيهَا لَغْوًا وَلَا تَأْثِيمًا . إِلَّا قِيلًا سَلَامًا سَلَامًا ﴿الواقعة :26﴾
‘‘তারা সেখানে বাহুল্য ও খারাপ কিছু শুনবে না, শুধু শুনবে সালাম, সলাম বাক্য।’’ [ওয়াকেয়া:২৫-২৬] প্রশান্তি-স্বস্তি, ভালবাসা ও নিরাপত্তার পরিবেশ তাদের বেষ্টন করে থাকবে। সেখানে তাদের নেককার পিতা-মাতা, স্ত্রী-সন্তান সবাইকে জমায়েত করা হবে। এরশাদ হচ্ছে :
جَنَّاتُ عَدْنٍ يَدْخُلُونَهَا وَمَنْ صَلَحَ مِنْ آَبَائِهِمْ وَأَزْوَاجِهِمْ وَذُرِّيَّاتِهِمْ ﴿الرعد :23﴾
‘‘বসবাসের জান্নাত, সেখানে তারা এবং তাদের সৎকর্মশীল পিতা-মাতা, স্বামী, সন্তানগণ প্রবেশ করবে।’’ [রাদ:২৩] হে আল্লাহর বান্দা! তুমি এর চেয়ে উত্তম আর কি চাও!?
হ্যাঁ, এতো কিছুর পরও একটি নেয়ামত অবশিষ্ট আছে, যা মাজীদের দিন প্রদান করা হবে। যে দিন ঘোষণা দেয়া হবে :
يا أهل الجنة إن ربكم يستزيركم فحي على الزيارة , فينهضون للزيارة مبادرين , فإذا الإبل النجائب قد أعدت لهم حتى إذا انتهوا إلى الوادي الأفيح نصب لهم منابر من نور ولؤلؤ وزبرزجد , وجلسوا على كثبان المسك . ( الترمذي )
‘‘হে জান্নাতবাসীগন! তোমাদের রব তোমাদের সাক্ষাত দিবে, তোমরা সাক্ষাতের জন্য প্রস্ত্তত হও, অতঃপর তারা প্রতিযোগিতামূলক সাক্ষাতের জন্য প্রস্ত্তত হবে। তারা দেখতে পাবে, তাদের নিয়ে যাওয়ার জন্য দ্রুতগামী ভাল জাতের উট প্রস্ত্তত রয়েছে। তারা ময়দানে পৌঁছলে নূর-মুতি ও মনি-মোক্তা দিয়ে নির্মিত মিম্ভার ও মৃগনাভির তৈরী ফোম প্রদান করা হবে। তারা নিজ নিজ পদ মোতাবেক আল্লাহর নিকট উপবিষ্ট হবে। এরশাদ হচ্ছে :
هُمْ دَرَجَاتٌ عِنْدَ اللَّهِ ﴿آل عمران :163﴾
‘‘আল্লাহর নিকট তারা পদ-মর্যাদা অনুপাতে অবস্থান করবে।’’ [আলে ইমরান:১৬৩] কবি বলেন :
والسابقون إلى الصلاة هم الألى- فازوا بذلك السبق بالإحسان
যারা নামাজে অগ্রগামী, ইহসানের কারণে তারাই সে প্রতিযোগিতায় ধন্য হয়েছে।
এমতাবস্থায় একটি নূর প্রজ্বলিত হয়ে সমগ্র জান্নাত আলোকিত করে দিবে। তখন তারা মাথা উঁচু করে দেখতে পাবে, পবিত্র নামের অধিকারী, মহান আল্লাহ তাআলা ওপর থেকে আগমন করেছেন। তিনি বলবেন, হে জান্নাতবাসীগণ!
سَلَامٌ قَوْلًا مِنْ رَبٍّ رَحِيمٍ ﴿يس :58﴾
‘‘করুনাময় রবের পক্ষ থেকে তোমাদের প্রতি সালাম।’’ [ইয়াসিন:৫৮] তাদের পক্ষ থেকে এ সালামের একমাত্র যথাযথ উত্তর হচ্ছে :
اللهم انت السلام ومنك السلام تباركت يا ذا الجلال والإكرم
‘‘হে আল্লাহ! তুমি-ই সালাম, শান্তি তোমার পক্ষ থেকে-ই, তুমি-ই মর্যাদার অধিপতি, হে সম্মান ও ইজ্জতের মালিক।’’
অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাদের জন্য বিকশিত হবেন ও তাদের উদ্দেশ্যে হাসবেন এবং বলবেন : হে জান্নাতীগণ, এর পর তারা সর্বপ্রথম শ্রবন করবে : আমার ঐ বান্দারা কোথায়, যারা আমাকে না দেখে আমার অনুকরণ করেছে? এটা হচ্ছে ইয়াওমুল মাজীদ, তারা আমার কাছে প্রার্থনা করুক। তখন তারা একবাক্যে বলবে : আমরা আপনার ওপর সন্তুষ্ট, আপনিও আমাদের ওপর সন্তুষ্ট হয়ে যান। তিনি বলবেন : হে জান্নাতবাসীগণ, যদি আমি তোমাদের উপর সন্তুষ্ট না হতাম, আমার জান্নাতে তোমাদের স্থান দিতাম না। তোমরা আমার কাছে চাও। তখন তারা একবাক্যে বলবে : আপনার চেহারার দর্শন দিন, আমরা তাতে দৃষ্টি দিব। অতঃপর আল্লাহ তাআলা পর্দাসমূহ উত্তোলন করবেন এবং তাদের জন্য বিকশিত হবেন। যার ফলে নূরের ঝলকে সকলে বেহুশ হয়ে যাবে। আল্লাহর পক্ষ থেকে যদি এ সিদ্ধান্ত না থাকত যে, তারা জ্বলবে না, তবে অবশ্যই তারা জ্বলে যেত। তাদের মধ্যে এমন কেউ থাকবে না যার মুখোমুখি আল্লাহ হবেন না। এমনকি তাদের কাউকে লক্ষ্য করে বলবেন : হে অমুক, তোমার কি স্মরণে পরে অমুক, অমুক দিনের কথা? এভাবে তার দুনিয়ার বিচ্যুতি ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ সম্পর্কে অবহিত করবেন। আর সে বলবে : হে আমার রব, তুমি কি আমাকে মাফ করনি? তিনি বলবেন : অবশ্যই। আমার ক্ষমার কারণে-ই তুমি তোমার এ মঞ্জিলে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছ। আহ! কত মধুর হবে সে দিন কর্ণসমূহের স্বাদ! কত চমৎকার হবে সে দিন চক্ষ্যুসমূহের শীতলতা! এরশাদ হচ্ছে :
وُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ نَاضِرَةٌ . إِلَى رَبِّهَا نَاظِرَةٌ ﴿القيامة :22-23﴾
‘‘সে দিন চেহারাসমূহ হবে উজ্জল। তার রবের দিকে চেয়ে থাকবে।’’ [কিয়মাহ:২২ও২৩]
হে মুমিনগণ!
لِمِثْلِ هَذَا فَلْيَعْمَلِ الْعَامِلُونَ ﴿المطففين :61﴾
‘‘এমন সাফল্যের জন্য-ই, আমালকারীদের আমল করা উচিত।’’ [সাফফাত:৬১]
وَفِي ذَلِكَ فَلْيَتَنَافَسِ الْمُتَنَافِسُونَ ﴿المطففين :26﴾
‘‘এতেই প্রতিযোগিদের প্রতিযোগিতা করা উচিত।’’ [মুতাফফিফীন:২৬]
ألا إن سلعة الله غالية إلا إن سلعة الله الجنة . ( الترمذي والحاكم )
‘‘জেনে রেখ! আল্লাহর পণ্য খুব দাবি। জেনে রেখ! আল্লাহর পণ্য জান্নাত।’’ [তিরমিজী-হাকেম]
يا سلعة الرحمن لست رخيصة بل أنت غالية على الكسلان
يا سلعة الرحمن ليس ينالها في الألف إلا واحد لا اثنان
ياسلعة الرحمن ما ذا كفؤها إلا أولو التقوى قبل الموت ذو إمكان
لكنها حجبت بكل كريهة ليصد عنها المبطل المتواني
وتنالها الهمم التي تسمو إلى رب العلا بمشية الرحمن
হে রহমানের পণ্য তুমি সস্তা নও। বরং, তুমি অলসদের জন্য অসাধ্য।
হে রহমানের পণ্য, তোমাকে পাবে; হাজারে একজন, দুই জনও নয়।
হে রহমানের পণ্য, তোমার বিনিময় কি? মৃত্যুর আগে মুত্তাকী ব্যতীত।
তবে, তা আবৃত সবত্যাগ দিয়ে, যাতে অলস-অকর্মরা তা থেকে দূরে থাকে।
তার নাগাল পাবে অদম্য স্পৃহা, যা মহান আল্লাহ মুখি, আল্লাহর ইচ্ছায়।
জান্নাত ইমান ও তাকওয়া হিসেবে বিভিন্ন স্তরে বিভক্ত। এরশাদ হচেছ:
انْظُرْ كَيْفَ فَضَّلْنَا بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ وَلَلْآَخِرَةُ أَكْبَرُ دَرَجَاتٍ وَأَكْبَرُ تَفْضِيلًا ﴿الإسراء :21﴾
‘‘দেখ কিভাবে আমি তাদের কতেককে কতেকের ওপর শ্রেষ্টত্ব দিয়েছি। তবে মর্তবা ও ফযীলতের দিক থেকে আখেরাত-ই শ্রেষ্ট।’’ [ইসরা:২১] সর্ব শেষ যে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে, তার ঘটনাটি নিম্নরূপ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
آخر من يدخل الجنة رجل ........ فيقول ا أعطي أحد مثل ما أعطيت . ( مسلم )
সর্ব শেষ যে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে, সে একজন পুরুষ। কখনো সে হাটবে, কখনো উপুড় হয়ে চলবে, কখনো আগুন তাকে ঝলসে দিবে। যখন এ পথ অতিক্রম করে সামনে চলে যাবে, তখন সে তার দিকে ফিরে বলবে : বরকতময় সে আল্লাহ, যিনি আমাকে তোমার থেকে মুক্তি দিয়েছে। আল্লাহ আমাকে এমন জিনিস দান করেছেন, যা আগে-পরের কাউকে তিনি দান করেননি। অতঃপর তার জন্য একটি বৃক্ষ উম্মুক্ত করা হবে। সে বলবে, হে আল্লাহ! এ বৃক্ষের কাছে নিয়ে যাও, যাতে এর ছায়াতলে আশ্রয় নিতে পারি, এর পানি পান করতে পারি। আল্লাহ বলবেন : হে বনি আদম, আমি যদি তোমাকে এটা প্রদান করি, তুমি নিশ্চয় আরেকটি প্রার্থনা করবে। সে বলবে : না, হে আমার রব। সে এর জন্য ওয়াদাও করবে। আল্লাহ বার বার তার অপরাগতা গ্রহণ করবেন। কারণ, সে এমন জিনিস দেখবে যার উপর তার ধৈর্যধারণ সম্ভব হবে না। অতঃপর আল্লাহ তার কাছে নিয়ে যাবেন, সে তার ছায়ায় আশ্রয় নিবে, তার পানি পান করবে। অতঃপর আগের চেয়ে উত্তম আরেকটি বৃক্ষ তার জন্য উম্মুক্ত করা হবে। তখন সে বলবে: হে আমার রব! এ বৃক্ষের কাছে নিয়ে যাও, এর ছায়াতলে আশ্রয় নিব, এর পানি পান করব। এ ছাড়া আর কিছু প্রার্থনা করব না। তখন আল্লাহ তাকে মনে করিয়ে দিবেন : হে বনি আদম, তুমি কি আমার সাথে ওয়াদা করনি যে, আর কিছু প্রার্থনা করবে না? এর কাছে যেতে দিলে তুমি আরো অন্য কিছু প্রার্থনা করবে। অতঃপর সে প্রার্থনা না করার ওয়াদা করবে। আল্লাহ তার অপরাগতা কবুল করবেন, কারণ সে এমন জিনিস দেখবে, যার ওপর তার ধৈর্যধারণ সম্ভব হবে না। অতঃপর তাকে সে গাছের নিকটবর্তী করা হবে। সে তার ছায়াতলে আশ্রয় নিবে, তার পানি পান করবে। অতঃপর জান্নাতের দরজার নিকট আরেকটি বৃক্ষ উম্মুক্ত করা করা হবে, যা আগের দু’বৃক্ষ থেকেও উত্তম। সে বলবে : হে আল্লাহ! এ বৃক্ষের নিকটবর্তী কর, আমি তার ছায়াতলে আশ্রয় নিব, তার পানি পান করব, আর কিছু প্রার্থনা করব না। তিনি বলবেন : হে বনি আদম, তুমি আর কিছু প্রার্থনা না করার ওয়াদা করনি? সে বলবে, হ্যাঁ, তবে, এটাই শেষ, আর কিছু চাইব না। আল্লাহ তার অপরাগতা কবুল করবেন। কারণ, সে এমন জিনিস দেখবে, যার ওপর ধৈর্যধারণ করা তার পক্ষে সম্ভব হবে না। আল্লাহ তার নিকটবর্তী করবেন। যখন তার নিকটবর্তী হবে, তখন সে জান্নাতবাসীদের আওয়াজ শুনতে পাবে। সে বলবে : হে আমার রব! আমাকে এতে প্রবেশ করাও। আল্লাহ বলবেন : হে বনি আদম, তোমার চাওয়া আর শেষ হবে না। তোমাকে দুনিয়া এবং এর সাথে দুনিয়ার সমতুল্য আরো প্রদান করব, এতে কি তুমি সন্তুষ্ট হবে? সে বলবে : হে আল্লাহ, তুমি দুজাহানের রব, তা সত্বেও তুমি আমার সাথে উপহাস করছ!? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ গঠনা বলতে বলতে হেসে দিলেন। সাহাবারা তাকে বলল : হে আল্লাহর রাসূল! কেন হাসছেন? তিনি বললেন : আল্লাহর হাসি থেকে আমার হাসি চলে এসেছে। যখন সে বলবে : আপনি দু’জাহানের মালিক হওয়া সত্বেও আমার সাথে উপহাস করছেন? তখন আল্লাহ বলবেন : আমি তোমার সাথে উপহাস করছি না; তবে কি, আমি যা-চাই তা-ই করতে পারি। আরো প্রার্থনা করার জন্য আল্লাহ তাকে বললেন : এটা চাও, ওটা চাও। যখন তার সব চাওয়া শেষ হয়ে যাবে। তখন আল্লাহ বলবেন : এ সব তোমাকে দেয়া হল এবং এর সাথে আরো দশগুন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : অতঃপর সে তার ঘরে প্রবেশ করবে এবং সাথে সাথে তার স্ত্রী হিসেবে দু’জন হুরও প্রবেশ করবে। তারা তাকে বলবে : সমস্ত প্রসংশা সে আল্লাহর, যিনি আপনাকে আমাদের জন্য জিবীত করেছেন এবং আমাদেরকে আপনার জন্য জিবীত করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : সে বলবে : আমাকে যা দেয়া হয়েছে, তার মত কাউকে দেয়া হয়নি।’’ [মুসলিম]
হে মুসলিম ভাই! আল্লাহর আনুগত্যের জন্য হারাম ও নিষিদ্ধ বস্ত্ত থেকে বিরত থাক, হে সৌভাগ্যবান ব্যক্তি! আল্লাহর কালাম থেকে সুসংবাদ নাও। এরশাদ হচ্ছে :
وَأَمَّا مَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ وَنَهَى النَّفْسَ عَنِ الْهَوَى . فَإِنَّ الْجَنَّةَ هِيَ الْمَأْوَى ﴿النازعات :40-41﴾
‘‘পক্ষান্তারে যে ব্যক্তি তার রবের সামনে দন্ডায়মান হওয়াকে ভয় করেছে এবং খেয়াল খুশী থেকে নিজেকে নিবৃত্ত রেখেছে, তার ঠিকানা হবে জান্নাত।’’ [নাজেআত:৪০-৪১]
নেশা ও মস্তিস্ক বিকৃতকারী হারাম বস্ত্ত থেকে নিজকে হেফাজতকারী হে সৌভাগ্যবান ব্যক্তি। তুমি আল্লাহর কালাম থেকে সুসংবাদ নাও। এরশাদ হচ্ছে :
يَتَنَازَعُونَ فِيهَا كَأْسًا لَا لَغْوٌ فِيهَا وَلَا تَأْثِيمٌ ﴿الطور :23﴾
‘‘সেখানে তারা গ্লাস নিয়ে টানা-টানি করবে। সেখানে কোন বাহুল্য এবং গোনাহ নেই।’’ [তুর:২৩]
নিজ লজ্জাস্থান হেফাজতকারী, বাজারের বিষিদ্ধ বস্ত্ত, টেলিভিশন ও কুরুচিপূর্ণ ম্যাগাজিন থেকে দৃষ্টি অবনতকারী, হে আল্লাহর বান্দা! তোমার জন্য সুসংবাদ। সুভসংবাদ জান্নাতের : সেখানে হুর তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। তারা সৎ চরিত্রের অধিকারী, বাহ্যিক-আভ্যন্তরিণ রূপে মন্ডিত সুন্দরী নারী, তারা স্বামী ব্যতীত অন্য কারো দিকে তাকায় না। তারা শুধু স্বামীর অপেক্ষায় তাবুতে অবস্থান করছে। আল্লাহ তাআলা বিশেষভাবে তাদের সৃষ্টি করেছেন। তারা সমবয়সী, তাদের যৌবন নষ্ট হবে না, তাদের সৌন্দর্যে ভাটা পড়বে না। তারা চিরকুমারী। ইতোপূর্বে তাদের কেউ স্পর্শ করেনি। তারা মাসিক ঋতু ও ঘৃণীত বিষয় থেকে চির পবিত্র। তারা প্রবাল ও পদ্মারাগ সাদৃশ্য নারী, ঝিনুকের অভ্যন্তরে বিদ্যমান মুক্তার মত পরিস্কার। তারা আবৃত মুতির মত।
كن مبغضا للخائنات لحبها فتعظى بها من دونهن وتنعم
তাদের মহববতে বাধা সৃষ্টিকারী নারীদের সাথে বিদ্বেষ পোষণ কর;
তবে, তুমি অন্যদের বিপরীতে তাদের নিয়ে ভাগ্যবান ও নেয়ামত প্রাপ্ত হতে পারবে।
তাদের কেউ যদি দুনিয়াতে উঁকি দিত, তবে মহাশুন্য নূরে ভরে যেত, তাদের ঘ্রাণে মৌ মৌ করত সারা পৃথিবী।
ولخمارها على رأسها خير من الدنيا وما فيها . ( البخاري )
‘‘তাদের মাথার উড়না দুনিয়া ও তার ভেতর বিদ্যমান সমস্ত জিনিস থেকে উত্তম। [বুখারী]
فيا خاطب الحسناء إن كنت راغبا فهذا زمان المهر فهو المقدم
হে সুন্দরী নারীদের প্রত্যাশী, যদি তোমার আগ্রহ থাকে, তবে এটা হচ্ছে মহর আদায় করার সময়, এবং এটা অগ্রিম প্রদান করতে হয়।
গান বাদ্য থেকে বিরত থাক, হে ভাগ্যবান! তোমার জন্য সুসংবাদ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
إن أزواج أهل الجنة ليغنين أزواجهن بأحسن أصوات ما سمعها أحد قط . ( الطبراني )
জান্নাতবাসীদের স্ত্রীগণ এত সুন্দর আওয়াজে গান পরিবেশন করবে যা কেউ শুনেনি। [তাবরানী] তাদের গান :
نحن الخيرات الحسان , أزواج قوم كرام . ينظرن يقرة أعيان , نحن الخالدات فلا يمتن , نحن الآمنات فلا يخفن , نحن المقيمات فلا يضعن , نحن الخيرات الحسان . ( صحيح الجامع الصغير )
‘‘আমরা সুন্দরী, কল্যাণ আর কল্যাণ। সম্মানীত ব্যক্তিদের স্ত্রী। তারা বড় বড় চোখ দিয়ে আনন্দ ভরে তাকাবে। আমরা চিরস্থায়ী, কখনো মৃত্যু বরণ করব না। আমরা নিরাপদ, কখনো ভীত হব না, আমরা চিরস্থায়ী, ধ্বংস হব না। আমরা কল্যাণ, আমরা সুন্দরী।’’ [জামে সাগির]
يا خاطب الحور الحسان وطالبا لو صالهن بجنة الحيوان
لو كنت تدري من خطبت ومن طلبت بذلت ما تحوي من الأثمان
أو ما سمعت سماعهم فيها غناء الحور الأصوات والألحان
نزه سماعك أن أردت سماع ذياك الغناء عن هذه الألحان
لا تؤثر الأدنى على الأعلى فتحرم ذا وذا , يا ذلة الحرمان
حب الكتاب وحب ألحان الغنا في قلب عبد ليس يجتمعان
হে সুন্দরী হুরদের প্রস্তাবকারী ও অন্বেষণকারী, তাদের মিলন হবে স্থায়ী জান্নাতে।
যাদের প্রস্তাব করছ, যাদের অন্বেষণ করছ, তাদের যদি জানতে, তবে তোমার মালিকানাধীন সব ব্যয় করে দেবে।
তুমি কি তাদের আওয়াজ শোননি, তাতে রয়েছে হুরদের গান, আয়াজ ও তরঙ্গ।
যদি তুমি তা শোনতে চাও, তবে এ সমস্ত গান থেকে তোমার কান পবিত্র কর।
উত্তমের ওপর অধমকে প্রাধান্য দিও না, তবে এ-থেকে ও-থেকে বঞ্চিত হবে। ছি! বঞ্চিত হওয়ার অপমান।
কুরআনের মহববত আর এ দুনিয়ার গানের মহববত এক অন্তরে জমা হতে পারে না।
বাজারী নিষিদ্ধ পণ্য থেকে নিজকে ও নিজ পরিবারকে বিরত রাখ, হে ভাগ্যবান ব্যক্তি, তোমার জন্য সুসংবাদ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
إن في الجنة سوقا يأتيها أهل الجنة كل جمعة , فيها كثبان المسك , فتهب ريح الشمال فتحثوا في وجوههم وثيابهم فيزدادون حسنا وجمالا , فيقول لهم أهلوهم : والله لقد أزددتم بعدنا حسنا وجمالا , فيقولون وأنتم والله لقد ازددتم بعدنا جسنا وجمالا . ( مسلم )
‘‘জান্নাতের ভেতর একটি বাজার আছে, যেখানে জান্নাতিরা প্রতি জুমায় উপস্থিত হয়। সেখানে রয়েছে সুগন্ধির স্ত্তপ। উত্তরের বাতাস তাদের কাপড় আর চেহারায় পরশ দিয়ে বয়ে যাবে, যার ফলে তাদের সৌন্দর্য ও শ্রীর বৃদ্ধি ঘটবে। তাদের স্ত্রীগণ বলবে : আল্লাহর শপথ! আমাদের চোখের আড়ালে তোমাদের সৌর্ন্দয ও শ্রীর বৃদ্ধি ঘটেছে।’’ [মুসলিম]
হে আল্লাহর বান্দাগণ! জান্নাত অন্বেষণকারীগণ অন্যদের থেকে আলাদা। রাতে মানুষ যখন ঘুমায়, তারা তখন নামাজ পড়ে। মানুষ যখন দিনে পানাহার করে, তারা তখন রোযা রাখে। মানুষ যখন জমা করে, তারা তখন সদকা করে। মানুষ যখন ভীরুতা প্রদর্শন করে, তারা আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করে। তারা-ই আল্লাহর প্রকৃত বান্দা! তারা আল্লাহর হুকুম যথাযথ পালন করছে, তার অঙ্গিকার রক্ষা করছে। তারা আল্লাহর ওপর ইমান রাখে, তার সাথে শিরক করে না। তারা আল্লাহর ভয়ে ভীত। আল্লাহর হুকুম মোতাবেক নামাজ কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে, প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে সদকা করে। তারা সাধ্যমত এবাদত ও সৎ কর্ম সম্পাদন করে। তারা আল্লাহর ভয়ে কম্পিত থাকে। তারা কবীরা গুনাহ ও অশ্লীলতা থেকে বিরত থাকে। আল্লাহর স্মরণে তাদের অন্তর কেঁপে উঠে। কুরআনের তেলাওয়াত শোনে তাদের ইমান বৃদ্ধি পায়। তারা নিজ রব, আল্লাহর ওপর ভরসা করে, একান্তভাবে নামাজ আদায় করে, বেহুদা কথাবার্তা থেকে বিরত থাকে, যাকাত প্রদান করে। তারা নিজদের লজ্জাস্থান হেফাজত করে। তারা আমানত ও ওয়াদা রক্ষা করে। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পানাহার ত্যাগ করে ও জাগ্রত থাকে। তারা আখেরাতের সফরের জন্য পণ্য সংগ্রহ করে, আল্লাহর ভয়ে তাদের অশ্রু ঝড়ে। তাদের নির্জনতা উপদেশ স্বরূপ। অধিক তাওবার ফলে, তাদের গুনাহ মিটে গেছে। পবিত্র সে আল্লাহ যিনি তাদের মনোনিত করেছেন। তারা-ই সত্বিকারার্থে আল্লাহর বান্দা। তাদের ভেতর রয়েছে ইনসাফ প্রতিষ্ঠাকারী বাদশাহ, সংযমী যুবক, নিষ্ঠাবান শহীদ, ধনাঢ্য দানবীর, ধৈর্যশীল পরহেযগার, ছিন্নবস্ত্র পরিহিত সাধক, যাদেরকে সাধারণ মানুষ গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়। তারা যা শপথ করে, আল্লাহ তা পূরণ করেন। তাদের ভেতর রয়েছে একমাত্র আল্লাহর জন্য মহববতকারী, যে মহববত বংশগত আত্মীয়তার জন্য নয়, পার্থিব কোন স্বার্থের জন্যও নয়। তাদের ভেতর আছে হাফেজে কুরআন। তারা সত্যের পথে থেকেও ঝগড়া-বিবাদ থেকে দূরে অবস্থান করে। তারা হাসি-ঠাট্টার ছলে মিথ্যা বলে না। তারা উত্তম চরিত্রের অধিকারী, গোস্বা হজম করে, মানুষদের ক্ষমা করে। এরশাদ হচ্ছে :
وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ ﴿آل عمران :134﴾
‘‘আল্লাহ সৎ কর্মশীলদের ভাল বাসেন।’’ [আলে ইমরান:১৩৪]
তাদের ভেতর রয়েছে সে সব নারী, যারা আল্লাহর সমীপে আত্মসমর্পন করে, পরকালে বিশ্বাস রাখে; নেক কাজ, আনুগত্য, তওবা ও এবাদত করে; আল্লাহ যা হেফাজত করতে বলেছেন, লোকচক্ষুর অন্তরালেও তারা তা হেফাজত করে; তাদের ভেতর রয়েছে সে নারীও, যে অন্নহীনদের অন্ন দেয়, সালামের প্রসার করে, আত্মীযতার সম্পর্ক অটুট রাখে এবং রাতে নামাজ পড়ে, যখন মানুষ ঘুমায়; তাদের ভেতর আরো আছে সে নারী, যে আল্লাহর সামনে দন্ডায়মান হওয়াকে ভয় করে, নিজকে কুপ্রবৃত্ত থেকে বিরত রাখে। তারা সকলেই আল্লাহর আনুগত্য ও তাকে অধিক স্মরণকারী নারী। এরশাদ হচ্ছে :
مَنْ خَشِيَ الرَّحْمَنَ بِالْغَيْبِ وَجَاءَ بِقَلْبٍ مُنِيبٍ ﴿ق :33﴾
‘‘যে না দেখে দয়াময় আল্লাহকে ভয় করেছে ও বিনীত অন্তর নিয়ে উপস্থিত হয়েছে।’’ [কাফ:৩৩] আরো আছে সে চক্ষুধারী, যে আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করেছে, আল্লাহর রাস্তায় পাহারারত নিন্দ্রহীন রাত যাপন করেছে। তাদের ভেতর আরো আছে যে, উত্তম পদ্ধতিতে আল্লাহর দিকে আহবান করেছে, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করেছে, সব সময় মানুষের জন্য কল্যাণ কামনা করে এবং আল্লাহর জন্য মানুষদের ভালোবাসে। তারাই জান্নাতী, ইমানদার, ধৈর্যশীল, সৎ কর্মশীল ও সংযমী।
অতএব, যে ব্যক্তি এ বিশাল জান্নাত কামনা করে, সে কি তার বিনিময়ে জান, মাল, সহায়-সম্পদ, কিংবা সামান্য সময়কে বেশী মনে করতে পারে? কখনও না। বরং কারো যদি হাজার প্রাণ থাকে, আর সে হাজার যুগ পায়, যার প্রতিটি যুগ দুনিয়ার সমান, তা সব কিছু যদি সে এ উদ্দেশ্যে ব্যয় করে দেয়, তাও কম হবে। কম না হওয়ার কারণ কি? যেখানে সমগ্র দুনিয়া-ই সামান্য। আর আমরা এ সামান্য থেকে সামান্যের মালিক। আল্লাহর রাসূল বলেন:
لو أن رجلا يجر على وجهه من يوم ولد إلى يوم يموت هرما في طاعة الله لحقره يوم القيامة . ( أحمد )
‘‘যদি কোন ব্যক্তি জন্ম থেকে বার্ধক্য অবস্থায় মৃত্যু পর্যন্ত আল্লাহর সেজদায় অতিবাহিত করে, কিয়ামতের দিন তাও সে খুব সামান্য জ্ঞান করবে।’’ [আহমাদ]
লক্ষ্য কর! কেউ প্রস্ত্তত আছ কি? তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবাদের ন্যায় সমস্বরে উত্তর দাও : ‘‘ইনশা-আল্লাহ আমরা প্রস্ত্তত আছি।’’ আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে আহবানকারী আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
كل أمتي يدخلون الجنة إلا من أبى، قالوا من يأبى يا رسول الله؟ قال من أطاعني دخل الجنة ومن عصاني فقد أبى . ( البخاري )
‘‘আমার প্রত্যেক উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে, তবে যে অস্বীকার করেছে। তারা বলল : কে অস্বীকার করবে, হে আল্লাহর রাসূল? বললেন : যে আমার অনুসরণ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে; যে আমার অবাধ্য হবে, সে-ই অস্বীকার করল।’’ [বুখারী]
এ হলো জান্নাত। এ হলো তা অর্জন করার পদ্ধতি। এ জান্নাতকে যে স্বপ্নের মত দুনিয়ার জীবনের বিনিময়ে বিক্রি করে দেয়, তার ন্যায় ধোকায় পতিত আর কে হতে পারে? আশ্চর্য! জান্নাতুল ফেরদাউস বিক্রি করে, ঘৃনীত দুনিয়ার বিনিময়ে! যে দুনিয়া সামান্য হাসালে, প্রচুর কাঁদায়। ক্ষণিকের আনন্দের বিনিময়ে দীর্ঘকাল দুঃখে ভোগায়। জান্নাতের বাড়ি-ঘরের বিনিময়ে সংকীর্ণ ও ক্ষণস্থায়ী দুনিয়া ক্রয় করার চেয়ে কঠিন বোকামী আর কি হতে পারে? শত আফসোস! যে দিন তুমি আল্লাহর নেককার বান্দাদের মর্যাদা প্রত্যক্ষ্য করবে, চক্ষূশীতলকারী হাজার হাজার নেয়ামত প্রত্যক্ষ করবে, সে দিন তোমার কি হবে? সে দিন তুমি বুঝতে পারবে, কি হারিয়েছ, আর কি কামিয়েছ।
فسر في الطريق المستقيم إلى العلا إلى الصدق والإخلاص والبر والتقى
وإياك والدنيا الغرورة إنها متاع قليل مالها أبدا بقا
وتلهيك عن جنات خلد نعيمها يدوم ويصفو حبذا ذاك ملتقى
وفيها رضى الرب الكريم وقربه ورؤيته أكرم بذلك مرتقى
তুমি সিরাতাল মুস্তাকীমে বিচরণ কর, অর্থাৎ সত্য, ইখলাস, কল্যাণ ও তাকওয়ার পথে।
খবরদার! ধোকার বস্ত্ত দুনিয়া দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ো না, এটা খুব সামান্য, যার নেই স্থায়ীত্ব।
সে তোমাকে স্থায়ী জান্নাত থেকে গাফেল করে দেবে, যার নেয়ামত স্থায়ী, পরিশুদ্ধ, কি চমৎকার! সে মিলন স্থান।
সেখানে সর্বদা আল্লাহর সন্তুষ্টি আর তার নৈকট্য বিদ্যমান থাকবে, তবে তার দর্শন-ই সব চেয়ে বেশী সম্মানের।
হায় আফসোস! আমরা ক্ষণস্থায়ী জীবন নিয়ে এতো ব্যস্ত, দুনিয়ার প্রতি এতো ধাবিত, যা দৃষ্টে মনে হয়, আমরা এখানের-ই স্থায়ী বাসিন্দা, কখনো শোনেনি সে জান্নাতের কথা, যা নেককার মুমিনদের জন্য তৈরি করা হয়েছে। কারণ, আমাদের আমল সামান্য, চেষ্টায় ত্রুটি, দুনিয়ার চাকচিক্য, প্রলাপ আর খেল তামাশায় বিভোর হয়ে আছি। ভুলে গেছি জান্নাত, হারিয়ে ফেলেছি তা অর্জনের আগ্রহ।
فيا بائعا هذا ببخس معجل - كأنك لاتدري بلى سوف تعلم
فإن كنت لا تدري فتلك مصيبة وإن كنت تدري فلمصيبة أعظم
হে জান্নাত বিক্রিকারী, সামান্য বিনিময়ে; তুমি হয়তো এখনো জান না, তবে অচরইে জেনে যাবে।
যদি তুমি না জান তাও মুসিবত, আর যদি জান, তবে তা বড় মুসিবত।
আল্লাহকে ভয় কর, সামনে অগ্রসর হও, পরকালের প্রস্ত্ততি নাও, সৎ কাজ কর, আশা রাখ জান্নাতের। এরশাদ হচ্ছে :
وَسَارِعُوا إِلَى مَغْفِرَةٍ مِنْ رَبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَوَاتُ وَالْأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ . الَّذِينَ يُنْفِقُونَ فِي السَّرَّاءِ وَالضَّرَّاءِ وَالْكَاظِمِينَ الْغَيْظَ وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ . وَالَّذِينَ إِذَا فَعَلُوا فَاحِشَةً أَوْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللَّهَ فَاسْتَغْفَرُوا لِذُنُوبِهِمْ وَمَنْ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا اللَّهُ وَلَمْ يُصِرُّوا عَلَى مَا فَعَلُوا وَهُمْ يَعْلَمُونَ . أُولَئِكَ جَزَاؤُهُمْ مَغْفِرَةٌ مِنْ رَبِّهِمْ وَجَنَّاتٌ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَنِعْمَ أَجْرُ الْعَامِلِينَ ﴿آل عمران :133-136﴾
‘‘তোমরা তোমাদের রবের ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে ছুটে যাও। যার সীমানা ও প্রসস্ততা আসমান-জমিন। যা তৈরি করা হয়েছে মুত্তাকিনদের জন্য। যারা সুখে-দুঃখে সদকা করে, এবং যারা গোস্বা হজম করে, মানুষকে ক্ষমা করে; বস্ত্তত আল্লাহ সৎ কর্মশীলদের ভালোবাসেন। তারা যখন মন্দ কাজ করে অথবা নিজদের ওপর জুলুম করে, তখন তারা আল্লাকে স্মরণ করে, নিজ পাপের জন্য ক্ষমার প্রার্থনা করে; আল্লাহ ছাড়া কে তাদের পাপ ক্ষমা করবে? তারা জেনে-শোনে নিজের কৃত মন্দ কর্মে স্থীর থাকে না। তাদের প্রতিদান, তাদের রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা ও জান্নাত; যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হয় নরহসমূহ, সেখানে তারা অনন্তকাল থাকবে। কত চমৎকার! নেককার লোকদের প্রতিদান।’’ [আলে ইমরান:১৩৩-১৩৬]
হে আল্লাহ! আমরা তোমার সন্তুষ্টি আর জান্নাত চাই। তোমার গোস্বা আর জাহান্নাম থেকে পানাহ চাই। হে আল্লাহ! আমরা তোমার কাছে জান্নাত, জান্নাতি আমল এবং তার কথা ও কর্মের তওফিক চাই। হে আল্লাহ! আমরা তোমার কাছে জাহান্নাম, জাহান্নামী আমল এবং তার কথা ও কর্মে থেকে পানাহ চাই। হে আল্লাহ! চিরস্থায়ী ও চক্ষুশীতলকারী নেয়ামত চাই। হে আল্লাহ! তোমার চেহারায় দৃষ্টি দেয়ার স্বাদ আস্বাদন করতে চাই, তোমার সাক্ষাতের প্রেরণা চাই। হে আল্লাহ! তুমি কবুল কর। আমীন।
সমাপ্ত
فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَا أُخْفِيَ لَهُمْ مِنْ قُرَّةِ أَعْيُنٍ جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ ﴿17﴾
‘‘কেউ জানে না তাদের জন্য কি কি নয়নাভিরাম গোপন রাখা হয়েছে। তাদের কৃতকর্মের প্রতিদান স্বরূপ।’’ [সাজদাহ:১৭]
হে মুসলমানগণ! এসো শান্তির রাজ্য-জান্নাতের আলোচনার মাধ্যমে আমাদের অন্তর উর্বর ও আন্দোলিত করি। হতে পারে তার আলোচনা ও স্মৃতিচারণ আমাদের অন্তরে জান্নাতের আগ্রহ সৃষ্টি করবে। যার ফলে আমরা সে সকল ভাগ্যবানদের অর্ন্তভূক্ত হতে পারব, যারা আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হলে ঘোষণা আসবে :
ادْخُلُوهَا بِسَلَامٍ آَمِنِينَ ﴿الحجر :46﴾
‘‘এতে শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে প্রবেশ কর।’’ [হিজর:৪৬]
জান্নাত একমাত্র অভিষ্ঠ লক্ষ্য, কাঙ্খিত বস্ত্ত। এর জন্য-ই আমাদের পূর্ব পুরুষগণ সব কিছু ত্যাগ করতে প্রস্ত্তত ছিলেন। আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্যের সর্ব শেষ নমুনা পেশ করতেন। তার দীনের জন্য উৎসর্গীত হতেন, তার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে শাহাদাত বরণ করতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ জান্নাতের মাধ্যমেই বদরের ময়দানে মুসলিম সৈন্যদের ভেতর প্রেরণার সৃষ্টি করে ছিলেন, তিরস্কার করে ছিলেন তাদের মন্থরতাকে। লক্ষ্য করুন তার উদাত্ব আহবান :
قوموا إلى جنة عرضها السموات والأرض . ( مسلم )
‘‘সে জান্নাতের জন্য প্রস্ত্তত হও, যার ব্যপ্তি আসামান-জমীন সমতুল্য।’’ [মুসলিম]
তিনি কোন পদমর্যাদা কিংবা সম্পদের ওয়াদা করেননি, শুধু জান্নাতের ওয়াদা করেছেন। সে ওয়াদাই তাদের জন্য যতেষ্ট ছিল। তাদের বিশ্বাসের দৃঢ়তার ফলে জান্নাত চাক্ষুষ দেখার ন্যায় সামানে বিদ্যমান ছিল, তাদের সামনে দুনিয়া বিদ্যমান থাকা সত্বেও অর্থহীন ছিল। এমনও হয়েছে, কেউ কেউ হাতে রাখা খেজুর পর্যন্ত ফেলে দিয়ে বলে ছিল, এ গুলো খাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করাও অনাকাঙ্খিত দীর্ঘ হায়াত নিয়ে বেচে থাকা বৈ কি। আবার কেউ কেউ বর্শ্ব বিদ্ধ হয়েও আনন্দের আতিশয্যে বলেছিল, ‘‘কাবার রবের কসম, আমি সফল হয়েছি।’’ আর জাফর ইবনে আবিতালিবের বিষয়টি আরো আশ্চর্য। জান্নাত তার জীবন সঙ্গীর ন্যায় ছিল। লক্ষ্য করুন তার কবিতা, যা তিনি আবৃতি করেছিলেন মুতার যুদ্ধে, জায়েদ বিন হারেছের শাহাদাতের পর তিন হাজার মুসলিম সৈন্যের নেতৃত্ব দানকালে, যারা দুই লক্ষ খৃষ্টান সৈন্যের মোকাবেলায় অবতীর্ন হয়েছিল।
يا حبذا الجنة واقترابها طيبة وبارد شرابها
والروم روم قد دنا عذابها كافرة بعيدة أنسابها
على إن لاقيتها ضرابها
স্বাগতম হে জান্নাত! যার আগমন- সুভলক্ষণ, যার পানীয় শীতল।
রোম তো রোম-ই যার শস্তি ঘনিয়েছে। কাফের, ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন তাদের বংশ।
যদি তাদের সাক্ষাত পাই।
এ কবিতা আবৃতি করেই তিনি শহিদ হন। আর দু’ডানায় ভর করে জান্নাতে উড়ে বেড়ান। তার পর আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা ইসলামের ঝান্ডা তুলে নেন। তিনিও কম যাননি। মৃত্যু অবধারিত দেখেও তিনি আবৃতি করেছিলেন।
أقسمت يا نفس لتنزلنه طائعة أو لتكرهنه
إن أجلب الناس وشدوا الرنة مالي أراك تكرهين الجنة
قد طال ما قد كنت مطمئنة هل أنت إلا نطفة في شنة
শপথ হে নফস, অবশ্যই সেথায় অবতরণ করবে-
ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায়।
মানুষ জড়ো হয়েছে, ক্রন্দনের প্রস্ত্ততি নিয়েছে,
আমি কেন লক্ষ্য করছি, তুমি জান্নাত অপছন্দ করছ।
নিরাপদ কাটিয়েছ, তুমি দীর্ঘ সময়,
অথচ তুমি সংকীর্ন জায়গার বীর্য মাত্র।
এ কবিতা আবৃতি করে তিনিও পূর্বের ন্যায় পরপারে পারি চলে যান। আল্লাহ তাদের সকলের উপর সস্ত্তষ্ট হোন।
জান্নাতুল ফেরদাউসের মর্যাদা :
ফেরদাউস সে জান্নাতের নাম, যেখানে প্রত্যেক মানুষ তার কাঙ্খিত বস্ত্ত লাভ করে ধন্য হবে। যার ভেতর প্রাসাদের উপর প্রাসাদ নির্মিত। যার কক্ষসমূহ নূরে শোভিত। তিনি পবিত্র যে এর এর পরিকল্পনা করেছেন, তিনি করুনাময় যে তা স্বহস্তে তৈরি করেছে। এটা রহমতের স্থান, সফলতার স্থান, এর রাজত্ব মহান, এর নেয়ামত স্থায়ী। এরশাদ হচ্ছে :
فَمَنْ زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ ﴿آل عمران :185﴾
‘‘যাকে দোযখ থেকে দুরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সে-ই সফল।’’ [আলে ইমরান:১৮৫] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
لموضع سوط أحدكم من الجنة خير من الدنيا وما فيها . ( البخاري )
‘‘তোমাদের কারো চাবুক পরিমাণ জান্নাতের জায়গা দুনিয়া এবং তার ভেতর যা কিছু আছে তার চেয়ে উত্তম।’’ [বুখারী] জান্নাতের নেয়ামতের মোকাবেলায় দুনিয়ার নেয়ামাতের কোন তুলনা হয় না। তবে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে তুলনা করেছেন, সেভাবে তুলনা করতে দোষ নেই। এরশাদ হচ্ছে :
مثل ما يجعل أحدكم إصبعه في اليم فيلينظر بم يرجع . ( مسلم )
‘‘যেমন, তোমাদের কারো আঙ্গুল সমুদ্রে রাখার মতই, অতঃপর দেখ কি পরিমাণ পানি আঙ্গুলে উঠে এসেছে।’’ [মুসলিম] এবার চিন্তা কারুন, যে পরিমাণ পানি সমুদ্র থেকে আঙ্গুলের সাথে ওপরে উঠে এসেছে, সে পরিমাণ হচ্ছে ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার নেয়ামত। আর যে পরিমাণ পানি মহাসমুদ্রে অবশিষ্ট আছে, তা হচ্ছে জান্নাতের নেয়ামত।
জান্নাতের আলোচনা প্রকৃত পক্ষে আমাদের রেখে আসার বাড়ীর আলোচনা। এখান থেকেই ইবলিস আদম-হাওয়াকে বের করে দিয়েছে। হয়তো তার আলোচনা পুনারায় জান্নাতে ফিরে যাওয়ার পথ সুগম করবে।
فحي على جنت عدن فإنها منازلك الأولى وفيها المخيم
ولكننا سبي العدو فهل ترى نعود إلى أوطاننا ونسلم
অতএব, আসো তুমি জনবসতির উদ্যানে, কারণ ইহা
তোমার প্রথম গৃহ, এবং এতেই রয়েছে তাবু।
কিন্তু আমরা শত্রুর বন্ধী, আছে কি কোন পথ?
আমাদের বাড়িতে ফিরে যাব, আর নিরাপদ হয়ে যাব।
জান্নাতের বর্ণনা ব্যাপক ভাষাশৈলী ও ভাবগাম্ভির্যতাসহ কুরআন-সুন্নায় বিধৃত হয়েছে। যার রহস্য উদঘাটন করা, যার প্রকৃত অবস্থা উপলব্দি করা প্রায় অসম্ভব। হাদীসে কুদসীতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : আল্লাহ তাআলা বলেছেন :
قال الله : تعالى : أعددت لعبادي الصالحين ما لا عين رأت و لا أذن سمعت و لا خطر على قلب بشر , واقرؤوا إن شئتم فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَا أُخْفِيَ لَهُمْ مِنْ قُرَّةِ أَعْيُنٍ جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ ﴿السجدة - 17﴾ ( متفق عليه )
‘‘আমি আমার নেককার বান্দাদের জন্য এমন জিনিস তৈরী করে রেখেছি, যা কোন চোখ দর্শন করেনি, কোন কর্ণ শ্রবন করেনি, এবং মানুষের অন্তরে যার কল্পনা পর্যন্ত হয়নি। দলিল স্বরূপ তোমরা তেলাওয়াত করতে পার। ‘‘কেউ জানে না, তাদের জন্য নয়নাভিরাম কি কি উহ্য রাখা হয়েছে, তাদেরই কর্মের প্রতিদান স্বরূপ।’’ [সাজদাহ:১৭] [বুখারী-মুসলিম] জান্নাতের ময়দান খুব প্রসস্ত, তার প্রাসাদ খুব বড় ও বহুতল বিশিষ্ট। এর সৃষ্টিকারী স্বয়ং আল্লাহ তাআলা বলছেন :
وَسَارِعُوا إِلَى مَغْفِرَةٍ مِنْ رَبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَوَاتُ وَالْأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ ﴿آل عمران :133﴾
‘‘তোমরা তোমাদের রবের ক্ষমা এবং জান্নাতের পানে ছুটে যাও, যার সীমানা হচ্ছে আসমান-যমীন, যা তৈরী করা হয়েছে পরহেযগারদের জন্য।’’ [আলে ইমরান:১৩৩] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
إن في الجنة لشجرة يسير الراكب الجلود المضمر السريع مائة سنة ما يقطعها . ( متفق عليه )
‘‘জান্নাতে একটি গাছ আছে, এক জন আশ্বারোহী সবল-দ্রুতগামী ঘোড়ায় চড়ে একশত বৎসর ভ্রমন করেও তা অতিক্রম করতে পারবে না।’’ [বুখারী-মুসলিম] জান্নাতের বড় বড় আটটি দরজা রয়েছে, যার দুই খুঁটির মাঝখানে দূরত্বের পরিমাণ চল্লিশ বৎসর ভ্রমনের পথ।’’ [আহমাদ]
জান্নাতের ভেতর প্রাসাদের উপর প্রাসাদ নির্মিত। তার প্রসাদ সমূহ বিভিন্ন ধরনের মানিক্য খচিত, একসাথে ভেতর-বাহির দৃশ্যমান। [সহীহ আল জামে] তার দেয়াল স্বর্ণ ও রূপার দ্বারা নির্মিত। তার প্লাষ্টার উন্নত মৃগনাভী, তার পাথর-কুচি প্রবাল ও মোতি এবং তার মাটি জাফরান।
তাতে রয়েছে মোতির অনেক তাবু। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
إن للمؤمن في الجنة لخيمة من لؤلؤة واحدة مجوفة طولها في السماء ستون ميلا , للمؤمن فيها أهلون , يطوف عليهم المؤمن فلا يرى بعضهم بعضا . ( متفق عليه )
‘‘মোমেনের জন্য জান্নাতের ভেতর পাথরের তৈরি বড় একটি তাবু রয়েছে, যার দৈর্ঘ আসমানের ভেতর ষাট মাইল। মোমেনের জন্য সেখানে পরিবার পরিজন থাকবে। মুমিন বান্দা তাদের চারপাশে ঘোরাফেরা করবে, তবে কেউ কাউকে দেখবে না।’’ [বুখারী-মুসলিম] এরশাদ হচ্ছে :
وَإِذَا رَأَيْتَ ثَمَّ رَأَيْتَ نَعِيمًا وَمُلْكًا كَبِيرًا ﴿الدهر :20﴾
‘‘যখন তুমি তা দেখবে, আবার যখন দেখবে, সেখানে নেয়ামতরাজী ও বিশাল রাজ্য লক্ষ্য করবে।’’ [দাহর:২০] এরশাদ হচ্ছে :
فِيهَا أَنْهَارٌ مِنْ مَاءٍ غَيْرِ آَسِنٍ وَأَنْهَارٌ مِنْ لَبَنٍ لَمْ يَتَغَيَّرْ طَعْمُهُ وَأَنْهَارٌ مِنْ خَمْرٍ لَذَّةٍ لِلشَّارِبِينَ وَأَنْهَارٌ مِنْ عَسَلٍ مُصَفًّى وَلَهُمْ فِيهَا مِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِ وَمَغْفِرَةٌ مِنْ رَبِّهِمْ ﴿محمد :15﴾
‘‘তাতে রয়েছে দুর্ঘন্ধহীন পানির নহর; সুস্বাদু দুধের নহর; সুপেয় শরাবের নহর এবং পরিশোধিত মধুর নহর। সেখানে তাদের জন্য আরো রয়েছে, রকমারী ফল-মূল এবং তাদের রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা।’’ [মোহাম্মাদ:১৫] তার কুটির সমূহ বন্ধু-বান্ধবদের মিলন মেলা। তার বাগান পর্যটকদের প্রমোদ স্থান। তার ছাদ আল্লাহর আরশ।
তার প্রসাদসমূহ সুদৃঢ়, তার প্রদীপসমূহ আলোকোজ্জল, তার ভেতর রয়েছে চিকন-মোটা সব ধরনের রেশন আর আছে প্রচুর ফল-মূল, যা কোন দিন শেষ হবে না, যা ক্ষেতে কোন দিন নিষেধও করাও হবে না। এরশাদ হচ্ছে :
يُحَلَّوْنَ فِيهَا مِنْ أَسَاوِرَ مِنْ ذَهَبٍ وَلُؤْلُؤًا وَلِبَاسُهُمْ فِيهَا حَرِيرٌ ﴿الدهر :23﴾
‘‘সেখানে তাদেরকে স্বর্ণ ও মুতি দ্বারা তৈরি চুরি দিয়ে সজ্জিত করা হবে এবং সেখানে তাদের পোষাক হবে রেশমের।’’ [হজ:২৩]
সেখানে তারা নিজ নিজ আসনে হেলান দিয়ে বসবে, একে অপরের পালং মুখোমুখি থাকবে। পরস্পর আলাপ-আলোচনায় নিরত থাকবে। এরশাদ হচেছ :
وَأَقْبَلَ بَعْضُهُمْ عَلَى بَعْضٍ يَتَسَاءَلُونَ . قَالُوا إِنَّا كُنَّا قَبْلُ فِي أَهْلِنَا مُشْفِقِينَ . فَمَنَّ اللَّهُ عَلَيْنَا وَوَقَانَا عَذَابَ السَّمُومِ . إِنَّا كُنَّا مِنْ قَبْلُ نَدْعُوهُ إِنَّهُ هُوَ الْبَرُّ الرَّحِيمُ ﴿الطور :25-28﴾
‘‘তারা পরস্পর জিজ্ঞাসাবাদ ও খবরাখবর নেয়ার জন্য একে অপরের মুখোমুখি হবে। তারা বলবে, ইতোপূর্বে আমরা নিজ পরিবারের মাঝে খুব শংকিত ছিলাম। আল্লাহ আমাদের দয়া করেছেন, তিনি আমাদেরকে বিষাক্ত আযাব থেকে নাজাত প্রদান করেছেন। এর আগেও আমরা তাকে আহবান করতাম। তিনি হিতাকাঙ্খি-দয়ালু।’’ [তুর:২৫-২৮]
তার ভেতর আরো আছে সুদীর্ঘ ছায়া, অনেক নেয়ামত, রুচিশীল ফল-ফলাদি, সুস্বাদু পাখির গোস্ত, তার পানাহার সব সময়ের জন্য উম্মুক্ত, কখনো শেষ হবে না। তার ছায়া কখনো নিঃশেষ হবে না। দীর্ঘ সময় তাতে আমোদ-প্রমোদ আয়োজন চলবে, তাতে ঘুম আসবে না, ঘুমের প্রয়োজনও হবে না। তার ফল মাখনের চেয়ে নরম, মধুর চেয়ে বেশী মিষ্টি। তার ফল হাতের নাগালে থাকবে, তার পানীয় সুস্বাদ্য, বৃক্ষরাজি অবনত, আনুগত্যশীল। এরশাদ হচ্ছে :
وَذُلِّلَتْ قُطُوفُهَا تَذْلِيلًا ﴿الدهر :14﴾
‘‘তার ফলসমূহ খুব নাগালের করে দেয়া হয়েছে।’’ [দাহর:১৪] আশা করার সাথে সাথেই ফলসমূহ সম্মুখে ঝুঁকে যাবে। এরশাদ হচ্ছে :
مُتَّكِئِينَ عَلَى فُرُشٍ بَطَائِنُهَا مِنْ إِسْتَبْرَقٍ وَجَنَى الْجَنَّتَيْنِ دَانٍ ﴿الرحمن :54﴾
‘‘রেশমের আস্তর বিশিষ্ট বিছানায় হেলান অবস্থায় থাকবে। উভয় উদ্যানের ফল অবনত থাকবে।’’ [রাহমান:৪৫]
يعطى أحدهم قوة مائة رجل في الأكل والشرب والجماع . ( الترمذي )
‘‘পানাহার ও সহবাসের ক্ষেত্রে প্রত্যেককে একশত ব্যক্তির শক্তি প্রদান করা হবে।’’ [তিরমিজী] পানাহার ক্ষুদা নিবারণ কিংবা তৃষ্ণা মিটানোর জন্য নয়, বরং স্বাদ আস্বাদন আর মস্তি করার জন্য। এরশাদ হচ্ছে :
إِنَّ لَكَ أَلَّا تَجُوعَ فِيهَا وَلَا تَعْرَى . وَأَنَّكَ لَا تَظْمَأُ فِيهَا وَلَا تَضْحَى ﴿طه :118-119﴾
‘‘তোমার জন্য; তুমি এতে ক্ষুদার্ধ হবে না এবং বস্ত্রহীনও হবে না। এবং তুমি এতে পিপাসার্থ হবে না, রৌদ্র কষ্টও পাবে না।’’ [ত্বহা:১১৮-১১৯] মুদ্দা কথা জান্নাতে কষ্টদায়ক কোন বস্ত্ত বিদ্যমান থাকবে না।
لايبصقون ولا يتمخطون ولا يتغوطون . ( متفق عيه )
‘‘তারা থুতু ফালাবে না, নাকের শ্লেশা ফালাবে না এবং পায়খানাও করবে না।’’ [বুখারী-মুসলিম]
تكون حاجة أحدهم جشاء كرشح المسك . ( مسلم )
‘‘তাদের কারো প্রয়োজন হবে শুধু ঢেকুর তোলার, মৃগ নাভী ছিটানোর ন্যায়।’’ [মুসলিম]
আল্লাহ মুত্তাকিদের আহবান করবেন, সম্মানিত মেহমানদের ন্যায় তারা সামনে অগ্রসর হবে এবং আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হবে। এরশাদ হচ্ছে :
يَا عِبَادِ لَا خَوْفٌ عَلَيْكُمُ الْيَوْمَ وَلَا أَنْتُمْ تَحْزَنُونَ ﴿الزخرف :68﴾
‘‘হে আমার বান্দাগণ, আজ তোমাদের কোন ভয় নাই এবং তোমরা চিন্তিতও হবে না।’’ [যুখরুফ:৬৮]
তারা দুনিয়ার ন্যায় সেখানেও তাদের নিজ নিজ বাড়ি-ঘর চিনবে। এরশাদ হচ্ছে :
وَيُدْخِلُهُمُ الْجَنَّةَ عَرَّفَهَا لَهُمْ ﴿محمد :6﴾
‘‘অতঃপর তিনি তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার পরিচয় তিনি তাদেরকে ইতোপূর্বে দিয়েছেন।’’ [মুহাম্মদ:৬] সম্মানিত ফেরেশতাগণ তাদেরকে নিরাপদ আগমন ও উত্তম গৃহের সুসংবাদ দিয়ে অর্ভ্যথনা জানাবে। এরশাদ হচ্ছে :
وَسِيقَ الَّذِينَ اتَّقَوْا رَبَّهُمْ إِلَى الْجَنَّةِ زُمَرًا حَتَّى إِذَا جَاءُوهَا وَفُتِحَتْ أَبْوَابُهَا وَقَالَ لَهُمْ خَزَنَتُهَا سَلَامٌ عَلَيْكُمْ طِبْتُمْ فَادْخُلُوهَا خَالِدِينَ ﴿الزمر :73﴾
‘‘যারা তাদের রবকে ভয় করেছে, তাদেরকে দলে দলে জান্নাতে নিয়ে যাওয়া হবে। অতঃপর যখন তারা তাতে আগমন করবে ও দরজাসমূহ খুলে দেয়া হবে, তখন তাদেরকে জান্নাতের রক্ষীরা বলবে : ‘তোমাদের প্রতি সালাম, তোমরা সুখি, অতএব তোমরা এতে স্থায়ীভাবে প্রবেশ কর।’’ [জুমার:৭৩] আর জান্নাতিরা বলবে :
وَقَالُوا الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي هَدَانَا لِهَذَا وَمَا كُنَّا لِنَهْتَدِيَ لَوْلَا أَنْ هَدَانَا اللَّهُ لَقَدْ جَاءَتْ رُسُلُ رَبِّنَا بِالْحَقِّ ﴿الأعراف :43﴾
‘‘তারা বলবে : সমস্ত প্রসংশা সে আল্লাহর, যিনি আমাদেরকে এর জন্য পথ দেখিয়েছেন। যদি আল্লাহ আমাদের পথ না দেখাতেন, তবে আমরা পথ পেতাম না। আমাদের নিকট আমাদের রবের রাসূলগণ সত্য নিয়ে এসেছেন। এরশাদ হচ্ছে :
وَنُودُوا أَنْ تِلْكُمُ الْجَنَّةُ أُورِثْتُمُوهَا بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ ﴿الأعراف :43﴾
‘‘এবং ঘোষণা দেয়া হবে, এটাই তোমাদের জান্নাত, তোমরা এর মালিক হয়েছ, তোমরা যে আমল করতে, তার বিনিময়ে।’’ [আরাফ:৪৩] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
أول زمرة منهم يدخلون الجنة على صورة القمر ليلة البدر , ثم الذين يلونهم على أشد كوكب دري . ( متفق عليه )
‘‘জান্নাতে তাদের প্রথম দলটি প্রবেশ করবে, পূণির্মার রাতের চাদের ন্যায়। অতঃপর তাদের দ্বিতীয় দলটি যাবে উজ্জল নক্ষত্রের ন্যায়।’’ [বুখারী-মুসলিম] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
يدخل أهل الجنة الجنة على صورة أبيهم آدم , طول الواحد منهم ستون ذراعا . ( متفق عليه )
‘‘জান্নাতিরা জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের পিতা আদম আলাইহিস সালাম এর আকৃতিতে। তাদের প্রত্যেকের উচ্চতা হবে ষাট হাত।’’ [বুখারী-মুসীরম] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
لا تباغض بينهم قلوبهم على قلب واحد . ( البخاري )
‘‘তাদের মাঝে পরস্পর কোন বিদ্বেষ থাকবে না, তাদের সবার অন্তর একটি অন্তরের ন্যায় থাকবে।’’ [বুখারী] এরশাদ হচ্ছে :
وَنَزَعْنَا مَا فِي صُدُورِهِمْ مِنْ غِلٍّ إِخْوَانًا عَلَى سُرُرٍ مُتَقَابِلِينَ ﴿الأعراف :47﴾
‘‘তাদের অন্তরে যে ব্যধি রয়েছে, আমি তা দূর করে দিব, তারা মুখোমুখি চেয়ারে উপবিষ্ট, সকলে ভাই-ভাই।’’ [হিজর:৪৭] এরশাদ হচ্ছে :
دَعْوَاهُمْ فِيهَا سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَتَحِيَّتُهُمْ فِيهَا سَلَامٌ ﴿يونس :10﴾
‘‘সেখানে তাদের প্রার্থনা হল ‘হে আল্লাহ! তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করছি।’ আর তাদের শুভেচ্ছা হচ্ছে ‘সালাম’। [ইউনুস:১০] একজন ঘোষণাকারী তাদের আহবান করে বলবে :
إن لكم أن تحيوا فلا تموتوا أبدا وإن لكم أن تصحوا فلا تسقموا أبدا وإن لكم أن تشبوا فلا تهرموا أبدا وإن لكم أن تنعموا فلا تبأسوا أبدا . ( مسلم )
‘‘তোমরা এখানে চিরঞ্জিব কখনো মুত্যু বরণ করবে না। তোমরা এখানে চির সুস্থ, কখনো অসুস্থ হবে না। তোমরা এখানে চির যুবক, কখনো বৃদ্ধ হবে না। তোমরা এখানে আনন্দ-ফূর্তি কর, কখনো দুঃখিত হবে না।’’ [মুসলিম] এরশাদ হচ্ছে :
يُطَافُ عَلَيْهِمْ بِصِحَافٍ مِنْ ذَهَبٍ وَأَكْوَابٍ وَفِيهَا مَا تَشْتَهِيهِ الْأَنْفُسُ وَتَلَذُّ الْأَعْيُنُ وَأَنْتُمْ فِيهَا خَالِدُونَ ﴿الزخرف :71﴾
‘‘স্বর্ণের প্লেট ও গ্লাসসহ তাদের চতুর্পাশে চক্কর দেয়া হবে। এবং তাতে আরো রয়েছে, যা মন চায় ও যার দ্বারা চোখ তৃপ্তি অনুভব করে, এবং তোমরা সেখানে সর্বদা থাকবে।’’ [যুখরূপ:৭১] এরশাদ হচ্ছে :
تَعْرِفُ فِي وُجُوهِهِمْ نَضْرَةَ النَّعِيمِ ﴿المطففين :24﴾
‘‘তুমি তাদের চোখে নেয়ামতের প্রতিক্রিয়া চিনতে পারবে।’’ [মুতাফফিফীন:২৪] এরশাদ হচ্ছে :
وَيَطُوفُ عَلَيْهِمْ غِلْمَانٌ لَهُمْ كَأَنَّهُمْ لُؤْلُؤٌ مَكْنُونٌ ﴿الطور :24﴾
‘‘কিশোররা তাদের আশ-পাশে চক্কর কাটবে। তারা দেখতে সুরক্ষিত মোতির ন্যায়।’’ [তুর:২৪] এ হলো সেবকদের অবস্থা, আর যাদের সেবা করা হবে, তাদের অবস্থা কেমন হবে, বর্ণনার অপেক্ষা রাখে না। তারা জান্নাতের দীর্ঘ ছায়ার নিচে জমা হবে, সিল করা পানির বোতল পরস্পর আদান-প্রাদান করবে আর জান্নাতের ভেতর প্রবাহিত সুপেয় মদির পান করবে। তাদের উপর পরপর দয়া-কল্যাণ ও অনুগ্রহ বর্ষিত হবে। তাদের থেকে চিন্তা-পেরেশানি ও কষ্ট চিরতরে বিদায় নিবে। এরশাদ হচ্ছে :
وَقَالُوا الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَذْهَبَ عَنَّا الْحَزَنَ إِنَّ رَبَّنَا لَغَفُورٌ شَكُورٌ . الَّذِي أَحَلَّنَا دَارَ الْمُقَامَةِ مِنْ فَضْلِهِ لَا يَمَسُّنَا فِيهَا نَصَبٌ وَلَا يَمَسُّنَا فِيهَا لُغُوبٌ ﴿الفاطر :34-35﴾
‘‘এবং, তারা বলবে সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদের দুঃখ দূর করেছেন। নিশ্চয় আমাদের রব ক্ষমাশীল, উত্তম বিনিময় প্রদানকারী। তিনি নিজ অনুগ্রহে আমাদের থাকার স্থান দিয়েছেন। যেখানে আমাদের কষ্ট স্পর্শ করবে না, ক্লান্তিও আমাদের কাছে ঘেসবে না।’’ [ফাতের:৩৪-৩৫] এরশাদ হচ্ছে :
لَا يَسْمَعُونَ فِيهَا لَغْوًا وَلَا تَأْثِيمًا . إِلَّا قِيلًا سَلَامًا سَلَامًا ﴿الواقعة :26﴾
‘‘তারা সেখানে বাহুল্য ও খারাপ কিছু শুনবে না, শুধু শুনবে সালাম, সলাম বাক্য।’’ [ওয়াকেয়া:২৫-২৬] প্রশান্তি-স্বস্তি, ভালবাসা ও নিরাপত্তার পরিবেশ তাদের বেষ্টন করে থাকবে। সেখানে তাদের নেককার পিতা-মাতা, স্ত্রী-সন্তান সবাইকে জমায়েত করা হবে। এরশাদ হচ্ছে :
جَنَّاتُ عَدْنٍ يَدْخُلُونَهَا وَمَنْ صَلَحَ مِنْ آَبَائِهِمْ وَأَزْوَاجِهِمْ وَذُرِّيَّاتِهِمْ ﴿الرعد :23﴾
‘‘বসবাসের জান্নাত, সেখানে তারা এবং তাদের সৎকর্মশীল পিতা-মাতা, স্বামী, সন্তানগণ প্রবেশ করবে।’’ [রাদ:২৩] হে আল্লাহর বান্দা! তুমি এর চেয়ে উত্তম আর কি চাও!?
হ্যাঁ, এতো কিছুর পরও একটি নেয়ামত অবশিষ্ট আছে, যা মাজীদের দিন প্রদান করা হবে। যে দিন ঘোষণা দেয়া হবে :
يا أهل الجنة إن ربكم يستزيركم فحي على الزيارة , فينهضون للزيارة مبادرين , فإذا الإبل النجائب قد أعدت لهم حتى إذا انتهوا إلى الوادي الأفيح نصب لهم منابر من نور ولؤلؤ وزبرزجد , وجلسوا على كثبان المسك . ( الترمذي )
‘‘হে জান্নাতবাসীগন! তোমাদের রব তোমাদের সাক্ষাত দিবে, তোমরা সাক্ষাতের জন্য প্রস্ত্তত হও, অতঃপর তারা প্রতিযোগিতামূলক সাক্ষাতের জন্য প্রস্ত্তত হবে। তারা দেখতে পাবে, তাদের নিয়ে যাওয়ার জন্য দ্রুতগামী ভাল জাতের উট প্রস্ত্তত রয়েছে। তারা ময়দানে পৌঁছলে নূর-মুতি ও মনি-মোক্তা দিয়ে নির্মিত মিম্ভার ও মৃগনাভির তৈরী ফোম প্রদান করা হবে। তারা নিজ নিজ পদ মোতাবেক আল্লাহর নিকট উপবিষ্ট হবে। এরশাদ হচ্ছে :
هُمْ دَرَجَاتٌ عِنْدَ اللَّهِ ﴿آل عمران :163﴾
‘‘আল্লাহর নিকট তারা পদ-মর্যাদা অনুপাতে অবস্থান করবে।’’ [আলে ইমরান:১৬৩] কবি বলেন :
والسابقون إلى الصلاة هم الألى- فازوا بذلك السبق بالإحسان
যারা নামাজে অগ্রগামী, ইহসানের কারণে তারাই সে প্রতিযোগিতায় ধন্য হয়েছে।
এমতাবস্থায় একটি নূর প্রজ্বলিত হয়ে সমগ্র জান্নাত আলোকিত করে দিবে। তখন তারা মাথা উঁচু করে দেখতে পাবে, পবিত্র নামের অধিকারী, মহান আল্লাহ তাআলা ওপর থেকে আগমন করেছেন। তিনি বলবেন, হে জান্নাতবাসীগণ!
سَلَامٌ قَوْلًا مِنْ رَبٍّ رَحِيمٍ ﴿يس :58﴾
‘‘করুনাময় রবের পক্ষ থেকে তোমাদের প্রতি সালাম।’’ [ইয়াসিন:৫৮] তাদের পক্ষ থেকে এ সালামের একমাত্র যথাযথ উত্তর হচ্ছে :
اللهم انت السلام ومنك السلام تباركت يا ذا الجلال والإكرم
‘‘হে আল্লাহ! তুমি-ই সালাম, শান্তি তোমার পক্ষ থেকে-ই, তুমি-ই মর্যাদার অধিপতি, হে সম্মান ও ইজ্জতের মালিক।’’
অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাদের জন্য বিকশিত হবেন ও তাদের উদ্দেশ্যে হাসবেন এবং বলবেন : হে জান্নাতীগণ, এর পর তারা সর্বপ্রথম শ্রবন করবে : আমার ঐ বান্দারা কোথায়, যারা আমাকে না দেখে আমার অনুকরণ করেছে? এটা হচ্ছে ইয়াওমুল মাজীদ, তারা আমার কাছে প্রার্থনা করুক। তখন তারা একবাক্যে বলবে : আমরা আপনার ওপর সন্তুষ্ট, আপনিও আমাদের ওপর সন্তুষ্ট হয়ে যান। তিনি বলবেন : হে জান্নাতবাসীগণ, যদি আমি তোমাদের উপর সন্তুষ্ট না হতাম, আমার জান্নাতে তোমাদের স্থান দিতাম না। তোমরা আমার কাছে চাও। তখন তারা একবাক্যে বলবে : আপনার চেহারার দর্শন দিন, আমরা তাতে দৃষ্টি দিব। অতঃপর আল্লাহ তাআলা পর্দাসমূহ উত্তোলন করবেন এবং তাদের জন্য বিকশিত হবেন। যার ফলে নূরের ঝলকে সকলে বেহুশ হয়ে যাবে। আল্লাহর পক্ষ থেকে যদি এ সিদ্ধান্ত না থাকত যে, তারা জ্বলবে না, তবে অবশ্যই তারা জ্বলে যেত। তাদের মধ্যে এমন কেউ থাকবে না যার মুখোমুখি আল্লাহ হবেন না। এমনকি তাদের কাউকে লক্ষ্য করে বলবেন : হে অমুক, তোমার কি স্মরণে পরে অমুক, অমুক দিনের কথা? এভাবে তার দুনিয়ার বিচ্যুতি ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ সম্পর্কে অবহিত করবেন। আর সে বলবে : হে আমার রব, তুমি কি আমাকে মাফ করনি? তিনি বলবেন : অবশ্যই। আমার ক্ষমার কারণে-ই তুমি তোমার এ মঞ্জিলে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছ। আহ! কত মধুর হবে সে দিন কর্ণসমূহের স্বাদ! কত চমৎকার হবে সে দিন চক্ষ্যুসমূহের শীতলতা! এরশাদ হচ্ছে :
وُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ نَاضِرَةٌ . إِلَى رَبِّهَا نَاظِرَةٌ ﴿القيامة :22-23﴾
‘‘সে দিন চেহারাসমূহ হবে উজ্জল। তার রবের দিকে চেয়ে থাকবে।’’ [কিয়মাহ:২২ও২৩]
হে মুমিনগণ!
لِمِثْلِ هَذَا فَلْيَعْمَلِ الْعَامِلُونَ ﴿المطففين :61﴾
‘‘এমন সাফল্যের জন্য-ই, আমালকারীদের আমল করা উচিত।’’ [সাফফাত:৬১]
وَفِي ذَلِكَ فَلْيَتَنَافَسِ الْمُتَنَافِسُونَ ﴿المطففين :26﴾
‘‘এতেই প্রতিযোগিদের প্রতিযোগিতা করা উচিত।’’ [মুতাফফিফীন:২৬]
ألا إن سلعة الله غالية إلا إن سلعة الله الجنة . ( الترمذي والحاكم )
‘‘জেনে রেখ! আল্লাহর পণ্য খুব দাবি। জেনে রেখ! আল্লাহর পণ্য জান্নাত।’’ [তিরমিজী-হাকেম]
يا سلعة الرحمن لست رخيصة بل أنت غالية على الكسلان
يا سلعة الرحمن ليس ينالها في الألف إلا واحد لا اثنان
ياسلعة الرحمن ما ذا كفؤها إلا أولو التقوى قبل الموت ذو إمكان
لكنها حجبت بكل كريهة ليصد عنها المبطل المتواني
وتنالها الهمم التي تسمو إلى رب العلا بمشية الرحمن
হে রহমানের পণ্য তুমি সস্তা নও। বরং, তুমি অলসদের জন্য অসাধ্য।
হে রহমানের পণ্য, তোমাকে পাবে; হাজারে একজন, দুই জনও নয়।
হে রহমানের পণ্য, তোমার বিনিময় কি? মৃত্যুর আগে মুত্তাকী ব্যতীত।
তবে, তা আবৃত সবত্যাগ দিয়ে, যাতে অলস-অকর্মরা তা থেকে দূরে থাকে।
তার নাগাল পাবে অদম্য স্পৃহা, যা মহান আল্লাহ মুখি, আল্লাহর ইচ্ছায়।
জান্নাত ইমান ও তাকওয়া হিসেবে বিভিন্ন স্তরে বিভক্ত। এরশাদ হচেছ:
انْظُرْ كَيْفَ فَضَّلْنَا بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ وَلَلْآَخِرَةُ أَكْبَرُ دَرَجَاتٍ وَأَكْبَرُ تَفْضِيلًا ﴿الإسراء :21﴾
‘‘দেখ কিভাবে আমি তাদের কতেককে কতেকের ওপর শ্রেষ্টত্ব দিয়েছি। তবে মর্তবা ও ফযীলতের দিক থেকে আখেরাত-ই শ্রেষ্ট।’’ [ইসরা:২১] সর্ব শেষ যে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে, তার ঘটনাটি নিম্নরূপ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
آخر من يدخل الجنة رجل ........ فيقول ا أعطي أحد مثل ما أعطيت . ( مسلم )
সর্ব শেষ যে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে, সে একজন পুরুষ। কখনো সে হাটবে, কখনো উপুড় হয়ে চলবে, কখনো আগুন তাকে ঝলসে দিবে। যখন এ পথ অতিক্রম করে সামনে চলে যাবে, তখন সে তার দিকে ফিরে বলবে : বরকতময় সে আল্লাহ, যিনি আমাকে তোমার থেকে মুক্তি দিয়েছে। আল্লাহ আমাকে এমন জিনিস দান করেছেন, যা আগে-পরের কাউকে তিনি দান করেননি। অতঃপর তার জন্য একটি বৃক্ষ উম্মুক্ত করা হবে। সে বলবে, হে আল্লাহ! এ বৃক্ষের কাছে নিয়ে যাও, যাতে এর ছায়াতলে আশ্রয় নিতে পারি, এর পানি পান করতে পারি। আল্লাহ বলবেন : হে বনি আদম, আমি যদি তোমাকে এটা প্রদান করি, তুমি নিশ্চয় আরেকটি প্রার্থনা করবে। সে বলবে : না, হে আমার রব। সে এর জন্য ওয়াদাও করবে। আল্লাহ বার বার তার অপরাগতা গ্রহণ করবেন। কারণ, সে এমন জিনিস দেখবে যার উপর তার ধৈর্যধারণ সম্ভব হবে না। অতঃপর আল্লাহ তার কাছে নিয়ে যাবেন, সে তার ছায়ায় আশ্রয় নিবে, তার পানি পান করবে। অতঃপর আগের চেয়ে উত্তম আরেকটি বৃক্ষ তার জন্য উম্মুক্ত করা হবে। তখন সে বলবে: হে আমার রব! এ বৃক্ষের কাছে নিয়ে যাও, এর ছায়াতলে আশ্রয় নিব, এর পানি পান করব। এ ছাড়া আর কিছু প্রার্থনা করব না। তখন আল্লাহ তাকে মনে করিয়ে দিবেন : হে বনি আদম, তুমি কি আমার সাথে ওয়াদা করনি যে, আর কিছু প্রার্থনা করবে না? এর কাছে যেতে দিলে তুমি আরো অন্য কিছু প্রার্থনা করবে। অতঃপর সে প্রার্থনা না করার ওয়াদা করবে। আল্লাহ তার অপরাগতা কবুল করবেন, কারণ সে এমন জিনিস দেখবে, যার ওপর তার ধৈর্যধারণ সম্ভব হবে না। অতঃপর তাকে সে গাছের নিকটবর্তী করা হবে। সে তার ছায়াতলে আশ্রয় নিবে, তার পানি পান করবে। অতঃপর জান্নাতের দরজার নিকট আরেকটি বৃক্ষ উম্মুক্ত করা করা হবে, যা আগের দু’বৃক্ষ থেকেও উত্তম। সে বলবে : হে আল্লাহ! এ বৃক্ষের নিকটবর্তী কর, আমি তার ছায়াতলে আশ্রয় নিব, তার পানি পান করব, আর কিছু প্রার্থনা করব না। তিনি বলবেন : হে বনি আদম, তুমি আর কিছু প্রার্থনা না করার ওয়াদা করনি? সে বলবে, হ্যাঁ, তবে, এটাই শেষ, আর কিছু চাইব না। আল্লাহ তার অপরাগতা কবুল করবেন। কারণ, সে এমন জিনিস দেখবে, যার ওপর ধৈর্যধারণ করা তার পক্ষে সম্ভব হবে না। আল্লাহ তার নিকটবর্তী করবেন। যখন তার নিকটবর্তী হবে, তখন সে জান্নাতবাসীদের আওয়াজ শুনতে পাবে। সে বলবে : হে আমার রব! আমাকে এতে প্রবেশ করাও। আল্লাহ বলবেন : হে বনি আদম, তোমার চাওয়া আর শেষ হবে না। তোমাকে দুনিয়া এবং এর সাথে দুনিয়ার সমতুল্য আরো প্রদান করব, এতে কি তুমি সন্তুষ্ট হবে? সে বলবে : হে আল্লাহ, তুমি দুজাহানের রব, তা সত্বেও তুমি আমার সাথে উপহাস করছ!? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ গঠনা বলতে বলতে হেসে দিলেন। সাহাবারা তাকে বলল : হে আল্লাহর রাসূল! কেন হাসছেন? তিনি বললেন : আল্লাহর হাসি থেকে আমার হাসি চলে এসেছে। যখন সে বলবে : আপনি দু’জাহানের মালিক হওয়া সত্বেও আমার সাথে উপহাস করছেন? তখন আল্লাহ বলবেন : আমি তোমার সাথে উপহাস করছি না; তবে কি, আমি যা-চাই তা-ই করতে পারি। আরো প্রার্থনা করার জন্য আল্লাহ তাকে বললেন : এটা চাও, ওটা চাও। যখন তার সব চাওয়া শেষ হয়ে যাবে। তখন আল্লাহ বলবেন : এ সব তোমাকে দেয়া হল এবং এর সাথে আরো দশগুন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : অতঃপর সে তার ঘরে প্রবেশ করবে এবং সাথে সাথে তার স্ত্রী হিসেবে দু’জন হুরও প্রবেশ করবে। তারা তাকে বলবে : সমস্ত প্রসংশা সে আল্লাহর, যিনি আপনাকে আমাদের জন্য জিবীত করেছেন এবং আমাদেরকে আপনার জন্য জিবীত করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : সে বলবে : আমাকে যা দেয়া হয়েছে, তার মত কাউকে দেয়া হয়নি।’’ [মুসলিম]
হে মুসলিম ভাই! আল্লাহর আনুগত্যের জন্য হারাম ও নিষিদ্ধ বস্ত্ত থেকে বিরত থাক, হে সৌভাগ্যবান ব্যক্তি! আল্লাহর কালাম থেকে সুসংবাদ নাও। এরশাদ হচ্ছে :
وَأَمَّا مَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ وَنَهَى النَّفْسَ عَنِ الْهَوَى . فَإِنَّ الْجَنَّةَ هِيَ الْمَأْوَى ﴿النازعات :40-41﴾
‘‘পক্ষান্তারে যে ব্যক্তি তার রবের সামনে দন্ডায়মান হওয়াকে ভয় করেছে এবং খেয়াল খুশী থেকে নিজেকে নিবৃত্ত রেখেছে, তার ঠিকানা হবে জান্নাত।’’ [নাজেআত:৪০-৪১]
নেশা ও মস্তিস্ক বিকৃতকারী হারাম বস্ত্ত থেকে নিজকে হেফাজতকারী হে সৌভাগ্যবান ব্যক্তি। তুমি আল্লাহর কালাম থেকে সুসংবাদ নাও। এরশাদ হচ্ছে :
يَتَنَازَعُونَ فِيهَا كَأْسًا لَا لَغْوٌ فِيهَا وَلَا تَأْثِيمٌ ﴿الطور :23﴾
‘‘সেখানে তারা গ্লাস নিয়ে টানা-টানি করবে। সেখানে কোন বাহুল্য এবং গোনাহ নেই।’’ [তুর:২৩]
নিজ লজ্জাস্থান হেফাজতকারী, বাজারের বিষিদ্ধ বস্ত্ত, টেলিভিশন ও কুরুচিপূর্ণ ম্যাগাজিন থেকে দৃষ্টি অবনতকারী, হে আল্লাহর বান্দা! তোমার জন্য সুসংবাদ। সুভসংবাদ জান্নাতের : সেখানে হুর তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। তারা সৎ চরিত্রের অধিকারী, বাহ্যিক-আভ্যন্তরিণ রূপে মন্ডিত সুন্দরী নারী, তারা স্বামী ব্যতীত অন্য কারো দিকে তাকায় না। তারা শুধু স্বামীর অপেক্ষায় তাবুতে অবস্থান করছে। আল্লাহ তাআলা বিশেষভাবে তাদের সৃষ্টি করেছেন। তারা সমবয়সী, তাদের যৌবন নষ্ট হবে না, তাদের সৌন্দর্যে ভাটা পড়বে না। তারা চিরকুমারী। ইতোপূর্বে তাদের কেউ স্পর্শ করেনি। তারা মাসিক ঋতু ও ঘৃণীত বিষয় থেকে চির পবিত্র। তারা প্রবাল ও পদ্মারাগ সাদৃশ্য নারী, ঝিনুকের অভ্যন্তরে বিদ্যমান মুক্তার মত পরিস্কার। তারা আবৃত মুতির মত।
كن مبغضا للخائنات لحبها فتعظى بها من دونهن وتنعم
তাদের মহববতে বাধা সৃষ্টিকারী নারীদের সাথে বিদ্বেষ পোষণ কর;
তবে, তুমি অন্যদের বিপরীতে তাদের নিয়ে ভাগ্যবান ও নেয়ামত প্রাপ্ত হতে পারবে।
তাদের কেউ যদি দুনিয়াতে উঁকি দিত, তবে মহাশুন্য নূরে ভরে যেত, তাদের ঘ্রাণে মৌ মৌ করত সারা পৃথিবী।
ولخمارها على رأسها خير من الدنيا وما فيها . ( البخاري )
‘‘তাদের মাথার উড়না দুনিয়া ও তার ভেতর বিদ্যমান সমস্ত জিনিস থেকে উত্তম। [বুখারী]
فيا خاطب الحسناء إن كنت راغبا فهذا زمان المهر فهو المقدم
হে সুন্দরী নারীদের প্রত্যাশী, যদি তোমার আগ্রহ থাকে, তবে এটা হচ্ছে মহর আদায় করার সময়, এবং এটা অগ্রিম প্রদান করতে হয়।
গান বাদ্য থেকে বিরত থাক, হে ভাগ্যবান! তোমার জন্য সুসংবাদ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
إن أزواج أهل الجنة ليغنين أزواجهن بأحسن أصوات ما سمعها أحد قط . ( الطبراني )
জান্নাতবাসীদের স্ত্রীগণ এত সুন্দর আওয়াজে গান পরিবেশন করবে যা কেউ শুনেনি। [তাবরানী] তাদের গান :
نحن الخيرات الحسان , أزواج قوم كرام . ينظرن يقرة أعيان , نحن الخالدات فلا يمتن , نحن الآمنات فلا يخفن , نحن المقيمات فلا يضعن , نحن الخيرات الحسان . ( صحيح الجامع الصغير )
‘‘আমরা সুন্দরী, কল্যাণ আর কল্যাণ। সম্মানীত ব্যক্তিদের স্ত্রী। তারা বড় বড় চোখ দিয়ে আনন্দ ভরে তাকাবে। আমরা চিরস্থায়ী, কখনো মৃত্যু বরণ করব না। আমরা নিরাপদ, কখনো ভীত হব না, আমরা চিরস্থায়ী, ধ্বংস হব না। আমরা কল্যাণ, আমরা সুন্দরী।’’ [জামে সাগির]
يا خاطب الحور الحسان وطالبا لو صالهن بجنة الحيوان
لو كنت تدري من خطبت ومن طلبت بذلت ما تحوي من الأثمان
أو ما سمعت سماعهم فيها غناء الحور الأصوات والألحان
نزه سماعك أن أردت سماع ذياك الغناء عن هذه الألحان
لا تؤثر الأدنى على الأعلى فتحرم ذا وذا , يا ذلة الحرمان
حب الكتاب وحب ألحان الغنا في قلب عبد ليس يجتمعان
হে সুন্দরী হুরদের প্রস্তাবকারী ও অন্বেষণকারী, তাদের মিলন হবে স্থায়ী জান্নাতে।
যাদের প্রস্তাব করছ, যাদের অন্বেষণ করছ, তাদের যদি জানতে, তবে তোমার মালিকানাধীন সব ব্যয় করে দেবে।
তুমি কি তাদের আওয়াজ শোননি, তাতে রয়েছে হুরদের গান, আয়াজ ও তরঙ্গ।
যদি তুমি তা শোনতে চাও, তবে এ সমস্ত গান থেকে তোমার কান পবিত্র কর।
উত্তমের ওপর অধমকে প্রাধান্য দিও না, তবে এ-থেকে ও-থেকে বঞ্চিত হবে। ছি! বঞ্চিত হওয়ার অপমান।
কুরআনের মহববত আর এ দুনিয়ার গানের মহববত এক অন্তরে জমা হতে পারে না।
বাজারী নিষিদ্ধ পণ্য থেকে নিজকে ও নিজ পরিবারকে বিরত রাখ, হে ভাগ্যবান ব্যক্তি, তোমার জন্য সুসংবাদ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
إن في الجنة سوقا يأتيها أهل الجنة كل جمعة , فيها كثبان المسك , فتهب ريح الشمال فتحثوا في وجوههم وثيابهم فيزدادون حسنا وجمالا , فيقول لهم أهلوهم : والله لقد أزددتم بعدنا حسنا وجمالا , فيقولون وأنتم والله لقد ازددتم بعدنا جسنا وجمالا . ( مسلم )
‘‘জান্নাতের ভেতর একটি বাজার আছে, যেখানে জান্নাতিরা প্রতি জুমায় উপস্থিত হয়। সেখানে রয়েছে সুগন্ধির স্ত্তপ। উত্তরের বাতাস তাদের কাপড় আর চেহারায় পরশ দিয়ে বয়ে যাবে, যার ফলে তাদের সৌন্দর্য ও শ্রীর বৃদ্ধি ঘটবে। তাদের স্ত্রীগণ বলবে : আল্লাহর শপথ! আমাদের চোখের আড়ালে তোমাদের সৌর্ন্দয ও শ্রীর বৃদ্ধি ঘটেছে।’’ [মুসলিম]
হে আল্লাহর বান্দাগণ! জান্নাত অন্বেষণকারীগণ অন্যদের থেকে আলাদা। রাতে মানুষ যখন ঘুমায়, তারা তখন নামাজ পড়ে। মানুষ যখন দিনে পানাহার করে, তারা তখন রোযা রাখে। মানুষ যখন জমা করে, তারা তখন সদকা করে। মানুষ যখন ভীরুতা প্রদর্শন করে, তারা আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করে। তারা-ই আল্লাহর প্রকৃত বান্দা! তারা আল্লাহর হুকুম যথাযথ পালন করছে, তার অঙ্গিকার রক্ষা করছে। তারা আল্লাহর ওপর ইমান রাখে, তার সাথে শিরক করে না। তারা আল্লাহর ভয়ে ভীত। আল্লাহর হুকুম মোতাবেক নামাজ কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে, প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে সদকা করে। তারা সাধ্যমত এবাদত ও সৎ কর্ম সম্পাদন করে। তারা আল্লাহর ভয়ে কম্পিত থাকে। তারা কবীরা গুনাহ ও অশ্লীলতা থেকে বিরত থাকে। আল্লাহর স্মরণে তাদের অন্তর কেঁপে উঠে। কুরআনের তেলাওয়াত শোনে তাদের ইমান বৃদ্ধি পায়। তারা নিজ রব, আল্লাহর ওপর ভরসা করে, একান্তভাবে নামাজ আদায় করে, বেহুদা কথাবার্তা থেকে বিরত থাকে, যাকাত প্রদান করে। তারা নিজদের লজ্জাস্থান হেফাজত করে। তারা আমানত ও ওয়াদা রক্ষা করে। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পানাহার ত্যাগ করে ও জাগ্রত থাকে। তারা আখেরাতের সফরের জন্য পণ্য সংগ্রহ করে, আল্লাহর ভয়ে তাদের অশ্রু ঝড়ে। তাদের নির্জনতা উপদেশ স্বরূপ। অধিক তাওবার ফলে, তাদের গুনাহ মিটে গেছে। পবিত্র সে আল্লাহ যিনি তাদের মনোনিত করেছেন। তারা-ই সত্বিকারার্থে আল্লাহর বান্দা। তাদের ভেতর রয়েছে ইনসাফ প্রতিষ্ঠাকারী বাদশাহ, সংযমী যুবক, নিষ্ঠাবান শহীদ, ধনাঢ্য দানবীর, ধৈর্যশীল পরহেযগার, ছিন্নবস্ত্র পরিহিত সাধক, যাদেরকে সাধারণ মানুষ গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়। তারা যা শপথ করে, আল্লাহ তা পূরণ করেন। তাদের ভেতর রয়েছে একমাত্র আল্লাহর জন্য মহববতকারী, যে মহববত বংশগত আত্মীয়তার জন্য নয়, পার্থিব কোন স্বার্থের জন্যও নয়। তাদের ভেতর আছে হাফেজে কুরআন। তারা সত্যের পথে থেকেও ঝগড়া-বিবাদ থেকে দূরে অবস্থান করে। তারা হাসি-ঠাট্টার ছলে মিথ্যা বলে না। তারা উত্তম চরিত্রের অধিকারী, গোস্বা হজম করে, মানুষদের ক্ষমা করে। এরশাদ হচ্ছে :
وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ ﴿آل عمران :134﴾
‘‘আল্লাহ সৎ কর্মশীলদের ভাল বাসেন।’’ [আলে ইমরান:১৩৪]
তাদের ভেতর রয়েছে সে সব নারী, যারা আল্লাহর সমীপে আত্মসমর্পন করে, পরকালে বিশ্বাস রাখে; নেক কাজ, আনুগত্য, তওবা ও এবাদত করে; আল্লাহ যা হেফাজত করতে বলেছেন, লোকচক্ষুর অন্তরালেও তারা তা হেফাজত করে; তাদের ভেতর রয়েছে সে নারীও, যে অন্নহীনদের অন্ন দেয়, সালামের প্রসার করে, আত্মীযতার সম্পর্ক অটুট রাখে এবং রাতে নামাজ পড়ে, যখন মানুষ ঘুমায়; তাদের ভেতর আরো আছে সে নারী, যে আল্লাহর সামনে দন্ডায়মান হওয়াকে ভয় করে, নিজকে কুপ্রবৃত্ত থেকে বিরত রাখে। তারা সকলেই আল্লাহর আনুগত্য ও তাকে অধিক স্মরণকারী নারী। এরশাদ হচ্ছে :
مَنْ خَشِيَ الرَّحْمَنَ بِالْغَيْبِ وَجَاءَ بِقَلْبٍ مُنِيبٍ ﴿ق :33﴾
‘‘যে না দেখে দয়াময় আল্লাহকে ভয় করেছে ও বিনীত অন্তর নিয়ে উপস্থিত হয়েছে।’’ [কাফ:৩৩] আরো আছে সে চক্ষুধারী, যে আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করেছে, আল্লাহর রাস্তায় পাহারারত নিন্দ্রহীন রাত যাপন করেছে। তাদের ভেতর আরো আছে যে, উত্তম পদ্ধতিতে আল্লাহর দিকে আহবান করেছে, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করেছে, সব সময় মানুষের জন্য কল্যাণ কামনা করে এবং আল্লাহর জন্য মানুষদের ভালোবাসে। তারাই জান্নাতী, ইমানদার, ধৈর্যশীল, সৎ কর্মশীল ও সংযমী।
অতএব, যে ব্যক্তি এ বিশাল জান্নাত কামনা করে, সে কি তার বিনিময়ে জান, মাল, সহায়-সম্পদ, কিংবা সামান্য সময়কে বেশী মনে করতে পারে? কখনও না। বরং কারো যদি হাজার প্রাণ থাকে, আর সে হাজার যুগ পায়, যার প্রতিটি যুগ দুনিয়ার সমান, তা সব কিছু যদি সে এ উদ্দেশ্যে ব্যয় করে দেয়, তাও কম হবে। কম না হওয়ার কারণ কি? যেখানে সমগ্র দুনিয়া-ই সামান্য। আর আমরা এ সামান্য থেকে সামান্যের মালিক। আল্লাহর রাসূল বলেন:
لو أن رجلا يجر على وجهه من يوم ولد إلى يوم يموت هرما في طاعة الله لحقره يوم القيامة . ( أحمد )
‘‘যদি কোন ব্যক্তি জন্ম থেকে বার্ধক্য অবস্থায় মৃত্যু পর্যন্ত আল্লাহর সেজদায় অতিবাহিত করে, কিয়ামতের দিন তাও সে খুব সামান্য জ্ঞান করবে।’’ [আহমাদ]
লক্ষ্য কর! কেউ প্রস্ত্তত আছ কি? তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবাদের ন্যায় সমস্বরে উত্তর দাও : ‘‘ইনশা-আল্লাহ আমরা প্রস্ত্তত আছি।’’ আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে আহবানকারী আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
كل أمتي يدخلون الجنة إلا من أبى، قالوا من يأبى يا رسول الله؟ قال من أطاعني دخل الجنة ومن عصاني فقد أبى . ( البخاري )
‘‘আমার প্রত্যেক উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে, তবে যে অস্বীকার করেছে। তারা বলল : কে অস্বীকার করবে, হে আল্লাহর রাসূল? বললেন : যে আমার অনুসরণ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে; যে আমার অবাধ্য হবে, সে-ই অস্বীকার করল।’’ [বুখারী]
এ হলো জান্নাত। এ হলো তা অর্জন করার পদ্ধতি। এ জান্নাতকে যে স্বপ্নের মত দুনিয়ার জীবনের বিনিময়ে বিক্রি করে দেয়, তার ন্যায় ধোকায় পতিত আর কে হতে পারে? আশ্চর্য! জান্নাতুল ফেরদাউস বিক্রি করে, ঘৃনীত দুনিয়ার বিনিময়ে! যে দুনিয়া সামান্য হাসালে, প্রচুর কাঁদায়। ক্ষণিকের আনন্দের বিনিময়ে দীর্ঘকাল দুঃখে ভোগায়। জান্নাতের বাড়ি-ঘরের বিনিময়ে সংকীর্ণ ও ক্ষণস্থায়ী দুনিয়া ক্রয় করার চেয়ে কঠিন বোকামী আর কি হতে পারে? শত আফসোস! যে দিন তুমি আল্লাহর নেককার বান্দাদের মর্যাদা প্রত্যক্ষ্য করবে, চক্ষূশীতলকারী হাজার হাজার নেয়ামত প্রত্যক্ষ করবে, সে দিন তোমার কি হবে? সে দিন তুমি বুঝতে পারবে, কি হারিয়েছ, আর কি কামিয়েছ।
فسر في الطريق المستقيم إلى العلا إلى الصدق والإخلاص والبر والتقى
وإياك والدنيا الغرورة إنها متاع قليل مالها أبدا بقا
وتلهيك عن جنات خلد نعيمها يدوم ويصفو حبذا ذاك ملتقى
وفيها رضى الرب الكريم وقربه ورؤيته أكرم بذلك مرتقى
তুমি সিরাতাল মুস্তাকীমে বিচরণ কর, অর্থাৎ সত্য, ইখলাস, কল্যাণ ও তাকওয়ার পথে।
খবরদার! ধোকার বস্ত্ত দুনিয়া দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ো না, এটা খুব সামান্য, যার নেই স্থায়ীত্ব।
সে তোমাকে স্থায়ী জান্নাত থেকে গাফেল করে দেবে, যার নেয়ামত স্থায়ী, পরিশুদ্ধ, কি চমৎকার! সে মিলন স্থান।
সেখানে সর্বদা আল্লাহর সন্তুষ্টি আর তার নৈকট্য বিদ্যমান থাকবে, তবে তার দর্শন-ই সব চেয়ে বেশী সম্মানের।
হায় আফসোস! আমরা ক্ষণস্থায়ী জীবন নিয়ে এতো ব্যস্ত, দুনিয়ার প্রতি এতো ধাবিত, যা দৃষ্টে মনে হয়, আমরা এখানের-ই স্থায়ী বাসিন্দা, কখনো শোনেনি সে জান্নাতের কথা, যা নেককার মুমিনদের জন্য তৈরি করা হয়েছে। কারণ, আমাদের আমল সামান্য, চেষ্টায় ত্রুটি, দুনিয়ার চাকচিক্য, প্রলাপ আর খেল তামাশায় বিভোর হয়ে আছি। ভুলে গেছি জান্নাত, হারিয়ে ফেলেছি তা অর্জনের আগ্রহ।
فيا بائعا هذا ببخس معجل - كأنك لاتدري بلى سوف تعلم
فإن كنت لا تدري فتلك مصيبة وإن كنت تدري فلمصيبة أعظم
হে জান্নাত বিক্রিকারী, সামান্য বিনিময়ে; তুমি হয়তো এখনো জান না, তবে অচরইে জেনে যাবে।
যদি তুমি না জান তাও মুসিবত, আর যদি জান, তবে তা বড় মুসিবত।
আল্লাহকে ভয় কর, সামনে অগ্রসর হও, পরকালের প্রস্ত্ততি নাও, সৎ কাজ কর, আশা রাখ জান্নাতের। এরশাদ হচ্ছে :
وَسَارِعُوا إِلَى مَغْفِرَةٍ مِنْ رَبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَوَاتُ وَالْأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ . الَّذِينَ يُنْفِقُونَ فِي السَّرَّاءِ وَالضَّرَّاءِ وَالْكَاظِمِينَ الْغَيْظَ وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ . وَالَّذِينَ إِذَا فَعَلُوا فَاحِشَةً أَوْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللَّهَ فَاسْتَغْفَرُوا لِذُنُوبِهِمْ وَمَنْ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا اللَّهُ وَلَمْ يُصِرُّوا عَلَى مَا فَعَلُوا وَهُمْ يَعْلَمُونَ . أُولَئِكَ جَزَاؤُهُمْ مَغْفِرَةٌ مِنْ رَبِّهِمْ وَجَنَّاتٌ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَنِعْمَ أَجْرُ الْعَامِلِينَ ﴿آل عمران :133-136﴾
‘‘তোমরা তোমাদের রবের ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে ছুটে যাও। যার সীমানা ও প্রসস্ততা আসমান-জমিন। যা তৈরি করা হয়েছে মুত্তাকিনদের জন্য। যারা সুখে-দুঃখে সদকা করে, এবং যারা গোস্বা হজম করে, মানুষকে ক্ষমা করে; বস্ত্তত আল্লাহ সৎ কর্মশীলদের ভালোবাসেন। তারা যখন মন্দ কাজ করে অথবা নিজদের ওপর জুলুম করে, তখন তারা আল্লাকে স্মরণ করে, নিজ পাপের জন্য ক্ষমার প্রার্থনা করে; আল্লাহ ছাড়া কে তাদের পাপ ক্ষমা করবে? তারা জেনে-শোনে নিজের কৃত মন্দ কর্মে স্থীর থাকে না। তাদের প্রতিদান, তাদের রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা ও জান্নাত; যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হয় নরহসমূহ, সেখানে তারা অনন্তকাল থাকবে। কত চমৎকার! নেককার লোকদের প্রতিদান।’’ [আলে ইমরান:১৩৩-১৩৬]
হে আল্লাহ! আমরা তোমার সন্তুষ্টি আর জান্নাত চাই। তোমার গোস্বা আর জাহান্নাম থেকে পানাহ চাই। হে আল্লাহ! আমরা তোমার কাছে জান্নাত, জান্নাতি আমল এবং তার কথা ও কর্মের তওফিক চাই। হে আল্লাহ! আমরা তোমার কাছে জাহান্নাম, জাহান্নামী আমল এবং তার কথা ও কর্মে থেকে পানাহ চাই। হে আল্লাহ! চিরস্থায়ী ও চক্ষুশীতলকারী নেয়ামত চাই। হে আল্লাহ! তোমার চেহারায় দৃষ্টি দেয়ার স্বাদ আস্বাদন করতে চাই, তোমার সাক্ষাতের প্রেরণা চাই। হে আল্লাহ! তুমি কবুল কর। আমীন।
সমাপ্ত
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন