HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

সূরা আল-ফাতিহা-এর তাফসীর

লেখকঃ শাইখুল ইসলাম মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল ওয়াহহাব রহ.

সূরা আল-ফাতিহা-এর তাফসীর
সূরা আল-ফাতিহা সাতটি আয়াতের সমষ্টি। প্রথম তিন আয়াতে ও চতুর্থ আয়াতের প্রথমার্ধ আল্লাহর জন্য এবং চতুর্থ আয়াতের দ্বিতীয়ার্ধসহ শেষ তিন আয়াত বান্দার জন্য। সূরার প্রথম আয়াত:

﴿ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٢﴾ [ الفاتحة : ٢ ]

‘‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সৃষ্টিকুলের রব।’’

জেনে রাখুন, ٱلۡحَمۡدُ এর অর্থ ঐচ্ছিক উপকার সাধনের উপর মৌখিক প্রশংসা ব্যক্ত করা। মৌখিক প্রশংসা বলে কাজের মাধ্যমে যে প্রশংসা হয় তা পৃথক করে দেওয়া হলো। কাজের মাধ্যমে প্রশংসা যাকে লিসানুল হাল বা অবস্থার ভাষা বলা হয়, মূলত তা কৃতজ্ঞতারই এক প্রকার। ঐচ্ছিক উপকার বলে এমন কাজই বুঝানো হয়েছে যা মানুষ আপন ইচ্ছায় করে থাকে। আর যে উপকার বা উত্তম কাজে মানুষের কোনো হাত নেই, যেমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ইত্যাদি, এমন বিষয়ের ওপর প্রশংসা করাকে হামদ না বলে মাদহ বলা হয়ে থাকে। হামদ এবং শুকর এতদুভয়ের মধ্যে পার্থক্য হলো: হামদের মধ্যে গুণাবলী বর্ণনাসহ প্রশংসা করা, তা প্রশংসাকারীর প্রতি কোনো ইহসানের বিনিময়ে সাধিত হোক অথবা বিনিময় ছাড়া হোক। আর শুকর কেবল কৃতজ্ঞের প্রতি ইহসানের বিনিময়ই হয়ে থাকে। এ দিক দিয়ে শুকরের চেয়ে হামদ ব্যাপক। কেননা হামদ এর মধ্যে গুণাবলী ও ইহসান উভয়ই অন্তর্ভুক্ত।

তাই আল্লাহ তা‘আলার হামদ করা হয় তাঁর সর্ব সুন্দর নামসমূহ এবং পূর্বাপর তাঁর সমুহ সৃষ্টির ওপর। এ জন্য আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ ٱلَّذِي لَمۡ يَتَّخِذۡ وَلَدٗا﴾ [ الاسراء : ١١١ ] ‘‘আল্লাহ তা‘আলারই সকল প্রশংসা যিনি কোনো সন্তান গ্রহণ করেন নি।’’ [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ১১১]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

﴿ ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ ٱلَّذِي خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ﴾ [ الانعام : ١ ]

‘‘আল্লাহ তা‘আলারই সকল প্রশংসা যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন।’’ [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১]

এ প্রসঙ্গে কুরআন মাজীদে আরো অনেক আয়াত রয়েছে।

শুকর কেবল দান বা অনুগ্রহের বিনিময়েই হয়ে থাকে। তাই এদিক দিয়ে এর প্রয়োগ উক্ত হামদের চেয়ে সীমিত। তবে তার প্রয়োগ অন্তর, হাত ও ভাষার মাধ্যমে ব্যক্ত হতে পারে। এ জন্য আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿ٱعۡمَلُوٓاْ ءَالَ دَاوُۥدَ شُكۡرٗاۚ﴾ [ سبا : ١٣ ] ‘‘হে দাউদ বংশধরগণ! কৃতজ্ঞতাস্বরূপ তোমরা নেক কাজ করে যাও।’’ [সূরা সাবা, আয়াত: ১৩]

পক্ষান্তরে হামদ কেবল অন্তর এবং ভাষার মাধ্যমেই ব্যক্ত করা হয়। এ দিক দিয়ে শুকর তার বিভিন্ন প্রকার অনুসারে অধিকতর ব্যাপক এবং হামদ তার উপলক্ষের দিক দিয়ে অধিকতর ব্যাপক।

ٱلۡحَمۡدُ এর আলিফ ও লাম সার্বিক বা বর্গীয় অর্থে ব্যবহৃত। অর্থাৎ সর্ববিধ প্রশংসা এর অন্তর্গত এবং সবই আল্লাহ তা‘আলার জন্য, অন্য কারো জন্য নয়। এমন সব কাজ যাতে মানুষের কোনো হাত নেই, যেমন মানুষ সৃষ্টি, চক্ষু, অন্তর ইত্যাদি সৃষ্টি, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি এবং জীবিকারাজি প্রদান ইত্যাদি -এ জাতীয় কাজের ওপর আল্লাহর প্রশংসা স্পষ্ট। আর যেসব কাজের ওপর মখলুক প্রশংসা কুড়ায়, যেমন নেক বান্দা ও নাবী-রাসূলগণ যে সব কাজের জন্য প্রশংসিত হন, এভাবে কেউ কোনো মঙ্গল কাজ করলে, বিশেষ করে তা যদি আপনার উদ্দেশ্যে করে থাকে, এ সমস্ত প্রশংসাও আল্লাহ তা‘আলার প্রাপ্য। তা এ অর্থে যে, আল্লাহ তা‘আলাই এ কর্তাকে সৃষ্টি করেছেন, তাকে এ কাজ করার উপকরণ প্রদান করেছেন এবং তাকে এ কাজের ওপর আগ্রহী ও সমর্থ্য করেছেন। এ ছাড়া আরো অনেক অনুগ্রহ দান করেছেন যার কোনো একটির অবর্তমানে এ কর্তা ব্যক্তি প্রশংসিত হতে পারে না। এ দৃষ্টিতেই সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই প্রাপ্য।

﴿لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ﴾ ‘‘আল্লাহর জন্য যিনি সৃষ্টিকুলের রব।’’

‘আল্লাহ’ আমাদের মহান ও কল্যাণময় প্রতিপালকের নাম। এর অর্থ: ইলাহ অর্থাৎ মা‘বুদ (উপাস্য)।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿وَهُوَ ٱللَّهُ فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَفِي ٱلۡأَرۡضِ﴾ [ الانعام : ٣ ] “এবং তিনিই আল্লাহ আকাশমণ্ডলীতে ও পৃথিবীতে।’’ [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৩]

অর্থাৎ তিনি মা‘বুদ আকাশমণ্ডলীতে এবং মা‘বুদ এ পৃথিবীতে। তিনি অন্যত্র বলেন:

﴿إِن كُلُّ مَن فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ إِلَّآ ءَاتِي ٱلرَّحۡمَٰنِ عَبۡدٗا ٩٣ لَّقَدۡ أَحۡصَىٰهُمۡ وَعَدَّهُمۡ عَدّٗا ٩٤﴾ [ مريم : ٩٣، ٩٤ ]

“আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে এমন কেউ নেই যে, দয়াময় আল্লাহর নিকট বান্দারূপে উপস্থিত হবে না। তিনি তাদেরকে পরিবেষ্টন করে আছেন এবং তাদেরকে বিশেষভাবে গণনা করে রেখেছেন।” [সূরা মারয়াম, আয়াত: ৯৩-৯৫]

رب এর অর্থ প্রভু, প্রতিপালক, নিয়ন্তা। العالمين একবচনে العالم মহান কল্যাণময় আল্লাহ বাদে সব কিছুকে ‘আলম নামে আখ্যায়িত করা হয়। আল্লাহ বাদে প্রত্যেক বাদশাহ, নবী, মানুষ, জিন্ন ইত্যাদি প্রতিপালিত, বশবর্তী, নিয়ন্ত্রিত, ফকীর ও মুখাপেক্ষী। সবই এক মহান সত্তার প্রতি সম্পর্কিত -এতে তার কোনো শরীক নেই। তিনিই একমাত্র পরমুখাপেক্ষীবিহীন সত্তা এবং তাঁরই প্রতি সর্ব বিষয় সম্পর্কিত। [. ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ এর অর্থ বিসমিল্লাহ-এর ব্যাখ্যায় দ্রষ্টব্য।]

এরপর আল্লাহ তা‘আলা উল্লেখ করেন: مَٰلِكِ يَوۡمِ ٱلدِّينِ অন্য ক্বিরাতে আছে: مَلِكِ يَوۡمِ ٱلدِّينِ এখানে দ্রষ্টব্য যে, আল্লাহ তা‘আলা কুরআনের প্রথম সূরার একই স্থানে যেভাবে উলুহিয়্যাহ, রুবুবিয়্যাহ ও মুলকের বা আধিপত্যের উল্লেখ করেছেন, সেভাবে কুরআনের শেষ সূরায় এগুলোর উল্লেখ করে তিনি বলেন:

﴿قُلۡ أَعُوذُ بِرَبِّ ٱلنَّاسِ ١ مَلِكِ ٱلنَّاسِ ٢ إِلَٰهِ ٱلنَّاسِ ٣﴾ [ الناس : ١، ٣ ]

“বলুন (হে রাসূল) আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি মানুষের রবের, মানুষের অধিপতির, মানুষের মা‘বুদের।” [সূরা আন-নাস, আয়াত: ১-৩] মহান কল্যাণময় আল্লাহ কুরআনের প্রথম দিকে এক স্থানে তাঁর এ তিনটি গুণের উল্লেখ করেছেন, আবার এ গুণাত্রয় কুরআনের শেষাংশে এক স্থানে একত্রে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি নিজের মঙ্গল চায় তার উচিৎ এ স্থানদ্বয়ের প্রতি মনোযোগ প্রদান করা এবং এ সম্পর্কে গবেষণা ও পর্যালোচনায় সচেষ্ট হওয়া। তার আরো জানা উচিৎ যে, মহাজ্ঞানী আল্লাহ তা‘আলা কুরআনের প্রথমে, আবার কুরআনের শেষাংশে একত্রে এগুলোর উল্লেখ একসাথে করেছেন। কেবল এ উদ্দেশ্যে যে, এগুলোর মর্মার্থ অনুধাবন করা এবং এগুলোর পরস্পরের মধ্যে অর্থগত ব্যবধান সম্পর্কে বান্দার অবগত হওয়া অতীব প্রয়োজন। প্রতিটি গুণের একটা নির্দিষ্ট অর্থ রয়েছে যা অন্যটির মধ্যে নেই। যেমন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তিনটি গুণ, আল্লাহর রাসূল, সর্বশেষ নবী এবং আদম সন্তান। মোটকথা: এর প্রত্যেকটির এক একটি অর্থ রয়েছে যা অন্যটি থেকে ভিন্ন।

যখন এ কথা জানা হলো যে, ‘আল্লাহ’ অর্থ ‘ইলাহ’ এবং ইলাহ যিনি তিনিই মা‘বুদ। অতঃপর তুমি তাকে ডাকো তাঁর নামে কুরবানী করো বা তাঁর নামে মান্নত করো, তখন সত্যিকারভাবে তুমি বিশ্বাস করলে যে, তিনিই আল্লাহ। আর যদি কোনো সৃষ্টিকে ডাকো ভালো হউক আর মন্দ হউক বা তাঁর নামে কুরবানী বা তাঁর নামে মান্নত করো তাহলে তোমার বিশ্বাস হলো যে এটাই তোমার আল্লাহ। এভাবে যদি কোনো ব্যক্তি সম্পর্কে জানা যায় যে, সে তার জীবনের ক্ষণিকের জন্য হলেও ‘শামসান’ [. শামসান: প্রকৃত নাম মুহাম্মাদ ইবন শামসান। তার ছেলেরা তার নামে মান্নত করার জন্য লোকদের নির্দেশ দিত। লোক তাকে বিশেষ অলী ও শাফা‘আতের অধিকারী হিসেবে বিশ্বাস করত।] অথবা ‘তাজ’ [. রিয়াদের অদূরে ‘আল-খারজ’ এলাকার অধিবাসী ছিল। লোক তাকে বিশেষ অলী ও অনেক অলৌকিক শক্তির অধিকারী বলে বিশ্বাস করত। তার নামে মান্নত জমা করা হত। শাসকবৃন্দ তাকে ও তার অনুসারীদের ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত ছিল। তাজ ও শামসানের দ্বারা নজদ এলাকায় অনেক লোক বিভ্রান্ত হয়েছিল।] কে আল্লাহ হিসেবে বিশ্বাস করেছে, তাহলে সে বনী ইসরাঈলের পর্যায়ে পতিত হবে, যখন তারা গো বৎসের পূজা করেছিল। অতঃপর যখন তাদের কাছে তাদের ভ্রান্তি ধরা পড়লো তখন তারা ভীত-সন্ত্রস্ত্র ও অনুতপ্ত হয়ে যা বলেছিল আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে তা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন:

﴿ وَلَمَّا سُقِطَ فِيٓ أَيۡدِيهِمۡ وَرَأَوۡاْ أَنَّهُمۡ قَدۡ ضَلُّواْ قَالُواْ لَئِن لَّمۡ يَرۡحَمۡنَا رَبُّنَا وَيَغۡفِرۡ لَنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ١٤٩ ﴾ [ الاعراف : ١٤٩ ]

‘‘অতঃপর যখন তারা অনুতপ্ত হলো এবং বুঝতে পারল যে, আমরা নিশ্চিতই গোমরাহ হয়ে পড়েছি, তখন বলতে লাগল, আমাদের প্রতি যদি আমাদের রব ক্ষমা ও করুণা না করেন তাহলে অবশ্যই আমরা ধ্বংস (সর্বনাশগ্রস্থ) হয়ে যাবো।’’ (সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৪৯]

( رب ) এর অর্থ হলো মালিক, নিয়ন্ত। আল্লাহ তা‘আলা সব কিছুর মালিক এবং তিনি সব কিছুর নিয়ন্তা -এটি ধ্রুব সত্য। যাদের বিরুদ্ধে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধ করেছেন, সেই প্রতিমাপূজকরা আল্লাহর এ গুণ স্বীকার করত। আল্লাহ তা‘আলা এ সম্পর্কে কুরআন মাজীদের একাধিক স্থানে বর্ণনা করেছেন। যেমন, সূরা ইউনুসের এক আয়াতে বলেন:

﴿قُلۡ مَن يَرۡزُقُكُم مِّنَ ٱلسَّمَآءِ وَٱلۡأَرۡضِ أَمَّن يَمۡلِكُ ٱلسَّمۡعَ وَٱلۡأَبۡصَٰرَ وَمَن يُخۡرِجُ ٱلۡحَيَّ مِنَ ٱلۡمَيِّتِ وَيُخۡرِجُ ٱلۡمَيِّتَ مِنَ ٱلۡحَيِّ وَمَن يُدَبِّرُ ٱلۡأَمۡرَۚ فَسَيَقُولُونَ ٱللَّهُۚ فَقُلۡ أَفَلَا تَتَّقُونَ ٣١﴾ [ يونس : ٣١ ]

“(হে রাসূল) আপনি জিজ্ঞেস করুন, কে রিযিক দান করেন তোমাদেরকে আকাশ থেকে ও পৃথিবী থেকে? কিংবা কে তোমাদের কান বা চোখের মালিক? কে জীবিতকে মৃতের ভেতর থেকে বের করেন, কে-ইবা মৃতকে জীবিতদের মধ্য থেকে বের করে? কে করে কর্ম সম্পাদনের ব্যবস্থাপনা? তখন তারা বলে উঠবে, আল্লাহ। তখন আপনি বলুন, তারপরও কি তোমরা আল্লাহকে ভয় করবে না।’’ [সূরা ইউনুস, আয়াত: ৩১]

সুতরাং যে ব্যক্তি বিপদ মুক্তি ও প্রয়োজন সাধনের উদ্দেশ্যে আল্লাহকে ডাকে এবং পরে এ উদ্দেশ্যে কোনো মাখলুককেও ডাকে, বিশেষ করে মাখলুককে ডাকার সাথে তার ইবাদাতের সাথে নিজের সম্পর্ক সংশ্লিষ্ট করে ফেলে, যেমন সে ডাকার সময় বলে, অমুক তোমার বান্দা বা অলীর বান্দা বা নবীর বান্দা অথবা যুবাইরের বান্দা. তখন এর দ্বারা সে সেই মাখলুকের রুবুবিয়্যাত স্বীকার করে নিল এবং সমগ্র বিশ্বের রব হিসেবে আল্লাহকে স্বীকার করল না; বরং তার রুবুবিয়্যাতের কিছু অংশ অস্বীকার করে বসল।

আল্লাহ তা‘আলা সে বান্দাকে রহম করুন, যে নিজেকে নসীহত করে এবং এ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অনুধাবনের চেষ্টা করে আর এ সম্পর্কে সীরাতে মুস্তাকীমের অনুসারী আলেমগণের ভাষ্য জিজ্ঞেস করে। তারা সূরাটির ব্যাখ্যা এভাবে করেছেন কিনা?

( الملك ) শব্দের ব্যাখ্যা একটু পরে আসছে ইনশা-আল্লাহ। আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

﴿مَٰلِكِ يَوۡمِ ٱلدِّينِ ٤﴾ [ الفاتحة : ٤ ]

“প্রতিফল দিবসের মালিক।” [সূরা আল-ফাতিহা, আয়াত: ৩] অন্য ক্বিরাতে:

﴿مَلِكِ يَوۡمِ ٱلدِّينِ ٤﴾ [ الفاتحة : ٤ ] “প্রতিফল দিবসের অধিপতি।” [সূরা আল-ফাতিহা, আয়াত: ৩]

উভয় আকারে সকল ভাষ্যকারদের নিকট এর অর্থ তা-ই যা আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিম্নোক্ত বাণীতে ব্যক্ত করেছেন। তা হলো:

﴿وَمَآ أَدۡرَىٰكَ مَا يَوۡمُ ٱلدِّينِ ١٧ ثُمَّ مَآ أَدۡرَىٰكَ مَا يَوۡمُ ٱلدِّينِ ١٨ يَوۡمَ لَا تَمۡلِكُ نَفۡسٞ لِّنَفۡسٖ شَيۡ‍ٔٗاۖ وَٱلۡأَمۡرُ يَوۡمَئِذٖ لِّلَّهِ ١٩﴾ [ الانفطار : ١٧، ١٩ ]

“আর, তুমি কর্মফল দিবস সম্পর্কে কি জান? আবার, কর্মফল দিবস সম্পর্কে তুমি কি জান? সেদিন কেউ কারো জন্য কিছু করার ক্ষমতা রাখবে না। সেদিন ক্ষমতা থাকবে শুধু আল্লাহর হাতে ।’’ [সূরা ইনফিতার, আয়াত: ১৭-১৯]

যে ব্যক্তি এ আয়াতের ব্যাখ্যা সঠিকভাবে অনুধাবন করবে এবং জানতে পারবে যে, কর্মফল দিবস ও অন্যান্য দিবসসহ সব কিছুর মালিক আল্লাহ তা‘আলা হওয়া সত্বেও এ দিনের (কিয়ামতের) অধিকারকে তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন সে উপলব্ধি করতে পারবে যে, এখানে সেই মহান বিষয়টিকেই খাছ করে উদ্দেশ্যে করা হয়েছে, যা অনুধাবন করে যে জান্নাতে যাওয়ার সে এবং যা পরিজ্ঞাত না হয়ে যে জাহান্নামে যাওয়ার সে যাবে। বিষয়টি অর্থাৎ ‘কিয়ামতের দিন সম্পর্কে অধিকার একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার’ এ অর্থ কত-ই না মহান, যার ওপর বিশ বছর ধরে চিন্তা-ভাবনা করলেও এর যথাযথ হক আদায় সম্ভব হবে না। কোথায় সে মর্মার্থ ও এর প্রতি বিশ্বাস এবং কুরআন কর্তৃক স্পষ্টভাবে ব্যক্ত বিষয়ের ওপর ঈমান আর কোথায় এ সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: (হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কন্যা ফাতেমা! আমি আল্লাহর শাস্তি থেকে তোমাকে একটুও বাঁচাতে পারব না।) কোথায় আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের এ কথা, আর কোথায় সে তথাকথিত ‘কাসীদা বুরদা’ নামক গাঁথাতে আসা কবি বূসিরীর উক্তি:

ولن يضيق رسول الله جاهــــك بي ...... إذا الكريم تحلى باسم منتقم

فإن لي ذمة منه بتسمـــــــــيتي …... محمدا وهو أوفى الخلق بالذمــم

إن لم تكن في معادي آخذا بيدي ....... فضلا وإلا فقل يا زلة القــدم

“হে রাসূলাল্লাহ! তোমার মর্যাদা আমার জন্য সংকোচিত হবে না, যখন আল্লাহ কারীম আমার ওপর প্রতিশোধ নিতে উদ্যত হবেন।

মুহাম্মাদ নামকরণে আমার প্রতি দায়িত্ব রয়েছে তার ওপর। আর তিনিই হলেন সর্বাধিক দায়িত্ব পূরণকারী।

দয়া করে যদি তিনি হাতে ধরে আমায় উদ্ধার না করেন তাহলে আমার পদস্খলন নিশ্চিত।”

নিজের মঙ্গল কামনাকারীর পক্ষে উপরোক্ত কবিতাগুচ্ছ ও তার অর্থ সম্পর্কে গভীর চিন্তা-ভাবনা করা উচিৎ। যে সকল সাধারণ মানুষ ও তথাকথিত আলেমবর্গ যারা এগুলোর প্রতি আকৃষ্ট এবং কুরআন মাজীদের পরিবর্তে এগুলোর যারা আবৃত্তি করে, তাদেরও এ ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করে দেখা উচিৎ। কোনো বান্দার অন্তরে কি এ কবিতাগুচ্ছের প্রতি বিশ্বাস আর আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

﴿ يَوۡمَ لَا تَمۡلِكُ نَفۡسٞ لِّنَفۡسٖ شَيۡ‍ٔٗاۖ وَٱلۡأَمۡرُ يَوۡمَئِذٖ لِّلَّهِ ١٩ ﴾ [ الانفطار : ١٩ ]

“যেদিন কেউ কারো উপকার করতে পারবে না এবং সেদিন সব কর্তৃত্ব হবে আল্লাহর।” [সূরা আল-ইনফিতার, আয়াত: ১৯] এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস: “হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কন্যা ফাতেমা! আমি আল্লাহর শাস্তি থেকে তোমাকে একটুও বাঁচতে পারব না।” এর প্রতি বিশ্বাস একত্রিত হতে পারে? আল্লাহর শপথ, তা হতে পারে না, আল্লাহর শপথ, তা হতে পারে না, আল্লাহর শপথ, তা হতে পারে না। যেমন একত্রিত হতে পারে না এ কথা বলা যে, -মূসা আলাইহিস সালাম সত্য, অনুরূপ ফির‘উনও সত্য। তদ্রূপ একথা কথা বলা যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত আবার আবু জাহলও সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন