HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

অযু ব্যতীত কুরআনুল কারীম স্পর্শ করার বিধান

লেখকঃ একদল বিজ্ঞ আলেম

কিতাবের নাম/ লেখক/ অনুবাদক/ সম্পাদক
অযু ব্যতীত কুরআনুল কারীম স্পর্শ করার বিধান

একদল বিজ্ঞ আলেম

অনুবাদক : সানাউল্লাহ নজির আহমদ

সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

সংক্ষিপ্ত বর্ণনা... .. .
কুরআনুল কারীম অযু ব্যতীত স্পর্শ করা যাবে-কিনা এ সম্পর্কে আহলে ইলমগণ দ্বিমত পোষণ করেছেন; তবে যারা বলেন অযু ব্যতীত স্পর্শ করা বৈধ নয়, তাদের কথাই অধিক বিশুদ্ধ মনে হয়। এ মর্মে তিনজন শাইখের তিনটি ফাতওয়ার অনুবাদ পেশ করা হলো। ক. শাইখ আব্দুল্লাহ ইবন বায, খ. প্রফেসর ড. আহমদ ইবন মুহাম্মাদ আল-খলিল ও গ. শাইখ ইবন উসাইমীন রহ. প্রমুখদের ফাতওয়া।

প্রথম ফাতওয়া:
শাইখ আব্দুল্লাহ ইবন বায রহ.-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: অযু ব্যতীত মুসহাফ স্পর্শ করা অথবা একস্থান থেকে অপর স্থানে নেওয়ার বিধান কী এবং অযু ব্যতীত কুরআন তিলাওয়াত করার বিধান কী?

তিনি উত্তরে বলেন, “জমহুর (অধিকাংশ) আহলে ইলমের নিকট অযু ব্যতীত মুসহাফ স্পর্শ করা জায়েয নয়। চার ইমামের ফাতওয়া এটাই। নবী সাল্লাল্লাহু ‘‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ এ ফাতওয়া প্রদান করতেন। আমর ইবন হাযম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত একটি সহীহ হাদীসে এসেছে, যা গ্রহণ করতে কোনো সমস্যা নেই। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়ামানবাসীদের নিকট লিখে পাঠান:

«أَنْ لَا يَمَسَّ الْقُرْآنَ إِلَّا طَاهِرٌ» .

“পবিত্র সত্তা ব্যতীত কেউ কুরআন স্পর্শ করবে না”। [মুয়াত্তা, হাদীস নং ৫৩৪; আবূ দাঊদ ফিল মারাসিল, হাদীস নং ৯৩]

নদের বিচারে হাদীসটি জায়্যিদ। এ হাদীসের একাধিক সনদ রয়েছে, যার একটি অপরটি দ্বারা শক্তিশালী হয়। অতএব, ছোট-বড় উভয় প্রকার নাপাকী থেকে পবিত্রতা অর্জন ব্যতীত কোনো মুসলিমের পক্ষে মুসহাফ স্পর্শ করা বৈধ নয়। অনুরূপ এক জায়গা থেকে অপর জায়গায় স্থানান্তর করাও বৈধ নয় যদি স্থানান্তরকারী নাপাক হয়। তবে কোনো আড়ালের মাধ্যমে স্পর্শ বা স্থানান্তর করা বৈধ, যেমন গিলাফের উপর থেকে স্পর্শ করা, বা থলির ভেতর বহন করা ইত্যাদি। আড়াল ব্যতীত সরাসরি কুরআনুল কারীম স্পর্শ করা জমহুর আহলে ইলমের নিকট বৈধ নয়। হ্যাঁ, মুখস্থ তিলাওয়াত করা বৈধ; অনুরূপ শিক্ষার্থীর হাতে রাখা মুসহাফ থেকে মুয়াল্লিমের তিলাওয়াত করা বৈধ; তবে বড় নাপাকির কারণে নাপাক বা জুনুবি ব্যক্তির জন্য বৈধ নয়। নবী সাল্লাল্লাহু ‘‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত, জানাবত তথা গোসল ফরয ব্যতীত কোনো অবস্থা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কুরআন তিলাওয়াত থেকে বিরত রাখত না। ইমাম আহমদ রহ. একটি জায়্যিদ সনদে বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাথরুম থেকে এসে কুরআনুল কারীমের কিছু অংশ তিলাওয়াত করেন এবং বলেন,

«هَذَا لِمَنْ لَيْسَ بِجُنُبٍ، فَأَمَّا الْجُنُبُ فَلَا، وَلَا آيَةَ» .

“এ বিধান হচ্ছে তার জন্য যে জুনুবি নয়, কিন্তু যে জুনুবি তার জন্য তিলাওয়াত করা বৈধ নয়, এক আয়াতও নয়”। [আহমদ, হাদীস নং ৮৭৪] জুনুবি ব্যক্তি মুসহাফ দেখে কিংবা মুখস্থ কোনোভাবেই গোসল ব্যতীত কুরআন পড়বে না। আর ছোট নাপাকের কারণে নাপাক ব্যক্তি কুরআন মুখস্থ পড়বে, কিন্তু স্পর্শ করবে না।

এ মাসআলার সাথে আরেকটি মাসআলা সম্পৃক্ত; আর তা হচ্ছে হায়েয (ঋতুমতী) ও নিফাসের নারীদের কুরআনুল কারীম তিলাওয়াত করার বিধান। তাদের কুরআনুল কারীম তিলাওয়াত করার বৈধতার ব্যাপারে আহলে ইলম দ্বিমত পোষণ করেছেন। কেউ বলেছেন তাদের জন্য তিলাওয়াত করা বৈধ নয়, কারণ তারা জুনুবি ব্যক্তির ন্যায়। দ্বিতীয় অভিমত হচ্ছে তাদের জন্য মুখস্থ তিলাওয়াত করা বৈধ, তবে স্পর্শ করবে না এবং তারা জুনুবি ব্যক্তির মতো নয়। কারণ, হায়েস ও নিফাসের সময় অনেক লম্বা হয়, জুনুবি ব্যক্তির মতো স্বল্পকালীন নয়। দ্বিতীয়ত জুনুবি ব্যক্তি যখন ইচ্ছা গোসল করে কুরআন তিলাওয়াত করতে সক্ষম, কিন্তু হায়েয ও নিফাসের নারীদের পক্ষে এরূপ করা সম্ভব নয়। অতএব, তাদেরকে জুনুবি ব্যক্তির সাথে তুলনা করা সঠিক নয়। তাদের জন্য মুখস্থ কুরআন পড়া বৈধ, এটাই অধিক বিশুদ্ধ। কারণ, তাদের কুরআন তিলাওয়াতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়, এমন কোনো দলীল নেই, বরং তাদের কুরআন তিলাওয়াতকে বৈধতা প্রদানকারী অনেক দলীল রয়েছে। সহীহ বুখারী ও মুসলিমে রয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে বলেন, হজের মৌসুমে যখন তার হায়েয হয়েছিল:

«افْعَلِي مَا يَفْعَلُ الْحَاجُّ، غَيْرَ أَنْ لَا تَطُوفِي بِالْبَيْتِ حَتَّى تَطْهُرِي» .

“হাজিরা যা করে তুমিও তাই কর, তবে পবিত্র হওয়ার আগ পর্যন্ত বায়তুল্লাহ তাওয়াফ কর না”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২১১।] হাজী সাহেবগণ কুরআন তিলাওয়াত করেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কুরআন তিলাওয়াত থেকে নিষেধ করেন নি, এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, ঋতুমতী নারীর জন্য কুরআনুল কারীম তিলাওয়াত করা বৈধ। অনুরূপ নির্দেশ প্রদান করেছেন আসমা বিনতে উমাইসকে, যখন সে বিদায় হজের মিকাতে মুহাম্মাদ ইবন আবূ বকরকে প্রসব করেছিল। এ থেকে প্রমাণিত হয় হায়েয ও নিফাসের নারীর জন্য কুরআন তিলাওয়াত করা বৈধ, তবে স্পর্শ করা ব্যতীত। পক্ষান্তরে ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত হাদীস, যেখানে নবী সাল্লাল্লাহু ‘‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«لَا تَقْرَأْ الْحَائِضُ وَلَا الْجُنُبُ شَيْئًا مِنَ الْقُرْآنِ» .

“হায়েয ও জুনুবি ব্যক্তি কুরআনের কোনো অংশ তিলাওয়াত করবে না”। [তিরমিযী, হাদীস নং ১৩১] হাদীসটি দুর্বল। এ সনদে ইসমাঈল ইবন আইয়াশ রয়েছে, আহলে ইলমগণ হিজাযীদের থেকে তার বর্ণিত হাদীসকে দুর্বল বলেছেন। তারা বলেন, সে যখন শাম তথা তার দেশের লোকদের থেকে বর্ণনা করেন ঠিক আছে, কিন্তু যখন হিজাযীদের থেকে বর্ণনা করেন তখন দুর্বল। এ হাদীস তাদের থেকেই বর্ণিত, অতএব, হাদীসটি দুর্বল”। [দেখুন: মাজমু‘ ফতাওয়া ও মাকালাত মুতানাউওয়্যিআহ, ৪র্থ খণ্ড।]

দ্বিতীয় ফাতাওয়া:
প্রফেসর ড. আহমদ ইবন মুহাম্মাদ আল-খলীল কুরআনুল কারীম স্পর্শ করার সময় অযুর বিধান সংক্রান্ত এক নিবন্ধে বলেন,

الحمد الله والصلاة والسلام على نبينا محمد وعلى آله وصحبه أجمعين

অতঃপর যেসব ফিকহি মাসআলা সম্পর্কে অধিক প্রশ্ন করা হয় এবং যার প্রয়োজন খুব বেশি দেখা দেয়, তার মধ্যে ‘অযু ব্যতীত কুরআনুল কারীম স্পর্শ করার মাসআলাটি অন্যতম’।

মাসআলাটি বিরোধপূর্ণ: সকল আলেম একমত যে, কুরআনুল কারীম স্পর্শ করার জন্য অযু করা বৈধ ও মুস্তাহাব, তবে অযু করা ওয়াজিব কিনা এ নিয়ে তাদের দ্বিমত রয়েছে। কেউ বলেন অযু করা ওয়াজিব, কেউ বলেন মুস্তাহাব। নিম্ন আমরা দলীলসহ তাদের অভিমত উল্লেখ করছি:

প্রথম অভিমত:

পবিত্র সত্তা ব্যতীত কারো জন্য কুরআনুল কারীম স্পর্শ করা বৈধ নয়, তাই অপবিত্র ব্যক্তি কুরআন স্পর্শ করবে না। এটাই পূর্ববর্তী ও পরবর্তী জমহুর আলেমদের অভিমত। এটাই হানাফী [মারাকিল ফালাহ: (পৃ. ৬০), বাদায়েউস সানায়ে ফী তারতীবিশ শারায়ে: (১/৩৩)], মালেকী [আশ-শারহুস সাগীর: (১/১৪৯), মাওয়াহিবুল জালিল ফী শারহি মুখতাসারিল খালিল: (১/৩০৩)], শাফে‘ঈ [মুগনিল মুহতাজ: (১/৩৬), আল-মাজমু শারহুল মুহায্যাব: (২/৬৫)] ও হাম্বলীদের [আল-ইনসাফ ফী মারিফাতির রাজিহ মিনাল খিলাফ, লিল মুরদাওয়াঈ: (১/২২৩), শাহরু মুনতাহাল ইরাদাত: (১/৭৭)] মাযহাব। শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়াহ রহ. এ অভিমত গ্রহণ করেছেন। [মাজমুউল ফাতাওয়া: (২১/২৬৬)] তাদের দলীল, আব্দুল্লাহ ইবন আবি বকর ইবন মুহাম্মাদ ইবন আমর ইবন হাযম সূত্রে ইমাম মালিক রহ. বর্ণনা করেন,

«أَنَّ فِي الْكِتَابِ الَّذِي كَتَبَهُ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لِعَمْرِو بْنِ حَزْمٍ : «أَنْ لاَ يَمَسَّ الْقُرْآنَ إِلاَّ طَاهِرٌ» .

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমর ইবন হাযমকে যে পত্র লিখেছিলেন, তাতে লিখা ছিল: ‘পবিত্র ব্যক্তি ব্যতীত কেউ কুরআন স্পর্শ করবে না”। [মুয়াত্তা, হাদীস নং ৫৩৪; আবূ দাঊদ ফিল মারাসিল, হাদীস নং ৯৩]

এ হাদীস মুত্তাসিল ও মুরসাল উভয় সনদে বর্ণিত হয়েছে, ইমাম মালিক মুরসাল এবং ইমাম নাসাঈ ও ইবন হিব্বান রহ. মুত্তাসিল বর্ণনা করেছেন; তবে যারা মুরসাল বলেছেন তাদের কথাই অধিক বিশুদ্ধ, সনদ মুত্তাসিল মানলে হাদীসটি সহীহ নয়।

ইমাম আহমদকে এ হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তিনি বলেন, আশা করছি হাদীসটি সহীহ। আসরাম বলেন, ইমাম আহমদ হাদীসটিকে দলীল হিসেবে পেশ করেছেন। [আত-তিবইয়ান ফি আকসামিল কুরআন: (পৃ. ২২৯), আত-তালখিসুল হাবির: (৪/৫৮)]

এ হাদীস সম্পর্কে ইমাম আহমদ থেকে দু’টি বর্ণনা রয়েছে, এক বর্ণনায় তিনি সহীহ বলেছেন, অপর বর্ণনায় তিনি হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেছেন। এ থেকে প্রমাণ হয় যে, হাদীসটি সহীহ বলা যায় এবং দলীল হওয়ার যোগ্য, যদিও সনদ সংরক্ষিত নয়।

হাদীসটি মুরসাল হওয়া সত্ত্বেও ইমাম আহমদ ও অন্যান্য ইমামগণ গ্রহণ করেছেন, কারণ গোটা উম্মত এটাকে মেনে নিয়েছে ও তার দাবির ওপর আমল করে আসছে।

শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়াহ রহ. বলেন, “ইমাম আহমদ বলেছেন: এতে সন্দেহ নেই যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমর ইবন হাযমকে এ হাদীস লিখেছেন। [মাজমুউল ফাতাওয়া: (২১/২৬৬)] হাফেয ইবন হাজার রহ. ইবন তাইমিয়ার কথা সংক্ষেপ করে বলেন, ইমামদের একটি দল উল্লিখিত চিঠি সংবলিত হাদীসকে সহীহ বলেছেন, সনদের বিবেচনায় নয়, বরং প্রসিদ্ধির বিবেচনায়। ইমাম শাফে‘ঈ স্বীয় রিসালায় বলেন, আমর ইবন হাযমকে লিখা চিঠি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত বলেই আহলে ইলম তা গ্রহণ করেছেন”। [আত-তালখিসুল হাবির: (৪/৫৮)] এ থেকে প্রমাণ হয় হাদীসটি গ্রহণযোগ্য দলীল।

দ্বিতীয় দলীল:

আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

﴿إِنَّهُۥ لَقُرۡءَانٞ كَرِيمٞ ٧٧ فِي كِتَٰبٖ مَّكۡنُونٖ ٧٨ لَّا يَمَسُّهُۥٓ إِلَّا ٱلۡمُطَهَّرُونَ ٧٩﴾ [ الواقعة : ٧٧، ٧٩ ]

“নিশ্চয় এটি মহিমান্বিত কুরআন, যা সুরক্ষিত কিতাবে রয়েছে, কেউ তা স্পর্শ করবে না পবিত্রগণ ছাড়া” সূরা আল-ওয়াকিয়াহ, আয়াত: ৭৭-৭৯]

“দলীল হিসেবে এ আয়াতটি পেশ করা দুরস্ত নয়, কারণ পূর্বাপর বিষয় থেকে স্পষ্ট যে, পবিত্রগণ ব্যতীত যে কিতাব কেউ স্পর্শ করে না, সেটা মাকনুন কিতাবে বিদ্যমান। আর কিতাবে মাকনুন দ্বারা উদ্দেশ্য লাওহে মাহফুয”। [আত-তিবইয়ান ফী আকসামিল কুরআন: (পৃ. ২২৯)] আর لَا يَمَسُّهُ এর সর্বনাম লাওহে মাহফুযের দিকে ফিরেছে, কারণ এটাই তার নিকটতম বিশেষ্য। অতএব, অযুসহ কুরআন স্পর্শ করার পক্ষে এ আয়াত দলীল নয়।

ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেন, “আমি শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়াহ রহ.-কে শুনেছি, তিনি এ আয়াতকে ভিন্নভাবে দলীল হিসেবে পেশ করতেন। তিনি বলেন, সতর্কতার একটি দিক হচ্ছে, আসমানে বিদ্যমান সহিফাগুলো যখন পবিত্র সত্তা ব্যতীত কেউ স্পর্শ করে না, অনুরূপ আমাদের হাতে বিদ্যমান সহিফাগুলো আমরা পবিত্র অবস্থা ব্যতীত স্পর্শ করব না। হাদীসটি মূলত এ আয়াত থেকে নিঃসৃত”। [আত-তিবইয়ান ফী আকসামিল কুরআন: (পৃ. ২২৯)]

সত্যকথা হচ্ছে, সতর্কতা বা যেভাবেই হোক এ আয়াতে তার পক্ষে কোনো দলীল নেই। অযু ব্যতীত কুরআন স্পর্শ করা যাবে না মর্মে যদি অন্যান্য স্পষ্ট দলীল না থাকত, এ আয়াতকে তার পক্ষে দলীল হিসেবে পেশ করা যেত না।

তৃতীয় দলীল:

ইসহাক ইবন রাহওয়েহ বর্ণনা করেন, “অযুসহ কুরআনুল কারীম স্পর্শ করা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথীদের আমল ছিল”। [মাসায়েলুল ইমাম আহমদ ও ইসহাক ইবন রাহওয়েহ: (২/৩৪৫)] শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়াহ রহ. বলেন, সালমান ফারসি, আব্দুল্লাহ ইবন উমার ও অন্যান্য সাহাবীদের এ অভিমত ছিল। সাহাবীদের কেউ তাদের বিরোধিতা করেছেন আমরা জানি না”। [মাজমুইল ফাতাওয়া: (২১/২৬৬)]

দ্বিতীয় অভিমত:

কুরআনুল কারীম স্পর্শ করার জন্য অযু করা মুস্তাহাব, তবে অযু ব্যতীতও কুরআন স্পর্শ করা জায়েয। এটা যাহেরিয়াদের মাযহাব, ইবন হাযম এ অভিমতকে শক্তিশালী করেছেন। [আল-মুহাল্লাহ: (১/৯৫)] এ মতের পক্ষে তারা নিম্নের দলীলগুলো পেশ করেন:

প্রথম দলীল:

কুরআনুল কারীম ও সহীহ সুন্নাহ’য় এমন কোনো দলীল নেই, যার দ্বারা প্রমাণ হয় যে, অযু ব্যতীত মুসহাফ (কুরআন) স্পর্শ করা যাবে না। তিলাওয়াতের জন্য মুসহাফ স্পর্শ করা ভালো কাজ, যার জন্য ব্যক্তি অবশ্যই সাওয়াব পাবে। যদি কেউ মুসহাফ স্পর্শ করা থেকে বিরত রাখতে চায়, তাকে অবশ্যই দলীল পেশ করতে হবে। [আল-মুহাল্লা বিল আসার: (১/৯৫)]

দ্বিতীয় দলীল:

আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস কর্তৃক বর্ণিত, আবু সুফিয়ান ইবন হারব তাকে বলেছেন: ‘কুরাইশের দলনেতা হিসেবে হিরাকল তার নিকট দূত পাঠান.....’ এ ঘটনায় রয়েছে: অতঃপর তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের চিঠি তলব করেন, যা দিয়ে দিহইয়া কালবিকে বসরার প্রধানের নিকট প্রেরণ করা হয়েছিল। হিরাকল চিঠি হাতে নিয়ে পড়ল, তাতে ছিল: “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম, মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল্লাহর পক্ষ থেকে রোমের প্রধান হিরাকলের নিকট। হিদায়াত অনুসরণকারীর ওপর সালাম, অতঃপর আমি তোমাকে ইসলামের আহ্বান জানাচ্ছি, ইসলাম গ্রহণ কর নিরাপদ থাকবে। আল্লাহ তোমাকে দ্বিগুণ সাওয়াব প্রদান করবেন। আর যদি তুমি বিরত থাক, তাহলে তোমার ওপর আরিসিনদের পাপ।

﴿يَٰٓأَهۡلَ ٱلۡكِتَٰبِ تَعَالَوۡاْ إِلَىٰ كَلِمَةٖ سَوَآءِۢ بَيۡنَنَا وَبَيۡنَكُمۡ أَلَّا نَعۡبُدَ إِلَّا ٱللَّهَ وَلَا نُشۡرِكَ بِهِۦ شَيۡ‍ٔٗا وَلَا يَتَّخِذَ بَعۡضُنَا بَعۡضًا أَرۡبَابٗا مِّن دُونِ ٱللَّهِۚ فَإِن تَوَلَّوۡاْ فَقُولُواْ ٱشۡهَدُواْ بِأَنَّا مُسۡلِمُونَ ٦٤﴾ [ ال عمران : ٦٤ ]

“হে কিতাবীগণ, তোমরা এমন কথার দিকে আস, যা আমাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে সমান যে, আমরা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদত করব না। আর তার সাথে কোনো কিছুকে শরীক করব না এবং আমাদের কেউ কাউকে আল্লাহ ছাড়া রব হিসাবে গ্রহণ করব না। তারপর যদি তারা বিমুখ হয় তবে বল, ‘তোমরা সাক্ষী থাক যে, নিশ্চয় আমরা মুসলিম” সূরা আলে-ইমরান, আয়াত: ৬৪]

ইবন হাযম রহ. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনুল কারীমের এ আয়াতসহ নাসারাদের নিকট চিঠি প্রেরণ করেছেন। তিনি অবশ্যই জানতেন যে, এ চিঠি তারা স্পর্শ করবে, তবুও তিনি আয়াত লিখেছেন। [আল-মুহাল্লা বিল আসার: (১/৯৮)]

এ দলীলের উত্তর: চিঠিতে বিদ্যমান আয়াতটি কুরআনুল কারীমের হুকুম রাখে না, বরং এটা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহ ওয়াসাল্লামের বক্তৃতার অংশ অথবা তাফসীরের কিতাবে বিদ্যমান আয়াতের ন্যায় একটি আয়াত, যা অযু ব্যতীত স্পর্শ করা বৈধ। [আল-মুগনি লি ইবন কুদামাহ: (১/১০৯); নাইলুল আওতার: (১/২৬১)]

তৃতীয় দলীল:

মুসলিমরা সর্বদা তাদের বাচ্চাদের অযু ব্যতীত কুরআন স্পর্শ করার অনুমতি দিয়ে আসছেন, যদি এমন হত যে, অযু ব্যতীত কুরআন স্পর্শ করা যাবে না, তাহলে বাচ্চাদের তারা এ অনুমতি দিতেন না।

এ দলীলের উত্তর: এটা প্রয়োজনের খাতিরে ও বিশেষ স্বার্থের জন্য বৈধ, যদি বাচ্চাদের অযু ব্যতীত কুরআন পড়তে নিষেধ করা হয়, তাহলে তাদের কুরআন তিলাওয়াত অবশ্যই কমে যাবে। অতএব মুসলিমদের এ আমল দলীল হিসেবে পেশ করা যথাযথ নয়।

বিশুদ্ধ অভিমত:

ইনশাআল্লাহ, যারা বলেন কুরআন স্পর্শ করার জন্য অবশ্যই অযু করা শর্ত তাদের কথাই বিশুদ্ধ। বিশেষ করে এটা পূর্বাপর সকল মনীষীদের মাযহাব। ইবন হাযমের দলীল খুব দুর্বল, যার উত্তর আমরা পূর্বে পেশ করেছি।

তৃতীয় ফাতওয়া:
শাইখ উসাইমীন রহ. একসময় বলতেন অযু ব্যতীত কুরআনুল কারীম স্পর্শ করা বৈধ, কিন্তু পরবর্তীতে তিনি এ ফাতওয়া থেকে প্রত্যাবর্তন করেন। অতঃপর তিনি বলেন, অযু ব্যতীত কুরআনুল কারীম স্পর্শ করা বৈধ নয়, কারণ একটি হাদীসে আছে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহ ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«أَنْ لَا يَمَسَّ الْقُرْآنَ إِلَّا طَاهِرٌ» .

“পবিত্র ব্যক্তি ব্যতীত কেউ কুরআন স্পর্শ করবে না”। [মুয়াত্তা, হাদীস নং ৫৩৪; আবূ দাঊদ ফিল মারাসিল, হাদীস নং ৯৩] এ হাদীস যদিও মুরসাল, কিন্তু উম্মত তাকে ব্যাপকভাবে গ্রহণ করার কারণে সহীহ পরিণত হয়েছে। আর হাদীসে বিদ্যমান طاهرٌ শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য পবিত্র ব্যক্তি, যার অযু রয়েছে। হাদীসের অর্থ এই নয় যে, মুমিন ব্যতীত কেউ কুরআন স্পর্শ করবে না, কারণ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো মুমিন ব্যক্তিকে طاهرٌ সম্বোধন করেন নি। অতএব, তাহির দ্বারা উদ্দেশ্য অযু সম্পন্ন ব্যক্তি; তার আরেকটি প্রমাণ হচ্ছে অযুর আয়াত, যেখানে আল্লাহ তা‘আলা অযু, গোসল ও তায়াম্মুমের কথা উল্লেখ করেছেন, যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿مَا يُرِيدُ ٱللَّهُ لِيَجۡعَلَ عَلَيۡكُم مِّنۡ حَرَجٖ وَلَٰكِن يُرِيدُ لِيُطَهِّرَكُمۡ ٦﴾ [ المائ‍دة : ٦ ]

“আল্লাহ তোমাদের ওপর কঠিন করতে চান না, তবে তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান” সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৬]

অতএব, কোনো ব্যক্তির জন্য বৈধ নয় অযু ব্যতীত কুরআনুল কারীম স্পর্শ করা, তবে রোমাল, হাত মোজা অথবা মিসওয়াক দ্বারা যদি কুরআনুল কারীমের পৃষ্ঠা উল্টায় তার অনুমিত রয়েছে”। এটাই শাইখের সর্বশেষ ফাতওয়া:

قال في " الشرح الممتع " : فالذي تَقَرَّرَ عندي أخيراً : أنَّه لا يجوز مَسُّ المصْحَفِ إلا بِوُضُوء .

শাইখ, ‘আশ-শারহুল মুমতি’ গ্রন্থে বলেন, “সর্বশেষ আমার নিকট প্রমাণিত হয়েছে যে, অযু ব্যতীত কুরআনুল কারীম স্পর্শ করা বৈধ নয়”।

সমাপ্ত

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন