HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
জানাযার বিধিবিধান সংক্রান্ত ৭০টি প্রশ্ন
লেখকঃ শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীন রহ.
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ্র জন্য। দরূদ এবং সালাম বর্ষিত হোক আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর। জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে একজন মুসলিমকে পবিত্র ক্বুরআন ও ছহীহ হাদীছের পথনির্দেশ মেনে চলতে হবে। মানুষের এই নশ্বর পৃথিবীতে আগমন করার সময় যেমন তার অভিভাবকের কতিপয় দায়িত্ব ও কর্তব্য থাকে, তেমনি তার মৃত্যুর সময়ও জীবিতদের কিছু করণীয় রয়েছে। আর এ সবকিছুই আমাদের পবিত্র দ্বীনে ইসলামে সবিস্তারে বর্ণিত হয়েছে। কল্যাণের এমন কোন দিক নেই, যা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বাৎলে দিয়ে যান নি। অনুরূপভাবে এমন কোন অকল্যাণ নেই, যা থেকে তিনি আমাদেরকে সতর্ক করে যাননি। অতএব, কোন মুসলিম মৃত্যুমুখে পতিত হলে তাকে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ স্মরণ করাতে হবে। অতঃপর সে মৃত্যুবরণ করলে সুন্নাতী তরীক্বায় তার কাফন-দাফনের কাজ সম্পন্ন করতে হবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, একজন মানুষ মৃত্যুমুখে পতিত হওয়া থেকে শুরু করে মৃত্যুর পরে তাকে দাফনের পর পর্যন্ত অসংখ্য কুসংস্কার এবং অনৈসলামিক কর্মকাণ্ড আমাদের দেশে প্রচলিত আছে। এমন সময় মানুষের কি কি করণীয় এবং কি কি বর্জনীয়, সে সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা এই ছোট্ট পুস্তিকায় প্রশ্নোত্তর আকারে দেওয়া হয়েছে।
মানুষ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। সেজন্য হাযার চেষ্টা সত্ত্বেও ভুল হওয়া স্বাভাবিক। আশা করি, বিজ্ঞ পাঠকগণ ভুলত্রুটি সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় পরামর্শ, নির্দেশনা ও সহযোগিতা দিয়ে অনুবাদককে কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করবেন।
পরিশেষে, অনুবাদকের কাজে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যারা সার্বিক সহযোগিতা করেছেন, তাঁদের প্রতি আমরা আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আল্লাহপাক তাঁদেরকে জাযায়ে খায়ের দান করুন। পাঠকগণ বইটি পড়ে উপকৃত হলে আমাদের শ্রম স্বার্থক হবে ইনশাআল্লাহ। মহান আল্লাহ আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াসটুকু ক্ববূল করুন এবং ইহাকে আমাদের পরকালীন পাথেয় হিসাবে মঞ্জুর করুন। আমীন!
বিনীত
আব্দুল আলীম বিন কাওসার
abdulalim.kawsar@yahoo.com
মানুষ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। সেজন্য হাযার চেষ্টা সত্ত্বেও ভুল হওয়া স্বাভাবিক। আশা করি, বিজ্ঞ পাঠকগণ ভুলত্রুটি সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় পরামর্শ, নির্দেশনা ও সহযোগিতা দিয়ে অনুবাদককে কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করবেন।
পরিশেষে, অনুবাদকের কাজে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যারা সার্বিক সহযোগিতা করেছেন, তাঁদের প্রতি আমরা আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আল্লাহপাক তাঁদেরকে জাযায়ে খায়ের দান করুন। পাঠকগণ বইটি পড়ে উপকৃত হলে আমাদের শ্রম স্বার্থক হবে ইনশাআল্লাহ। মহান আল্লাহ আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াসটুকু ক্ববূল করুন এবং ইহাকে আমাদের পরকালীন পাথেয় হিসাবে মঞ্জুর করুন। আমীন!
বিনীত
আব্দুল আলীম বিন কাওসার
abdulalim.kawsar@yahoo.com
৩
জানাযার বিধিবিধান
প্রশ্ন ১: মরণাপন্ন ব্যক্তির কাছে উপস্থিত ব্যক্তির করণীয় কি? আর মরণাপন্ন ব্যক্তির নিকট সূরা ইয়াসিন পড়া কি সুন্নাতসম্মত?উত্তরঃ বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম। সমস্ত প্রশংসা মহান রব্বুল আলামীনের জন্য, দরূদ এবং সালাম বর্ষিত হোক আমাদের নবীর প্রতি, তাঁর পরিবারবর্গের প্রতি এবং সকল ছাহাবীর প্রতি। রোগী দেখতে যাওয়া মুসলিমদের পারস্পরিক অধিকার। আর যে রোগী দেখতে যাবে, তার জন্য উচিৎ হবে রোগীকে তওবা, যরূরী অছিয়ত এবং সর্বদা আল্লাহ্র যিক্র করার কথা স্বরণ করিয়ে দেওয়া। কেননা রোগী এ সময় এ জাতীয় বিষয়ের খুব বেশী মুখাপেক্ষী থাকে। অনুরূপভাবে রোগী যদি মৃত্যুমুখে পতিত হয় এবং তার কাছে উপস্থিত ব্যক্তি যদি নিশ্চিত হয় যে, তার মৃত্যু এসে গেছে, তাহলে তার উচিৎ তাকে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ পড়ার কথা স্বরণ করিয়ে দেওয়া, যেমনটি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদেশ করেছেন। [. ইমাম মুসলিম আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের মুমূর্ষু রোগীদেরকে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ স্বরণ করাও’ (‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৯১৬)।]
সে শুনতে পায় এমন শব্দে তার নিকট আল্লাহ্র যিকর করবে। ফলে সে স্মরণ করবে এবং আল্লাহ্র যিকর করবে। বিদ্বানগণ বলেন, মুমূর্ষু ব্যক্তিকে লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ পড়ার জন্য আদেশ করা উচিৎ নয়। কেননা তার মনটা ছোট হয়ে যাওয়া এবং তার এই কঠিন অবস্থার কারণে সে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ বলতে অস্বীকার করে বসতে পারে। আর অস্বীকার করে বসলেই তার শেষ ভাল হবে না। সেজন্য তার শয্যাপাশে লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ পড়ে তাকে এই কালিমা স্বরণ করাবে। [অর্থাৎ তাকে বলবেনা যে, হে অমুক! লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ পড়]।
এমনকি বিদ্বানগণ বলেছেন, যদি তাকে স্বরণ করিয়ে দেওয়ার পর সে স্বরণ করে এবং ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ পড়ে, তাহলে তখন চুপ হয়ে যাবে এবং তার সাথে আর কোনো কথা বলবে না- যাতে দুনিয়াতে তার সর্বশেষ কথাটি হয় ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’। কিন্তু মুমূর্ষু ব্যক্তি যদি তারপর আবার অন্য কোন কথা বলে ফেলে, তাহলে আবার তাকে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ স্বরণ করাবে- যাতে তার শেষ কালেমাটি হয় ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’।
আর মরণাপন্ন ব্যক্তির নিকট সূরা ইয়াসীন তেলাওয়াতকে অনেক বিদ্বান সুন্নাত বলেছেন। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা মরণাপন্ন ব্যক্তির নিকট সূরা ইয়াসীন পড়’। [. আবু দাঊদ, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৩১২১; ইবনু মাজাহ, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/১৪৪৮; আহমাদ, ৫/২৬, ২৭।] তবে কেউ কেউ হাদীছটি যঈফ বলেছেন। সুতরাং যার দৃষ্টিতে হাদীছটি ছহীহ, তার নিকট সুরা ইয়াসীন পড়া সুন্নাত। পক্ষান্তরে যার দৃষ্টিতে হাদীছটি যঈফ, তার নিকট সূরাটি পড়া সুন্নাত নয়। [. হাদীছটিকে ইমাম আলবানী ‘যঈফ’ বলেছেন (আলবানী, সুনানে আবূ দাঊদ, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৩১২১)। তিনি ‘ইরওয়াউল গালীল’-এ বলেছেন, হাদীছটিতে তিনটি ত্রুটি রয়েছে: ১. (হাদীছটির একজন বর্ণনাকরী) আবূ উছমান ‘মাজহূল’ বা অপরিচিত, ২. তার পিতাও ‘মাজহূল এবং ৩. হাদীছটিতে ‘ইযত্বিরাব’ রয়েছে (৩/১৫১, হা/৬৮৮)। সেজন্য শায়খ ইবনে বায (রহেমাহুল্লাহ)কে এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, হাদীছটিতে যেহেতু একজন ‘মাজহূল’ বা অপরিচিত বর্ণনাকারী রয়েছে, সেহেতু মুমূর্ষু ব্যক্তির নিকট সূরা ইয়াসীন তেলাওয়াত করা উত্তম নয়। অবশ্য তার নিকট পবিত্র ক্বুরআন পড়া ভাল। কিন্তু সূরা ইয়াসীনকে নির্দিষ্ট করে নেওয়ার কোন যুক্তি নেই (মাজমূউ ফাতাওয়া ইবনে বায, ১৩/৯৫)।–অনুবাদক।]
সে শুনতে পায় এমন শব্দে তার নিকট আল্লাহ্র যিকর করবে। ফলে সে স্মরণ করবে এবং আল্লাহ্র যিকর করবে। বিদ্বানগণ বলেন, মুমূর্ষু ব্যক্তিকে লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ পড়ার জন্য আদেশ করা উচিৎ নয়। কেননা তার মনটা ছোট হয়ে যাওয়া এবং তার এই কঠিন অবস্থার কারণে সে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ বলতে অস্বীকার করে বসতে পারে। আর অস্বীকার করে বসলেই তার শেষ ভাল হবে না। সেজন্য তার শয্যাপাশে লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ পড়ে তাকে এই কালিমা স্বরণ করাবে। [অর্থাৎ তাকে বলবেনা যে, হে অমুক! লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ পড়]।
এমনকি বিদ্বানগণ বলেছেন, যদি তাকে স্বরণ করিয়ে দেওয়ার পর সে স্বরণ করে এবং ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ পড়ে, তাহলে তখন চুপ হয়ে যাবে এবং তার সাথে আর কোনো কথা বলবে না- যাতে দুনিয়াতে তার সর্বশেষ কথাটি হয় ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’। কিন্তু মুমূর্ষু ব্যক্তি যদি তারপর আবার অন্য কোন কথা বলে ফেলে, তাহলে আবার তাকে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ স্বরণ করাবে- যাতে তার শেষ কালেমাটি হয় ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’।
আর মরণাপন্ন ব্যক্তির নিকট সূরা ইয়াসীন তেলাওয়াতকে অনেক বিদ্বান সুন্নাত বলেছেন। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা মরণাপন্ন ব্যক্তির নিকট সূরা ইয়াসীন পড়’। [. আবু দাঊদ, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৩১২১; ইবনু মাজাহ, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/১৪৪৮; আহমাদ, ৫/২৬, ২৭।] তবে কেউ কেউ হাদীছটি যঈফ বলেছেন। সুতরাং যার দৃষ্টিতে হাদীছটি ছহীহ, তার নিকট সুরা ইয়াসীন পড়া সুন্নাত। পক্ষান্তরে যার দৃষ্টিতে হাদীছটি যঈফ, তার নিকট সূরাটি পড়া সুন্নাত নয়। [. হাদীছটিকে ইমাম আলবানী ‘যঈফ’ বলেছেন (আলবানী, সুনানে আবূ দাঊদ, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৩১২১)। তিনি ‘ইরওয়াউল গালীল’-এ বলেছেন, হাদীছটিতে তিনটি ত্রুটি রয়েছে: ১. (হাদীছটির একজন বর্ণনাকরী) আবূ উছমান ‘মাজহূল’ বা অপরিচিত, ২. তার পিতাও ‘মাজহূল এবং ৩. হাদীছটিতে ‘ইযত্বিরাব’ রয়েছে (৩/১৫১, হা/৬৮৮)। সেজন্য শায়খ ইবনে বায (রহেমাহুল্লাহ)কে এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, হাদীছটিতে যেহেতু একজন ‘মাজহূল’ বা অপরিচিত বর্ণনাকারী রয়েছে, সেহেতু মুমূর্ষু ব্যক্তির নিকট সূরা ইয়াসীন তেলাওয়াত করা উত্তম নয়। অবশ্য তার নিকট পবিত্র ক্বুরআন পড়া ভাল। কিন্তু সূরা ইয়াসীনকে নির্দিষ্ট করে নেওয়ার কোন যুক্তি নেই (মাজমূউ ফাতাওয়া ইবনে বায, ১৩/৯৫)।–অনুবাদক।]
৪
প্রশ্ন ২: জানাযা পড়ার জন্য সমবেত করার উদ্দেশ্যে কারো মৃত্যু সংবাদ তার আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধু-বান্ধবকে দিলে কি তা নিষিদ্ধ মৃত্যু সংবাদ ঘোষণার আওতায় পড়বে নাকি তা বৈধ?উত্তরঃ এটি বৈধ মৃত্যু সংবাদ ঘোষণার অন্তর্ভুক্ত। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাজাশীর মৃত্যুর দিনে তাঁর মৃত্যুর খবর দিয়েছিলেন। [. বুখারী, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/১৩২৭; মুসলিম, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৯৫১।] তাছাড়া যে মহিলা মসজিদ ঝাড়ু দিত, ছাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁর মৃত্যুর সংবাদ না দিয়ে দাফন করে ফেললে তিনি বলেন, ‘তোমরা যদি আমাকে খবরটি দিতে’। [. বুখারী, ‘ছালাত’ অধ্যায়, হা/৪৫৮; মুসলিম, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৯৫৬।]
সুতরাং জানাযায় বেশী মানুষ শরীক হওয়ার উদ্দেশ্যে কারো মৃত্যু সংবাদ দিলে কোন সমস্যা নেই। কেননা এ মর্মে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। তবে মৃত ব্যক্তিকে দাফনের পরে মৃত্যুসংবাদ ঘোষণা শরী‘আত সম্মত নয়; বরং তা নিষিদ্ধ মৃত্যুসংবাদ ঘোষণার অন্তর্ভুক্ত।
সুতরাং জানাযায় বেশী মানুষ শরীক হওয়ার উদ্দেশ্যে কারো মৃত্যু সংবাদ দিলে কোন সমস্যা নেই। কেননা এ মর্মে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। তবে মৃত ব্যক্তিকে দাফনের পরে মৃত্যুসংবাদ ঘোষণা শরী‘আত সম্মত নয়; বরং তা নিষিদ্ধ মৃত্যুসংবাদ ঘোষণার অন্তর্ভুক্ত।
৫
প্রশ্ন ৩: মৃতকে গোসল দেওয়ার পদ্ধতি কি? এতদ্বিষয়ে এবং মৃতকে গোসল দেওয়ার ব্যাপারে দ্বীনি ছাত্রবৃন্দের জন্য আপনার নছীহত কি?উত্তরঃ মৃতকে গোসল দেওয়ার পদ্ধতিঃ মৃত ব্যক্তিকে এমন এক ঘেরা জায়গায় নিতে হবে, যেখানে কেউ তাকে দেখতে পাবে না। যারা তাকে গোসল করানোর কাজে সরাসরি অংশগ্রহণ করবে এবং যারা তাদেরকে সহযোগিতা করবে, তারা ছাড়া আর কেউ তার কাছে যাবে না। অতঃপর যে গোসল করাচ্ছে সে সহ অন্য কেউ যাতে তার লজ্জাস্থান দেখতে না পায়, সেজন্য তার লজ্জাস্থানে একটি নেকড়া দিয়ে দেহের কাপড়-চোপড় খুলে ফেলতে হবে। তারপর তাকে পরিষ্কার-পরিছন্ন করতে হবে। অতঃপর ছালাতের অযূর ন্যায় তাকে অযূ করাবে। তবে বিদ্বানগণ বলেন, তার নাক-মুখে পানি প্রবেশ করাবে না। বরং একটা নেকড়া ভিজিয়ে তা দিয়ে মৃতের দাঁত সমূহ এবং নাকের ভেতরে ঘষে পরিষ্কার করে দিবে। এরপর মৃতের মাথা ধুয়ে দিবে। অতঃপর তার সমস্ত শরীর ধুয়ে দিবে। তবে শরীর ধোয়ার সময় মৃত ব্যক্তির ডান অঙ্গ থেকে শুরু করবে। পানিতে বরই পাতা দেওয়া উচিৎ। কেননা তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় সাহায্য করে। বরই পাতার ফেনা দিয়ে মৃতের মাথা, দাড়ি ধুয়ে দিবে। অনুরূপভাবে শেষ বার ধোয়ার সময় পানিতে একটু কর্পূর মিশানো উচিৎ। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মেয়েকে গোসলদানকারী মহিলাগণকে বলেছিলেন, ‘শেষবার ধোয়ার সময় পানিতে একটু কর্পূর মিশাবে’। [. ইমাম মুসলিম উম্মে আত্বিইয়া (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) হতে র্বণনা করেন, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৯৩৯।] অতঃপর মৃতের গায়ের পানি মুছে তাকে কাফনের কাপড় পরাবে।
মৃতকে গোসল দেওয়া ফরযে কেফায়াহ। কেউ তা সম্পন্ন করলে অন্যদের উপর থেকে ফরযিয়াত উঠে যাবে। আমার মতে, যারা মৃত ব্যক্তিকে শর‘ঈ পদ্ধতিতে গোসল দিতে জানে, তারাই মৃতদের গোসলের দায়িত্ব নিবে। দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের সরাসরি গোসল করানোর কাজে অংশ নেওয়া যরূরী নয়। কেননা হতে পারে যে, শিক্ষার্থীরা এর চেয়ে আরো বেশী যরূরী কাজে ব্যস্ত রয়েছে। সেজন্য এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ গোসল দিলেই যথেষ্ট হবে। তবে দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের মৃতকে কাফন-দাফন করার পদ্ধতি ভালভাবে জেনে রাখা উচিৎ।
মৃতকে গোসল দেওয়া ফরযে কেফায়াহ। কেউ তা সম্পন্ন করলে অন্যদের উপর থেকে ফরযিয়াত উঠে যাবে। আমার মতে, যারা মৃত ব্যক্তিকে শর‘ঈ পদ্ধতিতে গোসল দিতে জানে, তারাই মৃতদের গোসলের দায়িত্ব নিবে। দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের সরাসরি গোসল করানোর কাজে অংশ নেওয়া যরূরী নয়। কেননা হতে পারে যে, শিক্ষার্থীরা এর চেয়ে আরো বেশী যরূরী কাজে ব্যস্ত রয়েছে। সেজন্য এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ গোসল দিলেই যথেষ্ট হবে। তবে দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের মৃতকে কাফন-দাফন করার পদ্ধতি ভালভাবে জেনে রাখা উচিৎ।
উত্তরঃ জানাযার ছালাতের পদ্ধতি: মৃতকে মুছল্লীদের সামনে রাখতে হবে। মৃত পুরুষ হলে ইমাম মাথা বরাবর দাঁড়াবেন আর মহিলা হলে দাঁড়াবেন মাঝ বরাবর। অতঃপর প্রথম তাকবীর দিয়ে সূরা ফাতিহা পড়বেন, দ্বিতীয় তাকবীর দিয়ে দরূদ শরীফ পড়বেন এবং তৃতীয় তাকবীর দিয়ে মৃতের জন্য দো‘আ করবেন।
«اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِحَيِّنَا وَمَيِّتِنَا وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا وَصَغِيرِنَا وَكَبِيرِنَا وَذَكَرِنَا وَأُنْثَانَا، اللَّهُمَّ مَنْ أَحْيَيْتَهُ مِنَّا فَأَحْيِهِ عَلَى الإِسْلاَمِ، وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلَى الإِيمَانِ , اللَّهُمَّ لاَ تَحْرِمْنَا أَجْرَهُ، وَلاَ تَفْتِنَّا بَعْدَهُ»
এই সাধারণ দো‘আটি পড়বেন। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত মৃতের জন্য বিশেষ দো‘আ পড়বেন। তা সম্ভব না হলে অন্য যে কোন দো‘আর মাধ্যমে তার জন্য দো‘আ করবেন। মোদ্দাকথাঃ মৃত ব্যক্তির জন্য খাছ কিছু দো‘আ করবেন। কেননা সে দো‘আর খুব বেশী মুখাপেক্ষী। অতঃপর চতুর্থ তাকবীর দিয়ে সামান্য একটু অপেক্ষা করে সালাম ফিরাবেন। কোন কোন বিদ্বান বলেন, চতুর্থ তাকবীরের পরে
﴿رَبَّنَا آتِنَا فِى الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِى الآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ﴾ [ سورة البقرة : 136]
দো‘আটি পড়বেন। আর পঞ্চম তাকবীর দিলে কোন সমস্যা নেই; বরং সেটিও সুন্নাত সম্মত। [. মুসলিম, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৯৫৭।] সেজন্য মাঝে মাঝে পঞ্চম তাকবীর দেওয়া উচিৎ, যাতে এই সুন্নাতটি বিলুপ্ত না হয়ে যায়। তবে যদি তিনি পঞ্চম তাকবীর দেওয়ার নিয়্যত করেন, তাহলে দো‘আ চতুর্থ ও পঞ্চম তাকবীরে ভাগ করে পড়বেন। আল্লাহই ভাল জানেন।
«اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِحَيِّنَا وَمَيِّتِنَا وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا وَصَغِيرِنَا وَكَبِيرِنَا وَذَكَرِنَا وَأُنْثَانَا، اللَّهُمَّ مَنْ أَحْيَيْتَهُ مِنَّا فَأَحْيِهِ عَلَى الإِسْلاَمِ، وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلَى الإِيمَانِ , اللَّهُمَّ لاَ تَحْرِمْنَا أَجْرَهُ، وَلاَ تَفْتِنَّا بَعْدَهُ»
এই সাধারণ দো‘আটি পড়বেন। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত মৃতের জন্য বিশেষ দো‘আ পড়বেন। তা সম্ভব না হলে অন্য যে কোন দো‘আর মাধ্যমে তার জন্য দো‘আ করবেন। মোদ্দাকথাঃ মৃত ব্যক্তির জন্য খাছ কিছু দো‘আ করবেন। কেননা সে দো‘আর খুব বেশী মুখাপেক্ষী। অতঃপর চতুর্থ তাকবীর দিয়ে সামান্য একটু অপেক্ষা করে সালাম ফিরাবেন। কোন কোন বিদ্বান বলেন, চতুর্থ তাকবীরের পরে
﴿رَبَّنَا آتِنَا فِى الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِى الآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ﴾ [ سورة البقرة : 136]
দো‘আটি পড়বেন। আর পঞ্চম তাকবীর দিলে কোন সমস্যা নেই; বরং সেটিও সুন্নাত সম্মত। [. মুসলিম, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৯৫৭।] সেজন্য মাঝে মাঝে পঞ্চম তাকবীর দেওয়া উচিৎ, যাতে এই সুন্নাতটি বিলুপ্ত না হয়ে যায়। তবে যদি তিনি পঞ্চম তাকবীর দেওয়ার নিয়্যত করেন, তাহলে দো‘আ চতুর্থ ও পঞ্চম তাকবীরে ভাগ করে পড়বেন। আল্লাহই ভাল জানেন।
৭
প্রশ্ন ৫: মুর্দাকে প্রস্তত করা, তাকে গোসল দেওয়া, কাফন পরানো, তার জানাযার ছালাত পড়া অথবা তাকে দাফন করার ক্ষেত্রে আত্মীয়-স্বজন আসা পর্যন্ত বিলম্ব করার হুকুম কি?উত্তরঃ মৃতের দাফন সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে বিলম্ব করা সুন্নাত পরিপন্থী এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদেশ বিরোধী। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা তাড়াতাড়ি মৃত ব্যক্তির দাফনকার্য সম্পন্ন করো। কেননা সে যদি পূণ্যবান হয়, তাহলে তার জন্য উত্তম পরিণতি রয়েছে, তাকে তোমরা কল্যাণের দিকে নিয়ে যাচ্ছ। আর যদি সে এর ব্যতিক্রম হয়, তাহলে তার জন্য খারাপ রয়েছে, যাকে তোমরা তোমাদের কাঁধ থেকে (তাড়াতড়ি) নামিয়ে দিচ্ছ’। [. বুখারী, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/১৩১৫; মুসলিম, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৯৪৪।]
সামান্য পরিমাণ বিলম্ব করা যেতে পারে। যেমনঃ কারো জন্য ১/২ ঘন্টা অপেক্ষা করা। মনে রাখতে হবে, দীর্ঘ সময় বিলম্ব করা মৃতের উপর অবিচার করার শামিল। কেননা নেকাত্মাকে যখন তার পরিবার গোরস্থানের উদ্দেশ্যে নিয়ে বের হয়, তখন সে বলে, আমাকে দ্রুত নিয়ে যাও, আমাকে দ্রত নিয়ে যাও। [. বুখারী, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/১৩৮০।] বুঝা গেল, সে দ্রুততা কামনা করে। কেননা তাকে কল্যাণ ও অশেষ ছওয়াবের ওয়াদা করা হয়েছে।
সামান্য পরিমাণ বিলম্ব করা যেতে পারে। যেমনঃ কারো জন্য ১/২ ঘন্টা অপেক্ষা করা। মনে রাখতে হবে, দীর্ঘ সময় বিলম্ব করা মৃতের উপর অবিচার করার শামিল। কেননা নেকাত্মাকে যখন তার পরিবার গোরস্থানের উদ্দেশ্যে নিয়ে বের হয়, তখন সে বলে, আমাকে দ্রুত নিয়ে যাও, আমাকে দ্রত নিয়ে যাও। [. বুখারী, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/১৩৮০।] বুঝা গেল, সে দ্রুততা কামনা করে। কেননা তাকে কল্যাণ ও অশেষ ছওয়াবের ওয়াদা করা হয়েছে।
উত্তরঃ বিদ্বানগণের অগ্রাধিকারযোগ্য অভিমত হচ্ছে, যার জানাযা পড়া হয়নি, কেবল তার ক্ষেত্র ব্যতীত অন্য কারো গায়েবানা জানাযা শরী‘আত সম্মত নয়। যেমনঃ কেউ যদি কাফের রাষ্ট্রে মৃত্যুবরণ করে এবং তার জানাযা পড়া না হয়, তাহলে তার গায়েবানা জানাযা পড়া আবশ্যক। কিন্তু যদি তার জানাযার ছালাত সম্পন্ন হয়, তাহলে সঠিক কথা হল, তার গায়েবানা জানাযা শরী‘আতসম্মত নয়। কেননা বাদশাহ নাজাশী ছাড়া অন্য কারো গায়েবানা জানাযার কথা হাদীছে আসেনি। [. বুখারী, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/১৩১৩২৭; মুসলিম, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৯৫১।] আর নাজাশীর জানাযার ছালাত তাঁর দেশে সম্পন্ন হয়েছিল না। সে কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনাতে তাঁর গায়েবানা জানাযা আদায় করেছিলেন। অনেক বড় বড় ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবদ্দশায় মৃত্যুবরণ করেন, কিন্তু তিনি তাদের গায়েবানা জানাযা পড়েছেন মর্মে কিছুই বর্ণিত হয় নি।
কোন কোন বিদ্বান বলেন, যার মাল দ্বারা বা ইল্ম দ্বারা দ্বীনের উপকার সাধিত হয়, এমন ব্যক্তির গায়েবানা জানাযা পড়া যেতে পারে। পক্ষান্তরে যার অবস্থা এমনটি হবে না, তার গায়েবানা জানাযা পড়া যাবে না। আবার কেউ কেউ বলেন, সবার গায়েবানা জানাযা পড়া যাবে। কিন্তু এটি অতীব দুর্বল অভিমত।
কোন কোন বিদ্বান বলেন, যার মাল দ্বারা বা ইল্ম দ্বারা দ্বীনের উপকার সাধিত হয়, এমন ব্যক্তির গায়েবানা জানাযা পড়া যেতে পারে। পক্ষান্তরে যার অবস্থা এমনটি হবে না, তার গায়েবানা জানাযা পড়া যাবে না। আবার কেউ কেউ বলেন, সবার গায়েবানা জানাযা পড়া যাবে। কিন্তু এটি অতীব দুর্বল অভিমত।
উত্তর : যদি কারো জানাযার ছালাত মসজিদে পড়া হয়, তাহলে মসজিদের ইমাম বেশী উত্তম। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘কেউ কারো কর্তৃত্বের স্থলে ইমামতি করবে না’। [. মুসলিম, ‘মসজিদসমূহ’ অধ্যায়, হা/৬৭৩।] কিন্তু মসজিদ ছাড়া অন্য কোথাও যদি তার জানাযা হয়, তাহলে মৃতের অছিয়ত প্রাপ্ত ব্যক্তিই জানাযা পড়ানোর ক্ষেত্রে উত্তম। তবে যদি তার অছিয়ত প্রাপ্ত কেউ না থাকে, তাহলে তার নিকটতম ব্যক্তি উত্তম হিসাবে বিবেচিত হবে।
১০
প্রশ্ন ৮: একই জানাযায় কয়েকজন মুর্দার উপস্থিতিতে আমরা কি তাদের মধ্যে সর্বাধিক জ্ঞানী ব্যক্তিকে ইমামের নিকটবর্তী করব নাকি তারা সবাই সমান?উত্তরঃ প্রথমে পুরুষদেরকে, তারপর মহিলাদেরকে রাখতে হবে। অনুরূপভাবে বালককে মহিলার আগে রাখতে হবে। যদি একই জানাযায় একজন পুরুষ, একজন অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক বালক, একজন প্রাপ্ত বয়ষ্কা মহিলা এবং একজন অপ্রাপ্ত বয়ষ্কা বালিকা থাকে, তাহলে তাদেরকে সাজাতে হবে এভাবেঃ ইমামের কাছাকাছি পুরুষটিকে, তারপর অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক বালকটিকে, তারপর মহিলাটিকে এবং তারপর অপ্রাপ্ত বয়ষ্কা বালিকাটিকে রাখতে হবে।
কিন্তু যদি তারা সবাই একই লিঙের হয়, যেমনঃ যদি সবাই পুরুষ হয়, তাহলে সর্বাপেক্ষা জ্ঞানী ব্যক্তিকে ইমামের নিকটবর্তী স্থানে রাখতে হবে। কেননা উহুদ যুদ্ধের শহীদগণের কয়েকজনকে যখন একই ক্ববরে দাফন করা হচ্ছিল, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কুরআন জানা ছাহাবীকে আগে ক্ববরে রাখার নির্দেশ করেছিলেন। [. সুনানে আবু দাঊদ, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৩১৩৬; তিরমিযী, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/১০১৬; আলবানী (রহেমাহুল্লাহ) হাদীছটিকে ‘ছহীহ’ বলেছেন।] এই হাদীছ প্রমাণ করে যে, আলেম ব্যক্তিকে ইমামের কাছাকাছি রাখতে হবে।
কিন্তু যদি তারা সবাই একই লিঙের হয়, যেমনঃ যদি সবাই পুরুষ হয়, তাহলে সর্বাপেক্ষা জ্ঞানী ব্যক্তিকে ইমামের নিকটবর্তী স্থানে রাখতে হবে। কেননা উহুদ যুদ্ধের শহীদগণের কয়েকজনকে যখন একই ক্ববরে দাফন করা হচ্ছিল, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কুরআন জানা ছাহাবীকে আগে ক্ববরে রাখার নির্দেশ করেছিলেন। [. সুনানে আবু দাঊদ, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৩১৩৬; তিরমিযী, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/১০১৬; আলবানী (রহেমাহুল্লাহ) হাদীছটিকে ‘ছহীহ’ বলেছেন।] এই হাদীছ প্রমাণ করে যে, আলেম ব্যক্তিকে ইমামের কাছাকাছি রাখতে হবে।
১২
প্রশ্ন ১০: মুর্দা অনেকগুলি হলে জানাযার সময় তাদের পুরুষ কিংবা মহিলা হওয়া সম্পর্কে মুছল্লীদেরকে অবহিত করার হুকুম কি?উত্তরঃ এতে কোন সমস্যা নেই। কেননা মৃত পুরুষ হলে মুছল্লীরা দো‘আয় পুং লিঙ্গের শব্দ ব্যবহার করবে, আর মহিলা হলে স্ত্রী লিঙ্গের শব্দ ব্যবহার করবে। তবে মুছল্লীরা নির্দিষ্ট দো‘আ না পড়লেও কোন সমস্যা নেই। উল্লেখ্য যে, যারা মৃতের লিঙ্গ সম্পর্কে অবহিত হবে না, তারা সাধারণভাবে মুর্দার জানাযা পড়ার নিয়্যত করবে এবং ঐ জানাযাই তাদের জন্য যথেষ্ট হবে। আল্লাহই ভাল জানেন।
১৩
প্রশ্ন ১১: বিশেষ করে জুম‘আর দিনে অনেক মুর্দার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়, এমনকি তাদের জন্য ইমামের সামনের জায়গাও সংকুলান হয় না। [. পবিত্র কা‘বা শরীফ ও মসজিদে নববীসহ সঊদী আরবের অনেক মসজিদে একসাথে অনেক মুর্দা উপস্থিতির দৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। আমাদের বাংলাদেশে সাধারণতঃ এমনটি ঘটে না বলে সম্মানিত পাঠকের বুঝতে একটু সমস্যা হতে পারে ভেবে আমরা সঊদী আরবের অবস্থা তুলে ধরলাম। --অনুবাদক।] এক্ষেত্রে কি কয়েক দফায় তাদের জানাযা পড়তে হবে?উত্তরঃ ইমামের সামনে একজনকে আরেকজনের পরে রেখে সবার জানাযা একসাথে পড়তে হবে। এক্ষেত্রে ইমাম এবং মুছল্লী একটু পেছনে সরে দাঁড়াবেন, এমনকি তারা কাতার একটু ঘন করে দাঁড়ালেও কোন সমস্যা নেই। কেননা তাদের রুকূ-সেজদার কোন প্রয়োজন নেই।
১৪
প্রশ্ন ১২: জানাযার ছালাতে বেশী মুছল্লী উপস্থিতির বিষয়ে কি কোন বর্ণনা এসেছে? বেশী মুছল্লী শরীক হওয়ার হিকমত কি?উত্তরঃ হ্যাঁ, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এরশাদ করেন, কোন মুসলিম মারা গেলে যদি তার জানাযায় এমন চল্লিশ জন ব্যক্তি উপস্থিত হয়, যারা আল্লাহ্র সাথে কাউকে শরীক করে না; তাহলে তার ব্যপারে তাদের সুপারিশ আল্লাহ ক্ববূল করেন। [. ইমাম মুসলিম ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে হাদীছটি বর্ণনা করেন, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৯৪৮।]
উত্তরঃ জানাযার ছালাতে সূরা ফাতিহার পরে ক্বুরআনের অন্য কোন আয়াত বা সূরা পড়লে কোনো সমস্যা নেই। তবে যেন ক্বিরাআত লম্বা না করে। আর শুধু সূরা ফাতিহা পড়লেও তা যথেষ্ট হবে। কেননা জানাযার ছালাত লম্বা না করে খাটো করে পড়তে হয়। সেজন্যই তো এই ছালাতে ছানা পড়তে হয় না; বরং আঊযুবিল্লাহ পড়ে সূরা ফাতিহা পড়তে হয়।
উত্তরঃ বিদ্বানগণ বলেন, জানাযার সাধারণ দো‘আ পড়ার পর ছোট বাচ্চার জন্য নিম্নোক্ত দো‘আ পড়বে,
اَللَّهُمَّ اجْعَلْهُ فَرَطاً لِوَالِدَيْهِ وَذُخْراً وَشَفِيْعًا مُجَاباً . اَللَّهُمَّ ثَقِّلْ بِهِ مَوَازِيْنَهُمَا وَأَعْظِمْ بِهِ أُجُوْرَهُمَا وَأَلْحِقْهُ بِصَالِحِ سَلَفِ الْمُؤْمِنِيْنَ , وَاجْعَلْهُ فِيْ كَفَالَةِ إِبْرَاهِيْمَ , وَقِهِ بِرَحْمَتِكَ عَذَابَ الْجَحِيْمِ .
উক্ত দো‘আও পড়তে পারে অথবা অন্য দো‘আও পড়তে পারে। এক্ষেত্রে হুকুম প্রশস্ত এবং এ বিষয়ে নির্ভরযোগ্য কোন ছহীহ হাদীছ পাওয়া যায় না। আল্লাহই ভাল জানেন।
اَللَّهُمَّ اجْعَلْهُ فَرَطاً لِوَالِدَيْهِ وَذُخْراً وَشَفِيْعًا مُجَاباً . اَللَّهُمَّ ثَقِّلْ بِهِ مَوَازِيْنَهُمَا وَأَعْظِمْ بِهِ أُجُوْرَهُمَا وَأَلْحِقْهُ بِصَالِحِ سَلَفِ الْمُؤْمِنِيْنَ , وَاجْعَلْهُ فِيْ كَفَالَةِ إِبْرَاهِيْمَ , وَقِهِ بِرَحْمَتِكَ عَذَابَ الْجَحِيْمِ .
উক্ত দো‘আও পড়তে পারে অথবা অন্য দো‘আও পড়তে পারে। এক্ষেত্রে হুকুম প্রশস্ত এবং এ বিষয়ে নির্ভরযোগ্য কোন ছহীহ হাদীছ পাওয়া যায় না। আল্লাহই ভাল জানেন।
উত্তরঃ সূরা ফাতিহা পাঠ ছালাতের একটি রুকন। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহা পড়ে না, তার ছালাত হয় না। [. ইমাম বুখারী উবাদাহ ইবনে ছামিত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে হাদীছটি বর্ণনা করেন, ‘আযান’ অধ্যায়, হা/৭৫৬; মুসলিম, ‘ছালাত’ অধ্যায়, হা/৩৯৪।]
এক্ষেত্রে জানাযার ছালাত এবং অন্য ছালাতের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। কেননা জানাযাও এক প্রকার ছালাত। সুতরাং রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাধারণ ঘোষণা, ‘যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহা পড়বে না, তার ছালাত হবে না’ জানাযার ছালাতকেও অন্তর্ভুক্ত করবে।
এক্ষেত্রে জানাযার ছালাত এবং অন্য ছালাতের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। কেননা জানাযাও এক প্রকার ছালাত। সুতরাং রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাধারণ ঘোষণা, ‘যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহা পড়বে না, তার ছালাত হবে না’ জানাযার ছালাতকেও অন্তর্ভুক্ত করবে।
১৮
প্রশ্ন ১৬: কারো জানাযার এক বা একাধিক তাকবীর ছুটে গেলে সে কি তার ক্বাযা আদায় করবে? সে ইমামের সাথে ছালাত শুরু করবেইবা কিভাবে?উত্তরঃ ইমামকে ছালাতের যে অবস্থাতে পাবে, ঠিক সেই অবস্থা থেকেই ইমামের সাথে ছালাত শুরু করবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা (ইমামের সাথে) ছালাতের যতটুকু পাও, ততটুকু আদায় কর। আর যতটুকু তোমাদের ছুটে যায়, ততটুকু পূরণ কর’। [. বুখারী, ‘আযান’ অধ্যায়, হা/৬৩৫।] যদি মুর্দা সেখানে থাকে, তাহলে ইমাম সালাম ফিরালে সে ছালাতের বাক্বী অংশ পূরণ করে নিবে। কিন্তু যদি মুর্দাকে সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়ার আশংকা থাকে, তাহলে আমাদের ফক্বীহগণের মতানুসারে, সে তাকবীর পূরণও করতে পারে অথবা ইমামের সাথে সালামও ফিরাতে পারে। আল্লাহই ভাল জানেন।
১৯
প্রশ্ন ১৭: কোন্ কোন্ সময়ে জানাযার ছালাত আদায় করা নিষেধ? আর কেনইবা ফজরের পূর্বে এবং আছরের পূর্বে মানুষ জানাযা ছালাত পড়ে না- বিশেষ করে কা‘বা ও মসজিদে নববীতে- অথচ তারা ঐসময় সমবেত থাকে?উত্তরঃ তিনটি সময়ে আমাদেরকে ছালাত আদায় করতে এবং মুর্দা দাফন করতে নিষেধ করা হয়েছেঃ সূর্যোদয়ের সময় থেকে সূর্য্য সামান্য পরিমাণ উপরে উঠা পর্যন্ত, ভরা দুপুর বেলায় অর্থাৎ সূর্য ঢলে যাওয়ার ১০ মিনিট মত আগে এবং সূর্যাস্তের সময়। উক্ত তিন সময় হল নিষিদ্ধ সময়। উক্ববা বিন আমের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত হাদীছে এসেছে, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে তিন সময়ে ছালাত আদায় করতে এবং মুর্দা দাফন করতে নিষেধ করেছেন। [. মুসলিম, ‘মুসাফিরদের ছালাত’ অধ্যায়, হা/৮৩১।] অতঃপর তিনি উক্ত তিনটি সময় উল্লেখ করেন।
তবে ফজর ও আছরের পরে যেহেতু জানাযার ছালাত আদায় করতে কোনো নিষেধ নেই, সেহেতু ফজর ও আছরের পূর্বে আগেভাগে জানাযা ছালাত আদায়ের কোনো প্রয়োজন নেই।
তবে ফজর ও আছরের পরে যেহেতু জানাযার ছালাত আদায় করতে কোনো নিষেধ নেই, সেহেতু ফজর ও আছরের পূর্বে আগেভাগে জানাযা ছালাত আদায়ের কোনো প্রয়োজন নেই।
২০
প্রশ্ন ১৮: জানাযার ছালাতের জন্য মৃতদেহকে নির্দিষ্ট জায়গায় রাখার আগে এবং দাফনের সময় মাটিতে রাখার আগে তার উদ্দেশ্যে দাঁড়ানোর হুকুম কি? আর দাফনের সময় দাঁড়ানোর হুকুমইবা কি? উল্লেখ্য যে, মৃতদেহকে মসজিদে প্রবেশ করানোর সময় মানুষ যখন তার জানাযার জন্য দাঁড়ায়, তখন তারা ছালাতের পরের যিকর-আযকার ছেড়ে দেয়!উত্তরঃ মানুষের পাশ দিয়ে যখন মৃতদেহ অতিক্রম করে, তখন তার জন্য দাঁড়ানো সুন্নাত। এ মর্মে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশ রয়েছে। [. আমের ইবনে রবী‘আহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত মারফূ‘ হাদীছে এসেছে, ‘যখন তোমাদের কেউ মৃতদেহ দেখবে, তখন সে যদি তার সাথে গমনকারী না হয়, তাহলে দাঁড়াবে; যতক্ষণ না সে মুর্দাটিকে পেছনে ফেলে যায় অথবা মুর্দা তাকে পেছনে ফেলে যায় অথবা মুর্দা তাকে পেছনে ফেলে যাওয়ার আগে মুর্দাকে মাটিতে রাখা হয়’ (বুখারী, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/১৩০৮; মুসলিম, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৯৫৮)।]
আর ইমামের সালাম ফিরানোর পরপরই জানাযা ছালাত শুরু করার বিষয়ে আমরা বলব, যদি ছুটে যাওয়া ছালাত পূরণকারীর সংখ্যা সেখানে অনেক হয়, তাহলে বাক্বীরা তাদের জন্য অপেক্ষা করবে; যাতে তারা জানাযার ছালাতের ফযীলত থেকে বঞ্চিত না হয়ে যায় এবং যাতে জানাযায় মুছল্লীর সংখ্যা বেশী হয়। কিন্তু যদি সেখানে সবাই পূর্ণ জামা‘আত পায় অথবা রাক‘আত ছুটে যাওয়া মুছল্লীর সংখ্যা কম হয়, তাহলে তাড়াতাড়ি পড়ে নেওয়া ভাল; যাতে মানুষ না চলে যায়।
আর ইমামের সালাম ফিরানোর পরপরই জানাযা ছালাত শুরু করার বিষয়ে আমরা বলব, যদি ছুটে যাওয়া ছালাত পূরণকারীর সংখ্যা সেখানে অনেক হয়, তাহলে বাক্বীরা তাদের জন্য অপেক্ষা করবে; যাতে তারা জানাযার ছালাতের ফযীলত থেকে বঞ্চিত না হয়ে যায় এবং যাতে জানাযায় মুছল্লীর সংখ্যা বেশী হয়। কিন্তু যদি সেখানে সবাই পূর্ণ জামা‘আত পায় অথবা রাক‘আত ছুটে যাওয়া মুছল্লীর সংখ্যা কম হয়, তাহলে তাড়াতাড়ি পড়ে নেওয়া ভাল; যাতে মানুষ না চলে যায়।
২১
প্রশ্ন ১৯: মৃতের পরিবার-পরিজন অথবা তাকে বহনকারী ব্যক্তিরা জানাযার ছালাতের সময় সামনে গিয়ে যদি ইমামের ডান পাশে দাঁড়ায়, তাহলে শরী‘আতে এর কোন ভিত্তি আছে কি? এক্ষেত্রে সুন্নাত কি?উত্তরঃ মৃতের আত্মীয়-স্বজন অথবা তাকে বহনকারী ব্যক্তিরা তাকে নিয়ে সামনে গেলেও তারা ইমামের ডান-বাম কোন পাশেই ছালাত দাঁড়াবে না; বরং সাধারণ মানুষের সাথেই কাতারে দাঁড়িয়ে ছালাত আদায় করবে। কিন্তু যদি তাদের জায়গা না হয়, তাহলে তারা ইমাম ও প্রথম কাতারের মাঝে দাঁড়াবে। কেননা দুই বা ততোধিক মুছল্লী হলে ইমামের পাশে দাঁড়ানো শরী‘আতসম্মত নয়।
তবে যদি তারা দেখে যে, ইমাম ও প্রথম কাতারের মধ্যেও তাদের জায়গা হচ্ছে না, তাহলে তারা ইমামের ডান ও বাম পাশে দাঁড়াবে। মৃতদেহ বহনকারী একজন হলে সে ইমামের ডান পাশে দাঁড়াবে। যেমনঃ মৃত ছোট বালক হলে সাধারণতঃ একজন বহন করে। আর বহনকারী একাধিক হলে ডান ও বাম উভয় পাশে দাঁড়াবে। আল্লাহই ভাল জানেন।
তবে যদি তারা দেখে যে, ইমাম ও প্রথম কাতারের মধ্যেও তাদের জায়গা হচ্ছে না, তাহলে তারা ইমামের ডান ও বাম পাশে দাঁড়াবে। মৃতদেহ বহনকারী একজন হলে সে ইমামের ডান পাশে দাঁড়াবে। যেমনঃ মৃত ছোট বালক হলে সাধারণতঃ একজন বহন করে। আর বহনকারী একাধিক হলে ডান ও বাম উভয় পাশে দাঁড়াবে। আল্লাহই ভাল জানেন।
উত্তরঃ অসম্পূর্ণ সন্তানকে রূহ প্রদানের আগেই সে গর্ভচ্যুত হলে তার জানাযা পড়তে হবে না। উল্লেখ্য যে, গর্ভধারণের চার মাসে রূহ বা আত্মা প্রদান করা হয়। ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ‘তোমাদের যে কাউকে তার মায়ের গর্ভে চল্লিশ দিন পর্যন্ত শুক্র অবস্থায় রাখা হয়। তারপরের চল্লিশ দিনে সে রক্তপিণ্ডে পরিণত হয়। তৎপরবর্তী চল্লিশ দিনে মাংসপিণ্ডে পরিণত হয়। অতঃপর তার কাছে ফেরেশতা পাঠানো হয়, তিনি তাতে আত্মার সঞ্চার করেন এবং তাকে চারটি বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়ঃ তার রিযিক্ব, তার আয়ূ, তার আমল এবং সে সৌভাগ্যবান হবে নাকি দুর্ভাগা’। [. বুখারী, ‘সৃষ্টির প্রারম্ভ’ অধ্যায়, হা/৩২০৮; মুসলিম, ‘তাক্বদীর’ অধ্যায়, হা/২৬৪৩।]
কিন্তু গর্ভচ্যুত অপূর্ণাঙ্গ সন্তানের পেটে আসা যদি চার মাস পূর্ণ হয়, তাহলে তাকে গোসল করাতে হবে, কাফন পরাতে হবে। অনুরূপভাবে তার জানাযা ছালাত পড়াতে হবে এবং মুসলিমদের সাথে ক্ববরস্থানে তাকে দাফন করতে হবে। আর চার মাস পূর্ণ না হলে গোসল, কাফন, জানাযা কোনটাই করতে হবে না এবং তাকে যেকোন জায়গায় দাফন করলে চলবে।
কিন্তু গর্ভচ্যুত অপূর্ণাঙ্গ সন্তানের পেটে আসা যদি চার মাস পূর্ণ হয়, তাহলে তাকে গোসল করাতে হবে, কাফন পরাতে হবে। অনুরূপভাবে তার জানাযা ছালাত পড়াতে হবে এবং মুসলিমদের সাথে ক্ববরস্থানে তাকে দাফন করতে হবে। আর চার মাস পূর্ণ না হলে গোসল, কাফন, জানাযা কোনটাই করতে হবে না এবং তাকে যেকোন জায়গায় দাফন করলে চলবে।
উত্তরঃ এ বিষয়ে কোন হাদীছ আছে বলে আমার জানা নেই। সেজন্য ইমামের উচিৎ, মাঝেমধ্যে মৃতের মাথা তাঁর বাম দিকে রাখা; যাতে মানুষের নিকট স্পষ্ট হয়ে যায় যে, মৃতের মাথা ডান দিকে রাখা ওয়াজিব নয়। কেননা এক শ্রেণীর মানুষ মনে করে, মৃত ব্যক্তির মাথা অবশ্যই ডান দিকে রাখতে হবে; অথচ শরী‘আতে এর কোন ভিত্তি নেই।
২৪
প্রশ্ন ২২: যদি কেউ ভিড়ের কারণে বা সুন্নাতে রাতেবাহ আদায় করার কারণে অথবা (ছুটে যাওয়া) ফরজ ছালাত পূর্ণ করার কারণে অথবা অন্য কোনো কারণে জানাযার সাথে না যায় কিন্তু দাফনের পূর্বে তার জানাযায় শরীক হয়, তাহলে কি সে মৃতের সাথে ক্ববরস্থানে গমনকারী হিসাবে বিবেচিত হবে? তার কি ক্ববরস্থানে গমনকারীর নেকী হবে?উত্তরঃ কেউ সুন্নাতে রাতেবাহ আদায়ের কারণে জানাযা না পড়লে সে জানাযা পড়ার নেকী থেকে বঞ্চিত হবে। কেননা জানাযার কাজ শেষ করেও সে ঐ সুন্নাত পড়তে পারত। পক্ষান্তরে যদি কেউ ওযর থাকার কারণে জানাযায় শরীক হতে না পারে, অথচ সে আগ্রহ করে মৃতকে দাফন করতে এসেছে কিন্তু বাধাগ্রস্ত হয়েছে অথবা মানুষ আগেভাগে জানাযা পড়ে মুর্দাকে ক্ববরস্থানে নিয়ে গেছে, এমতাবস্থায় তার নেকী লেখা হবে। কেননা সে নিয়্যত করেছিল এবং তারপক্ষে যতটুকু সম্ভব সে চেষ্টা করেছে। আর যে ব্যক্তি নিয়্যত করে এবং নিয়্যত অনুযায়ী আপ্রাণ চেষ্টা করে, তার জন্য পূর্ণ নেকী লেখা হয়। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿وَمَن يَخْرُجْ مِن بَيْتِهِ مُهَاجِرًا إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ يُدْرِكْهُ الْمَوْتُ فَقَدْ وَقَعَ أَجْرُهُ عَلَى اللَّهِ﴾ [ سورة النساء : 100]
‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে হিজরত করার উদ্দেশে নিজ গৃহ থেকে বের হয়, অতঃপর মৃত্যুমুখে পতিত হয়, তার ছওয়াব আল্লাহ্র কাছে অবধারিত হয়ে যায়’ (নিসা ১০০)।
কিন্তু ক্ববরস্থানে যদি তার পক্ষে জানাযার ছালাত পড়ে নেওয়া সম্ভব হয়, তাহলে পড়ে নিবে।
﴿وَمَن يَخْرُجْ مِن بَيْتِهِ مُهَاجِرًا إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ يُدْرِكْهُ الْمَوْتُ فَقَدْ وَقَعَ أَجْرُهُ عَلَى اللَّهِ﴾ [ سورة النساء : 100]
‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে হিজরত করার উদ্দেশে নিজ গৃহ থেকে বের হয়, অতঃপর মৃত্যুমুখে পতিত হয়, তার ছওয়াব আল্লাহ্র কাছে অবধারিত হয়ে যায়’ (নিসা ১০০)।
কিন্তু ক্ববরস্থানে যদি তার পক্ষে জানাযার ছালাত পড়ে নেওয়া সম্ভব হয়, তাহলে পড়ে নিবে।
২৫
প্রশ্ন ২৩: মসজিদে ইমামের সাথে কারো জানাযার ছালাত ছুটে গেলে ক্ববরস্থানে দাফনের পূর্বে অথবা দাফনের পরে ক্ববরকে কেন্দ্র করে জানাযা পড়া কি জায়েয?উত্তরঃ হ্যাঁ, জায়েয। যদি দাফনের পূর্বে তাদের পক্ষে জানাযা পড়া সম্ভব হয়, তাহলে পড়বে। কিন্তু দাফনের পরে তারা আসলে ক্ববরকে কেন্দ্র করে জানাযা পড়ে নিবে। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্ববরকে কেন্দ্র করে জানাযা পড়েছেন মর্মে প্রমাণিত হয়েছে। [. ছহীহ বুখারী, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৪৫৮; মুসলিম, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৯৫৬ দ্রষ্টব্য।]
২৬
প্রশ্ন ২৪: ইমামের সাথে ফরয ছালাত পায় নি এমন কেউ জানাযা ছালাতের জন্য মৃতকে সামনে নেওয়া অবস্থায় মসজিদে প্রবেশ করলে সে কি ইমামের সাথে জানাযার ছালাত পড়বে নাকি আগে ফরয ছালাত পড়বে?উত্তরঃ সে ইমামের সাথে আগে জানাযা পড়ে নিবে। কেননা ফরয ছালাত পরে আদায় করে নেওয়া যাবে। কিন্তু জানাযা ছালাত শেষে মৃতকে নিয়ে চলে গেলে সে আর জানাযা পড়ার সুযোগ পাবে না।
২৭
প্রশ্ন ২৫: মৃত ব্যক্তি ছালাত পরিত্যাগকারী হলে, অথবা সে ছালাত পরিত্যাগকারী বলে সন্দেহ হলে অথবা তার অবস্থা না জানা থাকলে তার জানাযা পড়ার হুকুম কি? জানাযার উদ্দেশ্যে তাকে ইমামের সামনে নিয়ে যাওয়া কি তার অভিভাবকের জন্য জায়েয হবে?উত্তরঃ যার সম্পর্কে নিশ্চিত জানা যাবে যে, সে বেনামাযী হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে, তার জানাযা পড়া জায়েয হবে না। কেননা সে কাফির, মুরতাদ। ক্ববরস্থান বাদে অন্য কোথাও গর্ত করে তাকে সেই গর্তে ফেলে দেওয়া উচিৎ, তার জানাযাই পড়া উচিৎ নয়। এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে কোনো খাতির-সম্মান নেই। কেননা পরকালে ফির‘আঊন, হামান, ক্বারূন ও উবাই ইবনে খালাফের সাথে তার হাশর হবে।
তবে তার অবস্থা সম্পর্কে জানা না থাকলে অথবা সন্দেহ থাকলে তার জানাযা পড়তে হবে। কেননা অমুসলিম প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত সে একজন মুসলিম হিসাবেই গণ্য হবে। অবশ্য ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে কারো সন্দেহ থাকলে সে জানাযার সময় একটু ব্যতিক্রম দো‘আ পড়লে কোনো সমস্যা নেই। দো‘আতে সে বলবে, اَللَّهُمَّ إِنْ كَانَ مُؤْمِنًا فَاغْفِرْ لَهُ وَارْحَمْهُ ‘হে আল্লাহ! সে যদি মুমিন হয়, তাহলে তাকে তুমি ক্ষমা কর এবং তার প্রতি রহম কর’। কেননা যারা তাদের স্ত্রীদের বিরুদ্ধে যেনার অভিযোগ তুলে, তাদের ক্ষেত্রে এরূপ ব্যতিক্রম দো‘আ এসেছে। সেজন্য স্বামী যখন তার স্ত্রীকে অভিশাপ করবে, তখন পঞ্চমবার বলবে,
﴿أَنَّ لَعْنَتَ اللَّهِ عَلَيْهِ إِن كَانَ مِنَ الْكَاذِبِينَ﴾ [ سورة النور : 7] ‘যদি সে মিথ্যাবাদী হয়, তবে তার উপর আল্লাহ্র লা‘নত’ (নূর ৭)। অনুরূপভাবে স্ত্রীও পঞ্চমবার বলবে,
﴿أَنَّ غَضَبَ اللَّهِ عَلَيْهَا إِن كَانَ مِنَ الصَّادِقِينَ﴾ [ سورة النور : 9] ‘যদি তার স্বামী সত্যবাদী হয়, তবে তার নিজের উপর আল্লাহ্র গযব নেমে আসবে’ (নূর ৯)।
তবে তার অবস্থা সম্পর্কে জানা না থাকলে অথবা সন্দেহ থাকলে তার জানাযা পড়তে হবে। কেননা অমুসলিম প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত সে একজন মুসলিম হিসাবেই গণ্য হবে। অবশ্য ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে কারো সন্দেহ থাকলে সে জানাযার সময় একটু ব্যতিক্রম দো‘আ পড়লে কোনো সমস্যা নেই। দো‘আতে সে বলবে, اَللَّهُمَّ إِنْ كَانَ مُؤْمِنًا فَاغْفِرْ لَهُ وَارْحَمْهُ ‘হে আল্লাহ! সে যদি মুমিন হয়, তাহলে তাকে তুমি ক্ষমা কর এবং তার প্রতি রহম কর’। কেননা যারা তাদের স্ত্রীদের বিরুদ্ধে যেনার অভিযোগ তুলে, তাদের ক্ষেত্রে এরূপ ব্যতিক্রম দো‘আ এসেছে। সেজন্য স্বামী যখন তার স্ত্রীকে অভিশাপ করবে, তখন পঞ্চমবার বলবে,
﴿أَنَّ لَعْنَتَ اللَّهِ عَلَيْهِ إِن كَانَ مِنَ الْكَاذِبِينَ﴾ [ سورة النور : 7] ‘যদি সে মিথ্যাবাদী হয়, তবে তার উপর আল্লাহ্র লা‘নত’ (নূর ৭)। অনুরূপভাবে স্ত্রীও পঞ্চমবার বলবে,
﴿أَنَّ غَضَبَ اللَّهِ عَلَيْهَا إِن كَانَ مِنَ الصَّادِقِينَ﴾ [ سورة النور : 9] ‘যদি তার স্বামী সত্যবাদী হয়, তবে তার নিজের উপর আল্লাহ্র গযব নেমে আসবে’ (নূর ৯)।
২৮
প্রশ্ন ২৬: জানাযায় মৃত ব্যক্তির জন্য দো‘আ করার সময় শর্ত জুড়ে দেওয়া কি জায়েয? যেমনঃ হে আল্লাহ! সে যদি ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ এর সাক্ষ্য প্রদানকারী হয়… ইত্যাদি? শরী‘আতে এর কোন ভিত্তি আছে কি?উত্তরঃ যদি কারো এই মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে খুব বেশী সন্দেহ থাকে, তাহলে اَللَّهُمَّ إِنْ كَانَ مُؤْمِنًا فَاغْفِرْ لَهُ وَارْحَمْهُ ‘হে আল্লাহ! সে যদি মুমিন হয়, তাহলে তাকে তুমি ক্ষমা কর এবং তার প্রতি রহমত বর্ষণ কর’ বললে কোন সমস্যা নেই। তবে সন্দেহ জোরালো না হলে শর্ত করবে না। কেননা মুসলিমদের আসল অবস্থা হল, তারা ইসলামের উপরেই আছে। দো‘আয় অনুরূপ শর্তারোপের ভিত্তি শরী‘আতে রয়েছে। লি‘আনের ক্ষেত্রে স্বামী যখন তার স্ত্রীকে অভিশাপ করবে, তখন পঞ্চমবার বলবে,
﴿أَنَّ لَعْنَتَ اللَّهِ عَلَيْهِ إِن كَانَ مِنَ الْكَاذِبِينَ﴾ [ سورة النور : 7]
‘যদি সে মিথ্যাবাদী হয়, তবে তার উপর আল্লাহ্র লা‘নত’ (নূর ৭)। অনুরূপভাবে স্ত্রীও পঞ্চমবার বলবে,
﴿أَنَّ غَضَبَ اللَّهِ عَلَيْهَا إِن كَانَ مِنَ الصَّادِقِينَ﴾ [ سورة النور : 9] ‘যদি তার স্বামী সত্যবাদী হয়, তবে তার নিজের উপর আল্লাহ্র গযব নেমে আসবে’ (নূর ৯)।
সা‘দ ইবনে আবু ওয়াক্কাছ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক অনুরূপ শর্তারোপের ঘটনা ঘটেছে। তিনি তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগকারী সম্পর্কে বলেন, ‘হে আল্লাহ এই ব্যক্তি যদি লোক দেখানো এবং সুনাম অর্জনের জন্য অভিযোগ করতে দাঁড়ায়, তাহলে তুমি তার চোখ অন্ধ করে দাও, তার বয়স বৃদ্ধি করে দাও এবং তাকে তুমি ফেতনা-ফাসাদের সম্মুখীন কর’। [. বুখারী, ‘আযান’ অধ্যায়, হা/৭৫৫।] আর তা দুবা‘আহ বিনতে যুবায়ের (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা)-এর উদ্দেশ্যে বলা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি
«إِنَّ لَكِ عَلَى رَبِّكِ مَا اسْتَثْنَيْتِ»
‘তোমার রব তোমার কৃত শর্ত অনুযায়ীই ফল দিবেন’-এরও অন্তর্ভুক্ত। [. দারেমী, ‘মানাসিক’ অধ্যায়, হা/১৮১১; হাদীছটি মূলতঃ বুখারী এবং মুসলিমেও রয়েছে: বুখারী, ‘বিবাহ’ অধ্যায়, হা/৫০৮৯; মুসলিম, ‘হজ্জ’ অধ্যায়, হা/১২০৮।]
﴿أَنَّ لَعْنَتَ اللَّهِ عَلَيْهِ إِن كَانَ مِنَ الْكَاذِبِينَ﴾ [ سورة النور : 7]
‘যদি সে মিথ্যাবাদী হয়, তবে তার উপর আল্লাহ্র লা‘নত’ (নূর ৭)। অনুরূপভাবে স্ত্রীও পঞ্চমবার বলবে,
﴿أَنَّ غَضَبَ اللَّهِ عَلَيْهَا إِن كَانَ مِنَ الصَّادِقِينَ﴾ [ سورة النور : 9] ‘যদি তার স্বামী সত্যবাদী হয়, তবে তার নিজের উপর আল্লাহ্র গযব নেমে আসবে’ (নূর ৯)।
সা‘দ ইবনে আবু ওয়াক্কাছ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক অনুরূপ শর্তারোপের ঘটনা ঘটেছে। তিনি তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগকারী সম্পর্কে বলেন, ‘হে আল্লাহ এই ব্যক্তি যদি লোক দেখানো এবং সুনাম অর্জনের জন্য অভিযোগ করতে দাঁড়ায়, তাহলে তুমি তার চোখ অন্ধ করে দাও, তার বয়স বৃদ্ধি করে দাও এবং তাকে তুমি ফেতনা-ফাসাদের সম্মুখীন কর’। [. বুখারী, ‘আযান’ অধ্যায়, হা/৭৫৫।] আর তা দুবা‘আহ বিনতে যুবায়ের (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা)-এর উদ্দেশ্যে বলা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি
«إِنَّ لَكِ عَلَى رَبِّكِ مَا اسْتَثْنَيْتِ»
‘তোমার রব তোমার কৃত শর্ত অনুযায়ীই ফল দিবেন’-এরও অন্তর্ভুক্ত। [. দারেমী, ‘মানাসিক’ অধ্যায়, হা/১৮১১; হাদীছটি মূলতঃ বুখারী এবং মুসলিমেও রয়েছে: বুখারী, ‘বিবাহ’ অধ্যায়, হা/৫০৮৯; মুসলিম, ‘হজ্জ’ অধ্যায়, হা/১২০৮।]
২৯
প্রশ্ন ২৭: মৃত ব্যক্তিকে কাঁধে করে বহন করা উত্তম নাকি গাড়ীতে? হেঁটে হোক অথবা আরোহী অবস্থায় হোক জানাযার সামনে চলা উত্তম নাকি পেছনে?উত্তরঃ কাঁধে করে মৃত ব্যক্তিকে বহন করা উত্তম। কেননা এতে একদিকে যেমন মৃতকে বহনের সাথে মানুষের সরাসরি সম্পর্ক থাকে, তেমনি উপদেশ গ্রহণের ক্ষেত্রেও তা বেশী কার্যকর। তাছাড়া মৃত ব্যক্তিকে যখন মানুষদের পাশ দিয়ে কাঁধে করে নিয়ে যাওয়া হবে, তখন তারা তাকে মৃত হিসাবে চিনতে পারবে এবং তার জন্য দো‘আ করবে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, মৃতকে এভাবে কাঁধে বহন করলে গর্ব-অহংকার থেকে অধিকতর দূরে থাকা সম্ভব হবে। তবে কোন যরূরী কারণে গাড়ীতে বহন করতে হলে তাতে কোনো সমস্যা নেই। যেমনঃ বৃষ্টি হলে, প্রচণ্ড গরম পড়লে বা প্রচণ্ড শীত পড়লে অথবা মৃতকে দাফনকার্যে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা কম হলে গাড়ীতে বহন করলে কোনো সমস্যা নেই।
আর মৃত ব্যক্তির সাথে চলার ব্যাপারে বিদ্বানগণ বলেন, মৃতের ডান, বাম, পেছন ও সামনে চলার ক্ষেত্রে পার্থক্য রয়েছে। হেঁটে গমনকারীরা মৃতের সামনে এবং আরোহীরা পেছনে থাকবে। আবার কেউ কেউ বলেন, ডানে, বামে, সামনে বা পেছনে যেখান দিয়েই চলা সহজতর হবে, সেখান দিয়েই চলবে।
আর মৃত ব্যক্তির সাথে চলার ব্যাপারে বিদ্বানগণ বলেন, মৃতের ডান, বাম, পেছন ও সামনে চলার ক্ষেত্রে পার্থক্য রয়েছে। হেঁটে গমনকারীরা মৃতের সামনে এবং আরোহীরা পেছনে থাকবে। আবার কেউ কেউ বলেন, ডানে, বামে, সামনে বা পেছনে যেখান দিয়েই চলা সহজতর হবে, সেখান দিয়েই চলবে।
৩০
প্রশ্ন ২৮: মৃতকে ক্ববরস্থানে নিয়ে যাওয়ার সময় ‘তারবী’ (تربيع)-এর অর্থ কি? শরী‘আতে এর কোন ভিত্তি আছে কি?উত্তরঃ মৃতকে ক্ববরস্থানে নিয়ে যাওয়ার সময় মৃত বহনের খাটলির চার দণ্ডকে চার বার ধরার নাম ‘তারবী’। এক্ষেত্রে প্রথমে মৃত ব্যক্তির ডান পাশের সামনের দণ্ড আগে ধরা হয়। অতঃপর ঐ একই পাশের পেছনের দণ্ড ধরা হয়। এরপর মৃত ব্যক্তির বাম পাশের সামনের দণ্ড, অতঃপর পেছনের দণ্ড ধরা হয়।
এমর্মে কতিপয় আছার বর্ণিত হয়েছে এবং আলেমগণ ইহাকে উত্তম গণ্য করেছেন। তবে ভিড়ের সময় নিজেকে এবং অন্যকে কষ্ট না দেওয়ার স্বার্থে এমনটি না করে সহজে যেভাবে বহন করা যায়, তা-ই করা উচিৎ।
এমর্মে কতিপয় আছার বর্ণিত হয়েছে এবং আলেমগণ ইহাকে উত্তম গণ্য করেছেন। তবে ভিড়ের সময় নিজেকে এবং অন্যকে কষ্ট না দেওয়ার স্বার্থে এমনটি না করে সহজে যেভাবে বহন করা যায়, তা-ই করা উচিৎ।
৩২
প্রশ্ন ৩০: মসজিদে মৃতের জানাযা সংঘটিত হওয়ার পর আরও কয়েকজন তার জানাযা পড়তে আসছে হেতু অন্তত দশ মিনিটের জন্য হলেও কি মৃতের দাফনকর্ম বিলম্বিত করা জায়েয?উত্তরঃ দ্রুত মৃতের দাফন কাজ সম্পন্ন করা সুন্নাত এবং উত্তম। কারো জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। যারা দেরীতে আসবে, তারা মৃত ব্যক্তির দাফনের পরে হলেও তার জানাযা পড়ে নিতে পারবে। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃতের দাফন সম্পন্ন হওয়ার পর তার ক্ববরকে কেন্দ্র করে জানাযার ছালাত আদায় করেছেন মর্মে প্রমাণিত হয়েছে। [. বুখারী, ‘আযান’ অধ্যায়, হা/৮৫৭; মুসলিম, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৯৫৪।]
উত্তরঃ কোনো কোনো বিদ্বান উল্লেখ করেছেন যে, মহিলাকে ক্ববরে নামানোর সময় তার ক্ববরকে ঢেকে রাখতে হবে, যাতে তার শরীরের দর্শনীয় স্থান প্রকাশ না পায়। তবে তা ওয়াজিব নয়। মহিলার ক্ববরের উপরে ইট সাজানো পর্যন্ত ঢেকে রাখতে হবে।
৩৬
প্রশ্ন ৩৪: মৃতকে ক্ববর দেওয়ার সময় যারা উপদেশ দেয়, তাদের ব্যাপারে আপনার অভিমত কি? নিয়মিত এটি করলে কি কোন সমস্যা?উত্তরঃ আমার মতে এটি সু্ন্নাত নয়। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং ছাহাবীগণ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম) থেকে এরূপ বর্ণিত হয় নি। সর্বোচ্চ যতটুকু জানা যায়, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা এক আনছার ছাহাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু–এর জানাযায় বের হলেন। অতঃপর তিনি সেখানে গিয়ে বসলেন এবং লোকজনও তাঁকে ঘিরে বসলেন, তারা দাফন সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করছিলেন। এমতাবস্থায় রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্থিতিগণকে মৃত্যুর সময় এবং দাফনের পরে মানুষের অবস্থা সম্পর্কে বলছিলেন। অনুরূপভাবে তিনি একদা দাফনের সময় ক্ববরের নিকট ছিলেন এবং বলেছিলেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকের জান্নাত বা জাহান্নামের ঠিকানা লিখে রাখা হয়েছে…’। [. বুখারী, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/১৩৬২; মুসলিম, ‘তাক্বদীর’ অধ্যায়, হা/২৬৪৭।] কিন্তু সেদিন তিনি খত্বীব হিসাবে দাঁড়ান নি– যেমনটি কিছু কিছু মানুষ করে থাকে। বরং তিনি তাদের সাথে বসে বসে কথা বলছিলেন। আর এমনটি তিনি নিয়মিত করেন নি।
অতএব, যদি ক্ববর স্থানে কেউ বসে এবং তার চারপাশে মানুষেরা বসে অপেক্ষা করে আর সে অনুরূপ কথা বলে, তাহলে কোন সমস্যা নেই এবং এটি সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত। তবে যদি দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেয়, তাহলে তা সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত হবে না।
অতএব, যদি ক্ববর স্থানে কেউ বসে এবং তার চারপাশে মানুষেরা বসে অপেক্ষা করে আর সে অনুরূপ কথা বলে, তাহলে কোন সমস্যা নেই এবং এটি সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত। তবে যদি দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেয়, তাহলে তা সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত হবে না।
উত্তরঃ এ বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর কোনো হাদীছ নেই। সুতরাং মানুষ স্বাভাবিকভাবে যে পা আগে পড়ে, সেই পা দিয়ে প্রবেশ করবে। স্বাভাবিক চলার গতিতে ডান পা আগে পড়লে ডান পা দিয়ে ঢুকবে, আর বাম পা আগে পড়লে বাম পা দিয়ে ঢুকবে। হাদীছ থেকে কোনো দলীল স্পষ্ট হওয়া পর্যন্ত এই আমল চলবে।
৩৮
প্রশ্ন ৩৬: মৃতের ক্ববরে মাটি দেওয়ার সময় শরী‘আতসম্মত কোন্ দো‘আটি পড়তে হয়? ﴿مِنْهَا خَلَقْنَاكُمْ وَفِيْهَا نُعِيْدُكُمْ﴾ [سورة طه: 55] পড়ার কোন হাদীছ আছে কি?উত্তরঃ কতিপয় বিদ্বান বলেন, ক্ববরে তিন মুঠো মাটি দেওয়া সুন্নাত। তবে
﴿مِنْهَا خَلَقْنَاكُمْ وَفِيهَا نُعِيدُكُمْ وَمِنْهَا نُخْرِجُكُمْ تَارَةً أُخْرَىٰ ﴾ [ سورة طه : 55]
পড়ার ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কোনো হাদীছ বর্ণিত হয় নি।
আর দাফনের পরে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশিত আমল করা সুন্নাত। তিনি দাফন সম্পন্ন করে ক্ববরের কাছে দাঁড়িয়ে বলতেন, ‘তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা চাও। সে যেন ফেরেশতাদ্বয়ের প্রশ্নের জবাবে অবিচল থাকতে পারে, সেটি তোমরা প্রার্থনা কর। কেননা তাকে এখনই জিজ্ঞেস করা হবে’। [. আবূ দাঊদ, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৩২২১।] অতএব, আমরা নিম্নোক্ত দো‘আটি পড়ব,
«اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ , اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ , اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ , اَللَّهُمَّ ثَبِّتْهُ , اَللَّهُمَّ ثَبِّتْهُ , اَللَّهُمَّ ثَبِّتْهُ»
‘হে আল্লাহ! আপনি তাকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ! আপনি তাকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ! আপনি তাকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ! আপনি তাকে অবিচল রাখুন। হে আল্লাহ! আপনি তাকে অবিচল রাখুন। হে আল্লাহ! আপনি তাকে অবিচল রাখুন’।
﴿مِنْهَا خَلَقْنَاكُمْ وَفِيهَا نُعِيدُكُمْ وَمِنْهَا نُخْرِجُكُمْ تَارَةً أُخْرَىٰ ﴾ [ سورة طه : 55]
পড়ার ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কোনো হাদীছ বর্ণিত হয় নি।
আর দাফনের পরে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশিত আমল করা সুন্নাত। তিনি দাফন সম্পন্ন করে ক্ববরের কাছে দাঁড়িয়ে বলতেন, ‘তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা চাও। সে যেন ফেরেশতাদ্বয়ের প্রশ্নের জবাবে অবিচল থাকতে পারে, সেটি তোমরা প্রার্থনা কর। কেননা তাকে এখনই জিজ্ঞেস করা হবে’। [. আবূ দাঊদ, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৩২২১।] অতএব, আমরা নিম্নোক্ত দো‘আটি পড়ব,
«اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ , اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ , اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ , اَللَّهُمَّ ثَبِّتْهُ , اَللَّهُمَّ ثَبِّتْهُ , اَللَّهُمَّ ثَبِّتْهُ»
‘হে আল্লাহ! আপনি তাকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ! আপনি তাকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ! আপনি তাকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ! আপনি তাকে অবিচল রাখুন। হে আল্লাহ! আপনি তাকে অবিচল রাখুন। হে আল্লাহ! আপনি তাকে অবিচল রাখুন’।
উত্তরঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর এক মেয়েকে যেভাবে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন, ঠিক সেভাবে সান্ত্বনা দেওয়া উত্তম। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মেয়ের সন্তান মারা গেলে তিনি তাঁকে আহ্বান জানিয়ে তাঁর নিকট একজন দূত প্রেরণ করেন। এই দূতকে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, ‘তাকে তুমি ধৈর্য্য ধরতে এবং এর বিনিময়ে নেকীর আশা করতে বল। কেননা আল্লাহ যা নিয়ে গেছেন, তা যেমন তাঁর, তেমনি যা তিনি রেখে গেছেন, তাও তাঁর। প্রত্যেকটি বস্তু একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত টিকে থাকবে’। [. বুখারী, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/১২৮৪; মুসলিম, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৯২৩।] তবে ‘আল্লাহ আপনার নেকী বৃদ্ধি করে দিন’, ‘আল্লাহ আপনাকে উত্তম সান্ত্বনা দান করুন’, আল্লাহ আপনার মৃতকে ক্ষমা করুন’ ইত্যাদি যেসব দো‘আ মানুষের কাছে প্রসিদ্ধ হয়ে আছে, তা কিছু কিছু আলেম পছন্দ করেছেন। তবে হাদীছ মোতাবেক আমল করাই উত্তম।
উত্তরঃ সান্ত্বনা দেওয়া বা শোক প্রকাশের সময় মুছাফাহা করা, চুম্বন করা সুন্নাত নয়। বরং মুছাফাহা করতে হবে সাক্ষাতের সময়। অতএব, শোকাক্রান্ত ব্যক্তির সাথে সাক্ষাত করে সালাম প্রদান করত: যখন তুমি তার সাথে মুছাফাহা করবে, তখন এই মুছাফাহাটা হবে সাক্ষাতের কারণে, সান্ত্বনা দেওয়ার উদ্দেশ্যে নয়। কিন্তু মানুষ এটাকে অভ্যাসে পরিণত করেছে। কারো যদি বিশ্বাস থাকে যে, এটি সুন্নাত, তাহলে সে পরিষ্কার জেনে রাখুক, এটি সুন্নাত নয়। তবে যদি সেটি স্বাভাবিক অভ্যাস হয় এবং তারা সেটিকে সুন্নাত বলে বিশ্বাস না করে, তাহলে সমস্যা নেই। কিন্তু বিষয়টি আমার কাছে রীতিমত উদ্বেগজনক এবং তা পরিত্যাগ করা নিঃসন্দেহে উত্তম।
এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই যে, সান্ত্বনা দেওয়ার উদ্দেশ্য হল, শোকাক্রান্ত ব্যক্তিকে ধৈর্য্যধারণ এবং আল্লাহ্র পক্ষ থেকে নেকী প্রাপ্তির বিষয়ে আশান্বিত করে তোলা; তাকে অভিনন্দন জানানো নয়, যেমনটি অন্যান্য অনুষ্ঠানে হয়ে থাকে। অতএব, কেউ মৃত্যুজনিত কারণে শোকাক্রান্ত হলে তাকে সান্ত্বনা দিতে হবে অর্থাৎ যাতে তার ধৈর্য্য ও নেকী প্রাপ্তির আশা বৃদ্ধি পায়, তা-ই করতে হবে।
এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই যে, সান্ত্বনা দেওয়ার উদ্দেশ্য হল, শোকাক্রান্ত ব্যক্তিকে ধৈর্য্যধারণ এবং আল্লাহ্র পক্ষ থেকে নেকী প্রাপ্তির বিষয়ে আশান্বিত করে তোলা; তাকে অভিনন্দন জানানো নয়, যেমনটি অন্যান্য অনুষ্ঠানে হয়ে থাকে। অতএব, কেউ মৃত্যুজনিত কারণে শোকাক্রান্ত হলে তাকে সান্ত্বনা দিতে হবে অর্থাৎ যাতে তার ধৈর্য্য ও নেকী প্রাপ্তির আশা বৃদ্ধি পায়, তা-ই করতে হবে।
উত্তরঃ মৃতের মৃত্যুর পর থেকেই তার শোকাহত পরিবার-পরিজন ও আত্মীয় স্বজনকে সান্ত্বনা প্রদানের সময় শুরু হয়। অনুরূপভাবে মৃত্যুঘটিত কারণ ছাড়া অন্য কোন কারণে কেউ দুঃখগ্রস্ত হলে দুঃখগ্রস্ত হওয়ার পর থেকেই তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার সময় শুরু হয়। দুঃখ–কষ্ট লাঘব না হওয়া পর্যন্ত সান্ত্বনা দেওয়া যায়। কারণ কাউকে সান্ত্বনা দেওয়ার উদ্দেশ্য তাকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানানো নয়; বরং সান্ত্বনা দেওয়ার উদ্দেশ্য হল, শোকাহত ব্যক্তিকে বিপদে ধৈর্য্য ধারণের প্রতি শক্তিশালী করে তোলা এবং ছওয়াব প্রাপ্তির আশায় তাকে আশান্বিত করা।
উত্তরঃ শরী‘আতে এর কোনো ভিত্তি নেই। কিন্তু কেউ যদি আপনার আত্মীয় হয় এবং আপনি না গেলে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার ভয় থাকে, তাহলে গেলে সমস্যা নেই। তবে মৃতের পরিবারের সদস্যদের জন্য তাদের বাড়িতে একত্রিত হওয়া এবং শোক প্রকাশকারীদের সাক্ষাত গ্রহণের জন্য অপেক্ষা করা শরী‘আত সম্মত নয়। এমনকি সালাফে ছালেহীনের কেউ কেউ এমন আমলকে নিষিদ্ধ বিলাপ ও মাতমের অন্তর্ভুক্ত গণ্য করেছেন। সেজন্য নিয়ম হল, শোকাহতরা তাদের বাড়ীর দরজা বন্ধ করে দিবে। বাজারে বা মসজিদে তাদের সাথে এমনিতেই কারো সাক্ষাত হয়ে গেলে শোক প্রকাশ করবে। এখানে দু’টি বিষয় উল্লেখযোগ্যঃ
একঃ শোক প্রকাশের জন্য মৃতের পরিবারের কাছে যাওয়া। এটি বৈধ নয়। তবে যেমনটি আমি বলেছি, যদি তার আত্মীয় হয় এবং তাদের কাছে না গেলে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে, তাহলে সেটি ভিন্ন কথা।
দুইঃ শোক প্রকাশকারীদের অভ্যর্থনার জন্য অপেক্ষা করা। এরও কোন ভিত্তি নেই। এর সাথে যদি সান্ত্বনা প্রদানকারীদের খাবারের আয়োজন যোগ করা হয়, তাহলে সালাফে ছালেহীনের কেউ কেউ ইহাকে নিষিদ্ধ বিলাপ ও মাতমের অন্তর্ভুক্ত গণ্য করেছেন।
একঃ শোক প্রকাশের জন্য মৃতের পরিবারের কাছে যাওয়া। এটি বৈধ নয়। তবে যেমনটি আমি বলেছি, যদি তার আত্মীয় হয় এবং তাদের কাছে না গেলে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে, তাহলে সেটি ভিন্ন কথা।
দুইঃ শোক প্রকাশকারীদের অভ্যর্থনার জন্য অপেক্ষা করা। এরও কোন ভিত্তি নেই। এর সাথে যদি সান্ত্বনা প্রদানকারীদের খাবারের আয়োজন যোগ করা হয়, তাহলে সালাফে ছালেহীনের কেউ কেউ ইহাকে নিষিদ্ধ বিলাপ ও মাতমের অন্তর্ভুক্ত গণ্য করেছেন।
উত্তরঃ স্বাভাবিক দৃষ্টিতে মনে হয়, মৃতকে ক্ববরস্থানে নিয়ে যাওয়ার সময় তার মাথা সামনের দিকে রাখাই ভাল। সামনের দিকে পা করে নিয়ে যাওয়া অনুত্তম। তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ সম্পর্কিত কোন হাদীছ আমার জানা নেই।
উত্তরঃ এ বিষয়ে গ্রহণযোগ্য কথা হচ্ছে, দাফনের পরে কোনো কিছু স্মরণ করিয়ে দেওয়া যাবে না; বরং তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে এবং ক্ববরে প্রশ্নের জবাবে দৃঢ় থাকার জন্য দো‘আ করতে হবে। কেননা দাফনের পরে মৃতকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত হাদীছটি দুর্বল।
৪৭
প্রশ্ন ৪৫: মৃতকে দাফনের পূর্বে তার পক্ষে সাক্ষ্য গ্রহণের রেওয়াজ কিছু কিছু মুসলিম সমাজে প্রচলিত আছে। মৃতের কোন আত্মীয় বা অভিভাবক জনগণকে উদ্দেশ্য করে বলে, আপনারা মৃতের ব্যাপারে কি সাক্ষ্য প্রদান করবেন? তখন তারা তার ব্যাপারে সততার সাক্ষ্য প্রদান করে। এসব কর্মকাণ্ডের কোন ভিত্তি কি শরী‘আতে আছে?উত্তরঃ শরী‘আতে এর কোন ভিত্তি নেই এবং কারো জন্য এরূপ বলাও উচিৎ নয়। কেননা এটি বিদ‘আতের অন্তর্ভুক্ত। তাছাড়া তার ব্যাপারে কেউ অসততার সাক্ষ্য দিতেও পারে, আর সে ক্ষেত্রে সেটি হবে তার জন্য অপমান এবং লাঞ্ছনার বিষয়। কারণ এ বিষয়ে একটি হাদীছ পাওয়া যায়। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা তাঁর ছাহাবীগণের সঙ্গে ছিলেন। এমতাবস্থায় একটি মৃতকে তাঁদের পাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হল এবং তাঁরা তার প্রশাংসা করলেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘অপরিহার্য হয়ে গেছে’। এরপর আরেকটি লাশ তাঁদের পাশ দিয়ে গেল কিন্তু তাঁরা তার বদনাম করলেন। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘অপরিহার্য হয়ে গেছে’। ছাহাবীগণ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম) জিজ্ঞেস করলেন, ‘অপরিহার্য হয়ে গেছে’ অর্থ কি? রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তোমরা যার প্রশংসা করলে, তার জন্য জান্নাত অপরিহার্য হয়ে গেছে। আর তোমরা যার বদনাম করলে, তার জন্য জাহান্নাম অপরিহার্য হয়ে গেছে। [. বুখারী, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/১৩৮৬; মুসলিম, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৯৪৯।]
৪৮
প্রশ্ন ৪৬: ‘দু’জন ব্যক্তিকে ক্ববরে শাস্তি দেওয়া হচ্ছিল। ফলে শাস্তি মাফের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের ক্ববরে খেজুরের ডাল পুঁতে দিলেন’ [. বুখারী, ‘অযূ’ অধ্যায়, হা/২১৬।] এই হাদীছের আলোকে ক্ববরের উপরে গাছের কাঁচা ডাল ইত্যাদি পোঁতা কি সুন্নাত নাকি এটি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর জন্য নির্দিষ্ট ছিল? আর তার জন্য নির্দিষ্ট হওয়ার দলীলইবা কি?উত্তরঃ ক্ববরের উপরে গাছের কাঁচা ডাল বা ঐ জাতীয় কিছু পোঁতা সুন্নাত নয়; বরং ইহা একদিকে যেমন বিদ‘আত, অন্যদিকে তেমনি মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণের শামিল। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব ক্ববরে এরূপ রাখতেন না। শুধুমাত্র ঐ ক্ববর দু’টিতে তিনি রেখেছিলেন। কারণ তিনি জানতে পেরেছিলেন যে, তাদেরকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। অতএব, ক্ববরের উপরে খেজুর ডাল পোঁতা মৃতের প্রতি অন্যায় এবং তার সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ বৈ কিছুই নয়। আর কেউ তার মুসলিম ভাই সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করতে পারে না। কেননা কেউ কারো ক্ববরের উপর খেজুরের ডাল পোঁতার অর্থই হচ্ছে, সে বিশ্বাস করে যে, ঐ ক্ববরবাসীকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ ব্যক্তিদ্বয়কে শাস্তি দেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছিলেন বলেই তো তাদের ক্ববরের উপরে খেজুরের ডাল পুঁতেছিলেন।
সংক্ষিপ্তভাবে বলা যায়, ক্ববরের উপরে খেজুরের ডাল বা এ জাতীয় কিছু পোঁতা বিদ‘আত এবং মৃতব্যক্তি সম্পর্কে কু–ধারণা পোষণ। কেননা যে ডাল পুঁতে, সে মনে করে ক্ববরবাসীকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। আর সেজন্যই তো সে তার শাস্তি লাঘব করতে চায়। এখানে আরেকটি বিষয় হচ্ছে, আল্লাহ ঐ ব্যক্তিদ্বয়ের ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর সুপারিশ ক্ববূল করেছিলেন; কিন্তু তিনি মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে আমাদের সুপারিশ ক্ববূল করবেন কিনা তা তো আমরা জানি না।
সংক্ষিপ্তভাবে বলা যায়, ক্ববরের উপরে খেজুরের ডাল বা এ জাতীয় কিছু পোঁতা বিদ‘আত এবং মৃতব্যক্তি সম্পর্কে কু–ধারণা পোষণ। কেননা যে ডাল পুঁতে, সে মনে করে ক্ববরবাসীকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। আর সেজন্যই তো সে তার শাস্তি লাঘব করতে চায়। এখানে আরেকটি বিষয় হচ্ছে, আল্লাহ ঐ ব্যক্তিদ্বয়ের ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর সুপারিশ ক্ববূল করেছিলেন; কিন্তু তিনি মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে আমাদের সুপারিশ ক্ববূল করবেন কিনা তা তো আমরা জানি না।
৪৯
প্রশ্ন ৪৭: ইমাম ফরয ছালাতের সালাম ফিরানোর সঙ্গে সঙ্গে মৃত ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজন তাকে দ্রুত দাফন করার উদ্দেশ্যে তড়িঘড়ি করে ইমামের সামনে জানাযা পড়ানোর জন্য নিয়ে আসে। এক্ষেত্রে মৃতের আত্মীয়-স্বজনের করণীয় আসলে কি? আর ইমামকেইবা আপনি কি নছীহত করবেন?উত্তরঃ যদি পরিপূর্ণ জামা‘আত পায়নি এমন মুছল্লীর সংখ্যা অনেক হয়, তবে জানাযা ছালাতের জন্য একটু অপেক্ষা করা ভাল। তাহলে বেশী সংখ্যক মানুষ তার জানাযা পড়তে পারবে এবং তারা নেকী থেকে বঞ্চিত হবে না। তবে এধরনের কোন কারণ না থাকলে দেরী না করে জানাযার ছালাত আদায় করে তাড়াতাড়ি দাফন করা ভাল।
৫০
প্রশ্ন ৪৮: মৃতের সাথে লেনদেন সংক্রান্ত কিছু ঘটে থাকলে মৃত ব্যক্তির অভিভাবক সে বিষয়টি সমাধানের জন্য জানাযায় অংশগ্রহণকারীদের কাছে আবেদন করতে পারে কি?উত্তরঃ এমন কর্ম বিদ‘আতের অন্তর্ভুক্ত। কেননা মৃতের সাথে যার কোনো লেনদেন নেই, মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে তার মনে কিছুই থাকে না। আর যার সাথে মৃত ব্যক্তির লেনদেন থাকে এবং সে যদি তা আদায় করে মৃত্যুবরণ করে, তাহলেও তার মনে কিছু থাকে না। কিন্তু যদি মৃত ব্যক্তি লেনদেনের পরিসমাপ্তি না করে মারা যায়, তাহলে লেনদেনে জড়িত ব্যক্তি তার সমাধান করতেও পারে, আবার নাও করতে পারে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি পরিশোধ করার নিয়্যতে কারো কাছ থেকে অর্থ-সম্পদ নিল, আল্লাহ তার পক্ষ থেকে আদায় করে দিবেন। কিন্তু যে ব্যক্তি ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে কারো অর্থ-সম্পদ নিল, আল্লাহ তার ক্ষতি সাধন করবেন’। [. বুখারী, ‘ঋণ নেওয়া’ অধ্যায়, হা/২৩৮৭।]
উত্তরঃ শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণ এবং ছওয়াবের আশায় মানুষ ক্ববর যিয়ারত করবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা ক্ববর যিয়ারত কর। কেননা তা আখেরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয়’। [. ইমাম মুসলিম হাদীছটি বর্ণনা করেছেন এভাবে, ‘তোমরা ক্ববর যিয়ারত কর। কেননা তা মরণকে স্মরণ করিয়ে দেয়’ (‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৯৭৬)।]
তবে যে ব্যক্তি বরকত লাভের উদ্দেশ্যে অথবা ক্ববরবাসীর কাছে প্রার্থনার উদ্দেশ্যে ক্ববর যিয়ারত করে, তার এই যিয়ারত বিদ‘আতী যিয়ারতও হতে পারে, আবার শিরকী যিয়ারতও হতে পারে। আল্লাহ্র প্রশংসা যে, আমাদের দেশে (অর্থাৎ সৌদী আরবে) এমনটি পাওয়া যায় না। যদিও কোন কোন ইসলামী রাষ্ট্রে এরূপ যিয়ারতের প্রচলন আছে।
যাহোক, ক্ববর যিয়ারত দুই ধরনেরঃ
১. নির্দিষ্টভাবে কোন এক ব্যক্তির ক্ববর যিয়ারত করা। এই ক্ষেত্রে যিয়ারতকারী ক্ববরটির পাশে দাঁড়িয়ে তার জন্য যত ইচ্ছা দো‘আ করবে; যেমনটি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছিলেন। (ঘটনা হল) রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ্র কাছে তাঁর মায়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার অনুমতি চাইলে আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে অনুমতি দেন নি। কিন্তু তাঁর মায়ের ক্ববর যিয়ারতের অনুমতি চাইলে তিনি তাঁকে অনুমতি দেন। [. মুসলিম, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৯৭৬।] ফলে তিনি তাঁর কতিপয় ছাহাবীকে নিয়ে তাঁর মায়ের ক্ববর যিয়ারত করেন।
২. ক্ববরস্থানের সবার ক্ববর যিয়ারত করা। এক্ষেত্রে যিয়ারতকারী ক্ববরসমূহকে সামনে করে দাঁড়াবে এবং ক্ববরবাসীদেরকে সালাম প্রদান করবে; যেমনটি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাকী‘ নামক ক্ববরস্থান যিয়ারতের সময় করতেন। তিনি বলতেন:
«السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ , وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لاَحِقُونَ . يَرْحَمُ اللَّهُ الْمُسْتَقْدِمِينَ مِنَّا وَمِنْكُمْ وَالْمُسْتَأْخِرِينَ . نَسْأَلُ اللهَ لَنَا وَلَكُمُ الْعَافِيَةَ , اَللَّهُمَّ لاَ تَحْرِمْنَا أَجْرَهُمْ , وَلاَ تَفْتِنَّا بَعْدَهُمْ , وَاغْفِرْ لَنَا وَلَهُمْ»
‘হে ক্ববরবাসী মুমিনগণ! আপনাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমরাও ইনশাআল্লাহ আপনাদের সাথে মিলিত হব। আমাদের ও আপনাদের অগ্রবর্তী ও পরবর্তীদের উপরে আল্লাহ রহম করুন। আমরা আমাদের ও আপনাদের জন্য আল্লাহ্র কাছে নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! তাদের পূণ্য থেকে আপনি আমাদেরকে বঞ্চিত করবেন না। তাদের মৃত্যুর পরে আমাদেরকে আপনি ফেতনায় ফেলবেন না। আপনি আমাদেরকে এবং তাদেরকে ক্ষমা করে দিন’। [. ছহীহ মুসলিম, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/ ৯৭৪, ৯৭৫।]
তবে যে ব্যক্তি বরকত লাভের উদ্দেশ্যে অথবা ক্ববরবাসীর কাছে প্রার্থনার উদ্দেশ্যে ক্ববর যিয়ারত করে, তার এই যিয়ারত বিদ‘আতী যিয়ারতও হতে পারে, আবার শিরকী যিয়ারতও হতে পারে। আল্লাহ্র প্রশংসা যে, আমাদের দেশে (অর্থাৎ সৌদী আরবে) এমনটি পাওয়া যায় না। যদিও কোন কোন ইসলামী রাষ্ট্রে এরূপ যিয়ারতের প্রচলন আছে।
যাহোক, ক্ববর যিয়ারত দুই ধরনেরঃ
১. নির্দিষ্টভাবে কোন এক ব্যক্তির ক্ববর যিয়ারত করা। এই ক্ষেত্রে যিয়ারতকারী ক্ববরটির পাশে দাঁড়িয়ে তার জন্য যত ইচ্ছা দো‘আ করবে; যেমনটি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছিলেন। (ঘটনা হল) রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ্র কাছে তাঁর মায়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার অনুমতি চাইলে আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে অনুমতি দেন নি। কিন্তু তাঁর মায়ের ক্ববর যিয়ারতের অনুমতি চাইলে তিনি তাঁকে অনুমতি দেন। [. মুসলিম, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৯৭৬।] ফলে তিনি তাঁর কতিপয় ছাহাবীকে নিয়ে তাঁর মায়ের ক্ববর যিয়ারত করেন।
২. ক্ববরস্থানের সবার ক্ববর যিয়ারত করা। এক্ষেত্রে যিয়ারতকারী ক্ববরসমূহকে সামনে করে দাঁড়াবে এবং ক্ববরবাসীদেরকে সালাম প্রদান করবে; যেমনটি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাকী‘ নামক ক্ববরস্থান যিয়ারতের সময় করতেন। তিনি বলতেন:
«السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ , وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لاَحِقُونَ . يَرْحَمُ اللَّهُ الْمُسْتَقْدِمِينَ مِنَّا وَمِنْكُمْ وَالْمُسْتَأْخِرِينَ . نَسْأَلُ اللهَ لَنَا وَلَكُمُ الْعَافِيَةَ , اَللَّهُمَّ لاَ تَحْرِمْنَا أَجْرَهُمْ , وَلاَ تَفْتِنَّا بَعْدَهُمْ , وَاغْفِرْ لَنَا وَلَهُمْ»
‘হে ক্ববরবাসী মুমিনগণ! আপনাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমরাও ইনশাআল্লাহ আপনাদের সাথে মিলিত হব। আমাদের ও আপনাদের অগ্রবর্তী ও পরবর্তীদের উপরে আল্লাহ রহম করুন। আমরা আমাদের ও আপনাদের জন্য আল্লাহ্র কাছে নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! তাদের পূণ্য থেকে আপনি আমাদেরকে বঞ্চিত করবেন না। তাদের মৃত্যুর পরে আমাদেরকে আপনি ফেতনায় ফেলবেন না। আপনি আমাদেরকে এবং তাদেরকে ক্ষমা করে দিন’। [. ছহীহ মুসলিম, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/ ৯৭৪, ৯৭৫।]
৫৩
প্রশ্ন ৫১: কেবলমাত্র ক্ববরস্থানে প্রবেশ করলে মৃতদের প্রতি সালাম দেওয়া সুন্নাত নাকি ক্ববরস্থানের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেও তাদেরকে সালাম দেওয়া যায়?উত্তরঃ শরী‘আত গবেষকগণ বলেন, কেউ ক্ববর যিয়ারত করতে যাক অথবা ক্ববরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করুক, তার জন্য একটু আগে উল্লেখিত দো‘আটির মাধ্যমে ক্ববরবাসীদের জন্য দো‘আ করা সুন্নাত।
উত্তরঃ শোক পালনের সময় বিধবা স্ত্রীর উপর যেসব বিষয় নিষিদ্ধঃ
এক. প্রয়োজন ছাড়া বাড়ী থেকে বের হবে না। যেমনঃ সে অসুস্থ হলে হাসপাতালে যেতে পারবে, তবে দিনের বেলায় যাবে। অনুরূপভাবে যরূরী কারণ ছাড়া বাড়ী থেকে বের হবে না। যেমনঃ তার বাড়ী ধ্বসে পড়ার উপক্রম হল এবং ভেঙ্গেচুরে তার গায়ের উপর পড়ার ভয় পেল, অথবা তার বাড়ীতে আগুন লেগে গেল ইত্যাদি। বিদ্বানগণ বলেন, দিনের বেলায় দরকারে বের হতে পারে। কিন্তু রাতে যরূরী কারণ ছাড়া বের হবে না।
দুই. খোশবূ ব্যবহার করবে না। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম শোক পালনকারিণীকে ঋতুমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত খোশবূ ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। ঋতুমুক্ত হওয়ার পর ঋতুর চিহ্ন দূর হওয়ার উদ্দেশ্যে সামান্য পরিমাণ আযফার (এক প্রকার খোশবূ) ব্যবহার করবে। [. উম্মে আত্বিইয়াহ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) বলেন, ‘আমাদেরকে তিন দিনের বেশী শোক পালন করতে নিষেধ করা হত। কিন্তু স্বামী মারা গেলে চার মাস ১০ দিন শোক পালন করার আদেশ করা হত। ঋতুমুক্ত হওয়ার পর পবিত্র হয়ে আমাদেরকে সামান্য পরিমাণ আযফার ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হত’ (বুখারী, ‘তালাক্ব’ অধ্যায়, হা/৫৩৪১; মুসলিম, ‘তালাক্ব’ অধ্যায়, হা/৯৩৮)।]
তিন. শোভাবর্ধক সুন্দর কোনো পোশাক পরিধান করবে না। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন পোশাক পরতে নিষেধ করেছেন। [. উম্মে আত্বিইয়াহ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) বর্ণিত উল্লেখিত হাদীছে এসেছে, ‘আমাদেরকে রঙীন কাপড় পরতে নিষেধ করা হত। তবে এক ধরনের ডোরা-কাটা পোষাক পরার অনুমতি দেওয়া হত’।] ফলে সে কোনো রকম সাজসজ্জা ছাড়াই ঐ জাতীয় সাধারণ পোশাক পরবে, বাড়িতে স্বাভাবিক যেসব পোশাক পরা হয়।
চার. চোখে সুরমা লাগাবে না। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম চোখে সুরমা লাগাতে নিষেধ করেছেন। [. উম্মে আত্বিইয়াহ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) বর্ণিত উল্লেখিত হাদীছে এসেছে, ‘আমাদেরকে চোখে সুরমা লাগাতে নিষেধ করা হত’।] তবে যদি সুরমা লাগাতে বাধ্য হয়, তাহলে এমনভাবে লাগাবে যাতে রাতে সুরমার রঙ প্রকাশ না পায়। আর দিনের বেলায় উহা মুছে ফেলবে।
পাঁচ. অলংকার পরবে না। কেননা সুন্দর পোশাক পরাই যদি নিষেধ হয়, তাহলে অলংকার পরার নিষেধাজ্ঞা তো আরো স্বাভাবিক।
সে পুরুষদের সাথে কথা বলতে পারবে, ফোন-মোবাইলে কথা বলতে পারবে। বাড়ীতে প্রবেশে শরী‘আতে বাধা নেই এমন ব্যক্তিকে বাড়ীতে প্রবেশের অনুমতি দিতে পারবে। রাতে ও দিনে বাড়ীর ছাদে উঠতে পারবে। প্রত্যেক জুমু‘আয় গোসল করা তার জন্য আবশ্যক– কিছু সাধারণ জনতার এমন ধারণা ঠিক নয়। প্রত্যেক সপ্তাহে তাকে তার মাথার চুলও খুলতে হবে না।
অনুরূপভাবে ইদ্দত শেষ হওয়ার পরে কিছু জিনিষ নিয়ে বের হওয়া এবং সর্বপ্রথম যার সাথে সাক্ষাৎ হবে, তাকে তা দান করে দেওয়ার প্রথাও শরী‘আত সম্মত নয়; বরং তা বিদ‘আত।
এক. প্রয়োজন ছাড়া বাড়ী থেকে বের হবে না। যেমনঃ সে অসুস্থ হলে হাসপাতালে যেতে পারবে, তবে দিনের বেলায় যাবে। অনুরূপভাবে যরূরী কারণ ছাড়া বাড়ী থেকে বের হবে না। যেমনঃ তার বাড়ী ধ্বসে পড়ার উপক্রম হল এবং ভেঙ্গেচুরে তার গায়ের উপর পড়ার ভয় পেল, অথবা তার বাড়ীতে আগুন লেগে গেল ইত্যাদি। বিদ্বানগণ বলেন, দিনের বেলায় দরকারে বের হতে পারে। কিন্তু রাতে যরূরী কারণ ছাড়া বের হবে না।
দুই. খোশবূ ব্যবহার করবে না। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম শোক পালনকারিণীকে ঋতুমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত খোশবূ ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। ঋতুমুক্ত হওয়ার পর ঋতুর চিহ্ন দূর হওয়ার উদ্দেশ্যে সামান্য পরিমাণ আযফার (এক প্রকার খোশবূ) ব্যবহার করবে। [. উম্মে আত্বিইয়াহ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) বলেন, ‘আমাদেরকে তিন দিনের বেশী শোক পালন করতে নিষেধ করা হত। কিন্তু স্বামী মারা গেলে চার মাস ১০ দিন শোক পালন করার আদেশ করা হত। ঋতুমুক্ত হওয়ার পর পবিত্র হয়ে আমাদেরকে সামান্য পরিমাণ আযফার ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হত’ (বুখারী, ‘তালাক্ব’ অধ্যায়, হা/৫৩৪১; মুসলিম, ‘তালাক্ব’ অধ্যায়, হা/৯৩৮)।]
তিন. শোভাবর্ধক সুন্দর কোনো পোশাক পরিধান করবে না। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন পোশাক পরতে নিষেধ করেছেন। [. উম্মে আত্বিইয়াহ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) বর্ণিত উল্লেখিত হাদীছে এসেছে, ‘আমাদেরকে রঙীন কাপড় পরতে নিষেধ করা হত। তবে এক ধরনের ডোরা-কাটা পোষাক পরার অনুমতি দেওয়া হত’।] ফলে সে কোনো রকম সাজসজ্জা ছাড়াই ঐ জাতীয় সাধারণ পোশাক পরবে, বাড়িতে স্বাভাবিক যেসব পোশাক পরা হয়।
চার. চোখে সুরমা লাগাবে না। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম চোখে সুরমা লাগাতে নিষেধ করেছেন। [. উম্মে আত্বিইয়াহ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) বর্ণিত উল্লেখিত হাদীছে এসেছে, ‘আমাদেরকে চোখে সুরমা লাগাতে নিষেধ করা হত’।] তবে যদি সুরমা লাগাতে বাধ্য হয়, তাহলে এমনভাবে লাগাবে যাতে রাতে সুরমার রঙ প্রকাশ না পায়। আর দিনের বেলায় উহা মুছে ফেলবে।
পাঁচ. অলংকার পরবে না। কেননা সুন্দর পোশাক পরাই যদি নিষেধ হয়, তাহলে অলংকার পরার নিষেধাজ্ঞা তো আরো স্বাভাবিক।
সে পুরুষদের সাথে কথা বলতে পারবে, ফোন-মোবাইলে কথা বলতে পারবে। বাড়ীতে প্রবেশে শরী‘আতে বাধা নেই এমন ব্যক্তিকে বাড়ীতে প্রবেশের অনুমতি দিতে পারবে। রাতে ও দিনে বাড়ীর ছাদে উঠতে পারবে। প্রত্যেক জুমু‘আয় গোসল করা তার জন্য আবশ্যক– কিছু সাধারণ জনতার এমন ধারণা ঠিক নয়। প্রত্যেক সপ্তাহে তাকে তার মাথার চুলও খুলতে হবে না।
অনুরূপভাবে ইদ্দত শেষ হওয়ার পরে কিছু জিনিষ নিয়ে বের হওয়া এবং সর্বপ্রথম যার সাথে সাক্ষাৎ হবে, তাকে তা দান করে দেওয়ার প্রথাও শরী‘আত সম্মত নয়; বরং তা বিদ‘আত।
৫৫
প্রশ্ন ৫৩: স্ত্রী যে বাড়ীতে থাকা অবস্থায় তার কাছে তার স্বামীর মৃত্যুর খবর এসেছে, সেই বাড়ীতে শোক প্রকাশের দিনগুলি কাটানো কি তার জন্য আবশ্যক নাকি তার স্বামীর বাড়ীতে? ওখান থেকে তার বাবার বাড়ীতে বা অন্যকোন বাড়ীতে যাওয়া কি তার জন্য বৈধ হবে?উত্তরঃ যে বাড়ীতে সে বসবাস করত, সেখানে অবস্থান করা তার জন্য আবশ্যক। ধরা যাক, সে তার কোন আত্মীয়ের বাড়ীতে বেড়াতে গেছে এবং এমতাবস্থায় তার স্বামীর মৃত্যুর খবর এসেছে। এক্ষেত্রে পূর্বে বসবাসকৃত বাড়ীতে ফিরে যাওয়া তার জন্য আবশ্যক। যে পাঁচটি বিষয় থেকে তাকে দূরে থাকার কথা বলা হয়েছে, তন্মধ্যে একটি হল, সে তার বাড়ী থেকে বের হবে না।
উত্তরঃ মহিলাদের ক্ববর যিয়ারত করা হারাম; বরং কবীরা গোনাহ। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্ববর যিয়ারতকারিণীদেরকে অভিশাপ করেছেন। তবে যিয়ারতের নিয়্যত ছাড়াই কোনো মহিলা যদি ক্ববরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে, তাহলে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ক্ববরবাসীদের জন্য দো‘আ করলে কোন সমস্যা নেই। ছহীহ মুসলিমে বর্ণিত আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা)–এর হাদীছে এমনই ইঙ্গিত পাওয়া যায়। [. মুসলিম, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৯৭৪।]
৫৭
প্রশ্ন ৫৫: বর্তমানে পত্র-পত্রিকায় শোক প্রকাশের এবং মৃতব্যক্তির অভিভাবকদের পক্ষ থেকে শোক প্রকাশকারীদের ধন্যবাদ জানানোর ধূম পড়ে গেছে। এমন রেওয়াজের হুকুম কি? এটি কি নিষিদ্ধ বিলাপ ও মাতমের আওতায় পড়বে? উল্লেখ্য যে, পত্রিকায় শোক প্রকাশ এবং শোক প্রকাশকারীদেরকে ধন্যবাদ জানাতে কখনও পত্রিকার পুরো পৃষ্টা লেগে যায়, যার ব্যয়ভার দশ হাযার সঊদী রিয়াল পড়ে। ইহা কি অপচয়ের অন্তর্ভুক্ত হবে?উত্তরঃ হ্যাঁ.. আমার মতে, এমন রেওয়াজ নিষিদ্ধ বিলাপের আওতাভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমন আমল নিষিদ্ধ বিলাপের আওতাভুক্ত না হলেও অন্ততঃ এতে সম্পদের অপচয় ও অপব্যয় তো হয়ই। মূলতঃ শোক প্রকাশ ধন্যবাদ জানানোর মত কোনো বিষয় নয় যে, মানুষকে পত্রিকার মাধ্যমে এতবেশী উদ্বুদ্ধ হতে হবে। বরং শোক প্রকাশের অর্থ হল, শোকগ্রস্ত ব্যক্তিকে কষ্ট সহ্যের প্রতি শক্তিশালী করে তোলা। এটি ভদ্রতা রক্ষার কোনো বিষয় নয় এবং না কোনো ধন্যবাদ জানানোর বিষয়। মানুষ যদি শোক প্রকাশের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য জানত, তাহলে পত্রিকায় শোক প্রকাশ, শোকের জন্য সমবেত হওয়া, খানা-পিনার আয়োজন করা ইত্যাদি কর্মকাণ্ডের ধারে-কাছেও যেত না।
৫৮
প্রশ্ন ৫৬: শোক প্রকাশের সময় উল্লেখ করতে গিয়ে আপনি বলেছেন, মৃত্যুঘটিত কারণ ছাড়া অন্য কারণেও শোক প্রকাশ করা যেতে পারে। কিন্তু আসলেই কি অন্য কারণে শোক প্রকাশ করা যায়? আর গেলে কিভাবে তা প্রকাশ করতে হবে?উত্তরঃ শোকগ্রস্ত ব্যক্তিকে ধৈর্য্যধারণের প্রতি শক্তিশালী করাই হল শোক প্রকাশ। সেজন্য তা মৃত্যুঘটিত কারণ ছাড়া অন্য ক্ষেত্রেও হতে পারে। যেমনঃ প্রচুর সম্পদ হারিয়ে যাওয়ার কারণে কেউ শোকাগ্রস্ত হলো এবং সে যাতে ভেঙ্গে না পড়ে সেজন্য আপনি শোকপ্রকাশ করতঃ তাকে ধৈর্য্যধারণের প্রতি উৎসাহিত করলেন।
৫৯
প্রশ্ন ৫৭: দুই ঈদের দিন এবং জুম‘আর দিনকে ক্ববর যিয়ারতের জন্য নির্দিষ্ট করে নেওয়ার বিধান কি? এই দিনগুলিতে কি জীবিতদের সাথে সাক্ষাত করতে হবে নাকি ক্ববর যিয়ারত করতে হবে?উত্তরঃ এই দিনগুলিকে ক্ববর যিয়ারতের জন্য নির্দিষ্ট করে নেওয়ার কোনো ভিত্তি নেই। সুতরাং ঈদের দিনকে ক্ববর যিয়ারতের জন্য নির্দিষ্ট করে নেওয়া এবং এমন আমলকে শরী‘আতসম্মত মনে করা বিদ‘আত। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এমর্মে কিছুই বর্ণিত হয় নি এবং কোনো বিদ্বান এ মতের পক্ষে অভিমত দিয়েছেন মর্মেও আমার জানা নেই। তবে জুম‘আর দিনের ব্যাপারে কতিপয় বিদ্বান বলেছেন, এই দিনে ক্ববর যিয়ারত করা উচিৎ। তবে তাঁরা তাঁদের মতের পক্ষে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কোন দলীল পেশ করেন নি।
৬০
প্রশ্ন ৫৮: মহিলা কর্তৃক রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর ক্ববর যিয়ারত এবং অন্যের ক্ববর যিয়ারতের মধ্যে কি কোন পার্থক্য আছে? মহিলা কর্তৃক ক্ববর যিয়ারতের নিষেধাজ্ঞা কি ‘আম বা সার্বিক বিধান নাকি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর ক্ববর এই হুকুম থেকে আলাদা?উত্তরঃ মহিলা কর্তৃক বিশেষভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর ক্ববর যিয়ারতের বৈধতার পক্ষে কোনো দলীল নেই। সুতরাং মহিলা কর্তৃক রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর ক্ববর যিয়ারত অন্য যে কোনো ব্যক্তির ক্ববর যিয়ারতের মতই। একারণে আল্লাহ্র শুকরিয়া যে, মহিলা ছালাতে অথবা ছালাতের বাইরে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর প্রতি সালাম প্রদান করলেই তার জন্য যথেষ্ট হবে। কেননা সে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত থেকে সালাম প্রদান করুক না কেন, তার সালাম রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর রূহ বরাবর পৌঁছে দেওয়া হয়।
উত্তরঃ ক্ববর রঙীন করা ক্ববরকে চুনকাম বা প্লাস্টার করার মতই। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্ববরকে চুনকাম বা প্লাস্টার করতে নিষেধ করেছেন। [. হাদীছটি জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেন (মুসলিম, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৯৭০)।] এছাড়া এটি মানুষের মধ্যে গর্ব–অহংকার সৃষ্টির একটি মাধ্যম। ফলে এর মাধ্যমে ক্ববরসমূহ অহংকারের স্থান হিসাবে পরিগণিত হবে। অতএব, তা পরিত্যাগ করা উচিৎ।
এমনিভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্ববরে লিখতে নিষেধ করেছেন। [. জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূল (ছাঃ) ক্ববর পাকা করতে, ক্ববরে লিখতে, ক্ববরের উপর ভবন বানাতে এবং ক্ববর পদদলিত করতে নিষেধ করেছেন (আবূ দাঊদ, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/১০৫২; ইবনু মাজাহ, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/১৫৬২-১৫৬৪; শায়খ আলবানী (রহেমাহুল্লাহ) হাদীছটিকে ‘ছহীহ’ বলেছেন)।] তবে লেখা যদি কেবলমাত্র পরিচয় দানের উদ্দেশ্যে হয় এবং তাতে কোন প্রশাংসার উল্লেখ না থাকে, তাহলে সেক্ষেত্রে কতিপয় আলেম শিথিলতা প্রদর্শন করেছেন। তারা বলেছেন, লেখাতে যদি মৃত ব্যক্তির সম্মান প্রকাশ পায়, তাহলে তা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত হবে। কেননা ক্ববরে লেখা থেকে নিষেধকে ক্ববর পাকা করা থেকে নিষেধের সাথে তুলনা করা হয়েছে।
এমনিভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্ববরে লিখতে নিষেধ করেছেন। [. জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূল (ছাঃ) ক্ববর পাকা করতে, ক্ববরে লিখতে, ক্ববরের উপর ভবন বানাতে এবং ক্ববর পদদলিত করতে নিষেধ করেছেন (আবূ দাঊদ, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/১০৫২; ইবনু মাজাহ, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/১৫৬২-১৫৬৪; শায়খ আলবানী (রহেমাহুল্লাহ) হাদীছটিকে ‘ছহীহ’ বলেছেন)।] তবে লেখা যদি কেবলমাত্র পরিচয় দানের উদ্দেশ্যে হয় এবং তাতে কোন প্রশাংসার উল্লেখ না থাকে, তাহলে সেক্ষেত্রে কতিপয় আলেম শিথিলতা প্রদর্শন করেছেন। তারা বলেছেন, লেখাতে যদি মৃত ব্যক্তির সম্মান প্রকাশ পায়, তাহলে তা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত হবে। কেননা ক্ববরে লেখা থেকে নিষেধকে ক্ববর পাকা করা থেকে নিষেধের সাথে তুলনা করা হয়েছে।
৬২
প্রশ্ন ৬০: স্বীকৃত কোনো সৎ ও জ্ঞানী মানুষ মারা গেলে তাঁর ক্ববর যিয়ারতকারীদের সংখ্যা বেশী হয়। কিন্তু সেটি যেন শির্কের মাধ্যমে পরিণত না হয়, সেজন্য কিছু কিছু ছাত্র এত বেশী পরিমাণ যিয়ারত করতে নিষেধ করে থাকে। এক্ষণে এবিষয়ে আপনার মতামত জানিয়ে বাধিত করবেন।উত্তরঃ ছাত্রদের এই মতটি আমিও ঠিক মনে করি। কেননা নেককার ও জ্ঞানীদের ক্ববর বেশী বেশী যিয়ারত করলে পরবর্তীতে এই যিয়ারত শির্কের পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে। সেজন্য ক্ববর যিয়ারত ছাড়াই তাঁদের জন্য দো‘আ করা উচিৎ। কেননা আল্লাহ বান্দার দো‘আ ক্ববূল করলে তা মৃত ব্যক্তির জন্য ফায়দা দিবে। বান্দা মৃত ব্যক্তির ক্ববরের কাছে এসে দো‘আ করুক অথবা বাড়ীতে বা মসজিদে দো‘আ করুক, সেটি কোনো ব্যাপার নয়। ফলে ক্ববরের কাছে বেশী বেশী যাওয়ার প্রয়োজন নেই। অতএব, ছাত্রদের এই নিষেধাজ্ঞা যুক্তিযুক্ত, বিশেষ করে বর্তমান যামানায়।
৬৩
প্রশ্ন ৬১: খারাপ প্রকৃতির মানুষ মারা গেলে লোকে অনেক সময় তার দোষত্রুটি বর্ণনা করে। অথচ ছহীহ বুখারীতে এসেছে, ‘তোমরা মৃতদেরকে গালি দিও না। কেননা তারা তাদের কৃতকর্মের প্রতিদান প্রাপ্তির স্থলে পৌঁছে গেছে’। [. বুখারী, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/১৩৯৩।] এক্ষণে, ঐসব লোক কি এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়ে?উত্তরঃ হ্যাঁ, যদি ঐ ব্যক্তির খারাপ দিক বর্ণনার পেছনে তাকে গালি-গালাজ করার উদ্দেশ্য থাকে, তাহলে তা জায়েয নয়। কিন্তু এর উদ্দেশ্য যদি হয়, তার আমলের মত আমল থেকে মানুষকে সতর্কীকরণ, তাহলে তাতে কোনো সমস্যা নেই। কেননা এর মাধ্যমে সে অন্যের কল্যাণ কামনা করে।
৬৪
প্রশ্ন ৬২: ক্ববরে মৃত ব্যক্তির জন্য ‘ক্বাতীফা’ বা মখমল ও রেশমী জাতীয় কাপড় দেওয়ার হুকুম কি? ছহীহ মুসলিমে এসেছে, ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর ক্ববরে লাল ক্বাতীফা দিয়েছিলেন। [. মুসলিম, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৯৬৭।]উত্তরঃ কেউ কেউ ক্ববরে ক্বাতীফা দেওয়ার পক্ষে মত প্রকাশ করলেও এ বিষয়ে আমার দ্বিমত রয়েছে। কেননা কোনো একজন ছাহাবী থেকেও বর্ণিত হয় নি যে, তারা এমনটি করেছেন। তবে হতে পারে যে, তা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর জন্য নির্দিষ্ট ছিল। দ্বিতীয়তঃ যদি এমন পদ্ধতি চালু করা হয়, তাহলে মানুষ প্রতিযোগিতায় নেমে পড়বে এবং প্রত্যেকে চাইবে তার নিজস্ব মৃত ব্যক্তির ক্ববরে অন্যের চেয়ে সুন্দর কাপড় দিতে। অবশেষে ক্ববরসমূহ মানুষের অহংকারের স্থানে পরিণত হবে।
৬৫
প্রশ্ন ৬৩: রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর গোলাম শুক্বরান যখন তাঁর ক্ববরে কাপড় দিয়েছিলেন, তখন ছাহাবীগণ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম) তার বিরোধিতা করেছিলেন মর্মে কোন দলীল আছে কি? ছাহাবীগণ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম) এই কাপড় আবার বের করে ফেলেছিলেন মর্মের বক্তব্যের সঠিক তাইবা কতটুকু?উত্তরঃ এ বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই।
৬৬
প্রশ্ন ৬৪: ইমাম মুসলিম বর্ণিত আবু হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু–এর হাদীছে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘কোনো মুসলিম ব্যক্তির রূহ যখন বের হয়ে যায়, তখন দু’জন ফেরেশতা তা নিয়ে উপরে উঠে। হাম্মাদ (হাদীছটির একজন বর্ণনাকারী) বলেন, অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ রূহের সুগন্ধি এবং মিস্কে আম্বরের কথা উল্লেখ করলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ঐ সময় আসমানবাসী বলেন, যমীন থেকে পবিত্র আত্মা এসেছে।…আল্লাহ আপনার উপর রহমত বর্ষণ করুন এবং আপনার শরীরের প্রতিও রহমত বর্ষণ করুন, যাকে আপনি সৎ আমল দ্বারা পরিচালিত করতেন। অতঃপর তাকে তার প্রভূর দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। তারপর আল্লাহ বলবেন, একে শেষ সময় পর্যন্ত নিয়ে যাও। অনুরূপভাবে কাফেরকেও বলা হয়, একে শেষ সময় পর্যন্ত নিয়ে যাও। [. মুসলিম, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/২৮৭২।] এক্ষণে হাদীছে ‘শেষ সময় পর্যন্ত’ দ্বারা কি বুঝানো হয়েছে?উত্তরঃ এখানে ‘শেষ সময়’ দ্বারা ক্বিয়ামত দিবস বুঝানো হয়েছে। [. অর্থাৎ তাদের উভয়কে এমন স্থানে নিয়ে যাও, যা তাদের প্রত্যেকের ক্বিয়ামত পর্যন্ত অবস্থানের জন্য তৈরী করে রাখা হয়েছে। ক্বাযী আয়ায বলেন, মুমিনের আত্মাকে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত নিয়ে যাও। আর কাফিরের আত্মাকে নিয়ে যাও সিজ্জীন পর্যন্ত (মিরক্বাতুল মাফাতীহ শারহু মিশকাতিল মাছাবীহ, হা/১৬৪৩-এর ব্যাখ্যা দ্রঃ)।–অনুবাদক।]
৬৭
প্রশ্ন ৬৫: ছহীহ মুসলিমে আবু হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত হাদীছে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমি আমার প্রভূর কাছে আমার মায়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার অনুমতি চাইলাম। কিন্তু তিনি আমাকে অনুমতি দিলেন না’। [. মুসলিম, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৯৭৬।] উক্ত হাদীছ কি প্রমাণ করে যে, তাঁর মা জাহান্নামী?উত্তরঃ হ্যাঁ, উক্ত হাদীছ প্রমাণ করে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মা মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِينَ آمَنُوا أَن يَسْتَغْفِرُوا لِلْمُشْرِكِينَ وَلَوْ كَانُوا أُولِي قُرْبَىٰ مِن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُمْ أَصْحَابُ الْجَحِيمِ﴾ [ سورة التوبة : 113]
‘মুশরিকরা জাহান্নামী একথা স্পষ্ট হওয়ার পর তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা নবী ও মুমিনের জন্য উচিৎ নয়, যদিও তারা নিকটাত্মীয় হয়’ (তাওবাহ ১১৩)।
অন্যত্রে আল্লাহ বলেন,
﴿إِنَّهُ مَن يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ﴾ [ سورة المائدة : 72]
‘নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহ্র সাথে শির্ক করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন। আর তার বাসস্থান হচ্ছে জাহান্নাম। অত্যাচারীদের কোন সাহায্যকারী নেই’ (মায়েদাহ ৭২)।
﴿مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِينَ آمَنُوا أَن يَسْتَغْفِرُوا لِلْمُشْرِكِينَ وَلَوْ كَانُوا أُولِي قُرْبَىٰ مِن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُمْ أَصْحَابُ الْجَحِيمِ﴾ [ سورة التوبة : 113]
‘মুশরিকরা জাহান্নামী একথা স্পষ্ট হওয়ার পর তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা নবী ও মুমিনের জন্য উচিৎ নয়, যদিও তারা নিকটাত্মীয় হয়’ (তাওবাহ ১১৩)।
অন্যত্রে আল্লাহ বলেন,
﴿إِنَّهُ مَن يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ﴾ [ سورة المائدة : 72]
‘নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহ্র সাথে শির্ক করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন। আর তার বাসস্থান হচ্ছে জাহান্নাম। অত্যাচারীদের কোন সাহায্যকারী নেই’ (মায়েদাহ ৭২)।
৬৮
প্রশ্ন ৬৬: জুতা পায়ে ক্ববর স্থানে যাওয়ার হুকুম কি? রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘হে জুতাওয়ালা, তোমার জুতা জোড়া খুলো’। [. আবূ দাঊদ, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৩২৩০; নাসাঈ, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/২০৪৮; ইবনু মাজাহ, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/১৫৬৮; আহমাদ, ‘জানাযা’ অধ্যায়, ৫/৮২; বাশীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে হাদীছটি বর্ণিত হয়েছে। আলবানী হাদীছটিকে ‘হাসান’ বলেছেন।] এই দলীল কি সঠিক?উত্তরঃ বিদ্বানগণ বলেন, জুতা পায়ে ক্ববরস্থানে যাওয়া মাকরূহ। তারা এ হাদীছকে দলীল হিসাবে পেশ করেছেন। তবে তারা বলেছেন, প্রয়োজনের তাকীদে জুতা পায়ে ক্ববরস্থানে গেলে কোনো সমস্যা নেই। যেমনঃ সূর্যতাপে ক্ববরস্থানের মাটি খুব গরম থাকলে, সেখানে কাঁটা থাকলে ইত্যাদি।
৬৯
প্রশ্ন ৬৭: ইমাম মুসলিম মুহাম্মাদ ইবনে ক্বায়স থেকে বর্ণনা করেন, আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) বলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! ক্ববরবাসীদের জন্য আমি কিভাবে দো‘আ করব? রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তুমি বলবে, «السَّلَامُ عَلَى أَهْلِ الدِّيَارِ مِنْ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ وَيَرْحَمُ اللَّهُ الْمُسْتَقْدِمِينَ مِنَّا وَالْمُسْتَأْخِرِينَ وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لَاحِقُونَ»
‘ক্ববরবাসী মুমিন এবং মুসলমানের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমাদের অগ্রবর্তী এবং পরবর্তীদের উপর আল্লাহ রহম করুন। আমরা নিশ্চয়ই আপনাদের সাথে মিলিত হব ইনশাআল্লাহ। [. ছহীহ মুসলিম, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/ ৯৭৪, ৯৭৫।]
এছাড়া বুখারী ও মুসলিমে উম্মে আত্বিইয়া (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘মৃতের জানাযা ও কাফন-দাফনে শরীক হতে আমাদেরকে নিষেধ করা হত। কিন্তু আমাদের প্রতি কঠোরতা প্রয়োগ করা হত না’। [. বুখারী, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/১২৭৮; মুসলিম, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৯৩৮।] অর্থাৎ এই নিষেধ ছিল মাকরূহ; হারাম নয়। এসব হাদীছ কি স্পষ্ট প্রমাণ করে না যে, মহিলারা যদি যিয়ারত করতে যেয়ে হারাম কার্য এড়িয়ে চলে, তাহলে তারা ক্ববর যিয়ারত করতে পারে? যদি তা না হয়, তাহলে মুহাম্মাদ বিন ক্বায়স বর্ণিত আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) বর্ণিত উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যা কি হবে?
উত্তরঃ ইতোপূর্বে এ জাতীয় একটি প্রশ্নের জবাব আমরা প্রদান করেছি। আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা)–এর হাদীছের আলোকে আমরা বলেছি, কোন মহিলা ক্ববর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে বের হলে তা কবীরা গোনাহ হিসাবে বিবেচিত হবে। কিন্তু যদি সে ক্ববর যিয়ারতের নিয়্যত ছাড়াই ক্ববরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে এবং একটু দাঁড়িয়ে ক্ববরবাসীকে সালাম দেয়, তাহলে তাতে কোনো দোষ নেই। এটিই আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা)–এর হাদীছের ব্যাখ্যা। ফলে হাদীছদ্বয়ের মধ্যে আর বৈপরীত্য থাকল না। ‘আমাদেরকে মৃতের জানাযা ও কাফন-দাফনে শরীক হতে নিষেধ করা হত, কিন্তু আমাদের প্রতি কঠোরতা দেখানো হত না’ উম্মে আত্বিইয়া (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা)-এর এই হাদীছের ব্যাখ্যায় বেশীর ভাগ বিদ্বান বলেছেন, ‘আমাদেরকে মৃতের জানাযা ও কাফন-দাফনে শরীক হতে নিষেধ করা হত’ মর্মে উম্মে আত্বিইয়ার এই বর্ণনাটুকুই ধর্তব্য হবে। আর হাদীছের পরবর্তী অংশ ‘আমাদের উপর কঠোরতা করা হত না’ তাঁর নিজস্ব বুঝ। তবে হতে পারে এটিই রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর উদ্দেশ্য। কিন্তু মনে রাখতে হবে, জানাযার কাজে শরীক হওয়া আর ক্ববর যিয়ারত করা এক নয়। কেননা জানাযার কাজে পুরুষ থাকায় তারা মহিলাদেরকে নিষিদ্ধ কাজ থেকে বাধা দিতে পারে; কিন্তু ক্ববর যিয়ারতের ক্ষেত্রে তা তেমনটি সম্ভব হয় না।
‘ক্ববরবাসী মুমিন এবং মুসলমানের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমাদের অগ্রবর্তী এবং পরবর্তীদের উপর আল্লাহ রহম করুন। আমরা নিশ্চয়ই আপনাদের সাথে মিলিত হব ইনশাআল্লাহ। [. ছহীহ মুসলিম, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/ ৯৭৪, ৯৭৫।]
এছাড়া বুখারী ও মুসলিমে উম্মে আত্বিইয়া (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘মৃতের জানাযা ও কাফন-দাফনে শরীক হতে আমাদেরকে নিষেধ করা হত। কিন্তু আমাদের প্রতি কঠোরতা প্রয়োগ করা হত না’। [. বুখারী, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/১২৭৮; মুসলিম, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৯৩৮।] অর্থাৎ এই নিষেধ ছিল মাকরূহ; হারাম নয়। এসব হাদীছ কি স্পষ্ট প্রমাণ করে না যে, মহিলারা যদি যিয়ারত করতে যেয়ে হারাম কার্য এড়িয়ে চলে, তাহলে তারা ক্ববর যিয়ারত করতে পারে? যদি তা না হয়, তাহলে মুহাম্মাদ বিন ক্বায়স বর্ণিত আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) বর্ণিত উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যা কি হবে?
উত্তরঃ ইতোপূর্বে এ জাতীয় একটি প্রশ্নের জবাব আমরা প্রদান করেছি। আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা)–এর হাদীছের আলোকে আমরা বলেছি, কোন মহিলা ক্ববর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে বের হলে তা কবীরা গোনাহ হিসাবে বিবেচিত হবে। কিন্তু যদি সে ক্ববর যিয়ারতের নিয়্যত ছাড়াই ক্ববরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে এবং একটু দাঁড়িয়ে ক্ববরবাসীকে সালাম দেয়, তাহলে তাতে কোনো দোষ নেই। এটিই আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা)–এর হাদীছের ব্যাখ্যা। ফলে হাদীছদ্বয়ের মধ্যে আর বৈপরীত্য থাকল না। ‘আমাদেরকে মৃতের জানাযা ও কাফন-দাফনে শরীক হতে নিষেধ করা হত, কিন্তু আমাদের প্রতি কঠোরতা দেখানো হত না’ উম্মে আত্বিইয়া (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা)-এর এই হাদীছের ব্যাখ্যায় বেশীর ভাগ বিদ্বান বলেছেন, ‘আমাদেরকে মৃতের জানাযা ও কাফন-দাফনে শরীক হতে নিষেধ করা হত’ মর্মে উম্মে আত্বিইয়ার এই বর্ণনাটুকুই ধর্তব্য হবে। আর হাদীছের পরবর্তী অংশ ‘আমাদের উপর কঠোরতা করা হত না’ তাঁর নিজস্ব বুঝ। তবে হতে পারে এটিই রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর উদ্দেশ্য। কিন্তু মনে রাখতে হবে, জানাযার কাজে শরীক হওয়া আর ক্ববর যিয়ারত করা এক নয়। কেননা জানাযার কাজে পুরুষ থাকায় তারা মহিলাদেরকে নিষিদ্ধ কাজ থেকে বাধা দিতে পারে; কিন্তু ক্ববর যিয়ারতের ক্ষেত্রে তা তেমনটি সম্ভব হয় না।
৭০
প্রশ্ন ৬৮: ছহীহ মুসলিমে আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত হাদীছে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘মুমূর্ষু রোগীদেরকে তোমরা লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ স্মরণ করাও। [. মুসলিম, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৯১৬।] বাহ্যত এই হাদীছটি মুমূর্ষু ব্যক্তিকে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ স্মরণ করানো ওয়াজিব সাব্যস্ত করে। প্রশ্ন হচ্ছে, ওয়াজিব এই হুকুম সুন্নাত ও মুস্তাহাব পর্যায়ে নিয়ে আসার কোন দলীল আছে কি?উত্তরঃ ছাহাবীগণের আমলই তার দলীল। কেননা তাঁরা প্রত্যেক মুমূর্ষুকে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ স্মরণ করাতেন না।
৭১
প্রশ্ন ৬৯: ছহীহ মুসলিমে আবু হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত হাদীছে প্রমাণিত হয়, রূহ (روح) এবং নাফ্স (نفس) একই অর্থে ব্যবহৃত হয়। হাদীছটি এরূপ, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা কি দেখনি, মরনের সময় মানুষ অপলক দৃষ্টিতে এবং চোখ মোটা করে তাকায়?’ ছাহাবীগণ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম) বললেন, নিশ্চয়ই। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘মানুষের নাফ্স বের হওয়ার সময় তার চোখ সেদিকে তাকিয়ে থাকে বলে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়’। [. মুসলিম, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৯২১।] উম্মে সালামাহ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) বর্ণিত অন্য হাদীছে এসেছে, ‘যখন রূহ ছিনিয়ে নেয়া হয়, তখন চোখ সেদিকে দেখতে থাকে’। [. মুসলিম, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৯২0।] তাহলে রূহ্ই কি নাফ্স? জানিয়ে বাধিত করবেন।উত্তরঃ হ্যাঁ, রূহ এবং নাফস একই অর্থে। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿اللَّهُ يَتَوَفَّى الْأَنفُسَ حِينَ مَوْتِهَا وَالَّتِي لَمْ تَمُتْ فِي مَنَامِهَا﴾ [ سورة زمر : 42]
‘আল্লাহ মানুষের প্রাণ হরণ করেন তার মৃত্যুর সময়; আর যে মরে না, তার নিদ্রাকালে’ (যুমার ৪২)।
﴿اللَّهُ يَتَوَفَّى الْأَنفُسَ حِينَ مَوْتِهَا وَالَّتِي لَمْ تَمُتْ فِي مَنَامِهَا﴾ [ سورة زمر : 42]
‘আল্লাহ মানুষের প্রাণ হরণ করেন তার মৃত্যুর সময়; আর যে মরে না, তার নিদ্রাকালে’ (যুমার ৪২)।
৭২
প্রশ্ন ৭০: ছহীহ মুসলিমে আবূ মালেক আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত হাদীছে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘বিলাপকারিণী যদি তওবা না করে, তাহলে আলকাতরার পোশাক এবং খোস-পাঁচড়ার বর্ম পরিয়ে ক্বিয়ামতের দিন তাকে উঠানো হবে’। [. মুসলিম, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৯৩৪।] উক্ত হাদীছে ‘খোস–পাঁচড়ার বর্ম’ বলতে কি বুঝানো হয়েছে?উত্তরঃ এর অর্থ হল, তার চামড়ায় খোস–পাঁচড়া হবে। জাহান্নামের আগুনে যাতে তার কষ্টের পরিমাণ বেশী হয়, সেজন্য এই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা আল্লাহ্র কাছে জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
৭৩
জানাযার বিধিবিধান সংক্রান্ত আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা [. ‘শায়খ মুহাম্মাদ বিন ছালেহ কল্যাণ ফাউন্ডেশন’-এর গবেষণা কমিটি কর্তৃক এই অংশটি সংযোজন করা হয়েছে।]১. মৃত ব্যক্তিকে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে নিয়ে যাওয়া এবং বারংবার জানাযার ছালাত পড়াঃ যদি মৃতকে একস্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্য হয় বারবার জানাযার ছালাত আদায় করা, তাহলে তা নিকৃষ্ট বিদ‘আত হিসাবে পরিগণিত হবে। এটি সালাফে ছালেহীনের পথনির্দেশের বিরোধী এবং মৃতকে দ্রুত কাফন-দাফনের ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশেরও বিরোধী। এছাড়া এর মাধ্যমে মৃতদের নিয়ে মানুষের মাঝে গর্ব-অহংকারের পর্দাতো উন্মুক্ত হয়ই। শুধু তাই নয়; বরং মৃতের কাফন-দাফনের বিষয়টি বিয়ের অনুষ্ঠানের মত হয়ে যায়।
আর বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে, গায়েবানা জানাযা শরী‘আত সম্মত নয়। তবে মৃত ব্যক্তির জানাযা না কোথাও না পড়া হলে সেক্ষেত্রে তার গায়েবানা জানাযা পড়া যায়; যেমনটি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাজাশীর গায়েবানা জানাযা পড়েছিলেন। অনুরূপভাবে দেশপ্রধান গায়েবানা জানাযার আদেশ করলে পড়া যেতে পারে। কেননা ইজতেহাদী কোন বিষয়ে রাষ্ট্রপ্রধানের অবাধ্য হওয়া উচিৎ নয়।
তবে কোনো জায়গা উত্তম হওয়ার কারণে অথবা সেখানে মৃত ব্যক্তির পরিবার-পরিজন থাকার কারণে সেখানে দাফন করার উদ্দেশ্যে যদি তাকে নিয়ে যাওয়া হয়, তবে তাতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু কোনো জায়গা উত্তম হওয়ার কারণে সেখানে মৃত দাফনের ভিড় পড়ে যেতে পারে এই আশংকায়, উক্ত জায়গা সংকীর্ণ হওয়ার কারণে অথবা ঠিকমত দাফনকার্য সম্পাদন করতে না পারার কারণে যদি রাষ্ট্রপ্রধান মৃতকে সেখানে নিয়ে যেতে নিষেধ করেন, তাহলে নিয়ে যাওয়া যাবে না। এমনিভাবে ওয়ারিছদের ক্ষতি হতে পারে এমন ব্যাপক পরিমাণ অর্থ ব্যয় হওয়ার আশংকা থাকলেও মৃতকে অন্য স্থানে স্থানান্তর করা যাবে না।
আবার কখনও মুর্দাকে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত করা আবশ্যক হয়ে পড়তে পারে। যেমনঃ কেউ যদি কাফের রাষ্ট্রে মৃত্যুবরণ করে, সেখানে মুসলিমদের ক্ববরস্থান না থাকে এবং ঐ দেশের অন্য কোথাও তাকে দাফন করা সম্ভব না হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে তাকে মুসলিম রাষ্ট্রে স্থানান্তর করা আবশ্যক।
একই এলাকার একাধিক মসজিদে জানাযা পড়ানোর জন্য মৃত ব্যক্তিকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তর করাও জঘন্য বিদ‘আত। অতএব, জানাযা পড়ার জন্য মৃত ব্যক্তির নিকটে যেতে হবে; তাকে নিয়ে ঘুরে বেড়ানো যাবে না।
২. জানাযার স্থান অত্যন্ত সংকীর্ণ হওয়ার কারণে মৃত ব্যক্তির নিকটাত্মীয়রা যদি ইমামের সাথে একই কাতারে দাঁড়ায়, তাহলে তাতে কোনো সমস্যা নেই। তবে ইমাম ও প্রথম কাতারের মধ্যবর্তী স্থানেও যদি দাঁড়ানো সম্ভব হয়, তাহলে ইমামের সাথে দাঁড়াবে না। তারা ইমামের ডান-বাম উভয় পাশে দাঁড়াতে পারে। কিন্তু স্থানটি যদি প্রশস্ত হয়, তাহলে একই কাতারে ইমামের সাথে দাঁড়াবে না। কেননা জামা‘আতে ছালাত আদায়ের ক্ষেত্রে এমনভাবে দাঁড়ানো সুন্নাত পরিপন্থী। উল্লেখ্য যে, মৃত ব্যক্তির কতিপয় আত্মীয় ইমামের সাথে একই কাতারে দাঁড়ানোর জন্য সামনে যায় এবং মনে করে, এটিই সুন্নাত। কিন্তু মূলতঃ এমন আমল মারাত্মক ভুল, ইমামগণের উচিৎ মানুষকে এ ব্যাপারে সতর্ক করে তোলা। সাথে সাথে তাদেরকে বলে দিতে হবে যে, ইহা সুন্নাত নয়।
৩. বিনা প্রয়োজনে ক্ববরস্থানে গাড়ী প্রবেশ করানো উচিৎ নয়। কেননা তা একদিকে যেমন স্থান সংকীর্ণ করে, অন্যদিকে তেমনি জানাযার দৃশ্যকে বিবাহ অনুষ্ঠানের দৃশ্যে পরিণত করে। ফলে তা মানুষকে আখেরাতের কথা স্মরণের বিষয়টি ভুলিয়ে দেয়।
৪. বর্তমানে শোক প্রকাশের সময় মুছাফাহা এবং কোলাকুলির যে রীতি মানুষ চালু করেছে, সালাফে ছালেহীন থেকে তার কোনো ভিত্তি আছে বলে আমার জানা নেই। অনুরূপভাবে শোকপ্রকাশকারীদের উদ্দেশ্যে মৃতের পরিবার-পরিজন কর্তৃক সারিবদ্ধ অবস্থানেরও কোন ভিত্তি আমার জানা নেই। কিন্তু কেউ কেউ বলে, যদি জানাযায় অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা অনেক হয় এবং মৃতের পরিবার-পরিজনের সংখ্যা বেশী হয়, তাহলে শোক প্রকাশকারীদের আরামের উদ্দেশ্যে তারা এরূপ সারিবদ্ধ অবস্থান গ্রহণ করে। এতে মৃতের পরিবার-পরিজনকে খুঁজে পেতে শোক প্রকাশকারীদের কষ্ট হয় না। তাদের উদ্দেশ্য সঠিক হলেও এমন আমল আমার পছন্দ নয়।
৫. জানাযা ও কাফন-দাফনে অংশগ্রহণকারীদেরকে তাদের বর্তমান ও ভবিষ্যত নিয়ে ভাবতে হবে। মনে রাখতে হবে, আজ সে মৃত ব্যক্তির জানাযা ও কাফন-দাফনে অংশগ্রহণ করেছে; কিন্তু কাল তার জানাযায় অন্যরা অংশগ্রহণ করবে। অতএব, এসময় তাদেরকে দুনিয়াবী আলাপ-আলোচনা পরিত্যাগ করতে হবে। কেননা এমন খোশ গল্প করলে একদিকে যেমন তারা আখেরাতের কথা স্মরণ করতে ব্যর্থ হয়, অন্যদিকে তেমনি তা মৃতের শোকাহত আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের মনে আঘাত হানে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্ববরস্থানে ক্ববর খনন সম্পন্ন হওয়ার আগে তাঁর ছাহাবীগণের সাথে বসে সময়োপযোগী আলোচনা করতেন। ছহীহ বুখারীতে আলী ইবনে আবু তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, আমরা এক জানাযায় বাক্বী‘উল গারক্বাদ ক্ববরস্থানে ছিলাম। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে বসলেন এবং আমরাও তাঁর পাশে বসলাম। তাঁর হাতে ছিল একটি লাঠি, অতঃপর তিনি মাথা নোয়ায়ে চিন্তামগ্ন অবস্থায় লাঠিটি দিয়ে মাটি খুঁটতে লাগলেন...।
মুসনাদে আহমাদ, সুনানে আবু দাঊদসহ অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থে বারা ইবনে আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, আমরা আনছারদের এক ব্যক্তির জানাযায় রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বের হলাম। আমরা ক্ববরস্থানে পৌঁছে গেলাম, কিন্তু তখনও ক্ববর খনন সম্পন্ন হয় নি। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে পড়লেন এবং আমরাও এমনভাবে বসে পড়লাম, যেন আমাদের মাথায় পাখি বসে আছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাতের লাঠি দিয়ে মাটি খুঁটতে খুঁটতে বললেন, ‘তোমরা প্রতিদিন ২/৩ বার আল্লাহ্র কাছে ক্ববরের আযাব থেকে পরিত্রাণ চাইবে’। অতঃপর তিনি তাঁদের উদ্দেশ্যে মৃত্যুর সময় এবং মৃত্যুর পরে মুমিন ও কাফিরের অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করলেন।
উক্ত হাদীছদ্বয় থেকে আমরা জানতে পারলাম, জানাযা ও কাফন-দাফনে অংশগ্রহণকারীদের পারস্পরিক আলোচনা হবে মৃত্যু এবং মৃত্যুর পরের অবস্থা নিয়ে।
এই হাদীছদ্বয়ের আলোকে কেউ কেউ বলেন, এমন অবস্থায় মানুষদের উদ্দেশ্যে কিছু ওয়ায-নছীহত করা উচিৎ। সুতরাং কেউ দাঁড়িয়ে তাদের সামনে আলোচনা পেশ করবেন। কিন্তু হাদীছদ্বয় থেকে এমন দলীল গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বক্তব্য পেশ করার উদ্দেশ্যে দাঁড়ান নি; বরং বসে বসে তাঁর আশেপাশের লোকদের সাথে কিছু কথা বলেছেন মাত্র।
৬. শোক প্রকাশকারীদেরকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য মৃতের পরিবার-পরিজন কর্তৃক বাড়ীতে অবস্থানের রীতি সালাফে ছালেহীনের যুগে ছিল না। সেজন্য কেউ কেউ স্পষ্টই বলেছেন যে, এমনটি করা বিদ‘আত। ‘আল-ইক্বনা ওয়া শারহুহু’ গ্রন্থকার বলেন, শোকপ্রকাশের জন্য বসা অপছন্দনীয়। অর্থাৎ মানুষ শোকাহত ব্যক্তিকে শোক জানাতে আসবে আর সে তাদের অপেক্ষায় বসে থাকবে, এমন রীতি অপছন্দনীয়। তাঁকে মৃতের পরিবার-পরিজনের উদ্দেশ্যে খাবার তৈরীর কথা বলা হলে তিনি বলেন, মৃতের পরিবার-পরিজনের উদ্দেশ্যে খাবার তৈরী করবে; তাদের নিকট আগত লোকজনের জন্য নয়। কেননা মৃতের বাড়ীতে আগতদের জন্য খাবার তৈরী করা অপছন্দনীয়। কারণ এতে মৃতের বাড়ীতে মানুষের সমবেত হওয়ার মত একটি অপছন্দনীয় কাজের প্রতি সাহায্য করা হয়।
মারওয়াযী (রহেমাহুল্লাহ) ইমাম আহমাদ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, এটি জাহেলী যুগের কর্মকাণ্ডের একটি। তিনি কঠোরভাবে এর বিরোধিতা করেন। অতঃপর তিনি জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর হাদীছ উল্লেখ করেন। জারীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, মৃত ব্যক্তিকে দাফনের পর তার বাড়ীতে লোকজনের উপস্থিতি এবং তাদের জন্য খাবার তৈরীর বিষয়টি আমরা নিষিদ্ধ শোক-মাতমের অন্তর্ভুক্ত গণ্য করতাম। ইমাম নববী তাঁর ‘শারহুল মুহায্যাব’ গ্রন্থে বলেন, শোক প্রকাশের জন্য একত্রে বসাকে ইমাম শাফেঈ, মুহায্যাব গ্রন্থকার এবং শাফেঈ মাযহাবের সবাই অপছন্দনীয় গণ্য করেছেন। আবু হামেদসহ অন্যান্যগণ ইমাম শাফেঈ (রহেমাহুল্লাহ)-এর এই উক্তির ব্যাখ্যায় বলেছেন, এখানে শোক প্রকাশের জন্য বসার অর্থ হল, মৃতের পরিবার-পরিজনেরা বাড়ীতে একত্রে বসে থাকবে আর লোকজন তাদেরকে শোক জানাবে। সেজন্য মৃতের পরিবার-পরিজনের উচিৎ, নিজ নিজ কাজে বেরিয়ে যাওয়া। এরপর তাদের সাথে কারো কোথাও দেখা হয়ে গেলে শোক জানাবে।
এখানে আরেকটি বিষয় হল, মৃতের পরিবারের সদস্যরা শোক প্রকাশকারীদের উদ্দেশ্যে বাড়ীর দরজা খুলে রেখে যেন বলতে চায়, আমরা আজ শোকাহত, তোমরা আমাদের উদ্দেশ্যে শোক প্রকাশ কর। অনুরূপভাবে পত্র-পত্রিকায় শোক প্রকাশের স্থান ঘোষণা করার অর্থও তাই। কারো শোক প্রকাশের প্রত্যাশী হয়ে মুছীবতের ঘোষণা দেওয়া কি সুন্নাত?! আল্লাহ্র তাক্বদীরকে দ্বিধাহীন চিত্তে মেনে নিয়ে ধৈর্য্যধারণ করা এবং বিষয়টিকে তার এবং তার প্রভূর মাঝে সীমাবদ্ধ রাখা কি উচিৎ ছিল না?! সকল সমস্যায় আল্লাহ্র ওয়াস্তে নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়া কি উচিৎ নয়।
কোন কোন এলাকায় তাঁবু খাটানো হয়, চেয়ার সাজানো হয় এবং আলোকসজ্জা করা হয়। আর উপস্থিতিদেরকে এত বেশী মাত্রায় প্রবেশ করতে এবং বের হতে দেখা যায় যে, বিয়ের অনুষ্ঠান এবং এর মধ্যে কোন পার্থক্যই করা যায় না।
আবার কখনও মৃতের রূহের মাগফেরাতের আশায় ক্বারী ও হাফেযদেরকে ভাড়া করে আনা হয়। অথচ এসব ক্ষেত্রে ভাড়া করা অন্যায়। মনে রাখতে হবে, এই অর্থলোভে ক্বুরআন পড়তে আসার কারণে ক্বারী কোন নেকী পাবে না। ফলে এভাবে ক্বারী ভাড়া করলে একদিকে যেমন সম্পদের ক্ষতি হয়, অন্যদিকে তেমন ঐসব ক্বারীকে অন্যায়ের প্রতি প্রলুব্ধ করা হয়।
এখন কেউ যদি বলে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে জাফর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এবং তাঁর সঙ্গীদ্বয়ের হত্যার খবর আসলে চিন্তামগ্ন হয়ে তিনি কি মসজিদে বসেন নি?
জবাবে বলব, হ্যাঁ, তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মানুষ শোক জানাবে, সে উদ্দেশ্যে তিনি বসেন নি। সেজন্য তাঁকে কেউ শোক জানাতে বসেছিলেন মর্মে আমাদের কাছে কোন বর্ণনা আসে নি। অতএব, বাড়ীর দরজা খুলে রেখে শোক প্রকাশকারীদের সাক্ষাৎ প্রত্যাশী হওয়ার পক্ষে কোন দলীল এই ঘটনায় নেই।
মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীন
২৪/১/১৪১৮ হিঃ
আর বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে, গায়েবানা জানাযা শরী‘আত সম্মত নয়। তবে মৃত ব্যক্তির জানাযা না কোথাও না পড়া হলে সেক্ষেত্রে তার গায়েবানা জানাযা পড়া যায়; যেমনটি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাজাশীর গায়েবানা জানাযা পড়েছিলেন। অনুরূপভাবে দেশপ্রধান গায়েবানা জানাযার আদেশ করলে পড়া যেতে পারে। কেননা ইজতেহাদী কোন বিষয়ে রাষ্ট্রপ্রধানের অবাধ্য হওয়া উচিৎ নয়।
তবে কোনো জায়গা উত্তম হওয়ার কারণে অথবা সেখানে মৃত ব্যক্তির পরিবার-পরিজন থাকার কারণে সেখানে দাফন করার উদ্দেশ্যে যদি তাকে নিয়ে যাওয়া হয়, তবে তাতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু কোনো জায়গা উত্তম হওয়ার কারণে সেখানে মৃত দাফনের ভিড় পড়ে যেতে পারে এই আশংকায়, উক্ত জায়গা সংকীর্ণ হওয়ার কারণে অথবা ঠিকমত দাফনকার্য সম্পাদন করতে না পারার কারণে যদি রাষ্ট্রপ্রধান মৃতকে সেখানে নিয়ে যেতে নিষেধ করেন, তাহলে নিয়ে যাওয়া যাবে না। এমনিভাবে ওয়ারিছদের ক্ষতি হতে পারে এমন ব্যাপক পরিমাণ অর্থ ব্যয় হওয়ার আশংকা থাকলেও মৃতকে অন্য স্থানে স্থানান্তর করা যাবে না।
আবার কখনও মুর্দাকে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত করা আবশ্যক হয়ে পড়তে পারে। যেমনঃ কেউ যদি কাফের রাষ্ট্রে মৃত্যুবরণ করে, সেখানে মুসলিমদের ক্ববরস্থান না থাকে এবং ঐ দেশের অন্য কোথাও তাকে দাফন করা সম্ভব না হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে তাকে মুসলিম রাষ্ট্রে স্থানান্তর করা আবশ্যক।
একই এলাকার একাধিক মসজিদে জানাযা পড়ানোর জন্য মৃত ব্যক্তিকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তর করাও জঘন্য বিদ‘আত। অতএব, জানাযা পড়ার জন্য মৃত ব্যক্তির নিকটে যেতে হবে; তাকে নিয়ে ঘুরে বেড়ানো যাবে না।
২. জানাযার স্থান অত্যন্ত সংকীর্ণ হওয়ার কারণে মৃত ব্যক্তির নিকটাত্মীয়রা যদি ইমামের সাথে একই কাতারে দাঁড়ায়, তাহলে তাতে কোনো সমস্যা নেই। তবে ইমাম ও প্রথম কাতারের মধ্যবর্তী স্থানেও যদি দাঁড়ানো সম্ভব হয়, তাহলে ইমামের সাথে দাঁড়াবে না। তারা ইমামের ডান-বাম উভয় পাশে দাঁড়াতে পারে। কিন্তু স্থানটি যদি প্রশস্ত হয়, তাহলে একই কাতারে ইমামের সাথে দাঁড়াবে না। কেননা জামা‘আতে ছালাত আদায়ের ক্ষেত্রে এমনভাবে দাঁড়ানো সুন্নাত পরিপন্থী। উল্লেখ্য যে, মৃত ব্যক্তির কতিপয় আত্মীয় ইমামের সাথে একই কাতারে দাঁড়ানোর জন্য সামনে যায় এবং মনে করে, এটিই সুন্নাত। কিন্তু মূলতঃ এমন আমল মারাত্মক ভুল, ইমামগণের উচিৎ মানুষকে এ ব্যাপারে সতর্ক করে তোলা। সাথে সাথে তাদেরকে বলে দিতে হবে যে, ইহা সুন্নাত নয়।
৩. বিনা প্রয়োজনে ক্ববরস্থানে গাড়ী প্রবেশ করানো উচিৎ নয়। কেননা তা একদিকে যেমন স্থান সংকীর্ণ করে, অন্যদিকে তেমনি জানাযার দৃশ্যকে বিবাহ অনুষ্ঠানের দৃশ্যে পরিণত করে। ফলে তা মানুষকে আখেরাতের কথা স্মরণের বিষয়টি ভুলিয়ে দেয়।
৪. বর্তমানে শোক প্রকাশের সময় মুছাফাহা এবং কোলাকুলির যে রীতি মানুষ চালু করেছে, সালাফে ছালেহীন থেকে তার কোনো ভিত্তি আছে বলে আমার জানা নেই। অনুরূপভাবে শোকপ্রকাশকারীদের উদ্দেশ্যে মৃতের পরিবার-পরিজন কর্তৃক সারিবদ্ধ অবস্থানেরও কোন ভিত্তি আমার জানা নেই। কিন্তু কেউ কেউ বলে, যদি জানাযায় অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা অনেক হয় এবং মৃতের পরিবার-পরিজনের সংখ্যা বেশী হয়, তাহলে শোক প্রকাশকারীদের আরামের উদ্দেশ্যে তারা এরূপ সারিবদ্ধ অবস্থান গ্রহণ করে। এতে মৃতের পরিবার-পরিজনকে খুঁজে পেতে শোক প্রকাশকারীদের কষ্ট হয় না। তাদের উদ্দেশ্য সঠিক হলেও এমন আমল আমার পছন্দ নয়।
৫. জানাযা ও কাফন-দাফনে অংশগ্রহণকারীদেরকে তাদের বর্তমান ও ভবিষ্যত নিয়ে ভাবতে হবে। মনে রাখতে হবে, আজ সে মৃত ব্যক্তির জানাযা ও কাফন-দাফনে অংশগ্রহণ করেছে; কিন্তু কাল তার জানাযায় অন্যরা অংশগ্রহণ করবে। অতএব, এসময় তাদেরকে দুনিয়াবী আলাপ-আলোচনা পরিত্যাগ করতে হবে। কেননা এমন খোশ গল্প করলে একদিকে যেমন তারা আখেরাতের কথা স্মরণ করতে ব্যর্থ হয়, অন্যদিকে তেমনি তা মৃতের শোকাহত আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের মনে আঘাত হানে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্ববরস্থানে ক্ববর খনন সম্পন্ন হওয়ার আগে তাঁর ছাহাবীগণের সাথে বসে সময়োপযোগী আলোচনা করতেন। ছহীহ বুখারীতে আলী ইবনে আবু তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, আমরা এক জানাযায় বাক্বী‘উল গারক্বাদ ক্ববরস্থানে ছিলাম। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে বসলেন এবং আমরাও তাঁর পাশে বসলাম। তাঁর হাতে ছিল একটি লাঠি, অতঃপর তিনি মাথা নোয়ায়ে চিন্তামগ্ন অবস্থায় লাঠিটি দিয়ে মাটি খুঁটতে লাগলেন...।
মুসনাদে আহমাদ, সুনানে আবু দাঊদসহ অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থে বারা ইবনে আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, আমরা আনছারদের এক ব্যক্তির জানাযায় রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বের হলাম। আমরা ক্ববরস্থানে পৌঁছে গেলাম, কিন্তু তখনও ক্ববর খনন সম্পন্ন হয় নি। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে পড়লেন এবং আমরাও এমনভাবে বসে পড়লাম, যেন আমাদের মাথায় পাখি বসে আছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাতের লাঠি দিয়ে মাটি খুঁটতে খুঁটতে বললেন, ‘তোমরা প্রতিদিন ২/৩ বার আল্লাহ্র কাছে ক্ববরের আযাব থেকে পরিত্রাণ চাইবে’। অতঃপর তিনি তাঁদের উদ্দেশ্যে মৃত্যুর সময় এবং মৃত্যুর পরে মুমিন ও কাফিরের অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করলেন।
উক্ত হাদীছদ্বয় থেকে আমরা জানতে পারলাম, জানাযা ও কাফন-দাফনে অংশগ্রহণকারীদের পারস্পরিক আলোচনা হবে মৃত্যু এবং মৃত্যুর পরের অবস্থা নিয়ে।
এই হাদীছদ্বয়ের আলোকে কেউ কেউ বলেন, এমন অবস্থায় মানুষদের উদ্দেশ্যে কিছু ওয়ায-নছীহত করা উচিৎ। সুতরাং কেউ দাঁড়িয়ে তাদের সামনে আলোচনা পেশ করবেন। কিন্তু হাদীছদ্বয় থেকে এমন দলীল গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বক্তব্য পেশ করার উদ্দেশ্যে দাঁড়ান নি; বরং বসে বসে তাঁর আশেপাশের লোকদের সাথে কিছু কথা বলেছেন মাত্র।
৬. শোক প্রকাশকারীদেরকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য মৃতের পরিবার-পরিজন কর্তৃক বাড়ীতে অবস্থানের রীতি সালাফে ছালেহীনের যুগে ছিল না। সেজন্য কেউ কেউ স্পষ্টই বলেছেন যে, এমনটি করা বিদ‘আত। ‘আল-ইক্বনা ওয়া শারহুহু’ গ্রন্থকার বলেন, শোকপ্রকাশের জন্য বসা অপছন্দনীয়। অর্থাৎ মানুষ শোকাহত ব্যক্তিকে শোক জানাতে আসবে আর সে তাদের অপেক্ষায় বসে থাকবে, এমন রীতি অপছন্দনীয়। তাঁকে মৃতের পরিবার-পরিজনের উদ্দেশ্যে খাবার তৈরীর কথা বলা হলে তিনি বলেন, মৃতের পরিবার-পরিজনের উদ্দেশ্যে খাবার তৈরী করবে; তাদের নিকট আগত লোকজনের জন্য নয়। কেননা মৃতের বাড়ীতে আগতদের জন্য খাবার তৈরী করা অপছন্দনীয়। কারণ এতে মৃতের বাড়ীতে মানুষের সমবেত হওয়ার মত একটি অপছন্দনীয় কাজের প্রতি সাহায্য করা হয়।
মারওয়াযী (রহেমাহুল্লাহ) ইমাম আহমাদ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, এটি জাহেলী যুগের কর্মকাণ্ডের একটি। তিনি কঠোরভাবে এর বিরোধিতা করেন। অতঃপর তিনি জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর হাদীছ উল্লেখ করেন। জারীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, মৃত ব্যক্তিকে দাফনের পর তার বাড়ীতে লোকজনের উপস্থিতি এবং তাদের জন্য খাবার তৈরীর বিষয়টি আমরা নিষিদ্ধ শোক-মাতমের অন্তর্ভুক্ত গণ্য করতাম। ইমাম নববী তাঁর ‘শারহুল মুহায্যাব’ গ্রন্থে বলেন, শোক প্রকাশের জন্য একত্রে বসাকে ইমাম শাফেঈ, মুহায্যাব গ্রন্থকার এবং শাফেঈ মাযহাবের সবাই অপছন্দনীয় গণ্য করেছেন। আবু হামেদসহ অন্যান্যগণ ইমাম শাফেঈ (রহেমাহুল্লাহ)-এর এই উক্তির ব্যাখ্যায় বলেছেন, এখানে শোক প্রকাশের জন্য বসার অর্থ হল, মৃতের পরিবার-পরিজনেরা বাড়ীতে একত্রে বসে থাকবে আর লোকজন তাদেরকে শোক জানাবে। সেজন্য মৃতের পরিবার-পরিজনের উচিৎ, নিজ নিজ কাজে বেরিয়ে যাওয়া। এরপর তাদের সাথে কারো কোথাও দেখা হয়ে গেলে শোক জানাবে।
এখানে আরেকটি বিষয় হল, মৃতের পরিবারের সদস্যরা শোক প্রকাশকারীদের উদ্দেশ্যে বাড়ীর দরজা খুলে রেখে যেন বলতে চায়, আমরা আজ শোকাহত, তোমরা আমাদের উদ্দেশ্যে শোক প্রকাশ কর। অনুরূপভাবে পত্র-পত্রিকায় শোক প্রকাশের স্থান ঘোষণা করার অর্থও তাই। কারো শোক প্রকাশের প্রত্যাশী হয়ে মুছীবতের ঘোষণা দেওয়া কি সুন্নাত?! আল্লাহ্র তাক্বদীরকে দ্বিধাহীন চিত্তে মেনে নিয়ে ধৈর্য্যধারণ করা এবং বিষয়টিকে তার এবং তার প্রভূর মাঝে সীমাবদ্ধ রাখা কি উচিৎ ছিল না?! সকল সমস্যায় আল্লাহ্র ওয়াস্তে নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়া কি উচিৎ নয়।
কোন কোন এলাকায় তাঁবু খাটানো হয়, চেয়ার সাজানো হয় এবং আলোকসজ্জা করা হয়। আর উপস্থিতিদেরকে এত বেশী মাত্রায় প্রবেশ করতে এবং বের হতে দেখা যায় যে, বিয়ের অনুষ্ঠান এবং এর মধ্যে কোন পার্থক্যই করা যায় না।
আবার কখনও মৃতের রূহের মাগফেরাতের আশায় ক্বারী ও হাফেযদেরকে ভাড়া করে আনা হয়। অথচ এসব ক্ষেত্রে ভাড়া করা অন্যায়। মনে রাখতে হবে, এই অর্থলোভে ক্বুরআন পড়তে আসার কারণে ক্বারী কোন নেকী পাবে না। ফলে এভাবে ক্বারী ভাড়া করলে একদিকে যেমন সম্পদের ক্ষতি হয়, অন্যদিকে তেমন ঐসব ক্বারীকে অন্যায়ের প্রতি প্রলুব্ধ করা হয়।
এখন কেউ যদি বলে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে জাফর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এবং তাঁর সঙ্গীদ্বয়ের হত্যার খবর আসলে চিন্তামগ্ন হয়ে তিনি কি মসজিদে বসেন নি?
জবাবে বলব, হ্যাঁ, তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মানুষ শোক জানাবে, সে উদ্দেশ্যে তিনি বসেন নি। সেজন্য তাঁকে কেউ শোক জানাতে বসেছিলেন মর্মে আমাদের কাছে কোন বর্ণনা আসে নি। অতএব, বাড়ীর দরজা খুলে রেখে শোক প্রকাশকারীদের সাক্ষাৎ প্রত্যাশী হওয়ার পক্ষে কোন দলীল এই ঘটনায় নেই।
মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীন
২৪/১/১৪১৮ হিঃ
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন