HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
শির্কের হাকিকত ও তার প্রকারসমূহ কী
লেখকঃ ইসলাম কিউ.এ
৫
দুই. ছোট শির্ক:যেসব শির্ক বড় শির্কের বাহন অথবা যেসব শির্ককে কুরআন ও সুন্নায় ছোট শির্ক বলা হয়েছে, যতক্ষণ না সেগুলো বড় শির্কের পর্যায়ে পৌঁছে, ছোট শির্ক।
এ জাতীয় শির্ক সাধারণত দু’ভাবে হয়:
১. কোনো বস্তুকে উপায় হিসেবে গ্রহণ করা, আল্লাহ যার অনুমতি প্রদান করেন নি। যেমন, হাতের পাঞ্জা ও পুঁতি ইত্যাদি এ বিশ্বাসে ঝুলিয়ে রাখা যে, এগুলো নিরাপত্তার উপায় অথবা নজর লাগা প্রতিহত করবে অথচ আল্লাহ সেগুলোকে শরী‘আত ও তাকদীর কোনো বিচারেই উপায় বানান নি।
২. কোনো মহান বস্তুকে অতিরিক্ত সম্মান দেওয়া-যা আল্লাহর রুবুবিয়াতের সমান নয়, যেমন গায়রুল্লাহর নামে কসম খাওয়া; অথবা এরূপ বলা যে, ‘যদি আল্লাহ ও সে না থাকত ...’ ইত্যাদি ছোট শির্কের অন্তর্ভুক্ত। আর যদি আল্লাহর রুবুবিয়াতের সমপরিমাণ মর্যাদা দেওয়া হয় তাহলে বড় শির্ক।
আলেমগণ কতক নীতিমালা তৈরি করেছেন, যার দ্বারা কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত শির্কগুলো ছোট-বড় দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন,
১. কোনো কাজকে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক ছোট শির্ক আখ্যা দেওয়া, যেমন মাহমুদ ইবনে লাবিদ সূত্রে মুসনাদে আহমদে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمْ الشِّرْكُ الأَصْغَرُ . قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ : وَمَا الشِّرْكُ الأَصْغَرُ؟ قَالَ : الرِّيَاء . إِنَّ اللَّهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى يَقُولُ يَوْمَ تُجَازَى الْعِبَادُ بِأَعْمَالِهِمْ اذْهَبُوا إِلَى الَّذِينَ كُنْتُمْ تُرَاءُونَ بِأَعْمَالِكُمْ فِي الدُّنْيَا فَانْظُرُوا هَلْ تَجِدُونَ عِنْدَهُمْ جَزَاءً»
“নিশ্চয় সবচেয়ে বড় ভয়, যা আমি তোমাদের ওপর আশঙ্কা করি, তা হচ্ছে ছোট শির্ক। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল, ছোট শির্ক কি? তিনি বললেন: ‘রিয়া’, (লোক দেখানো আমল)। আল্লাহ তা‘আলা (রিয়াকারীদের) বলবেন, যে দিন বান্দাদেরকে তাদের আমলের প্রতিদান দেওয়া হবে, তোমরা তাদের কাছে যাও, দুনিয়াতে যাদেরকে তোমরা তোমাদের আমল দেখাতে, দেখ তাদের নিকট কোনো প্রতিদান পাও কিনা”। [আলবানী রহ. তার সহীহ হাদীস সমগ্রে হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন: (৯৫১)]
২. কুরআন ও হাদিসের কোথাও যদি শির্ক শব্দটি অনির্দিষ্টভাবে তথা নাকেরাহ ব্যবহৃত হয়, অর্থাৎ তার সাথে আলিফ ও লাম পদাশ্রিত নির্দেশক দু’টি হরফ সংযুক্ত না থাকে, তাহলে সাধারণত তার উদ্দেশ্য হয় ছোট শির্ক। এ প্রকার শির্কের উদাহরণ অনেক, যেমন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إن الرقى والتمائم والتِّوَلَة شرك»
“নিশ্চয় ঝাড়-ফুক [তবে সব ঝাঁড়-ফুক শির্ক নয়। কুরআনের আয়াত ও হাদীসের দো‘আ বা আগত চিকিৎসা দিয়ে ঝাঁড়-ফুক করানো জায়েয। বরং তা উত্তম কাজ। হাদীসে সে ঝাঁড়-ফুকই উদ্দেশ্য নেওয়া হয়েছে যার ভিত্তি-কুরআন হাদীস নয়, অথবা ভিন্ন কোনো ভাষায় হয়, যার অর্থ জানা যায় না। -সম্পাদক], তাবিজ ও তিওয়ালাহ্ হচ্ছে শির্ক”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৮৮৩। আলবানী রহ. সহীহ হাদীস সমগ্রে হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন: (৩৩১)] এ হাদিসে شرك শব্দটি পদাশ্রিত নির্দেশক দু’টি হরফ ال বিহীন এসেছে, তাই এ শির্ক দ্বারা উদ্দেশ্য ছোট শির্ক, বড় শির্ক নয় [তবে যদি এগুলোকে সরাসরি কার্যসম্পাদনকারী মনে করা হয়, তবে তা বড় শির্কে পরিণত হবে। -সম্পাদক]।
তামিমাহ: মাদুলি জাতীয় বস্তু, যা বদ নজর থেকে সুরক্ষার জন্য বাচ্চাদের গলায় ঝুলানো হয়।
তিওয়ালাহ: এটা তামিমাহ জাতীয় বস্তু, যা স্ত্রীকে স্বামীর নিকট ও স্বামীকে স্ত্রীর নিকট প্রিয়পাত্র বানানোর জন্য দেওয়া হয়।
৩. কুরআন ও হাদিসে ব্যবহৃত শির্ক শব্দের অর্থ যদি সাহাবিগণ ছোট শির্ক বলেন, তাহলে তার উদ্দেশ্য ছোট শির্ক। সাহাবিদের কথা আমাদের জন্য দলীল, কারণ তারা আল্লাহর দীনকে সবচেয়ে বেশি বুঝতেন এবং শরীয়ত প্রণেতার উদ্দেশ্য সবচেয়ে বেশী জানতেন। একটি উদাহরণ, ইমাম আবু দাউদ রাহিমাহুল্লাহ ইবনে মাসদউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সূত্রে বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«الطِّيَرَةُ شِرْكٌ الطِّيَرَةُ شِرْكٌ ثَلاثًا ، وَمَا مِنَّا إِلا وَلَكِنَّ اللَّهَ يُذْهِبُهُ بِالتَّوَكُّل»
“কুলক্ষণ নেওয়া শির্ক, কুলক্ষণ নেওয়া শির্ক, তিনবার। আমাদের মধ্যে কেউ নেই, তবে অবশ্যই [সে কুলক্ষণ গ্রহণ করে]; কিন্তু তাওয়াক্কুলের কারণে আল্লাহ তা দূর করে দেন”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৯১০]
বিজ্ঞ মুহাদ্দিসগণ বলেছেন এ হাদিসে وَمَا مِنَّا إِلا থেকে পরবর্তী অংশ ইবনে মাসউদের বাণী। তার এ কথা প্রমাণ করে, তিনি বুঝেছেন কুলক্ষণ নেওয়া ছোট শির্ক, অন্যথায় তার কথা وَمَا مِنَّا إِلا এর অর্থ দাঁড়ায় “আমাদের মধ্যে কেউ নেই, যে বড় শির্কে পতিত হয় না”, যা বাস্তবতার বিপরীত। দ্বিতীয়ত বড় শির্ক আল্লাহ তা‘আলা তাওয়াক্কুলের কারণে দূর করেন না, বরং তার জন্য তাওবা জরুরি। অতএব, এ হাদীসে শির্ক অর্থ ছোট শির্ক।
৪. নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক শির্ক অথবা কুফর শব্দের ব্যাখ্যা দেওয়া যে, তার দ্বারা ছোট শির্ক উদ্দেশ্য, বড় শির্ক নয়, যেমন ইমাম বুখারি ও ইমাম মুসলিম যায়েদ ইবনে খালিদ আল-জুহানি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে হুদাইবিয়ায় সকালের সালাত আদায় করলেন, সে রাতে বৃষ্টি হয়েছিল। সালাত শেষে তিনি মানুষের দিকে মুখ করে বসলেন, অতঃপর বললেন:
«هَلْ تَدْرُونَ مَاذَا قَالَ رَبُّكُمْ ؟ " قَالُوا : اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ . قَالَ : أَصْبَحَ مِنْ عِبَادِي مُؤْمِنٌ بِي وَكَافِرٌ فَأَمَّا مَنْ قَالَ مُطِرْنَا بِفَضْلِ اللَّهِ وَرَحْمَتِهِ فَذَلِكَ مُؤْمِنٌ بِي كَافِرٌ بِالْكَوْكَبِ وَأَمَّا مَنْ قَالَ بِنَوْءِ كَذَا وَكَذَا فَذَلِكَ كَافِرٌ بِي مُؤْمِنٌ بِالْكَوْكَبِ»
“তোমরা কি জান, তোমাদের রব কি বলেছেন”? তারা বলল: আল্লাহ ও তার রাসূলই ভালো জানেন। তিনি (আল্লাহ) বলেছেন: “আমার কতক বান্দা আমার ওপর ঈমানের হালতে ভোর করেছে, আর কতক কাফের অবস্থায়। অতএব, যে বলেছে: আমরা আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতে বৃষ্টি লাভ করেছি, সে আমার প্রতি বিশ্বাসী ও তারাসমূহের (প্রভাবের) প্রতি অবিশ্বাসী। আর যে বলেছে: অমুক অমুক তারার কারণে বৃষ্টি লাভ করেছি, সে আমার প্রতি অবিশ্বাসী ও তারাসমূহের (প্রভাবের) প্রতি বিশ্বাসী”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১০৩৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭১]
এ হাদিসে কুফর শব্দের অর্থ অপর হাদিসে এসেছে, যা আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«أَلَمْ تَرَوْا إِلَى مَا قَالَ رَبُّكُمْ ؟ قَالَ : " مَا أَنْعَمْتُ عَلَى عِبَادِي مِنْ نِعْمَةٍ إِلَّا أَصْبَحَ فَرِيقٌ مِنْهُمْ بِهَا كَافِرِينَ يَقُولُونَ الْكَوَاكِبُ وَبِالْكَوَاكِبِ»
“তোমরা কি দেখনি তোমাদের রব কি বলেছে? তিনি বলেছেন: “আমি আমার বান্দাদের উপর যখনই কোনো অনুগ্রহ করেছি তখনই তাদের একদল তা অস্বীকারকারী অবশ্যই হয়েছে, তারা বলে তারকা ও তারকা দ্বারা”।
এখানে স্পষ্ট করা হয়েছে যে, বৃষ্টি বর্ষণকে যে তারকার সাথে সম্পৃক্ত করল তারকা বৃষ্টি বর্ষণের কারণ হিসেবে, যদিও আল্লাহ তাকে বৃষ্টি বর্ষণের কারণ বানান নি, তার কুফুরী হচ্ছে আল্লাহর নি‘আমত অস্বীকার করার কুফুরী। আর নি‘আমতের কুফুরী হচ্ছে ছোট কুফুরী। হ্যাঁ, যে বিশ্বাস করে তারকাই জগতে কর্তৃত্ব করে এবং তারকাই বৃষ্টি বর্ষণ করে, তাহলে এটা বড় শির্ক।
ছোট শির্ক কখনো হয় প্রকাশ্য, যেমন কড়ি, তাগা ও তাবিজ পরিধান করা প্রকাশ্য ছোট শির্ক।
আবার ছোট শির্ক কখনো হয় অপ্রকাশ্য, যেমন অল্প রিয়া (সামান্যতম লোকদেখানো বা লোক শোনানোর প্রবণতা)।
ছোক শির্ক কখনো হয় বিশ্বাসে, যেমন কেউ কোনো বস্তু সম্পর্কে বিশ্বাস করল যে, তা উপকার হাসিল ও অনিষ্ট দূরীকরণের উপায়, অথচ আল্লাহ তাকে ভালো-মন্দের উপায় বানান নি অথবা কোনো বস্তুতে বরকতের বিশ্বাস করল, অথচ আল্লাহ তাতে বরকত রাখেন নি।
ছোক শির্ক কখনো হয় কথার কারণে, যেমন কেউ বলল অমুক অমুক তারার কারণে আমরা বৃষ্টি হাসিল করেছি, ‘একমাত্র তারাই বৃষ্টি বর্ষণ করেছে’ যদি এ বিশ্বাস পোষণ না করে। অথবা কেউ গায়রুল্লাহর নামে কসম করল, যদি গায়রুল্লাহকে সম্মান দেওয়া বা আল্লাহর বরাবর করা উদ্দেশ্য না হয়। অথবা কেউ বলল, যা আল্লাহ ও আপনি চেয়েছেন, ইত্যাদি।
ছোট শির্ক কখনো হয় কর্ম দ্বারা, যেমন কেউ বালা-মুসিবত দূর বা প্রতিরোধ করার জন্যে তাবিজ লটকালো, অথবা আংটি কিংবা তাগা পরিধান করল। কারণ কোনো বস্তুকে কেউ যখন কোনো কিছুর উপায় নির্ধারণ করে, শরীয়ত বা তাকদীর কোনো বিবেচনায় আল্লাহ যা উপায় নির্ধারণ করেন নি, সে আল্লাহর সাথে শির্ক করল। অনুরূপ কেউ যদি বরকতের আশায় কোনো বস্তু স্পর্শ করে, আল্লাহ যাতে বরকত রাখেন নি। যেমন, মসজিদের দরজাসমূহ চুমু খাওয়া, তার চৌখাট স্পর্শ করা ও তার মাটি থেকে রোগ মুক্তি কামনা করা ইত্যাদি কর্মসমূহ ছোট শির্ক।
এ হল ছোট শির্ক ও বড় শির্কের সংক্ষিপ্তসার, বিস্তারিত বর্ণনা এ সংক্ষিপ্ত উত্তরে দেওয়া সম্ভব নয়।
সমাপ্তি:
মুসলিমের কর্তব্য হচ্ছে ছোট-বড় সব শির্ক থেকে বেচে থাকা, কারণ সবচেয়ে বড় নাফরমানি, যা আল্লাহর সাথে করা হয় তা হচ্ছে শির্ক এবং তার অধিকারে সীমালঙ্ঘন করা, অর্থাৎ তার ইবাদত ও আনুগত্যে শির্ক করা, অথচ তার কোনো শরীক নেই। এ জন্য আল্লাহ তা‘আলা মুশরিকদের স্থায়ী নিবাস নির্ধারণ করেছেন জাহান্নাম। তিনি বলেছেন, মুশরিকদের তিনি ক্ষমা করবেন না, তাদের ওপর জান্নাত হারাম। তিনি বলেন:
﴿إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغۡفِرُ أَن يُشۡرَكَ بِهِۦ وَيَغۡفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَآءُۚ وَمَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدِ ٱفۡتَرَىٰٓ إِثۡمًا عَظِيمًا ٤٨﴾ [ النساء : ٤٨ ]
“নিশ্চয় আল্লাহ তার সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করবেন না। তিনি ক্ষমা করেন এ ছাড়া অন্যান্য পাপ, যার জন্য তিনি চান। আর যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে অবশ্যই মহাপাপ রচনা করে”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৪৮]
অপর আয়াতে তিনি ইরশাদ করেন:
﴿إِنَّهُۥ مَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدۡ حَرَّمَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِ ٱلۡجَنَّةَ وَمَأۡوَىٰهُ ٱلنَّارُۖ وَمَا لِلظَّٰلِمِينَ مِنۡ أَنصَارٖ ٧٢﴾ [ المائدة : ٧٢ ]
“নিশ্চয় যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, তার উপর অবশ্যই আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার ঠিকানা আগুন। আর যালেমদের কোনো সাহায্যকারী নেই”। [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৭২]
অতএব, প্রত্যেক বিবেকী ও দীনদার ব্যক্তির জন্যে অবশ্য কর্তব্য শির্কের ভয়ে ভীত থাকা ও স্বীয় রবের নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করা, তিনি যেন তাকে শির্ক থেকে মুক্তি দেন, যেমন ইবরাহিম ‘আলাইহিস সালাম বলেছেন:
﴿ وَٱجۡنُبۡنِي وَبَنِيَّ أَن نَّعۡبُدَ ٱلۡأَصۡنَامَ ٣٥ ﴾ [ ابراهيم : ٣٥ ]
“আমাকে ও আমার সন্তানদেরকে মূর্তির ইবাদত থেকে দূরে রাখুন”। [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ৪৮]
কোনো সালাফ বলেছেন: ইবরাহিমের পর কে নিজেকে নিরাপদ ভাবতে পারে।
অতএব, সত্যিকার বান্দা শির্কের ভয়ে ভীত থাকবে, শির্ক থেকে মুক্ত থাকার জন্য স্বীয় রবের নিকট আকুতি করবে এটাই স্বাভাবিক। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম “পিপড়ার চলার আওয়াজ থেকেও শির্ক তোমাদের মাঝে অধিক অস্পষ্ট, আমি তোমাকে একটি বিষয় বলছি, যার ফলে আল্লাহ তোমার থেকে ছোট-বড় শির্ক দূর করে দিবেন। তুমি বল:
«اللهم إني أعوذ بك أن أشرك بك وأنا أعلم، وأستغفرك لما لا أعلم» .
“হে আল্লাহ, আমার জানাবস্থায় আপনার সাথে শির্ক করা থেকে আপনার নিকট আশ্রয় চাই, আর আমি যা জানি না তার জন্য আপনার নিকট ক্ষমা চাই”। [সহীহ আল-জামে, হাদীস নং ৩৭৩১, আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
এ যাবত আমরা শির্কের পরিচয় ও তার দু’টি প্রকার সম্পর্কে সংজ্ঞাসহ আলোচনা করলাম।
এ জাতীয় শির্ক সাধারণত দু’ভাবে হয়:
১. কোনো বস্তুকে উপায় হিসেবে গ্রহণ করা, আল্লাহ যার অনুমতি প্রদান করেন নি। যেমন, হাতের পাঞ্জা ও পুঁতি ইত্যাদি এ বিশ্বাসে ঝুলিয়ে রাখা যে, এগুলো নিরাপত্তার উপায় অথবা নজর লাগা প্রতিহত করবে অথচ আল্লাহ সেগুলোকে শরী‘আত ও তাকদীর কোনো বিচারেই উপায় বানান নি।
২. কোনো মহান বস্তুকে অতিরিক্ত সম্মান দেওয়া-যা আল্লাহর রুবুবিয়াতের সমান নয়, যেমন গায়রুল্লাহর নামে কসম খাওয়া; অথবা এরূপ বলা যে, ‘যদি আল্লাহ ও সে না থাকত ...’ ইত্যাদি ছোট শির্কের অন্তর্ভুক্ত। আর যদি আল্লাহর রুবুবিয়াতের সমপরিমাণ মর্যাদা দেওয়া হয় তাহলে বড় শির্ক।
আলেমগণ কতক নীতিমালা তৈরি করেছেন, যার দ্বারা কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত শির্কগুলো ছোট-বড় দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন,
১. কোনো কাজকে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক ছোট শির্ক আখ্যা দেওয়া, যেমন মাহমুদ ইবনে লাবিদ সূত্রে মুসনাদে আহমদে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمْ الشِّرْكُ الأَصْغَرُ . قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ : وَمَا الشِّرْكُ الأَصْغَرُ؟ قَالَ : الرِّيَاء . إِنَّ اللَّهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى يَقُولُ يَوْمَ تُجَازَى الْعِبَادُ بِأَعْمَالِهِمْ اذْهَبُوا إِلَى الَّذِينَ كُنْتُمْ تُرَاءُونَ بِأَعْمَالِكُمْ فِي الدُّنْيَا فَانْظُرُوا هَلْ تَجِدُونَ عِنْدَهُمْ جَزَاءً»
“নিশ্চয় সবচেয়ে বড় ভয়, যা আমি তোমাদের ওপর আশঙ্কা করি, তা হচ্ছে ছোট শির্ক। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল, ছোট শির্ক কি? তিনি বললেন: ‘রিয়া’, (লোক দেখানো আমল)। আল্লাহ তা‘আলা (রিয়াকারীদের) বলবেন, যে দিন বান্দাদেরকে তাদের আমলের প্রতিদান দেওয়া হবে, তোমরা তাদের কাছে যাও, দুনিয়াতে যাদেরকে তোমরা তোমাদের আমল দেখাতে, দেখ তাদের নিকট কোনো প্রতিদান পাও কিনা”। [আলবানী রহ. তার সহীহ হাদীস সমগ্রে হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন: (৯৫১)]
২. কুরআন ও হাদিসের কোথাও যদি শির্ক শব্দটি অনির্দিষ্টভাবে তথা নাকেরাহ ব্যবহৃত হয়, অর্থাৎ তার সাথে আলিফ ও লাম পদাশ্রিত নির্দেশক দু’টি হরফ সংযুক্ত না থাকে, তাহলে সাধারণত তার উদ্দেশ্য হয় ছোট শির্ক। এ প্রকার শির্কের উদাহরণ অনেক, যেমন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إن الرقى والتمائم والتِّوَلَة شرك»
“নিশ্চয় ঝাড়-ফুক [তবে সব ঝাঁড়-ফুক শির্ক নয়। কুরআনের আয়াত ও হাদীসের দো‘আ বা আগত চিকিৎসা দিয়ে ঝাঁড়-ফুক করানো জায়েয। বরং তা উত্তম কাজ। হাদীসে সে ঝাঁড়-ফুকই উদ্দেশ্য নেওয়া হয়েছে যার ভিত্তি-কুরআন হাদীস নয়, অথবা ভিন্ন কোনো ভাষায় হয়, যার অর্থ জানা যায় না। -সম্পাদক], তাবিজ ও তিওয়ালাহ্ হচ্ছে শির্ক”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৮৮৩। আলবানী রহ. সহীহ হাদীস সমগ্রে হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন: (৩৩১)] এ হাদিসে شرك শব্দটি পদাশ্রিত নির্দেশক দু’টি হরফ ال বিহীন এসেছে, তাই এ শির্ক দ্বারা উদ্দেশ্য ছোট শির্ক, বড় শির্ক নয় [তবে যদি এগুলোকে সরাসরি কার্যসম্পাদনকারী মনে করা হয়, তবে তা বড় শির্কে পরিণত হবে। -সম্পাদক]।
তামিমাহ: মাদুলি জাতীয় বস্তু, যা বদ নজর থেকে সুরক্ষার জন্য বাচ্চাদের গলায় ঝুলানো হয়।
তিওয়ালাহ: এটা তামিমাহ জাতীয় বস্তু, যা স্ত্রীকে স্বামীর নিকট ও স্বামীকে স্ত্রীর নিকট প্রিয়পাত্র বানানোর জন্য দেওয়া হয়।
৩. কুরআন ও হাদিসে ব্যবহৃত শির্ক শব্দের অর্থ যদি সাহাবিগণ ছোট শির্ক বলেন, তাহলে তার উদ্দেশ্য ছোট শির্ক। সাহাবিদের কথা আমাদের জন্য দলীল, কারণ তারা আল্লাহর দীনকে সবচেয়ে বেশি বুঝতেন এবং শরীয়ত প্রণেতার উদ্দেশ্য সবচেয়ে বেশী জানতেন। একটি উদাহরণ, ইমাম আবু দাউদ রাহিমাহুল্লাহ ইবনে মাসদউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সূত্রে বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«الطِّيَرَةُ شِرْكٌ الطِّيَرَةُ شِرْكٌ ثَلاثًا ، وَمَا مِنَّا إِلا وَلَكِنَّ اللَّهَ يُذْهِبُهُ بِالتَّوَكُّل»
“কুলক্ষণ নেওয়া শির্ক, কুলক্ষণ নেওয়া শির্ক, তিনবার। আমাদের মধ্যে কেউ নেই, তবে অবশ্যই [সে কুলক্ষণ গ্রহণ করে]; কিন্তু তাওয়াক্কুলের কারণে আল্লাহ তা দূর করে দেন”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৯১০]
বিজ্ঞ মুহাদ্দিসগণ বলেছেন এ হাদিসে وَمَا مِنَّا إِلا থেকে পরবর্তী অংশ ইবনে মাসউদের বাণী। তার এ কথা প্রমাণ করে, তিনি বুঝেছেন কুলক্ষণ নেওয়া ছোট শির্ক, অন্যথায় তার কথা وَمَا مِنَّا إِلا এর অর্থ দাঁড়ায় “আমাদের মধ্যে কেউ নেই, যে বড় শির্কে পতিত হয় না”, যা বাস্তবতার বিপরীত। দ্বিতীয়ত বড় শির্ক আল্লাহ তা‘আলা তাওয়াক্কুলের কারণে দূর করেন না, বরং তার জন্য তাওবা জরুরি। অতএব, এ হাদীসে শির্ক অর্থ ছোট শির্ক।
৪. নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক শির্ক অথবা কুফর শব্দের ব্যাখ্যা দেওয়া যে, তার দ্বারা ছোট শির্ক উদ্দেশ্য, বড় শির্ক নয়, যেমন ইমাম বুখারি ও ইমাম মুসলিম যায়েদ ইবনে খালিদ আল-জুহানি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে হুদাইবিয়ায় সকালের সালাত আদায় করলেন, সে রাতে বৃষ্টি হয়েছিল। সালাত শেষে তিনি মানুষের দিকে মুখ করে বসলেন, অতঃপর বললেন:
«هَلْ تَدْرُونَ مَاذَا قَالَ رَبُّكُمْ ؟ " قَالُوا : اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ . قَالَ : أَصْبَحَ مِنْ عِبَادِي مُؤْمِنٌ بِي وَكَافِرٌ فَأَمَّا مَنْ قَالَ مُطِرْنَا بِفَضْلِ اللَّهِ وَرَحْمَتِهِ فَذَلِكَ مُؤْمِنٌ بِي كَافِرٌ بِالْكَوْكَبِ وَأَمَّا مَنْ قَالَ بِنَوْءِ كَذَا وَكَذَا فَذَلِكَ كَافِرٌ بِي مُؤْمِنٌ بِالْكَوْكَبِ»
“তোমরা কি জান, তোমাদের রব কি বলেছেন”? তারা বলল: আল্লাহ ও তার রাসূলই ভালো জানেন। তিনি (আল্লাহ) বলেছেন: “আমার কতক বান্দা আমার ওপর ঈমানের হালতে ভোর করেছে, আর কতক কাফের অবস্থায়। অতএব, যে বলেছে: আমরা আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতে বৃষ্টি লাভ করেছি, সে আমার প্রতি বিশ্বাসী ও তারাসমূহের (প্রভাবের) প্রতি অবিশ্বাসী। আর যে বলেছে: অমুক অমুক তারার কারণে বৃষ্টি লাভ করেছি, সে আমার প্রতি অবিশ্বাসী ও তারাসমূহের (প্রভাবের) প্রতি বিশ্বাসী”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১০৩৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭১]
এ হাদিসে কুফর শব্দের অর্থ অপর হাদিসে এসেছে, যা আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«أَلَمْ تَرَوْا إِلَى مَا قَالَ رَبُّكُمْ ؟ قَالَ : " مَا أَنْعَمْتُ عَلَى عِبَادِي مِنْ نِعْمَةٍ إِلَّا أَصْبَحَ فَرِيقٌ مِنْهُمْ بِهَا كَافِرِينَ يَقُولُونَ الْكَوَاكِبُ وَبِالْكَوَاكِبِ»
“তোমরা কি দেখনি তোমাদের রব কি বলেছে? তিনি বলেছেন: “আমি আমার বান্দাদের উপর যখনই কোনো অনুগ্রহ করেছি তখনই তাদের একদল তা অস্বীকারকারী অবশ্যই হয়েছে, তারা বলে তারকা ও তারকা দ্বারা”।
এখানে স্পষ্ট করা হয়েছে যে, বৃষ্টি বর্ষণকে যে তারকার সাথে সম্পৃক্ত করল তারকা বৃষ্টি বর্ষণের কারণ হিসেবে, যদিও আল্লাহ তাকে বৃষ্টি বর্ষণের কারণ বানান নি, তার কুফুরী হচ্ছে আল্লাহর নি‘আমত অস্বীকার করার কুফুরী। আর নি‘আমতের কুফুরী হচ্ছে ছোট কুফুরী। হ্যাঁ, যে বিশ্বাস করে তারকাই জগতে কর্তৃত্ব করে এবং তারকাই বৃষ্টি বর্ষণ করে, তাহলে এটা বড় শির্ক।
ছোট শির্ক কখনো হয় প্রকাশ্য, যেমন কড়ি, তাগা ও তাবিজ পরিধান করা প্রকাশ্য ছোট শির্ক।
আবার ছোট শির্ক কখনো হয় অপ্রকাশ্য, যেমন অল্প রিয়া (সামান্যতম লোকদেখানো বা লোক শোনানোর প্রবণতা)।
ছোক শির্ক কখনো হয় বিশ্বাসে, যেমন কেউ কোনো বস্তু সম্পর্কে বিশ্বাস করল যে, তা উপকার হাসিল ও অনিষ্ট দূরীকরণের উপায়, অথচ আল্লাহ তাকে ভালো-মন্দের উপায় বানান নি অথবা কোনো বস্তুতে বরকতের বিশ্বাস করল, অথচ আল্লাহ তাতে বরকত রাখেন নি।
ছোক শির্ক কখনো হয় কথার কারণে, যেমন কেউ বলল অমুক অমুক তারার কারণে আমরা বৃষ্টি হাসিল করেছি, ‘একমাত্র তারাই বৃষ্টি বর্ষণ করেছে’ যদি এ বিশ্বাস পোষণ না করে। অথবা কেউ গায়রুল্লাহর নামে কসম করল, যদি গায়রুল্লাহকে সম্মান দেওয়া বা আল্লাহর বরাবর করা উদ্দেশ্য না হয়। অথবা কেউ বলল, যা আল্লাহ ও আপনি চেয়েছেন, ইত্যাদি।
ছোট শির্ক কখনো হয় কর্ম দ্বারা, যেমন কেউ বালা-মুসিবত দূর বা প্রতিরোধ করার জন্যে তাবিজ লটকালো, অথবা আংটি কিংবা তাগা পরিধান করল। কারণ কোনো বস্তুকে কেউ যখন কোনো কিছুর উপায় নির্ধারণ করে, শরীয়ত বা তাকদীর কোনো বিবেচনায় আল্লাহ যা উপায় নির্ধারণ করেন নি, সে আল্লাহর সাথে শির্ক করল। অনুরূপ কেউ যদি বরকতের আশায় কোনো বস্তু স্পর্শ করে, আল্লাহ যাতে বরকত রাখেন নি। যেমন, মসজিদের দরজাসমূহ চুমু খাওয়া, তার চৌখাট স্পর্শ করা ও তার মাটি থেকে রোগ মুক্তি কামনা করা ইত্যাদি কর্মসমূহ ছোট শির্ক।
এ হল ছোট শির্ক ও বড় শির্কের সংক্ষিপ্তসার, বিস্তারিত বর্ণনা এ সংক্ষিপ্ত উত্তরে দেওয়া সম্ভব নয়।
সমাপ্তি:
মুসলিমের কর্তব্য হচ্ছে ছোট-বড় সব শির্ক থেকে বেচে থাকা, কারণ সবচেয়ে বড় নাফরমানি, যা আল্লাহর সাথে করা হয় তা হচ্ছে শির্ক এবং তার অধিকারে সীমালঙ্ঘন করা, অর্থাৎ তার ইবাদত ও আনুগত্যে শির্ক করা, অথচ তার কোনো শরীক নেই। এ জন্য আল্লাহ তা‘আলা মুশরিকদের স্থায়ী নিবাস নির্ধারণ করেছেন জাহান্নাম। তিনি বলেছেন, মুশরিকদের তিনি ক্ষমা করবেন না, তাদের ওপর জান্নাত হারাম। তিনি বলেন:
﴿إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغۡفِرُ أَن يُشۡرَكَ بِهِۦ وَيَغۡفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَآءُۚ وَمَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدِ ٱفۡتَرَىٰٓ إِثۡمًا عَظِيمًا ٤٨﴾ [ النساء : ٤٨ ]
“নিশ্চয় আল্লাহ তার সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করবেন না। তিনি ক্ষমা করেন এ ছাড়া অন্যান্য পাপ, যার জন্য তিনি চান। আর যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে অবশ্যই মহাপাপ রচনা করে”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৪৮]
অপর আয়াতে তিনি ইরশাদ করেন:
﴿إِنَّهُۥ مَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدۡ حَرَّمَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِ ٱلۡجَنَّةَ وَمَأۡوَىٰهُ ٱلنَّارُۖ وَمَا لِلظَّٰلِمِينَ مِنۡ أَنصَارٖ ٧٢﴾ [ المائدة : ٧٢ ]
“নিশ্চয় যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, তার উপর অবশ্যই আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার ঠিকানা আগুন। আর যালেমদের কোনো সাহায্যকারী নেই”। [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৭২]
অতএব, প্রত্যেক বিবেকী ও দীনদার ব্যক্তির জন্যে অবশ্য কর্তব্য শির্কের ভয়ে ভীত থাকা ও স্বীয় রবের নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করা, তিনি যেন তাকে শির্ক থেকে মুক্তি দেন, যেমন ইবরাহিম ‘আলাইহিস সালাম বলেছেন:
﴿ وَٱجۡنُبۡنِي وَبَنِيَّ أَن نَّعۡبُدَ ٱلۡأَصۡنَامَ ٣٥ ﴾ [ ابراهيم : ٣٥ ]
“আমাকে ও আমার সন্তানদেরকে মূর্তির ইবাদত থেকে দূরে রাখুন”। [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ৪৮]
কোনো সালাফ বলেছেন: ইবরাহিমের পর কে নিজেকে নিরাপদ ভাবতে পারে।
অতএব, সত্যিকার বান্দা শির্কের ভয়ে ভীত থাকবে, শির্ক থেকে মুক্ত থাকার জন্য স্বীয় রবের নিকট আকুতি করবে এটাই স্বাভাবিক। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম “পিপড়ার চলার আওয়াজ থেকেও শির্ক তোমাদের মাঝে অধিক অস্পষ্ট, আমি তোমাকে একটি বিষয় বলছি, যার ফলে আল্লাহ তোমার থেকে ছোট-বড় শির্ক দূর করে দিবেন। তুমি বল:
«اللهم إني أعوذ بك أن أشرك بك وأنا أعلم، وأستغفرك لما لا أعلم» .
“হে আল্লাহ, আমার জানাবস্থায় আপনার সাথে শির্ক করা থেকে আপনার নিকট আশ্রয় চাই, আর আমি যা জানি না তার জন্য আপনার নিকট ক্ষমা চাই”। [সহীহ আল-জামে, হাদীস নং ৩৭৩১, আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
এ যাবত আমরা শির্কের পরিচয় ও তার দু’টি প্রকার সম্পর্কে সংজ্ঞাসহ আলোচনা করলাম।
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন