HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
আল্লাহর রাসূলের প্রতি দরূদ-সালামের তাৎপর্য
লেখকঃ ড: মুহাম্মাদ মর্তুজা বিন আয়েশ মুহাম্মাদ
৬
আল্লাহর রাসূলের প্রতি সালাম পেশ করার নিয়মআল্লাহর নাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]এর প্রতি বেশি বেশি সালাম পেশ করার বিষয়টি শরীয়ত সম্মত একটি কাজ। এই বিষয়টি প্রমাণিত হয় মহান আল্লাহর বাণীর দ্বারা। কেননা মহান আল্লাহ বলেছেন:
( إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا ) , ( سورة الأحزاب , الآية 56(.
ভাবার্থের অনুবাদ: “নিশ্চয় আল্লাহ বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ কে অতিশয় সম্মান করেন। এবং ফেরেশতাগণ আল্লাহর নিকটে নাবী মুহাম্মাদ এর জন্য অতিশয় সম্মান প্রার্থনা করেন। সুতরাং হে ঈমানদার মুসলিম জাতি! তোমরাও নাবী মুহাম্মাদ এর অতিশয় সম্মান করো ও তাঁর প্রতি যথাযথভাবে সালাম পেশ করো”।
(সূরা আল আহযাব, আয়াত নং 56)।
আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি বেশি বেশি সালাম পেশ করার বিষয়ে উক্ত আয়াতটির সাথে সাথে আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। সেই হাদীসগুলির মধ্যে থেকে এখানে কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করা হলো:
عَنْ أَبِي طَلْحَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَاءَ ذَاتَ يَوْمٍ وَالْبُشْرَى فِي وَجْهِهِ؛ فَقُلْنَا : إِنَّا لَنَرَى الْبُشْرَى فِيْ وَجْهِكَ ! ؛ فَقَالَ : إِنَّهُ أَتَانِيَ الْمَلَكُ؛ فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ ! إِنَّ رَبَّكَ يَقُوْلُ : أَمَا يُرْضِيْكَ؟ أَنَّهُ لاَ يُصَلِّي عَلَيْكَ أَحَدٌ إِلاَّ صَلَّيْتُ عَلَيْهِ عَشْرًا , وَلاَ يُسَلِّمُ عَلَيْكَ أَحَدٌ إِلاَّ سَلَّمْتُ عَلَيْهِ عَشْرًا ".
( سنن النسائي , رقم الحديث 1283, وحسنه الألباني ).
অর্থ: আবু তালহা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] একদা আনন্দময় চেহারাসহ আগমন করলেন। তাই আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আপনার চেহারায় আনন্দের নিদর্শন উপলব্ধি করছি! সুতরাং তিনি বললেন: “আমার কাছে এক্ষনিই একজন ফেরেশতা এসেছিলেন এবং এই কথা বলে গেলেন: হে মুহাম্মাদ! আপনার পালনকর্তা বলেছেন: আপনি কি এতে সন্তুষ্ট নন যে, আপনার জন্য যে ব্যক্তি দরূদ পাঠ করবে (তথা আল্লাহর নিকটে আপনার জন্য অতিশয় সম্ভ্রম বা সম্মান প্রার্থনা করবে) তার প্রতি আমি দশটি রহমত ও বরকত বা কল্যাণ অবতীর্ণ করবো। এবং যে ব্যক্তি আপনার প্রতি সালাম পেশ করবে, তার প্রতি আমি দশবার শান্তি অবতীর্ণ করব।
(সুনান নাসায়ী, হাদীস নং 1283, আল্লামাহ নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ ( সঠিক ) বলেছেন )।
এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সম্মানার্থে তাঁর প্রতি দরূদ পাঠ করা ( অর্থাৎ অতিশয় সম্ভ্রম বা সম্মান প্রার্থনা করা ) এবং বেশি বেশি সালাম পেশ করা শরীয়ত সম্মত একটি বিধান বা নিয়ম।
সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি সালাম পেশ করবে, সে ব্যক্তির প্রতি মহান আল্লাহ শান্তি অবতীর্ণ করবেন। এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি দরূদ পাঠ করবে (অতিশয় সম্ভ্রম বা সম্মান প্রার্থনা করবে) তার প্রতি মহান আল্লাহ রহমত ও বরকত বা কল্যাণ অবতীর্ণ করবেন।
وعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعٌوْدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " إِنَّ لِلَّهِ مَلاَئِكَةً سَيَّاحِيْنَ فيِ الْأرْضِ يُبَلِّغُونِيْ مِنْ أُمَّتِي السَّلاَمَ ".
( سنن النسائي , رقم الحديث 1282, وصححه الألباني ).
অর্থ: আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “আল্লাহর পক্ষ থেকে পৃথিবীতে এমন কতকগুলি ভ্রমণকারী ফেরেশতামণ্ডলী নির্ধারিত রয়েছেন, যাঁরা আমার প্রতি আমার উম্মতের পক্ষ থেকে সালাম পৌঁছিয়ে দেন”।
(সুনান নাসায়ী, হাদীস নং 1282, আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ ( সঠিক ) বলেছেন) ।
এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সম্মানার্থে মহান আল্লাহ সকল মুসলিম নর-নারীর সালাম তাঁর নিকটে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কতকগুলি ফেরেশতা নিযুক্ত করে রেখেছেন। তাই আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি বেশি বেশি সালাম পেশ করা উচিত। কেননা এই কর্মটি হলো প্রকৃত ইসলাম ধর্মের একটি বিধান।
আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি সালাম পেশ করার কতকগুলি সময় ও স্থান নির্ধারিত রয়েছে, যেমন:-মাসজিদে প্রবেশ করার সময় এবং মাসজিদ থেকে বের হওয়ার সময়। এবং এই বিষয়ে যে সমস্ত হাদীস বর্ণিত হয়েছে, তার মধ্যে থেকে এখানে কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করা হলো:
عَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ؛ فَلْيُسَلِّمْ علَى النَّبيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وليقُلْ : اَللَّهمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمتِكَ، وَإِذَا خَرَجَ؛ فَلْيَقُلْ : اَللَّهمَّ إنِّيْ أَسْألُكَ مِنْ فَضْلِكَ ".
( سنن ابن ماجه , رقم الحديث 772, وسنن أبي داود , رقم الحديث 465, واللفظ لابن ماجه , وصححه الألباني ).
অর্থ: আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত যে, নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন:
তোমাদের মধ্যে থেকে কোনো ব্যক্তি যখন মাসজিদে প্রবেশ করবে, তখন যেন সে নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি সালাম পেশ করে। এবং এই দোয়াটি পাঠ করে:
" اَللَّهمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمتِكَ ".
অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি আমার পাপগুলি ক্ষমা করুন এবং আমার জন্য আপনার করুণার দরজাগুলি খুলে দিন”।
আর যখন মাসজিদ থেকে বের হবে, তখন যেন সে এই দোয়াটি পাঠ করে:
" اَللَّهمَّ إنِّيْ أَسْألُكَ مِنْ فَضْلِكَ ".
অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি আপনার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি”।
[সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং 772 এবং সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং 465 । তবে হাদীসের শব্দগুলি সুনান ইবনু মাজাহ থেকে নেওয়া হয়েছে। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।
وَعَنْ فَاطِمَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهاَ قَالَتْ : كَانَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ المَسْجِدَ صَلَّى عَلَى مُحَمَّدٍ وَسَلَّمَ، وَقَالَ : " رَبِّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوبِيْ، وَافْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ "، وَإِذَا خَرَجَ صَلَّى عَلَى مُحَمَّدٍ وَسَلَّمَ، وَقَالَ : " رَبِّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوبِيْ، وَافْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ فَضْلِكَ ".
( جامع الترمذي , رقم الحديث 314, وسنن ابن ماجه , رقم الحديث 773, واللفظ للترمذي , وقال الإمام الترمذي عن هذا الحديث بأنه : حسن , وصححه الألباني ).
অর্থ: “ফাতেমা বিনতু মুহাম্মাদ [রাদিয়াল্লাহু আনহা] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] যখন মাসজিদে প্রবেশ করতেন, তখন মুহাম্মাদের প্রতি দরূদ ও সালাম পাঠ করতেন এবং বলতেন:
" رَبِّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوبِيْ، وَافْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ ".
অর্থ: “হে আমার প্রভু! আপনি আমার পাপগুলি ক্ষমা করুন এবং আমার জন্য আপনার করুণার দরজাগুলি খুলে দিন”।
আর আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] যখন মাসজিদ থেকে বের হতেন, তখন মুহাম্মাদের প্রতি দরূদ ও সালাম পাঠ করতেন এবং বলতেন:
" رَبِّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوبِيْ، وَافْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ فَضْلِكَ ".
অর্থ: “হে আমার প্রভু! আপনি আমার পাপগুলি ক্ষমা করুন এবং আমার জন্য আপনার অনুগ্রহের দরজাগুলি খুলে দিন”।
[জামে তিরমিযী, হাদীস নং 314 এবং সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং 773, তবে হাদীসের শব্দগুলি জামে তিরমিযী থেকে নেওয়া হয়েছে। ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। এবং আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ ( সঠিক ) বলেছেন]।
وَعَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، أَن ّرَسُوْلَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , قَالَ : إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ؛ فَلْيُسَلِّمْ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , وَلْيَقُلْ : اَللَّهُمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ، وَإِذَا خَرَجَ؛ فَلْيُسَلِّمْ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , وَلْيَقُلْ : اَللَّهُمَّ اعْصِمْنـيْ مِنَ الشَّيْـطانِ الرَّجـيْمِ ".
( سنن ابن ماجه , رقم الحديث 773, وسنن أبي داود , رقم الحديث 465, واللفظ لابن ماجه , وصححه الألباني ).
অর্থ: আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন:
তোমাদের মধ্যে থেকে কোনো ব্যক্তি যখন মাসজিদে প্রবেশ করবে, তখন যেন সে নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি সালাম পেশ করে। এবং এই দোয়াটি পাঠ করে:
" اَللَّهمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمتِكَ ".
অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি আমার জন্য আপনার করুণার দরজাগুলি খুলে দিন”।
আর যখন মাসজিদ থেকে বের হবে, তখন যেন সে নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি সালাম পেশ করে। এবং এই দোয়াটি পাঠ করে:
" اَللَّهمَّ اعْصِمْنـيْ مِنَ الشَّيْـطانِ الرَّجـيْمِ ".
অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি আমাকে বিতাড়িত ও অভিশপ্ত শয়তান হতে রক্ষা করুন”।
[সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং 773 এবং সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং 465 । তবে হাদীসের শব্দগুলি সুনান ইবনু মাজাহ থেকে নেওয়া হয়েছে। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।
উল্লিখিত হাদীসগুলির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে,
1। আমাদের নাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর একটি অধিকার বা প্রাপ্য তাঁর উম্মতের উপর হলো এই যে, তাঁর উম্মতের প্রতিটি মানুষ যেন তাঁর প্রতি সালাম পেশ করে। তাই প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তিকে আদেশ প্রদান করা হয়েছে যে, সে যেন আল্লাহর রাসূলের প্রতি সাধারণভাবে যে কোনো সময়ে সালাম প্রেরণ করে। কিংবা কতকগুলি নির্দিষ্ট সময়ে সালাম প্রেরণ করে যেমন:- নামাজের তাশাহহোদ পাঠের সময় এবং মাসজিদে প্রবেশ করার সময় বা মাসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় । এবং নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর অনুপস্থিতিতেও তাঁর মৃত্যুবরণ করার পর অথবা তাঁর জীবদ্দশাতেও তাঁর প্রতি সালাম পেশ করার বিধান নির্ধারিত রয়েছে। তবে এই বিধানটি শুধু মাত্র তাঁরই বৈশিষ্ট্য এবং তাঁরই জন্য প্রযোজ্য। অন্য কোনো মানুষের জন্য প্রযোজ্য নয় এবং অন্য কোনো মানুষের বৈশিষ্ট্যও নয়। তাই কোনো জীবিত ব্যক্তির মাধ্যম ছাড়া অন্য কোনো নির্দিষ্ট জীবিত মানুষকে তার অনুপস্থিতিতে তার প্রতি সালাম পেশ করা বৈধ নয়। শুধু মাত্র নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর বৈশিষ্ট্য নির্ধারিত রয়েছে যে, তাঁকে তাঁর উম্মতের সালাম পৌঁছিয়ে দেওয়া হয়। এর দ্বারা মুসলিম ব্যক্তি নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে সালাম দেওয়ার মর্যাদা লাভ করে থাকে এবং তাঁর প্রতি তার এই সালাম পৌঁছিয়ে দেওয়া হয়। যদিও সে আল্লাহর রাসূলের জীবদ্দশাতে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য পথের দূরত্ব অতিক্রম না করে থাকে। অথবা যদিও সে তাঁর মৃত্যুবরণ করার পর তাঁর কবরের নিকটে উপস্থিত না হয়ে থাকে।
2। আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি অধিকতর সালাম প্রেরণ করার নিয়মটি হলো এই যে,
اَلسَّلاَمُ عَلَيْكَ أيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ ( [() صحيح البخاري , رقم الحديث 835, وصحيح مسلم , رقم الحديث 55- (402), وانظر أيضا : الجامع لأحكام القرآن للعلامة أبي عبد الله محمد بن أحمد الأنصاري القرطبي , اعتنى به وصححه الشيخ هشام الأنصاري , دار عالم الكتب للطباعة والنشر والتوزيع , الرياض , المملكة العربية السعودية , طبعة عام 1423 هـ - 2003م, تفسير الآية 56 من سورة الالأحزاب , ج 14, ص 234, وص 237.]).
অর্থ: “হে নাবী আপনার প্রতি সর্ব প্রকার শান্তি, আল্লাহর করুণা ও তাঁর কল্যাণ অবতীর্ণ হোক”।
পাঠ করা।
অথবা
اَلسَّلاَمُ عَلَيْكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ .
অর্থ: “হে আল্লাহর রাসূল! আপনার প্রতি সর্ব প্রকার শান্তি অবতীর্ণ হোক”।
বলে আল্লাহর রাসূলের প্রতি সালাম পেশ করা।
কিংবা
اَلسَّلاَمُ عَلَيْكَ يَا نَبِيَّ اللهِ .
অর্থ: “হে আল্লাহর নাবী! আপনার প্রতি সর্ব প্রকার শান্তি অবতীর্ণ হোক”।
পাঠ করে আল্লাহর রাসূলের প্রতি সালাম পেশ করা উচিত। কেননা এটাই তো হচ্ছে প্রকৃত ইসলাম ধর্মের পবিত্র অভিবাদন পদ্ধতি।
[দেখতে পারা যায় সহীহ বুখারী, হাদীস নং 3326 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 28 -(2841) এবং 132 -(2473)]।
নচেৎ
اَلسَّلاَمُ عَلَى النَّبِيِّ ( [() انظر فتح البارئ شرح صحيح البخاري للعلامة الحافظ أحمد بن علي بن حجر العسقلاني , المكتبة العصرية , طبعة عام 1426 هـ - 2005م, المجلد الثاني , شرح الحديث برقم 831, ص 1175.]).
অর্থ: “আল্লাহর নাবীর প্রতি সর্ব প্রকার শান্তি অবতীর্ণ হোক”।
উচ্চারণ করেও আল্লাহর রাসূলের প্রতি সালাম পেশ করা যেতে পারে।
3। সালাম এর ভাবার্থ হলো: সকল প্রকারের অমঙ্গল এবং দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্তি, শান্তি, পরিত্রাণ এবং নিরাপত্তা প্রাপ্ত হওয়া।
4। মুসলিম ব্যক্তির সঠিক ভাবে জেনে রাখা উচিত যে, আমাদের এই সালাম ফেরেশতাগণের মাধ্যমে আমাদের নাবীর প্রতি পৌঁছিয়ে দেওয়া হয়। তাই মাদিনায় সফর কারী ব্যক্তির মাধ্যমে আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি সালাম প্রেরণের কোনো দরকার নেই। এই কারণেই সাহাবীগণ, সালাফে সালেহীন, এবং ওলামায়ে ইসলাম কোনো একজন ব্যক্তির মাধ্যমে আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি সালাম প্রেরণ করতেন না। কেননা আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি সালাম কোন ব্যক্তির মাধ্যম ছাড়াই পৌঁছিয়ে দেওয়া হয়। যেমন এর পূর্বে উল্লিখিত হাদীসটির দ্বারা এই বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। সেই হাদীসটি হলো এই যে, আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন:
" إِنَّ لِلَّهِ مَلاَئِكَةً سَيَّاحِيْنَ فيِ الأرْضِ يُبَلِّغُونِيْ مِنْ أُمَّتِي السَّلاَمَ ".
( سنن النسائي , رقم الحديث 1282, وصححه الألباني ).
অর্থ: আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “আল্লাহর পক্ষ থেকে পৃথিবীতে এমন কতকগুলি ভ্রমণকারী ফেরেশতামণ্ডলী নির্ধারিত রয়েছেন, যাঁরা আমার প্রতি আমার উম্মতের পক্ষ থেকে সালাম পৌঁছিয়ে দেন”।
(সুনান নাসায়ী, হাদীস নং 1282, আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ ( সঠিক ) বলেছেন) ।
5। কোন মুসলিম ব্যক্তির জন্য এটা জায়েজ বা বৈধ নয় যে, সে সম্মিলিতভাবে, একযোগে একসুরে কোনো একটি নির্দিষ্ট পন্থায় আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি সালাম পেশ করবে। তাই প্রত্যেক ব্যক্তি আপন আপন সুরে, পৃথকভাবে এবং স্বতন্ত্রপদ্ধতিতে আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি অধিকতর সালাম প্রেরণ করবে। কেননা সম্মিলিতভাবে, একযোগে, একসুরে কোন একটি নির্দিষ্ট পন্থায় আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি সালাম প্রেরণ করার নিয়মটি ইসলামী শরীয়ত বা বিধানের মধ্যে পাওয়া যায় না। তাই এককভাবে আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি বেশি বেশি সালাম পেশ করা উচিত।
6। কোন মুসলিম ব্যক্তির জন্য এটা জায়েজ নয় যে, সে কোনো ব্যক্তির মাধ্যমে আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি সালাম প্রেরণ করবে। কেননা এই পদ্ধতিতে সালাম প্রেরণ করার কোনো বিধান প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষায় পাওয়া যায় না। তাই এই পদ্ধতিটি শরিয়ত সম্মত নয়। সুতরাং যে কোন মুসলিম ব্যক্তি দুনিয়ার যে কোনো দেশ বা স্থান থেকে আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি সালাম পেশ করতে পারবে। এতে কোনো বাধা নেই।
7। কোন মুসলিম ব্যক্তির জন্য এটা জায়েজ নয় যে, সে এমন দরূদ ও সালাম পাঠ করবে, যে সব দরূদ ও সালাম প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা সম্মত নয়। সুতরাং দরূদে তাজ, দরূদে তুনাজ্জীনা, দরূদে হাজারী ইত্যাদির শব্দগুলি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] থেকে বর্ণিত হয় নি। তাই এইসব দরূদ ও সালামের পদ্ধতি বর্জন করা দরকার। কেননা আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন:
" مَنْ أَحْدَثَ فِيْ أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ ".
( صحيح البخاري , رقم الحديث 2697, وأيضاً : صحيح مسلم , رقم الحديث 17- (1718) ).
অর্থ: “যে ব্যক্তি আমাদের এই ইসলাম ধর্মের মধ্যে এমন কোনো নতুন বিষয় ধর্মের কর্ম হিসেবে সংযুক্ত করবে, যে বিষয়টি প্রকৃতপক্ষে ইসলাম ধর্মের অংশ নয়, তাহলে সে বিষয়টি পরিত্যাজ্য বলেই বিবেচিত হবে”।
(সহীহ বুখারী, হাদীস নং 2697 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 17-(1718)।
8। জেনে রাখা উচিত যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহান আল্লাহর সর্বশেষ নাবী এবং রাসূল বা দূত । তিনি সকল জাতির মানবসমাজের জন্য প্রেরিত হয়েছেন। তাই তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা এবং তাঁর আনুগত্য ছাড়া আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন এবং আল্লাহর আনুগত্যের দাবির কোনো অর্থ থাকে না। কেননা মহান আল্লাহ বলেছেন:
( مَنْ يُّطِعِ الرَّسُوْلَ فَقَدْ أَطَاعَ اللّهَ ) , ( سورة النساء , جزء من الآية 80 ).
ভাবার্থের অনুবাদ: “যে ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদের আনুগত্য করতে সক্ষম হবে, সেই ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর অনুগত ব্যক্তি হতে পারবে”।
(সূরা আন নিসা, আয়াত নং 80 এর অংশবিশেষ)।
) قُلْ إِنْ كُنتُمْ تُحِبُّوْنَ اللّهَ فَاتَّبِعُوْنِي يُحْبِبْكُمُ اللّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ وَاللّهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ ), ( سورة آل عمران , الآية 31 ).
মহান আল্লাহ আরো বলেছেন:
ভাবার্থের অনুবাদ: “হে আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ! তুমি বলে দাও! যদি তোমরা আল্লাহর ভালবাসা লাভ করতে চাও, তাহলে আমার অনুসরণ করতে থাকো, তবেই আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপগুলিকে ক্ষমা করে দিবেন। যেহেতু আল্লাহ হলেন ক্ষমাবান ও দয়াবান”।
(সূরা আল ইমরান, আয়াত নং 31)।
وصلى الله وسلم على رسولنا محمد , وعلى آله وأصحابه , وأتباعه إلى يوم الدين , والحمد لله رب العالمين .
অর্থ: আল্লাহ আমাদের প্রিয় রাসূল মুহাম্মাদ এবং তাঁর পরিবার-পরিজন, সাহাবীগণ এবং কিয়ামত পর্যন্ত তাঁর অনুসরণকারীগণকে অতিশয় সম্মান ও শান্তি প্রদান করুন।
প্রণীত তারিখ 20/4/1436 হিজরী মোতাবেক 9/2/2015 খ্রিস্টাব্দ।
ড: মুহাম্মাদ মর্তুজা বিন আয়েশ মুহাম্মাদ
( إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا ) , ( سورة الأحزاب , الآية 56(.
ভাবার্থের অনুবাদ: “নিশ্চয় আল্লাহ বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ কে অতিশয় সম্মান করেন। এবং ফেরেশতাগণ আল্লাহর নিকটে নাবী মুহাম্মাদ এর জন্য অতিশয় সম্মান প্রার্থনা করেন। সুতরাং হে ঈমানদার মুসলিম জাতি! তোমরাও নাবী মুহাম্মাদ এর অতিশয় সম্মান করো ও তাঁর প্রতি যথাযথভাবে সালাম পেশ করো”।
(সূরা আল আহযাব, আয়াত নং 56)।
আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি বেশি বেশি সালাম পেশ করার বিষয়ে উক্ত আয়াতটির সাথে সাথে আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। সেই হাদীসগুলির মধ্যে থেকে এখানে কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করা হলো:
عَنْ أَبِي طَلْحَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَاءَ ذَاتَ يَوْمٍ وَالْبُشْرَى فِي وَجْهِهِ؛ فَقُلْنَا : إِنَّا لَنَرَى الْبُشْرَى فِيْ وَجْهِكَ ! ؛ فَقَالَ : إِنَّهُ أَتَانِيَ الْمَلَكُ؛ فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ ! إِنَّ رَبَّكَ يَقُوْلُ : أَمَا يُرْضِيْكَ؟ أَنَّهُ لاَ يُصَلِّي عَلَيْكَ أَحَدٌ إِلاَّ صَلَّيْتُ عَلَيْهِ عَشْرًا , وَلاَ يُسَلِّمُ عَلَيْكَ أَحَدٌ إِلاَّ سَلَّمْتُ عَلَيْهِ عَشْرًا ".
( سنن النسائي , رقم الحديث 1283, وحسنه الألباني ).
অর্থ: আবু তালহা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] একদা আনন্দময় চেহারাসহ আগমন করলেন। তাই আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আপনার চেহারায় আনন্দের নিদর্শন উপলব্ধি করছি! সুতরাং তিনি বললেন: “আমার কাছে এক্ষনিই একজন ফেরেশতা এসেছিলেন এবং এই কথা বলে গেলেন: হে মুহাম্মাদ! আপনার পালনকর্তা বলেছেন: আপনি কি এতে সন্তুষ্ট নন যে, আপনার জন্য যে ব্যক্তি দরূদ পাঠ করবে (তথা আল্লাহর নিকটে আপনার জন্য অতিশয় সম্ভ্রম বা সম্মান প্রার্থনা করবে) তার প্রতি আমি দশটি রহমত ও বরকত বা কল্যাণ অবতীর্ণ করবো। এবং যে ব্যক্তি আপনার প্রতি সালাম পেশ করবে, তার প্রতি আমি দশবার শান্তি অবতীর্ণ করব।
(সুনান নাসায়ী, হাদীস নং 1283, আল্লামাহ নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ ( সঠিক ) বলেছেন )।
এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সম্মানার্থে তাঁর প্রতি দরূদ পাঠ করা ( অর্থাৎ অতিশয় সম্ভ্রম বা সম্মান প্রার্থনা করা ) এবং বেশি বেশি সালাম পেশ করা শরীয়ত সম্মত একটি বিধান বা নিয়ম।
সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি সালাম পেশ করবে, সে ব্যক্তির প্রতি মহান আল্লাহ শান্তি অবতীর্ণ করবেন। এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি দরূদ পাঠ করবে (অতিশয় সম্ভ্রম বা সম্মান প্রার্থনা করবে) তার প্রতি মহান আল্লাহ রহমত ও বরকত বা কল্যাণ অবতীর্ণ করবেন।
وعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعٌوْدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " إِنَّ لِلَّهِ مَلاَئِكَةً سَيَّاحِيْنَ فيِ الْأرْضِ يُبَلِّغُونِيْ مِنْ أُمَّتِي السَّلاَمَ ".
( سنن النسائي , رقم الحديث 1282, وصححه الألباني ).
অর্থ: আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “আল্লাহর পক্ষ থেকে পৃথিবীতে এমন কতকগুলি ভ্রমণকারী ফেরেশতামণ্ডলী নির্ধারিত রয়েছেন, যাঁরা আমার প্রতি আমার উম্মতের পক্ষ থেকে সালাম পৌঁছিয়ে দেন”।
(সুনান নাসায়ী, হাদীস নং 1282, আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ ( সঠিক ) বলেছেন) ।
এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সম্মানার্থে মহান আল্লাহ সকল মুসলিম নর-নারীর সালাম তাঁর নিকটে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কতকগুলি ফেরেশতা নিযুক্ত করে রেখেছেন। তাই আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি বেশি বেশি সালাম পেশ করা উচিত। কেননা এই কর্মটি হলো প্রকৃত ইসলাম ধর্মের একটি বিধান।
আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি সালাম পেশ করার কতকগুলি সময় ও স্থান নির্ধারিত রয়েছে, যেমন:-মাসজিদে প্রবেশ করার সময় এবং মাসজিদ থেকে বের হওয়ার সময়। এবং এই বিষয়ে যে সমস্ত হাদীস বর্ণিত হয়েছে, তার মধ্যে থেকে এখানে কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করা হলো:
عَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ؛ فَلْيُسَلِّمْ علَى النَّبيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وليقُلْ : اَللَّهمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمتِكَ، وَإِذَا خَرَجَ؛ فَلْيَقُلْ : اَللَّهمَّ إنِّيْ أَسْألُكَ مِنْ فَضْلِكَ ".
( سنن ابن ماجه , رقم الحديث 772, وسنن أبي داود , رقم الحديث 465, واللفظ لابن ماجه , وصححه الألباني ).
অর্থ: আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত যে, নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন:
তোমাদের মধ্যে থেকে কোনো ব্যক্তি যখন মাসজিদে প্রবেশ করবে, তখন যেন সে নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি সালাম পেশ করে। এবং এই দোয়াটি পাঠ করে:
" اَللَّهمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمتِكَ ".
অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি আমার পাপগুলি ক্ষমা করুন এবং আমার জন্য আপনার করুণার দরজাগুলি খুলে দিন”।
আর যখন মাসজিদ থেকে বের হবে, তখন যেন সে এই দোয়াটি পাঠ করে:
" اَللَّهمَّ إنِّيْ أَسْألُكَ مِنْ فَضْلِكَ ".
অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি আপনার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি”।
[সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং 772 এবং সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং 465 । তবে হাদীসের শব্দগুলি সুনান ইবনু মাজাহ থেকে নেওয়া হয়েছে। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।
وَعَنْ فَاطِمَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهاَ قَالَتْ : كَانَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ المَسْجِدَ صَلَّى عَلَى مُحَمَّدٍ وَسَلَّمَ، وَقَالَ : " رَبِّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوبِيْ، وَافْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ "، وَإِذَا خَرَجَ صَلَّى عَلَى مُحَمَّدٍ وَسَلَّمَ، وَقَالَ : " رَبِّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوبِيْ، وَافْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ فَضْلِكَ ".
( جامع الترمذي , رقم الحديث 314, وسنن ابن ماجه , رقم الحديث 773, واللفظ للترمذي , وقال الإمام الترمذي عن هذا الحديث بأنه : حسن , وصححه الألباني ).
অর্থ: “ফাতেমা বিনতু মুহাম্মাদ [রাদিয়াল্লাহু আনহা] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] যখন মাসজিদে প্রবেশ করতেন, তখন মুহাম্মাদের প্রতি দরূদ ও সালাম পাঠ করতেন এবং বলতেন:
" رَبِّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوبِيْ، وَافْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ ".
অর্থ: “হে আমার প্রভু! আপনি আমার পাপগুলি ক্ষমা করুন এবং আমার জন্য আপনার করুণার দরজাগুলি খুলে দিন”।
আর আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] যখন মাসজিদ থেকে বের হতেন, তখন মুহাম্মাদের প্রতি দরূদ ও সালাম পাঠ করতেন এবং বলতেন:
" رَبِّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوبِيْ، وَافْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ فَضْلِكَ ".
অর্থ: “হে আমার প্রভু! আপনি আমার পাপগুলি ক্ষমা করুন এবং আমার জন্য আপনার অনুগ্রহের দরজাগুলি খুলে দিন”।
[জামে তিরমিযী, হাদীস নং 314 এবং সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং 773, তবে হাদীসের শব্দগুলি জামে তিরমিযী থেকে নেওয়া হয়েছে। ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। এবং আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ ( সঠিক ) বলেছেন]।
وَعَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، أَن ّرَسُوْلَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , قَالَ : إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ؛ فَلْيُسَلِّمْ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , وَلْيَقُلْ : اَللَّهُمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ، وَإِذَا خَرَجَ؛ فَلْيُسَلِّمْ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , وَلْيَقُلْ : اَللَّهُمَّ اعْصِمْنـيْ مِنَ الشَّيْـطانِ الرَّجـيْمِ ".
( سنن ابن ماجه , رقم الحديث 773, وسنن أبي داود , رقم الحديث 465, واللفظ لابن ماجه , وصححه الألباني ).
অর্থ: আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন:
তোমাদের মধ্যে থেকে কোনো ব্যক্তি যখন মাসজিদে প্রবেশ করবে, তখন যেন সে নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি সালাম পেশ করে। এবং এই দোয়াটি পাঠ করে:
" اَللَّهمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمتِكَ ".
অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি আমার জন্য আপনার করুণার দরজাগুলি খুলে দিন”।
আর যখন মাসজিদ থেকে বের হবে, তখন যেন সে নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি সালাম পেশ করে। এবং এই দোয়াটি পাঠ করে:
" اَللَّهمَّ اعْصِمْنـيْ مِنَ الشَّيْـطانِ الرَّجـيْمِ ".
অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি আমাকে বিতাড়িত ও অভিশপ্ত শয়তান হতে রক্ষা করুন”।
[সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং 773 এবং সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং 465 । তবে হাদীসের শব্দগুলি সুনান ইবনু মাজাহ থেকে নেওয়া হয়েছে। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।
উল্লিখিত হাদীসগুলির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে,
1। আমাদের নাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর একটি অধিকার বা প্রাপ্য তাঁর উম্মতের উপর হলো এই যে, তাঁর উম্মতের প্রতিটি মানুষ যেন তাঁর প্রতি সালাম পেশ করে। তাই প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তিকে আদেশ প্রদান করা হয়েছে যে, সে যেন আল্লাহর রাসূলের প্রতি সাধারণভাবে যে কোনো সময়ে সালাম প্রেরণ করে। কিংবা কতকগুলি নির্দিষ্ট সময়ে সালাম প্রেরণ করে যেমন:- নামাজের তাশাহহোদ পাঠের সময় এবং মাসজিদে প্রবেশ করার সময় বা মাসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় । এবং নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর অনুপস্থিতিতেও তাঁর মৃত্যুবরণ করার পর অথবা তাঁর জীবদ্দশাতেও তাঁর প্রতি সালাম পেশ করার বিধান নির্ধারিত রয়েছে। তবে এই বিধানটি শুধু মাত্র তাঁরই বৈশিষ্ট্য এবং তাঁরই জন্য প্রযোজ্য। অন্য কোনো মানুষের জন্য প্রযোজ্য নয় এবং অন্য কোনো মানুষের বৈশিষ্ট্যও নয়। তাই কোনো জীবিত ব্যক্তির মাধ্যম ছাড়া অন্য কোনো নির্দিষ্ট জীবিত মানুষকে তার অনুপস্থিতিতে তার প্রতি সালাম পেশ করা বৈধ নয়। শুধু মাত্র নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর বৈশিষ্ট্য নির্ধারিত রয়েছে যে, তাঁকে তাঁর উম্মতের সালাম পৌঁছিয়ে দেওয়া হয়। এর দ্বারা মুসলিম ব্যক্তি নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে সালাম দেওয়ার মর্যাদা লাভ করে থাকে এবং তাঁর প্রতি তার এই সালাম পৌঁছিয়ে দেওয়া হয়। যদিও সে আল্লাহর রাসূলের জীবদ্দশাতে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য পথের দূরত্ব অতিক্রম না করে থাকে। অথবা যদিও সে তাঁর মৃত্যুবরণ করার পর তাঁর কবরের নিকটে উপস্থিত না হয়ে থাকে।
2। আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি অধিকতর সালাম প্রেরণ করার নিয়মটি হলো এই যে,
اَلسَّلاَمُ عَلَيْكَ أيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ ( [() صحيح البخاري , رقم الحديث 835, وصحيح مسلم , رقم الحديث 55- (402), وانظر أيضا : الجامع لأحكام القرآن للعلامة أبي عبد الله محمد بن أحمد الأنصاري القرطبي , اعتنى به وصححه الشيخ هشام الأنصاري , دار عالم الكتب للطباعة والنشر والتوزيع , الرياض , المملكة العربية السعودية , طبعة عام 1423 هـ - 2003م, تفسير الآية 56 من سورة الالأحزاب , ج 14, ص 234, وص 237.]).
অর্থ: “হে নাবী আপনার প্রতি সর্ব প্রকার শান্তি, আল্লাহর করুণা ও তাঁর কল্যাণ অবতীর্ণ হোক”।
পাঠ করা।
অথবা
اَلسَّلاَمُ عَلَيْكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ .
অর্থ: “হে আল্লাহর রাসূল! আপনার প্রতি সর্ব প্রকার শান্তি অবতীর্ণ হোক”।
বলে আল্লাহর রাসূলের প্রতি সালাম পেশ করা।
কিংবা
اَلسَّلاَمُ عَلَيْكَ يَا نَبِيَّ اللهِ .
অর্থ: “হে আল্লাহর নাবী! আপনার প্রতি সর্ব প্রকার শান্তি অবতীর্ণ হোক”।
পাঠ করে আল্লাহর রাসূলের প্রতি সালাম পেশ করা উচিত। কেননা এটাই তো হচ্ছে প্রকৃত ইসলাম ধর্মের পবিত্র অভিবাদন পদ্ধতি।
[দেখতে পারা যায় সহীহ বুখারী, হাদীস নং 3326 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 28 -(2841) এবং 132 -(2473)]।
নচেৎ
اَلسَّلاَمُ عَلَى النَّبِيِّ ( [() انظر فتح البارئ شرح صحيح البخاري للعلامة الحافظ أحمد بن علي بن حجر العسقلاني , المكتبة العصرية , طبعة عام 1426 هـ - 2005م, المجلد الثاني , شرح الحديث برقم 831, ص 1175.]).
অর্থ: “আল্লাহর নাবীর প্রতি সর্ব প্রকার শান্তি অবতীর্ণ হোক”।
উচ্চারণ করেও আল্লাহর রাসূলের প্রতি সালাম পেশ করা যেতে পারে।
3। সালাম এর ভাবার্থ হলো: সকল প্রকারের অমঙ্গল এবং দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্তি, শান্তি, পরিত্রাণ এবং নিরাপত্তা প্রাপ্ত হওয়া।
4। মুসলিম ব্যক্তির সঠিক ভাবে জেনে রাখা উচিত যে, আমাদের এই সালাম ফেরেশতাগণের মাধ্যমে আমাদের নাবীর প্রতি পৌঁছিয়ে দেওয়া হয়। তাই মাদিনায় সফর কারী ব্যক্তির মাধ্যমে আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি সালাম প্রেরণের কোনো দরকার নেই। এই কারণেই সাহাবীগণ, সালাফে সালেহীন, এবং ওলামায়ে ইসলাম কোনো একজন ব্যক্তির মাধ্যমে আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি সালাম প্রেরণ করতেন না। কেননা আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি সালাম কোন ব্যক্তির মাধ্যম ছাড়াই পৌঁছিয়ে দেওয়া হয়। যেমন এর পূর্বে উল্লিখিত হাদীসটির দ্বারা এই বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। সেই হাদীসটি হলো এই যে, আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন:
" إِنَّ لِلَّهِ مَلاَئِكَةً سَيَّاحِيْنَ فيِ الأرْضِ يُبَلِّغُونِيْ مِنْ أُمَّتِي السَّلاَمَ ".
( سنن النسائي , رقم الحديث 1282, وصححه الألباني ).
অর্থ: আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “আল্লাহর পক্ষ থেকে পৃথিবীতে এমন কতকগুলি ভ্রমণকারী ফেরেশতামণ্ডলী নির্ধারিত রয়েছেন, যাঁরা আমার প্রতি আমার উম্মতের পক্ষ থেকে সালাম পৌঁছিয়ে দেন”।
(সুনান নাসায়ী, হাদীস নং 1282, আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ ( সঠিক ) বলেছেন) ।
5। কোন মুসলিম ব্যক্তির জন্য এটা জায়েজ বা বৈধ নয় যে, সে সম্মিলিতভাবে, একযোগে একসুরে কোনো একটি নির্দিষ্ট পন্থায় আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি সালাম পেশ করবে। তাই প্রত্যেক ব্যক্তি আপন আপন সুরে, পৃথকভাবে এবং স্বতন্ত্রপদ্ধতিতে আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি অধিকতর সালাম প্রেরণ করবে। কেননা সম্মিলিতভাবে, একযোগে, একসুরে কোন একটি নির্দিষ্ট পন্থায় আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি সালাম প্রেরণ করার নিয়মটি ইসলামী শরীয়ত বা বিধানের মধ্যে পাওয়া যায় না। তাই এককভাবে আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি বেশি বেশি সালাম পেশ করা উচিত।
6। কোন মুসলিম ব্যক্তির জন্য এটা জায়েজ নয় যে, সে কোনো ব্যক্তির মাধ্যমে আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি সালাম প্রেরণ করবে। কেননা এই পদ্ধতিতে সালাম প্রেরণ করার কোনো বিধান প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষায় পাওয়া যায় না। তাই এই পদ্ধতিটি শরিয়ত সম্মত নয়। সুতরাং যে কোন মুসলিম ব্যক্তি দুনিয়ার যে কোনো দেশ বা স্থান থেকে আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি সালাম পেশ করতে পারবে। এতে কোনো বাধা নেই।
7। কোন মুসলিম ব্যক্তির জন্য এটা জায়েজ নয় যে, সে এমন দরূদ ও সালাম পাঠ করবে, যে সব দরূদ ও সালাম প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা সম্মত নয়। সুতরাং দরূদে তাজ, দরূদে তুনাজ্জীনা, দরূদে হাজারী ইত্যাদির শব্দগুলি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] থেকে বর্ণিত হয় নি। তাই এইসব দরূদ ও সালামের পদ্ধতি বর্জন করা দরকার। কেননা আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন:
" مَنْ أَحْدَثَ فِيْ أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ ".
( صحيح البخاري , رقم الحديث 2697, وأيضاً : صحيح مسلم , رقم الحديث 17- (1718) ).
অর্থ: “যে ব্যক্তি আমাদের এই ইসলাম ধর্মের মধ্যে এমন কোনো নতুন বিষয় ধর্মের কর্ম হিসেবে সংযুক্ত করবে, যে বিষয়টি প্রকৃতপক্ষে ইসলাম ধর্মের অংশ নয়, তাহলে সে বিষয়টি পরিত্যাজ্য বলেই বিবেচিত হবে”।
(সহীহ বুখারী, হাদীস নং 2697 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 17-(1718)।
8। জেনে রাখা উচিত যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহান আল্লাহর সর্বশেষ নাবী এবং রাসূল বা দূত । তিনি সকল জাতির মানবসমাজের জন্য প্রেরিত হয়েছেন। তাই তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা এবং তাঁর আনুগত্য ছাড়া আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন এবং আল্লাহর আনুগত্যের দাবির কোনো অর্থ থাকে না। কেননা মহান আল্লাহ বলেছেন:
( مَنْ يُّطِعِ الرَّسُوْلَ فَقَدْ أَطَاعَ اللّهَ ) , ( سورة النساء , جزء من الآية 80 ).
ভাবার্থের অনুবাদ: “যে ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদের আনুগত্য করতে সক্ষম হবে, সেই ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর অনুগত ব্যক্তি হতে পারবে”।
(সূরা আন নিসা, আয়াত নং 80 এর অংশবিশেষ)।
) قُلْ إِنْ كُنتُمْ تُحِبُّوْنَ اللّهَ فَاتَّبِعُوْنِي يُحْبِبْكُمُ اللّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ وَاللّهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ ), ( سورة آل عمران , الآية 31 ).
মহান আল্লাহ আরো বলেছেন:
ভাবার্থের অনুবাদ: “হে আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ! তুমি বলে দাও! যদি তোমরা আল্লাহর ভালবাসা লাভ করতে চাও, তাহলে আমার অনুসরণ করতে থাকো, তবেই আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপগুলিকে ক্ষমা করে দিবেন। যেহেতু আল্লাহ হলেন ক্ষমাবান ও দয়াবান”।
(সূরা আল ইমরান, আয়াত নং 31)।
وصلى الله وسلم على رسولنا محمد , وعلى آله وأصحابه , وأتباعه إلى يوم الدين , والحمد لله رب العالمين .
অর্থ: আল্লাহ আমাদের প্রিয় রাসূল মুহাম্মাদ এবং তাঁর পরিবার-পরিজন, সাহাবীগণ এবং কিয়ামত পর্যন্ত তাঁর অনুসরণকারীগণকে অতিশয় সম্মান ও শান্তি প্রদান করুন।
প্রণীত তারিখ 20/4/1436 হিজরী মোতাবেক 9/2/2015 খ্রিস্টাব্দ।
ড: মুহাম্মাদ মর্তুজা বিন আয়েশ মুহাম্মাদ
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন