HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের গুণাবলী
লেখকঃ শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীন রহ.
৩
প্রথম অধ্যায়: তাঁর সৃষ্টিগত গুণাবলীআল্লাহ তা‘আলা তাঁর সৃষ্টিকে পরিপূর্ণ করেছেন, যেমন তাঁর শরীরের বর্ণনায় এসেছে যে, তাঁর শরীরের গঠন ছিল সামঞ্জস্যপূর্ণ সুদর্শন সুন্দর [বারা ইবন ‘আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: « كان النبي صلى الله عليه و سلم مربوعا , بعيد ما بين المنكبين , له شعر يبلغ شحمة أذنيه , رأيته في حلة حمراء , لم أر شيئا قط أحسن منه » . ( رواه البخاري ) . “নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মধ্যম আকৃতির পুরুষ; তাঁর উভয় কাঁধের দূরত্ব ছিল অল্প বেশি; চুল ছিল কানের লতিকা পর্যন্ত লম্বিত; আমি তাঁকে লাল পোষাক পরিহিত অবস্থায় দেখেছি; তাঁর চেয়ে সুন্দর কিছু আমি কখনও দেখি নি।” [ বুখারী, আস-সহীহ: মানাকিব / ২৩, ৪ /১৬৫; মুসলিম, আস-সহীহ: ফাদায়েল / ২৫, হাদিস নং- ২৩৩৭, ৪ / ১৮১৮]।জুরাইরী র. থেকে বর্ণিত, তিনি আবূ তোফায়েল রা. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: «قُلْتُ : لَهُ أَرَأَيْتَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ؟ قَالَ : نَعَمْ , كَانَ أَبْيَضَ , مَلِيحَ الْوَجْهِ » . ( رواه مسلم ) .“আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, আপনি কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছেন? তিনি বললেন: হ্যাঁ, তিনি ছিলেন ফর্সা, লাবণ্যময় চেহারার অধিকারী।” [মুসলিম, আস-সহীহ: ফাদায়েল / ২৮, হাদিস নং- ২৩৪০, ৪ / ১৮২০]।আর উম্মে মা‘বাদ কর্তৃক বর্ণিত হাদিসের মধ্যে আছে: « رَأَيْتُ رَجُلا ظَاهِرَ الْوَضَاءَةِ ، أَبْلَجَ الْوَجْهِ ، لَمْ تَعِبْهُ نُحْلَةٌ ، وَلَمْ تُزْرِ بِهِ صُقْلَةٌ ، وَسِيمٌ قَسِيمٌ ... أَجْمَلُ النَّاسِ وَأبْهَاهُ مِنْ بَعِيدٍ , وَأَجْلاهُ وَأَحْسَنُهُ مِنْ قَرِيبٍ » . “আমি এক ব্যক্তিকে দেখেছি, যার অবস্থা হল- তিনি পরিষ্কার সুন্দর, উজ্জ্বল চেহারার অধিকারী, তিনি শীর্ণতার দোষে দুষ্ট নন; নিন্দিত নন ক্ষুদ্রতার অভিযোগে, উজ্জ্বল ফর্সা, হ্যাণ্ডসাম ... সবচেয়ে সুন্দর মানুষ, দূর থেকে দেখতে তিনি সর্বাধিক দীপ্তিমান, আর কাছ থেকে দেখতে তিনি অতি উজ্জ্বল ও সুন্দর।”]; সুতরাং নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরুষদের মধ্যে মধ্যম আকৃতির [হাদিসের মধ্যে তার ব্যখ্যা করা হয়েছে: « لَيْسَ بِالطَّوِيلِ البائن , وَلاَ بِالْقَصِيرِ» . (তিনি খুব বেশি লম্বাও ছিলেন না, আবার বেঁটেও ছিলেন না)। [ ফতহুল বারী: ৬ /৫৬৯ ]।] ছিলেন; তিনি খুব বেশি লম্বাও ছিলেন না, আবার বেঁটেও ছিলেন না [রবী‘আ ইবন আবি আবদুর রহমান থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: « سمعت أنس بن مالك يصف النبي صلى الله عليه و سلم قال : كان ربعة من القوم , ليس بالطويل , ولا بالقصير » . ( رواه البخاري ) . “আমি আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের (শারীরিক) গুণাবলী বর্ণনা করতে শুনেছি, তিনি বলেন: “তিনি ছিলেন সম্প্রদায়ের মধ্যে মধ্যম আকৃতির মানুষ; তিনি বেশি লম্বাও ছিলেন না, আবার বেঁটেও ছিলেন না ।” [ বুখারী, আস-সহীহ: মানাকিব / ২৩, ৪ /১৬৪]। আর বারা ইবন ‘আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত হাদিসের মধ্যে আছে: « كان النبي صلى الله عليه و سلم مربوعا ... » . ( رواه البخاري ) .“নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মধ্যম আকৃতির পুরুষ ...।” [ বুখারী, আস-সহীহ: মানাকিব / ২৩, ৪ /১৬৫]।]; তাঁর উভয় কাঁধের দূরত্ব ছিল অল্প বেশি [বারা ইবন ‘আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: « كان النبي صلى الله عليه و سلم مربوعا , بعيد ما بين المنكبين ... » . ( رواه البخاري ) .“নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মধ্যম আকৃতির পুরুষ; তাঁর উভয় কাঁধের দূরত্ব ছিল অল্প বেশি; ...।” [বুখারী, আস-সহীহ: মানাকিব / ২৩, ৪ /১৬৫]।]; তিনি ছিলেন স্থূলাকার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অধিকারী [আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: « لم يكن النبي صلى الله عليه وسلم بالطويل ولا بالقصير، شثن الكفين ، والقدمين ، ضخم الرأس , ضخم الكراديس ، طويل المسرُبَةِ ، إِذا مشى تَكفَّا تكفِّيا . كأنما انحطّ من صبب . لم أر قبله ولا بعده مثله صلى الله عليه وسلم » . ( رواه الترمذي ) .“নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম লম্বাও ছিলেন না, আবার বেঁটেও ছিলেন না; তাঁর দুই হাতের তালু ও দুই পায়ের তলা ছিল মাংসবহুল; মাথা ছিল বড় এবং অস্থিগ্রন্থিগুলো ছিল মোটা; বক্ষদেশ থেকে নাভি পর্যন্ত একটি সরু কেশ রেখা ছিল; যখন তিনি হাঁটতেন, তখন সামনের দিকে ঝুঁকে চলতেন, মনে হত যেন তিনি যমীনের নীচু অংশে অবতরণ করছেন। আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের পূর্বে ও পরে তাঁর মত(এত অধিক সুন্দর) আর কাউকে দেখিনি।” [ তিরমিযী, আস-সুনান: মানাকিব / ৮, হাদিস নং- ৩৬৩৭; ৫ / ৫৯৮। আর তিনি বলেছেন: এই হাদিসটি হাসান, সহীহ]। " شثن "শব্দের অর্থ: হৃষ্টপুষ্ট আঙুলসমূহ। — [ কামূসুল মুহীত, মূল অক্ষর " شثن ", পৃ. ১৫৯ ]। " الكراديس "শব্দটি বহুবচন, একবচনে " الكُردوسة " যার অর্থ: এমন প্রত্যেক হাড়দ্বয়, যা একই গ্রন্থিতে মিলিত হয়েছে; প্রত্যেক মোটা গোশত বিশিষ্ট হাড়। — [ কামূসুল মুহীত, মূল অক্ষর " الكردوسة " ,পৃ. ৭৩৫ ]। " المسربة "শব্দের অর্থ: বক্ষদেশ থেকে নাভি পর্যন্ত সরু কেশ রেখা। — [কামূসুল মুহীত, মূল অক্ষর" سرب " , পৃ. ১২৪]।আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: « كان النبي صلى الله عليه و سلم ضخم اليدين والقدمين , حسن الوجه , لم أر بعده ولا قبله مثله , وكان بسط الكفين » . ( رواه البخاري ) . “নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুই হাত ও দুই পা ছিল মাংসবহুল; চেহারা ছিল সুন্দর; আমি তাঁর পরে ও তাঁর আগে তাঁর মত (এত অধিক সুন্দর) আর কাউকে দেখিনি; আর তাঁর হাতের তালু ছিল প্রশস্ত।” [ বুখারী, আস-সহীহ: লিবাস (পোষাক-পরিচ্ছদ) / ৬৮, ৭ / ৫৮]।], ভারসাম্যপূর্ণ; বিস্তৃত বুকের অধিকারী [হিন্দ ইবন আবি হালা রা. বর্ণিত হাদিসের মধ্যে আছে, যখন তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের গুণাবলী বর্ণনা করেন, তখন তিনি বলেন: « كان رسول الله صلى الله عليه وسلم فخما مفخما , يتلألأ وجهه تلألأ القمر ليلة البدر، أطول من المربوع , وأقصر من المشذب ، عظيم الهامة ، رجل الشعر , إن انفرقت عقيقته فرقها وإلا فلا يجاوز شعره شحمة أذنيه . إذا هو وفره ، أزهر اللون ، واسع الجبين ، أزج الحواجب سوابغ فى غير قرن , بينهما عرق يدره الغضب ، أقنى العرنين , له نور يعلوه , يحسبه من لم يتأمله أشم ، كث اللحية , سهل الخدين , ضليع الفم ، مفلج الأسنان , دقيق المسربة ، كأن عنقه جيد دمية فى صفاء الفضة ، معتدل الخلق , بادن متماسك ، سواء البطن والصدر ، عريض الصدر ، بعيد ما بين المنكبين ... » . “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সম্মান ও মর্যাদার আধার; তাঁর চেহারা পূর্ণিমার রাতের চাঁদের স্নিগ্ধ আলোর ন্যায় ঝলমল করত; তিনি মধ্যম আকৃতির চেয়ে দীর্ঘদেহী এবং অতিশয় দীর্ঘকায় ব্যক্তির চেয়ে খানিকটা খর্বকায় ছিলেন; তাঁর মাথা (তুলনামূলক) বড় এবং কেশরাজি কিছুটা কোঁকড়ানো ছিল; সহসা সিঁথি করা গেলে সিঁথি করতেন, নতুবা সিঁথি করতেন না; তিনি তাঁর কেশরাজিকে যখন ‘অপরা’ করতেন, তখন তা উভয় কানের লতি অতিক্রম করত; তাঁর বর্ণ অতি প্রাঞ্জল এবং ললাটের উভয় পার্শ্ব প্রশস্ততর ছিল; তাঁর ভ্রূযুগল বিমুক্ত বৃত্তাংশের ন্যায় বাঁকা, খুব সূক্ষ্ম ঘন চুল বিশিষ্ট ছিল; আর ঐ ভ্রূযুগলের মাঝে এমন একটি শিরা ছিল, যা রাগের সময় (অধিক রক্ত সঞ্চারিত হওয়ার ফলে) ভেসে উঠত (প্রকাশ পেত); তাঁর নাসিকা সুদীর্ঘ, অগ্রভাগ সরু ও মধ্যভাগ ন্যূজ্ব ছিল; তাঁর নাসিকায় এমন নূর (জ্যোতি) ছিল, যা নাকের উপর বিকীর্ণ হত; কেউ গভীর মনোযোগ সহকারে তাঁর নাকের প্রতি না তাকালে অত্যুন্নত নাসা মনে করত; তাঁর দাঁড়ি ছিল বিস্তীর্ণ ও খুব ঘন; গণ্ডদ্বয় মসৃণ এবং মুখমণ্ডল প্রশস্ত ছিল; সম্মুখের উপরের পাটির দু’টি দাঁত ও নীচের পাটির দু’টি দাঁত আলাদা ছিল— মিলিত ছিল না; বক্ষদেশ থেকে নাভি পর্যন্ত প্রলম্বিত চুলের রেখাটি ছিল সরু; তাঁর গ্রীবা (ঘাড়) যেন হাতির দাঁত দ্বারা নির্মিত মোতির গ্রীবা কিন্তু তার শুভ্রতা রৌপ্যের ন্যায়; তাঁর দেহের গঠন ছিল সুসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং মাংসপেশী ছিল সূদৃঢ় মজবুত; তাঁর পেট ও বক্ষ ছিল (উচ্চতায়) সমান এবং বক্ষ ছিল প্রশস্ত; তাঁর এক কাঁধ থেকে অন্য কাঁধ অপেক্ষাকৃত দূরত্বে ছিল: ...।”আর ‘তাবাকাতে ইবনে সা‘আদ’ (১ / ৪১৫) –এর মধ্যে আছে, আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: « كان رسول الله صلى الله عليه و سلم شثن القدمين والكفين , ضخم الساقين , عظيم الساعدين , ضخم المنكبين , بعيد ما بين المنكبين , رحب الصدر , رجل الرأس , أهدب العينين , حسن الفم » . “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুই হাতের তালু ও দুই পায়ের তলা ছিল মাংসবহুল; তাঁর পায়ের নলিযুগলও ছিল মাংসবহুল; বড় হাত বিশিষ্ট; মাংসবহুল কাঁধের অধিকারী; তাঁর উভয় কাঁধের দূরত্ব ছিল অল্প বেশি; প্রশস্ত বুকের অধিকারী; অতি কিঞ্চিত কোঁকড়ানো চুল বিশিষ্ট মাথার অধিকারী; লম্বা ভ্রূ বিশিষ্ট চোখ ও সুন্দর মুখের অধিকারী ।”]; আর তিনি ছিলেন মানুষের মধ্যে সর্বোত্তম চেহারার [আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: « كان النبي صلى الله عليه و سلم ضخم القدمين حسن الوجه لم أر بعده مثله» . ( رواه البخاري ) .“নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুই পা ছিল মাংসবহুল, চেহারা ছিল সুন্দর; আমি তাঁর পরে (এত অধিক সুন্দর) আর কাউকে দেখিনি।” [বুখারী, আস-সহীহ: লিবাস (পোষাক-পরিচ্ছদ) / ৬৮, ৭ / ৫৮]।পূর্বে উল্লেখিত বারা ইবন ‘আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত হাদিসের মধ্যে আছে: « كان رسول الله صلى الله عليه و سلم أحسن الناس وجها ... » . ( رواه البخاري ) .“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর চেহারার অধিকারী ...।” [ বুখারী, আস-সহীহ: মানাকিব]।] অধিকারী; তিনি ছিলেন দুধে আলতার মত ফর্সা উজ্জ্বল বর্ণের [আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: « كان ربعة من القوم ليس بالطويل ولا بالقصير , أزهر اللون , ليس بأبيض أمهق ولا آدم » . ( رواه البخاري ) .“তিনি ছিলেন সম্প্রদায়ের মধ্যে মধ্যম আকৃতির মানুষ; তিনি বেশি লম্বাও ছিলেন না, আবার বেঁটেও ছিলেন না; তিনি ছিলেন ফর্সা উজ্জ্বল বর্ণের; তিনি ধবধবে সাদা ছিলেন না, ছিলেন না খুব ধূসর বর্ণ।” [ বুখারী, আস-সহীহ: মানাকিব / ২৩, ৪ /১৬৪]। মুসলিম র. এর এক বর্ণনার মধ্যে আছে: « كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَزْهَرَ اللَّوْنِ كَأَنَّ عَرَقَهُ اللُّؤْلُؤُ » . ( رواه مسلم ) .“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন ফর্সা উজ্জ্বল বর্ণের; তাঁর ঘাম যেন মুক্তা।” [ মুসলিম, আস-সহীহ: ফাযায়েল / ২১, হাদিস নং- ২৩৩০, ৪ / ১৮১৫]। ইবনু হাজার র. ‘ফাতহুল বারী’ (৬ / ৫৬৯) –এর মধ্যে বলেন: " أَزْهَرَ اللَّوْنِ "অর্থ: আলতা মিশানো সাদা পানীয়।আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: « كان رسول الله صلى الله عليه و سلم ليس بالطويل , ولا بالقصير , ضخم الرأس واللحية , شثن الكفين والقدمين , مشرب وجهه حمرة طويل المسربة ... » . ( رواه أحمد ) . “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম লম্বাও ছিলেন না, আবার বেঁটেও ছিলেন না (তিনি মধ্যম আকৃতির ছিলেন); আর তিনি ছিলেন (তুলনামূলক) বড় মাথা ও দাঁড়ির অধিকারী; তাঁর দুই হাতের তালু ও দুই পায়ের তলা ছিল মাংসবহুল; তাঁর চেহারা ছিল লোহিতাভ শুভ্র প্রকৃতির; বক্ষদেশ থেকে নাভি পর্যন্ত একটি সরু কেশ রেখা ছিল; ...।” [ ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ: ১ / ৯৬; হাকেম, আল-মুসতাদরাক: ২ / ৬০৬ এবং তিনি বলেন, এই হাদিসটির সনদ ইমাম মুসলিম র. এর শর্তের আলোকে সহীহ, তবে তারা তা বর্ণনা করেননি, আর ইমাম যাহাবীও তার মতকে সমর্থন করেছেন]।]; চেহারা গোলাকৃতির [জাবির ইবন সামুরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: «كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَدْ شَمِطَ مُقَدَّمُ رَأْسِهِ وَلِحْيَتِهِ , وَكَانَ إِذَا ادَّهَنَ لَمْ يَتَبَيَّنْ , وَإِذَا شَعِثَ رَأْسُهُ تَبَيَّنَ , وَكَانَ كَثِيرَ شَعْرِ اللِّحْيَةِ , فَقَالَ رَجُلٌ : وَجْهُهُ مِثْلُ السَّيْفِ ؟ قَالَ : لاَ , بَلْ كَانَ مِثْلَ الشَّمْسِ وَالْقَمَرِ , وَكَانَ مُسْتَدِيرًا » . ( رواه مسلم ) . “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের চুল ও দাঁড়ির সম্মুখভাগ সাদা হয়ে গিয়েছিল। যখন তিনি তেল দিতেন, তখন (সাদা চুল) দেখা যেত না; আর যখন চুল এলোমেলো হত, তখন (শুভ্রতা) দেখা যেত। তাঁর দাঁড়ি খুব ঘন ছিল। এক ব্যক্তি বলল: তাঁর চেহারা মুবারক ছিল তলোয়ারের মত? জাবির রা. বললেন: না, তাঁর চেহারা মুবারক ছিল সূর্য ও চন্দ্রের মত (উজ্জ্বল) গোলাকার।” [ মুসলিম, আস-সহীহ: ফাযায়েল / ২৯, হাদিস নং- ২৩৪৪, ৪ / ১৮২৩]। হাদিসে উল্লেখিত " شَمِطَ " শব্দের অর্থ: মাথার শুভ্রতা, যার সাথে কালো মিশ্রিত হয়। [কামূসুল মুহীত: মূলবর্ণ ( شمط ), পৃ. ৮৭০]।আর আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসের মধ্যে আছে: « كان في الوجه تدوير أبيض مشرب » . ( رواه الترمذي ) .“তাঁর চেহারা ছিল গোলাকৃতির; তাঁর রং ছিল লোহিতাভাব শুভ্র।” [তিরমিযী, আস-সুনান: মানাকিব / ৮, হাদিস নং-৩৬৩৮, ৫ / ৫৯৯; তিনি বলেন: এই হাদিসটি হাসান ও গরীব, তার সনদ মুত্তাসিল নয়]।]; সাথে চিবুকদ্বয় ছিল সাবলীল [হিন্দ ইবন আবি হালা রা. থেকে বর্ণিত হাদিসের মধ্যে বর্ণিত হয়েছে, যখন তিনি হাসান ইবন আলী রা. কে উদ্দেশ্য করে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের গুণাবলী বর্ণনা করেন: « كث اللحية , سهل الخدين » .“তাঁর দাঁড়ি ছিল ঘন, চিবুকদ্বয় ছিল সরল সাবলীল।”]; চক্ষুদ্বয় ছিল গভীর কৃষ্ণতা বিশিষ্ট ডাগর ডাগর [শু‘বা র. থেকে বর্ণিত, তিনি সিমাক ইবন হারব র. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি জাবির ইবন সামুরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলতে শুনেছি: « كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ضَلِيعَ الْفَمِ , أَشْكَلَ الْعَيْنِ , مَنْهُوسَ الْعَقِبَيْنِ . قَالَ : قُلْتُ لِسِمَاكٍ : مَا ضَلِيعُ الْفَمِ ؟ قَالَ : عَظِيمُ الْفَمِ . قَالَ : قُلْتُ : مَا أَشْكَلُ الْعَيْنِ ؟ قَالَ : طَوِيلُ شَقِّ الْعَيْنِ . قَالَ : قُلْتُ : مَا مَنْهُوسُ الْعَقِبِ ؟ قَالَ : قَلِيلُ لَحْمِ الْعَقِبِ » . ( رواه مسلم ) . “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন প্রশস্ত মুখ, টানাটানা চোখ এবং সুষম গোড়ালী বিশিষ্ট। বর্ণনাকারী শু‘বা র. বলেন: আমি সিমাক র. কে জিজ্ঞাসা করলাম: প্রশস্ত মুখ কেমন? তিনি বললেন: বড় মুখ। শু‘বা র. বলেন: আমি বললাম: টানাটানা চোখ কেমন? তিনি বললেন: চোখ দু’টো দীঘল দীর্ঘ ডাগর। শু‘বা র. বলেন: আমি বললাম: সুষম গোড়ালী কেমন? তিনি বললেন: হালকা গোড়ালী।” [ মুসলিম, আস-সহীহ: ফাযায়েল / ২৭, হাদিস নং- ২৩৩৯, ৪ / ১৮২০; তিরমিযী, মানকিব / ১২, হাদিস নং- ৩৬৪৭, ৫ / ৬০৩]।তবে أشكل العين (টানাটানা চোখ) এর ব্যাখ্যায় সিমাক যা বলেছেন, কাযী ইয়াদ তার বিরোধিতা করেছেন, তিনি বলেন, সিমাক এটা ভ্রমবশত বলেছে। এটা প্রকাশ্য ভুল। সঠিক হচ্ছে, যাতে আলেমগণ একমত, এবং আবু উবায়েদ ও অন্যান্য শব্দার্থবিদদের করা অর্থ, আর তা হচ্ছে, শুভ্র সাদা চোখে লালের আভা থাকা। দেখুন, সহীহ মুসলিম, ইমাম নাওয়াওয়ীর ব্যাখ্যাসহ, ১৫/৯৩। আর জাবির ইবন সামুরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: « كان في ساقي رسول الله صلى الله عليه و سلم حموشة , وكان لا يضحك إلا تبسما , وكنت إذا نظرت إليه قلت : أكحل العينين وليس بأكحل » . ( رواه الترمذي ) . “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কদম মুবারকের গোছা (নলা) খানিকটা সরু গোছের ছিল; আর তিনি মুচকি হাসি ছাড়া হাসতেন না; আর আমি (বর্ণনাকারী) যখন তাঁর দিকে তাকাতাম, তখন আমি বলতাম: তিনি চোখ দু’টিতে সুরমার লাগিয়েছেন। অথচ তিনি (তখন) সুরমা লাগানো অবস্থায় ছিলেন না।” [তিরমিযী, মানকিব / ১২, হাদিস নং- ৩৬৪৫, ৫ / ৬০৩ এবং তিনি বলেন: এই হাদিসটি হাসান, গরীব, অপর এক দৃষ্টিতে সহীহ]।আর উম্মু মা‘বাদের হাদিসের মধ্যে আছে: « في عينه دعج » (তাঁর চক্ষু গভীর কালো); অচিরেই এর তথ্যসূত্র ও বিশুদ্ধতা নিয়ে কথা আসবে। আর " الدعج "শব্দের অর্থ: চোখ ও অন্যান্য বস্তুর মধ্যে গভীর কালো। [ শরহুস সুন্নাহ ( شرح السنة ): ১৩ / ২৬৭ ]।আর আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: « أدعج العينين , أهدب الأشفار » (তিনি ছিলেন গভীর কালো ডাগর চোখের অধিকারী; চোখের পাতার প্রান্তদেশের সাথে লম্বা ভ্রূ’র অধিকারী)। [তিরমিযী, আশ-শামায়েলুল মুহাম্মাদীয়া ( الشمائل المحمدية ), পরিচ্ছেদ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সৃষ্টিগত বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে যেসব বর্ণনা এসেছে ( باب ما جاء في خلق رسول الله صلى الله عليه و سلم رسول الله صلى الله عليه و سلم ), হাদিস নং- ৬, পৃ. ২০ ]।]; মনোরম ভ্রূ, যা উভয়ের মাঝে সংযোগ বিহীন [উম্মু মা‘বাদের হাদিসের মধ্যে বর্ণিত হয়েছে: « أزجُّ أقرنُ » (চিকন ও ধনুকাকৃতির ভ্রূ, দুই ভ্রূ পরস্পর মিলিত); আর " القرن "শব্দের অর্থ: দুই ভ্রূ’র মিলন বা সংযোগ। আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের গুণাবলী বর্ণনায় তার বিপরীত বর্ণনা করেন হিন্দ ইবন আবি হালা রা.: « أزج الحواجب , سوابغ فى غير قرن » .]; সরু নাক [“তাঁর ভ্রূযুগল বিমুক্ত বৃত্তাংশের ন্যায় বাঁকা, খুব সূক্ষ্ম ঘন চুল বিশিষ্ট ছিল।” বায়হাকী তাঁর ‘দালায়েলুন নবুয়াত’ ( دلائل النبوة ) নামক গ্রন্থের ২৪৮ পৃষ্ঠা’র মধ্যে বর্ণনা করেছেন। বাল‘য়াদাবীয়া’র জনৈক ব্যক্তি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের গুণাবলী বর্ণনা করেন, তিনি তাতে বলেন:« ... فإذا رجل حسن الجسم , عظيم الجبهة , دقيق الأنف , دقيق الحاجبين , وإذا من لدن نحره إلى سرته كالخيط الممدود شعره » .“ ... হঠাৎ দেখি এক ব্যক্তি, যার সুদর্শন শরীর, বড় কপাল, সরু নাক ও চিকন ভ্রূ; আরও দেখি তার বুকের উপরিভাগ থেকে নাভি পর্যন্ত প্রসারিত রেখার মত তার চুল।”]; সুন্দর মুখ [পূর্বোক্ত জাবির ইবন সামুরা রা. কর্তৃক বর্ণিত হাদিসের মধ্যে আছে: « كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ضَلِيعَ الْفَمِ ... قَالَ : قُلْتُ لِسِمَاكٍ : مَا ضَلِيعُ الْفَمِ ؟ قَالَ : عَظِيمُ الْفَمِ » . ( رواه مسلم ).“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন প্রশস্ত মুখের অধিকারী ... বর্ণনাকারী শু‘বা র. বলেন: আমি সিমাক র. কে জিজ্ঞাসা করলাম: প্রশস্ত মুখ কেমন? তিনি বললেন: বড় মুখ।” [ মুসলিম, আস-সহীহ: ফাযায়েল / ২৭, হাদিস নং- ২৩৩৯, ৪ / ১৮২০; তিরমিযী, মানকিব / ১২, হাদিস নং- ৩৬৪৭, ৫ / ৬০৩]। তারা বলে: আরবগণ এর দ্বারা – অর্থাৎ ‘প্রশস্ত মুখ’ ( ضَلِيعُ الْفَمِ ) দ্বারা প্রশংসা করে এবং ‘ক্ষুদ্রাকার মুখ’ ( صغير الفم ) বলে নিন্দা করে। আর সা‘লাবা " ضَلِيعُ الْفَمِ "এর ব্যাখ্যায় " واسع الفم "(প্রশস্ত মুখ) বলেছেন। আর ‘শামির’ [ইবন হামদুইয়াহ্] " ضَلِيعُ الْفَمِ "এর ব্যাখ্যায় " عظيم الأسنان "(বড় দাঁত) বলেছেন। [ইমাম নববীর ব্যাখ্যাসহ ‘সহীহ মুসলিম’: ১৫ / ৯৩]।সা‘ঈদ ইবনুল মুসায়্যিব র. থেকে বর্ণিত, তিনি আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের গুণাবলী বর্ণনা করতে শুনেছেন, তিনি বলেছেন: « كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أسود اللحية , حسن الثغر» . ( رواه البيهقي ).“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন কৃষ্ণ কালো দাঁড়ি ও সুন্দর মুখের অধিকারী।” [বায়হাকী, দালায়েলুন নবুয়াত ( دلائل النبوة ): পৃ. ২১৭]। আর পূর্বোক্ত আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদিসের মধ্যে আছে: « أهدب العينين , حسن الفم » . [ তিনি ছিলেন লম্বা ভ্রূ বিশিষ্ট চোখ ও সুন্দর মুখের অধিকারী ]।]; প্রশস্ত দাঁত, সামনের দাঁতগুলো উজ্জ্বল চকচকে [আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: « كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَفْلَجَ الثَّنِيَّتَيْنِ , إِذَا تَكَلَّمَ رُئِيَ كَالنُّورِ يَخْرُجُ مِنْ بَيْنِ ثَنَايَاهُ » . “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন (সামনে) প্রশস্ত দুই দাঁতের অধিকারী; যখন তিনি কথা বলতেন, তখন তাঁর দাঁতের মধ্য থেকে জ্যোতি বের হতে দেখা যায়।” [বাগবী, শরহুস সুন্নাহ ( شرح السنة ): ফাদায়েল / সিফাতুন্নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম, হাদিস নং- ৩৬৪৪, ১৩ / ২২৩; যে পদ্ধতিতে তিরমিযী র. ‘শামায়েল’ এর মধ্যে বর্ণনা করেছেন।হাদীসে বর্ণিত, أفلج শব্দটি فلج থেকে উদ্ভূত। তার অর্থ, দু’ পায়ের মধ্যে দুরত্ব থাকা, ও দু’ দাতের মধ্যে ফাঁক থাকা, এটাকেই বলা হয়, أفلج الأسنان আল-কামূসুল মুহীত, পৃ. ২৫৮।]; ঘন সুন্দর দাঁড়ি [পূর্বোক্ত জাবির ইবন সামুরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসের মধ্যে আছে: « كَانَ كثير شعر اللحية » . (তিনি ছিলেন অধিক চুল বিশিষ্ট ঘন দাঁড়ির অধিকারী)।আর আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসের মধ্যে আছে: « كان رسول الله صلى الله عليه و سلم ليس بالطويل ولا بالقصير ضخم الرأس واللحية ... » . ( رواه أحمد ) .“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম লম্বাও ছিলেন না, আবার বেঁটেও ছিলেন না (তিনি মধ্যম আকৃতির ছিলেন); আর তিনি ছিলেন বড় মাথা ও দাঁড়ির অধিকারী।” [ ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ: ১ / ৯৬; হাকেম, আল-মুসতাদরাক: ২ / ৬০৬]।আর উম্মু মা‘বাদের হাদিসের মধ্যে আছে: « و في لحيته كثاثة » (তাঁর দাঁড়ির মধ্যে ঘনত্ব রয়েছে)।আর পূর্বোক্ত আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুক কর্তৃক বর্ণিত হাদিসের মধ্যে রয়েছে: « كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أسود اللحية » . ( رواه البيهقي ).“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন কৃষ্ণ কালো দাঁড়ির অধিকারী।” [ বায়হাকী, দালায়েলুন নবুয়াত ( دلائل النبوة ): পৃ. ২১৭]।]।
আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মারা যান, তখন তাঁর মাথা ও দাঁড়ির মধ্যে বিশটি চুলও সাদা ছিল না; আর তাও কিছু সাদা ছিল তাঁর নিম্ন ঠোঁটের নীচের ছোট দাঁড়িতে, আর কিছু ছিল কানপট্টিতে এবং মাথার মধ্যে ছিল সামান্য কয়টি [আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: «كان ربعة من القوم ليس بالطويل ولا بالقصير , أزهر اللون ليس بأبيض أمهق ولا آدم , ليس بجعد قطط ولا سبط , رجل أنزل عليه وهو ابن أربعين , فلبث بمكة عشر سنين ينزل عليه , وبالمدينة عشر سنين , وقبض وليس في رأسه ولحيته عشرون شعرة بيضاء . قال ربيعة فرأيت شعرا من شعره فإذا هو أحمر , فسألت فقيل : احمر من الطيب » . ( رواه البخاري ).“তিনি ছিলেন সম্প্রদায়ের মধ্যে মধ্যম আকৃতির মানুষ; তিনি বেশি লম্বাও ছিলেন না, আবার বেঁটেও ছিলেন না; তিনি ছিলেন ফর্সা উজ্জ্বল বর্ণের; তিনি ধবধবে সাদা ছিলেন না, ছিলেন না খুব ধূসর বর্ণ। তাঁর চুল অতিরিক্ত কোঁকড়ানো ছিল না, আবার একেবারে সোজাও ছিল না। বরং কিছুটা কোকড়ানো। চল্লিশ বছর বয়সে তাঁর উপর ওহী নাযিল হয়, অতঃপর তিনি ওহী নাযিল অবস্থায় মক্কাতে দশ বছর এবং মদীনাতে দশ বছর অবস্থান করেন; আর তাঁর ইন্তিকাল হয় এমন অবস্থায় যে, তাঁর মাথায় ও দাঁড়িতে বিশটি চুলও সাদা ছিল না। রবী‘আহ্ রা. বলেন: অতঃপর আমি তাঁর চুলের মধ্য থেকে একটি লাল চুল দেখতে পেলাম, তারপর তাঁকে সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, অতঃপর জবাবে বলা হল: সুগন্ধি ব্যবহারের কারণে তা লাল হয়েছে।” [ বুখারী, আস-সহীহ: মানাকিব / ২৩, ৪ /১৬৪]। আর ইমাম মুসলিম র. এর এক বর্ণনায় আছে, তিনি (আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন: « وَلَمْ يَخْتَضِبْ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّمَا كَانَ الْبَيَاضُ فِى عَنْفَقَتِهِ , وَفِى الصُّدْغَيْنِ , وَفِى الرَّأْسِ نَبْذٌ » . ( رواه مسلم ).“আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কলপ দেননি। কিছু সাদা ছিল তাঁর নিম্ন ঠোঁটের নীচের ছোট দাঁড়িতে, আর কিছু ছিল কানপট্টিতে এবং মাথার মধ্যে ছিল কিছু।” [ মুসলিম, আস-সহীহ: ফাযায়েল / ২৯, হাদিস নং- ২৩৪১, ৪ / ১৮২১]।]; তাঁর মাথার চুল দুই কানের লতি থেকে দুই কাঁধের মাঝামাঝি পৌঁছে যেত [আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: «كان يضرب شعر رأس النبي صلى الله عليه و سلم منكبيه » . ( رواه البخاري و مسلم )“নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাথার চুল দুই কাঁধের মাঝামাঝি ঝুলে থাকত।” [ বুখারী, আস-সহীহ: লিবাস (পোষাক-পরিচ্ছদ) / ৬৮, ৭ / ৫৮; মুসলিম, আস-সহীহ: ফাযায়েল / ২৬, হাদিস নং- ২৩৩৮, ৪ / ১৮১৯]। আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: « كَانَ شَعَرُ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِلَى أَنْصَافِ أُذُنَيْهِ » . ( رواه مسلم ).“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কেশ মুবারক কানের অর্ধেক পর্যন্ত ঝুলানো ছিল।” [মুসলিম, আস-সহীহ: ফাযায়েল / ২৬, হাদিস নং- ২৩৩৯, ৪ / ১৮১৯]। বারা ইবন ‘আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: « كان النبي صلى الله عليه و سلم مربوعا , بعيد ما بين المنكبين له شعر يبلغ شحمة أذنيه » . ( رواه البخاري ) .“নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মধ্যম আকৃতির পুরুষ; তাঁর উভয় কাঁধের দূরত্ব ছিল অল্প বেশি; তাঁর মাথার চুল দুই কানের লতি পর্যন্ত পৌঁছাতো।” [বুখারী, আস-সহীহ: মানাকিব / ২৩, ৪ /১৬৫]।আনাস রা. এর কথা- “তাঁর চুল দুই কানের লতি পর্যন্ত পৌঁছত” এবং তাঁর কথা “চুল দুই কাঁধের মাঝামাঝি ঝুলে থাকত” পরস্পর বিপরীত ও বিরোধপূর্ণ এবং তার জবাবে বলা হয়, তাঁর অধিকাংশ চুল ছিল তাঁর কানের লতি পর্যন্ত বিস্তৃত, আর তার থেকে যা প্রলম্বিত হয়, তা কাঁধ পর্যন্ত সংযুক্ত; অথবা তা দুই অবস্থাকেই শামিল করে। [ ফতহুল বারী: ৬ / ৫৭৩ ]।]; তিনি (কপালের উপর চুল) ঝুলিয়ে রাখতেন, অতঃপর তিনি তাকে সিঁথি কাটার দিকে পরিবর্তন করেন [আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: «كَانَ أَهْلُ الْكِتَابِ يَسْدُلُونَ أَشْعَارَهُمْ , وَكَانَ الْمُشْرِكُونَ يَفْرُقُونَ رُءُوسَهُمْ , وَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُحِبُّ مُوَافَقَةَ أَهْلِ الْكِتَابِ فِيمَا لَمْ يُؤْمَرْ بِهِ , فَسَدَلَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم نَاصِيَتَهُ , ثُمَّ فَرَقَ بَعْدُ » . ( رواه مسلم ).“আহলে কিতাবরা তাদের কেশ ঝুলিয়ে রাখত, আর মুশরিকরা সিঁথি কাটত। যে বিষযে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি কোনো আদেশ আসতো না, সে বিষয়ে তিনি আহলে কিতাবদের অনুসরণ করা পছন্দ করতেন; তাই তিনি তাঁর কেশ মুবারক ঝুলিয়ে রাখেন; কিন্তু পরবর্তী সময় তিনি সিঁথি কাটতেন।” [মুসলিম, আস-সহীহ: ফাযায়েল / ২৪, হাদিস নং- ২৩৩৬, ৪ / ১৮১৭ – ১৮১৮ ]।কাযী ‘আইয়ায বলেন: " سدل الشعر "অর্থ হল: চুল ঝুলিয়ে দেওয়া; তিনি বলেন: আলেমগণের মতে এখানে এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল, কপালের উপর চুল ঝুলিয়ে দেওয়া এবং তাকে কপালের চুলের মত করে রেখে দেওয়া; বলা হয়: " سدل شعره و ثوبه إذا أرسله و لم يضم جوانبه " (তার চুল ও কাপড় ঝুলে গেছে, যখন সে তা ঝুলিয়ে দিয়েছে এবং তার প্রান্তসমূহ মিলিয়ে রাখে নি)। আর فَرق মানে হল: চুলের এক অংশকে অপর অংশ থেকে পৃথক করা, অর্থাৎ সিঁথি কাটা; আলেমগণ বলেন: সিঁথি কাটা সুন্নাত, কেননা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকেই প্রত্যাবর্তন করেছেন; তারা বলেন: পরিষ্কার কথা হল, তিনি ওহীর কারণেই তার (সিঁথি কাটার) দিকে প্রত্যাবর্তন করেছেন; এর দলিল হল তাঁর ( ইবনু ‘আব্বাস রা এর) কথা: « أنه كَانَ يوافق أَهْلِ الْكِتَابِ فِيمَا لَمْ يُؤْمَرْ بِهِ » . [তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এমন বিষয়ে আহলে কিতাবদের অনুসরণ করতেন, যে বিষয়ে তাঁর প্রতি কোন আদেশ আসতো না]।]; ফলে তিনি মাথার দুই পাশের মাঝ বরাবর সিঁথি কাটতেন।
এই হল নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সৃষ্টিগত বৈশিষ্ট্যাবলী, যা পূরুষ ব্যক্তিদের পরিপূর্ণ গুণাবলীর সমাহার, আমি সেসব গুণাবলী আপনাদের উদ্দেশ্যে বর্ণনা করেছি, যাতে তা আপনাদের জন্য নিদর্শন বা চিহ্ন হতে পারে ঐ সময়ে, যখন আপনারা তাঁকে স্বপ্নের মধ্যে দেখতে পাবেন; কারণ, যে ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁর ব্যাপারে প্রমাণিত বৈশিষ্ট্য বা গুণাবলীর আলোকে স্বপ্নের মধ্যে দেখতে পাবে, সে ব্যক্তি সত্যি সত্যি তাঁকে দেখেছে; কেননা শয়তান তাঁর রূপ ধারণ করতে পারে না [আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: « من رآني في المنام فقد رآني , فإن الشيطان لا يتخيل بي , ورؤيا المؤمن جزء من ستة وأربعين جزءا من النبوة » . ( رواه البخاري ).“যে আমাকে স্বপ্নযোগে দেখল, সে আমাকেই দেখল। কারণ, শয়তান আমার আকৃতি ধারণ করতে পারে না। আর মুমিনের স্বপ্ন নবুয়তের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগ।” [ বুখারী, আস-সহীহ: তা‘বীর (স্বপ্নের ব্যাখ্যা প্রদান) / ১০, ৮ / ৭১ – ৭২]। গ্রন্থের তাহকীককারী বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের (সৃষ্টিগত) বৈশিষ্ট্যসমূহের অন্যতম হচ্ছে, ১. নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কেশ মুবারক:কাতাদা র. বলেন: « قُلْتُ لأَنَسِ بْنِ مَالِكٍ كَيْفَ كَانَ شَعَرُ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ؟ قَالَ : « كَانَ شَعَرًا رَجِلاً لَيْسَ بِالْجَعْدِ وَلاَ السَّبِطِ بَيْنَ أُذُنَيْهِ وَعَاتِقِهِ» . ( رواه مسلم ) . “আমি আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কেশ মুবারক কেমন ছিল? জবাবে তিনি বললেন: মধ্যম প্রকৃতির ছিল; খুব কোঁকড়ানো ছিল না, আবার একেবারে সোজাও ছিল না; তা ছিল দুই কাঁধ ও দুই কানের মাঝ বরাবর।” [মুসলিম, আস-সহীহ: ফাযায়েল / ২৬, হাদিস নং- ২৩৩৮, ৪ / ১৮১৯ ]। " رَجِلا "অর্থ: কোঁকড়ানো ও সোজা অবস্থার মাঝামাঝি অবস্থা। — [ ইমাম নববীর ব্যাখ্যাসহ সহীহ মুসলিম: ১৫ / ৯২ ]। " الجعد "অর্থ: বস্তুর মধ্যে বক্রতা বা কুঞ্চিত হওয়া; বলা হয়: " شعر جعد "(কোঁকড়ানো চুল); আর جعد শব্দটি سبط (সোজা) শব্দের বিপরীত। — দেখুন: আল-কামূসুল মুহীত, মূল অক্ষর: ( جعد ), পৃ. ৩৪৮। " السبط "অর্থ: সোজা হওয়া; আর سبط শব্দটি جعد (বক্রতা) শব্দের বিপরীত। — দেখুন: আল-কামূসুল মুহীত, মূল অক্ষর: ( سبط ), পৃ. ৮৬৩ ২. নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সুরভীময় ও কোমল:আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: « مَا شَمِمْتُ عَنْبَرًا قَطُّ , وَلاَ مِسْكًا , وَلاَ شَيْئًا أَطْيَبَ مِنْ رِيحِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم , وَلاَ مَسِسْتُ شَيْئًا قَطُّ دِيبَاجًا وَلاَ حَرِيرًا أَلْيَنَ مَسًّا مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم » . ( رواه مسلم ) . “আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের (মুবারক শরীরের) চেয়ে সুগন্ধিময় কোনো আম্বর, মিশক বা অন্য কোনো বস্তুর ঘ্রাণ গ্রহণ করি নি এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের (মুবারক শরীরের) চেয়ে কোমল কোনো রেশম বা মোলায়েম কাপড় আমি স্পর্শ করি নি।” [মুসলিম, আস-সহীহ: ফাযায়েল / ২১, হাদিস নং- ২৩৩০, ৪ / ১৮১৪ - ১৮১৫]। ৩. নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘামের সুগন্ধি এবং তার দ্বারা বরকত লাভ:আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: « دَخَلَ عَلَيْنَا النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ عِنْدَنَا فَعَرِقَ وَجَاءَتْ أُمِّى بِقَارُورَةٍ فَجَعَلَتْ تَسْلُتُ الْعَرَقَ فِيهَا فَاسْتَيْقَظَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ : « يَا أُمَّ سُلَيْمٍ ! مَا هَذَا الَّذِى تَصْنَعِينَ ؟ » . قَالَتْ هَذَا عَرَقُكَ نَجْعَلُهُ فِى طِيبِنَا وَهُوَ مِنْ أَطْيَبِ الطِّيبِ » . ( رواه مسلم ) . “নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের ঘরে আসলেন এবং বিশ্রাম নিলেন; অতঃপর তিনি ঘামছিলেন, আর আমার মা একটি শিশি নিয়ে তা মুছে মুছে তাতে ভরতে লাগলেন; অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম জেগে গেলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন: হে উম্মে সুলাইম! একি করছ? জবাবে তিনি বললেন: এ আপনার ঘাম, যা আমরা সুগন্ধির সাথে মিশ্রিত করি, আর এ তো সব সুগন্ধির সেরা সুগন্ধি।” [মুসলিম, আস-সহীহ: ফাযায়েল / ২২, হাদিস নং- ২৩৩১, ৪ / ১৮১৫]। আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে আরও বর্ণিত আছে, তিনি বলেন: « كَانَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم يَدْخُلُ بَيْتَ أُمِّ سُلَيْمٍ فَيَنَامُ عَلَى فِرَاشِهَا , وَلَيْسَتْ فِيهِ , قَالَ : فَجَاءَ ذَاتَ يَوْمٍ فَنَامَ عَلَى فِرَاشِهَا , فَأُتِيَتْ , فَقِيلَ لَهَا : هَذَا النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم نَامَ فِى بَيْتِكِ عَلَى فِرَاشِكِ , قَالَ : فَجَاءَتْ وَقَدْ عَرِقَ , وَاسْتَنْقَعَ عَرَقُهُ عَلَى قِطْعَةِ أَدِيمٍ عَلَى الْفِرَاشِ , فَفَتَحَتْ عَتِيدَتَهَا فَجَعَلَتْ تُنَشِّفُ ذَلِكَ الْعَرَقَ فَتَعْصِرُهُ فِى قَوَارِيرِهَا , فَفَزِعَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم , فَقَالَ : « مَا تَصْنَعِينَ يَا أُمَّ سُلَيْمٍ ! ؟» . فَقَالَتْ يَا رَسُولَ اللَّهِ نَرْجُو بَرَكَتَهُ لِصِبْيَانِنَا , قَالَ : « أَصَبْتِ » . ( رواه مسلم ) . “নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে সুলাইমের ঘরে যেতেন এবং তার বিছানায় ঘুমাতেন, এমতাবস্থায় যে উম্মে সুলাইম তখন ঘরে থাকতেন না। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, একদিন তিনি এলেন এবং তার বিছানায় ঘুমালেন। অতঃপর তিনি (উম্মে সুলাইম) এলে তাকে বলা হল, ইনি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তোমার ঘরে তোমার বিছানায় ঘুমিয়ে আছেন। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, উম্মে সুলাইম ঘরে এলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন ঘেমেছেন, আর তাঁর ঘাম চামড়ার বিছানার উপর জমেছে। উম্মে সুলাইম তার কৌটা খুললেন এবং সে ঘাম মুছে মুছে শিশিতে ভরতে লাগলেন। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সন্ত্রস্ত হয়ে ঘুম থেকে উঠে তাকে বললেন, তুমি কী করছ, হে উম্মে সুলাইম!? তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের শিশুদের বরকতের উদ্দেশ্যে নিচ্ছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: ভাল করেছ।” [মুসলিম, আস-সহীহ: ফাযায়েল / ২২, হাদিস নং- ২৩৩২, ৪ / ১৮১৫ - ১৮১৬]। ৪. নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুচকি হাসি:সকল হাদিস থেকে এই কথা পরিষ্কার যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ অবস্থায় মুচকি হাসি হাসতেন, তবে কখনও কখনও তিনি এর উপর বৃদ্ধি করে সাধারণভাবে হাসতেন।আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন: « ما رأيت النبي صلى الله عليه و سلم مستجمعا قط ضاحكا حتى أرى منه لهواته , إنما كان يتبسم » . ( رواه البخاري ) . “আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মুখভরে হাসতে দেখি নি যে তাঁর আলা জিহ্বা দেখা যাবে; তিনি তো শুধু মুচকি হাসতেন।” [বুখারী, আস-সহীহ: আদব / ৬৮, ৭ / ৯৪ - ৯৫]। ৫. নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথাবার্তা:আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন: « إن رسول الله صلى الله عليه و سلم لم يكن يسرد الحديث كسردكم » . ( رواه البخاري ) .“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের কথা বলার মত করে অনবরত কথা বলতেন না।” [বুখারী, আস-সহীহ: মানাকিব / ২৩, ৪ / ১৬৪; তিরমিযী, আস-সুনান: মানাকিব / ৯, হাদিস নং- ৩৬৩৯, ৫ / ৬০০]। আর তিরমিযীর বর্ণনার মধ্যে অতিরিক্ত আছে: « لكنه كان يتكلم بكلام بينه فصل , يحفظه من جلس إليه » .“বরং তিনি সুস্পষ্ট করে আলাদা আলাদাভাবে কথা উচ্চারণ করতেন; ফলে যারা তাঁর কাছে বসা থাকত, তারা তা সংরক্ষণ করতে পারত।”৬. নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের (হাঁটা) পথচলা:পূর্বোক্ত আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদিসের মধ্যে আছে: « إِذا مشى تَكفَّا تكفِّيا . كأنما انحطّ من صبب . لم أر قبله ولا بعده مثله صلى الله عليه وسلم » . ( رواه الترمذي ) .“নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাঁটতেন, তখন সামনের দিকে ঝুঁকে চলতেন, মনে হত যেন তিনি যমীনের নীচু অংশে অবতরণ করছেন। আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের পূর্বে ও পরে তাঁর মত (এত অধিক সুন্দর) আর কাউকে দেখি নি।” [ তিরমিযী, আস-সুনান: মানাকিব / ৮, হাদিস নং- ৩৬৩৭; ৫ / ৫৯৮]।আর আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন: « ما رأيت شيئا أحسن من رسول الله صلى الله عليه و سلم , كأن الشمس تجري في وجهه , ما رأيت أحدا أسرع في مشيه من رسول الله صلى الله عليه و سلم , كأنما الأرض تطوى له , إنا لنجهد أنفسنا , وإنه لغير مكترث» . ( رواه الترمذي ) .“আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সুন্দর কিছু দেখি নি; সূর্য যেন তাঁর চেহারায় ছিল প্রবাহিত। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপেক্ষা দ্রুত হাঁটতে আমি কাউকে দেখি নি, মনে হত যেন তাঁর জন্য যমীনকে সংকুচিত করে দেয়া হয়েছে; আমরা তো খুবই চেষ্টা করতাম (তার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে); কিন্তু তিনি ছিলেন একেবারেই নিঃস্পৃহ।” [তিরমিযী, আস-সুনান: মানাকিব / ১২, হাদিস নং- ৩৬৪৮; ৫ / ৬০৪; আর তিনি বলেন: এই হাদিসটি গরীব হাদিস]।৭. মোহরে নবুয়তের বর্ণনা ও নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেহে তার অবস্থান:সায়েব ইবন ইয়াযিদ র. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: « ذهبت بي خالتي إلى النبي صلى الله عليه و سلم فقالت : يا رسول الله ! إن ابن أختي وجع , فمسح رأسي , ودعا لي بالبركة , ثم توضأ فشربت من وضوئه , ثم قمت خلف ظهره فنظرت إلى خاتم النبوة بين كتفيه , مثل زر الحجلة » . ( رواه البخاري و مسلم ) . “আমার খালা আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে নিয়ে গেলেন, তারপর তিনি বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! এটি আমার বোনের ছেলে, সে অসুস্থ; তখন তিনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন এবং আমার জন্য বরকতের দো‘আ করলেন; অতঃপর উযু করলেন, আর আমি তাঁর উযুর পানি থেকে পান করলাম; অতঃপর তাঁর পেছনে দাঁড়ালাম এবং তাঁর দুই কাঁধের মাঝখানে হাজেলার বোতামের মত মোহরে নবুয়ত দেখতে পেলাম।” [ বুখারী, আস-সহীহ: মানাকিব / ২২, ৪ / ১৬৩; মুসলিম, আস-সহীহ: ফাযায়েল / ৩০, হাদিস নং- ২৩৪৫, ৪ / ১৮২৩ ]। " الحجلة ": ‘হাজেলা’ হল তাঁবুর মত ঘর বিশেষ, যার কতগুলো বড় বড় বোতাম রয়েছে এবং তা খোলামেলা। - [ ইমাম নববীর ব্যাখ্যাসহ সহীহ মুসলিম: ১৫ / ৯৮ ]।আর ‘আসেম র. থেকে বর্ণিত, তিনি আবদুল্লাহ ইবন সারজিস রা. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: « رَأَيْتُ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم وَأَكَلْتُ مَعَهُ خُبْزًا وَلَحْمًا , أَوْ قَالَ : ثَرِيدًا , قَالَ : فَقُلْتُ لَهُ : أَسْتَغْفَرَ لَكَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم ؟ قَالَ نَعَمْ , وَلَكَ , ثُمَّ تَلاَ هَذِهِ الآيَةَ : ( وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ ) . قَالَ ثُمَّ دُرْتُ خَلْفَهُ فَنَظَرْتُ إِلَى خَاتَمِ النُّبُوَّةِ بَيْنَ كَتِفَيْهِ عِنْدَ نَاغِضِ كَتِفِهِ الْيُسْرَى جُمْعًا عَلَيْهِ خِيلاَنٌ كَأَمْثَالِ الثَّآلِيلِ » . ( رواه مسلم ) . “আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি এবং তাঁর সাথে গোশত ও রুটি খেয়েছি, অথবা বলেছেন ‘সারিদ’ (খেয়েছি)। আসেম বলেন: অতঃপর আমি তাকে বললাম: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন? তিনি বললেন: হ্যাঁ, তোমার জন্যও। অতঃপর তিনি এই আয়াতটি তিলাওয়াত করেন: ( وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ ) [ ক্ষমা প্রার্থনা কর তোমার পাপের জন্য এবং মুমিন পুরুষ ও নারীদের জন্য]।”আবদুল্লাহ বললেন: তারপর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে গেলাম এবং মোহরে নবুওয়ত দেখলাম তাঁর দুই কাঁধের মাঝে বাম পাশের বাহুর হাড়ের কাছে অংগুলির মাথা একত্রিত করলে যেমন হয় অনেকটা তেমন, যাতে তিলক আছে, মনে হয় যেন কতগুলো বিচি এর সমষ্টি।” [ মুসলিম, আস-সহীহ: ফাযায়েল / ৩০, হাদিস নং- ২৩৪৬, ৪ / ১৮২৩ – ১৮২৪ ]। ناغض : অধিকাংশ আলেম বলেন, " النغض " এবং " الناغض "অর্থ হল: কাঁধের সর্বোচ্চ ভাগ; কেউ কেউ বলেন: তা হল কাঁধের প্রান্তে অবস্থিত সূক্ষ্ম হাড়; আবার কেউ কেউ বলেন: নড়াচড়ার সময় তার থেকে যা প্রকাশ হয়। - [ ইমাম নববীর ব্যাখ্যাসহ সহীহ মুসলিম: ১৫ / ৯৮ ]। الخِيلان : বহুবচন, একবচনে " خال ", অর্থ হল: শরীরের মধ্যে তিলক বা মাশা। - [ ইমাম নববীর ব্যাখ্যাসহ সহীহ মুসলিম: ১৫ / ৯৯ ]।কুরতবী বলেন: বিশুদ্ধ হাদিসসমূহের ঐক্যবদ্ধ রায় হল, মোহরে নবুয়ত ছিল তাঁর বাম কাঁধের কাছে স্পষ্ট লাল কিছু, যার পরিমাণ ছোট করে বুঝালে কবুতরের ডিমের পরিমাণ। আর বড় করে বুঝালে তখন তা হাতের আঙ্গুলের মাথা একত্রিত করলে যতটুকু হয় ততটুকু পরিমাণ হত। আল্লাহই অধিক ভাল জানেন। [ফতহুল বারী: ৬ / ৫৬৩ ]।৮. নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কপাল মুবারক:হিন্দ ইবন আবি হালা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদিসের মধ্যে এসেছে: « كان رسول الله صلى الله عليه وسلم .... أزهر اللون ، واسع الجبين ، أزج الحواجب سوابغ فى غير قرن , بينهما عرق يدره الغضب ، أقنى العرنين , له نور يعلوه , يحسبه من لم يتأمله أشم ، كث اللحية , سهل الخدين ... » .“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন ... অতি প্রাঞ্জল বর্ণের অধিকারী; ললাটের উভয় পার্শ্ব ছিল প্রশস্ততর; তাঁর ভ্রূযুগল বিমুক্ত বৃত্তাংশের ন্যায় বাঁকা, খুব সূক্ষ্ম ঘন চুল বিশিষ্ট ছিল; আর ঐ ভ্রূযুগলের মাঝে এমন একটি শিরা ছিল, যা রাগের সময় (অধিক রক্ত সঞ্চারিত হওয়ার ফলে) ভেসে উঠত (প্রকাশ পেত); তাঁর নাসিকা সুদীর্ঘ, অগ্রভাগ সরু ও মধ্যভাগ ন্যূজ্ব ছিল; তাঁর নাসিকায় এমন নূর (জ্যোতি) ছিল, যা নাকের উপর বিকীর্ণ হত; কেউ গভীর মনোযোগ সহকারে তাঁর নাকের প্রতি না তাকালে অত্যুন্নত নাসা মনে করত; তাঁর দাঁড়ি ছিল বিস্তীর্ণ ও খুব ঘন; গণ্ডদ্বয় ছিল মসৃণ; ...।” ৯. নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাথা মুবারক:পূর্বে উল্লেখিত আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসের মধ্যে আছে, তিনি বলেছেন: « كان رسول الله صلى الله عليه و سلم ليس بالطويل ولا بالقصير ضخم الرأس واللحية ... » . ( رواه أحمد ) .“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম লম্বাও ছিলেন না, আবার বেঁটেও ছিলেন না (তিনি মধ্যম আকৃতির ছিলেন); আর তিনি ছিলেন বড় মাথা ও দাঁড়ির অধিকারী।” [ ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ: ১ / ৯৬; হাকেম, আল-মুসতাদরাক: ২ / ৬০৬]।১০. নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কণ্ঠস্বর:উম্মে মা‘বাদ রা. থেকে বর্ণিত হাদিসের মধ্যে আছে, তিনি বলেছেন: « في صوته صهل » . “তাঁর কণ্ঠস্বরের মধ্যে ছিল তীক্ষ্নতা ও বলিষ্ঠতা।”নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের গুচ্ছ গুণাবলীহুবাইশ ইবন খালিদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: « أن رسول الله صلى الله عليه وسلم حين خرج من مكة خرج منها مهاجرا إلى المدينة , هو وأبو بكر ومولى أبي بكر عامر بن فهيرة ، ودليلهما عبد الله بن أريقط الليثي , فمروا على خيمتي أم معبد الخزاعية , وكانت برزة جلدة تحتبي وتجلس بفناء الخيمة , ثم تسقي وتطعم ، فسألوها لحما وتمرا ليشتروه منها , فلم يصيبوا عندها شيئا من ذلك ، وكان القوم مرملين مسنتين فنظر رسول الله صلى الله عليه وسلم إلى شاة في كسر الخيمة ، فقال : « ما هذه الشاة يا أم معبد ؟ » قالت : شاة خلفها الجهد من الغنم قال : « هل بها من لبن ؟ » قالت : هي أجهد من ذلك قال : « أتأذنين لي أن أحلبها؟ » قالت : بأبي أنت وأمي نعم إن رأيت بها حلبا فاحلب ، فدعا بها رسول الله صلى الله عليه وسلم فمسح بيده ضرعها , وسمى الله عز وجل , ودعا لها في شاتها , فتفاجت عليه ، ودرت , واجترت , ودعا بإناء يربض الرهط ، فحلب فيه ثجا حتى علاه البهاء , ثم سقاها حتى رويت ، وسقى أصحابه حتى رووا ، ثم شرب آخرهم , ثم أراضوا , ثم حلب فيه الثانية على هدة حتى ملأ الإناء , ثم غادره عندها , فبايعها وارتحلوا عنها ، فقلما لبثت حتى جاءها زوجها أبو معبد يسوق أعنزا عجافا , يتساوكن هزلا مخهن قليل ، فلما رأى أبو معبد اللبن عجب , وقال : من أين لك هذا يا أم معبد والشاة عازب حيائل ولا حلوب في البيت ؟ قالت : لا والله إلا أنه مر بنا رجل مبارك من حاله كذا وكذا , قال : صفيه لي يا أم معبد , قالت : رأيت رجلا ظاهر الوضأة ، أبلج الوجه ، حسن الخلق , لم تعبه نحلة , ولم تزر به صقلة ، وسيم قصيم ، في عينيه دعج ، وفي أشفاره وطف ، وفي صوته صهل ، وفي عنقه سطع ، وفي لحيته كثاثة ، أزج أقرن ، إن صمت فعليه الوقار ، وإن تكلم سماه وعلاه البهاء , أجمل الناس وأبهاه من بعيد و أجلاه وأحسنه من قريب , حلو المنطق ، فصل لا نزر ولا هزر ، كأن منطقه خرزات نظم يتحدرن ، ربعة لا يأس من طول , ولا تقتحمه عين من قصر ، غصن بين غصنين ، وهو أنظر الثلاثة منظرا ، وأحسنهم قدرا ، له رفقاء يحفون به ، إن قال أنصتوا لقوله ، وإن أمر بادروا إلى أمره ، محفود محشود , لا عابس ولا مفند , قال أبو معبد : هو والله صاحب قريش الذي ذكر لنا من أمره ما ذكره بمكة ، ولقد هممت أن أصحبه ، ولأفعلن إن وجدت إلى ذلك سبيلا ، فأصبح صوت بمكة عاليا يسمعون الصوت ، ولا يدرون من صاحبه , وهو يقول : جزى الله رب الناس خير جزائه * رفيقين قالا خيمتي أم معبدهما نزلاها بالهدى واهتدت به * فقد فاز من أمسى رفيق محمدفيا لقصي ما زوى الله عنكم * به من فعال لا تجازى وسؤددليهن أبا بكر سعادة جـــــده * بصحبة من يسعد الله يسعدليهن بني كعب مقام فتاتهــم * ومقعدها للمؤمنين بمرصدسلوا أختكم عن شاتها وإنائها * فإنكم إن تسألوا الشاة تشهددعاها بشاة حائل فتحلبت * عليه صريحا ضرة الشاة مزبدفغادرها رهنا لديها لحالب * يرددها في مصدر ثم مورد » . ( رواه الحاكم ).“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যখন মক্কা থেকে বের করে দেয়া হয়, তখন হিজরতকারী হিসেবে তিনি, আবূ বকর রা. এবং আবূ বকর রা. এর গোলাম আমের ইবন ফুহায়রা ও তাঁদের উভয়ের পথপ্রদর্শক আবদুল্লাহ ইবন ওরাইকিত আল-লাইসী মদীনার উদ্দেশ্যে বের হয়ে পড়েন; তারা উম্মু মা‘বাদ আল-খুযা‘য়ীয়া’র তাঁবুর পাশ দিয়ে পথ অতিক্রম করেন; আর সে ছিল পরিণত বয়সী এক নারী, তাঁবুর আঙ্গিনায় কাপড় জড়িয়ে বসে থাকত; পানি পান করাত ও খাবার দিত। অতঃপর তাঁরা তার নিকট থেকে গোশত ও খেজুর ক্রয় করতে চাইল, কিন্তু তাঁরা তার নিকট এই ধরনের কিছুই পেল না; কারণ, তখন তারা (উম্মে মা‘বাদ এর গোষ্ঠী) ছিল রসদশূন্য দুর্ভিক্ষ কবলিত; অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁবুর একপাশে একটি ছাগল দেখতে পেলেন এবং বললেন: হে উম্মু মা‘বাদ! এই ছাগলটির অবস্থা কী? সে বলল: ছাগলের পাল থেকে মূলত দুর্বলতাই এই ছাগলটিকে পিছনে ফেলে দিয়েছে; তিনি বললেন: তার মধ্যে দুধ আছে কি? সে বলল: এই ব্যাপারে ছাগলটি খুবই দুর্বল; (অর্থাৎ এর অবস্থা দুধ দেওয়ার চেয়েও খারাপ) তিনি বললেন: তুমি কি আমাকে তা দোহন করার অনুমতি দেবে? সে বলল: আমার পিতা ও মাতা আপনার জন্য কুরবান হউক! আপনি যদি তা দোহন করতে চান, তাহলে তা দোহন করুন; অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাগলটিকে ডেকে আনালেন, তারপর তিনি তার ওলানে তাঁর হাত বুলালেন এবং আল্লাহ তা‘আলার নাম বললেন; আর তার (উম্মু মা‘বাদের) জন্য তার ছাগলের ব্যাপারে দো‘আ করলেন; অতঃপর বকরীটি দুধ দোহনের সুবিধার্থে তার দু’পায়ের মাঝখানে ফাঁক করল, তার দুধ অধিক হারে বৃদ্ধি পেল এবং সে জাবর কাটতে লাগল; তারপর তিনি একটি পাত্র নিয়ে আসার জন্য ডাকলেন যাতে কাফেলার সকলকে তৃপ্তি সহকারে দুধ পান করাতে পারেন, তারপর তাতে দুধ দোহন করে দুধের প্রবাহ সৃষ্টি করলেন, এমনকি তার উপর চকচকে ফেনা উঠল; অতঃপর তিনি উম্মু মা‘বাদকে তৃপ্তি সহকারে দুধ পান করালেন, আরও দুধ পান করালেন তাঁর সাথীদেরকে এবং তারাও পরিতৃপ্ত হলেন; অতঃপর তাদের বাকীরা দুধ পান করল; তারপর তারা সকলে দ্বিতীয়বার পান করল; অতঃপর তিনি তাতে দ্বিতীয়বার দুধ দোহন করলেন, এমনকি দুধের পাত্র পরিপূর্ণ হয়ে গেল; অতঃপর তিনি তা তার নিকট রেখে দিলেন, তারপর তার সাথে (পুনরায় সাক্ষাতের) প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলেন এবং তার নিকট থেকে রওয়ানা হলেন। তারপর অল্প কিছুক্ষণ অবস্থান করার পরেই তার স্বামী আবূ মা‘বাদ তার নিকট কতগুলো দুর্বল শীর্ণকায় বকরী তাড়িয়ে নিয়ে এসে উপস্থিত হল, বকরীগুলো দুর্বলতার কারণে টলায়মান অবস্থায় হাটল; অতঃপর যখন আবূ মা‘বাদ দুধ দেখতে পেলেন, তখন তিনি অবাক হলেন এবং বললেন: হে উম্মু মা‘বাদ! তোমার নিকট এই দুধ কোথা থেকে এল, অথচ বকরীগুলো ছিল দূরে চারণভূমিতে এবং ঘরের মধ্যে কোন দুধ ছিল না? জবাবে সে বলল: না, আল্লাহর কসম! তবে আমাদের নিকট দিয়ে এমন এক বরকতময় ব্যক্তি চলে গেছেন, যাঁর অবস্থা এমন এমন; আবূ মা‘বাদ বললেন: হে উম্মু মা‘বাদ! তুমি আমাকে তাঁর বৈশিষ্ট্য বর্ণনা কর, তখন সে বলল: আমি এক ব্যক্তিকে দেখেছি, যার অবস্থা হল- তিনি পরিষ্কার সুন্দর, উজ্জ্বল চেহারার অধিকারী, তিনি শীর্ণতার দোষে দুষ্ট নন; নিন্দিত নন ক্ষুদ্রতার অভিযোগে, তিনি ছিলেন উজ্জ্বল ফর্সা; তাঁর চোখ ছিল গভীর কালো; তাঁর চোখের পাতার প্রান্তদেশ ছিল লম্বা; তাঁর কণ্ঠস্বরের মধ্যে ছিল তীক্ষ্নতা ও বলিষ্ঠতা; তাঁর গর্দান ছিল লম্বা; তাঁর দাঁড়ির মধ্যে ঘনত্ব ছিল; ভ্রূ’র কিনারাসমূহ লম্বা হওয়ার সাথে ভ্রূ ছিল ধনুকাকৃতির; যদি তিনি চুপ থাকতেন, তাহলে তাঁর মধ্যে গাম্ভীর্যের ছাপ পরিলক্ষিত হত; আর যদি তিনি কথা বলতেন, তখন তিনি তাঁর মাথাকে উঁচু করতেন এবং তাঁর সাথীদের চেয়ে উঁচু হয়ে যেতেন; তিনি ছিলেন সবচেয়ে সুন্দর মানুষ, দূর থেকে দেখতে তিনি সর্বাধিক দীপ্তিমান, আর কাছ থেকে দেখতে তিনি অতি উত্তম; তিনি ছিলেন মিষ্টভাষী ও স্পষ্টভাষী এবং মাঝামাঝি পর্যায়ে কথা বলতেন, কমও বলতেন না, আবার বেশিও বলতেন না; (বলার সময়) তাঁর কথা যেন মণিমুক্তা ও ছন্দোবদ্ধ বাক্যের ন্যায় অবতীর্ণ হত; তিনি মধ্যম আকৃতির, দৃষ্টিকটু লম্বা নন এবং এমন বেঁটেও নন, যার কারণে কোনো চোখ তাঁকে অবজ্ঞা করতে পারে; তিনি ছিলেন দুই ডালের মাঝামাঝি একটি ডাল; সুতরাং তিনি ছিলেন তাদের তিনজনের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর এবং আভিজাত্যের দিক থেকে সবচেয়ে উত্তম; তাঁর সাথীগণ তাঁকে বেষ্টনী দিয়ে রাখে, তিনি যদি কথা বলেন তারা তাঁর কথা শুনে এবং তিনি যদি তাদের নির্দেশ দেন তারা তাঁর নির্দেশ পালনে প্রতিযোগিতা শুরু করে; তাঁর নিকট তাঁর সঙ্গীগণ সবসময় সমবেত থাকে; তিনি বিষণ্ন (বিরক্তি) চেহারার অধিকারী নন এবং কথাবার্তায় অসংলগ্ন নন। (বর্ণনা শোনার পর) আবূ মা‘বাদ বললেন: আল্লাহর কসম! তিনি কুরাইশ বংশের মহামান্য ব্যক্তি, আমার নিকট তাঁর ব্যাপারে যা আলোচনা করা হল, তা মক্কাতেও আলোচনা হয়; আমার প্রবল অভিপ্রায় হল, আমি তাঁর সঙ্গী হব এবং এর জন্য আমি কোনো পথ পেলে অবশ্যই আমি সেই পথ ধরব। আর মক্কাতে একটি আওয়াজ সুউচ্চ হল, তারা আওয়াজটি শোনল কিন্তু কে আওয়াজ করছে তা জানতে পারল না; আর সে (আওয়াজকারী) বলছিল:মানুষের প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলা দান করুন উত্তম পুরস্কারদুই বন্ধুকে, যাঁরা আগমন করেছেন দুই তাঁবুতে উম্মু মা‘বাদের;তাঁরা অবতরণ করেছে তার নিকট হিদায়াতসহ এবং সে হয়েছে হিদায়েত প্রাপ্ত,সুতরাং সেই ব্যক্তি সফলকাম হয়েছে, যে হয়েছে মুহাম্মদের সঙ্গীতে পরিণত; অতএব, হে কুসাই সম্প্রদায়! কি কারণে আল্লাহ তোমাদের থেকে দূর করলেন, এমন কল্যাণ, শ্রেষ্ঠত্ব ও নেতৃত্ব, যার কোনো প্রতিদান হয় না।আবূ বকরের সৌভাগ্যের জন্য তাকে মুবারকবাদ, এ জন্য যে তিনি এমন লোকের সাহচর্য নিয়েছেন, যার সাহচর্যে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন সৌভাগ্যমণ্ডিত করেন। বনী কা‘বের কন্যার জন্যও মুবারকবাদ, কারণ সে মুমিনদের জন্য উঁৎ পেতে বসেছিল, তোমরা তোমাদের বোনকে তার বকরী ও পাত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাসা কর,কেননা তোমারা বকরীকে জিজ্ঞাসা করলে সে সাক্ষ্য দিবে;তিনি তার নিকটে ডেকে আনলেন দুধহীন বকরীকে, অতঃপর সেটি ফোঁটা ফোঁটা দুধ ঝরালফেনায়িত দুধ বকরীর স্তন স্পষ্টভাবে তাঁর নিকটে;তারপর তিনি তাকে রেখে গেলেন বন্ধক হিসেবে তার নিকটে দোহনকারীর জন্যসে তাকে মূল উৎসে দুধ বের করবে, তারপর সরবরাহ কেন্দ্রে।”[হাকেম, আল-মুসতাদরাক: ৩ / ৯ - ১০ এবং তিনি বলেন, এই হাদিসটির সনদ সহীহ, ইমাম বুখারী ও মুসলিম র. হাদিসটি বর্ণনা করেন নি, আর ইমাম যাহাবী র.ও অনুরূপ মত ব্যক্ত করেছেন; বাগবী, শরহুস সুন্নাহ ( شرح السنة ): ফাদায়েল / নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামগ্রীক গুণাবলী ( جامع صفاته صلى الله عليه و سلم ), হাদিস নং-৩৭০৪, ১৩ / ২৬১ - ২৬৪ ]। * * *]।
আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মারা যান, তখন তাঁর মাথা ও দাঁড়ির মধ্যে বিশটি চুলও সাদা ছিল না; আর তাও কিছু সাদা ছিল তাঁর নিম্ন ঠোঁটের নীচের ছোট দাঁড়িতে, আর কিছু ছিল কানপট্টিতে এবং মাথার মধ্যে ছিল সামান্য কয়টি [আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: «كان ربعة من القوم ليس بالطويل ولا بالقصير , أزهر اللون ليس بأبيض أمهق ولا آدم , ليس بجعد قطط ولا سبط , رجل أنزل عليه وهو ابن أربعين , فلبث بمكة عشر سنين ينزل عليه , وبالمدينة عشر سنين , وقبض وليس في رأسه ولحيته عشرون شعرة بيضاء . قال ربيعة فرأيت شعرا من شعره فإذا هو أحمر , فسألت فقيل : احمر من الطيب » . ( رواه البخاري ).“তিনি ছিলেন সম্প্রদায়ের মধ্যে মধ্যম আকৃতির মানুষ; তিনি বেশি লম্বাও ছিলেন না, আবার বেঁটেও ছিলেন না; তিনি ছিলেন ফর্সা উজ্জ্বল বর্ণের; তিনি ধবধবে সাদা ছিলেন না, ছিলেন না খুব ধূসর বর্ণ। তাঁর চুল অতিরিক্ত কোঁকড়ানো ছিল না, আবার একেবারে সোজাও ছিল না। বরং কিছুটা কোকড়ানো। চল্লিশ বছর বয়সে তাঁর উপর ওহী নাযিল হয়, অতঃপর তিনি ওহী নাযিল অবস্থায় মক্কাতে দশ বছর এবং মদীনাতে দশ বছর অবস্থান করেন; আর তাঁর ইন্তিকাল হয় এমন অবস্থায় যে, তাঁর মাথায় ও দাঁড়িতে বিশটি চুলও সাদা ছিল না। রবী‘আহ্ রা. বলেন: অতঃপর আমি তাঁর চুলের মধ্য থেকে একটি লাল চুল দেখতে পেলাম, তারপর তাঁকে সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, অতঃপর জবাবে বলা হল: সুগন্ধি ব্যবহারের কারণে তা লাল হয়েছে।” [ বুখারী, আস-সহীহ: মানাকিব / ২৩, ৪ /১৬৪]। আর ইমাম মুসলিম র. এর এক বর্ণনায় আছে, তিনি (আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন: « وَلَمْ يَخْتَضِبْ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّمَا كَانَ الْبَيَاضُ فِى عَنْفَقَتِهِ , وَفِى الصُّدْغَيْنِ , وَفِى الرَّأْسِ نَبْذٌ » . ( رواه مسلم ).“আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কলপ দেননি। কিছু সাদা ছিল তাঁর নিম্ন ঠোঁটের নীচের ছোট দাঁড়িতে, আর কিছু ছিল কানপট্টিতে এবং মাথার মধ্যে ছিল কিছু।” [ মুসলিম, আস-সহীহ: ফাযায়েল / ২৯, হাদিস নং- ২৩৪১, ৪ / ১৮২১]।]; তাঁর মাথার চুল দুই কানের লতি থেকে দুই কাঁধের মাঝামাঝি পৌঁছে যেত [আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: «كان يضرب شعر رأس النبي صلى الله عليه و سلم منكبيه » . ( رواه البخاري و مسلم )“নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাথার চুল দুই কাঁধের মাঝামাঝি ঝুলে থাকত।” [ বুখারী, আস-সহীহ: লিবাস (পোষাক-পরিচ্ছদ) / ৬৮, ৭ / ৫৮; মুসলিম, আস-সহীহ: ফাযায়েল / ২৬, হাদিস নং- ২৩৩৮, ৪ / ১৮১৯]। আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: « كَانَ شَعَرُ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِلَى أَنْصَافِ أُذُنَيْهِ » . ( رواه مسلم ).“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কেশ মুবারক কানের অর্ধেক পর্যন্ত ঝুলানো ছিল।” [মুসলিম, আস-সহীহ: ফাযায়েল / ২৬, হাদিস নং- ২৩৩৯, ৪ / ১৮১৯]। বারা ইবন ‘আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: « كان النبي صلى الله عليه و سلم مربوعا , بعيد ما بين المنكبين له شعر يبلغ شحمة أذنيه » . ( رواه البخاري ) .“নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মধ্যম আকৃতির পুরুষ; তাঁর উভয় কাঁধের দূরত্ব ছিল অল্প বেশি; তাঁর মাথার চুল দুই কানের লতি পর্যন্ত পৌঁছাতো।” [বুখারী, আস-সহীহ: মানাকিব / ২৩, ৪ /১৬৫]।আনাস রা. এর কথা- “তাঁর চুল দুই কানের লতি পর্যন্ত পৌঁছত” এবং তাঁর কথা “চুল দুই কাঁধের মাঝামাঝি ঝুলে থাকত” পরস্পর বিপরীত ও বিরোধপূর্ণ এবং তার জবাবে বলা হয়, তাঁর অধিকাংশ চুল ছিল তাঁর কানের লতি পর্যন্ত বিস্তৃত, আর তার থেকে যা প্রলম্বিত হয়, তা কাঁধ পর্যন্ত সংযুক্ত; অথবা তা দুই অবস্থাকেই শামিল করে। [ ফতহুল বারী: ৬ / ৫৭৩ ]।]; তিনি (কপালের উপর চুল) ঝুলিয়ে রাখতেন, অতঃপর তিনি তাকে সিঁথি কাটার দিকে পরিবর্তন করেন [আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: «كَانَ أَهْلُ الْكِتَابِ يَسْدُلُونَ أَشْعَارَهُمْ , وَكَانَ الْمُشْرِكُونَ يَفْرُقُونَ رُءُوسَهُمْ , وَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُحِبُّ مُوَافَقَةَ أَهْلِ الْكِتَابِ فِيمَا لَمْ يُؤْمَرْ بِهِ , فَسَدَلَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم نَاصِيَتَهُ , ثُمَّ فَرَقَ بَعْدُ » . ( رواه مسلم ).“আহলে কিতাবরা তাদের কেশ ঝুলিয়ে রাখত, আর মুশরিকরা সিঁথি কাটত। যে বিষযে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি কোনো আদেশ আসতো না, সে বিষয়ে তিনি আহলে কিতাবদের অনুসরণ করা পছন্দ করতেন; তাই তিনি তাঁর কেশ মুবারক ঝুলিয়ে রাখেন; কিন্তু পরবর্তী সময় তিনি সিঁথি কাটতেন।” [মুসলিম, আস-সহীহ: ফাযায়েল / ২৪, হাদিস নং- ২৩৩৬, ৪ / ১৮১৭ – ১৮১৮ ]।কাযী ‘আইয়ায বলেন: " سدل الشعر "অর্থ হল: চুল ঝুলিয়ে দেওয়া; তিনি বলেন: আলেমগণের মতে এখানে এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল, কপালের উপর চুল ঝুলিয়ে দেওয়া এবং তাকে কপালের চুলের মত করে রেখে দেওয়া; বলা হয়: " سدل شعره و ثوبه إذا أرسله و لم يضم جوانبه " (তার চুল ও কাপড় ঝুলে গেছে, যখন সে তা ঝুলিয়ে দিয়েছে এবং তার প্রান্তসমূহ মিলিয়ে রাখে নি)। আর فَرق মানে হল: চুলের এক অংশকে অপর অংশ থেকে পৃথক করা, অর্থাৎ সিঁথি কাটা; আলেমগণ বলেন: সিঁথি কাটা সুন্নাত, কেননা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকেই প্রত্যাবর্তন করেছেন; তারা বলেন: পরিষ্কার কথা হল, তিনি ওহীর কারণেই তার (সিঁথি কাটার) দিকে প্রত্যাবর্তন করেছেন; এর দলিল হল তাঁর ( ইবনু ‘আব্বাস রা এর) কথা: « أنه كَانَ يوافق أَهْلِ الْكِتَابِ فِيمَا لَمْ يُؤْمَرْ بِهِ » . [তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এমন বিষয়ে আহলে কিতাবদের অনুসরণ করতেন, যে বিষয়ে তাঁর প্রতি কোন আদেশ আসতো না]।]; ফলে তিনি মাথার দুই পাশের মাঝ বরাবর সিঁথি কাটতেন।
এই হল নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সৃষ্টিগত বৈশিষ্ট্যাবলী, যা পূরুষ ব্যক্তিদের পরিপূর্ণ গুণাবলীর সমাহার, আমি সেসব গুণাবলী আপনাদের উদ্দেশ্যে বর্ণনা করেছি, যাতে তা আপনাদের জন্য নিদর্শন বা চিহ্ন হতে পারে ঐ সময়ে, যখন আপনারা তাঁকে স্বপ্নের মধ্যে দেখতে পাবেন; কারণ, যে ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁর ব্যাপারে প্রমাণিত বৈশিষ্ট্য বা গুণাবলীর আলোকে স্বপ্নের মধ্যে দেখতে পাবে, সে ব্যক্তি সত্যি সত্যি তাঁকে দেখেছে; কেননা শয়তান তাঁর রূপ ধারণ করতে পারে না [আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: « من رآني في المنام فقد رآني , فإن الشيطان لا يتخيل بي , ورؤيا المؤمن جزء من ستة وأربعين جزءا من النبوة » . ( رواه البخاري ).“যে আমাকে স্বপ্নযোগে দেখল, সে আমাকেই দেখল। কারণ, শয়তান আমার আকৃতি ধারণ করতে পারে না। আর মুমিনের স্বপ্ন নবুয়তের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগ।” [ বুখারী, আস-সহীহ: তা‘বীর (স্বপ্নের ব্যাখ্যা প্রদান) / ১০, ৮ / ৭১ – ৭২]। গ্রন্থের তাহকীককারী বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের (সৃষ্টিগত) বৈশিষ্ট্যসমূহের অন্যতম হচ্ছে, ১. নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কেশ মুবারক:কাতাদা র. বলেন: « قُلْتُ لأَنَسِ بْنِ مَالِكٍ كَيْفَ كَانَ شَعَرُ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ؟ قَالَ : « كَانَ شَعَرًا رَجِلاً لَيْسَ بِالْجَعْدِ وَلاَ السَّبِطِ بَيْنَ أُذُنَيْهِ وَعَاتِقِهِ» . ( رواه مسلم ) . “আমি আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কেশ মুবারক কেমন ছিল? জবাবে তিনি বললেন: মধ্যম প্রকৃতির ছিল; খুব কোঁকড়ানো ছিল না, আবার একেবারে সোজাও ছিল না; তা ছিল দুই কাঁধ ও দুই কানের মাঝ বরাবর।” [মুসলিম, আস-সহীহ: ফাযায়েল / ২৬, হাদিস নং- ২৩৩৮, ৪ / ১৮১৯ ]। " رَجِلا "অর্থ: কোঁকড়ানো ও সোজা অবস্থার মাঝামাঝি অবস্থা। — [ ইমাম নববীর ব্যাখ্যাসহ সহীহ মুসলিম: ১৫ / ৯২ ]। " الجعد "অর্থ: বস্তুর মধ্যে বক্রতা বা কুঞ্চিত হওয়া; বলা হয়: " شعر جعد "(কোঁকড়ানো চুল); আর جعد শব্দটি سبط (সোজা) শব্দের বিপরীত। — দেখুন: আল-কামূসুল মুহীত, মূল অক্ষর: ( جعد ), পৃ. ৩৪৮। " السبط "অর্থ: সোজা হওয়া; আর سبط শব্দটি جعد (বক্রতা) শব্দের বিপরীত। — দেখুন: আল-কামূসুল মুহীত, মূল অক্ষর: ( سبط ), পৃ. ৮৬৩ ২. নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সুরভীময় ও কোমল:আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: « مَا شَمِمْتُ عَنْبَرًا قَطُّ , وَلاَ مِسْكًا , وَلاَ شَيْئًا أَطْيَبَ مِنْ رِيحِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم , وَلاَ مَسِسْتُ شَيْئًا قَطُّ دِيبَاجًا وَلاَ حَرِيرًا أَلْيَنَ مَسًّا مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم » . ( رواه مسلم ) . “আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের (মুবারক শরীরের) চেয়ে সুগন্ধিময় কোনো আম্বর, মিশক বা অন্য কোনো বস্তুর ঘ্রাণ গ্রহণ করি নি এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের (মুবারক শরীরের) চেয়ে কোমল কোনো রেশম বা মোলায়েম কাপড় আমি স্পর্শ করি নি।” [মুসলিম, আস-সহীহ: ফাযায়েল / ২১, হাদিস নং- ২৩৩০, ৪ / ১৮১৪ - ১৮১৫]। ৩. নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘামের সুগন্ধি এবং তার দ্বারা বরকত লাভ:আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: « دَخَلَ عَلَيْنَا النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ عِنْدَنَا فَعَرِقَ وَجَاءَتْ أُمِّى بِقَارُورَةٍ فَجَعَلَتْ تَسْلُتُ الْعَرَقَ فِيهَا فَاسْتَيْقَظَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ : « يَا أُمَّ سُلَيْمٍ ! مَا هَذَا الَّذِى تَصْنَعِينَ ؟ » . قَالَتْ هَذَا عَرَقُكَ نَجْعَلُهُ فِى طِيبِنَا وَهُوَ مِنْ أَطْيَبِ الطِّيبِ » . ( رواه مسلم ) . “নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের ঘরে আসলেন এবং বিশ্রাম নিলেন; অতঃপর তিনি ঘামছিলেন, আর আমার মা একটি শিশি নিয়ে তা মুছে মুছে তাতে ভরতে লাগলেন; অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম জেগে গেলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন: হে উম্মে সুলাইম! একি করছ? জবাবে তিনি বললেন: এ আপনার ঘাম, যা আমরা সুগন্ধির সাথে মিশ্রিত করি, আর এ তো সব সুগন্ধির সেরা সুগন্ধি।” [মুসলিম, আস-সহীহ: ফাযায়েল / ২২, হাদিস নং- ২৩৩১, ৪ / ১৮১৫]। আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে আরও বর্ণিত আছে, তিনি বলেন: « كَانَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم يَدْخُلُ بَيْتَ أُمِّ سُلَيْمٍ فَيَنَامُ عَلَى فِرَاشِهَا , وَلَيْسَتْ فِيهِ , قَالَ : فَجَاءَ ذَاتَ يَوْمٍ فَنَامَ عَلَى فِرَاشِهَا , فَأُتِيَتْ , فَقِيلَ لَهَا : هَذَا النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم نَامَ فِى بَيْتِكِ عَلَى فِرَاشِكِ , قَالَ : فَجَاءَتْ وَقَدْ عَرِقَ , وَاسْتَنْقَعَ عَرَقُهُ عَلَى قِطْعَةِ أَدِيمٍ عَلَى الْفِرَاشِ , فَفَتَحَتْ عَتِيدَتَهَا فَجَعَلَتْ تُنَشِّفُ ذَلِكَ الْعَرَقَ فَتَعْصِرُهُ فِى قَوَارِيرِهَا , فَفَزِعَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم , فَقَالَ : « مَا تَصْنَعِينَ يَا أُمَّ سُلَيْمٍ ! ؟» . فَقَالَتْ يَا رَسُولَ اللَّهِ نَرْجُو بَرَكَتَهُ لِصِبْيَانِنَا , قَالَ : « أَصَبْتِ » . ( رواه مسلم ) . “নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে সুলাইমের ঘরে যেতেন এবং তার বিছানায় ঘুমাতেন, এমতাবস্থায় যে উম্মে সুলাইম তখন ঘরে থাকতেন না। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, একদিন তিনি এলেন এবং তার বিছানায় ঘুমালেন। অতঃপর তিনি (উম্মে সুলাইম) এলে তাকে বলা হল, ইনি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তোমার ঘরে তোমার বিছানায় ঘুমিয়ে আছেন। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, উম্মে সুলাইম ঘরে এলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন ঘেমেছেন, আর তাঁর ঘাম চামড়ার বিছানার উপর জমেছে। উম্মে সুলাইম তার কৌটা খুললেন এবং সে ঘাম মুছে মুছে শিশিতে ভরতে লাগলেন। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সন্ত্রস্ত হয়ে ঘুম থেকে উঠে তাকে বললেন, তুমি কী করছ, হে উম্মে সুলাইম!? তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের শিশুদের বরকতের উদ্দেশ্যে নিচ্ছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: ভাল করেছ।” [মুসলিম, আস-সহীহ: ফাযায়েল / ২২, হাদিস নং- ২৩৩২, ৪ / ১৮১৫ - ১৮১৬]। ৪. নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুচকি হাসি:সকল হাদিস থেকে এই কথা পরিষ্কার যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ অবস্থায় মুচকি হাসি হাসতেন, তবে কখনও কখনও তিনি এর উপর বৃদ্ধি করে সাধারণভাবে হাসতেন।আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন: « ما رأيت النبي صلى الله عليه و سلم مستجمعا قط ضاحكا حتى أرى منه لهواته , إنما كان يتبسم » . ( رواه البخاري ) . “আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মুখভরে হাসতে দেখি নি যে তাঁর আলা জিহ্বা দেখা যাবে; তিনি তো শুধু মুচকি হাসতেন।” [বুখারী, আস-সহীহ: আদব / ৬৮, ৭ / ৯৪ - ৯৫]। ৫. নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথাবার্তা:আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন: « إن رسول الله صلى الله عليه و سلم لم يكن يسرد الحديث كسردكم » . ( رواه البخاري ) .“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের কথা বলার মত করে অনবরত কথা বলতেন না।” [বুখারী, আস-সহীহ: মানাকিব / ২৩, ৪ / ১৬৪; তিরমিযী, আস-সুনান: মানাকিব / ৯, হাদিস নং- ৩৬৩৯, ৫ / ৬০০]। আর তিরমিযীর বর্ণনার মধ্যে অতিরিক্ত আছে: « لكنه كان يتكلم بكلام بينه فصل , يحفظه من جلس إليه » .“বরং তিনি সুস্পষ্ট করে আলাদা আলাদাভাবে কথা উচ্চারণ করতেন; ফলে যারা তাঁর কাছে বসা থাকত, তারা তা সংরক্ষণ করতে পারত।”৬. নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের (হাঁটা) পথচলা:পূর্বোক্ত আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদিসের মধ্যে আছে: « إِذا مشى تَكفَّا تكفِّيا . كأنما انحطّ من صبب . لم أر قبله ولا بعده مثله صلى الله عليه وسلم » . ( رواه الترمذي ) .“নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাঁটতেন, তখন সামনের দিকে ঝুঁকে চলতেন, মনে হত যেন তিনি যমীনের নীচু অংশে অবতরণ করছেন। আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের পূর্বে ও পরে তাঁর মত (এত অধিক সুন্দর) আর কাউকে দেখি নি।” [ তিরমিযী, আস-সুনান: মানাকিব / ৮, হাদিস নং- ৩৬৩৭; ৫ / ৫৯৮]।আর আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন: « ما رأيت شيئا أحسن من رسول الله صلى الله عليه و سلم , كأن الشمس تجري في وجهه , ما رأيت أحدا أسرع في مشيه من رسول الله صلى الله عليه و سلم , كأنما الأرض تطوى له , إنا لنجهد أنفسنا , وإنه لغير مكترث» . ( رواه الترمذي ) .“আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সুন্দর কিছু দেখি নি; সূর্য যেন তাঁর চেহারায় ছিল প্রবাহিত। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপেক্ষা দ্রুত হাঁটতে আমি কাউকে দেখি নি, মনে হত যেন তাঁর জন্য যমীনকে সংকুচিত করে দেয়া হয়েছে; আমরা তো খুবই চেষ্টা করতাম (তার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে); কিন্তু তিনি ছিলেন একেবারেই নিঃস্পৃহ।” [তিরমিযী, আস-সুনান: মানাকিব / ১২, হাদিস নং- ৩৬৪৮; ৫ / ৬০৪; আর তিনি বলেন: এই হাদিসটি গরীব হাদিস]।৭. মোহরে নবুয়তের বর্ণনা ও নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেহে তার অবস্থান:সায়েব ইবন ইয়াযিদ র. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: « ذهبت بي خالتي إلى النبي صلى الله عليه و سلم فقالت : يا رسول الله ! إن ابن أختي وجع , فمسح رأسي , ودعا لي بالبركة , ثم توضأ فشربت من وضوئه , ثم قمت خلف ظهره فنظرت إلى خاتم النبوة بين كتفيه , مثل زر الحجلة » . ( رواه البخاري و مسلم ) . “আমার খালা আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে নিয়ে গেলেন, তারপর তিনি বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! এটি আমার বোনের ছেলে, সে অসুস্থ; তখন তিনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন এবং আমার জন্য বরকতের দো‘আ করলেন; অতঃপর উযু করলেন, আর আমি তাঁর উযুর পানি থেকে পান করলাম; অতঃপর তাঁর পেছনে দাঁড়ালাম এবং তাঁর দুই কাঁধের মাঝখানে হাজেলার বোতামের মত মোহরে নবুয়ত দেখতে পেলাম।” [ বুখারী, আস-সহীহ: মানাকিব / ২২, ৪ / ১৬৩; মুসলিম, আস-সহীহ: ফাযায়েল / ৩০, হাদিস নং- ২৩৪৫, ৪ / ১৮২৩ ]। " الحجلة ": ‘হাজেলা’ হল তাঁবুর মত ঘর বিশেষ, যার কতগুলো বড় বড় বোতাম রয়েছে এবং তা খোলামেলা। - [ ইমাম নববীর ব্যাখ্যাসহ সহীহ মুসলিম: ১৫ / ৯৮ ]।আর ‘আসেম র. থেকে বর্ণিত, তিনি আবদুল্লাহ ইবন সারজিস রা. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: « رَأَيْتُ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم وَأَكَلْتُ مَعَهُ خُبْزًا وَلَحْمًا , أَوْ قَالَ : ثَرِيدًا , قَالَ : فَقُلْتُ لَهُ : أَسْتَغْفَرَ لَكَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم ؟ قَالَ نَعَمْ , وَلَكَ , ثُمَّ تَلاَ هَذِهِ الآيَةَ : ( وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ ) . قَالَ ثُمَّ دُرْتُ خَلْفَهُ فَنَظَرْتُ إِلَى خَاتَمِ النُّبُوَّةِ بَيْنَ كَتِفَيْهِ عِنْدَ نَاغِضِ كَتِفِهِ الْيُسْرَى جُمْعًا عَلَيْهِ خِيلاَنٌ كَأَمْثَالِ الثَّآلِيلِ » . ( رواه مسلم ) . “আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি এবং তাঁর সাথে গোশত ও রুটি খেয়েছি, অথবা বলেছেন ‘সারিদ’ (খেয়েছি)। আসেম বলেন: অতঃপর আমি তাকে বললাম: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন? তিনি বললেন: হ্যাঁ, তোমার জন্যও। অতঃপর তিনি এই আয়াতটি তিলাওয়াত করেন: ( وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ ) [ ক্ষমা প্রার্থনা কর তোমার পাপের জন্য এবং মুমিন পুরুষ ও নারীদের জন্য]।”আবদুল্লাহ বললেন: তারপর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে গেলাম এবং মোহরে নবুওয়ত দেখলাম তাঁর দুই কাঁধের মাঝে বাম পাশের বাহুর হাড়ের কাছে অংগুলির মাথা একত্রিত করলে যেমন হয় অনেকটা তেমন, যাতে তিলক আছে, মনে হয় যেন কতগুলো বিচি এর সমষ্টি।” [ মুসলিম, আস-সহীহ: ফাযায়েল / ৩০, হাদিস নং- ২৩৪৬, ৪ / ১৮২৩ – ১৮২৪ ]। ناغض : অধিকাংশ আলেম বলেন, " النغض " এবং " الناغض "অর্থ হল: কাঁধের সর্বোচ্চ ভাগ; কেউ কেউ বলেন: তা হল কাঁধের প্রান্তে অবস্থিত সূক্ষ্ম হাড়; আবার কেউ কেউ বলেন: নড়াচড়ার সময় তার থেকে যা প্রকাশ হয়। - [ ইমাম নববীর ব্যাখ্যাসহ সহীহ মুসলিম: ১৫ / ৯৮ ]। الخِيلان : বহুবচন, একবচনে " خال ", অর্থ হল: শরীরের মধ্যে তিলক বা মাশা। - [ ইমাম নববীর ব্যাখ্যাসহ সহীহ মুসলিম: ১৫ / ৯৯ ]।কুরতবী বলেন: বিশুদ্ধ হাদিসসমূহের ঐক্যবদ্ধ রায় হল, মোহরে নবুয়ত ছিল তাঁর বাম কাঁধের কাছে স্পষ্ট লাল কিছু, যার পরিমাণ ছোট করে বুঝালে কবুতরের ডিমের পরিমাণ। আর বড় করে বুঝালে তখন তা হাতের আঙ্গুলের মাথা একত্রিত করলে যতটুকু হয় ততটুকু পরিমাণ হত। আল্লাহই অধিক ভাল জানেন। [ফতহুল বারী: ৬ / ৫৬৩ ]।৮. নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কপাল মুবারক:হিন্দ ইবন আবি হালা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদিসের মধ্যে এসেছে: « كان رسول الله صلى الله عليه وسلم .... أزهر اللون ، واسع الجبين ، أزج الحواجب سوابغ فى غير قرن , بينهما عرق يدره الغضب ، أقنى العرنين , له نور يعلوه , يحسبه من لم يتأمله أشم ، كث اللحية , سهل الخدين ... » .“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন ... অতি প্রাঞ্জল বর্ণের অধিকারী; ললাটের উভয় পার্শ্ব ছিল প্রশস্ততর; তাঁর ভ্রূযুগল বিমুক্ত বৃত্তাংশের ন্যায় বাঁকা, খুব সূক্ষ্ম ঘন চুল বিশিষ্ট ছিল; আর ঐ ভ্রূযুগলের মাঝে এমন একটি শিরা ছিল, যা রাগের সময় (অধিক রক্ত সঞ্চারিত হওয়ার ফলে) ভেসে উঠত (প্রকাশ পেত); তাঁর নাসিকা সুদীর্ঘ, অগ্রভাগ সরু ও মধ্যভাগ ন্যূজ্ব ছিল; তাঁর নাসিকায় এমন নূর (জ্যোতি) ছিল, যা নাকের উপর বিকীর্ণ হত; কেউ গভীর মনোযোগ সহকারে তাঁর নাকের প্রতি না তাকালে অত্যুন্নত নাসা মনে করত; তাঁর দাঁড়ি ছিল বিস্তীর্ণ ও খুব ঘন; গণ্ডদ্বয় ছিল মসৃণ; ...।” ৯. নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাথা মুবারক:পূর্বে উল্লেখিত আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসের মধ্যে আছে, তিনি বলেছেন: « كان رسول الله صلى الله عليه و سلم ليس بالطويل ولا بالقصير ضخم الرأس واللحية ... » . ( رواه أحمد ) .“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম লম্বাও ছিলেন না, আবার বেঁটেও ছিলেন না (তিনি মধ্যম আকৃতির ছিলেন); আর তিনি ছিলেন বড় মাথা ও দাঁড়ির অধিকারী।” [ ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ: ১ / ৯৬; হাকেম, আল-মুসতাদরাক: ২ / ৬০৬]।১০. নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কণ্ঠস্বর:উম্মে মা‘বাদ রা. থেকে বর্ণিত হাদিসের মধ্যে আছে, তিনি বলেছেন: « في صوته صهل » . “তাঁর কণ্ঠস্বরের মধ্যে ছিল তীক্ষ্নতা ও বলিষ্ঠতা।”নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের গুচ্ছ গুণাবলীহুবাইশ ইবন খালিদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: « أن رسول الله صلى الله عليه وسلم حين خرج من مكة خرج منها مهاجرا إلى المدينة , هو وأبو بكر ومولى أبي بكر عامر بن فهيرة ، ودليلهما عبد الله بن أريقط الليثي , فمروا على خيمتي أم معبد الخزاعية , وكانت برزة جلدة تحتبي وتجلس بفناء الخيمة , ثم تسقي وتطعم ، فسألوها لحما وتمرا ليشتروه منها , فلم يصيبوا عندها شيئا من ذلك ، وكان القوم مرملين مسنتين فنظر رسول الله صلى الله عليه وسلم إلى شاة في كسر الخيمة ، فقال : « ما هذه الشاة يا أم معبد ؟ » قالت : شاة خلفها الجهد من الغنم قال : « هل بها من لبن ؟ » قالت : هي أجهد من ذلك قال : « أتأذنين لي أن أحلبها؟ » قالت : بأبي أنت وأمي نعم إن رأيت بها حلبا فاحلب ، فدعا بها رسول الله صلى الله عليه وسلم فمسح بيده ضرعها , وسمى الله عز وجل , ودعا لها في شاتها , فتفاجت عليه ، ودرت , واجترت , ودعا بإناء يربض الرهط ، فحلب فيه ثجا حتى علاه البهاء , ثم سقاها حتى رويت ، وسقى أصحابه حتى رووا ، ثم شرب آخرهم , ثم أراضوا , ثم حلب فيه الثانية على هدة حتى ملأ الإناء , ثم غادره عندها , فبايعها وارتحلوا عنها ، فقلما لبثت حتى جاءها زوجها أبو معبد يسوق أعنزا عجافا , يتساوكن هزلا مخهن قليل ، فلما رأى أبو معبد اللبن عجب , وقال : من أين لك هذا يا أم معبد والشاة عازب حيائل ولا حلوب في البيت ؟ قالت : لا والله إلا أنه مر بنا رجل مبارك من حاله كذا وكذا , قال : صفيه لي يا أم معبد , قالت : رأيت رجلا ظاهر الوضأة ، أبلج الوجه ، حسن الخلق , لم تعبه نحلة , ولم تزر به صقلة ، وسيم قصيم ، في عينيه دعج ، وفي أشفاره وطف ، وفي صوته صهل ، وفي عنقه سطع ، وفي لحيته كثاثة ، أزج أقرن ، إن صمت فعليه الوقار ، وإن تكلم سماه وعلاه البهاء , أجمل الناس وأبهاه من بعيد و أجلاه وأحسنه من قريب , حلو المنطق ، فصل لا نزر ولا هزر ، كأن منطقه خرزات نظم يتحدرن ، ربعة لا يأس من طول , ولا تقتحمه عين من قصر ، غصن بين غصنين ، وهو أنظر الثلاثة منظرا ، وأحسنهم قدرا ، له رفقاء يحفون به ، إن قال أنصتوا لقوله ، وإن أمر بادروا إلى أمره ، محفود محشود , لا عابس ولا مفند , قال أبو معبد : هو والله صاحب قريش الذي ذكر لنا من أمره ما ذكره بمكة ، ولقد هممت أن أصحبه ، ولأفعلن إن وجدت إلى ذلك سبيلا ، فأصبح صوت بمكة عاليا يسمعون الصوت ، ولا يدرون من صاحبه , وهو يقول : جزى الله رب الناس خير جزائه * رفيقين قالا خيمتي أم معبدهما نزلاها بالهدى واهتدت به * فقد فاز من أمسى رفيق محمدفيا لقصي ما زوى الله عنكم * به من فعال لا تجازى وسؤددليهن أبا بكر سعادة جـــــده * بصحبة من يسعد الله يسعدليهن بني كعب مقام فتاتهــم * ومقعدها للمؤمنين بمرصدسلوا أختكم عن شاتها وإنائها * فإنكم إن تسألوا الشاة تشهددعاها بشاة حائل فتحلبت * عليه صريحا ضرة الشاة مزبدفغادرها رهنا لديها لحالب * يرددها في مصدر ثم مورد » . ( رواه الحاكم ).“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যখন মক্কা থেকে বের করে দেয়া হয়, তখন হিজরতকারী হিসেবে তিনি, আবূ বকর রা. এবং আবূ বকর রা. এর গোলাম আমের ইবন ফুহায়রা ও তাঁদের উভয়ের পথপ্রদর্শক আবদুল্লাহ ইবন ওরাইকিত আল-লাইসী মদীনার উদ্দেশ্যে বের হয়ে পড়েন; তারা উম্মু মা‘বাদ আল-খুযা‘য়ীয়া’র তাঁবুর পাশ দিয়ে পথ অতিক্রম করেন; আর সে ছিল পরিণত বয়সী এক নারী, তাঁবুর আঙ্গিনায় কাপড় জড়িয়ে বসে থাকত; পানি পান করাত ও খাবার দিত। অতঃপর তাঁরা তার নিকট থেকে গোশত ও খেজুর ক্রয় করতে চাইল, কিন্তু তাঁরা তার নিকট এই ধরনের কিছুই পেল না; কারণ, তখন তারা (উম্মে মা‘বাদ এর গোষ্ঠী) ছিল রসদশূন্য দুর্ভিক্ষ কবলিত; অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁবুর একপাশে একটি ছাগল দেখতে পেলেন এবং বললেন: হে উম্মু মা‘বাদ! এই ছাগলটির অবস্থা কী? সে বলল: ছাগলের পাল থেকে মূলত দুর্বলতাই এই ছাগলটিকে পিছনে ফেলে দিয়েছে; তিনি বললেন: তার মধ্যে দুধ আছে কি? সে বলল: এই ব্যাপারে ছাগলটি খুবই দুর্বল; (অর্থাৎ এর অবস্থা দুধ দেওয়ার চেয়েও খারাপ) তিনি বললেন: তুমি কি আমাকে তা দোহন করার অনুমতি দেবে? সে বলল: আমার পিতা ও মাতা আপনার জন্য কুরবান হউক! আপনি যদি তা দোহন করতে চান, তাহলে তা দোহন করুন; অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাগলটিকে ডেকে আনালেন, তারপর তিনি তার ওলানে তাঁর হাত বুলালেন এবং আল্লাহ তা‘আলার নাম বললেন; আর তার (উম্মু মা‘বাদের) জন্য তার ছাগলের ব্যাপারে দো‘আ করলেন; অতঃপর বকরীটি দুধ দোহনের সুবিধার্থে তার দু’পায়ের মাঝখানে ফাঁক করল, তার দুধ অধিক হারে বৃদ্ধি পেল এবং সে জাবর কাটতে লাগল; তারপর তিনি একটি পাত্র নিয়ে আসার জন্য ডাকলেন যাতে কাফেলার সকলকে তৃপ্তি সহকারে দুধ পান করাতে পারেন, তারপর তাতে দুধ দোহন করে দুধের প্রবাহ সৃষ্টি করলেন, এমনকি তার উপর চকচকে ফেনা উঠল; অতঃপর তিনি উম্মু মা‘বাদকে তৃপ্তি সহকারে দুধ পান করালেন, আরও দুধ পান করালেন তাঁর সাথীদেরকে এবং তারাও পরিতৃপ্ত হলেন; অতঃপর তাদের বাকীরা দুধ পান করল; তারপর তারা সকলে দ্বিতীয়বার পান করল; অতঃপর তিনি তাতে দ্বিতীয়বার দুধ দোহন করলেন, এমনকি দুধের পাত্র পরিপূর্ণ হয়ে গেল; অতঃপর তিনি তা তার নিকট রেখে দিলেন, তারপর তার সাথে (পুনরায় সাক্ষাতের) প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলেন এবং তার নিকট থেকে রওয়ানা হলেন। তারপর অল্প কিছুক্ষণ অবস্থান করার পরেই তার স্বামী আবূ মা‘বাদ তার নিকট কতগুলো দুর্বল শীর্ণকায় বকরী তাড়িয়ে নিয়ে এসে উপস্থিত হল, বকরীগুলো দুর্বলতার কারণে টলায়মান অবস্থায় হাটল; অতঃপর যখন আবূ মা‘বাদ দুধ দেখতে পেলেন, তখন তিনি অবাক হলেন এবং বললেন: হে উম্মু মা‘বাদ! তোমার নিকট এই দুধ কোথা থেকে এল, অথচ বকরীগুলো ছিল দূরে চারণভূমিতে এবং ঘরের মধ্যে কোন দুধ ছিল না? জবাবে সে বলল: না, আল্লাহর কসম! তবে আমাদের নিকট দিয়ে এমন এক বরকতময় ব্যক্তি চলে গেছেন, যাঁর অবস্থা এমন এমন; আবূ মা‘বাদ বললেন: হে উম্মু মা‘বাদ! তুমি আমাকে তাঁর বৈশিষ্ট্য বর্ণনা কর, তখন সে বলল: আমি এক ব্যক্তিকে দেখেছি, যার অবস্থা হল- তিনি পরিষ্কার সুন্দর, উজ্জ্বল চেহারার অধিকারী, তিনি শীর্ণতার দোষে দুষ্ট নন; নিন্দিত নন ক্ষুদ্রতার অভিযোগে, তিনি ছিলেন উজ্জ্বল ফর্সা; তাঁর চোখ ছিল গভীর কালো; তাঁর চোখের পাতার প্রান্তদেশ ছিল লম্বা; তাঁর কণ্ঠস্বরের মধ্যে ছিল তীক্ষ্নতা ও বলিষ্ঠতা; তাঁর গর্দান ছিল লম্বা; তাঁর দাঁড়ির মধ্যে ঘনত্ব ছিল; ভ্রূ’র কিনারাসমূহ লম্বা হওয়ার সাথে ভ্রূ ছিল ধনুকাকৃতির; যদি তিনি চুপ থাকতেন, তাহলে তাঁর মধ্যে গাম্ভীর্যের ছাপ পরিলক্ষিত হত; আর যদি তিনি কথা বলতেন, তখন তিনি তাঁর মাথাকে উঁচু করতেন এবং তাঁর সাথীদের চেয়ে উঁচু হয়ে যেতেন; তিনি ছিলেন সবচেয়ে সুন্দর মানুষ, দূর থেকে দেখতে তিনি সর্বাধিক দীপ্তিমান, আর কাছ থেকে দেখতে তিনি অতি উত্তম; তিনি ছিলেন মিষ্টভাষী ও স্পষ্টভাষী এবং মাঝামাঝি পর্যায়ে কথা বলতেন, কমও বলতেন না, আবার বেশিও বলতেন না; (বলার সময়) তাঁর কথা যেন মণিমুক্তা ও ছন্দোবদ্ধ বাক্যের ন্যায় অবতীর্ণ হত; তিনি মধ্যম আকৃতির, দৃষ্টিকটু লম্বা নন এবং এমন বেঁটেও নন, যার কারণে কোনো চোখ তাঁকে অবজ্ঞা করতে পারে; তিনি ছিলেন দুই ডালের মাঝামাঝি একটি ডাল; সুতরাং তিনি ছিলেন তাদের তিনজনের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর এবং আভিজাত্যের দিক থেকে সবচেয়ে উত্তম; তাঁর সাথীগণ তাঁকে বেষ্টনী দিয়ে রাখে, তিনি যদি কথা বলেন তারা তাঁর কথা শুনে এবং তিনি যদি তাদের নির্দেশ দেন তারা তাঁর নির্দেশ পালনে প্রতিযোগিতা শুরু করে; তাঁর নিকট তাঁর সঙ্গীগণ সবসময় সমবেত থাকে; তিনি বিষণ্ন (বিরক্তি) চেহারার অধিকারী নন এবং কথাবার্তায় অসংলগ্ন নন। (বর্ণনা শোনার পর) আবূ মা‘বাদ বললেন: আল্লাহর কসম! তিনি কুরাইশ বংশের মহামান্য ব্যক্তি, আমার নিকট তাঁর ব্যাপারে যা আলোচনা করা হল, তা মক্কাতেও আলোচনা হয়; আমার প্রবল অভিপ্রায় হল, আমি তাঁর সঙ্গী হব এবং এর জন্য আমি কোনো পথ পেলে অবশ্যই আমি সেই পথ ধরব। আর মক্কাতে একটি আওয়াজ সুউচ্চ হল, তারা আওয়াজটি শোনল কিন্তু কে আওয়াজ করছে তা জানতে পারল না; আর সে (আওয়াজকারী) বলছিল:মানুষের প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলা দান করুন উত্তম পুরস্কারদুই বন্ধুকে, যাঁরা আগমন করেছেন দুই তাঁবুতে উম্মু মা‘বাদের;তাঁরা অবতরণ করেছে তার নিকট হিদায়াতসহ এবং সে হয়েছে হিদায়েত প্রাপ্ত,সুতরাং সেই ব্যক্তি সফলকাম হয়েছে, যে হয়েছে মুহাম্মদের সঙ্গীতে পরিণত; অতএব, হে কুসাই সম্প্রদায়! কি কারণে আল্লাহ তোমাদের থেকে দূর করলেন, এমন কল্যাণ, শ্রেষ্ঠত্ব ও নেতৃত্ব, যার কোনো প্রতিদান হয় না।আবূ বকরের সৌভাগ্যের জন্য তাকে মুবারকবাদ, এ জন্য যে তিনি এমন লোকের সাহচর্য নিয়েছেন, যার সাহচর্যে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন সৌভাগ্যমণ্ডিত করেন। বনী কা‘বের কন্যার জন্যও মুবারকবাদ, কারণ সে মুমিনদের জন্য উঁৎ পেতে বসেছিল, তোমরা তোমাদের বোনকে তার বকরী ও পাত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাসা কর,কেননা তোমারা বকরীকে জিজ্ঞাসা করলে সে সাক্ষ্য দিবে;তিনি তার নিকটে ডেকে আনলেন দুধহীন বকরীকে, অতঃপর সেটি ফোঁটা ফোঁটা দুধ ঝরালফেনায়িত দুধ বকরীর স্তন স্পষ্টভাবে তাঁর নিকটে;তারপর তিনি তাকে রেখে গেলেন বন্ধক হিসেবে তার নিকটে দোহনকারীর জন্যসে তাকে মূল উৎসে দুধ বের করবে, তারপর সরবরাহ কেন্দ্রে।”[হাকেম, আল-মুসতাদরাক: ৩ / ৯ - ১০ এবং তিনি বলেন, এই হাদিসটির সনদ সহীহ, ইমাম বুখারী ও মুসলিম র. হাদিসটি বর্ণনা করেন নি, আর ইমাম যাহাবী র.ও অনুরূপ মত ব্যক্ত করেছেন; বাগবী, শরহুস সুন্নাহ ( شرح السنة ): ফাদায়েল / নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামগ্রীক গুণাবলী ( جامع صفاته صلى الله عليه و سلم ), হাদিস নং-৩৭০৪, ১৩ / ২৬১ - ২৬৪ ]। * * *]।
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন