HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের গুণাবলী
লেখকঃ শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীন রহ.
৪
দ্বিতীয় অধ্যায়: তাঁর চারিত্রিক গুণাবলীআর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের চারিত্রিক গুণাবলী; তিনি ছিলেন সামগ্রিকভাবে উত্তম চারিত্রিক গুণাবলীর ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ নৈতিকতাসম্পন্ন মানুষ; দলিল হিসেবে আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক তাঁকে দেয়া এই সার্টিফিকেটই (চারিত্রিক সনদই) আপনার জন্য যথেষ্ট হবে; আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَإِنَّكَ لَعَلَىٰ خُلُقٍ عَظِيمٖ ٤ ﴾ [ القلم : ٤ ]
“আর নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের উপর রয়েছেন।” — (সূরা আল-ক্বলম: ৪)
বদান্যতা ও দানশীলতার ক্ষেত্রে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সর্বাধিক উদার দানশীল মানুষ, তিনি এত বেশি পরিমাণে দান করতেন, সে পর্যায়ে কোনো রাজা-বাদশা পৌঁছতে পারে না; হাদিসের ভাষায়:
« فَجَاءَهُ رَجُلٌ فَأَعْطَاهُ غَنَمًا بَيْنَ جَبَلَيْنِ , فَرَجَعَ إِلَى قَوْمِهِ , فَقَالَ : يَا قَوْمِ ! أَسْلِمُوا فَإِنَّ مُحَمَّدًا يُعْطِى عَطَاءً لاَ يَخْشَى الْفَاقَةَ » . ( رواه مسلم ) .
“এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এলো; তিনি তাকে এত বেশি ছাগল দিলেন যাতে দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থান পূর্ণ হয়ে যাবে। তারপর সে ব্যক্তি তার সম্প্রদায়ের কাছে গিয়ে তাদের বলল, হে আমার জাতি ভাইয়েরা! তোমরা ইসলাম গ্রহণ কর; কেননা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এত বেশি দান করেন যে, তিনি অভাবের ভয় করেন না।” [মুসলিম, আস-সহীহ: ফাযায়েল / ১৪, হাদিস নং- ২৩১২, ৪ / ১৮০৬]
জাবির ইবন আবদিল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন:
« مَا سُئِلَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم شَيْئًا قَطُّ فَقَالَ : لاَ » . ( رواه مسلم ) .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে কেউ কিছু চাইলে কোন দিন তিনি ‘না’ বলেন নি।” [মুসলিম, আস-সহীহ: ফাযায়েল / ১৪, হাদিস নং- ২৩১১, ৪ / ১৮০৫]
আর যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুনায়েনের যুদ্ধ থেকে ফিরে আসলেন, তখন আরব বেদুইনগণ তাঁর পিছু নিতে লাগল তার কাছে চাওয়া আরম্ভ করল, এমনকি তারা তাঁকে একটি গাছের নিকট আশ্রয় নিতে বাধ্য করল; তারপর তিনি তাঁর বাহনের উপর থাকা অবস্থায়ই তারা তাঁর চাদরটি ছিনিয়ে নিল, তখন তিনি বললেন:
« ردوا عليّ ردائي ، أتخشون عليّ البخل ؟ فقال : فوالله لو كان لي عدد هذه العضاة نعماً , لقسمته بينكم ، ثم لا تجدوني بخيلاً ولا جباناً ولا كذاباً » . ( رواه البغوي ) .
“তোমরা আমাকে আমার চাদরটি ফেরত দাও; তোমরা কি আমার ব্যাপারে কৃপণতার আশঙ্কা কর? তারপর তিনি বললেন: আল্লাহর শপথ! যদি আমার নিকট এই গাছপালার সংখ্যা পরিমাণ উটও থাকে, তবে তা আমি তোমাদের মাঝে বন্টন করে দিব; অতঃপর তোমরা আমাকে কৃপণ, কাপুরুষ ও মিথ্যাবাদী হিসেবে পাবে না।” [বাগবী, শরহুস সুন্নাহ ( شرح السنة ): ফাদায়েল / নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের দানশীলতা( جوده صلى الله عليه وسلم ), হাদিস নং- ৩৬৮৯, ১৩ / ২৫২, আর তিনি বলেছেন: এই হাদিসটি সহীহ; আর ইমাম নাসায়ী র. তাঁর ‘আস-সুনান’ গ্রন্থে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন: হিবা / ১, ৬ / ২৬৩ – ২৬৪। العضاه : ছোট কাঁটাযুক্ত বৃক্ষ বিশেষ, যা শক্ত এবং যমীনের মধ্যে বিদ্যমান থাকে। - [আল-কামূসুল মুহীত, মূল অক্ষর ( عضض ), পৃ. ৮৩৫; আর ইমাম নাসায়ী র. এর বর্ণনার মধ্যে এসেছে: « لو أن لكم شجر تهامة نعما ...» . [যদি তোমাদের জন্য মক্কা নগরীর গাছপালার সংখ্যা পরিমাণ উট অর্জিত হত ...]।]
আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিজের উপর অপরকে প্রাধান্য দিতেন; ফলে তিনি দান করে দিতেন, অথচ তাঁর উপর একমাস বা দুইমাস অতিবাহিত হয়ে যেত, তাঁর ঘরে আগুন জ্বলত না [‘উরওয়া র. থেকে বর্ণিত, তিনি ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলতেন: «وَاللَّهِ يَا ابْنَ أُخْتِى , إِنْ كُنَّا لَنَنْظُرُ إِلَى الْهِلاَلِ ثُمَّ الْهِلاَلِ ثُمَّ الْهِلاَلِ , ثَلاَثَةَ أَهِلَّةٍ فِى شَهْرَيْنِ وَمَا أُوقِدَ فِى أَبْيَاتِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم نَارٌ , قَالَ : قُلْتُ : يَا خَالَةُ فَمَا كَانَ يُعَيِّشُكُمْ ؟ قَالَتِ : الأَسْوَدَانِ التَّمْرُ وَالْمَاءُ , إِلاَّ أَنَّهُ قَدْ كَانَ لِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم جِيرَانٌ مِنَ الأَنْصَارِ , وَكَانَتْ لَهُمْ مَنَائِحُ , فَكَانُوا يُرْسِلُونَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِنْ أَلْبَانِهَا فَيَسْقِينَاهُ » . ( رواه مسلم ) .“আল্লাহর কসম! হে আমার বোনের ছেলে! আমরা (মাসের) নতুন চাঁদ দেখতাম, অতঃপর আবার নতুন চাঁদ দেখতাম, তারপর আবার নতুন চাঁদ দেখতাম; অর্থাৎ দুই মাসে তিনটি নতুন চাঁদ দেখতাম। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো ঘরেই আগুন জ্বালানো হতো না। তিনি (‘উরওয়া র.) বলেন: আমি জিজ্ঞাসা করলাম: হে খালা! আপনারা তা হলে কিভাবে বেঁচে থাকতেন? তিনি বললেন: দু’টি কালো জিনিস: খেজুর ও পানি; তবে কয়েক ঘর আনসার পরিবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিবেশী ছিল; তাঁদের কিছু দুধালো উটনী ও বকরী ছিল। তাঁরা হাদিয়া হিসাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য দুধ পাঠাতেন; আর তিনি আমাদেরকে তা পান করতে দিতেন। - [মুসলিম, আস-সহীহ: যুহুদ, হাদিস নং- ২৯৭২, ৪ / ২২৮৩ ]]।
জনৈক মহিলা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের খিদমতে একটি ঝালরসহ বোনা চাদর হাদিয়া (উপহার) স্বরূপ দান করলেন এবং বললেন:
« يا رسول الله أكسوك هذه , فأخذها النبي صلى الله عليه و سلم محتاجا إليها , فلبسها , فرآها عليه رجل من الصحابة , فقال : يا رسول الله ! ما أحسن هذه فاكسنيها , فقال : نعم , . فلما قام النبي صلى الله عليه و سلم لامه أصحابه , قالوا : ما أحسنت حين رأيت النبي صلى الله عليه و سلم أخذها محتاجا إليها ثم سألته إياها , وقد عرفت أنه لا يسأل شيئا فيمنعه , فقال : رجوت بركتها حين لبسها النبي صلى الله عليه و سلم لعلي أكفن فيها » . ( رواه البخاري ) .
“হে আল্লাহর রাসূল! আমি এটি আপনাকে পরিধানের জন্য দিলাম; আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাদরখানা এমনভাবে গ্রহণ করলেন, যেন তাঁর এটির দরকার ছিল। এরপর তিনি এটি পরিধান করলেন। তারপর সাহাবীদের মধ্য থেকে একজন সেটি তাঁর দেহে দেখে আবেদন করলেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! এটা কতই না সুন্দর! আপনি এটি আমাকে দিয়ে দিন। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: হ্যাঁ (দিয়ে দেব)। অতঃপর যখন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠে চলে গেলেন, তখন অন্যান্য সাহাবীগণ তাঁকে দোষারোপ করে বললেন: তুমি ভাল কাজ কর নি। যখন তুমি দেখলে যে, তিনি চাদরখানা এমনভাবে গ্রহণ করেছেন, যেন এটি তাঁর প্রয়োজন ছিল; এরপরও তুমি সেটা চেয়ে বসলে; অথচ তুমি অবশ্যই জান যে, তাঁর কাছে যখনই কোন জিনিস চাওয়া হয়, তখন তিনি কাউকে বিমুখ করেন না। তখন সেই ব্যক্তি বলল: যখন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটি পরিধান করেছেন, তখন তাঁর বরকত হাসিল করার আশায়ই আমি এই কাজ করেছি, যেন আমি এ চাদরটাকে আমার কাফন বানাতে পারি।” [বুখারী, আস-সহীহ: আদব / ৩৯, ৭ / ৮২]
আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বদান্যতা বা দানশীলতা ছিল তার যথাযথ স্থানে; তিনি দান করতেন আল্লাহর জন্যে এবং আল্লাহর নামে; হয় তিনি ফকীর-মিসকীনকে দান করতেন অথবা অভাবীকে; অথবা আল্লাহর পথে; অথবা ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য; অথবা উম্মতের জন্য শরী‘য়তের বিধিবিধান প্রবর্তনের উদ্দেশ্যে।
আর বীরত্বের ক্ষেত্রে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন খুব সাহসী মানুষ এবং সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ গ্রহণে ছিলেন তাদের মধ্যে অধিকতর তীক্ষ্ন ও মজবুত; জনগণ পালিয়ে যেত, অথচ তিনি সুদৃঢ়ভাবে অটল থাকতেন। আব্বাস ইবন আবদিল মুত্তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:
«فَلَمَّا الْتَقَى الْمُسْلِمُونَ وَالْكُفَّارُ ( يعني في حنين ) وَلَّى الْمُسْلِمُونَ مُدْبِرِينَ , فَطَفِقَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَرْكُضُ بَغْلَتَهُ قِبَلَ الْكُفَّارِ , قَالَ عَبَّاسٌ : وَ أَنَا آخِذٌ بِلِجَامِ بَغْلَةِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَكُفُّهَا إِرَادَةَ أَنْ لاَ تُسْرِعَ , و كان يقول حينئذ : « أنا النبي لا كذب أنا ابن عبد المطلب » . ( رواه مسلم ) .
“যখন (হুনায়েনের যুদ্ধে) মুসলিম ও কাফিরগণ পরস্পর সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হল, তখন মুসলিমগণ (যুদ্ধের এক পর্যায়ে) পিছনের দিকে পলায়ন করতে লাগলেন; আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় পায়ের গোড়ালী দ্বারা নিজের খচ্চরকে আঘাত করে কাফিরদের দিকে ধাবিত করছিলেন। আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: আমি তাঁর খচ্চরের লাগাম ধরে রেখেছিলাম এবং একে থামিয়ে রাখার চেষ্টা করছিলাম যাতে দ্রুত গতিতে অগ্রসর হতে না পারে; আর তখন তিনি বলছিলেন:
“আমি যে নবী তা তো নয় মিথ্যা,
আমি হলাম আবদুল মুত্তালিবের বেটা।” [মুসলিম, আস-সহীহ: জিহাদ / ২৮, হাদিস নং- ১৭৭৫, ৩ / ১৩৯৮ এবং তাতে আছে: « فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : « أَىْ عَبَّاسُ نَادِ أَصْحَابَ السَّمُرَةِ » . [তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: হে আব্বাস! আসহাবে সমুরাকে (গাছের নিছে বাই‘আতকারি সাহাবীদের) আহ্বান কর]। আর তাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই কথাটি বর্ণিত নেই: « أنا النبي لا كذب أنا ابن عبد المطلب » [আমি যে নবী তা তো নয় মিথ্যা, আমি হলাম আবদুল মুত্তালিবের বেটা।]। আর বারা রা. এর বর্ণনার মধ্যে তা বর্ণিত হয়েছে; তাতে আছে:« ... فَأَقْبَلُوا هُنَاكَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم , وَرَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَلَى بَغْلَتِهِ الْبَيْضَاءِ وَأَبُو سُفْيَانَ بْنُ الْحَارِثِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ يَقُودُ بِهِ فَنَزَلَ فَاسْتَنْصَرَ وَقَالَ : « أَنَا النَّبِىُّ لاَ كَذِبْ أَنَا ابْنُ عَبْدِ الْمُطَّلِبْ » . ( رواه مسلم ) .“... তখন তাঁরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিকে এগিয়ে এলেন, আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে সময় তাঁর সাদা খচ্চরের উপর ছিলেন; আর আবূ সুফিয়ান ইবন আবদিল মুত্তালিব রা. একে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন। অতঃপর তিনি অবতরণ করলেন এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইলেন। আর তিনি বললেন: “আমি অবশ্যই নবী, এ কথা মিথ্যা নয়; আমি ইবন আবদিল মুত্তালিব।” - [মুসলিম, আস-সহীহ: জিহাদ / ২৮, হাদিস নং- ১৭৭৬, ৩ / ১৪০০]।]
আর আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:
«كنا اذا احمر البأس , ولقى القوم القوم , اتقينا برسول الله صلى الله تعالى عليه وسلم فما يكون احد اقرب الى العدو منه» . ( رواه البغوي ) .
“যুদ্ধের উত্তেজনা যখন ঘোরতর হয়ে উঠত এবং এক দল আরেক দলের মুখোমুখি হয়ে দাঁড়াতো, তখন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে আত্মরক্ষা করতাম; কারণ, কোনো ব্যক্তিই তাঁর চেয়ে শত্রুর অধিক নিকটবর্তী হত না।” [বাগবী, শরহুস সুন্নাহ ( شرح السنة ): ফাদায়েল / নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বীরত্ব ( شجاعته صلى الله عليه وسلم ), হাদিস নং- ৩৬৯৮, ১৩ / ২৫৭ -২৫৮।ইমাম মুসলিম র. বর্ণনা করেছেন, বারা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: « كُنَّا وَاللَّهِ إِذَا احْمَرَّ الْبَأْسُ نَتَّقِى بِهِ , وَإِنَّ الشُّجَاعَ مِنَّا لَلَّذِى يُحَاذِى بِهِ . يَعْنِى النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم » . ( رواه مسلم ) .“আল্লাহর কসম! যুদ্ধের উত্তেজনা যখন ঘোরতর হয়ে উঠত, তখন আমরা তাঁর মাধ্যমে আত্মরক্ষা করতাম। নিশ্চয়ই আমাদের মাঝে বীরপুরুষ তিনিই, যে যুদ্ধে তাঁর বরাবর থাকে, অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম। (রাসূলের বরাবর কেউ দাঁড়ালে সে সাহসী হতো ও তার বীরত্ব প্রকাশ পেত)।” [মুসলিম, আস-সহীহ: জিহাদ / ২৮, হাদিস নং- ১৭৭৬, ৩ / ১৪০১]।]
অনুরূপভাবে আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:
« كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَحْسَنَ النَّاسِ , وَكَانَ أَجْوَدَ النَّاسِ , وَكَانَ أَشْجَعَ النَّاسِ , وَلَقَدْ فَزِعَ أَهْلُ الْمَدِينَةِ ذَاتَ لَيْلَةٍ , فَانْطَلَقَ نَاسٌ قِبَلَ الصَّوْتِ , فَتَلَقَّاهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم رَاجِعًا وَقَدْ سَبَقَهُمْ إِلَى الصَّوْتِ وَهُوَ عَلَى فَرَسٍ لأَبِى طَلْحَةَ عُرْىٍ , فِى عُنُقِهِ السَّيْفُ وَهُوَ يَقُولُ : « لَمْ تُرَاعُوا لَمْ تُرَاعُوا » . قَالَ : « وَجَدْنَاهُ بَحْرًا أَوْ إِنَّهُ لَبَحْرٌ » . قَالَ : وَكَانَ فَرَسًا يُبَطَّأُ » . ( رواه مسلم ) .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সকল মানুষের মধ্যে অতি সুন্দর, অতি দানশীল এবং শ্রষ্ঠ বীর ছিলেন। কোন এক রাতে মদীনাবাসীগণ ঘাবড়িয়ে গিয়েছিল; যে দিক থেকে শব্দ আসছিল, লোকেরা সেই দিকে ছুটে চলল; এক পর্যায়ে পথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে তাদের সাক্ষাত হয় এমতাবস্থায় যে, তখন তিনি ফিরে আসছিলেন; কারণ, শব্দের দিকে প্রথম তিনিই ছুটে গিয়েছিলেন। তখন তিনি আবূ তালহা (রা.) এর জিন বা গদিবিহীন ঘোড়ায় আরোহিত হয়েছিলেন; তাঁর কাঁধে তরবারি ছিল; আর তিনি বলেন: তোমরা ভীত হয়ো না, তোমরা ভীত হয়ো না। বর্ণনাকারী (আনাস) আরও বললেন: আমি এই ঘোড়াকে পেয়েছি সমুদ্রের মত, অথবা তিনি বললেন: এ তো সমুদ্র। অথচ ইতঃপূর্বে এই ঘোড়ার গতি ছিল ধীর।” [মুসলিম, আস-সহীহ: ফাদায়েল / ১১, হাদিস নং- ২৩০৭, ৪ / ১৮০২ - ১৮০৩; আর এটা হল নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহা বীরত্ব ও আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ ভরসার চূড়ান্ত প্রমাণ।]
আর এই ধরনের মহাবীরত্ব থাকা সত্ত্বেও তিনি ছিলেন কোমল নম্র ভদ্র দয়াবান এক ব্যক্তি; আর তিনি অশ্লীলভাষী ছিলেন না এবং অশ্লীল কথা বানিয়েও বলতে পারতেন না [আবদুল্লাহ ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: « لم يكن النبي صلى الله عليه و سلم فاحشا ولا متفحشا , وكان يقول : « إن من خياركم أحسنكم أخلاقا » . ( رواه البخاري ) .“নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম অশ্লীলভাষী ছিলেন না এবং অশ্লীল কথা কষ্ট করেও বলতে পারতেন না; তিনি বলতেন: “তোমাদের মধ্যে উত্তম সে ব্যক্তি, যার চরিত্র ভাল।”[বুখারী, আস-সহীহ: মানকিব / ২৩, ৪ / ১৬৬]।]; আর তিনি ছিলেন না বাজারের মধ্যে হৈ-চৈকারী; আর তিনি মন্দের জবাব মন্দের মাধ্যমে দিতেন না, বরং তিনি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখতেন; আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:
« خَدَمْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَشْرَ سِنِينَ , وَاللَّهِ مَا قَالَ لِى : أُفًّا قَطُّ وَلاَ قَالَ لِى لِشَىْءٍ : لِمَ فَعَلْتَ كَذَا ؟ وَهَلاَّ فَعَلْتَ كَذَا ؟ » ( رواه مسلم ) .
“আমি দশ বছর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের খিদমত করেছি, আল্লাহর কসম! তিনি কখনও আমাকে ‘উহ্’ শব্দও বলেন নি এবং কখনও কোনো বিষয়ে আমাকে বলেন নি: তুমি কেন এটা করলে? কেন ওটা করলে না?” [মুসলিম, আস-সহীহ: ফাদায়েল / ১৩, হাদিস নং- ২৩০৯, ৪ / ১৮০৪.]
আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদের সাথে কৌতুক করতেন [আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: « قالوا يا رسول الله إنك تداعبنا , قال : إني لا أقول إلا حقا » . ( رواه الترمذي ) .“তারা বলল: হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাদের সাথে রসিকতা করেন! তিনি বললেন: নিশ্চয়ই আমি সত্য কথাই বলি।” - [তিরমিযী, আস-সুনান: আল-বির্রু ( البر ) / ৫৭, হাদিস নং- ১৯৯০, ৫ / ৩৭৫; আর তিনি বলেন: এই হাদিসটি হাসান, সহীহ]।আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: « إن رجلا استحمل رسول الله صلى الله عليه و سلم , فقال : إني حاملك على ولد الناقة , فقال : يا رسول الله ! ما أصنع بولد الناقة ؟ فقال رسول الله صلى الله عليه و سلم : وهل تلد الإبل إلا النوق ؟ » . ( رواه الترمذي ) .“এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বাহন চাইলে তিনি তাকে বললেন: আমি তোমাকে বাহন হিসেবে একটি উটনীর বাচ্চা দিব; এ কথা শুনে সে বলল: আমি উটনীর বাচ্চা দিয়ে কী করব? জবাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: উটগুলো কি বাচ্চাই প্রসব করে না?” - [তিরমিযী, আস-সুনান: আল-বির্রু ( البر ) / ৫৭, হাদিস নং- ১৯৯১, ৫ / ৩৭৫; আর তিনি বলেন: এই হাদিসটি সহীহ, গরীব]।]; তাঁদের সাথে মিশতেন, আলাপ আলোচনা করতেন, তাঁদের শিশুদের সাথে খেলাধুলা ও রসিকতা করতেন [আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: « كان رسول الله صلى الله عليه و سلم ليخالطنا حتى إن كان ليقول لأخ لي صغير : يا أبا عمير ما فعل النغير ؟ » . ( رواه الترمذي ) .“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সাথে মিশতেন, এমনকি তিনি আমার ছোট ভাইকে বলতেন: হে আবূ ‘উমাইর! তোমার ‘নুগাইর’ (ছোট পাখি) কী করে?” - [তিরমিযী, আস-সুনান: আল-বির্রু ( البر ) / ৫৭, হাদিস নং- ১৯৮৯, ৪ / ৩৫৭]।] এবং তাদেরকে কোলে নিতেন; আর কখনও কখনও শিশুরা তাঁর কোলের মধ্যে প্রশ্রাব করে দিত, কিন্তু তিনি তাকে তিরস্কার করতেন না।
আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বাধীন ব্যক্তি, গোলাম, ধনী ও দরিদ্র সকলের দা‘ওয়াত গ্রহণ করতেন [আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: « رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَرْكَبُ الْحِمَارَ الْعُرْيَ ، وَيُجِيبُ دَعْوَةَ الْمَمْلُوكِ، وَيَنَامُ عَلَى الأَرْضِ ، وَيَجْلِسُ عَلَى الأَرْضِ ، وَيَأْكُلُ عَلَى الأَرْضِ ، وَيَقُولُ : لَوْ دُعِيتُ إِلَى كُرَاعٍ جِئْتُ ، وَلَوْ أُهْدِيَ إِلَيَّ ذِرَاعٌ لَقَبِلْتُ » . ( رواه البغوي ) .“আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গদীবিহীন গাধার উপর আরোহন করতে দেখেছি; দেখেছি ক্রীতদাসের আহ্বানে সাড়া দিতে; আরও দেখেছি মাটিতে ঘুমাতে, মাটির উপর বসতে এবং মাটিতে বসে খাওয়া-দাওয়া করতে; আর তিনি বলতেন: যদি আমাকে গরু-ছাগলের খুর আহারের জন্য দাওয়াত দেয়া হয়, তাহলেও আমি আসব; আর যদি (গরু-ছাগলের) একটি বাহু আমার নিকট উপহার (হাদিয়া) হিসেবে পাঠানো হয়, তাহলে আমি তা গ্রহণ করব।” - [বাগবী, শরহুস সুন্নাহ ( شرح السنة ): ফাদায়েল / নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নম্রতা ( تواضعه صلى الله عليه وسلم ), হাদিস নং- ৩৬৭৪, ১৩ / ২৪২.]।]; আর তিনি মদীনার প্রান্তে গিয়ে রোগীর সেবা করতেন [আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: « كان رسول الله صلى الله عليه و سلم يعود المريض , ويشهد الجنازة , ويركب الحمار , ويجيب دعوة العبد » . ( رواه الترمذي ) .“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোগীর সেবা করতেন, জানাযার নামাযে শরীক হতেন, গাধায় আরোহন করতেন এবং গোলামের দাওয়াত গ্রহণ করতেন।” - [তিরমিযী, আস-সুনান: জানায়েয / ৩২, হাদিস নং- ১০১৭, ৩ / ৩২৮; আর তিনি বলেন: এই হাদিসটি আনাস রা. থেকে মুসলিম— এই সনদে ব্যতীত অন্য কোন সনদে বর্ণিত হয়েছে বলে আমরা জানি না; আর কানা মুসলিম, সে হল মুসলিম ইবন কাইসান, যার ব্যাপারে কথা রয়েছে]।]; তিনি ওযর পেশকারী ব্যক্তির ওযর গ্রহণ করতেন; আর তিনি জনগণকে নিয়ে সালাত আদায় করা অবস্থায় যখন শিশুর কান্না শুনতেন, তখন তিনি তার মায়ের ফিতনায় পড়ার আশঙ্কায় সালাত দ্রুত শেষ করতেন [আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: « ما صليت وراء إمام قط أخف صلاة , ولا أتم من النبي صلى الله عليه و سلم وإن كان ليسمع بكاء الصبي فيخفف مخافة أن تفتن أمه » . ( رواه البخاري ) .“আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেয়ে সংক্ষিপ্ত এবং পূর্ণাঙ্গ সালাত আর কোনো ইমামের পিছনে কখনও পড়ি নি; আর তা এ জন্য যে, তিনি শিশুর কান্না শুনতে পেতেন এবং তার মায়ের ফিতনায় পড়ার আশঙ্কায় সংক্ষেপ করতেন।” - [বুখারী, আস-সহীহ: আযান / ৬৫, ১ / ১৭৩]।]।
আর আবূ কাতাদা রা. বর্ণিত হাদিসের মধ্যে আছে:
« كَانَ يُصَلِّى وَهُوَ حَامِلٌ أُمَامَةَ بِنْتَ زَيْنَبَ بِنْتِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَلأَبِى الْعَاصِ بْنِ الرَّبِيعِ , فَإِذَا قَامَ حَمَلَهَا وَإِذَا سَجَدَ وَضَعَهَا» . ( رواه مسلم ) .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কন্যা যয়নাবের কন্যা উমামাকে (আবূল ‘আস ইবন রাবী‘র ঔরসজাত) স্বীয় কাঁধে উঠিয়ে সালাত আদায় করতেন। যখন তিনি দাঁড়াতেন, তখন তাকে উঠিয়ে নিতেন; আর যখন তিনি সিজদা করতেন, তখন তাকে নামিয়ে রাখতেন।” [মুসলিম, আস-সহীহ: মাসাজিদ / ৯, হাদিস নং- ৫৪৩, ১ / ৩৮৫]
আবূ বুরায়দা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:
« كان رسول الله صلى الله عليه و سلم يخطبنا إذ جاء الحسن و الحسين عليهما السلام عليهما قميصان أحمران يمشيان ويعثران , فنزل رسول الله صلى الله عليه و سلم من المنبر فحملهما ووضعهما بين يديه , ثم قال : صدق الله ﴿ أَنَّمَآ أَمۡوَٰلُكُمۡ وَأَوۡلَٰدُكُمۡ فِتۡنَةٞ ﴾ [ الانفال : ٢٨ ] فنظرت إلى هذين الصبيين يميشيان ويعثران فلم أصبر حتى قطعت حديثي ورفعتهما » . ( رواه الترمذي ) .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভাষণ দিচ্ছিলেন এমন সময় হাসান ও হুসাইন রা. আসলেন; তাঁদের গায়ে ছিল লাল জামা; তাঁরা হাঁটছিলেন আবার পড়ে যাচ্ছিলেন; অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বর থেকে নেমে এলেন এবং তাঁদের দু’জনকে উঠিয়ে নিয়ে সামনে বসালেন; তারপর বললেন: আল্লাহ তা‘আলা সত্যই বলেছেন: ﴿ أَنَّمَآ أَمۡوَٰلُكُمۡ وَأَوۡلَٰدُكُمۡ فِتۡنَةٞ ﴾ [তোমাদের সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি তো তোমাদের জন্য ফিতনা (পরীক্ষা) স্বরূপ। - সূরা আল-আনফাল: ২৮]; এই শিশু দু’টি হেঁটে আসছিল আর পড়ে যাচ্ছিল দেখে আমি আর স্থির থাকতে পারলাম না, এমনকি কথা বন্ধ করে দিলাম এবং এদেরকে উঠিয়ে নিলাম।” [তিরমিযী, আস-সুনান: মানাকিব / ৩১, হাদিস নং- ৩৭৭৪, ৫ / ৬৫৮; আর তিনি বলেছেন: এই হাদিসটি হাসান, গরীব।]
হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: আমি আমার পিতাকে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথীদের মধ্যে তাঁর আচার-ব্যবহারের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলাম, জবাবে তিনি বললেন:
« كان رسول الله صلى الله عليه و سلم دائم البشر , سهل الخلق , لين الجانب , ليس بفظ و لا غليظ و لا صخاب , و لا فحاش , و لا عياب , و لا مشاح , يتغافل عما لا يشتهي , و لا يويس منه و لا يجيب فيه , قد ترك نفسه من ثلاث : المراء والإكثار ومما لا يعنيه , و ترك الناس من ثلاث : كان لا يذم أحدا و لا يعيره , و لا يطلب عورته , و لا يتكلم إلا بما رجا ثوابه , و إذا تكلم أطرق جلساؤه كأنما على رؤوسهم الطير , فإذا سكت تكلموا , و لا يتنازعوا عنده الحديث , و من تكلم عنده أنصتوا له حتى يفرغ , حديثهم حديث أولهم , يضحك مما يضحكون منه , و يتعجب مما يتعجبون منه , و يصبر للغريب على الجفوة في منطقه و مسألته حتى إذا كان أصحابه ليستجلبونهم , و يقول : إذا رأيتم طالب الحاجة يطلبها فارفدوه , و لا يقبل الثناء من مكافئ , و لا يقطع على أحد حديثه حتى يجوز , فيقطعه بنهي أو قيام » . ( رواه الترمذي ) .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সদাহাসিমুখ ও বিনম্র স্বভাবের অধিকারী; তিনি রূঢ়ভাষী বা কঠিন হৃদয়ের অধিকারী ছিলেন না; তিনি উচ্চস্বরে কথা বলতেন না, অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করতেন না, অপরের দোষ খুঁজে বেড়াতেন না এবং বখীল ছিলেন না। যা চাইতেন না তা থেকে নির্লিপ্ত থাকতেন; কোনো আশাকারীকে নিরাশ করতেন না, তেমনি কাউকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতিও দিতেন না। তিনটি বিষয় থেকে তিনি দূরে থাকতেন: প্রদর্শনেচ্ছা, বেশী কথা ও অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলা। আর তিনটি কাজ থেকে তিনি মানুষকে মুক্ত রাখতেন: তিনি কাউকে নিন্দা করতেন না, কাউকে অপবাদ দিতেন না এবং কারও দোষ-ত্রুটি অনুসন্ধান করতেন না। আর যে কথায় সাওয়াব হয়, এমন কথা ছাড়া অন্য কোন কথা বলতেন না। তিনি যখন কথা বলতেন, তখন উপস্থিত শ্রোতাদের মনোযোগ এমনভাবে আকর্ষণ করতেন যে, তাদের মাথায় যেন পাখি বসে আছে। যখন তিনি কথা বলা শেষ করে নিরব হতেন, তখন অন্যরা কথা বলত এবং তাঁর নিকট তারা কেউ বাদানুবাদ করত না। আর তাঁর নিকট কেউ কথা বলা শুরু করলে তার কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত অন্যদেরকে চুপ থাকতে বলতেন। কোনো কথায় তারা হাসলে তিনিও হাসতেন এবং তারা বিস্ময় প্রকাশ করলে তিনিও বিস্ময় প্রকাশ করতেন। অপরিচিত লোকের রূঢ় আচরণ কিংবা কঠোর উক্তি তিনি ধৈর্যের সাথে সহ্য করতেন, এমনকি সাহাবীগণকে এমন লোকদের (অপরিচিত লোকদেরকে) নিয়ে আসতে বলতেন। আরও বলতেন: যখন তোমরা কোনো প্রয়োজন দেখা দেওয়া লোক দেখবে তখন তা সমাধা করতে তার সাহায্য করবে। শুধু ভালোর বিনিময়ে প্রশংসা ব্যতীত অন্য কোনো প্রকার প্রশংসা তিনি গ্রহণ করতেন না। কেউ কথা বলতে থাকলে তাকে থামিয়ে দিয়ে তিনি নিজে কথা বলা আরম্ভ করতেন না; অবশ্য কেউ সীমা লঙ্ঘন করলে তাকে থামিয়ে দিতেন অথবা মজলিস থেকে উঠে যেতেন (যাতে বক্তা নিজেই চুপ হয়ে যায়)।” [তিরমিযী, আস-সুনান: শামাইলে মুহাম্মদ, পরিচ্ছেদ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের চরিত্র মাধুর্যের বিবরণ, হাদিস নং- ৩২৪, পৃ. ১৯৮ – ২০০; বাগবী, শরহুস সুন্নাহ: ফাদায়েল / পরিচ্ছেদ: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমগ্রীক গুণাবলী ( باب جامع صفاته صلى الله عليه و سلم ), হাদিস নং- ৩৭০৪, ১৩ / ৩৭০ - ৩৭৫, ইমাম তিরমিযীর সনদ অনুযায়ী; বায়হাকী, আদ-দালায়েল ( الدلائل ): পৃ. ২৮৫ - ২৮৯; এই হাদিসটি একটি দীর্ঘ হাদিসের অংশবিশেষ, হিন্দ ইবন আবি হালা রা. হাসান রা. কে জিজ্ঞাসা করেন, আর তিনি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের গুণ ও চরিত্রের বর্ণনাকারী, এই হাদিসটি দুর্বল, কেননা তার সনদে সুফিয়ান ইবন ওকী‘ নামে একজন দুর্বল বর্ণনাকারী রয়েছে, অনুরূপভাবে তাতে জামী’ ইবন ‘উমায়ের নামে একজন দুর্বল বর্ণনাকারী আছে, আর তাতে বনী তামীম গোত্রের একজন অপরিচিত ব্যক্তি রয়েছে; তবে মতন তথা মূল বক্তব্যের সমর্থনে সহীহ বর্ণনা রয়েছে।]
আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাদাসিদে ও অনাড়াম্বর জীবনযাপনে চরম ধৈর্যশীল মানুষ ছিলেন; তাঁর বালিশ ছিল যার অভ্যন্তরে ছিল খেজুরের ছোবড়া। আনাস ইবন মালেক রা. কর্তৃক বর্ণিত হাদিসের মধ্যে আছে, তিনি বলেন:
«دخلت على رسول الله صلى الله عليه و سلم وهو على سرير مضطجع مرمل بشريط وتحت رأسه وسادة من آدم حشوها ليف , فدخل عليه نفر من أصحابه ودخل عمر , فانحرف رسول الله صلى الله عليه و سلم انحرافة , فلم ير عمر بين جنبه وبين الشريط ثوبا , وقد أثر الشريط بجنب رسول الله صلى الله عليه و سلم , فبكى عمر , فقال له النبي صلى الله عليه و سلم : ما يبكيك يا عمر ؟ قال : والله الا أن أكون أعلم انك أكرم على الله عز و جل من كسرى وقيصر , وهما يعبثان في الدنيا فيما يعبثان فيه , وأنت يا رسول الله بالمكان الذي أرى ! فقال النبي صلى الله عليه و سلم : أما ترضى ان تكون لهم الدنيا ولنا الآخرة ؟ قال عمر : بلى , قال : فإنه كذاك » . ( رواه أحمد ) .
“আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গিয়ে হাযির হলাম এমতাবস্থায় যে, তিনি শুয়ে আছেন এমন এক খাটে, যা খেজুরের রশি দ্বারা তৈরি করা এবং তাঁর মাথার নীচে ছিল তাম্রবর্ণের বালিশ, যা খেজুর পাতার দ্বারা ভর্তি; অতঃপর তাঁর নিকট হাযির হলে এক দল সাহাবী এবং সাথে ওমর রা. উপস্থিত হলেন; অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার মোড় নিলেন, তাতে ওমর রা. তাঁর পার্শ্বদেশ ও খেজুরের রশির মাঝখানে (বিছানো) কোন কাপড় দেখতে পেলেন না, আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের পার্শ্বদেশে খেজুরের রশির চিহ্ন লেগে ছিল; তা দেখে ওমর রা. কেঁদে পেললেন; অতঃপর তাঁকে লক্ষ্য করে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: হে ওমর! তুমি কাঁদছ কেন? জবাবে ওমর রা. বললেন: আল্লাহর কসম! আমি জানি যে, আপনি আল্লাহ তা‘আলার নিকট কিসরা ও কায়সার থেকে অনেক বেশি সম্মানিত ও প্রিয়; অথচ তারা দুনিয়ার মধ্যে আমোদ-প্রমোদ করে যাচ্ছে; আর হে আল্লাহর রাসূল! আপনার অবস্থান তো আমি দেখতেই পাচ্ছি! তখন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তুমি কি পছন্দ কর না যে, তাদের জন্য (সমৃদ্ধ) হউক দুনিয়া, আর আমাদের জন্য (সমৃদ্ধ) হউক আখিরাত? জবাবে ওমর রা. বললেন: হ্যাঁ, অবশ্যই; তিনি বললেন: সুতরাং (প্রকৃত) বিষয়টি অনুরূপই।” [ইমাম আহমদ, মুসনাদ: ৩ / ১৩৯ - ১৪০]
এই হল নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের চরিত্রের উজ্জ্বল কিছু মণি-মুক্তা; সুতরাং আপনারা তাকে আপনাদের জন্য অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় মশাল বা পাঞ্জেরী হিসেবে গ্রহণ করুন, তার প্রতি আস্থা রাখুন, তাকে গ্রহণ করুন, তার উপর পথ চলুন এবং সঠিক পথের অনুসারী হউন; আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে উত্তম চরিত্র দান করেছেন এবং আমাদেরকে তাঁর অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন; আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿ فََٔامِنُواْ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِ ٱلنَّبِيِّ ٱلۡأُمِّيِّ ٱلَّذِي يُؤۡمِنُ بِٱللَّهِ وَكَلِمَٰتِهِۦ وَٱتَّبِعُوهُ لَعَلَّكُمۡ تَهۡتَدُونَ ١٥٨ ﴾ [ الاعراف : ١٥٨ ]
“কাজেই তোমরা ঈমান আন আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রাসূল উম্মী নবীর প্রতি, যিনি আল্লাহ ও তাঁর বাণীসমূহে ঈমান রাখেন। আর তোমরা তার অনুসরণ কর, যাতে তোমরা হিদায়াতপ্রাপ্ত হও।” – [সূরা আল-আ‘রাফ: ১৫৮]।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে এবং আপনাদেরকে এই নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মহব্বত করার সুযোগ দান করুন এবং আমাদেরকে আজীবন তাঁর সুন্নাহ ও হিদায়েতের অনুসরণ করার তাওফীক দান করুন।
﴿ وَإِنَّكَ لَعَلَىٰ خُلُقٍ عَظِيمٖ ٤ ﴾ [ القلم : ٤ ]
“আর নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের উপর রয়েছেন।” — (সূরা আল-ক্বলম: ৪)
বদান্যতা ও দানশীলতার ক্ষেত্রে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সর্বাধিক উদার দানশীল মানুষ, তিনি এত বেশি পরিমাণে দান করতেন, সে পর্যায়ে কোনো রাজা-বাদশা পৌঁছতে পারে না; হাদিসের ভাষায়:
« فَجَاءَهُ رَجُلٌ فَأَعْطَاهُ غَنَمًا بَيْنَ جَبَلَيْنِ , فَرَجَعَ إِلَى قَوْمِهِ , فَقَالَ : يَا قَوْمِ ! أَسْلِمُوا فَإِنَّ مُحَمَّدًا يُعْطِى عَطَاءً لاَ يَخْشَى الْفَاقَةَ » . ( رواه مسلم ) .
“এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এলো; তিনি তাকে এত বেশি ছাগল দিলেন যাতে দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থান পূর্ণ হয়ে যাবে। তারপর সে ব্যক্তি তার সম্প্রদায়ের কাছে গিয়ে তাদের বলল, হে আমার জাতি ভাইয়েরা! তোমরা ইসলাম গ্রহণ কর; কেননা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এত বেশি দান করেন যে, তিনি অভাবের ভয় করেন না।” [মুসলিম, আস-সহীহ: ফাযায়েল / ১৪, হাদিস নং- ২৩১২, ৪ / ১৮০৬]
জাবির ইবন আবদিল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন:
« مَا سُئِلَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم شَيْئًا قَطُّ فَقَالَ : لاَ » . ( رواه مسلم ) .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে কেউ কিছু চাইলে কোন দিন তিনি ‘না’ বলেন নি।” [মুসলিম, আস-সহীহ: ফাযায়েল / ১৪, হাদিস নং- ২৩১১, ৪ / ১৮০৫]
আর যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুনায়েনের যুদ্ধ থেকে ফিরে আসলেন, তখন আরব বেদুইনগণ তাঁর পিছু নিতে লাগল তার কাছে চাওয়া আরম্ভ করল, এমনকি তারা তাঁকে একটি গাছের নিকট আশ্রয় নিতে বাধ্য করল; তারপর তিনি তাঁর বাহনের উপর থাকা অবস্থায়ই তারা তাঁর চাদরটি ছিনিয়ে নিল, তখন তিনি বললেন:
« ردوا عليّ ردائي ، أتخشون عليّ البخل ؟ فقال : فوالله لو كان لي عدد هذه العضاة نعماً , لقسمته بينكم ، ثم لا تجدوني بخيلاً ولا جباناً ولا كذاباً » . ( رواه البغوي ) .
“তোমরা আমাকে আমার চাদরটি ফেরত দাও; তোমরা কি আমার ব্যাপারে কৃপণতার আশঙ্কা কর? তারপর তিনি বললেন: আল্লাহর শপথ! যদি আমার নিকট এই গাছপালার সংখ্যা পরিমাণ উটও থাকে, তবে তা আমি তোমাদের মাঝে বন্টন করে দিব; অতঃপর তোমরা আমাকে কৃপণ, কাপুরুষ ও মিথ্যাবাদী হিসেবে পাবে না।” [বাগবী, শরহুস সুন্নাহ ( شرح السنة ): ফাদায়েল / নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের দানশীলতা( جوده صلى الله عليه وسلم ), হাদিস নং- ৩৬৮৯, ১৩ / ২৫২, আর তিনি বলেছেন: এই হাদিসটি সহীহ; আর ইমাম নাসায়ী র. তাঁর ‘আস-সুনান’ গ্রন্থে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন: হিবা / ১, ৬ / ২৬৩ – ২৬৪। العضاه : ছোট কাঁটাযুক্ত বৃক্ষ বিশেষ, যা শক্ত এবং যমীনের মধ্যে বিদ্যমান থাকে। - [আল-কামূসুল মুহীত, মূল অক্ষর ( عضض ), পৃ. ৮৩৫; আর ইমাম নাসায়ী র. এর বর্ণনার মধ্যে এসেছে: « لو أن لكم شجر تهامة نعما ...» . [যদি তোমাদের জন্য মক্কা নগরীর গাছপালার সংখ্যা পরিমাণ উট অর্জিত হত ...]।]
আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিজের উপর অপরকে প্রাধান্য দিতেন; ফলে তিনি দান করে দিতেন, অথচ তাঁর উপর একমাস বা দুইমাস অতিবাহিত হয়ে যেত, তাঁর ঘরে আগুন জ্বলত না [‘উরওয়া র. থেকে বর্ণিত, তিনি ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলতেন: «وَاللَّهِ يَا ابْنَ أُخْتِى , إِنْ كُنَّا لَنَنْظُرُ إِلَى الْهِلاَلِ ثُمَّ الْهِلاَلِ ثُمَّ الْهِلاَلِ , ثَلاَثَةَ أَهِلَّةٍ فِى شَهْرَيْنِ وَمَا أُوقِدَ فِى أَبْيَاتِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم نَارٌ , قَالَ : قُلْتُ : يَا خَالَةُ فَمَا كَانَ يُعَيِّشُكُمْ ؟ قَالَتِ : الأَسْوَدَانِ التَّمْرُ وَالْمَاءُ , إِلاَّ أَنَّهُ قَدْ كَانَ لِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم جِيرَانٌ مِنَ الأَنْصَارِ , وَكَانَتْ لَهُمْ مَنَائِحُ , فَكَانُوا يُرْسِلُونَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِنْ أَلْبَانِهَا فَيَسْقِينَاهُ » . ( رواه مسلم ) .“আল্লাহর কসম! হে আমার বোনের ছেলে! আমরা (মাসের) নতুন চাঁদ দেখতাম, অতঃপর আবার নতুন চাঁদ দেখতাম, তারপর আবার নতুন চাঁদ দেখতাম; অর্থাৎ দুই মাসে তিনটি নতুন চাঁদ দেখতাম। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো ঘরেই আগুন জ্বালানো হতো না। তিনি (‘উরওয়া র.) বলেন: আমি জিজ্ঞাসা করলাম: হে খালা! আপনারা তা হলে কিভাবে বেঁচে থাকতেন? তিনি বললেন: দু’টি কালো জিনিস: খেজুর ও পানি; তবে কয়েক ঘর আনসার পরিবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিবেশী ছিল; তাঁদের কিছু দুধালো উটনী ও বকরী ছিল। তাঁরা হাদিয়া হিসাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য দুধ পাঠাতেন; আর তিনি আমাদেরকে তা পান করতে দিতেন। - [মুসলিম, আস-সহীহ: যুহুদ, হাদিস নং- ২৯৭২, ৪ / ২২৮৩ ]]।
জনৈক মহিলা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের খিদমতে একটি ঝালরসহ বোনা চাদর হাদিয়া (উপহার) স্বরূপ দান করলেন এবং বললেন:
« يا رسول الله أكسوك هذه , فأخذها النبي صلى الله عليه و سلم محتاجا إليها , فلبسها , فرآها عليه رجل من الصحابة , فقال : يا رسول الله ! ما أحسن هذه فاكسنيها , فقال : نعم , . فلما قام النبي صلى الله عليه و سلم لامه أصحابه , قالوا : ما أحسنت حين رأيت النبي صلى الله عليه و سلم أخذها محتاجا إليها ثم سألته إياها , وقد عرفت أنه لا يسأل شيئا فيمنعه , فقال : رجوت بركتها حين لبسها النبي صلى الله عليه و سلم لعلي أكفن فيها » . ( رواه البخاري ) .
“হে আল্লাহর রাসূল! আমি এটি আপনাকে পরিধানের জন্য দিলাম; আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাদরখানা এমনভাবে গ্রহণ করলেন, যেন তাঁর এটির দরকার ছিল। এরপর তিনি এটি পরিধান করলেন। তারপর সাহাবীদের মধ্য থেকে একজন সেটি তাঁর দেহে দেখে আবেদন করলেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! এটা কতই না সুন্দর! আপনি এটি আমাকে দিয়ে দিন। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: হ্যাঁ (দিয়ে দেব)। অতঃপর যখন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠে চলে গেলেন, তখন অন্যান্য সাহাবীগণ তাঁকে দোষারোপ করে বললেন: তুমি ভাল কাজ কর নি। যখন তুমি দেখলে যে, তিনি চাদরখানা এমনভাবে গ্রহণ করেছেন, যেন এটি তাঁর প্রয়োজন ছিল; এরপরও তুমি সেটা চেয়ে বসলে; অথচ তুমি অবশ্যই জান যে, তাঁর কাছে যখনই কোন জিনিস চাওয়া হয়, তখন তিনি কাউকে বিমুখ করেন না। তখন সেই ব্যক্তি বলল: যখন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটি পরিধান করেছেন, তখন তাঁর বরকত হাসিল করার আশায়ই আমি এই কাজ করেছি, যেন আমি এ চাদরটাকে আমার কাফন বানাতে পারি।” [বুখারী, আস-সহীহ: আদব / ৩৯, ৭ / ৮২]
আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বদান্যতা বা দানশীলতা ছিল তার যথাযথ স্থানে; তিনি দান করতেন আল্লাহর জন্যে এবং আল্লাহর নামে; হয় তিনি ফকীর-মিসকীনকে দান করতেন অথবা অভাবীকে; অথবা আল্লাহর পথে; অথবা ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য; অথবা উম্মতের জন্য শরী‘য়তের বিধিবিধান প্রবর্তনের উদ্দেশ্যে।
আর বীরত্বের ক্ষেত্রে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন খুব সাহসী মানুষ এবং সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ গ্রহণে ছিলেন তাদের মধ্যে অধিকতর তীক্ষ্ন ও মজবুত; জনগণ পালিয়ে যেত, অথচ তিনি সুদৃঢ়ভাবে অটল থাকতেন। আব্বাস ইবন আবদিল মুত্তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:
«فَلَمَّا الْتَقَى الْمُسْلِمُونَ وَالْكُفَّارُ ( يعني في حنين ) وَلَّى الْمُسْلِمُونَ مُدْبِرِينَ , فَطَفِقَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَرْكُضُ بَغْلَتَهُ قِبَلَ الْكُفَّارِ , قَالَ عَبَّاسٌ : وَ أَنَا آخِذٌ بِلِجَامِ بَغْلَةِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَكُفُّهَا إِرَادَةَ أَنْ لاَ تُسْرِعَ , و كان يقول حينئذ : « أنا النبي لا كذب أنا ابن عبد المطلب » . ( رواه مسلم ) .
“যখন (হুনায়েনের যুদ্ধে) মুসলিম ও কাফিরগণ পরস্পর সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হল, তখন মুসলিমগণ (যুদ্ধের এক পর্যায়ে) পিছনের দিকে পলায়ন করতে লাগলেন; আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় পায়ের গোড়ালী দ্বারা নিজের খচ্চরকে আঘাত করে কাফিরদের দিকে ধাবিত করছিলেন। আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: আমি তাঁর খচ্চরের লাগাম ধরে রেখেছিলাম এবং একে থামিয়ে রাখার চেষ্টা করছিলাম যাতে দ্রুত গতিতে অগ্রসর হতে না পারে; আর তখন তিনি বলছিলেন:
“আমি যে নবী তা তো নয় মিথ্যা,
আমি হলাম আবদুল মুত্তালিবের বেটা।” [মুসলিম, আস-সহীহ: জিহাদ / ২৮, হাদিস নং- ১৭৭৫, ৩ / ১৩৯৮ এবং তাতে আছে: « فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : « أَىْ عَبَّاسُ نَادِ أَصْحَابَ السَّمُرَةِ » . [তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: হে আব্বাস! আসহাবে সমুরাকে (গাছের নিছে বাই‘আতকারি সাহাবীদের) আহ্বান কর]। আর তাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই কথাটি বর্ণিত নেই: « أنا النبي لا كذب أنا ابن عبد المطلب » [আমি যে নবী তা তো নয় মিথ্যা, আমি হলাম আবদুল মুত্তালিবের বেটা।]। আর বারা রা. এর বর্ণনার মধ্যে তা বর্ণিত হয়েছে; তাতে আছে:« ... فَأَقْبَلُوا هُنَاكَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم , وَرَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَلَى بَغْلَتِهِ الْبَيْضَاءِ وَأَبُو سُفْيَانَ بْنُ الْحَارِثِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ يَقُودُ بِهِ فَنَزَلَ فَاسْتَنْصَرَ وَقَالَ : « أَنَا النَّبِىُّ لاَ كَذِبْ أَنَا ابْنُ عَبْدِ الْمُطَّلِبْ » . ( رواه مسلم ) .“... তখন তাঁরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিকে এগিয়ে এলেন, আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে সময় তাঁর সাদা খচ্চরের উপর ছিলেন; আর আবূ সুফিয়ান ইবন আবদিল মুত্তালিব রা. একে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন। অতঃপর তিনি অবতরণ করলেন এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইলেন। আর তিনি বললেন: “আমি অবশ্যই নবী, এ কথা মিথ্যা নয়; আমি ইবন আবদিল মুত্তালিব।” - [মুসলিম, আস-সহীহ: জিহাদ / ২৮, হাদিস নং- ১৭৭৬, ৩ / ১৪০০]।]
আর আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:
«كنا اذا احمر البأس , ولقى القوم القوم , اتقينا برسول الله صلى الله تعالى عليه وسلم فما يكون احد اقرب الى العدو منه» . ( رواه البغوي ) .
“যুদ্ধের উত্তেজনা যখন ঘোরতর হয়ে উঠত এবং এক দল আরেক দলের মুখোমুখি হয়ে দাঁড়াতো, তখন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে আত্মরক্ষা করতাম; কারণ, কোনো ব্যক্তিই তাঁর চেয়ে শত্রুর অধিক নিকটবর্তী হত না।” [বাগবী, শরহুস সুন্নাহ ( شرح السنة ): ফাদায়েল / নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বীরত্ব ( شجاعته صلى الله عليه وسلم ), হাদিস নং- ৩৬৯৮, ১৩ / ২৫৭ -২৫৮।ইমাম মুসলিম র. বর্ণনা করেছেন, বারা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: « كُنَّا وَاللَّهِ إِذَا احْمَرَّ الْبَأْسُ نَتَّقِى بِهِ , وَإِنَّ الشُّجَاعَ مِنَّا لَلَّذِى يُحَاذِى بِهِ . يَعْنِى النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم » . ( رواه مسلم ) .“আল্লাহর কসম! যুদ্ধের উত্তেজনা যখন ঘোরতর হয়ে উঠত, তখন আমরা তাঁর মাধ্যমে আত্মরক্ষা করতাম। নিশ্চয়ই আমাদের মাঝে বীরপুরুষ তিনিই, যে যুদ্ধে তাঁর বরাবর থাকে, অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম। (রাসূলের বরাবর কেউ দাঁড়ালে সে সাহসী হতো ও তার বীরত্ব প্রকাশ পেত)।” [মুসলিম, আস-সহীহ: জিহাদ / ২৮, হাদিস নং- ১৭৭৬, ৩ / ১৪০১]।]
অনুরূপভাবে আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:
« كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَحْسَنَ النَّاسِ , وَكَانَ أَجْوَدَ النَّاسِ , وَكَانَ أَشْجَعَ النَّاسِ , وَلَقَدْ فَزِعَ أَهْلُ الْمَدِينَةِ ذَاتَ لَيْلَةٍ , فَانْطَلَقَ نَاسٌ قِبَلَ الصَّوْتِ , فَتَلَقَّاهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم رَاجِعًا وَقَدْ سَبَقَهُمْ إِلَى الصَّوْتِ وَهُوَ عَلَى فَرَسٍ لأَبِى طَلْحَةَ عُرْىٍ , فِى عُنُقِهِ السَّيْفُ وَهُوَ يَقُولُ : « لَمْ تُرَاعُوا لَمْ تُرَاعُوا » . قَالَ : « وَجَدْنَاهُ بَحْرًا أَوْ إِنَّهُ لَبَحْرٌ » . قَالَ : وَكَانَ فَرَسًا يُبَطَّأُ » . ( رواه مسلم ) .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সকল মানুষের মধ্যে অতি সুন্দর, অতি দানশীল এবং শ্রষ্ঠ বীর ছিলেন। কোন এক রাতে মদীনাবাসীগণ ঘাবড়িয়ে গিয়েছিল; যে দিক থেকে শব্দ আসছিল, লোকেরা সেই দিকে ছুটে চলল; এক পর্যায়ে পথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে তাদের সাক্ষাত হয় এমতাবস্থায় যে, তখন তিনি ফিরে আসছিলেন; কারণ, শব্দের দিকে প্রথম তিনিই ছুটে গিয়েছিলেন। তখন তিনি আবূ তালহা (রা.) এর জিন বা গদিবিহীন ঘোড়ায় আরোহিত হয়েছিলেন; তাঁর কাঁধে তরবারি ছিল; আর তিনি বলেন: তোমরা ভীত হয়ো না, তোমরা ভীত হয়ো না। বর্ণনাকারী (আনাস) আরও বললেন: আমি এই ঘোড়াকে পেয়েছি সমুদ্রের মত, অথবা তিনি বললেন: এ তো সমুদ্র। অথচ ইতঃপূর্বে এই ঘোড়ার গতি ছিল ধীর।” [মুসলিম, আস-সহীহ: ফাদায়েল / ১১, হাদিস নং- ২৩০৭, ৪ / ১৮০২ - ১৮০৩; আর এটা হল নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহা বীরত্ব ও আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ ভরসার চূড়ান্ত প্রমাণ।]
আর এই ধরনের মহাবীরত্ব থাকা সত্ত্বেও তিনি ছিলেন কোমল নম্র ভদ্র দয়াবান এক ব্যক্তি; আর তিনি অশ্লীলভাষী ছিলেন না এবং অশ্লীল কথা বানিয়েও বলতে পারতেন না [আবদুল্লাহ ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: « لم يكن النبي صلى الله عليه و سلم فاحشا ولا متفحشا , وكان يقول : « إن من خياركم أحسنكم أخلاقا » . ( رواه البخاري ) .“নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম অশ্লীলভাষী ছিলেন না এবং অশ্লীল কথা কষ্ট করেও বলতে পারতেন না; তিনি বলতেন: “তোমাদের মধ্যে উত্তম সে ব্যক্তি, যার চরিত্র ভাল।”[বুখারী, আস-সহীহ: মানকিব / ২৩, ৪ / ১৬৬]।]; আর তিনি ছিলেন না বাজারের মধ্যে হৈ-চৈকারী; আর তিনি মন্দের জবাব মন্দের মাধ্যমে দিতেন না, বরং তিনি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখতেন; আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:
« خَدَمْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَشْرَ سِنِينَ , وَاللَّهِ مَا قَالَ لِى : أُفًّا قَطُّ وَلاَ قَالَ لِى لِشَىْءٍ : لِمَ فَعَلْتَ كَذَا ؟ وَهَلاَّ فَعَلْتَ كَذَا ؟ » ( رواه مسلم ) .
“আমি দশ বছর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের খিদমত করেছি, আল্লাহর কসম! তিনি কখনও আমাকে ‘উহ্’ শব্দও বলেন নি এবং কখনও কোনো বিষয়ে আমাকে বলেন নি: তুমি কেন এটা করলে? কেন ওটা করলে না?” [মুসলিম, আস-সহীহ: ফাদায়েল / ১৩, হাদিস নং- ২৩০৯, ৪ / ১৮০৪.]
আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদের সাথে কৌতুক করতেন [আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: « قالوا يا رسول الله إنك تداعبنا , قال : إني لا أقول إلا حقا » . ( رواه الترمذي ) .“তারা বলল: হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাদের সাথে রসিকতা করেন! তিনি বললেন: নিশ্চয়ই আমি সত্য কথাই বলি।” - [তিরমিযী, আস-সুনান: আল-বির্রু ( البر ) / ৫৭, হাদিস নং- ১৯৯০, ৫ / ৩৭৫; আর তিনি বলেন: এই হাদিসটি হাসান, সহীহ]।আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: « إن رجلا استحمل رسول الله صلى الله عليه و سلم , فقال : إني حاملك على ولد الناقة , فقال : يا رسول الله ! ما أصنع بولد الناقة ؟ فقال رسول الله صلى الله عليه و سلم : وهل تلد الإبل إلا النوق ؟ » . ( رواه الترمذي ) .“এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বাহন চাইলে তিনি তাকে বললেন: আমি তোমাকে বাহন হিসেবে একটি উটনীর বাচ্চা দিব; এ কথা শুনে সে বলল: আমি উটনীর বাচ্চা দিয়ে কী করব? জবাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: উটগুলো কি বাচ্চাই প্রসব করে না?” - [তিরমিযী, আস-সুনান: আল-বির্রু ( البر ) / ৫৭, হাদিস নং- ১৯৯১, ৫ / ৩৭৫; আর তিনি বলেন: এই হাদিসটি সহীহ, গরীব]।]; তাঁদের সাথে মিশতেন, আলাপ আলোচনা করতেন, তাঁদের শিশুদের সাথে খেলাধুলা ও রসিকতা করতেন [আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: « كان رسول الله صلى الله عليه و سلم ليخالطنا حتى إن كان ليقول لأخ لي صغير : يا أبا عمير ما فعل النغير ؟ » . ( رواه الترمذي ) .“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সাথে মিশতেন, এমনকি তিনি আমার ছোট ভাইকে বলতেন: হে আবূ ‘উমাইর! তোমার ‘নুগাইর’ (ছোট পাখি) কী করে?” - [তিরমিযী, আস-সুনান: আল-বির্রু ( البر ) / ৫৭, হাদিস নং- ১৯৮৯, ৪ / ৩৫৭]।] এবং তাদেরকে কোলে নিতেন; আর কখনও কখনও শিশুরা তাঁর কোলের মধ্যে প্রশ্রাব করে দিত, কিন্তু তিনি তাকে তিরস্কার করতেন না।
আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বাধীন ব্যক্তি, গোলাম, ধনী ও দরিদ্র সকলের দা‘ওয়াত গ্রহণ করতেন [আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: « رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَرْكَبُ الْحِمَارَ الْعُرْيَ ، وَيُجِيبُ دَعْوَةَ الْمَمْلُوكِ، وَيَنَامُ عَلَى الأَرْضِ ، وَيَجْلِسُ عَلَى الأَرْضِ ، وَيَأْكُلُ عَلَى الأَرْضِ ، وَيَقُولُ : لَوْ دُعِيتُ إِلَى كُرَاعٍ جِئْتُ ، وَلَوْ أُهْدِيَ إِلَيَّ ذِرَاعٌ لَقَبِلْتُ » . ( رواه البغوي ) .“আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গদীবিহীন গাধার উপর আরোহন করতে দেখেছি; দেখেছি ক্রীতদাসের আহ্বানে সাড়া দিতে; আরও দেখেছি মাটিতে ঘুমাতে, মাটির উপর বসতে এবং মাটিতে বসে খাওয়া-দাওয়া করতে; আর তিনি বলতেন: যদি আমাকে গরু-ছাগলের খুর আহারের জন্য দাওয়াত দেয়া হয়, তাহলেও আমি আসব; আর যদি (গরু-ছাগলের) একটি বাহু আমার নিকট উপহার (হাদিয়া) হিসেবে পাঠানো হয়, তাহলে আমি তা গ্রহণ করব।” - [বাগবী, শরহুস সুন্নাহ ( شرح السنة ): ফাদায়েল / নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নম্রতা ( تواضعه صلى الله عليه وسلم ), হাদিস নং- ৩৬৭৪, ১৩ / ২৪২.]।]; আর তিনি মদীনার প্রান্তে গিয়ে রোগীর সেবা করতেন [আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: « كان رسول الله صلى الله عليه و سلم يعود المريض , ويشهد الجنازة , ويركب الحمار , ويجيب دعوة العبد » . ( رواه الترمذي ) .“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোগীর সেবা করতেন, জানাযার নামাযে শরীক হতেন, গাধায় আরোহন করতেন এবং গোলামের দাওয়াত গ্রহণ করতেন।” - [তিরমিযী, আস-সুনান: জানায়েয / ৩২, হাদিস নং- ১০১৭, ৩ / ৩২৮; আর তিনি বলেন: এই হাদিসটি আনাস রা. থেকে মুসলিম— এই সনদে ব্যতীত অন্য কোন সনদে বর্ণিত হয়েছে বলে আমরা জানি না; আর কানা মুসলিম, সে হল মুসলিম ইবন কাইসান, যার ব্যাপারে কথা রয়েছে]।]; তিনি ওযর পেশকারী ব্যক্তির ওযর গ্রহণ করতেন; আর তিনি জনগণকে নিয়ে সালাত আদায় করা অবস্থায় যখন শিশুর কান্না শুনতেন, তখন তিনি তার মায়ের ফিতনায় পড়ার আশঙ্কায় সালাত দ্রুত শেষ করতেন [আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: « ما صليت وراء إمام قط أخف صلاة , ولا أتم من النبي صلى الله عليه و سلم وإن كان ليسمع بكاء الصبي فيخفف مخافة أن تفتن أمه » . ( رواه البخاري ) .“আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেয়ে সংক্ষিপ্ত এবং পূর্ণাঙ্গ সালাত আর কোনো ইমামের পিছনে কখনও পড়ি নি; আর তা এ জন্য যে, তিনি শিশুর কান্না শুনতে পেতেন এবং তার মায়ের ফিতনায় পড়ার আশঙ্কায় সংক্ষেপ করতেন।” - [বুখারী, আস-সহীহ: আযান / ৬৫, ১ / ১৭৩]।]।
আর আবূ কাতাদা রা. বর্ণিত হাদিসের মধ্যে আছে:
« كَانَ يُصَلِّى وَهُوَ حَامِلٌ أُمَامَةَ بِنْتَ زَيْنَبَ بِنْتِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَلأَبِى الْعَاصِ بْنِ الرَّبِيعِ , فَإِذَا قَامَ حَمَلَهَا وَإِذَا سَجَدَ وَضَعَهَا» . ( رواه مسلم ) .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কন্যা যয়নাবের কন্যা উমামাকে (আবূল ‘আস ইবন রাবী‘র ঔরসজাত) স্বীয় কাঁধে উঠিয়ে সালাত আদায় করতেন। যখন তিনি দাঁড়াতেন, তখন তাকে উঠিয়ে নিতেন; আর যখন তিনি সিজদা করতেন, তখন তাকে নামিয়ে রাখতেন।” [মুসলিম, আস-সহীহ: মাসাজিদ / ৯, হাদিস নং- ৫৪৩, ১ / ৩৮৫]
আবূ বুরায়দা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:
« كان رسول الله صلى الله عليه و سلم يخطبنا إذ جاء الحسن و الحسين عليهما السلام عليهما قميصان أحمران يمشيان ويعثران , فنزل رسول الله صلى الله عليه و سلم من المنبر فحملهما ووضعهما بين يديه , ثم قال : صدق الله ﴿ أَنَّمَآ أَمۡوَٰلُكُمۡ وَأَوۡلَٰدُكُمۡ فِتۡنَةٞ ﴾ [ الانفال : ٢٨ ] فنظرت إلى هذين الصبيين يميشيان ويعثران فلم أصبر حتى قطعت حديثي ورفعتهما » . ( رواه الترمذي ) .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভাষণ দিচ্ছিলেন এমন সময় হাসান ও হুসাইন রা. আসলেন; তাঁদের গায়ে ছিল লাল জামা; তাঁরা হাঁটছিলেন আবার পড়ে যাচ্ছিলেন; অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বর থেকে নেমে এলেন এবং তাঁদের দু’জনকে উঠিয়ে নিয়ে সামনে বসালেন; তারপর বললেন: আল্লাহ তা‘আলা সত্যই বলেছেন: ﴿ أَنَّمَآ أَمۡوَٰلُكُمۡ وَأَوۡلَٰدُكُمۡ فِتۡنَةٞ ﴾ [তোমাদের সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি তো তোমাদের জন্য ফিতনা (পরীক্ষা) স্বরূপ। - সূরা আল-আনফাল: ২৮]; এই শিশু দু’টি হেঁটে আসছিল আর পড়ে যাচ্ছিল দেখে আমি আর স্থির থাকতে পারলাম না, এমনকি কথা বন্ধ করে দিলাম এবং এদেরকে উঠিয়ে নিলাম।” [তিরমিযী, আস-সুনান: মানাকিব / ৩১, হাদিস নং- ৩৭৭৪, ৫ / ৬৫৮; আর তিনি বলেছেন: এই হাদিসটি হাসান, গরীব।]
হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: আমি আমার পিতাকে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথীদের মধ্যে তাঁর আচার-ব্যবহারের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলাম, জবাবে তিনি বললেন:
« كان رسول الله صلى الله عليه و سلم دائم البشر , سهل الخلق , لين الجانب , ليس بفظ و لا غليظ و لا صخاب , و لا فحاش , و لا عياب , و لا مشاح , يتغافل عما لا يشتهي , و لا يويس منه و لا يجيب فيه , قد ترك نفسه من ثلاث : المراء والإكثار ومما لا يعنيه , و ترك الناس من ثلاث : كان لا يذم أحدا و لا يعيره , و لا يطلب عورته , و لا يتكلم إلا بما رجا ثوابه , و إذا تكلم أطرق جلساؤه كأنما على رؤوسهم الطير , فإذا سكت تكلموا , و لا يتنازعوا عنده الحديث , و من تكلم عنده أنصتوا له حتى يفرغ , حديثهم حديث أولهم , يضحك مما يضحكون منه , و يتعجب مما يتعجبون منه , و يصبر للغريب على الجفوة في منطقه و مسألته حتى إذا كان أصحابه ليستجلبونهم , و يقول : إذا رأيتم طالب الحاجة يطلبها فارفدوه , و لا يقبل الثناء من مكافئ , و لا يقطع على أحد حديثه حتى يجوز , فيقطعه بنهي أو قيام » . ( رواه الترمذي ) .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সদাহাসিমুখ ও বিনম্র স্বভাবের অধিকারী; তিনি রূঢ়ভাষী বা কঠিন হৃদয়ের অধিকারী ছিলেন না; তিনি উচ্চস্বরে কথা বলতেন না, অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করতেন না, অপরের দোষ খুঁজে বেড়াতেন না এবং বখীল ছিলেন না। যা চাইতেন না তা থেকে নির্লিপ্ত থাকতেন; কোনো আশাকারীকে নিরাশ করতেন না, তেমনি কাউকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতিও দিতেন না। তিনটি বিষয় থেকে তিনি দূরে থাকতেন: প্রদর্শনেচ্ছা, বেশী কথা ও অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলা। আর তিনটি কাজ থেকে তিনি মানুষকে মুক্ত রাখতেন: তিনি কাউকে নিন্দা করতেন না, কাউকে অপবাদ দিতেন না এবং কারও দোষ-ত্রুটি অনুসন্ধান করতেন না। আর যে কথায় সাওয়াব হয়, এমন কথা ছাড়া অন্য কোন কথা বলতেন না। তিনি যখন কথা বলতেন, তখন উপস্থিত শ্রোতাদের মনোযোগ এমনভাবে আকর্ষণ করতেন যে, তাদের মাথায় যেন পাখি বসে আছে। যখন তিনি কথা বলা শেষ করে নিরব হতেন, তখন অন্যরা কথা বলত এবং তাঁর নিকট তারা কেউ বাদানুবাদ করত না। আর তাঁর নিকট কেউ কথা বলা শুরু করলে তার কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত অন্যদেরকে চুপ থাকতে বলতেন। কোনো কথায় তারা হাসলে তিনিও হাসতেন এবং তারা বিস্ময় প্রকাশ করলে তিনিও বিস্ময় প্রকাশ করতেন। অপরিচিত লোকের রূঢ় আচরণ কিংবা কঠোর উক্তি তিনি ধৈর্যের সাথে সহ্য করতেন, এমনকি সাহাবীগণকে এমন লোকদের (অপরিচিত লোকদেরকে) নিয়ে আসতে বলতেন। আরও বলতেন: যখন তোমরা কোনো প্রয়োজন দেখা দেওয়া লোক দেখবে তখন তা সমাধা করতে তার সাহায্য করবে। শুধু ভালোর বিনিময়ে প্রশংসা ব্যতীত অন্য কোনো প্রকার প্রশংসা তিনি গ্রহণ করতেন না। কেউ কথা বলতে থাকলে তাকে থামিয়ে দিয়ে তিনি নিজে কথা বলা আরম্ভ করতেন না; অবশ্য কেউ সীমা লঙ্ঘন করলে তাকে থামিয়ে দিতেন অথবা মজলিস থেকে উঠে যেতেন (যাতে বক্তা নিজেই চুপ হয়ে যায়)।” [তিরমিযী, আস-সুনান: শামাইলে মুহাম্মদ, পরিচ্ছেদ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের চরিত্র মাধুর্যের বিবরণ, হাদিস নং- ৩২৪, পৃ. ১৯৮ – ২০০; বাগবী, শরহুস সুন্নাহ: ফাদায়েল / পরিচ্ছেদ: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমগ্রীক গুণাবলী ( باب جامع صفاته صلى الله عليه و سلم ), হাদিস নং- ৩৭০৪, ১৩ / ৩৭০ - ৩৭৫, ইমাম তিরমিযীর সনদ অনুযায়ী; বায়হাকী, আদ-দালায়েল ( الدلائل ): পৃ. ২৮৫ - ২৮৯; এই হাদিসটি একটি দীর্ঘ হাদিসের অংশবিশেষ, হিন্দ ইবন আবি হালা রা. হাসান রা. কে জিজ্ঞাসা করেন, আর তিনি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের গুণ ও চরিত্রের বর্ণনাকারী, এই হাদিসটি দুর্বল, কেননা তার সনদে সুফিয়ান ইবন ওকী‘ নামে একজন দুর্বল বর্ণনাকারী রয়েছে, অনুরূপভাবে তাতে জামী’ ইবন ‘উমায়ের নামে একজন দুর্বল বর্ণনাকারী আছে, আর তাতে বনী তামীম গোত্রের একজন অপরিচিত ব্যক্তি রয়েছে; তবে মতন তথা মূল বক্তব্যের সমর্থনে সহীহ বর্ণনা রয়েছে।]
আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাদাসিদে ও অনাড়াম্বর জীবনযাপনে চরম ধৈর্যশীল মানুষ ছিলেন; তাঁর বালিশ ছিল যার অভ্যন্তরে ছিল খেজুরের ছোবড়া। আনাস ইবন মালেক রা. কর্তৃক বর্ণিত হাদিসের মধ্যে আছে, তিনি বলেন:
«دخلت على رسول الله صلى الله عليه و سلم وهو على سرير مضطجع مرمل بشريط وتحت رأسه وسادة من آدم حشوها ليف , فدخل عليه نفر من أصحابه ودخل عمر , فانحرف رسول الله صلى الله عليه و سلم انحرافة , فلم ير عمر بين جنبه وبين الشريط ثوبا , وقد أثر الشريط بجنب رسول الله صلى الله عليه و سلم , فبكى عمر , فقال له النبي صلى الله عليه و سلم : ما يبكيك يا عمر ؟ قال : والله الا أن أكون أعلم انك أكرم على الله عز و جل من كسرى وقيصر , وهما يعبثان في الدنيا فيما يعبثان فيه , وأنت يا رسول الله بالمكان الذي أرى ! فقال النبي صلى الله عليه و سلم : أما ترضى ان تكون لهم الدنيا ولنا الآخرة ؟ قال عمر : بلى , قال : فإنه كذاك » . ( رواه أحمد ) .
“আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গিয়ে হাযির হলাম এমতাবস্থায় যে, তিনি শুয়ে আছেন এমন এক খাটে, যা খেজুরের রশি দ্বারা তৈরি করা এবং তাঁর মাথার নীচে ছিল তাম্রবর্ণের বালিশ, যা খেজুর পাতার দ্বারা ভর্তি; অতঃপর তাঁর নিকট হাযির হলে এক দল সাহাবী এবং সাথে ওমর রা. উপস্থিত হলেন; অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার মোড় নিলেন, তাতে ওমর রা. তাঁর পার্শ্বদেশ ও খেজুরের রশির মাঝখানে (বিছানো) কোন কাপড় দেখতে পেলেন না, আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের পার্শ্বদেশে খেজুরের রশির চিহ্ন লেগে ছিল; তা দেখে ওমর রা. কেঁদে পেললেন; অতঃপর তাঁকে লক্ষ্য করে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: হে ওমর! তুমি কাঁদছ কেন? জবাবে ওমর রা. বললেন: আল্লাহর কসম! আমি জানি যে, আপনি আল্লাহ তা‘আলার নিকট কিসরা ও কায়সার থেকে অনেক বেশি সম্মানিত ও প্রিয়; অথচ তারা দুনিয়ার মধ্যে আমোদ-প্রমোদ করে যাচ্ছে; আর হে আল্লাহর রাসূল! আপনার অবস্থান তো আমি দেখতেই পাচ্ছি! তখন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তুমি কি পছন্দ কর না যে, তাদের জন্য (সমৃদ্ধ) হউক দুনিয়া, আর আমাদের জন্য (সমৃদ্ধ) হউক আখিরাত? জবাবে ওমর রা. বললেন: হ্যাঁ, অবশ্যই; তিনি বললেন: সুতরাং (প্রকৃত) বিষয়টি অনুরূপই।” [ইমাম আহমদ, মুসনাদ: ৩ / ১৩৯ - ১৪০]
এই হল নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের চরিত্রের উজ্জ্বল কিছু মণি-মুক্তা; সুতরাং আপনারা তাকে আপনাদের জন্য অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় মশাল বা পাঞ্জেরী হিসেবে গ্রহণ করুন, তার প্রতি আস্থা রাখুন, তাকে গ্রহণ করুন, তার উপর পথ চলুন এবং সঠিক পথের অনুসারী হউন; আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে উত্তম চরিত্র দান করেছেন এবং আমাদেরকে তাঁর অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন; আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿ فََٔامِنُواْ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِ ٱلنَّبِيِّ ٱلۡأُمِّيِّ ٱلَّذِي يُؤۡمِنُ بِٱللَّهِ وَكَلِمَٰتِهِۦ وَٱتَّبِعُوهُ لَعَلَّكُمۡ تَهۡتَدُونَ ١٥٨ ﴾ [ الاعراف : ١٥٨ ]
“কাজেই তোমরা ঈমান আন আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রাসূল উম্মী নবীর প্রতি, যিনি আল্লাহ ও তাঁর বাণীসমূহে ঈমান রাখেন। আর তোমরা তার অনুসরণ কর, যাতে তোমরা হিদায়াতপ্রাপ্ত হও।” – [সূরা আল-আ‘রাফ: ১৫৮]।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে এবং আপনাদেরকে এই নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মহব্বত করার সুযোগ দান করুন এবং আমাদেরকে আজীবন তাঁর সুন্নাহ ও হিদায়েতের অনুসরণ করার তাওফীক দান করুন।
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন