মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
দ্বিতীয় অধিকার: তাদের সম্মান-মর্যাদা ও ন্যায়পরায়ণতায় বিশ্বাস করা এবং তারা উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ ও পরিপূর্ণ মানুষ, হক ও সঠিকতায় তারা সর্বাধিক নিকটতম, এ বিশ্বাস রাখা
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/438/7
উম্মতের মধ্যে সম্মান-মর্যাদা, সততা ও বিশুদ্ধতায় সাহাবীগণের মতো আর কেউ নেই। [আদ-দুররাতুল মুদিয়্যাহ ফি ‘আক্বীদাতিল ফিরকাতিল মারদিয়্যাহ মা‘আ শারহিহা লাওয়ামি‘উল আনওয়ার, ২/৩৭৭।] এ ব্যাপারে মুসলিমদের মধ্যে অকাট্য ইজমা সংঘটিত হয়েছে। এ মতের সাথে কিছু বিদ‘আতীদের একমত না হওয়া ধর্তব্য হবে না।
ইবনুল কাইয়্যিম রহ. তার ‘নুনিয়্যাহ’ কিতাবে বলেছেন, ‘যেহেতু আলেমগণ ঐকমত্য যে, সাহাবীগণ (নবীদের পরে) মানব জাতির মধ্যে সর্বোত্তম মানব। এটি অকাট্য ভাবে প্রমাণিত, এতে কারো কোনো মতানৈক্য নেই।’ [নুনিয়্যাতু ইবনুল কাইয়্যিম মা‘আ শারহিহা তাওদীহুল মাকাসিদ, লি ইবন ‘ঈসা, ২/৪৬১।]
সাহাবীগণের মর্যাদার ব্যাপারে অসংখ্য দলীল-প্রমাণ রয়েছে। আল্লাহর কিতাব আল-কুরআন তাদের মহিমান্বিত প্রশংসা বর্ণনায় ভরপুর। যেহেতু আল্লাহ তাদের সততা, বিশুদ্ধ ঈমান, প্রকৃত ভালোবাসা, পরিপূর্ণ জ্ঞান, পরিপক্ক মতামত, পূর্ণাঙ্গ উপদেশ ও স্পষ্ট আমানত সম্পর্কে জ্ঞাত আছেন।
তাদের ফযীলতের সেসব আয়াতের মধ্য থেকে নিম্নে কয়েকটি বর্ণনা করা হলো:
“আর মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম অগ্রগামী এবং যারা তাদেরকে অনুসরণ করেছে সুন্দরভাবে, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন আর তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত করেছেন জান্নাতসমূহ, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত, তারা সেখানে চিরস্থায়ী হবে। এটাই মহাসাফল্য”। [আত-তাওবা, আয়াত: ১০০]
“নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং নিজেদের মাল ও জান দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করেছে আর যারা আশ্রয় দিয়েছে ও সহায়তা করেছে, তারা একে অপরের বন্ধু।” [সূরা আল- আনফাল, আয়াত: ৭২]
এ আয়াত থেকে পরবর্তী আয়াত পর্যন্ত আল্লাহ তাদের মর্যাদা বর্ণনা করে বলেছেন,
“আর যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে এবং যারা আশ্রয় দিয়েছে ও সাহায্য করেছে, তারাই প্রকৃত মুমিন, তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও সম্মানজনক রিযিক।” [সূরা আল- আনফাল, আয়াত: ৭৪]
সাহাবীগণের মর্যাদা প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেছেন,
“অবশ্যই আল্লাহ নবী, মুহাজির ও আনসারদের তাওবা কবুল করলেন, যারা তার অনুসরণ করেছে সংকটপূর্ণ মুহূর্তে। তাদের মধ্যে এক দলের হৃদয় সত্যচ্যূত হওয়ার উপক্রম হবার পর। তারপর আল্লাহ তাদের তাওবা কবূল করলেন। নিশ্চয় তিনি তাদের প্রতি স্নেহশীল, পরম দয়ালু।” [আত-তাওবা, আয়াত: ১১৭]
“মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল এবং তার সাথে যারা আছে তারা কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর; পরস্পরের প্রতি সদয়, তুমি তাদেরকে রুকূকারী, সাজদাকারী অবস্থায় দেখতে পাবে। তারা আল্লাহর করুণা ও সন্তুষ্টি অনুসন্ধান করছে। তাদের আলামত হচ্ছে, তাদের চেহারায় সাজদার চিহ্ন থাকে। এটাই তাওরাতে তাদের দৃষ্টান্ত। আর ইনজীলে তাদের দৃষ্টান্ত হলো একটি চারাগাছের মত, যে তার কঁচিপাতা উদগত করেছে ও শক্ত করেছে, অতঃপর তা পুষ্ট হয়েছে ও স্বীয় কাণ্ডের উপর মজবুতভাবে দাঁড়িয়েছে, যা চাষীকে আনন্দ দেয়। যাতে তিনি তাদের দ্বারা কাফিরদেরকে ক্রোধান্বিত করতে পারেন। তাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের জন্য ক্ষমা ও মহাপ্রতিদানের ওয়াদা করেছেন।” [সূরা আল-ফাতহ, আয়াত: ২৯]
“সেদিন নবী ও তার সাথে যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে আল্লাহ লাঞ্ছিত করবেন না। তাদের আলো তাদের সামনে ও ডানে ধাবিত হবে। তারা বলবেন, হে আমাদের রব, আমাদের জন্য আমাদের আলো পূর্ণ করে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন; নিশ্চয় আপনি সর্ববিষয়ে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।” [সূরা আত-তাহরীম, আয়াত: ৮]
“আর তোমরা জেনে রাখো যে, তোমাদের মধ্যে আল্লাহর রাসূল রয়েছেন। তিনি যদি অধিকাংশ বিষয়ে তোমাদের কথা মেনে নিতেন, তাহলে তোমরা অবশ্যই কষ্টে পতিত হতে। কিন্তু আল্লাহ তোমাদের কাছে ঈমানকে প্রিয় করে দিয়েছেন এবং তা তোমাদের অন্তরে সুশোভিত করেছেন। আর তোমাদের কাছে কুফরী, পাপাচার ও অবাধ্যতাকে অপছন্দনীয় করে দিয়েছেন। তারাই তো সত্য পথপ্রাপ্ত। আল্লাহর পক্ষ থেকে করুণা ও নি‘আমত স্বরূপ। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।” [সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ৭-৮]
“তোমাদের মধ্যে যারা মক্কা বিজয়ের পূর্বে ব্যয় করেছে এবং যুদ্ধ করেছে তারা সমান নয়। তারা মর্যাদায় তাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ, যারা পরে ব্যয় করেছে ও যুদ্ধ করেছে। তবে আল্লাহ প্রত্যেকের জন্যই কল্যাণের ওয়াদা করেছেন। আর তোমরা যা করো, সে সম্পর্কে আল্লাহ সবিশেষ অবগত।” [সূরা আল-হাদীদ, আয়াত: ১০]
“তোমরা হলে সর্বোত্তম উম্মত, যাদেরকে মানুষের জন্য বের করা হয়েছে। তোমরা ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে বারণ করবে, আর আল্লাহর প্রতি ঈমান পোষণ করবে।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১১০]
এ আয়াত দ্বারা সাহাবীগণের মর্যাদা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত। এ আয়াত হয়ত তাদের কথাই নির্দিষ্টভাবে বুঝিয়েছে অথবা সর্বোত্তম উম্মত বলে নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সব উম্মতকে বুঝানো হয়েছে। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সব উম্মত বুঝালে সাহাবীরা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এ আয়াতের অন্তর্ভুক্ত হবেন।
এ ছাড়াও আল্লাহ তা‘আলা তাদের মর্যাদা সম্পর্কে বলেছেন,
“আর এভাবেই আমরা তোমাদেরকে মধ্যপন্থী উম্মত বানিয়েছি, যাতে তোমরা মানুষের ওপর সাক্ষী হও এবং রাসূল সাক্ষী হন তোমাদের উপর।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৪৩] পূর্বোক্ত আয়াতের মতোই উপরোক্ত আয়াতের দ্বারা দলীল দেওয়া হয়েছে; বরং কুরআন ও হাদীসের যত আয়াত ও হাদীস এ উম্মতের সম্মান ও মর্যাদা প্রমাণ করে তা সবই অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণকে অন্তর্ভুক্ত করে।
অন্যদিকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অসংখ্য হাদীস সাহাবীগণের মর্যাদার কথা বলেছে। তন্মধ্যে নিচে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো:
“তারকারাজি আসমানের জন্য নিরাপত্তা রক্ষাকারী। যখন তারকারাজি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে তখন আসমানের জন্য প্রতিশ্রুত বিপদ আসন্ন হবে (অর্থাৎ কিয়ামত সংঘটিত হবে)। আর আমি আমার সাহাবীগণের জন্য নিরাপত্তা প্রদানকারী স্বরূপ। যখন আমি বিদায় নেব তখন আমার সাহাবীগণের উপর প্রতিশ্রুত সময় উপস্থিত হবে (অর্থাৎ ফিতনা-ফাসাদ ও যুদ্ধ-বিগ্রহ শুরু হয়ে যাবে)। আর আমার সাহাবীগণ সমগ্র উম্মতের জন্য নিরাপত্তা প্রদানকারী স্বরূপ। যখন আমার সাহাবীগণ বিদায় হয়ে যাবে তখন আমার উম্মতের ওপর প্রতিশ্রুত সময় উপস্থিত হবে (অর্থাৎ কিয়ামতের আলামত প্রকাশ পাবে। যেমন, শির্ক, বিদ‘আত ছড়িয়ে পড়বে, ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টি হবে, শয়তানের শিং উদয় হবে, খ্রিস্টানদের রাজত্ব কায়েম হবে, মক্কা ও মদীনার অবমাননা করা হবে ইত্যাদি)। [সহীহ মুসলিম, কিতাব, ফাযায়েলে সাহাবাহ, বাব, بَابُ بَيَانِ أَنَّ بَقَاءَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمَانٌ لِأَصْحَابِهِ، وَبَقَاءَ أَصْحَابِهِ أَمَانٌ لِلْأُمَّةِ ৪/১৯৬১, হাদীস নং ২৫৩১।]
আবুল আব্বাস আল-কুরত্ববী রহ. উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, ‘রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ যতদিন জমিনে জীবিত থাকবেন ততদিন জমিনে দীন কায়েম থাকবে, হক প্রকাশ্যে থাকবে, শত্রুর উপর বিজয় অর্জিত হবে। আর যখন তাঁর সাহাবীরা মারা যাবেন, তখন পৃথিবীতে ফিতনা-ফাসাদ শুরু হবে, শত্রুর বিজয় অর্জিত হবে। এভাবেই দীন কমতে থাকবে। দীন কমতে কমতে এক সময় এমন অবস্থা হবে যে, জমিনে আল্লাহ, আল্লাহ বলার মতো কেউ অবশিষ্ট থাকবে না। (আর তখনই কিয়ামত সংঘটিত হবে)। এ কথাই উপরোক্ত হাদীসে এ উম্মতের সাথে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। আল্লাহই সম্যক জ্ঞাত।’ [আল-মুফহিম, ৬/৪৮৫।]
“তোমরা আমার সাহাবীগণকে গালমন্দ করো না। তোমাদের কেউ যদি অহুদ পাহাড় সমান স্বর্ণ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় কর, তবে তাদের একমুদ বা অর্ধমুদ-এর সমপরিমাণেও পৌঁছুতে পারবে না।” [সহীহ বুখারী, কিতাব: ফাযায়েলে সাহাবাহ, বাব: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামে বাণী: আমি যদি কাউকে খলীল বানাতাম, ৩/১২, হাদীস নং ৩৬৭৩; সহীহ মুসলিম, কিতাব: ফাযায়েলে সাহাবাহ, বাব: সাহাবীদেরকে গাল-মন্দ করা হারাম, ৪/১৯৬৭-১৯৬৮, হাদীস নং ২৫৪১, হাদীসটি আবু সা‘ঈদ খুদুরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত।]
এ হাদীসের ব্যাখ্যায় শাওকানী রহ. খুব সুন্দর একটি মন্তব্য পেশ করেছেন, তিনি বলেছেন, ‘পরবর্তী সাহাবীগণ যদি উহুদ পাহাড় সমপরিমাণ স্বর্ণ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করেও পূর্ববর্তী সাহাবীগণের এক মুদ বা অর্ধ মুদ পরিমাণ ব্যয়ের মত সাওয়াবের অধিকারী না হয়, তবে আমাদের পক্ষ থেকে উহুদ পরিমাণ দানও তাদের এক শষ্য পরিমাণ বা তার অর্ধেক ব্যয়ের কাছে পৌঁছুতে পারবে বলে আমি মনে করি না’। [ইরশাদুস সায়িল ইলা দালায়েলিল মাসায়েল মা‘আর রাসায়েলেস সালাফিয়া, পৃষ্ঠা ৪৫।]
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন,
“আমার যুগের লোকেরাই হচ্ছে সর্বোত্তম লোক, এরপর যারা তাদের নিকটবর্তী, এরপর যারা তাদের নিকটবর্তী যুগের।” [সহীহ বুখারী, কিতাব: সাহাবীদের মর্যাদা, বাব: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবী ও তাদের সহচরদের (তাবেয়ী) মর্যাদা, যারা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহচর্য লাভ করেছেন বা মুসলিমদের মধ্যে যারা তাঁকে দেখেছেন তারাই তাঁর সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত, ৩/৬, হাদীস নং ৩৬৫১; সহীহ মুসলিম, কিতাব: সাহাবীদের মর্যাদা, বাব: সাহাবী ও যারা তাদের পরবর্তীতে ও যারা তাদের পরবর্তীতে আসবেন তাদের মর্যাদা, ৪/১৯৬৩, হাদীস নং ২৫৩৩। হাদীসটি আব্দুল্লাহ ইবন মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত।]
সাহাবীগণের সর্বোত্তম হওয়ার এ সাক্ষ্য ও বিবরণ স্বয়ং এমন এক মহান ব্যক্তি দিয়েছেন যিনি মনগড়া কোনো কথা বলেন না। তাহলে এর চেয়ে উত্তম সত্যায়ন আর কী হতে পারে?!
আব্দুল্লাহ ইবন মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণের মর্যাদা বর্ণনায় বলেছেন, (এ ধরণের বর্ণনা ইবন ‘উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু [আবু নু‘আইম রহ. হিলইয়াতুল আওলিয়াতে ১/৩০৫ বর্ণনা করেছেন।] ও হাসান বসরী রহ. [ইবন আব্দুল বার জামে‘উ বায়ানিল ইলম ও ফাদলিহি ২/১৯৫ তে বর্ণনা করেছেন।] এর থেকেও বর্ণিত আছে) ‘যে ব্যক্তি কারো অনুসরণ করতে চায় সে যেনো মৃত ব্যক্তির অনুসরণ করে; কেননা জীবিত ব্যক্তি কখনও ফিতনায় নিপতিত হওয়া থেকে নিরাপদ নয়। তারাই (অর্থাৎ সেসব মৃত ব্যক্তি) হচ্ছেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ। আল্লাহর শপথ, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ হচ্ছেন এ উম্মতের সর্বোত্তম মানুষ, অন্তরের দিক থেকে সর্বাধিক পবিত্র, গভীর ইলমের অধিকারী আর সবচেয়ে কম লৌকিকতা প্রদর্শনকারী। আল্লাহ তাদেরকে তাঁর নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবী হিসেবে ও তাঁর দীন প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচিত করেছেন। অতএব, তাদের সম্মান ও মর্যাদা জানো ও তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করো, তাদের আখলাক ও দীনের যতটুকু সম্ভব আঁকড়ে ধরো; কেননা তারা সঠিক হিদায়াতের পথে ছিলেন।’ [ইবন আব্দুল বার জামে‘উ বায়ানিল ইলম ও ফাদলিহি ২/১৯৫-১৯৬ তে বর্ণনা করেছেন।]
আবু ‘উমার আদ-দানী রহ. বলেছেন, ‘সাহাবীরা উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম, সর্বাধিক নেককার ও তারা আল্লাহর নির্বাচিত ছিলেন। আল্লাহ তাদেরকে তাঁর অপরিসীম নি‘আমত দান করে সম্মানিত করেছেন এবং তাঁর অনুগ্রহ ও দয়ার দ্বারা তাদেরকে বিশেষায়িত করেছেন।’ [আল-আরজুযাতুল মুনাব্বিহা ‘আলা আসমাইল কুররা ওয়ার রুওয়াত ওয়া উসূলিল কিরাআত, পৃষ্ঠা ১৮৯, কবিতা নং ৫৭১-৫৭২।]
সাহাবীগণের সুন্দর গুণাবালী ও মর্যাদা সম্পর্কে গভীর চিন্তা করে দেখলে বুঝতে পারবেন যে, তারা ইলম, ন্যায়পরায়ণতা, জিহাদ ও অন্যান্য সব কল্যাণকর কাজে সর্বাধিক অগ্রগামী ছিলেন। ফলে তারা তাদের পূর্ববর্তীদেরকে ছাড়িয়ে গেছেন আর পরবর্তীদেরকে হারিয়ে দিয়েছেন, অভীষ্ট লক্ষ্যে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন, সর্বোচ্চ সম্মান অর্জন করেছিলেন। তারাই ছিলেন আমাদের পর্যন্ত ইসলাম পৌঁছানোর এবং সব ধরণের কল্যাণ ও হিদায়াতের মাধ্যম। তাদের মাধ্যমেই আমরা সৌভাগ্য ও নাজাত লাভ করেছি। কিয়ামত পর্যন্ত উম্মত তাদের ইলম, ন্যায়পরায়ণতা ও জিহাদের অবশিষ্ট কল্যাণ প্রাপ্ত হবেন। তাদের মাধ্যম ব্যতীত কেউ কোনো কল্যাণকর ইলমপ্রাপ্ত হবে না। তাদের মাধ্যমেই আমরা ইলম পেয়েছি। তাদের জিহাদ ও বিজয় ব্যতীত আমরা পৃথিবীর বুকে নিরাপদে বসবাস করতে পারতাম না। ন্যায়পরায়ণ ও হিদায়াতের ওপর অধিষ্ঠিত কোনো ইমাম বা শাসক তাদের দ্বারা প্রাপ্ত মাধ্যম ব্যতীত শাসন কার্য পরিচালনা করতে পারতো না। তারাই তরবারীর দ্বারা দেশ জয় করেছেন, দৃঢ় ঈমানের দ্বারা মানুষের হৃদয় উন্মুক্ত করেছেন, ন্যায়পরায়ণতার দ্বারা দেশ আবাদ করেছেন এবং ইলম ও হিদায়াতের দ্বারা অন্তর জয় করেছেন। তাদের কৃত আমল ছাড়াও কিয়ামত পর্যন্ত উম্মতের আমলের একটি অংশ তারা প্রাপ্ত হবেন। অতএব, সে মহান আল্লাহর তাসবীহ বর্ণনা করছি যিনি তাঁর দয়ায় ও রহমতে যাকে ইচ্ছা তাকে নির্বাচিত করেন। [ইবনুল কাইয়্যেম, তরীকুল হিজরাতাইন, পৃষ্ঠা ৬৪৮।]
ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. তাদের হকের ব্যাপারে কতই না সুন্দর কথা বলেছেন! তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বিজ্ঞ ও সচেতনতার সাথে তাদের সীরাত (জীবনী পড়েন) দেখেন, আল্লাহ তাদেরকে যে সম্মান ও মর্যাদা দান করেছেন তা অবলোকন করেন, তাহলে তিনি নিশ্চিত ভাবে জানতে পাবেন যে, নবী রাসূলদের পরে তারাই সর্বোত্তম সৃষ্টি, তাদের মতো পূর্বে কেউ ছিলেন না এবং পরবর্তীতেও কেউ আসবেন না। এ উম্মতের মধ্যে তারাই সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম যে উম্মতকে আল্লাহ সমস্ত উম্মতের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা দান করেছেন।’ [মাজমু‘উল ফাতাওয়া, (আল-ওয়াসিতিয়্যাহ) ৩/১০৩।]
তাদের এ সুমহান মর্যাদা ও সুউচ্চ পবিত্রতম সম্মানের কারণে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত সকল সাহাবীকে ন্যায়পরায়ণ মনে করেন, তারা কেউ মাজরূহ তথা দোষ-ত্রুটি যুক্ত নন। আল্লাহ তাদেরকে অপবাদ থেকে মুক্ত রেখেছেন এবং দোষ-ত্রুটি থেকে রক্ষা করেছেন। তারা সকলেই মুসলিমদের সম্মানিত ইমাম ও নেতা। আর আল্লাহ তাদেরকে নির্বাচন করেছেন ও তাদের পবিত্রতার সংবাদ সকলেরই জানা। তারা সর্বোত্তম যুগের মানুষ, সর্বোত্তম উম্মত, যাদেরকে মানুষের কল্যাণে সৃষ্টি করা হয়েছে। সুতরাং আল্লাহ যাদেরকে তাঁর নবীর সাহচর্য ও সাহায্যের জন্য নির্বাচিত করে যাদের ওপর তিনি সন্তুষ্ট, এর চেয়ে উত্তম ন্যায়পরায়ণতার সাক্ষ্য হতে পারে না, এর চেয়ে উত্তম প্রশংসা হতে পারে না, আর এর চেয়ে পরিপূর্ণ ন্যায়পরায়ণতা সাব্যস্ত করার আর কী পন্থা হতে পারে?
ইবন আব্দুল বার রহ. বলেছেন, ‘সমস্ত সাহাবীগণের অবস্থা ও জীবন চরিত নিয়ে গবেষণা করে আহলে হক তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত ইজমা তথা ঐকমত্য হয়েছেন যে, তারা সকলেই ন্যায়পরায়ণ।’ [আল-ইসতী‘আব, ১/১৯।]
‘তারা সকলেই সৎকাজ ও তাকওয়ার অধিকারী এবং সর্বাধিক যোগ্য ছিলেন, আর সব ভালো কাজের তারাই ছিলেন অগ্রগামী।’ [কাসীদাতু আবু মারওয়ান আব্দুল মালিক ইবন ইদরীস আল-জাযায়েরী ফিল আদাবি ওয়াস-সুন্নাহ, পৃষ্ঠা ৫৮, পংক্তি নং ১২৪।]
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/438/7
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।