HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
ইসলামে বন্ধুত্ব ও শত্রুতা
লেখকঃ শাইখ সালেহ ইবন ফাউযান আল-ফাউযান
৩
ভূমিকাযাবতীয় প্রশংসা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের যিনি সমগ্র জাহানের প্রতিপালক, আর সালাত ও সালাম নাযিল হোক আমাদের প্রাণ-প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর, তার পরিবার-পরিজন ও সাথী-সঙ্গীদের উপর এবং তাদের উপর যারা তার প্রদর্শিত পথের অনুসারী।
একজন ঈমানদারের উপর ওয়াজিব হল, আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মহব্বতের সাথে সাথে আল্লাহর বন্ধুদের মহব্বত করা ও তার শত্রুদের সাথে দুশমনি করা।
আল্লাহর বন্ধুদের সাথে বন্ধুত্ব থাকা এবং আল্লাহর দুশমনদের সাথে শত্রুতা থাকা একজন মুমিনের ঈমানের পরিচয় এবং এটি ঈমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ রোকন। যার মধ্যে এ গুণ থাকবে না সে সত্যিকার ঈমানদার হতে পারে না। ঈমানদার হতে হলে অবশ্যই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বন্ধুত্ব এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য শত্রুতা তার মধ্যে থাকতে হবে, অন্যথায় ঈমানদার হওয়া যাবে না। আর এটি ঈমানের একটি অন্যতম অংশ এবং ঈমানের সাথে আঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। যাদের মধ্যে ঈমানের এ মান-দণ্ড থাকবে না, তাদের ঈমান থাকবে না।
ইসলামী আক্বীদার অন্যতম ভিত্তি হল, দ্বীনের উপর বিশ্বাসী সব ঈমানদার মুমিনের সাথে বন্ধুত্ব রাখা। আর যারা এ দ্বীন-ইসলামকে বিশ্বাস করে না, আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি ঈমান আনে না এবং আখিরাতের প্রতি ঈমান আনে না, সে সব মুশরিক ও কাফেরদের সাথে দুশমনি রাখা এবং তাদের ঘৃণার চোখে দেখা। সুতরাং মনে রাখতে হবে, যারা তাওহীদে বিশ্বাসী-মুখলিস ঈমানদার তাদের মহব্বত করা এবং তাদের সাথে বন্ধুত্ব রাখা হল ঈমানের বহি:প্রকাশ। আর যারা মুশরিক- গাইরুল্লাহর ইবাদত করে- তাদের অপছন্দ ও ঘৃণা করা ঈমানদার হওয়ার প্রমাণ স্বরূপ। আর এটিই হল ইব্রাহীম আ. ও তার অনুসারীদের জন্য আল্লাহর রাব্বুল আলামীন কর্তৃক মনোনীত দ্বীন, যে দ্বীনের আনুগত্য করার জন্য আমাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনে করীমে এরশাদ করে বলেন,
﴿قَدۡ كَانَتۡ لَكُمۡ أُسۡوَةٌ حَسَنَةٞ فِيٓ إِبۡرَٰهِيمَ وَٱلَّذِينَ مَعَهُۥٓ إِذۡ قَالُواْ لِقَوۡمِهِمۡ إِنَّا بُرَءَٰٓؤُاْ مِنكُمۡ وَمِمَّا تَعۡبُدُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ كَفَرۡنَا بِكُمۡ وَبَدَا بَيۡنَنَا وَبَيۡنَكُمُ ٱلۡعَدَٰوَةُ وَٱلۡبَغۡضَآءُ أَبَدًا حَتَّىٰ تُؤۡمِنُواْ بِٱللَّهِ وَحۡدَهُۥٓ إِلَّا قَوۡلَ إِبۡرَٰهِيمَ لِأَبِيهِ لَأَسۡتَغۡفِرَنَّ لَكَ وَمَآ أَمۡلِكُ لَكَ مِنَ ٱللَّهِ مِن شَيۡءٖۖ رَّبَّنَا عَلَيۡكَ تَوَكَّلۡنَا وَإِلَيۡكَ أَنَبۡنَا وَإِلَيۡكَ ٱلۡمَصِيرُ ٤﴾ ] سورة الممتحنة : 4[.
“ইবরাহীম ও তার সাথে যারা ছিল তাদের মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ। তারা যখন স্বীয় সম্প্রদায়কে বলছিল, ‘তোমাদের সাথে এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যা কিছুর উপাসনা কর তা হতে আমরা সম্পূর্ণ মুক্ত। আমরা তোমাদেরকে অস্বীকার করি; এবং উদ্রেক হল আমাদের- তোমাদের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ চিরকালের জন্য; যতক্ষণ না তোমরা এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আন। তবে স্বীয় পিতার প্রতি ইবরাহীমের উক্তিটি ব্যতিক্রম: ‘আমি অবশ্যই তোমার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করব আর তোমার ব্যাপারে আল্লাহর কাছে আমি কোন অধিকার রাখি না।’ হে আমাদের প্রতিপালক, আমরা আপনার ওপরই ভরসা করি, আপনারই অভিমুখী হই আর প্রত্যাবর্তন তো আপনারই কাছে”। [সূরা মুমতাহিনা, আয়াত: ৪]
আর এটা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দ্বীনের অনুকরণের নামান্তর। এখানে কোন ভিন্নতা ও পার্থক্য নাই [আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ কথা স্পষ্ট করেন, মুশরিকদের সাথে কোন আপোষ নাই। মুসলিমরা কখনোই মুশরিকদের সাথে একত্র হতে পারে না। ইব্রাহীম আ. তার কাওকে জানিয়ে দেন, আল্লাহকে বাদ দিয়ে তোমরা যে সব দেব-দেবী ও উপাস্যের উপাসনা কর, তার থেকে আমি সম্পূর্ণ মুক্ত। আমার সাথে তোমাদের উপাস্যদের কোন সম্পর্ক নাই। ইব্রাহীম আ. তার কওমের মুশরিকদের আরও জানিয়ে দেন, তোমাদের সাথে আমার শত্রুতা কোন ক্ষণিকের জন্য নয়, বরং তা চিরকালের জন্য; যতদিন পর্যন্ত তোমরা আল্লাহর উপর ঈমান আনবে না, ততদিন পর্যন্ত তোমাদের সাথে আমার শত্রুতা বহাল থাকবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইব্রাহীম আ. এর দৃঢ়তাকে কুরআনে তুলে ধরেন এবং তিনি উম্মতে মুসলিমাকে বলেন, তোমাদের জন্য ইব্রাহীম আ. এর মধ্যে রয়েছে, উত্তম আদর্শ। সুতরাং, মনে রাখতে হবে মুসলিমদের জন্য অমুসলিমদের সাথে আপোষহীন হতে হবে, যতদিন পর্যন্ত তারা ঈমান না আনবে, ততদিন পর্যন্ত তাদের সাথে কোন আপোস নাই। [অনুবাদক]।]। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَتَّخِذُواْ ٱلۡيَهُودَ وَٱلنَّصَٰرَىٰٓ أَوۡلِيَآءَۘ بَعۡضُهُمۡ أَوۡلِيَآءُ بَعۡضٖۚ وَمَن يَتَوَلَّهُم مِّنكُمۡ فَإِنَّهُۥ مِنۡهُمۡۗ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَهۡدِي ٱلۡقَوۡمَ ٱلظَّٰلِمِينَ ٥١﴾ ] سورة المائدة :51]
“হে মুমিনগণ, ইয়াহূদী ও নাসারাদেরকে তোমরা বন্ধরূপে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। আর তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে নিশ্চয় তাদেরই একজন। নিশ্চয় আল্লাহ যালিম কওমকে হিদায়েত দেন না”। [সূরা মায়েদাহ, আয়াত: ৫১]
এ আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কিতাবিদের সাথে বন্ধুত্ব করার বিধান কি তার বর্ণনা দেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কিতাবিদের সাথে বন্ধুত্ব করতে এবং তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে নিষেধ করেন [ব্যাখ্যা: আয়াতে আল্লাহ মুসলিম উম্মাহকে জানিয়ে দিয়ে বলেন, আমি যাদের কিতাব দিয়েছি, অর্থাৎ ইয়াহুদী ও খৃষ্টানদেরকে কখনোই তোমাদের বন্ধু বানাবে না। কারণ, তারা কখনোই তোমাদেরকে তাদের নিজেদের আপন মনে করে না, তারা সব সময় তোমাদেরকে তাদের শত্রু হিসেবে গণ্য করে। আর তারা সব সময় মুসলিমদের ক্ষতির অনুসন্ধান করে। তারপরও যারা কিতাবিদের সাথে বন্ধুত্ব করবে আল্লাহ তাদের বিষয়ে বলেন, তারা সে সব জাতিরই অন্তর্ভুক্ত হবে, তারা মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত হবে না। [অনুবাদক]।]। অপর এক আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কাফেরদেরও বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে নিষেধ করেন। কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব করা হারাম হওয়া বিষয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَتَّخِذُواْ عَدُوِّي وَعَدُوَّكُمۡ أَوۡلِيَآءَ تُلۡقُونَ إِلَيۡهِم بِٱلۡمَوَدَّةِ وَقَدۡ كَفَرُواْ بِمَا جَآءَكُم مِّنَ ٱلۡحَقِّ يُخۡرِجُونَ ٱلرَّسُولَ وَإِيَّاكُمۡ أَن تُؤۡمِنُواْ بِٱللَّهِ رَبِّكُمۡ﴾ [ سورة الممتحنة :1]
“হে ঈমান-দারগণ, তোমরা আমার ও তোমাদের শত্রুদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না” [ব্যখ্যা: আয়াতে আল্লাহ মুমিনদের কাফেরদের নির্যাতনের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। অর্থাৎ, তোমরা তাদের কিভাবে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে? তারা তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ হতে যে হেদায়েতের মিশন এসেছে, তা অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যান করছে এবং তোমাদেরকে কোন প্রকার অপরাধ ছাড়া তোমাদের বাড়ি-ঘর হতে বের করে দিয়েছে, তোমাদের ভিটা-বাড়ি ছাড়া করেছে। সুতরাং, তোমরা তাদেরকে কখনোই বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না।]। [সূরা মুমতাহানাহ, আয়াত: ১]
এ বিষয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও বলেন, কাফেররা যদি মুমিনদের আত্মীয়-স্বজন বা রক্ত সম্পর্কীয় ও গোত্রীয় লোকও হয়, তাদের সাথে অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব এবং তাদের খালেস মহব্বত করতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুমিনদের জন্য হারাম করে দিয়েছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا آبَاءَكُمْ وَإِخْوَانَكُمْ أَوْلِيَاءَ إِنْ اسْتَحَبُّوا الْكُفْرَ عَلَى الْإِيمَانِ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَأُوْلَئِكَ هُمْ الظَّالِمُونَ .﴾ [ سورة التوبة :23].
“হে ঈমান-দারগণ, তোমরা নিজদের পিতা ও ভাইদেরকে বন্ধরূপে গ্রহণ করো না, যদি তারা ঈমান অপেক্ষা কুফরিকে প্রিয় মনে করে। তোমাদের মধ্য থেকে যারা তাদেরকে বন্ধরূপে গ্রহণ করে তারাই যালিম”। [সূরা তাওবাহ, আয়াত: ২৩]
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও বলেন,
﴿لَّا تَجِدُ قَوۡمٗا يُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِ يُوَآدُّونَ مَنۡ حَآدَّ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَلَوۡ كَانُوٓاْ ءَابَآءَهُمۡ أَوۡ أَبۡنَآءَهُمۡ أَوۡ إِخۡوَٰنَهُمۡ أَوۡ عَشِيرَتَهُمۡۚ أُوْلَٰٓئِكَ كَتَبَ فِي قُلُوبِهِمُ ٱلۡإِيمَٰنَ وَأَيَّدَهُم بِرُوحٖ مِّنۡهُۖ وَيُدۡخِلُهُمۡ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَاۚ رَضِيَ ٱللَّهُ عَنۡهُمۡ وَرَضُواْ عَنۡهُۚ أُوْلَٰٓئِكَ حِزۡبُ ٱللَّهِۚ أَلَآ إِنَّ حِزۡبَ ٱللَّهِ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ٢٢﴾ ] سورة المجادلة :22[
“যারা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান আনে তুমি পাবে না এমন জাতিকে তাদেরকে পাবে না এমন লোকদের সাথে বন্ধুত্ব করতে বন্ধু হিসাবে যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করে, যদি সেই বিরুদ্ধবাদীরা তাদের পিতা, পুত্র, ভাই অথবা জ্ঞাতি-গোষ্ঠী হয় তবুও। এদের অন্তরে আল্লাহ ঈমান লিখে দিয়েছেন এবং তাঁর পক্ষ থেকে রূহ দ্বারা তাদের শক্তিশালী করেছেন। তিনি তাদের প্রবেশ করাবেন এমন জান্নাতসমূহে যার নিচে দিয়ে ঝর্ণাধারাসমূহ প্রবাহিত হয়। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। এরা হল আল্লাহর দল। জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহর দলই সফলকাম”। [সূরা মুজাদালাহ, আয়াত: ২২] [অর্থাৎ যারা আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলে বিরোধিতা করে, তারা যদি তোমাদের নিকটাত্মীয়ও হয়ে থাকে; তোমাদের মাতা-পিতাও হয়ে থাকে, তারপরও তাদের সাথে কোন প্রকার বন্ধুত্ব চলে না।]
কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হল, বর্তমানে অধিকাংশ মানুষ দ্বীনের এ গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতিকে একেবারেই ভুলে গেছে [তারা অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব করাকে তাদের উদারতা, উগ্রবাদ বিরোধিতা ও অসাম্প্রদায়িকতা বলে চালিয়ে যাচ্ছে। তারা মনে করে অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব করা ও তাদের সাথে সু-সম্পর্ক রাখা উদারপন্থী ও অসাম্প্রদায়িক হওয়ার প্রমাণ। মনে রাখতে হবে, যে সব মুসলিম এ ধরনের মন-মানসিকতা পোষণ করে তারা কখনোই ঈমানদার হতে পারে না। তারা ইয়াহুদী খৃষ্টানদের দোষর এবং আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের দুশমন। আমাদের সমাজে এ ধরনের ঘাতকের অভাব নাই। [অনুবাদক]।]।
এমনকি আমি আরবি একটি টিভি চ্যানেলে একজন বিশিষ্ট আলেম ও দা‘য়ীকে বলতে শুনেছি, তিনি খৃষ্টানদের সম্পর্কে বলেন, তারা আমাদের ভাই। এটি একটি মারাত্মক কথা যার সমর্থনে কোন দলীল-প্রমাণ নাই [এ ধরনের কথা শুধু মারাত্মকই নয়, বরং ঈমানের জন্য হুমকি। যারা এ ধরনের কথা বলে, তাদের ঈমান প্রশ্নবিদ্ধ। আল্লাহ আমাদের এ ধরনের কথা-বার্তা থেকে হেফাজত করুক।]।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেভাবে ইসলামী আকীদায় অবিশ্বাসী কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব করাকে হারাম করেছেন এবং তাদের ঘৃণা করার নির্দেশ দিয়েছেন, সেভাবে যারা ঈমান এনেছে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করা ও তাদের মহব্বত করাকেও ওয়াজিব করেছেন। [একজন ঈমানদারের প্রতি অপর ঈমানদারের ভালোবাসা ও মহব্বত থাকতে হবে এবং তাদের বিপদ-আপদে এগিয়ে আসতে হবে।] আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱلَّذِينَ يُقِيمُونَ ٱلصَّلَوٰةَ وَيُؤۡتُونَ ٱلزَّكَوٰةَ وَهُمۡ رَٰكِعُونَ ٥٥ وَمَن يَتَوَلَّ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ فَإِنَّ حِزۡبَ ٱللَّهِ هُمُ ٱلۡغَٰلِبُونَ ٥٦﴾ [ سورة المائدة : 55].
“তোমাদের বন্ধু কেবল আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মুমিনগণ, যারা সালাত কায়েম করে এবং যাকাত প্রদান করে বিনীত হয়ে। আর যে আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মুমিনদের সাথে বন্ধুত্ব করে, তবে নিশ্চয় আল্লাহর দলই বিজয়ী”। [সূরা মায়েদাহ, আয়াত: ৫৫]
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও বলেন,
﴿مُّحَمَّدٞ رَّسُولُ ٱللَّهِۚ وَٱلَّذِينَ مَعَهُۥٓ أَشِدَّآءُ عَلَى ٱلۡكُفَّارِ رُحَمَآءُ بَيۡنَهُمۡۖ تَرَىٰهُمۡ رُكَّعٗا سُجَّدٗا يَبۡتَغُونَ فَضۡلٗا مِّنَ ٱللَّهِ وَرِضۡوَٰنٗاۖ سِيمَاهُمۡ فِي وُجُوهِهِم مِّنۡ أَثَرِ ٱلسُّجُودِۚ﴾ [ سورة الفتح :29].
“মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল এবং তার সাথে যারা আছে তারা কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর; পরস্পরের প্রতি সদয়” [ব্যাখ্যা: আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুমিনদের পারস্পরিক সম্পর্ক ও কাফেরদের বিপক্ষে তাদের অবস্থানের একটি চিত্র তুলে ধরেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, মুমিনরা পরস্পরের প্রতি অতীব সদয় ও দয়া পরবশ। তারা তাদের ছোটদের স্নেহ করে বড়দের সম্মান করে। তাদের মধ্যে কোন প্রকার হিংসা-বিদ্বেষ নাই। কিন্তু দুশমনদের বিরুদ্ধে তারা অত্যন্ত কঠিন। তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার আপোষ নাই। দুশমনদের মোকাবেলায় তারা এক। [অনুবাদক]।]। [সূরা ফাতহ, আয়াত: ২৯]
﴿إِنَّمَا ٱلۡمُؤۡمِنُونَ إِخۡوَةٞ﴾ [ سورة الحجرات :10].
“নিশ্চয় মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই। [সূরা হুজরাত, আয়াত: ১০]
সুতরাং মুমিনগণ পরস্পর ভাই, এ ভ্রাতৃত্ব দ্বীন ও আকীদার ভিত্তিতে; যদিও দেশ, বংশ ও সময়ের দিক থেকে তাদের মধ্যে দুরত্ব থাকুক।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআন করীমে এরশাদ করে বলেন,
﴿وَٱلَّذِينَ جَآءُو مِنۢ بَعۡدِهِمۡ يَقُولُونَ رَبَّنَا ٱغۡفِرۡ لَنَا وَلِإِخۡوَٰنِنَا ٱلَّذِينَ سَبَقُونَا بِٱلۡإِيمَٰنِ وَلَا تَجۡعَلۡ فِي قُلُوبِنَا غِلّٗا لِّلَّذِينَ ءَامَنُواْ رَبَّنَآ إِنَّكَ رَءُوفٞ رَّحِيمٌ ١٠﴾ [ سورة الحشر :10].
“যারা তাদের পরে এসেছে তারা বলে: ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে ও আমাদের ভাই যারা ঈমান নিয়ে আমাদের পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে তাদেরকে ক্ষমা করুন; এবং যারা ঈমান এনেছিল তাদের জন্য আমাদের অন্তরে কোন বিদ্বেষ রাখবেন না; হে আমাদের রব, নিশ্চয় আপনি দয়াবান, পরম দয়ালু”। [সূরা হাসর, আয়াত: ১০]
মোট কথা, সৃষ্টির শুরু থেকে আজ পর্যন্ত মুমিনরা একে অপরের ভাই। তাদের ঘর-বাড়ী, স্থান-কাল ও সীমা-রেখা যতই দূরে থাকুক না কেন, তা বিবেচনার বিষয় নয়, তারা আল্লাহ ও তার রাসূলে বিশ্বাসী কিনা তা হল মুল বিবেচনার বিষয়। ঈমানের দিক দিয়ে তাদের একের সাথে অপরের সম্পর্ক খুবই গভীর। পরবর্তী যুগের মুমিনরা তাদের পূর্ববর্তীদের অনুকরণ করবে, তাদের জন্য দো‘আ করবে, ক্ষমা চাইবে।
একজন ঈমানদারের উপর ওয়াজিব হল, আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মহব্বতের সাথে সাথে আল্লাহর বন্ধুদের মহব্বত করা ও তার শত্রুদের সাথে দুশমনি করা।
আল্লাহর বন্ধুদের সাথে বন্ধুত্ব থাকা এবং আল্লাহর দুশমনদের সাথে শত্রুতা থাকা একজন মুমিনের ঈমানের পরিচয় এবং এটি ঈমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ রোকন। যার মধ্যে এ গুণ থাকবে না সে সত্যিকার ঈমানদার হতে পারে না। ঈমানদার হতে হলে অবশ্যই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বন্ধুত্ব এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য শত্রুতা তার মধ্যে থাকতে হবে, অন্যথায় ঈমানদার হওয়া যাবে না। আর এটি ঈমানের একটি অন্যতম অংশ এবং ঈমানের সাথে আঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। যাদের মধ্যে ঈমানের এ মান-দণ্ড থাকবে না, তাদের ঈমান থাকবে না।
ইসলামী আক্বীদার অন্যতম ভিত্তি হল, দ্বীনের উপর বিশ্বাসী সব ঈমানদার মুমিনের সাথে বন্ধুত্ব রাখা। আর যারা এ দ্বীন-ইসলামকে বিশ্বাস করে না, আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি ঈমান আনে না এবং আখিরাতের প্রতি ঈমান আনে না, সে সব মুশরিক ও কাফেরদের সাথে দুশমনি রাখা এবং তাদের ঘৃণার চোখে দেখা। সুতরাং মনে রাখতে হবে, যারা তাওহীদে বিশ্বাসী-মুখলিস ঈমানদার তাদের মহব্বত করা এবং তাদের সাথে বন্ধুত্ব রাখা হল ঈমানের বহি:প্রকাশ। আর যারা মুশরিক- গাইরুল্লাহর ইবাদত করে- তাদের অপছন্দ ও ঘৃণা করা ঈমানদার হওয়ার প্রমাণ স্বরূপ। আর এটিই হল ইব্রাহীম আ. ও তার অনুসারীদের জন্য আল্লাহর রাব্বুল আলামীন কর্তৃক মনোনীত দ্বীন, যে দ্বীনের আনুগত্য করার জন্য আমাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনে করীমে এরশাদ করে বলেন,
﴿قَدۡ كَانَتۡ لَكُمۡ أُسۡوَةٌ حَسَنَةٞ فِيٓ إِبۡرَٰهِيمَ وَٱلَّذِينَ مَعَهُۥٓ إِذۡ قَالُواْ لِقَوۡمِهِمۡ إِنَّا بُرَءَٰٓؤُاْ مِنكُمۡ وَمِمَّا تَعۡبُدُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ كَفَرۡنَا بِكُمۡ وَبَدَا بَيۡنَنَا وَبَيۡنَكُمُ ٱلۡعَدَٰوَةُ وَٱلۡبَغۡضَآءُ أَبَدًا حَتَّىٰ تُؤۡمِنُواْ بِٱللَّهِ وَحۡدَهُۥٓ إِلَّا قَوۡلَ إِبۡرَٰهِيمَ لِأَبِيهِ لَأَسۡتَغۡفِرَنَّ لَكَ وَمَآ أَمۡلِكُ لَكَ مِنَ ٱللَّهِ مِن شَيۡءٖۖ رَّبَّنَا عَلَيۡكَ تَوَكَّلۡنَا وَإِلَيۡكَ أَنَبۡنَا وَإِلَيۡكَ ٱلۡمَصِيرُ ٤﴾ ] سورة الممتحنة : 4[.
“ইবরাহীম ও তার সাথে যারা ছিল তাদের মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ। তারা যখন স্বীয় সম্প্রদায়কে বলছিল, ‘তোমাদের সাথে এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যা কিছুর উপাসনা কর তা হতে আমরা সম্পূর্ণ মুক্ত। আমরা তোমাদেরকে অস্বীকার করি; এবং উদ্রেক হল আমাদের- তোমাদের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ চিরকালের জন্য; যতক্ষণ না তোমরা এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আন। তবে স্বীয় পিতার প্রতি ইবরাহীমের উক্তিটি ব্যতিক্রম: ‘আমি অবশ্যই তোমার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করব আর তোমার ব্যাপারে আল্লাহর কাছে আমি কোন অধিকার রাখি না।’ হে আমাদের প্রতিপালক, আমরা আপনার ওপরই ভরসা করি, আপনারই অভিমুখী হই আর প্রত্যাবর্তন তো আপনারই কাছে”। [সূরা মুমতাহিনা, আয়াত: ৪]
আর এটা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দ্বীনের অনুকরণের নামান্তর। এখানে কোন ভিন্নতা ও পার্থক্য নাই [আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ কথা স্পষ্ট করেন, মুশরিকদের সাথে কোন আপোষ নাই। মুসলিমরা কখনোই মুশরিকদের সাথে একত্র হতে পারে না। ইব্রাহীম আ. তার কাওকে জানিয়ে দেন, আল্লাহকে বাদ দিয়ে তোমরা যে সব দেব-দেবী ও উপাস্যের উপাসনা কর, তার থেকে আমি সম্পূর্ণ মুক্ত। আমার সাথে তোমাদের উপাস্যদের কোন সম্পর্ক নাই। ইব্রাহীম আ. তার কওমের মুশরিকদের আরও জানিয়ে দেন, তোমাদের সাথে আমার শত্রুতা কোন ক্ষণিকের জন্য নয়, বরং তা চিরকালের জন্য; যতদিন পর্যন্ত তোমরা আল্লাহর উপর ঈমান আনবে না, ততদিন পর্যন্ত তোমাদের সাথে আমার শত্রুতা বহাল থাকবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইব্রাহীম আ. এর দৃঢ়তাকে কুরআনে তুলে ধরেন এবং তিনি উম্মতে মুসলিমাকে বলেন, তোমাদের জন্য ইব্রাহীম আ. এর মধ্যে রয়েছে, উত্তম আদর্শ। সুতরাং, মনে রাখতে হবে মুসলিমদের জন্য অমুসলিমদের সাথে আপোষহীন হতে হবে, যতদিন পর্যন্ত তারা ঈমান না আনবে, ততদিন পর্যন্ত তাদের সাথে কোন আপোস নাই। [অনুবাদক]।]। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَتَّخِذُواْ ٱلۡيَهُودَ وَٱلنَّصَٰرَىٰٓ أَوۡلِيَآءَۘ بَعۡضُهُمۡ أَوۡلِيَآءُ بَعۡضٖۚ وَمَن يَتَوَلَّهُم مِّنكُمۡ فَإِنَّهُۥ مِنۡهُمۡۗ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَهۡدِي ٱلۡقَوۡمَ ٱلظَّٰلِمِينَ ٥١﴾ ] سورة المائدة :51]
“হে মুমিনগণ, ইয়াহূদী ও নাসারাদেরকে তোমরা বন্ধরূপে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। আর তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে নিশ্চয় তাদেরই একজন। নিশ্চয় আল্লাহ যালিম কওমকে হিদায়েত দেন না”। [সূরা মায়েদাহ, আয়াত: ৫১]
এ আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কিতাবিদের সাথে বন্ধুত্ব করার বিধান কি তার বর্ণনা দেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কিতাবিদের সাথে বন্ধুত্ব করতে এবং তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে নিষেধ করেন [ব্যাখ্যা: আয়াতে আল্লাহ মুসলিম উম্মাহকে জানিয়ে দিয়ে বলেন, আমি যাদের কিতাব দিয়েছি, অর্থাৎ ইয়াহুদী ও খৃষ্টানদেরকে কখনোই তোমাদের বন্ধু বানাবে না। কারণ, তারা কখনোই তোমাদেরকে তাদের নিজেদের আপন মনে করে না, তারা সব সময় তোমাদেরকে তাদের শত্রু হিসেবে গণ্য করে। আর তারা সব সময় মুসলিমদের ক্ষতির অনুসন্ধান করে। তারপরও যারা কিতাবিদের সাথে বন্ধুত্ব করবে আল্লাহ তাদের বিষয়ে বলেন, তারা সে সব জাতিরই অন্তর্ভুক্ত হবে, তারা মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত হবে না। [অনুবাদক]।]। অপর এক আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কাফেরদেরও বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে নিষেধ করেন। কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব করা হারাম হওয়া বিষয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَتَّخِذُواْ عَدُوِّي وَعَدُوَّكُمۡ أَوۡلِيَآءَ تُلۡقُونَ إِلَيۡهِم بِٱلۡمَوَدَّةِ وَقَدۡ كَفَرُواْ بِمَا جَآءَكُم مِّنَ ٱلۡحَقِّ يُخۡرِجُونَ ٱلرَّسُولَ وَإِيَّاكُمۡ أَن تُؤۡمِنُواْ بِٱللَّهِ رَبِّكُمۡ﴾ [ سورة الممتحنة :1]
“হে ঈমান-দারগণ, তোমরা আমার ও তোমাদের শত্রুদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না” [ব্যখ্যা: আয়াতে আল্লাহ মুমিনদের কাফেরদের নির্যাতনের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। অর্থাৎ, তোমরা তাদের কিভাবে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে? তারা তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ হতে যে হেদায়েতের মিশন এসেছে, তা অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যান করছে এবং তোমাদেরকে কোন প্রকার অপরাধ ছাড়া তোমাদের বাড়ি-ঘর হতে বের করে দিয়েছে, তোমাদের ভিটা-বাড়ি ছাড়া করেছে। সুতরাং, তোমরা তাদেরকে কখনোই বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না।]। [সূরা মুমতাহানাহ, আয়াত: ১]
এ বিষয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও বলেন, কাফেররা যদি মুমিনদের আত্মীয়-স্বজন বা রক্ত সম্পর্কীয় ও গোত্রীয় লোকও হয়, তাদের সাথে অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব এবং তাদের খালেস মহব্বত করতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুমিনদের জন্য হারাম করে দিয়েছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا آبَاءَكُمْ وَإِخْوَانَكُمْ أَوْلِيَاءَ إِنْ اسْتَحَبُّوا الْكُفْرَ عَلَى الْإِيمَانِ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَأُوْلَئِكَ هُمْ الظَّالِمُونَ .﴾ [ سورة التوبة :23].
“হে ঈমান-দারগণ, তোমরা নিজদের পিতা ও ভাইদেরকে বন্ধরূপে গ্রহণ করো না, যদি তারা ঈমান অপেক্ষা কুফরিকে প্রিয় মনে করে। তোমাদের মধ্য থেকে যারা তাদেরকে বন্ধরূপে গ্রহণ করে তারাই যালিম”। [সূরা তাওবাহ, আয়াত: ২৩]
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও বলেন,
﴿لَّا تَجِدُ قَوۡمٗا يُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِ يُوَآدُّونَ مَنۡ حَآدَّ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَلَوۡ كَانُوٓاْ ءَابَآءَهُمۡ أَوۡ أَبۡنَآءَهُمۡ أَوۡ إِخۡوَٰنَهُمۡ أَوۡ عَشِيرَتَهُمۡۚ أُوْلَٰٓئِكَ كَتَبَ فِي قُلُوبِهِمُ ٱلۡإِيمَٰنَ وَأَيَّدَهُم بِرُوحٖ مِّنۡهُۖ وَيُدۡخِلُهُمۡ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَاۚ رَضِيَ ٱللَّهُ عَنۡهُمۡ وَرَضُواْ عَنۡهُۚ أُوْلَٰٓئِكَ حِزۡبُ ٱللَّهِۚ أَلَآ إِنَّ حِزۡبَ ٱللَّهِ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ٢٢﴾ ] سورة المجادلة :22[
“যারা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান আনে তুমি পাবে না এমন জাতিকে তাদেরকে পাবে না এমন লোকদের সাথে বন্ধুত্ব করতে বন্ধু হিসাবে যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করে, যদি সেই বিরুদ্ধবাদীরা তাদের পিতা, পুত্র, ভাই অথবা জ্ঞাতি-গোষ্ঠী হয় তবুও। এদের অন্তরে আল্লাহ ঈমান লিখে দিয়েছেন এবং তাঁর পক্ষ থেকে রূহ দ্বারা তাদের শক্তিশালী করেছেন। তিনি তাদের প্রবেশ করাবেন এমন জান্নাতসমূহে যার নিচে দিয়ে ঝর্ণাধারাসমূহ প্রবাহিত হয়। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। এরা হল আল্লাহর দল। জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহর দলই সফলকাম”। [সূরা মুজাদালাহ, আয়াত: ২২] [অর্থাৎ যারা আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলে বিরোধিতা করে, তারা যদি তোমাদের নিকটাত্মীয়ও হয়ে থাকে; তোমাদের মাতা-পিতাও হয়ে থাকে, তারপরও তাদের সাথে কোন প্রকার বন্ধুত্ব চলে না।]
কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হল, বর্তমানে অধিকাংশ মানুষ দ্বীনের এ গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতিকে একেবারেই ভুলে গেছে [তারা অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব করাকে তাদের উদারতা, উগ্রবাদ বিরোধিতা ও অসাম্প্রদায়িকতা বলে চালিয়ে যাচ্ছে। তারা মনে করে অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব করা ও তাদের সাথে সু-সম্পর্ক রাখা উদারপন্থী ও অসাম্প্রদায়িক হওয়ার প্রমাণ। মনে রাখতে হবে, যে সব মুসলিম এ ধরনের মন-মানসিকতা পোষণ করে তারা কখনোই ঈমানদার হতে পারে না। তারা ইয়াহুদী খৃষ্টানদের দোষর এবং আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের দুশমন। আমাদের সমাজে এ ধরনের ঘাতকের অভাব নাই। [অনুবাদক]।]।
এমনকি আমি আরবি একটি টিভি চ্যানেলে একজন বিশিষ্ট আলেম ও দা‘য়ীকে বলতে শুনেছি, তিনি খৃষ্টানদের সম্পর্কে বলেন, তারা আমাদের ভাই। এটি একটি মারাত্মক কথা যার সমর্থনে কোন দলীল-প্রমাণ নাই [এ ধরনের কথা শুধু মারাত্মকই নয়, বরং ঈমানের জন্য হুমকি। যারা এ ধরনের কথা বলে, তাদের ঈমান প্রশ্নবিদ্ধ। আল্লাহ আমাদের এ ধরনের কথা-বার্তা থেকে হেফাজত করুক।]।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেভাবে ইসলামী আকীদায় অবিশ্বাসী কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব করাকে হারাম করেছেন এবং তাদের ঘৃণা করার নির্দেশ দিয়েছেন, সেভাবে যারা ঈমান এনেছে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করা ও তাদের মহব্বত করাকেও ওয়াজিব করেছেন। [একজন ঈমানদারের প্রতি অপর ঈমানদারের ভালোবাসা ও মহব্বত থাকতে হবে এবং তাদের বিপদ-আপদে এগিয়ে আসতে হবে।] আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱلَّذِينَ يُقِيمُونَ ٱلصَّلَوٰةَ وَيُؤۡتُونَ ٱلزَّكَوٰةَ وَهُمۡ رَٰكِعُونَ ٥٥ وَمَن يَتَوَلَّ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ فَإِنَّ حِزۡبَ ٱللَّهِ هُمُ ٱلۡغَٰلِبُونَ ٥٦﴾ [ سورة المائدة : 55].
“তোমাদের বন্ধু কেবল আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মুমিনগণ, যারা সালাত কায়েম করে এবং যাকাত প্রদান করে বিনীত হয়ে। আর যে আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মুমিনদের সাথে বন্ধুত্ব করে, তবে নিশ্চয় আল্লাহর দলই বিজয়ী”। [সূরা মায়েদাহ, আয়াত: ৫৫]
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও বলেন,
﴿مُّحَمَّدٞ رَّسُولُ ٱللَّهِۚ وَٱلَّذِينَ مَعَهُۥٓ أَشِدَّآءُ عَلَى ٱلۡكُفَّارِ رُحَمَآءُ بَيۡنَهُمۡۖ تَرَىٰهُمۡ رُكَّعٗا سُجَّدٗا يَبۡتَغُونَ فَضۡلٗا مِّنَ ٱللَّهِ وَرِضۡوَٰنٗاۖ سِيمَاهُمۡ فِي وُجُوهِهِم مِّنۡ أَثَرِ ٱلسُّجُودِۚ﴾ [ سورة الفتح :29].
“মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল এবং তার সাথে যারা আছে তারা কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর; পরস্পরের প্রতি সদয়” [ব্যাখ্যা: আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুমিনদের পারস্পরিক সম্পর্ক ও কাফেরদের বিপক্ষে তাদের অবস্থানের একটি চিত্র তুলে ধরেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, মুমিনরা পরস্পরের প্রতি অতীব সদয় ও দয়া পরবশ। তারা তাদের ছোটদের স্নেহ করে বড়দের সম্মান করে। তাদের মধ্যে কোন প্রকার হিংসা-বিদ্বেষ নাই। কিন্তু দুশমনদের বিরুদ্ধে তারা অত্যন্ত কঠিন। তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার আপোষ নাই। দুশমনদের মোকাবেলায় তারা এক। [অনুবাদক]।]। [সূরা ফাতহ, আয়াত: ২৯]
﴿إِنَّمَا ٱلۡمُؤۡمِنُونَ إِخۡوَةٞ﴾ [ سورة الحجرات :10].
“নিশ্চয় মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই। [সূরা হুজরাত, আয়াত: ১০]
সুতরাং মুমিনগণ পরস্পর ভাই, এ ভ্রাতৃত্ব দ্বীন ও আকীদার ভিত্তিতে; যদিও দেশ, বংশ ও সময়ের দিক থেকে তাদের মধ্যে দুরত্ব থাকুক।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআন করীমে এরশাদ করে বলেন,
﴿وَٱلَّذِينَ جَآءُو مِنۢ بَعۡدِهِمۡ يَقُولُونَ رَبَّنَا ٱغۡفِرۡ لَنَا وَلِإِخۡوَٰنِنَا ٱلَّذِينَ سَبَقُونَا بِٱلۡإِيمَٰنِ وَلَا تَجۡعَلۡ فِي قُلُوبِنَا غِلّٗا لِّلَّذِينَ ءَامَنُواْ رَبَّنَآ إِنَّكَ رَءُوفٞ رَّحِيمٌ ١٠﴾ [ سورة الحشر :10].
“যারা তাদের পরে এসেছে তারা বলে: ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে ও আমাদের ভাই যারা ঈমান নিয়ে আমাদের পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে তাদেরকে ক্ষমা করুন; এবং যারা ঈমান এনেছিল তাদের জন্য আমাদের অন্তরে কোন বিদ্বেষ রাখবেন না; হে আমাদের রব, নিশ্চয় আপনি দয়াবান, পরম দয়ালু”। [সূরা হাসর, আয়াত: ১০]
মোট কথা, সৃষ্টির শুরু থেকে আজ পর্যন্ত মুমিনরা একে অপরের ভাই। তাদের ঘর-বাড়ী, স্থান-কাল ও সীমা-রেখা যতই দূরে থাকুক না কেন, তা বিবেচনার বিষয় নয়, তারা আল্লাহ ও তার রাসূলে বিশ্বাসী কিনা তা হল মুল বিবেচনার বিষয়। ঈমানের দিক দিয়ে তাদের একের সাথে অপরের সম্পর্ক খুবই গভীর। পরবর্তী যুগের মুমিনরা তাদের পূর্ববর্তীদের অনুকরণ করবে, তাদের জন্য দো‘আ করবে, ক্ষমা চাইবে।
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন