HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
ইসলামে বন্ধুত্ব ও শত্রুতা
লেখকঃ শাইখ সালেহ ইবন ফাউযান আল-ফাউযান
৬
বন্ধুত্ব ও দুশমনির বিবেচনায় মানুষের প্রকারভেদবন্ধুত্ব ও শত্রুতার বিবেচনায় মানুষ তিন প্রকার:
প্রথম প্রকার: [যাদেরকে খালেসভাবে ভালোবাসতে হবে]
ঐ সব ঈমানদার যাদেরকে অন্তরের অন্তঃস্থল হতে মহব্বত করতে হবে এবং খালেস মহব্বত করতে হবে। তাদের প্রতি কোনো প্রকার দুশমনি করা যাবে না এবং ঘৃণা করা যাবে না।
তারা হচ্ছে, খালেস মুমিন, যাদের ঈমানের মধ্যে কোন প্রকার ত্রুটি নাই। প্রকৃত পক্ষে এরা হল, নবী, রাসূল, সিদ্দিকীন, সালে-হীন ও শহীদগণ।
এদের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও সবোর্চ্চ স্থানের অধিকারী হলেন, আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তাকে দুনিয়ার সব মানুষ থেকে অধিক মহব্বত করতে হবে। এমনকি মাতা-পিতা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন ও দুনিয়ার সব মানুষ থেকে বেশি মহব্বত করতে হবে [যখন একজন মানুষ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দুনিয়ার সবকিছু হতে বেশি মহব্বত করবে, তখন সে প্রকৃত ঈমানদার হতে পারবে।]। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পর সর্বাধিক বেশি মহব্বত করতে হবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রীগণ যারা মুমিনদের মাতা। তারপর তার পরিবার-পরিজন ও তার সাহাবী তথা সাথী-সঙ্গীদের বেশি মহব্বত করতে হবে। বিশেষ করে, খুলাফায়ে রাশেদীন এবং দশ জনের বাকী সাহাবীগণের প্রতি, যাদের দুনিয়াতে জান্নাতের সু-সংবাদ দেয়া হয়েছে। আরও ভালোবাসতে হবে, অপরাপর মুহাজির ও আনছারগণকে। তারপর যারা বদরের যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন এবং বাইয়াতে রেদওয়ানে শরিক হন, তারপর বাকী সাহাবীগণের মহব্বত অন্তরে থাকতে হবে।
সাহাবীদের পর মুমিনদের অন্তরে তাবে‘য়ীদের প্রতি মহব্বত ও ভালোবাসা থাকতে হবে। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে যুগকে উত্তম যুগ বলে আখ্যায়িত করেন, তাদের প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে। আর এ উম্মতের সালাফে সালে-হীন ও চার ইমামের প্রতি মহব্বত থাকতে হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿وَٱلَّذِينَ جَآءُو مِنۢ بَعۡدِهِمۡ يَقُولُونَ رَبَّنَا ٱغۡفِرۡ لَنَا وَلِإِخۡوَٰنِنَا ٱلَّذِينَ سَبَقُونَا بِٱلۡإِيمَٰنِ وَلَا تَجۡعَلۡ فِي قُلُوبِنَا غِلّٗا لِّلَّذِينَ ءَامَنُواْ رَبَّنَآ إِنَّكَ رَءُوفٞ رَّحِيمٌ ١٠﴾ [ سورة الحشر :10].
“যারা তাদের পরে এসেছে তারা বলে: ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে ও আমাদের ভাই যারা ঈমান নিয়ে আমাদের পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে তাদেরকে ক্ষমা করুন; এবং যারা ঈমান এনেছিল তাদের জন্য আমাদের অন্তরে কোন বিদ্বেষ রাখবেন না; হে আমাদের রব, নিশ্চয় আপনি দয়াবান, পরম দয়ালু”। [সূরা হাশর, আয়াত: ১০]
যার অন্তরে সামান্য পরিমাণ ঈমান আছে, সে কখনোই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবী ও উম্মতের সালাফদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করতে পারে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবী ও তার উম্মতের মহা মনিষীদের প্রতি তারাই বিদ্বেষ পোষণ করতে পারে, যারা মুনাফেক ও যাদের অন্তরে কপটতা আছে [এ ছাড়া ইসলামের দুশমন যারা ইসলামের মূলোৎপাটনে যুগে যুগে ভূমিকা রাখে, তারাই ইসলামের প্রাণ পুরুষদের কলঙ্কিত করে ইসলামের সৌন্দর্য, গ্রহণযোগ্যতা ও সার্বজনীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। [অনুবাদক]।]। যেমন, শিয়া-রাফেযী সম্প্রদায়, খারেজী সম্প্রদায় ইত্যাদি। আমরা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করি তিনি যেন আমাদের হেফাজত করেন।
দ্বিতীয় প্রকার: যাদের সাথে খালেস দুশমনি ও শত্রুতা করতে হবে
দ্বিতীয় শ্রেণীর লোক খাটি কাফের, মুনাফেক, মুশরিক, নাস্তিক, মুরতাদ ও অনুরূপ লোক, যাদের সাথে দুশমনি করার কোন বিকল্প নাই [এদেরকে অবশ্যই ঘৃণা করতে হবে এবং এদের বিরোধিতা করতে হবে। তাদের সাথে কোন প্রকার বন্ধুত্ব করা যাবে না এবং তাদের সাথে কোন সম্পর্ক রাখা যাবে না। এ সব লোকের সাথে খালেস দুশমনি এবং এদের খুব ঘৃণা করতে হবে। তাদেরকে কোন প্রকার মহব্বত ও বন্ধুত্ব করা জঘন্য অপরাধ। এরা মানবতার দুশমন এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের দুশমন।]। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনে করীমে এরশাদ করে বলেন,
﴿لَّا تَجِدُ قَوۡمٗا يُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِ يُوَآدُّونَ مَنۡ حَآدَّ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَلَوۡ كَانُوٓاْ ءَابَآءَهُمۡ أَوۡ أَبۡنَآءَهُمۡ أَوۡ إِخۡوَٰنَهُمۡ أَوۡ عَشِيرَتَهُمۡۚ ﴾ [ سورة المجادلة :22 ].
“যারা আল্লাহ ও শেষদিবসের প্রতি ঈমান আনে তুমি পাবে না এমন জাতিকে তাদেরকে পাবে না এমন লোকদের সাথে বন্ধুত্ব করতে বন্ধু হিসাবে যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করে, যদি সেই বিরুদ্ধবাদীরা তাদের পিতা, পুত্র, ভাই অথবা জ্ঞাতি-গোষ্ঠী হয় তবুও। [সুরা মুজাদালাহ্, আয়াত: ২২]
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বনী ইসরাইলদের বিভিন্ন অপকর্মের বর্ণনা দিয়ে বলেন,
﴿ تَرَىٰ كَثِيرٗا مِّنۡهُمۡ يَتَوَلَّوۡنَ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْۚ لَبِئۡسَ مَا قَدَّمَتۡ لَهُمۡ أَنفُسُهُمۡ أَن سَخِطَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِمۡ وَفِي ٱلۡعَذَابِ هُمۡ خَٰلِدُونَ ٨٠ وَلَوۡ كَانُواْ يُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلنَّبِيِّ وَمَآ أُنزِلَ إِلَيۡهِ مَا ٱتَّخَذُوهُمۡ أَوۡلِيَآءَ وَلَٰكِنَّ كَثِيرٗا مِّنۡهُمۡ فَٰسِقُونَ ٨١﴾ [ سورة المائدة :79-80].
“তাদের মধ্যে অনেককে তুমি দেখতে পাবে, যারা কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব করে। তারা যা নিজদের জন্য পেশ করেছে, তা কত মন্দ যে, আল্লাহ তাদের উপর ক্রোধান্বিত হয়েছেন এবং তারা আযাবেই স্থায়ী হবে। আর যদি তারা আল্লাহ ও নবীর প্রতি এবং যা তার নিকট নাযিল করা হয়েছে তার প্রতি ঈমান রাখত, তবে তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করত না। কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকে ফাসিক”। [সূরা আল-মায়েদাহ্, আয়াত: ৭৯-৮০]
তৃতীয় শ্রেণীর লোক:
এ প্রকারের লোককে একদিক বিবেচনায় মহব্বত করা হবে এবং অপর দিক বিবেচনায় তাদের ঘৃণা করা হবে। তাদের মধ্যে মহব্বত ও ঘৃণা বা দুশমনি দুটিই একত্র হবে। এ প্রকারের লোক, গুনাহগার মুমিনরা। যারা ঈমানের সাথে গুনাহের কাজে জড়িত। তাদের মধ্যে ঈমান থাকার কারণে তাদের মহব্বত করা হবে আর গুনাহগার বা অপরাধী হওয়ার কারণে তাদের ঘৃণা করা হবে [অপরাধি মুসলিমের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ আর কাফেরের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ দুটি এক হতে পারে না। কাফেরদের প্রতি বিদ্বেষ বা শত্রুতা চিরন্তন। পক্ষান্তরে মুসলিমদের প্রতি বিদ্বেষ তার গুণাহের কারণে হয়ে থাকে। যেমনটি শাইখ বর্ণনা করেছেন। এর প্রমাণ হল ঐ হাদীস যেটিকে ইমাম বুখারি স্বীয় সনদে বর্ণনা করেন। عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رضي الله عنه أَنَّ رَجُلًا عَلَى عَهْدِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم كَانَ اسْمُهُ عَبْدَاللَّهِ وَكَانَ يُلَقَّبُ حِمَارًا وَكَانَ يُضْحِكُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَكَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم قَدْ جَلَدَهُ فِي الشَّرَابِ فَأُتِيَ بِهِ يَوْمًا فَأَمَرَ بِهِ فَجُلِدَ فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الْقَوْمِ اللَّهُمَّ الْعَنْهُ مَا أَكْثَرَ مَا يُؤْتَى بِهِ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم : « لَا تَلْعَنُوهُ فَوَاللَّهِ مَا عَلِمْتُ إِنَّهُ يُحِبُّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ » অর্থ, ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে আব্দুল্লাহ নামে এক ব্যক্তি যাকে সবাই জামার বলে ডাকতো এবং সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হাসাতো। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে মদ পান করার কারণে তাকে একবার শাস্তি দেয়। তাকে একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে উপস্থিত করা হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দুররা মারার নির্দেশ দিলে তাকে দুররা মারা হল। তার অবস্থা দেখে উপস্থিত এক লোক বলল, হে আল্লাহ তুমি তাকে রহমত থেকে দূর করে দাও। কারণ, লোকটিকে কতবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরাবারে আনা হয়ে থাকে। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলল, “তোমরা তাকে অভিশাপ করো না। কারণ, আল্লাহর শপথ, আমি তো জানি লোকটি আল্লাহ ও তার রাসূলকে মহব্বত করে।]। তবে তাদের গুনাহ শির্কের নিচে হতে হবে, যদি তাদের গুনাহ শির্কের পর্যায়ে পৌঁছে যায়, তখন তাদের বিধান কাফের ও মুশরিকদের বিধানেরই মত।
মুমিনদের মহব্বত করার দাবি হল, তাদের জন্য কল্যাণকামী ও তাদের হিতাকাংখী হতে হবে। মুমিনদেরকে সব সময় সৎ পথে চলা ও ভালো কাজ করার প্রতি উৎসাহ দিতে হবে, যাতে তারা কোন প্রকার অন্যায় ও অশ্লীল কাজের প্রতি ঝুঁকে না পড়ে। আপ্রাণ চেষ্টা করে তাদের অন্যায় কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখতে হবে এবং তাদের অন্যায় অপরাধের প্রতিবাদ করতে হবে। কোন মুমিন থেকে কোন অন্যায় সংঘটিত হতে দেখলে, তার উপর চুপ থাকা যাবে না। বরং তাদের গুনাহের বিরোধিতা করতে হবে এবং তাদেরকে গুনাহ থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে হবে। মুমিনরা মানুষকে ভালো কাজের আদেশ দেবে এবং অন্যায় কাজ হতে ফিরিয়ে রাখবে। আর তারা যাতে অন্যায়, অশ্লীল ও অসামাজিক কাজ হতে বিরত থাকে, সে জন্য তাদের সতর্ক করবে। মুমিনরা যদি কোন অন্যায় করে ফেলে, তখন তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করবে, যাতে তারা অন্যায় হতে বিরত থাকে এবং গুনাহ হতে আল্লাহর দরবারে তওবা করে।
গুনাহগার মুমিন বা অপরাধী মুমিনদেরকে কাফের মুশরিকদের মত পরিপূর্ণ ঘৃণা করবে না এবং তাদের সাথে কাফের মুশরিকদের মত এমন খালেস দুশমনি ও শত্রুতা দেখাবে না যে তাদের সাথে সম্পর্কত্যাগ করে থাকবে। যেমন খারেজিরা শির্কের নিম্ন পর্যায়ের কবিরা গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করে থাকে।
তবে কবিরা গুনাহে লিপ্ত লোকদের খালেস মহব্বত ও বন্ধুত্ব করা যাবে না, যেমনটি করে থাকে মুরজিয়া সম্প্রদায়ের লোকেরা [কারণ, তারা বলে ঈমানের সাথে গুনাহ কোন বিঘ্ন ঘটাতে পারে না। সুতরাং গুনাহ কোন সমস্যা নয়। এটা নিঃসন্দেহে খারেজীদের বিপরীতমুখী অবস্থান। এ দুয়ের মাঝখানে হচ্ছে হকপন্থা। [সম্পাদক]]; বরং তাদের [অপরাধী মুমিনদের] বিষয়ে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করতে হবে। আর এটিই হল, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মাযহাব [এখানে খারেজি ও মুরজিয়া উভয় পক্ষই বাড়াবাড়ি করে থাকে। এক পক্ষ বলে, গুনাহের কারণে তাকে একেবারে কাফেরের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হবে এবং তাদের সাথে কাফেরের মত আচরণ করতে হবে। আবার অপর পক্ষ বলে না, গুনাহের কারণে তাদের ঈমানের কোন ক্ষতি হয় না। সুতরাং, তাদের সাথে কোন খারাপ আচরণ করা যাবে না, বরং তাদের সাথে সে আচরণ করতে হবে, যে আচরণ মুমিনদের সাথে করা হবে। উভয় পক্ষই ভ্রান্তিতে আছে, একমাত্র আহলে সুন্নাত ওয়াল জমাত ছাড়া; তারা মধ্যম পন্থা অবলম্বন করেছে। তারা বলে, তাদের গুনাহের জন্য ঘৃণা করা হবে, আর ঈমানের কারণে মহব্বত করা হবে।]।
আর আল্লাহর জন্য মহব্বত এবং আল্লাহর জন্য দুশমনি করা ঈমানের মজবুত রশি। আর হাদিসে বর্ণিত আছে, কিয়ামতের দিন মানুষ তার সাথে থাকবে, যাকে সে মহব্বত করে। [হাদীসটি বুখারিতে বর্ণিত। কিতাবুল আদব, পরিচ্ছেদ: আল্লাহর মহব্বতের নিদর্শন। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ كَيْفَ تَقُولُ فِي رَجُلٍ أَحَبَّ قَوْماً وَلَمْ يَلْحَقْ بِهِمْ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : « الْمَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَبَّ » وأخرجه مسلم ، كتاب الصلة ، باب المرء مع من أحب .অর্থ, এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে এসে বলে, হে আল্লাহর রাসূল! এক ব্যক্তি সে কোন সম্প্রদায়ের লোককে মহব্বত করে অথচ সে তাদের সাথে সম্পৃক্ত নয়, আপনি তার সম্পর্কে কি বলেন, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মানুষ তার সাথে হবে যাকে সে মহব্বত করে। আর মুসলিম হাদীসটি কিতাবুস সেলা-তে আলোচনা করেন। পরিচ্ছেদ: মানুষ যাকে মহব্বত করে তার সাথে হবে।]
বর্তমান যুগে মানুষের অবস্থা পরিবর্তিত হয়ে গেছে। বর্তমানে মানুষের অধিকাংশ মহব্বত ও বন্ধুত্ব দুনিয়ার কারণেই হয়ে থাকে। যখন কোন মানুষের নিকট দুনিয়ার ধন-সম্পদ থাকে, তার হাতে ক্ষমতা থাকে বা তার শক্তি থাকে, তখন মানুষ তাকে মহব্বত করতে থাকে এবং তার সাথে বন্ধুত্ব করে, যদিও সে আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং দ্বীন ইসলামের অনেক বড় দুশমন [যার কারণে তাদের বন্ধুত্ব ও মহব্বত কখনো স্থায়ী হয় না, একেবারেই সাময়িক হয়। যখন স্বার্থ হাসিল না হয় বা স্বার্থের বিঘ্ন ঘটে, তখন তাদের বন্ধুত্ব আর টিক না, একে অপরের শত্রুতে পরিণত হয়। এ হল, বর্তমান যুগে আমাদের অবস্থা ও পরিণতি। আমরা মানুষের সাথে স্বার্থের বন্ধুত্ব করি এবং স্বার্থে কারণে আবার শত্রুতা করি। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।]। আর যখন কারো নিকট দুনিয়ার ধন সম্পদ না থাকে তখন সে যত বড় আল্লাহর অলি বা আল্লাহর রাসূলের অনুসারী হোক না কেন, তাকে কেউ মহব্বত করে না এবং তার সাথে বন্ধুত্ব করে না। কারণ, তার দ্বারা তার পার্থিব স্বার্থ হাসিল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। ফলে তাকে পদে পদে অপমান করে এবং তার সাথে দুর্ব্যবহার করে, যখন তখন তাকে অসম্মান ও অশ্রদ্ধা করে [এ ধরনের বন্ধুত্ব ও শত্রুতা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে কোন কাজে আসবে না। আল্লাহর জন্য ভালোবাসা এবং আল্লাহর জন্য শত্রুতাই আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে কাজে আসবে।]। আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন,
«مَنْ أَحَبَ فِي اللهِ وأبغضَ في اللهِ ووالى في اللهِ وعادى في اللهِ فإنما تُنالُ وَلايةُ اللهِ بذلك ، وقدْ صارتْ عامةُ مُؤاخاةُ الناسِ على أمرِ الدُنيا وذلك لا يُجدي على أهلِهِ شَيئاً » رواه ابن جرير
“যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য মহব্বত করে এবং আল্লাহর জন্য ঘৃণা করে, আর আল্লাহর জন্য বন্ধুত্ব করে এবং আল্লাহর জন্য দুশমনি করে, অবশ্যই এর মাধ্যমে সে আল্লাহর সান্নিধ্য ও বন্ধুত্ব লাভ করবে। কিন্তু বর্তমানে অধিকাংশ মানুষের বন্ধুত্বের ভিত হল, দুনিয়ার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট। এ কারণেই এ ধরনের বন্ধুত্ব দ্বারা তারা কিছুই লাভ করতে পারে না”। [ইবনে জারির]
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, নিশ্চয় আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
« مَنْ عَادَى لِي وَلِيًّا فَقَدْ آذَنْتُهُ بِالْحَرْبِ » الحديث رواه البخاري .
“যে ব্যক্তি আমার কোন অলি বা বন্ধুর বিরোধিতা করে এবং তার সাথে দুশমনি রাখে, আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করলাম”। [বুখারি কিতাবর রিকাক, পরিচ্ছেদ: বিনয়।]
মানুষের মধ্য হতে আল্লাহর সবচেয়ে বিরুদ্ধবাদী বা বিরোধী ব্যক্তি হল, যে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণের সাথে দুশমনি করে, তাদের সমালোচনা করে এবং তাদেরকে খাটো বা হেয় প্রতিপন্ন করে। অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করে বলেন,
«اللَّهَ اللَّهَ فِي أَصْحَابِي لَا تَتَّخِذُوهُمْ غَرَضاً ، فمَنْ آذَاهُمْ فَقَدْ آذَانِي وَمَنْ آذَانِي فَقَدْ آذَى اللَّهَ وَمَنْ آذَى اللَّهَ يُوشِكُ أَنْ يَأْخُذَهُ » . أخرجه الترمذيُ وغيرُه
আল্লাহর দোহাই, আল্লাহর দোহাই, তোমরা আমার সাহাবীদের বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন কর। তোমরা আমার সাহাবীদেরকে তোমাদের সমালোচনা ও বিতর্কের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করো না। যারা তাদের কষ্ট দেয়, তারা আমাকেই কষ্ট দিল, আর যে ব্যক্তি আমাকে কষ্ট দেয়, সে আল্লাহকে কষ্ট দিল, আর যে আল্লাহকে কষ্ট দেয়, তাকে অবশ্যই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পাকড়াও করবে [ইমাম তিরমিযি মানাকেব অধ্যায়ে যারা রাসূলের সাহাবীদের গালি দেন তাদের আলোচনা হাদিসটি বর্ণনা করেন। ইমাম তিরমিযির নিকট হাদিসটির বর্ণনা এভাবে, আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফ্ফাল রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «اللَّهَ اللَّهَ فِي أَصْحَابِي اللَّهَ اللَّهَ فِي أَصْحَابِي لَا تَتَّخِذُوهُمْ غَرَضاً بَعْدِي فَمَنْ أَحَبَّهُمْ فَبِحُبِّي أَحَبَّهُمْ وَمَنْ أَبْغَضَهُمْ فَبِبُغْضِي أَبْغَضَهُمْ وَمَنْ آذَاهُمْ فَقَدْ آذَانِي وَمَنْ آذَانِي فَقَدْ آذَى اللَّهَ وَمَنْ آذَى اللَّهَ يُوشِكُ أَنْ يَأْخُذَهُ» অর্থ, আমার সাহাবীদের বিষয়ে তোমাদেরকে আল্লাহর দোহাই দিচ্ছি, আমার সাহাবীদের বিষয়ে তোমাদেরকে আল্লাহর দোহাই দিচ্ছি, তোমরা আমার সাহাবীদের বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন কর। তোমরা আমাদের সাহাবীদেরকে তোমাদের সমালোচনা ও বিতর্কের লক্ষ্য বস্তুতে পরিণত করো না। যারা তাদের তাদের মহব্বত করে আমাকে মহব্বত করার কারণে মহব্বত করে আর যারা তাদের ঘৃণা করে তারা আমাকে ঘৃণা করার কারণে ঘৃণা করল। আর যারা তাদের কষ্ট দেয়, তারা আমাকেই কষ্ট দিল, আর যে ব্যক্তি আমাকে কষ্ট দেয়, সে আল্লাহকে কষ্ট দিল, আর যে আল্লাহকে কষ্ট দেয়, তাকে অবশ্যই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পাকড়াও করবে।]। [তিরমিযি ও অন্যান্য হাদিসের কিতাবসমূহ]
কোন কোন ভ্রষ্ট-গোমরাহ ফের্কা ও দল এমন আছে, তারা মনে করে সাহাবীগণকে গালি দেয়া, তাদের বিরোধিতা করা ও তাদের সমালোচনা করা দ্বীনের একটি অংশ বা দীনি দায়িত্ব। তাই তারা সব সময় তাদের সমালোচনা ও বিরোধিতায় লিপ্ত থাকে এবং মানুষের মধ্যে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রাণ প্রিয় সাহাবীদের সমালোচনা করতে থাকে। এর কারণে তাদের অবশ্যই কঠিন আযাবের মুখোমুখি হতে হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে তার কঠিন ও বেদনা দায়ক আযাব ও গজব থেকে হেফাজত করুন এবং আমরা আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করি তিনি যেন আমাদের ক্ষমা করেন এবং মাফ করেন।
وصلى اللهُ وسلَّمَ وباركَ علي نبيِنا محمدٍ وآلِهِ وصحبِه .
প্রথম প্রকার: [যাদেরকে খালেসভাবে ভালোবাসতে হবে]
ঐ সব ঈমানদার যাদেরকে অন্তরের অন্তঃস্থল হতে মহব্বত করতে হবে এবং খালেস মহব্বত করতে হবে। তাদের প্রতি কোনো প্রকার দুশমনি করা যাবে না এবং ঘৃণা করা যাবে না।
তারা হচ্ছে, খালেস মুমিন, যাদের ঈমানের মধ্যে কোন প্রকার ত্রুটি নাই। প্রকৃত পক্ষে এরা হল, নবী, রাসূল, সিদ্দিকীন, সালে-হীন ও শহীদগণ।
এদের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও সবোর্চ্চ স্থানের অধিকারী হলেন, আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তাকে দুনিয়ার সব মানুষ থেকে অধিক মহব্বত করতে হবে। এমনকি মাতা-পিতা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন ও দুনিয়ার সব মানুষ থেকে বেশি মহব্বত করতে হবে [যখন একজন মানুষ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দুনিয়ার সবকিছু হতে বেশি মহব্বত করবে, তখন সে প্রকৃত ঈমানদার হতে পারবে।]। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পর সর্বাধিক বেশি মহব্বত করতে হবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রীগণ যারা মুমিনদের মাতা। তারপর তার পরিবার-পরিজন ও তার সাহাবী তথা সাথী-সঙ্গীদের বেশি মহব্বত করতে হবে। বিশেষ করে, খুলাফায়ে রাশেদীন এবং দশ জনের বাকী সাহাবীগণের প্রতি, যাদের দুনিয়াতে জান্নাতের সু-সংবাদ দেয়া হয়েছে। আরও ভালোবাসতে হবে, অপরাপর মুহাজির ও আনছারগণকে। তারপর যারা বদরের যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন এবং বাইয়াতে রেদওয়ানে শরিক হন, তারপর বাকী সাহাবীগণের মহব্বত অন্তরে থাকতে হবে।
সাহাবীদের পর মুমিনদের অন্তরে তাবে‘য়ীদের প্রতি মহব্বত ও ভালোবাসা থাকতে হবে। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে যুগকে উত্তম যুগ বলে আখ্যায়িত করেন, তাদের প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে। আর এ উম্মতের সালাফে সালে-হীন ও চার ইমামের প্রতি মহব্বত থাকতে হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿وَٱلَّذِينَ جَآءُو مِنۢ بَعۡدِهِمۡ يَقُولُونَ رَبَّنَا ٱغۡفِرۡ لَنَا وَلِإِخۡوَٰنِنَا ٱلَّذِينَ سَبَقُونَا بِٱلۡإِيمَٰنِ وَلَا تَجۡعَلۡ فِي قُلُوبِنَا غِلّٗا لِّلَّذِينَ ءَامَنُواْ رَبَّنَآ إِنَّكَ رَءُوفٞ رَّحِيمٌ ١٠﴾ [ سورة الحشر :10].
“যারা তাদের পরে এসেছে তারা বলে: ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে ও আমাদের ভাই যারা ঈমান নিয়ে আমাদের পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে তাদেরকে ক্ষমা করুন; এবং যারা ঈমান এনেছিল তাদের জন্য আমাদের অন্তরে কোন বিদ্বেষ রাখবেন না; হে আমাদের রব, নিশ্চয় আপনি দয়াবান, পরম দয়ালু”। [সূরা হাশর, আয়াত: ১০]
যার অন্তরে সামান্য পরিমাণ ঈমান আছে, সে কখনোই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবী ও উম্মতের সালাফদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করতে পারে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবী ও তার উম্মতের মহা মনিষীদের প্রতি তারাই বিদ্বেষ পোষণ করতে পারে, যারা মুনাফেক ও যাদের অন্তরে কপটতা আছে [এ ছাড়া ইসলামের দুশমন যারা ইসলামের মূলোৎপাটনে যুগে যুগে ভূমিকা রাখে, তারাই ইসলামের প্রাণ পুরুষদের কলঙ্কিত করে ইসলামের সৌন্দর্য, গ্রহণযোগ্যতা ও সার্বজনীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। [অনুবাদক]।]। যেমন, শিয়া-রাফেযী সম্প্রদায়, খারেজী সম্প্রদায় ইত্যাদি। আমরা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করি তিনি যেন আমাদের হেফাজত করেন।
দ্বিতীয় প্রকার: যাদের সাথে খালেস দুশমনি ও শত্রুতা করতে হবে
দ্বিতীয় শ্রেণীর লোক খাটি কাফের, মুনাফেক, মুশরিক, নাস্তিক, মুরতাদ ও অনুরূপ লোক, যাদের সাথে দুশমনি করার কোন বিকল্প নাই [এদেরকে অবশ্যই ঘৃণা করতে হবে এবং এদের বিরোধিতা করতে হবে। তাদের সাথে কোন প্রকার বন্ধুত্ব করা যাবে না এবং তাদের সাথে কোন সম্পর্ক রাখা যাবে না। এ সব লোকের সাথে খালেস দুশমনি এবং এদের খুব ঘৃণা করতে হবে। তাদেরকে কোন প্রকার মহব্বত ও বন্ধুত্ব করা জঘন্য অপরাধ। এরা মানবতার দুশমন এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের দুশমন।]। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনে করীমে এরশাদ করে বলেন,
﴿لَّا تَجِدُ قَوۡمٗا يُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِ يُوَآدُّونَ مَنۡ حَآدَّ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَلَوۡ كَانُوٓاْ ءَابَآءَهُمۡ أَوۡ أَبۡنَآءَهُمۡ أَوۡ إِخۡوَٰنَهُمۡ أَوۡ عَشِيرَتَهُمۡۚ ﴾ [ سورة المجادلة :22 ].
“যারা আল্লাহ ও শেষদিবসের প্রতি ঈমান আনে তুমি পাবে না এমন জাতিকে তাদেরকে পাবে না এমন লোকদের সাথে বন্ধুত্ব করতে বন্ধু হিসাবে যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করে, যদি সেই বিরুদ্ধবাদীরা তাদের পিতা, পুত্র, ভাই অথবা জ্ঞাতি-গোষ্ঠী হয় তবুও। [সুরা মুজাদালাহ্, আয়াত: ২২]
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বনী ইসরাইলদের বিভিন্ন অপকর্মের বর্ণনা দিয়ে বলেন,
﴿ تَرَىٰ كَثِيرٗا مِّنۡهُمۡ يَتَوَلَّوۡنَ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْۚ لَبِئۡسَ مَا قَدَّمَتۡ لَهُمۡ أَنفُسُهُمۡ أَن سَخِطَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِمۡ وَفِي ٱلۡعَذَابِ هُمۡ خَٰلِدُونَ ٨٠ وَلَوۡ كَانُواْ يُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلنَّبِيِّ وَمَآ أُنزِلَ إِلَيۡهِ مَا ٱتَّخَذُوهُمۡ أَوۡلِيَآءَ وَلَٰكِنَّ كَثِيرٗا مِّنۡهُمۡ فَٰسِقُونَ ٨١﴾ [ سورة المائدة :79-80].
“তাদের মধ্যে অনেককে তুমি দেখতে পাবে, যারা কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব করে। তারা যা নিজদের জন্য পেশ করেছে, তা কত মন্দ যে, আল্লাহ তাদের উপর ক্রোধান্বিত হয়েছেন এবং তারা আযাবেই স্থায়ী হবে। আর যদি তারা আল্লাহ ও নবীর প্রতি এবং যা তার নিকট নাযিল করা হয়েছে তার প্রতি ঈমান রাখত, তবে তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করত না। কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকে ফাসিক”। [সূরা আল-মায়েদাহ্, আয়াত: ৭৯-৮০]
তৃতীয় শ্রেণীর লোক:
এ প্রকারের লোককে একদিক বিবেচনায় মহব্বত করা হবে এবং অপর দিক বিবেচনায় তাদের ঘৃণা করা হবে। তাদের মধ্যে মহব্বত ও ঘৃণা বা দুশমনি দুটিই একত্র হবে। এ প্রকারের লোক, গুনাহগার মুমিনরা। যারা ঈমানের সাথে গুনাহের কাজে জড়িত। তাদের মধ্যে ঈমান থাকার কারণে তাদের মহব্বত করা হবে আর গুনাহগার বা অপরাধী হওয়ার কারণে তাদের ঘৃণা করা হবে [অপরাধি মুসলিমের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ আর কাফেরের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ দুটি এক হতে পারে না। কাফেরদের প্রতি বিদ্বেষ বা শত্রুতা চিরন্তন। পক্ষান্তরে মুসলিমদের প্রতি বিদ্বেষ তার গুণাহের কারণে হয়ে থাকে। যেমনটি শাইখ বর্ণনা করেছেন। এর প্রমাণ হল ঐ হাদীস যেটিকে ইমাম বুখারি স্বীয় সনদে বর্ণনা করেন। عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رضي الله عنه أَنَّ رَجُلًا عَلَى عَهْدِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم كَانَ اسْمُهُ عَبْدَاللَّهِ وَكَانَ يُلَقَّبُ حِمَارًا وَكَانَ يُضْحِكُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَكَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم قَدْ جَلَدَهُ فِي الشَّرَابِ فَأُتِيَ بِهِ يَوْمًا فَأَمَرَ بِهِ فَجُلِدَ فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الْقَوْمِ اللَّهُمَّ الْعَنْهُ مَا أَكْثَرَ مَا يُؤْتَى بِهِ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم : « لَا تَلْعَنُوهُ فَوَاللَّهِ مَا عَلِمْتُ إِنَّهُ يُحِبُّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ » অর্থ, ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে আব্দুল্লাহ নামে এক ব্যক্তি যাকে সবাই জামার বলে ডাকতো এবং সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হাসাতো। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে মদ পান করার কারণে তাকে একবার শাস্তি দেয়। তাকে একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে উপস্থিত করা হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দুররা মারার নির্দেশ দিলে তাকে দুররা মারা হল। তার অবস্থা দেখে উপস্থিত এক লোক বলল, হে আল্লাহ তুমি তাকে রহমত থেকে দূর করে দাও। কারণ, লোকটিকে কতবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরাবারে আনা হয়ে থাকে। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলল, “তোমরা তাকে অভিশাপ করো না। কারণ, আল্লাহর শপথ, আমি তো জানি লোকটি আল্লাহ ও তার রাসূলকে মহব্বত করে।]। তবে তাদের গুনাহ শির্কের নিচে হতে হবে, যদি তাদের গুনাহ শির্কের পর্যায়ে পৌঁছে যায়, তখন তাদের বিধান কাফের ও মুশরিকদের বিধানেরই মত।
মুমিনদের মহব্বত করার দাবি হল, তাদের জন্য কল্যাণকামী ও তাদের হিতাকাংখী হতে হবে। মুমিনদেরকে সব সময় সৎ পথে চলা ও ভালো কাজ করার প্রতি উৎসাহ দিতে হবে, যাতে তারা কোন প্রকার অন্যায় ও অশ্লীল কাজের প্রতি ঝুঁকে না পড়ে। আপ্রাণ চেষ্টা করে তাদের অন্যায় কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখতে হবে এবং তাদের অন্যায় অপরাধের প্রতিবাদ করতে হবে। কোন মুমিন থেকে কোন অন্যায় সংঘটিত হতে দেখলে, তার উপর চুপ থাকা যাবে না। বরং তাদের গুনাহের বিরোধিতা করতে হবে এবং তাদেরকে গুনাহ থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে হবে। মুমিনরা মানুষকে ভালো কাজের আদেশ দেবে এবং অন্যায় কাজ হতে ফিরিয়ে রাখবে। আর তারা যাতে অন্যায়, অশ্লীল ও অসামাজিক কাজ হতে বিরত থাকে, সে জন্য তাদের সতর্ক করবে। মুমিনরা যদি কোন অন্যায় করে ফেলে, তখন তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করবে, যাতে তারা অন্যায় হতে বিরত থাকে এবং গুনাহ হতে আল্লাহর দরবারে তওবা করে।
গুনাহগার মুমিন বা অপরাধী মুমিনদেরকে কাফের মুশরিকদের মত পরিপূর্ণ ঘৃণা করবে না এবং তাদের সাথে কাফের মুশরিকদের মত এমন খালেস দুশমনি ও শত্রুতা দেখাবে না যে তাদের সাথে সম্পর্কত্যাগ করে থাকবে। যেমন খারেজিরা শির্কের নিম্ন পর্যায়ের কবিরা গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করে থাকে।
তবে কবিরা গুনাহে লিপ্ত লোকদের খালেস মহব্বত ও বন্ধুত্ব করা যাবে না, যেমনটি করে থাকে মুরজিয়া সম্প্রদায়ের লোকেরা [কারণ, তারা বলে ঈমানের সাথে গুনাহ কোন বিঘ্ন ঘটাতে পারে না। সুতরাং গুনাহ কোন সমস্যা নয়। এটা নিঃসন্দেহে খারেজীদের বিপরীতমুখী অবস্থান। এ দুয়ের মাঝখানে হচ্ছে হকপন্থা। [সম্পাদক]]; বরং তাদের [অপরাধী মুমিনদের] বিষয়ে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করতে হবে। আর এটিই হল, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মাযহাব [এখানে খারেজি ও মুরজিয়া উভয় পক্ষই বাড়াবাড়ি করে থাকে। এক পক্ষ বলে, গুনাহের কারণে তাকে একেবারে কাফেরের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হবে এবং তাদের সাথে কাফেরের মত আচরণ করতে হবে। আবার অপর পক্ষ বলে না, গুনাহের কারণে তাদের ঈমানের কোন ক্ষতি হয় না। সুতরাং, তাদের সাথে কোন খারাপ আচরণ করা যাবে না, বরং তাদের সাথে সে আচরণ করতে হবে, যে আচরণ মুমিনদের সাথে করা হবে। উভয় পক্ষই ভ্রান্তিতে আছে, একমাত্র আহলে সুন্নাত ওয়াল জমাত ছাড়া; তারা মধ্যম পন্থা অবলম্বন করেছে। তারা বলে, তাদের গুনাহের জন্য ঘৃণা করা হবে, আর ঈমানের কারণে মহব্বত করা হবে।]।
আর আল্লাহর জন্য মহব্বত এবং আল্লাহর জন্য দুশমনি করা ঈমানের মজবুত রশি। আর হাদিসে বর্ণিত আছে, কিয়ামতের দিন মানুষ তার সাথে থাকবে, যাকে সে মহব্বত করে। [হাদীসটি বুখারিতে বর্ণিত। কিতাবুল আদব, পরিচ্ছেদ: আল্লাহর মহব্বতের নিদর্শন। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ كَيْفَ تَقُولُ فِي رَجُلٍ أَحَبَّ قَوْماً وَلَمْ يَلْحَقْ بِهِمْ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : « الْمَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَبَّ » وأخرجه مسلم ، كتاب الصلة ، باب المرء مع من أحب .অর্থ, এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে এসে বলে, হে আল্লাহর রাসূল! এক ব্যক্তি সে কোন সম্প্রদায়ের লোককে মহব্বত করে অথচ সে তাদের সাথে সম্পৃক্ত নয়, আপনি তার সম্পর্কে কি বলেন, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মানুষ তার সাথে হবে যাকে সে মহব্বত করে। আর মুসলিম হাদীসটি কিতাবুস সেলা-তে আলোচনা করেন। পরিচ্ছেদ: মানুষ যাকে মহব্বত করে তার সাথে হবে।]
বর্তমান যুগে মানুষের অবস্থা পরিবর্তিত হয়ে গেছে। বর্তমানে মানুষের অধিকাংশ মহব্বত ও বন্ধুত্ব দুনিয়ার কারণেই হয়ে থাকে। যখন কোন মানুষের নিকট দুনিয়ার ধন-সম্পদ থাকে, তার হাতে ক্ষমতা থাকে বা তার শক্তি থাকে, তখন মানুষ তাকে মহব্বত করতে থাকে এবং তার সাথে বন্ধুত্ব করে, যদিও সে আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং দ্বীন ইসলামের অনেক বড় দুশমন [যার কারণে তাদের বন্ধুত্ব ও মহব্বত কখনো স্থায়ী হয় না, একেবারেই সাময়িক হয়। যখন স্বার্থ হাসিল না হয় বা স্বার্থের বিঘ্ন ঘটে, তখন তাদের বন্ধুত্ব আর টিক না, একে অপরের শত্রুতে পরিণত হয়। এ হল, বর্তমান যুগে আমাদের অবস্থা ও পরিণতি। আমরা মানুষের সাথে স্বার্থের বন্ধুত্ব করি এবং স্বার্থে কারণে আবার শত্রুতা করি। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।]। আর যখন কারো নিকট দুনিয়ার ধন সম্পদ না থাকে তখন সে যত বড় আল্লাহর অলি বা আল্লাহর রাসূলের অনুসারী হোক না কেন, তাকে কেউ মহব্বত করে না এবং তার সাথে বন্ধুত্ব করে না। কারণ, তার দ্বারা তার পার্থিব স্বার্থ হাসিল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। ফলে তাকে পদে পদে অপমান করে এবং তার সাথে দুর্ব্যবহার করে, যখন তখন তাকে অসম্মান ও অশ্রদ্ধা করে [এ ধরনের বন্ধুত্ব ও শত্রুতা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে কোন কাজে আসবে না। আল্লাহর জন্য ভালোবাসা এবং আল্লাহর জন্য শত্রুতাই আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে কাজে আসবে।]। আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন,
«مَنْ أَحَبَ فِي اللهِ وأبغضَ في اللهِ ووالى في اللهِ وعادى في اللهِ فإنما تُنالُ وَلايةُ اللهِ بذلك ، وقدْ صارتْ عامةُ مُؤاخاةُ الناسِ على أمرِ الدُنيا وذلك لا يُجدي على أهلِهِ شَيئاً » رواه ابن جرير
“যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য মহব্বত করে এবং আল্লাহর জন্য ঘৃণা করে, আর আল্লাহর জন্য বন্ধুত্ব করে এবং আল্লাহর জন্য দুশমনি করে, অবশ্যই এর মাধ্যমে সে আল্লাহর সান্নিধ্য ও বন্ধুত্ব লাভ করবে। কিন্তু বর্তমানে অধিকাংশ মানুষের বন্ধুত্বের ভিত হল, দুনিয়ার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট। এ কারণেই এ ধরনের বন্ধুত্ব দ্বারা তারা কিছুই লাভ করতে পারে না”। [ইবনে জারির]
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, নিশ্চয় আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
« مَنْ عَادَى لِي وَلِيًّا فَقَدْ آذَنْتُهُ بِالْحَرْبِ » الحديث رواه البخاري .
“যে ব্যক্তি আমার কোন অলি বা বন্ধুর বিরোধিতা করে এবং তার সাথে দুশমনি রাখে, আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করলাম”। [বুখারি কিতাবর রিকাক, পরিচ্ছেদ: বিনয়।]
মানুষের মধ্য হতে আল্লাহর সবচেয়ে বিরুদ্ধবাদী বা বিরোধী ব্যক্তি হল, যে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণের সাথে দুশমনি করে, তাদের সমালোচনা করে এবং তাদেরকে খাটো বা হেয় প্রতিপন্ন করে। অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করে বলেন,
«اللَّهَ اللَّهَ فِي أَصْحَابِي لَا تَتَّخِذُوهُمْ غَرَضاً ، فمَنْ آذَاهُمْ فَقَدْ آذَانِي وَمَنْ آذَانِي فَقَدْ آذَى اللَّهَ وَمَنْ آذَى اللَّهَ يُوشِكُ أَنْ يَأْخُذَهُ » . أخرجه الترمذيُ وغيرُه
আল্লাহর দোহাই, আল্লাহর দোহাই, তোমরা আমার সাহাবীদের বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন কর। তোমরা আমার সাহাবীদেরকে তোমাদের সমালোচনা ও বিতর্কের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করো না। যারা তাদের কষ্ট দেয়, তারা আমাকেই কষ্ট দিল, আর যে ব্যক্তি আমাকে কষ্ট দেয়, সে আল্লাহকে কষ্ট দিল, আর যে আল্লাহকে কষ্ট দেয়, তাকে অবশ্যই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পাকড়াও করবে [ইমাম তিরমিযি মানাকেব অধ্যায়ে যারা রাসূলের সাহাবীদের গালি দেন তাদের আলোচনা হাদিসটি বর্ণনা করেন। ইমাম তিরমিযির নিকট হাদিসটির বর্ণনা এভাবে, আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফ্ফাল রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «اللَّهَ اللَّهَ فِي أَصْحَابِي اللَّهَ اللَّهَ فِي أَصْحَابِي لَا تَتَّخِذُوهُمْ غَرَضاً بَعْدِي فَمَنْ أَحَبَّهُمْ فَبِحُبِّي أَحَبَّهُمْ وَمَنْ أَبْغَضَهُمْ فَبِبُغْضِي أَبْغَضَهُمْ وَمَنْ آذَاهُمْ فَقَدْ آذَانِي وَمَنْ آذَانِي فَقَدْ آذَى اللَّهَ وَمَنْ آذَى اللَّهَ يُوشِكُ أَنْ يَأْخُذَهُ» অর্থ, আমার সাহাবীদের বিষয়ে তোমাদেরকে আল্লাহর দোহাই দিচ্ছি, আমার সাহাবীদের বিষয়ে তোমাদেরকে আল্লাহর দোহাই দিচ্ছি, তোমরা আমার সাহাবীদের বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন কর। তোমরা আমাদের সাহাবীদেরকে তোমাদের সমালোচনা ও বিতর্কের লক্ষ্য বস্তুতে পরিণত করো না। যারা তাদের তাদের মহব্বত করে আমাকে মহব্বত করার কারণে মহব্বত করে আর যারা তাদের ঘৃণা করে তারা আমাকে ঘৃণা করার কারণে ঘৃণা করল। আর যারা তাদের কষ্ট দেয়, তারা আমাকেই কষ্ট দিল, আর যে ব্যক্তি আমাকে কষ্ট দেয়, সে আল্লাহকে কষ্ট দিল, আর যে আল্লাহকে কষ্ট দেয়, তাকে অবশ্যই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পাকড়াও করবে।]। [তিরমিযি ও অন্যান্য হাদিসের কিতাবসমূহ]
কোন কোন ভ্রষ্ট-গোমরাহ ফের্কা ও দল এমন আছে, তারা মনে করে সাহাবীগণকে গালি দেয়া, তাদের বিরোধিতা করা ও তাদের সমালোচনা করা দ্বীনের একটি অংশ বা দীনি দায়িত্ব। তাই তারা সব সময় তাদের সমালোচনা ও বিরোধিতায় লিপ্ত থাকে এবং মানুষের মধ্যে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রাণ প্রিয় সাহাবীদের সমালোচনা করতে থাকে। এর কারণে তাদের অবশ্যই কঠিন আযাবের মুখোমুখি হতে হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে তার কঠিন ও বেদনা দায়ক আযাব ও গজব থেকে হেফাজত করুন এবং আমরা আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করি তিনি যেন আমাদের ক্ষমা করেন এবং মাফ করেন।
وصلى اللهُ وسلَّمَ وباركَ علي نبيِنا محمدٍ وآلِهِ وصحبِه .
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন