HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
যুব সমাজের অবক্ষয় ও তার প্রতিকার- জাকেরুল্লাহ আবুল খায়ের
লেখকঃ জাকেরুল্লাহ আবুল খায়ের
إِنَّ الْحَمْدُ للهِ ، نَحْمَدُهُ وَنَسْتَعِيْنُهُ وَنَسْتَغْفِرُهُ ، وَنَعُـوْذُ بِاللهِ مِنْ شُرُوْرِ أَنْفُسِنَا ، وَمِنْ سَيِّئَاتِ أَعْمَالِنَا ، مَنْ يَّهْدِهِ اللهُ فَلاَ مُضِلَّ لَهُ ، وَمَنْ يُّضْلِلِ اللهُ فَلاَ هَادِيَ لَهُ ، وَأَشْهَدُ أَنْ لاَّ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ
নিশ্চয়ই যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য। আমরা তারই প্রশংসা করি, তার কাছে সাহায্য চাই, তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি। আল্লাহর নিকট আমরা আমাদের প্রবৃত্তির অনিষ্টতা ও আমাদের কর্মসমূহের খারাপ পরিণতি থেকে আশ্রয় কামনা করি। আল্লাহ যাকে হেদায়েত দেন, তাকে গোমরাহ করার কেউ নেই। আর যাকে গোমরাহ করেন তাকে হেদায়েত দেওয়ার কেউ নেই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্যিকার ইলাহ নেই, তিনি একক, তার কোনো শরিক নেই। আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। সালাত ও সালাম নাযিল হোক তার উপর, তার পরিবার-পরিজন ও তার সাহাবীদের উপর এবং যারা কিয়ামত অবধি ইহসানের সাথে তাদের অনুসরণ করেন তাদের উপর।
বর্তমান সময়ে যুব সমাজের দুরবস্থা ও তাদের নৈতিক পতন এত বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে যা বলার অপেক্ষা রাখে না। এভাবে চলতে থাকলে, মুসলিম সমাজের অবস্থা যে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা কল্পনাতীত। তাই যুব সমাজকে তাদের অপ-মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করা এবং নিশ্চিত ধ্বংস থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করা আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব। এ দায়িত্ববোধ থেকে এ বইটি সংকলনের প্রেরণা পাই। এ বইটি বর্তমান সময়ের যুব সমাজের বিভিন্ন সমস্যা এবং এগুলোর সমাধান তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। আশা করি পাঠক বন্ধুরা বইটি পড়ে উপকৃত হবেন এবং ধ্বংসের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে সচেষ্ট হবেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট প্রার্থনা তিনি যেন আমাদেরকে ভালো কর্ম করার তাওফিক দেন এবং খারাপ ও মন্দ কর্ম হতে হেফাজত করেন। আমীন
জাকের উল্লাহ আবুল খায়ের
নিশ্চয়ই যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য। আমরা তারই প্রশংসা করি, তার কাছে সাহায্য চাই, তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি। আল্লাহর নিকট আমরা আমাদের প্রবৃত্তির অনিষ্টতা ও আমাদের কর্মসমূহের খারাপ পরিণতি থেকে আশ্রয় কামনা করি। আল্লাহ যাকে হেদায়েত দেন, তাকে গোমরাহ করার কেউ নেই। আর যাকে গোমরাহ করেন তাকে হেদায়েত দেওয়ার কেউ নেই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্যিকার ইলাহ নেই, তিনি একক, তার কোনো শরিক নেই। আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। সালাত ও সালাম নাযিল হোক তার উপর, তার পরিবার-পরিজন ও তার সাহাবীদের উপর এবং যারা কিয়ামত অবধি ইহসানের সাথে তাদের অনুসরণ করেন তাদের উপর।
বর্তমান সময়ে যুব সমাজের দুরবস্থা ও তাদের নৈতিক পতন এত বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে যা বলার অপেক্ষা রাখে না। এভাবে চলতে থাকলে, মুসলিম সমাজের অবস্থা যে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা কল্পনাতীত। তাই যুব সমাজকে তাদের অপ-মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করা এবং নিশ্চিত ধ্বংস থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করা আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব। এ দায়িত্ববোধ থেকে এ বইটি সংকলনের প্রেরণা পাই। এ বইটি বর্তমান সময়ের যুব সমাজের বিভিন্ন সমস্যা এবং এগুলোর সমাধান তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। আশা করি পাঠক বন্ধুরা বইটি পড়ে উপকৃত হবেন এবং ধ্বংসের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে সচেষ্ট হবেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট প্রার্থনা তিনি যেন আমাদেরকে ভালো কর্ম করার তাওফিক দেন এবং খারাপ ও মন্দ কর্ম হতে হেফাজত করেন। আমীন
জাকের উল্লাহ আবুল খায়ের
একজন মানুষের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হলো তার যৌবনকাল। যৌবনকালকে একজন মানুষের জীবনের স্বর্ণ যুগ বলা যেতে পারে। কিন্তু এ যৌবনকাল মানুষের জন্য যেমনি গুরুত্বপূর্ণ তেমনি ঝুঁকিপূর্ণ। যৌবনকে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ কাজ নয়, কিন্তু সম্ভব। সে সফল ব্যক্তি যে তার যৌবনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং কাজে লাগাতে পারে।
একজন যুবকের জন্য ভাল থাকাটা খুবই চ্যালেঞ্জিং হলেও তার খারাপ হওয়াটা অত্যন্ত সহজ। কারণ, এ সময়টাতে একজন যুবককে হাতছানি দিয়ে ডাকতে থাকে অসংখ্য অশুভশক্তি। আমি এটাকে এভাবে প্রকাশ করি যে, কচুর পাতার পানি যেমন টলমল করে যে কোনো মুহূর্তে পড়ে যেতে পারে, ঠিক তেমনি একজন যুবক যে কোনো সময় নষ্ট হয়ে যেতে পারে। যে কোনো সময় হয়ে যেতে পারে তার জীবনের সব কিছু এলোমেলো। বর্তমান সময়ে গোটা বিশ্বের দিক তাকালে আমরা দেখতে পাই, বর্তমানে যুবক শ্রেণি বিভিন্ন ধরনের সমস্যা ও সংকটে নিপতিত। তারা তাদের জীবনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে সম্পূর্ণ উদাসীন। তাই যুব সমাজকে সচেতন করা এবং তাদেরকে অশুভশক্তির করাল ঘ্রাস থেকে রক্ষা করার জন্য চেষ্টা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
নিম্নে আমরা যৌবনের গুরুত্ব, ইসলামের প্রচার-প্রসারে যুবকদের ভূমিকা এবং যুবক শ্রেণী ধ্বংসের বিভিন্ন উপকরণগুলো উল্লেখ করব, যাতে যুবকরা তাদের মূল্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবগত হতে পারে এবং যে সব কারণে যুব সমাজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিপতিত হয়, সে সব কারণ থেকে দূরে থেকে তারা তাদের নিজেদের রক্ষা করতে পারে এবং ভয়াবহ পরিণতি হতে নিজেদের বাঁচাতে পারে।
একজন মানুষের যৌবনকালই হল, তার জীবনের স্বর্ণ যুগ এবং কর্ম সম্পাদন, ক্যারিয়ার গঠন ও নেক আমল করার মুখ্য সময়। এ সময়টিকে যে কাজে লাগাবে সে উন্নতি করতে পারবে। আর যে এ সময়টিকে হেলা-খেলায় নষ্ট করবে সে জীবনে কোনো উন্নতি করতে পারবে না। কারণ, মানুষের যৌবনকাল, দুটি দুর্বলতা- বাল্যকাল ও বার্ধক্য কাল-এর মাঝে একটি সবলতা বা শক্তি। সুতরাং এ সময়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া ও কাজে লাগানোর জন্য চেষ্টা করাই হলো বুদ্ধিমানের কাজ এবং তার জীবনের সুবর্ণ সুযোগ। এ কারণেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«اغتنم خمسا قبل خمس : شبابك قبل هرمك، وصحتك قبل سقمك، وغناك قبل فقرك، وفراغك قبل شغلك، وحياتك قبل موتك »
“তোমরা পাঁচটি জিনিসকে পাঁচটি জিনিসের পূর্বে গণিমত-সুবর্ণ সুযোগ- মনে কর। তোমার যৌবনকে কাজে লাগাও বার্ধক্য আসার পূর্বে, তোমার সুস্থতাকে কাজে লাগাও তোমার অসুস্থতার পূর্বে, তোমার সচ্ছলতাকে কাজে লাগাও অসচ্ছলতার পূর্বে, তোমার অবসরতাকে কাজে লাগাও তোমার ব্যস্ততার পূর্বে, আর তোমার হায়াতকে কাজে লাগাও তোমার মৃত্যু আসার পূর্বে”। [বর্ণনায় হাকিম, হাদিস: ৭৮৪৬ তিনি হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। হাদিসটি বুখারি ও মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী, তবে তারা হাদিসটি উল্লেখ করেননি। ##]
ইমাম আহমদ আহমদ রহ. বলেন, “আমি যৌবনকে এমন বস্তুর সাথেই তুলনা করি, যে বস্তুটি ক্ষণিকের জন্য আমার বগলের নীচে থাকে, তারপর তা হারিয়ে যায়”।
যৌবনকাল হল, ইবাদত বন্দেগী ও আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার একটি মুখ্য সময়। এটি বেশি দিন স্থায়ী হয় না। যৌবন মানুষের জীবনে একজন আগন্তুক মেহমানের মত। সেটি মানুষের জীবনে একবার আসে আবার খুব দ্রুত চলে যায়। বুদ্ধিমান সে- যে তার যৌবনকে কাজে লাগায় এবং ভবিষ্যৎ জীবন তথা বার্ধক্যের জন্য পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করে। যদি কোনো বুদ্ধিমান যৌবনকে কাজে না লাগায়, তখন তার আফসোসের আর অন্ত থাকে না। তার আফসোস তাকে শেষ করে দেয়। কোনো কবি যৌবন সম্পর্কে বলেন,
ضيف زارنا أقام عندنا قليلا .. .. سوّد الصحف بالذنوب وولى
“যৌবন হল, একজন মেহমান যে আমাদের আঙ্গিনায় এসে কিছু সময় অবস্থান করল, তারপর সে গুনাহ দ্বারা আমলনামাকে কালো করল, অতঃপর পালিয়ে গেল”।
যৌবন মানুষের জীবনের একবারই আসে বার বার আসে না। একবার চলে গেলে তা আর কখনো ফিরে আসবে না। যৌবন কাজে না লাগিয়ে অবহেলায় নষ্ট করলে, যেমনিভাবে দুনিয়াতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে অনুরূপভাবে আখিরাতে আল্লাহর নিকট তার জবাবদিহি করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন মানুষকে তার যৌবন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে বলবেন, তুমি তোমার যৌবনকে কোথায় ব্যয় করলে এবং কিভাবে তার ক্ষয় করলে। হাদিসে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لا تزول قدما ابن آدم يوم القيامة من عند ربه، حتى يُسأل عن خمس : عن عمره فيم أفناه؟ وعن شبابه فيم أبلاه؟ وعن ماله من أين اكتسبه وفيم أنفقه؟ وماذا عمل فيما علم؟ "
“কিয়ামতের দিন পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ব্যতীত, কোনো আদম সন্তান আল্লাহর সম্মুখ হতে পা সরাতে পারবে না। তার জীবনকে কোথায় ব্যয় করেছে। যৌবনকে কোথায় ক্ষয় করেছে, সম্পদ কোথায় থেকে অর্জন করেছে এবং কোথায় ব্যয় করছে। আর যা জেনেছে, সে অনুযায়ী কতটুকু আমল করছে”। [বর্ণনায় তিরমিযি, হাদিস: ২৪১৬; আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন।]
وعدّ صلى الله عليه وسلم في السبعة الذين يظلهم الله في ظله يوم لا ظل إلا ظله : « شابا نشأ في عبادة الله ".
আর যে যুবক তার যৌবনকে আল্লাহর ইবাদতে কাটিয়ে দেয়, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সম্পর্কে বলেছেন, আল্লাহ কিয়ামতের দিন-যেদিন আল্লাহর ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না-তাকে আল্লাহ স্বীয় ছায়ার তলে আশ্রয় দেবেন।
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহ তা‘আলা একমাত্র যুবক বান্দাকে জ্ঞান দান করেন। যাবতীয় কল্যাণ যৌবনেই লাভ করা সম্ভব হয়। তারপর তিনি তার দাবির পক্ষে যুক্তি-প্রমাণ হিসেবে আল্লাহ তা‘আলার বাণী তিলাওয়াত করে শোনান। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿قَالُواْ سَمِعۡنَا فَتٗى يَذۡكُرُهُمۡ يُقَالُ لَهُۥٓ إِبۡرَٰهِيمُ ٦٠﴾ [ الانبياء : ٦٠ ]
“তাদের কেউ কেউ বলল, আমরা শুনেছি এক যুবক এই মূর্তিগুলোর সমালোচনা করে। তাকে বলা হয় ইবরাহিম”। [সূরা আম্বিয়া, আয়াত: ৬০]
﴿نَّحۡنُ نَقُصُّ عَلَيۡكَ نَبَأَهُم بِٱلۡحَقِّۚ إِنَّهُمۡ فِتۡيَةٌ ءَامَنُواْ بِرَبِّهِمۡ وَزِدۡنَٰهُمۡ هُدٗى ١٣ ﴾ [ الكهف : ١٣ ]
“আমরা তোমাকে তাদের সংবাদ সঠিকভাবে বর্ণনা করছি। নিশ্চয় তারা কয়েকজন যুবক, যারা তাদের রবের প্রতি ঈমান এনেছিল এবং আমরা তাদের হিদায়েত বাড়িয়ে দিয়েছিলাম।” [সূরা কাহাফ, আয়াত: ১৩]
﴿يَٰيَحۡيَىٰ خُذِ ٱلۡكِتَٰبَ بِقُوَّةٖۖ وَءَاتَيۡنَٰهُ ٱلۡحُكۡمَ صَبِيّٗا ١٢ وَحَنَانٗا مِّن لَّدُنَّا وَزَكَوٰةٗۖ وَكَانَ تَقِيّٗا ١٣﴾ [ مريم : ١٢، ١٣ ]
“হে ইয়াহইয়া, তুমি কিতাবটিকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর’ আমরা তাকে শৈশবেই প্রজ্ঞা দান করেছি। আর আমাদের পক্ষ থেকে তাকে স্নেহ-মমতা ও পবিত্রতা দান করেছি এবং সে মুত্তাকী ছিল।” [সূরা মারয়াম, আয়াত: ১২, ১৩]
হাফসা বিনতে সীরিন রহ. বলেন, “হে যুবক সম্প্রদায়! তোমরা কর্ম কর, কারণ, যৌবনকালই হল, কাজ করার উপযুক্ত সময়”। আহনাফ ইবনে কাইস রহ. বলেন, السودد مع السواد ‘নেতৃত্ব কালো থাকা অবস্থায়’ অর্থাৎ, যদি কোনো ব্যক্তি যৌবন কালে নেতা না হতে পারে, সে বুড়ো কালেও নেতা হতে পারবে না।
একজন যুবকের জন্য ভাল থাকাটা খুবই চ্যালেঞ্জিং হলেও তার খারাপ হওয়াটা অত্যন্ত সহজ। কারণ, এ সময়টাতে একজন যুবককে হাতছানি দিয়ে ডাকতে থাকে অসংখ্য অশুভশক্তি। আমি এটাকে এভাবে প্রকাশ করি যে, কচুর পাতার পানি যেমন টলমল করে যে কোনো মুহূর্তে পড়ে যেতে পারে, ঠিক তেমনি একজন যুবক যে কোনো সময় নষ্ট হয়ে যেতে পারে। যে কোনো সময় হয়ে যেতে পারে তার জীবনের সব কিছু এলোমেলো। বর্তমান সময়ে গোটা বিশ্বের দিক তাকালে আমরা দেখতে পাই, বর্তমানে যুবক শ্রেণি বিভিন্ন ধরনের সমস্যা ও সংকটে নিপতিত। তারা তাদের জীবনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে সম্পূর্ণ উদাসীন। তাই যুব সমাজকে সচেতন করা এবং তাদেরকে অশুভশক্তির করাল ঘ্রাস থেকে রক্ষা করার জন্য চেষ্টা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
নিম্নে আমরা যৌবনের গুরুত্ব, ইসলামের প্রচার-প্রসারে যুবকদের ভূমিকা এবং যুবক শ্রেণী ধ্বংসের বিভিন্ন উপকরণগুলো উল্লেখ করব, যাতে যুবকরা তাদের মূল্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবগত হতে পারে এবং যে সব কারণে যুব সমাজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিপতিত হয়, সে সব কারণ থেকে দূরে থেকে তারা তাদের নিজেদের রক্ষা করতে পারে এবং ভয়াবহ পরিণতি হতে নিজেদের বাঁচাতে পারে।
একজন মানুষের যৌবনকালই হল, তার জীবনের স্বর্ণ যুগ এবং কর্ম সম্পাদন, ক্যারিয়ার গঠন ও নেক আমল করার মুখ্য সময়। এ সময়টিকে যে কাজে লাগাবে সে উন্নতি করতে পারবে। আর যে এ সময়টিকে হেলা-খেলায় নষ্ট করবে সে জীবনে কোনো উন্নতি করতে পারবে না। কারণ, মানুষের যৌবনকাল, দুটি দুর্বলতা- বাল্যকাল ও বার্ধক্য কাল-এর মাঝে একটি সবলতা বা শক্তি। সুতরাং এ সময়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া ও কাজে লাগানোর জন্য চেষ্টা করাই হলো বুদ্ধিমানের কাজ এবং তার জীবনের সুবর্ণ সুযোগ। এ কারণেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«اغتنم خمسا قبل خمس : شبابك قبل هرمك، وصحتك قبل سقمك، وغناك قبل فقرك، وفراغك قبل شغلك، وحياتك قبل موتك »
“তোমরা পাঁচটি জিনিসকে পাঁচটি জিনিসের পূর্বে গণিমত-সুবর্ণ সুযোগ- মনে কর। তোমার যৌবনকে কাজে লাগাও বার্ধক্য আসার পূর্বে, তোমার সুস্থতাকে কাজে লাগাও তোমার অসুস্থতার পূর্বে, তোমার সচ্ছলতাকে কাজে লাগাও অসচ্ছলতার পূর্বে, তোমার অবসরতাকে কাজে লাগাও তোমার ব্যস্ততার পূর্বে, আর তোমার হায়াতকে কাজে লাগাও তোমার মৃত্যু আসার পূর্বে”। [বর্ণনায় হাকিম, হাদিস: ৭৮৪৬ তিনি হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। হাদিসটি বুখারি ও মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী, তবে তারা হাদিসটি উল্লেখ করেননি। ##]
ইমাম আহমদ আহমদ রহ. বলেন, “আমি যৌবনকে এমন বস্তুর সাথেই তুলনা করি, যে বস্তুটি ক্ষণিকের জন্য আমার বগলের নীচে থাকে, তারপর তা হারিয়ে যায়”।
যৌবনকাল হল, ইবাদত বন্দেগী ও আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার একটি মুখ্য সময়। এটি বেশি দিন স্থায়ী হয় না। যৌবন মানুষের জীবনে একজন আগন্তুক মেহমানের মত। সেটি মানুষের জীবনে একবার আসে আবার খুব দ্রুত চলে যায়। বুদ্ধিমান সে- যে তার যৌবনকে কাজে লাগায় এবং ভবিষ্যৎ জীবন তথা বার্ধক্যের জন্য পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করে। যদি কোনো বুদ্ধিমান যৌবনকে কাজে না লাগায়, তখন তার আফসোসের আর অন্ত থাকে না। তার আফসোস তাকে শেষ করে দেয়। কোনো কবি যৌবন সম্পর্কে বলেন,
ضيف زارنا أقام عندنا قليلا .. .. سوّد الصحف بالذنوب وولى
“যৌবন হল, একজন মেহমান যে আমাদের আঙ্গিনায় এসে কিছু সময় অবস্থান করল, তারপর সে গুনাহ দ্বারা আমলনামাকে কালো করল, অতঃপর পালিয়ে গেল”।
যৌবন মানুষের জীবনের একবারই আসে বার বার আসে না। একবার চলে গেলে তা আর কখনো ফিরে আসবে না। যৌবন কাজে না লাগিয়ে অবহেলায় নষ্ট করলে, যেমনিভাবে দুনিয়াতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে অনুরূপভাবে আখিরাতে আল্লাহর নিকট তার জবাবদিহি করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন মানুষকে তার যৌবন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে বলবেন, তুমি তোমার যৌবনকে কোথায় ব্যয় করলে এবং কিভাবে তার ক্ষয় করলে। হাদিসে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لا تزول قدما ابن آدم يوم القيامة من عند ربه، حتى يُسأل عن خمس : عن عمره فيم أفناه؟ وعن شبابه فيم أبلاه؟ وعن ماله من أين اكتسبه وفيم أنفقه؟ وماذا عمل فيما علم؟ "
“কিয়ামতের দিন পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ব্যতীত, কোনো আদম সন্তান আল্লাহর সম্মুখ হতে পা সরাতে পারবে না। তার জীবনকে কোথায় ব্যয় করেছে। যৌবনকে কোথায় ক্ষয় করেছে, সম্পদ কোথায় থেকে অর্জন করেছে এবং কোথায় ব্যয় করছে। আর যা জেনেছে, সে অনুযায়ী কতটুকু আমল করছে”। [বর্ণনায় তিরমিযি, হাদিস: ২৪১৬; আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন।]
وعدّ صلى الله عليه وسلم في السبعة الذين يظلهم الله في ظله يوم لا ظل إلا ظله : « شابا نشأ في عبادة الله ".
আর যে যুবক তার যৌবনকে আল্লাহর ইবাদতে কাটিয়ে দেয়, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সম্পর্কে বলেছেন, আল্লাহ কিয়ামতের দিন-যেদিন আল্লাহর ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না-তাকে আল্লাহ স্বীয় ছায়ার তলে আশ্রয় দেবেন।
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহ তা‘আলা একমাত্র যুবক বান্দাকে জ্ঞান দান করেন। যাবতীয় কল্যাণ যৌবনেই লাভ করা সম্ভব হয়। তারপর তিনি তার দাবির পক্ষে যুক্তি-প্রমাণ হিসেবে আল্লাহ তা‘আলার বাণী তিলাওয়াত করে শোনান। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿قَالُواْ سَمِعۡنَا فَتٗى يَذۡكُرُهُمۡ يُقَالُ لَهُۥٓ إِبۡرَٰهِيمُ ٦٠﴾ [ الانبياء : ٦٠ ]
“তাদের কেউ কেউ বলল, আমরা শুনেছি এক যুবক এই মূর্তিগুলোর সমালোচনা করে। তাকে বলা হয় ইবরাহিম”। [সূরা আম্বিয়া, আয়াত: ৬০]
﴿نَّحۡنُ نَقُصُّ عَلَيۡكَ نَبَأَهُم بِٱلۡحَقِّۚ إِنَّهُمۡ فِتۡيَةٌ ءَامَنُواْ بِرَبِّهِمۡ وَزِدۡنَٰهُمۡ هُدٗى ١٣ ﴾ [ الكهف : ١٣ ]
“আমরা তোমাকে তাদের সংবাদ সঠিকভাবে বর্ণনা করছি। নিশ্চয় তারা কয়েকজন যুবক, যারা তাদের রবের প্রতি ঈমান এনেছিল এবং আমরা তাদের হিদায়েত বাড়িয়ে দিয়েছিলাম।” [সূরা কাহাফ, আয়াত: ১৩]
﴿يَٰيَحۡيَىٰ خُذِ ٱلۡكِتَٰبَ بِقُوَّةٖۖ وَءَاتَيۡنَٰهُ ٱلۡحُكۡمَ صَبِيّٗا ١٢ وَحَنَانٗا مِّن لَّدُنَّا وَزَكَوٰةٗۖ وَكَانَ تَقِيّٗا ١٣﴾ [ مريم : ١٢، ١٣ ]
“হে ইয়াহইয়া, তুমি কিতাবটিকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর’ আমরা তাকে শৈশবেই প্রজ্ঞা দান করেছি। আর আমাদের পক্ষ থেকে তাকে স্নেহ-মমতা ও পবিত্রতা দান করেছি এবং সে মুত্তাকী ছিল।” [সূরা মারয়াম, আয়াত: ১২, ১৩]
হাফসা বিনতে সীরিন রহ. বলেন, “হে যুবক সম্প্রদায়! তোমরা কর্ম কর, কারণ, যৌবনকালই হল, কাজ করার উপযুক্ত সময়”। আহনাফ ইবনে কাইস রহ. বলেন, السودد مع السواد ‘নেতৃত্ব কালো থাকা অবস্থায়’ অর্থাৎ, যদি কোনো ব্যক্তি যৌবন কালে নেতা না হতে পারে, সে বুড়ো কালেও নেতা হতে পারবে না।
ইসলামের প্রথম যুগে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যে সব সাহাবী তার প্রতি ঈমান আনে, তাকে সাহায্য করে, সহযোগিতা করে এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেদায়াতের যে আলোকবর্তিকা নিয়ে আসেন, তার অনুসরণ করে, তারা সবাই ছিল যুবক! ইসলামী দুনিয়ার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অনেক সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবকদের হাতেই ন্যস্ত করেন এবং তাদের হাতে দায়িত্ব সমর্পণ করেন। যেমন, উসামা ইবনু যায়েদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এর মত বড় সাহাবীদের উপস্থিতিতে মাত্র আঠারো বছর বয়সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধের সেনাপতি নিয়োগ করেন। হুনাইনের যুদ্ধে যাওয়ার সময় উত্তাব ইবন উসাইদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে মাত্র বিশ বছর বয়সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার গভর্নর নিয়োগ করেন। এ ছাড়াও ইসলামের ইতিহাসে ইসলামের ঝাণ্ডা বহন করা, ইসলামের পতাকাকে সমুন্নত রাখা এবং ইসলামের আলোকে দুনিয়ার আনাচে কানাচে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে যুবকদের ভূমিকা বিষয়ে আরও অসংখ্য দৃষ্টান্ত রয়েছে।
ইয়াহয়া ইবনে মঈন রহ. আহমদ ইবন হাম্বলকে হাদিস শেখার জন্য ইমাম শাফেয়ী রহ. এর বাহনের পিছনে হাটতে দেখে বলেন, হে আবু আব্দুল্লাহ! তুমি সুফিয়ান সাওরীর রহ. এর মত এত বড় মর্যাদাশীল হওয়া স্বত্বেও তার থেকে হাদিস শোনা ছেড়ে দিয়ে, এ যুবকের বাহনের পিছনে হাঁটছ এবং তার থেকে হাদিস শুনছ? আহমদ রহ. তাকে উত্তর দিয়ে বলেন, ‘যদি আপনি এ যুবককে চিনতে পারতেন, তবে আপনিও অপর পাশ দিয়ে হাঁটতেন’। সুফিয়ানে সাওরীর ইলম যদি উপরে হওয়ার কারণে ছুটে যায়, তবে নিচে হওয়ার কারণে তা আমি লাভ করতে পারব। আর এ যুবকের জ্ঞান যদি ছুটে যায়, তবে তা উপরে বা নীচে কোথাও পাওয়া যাবে না।
ইরাক থেকে একটি জামাত ওমর ইবন আব্দুল আযীয রহ. এর নিকট আসলে, তাদের মধ্যে একজন যুবককে দেখতে পেল, সে কথা বলার জন্য উদগ্রীব হয়ে সামনের দিক অগ্রসর হচ্ছে। তার অবস্থা দেখে ওমর ইবন আব্দুল আযীয রহ. তাকে বলল, হে যুবক! তুমি থাম, বড়দের কথা বলতে দাও। তখন সে বলল, হে আমীরুল মুমিনীন! কোনো কোনো বিষয়ের সম্পর্ক বয়সের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। যদি বয়সের সাথে সম্পর্কিত হত, তাহলে মুসলিমদের মধ্যে খলিফা হওয়ার মত এমন অনেক ব্যক্তি আছে, যার বয়স আপনার থেকে অনেক বেশি। তার কথা শোনে ওমর ইবন আব্দুল আযীয বলল, ঠিক আছে তুমি বল।
মাকামাতের ব্যাখ্যায় আল্লামা মাসউদী রহ. একটি ঘটনা বর্ণনা করেন, মাহদী বসরায় প্রবেশ করে দেখলেন, ইয়াস ইবন মুয়াবিয়া নামে একজন বাচ্চার পিছনে চারশত আলেম এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। তারা সবাই ইয়াসের পিছনে হাঁটছে আর ইয়াস তাদের সামনে হাঁটছে। এ দৃশ্য দেখে মাহদী বলল, এদের মধ্যে কি সামনে বাড়িয়ে দেওয়ার মত এ বাচ্চা ছাড়া কোনো মুরব্বী নাই? তারপর মাহদী তাকে উদ্দেশ্য করে বলল, হে বাবু তোমার বয়স কত? তখন সে বলল, -আল্লাহ তা‘আলা আমীরের হায়াতকে বৃদ্ধি করুক- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উসামা ইবন যায়েদ ইবন হারেসাকে যখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর উপস্থিতিতে ইসলামী সৈন্য দলের সেনাপতি নিযুক্ত করেন, তখন তার বয়স যত ছিল, বর্তমানে আমার বয়সও তাই। তার কথা শোনে মাহদী বলল, “আল্লাহ তোমার মধ্যে বরকত দান করুক” তুমি সামনেই থাক।
খতীব রহ. তারিখে বাগদাদে উল্লেখ করেন, ইয়াহয়া ইবন আকসাম বিশ বছর বয়সে বসরার গভর্নর নিযুক্ত হন। বয়স কম হওয়াতে লোকেরা তাকে খাট করে দেখল এবং তাকে তুচ্ছ জ্ঞান করে জিজ্ঞাসা করল, তোমার বয়স কত? সে উত্তরে বলল, আমি উত্তাব ইবন উসাইদ হতে বড় যাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের বছর মক্কার কাযী নিয়োগ করে পাঠিয়েছিলেন। আমি মুয়ায ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বড়, যাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়ামনের কাযী বানিয়ে পাঠিয়েছিলেন। আমি কা‘আব ইবন সুয়াইদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বড় যাকে ওমর ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বসরার গবর্নর বানিয়ে পাঠিয়েছিলেন। তিনি তাদের এমনভাবে উত্তর দিলেন, যার মধ্যে তাদের অভিযোগের সব উত্তর প্রমাণসহ বিদ্যমান।
আবুল ইয়াকযান রহ. বলেন, হাজ্জাজ ইবন ইউছুফ মুহাম্মদ ইবন কাশেমকে সতের বছর বয়সে যুদ্ধের সেনাপতি বানান। তিনি পারসিকদের সাথে যুদ্ধ করে জয়ী হন। তারপর তাকে সিন্ধু প্রদেশের সেনাপতি বানালে তিনি সিন্ধু ও ভারত উপ মহাদেশ জয় করেন।
হাতীত আয-যাইয়াতকে হাজ্জাজ ইবন ইউসুফের নিকট ধরে নিয়ে আসা হলে, হাজ্জাজ তাকে জিজ্ঞাসা করে বলল, তুমি কি হাতীত? সে বলল, হ্যাঁ আমি হাতীত, তুমি আমাকে তোমার যা ইচ্ছা তা জিজ্ঞাসা কর। আমি আল্লাহর নিকট তিনটি ওয়াদা করছি। তুমি যদি কোনো কথা জিজ্ঞাসা কর, সত্য বলব, যদি কষ্ট দাও ধৈর্য ধরব, আর যদি ক্ষমা কর, কৃতজ্ঞ হব। তার কথা শোনে হাজ্জাজ বলল, আমার সম্পর্কে তুমি কি ধারণ পোষণ কর? তখন হাতীত আয-যাইয়াত বলল, যমীনে তুমি আল্লাহর দুশমনদের মধ্য হতে একজন দুশমন। তুমি মা বোনদের ইজ্জত নষ্ট কর, সামান্য অপরাধে মানুষ হত্যা কর। হাজ্জাজ বলল, আমীরুল মুমিনীন আব্দুল মালেক ইবনে মারওয়ান সম্পর্কে তোমার মন্তব্য কি? সে বলল, সে তোমার চেয়েও বড় অপরাধী। তুমি তার অপরাধসমূহের একটি অপরাধ মাত্র।
দেখুন, একজন যুবকের সাহস, সততা ও প্রতিশ্রুতি কত দৃঢ় ও মজবুত। মৃত্যু নিশ্চিত জানা স্বত্বেও সে কোনো লুকোচুরির আশ্রয় নেয়নি।
আব্দুল্লাহ ইবন যিয়াদ তেইশ বছর বয়সে খুরাসানের গভর্নর নিযুক্ত হন। মু‘আয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে ত্রিশ বছরের কম বয়সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়ামনের গবর্নর বানান। নাহু ও আরবি ভাষার ইমাম ছিবওয়াই রহ. মাত্র বত্রিশ বছরে মারা যান। ইব্রাহীম নাখয়ী থেকে মানুষ হাদিস গ্রহণ করেন, তার বয়স মাত্র আঠারো বছর।
বুহতরী বলেন,
لا تنظرن إلى العباس من صغر في السن وانظر إلى الجد الذي شادا
إن النجوم نجومَ الأفق أصغرُها في العين أذهبُها في الجو إصعــادا
“আব্বাস বয়সে ছোট বলে তুমি তাকে তুচ্ছ মনে করো না। তুমি তার দৃঢ়তা ও জ্ঞানের গভীরতা দেখ। মরু ভূমিতে চলার জন্য পথনির্দেশক নক্ষত্রটি মহা মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ তবে দেখতে খুবই ছোট”।
যুবকরাই হলো, উম্মতের কাণ্ডারি, মজবুত খুঁটি, চালিকা শক্তি ও প্রাণ, যুবকদের ছোয়া ছাড়া কোনো দাওয়াত ও আন্দোলন কখনোই সফল হতে পারে না। যুবকদের শক্তি ও তাদের আন্দোলনের উপর ভিত্তি করেই যে কোনো আন্দোলন প্রতিষ্ঠা লাভ করে এবং মিশন সফল হয়।
মোটকথা, যে সমাজ বা দেশে যুব সমাজের চরিত্র ভালো থাকবে, সে সমাজের শান্তি শৃঙ্খলা ও স্বাভাবিক জীবন যাপন ঠিক থাকবে। আর যে সমাজে যুবকদের চারিত্রিক ও নৈতিক অবক্ষয় দেখা দেবে, সে সমাজের শান্তি শৃঙ্খলা ও স্বাভাবিক জীবন যাপন ঠিক থাকবে না এবং সে সমাজের পতন ও ধ্বংস অনিবার্য।
ইয়াহয়া ইবনে মঈন রহ. আহমদ ইবন হাম্বলকে হাদিস শেখার জন্য ইমাম শাফেয়ী রহ. এর বাহনের পিছনে হাটতে দেখে বলেন, হে আবু আব্দুল্লাহ! তুমি সুফিয়ান সাওরীর রহ. এর মত এত বড় মর্যাদাশীল হওয়া স্বত্বেও তার থেকে হাদিস শোনা ছেড়ে দিয়ে, এ যুবকের বাহনের পিছনে হাঁটছ এবং তার থেকে হাদিস শুনছ? আহমদ রহ. তাকে উত্তর দিয়ে বলেন, ‘যদি আপনি এ যুবককে চিনতে পারতেন, তবে আপনিও অপর পাশ দিয়ে হাঁটতেন’। সুফিয়ানে সাওরীর ইলম যদি উপরে হওয়ার কারণে ছুটে যায়, তবে নিচে হওয়ার কারণে তা আমি লাভ করতে পারব। আর এ যুবকের জ্ঞান যদি ছুটে যায়, তবে তা উপরে বা নীচে কোথাও পাওয়া যাবে না।
ইরাক থেকে একটি জামাত ওমর ইবন আব্দুল আযীয রহ. এর নিকট আসলে, তাদের মধ্যে একজন যুবককে দেখতে পেল, সে কথা বলার জন্য উদগ্রীব হয়ে সামনের দিক অগ্রসর হচ্ছে। তার অবস্থা দেখে ওমর ইবন আব্দুল আযীয রহ. তাকে বলল, হে যুবক! তুমি থাম, বড়দের কথা বলতে দাও। তখন সে বলল, হে আমীরুল মুমিনীন! কোনো কোনো বিষয়ের সম্পর্ক বয়সের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। যদি বয়সের সাথে সম্পর্কিত হত, তাহলে মুসলিমদের মধ্যে খলিফা হওয়ার মত এমন অনেক ব্যক্তি আছে, যার বয়স আপনার থেকে অনেক বেশি। তার কথা শোনে ওমর ইবন আব্দুল আযীয বলল, ঠিক আছে তুমি বল।
মাকামাতের ব্যাখ্যায় আল্লামা মাসউদী রহ. একটি ঘটনা বর্ণনা করেন, মাহদী বসরায় প্রবেশ করে দেখলেন, ইয়াস ইবন মুয়াবিয়া নামে একজন বাচ্চার পিছনে চারশত আলেম এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। তারা সবাই ইয়াসের পিছনে হাঁটছে আর ইয়াস তাদের সামনে হাঁটছে। এ দৃশ্য দেখে মাহদী বলল, এদের মধ্যে কি সামনে বাড়িয়ে দেওয়ার মত এ বাচ্চা ছাড়া কোনো মুরব্বী নাই? তারপর মাহদী তাকে উদ্দেশ্য করে বলল, হে বাবু তোমার বয়স কত? তখন সে বলল, -আল্লাহ তা‘আলা আমীরের হায়াতকে বৃদ্ধি করুক- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উসামা ইবন যায়েদ ইবন হারেসাকে যখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর উপস্থিতিতে ইসলামী সৈন্য দলের সেনাপতি নিযুক্ত করেন, তখন তার বয়স যত ছিল, বর্তমানে আমার বয়সও তাই। তার কথা শোনে মাহদী বলল, “আল্লাহ তোমার মধ্যে বরকত দান করুক” তুমি সামনেই থাক।
খতীব রহ. তারিখে বাগদাদে উল্লেখ করেন, ইয়াহয়া ইবন আকসাম বিশ বছর বয়সে বসরার গভর্নর নিযুক্ত হন। বয়স কম হওয়াতে লোকেরা তাকে খাট করে দেখল এবং তাকে তুচ্ছ জ্ঞান করে জিজ্ঞাসা করল, তোমার বয়স কত? সে উত্তরে বলল, আমি উত্তাব ইবন উসাইদ হতে বড় যাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের বছর মক্কার কাযী নিয়োগ করে পাঠিয়েছিলেন। আমি মুয়ায ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বড়, যাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়ামনের কাযী বানিয়ে পাঠিয়েছিলেন। আমি কা‘আব ইবন সুয়াইদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বড় যাকে ওমর ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বসরার গবর্নর বানিয়ে পাঠিয়েছিলেন। তিনি তাদের এমনভাবে উত্তর দিলেন, যার মধ্যে তাদের অভিযোগের সব উত্তর প্রমাণসহ বিদ্যমান।
আবুল ইয়াকযান রহ. বলেন, হাজ্জাজ ইবন ইউছুফ মুহাম্মদ ইবন কাশেমকে সতের বছর বয়সে যুদ্ধের সেনাপতি বানান। তিনি পারসিকদের সাথে যুদ্ধ করে জয়ী হন। তারপর তাকে সিন্ধু প্রদেশের সেনাপতি বানালে তিনি সিন্ধু ও ভারত উপ মহাদেশ জয় করেন।
হাতীত আয-যাইয়াতকে হাজ্জাজ ইবন ইউসুফের নিকট ধরে নিয়ে আসা হলে, হাজ্জাজ তাকে জিজ্ঞাসা করে বলল, তুমি কি হাতীত? সে বলল, হ্যাঁ আমি হাতীত, তুমি আমাকে তোমার যা ইচ্ছা তা জিজ্ঞাসা কর। আমি আল্লাহর নিকট তিনটি ওয়াদা করছি। তুমি যদি কোনো কথা জিজ্ঞাসা কর, সত্য বলব, যদি কষ্ট দাও ধৈর্য ধরব, আর যদি ক্ষমা কর, কৃতজ্ঞ হব। তার কথা শোনে হাজ্জাজ বলল, আমার সম্পর্কে তুমি কি ধারণ পোষণ কর? তখন হাতীত আয-যাইয়াত বলল, যমীনে তুমি আল্লাহর দুশমনদের মধ্য হতে একজন দুশমন। তুমি মা বোনদের ইজ্জত নষ্ট কর, সামান্য অপরাধে মানুষ হত্যা কর। হাজ্জাজ বলল, আমীরুল মুমিনীন আব্দুল মালেক ইবনে মারওয়ান সম্পর্কে তোমার মন্তব্য কি? সে বলল, সে তোমার চেয়েও বড় অপরাধী। তুমি তার অপরাধসমূহের একটি অপরাধ মাত্র।
দেখুন, একজন যুবকের সাহস, সততা ও প্রতিশ্রুতি কত দৃঢ় ও মজবুত। মৃত্যু নিশ্চিত জানা স্বত্বেও সে কোনো লুকোচুরির আশ্রয় নেয়নি।
আব্দুল্লাহ ইবন যিয়াদ তেইশ বছর বয়সে খুরাসানের গভর্নর নিযুক্ত হন। মু‘আয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে ত্রিশ বছরের কম বয়সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়ামনের গবর্নর বানান। নাহু ও আরবি ভাষার ইমাম ছিবওয়াই রহ. মাত্র বত্রিশ বছরে মারা যান। ইব্রাহীম নাখয়ী থেকে মানুষ হাদিস গ্রহণ করেন, তার বয়স মাত্র আঠারো বছর।
বুহতরী বলেন,
لا تنظرن إلى العباس من صغر في السن وانظر إلى الجد الذي شادا
إن النجوم نجومَ الأفق أصغرُها في العين أذهبُها في الجو إصعــادا
“আব্বাস বয়সে ছোট বলে তুমি তাকে তুচ্ছ মনে করো না। তুমি তার দৃঢ়তা ও জ্ঞানের গভীরতা দেখ। মরু ভূমিতে চলার জন্য পথনির্দেশক নক্ষত্রটি মহা মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ তবে দেখতে খুবই ছোট”।
যুবকরাই হলো, উম্মতের কাণ্ডারি, মজবুত খুঁটি, চালিকা শক্তি ও প্রাণ, যুবকদের ছোয়া ছাড়া কোনো দাওয়াত ও আন্দোলন কখনোই সফল হতে পারে না। যুবকদের শক্তি ও তাদের আন্দোলনের উপর ভিত্তি করেই যে কোনো আন্দোলন প্রতিষ্ঠা লাভ করে এবং মিশন সফল হয়।
মোটকথা, যে সমাজ বা দেশে যুব সমাজের চরিত্র ভালো থাকবে, সে সমাজের শান্তি শৃঙ্খলা ও স্বাভাবিক জীবন যাপন ঠিক থাকবে। আর যে সমাজে যুবকদের চারিত্রিক ও নৈতিক অবক্ষয় দেখা দেবে, সে সমাজের শান্তি শৃঙ্খলা ও স্বাভাবিক জীবন যাপন ঠিক থাকবে না এবং সে সমাজের পতন ও ধ্বংস অনিবার্য।
মনে রাখতে হবে, বর্তমানে আমাদের যুব সমাজ অসংখ্য সংকট ও সমস্যায় জর্জরিত। এ সব সংকট ও সমস্যার মধ্য হতে অন্যতম সংকট ও সমস্যা হলো মাদক সেবন ও নেশা করা। ইসলামে সব ধরনের মাদকদ্রব্য নিষিদ্ধ হলেও ধর্মীয় মূল্যবোধ হারিয়ে যুব সমাজ মাদকের মরণ নেশায় মেতে উঠেছে। বাংলা ‘নেশা’ শব্দটি মূলত ফার্সি শব্দ ‘নাশাতুন’ থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ হচ্ছে ‘মত্ততা’। বর্তমান সময়ে অধিকাংশ যুব সমাজ মাদক-আক্রান্ত হয়ে ধ্বংসের অবলীলায় নিপতিত হতে দেখা যায়। বিভিন্ন ধরনের মাদকের সয়লাব যুবকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়াতে তারা কোনো না কোনো উপায়ে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। মাদক বর্তমানে এত বেশি ব্যাপক আকার ধারণ করছে, যার ভয়ানক প্রভাব ও বিস্তার লক্ষ্য করা যায় আমাদের মানুষ গড়ার আঙ্গিনা-শিক্ষাঙ্গনগুলোতেও। এটি বর্তমান সময়ে যুব সমাজের জন্য একটি ভয়ানক পরিণতি ও অশনি সংকেত। তাই, বর্তমানে যদি একজন যুবক নষ্ট হয়ে যাওয়ার আগে তাকে সঠিক পথে রাখার জন্য কিংবা মাদক থেকে দূরে রাখার জন্য সময়মত সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করা হয়, তাহলে যুব সমাজের কাছে জাতির যে প্রত্যাশা তা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হতে বাধ্য।
যুব সমাজ ধ্বংস ও তাদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের প্রধান অন্তরায় মাদক। মাদক শুধু একজন যুবকের মেধা ও সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের প্রতিবন্ধক নয় বরং মাদক একজন যুবককে ধ্বংসের অবলীলা ও মারাত্মক পরিণতির দিক ঠেলে দিয়ে তাকে চিরতরে ধ্বংস ও অকেজো করে দেয়। তার মূল্যবান জীবনটা নষ্ট হয়ে যায়।
ইসলামি মূল্যবোধ বান্ধব সমাজ ব্যবস্থা ছাড়া সব সমাজেই মাদকের ছুটাছুটি পরিলক্ষিত। মুসলিম পারিবারিক বন্ধন ও ইসলামি মূল্যবোধ কম-এমন পরিবারের সদস্যরা অতি সামান্য কারণে মাদকদ্রব্যে অধিকতর আসক্ত হচ্ছে। যারা নেশা করে তাদের অধিকাংশই জানে, নেশা কোনও রকম উপকারী বা ভালো কাজ নয় এবং তা মানুষের জীবনীশক্তি বিনষ্ট করে। এসব জেনেশুনেও মাদকাসক্ত মানুষ নেশার অন্ধকার জগতের মধ্যে থাকতে চায়। মাদকাসক্ত তরুণ প্রজন্ম ধর্ম-কর্ম সবকিছু বিসর্জন দিয়ে হতাশাকে সঙ্গী করে জীবনের চলার পথ থেকে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছে এবং বিবেক-বুদ্ধি হারিয়ে সামাজিকতা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। ইসলাম মানুষকে নেশা গ্রহণ ও মাদক সেবন হতে সম্পূর্ণ নিষেধ করে। মানুষকে ধ্বংস ও করুণ পরিণতি হতে রক্ষা করার জন্য ইসলামী অনুশাসন মেনে চলার কোনো বিকল্প নাই। তাই আমাদের জানতে হবে ইসলাম মাদক সম্পর্কে কি দিক-নির্দেশনা দেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেছেন,
«كل شراب أسكر فهو حرام»
“যে কোনো ধরনের নেশাজাত পানীয় হারাম”। [বুখারী, হাদিস: ৫৫৮৫] তিনি আরও বলেন,
«كُلُّ مُسْكِرٍ خَمْرٌ، وَكُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ، وَمَنْ شَرِبَ الْخَمْرَ فِي الدُّنْيَا فَمَاتَ وَهُوَ يُدْمِنُهَا لَمْ يَتُبْ، لَمْ يَشْرَبْهَا فِي الْآخِرَةِ» رواه مسلم .
‘নেশাজাতীয় যেকোনো দ্রব্যই মাদক, আর যাবতীয় মাদকই হারাম, যে ব্যক্তি দুনিয়াতে মাদক সেবন করে, অতপর নেশাগ্রস্ত অবস্থায় মারা যায় এবং সে তাওবা না করে, আখিরাতে সে মদ পান করা হতে বঞ্চিত হবে’। [মুসলিম, হাদিস: ২০০৩]
মানবসভ্যতার প্রতি মারাত্মক হুমকি সৃষ্টিকারী দেশের অন্যতম অভিশাপ মাদকাসক্তি। মাদকদ্রব্যের নেশার ছোবল এমনই ভয়ানক যে তা ব্যক্তিকে পরিবার, সমাজ, দেশ থেকেই বিচ্ছিন্ন করে না; তা সমগ্র জীবন ধ্বংস করে দেয়। মাদক কেবল সমাজ, জাতি ও রাষ্ট্রেরই ক্ষতি করে না; সভ্যতা ও সংস্কৃতিকেও বিপন্ন করে। পরিমাণে অল্প হোক আর বেশি হোক-পান বা অন্য কোনোভাবে গ্রহণ করা হোক, নেশা ও চিত্ত-বিভ্রমক হলেই তা ইসলামে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। মানবতার মুক্তির কাণ্ডারি ইসলামই সর্বনাশা মাদক সম্পর্কে মানব জাতিকে সর্বোচ্চ সতর্ক করছে। মানুষ যাতে মাদক থেকে দূরে থাকে তার জন্য মাদক সেবনে এ নেশাগ্রস্থ ব্যক্তির জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করেছেন। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে ঘোষিত হয়েছে,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِنَّمَا ٱلۡخَمۡرُ وَٱلۡمَيۡسِرُ وَٱلۡأَنصَابُ وَٱلۡأَزۡلَٰمُ رِجۡسٞ مِّنۡ عَمَلِ ٱلشَّيۡطَٰنِ فَٱجۡتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ٩٠ ﴾ [ المائدة : ٩٠ ]
‘ওহে মুমিনগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমা ও ভাগ্য নির্ণায়ক তীর হচ্ছে ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কারসাজি। সুতরাং, তোমরা এসব বর্জন করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার”। [সূরা আল-মায়িদা, আয়াত-৯০]
মাদক হলো এমন এক ধরনের অবৈধ ও বর্জনীয় বস্তু, যা গ্রহণ বা সেবন করলে আসক্ত ব্যক্তির এক বা একাধিক কার্যকলাপের অস্বাভাবিক পরিবর্তন বা বিকৃতি ঘটতে পারে। মাদকাসক্তিতে মানুষের কোনও না কোনও ক্ষয়ক্ষতি তো হয়ই এবং ধীরে ধীরে তা নেশাগ্রস্ত ব্যক্তিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়। মাদক কেবল একক অপরাধ নয়, মাদকাসক্তির সঙ্গে সন্ত্রাস ও অন্যান্য অপরাধ অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে মানুষের অন্তরে মাদকের ক্ষতির অনুভূতি জাগ্রত করে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«لا تشربوا الخمر؛ فإنها مفتاح كل شر»
‘তোমরা মাদক ও নেশা পান করো না; কেননা এটা সব অপকর্ম ও অশ্লীলতার মূল’। [ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৩৭১। হাকিম, হাদিস: ৭২৩১; হাদিসটি সহীহ বুখারি মুসলিম এর শর্ত অনুযায়ী।]
মাদকের করাল গ্রাসে তরুণ সমাজ আজ সৃষ্টিশীল ও সৃজনশীল কাজে মেধা, যোগ্যতা, প্রজ্ঞার আশানুরূপ অবদান রাখতে পারছে না। যে তরুণ তার অমিত সম্ভাবনাকে পরিবার, দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজে লাগাতে পারত, মাদকের নীল দংশন তার সুকুমার বৃত্তি নষ্ট করে, এমনকি ক্রমান্বয়ে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। উপরন্তু তথা কালেমা, নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাতসহ আল্লাহ তায়ালার বিধিবদ্ধ দৈহিক ও আর্থিক ইবাদত থেকে দূরে রাখে এবং পাপাচারে লিপ্ত করে। এতে মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তা‘আলা অসন্তুষ্ট হন। এ মর্মে কুরআনে মাজীদে আল্লাহ বলেন,
﴿إِنَّمَا يُرِيدُ ٱلشَّيۡطَٰنُ أَن يُوقِعَ بَيۡنَكُمُ ٱلۡعَدَٰوَةَ وَٱلۡبَغۡضَآءَ فِي ٱلۡخَمۡرِ وَٱلۡمَيۡسِرِ وَيَصُدَّكُمۡ عَن ذِكۡرِ ٱللَّهِ وَعَنِ ٱلصَّلَوٰةِۖ فَهَلۡ أَنتُم مُّنتَهُونَ ٩١﴾ [ المائدة : ٩١ ]
‘নিশ্চয় শয়তান মদ ও জুয়ার দ্বারা তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক শত্রুতা ও বিদ্বেষ ঘটাতে চায় এবং তোমাদের আল্লাহর স্মরণ ও সালাত থেকে বিরত রাখতে চায়, তবু কি তোমরা নিবৃত্ত হবে না [সূরা আল-মায়িদা, আয়াত-৯১]?’ যেহেতু মাদকাসক্তি একটি জঘন্য সামাজিক ব্যাধি, জনগণের সামাজিক আন্দোলন, গণসচেতনতা ও সক্রিয় প্রতিরোধের মাধ্যমেই এর প্রতিকার করা সম্ভব। ঘর থেকে শুরু করে স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়সহ পাড়া-মহল্লা ও এলাকায় মাদকদ্রব্য ব্যবহারের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে ঘৃণা প্রকাশের আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। মাদকদ্রব্যের মারাত্মক পরিণতি সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করে তুলতে নিয়মিত সভা-সমিতি, সেমিনার, কর্মশালার আয়োজন করতে হবে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় ধর্মীয় বিধিবিধান সম্পর্কিত শিক্ষামূলক ক্লাস নিতে হবে। মাদকদ্রব্য উৎপাদন, চোরাচালান, ব্যবহার, বিক্রয় প্রভৃতি বিষয়ে প্রচলিত আইনগুলোর বাস্তব প্রয়োগ ও কঠোর বিধান কার্যকর নিশ্চিত করা দরকার। সমাজজীবনে এহেন ঘৃণ্য মাদকদ্রব্যের ব্যবহার ও প্রসার রোধ করা অত্যন্ত জরুরি। এ ক্ষেত্রে যারা মাদকদ্রব্য প্রস্তুত, এর প্রচলন ও সরবরাহের কাজে জড়িত তাদের দেশ ও জাতির স্বার্থে এহেন অনৈতিক কাজ অবশ্যই বর্জন করা উচিত। প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজের আগে মসজিদের ইমাম-খতিবের ভাষণে মাদকের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে সোচ্চার থাকতে হবে এবং মাদকের কুফল সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টি করে মাদকের অবৈধ উৎপাদন, বিপণন, ব্যবহার ও চোরাচালান রোধসহ সকল স্তরের মুসল্লিদের কঠোর অবস্থান নিতে হবে। শুধু মদ্যপায়ী ও বিক্রেতা নয়, বরং মদ ও মাদকদ্রব্যের সঙ্গে সম্পর্কিত ১০ জনের প্রতি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিসম্পাত দিয়েছেন। তারা হচ্ছে,
«لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الخَمْرِ عَشَرَةً : عَاصِرَهَا، وَمُعْتَصِرَهَا، وَشَارِبَهَا، وَحَامِلَهَا، وَالمَحْمُولَةُ إِلَيْهِ، وَسَاقِيَهَا، وَبَائِعَهَا، وَآكِلَ ثَمَنِهَا، وَالمُشْتَرِي لَهَا، وَالمُشْتَرَاةُ لَهُ»
“১. মদ্যপানকারী, ২. মাদক প্রস্ততকারক ৩. মাদক প্রস্তুতের উপদেষ্টা, ৪. মাদক বহনকারী, ৫. যার কাছে মাদক বহন করা হয় ৬. যে মাদক পান করায়, ৭. মাদক বিক্রেতা, ৮. মাদকের মূল্য গ্রহণকারী ৯. মাদক ক্রয়-বিক্রয়কারী, ১০. যার জন্য মাদক ক্রয় করা হয়” [তিরমিযী, ১২৯৫।]।
সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গসহ সকল শ্রেণীর ধর্মপ্রাণ লোক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে মাদকদ্রব্যের প্রসার রোধে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা চালালে দেশ থেকে মাদকদ্রব্যের ব্যবহার চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে ইসলামে কঠোর শাস্তির বিধান আছে। ইহকাল ও পরকালে মাদকাসক্তির ভয়াবহতা জনগণের সামনে তুলে ধরার পরও যারা এ ভয়ঙ্কর নেশা ছাড়ে না তাদের জন্য আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দণ্ডবিধি প্রবর্তন করেছেন, যাতে তারা সংশোধিত হয় এবং অন্যরা শিক্ষা নিতে পারে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইসলামী মূল্যবোধে উজ্জীবিত হওয়ার শিক্ষাই মাদকের সর্বনাশা অভিশাপ থেকে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তরুণদের রক্ষা করতে পারে।
অতএব, ধর্মভীরু মা-বাবা ও অভিভাবকদের উচিত সর্বনাশা মাদকের কুফল ও ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সন্তানদের সচেতন করা। তাহলেই মাদকাসক্ত সন্তানদের নিয়ে মা-বাবার সমস্যা অনেক কমে যাবে। মা-বাবা ও অভিভাবকেরা, নিজেদের সন্তানদের সামনে ধর্মীয় রীতিনীতি, ইসলামি মূল্যবোধ ও নীতি-নৈতিকতার সুন্দর আদর্শ তুলে ধরুন। কারণ তারাই একদিন সমাজ-সংসার তথা দেশের কর্ণধার হবে। প্রত্যেক অভিভাবকের উচিত, তাদের সন্তান যাতে কোনও অসৎ সংস্রবে পড়ে মাদকাসক্ত না হয় সেদিক সজাগ দৃষ্টি রাখা। এ ক্ষেত্রে পারিবারিক শৃঙ্খলা, সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক, সর্বোপরি মানসিক বিকাশের উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি।
মাদক ত্যাগের ব্যাপারে আসক্ত ব্যক্তিদেরও আত্মপ্রত্যয়ী হওয়া দরকার। মাদক থেকে বিরত থাকার জন্য নিজস্ব উদ্যোগই সবচেয়ে ভালো। নিজ থেকে নেশা ছাড়া সম্ভব না হলে তাদের ইসলামি মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ করতে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ বা রাষ্ট্র প্রদত্ত সহযোগিতা গ্রহণ করতে হবে। তরুণ প্রজন্ম ও যুব সমাজে মাদকাসক্তির নেশায় যে নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয়ের সৃষ্টি হয়েছে তা কেবল ইসলামি মূল্যবোধই প্রতিরোধ করতে পারে। আসক্তদেরকে মাদক ত্যাগে উৎসাহিত করতে সর্বস্তরের জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে।
হাদিসে মাদকের সেবনের বিভিন্ন পরিণতির কথা উল্লেখ করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের অন্তরে মাদকের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করেছেন এবং বিভিন্ন প্রকার শাস্তি ও আযাবের কথা উল্লেখ করে মানুষকে সর্তক করেছেন। যেমন-রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাদকের বিস্তারকে কিয়ামতের আলামত বলে আখ্যায়িত করেন।
যুব সমাজ ধ্বংস ও তাদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের প্রধান অন্তরায় মাদক। মাদক শুধু একজন যুবকের মেধা ও সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের প্রতিবন্ধক নয় বরং মাদক একজন যুবককে ধ্বংসের অবলীলা ও মারাত্মক পরিণতির দিক ঠেলে দিয়ে তাকে চিরতরে ধ্বংস ও অকেজো করে দেয়। তার মূল্যবান জীবনটা নষ্ট হয়ে যায়।
ইসলামি মূল্যবোধ বান্ধব সমাজ ব্যবস্থা ছাড়া সব সমাজেই মাদকের ছুটাছুটি পরিলক্ষিত। মুসলিম পারিবারিক বন্ধন ও ইসলামি মূল্যবোধ কম-এমন পরিবারের সদস্যরা অতি সামান্য কারণে মাদকদ্রব্যে অধিকতর আসক্ত হচ্ছে। যারা নেশা করে তাদের অধিকাংশই জানে, নেশা কোনও রকম উপকারী বা ভালো কাজ নয় এবং তা মানুষের জীবনীশক্তি বিনষ্ট করে। এসব জেনেশুনেও মাদকাসক্ত মানুষ নেশার অন্ধকার জগতের মধ্যে থাকতে চায়। মাদকাসক্ত তরুণ প্রজন্ম ধর্ম-কর্ম সবকিছু বিসর্জন দিয়ে হতাশাকে সঙ্গী করে জীবনের চলার পথ থেকে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছে এবং বিবেক-বুদ্ধি হারিয়ে সামাজিকতা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। ইসলাম মানুষকে নেশা গ্রহণ ও মাদক সেবন হতে সম্পূর্ণ নিষেধ করে। মানুষকে ধ্বংস ও করুণ পরিণতি হতে রক্ষা করার জন্য ইসলামী অনুশাসন মেনে চলার কোনো বিকল্প নাই। তাই আমাদের জানতে হবে ইসলাম মাদক সম্পর্কে কি দিক-নির্দেশনা দেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেছেন,
«كل شراب أسكر فهو حرام»
“যে কোনো ধরনের নেশাজাত পানীয় হারাম”। [বুখারী, হাদিস: ৫৫৮৫] তিনি আরও বলেন,
«كُلُّ مُسْكِرٍ خَمْرٌ، وَكُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ، وَمَنْ شَرِبَ الْخَمْرَ فِي الدُّنْيَا فَمَاتَ وَهُوَ يُدْمِنُهَا لَمْ يَتُبْ، لَمْ يَشْرَبْهَا فِي الْآخِرَةِ» رواه مسلم .
‘নেশাজাতীয় যেকোনো দ্রব্যই মাদক, আর যাবতীয় মাদকই হারাম, যে ব্যক্তি দুনিয়াতে মাদক সেবন করে, অতপর নেশাগ্রস্ত অবস্থায় মারা যায় এবং সে তাওবা না করে, আখিরাতে সে মদ পান করা হতে বঞ্চিত হবে’। [মুসলিম, হাদিস: ২০০৩]
মানবসভ্যতার প্রতি মারাত্মক হুমকি সৃষ্টিকারী দেশের অন্যতম অভিশাপ মাদকাসক্তি। মাদকদ্রব্যের নেশার ছোবল এমনই ভয়ানক যে তা ব্যক্তিকে পরিবার, সমাজ, দেশ থেকেই বিচ্ছিন্ন করে না; তা সমগ্র জীবন ধ্বংস করে দেয়। মাদক কেবল সমাজ, জাতি ও রাষ্ট্রেরই ক্ষতি করে না; সভ্যতা ও সংস্কৃতিকেও বিপন্ন করে। পরিমাণে অল্প হোক আর বেশি হোক-পান বা অন্য কোনোভাবে গ্রহণ করা হোক, নেশা ও চিত্ত-বিভ্রমক হলেই তা ইসলামে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। মানবতার মুক্তির কাণ্ডারি ইসলামই সর্বনাশা মাদক সম্পর্কে মানব জাতিকে সর্বোচ্চ সতর্ক করছে। মানুষ যাতে মাদক থেকে দূরে থাকে তার জন্য মাদক সেবনে এ নেশাগ্রস্থ ব্যক্তির জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করেছেন। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে ঘোষিত হয়েছে,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِنَّمَا ٱلۡخَمۡرُ وَٱلۡمَيۡسِرُ وَٱلۡأَنصَابُ وَٱلۡأَزۡلَٰمُ رِجۡسٞ مِّنۡ عَمَلِ ٱلشَّيۡطَٰنِ فَٱجۡتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ٩٠ ﴾ [ المائدة : ٩٠ ]
‘ওহে মুমিনগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমা ও ভাগ্য নির্ণায়ক তীর হচ্ছে ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কারসাজি। সুতরাং, তোমরা এসব বর্জন করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার”। [সূরা আল-মায়িদা, আয়াত-৯০]
মাদক হলো এমন এক ধরনের অবৈধ ও বর্জনীয় বস্তু, যা গ্রহণ বা সেবন করলে আসক্ত ব্যক্তির এক বা একাধিক কার্যকলাপের অস্বাভাবিক পরিবর্তন বা বিকৃতি ঘটতে পারে। মাদকাসক্তিতে মানুষের কোনও না কোনও ক্ষয়ক্ষতি তো হয়ই এবং ধীরে ধীরে তা নেশাগ্রস্ত ব্যক্তিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়। মাদক কেবল একক অপরাধ নয়, মাদকাসক্তির সঙ্গে সন্ত্রাস ও অন্যান্য অপরাধ অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে মানুষের অন্তরে মাদকের ক্ষতির অনুভূতি জাগ্রত করে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«لا تشربوا الخمر؛ فإنها مفتاح كل شر»
‘তোমরা মাদক ও নেশা পান করো না; কেননা এটা সব অপকর্ম ও অশ্লীলতার মূল’। [ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৩৭১। হাকিম, হাদিস: ৭২৩১; হাদিসটি সহীহ বুখারি মুসলিম এর শর্ত অনুযায়ী।]
মাদকের করাল গ্রাসে তরুণ সমাজ আজ সৃষ্টিশীল ও সৃজনশীল কাজে মেধা, যোগ্যতা, প্রজ্ঞার আশানুরূপ অবদান রাখতে পারছে না। যে তরুণ তার অমিত সম্ভাবনাকে পরিবার, দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজে লাগাতে পারত, মাদকের নীল দংশন তার সুকুমার বৃত্তি নষ্ট করে, এমনকি ক্রমান্বয়ে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। উপরন্তু তথা কালেমা, নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাতসহ আল্লাহ তায়ালার বিধিবদ্ধ দৈহিক ও আর্থিক ইবাদত থেকে দূরে রাখে এবং পাপাচারে লিপ্ত করে। এতে মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তা‘আলা অসন্তুষ্ট হন। এ মর্মে কুরআনে মাজীদে আল্লাহ বলেন,
﴿إِنَّمَا يُرِيدُ ٱلشَّيۡطَٰنُ أَن يُوقِعَ بَيۡنَكُمُ ٱلۡعَدَٰوَةَ وَٱلۡبَغۡضَآءَ فِي ٱلۡخَمۡرِ وَٱلۡمَيۡسِرِ وَيَصُدَّكُمۡ عَن ذِكۡرِ ٱللَّهِ وَعَنِ ٱلصَّلَوٰةِۖ فَهَلۡ أَنتُم مُّنتَهُونَ ٩١﴾ [ المائدة : ٩١ ]
‘নিশ্চয় শয়তান মদ ও জুয়ার দ্বারা তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক শত্রুতা ও বিদ্বেষ ঘটাতে চায় এবং তোমাদের আল্লাহর স্মরণ ও সালাত থেকে বিরত রাখতে চায়, তবু কি তোমরা নিবৃত্ত হবে না [সূরা আল-মায়িদা, আয়াত-৯১]?’ যেহেতু মাদকাসক্তি একটি জঘন্য সামাজিক ব্যাধি, জনগণের সামাজিক আন্দোলন, গণসচেতনতা ও সক্রিয় প্রতিরোধের মাধ্যমেই এর প্রতিকার করা সম্ভব। ঘর থেকে শুরু করে স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়সহ পাড়া-মহল্লা ও এলাকায় মাদকদ্রব্য ব্যবহারের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে ঘৃণা প্রকাশের আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। মাদকদ্রব্যের মারাত্মক পরিণতি সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করে তুলতে নিয়মিত সভা-সমিতি, সেমিনার, কর্মশালার আয়োজন করতে হবে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় ধর্মীয় বিধিবিধান সম্পর্কিত শিক্ষামূলক ক্লাস নিতে হবে। মাদকদ্রব্য উৎপাদন, চোরাচালান, ব্যবহার, বিক্রয় প্রভৃতি বিষয়ে প্রচলিত আইনগুলোর বাস্তব প্রয়োগ ও কঠোর বিধান কার্যকর নিশ্চিত করা দরকার। সমাজজীবনে এহেন ঘৃণ্য মাদকদ্রব্যের ব্যবহার ও প্রসার রোধ করা অত্যন্ত জরুরি। এ ক্ষেত্রে যারা মাদকদ্রব্য প্রস্তুত, এর প্রচলন ও সরবরাহের কাজে জড়িত তাদের দেশ ও জাতির স্বার্থে এহেন অনৈতিক কাজ অবশ্যই বর্জন করা উচিত। প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজের আগে মসজিদের ইমাম-খতিবের ভাষণে মাদকের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে সোচ্চার থাকতে হবে এবং মাদকের কুফল সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টি করে মাদকের অবৈধ উৎপাদন, বিপণন, ব্যবহার ও চোরাচালান রোধসহ সকল স্তরের মুসল্লিদের কঠোর অবস্থান নিতে হবে। শুধু মদ্যপায়ী ও বিক্রেতা নয়, বরং মদ ও মাদকদ্রব্যের সঙ্গে সম্পর্কিত ১০ জনের প্রতি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিসম্পাত দিয়েছেন। তারা হচ্ছে,
«لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الخَمْرِ عَشَرَةً : عَاصِرَهَا، وَمُعْتَصِرَهَا، وَشَارِبَهَا، وَحَامِلَهَا، وَالمَحْمُولَةُ إِلَيْهِ، وَسَاقِيَهَا، وَبَائِعَهَا، وَآكِلَ ثَمَنِهَا، وَالمُشْتَرِي لَهَا، وَالمُشْتَرَاةُ لَهُ»
“১. মদ্যপানকারী, ২. মাদক প্রস্ততকারক ৩. মাদক প্রস্তুতের উপদেষ্টা, ৪. মাদক বহনকারী, ৫. যার কাছে মাদক বহন করা হয় ৬. যে মাদক পান করায়, ৭. মাদক বিক্রেতা, ৮. মাদকের মূল্য গ্রহণকারী ৯. মাদক ক্রয়-বিক্রয়কারী, ১০. যার জন্য মাদক ক্রয় করা হয়” [তিরমিযী, ১২৯৫।]।
সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গসহ সকল শ্রেণীর ধর্মপ্রাণ লোক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে মাদকদ্রব্যের প্রসার রোধে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা চালালে দেশ থেকে মাদকদ্রব্যের ব্যবহার চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে ইসলামে কঠোর শাস্তির বিধান আছে। ইহকাল ও পরকালে মাদকাসক্তির ভয়াবহতা জনগণের সামনে তুলে ধরার পরও যারা এ ভয়ঙ্কর নেশা ছাড়ে না তাদের জন্য আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দণ্ডবিধি প্রবর্তন করেছেন, যাতে তারা সংশোধিত হয় এবং অন্যরা শিক্ষা নিতে পারে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইসলামী মূল্যবোধে উজ্জীবিত হওয়ার শিক্ষাই মাদকের সর্বনাশা অভিশাপ থেকে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তরুণদের রক্ষা করতে পারে।
অতএব, ধর্মভীরু মা-বাবা ও অভিভাবকদের উচিত সর্বনাশা মাদকের কুফল ও ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সন্তানদের সচেতন করা। তাহলেই মাদকাসক্ত সন্তানদের নিয়ে মা-বাবার সমস্যা অনেক কমে যাবে। মা-বাবা ও অভিভাবকেরা, নিজেদের সন্তানদের সামনে ধর্মীয় রীতিনীতি, ইসলামি মূল্যবোধ ও নীতি-নৈতিকতার সুন্দর আদর্শ তুলে ধরুন। কারণ তারাই একদিন সমাজ-সংসার তথা দেশের কর্ণধার হবে। প্রত্যেক অভিভাবকের উচিত, তাদের সন্তান যাতে কোনও অসৎ সংস্রবে পড়ে মাদকাসক্ত না হয় সেদিক সজাগ দৃষ্টি রাখা। এ ক্ষেত্রে পারিবারিক শৃঙ্খলা, সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক, সর্বোপরি মানসিক বিকাশের উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি।
মাদক ত্যাগের ব্যাপারে আসক্ত ব্যক্তিদেরও আত্মপ্রত্যয়ী হওয়া দরকার। মাদক থেকে বিরত থাকার জন্য নিজস্ব উদ্যোগই সবচেয়ে ভালো। নিজ থেকে নেশা ছাড়া সম্ভব না হলে তাদের ইসলামি মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ করতে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ বা রাষ্ট্র প্রদত্ত সহযোগিতা গ্রহণ করতে হবে। তরুণ প্রজন্ম ও যুব সমাজে মাদকাসক্তির নেশায় যে নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয়ের সৃষ্টি হয়েছে তা কেবল ইসলামি মূল্যবোধই প্রতিরোধ করতে পারে। আসক্তদেরকে মাদক ত্যাগে উৎসাহিত করতে সর্বস্তরের জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে।
হাদিসে মাদকের সেবনের বিভিন্ন পরিণতির কথা উল্লেখ করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের অন্তরে মাদকের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করেছেন এবং বিভিন্ন প্রকার শাস্তি ও আযাবের কথা উল্লেখ করে মানুষকে সর্তক করেছেন। যেমন-রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাদকের বিস্তারকে কিয়ামতের আলামত বলে আখ্যায়িত করেন।
মাদক ও নেশাজাত দ্রব্যের বিস্তার কিয়ামতের আলামত। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
إن من أشراط الساعة : أن يرفع العلم ويثبت الجهل، ويُشرب الخمر، ويظهر الزنا رواه البخاري ومسلم،
“কিয়ামতের আলামতসমূহের কতক আলামত হল, দুনিয়া থেকে ইলম তুলে নেয়া হবে, অজ্ঞতা-নিরক্ষরতা-প্রতিস্থাপিত হবে, মদ্য পান ব্যাপক হবে এবং ব্যভিচার বৃদ্ধি পাবে। [বর্ণনায় বুখারি, হাদিস: ৮০, মুসলিম, হাদিস: ২৬৭১] অর্থাৎ কিয়ামতের পূর্বে মানুষের মধ্যে মদ্যপান ও নেশা গ্রহণ অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাবে। যেমনটি অপর একটি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ويكثر شرب الخمر “এবং মদ্যপান বৃদ্ধি পাবে”। [বুখারি, হাদিস: ৫২৩১]
কিয়ামতের পূর্বে দেশ ও সমাজে মাদকের সয়লাব এত ব্যাপক হবে, কেউ কেউ মাদক সেবন করাকে অপরাধও মনে করবে না। তারা মনে করবে মাদক সেবন করা কোনো অপরাধ নয় বরং তা হালাল। অনেক সময় দেখা যাবে, মাদক ও নেশা জাতীয় বস্তুর নাম পরিবর্তন করে বিভিন্ন প্রকার কোমল পানীয় ও শরবতের নামে নামকরণ করে তা পান করা হবে। তারা মনে করবে নাম পরিবর্তন করা দ্বারা তা হালাল হয়ে যাবে। ফলে মাদক সেবন যে হারাম ও নিষিদ্ধ তা তাদের অন্তর থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। মাদকের প্রতি তাদের আগ্রহ বাড়বে, এটা যে নিষিদ্ধ তার প্রতি কোনো ভ্রূক্ষেপ করা হবে না। ‘উবাদাহ ইবন সামেত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«ليستحلنّ طائفة من أمتي الخمر، باسم يسمّونها إياه»
“আমার উম্মতের মধ্যে একটি গোষ্ঠী এমন হবে, যারা মদকে ভিন্ন নামে নামকরণ করে সেটাকে হালাল মনে করবে”। [আহমদ, হাদিস:২২৭০৯]
এর চেয়েও অধিক শক্তিশালী হাদিস -যাতে এ ধরনের অপরাধীদের বিষয়ে কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে- যেটি ইমাম বুখারী রহ. সহীহ বুখারিতে আবু মালেক আল আশ‘আরী হতে বর্ণনা করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«ليكوننّ من أمتي أقوام، يستحلّون الحِرَ والحرير، والخمر والمعازف، ولينزلن أقوام إلى جنب عَلَم، يروح عليهم بسارحةٍ لهم، يأتيهم -يعني الفقير- لحاجةٍ فيقولون : ارجع إلينا غداً . فيبيّتهم الله، ويضع العَلَم، ويمسخ آخرين قردة وخنازير إلى يوم القيامة»
“আমার উম্মতের কতক সম্প্রদায় এমন হবে, যারা যিনা-ব্যভিচার, রেশমী কাপড় পরিধান করা, মাদক সেবন করা ও গান-বাজনাকে বৈধ মনে করবে। আর উম্মতের একটি সম্প্রদায় একটি পাহাড়ের পাদদেশে অবতরণ করলে তাদের নিকট তাদের রাখাল তাদের ছাগলগুলো নিয়ে উপস্থিত হবে। তখন তাদের নিকট একজন ভিক্ষুক এসে ভিক্ষা চাইলে তারা তাকে বলবে, তুমি আমাদের নিকট আগামীকাল এস। রাতে তাদের উপর আযাব এসে তাদের ধ্বংস করে দেবে। আর আল্লাহ তাদের উপর পাহাড় ধ্বসে দিবেন। আর তাদের কতেককে তিনি কিয়ামত পর্যন্ত বানর ও শুকরের আকৃতিতে পরিণত করে দিবেন। [বুখারি, হাদিস: ৫৫৯০]
إن من أشراط الساعة : أن يرفع العلم ويثبت الجهل، ويُشرب الخمر، ويظهر الزنا رواه البخاري ومسلم،
“কিয়ামতের আলামতসমূহের কতক আলামত হল, দুনিয়া থেকে ইলম তুলে নেয়া হবে, অজ্ঞতা-নিরক্ষরতা-প্রতিস্থাপিত হবে, মদ্য পান ব্যাপক হবে এবং ব্যভিচার বৃদ্ধি পাবে। [বর্ণনায় বুখারি, হাদিস: ৮০, মুসলিম, হাদিস: ২৬৭১] অর্থাৎ কিয়ামতের পূর্বে মানুষের মধ্যে মদ্যপান ও নেশা গ্রহণ অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাবে। যেমনটি অপর একটি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ويكثر شرب الخمر “এবং মদ্যপান বৃদ্ধি পাবে”। [বুখারি, হাদিস: ৫২৩১]
কিয়ামতের পূর্বে দেশ ও সমাজে মাদকের সয়লাব এত ব্যাপক হবে, কেউ কেউ মাদক সেবন করাকে অপরাধও মনে করবে না। তারা মনে করবে মাদক সেবন করা কোনো অপরাধ নয় বরং তা হালাল। অনেক সময় দেখা যাবে, মাদক ও নেশা জাতীয় বস্তুর নাম পরিবর্তন করে বিভিন্ন প্রকার কোমল পানীয় ও শরবতের নামে নামকরণ করে তা পান করা হবে। তারা মনে করবে নাম পরিবর্তন করা দ্বারা তা হালাল হয়ে যাবে। ফলে মাদক সেবন যে হারাম ও নিষিদ্ধ তা তাদের অন্তর থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। মাদকের প্রতি তাদের আগ্রহ বাড়বে, এটা যে নিষিদ্ধ তার প্রতি কোনো ভ্রূক্ষেপ করা হবে না। ‘উবাদাহ ইবন সামেত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«ليستحلنّ طائفة من أمتي الخمر، باسم يسمّونها إياه»
“আমার উম্মতের মধ্যে একটি গোষ্ঠী এমন হবে, যারা মদকে ভিন্ন নামে নামকরণ করে সেটাকে হালাল মনে করবে”। [আহমদ, হাদিস:২২৭০৯]
এর চেয়েও অধিক শক্তিশালী হাদিস -যাতে এ ধরনের অপরাধীদের বিষয়ে কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে- যেটি ইমাম বুখারী রহ. সহীহ বুখারিতে আবু মালেক আল আশ‘আরী হতে বর্ণনা করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«ليكوننّ من أمتي أقوام، يستحلّون الحِرَ والحرير، والخمر والمعازف، ولينزلن أقوام إلى جنب عَلَم، يروح عليهم بسارحةٍ لهم، يأتيهم -يعني الفقير- لحاجةٍ فيقولون : ارجع إلينا غداً . فيبيّتهم الله، ويضع العَلَم، ويمسخ آخرين قردة وخنازير إلى يوم القيامة»
“আমার উম্মতের কতক সম্প্রদায় এমন হবে, যারা যিনা-ব্যভিচার, রেশমী কাপড় পরিধান করা, মাদক সেবন করা ও গান-বাজনাকে বৈধ মনে করবে। আর উম্মতের একটি সম্প্রদায় একটি পাহাড়ের পাদদেশে অবতরণ করলে তাদের নিকট তাদের রাখাল তাদের ছাগলগুলো নিয়ে উপস্থিত হবে। তখন তাদের নিকট একজন ভিক্ষুক এসে ভিক্ষা চাইলে তারা তাকে বলবে, তুমি আমাদের নিকট আগামীকাল এস। রাতে তাদের উপর আযাব এসে তাদের ধ্বংস করে দেবে। আর আল্লাহ তাদের উপর পাহাড় ধ্বসে দিবেন। আর তাদের কতেককে তিনি কিয়ামত পর্যন্ত বানর ও শুকরের আকৃতিতে পরিণত করে দিবেন। [বুখারি, হাদিস: ৫৫৯০]
এক: কোনো বস্তুকে অন্য নামে নামকরণ দ্বারা বস্তুর আসল রূপ পরিবর্তন হয় না। আর শরীয়তের সব বিধানই হল, স্পষ্ট, মজবুত ও শক্তিশালী। শরিয়তের বিধান দ্বারা কোনো প্রকার খেল-তামাশা করা বৈধ নয়। সুতরাং, যে নামেই নাম করণ করা হোক না কেন, তার মধ্যে যখন কারণ- নেশা-পাওয়া যাবে, তখন তা সেবন বা পান হারাম হবে। এমনকি যদি আমরা মদকে পানিও নাম রাখি, তা হলেও তা হারাম হবে। কারণ, হাদিসে স্পষ্ট ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, যে পানীয় দ্বারা মানুষের মস্তিষ্ক নষ্ট হয়, তা হারাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«كل شراب أسكر فهو حرام»
“যে কোনো ধরনের নেশাজাত পানীয় হারাম” [বুখারী, হাদিস, ৫৫৮৫।]।
অনুরূপভাবে রাসূল সা. বলেন,
«كل مسكر خمر، وكل مسكر حرام»
“নেশাজাতীয় যেকোনো দ্রব্যই মাদক, আর যাবতীয় মাদকই হারাম [মুসলিম, হাদিস: ৫০০৫।]।”
আর যারা মদ পান করাকে বৈধ দাবী এবং হালাল মনে করে তাদের বলা হবে, আল্লাহ তা‘আলা যে সব বস্তুকে হারাম করেছে, তাকে হালাল মনে করা দ্বারা একজন মানুষ ইসলামের বন্ধন থেকে বের হয়ে যায়। শেখ সুলাইমান আত-তামিমী রহ. বলেন, যে সব বস্তু নিষিদ্ধ হওয়া বা হালাল হওয় বিষয়ে উম্মতের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সে ধরনের হালাল বা হারাম মনে করা কুফর। কারণ, আল্লাহ ও তার রাসূল যে বস্তুকে হালাল করেছেন, তার হালাল হওয়াকে অস্বীকার করা যাবে না এবং যে বস্তুকে হারাম করেছে তাকে হালাল বলে আখ্যায়িত করা যাবে না। এ ধরনের ধৃষ্টতা কেবল সেই দেখাতে পারে যে ইসলামের দুশমন, ইসলামের বিধি-বিধান অস্বীকারকারী এবং কুরআনও সুন্নাহ এবং উম্মতের ইজমাকে অমান্যকারী।
দুই: পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের হেফাযত করা একজন মানুষের জন্য খুবই জরুরী। পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের হেফাযত ছাড়া ইসলামের মাকাসেদ তথা মূল উদ্দেশ্যসমূহ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। আর ইসলামের মাকাসেদকে সংরক্ষণ করার জন্য পরিপূর্ণ চেষ্টা করা একজন মুমিনের দায়িত্ব ও কর্তব্য। কিন্তু মদ মানুষের জ্ঞানকে নষ্ট করে দেয় যা একজন মানুষের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইন্দ্রিয়। মদ মানুষের জ্ঞানকে বিলুপ্ত করে, চিন্তা-ফিকিরকে নষ্ট করে দেয়। একজন মানুষ যাতে তার জ্ঞানহারা না হয়, এ কারণে আল্লাহ মানুষকে মদ পান হতে কঠিন হুশিয়ারি উচ্চারণ করে। আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে মদ থেকে দূরে থাকার জন্য সুস্পষ্ট ও পরিষ্কার নিষেধ করেন, যার মধ্যে কোনো প্রকার ব্যাখ্যা বা বিকৃতির সুযোগ নাই। এ কারণেই ইমাম কুরতবী রহ. আল্লাহ তা‘আলার বাণী فاجتنبوه এর তাফসীরে বলেন, আল্লাহর এ কথাটি দ্বারা মদ থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকাকে বুঝায়। ফলে মদ থেকে কোনো উপায়ে কোনো প্রকার উপকার গ্রহণ করা যাবে না। মদ পান করা যাবে না, বিক্রি করা যাবে না, শরবত বানানো যাবে না, ঔষধ বানানো যাবে না ইত্যাদি। ইমাম ইবন মাজাহ আবুদ দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে একটি হাদিস বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,
«لا تشربوا الخمر؛ فإنها مفتاح كل شر»
“তোমরা মদ সেবন করো না, কারণ, মদ সমস্ত অনিষ্টতার চাবি-কাঠি”। [ইবন মাজাহ, হাদীস নং, ৩৩৭১; হাকিম, হাদিস: ৭২৩১; হাদিসটি সহীহ বুখারি মুসলিম এর শর্ত অনুযায়ী।]
মদের ক্ষতি শুধু দু একটির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর ক্ষতি এত ব্যাপক- যার কারণে আল্লাহ তা‘আলা মদ সেবন করাকে শুধু হারাম বা নিষিদ্ধ করেননি বরং মদ বিক্রি করা, তৈরি করা, আমদানি-রফতানি বিপণনসহ যাবতীয় সব কিছুকেই নিষিদ্ধ করেন। যারা মদের বাণিজ্য করে, তাদের ব্যাপারেও কঠিন হুশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। যারা মদ পান করে তারা আখেরাতে এ জাতীয় পানীয় থেকে বঞ্চিত হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। যেমন, আব্দুল্লাহ ইবন ওমরের হাদিস বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«من شرب الخمر في الدنيا فمات وهو يدمنها لم يتب، لم يشربها في الآخرة»
“যে ব্যক্তি দুনিয়াতে মদ পান করে এবং নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তাওবা না করে মারা যায়, সে আখিরাতে ঐ জাতীয় কোনো পানীয় পান করতে পারবে না। [বর্ণনায় মুসলিম, হাদিস: ২০০৩, নাসায়ী, হাদিস: ৫৬৭৩।] আর জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে একটি হাদিস বর্ণিত, তাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«وإن على الله لعهدا لمن شرب المسكر أن يسقيه من طينة الخبال : عرق أهل النار»
“যারা দুনিয়াতে মাদক সেবন করে, তাদেরকে আখিরাতে জাহান্নামীদের দেহের পচা-গলা, পুঁজ ও ঘাম পান করানো বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” [বর্ণনায় মুসলিম, হাদিস: ২০০২।] অনুরূপভাবে আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে একটি মারফু হাদিস বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لا يدخل الجنة مدمن خمر»
“নেশাকরায় অভ্যস্ত ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না”। [ইব্নু মাযা, হাদিস: ৩৩৭৬ ইবনু হাব্বান, হাদিস: ৬১৩৭।]
আবদুল্লাহ ইবন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে আরও একটি হাদিস বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«من شرب الخمر لم تقبل له صلاةٌ أربعين صباحاً، فإن تاب : تاب الله عليه، فإن عاد لم يقبل الله له صلاة أربعين صباحاً، فإن تاب : تاب الله عليه، فإن عاد لم يقبل الله له صلاة أربعين صباحاً، فإن تاب : تاب الله عليه، فإن عاد الرابعة لم يقبل الله له صلاة أربعين صباحاً، فإن تاب لم يتب الله عليه، وسقاه من نهر الخبال» .
“যে ব্যক্তি মদ পান করে, চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার সালাত কবুল করা হবে না। যদি সে তাওবা করে আল্লাহ তা‘আলা তার তাওবা কবুল করবেন। তারপর যদি সে পুনরায় মদ পান করে, আল্লাহ আবারো চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার সালাত কবুল করবেন না। তারপর যদি সে তাওবা করে আল্লাহ তা‘আলা তার তাওবা কবুল করবেন। তারপর যদি সে পুনরায় মদ পান করে, আল্লাহ আবারো চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার সালাত কবুল করবেন না। যদি সে তাওবা করে আল্লাহ তা‘আলা তার তাওবা কবুল করবেন। তারপর যদি সে চতুর্থবার পুনরায় মদ পান করে, আল্লাহ আবারো চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার সালাত কবুল করবে না। তারপর যদি তাওবা করে তার তাওবা কবুল করা হবে না। আল্লাহ তাকে জাহান্নামীদের পচা-গলা ও পুঁজের নহর থেকে পান করাবেন”। [বর্ণনায় তিরমিযি, হাদিস: ১৮৬২।]
যারা প্রবৃত্তির পূজারি তাদের নিকট এ ধরনের উপদেশ অনেক সময় অমূলক। যারা আখিরাতে বিশ্বাস করে না, তাদের আখিরাতের ওয়াজ ও নছিহত দ্বারা মদ পান করা থেকে বিরত রাখা সম্ভব নয়। এ ধরনের লোকদের নিকট মদ পান বা নেশাজাত দ্রব্য পান করা দুনিয়াবি ক্ষতিগুলো তুলে ধরতে হবে। তাদের বুঝাতে হবে, মদ পান করা বা নেশা গ্রহণ করা কেবল শরীয়তের পরিপন্থীই নয় বরং নেশাজাত বস্তু সেবন করা দ্বারা একজন মানুষ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়, পারিবারিক ও সামাজিক শান্তি শৃঙ্খলা বিনষ্ট হয় ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংসের দিক ঠেলে দেওয়া হয়। মদ পানের কারণে ঘরে বাইরে অশান্তি তৈরি হয়, বৈবাহিক সম্পর্কে ফাটল দেখা দেয়, মারা-মারি হানা-হানি বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়াও রয়েছে একজন মানুষের দৈহিক ক্ষতি। মাদক সেবন দ্বারা বড় বড় রোগ-ক্যানসার, যক্ষ্মা ইত্যাদি মারাত্মক সংক্রামক ব্যাধি দেখা দেয়। এত কিছুর পরও কি বলা যাবে, মাদক সেবন করা বৈধ এবং তা নিষিদ্ধ এবং হারাম নয়?
«كل شراب أسكر فهو حرام»
“যে কোনো ধরনের নেশাজাত পানীয় হারাম” [বুখারী, হাদিস, ৫৫৮৫।]।
অনুরূপভাবে রাসূল সা. বলেন,
«كل مسكر خمر، وكل مسكر حرام»
“নেশাজাতীয় যেকোনো দ্রব্যই মাদক, আর যাবতীয় মাদকই হারাম [মুসলিম, হাদিস: ৫০০৫।]।”
আর যারা মদ পান করাকে বৈধ দাবী এবং হালাল মনে করে তাদের বলা হবে, আল্লাহ তা‘আলা যে সব বস্তুকে হারাম করেছে, তাকে হালাল মনে করা দ্বারা একজন মানুষ ইসলামের বন্ধন থেকে বের হয়ে যায়। শেখ সুলাইমান আত-তামিমী রহ. বলেন, যে সব বস্তু নিষিদ্ধ হওয়া বা হালাল হওয় বিষয়ে উম্মতের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সে ধরনের হালাল বা হারাম মনে করা কুফর। কারণ, আল্লাহ ও তার রাসূল যে বস্তুকে হালাল করেছেন, তার হালাল হওয়াকে অস্বীকার করা যাবে না এবং যে বস্তুকে হারাম করেছে তাকে হালাল বলে আখ্যায়িত করা যাবে না। এ ধরনের ধৃষ্টতা কেবল সেই দেখাতে পারে যে ইসলামের দুশমন, ইসলামের বিধি-বিধান অস্বীকারকারী এবং কুরআনও সুন্নাহ এবং উম্মতের ইজমাকে অমান্যকারী।
দুই: পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের হেফাযত করা একজন মানুষের জন্য খুবই জরুরী। পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের হেফাযত ছাড়া ইসলামের মাকাসেদ তথা মূল উদ্দেশ্যসমূহ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। আর ইসলামের মাকাসেদকে সংরক্ষণ করার জন্য পরিপূর্ণ চেষ্টা করা একজন মুমিনের দায়িত্ব ও কর্তব্য। কিন্তু মদ মানুষের জ্ঞানকে নষ্ট করে দেয় যা একজন মানুষের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইন্দ্রিয়। মদ মানুষের জ্ঞানকে বিলুপ্ত করে, চিন্তা-ফিকিরকে নষ্ট করে দেয়। একজন মানুষ যাতে তার জ্ঞানহারা না হয়, এ কারণে আল্লাহ মানুষকে মদ পান হতে কঠিন হুশিয়ারি উচ্চারণ করে। আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে মদ থেকে দূরে থাকার জন্য সুস্পষ্ট ও পরিষ্কার নিষেধ করেন, যার মধ্যে কোনো প্রকার ব্যাখ্যা বা বিকৃতির সুযোগ নাই। এ কারণেই ইমাম কুরতবী রহ. আল্লাহ তা‘আলার বাণী فاجتنبوه এর তাফসীরে বলেন, আল্লাহর এ কথাটি দ্বারা মদ থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকাকে বুঝায়। ফলে মদ থেকে কোনো উপায়ে কোনো প্রকার উপকার গ্রহণ করা যাবে না। মদ পান করা যাবে না, বিক্রি করা যাবে না, শরবত বানানো যাবে না, ঔষধ বানানো যাবে না ইত্যাদি। ইমাম ইবন মাজাহ আবুদ দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে একটি হাদিস বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,
«لا تشربوا الخمر؛ فإنها مفتاح كل شر»
“তোমরা মদ সেবন করো না, কারণ, মদ সমস্ত অনিষ্টতার চাবি-কাঠি”। [ইবন মাজাহ, হাদীস নং, ৩৩৭১; হাকিম, হাদিস: ৭২৩১; হাদিসটি সহীহ বুখারি মুসলিম এর শর্ত অনুযায়ী।]
মদের ক্ষতি শুধু দু একটির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর ক্ষতি এত ব্যাপক- যার কারণে আল্লাহ তা‘আলা মদ সেবন করাকে শুধু হারাম বা নিষিদ্ধ করেননি বরং মদ বিক্রি করা, তৈরি করা, আমদানি-রফতানি বিপণনসহ যাবতীয় সব কিছুকেই নিষিদ্ধ করেন। যারা মদের বাণিজ্য করে, তাদের ব্যাপারেও কঠিন হুশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। যারা মদ পান করে তারা আখেরাতে এ জাতীয় পানীয় থেকে বঞ্চিত হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। যেমন, আব্দুল্লাহ ইবন ওমরের হাদিস বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«من شرب الخمر في الدنيا فمات وهو يدمنها لم يتب، لم يشربها في الآخرة»
“যে ব্যক্তি দুনিয়াতে মদ পান করে এবং নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তাওবা না করে মারা যায়, সে আখিরাতে ঐ জাতীয় কোনো পানীয় পান করতে পারবে না। [বর্ণনায় মুসলিম, হাদিস: ২০০৩, নাসায়ী, হাদিস: ৫৬৭৩।] আর জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে একটি হাদিস বর্ণিত, তাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«وإن على الله لعهدا لمن شرب المسكر أن يسقيه من طينة الخبال : عرق أهل النار»
“যারা দুনিয়াতে মাদক সেবন করে, তাদেরকে আখিরাতে জাহান্নামীদের দেহের পচা-গলা, পুঁজ ও ঘাম পান করানো বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” [বর্ণনায় মুসলিম, হাদিস: ২০০২।] অনুরূপভাবে আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে একটি মারফু হাদিস বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لا يدخل الجنة مدمن خمر»
“নেশাকরায় অভ্যস্ত ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না”। [ইব্নু মাযা, হাদিস: ৩৩৭৬ ইবনু হাব্বান, হাদিস: ৬১৩৭।]
আবদুল্লাহ ইবন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে আরও একটি হাদিস বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«من شرب الخمر لم تقبل له صلاةٌ أربعين صباحاً، فإن تاب : تاب الله عليه، فإن عاد لم يقبل الله له صلاة أربعين صباحاً، فإن تاب : تاب الله عليه، فإن عاد لم يقبل الله له صلاة أربعين صباحاً، فإن تاب : تاب الله عليه، فإن عاد الرابعة لم يقبل الله له صلاة أربعين صباحاً، فإن تاب لم يتب الله عليه، وسقاه من نهر الخبال» .
“যে ব্যক্তি মদ পান করে, চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার সালাত কবুল করা হবে না। যদি সে তাওবা করে আল্লাহ তা‘আলা তার তাওবা কবুল করবেন। তারপর যদি সে পুনরায় মদ পান করে, আল্লাহ আবারো চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার সালাত কবুল করবেন না। তারপর যদি সে তাওবা করে আল্লাহ তা‘আলা তার তাওবা কবুল করবেন। তারপর যদি সে পুনরায় মদ পান করে, আল্লাহ আবারো চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার সালাত কবুল করবেন না। যদি সে তাওবা করে আল্লাহ তা‘আলা তার তাওবা কবুল করবেন। তারপর যদি সে চতুর্থবার পুনরায় মদ পান করে, আল্লাহ আবারো চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার সালাত কবুল করবে না। তারপর যদি তাওবা করে তার তাওবা কবুল করা হবে না। আল্লাহ তাকে জাহান্নামীদের পচা-গলা ও পুঁজের নহর থেকে পান করাবেন”। [বর্ণনায় তিরমিযি, হাদিস: ১৮৬২।]
যারা প্রবৃত্তির পূজারি তাদের নিকট এ ধরনের উপদেশ অনেক সময় অমূলক। যারা আখিরাতে বিশ্বাস করে না, তাদের আখিরাতের ওয়াজ ও নছিহত দ্বারা মদ পান করা থেকে বিরত রাখা সম্ভব নয়। এ ধরনের লোকদের নিকট মদ পান বা নেশাজাত দ্রব্য পান করা দুনিয়াবি ক্ষতিগুলো তুলে ধরতে হবে। তাদের বুঝাতে হবে, মদ পান করা বা নেশা গ্রহণ করা কেবল শরীয়তের পরিপন্থীই নয় বরং নেশাজাত বস্তু সেবন করা দ্বারা একজন মানুষ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়, পারিবারিক ও সামাজিক শান্তি শৃঙ্খলা বিনষ্ট হয় ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংসের দিক ঠেলে দেওয়া হয়। মদ পানের কারণে ঘরে বাইরে অশান্তি তৈরি হয়, বৈবাহিক সম্পর্কে ফাটল দেখা দেয়, মারা-মারি হানা-হানি বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়াও রয়েছে একজন মানুষের দৈহিক ক্ষতি। মাদক সেবন দ্বারা বড় বড় রোগ-ক্যানসার, যক্ষ্মা ইত্যাদি মারাত্মক সংক্রামক ব্যাধি দেখা দেয়। এত কিছুর পরও কি বলা যাবে, মাদক সেবন করা বৈধ এবং তা নিষিদ্ধ এবং হারাম নয়?
বিজাতীয় সংস্কৃতির অগ্রাসন আমাদের যুব সমাজ ধ্বংসের অন্যতম কারণ। কারণ, আজ আমরা আমাদের নিজেদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও তমদ্দুন থেকে অনেক দূরে সরে গিয়ে বিজাতিদের সংস্কৃতির দ্বারস্থ হয়েছি এবং আমরা আমাদের নিজেদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে বাদ দিয়ে অমুসলিম কাফের ও বিজাতিদের সংস্কৃতির অন্ধানুকরণে ব্যাকুল হয়ে পড়েছি। বর্তমান সময়ে মুসলিম দেশসমূহে ইসলামী সংস্কৃতির সম্পূর্ণ বিপরীত চর্চা হচ্ছে। এমনকি আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিজাতীয় সংস্কৃতিকে পাঠ্যসূচী করা হয়েছে। অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, মুসলিমরা তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য কি তা ভুলেই গেছে। তাদের নিকট পশ্চিমা সংস্কৃতি ছাড়া কোনো কিছুই মনে হয় যেন গ্রহণযোগ্য নয়। একজন মুসলিম কেন যেন মনে করে, পশ্চিমা সংস্কৃতি ছাড়া নিজেকে আধুনিক বা অভিজাত হিসেবে প্রকাশ করা যায় না। ফলে মুসলিমরা তাদের নিজেদের হাজার বছরের আত্মপরিচয়কে ভুলে গিয়ে চোখ ধাঁধানো মরীচিকার পেছনে ছুটছে। তাদের প্রাত্যহিক ব্যাবহারিক জীবনের পশ্চিমাদের অনুকরণ করা একটি মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ ইসলামী সভ্যতাই সারা দুনিয়ার মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও সর্বশ্রেষ্ঠ। ইসলামই মানুষকে মানবতা, সভ্যতা ও সংস্কৃতি শিখিয়েছে। ইসলামের মহান আদর্শ ও মুসলিম সভ্যতা সংস্কৃতিকে অনুকরণ করে বিজাতিরা সারা দুনিয়ার নেতৃত্ব দিচ্ছে। আর আমরা মুসলিমরা তাদের অন্ধ অনুকরণ করে বেড়াচ্ছি এবং সারা দুনিয়ার মধ্যে সব ধরনের অপমান সহ্য করে যাচ্ছি। আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদের সতর্ক করে বলেন,
﴿وَلَا تَرۡكَنُوٓاْ إِلَى ٱلَّذِينَ ظَلَمُواْ فَتَمَسَّكُمُ ٱلنَّارُ وَمَا لَكُم مِّن دُونِ ٱللَّهِ مِنۡ أَوۡلِيَآءَ ثُمَّ لَا تُنصَرُونَ ١١٣ ﴾ [ هود : ١١٣ ]
“তোমরা সীমালঙ্ঘনকারীদের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়ো না, অন্যথায় অগ্নি তোমাদেরকে স্পর্শ করবে। আর এই অবস্থায় আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোনো বন্ধু থাকবে না এবং তোমরা সাহায্যও পাবে না”। [সূরা হূদ, আয়াত; ১১৩]
তাছাড়া সমাজ-বিজ্ঞানী প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«من تشبه بقوم فهو منهم»
“যে ব্যক্তি কোনো জাতির সাথে সামঞ্জস্য বিধান করবে, সে ব্যক্তি সেই জাতিরই দলভুক্ত হবে”। [আহমাদ ২/৫০, আবূ দাঊদ ৪০৩১, সহীহুল জামে’ ৬০২৫ নং]
ভালো-মন্দ বাচ-বিচার না করে অন্ধভাবে অপরের ভঙ্গিমা নকল করে চলা, সব কাজে অপরের হুবহু অনুকরণ করা মানুষের জন্য নিন্দনীয়। কারণ, এমন স্বভাব কেবল বানরেরই হয়ে থাক। যে জাতি কোনো প্রকার বিচার-বিশ্লেষণ না করে চোখ বুজে অপরের অনুকরণ করে তৃপ্তি পায়, সে বানরের স্বভাবের অধকিারী বললে ভুল হবে না। কিন্তু মানুষ, বিশেষ করে কোনো মুসলিম পারে না বিজাতির কোনো অসভ্য ভঙ্গিমা নকল করে চলতে। কারণ, মুসলিমের আছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ও ঐতিহ্য। আর তা বিনাশ করে অপরের বৈশিষ্ট্য গ্রহণ করার মানেই হল, নিজেকে ধ্বংস ও বিলীন করা।
বিজাতিদের সভ্যতা সংস্কৃতিতে মানবতার জন্য অনিবার্য ধ্বংস ও নিশ্চিত অশান্তি। তার প্রমাণ আমরা পশ্চিমা দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখতে পাই- আজ তাদের দেশে মানবতা কত অসহায়, নারীরা কতনা নির্যাতিত, নিষ্পেষিত। তাদের দেশের মানুষ তাদের বাবা-মায়ের পরিচয় কি তা জানে না। বৃদ্ধ মাতা পিতাদের খোজ খবর নেওয়ার মত কেউ নেই। আবার মা বাবার নিকট তাদের সন্তানেরও কোনো হিসেব নেই। ভাই বোনের কোনো পরিচয় নাই। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কোনো বন্ধন নেই। মানসিক অশান্তি তাদের নিত্য দিনের সাথী। তাদের জীবন যে কত দূর্বিসহ তা দেখলেই বুঝা যাবে। আত্মহত্যা পারিবারিক কলহ তাদের নিত্য দিনের সঙ্গী। এ কারণেই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ উম্মতকে বিজাতিদের অনুকরণ করা থেকে সতর্ক করেন। তিনি বলেন,
«لتتعن سنن من كان قبلكم حذو القذة بالقذة وشبرا بشبر وذراعا بذراع حتى لو دخلوا جحر ضب لدخلتموه . قالوا اليهود والنصارى؟ قال : فمن !
“অবশ্যই তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তী জাতির পথ অনুসরণ করবে বিঘত-বিঘত এবং হাত-হাত (সম) পরিমাণ। এমনকি তারা যদি ষাণ্ডার গর্তে প্রবেশ করে, তাহলে তোমরাও তাদের পিছনে পিছনে যাবে।” সাহাবিগণ বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি কি ইয়াহুদ ও নাসারার অনুকরণ করার কথা বলছেন?’ তিনি বললেন, “তবে আবার কার?” [বুখারী, মুসলিম ২৬৬৯, হাকেম, আহমাদ, সহীহুল জামে’ ৫০৬৭ নং]
সাহাবী হুযাইফা ইবন ইয়ামান বলেন, ‘তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তী জাতির পথ অবলম্বন করবে জুতার মাপের মত (সম্পূর্ণভাবে)। তোমরা তাদের পথে চলতে ভুল করবে না এবং তারাও তোমাদেরকে সঙ্গে নিয়ে চলতে ভুল করবে না। এমন কি তাদের কেউ যদি শুকনো অথবা নরম পায়খানা খায়, তাহলে তোমরাও (তাদের অনুকরণে) তা খেতে লাগবে [ইবনে ওয়াদ্দাহ, আল-বিদাউ অন্নাহইয়ু ‘আনহা, নং ১৯৩; পৃ. ২/১৩৭।]!’
তিনি মুসলিম জাতিকে সতর্ক করে বলেন, “সে ব্যক্তি আমার দলভুক্ত নয়, যে ব্যক্তি আমাদেরকে ছেড়ে অন্য কারো সাদৃশ্য অবলম্বন করে। তোমরা ইয়াহুদীদের সাদৃশ্য অবলম্বন করো না, আর খ্রিষ্টানদেরও সাদৃশ্য অবলম্বন করো না।” [তিরমিযী, সহীহুল জামে, হাদিস; ২৬৯৫।]
তাছাড়া রাসূল বলেন, ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানরা রোযা রাখে, কিন্তু সেহেরী খায় না। তাই ইসলাম তাদের অন্ধ অনুকরণ করে সেহেরী খাওয়া ত্যাগ করতে নিষেধ করল। [মুসলিম, হাদিস: ১০৯৬।]
রোযা রাখার পর ওরা ইফতার করে, কিন্তু বড্ড দেরী করে। ইসলাম তাদের অনুকরণ বর্জন করতে নির্দেশ দিয়ে সূর্য ডোবার সাথে সাথে সত্বর ইফতার করতে মুসলিম জাতিকে উদ্বুদ্ধ করল। [আবূ দাঊদ, হাদিস: ২৩৫৩, ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৬৯৮, হাকেম, হাদিস: ১/৪৩১]
সূর্য পূজকরা সূর্যের উদয় ও অস্তের সময় তার পূজা করে থাকে। তাই ঐ সময়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যেও নামায পড়াকে ইসলাম নিষিদ্ধ ঘোষণা করল [মুসলিম, হাদিস: ৮৩২]।
যাতে মুশরিকদের সাথে তওহীদ বাদী মুসলিমদের কোনো প্রকার সাদৃশ্য ভাব না ফুটে ওঠে।
বৈরাগ্যবাদ বিজাতীয় আচার। ইসলামে তা নিষিদ্ধ হল। [আবূ দাঊদ, হাদিস: ৪৯০৪]
পাশ্চাত্য-সভ্যতার ছোঁয়া লাগা মানুষ হীনমন্যতার শিকার হয়ে পশ্চিমা-বিশ্বের অনুকরণ করে। কাফেরদের বিভিন্নমুখী বিভব ও প্রভাব-প্রতিপত্তি এবং পার্থিব উন্নয়ন দেখে মুসলিম নিজেদেরকে হেয় ও তুচ্ছজ্ঞান করে বসেছে। ভেবেছে, দুনিয়ায় ওরা যখন এত উন্নত, তখন ওদের সভ্যতাই হলো প্রকৃত সভ্যতা। সংকীর্ণ দৃষ্টিকোণে এটাই ধরে নিয়েছে যে, ওরা যেটা করে, সেটাই উত্তম ও অনুকরণীয়। ওদের মত করতে পারলে তারাও ঐরূপ উন্নতির পরশমণি হাতে পেয়ে যাবে। মনে করেছে যে, ওদের ঐ ছন্নছাড়া, লাগামছাড়া, বাঁধনহারা যৌন-স্বাধীনতাপূর্ণ জীবনই হলো ওদের উন্নতির মূল কারণ এবং প্রগতির মূল রহস্য।
﴿وَلَا تَرۡكَنُوٓاْ إِلَى ٱلَّذِينَ ظَلَمُواْ فَتَمَسَّكُمُ ٱلنَّارُ وَمَا لَكُم مِّن دُونِ ٱللَّهِ مِنۡ أَوۡلِيَآءَ ثُمَّ لَا تُنصَرُونَ ١١٣ ﴾ [ هود : ١١٣ ]
“তোমরা সীমালঙ্ঘনকারীদের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়ো না, অন্যথায় অগ্নি তোমাদেরকে স্পর্শ করবে। আর এই অবস্থায় আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোনো বন্ধু থাকবে না এবং তোমরা সাহায্যও পাবে না”। [সূরা হূদ, আয়াত; ১১৩]
তাছাড়া সমাজ-বিজ্ঞানী প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«من تشبه بقوم فهو منهم»
“যে ব্যক্তি কোনো জাতির সাথে সামঞ্জস্য বিধান করবে, সে ব্যক্তি সেই জাতিরই দলভুক্ত হবে”। [আহমাদ ২/৫০, আবূ দাঊদ ৪০৩১, সহীহুল জামে’ ৬০২৫ নং]
ভালো-মন্দ বাচ-বিচার না করে অন্ধভাবে অপরের ভঙ্গিমা নকল করে চলা, সব কাজে অপরের হুবহু অনুকরণ করা মানুষের জন্য নিন্দনীয়। কারণ, এমন স্বভাব কেবল বানরেরই হয়ে থাক। যে জাতি কোনো প্রকার বিচার-বিশ্লেষণ না করে চোখ বুজে অপরের অনুকরণ করে তৃপ্তি পায়, সে বানরের স্বভাবের অধকিারী বললে ভুল হবে না। কিন্তু মানুষ, বিশেষ করে কোনো মুসলিম পারে না বিজাতির কোনো অসভ্য ভঙ্গিমা নকল করে চলতে। কারণ, মুসলিমের আছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ও ঐতিহ্য। আর তা বিনাশ করে অপরের বৈশিষ্ট্য গ্রহণ করার মানেই হল, নিজেকে ধ্বংস ও বিলীন করা।
বিজাতিদের সভ্যতা সংস্কৃতিতে মানবতার জন্য অনিবার্য ধ্বংস ও নিশ্চিত অশান্তি। তার প্রমাণ আমরা পশ্চিমা দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখতে পাই- আজ তাদের দেশে মানবতা কত অসহায়, নারীরা কতনা নির্যাতিত, নিষ্পেষিত। তাদের দেশের মানুষ তাদের বাবা-মায়ের পরিচয় কি তা জানে না। বৃদ্ধ মাতা পিতাদের খোজ খবর নেওয়ার মত কেউ নেই। আবার মা বাবার নিকট তাদের সন্তানেরও কোনো হিসেব নেই। ভাই বোনের কোনো পরিচয় নাই। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কোনো বন্ধন নেই। মানসিক অশান্তি তাদের নিত্য দিনের সাথী। তাদের জীবন যে কত দূর্বিসহ তা দেখলেই বুঝা যাবে। আত্মহত্যা পারিবারিক কলহ তাদের নিত্য দিনের সঙ্গী। এ কারণেই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ উম্মতকে বিজাতিদের অনুকরণ করা থেকে সতর্ক করেন। তিনি বলেন,
«لتتعن سنن من كان قبلكم حذو القذة بالقذة وشبرا بشبر وذراعا بذراع حتى لو دخلوا جحر ضب لدخلتموه . قالوا اليهود والنصارى؟ قال : فمن !
“অবশ্যই তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তী জাতির পথ অনুসরণ করবে বিঘত-বিঘত এবং হাত-হাত (সম) পরিমাণ। এমনকি তারা যদি ষাণ্ডার গর্তে প্রবেশ করে, তাহলে তোমরাও তাদের পিছনে পিছনে যাবে।” সাহাবিগণ বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি কি ইয়াহুদ ও নাসারার অনুকরণ করার কথা বলছেন?’ তিনি বললেন, “তবে আবার কার?” [বুখারী, মুসলিম ২৬৬৯, হাকেম, আহমাদ, সহীহুল জামে’ ৫০৬৭ নং]
সাহাবী হুযাইফা ইবন ইয়ামান বলেন, ‘তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তী জাতির পথ অবলম্বন করবে জুতার মাপের মত (সম্পূর্ণভাবে)। তোমরা তাদের পথে চলতে ভুল করবে না এবং তারাও তোমাদেরকে সঙ্গে নিয়ে চলতে ভুল করবে না। এমন কি তাদের কেউ যদি শুকনো অথবা নরম পায়খানা খায়, তাহলে তোমরাও (তাদের অনুকরণে) তা খেতে লাগবে [ইবনে ওয়াদ্দাহ, আল-বিদাউ অন্নাহইয়ু ‘আনহা, নং ১৯৩; পৃ. ২/১৩৭।]!’
তিনি মুসলিম জাতিকে সতর্ক করে বলেন, “সে ব্যক্তি আমার দলভুক্ত নয়, যে ব্যক্তি আমাদেরকে ছেড়ে অন্য কারো সাদৃশ্য অবলম্বন করে। তোমরা ইয়াহুদীদের সাদৃশ্য অবলম্বন করো না, আর খ্রিষ্টানদেরও সাদৃশ্য অবলম্বন করো না।” [তিরমিযী, সহীহুল জামে, হাদিস; ২৬৯৫।]
তাছাড়া রাসূল বলেন, ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানরা রোযা রাখে, কিন্তু সেহেরী খায় না। তাই ইসলাম তাদের অন্ধ অনুকরণ করে সেহেরী খাওয়া ত্যাগ করতে নিষেধ করল। [মুসলিম, হাদিস: ১০৯৬।]
রোযা রাখার পর ওরা ইফতার করে, কিন্তু বড্ড দেরী করে। ইসলাম তাদের অনুকরণ বর্জন করতে নির্দেশ দিয়ে সূর্য ডোবার সাথে সাথে সত্বর ইফতার করতে মুসলিম জাতিকে উদ্বুদ্ধ করল। [আবূ দাঊদ, হাদিস: ২৩৫৩, ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৬৯৮, হাকেম, হাদিস: ১/৪৩১]
সূর্য পূজকরা সূর্যের উদয় ও অস্তের সময় তার পূজা করে থাকে। তাই ঐ সময়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যেও নামায পড়াকে ইসলাম নিষিদ্ধ ঘোষণা করল [মুসলিম, হাদিস: ৮৩২]।
যাতে মুশরিকদের সাথে তওহীদ বাদী মুসলিমদের কোনো প্রকার সাদৃশ্য ভাব না ফুটে ওঠে।
বৈরাগ্যবাদ বিজাতীয় আচার। ইসলামে তা নিষিদ্ধ হল। [আবূ দাঊদ, হাদিস: ৪৯০৪]
পাশ্চাত্য-সভ্যতার ছোঁয়া লাগা মানুষ হীনমন্যতার শিকার হয়ে পশ্চিমা-বিশ্বের অনুকরণ করে। কাফেরদের বিভিন্নমুখী বিভব ও প্রভাব-প্রতিপত্তি এবং পার্থিব উন্নয়ন দেখে মুসলিম নিজেদেরকে হেয় ও তুচ্ছজ্ঞান করে বসেছে। ভেবেছে, দুনিয়ায় ওরা যখন এত উন্নত, তখন ওদের সভ্যতাই হলো প্রকৃত সভ্যতা। সংকীর্ণ দৃষ্টিকোণে এটাই ধরে নিয়েছে যে, ওরা যেটা করে, সেটাই উত্তম ও অনুকরণীয়। ওদের মত করতে পারলে তারাও ঐরূপ উন্নতির পরশমণি হাতে পেয়ে যাবে। মনে করেছে যে, ওদের ঐ ছন্নছাড়া, লাগামছাড়া, বাঁধনহারা যৌন-স্বাধীনতাপূর্ণ জীবনই হলো ওদের উন্নতির মূল কারণ এবং প্রগতির মূল রহস্য।
আকাশ সংস্কৃতির অগ্রাসন যুব সমাজ ধ্বংসের অন্যতম কারণ। আকাশ সংস্কৃতির কারণে, আজ মানুষ ঘরে বসেই সারা দুনিয়ার সব কিছুই অবলোকন করছে। ঘরে বসে নগ্ন, অর্ধ-নগ্ন, বেহায়াপনা, অশ্লীল গান-বাজনা, নাটক সিনেমা দেখে তারা তাদের নিজেদের মূল্যবান সময় নষ্ট করছে। যে সময়কে কাজে লাগিয়ে তারা তাদের ভবিষ্যৎ গঠন করতে পারত, তা না করে তারা তাদের নিজেদের ধ্বংস নিশ্চিত করছে। আকাশ সংস্কৃতির বিষাক্ত ছোবল আমাদের তরুণ সমাজকে প্রতিদিন নৈতিক অক্ষয়ের দিক নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশের তথাকথিত সংস্কৃতি মনা নাট্যকার, চলচ্চিত্রকার, সাহিত্যিকদের কারণে আমাদের তরুণ সমাজ দিনের পর দিন নৈতিক অবক্ষয় ও ধ্বংসের অবলীলায় নিপতিত হচ্ছে। তাদের চরিত্র ধ্বংস করার পেছনে মূলত এসব নাট্যকার, চলচ্চিত্রকার, সাহিত্যিকদের ভূমিকা বা অবদান অনেক বেশী। তারা তরুণ প্রজন্মকে চুরি, ডাকাতি, মাতা-পিতার অবাধ্যতা, ছেলে-মেয়ের অবাধ মেলা-মেশা ইত্যাদি শেখাচ্ছে। ভালো কিছু তারা জাতিকে দিতে পারেনি।
আকাশ সংস্কৃতির কারণে আজকাল আমরা দেশীয় সংস্কৃতি ভুলে বিজাতীয় সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়ছি, যার প্রভাব পড়ছে আজকাল তরুণদের মনে।
বিজাতীয় সংস্কৃতিতে মদ্যপানের ঘটনা অহরহ থাকে বিধায় আমাদের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব এইসব বাজে জিনিসের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে। মসজিদে গিয়ে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করার থেকে DJ Party তে গিয়ে উদ্দাম নৃত্য, মাতলামি এবং বেহায়াপনায় তারা বেশী মনোযোগী হয়ে পড়ছে। নাট্যকার অথবা চলচ্চিত্রকাররাও সমাজের অসঙ্গতিপূর্ণ বিষয়গুলো পর্দার মাধ্যমে তুলে ধরে মানুষের মাঝে জনসচেতনতা তৈরির করার চেয়ে কিভাবে তা মানুষের মাঝে অভ্যাসে পরিণত করা যায় সেই চেষ্টায় বেশী করে থাকে। ফলে নাটক সিনেমাগুলোর প্রধান বিষয়ই থাকে নারী পুরুষের অবাধ মেলা-মেশা, অবাস্তব প্রেম ভালোবাসা, অশালীন গালিগালাজ, অবৈধ যৌনাচার। মনে হয় যেন এই ছাড়া পৃথিবীতে আর কোনো ভালো বিষয় নেই। প্রেমের কারণে বাবা মাকে কিভাবে অপমান করতে সন্তান দ্বিধা-বোধ করেনা, তাই দেখানো হয়। ফলে তরুণ প্রজন্ম দিনদিন বেয়াদব হয়ে যাচ্ছে আর সিনেমার দৃশ্য অনুসরণ করতে গিয়ে ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। বাবা মাকে খুশী করার চেয়ে আজকাল তরুণ তরুণীরা তাদের প্রিয়তম/প্রিয়তমার মন জোগাতে বেশী ব্যস্ত। ভালবাসার মানুষটির মন জোগানোর জন্য বাবার পকেট চুরি করা হচ্ছে নয়তো মায়ের টাকার পার্সে হানা দেওয়া হচ্ছে।
আকাশ সংস্কৃতির কারণে আজকাল আমরা দেশীয় সংস্কৃতি ভুলে বিজাতীয় সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়ছি, যার প্রভাব পড়ছে আজকাল তরুণদের মনে।
বিজাতীয় সংস্কৃতিতে মদ্যপানের ঘটনা অহরহ থাকে বিধায় আমাদের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব এইসব বাজে জিনিসের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে। মসজিদে গিয়ে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করার থেকে DJ Party তে গিয়ে উদ্দাম নৃত্য, মাতলামি এবং বেহায়াপনায় তারা বেশী মনোযোগী হয়ে পড়ছে। নাট্যকার অথবা চলচ্চিত্রকাররাও সমাজের অসঙ্গতিপূর্ণ বিষয়গুলো পর্দার মাধ্যমে তুলে ধরে মানুষের মাঝে জনসচেতনতা তৈরির করার চেয়ে কিভাবে তা মানুষের মাঝে অভ্যাসে পরিণত করা যায় সেই চেষ্টায় বেশী করে থাকে। ফলে নাটক সিনেমাগুলোর প্রধান বিষয়ই থাকে নারী পুরুষের অবাধ মেলা-মেশা, অবাস্তব প্রেম ভালোবাসা, অশালীন গালিগালাজ, অবৈধ যৌনাচার। মনে হয় যেন এই ছাড়া পৃথিবীতে আর কোনো ভালো বিষয় নেই। প্রেমের কারণে বাবা মাকে কিভাবে অপমান করতে সন্তান দ্বিধা-বোধ করেনা, তাই দেখানো হয়। ফলে তরুণ প্রজন্ম দিনদিন বেয়াদব হয়ে যাচ্ছে আর সিনেমার দৃশ্য অনুসরণ করতে গিয়ে ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। বাবা মাকে খুশী করার চেয়ে আজকাল তরুণ তরুণীরা তাদের প্রিয়তম/প্রিয়তমার মন জোগাতে বেশী ব্যস্ত। ভালবাসার মানুষটির মন জোগানোর জন্য বাবার পকেট চুরি করা হচ্ছে নয়তো মায়ের টাকার পার্সে হানা দেওয়া হচ্ছে।
নগ্ন ও অশ্লীল গান-বাজনা যুব সমাজের চরিত্রকে কলুষিত করে তুলছে। যুব সমাজের চারিত্রকে হনন করার জন্যেই বর্তমানে গান-বাজনা, অশ্লীল, উলঙ্গ, অর্ধাউলঙ্গ ছবি ও নগ্ন নাটক-সিনেমার মহামারিকে সুপরিকল্পিতভাবে জাতির উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। হলিউড, বলিউড কিংবা ডালিউড ইত্যাদির প্রতি ঝাঁপিয়ে পড়ার কারণে যুব সমাজ এক মহা বিপদের মুখোমুখি। তারা এ সব গান বাজনা শোনে এবং অশ্লীল দৃশ্য দেখে দেখে বাস্তব জীবনে নিজেদের তাদের মত করে সাজাতে ব্যস্ত। কিন্তু এর পরিণতি যে কত ভয়াবহ তা তারা কোনোভাবেই অনুধাবন করতে পারছে না। যৌবনের সময়টা হল, একজন মানুষের ভবিষ্যৎ রচনা, ক্যারিয়ার গঠন ও যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলার মুখ্য সময়। আর গান-বাজনা হল, মানুষকে তার ভবিয্যত লক্ষ্যে পৌছতে প্রতিবন্ধক এবং তাকে ফিরিয়ে রাখার মুখ্য উপকরণ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يَشۡتَرِي لَهۡوَ ٱلۡحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ بِغَيۡرِ عِلۡمٖ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًاۚ أُوْلَٰٓئِكَ لَهُمۡ عَذَابٞ مُّهِينٞ ٦﴾ [ لقمان : ٦ ]
“আর মানুষের মধ্য থেকে কেউ কেউ না জেনে আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য বেহুদা কথা খরিদ করে, আর তারা ঐগুলোকে হাসি-ঠাট্টা হিসেবে গ্রহণ করে, তারা ঐ সব লোক যাদের জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি”। [সূরা লুকমান, আয়াত: ৬]
বেশীর ভাগ তাফসীরকারক ‘ লাহওয়াল হাদিস’ বলতে গানকে বুঝিয়েছেন। ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: এটা হচ্ছে গান। ইমাম হাসান বসরী র. বলেন: এটা গান ও বাদ্যের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে।
ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: “গান অন্তরে মুনাফেকী সৃষ্টি করে, যেমনভাবে পানি ঘাস সৃষ্টি করে। যিকর অন্তরে ঈমান সৃষ্টি করে, যেমন পানি ফসল উৎপন্ন করে”।
আব্দুল্লাহ ইবন মসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তিন তিনবার কসম খেয়ে বলেছেন, ‘উক্ত আয়াতে ‘অসার বাক্য’ বলতে ‘গান’কে বুঝানো হয়েছে। অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এবং জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও ইকরামা হতে।
গান হলো অসার, অবান্তর, অশ্লীল ও যৌন-উত্তেজনামূলক অথবা শির্কী ও বিদআতি কথামালাকে কবিতা-ছন্দে সুললিত ও সুরেলি কণ্ঠে গাওয়া শব্দ-ধ্বনির নাম। যা ইসলামে হারাম। হারাম তা গাওয়া এবং হারাম তা শোনাও। গানে হƒদয় উদাস হয়, রোগাক্রান্ত ও কঠোর হয়। গান হলো ‘ব্যভিচারের মন্ত্র’, অবৈধ ভালোবাসার আজব আকর্ষণ সৃষ্টিকারী যন্ত্র। তাই তো “মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নগ্নতা ও পর্দা-হীনতা এবং গানকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন”। [আহমাদ, সহীহুল জামে, হাদিস: ৬৯১৪]
মিউজিক বা বাজনা শোনাও মুসলিমের জন্য বৈধ নয়। কারণ, বাজনা-ঝংকারও মানুষের মন মাতিয়ে তোলে, বিভোরে উদাস করে ফেলে এবং উন্মত্ততায় আন্দোলিত করে। ফলে তা সামাজিক অবক্ষয়, নীতি নৈতিকতার চন্দপতন ঘটায়। সবচেয়ে শুদ্ধ হাদিসের কিতাব বুখারী শরীফে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “অবশ্যই আমার উম্মতের মধ্যে এমন এক সম্প্রদায় হবে; যারা ব্যভিচার, (পুরুষের জন্য) রেশমবস্ত্র, মদ এবং বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার (হারাম হওয়া সত্ত্বেও) হালাল মনে করবে”। [বুখারী, হাদিস: ৫৫৯০, আবূ দাঊদ, তিরমিযী, দারেমী, সহীহুল জামে হাদিস; ৫৪৬৬]
তিনি আরও বলেন, “অবশ্যই আমার উম্মতের কিছু লোক মদের নাম পরিবর্তন করে তা পান করবে, তাদের মাথার উপরে বাদ্যযন্ত্র বাজানো হবে এবং নর্তকী নাচবে। আল্লাহ তাদেরকে মাটিতে ধসিয়ে দেবেন এবং বানর ও শূকরে পরিণত করবেন [ইবনে মাজাহ, ইবনে হিব্বান, ত্বাবারানী, বাইহাকীর শুআবুল ঈমান, সহীহুল জামে হাদিস: ৫৪৫৪]!”
তিনি আরও বলেন, “অবশ্যই আমার উম্মতের মাঝে (কিছু লোককে) মাটি ধসিয়ে, পাথর বর্ষণ করে এবং আকার বিকৃত করে (ধ্বংস করা) হবে। আর এ শাস্তি তখন আসবে, যখন তারা মদ পান করবে, নর্তকী রাখবে এবং বাদ্যযন্ত্র বাজাবে [সহীহুল জামে’ ৩৬৬৫, ৫৪৬৭ নং]।”
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, “অবশ্যই আল্লাহ আমার উম্মতের জন্য মদ, জুয়া, ঢোল তবলা এবং বীণা-জাতীয় বাদ্যযন্ত্রকে হারাম করেছেন [আহমাদ, সিলসিলাহ সহীহাহ, হাদিস: ১৭০৮]।”
অন্য এক হাদিসে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “ফিরিশতা সেই কাফেলার সঙ্গী হন না; যে কাফেলায় ঘণ্টার শব্দ থাকে [আহমাদ, সহীহুল জামে, হাদিস: ৭৩৪২]।” আর এক বর্ণনায় তিনি বলেন, “ঘণ্টা বা ঘুঙুর হলো শয়তানের বাঁশি [মুসলিম, হাদিস: ২১১৪, আবূ দাঊদ, হাদিস: ২৫৫৬]।”
﴿وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يَشۡتَرِي لَهۡوَ ٱلۡحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ بِغَيۡرِ عِلۡمٖ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًاۚ أُوْلَٰٓئِكَ لَهُمۡ عَذَابٞ مُّهِينٞ ٦﴾ [ لقمان : ٦ ]
“আর মানুষের মধ্য থেকে কেউ কেউ না জেনে আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য বেহুদা কথা খরিদ করে, আর তারা ঐগুলোকে হাসি-ঠাট্টা হিসেবে গ্রহণ করে, তারা ঐ সব লোক যাদের জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি”। [সূরা লুকমান, আয়াত: ৬]
বেশীর ভাগ তাফসীরকারক ‘ লাহওয়াল হাদিস’ বলতে গানকে বুঝিয়েছেন। ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: এটা হচ্ছে গান। ইমাম হাসান বসরী র. বলেন: এটা গান ও বাদ্যের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে।
ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: “গান অন্তরে মুনাফেকী সৃষ্টি করে, যেমনভাবে পানি ঘাস সৃষ্টি করে। যিকর অন্তরে ঈমান সৃষ্টি করে, যেমন পানি ফসল উৎপন্ন করে”।
আব্দুল্লাহ ইবন মসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তিন তিনবার কসম খেয়ে বলেছেন, ‘উক্ত আয়াতে ‘অসার বাক্য’ বলতে ‘গান’কে বুঝানো হয়েছে। অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এবং জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও ইকরামা হতে।
গান হলো অসার, অবান্তর, অশ্লীল ও যৌন-উত্তেজনামূলক অথবা শির্কী ও বিদআতি কথামালাকে কবিতা-ছন্দে সুললিত ও সুরেলি কণ্ঠে গাওয়া শব্দ-ধ্বনির নাম। যা ইসলামে হারাম। হারাম তা গাওয়া এবং হারাম তা শোনাও। গানে হƒদয় উদাস হয়, রোগাক্রান্ত ও কঠোর হয়। গান হলো ‘ব্যভিচারের মন্ত্র’, অবৈধ ভালোবাসার আজব আকর্ষণ সৃষ্টিকারী যন্ত্র। তাই তো “মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নগ্নতা ও পর্দা-হীনতা এবং গানকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন”। [আহমাদ, সহীহুল জামে, হাদিস: ৬৯১৪]
মিউজিক বা বাজনা শোনাও মুসলিমের জন্য বৈধ নয়। কারণ, বাজনা-ঝংকারও মানুষের মন মাতিয়ে তোলে, বিভোরে উদাস করে ফেলে এবং উন্মত্ততায় আন্দোলিত করে। ফলে তা সামাজিক অবক্ষয়, নীতি নৈতিকতার চন্দপতন ঘটায়। সবচেয়ে শুদ্ধ হাদিসের কিতাব বুখারী শরীফে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “অবশ্যই আমার উম্মতের মধ্যে এমন এক সম্প্রদায় হবে; যারা ব্যভিচার, (পুরুষের জন্য) রেশমবস্ত্র, মদ এবং বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার (হারাম হওয়া সত্ত্বেও) হালাল মনে করবে”। [বুখারী, হাদিস: ৫৫৯০, আবূ দাঊদ, তিরমিযী, দারেমী, সহীহুল জামে হাদিস; ৫৪৬৬]
তিনি আরও বলেন, “অবশ্যই আমার উম্মতের কিছু লোক মদের নাম পরিবর্তন করে তা পান করবে, তাদের মাথার উপরে বাদ্যযন্ত্র বাজানো হবে এবং নর্তকী নাচবে। আল্লাহ তাদেরকে মাটিতে ধসিয়ে দেবেন এবং বানর ও শূকরে পরিণত করবেন [ইবনে মাজাহ, ইবনে হিব্বান, ত্বাবারানী, বাইহাকীর শুআবুল ঈমান, সহীহুল জামে হাদিস: ৫৪৫৪]!”
তিনি আরও বলেন, “অবশ্যই আমার উম্মতের মাঝে (কিছু লোককে) মাটি ধসিয়ে, পাথর বর্ষণ করে এবং আকার বিকৃত করে (ধ্বংস করা) হবে। আর এ শাস্তি তখন আসবে, যখন তারা মদ পান করবে, নর্তকী রাখবে এবং বাদ্যযন্ত্র বাজাবে [সহীহুল জামে’ ৩৬৬৫, ৫৪৬৭ নং]।”
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, “অবশ্যই আল্লাহ আমার উম্মতের জন্য মদ, জুয়া, ঢোল তবলা এবং বীণা-জাতীয় বাদ্যযন্ত্রকে হারাম করেছেন [আহমাদ, সিলসিলাহ সহীহাহ, হাদিস: ১৭০৮]।”
অন্য এক হাদিসে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “ফিরিশতা সেই কাফেলার সঙ্গী হন না; যে কাফেলায় ঘণ্টার শব্দ থাকে [আহমাদ, সহীহুল জামে, হাদিস: ৭৩৪২]।” আর এক বর্ণনায় তিনি বলেন, “ঘণ্টা বা ঘুঙুর হলো শয়তানের বাঁশি [মুসলিম, হাদিস: ২১১৪, আবূ দাঊদ, হাদিস: ২৫৫৬]।”
জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্য থাকতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ। পার্থিব উদ্দেশ্য জ্ঞান অর্জন করা দ্বারা অর্জিত জ্ঞান মানবতার কল্যাণ নিশ্চিত করতে পারে না। আর যে জ্ঞান মানুষের মাঝে ও তার প্রভুর মাঝে সুসম্পর্ক তৈরি করে সে জ্ঞানই হল মানবতার কল্যাণ, সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা এবং ইহকাল ও পরকাল উভয় জগতের শান্তির গ্যারান্টি। কিন্তু তিক্ত হলেও সত্য বর্তমানে যুব সমাজ যে জ্ঞান অর্জন বা শিক্ষা গ্রহণ করছে, তাও পার্থিব উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই করছে। মানবতার কল্যাণ সাধন করার মত কোনো শিক্ষা তাদের পাঠ্য তালিকাতেই নেই। পশ্চিমা তথা বিজাতিদের অনুকরণে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকেও সেভাবেই সাজানো হয়েছে। ফলে মানুষের সাথে তাদের রবের সাথে সম্পর্ক না হয়ে আল্লাহর সাথে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে, যা মানবতার জন্য বড় ধরনের শূন্যতা এবং সামাজিক অবক্ষয়ের অন্যতম কারণ।
আবার অনেক সময় দেখা যাচ্ছে যে শরয়ী জ্ঞান বা দ্বীনী জ্ঞান দ্বারা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করাই লক্ষ্য হওয়ার কথা, সে জ্ঞানকেও পার্থিব উদ্দেশ্যে অর্জন করা হচ্ছে অথবা দুনিয়াতে সু-খ্যাতি লাভ করার উদ্দেশ্যে অর্জন করা হচ্ছে। ফলে লোকটি দুনিয়াও আখিরাত উভয় জাহানে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
«من تعلم علما مما يبتغى به وجه الله عز وجل لا يتعلمه إلا ليصيب به عرضا من الدنيا لم يجد عرف الجنة يوم القيامة»
যে ব্যক্তি এমন ইলম যা দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা হয় তা পার্থিব কোনো সুবিধা লাভের উদ্দেশ্যে শিখে, সে কিয়ামতের দিন জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না [আহমদ, হাদিস: ৮৪৫৭ আবুদাউদ, হাদিস:৩৬৬৪, ইবনু মাযা, হাদিস: ২৫২]।
আবার অনেক সময় দেখা যাচ্ছে যে শরয়ী জ্ঞান বা দ্বীনী জ্ঞান দ্বারা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করাই লক্ষ্য হওয়ার কথা, সে জ্ঞানকেও পার্থিব উদ্দেশ্যে অর্জন করা হচ্ছে অথবা দুনিয়াতে সু-খ্যাতি লাভ করার উদ্দেশ্যে অর্জন করা হচ্ছে। ফলে লোকটি দুনিয়াও আখিরাত উভয় জাহানে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
«من تعلم علما مما يبتغى به وجه الله عز وجل لا يتعلمه إلا ليصيب به عرضا من الدنيا لم يجد عرف الجنة يوم القيامة»
যে ব্যক্তি এমন ইলম যা দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা হয় তা পার্থিব কোনো সুবিধা লাভের উদ্দেশ্যে শিখে, সে কিয়ামতের দিন জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না [আহমদ, হাদিস: ৮৪৫৭ আবুদাউদ, হাদিস:৩৬৬৪, ইবনু মাযা, হাদিস: ২৫২]।
মুসলিম যুবকরা এমন সব পোশাক পরিচ্ছদ অবলম্বন করছে, তাদের দেখলে মনে হয় না তারা কোনো মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করছে। তাদের পরিধেয় পোশাকগুলো কোনো প্রকার রুচিশীলতার পরিচয় বহন করে না। তাদের মন-মগজ ও মস্তিষ্ক যে কত নিচে নামছে তা তাদের পোশাক দেখলেই বুঝা যায়। নাটক সিনেমার নায়ক, নায়িকারা কি ধরনের পোশাক পরল সে নিজেও সে ধরনের পোশাক পরিধানে ব্যস্ত। অথচ এ ধরনের পোশাক দ্বারা সতর ডাকা হলো কি হলো না তার প্রতি বিন্দু পরিমাণও ভ্রুক্ষেপ করতে রাজি নয়। এই ছবিগুলোর নামে যে পোশাকটি বের হবে তা কোনো এক বন্ধু যদি আগে কিনে থাকে তাহলে সে অন্য বন্ধুদের প্রশংসা কুড়িয়ে নিতে সক্ষম হয়। সম্প্রতি আমরা দেখতে পাই যে, তেরে-নাম, রা-ওয়ান, জিলিক, টাপুর-টুপুর, ওয়াকা-ওয়াকা, বিন্ধু, দেবদাস এ ধরনের বিভিন্ন ছবি, অভিনেতা- অভিনেত্রীর নামে যে পোশাকগুলো বের হয়েছে তা আমাদের যুব সমাজের পছন্দ কুড়িয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। ফলে তারা তাদের অনুকরণে বিভিন্ন নামের পোশাক কিনছে এবং তাকে তারা তাদের ফ্যাশন হিসেবে গ্রহণ করছে। আমাদের যুবক যুবতীরা এমন সব পোশাক পরিধান করছে, যা দেখে মনে হয় না তারা কোনো সভ্য পরিবারে বসবাস করছে। ইসলামী শরীয়তে পোশাকের যে মানদণ্ড নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে তা যদি সমাজে বাস্তবায়িত হত এবং আমাদের যুব সমাজ তার অনুকরণ করত তাহলে সামাজিক অবক্ষয় অনেকটা কমে যেত। কিন্তু যুব সমাজ যৌন উত্তেজক ও অর্ধ উলঙ্গ পোশাক পরিধান করার ফলে আজ সমাজে আমরা প্রতি নিয়তই দুর্ঘটনার মুখোমুখি হচ্ছি। সামাজিক ক্রাইম-এসিড নিক্ষেপ, ধর্ষণ, ইভটিজিং, যৌন হয়রানী ইত্যাদি দিনের পর দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আজ যদি আমাদের যুবক ভাই ও বোনেরা ইসলামী দিক নির্দেশনা অনুযায়ী নিজেদের জীবনকে গড়ে তুলত এবং পোশাক পরিচ্ছদে ইসলামী অনুশাসন মেনে চলত, তাহলে তারা তাদের সোনালী ভবিষ্যৎ রচনা করতে পারত। কিন্তু না, তারা তাদের নিজেদের ঐতিহ্যকে বাদ দিয়ে বিজাতিদের পোশাক পরিচ্ছদ গ্রহণেই ব্যাকুল। আর আমাদের প্রাণ প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পোশাক পরিচ্ছদে বিজাতিদের অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন। আমরা যাতে আমাদের যাবতীয় কর্মে বিজাতিদের অনুকরণ না করি সে ব্যাপারে তিনি অধিক সতর্ক করেছেন।
একদা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমরকে দু’টি জাফরান রঙের কাপড় পরে থাকতে দেখে বললেন, “এ ধরনের কাপড় হলো কাফেরদের। অতএব তুমি তা পরো না [মুসলিম, আহমাদ ২/১৬২]।”
এ থেকে বুঝা যায় যে, যে ধরনের লেবাস-পোশাক বিজাতির বিশেষ প্রতীক তা কোনো মুসলিম নর-নারী ব্যবহার করতে পারে না।
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তোমরা মোচ ছেঁটে ফেল এবং দাড়ি ছেড়ে দাও। আর একাজ করে তোমরা মুশরিকদের অন্যথাচরণ কর [বুখারী, হাদিস: ৫৮৯৩, মুসলিম, হাদিস: ২৫৯]।”
“মোচ ছেঁটে ও দাড়ি রেখে অগ্নিপূজকদের বৈপরীত্য কর [মুসলিম, হাদিস: ২৬০]।”
“এবং ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানদের সাদৃশ্য অবলম্বন করো না [আহমাদ, সহীহুল জামে’, হাদিস: ১০৬৭]।”
চুল-দাড়ি পেকে সাদা হয়ে গেলে সাদাই রেখে দেওয়া বিজাতীয় আচরণ। তাই ইসলামের আদেশ হল, তা কালো ছাড়া অন্য কোনো রঙ দ্বারা রঙিয়ে ফেল এবং বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করো না [বুখারী, হাদিস: ৩৪৬২, মুসলিম, হাদিস: ২১০৩, আহমাদ, ত্বাবারানী, সহীহুল জামে’, হাদিস: ১০৬৭, ৪৮৮৭]।
মাথায় পরচুলা ব্যবহার ইয়াহুদী মেয়েদের আচরণ। অতএব তা কোনো মুসলিম নারী ব্যবহার করতে পারে না। [মুসলিম, হাদিস: ২৭৪২]
একদা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমরকে দু’টি জাফরান রঙের কাপড় পরে থাকতে দেখে বললেন, “এ ধরনের কাপড় হলো কাফেরদের। অতএব তুমি তা পরো না [মুসলিম, আহমাদ ২/১৬২]।”
এ থেকে বুঝা যায় যে, যে ধরনের লেবাস-পোশাক বিজাতির বিশেষ প্রতীক তা কোনো মুসলিম নর-নারী ব্যবহার করতে পারে না।
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তোমরা মোচ ছেঁটে ফেল এবং দাড়ি ছেড়ে দাও। আর একাজ করে তোমরা মুশরিকদের অন্যথাচরণ কর [বুখারী, হাদিস: ৫৮৯৩, মুসলিম, হাদিস: ২৫৯]।”
“মোচ ছেঁটে ও দাড়ি রেখে অগ্নিপূজকদের বৈপরীত্য কর [মুসলিম, হাদিস: ২৬০]।”
“এবং ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানদের সাদৃশ্য অবলম্বন করো না [আহমাদ, সহীহুল জামে’, হাদিস: ১০৬৭]।”
চুল-দাড়ি পেকে সাদা হয়ে গেলে সাদাই রেখে দেওয়া বিজাতীয় আচরণ। তাই ইসলামের আদেশ হল, তা কালো ছাড়া অন্য কোনো রঙ দ্বারা রঙিয়ে ফেল এবং বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করো না [বুখারী, হাদিস: ৩৪৬২, মুসলিম, হাদিস: ২১০৩, আহমাদ, ত্বাবারানী, সহীহুল জামে’, হাদিস: ১০৬৭, ৪৮৮৭]।
মাথায় পরচুলা ব্যবহার ইয়াহুদী মেয়েদের আচরণ। অতএব তা কোনো মুসলিম নারী ব্যবহার করতে পারে না। [মুসলিম, হাদিস: ২৭৪২]
মানুষ সামাজিক জীব। সমাজ ছাড়া মানুষ বাচতে পারে না। আর একজন মানুষকে সমাজে চলতে হলে, তাকেই অবশ্যই সমাজের মানুষের সাথে উঠা-বসা ও মেলা-মেশা করতে হয়। তবে এখানে আমাকে লক্ষ্য রাখতে হবে, আমি যাদের সাথে চলা-ফেরা ও বন্ধুত্ব করব, তারা কেমন? তাদের স্বভাব-চরিত্র কেমন? কারণ, সৎ সঙ্গীর সাথে বন্ধুত্ব করা ও নেককার লোকের সাথে উঠা-বসা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ যখন ভালো লোকের সাথে চলা-ফেরা করবে, তার প্রভাব একজন মানুষের মধ্যে অবশ্যই থাকবে। একজন যুবকের জীবনে তার সৎ সঙ্গই কেবলমাত্র তাকে তার সুন্দর একটি ক্যারিয়ার গঠনে সহযোগী হতে পারে। সৎ সঙ্গ একজন মানুষকে ভালো হতে সহযোগিতা করে। পক্ষান্তরে যদি একজন যুবকের সাথী-সঙ্গীরা অসৎ, খারাপ ও দুশ্চরিত্র হয়, তখন তার ভালো হওয়ার সুযোগ থাকে না। যখন একজন মানুষ অসৎ ও মন্দ আখলাকের লোকের সাথে থাকবে তার প্রভাব ও তার দুশ্চরিত্রের প্রভাব তার মধ্যে পরিলক্ষিত হবে। এ কারণেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«المرء على دين خليله، فلينظر أحدكم من يخالل» رواه الترمذي وحسَّنه
“মানুষ তার বন্ধুর দীনের উপর, তাকে অবশ্যই চিন্তা করতে হবে, কাকে সে বন্ধু বানাবে”। [বর্ণনায় তিরমিযি, হাদিস: ২৩৭৮ এবং তিনি হাদিসটিকে হাসান বলে আখ্যায়িত করেন।] একজন বন্ধুই মানুষের ভালো হওয়া ও খারাপ হওয়ার মূল চালিকা শক্তি। এটি শুধু মুখের কথা বা দাবি নয় বরং বাস্তবতা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَيَوۡمَ يَعَضُّ ٱلظَّالِمُ عَلَىٰ يَدَيۡهِ يَقُولُ يَٰلَيۡتَنِي ٱتَّخَذۡتُ مَعَ ٱلرَّسُولِ سَبِيلٗا ٢٧ يَٰوَيۡلَتَىٰ لَيۡتَنِي لَمۡ أَتَّخِذۡ فُلَانًا خَلِيلٗا ٢٨ لَّقَدۡ أَضَلَّنِي عَنِ ٱلذِّكۡرِ بَعۡدَ إِذۡ جَآءَنِيۗ وَكَانَ ٱلشَّيۡطَٰنُ لِلۡإِنسَٰنِ خَذُولٗا ٢٩ ﴾ [ الفرقان : ٢٧، ٢٩ ]
আর সেদিন যালিম নিজের হাত দুটো কামড়িয়ে বলবে, হায়, আমি যদি রাসূলের সাথে কোনো পথ অবলম্বন করতাম,! হায় আমার দুর্ভোগ, আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম। অবশ্যই সে তো আমাকে উপদেশ-বাণী থেকে বিভ্রান্ত করেছিল, আমার কাছে তা আসার পর। আর শয়তান তো মানুষের জন্য চরম প্রতারক। [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ২৭-২৯]
আবুদ দরদা রা. আবু মুসা আশআরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إنما مثل الجليس الصالح والجليس السوء كحامل المسك ونافخ الكير، فحامل المسك إما أن يحذيك وإما أن تبتاع منه وإما أن تجد منه ريحاً طيبة، ونافخ الكير إما أن يحرق ثيابك، وإما أن تجد ريحاً خبيثة» .
“নেককার সাথী ও অসৎ সাথীর দৃষ্টান্ত: একজন আতর বহনকারী ও একজন কামারের মত। আতর বহনকারী সে হয় তোমাকে আতর দেবে, অথবা তুমি তার থেকে খরিদ করবে অথবা কম পক্ষে তুমি তার থেকে সুঘ্রাণ পাবে। আর কামার সে হয় তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে অথবা তুমি তার থেকে দুর্গন্ধ অনুভব করবে” [মুসলিম, হাদিস: ২৬২৮।]।
যারা নেক লোকদের সাথে উঠা-বসা করবে, তারা অবশ্যই ভালো কিছু অর্জন করবে। বিশেষ করে, তারা তাদের সংশ্রব থেকে ভালো কিছু শিখবে বা দো‘আ লাভ করবে। যদিও তাদের আমল ঐ সব ভালো লোকদের আমলের পর্যায়ে পৌছবে না। যেমনটি হাদিসে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«وله قد غفرت، هم القوم لا يشقى بهم جليسهم»
“আমি তাকেও ক্ষমা করে দিলাম, আর তারা এমন এক সম্প্রদায় তাদের সাথে যারা বসবে তারাও বঞ্চিত হবে না”। [বর্ণনায় মুসলিম, হাদিস: ২৬৮৯।]
অনুরূপভাবে অনুকরণীয় হিসেবে তাদের গ্রহণ করে তাদের ইলম, আমল ও আখলাক দ্বারা প্রভাবিত হওয়া দ্বারাও উপকৃত হবে। যেমনটি হাদিসে উল্লেখ করা হয়,
«المرء على دين خليله، فلينظر أحدكم من يخالل»
“মানুষ তার বন্ধুর দীনের উপর, তাকে অবশ্যই চিন্তা করতে হবে, কাকে সে বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে”। [বর্ণনায় তিরমিযি হাদিস: ২৩৭৮ এবং তিনি হাদিসটিকে হাসান বলে আখ্যায়িত করেন।] যখন কোনো ব্যক্তির বন্ধু সৎ হয়, তার ভালো হওয়ার সুযোগ বেশি থাকে। তার মধ্যে যে সব দোষত্রুটি আছে, তা যখন তার বন্ধুদের সামনে ধরা পড়ে তখন তারা তাকে সংশোধন করে এবং তার দোষত্রুটি ধরিয়ে দেয়। তখন সে নিজেই সংশোধন হতে এবং দোষত্রুটির চিকিৎসা গ্রহণে চেষ্টা করে। হাদিসে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«المؤمن مرآة المؤمن»
“একজন মুমিন অপর মুমিনের আয়নাস্বরূপ।” [বর্ণনায় আবু দাউদ, হাদিস: ৪৯১৮, আল্লাম ইরাকী ও আল্লামা ইবনে হাজার হাদিসটিকে হাসান বলে আখ্যায়িত করেন।] আয়নায় যেমন একজন মানুষ তার চেহারা দেখে অনুরূপভাবে সে তার অপর ভাইয়ের মধ্যে নিজেকে দেখতে পায়।
নেকলোকদের সাথে উঠা-বসা করা, আল্লাহর মহব্বত লাভের কারণ হয়ে থাকে। হাদিসে কুদসীতে বর্ণিত আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
«وجبت محبتي للمتحابين فيَّ والمتجالسين فيَّ»
“আমার মহব্বত ওয়াজিব হয়ে যায়, তাদের জন্য যারা আমার জন্য একে অপরকে ভালোবাসে এবং আমার জন্য একে অপরের সাথে একত্রে বসে।” [বর্ণনায় মালেক এবং ইবনু আব্দিল বার ও মুনযিরি হাদিসটির সনদকে সহীহ বলেন। মুসনাদে আহমাদ ৫/২৩৩, নং ২২০৮৩।]
পক্ষান্তরে যারা সৎ লোকদের সাথে উঠা-বসা করে না এবং অসৎ লোকদের সাথে উঠা-বসা করে তারা দুনিয়া ও আখিরাতে অসংখ্য ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
«المرء على دين خليله، فلينظر أحدكم من يخالل» رواه الترمذي وحسَّنه
“মানুষ তার বন্ধুর দীনের উপর, তাকে অবশ্যই চিন্তা করতে হবে, কাকে সে বন্ধু বানাবে”। [বর্ণনায় তিরমিযি, হাদিস: ২৩৭৮ এবং তিনি হাদিসটিকে হাসান বলে আখ্যায়িত করেন।] একজন বন্ধুই মানুষের ভালো হওয়া ও খারাপ হওয়ার মূল চালিকা শক্তি। এটি শুধু মুখের কথা বা দাবি নয় বরং বাস্তবতা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَيَوۡمَ يَعَضُّ ٱلظَّالِمُ عَلَىٰ يَدَيۡهِ يَقُولُ يَٰلَيۡتَنِي ٱتَّخَذۡتُ مَعَ ٱلرَّسُولِ سَبِيلٗا ٢٧ يَٰوَيۡلَتَىٰ لَيۡتَنِي لَمۡ أَتَّخِذۡ فُلَانًا خَلِيلٗا ٢٨ لَّقَدۡ أَضَلَّنِي عَنِ ٱلذِّكۡرِ بَعۡدَ إِذۡ جَآءَنِيۗ وَكَانَ ٱلشَّيۡطَٰنُ لِلۡإِنسَٰنِ خَذُولٗا ٢٩ ﴾ [ الفرقان : ٢٧، ٢٩ ]
আর সেদিন যালিম নিজের হাত দুটো কামড়িয়ে বলবে, হায়, আমি যদি রাসূলের সাথে কোনো পথ অবলম্বন করতাম,! হায় আমার দুর্ভোগ, আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম। অবশ্যই সে তো আমাকে উপদেশ-বাণী থেকে বিভ্রান্ত করেছিল, আমার কাছে তা আসার পর। আর শয়তান তো মানুষের জন্য চরম প্রতারক। [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ২৭-২৯]
আবুদ দরদা রা. আবু মুসা আশআরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إنما مثل الجليس الصالح والجليس السوء كحامل المسك ونافخ الكير، فحامل المسك إما أن يحذيك وإما أن تبتاع منه وإما أن تجد منه ريحاً طيبة، ونافخ الكير إما أن يحرق ثيابك، وإما أن تجد ريحاً خبيثة» .
“নেককার সাথী ও অসৎ সাথীর দৃষ্টান্ত: একজন আতর বহনকারী ও একজন কামারের মত। আতর বহনকারী সে হয় তোমাকে আতর দেবে, অথবা তুমি তার থেকে খরিদ করবে অথবা কম পক্ষে তুমি তার থেকে সুঘ্রাণ পাবে। আর কামার সে হয় তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে অথবা তুমি তার থেকে দুর্গন্ধ অনুভব করবে” [মুসলিম, হাদিস: ২৬২৮।]।
যারা নেক লোকদের সাথে উঠা-বসা করবে, তারা অবশ্যই ভালো কিছু অর্জন করবে। বিশেষ করে, তারা তাদের সংশ্রব থেকে ভালো কিছু শিখবে বা দো‘আ লাভ করবে। যদিও তাদের আমল ঐ সব ভালো লোকদের আমলের পর্যায়ে পৌছবে না। যেমনটি হাদিসে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«وله قد غفرت، هم القوم لا يشقى بهم جليسهم»
“আমি তাকেও ক্ষমা করে দিলাম, আর তারা এমন এক সম্প্রদায় তাদের সাথে যারা বসবে তারাও বঞ্চিত হবে না”। [বর্ণনায় মুসলিম, হাদিস: ২৬৮৯।]
অনুরূপভাবে অনুকরণীয় হিসেবে তাদের গ্রহণ করে তাদের ইলম, আমল ও আখলাক দ্বারা প্রভাবিত হওয়া দ্বারাও উপকৃত হবে। যেমনটি হাদিসে উল্লেখ করা হয়,
«المرء على دين خليله، فلينظر أحدكم من يخالل»
“মানুষ তার বন্ধুর দীনের উপর, তাকে অবশ্যই চিন্তা করতে হবে, কাকে সে বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে”। [বর্ণনায় তিরমিযি হাদিস: ২৩৭৮ এবং তিনি হাদিসটিকে হাসান বলে আখ্যায়িত করেন।] যখন কোনো ব্যক্তির বন্ধু সৎ হয়, তার ভালো হওয়ার সুযোগ বেশি থাকে। তার মধ্যে যে সব দোষত্রুটি আছে, তা যখন তার বন্ধুদের সামনে ধরা পড়ে তখন তারা তাকে সংশোধন করে এবং তার দোষত্রুটি ধরিয়ে দেয়। তখন সে নিজেই সংশোধন হতে এবং দোষত্রুটির চিকিৎসা গ্রহণে চেষ্টা করে। হাদিসে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«المؤمن مرآة المؤمن»
“একজন মুমিন অপর মুমিনের আয়নাস্বরূপ।” [বর্ণনায় আবু দাউদ, হাদিস: ৪৯১৮, আল্লাম ইরাকী ও আল্লামা ইবনে হাজার হাদিসটিকে হাসান বলে আখ্যায়িত করেন।] আয়নায় যেমন একজন মানুষ তার চেহারা দেখে অনুরূপভাবে সে তার অপর ভাইয়ের মধ্যে নিজেকে দেখতে পায়।
নেকলোকদের সাথে উঠা-বসা করা, আল্লাহর মহব্বত লাভের কারণ হয়ে থাকে। হাদিসে কুদসীতে বর্ণিত আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
«وجبت محبتي للمتحابين فيَّ والمتجالسين فيَّ»
“আমার মহব্বত ওয়াজিব হয়ে যায়, তাদের জন্য যারা আমার জন্য একে অপরকে ভালোবাসে এবং আমার জন্য একে অপরের সাথে একত্রে বসে।” [বর্ণনায় মালেক এবং ইবনু আব্দিল বার ও মুনযিরি হাদিসটির সনদকে সহীহ বলেন। মুসনাদে আহমাদ ৫/২৩৩, নং ২২০৮৩।]
পক্ষান্তরে যারা সৎ লোকদের সাথে উঠা-বসা করে না এবং অসৎ লোকদের সাথে উঠা-বসা করে তারা দুনিয়া ও আখিরাতে অসংখ্য ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
বর্তমান সময়ে যিনা-ব্যভিচার একটি মারাত্মক সমস্যা। বর্তমানে এ ব্যাধি এত মারাত্মক আকার ধারণ করছে যে প্রায় প্রতিটি ফ্লাট বাড়ী একটি যৌন কেন্দ্র। অভিজাত ফ্যামিলির ছেলে মেয়েরা এ সব অপকর্মকে কোনো অন্যায় মনে করছে না। তারা মনে করছে এটি তাদের তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার ও স্বাধীনতা। তারা উন্নত বিশ্বকে তাদের মডেল হিসেবে উপস্থাপন করছে। তারা বলে উন্নত বিশ্বের মেয়েরা রাস্তা-ঘাট, হোটেল, পার্ক সব জায়গায় যেভাবে যৌন ক্ষুধা মিটিয়ে ঘরে ফিরে, তারাও এমন সমাজ ব্যবস্থার পক্ষপাতি। এ সব যেনা-ব্যভিচারের কারণে আজ সমাজে অশান্তি, মানবতার হাহাকার।
সত্য বলেছেন আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। সত্য তাঁর নবুওয়তের অহীলব্ধ ভবিষ্যদ্বাণী। তিনি বলেছেন,
«يَا مَعْشَرَ الْمُهَاجِرِينَ خَمْسٌ إِذَا ابْتُلِيتُمْ بِهِنَّ، وَأَعُوذُ بِاللَّهِ أَنْ تُدْرِكُوهُنَّ : لَمْ تَظْهَرِ الْفَاحِشَةُ فِي قَوْمٍ قَطُّ، حَتَّى يُعْلِنُوا بِهَا، إِلَّا فَشَا فِيهِمُ الطَّاعُونُ، وَالْأَوْجَاعُ الَّتِي لَمْ تَكُنْ مَضَتْ فِي أَسْلَافِهِمُ الَّذِينَ مَضَوْا، وَلَمْ يَنْقُصُوا الْمِكْيَالَ وَالْمِيزَانَ، إِلَّا أُخِذُوا بِالسِّنِينَ، وَشِدَّةِ الْمَئُونَةِ، وَجَوْرِ السُّلْطَانِ عَلَيْهِمْ، وَلَمْ يَمْنَعُوا زَكَاةَ أَمْوَالِهِمْ، إِلَّا مُنِعُوا الْقَطْرَ مِنَ السَّمَاءِ، وَلَوْلَا الْبَهَائِمُ لَمْ يُمْطَرُوا، وَلَمْ يَنْقُضُوا عَهْدَ اللَّهِ، وَعَهْدَ رَسُولِهِ، إِلَّا سَلَّطَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ عَدُوًّا مِنْ غَيْرِهِمْ، فَأَخَذُوا بَعْضَ مَا فِي أَيْدِيهِمْ، وَمَا لَمْ تَحْكُمْ أَئِمَّتُهُمْ بِكِتَابِ اللَّهِ، وَيَتَخَيَّرُوا مِمَّا أَنْزَلَ اللَّهُ، إِلَّا جَعَلَ اللَّهُ بَأْسَهُمْ بَيْنَهُمْ» .
“হে মুহাজিরদল! পাঁচটি কর্ম এমন রয়েছে যাতে তোমরা লিপ্ত হয়ে পড়লে উপযুক্ত শাস্তি তোমাদেরকে গ্রাস করবে। আমি আল্লাহর নিকট পানাহ চাই, যাতে তোমরা তা প্রত্যক্ষ না কর। যখনই কোনো জাতির মধ্যে অশ্লীলতা (ব্যভিচার) প্রকাশ্যভাবে ব্যাপক হবে তখনই সেই জাতির মধ্যে প্লেগ এবং এমন মহামারী ব্যাপক হবে যা তাদের পূর্বপুরুষদের মাঝে ছিল না। যখনই কোনো জাতি ওজন ও মাপে কম দিতে আরম্ভ করবে তখনই তাদেরকে দুর্ভিক্ষ, জীবন-নির্বাহের কষ্ট ও শাসককুলের অত্যাচার পেয়ে বসবে। আর যখনই কোনো জাতি সম্পদের যাকাত প্রদানে বিরত থাকবে তখনই তাদের মধ্যে আকাশ থেকে অনাবৃষ্টি দেখা দিবে। যদি না জীব-জন্তু থাকত, তাদের মোটেই বৃষ্টি দেওয়া হতো না। আর যখনই আল্লাহ ও রাসূলের সাথে কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গ করবে তখনই তাদের অধিকৃত বস্তুর কিছু হাতছাড়া হয়ে যাবে। আর যখনই কোনো জাতির নেতারা আল্লাহর কিতাব কুরআন দ্বারা বিচার-ফয়সালা করা ত্যাগ করবে এবং তা থেকে হুকুম পছন্দ করে গ্রহণ করবে না তখনই তাদের মধ্যে পরস্পর ভীতির সঞ্চার করবেন।” [ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪০১৯, সহীহ তারগীব, হাদিস: ৭৫৯]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যখনই কোনো জাতি তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে তখনই তাদের মাঝে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। যখনই কোনো জাতির মাঝে অশ্লীলতা আত্মপ্রকাশ করে তখনই সে জাতির জন্য আল্লাহ মৃত্যুকে আধিপত্য প্রদান করেন। (তাদের মধ্যে মৃতের হার বেড়ে যায়।) আর যখনই কোনো জাতি যাকাত-দানে বিরত হয় তখনই তাদের জন্য (আকাশের) বৃষ্টি বন্ধ করে দেওয়া হয়।” [হাকেম, হাদিস: ২/১২৬, বাইহাকী, হাদিস: ৩/ ৩৪৬, বায্যার, হাদিস: ৩২৯৯ , সিলসিলাহ সহীহাহ, হাদিস: ১০৭]
অবৈধ যৌনাচারের ফলে প্রাদুর্ভূত বিভিন্ন পুরনো রোগ তো আছেই। গনোরিয়া, সিফিলিস, শুক্র-ক্ষরণ প্রভৃতি যৌনরোগ ব্যভিচারীদের মাঝেই আধিপত্য বিস্তার করে। গনোরিয়া বা প্রমেহ রোগে জননাঙ্গে ঘা ও জ্বালা সৃষ্টি হয় এবং সেখান হতে পুঁজ নিঃসরণ হয়। মূত্রনালি জ্বালা করে, সুড়সুড় করে। মূত্রত্যাগে কষ্ট হয়। পানির মত প্রস্রাবের পর হলুদ পুঁজযুক্ত পদার্থ বের হয়। সে সঙ্গে মাথা ধরা ও ঘোরা, জ্বর এবং নিম্ন-গ্রন্থি-স্ফীতি তো আছেই।
সিফিলিস বা উপদংশ রোগ শরীরে প্রবেশ করার পর সপ্তাহ মধ্যে লাল দাগ ও ফুস্কুড়ি প্রকাশ পায়। এরপর হতে শরীর অনবরত চুলকায় ও তার চারিধারে প্রবাহযুক্ত পানি-ভরা ফোস্কা দেখা দেয় এবং ঐ সব ফুস্কুড়ি হতে পরে গলে ঘা হয় ও পুঁজ বের হয়। রোগ পুরনো হলে নখ খসে যায়, চুল ওঠে এবং সর্বাঙ্গে বিভিন্ন রোগ ও রোগের উপসর্গ প্রকাশ পায়।
আর শুক্র-ক্ষরণ রোগে তরল বীর্য যখন-তখন ঝরতে থাকে। এর ফলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে, বুক ধড়ফড় করে, মাথা ধরে ও ঘোরে ইত্যাদি।
সুতরাং এমন সব রোগের কথা শুনে শঙ্কিত হওয়া উচিত ব্যভিচারীকে। ক্ষণস্থায়ী সে স্বাদে লাভ কি, যার পরে আছে দীর্ঘস্থায়ী বা চিরস্থায়ী বিষাদ।
ব্যভিচার ব্যভিচারীর জন্য সাংসারিক ও পারিবারিক লাঞ্ছনা ডেকে আনে। আত্মীয়স্বজনের সামনে হতে হয় অপমানিত। কারণ, ব্যভিচারী যতই সতর্কতা ও গোপনীয়তা অবলম্বন করুক না কেন, একদিন না একদিন তার সে পাপ-রহস্য মানুষের সমাজে প্রকাশ পেয়েই যায়। ফলে তার ব্যাপারে প্রকাশ্যে অথবা গোপনে একটা এমন দুর্নাম ছড়িয়ে পড়ে, যার দরুন সে প্রায় সকলের কাছে নিন্দার্হ ও ঘৃণার্হ হয়। সহজে কেউ তার সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক কায়েম করতে চায় না। অনেক সময় তার কারণে তার পুরো বংশ ও পরিবারেরই বদনাম হয়। শেষে পরিণতি এই দাঁড়ায় যে, ভালো লোকেরা তাদের সহিত কোনো সম্পর্ক কায়েম করতে চায় না। অবশ্য ‘কানা বেগুনের ডগলা খদ্দের’ তো আছেই।
পক্ষান্তরে ব্যভিচারীর জীবনে লাঞ্ছনা যখন আসে, তখন তার হƒদয়ের জ্যোতি বিলীন হয়ে যায় এবং মন ভরে ওঠে অন্ধকারে। অপমানের পর এমনও হয়ে থাকে যে, শেষে সে একজন নির্লজ্জ ধৃষ্টতে পরিণত হয়ে যায়। সমাজে চলার পথে তার আর কোনো প্রকার ‘হায়া-শরম’ বলতে কিছু থাকে না। আর যার লজ্জা থাকে না, তার কিছু থাকে না। লজ্জাহীনের পূর্ণ ঈমানও থাকে না। যার ফলে মানুষের মনুষ্যত্ব ধ্বংস হয়ে যায় এবং পশুর পশুত্ব এসে স্থান নেয় তার মনে ও আচরণে।
ব্যভিচারীর মনে সব সময় এক প্রকার ভয় থাকে। অন্তরে বাসা বাঁধে সার্বক্ষণিক লাঞ্ছনা। যেমন আল্লাহর আনুগত্যে থাকে সম্মান ও মনের প্রফুল্লতা। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿وَٱلَّذِينَ كَسَبُواْ ٱلسَّئَِّاتِ جَزَآءُ سَيِّئَةِۢ بِمِثۡلِهَا وَتَرۡهَقُهُمۡ ذِلَّةٞۖ ٢٧ ﴾ [ يونس : ٢٧ ]
“যারা মন্দ কাজ করে, তাদের প্রতিফল অনুরূপ মন্দ এবং লাঞ্ছনা তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে---।” [সূরা ইউনুস, আয়াত: ২৭] ব্যভিচারী সর্বদা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকে। জারজ জন্ম নিলে তো আরও। এ ছাড়া ব্যভিচারের ফলে তার সম্ভ্রম ও আত্মমর্যাদা যায়, স্ত্রী-কন্যার ব্যাপারে ঈর্ষা থাকে না। বরং ব্যভিচারী মিথ্যাবাদীও হয়, খেয়ানত-কারী ও ধোকাবাজ হয়। সাধারণত: বন্ধুর বন্ধুত্বের মানও খেয়াল রাখে না [ইবনুল কাইয়্যেম, রওদাতুল মুহিব্বীন।]।
ব্যভিচারী দ্বীনী ইলম থেকে বঞ্চিত হয়। কারণ, ইলম হলো আল্লাহর নূর। আর আল্লাহর নূর কোনো পাপিষ্ঠকে দেওয়া হয় না, তথা পাপের কালিমা সে জ্যোতিকে নি®প্রভ করে ফেলে।
ব্যভিচার এমন এক ‘ফ্রি সার্ভিস’ চিত্তবিনোদনের সুন্দর উপায় যে, ব্যভিচারীকে বিবাহ করে ঘর-সংসার করতে বাধা দেয়। তাকে বিবাহে আগ্রহহীন ও নিঃস্পৃহ করে তোলে। বিনা খরচ ও পরম স্বাধীনতায় যদি কাম-চরিতার্থ করা সহজ হয় এবং স্বামীর কোনো প্রকার দায়িত্ব ঘাড়ে না নিয়েই যদি মনের মত ‘বউ’ পাওয়া যায়, তবে কে আর বিয়ে করবে? ব্রিটেনের প্রায় ৯০ শতাংশ যুবক-যুবতী এই দায়-দায়িত্বহীন সম্পর্ককেই পছন্দ করে এবং বিবাহে জড়িয়ে পড়াকে বড্ড ঝামেলার কাজ মনে করে! [আল-ইফ্ফাহ পৃ. ১৯।]
ব্যভিচার স্বামী-স্ত্রীর সংসারে ফাটল ধরায়। কারণ, অন্যাসক্ত স্বামীর মন পড়ে থাকে অন্য যুবতীর প্রতি। অনুরূপ অন্যাসক্তা স্ত্রীর মন পড়ে থাকে কোনো অন্য রসিক নাগরের যৌবন-আসনে। আর এই উভয়ের মাঝে সন্দেহ বাসা বাঁধে। একে অপরের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলে। সন্দেহ হয় স্বামীর নিজের সন্তানের ব্যাপারেও। প্রতিবাদ ও কৈফিয়ত হলে কলহ বাধে। অতঃপর চলে মারধর। আর তারপরই তালাক অথবা খুন!
ব্যভিচার পিতার পিতৃ-বোধ এবং মাতার মাতৃ-বোধ বিনষ্ট করে ফেলে। পিতৃ ও মাতৃবৎশল্য সন্তানদের উপর থেকে উঠে যায়। যেমন অনেকের জানতে বা অজান্তে সমাজে পয়দা হয় হাজারো জারজ সন্তান।
ব্যভিচার সমাজে নিরাপত্তাহীনতা ডেকে আনে। ধর্ষণের ভয়ে কিশোরী-যুবতীর নিরাপত্তা থাকে না। এমন কি নিরাপত্তা থাকে না কোনো সুদর্শন কিশোরও! বাড়ির ভিতরে থেকেও মনের আতঙ্কে শান্তির ঘুম ঘুমাতে পায় না তারা। অনেকে ঐ শ্রেণীর হিংস্র নেকড়ের পাল্লায় পড়ে জীবন পর্যন্তও হারিয়ে বসে।
মানসিক বিপর্যয় ঘটিয়েই ব্যভিচার বহু সমাজ-বিরোধী অপরাধী সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে পিতা-মাতার স্নেহ ও মায়া-মমতা থেকে বঞ্চিত জারজ সন্তানরা মানসিক কঠোরতা ও সামাজিক ঘৃণার মাঝে মানুষ হতে থাকে এবং পরিশেষে অপরাধ জগৎকেই মনের মত জগত বলে নিজের জন্য বেছে নয়।
ব্যভিচার চরিত্রহীনতা ও এক মহা অপরাধ। এ অপরাধ-রাজ্যে বাস করে মানুষ যে সব সময় আনন্দ পায় তা নয়। যেমন আল্লাহর আনুগত্য ও স্মরণে মন প্রশান্ত থাকে, তেমনি তাঁর অবাধ্যাচরণ ও পাপ-পঙ্কিলতাময় জীবনে মন বিক্ষিপ্ত ও অশান্তিময় থাকে। আর মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ أَفَرَءَيۡتَ مَنِ ٱتَّخَذَ إِلَٰهَهُۥ هَوَىٰهُ وَأَضَلَّهُ ٱللَّهُ عَلَىٰ عِلۡمٖ وَخَتَمَ عَلَىٰ سَمۡعِهِۦ وَقَلۡبِهِۦ وَجَعَلَ عَلَىٰ بَصَرِهِۦ غِشَٰوَةٗ فَمَن يَهۡدِيهِ مِنۢ بَعۡدِ ٱللَّهِۚ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ ٢٣ ﴾ [ الجاثية : ٢٣ ]
“তুমি কি তাকে লক্ষ্য করেছ, যে তার খেয়াল-খুশীকে নিজের উপাস্য বানিয়ে নিয়েছে। আল্লাহ তা জেনেই তাকে বিভ্রান্ত করেছেন এবং ওর কর্ণ ও হƒদয় মোহর (সীল) করে দিয়েছেন। আর ওর চোখের উপর ফেলে দিয়েছেন পর্দা। অতএব আল্লাহ তাকে বিভ্রান্ত করার পর কে তাকে পথ নির্দেশ করবে? তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না?” [সূরা জাসিয়াহ, আয়াত: ২৩]
বলাবাহুল্য যে, প্রেম ও ব্যভিচারের মত ক্ষণিকের সুখ ও সম্ভোগের জগতে মন-পূজারী বহু যুবক-যুবতী আপোষের মাঝে প্রেম ও মিলন কলহ নিয়ে কত শত মনের ধিক্কারে আত্মহত্যার শিকারে পরিণত হয়। ১৯৮৭ সালের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, ব্রিটেনে প্রতি ২ ঘণ্টায় একটি করে যুবক আত্মহত্যা করে মৃত্যুবরণ করে থাকে! [আল-ইফফাহ, পৃ. ২৫।]
ব্যভিচার এমন এক অপরাধ যে, তার ফলে খুন হয় লাখো লাখো সদ্যপ্রসূত কচি-কাঁচা শিশু। নির্দয় পাষণ্ড মা জন্মের পর তাকে ডাষ্টবিনে, নদীতে অথবা কোনো ঝোপে-জঙ্গলে ফেলে আসে! লাখো লাখো সন্তানকে ভ্রƒণ অবস্থায় পেটেই হত্যা করা হয়। কারণ, পিতামাতার উদ্দেশ্য ছিল, কেবল কাম তৃষ্ণা নিবারণ করা, কোনো অযাচিত সন্তান নেওয়া নয়।
ব্যভিচারের ফলে বংশে এমন এক সন্তান অনুপ্রবেশ করে যে সে বংশের কেউ নয়। সে মিরাস পায়, অথচ সে ওয়ারেস নয়। অনেক সময় এই সন্তান প্রকৃত ওয়ারেসীনকে বঞ্চিতও করে। পরিবারে অনেকের সে মাহরাম গণ্য হয়, অথচ প্রকৃতপক্ষে সে গায়র মাহরাম ও বেগানা। আর এইভাবে একটি পাপের কারণে আরও বহু গুপ্ত ফ্যাসাদ চলতে থাকে সংসারে। যে পাপের কথা কেবল মন জানে, যেমন আসল বাপের কথা কেবল মা জানে।
ব্যভিচার আল্লাহর গযব আনয়ন করে। আল্লাহ বলেন,
﴿فَلۡيَحۡذَرِ ٱلَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنۡ أَمۡرِهِۦٓ أَن تُصِيبَهُمۡ فِتۡنَةٌ أَوۡ يُصِيبَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٌ ٦٣ ﴾ [ النور : ٦٣ ]
“সুতরাং যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় অথবা কঠিন শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করবে।” [সূরা শূরা, আয়াত: ৪০]
ব্যভিচার এক নিকৃষ্ট মহাপাপ। যে পাপের শাস্তিস্বরূপ অনুরূপ পাপ তার পরিবারে এসে যেতে পারে। কারণ, মহান আল্লাহ বলেন, جَزَآءُ سَيِّئَةِۢ بِمِثۡلِهَا “মন্দের প্রতিফল অনুরূপ মন্দ।”
﴿ وَٱلَّذِينَ كَسَبُواْ ٱلسَّئَِّاتِ جَزَآءُ سَيِّئَةِۢ بِمِثۡلِهَا وَتَرۡهَقُهُمۡ ذِلَّةٞۖ ٢٧ ﴾ [ يونس : ٢٧ ]
“যারা মন্দ কাজ করে তাদের প্রতিফল অনুরূপ মন্দ এবং তাদেরকে লাঞ্ছনা আচ্ছন্ন করবে ---।” [সূরা ইউনুস, আয়াত: ২৭]
সাধারণত: ব্যভিচারীদের স্ত্রী অথবা বোন অথবা কন্যাও ব্যভিচারিণী হয়ে থাকে। কারণ, তারা তাদের ব্যাপারে ঈর্ষা-হীন হয়ে পড়ে। তাছাড়া যে পরস্ত্রীকে অসতী করে বেড়ায়, তার স্ত্রীও অসতী হতে পারে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ٱلۡخَبِيثَٰتُ لِلۡخَبِيثِينَ وَٱلۡخَبِيثُونَ لِلۡخَبِيثَٰتِۖ﴾
“দুশ্চরিত্রা নারী দুশ্চরিত্র পুরুষের জন্য এবং সচ্চরিত্র পুরুষ সচ্চরিত্রা নারীর জন্য”। [সূরা নূর, আয়াত: ২৬]
অথচ কোনো মানুষ, বরং স্বয়ং ব্যভিচারী ও লম্পটও চায় না যে, তার স্ত্রী ব্যভিচারিণী বা অস্বচ্ছ-অপবিত্রা হোক।
‘নিজেদের নেই মনুষ্যত্ব, জানি না কেমনে তারা-
নারীদের কাছে চাহে সতীত্ব হায়রে শরম-হারা!’
ব্যভিচারী হলেও সে কোনো দিন চাইবে না যে, তার স্ত্রীও তারই মত ব্যভিচার করুক অথবা তার স্ত্রীকে কেউ ধর্ষণ করুক। স্ত্রী খুন হয়েছে শুনে মনে যতটা আঘাত লাগে, স্ত্রী ব্যভিচার করেছে বা ধর্ষিতা হয়েছে শুনে মনে আঘাত লাগে তার থেকে অনেক গুণ বেশী। সা‘দ ইবন ‘উবাদাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘যদি আমি আমার স্ত্রীর সাথে অন্য পুরুষকে দেখি, তাহলে তরবারি দ্বারা তার মাথা কেটে ফেলব।’ এ কথা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে পৌঁছলে তিনি বললেন, “তোমরা কি সা‘দের আত্মমর্যাদাবোধ বা ঈর্ষায় আশ্চর্যবোধ করছ? আল্লাহর কসম! আমি ওর থেকেও বেশী ঈর্ষা-বান এবং আল্লাহ আমার থেকেও বেশী ঈর্ষা-বান। আর এ জন্যই তিনি গুপ্ত ও প্রকাশ্য সকল অশ্লীলতাকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন। [বুখারী, হাদিস: ৭৪১৬, মুসলিম, হাদিস: ১৪৯৯]
অনুরূপ কোনো আত্ম-মর্যাদাবান পুরুষই চায় না যে, তার কোনো নিকটাত্মীয় মহিলা ব্যভিচারিণী হোক। অতএব ব্যভিচারী কিরূপে অপরের নিকটাত্মীয় মহিলার সহিত সে কাজ পছন্দ করে?
একদা এক যুবক আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, ‘আপনি আমাকে ব্যভিচার করার অনুমতি দিন!’ তিনি বললেন, “তুমি কি তোমার মায়ের সাথে তা পছন্দ কর? তোমার বোন বা মেয়ের সাথে, তোমার ফুফু বা খালার সাথে তা পছন্দ কর?” যুবকটি প্রত্যেকের জন্য উত্তরে একই কথা বলল, ‘না। আল্লাহর কসম, হে আল্লাহর রসূল! আপনার জন্য আমার জীবন উৎসর্গ হোক। (তাদের সঙ্গে আমি এ কাজ করতে চাই না।)’ তখন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তাহলে লোকেরাও তো পছন্দ করে না যে, কেউ তাদের মা, মেয়ে, বোন, খালা বা ফুফুর সাথে ব্যভিচার করুক [আহমাদ ৫/২৫৬-২৫৭, ত্বাবারানী, সিলসিলাহ সহীহাহ, হাদিস: ৩৭০]।” অতএব ব্যভিচারী যুবককে এ ব্যাপারে উপদেশ গ্রহণ করা উচিত।
ব্যভিচার ও লাম্পট্য জগতের এ পাপ কিন্তু এক পর্যায়ের নয়। যেমন, ছোট ব্যভিচার হল, কাম নজরে দেখা চোখের ব্যভিচার। যৌন উত্তেজনামূলক কথা শোনা কানের ব্যভিচার এবং তা বলা জিভের ব্যভিচার। স্পর্শ করা হাতের এবং যৌন-মিলনের উদ্দেশ্যে চলা পায়ের ব্যভিচার। আর দুই যৌনাঙ্গের মিলনে হয় বড় ও আসল ব্যভিচার। [মিশকাত, হাদিস নং ৮৬; মুসনাদে আহমাদ ২/৩২৯।]
কোনো অবিবাহিতা নারীর সহিত ব্যভিচার করার চাইতে বড় ব্যভিচার হলো কোনো বিবাহিতা নারীর সহিত ব্যভিচার। এর চাইতে বড় হলো কোনো আত্মীয় বা প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে ব্যভিচার। অতঃপর নিজের ভাইঝি-বোনঝি বা খালা-ফুফুর সাথে, অতঃপর নিজের বোনের সাথে, অতঃপর নিজের মেয়ের সাথে এবং সর্বোপরি বড় ব্যভিচার হলো মায়ের সাথে ব্যভিচার! (নাঊযু বিল্লাহি মিন যালিকা কুল্লিহী) অবশ্য একান্ত জানোয়ার ছাড়া নিজের নিকটাত্মীয় এগানা মহিলাদের সাথে কেউ একাজ করতে উদ্বুদ্ধ হয় না। আর এগানা মহিলা হলো সেই সব মহিলা, যাদের সহিত কোনো সময়ই বিবাহ বৈধ নয়।
যে সব কারণে সাধারণ ব্যভিচার সংঘটিত হয়, তন্মধ্যে রয়েছে,
১- যুবক-যুবতীর নির্জনতা অবলম্বন, একান্তে গমন-ভ্রমণ, কোনো বাড়ি বা রুমে একাকী উভয়ের বসবাস, রিক্সা বা গাড়িতে চালকের সাথে একাকিনী যাতায়াত, দোকানে দোকানদারের কাছে একাকিনী মার্কেট করা, দর্জির কাছে একান্তে পোশাকের মাপ দেওয়া, ডাক্তারের সহিত নার্সের অথবা রোগিণীর একান্তে চিকিৎসা কাজ, প্রাইভেট টিউটরের কাছে একাকিনী পড়াশোনা করা ইত্যাদি। এগুলি ব্যভিচারের এক একটি সূক্ষ্ম ছিদ্রপথ। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “কোন মহিলার সাথে কোনো পুরুষ যখন নির্জনতা অবলম্বন করে, তখন শয়তান তাদের তৃতীয় জন (কুটনা) হয়। [তিরমিযী, ১১৭১।]
আর এই কারণেই মহিলার জন্য স্বামীর ভাই ইত্যাদি বেগানা আত্মীয়কে মৃত্যুর সাথে তুলনা করা হয়েছে [বুখারী, ৫২৩২; মুসলিম, ২১৭২।]!
২- অবাধ মেলামেশা। পর্দার সাথে হলেও পাশাপাশি নারী-পুরুষের অবস্থান ব্যভিচারের এক বিপজ্জনক ছিদ্রপথ। একই বাড়িতে চাচাতো প্রভৃতি ভাই-বোন, স্কুল-কলেজে ও চাকুরী-ক্ষেত্রে যুবক-যুবতীর অবাধ দেখা-সাক্ষাৎ, অনুরূপ মার্কেটে, মেলা-খেলায়, বিয়েবাড়ি, মরা-বাড়ি, হাসপাতাল প্রভৃতি জায়গায় নারী-পুরুষের বারবার সাক্ষাতের ফলে পরিচয় এবং প্রেম, আর তারপরই শুরু হয় ব্যভিচার।
আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘তোমাদের কি শরম নেই? তোমাদের কি ঈর্ষা নেই? তোমরা তোমাদের মহিলাদেরকে পর-পুরুষদের মাঝে যেতে ছেড়ে দাও এবং এরা ওদেরকে ও ওরা এদেরকে দেখাদেখি করে!’ [দেখুন-হাকাযা তুদাম্মিরু জারীমাতুল জিনসিয়্যাতু আহলাহা পৃ. ২২।]
৩- বিবাহে বিলম্ব। সঠিক ও উপযুক্ত বয়সে বা প্রয়োজন-সময়ে বিয়ে না হলে যৌন ক্ষুধা নিবারণের জন্য ব্যভিচার ঘটা স্বাভাবিক। অধ্যয়ন শেষ করার আশায় অথবা চাকুরী পাওয়ার অপেক্ষায় অথবা সামাজিক কোনো বাধায় (বিধবা) বিবাহ না হওয়ার ফলে ব্যভিচারের এক চোরা পথ খোলা যায়।
৪- অতিরিক্ত মাহর অথবা পণ ও যৌতুক-প্রথাও ব্যভিচারের একটি কারণ। কেননা, উভয় প্রথাই বিবাহের পথে বড় বাধা।
৫- মহিলাদের বেপর্দা চলন ও নগ্নতা। ব্যভিচার ও ধর্ষণের এটি একটি বড় কারণ। ছিলা কলাতে মাছি বসা স্বাভাবিক। ছিলা লেবু বা খোলা তেঁতুল দেখলে জিভে পানি আসা মানুষের প্রকৃতিগত ব্যাপার। অনুরূপ পর্দা-হীনা, অর্ধ নগ্না ও প্রায় পূর্ণ নগ্না যুবতী দেখলে যুবকের মনে কাম উত্তেজিত হওয়াও স্বাভাবিক। আর এ জন্যই ইসলামে পর্দার বিধান অনুসরণ করা মহিলার উপর ফরয করা হয়েছে। নারীকে তার সৌন্দর্য বেগানা পুরুষকে প্রদর্শন করতে নিষেধ করা হয়েছে। (সূরা নূর, আয়াত: ৩১)
আর মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে,
«الْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ، فَإِذَا خَرَجَتْ اسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ»
“নারী হলো গোপনীয় জিনিস। তাই যখন সে (গোপনীয়তা থেকে) বের হয়, তখন শয়তান তাকে পুরুষের চোখে শোভনীয়া ও লোভনীয়া করে তোলে [তিরমিযী, হাদিস: ১১৭৩; মিশকাত, হাদিস: ৩১০৯]।”
৬- নোংরা ফিল্ম দেখা, অশ্লীল পত্র-পত্রিকা পড়া এবং গান শোনা। যৌবনের কামনায় যৌন-চেতনা বা উত্তেজনা বলে একটা জিনিস আছে। যার অর্থ এই যে, যৌন-কামনা ঘুমিয়ে থাকে বা তাকে সুপ্ত রাখা যায় এবং কখনো কখনো তা প্রশান্ত থাকে বা তাকে প্রশমিত রাখা সম্ভব। বলা বাহুল্য নোংরা ফিল্ম, পত্র-পত্রিকা এবং গান হলো এমন জিনিস, যা সুপ্ত যৌনকামনাকে জাগ্রত করে এবং প্রশান্ত যৌন-বাসনাকে উত্তেজিত করে। এ ছাড়া এ উম্মতের সম্মানিত উত্তরসূরীগণ বলতেন যে, ‘গান হলো ব্যভিচারের মন্ত্র।’
৭- বেশ্যাবৃত্তির স্বীকৃতি ও সমাজে তাদের পেশাদারীর অনুমতি। তাদেরকে ‘যৌনকর্মী’ বলে আখ্যায়িত করে তাদের বৃত্তিকে অর্থোপার্জনের এক পেশা বলে স্বীকার করে নেওয়া ব্যভিচার প্রসার লাভের অন্যতম কারণ।
৮- মদ ও মাদক-দ্রব্যের ব্যাপক ব্যবহার। মদ, হিরোইন প্রভৃতির নেশায় নারীর নেশা ও চাহিদা সৃষ্টি হয় মাতাল মনে। ফলে এর কারণেও ব্যভিচার ব্যাপক হয়।
৯- আর সবচেয়ে বড় ও প্রধান কারণ হল, দ্বীন ও ঈমানের দুর্বলতা, নৈতিক চরিত্রের অবক্ষয়। যার মাঝে ঈমান ও তাকওয়া নেই, সে ব্যভিচার থেকে বাঁচতে পারে না। এমন ব্যক্তির মনের ডোর শয়তানের হাতে থাকে। অথবা নিজের খেয়াল-খুশী মত চালাতে থাকে নিজের জীবন ও যৌবনকে।
বলা বাহুল্য, যুবক যদি উল্লেখিত ব্যভিচারের কারণসমূহ থেকে দূরে থাকতে পারে, তাহলে অবশ্যই সে ব্যভিচার থেকে বাঁচতে পারবে। পক্ষান্তরে উপরোক্ত কারণসমূহের কোনো একটির কাছাকাছি গেলেই ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ে পড়বে। আর মহান আল্লাহর ঘোষণা হল,
﴿ وَلَا تَقۡرَبُواْ ٱلزِّنَىٰٓۖ إِنَّهُۥ كَانَ فَٰحِشَةٗ وَسَآءَ سَبِيلٗا ٣٢ ﴾ [ الاسراء : ٣٢ ]
“তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। কারণ তা হলো অশ্লীল এবং নোংরা পথ।” [সূরা ইসরা, আয়াত: ৩২]
ব্যভিচার ব্যাপক আকারে প্রসার লাভ করা এই কথার ইঙ্গিত যে, কিয়ামত অতি নিকটে আসছে। [বুখারী, হাদিস: ৮১, মুসলিম, হাদিস: ২৬৭১]
অতএব যত দিন যাবে, ব্যভিচার পৃথিবীময় তত আরও বৃদ্ধি পাবে। তবে ঈমানদাররা ঈমান নিয়ে অবশ্যই সর্বদা সে অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকবে।
সত্য বলেছেন আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। সত্য তাঁর নবুওয়তের অহীলব্ধ ভবিষ্যদ্বাণী। তিনি বলেছেন,
«يَا مَعْشَرَ الْمُهَاجِرِينَ خَمْسٌ إِذَا ابْتُلِيتُمْ بِهِنَّ، وَأَعُوذُ بِاللَّهِ أَنْ تُدْرِكُوهُنَّ : لَمْ تَظْهَرِ الْفَاحِشَةُ فِي قَوْمٍ قَطُّ، حَتَّى يُعْلِنُوا بِهَا، إِلَّا فَشَا فِيهِمُ الطَّاعُونُ، وَالْأَوْجَاعُ الَّتِي لَمْ تَكُنْ مَضَتْ فِي أَسْلَافِهِمُ الَّذِينَ مَضَوْا، وَلَمْ يَنْقُصُوا الْمِكْيَالَ وَالْمِيزَانَ، إِلَّا أُخِذُوا بِالسِّنِينَ، وَشِدَّةِ الْمَئُونَةِ، وَجَوْرِ السُّلْطَانِ عَلَيْهِمْ، وَلَمْ يَمْنَعُوا زَكَاةَ أَمْوَالِهِمْ، إِلَّا مُنِعُوا الْقَطْرَ مِنَ السَّمَاءِ، وَلَوْلَا الْبَهَائِمُ لَمْ يُمْطَرُوا، وَلَمْ يَنْقُضُوا عَهْدَ اللَّهِ، وَعَهْدَ رَسُولِهِ، إِلَّا سَلَّطَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ عَدُوًّا مِنْ غَيْرِهِمْ، فَأَخَذُوا بَعْضَ مَا فِي أَيْدِيهِمْ، وَمَا لَمْ تَحْكُمْ أَئِمَّتُهُمْ بِكِتَابِ اللَّهِ، وَيَتَخَيَّرُوا مِمَّا أَنْزَلَ اللَّهُ، إِلَّا جَعَلَ اللَّهُ بَأْسَهُمْ بَيْنَهُمْ» .
“হে মুহাজিরদল! পাঁচটি কর্ম এমন রয়েছে যাতে তোমরা লিপ্ত হয়ে পড়লে উপযুক্ত শাস্তি তোমাদেরকে গ্রাস করবে। আমি আল্লাহর নিকট পানাহ চাই, যাতে তোমরা তা প্রত্যক্ষ না কর। যখনই কোনো জাতির মধ্যে অশ্লীলতা (ব্যভিচার) প্রকাশ্যভাবে ব্যাপক হবে তখনই সেই জাতির মধ্যে প্লেগ এবং এমন মহামারী ব্যাপক হবে যা তাদের পূর্বপুরুষদের মাঝে ছিল না। যখনই কোনো জাতি ওজন ও মাপে কম দিতে আরম্ভ করবে তখনই তাদেরকে দুর্ভিক্ষ, জীবন-নির্বাহের কষ্ট ও শাসককুলের অত্যাচার পেয়ে বসবে। আর যখনই কোনো জাতি সম্পদের যাকাত প্রদানে বিরত থাকবে তখনই তাদের মধ্যে আকাশ থেকে অনাবৃষ্টি দেখা দিবে। যদি না জীব-জন্তু থাকত, তাদের মোটেই বৃষ্টি দেওয়া হতো না। আর যখনই আল্লাহ ও রাসূলের সাথে কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গ করবে তখনই তাদের অধিকৃত বস্তুর কিছু হাতছাড়া হয়ে যাবে। আর যখনই কোনো জাতির নেতারা আল্লাহর কিতাব কুরআন দ্বারা বিচার-ফয়সালা করা ত্যাগ করবে এবং তা থেকে হুকুম পছন্দ করে গ্রহণ করবে না তখনই তাদের মধ্যে পরস্পর ভীতির সঞ্চার করবেন।” [ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪০১৯, সহীহ তারগীব, হাদিস: ৭৫৯]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যখনই কোনো জাতি তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে তখনই তাদের মাঝে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। যখনই কোনো জাতির মাঝে অশ্লীলতা আত্মপ্রকাশ করে তখনই সে জাতির জন্য আল্লাহ মৃত্যুকে আধিপত্য প্রদান করেন। (তাদের মধ্যে মৃতের হার বেড়ে যায়।) আর যখনই কোনো জাতি যাকাত-দানে বিরত হয় তখনই তাদের জন্য (আকাশের) বৃষ্টি বন্ধ করে দেওয়া হয়।” [হাকেম, হাদিস: ২/১২৬, বাইহাকী, হাদিস: ৩/ ৩৪৬, বায্যার, হাদিস: ৩২৯৯ , সিলসিলাহ সহীহাহ, হাদিস: ১০৭]
অবৈধ যৌনাচারের ফলে প্রাদুর্ভূত বিভিন্ন পুরনো রোগ তো আছেই। গনোরিয়া, সিফিলিস, শুক্র-ক্ষরণ প্রভৃতি যৌনরোগ ব্যভিচারীদের মাঝেই আধিপত্য বিস্তার করে। গনোরিয়া বা প্রমেহ রোগে জননাঙ্গে ঘা ও জ্বালা সৃষ্টি হয় এবং সেখান হতে পুঁজ নিঃসরণ হয়। মূত্রনালি জ্বালা করে, সুড়সুড় করে। মূত্রত্যাগে কষ্ট হয়। পানির মত প্রস্রাবের পর হলুদ পুঁজযুক্ত পদার্থ বের হয়। সে সঙ্গে মাথা ধরা ও ঘোরা, জ্বর এবং নিম্ন-গ্রন্থি-স্ফীতি তো আছেই।
সিফিলিস বা উপদংশ রোগ শরীরে প্রবেশ করার পর সপ্তাহ মধ্যে লাল দাগ ও ফুস্কুড়ি প্রকাশ পায়। এরপর হতে শরীর অনবরত চুলকায় ও তার চারিধারে প্রবাহযুক্ত পানি-ভরা ফোস্কা দেখা দেয় এবং ঐ সব ফুস্কুড়ি হতে পরে গলে ঘা হয় ও পুঁজ বের হয়। রোগ পুরনো হলে নখ খসে যায়, চুল ওঠে এবং সর্বাঙ্গে বিভিন্ন রোগ ও রোগের উপসর্গ প্রকাশ পায়।
আর শুক্র-ক্ষরণ রোগে তরল বীর্য যখন-তখন ঝরতে থাকে। এর ফলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে, বুক ধড়ফড় করে, মাথা ধরে ও ঘোরে ইত্যাদি।
সুতরাং এমন সব রোগের কথা শুনে শঙ্কিত হওয়া উচিত ব্যভিচারীকে। ক্ষণস্থায়ী সে স্বাদে লাভ কি, যার পরে আছে দীর্ঘস্থায়ী বা চিরস্থায়ী বিষাদ।
ব্যভিচার ব্যভিচারীর জন্য সাংসারিক ও পারিবারিক লাঞ্ছনা ডেকে আনে। আত্মীয়স্বজনের সামনে হতে হয় অপমানিত। কারণ, ব্যভিচারী যতই সতর্কতা ও গোপনীয়তা অবলম্বন করুক না কেন, একদিন না একদিন তার সে পাপ-রহস্য মানুষের সমাজে প্রকাশ পেয়েই যায়। ফলে তার ব্যাপারে প্রকাশ্যে অথবা গোপনে একটা এমন দুর্নাম ছড়িয়ে পড়ে, যার দরুন সে প্রায় সকলের কাছে নিন্দার্হ ও ঘৃণার্হ হয়। সহজে কেউ তার সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক কায়েম করতে চায় না। অনেক সময় তার কারণে তার পুরো বংশ ও পরিবারেরই বদনাম হয়। শেষে পরিণতি এই দাঁড়ায় যে, ভালো লোকেরা তাদের সহিত কোনো সম্পর্ক কায়েম করতে চায় না। অবশ্য ‘কানা বেগুনের ডগলা খদ্দের’ তো আছেই।
পক্ষান্তরে ব্যভিচারীর জীবনে লাঞ্ছনা যখন আসে, তখন তার হƒদয়ের জ্যোতি বিলীন হয়ে যায় এবং মন ভরে ওঠে অন্ধকারে। অপমানের পর এমনও হয়ে থাকে যে, শেষে সে একজন নির্লজ্জ ধৃষ্টতে পরিণত হয়ে যায়। সমাজে চলার পথে তার আর কোনো প্রকার ‘হায়া-শরম’ বলতে কিছু থাকে না। আর যার লজ্জা থাকে না, তার কিছু থাকে না। লজ্জাহীনের পূর্ণ ঈমানও থাকে না। যার ফলে মানুষের মনুষ্যত্ব ধ্বংস হয়ে যায় এবং পশুর পশুত্ব এসে স্থান নেয় তার মনে ও আচরণে।
ব্যভিচারীর মনে সব সময় এক প্রকার ভয় থাকে। অন্তরে বাসা বাঁধে সার্বক্ষণিক লাঞ্ছনা। যেমন আল্লাহর আনুগত্যে থাকে সম্মান ও মনের প্রফুল্লতা। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿وَٱلَّذِينَ كَسَبُواْ ٱلسَّئَِّاتِ جَزَآءُ سَيِّئَةِۢ بِمِثۡلِهَا وَتَرۡهَقُهُمۡ ذِلَّةٞۖ ٢٧ ﴾ [ يونس : ٢٧ ]
“যারা মন্দ কাজ করে, তাদের প্রতিফল অনুরূপ মন্দ এবং লাঞ্ছনা তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে---।” [সূরা ইউনুস, আয়াত: ২৭] ব্যভিচারী সর্বদা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকে। জারজ জন্ম নিলে তো আরও। এ ছাড়া ব্যভিচারের ফলে তার সম্ভ্রম ও আত্মমর্যাদা যায়, স্ত্রী-কন্যার ব্যাপারে ঈর্ষা থাকে না। বরং ব্যভিচারী মিথ্যাবাদীও হয়, খেয়ানত-কারী ও ধোকাবাজ হয়। সাধারণত: বন্ধুর বন্ধুত্বের মানও খেয়াল রাখে না [ইবনুল কাইয়্যেম, রওদাতুল মুহিব্বীন।]।
ব্যভিচারী দ্বীনী ইলম থেকে বঞ্চিত হয়। কারণ, ইলম হলো আল্লাহর নূর। আর আল্লাহর নূর কোনো পাপিষ্ঠকে দেওয়া হয় না, তথা পাপের কালিমা সে জ্যোতিকে নি®প্রভ করে ফেলে।
ব্যভিচার এমন এক ‘ফ্রি সার্ভিস’ চিত্তবিনোদনের সুন্দর উপায় যে, ব্যভিচারীকে বিবাহ করে ঘর-সংসার করতে বাধা দেয়। তাকে বিবাহে আগ্রহহীন ও নিঃস্পৃহ করে তোলে। বিনা খরচ ও পরম স্বাধীনতায় যদি কাম-চরিতার্থ করা সহজ হয় এবং স্বামীর কোনো প্রকার দায়িত্ব ঘাড়ে না নিয়েই যদি মনের মত ‘বউ’ পাওয়া যায়, তবে কে আর বিয়ে করবে? ব্রিটেনের প্রায় ৯০ শতাংশ যুবক-যুবতী এই দায়-দায়িত্বহীন সম্পর্ককেই পছন্দ করে এবং বিবাহে জড়িয়ে পড়াকে বড্ড ঝামেলার কাজ মনে করে! [আল-ইফ্ফাহ পৃ. ১৯।]
ব্যভিচার স্বামী-স্ত্রীর সংসারে ফাটল ধরায়। কারণ, অন্যাসক্ত স্বামীর মন পড়ে থাকে অন্য যুবতীর প্রতি। অনুরূপ অন্যাসক্তা স্ত্রীর মন পড়ে থাকে কোনো অন্য রসিক নাগরের যৌবন-আসনে। আর এই উভয়ের মাঝে সন্দেহ বাসা বাঁধে। একে অপরের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলে। সন্দেহ হয় স্বামীর নিজের সন্তানের ব্যাপারেও। প্রতিবাদ ও কৈফিয়ত হলে কলহ বাধে। অতঃপর চলে মারধর। আর তারপরই তালাক অথবা খুন!
ব্যভিচার পিতার পিতৃ-বোধ এবং মাতার মাতৃ-বোধ বিনষ্ট করে ফেলে। পিতৃ ও মাতৃবৎশল্য সন্তানদের উপর থেকে উঠে যায়। যেমন অনেকের জানতে বা অজান্তে সমাজে পয়দা হয় হাজারো জারজ সন্তান।
ব্যভিচার সমাজে নিরাপত্তাহীনতা ডেকে আনে। ধর্ষণের ভয়ে কিশোরী-যুবতীর নিরাপত্তা থাকে না। এমন কি নিরাপত্তা থাকে না কোনো সুদর্শন কিশোরও! বাড়ির ভিতরে থেকেও মনের আতঙ্কে শান্তির ঘুম ঘুমাতে পায় না তারা। অনেকে ঐ শ্রেণীর হিংস্র নেকড়ের পাল্লায় পড়ে জীবন পর্যন্তও হারিয়ে বসে।
মানসিক বিপর্যয় ঘটিয়েই ব্যভিচার বহু সমাজ-বিরোধী অপরাধী সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে পিতা-মাতার স্নেহ ও মায়া-মমতা থেকে বঞ্চিত জারজ সন্তানরা মানসিক কঠোরতা ও সামাজিক ঘৃণার মাঝে মানুষ হতে থাকে এবং পরিশেষে অপরাধ জগৎকেই মনের মত জগত বলে নিজের জন্য বেছে নয়।
ব্যভিচার চরিত্রহীনতা ও এক মহা অপরাধ। এ অপরাধ-রাজ্যে বাস করে মানুষ যে সব সময় আনন্দ পায় তা নয়। যেমন আল্লাহর আনুগত্য ও স্মরণে মন প্রশান্ত থাকে, তেমনি তাঁর অবাধ্যাচরণ ও পাপ-পঙ্কিলতাময় জীবনে মন বিক্ষিপ্ত ও অশান্তিময় থাকে। আর মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ أَفَرَءَيۡتَ مَنِ ٱتَّخَذَ إِلَٰهَهُۥ هَوَىٰهُ وَأَضَلَّهُ ٱللَّهُ عَلَىٰ عِلۡمٖ وَخَتَمَ عَلَىٰ سَمۡعِهِۦ وَقَلۡبِهِۦ وَجَعَلَ عَلَىٰ بَصَرِهِۦ غِشَٰوَةٗ فَمَن يَهۡدِيهِ مِنۢ بَعۡدِ ٱللَّهِۚ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ ٢٣ ﴾ [ الجاثية : ٢٣ ]
“তুমি কি তাকে লক্ষ্য করেছ, যে তার খেয়াল-খুশীকে নিজের উপাস্য বানিয়ে নিয়েছে। আল্লাহ তা জেনেই তাকে বিভ্রান্ত করেছেন এবং ওর কর্ণ ও হƒদয় মোহর (সীল) করে দিয়েছেন। আর ওর চোখের উপর ফেলে দিয়েছেন পর্দা। অতএব আল্লাহ তাকে বিভ্রান্ত করার পর কে তাকে পথ নির্দেশ করবে? তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না?” [সূরা জাসিয়াহ, আয়াত: ২৩]
বলাবাহুল্য যে, প্রেম ও ব্যভিচারের মত ক্ষণিকের সুখ ও সম্ভোগের জগতে মন-পূজারী বহু যুবক-যুবতী আপোষের মাঝে প্রেম ও মিলন কলহ নিয়ে কত শত মনের ধিক্কারে আত্মহত্যার শিকারে পরিণত হয়। ১৯৮৭ সালের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, ব্রিটেনে প্রতি ২ ঘণ্টায় একটি করে যুবক আত্মহত্যা করে মৃত্যুবরণ করে থাকে! [আল-ইফফাহ, পৃ. ২৫।]
ব্যভিচার এমন এক অপরাধ যে, তার ফলে খুন হয় লাখো লাখো সদ্যপ্রসূত কচি-কাঁচা শিশু। নির্দয় পাষণ্ড মা জন্মের পর তাকে ডাষ্টবিনে, নদীতে অথবা কোনো ঝোপে-জঙ্গলে ফেলে আসে! লাখো লাখো সন্তানকে ভ্রƒণ অবস্থায় পেটেই হত্যা করা হয়। কারণ, পিতামাতার উদ্দেশ্য ছিল, কেবল কাম তৃষ্ণা নিবারণ করা, কোনো অযাচিত সন্তান নেওয়া নয়।
ব্যভিচারের ফলে বংশে এমন এক সন্তান অনুপ্রবেশ করে যে সে বংশের কেউ নয়। সে মিরাস পায়, অথচ সে ওয়ারেস নয়। অনেক সময় এই সন্তান প্রকৃত ওয়ারেসীনকে বঞ্চিতও করে। পরিবারে অনেকের সে মাহরাম গণ্য হয়, অথচ প্রকৃতপক্ষে সে গায়র মাহরাম ও বেগানা। আর এইভাবে একটি পাপের কারণে আরও বহু গুপ্ত ফ্যাসাদ চলতে থাকে সংসারে। যে পাপের কথা কেবল মন জানে, যেমন আসল বাপের কথা কেবল মা জানে।
ব্যভিচার আল্লাহর গযব আনয়ন করে। আল্লাহ বলেন,
﴿فَلۡيَحۡذَرِ ٱلَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنۡ أَمۡرِهِۦٓ أَن تُصِيبَهُمۡ فِتۡنَةٌ أَوۡ يُصِيبَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٌ ٦٣ ﴾ [ النور : ٦٣ ]
“সুতরাং যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় অথবা কঠিন শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করবে।” [সূরা শূরা, আয়াত: ৪০]
ব্যভিচার এক নিকৃষ্ট মহাপাপ। যে পাপের শাস্তিস্বরূপ অনুরূপ পাপ তার পরিবারে এসে যেতে পারে। কারণ, মহান আল্লাহ বলেন, جَزَآءُ سَيِّئَةِۢ بِمِثۡلِهَا “মন্দের প্রতিফল অনুরূপ মন্দ।”
﴿ وَٱلَّذِينَ كَسَبُواْ ٱلسَّئَِّاتِ جَزَآءُ سَيِّئَةِۢ بِمِثۡلِهَا وَتَرۡهَقُهُمۡ ذِلَّةٞۖ ٢٧ ﴾ [ يونس : ٢٧ ]
“যারা মন্দ কাজ করে তাদের প্রতিফল অনুরূপ মন্দ এবং তাদেরকে লাঞ্ছনা আচ্ছন্ন করবে ---।” [সূরা ইউনুস, আয়াত: ২৭]
সাধারণত: ব্যভিচারীদের স্ত্রী অথবা বোন অথবা কন্যাও ব্যভিচারিণী হয়ে থাকে। কারণ, তারা তাদের ব্যাপারে ঈর্ষা-হীন হয়ে পড়ে। তাছাড়া যে পরস্ত্রীকে অসতী করে বেড়ায়, তার স্ত্রীও অসতী হতে পারে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ٱلۡخَبِيثَٰتُ لِلۡخَبِيثِينَ وَٱلۡخَبِيثُونَ لِلۡخَبِيثَٰتِۖ﴾
“দুশ্চরিত্রা নারী দুশ্চরিত্র পুরুষের জন্য এবং সচ্চরিত্র পুরুষ সচ্চরিত্রা নারীর জন্য”। [সূরা নূর, আয়াত: ২৬]
অথচ কোনো মানুষ, বরং স্বয়ং ব্যভিচারী ও লম্পটও চায় না যে, তার স্ত্রী ব্যভিচারিণী বা অস্বচ্ছ-অপবিত্রা হোক।
‘নিজেদের নেই মনুষ্যত্ব, জানি না কেমনে তারা-
নারীদের কাছে চাহে সতীত্ব হায়রে শরম-হারা!’
ব্যভিচারী হলেও সে কোনো দিন চাইবে না যে, তার স্ত্রীও তারই মত ব্যভিচার করুক অথবা তার স্ত্রীকে কেউ ধর্ষণ করুক। স্ত্রী খুন হয়েছে শুনে মনে যতটা আঘাত লাগে, স্ত্রী ব্যভিচার করেছে বা ধর্ষিতা হয়েছে শুনে মনে আঘাত লাগে তার থেকে অনেক গুণ বেশী। সা‘দ ইবন ‘উবাদাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘যদি আমি আমার স্ত্রীর সাথে অন্য পুরুষকে দেখি, তাহলে তরবারি দ্বারা তার মাথা কেটে ফেলব।’ এ কথা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে পৌঁছলে তিনি বললেন, “তোমরা কি সা‘দের আত্মমর্যাদাবোধ বা ঈর্ষায় আশ্চর্যবোধ করছ? আল্লাহর কসম! আমি ওর থেকেও বেশী ঈর্ষা-বান এবং আল্লাহ আমার থেকেও বেশী ঈর্ষা-বান। আর এ জন্যই তিনি গুপ্ত ও প্রকাশ্য সকল অশ্লীলতাকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন। [বুখারী, হাদিস: ৭৪১৬, মুসলিম, হাদিস: ১৪৯৯]
অনুরূপ কোনো আত্ম-মর্যাদাবান পুরুষই চায় না যে, তার কোনো নিকটাত্মীয় মহিলা ব্যভিচারিণী হোক। অতএব ব্যভিচারী কিরূপে অপরের নিকটাত্মীয় মহিলার সহিত সে কাজ পছন্দ করে?
একদা এক যুবক আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, ‘আপনি আমাকে ব্যভিচার করার অনুমতি দিন!’ তিনি বললেন, “তুমি কি তোমার মায়ের সাথে তা পছন্দ কর? তোমার বোন বা মেয়ের সাথে, তোমার ফুফু বা খালার সাথে তা পছন্দ কর?” যুবকটি প্রত্যেকের জন্য উত্তরে একই কথা বলল, ‘না। আল্লাহর কসম, হে আল্লাহর রসূল! আপনার জন্য আমার জীবন উৎসর্গ হোক। (তাদের সঙ্গে আমি এ কাজ করতে চাই না।)’ তখন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তাহলে লোকেরাও তো পছন্দ করে না যে, কেউ তাদের মা, মেয়ে, বোন, খালা বা ফুফুর সাথে ব্যভিচার করুক [আহমাদ ৫/২৫৬-২৫৭, ত্বাবারানী, সিলসিলাহ সহীহাহ, হাদিস: ৩৭০]।” অতএব ব্যভিচারী যুবককে এ ব্যাপারে উপদেশ গ্রহণ করা উচিত।
ব্যভিচার ও লাম্পট্য জগতের এ পাপ কিন্তু এক পর্যায়ের নয়। যেমন, ছোট ব্যভিচার হল, কাম নজরে দেখা চোখের ব্যভিচার। যৌন উত্তেজনামূলক কথা শোনা কানের ব্যভিচার এবং তা বলা জিভের ব্যভিচার। স্পর্শ করা হাতের এবং যৌন-মিলনের উদ্দেশ্যে চলা পায়ের ব্যভিচার। আর দুই যৌনাঙ্গের মিলনে হয় বড় ও আসল ব্যভিচার। [মিশকাত, হাদিস নং ৮৬; মুসনাদে আহমাদ ২/৩২৯।]
কোনো অবিবাহিতা নারীর সহিত ব্যভিচার করার চাইতে বড় ব্যভিচার হলো কোনো বিবাহিতা নারীর সহিত ব্যভিচার। এর চাইতে বড় হলো কোনো আত্মীয় বা প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে ব্যভিচার। অতঃপর নিজের ভাইঝি-বোনঝি বা খালা-ফুফুর সাথে, অতঃপর নিজের বোনের সাথে, অতঃপর নিজের মেয়ের সাথে এবং সর্বোপরি বড় ব্যভিচার হলো মায়ের সাথে ব্যভিচার! (নাঊযু বিল্লাহি মিন যালিকা কুল্লিহী) অবশ্য একান্ত জানোয়ার ছাড়া নিজের নিকটাত্মীয় এগানা মহিলাদের সাথে কেউ একাজ করতে উদ্বুদ্ধ হয় না। আর এগানা মহিলা হলো সেই সব মহিলা, যাদের সহিত কোনো সময়ই বিবাহ বৈধ নয়।
যে সব কারণে সাধারণ ব্যভিচার সংঘটিত হয়, তন্মধ্যে রয়েছে,
১- যুবক-যুবতীর নির্জনতা অবলম্বন, একান্তে গমন-ভ্রমণ, কোনো বাড়ি বা রুমে একাকী উভয়ের বসবাস, রিক্সা বা গাড়িতে চালকের সাথে একাকিনী যাতায়াত, দোকানে দোকানদারের কাছে একাকিনী মার্কেট করা, দর্জির কাছে একান্তে পোশাকের মাপ দেওয়া, ডাক্তারের সহিত নার্সের অথবা রোগিণীর একান্তে চিকিৎসা কাজ, প্রাইভেট টিউটরের কাছে একাকিনী পড়াশোনা করা ইত্যাদি। এগুলি ব্যভিচারের এক একটি সূক্ষ্ম ছিদ্রপথ। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “কোন মহিলার সাথে কোনো পুরুষ যখন নির্জনতা অবলম্বন করে, তখন শয়তান তাদের তৃতীয় জন (কুটনা) হয়। [তিরমিযী, ১১৭১।]
আর এই কারণেই মহিলার জন্য স্বামীর ভাই ইত্যাদি বেগানা আত্মীয়কে মৃত্যুর সাথে তুলনা করা হয়েছে [বুখারী, ৫২৩২; মুসলিম, ২১৭২।]!
২- অবাধ মেলামেশা। পর্দার সাথে হলেও পাশাপাশি নারী-পুরুষের অবস্থান ব্যভিচারের এক বিপজ্জনক ছিদ্রপথ। একই বাড়িতে চাচাতো প্রভৃতি ভাই-বোন, স্কুল-কলেজে ও চাকুরী-ক্ষেত্রে যুবক-যুবতীর অবাধ দেখা-সাক্ষাৎ, অনুরূপ মার্কেটে, মেলা-খেলায়, বিয়েবাড়ি, মরা-বাড়ি, হাসপাতাল প্রভৃতি জায়গায় নারী-পুরুষের বারবার সাক্ষাতের ফলে পরিচয় এবং প্রেম, আর তারপরই শুরু হয় ব্যভিচার।
আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘তোমাদের কি শরম নেই? তোমাদের কি ঈর্ষা নেই? তোমরা তোমাদের মহিলাদেরকে পর-পুরুষদের মাঝে যেতে ছেড়ে দাও এবং এরা ওদেরকে ও ওরা এদেরকে দেখাদেখি করে!’ [দেখুন-হাকাযা তুদাম্মিরু জারীমাতুল জিনসিয়্যাতু আহলাহা পৃ. ২২।]
৩- বিবাহে বিলম্ব। সঠিক ও উপযুক্ত বয়সে বা প্রয়োজন-সময়ে বিয়ে না হলে যৌন ক্ষুধা নিবারণের জন্য ব্যভিচার ঘটা স্বাভাবিক। অধ্যয়ন শেষ করার আশায় অথবা চাকুরী পাওয়ার অপেক্ষায় অথবা সামাজিক কোনো বাধায় (বিধবা) বিবাহ না হওয়ার ফলে ব্যভিচারের এক চোরা পথ খোলা যায়।
৪- অতিরিক্ত মাহর অথবা পণ ও যৌতুক-প্রথাও ব্যভিচারের একটি কারণ। কেননা, উভয় প্রথাই বিবাহের পথে বড় বাধা।
৫- মহিলাদের বেপর্দা চলন ও নগ্নতা। ব্যভিচার ও ধর্ষণের এটি একটি বড় কারণ। ছিলা কলাতে মাছি বসা স্বাভাবিক। ছিলা লেবু বা খোলা তেঁতুল দেখলে জিভে পানি আসা মানুষের প্রকৃতিগত ব্যাপার। অনুরূপ পর্দা-হীনা, অর্ধ নগ্না ও প্রায় পূর্ণ নগ্না যুবতী দেখলে যুবকের মনে কাম উত্তেজিত হওয়াও স্বাভাবিক। আর এ জন্যই ইসলামে পর্দার বিধান অনুসরণ করা মহিলার উপর ফরয করা হয়েছে। নারীকে তার সৌন্দর্য বেগানা পুরুষকে প্রদর্শন করতে নিষেধ করা হয়েছে। (সূরা নূর, আয়াত: ৩১)
আর মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে,
«الْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ، فَإِذَا خَرَجَتْ اسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ»
“নারী হলো গোপনীয় জিনিস। তাই যখন সে (গোপনীয়তা থেকে) বের হয়, তখন শয়তান তাকে পুরুষের চোখে শোভনীয়া ও লোভনীয়া করে তোলে [তিরমিযী, হাদিস: ১১৭৩; মিশকাত, হাদিস: ৩১০৯]।”
৬- নোংরা ফিল্ম দেখা, অশ্লীল পত্র-পত্রিকা পড়া এবং গান শোনা। যৌবনের কামনায় যৌন-চেতনা বা উত্তেজনা বলে একটা জিনিস আছে। যার অর্থ এই যে, যৌন-কামনা ঘুমিয়ে থাকে বা তাকে সুপ্ত রাখা যায় এবং কখনো কখনো তা প্রশান্ত থাকে বা তাকে প্রশমিত রাখা সম্ভব। বলা বাহুল্য নোংরা ফিল্ম, পত্র-পত্রিকা এবং গান হলো এমন জিনিস, যা সুপ্ত যৌনকামনাকে জাগ্রত করে এবং প্রশান্ত যৌন-বাসনাকে উত্তেজিত করে। এ ছাড়া এ উম্মতের সম্মানিত উত্তরসূরীগণ বলতেন যে, ‘গান হলো ব্যভিচারের মন্ত্র।’
৭- বেশ্যাবৃত্তির স্বীকৃতি ও সমাজে তাদের পেশাদারীর অনুমতি। তাদেরকে ‘যৌনকর্মী’ বলে আখ্যায়িত করে তাদের বৃত্তিকে অর্থোপার্জনের এক পেশা বলে স্বীকার করে নেওয়া ব্যভিচার প্রসার লাভের অন্যতম কারণ।
৮- মদ ও মাদক-দ্রব্যের ব্যাপক ব্যবহার। মদ, হিরোইন প্রভৃতির নেশায় নারীর নেশা ও চাহিদা সৃষ্টি হয় মাতাল মনে। ফলে এর কারণেও ব্যভিচার ব্যাপক হয়।
৯- আর সবচেয়ে বড় ও প্রধান কারণ হল, দ্বীন ও ঈমানের দুর্বলতা, নৈতিক চরিত্রের অবক্ষয়। যার মাঝে ঈমান ও তাকওয়া নেই, সে ব্যভিচার থেকে বাঁচতে পারে না। এমন ব্যক্তির মনের ডোর শয়তানের হাতে থাকে। অথবা নিজের খেয়াল-খুশী মত চালাতে থাকে নিজের জীবন ও যৌবনকে।
বলা বাহুল্য, যুবক যদি উল্লেখিত ব্যভিচারের কারণসমূহ থেকে দূরে থাকতে পারে, তাহলে অবশ্যই সে ব্যভিচার থেকে বাঁচতে পারবে। পক্ষান্তরে উপরোক্ত কারণসমূহের কোনো একটির কাছাকাছি গেলেই ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ে পড়বে। আর মহান আল্লাহর ঘোষণা হল,
﴿ وَلَا تَقۡرَبُواْ ٱلزِّنَىٰٓۖ إِنَّهُۥ كَانَ فَٰحِشَةٗ وَسَآءَ سَبِيلٗا ٣٢ ﴾ [ الاسراء : ٣٢ ]
“তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। কারণ তা হলো অশ্লীল এবং নোংরা পথ।” [সূরা ইসরা, আয়াত: ৩২]
ব্যভিচার ব্যাপক আকারে প্রসার লাভ করা এই কথার ইঙ্গিত যে, কিয়ামত অতি নিকটে আসছে। [বুখারী, হাদিস: ৮১, মুসলিম, হাদিস: ২৬৭১]
অতএব যত দিন যাবে, ব্যভিচার পৃথিবীময় তত আরও বৃদ্ধি পাবে। তবে ঈমানদাররা ঈমান নিয়ে অবশ্যই সর্বদা সে অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকবে।
১- পর্দাহীনতা দূর করে, সমাজে পবিত্র পর্দা-আইন চালু করা। আর এ দায়িত্ব হলো প্রত্যেক মুসলিমের, নারী ও পুরুষ, যুবক ও বৃদ্ধ, রাজা ও প্রজা সকলের।
২- ব্যভিচারের ‘হদ্দ্’ দণ্ডবিধি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চালু করা। এমন শাস্তি প্রয়োগ করা, যাতে কোনো লম্পট তার লাম্পট্যে সুযোগ ও সাহস না পায়।
৩- মহিলাকে কোনো মাহরাম বা স্বামী ছাড়া একাকিনী বাড়ির বাইরে না ছাড়া।
৪- কোনো বেগানা (দেওর, বুনাই, নন্দাই, বন্ধু প্রভৃতি) পুরুষের সাথে নারীকে নির্জনতা অবলম্বন করার সুযোগ না দেওয়া। সে বেগানা পুরুষ ফিরিশতা তুল্য হলেও তার সহিত মহিলাকে নির্জন বাস বা সফর করতে না দেওয়া।
৫- সৎ-চরিত্র গঠন করার সামাজিক ভূমিকা পালন করা; অশ্লীল ছবি, পত্র-পত্রিকা, গানবাজনা, যাত্রা-থিয়েটার প্রভৃতি বন্ধ করা এবং রেডিও, টিভি ও পত্র-পত্রিকা ইত্যাদি প্রচারমাধ্যমে সচ্চরিত্র গঠনের উপর তাকীদ প্রচার করা।
৬- সর্বতোভাবে বিবাহের সকল উপায়-উপকরণ সহজ করা। সহজে বিবাহ হওয়ার পথে সকল বাধা-বিপত্তি দূর করা।
৭- স্কুল-কলেজে সহশিক্ষা বন্ধ করে বালক ও বালিকাদের জন্য পৃথক পৃথক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থা করা। অবিবাহিত তরুণ-তরুণী ও কিশোর-কিশোরীকে যৌন-শিক্ষা না দেওয়া।
৮- নারীর জন্য পৃথক চাকুরী-ক্ষেত্র তৈরী করা।
৯- সকল প্রকার বেশ্যাবৃত্তি ও যৌন-ব্যবসা বন্ধ করা।
কিন্তু বন্ধু! তুমি যদি কোনো অমুসলিম রাষ্ট্রে বাস কর, তাহলে নোংরামির স্রোতে গা না ভাসিয়ে নিজেকে ও নিজের পরিবার-পরিজনকে বাঁচানোর জন্য নিম্নের উপদেশমালা গ্রহণ করঃ-
২- ব্যভিচারের ‘হদ্দ্’ দণ্ডবিধি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চালু করা। এমন শাস্তি প্রয়োগ করা, যাতে কোনো লম্পট তার লাম্পট্যে সুযোগ ও সাহস না পায়।
৩- মহিলাকে কোনো মাহরাম বা স্বামী ছাড়া একাকিনী বাড়ির বাইরে না ছাড়া।
৪- কোনো বেগানা (দেওর, বুনাই, নন্দাই, বন্ধু প্রভৃতি) পুরুষের সাথে নারীকে নির্জনতা অবলম্বন করার সুযোগ না দেওয়া। সে বেগানা পুরুষ ফিরিশতা তুল্য হলেও তার সহিত মহিলাকে নির্জন বাস বা সফর করতে না দেওয়া।
৫- সৎ-চরিত্র গঠন করার সামাজিক ভূমিকা পালন করা; অশ্লীল ছবি, পত্র-পত্রিকা, গানবাজনা, যাত্রা-থিয়েটার প্রভৃতি বন্ধ করা এবং রেডিও, টিভি ও পত্র-পত্রিকা ইত্যাদি প্রচারমাধ্যমে সচ্চরিত্র গঠনের উপর তাকীদ প্রচার করা।
৬- সর্বতোভাবে বিবাহের সকল উপায়-উপকরণ সহজ করা। সহজে বিবাহ হওয়ার পথে সকল বাধা-বিপত্তি দূর করা।
৭- স্কুল-কলেজে সহশিক্ষা বন্ধ করে বালক ও বালিকাদের জন্য পৃথক পৃথক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থা করা। অবিবাহিত তরুণ-তরুণী ও কিশোর-কিশোরীকে যৌন-শিক্ষা না দেওয়া।
৮- নারীর জন্য পৃথক চাকুরী-ক্ষেত্র তৈরী করা।
৯- সকল প্রকার বেশ্যাবৃত্তি ও যৌন-ব্যবসা বন্ধ করা।
কিন্তু বন্ধু! তুমি যদি কোনো অমুসলিম রাষ্ট্রে বাস কর, তাহলে নোংরামির স্রোতে গা না ভাসিয়ে নিজেকে ও নিজের পরিবার-পরিজনকে বাঁচানোর জন্য নিম্নের উপদেশমালা গ্রহণ করঃ-
১- তোমার পরিবার ও পরিবেশের মাঝে একটি স্বায়ত্ত-শাসনভুক্ত রাষ্ট্র গঠন কর এবং সেই রাষ্ট্রে যথা-সম্ভব ইসলামী আইন চালু কর।
২- অশ্লীলতার মোকাবিলা করার জন্য নিজের আত্মাকে ট্রেনিং দাও। আল্লাহ-ভীতি ও ‘তাকওয়া’ মনের মাঝে সঞ্চিত রাখ। শয়তান ও খেয়াল-খুশীর দাসত্ব করা থেকে বহু ক্রোশ দূরে থাক। ‘নাফসে আম্মারাহ’কে সর্বদা দমন করে রাখ। মনে-প্রাণে আল্লাহর স্মরণ রাখ। মন প্রশান্ত থাকবে।
৩- পরিপূর্ণ মু’মিন হলো সেই ব্যক্তি, যে তার চরিত্রে সবচেয়ে সুন্দর। অতএব তুমি তোমার চরিত্রকে সুন্দর ও পবিত্র কর।
৪- নোংরা পরিবেশে ধৈর্যশীলতা অবলম্বন কর। ধৈর্যের ফল বড় মিঠা হয়। অতএব ধৈর্যের সাথে অশ্লীলতার মোকাবিলা কর।
৫- মন্দ পরিণামকে ভয় কর। দুনিয়া ও আখেরাতের লাঞ্ছনা ও শাস্তির ভয় রাখ।
৬- অশ্লীলতা ও ব্যভিচার থেকে বাঁচতে পারলে তাতে যে সওয়াব ও মর্যাদা লাভ হয়, তার লোভ ও আশা রাখ। কিয়ামতে ছায়াহীন মাঠে আরশের ছায়া লাভ এবং বেহেশতে হুরীদের সহিত ইচ্ছাসুখের সম্ভোগের কথা মনে রাখ।
৭- মনে রেখো যে, তুমি যেমন চাও না, তোমার মা-বোন বা স্ত্রী ব্যভিচারিণী অথবা ধর্ষিতা হোক, তেমনি অন্য কেউই তা চায় না। অতএব সকলের ক্ষেত্রে ন্যায়পরায়ণতা বজায় রাখ।
৮- লজ্জাশীলতা ঈমানের একটি অংশ ও শাখা। মু’মিন হিসাবে তুমি সে মহৎ গুণকে তোমার হƒদয় থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিও না। লজ্জাশীলতা তোমার মনের প্রতি অশ্লীলতার সকল ছিদ্রপথ বন্ধ করুক।
৯- হিম্মত উঁচু রাখ। নিজের সচ্চরিত্রতা নিয়ে নিজেকে ধন্য মনে কর। আর মনে রেখো যে, সচ্চরিত্র এক অমূল্য ধন; যা আর কারো না থাকলে তোমার আছে।
১০- সেই সকল অশ্লীল বই-পুস্তক ও পত্র-পত্রিকা পড়া অবশ্যই ত্যাগ কর, যা পড়ে তোমার হƒদয়ে কামনার উদ্রেক হয়, যৌন উত্তেজনা সৃষ্টি হয় দেহ-মনে। আর সেই সকল বই-পুস্তক ও পত্র-পত্রিকা পড়, যাতে এ সব পাপ ও তার শাস্তির কথা আলোচিত হয়েছে, যাতে রয়েছে আল্লাহ-ভীতির কথা।
১১- ইসলাম ও তার শরীয়তকে তোমার জীবনের সকল ক্ষেত্রে জীবন-বিধান বলে জানো ও মানো। দেখবে, সকল সমস্যার সমাধান রয়েছে ইসলামে।
১২- সম্ভব হলে সত্বর বিবাহ করে ফেল। কারণ, বিবাহই হলো এ সমস্যার সবচেয়ে উত্তম সমাধান। বিবাহ হলো অর্ধেক দ্বীন। বিবাহ হলো শান্তির মলম। বিবাহিতকে আল্লাহ সাহায্য করে থাকেন। সুতরাং চাকুরী না হলেও, নিজের পায়ে না দাঁড়ালেও, পড়া শেষ না হলেও তুমি বিবাহ কর। তোমার জন্য আল্লাহর সাহায্য আছে। আর জেনে রেখো যে, ব্যভিচারে পড়ার ভয় থাকলে তোমার জন্য বিবাহ করা ফরয।
১৩- মনের খেয়াল-খুশী ও প্রবৃত্তির ডোর নিজের হাতে ধরে থেকো এবং শয়তানের হাতে ছেড়ে দিও না। তোমার মনকে পবিত্র রেখো। কারণ,
﴿ قَدۡ أَفۡلَحَ مَن زَكَّىٰهَا ٩ وَقَدۡ خَابَ مَن دَسَّىٰهَا ١٠ ﴾ [ الشمس : ٩، ١٠ ]
“যে তার মনকে পবিত্র করবে, সে হবে সফলকাম এবং যে তা কলুষিত করবে, সেই হবে অসফল।” [সূরা আস-শামস, আয়াত: ৯-১০]
১৪- মনকে নিয়ন্ত্রিত ও সংযত করার জন্য রোযা রাখ। এই রোযা তোমার যৌন-কামনাও দমন করবে।
১৫- ব্যভিচার থেকে বাঁচার জন্য চোখের ব্যভিচার থেকে দূরে থাক। আল্লাহর হারামকৃত বস্তুর দিকে দৃষ্টিপাত করো না। হারামের সামনে নজর ঝুঁকিয়ে চল।
১৬- সকল প্রকার যৌন-চিন্তা মন থেকে তুলে ফেল। আর এর জন্য ইসলামী ক্যাসেট শোন, বই পড়। নেক বন্ধুর কাছে গিয়ে বস এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের কথা আলোচনা কর। একা থাকলে কুরআন ও তার অর্থ পড়।
১৭- যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী সকল উপায় ও উপকরণ থেকে দূরে থাক। ভাবী ও চাচাতো-খালাতো-মামাতো-ফুফাতো বোনরা বেপর্দা হলে তাদেরকে নিজের বোনের মত দেখো। বন্ধুর বউ বেপর্দা হলে তার সাথে বন্ধুত্ব বর্জন কর। প্রয়োজন ছাড়া বেড়াবার উদ্দেশ্যে এমন স্থানে (হাটে-বাজারে) বেড়াতে যেও না, যেখানে নেংটা মহিলা নজরে আসে। টিভি-সিনেমা, নাটক-যাত্রা-থিয়েটার দেখা বন্ধ কর। ব্যভিচারের মন্ত্র গান শোনা বর্জন কর। স্কুল-কলেজে সহপাঠিনী থেকে দূরে থাক এবং ধৈর্যের সাথে দৃষ্টি সংযত রাখ।
১৮- সুশীল বন্ধু গ্রহণ কর এবং এমন বন্ধুর সংসর্গ ত্যাগ কর, যে যৌন ও নারীর কথা আলোচনা করে মজা নেয় ও আসর জমায়।
১৯- নির্জনতা ত্যাগ কর। বেকারত্ব দূর কর। কোনো একটা কাজ ধরে নাও এবং সে কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাক।
২০- যদি তুমি এমন দেশে থাক, যে দেশে ব্যভিচার কোনো পাপ বা অপরাধ নয় অথবা এমন জায়গায় চাকুরী কর, যেখানে মহিলা সহকর্মীরা অযাচিতভাবে তোমার গায়ে পড়তে আসে, তাহলে সম্ভব হলে তুমি সে দেশ, পরিবেশ ও চাকুরী ত্যাগ করে বিকল্প ব্যবস্থা নাও। অর্থের জন্য নিজের চরিত্র ও ঈমান হারিয়ো না। আল্লাহ তোমার সহায়। যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য কিছু ত্যাগ করে, আল্লাহ তাকে বিনিময়ে তার চেয়ে উত্তম জিনিস দান করেন।
২১- তওবা ও ইস্তিগফার করতে থাক। নারীর ফিতনা থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা কর। আল্লাহ তোমাকে নোংরামি থেকে রক্ষা করবেন।
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ ٱتَّقَوۡاْ إِذَا مَسَّهُمۡ طَٰٓئِفٞ مِّنَ ٱلشَّيۡطَٰنِ تَذَكَّرُواْ فَإِذَا هُم مُّبۡصِرُونَ ٢٠١ ﴾ [ الاعراف : ٢٠٠ ]
“অবশ্যই যাদের মনে আল্লাহর ভয় রয়েছে, তাদেরকে শয়তান কুমন্ত্রণা দেওয়ার সাথে সাথে তারা সতর্ক হয়ে যায় এবং তখনই তাদের বিবেচনা-শক্তি জাগ্রত হয়ে ওঠে। (তারা হয় আত্ম সচেতন মানুষ। [সূরা আ’রাফ, আয়াত: ২০১])
২- অশ্লীলতার মোকাবিলা করার জন্য নিজের আত্মাকে ট্রেনিং দাও। আল্লাহ-ভীতি ও ‘তাকওয়া’ মনের মাঝে সঞ্চিত রাখ। শয়তান ও খেয়াল-খুশীর দাসত্ব করা থেকে বহু ক্রোশ দূরে থাক। ‘নাফসে আম্মারাহ’কে সর্বদা দমন করে রাখ। মনে-প্রাণে আল্লাহর স্মরণ রাখ। মন প্রশান্ত থাকবে।
৩- পরিপূর্ণ মু’মিন হলো সেই ব্যক্তি, যে তার চরিত্রে সবচেয়ে সুন্দর। অতএব তুমি তোমার চরিত্রকে সুন্দর ও পবিত্র কর।
৪- নোংরা পরিবেশে ধৈর্যশীলতা অবলম্বন কর। ধৈর্যের ফল বড় মিঠা হয়। অতএব ধৈর্যের সাথে অশ্লীলতার মোকাবিলা কর।
৫- মন্দ পরিণামকে ভয় কর। দুনিয়া ও আখেরাতের লাঞ্ছনা ও শাস্তির ভয় রাখ।
৬- অশ্লীলতা ও ব্যভিচার থেকে বাঁচতে পারলে তাতে যে সওয়াব ও মর্যাদা লাভ হয়, তার লোভ ও আশা রাখ। কিয়ামতে ছায়াহীন মাঠে আরশের ছায়া লাভ এবং বেহেশতে হুরীদের সহিত ইচ্ছাসুখের সম্ভোগের কথা মনে রাখ।
৭- মনে রেখো যে, তুমি যেমন চাও না, তোমার মা-বোন বা স্ত্রী ব্যভিচারিণী অথবা ধর্ষিতা হোক, তেমনি অন্য কেউই তা চায় না। অতএব সকলের ক্ষেত্রে ন্যায়পরায়ণতা বজায় রাখ।
৮- লজ্জাশীলতা ঈমানের একটি অংশ ও শাখা। মু’মিন হিসাবে তুমি সে মহৎ গুণকে তোমার হƒদয় থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিও না। লজ্জাশীলতা তোমার মনের প্রতি অশ্লীলতার সকল ছিদ্রপথ বন্ধ করুক।
৯- হিম্মত উঁচু রাখ। নিজের সচ্চরিত্রতা নিয়ে নিজেকে ধন্য মনে কর। আর মনে রেখো যে, সচ্চরিত্র এক অমূল্য ধন; যা আর কারো না থাকলে তোমার আছে।
১০- সেই সকল অশ্লীল বই-পুস্তক ও পত্র-পত্রিকা পড়া অবশ্যই ত্যাগ কর, যা পড়ে তোমার হƒদয়ে কামনার উদ্রেক হয়, যৌন উত্তেজনা সৃষ্টি হয় দেহ-মনে। আর সেই সকল বই-পুস্তক ও পত্র-পত্রিকা পড়, যাতে এ সব পাপ ও তার শাস্তির কথা আলোচিত হয়েছে, যাতে রয়েছে আল্লাহ-ভীতির কথা।
১১- ইসলাম ও তার শরীয়তকে তোমার জীবনের সকল ক্ষেত্রে জীবন-বিধান বলে জানো ও মানো। দেখবে, সকল সমস্যার সমাধান রয়েছে ইসলামে।
১২- সম্ভব হলে সত্বর বিবাহ করে ফেল। কারণ, বিবাহই হলো এ সমস্যার সবচেয়ে উত্তম সমাধান। বিবাহ হলো অর্ধেক দ্বীন। বিবাহ হলো শান্তির মলম। বিবাহিতকে আল্লাহ সাহায্য করে থাকেন। সুতরাং চাকুরী না হলেও, নিজের পায়ে না দাঁড়ালেও, পড়া শেষ না হলেও তুমি বিবাহ কর। তোমার জন্য আল্লাহর সাহায্য আছে। আর জেনে রেখো যে, ব্যভিচারে পড়ার ভয় থাকলে তোমার জন্য বিবাহ করা ফরয।
১৩- মনের খেয়াল-খুশী ও প্রবৃত্তির ডোর নিজের হাতে ধরে থেকো এবং শয়তানের হাতে ছেড়ে দিও না। তোমার মনকে পবিত্র রেখো। কারণ,
﴿ قَدۡ أَفۡلَحَ مَن زَكَّىٰهَا ٩ وَقَدۡ خَابَ مَن دَسَّىٰهَا ١٠ ﴾ [ الشمس : ٩، ١٠ ]
“যে তার মনকে পবিত্র করবে, সে হবে সফলকাম এবং যে তা কলুষিত করবে, সেই হবে অসফল।” [সূরা আস-শামস, আয়াত: ৯-১০]
১৪- মনকে নিয়ন্ত্রিত ও সংযত করার জন্য রোযা রাখ। এই রোযা তোমার যৌন-কামনাও দমন করবে।
১৫- ব্যভিচার থেকে বাঁচার জন্য চোখের ব্যভিচার থেকে দূরে থাক। আল্লাহর হারামকৃত বস্তুর দিকে দৃষ্টিপাত করো না। হারামের সামনে নজর ঝুঁকিয়ে চল।
১৬- সকল প্রকার যৌন-চিন্তা মন থেকে তুলে ফেল। আর এর জন্য ইসলামী ক্যাসেট শোন, বই পড়। নেক বন্ধুর কাছে গিয়ে বস এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের কথা আলোচনা কর। একা থাকলে কুরআন ও তার অর্থ পড়।
১৭- যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী সকল উপায় ও উপকরণ থেকে দূরে থাক। ভাবী ও চাচাতো-খালাতো-মামাতো-ফুফাতো বোনরা বেপর্দা হলে তাদেরকে নিজের বোনের মত দেখো। বন্ধুর বউ বেপর্দা হলে তার সাথে বন্ধুত্ব বর্জন কর। প্রয়োজন ছাড়া বেড়াবার উদ্দেশ্যে এমন স্থানে (হাটে-বাজারে) বেড়াতে যেও না, যেখানে নেংটা মহিলা নজরে আসে। টিভি-সিনেমা, নাটক-যাত্রা-থিয়েটার দেখা বন্ধ কর। ব্যভিচারের মন্ত্র গান শোনা বর্জন কর। স্কুল-কলেজে সহপাঠিনী থেকে দূরে থাক এবং ধৈর্যের সাথে দৃষ্টি সংযত রাখ।
১৮- সুশীল বন্ধু গ্রহণ কর এবং এমন বন্ধুর সংসর্গ ত্যাগ কর, যে যৌন ও নারীর কথা আলোচনা করে মজা নেয় ও আসর জমায়।
১৯- নির্জনতা ত্যাগ কর। বেকারত্ব দূর কর। কোনো একটা কাজ ধরে নাও এবং সে কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাক।
২০- যদি তুমি এমন দেশে থাক, যে দেশে ব্যভিচার কোনো পাপ বা অপরাধ নয় অথবা এমন জায়গায় চাকুরী কর, যেখানে মহিলা সহকর্মীরা অযাচিতভাবে তোমার গায়ে পড়তে আসে, তাহলে সম্ভব হলে তুমি সে দেশ, পরিবেশ ও চাকুরী ত্যাগ করে বিকল্প ব্যবস্থা নাও। অর্থের জন্য নিজের চরিত্র ও ঈমান হারিয়ো না। আল্লাহ তোমার সহায়। যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য কিছু ত্যাগ করে, আল্লাহ তাকে বিনিময়ে তার চেয়ে উত্তম জিনিস দান করেন।
২১- তওবা ও ইস্তিগফার করতে থাক। নারীর ফিতনা থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা কর। আল্লাহ তোমাকে নোংরামি থেকে রক্ষা করবেন।
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ ٱتَّقَوۡاْ إِذَا مَسَّهُمۡ طَٰٓئِفٞ مِّنَ ٱلشَّيۡطَٰنِ تَذَكَّرُواْ فَإِذَا هُم مُّبۡصِرُونَ ٢٠١ ﴾ [ الاعراف : ٢٠٠ ]
“অবশ্যই যাদের মনে আল্লাহর ভয় রয়েছে, তাদেরকে শয়তান কুমন্ত্রণা দেওয়ার সাথে সাথে তারা সতর্ক হয়ে যায় এবং তখনই তাদের বিবেচনা-শক্তি জাগ্রত হয়ে ওঠে। (তারা হয় আত্ম সচেতন মানুষ। [সূরা আ’রাফ, আয়াত: ২০১])
তারপর আসা যাক আমাদের পিতা-মাতার কথায়। আমাদের পিতামাতা হচ্ছে সন্তানদের সবচেয়ে বড় শিক্ষক। ছোটকাল থেকে তারা সন্তানদের যে ধরণের শিক্ষা দেন সন্তানরা সেই শিক্ষাতেই বড় হয়ে ওঠে। সন্তানকে আদর্শ ও চরিত্রবান করতে গেলে মা-বাবাদের সেই ধরণের শিক্ষা দিতে হয়। শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাই একজন ছেলে/মেয়েকে নৈতিকতা সম্পন্ন মানুষ করতে পারে না। এজন্য পরিবারের বাবা-মায়ের ভূমিকা ব্যাপক এবং বাবা মায়েদের উচিত সন্তানকে ভালো লেখা পড়ার পাশাপাশি নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষা দেওয়া। সে কোথায় যায়, কোনো বন্ধুদের সাথে মেলামেশা করে এসব বিষয়ে আগ্রহ সহকারে খোঁজখবর নিতে হবে। মনে সবচেয়ে বড় কষ্ট পাই যখন দেখি, S.S.C এবং H.S.C তে A+ পাওয়া ছেলে পেলেগুলো পাড়ার মোড়ে সিগারেট ফুঁকছে কিংবা গার্লস স্কুলের সামনে অসহায়ভাবে দাড়িয়ে থাকছে এবং নানা রকম অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ছে। তাই বাবা মাকে এইসব ব্যাপারে জরুরী ভূমিকা পালন করতে হবে।
পাশাপাশি বাসায় ইসলামী শিক্ষাদান করতে হবে কারণ মানুষের নৈতিক চরিত্র বিকাশের ক্ষেত্রে ইসলামী শিক্ষার বিকল্প নেই। ‘তুমি ভালো রেজাল্ট করলেই তার সাত খুন মাফ’ অথবা ‘আমার দরকার ভালো রেজাল্ট, তারপর তুমি যা খুশী তাই কর আমার কোনো আপত্তি নেই’ সন্তানদের প্রতি এ ধরণের মনোভাব আজকাল পিতামাতার মধ্যে বেশী দেখা যাচ্ছে এ ধরনের মন মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। কোনটা সঠিক পথ আর কোনটা ভুল পথ সেটা স্পষ্ট করে সন্তানদের বোঝাতে হবে। কিন্তু বর্তমানে কিছু বাবা-মায়ের হয়ত ধারণা জন্মেছে সন্তান ভালো করে লেখাপড়া করলে, ভালো রেজাল্ট করলেই সে ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু এই ধরণের ধারণা শুধু অমূলক নয় রীতিমত ভয়ংকরও বটে। আমার করুণা হয় ঐসব অভিভাবকদের প্রতি যারা তাদের মেয়েদের ওড়না ছাড়া টি-শার্ট, জিনসের প্যান্ট পরে বাইরে বের হতে দেয়। অবশ্য তাদের বাবা মাও যদি অমন চরিত্রের হয় তাহলে বলার কিছু থাকে না। কারণ, সর্বাঙ্গে ব্যথা ঔষধ দিব কোথা। অভিভাবকরা যদি তাদের সন্তানদের উগ্র পোশাক পরতে দেয় তাহলে তাদেরকেই পস্তাতে হবে। আরব্য কবির একটি উক্তি মনে পড়ে যায়, তা হল- ‘ইন্নাকা লা-তাজনি মিনাশ শাওকিল ইনাব’ তুমি কাঁটাযুক্ত বৃক্ষ থেকে কখনো আঙ্গুর ফল পাবে না। সারা দেশ নয়, শুধু ঢাকা শহরেই লাখ লাখ মা-বাবা রয়েছেন যারা তাদের ছেলে-মেয়েদের নিয়ে চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন।
পাশাপাশি বাসায় ইসলামী শিক্ষাদান করতে হবে কারণ মানুষের নৈতিক চরিত্র বিকাশের ক্ষেত্রে ইসলামী শিক্ষার বিকল্প নেই। ‘তুমি ভালো রেজাল্ট করলেই তার সাত খুন মাফ’ অথবা ‘আমার দরকার ভালো রেজাল্ট, তারপর তুমি যা খুশী তাই কর আমার কোনো আপত্তি নেই’ সন্তানদের প্রতি এ ধরণের মনোভাব আজকাল পিতামাতার মধ্যে বেশী দেখা যাচ্ছে এ ধরনের মন মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। কোনটা সঠিক পথ আর কোনটা ভুল পথ সেটা স্পষ্ট করে সন্তানদের বোঝাতে হবে। কিন্তু বর্তমানে কিছু বাবা-মায়ের হয়ত ধারণা জন্মেছে সন্তান ভালো করে লেখাপড়া করলে, ভালো রেজাল্ট করলেই সে ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু এই ধরণের ধারণা শুধু অমূলক নয় রীতিমত ভয়ংকরও বটে। আমার করুণা হয় ঐসব অভিভাবকদের প্রতি যারা তাদের মেয়েদের ওড়না ছাড়া টি-শার্ট, জিনসের প্যান্ট পরে বাইরে বের হতে দেয়। অবশ্য তাদের বাবা মাও যদি অমন চরিত্রের হয় তাহলে বলার কিছু থাকে না। কারণ, সর্বাঙ্গে ব্যথা ঔষধ দিব কোথা। অভিভাবকরা যদি তাদের সন্তানদের উগ্র পোশাক পরতে দেয় তাহলে তাদেরকেই পস্তাতে হবে। আরব্য কবির একটি উক্তি মনে পড়ে যায়, তা হল- ‘ইন্নাকা লা-তাজনি মিনাশ শাওকিল ইনাব’ তুমি কাঁটাযুক্ত বৃক্ষ থেকে কখনো আঙ্গুর ফল পাবে না। সারা দেশ নয়, শুধু ঢাকা শহরেই লাখ লাখ মা-বাবা রয়েছেন যারা তাদের ছেলে-মেয়েদের নিয়ে চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন।
অভিভাবকদের অবশ্যই তার সন্তানদের সালাতে যত্নবান হতে শেখাতে হবে। কারণ, সালাত মানুষকে ভালো হতে শেখায় খারাব বা মন্দ হতে বারণ করে। তবে এর জন্য জরুরী হলো মাতা-পিতা/অভিভাবক নিজেও সালাতে অভ্যস্ত হতে হবে। আর যদি তারা নিজেরাও সালাত আদায়কারী বা সালাতে যত্নবান না হন, তবে আমাদের আর বলার কিছুই থাকে না। কারণ, সর্ব জায়গায় ক্ষত মলম দিব কত। এ বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তোমরা তোমাদের সন্তানদের সাত বছর বয়সে সালাত আদায়ের নির্দেশ দাও আর যখন তারা দশ বছর বয়সে পৌঁছে যাবে, তখন তোমরা তাদের সালাত আদায় না করার উপর প্রহার কর।” [আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৯৫।]
সন্তানদের অবশ্যই ভালো শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক ও শিক্ষার পরিবেশ ইত্যাদি অবশ্যই বিবেচ্য। আপনার ছেলে কি নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে কিনা, কোন ধরনের শিক্ষকের নিকট থেকে সে শিক্ষা অর্জন করছে তার চরিত্র কি? আপনি যে স্কুল বা মাদ্রাসায় আপনার ছেলে পাঠাচ্ছেন সেখানকার পরিবেশ কি তা অবশ্যই আপনাকে বিবেচনায় আনতে হবে। আর যদি আপনি শুধু সার্টিফিকেট নির্ভর পড়া লেখায় বিশ্বাসী হয়ে থাকেন তাহলে তো কোনো কথাই না। মনে রাখবেন, কু-শিক্ষার চেয়ে অ-শিক্ষা ভালো। যে শিক্ষা একজন মানুষকে চরিত্রবান করে গড়ে তুলে না, যে শিক্ষা একজন মানুষকে মানবতা শেখায় না, সে শিক্ষাই কু-শিক্ষা। গুরুজনকে কিভাবে শ্রদ্ধা করতে হয় তার তালীম দেওয়া এবং সে ব্যাপারে তাদের উৎসাহ দেয়া সুশিক্ষা হিসেবে বিবেচ্য।
বর্তমানে যুব সমাজের চরিত্র হরণের অন্যতম উপকরণ হল, প্রচার মাধ্যম। পেপার, পত্রিকা, ম্যাগাজিন, রেডিও, টেলিভিশন ইত্যাদি বর্তমানে যুবকদের বিপথগামী করা এবং তাদের নৈতিক পতনের অন্যতম কারণ। এ সব প্রচারমাধ্যম নারী ও পুরুষের নগ্ন ছবি, উলঙ্গ, অর্ধ উলঙ্গ চিত্র ও বিভিন্ন প্রকারের খারাব দৃশ্য দ্বারা ভরে থাকে। ফলে যুবকরা এ সব খারাব দৃশ্য দেখে প্রভাবিত হচ্ছে এবং অপকর্মের প্রতি ধাবিত হচ্ছে। যেখানে প্রচার মাধ্যমগুলোর কাজ ছিল মানুষের নিকট সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ খবরগুলো তুলে ধরা, মানুষকে অন্যায় অপরাধ থেকে সতর্ক করা এবং মানুষের চারিত্রিক উন্নতি সাধনে কাজ করে যাওয়া, তা না করে, বর্তমানে প্রচার মাধ্যমগুলো মিথ্যা খবর পরিবেশন করে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্ত চড়াচ্ছে এবং মানুষকে অপরাধপ্রবণ করে তুলছে এবং অপকর্মের প্রতি টেনে নিয়ে যাচ্ছে। প্রচার মাধ্যমগুলো আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতিকে মুছে দিয়ে পশ্চিমা দুনিয়ার-বিজাতীয় সংস্কৃতিকে আমাদের মুসলিম দেশগুলোতে বাস্তবায়ন করতে চায়। কিন্তু এর পরিণতি যে কত ভয়াবহ ও বিপদজনক তা আমাদের মুসলিম যুবকরা বুঝতে পারছে না এবং তা বুঝার জন্য যে পরিমাণ জ্ঞান-বুদ্ধি ও বিচক্ষণতা দরকার তা তাদের অনুপস্থিত। আমাদের মুসলিম যুবকদের পশ্চিমাদের বিষাক্ত ছোবল থেকে বাচাতে হলে, প্রচার মাধ্যমগুলোকে অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং মিথ্যা খবর পরিবেশন থেকে বিরত রাখতে হবে। বিশেষ করে টেলিভিশন, রেডিও ইত্যাদিতে যুবকরা খারাপ সিনেমা, নাটক, গান-বাজনা ইত্যাদি দেখে এবং শোনে এক অজানা গন্তব্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে। তারা বুঝতে পারছে না যে তাদের পরিণতি ও ভবিষ্যৎ কত অন্ধকার। শুধু আমরা টেলিভিশন, পত্রিকা, রাজনৈতিক মঞ্চ এবং সভা সেমিনারে যতই নান্দনিক এবং শ্রুতিমধুর ভুলি বর্ষণ করি না কেন, সুন্দর ও আলোকিত সমাজ এবং সমৃদ্ধ জাতি গড়তে হলে সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দিতে হবে আমাদের এ প্রজন্ম যুব সমাজের নৈতিক উন্নতির প্রতি। অবক্ষয় থেকে বাঁচতে হলে প্রতিষ্ঠা করতে হবে একটি মাদক মুক্ত, পশ্চিমা সংস্কৃতির নগ্ন ছোবল থেকে মুক্ত একটি আধুনিক সমাজ।
বর্তমান সময়ে, রাস্তাঘাটে উঠতি বয়সের কিছু ছেলেকে দেখা যায় তাদের মাথার চুল উস্কুখুস্কু, শর্ট শার্ট পরা, জিনসের প্যান্ট কোমরের নিচের দিকে পরা, হাত একটু উঁচু করলেই লজ্জা স্থানের কিয়দংশ দেখা যায়। প্যান্টের নিচের অংশ পায়ের পাতার নিচে পরে থাকে অনেকটা ঝাড়ুদারের কাজ করে। দাঁড়ি কেটে মুখের বিশেষ জায়গায় এমনভাবে রাখে যেটা নিশ্চিত কোনো ইহুদী, খৃস্টান, হিন্দু অথবা তথাকথিত মুসলিম নামধারী নায়ক কিংবা কণ্ঠশিল্পীরা করে থাকে।
আর কিছু মেয়েরা ধর্ম, জাত-পাত সব ভুলে পোশাক ছোট করতে করতে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে আশংকা হয় তারা ক’দিন পরে চিড়িয়াখানার সদস্যদের মত কিছু দাবি না করে বসে।
এ সবের মুল কারণ হল, লজ্জাহীনতা। যখন মানুষের মধ্যে লজ্জা না থাকে, তখন সে যা ইচ্ছা তাই করতে পারে। লজ্জা মানুষকে খারাপ ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে, ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ করে। লজ্জা আত্মার একটি ভালো গুণ এবং যাবতীয় উন্নত চরিত্রের মূল, ঈমানের সৌন্দর্য ও ইসলামের নিদর্শন। যেমন- হাদিসে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
" إن لكل دين خُلقًا، وخُلُقُ الإسلام الحياء ".
প্রতিটি দ্বীনের জন্য উত্তম চরিত্র রয়েছে, আর ইসলামের উত্তম চরিত্র হল, লজ্জা। [ইবনে মাজাহ: ৪১৮১] যার মধ্যে লজ্জা আছে, তার চরিত্র ঠিক আর যার মধ্যে লজ্জা নেই তার চরিত্র ঠিক নেই। লজ্জা মানুষকে নিরাপত্তা দেয় অপমান অপদস্থের হাত থেকে রক্ষা করে।
ওহাব ইবন মুনাব্বেহ রহ. বলেন, ঈমান বস্ত্রহীন, ঈমানের পোশাক তাকওয়া আর ঈমানের সৌন্দর্য লজ্জা। কেউ কেউ বলেন, যে ব্যক্তি ঈমানকে লজ্জার পোশাক পরিধান করাবে, লোকেরা তার দোষ দেখতে পাবে না।
লজ্জা গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে, ইসলাম লজ্জার প্রতি মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে এবং উৎসাহ দেয়। এমনকি লজ্জাকে ঈমান বলে আখ্যায়িত করে। বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
" الإيمان بضعٌ وسبعون شعبة، فأفضلها قول : لا إله إلا الله، وأدناها : إماطة الأذى عن الطريق، والحياء شعبة من الإيمان ".
ঈমানের শাখা সত্তরের অধিক, সর্বোত্তম শাখা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা, আর সব চেয়ে ছোট শাখা হল, কষ্টদায়ক বস্তুকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়া। আর লজ্জা ঈমানের অন্যতম শাখা। [নাসায়ী, হাদিস: ৫০০৫] অপর একটি হাদিসে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
" الحياء والإيمان قرنا جميعًا، فإذا رفع أحدهما رفع الآخر ".
“লজ্জা ও ঈমান একটি অপরটির পরিপূরক। যখন একটি বিলুপ্ত হবে, তখন অন্যটি এমনিতেই চলে যাবে”। লজ্জা ঈমান হওয়ার রহস্য- ঈমান ও লজ্জা উভয়টি মানুষকে কল্যাণের প্রতি আহ্বান করে এবং খারাপ কর্ম হতে দূরে সরায়।
যখন তুমি মানুষের মধ্যে উদাসীনতা, অশ্লীলতা ও নোংরামি দেখবে, তখন তুমি বুঝবে যে মানুষের মধ্যে লজ্জাহীনতা বেড়ে গেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
" إن مما أدرك الناس من كلام النبوة الأولى : إذا لم تستحِ فاصنع ما شئت ".
“পূর্বের যুগের নবীদের অবশিষ্ট কথা যা পরবর্তী যুগের উম্মতরা পেয়েছে, তা হল, যখন তুমি লজ্জা করবে না, তখন তুমি যা চাও তাই কর”। [বুখারি, হাদিস:৬১২০]
আর কিছু মেয়েরা ধর্ম, জাত-পাত সব ভুলে পোশাক ছোট করতে করতে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে আশংকা হয় তারা ক’দিন পরে চিড়িয়াখানার সদস্যদের মত কিছু দাবি না করে বসে।
এ সবের মুল কারণ হল, লজ্জাহীনতা। যখন মানুষের মধ্যে লজ্জা না থাকে, তখন সে যা ইচ্ছা তাই করতে পারে। লজ্জা মানুষকে খারাপ ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে, ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ করে। লজ্জা আত্মার একটি ভালো গুণ এবং যাবতীয় উন্নত চরিত্রের মূল, ঈমানের সৌন্দর্য ও ইসলামের নিদর্শন। যেমন- হাদিসে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
" إن لكل دين خُلقًا، وخُلُقُ الإسلام الحياء ".
প্রতিটি দ্বীনের জন্য উত্তম চরিত্র রয়েছে, আর ইসলামের উত্তম চরিত্র হল, লজ্জা। [ইবনে মাজাহ: ৪১৮১] যার মধ্যে লজ্জা আছে, তার চরিত্র ঠিক আর যার মধ্যে লজ্জা নেই তার চরিত্র ঠিক নেই। লজ্জা মানুষকে নিরাপত্তা দেয় অপমান অপদস্থের হাত থেকে রক্ষা করে।
ওহাব ইবন মুনাব্বেহ রহ. বলেন, ঈমান বস্ত্রহীন, ঈমানের পোশাক তাকওয়া আর ঈমানের সৌন্দর্য লজ্জা। কেউ কেউ বলেন, যে ব্যক্তি ঈমানকে লজ্জার পোশাক পরিধান করাবে, লোকেরা তার দোষ দেখতে পাবে না।
লজ্জা গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে, ইসলাম লজ্জার প্রতি মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে এবং উৎসাহ দেয়। এমনকি লজ্জাকে ঈমান বলে আখ্যায়িত করে। বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
" الإيمان بضعٌ وسبعون شعبة، فأفضلها قول : لا إله إلا الله، وأدناها : إماطة الأذى عن الطريق، والحياء شعبة من الإيمان ".
ঈমানের শাখা সত্তরের অধিক, সর্বোত্তম শাখা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা, আর সব চেয়ে ছোট শাখা হল, কষ্টদায়ক বস্তুকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়া। আর লজ্জা ঈমানের অন্যতম শাখা। [নাসায়ী, হাদিস: ৫০০৫] অপর একটি হাদিসে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
" الحياء والإيمان قرنا جميعًا، فإذا رفع أحدهما رفع الآخر ".
“লজ্জা ও ঈমান একটি অপরটির পরিপূরক। যখন একটি বিলুপ্ত হবে, তখন অন্যটি এমনিতেই চলে যাবে”। লজ্জা ঈমান হওয়ার রহস্য- ঈমান ও লজ্জা উভয়টি মানুষকে কল্যাণের প্রতি আহ্বান করে এবং খারাপ কর্ম হতে দূরে সরায়।
যখন তুমি মানুষের মধ্যে উদাসীনতা, অশ্লীলতা ও নোংরামি দেখবে, তখন তুমি বুঝবে যে মানুষের মধ্যে লজ্জাহীনতা বেড়ে গেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
" إن مما أدرك الناس من كلام النبوة الأولى : إذا لم تستحِ فاصنع ما شئت ".
“পূর্বের যুগের নবীদের অবশিষ্ট কথা যা পরবর্তী যুগের উম্মতরা পেয়েছে, তা হল, যখন তুমি লজ্জা করবে না, তখন তুমি যা চাও তাই কর”। [বুখারি, হাদিস:৬১২০]
যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম মোবাইল ফোন এখন আর শুধু কথা বলার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। চীনের সুবাদে ইন্টারনেট, চ্যাটিং, অডিও, ভিডিও সহ সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা সমৃদ্ধ মোবাইল সেটের মূল্য সকলের সাধ্যের মধ্যেই আছে। আকাশ সংস্কৃতি, ইন্টারনেট, মোবাইল, ভিডিও’র মত প্রযুক্তি এখন সবার জন্য অবারিত। নিত্য নতুন বহুরূপী সুযোগ সুবিধা সমৃদ্ধ মোবাইল সেট তরুণদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
মোবাইল সেট নিয়ে সব চেয়ে বেশী মাতামাতি লক্ষ্য করা গেছে বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে। কখনও প্রয়োজনে কখনও সময়ের সাথে তাল মিলাতে গিয়ে অভিভাবকরা বাধ্য হয়েই অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের হাতে তুলে দিচ্ছে মোবাইল নামক যন্ত্র। কিন্তু কখনও কি অভিভাবকরা চিন্তা করে দেখেছে মোবাইলের পার্শ্ব কিছু অপব্যবহারের কারণে তার সন্তান বিপথগামী হয়ে পড়ছে? সম্প্রতি বিভিন্ন পত্রপত্রিকার সংবাদের দিকে একটু নজর দিলেই বোঝা যায় মোবাইল মানুষের নৈতিকতাকে কিভাবে ধ্বংস করছে। খুন, ধর্ষণ, ইভ-টিজিং সহ যে সকল ঘটনা অহরহ ঘটে চলেছে তার পিছনে মোবাইলের একটা ভূমিকা বরাবরই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের বড় একটা অংশ জড়িয়ে পরেছে মোবাইল পর্ণোগ্রাফি বা ব্লু ফিল্ম আসক্তিতে। ইন্টারনেটের সুবাদে এবং বিভিন্ন মোবাইল সার্ভিসিং সেন্টার থেকে গান ঢুকানোর নামে শিক্ষার্থীরা সুলভেই তাদের মোবাইল ম্যামোরীতে নগ্ন ভিডিও ক্লিপস লোড করে নিচ্ছে। এ সব নগ্ন ভিডিও এক সাথে অনেকে মিলে দেখছে এবং ব্লুটুথ এর সুবাদে তা এক হাত অন্য হাত হয়ে ছড়িয়ে পরছে সবার হাতে হাতে। শুধু তাই নয় ক্লাসের পিছনের বেঞ্চে বসে ক্লাসের সময় শিক্ষকের চোখ ফাঁকি দিয়ে মোবাইলের অপব্যবহারের কথাও শোনা গেছে। ভাবার বিষয় হচ্ছে, এ আসক্তি শুধু ছেলেদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, মেয়েদের ও একটা বড় অংশ ব্লু ফিল্ম আসক্তিতে জড়িয়ে পরেছে। এর ফলে খুব অল্প বয়সেই ছেলে মেয়েদের মাঝে যৌন আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার কারণে প্রতিনিয়ত ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, ইভ-টিজিং, আত্মহত্যা, অপহরণসহ অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ছে অল্পবয়সী ছেলে মেয়েরা। আধুনিকতার নামে এই উগ্র আধুনিকতার কবলে পড়ে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম দিন দিন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এগিয়ে যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে এই ধ্বংস থেকে বাঁচাতে তাদের নৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা সব থেকে বেশী জরুরী। পাশাপাশি সন্তানদের মোবাইল সেট কিনে দেওয়ার সময় অভিভাবকদের ও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যাতে করে মোবাইলের অপব্যবহার না হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে যাতে করে ব্যাঙ্গের ছাতার মত গড়ে উঠা সার্ভিসিং সেন্টারগুলো থেকে মোবাইলে পর্ণোগ্রাফি ছড়িয়ে পড়তে না পারে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের বিশেষ করে মাধ্যমিক পড়ুয়াদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মোবাইল ব্যবহারের ব্যাপারে বিধি নিষেধের ব্যাপারে সরকারীভাবে ভেবে দেখার সময় এসে
মোবাইল সেট নিয়ে সব চেয়ে বেশী মাতামাতি লক্ষ্য করা গেছে বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে। কখনও প্রয়োজনে কখনও সময়ের সাথে তাল মিলাতে গিয়ে অভিভাবকরা বাধ্য হয়েই অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের হাতে তুলে দিচ্ছে মোবাইল নামক যন্ত্র। কিন্তু কখনও কি অভিভাবকরা চিন্তা করে দেখেছে মোবাইলের পার্শ্ব কিছু অপব্যবহারের কারণে তার সন্তান বিপথগামী হয়ে পড়ছে? সম্প্রতি বিভিন্ন পত্রপত্রিকার সংবাদের দিকে একটু নজর দিলেই বোঝা যায় মোবাইল মানুষের নৈতিকতাকে কিভাবে ধ্বংস করছে। খুন, ধর্ষণ, ইভ-টিজিং সহ যে সকল ঘটনা অহরহ ঘটে চলেছে তার পিছনে মোবাইলের একটা ভূমিকা বরাবরই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের বড় একটা অংশ জড়িয়ে পরেছে মোবাইল পর্ণোগ্রাফি বা ব্লু ফিল্ম আসক্তিতে। ইন্টারনেটের সুবাদে এবং বিভিন্ন মোবাইল সার্ভিসিং সেন্টার থেকে গান ঢুকানোর নামে শিক্ষার্থীরা সুলভেই তাদের মোবাইল ম্যামোরীতে নগ্ন ভিডিও ক্লিপস লোড করে নিচ্ছে। এ সব নগ্ন ভিডিও এক সাথে অনেকে মিলে দেখছে এবং ব্লুটুথ এর সুবাদে তা এক হাত অন্য হাত হয়ে ছড়িয়ে পরছে সবার হাতে হাতে। শুধু তাই নয় ক্লাসের পিছনের বেঞ্চে বসে ক্লাসের সময় শিক্ষকের চোখ ফাঁকি দিয়ে মোবাইলের অপব্যবহারের কথাও শোনা গেছে। ভাবার বিষয় হচ্ছে, এ আসক্তি শুধু ছেলেদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, মেয়েদের ও একটা বড় অংশ ব্লু ফিল্ম আসক্তিতে জড়িয়ে পরেছে। এর ফলে খুব অল্প বয়সেই ছেলে মেয়েদের মাঝে যৌন আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার কারণে প্রতিনিয়ত ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, ইভ-টিজিং, আত্মহত্যা, অপহরণসহ অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ছে অল্পবয়সী ছেলে মেয়েরা। আধুনিকতার নামে এই উগ্র আধুনিকতার কবলে পড়ে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম দিন দিন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এগিয়ে যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে এই ধ্বংস থেকে বাঁচাতে তাদের নৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা সব থেকে বেশী জরুরী। পাশাপাশি সন্তানদের মোবাইল সেট কিনে দেওয়ার সময় অভিভাবকদের ও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যাতে করে মোবাইলের অপব্যবহার না হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে যাতে করে ব্যাঙ্গের ছাতার মত গড়ে উঠা সার্ভিসিং সেন্টারগুলো থেকে মোবাইলে পর্ণোগ্রাফি ছড়িয়ে পড়তে না পারে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের বিশেষ করে মাধ্যমিক পড়ুয়াদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মোবাইল ব্যবহারের ব্যাপারে বিধি নিষেধের ব্যাপারে সরকারীভাবে ভেবে দেখার সময় এসে
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক যুব সমাজের জন্য একটি মারাত্মক সমস্যা। বর্তমানে যুব সমাজ ফেসবুক ইন্টারনেটের প্রতি প্রতিটি মুহূর্তে হুমড়ি খেয়ে ঝুঁকে পড়ছে। লেখাপড়া ফাঁকি দিয়ে ফেসবুকে চ্যাট করে কেউ কেউ রাত পার করে দিচ্ছে। পড়া-লেখা নষ্ট হচ্ছে, সময় নষ্ট হচ্ছে, তার প্রতি কোনো ভ্রুক্ষেপ তারা করছে না। বর্তমানে যুবক যুবতীরা ফেসবুক ইন্টারনেটের প্রতি খুব আসক্ত হয়ে পড়ায় তাদের জীবন এখন হুমকির মখে পড়ছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম এ ফেসবুককে তারা তাদের বিভিন্ন ধরনের অপকর্মের যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাদের জীবনের মহা মূল্যবান সময়কে প্রতিদিনই এখানে ব্যয় করছে। ফলে তারা পড়ালেখা হতে দূরে সরে যাচ্ছে এবং দেখা অদেখা যুবক যুবতীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তুলে নানাবিধ সমাজ বিরোধী কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ছে।
বর্তমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে সব শিক্ষা দেওয়া হয়, তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাস্তবতা ও নৈতিকতা বিবর্জিত। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে নৈতিক শিক্ষার খুবই অভাব। এ ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার করে তাতে দ্বীনি শিক্ষা ও বাস্তবধর্মী শিক্ষার ব্যবস্থা করতে পারলেই, যুব সমাজের অবক্ষয় রোধ করা সম্ভব। যুব সমাজের অবক্ষয় রোধে সঠিক আকীদা, হারাম হালাল, মানুষের সাথে লেন-দেন, পারিবারিক জীবন ব্যবস্থা, আচার-ব্যবহার ইত্যাদি নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা বর্তমানে সময়ের অন্যতম দাবী।
মসজিদ, মাদ্রাসা ইত্যাদির সভা সেমিনারে যুবকদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য উন্মুক্ত আলোচনার ব্যবস্থা করা এবং প্রশ্ন উত্তরের মাধ্যমে তাদের শিক্ষার দানের ব্যবস্থা করা, যাতে তারা তাদের সমস্যাগুলির সমাধান ও তাদের পথ চলার গতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা লাভ করতে সক্ষম হয়। মুসলিম যুব সমাজকে সংশোধনের ক্ষেত্রে আলেম-ওলামা, বুদ্ধিজীবী ও জ্ঞানীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য অনেক। কিন্তু বর্তমানে মুসলিম যুব সমাজের মাঝে আর আলেম-ওলামা, বুদ্ধিজীবী ও জ্ঞানীদের মাঝে বিশাল দূরত্ব ও ফাটল পরিলক্ষিত। এটি কোনো সুফল ভয়ে আনতে পারে না এবং শুভ লক্ষণও নয় বরং এটি যুব সমাজের অবক্ষয় ও পতনের অন্যতম কারণ। এর জন্য শুধু যুবকদের দোষারোপ করে বসে থাকলে চলবে না, আলেমদেরই তাদের সংশোধন করা ও ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে।
মসজিদ, মাদ্রাসা ইত্যাদির সভা সেমিনারে যুবকদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য উন্মুক্ত আলোচনার ব্যবস্থা করা এবং প্রশ্ন উত্তরের মাধ্যমে তাদের শিক্ষার দানের ব্যবস্থা করা, যাতে তারা তাদের সমস্যাগুলির সমাধান ও তাদের পথ চলার গতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা লাভ করতে সক্ষম হয়। মুসলিম যুব সমাজকে সংশোধনের ক্ষেত্রে আলেম-ওলামা, বুদ্ধিজীবী ও জ্ঞানীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য অনেক। কিন্তু বর্তমানে মুসলিম যুব সমাজের মাঝে আর আলেম-ওলামা, বুদ্ধিজীবী ও জ্ঞানীদের মাঝে বিশাল দূরত্ব ও ফাটল পরিলক্ষিত। এটি কোনো সুফল ভয়ে আনতে পারে না এবং শুভ লক্ষণও নয় বরং এটি যুব সমাজের অবক্ষয় ও পতনের অন্যতম কারণ। এর জন্য শুধু যুবকদের দোষারোপ করে বসে থাকলে চলবে না, আলেমদেরই তাদের সংশোধন করা ও ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে।
ছেলে-মেয়েদের অবাধ মেলা-মেশা রোধ করা যুব সমাজের অবক্ষয় হতে বাঁচানোর জন্য খুবই জরুরী। কিন্তু বর্তমান দুনিয়াতে ছেলে মেয়েদের সহাবস্থান মানবতার জন্য মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনছে। স্কুল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সহ সব ধরনের শিক্ষাঙ্গনগুলোতে ছেলে মেয়ে একসাথে বসে লেখা পড়া করছে। শিক্ষক শিক্ষিকা এক সাথে উঠ-বস করছে। এটি যে একটি অপরাধ বা মানব সভ্যতার পরিপন্থী এ অনুভূতিই আজ তাদের মধ্যে হারিয়ে গেছে। পরিস্থিতি এতই নাজুক যে এ কথা বলাই যেন একটি অপরাধ। যারা এ ধরনের কথা বলবে, তারা প্রগতি বিরোধী এবং অগ্রগতি ও উন্নতির প্রতিবন্ধক। মেইল, ফ্যাক্টরি ও গার্মেন্টসে ছেলে মেয়ে একত্র ধাক্কা-ধাক্কি করে পঙ্গ পালের মত প্রবেশ করা, উভয় লিঙ্গের বিপরীত শ্রেণীর ছেলে মেয়েদের এক সাথে একান্তে কাজ করা ইত্যাদি দ্বারা সংঘটিত অপরাধ বনের পশুদেরকেও হার মানিয়েছে।
মনে রাখতে হবে, শরীয়তের বিধান হল, বেগানা নারী-পুরুষের কোনো নির্জন স্থানে একাকী বাস, কিছু ক্ষণের জন্যও লোক-চক্ষুর অন্তরালে, ঘরের ভিতরে, পর্দার আড়ালে একান্তে অবস্থান শরীয়তে হারাম। যেহেতু তা ব্যভিচার না হলেও ব্যভিচারের নিকটবর্তী করে, ব্যভিচারের ভূমিকা অবতারণায় সহায়িকা হয়। আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “কোন পুরুষ যেন কোনো নারীর সাথে একান্তে গোপনে অবস্থান না করে। কারণ, শয়তান উভয়ের কুটনি হয়।”
এ ব্যাপারে সমাজে অধিক শৈথিল্য পরিলক্ষিত হয় দেওর-ভাবী ও শালী-বুনাই-এর ক্ষেত্রে। অথচ এদের মাঝেই বিপর্যয় ঘটে অধিক। তাই আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদের পক্ষে তাদের দেবরকে মৃত্যুর সাথে তুলনা করেছেন।”
অতএব দেবরের সাথে মায়ের বাড়ি, ডাক্তারখানা, অনুরূপ বুনাই-এর সাথে বোনের বাড়ি, ডাক্তারখানা বা কোনো বিলাস-বিহারে যাওয়া-আসা এক মারাত্মক বিস্ফোরক বিষয়।
তদনুরূপ তাদের সাথে কোনো কামরা বা স্থানে নির্জনতা অবলম্বন, বাড়ির দাসী বা দাসের সাথে গৃহকর্তা বা কর্ত্রী অথবা তাদের ছেলে-মেয়ের সাথে নিভৃত বাস, বাগদত্তা বরকনের একান্তে আলাপ বা গমন, বন্ধু-বান্ধবীর একত্রে নির্জন বাস, লিফটে কোনো বেগানা যুবক-যুবতীর একান্তে উঠা-নামা, ডাক্তার ও নার্সের একান্তে চেম্বারে অবস্থান, টিউটর ও ছাত্রীর একান্তে নির্জন বাস ও পড়াশোনা, স্বামীর অবর্তমানে কোনো বেগানা আত্মীয় বা বন্ধুর সাথে নির্জন বাস, ট্যাক্সি ড্রাইভারের সাথে বা রিক্সায় রিক্সাচালকের সাথে নির্জনে গমন, পীর ও মহিলা মুরীদদের একান্তে বায়াত ও তা’লীম প্রভৃতি একই পর্যায়ের; যাদের মাঝে শয়তান কুটনি সেজে অবৈধ বাসনা ও কামনা জাগ্রত করে কোনো পাপ সংঘটিত করতে চেষ্টা করে।
বারুদের নিকট আগুন রাখা হলে বিস্ফোরণ তো হতেই পারে। যেহেতু মানুষের মন বড় মন্দ প্রবণ এবং দুর্নিবার কামনা ও বাসনা মানুষকে অন্ধ ও বধির করে তোলে। তা ছাড়া নারীর মাঝে রয়েছে মনোরম কমনীয়তা, মহনীয়টা এবং চপলতা। আর শয়তান তো মানুষকে অসৎ কাজে ফাঁসিয়ে দিয়ে আনন্দ বোধ করে থাকে।
মনে রাখতে হবে, শরীয়তের বিধান হল, বেগানা নারী-পুরুষের কোনো নির্জন স্থানে একাকী বাস, কিছু ক্ষণের জন্যও লোক-চক্ষুর অন্তরালে, ঘরের ভিতরে, পর্দার আড়ালে একান্তে অবস্থান শরীয়তে হারাম। যেহেতু তা ব্যভিচার না হলেও ব্যভিচারের নিকটবর্তী করে, ব্যভিচারের ভূমিকা অবতারণায় সহায়িকা হয়। আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “কোন পুরুষ যেন কোনো নারীর সাথে একান্তে গোপনে অবস্থান না করে। কারণ, শয়তান উভয়ের কুটনি হয়।”
এ ব্যাপারে সমাজে অধিক শৈথিল্য পরিলক্ষিত হয় দেওর-ভাবী ও শালী-বুনাই-এর ক্ষেত্রে। অথচ এদের মাঝেই বিপর্যয় ঘটে অধিক। তাই আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদের পক্ষে তাদের দেবরকে মৃত্যুর সাথে তুলনা করেছেন।”
অতএব দেবরের সাথে মায়ের বাড়ি, ডাক্তারখানা, অনুরূপ বুনাই-এর সাথে বোনের বাড়ি, ডাক্তারখানা বা কোনো বিলাস-বিহারে যাওয়া-আসা এক মারাত্মক বিস্ফোরক বিষয়।
তদনুরূপ তাদের সাথে কোনো কামরা বা স্থানে নির্জনতা অবলম্বন, বাড়ির দাসী বা দাসের সাথে গৃহকর্তা বা কর্ত্রী অথবা তাদের ছেলে-মেয়ের সাথে নিভৃত বাস, বাগদত্তা বরকনের একান্তে আলাপ বা গমন, বন্ধু-বান্ধবীর একত্রে নির্জন বাস, লিফটে কোনো বেগানা যুবক-যুবতীর একান্তে উঠা-নামা, ডাক্তার ও নার্সের একান্তে চেম্বারে অবস্থান, টিউটর ও ছাত্রীর একান্তে নির্জন বাস ও পড়াশোনা, স্বামীর অবর্তমানে কোনো বেগানা আত্মীয় বা বন্ধুর সাথে নির্জন বাস, ট্যাক্সি ড্রাইভারের সাথে বা রিক্সায় রিক্সাচালকের সাথে নির্জনে গমন, পীর ও মহিলা মুরীদদের একান্তে বায়াত ও তা’লীম প্রভৃতি একই পর্যায়ের; যাদের মাঝে শয়তান কুটনি সেজে অবৈধ বাসনা ও কামনা জাগ্রত করে কোনো পাপ সংঘটিত করতে চেষ্টা করে।
বারুদের নিকট আগুন রাখা হলে বিস্ফোরণ তো হতেই পারে। যেহেতু মানুষের মন বড় মন্দ প্রবণ এবং দুর্নিবার কামনা ও বাসনা মানুষকে অন্ধ ও বধির করে তোলে। তা ছাড়া নারীর মাঝে রয়েছে মনোরম কমনীয়তা, মহনীয়টা এবং চপলতা। আর শয়তান তো মানুষকে অসৎ কাজে ফাঁসিয়ে দিয়ে আনন্দ বোধ করে থাকে।
সালাত মানুষের নৈতিক উৎকর্ষ সাধনের অন্যতম হাতিয়ার। সালাত মানুষকে খারাব ও মন্দ কাজ হতে বিরত রাখে এবং ভালো কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে। এ কারণে একজন বাচ্চা যখন ভালো মন্দ বিচার করতে পারে, তখন থেকেই তাকে সালাত আদায় করার আদেশ দিতে হবে। যাতে সে সালাত আদায়ে অভ্যস্ত হয় এবং বড় হয়ে সালাত আদায়ের প্রতি যত্নবান হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مُرُوا أَوْلَادَكُمْ بِالصَّلَاةِ وَهُمْ أَبْنَاءُ سَبْعِ سِنِينَ، وَاضْرِبُوهُمْ عَلَيْهَا، وَهُمْ أَبْنَاءُ عَشْرٍ وَفَرِّقُوا بَيْنَهُمْ فِي الْمَضَاجِعِ»
“তোমাদের বাচ্চাদের সাত বছর বয়সে সালাত আদায়ের আদেশ দাও এবং বছর বয়সে সালাত আদায় না করার জন্য তাদের প্রহার কর। আর তোমরা তাদের বিছানা আলাদা করে দাও”। [আবু দাউদ: ৪৯৫]
হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় ইসলাম যুবকদের অধিক গুরুত্ব দেয়। যুবকদের বয়সের পরিবর্তনের সাথে তাদের নির্দেশনাও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। ক্ষমতা ও যোগ্যতা অনুযায়ী ইসলাম যুবকদের দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। যেমন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«كُلُّ مَوْلُودٍ يُولَدُ عَلَى المِلَّةِ فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِهِ أَوْ يُنَصِّرَانِهِ أَوْ يُشَرِّكَانِهِ»
“প্রতিটি নবজাতক ইসলামী ফিতরাতের উপর জন্মলাভ করে। কিন্তু তার পিতা-মাতা তাকে ইয়াহুদী, খৃষ্টান অথবা মুশরিক বানায়”। [তিরমিযি, হাদিস: ২১৩৮]
«مُرُوا أَوْلَادَكُمْ بِالصَّلَاةِ وَهُمْ أَبْنَاءُ سَبْعِ سِنِينَ، وَاضْرِبُوهُمْ عَلَيْهَا، وَهُمْ أَبْنَاءُ عَشْرٍ وَفَرِّقُوا بَيْنَهُمْ فِي الْمَضَاجِعِ»
“তোমাদের বাচ্চাদের সাত বছর বয়সে সালাত আদায়ের আদেশ দাও এবং বছর বয়সে সালাত আদায় না করার জন্য তাদের প্রহার কর। আর তোমরা তাদের বিছানা আলাদা করে দাও”। [আবু দাউদ: ৪৯৫]
হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় ইসলাম যুবকদের অধিক গুরুত্ব দেয়। যুবকদের বয়সের পরিবর্তনের সাথে তাদের নির্দেশনাও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। ক্ষমতা ও যোগ্যতা অনুযায়ী ইসলাম যুবকদের দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। যেমন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«كُلُّ مَوْلُودٍ يُولَدُ عَلَى المِلَّةِ فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِهِ أَوْ يُنَصِّرَانِهِ أَوْ يُشَرِّكَانِهِ»
“প্রতিটি নবজাতক ইসলামী ফিতরাতের উপর জন্মলাভ করে। কিন্তু তার পিতা-মাতা তাকে ইয়াহুদী, খৃষ্টান অথবা মুশরিক বানায়”। [তিরমিযি, হাদিস: ২১৩৮]
যুব সমাজের যত সব সমস্যা আছে তার মধ্যে বিবাহ না করা বা দেরিতে বিবাহ করা এটি একটি অন্যতম সমস্যা। সুতরাং যুবকদের সমস্যার প্রতিকারের জন্য অবশ্যই বিবাহ সম্পর্কে যুবকদের মধ্যে যে আতঙ্ক রয়েছে তা দূর করতে হবে এবং যথা সময়ে তাদের বিবাহের ব্যবস্থা করতে হবে। নিম্নে আমরা বিবাহ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত আলোচনা তুলে ধরব।
যুবকদের অন্যতম সমস্যা হল, সময়মত বিবাহ না করা। এটি একটি মারাত্মক সমস্যা, যার কারণে যুব সমাজকে এত বেশি ও অসংখ্য ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়, যা কেবল আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। বিবাহ না করার তারা বিভিন্ন কারণ দেখায়। যেমন-
এক- তাড়া-তাড়ি বিবাহ করলে, পড়া লেখার ক্ষতি এবং ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়।
দুই- দ্রুত বিবাহ করা দ্বারা তার উপর স্ত্রী সন্তানের খরচ করার দায়িত্ব বর্তায়, যা তার জন্য কঠিন হয়।
তিন- যুবকদের বিবাহ করা হতে দূরে থাকার সবচেয়ে ক্ষতিকর বিবাহ করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা। যেমন, অধিক খরচ, যা অনেক সময় একজন যুবক বহন করতে সক্ষম হয় না। এটি আমার দৃষ্টিতে যুবকদেরকে বিবাহ হতে দূরে রাখার সবচেয়ে বড় সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা।
আমরা আন্তরিক হলে, যুবকদের এ ধরনের সমস্যার সমাধান করা খুব সহজ এবং সহনীয়। প্রথমত: বিবাহ করার মধ্যে একজন যুবকের জন্য কি কি কল্যাণ, সাওয়াব, নেকী ও গুণাগুণ রয়েছে, তার বর্ণনা যুবকদের সামনে তুলে ধরতে হবে। দুনিয়াতে সব কিছুরই ভালো ও খারাপ দিক রয়েছে। অনুরূপভাবে বিবাহও। আমি বলি না যে, এর কোনো খারাপ দিক নাই। কিন্তু বিবাহের ভালো দিক, খারাপ দিকের তুলনায় অধিক উত্তম, ভালো, কল্যাণকর ও অগ্রগণ্য। সুতরাং, একজন যুবককে বিবাহের কল্যাণকর দিকগুলো বুঝাবে এবং বিবাহ করার প্রতি উৎসাহ দেবে, যাতে তারা বিবাহের প্রতি আকৃষ্ট হয়।
এক- তাড়া-তাড়ি বিবাহ করলে, পড়া লেখার ক্ষতি এবং ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়।
দুই- দ্রুত বিবাহ করা দ্বারা তার উপর স্ত্রী সন্তানের খরচ করার দায়িত্ব বর্তায়, যা তার জন্য কঠিন হয়।
তিন- যুবকদের বিবাহ করা হতে দূরে থাকার সবচেয়ে ক্ষতিকর বিবাহ করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা। যেমন, অধিক খরচ, যা অনেক সময় একজন যুবক বহন করতে সক্ষম হয় না। এটি আমার দৃষ্টিতে যুবকদেরকে বিবাহ হতে দূরে রাখার সবচেয়ে বড় সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা।
আমরা আন্তরিক হলে, যুবকদের এ ধরনের সমস্যার সমাধান করা খুব সহজ এবং সহনীয়। প্রথমত: বিবাহ করার মধ্যে একজন যুবকের জন্য কি কি কল্যাণ, সাওয়াব, নেকী ও গুণাগুণ রয়েছে, তার বর্ণনা যুবকদের সামনে তুলে ধরতে হবে। দুনিয়াতে সব কিছুরই ভালো ও খারাপ দিক রয়েছে। অনুরূপভাবে বিবাহও। আমি বলি না যে, এর কোনো খারাপ দিক নাই। কিন্তু বিবাহের ভালো দিক, খারাপ দিকের তুলনায় অধিক উত্তম, ভালো, কল্যাণকর ও অগ্রগণ্য। সুতরাং, একজন যুবককে বিবাহের কল্যাণকর দিকগুলো বুঝাবে এবং বিবাহ করার প্রতি উৎসাহ দেবে, যাতে তারা বিবাহের প্রতি আকৃষ্ট হয়।
এক- বিবাহ লজ্জাস্থানের হেফাযত এবং চোখের হেফাযত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ، عَلَيْكُمْ بِالبَاءَةِ، فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ، وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ، فَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ مِنْكُمُ البَاءَةَ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ، فَإِنَّ الصَّوْمَ لَهُ وِجَاءٌ»
“হে যুব সমাজ! তোমাদের মধ্যে যার ক্ষমতা আছে, সে যেন বিবাহ করে। কারণ, এটি চোখের জন্য নিরাপদ এবং লজ্জা-স্থানের হেফাযত। আর যদি কোনো ব্যক্তি অক্ষম হয়, সে যেন রোযা রাখে। কারণ, রোযা তার জন্য প্রতিষেধক”। [বুখারি, হাদিস: ৫০৬৬, মুসলিম, হাদিস: ১৪০০]
বর্তমানে আমাদের এ যুগে অধিকাংশ যুবকই বিবাহ করতে সক্ষম। সুতরাং, তাদের বিবাহের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার গড়িমসি করা উচিত নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَٱلَّذِينَ هُمۡ لِفُرُوجِهِمۡ حَٰفِظُونَ ٢٩ إِلَّا عَلَىٰٓ أَزۡوَٰجِهِمۡ أَوۡ مَا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُهُمۡ فَإِنَّهُمۡ غَيۡرُ مَلُومِينَ ٣٠ ﴾ [ المعارج : ٢٩، ٣٠ ]
আর যারা তাদের যৌনাঙ্গসমূহের হিফাযতকারী, তবে তাদের স্ত্রী ও তাদের ডান হাত যাদের মালিক হয়েছে, সে দাসীগণের ক্ষেত্র ছাড়া। তাহলে তারা সে ক্ষেত্রে নিন্দনীয় হবে না। [সূরা মায়ারেয, আয়াত: ২৯, ৩০]
বিবাহ লজ্জা-স্থানের জন্য নিরাপদ। অর্থাৎ বিবাহ তোমাকে মহা ক্ষতি-লজ্জা-স্থানের বিপদ-থেকে নিরাপত্তা দেবে। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, বিবাহ লজ্জা-স্থানের হেফাজত এবং চোখের নিরাপত্তা। বিবাহ একজন যুবকের চোখকে ঠাণ্ডা করে এবং বিবাহ করার কারণে একজন যুবক এদিক সেদিক তাকায়-না অথবা আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন তার প্রতি কোনো প্রকার কর্ণপাত করে না। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা তাকে হালালের মাধ্যমে হারাম হতে ফিরিয়ে নিয়েছে এবং তার অনুগ্রহ ও দয়া দ্বারা অন্য সবকিছু হতে তাকে যথেষ্ট করেছে।
দুই- বিবাহ দ্বারা আত্মার তৃপ্তি ও প্রশান্তি লাভ হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَمِنۡ ءَايَٰتِهِۦٓ أَنۡ خَلَقَ لَكُم مِّنۡ أَنفُسِكُمۡ أَزۡوَٰجٗا لِّتَسۡكُنُوٓاْ إِلَيۡهَا وَجَعَلَ بَيۡنَكُم مَّوَدَّةٗ وَرَحۡمَةًۚ ٢١ ﴾ [ الروم : ٢١ ]
“আর তার নিদর্শনা বলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এর মধ্যে নির্দেশাবলী রয়েছে সে কওমের জন্য যারা চিন্তা করে”। [সূরা রুম, আয়াত: ২১]
যখন কোনো যুবক বিবাহ করে, তখন তার খারাপ আত্মা ও কু-প্রবৃত্তি খামুশ হয়ে যায়, দিক-বেদিক ছুটা-ছুটি করা হতে বিরত থাকে এবং তার অন্তর প্রশান্তি পায়। একজন যুবক অনেক সময় দুশ্চিন্তা ও পেরেশানিতে থাকে। কিন্তু যখন সে বিবাহ করে, তখন তার আত্মা শান্তি ও নিরাপদ থাকে। মোটকথা, বিবাহ করা, একজন যুবকের জন্য অসংখ্য কল্যাণের কারণ হয়ে থাকে।
«يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ، عَلَيْكُمْ بِالبَاءَةِ، فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ، وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ، فَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ مِنْكُمُ البَاءَةَ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ، فَإِنَّ الصَّوْمَ لَهُ وِجَاءٌ»
“হে যুব সমাজ! তোমাদের মধ্যে যার ক্ষমতা আছে, সে যেন বিবাহ করে। কারণ, এটি চোখের জন্য নিরাপদ এবং লজ্জা-স্থানের হেফাযত। আর যদি কোনো ব্যক্তি অক্ষম হয়, সে যেন রোযা রাখে। কারণ, রোযা তার জন্য প্রতিষেধক”। [বুখারি, হাদিস: ৫০৬৬, মুসলিম, হাদিস: ১৪০০]
বর্তমানে আমাদের এ যুগে অধিকাংশ যুবকই বিবাহ করতে সক্ষম। সুতরাং, তাদের বিবাহের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার গড়িমসি করা উচিত নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَٱلَّذِينَ هُمۡ لِفُرُوجِهِمۡ حَٰفِظُونَ ٢٩ إِلَّا عَلَىٰٓ أَزۡوَٰجِهِمۡ أَوۡ مَا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُهُمۡ فَإِنَّهُمۡ غَيۡرُ مَلُومِينَ ٣٠ ﴾ [ المعارج : ٢٩، ٣٠ ]
আর যারা তাদের যৌনাঙ্গসমূহের হিফাযতকারী, তবে তাদের স্ত্রী ও তাদের ডান হাত যাদের মালিক হয়েছে, সে দাসীগণের ক্ষেত্র ছাড়া। তাহলে তারা সে ক্ষেত্রে নিন্দনীয় হবে না। [সূরা মায়ারেয, আয়াত: ২৯, ৩০]
বিবাহ লজ্জা-স্থানের জন্য নিরাপদ। অর্থাৎ বিবাহ তোমাকে মহা ক্ষতি-লজ্জা-স্থানের বিপদ-থেকে নিরাপত্তা দেবে। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, বিবাহ লজ্জা-স্থানের হেফাজত এবং চোখের নিরাপত্তা। বিবাহ একজন যুবকের চোখকে ঠাণ্ডা করে এবং বিবাহ করার কারণে একজন যুবক এদিক সেদিক তাকায়-না অথবা আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন তার প্রতি কোনো প্রকার কর্ণপাত করে না। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা তাকে হালালের মাধ্যমে হারাম হতে ফিরিয়ে নিয়েছে এবং তার অনুগ্রহ ও দয়া দ্বারা অন্য সবকিছু হতে তাকে যথেষ্ট করেছে।
দুই- বিবাহ দ্বারা আত্মার তৃপ্তি ও প্রশান্তি লাভ হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَمِنۡ ءَايَٰتِهِۦٓ أَنۡ خَلَقَ لَكُم مِّنۡ أَنفُسِكُمۡ أَزۡوَٰجٗا لِّتَسۡكُنُوٓاْ إِلَيۡهَا وَجَعَلَ بَيۡنَكُم مَّوَدَّةٗ وَرَحۡمَةًۚ ٢١ ﴾ [ الروم : ٢١ ]
“আর তার নিদর্শনা বলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এর মধ্যে নির্দেশাবলী রয়েছে সে কওমের জন্য যারা চিন্তা করে”। [সূরা রুম, আয়াত: ২১]
যখন কোনো যুবক বিবাহ করে, তখন তার খারাপ আত্মা ও কু-প্রবৃত্তি খামুশ হয়ে যায়, দিক-বেদিক ছুটা-ছুটি করা হতে বিরত থাকে এবং তার অন্তর প্রশান্তি পায়। একজন যুবক অনেক সময় দুশ্চিন্তা ও পেরেশানিতে থাকে। কিন্তু যখন সে বিবাহ করে, তখন তার আত্মা শান্তি ও নিরাপদ থাকে। মোটকথা, বিবাহ করা, একজন যুবকের জন্য অসংখ্য কল্যাণের কারণ হয়ে থাকে।
দ্রুত বিবাহ করার অন্যতম উপকারিতা হল, সন্তান লাভ করা যা একজন মানুষের চোখের শীতলতা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿وَٱلَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا هَبۡ لَنَا مِنۡ أَزۡوَٰجِنَا وَذُرِّيَّٰتِنَا قُرَّةَ أَعۡيُنٖ وَٱجۡعَلۡنَا لِلۡمُتَّقِينَ إِمَامًا٧٤ ﴾ [ الفرقان : ٧٤ ]
“আর যারা বলে, ‘হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান করুন যারা আমাদের চক্ষু শীতল করবে। আর আপনি আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানিয়ে দিন’। [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৭৪]
আয়াত দ্বারা বুঝা যায় স্ত্রী সন্তানরা মানুষের চোখের শীতলতা। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা জানিয়ে দেন যে, বিবাহের দ্বারা চোখের শীতলতা লাভ হয়। এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা যুবকদের বিবাহ করার প্রতি উৎসাহ দেন এবং বিবাহ করার জন্য সাহস দেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও বলেন,
﴿هَبۡ لَنَا مِنۡ أَزۡوَٰجِنَا وَذُرِّيَّٰتِنَا قُرَّةَ أَعۡيُنٖ وَٱجۡعَلۡنَا لِلۡمُتَّقِينَ إِمَامًا ٧٤﴾ [ الفرقان : ٧٤ ]
“আপনি আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান করুন যারা আমাদের চক্ষু শীতল করবে। আর আপনি আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানিয়ে দিন’। [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৭৪]
অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿ٱلۡمَالُ وَٱلۡبَنُونَ زِينَةُ ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَاۖ وَٱلۡبَٰقِيَٰتُ ٱلصَّٰلِحَٰتُ خَيۡرٌ عِندَ رَبِّكَ ثَوَابٗا وَخَيۡرٌ أَمَلٗا ٤٦﴾ [ الكهف : ٤٦ ]
“সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দুনিয়ার জীবনের শোভা। আর স্থায়ী সৎকাজ তোমার রবের নিকট প্রতিদানে উত্তম এবং প্রত্যাশাতেও উত্তম” [সূরা কাহাফ, আয়াত: ৪৬]।
সন্তান-সন্ততি দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্য। আয়াত দ্বারা প্রতীয়মান হয়, সন্তান দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্য। আর মানুষ দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্যের প্রেমিক। একজন মানুষ যেভাবে ধন-সম্পদ তালাশ করে অনুরূপভাবে সে সন্তান-সন্ততিও তালাশ করে। কারণ, মাল যেমন দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্য এমনিভাবে সন্তানও দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্য। আর আখিরাতে নেক সন্তানের নেক আমলের সাওয়াব মাতা-পিতার উপরও বর্তাবে। যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلَاثٍ : صَدَقَةٌ جَارِيَةٌ، وَعِلْمٌ يُنْتَفَعُ بِهِ، وَوَلَدٌ صَالِحٌ يَدْعُو لَهُ »
“যখন আদম সন্তান মারা যায় তখন তার তিনটি আমল ছাড়া সব আমলের সাওয়াব বন্ধ হয়ে যায়। উপকারী ইলম যা দ্বারা মানুষ উপকার লাভ করতে থাকে, সদকায়ে জারিয়া এবং নেক সন্তান যারা তাদের জন্য দু’আ করতে থাকে”। [তিরমিযি, হাদিস: ১৩৭৬, নাসায়ী হাদিস: ৩৬৫১] সুতরাং সন্তান-সন্ততির মধ্যে দুনিয়ার জীবন ও আখিরাতের জীবন উভয় জাহানের কল্যাণ নিহিত রয়েছে। অনুরূপভাবে যৌবনের শুরুতে বিবাহ করা দ্বারা যখন অধিক সন্তান লাভ হবে, তখন উম্মতে মুসলিমার সংখ্যা ও মুসলিম সমাজের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। আর মানুষ ইসলামী সমাজ গঠনের বিষয়ে অবশ্যই দায়িত্বশীল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«تَزَوَّجُوا الْوَدُودَ الْوَلُودَ فَإِنِّي مُكَاثِرٌ بِكُمُ الْأُمَمَ»
“তোমরা বিবাহ কর এমন স্ত্রীদের যারা অধিক মহব্বত করে এবং অধিক সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। কারণ কিয়ামতের দিন আমি তোমাদের আধিক্যকে নিয়ে গর্ব করব”। [আবু দাউদ, হাদিস:২০৫০, আহমদ: ১৩৫৬৯]
উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো ছাড়াও বিবাহ করাতে অনেক কল্যাণ নিহিত। যখন তুমি একজন যুবকের সামনে এ ধরনের বিষয়গুলো তুলে ধরবে, তখন তার সামনে বিবাহ হতে বিরত রাখে এ ধরনের প্রতিবন্ধকতা ও বাধা দূর হয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি বলে, দ্রুত বিবাহ করা দ্বারা পড়া লেখার ক্ষতি হয় বা উচ্চ ডিগ্রি লাভ করতে বাধা হয়, সে আসলে তোমাকে সঠিক কথা বলে নি। বরং সঠিক কথা হলো এর বিপরীত। কারণ, বিবাহ করার যে সব ফায়দা লাভ ও বৈশিষ্ট্যের কথা আমরা উপরে উল্লেখ করলাম, এগুলোর সাথে সাথে বিবাহ দ্বারা আরও যা লাভ হয়, তা হল, আত্মার প্রশান্তি, অন্তরের শান্তি ও চোখের শীতলতা। আর যখন কোনো মানুষের মন শান্ত থাকে, আত্মা পরিতৃপ্ত এবং চোখের শীতলতা থাকে, তখন তার জন্য সব কিছুই সহজ হয় এবং শিক্ষা লাভ করা সহজ হয়। আর বিবাহ বিলম্ব করা বা না করা দ্বারা মানুষের জীবনের উদ্দেশ্য তথা অধিক জ্ঞান অর্জন করাতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয় না। কিন্তু যখন বিবাহ করে, তখন তার প্রবৃত্তি শান্ত হয় এবং সে একটি বিশ্রাম স্থল লাভে ধন্য হয় এবং এমন একজন স্ত্রী লাভে সক্ষম হয়, যে তাকে শিক্ষা লাভের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে এবং বাড়ি ফিরলে তার খেদমত ও সেবা যত্ন করবে। সুতরাং, আল্লাহ তা‘আলা যখন তাড়াতাড়ি বিবাহ করার সুযোগ করে দেয়, তা অবশ্যই করা উচিত, কাল ক্ষেপণ করা কোনো ক্রমেই উচিত না। কারণ, এটি একজন ছাত্রকে তার জ্ঞান অর্জনে সহযোগিতা করে। আর বিবাহ করাতে পড়া লেখা ও জ্ঞান অর্জনে বিঘ্ন ঘটে এ ধরনের ধারণা সম্পূর্ণ অমূলক। অনুরূপভাবে তাড়াতাড়ি বিবাহ করার কারণে একজন ছাত্র বা যুবক স্ত্রী সন্তানের খরচ বহন করার দায়িত্ব নিতে হয় যার কারণে অতিরিক্ত চাপ বহন করতে হয়, এ ধরনের কথা বলাও অমূলক। কারণ, বিবাহ করা দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা বরকত ও কল্যাণ দান করবেন। বিবাহ হচ্ছে আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুকরণ ও আনুগত্য করা। আর এটি একটি সাওয়াবের কাজ ও উত্তম কাজ। যখন কোনো যুবক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদেশের অনুকরণ করার উদ্দেশ্যে বিবাহ করে, বিবাহ করাতে যে সব বরকতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে তার অনুসন্ধান করে এবং তার নিয়ত খাটি হয়, তাহলে অবশ্যই এ বিবাহ তার জন্য কল্যাণের কারণ হবে। আর মনে রাখতে হবে, রিযকের মালিক আল্লাহ। আল্লাহ বলেন,
﴿۞وَمَا مِن دَآبَّةٖ فِي ٱلۡأَرۡضِ إِلَّا عَلَى ٱللَّهِ رِزۡقُهَا وَيَعۡلَمُ مُسۡتَقَرَّهَا وَمُسۡتَوۡدَعَهَاۚ كُلّٞ فِي كِتَٰبٖ مُّبِينٖ ٦ ﴾ [ هود : ٦ ]
“আর জমিনে বিচরণকারী প্রতিটি প্রাণীর রিযকের দায়িত্ব আল্লাহরই এবং তিনি জানেন তাদের আবাসস্থল ও সমাধিস্থল”। [সূরা হুদ, আয়াত: ৬] আল্লাহ তা‘আলা যাকে বিবাহ করার তাওফিক দেন তার জন্য ও তার স্ত্রী সন্তানের রিযকের ব্যবস্থা তিনিই করবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَا تَقۡتُلُوٓاْ أَوۡلَٰدَكُم مِّنۡ إِمۡلَٰقٖ نَّحۡنُ نَرۡزُقُكُمۡ وَإِيَّاهُمۡۖ ١٥١﴾ [ الانعام : ١٥١ ]
“আর তোমরা দারিদ্রের কারণে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না। আমিও তোমাদেরকে রিযক দেই এবং তাদেরকেও”। [সূরা আনআম, আয়াত: ১৫১]
সুতরাং, মনে রাখতে হবে, কোনো যুবককে তার ক্ষমতার অতিরিক্ত কোনো দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়া হয় না। এটি নিছক একটি ধারনা বৈ আর কিছু নয়। কারণ, বিবাহের কারণে বরকত হয় এবং কল্যাণ নিশ্চিত হয়। বিবাহ মানুষের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত চিরন্তন একটি বিধান। বিবাহ করা মানুষের জন্য কোনো প্রকার আতঙ্ক বা দুঃখ কষ্টের কারণ নয়। যদি মানুষের নিয়ত ভালো হয়, তাহলে বিবাহ কল্যাণ লাভের মাধ্যমসমূহ হতে একটি অন্যতম মাধ্যম। আর বর্তমানে মানুষ বিবাহের ক্ষেত্রে যে সমস্যা ও অসুবিধার কারণ দেখায়, এগুলো সবই মানুষের –নিন্দনীয়- আবিষ্কার। কারণ, বিবাহতে এ ধরনের কোনো অসুবিধা বা সমস্যা বিবাহের সাথে সম্পৃক্ত নয়। যেমন, বড় অংকের মোহর নির্ধারণ করা, বড় করে অনুষ্ঠান করা, অনুষ্ঠান করতে গিয়ে অধিক টাকা পয়সার অপচয় করা ইত্যাদি যেগুলো বর্তমানে মানুষ করে থাকে, এগুলো করার বিষয়টি আল্লাহ তা‘আলার বিধানে নেই। বরং, বিবাহ শাদিকে সহজকরণই ইসলামী শরিয়তের মূল লক্ষ্য। বিবাহ শাদিতে যে সব অনৈতিক ও অনর্থক কাজ করা হয়ে থাকে, সে সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে হবে যে, এ ধরনের কর্মকাণ্ড তাদের কোনো উপকারে আসে না বরং তা তাদের স্ত্রী সন্তানদের ক্ষতির কারণ হয়। সুতরাং, এগুলোর সংস্কার করতে হবে এবং বিবাহ শাদিতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড যাতে না হয়, বিবাহ যাতে সহজ হয়, বিবাহতে খরচ কমিয়ে আনা যায় তার প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। আর অতিরিক্ত ব্যয়, অনুষ্ঠানাদি ইত্যাদি অনৈতিক ও অনর্থক বিষয়গুলো দূর করার উপর অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। যাতে বিবাহ শাদি তার আপন অবস্থা-সহজ পদ্ধতি কম খরচ-এর প্রতি ফিরে আসে। আল্লাহ তা‘আলার নিকট আমাদের কামনা তিনি যেন, আমাদের সবার প্রতি দয়া করেন এবং আমাদেরকে সঠিক পথের দিক হিদায়েত দেন। আর তিনি যেন, মুসলিমদের অবস্থা ও মুসলিম যুবকদের অবস্থা সংশোধন করে দেন। আরও কামনা করি আল্লাহ যেন মুসলিমদেরকে তাদের হারানো ইজ্জত, সম্মান ও গৌরবকে ফিরিয়ে দেন, তাদের অবস্থার উন্নতি দান করেন। আল্লাহর নিকট কামনা, আল্লাহ যেন, মুসলিমদের তাদের দ্বীনের বিষয়ে সাহায্য করেন এবং তাদেরকে তাদের দুশমনদের অনিষ্টতা থেকে হেফাযত করার ক্ষেত্রে তিনিই যথেষ্ট হন। আর সালাত ও সালাম নাযিল হোক আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তার পরিবার পরিজন ও তার সব সাথীদের উপর। আর যাবতীয় প্রশংসা মহান আল্লাহর, যিনি সমগ্র জগতের প্রতিপালক।
﴿وَٱلَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا هَبۡ لَنَا مِنۡ أَزۡوَٰجِنَا وَذُرِّيَّٰتِنَا قُرَّةَ أَعۡيُنٖ وَٱجۡعَلۡنَا لِلۡمُتَّقِينَ إِمَامًا٧٤ ﴾ [ الفرقان : ٧٤ ]
“আর যারা বলে, ‘হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান করুন যারা আমাদের চক্ষু শীতল করবে। আর আপনি আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানিয়ে দিন’। [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৭৪]
আয়াত দ্বারা বুঝা যায় স্ত্রী সন্তানরা মানুষের চোখের শীতলতা। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা জানিয়ে দেন যে, বিবাহের দ্বারা চোখের শীতলতা লাভ হয়। এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা যুবকদের বিবাহ করার প্রতি উৎসাহ দেন এবং বিবাহ করার জন্য সাহস দেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও বলেন,
﴿هَبۡ لَنَا مِنۡ أَزۡوَٰجِنَا وَذُرِّيَّٰتِنَا قُرَّةَ أَعۡيُنٖ وَٱجۡعَلۡنَا لِلۡمُتَّقِينَ إِمَامًا ٧٤﴾ [ الفرقان : ٧٤ ]
“আপনি আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান করুন যারা আমাদের চক্ষু শীতল করবে। আর আপনি আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানিয়ে দিন’। [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৭৪]
অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿ٱلۡمَالُ وَٱلۡبَنُونَ زِينَةُ ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَاۖ وَٱلۡبَٰقِيَٰتُ ٱلصَّٰلِحَٰتُ خَيۡرٌ عِندَ رَبِّكَ ثَوَابٗا وَخَيۡرٌ أَمَلٗا ٤٦﴾ [ الكهف : ٤٦ ]
“সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দুনিয়ার জীবনের শোভা। আর স্থায়ী সৎকাজ তোমার রবের নিকট প্রতিদানে উত্তম এবং প্রত্যাশাতেও উত্তম” [সূরা কাহাফ, আয়াত: ৪৬]।
সন্তান-সন্ততি দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্য। আয়াত দ্বারা প্রতীয়মান হয়, সন্তান দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্য। আর মানুষ দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্যের প্রেমিক। একজন মানুষ যেভাবে ধন-সম্পদ তালাশ করে অনুরূপভাবে সে সন্তান-সন্ততিও তালাশ করে। কারণ, মাল যেমন দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্য এমনিভাবে সন্তানও দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্য। আর আখিরাতে নেক সন্তানের নেক আমলের সাওয়াব মাতা-পিতার উপরও বর্তাবে। যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلَاثٍ : صَدَقَةٌ جَارِيَةٌ، وَعِلْمٌ يُنْتَفَعُ بِهِ، وَوَلَدٌ صَالِحٌ يَدْعُو لَهُ »
“যখন আদম সন্তান মারা যায় তখন তার তিনটি আমল ছাড়া সব আমলের সাওয়াব বন্ধ হয়ে যায়। উপকারী ইলম যা দ্বারা মানুষ উপকার লাভ করতে থাকে, সদকায়ে জারিয়া এবং নেক সন্তান যারা তাদের জন্য দু’আ করতে থাকে”। [তিরমিযি, হাদিস: ১৩৭৬, নাসায়ী হাদিস: ৩৬৫১] সুতরাং সন্তান-সন্ততির মধ্যে দুনিয়ার জীবন ও আখিরাতের জীবন উভয় জাহানের কল্যাণ নিহিত রয়েছে। অনুরূপভাবে যৌবনের শুরুতে বিবাহ করা দ্বারা যখন অধিক সন্তান লাভ হবে, তখন উম্মতে মুসলিমার সংখ্যা ও মুসলিম সমাজের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। আর মানুষ ইসলামী সমাজ গঠনের বিষয়ে অবশ্যই দায়িত্বশীল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«تَزَوَّجُوا الْوَدُودَ الْوَلُودَ فَإِنِّي مُكَاثِرٌ بِكُمُ الْأُمَمَ»
“তোমরা বিবাহ কর এমন স্ত্রীদের যারা অধিক মহব্বত করে এবং অধিক সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। কারণ কিয়ামতের দিন আমি তোমাদের আধিক্যকে নিয়ে গর্ব করব”। [আবু দাউদ, হাদিস:২০৫০, আহমদ: ১৩৫৬৯]
উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো ছাড়াও বিবাহ করাতে অনেক কল্যাণ নিহিত। যখন তুমি একজন যুবকের সামনে এ ধরনের বিষয়গুলো তুলে ধরবে, তখন তার সামনে বিবাহ হতে বিরত রাখে এ ধরনের প্রতিবন্ধকতা ও বাধা দূর হয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি বলে, দ্রুত বিবাহ করা দ্বারা পড়া লেখার ক্ষতি হয় বা উচ্চ ডিগ্রি লাভ করতে বাধা হয়, সে আসলে তোমাকে সঠিক কথা বলে নি। বরং সঠিক কথা হলো এর বিপরীত। কারণ, বিবাহ করার যে সব ফায়দা লাভ ও বৈশিষ্ট্যের কথা আমরা উপরে উল্লেখ করলাম, এগুলোর সাথে সাথে বিবাহ দ্বারা আরও যা লাভ হয়, তা হল, আত্মার প্রশান্তি, অন্তরের শান্তি ও চোখের শীতলতা। আর যখন কোনো মানুষের মন শান্ত থাকে, আত্মা পরিতৃপ্ত এবং চোখের শীতলতা থাকে, তখন তার জন্য সব কিছুই সহজ হয় এবং শিক্ষা লাভ করা সহজ হয়। আর বিবাহ বিলম্ব করা বা না করা দ্বারা মানুষের জীবনের উদ্দেশ্য তথা অধিক জ্ঞান অর্জন করাতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয় না। কিন্তু যখন বিবাহ করে, তখন তার প্রবৃত্তি শান্ত হয় এবং সে একটি বিশ্রাম স্থল লাভে ধন্য হয় এবং এমন একজন স্ত্রী লাভে সক্ষম হয়, যে তাকে শিক্ষা লাভের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে এবং বাড়ি ফিরলে তার খেদমত ও সেবা যত্ন করবে। সুতরাং, আল্লাহ তা‘আলা যখন তাড়াতাড়ি বিবাহ করার সুযোগ করে দেয়, তা অবশ্যই করা উচিত, কাল ক্ষেপণ করা কোনো ক্রমেই উচিত না। কারণ, এটি একজন ছাত্রকে তার জ্ঞান অর্জনে সহযোগিতা করে। আর বিবাহ করাতে পড়া লেখা ও জ্ঞান অর্জনে বিঘ্ন ঘটে এ ধরনের ধারণা সম্পূর্ণ অমূলক। অনুরূপভাবে তাড়াতাড়ি বিবাহ করার কারণে একজন ছাত্র বা যুবক স্ত্রী সন্তানের খরচ বহন করার দায়িত্ব নিতে হয় যার কারণে অতিরিক্ত চাপ বহন করতে হয়, এ ধরনের কথা বলাও অমূলক। কারণ, বিবাহ করা দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা বরকত ও কল্যাণ দান করবেন। বিবাহ হচ্ছে আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুকরণ ও আনুগত্য করা। আর এটি একটি সাওয়াবের কাজ ও উত্তম কাজ। যখন কোনো যুবক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদেশের অনুকরণ করার উদ্দেশ্যে বিবাহ করে, বিবাহ করাতে যে সব বরকতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে তার অনুসন্ধান করে এবং তার নিয়ত খাটি হয়, তাহলে অবশ্যই এ বিবাহ তার জন্য কল্যাণের কারণ হবে। আর মনে রাখতে হবে, রিযকের মালিক আল্লাহ। আল্লাহ বলেন,
﴿۞وَمَا مِن دَآبَّةٖ فِي ٱلۡأَرۡضِ إِلَّا عَلَى ٱللَّهِ رِزۡقُهَا وَيَعۡلَمُ مُسۡتَقَرَّهَا وَمُسۡتَوۡدَعَهَاۚ كُلّٞ فِي كِتَٰبٖ مُّبِينٖ ٦ ﴾ [ هود : ٦ ]
“আর জমিনে বিচরণকারী প্রতিটি প্রাণীর রিযকের দায়িত্ব আল্লাহরই এবং তিনি জানেন তাদের আবাসস্থল ও সমাধিস্থল”। [সূরা হুদ, আয়াত: ৬] আল্লাহ তা‘আলা যাকে বিবাহ করার তাওফিক দেন তার জন্য ও তার স্ত্রী সন্তানের রিযকের ব্যবস্থা তিনিই করবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَا تَقۡتُلُوٓاْ أَوۡلَٰدَكُم مِّنۡ إِمۡلَٰقٖ نَّحۡنُ نَرۡزُقُكُمۡ وَإِيَّاهُمۡۖ ١٥١﴾ [ الانعام : ١٥١ ]
“আর তোমরা দারিদ্রের কারণে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না। আমিও তোমাদেরকে রিযক দেই এবং তাদেরকেও”। [সূরা আনআম, আয়াত: ১৫১]
সুতরাং, মনে রাখতে হবে, কোনো যুবককে তার ক্ষমতার অতিরিক্ত কোনো দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়া হয় না। এটি নিছক একটি ধারনা বৈ আর কিছু নয়। কারণ, বিবাহের কারণে বরকত হয় এবং কল্যাণ নিশ্চিত হয়। বিবাহ মানুষের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত চিরন্তন একটি বিধান। বিবাহ করা মানুষের জন্য কোনো প্রকার আতঙ্ক বা দুঃখ কষ্টের কারণ নয়। যদি মানুষের নিয়ত ভালো হয়, তাহলে বিবাহ কল্যাণ লাভের মাধ্যমসমূহ হতে একটি অন্যতম মাধ্যম। আর বর্তমানে মানুষ বিবাহের ক্ষেত্রে যে সমস্যা ও অসুবিধার কারণ দেখায়, এগুলো সবই মানুষের –নিন্দনীয়- আবিষ্কার। কারণ, বিবাহতে এ ধরনের কোনো অসুবিধা বা সমস্যা বিবাহের সাথে সম্পৃক্ত নয়। যেমন, বড় অংকের মোহর নির্ধারণ করা, বড় করে অনুষ্ঠান করা, অনুষ্ঠান করতে গিয়ে অধিক টাকা পয়সার অপচয় করা ইত্যাদি যেগুলো বর্তমানে মানুষ করে থাকে, এগুলো করার বিষয়টি আল্লাহ তা‘আলার বিধানে নেই। বরং, বিবাহ শাদিকে সহজকরণই ইসলামী শরিয়তের মূল লক্ষ্য। বিবাহ শাদিতে যে সব অনৈতিক ও অনর্থক কাজ করা হয়ে থাকে, সে সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে হবে যে, এ ধরনের কর্মকাণ্ড তাদের কোনো উপকারে আসে না বরং তা তাদের স্ত্রী সন্তানদের ক্ষতির কারণ হয়। সুতরাং, এগুলোর সংস্কার করতে হবে এবং বিবাহ শাদিতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড যাতে না হয়, বিবাহ যাতে সহজ হয়, বিবাহতে খরচ কমিয়ে আনা যায় তার প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। আর অতিরিক্ত ব্যয়, অনুষ্ঠানাদি ইত্যাদি অনৈতিক ও অনর্থক বিষয়গুলো দূর করার উপর অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। যাতে বিবাহ শাদি তার আপন অবস্থা-সহজ পদ্ধতি কম খরচ-এর প্রতি ফিরে আসে। আল্লাহ তা‘আলার নিকট আমাদের কামনা তিনি যেন, আমাদের সবার প্রতি দয়া করেন এবং আমাদেরকে সঠিক পথের দিক হিদায়েত দেন। আর তিনি যেন, মুসলিমদের অবস্থা ও মুসলিম যুবকদের অবস্থা সংশোধন করে দেন। আরও কামনা করি আল্লাহ যেন মুসলিমদেরকে তাদের হারানো ইজ্জত, সম্মান ও গৌরবকে ফিরিয়ে দেন, তাদের অবস্থার উন্নতি দান করেন। আল্লাহর নিকট কামনা, আল্লাহ যেন, মুসলিমদের তাদের দ্বীনের বিষয়ে সাহায্য করেন এবং তাদেরকে তাদের দুশমনদের অনিষ্টতা থেকে হেফাযত করার ক্ষেত্রে তিনিই যথেষ্ট হন। আর সালাত ও সালাম নাযিল হোক আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তার পরিবার পরিজন ও তার সব সাথীদের উপর। আর যাবতীয় প্রশংসা মহান আল্লাহর, যিনি সমগ্র জগতের প্রতিপালক।
যুব সমাজ ধ্বংসের অন্যতম কারণ হলো দৃষ্টি। রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার সর্বত্র উলঙ্গ, অর্ধ উলঙ্গ ও নগ্ন ছবি দেখে যুব সমাজ তাদের চরিত্রকে জলাঞ্জলি দিচ্ছে প্রতি নিয়ত। এ ছাড়া ঘরে বসে টিভির পর্দায় বিভিন্ন ধরনের জোন উত্তেজক নাটক সিনেমা দেখে দেখে তারা ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে। তাই যুব সমাজকে ধ্বংস ও অপ মৃত্যুর হাত থেকে বাচাতে হলে, অবশ্যই এ সব খারাপ দৃশ্য ও নগ্ন নাটক সিনেমা থেকে চোখকে হেফাযত করতে হবে। চোখ মানবাত্মার অন্তরে কোনো কিছু প্রবেশ করা বা উদ্রেকের জন্য বড় ধরণের সু-রঙ্গ ও প্রবেশদ্বার। ইমাম কুরতবী রহ. বলেন, চোখ অন্তরে কোনো কিছু প্রবেশের বড় দরজা। চোখের কারণেই মানুষের পদস্খলনটি বেশি হয়। ফলে চোখ থেকে অধিক সতর্ক হতে হবে। চক্ষুকে নিষিদ্ধ বস্তু ও ফিতনার আশংকা থাকে এমন সব বস্তুর দিক তাকানো হতে অবনত রাখতে হবে। আর চক্ষু অবনত রাখার অর্থ, একজন মুসলিম নিষিদ্ধ বস্তুর দিক তাকানো হতে বিরত থাকবে, সে শুধু বৈধ বিষয়সমূহ দেখবে। আর যদি অনিচ্ছায় কোনো নিষিদ্ধ বস্তুর দিক নজর পড়ে যায়, তবে সাথে সাথে তা ফিরিয়ে নেবে। দৃষ্টিকে দীর্ঘায়ত করবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ قُل لِّلۡمُؤۡمِنِينَ يَغُضُّواْ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِمۡ وَيَحۡفَظُواْ فُرُوجَهُمۡۚ ذَٰلِكَ أَزۡكَىٰ لَهُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ خَبِيرُۢ بِمَا يَصۡنَعُونَ ٣٠ ﴾ [ النور : ٣٠ ]
“মুমিন পুরুষদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জা স্থানের হিফাজত করবে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। নিশ্চয় তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত”। [সূরা নূর, আয়াত: ৩০]
আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে লজ্জা স্থানের হেফাজতের পূর্বে চোখের হেফাজত করার নির্দেশ দেন। কারণ, যাবতীয় দূর্ঘটনা ও বিপদের মূল হলো দৃষ্টি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় হাদিসে আমাদেরকে চক্ষু অবনত রাখতে নির্দেশ দেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে প্রমাণিত তিনি বলেন,
اضمنوا لي ستا من أنفسكم أضمن لكم الجنة : اصدقوا إذا حدثتم، وأوفوا إذا عاهدتم، وأدوا إذا ائتمنتم، واحفظوا فروجكم، وغضوا أبصاركم، وكفوا أيديكم ".
“তোমরা আমার জন্য ছয়টি জিনিসের জিনিসের দায়িত্ব নিলে, আমি তোমাদের জান্নাতের দায়িত্ব নিব। যখন কথা বল, সত্য বল। যখন প্রতিশ্রুতি দেবে তা পুরো করবে, আর যখন তোমার নিকট আমানত রাখা হবে, তা রক্ষা করবে। আর তোমরা তোমাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করবে, তোমাদের চক্ষুকে অবনত করবে এবং তোমরা তোমাদের হাতকে বিরত রাখবে”। [আহমদ, হাদিস: ২২৭৫৭]
বরং অপর একটি হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চক্ষু অবনত রাখাকে রাস্তার হক হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি তার সাথীদেরকে বলেন,
" إياكم والجلوس في الطرقات، فقالوا : يا رسول الله مالنا من مجالسنا بُدٌّ نتحدث فيها . فقال : " فإذا أبيتم إلا المجلس فأعطوا الطريق حقه . قالوا : وما حق الطريق يا رسول الله؟ قال : غض البصر، وكف الأذى ، ورد السلام، والأمر بالمعروف، والنهي عن المنكر ".
“তোমরা রাস্তা বা মানুষের চলাচলের পথে বসা থেকে বিরত থাক। সাহাবীরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! রাস্তায় বসা ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নাই আমরা রাস্তায় বসে কথা-বার্তা বলি-আলোচনা করি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি তোমাদের বসতেই হয়, তাহলে তোমরা আল্লাহর হক আদায় কর। তারা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! রাস্তার হক কি? তিনি বললেন, চক্ষু অবনত করা, কষ্ট দায়ক বস্তু পথের থেকে সরানো, সালামের উত্তর দেয়া, সৎকাজের আদেশ দেওয়া ও অসৎ কাজ হতে নিষেধ করা”। [মুসলিম, হাদিস: ২১২১]
وقد وجد النبي صلى الله عليه وسلم الفضل بن عباس رضي الله عنهما ينظر إلى امرأة جاءت تستفتيه صلى الله عليه وسلم فأخذ بذقن الفضل فعدل وجهه عن النظر إليها .
একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট একজন মহিলা ফতোয়া জানতে আসলে, তার দিক ফযল ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমাকে তাকাতে দেখলে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার থুতনী নীচে ধরে তার চেহারাকে অন্যদিক ফিরিয়ে দেন। [বুখারি, হাদিস: ৬২২৮]
আল্লামা ইবনুল কাইয়েম রহ. বলেন, এ কাজটি হল, তাকে এ ধরনের দৃষ্টি হতে নিষেধ করা এবং কাজটি থেকে বারণ করা। যদি এ ধরনের কাজ বৈধ হত, তাহলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ফিরিয়ে না দিয়ে আপন অবস্থায় ছেড়ে দিত।
﴿ قُل لِّلۡمُؤۡمِنِينَ يَغُضُّواْ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِمۡ وَيَحۡفَظُواْ فُرُوجَهُمۡۚ ذَٰلِكَ أَزۡكَىٰ لَهُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ خَبِيرُۢ بِمَا يَصۡنَعُونَ ٣٠ ﴾ [ النور : ٣٠ ]
“মুমিন পুরুষদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জা স্থানের হিফাজত করবে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। নিশ্চয় তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত”। [সূরা নূর, আয়াত: ৩০]
আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে লজ্জা স্থানের হেফাজতের পূর্বে চোখের হেফাজত করার নির্দেশ দেন। কারণ, যাবতীয় দূর্ঘটনা ও বিপদের মূল হলো দৃষ্টি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় হাদিসে আমাদেরকে চক্ষু অবনত রাখতে নির্দেশ দেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে প্রমাণিত তিনি বলেন,
اضمنوا لي ستا من أنفسكم أضمن لكم الجنة : اصدقوا إذا حدثتم، وأوفوا إذا عاهدتم، وأدوا إذا ائتمنتم، واحفظوا فروجكم، وغضوا أبصاركم، وكفوا أيديكم ".
“তোমরা আমার জন্য ছয়টি জিনিসের জিনিসের দায়িত্ব নিলে, আমি তোমাদের জান্নাতের দায়িত্ব নিব। যখন কথা বল, সত্য বল। যখন প্রতিশ্রুতি দেবে তা পুরো করবে, আর যখন তোমার নিকট আমানত রাখা হবে, তা রক্ষা করবে। আর তোমরা তোমাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করবে, তোমাদের চক্ষুকে অবনত করবে এবং তোমরা তোমাদের হাতকে বিরত রাখবে”। [আহমদ, হাদিস: ২২৭৫৭]
বরং অপর একটি হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চক্ষু অবনত রাখাকে রাস্তার হক হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি তার সাথীদেরকে বলেন,
" إياكم والجلوس في الطرقات، فقالوا : يا رسول الله مالنا من مجالسنا بُدٌّ نتحدث فيها . فقال : " فإذا أبيتم إلا المجلس فأعطوا الطريق حقه . قالوا : وما حق الطريق يا رسول الله؟ قال : غض البصر، وكف الأذى ، ورد السلام، والأمر بالمعروف، والنهي عن المنكر ".
“তোমরা রাস্তা বা মানুষের চলাচলের পথে বসা থেকে বিরত থাক। সাহাবীরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! রাস্তায় বসা ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নাই আমরা রাস্তায় বসে কথা-বার্তা বলি-আলোচনা করি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি তোমাদের বসতেই হয়, তাহলে তোমরা আল্লাহর হক আদায় কর। তারা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! রাস্তার হক কি? তিনি বললেন, চক্ষু অবনত করা, কষ্ট দায়ক বস্তু পথের থেকে সরানো, সালামের উত্তর দেয়া, সৎকাজের আদেশ দেওয়া ও অসৎ কাজ হতে নিষেধ করা”। [মুসলিম, হাদিস: ২১২১]
وقد وجد النبي صلى الله عليه وسلم الفضل بن عباس رضي الله عنهما ينظر إلى امرأة جاءت تستفتيه صلى الله عليه وسلم فأخذ بذقن الفضل فعدل وجهه عن النظر إليها .
একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট একজন মহিলা ফতোয়া জানতে আসলে, তার দিক ফযল ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমাকে তাকাতে দেখলে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার থুতনী নীচে ধরে তার চেহারাকে অন্যদিক ফিরিয়ে দেন। [বুখারি, হাদিস: ৬২২৮]
আল্লামা ইবনুল কাইয়েম রহ. বলেন, এ কাজটি হল, তাকে এ ধরনের দৃষ্টি হতে নিষেধ করা এবং কাজটি থেকে বারণ করা। যদি এ ধরনের কাজ বৈধ হত, তাহলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ফিরিয়ে না দিয়ে আপন অবস্থায় ছেড়ে দিত।
অনেক সময় একজন মানুষ এমন কোনো স্থান বা পরিস্থিতির মুখোমুখি হন, তখন ইচ্ছা না থাকলেও নিষিদ্ধ বস্তু সমূহের উপর তার দৃষ্টি পড়ে, যাকে আমরা ‘হঠাৎ দৃষ্টি পড়া’ বলে আখ্যায়িত করে থাকি। এ ধরনের পরিস্থিতিতে করনীয় হল, দৃষ্টিকে সাথে সাথে ফিরিয়ে নেয়া। জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন,
سألت رسول الله صلى الله عليه وسلم عن نظر الفجأة فأمرني أن أصرف بصري ".
“আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হঠাৎ দৃষ্টি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে, তিনি আমাকে আমার চোখ ফিরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন। [মুসলিম, হাদিস: ২১৫৯, তিরমিযি, হাদিস: ২৭৭৬] কোনো নিষিদ্ধ বস্তুর উপর দৃষ্টি পড়ার সাথে সাথে দীর্ঘায়িত না করে চোখ ফিরিয়ে নেওয়াই হল, সর্বাধিক উপকারী ও দ্রুত চিকিৎসা। দৃষ্টিকে দীর্ঘায়িত করা হলে অপরাধী ও গুনাহগার বলে সাব্যস্ত হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«يا عليُّ لا تتبع النظرة النظرة فإن لك الأولى وليست لك الآخرة» .
“হে আলী, তুমি দৃষ্টির পুনরাবৃত্তি করবে না, কারণ, প্রথম দৃষ্টি তোমার পক্ষে, কিন্তু পরবর্তী দৃষ্টি তোমার জন্য নয়” [তিরমিযি, হাদিস: ২৭৭৭, আবুদাউদ, হাদিস: ২১৪৯, আহমদ: ২২৯৯১]।
سألت رسول الله صلى الله عليه وسلم عن نظر الفجأة فأمرني أن أصرف بصري ".
“আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হঠাৎ দৃষ্টি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে, তিনি আমাকে আমার চোখ ফিরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন। [মুসলিম, হাদিস: ২১৫৯, তিরমিযি, হাদিস: ২৭৭৬] কোনো নিষিদ্ধ বস্তুর উপর দৃষ্টি পড়ার সাথে সাথে দীর্ঘায়িত না করে চোখ ফিরিয়ে নেওয়াই হল, সর্বাধিক উপকারী ও দ্রুত চিকিৎসা। দৃষ্টিকে দীর্ঘায়িত করা হলে অপরাধী ও গুনাহগার বলে সাব্যস্ত হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«يا عليُّ لا تتبع النظرة النظرة فإن لك الأولى وليست لك الآخرة» .
“হে আলী, তুমি দৃষ্টির পুনরাবৃত্তি করবে না, কারণ, প্রথম দৃষ্টি তোমার পক্ষে, কিন্তু পরবর্তী দৃষ্টি তোমার জন্য নয়” [তিরমিযি, হাদিস: ২৭৭৭, আবুদাউদ, হাদিস: ২১৪৯, আহমদ: ২২৯৯১]।
নারীরাও চক্ষুকে অবনত রাখতে নির্দেশিত। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿قُل لِّلۡمُؤۡمِنِينَ يَغُضُّواْ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِمۡ وَيَحۡفَظُواْ فُرُوجَهُمۡۚ ذَٰلِكَ أَزۡكَىٰ لَهُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ خَبِيرُۢ بِمَا يَصۡنَعُونَ ٣٠﴾ [ النور : ٣٠ ]
“মুমিন পুরুষদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করবে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। নিশ্চয় তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত”। [সূরা নূর, আয়াত: ৩০]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿ وَقُل لِّلۡمُؤۡمِنَٰتِ يَغۡضُضۡنَ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِنَّ﴾ [ النور : ٣١ ]
“আর আপনি মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিশক্তিকে নত করে”। [সূরা আন-নূর: ৩১]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«وخير صفوف النساء المؤخر، وشرها المقدم، يا معشر النساء إذا سجد الرجال فاغضضن أبصاركن ..» الحديث .
“নারীদের জন্য উত্তম কাতার শেষের কাতার আর নিকৃষ্ট কাতার হলো সামনের কাতার। হে নারীর দল! যখন পরুষেরা সেজদা করে, তখন তোমরা তোমাদের চক্ষুকে অবনত রাখ” [আহমদ, হাদিস: ১৫১৬১]
সালফে সালেহীন তথা এ উম্মতের ভালো পূর্বসূরীগণ চক্ষুকে অবনত রাখা বিষয়ে অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকতেন। আমরা তাদের থেকে এ বিষয়ে বিভিন্ন ওয়াজ নসিহত শুনতে পাই এবং তাদের অবস্থান বুঝতে পারি, যা আমাদেরকে তাদের সাহসিকতা বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দেন। যেমন, আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,
إذا مرت بك امرأة فغمض عينيك حتى تجاوزك ".
“যদি তোমার পাশ দিয়ে কোনো নারী অতিক্রম করে, তখন অতিক্রম না করা পর্যন্ত তুমি তোমার চোখকে অবনত রাখ।”
কেউ কেউ বলেন,
من حفظ بصره أورثه الله نورا في بصيرته .
“যে ব্যক্তি তার দৃষ্টির হেফাযত করে, আল্লাহ তা‘আলা তার দূর-দৃষ্টির মধ্যে নূর ঢেলে দেন।”
আর সুফিয়ান রহ. যখন ঈদের দিন ঘর থেকে বের হতেন, তখন তিনি বলতেন,
«إن أول ما نبدأ به اليوم غض أبصارنا»
আজকের দিন আমি সর্বপ্রথম যে জিনিসটি দিয়ে শুরু করব, তা আমরা আমাদের চক্ষুকে অবনত রাখব।
এক ব্যক্তি যখন হাসান বসরীকে বলল, অনারব নারীরা তাদের বক্ষ ও মাথাকে খোলা রাখে, তখন সে বলল, اصرف بصرك . তুমি তোমার চোখকে বিরত রাখ।
রবী ইবন খাসইয়াম তিনি সর্বদা দৃষ্টিকে নিচু করে রাখতেন। একদিন তার পাশ দিয়ে কতক নারী অতিক্রম করলে, তিনি তার মাথাকে নিচু করে তার বুক পর্যন্ত নিয়ে গেলেন। তখন মহিলা মনে করল, তিনি অন্ধ, ফলে তার অন্ধত্ব থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় কামনা করল।
﴿قُل لِّلۡمُؤۡمِنِينَ يَغُضُّواْ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِمۡ وَيَحۡفَظُواْ فُرُوجَهُمۡۚ ذَٰلِكَ أَزۡكَىٰ لَهُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ خَبِيرُۢ بِمَا يَصۡنَعُونَ ٣٠﴾ [ النور : ٣٠ ]
“মুমিন পুরুষদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করবে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। নিশ্চয় তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত”। [সূরা নূর, আয়াত: ৩০]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿ وَقُل لِّلۡمُؤۡمِنَٰتِ يَغۡضُضۡنَ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِنَّ﴾ [ النور : ٣١ ]
“আর আপনি মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিশক্তিকে নত করে”। [সূরা আন-নূর: ৩১]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«وخير صفوف النساء المؤخر، وشرها المقدم، يا معشر النساء إذا سجد الرجال فاغضضن أبصاركن ..» الحديث .
“নারীদের জন্য উত্তম কাতার শেষের কাতার আর নিকৃষ্ট কাতার হলো সামনের কাতার। হে নারীর দল! যখন পরুষেরা সেজদা করে, তখন তোমরা তোমাদের চক্ষুকে অবনত রাখ” [আহমদ, হাদিস: ১৫১৬১]
সালফে সালেহীন তথা এ উম্মতের ভালো পূর্বসূরীগণ চক্ষুকে অবনত রাখা বিষয়ে অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকতেন। আমরা তাদের থেকে এ বিষয়ে বিভিন্ন ওয়াজ নসিহত শুনতে পাই এবং তাদের অবস্থান বুঝতে পারি, যা আমাদেরকে তাদের সাহসিকতা বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দেন। যেমন, আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,
إذا مرت بك امرأة فغمض عينيك حتى تجاوزك ".
“যদি তোমার পাশ দিয়ে কোনো নারী অতিক্রম করে, তখন অতিক্রম না করা পর্যন্ত তুমি তোমার চোখকে অবনত রাখ।”
কেউ কেউ বলেন,
من حفظ بصره أورثه الله نورا في بصيرته .
“যে ব্যক্তি তার দৃষ্টির হেফাযত করে, আল্লাহ তা‘আলা তার দূর-দৃষ্টির মধ্যে নূর ঢেলে দেন।”
আর সুফিয়ান রহ. যখন ঈদের দিন ঘর থেকে বের হতেন, তখন তিনি বলতেন,
«إن أول ما نبدأ به اليوم غض أبصارنا»
আজকের দিন আমি সর্বপ্রথম যে জিনিসটি দিয়ে শুরু করব, তা আমরা আমাদের চক্ষুকে অবনত রাখব।
এক ব্যক্তি যখন হাসান বসরীকে বলল, অনারব নারীরা তাদের বক্ষ ও মাথাকে খোলা রাখে, তখন সে বলল, اصرف بصرك . তুমি তোমার চোখকে বিরত রাখ।
রবী ইবন খাসইয়াম তিনি সর্বদা দৃষ্টিকে নিচু করে রাখতেন। একদিন তার পাশ দিয়ে কতক নারী অতিক্রম করলে, তিনি তার মাথাকে নিচু করে তার বুক পর্যন্ত নিয়ে গেলেন। তখন মহিলা মনে করল, তিনি অন্ধ, ফলে তার অন্ধত্ব থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় কামনা করল।
চক্ষুকে অবনত রাখার কয়েকটি উপকারিতা ইমাম ইবনুল কাইয়েম রহ. বর্ণনা করেন:
এক- আফসোসের যন্ত্রণা ও না পাওয়ার বেদনা থেকে অন্তরকে মুক্ত রাখা। কারণ, যে ব্যক্তি তার দৃষ্টিকে স্বাধীনভাবে ছেড়ে দেয়, তার আফসোস আর না পাওয়ার বেদনা লেগেই থাকে।
দুই- দৃষ্টির হেফাযত মানুষের অন্তরে নূর ও আলো সৃষ্টি করে। অনুরূপভাবে দৃষ্টিকে স্বাধীনভাবে ছেড়ে দেওয়া দ্বারা অন্তর, চেহারা ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আচ্ছন্ন হয়ে যায়।
তিন- দৃষ্টির হেফাযত করা দ্বারা একজন মানুষের দূরদর্শিতা বৃদ্ধি পায় এবং সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে সক্ষম হয়। যেমন আল্লামা কিরমানী রহ. বলেন, যে ব্যক্তি তার বাহ্যিক দিকসমূহকে সুন্নাত দারা সাজায়, আর সবসময় অন্তর দিয়ে আল্লাহর কথা চিন্তা করে, নিষিদ্ধ বস্তু হতে চোখকে হেফাযত করে, প্রবৃত্তিকে অন্যায় কর্ম হতে বিরত রাখে এবং হালাল খায় সে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে কখনোই অক্ষম হবে না।
চার- তার জন্য ইলমের পথ ও দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হবে এবং ইলমের উপকরণসমূহ তার জন্য সহজ হবে। আর এটি অন্তরের নূরের কারণেই হয়ে থাকে। কারণ, যখন অন্তর নূর দ্বারা আলোকিত হবে, তখন তার মধ্যে সব কিছুর হাকিকত স্পষ্ট হবে। আর যে ব্যক্তি তার দৃষ্টিকে যেভাবে ইচ্ছা ছেড়ে দেবে, তার অন্তর অন্ধকার ও আবর্জনাময় হবে।
পাঁচ- চোখের হেফাযত করা দ্বারা মানুষের আত্মার শক্তি, দৃঢ়তা ও সাহসিকতা বৃদ্ধি পায়।
ছয়- চোখের হেফাযত করা মানুষের অন্তরে তৃপ্তি, আনন্দ ও উজ্জ্বলতাকে বৃদ্ধি করে। চোখে দেখে কোনো কিছু উপভোগ করার লজ্জা হতে, অন্তরের আনন্দ ও খুশি অনুভব করা অনেক বড়।
সাত- চোখের হেফাযত একজন মানুষকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করে। কারণ, খারাপ বস্তুর দিক তাকানো মানুষকে অশ্লীল কর্মের দিকে ধাবিত করে। আর যখন কোনো ব্যক্তি তার চোখের হেফাযত করে, সে অশ্লীল কাজের মধ্যে পতিত হওয়া থেকে নিরাপদ থাকে। আর যখন সে তার দৃষ্টিকে স্বাধীনভাবে ছেড়ে দেবে, তখন তার ধ্বংস অনিবার্য।
পরিশেষে আমরা বলব, আজ আমাদের যুব সমাজের সমস্যা অত্যন্ত প্রকট আকার ধারণ করছে। তারা আজ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। যুব সমাজকে যদি রক্ষা করা সম্ভব না হয়, তাহলে সমাজের অবক্ষয় দূর করা কোনভাবেই সম্ভব হবে না। তাই আমরা সবাই সম্মিলিত উদ্যোগের মাধ্যমে আমাদের যুব সমাজকে রক্ষা করতে এবং তাদেরকে নিশ্চিত ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানো প্রাণপণ চেষ্টা যেন চালিয়ে যাই।
আল্লাহর নিকট আমাদের কামনা আল্লাহ তা‘আলা যেন, আমাদের যুব সমাজকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করে আমাদেরকে একটি সুন্দর সমাজ উপহার দেন। আমীন।
এক- আফসোসের যন্ত্রণা ও না পাওয়ার বেদনা থেকে অন্তরকে মুক্ত রাখা। কারণ, যে ব্যক্তি তার দৃষ্টিকে স্বাধীনভাবে ছেড়ে দেয়, তার আফসোস আর না পাওয়ার বেদনা লেগেই থাকে।
দুই- দৃষ্টির হেফাযত মানুষের অন্তরে নূর ও আলো সৃষ্টি করে। অনুরূপভাবে দৃষ্টিকে স্বাধীনভাবে ছেড়ে দেওয়া দ্বারা অন্তর, চেহারা ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আচ্ছন্ন হয়ে যায়।
তিন- দৃষ্টির হেফাযত করা দ্বারা একজন মানুষের দূরদর্শিতা বৃদ্ধি পায় এবং সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে সক্ষম হয়। যেমন আল্লামা কিরমানী রহ. বলেন, যে ব্যক্তি তার বাহ্যিক দিকসমূহকে সুন্নাত দারা সাজায়, আর সবসময় অন্তর দিয়ে আল্লাহর কথা চিন্তা করে, নিষিদ্ধ বস্তু হতে চোখকে হেফাযত করে, প্রবৃত্তিকে অন্যায় কর্ম হতে বিরত রাখে এবং হালাল খায় সে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে কখনোই অক্ষম হবে না।
চার- তার জন্য ইলমের পথ ও দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হবে এবং ইলমের উপকরণসমূহ তার জন্য সহজ হবে। আর এটি অন্তরের নূরের কারণেই হয়ে থাকে। কারণ, যখন অন্তর নূর দ্বারা আলোকিত হবে, তখন তার মধ্যে সব কিছুর হাকিকত স্পষ্ট হবে। আর যে ব্যক্তি তার দৃষ্টিকে যেভাবে ইচ্ছা ছেড়ে দেবে, তার অন্তর অন্ধকার ও আবর্জনাময় হবে।
পাঁচ- চোখের হেফাযত করা দ্বারা মানুষের আত্মার শক্তি, দৃঢ়তা ও সাহসিকতা বৃদ্ধি পায়।
ছয়- চোখের হেফাযত করা মানুষের অন্তরে তৃপ্তি, আনন্দ ও উজ্জ্বলতাকে বৃদ্ধি করে। চোখে দেখে কোনো কিছু উপভোগ করার লজ্জা হতে, অন্তরের আনন্দ ও খুশি অনুভব করা অনেক বড়।
সাত- চোখের হেফাযত একজন মানুষকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করে। কারণ, খারাপ বস্তুর দিক তাকানো মানুষকে অশ্লীল কর্মের দিকে ধাবিত করে। আর যখন কোনো ব্যক্তি তার চোখের হেফাযত করে, সে অশ্লীল কাজের মধ্যে পতিত হওয়া থেকে নিরাপদ থাকে। আর যখন সে তার দৃষ্টিকে স্বাধীনভাবে ছেড়ে দেবে, তখন তার ধ্বংস অনিবার্য।
পরিশেষে আমরা বলব, আজ আমাদের যুব সমাজের সমস্যা অত্যন্ত প্রকট আকার ধারণ করছে। তারা আজ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। যুব সমাজকে যদি রক্ষা করা সম্ভব না হয়, তাহলে সমাজের অবক্ষয় দূর করা কোনভাবেই সম্ভব হবে না। তাই আমরা সবাই সম্মিলিত উদ্যোগের মাধ্যমে আমাদের যুব সমাজকে রক্ষা করতে এবং তাদেরকে নিশ্চিত ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানো প্রাণপণ চেষ্টা যেন চালিয়ে যাই।
আল্লাহর নিকট আমাদের কামনা আল্লাহ তা‘আলা যেন, আমাদের যুব সমাজকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করে আমাদেরকে একটি সুন্দর সমাজ উপহার দেন। আমীন।
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন