মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
যুব সমাজের অবক্ষয় ও তার প্রতিকার- জাকেরুল্লাহ আবুল খায়ের
লেখকঃ জাকেরুল্লাহ আবুল খায়ের
১৫
যিনা-ব্যভিচার:
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/545/15
বর্তমান সময়ে যিনা-ব্যভিচার একটি মারাত্মক সমস্যা। বর্তমানে এ ব্যাধি এত মারাত্মক আকার ধারণ করছে যে প্রায় প্রতিটি ফ্লাট বাড়ী একটি যৌন কেন্দ্র। অভিজাত ফ্যামিলির ছেলে মেয়েরা এ সব অপকর্মকে কোনো অন্যায় মনে করছে না। তারা মনে করছে এটি তাদের তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার ও স্বাধীনতা। তারা উন্নত বিশ্বকে তাদের মডেল হিসেবে উপস্থাপন করছে। তারা বলে উন্নত বিশ্বের মেয়েরা রাস্তা-ঘাট, হোটেল, পার্ক সব জায়গায় যেভাবে যৌন ক্ষুধা মিটিয়ে ঘরে ফিরে, তারাও এমন সমাজ ব্যবস্থার পক্ষপাতি। এ সব যেনা-ব্যভিচারের কারণে আজ সমাজে অশান্তি, মানবতার হাহাকার।
সত্য বলেছেন আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। সত্য তাঁর নবুওয়তের অহীলব্ধ ভবিষ্যদ্বাণী। তিনি বলেছেন,
“হে মুহাজিরদল! পাঁচটি কর্ম এমন রয়েছে যাতে তোমরা লিপ্ত হয়ে পড়লে উপযুক্ত শাস্তি তোমাদেরকে গ্রাস করবে। আমি আল্লাহর নিকট পানাহ চাই, যাতে তোমরা তা প্রত্যক্ষ না কর। যখনই কোনো জাতির মধ্যে অশ্লীলতা (ব্যভিচার) প্রকাশ্যভাবে ব্যাপক হবে তখনই সেই জাতির মধ্যে প্লেগ এবং এমন মহামারী ব্যাপক হবে যা তাদের পূর্বপুরুষদের মাঝে ছিল না। যখনই কোনো জাতি ওজন ও মাপে কম দিতে আরম্ভ করবে তখনই তাদেরকে দুর্ভিক্ষ, জীবন-নির্বাহের কষ্ট ও শাসককুলের অত্যাচার পেয়ে বসবে। আর যখনই কোনো জাতি সম্পদের যাকাত প্রদানে বিরত থাকবে তখনই তাদের মধ্যে আকাশ থেকে অনাবৃষ্টি দেখা দিবে। যদি না জীব-জন্তু থাকত, তাদের মোটেই বৃষ্টি দেওয়া হতো না। আর যখনই আল্লাহ ও রাসূলের সাথে কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গ করবে তখনই তাদের অধিকৃত বস্তুর কিছু হাতছাড়া হয়ে যাবে। আর যখনই কোনো জাতির নেতারা আল্লাহর কিতাব কুরআন দ্বারা বিচার-ফয়সালা করা ত্যাগ করবে এবং তা থেকে হুকুম পছন্দ করে গ্রহণ করবে না তখনই তাদের মধ্যে পরস্পর ভীতির সঞ্চার করবেন।” [ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪০১৯, সহীহ তারগীব, হাদিস: ৭৫৯]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যখনই কোনো জাতি তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে তখনই তাদের মাঝে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। যখনই কোনো জাতির মাঝে অশ্লীলতা আত্মপ্রকাশ করে তখনই সে জাতির জন্য আল্লাহ মৃত্যুকে আধিপত্য প্রদান করেন। (তাদের মধ্যে মৃতের হার বেড়ে যায়।) আর যখনই কোনো জাতি যাকাত-দানে বিরত হয় তখনই তাদের জন্য (আকাশের) বৃষ্টি বন্ধ করে দেওয়া হয়।” [হাকেম, হাদিস: ২/১২৬, বাইহাকী, হাদিস: ৩/ ৩৪৬, বায্যার, হাদিস: ৩২৯৯ , সিলসিলাহ সহীহাহ, হাদিস: ১০৭]
অবৈধ যৌনাচারের ফলে প্রাদুর্ভূত বিভিন্ন পুরনো রোগ তো আছেই। গনোরিয়া, সিফিলিস, শুক্র-ক্ষরণ প্রভৃতি যৌনরোগ ব্যভিচারীদের মাঝেই আধিপত্য বিস্তার করে। গনোরিয়া বা প্রমেহ রোগে জননাঙ্গে ঘা ও জ্বালা সৃষ্টি হয় এবং সেখান হতে পুঁজ নিঃসরণ হয়। মূত্রনালি জ্বালা করে, সুড়সুড় করে। মূত্রত্যাগে কষ্ট হয়। পানির মত প্রস্রাবের পর হলুদ পুঁজযুক্ত পদার্থ বের হয়। সে সঙ্গে মাথা ধরা ও ঘোরা, জ্বর এবং নিম্ন-গ্রন্থি-স্ফীতি তো আছেই।
সিফিলিস বা উপদংশ রোগ শরীরে প্রবেশ করার পর সপ্তাহ মধ্যে লাল দাগ ও ফুস্কুড়ি প্রকাশ পায়। এরপর হতে শরীর অনবরত চুলকায় ও তার চারিধারে প্রবাহযুক্ত পানি-ভরা ফোস্কা দেখা দেয় এবং ঐ সব ফুস্কুড়ি হতে পরে গলে ঘা হয় ও পুঁজ বের হয়। রোগ পুরনো হলে নখ খসে যায়, চুল ওঠে এবং সর্বাঙ্গে বিভিন্ন রোগ ও রোগের উপসর্গ প্রকাশ পায়।
আর শুক্র-ক্ষরণ রোগে তরল বীর্য যখন-তখন ঝরতে থাকে। এর ফলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে, বুক ধড়ফড় করে, মাথা ধরে ও ঘোরে ইত্যাদি।
সুতরাং এমন সব রোগের কথা শুনে শঙ্কিত হওয়া উচিত ব্যভিচারীকে। ক্ষণস্থায়ী সে স্বাদে লাভ কি, যার পরে আছে দীর্ঘস্থায়ী বা চিরস্থায়ী বিষাদ।
ব্যভিচার ব্যভিচারীর জন্য সাংসারিক ও পারিবারিক লাঞ্ছনা ডেকে আনে। আত্মীয়স্বজনের সামনে হতে হয় অপমানিত। কারণ, ব্যভিচারী যতই সতর্কতা ও গোপনীয়তা অবলম্বন করুক না কেন, একদিন না একদিন তার সে পাপ-রহস্য মানুষের সমাজে প্রকাশ পেয়েই যায়। ফলে তার ব্যাপারে প্রকাশ্যে অথবা গোপনে একটা এমন দুর্নাম ছড়িয়ে পড়ে, যার দরুন সে প্রায় সকলের কাছে নিন্দার্হ ও ঘৃণার্হ হয়। সহজে কেউ তার সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক কায়েম করতে চায় না। অনেক সময় তার কারণে তার পুরো বংশ ও পরিবারেরই বদনাম হয়। শেষে পরিণতি এই দাঁড়ায় যে, ভালো লোকেরা তাদের সহিত কোনো সম্পর্ক কায়েম করতে চায় না। অবশ্য ‘কানা বেগুনের ডগলা খদ্দের’ তো আছেই।
পক্ষান্তরে ব্যভিচারীর জীবনে লাঞ্ছনা যখন আসে, তখন তার হƒদয়ের জ্যোতি বিলীন হয়ে যায় এবং মন ভরে ওঠে অন্ধকারে। অপমানের পর এমনও হয়ে থাকে যে, শেষে সে একজন নির্লজ্জ ধৃষ্টতে পরিণত হয়ে যায়। সমাজে চলার পথে তার আর কোনো প্রকার ‘হায়া-শরম’ বলতে কিছু থাকে না। আর যার লজ্জা থাকে না, তার কিছু থাকে না। লজ্জাহীনের পূর্ণ ঈমানও থাকে না। যার ফলে মানুষের মনুষ্যত্ব ধ্বংস হয়ে যায় এবং পশুর পশুত্ব এসে স্থান নেয় তার মনে ও আচরণে।
ব্যভিচারীর মনে সব সময় এক প্রকার ভয় থাকে। অন্তরে বাসা বাঁধে সার্বক্ষণিক লাঞ্ছনা। যেমন আল্লাহর আনুগত্যে থাকে সম্মান ও মনের প্রফুল্লতা। মহান আল্লাহ বলেন,
“যারা মন্দ কাজ করে, তাদের প্রতিফল অনুরূপ মন্দ এবং লাঞ্ছনা তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে---।” [সূরা ইউনুস, আয়াত: ২৭] ব্যভিচারী সর্বদা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকে। জারজ জন্ম নিলে তো আরও। এ ছাড়া ব্যভিচারের ফলে তার সম্ভ্রম ও আত্মমর্যাদা যায়, স্ত্রী-কন্যার ব্যাপারে ঈর্ষা থাকে না। বরং ব্যভিচারী মিথ্যাবাদীও হয়, খেয়ানত-কারী ও ধোকাবাজ হয়। সাধারণত: বন্ধুর বন্ধুত্বের মানও খেয়াল রাখে না [ইবনুল কাইয়্যেম, রওদাতুল মুহিব্বীন।]।
ব্যভিচারী দ্বীনী ইলম থেকে বঞ্চিত হয়। কারণ, ইলম হলো আল্লাহর নূর। আর আল্লাহর নূর কোনো পাপিষ্ঠকে দেওয়া হয় না, তথা পাপের কালিমা সে জ্যোতিকে নি®প্রভ করে ফেলে।
ব্যভিচার এমন এক ‘ফ্রি সার্ভিস’ চিত্তবিনোদনের সুন্দর উপায় যে, ব্যভিচারীকে বিবাহ করে ঘর-সংসার করতে বাধা দেয়। তাকে বিবাহে আগ্রহহীন ও নিঃস্পৃহ করে তোলে। বিনা খরচ ও পরম স্বাধীনতায় যদি কাম-চরিতার্থ করা সহজ হয় এবং স্বামীর কোনো প্রকার দায়িত্ব ঘাড়ে না নিয়েই যদি মনের মত ‘বউ’ পাওয়া যায়, তবে কে আর বিয়ে করবে? ব্রিটেনের প্রায় ৯০ শতাংশ যুবক-যুবতী এই দায়-দায়িত্বহীন সম্পর্ককেই পছন্দ করে এবং বিবাহে জড়িয়ে পড়াকে বড্ড ঝামেলার কাজ মনে করে! [আল-ইফ্ফাহ পৃ. ১৯।]
ব্যভিচার স্বামী-স্ত্রীর সংসারে ফাটল ধরায়। কারণ, অন্যাসক্ত স্বামীর মন পড়ে থাকে অন্য যুবতীর প্রতি। অনুরূপ অন্যাসক্তা স্ত্রীর মন পড়ে থাকে কোনো অন্য রসিক নাগরের যৌবন-আসনে। আর এই উভয়ের মাঝে সন্দেহ বাসা বাঁধে। একে অপরের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলে। সন্দেহ হয় স্বামীর নিজের সন্তানের ব্যাপারেও। প্রতিবাদ ও কৈফিয়ত হলে কলহ বাধে। অতঃপর চলে মারধর। আর তারপরই তালাক অথবা খুন!
ব্যভিচার পিতার পিতৃ-বোধ এবং মাতার মাতৃ-বোধ বিনষ্ট করে ফেলে। পিতৃ ও মাতৃবৎশল্য সন্তানদের উপর থেকে উঠে যায়। যেমন অনেকের জানতে বা অজান্তে সমাজে পয়দা হয় হাজারো জারজ সন্তান।
ব্যভিচার সমাজে নিরাপত্তাহীনতা ডেকে আনে। ধর্ষণের ভয়ে কিশোরী-যুবতীর নিরাপত্তা থাকে না। এমন কি নিরাপত্তা থাকে না কোনো সুদর্শন কিশোরও! বাড়ির ভিতরে থেকেও মনের আতঙ্কে শান্তির ঘুম ঘুমাতে পায় না তারা। অনেকে ঐ শ্রেণীর হিংস্র নেকড়ের পাল্লায় পড়ে জীবন পর্যন্তও হারিয়ে বসে।
মানসিক বিপর্যয় ঘটিয়েই ব্যভিচার বহু সমাজ-বিরোধী অপরাধী সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে পিতা-মাতার স্নেহ ও মায়া-মমতা থেকে বঞ্চিত জারজ সন্তানরা মানসিক কঠোরতা ও সামাজিক ঘৃণার মাঝে মানুষ হতে থাকে এবং পরিশেষে অপরাধ জগৎকেই মনের মত জগত বলে নিজের জন্য বেছে নয়।
ব্যভিচার চরিত্রহীনতা ও এক মহা অপরাধ। এ অপরাধ-রাজ্যে বাস করে মানুষ যে সব সময় আনন্দ পায় তা নয়। যেমন আল্লাহর আনুগত্য ও স্মরণে মন প্রশান্ত থাকে, তেমনি তাঁর অবাধ্যাচরণ ও পাপ-পঙ্কিলতাময় জীবনে মন বিক্ষিপ্ত ও অশান্তিময় থাকে। আর মহান আল্লাহ বলেন,
“তুমি কি তাকে লক্ষ্য করেছ, যে তার খেয়াল-খুশীকে নিজের উপাস্য বানিয়ে নিয়েছে। আল্লাহ তা জেনেই তাকে বিভ্রান্ত করেছেন এবং ওর কর্ণ ও হƒদয় মোহর (সীল) করে দিয়েছেন। আর ওর চোখের উপর ফেলে দিয়েছেন পর্দা। অতএব আল্লাহ তাকে বিভ্রান্ত করার পর কে তাকে পথ নির্দেশ করবে? তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না?” [সূরা জাসিয়াহ, আয়াত: ২৩]
বলাবাহুল্য যে, প্রেম ও ব্যভিচারের মত ক্ষণিকের সুখ ও সম্ভোগের জগতে মন-পূজারী বহু যুবক-যুবতী আপোষের মাঝে প্রেম ও মিলন কলহ নিয়ে কত শত মনের ধিক্কারে আত্মহত্যার শিকারে পরিণত হয়। ১৯৮৭ সালের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, ব্রিটেনে প্রতি ২ ঘণ্টায় একটি করে যুবক আত্মহত্যা করে মৃত্যুবরণ করে থাকে! [আল-ইফফাহ, পৃ. ২৫।]
ব্যভিচার এমন এক অপরাধ যে, তার ফলে খুন হয় লাখো লাখো সদ্যপ্রসূত কচি-কাঁচা শিশু। নির্দয় পাষণ্ড মা জন্মের পর তাকে ডাষ্টবিনে, নদীতে অথবা কোনো ঝোপে-জঙ্গলে ফেলে আসে! লাখো লাখো সন্তানকে ভ্রƒণ অবস্থায় পেটেই হত্যা করা হয়। কারণ, পিতামাতার উদ্দেশ্য ছিল, কেবল কাম তৃষ্ণা নিবারণ করা, কোনো অযাচিত সন্তান নেওয়া নয়।
ব্যভিচারের ফলে বংশে এমন এক সন্তান অনুপ্রবেশ করে যে সে বংশের কেউ নয়। সে মিরাস পায়, অথচ সে ওয়ারেস নয়। অনেক সময় এই সন্তান প্রকৃত ওয়ারেসীনকে বঞ্চিতও করে। পরিবারে অনেকের সে মাহরাম গণ্য হয়, অথচ প্রকৃতপক্ষে সে গায়র মাহরাম ও বেগানা। আর এইভাবে একটি পাপের কারণে আরও বহু গুপ্ত ফ্যাসাদ চলতে থাকে সংসারে। যে পাপের কথা কেবল মন জানে, যেমন আসল বাপের কথা কেবল মা জানে।
“সুতরাং যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় অথবা কঠিন শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করবে।” [সূরা শূরা, আয়াত: ৪০]
ব্যভিচার এক নিকৃষ্ট মহাপাপ। যে পাপের শাস্তিস্বরূপ অনুরূপ পাপ তার পরিবারে এসে যেতে পারে। কারণ, মহান আল্লাহ বলেন, جَزَآءُ سَيِّئَةِۢ بِمِثۡلِهَا “মন্দের প্রতিফল অনুরূপ মন্দ।”
“যারা মন্দ কাজ করে তাদের প্রতিফল অনুরূপ মন্দ এবং তাদেরকে লাঞ্ছনা আচ্ছন্ন করবে ---।” [সূরা ইউনুস, আয়াত: ২৭]
সাধারণত: ব্যভিচারীদের স্ত্রী অথবা বোন অথবা কন্যাও ব্যভিচারিণী হয়ে থাকে। কারণ, তারা তাদের ব্যাপারে ঈর্ষা-হীন হয়ে পড়ে। তাছাড়া যে পরস্ত্রীকে অসতী করে বেড়ায়, তার স্ত্রীও অসতী হতে পারে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“দুশ্চরিত্রা নারী দুশ্চরিত্র পুরুষের জন্য এবং সচ্চরিত্র পুরুষ সচ্চরিত্রা নারীর জন্য”। [সূরা নূর, আয়াত: ২৬]
অথচ কোনো মানুষ, বরং স্বয়ং ব্যভিচারী ও লম্পটও চায় না যে, তার স্ত্রী ব্যভিচারিণী বা অস্বচ্ছ-অপবিত্রা হোক।
‘নিজেদের নেই মনুষ্যত্ব, জানি না কেমনে তারা-
নারীদের কাছে চাহে সতীত্ব হায়রে শরম-হারা!’
ব্যভিচারী হলেও সে কোনো দিন চাইবে না যে, তার স্ত্রীও তারই মত ব্যভিচার করুক অথবা তার স্ত্রীকে কেউ ধর্ষণ করুক। স্ত্রী খুন হয়েছে শুনে মনে যতটা আঘাত লাগে, স্ত্রী ব্যভিচার করেছে বা ধর্ষিতা হয়েছে শুনে মনে আঘাত লাগে তার থেকে অনেক গুণ বেশী। সা‘দ ইবন ‘উবাদাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘যদি আমি আমার স্ত্রীর সাথে অন্য পুরুষকে দেখি, তাহলে তরবারি দ্বারা তার মাথা কেটে ফেলব।’ এ কথা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে পৌঁছলে তিনি বললেন, “তোমরা কি সা‘দের আত্মমর্যাদাবোধ বা ঈর্ষায় আশ্চর্যবোধ করছ? আল্লাহর কসম! আমি ওর থেকেও বেশী ঈর্ষা-বান এবং আল্লাহ আমার থেকেও বেশী ঈর্ষা-বান। আর এ জন্যই তিনি গুপ্ত ও প্রকাশ্য সকল অশ্লীলতাকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন। [বুখারী, হাদিস: ৭৪১৬, মুসলিম, হাদিস: ১৪৯৯]
অনুরূপ কোনো আত্ম-মর্যাদাবান পুরুষই চায় না যে, তার কোনো নিকটাত্মীয় মহিলা ব্যভিচারিণী হোক। অতএব ব্যভিচারী কিরূপে অপরের নিকটাত্মীয় মহিলার সহিত সে কাজ পছন্দ করে?
একদা এক যুবক আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, ‘আপনি আমাকে ব্যভিচার করার অনুমতি দিন!’ তিনি বললেন, “তুমি কি তোমার মায়ের সাথে তা পছন্দ কর? তোমার বোন বা মেয়ের সাথে, তোমার ফুফু বা খালার সাথে তা পছন্দ কর?” যুবকটি প্রত্যেকের জন্য উত্তরে একই কথা বলল, ‘না। আল্লাহর কসম, হে আল্লাহর রসূল! আপনার জন্য আমার জীবন উৎসর্গ হোক। (তাদের সঙ্গে আমি এ কাজ করতে চাই না।)’ তখন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তাহলে লোকেরাও তো পছন্দ করে না যে, কেউ তাদের মা, মেয়ে, বোন, খালা বা ফুফুর সাথে ব্যভিচার করুক [আহমাদ ৫/২৫৬-২৫৭, ত্বাবারানী, সিলসিলাহ সহীহাহ, হাদিস: ৩৭০]।” অতএব ব্যভিচারী যুবককে এ ব্যাপারে উপদেশ গ্রহণ করা উচিত।
ব্যভিচার ও লাম্পট্য জগতের এ পাপ কিন্তু এক পর্যায়ের নয়। যেমন, ছোট ব্যভিচার হল, কাম নজরে দেখা চোখের ব্যভিচার। যৌন উত্তেজনামূলক কথা শোনা কানের ব্যভিচার এবং তা বলা জিভের ব্যভিচার। স্পর্শ করা হাতের এবং যৌন-মিলনের উদ্দেশ্যে চলা পায়ের ব্যভিচার। আর দুই যৌনাঙ্গের মিলনে হয় বড় ও আসল ব্যভিচার। [মিশকাত, হাদিস নং ৮৬; মুসনাদে আহমাদ ২/৩২৯।]
কোনো অবিবাহিতা নারীর সহিত ব্যভিচার করার চাইতে বড় ব্যভিচার হলো কোনো বিবাহিতা নারীর সহিত ব্যভিচার। এর চাইতে বড় হলো কোনো আত্মীয় বা প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে ব্যভিচার। অতঃপর নিজের ভাইঝি-বোনঝি বা খালা-ফুফুর সাথে, অতঃপর নিজের বোনের সাথে, অতঃপর নিজের মেয়ের সাথে এবং সর্বোপরি বড় ব্যভিচার হলো মায়ের সাথে ব্যভিচার! (নাঊযু বিল্লাহি মিন যালিকা কুল্লিহী) অবশ্য একান্ত জানোয়ার ছাড়া নিজের নিকটাত্মীয় এগানা মহিলাদের সাথে কেউ একাজ করতে উদ্বুদ্ধ হয় না। আর এগানা মহিলা হলো সেই সব মহিলা, যাদের সহিত কোনো সময়ই বিবাহ বৈধ নয়।
যে সব কারণে সাধারণ ব্যভিচার সংঘটিত হয়, তন্মধ্যে রয়েছে,
১- যুবক-যুবতীর নির্জনতা অবলম্বন, একান্তে গমন-ভ্রমণ, কোনো বাড়ি বা রুমে একাকী উভয়ের বসবাস, রিক্সা বা গাড়িতে চালকের সাথে একাকিনী যাতায়াত, দোকানে দোকানদারের কাছে একাকিনী মার্কেট করা, দর্জির কাছে একান্তে পোশাকের মাপ দেওয়া, ডাক্তারের সহিত নার্সের অথবা রোগিণীর একান্তে চিকিৎসা কাজ, প্রাইভেট টিউটরের কাছে একাকিনী পড়াশোনা করা ইত্যাদি। এগুলি ব্যভিচারের এক একটি সূক্ষ্ম ছিদ্রপথ। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “কোন মহিলার সাথে কোনো পুরুষ যখন নির্জনতা অবলম্বন করে, তখন শয়তান তাদের তৃতীয় জন (কুটনা) হয়। [তিরমিযী, ১১৭১।]
আর এই কারণেই মহিলার জন্য স্বামীর ভাই ইত্যাদি বেগানা আত্মীয়কে মৃত্যুর সাথে তুলনা করা হয়েছে [বুখারী, ৫২৩২; মুসলিম, ২১৭২।]!
২- অবাধ মেলামেশা। পর্দার সাথে হলেও পাশাপাশি নারী-পুরুষের অবস্থান ব্যভিচারের এক বিপজ্জনক ছিদ্রপথ। একই বাড়িতে চাচাতো প্রভৃতি ভাই-বোন, স্কুল-কলেজে ও চাকুরী-ক্ষেত্রে যুবক-যুবতীর অবাধ দেখা-সাক্ষাৎ, অনুরূপ মার্কেটে, মেলা-খেলায়, বিয়েবাড়ি, মরা-বাড়ি, হাসপাতাল প্রভৃতি জায়গায় নারী-পুরুষের বারবার সাক্ষাতের ফলে পরিচয় এবং প্রেম, আর তারপরই শুরু হয় ব্যভিচার।
আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘তোমাদের কি শরম নেই? তোমাদের কি ঈর্ষা নেই? তোমরা তোমাদের মহিলাদেরকে পর-পুরুষদের মাঝে যেতে ছেড়ে দাও এবং এরা ওদেরকে ও ওরা এদেরকে দেখাদেখি করে!’ [দেখুন-হাকাযা তুদাম্মিরু জারীমাতুল জিনসিয়্যাতু আহলাহা পৃ. ২২।]
৩- বিবাহে বিলম্ব। সঠিক ও উপযুক্ত বয়সে বা প্রয়োজন-সময়ে বিয়ে না হলে যৌন ক্ষুধা নিবারণের জন্য ব্যভিচার ঘটা স্বাভাবিক। অধ্যয়ন শেষ করার আশায় অথবা চাকুরী পাওয়ার অপেক্ষায় অথবা সামাজিক কোনো বাধায় (বিধবা) বিবাহ না হওয়ার ফলে ব্যভিচারের এক চোরা পথ খোলা যায়।
৪- অতিরিক্ত মাহর অথবা পণ ও যৌতুক-প্রথাও ব্যভিচারের একটি কারণ। কেননা, উভয় প্রথাই বিবাহের পথে বড় বাধা।
৫- মহিলাদের বেপর্দা চলন ও নগ্নতা। ব্যভিচার ও ধর্ষণের এটি একটি বড় কারণ। ছিলা কলাতে মাছি বসা স্বাভাবিক। ছিলা লেবু বা খোলা তেঁতুল দেখলে জিভে পানি আসা মানুষের প্রকৃতিগত ব্যাপার। অনুরূপ পর্দা-হীনা, অর্ধ নগ্না ও প্রায় পূর্ণ নগ্না যুবতী দেখলে যুবকের মনে কাম উত্তেজিত হওয়াও স্বাভাবিক। আর এ জন্যই ইসলামে পর্দার বিধান অনুসরণ করা মহিলার উপর ফরয করা হয়েছে। নারীকে তার সৌন্দর্য বেগানা পুরুষকে প্রদর্শন করতে নিষেধ করা হয়েছে। (সূরা নূর, আয়াত: ৩১)
আর মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে,
“নারী হলো গোপনীয় জিনিস। তাই যখন সে (গোপনীয়তা থেকে) বের হয়, তখন শয়তান তাকে পুরুষের চোখে শোভনীয়া ও লোভনীয়া করে তোলে [তিরমিযী, হাদিস: ১১৭৩; মিশকাত, হাদিস: ৩১০৯]।”
৬- নোংরা ফিল্ম দেখা, অশ্লীল পত্র-পত্রিকা পড়া এবং গান শোনা। যৌবনের কামনায় যৌন-চেতনা বা উত্তেজনা বলে একটা জিনিস আছে। যার অর্থ এই যে, যৌন-কামনা ঘুমিয়ে থাকে বা তাকে সুপ্ত রাখা যায় এবং কখনো কখনো তা প্রশান্ত থাকে বা তাকে প্রশমিত রাখা সম্ভব। বলা বাহুল্য নোংরা ফিল্ম, পত্র-পত্রিকা এবং গান হলো এমন জিনিস, যা সুপ্ত যৌনকামনাকে জাগ্রত করে এবং প্রশান্ত যৌন-বাসনাকে উত্তেজিত করে। এ ছাড়া এ উম্মতের সম্মানিত উত্তরসূরীগণ বলতেন যে, ‘গান হলো ব্যভিচারের মন্ত্র।’
৭- বেশ্যাবৃত্তির স্বীকৃতি ও সমাজে তাদের পেশাদারীর অনুমতি। তাদেরকে ‘যৌনকর্মী’ বলে আখ্যায়িত করে তাদের বৃত্তিকে অর্থোপার্জনের এক পেশা বলে স্বীকার করে নেওয়া ব্যভিচার প্রসার লাভের অন্যতম কারণ।
৮- মদ ও মাদক-দ্রব্যের ব্যাপক ব্যবহার। মদ, হিরোইন প্রভৃতির নেশায় নারীর নেশা ও চাহিদা সৃষ্টি হয় মাতাল মনে। ফলে এর কারণেও ব্যভিচার ব্যাপক হয়।
৯- আর সবচেয়ে বড় ও প্রধান কারণ হল, দ্বীন ও ঈমানের দুর্বলতা, নৈতিক চরিত্রের অবক্ষয়। যার মাঝে ঈমান ও তাকওয়া নেই, সে ব্যভিচার থেকে বাঁচতে পারে না। এমন ব্যক্তির মনের ডোর শয়তানের হাতে থাকে। অথবা নিজের খেয়াল-খুশী মত চালাতে থাকে নিজের জীবন ও যৌবনকে।
বলা বাহুল্য, যুবক যদি উল্লেখিত ব্যভিচারের কারণসমূহ থেকে দূরে থাকতে পারে, তাহলে অবশ্যই সে ব্যভিচার থেকে বাঁচতে পারবে। পক্ষান্তরে উপরোক্ত কারণসমূহের কোনো একটির কাছাকাছি গেলেই ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ে পড়বে। আর মহান আল্লাহর ঘোষণা হল,
“তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। কারণ তা হলো অশ্লীল এবং নোংরা পথ।” [সূরা ইসরা, আয়াত: ৩২]
ব্যভিচার ব্যাপক আকারে প্রসার লাভ করা এই কথার ইঙ্গিত যে, কিয়ামত অতি নিকটে আসছে। [বুখারী, হাদিস: ৮১, মুসলিম, হাদিস: ২৬৭১]
অতএব যত দিন যাবে, ব্যভিচার পৃথিবীময় তত আরও বৃদ্ধি পাবে। তবে ঈমানদাররা ঈমান নিয়ে অবশ্যই সর্বদা সে অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকবে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/545/15
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।