HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

যুব সমাজের অবক্ষয় ও তার প্রতিকার

লেখকঃ সালেহ ইবন্ ফাওযান আল-ফাওযান

কিতাবের নাম/ লেখক/ অনুবাদক/ সম্পাদক
যুব সমাজের অবক্ষয় ও তার প্রতিকার

সালেহ ইবন্ ফাওযান আল-ফাওযান

অনুবাদ : জাকের উল্লাহ আবুল খায়ের

সম্পাদনা : ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী

ভূমিকা
بسم الله الرحمن الرحيم

সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ তা’আলার, যিনি সমগ্র জগতের প্রতিপালক। আমরা তারই প্রশংসা করি, তার কাছেই সাহায্য চাই, তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং তার কাছেই গুনাহ মাপ চাই। আর আমরা আল্লাহর নিকট আমাদের কু-প্রবৃত্তির যাবতীয় অকল্যাণ হতে এবং আমাদের আমলসমূহের মন্দ পরিণতি হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই। আল্লাহ যাকে হেদায়েত দেন, তাকে গোমরাহ করার কেউ নাই। আর যাকে আল্লাহ গোমরাহ করেন, তাকে আল্লাহ ছাড়া হেদায়েত দেয়ারও কেউ নাই। আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নাই, তিনি একক, তার কোন শরীক নাই। আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দাও রাসূল। আর আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের পূর্বে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সু-সংবাদদাতা, ভয়প্রদর্শনকারী এবং আল্লাহর নির্দেশে দ্বীনের দায়ী ও আলোকবর্তিকা হিসেবে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন। আর তিনিই মানুষের নিকট রিসালাতকে নিকট পৌঁছিয়েছেন, আমানতকে যথাযথ আদায় করেছেন এবং তিনি উম্মতকে সঠিক দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। আর তিনি আল্লাহর রাহে সত্যিকার জিহাদ করেছেন। আর অসংখ্য-অগণিত সালাত ও সালাম নাযিল হোক নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তার পরিবার-পরিজন, সাথী-সঙ্গী ও কিয়ামত অবধি অনাগত তার সমস্ত অনুসারীদের উপর।

অতঃপর

আজ তোমাদের নিকট আমি এমন একটি বিষয় আলোচনা করছি যা বর্তমান সময়ে সব মুসলিমের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরী। আর সেটি হচ্ছে যুব সমাজকে নিয়ে আলোচনা। বর্তমানে তাদের অধঃ:পতন, অবক্ষয় ও তার প্রতিকার এবং তাদের করুণ পরিণতি হতে উত্তরণের জন্য কি করনীয়? এ বিষয়গুলো নিয়েই আমরা এখানে আলোচনা করব। এ বিষয়ের উপর যথাযথ ও বিস্তারিত আলোচনা করার সীমাবদ্ধতা থাকায় আমি বিস্তারিত আলোচনা করতে সক্ষম নই। তবে সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমি আমার এ লিখনিতে কিছু ইশারা-ইঙ্গিত বা সতর্কতা সম্বলিত একটি দিক নির্দেশনা তুলে ধরার চেষ্টা করছি। আল্লাহই তাওফিক দেয়ার মালিক।

সালেহ আল-ফাওযান

পরিচালক

হায়ার ইন্সটিটিউট অব ইসলামিক জুরিসপ্রুডেন্স

রিয়াদ, সৌদী আরব।

মানব জীবনে যুব সমাজের ভূমিকা:
প্রিয় মুসলিম ভাই! অবশ্যই মনে রাখতে হবে, মানব জীবনে যুব সমাজের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিসীম। যখন যুব সমাজ চরিত্রবান ও সঠিক জ্ঞানের অধিকারী হবে, তখন তারাই উম্মতের যাবতীয় দায়িত্ব গ্রহণ করবে, আল্লাহর দেয়া দ্বীনের প্রচার ও প্রসারে ঝাঁপিয়ে পড়বে এবং আর তারাই মানুষকে দ্বীনের প্রতি দাওয়াত দেবে। কারণ, আল্লাহ তা’আলা যুবকদের দৈহিক শক্তি, উদ্ভাবনী মেধা ও চিন্তা-ফিকির করার যোগ্যতা বয়স্কদের তুলনায় অনেক বেশি দিয়েছেন। যদিও বৃদ্ধরা বয়সে বেশি হওয়ার কারণে অভিজ্ঞতা, জ্ঞানের গভীরতা ও বুদ্ধিমত্তায় যুবকদের চেয়ে অনেক বেশি অগ্রগামী। কিন্তু দৈহিক ভাবে দুর্বল হওয়ায় এবং সাহসের অভাব থাকার কারণে শক্তিশালী যুবকরা যে সব কাজ আঞ্জাম দিতে পারে তা আঞ্জাম দেয়া বৃদ্ধদের দ্বারা সম্ভব নয়। এ কারণেই ইসলামের ইতিহাসে আমরা দেখতে পাই, এ দ্বীনের প্রচার-প্রসার ও দ্বীন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস, আব্দুল্লাহ ইবন ওমর, আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আস, মুয়ায ইবন জাবাল, যায়েদ ইবন সাবেত প্রমুখ যুবক সাহাবীদের ভূমিকাই গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ। তারাই এ উম্মতের জন্য নবুওয়াতের ইলমকে সংরক্ষণ করেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিটি কথা ও কাজের ধারক-বাহকের দায়িত্ব পালন করে ইসলামকে পৃথিবীর আনাচে-কানাচে পৌঁছিয়ে দেন। এরা ছাড়াও তাদের সাথে সাথে আরও যারা দ্বীনের এ মহান দায়িত্ব পালন করে ইতিহাসে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, খালেদ ইবন ওয়ালিদ, মুসান্নাহ ইবন হারেসাহ ও আস-সাইবানী রাদিয়াল্লাহু প্রমুখ সাহাবীগণ। তারা সবাই ছিলেন তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে ঐক্যবদ্ধ এক উম্মত ও সংঘবদ্ধ একটি জাতি। তারা দ্বীনকে পৌঁছানোর গুরু দায়িত্ব পালন ছাড়াও দেশ, জাতি ও সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এবং তারা তাদের উপর অর্পিত স্বীয় দায়িত্ব পালনে কোন প্রকার অবহেলা প্রদর্শন করেননি। কেয়ামত অবধি কেউ তাদের অবদান অস্বীকার করতে পারবে না। বর্তমান সময় পর্যন্ত তাদের অবদান অবশিষ্ট আছে এবং যতদিন ইসলাম থাকবে, ততদিন পর্যন্ত তাদের অবদানও বাকী থাকবে। বর্তমানের যুবকরাও যখন তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবে, সৎ ও ভাল কর্ম করবে, তারা তাদের মর্যাদা ও অবস্থান সম্পর্কে অবগত হবে এবং তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব ও আমানত আদায় করবে, তারা তাদেরই উত্তরসূরি হবে এবং তাদের নামও ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সব যুবকদের বিষয়ে সংবাদ দেন- কিয়ামতের দিন সাত শ্রেণীর লোককে আল্লাহ তা’আলা তার ছায়া তলে ছায়া দেবেন, তাদের মধ্যে এক শ্রেণীর লোক হল, সে সব যুবক যারা তাদের যৌবনকে আল্লাহর ইবাদাতে ব্যয় করেন।

যুবকদের প্রতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দিক-নির্দেশনা:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবকদের বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলেন,

«يَا غُلَامُ إِنِّي أُعَلِّمُكَ كَلِمَاتٍ، احْفَظِ اللَّهَ يَحْفَظْكَ، احْفَظِ اللَّهَ تَجِدْهُ تُجَاهَكَ، إِذَا سَأَلْتَ فَاسْأَلِ اللَّهَ، وَإِذَا اسْتَعَنْتَ فَاسْتَعِنْ بِاللَّهِ، »

“হে বৎস! আমি তোমাকে কয়েকটি বাক্য শিখিয়ে দেব, তুমি আল্লাহর হেফাযত কর, আল্লাহ তোমাকে হেফাযত করবে। তুমি আল্লাহর হেফাযত কর, আল্লাহকে তুমি তোমার সম্মুখ দেখতে পাবে। যখন তুমি কিছু চাও আল্লাহর কাছে চাও। আর যখন সাহায্য চাও আল্লাহর কাছে চাও”। মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন গাধার পিঠে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিছনে বসা ছিলেন, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, হে মুয়াজ! তুমি কি জান বান্দার উপর আল্লাহর হক কি?... । ছোট শিশু ওমর ইবন আবু সালমা রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন তার সাথে খাচ্ছিল এবং হাতকে প্লেটের সব জায়গায় ঘোরাচ্ছিল, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাত ধরে ফেলেন এবং তাকে সম্বোধন করে বলেন,

«يَا غُلاَمُ، سَمِّ اللَّهَ، وَكُلْ بِيَمِينِكَ، وَكُلْ مِمَّا يَلِيكَ» فَمَا زَالَتْ تِلْكَ طِعْمَتِي بَعْدُ

“হে গোলাম-বৎস! খাওয়ার শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়, ডান হাত দিয়ে খাও এবং তোমার সামনের অংশ থেকে খাও। এর পর থেকে সারা জীবন এ নিয়মই ছিল আমার আমার খাদ্য গ্রহণের নিয়ম।”

ছোট শিশুদের প্রতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে এসব দিক-নির্দেশনা মানব জাতির জন্য অনুকরণীয় ও অনবদ্য আদর্শ। তিনি বাচ্চাদেরকে এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ আদব ও শিষ্টাচারগুলো শিক্ষা দেন, যাতে বাল্যকাল থেকে তাদের অন্তরে ইসলামী আদব ও শিষ্টাচারগুলো গেঁথে যায়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উল্লেখিত হাদিস ও যুবকদের দিক-নির্দেশনা দেয়া থেকে এ কথা প্রমাণিত হয়, যুবকদের ভাল কাজের প্রতি উৎসাহ দেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বড়দের দায়িত্ব হল, তারা যুবকদেরকে ভালো কাজের প্রতি উৎসাহ দেবে এবং কল্যাণমূলক কাজের প্রতি দিক-নির্দেশনা দেবে।

যুবকদের প্রতি গুরুত্ব দেয়া
ইসলাম যুব সমাজকে তাদের বাল্যকাল থেকেই অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। কারণ, তারাই ভবিষ্যতের প্রাণ পুরুষ এবং বাপ-দাদা ও পিতা-মাতার উত্তরসূরি। যুবকরাই তাদের পূর্বসূরিদের রেখে যাওয়া অসমাপ্ত কর্মগুলো সম্পাদন করবে। যুবকদের প্রতি গুরুত্ব দেয়ার কতক ইসলামী দিক নির্দেশনা আমরা নিম্নে আলোচনা করছি।

প্রথমত: নেককার স্ত্রী গ্রহণ করা। কারণ, স্ত্রীগণ হল, সন্তান উৎপাদনের উৎস এবং ফলাফল লাভের যথাযথ স্থান। স্ত্রীদের গর্ভেই সন্তান জন্ম হয় এবং তাদের পেট থেকে সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়। নেককার স্ত্রী গ্রহণের গুরুত্ব বিবেচনা করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নেককার স্ত্রী গ্রহণ করার প্রতি অধিক গুরুত্ব প্রদান করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدِّينِ تَرِبَتْ يَدَاكَ »

“তুমি দ্বীনদার নারীকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করে বিজয়ী হও, তোমার হাত বরকতময় হোক”।

কারণ, নেক স্ত্রী থেকে যখন আল্লাহ তোমাকে সন্তান দান করবে, সে তোমার সন্তানদের সঠিক দিক নির্দেশনা দেবে এবং বাল্য কাল থেকেই তাদেরকে সঠিক পথে পরিচালনা করবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এ বাণী বাচ্চাদের প্রতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা এবং তাৎপর্যপূর্ণ।

দ্বিতীয়ত: নবজাতকের প্রতি ইসলামের নির্দেশনা হল- যখন একটি শিশু জন্ম গ্রহণ করবে, তার পিতা-মাতা যেন তার জন্য একটি সুন্দর নাম নির্বাচন করে। কারণ, সুন্দর নাম নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিতাদেরকে তার বাচ্চার সুন্দর নাম রাখা ও খারাপ নাম রাখা হতে বিরত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়াও অনুপযোগী অর্থ বিশিষ্ট কোন নাম যাতে না রাখে, সে বিষয়ে তিনি উম্মতকে সতর্ক করেছেন।

তৃতীয়ত: ইসলাম যুবকদের গুরুত্ব দেয়া বিষয়ে আরেকটি উদাহরণ হল, ইসলাম পিতাদেরকে তাদের পক্ষ হতে আকিকা করার দিক-নির্দেশনা দেন। অর্থাৎ- তাদের পক্ষ থেকে পশু যবেহ করার নির্দেশ দেন। শিশুদের পক্ষ থেকে আকীকাহ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। বলা বাহুল্য, শিশুদের পক্ষ থেকে আকীকাহ করার একটি প্রভাব বাচ্চাদের জীবনের উপর পড়ে। আকীকা শুধু গোস্ত খাওয়া বা আনন্দ করার নাম নয়। আকীকা ইসলামের একটি তাৎপর্যপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। এ সুন্নতের প্রতি দিক নির্দেশনা দেয়া প্রমাণ করে ইসলাম যুবকদের প্রতি তাদের জন্ম লগ্ন থেকেই যত্নবান।

চতুর্থত: একজন শিশু যখন ভালো মন্দ বিচার করতে পারে এবং তাদের বুঝ হয়, তখন তাদের সু-শিক্ষা দেয়া এবং দ্বীনের বিধান পালনের প্রতি আদেশ দেয়ার প্রতি ইসলাম বিশেষ গুরুত্ব দেয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مُرُوا أَوْلَادَكُمْ بِالصَّلَاةِ وَهُمْ أَبْنَاءُ سَبْعِ سِنِينَ، وَاضْرِبُوهُمْ عَلَيْهَا، وَهُمْ أَبْنَاءُ عَشْرٍ وَفَرِّقُوا بَيْنَهُمْ فِي الْمَضَاجِعِ»

“তোমাদের সন্তানদের বয়স যখন সাত বছর হয়, তখন তাদের সালাত আদায়ের আদেশ দাও। সালাত আদায় না করলে তোমরা তাদের প্রহার কর যখন তাদের বয়স দশ বছর হয়। আর তোমরা তখন তাদের বিছানাও আলাদা করে দাও।

হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় ইসলাম যুবকদের অধিক গুরুত্ব দেয়। যুবকদের বয়সের পরিবর্তনের সাথে তাদের নির্দেশনাও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। ক্ষমতা ও যোগ্যতা অনুযায়ী ইসলাম যুবকদের দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। যেমন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«كُلُّ مَوْلُودٍ يُولَدُ عَلَى المِلَّةِ فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِهِ أَوْ يُنَصِّرَانِهِ أَوْ يُشَرِّكَانِهِ»

“প্রতিটি নবজাতক ইসলামী ফিতরাতের উপর জন্ম লাভ করে। কিন্তু তার পিতা-মাতা তাকে ইয়াহু-দী, খৃষ্টান অথবা মুশরিক বানায়”।

একজন নবজাতক-শিশু অবশ্যই ফিতরাত অর্থাৎ ইসলামী স্বভাবের উপর জন্ম লাভ করে। আর ফিতরাতকে যখন মাতা-পিতা গুরুত্ব দেয়, সংরক্ষণ করে এবং ভালো দিক পরিচালনা করে, তখন তা ভালো পরিচালনার কারণে ভালো দিকে পরিচালিত হয়, আর যখন মাতা-পিতা সন্তানকে লালন-পালন করতে গিয়ে, ভিন্ন পথে পরিচালনা করে, তখন সে নষ্ট হয়ে যায় এবং মাতা-পিতার কারণে সে খারাপ পথে চলে যায়। যদি মাতা-পিতা ইয়াহুদী হয় অথবা খৃষ্টান হয় অথবা মুজুছী হয়, তখন সন্তানও এ সব বাতিল ও ভ্রান্ত দ্বীনের অনুসারী হয় ফলে তার আসল ফিতরাত-স্বভাব নষ্ট হয়। আর যদি সন্তানের মাতা-পিতা ভালো হয়, তখন সে আল্লাহ তা’আলা সন্তানের মধ্যে যে ফিতরাতে ইসলামীকে আমানত রেখেছেন তারা তার সংরক্ষণ করে, তাকে লালন-পালন করে এবং তাকে যে কোন প্রকার বিকৃতি হতে হেফাজত করে।

পঞ্চমত: যুবকদের বিষয়টিকে ইসলাম তাদের জীবনের শুরু থেকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করেন। এর উপর আরও একটি প্রমাণ হল, আল্লাহ তা’আলা একজন যুবককে তার মাতা-পিতা বা তাদের উভয়ের মধ্যে জীবিত যে কোন একজনের প্রতি ভালো ব্যবহারের নির্দেশ দেন। আর তাকে স্মরণ করিয়ে দেন- তুমি যখন ছোট ছিলে, তখন কীভাবে তোমার মাতা-পিতা তোমাকে লালন-পালন করেছিল। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

﴿ ۞وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا تَعۡبُدُوٓاْ إِلَّآ إِيَّاهُ وَبِٱلۡوَٰلِدَيۡنِ إِحۡسَٰنًاۚ إِمَّا يَبۡلُغَنَّ عِندَكَ ٱلۡكِبَرَ أَحَدُهُمَآ أَوۡ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُل لَّهُمَآ أُفّٖ وَلَا تَنۡهَرۡهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوۡلٗا كَرِيمٗا ٢٣ وَٱخۡفِضۡ لَهُمَا جَنَاحَ ٱلذُّلِّ مِنَ ٱلرَّحۡمَةِ وَقُل رَّبِّ ٱرۡحَمۡهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرٗا ٢٤ ﴾ [ الاسراء : ٢٣، ٢٤ ]

“আর তাদের উভয়ের জন্য দয়াপরবশ হয়ে বিনয়ের ডানা নত করে দাও এবং বল, হে আমার রব, তাদের প্রতি দয়া কর, যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছেন। আর তোমার রব আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করবে না এবং পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করবে। তাদের একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার নিকট বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে ‘উফ’ বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না। আর তাদের সাথে সম্মানজনক কথা বল”। [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ২৩, ২৪]

মাতা-পিতার জন্য তাদের সন্তানকে লালন-পালন করা সন্তানের জন্য অনেক বড় নেয়ামত ও অপার অনুগ্রহ। সুতরাং, সন্তান যখন বড় হবে সন্তানের উপর ওয়াজিব হল, সে তার মাতা-পিতার খেদমত করে তাদের সন্তুষ্টি অর্জন করতে চেষ্টা করবে। আর লালন পালন দ্বারা উদ্দেশ্য শুধু মাত্র দৈহিক লালন-পালন যেমন, খাওয়া দাওয়া, পোশাক পরিচ্ছেদ ইত্যাদি নয়। কারণ, খাওয়া দাওয়া বাসস্থানের ব্যবস্থার মাধ্যমে যে লালন-পালন তা জীব-জন্তুর লালন-পালন। কিন্তু আসল লালন-পালন হল, শিক্ষা-দীক্ষা প্রদান, সঠিক দ্বীনী স্বভাবের সংরক্ষণ, ভালো কাজের প্রতি দিক নির্দেশনা দেয়া, অন্তরে কল্যাণের বীজ বপন করা এবং ভালো কাজে অভ্যস্ত করে গড়ে তোলা। আর এ ধরনের উপকারী লালন-পালনের প্রভাব সন্তানের উপর চিরদিন বাকী থাকে এবং তারা সে অনুপাতে তাদের জীবনকে পরিচালনা করে। মাতা-পিতা থেকে যে শিক্ষা লাভ করে, সে শিক্ষা নিয়েই তারা বড় হতে থাকে এবং সে শিক্ষা তার জীবন চলার পাথেয় হয়। আর দৈহিক লালন-পালন কোন কোন সময় তার সংশোধন হওয়া বা ভালো হওয়ার তুলনায় তার নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাই বেশি থাকে। আর মনে রাখবে, একজন সন্তানকে যখন খানা-পিনা ইত্যাদির মাধ্যমে লালন-পালন করা হয় এবং তার প্রবৃত্তির চাহিদা পূরণ করা হয়, তখন অনেক সময় দেখা যায়, তাতে তার ক্ষতিই বেশি হয়, তার প্রকৃত লালন-পালন হয় না। কারণ, নৈতিক শিক্ষা দেয়া ছাড়া শুধু লালন-পালন করাতে একজন মানুষের মধ্যে জীব-জন্তুর স্বভাব তৈরি হয়। আর যদি মাতা-পিতা তাদের সন্তানকে উভয় প্রকার লালন করে অর্থাৎ, দৈহিক লালন- এটি হতে হবে, নির্ধারিত সীমানা ও শরীয়ত সম্মত গণ্ডির মধ্যে, যাতে কোন প্রকার অপচয় ও অপব্যয় না হয়- নৈতিক শিক্ষা-দীক্ষা দেয়ার মাধ্যমে লালন-পালন, তাহলে তা অবশ্যই অধিক উত্তম হবে এবং সন্তান যখন বড় হবে তখন সে তার প্রতি তার মাতা-পিতার অনুগ্রহের কথা স্মরণ করবে। যেমন সন্তানকে মা-বাবার জন্য দোয়া করার বিষয়টি আল্লাহ তা’আলা এভাবে শিখিয়ে দেন,

﴿رَّبِّ ٱرۡحَمۡهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرٗا ٢٤ ﴾ [ الاسراء : ٢٤ ]

“হে আমার রব, তাদের প্রতি দয়া কর, যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছেন”।

যুব সমাজের সমস্যার কারণ ও প্রতিকার:
হে মুসলিম ভাইয়েরা! আমরা আমাদের আলোচনায় যুবকদের কতক সমস্যা ও কুরআন ও সূন্নাহের আলোকে তার সমাধান তুলে ধরতে চাই। ইসলামই একমাত্র দ্বীন যাতে রয়েছে যাবতীয় সব সমস্যার সমাধান। যখন কোন মানুষ তার বাস্তব জীবনে ইসলামকে পরিপূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করবে, তখন তার জীবনে আর কোন সমস্যা থাকতে পারে না। বর্তমানে যুব সমাজের সমস্যা অনেক। নিম্নে কতক সমস্যার কথা আলোচনা করা হল:

প্রথমত: বর্তমান যুগের যুবকরা মারাত্মক ও ভয়ানক বিপদের সম্মুখীন। যদি যুবকদের স্বাধীনভাবে ছেড়ে দেয়া হয়, তবে এটি তাদের জন্য একটি মারাত্মক সমস্যা ও তাদের জীবনের জন্য আত্মাহুতি। বর্তমান পরিস্থিতি তাদের চরিত্র ও আচার ব্যবহারকে খারাপ করে দেয় এবং তাদের মন মানসিকতা ও তাদের বিশ্বাসকে নষ্ট করে দেয়। বর্তমান সময়ে যুব সমাজকে ধ্বংসের উপকরণ অসংখ্য ও অগণিত। কতক ধরনের উপকরণ আছে, যেগুলো প্রচার মাধ্যম গুলোর কারণে আমাদের সম্মুখীন হতে হয়। যেমন, রেডিও, টেলিভিশন, পেপার, নগ্ন ম্যাগাজিন ইত্যাদি। এগুলো যুব সমাজকে ধ্বংস করা ও তাদের চরিত্রকে হরণ করার জন্য খুবই ক্ষতিকর ও বিষাক্ত মাধ্যম। বর্তমানে আমরা প্রতিটি যুবকের হাতে নগ্ন পেপার পত্রিকা ও ম্যাগাজিন গুলো দেখতে পাই। যুবকরা তাদের নিজেদের ক্ষতিকর দিকসমূহ বুঝতে না পেরে এ সবের প্রতি হুমড়ি দিয়ে লিপ্ত হয়ে পড়ে। যুব সমাজ যদি এ সব ক্ষতিকর উপকরণ -চাই ছবি হোক বা পড়ার বিষয় হোক- ছেড়ে দেয়, এটি তাদের কল্যাণকে নিশ্চিত করে। কারণ, এ সবের পরিণতি খুবই মারাত্মক ও ক্ষতিকর।

বর্তমানে অধিকাংশ যুবকের নৈতিক অবক্ষয় ও পতনের কারণ, তারা তাদের নিজেদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ছেড়ে দিয়ে, পশ্চিমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অন্ধ অনুকরণ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়া। আমাদের যুব সমাজকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে তারা তাদের নির্মিত সব ধরনের অশ্লীল ও অ-রুচিশীল উপকরণকে আমাদের মুসলিম সমাজের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়। আর আমাদের যুবকরা তাদের ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। ফলে তারা পোশাক-আশাক, চলা-ফেরা সহ যাবতীয় সব বিষয়ে পুরোপুরি পশ্চিমাদের অন্ধ অনুকরণে ব্যস্ত।

আর তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চিন্তা হল, আমাদের যুবকদের বিশ্বাসের উপর আঘাত করা এবং আকীদা বিশ্বাসকে নষ্ট করা। ফলে অনেক মুসলিম যুবককে দেখা যায়, পশ্চিমাদের খপ্পরে পড়ে তারা তাদের ঈমান আকীদা নষ্ট করে ফেলে। ফলে তারা নাস্তিক, মুরতাদ ও ধর্মহীনে পরিণত হয় এবং তাদের চিন্তাধারাতে সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা ইত্যাদি ভ্রান্ত মতবাদ স্থান করে নেয়। যখন একজন যুবক এ সব পশ্চিমা ও বিজাতীয় সংস্কৃতিতে বসবাস করতে থাকবে, তখন সে অতি সহজেই তাদের চিন্তা ধারা ও সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত হবে। কারণ, তার মন মানসিকতাকে রক্ষা করার মত পর্যাপ্ত জ্ঞান তার মধ্যে অনুপস্থিত। তারা ইসলামী আকীদা ও বিশ্বাস সম্পর্কে যেসব আপত্তি ও সংশয় তুলে ধরে, তার উত্তর দেয়ার মত পর্যাপ্ত জ্ঞান তার মধ্যে না থাকাতে সে ভ্রান্ত ও বাতিলকেই সত্য বলে গ্রহণ করবে। যার ফলে সে তার নিকট যা পায় তাই গ্রহণ করে থাকে। যেমন-কবি বলেন,

عرفت هواها قبل أن أعرف الهوى فصا د ف قلبا خاليا فتمكنا

“আমি প্রবৃত্তিকে জানার পূর্বে তার উদ্দেশ্য বুঝতে পেরেছি। সে অন্তরকে খালি পেয়ে তাতে স্থান করে নিয়েছে”।

মোট কথা, যে যুবক পশ্চিমাদের চিন্তাধারা ও তাদের অপসংস্কৃতির খপ্পরে পড়ে, তার অন্তর সত্যিকার ইলম থেকে খালি হয়। আর যখন কোন মানুষের অন্তরে এ সব উপকরণে একবার প্রবেশ করে, তখন তা বের করা কঠিন হয়। এটি বর্তমান সময়ে আমাদের যুব সমাজের জন্য একটি মারাত্মক সমস্যা।

দ্বিতীয়ত: প্রচার মাধ্যমের পর যুব সমাজকে ধ্বংসের অন্যতম উপকরণ হল, পশ্চিমা ও বিজাতীয় দেশগুলোতে যুবকদের সফর করতে যাওয়া। বিজাতিদের দেশে প্রবেশ করা দ্বারা তাদের চিন্তার বিকৃতি ঘটে এবং তারা সৃষ্টি সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক ও অনর্থক চিন্তায় লিপ্ত হয়। তবে আমরা সব প্রচার মাধ্যমকে দোষারোপ করছি না। কারণ, এখানে কিছু কিছু প্রচার মাধ্যম আছে যেগুলো ভালো কিন্তু সেগুলোর সংখ্যা খুবই কম। আমরা শুধু সে সব প্রচার মাধ্যমকে দোষারোপ করছি, যেগুলো অশ্লীলতা ও নাস্তিকতার ধারক বাহক। একটা সময় আসে যখন একজন যুবক অমুসলিম ও খৃষ্টীয় রাষ্ট্র-যেগুলো মানবতা ও চরিত্র ধ্বংসের কারখানা-দেখার উদ্দেশ্যে সফর করতে যায়, তখন সেখানে গিয়ে তাদের বিভিন্ন প্রকার অপসংস্কৃতি, উলঙ্গ-পনা, নষ্টামি ও বিকৃত চিন্তা ধারা দেখে, সে তা দ্বারা তারা প্রভাবিত হয়। কারণ, তার নিকট এ পরিমাণ জ্ঞান-বুদ্ধির পুঁজি নাই, যা দ্বারা সে এ সব বিকৃতি, নাস্তিকতা, নষ্টামি ও অপসংস্কৃতির জবাব দেবে। এ কারণেই দেখা যায়, যখন একজন যুবক ঐ সব দেশে ভ্রমণ করে এবং তাদের পরিবেশ ও নাগরিকদের সাথে উঠ-বস করে, তা খুব দ্রুত তার দ্বীন ও সংস্কৃতিকে পরিবর্তন করে দেয়। তখন সে খালি হাত দেশে ফিরে আসে। আর এটি হল, একজন যুবকের চারিত্রিক ও মানসিক বিকৃতির অন্যতম কারণ। অর্থাৎ, পশ্চিমা ও বিজাতীয় দেশগুলো সফর করাও অনেক সময় যুব সমাজ ধ্বংসের কারণ হয়ে থাকে।

তৃতীয়ত: যুব সমাজের অবক্ষয়ের অপর একটি কারণ, অজ্ঞতা ও মূর্খতা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া। অধিকাংশ যুবক এমন আছে তারা তাদের দ্বীন সম্পর্কে কিছুই জানে না। কারণ, তারা ভালো ও মন্দের মধ্যে বিচার করা এবং হারাম হালাল নির্ণয় করার জন্য যতটুকু শিক্ষা অর্জন করা দরকার তা আদৌ লাভ করেনি।

উপরোক্ত কারণগুলো ছাড়াও আরও অসংখ্য বিধ্বংসী কারণ রয়েছে, যেগুলো একজন যুবককে প্রভাবিত করে এবং তাকে দ্বীন থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। যার অ-শুভ পরিণতি আমরা বাস্তবে প্রত্যক্ষ করছি, সমাজের তাদের অপরাধ প্রবণতা লক্ষ করছি এবং তাদের কারণে আমরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি।

যুব সমাজের অবক্ষয়ের প্রতিকার
আমরা যদি আল্লাহ ও রাসূলের জন্য এবং আল্লাহর কিতাবসমূহ, মুসলিম ইমামগণ ও সাধারণ মানুষের জন্য সত্যিকার হিতাকাংখী হয়ে থাকি, তাহলে যুব সমাজের জন্য এ ধরনের সমস্যার প্রতিকার করা কোন কঠিন বিষয় নয়। কয়েকটি সহজ ও সহনীয় বিষয়গুলো দ্বারা যুব সমাজের সমস্যাগুলোর প্রতিকার করা সম্ভব। নিম্নে আমরা সেগুলো আলোচনা করছি।

প্রথম বিষয়: বর্তমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে যে সব শিক্ষা দেয়া হয়, সে সব শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার করে তাতে দ্বীনি শিক্ষার প্রচলন করা। সঠিক আকীদার শিক্ষা দেয়া, হারাম হালাল শিক্ষা দেয়া, মানুষের সাথে কীভাবে মুয়ামালা বা লেন-দেন করতে হয় তা শিক্ষা দেয়া। কোন খাদ্যটি হারাম আর কোনটি হালাল তা শিক্ষা ব্যবস্থায় অবশ্যই থাকতে হবে।

মোট কথা, শিক্ষা ব্যবস্থা এমনভাবে সাজাতে হবে, যাতে একজন মানুষের অন্তর ইলমে নাফে দ্বারা পরিপূর্ণ হয়ে যায় এবং একজন মানুষ পবিত্র বস্তু ও অপবিত্র বস্তুর মধ্যে প্রার্থক করতে সক্ষম হয়। তারা যে সব সমস্যার সম্মুখীন হয়, সে সব সমস্যার সঠিক সমাধান বের করার জন্য তাদের দক্ষ করে ঘড়ে তুলতে হবে। ভালো ও অভিজ্ঞ শিক্ষক নির্বাচন করা, যারা ছাত্রদের অন্তরে ইলমে নাফের বীজ বপন করবে এবং তাদেরকে উপকারী ইলম হাসিলের প্রতি উৎসাহ দেবে।

দ্বিতীয়: মসজিদ, মাদ্রাসা ইত্যাদির সভা সেমিনারে আলেমদের সাথে যুবকদের সাক্ষাত ও উঠ-বস করা খুবই জরুরী। যুবকদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের উন্মুক্ত আলোচনা ও প্রশ্ন উত্তরের ব্যবস্থা করা, যাতে তাদের সমস্যগুলির সমাধান ও তাদের পথ চলার গতি স্পষ্ট হয়। মনে রাখতে হবে, মুসলিম যুব সমাজকে সংশোধনের ক্ষেত্রে আলেমদের দায়িত্ব ও কর্তব্য অনেক। কিন্তু তিক্ত হলেও সত্য বর্তমানে মুসলিম যুব সমাজের মাঝে আর আলেমদের মাঝে বিশাল দূরত্ব ও ফাটল পরিলক্ষিত। অধিকাংশই আমরা দেখতে পাই আলেমরা একদিকে আর যুবকরা তাদের বিপরীত দিকে। এটি যুব সমাজের অবক্ষয় ও পতনের অন্যতম কারণ। যখন যুব-সমাজ আলেমদের সাথে উঠ-বস করত এবং তাদের সাথে সম্পর্ক রাখত, তখন তারা সঠিক পথের উপর ছিল এবং পতন হতে নিরাপদ ছিল। কিন্তু যখন তার আলেম-ওলামাদের থেকে দূরে সরে গেল, তখনই তাদের পতন শুরু হল এবং ধ্বংসের মুখোমুখি হল।

তৃতীয় বিষয়: বর্তমান যুব সমাজকে পতনের হাত থেকে রক্ষা করা ও নিশ্চিত ধ্বংসের কবল হতে বাঁচানো এবং তাদের অবক্ষয়ের প্রতিকারের জন্য যে বিষয় গুলো লক্ষ্য রাখতে হবে, তার মধ্যে অন্যতম হল, একেবারে অপারগ হওয়া বা নেহায়েত জরুরত ছাড়া তাদের অমুসলিম দেশে ভ্রমণ করতে নিষেধ করা, যাতে তারা কাফের ও অমুসলিম দেশে ভ্রমণ করার ক্ষতি হতে নিরাপদ থাকে এবং তাদের কালচার দ্বারা প্রভাবিত হওয়া থেকে মুক্ত থাকে। আর যদি তাদেরকে তাদের ইচ্ছানুযায়ী সফর করতে দেয়া হয়, তখন এটি হবে তাদের জন্য আত্মঘাতী ও ক্ষতিকর।

উল্লেখিত সিদ্ধান্তগুলো যদি সমাজে বাস্তবায়িত হয়, তবেই যুব সমাজকে নিশ্চিত ধ্বংস ও পতনের হাত থেকে রক্ষা করা যাবে বলে আমার বিশ্বাস। অর্থাৎ, প্রথমত: শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার তারপর সৎ ও যোগ্য শিক্ষক নির্বাচন। দ্বিতীয়ত: আলেমদের সাথে যুবকদের সু-সম্পর্ক গড়ে তলা এবং তাদের সভা সেমিনার ও দরসে হাজির হয়ে তাদের সাথে উঠ-বস করা। তৃতীয়ত: একেবারে অপারগ হওয়া ও নেহায়েত জরুরত ছাড়া কাফেরদের দেশে ভ্রমণ করা হতে যুবকদের বিরত থাকা। এ ধরনের বিপদ জনক ভ্রমণের জন্য অবশ্যই নিয়ম-কানুন ও আইন থাকতে হবে, যাতে যুবকদের বিপদ থেকে রক্ষা করা যায়। চতুর্থত: প্রচার মাধ্যমগুলোর সংশোধন ও নিয়ন্ত্রণ করা, যাতে প্রচার মাধ্যমগুলো কেবল তাই প্রচার করে যা মানুষের উপকারে আসে এবং মানুষকে ভালো ও কল্যাণের প্রতি দিক নির্দেশনা দেয়।

যুব সমাজ ও বিবাহ
যুবকদের অন্যতম সমস্যা হল, সময়মত বিবাহ না করা। অর্থাৎ, বিবাহ হতে বিরত থাকা। এটি একটি মারাত্মক সমস্যা, যার কারণে যুব সমাজকে এত বেশি ও অসংখ্য ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়, যা কেবল আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। বিবাহ না করার তারা বিভিন্ন কারণ দেখায়। যেমন-

এক- তারা বলে, তাড়া-তাড়ি বিবাহ করলে, তাদের পড়া লেখার ক্ষতি হয় এবং ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়, তাই তারা বিবাহ করতে বিলম্ব করে।

দুই- তারা আরও বলে, তাড়া-তাড়ি করে বিবাহ করা দ্বারা তার মাথার উপর স্ত্রী সন্তানের খরচ করার দায়িত্ব বর্তায়, যা তার জন্য কঠিন হয়। তাই তারা বিবাহ থেকে বিরত থাকে।

তিন- যুবকদের বিবাহ করা হতে দূরে থাকার সবচেয়ে ক্ষতিকর বিবাহ করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা। যেমন, অধিক খরচ করা, তাদের মাথার উপর খরচের বোঝা চাপিয়ে দেয়া, যা অনেক সময় একজন যুবক বহন করতে সক্ষম হয় না। এটি আমার দৃষ্টিতে যুবকদেরকে বিবাহ হতে দূরে রাখার সবচেয়ে বড় সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা।

যদি আমরা আন্তরিক হই এবং সমাধান চাই, তাহলে যুবকদের এ ধরনের সমস্যার প্রতিকার ও চিকিৎসাও খুব সহজ এবং সহনীয়। প্রথমত: বিবাহ করার মধ্যে যে সব সমস্যা ও বাধা রয়েছে যেগুলোর মোকাবেলায় বিবাহ করার মধ্যে একজন যুবকের জন্য কি কি কল্যাণ, সাওয়াব, নেকী ও গুণাগুণ রয়েছে, তার বর্ণনা যুবকদের মধ্যে তুলে ধরতে হবে। দুনিয়াতে সব কিছুরই ভালো দিক এবং খারাপ দিক রয়েছে। অনুরূপভাবে বিবাহেরও ভালো দিক ও খারাপ দিক আছে। আমি বলি না যে, এর কোন খারাপ দিক নাই। কিন্তু তার ভালো দিক গুলো খারাপ, ক্ষতিকর ও সমস্যার তুলনায় অধিক উত্তম, ভালো, কল্যাণকর ও অগ্রগণ্য। সুতরাং, একজন যুবককে বিবাহের কল্যাণকর দিকগুলো বুঝাবে এবং বিবাহ করার জন্য তারগীব দিবে, যাতে তারা বিবাহের প্রতি আকৃষ্ট হয়।

বিবাহের উপকারিতা:
এক- বিবাহের করা দ্বারা লজ্জা স্থানের হেফাযত এবং চোখের হেফাযত হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দিকে ইশারা করে বলেন,

«يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ، عَلَيْكُمْ بِالبَاءَةِ، فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ، وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ، فَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ مِنْكُمُ البَاءَةَ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ، فَإِنَّ الصَّوْمَ لَهُ وِجَاءٌ»

হে যুবক সমাজ! তোমাদের মধ্যে যার ক্ষমতা আছে, সে যেন বিবাহ করে। কারণ, এটি চোখের জন্য নিরাপদ এবং লজ্জা-স্থানের জন্য হেফাযত। আর যদি কোন ব্যক্তি অক্ষম হয়, সে যেন রোজা রাখে।

এ হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবকদের বিবাহ করার প্রতি উৎসাহ দেন এবং দিক-নির্দেশনা দেন। কারণ, তাদের বিবাহ করার ক্ষমতা আছে এবং শক্তি আছে যদি তারা তাদের ক্ষমতা ও শক্তিকে যথাস্থানে প্রয়োগ করে, তা কাজে লাগবে, অন্যথায় তার অপচয় হবে। সুতরাং, একজন যুবককে অবশ্যই যত তাড়া-তাড়ি সম্ভব বিবাহ করে ফেলা উচিত, যাতে তাদের যৌবনের অপচয় না হয়। বর্তমানে আমাদের এ যুগে অধিকাংশ যুবকই বিবাহ করতে সক্ষম। সুতরাং, তাদের বিবাহের ক্ষেত্রে কোন প্রকার গড়িমসি করা উচিত নয়। অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্রুত বিবাহ করার অনেক বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, এটিই লজ্জা-স্থানের জন্য নিরাপদ। আর লজ্জা স্থান হল খুবই বিপদজনক। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

﴿ وَٱلَّذِينَ هُمۡ لِفُرُوجِهِمۡ حَٰفِظُونَ ٢٩ إِلَّا عَلَىٰٓ أَزۡوَٰجِهِمۡ أَوۡ مَا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُهُمۡ فَإِنَّهُمۡ غَيۡرُ مَلُومِينَ ٣٠ ﴾ [ المعارج : ٢٩، ٣٠ ]

আর যারা তাদের যৌনাংগসমূহের হিফাযতকারী, তবে তাদের স্ত্রী ও তাদের ডান হাত যাদের মালিক হয়েছে, সে দাসীগণের ক্ষেত্র ছাড়া। তাহলে তারা সে ক্ষেত্রে নিন্দনীয় হবে না। [সূরা মায়ারেয, আয়াত: ২৯, ৩০]

বিবাহ লজ্জা-স্থানের জন্য নিরাপদ। অর্থাৎ, বিবাহ তোমাকে মহা ক্ষতি ও লজ্জা-স্থানের বিপদ-থেকে নিরাপত্তা দেবে। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, বিবাহ লজ্জা-স্থানের হেফাযত এবং চোখের নিরাপত্তা। বিবাহ একজন যুবকের চোখকে ঠাণ্ডা করে এবং বিবাহ করার কারণে একজন যুবক এদিক সেদিক তাকায়-না অথবা আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন তার প্রতি কোন প্রকার কর্ণপাত করে না। কারণ, আল্লাহ তা’আলা তাকে হালালের মাধ্যমে হারাম হতে ফিরিয়ে নিয়েছে এবং তার অনুগ্রহ ও দয়া দ্বারা অন্য সবকিছু হতে তাকে যথেষ্ট করেছে।

দুই- বিবাহ দ্বারা আত্মার তৃপ্তি ও প্রশান্তি লাভ হয়। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

﴿ وَمِنۡ ءَايَٰتِهِۦٓ أَنۡ خَلَقَ لَكُم مِّنۡ أَنفُسِكُمۡ أَزۡوَٰجٗا لِّتَسۡكُنُوٓاْ إِلَيۡهَا وَجَعَلَ بَيۡنَكُم مَّوَدَّةٗ وَرَحۡمَةًۚ ٢١ ﴾ [ الروم : ٢١ ]

“আর তার নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এর মধ্যে নির্দেশাবলী রয়েছে সে কওমের জন্য যারা চিন্তা করে”। [সূরা রুম, আয়াত: ২১]

যখন কোন যুবক বিবাহ করে, তখন তার খারাপ আত্মা ও কু-প্রবৃত্তি খামুশ হয়ে যায়, দিকবেদিক ছুটা-ছুটি করা হতে বিরত থাকে এবং তার অন্তর প্রশান্তি পায়। একজন যুবক অনেক সময় দুশ্চিন্তা ও পেরেশানিতে থাকে। কিন্তু যখন সে বিবাহ করে, তখন তার আত্মা শান্তি ও নিরাপদ থাকে। মোট কথা, বিবাহ করা, একজন যুবকের জন্য অসংখ্য কল্যাণের কারণ হয়ে থাকে।

১০
দ্রুত বিবাহ করার উপকারিতা:
দ্রুত বিবাহ করার অন্যতম উপকারিতা হল, সন্তান লাভ করা যা একজন মানুষের চোখের শীতলতা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,

﴿ وَٱلَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا هَبۡ لَنَا مِنۡ أَزۡوَٰجِنَا وَذُرِّيَّٰتِنَا قُرَّةَ أَعۡيُنٖ وَٱجۡعَلۡنَا لِلۡمُتَّقِينَ إِمَامًا ٧٤ ﴾ [ الفرقان : ٧٤ ]

“আর যারা বলে, ‘হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান করুন যারা আমাদের চক্ষু শীতল করবে। আর আপনি আমাদেরকে মুত্তাকীনদের নেতা বানিয়ে দিন’।

আয়াত দ্বারা বুঝা যায় স্ত্রী সন্তানরা মানুষের চোখের শীতলতা। কারণ, আল্লাহ তা’আলা জানিয়ে দেন যে, বিবাহের দ্বারা চোখের শীতলতা লাভ হয়। এ আয়াতে আল্লাহ তা’আলা যুবকদের বিবাহ করার প্রতি উৎসাহ দেন এবং বিবাহ করার জন্য সাহস দেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও বলেন,

﴿هَبۡ لَنَا مِنۡ أَزۡوَٰجِنَا وَذُرِّيَّٰتِنَا قُرَّةَ أَعۡيُنٖ وَٱجۡعَلۡنَا لِلۡمُتَّقِينَ إِمَامًا ٧٤﴾ [ الفرقان : ٧٤ ]

আপনি আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান করুন যারা আমাদের চক্ষু শীতল করবে। আর আপনি আমাদেরকে মুত্তাকীনদের নেতা বানিয়ে দিন’ অনুরূপভাবে আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন,

﴿ ٱلۡمَالُ وَٱلۡبَنُونَ زِينَةُ ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَاۖ وَٱلۡبَٰقِيَٰتُ ٱلصَّٰلِحَٰتُ خَيۡرٌ عِندَ رَبِّكَ ثَوَابٗا وَخَيۡرٌ أَمَلٗا ٤٦ ﴾ [ الكهف : ٤٦ ]

“সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দুনিয়ার জীবনের শোভা। আর স্থায়ী সৎকাজ তোমার রবের নিকট প্রতিদানে উত্তম এবং প্রত্যাশাতেও উত্তম।” [সূরা কাহাফ, আয়াত: ৪৬]

সন্তান-সন্ততি দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্য। আয়াত দ্বারা প্রতীয়মান হয়, সন্তান দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্য। আর মানুষ দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্যের প্রেমিক। একজন মানুষ যেভাবে ধন-সম্পদ তালাশ করে অনুরূপভাবে সে সন্তান-সন্ততিও তালাশ করে। কারণ, মাল যেমন দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্য এমনি ভাবে সন্তানও দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্য। আর আখিরাতে নেক সন্তানের নেক আমলের সাওয়াব মাতা-পিতার উপরও বর্তাবে। যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلَاثٍ : صَدَقَةٌ جَارِيَةٌ، وَعِلْمٌ يُنْتَفَعُ بِهِ، وَوَلَدٌ صَالِحٌ يَدْعُو لَهُ »

“যখন আদম সন্তান মারা যায় তখন তার তিনটি আমল ছাড়া সব আমলের সাওয়াব বন্ধ হয়ে যায়। উপকারী ইলম যা দ্বারা মানুষ উপকার লাভ করতে থাকে, সদকায়ে জারিয়া এবং নেক সন্তান যারা তাদের জন্য দু’আ করতে থাকে”। সুতরাং সন্তান-সন্ততির মধ্যে দুনিয়ার জীবন ও আখিরাতের জীবন উভয় জাহানের কল্যাণ নিহিত রয়েছে। অনুরূপভাবে যৌবনের শুরুতে বিবাহ করা দ্বারা যখন অধিক সন্তান লাভ হবে, তখন উম্মতে মুসলিমার সংখ্যা ও মুসলিম সমাজের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। আর মানুষ ইসলামী সমাজ গঠনের বিষয়ে অবশ্যই দায়িত্বশীল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«تَزَوَّجُوا الْوَدُودَ الْوَلُودَ فَإِنِّي مُكَاثِرٌ بِكُمُ الْأُمَمَ»

“তোমরা বিবাহ কর এমন স্ত্রীদের যারা অধিক মহব্বত করে এবং অধিক সন্তান জন্ম দেয়ার ক্ষমতা রাখে। কারণ কিয়ামতের দিন আমি তোমাদের আধিক্যকে নিয়ে গৌরব করব”। উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো ছাড়াও বিবাহ করাতে অনেক কল্যাণ নিহিত। যখন তুমি একজন যুবকের সামনে এ ধরনের বিষয়গুলো তুলে ধরবে, তখন তার সামনে বিবাহ হতে বিরত রাখে এ ধরনের প্রতিবন্ধকতা ও বাধা দূর হয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি বলে, দ্রুত বিবাহ করা দ্বারা পড়া লেখার ক্ষতি হয় বা উচ্চ ডিগ্রি লাভ করতে বাধা হয়, সে আসলে মুসলিমই নয়। বরং সঠিক কথা হল এর বিপরীত। কারণ, বিবাহ করার যে সব ফায়দা লাভ ও বৈশিষ্ট্যের কথা আমরা উপরে উল্লেখ করলাম, এগুলোর সাথে সাথে বিবাহ দ্বারা আরও যা লাভ হয়, তা হল, আত্মার প্রশান্তি, অন্তরের শান্তি ও চোখের শীতলতা। আর যখন কোন মানুষের মন শান্ত থাকে, আত্মা পরিতৃপ্ত এবং চোখের শীতলতা থাকে, তখন তার জন্য সব কিছুই সহজ হয় এবং শিক্ষা লাভ করা সহজ হয়। আর বিবাহ বিলম্ব করা বা না করা দ্বারা মানুষের জীবনের উদ্দেশ্য তথা অধিক জ্ঞান অর্জন করাতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয় না। কিন্তু যখন বিবাহ করে, তখন তার প্রবৃত্তি শান্ত হয়, এবং সে একটি বিশ্রাম স্থল লাভে ধন্য হয় এবং এমন একজন স্ত্রী লাভে সক্ষম হয়, যে তাকে শিক্ষা লাভের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে এবং বাড়ি ফিরলে তার খেদমত ও সেবা যত্ন করবে। সুতরাং, আল্লাহ তা’আলা যখন তাড়াতাড়ি বিবাহ করার সুযোগ করে দেয়, তা অবশ্যই করা উচিত, কাল ক্ষেপণ করা কোন ক্রমেই উচিত না। কারণ, এটি একজন ছাত্রকে তার জ্ঞান অর্জনে সহযোগিতা করে। আর বিবাহ করাতে পড়া লেখা ও জ্ঞান অর্জনে বিঘ্ন ঘটে এ ধরনের ধারণা সম্পূর্ণ অমূলক। অনুরূপভাবে তাড়া-তাড়ি বিবাহ করার কারণে একজন ছাত্র বা যুবক স্ত্রী সন্তানের খরচ বহন করার দায়িত্ব নিতে হয় যার কারণে অতিরিক্ত চাপ বহন করতে হয়, এ ধরনের কথা বলাও অমূলক। যারা তাড়াতাড়ি বিবাহ করা হতে বিরত থাকে তারা মুসলিমদের কাতারেই পড়ে না। কারণ, বিবাহ করা দ্বারা আল্লাহ তা’আলা বরকত ও কল্যাণ দান করবেন। কারণ, বিবাহ হল, আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুকরণ ও আনুগত্য করা। আর এটি একটি সাওয়াবের কাজ ও উত্তম কাজ। যখন কোন যুবক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদেশের অনুকরণ করার উদ্দেশ্যে বিবাহ করে, বিবাহ করাতে যে সব বরকতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়ে তার অনুসন্ধান করে এবং তার নিয়ত খাঁটি হয়, তাহলে অবশ্যই এ বিবাহ তার জন্য কল্যাণের কারণ হবে। আর মনে রাখতে হবে, রিযকের মালিক আল্লাহ। আল্লাহ বলেন,

﴿۞وَمَا مِن دَآبَّةٖ فِي ٱلۡأَرۡضِ إِلَّا عَلَى ٱللَّهِ رِزۡقُهَا وَيَعۡلَمُ مُسۡتَقَرَّهَا وَمُسۡتَوۡدَعَهَاۚ كُلّٞ فِي كِتَٰبٖ مُّبِينٖ ٦ ﴾ [ هود : ٦ ]

“আর জমিনে বিচরণকারী প্রতিটি প্রাণীর রিযকের দায়িত্ব আল্লাহরই এবং তিনি জানেন তাদের আবাসস্থল ও সমাধিস্থল”। [সূরা হুদ, আয়াত: ৬]

আল্লাহ তা’আলা যাকে বিবাহ করার তাওফিক দেন তার জন্য ও তার স্ত্রী সন্তানের রিযকের ব্যবস্থা তিনিই করবেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

﴿وَلَا تَقۡتُلُوٓاْ أَوۡلَٰدَكُم مِّنۡ إِمۡلَٰقٖ نَّحۡنُ نَرۡزُقُكُمۡ وَإِيَّاهُمۡۖ ١٥١﴾ [ الانعام : ١٥١ ]

“আর তোমরা দারিদ্রের কারণে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না। আমিও তোমাদেরকে রিযক দেই এবং তাদেরকেও”। [সূরা আনআম, আয়াত: ১৫১]

সুতরাং মনে রাখতে হবে, কোন যুবককে তার ক্ষমতার অতিরিক্ত কোন দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়া হয় না। এটি নিছক একটি ধারণা বৈ আর কিছু নয়। কারণ, বিবাহের কারণে বরকত হয় এবং কল্যাণ নিশ্চিত হয়। বিবাহ মানুষের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত চিরন্তন একটি বিধান। বিবাহ করা মানুষের জন্য কোন প্রকার আতঙ্ক বা দু:খ কষ্টের কারণ নয়। যদি মানুষের নিয়ত ভালো হয়, তাহলে বিবাহ কল্যাণ লাভের মাধ্যমসমূহ হতে একটি অন্যতম মাধ্যম। আর বর্তমানে মানুষ বিবাহের ক্ষেত্রে যে সমস্যা ও অসুবিধার কারণ দেখায়, এগুলো সবই মানুষের নিন্দনীয় আবিষ্কার। কারণ, বিবাহতে এ ধরনের কোন অসুবিধা বা সমস্যা বিবাহের সাথে সম্পৃক্ত নয়। যেমন, বড় অংকের মোহর নির্ধারণ করা, বড় করে অনুষ্ঠান করা, অনুষ্ঠান করতে গিয়ে অধিক টাকা পয়সার অপচয় করা ইত্যাদি যেগুলো বর্তমানে মানুষ করে থাকে, এগুলো করা বিষয়ে আল্লাহ তা’আলা কোন বিধান নাই। বরং বিবাহ-শাদিকে সহজীকরণই ইসলামী শরিয়তের মূল লক্ষ্য। বিবাহ-শাদিতে যে সব অনৈতিক ও অনর্থক কাজ করা হয়ে থাকে, সে সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে হবে যে, এ ধরনের কর্ম-কাণ্ড তাদের কোন উপকারে আসে না বরং তা তাদের স্ত্রী সন্তানদের ক্ষতির কারণ হয়। সুতরাং, এগুলোর সংস্কার করতে হবে এবং বিবাহে এ ধরনের কর্মকাণ্ড যাতে না হয়, বিবাহ যাতে সহজ হয়, বিবাহতে খরচ কমিয়ে আনা যায় তার জন্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। আর অতিরিক্ত ব্যয়, অনুষ্ঠানাদি ইত্যাদি অনৈতিক ও অনর্থক বিষয়গুলো দূর করার উপর অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। যাতে বিবাহ-শাদি তার আপন অবস্থা-সহজ পদ্ধতি কম খরচ-এর প্রতি ফিরে আসে। আল্লাহ তা’আলার নিকট আমাদের কামনা তিনি যেন, আমাদের সবার প্রতি দয়া করেন এবং আমাদেরকে সঠিক পথের দিক হিদায়াত দেন। আর তিনি যেন, মুসলিমদের অবস্থা ও মুসলিম যুবকদের অবস্থা সংশোধন করে দেন। আরও কামনা করি আল্লাহ যেন মুসলিমদেরকে তাদের হারানো ইজ্জত, সম্মান ও গৌরবকে ফিরিয়ে দেন, তাদের অবস্থার উন্নতি দান করেন। আল্লাহর নিকট আরো কামনা তিনি যেন, মুসলিমদের তাদের দ্বীনের বিষয়ে সাহায্য করেন এবং তাদেরকে তাদের দুশমনদের অনিষ্ট থেকে হেফাযত করার ক্ষেত্রে তিনিই যথেষ্ট হন। আর সালাত ও সালাম নাযিল হোক আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তার পরিবার পরিজন ও তার সব সাথীদের উপর। আর যাবতীয় প্রশংসা মহান আল্লাহর, যিনি সমগ্র জগতের প্রতিপালক।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন