HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
কতিপয় প্রশ্ন যা শী‘আ যুবকদের সত্যের দিকে ধাবিত করেছে
লেখকঃ সুলাইমান ইবন সালেহ আল-খারাশি
শী‘আদের সম্পর্কে যাদের জানা আছে, তারা অবশ্যই জানেন যে, তাদের বিভিন্ন দল ও উপদলে এমন বৈপরীত্য, স্ববিরোধীতা ও দ্বিমুখী নীতি রয়েছে, যার কোনো শেষ নেই, অন্য বাতিল ধর্মেও যার নজির পাওয়া দুষ্কর। লেখক এ কিতাবে শী‘আ বারো ইমামিয়াদের মাযহাবে বিদ্যমান কতক প্রশ্ন ও বৈপরীত্য সংগ্রহ এবং তা জমা করার প্রয়াস পেয়েছেন, যা শী‘আ বারো ইমামিয়াদের প্রতি উত্থাপিত হয়, কুরআন ও হাদীসে ফিরে যাওয়া ব্যতীত যা থেকে নিষ্কৃতি লাভের কোনো উপায় নেই, হয়তো তাদের যুবকরা এসব বৈপরীত্য দেখে উপকৃত হবে এবং স্বীয় আখিরাতের চিন্তা করে সত্য গ্রহণ করবে।
ইসলামের দাবীদার শী‘আ সম্প্রদায় সম্পর্কে আমাদের দেশের লোকেরা জানে না বললেই চলে, এক সময় আমি নিজেও তাদের সম্পর্কে জানতাম না, তাদেরকে মুসলিম মনে করতাম। কিন্তু তাদের সম্পর্কে যখন জানার সুযোগ হয়, তাদের আকীদা-বিশ্বাস ও কর্মনীতি ব্যাপক পড়াশোনা করি, তাদের মৌলিক গ্রন্থগুলো দেখার সুযোগ হয়, তখন থেকেই আমার নিকট স্পষ্ট হয় যে, এরা ইসলামের অন্তর্ভুক্ত বা মুসলিম নয়। এদের মধ্যে স্পষ্ট শির্ক, বিদ‘আত, কুসংষ্কার এবং বৈপরিত্য বিদ্যমান, যার সাথে ইসলামের দূরতমও কোনো সম্পর্ক নেই। এরা ইসলামের নামে নিজেদের মধ্যে ইয়াহূদী, খৃস্টান, অগ্নিপূজক ও পৌত্তলিক সবার আকীদা লালন করে। আরো আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এরা চরম মুসলিম ও আরব বিদ্বেষী, যা আমাদের অনেকেরই অজানা, তাই এদের সম্পর্কে পাঠকবর্গের অবগতির জন্য শী‘আদের ইতিহাস নিয়ে সামান্য আলোচনা করলাম।
ইসলামের শুরু থেকেই মুশরিকরা তার বিরোধিতা আরম্ভ করে। বিশেষ করে আরব উপদ্বীপের ইয়াহূদী, ইরানের মাজুসী তথা অগ্নিপূজক ও ভারত উপদেশের মূর্তিপুজকদের গা জ্বালার অন্ত থাকে না। তারা ইসলামকে চিরতরে মুছে দেওয়ার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে ইয়াহূদী বংশদ্ভুত আব্দুল্লাহ ইবন সাবা। আল্লাহ সত্যিই বলেছেন:
﴿لَتَجِدَنَّ أَشَدَّ ٱلنَّاسِ عَدَٰوَةٗ لِّلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱلۡيَهُودَ وَٱلَّذِينَ أَشۡرَكُواْۖ﴾ [ المائدة : ٨٢ ]
“তুমি অবশ্যই মমিনদের জন্য মানুষের মধ্যে শত্রুতায় অধিক কঠোর পাবে ইয়াহূদীদেরকে এবং যারা শির্ক করেছে তাদেরকে”। [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৮২]
আব্দুল্লাহ ইবন সাবা অন্তরে নিফাক নিয়ে প্রকাশ্যে ইসলাম গ্রহণ করে। কারণ সে নিশ্চিত জানত, সম্মুখ যুদ্ধে মুসলিমদের হারানো কঠিন। তাদের পূর্বপুরুষ বনু কুরাইযা, বনু নজির ও বনু কায়নুকা ইসলামের মোকাবিলায় সফল হয় নি। তাই ইসলামের ভেতরে প্রবেশ করে ইসলামের ক্ষতি সাধন করার অন্যান্য কৌশল গ্রহণ করে সে।
আব্দুল্লাহ ইবন সাবা ও তার পরিচয়:
আব্দুল্লাহ ইবন সাবা ছিল ইয়াহূদী, ইয়ামানের জনপদ সান‘আর অধিবাসী, হিমইয়ার অথবা হামদান বংশে তার জন্ম। [তারিখে তাবারি: (৪/৩৪০)] উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর খিলাফতকালে মুসলিমদের গোমরাহ করার লক্ষ্যে সে ইসলামি ভূ-খণ্ড চষে বেড়ায়। প্রথমে হিজায (মদিনায়), অতঃপর বসরা, অতঃপর কুফা অতঃপর শাম গমন করে, কিন্তু কোথাও তেমন সুবিধা করতে পারে নি। অতঃপর সে মিসর এসে অবস্থান করে এবং সেখানেই তার আকীদা ‘ওসিয়াত’ ও ‘রাজ‘আত’ প্রচার করে। এখানে সে কতক অনুসারী লাভ করে। [তারিখে তাবারি: (৪/৩৪০); কামেল লি ইবন আসির: (৩/৭৭); বিদায়ান ও নিহায়া লি ইবন কাসির: (৭/১৬৭); তারিখে দিমাশক লি ইবন আসাকির: (২৯/৭-৮) ও অন্যান্য কিতাবে (৩৫ হিজরী) ঘটনাসমূহ দেখুন।]
শী‘আ ঐতিহাসিক “রাওজাতুস সাফা” গ্রন্থে বলেন, “আব্দুল্লাহ ইবন সাবা যখন জানতে পারেন যে, মিসরে উসমান বিরোধীদের সংখ্যা অধিক, তিনি সেখানে চলেন যান। তিনি ইলম ও তাকওয়ার বেশ ধারণ করেন। অবশেষে মানুষ তার দ্বারা প্রতারিত হয়। তাদের মাঝে সে গভীর আস্থা ও বিশ্বাস সৃষ্টি করে নিজের মাযহাব ও মতবাদ প্রচার আরম্ভ করে। যেমন, প্রত্যেক নবীর ওসি ও খলিফা রয়েছে, আর রাসূলুল্লাহর ওসি ও খলিফা হচ্ছে একমাত্র আলী। তিনি ইলম ও ফাতওয়ার মালিক, তার রয়েছে সম্মান ও বীরত্ব। তিনি আমানত ও তাকওয়ার অধিকারী। সে আরো বলে: উম্মত আলীর ওপর যুলুম করেছে, তারা তার খিলাফত ও ইমামতির অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে। এখন আমাদের সবার উচিৎ তাকে সাহায্য করা ও উসমানের বাই‘আত ত্যাগ করা। তার কথার দ্বারা অনেকে প্রতারিত হয়ে খলিফা উসমানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ঘোষণা করে”। [ফারসি ভাষায়: “রাওজাতুস সাফা”: (পৃ. ২৯২); শী‘আ ও সুন্নাহ কিতাব: (পৃ. ১৫-২০); ইহসান ইলাহি জহির।]
ঐতিহাসিকগণ বলেন, ইয়ামানের যেখানে আব্দুল্লাহ ইবন সাবা বেড়ে উঠেছে, সেখানে তাওরাত ও ইঞ্জীলের শিক্ষা, আদর্শ ও মতবাদ বিদ্যমান ছিল। তবে তাওরাতের শিক্ষা অনেকটাই ইঞ্জীলের সাথে মিশে গিয়েছিল। সে উভয় গ্রন্থ থেকে তার আকীদা গ্রহণ করে। [“তারিখুল আরব কাবলাল ইসলাম” লি জাওয়াদ আলি: (৬/৩৪)]
আব্দুল্লাহ সাবার প্রচারিত কতক আকীদা:
আব্দুল্লাহ ইবন সাবা মদিনা থেকে তার বিষ ছড়ানো আরম্ভ করে। তখন মদিনায় আলিম-উলামায় ভরপুর ছিল। যখন সে কোনো সন্দেহ পেশ করত, তারা তার প্রতিবাদ করতেন। যেমন, সে ইয়াহূদী আকীদা রাজ‘আত তথা পুনর্জনম পেশ করে।
ইবন সাবা বলে: “আমি তাদের প্রতি আশ্চর্য বোধ করি, যারা বলে ঈসা ফিরে আসবে কিন্তু মুহাম্মাদ ফিরে আসবে না। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّ ٱلَّذِي فَرَضَ عَلَيۡكَ ٱلۡقُرۡءَانَ لَرَآدُّكَ إِلَىٰ مَعَادٖۚ﴾ [ القصص : ٨٥ ]
“নিশ্চয় যিনি আপনার ওপর কুরআনকে বিধানস্বরূপ দিয়েছেন, অবশ্যই তিনি তোমাকে প্রত্যাবতনস্থালে ফিরিয়ে নেবেন”। [সুরা আল-কাসাস, আয়াত: ৮৫]
অতএব, ঈসার তুলনায় মুহাম্মাদ ফিরে আসার বেশি হকদার। এক হাজার নবী ও এক হাজার ওসি ছিল, আলী হচ্ছে মুহাম্মাদের ওসি। অতঃপর সে বলে: মুহাম্মাদ সর্বশেষ নবী আর আলী সর্বশেষ ওসি”। [“তারিখে তাবারি”: (৪/৩৪০)]
ইবন কাসীর রহ. এ আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে কতক আলিমের বাণী উল্লেখ করেন। যেমন, “আল্লাহ আপনাকে কিয়ামতে উপস্থিত করবেন, অতঃপর তিনি তোমাকে দেওয়া নবুওয়াতের দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন”। কেউ বলেছেন: আল্লাহ আপনাকে জান্নাতে নিয়ে যাবেন অথবা তোমাকে মৃত্যু দেবেন অথবা তোমাকে মক্কায় নিয়ে যাবেন। মক্কায় নিয়ে যাওয়ার বাণী ইমাম বুখারী ইবন আব্বাস থেকে বর্ণনা করেন। [সহীহ বুখারী-ফাতহ: ৮/৩৬৯); তাবারি ফিত তাফসীর: (১০/৮০-৮১)] কিন্তু ইবন সাবা এ আয়াতের অর্থ বিকৃত করে তার রাজ‘আত তথা পুনরাগমনবাদের মত ভ্রান্ত মতবাদ প্রচার করে।
মালাতী (মৃত: ৩৭৭ হি.) উল্লেখ করেন: “সাবায়িরা আলীর নিকট এসে বলে: আপনি আপনি!! তিনি বললেন: আমি কে? তারা বলল: আপনি সৃষ্টিকারী। আলী তাদেরকে তিরষ্কার করেন, কিন্তু তারা কোনোভাবে এ মত ত্যাগ করবে না, আলী আগুনের কুণ্ডলী তৈরি করে তাদেরকে সেখানে জ্বালিয়ে দেন”। [“আত-তানবীহ ওয়ার রাদ আলা আহলিল আহওয়া ওয়াল বিদা”: (পৃ. ১৮)]
আবু হাফস ইবন শাহিন (মৃত ৩৮৫ হি.) উল্লেখ করেন: “আলী শী‘আদের একটি জামা‘আত জ্বালিয়ে দিয়েছেন, অপর একটি গ্রুপকে তিনি নির্বাসনে পাঠান। যাদেরকে তিনি নির্বাসনে পাঠান, তাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবন সাবাও ছিল”। [“মিনহাজুস সুন্নাহ” লি ইবন তাইমিয়াহ: (১/৭)]
শী‘আ প্রখ্যাত আলিম কুম্মি (মৃত: ৩০১ হি.) উল্লেখ করেন: “আব্দুল্লাহ ইবন সাবা সর্বপ্রথম আবু বকর, উমার, উসমান ও সাহাবীদের সম্পর্কে বিষোদগার এবং তাদের ওপর অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে। আর দাবি করে যে, আলী তাকে এর নির্দেশ দিয়েছে। আলীর মৃত্যু সংবাদ বহনকারীকে সাবায়িরা বলে: “হে আল্লাহর শত্রু তুমি মিথ্যা বলেছ, যদি তুমি তার মস্তকের খুলি নিয়ে আস, আর তার স্বপক্ষে সত্তরজন সত্য সাক্ষী পেশ কর, তবুও আমরা তা বিশ্বাস করব না। আমরা বিশ্বাস করি যে, তিনি মারা যাননি, তাকে হত্যা করা হয় নি, যতক্ষণ না তিনি আরবদের লাঠি দ্বারা পরিচালনা করবেন ও পুরো দুনিয়ার মালিক হবেন ততক্ষণ তিনি মারা যাবেন না, অতঃপর তারা চলে যায়”। [“আল-মাকালাত ওয়াল ফিরাক”: (পৃ. ২০), প্রকাশ: ১৯৬৩ই.]
শী‘আদের বড় আলিম ও বিখ্যাত ঐতিহাসিকগণ স্বীকার করেছেন: “কতক আহলে ইলম উল্লেখ করেছেন যে, আব্দুল্লাহ ইবন সাবা ইয়াহূদী থেকে ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি আলী আলাইহিস সালামের পক্ষ নেন। তিনি ইয়াহূদী থাকাবস্থায় বলতেন ইউশা ইবন নূন হচ্ছে মূসার ওসি, এটা ছিল তার বাড়াবাড়ি। তিনি ইসলাম গ্রহণ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর আলীর ব্যাপারে অনুরূপ আকীদা প্রচার করেন। তিনি সর্বপ্রথম বলেন আলীর ইমামতি ফরয। তিনি আলীর শত্রুদের সাথে বিচ্ছেদ ঘোষণা করেন, তার বিরোধীদের তিনি অপছন্দ করেন ও তাদেরকে কাফির বলেন। এখান থেকেই যারা শী‘আ নয়, তারা বলেন শী‘আ ও রাফেযীর মূল হচ্ছে ইয়াহূদী”। [“রিজালুল কাশি”: (পৃ. ১০১), প্রকাশক: মুয়াসসাসাতুল ইলমি বি কারবালা, ইরাক। এ কিতাবের ভূমিকায় তারা বলেছে: রিজাল শাস্ত্রের চারটি কিতাব মূল। এগুলো নির্ভরযোগ্য কিতাব। এর তার মধ্যে প্রধান ও অগ্রগামী হচ্ছে معرفة الناقلين عن الأئمة الصادقين যা برجال الكشي নামে প্রসিদ্ধ। ভূমিকা দেখুন।]
শী‘আদের তৃতীয় শতাব্দির বিখ্যাত পণ্ডিত আল-হাসান ইবন মূসা আবু মুহাম্মাদ আন-নাওবাখতী বলেন, “আব্দুল্লাহ ইবন সাবা আবু বকর, উমার, উসমান ও সাহাবীদের বিষোদগার করেন, তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেন এবং বলেন, আলী তাকে এর নির্দেশ দিয়েছেন। আলী তাকে গ্রেফতার করে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন, সে তা স্বীকার করে। আলী তাকে হত্যার নির্দেশ দেন। তখন আশ-পাশের লোকজন চিৎকার করে উঠল, হে আমিরুল মুমিন! এমন ব্যক্তিকে হত্যা করবেন, যে মানুষদেরকে আহলে বাইত ও আপনাদের মহব্বত এবং আপনাদের নেতৃত্বের দিকে আহ্বান করে ও আপনাদের শত্রুদের থেকে বিচ্ছেদ ঘোষণা করে! আলী তাকে মাদায়েন (তৎকালীন পারস্যের রাজধানী) পাঠিয়ে দেন”। [“ফিরাকুশ শী‘আ” লি নওবখতি: (পৃ. ৪৩-৪৪); মাকতাবাহ হায়দারিয়া ইবন নাজাফ, ইরাক, ১৩৭৯ হিজরী ও ১৯৫৯ ইং।]
আব্দুল্লাহ ইবন সাবা এভাবে মুসলিমদের মধ্যে একটি ভ্রান্ত জামা‘আত তৈরিতে সক্ষম হয়, যারা ছিল ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী। তারা এমন কিছু আকীদা প্রচার করে, যার সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। সে নিজেকে আলীর পক্ষের ঘোষণা করলেও আলীর সাথে তার কোনো সম্পর্ক ছিল না। আলী তাদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি তাদেরকে কঠিন শাস্তি দিয়েছেন। তার সন্তানেরাও তাদেরকে অপছন্দ করত। তাদের ওপর লা‘নত করেছে, তাদেরকে দূরে ঠেলে দিয়েছে। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে সেসব বাস্তবতা চাপা পড়ে যায়, মুসলিমরা ভুলতে আরম্ভ করে তাদের ইতিহাস।
শী‘আদের বিপক্ষে তাদের ইমামদের সাক্ষী ও সতর্কবাণী:
শী‘আরা আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাতে বাই‘আত করে, তার আনুগত্য এবং তার পক্ষ নেওয়ার শপথ করেও বিভিন্ন যুদ্ধে তার পক্ষ ত্যাগ করে, তাকে অসম্মান করে। বস্তুত তারা আলীর নামের আড়ালে আশ্রয় গ্রহণ করে। যখন তাদেরকে ডাকা হত, তারা নানা অযুহাত দেখাত, কখনো কোনো অযুহাত ছাড়াই বিরত থাকে। এক সময় তিনি তাদের ওপর বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, “হে পুরুষ আকৃতির লোকেরা, তোমরা তো পুরুষ নও!!! বাচ্চাদের স্বপ্ন লালনকারী, নারীদের ন্যায় বিবেকের অধিকারী, আফসোস! আমি যদি তোমাদের না দেখতাম! তোমাদের সাথে আমার যদি কোনো পরিচয় না হত! আল্লাহর শপথ আমি অনুতাপ নিয়ে চলছি, পিছনে কুয়াশা রেখে যাচ্ছি... আল্লাহ তোমাদের ধ্বংস করুন। তোমরা আমার অন্তরকে পুঁজে ভরে দিয়েছ, গোস্বায় আমার হৃদয় পূর্ণ করে দিয়েছ, তোমরা আমার প্রতি নিঃশ্বাসে অপবাদ গলাধঃকরণ করিয়েছ। তোমরা অবাধ্য হয়ে আমার সিদ্ধান্ত বিনষ্ট করেছ। এমনকি কুরাইশরা বলতে বাধ্য হয়েছে: “আলী ইবন আবু তালিব বাহাদুর ঠিক, কিন্তু তার মধ্যে যুদ্ধ বিদ্যা নেই। বস্তুত যে আনুগত্য করে না, তার কোনো সিদ্ধান্তই নেই...” [নাহজুল বালাগাহ: ৮৮-৯১, প্রকাশক: মাকতাবাতুল আলফাইন। আরো দেখুন: নাহজুল বালাগাহ: ৭০-৭১, বইরুত প্রকাশনী।] অন্যত্র তিনি বলেন, “সিফফীন যুদ্ধে শী‘আদের অপমানের স্বীকার হয়ে তিনি বলেন, আমার আশা যদি মুয়াবিয়া আমার সাথে তোমাদের নিয়ে কেনাবেচা করত, যেমন টাকার বিনিয়ে জিনিসের কেনাবেচা হয়, আর তোমাদের দশজন গ্রহণ করে যদি তাদের একজন আমাকে দেয়!!!? [নাহজুল বালাগাহ: পৃ. ২২৪।]
শী‘আদের সম্পর্কে হাসান ইবন আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
হাসান ইবন আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু ছুরিকাঘাতে আহত হয়ে তার শী‘আ গ্রুপের বর্ণনা দিয়ে বলেন, “আল্লাহর শপথ, আমি দেখছি এদের চেয়ে মুয়াবিয়া আমার জন্য অধিক ভালো, যারা বলে তারা আমার লোক। তারা আামাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছে, আমার মূলধন ছিনিয়ে নিয়েছে, আমার সম্পদ আত্মসাৎ করেছে। আল্লাহর শপথ আমি যদি মুয়াবিয়ার অধীনে থাকতাম, তাহলে আমি আমার জীবন রক্ষা করতে পারতাম, আমার পরিবারের নিরাপত্তা পেতাম। এটাই আমার জন্য ভালো ছিল, তাদের দ্বারা হত্যার শিকার হওয়া ও আমার পরিবারের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের চেয়ে”!? [দেখুন: আল-ইহতিজাজ লিত তাবরাসি: (খৃ. ২, পৃ. ২৯০)]
শী‘আদের সম্পর্কে হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু শী‘আদের সম্মোধন করে বলেন, “হে লোকেরা তোমরা ধ্বংস হও, আফসোস, তোমরা আমাদেরকে ডেকেছ, আমরা তোমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছি। তোমরা আমাদের হাত থেকে হাতিয়ার নিয়ে আমাদের ওপরই উম্মোচন করেছ। সে আগুনই তোমরা আমাদের ওপর প্রজ্বলিত করেছ, যা আমরা তোমাদের শত্রু ও আমাদের শত্রুর মোকাবেলায় প্রজ্বলিত করেছিলাম। তোমরা তোমাদের পূর্বপুরুষদের সাথে একাত্ম হয়েছ। তোমরা তোমাদের শত্রুদের শক্তি বৃদ্ধি করেছ। আমি মনে করি না, সেখান তোমরা কোনো স্বার্থ উদ্ধার করতে পারবে, অথচ আমরা তোমাদের সাথে কোনো অপরাধ করে নি। তোমরা কেন ধ্বংস হও না...। [আল-ইহতিজাজ লিত তাবরিসি: (খ.২পৃ. ৩০০)]
শী‘আদের সম্পর্কে তাদের পঞ্চম ইমাম বাকের বলেন,
বারো ইমামিয়া শী‘আদের পঞ্চম ইমাম মুহাম্মাদ আল-বাকের তার অনুসারী ও শী‘আদের সম্পর্কে বলেন, “যদি সবাই আমাদের দলভুক্ত হয়ে যায়, চারভাগের তিনভাগ আমাদের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করবে, আর চতূর্থভাগ হবে আহমক”!! [দেখুন: রিজালুল কাশি: (পৃ. ১৭৯)]
শী‘আদের ইমাম মূসা ইবন জাফর বলেন,
সপ্তম ইমাম মূসা ইবন জাফর প্রকৃত মুরতাদ সম্পর্কে বলেন, “যদি আমি আমার দল পৃথক করি, তাহলে তাদের শুধু তোষামোদকারী পাব, আর যদি তাদের পরীক্ষা করি, তাহলে তাদেরকে দেখব মুরতাদ(!!!), আর যদি তাদের যাচাই-বাছাই করি, তাহলে এক হাজারের মধ্যে একজনও খালেস (!?) বের হবে না। আর যদি আমি তাদেরকে চালুনি দ্বারা ছাঁকি, তাহলে তাদের কেউ অবশিষ্ট থাকবে না, আসনে হেলানদাতা ব্যতীত। তারা বলে: আমরা আলীর দল, অথচ আলীর দলের লোক তারাই, যাদের কথা ও কাজ এক”। [আর-রওজাতু মিনাল কাফি: খ. ৮পৃ. ১৯১, হাদীস নং ২৯০।]
এই যদি হয় আলী ও তার সন্তানদের ভক্তরা, তাহলে আল্লাহই ভালো জানেন সর্বশেষ ইমাম মাহদীর অনুসারীরা কেমন হবে, যে সাবালকই হয় নি? আলী শী‘আদের সম্পর্কে সত্যিই বলেছেন: “তোমরা বাতেল যেভাবে জান, হক সে রকম জান না। তোমরা হককে যেভাবে প্রত্যাখ্যান কর, বাতিলকে সেভাবে প্রত্যাখ্যান কর না।
মুসলিমদের বিরুদ্ধে শী‘আ ও কাফির একাত্মতা:
ইব্নুল ‘আল-কামি ও নাসিরুত-তুসি ইমাম আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর দল রক্ষার অযুহাতে খিলাফতে আব্বাসিয়ার ধ্বংসের জন্য কাফিরদের সাথে যোগ দিয়েছে। উল্লেখ্য শী‘আরা ‘তুসি’-কে ‘মানব জাতির শিক্ষক’, ‘এগারতম শতাব্দির বিবেক’, গবেষক, পণ্ডিত ও তর্কবিদদের শিরোমণি ইত্যাদি উপাধিতে ভূষিত করে।
সকল ঐতিহাসিকগণ অভিন্নভাবে খিলাফতে আব্বাসিয়ার শেষ মুহূর্তগুলো সম্পর্কে বলেন, বাগদাদের পতন, নজিরবিহীন মুসলিম গণহত্যা, ইসলামী কিতাবসমূহ দাজলা নদীতে নিক্ষেপ করাসহ সব ব্যাপারে ইবন আল-কামি ও তুসি সহযোগী ছিল হালাকু খানের। ইবন আল-কামি ছিল তখনকার আব্বাসিয় খলিফা মুতাসিমের উযীর ও পরামর্শদাতা, সে গোপনে হালাকু খানের সাথে আঁতাত করে আব্বাসিয় খিলাফতের পতন ঘটায়, আর তুসি ছিল হালাকুর উপদেষ্টা। উল্লেখ্য ইবনুল আল-কামি এবং তুসি উভয় ছিল ইরানী ও কালো পাগড়ীওয়ালাদের দলভুক্ত।
এতদ সত্বেও ইরানের খুমিনি বলে:
খাজা নাসিরুদ্দিন তুসির মতো লোক না থাকার কারণে মানুষের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে, যারা ইসলামের মহান খেদমত আঞ্জাম দিয়েছে। আমরা এ পাপিষ্ঠকে জিজ্ঞাসা করতে চাই সে হত্যা ও ধ্বংস ব্যতীত ইসলাম ও মুসলিমদের কি উপকার করেছে? হ্যাঁ সে যদি হালাকুকে সাহায্য করার ইসলামী খিদমত বলে, তাহলে এর ব্যাখ্যা ভিন্ন। কারণ তাদের মূল উদ্দেশ্য আহলে সুন্নাহ’র বিরুদ্ধে কাফিরদের সাহায্য করা।
পারস্যের অগ্নিপুজকদের সাথে শী‘আদের যোগসূত্র:
আরবদের প্রতি শী‘আদের অন্তহীন বিষোদগার: শী‘আ আলিম ইহকাকি বলেন, “বিশ্বের দুই মহান রাষ্ট পারস্য (ইরান) ও রোমের লোকেরা যেসব কষ্ট ও দুর্দশার সম্মুখীন হয়েছে তার মূল কারণ হচ্ছে আরব ও তাদের পূর্বপুরুষদের অভিযান পরিচালনা করা, যাদের অন্তরে মহান ইসলামের কোনো জ্ঞান ছিল না, তারা ছিল বেদুইন ও ইতর লোক, যাদের স্বভাবে ছিল নিষ্ঠুরতা ও নির্মমতা। এসব প্রবৃত্তি পুজারী (সাহাবী) দ্বারা এ দুই দেশ এবং পূর্ব-পশ্চিমের অধিকাংশ শহর-নগর ধ্বংস ও ক্ষতির সন্মুখীন হয়েছে। তারা দুই মহান রাষ্টের সৌন্দর্য বিনষ্ট করেছে”। [দেখুন: রিসালাতুল ঈমান: (পৃ. ৩২৩) মির্জা হাসান হায়েরি আল-ইহকাকি, প্রকাশক: মাকতাবাতুস সাদেক, কুয়েত, ১৪১২ হিজরী।]
হে মুসলিম ভাই, ইহকাকির কথায় একটু চিন্তা করুন, সে সাহাবীদের বলে ইতর, বেদুইন, প্রবৃত্তি পূজারী এবং পারস্যের পবিত্রতা বিনষ্টকারী, আমরা জানি না পারস্যের পবিত্রতা কি, অথচ তারা তো মাহরাম নারীদের বিয়ে করা বৈধ মনে করে! কোনো মুসলিম কি এ কথা বলতে পারে?
তারা উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুকে অপছন্দ করে। কারণ, তার হাতে পারস্য পরাস্ত হয়েছিল। ইরানের কাশান শহরে অগ্নিপূজক আবু লুলুর মাজার রয়েছে, যে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুকে শহীদ করেছে। তারা আবু লুলুকে “বাবা সুজাউদ্দিন” বলে। তার মৃত্যুবার্ষিকীতে তারা মাতম ও শোক পালন করে। আবু লুলুকে তারা দু’টি কারণে বাবা সুজাউদ্দিন বলে। প্রথমতঃ সে অগ্নিপুজক (শী‘আ)দের রুহানি পিতা। দ্বিতীয়তঃ অগ্নিপুজকদের ধর্ম মূলতঃ শী‘আদের ধর্ম। অতএব, রাফেযী বা শী‘আ মাযহাব মূলত অগ্নিপুজকদের একটি মাযহাব!
একই কারণে তারা হুসাইনের সেসব সন্তানদের সম্মান করে, যারা হুসাইনের ইরানী স্ত্রী শাহেরবানু বিনতে ইয়াজদাজারদ এর বংশের সন্তান। [দেখুন: বিহারুল আনওয়ার: (৪৫/৩২৯) লিল মাজলিসি, প্রকাশক: মুয়াসসাহ আল-ওফাত, বইরুত, ১৪০৩ হিজরী।]
ফ্রান্স প্রবাসী ইরানের শী‘আ গবেষক মুহাম্মাদ আমির আলী মাজি উল্লেখ করেন: “জারাদাস্তিয়া (প্রাচীন মতবাদ) চিন্তাধারা শী‘আদের মধ্যে প্রবেশ করে। বিশেষ করে আমাদের সরদার হুসাইন যখন পারস্যের সর্বশেষ সম্রাট সাসান বংশের মেয়ে বিয়ে করেন, তখন প্রাচীন ইরানের সাথে শী‘আদের একটি যোগসূত্র সৃষ্টি হয়। এ যুবতীই শী‘আদের সকল ইমামের মাতা হিসেবে গণ্য হন। এর মাধ্যমে প্রাচীন যুগের অগ্নিপুজক ও শী‘আদের যোগসূত্র কায়েম হয়”। এ হচ্ছে শী‘আদের ভেতরকার এক ব্যক্তির সাক্ষী।
লোকেরা শোনে আশ্চর্য হবে যে, শী‘আরা কেন শুধু হুসাইনের মৃত্যুর কারণে ক্রন্দন করে, কিন্তু তারা হুসাইনের ভাই আবু বকর, অনুরূপ তার সন্তান আবু বকরের জন্য ক্রন্দন করে না, অথচ এরাও তার সাথেই মারা গেছেন। এরা কি আহলে বাইতের সদস্য ছিলেন না অথবা তারা এমন দু’টি নাম বহন করে, শী‘আরা যা সাধারণ শী‘আদের মধ্যে প্রচার করা পছন্দ করে না, যেন আহলে বাইত ও সাহাবীদের মাঝে মহব্বতের বাস্তবতা তাদের সামনে প্রকাশ না পায়। বিশেষ করে আবু বকর ও উমারের সাথে আহলে বাইতের সখ্যতা, বন্ধুত্ব ও মহব্বত।
একই কারণে তারা অন্যান্য সাহাবীদের ব্যতিক্রম সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে সম্মান করে, এমনকি অনেকে বলেছে তার নিকট ওহি আসে, তার কারণ তিনি পারস্যের। [দেখুন: রিজালুলকাশি: (২১)]
তারা আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে কিসরা তথা খসরু পারভেজ সম্পর্কে তাদের কিতাবে বর্ণনা করে: “নিশ্চয় আল্লাহ তাকে জাহান্নামের আযাব থেকে মুক্ত করেছেন, আগুন তার ওপর হারাম”। [দেখুন: বিহারুল আনওয়ার: (১৪/৪১)]
এ হচ্ছে পারস্য তথা ইরানের আরব বিদ্বেষের কারণ। এটা পুরনো ইতিহাস। তাদের ষড়যন্ত্রের মোকাবিলায় আল্লাহ আমাদের জন্য যথেষ্ট।
ইরান ও ইয়াহূদী সম্পর্ক:
ইরান বাহ্যিকভাবে আমেরিকার সাথে শত্রুতা পোষণ করলেও, বস্তুতঃ সে দ্বিমুখি নীতিই অবলম্বন করে আমেরিকার সাথে। যা আরবদের জন্য খুব দুঃখজনক। ইরানের রাফেযীরা যতই ইসলামের দোহাই দিক না কেন, মূলত তারা ইসলামের শত্রু এবং তারা ইসলাম নিঃশেষ করার জন্য ইয়াহূদী ও নাসারাদের সাথে হাত মেলাতে কসুর করবে না।
মোদ্দাকথাঃ শী‘আরা এমন জাতি, যাদের উৎপত্তি ইয়াহূদীদের থেকে, অতঃপর এদের সাথে সংমিশ্রণ ঘটেছে অগ্নিপুজকদের। এরা ইয়াহূদীদের ন্যায় নিজেদের মধ্যে সব ধরণের খারাপি লালন করে, যেমন মিথ্যা বলা, ধোঁকা দেওয়া, প্রতারণা এবং আরব ও ইসলাম বিদ্বেষ। আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু ও আহলে বাইতের মহব্বতের অন্তরালে পুরো ইসলামকে তারা ত্যাগ করে, সাহাবাদের গালমন্দ করে, কুরআনে বিকৃতির বিশ্বাস করে, আহলে বাইতের অনেক সদস্যকে কাফির বলে। এরা বাহ্যত ইয়াহূদী ও আমেরিকা বিদ্বেষ প্রচার করলেও গোপনে তাদের সাথেই সখ্যতা কায়েম করে। ইসলাম ও মুসলিমদের বিপক্ষে তাদের সাথে তারা হাত মিলায়। আল্লাহ এদের ষড়যন্ত্র থেকে ইসলাম ও মুসলিমদের হিফাযত করুন। এদের আকীদা-বিশ্বাসে এমন বৈপরীত্য, যা অনেকটা হাস্যকর, গোড়ামি, বরং পাগলামী ও বিবেক শূন্যতা, কোনো বিবেকী লোক এমন বৈপরীত্য সমর্থন কিংবা বিশ্বাস করতে পারে না। এ বইয়ের সংকলক এমনি কতগুলো বৈপরীত্য একত্র করেছেন, যার গুরুত্ব অনুধাবন করে আমরা তা অনুবাদ করে বাংলাভাষাভাষী ভাইদের জন্য পেশ করছি, আশা করি মুসলিম ভাইয়েরা এর থেকে উপকৃত হবেন এবং বিবেকবান শী‘আ যুবকদেরকে এ বই নতুন করে ভাবতে ও সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করবে।
অনুবাদক
সানাউল্লাহ নজির আহমদ
ইসলামের শুরু থেকেই মুশরিকরা তার বিরোধিতা আরম্ভ করে। বিশেষ করে আরব উপদ্বীপের ইয়াহূদী, ইরানের মাজুসী তথা অগ্নিপূজক ও ভারত উপদেশের মূর্তিপুজকদের গা জ্বালার অন্ত থাকে না। তারা ইসলামকে চিরতরে মুছে দেওয়ার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে ইয়াহূদী বংশদ্ভুত আব্দুল্লাহ ইবন সাবা। আল্লাহ সত্যিই বলেছেন:
﴿لَتَجِدَنَّ أَشَدَّ ٱلنَّاسِ عَدَٰوَةٗ لِّلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱلۡيَهُودَ وَٱلَّذِينَ أَشۡرَكُواْۖ﴾ [ المائدة : ٨٢ ]
“তুমি অবশ্যই মমিনদের জন্য মানুষের মধ্যে শত্রুতায় অধিক কঠোর পাবে ইয়াহূদীদেরকে এবং যারা শির্ক করেছে তাদেরকে”। [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৮২]
আব্দুল্লাহ ইবন সাবা অন্তরে নিফাক নিয়ে প্রকাশ্যে ইসলাম গ্রহণ করে। কারণ সে নিশ্চিত জানত, সম্মুখ যুদ্ধে মুসলিমদের হারানো কঠিন। তাদের পূর্বপুরুষ বনু কুরাইযা, বনু নজির ও বনু কায়নুকা ইসলামের মোকাবিলায় সফল হয় নি। তাই ইসলামের ভেতরে প্রবেশ করে ইসলামের ক্ষতি সাধন করার অন্যান্য কৌশল গ্রহণ করে সে।
আব্দুল্লাহ ইবন সাবা ও তার পরিচয়:
আব্দুল্লাহ ইবন সাবা ছিল ইয়াহূদী, ইয়ামানের জনপদ সান‘আর অধিবাসী, হিমইয়ার অথবা হামদান বংশে তার জন্ম। [তারিখে তাবারি: (৪/৩৪০)] উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর খিলাফতকালে মুসলিমদের গোমরাহ করার লক্ষ্যে সে ইসলামি ভূ-খণ্ড চষে বেড়ায়। প্রথমে হিজায (মদিনায়), অতঃপর বসরা, অতঃপর কুফা অতঃপর শাম গমন করে, কিন্তু কোথাও তেমন সুবিধা করতে পারে নি। অতঃপর সে মিসর এসে অবস্থান করে এবং সেখানেই তার আকীদা ‘ওসিয়াত’ ও ‘রাজ‘আত’ প্রচার করে। এখানে সে কতক অনুসারী লাভ করে। [তারিখে তাবারি: (৪/৩৪০); কামেল লি ইবন আসির: (৩/৭৭); বিদায়ান ও নিহায়া লি ইবন কাসির: (৭/১৬৭); তারিখে দিমাশক লি ইবন আসাকির: (২৯/৭-৮) ও অন্যান্য কিতাবে (৩৫ হিজরী) ঘটনাসমূহ দেখুন।]
শী‘আ ঐতিহাসিক “রাওজাতুস সাফা” গ্রন্থে বলেন, “আব্দুল্লাহ ইবন সাবা যখন জানতে পারেন যে, মিসরে উসমান বিরোধীদের সংখ্যা অধিক, তিনি সেখানে চলেন যান। তিনি ইলম ও তাকওয়ার বেশ ধারণ করেন। অবশেষে মানুষ তার দ্বারা প্রতারিত হয়। তাদের মাঝে সে গভীর আস্থা ও বিশ্বাস সৃষ্টি করে নিজের মাযহাব ও মতবাদ প্রচার আরম্ভ করে। যেমন, প্রত্যেক নবীর ওসি ও খলিফা রয়েছে, আর রাসূলুল্লাহর ওসি ও খলিফা হচ্ছে একমাত্র আলী। তিনি ইলম ও ফাতওয়ার মালিক, তার রয়েছে সম্মান ও বীরত্ব। তিনি আমানত ও তাকওয়ার অধিকারী। সে আরো বলে: উম্মত আলীর ওপর যুলুম করেছে, তারা তার খিলাফত ও ইমামতির অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে। এখন আমাদের সবার উচিৎ তাকে সাহায্য করা ও উসমানের বাই‘আত ত্যাগ করা। তার কথার দ্বারা অনেকে প্রতারিত হয়ে খলিফা উসমানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ঘোষণা করে”। [ফারসি ভাষায়: “রাওজাতুস সাফা”: (পৃ. ২৯২); শী‘আ ও সুন্নাহ কিতাব: (পৃ. ১৫-২০); ইহসান ইলাহি জহির।]
ঐতিহাসিকগণ বলেন, ইয়ামানের যেখানে আব্দুল্লাহ ইবন সাবা বেড়ে উঠেছে, সেখানে তাওরাত ও ইঞ্জীলের শিক্ষা, আদর্শ ও মতবাদ বিদ্যমান ছিল। তবে তাওরাতের শিক্ষা অনেকটাই ইঞ্জীলের সাথে মিশে গিয়েছিল। সে উভয় গ্রন্থ থেকে তার আকীদা গ্রহণ করে। [“তারিখুল আরব কাবলাল ইসলাম” লি জাওয়াদ আলি: (৬/৩৪)]
আব্দুল্লাহ সাবার প্রচারিত কতক আকীদা:
আব্দুল্লাহ ইবন সাবা মদিনা থেকে তার বিষ ছড়ানো আরম্ভ করে। তখন মদিনায় আলিম-উলামায় ভরপুর ছিল। যখন সে কোনো সন্দেহ পেশ করত, তারা তার প্রতিবাদ করতেন। যেমন, সে ইয়াহূদী আকীদা রাজ‘আত তথা পুনর্জনম পেশ করে।
ইবন সাবা বলে: “আমি তাদের প্রতি আশ্চর্য বোধ করি, যারা বলে ঈসা ফিরে আসবে কিন্তু মুহাম্মাদ ফিরে আসবে না। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّ ٱلَّذِي فَرَضَ عَلَيۡكَ ٱلۡقُرۡءَانَ لَرَآدُّكَ إِلَىٰ مَعَادٖۚ﴾ [ القصص : ٨٥ ]
“নিশ্চয় যিনি আপনার ওপর কুরআনকে বিধানস্বরূপ দিয়েছেন, অবশ্যই তিনি তোমাকে প্রত্যাবতনস্থালে ফিরিয়ে নেবেন”। [সুরা আল-কাসাস, আয়াত: ৮৫]
অতএব, ঈসার তুলনায় মুহাম্মাদ ফিরে আসার বেশি হকদার। এক হাজার নবী ও এক হাজার ওসি ছিল, আলী হচ্ছে মুহাম্মাদের ওসি। অতঃপর সে বলে: মুহাম্মাদ সর্বশেষ নবী আর আলী সর্বশেষ ওসি”। [“তারিখে তাবারি”: (৪/৩৪০)]
ইবন কাসীর রহ. এ আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে কতক আলিমের বাণী উল্লেখ করেন। যেমন, “আল্লাহ আপনাকে কিয়ামতে উপস্থিত করবেন, অতঃপর তিনি তোমাকে দেওয়া নবুওয়াতের দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন”। কেউ বলেছেন: আল্লাহ আপনাকে জান্নাতে নিয়ে যাবেন অথবা তোমাকে মৃত্যু দেবেন অথবা তোমাকে মক্কায় নিয়ে যাবেন। মক্কায় নিয়ে যাওয়ার বাণী ইমাম বুখারী ইবন আব্বাস থেকে বর্ণনা করেন। [সহীহ বুখারী-ফাতহ: ৮/৩৬৯); তাবারি ফিত তাফসীর: (১০/৮০-৮১)] কিন্তু ইবন সাবা এ আয়াতের অর্থ বিকৃত করে তার রাজ‘আত তথা পুনরাগমনবাদের মত ভ্রান্ত মতবাদ প্রচার করে।
মালাতী (মৃত: ৩৭৭ হি.) উল্লেখ করেন: “সাবায়িরা আলীর নিকট এসে বলে: আপনি আপনি!! তিনি বললেন: আমি কে? তারা বলল: আপনি সৃষ্টিকারী। আলী তাদেরকে তিরষ্কার করেন, কিন্তু তারা কোনোভাবে এ মত ত্যাগ করবে না, আলী আগুনের কুণ্ডলী তৈরি করে তাদেরকে সেখানে জ্বালিয়ে দেন”। [“আত-তানবীহ ওয়ার রাদ আলা আহলিল আহওয়া ওয়াল বিদা”: (পৃ. ১৮)]
আবু হাফস ইবন শাহিন (মৃত ৩৮৫ হি.) উল্লেখ করেন: “আলী শী‘আদের একটি জামা‘আত জ্বালিয়ে দিয়েছেন, অপর একটি গ্রুপকে তিনি নির্বাসনে পাঠান। যাদেরকে তিনি নির্বাসনে পাঠান, তাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবন সাবাও ছিল”। [“মিনহাজুস সুন্নাহ” লি ইবন তাইমিয়াহ: (১/৭)]
শী‘আ প্রখ্যাত আলিম কুম্মি (মৃত: ৩০১ হি.) উল্লেখ করেন: “আব্দুল্লাহ ইবন সাবা সর্বপ্রথম আবু বকর, উমার, উসমান ও সাহাবীদের সম্পর্কে বিষোদগার এবং তাদের ওপর অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে। আর দাবি করে যে, আলী তাকে এর নির্দেশ দিয়েছে। আলীর মৃত্যু সংবাদ বহনকারীকে সাবায়িরা বলে: “হে আল্লাহর শত্রু তুমি মিথ্যা বলেছ, যদি তুমি তার মস্তকের খুলি নিয়ে আস, আর তার স্বপক্ষে সত্তরজন সত্য সাক্ষী পেশ কর, তবুও আমরা তা বিশ্বাস করব না। আমরা বিশ্বাস করি যে, তিনি মারা যাননি, তাকে হত্যা করা হয় নি, যতক্ষণ না তিনি আরবদের লাঠি দ্বারা পরিচালনা করবেন ও পুরো দুনিয়ার মালিক হবেন ততক্ষণ তিনি মারা যাবেন না, অতঃপর তারা চলে যায়”। [“আল-মাকালাত ওয়াল ফিরাক”: (পৃ. ২০), প্রকাশ: ১৯৬৩ই.]
শী‘আদের বড় আলিম ও বিখ্যাত ঐতিহাসিকগণ স্বীকার করেছেন: “কতক আহলে ইলম উল্লেখ করেছেন যে, আব্দুল্লাহ ইবন সাবা ইয়াহূদী থেকে ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি আলী আলাইহিস সালামের পক্ষ নেন। তিনি ইয়াহূদী থাকাবস্থায় বলতেন ইউশা ইবন নূন হচ্ছে মূসার ওসি, এটা ছিল তার বাড়াবাড়ি। তিনি ইসলাম গ্রহণ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর আলীর ব্যাপারে অনুরূপ আকীদা প্রচার করেন। তিনি সর্বপ্রথম বলেন আলীর ইমামতি ফরয। তিনি আলীর শত্রুদের সাথে বিচ্ছেদ ঘোষণা করেন, তার বিরোধীদের তিনি অপছন্দ করেন ও তাদেরকে কাফির বলেন। এখান থেকেই যারা শী‘আ নয়, তারা বলেন শী‘আ ও রাফেযীর মূল হচ্ছে ইয়াহূদী”। [“রিজালুল কাশি”: (পৃ. ১০১), প্রকাশক: মুয়াসসাসাতুল ইলমি বি কারবালা, ইরাক। এ কিতাবের ভূমিকায় তারা বলেছে: রিজাল শাস্ত্রের চারটি কিতাব মূল। এগুলো নির্ভরযোগ্য কিতাব। এর তার মধ্যে প্রধান ও অগ্রগামী হচ্ছে معرفة الناقلين عن الأئمة الصادقين যা برجال الكشي নামে প্রসিদ্ধ। ভূমিকা দেখুন।]
শী‘আদের তৃতীয় শতাব্দির বিখ্যাত পণ্ডিত আল-হাসান ইবন মূসা আবু মুহাম্মাদ আন-নাওবাখতী বলেন, “আব্দুল্লাহ ইবন সাবা আবু বকর, উমার, উসমান ও সাহাবীদের বিষোদগার করেন, তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেন এবং বলেন, আলী তাকে এর নির্দেশ দিয়েছেন। আলী তাকে গ্রেফতার করে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন, সে তা স্বীকার করে। আলী তাকে হত্যার নির্দেশ দেন। তখন আশ-পাশের লোকজন চিৎকার করে উঠল, হে আমিরুল মুমিন! এমন ব্যক্তিকে হত্যা করবেন, যে মানুষদেরকে আহলে বাইত ও আপনাদের মহব্বত এবং আপনাদের নেতৃত্বের দিকে আহ্বান করে ও আপনাদের শত্রুদের থেকে বিচ্ছেদ ঘোষণা করে! আলী তাকে মাদায়েন (তৎকালীন পারস্যের রাজধানী) পাঠিয়ে দেন”। [“ফিরাকুশ শী‘আ” লি নওবখতি: (পৃ. ৪৩-৪৪); মাকতাবাহ হায়দারিয়া ইবন নাজাফ, ইরাক, ১৩৭৯ হিজরী ও ১৯৫৯ ইং।]
আব্দুল্লাহ ইবন সাবা এভাবে মুসলিমদের মধ্যে একটি ভ্রান্ত জামা‘আত তৈরিতে সক্ষম হয়, যারা ছিল ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী। তারা এমন কিছু আকীদা প্রচার করে, যার সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। সে নিজেকে আলীর পক্ষের ঘোষণা করলেও আলীর সাথে তার কোনো সম্পর্ক ছিল না। আলী তাদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি তাদেরকে কঠিন শাস্তি দিয়েছেন। তার সন্তানেরাও তাদেরকে অপছন্দ করত। তাদের ওপর লা‘নত করেছে, তাদেরকে দূরে ঠেলে দিয়েছে। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে সেসব বাস্তবতা চাপা পড়ে যায়, মুসলিমরা ভুলতে আরম্ভ করে তাদের ইতিহাস।
শী‘আদের বিপক্ষে তাদের ইমামদের সাক্ষী ও সতর্কবাণী:
শী‘আরা আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাতে বাই‘আত করে, তার আনুগত্য এবং তার পক্ষ নেওয়ার শপথ করেও বিভিন্ন যুদ্ধে তার পক্ষ ত্যাগ করে, তাকে অসম্মান করে। বস্তুত তারা আলীর নামের আড়ালে আশ্রয় গ্রহণ করে। যখন তাদেরকে ডাকা হত, তারা নানা অযুহাত দেখাত, কখনো কোনো অযুহাত ছাড়াই বিরত থাকে। এক সময় তিনি তাদের ওপর বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, “হে পুরুষ আকৃতির লোকেরা, তোমরা তো পুরুষ নও!!! বাচ্চাদের স্বপ্ন লালনকারী, নারীদের ন্যায় বিবেকের অধিকারী, আফসোস! আমি যদি তোমাদের না দেখতাম! তোমাদের সাথে আমার যদি কোনো পরিচয় না হত! আল্লাহর শপথ আমি অনুতাপ নিয়ে চলছি, পিছনে কুয়াশা রেখে যাচ্ছি... আল্লাহ তোমাদের ধ্বংস করুন। তোমরা আমার অন্তরকে পুঁজে ভরে দিয়েছ, গোস্বায় আমার হৃদয় পূর্ণ করে দিয়েছ, তোমরা আমার প্রতি নিঃশ্বাসে অপবাদ গলাধঃকরণ করিয়েছ। তোমরা অবাধ্য হয়ে আমার সিদ্ধান্ত বিনষ্ট করেছ। এমনকি কুরাইশরা বলতে বাধ্য হয়েছে: “আলী ইবন আবু তালিব বাহাদুর ঠিক, কিন্তু তার মধ্যে যুদ্ধ বিদ্যা নেই। বস্তুত যে আনুগত্য করে না, তার কোনো সিদ্ধান্তই নেই...” [নাহজুল বালাগাহ: ৮৮-৯১, প্রকাশক: মাকতাবাতুল আলফাইন। আরো দেখুন: নাহজুল বালাগাহ: ৭০-৭১, বইরুত প্রকাশনী।] অন্যত্র তিনি বলেন, “সিফফীন যুদ্ধে শী‘আদের অপমানের স্বীকার হয়ে তিনি বলেন, আমার আশা যদি মুয়াবিয়া আমার সাথে তোমাদের নিয়ে কেনাবেচা করত, যেমন টাকার বিনিয়ে জিনিসের কেনাবেচা হয়, আর তোমাদের দশজন গ্রহণ করে যদি তাদের একজন আমাকে দেয়!!!? [নাহজুল বালাগাহ: পৃ. ২২৪।]
শী‘আদের সম্পর্কে হাসান ইবন আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
হাসান ইবন আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু ছুরিকাঘাতে আহত হয়ে তার শী‘আ গ্রুপের বর্ণনা দিয়ে বলেন, “আল্লাহর শপথ, আমি দেখছি এদের চেয়ে মুয়াবিয়া আমার জন্য অধিক ভালো, যারা বলে তারা আমার লোক। তারা আামাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছে, আমার মূলধন ছিনিয়ে নিয়েছে, আমার সম্পদ আত্মসাৎ করেছে। আল্লাহর শপথ আমি যদি মুয়াবিয়ার অধীনে থাকতাম, তাহলে আমি আমার জীবন রক্ষা করতে পারতাম, আমার পরিবারের নিরাপত্তা পেতাম। এটাই আমার জন্য ভালো ছিল, তাদের দ্বারা হত্যার শিকার হওয়া ও আমার পরিবারের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের চেয়ে”!? [দেখুন: আল-ইহতিজাজ লিত তাবরাসি: (খৃ. ২, পৃ. ২৯০)]
শী‘আদের সম্পর্কে হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু শী‘আদের সম্মোধন করে বলেন, “হে লোকেরা তোমরা ধ্বংস হও, আফসোস, তোমরা আমাদেরকে ডেকেছ, আমরা তোমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছি। তোমরা আমাদের হাত থেকে হাতিয়ার নিয়ে আমাদের ওপরই উম্মোচন করেছ। সে আগুনই তোমরা আমাদের ওপর প্রজ্বলিত করেছ, যা আমরা তোমাদের শত্রু ও আমাদের শত্রুর মোকাবেলায় প্রজ্বলিত করেছিলাম। তোমরা তোমাদের পূর্বপুরুষদের সাথে একাত্ম হয়েছ। তোমরা তোমাদের শত্রুদের শক্তি বৃদ্ধি করেছ। আমি মনে করি না, সেখান তোমরা কোনো স্বার্থ উদ্ধার করতে পারবে, অথচ আমরা তোমাদের সাথে কোনো অপরাধ করে নি। তোমরা কেন ধ্বংস হও না...। [আল-ইহতিজাজ লিত তাবরিসি: (খ.২পৃ. ৩০০)]
শী‘আদের সম্পর্কে তাদের পঞ্চম ইমাম বাকের বলেন,
বারো ইমামিয়া শী‘আদের পঞ্চম ইমাম মুহাম্মাদ আল-বাকের তার অনুসারী ও শী‘আদের সম্পর্কে বলেন, “যদি সবাই আমাদের দলভুক্ত হয়ে যায়, চারভাগের তিনভাগ আমাদের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করবে, আর চতূর্থভাগ হবে আহমক”!! [দেখুন: রিজালুল কাশি: (পৃ. ১৭৯)]
শী‘আদের ইমাম মূসা ইবন জাফর বলেন,
সপ্তম ইমাম মূসা ইবন জাফর প্রকৃত মুরতাদ সম্পর্কে বলেন, “যদি আমি আমার দল পৃথক করি, তাহলে তাদের শুধু তোষামোদকারী পাব, আর যদি তাদের পরীক্ষা করি, তাহলে তাদেরকে দেখব মুরতাদ(!!!), আর যদি তাদের যাচাই-বাছাই করি, তাহলে এক হাজারের মধ্যে একজনও খালেস (!?) বের হবে না। আর যদি আমি তাদেরকে চালুনি দ্বারা ছাঁকি, তাহলে তাদের কেউ অবশিষ্ট থাকবে না, আসনে হেলানদাতা ব্যতীত। তারা বলে: আমরা আলীর দল, অথচ আলীর দলের লোক তারাই, যাদের কথা ও কাজ এক”। [আর-রওজাতু মিনাল কাফি: খ. ৮পৃ. ১৯১, হাদীস নং ২৯০।]
এই যদি হয় আলী ও তার সন্তানদের ভক্তরা, তাহলে আল্লাহই ভালো জানেন সর্বশেষ ইমাম মাহদীর অনুসারীরা কেমন হবে, যে সাবালকই হয় নি? আলী শী‘আদের সম্পর্কে সত্যিই বলেছেন: “তোমরা বাতেল যেভাবে জান, হক সে রকম জান না। তোমরা হককে যেভাবে প্রত্যাখ্যান কর, বাতিলকে সেভাবে প্রত্যাখ্যান কর না।
মুসলিমদের বিরুদ্ধে শী‘আ ও কাফির একাত্মতা:
ইব্নুল ‘আল-কামি ও নাসিরুত-তুসি ইমাম আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর দল রক্ষার অযুহাতে খিলাফতে আব্বাসিয়ার ধ্বংসের জন্য কাফিরদের সাথে যোগ দিয়েছে। উল্লেখ্য শী‘আরা ‘তুসি’-কে ‘মানব জাতির শিক্ষক’, ‘এগারতম শতাব্দির বিবেক’, গবেষক, পণ্ডিত ও তর্কবিদদের শিরোমণি ইত্যাদি উপাধিতে ভূষিত করে।
সকল ঐতিহাসিকগণ অভিন্নভাবে খিলাফতে আব্বাসিয়ার শেষ মুহূর্তগুলো সম্পর্কে বলেন, বাগদাদের পতন, নজিরবিহীন মুসলিম গণহত্যা, ইসলামী কিতাবসমূহ দাজলা নদীতে নিক্ষেপ করাসহ সব ব্যাপারে ইবন আল-কামি ও তুসি সহযোগী ছিল হালাকু খানের। ইবন আল-কামি ছিল তখনকার আব্বাসিয় খলিফা মুতাসিমের উযীর ও পরামর্শদাতা, সে গোপনে হালাকু খানের সাথে আঁতাত করে আব্বাসিয় খিলাফতের পতন ঘটায়, আর তুসি ছিল হালাকুর উপদেষ্টা। উল্লেখ্য ইবনুল আল-কামি এবং তুসি উভয় ছিল ইরানী ও কালো পাগড়ীওয়ালাদের দলভুক্ত।
এতদ সত্বেও ইরানের খুমিনি বলে:
খাজা নাসিরুদ্দিন তুসির মতো লোক না থাকার কারণে মানুষের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে, যারা ইসলামের মহান খেদমত আঞ্জাম দিয়েছে। আমরা এ পাপিষ্ঠকে জিজ্ঞাসা করতে চাই সে হত্যা ও ধ্বংস ব্যতীত ইসলাম ও মুসলিমদের কি উপকার করেছে? হ্যাঁ সে যদি হালাকুকে সাহায্য করার ইসলামী খিদমত বলে, তাহলে এর ব্যাখ্যা ভিন্ন। কারণ তাদের মূল উদ্দেশ্য আহলে সুন্নাহ’র বিরুদ্ধে কাফিরদের সাহায্য করা।
পারস্যের অগ্নিপুজকদের সাথে শী‘আদের যোগসূত্র:
আরবদের প্রতি শী‘আদের অন্তহীন বিষোদগার: শী‘আ আলিম ইহকাকি বলেন, “বিশ্বের দুই মহান রাষ্ট পারস্য (ইরান) ও রোমের লোকেরা যেসব কষ্ট ও দুর্দশার সম্মুখীন হয়েছে তার মূল কারণ হচ্ছে আরব ও তাদের পূর্বপুরুষদের অভিযান পরিচালনা করা, যাদের অন্তরে মহান ইসলামের কোনো জ্ঞান ছিল না, তারা ছিল বেদুইন ও ইতর লোক, যাদের স্বভাবে ছিল নিষ্ঠুরতা ও নির্মমতা। এসব প্রবৃত্তি পুজারী (সাহাবী) দ্বারা এ দুই দেশ এবং পূর্ব-পশ্চিমের অধিকাংশ শহর-নগর ধ্বংস ও ক্ষতির সন্মুখীন হয়েছে। তারা দুই মহান রাষ্টের সৌন্দর্য বিনষ্ট করেছে”। [দেখুন: রিসালাতুল ঈমান: (পৃ. ৩২৩) মির্জা হাসান হায়েরি আল-ইহকাকি, প্রকাশক: মাকতাবাতুস সাদেক, কুয়েত, ১৪১২ হিজরী।]
হে মুসলিম ভাই, ইহকাকির কথায় একটু চিন্তা করুন, সে সাহাবীদের বলে ইতর, বেদুইন, প্রবৃত্তি পূজারী এবং পারস্যের পবিত্রতা বিনষ্টকারী, আমরা জানি না পারস্যের পবিত্রতা কি, অথচ তারা তো মাহরাম নারীদের বিয়ে করা বৈধ মনে করে! কোনো মুসলিম কি এ কথা বলতে পারে?
তারা উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুকে অপছন্দ করে। কারণ, তার হাতে পারস্য পরাস্ত হয়েছিল। ইরানের কাশান শহরে অগ্নিপূজক আবু লুলুর মাজার রয়েছে, যে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুকে শহীদ করেছে। তারা আবু লুলুকে “বাবা সুজাউদ্দিন” বলে। তার মৃত্যুবার্ষিকীতে তারা মাতম ও শোক পালন করে। আবু লুলুকে তারা দু’টি কারণে বাবা সুজাউদ্দিন বলে। প্রথমতঃ সে অগ্নিপুজক (শী‘আ)দের রুহানি পিতা। দ্বিতীয়তঃ অগ্নিপুজকদের ধর্ম মূলতঃ শী‘আদের ধর্ম। অতএব, রাফেযী বা শী‘আ মাযহাব মূলত অগ্নিপুজকদের একটি মাযহাব!
একই কারণে তারা হুসাইনের সেসব সন্তানদের সম্মান করে, যারা হুসাইনের ইরানী স্ত্রী শাহেরবানু বিনতে ইয়াজদাজারদ এর বংশের সন্তান। [দেখুন: বিহারুল আনওয়ার: (৪৫/৩২৯) লিল মাজলিসি, প্রকাশক: মুয়াসসাহ আল-ওফাত, বইরুত, ১৪০৩ হিজরী।]
ফ্রান্স প্রবাসী ইরানের শী‘আ গবেষক মুহাম্মাদ আমির আলী মাজি উল্লেখ করেন: “জারাদাস্তিয়া (প্রাচীন মতবাদ) চিন্তাধারা শী‘আদের মধ্যে প্রবেশ করে। বিশেষ করে আমাদের সরদার হুসাইন যখন পারস্যের সর্বশেষ সম্রাট সাসান বংশের মেয়ে বিয়ে করেন, তখন প্রাচীন ইরানের সাথে শী‘আদের একটি যোগসূত্র সৃষ্টি হয়। এ যুবতীই শী‘আদের সকল ইমামের মাতা হিসেবে গণ্য হন। এর মাধ্যমে প্রাচীন যুগের অগ্নিপুজক ও শী‘আদের যোগসূত্র কায়েম হয়”। এ হচ্ছে শী‘আদের ভেতরকার এক ব্যক্তির সাক্ষী।
লোকেরা শোনে আশ্চর্য হবে যে, শী‘আরা কেন শুধু হুসাইনের মৃত্যুর কারণে ক্রন্দন করে, কিন্তু তারা হুসাইনের ভাই আবু বকর, অনুরূপ তার সন্তান আবু বকরের জন্য ক্রন্দন করে না, অথচ এরাও তার সাথেই মারা গেছেন। এরা কি আহলে বাইতের সদস্য ছিলেন না অথবা তারা এমন দু’টি নাম বহন করে, শী‘আরা যা সাধারণ শী‘আদের মধ্যে প্রচার করা পছন্দ করে না, যেন আহলে বাইত ও সাহাবীদের মাঝে মহব্বতের বাস্তবতা তাদের সামনে প্রকাশ না পায়। বিশেষ করে আবু বকর ও উমারের সাথে আহলে বাইতের সখ্যতা, বন্ধুত্ব ও মহব্বত।
একই কারণে তারা অন্যান্য সাহাবীদের ব্যতিক্রম সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে সম্মান করে, এমনকি অনেকে বলেছে তার নিকট ওহি আসে, তার কারণ তিনি পারস্যের। [দেখুন: রিজালুলকাশি: (২১)]
তারা আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে কিসরা তথা খসরু পারভেজ সম্পর্কে তাদের কিতাবে বর্ণনা করে: “নিশ্চয় আল্লাহ তাকে জাহান্নামের আযাব থেকে মুক্ত করেছেন, আগুন তার ওপর হারাম”। [দেখুন: বিহারুল আনওয়ার: (১৪/৪১)]
এ হচ্ছে পারস্য তথা ইরানের আরব বিদ্বেষের কারণ। এটা পুরনো ইতিহাস। তাদের ষড়যন্ত্রের মোকাবিলায় আল্লাহ আমাদের জন্য যথেষ্ট।
ইরান ও ইয়াহূদী সম্পর্ক:
ইরান বাহ্যিকভাবে আমেরিকার সাথে শত্রুতা পোষণ করলেও, বস্তুতঃ সে দ্বিমুখি নীতিই অবলম্বন করে আমেরিকার সাথে। যা আরবদের জন্য খুব দুঃখজনক। ইরানের রাফেযীরা যতই ইসলামের দোহাই দিক না কেন, মূলত তারা ইসলামের শত্রু এবং তারা ইসলাম নিঃশেষ করার জন্য ইয়াহূদী ও নাসারাদের সাথে হাত মেলাতে কসুর করবে না।
মোদ্দাকথাঃ শী‘আরা এমন জাতি, যাদের উৎপত্তি ইয়াহূদীদের থেকে, অতঃপর এদের সাথে সংমিশ্রণ ঘটেছে অগ্নিপুজকদের। এরা ইয়াহূদীদের ন্যায় নিজেদের মধ্যে সব ধরণের খারাপি লালন করে, যেমন মিথ্যা বলা, ধোঁকা দেওয়া, প্রতারণা এবং আরব ও ইসলাম বিদ্বেষ। আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু ও আহলে বাইতের মহব্বতের অন্তরালে পুরো ইসলামকে তারা ত্যাগ করে, সাহাবাদের গালমন্দ করে, কুরআনে বিকৃতির বিশ্বাস করে, আহলে বাইতের অনেক সদস্যকে কাফির বলে। এরা বাহ্যত ইয়াহূদী ও আমেরিকা বিদ্বেষ প্রচার করলেও গোপনে তাদের সাথেই সখ্যতা কায়েম করে। ইসলাম ও মুসলিমদের বিপক্ষে তাদের সাথে তারা হাত মিলায়। আল্লাহ এদের ষড়যন্ত্র থেকে ইসলাম ও মুসলিমদের হিফাযত করুন। এদের আকীদা-বিশ্বাসে এমন বৈপরীত্য, যা অনেকটা হাস্যকর, গোড়ামি, বরং পাগলামী ও বিবেক শূন্যতা, কোনো বিবেকী লোক এমন বৈপরীত্য সমর্থন কিংবা বিশ্বাস করতে পারে না। এ বইয়ের সংকলক এমনি কতগুলো বৈপরীত্য একত্র করেছেন, যার গুরুত্ব অনুধাবন করে আমরা তা অনুবাদ করে বাংলাভাষাভাষী ভাইদের জন্য পেশ করছি, আশা করি মুসলিম ভাইয়েরা এর থেকে উপকৃত হবেন এবং বিবেকবান শী‘আ যুবকদেরকে এ বই নতুন করে ভাবতে ও সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করবে।
অনুবাদক
সানাউল্লাহ নজির আহমদ
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি বলেছেন:
﴿وَأَنَّ هَٰذَا صِرَٰطِي مُسۡتَقِيمٗا فَٱتَّبِعُوهُۖ وَلَا تَتَّبِعُواْ ٱلسُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمۡ عَن سَبِيلِهِ﴾ [ الانعام : ١٥٣ ]
“আর এটি তো আমার সোজা পথ। সুতরাং তোমরা তার অনুসরণ কর এবং অন্যান্য পথ অনসরণ করো না, তাহলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে”। [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১৫৩]
দুরূদ ও সালাম সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর, যিনি বলেছেন:
«إن بني إسرائيل افترقوا على إحدى وسبعين ملة، وتفترق أمتي على ثلاث وسبعين ملة؛ كلها في النار إلا واحدة»، فقيل : يا رسول الله، ما الواحدة؟ قال : «ما أنا عليه اليوم وأصحابي» .
“বনি ইসরাইলরা একাত্তুর দলে বিভক্ত হয়েছে, আর আমার উম্মত হবে তিয়াত্তুর দলে বিভক্ত, সব ক’টি দল জাহান্নামী একটি ব্যতীত”, জিজ্ঞাসা করা হলো: হে আল্লাহর রাসূল, একটি কোনটি? তিনি বললেন: “আজকে আমি ও আমার সাহাবীগণ যে দলে আছি সেটিই”। [সহীহ তিরমিযী, লিল আলবানী, হাদীস নং ২১২৯। এ হাদীসের অর্থ ও সনদ জানার জন্য আরো দেখুন সালিম হিলালির রচনা “দারউল ইরতিয়াব আন হাদীসে মা-আনা আলাইহি ওয়াল আসহাব”]
অতঃপর,
আল্লাহ তা‘আলা (তাঁর সর্বব্যাপী পার্থিব ইচ্ছা ও সিদ্ধান্ত অনুযায়ী) চেয়েছেন যে, মুসলিমগণ বিভিন্ন দল-উপদল এবং গ্রুপ ও মাযহাবে বিভক্ত হবে। ইখতিলাফ ও মতবিরোধের সময় কুরআন ও সুন্নাহ’র দিকে প্রত্যাবর্তন করার আল্লাহর নির্দেশ উপেক্ষা করে তারা একে অপরের সাথে শত্রুতা করবে, ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হবে একে অপরের বিরুদ্ধে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ وَأُوْلِي ٱلۡأَمۡرِ مِنكُمۡۖ فَإِن تَنَٰزَعۡتُمۡ فِي شَيۡءٖ فَرُدُّوهُ إِلَى ٱللَّهِ وَٱلرَّسُولِ إِن كُنتُمۡ تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِۚ ذَٰلِكَ خَيۡرٞ وَأَحۡسَنُ تَأۡوِيلًا ٥٩﴾ [ النساء : ٥٩ ]
“অতঃপর কোনো বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যাবর্তন করাও, যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখ। এটি উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৫৯]
তাই মুসলিম উম্মাহর প্রত্যেক হিতাকাঙক্ষী, তার ঐক্য, একতা ও সংঘবদ্ধতা প্রত্যাশী প্রত্যেকের দায়িত্ব হলো সত্য, ইনসাফ ও ন্যায়ের ওপর মুসলিম জাতির ঐক্যবদ্ধতা সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে যথাসাধ্য চেষ্টা করা এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে তার যে আকীদা, শরী‘আত ও আদর্শ ছিল তার ওপরই তাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা। যার নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহ তা‘আলা:
﴿وَٱعۡتَصِمُواْ بِحَبۡلِ ٱللَّهِ جَمِيعٗا وَلَا تَفَرَّقُواْۚ﴾ [ ال عمران : ١٠٣ ]
“আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং বিভক্ত হয়ো না”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০৩]
এ গুরু-দায়িত্বের প্রধান কাজ হলো, বিচ্যুত বিভিন্ন দল-উপদলের লোকদেরকে কুরআন ও সুন্নাহ’র দিকে আহ্বান করা, তাদের ভ্রান্তি ও সীমালঙ্ঘন স্পষ্ট করা, যা তাদের হিদায়াতের পথে বড় বাঁধা এবং মুসলিম জামা‘আতকে আঁকড়ে ধরার জন্য অনুপ্রাণিত করা।
আর এ ভাবনা থেকেই বারো ইমামী শী‘আদের প্রতি বিভিন্ন প্রশ্ন এবং অকাট্য যুক্তির অবতারণা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, হয়তো আমার এ সংকলন তাদের যুবকদের চিন্তা ও বিবেচনার জগতকে আন্দোলিত করবে, তাদের মধ্যে যারা বিবেকবান তাদেরকে সত্যের দিকে ধাবিত করবে। কারণ, তারা যখন এসব দ্বৈতনীতি, বৈপরিত্ব ও প্রশ্নের ব্যাপারে চিন্তা করবে, তখন তাদের কুরআন ও সুন্নাহ’র দিকে প্রত্যাবর্তন ব্যতীত কোনো পথ থাকবে না, যদি তারা এ থেকে নিষ্কৃতি পেতে চায়, পরিহার করতে চায় এসব স্ববিরোধী বক্তব্য।আমাকে সত্যিকারভাবেই অভিভূত করেছে যে, শী‘আ মতবাদ ত্যাগ করে হক তথা ইসলাম গ্রহণকারী এক ভাই [তিনি হচ্ছেন, সম্মানিত ভাই, আবু খালীফা আল-কুদাইবী, বাহরাইন থেকে। তিনি রিয়াদস্থ তাঁর ঘরে আমাকে সাক্ষাৎকার দিয়ে ধন্য করেছেন।], তার হিদায়াত লাভ করার ঘটনা ও অভিজ্ঞতা নিয়ে এক কিতাব রচনা করেছেন, যার নামকরণ করেছেন:
«ربحتُ الصحابة .. ولم أخسر آل البيت» !
“আমি সাহাবীদের লাভ করেছি, কিন্তু আহলে বাইতকেও হারাই নি!”
আল্লাহ তাকে দীনের ওপর দৃঢ় রাখুন, সত্যিই সে নামকরণের ব্যাপারে আল্লাহর তাওফীকপ্রাপ্ত হয়েছে। কারণ সত্যিকার মুসলিম আহলে বাইত ও সাহাবীদের মহব্বতের মধ্যে কোনো বিরোধ বা দ্বন্দ্ব দেখে না, আল্লাহ তাদের সকলের ওপর সন্তুষ্ট হোন।
তার কিতাবের এ নামকরণের কারণ সম্পর্কে সে আমাকে স্মরণ করিয়ে দেয় খিষ্টান থেকে ইসলাম গ্রহণকারী সে ভাইয়ের কথা, যিনি একটি কিতাব লেখেছেন অনুরূপ নাম দিয়ে:
«ربحتُ محمداً .. ولم أخسر عيسى» عليهما السلام .
“আমি মুহাম্মাদকে লাভ করেছি, কিন্তু ঈসাকেও হারাই নি” তাদের উভয়ের ওপর সালাম।
জ্ঞাতব্য যে, আমি এসব প্রশ্ন ও দ্বন্দ্বের অধিকাংশই সংগ্রহ করেছি বিভিন্ন ওয়েব সাইট থেকে, বিশেষ করে ( منتدى الدفاع عن السنة ) “মুনতাদা দিফা‘ ‘আনিস-সুন্নাহ”। এর সাথে আরো যোগ করেছি সেসব দ্বন্দ্ব ও দ্বৈতনীতি, যা অবগত হয়েছি আমি বিভিন্ন কিতাব থেকে, যেখানে শী‘আদের নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। অতঃপর সবগুলোকে সাজিয়েছি এবং এক ভলিউমও এক কিতাবে জমা করেছি। আমার কাজ শুধু জমা করা ও সাজানো। আল্লাহর নিকট দোয়া করছি, তিনি যেন এর দ্বারা শী‘আ যুবকদের হিদায়াত দান করেন। এ কিতাব দ্বারা তাদের কল্যাণের দ্বার উম্মুক্ত করেন। সবশেষে তাদের প্রতি আমার আহ্বান ‘সত্যের দিকে ফিরে আসা, ভ্রান্তিতে অটল থাকার চাইতে উত্তম’। তারা যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত আঁকড়ে ধরে, তার ওপর সন্তুষ্টি প্রকাশ করে ও তাকে সাহায্য করে, তাহলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস অনেক আহলে সুন্নাহ থেকে তাদের প্রতিদান অনেক বেড়ে যাবে, যারা তাদের দীন থেকে বিমুখ, প্রবৃত্তি নিয়ে ব্যস্ত অথবা দীনের ব্যাপারে সন্দেহে নিমজ্জিত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿مَن كَفَرَ فَعَلَيۡهِ كُفۡرُهُۥۖ وَمَنۡ عَمِلَ صَٰلِحٗا فَلِأَنفُسِهِمۡ يَمۡهَدُونَ ٤٤﴾ [ الروم : ٤٤ ]
“যে কুফুরী করে তার কুফুরীর পরিণাম তার ওপরই। আর যারা সৎকর্ম করে তারা তাদের নিজেদের জন্য শয্যা রচনা করে”। [সূরা আর-রূম, আয়াত: ৪৪]
আল্লাহ ভালো জানেন। দুরূদ ও সালাম আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর।
আবু মুস‘আব
Alkarashi1@hotmail.com
﴿وَأَنَّ هَٰذَا صِرَٰطِي مُسۡتَقِيمٗا فَٱتَّبِعُوهُۖ وَلَا تَتَّبِعُواْ ٱلسُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمۡ عَن سَبِيلِهِ﴾ [ الانعام : ١٥٣ ]
“আর এটি তো আমার সোজা পথ। সুতরাং তোমরা তার অনুসরণ কর এবং অন্যান্য পথ অনসরণ করো না, তাহলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে”। [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১৫৩]
দুরূদ ও সালাম সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর, যিনি বলেছেন:
«إن بني إسرائيل افترقوا على إحدى وسبعين ملة، وتفترق أمتي على ثلاث وسبعين ملة؛ كلها في النار إلا واحدة»، فقيل : يا رسول الله، ما الواحدة؟ قال : «ما أنا عليه اليوم وأصحابي» .
“বনি ইসরাইলরা একাত্তুর দলে বিভক্ত হয়েছে, আর আমার উম্মত হবে তিয়াত্তুর দলে বিভক্ত, সব ক’টি দল জাহান্নামী একটি ব্যতীত”, জিজ্ঞাসা করা হলো: হে আল্লাহর রাসূল, একটি কোনটি? তিনি বললেন: “আজকে আমি ও আমার সাহাবীগণ যে দলে আছি সেটিই”। [সহীহ তিরমিযী, লিল আলবানী, হাদীস নং ২১২৯। এ হাদীসের অর্থ ও সনদ জানার জন্য আরো দেখুন সালিম হিলালির রচনা “দারউল ইরতিয়াব আন হাদীসে মা-আনা আলাইহি ওয়াল আসহাব”]
অতঃপর,
আল্লাহ তা‘আলা (তাঁর সর্বব্যাপী পার্থিব ইচ্ছা ও সিদ্ধান্ত অনুযায়ী) চেয়েছেন যে, মুসলিমগণ বিভিন্ন দল-উপদল এবং গ্রুপ ও মাযহাবে বিভক্ত হবে। ইখতিলাফ ও মতবিরোধের সময় কুরআন ও সুন্নাহ’র দিকে প্রত্যাবর্তন করার আল্লাহর নির্দেশ উপেক্ষা করে তারা একে অপরের সাথে শত্রুতা করবে, ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হবে একে অপরের বিরুদ্ধে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ وَأُوْلِي ٱلۡأَمۡرِ مِنكُمۡۖ فَإِن تَنَٰزَعۡتُمۡ فِي شَيۡءٖ فَرُدُّوهُ إِلَى ٱللَّهِ وَٱلرَّسُولِ إِن كُنتُمۡ تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِۚ ذَٰلِكَ خَيۡرٞ وَأَحۡسَنُ تَأۡوِيلًا ٥٩﴾ [ النساء : ٥٩ ]
“অতঃপর কোনো বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যাবর্তন করাও, যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখ। এটি উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৫৯]
তাই মুসলিম উম্মাহর প্রত্যেক হিতাকাঙক্ষী, তার ঐক্য, একতা ও সংঘবদ্ধতা প্রত্যাশী প্রত্যেকের দায়িত্ব হলো সত্য, ইনসাফ ও ন্যায়ের ওপর মুসলিম জাতির ঐক্যবদ্ধতা সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে যথাসাধ্য চেষ্টা করা এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে তার যে আকীদা, শরী‘আত ও আদর্শ ছিল তার ওপরই তাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা। যার নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহ তা‘আলা:
﴿وَٱعۡتَصِمُواْ بِحَبۡلِ ٱللَّهِ جَمِيعٗا وَلَا تَفَرَّقُواْۚ﴾ [ ال عمران : ١٠٣ ]
“আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং বিভক্ত হয়ো না”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০৩]
এ গুরু-দায়িত্বের প্রধান কাজ হলো, বিচ্যুত বিভিন্ন দল-উপদলের লোকদেরকে কুরআন ও সুন্নাহ’র দিকে আহ্বান করা, তাদের ভ্রান্তি ও সীমালঙ্ঘন স্পষ্ট করা, যা তাদের হিদায়াতের পথে বড় বাঁধা এবং মুসলিম জামা‘আতকে আঁকড়ে ধরার জন্য অনুপ্রাণিত করা।
আর এ ভাবনা থেকেই বারো ইমামী শী‘আদের প্রতি বিভিন্ন প্রশ্ন এবং অকাট্য যুক্তির অবতারণা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, হয়তো আমার এ সংকলন তাদের যুবকদের চিন্তা ও বিবেচনার জগতকে আন্দোলিত করবে, তাদের মধ্যে যারা বিবেকবান তাদেরকে সত্যের দিকে ধাবিত করবে। কারণ, তারা যখন এসব দ্বৈতনীতি, বৈপরিত্ব ও প্রশ্নের ব্যাপারে চিন্তা করবে, তখন তাদের কুরআন ও সুন্নাহ’র দিকে প্রত্যাবর্তন ব্যতীত কোনো পথ থাকবে না, যদি তারা এ থেকে নিষ্কৃতি পেতে চায়, পরিহার করতে চায় এসব স্ববিরোধী বক্তব্য।আমাকে সত্যিকারভাবেই অভিভূত করেছে যে, শী‘আ মতবাদ ত্যাগ করে হক তথা ইসলাম গ্রহণকারী এক ভাই [তিনি হচ্ছেন, সম্মানিত ভাই, আবু খালীফা আল-কুদাইবী, বাহরাইন থেকে। তিনি রিয়াদস্থ তাঁর ঘরে আমাকে সাক্ষাৎকার দিয়ে ধন্য করেছেন।], তার হিদায়াত লাভ করার ঘটনা ও অভিজ্ঞতা নিয়ে এক কিতাব রচনা করেছেন, যার নামকরণ করেছেন:
«ربحتُ الصحابة .. ولم أخسر آل البيت» !
“আমি সাহাবীদের লাভ করেছি, কিন্তু আহলে বাইতকেও হারাই নি!”
আল্লাহ তাকে দীনের ওপর দৃঢ় রাখুন, সত্যিই সে নামকরণের ব্যাপারে আল্লাহর তাওফীকপ্রাপ্ত হয়েছে। কারণ সত্যিকার মুসলিম আহলে বাইত ও সাহাবীদের মহব্বতের মধ্যে কোনো বিরোধ বা দ্বন্দ্ব দেখে না, আল্লাহ তাদের সকলের ওপর সন্তুষ্ট হোন।
তার কিতাবের এ নামকরণের কারণ সম্পর্কে সে আমাকে স্মরণ করিয়ে দেয় খিষ্টান থেকে ইসলাম গ্রহণকারী সে ভাইয়ের কথা, যিনি একটি কিতাব লেখেছেন অনুরূপ নাম দিয়ে:
«ربحتُ محمداً .. ولم أخسر عيسى» عليهما السلام .
“আমি মুহাম্মাদকে লাভ করেছি, কিন্তু ঈসাকেও হারাই নি” তাদের উভয়ের ওপর সালাম।
জ্ঞাতব্য যে, আমি এসব প্রশ্ন ও দ্বন্দ্বের অধিকাংশই সংগ্রহ করেছি বিভিন্ন ওয়েব সাইট থেকে, বিশেষ করে ( منتدى الدفاع عن السنة ) “মুনতাদা দিফা‘ ‘আনিস-সুন্নাহ”। এর সাথে আরো যোগ করেছি সেসব দ্বন্দ্ব ও দ্বৈতনীতি, যা অবগত হয়েছি আমি বিভিন্ন কিতাব থেকে, যেখানে শী‘আদের নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। অতঃপর সবগুলোকে সাজিয়েছি এবং এক ভলিউমও এক কিতাবে জমা করেছি। আমার কাজ শুধু জমা করা ও সাজানো। আল্লাহর নিকট দোয়া করছি, তিনি যেন এর দ্বারা শী‘আ যুবকদের হিদায়াত দান করেন। এ কিতাব দ্বারা তাদের কল্যাণের দ্বার উম্মুক্ত করেন। সবশেষে তাদের প্রতি আমার আহ্বান ‘সত্যের দিকে ফিরে আসা, ভ্রান্তিতে অটল থাকার চাইতে উত্তম’। তারা যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত আঁকড়ে ধরে, তার ওপর সন্তুষ্টি প্রকাশ করে ও তাকে সাহায্য করে, তাহলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস অনেক আহলে সুন্নাহ থেকে তাদের প্রতিদান অনেক বেড়ে যাবে, যারা তাদের দীন থেকে বিমুখ, প্রবৃত্তি নিয়ে ব্যস্ত অথবা দীনের ব্যাপারে সন্দেহে নিমজ্জিত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿مَن كَفَرَ فَعَلَيۡهِ كُفۡرُهُۥۖ وَمَنۡ عَمِلَ صَٰلِحٗا فَلِأَنفُسِهِمۡ يَمۡهَدُونَ ٤٤﴾ [ الروم : ٤٤ ]
“যে কুফুরী করে তার কুফুরীর পরিণাম তার ওপরই। আর যারা সৎকর্ম করে তারা তাদের নিজেদের জন্য শয্যা রচনা করে”। [সূরা আর-রূম, আয়াত: ৪৪]
আল্লাহ ভালো জানেন। দুরূদ ও সালাম আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর।
আবু মুস‘আব
Alkarashi1@hotmail.com
১ শী‘আদের বিশ্বাস আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু মাসুম তথা নিষ্পাপ ইমাম। তা সত্বেও আমরা দেখি (তাদের স্বীকারোক্তি মোতাবিক) তিনি নিজ মেয়ে হাসান ও হুসাইনের সহোদর বোন উম্মে কুলসুমকে উমার ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহুর সাথে বিয়ে দেন [এ বিয়ে শী‘আদের বড় আলিমদের নিকটও স্বীকৃত, দেখুন: ‘আল-কুলাইনি ফিল কাফি ফিল ফুরু’: (৬/১১৫); আত-তুসি ফি তাহজিবিল আহকাম, বাবু আদাদিন নিসা: (খ.৮/পৃ. ১৪৮) ও (খ.২/পৃ. ৩৮০); আত-তুসির রচনা ‘আল-ইসতেবসার’: (৩/৩৫৬), আল-মাজেন্দারানি ফি মানাকিবে আলে-আবি তালিব: (৩/১২৪); আল-আমেলি ফি মাসালিকিল আফহাম: (১/কিতাবুন নিকাহ), মুরতাজা আলামুল হুদা ফিশ-শাফি: (পৃ. ১১৬); ইবন আবিল হাদিদ ফি শারহে নাহজিল বালাগাহ: (৩/১২৪), আরদবিলি ফি হাদিকাতিশ শী‘আহ: (পৃ. ২৭৭); শুশতরি ফি মাজালিসিল মুমিনীন: (পৃ. ৭৬-৮২); আল-মাজলিসী ফি বিহারিল আনওয়ার: (পৃ. ৬২১), আরো বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন আবু মুয়াজ ইসমায়েলীর রচনা: “যিওয়াজু ওমর ইব্নুল খাত্তাব মিন উম্মে কুলসুম বিনতে আলী ইবন আলী তালিব হাকিকাতান লা ইফতিরাআন”]! এ থেকে শী‘আদের দুইটি সিদ্ধান্তের একটি অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে, যার বাস্তবতা তাদের জন্য খুবই তিক্ত ও বিরক্তিকর:
এক. হয়তো আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু নিষ্পাপ বা মাসুম নন। কারণ, তিনি নিজ মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন কাফিরের সাথে!, এটা শী‘আদের মূলনীতি বিরোধী। এ থেকে আরো স্পষ্ট হয় তিনি ব্যতীত অন্যান্য ইমামও নিষ্পাপ নন।
দুই. অথবা উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু মুসলিম! যে কারণে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু তার সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। এ দু’টি প্রশ্ন শী‘আদের নিরুত্তর করে দেয়।
২ শী‘আরা ধারণা করে আবু বকর ও উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা কাফির ছিলেন, কিন্তু তা স্বত্বেও আমরা লক্ষ্য করি, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু, শী‘আদের নিকট যিনি নিষ্পাপ ইমাম, তাদের উভয়ের খিলাফতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন এবং একের পর অপরের নিকট বায়‘আত গ্রহণ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন নি। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, আলী নিষ্পাপ ছিলেন না, কারণ শী‘আদের ধারণানুযায়ী আলীর স্বীকারোক্তি মোতাবেক তারা ছিল কাফির, যালিম ও আত্মসাৎকারী, আর তিনি তাদের হাতেই বাই‘আত করেছেন। এটা তো তার নিষ্পাপ হওয়ার বিপরীত এবং যালেমের জুলমের ওপর সাহায্য করা বৈ কিছু নয়। নিষ্পাপ ব্যক্তি থেকে এমন কখনো হতে পারে না অথবা তার কর্ম সঠিক ছিল!! কারণ, তারা উভয়ে ছিলেন ইনসাফপূর্ণ, সত্যবাদী ও মুসলিম খলিফা। অতএব, শী‘আদের পক্ষ থেকে তাদেরকে কাফির বলা, তাদের গালমন্দ করা, তাদের ওপর লা‘নত করা ও তাদের ওপর অসন্তুষ্টি প্রকাশ করা, বস্তুত তাদের ইমামেরই বিরোধিতা করা! আমরা তো নির্বাক, আবুল হাসান আলী –রাদিয়াল্লাহু আনহু-র অনুসরণ করব, না তার পাপিষ্ঠ অপরাধী দল শী‘আদের অনুসরণ করব!?
৩. ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহার মৃত্যুর পর আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু অনেক নারীই বিয়ে করেছেন, যাদের থেকে তার অনেক সন্তানও রয়েছে। যেমন,
(ক) আব্বাস ইবন আলী ইবন আবু তালিব।
(খ) আব্দুল্লাহ ইবন আলী ইবন আবু তালিব।
(গ) জাফর ইবন আলী ইবন আবু তালিব।
(ঘ) উসমান ইবন আলী ইবন আবু তালিব।
এদের সকলের মাতা: উম্মুল বানিন বিনত হিজাম ইবন দারেম। [কাশফুল গুম্মাহ ফি মারেফাতিল আয়িম্মাহ।]
(ক) উবাইদুল্লাহ ইবন আলী ইবন আবি তালিব।
(খ) আবুবকর ইবন আলী ইবন আবি তালিব।
এদের মাতা: লায়লা বিনতে মাসউদ আদ-দারিয়াহ [কাশফূল গুম্মাহ ফি মারেফাতিল আয়িম্মাহ, আল-ইরশাদ: (পৃ. ১৬৭); মুজামুল খুইয়ি: (২১/৬৬)]।
(ক) ইয়াহইয়া ইবন আলী ইবন আবি তালিব।
(খ) মুহাম্মাদ আল-আসগার ইবন আলী ইবন আবি তালিব।
(গ) আউন ইবন আলী ইবন আলী তালিব।
এদের মাতা: আসমা বিনতে উমাইয়েস [কাশফূল গুম্মাহ ফি মারেফাতিল আয়িম্মাহ।]।
(ক) রুকাইয়া বিনত আলী ইবন আবি তালিব।
(খ) উমার ইবন আলী ইবন আবি তালিব, তিনি পয়ত্রিশ বছর বয়সে মারা যান।
এদের মাতা: উম্মে হাবিবা বিনতে রাবিয়াহ [কাশফূল গুম্মাহ ফি মারেফাতিল আয়িম্মাহ, আল-ইরশাদ: (পৃ. ১৬৭), মুজামুল খুইয়ি: (১৩/৪৫)]।
(ক) উম্মুল হাসান বিনতে আলী ইবন আবি তালিব।
(খ) রামলাতুল কুবরা বিনতে আলী ইবন আবি তালিব।
এদের মাতা: উম্মে মাসউদ বিনতে উরওয়াহ ইবন মাসউদ আস-সাকাফি [আলী আল-আরবালি রচিত ‘কাশফূল গুম্মাহ ফি মারেফাতিল আয়িম্মাহ’: (২/৬৬), আল-ইরশাদ: (পৃ. ১৬৭); মুজামুল খুইয়ি: (১৩/৪৫); শী‘আদের আরো প্রমাণ্যগ্রন্থসমূহে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর সন্তানের এসব নাম উল্লেখ রয়েছে। দেখুন: উস্তাদ ফায়সাল নূর রচিত ‘আল-ইমামাহ ওয়ান নস’ (পৃ. ৬৮৩-৬৮৬)]।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে কোনো ব্যক্তি তার কলিজার টুকরা, সন্তানদের নাম কি শত্রুদের নামে রাখে?! আর এ পিতা যদি হয় আলী, তার থেকে এটা কীভাবে সম্ভব! আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু কীভাবে নিজ সন্তানদের নাম তাদের নামানুসারে রাখতে পারেন, যাদেরকে তোমরা কাফির ধারণা কর?! বিবেকবান কোনো সুস্থ ব্যক্তি কি তার প্রিয় সন্তানদের নাম শত্রুদের নামে রাখতে পারে?! তোমরা কি জান, আলীই কুরাইশ বংশের প্রথম ব্যক্তি, যিনি নিজ সন্তানদের নাম আবু বকর, উমার ও উসমান রেখেছেন?
৪ শী‘আদের নিকট গ্রহণযোগ্য কিতাব ‘নাহজুল বালাগা’র বর্ণনাকারী বলেন, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু খিলাফত থেকে অব্যাহতি চেয়ে বলেছেন: ( دعوني والتمسوا غيري !) ‘তোমরা আমাকে অব্যাহতি দাও, অন্য কাউকে তালাশ করে নাও’। [নাহজুল বালাগাহ: পৃ. ১৩৬), আরো দেখুন: (পৃ. ৩৬৬-৩৬৭) ও (পৃ. ৩২২)]
এ উক্তি তো শী‘আদের মাযহাবের মূলনীতিই উপড়ে ফেলে। তিনি কীভাবে খিলাফত থেকে অব্যাহতি চান, অথচ শী‘আদের নিকট তার ইমামতি ও খিলাফত আল্লাহর পক্ষ থেকে ফরয ও অবশ্য জরুরি, তাদের ধারণানুযায়ী তিনি আবু বকরের নিকট এ খিলাফতের দাবী করতেন?!
৫. শী‘আদের ধারণা যে, ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শরীরের অংশ, তাকে আবু বকরের খিলাফতের সময় অপমান করা হয়েছে, তার পাঁজরের হাঁড় ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে, তার বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল এবং তার গর্ভের বাচ্চা ফেলে দেওয়া হয়েছে, শী‘আদের নিকট যার নাম মুহসিন!
প্রশ্ন হলো: এসব ঘটনার সময় আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু কোথায় ছিলেন?! তার বাহাদুরি কোথায় ছিল, তিনি কেন নিজের অধিকার আদায় করেন নি, অথচ তিনি ছিলেন বীর বাহাদুর, বারবার আক্রমণকারী?!
৬. আমরা দেখি বড় বড় সাহাবায়ে কেরাম আহলে বাইতের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক করেছেন, তাদের নারীদের বিয়ে করেছেন, অনুরূপ তারাও সাহাবীদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক করেছেন, তাদের মেয়েদের বিয়ে করেছেন, বিশেষ করে আবু বকর ও উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা। এ ব্যাপারে শী‘আ-সুন্নী সকল ঐতিহাসিক ও লেখকগণ একমত। যেমন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিয়ে করেছেন:
আয়েশা বিনতে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে।
হাফসা বিনতে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুকে।
নিজের দুই মেয়ে রুকাইয়া, অতঃপর উম্মে কুলসুমকে বিয়ে দিয়েছেন তৃতীয় খলিফা উসমান ইবন আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিকট, এ জন্যই তাকে যুন-নূরাইন (দুই নূর বিশিষ্ট) বলা হয়, তিনি ছিলেন দানশীল ও লাজুক।
অতঃপর তার ছেলে আবান ইবন উসমান বিয়ে করেন উম্মে কুলসুম বিনতে আব্দুল্লাহ ইবন জাফর ইবন আবি তালিবকে। অর্থাৎ আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর ভাতিজার মেয়ে।
মারওয়ান ইবন আবান ইবন উসমান বিয়ে করেন উম্মুল কাসেম বিনতে হাসান ইবন হাসান ইবন আলী ইবন আবি তালিবকে। অর্থাৎ উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর নাতি বিয়ে করেন আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু নাতির মেয়েকে।
যায়েদ ইবন আমর ইবন উসমান বিয়ে করেন সাকিনা বিনতে হুসাইনকে। অর্থাৎ উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর নাতি বিয়ে করেন আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর নাতিনকে।
আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবন উসমান বিয়ে করেন ফাতেমা বিনতে হুসাইন ইবন আলীকে। অর্থাৎ উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর নাতি বিয়ে করেন হুসাইনের মেয়ে তথা আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর নাতিনকে।
আমরা শুধু সাহাবাদের থেকে তিন খলিফারই উল্লেখ করলাম, অন্যান্য সাহাবাদের সাথে যদিও আহলে বাইতের বৈবাহিক সম্পর্ক ছিল, এটা বুঝানোর জন্য যে, আহলে বাইত তাদেরকে মহব্বত করতেন, আর এ জন্যই এসব বৈবাহিক সম্পর্ক ও আত্মীয়তা। [এর চেয়েও আরো অধিক জানার জন্য দেখুন ফকিহ আলাউদ্দিন রচিত ‘আদ্দুররুল মানসুর মিন তুরাসি আহলিল বাইত’।]
আমরা আরো লক্ষ্য করি যে, আহলে বাইতের সদস্যরা তাদের সন্তানের নাম রাখতেন সাহাবাদের নামানুসারে। এ ব্যাপারে শী‘আ-সুন্নী সব লেখক ও ঐতিহাসিক একমত।
শী‘আদের গ্রহণযোগ্য কিতাবেই রয়েছে লায়লা বিনত মাসউদ হানজালিয়ার গর্ভে ভূমিষ্ঠ আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু নিজ সন্তানের নাম রেখেছেন আবু বকর। বনু হাশেমের মধ্যে সর্ব প্রথম আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু নিজ সন্তানের নাম রাখেন আবু বকর। [দেখুন: আল-ইরশাদ লিল মূফিদ: (পৃ. ৩৫৪); আবুল ফরজ আসফাহানী শী‘আ রচিত ‘মুকাতিলুত তালেবিন’: (পৃ. ৯১); তারিখুল ইয়াকুবি শী‘আ: (খ.২/পৃ. ২১৩)]
অনুরূপ হাসান ইবন আলী ইবন আবি তালেব নিজ সন্তানদের নাম রেখেছেন আবু বকর, আব্দুর রহমান, তালহা ও উবাইদুল্লাহ প্রমুখ। [মাসউদি শী‘আর রচনা ‘আততানবিহ ওয়াল ইরশাদ, (পৃ. ২৬৩)]
অনুরূপ হাসান ইবন হাসান ইবন আলিও নিজ সন্তানদের অনুরূপ নাম রাখেন। [আবুল ফরজ আসফাহানি শী‘আ রচিত ‘মুকাতিলুত তালেবিন’: (পৃ. ১৮৮); দারুল মারেফা প্রকাশিত।]
অনুরূপ মুসা কাযেম নিজ মেয়ের নাম রাখেন আয়েশা। [আর-বলি রচিত ‘কাশফুল গুম্মাহ’: (৩/২৬)]
আবার আহলে বাইতের কেউ নিজের উপনাম গ্রহণ করেছেন আবু বকর, যেমন যয়নুল আবেদিন ইবন আলি। [আর-বলি রচিত ‘কাশফুল গুম্মাহ’: (২/৩১৭)] ও আলী ইবন মূসা (রেযা) প্রমুখ। [আবুল ফরজ আসফাহানি শী‘আ রচিত ‘মুকাতিলুত তালেবিন’: (পৃ. ৫৬১-৫৬২), দারুল মারেফা থেকে প্রকাশিত।]
আহলে বাইতের যারা নিজ সন্তানের নাম রেখেছেন উমার, তাদের মধ্যে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু অন্যতম। তিনি নিজের এক সন্তানের নাম রাখেন উমার আকবর, যার মাতা ছিল উম্মে হাবিবা বিনতে রাবিআহ। তিনি নিজ ভাই হুসাইনের সাথে তুফ নামক স্থানে শহীদ হোন। তার আরেক সন্তান হচ্ছে উমার আসগর, তার মাতা ছিল সাহবা বিনতে তাগলাবিয়াহ। আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর এ সন্তান দীর্ঘ জীবন লাভ করে ভাইদের মিরাস লাভ করেন। [আল-ইরশাদ লিল মুফিদ: (পৃ. ৩৫৪), মুজামু রিজালিল হাদীস লিল খুইয়ি: (খ.১৩,পৃ. ৫১); আবুল ফরয আসফাহানি শী‘আ রচিত ‘মুকাতিলুত তালেবিন’: (পৃ. ৮৪), বইরুত থেকে প্রকাশিত। উমদাতুত তালিব: (পৃ. ৩৬১), নাজাফ থেকে প্রকাশিত, জালাউল উয়ূন: (পৃ. ৫৭০),]
অনুরূপ হাসান ইবন আলী নিজ সন্তানের নাম রাখেন আবু বকর ও উমার। [আল-ইরশাদ লিল মুফিদ: (পৃ. ১৯৪), মুনতাহাল আমাল: (খ.১পৃ. ২৪০), উমদাতুত তালিব: (পৃ. ৮১), জালাউল উয়ুন লিল মাজলিসি: (পৃ. ৫৮২), মুজামু রিজালিল হাদীস লিল খুইয়ি: (খ.১৩পৃ. ২৯), নং (৮৭১৬); কাশফূলগুম্মাহ: (২/২০১)]
অনুরূপ আলী ইবনুল হুসাইন ইবন আলীি। [আল-ইরশাদ লিল মুফিদ: (২/১৫৫); কাশফুল গুম্মাহ: (২/২৯৪)]
অনুরূপ জয়নুল আবেদিন।
অনুরূপ মূসা আল-কাজেম।
অনুরূপ হুসাইন ইবন যায়েদ ইবন আলি।
অনুরূপ ইসহাক ইবন হাসান ইবন আলী ইবন হুসাইন।
অনুরূপ হাসান ইবন আলী ইবন হাসান ইবন হুসাইন ইবন হাসান।
আহলে বাইতের আরো অনেকেই আবু বকর ও উমারের নাম অনুসারে নিজেদের সন্তানদের নাম রেখেছেন। কলেবর বৃদ্ধির আশঙ্কায় আমরা এখানেই ইতি টানছি। [বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন: ‘মাকাতিলুত তালেবিন’ ও ইমামিয়াহ সম্প্রদায়ের অন্যান্য মৌলিক গ্রন্থ, যেমন আদদুররুল মানসুর: (পৃ. ৬৫-৬৯)]
আর আহলে বাইতের যারা তাদের মেয়েদের নাম রেখেছেন আয়েশা, তাদের মধ্যে মূসা কাযেম [আল-ইরশাদ: (পৃ. ৩০২), আল-ফুসুল হিম্মাহ: (২৪২), কাশফুল গুম্মাহ: (খ. ৩ পৃ. ২৬)] এবং আলী আল-হাদি [আল-ইরশাদ লিল মুফিদ: (২/৩১২)] অন্যতম।
আমরা শুধু আবু বকর, উমার ও আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহুমের নাম উল্লেখ করলাম, যদিও আহলে বাইতের অনেকে তাদের ব্যতীত অন্যান্য সাহাবাদের নামানুসারে নিজেদের সন্তানের নাম রেখেছেন।
৭. কুলাইনি ‘আল-কাফি’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন: “ইমামগণ জানেন তারা কখন মারা যাবেন, এবং তারা নিজেদের ইচ্ছা ব্যতীত মারা যান না”। [‘আল-উসুলুল কাফি লিল কুলাইনি’: (১/২৫৮); ‘আল-ফুসুলুল হিম্মাহ’ লিল হুর আল-আমেলি: (পৃ. ১৫৫)] অতঃপর মাজলিসী তার ‘বিহারুল আনওয়ার’ কিতাবে একটি হাদীস উল্লেখ করেন: “এমন কোনো ইমাম নেই, যিনি হত্যার শিকার হন নি অথবা বিষ প্রয়োগে মারা যান নি”। [‘বিহারুল আনওয়ার’: (৪৩/৩৬৪)]
আমাদের প্রশ্ন: যদি ইমাম গায়েব জানেন, যেমন কুলাইনি ও হুর আল-আমেলী উল্লেখ করেছেন, তাহলে তাদের জানার কথা খানার সাথে কি দেওয়া হয়েছে, যদি তাতে বিষ থাকে, তাহলে তারা জেনে বিরত থাকবেন, আর যদি বিরত না থাকেন আত্মহত্যা করে মারা গেলেন। কারণ তিনি জানেন খাদ্যে বিষ রয়েছে! অতএব, তিনি নিজেই নিজেকে হত্যা করলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন আত্মহত্যাকারী জাহান্নামী! শী‘আরা কি তাদের ইমামদের জন্য এটা পছন্দ করেন?!
৮. হাসান ইবন আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুমা, মুয়াবিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করে তার সাথে সমঝোতা করেন, অথচ তার নিকট তখন ছিল বৃহৎ জামা‘আত ও বিরাট সৈন্যবাহিনী, যা দিয়ে তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারতেন। এর বিপরীতে আমরা দেখি তার ভাই হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু ইয়াজিদের বিরুদ্ধে সামান্য লোক নিয়ে বিদ্রোহ করেন, অথচ তিনি ক্ষমতার দাবি পরিত্যাগ করেও তার সাথে সমঝোতায় আসতে পারতেন।
অতএব, তাদের একজনকে সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত ও অপরকে বাতিলের ওপর অটল মানা ব্যতীত দ্বিতীয় কোনো পথ নেই। কারণ, যুদ্ধ করার সামর্থ থাকা সত্বেও যদি হাসানের ক্ষমতা হস্তান্তর করা সঠিক হয়, তাহলে সমঝোতার সুযোগ থাকা সত্বেও সামান্য শক্তি নিয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করা হুসাইনের পক্ষে ভুল ছিল। আর যদি দুর্বলতা সত্বেও হুসাইনের বিদ্রোহ ঘোষণা করা সঠিক হয়, তাহলে সামর্থ থাকা সত্বেও হাসানের ক্ষমতা হস্তান্তর করা ভুল ছিল!
এ ঘটনা শী‘আদেরকে এমন এক পরিস্থিতির সম্মুখীন করে, যার মুখোমুখি হতে কেউ পছন্দ করে না। কারণ তারা যদি বলে: তারা উভয়ে সত্যের ওপর ছিল, তাহলে তারা দুই বিপরীত বস্তুকে একত্র করল, যা তাদের মূলনীতিই নস্যাৎ করে দেয়। আর যদি তারা হাসানের কর্মকে বাতিল বলে, তাহলে তার ইমামতি বাতিল বলা জরুরী, যদি তার ইমামতি বাতিল হয়, তাহলে তার পিতার ইমামতি ও নিষ্পাপ হওয়া বাতিল হয়। কারণ, তিনি হাসানের ব্যাপারে ওসিয়ত করেছেন। আর তাদের মাযহাব অনুসারে মাসুম ইমাম মাসুম ইমাম ব্যতীত অন্য কারো ব্যাপারে ওসিয়ত করতে পারে না।
আর যদি তারা বলে হুসাইনের কাজ ভুল ছিল, তাহলে তার ইমামতি ও নিষ্পাপ হওয়া বাতিল প্রমাণিত হয়। তার ইমামতি ও নিষ্পাপ হওয়ার বাতুলতা তার সকল সন্তান ও তাদের পরবর্তী বংশের ইমামতি ও নিষ্পাপ হওয়া বাতিল প্রমাণ করে। কারণ তিনিই তাদের ইমামতির মূল এবং তার থেকেই ইমামতির ধারা পরবর্তীদের নিকট পর্যন্ত পৌঁছেছে। যদি মূল বাতিল হয়, তাহলে পরবর্তীরা এমনিই বাতিল!
(কতক শী‘আ এ প্রশ্ন থেকে বাচার জন্য খিলাফত ও ইমারতের মাঝে পার্থক্য করে! অর্থাৎ হাসান খিলাফত হস্তান্তর করেছেন ইমারত হস্তান্তর করেন নি, এটা হাস্যকর ব্যাখ্যা।)
৯. কুলাইনি তার কিতাব ‘আল-কাফি’ [দেখুন, কুলাইনির উসুলুল কাফী: ১/২৩৯।]তে উল্লেখ করেছেন:
«حدثنا عِدَّةٌ مِنْ أَصْحَابِنَا عَنْ أَحْمَدَ بْنِ مُحَمَّدٍ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الْحَجَّالِ عَنْ أَحْمَدَ بْنِ عُمَرَ الْحَلَبِيِّ عَنْ أَبِي بَصِيرٍ قَالَ دَخَلْتُ عَلَى أَبِي عَبْدِ اللَّهِ ( عليه السلام ) فَقُلْتُ لَهُ جُعِلْتُ فِدَاكَ إِنِّي أَسْأَلُكَ عَنْ مَسْأَلَةٍ هَاهُنَا أَحَدٌ يَسْمَعُ كَلَامِي، قَالَ فَرَفَعَ أَبُو عَبْدِ اللَّه ) ( عليه السلام ) سِتْراً بَيْنَهُ وبَيْنَ بَيْتٍ آخَرَ فَاطَّلَعَ فِيهِ ثُمَّ قَالَ : يَا أَبَا مُحَمَّدٍ سَلْ عَمَّا بَدَا لَكَ، قَالَ : قلْتُ : جُعِلْتُ فداك ..... ثُمَّ سَكَتَ سَاعَةً ثُمَّ قَالَ : وإِنَّ عِنْدَنَا لَمُصْحَفَ فَاطِمَةَ ( عليها السلام ) ومَا يُدْرِيهِمْ مَا مُصْحَفُ فَاطِمَةَ ( عليها السلام ) ، قَالَ : قُلْتُ : ومَا مُصْحَفُ فَاطِمَةَ ( عليها السلام ) ؟ قَالَ : مُصْحَفٌ فِيهِ مِثْلُ قُرْآنِكُمْ هَذَا ثَلَاثَ مَرَّاتٍ، واللَّهِ مَا فِيهِ مِنْ قُرْآنِكُمْ حَرْفٌ وَاحِدٌ، قَالَ : قُلْتُ : هَذَا واللَّهِ الْعِلْمُ، قَالَ : إِنَّهُ لَعِلْمٌ ومَا هُوَ بِذَاكَ» . انتهى .
“আমাদের কতক উস্তাদ আহমদ ইবন মুহাম্মাদ থেকে, সে আব্দুল্লাহ ইবন হাজ্জাল থেকে, সে আহমদ ইবন উমার আল-হালবি থেকে, সে আবু বাসির থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি আবু আব্দুল্লাহ (আলাইহিস সালামে)-র দরবারে উপস্থিত হই, অতঃপর তাকে বলি, আমি আপনার জন্য উৎসর্গ, আমি একটি মাসআলা সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞাসা করব, এখানে কেউ আমার কথা শ্রবণ করছে, ফলে আবু আব্দুল্লাহ একটি ঘরের পর্দা উঠিয়ে সেখানে উঁকি দেন, অতঃপর বলেন, হে আবু মুহাম্মাদ তোমার যা খুশি প্রশ্ন কর, তিনি বলেন, আমি বললাম: আমি আপনার ওপর উৎসর্গ... অতঃপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলেন, আমাদের নিকট মুসহাফে (কুরআন) ফাতেমা (আলাইহাস সালাম) রয়েছে, তারা কীভাবে জানবে মুসহাফে ফাতেমা (আলাইহাস সালাম) কী! তিনি বলেন, আমি বললাম: মুসহাফে ফাতেমা (আলাইহিস সালাম) কী? তিনি বললেন: তোমাদের কুরআনের ন্যায় তিনগুন বড়। আল্লাহর শপথ, তাতে তোমাদের কুরআনের একটি অক্ষরও নেই। তিনি বলেন, আমি বললাম: আল্লাহর শপথ এটাই তো জ্ঞান। তিনি বললেন: অবশ্যই এটাই জ্ঞান”। [দেখুন: ‘উসুলুল কাফি’ লিল কুলাইনি: (১/২৩৯)]
আমাদের প্রশ্ন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম কি মাসহাফে ফাতেমা জানতেন?! তিনি যদি মাসহাফে ফাতেমা না জানেন, তাহলে আহলে বাইত কীভাবে মাসহাফে ফাতেমার সন্ধান পেল, অথচ তিনি ছিলেন আল্লাহর রাসূল?! আর যদি তিনি জেনে থাকেন, তাহলে কেন তিনি মাসহাফে ফাতেমা উম্মত থেকে আড়ালে রাখলেন?! অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلرَّسُولُ بَلِّغۡ مَآ أُنزِلَ إِلَيۡكَ مِن رَّبِّكَۖ وَإِن لَّمۡ تَفۡعَلۡ فَمَا بَلَّغۡتَ رِسَالَتَهُۥۚ﴾ [ المائدة : ٦٧ ]
“হে রাসূল, তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার নিকট যা নাযিল করা হয়েছে, তা পৌঁছে দাও আর যদি তুমি না কর তবে তুমি তাঁর রিসালাত পৌঁছালে না”। [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৬৭-৭৭]
১০. কুলাইনির ‘আল-কাফি’ গ্রন্থের প্রথম খণ্ডে কতক লোকের নাম রয়েছে, যারা শী‘আদের নিকট রাসূলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস ও আহলে বাইতের বাণী বর্ণনা করেছেন, তন্মধ্যে নিম্নের নামগুলো বিদ্যমান:
মুফাজ্জাল ইবন উমার, আহমদ ইবন উমার আল-হালবি, উমার ইবন আবান, উমার ইবন উজুইনাহ, উমার ইবন আব্দুল আজিজ, ইবরাহিম ইবন উমার, উমার ইবন হানজালাহ, মূসা ইবন উমার, আব্বাস ইবন উমর প্রমুখ। এসব নামের মধ্যে উমার নাম বিদ্যমান, হয়তো স্বয়ং বর্ণনাকারী অথবা বর্ণনাকারীর পিতার নাম উমার। এদের নাম কেন উমার রাখা হয়েছে?!
১১. আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَبَشِّرِ ٱلصَّٰبِرِينَ ١٥٥ ٱلَّذِينَ إِذَآ أَصَٰبَتۡهُم مُّصِيبَةٞ قَالُوٓاْ إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّآ إِلَيۡهِ رَٰجِعُونَ ١٥٦ أُوْلَٰٓئِكَ عَلَيۡهِمۡ صَلَوَٰتٞ مِّن رَّبِّهِمۡ وَرَحۡمَةٞۖ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُهۡتَدُونَ ١٥٧﴾ [ البقرة : ١٥٥، ١٥٧ ]
“আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও। যারা, তাদেরকে যখন বিপদ আক্রান্ত করে তখন বলে, নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয় আমরা তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। তাদের ওপরই রয়েছে তাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও রহমত এবং তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত”। [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৫৫-১৫৭]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿وَٱلصَّٰبِرِينَ فِي ٱلۡبَأۡسَآءِ وَٱلضَّرَّآءِ وَحِينَ ٱلۡبَأۡسِۗ﴾ [ البقرة : ١٧٧ ]
“যারা ধৈর্যধারণ করে কষ্ট ও দুর্দশায় ও যুদ্ধের সময়ে”। [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৭৭]
‘নাহজুল বালাগাহ’-য় রয়েছে:
عليه و«وقال علي رضي الله عنه بعد وفاة النبي صلى الله عليه وسلم مخاطبا إياه صلى الله سلم : لولا أنك نهيت عن الجزع وأمرت بالصبر لأنفدنا عليك ماء الشؤون» .
“আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর তাকে সম্মোধন করে বলেন, আপনি যদি মাতম থেকে নিষেধ না করতেন, আর ধৈর্য ধারণ করার নির্দেশ না দিতেন, তাহলে আপনার জন্য ক্রন্দন করে আমরা চোখের পানি শেষ করতাম। [‘নাহজুল বালাগাহ’: (পৃ. ৫৭৬), দেখুন: ‘মুসতাদরাকুল ওয়াসায়েল’: (২/৪৪৫)]
তাতে আরো রয়েছে:
«أن علياً عليه السلام قال : من ضرب يده عند مصيبة على فخذه فقد حبط عمله» .
“আলী আলাইহিস সালাম বলেছেন: মুসিবতের সময় নিজ হাত দিয়ে যে রানের উপর আঘাত করল, তার সকল আমল বিনষ্ট হয়ে গেল”। [দেখুন: ‘আল-খিসাল’ লি সাদুক: (পৃ. ৬২), ‘ওয়াসায়েলুশ শী‘আহ’: (৩/২৭০)]
কারবালার ময়দানে হুসাইন তার বোন যয়নবকে বলেন, ‘মুনতাহাল আমাল’ [‘মুনতাহাল আমাল’: (১/২৪৮)] গ্রন্থকার ফারসিতে যা নকল করেছেন, তার আরবী অনুবাদ:
«يا أختي، أحلفك بالله عليك أن تحافظي على هذا الحلف، إذا قتلت فلا تشقي عليّ الجيب، ولا تخمشي وجهك بأظفارك، ولا تنادي بالويل والثبور على شهادتي» .
“হে আমার বোন, আমি তোমাকে আল্লাহর শপথ দিচ্ছি, তুমি অবশ্যই এ শপথ রক্ষা করবে, আমি যখন মারা যাব, তুমি আমার জন্য কাপড় ছিড়বে না, নখ দ্বারা তোমার চেহারা ক্ষতবিক্ষত করবে না, আমার শাহাদাতের জন্য তুমি মুসিবত ও মৃত্যুকে আহ্বান করবে না”।
আবু জাফর কুম্মি বর্ণনা করেন, আলী (আলাইহিস সালাম) তার শিষ্যদের শিক্ষা দিয়ে বলেন,
«لا تلبسوا سوادا فإنه لباس فرعون» .
“তোমরা কালো কাপড় পরিধান কর না, কারণ তা ফিরআউনের পোশাক”। [আবু জাফর মুহাম্মদ ইবন বাবুইয়াহ আল-কুম্মি রচিত ‘মান লা ইয়াহদুরুহুল ফকিহ’: (১/২৩২) এবং ‘ওয়াসায়েলুশ শী‘আহ’ লিল হুর আল-আমেলি: (২/৯১৬)]
﴿وَلَا يَعۡصِينَكَ فِي مَعۡرُوفٖ﴾ [ الممتحنة : ١٢ ]
“এবং সৎ কাজে তারা তোমার অবাধ্য হবে না”। [সূরা আল--মুমতাহিনাহ, আয়াত: ১২]
এর ব্যাখ্যায় ‘তাফসিরুস সাফি’-তে রয়েছে: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম নারীদের এ মর্মে বাই‘আত করেছেন যে, তারা কাপড় কালো করবে না, বুকের কাপড় ছিড়বে না এবং সর্বনাশ ও মুসিবত বলে মাতম-চিৎকার করবে না।
কুলাইনি ‘ফুরুলউল কাফি’ গ্রন্থে বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে ওসিয়ত করে বলেছেন:
«إذا أنا مت فلا تخمشي وجهاً ولا ترخي عليّ شعراً ولا تنادي بالويل ولا تقيمي عليَّ نائحة»
“আমি যখন মারা যাব, তুমি তোমার চেহারা ক্ষতবিক্ষত করবে না, আমার ওপর তোমার চুল দ্বারা আঘাত করবে না, মুসিবত বলে মাতম করবে না এবং আমার জন্য বিলাপকারিনী দিয়ে ক্রন্দনের ব্যবস্থা করবে না” [৫/৫২৭।]।
শী‘আদের শাইখ মুহাম্মাদ ইবন বাবুইয়াহ আল-কুম্মি, যিনি শী‘আদের নিকট সাদুক উপাদিতে ভূষিত, তিনি বলেন,
«من ألفاظ رسول الله صلى الله عليه وآله وسلم التي لم يسبق إليها : « النياحة من عمل الجاهلية»
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম বলেন, বিলাপ করে ক্রন্দন করা জাহেলী আমল”। [সাদুক আবু জাফর মুহাম্মদ ইবন বাবুইয়াহ আল-কুম্মি রচিত ‘মান লা ইয়াহদুরুহুল ফকিহ’: (৪/২৭১-২৭২), ‘ওয়াসায়েলুশ শী‘আহ’ লিল হুর আল-আমেলি: (২/৯১৫); ‘আল-হাদায়েকুন নাদেরাহ’: (৪/১৪৯); ‘জামে আহাদিসিশ শী‘আহ’ লিল হাজ হুসাইন আল-বুরুজারদি: (৩/৪৮৮); মুহাম্মদ বাকের আল-মাজলিসি বর্ণনাকৃত শব্দ: النياحة عمل الجاهلية ‘বিহারুল আনওয়ার’: (৮২/১০৩)]
অনুরূপ শী‘আদের আলিম মাজলিসী, নুরী ও বারুজারদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন:
«صوتان ملعونان يبغضهما الله : إعوال عند مصيبة، وصوت عند نغمة؛ يعني النوح والغناء»
“আল্লাহর অপছন্দ ও অভিশপ্ত দুটি শব্দ: মুসিবতের সময় আর্তনাদ করা ও গানের সময় আওয়াজ করা, অর্থাৎ বিলাপ করে ক্রন্দন করা ও গান-বাদ্য করা”। [‘বিহারুল আনওয়ার’ লিল মাজলিসি: (৮২/১০৩), ‘মুসতাদরাকুল ওয়াসালে’: (১/১৪৩-১৪৪), ‘জামে আহাদিসুশ শী‘আহ’: (৩/৪৮৮), ‘মান লা ইয়াহদুরুহুল ফকিহ’: (২/২৭১)]
শী‘আদের এসব বর্ণনার পর আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে:
শী‘আরা কেন তাদের মধ্যকার বিদ্যমান সত্যের অনুসরণ করে না?! আমরা কাকে সত্য বলব: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আহলে বাইতকে, নাকি তাদের মোল্লাদেরকে?!
১২. যদি তাত্ববির [আরবিতে التطبير ‘তাত্ববির’ হচ্ছে: মাথা রক্তাক্ত করা, আশুরার দিন শী‘আরা যেরূপ করে। দেখুন: ‘সিরাতুন নাজাত’ লিত-তাবরিজি: (১/৪৩২)], মাতম ও বক্ষে আঘাত করায় মহান প্রতিদান থাকে, যেমন শী‘আদের ধারণা, [দেখুন: ‘ইরশাদুস সায়েল’: (পৃ. ১৮৪)] তাহলে মোল্লারা কেন তাত্ববীর করে না?
১৩. শী‘আরা যেহেতু ধারণা করে যে, গাদিরে খুমে হাজারো সাহাবী উপস্থিত ছিল, যারা সকলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওসিয়ত শ্রবণ করেছে যে, তার মৃত্যুর পর আলী ইবন আলী তালিব সরাসরি খিলাফত লাভ করবে। তাহলে সে হাজারো সাহাবী থেকে কেন একজন উপস্থিত হয় নি এবং আলী ইবন আবি তালিবের পক্ষ নেয় নি, না আম্মার ইবন ইয়াসার, না মিকদাদ ইবন আমর, না সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহুম, তারা কেন বলে নি: হে আবু বকর, তুমি কেন আলীর খিলাফাত আত্মসাৎ করছ, অথচ তুমি জান রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গাদিরে খুমে কি বলেছেন?!
১৪. মৃত্যুর সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কিছু লেখার ইচ্ছা করেন, যেন উম্মত তার পরবর্তীতে গোমরাহ না হয়, তখন কেন আলী কথা বলে নি, অথচ তিনি এমন বাহাদুর, যে আল্লাহ ব্যতীত কাউকে ভয় করে না?! অথচ তিনি জানেন, সত্য থেকে যে চুপ থাকে, সে বোবা শয়তান!!
১৫. শী‘আরা কি বলে না, ‘আল-কাফি’র অধিকাংশ বর্ণনা দুর্বল?! আমাদের নিকট কুরআন ব্যতীত বিশুদ্ধ কিছু নেই।
এদত্বসত্বেও তারা কীভাবে (মিথ্যা ও মনগড়া) দাবি করে যে, কুরআনের আল্লাহ প্রদত্ত তাফসীর মহান কিতাবে (আল-কাফীতে) বিদ্যমান, তাদের স্বীকারুক্তিতেই যার বর্ণনাসমূহ দুর্বল?!
১৬. উবুদিয়্যাত তথা ইবাদাতের উপযুক্ত একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা, যেমন তিনি বলেন,
﴿بَلِ ٱللَّهَ فَٱعۡبُدۡ وَكُن مِّنَ ٱلشَّٰكِرِينَ ٦٦﴾ [ الزمر : ٦٦ ]
“বরং আল্লাহরই ইবাদত কর”। [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৬৬]
তবে কেন শী‘আরা আব্দুল হুসাইন, আব্দে আলি, আব্দুজ জোহরা ও আব্দুল ইমাম নাম গ্রহণ করে?! আর তাদের ইমামরা কেন নিজেদের সন্তানের নাম আব্দে আলী ও আব্দুজ জোহরা রাখেনি? হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর শহিদ হওয়ার পর আব্দুল হুসাইন অর্থ হুসাইনের খাদেম বলা কি ঠিক? এটা কি কোনো বিবেকের কথা যে, আব্দুল হুসাইন হুসাইনের কবরে তার জন্য খানা-পানীয় ও অযুর পানি পেশ করে!!! ফলে সে তার খাদেম??
১৭. আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন জানেন যে, তিনি ওসিয়তকৃত আল্লাহর খলিফা, তবে কেন তিনি আবু বকর, উমার ও উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুম প্রমুখদের নিকট বায়‘আত করেছেন ?!
যদি তোমরা বল: তিনি অপারগ ছিলেন, তাহলে অপারগ ব্যক্তি ইমামতির যোগ্য নয়। কারণ, ইমামতির দায়িত্ব গ্রহণে যে সক্ষম, সেই তার উপযুক্ত।
যদি তোমরা বল: তিনি সক্ষম ছিলেন, কিন্তু তিনি তার জন্য অগ্রসর হননি, তাহলে এটা খিয়ানত।
খিয়ানতকারী কখনো ইমামতির উপযুক্ত নয়! তাকে অধীনদের ব্যাপারে বিশ্বাস করা যায় না। আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু এসব থেকে মুক্ত- তোমাদের কোনো সঠিক উত্তর থাকলে পেশ কর?
১৮. আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন খিলাফত গ্রহণ করেন, তখন তিনি তার পূর্বের খলিফাদের বিরোধিতা করেন নি। পূর্বের খলিফাদের যুগে মুসলিমদের নিকট সংরক্ষিত কুরআন ব্যতীত অন্য কুরআন তিনি পেশ করেন নি। তিনি কুরআনের কোনো বিষয়ে মতবিরোধও করেন নি। বরং তিনি বারবার বলেছেন: “নবীর পর এ উম্মতের সর্বোত্তম ব্যক্তি হচ্ছে আবু বকর ও উমার”। তিনি ‘মুত‘আ’ বা কন্টাক্ট বিয়ের বৈধতা দেন নি। তিনি ফিদাক ফিরিয়ে নেননি। তিনি হজের সময় মানুষের ওপর ‘মুত‘আ’ ওয়াজিব করেন নি। তিনি আযানে خير العمل “আস উত্তম আমলের দিকে” বিকৃতি করেন নি। আর ফজরের আযান থেকে তিনি الصلاة خير من النوم “সালাত ঘুম থেকে উত্তম” বিলোপ করেন নি।
যদি আবু বকর ও উমার উভয় কাফির হয় এবং তারা তার খিলাফত আত্মসাৎ করে থাকে, যেমন শী‘আদের ধারণা, তাহলে কেন তিনি এটা প্রকাশ করেন নি, অথচ ক্ষমতা তার হাতেই ছিল?! বরং আমরা তার বিপরীত লক্ষ্য করি, তিনি তাদের প্রশংসা করেছেন, তাদের সুনাম করেছেন। অতএব, তিনি যার ওপর সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন, তোমাদেরও তার ওপর সন্তুষ্টি প্রকাশ করা জরুরি অথবা তোমাদের বলা জরুরী হয় যে, তিনি খিয়ানত করেছেন, আসল বিষয় সবার সামনে প্রকাশ করেন নি। আমরা আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে এ থেকে মুক্ত মনে করি।
১৯. শী‘আদের ধারণা খোলাফায়ে রাশেদিন ছিল কাফির। তাহলে আল্লাহ কেন তাদের সাহায্য করলেন এবং কীভাবে তাদের হাতে দেশের পর দেশ বিজয়ী হলো! তাদের সময়ই তো ইসলাম সবচেয়ে সম্মানিত ও কাফিরদের জন্য বড় আতঙ্ক ছিল! সে যুগের ন্যায় সম্মান ও ইজ্জত মুসলিমরা কখনো কি দেখেছে?! কাফির ও মুনাফিকদের বেইজ্জত ও অপমান করার আল্লাহর যে নীতি, তার সাথে এর কোনো সম্পর্ক আছে?!
পক্ষান্তরে আমরা ‘মাসুম’ তথা নিষ্পাপের যুগ দেখি, -তোমাদের ধারণায় যার ইমামতি আল্লাহ মানুষের জন্য রহমত স্বরূপ বানিয়েছেন- তার যুগে মুসলিম জাতি বিভক্ত ও পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত ছিল, এমনকি দুশমনেরা পর্যন্ত ইসলাম ও মুসলিমদের নিঃশেষ করার পরিকল্পনা করেছিল, তাহলে এ মাসুমের ইমামতির ফলে মুসলিম জাতির কোনো রহমত হাসিল হলো?! যদি তোমাদের সামান্য বিবেক থাকে তবে বল?!
২০. শী‘আদের ধারণা মুয়াবিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন কাফির, অতঃপর আমরা দেখি হাসান ইবন আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু তার নিকট খিলাফত হস্তান্তর করেন, -অথচ তিনি নিষ্পাপ ইমাম-, অতএব, তোমাদের নিকট হাসান কাফিরের নিকট খিলাফত হস্তান্তর করেছেন, (যা তার নিষ্পাপ হওয়ার সাথে সাংঘর্ষিক) অথবা মুয়াবিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন মুসলিম!
২১. শী‘আরা যে হুসাইনের মাটির উপর সাজদাহ করে, তার উপর কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো সাজদাহ করেছিলেন?!
যদি তারা বলে হ্যাঁ: আমরা বলব: আল্লাহর শপথ, এটা ডাহা মিথ্যা।
আর যদি বলে না: আমরা বলব: তাহলে তোমরা কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বেশি হিদায়াতের দাবিদার?
অথচ তোমাদের বর্ণনায় আছে, জিবরীল আলাইহিস সালাম মুষ্টি ভরে কারবালার মাটি হাতে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে হাজির হয়েছিল।
২২. শী‘আদের দাবি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবাগণ তার মৃত্যুর পর মুরতাদ হয়ে গেছেন এবং তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
আমাদের প্রশ্ন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবারা কি তার মৃত্যুর পূর্বে বারো ইমামে বিশ্বাসী ছিলেন, আর তার মৃত্যুর পর আহলে সুন্নত হয়ে গেছেন?
অথবা তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পূর্বে সুন্নী ছিলেন, কিন্তু তার মৃত্যুর পর তারা বারো ইমামে বিশ্বাসী শী‘আ হন?
২৩. এটা স্পষ্ট যে, হাসান ইবন আলী ও তার মাতা ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা শী‘আদের নিকট ‘আহলে কিসা’ এর অন্তর্ভুক্ত [হাদীসে কিসার সারসংক্ষেপ হচ্ছে: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন কালো পশমের চাদর গায়ে বের হোন, অতঃপর হাসান উপস্থিত হলে তাকে তার মধ্যে নিয়ে নেন, অতঃপর আসে হুসাইন, তাকেও তার মধ্যে নিয়ে নেন, অতঃপর আসে ফাতেমা, তাকেও তার মধ্যে নিয়ে নেন, অতঃপর আসে আলি, তাকেও তার মধ্যে নিয়ে নেন। অতঃপর তিনি তিলাওয়াত করেন: ﴿إِنَّمَا يُرِيدُ ٱللَّهُ لِيُذۡهِبَ عَنكُمُ ٱلرِّجۡسَ أَهۡلَ ٱلۡبَيۡتِ وَيُطَهِّرَكُمۡ تَطۡهِيرٗا﴾ [ الاحزاب : ٣٣ ] “হে নবী পরিবার, আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতাকে দূরীভূত করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণ রূপে পবিত্র করতে”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩৩] দেখুন সহীহ মুসলিম, ফাযায়েলে সাহাবা অধ্যায়।] এবং তারা নিষ্পাপ ইমাম। এ ব্যাপারে তার এবং তার ভাই হুসাইনের মর্যাদা সমান, তাহলে কেন হাসানের বংশ থেকে ইমামতির দ্বারা নিঃশেষ হলো, আর হুসাইনের বংশ থেকে ইমামতি অব্যাহত থাকল?!! অথচ তাদের পিতা এক, তাদের মাতা এক এবং তারা উভয়ে জান্নাতের সরদার, বরং হাসানের অধিক মর্যাদা হচ্ছে যে, তিনি হুসাইনের পূর্বে ও তার চেয়ে বয়সে বড়? এর কোনো সদুত্তর আছে?
২৪. আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু এক ওয়াক্ত সালাতও কেন সকলকে নিয়ে জমা‘আতের সাথে পড়েন নি, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ ছিলেন, যে অসুস্থায় তিনি মারা যান, অথচ তোমাদের ধারণায় তার পরেই তিনি ইমাম?! ছোট ইমামতি কি বড় ইমামতির প্রমাণ নয়?
২৫. তোমরা বল: তোমাদের বারোতম ইমামের সুড়ঙ্গে বা ভূগর্ভে লোকানোর কারণ হচ্ছে যালিমদের ভয়, বিভিন্ন যুগে যখন শী‘আদের রাষ্ট্র কায়েম হয়েছিল, যেমন উবাইদি, বুওয়াইহি ও সাফাভি এবং সর্বশেষ ইরানী রাষ্ট্র, যেখানে তার কোনো ভয় নেই, তবুও তিনি কেন বরাবর অদৃশ্য হয়ে আছেন, তিনি কেন বের হন না! অথচ শী‘আরা নিজ দেশে তাকে সাহায্য ও তার সুরক্ষা দিতে সক্ষম?! যাদের সংখ্যা মিলিয়ন মিলিয়ন, সকাল-সন্ধ্যা তারা নিজেদেরকে তার ওপর উৎসর্গ করে!!
২৬. হিজরতের সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বকরকে সাথে নিয়েছেন এবং তাকে জীবিত রেখেছেন, পক্ষান্তরে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে মৃত্যু ও ধ্বংসের মুখে তার বিছানায় রেখে গেছেন... যদি আলী ইমাম ও নির্দিষ্ট খলিফা হত, তাহলে তাকে ধ্বংসের মুখে রেখে আবু বকরকে কেন জীবিত রাখলেন, অথচ সে মারা গেলে ইমামতে কোনো সমস্যা হত না এবং ইমামতির ধারাবাহিকতাও বিনষ্ট হতো না...
আমাদের প্রশ্ন: এদের মধ্যে কার জীবন অতি মূল্যবান, যাকে কোনো কষ্ট স্পর্শ করবে না অথবা কাকে মৃত্যু ও ধ্বংসের মুখে রাখা শ্রেয় ছিল...?
যদি তোমরা বল: আলী গায়েব জানেন, তাহলে মৃত্যুর বিছানায় শোয়ায় কিসের ফযীলত?!
২৭. ‘তাকিয়াহ’ [তাকিয়াহ হচ্ছে, ভয়ের কারণে হক কথা ও হক কাজ থেকে চল-চাতুরীর আশ্রয় নেযা। সম্পাদক।] একমাত্র ভয়ের কারণেই গ্রহণ করা হয়।
ভয় দুই প্রকার:
প্রথমত: জীবনের ওপর ভয়।
দ্বিতীয়ত: কষ্ট ও শারীরিক যাতনার ভয় এবং গালমন্দ, তিরষ্কার ও অসম্মানের আশঙ্কা।
ইমামদের ওপর জানের ভয় নেই দু’টি কারণে:
এক. তোমাদের ধারণা মোতাবেক ইমামগণ স্বাভাবিক ও স্বেচ্ছায় মৃত্যু বরণ করেন।
দুই. ইমামগণ অগ্র-পশ্চাতের জ্ঞান রাখেন। তারা নির্ধারিতভাবে তাদের মৃত্যুর সময় ও অবস্থা সম্পর্কে অবগত, যেমন তোমাদের ধারণা।
অতএব, মৃত্যুর সময়ের আগে তারা নিজেদের জানের ভয় করতে পারেন না। নিজেদের ধর্মের ব্যাপারে নিফাকের আশ্রয় নেওয়া ও সাধারণ মুমিনদের ধোঁকা দেওয়ার কোনো কারণ তাদের ছিল না।
আর দ্বিতীয় প্রকার ভয় তথা কষ্ট ও শারীরিক যাতনা সহ্য করা এবং গালমন্দ, তিরষ্কার ও অসম্মানের আশঙ্কা করা ইত্যাদি তো আলিমদের দায়িত্বই। বিশেষ করে আহলে বাইতগণ তাদের দাদার দীন রক্ষার জন্য এসব সহ্য করে নিবে, এটাই স্বাভাবিক।
অতএব, ‘তাকইয়ার’ প্রশ্ন কেন?! এর দ্বারা কেন মানুষকে প্রতারিত করা হয়?!
২৮. শী‘আদের নিকট ইমাম নির্ধারণ করার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, সকল শহর-নগর ও পল্লী থেকে যুলুম ও ফ্যাসাদ দূর করা এবং ন্যায় ও ইনসাফ কায়েম করা।
আমাদের প্রশ্ন: তোমরা কি বল: আল্লাহর সৃষ্ট প্রত্যেক শহর ও গ্রামে মাসুম ও নিষ্পাপ ইমাম বিদ্যমান, যিনি মানুষের থেকে যুলুম প্রতিহত করেন অথবা করেন না?!
যদি তোমরা বল: আল্লাহর সৃষ্ট প্রত্যেক নগর ও গ্রামে নিষ্পাপ ইমাম বিদ্যমান।
তাহলে তোমাদেরকে বলব: এটা তোমাদের স্পষ্ট অতিরঞ্জন, মুশরিক ও আহলে কিতাবিদের দেশেও কি নিষ্পাপ ইমাম বিদ্যমান? শাম দেশে মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিকটও কি নিষ্পাপ ইমাম বিদ্যমান ছিল?
যদি তোমরা বল: নিষ্পাপ ইমাম একজন, তবে দেশে দেশে, নগরে নগরে ও গ্রামে গ্রামে তার প্রতিনিধি বিদ্যমান।
আমরা বলব: সকল দেশেই তার প্রতিনিধি বিদ্যমান, না শুধু কতক দেশে বিদ্যমান?
যদি বল: সকল দেশে ও সকল গ্রামে।
আমরা বলব: পূর্বের ন্যায় এটাও তোমাদের অতিরঞ্জন!
যদি বল: বরং কতক দেশ ও গ্রামে তার প্রতিনিধি বিদ্যমান।
আমরা বলব: সকল দেশ ও গ্রামে একই কারণে নিষ্পাপ ইমামের প্রয়োজন, তাহলে তোমরা দেশ ও নগরের মাঝে পার্থক্য কর কেন?!
২৯. ‘কুলাইনি’ তার কাফি গ্রন্থে একটি অধ্যায় কায়েম করেছেন, যার শিরোনাম:
( إنّ النساء لا يرثن من العقار شيئا )
“নারীরা যমীনের কোনো অংশের উত্তরাধিকার হবে না” সেখানে তিনি আবু জাফর থেকে বর্ণনা করেন:
«النساء لا يرثن من الأرض ولا من العقار شيئاً» .
“নারীরা যমীন ও ভূ-সম্পত্তির কোনো ওয়ারিস-মালিক হবে না”। [দেুখন: কুলাইনি রচিত ‘ফুরু উলকাফি’: (৭/১২৭)]
‘তুসি’ তার ‘তাহযিব’ গ্রন্থে মাইসার থেকে বর্ণনা করেন:
«سألت أبا عبد الله عليه السلام عن النساء ما لهن من الميراث؟ فقال : لهن قيمة الطوب والبناء والخشب والقصب فأما الأرض والعقار فلا ميراث لهن فيهما»
“আমি আবু আব্দুল্লাহকে নারীদের উত্তরাধিকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি, তাদের কি মিরাস নেই? তিনি বললেন: তাদের জন্য রয়েছে ইট, কাঠ, বাশ ও বাড়ি নির্মাণের যাবতীয় খরচ। কিন্তু যমীন ও ভূ-সম্পত্তিতে তাদের কোনো অংশ নেই”। [‘তাহযিব’: (৯/২৫৪)]
মুহাম্মাদ ইবন মুসলিম আবু জাফর থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
«النساء لا يرثن من الأرض ولا من العقار شيئاً»
“নারীরা যমীন ও ভূ-সম্পত্তির উত্তরাধিকার হবে না”।
আব্দুল মালেক (আলাইহিস সালাম) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
ليس للنساء من الدور والعقار شيئًا» .«
“বাড়ি ও যমীনে নারীদের কোনো অংশ নেই”।
এসব বর্ণনায় ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহা বা অন্য কাউকে খাস করা হয় নি। অতএব, এসব বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হয়, ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উত্তরাধিকার দাবি করতে পারেন না। (শী‘আদের মাযহাব অনুসারেই)।
দ্বিতীয়তঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সকল সম্পত্তির মালিক ইমাম। মুহাম্মাদ ইবন ইয়াহইয়া বর্ণনা করেন আহমদ ইবন মুহাম্মাদ থেকে, তিনি বর্ণনা করেন আমর ইবন শিমার থেকে, তিনি বর্ণনা করেন যাবের থেকে, যাবের আবু জাফর আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«خلق الله آدم وأقطعه الدنيا قطيعة، فما كان لآدم (ع ) فلرسول الله ﷺ وما كان لرسول الله فهو للأئمة من آل محمد»
“আল্লাহ তা‘আলা আদমকে সৃষ্টি করে, তাকে দুনিয়ার একটি অংশ দান করেন। আদম আলাইহিস সালামের অংশের মালিক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অংশের মালিক তার বংশের ইমামগণ”। [কুলাইনি রচিত ‘উসুলুল কাফি’, কিতাবুল হুজ্জাহ: (খ.১পৃ. ৪৭৬),] শী‘আদের আকীদা অনুসারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর প্রথম ইমাম হচ্ছে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু। তাই ফিদাকের জমির প্রকৃত দাবিদার আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু, ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহা নয়। কিন্তু আমরা দেখি আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু তা করেন নি, বরং তিনি বলেছেন:
«ولو شئت لاهتديت الطريق إلى مصفى هذا العسل، ولباب هذا القمح، ونسائج هذا القز، ولكن هيهات أن يغلبني هواي وأن يقودني جشعي إلى تخير الأطعمة، ولعل بالحجاز واليمامة من لا طمع له في القرص، ولا عهد له بالشبع» .
“আমি যদি চাইতাম, তাহলে স্বচ্ছ এ মধুর অধিকারী হওয়ার সক্ষম ছিলাম, এ শস্যের মালিক হতাম, এ রেশমের স্বত্তাধিকারী হতাম। কিন্তু কখনো আমার ওপর প্রবৃত্তি জয়ী হতে পারে না, লালসা আমাকে সুস্বাদু খাদ্য গ্রহণে প্ররোচিত করতে পারে না। হয়তো হিজায ও ইয়ামামাতে এমন কেউ আছে, এক চিমটি জমিনের প্রতি যার আগ্রহ নেই, তৃপ্ত হওয়ার যার কোনো আকাঙ্খা নেই”। [নাহজুল বালাগাহ: (১/২১১)]
৩০. মুরতাদদের সাথে আবু বকর কেন যুদ্ধ করেছে, এবং কেন বলেছিল: তারা যদি আমাকে উটের একটি রশি দিতেও অস্বীকার করে, যা তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রদান করত, আমি তাদের সাথে যুদ্ধ করব। পক্ষান্তরে শী‘আরা বলে যে, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু মানুষের মুরতাদ হয়ে যাওয়ার ভয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে লিখিত কুরআন বের করেন নি!! অথচ শী‘আদের ধারণা মোতাবেক তিনি ছিলেন খলিফা, তার ছিল বিশেষগুণ এবং তার সাথে ছিল আল্লাহর সাহায্য, তার পরও তিনি মানুষের মুরতাদ হয়ে যাওয়ার ভয়ে কুরআন বের করতে অস্বীকৃতি জানান, আর মানুষদেরকে গোমরাহীতে রাখতে ভালোবাসেন, আর আবু বকর উটের একটি রশির জন্যও যুদ্ধ করেন!!
৩১. আহলে সুন্নত ওয়াল জামা‘আত ও শী‘আদের সকল গ্রুপের ঐক্যমত যে, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন বাহাদুর ও বীর, যাতে কোনো সন্দেহ নেই। তিনি আল্লাহর রাস্তায় কোনো তিরষ্কারের তিরষ্কারকে ভয় করতেন না। তার এ বাহাদূরী ও বীরত্ব জন্মের পর থেকে ইবন মুলজিমের হাতে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এক মুহূর্তের জন্যও বিচ্ছিন্ন হয় নি। এ দিকে শী‘আরা দাবি করে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর সরাসরি আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু খিলাফতের ওসিয়তকৃত ব্যক্তি ও দাবিদার, বরং হকদার।
তাহলে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু কেন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাতে বায়‘আত করলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর তার বীরত্ব কি স্তমিত হয়ে গিয়েছিল?!
অতঃপর কেন তিনি উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাতে বাই‘আত করেছিলেন?!
অতঃপর কেন তিনি উসমান জিন্নুরাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাতে বায়‘আত করেছিলেন?!
তিনি কি অক্ষম ছিলেন, (কখনো নয়) তিনি কেন তিন খলিফার যুগে একবারের জন্যও মিম্বারে চড়ে ঘোষণা দিতে পারেন নি যে, তারা আমার খিলাফত আত্মসাৎ করেছে?! আমিই এ খিলাফতের হকদার, আমিই এর ওসিয়তকৃত ব্যক্তি?!
তিনি কেন এটা করেন নি, তিনি কেন তার অধিকার বুঝে নেননি, অথচ তিনি ছিলেন বীর ও আক্রমণকারী?! তার সাথে ছিল অনেক সাহায্যকারী ও তাকে মহব্বতকারী অনেক প্রেমিক?!
৩২. ‘হাদিসুল কিসা’ দ্বারা আলীর পরিবারের চার ব্যক্তির পবিত্রতার প্রমাণ মিলে। [তারা হচ্ছে: আলি, ফাতেমা, হাসান ও হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুম।] তাদের ব্যতীত বাকিদের পবিত্রতার অন্তর্ভুক্ত করার দলীল কি?!
৩৩. শী‘আরা তাদের ইমাম জাফর সাদেক থেকে বর্ণনা করে, যিনি তাদের ধারণা মতে ‘জাফরি মাযহাব’-এর প্রণেতা, ইমাম জাফর গর্ব করে বলেন, “আবু বকর আমাকে দু’বার জন্ম দিয়েছে”। [‘কাশফুল গুম্মাহ’ লিল আরবালি: (২/৩৭৪)।] কারণ, তার বংশ পরম্পরা দু’ভাবে আবু বকর পর্যন্ত পৌঁছে:
এক. তার মায়ের দিক থেকে, ফাতেমা বিনতে কাসেম ইবন আবু বকর।
দুই. তার নানির দিক থেকে, তার নানি ছিল আসমা বিনতে আব্দুর রহমান ইবন আবু বকর।
এদতসত্বেও দেখি যে, শী‘আরা জাফর সাদেক থেকে তার নানা সম্পর্কে বিভিন্ন মিথ্যাচার বর্ণনা করে!
আমাদের প্রশ্ন: জাফর সাদেক এক দিক থেকে তার নানাকে নিয়ে গর্ব করেন, আবার কোনো হিসেবে তিনি তার কুৎসা বর্ণনা করেন?! এ ধরনের কথা বাজারি মুর্খ লোকদের থেকেই প্রকাশ পেতে পারে, এমন ইমাম থেকে কখনোই প্রকাশ পেতে পারে না, শী‘আরা যাকে জমানার শ্রেষ্ঠ পণ্ডিত ও মুত্তাকী মনে করে।
৩৪. মসজিদুল আকসা উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুর যমনায় প্রথমে অতঃপর সুন্নী নেতা সালাউদ্দিন আউয়ূবি রহ.-এর নেতৃত্বে দ্বিতীয়বার স্বাধীন হয়।
দীর্ঘ ইতিহাসে শী‘আদের কর্মফল কি?!
তারা কখনো কি সামান্য ভূ-খণ্ড জয় করেছে অথবা ইসলাম ও মুসলিমদের শত্রুদের থেকে কোনো প্রতিশোধ গ্রহণে সক্ষম হয়েছে?
৩৫. শী‘আদের দাবি উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর সাথে বিদ্বেষ পোষণ করতেন, অথচ আমরা দেখি উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বায়তুল মাকদিসের অভিযানে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে মদিনার দায়িত্বশীল নিযুক্ত করেন?! [আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া: (৭/৫৭)] আমরা জানি যে, সে অভিযানে যদি উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু কোনো দুর্ঘটনার শিকার হতেন, তাহলে আলিই হতেন মদিনার খলিফা!
অতএব, এটা আলীর প্রতি উমারের কোনো ধরনের বিদ্বেষ?!
৩৬. শী‘আদের ধারণা, তাদের ইমাম মাহদী যখন আভির্ভূত হবেন, তিনি দাউদের বিধান মোতাবিক ফয়সালা করবেন! তিনি দলীল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন না।
আমাদের প্রশ্ন: তিনি কেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শরী‘আত মোতাবিক ফয়সালা করবেন না, যে শরী‘আত পূর্বের সকল শরী‘আত রহিত করে দিয়েছে, যে শরী‘আতের দৃষ্টিতে ফয়সালার সময় দলীল পেশ করা ওয়াজিব?!
৩৭. শী‘আদের ধারণা, তাদের মাহদী যখন আভির্ভূতি হবেন, ইয়াহূদী ও নাসারাদের সাথে সন্ধি করবেন আর আরব ও কুরাইশদের সাথে তিনি যুদ্ধ করবেন?!!
আমাদের প্রশ্ন: মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি কুরাইশ বংশের নয়, অনুরূপ তোমাদের কথানুসারে তোমাদের ইমামরা কি কুরাইশ বংশের নয়?!
৩৮. শী‘আদের ধারণা ইমামদের মায়েরা ইমামদেরকে পার্শ্বে ধারণ করেন এবং ডান রান দিয়ে প্রসব করেন [‘ইসবাতুল ওসিয়্যাহ’ লিল মাসউদি: (পৃ. ১৯৬)]!! অথচ সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও সর্বোত্তম মানব মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তার মা কি গর্ভে ধারণ করেন নি, তিনি কি তার মায়ের রেহেম থেকে বের হন নি?!
৩৯. শী‘আরা আবু আব্দুল্লাহ জাফর সাদেক থেকে বর্ণনা করে, তিনি বলেছেন:
«صاحب هذا الأمر رجل لا يسميه باسمه إلا كافر ...».
এ পদের মালিক এমন এক ব্যক্তি, কাফির ব্যতীত কেউ তার নামকরণ করবে না। [দেুখন: “আনওয়ারুন নুমানিয়াহ”: (২/৫৩)]
আবার তারাই আবু মুহাম্মাদ হাসান আল-আসকারী থেকে বর্ণনা করে যে, তিনি মাহদীর মাতাকে বলেছেন:
«ستحملين ذكرًا واسمه محمد وهو القائم من بعدي ...».
তুমি এমন একজন পুরুষ গর্ভে ধারণ করবে, যার নাম হবে মুহাম্মাদ, আমার পরে সেই কর্ণধার হবে। [“আনওয়ারুন নুমানিয়াহ”: (২/৫৫)]
এ কোনো ধরনের দ্বৈতনীতি?! এক সময় বল: যে ব্যক্তি তার নামকরণ করবে সে কাফির। আবার তোমরাই বল যে, হাসান আসকারি তারনাম করণ করেছে মুহাম্মাদ!
৪০. কুলাইনি ‘আল-কাফি’ গ্রন্থে আহমদ ইবন মুহাম্মাদ সূত্রে মারফু সনদে আবু আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
«يكره السواد إلا في ثلاث الخف والعمامة والكساء»
“তিনটি জিনিস ব্যতীত কালো রং ব্যবহার করা মাকরুহ, মোজা, পাগড়ি ও চাদর”। [আল-ওয়াসায়েল: (খৃ. ৩/পৃ. ২৭৮), হাদীস নং ১); দেখুন: ‘ফুরুউল কাফি’ লিল কুলাইনি: (৬/৪৪৯)]
এ সনদেই পোশাক অধ্যায়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মারফু‘ সনদে রয়েছে:
«كان رسول الله صلى الله عليه وآله وسلم يكره السواد إلا في ثلاثة الخف والكساء والعمامة»
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনটি জিনিস ব্যতীত কালো রং অপছন্দ করতেন, মোজা, চাদর ও পাগড়ি”। [‘আল-কাফি’: (খ. ২পৃ. ২০৫)]
‘আল-হুর আল-আমেলি’ তার ওসায়েল গ্রন্থে একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তি সূত্রে মুহাম্মাদ ইবন সুলাইমান থেকে বর্ণনা করেন, তিনি মুরসাল সনদে আবু আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন: আমি তাকে বললাম:
«أصلى في القلنسوة السوداء؟ قال : لا تصل فيها فانها لباس أهل النار» .
“আমি কি কালো টুপিতে সালাত পড়ব? তিনি বললেন: না, তাতে সালাত পড় না, কারণ কালো জাহান্নামীদের পোশাক”। [আল-ওয়াসায়েল: (খ. ৩, পৃ. ২৮১) অধ্যায় নং ২০, হাদীস নং ৩, দেখুন: ‘ওয়াসায়েলুশ শী‘আহ’: (৩/২৮১)]
من لا يحضره الفقيه গ্রন্থে আমিরুল মুমিনীন আলাইহিস সালাম থেকে মুরসাল সূত্রে এবং العلل والخصال গ্রন্থে তার থেকেই মুসনাদ সূত্রে বর্ণিত, তিনি তার সাথীদের বলেছেন:
«لا تلبسوا السواد فإنه لباس فرعون» .
“তোমরা কালো পোশাক পরিধান কর না। কারণ, তা ফিরআউনের পোশাক”।
হুজাইফা ইবন মানসুর থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হায়রা নামক স্থানে আবু আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালামের নিকট ছিলাম, এমতাবস্থায় তাকে ডেকে নেওয়ার জন্য তার নিকট খলিফা আবুল আব্বাসের প্রতিনিধি আগমন করে, তিনি মুমতিরাহ তলব করে পাঠান। মুমতিরাহ উলের তৈরি এক জাতিয় কাপড়, বৃষ্টি থেকে সুরক্ষার জন্য যা পরিধান করা হয় [‘মান লা ইয়াহ দুরুহুল ফকিহ’: (খ. ১, পৃ. ২৫১), আল-ওয়াসায়েল: (খ. ৩, পৃ. ২৭৮), দ্বিতীয় বর্ণনাটি দেখুন: আল-ওয়াসায়েল: (খ. ৩, পৃ. ২৭৯) হাদীস নং ৭); ‘মান লা ইয়াহ দুরুহুল ফকিহ’: (খ. ২, পৃ. ২৫২); আল-কাফি: (খ. ২, পৃ. ২০৫)]।
বরং কতক বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কালো হচ্ছে তাদের শত্রু বনু আব্বাসের পোশাক:
যেমন, ‘মান লা ইয়াহ দুরুহুল ফকিহ’ গ্রন্থে সাদুক থেকে মুরসাল সনদে বর্ণিত, সাদুক বলেছেন: জিবরীল আলাইহিস সালাম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আগমন করেন। তখন তার গায়ে ছিল কালো আলখিল্লা এবং বেল্টে খঞ্জর লটকানো ছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: হে জিবরীল এটা কোনো পোশাক? তিনি বললেন: আপনার চাচার সন্তান বনু আব্বাসের পোশাক। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আব্বাসের উদ্দেশ্যে বের হলেন, অতঃপর বললেন: হে চাচা, আপনার সন্তান দ্বারা তো আমার সন্তানের সর্বনাশ হবে। সে বলল: হে আল্লাহর রাসূল, আমি কি নিজেকে হত্যা করে ফেলব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: কলম যা লেখার লিখে ফেলেছে। এখানে স্পষ্ট যে, কতক বর্ণনায় উল্লেখিত জাহান্নামী দ্বারা উদ্দেশ্য কিয়ামতের দিন যারা চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামী হবে তারা, যেমন ফিরআউন ও তাদের অনুসারীরা এবং অত্যাচারী আব্বাসীয় খলিফারা, যারা ছিল এ উম্মতের কাফির সম্প্রদায় এবং পূর্বে যারা কালো পোশাককে নিজেদের পরিচ্ছদ হিসেবে গ্রহণ করেছে তারা। [‘মান লা ইয়াহদুরুহুল ফকিহ’: (খ.২পৃ. ২৫২) আরো দেখুন: “আওফাল ইলাল ওয়াল খিসাল কামা ফিল ওয়াসায়েল”]
ইসমাঈল ইবন মুসলিম সাদেক আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন: আল্লাহ তার কোনো নবীর নিকট ওহী করেন যে,
«قل للمؤمنين لا تلبسوا ملابس أعدائي ولا تطعموا مطاعم أعدائي ولا تسلكوا مسالك أعدائي، فتكونوا أعدائي كما هم أعدائي» .
“তুমি মুমিনদেরকে বল: তোমরা আমার শত্রুদের পোশাক পরিধান কর না, তোমরা আমার শত্রুদের খানা খেয়ে না এবং আমার শত্রুদের পথে চল না, অন্যথায় তোমরাও আমার শত্রুদের ন্যায় হয়ে যাবে। [‘মান লা ইয়াহদুরুহুল ফকিহ’: (খ.১পৃ. ২৫২); ওসায়েলূশ শী‘আহ: (৪/৩৮৪); বিহারুল আনওয়ার: (২/২৯১) ও (২৮/৪৮)]
عيون الأخبار গ্রন্থে আলী ইবন আবি তালিব সূত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত: “শত্রুদের পোশাক হচ্ছে কালো, শত্রুদের খাদ্য হচ্ছে নাবীয, নেশাদ্রব্য, কাঁদা, জীবন্ত মাছ, পানিতে ভাসমান মরা মাছ ইত্যাদি... এক পর্যায়ে তিনি বলেন, শত্রুদের পথ অনুসরণ করা, অপবাদের জায়গায় যাওয়া, মদ্যপানের আসর, গান-বাদ্যের আসর, ইমাম ও মুমিনদের কুৎসা রটনার আসর এবং পাপী, যালেম ও ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারীদের আসর। [দেখুন: “উইনুল আখবার”: (১/৬২)] সংক্ষিপ্ত।
কালো রংঙের পোশাকের ব্যাপারে ইমামদের এতো বিষোদগার সত্বেও শী‘আরা কেন কালো রঙের পোশাক পরিধান করে এবং এটাকে তারা আভিজাত্যের পোশাক মনে করে?!!
৪১. কোনো ব্যক্তি যদি শী‘আ হতে চায় তার উপায় কি, শী‘আদের দ্বৈতনীতি ও বিপরীত মুখি এতো মাযহাবের মধ্যে কোনোটির সে অনুকরণ করবে?! কারণ, তারা ইমামিয়াহ, ইসমাইলিয়াহ, নুসাইরিয়াহ ও যাইদিয়াহ বিভিন্ন দল ও উপদলে বিভক্ত। প্রত্যেকেই আহলে বাইতের সাথে সম্পৃক্ততার দাবি করে, ইমামতি বিশ্বাস করে ও সাহাবীদের সাথে শত্রুতা পোষণ করে?! তাদের সকলের বিশ্বাস আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু ইমাম এবং তিনিই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর সরাসরি খলিফা, তাদের সাথেই রয়েছে দীনের মূলনীতি...!!!
৪২. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর কি কুরআন ব্যতীত কোনো কিতাব নাযিল হয়েছিল, যে সম্পর্কে তিনি শুধু আলীকেই অবহিত করেছেন?!
যদি বল: না, তাহলে তোমাদের নিম্নের বর্ণনার তোমরা কী উত্তর দেবে:
এক. الجامعة আল-জামেয়াহ:
আবু বাসির আবু আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন: আমি মুহাম্মাদ, আমাদের নিকট আল-জামেয়াহ রয়েছে, তারা কীভাবে জানবে আল-জামেয়াহ কি?!
তিনি বলেন, আমি বললাম: আপনার প্রতি আমি উৎসর্গ, আল-জামেয়াহ কী?!
তিনি বললেন: সহীফা (আসমানী গ্রন্থ), যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতে সত্তর হাত লম্বা, তার লেখা হচ্ছে খোদাইকৃত, আলী ডান হাত দিয়ে তা লিপিবদ্ধ করেছেন, তাতে রয়েছে সকল হালাল ও হারাম এবং মানুষের প্রয়োজনীয় সকল বস্তু...। [‘আল-কাফি’: (১/২৩৯)]
এখানে চিন্তা করুন: “মানুষের প্রয়োজনীয় সকল বস্তু”।
তাহলে এ কিতাব কেন গোপন রাখা হয়েছে, কেন এর বিধান থেকে আমাদের মাহরুম করা হয়েছে?!
অতঃপর: এটা কি ইলম গোপন করার অপরাধ নয়?!
দুই. صحيفة الناموس সহীফাতু নামুছ:
রেজা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে ইমামের আলামত সংক্রান্ত হাদীসে এসেছে:
«وتكون صحيفة عنده فيها أسماء شيعتهم إلى يوم القيامة، وصحيفة فيها أسماء أعدائهم إلى يوم القيامة» .
“তার নিকট একটি সহীফা থাকবে, তাতে কিয়ামত পর্যন্ত সকল শী‘আদের নাম লিপিবদ্ধ থাকবে। তার নিকট আরেকটি সহীফা থাকবে, তাতে কিয়ামত পর্যন্ত শী‘আদের সকল শত্রুর নাম লিপিবদ্ধ থাকবে [‘বিহারুল আনওয়ার’: (২৫/১১৭)]।
আমরা বলতে চাই: এটা কোনো ধরণের সহীফা, যাতে কিয়ামত পর্যন্ত সকল শী‘আদের নাম শামিল হয়?!
বর্তমান ইরানে বিদ্যমান সকল শী‘আদের নামও যদি কোথাও লিপিবদ্ধ করা হয়, তবুও কমপক্ষে একশত ভলিউমের প্রয়োজন হবে!!
তিন. صحيفة العبيطة সহীফাতুল আবিতাহ:
আমিরুল মুমিনীন রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন:
«وأيم الله إن عندي لصحفاً كثيرة قطائع رسول الله صلى الله عليه وآله، وأهل بيته وإن فيها لصحيفة يقال لها العبيطة، وما ورد على العرب أشد منها، وإن فيها لستين قبيلة من العرب بـهرجة، مالها في دين الله من نصيب» .
“আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমার নিকট অনেকগুলো সহীফা বিদ্যমান, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আহলে বাইতের মিরাস, তাতে একটা সহীফা বিদ্যমান, যার নাম ‘আবিতাহ’। আরবদের ওপর তার চেয়ে কঠিন কোনো বস্তু নাযিল হয় নি, তাদের মধ্যে ষাটটি বংশ আছে, ইসলামে যাদের কোনো অংশ নেই। [‘বিহারুল আনওয়ার’: (২৬/৩৭)]
আমাদের বক্তব্য: এসব বর্ণনা গ্রহণযোগ্য কিংবা বিবেক সিদ্ধ নয়। এসব বংশের মধ্যে ইসলামের কোনো অংশ না থাকার অর্থ হচ্ছে, এদের মধ্যে কেউ মুসলিম নেই! অতঃপর এখানে শুধু আরবদের খাস করার মধ্যে আমরা রাজনৈতিক গন্ধ পাচ্ছি।
চার. صحيفة ذؤابة السيف সহীফা যাওয়াবেবাতুস সাইফ:
আবু বসির আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তলোয়ারের গোড়ায় একটা ছোট সহীফা রয়েছে, তাতে কিছু হরফ বিদ্যমান, যার প্রত্যেকটি হরফ থেকে এক হাজার হরফ বের হয়।
আবু বসির বলেন, আবু আব্দুল্লাহ বলেছেন: কিয়ামত পর্যন্ত তার থেকে মাত্র দুইটি হরফই বের হয়েছে। [বিহারুল আনওয়ার: (২৬/৫৬)]
আমাদের প্রশ্ন: অন্যান্য হরফ কোথায় ?!
সেগুলো কেন বের হয় না, অন্তত শী‘আরা যেন তার থেকে উপকৃত হয়?!
এমতাবস্থায় সেগুলো কি কিয়ামত পর্যন্ত গোপনই থাকবে??! এভাবে এক প্রজন্মের পর অপর প্রজন্ম ধ্বংস হবে, আর দীন কিতাবের মধ্যেই লিপিবদ্ধ থেকে যাবে?!
পাঁচ. صحيفة علي আলীর সহীফা:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তলোয়ারে খাপে পাওয়া এটা আরেকটা সহীফা:
আবু আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তলোয়ারের খাপে একটি সহীফা পাওয়া গেছে, তাতে লিখা ছিল:
«بسم الله الرحمن الرحيم، إن أعتى الناس على الله يوم القيامة من قتل غير قاتله، ومن ضرب غير ضاربه، ومن تولى غير مواليه فهو كافر بما أنزل الله تعالى على محمد صلى الله عليه وآله، ومن أحدث حدثاً أو آوى محدثاً لم يقبل الله منه يوم القيامة صرفاً ولا عدلاً» .
“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম, কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট সবচেয়ে অবাধ্য সেই হবে, যে হত্যাকারী ব্যতীত কাউকে হত্যা করে, আঘাতকারী ব্যতীত কাউকে আঘাত করে, এবং যে নিজের বন্ধু ব্যতীত অন্যদের পক্ষাবলম্বন করল, সে মুহাম্মদের ওপর নাযিলকৃত সবকিছুকে অস্বীকার করল। আর যে কোনো বিদ‘আত সৃষ্টি করল অথবা কোনো বিদআতিকে আশ্রয় দিল, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার ফরজ-নফল কিছুই কবুল করবেন না। [“বিহারুল আনওয়ার”: (২৭/৬৫)]
ছয়. الجفر আল-জাফর:
এ সহীফা আবার দু’প্রকার: الجفر الأبيض সাদা জাফর ও والجفر الأحمر লাল জাফর:
আবুল আলা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবু আব্দুল্লাহকে বলতে শোনেছি: আমার নিকট সাদা জাফর রয়েছে।
তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম: তাতে কি রয়েছে?
তিনি বললেন: দাউদের জবুর, মূসার তাওরাত, ঈসার ইঞ্জীল ও ইবরাহিমের সহীফা এবং হালাল ও হারাম...। আর আমার নিকট লাল জাফরও বিদ্যমান।
তিনি বললেন: আমি বললাম: লাল জাফরে কি আছে?
তিনি বললেন: হাতিয়ার, রক্তের জন্য তা উন্মুক্ত করা হবে, অস্ত্রধারী হত্যার জন্য তা উন্মুক্ত করবেন।
আবু আব্দুল্লাহ তাকে জিজ্ঞাসা করল: আল্লাহ আপনার ভালো করুন, এটা বনু হাসান জানে?
তিনি বললেন: আল্লাহর শপথ তারা জানে, যেমন জানে তারা রাতকে রাত হিসেবে এবং দিনকে দিন হিসেবে, কিন্তু হিংসা ও দুনিয়ার মোহ তাদেরকে অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যানের জন্য উদ্বুদ্ধ করবে। যদি তারা সত্যের দ্বারা সত্যকে তালাশ করত, তাহলে তাদের জন্য খুবই ভালো হতো। [“উসুলুল কাফি”: (১/২৪)]
আমাদের প্রশ্ন: চিন্তা করুন দাউদের জাবুর, মূসার তাওরাত, ঈসার ইঞ্জীল এবং ইবরাহিমের সহীফা ও হালাল-হারাম, সব কিছুই এ জাফরে রয়েছে!
তাহলে কেন তারা এ কিতাব গোপন করে?!
সাত. مصحف فاطمة মাসহাফে ফাতেমা:
ক. আলী ইবন সায়িদ আবু আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ আমাদের নিকট মাসহাফে ফাতেমা রয়েছে, তাতে আল্লাহর কিতাবের একটি আয়াতও নেই, নিশ্চয় তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের লিখানো, আলীর নিজ হাতে লিখিত। [বিহারুল আনওয়ার: (২৬/৪১)]
খ. মুহাম্মাদ ইবন মাসলামা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত:
“ফাতেমা একটি মাসহাফ রেখে গেছেন, যা কুরআন নয়, তবে তা আল্লাহর কালাম, তার ওপর এ মাসহাফ নাযিল করা হয়েছে, যা আলীর হাতে রাসূলের লিখানো। [“বিহারুল আনওয়ার: (২৬/৪১)]
গ. আলী ইবন আবু হামজা আবু আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণনা করেন: “আমাদের নিকট ফাতেমা আলাইহিস সালামের মাসহাফ রয়েছে, আল্লাহর শপথ তাতে কুরআনের একটি হরফও নেই, তবে তা আলীর হাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের লিখানো”। [“বিহারুল আনওয়ার: (২৬/৪৮)]
যদি আলীর দ্বারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের লিখানো হয়, তবে কেন উম্মত থেকে তিনি তা গোপন করলেন? অথচ আল্লাহ তা‘আলা তার রাসূলকে সবকিছু পৌঁছানোর নির্দেশ দিয়েছেন, যা তার ওপর নাযিল করা হয়েছে: আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلرَّسُولُ بَلِّغۡ مَآ أُنزِلَ إِلَيۡكَ مِن رَّبِّكَۖ وَإِن لَّمۡ تَفۡعَلۡ فَمَا بَلَّغۡتَ رِسَالَتَهُ﴾ [ المائدة : ٦٧ ]
“হে রাসূল, তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার নিকট যা নাযিল করা হয়েছে, তা পৌঁছে দাও আর যদি তুমি না কর তবে তুমি তাঁর রিসালাত পৌঁছালে না”। [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৬৭]
এরপরেও সকল উম্মত থেকে এসব কিছু গোপন করা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য কীভাবে বৈধ হয়?! আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং তার পরবর্তী সকল ইমামগণ কীভাবে এসব তাদের উম্মত থেকে গোপন রাখেন?!
এটা কি আমানতের খিয়ানত নয়?!
আট. তাওরাত, ইঞ্জীল ও যাবুর:
আবু আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি ইঞ্জীল, তাওরাত ও যবুর সুরয়ানি ভাষায় পাঠ করতেন। [“উসুলুল কাফি”: (১/২২৭)]
আমাদের প্রশ্ন: আমিরুল মুমিনীন আলী ও তার পরবর্তী ইমামগণ যাবুর, তাওরাত ও ইঞ্জীল দ্বারা কি করেন, কেন তারা এগুলো একজন থেকে অপরজন গ্রহণ করে আসছেন ও গোপনে তিলাওয়াত করছেন? শী‘আদের বাণী দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আলী একাই কুরআন এবং সকল আসমানি কিতাব ও সহীফাসমূহ সংরক্ষণ করেছেন, আলীর যাবুর, তাওরাত ও ইঞ্জীলের কেন প্রয়োজন হলো?! বিশেষ করে আমরা যখন জানি যে, কুরআন নাযিলের পর পূর্বের সকল আসমানি কিতাব রহিত হয়ে গেছে?
অতঃপর আমাদের বক্তব্য: আমরা জানি যে, ইসলামে এক কুরআন ব্যতীত কোনো কিতাব নেই, অধিক কিতাব ইয়াহূদী ও নাসারাদের বৈশিষ্ট্য, তাদের নির্ভরযোগ্য কিতাবে স্পষ্ট।
৪৩. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেন তার চেহারা রক্তাক্ত করেন নি, যখন ছেলে ইবরাহীম মারা গিয়েছিল?!
আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু কেন নিজের চেহারা রক্তাক্ত করেন নি, যখন ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহা মারা গিয়েছিল?
৪৪. শী‘আ অনেক আলিম বিশেষ করে ইরানি আলিমরা আরবী জানে না, তারা আরবিতে অজ্ঞ, তারা কীভাবে আল্লাহর কিতাব ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত থেকে বিধান রচনা করে?! অথচ আরবী জানা আলিমের একটি জরুরী শর্ত।
৪৫. শী‘আরা বিশ্বাস করে যে, অধিকাংশ সাহাবায়ে কেরাম ছিলেন মুনাফিক ও কাফির, অল্প কিছু ব্যতীত। যদি বাস্তবতা এরূপই হয়, তাহলে অধিক সংখ্যক এ কাফিররা কেন অল্প লোকদের ধ্বংস করল না, যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলেন?!
যদি তারা বলে: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর এরা মুরতাদ হয়ে গিয়েছিল সাতজন ব্যতীত, তাহলে তারা কেন এ সাতজনকে ধ্বংস করে বাপ-দাদার পূর্বের ধর্মে ফিরে যায়নি?!
৪৬. শী‘আদের শাইখ আবু জাফর মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান আত-তুসি তার কিতাব ‘তাহযিবুল আহকাম’ গ্রন্থের ভূমিকায় বলেন, এ কিতাব তাদের চারটি মূল কিতাবের একটি:
«الحمد لله ولي الحق ومستحقه وصلواته على خيرته من خلقه محمد صلى الله عليه وآله وسلم تسليماً، ذاكرني بعض الأصدقاء أبره الله ممن أوجب حقه علينا بأحاديث أصحابنا أيدهم الله ورحم السلف منهم، وما وقع فيها من الاختلاف والتباين والمنافاة والتضاد، حتى لا يكاد يتفق خبر إلا وبإزائه ما يضاده، ولا يسلم حديث إلا وفي مقابلة ما ينافيه، حتى جعل مخالفونا ذلك من أعظم الطعون على مذهبنا ..»
“...আমার কতক ভাই আমাদের পূর্বসূরীদের কতক হাদীস এবং তাতে সংঘটিত বৈপরীত্য, অমিল ও ভিন্নতা সম্পর্কে জানিয়েছেন, কারণ এমন সংবাদ নেই যার বিপরীত কোনো সংবাদ নেই, এমন হাদীস নেই যার বিপরীত কোনো হাদীস নেই। যা আমাদের বিরোধীরা আমাদের মাযহাবের বড় ধরণের একটি ত্রুটি গণ্য করে...” [“তাহজিবুল আহকাম”: (১/৪৫)]
বারো ইমামের অনুসারী সাইয়্যেদ দিলদার আলী লাখনভি বলেন
«إن الأحاديث المأثورة عن الأئمة مختلفة جداً لا يكاد يوجد حديث إلا وفي مقابله ما ينافيه، ولا يتفق خبر إلا وبإزائه ما يضاده، حتى صار ذلك سبباً لرجوع بعض الناقصين ...».
“ইমামদের থেকে বর্ণিত হাদীসগুলো খুবই বিরোধপূর্ণ, একটির সাথে আরেকটির কোনো মিল নেই, এমন কোনো হাদীস নেই, যার বিপরীত হাদীস নেই, এমন কোনো সংবাদ নেই, যার বিপরীত সংবাদ নেই, যা দুর্বলদের জন্য শী‘আ মাযহাব ত্যাগ করার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে...” [“আসাসুল উসুল”: (পৃ. ৫১) লখনৌ, ভারত থেকে প্রকাশিত।]
শী‘আদের বড় আলিম, মুহাক্কিক ও শাইখ হুসাইন ইবন শিহাবুদ্দিন আল-কারখি বলেন,
«فذلك الغرض الذي ذكره في أول التهذيب من أنه ألفه لدفع التناقض بين أخبارنا لما بلغه أن بعض الشيعة رجع عن المذهب لأجل ذلك» .
“এ উদ্দেশ্যেই তিনি তাহযীব গ্রন্থের শুরুতে উল্লেখ করেছেন যে, আমাদের হাদীসের বৈপরীত্য দূর করার জন্যই এ গ্রন্থ প্রণয়ন করা, কারণ তার নিকট সংবাদ পৌঁছেছে যে এ বৈপরীত্যের কারণে কতক লোক শী‘আ মাযহাব ত্যাগ করেছে”। [“হিদায়াতুল আবরার ইলা তারিকিল আইম্মাতিল আতহার”: (পৃ. ১৬৪), প্রথম প্রকাশ: ১৩৯৬হিজরী]
আমাদের বক্তব্য: শী‘আরা নিজেরাই স্বীকার করেছে যে, তাদের মাযহাবে বৈপরীত্য রয়েছে। [“উসুলু মাজহাবিশ শী‘আহ আল-ইমামিয়াহ ইসনা আশারিয়াহ” লিল কাফারি: (১/৪১৮ এবং তার পরের পৃষ্ঠাসমূহ)] এটা কি তাদের মাযহাবের বাতুলতার পরিচয় না?! আল্লাহ তা‘আলা বাতিলের পরিচয় সম্পর্কে বলেন,
﴿وَلَوۡ كَانَ مِنۡ عِندِ غَيۡرِ ٱللَّهِ لَوَجَدُواْ فِيهِ ٱخۡتِلَٰفٗا كَثِيرٗا﴾ [ النساء : ٨٢ ]
“আর যদি তা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো পক্ষ থেকে হত, তবে অবশ্যই তারা এতে অনেক বৈপরীত্য দেখতে পেত”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৮২]
৪৭. শী‘আদের বিশ্বাস যে, আলী ইবন আবু তালিব তার সন্তান হুসাইন থেকে উত্তম। তাহলে তারা আলীর মৃত্যু বার্ষিকীতে সেরূপ কেন করে না, যেরূপ করে আলীর ছেলে হুসাইনের মৃত্যু বার্ষিকীতে?! অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি তাদের চেয়ে উত্তম নয়? তাহলে নবীর জন্য কেন তারা এরচেয়ে অধিক ক্রন্দন করে না?!
৪৮. যেহেতু আলী ইবন আবি তালেব ও তার সন্তানদের ইমামতি ঈমানের একটি অবিচ্ছেদ্য রুকন, এ রুকন ব্যতীত ঈমান বিশুদ্ধ হবে না, আর যে এর ওপর ঈমান আনবে না, সে কাফির ও জাহান্নামী, যদিও সে সাক্ষ্য দেয় لا إله إلا الله وأن محمدًا رسول الله (আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল) সালাত কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে, সিয়াম পালন করে ও বায়তুল্লাহ শরীফের হজ করে, যেরূপ শী‘আদের ধারণা।
অতএব, এ মহান রুকন সম্পর্কে স্পষ্ট বর্ণনা কুরআনের কোথাও নেই কেন?!
অথচ আমরা দেখি যে, এর চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য রুকন ও ওয়াজিবগুলো কুরআন স্পষ্ট করে বর্ণনা করেছে, যেমন সালাত, যাকাত, সিয়াম ও হজ, বরং কিছু বৈধ জিনিস পর্যন্ত কুরআন স্পষ্ট করে বর্ণনা করেছে, যেমন শিকার করা... তাহলে বড় ও মহান রুকন কোথায় গেল?!
৪৯. সাহবীগণের জামা‘আত যদি শী‘আদের বর্ণনা মোতাবিক একে অপরের সাথে বিদ্বেষ পোষণ করতেন এবং প্রত্যেকেই খিলাফত লাভের আশা করতেন, তাহলে তাদের কম লোকই ঈমানের ওপর বিদ্যমান থাকত, আর ইসলাম এতটা প্রসার হত না এবং সাহাবাদের যমনায় হাজার হাজার লোক ইসলাম গ্রহণ করত না।
৫০. অধিকাংশ শী‘আরা কেন জুমার সালাত বাতিল ঘোষণা করে, অথচ সূরায়ে জুমু‘আতে এ সালাত কায়েমের স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে:
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَوٰةِ مِن يَوۡمِ ٱلۡجُمُعَةِ فَٱسۡعَوۡاْ إِلَىٰ ذِكۡرِ ٱللَّهِ وَذَرُواْ ٱلۡبَيۡعَۚ ذَٰلِكُمۡ خَيۡرٞ لَّكُمۡ إِن كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ ٩﴾ [ الجمعة : ٩ ]
“হে মুমিনগণ, যখন জুম‘আর দিনে সালাতের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও। আর বেচা-কেনা বর্জন কর। এটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, যদি তোমরা জানতে”। [সূরা আল-জুমু‘আ, আয়াত: ৯]
যদি তারা বলে: আমরা এ সালাত প্রতিশ্রুত মাহদীর আগমন পর্যন্ত ত্যাগ করব!
আমরা বলব: মাহদীর আগমনের অপেক্ষার জন্য কুরআনের এ মহান নির্দেশ ত্যাগ করা কি বৈধ?!
অথচ হাজার হাজার শী‘আ মারা যাচ্ছে ইসলামের এ মহান নির্দেশ জুমু‘আর সালাত কায়েম করা ব্যতীতই, ধারণা প্রসূত শয়তানী এ অযুহাতের কারণে।
৫১. শী‘আদের ধারণা যে, আবু বকর ও উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমার পক্ষ থেকে কুরআনের কিছু আয়াত রহিত করা হয়েছে এবং কিছু বিষয়ে পরিবর্তন করা হয়েছে!
তারা আবু জাফর থেকে বর্ণনা করে যে, তাকে বলা হয়েছিল: আলীকে কেন আমিরুল মুনিন বলা হয়?
তিনি বলেন, এভাবেই আল্লাহ তা‘আলা তার কিতাবে নাযিল করেছেন:
( وإذ أخذ ربك من بني آدم من ظهورهم ذريتهم وأشهدهم على أنفسهم ألست بربكم وأن محمدًا رسولي وأن عليًا أمير المؤمنين )!
“আর স্মরণ কর, যখন তোমার রব বনী-আদমের পৃষ্ঠদেশ হতে তাদের বংশধরকে বের করলেন এবং তাদেরকে তাদের নিজেদের ওপর সাক্ষী করলেন যে, ‘আমি কি তোমাদের রব নই’? আর মুহাম্মাদ আমার রাসূল ও আলী আমিরুল মুমিনীন নয়!।
আর স্মরণ কর, যখন তোমার রব বনী-আদমের পৃষ্ঠদেশ হতে তাদের বংশধরকে বের করলেন এবং তাদেরকে তাদের নিজের ওপর সাক্ষী করলেন যে, আমি কি তোমাদের রব নই, এবং মুহাম্মাদ আমার রাসূল ও আলী আমিরুল মুমিনীন নয়? [“উসুলুল কাফি”: (১/৪১২)]
কুলাইনি নিম্নের আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন,
﴿فَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ بِهِۦ وَعَزَّرُوهُ وَنَصَرُوهُ وَٱتَّبَعُواْ ٱلنُّورَ ٱلَّذِيٓ أُنزِلَ مَعَهُۥٓ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ﴾ [ الاعراف : ١٥٧ ]
“সুতরাং যারা তার প্রতি ঈমান আনে, (অর্থাৎ ইমামের প্রতি) তাকে সম্মান করে, তাকে সাহায্য করে এবং তার সাথে যে নূর নাযিল করা হয়েছে তা অনুসরণ করে, তারাই সফল”। [সূরা আল-আরাফ, আয়াত: ১৫৭]
অর্থাৎ যারা জিবত ও তাগুতের ইবাদত থেকে বিরত থেকেছে, আর জিবত ও তাগুত হচ্ছে অমুক ও অমুক! [“উসুলুল কাফি”: (১/৪২৯)]
মাজলিসী বলেছেন: “এখানে অমুক অমুক দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে আবু বকর ও উমার”। [“বিহারুল আনওয়ার”: (২৩/৩০৬)]
আর এ জন্যই শী‘আরা এদের দু’জনকে শয়তান গণ্য করে। (নাউযুবিল্লাহ) আমরা আল্লাহর নিকট এর থেকে পানাহ চাই।
আল্লাহর এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তারা বলে:
﴿لَا تَتَّبِعُواْ خُطُوَٰتِ ٱلشَّيۡطَٰنِۚ﴾ [ النور : ٢١ ]
“তোমরা শয়তানের পদাঙ্কসমূহ অনুসরণ করো না”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ২১]
তারা বলেছে: শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ হচ্ছে অমুক ও অমুকের শাসনকাল। [“তাফসিরুল আইয়াশি”: (১/২১৪), “তাফসিরুস সাফি”: (১/২৪২)]
তারা আবু আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণনা করে:
ومن يطع الله ورسوله في ولاية علي وولاية الأئمة من بعده فقد فاز فوزا عظيما
“আর যে আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করে আলী ও তার পরবর্তী ইমামদের অধীনে, সেই মহান সফলতা লাভ করল”। তিনি বলেন, এরূপই নাযিল হয়েছে। [দেখুন: “উসুলুল কাফি”: (১/৪১৪)]
আবু জাফর থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন জিবরীল আলাইহিস সালাম এ আয়াত এভাবে নিয়ে অবতরণ করেছেন:
بئسما اشتروا به أنفسهم أن يكفروا بما أنزل الله في علي بغيا .
“আল্লাহ আলীর ব্যাপারে যা নাযিল করেছেন, তার সাথে কুফুরী করে তারা যা খরিদ করেছে, তা খুবই ঘৃণ্য”। [দেখুন: “উসুলুল কাফি”: (১/৪১৭)]
জাবের থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: জিবরীল আলাইহিস সালাম এ আয়াত নিয়ে এভাবে মুহাম্মাদের ওপর নাযিল হয়েছেন:
{ وإن كنتم في ريب مما نزلنا على عبدنا في علي فأتوا بسورة من مثله }.
“আমার বান্দার ওপর আলীর ব্যাপারে আমি যা নাযিল করেছি, যদি তার ব্যাপারে তোমাদের সন্দেহ থাক, তাহলে অনুরূপ সূরা তোমরা পেশ কর”। [দেখুন: “শারহু উসুলুল কাফি”: (৭/৬৬)]
আবু আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
نزل جبرائيل على محمد صلى الله عليه وآله بهذه الآية هكذا { يا أيها الذين أوتوا الكتب آمنوا بما نزلنا في علي نورا مبينا }.
“জিবরীল আলাইহিস সালাম মুহাম্মদের ওপর এ আয়াত এভাবে নিয়ে অবতরণ করেন: হে কিতাবিগণ, আমি আলীর ব্যাপারে যে স্পষ্ট নূর নাযিল করেছি, তার ওপর তোমরা ঈমান আনয়ন কর”। [“শারহু উসুলুল কাফি”: (৭/৬৬)]
মুহাম্মদ ইবন সিনান রিজা আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
كبر على المشركين بولاية علي ما تدعوهم إليه يا محمد من ولاية علي }. هكذا في الكتاب مخطوطة .
“মুশরিকদের ওপর বড় কঠিন আলীর ইমামতি, হে মুহাম্মাদ তুমি যে আলীর ইমামতির দিকে আহ্বান কর”। হাতে লেখার কপিতে এভাবেই বিদ্যমান। [“শারহু উসুলুল কাফি”: (৫/৩০১)]
আবু আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন:
سأل سائل بعذاب واقع للكافرين بولاية علي ليس له دافع قال : هكذا والله نزل بها جبرائيل عليه السلام على محمد صلى الله عليه وآله .
“কোন জিজ্ঞাসাকারী আযাব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল, যে আযাব আলীর ইমামতি অস্বীকারকারীদের ওপর পতিত হবে, যা প্রতিহত করার কেউ নেই। তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ এ আয়াত এভাবে নিয়েই জিবরীল আলাইহিস সালাম নাযিল হয়েছে। [“উসুলুল কাফি”: (১/৪২২)]
আবু জাফর থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
نزل جبرائيل عليه السلام بهذه الآية على محمد صلى الله عليه وآله هكذا : فبدل الذين ظلموا آل محمد حقهم قولا غير الذي قيل لهم فأنزلنا على الذين ظلموا آل محمد حقهم رجزًا من السماء بما كانوا يفسقون .
“জিবরীল আলাইহিস সালাম মুহাম্মাদের ওপর এ আয়াত এভাবে নিয়ে নাযিল হন: যারা মুহাম্মদের বংশের ওপর তাদের অধিকারের ব্যাপারে যুলুম করেছে, তারা বাক্য পরিবর্তন করে ফেলেছে, যা তাদেরকে বলা হয় নি, ফলে যারা মুহাম্মদের বংশের ওপর তাদের অধিকারের ব্যাপারে যুলুম করেছে, তাদের ওপর আসমান থেকে আমি শাস্তি নাযিল করেছি, তাদের অবাধ্যতার কারণে। [“শারহু উসুলুল কাফি”: (১/৪২৩)]
আবু জাফর থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন:
نزل جبرائيل عليه السلام بهذه الآية هكذا { إن الذين ظلموا آل محمد حقهم لم يكن الله ليغفر لهم ولا ليهديهم طريقا إلا طريق جهنم } ثم قال { يا أيها الناس قد جاءكم الرسول بالحق من ربكم في ولاية علي فآمنوا خيرا لكم وإن تكفروا بولاية علي فإن لله ما في السماوات وما في الأرض .
“জিবরিল আলাইহিস সালাম এ আয়াত এভাবে নিয়েই নাযিল হয়েছেন: যারা মুহাম্মদের বংশের ওপর যুলুম করেছে, তাদের অধিকারের ব্যাপারে, আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন না এবং জাহান্নামের রাস্তা ব্যতীত তাদের কোনো রাস্তার পথ দেখাবেন না। অতঃপর তিনি বলেন, হে লোক সকল, তোমাদের নিকট তোমাদের রবের পক্ষ থেকে আলীর ইমামতির ব্যাপারে সত্য নিয়ে রাসূল আগমন করেছেন। অতএব, তোমরা ঈমান আনয়ন কর, তোমাদের জন্য ভালো হবে, আর যদি তোমরা আলীর ইমামতির ব্যাপারে কুফুরী কর, তাহলে আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, সব আল্লাহর মালিকানাধীন। [দেখুন: “উসুলুল কাফি”: (১/৪২৪)]
শী‘আদের ধারণা এসব আয়াত স্পষ্ট করে আলীর ইমামতির প্রতি নির্দেশ প্রদান করে, কিন্তু আবু বকর ও উমার এতে বিকৃতি সাধন করেছে।
এখানে আমাদের দু’টি প্রশ্ন, যা শী‘আদের খুবই বিরক্তিকর:
প্রথম প্রশ্ন: আবু বকর ও উমার যেহেতু এসব আয়াত পরিবর্তন করেছে, তবে আলী কেন এ বিষয়টি সবার সামনে স্পষ্ট করে নি, যখন সে মুসলিমদের খলিফা হয়েছিল?! অথবা নিদেন পক্ষে কেন সে কুরআনকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয় নি?!
আমরা আলী রাদিয়াল্লাহু আনুহুর জীবনীতে তা করতে দেখি নি, বরং তার পূর্বের খলিফাদের যুগে কুরআন যেরূপ ছিল, তার যুগেও কুরআন অনুরূপই ছিল, যেরূপ ছিল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে। কারণ, এ আল-কুরআনের হিফাযত আল্লাহর জিম্মায়, যিনি বলেছেন:
﴿إِنَّا نَحۡنُ نَزَّلۡنَا ٱلذِّكۡرَ وَإِنَّا لَهُۥ لَحَٰفِظُونَ ٩﴾ [ الحجر : ٩ ]
“নিশ্চয় আমরা আল-কুরআন নাযিল করছি, আর আমরাই তার হিফাযতকারী”। [সূরা আল-হিজর, আয়াত: ৯]
কিন্তু শী‘আরা তা জানে না।
দ্বিতীয় প্রশ্ন: শী‘আরা আলীর ইমামতি, খিলাফত ও ভিলাওয়েত প্রমাণ করার জন্য, যেসব আয়াতে পরিবর্তন করেছে, তা আমাদের স্পষ্টভাবে জানান দেয় যে, এটা কখনো বাস্তবায়ন হবে না!!
তাদের বিকৃত করা আয়াতগুলোতে লক্ষ্য করুন, এসব আয়াতগুলো মূলতঃ নাযিল হয়েছে ইয়াহূদীদের সম্পর্কে, আর এগুলো তারা মুসলিমদের সাথে সম্পৃক্ত করে!
فبدل الذين ظلموا آل محمد حقهم قولاً غير الذي قيل لهم فأنزلنا على الذين ظلموا آل محمد حقهم رجزا من السماء بما كانوا يفسقون .
“যারা মুহাম্মদের বংশের ওপর তাদের অধিকারের ব্যাপারে যুলুম করেছে, তারা বাক্য পরিবর্তন করে ফেলেছে, যা তাদেরকে বলা হয় নি, ফলে যারা মুহাম্মদের বংশের ওপর তাদের অধিকারের ব্যাপারে যুলুম করেছে, তাদের ওপর আসমান থেকে আমি শাস্তি নাযিল করেছি, তাদের অবাধ্যতার কারণে। [দেখুন: “শারহু উসুলুল কাফি”: (১/৪২৩)]
তাদের পরিবর্তন অনুযায়ী এ আয়াত এমন বিষয় সম্পর্কে সংবাদ দিচ্ছে, যা ভবিষ্যতে সংঘটিত হবে, আর আলী তা জনেন।
তাহলে আলী ও আহলে বাইত অতীতের কোনো হক দাবি করেন, যা তাদের থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে, অথচ কুরআন সংবাদ দিচ্ছে ভবিষ্যতে তারা তার অধিকারী হবে? আর মুসলিমরা আলীর ইমামতি, অসিয়ত ও খিলাফত গ্রহণ করবে না, সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর খলিফা হবে না, এটা কীভাবে সম্ভব?!
অতঃপর আমাদের প্রশ্ন, কখন তাদের ওপর শাস্তি নাযিল হয়েছে, যারা আহলে বাইতের খিলাফতের অধিকার হরণ করেছে?!
সকলেই জানে এটা কখনো বাস্তব হয় নি, কিন্তু তাদের বিকৃতি সবার নিকট স্পষ্ট ও পরিষ্কার।
৫২. শী‘আরা আল্লাহর নিম্নের বাণী সম্পর্কে আবুল হাসান থেকে বর্ণনা করে:
﴿يُرِيدُونَ لِيُطۡفُِٔواْ نُورَ ٱللَّهِ بِأَفۡوَٰهِهِمۡ﴾ [ الصف : ٨ ] ـ «يريدون ليطفئوا ولاية أمير المؤمنين»، ﴿وَٱللَّهُ مُتِمُّ نُورِهِ﴾ [ الصف : ٨ ] يقول : «والله متم الإمامة، والإمامة هي النور»، وذلك قول الله عز وجل : ﴿فََٔامِنُواْ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ وَٱلنُّورِ ٱلَّذِيٓ أَنزَلۡنَاۚ﴾ [ التغابن : ٨ ] قال : «النور والله : الأئمة من آل محمد صلى الله عليه وآله وسلم يوم القيامة» .
“তারা তাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহর নূরকে নির্বাপিত করতে চায়”। [সূরা আস সাফ, আয়াত: ৮] (ব্যাখ্যা:) তারা আমিরুল মুমিনীনের ইমামতি নির্বাপিত করতে চায়। “আল্লাহ তার নূরকে অবশ্যই পরিপূর্ণ করবেন”। [সূরা আস সাফ, আয়াত: ৮] (ব্যাখ্যা:) তিনি বলেন, আল্লাহ অবশ্যই ইমামতি পরিপূর্ণ করবেন, ইমামতি হচ্ছে নূর। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণীতে এসেছে: “তোমরা ঈমান আনয়ন কর আল্লাহর প্রতি ও তার রাসূলের প্রতি এবং আমার নাযিলকৃত নূরের প্রতি”। [সূরা আত-তাগাবুন, আয়াত: ৮] তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ নূর হচ্ছে কিয়ামত পর্যন্ত আহলে বাইয়তের ইমামতি। [“আল-কাফি”: (১/১৪৯)]
আমাদের প্রশ্ন: আল্লাহ তার নূরের পূর্ণতা দান করেছেন কীভাবে, ইসলামের প্রসার করে, না আহলে বাইতকে ইমামতি ও খিলাফত প্রদান করে?!
৫৩. শী‘আদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী আমরা শুধু আহলে বাইতের দু’জনকেই দেখি, যারা খিলাফত লাভ করেছেন: আলী ও তার ছেলে হাসান রাদিয়াল্লাহু আনহুমা! অবশিষ্ট দশজন দ্বারা নূরের পূর্ণতা কীভাবে প্রদান করার হলো? তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস দ্বারা তাদের বারো ইমামের ইমামতির দলীল পেশ করে যে, তারাই “খলিফা” অথবা তারাই “আমির” অথবা তারাই “নেতৃত্বের অধিকারী” তাহলে অবশিষ্ট দশজনের খিলাফত ও ইমামতি গেল কোথায়?!
৫৪. শী‘আদের কোনো কোনো কিতাবে আছে, জাফর সাদেক থেকে বর্ণিত, তিনি এক নারীকে বলেন, সে তাকে আবু বকর ও উমারের সাথে বন্ধুত্ব করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিল: আমি কি তাদের সাথে বন্ধুত্ব কায়েম করব?! তিনি বললেন: তাদের সাথে বন্ধুত্ব কায়েম কর। নারীটি বলল: আমি আমার রবকে বলব, যখন তার সাথে সাক্ষাত করব, তুমিই তাদের সাথে বন্ধুত্ব কায়েম করার জন্য আমাকে নির্দেশ দিয়েছ?! তিনি বললেন: হ্যাঁ। [“রাওজাতুল কাফি”: (৮/২৩৭)]
শী‘আদের কতক কিতাবে রয়েছে, ‘বাকের’ (বারো ইমামের একজন) এর এক শিষ্য বিস্ময় প্রকাশ করেন, যখন তিনি শোনেন বাকের নিজেই আবু বকরকে সিদ্দিক উপাদিতে স্মরণ করছেন। লোকটি তাকে বলল: আপনি কি তাকে এ উপাদিতে স্মরণ করেন?! বাকের বলেন, হ্যাঁ, অবশ্যই সে সিদ্দিক। যে তাকে সিদ্দিক বলবে না, আখেরাতে আল্লাহ তার কোনো কথাই বিশ্বাস করবেন না। [“কাশফুল গুম্মাহ”: (২/৩৬০)]
আমাদের জিজ্ঞাসা: আবু বকরের ব্যাপারে শী‘আদের মন্তব্য কি, তারা তাদের ইমামের কথা মানে?
৫৫. আবুল ফরজ ইস্পাহানি ‘মাকাতিলুত তালিবিন’ গ্রন্থে, আরবালি ‘কাশফুল গুম্মাহ’ গ্রন্থে ও মাজলিসী ‘জালাউল উয়ূন’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন: আবু বকর ইবন আলী ইবন আবু তালিব কারবালার ময়দানে তার ভাই হুসাইনের সাথে শাহাদাত বরণ করেন, অনুরূপ হুসাইনের এক সন্তান শাহাদাত বরণ করেন, যার নাম ছিল আবু বকর! এবং মুহাম্মাদ আসগর, (হুসাইনের ছেলে) যার উপনাম ছিল আবু বকর।
শী‘আরা কেন এ নামগুলো গোপন করে?! আর শুধু হুসাইনের শাহাদাতকেই প্রধান্য দেয় ও প্রকাশ করে?!
এর কারণ হচ্ছে হুসাইনের ভাই এবং তার নিজের সন্তানের নাম ছিল আবু বকর!!
শী‘আরা চায় না এটা মুসলিমরা ও তাদের সাধারণ অনুসারীরা জেনে যাক, কারণ এর ফলে তাদের মিথ্যা দাবি প্রকাশ পেয়ে যাবে যে, আহলে বাইত ও বড় বড় সাহাবাদের মাঝে শত্রুতা ছিল, বিশেষ করে আবু বকরের সাথে। কারণ, যদি আবু বকর কাফির ও মুরতাদ হন, আর আহলে বাইতের অধিকার হরণ করেন, (যেমন শী‘আদের ধারণা) তাহলে কখনোই তারা আবু বকর নাম ধারণ করত না !
বরং চিন্তাশীল ব্যক্তিদের নিকট স্পষ্ট যে, এটা আহলে বাইত ও সাহাবীদের মাঝে মহব্বত ও সুসম্পর্কের প্রমাণ। (শী‘আরা কখনোই চায় না, এ সম্পর্ক মানুষের নিকট প্রকাশ পেয়ে যাক, কারণ তাহলে তাদের মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্রের সকল জাল ছিন্ন হয়ে যাবে।)
অতঃপর আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে শী‘আরা কেন আলী ও হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুমার অনুসরণ করে তাদের সন্তানদের নাম আবু বকর রাখে না?!
৫৬. নিশ্চয় যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বশেষ নবী ও রাসূল মানে, তার ইমামতির উদ্দেশ্য হাসিল হলো, শী‘আরা যা বর্ণনা করে। অতএব, যে বিশ্বাস করে মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল, তার আনুগত্য করা ওয়াজিব এবং যথাসাধ্য তার আনুগত্যের জন্য চেষ্টা করে, তার ব্যাপারে যদি বলা হয় যে, সে জান্নাতে যাবে, তাহলে তার ইমামতির বিষয় জানার প্রয়োজন হলো না, এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত অন্য কারো আনুগত্যও তার ওপর জরুরী হলো না। অতএব, শী‘আদের ইমামতির বিষয়টি বেহুদা ও অকার্যকর প্রমাণিত হলো।
আর যদি বলা হয় যে, ইমামের আনুগত্য ব্যতীত সে জান্নাতে যাবে না, তাহলে এটা কুরআন বিরোধী, কারণ আল্লাহ তা‘আলা কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় শুধু আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্যকারীদের জন্য জান্নাত অবধারিত ঘোষণা করেছেন, কোথাও ইমামের আনুগত্য বা তাদের ওপর ঈমানের শর্তারোপ করা হয় নি। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَ فَأُوْلَٰٓئِكَ مَعَ ٱلَّذِينَ أَنۡعَمَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِم مِّنَ ٱلنَّبِيِّۧنَ وَٱلصِّدِّيقِينَ وَٱلشُّهَدَآءِ وَٱلصَّٰلِحِينَۚ وَحَسُنَ أُوْلَٰٓئِكَ رَفِيقٗا ٦٩﴾ [ النساء : ٦٩ ] ـ
“আর যারা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করে তারা তাদের সাথে থাকবে, আল্লাহ যাদের ওপর অনুগ্রহ করেছেন নবী, সিদ্দীক, শহীদ ও সৎকর্মশীলদের মধ্য থেকে। আর সাথী হিসেবে তারা হবে উত্তম”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৬৯]
অন্যত্র তিনি বলেন,
﴿وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ يُدۡخِلۡهُ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَاۚ وَذَٰلِكَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ ١٣﴾ [ النساء : ١٣ ]
“আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে আল্লাহ তাকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতসমূহে, যার তলদেশে প্রবাহিত রয়েছে নহরসমূহ। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আর এটা মহা সফলতা”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৩]
যদি ইমামতি ঈমান ও কুফরের মাপকাঠি হত অথবা ইসলামের বড় রুকন হত, যা ব্যতীত বান্দার আমল গ্রহণযোগ্য নয়, যেমন শী‘আদের ধারণা, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা অবশ্যই এসব আয়াতে তার উল্লেখ করতেন ও তার ওপর গুরুত্বারোপ করতেন। কারণ, আল্লাহ জানেন এসব বিষয় নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হবে। আশা করছি কেউ এ ধৃষ্টতা দেখাবে না যে, এসব আয়াতে আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্যের নির্দেশে ইমামদের আনুগত্যও বিদ্যমান, কারণ এটা নেহাতই মনগড়া তাফসির, বরং তার বাতুলতার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, রাসূলের আনুগত্যই স্বয়ং আল্লাহর আনুগত্য, যে আল্লাহ তাকে নবী রূপে প্রেরণ করেছেন। তা সত্বেও আমরা দেখি যে, আল্লাহ শুধু নিজের আনুগত্য উল্লেখ করেই ক্ষান্ত হননি, বরং আলাদা ও স্বতন্ত্রভাবে রাসূলের আনুগত্যের কথাও উল্লেখ করেছেন, যেন সবার নিকট স্পষ্ট হয় যে, আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
এ জন্যই জান্নাতে প্রবেশের শর্ত হিসেবে আল্লাহর আনুগত্যের পর রাসূলের আনুগত্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, কারণ তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে তাবলিগকারী, তাই তার আনুগত্য মূলতঃ তাকে প্রেরণকারীরই আনুগত্য।
আর যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর আল্লাহর কোনো বার্তাবাহক নেই, বা কারো জন্য প্রমাণিত হয় নি যে, তিনি আল্লাহর সরাসরি বার্তাবাহক, তাই অন্য কোনো বিবেচনা ব্যতীতই শুধু আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্যের সাথে জান্নাতে প্রবেশের শর্তারোপ করা হয়েছে।
৫৭. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে কতক লোক আসত, তাকে একবার দেখেই আবার তাদের দেশে তারা ফিরে যেত, নিঃসন্দেহে তারা আলী বা তার সন্তান ও নাতীদের ইমামতি সম্পর্কে শোনে নি, বিশেষ করে শী‘আদের ধারণা যে, নবুওয়াতের প্রথম যুগেই ইমামতির বিষয়টি নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল, তারা এর স্বপক্ষে হাদীসে দার প্রমাণ হিসেবে পেশ করে। তাদের ইসলাম কি অসম্পূর্ণ ছিল?!
যদি তোমরা বল: হ্যাঁ, আমরা বলব: যদি তাই হয়, তাহলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সর্বপ্রথম দায়িত্ব ছিল, তাদের ঈমান ঠিক করা এবং তাদের নিকট ইমামতির বিষয়টি প্রকাশ করা। অথচ আমরা দেখি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন করেন নি।
৫৮. শী‘আদের নিকট গ্রহণযোগ্য কিতাব ‘নাহজুল বালাগায়’ বিদ্যমান: আলী আলাইহিস সালাম মুয়াবিয়ার নিকট লেখেন:
إنه بايعني القوم الذين بايعوا أبا بكر وعمر وعثمان على ما بايعوهم عليه فلم يكن للشاهد أن يختار ولا للغائب أن يرد وإنما الشورى للمهاجرين والأنصار فإن اجتمعوا على رجل وسمَّوه إماماً كان ذلك لله رضاً فإن خرج عن أمرهم خارج بطعن أو بدعة ردوه إلى ما خرج منه فإن أبى قاتلوه على اتباعه غير سبيل المؤمنين وولاه الله ما تولى ولعمري يا معاوية لئن نظرت بعقلك دون هواك لتجدني أبرأ الناس من دم عثمان، ولتعلمن أني كنت في عزلة عنه إلا أن تتجنى فتجن ما بدا لك والسلام .
“যারা আবু বকর, উমার ও উসমানের হাতে যে শর্তে বাই‘আত করেছে, তারা আমার হাতেও একই শর্তে বাই‘আত করেছে, অতএব, কোনো উপস্থিত ব্যক্তির সাধ্য নেই গ্রহণ করা কিংবা কোনো অনুপস্থিত ব্যক্তির জন্য শোভা নয় প্রত্যাখ্যান করা, বরং বিষয়টি মুহাজির ও আনসারদের পরামর্শ নির্ভর, তারা যদি কোনো ব্যক্তির ব্যাপারে সমবেত হয় ও তাকে ইমাম নামকরণ করে, তাহলে সেটাই আল্লাহর সন্তুষ্টি, যে তাদের সিদ্ধান্ত থেকে বের হলো, সে অপবাদ নিয়ে বের হলো অথবা বিদ‘আত নিয়ে বের হলো, তাকে অবশ্যই সেদিকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে, যেখান থেকে সে বের হয়েছে। আর যদি সে অস্বীকার করে, তাহলে তার সাথে যুদ্ধ করা হবে, যেহেতু সে মুমিনদের সিদ্ধান্ত ত্যাগ করেছে। আর সে যেদিকে যেতে চেয়েছে আল্লাহ তাকে সেদিকেই নিয়ে যাবে। হে মুয়াবিয়া আমার জীবনের শপথ করে বলছি, তুমি যদি প্রবৃত্তি ত্যাগ করে তোমার বিবেক দিয়ে চিন্তা কর, তাহলে তুমি বুঝবে যে উসমানের রক্তের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই, তুমি নিশ্চয় জানবে যে, আমি তার থেকে বিরত ছিলাম... ওয়াস্সালাম”। [দেখুন: “সাফওয়াতু শুরুহি নাহজিল বালাগাহ”: (পৃ. ৫৯৩)]
এখান থেকে প্রমাণিত হয়:
এক. ইমাম মুহাজির ও আনসারদের থেকে বাছাই করা হবে, শী‘আদের নিকট স্বীকৃত ইমামতির সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই!
দুই. আলী সেভাবেই বাই‘আত গ্রহণ করেছেন, যেভাবে আবু বকর, উমার ও উসমান বাই‘আত গ্রহণ করেছেন, আল্লাহ তাদের সকলের ওপর সন্তুষ্ট হোন।
তিন. পরামর্শ গ্রহণ করা হবে মুহাজির ও আনসারদের। এটাই প্রমাণ করে যে, মুহাজির ও আনসারগণ আল্লাহর নিকট সম্মানিত ও উঁচু মর্যাদার অধিকারী, যা শী‘আদের মিথ্যাচার ও অপবাদের সম্পূর্ণ বিপরীত।
চার. মুহাজির ও আনসারদের কাউকে কবুল করা, কারো প্রতি তাদের সন্তুষ্টি প্রকাশ করা ও কোনো ইমামের হাতে তাদের বাই‘আত করাই আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রমাণ। এতে কোনো ইমামের ইমামতি ছিনতাই বা জবর দখল করা হয় না, যেমন শী‘আরা দাবি করে। অন্যথায় সেখানে আল্লাহর সন্তুষ্টি কীভাবে থাকে?!
পাঁচ. শী‘আরা মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুকে লা‘নত করে, অথচ আমরা দেখি আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু তার চিঠিতে তাকে লা‘নত করেন নি !
৫৯. শী‘আদের সাধ্য নেই এটা অস্বীকার করার যে, আবু বকর, উমার ও উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতে গাছের নিচে বাই‘আত করেছিলেন। যাদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন যে, তিনি তাদের ওপর সন্তুষ্ট এবং তাদের অন্তরের বিষয় সম্পর্কে অবগত। [আল্লাহ তাআলা বলেন: ﴿لَّقَدۡ رَضِيَ ٱللَّهُ عَنِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ إِذۡ يُبَايِعُونَكَ تَحۡتَ ٱلشَّجَرَةِ فَعَلِمَ مَا فِي قُلُوبِهِمۡ فَأَنزَلَ ٱلسَّكِينَةَ عَلَيۡهِمۡ وَأَثَٰبَهُمۡ فَتۡحٗا قَرِيبٗا ١٨﴾ [ الفتح : ١٨ ] “অবশ্যই আল্লাহ মুমিনদের ওপর সন্তুষ্ট হয়েছেন, যখন তারা গাছের নিচে আপনার হাতে বাই‘আত গ্রহণ করেছিল। অতঃপর তিনি তাদের অন্তরে কি ছিল তা জেনে নিয়েছেন, ফলে তাদের উপর প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং তাদেরকে পুরস্কৃত করলেন নিকটবর্তী বিজয় দিয়ে”। সূরা আল-ফাতহ: (১৮)] অতএব, শী‘আরা কীভাবে আল্লাহর সংবাদের সাথে কুফুরী করে এবং তার বিরুদ্ধে বিশ্বাস পোষণ করে?! যেন তারা বলতে চাচ্ছে: হে আল্লাহ আপনি তাদের ব্যাপারে জানেন না, আমরা যা জানি! আল্লাহর নিকট পানাহ চাচ্ছি।
৬০. অধিকন্তু আমরা দেখি শী‘আরা মহান ও প্রধান সাহাবীদের গালি দেওয়া আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের কাজ মনে করে, বিশেষ করে তিন খলিফা: আবু বকর, উমার ও উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুম। অথচ কোনো সুন্নী একজন আহলে বাইতকেও গালি দেয় না, শী‘আরা মিথ্যার আশ্রয় নিয়েও এর অস্বীকার করতে পারবে না।
৬১. শী‘আরা তাদের কিতাবে হুসাইনের মৃত্যু সম্পর্কে লিখে যে, যুদ্ধের ময়দানে তিনি পিপাসায় মারা গেছেন, আর এ জন্যই তুমি দেখবে পানির কুপ ও ট্যাঙ্কির ওপর তারা লিখে রাখে: “পানি পান কর আর হুসাইনের পিপাসা স্মরণ কর”!
আমাদের প্রশ্ন: শী‘আদের আকীদা অনুযায়ী ইমামরা যেহেতু গায়েব জানেন। তাহলে যুদ্ধের ময়দানে তৃষ্ণার্ত হবেন এটা হুসাইন জানতেন না? জানতেন না তিনি পিপাসায় মারা যাবেন? তাহলে কেন তিনি পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি জমা করে রাখলেন না?!
দ্বিতীয়তঃ যুদ্ধের ময়দানে যথেষ্ট পরিমাণ পানি সংগ্রহে রাখা কি যুদ্ধের প্রস্তুতির মধ্যে গণ্য হয় না?!
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَأَعِدُّواْ لَهُم مَّا ٱسۡتَطَعۡتُم مِّن قُوَّةٖ وَمِن رِّبَاطِ ٱلۡخَيۡلِ تُرۡهِبُونَ بِهِۦ عَدُوَّ ٱللَّهِ وَعَدُوَّكُمۡ﴾ [ الانفال : ٦٠ ]
“আর তোমরা মুকাবিলার জন্য তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী শক্তি ও অশ্ব বাহিনী প্রস্তুত কর, তা দ্বারা তোমরা ভয় দেখাবে আল্লাহর শত্রু ও তোমাদের শত্রুদেরকে”। [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৬০]
৬২. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে ইসলাম পরিপূর্ণতা লাভ করেছে। কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿ٱلۡيَوۡمَ أَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِينَكُمۡ﴾ [ المائدة : ٣ ]
“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণ করলাম”। [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৩]
আর শী‘আদের মাযহাব প্রকাশ পেয়েছেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর, এটা কীভাবে সম্ভব?!
৬৩. আল্লাহ তা‘আলা ইফকের সে প্রসিদ্ধ ঘটনায় আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার পবিত্রতা নাযিল করেছেন, তাকে মিথ্যা অপবাদ থেকে নাজাত দিয়েছেন। তা সত্বেও আমরা দেখি কতক শী‘আ তাকে খিয়ানতের অপবাদ দেয়!! [দেখুন: “তাফসিরুল কুম্মি”: (২/৩৭৭) এবং “আল-বুরহান” লিল বাহরানি: (৪/৩৫৮)] (আল্লাহর নিকট পানাহ চাই)
এতে যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর অপবাদ, তেমন আল্লাহর ওপরও অপবাদ যে, তিনি তার নবীকে বলেন নি যে, তোমার স্ত্রী খিয়ানতকারীনী?! আর এটা কীভাবে সম্ভব!
শী‘আদের মাযহাব খুবই ঘৃণিত মাযহাব যে, সর্বোত্তম নবীর স্ত্রী ও মুমিনদের মায়েদেরকে তারা অপবাদ দেয়।
৬৪. শী‘আদের বর্ণনা মতে আলী ও তার সন্তানদের মধ্যে সকল অলৌকিক ঘটনা সীমাবদ্ধ, তারা মৃত অবস্থায়ও উপকার করে, তাহলে তারা কেন জীবিত অবস্থায় নিজেদের উপকার করে নি?!
অথচ আমরা দেখি যে, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু নিশ্চিন্তে ও দাঙ্গা-হাঙ্গামাবিহীন খিলাফত পরিচালনা করতে পারে নি, অতঃপর তিনি আততায়ীর হাতে মারা যান। অনুরূপ হাসানও দেখি মুয়াবিয়ার হাতে খিলাফত ছেড়ে দেন, আর হুসাইন প্রথমত হন কোনঠাসা, অতঃপর হন মৃত্যুর সন্মুখীন, তার উদ্দেশ্যও সফল হয় নি... অনুরূপ তাদের পরবর্তী ইমামদের অবস্থাও তথৈবচ!
এসব মুহূর্তে তাদের অলৌকিক ঘটনাবলি কোথায় ছিল, যা শী‘আরা দাবি করে?!
৬৫. শী‘আদের ধারণা আলীর ফযীলত শী‘আদের সূত্রে মুতাওয়াতির ও বহু সনদে বর্ণিত, অনুরূপ তার ইমামতির ব্যাপারটি। তাদের প্রতি প্রশ্ন: যেসব শী‘আরা সাহাবী নয়, তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা শোনে নি। তাদের বর্ণনা বিচ্ছিন্ন, যদি সাহাবীদের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত না পৌঁছায় তাহলে তাদের বর্ণনাও বিশুদ্ধ নয়, আর শী‘আরা যেসব সাহাবীদের স্বীকৃতি দেয়, তাদের সংখ্যা খুবই কম, দশ বা তার চেয়ে কিছু বেশি। এদের দ্বারা তো মুতাওয়াতির প্রমাণিত হয় না! আর অবশিষ্ট সাহাবীগণ যারা তার ফযীলত বর্ণনা করেছেন, শী‘আরা তাদের কুৎসা রটনা করে এবং তাদেরকে কুফুরীর অপবাদ দেয়!
অতঃপর শী‘আদের ওপর প্রশ্ন উত্থাপিত হয়, জমহুর সাহাবায়ে কেরাম, আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে যাদের প্রশংসা করেছেন, তোমাদের ধারণা মোতাবিক তারা যদি মিথ্যা বলতে ও ইলম গোপন করতে পারে, তাহলে তোমাদের স্বীকৃতপ্রাপ্ত অল্প কয়েকজন কি মিথ্যা বলতে পারে না, বরং তাদের ব্যাপারে মিথ্যা তো আরো সহজ!
৬৬. শী‘আরা দাবি করে: আবু বকর, উমার ও উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুম, তাদের উদ্দেশ্য ছিল নেতৃত্ব ও রাজত্ব, তাই তারা অন্যদের ওপর ইমামতির ব্যাপারে যুলুম করেছে।
আমাদের প্রশ্ন: তারা ইমামতির জন্য কোনো মুসলিমের সাথে যুদ্ধ করে নি, বরং যুদ্ধ করেছে মুরতাদ ও কাফিরদের সাথে, যেমন কিসরা, কায়সার ও পারস্য দেশসমূহ এবং সেখানে তারা ইসলাম কায়েম করেছে। তারা ঈমান ও ঈমানদেরকে বিজয়ী করেছে এবং কুফর ও কাফিরদেরকে পরাজিত করেছে। যেমন উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু, যার মর্যাদা আবু বকর ও উমারের চেয়ে কম, যাকে বিদ্রোহীরা শহীদ করেছে, তিনি কোনো মুসলিমের সাথে যুদ্ধ করেন নি, তার খিলাফত ও রাজত্বের জন্য কোনো মুসলিমকে তিনি হত্যা করেন নি।
অতএব, শী‘আরা যদি তাদেরকে যালিম ও রাসূলের শত্রু ভাবে, তাহলে আলীকেও যালেম ও শত্রু মনে করা জরুরী!!
৬৭. কাদিয়ানিরা তাদের নেতা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর নবুওয়াত দাবি করে কুফুরী করেছে, তাদের মাঝে ও শী‘আদের মাঝে কিসের পার্থক্য, যারা তাদের ইমামদের মধ্যে নবীদের বৈশিষ্ট্য বরং আরো অতিরিক্ত বৈশিষ্ট দাবি ও বিশ্বাস করে?!
এটা দাবি কি কুফুরী নয়?! অথবা তাদেরকে বলছি: তোমরা নবী ও ইমামদের পার্থক্য বর্ণনা কর?! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি বারো ইমামের সুসংবাদ দেওয়ার জন্য প্রেরিত হয়েছেন, যাদের কথা তার কথার ন্যায়, যাদের কর্ম তার কর্মের ন্যায় এবং যারা তার মতই নিষ্পাপ ও মাসুম...?
৬৮. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কীভাবে আয়েশার ঘরে দাফন করা হয়, অথচ তোমরা তাকে কুফর ও নিফাকের অপবাদ দাও?! এটা কি আয়েশার প্রতি রাসূলের মহব্বত ও সন্তুষ্টির প্রমাণ নয়?!
৬৯. অনুরূপ: কীভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আবু বকর ও উমারের মাঝখানে দাফন করা হয়, অথচ তারা উভয়ে তোমাদের দৃষ্টিতে কাফির?! কোনো মুসলিমকে কাফিরদের মাঝে দাফন করা বৈধ নয়, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যাপারে সেটা কীভাবে ঘটলো?! আল্লাহ কি তার হাবিবকে মৃত্যুর পরও কাফিরদের সংশ্রব থেকে রক্ষা করেন নি?! (তোমাদের ধারণা মতে)।
অতঃপর আলী এসব কর্মকাণ্ডের সময় কোথায় ছিলেন?! তিনি কেন এর বিরোধিতা করেন নি?!
তোমাদের বলা উচিৎ, আবু বকর ও উমার উভয়ে মুসলিম ছিলেন। তারা যেহেতু আল্লাহর নিকট সম্মানিত ছিলেন, তাই আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়াতেও সম্মান দান করেছেন, এটাই সত্য অথবা আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু তার দীনের ব্যাপারে খিয়ানত করেছেন!! আমরা খিয়ানত থেকে তাকে মুক্ত মনে করি। অন্যথায় আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ নবীর সাথে কীভাবে কাফিরদের দাফন করা হয়? যেমন তোমরা ধারণা কর।
৭০. শী‘আরা দাবি করে যে, আলীর ইমামতি ও তার খিলাফতের বর্ণনা কুরআনে ছিল, কিন্তু সাহাবীগণ তা গোপন করেছেন।
এটা তাদের মিথ্যা দাবি, কারণ সাহাবায়ে কেরাম সেসব হাদীস গোপন করে নি, যেসব হাদীস দ্বারা তারা আলীর ইমামতির স্বপক্ষে দলীল পেশ করে, এগুলো কেন তারা গোপন করেন নি?! যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«أنت مني بمنزلة هارون من موسى»
“তুমি আমার নিকট এমনি, যেমন হারুন মূসার নিকট ছিল”। ইত্যাদি হাদীস তারা কেন গোপন করেন নি?!
৭১. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরবর্তী মুসলিমদের খলিফা ছিল আবু বকর, এর দলীল:
এক. সকল সাহাবায়ে কেরামের ঐক্যমত এবং তার আনুগত্যে তাদের সকলের সম্মত হওয়া, তার নির্দেশ মেনে নেওয়া ও তার নিষেধ থেকে বিরত থাকা এবং তার খিলাফতের ওপর কারো প্রশ্ন উত্থাপন না করা। যদি তিনি সত্যিকার খলিফা না হতেন, তাহলে অবশ্যই তারা তার খিলাফতের ব্যাপারে আপত্তি করতেন। তারা তার অনুসরণ করতেন না। অথচ তাদের তাকওয়া, দীনদারী ও সততা ছিল সবার নিকট স্বীকৃত, তারা কারো তিরষ্কারকে পরোয়া করতেন না।
দুই. আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু তার বিরোধিতা করেন নি, তার সাথে যুদ্ধের ঘোষণা করে নি। এর করণ হয়তো: ফিতনা ও অনিষ্টের ভয় অথবা অক্ষমতা অথবা তার জানা ছিল যে, তিনিই খিলাফতের হকদার অর্থাৎ আবু বকরই সত্যিকার খলিফা হওয়ার যোগ্য।
তবে ফিতনা ও অনিষ্টের ভয়ে যুদ্ধ ত্যাগ করা তার জন্য কখনো উচিৎ হয় নি। কারণ, তিনি মুয়াবিয়ার সাথে যুদ্ধ করেছেন, যে যুদ্ধে বহু মানুষ মারা গিয়েছে। তিনি তালহা ও যুবায়ের রাদিয়াল্লাহু আনহুমার সাথে যুদ্ধ করেছেন, অনুরূপ তিনি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার সাথে যুদ্ধ করেছেন, যখন তিনি জেনেছেন যে, তিনি হকের ওপর আছেন, তখন তিনি ফিতনার ভয়ে যুদ্ধ ত্যাগ করেন নি!
তবে আলীকে অক্ষম বলা যুক্তিযুক্ত নয়। কারণ, যারা তাকে মুয়াবিয়ার যুগে সাহায্য করেছে, তারা সাকিফার দিন, উমারের খিলাফতের দিন এবং উমারের পরবর্তী খলিফা নির্বাচন করার উপদেষ্টা কমিটি গঠন করার দিন ঈমানদার ছিল। তারা যদি জানত যে, আলী সত্য পথে আছেন, তাহলে সেখানেও তারা তাকে আবু বকরের মোকাবিলায় সাহায্য করত। কারণ আলীর জন্য মুয়াবিয়ার সাথে যুদ্ধ করার চেয়ে আবু বকরের সাথে যুদ্ধ করাই শ্রেয় ছিল।
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু এ জন্যই যুদ্ধ ত্যাগ করেছেন, যেহেতু তিনি জানতেন, আবু বকর সত্যের ওপর।
৭২. শী‘আদের দাবি মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু কাফির ও মুরতাদ ছিলেন! যদি অনুরূপই হয়, তাহলে আলী ও তার ছেলে হাসানের ওপর তাদের অনুরূপ অপবাদ দেওয়া উচিৎ। অর্থাৎ আলী মুরতাদের নিকট পরাজিত ছিলেন, আর হাসান মুরতাদের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন। অথচ আমরা দেখি যে, খালেদ ইবন ওয়ালিদ আবু বকরের যুগে মুরতাদদের সাথে যুদ্ধ করেছেন এবং তাদেরকে পরাজিত করেছেন। অতএব, প্রমাণিত হয় যে, কাফিরদের মোকাবিলায় খালেদকে সাহায্য করা আল্লাহর নিকট গুরুত্বপূর্ণ ছিল, মুয়াবিয়ার মোকাবিলায় আলীকে সাহায্য করার চেয়ে! আর আল্লাহ তা‘আলা ইনসাফপূর্ণ, তিনি কারো ওপর যুলুম করেন না, অতএব, খালেদই আলীর চেয়ে উত্তম প্রমাণিত হয়! বরং আবু বকর, উমার ও উসমানের সৈন্যবাহিনী কাফিরদের মোকাবিলায় বিজয় লাভ করত, অথচ আলী মুরতাদদের বিরোধিতায় পরাজিত ছিল! এটা কীভাবে সম্ভব? দ্বিতীয়তঃ আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَا تَهِنُواْ وَلَا تَحۡزَنُواْ وَأَنتُمُ ٱلۡأَعۡلَوۡنَ إِن كُنتُم مُّؤۡمِنِينَ ١٣٩﴾ [ ال عمران : ١٣٩ ]
“আর তোমরা দুর্বল হয়ো না এবং দুঃখিত হয়ো না, আর তোমরাই বিজয়ী যদি মুমিন হয়ে থাক”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩৯] তিনি অন্যত্র বলেন,
﴿فَلَا تَهِنُواْ وَتَدۡعُوٓاْ إِلَى ٱلسَّلۡمِ وَأَنتُمُ ٱلۡأَعۡلَوۡنَ وَٱللَّهُ مَعَكُمۡ وَلَن يَتِرَكُمۡ أَعۡمَٰلَكُمۡ ٣٥﴾ [ محمد : ٣٥ ]
“অতএব, তোমরা হীনবল হয়ো না ও সন্ধির আহ্বান জানিও না এবং তোমরাই প্রবল। আর আল্লাহ তোমাদের সাথই রয়েছেন এবং কখনোই তিনি তোমাদের কর্মফল হ্রাস করবেন না”। [সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ৩৫]
আমরা দেখি আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু শেষ দিকে মুয়াবিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে সন্ধির জন্য আহ্বান জানান, যখন তিনি তাকে তার দেশ থেকে হটাতে অপারগ হন। তিনি তার নিকট প্রস্তাব করেন, প্রত্যেকেই স্বস্ব রাজত্বে বিদ্যমান থাকব, যার নিকট যা রয়েছে, তাতেই সীমাবদ্ধ থাকব। যদি আলীর পক্ষ মুমিন হয়, তাহলে মুয়াবিয়ার পক্ষ ছিল মুরতাদ, যেমন শী‘আদের ধারণা, অতএব, আলীর বিজয় কি জরুরী ছিল না? অথচ এটা বাস্তবতার বিপরীত!
৭৩. শী‘আরা আলীর ঈমান ও ইনসাফ প্রমাণ করতে অক্ষম, আহলে সুন্নাহ হওয়া ব্যতীত কখনোই তারা তা প্রমাণ করতে পারবে না। কারণ তাদেরকে যখন খাওয়ারেজ অথবা অন্য কেউ বলে, যারা আলীকে কাফির বা ফাসিক ধারণা করে: আমরা মানি না যে, আলী মুমিন ছিল, বরং সে ছিল কাফির অথবা যালেম, যেমন শী‘আরা আবু বকর ও উমারের ব্যাপারে বলে। তাহলে তারা আলীর ঈমান ও ইনসাফের ওপর কোনো দলীলই পেশ করতে পারবে না, আর যেসব দলীল পেশ করবে, তার দ্বারা আবু বকর, উমার ও উসমানের ঈমান ও ইনসাফ তার চেয়ে প্রকটভাবে প্রমাণিত হবে।
যদি তারা আলীর ঈমানের স্বপক্ষে তার ইসলাম গ্রহণ, হিজরত ও জিহাদ পেশ করে, তাহলে এসব তো আবু বকর, উমার ও উসমানের ক্ষেত্রেও ছিল! বরং মুয়াবিয়ার ইসলাম, বনু উমাইয়্যাদের ইসলাম ও বনু আব্বাসের ইসলাম একাধিক সনদ ও সূত্রে প্রমাণিত, অনুরূপ প্রমাণিত তাদের সালাত, সিয়াম ও কাফিরদের সাথে তাদের জিহাদ!
শী‘আরা এদের কারো মধ্যে যদি নিফাকের দাবি করে, তাহলে খারিজিরাও আলীর ব্যাপারে নিফাকের দাবি করতে পারে!
শী‘আরা যদি এদের কারো ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করে, তাহলে এর চেয়ে বড় সন্দেহ পোষণ করা যায় আলীর ব্যাপারে!
যদি শী‘আরা কুৎসা রটনাকারীদের ন্যায় বলে যে, আবু বকর ও উমার ছিল মুনাফিক, তারা উভয়ে অন্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে শত্রুতা পোষণ করত, তারা তার দীনকে বিনষ্ট করেছে, তাহলে খারেজিরাও অনুরূপ আলীর ব্যাপারে বলতে পারে। তারা আরো বলতে পারে যে, আলীর অন্তরে তার চাচাত ভাই মুহাম্মাদের দীনের প্রতি বিদ্বেষ ছিল, তার পরিবারের সাথে বিদ্বেষ পোষণ করত, সে মুহাম্মদের দীনকে বিনষ্ট করতে চেয়েছিল, কিন্তু তার জীবদ্দশায় ও তিন খলিফার যুগে তার পক্ষে তা সম্ভব হয় নি, অবশেষে সে তৃতীয় খলিফার হত্যার ষড়যন্ত্র করে ও ফেতনার আগুন জ্বালিয়ে দেয়, যার ফলে সে মুহাম্মদের কতক সাহাবী ও তার উম্মতের কতক সদস্যকে হত্যার সুযোগ লাভ করে, এটা তার মুহাম্মদের প্রতি বিদ্বেষ ও শত্রুতার বহিঃপ্রকাশ ছিল, সে মূলত মুনাফিকদের পক্ষ ছিল, যারা তার মধ্যে ইলাহিয়্যাত ও নবুওয়াত দাবি করেছিল। আর আলী অন্তরে যা ধারণ করত, মুখে তার বিপরীত বলত, কারণ তার ধর্মই ছিল ‘তাকইয়াহ’। এ জন্যই দেখি বাতেনিরা তার অনুসারী, তাদের নিকট তার গোপন ভেদ বিদ্যমান, তারা তার থেকে তা বর্ণনা করে ও গ্রহণ করে!
যদি শী‘আরা আলীর ঈমান ও ইনসাফ কুরআন দ্বারা প্রমাণিত করতে চায়, তাদেরকে বলা হবে: কুরআন সবার জন্য সমান। সবাই কুরআন যেভাবে গ্রহণ করেছে, আলিও সেভাবে গ্রহণ করেছে। যে আয়াত তারা আলীর জন্য খাস করবে, সে আয়াত আরো বিশেষভাবে প্রযোজ্য হবে আবু বকর ও উমারের জন্য।
শী‘আরা যদি বলে: আলীর ব্যাপারে এসব আয়াত দলীল দ্বারা প্রমাণিত, তাহলে এসব দলীল তো আবু বকর ও উমারের ক্ষেত্রে অধিক প্রযোজ্য। যদি তারা তাওয়াতুরের দাবি করে, তাহলে এদের তাওয়াতুর তো বেশি শক্তিশালী। যদি তারা সাহাবীদের বর্ণনার ওপর নির্ভর করে, তাহলে আবু বকর ও উমারের ব্যাপারে তাদের বর্ণনায়ই অধিক!
৭৪. শী‘আরা ধারণা করে যে, আলী ইমামতির বেশি হকদার ছিল। কারণ, সকল সাহাবীদের মোকাবিলায় তার ফযীলতের বর্ণনা অধিক, সে অধিক ফযীলতপূর্ণ ছিল, (যেমন তাদের ধারণা)। আমরা বলব: তোমরা আলী সম্পর্কে নির্দিষ্ট কিছু ফযীলত জান, যেমন সে প্রথম যুগে ইসলাম গ্রহণ করেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে জিহাদ করেছে, তার ইলম বেশি ছিল, দুনিয়ার প্রতি তিনি অনাগ্রহী ছিলেন। আচ্ছা অনুরূপ গুনাবলি হাসান ও হুসাইনের মধ্যে বেশি ছিল, না সাদ ইবন আবু ওয়াক্কাস, আব্দুর রহমান ইবন আউফ ও আব্দুল্লাহ ইবন উমার ও অন্যান্য মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে বেশি ছিল?!
কেউ হাসান ও হুসাইনের মধ্যে এটা দাবি করতে পারবে না। এখন অবশিষ্ট রইল তাদের ব্যাপারে কুরআন ও হাদীসের দলীল। যদি উমাইয়্যারা মুয়াবিয়ার খিলাফতের পক্ষে কুরআনের দলীল পেশ করে, তাহলে তাদের দাবিই হবে শী‘আদের চেয়ে শক্তিশালী। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿وَمَن قُتِلَ مَظۡلُومٗا فَقَدۡ جَعَلۡنَا لِوَلِيِّهِۦ سُلۡطَٰنٗا فَلَا يُسۡرِف فِّي ٱلۡقَتۡلِۖ إِنَّهُۥ كَانَ مَنصُورٗا ٣٣﴾ [ الاسراء : ٣٣ ]
فسيقولون : المظلوم هو عثمان بن عفان، وقد نصر الله معاوية لتوليه دم عثمان !
“আর যে অন্যায়ভাবে নিহত হয়, আমি অবশ্যই তার অভিভাবককে ক্ষমতা দিয়েছি। সুতরাং হত্যার ব্যাপারে সে সীমালঙ্ঘন করবে না, নিশ্চয় সে হবে সাহায্যপ্রাপ্ত”। [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৩৩]
“তারা বলতে পারে, এখানে মযলুম হচ্ছে উসমান ইবন আফফান, আর আল্লাহ তা‘আলা তার রক্তের বদলা নেওয়ার জন্য মুয়াবিয়াকে ক্ষমতা দান করেছেন”!
৭৫. শী‘আরা ধারণা করে যে, আবু বকর ও উমার উভয়েই আলীর খিলাফত জবর দখল করেছে এবং তারা উভয়েই তার বিপক্ষে ষড়যন্ত্র করেছে, তাকে খিলাফত থেকে বঞ্চিত করার জন্য... এটা তাদের মিথ্যাচার।
আমাদের বক্তব্য: যদি তোমাদের কথা সত্য হয়, তাহলে উমার অন্যদের সাথে কেন তাকে পরামর্শ সভার অন্তর্ভুক্ত করেছেন? অথচ যদি তাকে পরামর্শ সভা থেকে বাদ দিতেন, যেমন বাদ দিয়েছেন সায়িদ ইবন জায়েদকে অথবা তার পরিবর্তে অন্য কাউকে অন্তর্ভুক্ত করতেন, তাহলে এক শব্দ দ্বারাও কেউ তার প্রতিবাদ করত না।
এর দ্বারাই প্রমাণিত হয় যে, সাহাবায়ে কেরাম তাকে উপযুক্ত মর্যাদায় প্রদান করেছেন, তার ব্যাপারে কোনো যুলুম বা বাড়াবাড়ি করেন নি। যে ক্ষমতার হকদার ছিল, তাকেই তারা ক্ষমতা প্রদান করেছেন।
নিচের দলীলও যার সত্যতার প্রমাণ:
উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর হত্যার পর যখন আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন মুহাজির ও আনসারগণ দ্রুত তার হাতে বাই‘আত হন। কেউ কি বলতে পারবে, আবু বকর, উমার ও উসমানের নিকট বাই‘আতের কারণে, তাদের কেউ আলীর কাছে অপরাধ স্বীকার করেছে?! অথবা তাদের কেউ আলীর ইমামতির দলীল অস্বীকার করার কারণে তাওবা করেছে?! অথবা তাদের কেউ বলেছে: আলীর খিলাফত সম্পর্কে এ দলীল আজই আমার স্মরণ হলো, পূর্বে যা ভুলে গিয়েছিলাম?!
৭৬. আনসারগণ খিলাফতের ব্যাপারে আবু বকরের সাথে মতভেদ করেছে, তারা তাকে সাদ ইবন উবাদার নিকট বাই‘আতের আহ্বান জানিয়েছে, তখন আলী ঘরে বসে ছিলেন, তিনি কোনো পক্ষ নেন নি। অতঃপর সকল আনসার আবু বকরের বাই‘আতে একমত হন, যার পশ্চাতে নিচের কোনো এক কারণ অবশ্যই ছিল:
এক. আবু বকরের শক্তির কাছে তারা নতি স্বীকার করেছে।
দুই. অথবা আবু বকর খিলাফতের উপযুক্ত ছিল, এটা তাদের নিকট স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, যে কারণে তারা তার আনুগত্য মেনে নিয়েছে।
তিন. অথবা অর্থহীন ও এমনিতেই তারা এটা করেছে। এ ছাড়া চতুর্থ কোনো ব্যাখ্যা নেই।
শী‘আরা যদি বলে: আবু বকরের শক্তির কাছে তারা নতি স্বীকার করেছে। এটা নিরেট মিথ্যাচার। কারণ সেখানে কোনো যুদ্ধ, মারামারি, গালাগাল, ধমক ও অস্ত্রের ভয় ছিল না। আর আনসারগণ ভয়ে বাই‘আত করেছেন বলা অসম্ভব। কারণ, তাদের দুই হাজারেরও বেশি অশ্বারোহী যোদ্ধা ছিল, যারা সবাই একই বংশের, ইতোপূর্বে তাদের এমন বাহাদুরি প্রকাশ পেয়েছে, যার সামনে পুরো আরব বিশ্ব মাথা নত করেছে। দ্বিতীয়তঃ তারা মৃত্যুর দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়ে দীর্ঘ আট বছর সকল আরবের সাথে যুদ্ধ করেছে। রূমের কায়সারের সাথে মুতার যুদ্ধেও অবতীর্ণ হয়েছে। আবু বকরের পক্ষে বা তার সাথে আগমনকারী আরো দু’চার জনের পক্ষে তাদের ভীত করা ছিল অসম্ভব, যাদের ছিল না তেমন লোকবল, ধন-সম্পদ অথবা কঠিন দূর্গের ন্যায় বংশ বা গোত্র। এতদসত্বেও তারা দ্বীধাহীন চিত্তে তার নিকট বাই‘আত করেন।
অনুরূপ আনসারদের দাবি ত্যাগ করা, তাদের গোত্রীয় ভাইয়ের হাতে বাই‘আত না করা, আবার সকলের তা মেনে নেওয়াও অসম্ভব ছিল যদি আবু বকরের মধ্যে খিলাফতের যোগ্যতা না থাকত। অতঃপর এতবড় সম্প্রদায়ের চিরচেনা সত্য থেকে বিচ্যুত হওয়া, অসত্য ও নফসের প্রবৃত্তির ওপর একমত হওয়া কোনো ভয়-ভীতি ব্যতীত অসম্ভব অথবা মাল ও সম্পদের লোভ ব্যতীত অসম্ভব। অতঃপর এমন এক ব্যক্তির নিকট নতি স্বীকার করা, যার কোনো বংশ নেই, নিরাপত্তা নেই, যাকে সুরক্ষা দেওয়ার কেউ নেই, যার অট্টালিকা নেই, আর না আছে গোলাম-বৃত্ত ও ধন-সম্পদ, আনসারদের পক্ষে ছিল অসম্ভব, যদি না তিনি খিলাফতের যোগ্য হতেন।
অতএব, এসব সম্ভাবনা যখন বাতিল প্রমাণিত হলো, আমরা বুঝলাম যে, আনসার সাহাবায়ে কেরাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত দলীল এবং আবু বকরের যোগ্যতার কারণেই তার হাতে বাই‘আত করেছেন, শুধু ইজতেহাদ কিংবা ধারণার ওপর নির্ভর করে নয়।
অতএব, যখন আনসার থেকে নেতা নির্বাচিত হলো না, তাদের হাত থেকে নেতৃত্ব চলে গেল, তখন তারা সকলে কি কারণে আলীর খিলাফত সম্পর্কে রাসূলের নির্দেশ ও আদেশ অস্বীকার বা অমান্য করলেন?! যে আলীর ওপর যুলুম করেছে, তার অধিকার হরণ করেছে, তার ব্যাপারে সকলের ঐক্যমত হওয়া ছিল অসম্ভব!!
৭৭. শী‘আদের ধারণা মোতাবেক আবু বকর ও উমার আলীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে সফল হয়েছেন, আমাদের প্রশ্ন তারা ক্ষমতায় গিয়ে নিজেদের জন্য কি করেছেন?!
আবু বকর কেন তার সন্তানকে খিলাফতের দায়িত্ব দিলেন না, যেমন দিয়েছেন আলি?!
ওমর কেন তার সন্তানকে খিলাফতের দায়িত্ব দিলেন না, যেমন দিয়েছেন আলী?!
৭৮. আমরা জানি যে, মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবন উসমান ইবন আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহুর মাতা হচ্ছেন ফাতেমা বিনতে হুসাইন ইবন আলী ইবন আবু তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু। অর্থাৎ মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল্লাহর দাদি ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহা আর দাদা হচ্ছেন উসমান ইবন আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহু!
এখানে আমাদের প্রশ্ন, যা শী‘আদের জন্য খুবই বিরক্তিকর: ফাতেমার কোনো নাতী অভিশপ্ত হবে, এটা তাদের মাযহাব কি সমর্থন করে?! কারণ শী‘আদের নিকট বনু উমায়্যারা ‘কুরআনে বর্ণিত অভিশপ্ত গাছ’ যাদের অন্তর্ভুক্ত উল্লিখিত মুহাম্মাদও?! [দেখুন: “আল-কাফি”: (৫/৭), কিতাবু সালিম ইবন কাইস”: (পৃ. ৩৬২)]
৭৯. শী‘আরা তাদের ইমামদের ব্যাপারে ‘তাকইয়াহ’ ও ‘ইসমত’ এর আকীদা পোষণ করে। উল্লেখ্য ‘তাকইয়া’র মূল হচ্ছে প্রতারণা অর্থাৎ অন্তরের বিপরীত মুখে উচ্চারণ করা। আর মাসুম অর্থ নিষ্পাপ। অথচ উভয় একটা আরেকটার বিপরীত। যা কারো মধ্যে কখনো জমা হতে পারে না। কারণ, তোমাদের ইমামদের নিষ্পাপ হওয়ার অর্থ কী, যখন তোমরা তাদের কথার শুদ্ধতা বা অশুদ্ধতা জান না? কারণ তোমাদের ধর্মের দশভাগের নয়ভাগই হচ্ছে ‘তাকইয়াহ’! তাদের সব কথা ও কর্মে তো এ সম্ভাবনাই থাকে যে, তারা এটা প্রতারণা ও অপরকে ধোঁকা দেওয়া অথবা কোনো স্বার্থ হাসিলের জন্য ‘তাকইয়ার’ আশ্রয় নিয়ে বলেছেন বা করেছেন।
দ্বিতীয়তঃ তোমাদের নিকট ‘তাকইয়া’র সাওয়াব হচ্ছে সালাতের সাওয়াবের ন্যায়, যেমন বর্ণিত আছে: تارك التقية كتارك الصلاة “তাকইয়া ত্যাগকারী সালাত ত্যাগকারীর ন্যায়”। [বিহারুল আনওয়ার: (৭৫/৪২১), “মুসতাদরাকুল ওয়াসায়েল”: (১২/২৫৪)]
অধিকন্তু তোমাদের ধর্মের “দশভাগের নয়ভাগই হচ্ছে তাকইয়া”। [“উসুলুল কাফি”: (২/২১৭), “বিহারুল আনওয়ার”: (৭৫/৪২৩)] অতএব, এতে সন্দেহ নেই যে, তোমাদের ইমামরা যা কিছু করেছে, তা সব ঐ নয়ভাগের অন্তর্ভুক্ত! এটা তোমাদের ধারণাকৃত তাদের নিষ্পাপতার বিপরীত নয়কি!
৮০. শী‘আরা যখন তাদের ইমামদের ইমামতির স্বপক্ষে ‘হাদীসে সাকালাইন’ পেশ করে, তখন তারা বিপরীত চরিত্র ধারণ করে। [হাদীসে সাকলাইন إني تارك فيكم الثقلين : كتاب الله وعترتي أهل بيتي “আমি তোমাদের মাঝে দু’টি ভারি বস্তু রেখে যাচ্ছি: আল্লাহর কিতাব ও আমার পরিবার”। তিরমিযী: (৫/৩২৮-৩২৯)] (হাদীসে সাকালাইন অর্থাৎ কুরআন ও নবী পরিবার সম্পর্কিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশ সম্বলিত হাদীস) অতঃপর আমরা তাদেরকে দেখি যে, যারা ‘সাকলে আসগর’ অর্থাৎ ছোট সাকল তথা আহলে বাইতকে দোষারোপ করে, তাদেরকে তারা কাফির বলে। কিন্তু যারা ‘সাকলে আকবার’ অর্থাৎ বড় সাকল তথা কুরআনের ছিদ্রান্বেষণ বা তার দোষারোপ করে, তাদেরকে তারা কাফির বলে না, বরং তাকে মুজতাহিদে মুখতি তথা ‘ভুলকারী গবেষক’ বলে, কাফির বলে না।
৮১. শী‘আদের ধারণা যে, সাহাবায়ে কেরাম সবাই মুরতাদ হয়ে গেছে, অল্প সংখ্যক ব্যতীত, যাদের সংখ্যা অধিক হলেও সাতের বেশি নয়।
আমাদের প্রশ্ন: আহলে বাইতের অন্যান্য সদস্য কোথায়, যেমন জাফরের সন্তান ও আলীর সন্তান... তারাও কি অন্যদের সাথে কাফির হয়ে গেছে?!
৮২. হাদীসুল মাহদীতে এসেছে:
«لو لم يبقَ من الدنيا إلا يوم لطوَّل الله ذلك اليوم حتى يبعث فيه رجلاً من أهل طئ اسمه اسبيتي يوامي واسم أبيه اسم أبي»،
“দুনিয়া থেকে যদি একদিন বাকি থাকে, তবুও আল্লাহ সে দিনকে প্রলম্বিত করে আহলে বাইতের এক লোক প্রেরণ করবেন, যার নাম হবে আমার নামের ন্যায় এবং যার পিতার নাম হবে আমার পিতার নামের ন্যায়”। [“আবু দাউদ”: (৪/১০৬), আল-বানি হাদীসটি সহিহ বলেছেন: “সহীহুল জামে”: (৫১৮০)। শী‘আরা এ হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করে ঠিক, কিন্তু তার নামের ব্যাপারে তারা খুব জটিলতার সন্মুখীন হয়েছে, সামনে যার বর্ণনা আসছে!]
আমাদের জানি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আর শী‘আদের নিকট মাহদী হচ্ছে মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান! এটা একটা বড় প্রশ্ন!
আর এ জন্য শী‘আদের কোনো এক পণ্ডিত এ প্রশ্নের সমাধানে চাতুরতার আশ্রয় নিয়েছেন, যেমন তিনি বলেছেন:
«كان لرسول الله صلى الله عليه وسلم سبطان أبو محمد الحسن وأبو عبد الله الحسين، ولما كان الحجة ـ أي المنتظرـ من ولد الحسين أبي عبد الله، وكانت كنية الحسين أبا عبد الله، فأطلق النبي صلى الله عليه وسلم على الكنية لفظ الاسم، لأجل المقابلة بالاسم في حق أبيه، وأطلق على الجد لفظة الأب» !!.
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দু’জন সন্তান ছিল আবু মুহাম্মাদ আল-হাসান ও আবু আব্দুল্লাহ আল-হুসাইন। যেহেতু অপেক্ষার ‘মাহদী’ আগমন করবেন আবু আব্দুল্লাহ হুসাইনের সন্তান থেকে, আর তার উপনাম ছিল আবু আব্দুল্লাহ, তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপনামকেই নাম হিসেবে উল্লেখ করেছেন, আর দাদার জন্য পিতা শব্দ ব্যবহার করেছেন। [“কাশফুল গুম্মাহ ফি মারেফাতিল আইম্মাহ” লিল আরবালি: (৩/২২৮); “আমালিত তুসি” (পৃ. ৩৬২); “ইসবাতুল হুতাদ”: (৩/৫৯৪, ৫৯৮)]
৮৩. শী‘আদের ইমাম ‘মাহদী’ সম্পর্কে অমিল ও বিপরীত বক্তব্য:
এক. ‘মাহদী’র মা কে?
‘মাহদী’র মাতা কি বাদি হবে, যার নাম নারগিস অথবা সাকিল অথবা মালিকাহ অথবা খামত অথবা হাকিমাহ অথবা রায়হানাহ অথবা সুসান অথবা স্বাধীন নারী হবে, যার নাম মারইয়াম?!
দুই. তার জন্ম কখন?
সে কি তার পিতার মৃত্যুর আট মাস পর জন্ম গ্রহণ করেছে অথবা তার পিতার মৃত্যুর পূর্বে ২৫২ হি. অথবা ২৫৫ হি. অথবা ২৫৬ হি. অথবা ২৫৭ হি. অথবা ২৫৮ হি. অথবা ৮ জিলকদ অথবা ৮ শাবান অথবা ১৫ শাবান অথবা ১৫ রমযান, কখন জন্ম গ্রহণ করেছে?!
তিন. তার মাতা তাকে কীভাবে গর্ভে ধারণ করেছে?
তার মাতা কি তাকে পেটে ধারণ করেছে, যেমন সকল নারীরা তাদের সন্তান ধারণ করে? অথবা অন্যান্য নারীর বিপরীত তার মাতা তাকে পার্শ্বে ধারণ করেছে?!
চার. তার মাতা তাকে কীভাবে প্রসব করেছে?
সকল নারীদের ন্যায় যৌনাঙ্গের মাধ্যমেই প্রসব করেছে? অথবা সকল নারীদের বিপরীত রান থেকে তাকে প্রসব করেছে?
পাঁচ. তিনি কীভাবে লালিত-পালিত হয়েছেন?
তারা আবুল হাসান থেকে বর্ণনা করে:
«إنا معاشر الأوصياء ننشأ في اليوم مثلما ينشأ غيرنا في الجمعة» !.
“আমরা অসিয়তকৃত জামা‘আত, আমরা দিনে এতটুকু বড় হই, অন্যরা জুমার দিনে যতটুকু বড় হয়”!
আবুল হাসান থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«إن الصبي منا إذا أتى عليه شهر كان كمن أتى عليه سنة» !.
“আমাদের বাচ্চাদের ওপর একমাস অতিক্রম করা অন্যদের ওপর এক বছর অতিক্রম করার সমান”!
আবুল হাসান থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন:
« إنا معاشر الأئمة ننشأ في اليوم كما ينشأ غيرنا في السنة» !.
“আমরা ইমামদের জামা‘আত, আমরা দিনে এতটুকু বড় হই, অন্যরা যতটুকু বড় হয় বছরে”! [দেখুন: “আল-গায়বাহ” লিত তুসি: (পৃ. ১৫৯-১৬০)]
ছয়. তারা কোথায় বাস করে?
শী‘আরা বলেছে: তাইবাতে, আবার বলেছে: রাওহা নামক স্থানে অবস্থিত রিজওয়া পাহাড়ে, আবার তারা বলেছে: বরং মক্কায় জি তাওয়া স্থানে, আবার তারা বলেছে: বরং সে সামেরা নামক স্থানে!
এমনকি তাদের কেউ বলেছে:
«ليت شعري أين استقرت بك النوى … بل أي أرض تقلك أو ثرى، أبرضوى أم بغيرها أم بذي طوى … أم في اليمن بوادي شمروخ أم في الجزيرة الخضراء» .
“আমি যদি জানতাম! কোথায় তোমার গন্তব্য স্থির হয়েছে... বরং কোনো যমীন অথবা ভূগর্ব তোমাকে ধারণ করছে, রিজওয়া নামক স্থান, না অন্য কোনো যমীন, না জি তাওয়া নামক স্থান... অথবা ইয়ামানের শামরুখ উপত্যকা অথবা সবুজ উপদ্বীপ”। [“বিহারুল আনওয়ার”: (১০২/১০৮)]
সাত. তিনি কি যুবক অবস্থায় ফিরে আসবেন, না বার্ধক্য অবস্থায় ফিরে আসবেন?
মুফাজ্জল থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি সাদেককে জিজ্ঞাসা করেছি: হে আমার মুনিব, তিনি কি যুবক অবস্থায় ফিরে আসবেন, না বৃদ্ধ অবস্থায় ফিরে আসবেন? তিনি বললেন:
«سبحان الله، وهل يعرف ذلك، يظهر كيف شاء وبأي صورة شاء» .
“সুবহানাল্লাহ! এটা কি জানা সম্ভব, তিনি যেভাবে চান এবং যে আকৃতিতে চান বিকশিত হবেন”। [দেখুন: “বিহারুল আনওয়ার”: (৭/৫৩)]
অন্য বর্ণনায় আছে:
«يظهر في صورة شاب موفق ابن اثنين وثلاثين سنة» .
“তিনি যুবকের আকৃতিতে বিকশিত হবেন, বত্রিশ বছরের যুবকদের ন্যায়”। [“কিতাবু তারিখি মা বা’দাজ জুহুর”: (পৃ. ৩৬০)]
অন্য বর্ণনায় আছে:
يخرج وهو ابن إحدى وخمسين سنة .
“তিনি একান্ন বছরের বয়স্ক হবেন”। [“কিতাবু তারিখি মা বা’দাজ জুহুর”: (পৃ. ৩৬১)]
অন্য বর্ণনায় আছে:
يظهر في صورة شاب موفق ابن ثلاثين سنة .
“তিনি যুবকদের আকৃতিতে বিকশিত হবেন, ত্রিশ বছরের যুবকদের ন্যায়”। [দেখুন: “আল-গায়বাহ” লিত তুসি: (পৃ. ৪২০)]
আট. তার রাজত্বের সময়কাল কত?
মুহাম্মাদ আস-সদর বলেছেন:
وهي أخبار كثيرة ولكنها متضاربة في المضمون إلى حد كبير حتى أوقع كثيراً من المؤلفين في الحيرة والذهول .
“এ ব্যাপারে অনেক হাদীসই রয়েছে, কিন্তু একটির সাথে অপরটির কোনো মিল নই, বরং রয়েছে বিস্তুর পার্থক্য, যা অনেক লেখকদের বিচ্যুতি ও ভ্রান্তিতে নিক্ষেপ করেছে”। [“কিতাবু তারিখি মা বা’দাজ জুহুর”: (পৃ. ৪৩৩)]
وقيل : ( ملك القائم منا 19 سنة ) وفي رواية : ( سبع سنين، يطول الله له في الأيام والليالي حتى تكون السنة من سنيه مكان عشر سنين فيكون سني ملكه 70 سنة من سنيكم ).
বলা হয়েছে: “তার রাজত্ব হবে ১৯ বছর”, অন্য বর্ণনা আছে: “সাত বছর, আল্লাহ তার রাত ও দিনকে প্রলিম্বত করবেন, ফলে তার এক বছর হবে দশ বছরের ন্যায়, এভাবে তোমাদের হিসাব মতে সত্তর বছর তার রাজত্ব চলবে”। [“কিতাবু তারিখি মা বা’দাজ জুহুর”: (পৃ. ৪৩৬)]
অন্য বর্ণনায় আছে, ‘মাহদী’ ৩০৯ বছর রাজত্ব করবেন, যে পরিমাণ আসহাবে কাহাফবাসীরা তাদের গুহায় অবস্থান করেছে।
নয়. তার অদৃশ্য বা অনুপস্থিত থাকার পরিমাণ কত?
শী‘আরা আলী ইবন আবি তালেব থেকে বর্ণনা করেছে, তিনি বলেছেন:
تكون له ـ أي للمهدي ـ غيبة وحيرة، يضل فيها أقوام ويهتدي آخرون، فلما سئل : كم تكون الحيرة؟ قال : ستة أيام أو ستة أشهر أو ست سنين .
‘মাহদি’র ব্যাপারে অনুপস্থিতি ও কিংকর্তব্যবিমূঢ়তা উভয় হবে, তাতে এক সম্প্রদায় গোমরাহ হবে, অন্য সম্প্রদায় হিদায়াত লাভ করবে। যখন তাকে জিজ্ঞাসা কলা হলো: কত দিন হবে কিংকর্তব্যবিমূঢ়তার মেয়াদকাল? তিনি বললেন: ছয় দিন অথবা ছয় মাস অথবা ছয় বছর”। [“আল-কাফি”: (১/৩৩৮)]
আবু আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন:
( ليس بين خروج القائم وقتل النفس الزكية إلا خمس عشرة ليلة ) ، يعني 140 للهجرة !
“পবিত্র নফস হত্যা ও ‘মাহদী’র আগমনের ব্যবধান হবে মাত্র পনের দিন”। অর্থাৎ ১৪০ হিজরীতে তিনি আগমন করবেন!
মুহাম্মদ আস-সদর এ সংবাদ সম্পর্কে বলেন,
خبر موثوق قابل للإثبات التاريخي ـ بحسب منهج هذا الكتاب ـ فقد رواه المفيد في الإرشاد عن ثعلبة بن ميمون عن شعيب الحداد عن صالح بن ميتم الجمال، وكل هؤلاء الرجال موثقون أجلاء !
“এ সংবাদটি নির্ভর যোগ্য ও ঐতিহাসিকভাবে গ্রহণযোগ্য, (কিতাবের নীতি অনুসারে) এ সংবাদটি বর্ণনা করেছেন ‘মুফিদ’ তার ইরশাদ গ্রন্থে সালাবা ইবন মায়মুন থেকে, সে বর্ণনা করেছে শুআইব আল-হাদ্দাদ থেকে, সে বর্ণনা করেছে সালেহ থেকে। এরা সবাই মহা পণ্ডিত ও নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিবর্গ! [“কিতাবু তারিখি মা বা’দাজ জুহুর”: (পৃ. ১৮৫)]
পূর্বের বর্ণনা মতে নির্দিষ্ট তারিখে যখন তিনি বের হন নি! তখন মাহদী সম্পর্কে তার থেকেই দ্বিতীয় বর্ণনা আসল:
يا ثابت إن الله كان وقت هذا الأمر في السبعين، فلما أن قتل الحسين اشتد غضب الله على أهل الأرض فأخره إلى أربعين ومائة : فحدثناكم أنه سيخرج سنة 140 ، فأذعتم الحديث وكشفتم قناع الستر، فلم يجعل الله له بعد ذلك عندنا وقتا !!
“হে সাবেত, আল্লাহ তা‘আলা সত্তুরের মধ্যে এ বিষয়টি নির্ধারণ করে ছিলেন, যখন হুসাইনকে হত্যা করা হলো, যমীনবাসীদের ওপর আল্লাহর গোস্বা বেড়ে গেল, তিনি একশত চল্লিশ বছর পর্যন্ত বিলম্ব করলেন: আমরা তোমাদেরকে বলছি, তিনি ১৪০ হিজরীতে বের হবেন, কিন্তু তোমরা সংবাদটি প্রচার করে দিয়েছ ও পর্দা উন্মোচন করে ফেলেছ, তাই এরপর থেকে আল্লাহ আমাদের জন্য কোনো সময় নির্ধারণ করেন নি!! [“উসুলুল কাফি”: (১/৩৬৮); “আল-গায়বাহ” লিন নুমানি: (পৃ. ১৯৭); “আল-গায়বাহ” লিত তুসি”: (পৃ. ২৬৩); “বিহারুল আনওয়ার”: (৫২/১১৭)]
অতঃপর আবু জাফর সাদেক থেকে এক বর্ণনা আসে, যা পূর্বের সকল বর্ণনাকে মিথ্যা প্রমাণ করে, তিনি বলেছেন:
كذب الوقاتون إنا أهل البيت لا نوقّت .
“সময় নির্ধারণকারীরা মিথ্যুক, আমরা আহলে বাইত কোনো সময় নির্ধারণ করি না”। [“উসুলুল কাফি”: (১/৩৬৮); “আল-গায়বাহ” লিন নুমানি: (পৃ. ১৯৮)]
و( ما وقتنا فيما مضى، ولا نوقت فيما يُستقبل ).
“আমরা পূর্বে সময় নির্ধারণ করে নি, ভবিষ্যতেও সময় নির্ধারণ করব না”। [“আল-গায়বাহ” লিত তুসি”: (পৃ. ২৬২); “বিহারুল আনওয়ার”: (৫২/১০৩)]
৮৪. শী‘আরা আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি উর্ধ্ব শ্বাস ছেড়ে সাথীদের নিকট আগমন করেন, অতঃপর বলেন,
كيف أنتم وزمان قد أظلكم تـعطل فيه الحدود ويتخذ المال فيه دولا , ويعادى فيه أولياء اللّه , ويوالى فيه أعداء اللّه؟ قالوا : يا أمير المؤمنين فإن أدركنا ذلك الزمان فكيف نصنع؟ قال : كونوا كأصحاب عـيسى (ع): نشروا بالمناشير , وصلبوا على الخشب، موت في طاعة اللّه عز وجل خير من حياة في معصية اللّه .
“তোমাদের অবস্থা তখন কেমন হবে, যখন তোমাদের ওপর এমন এক সময় আসবে, যেখানে আল্লাহর বিধান পরিত্যাগ করা হবে, জাতীয় সম্পদকে ব্যক্তিগত সম্পদে পরিণত করা হবে, আল্লাহর ওলিদের সাথে শত্রুতা করা হবে এবং আল্লাহর শত্রুদের সাথে বন্ধুত্ব করা হবে? তারা বলল: হে আমিরুল মুমিনীন, আমরা যদি সে যুগ পাই, তাহলে কি করব? তিনি বললেন: “তোমরা ঈসার সাথীদের ন্যায় হয়ে যাবে, যাদেরকে করাত দিয়ে চিড়া হয়েছিল, গাছের উপর শুলিতে চড়ানো হয়েছিল, আল্লাহর আনুগত্যে মৃত্যু বরণ করা, তার অপরাধে বেঁচে থাকার চেয়ে উত্তম”। [“নাহজুজ সাআদাহ”: (২/৬৩৯)]
এর সাথে শী‘আদের ‘তাকইয়া’ নীতির কোনো মিল আছে?!
৮৫. আবু বকর কেন হিজরতের সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথীত্ব গ্রহণ করেছিলেন?!
যদি তিনি মুনাফিক হন, (যেমন শী‘আরা বলে) তাহলে কেন তিনি নিজ কাফির কাওমের সাথে গিয়ে একাত্বতা ঘোষণা করেন নি, অথচ তারাই ছিল ক্ষমতাবান, মক্কায় তারাই ছিল সম্মানিত?! যদি দুনিয়াব কোনো স্বার্থে তিনি নিফাকি করেন, তাহলে সে সময় রাসূলের সাথে থাকার মধ্যে কোনো স্বার্থ ছিল? অথচ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একা, নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত! এতদ সত্বেও কাফিররা তাকে হত্যার ব্যাপারে ছিল আদগ্রীব!
৮৬. আল্লাহ তা‘আলা কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় সাহাবীদের প্রশংসা করেছেন।
যেমন, তিনি বলেন,
﴿وَرَحۡمَتِي وَسِعَتۡ كُلَّ شَيۡءٖۚ فَسَأَكۡتُبُهَا لِلَّذِينَ يَتَّقُونَ وَيُؤۡتُونَ ٱلزَّكَوٰةَ وَٱلَّذِينَ هُم بَِٔايَٰتِنَا يُؤۡمِنُونَ ١٥٦ ٱلَّذِينَ يَتَّبِعُونَ ٱلرَّسُولَ ٱلنَّبِيَّ ٱلۡأُمِّيَّ ٱلَّذِي يَجِدُونَهُۥ مَكۡتُوبًا عِندَهُمۡ فِي ٱلتَّوۡرَىٰةِ وَٱلۡإِنجِيلِ يَأۡمُرُهُم بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَىٰهُمۡ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَيُحِلُّ لَهُمُ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡخَبَٰٓئِثَ وَيَضَعُ عَنۡهُمۡ إِصۡرَهُمۡ وَٱلۡأَغۡلَٰلَ ٱلَّتِي كَانَتۡ عَلَيۡهِمۡۚ فَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ بِهِۦ وَعَزَّرُوهُ وَنَصَرُوهُ وَٱتَّبَعُواْ ٱلنُّورَ ٱلَّذِيٓ أُنزِلَ مَعَهُۥٓ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ١٥٧﴾ [ الاعراف : ١٥٦، ١٥٧ ] .
“আর আমার রহমত সব বস্তুকে পরিব্যাপ্ত করেছে। সুতরাং আমি তা লিখে দেব তাদের জন্য যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং যাকাত প্রদান করে। আর যারা আমার আয়াতসমূহের প্রতি ঈমান আনে। যারা অনুসরণ করে রাসূলের, যে উম্মী নবী; যার গুণাবলী তারা নিজদের কাছে তাওরাত ও ইঞ্জিলে লিখিত পায়, যে তাদেরকে সৎ কাজের আদেশ দেয় ও বারণ করে অসৎ কাজ থেকে এবং তাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল করে আর অপবিত্র বস্তু হারাম করে। আর তাদের থেকে বোঝা ও শৃংখল (যা তাদের উপরে ছিল) অপসারণ করে। সুতরাং যারা তার প্রতি ঈমান আনে, তাকে সম্মান করে, তাকে সাহায্য করে এবং তার সাথে যে নূর নাযিল করা হয়েছে তা অনুসরণ করে তারাই সফলকাম”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৫৬-১৫৭]
অন্যত্র তিনি বলেন,
﴿ٱلَّذِينَ ٱسۡتَجَابُواْ لِلَّهِ وَٱلرَّسُولِ مِنۢ بَعۡدِ مَآ أَصَابَهُمُ ٱلۡقَرۡحُۚ لِلَّذِينَ أَحۡسَنُواْ مِنۡهُمۡ وَٱتَّقَوۡاْ أَجۡرٌ عَظِيمٌ ١٧٢ ٱلَّذِينَ قَالَ لَهُمُ ٱلنَّاسُ إِنَّ ٱلنَّاسَ قَدۡ جَمَعُواْ لَكُمۡ فَٱخۡشَوۡهُمۡ فَزَادَهُمۡ إِيمَٰنٗا وَقَالُواْ حَسۡبُنَا ٱللَّهُ وَنِعۡمَ ٱلۡوَكِيلُ ١٧٣﴾ [ ال عمران : ١٧٢، ١٧٣ ]
“যারা আল্লাহ ও রাসূলের ডাকে সাড়া দিয়েছে যখমপ্রাপ্ত হওয়ার পরও, তাদের মধ্য থেকে যারা সৎকর্ম করেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করেছে তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার। যাদেরকে মানুষেরা বলেছিল যে, ‘নিশ্চয় লোকেরা তোমাদের বিরুদ্ধে সমবেত হয়েছে। সুতরাং তাদেরকে ভয় কর’। কিন্তু তা তাদের ঈমান বাড়িয়ে দিয়েছিল এবং তারা বলেছিল, ‘আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনি কতই না উত্তম কর্মবিধায়ক”! [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৭২-১৭৩]
অন্যত্র তিনি বলেন,
﴿هُوَ ٱلَّذِيٓ أَيَّدَكَ بِنَصۡرِهِۦ وَبِٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٦٢ وَأَلَّفَ بَيۡنَ قُلُوبِهِمۡۚ لَوۡ أَنفَقۡتَ مَا فِي ٱلۡأَرۡضِ جَمِيعٗا مَّآ أَلَّفۡتَ بَيۡنَ قُلُوبِهِمۡ وَلَٰكِنَّ ٱللَّهَ أَلَّفَ بَيۡنَهُمۡۚ إِنَّهُۥ عَزِيزٌ حَكِيمٞ ٦٣﴾ [ الانفال : ٦٢، ٦٣ ]
“তিনিই তোমাকে শক্তিশালী করেছেন তাঁর সাহায্য ও মুমিনদের দ্বারা। আর তিনি তাদের অন্তরসমূহে প্রীতি স্থাপন করেছেন। যদি তুমি যমীনে যা আছে, তার সবকিছু ব্যয় করতে, তবুও তাদের অন্তরসমূহে প্রীতি স্থাপন করতে পারতে না। কিন্তু আল্লাহ তাদের মধ্যে প্রীতি স্থাপন করেছেন, নিশ্চয় তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাবান”। [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৬২-৬৩]
অন্যত্র তিনি বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ حَسۡبُكَ ٱللَّهُ وَمَنِ ٱتَّبَعَكَ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٦٤﴾ [ الانفال : ٦٤ ]
“হে নবী, তোমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট এবং যেসব মুমিন তোমার অনুসরণ করেছে তাদের জন্যও”। [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৬৪]
অন্যত্র তিনি বলেন,
﴿كُنتُمۡ خَيۡرَ أُمَّةٍ أُخۡرِجَتۡ لِلنَّاسِ تَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَتَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَتُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِۗ﴾ [ ال عمران : ١١٠ ]
“তোমরা হলে সর্বোত্তম উম্মত, যাদেরকে মানুষের জন্য বের করা হয়েছে। তোমরা ভালো কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে বারণ করবে, আর আল্লাহর প্রতি ঈমান পোষণ করবে”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১১০]
এ ছাড়াও আরো অনেক আয়াত বিদ্যমান।
শী‘আরা বিশ্বাস করে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে সাহাবায়ে কেরাম মুমিন ছিলেন, কিন্তু তারা ধারণা করে যে, মৃত্যুর পর তারা মুরতাদ হয়ে গেছেন! আশ্চর্য! কীভাবে একযুগে সকল সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর মুরতাদ হয়ে যায়? এবং কেন?
কেন তারা মুসিবত ও কষ্টের সময় তাকে সাহায্য করে, নিজের জান ও মাল তার জন্য উৎসর্গ করে, অতঃপর তার মৃত্যুর পর মুরতাদ হয়ে যায়, কোন কারণ ছাড়াই?!
যদি তোমরা বল: তাদের মুরতাদ হওয়ার কারণ আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে খলিফা নির্বাচিত করা, তাহলে তোমাদেরকে বলা হবে:
সাহাবায়ে কেরাম আবু বকরের বাই‘আতের ব্যাপারে কেন একমত হবেন, তারা আবু বকরকে কেন ভয় করবেন? আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু কি ক্ষমতার অধিকারী ও প্রতাপশালী ছিলেন, যার দ্বারা তিনি তাদেরকে বাই‘আতের জন্য বাধ্য করেছেন? অধিকন্তু আবু বকর কুরাইশ বংশের বনু তাইম থেকে, কুরাইশ বংশের মধ্যে এদের সংখ্যা ছিল খুবই কম, বস্তুতঃ কুরাইশের মধ্যে অধিক প্রভাবশালী ছিল বনু হাশেম, বনু আব্দুদ দার ও বনু মাখজুম।
যখন তিনি সাহাবায়ে কেরামকে বাই‘আতের জন্য বাধ্য করতে পারেন নি, তবুও কেন সাহাবায়ে কেরাম অন্য বংশের অন্য দেশের (মক্কার) এক ব্যক্তির জন্য সকলে মিলে নিজেদের চেষ্টা-জিহাদ, ঈমান, সাহায্য, প্রতিযোগিতা এবং দুনিয়া ও আখিরাতের সব কিছু উৎসর্গ করেন, তাকে সমর্থন দেন?!
৮৭. যদি সাহাবায়ে কেরাম মুরতাদ হয়ে থাকে, (যেমন তোমরা ধারণা কর) তাহলে তারা কীভাবে মুসাইলামার বাহিনী, তালিহা ইবন খুওয়াইলিদের বাহিনী ও আসওয়াদ আনাসির বাহিনী এবং সাজাহ বাহিনী প্রমুখদের সাথে যুদ্ধ করেন এবং তাদেরকে ইসলামের দিকে ফিরিয়ে আনেন?!
সাহাবায়ে কেরাম কেন মুরতাদদের সাহায্য করল না অথবা তাদেরকে কেন তাদের হালতে ছেড়ে দিল না, যেহেতু তারাও তাদের ন্যায় মুরতাদ ছিল, যেমন তোমাদের ধারণা?!
৮৮. দুনিয়ার নীতি ও দীনি নীতি উভয় প্রমাণ করে যে, নবীদের যুগে তাদের সাথীরাই সর্বোত্তম ব্যক্তি, যদি কোনো নবীর উম্মতকে তাদের শ্রেষ্ঠ লোকদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন, তাহলে তারা বলবে: নবীর সাথীগণ।
যদি তাওরাতে বিশ্বাসী ইয়াহূদীদের জিজ্ঞাসা করা হয়, তাদের ধর্মের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের সম্পর্কে, তারা বলবে মূসা আলাইহিস সালামের সাথীবৃন্দ।
যদি ইঞ্জীলে বিশ্বাসী খৃস্টানদের জিজ্ঞাসা করা হয়, তাদের ধর্মের উত্তম ব্যক্তিদের সম্পর্কে, তারা বলবে ঈসা আলাইহিস সালামের সাথীবৃন্দ, অনুরূপ সকল নবীদের উম্মত। কারণ, রাসূলদের যুগই ওহির যুগ, তারাই গভীরভাবে অহী বুঝেছেন, তারাই নবী ও রাসূলদের গভীরভাবে চিনেছেন।
তাহলে মুহাম্মাদ আলাইহিস সালামের ক্ষেত্রে তার বিপরীত হলো কেন, যাকে আল্লাহ শাশ্বত রিসালাত দান করেছেন, উদার ও পরিপূর্ণ শরী‘আত দান করেছেন, পূর্বের সকল নবী ও রাসূলগণ যার আভির্ভাবের সংবাদ দিয়েছেন, পূর্বের সকল আসমানী কিতাব যার ব্যাপারে সুসংবাদ প্রদান করেছে, (তোমাদের ধারণা মতে তার সাথীরাই কাফির) যারা মুহাম্মদের ওপর ঈমান এনেছে, তাকে সাহায্য করেছে, তাকে ইজ্জত ও সম্মান করেছে?! তাহলে তোমাদের নিকট রিসালাতে মুহাম্মদিয়ার অর্থ কি, আল্লাহর এ দীনের ভাবগাম্বীর্যকতা কোথায় রাখলে তোমরা, যদি এ দীন থেকে মুহাম্মাদের বিশিষ্ট সাহাবীরাই মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার পরবর্তীতে তারা কাফির হয়ে যায়?! তাহলে তার পরে যারা আসবে, তারা তো আরো আগেই কাফির, মুরতাদ ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারাই যদি কাফির হয়, যারা রাসূলের সাহায্যের জন্য পরিবার ও দেশ ত্যাগ করেছে, শুধু তার জন্যই পিতা ও ভাইদের সাথে যুদ্ধ করেছে, তার মৃত্যুর পর যারা বিভিন্ন দেশে জ্ঞান, কুরআন ও ইসলামের আদর্শ কখনো তলোয়ার আবার কখনো মুখের মাধ্যমে প্রচার করেছে!
৮৯. আমরা দেখি যে, কঠিন মুহূর্তেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘তাকইয়া’র আশ্রয় গ্রহণ করেন নি, পক্ষান্তরে শী‘আরা দাবি করে যে, এ ‘তাকইয়া’-ই হচ্ছে তাদের দীনের দশভাগের নয়ভাগ! আর তাদের ইমামরা এ ‘তাকইয়া’ অধিকহারে ব্যাবহার করেছেন। তারা কেন তাদের দাদা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ন্যায় হলো না?!
৯০. আমরা দেখি আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু তার প্রতিপক্ষকে কাফির বলেন নি, এমনকি খারেজিদেরকেও তিনি কাফির বলেন নি, যারা তার সাথে যুদ্ধ করেছে, তাকে কষ্ট দিয়েছে ও তাকে কাফির বলেছে। শী‘আদের কী হলো, তারা কেন তার অনুসরণ করে না?! অথচ তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উত্তম সাহাবাদের কাফির বলে, বরং তার স্ত্রীদের, যারা মুমিনদের মাতা?!
৯১. উম্মতের সর্বসম্মত মত বা ইজমা এককভাবে শী‘আদের নিকট দলীল বিবেচনা করা হয় না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে মাসুম তথা নিষ্পাপ সত্বার উপস্থিতি পাওয়া যায়, এটা তাদের নীতি। [দেখুন: “তাহজিবুল উসুল লি ইবনিল মুতাহহার আল-হুলি”: (পৃ. ৭০); “আল-মারজায়্যিাহতু আদদ্বীনিয়্যাতুল উলইয়া লি হুসাইন মাতুক”: (পৃ. ১৬)]
আমাদের বক্তব্য: এটা একটা বেহুদা নীতি, যদি নিষ্পাপ সত্বাই থাকে, তাহলে ইজমা তথা উম্মতের সবার ঐক্যমতের প্রয়োজন কিসের।
৯২. আমরা দেখি যে, শী‘আরা ‘জাইদিয়া’ সম্প্রদায়কে কাফির বলে, অথচ ‘জাইদিয়ারা’ও আহলে বাইতকে মহব্বত করে ও তাদের নেতৃত্ব স্বীকার করে। অতএব, আমাদের নিকট স্পষ্ট হলো যে, শী‘আদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সাহাবা ও এ উম্মতের উত্তম ব্যক্তিদের সাথে বিদ্বেষ পোষণ করা, আহলে বাইতকে মহব্বত করা নয়, যেমন তারা দাবি করে। [আরো দেখুন: “তাকফিরুশ শী‘আহ লি উমুমিল মুসলিমিন” লি শাইখ আলী আল-উমারি। তিনি তাদের অনেকগুলো স্পষ্ট দলিল উল্লেখ করে প্রমাণ করেছেন যে, শী‘আরা তাদের ব্যতীত সকলকে কাফির বলে, শী‘আ জাইদিয়াহ ফেরকাকেও তারা কাফের বলে।] উল্লেখ্য জাইদিয়া শী‘আরা বারো ইমামী শী‘আদের ন্যায় সাহাবীদের কাফির বলে না।
৯৩. শী‘আরা ধারণা করে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর আলীই খিলাফতের হকদার। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«أنت مني بمنزلة هارون من موسى» .
“তুমি আমার নিকট এমনি, যেমন মূসার নিকট ছিল হারুন”। [সহীহ বুখারী ও মুসলিম।]
অথচ আমরা দেখি যে, হারুন আলাইহিস সালাম মূসা আলাইহিস সালামের স্থলাভিষিক্ত হন নি! বরং তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছে ইউশা ইবন নূন!
৯৪. শী‘আরা তাদের অনুসারীদের পাপাচার ও ধ্বংসাত্মক কাজেও উদ্বুদ্ধ করে। এর কারণ হচ্ছে যে, তাদের নিকট “আলীর মহব্বত এমন নেকি, যার সাথে কোনো পাপ ক্ষতিকর নয়”। আল-কুরআন একাধিক জায়গায় তাদের এ দাবি মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। আল-কুরআন তাদেরকে নিষিদ্ধ বস্তু ও ইসলামের বিরোধীতা থেকে বারণ করেছে।
আল-কুরআনে বলা হয়েছে,
﴿لَّيۡسَ بِأَمَانِيِّكُمۡ وَلَآ أَمَانِيِّ أَهۡلِ ٱلۡكِتَٰبِۗ مَن يَعۡمَلۡ سُوٓءٗا يُجۡزَ بِهِۦ وَلَا يَجِدۡ لَهُۥ مِن دُونِ ٱللَّهِ وَلِيّٗا وَلَا نَصِيرٗا ١٢٣﴾ [ النساء : ١٢٣ ]
“না তোমাদের আশায় এবং না কিতাবীদের আশায় (কাজ হবে)। যে মন্দকাজ করবে তাকে তার প্রতিফল দেওয়া হবে। আর সে তার জন্য আল্লাহ ছাড়া কোনো অভিভাবক ও সাহায্যকারী পাবে না”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১২৩]
৯৫. শী‘আরা আল-বাদা ( البداء )، আকীদায় বিশ্বাসী [‘বাদা’ আকীদা হচ্ছে এটা বিশ্বাস করা যে, কোনকিছু সম্পর্কে আল্লাহ্ তা‘আলা প্রথমে জানতেন না, পরে তাঁর কাছে সেটা প্রকাশ পেয়েছে। এ আকীদা মূলতঃ ইয়াহূদীদের আকীদা। [সম্পাদক]], অতঃপর তারা দাবি করে যে, তাদের ইমামগণ গায়েব জানত! তাহলে ইমামরা কি আল্লাহর চেয়ে বড়?! তারা এ আকীদার ব্যাপারে যত ব্যাখ্যাই প্রদান করুক, (যার মূল হচ্ছে আল্লাহর সাথে মূর্খতা সম্পৃক্ত করা) কিন্তু তাদের একাধিক খবর তাদের ব্যাখ্যার বিপরীত। [“উসুলু মাজহাবিশ শী‘আহ আল-ইমামিয়াহ” লিশ শাইখ আল-কাফারি: (২/১১৩১-১১৫১) (২/১১৩১-১১৫১).]
৯৬. ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, বিভিন্ন ঘটনা ও যুদ্ধের সময় শী‘আরা ছিল মুসলিমদের শত্রু ইয়াহূদী, নাসারা ও মুশরিকদের সাহায্যকারী, তার মধ্যে অন্যমত হচ্ছে: মোগলদের হাতে বাগদাদের পতন এবং নাসারাদের হাতে বাইতুল মাকদিসের পতন...। একজন সত্যিকার মুসলিম কীভাবে এটা করতে পারে! কীভাবে কুরআনের বিরোধীতা করতে পারে, যেখানে ইয়াহূদী ও নাসারাদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে নিষেধ করা হয়েছে?! আলী অথবা তার কোনো সন্তান অথবা তার কোনো নাতি কি শী‘আদের ন্যায় কুকর্ম করেছে?!
৯৭. আমরা দেখি অনেক শী‘আরাই হাসান ইবন আলীর ব্যাপারে বিরূপ মন্তব্য করে, তার ও সন্তানের ব্যাপারে কুৎসা রটনা করে, অথচ তিনি তাদের একজন ইমাম, আহলে বাইতের সদস্য। [দেখুন: “আয়ানুশ শী‘আহ”: (১/২৬); “সালিম ইবন কায়েস”: (পৃ. ২৮৮); “বিহারুল আনওয়ার”: (২৭/২১২) (২৭/২১২).]
৯৮. শী‘আদের মাযহাবে যারা চিন্তা করবে, তারা জানতে পারবে সামান্য সময়ের ব্যবধানে তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিভক্তি, বিচ্ছিন্নতা ও বিভিন্নতা এবং একাধিক মতাদর্শ ও পরস্পর বিরোধ, একে অপরকে কাফির বলা ইত্যাদি, তার একটি স্পষ্ট উদাহরণ হচ্ছে: শী‘আদের এক পণ্ডিত আহমদ আহসায়ি একটি দলের গোড়াপত্তন করেন, পরবর্তীতে যে দলটি নাম ধারণ করে ‘শাইখিয়্যাহ’। আবার তার শিষ্য কাজেম রশতি অপর দলের গোড়া পত্তন করেন, যার নাম হয় কাশফিয়্যাহ। আবার তার শিষ্য মুহাম্মাদ কারীম খান অপর দলের গোড়াপত্তন করেন, যার নাম হয় কারিমখানিয়্যাহ। আবার তার আরেক শিষ্য কুররাতুল আইন আরেকটি দলের গোড়াপত্তন করেন, যার নাম হয় কুরতিয়্যাহ। আবার মির্জা আলী শিরাজি অপর দলের গোড়াপত্তন করেন, যার নাম হয় আল-বাবিয়্যাহ। আবার মির্জা হুসাইন আলী গোড়াপত্তন করেন অপর দলের, যার নাম বাহায়ি ফিরকা।
দেখুন শী‘আদের থেকে একই যুগে কীভাবে এতো দল ও উপদলের সৃষ্টি হলো এবং সামান্য সময়ের ব্যবধানে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿وَلَا تَتَّبِعُواْ ٱلسُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمۡ عَن سَبِيلِهِ﴾ [ الانعام : ١٥٣ ]
“এবং তোমরা অন্যান্য পথ অনুসরণ করো না, তাহলে তো তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে”। [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১৫৩]
আরো দেখুন সূরা আন-আম এর: (১৫৪-১৬৩) আয়াতগুলো।
৯৯. আমরা দেখি যে, ফাসাদ সৃষ্টিকারী বিদ্রোহীরা যখন উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুকে গৃহবন্দী করে, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু তার পক্ষে লোকদের প্রতিহত করেন এবং তাদেরকে তাড়িয়ে দেন। আর তাকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য প্রেরণ করেন নিজের দুই সন্তান হাসান ও হুসাইন এবং ভাতিজা আব্দুল্লাহ ইবন জাফরকে। [দেখুন: “শারহু নাহজিল বালাগাহ” লি ইবন আবিল হাদিদ: (খ.১০,পৃ. ৫৮১), ইরানে প্রকাশিত; “তারিখুল মাসউদি শিয়ি”: (খ.২পৃ. ৩৪৪), বইরুত।] কিন্তু উসমান মানুষদের বলে দিয়েছেন, তারা যেন হাতিয়ার রেখে ঘরে বসে থাকে, অর্থাৎ কেউ যেন তার (উসমানের) পক্ষ নিয়ে বিদ্রোহীদের হত্যা না করে। এর দ্বারাই প্রমাণিত হয় যে, শী‘আদের ধারণা আলী ও উসমানের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ ছিল, তা সবই মিথ্যা ও অসার।
১০০. শী‘আ ও সুন্নিদের ঐক্যমতে প্রমাণিত যে, উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে অধিকাংশ পরামর্শে শরীক করতেন, তার পরামর্শ নিতেন। [দেখুন: “নাহজুল বালাগাহ: (পৃ. ৩২৫, ৩৪০)] যদি উমার যালিম হত, (যেমন শী‘আরা ধারণা করে) তাহলে আলীকে কখনোই পরামর্শে শরীক করতেন না, কারণ যালিমরা সত্যবাদীদের পরামর্শ গ্রহণ করে না!
১০১. সবার নিকট ঐক্যমতে প্রমাণিত যে, সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহু আনহু উমারের যমনায় মাদায়েনের আমির ছিলেন। [“সিয়ারু আলামিন নুবালা” লিজ জাহাবি: (১/৫৪৭)] এবং আম্মার ইবন ইয়াসির ছিলেন কুফার আমির। [“সিয়ারু আলামিন নুবালা” লিজ জাহাবি: (১/৪২২)] শী‘আদের দাবি অনুযায়ী এরা উভয়েই ছিল আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর সাহায্যকারী ও তার দলভুক্ত। তাদের বিবেচনায় যদি উমার মুরতাদ অথবা যালিম ও আলীর ওপর যুলুম করত, তাহলে তারা কখনোই উমারের এ দায়িত্ব গ্রহণ করতেন না। তারা কীভাবে যালিম ও মুরতাদকে সাহায্য করবে?! অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَا تَرۡكَنُوٓاْ إِلَى ٱلَّذِينَ ظَلَمُواْ فَتَمَسَّكُمُ ٱلنَّارُ وَمَا لَكُم مِّن دُونِ ٱللَّهِ مِنۡ أَوۡلِيَآءَ ثُمَّ لَا تُنصَرُونَ ١١٣﴾ [ هود : ١١٣ ]
“আর যারা যুলুম করেছে তোমরা তাদের প্রতি ঝুঁকে পড়ো না, অন্যথায় আগুন তোমাদেরকেও স্পর্শ করবে”। [সূরা হূদ, আয়াত: ১১৩]
১০২. শী‘আরা বিশ্বাস করে, তাদের ইমামগণ নিষ্পাপ, তাদের মাহদী এখনো বিদ্যমান, তাদের কতক আলিম তার সাক্ষাত করেন, বলা হয় এদের সংখ্যা ত্রিশজন পুরুষ। অতএব, এতদ সত্বেও তাদের মাযহাবে কীভাবে মতভেদ ও মতবিরোধ সৃষ্টি হয়, অন্যান্য দল ও গ্রুপে যার কোনো উদাহরণ নেই। প্রায় এমন যে, তাদের প্রত্যেক আলিম ও পণ্ডিতের আলাদা আলাদা মাযহাব?! এরপরও তারা দাবি করে, একজন ইমাম বিদ্যমান, যার ওপর ঈমান আনয়ন করা মানুষের ওপর জরুরি, আর তিনি হচ্ছে অপেক্ষার মাহদী। অতএব, আমাদের প্রশ্ন তাদের ইমাম ও নেতা বিদ্যমান থাকতে এবং তার সাথে তাদের যোগাযোগ থাকা সত্বেও কেন তারা এতো দলে ও উপদলে বিভক্ত, যার কোনো নজির অন্যান্য ধর্মে নেই?! অতঃপর তোমরাই বল যে, মাজলিসী একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন: অদৃশ্য ইমাম দেখা যায় না, যে অদৃশ্য ইমাম দেখার দাবি করবে, সে মিথ্যাবাদী, তা সত্বেও আমরা তোমাদের কিতাবে দেখি, তোমাদের আলিমরা ইমাম মাহদীকে বহুবার দেখেছে।
১০৩. শী‘আদের প্রতি প্রশ্ন: তোমরা বল যে, কোনো যমানা ইমাম বিহীন থাকা দুরস্ত নেই, আর ‘তাকইয়া’ তোমাদের ধর্মের দশভাগের নয়ভাগ, যে ‘তাকইয়া’ ইমামের জন্য বৈধ, বরং মুস্তাহাব ও ফজিলতের বিষয়, কারণ তিনিই সবচেয়ে বড় মুত্তাকি। অতএব, এ ইমাম মানুষের জন্য কীভাবে দলীল হবেন, তিনি মানুষের কী উপকার করবেন?!
১০৪. শী‘আদের ধারণা যে, ঈমান সহীহ হওয়ার জন্য ইমামদের জানা জরুরী, তাহলে বারো ইমাম পূর্ণ হওয়ার পূর্বে যারা মারা গেছে, তাদের ব্যাপারে তোমাদের বক্তব্য কি?! আর মৃত ব্যক্তি যদি ইমাম হয়, তাহলে তোমাদের উত্তর কী? অর্থাৎ কোনো ইমাম যদি অপর ইমামকে না জেনে মারা যায়, তার অবস্থা কী হবে?!
তোমাদের কতক ইমাম রয়েছে, যিনি জানতেন না, তার পরে কে ইমাম হবে! অতএব, এটাকে তোমরা কীভাবে ইমানের শর্ত বল?!
১০৫. নাহজুল বালাগার লেখক বর্ণনা করেন, যখন আলীর নিকট পৌঁছল যে, আনসার সাহাবীগণ দাবি করছে তাদের মধ্যে থেকে ইমাম হবে, তিনি বলেন, “তোমরা কেন তাদের ওপর দলীল পেশ কর নি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওসিয়ত করেছেন, তাদের (আনসারদের) নেককারদের প্রতি সদয় আচরণ করবে এবং তাদের অপরাধীদের ক্ষমা করবে? তারা বলল: এখানে তাদের বিরুদ্ধে দলীল কোথায়? তিনি বললেন: যদি তাদের মধ্যে ইমামতি থাকত, তাহলে তাদের ব্যাপারে ওসিয়ত করতেন না”। [নাহজুল বালাগাহ: পৃ. ৯৭)]
অতএব, শী‘আদেরকে বলব: “অনুরূপ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহলে বাইতের ব্যাপারে ওসিয়ত করেছেন, যেমন তিনি বলেছেন:
«أذكركم الله في أهل بيتي»
“আমার পরিবারের ব্যাপারে তোমরা আল্লাহকে স্মরণ করবে”। যদি ইমামতি তাদের হক ও তাদের সাথে খাস হত, তাহলে তাদের ব্যাপারে অন্যদের ওসিয়ত করতেন না?! বরং তাদেরকে ওসিয়ত করতেন অন্যদের সাথে সদাচারণ করার জন্য।
১০৬. যদি তোমাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, একজন নেককার মুত্তাকি ও মুমিন ব্যক্তি কতক মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করে, যাদের কেউ মুমিন ও কেউ মুনাফিক, তবে তার ওপর আল্লাহর দয়া যে, তিনি কথার দ্বারাই মুনাফিকদের চিনতে পারেন। এতদ সত্বেও এ ব্যক্তি নেককার লোকদের ত্যাগ করে মুনাফিকদের গ্রহণ করে, তাদের হাতে নেতৃত্ব দেয় এবং নিজের জীবদ্দশায় মানুষেরে ওপর তাদেরকে আমির নিযুক্ত করে, বরং তাদেরকে নিকটে আনে, তাদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক কায়েম করে, অতঃপর তাদের ওপর সন্তুষ্টি অবস্থায় মারা যায়, এ ব্যক্তির ব্যাপারে আপনি কী বলবেন?!
এ নেককার ব্যক্তিই তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, শী‘আরা তার ব্যাপারে এমন ধারণাই পোষণ করে!
১০৭. শী‘আদের আলিম হুর আল-আমেলী আবু জাফর থেকে নিম্নের আয়াতের ব্যাখ্যায় বর্ণনা করেন:
﴿وَلَا تُمۡسِكُواْ بِعِصَمِ ٱلۡكَوَافِرِ﴾ [ الممتحنة : ١٠ ]
“আর তোমরা কাফির নারীদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক বজায় রেখ না”। [সূরা আল-মুমতাহিনাহ, আয়াত: ১০]
তিনি বলেন, যার নিকট কাফির স্ত্রী রয়েছে, অথচ সে মুসলিম, তার উচিৎ স্ত্রীর নিকট ইসলাম পেশ করা, যদি সে ইসলাম কবুল করে, তাহলে সে তার স্ত্রী, অন্যথায় তার থেকে সে বিচ্ছিন্ন ও আলাদা। আল্লাহ তাকে রাখতে নিষেধ করেছেন”। [“ওয়াসালেলুশ শী‘আহ”: (২০/৫৪২)]
অতএব, উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা যদি কাফির ও মুরতাদ হয়, যেমন শী‘আরা তার ব্যাপারে বলে, (আল্লাহর নিকট পানাহ চাই) তাহলে আল্লাহর কুরআন অনুযায়ী তাকে তালাক দেওয়া ওয়াজিব ছিল, তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিফাক ও মুরতাদ হওয়া সম্পর্কে জানতে পারেনি, কিন্তু শী‘আরা জেনেছে!
১০৮. শী‘আদের একটি দল খাত্তাবি গ্রুপ বলে, জাফর সাদেকের পর ইমাম হচ্ছে তার ছেলে ইসমাইল, শী‘আদের আলিম তার প্রতিবাদ করে বলেন, “আবু আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালামের পূর্বেই ইসমাইল মারা গেছে, আর মৃতরা জীবিতদের খলীফা হতে পারে না...” [“কামালুদ দীন ও তামামুম নি‘মাহ”: (পৃ. ১০৫)]
অতএব, শী‘আদের প্রতি প্রশ্ন: তোমরা আলীর ইমামতির দলীল হিসেবে পেশ কর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিম্নের বাণী:
«أنت مني بمنـزلة هارون من موسى»
“তুমি আমার নিকট সেরূপ, যেরূপ ছিল হারুন মূসার নিকট”। আর আমরা জানি যে, হারুন আলাইহিস সালাম মূসা আলাইহিস সালামের পূর্বে মারা গেছেন। তোমাদের স্বীকৃতি মোতাবেকই মৃতরা জীবিত ব্যক্তিদের খলিফা হতে পারে না!
১০৯. শী‘আরা তাদের বারো ইমামের দলীল হিসেবে নিম্নের হাদীস পেশ করে:
«لا يزال الأمر عزيزاً إلى اثني عشر خليفة كلهم من قريش» وفي رواية «يكون اثنا عشر أميراً» وفي رواية «لا يزال أمر الناس ماضياً ما وليهم اثنا عشر رجلا» .
“বারো খলিফা পর্যন্ত এ দীন সম্মানিতই থাকবে, যাদের প্রত্যেকেই হবে কুরাইশ বংশের। অন্য বর্ণনায় আছে: “বারো জন আমির হবে”। অন্য বর্ণনায় আছে: “বারোজন ইমাম পর্যন্ত মানুষের কর্মকাণ্ড যথাযথ চলবে”। [সহীহ বুখারী ও মুসলিম।]
আমরা বলব: হাদীস সহীহ সন্দেহ নেই, এ বারোজন মানুষের খলিফা ও আমির হবে, তবে আমরা সবাই জানি যে, শী‘আদের ইমামদের মধ্যে আলী ও হাসান ব্যতীত কেউ খলিফা হন নি। অতএব, হাদীসের অর্থ এক প্রান্তে আর শী‘আরা হচ্ছে অন্য প্রান্তে! আর এসব বর্ণনায় বারো খলিফার কারো নাম উল্লেখ করা হয় নি...!
১১০. শী‘আরা দাবি করে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর অল্প কয়েক জন ব্যতীত সকলে মুরতাদ হয়ে গেছে। তাদেরকে বলব: মানুষ মুরতাদ হয় হয়তো সন্দেহের কারণে অথবা প্রবৃত্তি ও নফসের কারণে।
আর সর্বজনবিদীত যে, ইসলামের শুরুতে সন্দেহ থাকার যথেষ্ট কারণ ছিল, কিন্তু ইসলামের দুর্বল অবস্থায় যার ঈমান পাহাড়ের ন্যায় মজবুত ও কঠিন ছিল, তাদের ঈমান ইসলামের প্রকাশ ও প্রচারের পর কীভাবে দুর্বল হলো?!
আর নফস ও প্রবৃত্তির ব্যাপার: আল্লাহর মহব্বতে যারা নিজেদের দেশ ও সম্পদ ত্যাগ করেছে, ত্যাগ করেছে নিজেদের সম্মান ও ইজ্জত, একেবারেই স্বেচ্ছায়, তাদের ব্যাপারে কীভাবে ধারণা করা হয় যে, তারা প্রবৃত্তি ও নফসের জন্য মুরতাদ হয়ে ইসলাম ত্যাগ করেছে?! উল্লেখ্য সাহাবাদের মুরতাদ জ্ঞান করা শী‘আদের নিকট ঈমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ রুকন, অর্থাৎ ইমামিয়্যাহদের নিকট।
১১১. শী‘আরা সাহাবাদের আমানতদারী বিশ্বাস করে না, কিন্তু আমরা তাদের কিতাবে কতক বর্ণনা দেখি, যা নিঃসন্দেহে সাহাবাদের আমানতদারীর প্রমাণ করে! যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত, তিনি বিদায় হজে এ বলে ভাষণ দিয়েছেন:
«نضّر الله عبداً سمع مقالتي فوعاها، ثم بلغها إلى من لم يسمعها ..»
“আল্লাহ তা‘আলা সে বান্দাকে তরতাজা রাখুন, যে আমার কথা শোনে সংরক্ষণ করেছে, অতঃপর যে শোনেনি তার নিকট পৌঁছে দিয়েছে...” [“আল-খেসাল: (পৃ. ১৪৯-১৫০), হাদীস নং ১৮২)] যদি সাহাবায়ে কেরাম আমানতদার না হয়, তাহলে কীভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে হাদীস পৌঁছানোর দায়িত্ব প্রদান করেন, যারা শোনে নি তাদের নিকট?!
১১২. কোনো শী‘আকে বলা হয়েছিল: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি আমাদেরকে নেককার স্ত্রী ও উত্তম লোকদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক কায়েম করার নির্দেশ প্রদান করেন নি?
সে বলল: অবশ্যই, কোনো সন্দেহ নেই।
তাকে বলা হলো: তুমি কি যেনার সন্তানের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক কায়েম পছন্দ কর?!
সে বলল: আল্লাহর নিকট পানাহ চাই!
তাকে বলা হলো: তোমরা (মিথ্যা) দাবি কর যে, উমার ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিল যিনাকারীনীর সন্তান, যার নাম ছিল সাহহাক! [“আল-কাশকুল লিল বাহরানি”: (৩/২১২); “লাকাদ শাইয়্যাআনিল হুসাইন”: (পৃ. ১৭৭)]
তোমাদের আলিম নিআমাতুল্লাহ আল-জাযায়েরি খুব নির্লজ্জভাবে দাবি করে যে, উমার পুরুষের পানি গ্রহণ করা ব্যতীত ক্ষান্ত হতো না, [“আল-আন ওয়ারুন নুমানিয়াহ”: (১/৬৩)] (আল্লাহর নিকট পানাহ চাই)।
তোমরা আরো দাবি কর যে, উমারের মেয়ে হাফসাও ছিল তাদের পিতার ন্যায় মুনাফিক ও বদ, বরং কাফির!
তোমরা কি মনে কর রাসূলুল্লাহ যেনার সন্তানের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক কায়েম করেছেন?!
অথবা তিনি নিজের জন্য খারাপ ও মুনাফিক নারী পছন্দ করেছেন?!
আল্লাহর শপথ, তোমরা আল্লাহ ও তার সাহাবাদেরে ওপর মিথ্যা অপবাদ আরোপ কর, তোমরা নিজেদের জন্য যা পছন্দ কর না, তাদের ওপর তাই চাপিয়ে দাও।
১১৩. যদি সাহাবাদের মধ্যেই মুনাফিক ও মুরতাদ অধিক হারে থাকে, তাহলে কীভাবে ইসলাম প্রসার ও প্রচার লাভ করল?! কীভাবে পারস্য ও রুম ইসলামের অধীনে আসল এবং কীভাবে বায়তুল মাকদিস স্বাধীন হলো?!
১১৪. শী‘আদের আলিম ‘মুহাম্মাদ কাশেফ আলুল গেতা’ আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন:
«وحين رأى أن الخليفتين قبله ـ أي أبا بكر وعمر ـ بذلا أقصى الجهد في نشر كلمة التوحيد، وتجهيز الجيوش، وتوسيع الفتوح، ولم يستأثرا ولم يستبدا، بايع وسالم» .
“যখন তিনি দেখলেন যে, তার পূর্বের দুই খলিফা (আবু বকর ও উমার) তাওহিদের কালিমা প্রচার করা, মুসলিম মুজাহিদ তৈরি করা ও দেশে দেশে ইসলামকে বিজয় করার জন্য তাদের সর্বাত্মক চেষ্টা ব্যয় করেছেন, কোনো বিষয়ে তারা নিজেদেরকে প্রধান্য দেন নি, কাউকে দাসে পরিণত করেন নি, তাই আলী তাদের হাতে বাই‘আত করেন ও তাদেরকে মেনে নেন। [“আসলুশ শী‘আহ ও উসুলুহা”: (পৃ. ৪৯)]
অতএব, বুঝা গেল: তারা তাওহীদের কালেমা প্রচার করেছেন, আল্লাহর রাস্তায় সৈন্যবাহিনী তৈরি করেছেন এবং তারা উভয়ে বহু দেশ জয় করেছেন, (এটা শী‘আদের বড় এক আলিমের স্বীকৃতি)। তাহলে কেন তাদেরকে অপবাদ দেওয়া হয় যে, তারা ছিল কাফির, মুনাফিক ও মুরতাদদের সরদার?! এটা কি বৈপরিত্ব নয়?!
১১৫. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর সাহাবায়ে কেরাম মুরতাদ হয়ে গেছেন, শী‘আরা তাদের এ দাবির স্বপক্ষে নিম্নের হাদীস পেশ করে:
«يرد علي رجال أعرفهم ويعرفونني، فيذادون عن الحوض، فأقول : أصحابي، أصحابي ! ، فيقال : إنك لا تدري ما أحدثوا بعدك» .
“আমার নিকট এমন অনেক মানুষ আগমন করবে, আমি যাদেরকে চিনব এবং যারা আমাকে চিনবে, অতঃপর তাদেরকে হাউস থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে, আমি বলব: এরা তো আমার সাথী, এরা তো আমার সাথী! আমাকে বলা হবে: তুমি জান না এরা তোমার পরে কি সৃষ্টি করেছে”! [বুখারি।]
শী‘আদের প্রতি আমাদের পশ্ন: এ হাদীস ব্যাপক, এখানে কারো নাম উল্লেখ করা হয় নি, এ থেকে আম্মার ইবন ইয়াসার, মিকদাদ ইবন আসওয়াদ, আবু জর, সালমান ফারসি কাউকেই বাদ দেওয়া হয় নি, যারা তোমাদের দৃষ্টিতে মুরতাদ নয়! বরং আলী ইবন আবু তালিবকেও বাদ দেওয়া হয় নি! অতএব, তোমরা কী হিসেবে এ হাদীসকে কারো সাথে খাস কর, আর কাউকে এর থেকে বাদ রাখ?! এও বলা সম্ভব যে, যাদের অন্তরে সাহাবাদের ব্যাপারে সামান্য বিদ্বেষ রয়েছে, তারাই এর অন্তর্ভুক্ত! এ হাদীস তাদের ব্যাপারেই সংবাদ দিচ্ছে! তাহলে এ হাদীস দ্বারা তোমাদের মুখোশই খসে পড়ে!
১১৬. আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর বড় এক শিষ্য মালেক ইবন আসতার বলেন, যাকে শী‘আরাও সম্মান করে:
«أيها الناس، إن الله تبارك وتعالى بعث فيكم رسوله محمداً صلى الله عليه وسلم بشيراً ونذيراً، وأنزل عليه الكتاب فيه الحلال والحرام والفرائض والسنن، ثم قبضه إليه وقد أدى ما كان عليه، ثم استخلف على الناس أبا بكر فسار بسيرته واستن بسنته، واستخلف أبو بكر عمر فاستن بمثل تلك السنّة»
“হে লোক সকল, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের মধ্যে তার রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারী হিসেবে প্রেরণ করেছেন, এবং তার ওপর কিতাব নাযিল করেছেন, যাতে রয়েছে হালাল-হারাম, ফারায়েয ও সুনান, অতঃপর আল্লাহ তাকে উঠিয়ে নিয়েছেন, যখন তিনি তার দায়িত্ব আদায় করেছেন, অতঃপর আবু বকর মানুষের ওপর খলিফা নিযুক্ত হন, তিনিও তার অনুসরণ করেন ও তার সুন্নাত মোতাবেক জীবন যাপন করেন, অতঃপর আবু বকর উমারকে খলিফা নিযুক্ত করেন, তিনিও তার ন্যায় পরিচালনা করেন”। [“মালেক ইব্নুল আশতার-খুতবাতুহু ও আরাউহু: (পৃ. ৮৯), “আল-ফুতুহ” লি ইবন আসম: (১/৩৯৬)]
তিনি আবু বকর ও উমারের প্রশংসা করছেন, যে প্রশংসার তারা উপযুক্ত, এতদ সত্বেও শী‘আরা এসব প্রশংসা ভুলে যায়, তাদের মজলিসে ও হুসাইনিয়াতে এর আলোচনা করে না, বরং সেখানে তারা তাদের বদনাম ও কুৎসা রটনা করে! আল্লাহ তাদের হিদায়াত দান করুন। কী জন্য তোমরা এমন কর?!
১১৭. ইবন হাজম রহ. শী‘আদের প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন,
«بايع أبا بكر بعد ستة شهور تأخر فيها عن بيعته ( وهذا ) لا يخلو ضرره من أحد وجهين : إما أن يكون مصيباً في تأخره، فقد أخطأ إذ بايع . أو يكون مصيباً في بيعته، فقد أخطأ إذ تأخر عنها» !
“আলি আবু বকরের হাতে বাই‘য়াত করেছেন ছয় মাস পরে, তিনি তার বাই‘য়াত থেকে ছয় মাস পর্যন্ত বিরত থেকেছেন, এখানে দু’টি খারাপির একটি অবশ্যই নিশ্চিত: হয়তো তিনি বিলম্ব করে ঠিক করেছেন, তাহলে তিনি বাই‘য়াত করে ভুল করেছেন অথবা বাই‘য়াত করে ঠিক করেছেন, তাহলে বিলম্ব করে ভুল করেছেন! [“আল-ফেসাল ফিল মিলাল ওয়াল আহওয়াল ওয়াননিহাল”: (৪/২৩৫)]
১১৮. যদি শী‘আদের বলা হয়: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু কেন খিলাফতের ব্যাপারে নিশ্চুপ ছিলেন, অথচ তোমাদের দাবি মোতাবেক তিনিই খিলাফতের ওসি ও আদিষ্ট। তারা বলে: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছিলেন তার মৃত্যুর পর ফিতনার জন্ম দেবে না এবং তলোয়ার উম্মুক্ত করবে না! তাদেরকে বলব: তাহলে তিনি কেন জামাল ও সিফফিন যুদ্ধে তলোয়ার উম্মুক্ত করেছিলেন?! অথচ সে যুদ্ধে হাজার হাজার মুসলিম মারা গেছে?! কোনো তলোয়ার উত্তোলন করা উচিৎ ছিল: প্রথম যালিমের সময়, না চতুর্থ যালিমের সময়, না দশম যালিমের সময়...?!
১১৯. শী‘আদের নিকট নবী ও তাদের ইমামদের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই, এমনকি তাদের শাইখ মাজলিসী ইমামদের সম্পর্কে বলেন,
«ولا نعرف جهة لعدم اتصافهم بالنبوة إلا رعاية خاتم الأنبياء . ولا يصل إلى عقولنا فرق بين النبوة والإمامة» .
“আমরা ইমামদেরকে নবুওয়াত দ্বারা ভূষিত না করার কোনো কারণ দেখি না, শেষ নবীর সাথে সৌজন্য বোধ ব্যতীত, আমাদের বিবেকে নবুওয়াত ও ইমামতির মধ্যে কোনো পার্থক্য ধরা পরে না”। [“বিহারুল আনওয়ার”: (২৬/২৮)]
আমাদের প্রশ্ন: তাহলে শেষ নবীর আকীদার গুরুত্ব কিসে?! রাসূলকে শেষ নবী মানার অর্থ কী?! কারণ, নবীদেরকে অন্যান্য মানুষের বিপরীতে যেসব বৈশিষ্ট্য দ্বারা ভূষিত করা হয়েছিল, যেমন তারা নিষ্পাপ, তারা আল্লাহর বার্তাবাহক, তারা মু‘জিযা ও অলৌকিক ঘটনার ধারক ইত্যাদি যদি শেষ নবীর মৃত্যুর পর বন্ধ না হয়, বরং বারো ইমাম পর্যন্ত চালু থাকে, তাহলে তার শেষ হওয়ার অর্থ কি?!
১২০. শী‘আদের ধারণা ইমাম নির্ধারণ করা হয় ‘আল্লাহর অনুগ্রহ’ [অর্থাৎ ইমামত তাদের নিকট নবুওয়াতের মতো। অতএব, প্রত্যেক যুগে নবীর প্রতিনিধি ইমাম থাকা জরুরি, যার দায়িত্ব হচ্ছে মানুষকে হিদায়াত করা, তাদেরকে সৎ পথ দেখানো এবং তাদের জাগতিক ও পার্থিব কার্যাদি পরিকল্পনা করা...। দেখুন: “আল-ইমামাত ওয়াননাস” লিল উস্তাদ ফায়সাল নুর: (পৃ. ২৯০)] নীতির ওপর। আশ্চর্য হলেও সত্য যে, তাদের বারোতম ইমাম শৈশব থেকে আজ পর্যন্ত আত্মগোপন করে আছেন! অতএব, পলাতক ও আত্মগোপনকারীকে ইমাম নিযুক্ত করার মধ্যে কোনো ধরণের অনুগ্রহ?!
১২১. শী‘আদের দাবি তাদের ইমামরা মাসুম [“তাদের নিকট ইসমাত হচ্ছে যে, “ইমাম সগিরা ও কাবিরা গুনা থেকে নিষ্পাপ, তিনি ফতোয়া প্রদান ও উত্তর দেয়ার ব্যাপারে কখনো ভুল করেন না, কখনো তার বিচ্যুতি ঘটে না, তিনি ভুলেন না এবং দুনিয়াবী কোনো বিষয় নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করেন না”। “কামাল ফি মিজানিল হিকমাহ”: (১/১৭৪); “আকায়েদুল ইমামিয়্যাহ”: (পৃ. ৫১); “বিহারুল আনওয়ার”: (২৫/৩৫০-৩৫১)] তথা নিষ্পাপ, অথচ শী‘আ-সু্ন্নী সকলের বর্ণনা মতে এর বিপরীত চিত্রই ফুটে উঠে, উদাহরণ:
এক. উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর হত্যার বিচার প্রার্থীদের সাথে যুদ্ধের ব্যাপারে হাসান রাদিয়াল্লাহু আনহু বরাবরই তার পিতার সাথে বিরোধ করতেন। সন্দেহ নেই, এদের একজন ছিল সঠিক পথে, আর অপর জন ছিল ভুল পথে। অথচ তারা উভয়েই শী‘আদের নিকট নিষ্পাপ ইমাম!
দুই. মুয়াবিয়ার সাথে সন্ধি করার ঘটনায় হুসাইন তার ভাই হাসানের সাথে মত বিরোধ করেন। এতে সন্দেহ, তাদের দুই জনের একজন ছিল সঠিক পথে, অপর ছিল ভুল পথে। অথচ এরা উভয়েই শী‘আদের নিকট নিষ্পাপ!
তিন. শী‘আদের কোনো কোনো কিতাবে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত:
«لا تكفوا عن مقالة بحق، أو مشورة بعدل، فإني لست آمن أن أخطئ» .
“তোমরা সত্য কথা অথবা ইনসাফের পরামর্শ থেকে বিরত থাকবে না। কারণ, আমি ভুল থেকে উর্ধ্বে নয়”। [“আল-কাফি”: (৮/২৫৬); “বিহারুল আনওয়ার”: (২৭/২৫৩)]
১২২. শী‘আরা পবিত্র ভূমি মক্কা ও মদিনার আলিমদের সম্পর্কে চরম ধৃষ্টতার পরিচয় দেয়। তারা ফাতওয়া দেয় প্রয়োজনের খাতিরে মুরতাদদের সাথে যুদ্ধের জন্য কাফির থেকে সাহায্য গ্রহণ করা যায়। অতঃপর আমরা দেখি তাদের প্রসিদ্ধ শাইখ ইবন মুতাহহার আল-হুলী তার কিতাবে লেখেন:
إجماع الشيعة ـ ما عدا شيخهم الطوسي ـ على جواز الاستعانة «بأهل الذمة على حرب أهل البغي» !!
“শাইখ আত-তুসি ব্যতীত সকল শী‘আ একমত যে, বিদ্রোহীদের সাথে যুদ্ধের জন্য জিম্মিদের থেকে সাহায্য নেওয়া বৈধ!! [“মুনতাহাত তালাব ফি তাহকিল মাজহাব”: (২/৯৮৫)] এটা কি বৈপরীত্য নয়?!
১২৩. শী‘আদের মূলনীতি: ইমামতির মালিক সেই হবে, আহলে বাইত থেকে যে ইমামতির দাবি করবে এবং তার সত্যতার স্বপক্ষে অলৌকিক দলীল পেশ করবে। তা সত্বেও দেখি তারা জায়দ ইবন আলীকে ইমাম মানে না, অথচ তিনি ইমামতির দাবি করেছিলেন। অপর দিকে তাদের অদৃশ্য মাহদীকে ইমাম বলে, যে কখনো ইমামতি দাবি করে নি। ছোট ও শৈশবে ছিল বলে তার থেকে অলৌকিক ঘটনাও প্রকাশ পায়নি, (যেমন তাদের ধারণা)।
১২৪. যখন এ আয়াত নাযিল হয়:
﴿إِنَّ ٱللَّهَ يَأۡمُرُكُمۡ أَن تُؤَدُّواْ ٱلۡأَمَٰنَٰتِ إِلَىٰٓ أَهۡلِهَا﴾ [ النساء : ٥٨ ]
“নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ দিচ্ছেন আমানতসমূহ তার হকদারদের কাছে পৌঁছে দিতে”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৫৮]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনী শায়বাদের ডেকে তাদের হাতে কাবার চাবি প্রদান করেন এবং বলেন,
«خذوها يا بني طلحة خالدة مخلدة فيكم إلى يوم القيامة، لا ينـزعها منكم إلا ظالم»
“হে বনু তালহা, এ চাবি গ্রহণ কর, কিয়ামত পর্যন্ত এ চাবি তোমাদের মধ্যেই থাকবে, কোনো অত্যাচারী ব্যতীত এ চাবি তোমাদের থেকে কেউ নেবে না”। [তাবরানি ফিল কাবির এবং তাবরানি ফিল আওসাত: মাজমাউজ জাওয়াদে: (৩/২৮৫)] কাবার একটা সামান্য চাবির ব্যাপারে যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা বলেন, তাহলে আলীর খিলাফত সম্পর্কে কেন তিনি এ কথা বলেননি, অথচ আলীর খিলাফতের বিষয়টি সকল মুসলিমের সাথে সংশ্লিষ্ট এবং তার ওপর নির্ভর করে অনেক কিছু?!
১২৫. শী‘আরা একটি হাদীস তৈরি করেছে, তারা বলে:
«لعن الله من تخلف عن جيش أسامة»
“উসামার বাহিনী থেকে যে বিরত থেকেছে, আল্লাহর তার ওপর লা‘নত করুন”। [দেখুন: “আল-মুহাজ্জাব” লি ইব্নুল বারাজ: (১/১৩); “আল-ঈজাহ” লি ইবন শাজান: (পৃ. ৪৫৪); “উসুলুল আখবার” লিল আমেলি: (পৃ. ৬৮)] এর পশ্চাতে শী‘আরা উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুকে লা‘নত করে!
এখানে তাদের ওপর দু’টি প্রশ্ন উত্থাপিত হয়:
এক. আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু উসামার বাহিনী থেকে পিছু থাকেনি। এটা আবু বকরের ইমামতি মেনে নেওয়ার আলামত। কারণ, আলী রাদিয়াল্লাহ আনহু আবু বকরের নিযুক্ত উসামার বাহিনীতে যোগ দিয়েছেন! উসামার নেতৃত্ব ঠিক হলে আবু বকরের নেতৃত্বও ঠিক, উসামার নেতৃত্ব মেনে নেওয়া মানে আবু বকরের নেতৃত্ব মেনে নেওয়া।
দুই. অথবা আলী উসামার দলে যোগ দেননি, তাহলে তাদের মিথ্যা হাদীস আলীর ওপরও বর্তায়!
১২৬. শী‘আদের ধারণা, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিকট কুরআনের এক কপি আছে, যা কুরআন নাযিলের ক্রম হিসেবে সংরক্ষণ করা! আমাদের প্রশ্ন: উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর পর আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু খিলাফত পেয়েছিলেন, তখন কেন তিনি এ কুরআন বের করেন নি?! অথচ আমাদের কুরআন তো আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকেও বর্ণিত, যেখানে নাযিল হওয়ার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয় নি।
১২৭. শী‘আরা আহলে বাইত ও নবী পরিবারের মহব্বতের দাবি করে, কিন্তু তাদের নিকট এ দাবির বিপরীতও আমরা দেখতে পাই। যেমন, কতক আহলে বাইতের বংশই তারা অস্বীকার করে, যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুই মেয়ে রুকাইয়া ও উম্মে কুলসুম! রাসূলের চাচা আব্বাস ও তার সকল সন্তানদের এবং জুবাইয়ের ইবন সাফিয়্যাহ, যিনি ছিলেন রাসূলের ফুফু। বরং তারা ফাতেমারও অনেক সন্তানকে অস্বীকার করে, যেমন জায়েদ ইবন আলি, এবং তার ছেলে ইয়াহইয়া, এবং মূসা কাজেমের সন্তান ইবরাহিম ও জাফর, শী‘আরা তাদের ইমাম হাসান আসকারির ভাই জাফর ইবন আলীকে গালাগাল করে। তাদের বিশ্বাস হাসান ইব্নুল হাসান (আল-মুসান্না), তার ছেলে আব্দুল্লাহ (আল-মাহাদ), তার ছেলে মুহাম্মাদ (নফস জাকিয়্যাহ) মুরতাদ হয়ে গেছে! অনুরূপ তারা বিশ্বাস করে ইবরাহিম ইবন আব্দুল্লাহ, জাকারিয়া ইবন মুহাম্মাদ আল-বাকের, মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল্লাহ ইবন হুসাইন ইবন হাসান, মুহাম্মাদ ইবনুল কাসেম ইবনুল হুসাইন ও ইয়াহইয়াহ ইবন উমার সম্পর্কে...। অতএব, আহলে বাইতের মহব্বতের দাবি কোথায়?!
বরং তাদের কেউ বলেছে:
«إن سائر بني الحسن بن علي كانت لهم أفعال شنيعة ولا تحمل على التقية» !
“হাসান ইবন আলীর সকল সন্তানের মধ্যে এমন কিছু নিকৃষ্ট কর্মকাণ্ড আছে, যা ‘তাকইয়া’র বিচারে আসে না! বরং এর চেয়ে জঘন্য কথা হচ্ছে:
১২৮. শী‘আরা প্রথম যুগের সকল আহলে বাইতকে কাফির বলে!! যেমন তাদের মূল কিতাবসমূহে এসেছে:
أن الناس بعد رسول الله صلى الله عليه وسلم ارتدوا إلا ثلاثة ( سلمان وأبو ذر والمقداد، وبعضهم يوصلهم إلى 7 ، وليس فيهم واحد من أهل البيت ).
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর সকলেই মুরতাদ হয়ে গিয়েছিল মাত্র তিনজন ব্যতীত, (সালমান, আবু যর ও মিকদাদ), কেউ বলেন সাতজন, যাদের মধ্যে একজন আহলে বাইতও নেই”। [দেখুন: সালিম ইবন কায়েস” লিল আমেরি: (পৃ. ৯২); “আর-রাওজাতু মিনাল কাফি”: (৮/২৪৫) এবং “হায়াতুল কুলুব” লিল মাজলিসি –ফারসি: (২/৬৪০)] অতএব, তারা তো সকলের ব্যাপারে কাফির ও মুরতাদ হওয়ার ঘোষণা দিল। (আল্লাহর নিকট পানাহ চাই)।
১২৯. হাসান রাদিয়াল্লাহু আনহুর বিপুল সংখ্যক সাথী ও সৈন্যবাহিনী সত্বেও মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাতে খিলাফত হস্তান্তর করেন। অথচ তার ভাই হুসাইন সামান্য লোকবল নিয়ে ইয়াজিদ ইবন মুয়াবিয়ার সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন, তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন, অথচ এরা উভয়েই শী‘আদের নিকট ইমাম! আমাদের প্রশ্ন: বিপুল সৈন্য ও সাথী-সঙ্গী থাকা সত্বেও যদি মুয়াবিয়ার হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হাসানের সঠিক হয়, তাহলে সাথী-সঙ্গীহীন হুসাইনের বিদ্রোহ ঘোষণা করা ছিল ভুল অথবা তার বিপরীত সঠিক! বরং তারা নির্দিষ্টভাবে আহলে বাইতের কতককে কাফির বলে: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচা আব্বাস, শী‘আদের দাবি তার ব্যাপারে কুরআনের নিম্নের আয়াত নাযিল হয়েছে:
﴿وَمَن كَانَ فِي هَٰذِهِۦٓ أَعۡمَىٰ فَهُوَ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ أَعۡمَىٰ وَأَضَلُّ سَبِيلٗا ٧٢﴾ [ الاسراء : ٧٢ ]
“আর যে ব্যক্তি এখানে অন্ধ, সে আখিরাতেও অন্ধ এবং অধিকতর পথভ্রষ্ট”। [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৭২] [“রিজালুল কাশি”: (পৃ. ৫৩)]
অনুরূপ তার ছেলে, এ উম্মতের বিজ্ঞ জ্ঞানী, বিশিষ্ট সাহাবী, কুরআনের ভাষ্যকার আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস সম্পর্কে শী‘আদের গ্রন্থ আল-কাফির বর্ণনাও আহলে বাইতের এ সদস্যকে কাফির বলার শামিল, সেখানে তাকে মূর্খ ও বিবেকহীন বলা হয়েছে! [“উসুলুল কাফি”: (১/২৪৭)]
রিজালুল কাশি গ্রন্থে এসেছে:
«اللهم العن ابني فلان وأعم أبصارهما، كما عميت قلوبهما ..»!
“হে আল্লাহ তুমি তার দুই সন্তানের ওপর লা‘নত কর, তাদের চোখ অন্ধ করে দাও, যেমন তাদের অন্তর অন্ধ করে দিয়েছে..”! [“রিজালুল কাশি”: (পৃ. ৫৩); মুজামু রিজালিল হাদীস” লিল খুইয়ি: (১২/৮১)] এর ব্যাখ্যায় তাদের শাইখ হাসান মুস্তাফি উল্লেখ করেন: “এরা হচ্ছে আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস ও উবাইদুল্লাহ ইবন আব্বাস”। [“রিজালুল কাশি”: (পৃ. ৫৩); মুজামু রিজালিল হাদীস” লিল খুইয়ি: (১২/৮১)]
বরং ফাতেমা ব্যতীত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্যান্য মেয়েরা পর্যন্ত শী‘আদের হিংসা ও বিদ্বেষের শিকার হয়েছেন, বরং তাদের কতকের ব্যাপারে নবীর পরিচয়কেই অস্বীকার করেছে! এটাই কি তাদের নবী পরিবারের প্রতি ভালোবাসা?!
১৩০. আবু বকরের খিলাফতের যমনায় আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুও মুরতাদদের যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন, তিনি বনু হানিফার বন্দীদের থেকে এক দাসীকে পর্যন্ত গ্রহণ করেন, যার থেকে তার এক সন্তান হয়, যার নাম মুহাম্মাদ ইবনুল হানাফিয়্যাহ। এর দ্বারাও প্রমাণিত হয় যে, আলী আবু বকরের খিলাফতকে অবৈধ মনে করতেন না। কারণ তার খিলাফত বাতিল হলে আলীর যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করাও ছিল বাতিল।
১৩১. বিভিন্ন মাসআলার মধ্যে জাফর থেকে বর্ণিত বাণীতেও বিস্তর পার্থক্য দেখা যায়। এমন মাসআলা প্রায় দুষ্কর যেখানে তার একাধিক মতামত নেই। যেমন, যে কূপে নাপাক পড়েছে তার সম্পর্কে তিনি একবার বলেন, “এটা সমুদ্র, কোনো জিনিস একে নাপাক করে না”। আবার বলেন, “এ কূপের সব পানি বের করতে হবে”। আবার বলেন, “সাত বা ছয় বালতি পানি উঠালেই যথেষ্ট”। যখন কোনো শী‘আ আলিমকে জিজ্ঞাসা করা হলো, এ মতদ্বৈতা থেকে বের হওয়ার পথ কি? তিনি বললেন: মুজতাহিদ (গবেষক) এসব মতামতের মধ্যে কোনো একটিকে প্রধান্য দেবে। অতঃপর অন্যান্য মতামতের ব্যাপারে বলবে এগুলো ‘তাকইয়া’! তাকে বলা হলো: যদি আরেক মুজতাহিদ অপর মতকে প্রধান্য দেয়, তখন এ মতের ব্যাপারে কি বলবেন? তিনি বললেন: একই কথা বলব, এগুলো ছিল ‘তাকইয়া’। তাকে বলা হলো: তাহলে তো জাফরের মাযহাবই বিনষ্ট হয়ে যায়!! কারণ যে মাসআলাকেই তার সাথে সম্পৃক্ত করা হবে, তার ব্যাপারেই বলা হবে যে, এটা ছিল ‘তাকইয়া’, কারণ মূল মাসআলা ও ‘তাকইয়া’র মধ্যে পার্থক্যকারী কোনো মাপকাঠি নেই!!
১৩২. হাদীসের ব্যাপারে শী‘আদের নিকট গ্রহণযোগ্য কিতাব হচ্ছে:
এক. «الوسائل» للحر العاملي المتوفى سنة 1104 هـ
দুই. «البحار» للمجلسي المتوفى سنة 1111 هـ
তিন. «مستدرك الوسائل» للطبرسي المتوفى سنة 1320 هـ
এসব কিতাব অনেক পরে রচিত! যদি তারা এগুলোর সনদ ও বর্ণনার ভিত্তিতে জমা করে থাকেন, তাহলে কোনো বিবেকবান এর ওপর আস্থা রাখতে পারেন, যা প্রায় এগারো শতাব্দী অথবা তের শতাব্দী পর্যন্ত লিপিবদ্ধ ছিল না?!
১৩৩. শী‘আদের কিতাবে অনেক বর্ণনা ও হাদীস রয়েছে, যা আহলে সুন্নাতের বর্ণনার সাথে মিলে যায়, আকীদার ব্যাপারে অথবা বিদ‘আত প্রত্যাখ্যানের ব্যাপারে অথবা অন্য কোনো বিষয়ে; কিন্তু শী‘আরা তার বাহ্যিক অর্থ প্রত্যাখ্যান করে অন্য অর্থ নেয় ‘তাকইয়া’র আশ্রয়ে। কারণ, বাহ্যিক অর্থ তাদের প্রবৃত্তির সমর্থন করে না!
১৩৪. নাহজুল বালাগার লেখক আলী থেকে আবু বকর ও উমার সম্পর্কে প্রশংসা নকল করেছেন। যেমন, আবু বকর সম্পর্কে তিনি বলেন,
«ذهب نقي الثوب قليل العيب، أصاب خيرها وسبق شرها، أدى إلى الله طاعته، واتقاه بحقه» .
“চলে গেলেন পবিত্র পোশাকধারী ও নির্দোষ ব্যক্তি, যিনি কল্যাণ উপার্জন করেছেন, অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থেকেছেন, আল্লাহর আনুগত্য করেছেন এবং যথাযথ তার তাকওয়ার অধিকারী ছিলেন”। [নাহজুল বালাগাহ: পৃ. ৩৫০), তাহকিক: সাবিহি আস-সালেহ।]
শী‘আরা এ ধরণের প্রশংসা দেখে হতভম্ব হয়, যা তাদের আকীদা তথা সাহাবীদের সাথে বিদ্বেষ পোষণ করার সম্পূর্ণ বিপরীত, ফলে এগুলো তারা ‘তাকইয়া’ বলে আখ্যা দেয়!! তাদেরকে সন্তুষ্ট করা ও তাদের অন্তরকে নিজের প্রতি নমনীয় করার জন্য আলী এসব বলেছেন। অতএব, যারা আবু বকর ও উমারের খিলাফতকে সঠিক জানত, আলী তাদেরকে এভাবে ধোঁকা দিয়েছেন! অথবা বলতে হয়, আলী ছিল ভীরু ও মুনাফিক, মুখে তাই উচ্চারণ করেছেন অন্তরে যা ছিল না। শী‘আরা আলীর যে বীরত্ব ও বাহাদুরি উল্লেখ করে, এটা তার বিপরীত নয়!?
১৩৫. শী‘আরা তাদের ইমামদের মাসূম তথা নিষ্পাপ দাবি করে, যা সবার নিকট প্রসিদ্ধ, এ নীতির কারণেই তারা অনেকটা কোণঠাসা। কারণ তাদের নিকটই এমন অনেক বর্ণনা রয়েছে, যার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, তাদের ইমামরা অন্যান্য লোকের ন্যায় মানুষ ছিল, তাদের যেমন ভুল-ভ্রান্তি হয়, এদেরও তেমন ভুল-ভ্রান্তি হয়েছে। এমনকি শী‘আদের আলিম মাজলিসী স্বীকার করেছেন:
«المسألة في غاية الإشكال؛ لدلالة كثير من الأخبار والآيات على صدور السهو عنهم ..».
“এ বিষয় খুবই জটিল, কারণ অনেক বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, তাদের থেকে ভুল-ভ্রান্তি প্রকাশ পেয়েছে”। [“বিহারুল আনওয়ার”: (২৫/৩৫১)]
১৩৬. শী‘আদের এগারোতম ইমাম হাসান আসকারী কোনো সন্তান না রেখেই মারা যান, কিন্তু পরবর্তীতে শী‘আদের এক লোক ‘উসমান ইবন সায়িদ’ দাবি করে যে, হাসান আসকারির এক সন্তান ছিল, যে চার বছর বয়সেই আত্ম গোপন করে, সে-ই হাসান আসকারীর প্রতিনিধি।
শী‘আদের কাণ্ড দেখে অবাক লাগে! তারা দাবি করে যে, তারা মাসুমদের ব্যতীত কারো কথা গ্রহণ করে না, আবার তারাই তাদের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ‘ইমামিয়্যাহ আকীদা’ সম্পর্কে এমন ব্যক্তির কথা গ্রহণ করে, যে মাসুম নয়!!
১৩৭. শী‘আরা মারওয়ান ইবনুল হাকাম সম্পর্কে সব ধরণের কটাক্ষ করে, আবার তারাই বর্ণনা করে যে, হাসান ও হুসাইন মারওয়ান ইবনুল হাকামের পিছনে সালাত আদায় করত! [“বিহারুল আনওয়ার”: (১০/১৩৯); আন-নাওয়াদের” লিল রাওয়েন্দি: (পৃ. ১৬৩)]
আরো আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে মারওয়ানের ছেলে মুয়াবিয়াহ আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর মেয়ে রমলাকে বিয়ে করেন!! [“নাসাবু কুরাইশ” লি মুসআব জাবিরি: (পৃ. ৪৫) এবং “জামহারাতু আনসাবিল আরব” লি ইবন হাজম: (পৃ. ৮৭)] অনুরূপ জয়নব বিনতে হাসান (আল-মুসান্না) মারওয়ানের নাতি ওলিদ ইবন আব্দুল মালিকের সাথে বিবাহিত ছিলেন। [“নাসাবু কুরাইশ” লি মুসআব জাবিরি: (পৃ. ৫২) এবং “জামহারাতু আনসাবিল আরব” লি ইবন হাজম: (পৃ. ১০৮)] অনুরূপ ওলিদ বিয়ে করেছেন নাফিসা বিনতে জায়েদ ইবনুল হাসান ইবন আলীকে। [“উমদাতু ফি আনসাবে আলে আবি তালেব” লি ইবন আনবাহ আশশিয়ি: (পৃ. ১১১); “তাবকাত ইবন সাদ”: (৫/৩৪)]
১৩৮. শী‘আরা তাদের অদৃশ্য ইমাম মাহদীর জন্মের ঘটনা সম্পর্কে বলে:
«نزلت عليه طيور من السماء تمسح أجنحتها على رأسه ووجهه وسائر جسده ثم تطير ! فلما قيل لأبيه ضحك وقال : تلك ملائكة السماء نزلت للتبرك بهذا المولود، وهي أنصاره إذا خرج» !
“তার ওপর আসমান থেকে পাখি অবতরণ করে, ডানা দ্বারা তার মাথা, চেহারা ও সমস্ত শরীর মাসেহ করে অতঃপর উড়ে যায়! যখন তার পিতাকে বলা হলো, তিনি হাসলেন আর বললেন: এরা হচ্ছে আসমানের ফিরিশতা, এরা এ নবজাতক থেকে বরকত হাসিল করার জন্য নাযিল হয়েছে। যখন সে বের হবে, তখন এরা তাকে সাহায্য করবে”! [“রাওজাতুল ওয়াজেনি”: (পৃ. ২৬০)]
আমাদের প্রশ্ন: যদি ফিরিশতারা তার সাহায্যকারী হয়, তাহলে কেন তার ভয়, কেন তিনি ভয়ে গর্তে ঢকে যান?!
১৩৯. শী‘আরা তাদের ইমামের জন্য কতগুলো শর্ত নির্ধারণ করেছে:
এক. ইমাম পিতার বড় ছেলে হবেন।
দুই. তাকে একমাত্র ইমামই গোসল দেবে।
তিন. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বর্ম তার গায়ে যথাযথভাবে লাগবে।
চার. তিনি সবচেয়ে জ্ঞানী হবেন।
পাঁচ. তিনি গায়েব জানবেন! ইত্যাদি।
কিন্তু পরবর্তীতে তারা এসব শর্ত নিয়ে মুসীবতে পড়েছে!! কারণ, আমরা দেখি যে, তাদের কতক ইমাম পিতার বড় সন্তান ছিল না, যেমন মূসা কাজেম ও হাসান আসকারি এবং কতককে কোনো ইমাম গোসল দেয় নি, যেমন আলী রেজা, তাকে তার ছেলে জাওয়াদ গোসল দেয় নি। কারণ, তখন তার বয়স আটও অতিক্রম করে নি, অনুরূপ মূসা কাজেমকে তার ছেলে আলী রেজা গোসল দেয় নি। কারণ, তখন তিনি অনুপস্থিত ছিলেন, বরং হুসাইন ইবন আলীকে তার ছেলে জয়নুল আবেদিন গোসল দেয় নি। কারণ, তখন তিনি বিছানায় শোয়া এবং ইবন জিয়াদের সৈন্যবাহিনী প্রতিবন্ধক হয়েছিল।
তাদের কোনো ইমাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বর্ম সমান ছিল না, যেমন মুহাম্মাদ আল-জাওয়াদ, তিনি নিজ পিতার মৃত্যুর সময় আট বছর অতিক্রম করেন নি। অনরূপ তার ছেলে আলী ইবন মুহাম্মাদ তার শৈশবেই মারা যান।
তাদের অনেকে সবার চেয়ে জ্ঞানী ছিল না, যেমন যারা ছোট ছিল। তাদের কোনো কোনো ইমামের ব্যাপারে শী‘আদের বর্ণনায় আছে যে, তাদের স্বপ্নদোষ হত এবং তারা নাপাক হতেন। যেমন, আলী ও তার দুই ছেলে হাসান ও হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুম। যেমন, তারাই বর্ণনা করেছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেছেন:
«لا يحل لأحد أن يجنب في هذا المسجد إلا أنا وعلي وفاطمة والحسن والحسين» .
“কারো জন্য বৈধ নয় এ মসজিদে নাপাক হওয়া, তবে আমি, আলি, ফাতেমা, হাসান ও হুসাইন ব্যতীত”। [“উয়ূনু আখবারির রিজা”: (২/৬০)]
অবশিষ্ট রইল গায়েব জানা, এটাও একটা নিরেট মিথ্যা, আল্লাহ কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে তা খণ্ডন করেছেন।
১৪০. শী‘আরা দাবি করে যে, ইমামের ব্যাপারে নস বা সরাসরি নির্দেশ থাকা জরুরী। বাস্তব যদি এমনই হতো, তাহলে তাদের বিভিন্ন দল ও উপদলে ইমামতির ব্যাপারে এতো মতভেদ দেখা যেত না। প্রত্যেক দলই তাদের ইমামের ব্যাপারে নস বা সরাসরি নির্দেশের দাবি করে! অতএব, তাহলে কোনো দলিলের ভিত্তিতে একদল অপর দল থেকে উত্তম?! যেমন, কাইসানিয়ারা দাবি করে যে, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর পর ইমাম হচ্ছে তার ছেলে মুহাম্মাদ ইবনুল হানাফিয়াহ, অনুরূপ অন্যান্য দল।
১৪১. কতক শী‘আ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে অপবাদ দেয়, যেমন অপবাদ দিয়েছে ইফকের ঘটনা সৃষ্টিকারীরা, (আল্লাহর নিকট পানাহ চাই), পূর্বে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে।
তাদের প্রতি প্রশ্ন: যদি বিষয়টি এমনই হয় যেমন তোমরা বল, তাহলে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ওপর হদ কয়েম কেন করেন নি, অথচ তিনিই বলেছেন:
«والله لو سرقت فاطمة بنت محمد لقطعت يدها»؟ !
“আল্লাহর শপথ, যদি ফাতেমা বিনতে মুহাম্মাদ চুরি করত, তাহলে তারও হাত কাটা হত”। [সহীহ বুখারী।] আলী কেন তার ওপর হদ কায়েম করে নি, যিনি আল্লাহর বিধানের ব্যাপারে কাউকে ভয় করেন না?! তার ওপর কেন হদ কায়েম করে নি হাসান, যখন সে খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে?!
১৪২. শী‘আদের ধারণা ইমামদের নিকট ইলম গচ্ছিত, তারা এমন কিতাব ও ইলমের উত্তরাধিকার হয়েছেন, যা অন্য কেউ হয় নি, যেমন তাদের নিকট বিদ্যমান:
এক. صحيفة الجامعة (সাহীফাতুল জামে)
দুই. كتاب علي (কিতাবু আলী)
তিন. العبيطة (আল-আবতিয়াহ)
চার. ديوان الشيعة (দিওয়ানুশ শী‘আহ)
পাঁচ. الجفر (আল-জাফর)
তাদের এসব কিতাব ধারণা প্রসূত, তারা বলে এতে মানুষের প্রয়োজনীয় যাবতীয় বিষয় রয়েছে, তাহলে এসব কিতাব উহ্য কেন, এতে মানুষের ফায়দা কিসের, মাহদীর অদৃশ্যের (কাল্পনিক) ঘটনা থেকে কেন তা আজ পর্যন্ত গোপন?!
তাদের প্রতি আরো প্রশ্ন: এখন এসব কিতাব কোথায়? তাদের অপেক্ষার মাহদী কিসের অপেক্ষা করছে, এসব কিতাব নিয়ে মানুষের সামনে কেন উপস্থিত হয় না? হিদায়াতের মূল উৎস এসব কিতাব থেকে কেন জগতবাসী এগার শতক থেকে বঞ্চিত?! কোনো অপরাধের কারণে প্রজন্মের পর প্রজন্ম এর থেকে মাহরুম হচ্ছে?! আর এতে যদি জগতবাসীর কোনো ফায়দা না থাকে, তাহলে এসব দাবি কেন করা হয়? শী‘আদেরকে হিদায়াতের আসল উৎস তথা কুরআন ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত থেকে কেন বিভ্রান্ত করা হয়?!
১৪৩. শী‘আরা তাদের কিতাবে উল্লেখ করে যে, হুসাইনের কুফায় যাত্রা করা, অতঃপর সেখানে লাঞ্ছনা ও হত্যার শিকার হওয়ার কারণ ছিল তিন জন ব্যতীত সকলের মুরতাদ হয়ে যাওয়া। যদি হুসাইন গায়েব জানতেন (যেমন শী‘আদের ধারণা) তাহলে কখনো তিনি কুফায় যাত্রা করতেন না।
১৪৪. শী‘আরা দাবি করে যে, তাদের বারোতম ইমামের অদৃশ্য হওয়ার কারণ হচ্ছে হত্যার ভয়।
আমাদের প্রশ্ন: তার পূর্বের ইমামদের কেন হত্যা করা হয় নি?! অথচ তারা খিলাফতের যুগে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতেন, তারা ছিল প্রাপ্ত বয়স্ক, তাদেরকেই যখন হত্যা করা হয় নি, তাহলে এ ছোট বাচ্চাকে কেন হত্যা করা হবে, এর কিসের হত্যার ভয়?!
১৪৫. শী‘আরা দাবি করে যে, তারা সেসব হাদীসই মানে, যা আহলে বাইতের সূত্রে বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত। [“উসুলুশ শী‘আহ ও উসুলুহা” লি মুহাম্মাদ হুসাইন আলে কাশেফুল গিতা: (পৃ. ৮৩)] এখানেই তারা মানুষকে বিভ্রান্তিতে নিক্ষেপ করে ও ধোঁকা দেয়। কারণ, তাদের বিশ্বাস তাদের ইমামগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মতোই জ্ঞানী, তারা কেউ মনগড়া কথা বলে না। ইমামের কথা আল্লাহ ও রাসূলের কথার ন্যায়। আর এ জন্যই তাদের কিতাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী খুব কম। কারণ, তারা তাদের ইমামদের কথাকেই যথেষ্ট মনে করে। দ্বিতীয়তঃ তাদের এ কথাও সঠিক নয় যে, তারা আহলে বাইতের সব সদস্যের সূত্রে প্রমাণিত হাদীস গ্রহণ করে, বরং তারা শুধু তাদের ইমামদের কথা গ্রহণ করে। যেমন তারা হাসানের সন্তানদের ওপর আস্থা রাখে না।
১৪৬. তাদের প্রতি আরো প্রশ্ন: তোমরা তোমাদের ইমামদের থেকে প্রমাণিত হাদীস গ্রহণ কর, কিন্তু আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু ব্যতীত কেউ তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রান্ত বয়সে দেখে নি, তাহলে আলী একাই রাসূলের সকল সুন্নত পরবর্তী সকল উম্মতের নিকট পৌঁছানোর জন্য যথেষ্ট?! এটা কীভাবে সম্ভব: অথচ তোমাদের স্বীকৃতি দ্বারাই প্রমাণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো তাকে মদিনায় রেখে যেতেন, আবার কখনো তাকে অভিযানে প্রেরণ করতেন?! অতএব, প্রমাণিত হলো আলী সব সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে থাকতেন না।
অধিকন্তু আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘরের সংবাদ কীভাবে নকল করবেন, যা একমাত্র তার স্ত্রীদের সাথেই খাস?!
অতএব, প্রমাণিত হলো, আলী একাই তোমাদের নিকট সকল হাদীস পৌঁছাই নি!
১৪৭. শী‘আদের প্রতি প্রশ্ন: অধিকাংশ ইসলামী দেশে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইলম পৌঁছছে আলী ব্যতীত অন্য সাহাবীদের দ্বারা, বরং আহলে বাইতের সদস্য ব্যতীত অন্যদের মাধ্যমেই সাধারণত পৃথিবীর আনাচে-কানাচে ইসলাম পৌঁছেছে! যেমন, ইসলাম, কুরআন ও দীনি শিক্ষা দেওয়ার জন্য মদিনায় আসআদ ইবন জুরারাকে প্রেরণ করেন। বাহরাইন ও তার আশ-পাশের এলাকায় আলা-ইবন হাজরামীকে প্রেরণ করেন। মুয়াজ ও আবু মূসাকে প্রেরণ করেছেন ইয়ামানে, ইতাব ইবন উসাইদকে প্রেরণ করেছেন মক্কায়। তাহলে শী‘আদের দাবির সত্যতা কোথায় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইলম আলী বা আহলে বাইত ব্যতীত পৌঁছতে পারে না?!
১৪৮. শী‘আদের প্রতি প্রশ্ন: শী‘আরা স্বীকার করে যে, তাদের নিকট হালাল-হারাম ও হজের ইলম পৌঁছছে আবু জাফর আল-বাকেরের মাধ্যমে। এর অর্থ হচ্ছে আলীর মাধ্যমে এ ইলম তাদের নিকট পৌঁছে নি! শী‘আদের কিতাবের বক্তব্য:
«كانت الشيعة قبل أن يكون أبو جعفر وهم لا يعرفون مناسك حجهم وحلالهم وحرامهم، حتى كان أبو جعفر ففتح لهم وبين لهم مناسك حجهم وحلالهم وحرامهم، حتى صار الناس يحتاجون إليه من بعد ما كانوا يحتاجون إلى الناس» .
“শী‘আরা আবু জাফরের পূর্বে হালাল-হারাম ও হজের বিধান জানত না, অবশেষে আবু জাফর তাদের ইলমের দরজা উম্মুক্ত করেন এবং তাদেরকে হালাল-হারাম ও হজের বিধান শিক্ষা দেন। অতঃপর মানুষেরা সবাইকে ত্যাগ করে, তার দিকেই প্রত্যাবর্তন করে”। [“উসুলুল কাফি”: (২/২০); “তাফসীরুল আইয়াশি”: (১/২৫২-২৫৩); “আল-বুরহান”: (১/৩৮৬); “রিজালুল কাশি”: (পৃ. ৪২৫)] অতএব, শী‘আরা বাকেরের পূর্বে কীভাবে আল্লাহর ইবাদাত করত?!
১৪৯. শী‘আরা নিজেদের ইখতিলাফের সময় এমন ব্যক্তিকে ফয়সালাকারী বানায়, যার ব্যাপারে তাদের ধারণা হয় যে, তিনি অপেক্ষার অদৃশ্য মাহদীকে দেখেছেন, তাকেই তারা সত্যবাদী ও ইনসাফপূর্ণ মনে করে। তাদের শাইখ মামকানী বলেন,
«تشرف الرجل برؤية الحجة ـ عجل الله فرجه وجعلنا من كل مكروه فداه ! ـ بعد غيبته، فنستشهد بذلك على كونه في مرتبة أعلى من مرتبة العدالة ضرورة» .
“কোন ব্যক্তি যদি হুজ্জতকে দেখে সৌভাগ্যবান হয়, আমরা এ কারণে তার ব্যাপারে সাক্ষ্য দেই যে, তিনি ইনসাফের সর্বোচ্ছ শিখরে”। [“তানকিহুল মাকাল”: (১/২১১)]
আমাদের প্রশ্ন: যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছেন, তাদের ব্যাপারে কেন তোমরা এটা বল না?! অথচ তিনি তোমাদের হুজ্জত থেকে উত্তম ও উৎকৃষ্ট?!
১৫০. শী‘আদের দ্বিমুখী আচরণ হচ্ছে যে, যারা তাদের কোনো ইমামকে অস্বীকার করে, তারা তাদের বর্ণনা পরিত্যাগ করে, যে কারণে তারা সাহাবীদের বর্ণনা ত্যাগ করেছে। অতঃপর আমরা দেখি যে, শী‘আদের কতক মুরুব্বি, যারা তাদের কতক ইমামকে অস্বীকার করেছেন, তাদের সাথে তারা এ আচরণ করে না! যেমন তাদের শাইখ হুর আল-আমেলি এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যে, ইমামিয়ারা “আল-ফাতহিয়্যাহ”, [আতবাউ আব্দুল্লাহ “আল-আফতাহ” ইবন জাফর সাদেক।] “আল-ওয়াকেফিয়্যাহ” [এরা ইমামতের ধারা মূসা ইবন জাফর পর্যন্ত শেষ করে, তার পরে কারো ইমামত স্বীকৃতি দেয় না।] এবং “আন-নাউসিয়্যাহ” [এরা নাউস অথবা ইবন নাউস নামক ব্যক্তির অনুসারী, তারা বলে জাফর ইবন মুহাম্মদ তথা মাহদি মারা যায় নি।] সম্প্রদায়ের হাদীস অনুযায়ী আমল করে। অথচ এ তিন জামা‘আতের সবাই বারো ইমামিদের কতক ইমামকে অস্বীকার করে। এতদ সত্বেও তাদের অনেক ব্যক্তিকে তারা নির্ভরযোগ্য গণ্য করে। [উদাহরণত দেখুন: “রিজালুল কাশি”: (পৃ. ৫৬৩, ৫৬৫, ৫৭০, ৫১২, ৬১৬, ৫৯৭, ৬১৫)] কিন্তু তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের সাথে এমনটি করে না!
১৫১. শী‘আদের আলিমদের বড় একটি জামা‘আত স্বীকার করে যে, আল-কুলাইনি রচিত তাদের কিতাব ‘আল-কাফি’তে সহীহ, দুর্বল ও বানোয়াট হাদীস রয়েছে, অথচ শী‘আদের নিকট স্বীকৃত যে, এ কিতাব তাদের অদৃশ্য ইমামের নিকট পেশ করা হয়েছিল, (যেমন তাদের ধারণা) অতঃপর তিনি বলেন, এ কিতাবই আমাদের শী‘আ গ্রুপের জন্য যথেষ্ট। [“মুকাদ্দামতুল কাফি” লি হুসাইন আলী: (পৃ. ২৫); “রাওজাতুল জান্নাত লিল খাওয়ানাসারি”: (৬/১০৯); “আশ-শিয়াহ”: লি মুহাম্মদ সাদেক আস-সাদর: (পৃ. ১২২)]
আমাদের প্রশ্ন: মাহদী কেন এর ভেতরকার বানোয়াট বর্ণনা সম্পর্কে সর্তক করেন নি?!
১৫২. শী‘আদের শাইখ হামদানী ‘মিসবাহুল ফকিহ’ গ্রন্থে বলেন,
«إن المدار على حجية الإجماع على ما استقر عليه رأي المتأخرين ليس على اتفاق الكل، بل ولا على اتفاقهم في عصر واحد، بل على استكشاف رأي المعصوم بطريق الحدس ..»
“ইজমার শর্ত হচ্ছে পরবর্তী আলিমদের চূড়ান্ত অভিমত, সবার ঐক্যমত জরুরী নয়, বরং একযুগের সবার ঐক্যমতও জরুরী নয়, বরং অনুমান দ্বারা যদি মাসুম ইমামের সিদ্ধান্ত জানা যায়, তাহলেই যথেষ্ট...” [“মিসবাহুল ফাকিহ”: (পৃ. ৪৩৬); “আল-ইজতিহাদ ও তাকলিদ”: (পৃ. ১৭)] তারা ইজমার স্বপক্ষে অনুমান দ্বারা অদৃশ্য ইমামের মতামত জানাই যথেষ্ট মনে করে, যেখানে ভুলের সম্ভাবনা রয়েছে, অথচ তারা পঞ্চইন্দ্রিয় দ্বারা প্রমাণিত নির্ভুল ইজমা গ্রহণ করে না! এ বৈপরিত্বের সুরাহা কোথায়!
১৫৩. শী‘আরা স্বীকার করে যে, তাদের একজন বড় আলিম, অর্থাৎ ‘ইবন বাবুইয়া আল-কুম্মি’ যিনি শী‘আদের নিকট গ্রহণযোগ্য চার কিতাবের একটি من لا يحضره الفقيه এর লেখক, তার ব্যাপারে তারা বলে:
«يدعي الإجماع في مسألة ويدعي إجماعاً آخر على خلافها»
“তিনি এক মাসআলায় ইজমার দাবি করেন, আবার বিপরীত মাসআলায় অপর ইজমার দাবি করেন”। [“জামেউল মাকাল ফি-মা ইয়াতাআল্লাকু বি আহওয়ালিল হাদীস ওয়ার রিজাল” লিত তারিহি: (পৃ. ১৫)] যার পরিপেক্ষিতে তাদেরই একজন আলিম বলেছেন:
«ومن هذه طريقته في دعوى الإجماع كيف يتم الاعتماد عليه والوثوق بنقله» .
“ইজমার দাবির ব্যাপারে এটা যার নীতি, তার কথা ও বর্ণনার ওপর কীভাবে আস্থা রাখা যায়”!? [“জামেউল মাকাল ফি-মা ইয়াতাআল্লাকু বি আহওয়ালিল হাদীস ওয়ার রিজাল” লিত তারিহি: (পৃ. ১৫)]
১৫৪. শী‘আদের একটি আশ্চর্য বিষয় যে, তাদের কিতাবে কোনো মাসআলায় যদি একাধিক মত বা বিরোধ থাকে, এক মতের বক্তা সম্পর্কে যদি জানায়, আর অপর মতের বক্তাকে যদি জানা না যায়, তাহলে যে মতের বক্তাকে জানা যায় নি, সেটাকেই তারা প্রধান্য দেয়! কারণ তাদের ধারণা হয়তো এটাই তাদের মাসুম ইমামের বাণী! এমনকি তাদেরই এক শাইখ ‘হুর আল-আমেলী’ এতে আশ্চর্য বোধ ও এ নীতির সমালোচনা করে বলেছেন:
«وقولهم باشتراط دخول مجهول النسب فيهم أعجب وأغرب، وأي دليل عليه؟ وكيف يحصل مع ذلك العلم بكونه هو المعصوم أو الظن به» .
“তারা যে বলেছে: অপরিচিত লোকের মতই গ্রহণযোগ্য, এটা আশ্চর্য ও অদ্ভুদ বিষয়, এর দলীল কি? কীভাবে জানা যাবে যে, এর বক্তাই মাসুম ইমাম অথবা তার সম্পর্কে কীভাবে ধারণা জন্মাবে”? [“মুকতাবাসুল আসার”: (৩/৬৩)]
১৫৫. শী‘আদের শাইখ মাজলিযী বলেছেন:
«إن استقبال القبر أمر لازم وإن لم يكن موافقاً للقبلة»
“কবরের দিকে মুখ করা জরুরী, যদিও কিবলা মোতাবিক না হয়”। [বিহারুল আনওয়ার”: (১০১/৩৬৯)] অর্থাৎ তাদের মাজার ও পবিত্র স্থানসমূহ যিয়ারতকালে দুই রাকাত সালাত আদায়ের সময় কিবলামুখী না হলেও কবরমুখী হওয়া জরুরি!!
আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে তাদের কিতাবেই আহলে বাইতের ইমামদের থেকে আছে যে, কবরসমূহ মসজিদ ও কিবলা হিসেবে গ্রহণ কর না, কিন্তু এসব যেহেতু তাদের প্রবৃত্তি মোতাবিক নয়, তাই তারা এগুলোকে ‘তাকইয়া’ হিসেবে গণ্য করে, এর ওপর আমল পরিত্যাগ করে!
১৫৬. শী‘আরা “গাদিরে খুম” এর হাদীস এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিম্নের বাণী খুব বেশি উল্লেখ করে:
«أذكركم الله في أهل بيتي»
“আমার পরিবারের ব্যাপারে তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি”।
“অথচ তারা ভুলে যায়, তারাই সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ ওসিয়তের প্রত্যাখ্যান করে, যার প্রমাণ আহলে বাইতের বৃহৎ একটি জামা‘আতের সাথে তাদের শত্রুতা পোষণ করা!
১৫৭. শী‘আদের প্রতি প্রশ্ন: সাহাবায়ে কেরাম যদি আলীর খিলাফতের হাদীস গোপন করত, তাহলে তারা আলীর অন্যান্য ফযীলতের হাদীসগুলোও গোপন করত, তার ফযীলতের কোনো হাদীসই দ্বারা বর্ণনা করত না, অথচ তা বাস্তবতার বিপরীত, অতএব, প্রমাণিত হলো যে, খিলাফতের ব্যাপারে যদি আলী সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো ওসিয়ত থাকত, তাহলে সাহাবায়ে কেরাম অবশ্যই বর্ণনা করতেন। কারণ, খিলাফতের বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যার প্রচার ও প্রসার ছিল ওয়াজিব, আর এ ওয়াজিব আদায় হলে আলীর বিপক্ষের ও স্বপক্ষের সকলে তা জানত।
১৫৮. শী‘আরা বর্ণনা করে, হাসান আল-আসকারি তাদের অপেক্ষার ইমাম মাহদীর পিতা, তিনি নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি ব্যতীত কারো কথার ভিত্তিতে “অপেক্ষার মাহদী”র সংবাদ প্রকাশ করা থেকে নিষেধ করেছেন। অতঃপর তারাই এ নীতি লঙ্ঘন করে বলে, যে ইমামকে চিনবে না, সে গায়রুল্লাহকে চিনে এবং তারই ইবাদত করে! আর এ অবস্থায় মারা গেলে সে কুফর ও নিফাকি অবস্থায় মারা গেল! [“উসুলুল কাফি”: (১/১৮১, ১৮৪)]
আমাদের প্রশ্ন: কেন তার পিতার এ সতর্কতা, অথচ তাকে না জেনে মারা যাওয়া শী‘আদের নিকট মহা অরাধ?!
১৫৯. শী‘আদের প্রতি প্রশ্ন: যারা ধারণা করে যে, আল্লাহ তা‘আলা তাদের “অপেক্ষার মাহদী”র হায়াত দুই শত বছর বৃদ্ধি করেছেন, মানুষের প্রয়োজনের স্বার্থে, বরং পুরো জগতের স্বার্থে! আল্লাহ যদি মানুষের স্বার্থে কারো হায়াত দীর্ঘ করেন, তাহলে অবশ্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হায়াত দীর্ঘ করা উচিৎ ছিল।
১৬০. শী‘আরা তাদের অদৃশ্য ইমামের পিতা হাসান আসকারি সম্পর্কে হাসান আসকারির ভাই জাফরের কথা বিশ্বাস বা গ্রহণ করে না, যিনি বলেছেন যে, আমার ভাই হাসান আসকারীর কোনো সন্তান ছিল না, কারণ তিনি হচ্ছে তাদের নীতি অনুসারে গায়রে মাসুম বা নিষ্পাপ নন। [দেখুন: “আল-গায়বাহ”: (পৃ. ১০৬-১০৭)] অতঃপর দেখি যে, হাসান আসকারীর সন্তানের ব্যাপারে উসমান ইবন সায়িদের কথা তারা বিশ্বাস করে, অথচ সেও গায়রে মাসুম বা নিষ্পাপ নন! এ বৈপরীত্য কেন?! গায়রে মাসূম বলে যদি আপন ভাইয়ের কথা প্রত্যাখ্যান করতে পার, তাহলে অপর গায়রে মাসূমের কথা নিজের ভাই সম্পর্কে কীভাবে গ্রহণ কর?!
১৬১. শী‘আদের প্রসিদ্ধ আকীদা হচ্ছে عقيدة الطينة “আকিদায়ে তিনাহ”। এর সারাংশ হচ্ছে: আল্লাহ তা‘আলা শী‘আদের সৃষ্টি করেছেন এক মাটি থেকে, সুন্নিদের সৃষ্টি করেছেন অপর মাটি থেকে! অতঃপর এক নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে উভয় মাটির মধ্যে সংমিশ্রন ঘটে। অতএব, শী‘আদের মধ্যে যে খারাপি ও অপরাধ রয়েছে, তা মূলতঃ সুন্নীদের মাটির প্রভাব! আর সুন্নীদের মধ্যে যে ভালো ও আমানতদারী রয়েছে, তা শী‘আদের মাটির প্রভাব! যখন কিয়ামত সংগঠিত হবে, তখন শী‘আদের পাপ ও অপরাধ জমা করে সুন্নিদের কাঁধে রাখা হবে! আর সুন্নিদের ভালো ও নেক জমা করে শী‘আদের পাল্লায় রাখা হবে!
অথচ শী‘আরা জানে না, তাদের মনগড়া এ আকীদা তাকদীর ও বান্দার আমলের ব্যাপারে তাদের মাযহাবেরই বিপরীত! কারণ, এ আকীদার দাবি হচ্ছে মাটির প্রভাবে বান্দা আমল করতে বাধ্য, তার কোনো স্বাধীনতা নেই, কারণ তার জন্ম ও কর্ম হচ্ছে “তিনা”র ভিত্তিতে। অথচ তাদের মাযহাব বলে বান্দারা তাদের কর্মের স্রষ্টা, যেমন মু‘তাজিলাদের মাযহাব!
১৬২. শী‘আরা প্রায় উল্লেখ করে যে, আনসারগণ আলীকে ভালোবাসতেন, এবং সিফ্ফিন যুদ্ধে যুদ্ধে আলীর পক্ষে তাদের সংখ্যাই বেশি ছিল। তাদের প্রতি প্রশ্ন: বাস্তবতা যদি এমনই হয়, তাহলে কেন তারা খিলাফতের ভার আলীকে না দিয়ে আবু বকরকে দিল?! এর কোনো সন্তোষজনক উত্তর আছে কি?
নিশ্চয় আনসার ও মুহাজিরদের দৃষ্টি আমাদের চেয়ে সঠিক ছিল, তারা খিলাফত ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বংশের ভালোবাসা এক পাল্লায় রাখেন নি।
এ জন্য আমরা শী‘আদের কিতাবে দেখি, যেখানে সিফ্ফিন যুদ্ধে আলীর পক্ষে থাকার কারণে আনসারদের প্রশংসা করা হয়েছে, একই কিতাবে ‘সকিফা’র ঘটনার কারণে আনসারদের মুরতাদ ও কাফির বলে!
সাহাবীদের মূল্যায়ন করার এটাই মাপকাঠি শী‘আদের নিকট: তারা যদি কোনো বিষয়ে আলীর সাথে থাকে, তাহলে তারা সর্বোত্তম মানুষ, আর যদি তাদের ভূমিকা হয় আলীর বিপক্ষে অথবা বলতে পার আলীর মতের বিপক্ষে, তাহলে তারা মুরতাদ, স্বার্থপর ও মুনাফিক!
তারা যদি বলে: সাহাবীদের কাফির ও মুরতাদ বলার কারণ হচ্ছে যে, তারা আলীর খিলাফতের নস তথা রাসূলের নির্দেশ অস্বীকার করেছে। তাহলে আমাদের প্রশ্ন: বারো ইমামিয়াহ শী‘আরা কি বলে না যে, ‘হাদীসে গাদির’ মুতাওয়াতির সূত্রে প্রমাণিত, শত শত সাহাবায়ে কেরাম তা বর্ণনা করেছেন? তাহলে সাবায়ে কেরাম কীভাবে অস্বীকার করল?
আমি যখন নিজের মুখেই স্বীকার করি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ( من كنت مولاه فعلي مولاه ) “আলি যার অভিভাবক, আমিও তার অভিভাবক”। তাহলে কীভাবে আমি অস্বীকার করলাম?!
যদি বলা হয়: অর্থ অস্বীকার করেছে! তাদেরকে বলব: তোমরা হাদীসের যে ব্যাখ্যা কর, তাই যে সত্য তার প্রমাণ কি?! তোমরা কি সেসব সাহাবীদের চেয়ে বেশি বুঝ ও অধিক বিবেকবান, যারা সে সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিল, যারা নিজ কানে তা শ্রবণ করেছে?! অথবা তোমরা তাদের চেয়ে আরবি বেশি বুঝ, যে কারণে তারা যা বুঝে নি তোমরা তা বুঝেছ?! [“সুম্মা আবসারতুল হাকিকাহ” মুহাম্মদ সালেম আল-খিজির: (পৃ. ২৯১-২৯২)]
১৬৩. আমাদের সামনে দু’টি দল: একদল আল্লাহর কিতাবের ব্যাপারে বিষোদগার করে, তাতে পরিবর্তন ও বিকৃতির দাবি তুলে। এদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘আন-নূরী আত-তাবরিসী’। যিনি ‘আল-মুসতাদরাক’ গ্রন্থের লেখক। যা শী‘আ বারো ইমামিয়াদের নিকট হাদীসের মূল কিতাবের একটি। তার আরো একটি কিতাব হচ্ছে: ( فصل الخطاب في إثبات تحريف كتاب رب الأرباب ) এ বইয়ে তিনি কুরআনের বিকৃতি প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন। তিনি কুরআন সম্পর্কে বলেন,
ومن الأدلة على تحريفه فصاحته في بعض الفقرات البالغة حد الإعجاز وسخافة بعضها الآخر !
“কুরআনের বিকৃতির প্রমাণ হচ্ছে যে, কোনো কোনো জায়গায় উচ্চতরের সাহিত্য ও ভাষার প্রাঞ্জলতা রয়েছে, আবার কোথায়ও নিম্নমানের ভাষা ও শব্দের ব্যবহার”! [“ফাসলুল খিতাব ফি ইসবাতি তাহরিফি কিতাবি রাব্বিল আরবাব”: (পৃ. ২১১)]
সাইয়েদ আদনান আল-বাহরানি বলেন,
الأخبار التي لا تحصى كثرة وقد تجاوزت حد التواتر ولا في نقلها كثير فائدة بعد شيوع القول بالتحريف والتغيير بين الفريقين، وكونه من المسلمات عند الصحابة والتابعين بل وإجماع الفرقة المحقة وكونه من ضروريات مذهبهم وبه تضافرت أخبارهم .
“কুরআনের মধ্যে পরিবর্তন ও বিকৃতির বিষয়টি উভয় দলে সমানভাবে আলোচিত, যা অস্বীকার করার কোনো জো নেই, যা বর্ণনা করার মধ্যে কোনো ফায়দাও নেই; বরং এটা সাহাবী ও তাবেঈদের নিকট স্বীকৃত ছিল। হকপন্থীদের এ ব্যাপারে ইজমা সংগঠিত হয়েছে। এটা (শী‘আ) মাযহাবের একটি গুরুত্বপূর্ণ আকীদা, এ বিষয়ে অনেক বাণী রয়েছে।”। [“মাশারেকুশ সামুসুদ দারিয়্যাহ”: (পৃ. ১২৬)]
ইউসুফ বাহরানী বলেন,
لا يخفى ما في هذه الأخبار من الدلالة الصريحة والمقالة الفصيحة على ما اخترناه ووضوح ما قلنا، ولو تطرق الطعن إلى هذه الأخبار على كثرتها وانتشارها لأمكن الطعن إلى أخبار الشريعة كلها، كما لا يخفى؛ إذ الأصول واحدة وكذا الطرق والرواة والمشايخ والنقلة، ولعمري إن القول بعدم التغيير والتبديل لا يخرج من حسن الظن بأئمة الجور وأنهم لم يخونوا في الإمامة الكبرى مع ظهور خيانتهم في الأمانة الأخرى التي هي أشد ضرراً على الدين .
“এসব সংবাদে যে স্পষ্ট বার্তা রয়েছে, তা কারো নিকট অস্পষ্ট থাকার কথা নয়, যা আমাদের কথা ও মতের বিশুদ্ধতার প্রমাণ, যদি এতে কোনো সন্দেহের সৃষ্টি হয়, বা কোনো দুর্বলতা থাকে, তাহলে শরী‘আতের সব বিষয়েই সন্দেহের অবকাশ থাকা স্বাভাবিক, যা কারো নিকট অস্পষ্ট নেই। কারণ, মূলনীতি একটিই, অনুরূপ বর্ণনা এবং মাশাইখও এক। আমার জীবনের শপথ, যদি কুরআনের ব্যাপারে পরিবর্তন ও বিকৃতির আকীদা পোষণ না করা হয়, তাহলে যালিম ইমামদের ব্যাপারে সুধারণাই পোষণ করা হবে, আরো প্রমাণিত হবে যে, বড় ইমামতির ব্যাপারে তারা খিয়ানত করেন নি, অথচ তাদের খিয়ানত প্রকাশ পেয়েছে, তা দীনের জন্য খুব বেশি ক্ষতিকর”। [“আদ-দুরারুন নাজফিয়্যাহ” লি ইউসুফ আল-বাহরানি, মুয়াসসিস আলুল বাইত লি ইহইয়াউত তুরাস”: (পৃ. ২৯৮)]
এরা স্পষ্টভাবে কুরআন সম্পর্কে বিষোদগার করছে, তাদের বিশ্বাস কুরআনে বিকৃতি ঘটেছে!
অপর দল: তারা হচ্ছে ‘রাসূলের সাথী সাহাবায়ে কেরাম’ তাদের বড় অপরাধ হচ্ছে তারা আলীর পরিবর্তে আবু বকরের হাতে খিলাফতের ভার অর্পণ করেছে, যে অপরাধ শী‘আ ইমামিয়ারা কখনো ক্ষমা করবে না!
প্রথম দল: যারা আল্লাহর কিতাবের ব্যাপারে বিষোদগার করে, তাতে বিকৃতির আকীদা পোষণ করে, শী‘আ বারো ইমামিয়াহ আলিমরা তাদের সম্পর্কে বলে, ‘তারা ভুল করেছে’, ‘তারা ইজতেহাদ করেছে, তাবিল বা ব্যাখ্যা করেছে, আমরা তাদের সাথে একমত নই’। শী‘আদের কতক আলিম তাদের ব্যাপারে এ মন্তব্যই করে।
আফসোস! কুরআনের হিফাযতের বিষয় বা তাতে বিকৃতির বিষয় কি ইজতেহাদ ও গবেষণার অপেক্ষা রাখে?! এ কোনো ধরণের জঘন্য গবেষণা বা ইজতেহাদ যে, কুরআনের মধ্যে নিকৃষ্ট আয়াত রয়েছে! নিশ্চয় এটা বড় কিয়ামত বৈ কিছু নয়!
এখানে তারা এ কথা বলে, আবার তাদের (কুরআনে বিকৃতি সমর্থনকারীদের) সমর্থন করে, তারা কি বলে একটু লক্ষ্য করুন:
শী‘আ বারো ইমামিয়াহর বড় আলিম সায়্যেদ আলী আল-মিলানী তার ( عدم تحريف القرآن ص 34) নামক গ্রন্থে, মির্জা নূরী আত-তাবরাসীর (যিনি কুরআনে বিকৃতি বিশ্বাস করে) সমর্থন করে বলেন,
الميرزا نوري من كبار المحدثين، إننا نحترم الميرزا النوري، الميرزا نوري رجل من كبار علمائنا، ولا نتمكن من الاعتداء عليه بأقل شيء، ولا يجوز، وهذا حرام، إنه محدّث كبير من علمائنا !!
“মির্জা নূরী বড় মহাদ্দিস, আমরা অবশ্যই মির্জা নূরীকে সম্মান করি, তিনি আমাদের বড় আলিমদের একজন, তার ওপর সামান্য বাক্য ব্যয় করেও আমরা সীমালঙ্ঘন করতে পারি না, বৈধও নয়। এটা হারাম, নিশ্চয় তিনি একজন বড় মুহাদ্দিস”!! [“সুম্মা আবসারতুল হাকিকাহ”: (পৃ. ২৯৪)] তাদের বৈপরীত্য লক্ষ্য করুন।
১৬৪. আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ٱتَّبِعُواْ مَآ أُنزِلَ إِلَيۡكُم مِّن رَّبِّكُمۡ وَلَا تَتَّبِعُواْ مِن دُونِهِۦٓ أَوۡلِيَآءَۗ﴾ [ الاعراف : ٣ ]
“তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা নাযিল করা হয়েছে, তা অনুসরণ কর এবং তাকে ছাড়া অন্য অভিভাবকের অনুসরণ করো না”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৩]
কুরআনের এ আয়াতই প্রমাণ করে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত কারো অনুসরণ করা যাবে না, ইমাম যদি নির্বাচন করতেই হয়, তা শুধু আল্লাহর বাণী পৌঁছানোর জন্য, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে দীন পৌঁছে দিয়েছেন, তার বিপরীতে আজগুবি কোনো কিছু প্রচার করার জন্য নয়। আমরা দেখি যে, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে যখন কুরআনের ফয়সালার দিকে আহ্বান করা হয়েছিল, তিনি তার ডাকে সারা দিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন কুরআনকে ফয়সালাকারী মানাই যথাযথ। এ কথায় আলী যদি সঠিক থাকেন, তাহলে আমাদের কথাও তাই। আর তিনি যদি বাতিলের ডাকে সাড়া দিয়ে থাকেন, তাহলে আমরা বলব এটা তার পক্ষে কখনোই সম্ভব নয়। ইমামের উপস্থিতিতে কুরআনকে ফয়সালাকারী মানা নাজায়েয হতো, তাহলে আলী বলতেন: “তোমরা কীভাবে কুরআনের ফয়সালা তবল কর, অথচ রাসূলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দূত আমি তোমাদের মাঝে বিদ্যমান?
তারা যদি বলে: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু মারা গেছেন, তাই দীন প্রচারকারী ইমাম প্রয়োজন।
আমরা বলব: এটা একটা প্রতারণা, দলীল বিহীন দাবি ও যুক্তিহীন কথা। মানুষের প্রয়োজন শুধু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দীন ও তার ব্যাখ্যা। হোক না সে রাসূলের দরবারের উপস্থিত বা অনুপস্থিত বা পরবর্তীতে আগুন্তক কেউ।
দ্বিতীয়তঃ তারা যদি বলে সব যুগে ইমামের উপস্থিতি অবশ্যক, তাহলে যারা ইমাম থেকে দূরে অবস্থান করছে, তাদের দ্বারা এ আকীদা বিনষ্ট হয়ে যায়। কারণ, দুনিয়ার সব জায়গায় উপস্থিতি অসম্ভব। পৃথিবীর আনাচে-কানাচে বিদ্যমান গরীব, দুর্বল, নারী, অসুস্থ ও ব্যস্ত সকলের নিকট তার পৌঁছা অসম্ভব। অথচ (শী‘আদের মতে) এরা যদি ইমাম থেকে গাফেল থাকে, তাহলে তাদের ধ্বংস অনিবার্য, অতএব, তাদের নিকট ইমামের পৌঁছানো জরুরি। আর এটা সর্বজন স্বীকৃত যে, তাদের সকলের নিকট ইমামের পৌঁছানো কখনো ভাবেই সম্ভব নয়, তাই তার বাণী পৌঁছানো জরুরি, এটা সম্ভব।
আর আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, যদি মানুষের নিকট কিছু পৌঁছাতে হয়, তাহলে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী পৌঁছাব, তার বাণী পৌঁছানোই অধিকতর শ্রেয়, এতে কারো দ্বিমত পোষণ করার সুযোগ নেই। [“আল-ফিসাল ফিল মিলাল ওয়াল আহওয়া ওয়াননিহাল”: (৪/১৫৯-১৬০)] ইমামের বাণী কেন পৌঁছাব!
১৬৫. ইমামদের থেকে নির্ভরযোগ্য সনদে বর্ণিত শী‘আদের কিতাবে কতক বাণী রয়েছে, যেখানে এমন কিছু লোককে অভিশাপ দেওয়া ও মিথ্যাবাদী বলা হয়েছে, যেসব লোকদের কথা ও বর্ণনার ওপর শী‘আ মাযহাবের ভিত্তি। (অর্থাৎ ইমামগণ যাদের মিথ্যাবাদী বলেছেন এবং যাদেরকে অভিশাপ দিয়েছেন, শী‘আ মাযহাবের বাণী তারাই!!!) কিন্তু শী‘আ আলিমরা ইমামদের সেসব বর্ণনা গ্রহণ করে না। (কারণ, তাহলে তারা আহলে সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে এবং তাদের মিথ্যাচারের মুখোশ খসে পড়বে), তারা এগুলোর জাওয়াব দেওয়ার জন্য ‘তাকইয়া’র আশ্রয় গ্রহণ করে। মূলতঃ এভাবে তারা তাদের ইমামদের কথাই প্রত্যাখ্যান করে। অতএব, আমরা বলি, যদি ইমামের দলীল অস্বীকার কারণে শী‘আ মাযহাবে কেউ কাফির হয়, তাহলে তারা সবার আগে কাফির!, তাদের কথার বিচারে।
শী‘আদের বড় আলিম, মুহাম্মাদ রশিদ রেজা নিজে স্বীকার করেছেন: “আমাদের মাযহাবের যারা বর্ণনাকারী, ইমামরা নিজেরাই তাদের দোষ ও খারাপি বর্ণনা করেছেন, শী‘আদের কিতাবে যা উল্লেখও আছে। তিনি হিশাম ইবন সালেম জাওয়ালেকির দোষ সম্পর্কে বলেন,
«وجاءت فيه مطاعن، كما جاءت في غيره من أجلة أنصار أهل البيت وأصحابهم الثقات والجواب عنها عامة مفهوم»
“তার ব্যাপারে অনেক দোষ বর্ণনা করা হয়েছে, যেরূপ বর্ণনা করা হয়েছে আহলে বাইতের অন্যান্য আনসার ও বিশ্বস্ত সাথীদের ব্যাপারে, এর উত্তর সবার জানা”। [“আল-ইমাম আস্সাদেক” লি মুহাম্মদ হুসাইন আল-মুজাফ্ফর: (পৃ. ১৭৮)] অর্থাৎ তাদের নিকট এর প্রচলিত উত্তর হচ্ছে ‘তাকইয়া’। [আল-ইমাম আস্সাদেক” লি মুহাম্মদ হুসাইন আল-মুজাফ্ফর: (পৃ. ১৭৮)] অতঃপর তিনি বলেন,
«وكيف يصح في أمثال هؤلاء الأعاظم قدح؟ وهل قام دين الحق وظهر أمر أهل البيت إلا بصوارم حججهم» .
“এ ধরণের মহান ব্যক্তিদের মধ্যে দোষ থাকা কীভাবে সম্ভব? এদের বাগ্মীর মাধ্যমেই তো আহলে বাইতের দীন প্রচার ও প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে”। [আল-ইমাম আস্সাদেক” লি মুহাম্মদ হুসাইন আল-মুজাফ্ফর: (পৃ. ১৭৮)]
দেখুন নিজেদের ব্যাপারে তারা কীভাবে পক্ষপাতিত্ব করে: আহলে বাইত যাদের বদনাম ও দোষ বর্ণনা করেছে, তাদেরকেই তারা রক্ষা করতে চায়। তারা এ পাপিষ্ঠ ও অভিশপ্তদের রক্ষার জন্য আহলে বাইতের বর্ণনা পর্যন্ত ত্যাগ করে। যেসব বর্ণনায় তাদের আলিমদের মিথ্যারোপ করা হয়েছে ও তাদের থেকে সতর্ক করা হয়েছে। এসব বর্ণনা খোদ শী‘আদের কিতাবই বর্ণনা করে। এর দ্বারা তারা মূলতঃ আহলে বাইতকে মিথ্যারোপ করে। আর এসব মিথ্যাবাদীরা যা বলেছে, তাদেরকে তারা সত্য মনে করে, তাদের ব্যাপারে ইমামদের সতর্ক বাণী ও উপদেশকে তারা ‘তাকইয়া’ বলে চালিয়ে দেয়। তারা তাদের ইমামদের যেসব বর্ণনা গ্রহণ করে না, যা মুসলিম উম্মাহর সাথে মিলে যায়। বরং তারা তাদের ইমামদের শত্রুদের অনুসরণ করে, তাদের কথা গ্রহণ করে এবং ইমামদের বাণী প্রত্যাখ্যান করার জন্য ‘তাকইয়া’র আশ্রয় নেয়! এ হচ্ছে শী‘আ!
১৬৬. এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে আবু বকর, উমার ও উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুমের সম্পর্ক অধিক ঘনিষ্ঠ ছিল, তারাই তার সর্বাধিক নৈকট্যের অধিকারী ছিলেন। তিনি তাদের সকলের সাথেই বৈবাহিক সম্পর্ক কায়েম করেছেন। তিনি তাদের মহব্বত করতেন এবং তাদের প্রশংসা করতেন। অতএব,
আমাদের প্রশ্ন: তারা কি প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য উভয়ভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলেন অথবা এর বিপরীত ছিলেন তারা। যদি তারা এত নৈকট্যপ্রাপ্ত ও ঘনিষ্ঠ হওয়ার পরও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে আন্তরিক না থাকেন, তাহলে দুই অবস্থার যে কোনো একটি অবশ্যই জরুরি: হয়তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের ব্যাপারে জানতেন না অথবা তিনি তাদের সাথে তোষামোদ ও চাটুকারিতা করেছেন! আমরা যেটাই মানি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর বড় অপবাদ, যেমন কেউ বলেছেন:
فإن كنت لا تدري فتلك مصيبة
وإن كنت تدري فالمصيبة أعظم
“যদি তুমি না জান, তাহলে এটা এক ধরণের মুসীবত,
আর যদি জান, তাহলে মুসীবত এর চেয়েও বড়”।
আর যদি তারা রাসূলের মৃত্যুর পর বিচ্যুত হয়, তাহলে এটা কি আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূলকে হেয় ও অপমান করা নয় যে, তার বিশিষ্ট সাহাবী ও প্রধান সঙ্গীরাই তার দীন ত্যাগ করেছে!? আশ্চর্য! আল্লাহ যে নবীর দীনকে সব দীনের ওপর জয়ী করবেন ঘোষণা দিয়েছেন, তার সাথীরা কীভাবে মুরতাদ হয়? এভাবেই শী‘আরা রাসূলের ওপর বড় বড় অপবাদ আরোপ করে।
যেমন আবু জুরআ রাজি বলেছেন: এদের উদ্দেশ্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অপবাদ দেওয়া ও তার ব্যাপারে বিষোদগার করা, যেন লোকেরা বলে: মুহাম্মাদ ছিল একজন নিকৃষ্ট লোক, আর তার সাথীরাও ছিল নিকৃষ্ট। যদি সে ভালো লোক হত, তাহলে তার সাথীরাও ভালো হতো।
১৬৭. শী‘আরা বলে:
«الإمامة واجبة لأن الإمام نائب عن النبي صلى الله عليه وسلم في حفظ الشرع الإسلامي وتيسير المسلمين على طريقه القويم، وفي حفظ وحراسة الأحكام عن الزيادة والنقصان»
“ইমামতি ওয়াজিব। কারণ, ইমাম হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিনিধি, যার দায়িত্ব ইসলামী শরী‘আত হিফাযত করা, মুসলিমদের এ দীনের পথে চলতে সাহায্য করা এবং ইসলামী বিধানকে সংযোজন ও বিয়োজন থেকে সংরক্ষণ করা”। [“আশ-শিয়াহ ফিত তারিখ”: (পৃ. ৪৪-৪৫)] তারা আরো বলে:
«لابد من إمام منصوب من الله تعالى وحاجة العالم داعية إليه، ولا مفسدة فيه، فيجب نصبه ...»
“আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন নির্দিষ্ট ইমাম থাকা অবশ্য জরুরী, জগতবাসী ইমামের মুখাপেক্ষী, তাহলে জগতে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে না। অতএব, নির্দিষ্ট ইমাম ওয়াজিব...” [“মিনহাজুল কারামাহ”: (পৃ. ৭২-৭৩)] তারা আরো বলে:
«إنما وجبت لأنها لطف .. وإنما كانت لطفاً؛ لأن الناس إذا كان لهم رئيس مطاع مرشد يردع الظالم عن ظلمه، ويحملهم على الخير، ويردعهم عن الشر، كانوا أقرب إلى الصلاح، وأبعد عن الفساد، وهو اللطف» .
“ইমামতি এ জন্যও প্রয়োজন যে, ইমামতি হচ্ছে আল্লাহর অনুগ্রহ, আর অনুগ্রহ এ জন্য যে, মানুষের জন্য যদি সঠিক দিকনিদের্শনা প্রদানকারী একজন সর্বজন নেতা থাকা জরুরি, যিনি যালিমকে যুলুম থেকে বিরত রাখবেন, মানুষদের ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ করবেন ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখবেন, তাহলে তারা সংশোধন হবে ও অনিষ্ট থেকে দূরে থাকবে, আর এটাই হচ্ছে অনুগ্রহ”। [“আইয়ানুশ শী‘আহ”: (পৃ. ৬)]
আমাদের পশ্ন: শুধু আলী রাদিয়াল্লাহ আনহু ব্যতীত তোমাদের বারো ইমামের কেউ দীনি ও দুনিয়াবী শাসনের সর্বময় ক্ষমতা লাভ করে নি। তারা যালিমকে যুলুম থেকে বিরত রাখতে পারেনি, মানুষদের কল্যাণে অগ্রগামী করতে পারেনি, অনুরূপ পারে নি তাদেরকে খারাপি থেকে বিরত রাখতে! অতএব, তোমরা তোমাদের ইমামদের ব্যাপারে এসব ধারণ প্রসূত বাজে আকীদা কীভাবে পোষণ কর, যা কখনো বাস্তবে পরিণত হয় নি?! বরং তোমাদের এসব আকীদাই প্রমাণ করে যে, তারা ইমাম ছিল না। কারণ, তাদের থেকে মানুষ এ ধরণের অনুগ্রহ কখনো লাভ করে নি।
১৬৮. নাহজুল বালাগায় রয়েছে, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু নিম্নের দো‘আ দ্বারা আল্লাহর নিকট মোনাজাত করতেন:
«اللهم اغفر لي ما أنت أعلم به مني، فإن عدت فعد عليّ بالمغفرة، اللهم اغفر لي ما وأيت من نفسي ( وأيت : أي وعدت، والوأي : الوعد ) ولم تجد له وفاء عندي، اللهم اغفر لي ما تقربت به إليك بلساني ثم ألفه قلبي، اللهم اغفر لي رمزات الألحاظ وسقطات الألفاظ، وسهوات الجنان وهفوات اللسان» .
“হে আল্লাহ, তুমি আমার যেসব অপরাধ জান তা ক্ষমা কর, যদি আমি পুনরায় অপরাধ করি, পুনরায় আমাকে ক্ষমা কর। হে আল্লাহ তুমি আমাকে যে ওয়াদা দিয়েছ, কিন্তু আমি তা আদায় করতে পারেনি, সে ব্যাপারেও আমাকে ক্ষমা কর। হে আল্লাহ তুমি আমাকে ক্ষমা কর, যার মাধ্যমে আমি তোমার নৈকট্য অর্জন করেছি, অতঃপর আমার অন্তর তার আবৃত্তি করেছে। হে আল্লাহ আমার কু-দৃষ্টি, বদ-জবানী, অন্তরে কু-মন্ত্রণা ও মুখের বাচালতাকে ক্ষমা করুন”। [“নাহজুল বালাগাহ” শারহু ইবন আবিল হাদিদ: (৬/১৭৬)]
আমরা দেখছি আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছেন, যেন আল্লাহ তার ভুল-চুক ইত্যাদি পাপগুলো ক্ষমা ও মার্জনা করে দেন, এটা কি ইমামদের নিষ্পাপতা বিরোধী নয়, শী‘আরা যেমন ধারণা করে!
১৬৯. শী‘আদের দাবি যে, এমন কোনো নবী নেই যিনি আলীর ইমামতির দিকে আহ্বান করেন নি! [দেখুন: “বিহারুল আনওয়ার”: (১১/৬০), “আল-মাআলেমুল জুলফা”: (পৃ. ৩০৩)] আল্লাহ তা‘আলা সকল নবীদের থেকে আলীর ইমামতির অঙ্গীকার নিয়েছেন! [“আল-মাআলেমুল জুলফা”: (পৃ. ৩০৩)] বরং আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর ব্যাপারে শী‘আদের বাড়াবাড়ি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তাদের শাইখ ‘তিহরানী’ দাবি করেন:
«عُرضت على جميع الأشياء، فما قبل صلح، وما لم يقبل فسد» !
“আলীর ইমামতি সকল জিনিসের ওপর পেশ করা হয়েছিল, যারা কবুল করেছে তারা ঠিক আছে, আর যারা কুবল করে নি তারা বিনষ্ট হয়ে গেছে”। [“ওয়াদায়েউন নবুয়াহ” লিত তিহরানি: (পৃ. ১৫৫)]
আমাদের প্রশ্ন: নবীগণ আল্লাহর তাওহিদ ও একমাত্র তার ইবাদাতের দাওয়াত দিয়েছেন, আলীর ইমামতির দাওয়াত তারা দেন নি, যেমন তোমরা ধারণা কর। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمَآ أَرۡسَلۡنَا مِن قَبۡلِكَ مِن رَّسُولٍ إِلَّا نُوحِيٓ إِلَيۡهِ أَنَّهُۥ لَآ إِلَٰهَ إِلَّآ أَنَا۠ فَٱعۡبُدُونِ ٢٥﴾ [ الانبياء : ٢٥ ]
“আর তোমার পূর্বে এমন কোনো রাসূল আমরা পাঠাই নি যার প্রতি আমরা এই অহী নাযিল করি নি যে, ‘আমি ছাড়া কোনো কোনো (সত্য) ইলাহ নেই। সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদত কর”। সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ২৫)
শী‘আদের দাবি, আলীর ইমামতি সকল নবীর কিতাবে লিখিত ছিল, তাহলে একথা কেন শুধু শী‘আরাই জানে, অন্য কেউ কেন জানে না?! অন্যান্য ধর্মের লোকেরা কেন তা জানে না?! অন্য ধর্মের অনেকেই তো ইসলাম গ্রহণ করেছে, তারা তো কখনো এটা বলে নি?! কুরআনের কোথাও কেন এর উল্লেখ নেই, যে কুরআন সকল কিতাবের সাক্ষী ও সত্যতার প্রমাণ?!
১৭০. ইমামগণ কি ‘মুতআ’ বিয়ে করেছেন?! যদি করেন তাদের ‘মুতআ’র সন্তান কারা?!
১৭১. শী‘আরা বলে: ইমামগণ জানে আগে কি ছিল ও পরে কি হবে, তাদের নিকট কোনো কিছু গোপন নেই। আর আলী ইবন আবু তালিব ছিলেন ইলমের দরজা।
আমাদের প্রশ্ন: তাহলে তিনি কীভাবে ‘মজি’র হুকুম সম্পর্কে অজ্ঞ থাকেন, যা জানার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট অন্য কাউকে প্রেরণ করেন?!
১৭২. শী‘আদের নিকট সাহাবীদের সবচেয়ে বড় অপরাধ হচ্ছে, তারা আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর ইমামতি থেকে বিচ্যুত হয়েছেন, (যেমন তাদের দাবি), আর তার নিকট খিলাফত সোপর্দ না করা। এ কারণে শী‘আরা তাদের নির্ভরযোগ্য মনে করে না, কিন্তু শী‘আদের অন্যান্য গ্রুপ, যারা তাদের কতক ইমামকে অস্বীকার করে, যেমন الفطحية والواقفة ইত্যাদি?! তাদের কেন শী‘আরা অনির্ভরযোগ্য মনে করে না?! বরং দেখি তাদের লোকদের দলীল দেয়, তাদেরকে নির্ভরযোগ্য মনে করে? এ বৈপরিত্ব কেন?!
১৭৩. শী‘আদের সকল কিতাব এ ব্যাপারে একমত যে, তাদের ইমাম ও অন্যরা ‘তাকইয়া’ ব্যাবহার করেন, (যেমন পূর্বে বলা হয়েছে), অর্থাৎ তাদের অন্তরে যা নেই মুখে তাই বলেন, এভাবে তিনি কখনো মিথ্যাও বলেন! আর যে ‘তাকইয়া’ ব্যবহার করে, সে অবশ্যই মিথ্যা বলে, আর মিথ্যা বলা পাপ!
১৭৪. কুলাইনী বর্ণনা করেন, আলীর পূর্বের খলিফাগণ যে বিকৃতি করেছে, তার কতক সাথী সে বিষয়গুলো তাকে সংশোধন করতে বলেছিল, কিন্তু তিনি তা এ বলে পরিহার করেন যে, তার সাথীরা তার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। অথচ তারা তিন খলিফা (আবু বকর, উমার ও উসমান) সম্পর্কে অপবাদ দেয় যে, তারা কুরআন ও সুন্নাহের মধ্যে বিকৃতি করেছেন। তাহলে আলী সেসব বিকৃতি কেন রেখে দিলেন, এটা কি তার নিষ্পাপ হওয়ার দাবি, যেমন তোমরা বল?!
১৭৫. উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু তার মৃত্যুর পর পরামর্শের জন্য ছয়জন লোক নির্বাচন করেন। অতঃপর তিনজন অব্যহতি নেন। অতঃপর অব্যহতি নেন আব্দুর রহমান ইবন আউফ। অতঃপর অবশিষ্ট থাকে শুধু উসমান ও আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুমা। তখন আলী কেন বলল না আমিই খিলাফতের হকদার, খিলাফতের ওসিয়ত আমার জন্যই করা হয়েছে?! উমারের পরেও কি আলী কাউকে ভয় করতেন?!
১৭৬. শী‘আদের অদ্ভুত কাণ্ডের একটি হচ্ছে কিছু জাল হাদীস তৈরি করা, যাতে তাদের ইমামদের ক্রমানুসারে নাম রয়েছে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তাদের মাহদী পর্যন্ত। এতদসত্বেও বর্তমান যুগে তাদের অনেক মৌলিক গ্রন্থ সেসব নামের উল্লেখ অস্বীকার করে! যেমন, তাদের শাইখ ‘খুইয়ি’ বলেন,
«الروايات المتواترة الواصلة إلينا من طريق العامة والخاصة قد حددت الأئمة عليهم السلام باثني عشر من الناحية العددية ، ولم تحددهم بأسمائهم عليهم السلام واحدًا بعد واحد» .
“বিশেষ ব্যক্তি ও সাধারণ লোক থেকে তাওয়াতুর তথা একাধিক সনদে আমাদের নিকট পৌঁছেছে যে, ইমামদের নির্দিষ্ট সংখ্যা বারোজন, কিন্তু তাদের এক একজনের নাম নির্দিষ্ট নেই”। [“সিরাতুন নাজাত”: (২/৪৫২); “আল-ইমামাহ ওয়ান-নাস” লিল উস্তাদ ফায়সাল নুর: (পৃ. ৩০৬)]
১৭৭. শী‘আরা ধারণা করে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর অধিকাংশ সাহাবীই মুরতাদ হয়ে গেছেন, -যেমন তাদের নিকট প্রসিদ্ধ-, অতঃপর দেখি তারা নিজেরাই এর বিপরীত করে। যদি তাদের বলা হয়: যেহেতু আলীর সম্পর্কে খিলাফতের নস-দলীল রয়েছে, তাহলে কেন তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর খিলাফতের দাবি করেন নি? তারা বলে, সাহাবারা মুরতাদ হয়ে যাবে তাই!! যেমন, ‘আল-কাফি’ গ্রন্থে তাদের ইমাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন:
«إن الناس لما صنعوا ما صنعوا إذ بايعوا أبابكر لم يمنع أمير المؤمنين من أن يدعو لنفسه إلا نظره للناس ، وتخوفًا عليهم أن يرتدوا عن الإسلام فيعبدوا الأوثان» .
“মানুষেরা যখন আবু বকরের হাতে বাই‘আতে করে ফেলেছে, তখন আমিরুল মুমিনীন তাদের দিকে তাকিয়ে নিজের খিলাফতের দাবি করেন নি, পাছে তারা ইসলাম ত্যাগ করে মূর্তি পূজায় মগ্ন হবে”। [“আল-কাফি”: (৮/২৯৫); “বিহারুল আনওয়ার”: (২৮/২৫৫); “আমালিত তুসি”: (পৃ. ২৩৪)]
১৭৮. শী‘আরা দাবি করে যে, তাদের ইমামদের ব্যাপারে নস তথা দলীল রয়েছে। কিন্তু আমরা তাদের কিতাবে অনেক বর্ণনা দেখি, যা তাদের এ নীতি বিরুদ্ধ, উস্তাদ ফয়সাল নুর তার الإمامة والنص গ্রন্থে এসব বর্ণনা জমা করেছেন, অধিক জানার মূল কিতাব দেখুন।
সর্বশেষ আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করছি, তিনি এ কিতাব দ্বারা শী‘আ যুবক শ্রেণিকে উপকৃত করুন, এ কিতাবকে তিনি তাদের হিদায়াত ও সত্য পথের দিশারী হিসেবে কবুল করুন। তারা যেন সত্যকে আঁকড়ে ধরে, সত্য পথে ফিরে এবং সত্যের ব্যাপারে কোনো তিরষ্কার ও ধিক্কারকে পরোয়া না করে। আমীন।
এক. হয়তো আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু নিষ্পাপ বা মাসুম নন। কারণ, তিনি নিজ মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন কাফিরের সাথে!, এটা শী‘আদের মূলনীতি বিরোধী। এ থেকে আরো স্পষ্ট হয় তিনি ব্যতীত অন্যান্য ইমামও নিষ্পাপ নন।
দুই. অথবা উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু মুসলিম! যে কারণে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু তার সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। এ দু’টি প্রশ্ন শী‘আদের নিরুত্তর করে দেয়।
২ শী‘আরা ধারণা করে আবু বকর ও উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা কাফির ছিলেন, কিন্তু তা স্বত্বেও আমরা লক্ষ্য করি, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু, শী‘আদের নিকট যিনি নিষ্পাপ ইমাম, তাদের উভয়ের খিলাফতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন এবং একের পর অপরের নিকট বায়‘আত গ্রহণ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন নি। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, আলী নিষ্পাপ ছিলেন না, কারণ শী‘আদের ধারণানুযায়ী আলীর স্বীকারোক্তি মোতাবেক তারা ছিল কাফির, যালিম ও আত্মসাৎকারী, আর তিনি তাদের হাতেই বাই‘আত করেছেন। এটা তো তার নিষ্পাপ হওয়ার বিপরীত এবং যালেমের জুলমের ওপর সাহায্য করা বৈ কিছু নয়। নিষ্পাপ ব্যক্তি থেকে এমন কখনো হতে পারে না অথবা তার কর্ম সঠিক ছিল!! কারণ, তারা উভয়ে ছিলেন ইনসাফপূর্ণ, সত্যবাদী ও মুসলিম খলিফা। অতএব, শী‘আদের পক্ষ থেকে তাদেরকে কাফির বলা, তাদের গালমন্দ করা, তাদের ওপর লা‘নত করা ও তাদের ওপর অসন্তুষ্টি প্রকাশ করা, বস্তুত তাদের ইমামেরই বিরোধিতা করা! আমরা তো নির্বাক, আবুল হাসান আলী –রাদিয়াল্লাহু আনহু-র অনুসরণ করব, না তার পাপিষ্ঠ অপরাধী দল শী‘আদের অনুসরণ করব!?
৩. ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহার মৃত্যুর পর আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু অনেক নারীই বিয়ে করেছেন, যাদের থেকে তার অনেক সন্তানও রয়েছে। যেমন,
(ক) আব্বাস ইবন আলী ইবন আবু তালিব।
(খ) আব্দুল্লাহ ইবন আলী ইবন আবু তালিব।
(গ) জাফর ইবন আলী ইবন আবু তালিব।
(ঘ) উসমান ইবন আলী ইবন আবু তালিব।
এদের সকলের মাতা: উম্মুল বানিন বিনত হিজাম ইবন দারেম। [কাশফুল গুম্মাহ ফি মারেফাতিল আয়িম্মাহ।]
(ক) উবাইদুল্লাহ ইবন আলী ইবন আবি তালিব।
(খ) আবুবকর ইবন আলী ইবন আবি তালিব।
এদের মাতা: লায়লা বিনতে মাসউদ আদ-দারিয়াহ [কাশফূল গুম্মাহ ফি মারেফাতিল আয়িম্মাহ, আল-ইরশাদ: (পৃ. ১৬৭); মুজামুল খুইয়ি: (২১/৬৬)]।
(ক) ইয়াহইয়া ইবন আলী ইবন আবি তালিব।
(খ) মুহাম্মাদ আল-আসগার ইবন আলী ইবন আবি তালিব।
(গ) আউন ইবন আলী ইবন আলী তালিব।
এদের মাতা: আসমা বিনতে উমাইয়েস [কাশফূল গুম্মাহ ফি মারেফাতিল আয়িম্মাহ।]।
(ক) রুকাইয়া বিনত আলী ইবন আবি তালিব।
(খ) উমার ইবন আলী ইবন আবি তালিব, তিনি পয়ত্রিশ বছর বয়সে মারা যান।
এদের মাতা: উম্মে হাবিবা বিনতে রাবিয়াহ [কাশফূল গুম্মাহ ফি মারেফাতিল আয়িম্মাহ, আল-ইরশাদ: (পৃ. ১৬৭), মুজামুল খুইয়ি: (১৩/৪৫)]।
(ক) উম্মুল হাসান বিনতে আলী ইবন আবি তালিব।
(খ) রামলাতুল কুবরা বিনতে আলী ইবন আবি তালিব।
এদের মাতা: উম্মে মাসউদ বিনতে উরওয়াহ ইবন মাসউদ আস-সাকাফি [আলী আল-আরবালি রচিত ‘কাশফূল গুম্মাহ ফি মারেফাতিল আয়িম্মাহ’: (২/৬৬), আল-ইরশাদ: (পৃ. ১৬৭); মুজামুল খুইয়ি: (১৩/৪৫); শী‘আদের আরো প্রমাণ্যগ্রন্থসমূহে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর সন্তানের এসব নাম উল্লেখ রয়েছে। দেখুন: উস্তাদ ফায়সাল নূর রচিত ‘আল-ইমামাহ ওয়ান নস’ (পৃ. ৬৮৩-৬৮৬)]।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে কোনো ব্যক্তি তার কলিজার টুকরা, সন্তানদের নাম কি শত্রুদের নামে রাখে?! আর এ পিতা যদি হয় আলী, তার থেকে এটা কীভাবে সম্ভব! আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু কীভাবে নিজ সন্তানদের নাম তাদের নামানুসারে রাখতে পারেন, যাদেরকে তোমরা কাফির ধারণা কর?! বিবেকবান কোনো সুস্থ ব্যক্তি কি তার প্রিয় সন্তানদের নাম শত্রুদের নামে রাখতে পারে?! তোমরা কি জান, আলীই কুরাইশ বংশের প্রথম ব্যক্তি, যিনি নিজ সন্তানদের নাম আবু বকর, উমার ও উসমান রেখেছেন?
৪ শী‘আদের নিকট গ্রহণযোগ্য কিতাব ‘নাহজুল বালাগা’র বর্ণনাকারী বলেন, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু খিলাফত থেকে অব্যাহতি চেয়ে বলেছেন: ( دعوني والتمسوا غيري !) ‘তোমরা আমাকে অব্যাহতি দাও, অন্য কাউকে তালাশ করে নাও’। [নাহজুল বালাগাহ: পৃ. ১৩৬), আরো দেখুন: (পৃ. ৩৬৬-৩৬৭) ও (পৃ. ৩২২)]
এ উক্তি তো শী‘আদের মাযহাবের মূলনীতিই উপড়ে ফেলে। তিনি কীভাবে খিলাফত থেকে অব্যাহতি চান, অথচ শী‘আদের নিকট তার ইমামতি ও খিলাফত আল্লাহর পক্ষ থেকে ফরয ও অবশ্য জরুরি, তাদের ধারণানুযায়ী তিনি আবু বকরের নিকট এ খিলাফতের দাবী করতেন?!
৫. শী‘আদের ধারণা যে, ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শরীরের অংশ, তাকে আবু বকরের খিলাফতের সময় অপমান করা হয়েছে, তার পাঁজরের হাঁড় ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে, তার বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল এবং তার গর্ভের বাচ্চা ফেলে দেওয়া হয়েছে, শী‘আদের নিকট যার নাম মুহসিন!
প্রশ্ন হলো: এসব ঘটনার সময় আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু কোথায় ছিলেন?! তার বাহাদুরি কোথায় ছিল, তিনি কেন নিজের অধিকার আদায় করেন নি, অথচ তিনি ছিলেন বীর বাহাদুর, বারবার আক্রমণকারী?!
৬. আমরা দেখি বড় বড় সাহাবায়ে কেরাম আহলে বাইতের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক করেছেন, তাদের নারীদের বিয়ে করেছেন, অনুরূপ তারাও সাহাবীদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক করেছেন, তাদের মেয়েদের বিয়ে করেছেন, বিশেষ করে আবু বকর ও উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা। এ ব্যাপারে শী‘আ-সুন্নী সকল ঐতিহাসিক ও লেখকগণ একমত। যেমন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিয়ে করেছেন:
আয়েশা বিনতে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে।
হাফসা বিনতে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুকে।
নিজের দুই মেয়ে রুকাইয়া, অতঃপর উম্মে কুলসুমকে বিয়ে দিয়েছেন তৃতীয় খলিফা উসমান ইবন আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিকট, এ জন্যই তাকে যুন-নূরাইন (দুই নূর বিশিষ্ট) বলা হয়, তিনি ছিলেন দানশীল ও লাজুক।
অতঃপর তার ছেলে আবান ইবন উসমান বিয়ে করেন উম্মে কুলসুম বিনতে আব্দুল্লাহ ইবন জাফর ইবন আবি তালিবকে। অর্থাৎ আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর ভাতিজার মেয়ে।
মারওয়ান ইবন আবান ইবন উসমান বিয়ে করেন উম্মুল কাসেম বিনতে হাসান ইবন হাসান ইবন আলী ইবন আবি তালিবকে। অর্থাৎ উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর নাতি বিয়ে করেন আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু নাতির মেয়েকে।
যায়েদ ইবন আমর ইবন উসমান বিয়ে করেন সাকিনা বিনতে হুসাইনকে। অর্থাৎ উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর নাতি বিয়ে করেন আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর নাতিনকে।
আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবন উসমান বিয়ে করেন ফাতেমা বিনতে হুসাইন ইবন আলীকে। অর্থাৎ উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর নাতি বিয়ে করেন হুসাইনের মেয়ে তথা আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর নাতিনকে।
আমরা শুধু সাহাবাদের থেকে তিন খলিফারই উল্লেখ করলাম, অন্যান্য সাহাবাদের সাথে যদিও আহলে বাইতের বৈবাহিক সম্পর্ক ছিল, এটা বুঝানোর জন্য যে, আহলে বাইত তাদেরকে মহব্বত করতেন, আর এ জন্যই এসব বৈবাহিক সম্পর্ক ও আত্মীয়তা। [এর চেয়েও আরো অধিক জানার জন্য দেখুন ফকিহ আলাউদ্দিন রচিত ‘আদ্দুররুল মানসুর মিন তুরাসি আহলিল বাইত’।]
আমরা আরো লক্ষ্য করি যে, আহলে বাইতের সদস্যরা তাদের সন্তানের নাম রাখতেন সাহাবাদের নামানুসারে। এ ব্যাপারে শী‘আ-সুন্নী সব লেখক ও ঐতিহাসিক একমত।
শী‘আদের গ্রহণযোগ্য কিতাবেই রয়েছে লায়লা বিনত মাসউদ হানজালিয়ার গর্ভে ভূমিষ্ঠ আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু নিজ সন্তানের নাম রেখেছেন আবু বকর। বনু হাশেমের মধ্যে সর্ব প্রথম আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু নিজ সন্তানের নাম রাখেন আবু বকর। [দেখুন: আল-ইরশাদ লিল মূফিদ: (পৃ. ৩৫৪); আবুল ফরজ আসফাহানী শী‘আ রচিত ‘মুকাতিলুত তালেবিন’: (পৃ. ৯১); তারিখুল ইয়াকুবি শী‘আ: (খ.২/পৃ. ২১৩)]
অনুরূপ হাসান ইবন আলী ইবন আবি তালেব নিজ সন্তানদের নাম রেখেছেন আবু বকর, আব্দুর রহমান, তালহা ও উবাইদুল্লাহ প্রমুখ। [মাসউদি শী‘আর রচনা ‘আততানবিহ ওয়াল ইরশাদ, (পৃ. ২৬৩)]
অনুরূপ হাসান ইবন হাসান ইবন আলিও নিজ সন্তানদের অনুরূপ নাম রাখেন। [আবুল ফরজ আসফাহানি শী‘আ রচিত ‘মুকাতিলুত তালেবিন’: (পৃ. ১৮৮); দারুল মারেফা প্রকাশিত।]
অনুরূপ মুসা কাযেম নিজ মেয়ের নাম রাখেন আয়েশা। [আর-বলি রচিত ‘কাশফুল গুম্মাহ’: (৩/২৬)]
আবার আহলে বাইতের কেউ নিজের উপনাম গ্রহণ করেছেন আবু বকর, যেমন যয়নুল আবেদিন ইবন আলি। [আর-বলি রচিত ‘কাশফুল গুম্মাহ’: (২/৩১৭)] ও আলী ইবন মূসা (রেযা) প্রমুখ। [আবুল ফরজ আসফাহানি শী‘আ রচিত ‘মুকাতিলুত তালেবিন’: (পৃ. ৫৬১-৫৬২), দারুল মারেফা থেকে প্রকাশিত।]
আহলে বাইতের যারা নিজ সন্তানের নাম রেখেছেন উমার, তাদের মধ্যে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু অন্যতম। তিনি নিজের এক সন্তানের নাম রাখেন উমার আকবর, যার মাতা ছিল উম্মে হাবিবা বিনতে রাবিআহ। তিনি নিজ ভাই হুসাইনের সাথে তুফ নামক স্থানে শহীদ হোন। তার আরেক সন্তান হচ্ছে উমার আসগর, তার মাতা ছিল সাহবা বিনতে তাগলাবিয়াহ। আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর এ সন্তান দীর্ঘ জীবন লাভ করে ভাইদের মিরাস লাভ করেন। [আল-ইরশাদ লিল মুফিদ: (পৃ. ৩৫৪), মুজামু রিজালিল হাদীস লিল খুইয়ি: (খ.১৩,পৃ. ৫১); আবুল ফরয আসফাহানি শী‘আ রচিত ‘মুকাতিলুত তালেবিন’: (পৃ. ৮৪), বইরুত থেকে প্রকাশিত। উমদাতুত তালিব: (পৃ. ৩৬১), নাজাফ থেকে প্রকাশিত, জালাউল উয়ূন: (পৃ. ৫৭০),]
অনুরূপ হাসান ইবন আলী নিজ সন্তানের নাম রাখেন আবু বকর ও উমার। [আল-ইরশাদ লিল মুফিদ: (পৃ. ১৯৪), মুনতাহাল আমাল: (খ.১পৃ. ২৪০), উমদাতুত তালিব: (পৃ. ৮১), জালাউল উয়ুন লিল মাজলিসি: (পৃ. ৫৮২), মুজামু রিজালিল হাদীস লিল খুইয়ি: (খ.১৩পৃ. ২৯), নং (৮৭১৬); কাশফূলগুম্মাহ: (২/২০১)]
অনুরূপ আলী ইবনুল হুসাইন ইবন আলীি। [আল-ইরশাদ লিল মুফিদ: (২/১৫৫); কাশফুল গুম্মাহ: (২/২৯৪)]
অনুরূপ জয়নুল আবেদিন।
অনুরূপ মূসা আল-কাজেম।
অনুরূপ হুসাইন ইবন যায়েদ ইবন আলি।
অনুরূপ ইসহাক ইবন হাসান ইবন আলী ইবন হুসাইন।
অনুরূপ হাসান ইবন আলী ইবন হাসান ইবন হুসাইন ইবন হাসান।
আহলে বাইতের আরো অনেকেই আবু বকর ও উমারের নাম অনুসারে নিজেদের সন্তানদের নাম রেখেছেন। কলেবর বৃদ্ধির আশঙ্কায় আমরা এখানেই ইতি টানছি। [বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন: ‘মাকাতিলুত তালেবিন’ ও ইমামিয়াহ সম্প্রদায়ের অন্যান্য মৌলিক গ্রন্থ, যেমন আদদুররুল মানসুর: (পৃ. ৬৫-৬৯)]
আর আহলে বাইতের যারা তাদের মেয়েদের নাম রেখেছেন আয়েশা, তাদের মধ্যে মূসা কাযেম [আল-ইরশাদ: (পৃ. ৩০২), আল-ফুসুল হিম্মাহ: (২৪২), কাশফুল গুম্মাহ: (খ. ৩ পৃ. ২৬)] এবং আলী আল-হাদি [আল-ইরশাদ লিল মুফিদ: (২/৩১২)] অন্যতম।
আমরা শুধু আবু বকর, উমার ও আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহুমের নাম উল্লেখ করলাম, যদিও আহলে বাইতের অনেকে তাদের ব্যতীত অন্যান্য সাহাবাদের নামানুসারে নিজেদের সন্তানের নাম রেখেছেন।
৭. কুলাইনি ‘আল-কাফি’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন: “ইমামগণ জানেন তারা কখন মারা যাবেন, এবং তারা নিজেদের ইচ্ছা ব্যতীত মারা যান না”। [‘আল-উসুলুল কাফি লিল কুলাইনি’: (১/২৫৮); ‘আল-ফুসুলুল হিম্মাহ’ লিল হুর আল-আমেলি: (পৃ. ১৫৫)] অতঃপর মাজলিসী তার ‘বিহারুল আনওয়ার’ কিতাবে একটি হাদীস উল্লেখ করেন: “এমন কোনো ইমাম নেই, যিনি হত্যার শিকার হন নি অথবা বিষ প্রয়োগে মারা যান নি”। [‘বিহারুল আনওয়ার’: (৪৩/৩৬৪)]
আমাদের প্রশ্ন: যদি ইমাম গায়েব জানেন, যেমন কুলাইনি ও হুর আল-আমেলী উল্লেখ করেছেন, তাহলে তাদের জানার কথা খানার সাথে কি দেওয়া হয়েছে, যদি তাতে বিষ থাকে, তাহলে তারা জেনে বিরত থাকবেন, আর যদি বিরত না থাকেন আত্মহত্যা করে মারা গেলেন। কারণ তিনি জানেন খাদ্যে বিষ রয়েছে! অতএব, তিনি নিজেই নিজেকে হত্যা করলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন আত্মহত্যাকারী জাহান্নামী! শী‘আরা কি তাদের ইমামদের জন্য এটা পছন্দ করেন?!
৮. হাসান ইবন আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুমা, মুয়াবিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করে তার সাথে সমঝোতা করেন, অথচ তার নিকট তখন ছিল বৃহৎ জামা‘আত ও বিরাট সৈন্যবাহিনী, যা দিয়ে তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারতেন। এর বিপরীতে আমরা দেখি তার ভাই হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু ইয়াজিদের বিরুদ্ধে সামান্য লোক নিয়ে বিদ্রোহ করেন, অথচ তিনি ক্ষমতার দাবি পরিত্যাগ করেও তার সাথে সমঝোতায় আসতে পারতেন।
অতএব, তাদের একজনকে সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত ও অপরকে বাতিলের ওপর অটল মানা ব্যতীত দ্বিতীয় কোনো পথ নেই। কারণ, যুদ্ধ করার সামর্থ থাকা সত্বেও যদি হাসানের ক্ষমতা হস্তান্তর করা সঠিক হয়, তাহলে সমঝোতার সুযোগ থাকা সত্বেও সামান্য শক্তি নিয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করা হুসাইনের পক্ষে ভুল ছিল। আর যদি দুর্বলতা সত্বেও হুসাইনের বিদ্রোহ ঘোষণা করা সঠিক হয়, তাহলে সামর্থ থাকা সত্বেও হাসানের ক্ষমতা হস্তান্তর করা ভুল ছিল!
এ ঘটনা শী‘আদেরকে এমন এক পরিস্থিতির সম্মুখীন করে, যার মুখোমুখি হতে কেউ পছন্দ করে না। কারণ তারা যদি বলে: তারা উভয়ে সত্যের ওপর ছিল, তাহলে তারা দুই বিপরীত বস্তুকে একত্র করল, যা তাদের মূলনীতিই নস্যাৎ করে দেয়। আর যদি তারা হাসানের কর্মকে বাতিল বলে, তাহলে তার ইমামতি বাতিল বলা জরুরী, যদি তার ইমামতি বাতিল হয়, তাহলে তার পিতার ইমামতি ও নিষ্পাপ হওয়া বাতিল হয়। কারণ, তিনি হাসানের ব্যাপারে ওসিয়ত করেছেন। আর তাদের মাযহাব অনুসারে মাসুম ইমাম মাসুম ইমাম ব্যতীত অন্য কারো ব্যাপারে ওসিয়ত করতে পারে না।
আর যদি তারা বলে হুসাইনের কাজ ভুল ছিল, তাহলে তার ইমামতি ও নিষ্পাপ হওয়া বাতিল প্রমাণিত হয়। তার ইমামতি ও নিষ্পাপ হওয়ার বাতুলতা তার সকল সন্তান ও তাদের পরবর্তী বংশের ইমামতি ও নিষ্পাপ হওয়া বাতিল প্রমাণ করে। কারণ তিনিই তাদের ইমামতির মূল এবং তার থেকেই ইমামতির ধারা পরবর্তীদের নিকট পর্যন্ত পৌঁছেছে। যদি মূল বাতিল হয়, তাহলে পরবর্তীরা এমনিই বাতিল!
(কতক শী‘আ এ প্রশ্ন থেকে বাচার জন্য খিলাফত ও ইমারতের মাঝে পার্থক্য করে! অর্থাৎ হাসান খিলাফত হস্তান্তর করেছেন ইমারত হস্তান্তর করেন নি, এটা হাস্যকর ব্যাখ্যা।)
৯. কুলাইনি তার কিতাব ‘আল-কাফি’ [দেখুন, কুলাইনির উসুলুল কাফী: ১/২৩৯।]তে উল্লেখ করেছেন:
«حدثنا عِدَّةٌ مِنْ أَصْحَابِنَا عَنْ أَحْمَدَ بْنِ مُحَمَّدٍ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الْحَجَّالِ عَنْ أَحْمَدَ بْنِ عُمَرَ الْحَلَبِيِّ عَنْ أَبِي بَصِيرٍ قَالَ دَخَلْتُ عَلَى أَبِي عَبْدِ اللَّهِ ( عليه السلام ) فَقُلْتُ لَهُ جُعِلْتُ فِدَاكَ إِنِّي أَسْأَلُكَ عَنْ مَسْأَلَةٍ هَاهُنَا أَحَدٌ يَسْمَعُ كَلَامِي، قَالَ فَرَفَعَ أَبُو عَبْدِ اللَّه ) ( عليه السلام ) سِتْراً بَيْنَهُ وبَيْنَ بَيْتٍ آخَرَ فَاطَّلَعَ فِيهِ ثُمَّ قَالَ : يَا أَبَا مُحَمَّدٍ سَلْ عَمَّا بَدَا لَكَ، قَالَ : قلْتُ : جُعِلْتُ فداك ..... ثُمَّ سَكَتَ سَاعَةً ثُمَّ قَالَ : وإِنَّ عِنْدَنَا لَمُصْحَفَ فَاطِمَةَ ( عليها السلام ) ومَا يُدْرِيهِمْ مَا مُصْحَفُ فَاطِمَةَ ( عليها السلام ) ، قَالَ : قُلْتُ : ومَا مُصْحَفُ فَاطِمَةَ ( عليها السلام ) ؟ قَالَ : مُصْحَفٌ فِيهِ مِثْلُ قُرْآنِكُمْ هَذَا ثَلَاثَ مَرَّاتٍ، واللَّهِ مَا فِيهِ مِنْ قُرْآنِكُمْ حَرْفٌ وَاحِدٌ، قَالَ : قُلْتُ : هَذَا واللَّهِ الْعِلْمُ، قَالَ : إِنَّهُ لَعِلْمٌ ومَا هُوَ بِذَاكَ» . انتهى .
“আমাদের কতক উস্তাদ আহমদ ইবন মুহাম্মাদ থেকে, সে আব্দুল্লাহ ইবন হাজ্জাল থেকে, সে আহমদ ইবন উমার আল-হালবি থেকে, সে আবু বাসির থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি আবু আব্দুল্লাহ (আলাইহিস সালামে)-র দরবারে উপস্থিত হই, অতঃপর তাকে বলি, আমি আপনার জন্য উৎসর্গ, আমি একটি মাসআলা সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞাসা করব, এখানে কেউ আমার কথা শ্রবণ করছে, ফলে আবু আব্দুল্লাহ একটি ঘরের পর্দা উঠিয়ে সেখানে উঁকি দেন, অতঃপর বলেন, হে আবু মুহাম্মাদ তোমার যা খুশি প্রশ্ন কর, তিনি বলেন, আমি বললাম: আমি আপনার ওপর উৎসর্গ... অতঃপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলেন, আমাদের নিকট মুসহাফে (কুরআন) ফাতেমা (আলাইহাস সালাম) রয়েছে, তারা কীভাবে জানবে মুসহাফে ফাতেমা (আলাইহাস সালাম) কী! তিনি বলেন, আমি বললাম: মুসহাফে ফাতেমা (আলাইহিস সালাম) কী? তিনি বললেন: তোমাদের কুরআনের ন্যায় তিনগুন বড়। আল্লাহর শপথ, তাতে তোমাদের কুরআনের একটি অক্ষরও নেই। তিনি বলেন, আমি বললাম: আল্লাহর শপথ এটাই তো জ্ঞান। তিনি বললেন: অবশ্যই এটাই জ্ঞান”। [দেখুন: ‘উসুলুল কাফি’ লিল কুলাইনি: (১/২৩৯)]
আমাদের প্রশ্ন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম কি মাসহাফে ফাতেমা জানতেন?! তিনি যদি মাসহাফে ফাতেমা না জানেন, তাহলে আহলে বাইত কীভাবে মাসহাফে ফাতেমার সন্ধান পেল, অথচ তিনি ছিলেন আল্লাহর রাসূল?! আর যদি তিনি জেনে থাকেন, তাহলে কেন তিনি মাসহাফে ফাতেমা উম্মত থেকে আড়ালে রাখলেন?! অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلرَّسُولُ بَلِّغۡ مَآ أُنزِلَ إِلَيۡكَ مِن رَّبِّكَۖ وَإِن لَّمۡ تَفۡعَلۡ فَمَا بَلَّغۡتَ رِسَالَتَهُۥۚ﴾ [ المائدة : ٦٧ ]
“হে রাসূল, তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার নিকট যা নাযিল করা হয়েছে, তা পৌঁছে দাও আর যদি তুমি না কর তবে তুমি তাঁর রিসালাত পৌঁছালে না”। [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৬৭-৭৭]
১০. কুলাইনির ‘আল-কাফি’ গ্রন্থের প্রথম খণ্ডে কতক লোকের নাম রয়েছে, যারা শী‘আদের নিকট রাসূলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস ও আহলে বাইতের বাণী বর্ণনা করেছেন, তন্মধ্যে নিম্নের নামগুলো বিদ্যমান:
মুফাজ্জাল ইবন উমার, আহমদ ইবন উমার আল-হালবি, উমার ইবন আবান, উমার ইবন উজুইনাহ, উমার ইবন আব্দুল আজিজ, ইবরাহিম ইবন উমার, উমার ইবন হানজালাহ, মূসা ইবন উমার, আব্বাস ইবন উমর প্রমুখ। এসব নামের মধ্যে উমার নাম বিদ্যমান, হয়তো স্বয়ং বর্ণনাকারী অথবা বর্ণনাকারীর পিতার নাম উমার। এদের নাম কেন উমার রাখা হয়েছে?!
১১. আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَبَشِّرِ ٱلصَّٰبِرِينَ ١٥٥ ٱلَّذِينَ إِذَآ أَصَٰبَتۡهُم مُّصِيبَةٞ قَالُوٓاْ إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّآ إِلَيۡهِ رَٰجِعُونَ ١٥٦ أُوْلَٰٓئِكَ عَلَيۡهِمۡ صَلَوَٰتٞ مِّن رَّبِّهِمۡ وَرَحۡمَةٞۖ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُهۡتَدُونَ ١٥٧﴾ [ البقرة : ١٥٥، ١٥٧ ]
“আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও। যারা, তাদেরকে যখন বিপদ আক্রান্ত করে তখন বলে, নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয় আমরা তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। তাদের ওপরই রয়েছে তাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও রহমত এবং তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত”। [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৫৫-১৫৭]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿وَٱلصَّٰبِرِينَ فِي ٱلۡبَأۡسَآءِ وَٱلضَّرَّآءِ وَحِينَ ٱلۡبَأۡسِۗ﴾ [ البقرة : ١٧٧ ]
“যারা ধৈর্যধারণ করে কষ্ট ও দুর্দশায় ও যুদ্ধের সময়ে”। [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৭৭]
‘নাহজুল বালাগাহ’-য় রয়েছে:
عليه و«وقال علي رضي الله عنه بعد وفاة النبي صلى الله عليه وسلم مخاطبا إياه صلى الله سلم : لولا أنك نهيت عن الجزع وأمرت بالصبر لأنفدنا عليك ماء الشؤون» .
“আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর তাকে সম্মোধন করে বলেন, আপনি যদি মাতম থেকে নিষেধ না করতেন, আর ধৈর্য ধারণ করার নির্দেশ না দিতেন, তাহলে আপনার জন্য ক্রন্দন করে আমরা চোখের পানি শেষ করতাম। [‘নাহজুল বালাগাহ’: (পৃ. ৫৭৬), দেখুন: ‘মুসতাদরাকুল ওয়াসায়েল’: (২/৪৪৫)]
তাতে আরো রয়েছে:
«أن علياً عليه السلام قال : من ضرب يده عند مصيبة على فخذه فقد حبط عمله» .
“আলী আলাইহিস সালাম বলেছেন: মুসিবতের সময় নিজ হাত দিয়ে যে রানের উপর আঘাত করল, তার সকল আমল বিনষ্ট হয়ে গেল”। [দেখুন: ‘আল-খিসাল’ লি সাদুক: (পৃ. ৬২), ‘ওয়াসায়েলুশ শী‘আহ’: (৩/২৭০)]
কারবালার ময়দানে হুসাইন তার বোন যয়নবকে বলেন, ‘মুনতাহাল আমাল’ [‘মুনতাহাল আমাল’: (১/২৪৮)] গ্রন্থকার ফারসিতে যা নকল করেছেন, তার আরবী অনুবাদ:
«يا أختي، أحلفك بالله عليك أن تحافظي على هذا الحلف، إذا قتلت فلا تشقي عليّ الجيب، ولا تخمشي وجهك بأظفارك، ولا تنادي بالويل والثبور على شهادتي» .
“হে আমার বোন, আমি তোমাকে আল্লাহর শপথ দিচ্ছি, তুমি অবশ্যই এ শপথ রক্ষা করবে, আমি যখন মারা যাব, তুমি আমার জন্য কাপড় ছিড়বে না, নখ দ্বারা তোমার চেহারা ক্ষতবিক্ষত করবে না, আমার শাহাদাতের জন্য তুমি মুসিবত ও মৃত্যুকে আহ্বান করবে না”।
আবু জাফর কুম্মি বর্ণনা করেন, আলী (আলাইহিস সালাম) তার শিষ্যদের শিক্ষা দিয়ে বলেন,
«لا تلبسوا سوادا فإنه لباس فرعون» .
“তোমরা কালো কাপড় পরিধান কর না, কারণ তা ফিরআউনের পোশাক”। [আবু জাফর মুহাম্মদ ইবন বাবুইয়াহ আল-কুম্মি রচিত ‘মান লা ইয়াহদুরুহুল ফকিহ’: (১/২৩২) এবং ‘ওয়াসায়েলুশ শী‘আহ’ লিল হুর আল-আমেলি: (২/৯১৬)]
﴿وَلَا يَعۡصِينَكَ فِي مَعۡرُوفٖ﴾ [ الممتحنة : ١٢ ]
“এবং সৎ কাজে তারা তোমার অবাধ্য হবে না”। [সূরা আল--মুমতাহিনাহ, আয়াত: ১২]
এর ব্যাখ্যায় ‘তাফসিরুস সাফি’-তে রয়েছে: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম নারীদের এ মর্মে বাই‘আত করেছেন যে, তারা কাপড় কালো করবে না, বুকের কাপড় ছিড়বে না এবং সর্বনাশ ও মুসিবত বলে মাতম-চিৎকার করবে না।
কুলাইনি ‘ফুরুলউল কাফি’ গ্রন্থে বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে ওসিয়ত করে বলেছেন:
«إذا أنا مت فلا تخمشي وجهاً ولا ترخي عليّ شعراً ولا تنادي بالويل ولا تقيمي عليَّ نائحة»
“আমি যখন মারা যাব, তুমি তোমার চেহারা ক্ষতবিক্ষত করবে না, আমার ওপর তোমার চুল দ্বারা আঘাত করবে না, মুসিবত বলে মাতম করবে না এবং আমার জন্য বিলাপকারিনী দিয়ে ক্রন্দনের ব্যবস্থা করবে না” [৫/৫২৭।]।
শী‘আদের শাইখ মুহাম্মাদ ইবন বাবুইয়াহ আল-কুম্মি, যিনি শী‘আদের নিকট সাদুক উপাদিতে ভূষিত, তিনি বলেন,
«من ألفاظ رسول الله صلى الله عليه وآله وسلم التي لم يسبق إليها : « النياحة من عمل الجاهلية»
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম বলেন, বিলাপ করে ক্রন্দন করা জাহেলী আমল”। [সাদুক আবু জাফর মুহাম্মদ ইবন বাবুইয়াহ আল-কুম্মি রচিত ‘মান লা ইয়াহদুরুহুল ফকিহ’: (৪/২৭১-২৭২), ‘ওয়াসায়েলুশ শী‘আহ’ লিল হুর আল-আমেলি: (২/৯১৫); ‘আল-হাদায়েকুন নাদেরাহ’: (৪/১৪৯); ‘জামে আহাদিসিশ শী‘আহ’ লিল হাজ হুসাইন আল-বুরুজারদি: (৩/৪৮৮); মুহাম্মদ বাকের আল-মাজলিসি বর্ণনাকৃত শব্দ: النياحة عمل الجاهلية ‘বিহারুল আনওয়ার’: (৮২/১০৩)]
অনুরূপ শী‘আদের আলিম মাজলিসী, নুরী ও বারুজারদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন:
«صوتان ملعونان يبغضهما الله : إعوال عند مصيبة، وصوت عند نغمة؛ يعني النوح والغناء»
“আল্লাহর অপছন্দ ও অভিশপ্ত দুটি শব্দ: মুসিবতের সময় আর্তনাদ করা ও গানের সময় আওয়াজ করা, অর্থাৎ বিলাপ করে ক্রন্দন করা ও গান-বাদ্য করা”। [‘বিহারুল আনওয়ার’ লিল মাজলিসি: (৮২/১০৩), ‘মুসতাদরাকুল ওয়াসালে’: (১/১৪৩-১৪৪), ‘জামে আহাদিসুশ শী‘আহ’: (৩/৪৮৮), ‘মান লা ইয়াহদুরুহুল ফকিহ’: (২/২৭১)]
শী‘আদের এসব বর্ণনার পর আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে:
শী‘আরা কেন তাদের মধ্যকার বিদ্যমান সত্যের অনুসরণ করে না?! আমরা কাকে সত্য বলব: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আহলে বাইতকে, নাকি তাদের মোল্লাদেরকে?!
১২. যদি তাত্ববির [আরবিতে التطبير ‘তাত্ববির’ হচ্ছে: মাথা রক্তাক্ত করা, আশুরার দিন শী‘আরা যেরূপ করে। দেখুন: ‘সিরাতুন নাজাত’ লিত-তাবরিজি: (১/৪৩২)], মাতম ও বক্ষে আঘাত করায় মহান প্রতিদান থাকে, যেমন শী‘আদের ধারণা, [দেখুন: ‘ইরশাদুস সায়েল’: (পৃ. ১৮৪)] তাহলে মোল্লারা কেন তাত্ববীর করে না?
১৩. শী‘আরা যেহেতু ধারণা করে যে, গাদিরে খুমে হাজারো সাহাবী উপস্থিত ছিল, যারা সকলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওসিয়ত শ্রবণ করেছে যে, তার মৃত্যুর পর আলী ইবন আলী তালিব সরাসরি খিলাফত লাভ করবে। তাহলে সে হাজারো সাহাবী থেকে কেন একজন উপস্থিত হয় নি এবং আলী ইবন আবি তালিবের পক্ষ নেয় নি, না আম্মার ইবন ইয়াসার, না মিকদাদ ইবন আমর, না সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহুম, তারা কেন বলে নি: হে আবু বকর, তুমি কেন আলীর খিলাফাত আত্মসাৎ করছ, অথচ তুমি জান রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গাদিরে খুমে কি বলেছেন?!
১৪. মৃত্যুর সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কিছু লেখার ইচ্ছা করেন, যেন উম্মত তার পরবর্তীতে গোমরাহ না হয়, তখন কেন আলী কথা বলে নি, অথচ তিনি এমন বাহাদুর, যে আল্লাহ ব্যতীত কাউকে ভয় করে না?! অথচ তিনি জানেন, সত্য থেকে যে চুপ থাকে, সে বোবা শয়তান!!
১৫. শী‘আরা কি বলে না, ‘আল-কাফি’র অধিকাংশ বর্ণনা দুর্বল?! আমাদের নিকট কুরআন ব্যতীত বিশুদ্ধ কিছু নেই।
এদত্বসত্বেও তারা কীভাবে (মিথ্যা ও মনগড়া) দাবি করে যে, কুরআনের আল্লাহ প্রদত্ত তাফসীর মহান কিতাবে (আল-কাফীতে) বিদ্যমান, তাদের স্বীকারুক্তিতেই যার বর্ণনাসমূহ দুর্বল?!
১৬. উবুদিয়্যাত তথা ইবাদাতের উপযুক্ত একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা, যেমন তিনি বলেন,
﴿بَلِ ٱللَّهَ فَٱعۡبُدۡ وَكُن مِّنَ ٱلشَّٰكِرِينَ ٦٦﴾ [ الزمر : ٦٦ ]
“বরং আল্লাহরই ইবাদত কর”। [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৬৬]
তবে কেন শী‘আরা আব্দুল হুসাইন, আব্দে আলি, আব্দুজ জোহরা ও আব্দুল ইমাম নাম গ্রহণ করে?! আর তাদের ইমামরা কেন নিজেদের সন্তানের নাম আব্দে আলী ও আব্দুজ জোহরা রাখেনি? হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর শহিদ হওয়ার পর আব্দুল হুসাইন অর্থ হুসাইনের খাদেম বলা কি ঠিক? এটা কি কোনো বিবেকের কথা যে, আব্দুল হুসাইন হুসাইনের কবরে তার জন্য খানা-পানীয় ও অযুর পানি পেশ করে!!! ফলে সে তার খাদেম??
১৭. আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন জানেন যে, তিনি ওসিয়তকৃত আল্লাহর খলিফা, তবে কেন তিনি আবু বকর, উমার ও উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুম প্রমুখদের নিকট বায়‘আত করেছেন ?!
যদি তোমরা বল: তিনি অপারগ ছিলেন, তাহলে অপারগ ব্যক্তি ইমামতির যোগ্য নয়। কারণ, ইমামতির দায়িত্ব গ্রহণে যে সক্ষম, সেই তার উপযুক্ত।
যদি তোমরা বল: তিনি সক্ষম ছিলেন, কিন্তু তিনি তার জন্য অগ্রসর হননি, তাহলে এটা খিয়ানত।
খিয়ানতকারী কখনো ইমামতির উপযুক্ত নয়! তাকে অধীনদের ব্যাপারে বিশ্বাস করা যায় না। আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু এসব থেকে মুক্ত- তোমাদের কোনো সঠিক উত্তর থাকলে পেশ কর?
১৮. আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন খিলাফত গ্রহণ করেন, তখন তিনি তার পূর্বের খলিফাদের বিরোধিতা করেন নি। পূর্বের খলিফাদের যুগে মুসলিমদের নিকট সংরক্ষিত কুরআন ব্যতীত অন্য কুরআন তিনি পেশ করেন নি। তিনি কুরআনের কোনো বিষয়ে মতবিরোধও করেন নি। বরং তিনি বারবার বলেছেন: “নবীর পর এ উম্মতের সর্বোত্তম ব্যক্তি হচ্ছে আবু বকর ও উমার”। তিনি ‘মুত‘আ’ বা কন্টাক্ট বিয়ের বৈধতা দেন নি। তিনি ফিদাক ফিরিয়ে নেননি। তিনি হজের সময় মানুষের ওপর ‘মুত‘আ’ ওয়াজিব করেন নি। তিনি আযানে خير العمل “আস উত্তম আমলের দিকে” বিকৃতি করেন নি। আর ফজরের আযান থেকে তিনি الصلاة خير من النوم “সালাত ঘুম থেকে উত্তম” বিলোপ করেন নি।
যদি আবু বকর ও উমার উভয় কাফির হয় এবং তারা তার খিলাফত আত্মসাৎ করে থাকে, যেমন শী‘আদের ধারণা, তাহলে কেন তিনি এটা প্রকাশ করেন নি, অথচ ক্ষমতা তার হাতেই ছিল?! বরং আমরা তার বিপরীত লক্ষ্য করি, তিনি তাদের প্রশংসা করেছেন, তাদের সুনাম করেছেন। অতএব, তিনি যার ওপর সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন, তোমাদেরও তার ওপর সন্তুষ্টি প্রকাশ করা জরুরি অথবা তোমাদের বলা জরুরী হয় যে, তিনি খিয়ানত করেছেন, আসল বিষয় সবার সামনে প্রকাশ করেন নি। আমরা আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে এ থেকে মুক্ত মনে করি।
১৯. শী‘আদের ধারণা খোলাফায়ে রাশেদিন ছিল কাফির। তাহলে আল্লাহ কেন তাদের সাহায্য করলেন এবং কীভাবে তাদের হাতে দেশের পর দেশ বিজয়ী হলো! তাদের সময়ই তো ইসলাম সবচেয়ে সম্মানিত ও কাফিরদের জন্য বড় আতঙ্ক ছিল! সে যুগের ন্যায় সম্মান ও ইজ্জত মুসলিমরা কখনো কি দেখেছে?! কাফির ও মুনাফিকদের বেইজ্জত ও অপমান করার আল্লাহর যে নীতি, তার সাথে এর কোনো সম্পর্ক আছে?!
পক্ষান্তরে আমরা ‘মাসুম’ তথা নিষ্পাপের যুগ দেখি, -তোমাদের ধারণায় যার ইমামতি আল্লাহ মানুষের জন্য রহমত স্বরূপ বানিয়েছেন- তার যুগে মুসলিম জাতি বিভক্ত ও পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত ছিল, এমনকি দুশমনেরা পর্যন্ত ইসলাম ও মুসলিমদের নিঃশেষ করার পরিকল্পনা করেছিল, তাহলে এ মাসুমের ইমামতির ফলে মুসলিম জাতির কোনো রহমত হাসিল হলো?! যদি তোমাদের সামান্য বিবেক থাকে তবে বল?!
২০. শী‘আদের ধারণা মুয়াবিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন কাফির, অতঃপর আমরা দেখি হাসান ইবন আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু তার নিকট খিলাফত হস্তান্তর করেন, -অথচ তিনি নিষ্পাপ ইমাম-, অতএব, তোমাদের নিকট হাসান কাফিরের নিকট খিলাফত হস্তান্তর করেছেন, (যা তার নিষ্পাপ হওয়ার সাথে সাংঘর্ষিক) অথবা মুয়াবিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন মুসলিম!
২১. শী‘আরা যে হুসাইনের মাটির উপর সাজদাহ করে, তার উপর কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো সাজদাহ করেছিলেন?!
যদি তারা বলে হ্যাঁ: আমরা বলব: আল্লাহর শপথ, এটা ডাহা মিথ্যা।
আর যদি বলে না: আমরা বলব: তাহলে তোমরা কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বেশি হিদায়াতের দাবিদার?
অথচ তোমাদের বর্ণনায় আছে, জিবরীল আলাইহিস সালাম মুষ্টি ভরে কারবালার মাটি হাতে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে হাজির হয়েছিল।
২২. শী‘আদের দাবি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবাগণ তার মৃত্যুর পর মুরতাদ হয়ে গেছেন এবং তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
আমাদের প্রশ্ন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবারা কি তার মৃত্যুর পূর্বে বারো ইমামে বিশ্বাসী ছিলেন, আর তার মৃত্যুর পর আহলে সুন্নত হয়ে গেছেন?
অথবা তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পূর্বে সুন্নী ছিলেন, কিন্তু তার মৃত্যুর পর তারা বারো ইমামে বিশ্বাসী শী‘আ হন?
২৩. এটা স্পষ্ট যে, হাসান ইবন আলী ও তার মাতা ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা শী‘আদের নিকট ‘আহলে কিসা’ এর অন্তর্ভুক্ত [হাদীসে কিসার সারসংক্ষেপ হচ্ছে: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন কালো পশমের চাদর গায়ে বের হোন, অতঃপর হাসান উপস্থিত হলে তাকে তার মধ্যে নিয়ে নেন, অতঃপর আসে হুসাইন, তাকেও তার মধ্যে নিয়ে নেন, অতঃপর আসে ফাতেমা, তাকেও তার মধ্যে নিয়ে নেন, অতঃপর আসে আলি, তাকেও তার মধ্যে নিয়ে নেন। অতঃপর তিনি তিলাওয়াত করেন: ﴿إِنَّمَا يُرِيدُ ٱللَّهُ لِيُذۡهِبَ عَنكُمُ ٱلرِّجۡسَ أَهۡلَ ٱلۡبَيۡتِ وَيُطَهِّرَكُمۡ تَطۡهِيرٗا﴾ [ الاحزاب : ٣٣ ] “হে নবী পরিবার, আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতাকে দূরীভূত করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণ রূপে পবিত্র করতে”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩৩] দেখুন সহীহ মুসলিম, ফাযায়েলে সাহাবা অধ্যায়।] এবং তারা নিষ্পাপ ইমাম। এ ব্যাপারে তার এবং তার ভাই হুসাইনের মর্যাদা সমান, তাহলে কেন হাসানের বংশ থেকে ইমামতির দ্বারা নিঃশেষ হলো, আর হুসাইনের বংশ থেকে ইমামতি অব্যাহত থাকল?!! অথচ তাদের পিতা এক, তাদের মাতা এক এবং তারা উভয়ে জান্নাতের সরদার, বরং হাসানের অধিক মর্যাদা হচ্ছে যে, তিনি হুসাইনের পূর্বে ও তার চেয়ে বয়সে বড়? এর কোনো সদুত্তর আছে?
২৪. আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু এক ওয়াক্ত সালাতও কেন সকলকে নিয়ে জমা‘আতের সাথে পড়েন নি, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ ছিলেন, যে অসুস্থায় তিনি মারা যান, অথচ তোমাদের ধারণায় তার পরেই তিনি ইমাম?! ছোট ইমামতি কি বড় ইমামতির প্রমাণ নয়?
২৫. তোমরা বল: তোমাদের বারোতম ইমামের সুড়ঙ্গে বা ভূগর্ভে লোকানোর কারণ হচ্ছে যালিমদের ভয়, বিভিন্ন যুগে যখন শী‘আদের রাষ্ট্র কায়েম হয়েছিল, যেমন উবাইদি, বুওয়াইহি ও সাফাভি এবং সর্বশেষ ইরানী রাষ্ট্র, যেখানে তার কোনো ভয় নেই, তবুও তিনি কেন বরাবর অদৃশ্য হয়ে আছেন, তিনি কেন বের হন না! অথচ শী‘আরা নিজ দেশে তাকে সাহায্য ও তার সুরক্ষা দিতে সক্ষম?! যাদের সংখ্যা মিলিয়ন মিলিয়ন, সকাল-সন্ধ্যা তারা নিজেদেরকে তার ওপর উৎসর্গ করে!!
২৬. হিজরতের সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বকরকে সাথে নিয়েছেন এবং তাকে জীবিত রেখেছেন, পক্ষান্তরে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে মৃত্যু ও ধ্বংসের মুখে তার বিছানায় রেখে গেছেন... যদি আলী ইমাম ও নির্দিষ্ট খলিফা হত, তাহলে তাকে ধ্বংসের মুখে রেখে আবু বকরকে কেন জীবিত রাখলেন, অথচ সে মারা গেলে ইমামতে কোনো সমস্যা হত না এবং ইমামতির ধারাবাহিকতাও বিনষ্ট হতো না...
আমাদের প্রশ্ন: এদের মধ্যে কার জীবন অতি মূল্যবান, যাকে কোনো কষ্ট স্পর্শ করবে না অথবা কাকে মৃত্যু ও ধ্বংসের মুখে রাখা শ্রেয় ছিল...?
যদি তোমরা বল: আলী গায়েব জানেন, তাহলে মৃত্যুর বিছানায় শোয়ায় কিসের ফযীলত?!
২৭. ‘তাকিয়াহ’ [তাকিয়াহ হচ্ছে, ভয়ের কারণে হক কথা ও হক কাজ থেকে চল-চাতুরীর আশ্রয় নেযা। সম্পাদক।] একমাত্র ভয়ের কারণেই গ্রহণ করা হয়।
ভয় দুই প্রকার:
প্রথমত: জীবনের ওপর ভয়।
দ্বিতীয়ত: কষ্ট ও শারীরিক যাতনার ভয় এবং গালমন্দ, তিরষ্কার ও অসম্মানের আশঙ্কা।
ইমামদের ওপর জানের ভয় নেই দু’টি কারণে:
এক. তোমাদের ধারণা মোতাবেক ইমামগণ স্বাভাবিক ও স্বেচ্ছায় মৃত্যু বরণ করেন।
দুই. ইমামগণ অগ্র-পশ্চাতের জ্ঞান রাখেন। তারা নির্ধারিতভাবে তাদের মৃত্যুর সময় ও অবস্থা সম্পর্কে অবগত, যেমন তোমাদের ধারণা।
অতএব, মৃত্যুর সময়ের আগে তারা নিজেদের জানের ভয় করতে পারেন না। নিজেদের ধর্মের ব্যাপারে নিফাকের আশ্রয় নেওয়া ও সাধারণ মুমিনদের ধোঁকা দেওয়ার কোনো কারণ তাদের ছিল না।
আর দ্বিতীয় প্রকার ভয় তথা কষ্ট ও শারীরিক যাতনা সহ্য করা এবং গালমন্দ, তিরষ্কার ও অসম্মানের আশঙ্কা করা ইত্যাদি তো আলিমদের দায়িত্বই। বিশেষ করে আহলে বাইতগণ তাদের দাদার দীন রক্ষার জন্য এসব সহ্য করে নিবে, এটাই স্বাভাবিক।
অতএব, ‘তাকইয়ার’ প্রশ্ন কেন?! এর দ্বারা কেন মানুষকে প্রতারিত করা হয়?!
২৮. শী‘আদের নিকট ইমাম নির্ধারণ করার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, সকল শহর-নগর ও পল্লী থেকে যুলুম ও ফ্যাসাদ দূর করা এবং ন্যায় ও ইনসাফ কায়েম করা।
আমাদের প্রশ্ন: তোমরা কি বল: আল্লাহর সৃষ্ট প্রত্যেক শহর ও গ্রামে মাসুম ও নিষ্পাপ ইমাম বিদ্যমান, যিনি মানুষের থেকে যুলুম প্রতিহত করেন অথবা করেন না?!
যদি তোমরা বল: আল্লাহর সৃষ্ট প্রত্যেক নগর ও গ্রামে নিষ্পাপ ইমাম বিদ্যমান।
তাহলে তোমাদেরকে বলব: এটা তোমাদের স্পষ্ট অতিরঞ্জন, মুশরিক ও আহলে কিতাবিদের দেশেও কি নিষ্পাপ ইমাম বিদ্যমান? শাম দেশে মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিকটও কি নিষ্পাপ ইমাম বিদ্যমান ছিল?
যদি তোমরা বল: নিষ্পাপ ইমাম একজন, তবে দেশে দেশে, নগরে নগরে ও গ্রামে গ্রামে তার প্রতিনিধি বিদ্যমান।
আমরা বলব: সকল দেশেই তার প্রতিনিধি বিদ্যমান, না শুধু কতক দেশে বিদ্যমান?
যদি বল: সকল দেশে ও সকল গ্রামে।
আমরা বলব: পূর্বের ন্যায় এটাও তোমাদের অতিরঞ্জন!
যদি বল: বরং কতক দেশ ও গ্রামে তার প্রতিনিধি বিদ্যমান।
আমরা বলব: সকল দেশ ও গ্রামে একই কারণে নিষ্পাপ ইমামের প্রয়োজন, তাহলে তোমরা দেশ ও নগরের মাঝে পার্থক্য কর কেন?!
২৯. ‘কুলাইনি’ তার কাফি গ্রন্থে একটি অধ্যায় কায়েম করেছেন, যার শিরোনাম:
( إنّ النساء لا يرثن من العقار شيئا )
“নারীরা যমীনের কোনো অংশের উত্তরাধিকার হবে না” সেখানে তিনি আবু জাফর থেকে বর্ণনা করেন:
«النساء لا يرثن من الأرض ولا من العقار شيئاً» .
“নারীরা যমীন ও ভূ-সম্পত্তির কোনো ওয়ারিস-মালিক হবে না”। [দেুখন: কুলাইনি রচিত ‘ফুরু উলকাফি’: (৭/১২৭)]
‘তুসি’ তার ‘তাহযিব’ গ্রন্থে মাইসার থেকে বর্ণনা করেন:
«سألت أبا عبد الله عليه السلام عن النساء ما لهن من الميراث؟ فقال : لهن قيمة الطوب والبناء والخشب والقصب فأما الأرض والعقار فلا ميراث لهن فيهما»
“আমি আবু আব্দুল্লাহকে নারীদের উত্তরাধিকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি, তাদের কি মিরাস নেই? তিনি বললেন: তাদের জন্য রয়েছে ইট, কাঠ, বাশ ও বাড়ি নির্মাণের যাবতীয় খরচ। কিন্তু যমীন ও ভূ-সম্পত্তিতে তাদের কোনো অংশ নেই”। [‘তাহযিব’: (৯/২৫৪)]
মুহাম্মাদ ইবন মুসলিম আবু জাফর থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
«النساء لا يرثن من الأرض ولا من العقار شيئاً»
“নারীরা যমীন ও ভূ-সম্পত্তির উত্তরাধিকার হবে না”।
আব্দুল মালেক (আলাইহিস সালাম) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
ليس للنساء من الدور والعقار شيئًا» .«
“বাড়ি ও যমীনে নারীদের কোনো অংশ নেই”।
এসব বর্ণনায় ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহা বা অন্য কাউকে খাস করা হয় নি। অতএব, এসব বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হয়, ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উত্তরাধিকার দাবি করতে পারেন না। (শী‘আদের মাযহাব অনুসারেই)।
দ্বিতীয়তঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সকল সম্পত্তির মালিক ইমাম। মুহাম্মাদ ইবন ইয়াহইয়া বর্ণনা করেন আহমদ ইবন মুহাম্মাদ থেকে, তিনি বর্ণনা করেন আমর ইবন শিমার থেকে, তিনি বর্ণনা করেন যাবের থেকে, যাবের আবু জাফর আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«خلق الله آدم وأقطعه الدنيا قطيعة، فما كان لآدم (ع ) فلرسول الله ﷺ وما كان لرسول الله فهو للأئمة من آل محمد»
“আল্লাহ তা‘আলা আদমকে সৃষ্টি করে, তাকে দুনিয়ার একটি অংশ দান করেন। আদম আলাইহিস সালামের অংশের মালিক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অংশের মালিক তার বংশের ইমামগণ”। [কুলাইনি রচিত ‘উসুলুল কাফি’, কিতাবুল হুজ্জাহ: (খ.১পৃ. ৪৭৬),] শী‘আদের আকীদা অনুসারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর প্রথম ইমাম হচ্ছে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু। তাই ফিদাকের জমির প্রকৃত দাবিদার আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু, ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহা নয়। কিন্তু আমরা দেখি আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু তা করেন নি, বরং তিনি বলেছেন:
«ولو شئت لاهتديت الطريق إلى مصفى هذا العسل، ولباب هذا القمح، ونسائج هذا القز، ولكن هيهات أن يغلبني هواي وأن يقودني جشعي إلى تخير الأطعمة، ولعل بالحجاز واليمامة من لا طمع له في القرص، ولا عهد له بالشبع» .
“আমি যদি চাইতাম, তাহলে স্বচ্ছ এ মধুর অধিকারী হওয়ার সক্ষম ছিলাম, এ শস্যের মালিক হতাম, এ রেশমের স্বত্তাধিকারী হতাম। কিন্তু কখনো আমার ওপর প্রবৃত্তি জয়ী হতে পারে না, লালসা আমাকে সুস্বাদু খাদ্য গ্রহণে প্ররোচিত করতে পারে না। হয়তো হিজায ও ইয়ামামাতে এমন কেউ আছে, এক চিমটি জমিনের প্রতি যার আগ্রহ নেই, তৃপ্ত হওয়ার যার কোনো আকাঙ্খা নেই”। [নাহজুল বালাগাহ: (১/২১১)]
৩০. মুরতাদদের সাথে আবু বকর কেন যুদ্ধ করেছে, এবং কেন বলেছিল: তারা যদি আমাকে উটের একটি রশি দিতেও অস্বীকার করে, যা তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রদান করত, আমি তাদের সাথে যুদ্ধ করব। পক্ষান্তরে শী‘আরা বলে যে, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু মানুষের মুরতাদ হয়ে যাওয়ার ভয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে লিখিত কুরআন বের করেন নি!! অথচ শী‘আদের ধারণা মোতাবেক তিনি ছিলেন খলিফা, তার ছিল বিশেষগুণ এবং তার সাথে ছিল আল্লাহর সাহায্য, তার পরও তিনি মানুষের মুরতাদ হয়ে যাওয়ার ভয়ে কুরআন বের করতে অস্বীকৃতি জানান, আর মানুষদেরকে গোমরাহীতে রাখতে ভালোবাসেন, আর আবু বকর উটের একটি রশির জন্যও যুদ্ধ করেন!!
৩১. আহলে সুন্নত ওয়াল জামা‘আত ও শী‘আদের সকল গ্রুপের ঐক্যমত যে, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন বাহাদুর ও বীর, যাতে কোনো সন্দেহ নেই। তিনি আল্লাহর রাস্তায় কোনো তিরষ্কারের তিরষ্কারকে ভয় করতেন না। তার এ বাহাদূরী ও বীরত্ব জন্মের পর থেকে ইবন মুলজিমের হাতে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এক মুহূর্তের জন্যও বিচ্ছিন্ন হয় নি। এ দিকে শী‘আরা দাবি করে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর সরাসরি আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু খিলাফতের ওসিয়তকৃত ব্যক্তি ও দাবিদার, বরং হকদার।
তাহলে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু কেন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাতে বায়‘আত করলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর তার বীরত্ব কি স্তমিত হয়ে গিয়েছিল?!
অতঃপর কেন তিনি উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাতে বাই‘আত করেছিলেন?!
অতঃপর কেন তিনি উসমান জিন্নুরাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাতে বায়‘আত করেছিলেন?!
তিনি কি অক্ষম ছিলেন, (কখনো নয়) তিনি কেন তিন খলিফার যুগে একবারের জন্যও মিম্বারে চড়ে ঘোষণা দিতে পারেন নি যে, তারা আমার খিলাফত আত্মসাৎ করেছে?! আমিই এ খিলাফতের হকদার, আমিই এর ওসিয়তকৃত ব্যক্তি?!
তিনি কেন এটা করেন নি, তিনি কেন তার অধিকার বুঝে নেননি, অথচ তিনি ছিলেন বীর ও আক্রমণকারী?! তার সাথে ছিল অনেক সাহায্যকারী ও তাকে মহব্বতকারী অনেক প্রেমিক?!
৩২. ‘হাদিসুল কিসা’ দ্বারা আলীর পরিবারের চার ব্যক্তির পবিত্রতার প্রমাণ মিলে। [তারা হচ্ছে: আলি, ফাতেমা, হাসান ও হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুম।] তাদের ব্যতীত বাকিদের পবিত্রতার অন্তর্ভুক্ত করার দলীল কি?!
৩৩. শী‘আরা তাদের ইমাম জাফর সাদেক থেকে বর্ণনা করে, যিনি তাদের ধারণা মতে ‘জাফরি মাযহাব’-এর প্রণেতা, ইমাম জাফর গর্ব করে বলেন, “আবু বকর আমাকে দু’বার জন্ম দিয়েছে”। [‘কাশফুল গুম্মাহ’ লিল আরবালি: (২/৩৭৪)।] কারণ, তার বংশ পরম্পরা দু’ভাবে আবু বকর পর্যন্ত পৌঁছে:
এক. তার মায়ের দিক থেকে, ফাতেমা বিনতে কাসেম ইবন আবু বকর।
দুই. তার নানির দিক থেকে, তার নানি ছিল আসমা বিনতে আব্দুর রহমান ইবন আবু বকর।
এদতসত্বেও দেখি যে, শী‘আরা জাফর সাদেক থেকে তার নানা সম্পর্কে বিভিন্ন মিথ্যাচার বর্ণনা করে!
আমাদের প্রশ্ন: জাফর সাদেক এক দিক থেকে তার নানাকে নিয়ে গর্ব করেন, আবার কোনো হিসেবে তিনি তার কুৎসা বর্ণনা করেন?! এ ধরনের কথা বাজারি মুর্খ লোকদের থেকেই প্রকাশ পেতে পারে, এমন ইমাম থেকে কখনোই প্রকাশ পেতে পারে না, শী‘আরা যাকে জমানার শ্রেষ্ঠ পণ্ডিত ও মুত্তাকী মনে করে।
৩৪. মসজিদুল আকসা উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুর যমনায় প্রথমে অতঃপর সুন্নী নেতা সালাউদ্দিন আউয়ূবি রহ.-এর নেতৃত্বে দ্বিতীয়বার স্বাধীন হয়।
দীর্ঘ ইতিহাসে শী‘আদের কর্মফল কি?!
তারা কখনো কি সামান্য ভূ-খণ্ড জয় করেছে অথবা ইসলাম ও মুসলিমদের শত্রুদের থেকে কোনো প্রতিশোধ গ্রহণে সক্ষম হয়েছে?
৩৫. শী‘আদের দাবি উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর সাথে বিদ্বেষ পোষণ করতেন, অথচ আমরা দেখি উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বায়তুল মাকদিসের অভিযানে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে মদিনার দায়িত্বশীল নিযুক্ত করেন?! [আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া: (৭/৫৭)] আমরা জানি যে, সে অভিযানে যদি উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু কোনো দুর্ঘটনার শিকার হতেন, তাহলে আলিই হতেন মদিনার খলিফা!
অতএব, এটা আলীর প্রতি উমারের কোনো ধরনের বিদ্বেষ?!
৩৬. শী‘আদের ধারণা, তাদের ইমাম মাহদী যখন আভির্ভূত হবেন, তিনি দাউদের বিধান মোতাবিক ফয়সালা করবেন! তিনি দলীল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন না।
আমাদের প্রশ্ন: তিনি কেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শরী‘আত মোতাবিক ফয়সালা করবেন না, যে শরী‘আত পূর্বের সকল শরী‘আত রহিত করে দিয়েছে, যে শরী‘আতের দৃষ্টিতে ফয়সালার সময় দলীল পেশ করা ওয়াজিব?!
৩৭. শী‘আদের ধারণা, তাদের মাহদী যখন আভির্ভূতি হবেন, ইয়াহূদী ও নাসারাদের সাথে সন্ধি করবেন আর আরব ও কুরাইশদের সাথে তিনি যুদ্ধ করবেন?!!
আমাদের প্রশ্ন: মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি কুরাইশ বংশের নয়, অনুরূপ তোমাদের কথানুসারে তোমাদের ইমামরা কি কুরাইশ বংশের নয়?!
৩৮. শী‘আদের ধারণা ইমামদের মায়েরা ইমামদেরকে পার্শ্বে ধারণ করেন এবং ডান রান দিয়ে প্রসব করেন [‘ইসবাতুল ওসিয়্যাহ’ লিল মাসউদি: (পৃ. ১৯৬)]!! অথচ সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও সর্বোত্তম মানব মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তার মা কি গর্ভে ধারণ করেন নি, তিনি কি তার মায়ের রেহেম থেকে বের হন নি?!
৩৯. শী‘আরা আবু আব্দুল্লাহ জাফর সাদেক থেকে বর্ণনা করে, তিনি বলেছেন:
«صاحب هذا الأمر رجل لا يسميه باسمه إلا كافر ...».
এ পদের মালিক এমন এক ব্যক্তি, কাফির ব্যতীত কেউ তার নামকরণ করবে না। [দেুখন: “আনওয়ারুন নুমানিয়াহ”: (২/৫৩)]
আবার তারাই আবু মুহাম্মাদ হাসান আল-আসকারী থেকে বর্ণনা করে যে, তিনি মাহদীর মাতাকে বলেছেন:
«ستحملين ذكرًا واسمه محمد وهو القائم من بعدي ...».
তুমি এমন একজন পুরুষ গর্ভে ধারণ করবে, যার নাম হবে মুহাম্মাদ, আমার পরে সেই কর্ণধার হবে। [“আনওয়ারুন নুমানিয়াহ”: (২/৫৫)]
এ কোনো ধরনের দ্বৈতনীতি?! এক সময় বল: যে ব্যক্তি তার নামকরণ করবে সে কাফির। আবার তোমরাই বল যে, হাসান আসকারি তারনাম করণ করেছে মুহাম্মাদ!
৪০. কুলাইনি ‘আল-কাফি’ গ্রন্থে আহমদ ইবন মুহাম্মাদ সূত্রে মারফু সনদে আবু আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
«يكره السواد إلا في ثلاث الخف والعمامة والكساء»
“তিনটি জিনিস ব্যতীত কালো রং ব্যবহার করা মাকরুহ, মোজা, পাগড়ি ও চাদর”। [আল-ওয়াসায়েল: (খৃ. ৩/পৃ. ২৭৮), হাদীস নং ১); দেখুন: ‘ফুরুউল কাফি’ লিল কুলাইনি: (৬/৪৪৯)]
এ সনদেই পোশাক অধ্যায়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মারফু‘ সনদে রয়েছে:
«كان رسول الله صلى الله عليه وآله وسلم يكره السواد إلا في ثلاثة الخف والكساء والعمامة»
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনটি জিনিস ব্যতীত কালো রং অপছন্দ করতেন, মোজা, চাদর ও পাগড়ি”। [‘আল-কাফি’: (খ. ২পৃ. ২০৫)]
‘আল-হুর আল-আমেলি’ তার ওসায়েল গ্রন্থে একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তি সূত্রে মুহাম্মাদ ইবন সুলাইমান থেকে বর্ণনা করেন, তিনি মুরসাল সনদে আবু আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন: আমি তাকে বললাম:
«أصلى في القلنسوة السوداء؟ قال : لا تصل فيها فانها لباس أهل النار» .
“আমি কি কালো টুপিতে সালাত পড়ব? তিনি বললেন: না, তাতে সালাত পড় না, কারণ কালো জাহান্নামীদের পোশাক”। [আল-ওয়াসায়েল: (খ. ৩, পৃ. ২৮১) অধ্যায় নং ২০, হাদীস নং ৩, দেখুন: ‘ওয়াসায়েলুশ শী‘আহ’: (৩/২৮১)]
من لا يحضره الفقيه গ্রন্থে আমিরুল মুমিনীন আলাইহিস সালাম থেকে মুরসাল সূত্রে এবং العلل والخصال গ্রন্থে তার থেকেই মুসনাদ সূত্রে বর্ণিত, তিনি তার সাথীদের বলেছেন:
«لا تلبسوا السواد فإنه لباس فرعون» .
“তোমরা কালো পোশাক পরিধান কর না। কারণ, তা ফিরআউনের পোশাক”।
হুজাইফা ইবন মানসুর থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হায়রা নামক স্থানে আবু আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালামের নিকট ছিলাম, এমতাবস্থায় তাকে ডেকে নেওয়ার জন্য তার নিকট খলিফা আবুল আব্বাসের প্রতিনিধি আগমন করে, তিনি মুমতিরাহ তলব করে পাঠান। মুমতিরাহ উলের তৈরি এক জাতিয় কাপড়, বৃষ্টি থেকে সুরক্ষার জন্য যা পরিধান করা হয় [‘মান লা ইয়াহ দুরুহুল ফকিহ’: (খ. ১, পৃ. ২৫১), আল-ওয়াসায়েল: (খ. ৩, পৃ. ২৭৮), দ্বিতীয় বর্ণনাটি দেখুন: আল-ওয়াসায়েল: (খ. ৩, পৃ. ২৭৯) হাদীস নং ৭); ‘মান লা ইয়াহ দুরুহুল ফকিহ’: (খ. ২, পৃ. ২৫২); আল-কাফি: (খ. ২, পৃ. ২০৫)]।
বরং কতক বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কালো হচ্ছে তাদের শত্রু বনু আব্বাসের পোশাক:
যেমন, ‘মান লা ইয়াহ দুরুহুল ফকিহ’ গ্রন্থে সাদুক থেকে মুরসাল সনদে বর্ণিত, সাদুক বলেছেন: জিবরীল আলাইহিস সালাম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আগমন করেন। তখন তার গায়ে ছিল কালো আলখিল্লা এবং বেল্টে খঞ্জর লটকানো ছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: হে জিবরীল এটা কোনো পোশাক? তিনি বললেন: আপনার চাচার সন্তান বনু আব্বাসের পোশাক। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আব্বাসের উদ্দেশ্যে বের হলেন, অতঃপর বললেন: হে চাচা, আপনার সন্তান দ্বারা তো আমার সন্তানের সর্বনাশ হবে। সে বলল: হে আল্লাহর রাসূল, আমি কি নিজেকে হত্যা করে ফেলব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: কলম যা লেখার লিখে ফেলেছে। এখানে স্পষ্ট যে, কতক বর্ণনায় উল্লেখিত জাহান্নামী দ্বারা উদ্দেশ্য কিয়ামতের দিন যারা চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামী হবে তারা, যেমন ফিরআউন ও তাদের অনুসারীরা এবং অত্যাচারী আব্বাসীয় খলিফারা, যারা ছিল এ উম্মতের কাফির সম্প্রদায় এবং পূর্বে যারা কালো পোশাককে নিজেদের পরিচ্ছদ হিসেবে গ্রহণ করেছে তারা। [‘মান লা ইয়াহদুরুহুল ফকিহ’: (খ.২পৃ. ২৫২) আরো দেখুন: “আওফাল ইলাল ওয়াল খিসাল কামা ফিল ওয়াসায়েল”]
ইসমাঈল ইবন মুসলিম সাদেক আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন: আল্লাহ তার কোনো নবীর নিকট ওহী করেন যে,
«قل للمؤمنين لا تلبسوا ملابس أعدائي ولا تطعموا مطاعم أعدائي ولا تسلكوا مسالك أعدائي، فتكونوا أعدائي كما هم أعدائي» .
“তুমি মুমিনদেরকে বল: তোমরা আমার শত্রুদের পোশাক পরিধান কর না, তোমরা আমার শত্রুদের খানা খেয়ে না এবং আমার শত্রুদের পথে চল না, অন্যথায় তোমরাও আমার শত্রুদের ন্যায় হয়ে যাবে। [‘মান লা ইয়াহদুরুহুল ফকিহ’: (খ.১পৃ. ২৫২); ওসায়েলূশ শী‘আহ: (৪/৩৮৪); বিহারুল আনওয়ার: (২/২৯১) ও (২৮/৪৮)]
عيون الأخبار গ্রন্থে আলী ইবন আবি তালিব সূত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত: “শত্রুদের পোশাক হচ্ছে কালো, শত্রুদের খাদ্য হচ্ছে নাবীয, নেশাদ্রব্য, কাঁদা, জীবন্ত মাছ, পানিতে ভাসমান মরা মাছ ইত্যাদি... এক পর্যায়ে তিনি বলেন, শত্রুদের পথ অনুসরণ করা, অপবাদের জায়গায় যাওয়া, মদ্যপানের আসর, গান-বাদ্যের আসর, ইমাম ও মুমিনদের কুৎসা রটনার আসর এবং পাপী, যালেম ও ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারীদের আসর। [দেখুন: “উইনুল আখবার”: (১/৬২)] সংক্ষিপ্ত।
কালো রংঙের পোশাকের ব্যাপারে ইমামদের এতো বিষোদগার সত্বেও শী‘আরা কেন কালো রঙের পোশাক পরিধান করে এবং এটাকে তারা আভিজাত্যের পোশাক মনে করে?!!
৪১. কোনো ব্যক্তি যদি শী‘আ হতে চায় তার উপায় কি, শী‘আদের দ্বৈতনীতি ও বিপরীত মুখি এতো মাযহাবের মধ্যে কোনোটির সে অনুকরণ করবে?! কারণ, তারা ইমামিয়াহ, ইসমাইলিয়াহ, নুসাইরিয়াহ ও যাইদিয়াহ বিভিন্ন দল ও উপদলে বিভক্ত। প্রত্যেকেই আহলে বাইতের সাথে সম্পৃক্ততার দাবি করে, ইমামতি বিশ্বাস করে ও সাহাবীদের সাথে শত্রুতা পোষণ করে?! তাদের সকলের বিশ্বাস আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু ইমাম এবং তিনিই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর সরাসরি খলিফা, তাদের সাথেই রয়েছে দীনের মূলনীতি...!!!
৪২. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর কি কুরআন ব্যতীত কোনো কিতাব নাযিল হয়েছিল, যে সম্পর্কে তিনি শুধু আলীকেই অবহিত করেছেন?!
যদি বল: না, তাহলে তোমাদের নিম্নের বর্ণনার তোমরা কী উত্তর দেবে:
এক. الجامعة আল-জামেয়াহ:
আবু বাসির আবু আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন: আমি মুহাম্মাদ, আমাদের নিকট আল-জামেয়াহ রয়েছে, তারা কীভাবে জানবে আল-জামেয়াহ কি?!
তিনি বলেন, আমি বললাম: আপনার প্রতি আমি উৎসর্গ, আল-জামেয়াহ কী?!
তিনি বললেন: সহীফা (আসমানী গ্রন্থ), যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতে সত্তর হাত লম্বা, তার লেখা হচ্ছে খোদাইকৃত, আলী ডান হাত দিয়ে তা লিপিবদ্ধ করেছেন, তাতে রয়েছে সকল হালাল ও হারাম এবং মানুষের প্রয়োজনীয় সকল বস্তু...। [‘আল-কাফি’: (১/২৩৯)]
এখানে চিন্তা করুন: “মানুষের প্রয়োজনীয় সকল বস্তু”।
তাহলে এ কিতাব কেন গোপন রাখা হয়েছে, কেন এর বিধান থেকে আমাদের মাহরুম করা হয়েছে?!
অতঃপর: এটা কি ইলম গোপন করার অপরাধ নয়?!
দুই. صحيفة الناموس সহীফাতু নামুছ:
রেজা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে ইমামের আলামত সংক্রান্ত হাদীসে এসেছে:
«وتكون صحيفة عنده فيها أسماء شيعتهم إلى يوم القيامة، وصحيفة فيها أسماء أعدائهم إلى يوم القيامة» .
“তার নিকট একটি সহীফা থাকবে, তাতে কিয়ামত পর্যন্ত সকল শী‘আদের নাম লিপিবদ্ধ থাকবে। তার নিকট আরেকটি সহীফা থাকবে, তাতে কিয়ামত পর্যন্ত শী‘আদের সকল শত্রুর নাম লিপিবদ্ধ থাকবে [‘বিহারুল আনওয়ার’: (২৫/১১৭)]।
আমরা বলতে চাই: এটা কোনো ধরণের সহীফা, যাতে কিয়ামত পর্যন্ত সকল শী‘আদের নাম শামিল হয়?!
বর্তমান ইরানে বিদ্যমান সকল শী‘আদের নামও যদি কোথাও লিপিবদ্ধ করা হয়, তবুও কমপক্ষে একশত ভলিউমের প্রয়োজন হবে!!
তিন. صحيفة العبيطة সহীফাতুল আবিতাহ:
আমিরুল মুমিনীন রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন:
«وأيم الله إن عندي لصحفاً كثيرة قطائع رسول الله صلى الله عليه وآله، وأهل بيته وإن فيها لصحيفة يقال لها العبيطة، وما ورد على العرب أشد منها، وإن فيها لستين قبيلة من العرب بـهرجة، مالها في دين الله من نصيب» .
“আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমার নিকট অনেকগুলো সহীফা বিদ্যমান, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আহলে বাইতের মিরাস, তাতে একটা সহীফা বিদ্যমান, যার নাম ‘আবিতাহ’। আরবদের ওপর তার চেয়ে কঠিন কোনো বস্তু নাযিল হয় নি, তাদের মধ্যে ষাটটি বংশ আছে, ইসলামে যাদের কোনো অংশ নেই। [‘বিহারুল আনওয়ার’: (২৬/৩৭)]
আমাদের বক্তব্য: এসব বর্ণনা গ্রহণযোগ্য কিংবা বিবেক সিদ্ধ নয়। এসব বংশের মধ্যে ইসলামের কোনো অংশ না থাকার অর্থ হচ্ছে, এদের মধ্যে কেউ মুসলিম নেই! অতঃপর এখানে শুধু আরবদের খাস করার মধ্যে আমরা রাজনৈতিক গন্ধ পাচ্ছি।
চার. صحيفة ذؤابة السيف সহীফা যাওয়াবেবাতুস সাইফ:
আবু বসির আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তলোয়ারের গোড়ায় একটা ছোট সহীফা রয়েছে, তাতে কিছু হরফ বিদ্যমান, যার প্রত্যেকটি হরফ থেকে এক হাজার হরফ বের হয়।
আবু বসির বলেন, আবু আব্দুল্লাহ বলেছেন: কিয়ামত পর্যন্ত তার থেকে মাত্র দুইটি হরফই বের হয়েছে। [বিহারুল আনওয়ার: (২৬/৫৬)]
আমাদের প্রশ্ন: অন্যান্য হরফ কোথায় ?!
সেগুলো কেন বের হয় না, অন্তত শী‘আরা যেন তার থেকে উপকৃত হয়?!
এমতাবস্থায় সেগুলো কি কিয়ামত পর্যন্ত গোপনই থাকবে??! এভাবে এক প্রজন্মের পর অপর প্রজন্ম ধ্বংস হবে, আর দীন কিতাবের মধ্যেই লিপিবদ্ধ থেকে যাবে?!
পাঁচ. صحيفة علي আলীর সহীফা:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তলোয়ারে খাপে পাওয়া এটা আরেকটা সহীফা:
আবু আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তলোয়ারের খাপে একটি সহীফা পাওয়া গেছে, তাতে লিখা ছিল:
«بسم الله الرحمن الرحيم، إن أعتى الناس على الله يوم القيامة من قتل غير قاتله، ومن ضرب غير ضاربه، ومن تولى غير مواليه فهو كافر بما أنزل الله تعالى على محمد صلى الله عليه وآله، ومن أحدث حدثاً أو آوى محدثاً لم يقبل الله منه يوم القيامة صرفاً ولا عدلاً» .
“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম, কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট সবচেয়ে অবাধ্য সেই হবে, যে হত্যাকারী ব্যতীত কাউকে হত্যা করে, আঘাতকারী ব্যতীত কাউকে আঘাত করে, এবং যে নিজের বন্ধু ব্যতীত অন্যদের পক্ষাবলম্বন করল, সে মুহাম্মদের ওপর নাযিলকৃত সবকিছুকে অস্বীকার করল। আর যে কোনো বিদ‘আত সৃষ্টি করল অথবা কোনো বিদআতিকে আশ্রয় দিল, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার ফরজ-নফল কিছুই কবুল করবেন না। [“বিহারুল আনওয়ার”: (২৭/৬৫)]
ছয়. الجفر আল-জাফর:
এ সহীফা আবার দু’প্রকার: الجفر الأبيض সাদা জাফর ও والجفر الأحمر লাল জাফর:
আবুল আলা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবু আব্দুল্লাহকে বলতে শোনেছি: আমার নিকট সাদা জাফর রয়েছে।
তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম: তাতে কি রয়েছে?
তিনি বললেন: দাউদের জবুর, মূসার তাওরাত, ঈসার ইঞ্জীল ও ইবরাহিমের সহীফা এবং হালাল ও হারাম...। আর আমার নিকট লাল জাফরও বিদ্যমান।
তিনি বললেন: আমি বললাম: লাল জাফরে কি আছে?
তিনি বললেন: হাতিয়ার, রক্তের জন্য তা উন্মুক্ত করা হবে, অস্ত্রধারী হত্যার জন্য তা উন্মুক্ত করবেন।
আবু আব্দুল্লাহ তাকে জিজ্ঞাসা করল: আল্লাহ আপনার ভালো করুন, এটা বনু হাসান জানে?
তিনি বললেন: আল্লাহর শপথ তারা জানে, যেমন জানে তারা রাতকে রাত হিসেবে এবং দিনকে দিন হিসেবে, কিন্তু হিংসা ও দুনিয়ার মোহ তাদেরকে অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যানের জন্য উদ্বুদ্ধ করবে। যদি তারা সত্যের দ্বারা সত্যকে তালাশ করত, তাহলে তাদের জন্য খুবই ভালো হতো। [“উসুলুল কাফি”: (১/২৪)]
আমাদের প্রশ্ন: চিন্তা করুন দাউদের জাবুর, মূসার তাওরাত, ঈসার ইঞ্জীল এবং ইবরাহিমের সহীফা ও হালাল-হারাম, সব কিছুই এ জাফরে রয়েছে!
তাহলে কেন তারা এ কিতাব গোপন করে?!
সাত. مصحف فاطمة মাসহাফে ফাতেমা:
ক. আলী ইবন সায়িদ আবু আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ আমাদের নিকট মাসহাফে ফাতেমা রয়েছে, তাতে আল্লাহর কিতাবের একটি আয়াতও নেই, নিশ্চয় তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের লিখানো, আলীর নিজ হাতে লিখিত। [বিহারুল আনওয়ার: (২৬/৪১)]
খ. মুহাম্মাদ ইবন মাসলামা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত:
“ফাতেমা একটি মাসহাফ রেখে গেছেন, যা কুরআন নয়, তবে তা আল্লাহর কালাম, তার ওপর এ মাসহাফ নাযিল করা হয়েছে, যা আলীর হাতে রাসূলের লিখানো। [“বিহারুল আনওয়ার: (২৬/৪১)]
গ. আলী ইবন আবু হামজা আবু আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণনা করেন: “আমাদের নিকট ফাতেমা আলাইহিস সালামের মাসহাফ রয়েছে, আল্লাহর শপথ তাতে কুরআনের একটি হরফও নেই, তবে তা আলীর হাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের লিখানো”। [“বিহারুল আনওয়ার: (২৬/৪৮)]
যদি আলীর দ্বারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের লিখানো হয়, তবে কেন উম্মত থেকে তিনি তা গোপন করলেন? অথচ আল্লাহ তা‘আলা তার রাসূলকে সবকিছু পৌঁছানোর নির্দেশ দিয়েছেন, যা তার ওপর নাযিল করা হয়েছে: আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلرَّسُولُ بَلِّغۡ مَآ أُنزِلَ إِلَيۡكَ مِن رَّبِّكَۖ وَإِن لَّمۡ تَفۡعَلۡ فَمَا بَلَّغۡتَ رِسَالَتَهُ﴾ [ المائدة : ٦٧ ]
“হে রাসূল, তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার নিকট যা নাযিল করা হয়েছে, তা পৌঁছে দাও আর যদি তুমি না কর তবে তুমি তাঁর রিসালাত পৌঁছালে না”। [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৬৭]
এরপরেও সকল উম্মত থেকে এসব কিছু গোপন করা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য কীভাবে বৈধ হয়?! আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং তার পরবর্তী সকল ইমামগণ কীভাবে এসব তাদের উম্মত থেকে গোপন রাখেন?!
এটা কি আমানতের খিয়ানত নয়?!
আট. তাওরাত, ইঞ্জীল ও যাবুর:
আবু আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি ইঞ্জীল, তাওরাত ও যবুর সুরয়ানি ভাষায় পাঠ করতেন। [“উসুলুল কাফি”: (১/২২৭)]
আমাদের প্রশ্ন: আমিরুল মুমিনীন আলী ও তার পরবর্তী ইমামগণ যাবুর, তাওরাত ও ইঞ্জীল দ্বারা কি করেন, কেন তারা এগুলো একজন থেকে অপরজন গ্রহণ করে আসছেন ও গোপনে তিলাওয়াত করছেন? শী‘আদের বাণী দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আলী একাই কুরআন এবং সকল আসমানি কিতাব ও সহীফাসমূহ সংরক্ষণ করেছেন, আলীর যাবুর, তাওরাত ও ইঞ্জীলের কেন প্রয়োজন হলো?! বিশেষ করে আমরা যখন জানি যে, কুরআন নাযিলের পর পূর্বের সকল আসমানি কিতাব রহিত হয়ে গেছে?
অতঃপর আমাদের বক্তব্য: আমরা জানি যে, ইসলামে এক কুরআন ব্যতীত কোনো কিতাব নেই, অধিক কিতাব ইয়াহূদী ও নাসারাদের বৈশিষ্ট্য, তাদের নির্ভরযোগ্য কিতাবে স্পষ্ট।
৪৩. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেন তার চেহারা রক্তাক্ত করেন নি, যখন ছেলে ইবরাহীম মারা গিয়েছিল?!
আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু কেন নিজের চেহারা রক্তাক্ত করেন নি, যখন ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহা মারা গিয়েছিল?
৪৪. শী‘আ অনেক আলিম বিশেষ করে ইরানি আলিমরা আরবী জানে না, তারা আরবিতে অজ্ঞ, তারা কীভাবে আল্লাহর কিতাব ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত থেকে বিধান রচনা করে?! অথচ আরবী জানা আলিমের একটি জরুরী শর্ত।
৪৫. শী‘আরা বিশ্বাস করে যে, অধিকাংশ সাহাবায়ে কেরাম ছিলেন মুনাফিক ও কাফির, অল্প কিছু ব্যতীত। যদি বাস্তবতা এরূপই হয়, তাহলে অধিক সংখ্যক এ কাফিররা কেন অল্প লোকদের ধ্বংস করল না, যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলেন?!
যদি তারা বলে: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর এরা মুরতাদ হয়ে গিয়েছিল সাতজন ব্যতীত, তাহলে তারা কেন এ সাতজনকে ধ্বংস করে বাপ-দাদার পূর্বের ধর্মে ফিরে যায়নি?!
৪৬. শী‘আদের শাইখ আবু জাফর মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান আত-তুসি তার কিতাব ‘তাহযিবুল আহকাম’ গ্রন্থের ভূমিকায় বলেন, এ কিতাব তাদের চারটি মূল কিতাবের একটি:
«الحمد لله ولي الحق ومستحقه وصلواته على خيرته من خلقه محمد صلى الله عليه وآله وسلم تسليماً، ذاكرني بعض الأصدقاء أبره الله ممن أوجب حقه علينا بأحاديث أصحابنا أيدهم الله ورحم السلف منهم، وما وقع فيها من الاختلاف والتباين والمنافاة والتضاد، حتى لا يكاد يتفق خبر إلا وبإزائه ما يضاده، ولا يسلم حديث إلا وفي مقابلة ما ينافيه، حتى جعل مخالفونا ذلك من أعظم الطعون على مذهبنا ..»
“...আমার কতক ভাই আমাদের পূর্বসূরীদের কতক হাদীস এবং তাতে সংঘটিত বৈপরীত্য, অমিল ও ভিন্নতা সম্পর্কে জানিয়েছেন, কারণ এমন সংবাদ নেই যার বিপরীত কোনো সংবাদ নেই, এমন হাদীস নেই যার বিপরীত কোনো হাদীস নেই। যা আমাদের বিরোধীরা আমাদের মাযহাবের বড় ধরণের একটি ত্রুটি গণ্য করে...” [“তাহজিবুল আহকাম”: (১/৪৫)]
বারো ইমামের অনুসারী সাইয়্যেদ দিলদার আলী লাখনভি বলেন
«إن الأحاديث المأثورة عن الأئمة مختلفة جداً لا يكاد يوجد حديث إلا وفي مقابله ما ينافيه، ولا يتفق خبر إلا وبإزائه ما يضاده، حتى صار ذلك سبباً لرجوع بعض الناقصين ...».
“ইমামদের থেকে বর্ণিত হাদীসগুলো খুবই বিরোধপূর্ণ, একটির সাথে আরেকটির কোনো মিল নেই, এমন কোনো হাদীস নেই, যার বিপরীত হাদীস নেই, এমন কোনো সংবাদ নেই, যার বিপরীত সংবাদ নেই, যা দুর্বলদের জন্য শী‘আ মাযহাব ত্যাগ করার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে...” [“আসাসুল উসুল”: (পৃ. ৫১) লখনৌ, ভারত থেকে প্রকাশিত।]
শী‘আদের বড় আলিম, মুহাক্কিক ও শাইখ হুসাইন ইবন শিহাবুদ্দিন আল-কারখি বলেন,
«فذلك الغرض الذي ذكره في أول التهذيب من أنه ألفه لدفع التناقض بين أخبارنا لما بلغه أن بعض الشيعة رجع عن المذهب لأجل ذلك» .
“এ উদ্দেশ্যেই তিনি তাহযীব গ্রন্থের শুরুতে উল্লেখ করেছেন যে, আমাদের হাদীসের বৈপরীত্য দূর করার জন্যই এ গ্রন্থ প্রণয়ন করা, কারণ তার নিকট সংবাদ পৌঁছেছে যে এ বৈপরীত্যের কারণে কতক লোক শী‘আ মাযহাব ত্যাগ করেছে”। [“হিদায়াতুল আবরার ইলা তারিকিল আইম্মাতিল আতহার”: (পৃ. ১৬৪), প্রথম প্রকাশ: ১৩৯৬হিজরী]
আমাদের বক্তব্য: শী‘আরা নিজেরাই স্বীকার করেছে যে, তাদের মাযহাবে বৈপরীত্য রয়েছে। [“উসুলু মাজহাবিশ শী‘আহ আল-ইমামিয়াহ ইসনা আশারিয়াহ” লিল কাফারি: (১/৪১৮ এবং তার পরের পৃষ্ঠাসমূহ)] এটা কি তাদের মাযহাবের বাতুলতার পরিচয় না?! আল্লাহ তা‘আলা বাতিলের পরিচয় সম্পর্কে বলেন,
﴿وَلَوۡ كَانَ مِنۡ عِندِ غَيۡرِ ٱللَّهِ لَوَجَدُواْ فِيهِ ٱخۡتِلَٰفٗا كَثِيرٗا﴾ [ النساء : ٨٢ ]
“আর যদি তা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো পক্ষ থেকে হত, তবে অবশ্যই তারা এতে অনেক বৈপরীত্য দেখতে পেত”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৮২]
৪৭. শী‘আদের বিশ্বাস যে, আলী ইবন আবু তালিব তার সন্তান হুসাইন থেকে উত্তম। তাহলে তারা আলীর মৃত্যু বার্ষিকীতে সেরূপ কেন করে না, যেরূপ করে আলীর ছেলে হুসাইনের মৃত্যু বার্ষিকীতে?! অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি তাদের চেয়ে উত্তম নয়? তাহলে নবীর জন্য কেন তারা এরচেয়ে অধিক ক্রন্দন করে না?!
৪৮. যেহেতু আলী ইবন আবি তালেব ও তার সন্তানদের ইমামতি ঈমানের একটি অবিচ্ছেদ্য রুকন, এ রুকন ব্যতীত ঈমান বিশুদ্ধ হবে না, আর যে এর ওপর ঈমান আনবে না, সে কাফির ও জাহান্নামী, যদিও সে সাক্ষ্য দেয় لا إله إلا الله وأن محمدًا رسول الله (আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল) সালাত কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে, সিয়াম পালন করে ও বায়তুল্লাহ শরীফের হজ করে, যেরূপ শী‘আদের ধারণা।
অতএব, এ মহান রুকন সম্পর্কে স্পষ্ট বর্ণনা কুরআনের কোথাও নেই কেন?!
অথচ আমরা দেখি যে, এর চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য রুকন ও ওয়াজিবগুলো কুরআন স্পষ্ট করে বর্ণনা করেছে, যেমন সালাত, যাকাত, সিয়াম ও হজ, বরং কিছু বৈধ জিনিস পর্যন্ত কুরআন স্পষ্ট করে বর্ণনা করেছে, যেমন শিকার করা... তাহলে বড় ও মহান রুকন কোথায় গেল?!
৪৯. সাহবীগণের জামা‘আত যদি শী‘আদের বর্ণনা মোতাবিক একে অপরের সাথে বিদ্বেষ পোষণ করতেন এবং প্রত্যেকেই খিলাফত লাভের আশা করতেন, তাহলে তাদের কম লোকই ঈমানের ওপর বিদ্যমান থাকত, আর ইসলাম এতটা প্রসার হত না এবং সাহাবাদের যমনায় হাজার হাজার লোক ইসলাম গ্রহণ করত না।
৫০. অধিকাংশ শী‘আরা কেন জুমার সালাত বাতিল ঘোষণা করে, অথচ সূরায়ে জুমু‘আতে এ সালাত কায়েমের স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে:
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَوٰةِ مِن يَوۡمِ ٱلۡجُمُعَةِ فَٱسۡعَوۡاْ إِلَىٰ ذِكۡرِ ٱللَّهِ وَذَرُواْ ٱلۡبَيۡعَۚ ذَٰلِكُمۡ خَيۡرٞ لَّكُمۡ إِن كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ ٩﴾ [ الجمعة : ٩ ]
“হে মুমিনগণ, যখন জুম‘আর দিনে সালাতের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও। আর বেচা-কেনা বর্জন কর। এটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, যদি তোমরা জানতে”। [সূরা আল-জুমু‘আ, আয়াত: ৯]
যদি তারা বলে: আমরা এ সালাত প্রতিশ্রুত মাহদীর আগমন পর্যন্ত ত্যাগ করব!
আমরা বলব: মাহদীর আগমনের অপেক্ষার জন্য কুরআনের এ মহান নির্দেশ ত্যাগ করা কি বৈধ?!
অথচ হাজার হাজার শী‘আ মারা যাচ্ছে ইসলামের এ মহান নির্দেশ জুমু‘আর সালাত কায়েম করা ব্যতীতই, ধারণা প্রসূত শয়তানী এ অযুহাতের কারণে।
৫১. শী‘আদের ধারণা যে, আবু বকর ও উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমার পক্ষ থেকে কুরআনের কিছু আয়াত রহিত করা হয়েছে এবং কিছু বিষয়ে পরিবর্তন করা হয়েছে!
তারা আবু জাফর থেকে বর্ণনা করে যে, তাকে বলা হয়েছিল: আলীকে কেন আমিরুল মুনিন বলা হয়?
তিনি বলেন, এভাবেই আল্লাহ তা‘আলা তার কিতাবে নাযিল করেছেন:
( وإذ أخذ ربك من بني آدم من ظهورهم ذريتهم وأشهدهم على أنفسهم ألست بربكم وأن محمدًا رسولي وأن عليًا أمير المؤمنين )!
“আর স্মরণ কর, যখন তোমার রব বনী-আদমের পৃষ্ঠদেশ হতে তাদের বংশধরকে বের করলেন এবং তাদেরকে তাদের নিজেদের ওপর সাক্ষী করলেন যে, ‘আমি কি তোমাদের রব নই’? আর মুহাম্মাদ আমার রাসূল ও আলী আমিরুল মুমিনীন নয়!।
আর স্মরণ কর, যখন তোমার রব বনী-আদমের পৃষ্ঠদেশ হতে তাদের বংশধরকে বের করলেন এবং তাদেরকে তাদের নিজের ওপর সাক্ষী করলেন যে, আমি কি তোমাদের রব নই, এবং মুহাম্মাদ আমার রাসূল ও আলী আমিরুল মুমিনীন নয়? [“উসুলুল কাফি”: (১/৪১২)]
কুলাইনি নিম্নের আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন,
﴿فَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ بِهِۦ وَعَزَّرُوهُ وَنَصَرُوهُ وَٱتَّبَعُواْ ٱلنُّورَ ٱلَّذِيٓ أُنزِلَ مَعَهُۥٓ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ﴾ [ الاعراف : ١٥٧ ]
“সুতরাং যারা তার প্রতি ঈমান আনে, (অর্থাৎ ইমামের প্রতি) তাকে সম্মান করে, তাকে সাহায্য করে এবং তার সাথে যে নূর নাযিল করা হয়েছে তা অনুসরণ করে, তারাই সফল”। [সূরা আল-আরাফ, আয়াত: ১৫৭]
অর্থাৎ যারা জিবত ও তাগুতের ইবাদত থেকে বিরত থেকেছে, আর জিবত ও তাগুত হচ্ছে অমুক ও অমুক! [“উসুলুল কাফি”: (১/৪২৯)]
মাজলিসী বলেছেন: “এখানে অমুক অমুক দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে আবু বকর ও উমার”। [“বিহারুল আনওয়ার”: (২৩/৩০৬)]
আর এ জন্যই শী‘আরা এদের দু’জনকে শয়তান গণ্য করে। (নাউযুবিল্লাহ) আমরা আল্লাহর নিকট এর থেকে পানাহ চাই।
আল্লাহর এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তারা বলে:
﴿لَا تَتَّبِعُواْ خُطُوَٰتِ ٱلشَّيۡطَٰنِۚ﴾ [ النور : ٢١ ]
“তোমরা শয়তানের পদাঙ্কসমূহ অনুসরণ করো না”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ২১]
তারা বলেছে: শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ হচ্ছে অমুক ও অমুকের শাসনকাল। [“তাফসিরুল আইয়াশি”: (১/২১৪), “তাফসিরুস সাফি”: (১/২৪২)]
তারা আবু আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণনা করে:
ومن يطع الله ورسوله في ولاية علي وولاية الأئمة من بعده فقد فاز فوزا عظيما
“আর যে আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করে আলী ও তার পরবর্তী ইমামদের অধীনে, সেই মহান সফলতা লাভ করল”। তিনি বলেন, এরূপই নাযিল হয়েছে। [দেখুন: “উসুলুল কাফি”: (১/৪১৪)]
আবু জাফর থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন জিবরীল আলাইহিস সালাম এ আয়াত এভাবে নিয়ে অবতরণ করেছেন:
بئسما اشتروا به أنفسهم أن يكفروا بما أنزل الله في علي بغيا .
“আল্লাহ আলীর ব্যাপারে যা নাযিল করেছেন, তার সাথে কুফুরী করে তারা যা খরিদ করেছে, তা খুবই ঘৃণ্য”। [দেখুন: “উসুলুল কাফি”: (১/৪১৭)]
জাবের থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: জিবরীল আলাইহিস সালাম এ আয়াত নিয়ে এভাবে মুহাম্মাদের ওপর নাযিল হয়েছেন:
{ وإن كنتم في ريب مما نزلنا على عبدنا في علي فأتوا بسورة من مثله }.
“আমার বান্দার ওপর আলীর ব্যাপারে আমি যা নাযিল করেছি, যদি তার ব্যাপারে তোমাদের সন্দেহ থাক, তাহলে অনুরূপ সূরা তোমরা পেশ কর”। [দেখুন: “শারহু উসুলুল কাফি”: (৭/৬৬)]
আবু আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
نزل جبرائيل على محمد صلى الله عليه وآله بهذه الآية هكذا { يا أيها الذين أوتوا الكتب آمنوا بما نزلنا في علي نورا مبينا }.
“জিবরীল আলাইহিস সালাম মুহাম্মদের ওপর এ আয়াত এভাবে নিয়ে অবতরণ করেন: হে কিতাবিগণ, আমি আলীর ব্যাপারে যে স্পষ্ট নূর নাযিল করেছি, তার ওপর তোমরা ঈমান আনয়ন কর”। [“শারহু উসুলুল কাফি”: (৭/৬৬)]
মুহাম্মদ ইবন সিনান রিজা আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
كبر على المشركين بولاية علي ما تدعوهم إليه يا محمد من ولاية علي }. هكذا في الكتاب مخطوطة .
“মুশরিকদের ওপর বড় কঠিন আলীর ইমামতি, হে মুহাম্মাদ তুমি যে আলীর ইমামতির দিকে আহ্বান কর”। হাতে লেখার কপিতে এভাবেই বিদ্যমান। [“শারহু উসুলুল কাফি”: (৫/৩০১)]
আবু আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন:
سأل سائل بعذاب واقع للكافرين بولاية علي ليس له دافع قال : هكذا والله نزل بها جبرائيل عليه السلام على محمد صلى الله عليه وآله .
“কোন জিজ্ঞাসাকারী আযাব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল, যে আযাব আলীর ইমামতি অস্বীকারকারীদের ওপর পতিত হবে, যা প্রতিহত করার কেউ নেই। তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ এ আয়াত এভাবে নিয়েই জিবরীল আলাইহিস সালাম নাযিল হয়েছে। [“উসুলুল কাফি”: (১/৪২২)]
আবু জাফর থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
نزل جبرائيل عليه السلام بهذه الآية على محمد صلى الله عليه وآله هكذا : فبدل الذين ظلموا آل محمد حقهم قولا غير الذي قيل لهم فأنزلنا على الذين ظلموا آل محمد حقهم رجزًا من السماء بما كانوا يفسقون .
“জিবরীল আলাইহিস সালাম মুহাম্মাদের ওপর এ আয়াত এভাবে নিয়ে নাযিল হন: যারা মুহাম্মদের বংশের ওপর তাদের অধিকারের ব্যাপারে যুলুম করেছে, তারা বাক্য পরিবর্তন করে ফেলেছে, যা তাদেরকে বলা হয় নি, ফলে যারা মুহাম্মদের বংশের ওপর তাদের অধিকারের ব্যাপারে যুলুম করেছে, তাদের ওপর আসমান থেকে আমি শাস্তি নাযিল করেছি, তাদের অবাধ্যতার কারণে। [“শারহু উসুলুল কাফি”: (১/৪২৩)]
আবু জাফর থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন:
نزل جبرائيل عليه السلام بهذه الآية هكذا { إن الذين ظلموا آل محمد حقهم لم يكن الله ليغفر لهم ولا ليهديهم طريقا إلا طريق جهنم } ثم قال { يا أيها الناس قد جاءكم الرسول بالحق من ربكم في ولاية علي فآمنوا خيرا لكم وإن تكفروا بولاية علي فإن لله ما في السماوات وما في الأرض .
“জিবরিল আলাইহিস সালাম এ আয়াত এভাবে নিয়েই নাযিল হয়েছেন: যারা মুহাম্মদের বংশের ওপর যুলুম করেছে, তাদের অধিকারের ব্যাপারে, আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন না এবং জাহান্নামের রাস্তা ব্যতীত তাদের কোনো রাস্তার পথ দেখাবেন না। অতঃপর তিনি বলেন, হে লোক সকল, তোমাদের নিকট তোমাদের রবের পক্ষ থেকে আলীর ইমামতির ব্যাপারে সত্য নিয়ে রাসূল আগমন করেছেন। অতএব, তোমরা ঈমান আনয়ন কর, তোমাদের জন্য ভালো হবে, আর যদি তোমরা আলীর ইমামতির ব্যাপারে কুফুরী কর, তাহলে আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, সব আল্লাহর মালিকানাধীন। [দেখুন: “উসুলুল কাফি”: (১/৪২৪)]
শী‘আদের ধারণা এসব আয়াত স্পষ্ট করে আলীর ইমামতির প্রতি নির্দেশ প্রদান করে, কিন্তু আবু বকর ও উমার এতে বিকৃতি সাধন করেছে।
এখানে আমাদের দু’টি প্রশ্ন, যা শী‘আদের খুবই বিরক্তিকর:
প্রথম প্রশ্ন: আবু বকর ও উমার যেহেতু এসব আয়াত পরিবর্তন করেছে, তবে আলী কেন এ বিষয়টি সবার সামনে স্পষ্ট করে নি, যখন সে মুসলিমদের খলিফা হয়েছিল?! অথবা নিদেন পক্ষে কেন সে কুরআনকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয় নি?!
আমরা আলী রাদিয়াল্লাহু আনুহুর জীবনীতে তা করতে দেখি নি, বরং তার পূর্বের খলিফাদের যুগে কুরআন যেরূপ ছিল, তার যুগেও কুরআন অনুরূপই ছিল, যেরূপ ছিল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে। কারণ, এ আল-কুরআনের হিফাযত আল্লাহর জিম্মায়, যিনি বলেছেন:
﴿إِنَّا نَحۡنُ نَزَّلۡنَا ٱلذِّكۡرَ وَإِنَّا لَهُۥ لَحَٰفِظُونَ ٩﴾ [ الحجر : ٩ ]
“নিশ্চয় আমরা আল-কুরআন নাযিল করছি, আর আমরাই তার হিফাযতকারী”। [সূরা আল-হিজর, আয়াত: ৯]
কিন্তু শী‘আরা তা জানে না।
দ্বিতীয় প্রশ্ন: শী‘আরা আলীর ইমামতি, খিলাফত ও ভিলাওয়েত প্রমাণ করার জন্য, যেসব আয়াতে পরিবর্তন করেছে, তা আমাদের স্পষ্টভাবে জানান দেয় যে, এটা কখনো বাস্তবায়ন হবে না!!
তাদের বিকৃত করা আয়াতগুলোতে লক্ষ্য করুন, এসব আয়াতগুলো মূলতঃ নাযিল হয়েছে ইয়াহূদীদের সম্পর্কে, আর এগুলো তারা মুসলিমদের সাথে সম্পৃক্ত করে!
فبدل الذين ظلموا آل محمد حقهم قولاً غير الذي قيل لهم فأنزلنا على الذين ظلموا آل محمد حقهم رجزا من السماء بما كانوا يفسقون .
“যারা মুহাম্মদের বংশের ওপর তাদের অধিকারের ব্যাপারে যুলুম করেছে, তারা বাক্য পরিবর্তন করে ফেলেছে, যা তাদেরকে বলা হয় নি, ফলে যারা মুহাম্মদের বংশের ওপর তাদের অধিকারের ব্যাপারে যুলুম করেছে, তাদের ওপর আসমান থেকে আমি শাস্তি নাযিল করেছি, তাদের অবাধ্যতার কারণে। [দেখুন: “শারহু উসুলুল কাফি”: (১/৪২৩)]
তাদের পরিবর্তন অনুযায়ী এ আয়াত এমন বিষয় সম্পর্কে সংবাদ দিচ্ছে, যা ভবিষ্যতে সংঘটিত হবে, আর আলী তা জনেন।
তাহলে আলী ও আহলে বাইত অতীতের কোনো হক দাবি করেন, যা তাদের থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে, অথচ কুরআন সংবাদ দিচ্ছে ভবিষ্যতে তারা তার অধিকারী হবে? আর মুসলিমরা আলীর ইমামতি, অসিয়ত ও খিলাফত গ্রহণ করবে না, সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর খলিফা হবে না, এটা কীভাবে সম্ভব?!
অতঃপর আমাদের প্রশ্ন, কখন তাদের ওপর শাস্তি নাযিল হয়েছে, যারা আহলে বাইতের খিলাফতের অধিকার হরণ করেছে?!
সকলেই জানে এটা কখনো বাস্তব হয় নি, কিন্তু তাদের বিকৃতি সবার নিকট স্পষ্ট ও পরিষ্কার।
৫২. শী‘আরা আল্লাহর নিম্নের বাণী সম্পর্কে আবুল হাসান থেকে বর্ণনা করে:
﴿يُرِيدُونَ لِيُطۡفُِٔواْ نُورَ ٱللَّهِ بِأَفۡوَٰهِهِمۡ﴾ [ الصف : ٨ ] ـ «يريدون ليطفئوا ولاية أمير المؤمنين»، ﴿وَٱللَّهُ مُتِمُّ نُورِهِ﴾ [ الصف : ٨ ] يقول : «والله متم الإمامة، والإمامة هي النور»، وذلك قول الله عز وجل : ﴿فََٔامِنُواْ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ وَٱلنُّورِ ٱلَّذِيٓ أَنزَلۡنَاۚ﴾ [ التغابن : ٨ ] قال : «النور والله : الأئمة من آل محمد صلى الله عليه وآله وسلم يوم القيامة» .
“তারা তাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহর নূরকে নির্বাপিত করতে চায়”। [সূরা আস সাফ, আয়াত: ৮] (ব্যাখ্যা:) তারা আমিরুল মুমিনীনের ইমামতি নির্বাপিত করতে চায়। “আল্লাহ তার নূরকে অবশ্যই পরিপূর্ণ করবেন”। [সূরা আস সাফ, আয়াত: ৮] (ব্যাখ্যা:) তিনি বলেন, আল্লাহ অবশ্যই ইমামতি পরিপূর্ণ করবেন, ইমামতি হচ্ছে নূর। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণীতে এসেছে: “তোমরা ঈমান আনয়ন কর আল্লাহর প্রতি ও তার রাসূলের প্রতি এবং আমার নাযিলকৃত নূরের প্রতি”। [সূরা আত-তাগাবুন, আয়াত: ৮] তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ নূর হচ্ছে কিয়ামত পর্যন্ত আহলে বাইয়তের ইমামতি। [“আল-কাফি”: (১/১৪৯)]
আমাদের প্রশ্ন: আল্লাহ তার নূরের পূর্ণতা দান করেছেন কীভাবে, ইসলামের প্রসার করে, না আহলে বাইতকে ইমামতি ও খিলাফত প্রদান করে?!
৫৩. শী‘আদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী আমরা শুধু আহলে বাইতের দু’জনকেই দেখি, যারা খিলাফত লাভ করেছেন: আলী ও তার ছেলে হাসান রাদিয়াল্লাহু আনহুমা! অবশিষ্ট দশজন দ্বারা নূরের পূর্ণতা কীভাবে প্রদান করার হলো? তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস দ্বারা তাদের বারো ইমামের ইমামতির দলীল পেশ করে যে, তারাই “খলিফা” অথবা তারাই “আমির” অথবা তারাই “নেতৃত্বের অধিকারী” তাহলে অবশিষ্ট দশজনের খিলাফত ও ইমামতি গেল কোথায়?!
৫৪. শী‘আদের কোনো কোনো কিতাবে আছে, জাফর সাদেক থেকে বর্ণিত, তিনি এক নারীকে বলেন, সে তাকে আবু বকর ও উমারের সাথে বন্ধুত্ব করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিল: আমি কি তাদের সাথে বন্ধুত্ব কায়েম করব?! তিনি বললেন: তাদের সাথে বন্ধুত্ব কায়েম কর। নারীটি বলল: আমি আমার রবকে বলব, যখন তার সাথে সাক্ষাত করব, তুমিই তাদের সাথে বন্ধুত্ব কায়েম করার জন্য আমাকে নির্দেশ দিয়েছ?! তিনি বললেন: হ্যাঁ। [“রাওজাতুল কাফি”: (৮/২৩৭)]
শী‘আদের কতক কিতাবে রয়েছে, ‘বাকের’ (বারো ইমামের একজন) এর এক শিষ্য বিস্ময় প্রকাশ করেন, যখন তিনি শোনেন বাকের নিজেই আবু বকরকে সিদ্দিক উপাদিতে স্মরণ করছেন। লোকটি তাকে বলল: আপনি কি তাকে এ উপাদিতে স্মরণ করেন?! বাকের বলেন, হ্যাঁ, অবশ্যই সে সিদ্দিক। যে তাকে সিদ্দিক বলবে না, আখেরাতে আল্লাহ তার কোনো কথাই বিশ্বাস করবেন না। [“কাশফুল গুম্মাহ”: (২/৩৬০)]
আমাদের জিজ্ঞাসা: আবু বকরের ব্যাপারে শী‘আদের মন্তব্য কি, তারা তাদের ইমামের কথা মানে?
৫৫. আবুল ফরজ ইস্পাহানি ‘মাকাতিলুত তালিবিন’ গ্রন্থে, আরবালি ‘কাশফুল গুম্মাহ’ গ্রন্থে ও মাজলিসী ‘জালাউল উয়ূন’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন: আবু বকর ইবন আলী ইবন আবু তালিব কারবালার ময়দানে তার ভাই হুসাইনের সাথে শাহাদাত বরণ করেন, অনুরূপ হুসাইনের এক সন্তান শাহাদাত বরণ করেন, যার নাম ছিল আবু বকর! এবং মুহাম্মাদ আসগর, (হুসাইনের ছেলে) যার উপনাম ছিল আবু বকর।
শী‘আরা কেন এ নামগুলো গোপন করে?! আর শুধু হুসাইনের শাহাদাতকেই প্রধান্য দেয় ও প্রকাশ করে?!
এর কারণ হচ্ছে হুসাইনের ভাই এবং তার নিজের সন্তানের নাম ছিল আবু বকর!!
শী‘আরা চায় না এটা মুসলিমরা ও তাদের সাধারণ অনুসারীরা জেনে যাক, কারণ এর ফলে তাদের মিথ্যা দাবি প্রকাশ পেয়ে যাবে যে, আহলে বাইত ও বড় বড় সাহাবাদের মাঝে শত্রুতা ছিল, বিশেষ করে আবু বকরের সাথে। কারণ, যদি আবু বকর কাফির ও মুরতাদ হন, আর আহলে বাইতের অধিকার হরণ করেন, (যেমন শী‘আদের ধারণা) তাহলে কখনোই তারা আবু বকর নাম ধারণ করত না !
বরং চিন্তাশীল ব্যক্তিদের নিকট স্পষ্ট যে, এটা আহলে বাইত ও সাহাবীদের মাঝে মহব্বত ও সুসম্পর্কের প্রমাণ। (শী‘আরা কখনোই চায় না, এ সম্পর্ক মানুষের নিকট প্রকাশ পেয়ে যাক, কারণ তাহলে তাদের মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্রের সকল জাল ছিন্ন হয়ে যাবে।)
অতঃপর আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে শী‘আরা কেন আলী ও হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুমার অনুসরণ করে তাদের সন্তানদের নাম আবু বকর রাখে না?!
৫৬. নিশ্চয় যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বশেষ নবী ও রাসূল মানে, তার ইমামতির উদ্দেশ্য হাসিল হলো, শী‘আরা যা বর্ণনা করে। অতএব, যে বিশ্বাস করে মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল, তার আনুগত্য করা ওয়াজিব এবং যথাসাধ্য তার আনুগত্যের জন্য চেষ্টা করে, তার ব্যাপারে যদি বলা হয় যে, সে জান্নাতে যাবে, তাহলে তার ইমামতির বিষয় জানার প্রয়োজন হলো না, এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত অন্য কারো আনুগত্যও তার ওপর জরুরী হলো না। অতএব, শী‘আদের ইমামতির বিষয়টি বেহুদা ও অকার্যকর প্রমাণিত হলো।
আর যদি বলা হয় যে, ইমামের আনুগত্য ব্যতীত সে জান্নাতে যাবে না, তাহলে এটা কুরআন বিরোধী, কারণ আল্লাহ তা‘আলা কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় শুধু আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্যকারীদের জন্য জান্নাত অবধারিত ঘোষণা করেছেন, কোথাও ইমামের আনুগত্য বা তাদের ওপর ঈমানের শর্তারোপ করা হয় নি। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَ فَأُوْلَٰٓئِكَ مَعَ ٱلَّذِينَ أَنۡعَمَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِم مِّنَ ٱلنَّبِيِّۧنَ وَٱلصِّدِّيقِينَ وَٱلشُّهَدَآءِ وَٱلصَّٰلِحِينَۚ وَحَسُنَ أُوْلَٰٓئِكَ رَفِيقٗا ٦٩﴾ [ النساء : ٦٩ ] ـ
“আর যারা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করে তারা তাদের সাথে থাকবে, আল্লাহ যাদের ওপর অনুগ্রহ করেছেন নবী, সিদ্দীক, শহীদ ও সৎকর্মশীলদের মধ্য থেকে। আর সাথী হিসেবে তারা হবে উত্তম”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৬৯]
অন্যত্র তিনি বলেন,
﴿وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ يُدۡخِلۡهُ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَاۚ وَذَٰلِكَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ ١٣﴾ [ النساء : ١٣ ]
“আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে আল্লাহ তাকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতসমূহে, যার তলদেশে প্রবাহিত রয়েছে নহরসমূহ। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আর এটা মহা সফলতা”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৩]
যদি ইমামতি ঈমান ও কুফরের মাপকাঠি হত অথবা ইসলামের বড় রুকন হত, যা ব্যতীত বান্দার আমল গ্রহণযোগ্য নয়, যেমন শী‘আদের ধারণা, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা অবশ্যই এসব আয়াতে তার উল্লেখ করতেন ও তার ওপর গুরুত্বারোপ করতেন। কারণ, আল্লাহ জানেন এসব বিষয় নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হবে। আশা করছি কেউ এ ধৃষ্টতা দেখাবে না যে, এসব আয়াতে আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্যের নির্দেশে ইমামদের আনুগত্যও বিদ্যমান, কারণ এটা নেহাতই মনগড়া তাফসির, বরং তার বাতুলতার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, রাসূলের আনুগত্যই স্বয়ং আল্লাহর আনুগত্য, যে আল্লাহ তাকে নবী রূপে প্রেরণ করেছেন। তা সত্বেও আমরা দেখি যে, আল্লাহ শুধু নিজের আনুগত্য উল্লেখ করেই ক্ষান্ত হননি, বরং আলাদা ও স্বতন্ত্রভাবে রাসূলের আনুগত্যের কথাও উল্লেখ করেছেন, যেন সবার নিকট স্পষ্ট হয় যে, আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
এ জন্যই জান্নাতে প্রবেশের শর্ত হিসেবে আল্লাহর আনুগত্যের পর রাসূলের আনুগত্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, কারণ তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে তাবলিগকারী, তাই তার আনুগত্য মূলতঃ তাকে প্রেরণকারীরই আনুগত্য।
আর যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর আল্লাহর কোনো বার্তাবাহক নেই, বা কারো জন্য প্রমাণিত হয় নি যে, তিনি আল্লাহর সরাসরি বার্তাবাহক, তাই অন্য কোনো বিবেচনা ব্যতীতই শুধু আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্যের সাথে জান্নাতে প্রবেশের শর্তারোপ করা হয়েছে।
৫৭. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে কতক লোক আসত, তাকে একবার দেখেই আবার তাদের দেশে তারা ফিরে যেত, নিঃসন্দেহে তারা আলী বা তার সন্তান ও নাতীদের ইমামতি সম্পর্কে শোনে নি, বিশেষ করে শী‘আদের ধারণা যে, নবুওয়াতের প্রথম যুগেই ইমামতির বিষয়টি নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল, তারা এর স্বপক্ষে হাদীসে দার প্রমাণ হিসেবে পেশ করে। তাদের ইসলাম কি অসম্পূর্ণ ছিল?!
যদি তোমরা বল: হ্যাঁ, আমরা বলব: যদি তাই হয়, তাহলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সর্বপ্রথম দায়িত্ব ছিল, তাদের ঈমান ঠিক করা এবং তাদের নিকট ইমামতির বিষয়টি প্রকাশ করা। অথচ আমরা দেখি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন করেন নি।
৫৮. শী‘আদের নিকট গ্রহণযোগ্য কিতাব ‘নাহজুল বালাগায়’ বিদ্যমান: আলী আলাইহিস সালাম মুয়াবিয়ার নিকট লেখেন:
إنه بايعني القوم الذين بايعوا أبا بكر وعمر وعثمان على ما بايعوهم عليه فلم يكن للشاهد أن يختار ولا للغائب أن يرد وإنما الشورى للمهاجرين والأنصار فإن اجتمعوا على رجل وسمَّوه إماماً كان ذلك لله رضاً فإن خرج عن أمرهم خارج بطعن أو بدعة ردوه إلى ما خرج منه فإن أبى قاتلوه على اتباعه غير سبيل المؤمنين وولاه الله ما تولى ولعمري يا معاوية لئن نظرت بعقلك دون هواك لتجدني أبرأ الناس من دم عثمان، ولتعلمن أني كنت في عزلة عنه إلا أن تتجنى فتجن ما بدا لك والسلام .
“যারা আবু বকর, উমার ও উসমানের হাতে যে শর্তে বাই‘আত করেছে, তারা আমার হাতেও একই শর্তে বাই‘আত করেছে, অতএব, কোনো উপস্থিত ব্যক্তির সাধ্য নেই গ্রহণ করা কিংবা কোনো অনুপস্থিত ব্যক্তির জন্য শোভা নয় প্রত্যাখ্যান করা, বরং বিষয়টি মুহাজির ও আনসারদের পরামর্শ নির্ভর, তারা যদি কোনো ব্যক্তির ব্যাপারে সমবেত হয় ও তাকে ইমাম নামকরণ করে, তাহলে সেটাই আল্লাহর সন্তুষ্টি, যে তাদের সিদ্ধান্ত থেকে বের হলো, সে অপবাদ নিয়ে বের হলো অথবা বিদ‘আত নিয়ে বের হলো, তাকে অবশ্যই সেদিকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে, যেখান থেকে সে বের হয়েছে। আর যদি সে অস্বীকার করে, তাহলে তার সাথে যুদ্ধ করা হবে, যেহেতু সে মুমিনদের সিদ্ধান্ত ত্যাগ করেছে। আর সে যেদিকে যেতে চেয়েছে আল্লাহ তাকে সেদিকেই নিয়ে যাবে। হে মুয়াবিয়া আমার জীবনের শপথ করে বলছি, তুমি যদি প্রবৃত্তি ত্যাগ করে তোমার বিবেক দিয়ে চিন্তা কর, তাহলে তুমি বুঝবে যে উসমানের রক্তের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই, তুমি নিশ্চয় জানবে যে, আমি তার থেকে বিরত ছিলাম... ওয়াস্সালাম”। [দেখুন: “সাফওয়াতু শুরুহি নাহজিল বালাগাহ”: (পৃ. ৫৯৩)]
এখান থেকে প্রমাণিত হয়:
এক. ইমাম মুহাজির ও আনসারদের থেকে বাছাই করা হবে, শী‘আদের নিকট স্বীকৃত ইমামতির সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই!
দুই. আলী সেভাবেই বাই‘আত গ্রহণ করেছেন, যেভাবে আবু বকর, উমার ও উসমান বাই‘আত গ্রহণ করেছেন, আল্লাহ তাদের সকলের ওপর সন্তুষ্ট হোন।
তিন. পরামর্শ গ্রহণ করা হবে মুহাজির ও আনসারদের। এটাই প্রমাণ করে যে, মুহাজির ও আনসারগণ আল্লাহর নিকট সম্মানিত ও উঁচু মর্যাদার অধিকারী, যা শী‘আদের মিথ্যাচার ও অপবাদের সম্পূর্ণ বিপরীত।
চার. মুহাজির ও আনসারদের কাউকে কবুল করা, কারো প্রতি তাদের সন্তুষ্টি প্রকাশ করা ও কোনো ইমামের হাতে তাদের বাই‘আত করাই আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রমাণ। এতে কোনো ইমামের ইমামতি ছিনতাই বা জবর দখল করা হয় না, যেমন শী‘আরা দাবি করে। অন্যথায় সেখানে আল্লাহর সন্তুষ্টি কীভাবে থাকে?!
পাঁচ. শী‘আরা মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুকে লা‘নত করে, অথচ আমরা দেখি আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু তার চিঠিতে তাকে লা‘নত করেন নি !
৫৯. শী‘আদের সাধ্য নেই এটা অস্বীকার করার যে, আবু বকর, উমার ও উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতে গাছের নিচে বাই‘আত করেছিলেন। যাদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন যে, তিনি তাদের ওপর সন্তুষ্ট এবং তাদের অন্তরের বিষয় সম্পর্কে অবগত। [আল্লাহ তাআলা বলেন: ﴿لَّقَدۡ رَضِيَ ٱللَّهُ عَنِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ إِذۡ يُبَايِعُونَكَ تَحۡتَ ٱلشَّجَرَةِ فَعَلِمَ مَا فِي قُلُوبِهِمۡ فَأَنزَلَ ٱلسَّكِينَةَ عَلَيۡهِمۡ وَأَثَٰبَهُمۡ فَتۡحٗا قَرِيبٗا ١٨﴾ [ الفتح : ١٨ ] “অবশ্যই আল্লাহ মুমিনদের ওপর সন্তুষ্ট হয়েছেন, যখন তারা গাছের নিচে আপনার হাতে বাই‘আত গ্রহণ করেছিল। অতঃপর তিনি তাদের অন্তরে কি ছিল তা জেনে নিয়েছেন, ফলে তাদের উপর প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং তাদেরকে পুরস্কৃত করলেন নিকটবর্তী বিজয় দিয়ে”। সূরা আল-ফাতহ: (১৮)] অতএব, শী‘আরা কীভাবে আল্লাহর সংবাদের সাথে কুফুরী করে এবং তার বিরুদ্ধে বিশ্বাস পোষণ করে?! যেন তারা বলতে চাচ্ছে: হে আল্লাহ আপনি তাদের ব্যাপারে জানেন না, আমরা যা জানি! আল্লাহর নিকট পানাহ চাচ্ছি।
৬০. অধিকন্তু আমরা দেখি শী‘আরা মহান ও প্রধান সাহাবীদের গালি দেওয়া আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের কাজ মনে করে, বিশেষ করে তিন খলিফা: আবু বকর, উমার ও উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুম। অথচ কোনো সুন্নী একজন আহলে বাইতকেও গালি দেয় না, শী‘আরা মিথ্যার আশ্রয় নিয়েও এর অস্বীকার করতে পারবে না।
৬১. শী‘আরা তাদের কিতাবে হুসাইনের মৃত্যু সম্পর্কে লিখে যে, যুদ্ধের ময়দানে তিনি পিপাসায় মারা গেছেন, আর এ জন্যই তুমি দেখবে পানির কুপ ও ট্যাঙ্কির ওপর তারা লিখে রাখে: “পানি পান কর আর হুসাইনের পিপাসা স্মরণ কর”!
আমাদের প্রশ্ন: শী‘আদের আকীদা অনুযায়ী ইমামরা যেহেতু গায়েব জানেন। তাহলে যুদ্ধের ময়দানে তৃষ্ণার্ত হবেন এটা হুসাইন জানতেন না? জানতেন না তিনি পিপাসায় মারা যাবেন? তাহলে কেন তিনি পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি জমা করে রাখলেন না?!
দ্বিতীয়তঃ যুদ্ধের ময়দানে যথেষ্ট পরিমাণ পানি সংগ্রহে রাখা কি যুদ্ধের প্রস্তুতির মধ্যে গণ্য হয় না?!
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَأَعِدُّواْ لَهُم مَّا ٱسۡتَطَعۡتُم مِّن قُوَّةٖ وَمِن رِّبَاطِ ٱلۡخَيۡلِ تُرۡهِبُونَ بِهِۦ عَدُوَّ ٱللَّهِ وَعَدُوَّكُمۡ﴾ [ الانفال : ٦٠ ]
“আর তোমরা মুকাবিলার জন্য তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী শক্তি ও অশ্ব বাহিনী প্রস্তুত কর, তা দ্বারা তোমরা ভয় দেখাবে আল্লাহর শত্রু ও তোমাদের শত্রুদেরকে”। [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৬০]
৬২. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে ইসলাম পরিপূর্ণতা লাভ করেছে। কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿ٱلۡيَوۡمَ أَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِينَكُمۡ﴾ [ المائدة : ٣ ]
“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণ করলাম”। [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৩]
আর শী‘আদের মাযহাব প্রকাশ পেয়েছেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর, এটা কীভাবে সম্ভব?!
৬৩. আল্লাহ তা‘আলা ইফকের সে প্রসিদ্ধ ঘটনায় আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার পবিত্রতা নাযিল করেছেন, তাকে মিথ্যা অপবাদ থেকে নাজাত দিয়েছেন। তা সত্বেও আমরা দেখি কতক শী‘আ তাকে খিয়ানতের অপবাদ দেয়!! [দেখুন: “তাফসিরুল কুম্মি”: (২/৩৭৭) এবং “আল-বুরহান” লিল বাহরানি: (৪/৩৫৮)] (আল্লাহর নিকট পানাহ চাই)
এতে যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর অপবাদ, তেমন আল্লাহর ওপরও অপবাদ যে, তিনি তার নবীকে বলেন নি যে, তোমার স্ত্রী খিয়ানতকারীনী?! আর এটা কীভাবে সম্ভব!
শী‘আদের মাযহাব খুবই ঘৃণিত মাযহাব যে, সর্বোত্তম নবীর স্ত্রী ও মুমিনদের মায়েদেরকে তারা অপবাদ দেয়।
৬৪. শী‘আদের বর্ণনা মতে আলী ও তার সন্তানদের মধ্যে সকল অলৌকিক ঘটনা সীমাবদ্ধ, তারা মৃত অবস্থায়ও উপকার করে, তাহলে তারা কেন জীবিত অবস্থায় নিজেদের উপকার করে নি?!
অথচ আমরা দেখি যে, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু নিশ্চিন্তে ও দাঙ্গা-হাঙ্গামাবিহীন খিলাফত পরিচালনা করতে পারে নি, অতঃপর তিনি আততায়ীর হাতে মারা যান। অনুরূপ হাসানও দেখি মুয়াবিয়ার হাতে খিলাফত ছেড়ে দেন, আর হুসাইন প্রথমত হন কোনঠাসা, অতঃপর হন মৃত্যুর সন্মুখীন, তার উদ্দেশ্যও সফল হয় নি... অনুরূপ তাদের পরবর্তী ইমামদের অবস্থাও তথৈবচ!
এসব মুহূর্তে তাদের অলৌকিক ঘটনাবলি কোথায় ছিল, যা শী‘আরা দাবি করে?!
৬৫. শী‘আদের ধারণা আলীর ফযীলত শী‘আদের সূত্রে মুতাওয়াতির ও বহু সনদে বর্ণিত, অনুরূপ তার ইমামতির ব্যাপারটি। তাদের প্রতি প্রশ্ন: যেসব শী‘আরা সাহাবী নয়, তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা শোনে নি। তাদের বর্ণনা বিচ্ছিন্ন, যদি সাহাবীদের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত না পৌঁছায় তাহলে তাদের বর্ণনাও বিশুদ্ধ নয়, আর শী‘আরা যেসব সাহাবীদের স্বীকৃতি দেয়, তাদের সংখ্যা খুবই কম, দশ বা তার চেয়ে কিছু বেশি। এদের দ্বারা তো মুতাওয়াতির প্রমাণিত হয় না! আর অবশিষ্ট সাহাবীগণ যারা তার ফযীলত বর্ণনা করেছেন, শী‘আরা তাদের কুৎসা রটনা করে এবং তাদেরকে কুফুরীর অপবাদ দেয়!
অতঃপর শী‘আদের ওপর প্রশ্ন উত্থাপিত হয়, জমহুর সাহাবায়ে কেরাম, আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে যাদের প্রশংসা করেছেন, তোমাদের ধারণা মোতাবিক তারা যদি মিথ্যা বলতে ও ইলম গোপন করতে পারে, তাহলে তোমাদের স্বীকৃতপ্রাপ্ত অল্প কয়েকজন কি মিথ্যা বলতে পারে না, বরং তাদের ব্যাপারে মিথ্যা তো আরো সহজ!
৬৬. শী‘আরা দাবি করে: আবু বকর, উমার ও উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুম, তাদের উদ্দেশ্য ছিল নেতৃত্ব ও রাজত্ব, তাই তারা অন্যদের ওপর ইমামতির ব্যাপারে যুলুম করেছে।
আমাদের প্রশ্ন: তারা ইমামতির জন্য কোনো মুসলিমের সাথে যুদ্ধ করে নি, বরং যুদ্ধ করেছে মুরতাদ ও কাফিরদের সাথে, যেমন কিসরা, কায়সার ও পারস্য দেশসমূহ এবং সেখানে তারা ইসলাম কায়েম করেছে। তারা ঈমান ও ঈমানদেরকে বিজয়ী করেছে এবং কুফর ও কাফিরদেরকে পরাজিত করেছে। যেমন উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু, যার মর্যাদা আবু বকর ও উমারের চেয়ে কম, যাকে বিদ্রোহীরা শহীদ করেছে, তিনি কোনো মুসলিমের সাথে যুদ্ধ করেন নি, তার খিলাফত ও রাজত্বের জন্য কোনো মুসলিমকে তিনি হত্যা করেন নি।
অতএব, শী‘আরা যদি তাদেরকে যালিম ও রাসূলের শত্রু ভাবে, তাহলে আলীকেও যালেম ও শত্রু মনে করা জরুরী!!
৬৭. কাদিয়ানিরা তাদের নেতা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর নবুওয়াত দাবি করে কুফুরী করেছে, তাদের মাঝে ও শী‘আদের মাঝে কিসের পার্থক্য, যারা তাদের ইমামদের মধ্যে নবীদের বৈশিষ্ট্য বরং আরো অতিরিক্ত বৈশিষ্ট দাবি ও বিশ্বাস করে?!
এটা দাবি কি কুফুরী নয়?! অথবা তাদেরকে বলছি: তোমরা নবী ও ইমামদের পার্থক্য বর্ণনা কর?! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি বারো ইমামের সুসংবাদ দেওয়ার জন্য প্রেরিত হয়েছেন, যাদের কথা তার কথার ন্যায়, যাদের কর্ম তার কর্মের ন্যায় এবং যারা তার মতই নিষ্পাপ ও মাসুম...?
৬৮. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কীভাবে আয়েশার ঘরে দাফন করা হয়, অথচ তোমরা তাকে কুফর ও নিফাকের অপবাদ দাও?! এটা কি আয়েশার প্রতি রাসূলের মহব্বত ও সন্তুষ্টির প্রমাণ নয়?!
৬৯. অনুরূপ: কীভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আবু বকর ও উমারের মাঝখানে দাফন করা হয়, অথচ তারা উভয়ে তোমাদের দৃষ্টিতে কাফির?! কোনো মুসলিমকে কাফিরদের মাঝে দাফন করা বৈধ নয়, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যাপারে সেটা কীভাবে ঘটলো?! আল্লাহ কি তার হাবিবকে মৃত্যুর পরও কাফিরদের সংশ্রব থেকে রক্ষা করেন নি?! (তোমাদের ধারণা মতে)।
অতঃপর আলী এসব কর্মকাণ্ডের সময় কোথায় ছিলেন?! তিনি কেন এর বিরোধিতা করেন নি?!
তোমাদের বলা উচিৎ, আবু বকর ও উমার উভয়ে মুসলিম ছিলেন। তারা যেহেতু আল্লাহর নিকট সম্মানিত ছিলেন, তাই আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়াতেও সম্মান দান করেছেন, এটাই সত্য অথবা আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু তার দীনের ব্যাপারে খিয়ানত করেছেন!! আমরা খিয়ানত থেকে তাকে মুক্ত মনে করি। অন্যথায় আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ নবীর সাথে কীভাবে কাফিরদের দাফন করা হয়? যেমন তোমরা ধারণা কর।
৭০. শী‘আরা দাবি করে যে, আলীর ইমামতি ও তার খিলাফতের বর্ণনা কুরআনে ছিল, কিন্তু সাহাবীগণ তা গোপন করেছেন।
এটা তাদের মিথ্যা দাবি, কারণ সাহাবায়ে কেরাম সেসব হাদীস গোপন করে নি, যেসব হাদীস দ্বারা তারা আলীর ইমামতির স্বপক্ষে দলীল পেশ করে, এগুলো কেন তারা গোপন করেন নি?! যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«أنت مني بمنزلة هارون من موسى»
“তুমি আমার নিকট এমনি, যেমন হারুন মূসার নিকট ছিল”। ইত্যাদি হাদীস তারা কেন গোপন করেন নি?!
৭১. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরবর্তী মুসলিমদের খলিফা ছিল আবু বকর, এর দলীল:
এক. সকল সাহাবায়ে কেরামের ঐক্যমত এবং তার আনুগত্যে তাদের সকলের সম্মত হওয়া, তার নির্দেশ মেনে নেওয়া ও তার নিষেধ থেকে বিরত থাকা এবং তার খিলাফতের ওপর কারো প্রশ্ন উত্থাপন না করা। যদি তিনি সত্যিকার খলিফা না হতেন, তাহলে অবশ্যই তারা তার খিলাফতের ব্যাপারে আপত্তি করতেন। তারা তার অনুসরণ করতেন না। অথচ তাদের তাকওয়া, দীনদারী ও সততা ছিল সবার নিকট স্বীকৃত, তারা কারো তিরষ্কারকে পরোয়া করতেন না।
দুই. আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু তার বিরোধিতা করেন নি, তার সাথে যুদ্ধের ঘোষণা করে নি। এর করণ হয়তো: ফিতনা ও অনিষ্টের ভয় অথবা অক্ষমতা অথবা তার জানা ছিল যে, তিনিই খিলাফতের হকদার অর্থাৎ আবু বকরই সত্যিকার খলিফা হওয়ার যোগ্য।
তবে ফিতনা ও অনিষ্টের ভয়ে যুদ্ধ ত্যাগ করা তার জন্য কখনো উচিৎ হয় নি। কারণ, তিনি মুয়াবিয়ার সাথে যুদ্ধ করেছেন, যে যুদ্ধে বহু মানুষ মারা গিয়েছে। তিনি তালহা ও যুবায়ের রাদিয়াল্লাহু আনহুমার সাথে যুদ্ধ করেছেন, অনুরূপ তিনি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার সাথে যুদ্ধ করেছেন, যখন তিনি জেনেছেন যে, তিনি হকের ওপর আছেন, তখন তিনি ফিতনার ভয়ে যুদ্ধ ত্যাগ করেন নি!
তবে আলীকে অক্ষম বলা যুক্তিযুক্ত নয়। কারণ, যারা তাকে মুয়াবিয়ার যুগে সাহায্য করেছে, তারা সাকিফার দিন, উমারের খিলাফতের দিন এবং উমারের পরবর্তী খলিফা নির্বাচন করার উপদেষ্টা কমিটি গঠন করার দিন ঈমানদার ছিল। তারা যদি জানত যে, আলী সত্য পথে আছেন, তাহলে সেখানেও তারা তাকে আবু বকরের মোকাবিলায় সাহায্য করত। কারণ আলীর জন্য মুয়াবিয়ার সাথে যুদ্ধ করার চেয়ে আবু বকরের সাথে যুদ্ধ করাই শ্রেয় ছিল।
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু এ জন্যই যুদ্ধ ত্যাগ করেছেন, যেহেতু তিনি জানতেন, আবু বকর সত্যের ওপর।
৭২. শী‘আদের দাবি মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু কাফির ও মুরতাদ ছিলেন! যদি অনুরূপই হয়, তাহলে আলী ও তার ছেলে হাসানের ওপর তাদের অনুরূপ অপবাদ দেওয়া উচিৎ। অর্থাৎ আলী মুরতাদের নিকট পরাজিত ছিলেন, আর হাসান মুরতাদের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন। অথচ আমরা দেখি যে, খালেদ ইবন ওয়ালিদ আবু বকরের যুগে মুরতাদদের সাথে যুদ্ধ করেছেন এবং তাদেরকে পরাজিত করেছেন। অতএব, প্রমাণিত হয় যে, কাফিরদের মোকাবিলায় খালেদকে সাহায্য করা আল্লাহর নিকট গুরুত্বপূর্ণ ছিল, মুয়াবিয়ার মোকাবিলায় আলীকে সাহায্য করার চেয়ে! আর আল্লাহ তা‘আলা ইনসাফপূর্ণ, তিনি কারো ওপর যুলুম করেন না, অতএব, খালেদই আলীর চেয়ে উত্তম প্রমাণিত হয়! বরং আবু বকর, উমার ও উসমানের সৈন্যবাহিনী কাফিরদের মোকাবিলায় বিজয় লাভ করত, অথচ আলী মুরতাদদের বিরোধিতায় পরাজিত ছিল! এটা কীভাবে সম্ভব? দ্বিতীয়তঃ আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَا تَهِنُواْ وَلَا تَحۡزَنُواْ وَأَنتُمُ ٱلۡأَعۡلَوۡنَ إِن كُنتُم مُّؤۡمِنِينَ ١٣٩﴾ [ ال عمران : ١٣٩ ]
“আর তোমরা দুর্বল হয়ো না এবং দুঃখিত হয়ো না, আর তোমরাই বিজয়ী যদি মুমিন হয়ে থাক”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩৯] তিনি অন্যত্র বলেন,
﴿فَلَا تَهِنُواْ وَتَدۡعُوٓاْ إِلَى ٱلسَّلۡمِ وَأَنتُمُ ٱلۡأَعۡلَوۡنَ وَٱللَّهُ مَعَكُمۡ وَلَن يَتِرَكُمۡ أَعۡمَٰلَكُمۡ ٣٥﴾ [ محمد : ٣٥ ]
“অতএব, তোমরা হীনবল হয়ো না ও সন্ধির আহ্বান জানিও না এবং তোমরাই প্রবল। আর আল্লাহ তোমাদের সাথই রয়েছেন এবং কখনোই তিনি তোমাদের কর্মফল হ্রাস করবেন না”। [সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ৩৫]
আমরা দেখি আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু শেষ দিকে মুয়াবিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে সন্ধির জন্য আহ্বান জানান, যখন তিনি তাকে তার দেশ থেকে হটাতে অপারগ হন। তিনি তার নিকট প্রস্তাব করেন, প্রত্যেকেই স্বস্ব রাজত্বে বিদ্যমান থাকব, যার নিকট যা রয়েছে, তাতেই সীমাবদ্ধ থাকব। যদি আলীর পক্ষ মুমিন হয়, তাহলে মুয়াবিয়ার পক্ষ ছিল মুরতাদ, যেমন শী‘আদের ধারণা, অতএব, আলীর বিজয় কি জরুরী ছিল না? অথচ এটা বাস্তবতার বিপরীত!
৭৩. শী‘আরা আলীর ঈমান ও ইনসাফ প্রমাণ করতে অক্ষম, আহলে সুন্নাহ হওয়া ব্যতীত কখনোই তারা তা প্রমাণ করতে পারবে না। কারণ তাদেরকে যখন খাওয়ারেজ অথবা অন্য কেউ বলে, যারা আলীকে কাফির বা ফাসিক ধারণা করে: আমরা মানি না যে, আলী মুমিন ছিল, বরং সে ছিল কাফির অথবা যালেম, যেমন শী‘আরা আবু বকর ও উমারের ব্যাপারে বলে। তাহলে তারা আলীর ঈমান ও ইনসাফের ওপর কোনো দলীলই পেশ করতে পারবে না, আর যেসব দলীল পেশ করবে, তার দ্বারা আবু বকর, উমার ও উসমানের ঈমান ও ইনসাফ তার চেয়ে প্রকটভাবে প্রমাণিত হবে।
যদি তারা আলীর ঈমানের স্বপক্ষে তার ইসলাম গ্রহণ, হিজরত ও জিহাদ পেশ করে, তাহলে এসব তো আবু বকর, উমার ও উসমানের ক্ষেত্রেও ছিল! বরং মুয়াবিয়ার ইসলাম, বনু উমাইয়্যাদের ইসলাম ও বনু আব্বাসের ইসলাম একাধিক সনদ ও সূত্রে প্রমাণিত, অনুরূপ প্রমাণিত তাদের সালাত, সিয়াম ও কাফিরদের সাথে তাদের জিহাদ!
শী‘আরা এদের কারো মধ্যে যদি নিফাকের দাবি করে, তাহলে খারিজিরাও আলীর ব্যাপারে নিফাকের দাবি করতে পারে!
শী‘আরা যদি এদের কারো ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করে, তাহলে এর চেয়ে বড় সন্দেহ পোষণ করা যায় আলীর ব্যাপারে!
যদি শী‘আরা কুৎসা রটনাকারীদের ন্যায় বলে যে, আবু বকর ও উমার ছিল মুনাফিক, তারা উভয়ে অন্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে শত্রুতা পোষণ করত, তারা তার দীনকে বিনষ্ট করেছে, তাহলে খারেজিরাও অনুরূপ আলীর ব্যাপারে বলতে পারে। তারা আরো বলতে পারে যে, আলীর অন্তরে তার চাচাত ভাই মুহাম্মাদের দীনের প্রতি বিদ্বেষ ছিল, তার পরিবারের সাথে বিদ্বেষ পোষণ করত, সে মুহাম্মদের দীনকে বিনষ্ট করতে চেয়েছিল, কিন্তু তার জীবদ্দশায় ও তিন খলিফার যুগে তার পক্ষে তা সম্ভব হয় নি, অবশেষে সে তৃতীয় খলিফার হত্যার ষড়যন্ত্র করে ও ফেতনার আগুন জ্বালিয়ে দেয়, যার ফলে সে মুহাম্মদের কতক সাহাবী ও তার উম্মতের কতক সদস্যকে হত্যার সুযোগ লাভ করে, এটা তার মুহাম্মদের প্রতি বিদ্বেষ ও শত্রুতার বহিঃপ্রকাশ ছিল, সে মূলত মুনাফিকদের পক্ষ ছিল, যারা তার মধ্যে ইলাহিয়্যাত ও নবুওয়াত দাবি করেছিল। আর আলী অন্তরে যা ধারণ করত, মুখে তার বিপরীত বলত, কারণ তার ধর্মই ছিল ‘তাকইয়াহ’। এ জন্যই দেখি বাতেনিরা তার অনুসারী, তাদের নিকট তার গোপন ভেদ বিদ্যমান, তারা তার থেকে তা বর্ণনা করে ও গ্রহণ করে!
যদি শী‘আরা আলীর ঈমান ও ইনসাফ কুরআন দ্বারা প্রমাণিত করতে চায়, তাদেরকে বলা হবে: কুরআন সবার জন্য সমান। সবাই কুরআন যেভাবে গ্রহণ করেছে, আলিও সেভাবে গ্রহণ করেছে। যে আয়াত তারা আলীর জন্য খাস করবে, সে আয়াত আরো বিশেষভাবে প্রযোজ্য হবে আবু বকর ও উমারের জন্য।
শী‘আরা যদি বলে: আলীর ব্যাপারে এসব আয়াত দলীল দ্বারা প্রমাণিত, তাহলে এসব দলীল তো আবু বকর ও উমারের ক্ষেত্রে অধিক প্রযোজ্য। যদি তারা তাওয়াতুরের দাবি করে, তাহলে এদের তাওয়াতুর তো বেশি শক্তিশালী। যদি তারা সাহাবীদের বর্ণনার ওপর নির্ভর করে, তাহলে আবু বকর ও উমারের ব্যাপারে তাদের বর্ণনায়ই অধিক!
৭৪. শী‘আরা ধারণা করে যে, আলী ইমামতির বেশি হকদার ছিল। কারণ, সকল সাহাবীদের মোকাবিলায় তার ফযীলতের বর্ণনা অধিক, সে অধিক ফযীলতপূর্ণ ছিল, (যেমন তাদের ধারণা)। আমরা বলব: তোমরা আলী সম্পর্কে নির্দিষ্ট কিছু ফযীলত জান, যেমন সে প্রথম যুগে ইসলাম গ্রহণ করেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে জিহাদ করেছে, তার ইলম বেশি ছিল, দুনিয়ার প্রতি তিনি অনাগ্রহী ছিলেন। আচ্ছা অনুরূপ গুনাবলি হাসান ও হুসাইনের মধ্যে বেশি ছিল, না সাদ ইবন আবু ওয়াক্কাস, আব্দুর রহমান ইবন আউফ ও আব্দুল্লাহ ইবন উমার ও অন্যান্য মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে বেশি ছিল?!
কেউ হাসান ও হুসাইনের মধ্যে এটা দাবি করতে পারবে না। এখন অবশিষ্ট রইল তাদের ব্যাপারে কুরআন ও হাদীসের দলীল। যদি উমাইয়্যারা মুয়াবিয়ার খিলাফতের পক্ষে কুরআনের দলীল পেশ করে, তাহলে তাদের দাবিই হবে শী‘আদের চেয়ে শক্তিশালী। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿وَمَن قُتِلَ مَظۡلُومٗا فَقَدۡ جَعَلۡنَا لِوَلِيِّهِۦ سُلۡطَٰنٗا فَلَا يُسۡرِف فِّي ٱلۡقَتۡلِۖ إِنَّهُۥ كَانَ مَنصُورٗا ٣٣﴾ [ الاسراء : ٣٣ ]
فسيقولون : المظلوم هو عثمان بن عفان، وقد نصر الله معاوية لتوليه دم عثمان !
“আর যে অন্যায়ভাবে নিহত হয়, আমি অবশ্যই তার অভিভাবককে ক্ষমতা দিয়েছি। সুতরাং হত্যার ব্যাপারে সে সীমালঙ্ঘন করবে না, নিশ্চয় সে হবে সাহায্যপ্রাপ্ত”। [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৩৩]
“তারা বলতে পারে, এখানে মযলুম হচ্ছে উসমান ইবন আফফান, আর আল্লাহ তা‘আলা তার রক্তের বদলা নেওয়ার জন্য মুয়াবিয়াকে ক্ষমতা দান করেছেন”!
৭৫. শী‘আরা ধারণা করে যে, আবু বকর ও উমার উভয়েই আলীর খিলাফত জবর দখল করেছে এবং তারা উভয়েই তার বিপক্ষে ষড়যন্ত্র করেছে, তাকে খিলাফত থেকে বঞ্চিত করার জন্য... এটা তাদের মিথ্যাচার।
আমাদের বক্তব্য: যদি তোমাদের কথা সত্য হয়, তাহলে উমার অন্যদের সাথে কেন তাকে পরামর্শ সভার অন্তর্ভুক্ত করেছেন? অথচ যদি তাকে পরামর্শ সভা থেকে বাদ দিতেন, যেমন বাদ দিয়েছেন সায়িদ ইবন জায়েদকে অথবা তার পরিবর্তে অন্য কাউকে অন্তর্ভুক্ত করতেন, তাহলে এক শব্দ দ্বারাও কেউ তার প্রতিবাদ করত না।
এর দ্বারাই প্রমাণিত হয় যে, সাহাবায়ে কেরাম তাকে উপযুক্ত মর্যাদায় প্রদান করেছেন, তার ব্যাপারে কোনো যুলুম বা বাড়াবাড়ি করেন নি। যে ক্ষমতার হকদার ছিল, তাকেই তারা ক্ষমতা প্রদান করেছেন।
নিচের দলীলও যার সত্যতার প্রমাণ:
উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর হত্যার পর যখন আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন মুহাজির ও আনসারগণ দ্রুত তার হাতে বাই‘আত হন। কেউ কি বলতে পারবে, আবু বকর, উমার ও উসমানের নিকট বাই‘আতের কারণে, তাদের কেউ আলীর কাছে অপরাধ স্বীকার করেছে?! অথবা তাদের কেউ আলীর ইমামতির দলীল অস্বীকার করার কারণে তাওবা করেছে?! অথবা তাদের কেউ বলেছে: আলীর খিলাফত সম্পর্কে এ দলীল আজই আমার স্মরণ হলো, পূর্বে যা ভুলে গিয়েছিলাম?!
৭৬. আনসারগণ খিলাফতের ব্যাপারে আবু বকরের সাথে মতভেদ করেছে, তারা তাকে সাদ ইবন উবাদার নিকট বাই‘আতের আহ্বান জানিয়েছে, তখন আলী ঘরে বসে ছিলেন, তিনি কোনো পক্ষ নেন নি। অতঃপর সকল আনসার আবু বকরের বাই‘আতে একমত হন, যার পশ্চাতে নিচের কোনো এক কারণ অবশ্যই ছিল:
এক. আবু বকরের শক্তির কাছে তারা নতি স্বীকার করেছে।
দুই. অথবা আবু বকর খিলাফতের উপযুক্ত ছিল, এটা তাদের নিকট স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, যে কারণে তারা তার আনুগত্য মেনে নিয়েছে।
তিন. অথবা অর্থহীন ও এমনিতেই তারা এটা করেছে। এ ছাড়া চতুর্থ কোনো ব্যাখ্যা নেই।
শী‘আরা যদি বলে: আবু বকরের শক্তির কাছে তারা নতি স্বীকার করেছে। এটা নিরেট মিথ্যাচার। কারণ সেখানে কোনো যুদ্ধ, মারামারি, গালাগাল, ধমক ও অস্ত্রের ভয় ছিল না। আর আনসারগণ ভয়ে বাই‘আত করেছেন বলা অসম্ভব। কারণ, তাদের দুই হাজারেরও বেশি অশ্বারোহী যোদ্ধা ছিল, যারা সবাই একই বংশের, ইতোপূর্বে তাদের এমন বাহাদুরি প্রকাশ পেয়েছে, যার সামনে পুরো আরব বিশ্ব মাথা নত করেছে। দ্বিতীয়তঃ তারা মৃত্যুর দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়ে দীর্ঘ আট বছর সকল আরবের সাথে যুদ্ধ করেছে। রূমের কায়সারের সাথে মুতার যুদ্ধেও অবতীর্ণ হয়েছে। আবু বকরের পক্ষে বা তার সাথে আগমনকারী আরো দু’চার জনের পক্ষে তাদের ভীত করা ছিল অসম্ভব, যাদের ছিল না তেমন লোকবল, ধন-সম্পদ অথবা কঠিন দূর্গের ন্যায় বংশ বা গোত্র। এতদসত্বেও তারা দ্বীধাহীন চিত্তে তার নিকট বাই‘আত করেন।
অনুরূপ আনসারদের দাবি ত্যাগ করা, তাদের গোত্রীয় ভাইয়ের হাতে বাই‘আত না করা, আবার সকলের তা মেনে নেওয়াও অসম্ভব ছিল যদি আবু বকরের মধ্যে খিলাফতের যোগ্যতা না থাকত। অতঃপর এতবড় সম্প্রদায়ের চিরচেনা সত্য থেকে বিচ্যুত হওয়া, অসত্য ও নফসের প্রবৃত্তির ওপর একমত হওয়া কোনো ভয়-ভীতি ব্যতীত অসম্ভব অথবা মাল ও সম্পদের লোভ ব্যতীত অসম্ভব। অতঃপর এমন এক ব্যক্তির নিকট নতি স্বীকার করা, যার কোনো বংশ নেই, নিরাপত্তা নেই, যাকে সুরক্ষা দেওয়ার কেউ নেই, যার অট্টালিকা নেই, আর না আছে গোলাম-বৃত্ত ও ধন-সম্পদ, আনসারদের পক্ষে ছিল অসম্ভব, যদি না তিনি খিলাফতের যোগ্য হতেন।
অতএব, এসব সম্ভাবনা যখন বাতিল প্রমাণিত হলো, আমরা বুঝলাম যে, আনসার সাহাবায়ে কেরাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত দলীল এবং আবু বকরের যোগ্যতার কারণেই তার হাতে বাই‘আত করেছেন, শুধু ইজতেহাদ কিংবা ধারণার ওপর নির্ভর করে নয়।
অতএব, যখন আনসার থেকে নেতা নির্বাচিত হলো না, তাদের হাত থেকে নেতৃত্ব চলে গেল, তখন তারা সকলে কি কারণে আলীর খিলাফত সম্পর্কে রাসূলের নির্দেশ ও আদেশ অস্বীকার বা অমান্য করলেন?! যে আলীর ওপর যুলুম করেছে, তার অধিকার হরণ করেছে, তার ব্যাপারে সকলের ঐক্যমত হওয়া ছিল অসম্ভব!!
৭৭. শী‘আদের ধারণা মোতাবেক আবু বকর ও উমার আলীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে সফল হয়েছেন, আমাদের প্রশ্ন তারা ক্ষমতায় গিয়ে নিজেদের জন্য কি করেছেন?!
আবু বকর কেন তার সন্তানকে খিলাফতের দায়িত্ব দিলেন না, যেমন দিয়েছেন আলি?!
ওমর কেন তার সন্তানকে খিলাফতের দায়িত্ব দিলেন না, যেমন দিয়েছেন আলী?!
৭৮. আমরা জানি যে, মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবন উসমান ইবন আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহুর মাতা হচ্ছেন ফাতেমা বিনতে হুসাইন ইবন আলী ইবন আবু তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু। অর্থাৎ মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল্লাহর দাদি ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহা আর দাদা হচ্ছেন উসমান ইবন আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহু!
এখানে আমাদের প্রশ্ন, যা শী‘আদের জন্য খুবই বিরক্তিকর: ফাতেমার কোনো নাতী অভিশপ্ত হবে, এটা তাদের মাযহাব কি সমর্থন করে?! কারণ শী‘আদের নিকট বনু উমায়্যারা ‘কুরআনে বর্ণিত অভিশপ্ত গাছ’ যাদের অন্তর্ভুক্ত উল্লিখিত মুহাম্মাদও?! [দেখুন: “আল-কাফি”: (৫/৭), কিতাবু সালিম ইবন কাইস”: (পৃ. ৩৬২)]
৭৯. শী‘আরা তাদের ইমামদের ব্যাপারে ‘তাকইয়াহ’ ও ‘ইসমত’ এর আকীদা পোষণ করে। উল্লেখ্য ‘তাকইয়া’র মূল হচ্ছে প্রতারণা অর্থাৎ অন্তরের বিপরীত মুখে উচ্চারণ করা। আর মাসুম অর্থ নিষ্পাপ। অথচ উভয় একটা আরেকটার বিপরীত। যা কারো মধ্যে কখনো জমা হতে পারে না। কারণ, তোমাদের ইমামদের নিষ্পাপ হওয়ার অর্থ কী, যখন তোমরা তাদের কথার শুদ্ধতা বা অশুদ্ধতা জান না? কারণ তোমাদের ধর্মের দশভাগের নয়ভাগই হচ্ছে ‘তাকইয়াহ’! তাদের সব কথা ও কর্মে তো এ সম্ভাবনাই থাকে যে, তারা এটা প্রতারণা ও অপরকে ধোঁকা দেওয়া অথবা কোনো স্বার্থ হাসিলের জন্য ‘তাকইয়ার’ আশ্রয় নিয়ে বলেছেন বা করেছেন।
দ্বিতীয়তঃ তোমাদের নিকট ‘তাকইয়া’র সাওয়াব হচ্ছে সালাতের সাওয়াবের ন্যায়, যেমন বর্ণিত আছে: تارك التقية كتارك الصلاة “তাকইয়া ত্যাগকারী সালাত ত্যাগকারীর ন্যায়”। [বিহারুল আনওয়ার: (৭৫/৪২১), “মুসতাদরাকুল ওয়াসায়েল”: (১২/২৫৪)]
অধিকন্তু তোমাদের ধর্মের “দশভাগের নয়ভাগই হচ্ছে তাকইয়া”। [“উসুলুল কাফি”: (২/২১৭), “বিহারুল আনওয়ার”: (৭৫/৪২৩)] অতএব, এতে সন্দেহ নেই যে, তোমাদের ইমামরা যা কিছু করেছে, তা সব ঐ নয়ভাগের অন্তর্ভুক্ত! এটা তোমাদের ধারণাকৃত তাদের নিষ্পাপতার বিপরীত নয়কি!
৮০. শী‘আরা যখন তাদের ইমামদের ইমামতির স্বপক্ষে ‘হাদীসে সাকালাইন’ পেশ করে, তখন তারা বিপরীত চরিত্র ধারণ করে। [হাদীসে সাকলাইন إني تارك فيكم الثقلين : كتاب الله وعترتي أهل بيتي “আমি তোমাদের মাঝে দু’টি ভারি বস্তু রেখে যাচ্ছি: আল্লাহর কিতাব ও আমার পরিবার”। তিরমিযী: (৫/৩২৮-৩২৯)] (হাদীসে সাকালাইন অর্থাৎ কুরআন ও নবী পরিবার সম্পর্কিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশ সম্বলিত হাদীস) অতঃপর আমরা তাদেরকে দেখি যে, যারা ‘সাকলে আসগর’ অর্থাৎ ছোট সাকল তথা আহলে বাইতকে দোষারোপ করে, তাদেরকে তারা কাফির বলে। কিন্তু যারা ‘সাকলে আকবার’ অর্থাৎ বড় সাকল তথা কুরআনের ছিদ্রান্বেষণ বা তার দোষারোপ করে, তাদেরকে তারা কাফির বলে না, বরং তাকে মুজতাহিদে মুখতি তথা ‘ভুলকারী গবেষক’ বলে, কাফির বলে না।
৮১. শী‘আদের ধারণা যে, সাহাবায়ে কেরাম সবাই মুরতাদ হয়ে গেছে, অল্প সংখ্যক ব্যতীত, যাদের সংখ্যা অধিক হলেও সাতের বেশি নয়।
আমাদের প্রশ্ন: আহলে বাইতের অন্যান্য সদস্য কোথায়, যেমন জাফরের সন্তান ও আলীর সন্তান... তারাও কি অন্যদের সাথে কাফির হয়ে গেছে?!
৮২. হাদীসুল মাহদীতে এসেছে:
«لو لم يبقَ من الدنيا إلا يوم لطوَّل الله ذلك اليوم حتى يبعث فيه رجلاً من أهل طئ اسمه اسبيتي يوامي واسم أبيه اسم أبي»،
“দুনিয়া থেকে যদি একদিন বাকি থাকে, তবুও আল্লাহ সে দিনকে প্রলম্বিত করে আহলে বাইতের এক লোক প্রেরণ করবেন, যার নাম হবে আমার নামের ন্যায় এবং যার পিতার নাম হবে আমার পিতার নামের ন্যায়”। [“আবু দাউদ”: (৪/১০৬), আল-বানি হাদীসটি সহিহ বলেছেন: “সহীহুল জামে”: (৫১৮০)। শী‘আরা এ হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করে ঠিক, কিন্তু তার নামের ব্যাপারে তারা খুব জটিলতার সন্মুখীন হয়েছে, সামনে যার বর্ণনা আসছে!]
আমাদের জানি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আর শী‘আদের নিকট মাহদী হচ্ছে মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান! এটা একটা বড় প্রশ্ন!
আর এ জন্য শী‘আদের কোনো এক পণ্ডিত এ প্রশ্নের সমাধানে চাতুরতার আশ্রয় নিয়েছেন, যেমন তিনি বলেছেন:
«كان لرسول الله صلى الله عليه وسلم سبطان أبو محمد الحسن وأبو عبد الله الحسين، ولما كان الحجة ـ أي المنتظرـ من ولد الحسين أبي عبد الله، وكانت كنية الحسين أبا عبد الله، فأطلق النبي صلى الله عليه وسلم على الكنية لفظ الاسم، لأجل المقابلة بالاسم في حق أبيه، وأطلق على الجد لفظة الأب» !!.
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দু’জন সন্তান ছিল আবু মুহাম্মাদ আল-হাসান ও আবু আব্দুল্লাহ আল-হুসাইন। যেহেতু অপেক্ষার ‘মাহদী’ আগমন করবেন আবু আব্দুল্লাহ হুসাইনের সন্তান থেকে, আর তার উপনাম ছিল আবু আব্দুল্লাহ, তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপনামকেই নাম হিসেবে উল্লেখ করেছেন, আর দাদার জন্য পিতা শব্দ ব্যবহার করেছেন। [“কাশফুল গুম্মাহ ফি মারেফাতিল আইম্মাহ” লিল আরবালি: (৩/২২৮); “আমালিত তুসি” (পৃ. ৩৬২); “ইসবাতুল হুতাদ”: (৩/৫৯৪, ৫৯৮)]
৮৩. শী‘আদের ইমাম ‘মাহদী’ সম্পর্কে অমিল ও বিপরীত বক্তব্য:
এক. ‘মাহদী’র মা কে?
‘মাহদী’র মাতা কি বাদি হবে, যার নাম নারগিস অথবা সাকিল অথবা মালিকাহ অথবা খামত অথবা হাকিমাহ অথবা রায়হানাহ অথবা সুসান অথবা স্বাধীন নারী হবে, যার নাম মারইয়াম?!
দুই. তার জন্ম কখন?
সে কি তার পিতার মৃত্যুর আট মাস পর জন্ম গ্রহণ করেছে অথবা তার পিতার মৃত্যুর পূর্বে ২৫২ হি. অথবা ২৫৫ হি. অথবা ২৫৬ হি. অথবা ২৫৭ হি. অথবা ২৫৮ হি. অথবা ৮ জিলকদ অথবা ৮ শাবান অথবা ১৫ শাবান অথবা ১৫ রমযান, কখন জন্ম গ্রহণ করেছে?!
তিন. তার মাতা তাকে কীভাবে গর্ভে ধারণ করেছে?
তার মাতা কি তাকে পেটে ধারণ করেছে, যেমন সকল নারীরা তাদের সন্তান ধারণ করে? অথবা অন্যান্য নারীর বিপরীত তার মাতা তাকে পার্শ্বে ধারণ করেছে?!
চার. তার মাতা তাকে কীভাবে প্রসব করেছে?
সকল নারীদের ন্যায় যৌনাঙ্গের মাধ্যমেই প্রসব করেছে? অথবা সকল নারীদের বিপরীত রান থেকে তাকে প্রসব করেছে?
পাঁচ. তিনি কীভাবে লালিত-পালিত হয়েছেন?
তারা আবুল হাসান থেকে বর্ণনা করে:
«إنا معاشر الأوصياء ننشأ في اليوم مثلما ينشأ غيرنا في الجمعة» !.
“আমরা অসিয়তকৃত জামা‘আত, আমরা দিনে এতটুকু বড় হই, অন্যরা জুমার দিনে যতটুকু বড় হয়”!
আবুল হাসান থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«إن الصبي منا إذا أتى عليه شهر كان كمن أتى عليه سنة» !.
“আমাদের বাচ্চাদের ওপর একমাস অতিক্রম করা অন্যদের ওপর এক বছর অতিক্রম করার সমান”!
আবুল হাসান থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন:
« إنا معاشر الأئمة ننشأ في اليوم كما ينشأ غيرنا في السنة» !.
“আমরা ইমামদের জামা‘আত, আমরা দিনে এতটুকু বড় হই, অন্যরা যতটুকু বড় হয় বছরে”! [দেখুন: “আল-গায়বাহ” লিত তুসি: (পৃ. ১৫৯-১৬০)]
ছয়. তারা কোথায় বাস করে?
শী‘আরা বলেছে: তাইবাতে, আবার বলেছে: রাওহা নামক স্থানে অবস্থিত রিজওয়া পাহাড়ে, আবার তারা বলেছে: বরং মক্কায় জি তাওয়া স্থানে, আবার তারা বলেছে: বরং সে সামেরা নামক স্থানে!
এমনকি তাদের কেউ বলেছে:
«ليت شعري أين استقرت بك النوى … بل أي أرض تقلك أو ثرى، أبرضوى أم بغيرها أم بذي طوى … أم في اليمن بوادي شمروخ أم في الجزيرة الخضراء» .
“আমি যদি জানতাম! কোথায় তোমার গন্তব্য স্থির হয়েছে... বরং কোনো যমীন অথবা ভূগর্ব তোমাকে ধারণ করছে, রিজওয়া নামক স্থান, না অন্য কোনো যমীন, না জি তাওয়া নামক স্থান... অথবা ইয়ামানের শামরুখ উপত্যকা অথবা সবুজ উপদ্বীপ”। [“বিহারুল আনওয়ার”: (১০২/১০৮)]
সাত. তিনি কি যুবক অবস্থায় ফিরে আসবেন, না বার্ধক্য অবস্থায় ফিরে আসবেন?
মুফাজ্জল থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি সাদেককে জিজ্ঞাসা করেছি: হে আমার মুনিব, তিনি কি যুবক অবস্থায় ফিরে আসবেন, না বৃদ্ধ অবস্থায় ফিরে আসবেন? তিনি বললেন:
«سبحان الله، وهل يعرف ذلك، يظهر كيف شاء وبأي صورة شاء» .
“সুবহানাল্লাহ! এটা কি জানা সম্ভব, তিনি যেভাবে চান এবং যে আকৃতিতে চান বিকশিত হবেন”। [দেখুন: “বিহারুল আনওয়ার”: (৭/৫৩)]
অন্য বর্ণনায় আছে:
«يظهر في صورة شاب موفق ابن اثنين وثلاثين سنة» .
“তিনি যুবকের আকৃতিতে বিকশিত হবেন, বত্রিশ বছরের যুবকদের ন্যায়”। [“কিতাবু তারিখি মা বা’দাজ জুহুর”: (পৃ. ৩৬০)]
অন্য বর্ণনায় আছে:
يخرج وهو ابن إحدى وخمسين سنة .
“তিনি একান্ন বছরের বয়স্ক হবেন”। [“কিতাবু তারিখি মা বা’দাজ জুহুর”: (পৃ. ৩৬১)]
অন্য বর্ণনায় আছে:
يظهر في صورة شاب موفق ابن ثلاثين سنة .
“তিনি যুবকদের আকৃতিতে বিকশিত হবেন, ত্রিশ বছরের যুবকদের ন্যায়”। [দেখুন: “আল-গায়বাহ” লিত তুসি: (পৃ. ৪২০)]
আট. তার রাজত্বের সময়কাল কত?
মুহাম্মাদ আস-সদর বলেছেন:
وهي أخبار كثيرة ولكنها متضاربة في المضمون إلى حد كبير حتى أوقع كثيراً من المؤلفين في الحيرة والذهول .
“এ ব্যাপারে অনেক হাদীসই রয়েছে, কিন্তু একটির সাথে অপরটির কোনো মিল নই, বরং রয়েছে বিস্তুর পার্থক্য, যা অনেক লেখকদের বিচ্যুতি ও ভ্রান্তিতে নিক্ষেপ করেছে”। [“কিতাবু তারিখি মা বা’দাজ জুহুর”: (পৃ. ৪৩৩)]
وقيل : ( ملك القائم منا 19 سنة ) وفي رواية : ( سبع سنين، يطول الله له في الأيام والليالي حتى تكون السنة من سنيه مكان عشر سنين فيكون سني ملكه 70 سنة من سنيكم ).
বলা হয়েছে: “তার রাজত্ব হবে ১৯ বছর”, অন্য বর্ণনা আছে: “সাত বছর, আল্লাহ তার রাত ও দিনকে প্রলিম্বত করবেন, ফলে তার এক বছর হবে দশ বছরের ন্যায়, এভাবে তোমাদের হিসাব মতে সত্তর বছর তার রাজত্ব চলবে”। [“কিতাবু তারিখি মা বা’দাজ জুহুর”: (পৃ. ৪৩৬)]
অন্য বর্ণনায় আছে, ‘মাহদী’ ৩০৯ বছর রাজত্ব করবেন, যে পরিমাণ আসহাবে কাহাফবাসীরা তাদের গুহায় অবস্থান করেছে।
নয়. তার অদৃশ্য বা অনুপস্থিত থাকার পরিমাণ কত?
শী‘আরা আলী ইবন আবি তালেব থেকে বর্ণনা করেছে, তিনি বলেছেন:
تكون له ـ أي للمهدي ـ غيبة وحيرة، يضل فيها أقوام ويهتدي آخرون، فلما سئل : كم تكون الحيرة؟ قال : ستة أيام أو ستة أشهر أو ست سنين .
‘মাহদি’র ব্যাপারে অনুপস্থিতি ও কিংকর্তব্যবিমূঢ়তা উভয় হবে, তাতে এক সম্প্রদায় গোমরাহ হবে, অন্য সম্প্রদায় হিদায়াত লাভ করবে। যখন তাকে জিজ্ঞাসা কলা হলো: কত দিন হবে কিংকর্তব্যবিমূঢ়তার মেয়াদকাল? তিনি বললেন: ছয় দিন অথবা ছয় মাস অথবা ছয় বছর”। [“আল-কাফি”: (১/৩৩৮)]
আবু আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন:
( ليس بين خروج القائم وقتل النفس الزكية إلا خمس عشرة ليلة ) ، يعني 140 للهجرة !
“পবিত্র নফস হত্যা ও ‘মাহদী’র আগমনের ব্যবধান হবে মাত্র পনের দিন”। অর্থাৎ ১৪০ হিজরীতে তিনি আগমন করবেন!
মুহাম্মদ আস-সদর এ সংবাদ সম্পর্কে বলেন,
خبر موثوق قابل للإثبات التاريخي ـ بحسب منهج هذا الكتاب ـ فقد رواه المفيد في الإرشاد عن ثعلبة بن ميمون عن شعيب الحداد عن صالح بن ميتم الجمال، وكل هؤلاء الرجال موثقون أجلاء !
“এ সংবাদটি নির্ভর যোগ্য ও ঐতিহাসিকভাবে গ্রহণযোগ্য, (কিতাবের নীতি অনুসারে) এ সংবাদটি বর্ণনা করেছেন ‘মুফিদ’ তার ইরশাদ গ্রন্থে সালাবা ইবন মায়মুন থেকে, সে বর্ণনা করেছে শুআইব আল-হাদ্দাদ থেকে, সে বর্ণনা করেছে সালেহ থেকে। এরা সবাই মহা পণ্ডিত ও নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিবর্গ! [“কিতাবু তারিখি মা বা’দাজ জুহুর”: (পৃ. ১৮৫)]
পূর্বের বর্ণনা মতে নির্দিষ্ট তারিখে যখন তিনি বের হন নি! তখন মাহদী সম্পর্কে তার থেকেই দ্বিতীয় বর্ণনা আসল:
يا ثابت إن الله كان وقت هذا الأمر في السبعين، فلما أن قتل الحسين اشتد غضب الله على أهل الأرض فأخره إلى أربعين ومائة : فحدثناكم أنه سيخرج سنة 140 ، فأذعتم الحديث وكشفتم قناع الستر، فلم يجعل الله له بعد ذلك عندنا وقتا !!
“হে সাবেত, আল্লাহ তা‘আলা সত্তুরের মধ্যে এ বিষয়টি নির্ধারণ করে ছিলেন, যখন হুসাইনকে হত্যা করা হলো, যমীনবাসীদের ওপর আল্লাহর গোস্বা বেড়ে গেল, তিনি একশত চল্লিশ বছর পর্যন্ত বিলম্ব করলেন: আমরা তোমাদেরকে বলছি, তিনি ১৪০ হিজরীতে বের হবেন, কিন্তু তোমরা সংবাদটি প্রচার করে দিয়েছ ও পর্দা উন্মোচন করে ফেলেছ, তাই এরপর থেকে আল্লাহ আমাদের জন্য কোনো সময় নির্ধারণ করেন নি!! [“উসুলুল কাফি”: (১/৩৬৮); “আল-গায়বাহ” লিন নুমানি: (পৃ. ১৯৭); “আল-গায়বাহ” লিত তুসি”: (পৃ. ২৬৩); “বিহারুল আনওয়ার”: (৫২/১১৭)]
অতঃপর আবু জাফর সাদেক থেকে এক বর্ণনা আসে, যা পূর্বের সকল বর্ণনাকে মিথ্যা প্রমাণ করে, তিনি বলেছেন:
كذب الوقاتون إنا أهل البيت لا نوقّت .
“সময় নির্ধারণকারীরা মিথ্যুক, আমরা আহলে বাইত কোনো সময় নির্ধারণ করি না”। [“উসুলুল কাফি”: (১/৩৬৮); “আল-গায়বাহ” লিন নুমানি: (পৃ. ১৯৮)]
و( ما وقتنا فيما مضى، ولا نوقت فيما يُستقبل ).
“আমরা পূর্বে সময় নির্ধারণ করে নি, ভবিষ্যতেও সময় নির্ধারণ করব না”। [“আল-গায়বাহ” লিত তুসি”: (পৃ. ২৬২); “বিহারুল আনওয়ার”: (৫২/১০৩)]
৮৪. শী‘আরা আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি উর্ধ্ব শ্বাস ছেড়ে সাথীদের নিকট আগমন করেন, অতঃপর বলেন,
كيف أنتم وزمان قد أظلكم تـعطل فيه الحدود ويتخذ المال فيه دولا , ويعادى فيه أولياء اللّه , ويوالى فيه أعداء اللّه؟ قالوا : يا أمير المؤمنين فإن أدركنا ذلك الزمان فكيف نصنع؟ قال : كونوا كأصحاب عـيسى (ع): نشروا بالمناشير , وصلبوا على الخشب، موت في طاعة اللّه عز وجل خير من حياة في معصية اللّه .
“তোমাদের অবস্থা তখন কেমন হবে, যখন তোমাদের ওপর এমন এক সময় আসবে, যেখানে আল্লাহর বিধান পরিত্যাগ করা হবে, জাতীয় সম্পদকে ব্যক্তিগত সম্পদে পরিণত করা হবে, আল্লাহর ওলিদের সাথে শত্রুতা করা হবে এবং আল্লাহর শত্রুদের সাথে বন্ধুত্ব করা হবে? তারা বলল: হে আমিরুল মুমিনীন, আমরা যদি সে যুগ পাই, তাহলে কি করব? তিনি বললেন: “তোমরা ঈসার সাথীদের ন্যায় হয়ে যাবে, যাদেরকে করাত দিয়ে চিড়া হয়েছিল, গাছের উপর শুলিতে চড়ানো হয়েছিল, আল্লাহর আনুগত্যে মৃত্যু বরণ করা, তার অপরাধে বেঁচে থাকার চেয়ে উত্তম”। [“নাহজুজ সাআদাহ”: (২/৬৩৯)]
এর সাথে শী‘আদের ‘তাকইয়া’ নীতির কোনো মিল আছে?!
৮৫. আবু বকর কেন হিজরতের সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথীত্ব গ্রহণ করেছিলেন?!
যদি তিনি মুনাফিক হন, (যেমন শী‘আরা বলে) তাহলে কেন তিনি নিজ কাফির কাওমের সাথে গিয়ে একাত্বতা ঘোষণা করেন নি, অথচ তারাই ছিল ক্ষমতাবান, মক্কায় তারাই ছিল সম্মানিত?! যদি দুনিয়াব কোনো স্বার্থে তিনি নিফাকি করেন, তাহলে সে সময় রাসূলের সাথে থাকার মধ্যে কোনো স্বার্থ ছিল? অথচ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একা, নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত! এতদ সত্বেও কাফিররা তাকে হত্যার ব্যাপারে ছিল আদগ্রীব!
৮৬. আল্লাহ তা‘আলা কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় সাহাবীদের প্রশংসা করেছেন।
যেমন, তিনি বলেন,
﴿وَرَحۡمَتِي وَسِعَتۡ كُلَّ شَيۡءٖۚ فَسَأَكۡتُبُهَا لِلَّذِينَ يَتَّقُونَ وَيُؤۡتُونَ ٱلزَّكَوٰةَ وَٱلَّذِينَ هُم بَِٔايَٰتِنَا يُؤۡمِنُونَ ١٥٦ ٱلَّذِينَ يَتَّبِعُونَ ٱلرَّسُولَ ٱلنَّبِيَّ ٱلۡأُمِّيَّ ٱلَّذِي يَجِدُونَهُۥ مَكۡتُوبًا عِندَهُمۡ فِي ٱلتَّوۡرَىٰةِ وَٱلۡإِنجِيلِ يَأۡمُرُهُم بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَىٰهُمۡ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَيُحِلُّ لَهُمُ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡخَبَٰٓئِثَ وَيَضَعُ عَنۡهُمۡ إِصۡرَهُمۡ وَٱلۡأَغۡلَٰلَ ٱلَّتِي كَانَتۡ عَلَيۡهِمۡۚ فَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ بِهِۦ وَعَزَّرُوهُ وَنَصَرُوهُ وَٱتَّبَعُواْ ٱلنُّورَ ٱلَّذِيٓ أُنزِلَ مَعَهُۥٓ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ١٥٧﴾ [ الاعراف : ١٥٦، ١٥٧ ] .
“আর আমার রহমত সব বস্তুকে পরিব্যাপ্ত করেছে। সুতরাং আমি তা লিখে দেব তাদের জন্য যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং যাকাত প্রদান করে। আর যারা আমার আয়াতসমূহের প্রতি ঈমান আনে। যারা অনুসরণ করে রাসূলের, যে উম্মী নবী; যার গুণাবলী তারা নিজদের কাছে তাওরাত ও ইঞ্জিলে লিখিত পায়, যে তাদেরকে সৎ কাজের আদেশ দেয় ও বারণ করে অসৎ কাজ থেকে এবং তাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল করে আর অপবিত্র বস্তু হারাম করে। আর তাদের থেকে বোঝা ও শৃংখল (যা তাদের উপরে ছিল) অপসারণ করে। সুতরাং যারা তার প্রতি ঈমান আনে, তাকে সম্মান করে, তাকে সাহায্য করে এবং তার সাথে যে নূর নাযিল করা হয়েছে তা অনুসরণ করে তারাই সফলকাম”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৫৬-১৫৭]
অন্যত্র তিনি বলেন,
﴿ٱلَّذِينَ ٱسۡتَجَابُواْ لِلَّهِ وَٱلرَّسُولِ مِنۢ بَعۡدِ مَآ أَصَابَهُمُ ٱلۡقَرۡحُۚ لِلَّذِينَ أَحۡسَنُواْ مِنۡهُمۡ وَٱتَّقَوۡاْ أَجۡرٌ عَظِيمٌ ١٧٢ ٱلَّذِينَ قَالَ لَهُمُ ٱلنَّاسُ إِنَّ ٱلنَّاسَ قَدۡ جَمَعُواْ لَكُمۡ فَٱخۡشَوۡهُمۡ فَزَادَهُمۡ إِيمَٰنٗا وَقَالُواْ حَسۡبُنَا ٱللَّهُ وَنِعۡمَ ٱلۡوَكِيلُ ١٧٣﴾ [ ال عمران : ١٧٢، ١٧٣ ]
“যারা আল্লাহ ও রাসূলের ডাকে সাড়া দিয়েছে যখমপ্রাপ্ত হওয়ার পরও, তাদের মধ্য থেকে যারা সৎকর্ম করেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করেছে তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার। যাদেরকে মানুষেরা বলেছিল যে, ‘নিশ্চয় লোকেরা তোমাদের বিরুদ্ধে সমবেত হয়েছে। সুতরাং তাদেরকে ভয় কর’। কিন্তু তা তাদের ঈমান বাড়িয়ে দিয়েছিল এবং তারা বলেছিল, ‘আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনি কতই না উত্তম কর্মবিধায়ক”! [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৭২-১৭৩]
অন্যত্র তিনি বলেন,
﴿هُوَ ٱلَّذِيٓ أَيَّدَكَ بِنَصۡرِهِۦ وَبِٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٦٢ وَأَلَّفَ بَيۡنَ قُلُوبِهِمۡۚ لَوۡ أَنفَقۡتَ مَا فِي ٱلۡأَرۡضِ جَمِيعٗا مَّآ أَلَّفۡتَ بَيۡنَ قُلُوبِهِمۡ وَلَٰكِنَّ ٱللَّهَ أَلَّفَ بَيۡنَهُمۡۚ إِنَّهُۥ عَزِيزٌ حَكِيمٞ ٦٣﴾ [ الانفال : ٦٢، ٦٣ ]
“তিনিই তোমাকে শক্তিশালী করেছেন তাঁর সাহায্য ও মুমিনদের দ্বারা। আর তিনি তাদের অন্তরসমূহে প্রীতি স্থাপন করেছেন। যদি তুমি যমীনে যা আছে, তার সবকিছু ব্যয় করতে, তবুও তাদের অন্তরসমূহে প্রীতি স্থাপন করতে পারতে না। কিন্তু আল্লাহ তাদের মধ্যে প্রীতি স্থাপন করেছেন, নিশ্চয় তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাবান”। [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৬২-৬৩]
অন্যত্র তিনি বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ حَسۡبُكَ ٱللَّهُ وَمَنِ ٱتَّبَعَكَ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٦٤﴾ [ الانفال : ٦٤ ]
“হে নবী, তোমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট এবং যেসব মুমিন তোমার অনুসরণ করেছে তাদের জন্যও”। [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৬৪]
অন্যত্র তিনি বলেন,
﴿كُنتُمۡ خَيۡرَ أُمَّةٍ أُخۡرِجَتۡ لِلنَّاسِ تَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَتَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَتُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِۗ﴾ [ ال عمران : ١١٠ ]
“তোমরা হলে সর্বোত্তম উম্মত, যাদেরকে মানুষের জন্য বের করা হয়েছে। তোমরা ভালো কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে বারণ করবে, আর আল্লাহর প্রতি ঈমান পোষণ করবে”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১১০]
এ ছাড়াও আরো অনেক আয়াত বিদ্যমান।
শী‘আরা বিশ্বাস করে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে সাহাবায়ে কেরাম মুমিন ছিলেন, কিন্তু তারা ধারণা করে যে, মৃত্যুর পর তারা মুরতাদ হয়ে গেছেন! আশ্চর্য! কীভাবে একযুগে সকল সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর মুরতাদ হয়ে যায়? এবং কেন?
কেন তারা মুসিবত ও কষ্টের সময় তাকে সাহায্য করে, নিজের জান ও মাল তার জন্য উৎসর্গ করে, অতঃপর তার মৃত্যুর পর মুরতাদ হয়ে যায়, কোন কারণ ছাড়াই?!
যদি তোমরা বল: তাদের মুরতাদ হওয়ার কারণ আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে খলিফা নির্বাচিত করা, তাহলে তোমাদেরকে বলা হবে:
সাহাবায়ে কেরাম আবু বকরের বাই‘আতের ব্যাপারে কেন একমত হবেন, তারা আবু বকরকে কেন ভয় করবেন? আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু কি ক্ষমতার অধিকারী ও প্রতাপশালী ছিলেন, যার দ্বারা তিনি তাদেরকে বাই‘আতের জন্য বাধ্য করেছেন? অধিকন্তু আবু বকর কুরাইশ বংশের বনু তাইম থেকে, কুরাইশ বংশের মধ্যে এদের সংখ্যা ছিল খুবই কম, বস্তুতঃ কুরাইশের মধ্যে অধিক প্রভাবশালী ছিল বনু হাশেম, বনু আব্দুদ দার ও বনু মাখজুম।
যখন তিনি সাহাবায়ে কেরামকে বাই‘আতের জন্য বাধ্য করতে পারেন নি, তবুও কেন সাহাবায়ে কেরাম অন্য বংশের অন্য দেশের (মক্কার) এক ব্যক্তির জন্য সকলে মিলে নিজেদের চেষ্টা-জিহাদ, ঈমান, সাহায্য, প্রতিযোগিতা এবং দুনিয়া ও আখিরাতের সব কিছু উৎসর্গ করেন, তাকে সমর্থন দেন?!
৮৭. যদি সাহাবায়ে কেরাম মুরতাদ হয়ে থাকে, (যেমন তোমরা ধারণা কর) তাহলে তারা কীভাবে মুসাইলামার বাহিনী, তালিহা ইবন খুওয়াইলিদের বাহিনী ও আসওয়াদ আনাসির বাহিনী এবং সাজাহ বাহিনী প্রমুখদের সাথে যুদ্ধ করেন এবং তাদেরকে ইসলামের দিকে ফিরিয়ে আনেন?!
সাহাবায়ে কেরাম কেন মুরতাদদের সাহায্য করল না অথবা তাদেরকে কেন তাদের হালতে ছেড়ে দিল না, যেহেতু তারাও তাদের ন্যায় মুরতাদ ছিল, যেমন তোমাদের ধারণা?!
৮৮. দুনিয়ার নীতি ও দীনি নীতি উভয় প্রমাণ করে যে, নবীদের যুগে তাদের সাথীরাই সর্বোত্তম ব্যক্তি, যদি কোনো নবীর উম্মতকে তাদের শ্রেষ্ঠ লোকদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন, তাহলে তারা বলবে: নবীর সাথীগণ।
যদি তাওরাতে বিশ্বাসী ইয়াহূদীদের জিজ্ঞাসা করা হয়, তাদের ধর্মের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের সম্পর্কে, তারা বলবে মূসা আলাইহিস সালামের সাথীবৃন্দ।
যদি ইঞ্জীলে বিশ্বাসী খৃস্টানদের জিজ্ঞাসা করা হয়, তাদের ধর্মের উত্তম ব্যক্তিদের সম্পর্কে, তারা বলবে ঈসা আলাইহিস সালামের সাথীবৃন্দ, অনুরূপ সকল নবীদের উম্মত। কারণ, রাসূলদের যুগই ওহির যুগ, তারাই গভীরভাবে অহী বুঝেছেন, তারাই নবী ও রাসূলদের গভীরভাবে চিনেছেন।
তাহলে মুহাম্মাদ আলাইহিস সালামের ক্ষেত্রে তার বিপরীত হলো কেন, যাকে আল্লাহ শাশ্বত রিসালাত দান করেছেন, উদার ও পরিপূর্ণ শরী‘আত দান করেছেন, পূর্বের সকল নবী ও রাসূলগণ যার আভির্ভাবের সংবাদ দিয়েছেন, পূর্বের সকল আসমানী কিতাব যার ব্যাপারে সুসংবাদ প্রদান করেছে, (তোমাদের ধারণা মতে তার সাথীরাই কাফির) যারা মুহাম্মদের ওপর ঈমান এনেছে, তাকে সাহায্য করেছে, তাকে ইজ্জত ও সম্মান করেছে?! তাহলে তোমাদের নিকট রিসালাতে মুহাম্মদিয়ার অর্থ কি, আল্লাহর এ দীনের ভাবগাম্বীর্যকতা কোথায় রাখলে তোমরা, যদি এ দীন থেকে মুহাম্মাদের বিশিষ্ট সাহাবীরাই মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার পরবর্তীতে তারা কাফির হয়ে যায়?! তাহলে তার পরে যারা আসবে, তারা তো আরো আগেই কাফির, মুরতাদ ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারাই যদি কাফির হয়, যারা রাসূলের সাহায্যের জন্য পরিবার ও দেশ ত্যাগ করেছে, শুধু তার জন্যই পিতা ও ভাইদের সাথে যুদ্ধ করেছে, তার মৃত্যুর পর যারা বিভিন্ন দেশে জ্ঞান, কুরআন ও ইসলামের আদর্শ কখনো তলোয়ার আবার কখনো মুখের মাধ্যমে প্রচার করেছে!
৮৯. আমরা দেখি যে, কঠিন মুহূর্তেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘তাকইয়া’র আশ্রয় গ্রহণ করেন নি, পক্ষান্তরে শী‘আরা দাবি করে যে, এ ‘তাকইয়া’-ই হচ্ছে তাদের দীনের দশভাগের নয়ভাগ! আর তাদের ইমামরা এ ‘তাকইয়া’ অধিকহারে ব্যাবহার করেছেন। তারা কেন তাদের দাদা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ন্যায় হলো না?!
৯০. আমরা দেখি আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু তার প্রতিপক্ষকে কাফির বলেন নি, এমনকি খারেজিদেরকেও তিনি কাফির বলেন নি, যারা তার সাথে যুদ্ধ করেছে, তাকে কষ্ট দিয়েছে ও তাকে কাফির বলেছে। শী‘আদের কী হলো, তারা কেন তার অনুসরণ করে না?! অথচ তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উত্তম সাহাবাদের কাফির বলে, বরং তার স্ত্রীদের, যারা মুমিনদের মাতা?!
৯১. উম্মতের সর্বসম্মত মত বা ইজমা এককভাবে শী‘আদের নিকট দলীল বিবেচনা করা হয় না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে মাসুম তথা নিষ্পাপ সত্বার উপস্থিতি পাওয়া যায়, এটা তাদের নীতি। [দেখুন: “তাহজিবুল উসুল লি ইবনিল মুতাহহার আল-হুলি”: (পৃ. ৭০); “আল-মারজায়্যিাহতু আদদ্বীনিয়্যাতুল উলইয়া লি হুসাইন মাতুক”: (পৃ. ১৬)]
আমাদের বক্তব্য: এটা একটা বেহুদা নীতি, যদি নিষ্পাপ সত্বাই থাকে, তাহলে ইজমা তথা উম্মতের সবার ঐক্যমতের প্রয়োজন কিসের।
৯২. আমরা দেখি যে, শী‘আরা ‘জাইদিয়া’ সম্প্রদায়কে কাফির বলে, অথচ ‘জাইদিয়ারা’ও আহলে বাইতকে মহব্বত করে ও তাদের নেতৃত্ব স্বীকার করে। অতএব, আমাদের নিকট স্পষ্ট হলো যে, শী‘আদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সাহাবা ও এ উম্মতের উত্তম ব্যক্তিদের সাথে বিদ্বেষ পোষণ করা, আহলে বাইতকে মহব্বত করা নয়, যেমন তারা দাবি করে। [আরো দেখুন: “তাকফিরুশ শী‘আহ লি উমুমিল মুসলিমিন” লি শাইখ আলী আল-উমারি। তিনি তাদের অনেকগুলো স্পষ্ট দলিল উল্লেখ করে প্রমাণ করেছেন যে, শী‘আরা তাদের ব্যতীত সকলকে কাফির বলে, শী‘আ জাইদিয়াহ ফেরকাকেও তারা কাফের বলে।] উল্লেখ্য জাইদিয়া শী‘আরা বারো ইমামী শী‘আদের ন্যায় সাহাবীদের কাফির বলে না।
৯৩. শী‘আরা ধারণা করে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর আলীই খিলাফতের হকদার। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«أنت مني بمنزلة هارون من موسى» .
“তুমি আমার নিকট এমনি, যেমন মূসার নিকট ছিল হারুন”। [সহীহ বুখারী ও মুসলিম।]
অথচ আমরা দেখি যে, হারুন আলাইহিস সালাম মূসা আলাইহিস সালামের স্থলাভিষিক্ত হন নি! বরং তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছে ইউশা ইবন নূন!
৯৪. শী‘আরা তাদের অনুসারীদের পাপাচার ও ধ্বংসাত্মক কাজেও উদ্বুদ্ধ করে। এর কারণ হচ্ছে যে, তাদের নিকট “আলীর মহব্বত এমন নেকি, যার সাথে কোনো পাপ ক্ষতিকর নয়”। আল-কুরআন একাধিক জায়গায় তাদের এ দাবি মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। আল-কুরআন তাদেরকে নিষিদ্ধ বস্তু ও ইসলামের বিরোধীতা থেকে বারণ করেছে।
আল-কুরআনে বলা হয়েছে,
﴿لَّيۡسَ بِأَمَانِيِّكُمۡ وَلَآ أَمَانِيِّ أَهۡلِ ٱلۡكِتَٰبِۗ مَن يَعۡمَلۡ سُوٓءٗا يُجۡزَ بِهِۦ وَلَا يَجِدۡ لَهُۥ مِن دُونِ ٱللَّهِ وَلِيّٗا وَلَا نَصِيرٗا ١٢٣﴾ [ النساء : ١٢٣ ]
“না তোমাদের আশায় এবং না কিতাবীদের আশায় (কাজ হবে)। যে মন্দকাজ করবে তাকে তার প্রতিফল দেওয়া হবে। আর সে তার জন্য আল্লাহ ছাড়া কোনো অভিভাবক ও সাহায্যকারী পাবে না”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১২৩]
৯৫. শী‘আরা আল-বাদা ( البداء )، আকীদায় বিশ্বাসী [‘বাদা’ আকীদা হচ্ছে এটা বিশ্বাস করা যে, কোনকিছু সম্পর্কে আল্লাহ্ তা‘আলা প্রথমে জানতেন না, পরে তাঁর কাছে সেটা প্রকাশ পেয়েছে। এ আকীদা মূলতঃ ইয়াহূদীদের আকীদা। [সম্পাদক]], অতঃপর তারা দাবি করে যে, তাদের ইমামগণ গায়েব জানত! তাহলে ইমামরা কি আল্লাহর চেয়ে বড়?! তারা এ আকীদার ব্যাপারে যত ব্যাখ্যাই প্রদান করুক, (যার মূল হচ্ছে আল্লাহর সাথে মূর্খতা সম্পৃক্ত করা) কিন্তু তাদের একাধিক খবর তাদের ব্যাখ্যার বিপরীত। [“উসুলু মাজহাবিশ শী‘আহ আল-ইমামিয়াহ” লিশ শাইখ আল-কাফারি: (২/১১৩১-১১৫১) (২/১১৩১-১১৫১).]
৯৬. ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, বিভিন্ন ঘটনা ও যুদ্ধের সময় শী‘আরা ছিল মুসলিমদের শত্রু ইয়াহূদী, নাসারা ও মুশরিকদের সাহায্যকারী, তার মধ্যে অন্যমত হচ্ছে: মোগলদের হাতে বাগদাদের পতন এবং নাসারাদের হাতে বাইতুল মাকদিসের পতন...। একজন সত্যিকার মুসলিম কীভাবে এটা করতে পারে! কীভাবে কুরআনের বিরোধীতা করতে পারে, যেখানে ইয়াহূদী ও নাসারাদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে নিষেধ করা হয়েছে?! আলী অথবা তার কোনো সন্তান অথবা তার কোনো নাতি কি শী‘আদের ন্যায় কুকর্ম করেছে?!
৯৭. আমরা দেখি অনেক শী‘আরাই হাসান ইবন আলীর ব্যাপারে বিরূপ মন্তব্য করে, তার ও সন্তানের ব্যাপারে কুৎসা রটনা করে, অথচ তিনি তাদের একজন ইমাম, আহলে বাইতের সদস্য। [দেখুন: “আয়ানুশ শী‘আহ”: (১/২৬); “সালিম ইবন কায়েস”: (পৃ. ২৮৮); “বিহারুল আনওয়ার”: (২৭/২১২) (২৭/২১২).]
৯৮. শী‘আদের মাযহাবে যারা চিন্তা করবে, তারা জানতে পারবে সামান্য সময়ের ব্যবধানে তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিভক্তি, বিচ্ছিন্নতা ও বিভিন্নতা এবং একাধিক মতাদর্শ ও পরস্পর বিরোধ, একে অপরকে কাফির বলা ইত্যাদি, তার একটি স্পষ্ট উদাহরণ হচ্ছে: শী‘আদের এক পণ্ডিত আহমদ আহসায়ি একটি দলের গোড়াপত্তন করেন, পরবর্তীতে যে দলটি নাম ধারণ করে ‘শাইখিয়্যাহ’। আবার তার শিষ্য কাজেম রশতি অপর দলের গোড়া পত্তন করেন, যার নাম হয় কাশফিয়্যাহ। আবার তার শিষ্য মুহাম্মাদ কারীম খান অপর দলের গোড়াপত্তন করেন, যার নাম হয় কারিমখানিয়্যাহ। আবার তার আরেক শিষ্য কুররাতুল আইন আরেকটি দলের গোড়াপত্তন করেন, যার নাম হয় কুরতিয়্যাহ। আবার মির্জা আলী শিরাজি অপর দলের গোড়াপত্তন করেন, যার নাম হয় আল-বাবিয়্যাহ। আবার মির্জা হুসাইন আলী গোড়াপত্তন করেন অপর দলের, যার নাম বাহায়ি ফিরকা।
দেখুন শী‘আদের থেকে একই যুগে কীভাবে এতো দল ও উপদলের সৃষ্টি হলো এবং সামান্য সময়ের ব্যবধানে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿وَلَا تَتَّبِعُواْ ٱلسُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمۡ عَن سَبِيلِهِ﴾ [ الانعام : ١٥٣ ]
“এবং তোমরা অন্যান্য পথ অনুসরণ করো না, তাহলে তো তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে”। [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১৫৩]
আরো দেখুন সূরা আন-আম এর: (১৫৪-১৬৩) আয়াতগুলো।
৯৯. আমরা দেখি যে, ফাসাদ সৃষ্টিকারী বিদ্রোহীরা যখন উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুকে গৃহবন্দী করে, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু তার পক্ষে লোকদের প্রতিহত করেন এবং তাদেরকে তাড়িয়ে দেন। আর তাকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য প্রেরণ করেন নিজের দুই সন্তান হাসান ও হুসাইন এবং ভাতিজা আব্দুল্লাহ ইবন জাফরকে। [দেখুন: “শারহু নাহজিল বালাগাহ” লি ইবন আবিল হাদিদ: (খ.১০,পৃ. ৫৮১), ইরানে প্রকাশিত; “তারিখুল মাসউদি শিয়ি”: (খ.২পৃ. ৩৪৪), বইরুত।] কিন্তু উসমান মানুষদের বলে দিয়েছেন, তারা যেন হাতিয়ার রেখে ঘরে বসে থাকে, অর্থাৎ কেউ যেন তার (উসমানের) পক্ষ নিয়ে বিদ্রোহীদের হত্যা না করে। এর দ্বারাই প্রমাণিত হয় যে, শী‘আদের ধারণা আলী ও উসমানের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ ছিল, তা সবই মিথ্যা ও অসার।
১০০. শী‘আ ও সুন্নিদের ঐক্যমতে প্রমাণিত যে, উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে অধিকাংশ পরামর্শে শরীক করতেন, তার পরামর্শ নিতেন। [দেখুন: “নাহজুল বালাগাহ: (পৃ. ৩২৫, ৩৪০)] যদি উমার যালিম হত, (যেমন শী‘আরা ধারণা করে) তাহলে আলীকে কখনোই পরামর্শে শরীক করতেন না, কারণ যালিমরা সত্যবাদীদের পরামর্শ গ্রহণ করে না!
১০১. সবার নিকট ঐক্যমতে প্রমাণিত যে, সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহু আনহু উমারের যমনায় মাদায়েনের আমির ছিলেন। [“সিয়ারু আলামিন নুবালা” লিজ জাহাবি: (১/৫৪৭)] এবং আম্মার ইবন ইয়াসির ছিলেন কুফার আমির। [“সিয়ারু আলামিন নুবালা” লিজ জাহাবি: (১/৪২২)] শী‘আদের দাবি অনুযায়ী এরা উভয়েই ছিল আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর সাহায্যকারী ও তার দলভুক্ত। তাদের বিবেচনায় যদি উমার মুরতাদ অথবা যালিম ও আলীর ওপর যুলুম করত, তাহলে তারা কখনোই উমারের এ দায়িত্ব গ্রহণ করতেন না। তারা কীভাবে যালিম ও মুরতাদকে সাহায্য করবে?! অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَا تَرۡكَنُوٓاْ إِلَى ٱلَّذِينَ ظَلَمُواْ فَتَمَسَّكُمُ ٱلنَّارُ وَمَا لَكُم مِّن دُونِ ٱللَّهِ مِنۡ أَوۡلِيَآءَ ثُمَّ لَا تُنصَرُونَ ١١٣﴾ [ هود : ١١٣ ]
“আর যারা যুলুম করেছে তোমরা তাদের প্রতি ঝুঁকে পড়ো না, অন্যথায় আগুন তোমাদেরকেও স্পর্শ করবে”। [সূরা হূদ, আয়াত: ১১৩]
১০২. শী‘আরা বিশ্বাস করে, তাদের ইমামগণ নিষ্পাপ, তাদের মাহদী এখনো বিদ্যমান, তাদের কতক আলিম তার সাক্ষাত করেন, বলা হয় এদের সংখ্যা ত্রিশজন পুরুষ। অতএব, এতদ সত্বেও তাদের মাযহাবে কীভাবে মতভেদ ও মতবিরোধ সৃষ্টি হয়, অন্যান্য দল ও গ্রুপে যার কোনো উদাহরণ নেই। প্রায় এমন যে, তাদের প্রত্যেক আলিম ও পণ্ডিতের আলাদা আলাদা মাযহাব?! এরপরও তারা দাবি করে, একজন ইমাম বিদ্যমান, যার ওপর ঈমান আনয়ন করা মানুষের ওপর জরুরি, আর তিনি হচ্ছে অপেক্ষার মাহদী। অতএব, আমাদের প্রশ্ন তাদের ইমাম ও নেতা বিদ্যমান থাকতে এবং তার সাথে তাদের যোগাযোগ থাকা সত্বেও কেন তারা এতো দলে ও উপদলে বিভক্ত, যার কোনো নজির অন্যান্য ধর্মে নেই?! অতঃপর তোমরাই বল যে, মাজলিসী একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন: অদৃশ্য ইমাম দেখা যায় না, যে অদৃশ্য ইমাম দেখার দাবি করবে, সে মিথ্যাবাদী, তা সত্বেও আমরা তোমাদের কিতাবে দেখি, তোমাদের আলিমরা ইমাম মাহদীকে বহুবার দেখেছে।
১০৩. শী‘আদের প্রতি প্রশ্ন: তোমরা বল যে, কোনো যমানা ইমাম বিহীন থাকা দুরস্ত নেই, আর ‘তাকইয়া’ তোমাদের ধর্মের দশভাগের নয়ভাগ, যে ‘তাকইয়া’ ইমামের জন্য বৈধ, বরং মুস্তাহাব ও ফজিলতের বিষয়, কারণ তিনিই সবচেয়ে বড় মুত্তাকি। অতএব, এ ইমাম মানুষের জন্য কীভাবে দলীল হবেন, তিনি মানুষের কী উপকার করবেন?!
১০৪. শী‘আদের ধারণা যে, ঈমান সহীহ হওয়ার জন্য ইমামদের জানা জরুরী, তাহলে বারো ইমাম পূর্ণ হওয়ার পূর্বে যারা মারা গেছে, তাদের ব্যাপারে তোমাদের বক্তব্য কি?! আর মৃত ব্যক্তি যদি ইমাম হয়, তাহলে তোমাদের উত্তর কী? অর্থাৎ কোনো ইমাম যদি অপর ইমামকে না জেনে মারা যায়, তার অবস্থা কী হবে?!
তোমাদের কতক ইমাম রয়েছে, যিনি জানতেন না, তার পরে কে ইমাম হবে! অতএব, এটাকে তোমরা কীভাবে ইমানের শর্ত বল?!
১০৫. নাহজুল বালাগার লেখক বর্ণনা করেন, যখন আলীর নিকট পৌঁছল যে, আনসার সাহাবীগণ দাবি করছে তাদের মধ্যে থেকে ইমাম হবে, তিনি বলেন, “তোমরা কেন তাদের ওপর দলীল পেশ কর নি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওসিয়ত করেছেন, তাদের (আনসারদের) নেককারদের প্রতি সদয় আচরণ করবে এবং তাদের অপরাধীদের ক্ষমা করবে? তারা বলল: এখানে তাদের বিরুদ্ধে দলীল কোথায়? তিনি বললেন: যদি তাদের মধ্যে ইমামতি থাকত, তাহলে তাদের ব্যাপারে ওসিয়ত করতেন না”। [নাহজুল বালাগাহ: পৃ. ৯৭)]
অতএব, শী‘আদেরকে বলব: “অনুরূপ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহলে বাইতের ব্যাপারে ওসিয়ত করেছেন, যেমন তিনি বলেছেন:
«أذكركم الله في أهل بيتي»
“আমার পরিবারের ব্যাপারে তোমরা আল্লাহকে স্মরণ করবে”। যদি ইমামতি তাদের হক ও তাদের সাথে খাস হত, তাহলে তাদের ব্যাপারে অন্যদের ওসিয়ত করতেন না?! বরং তাদেরকে ওসিয়ত করতেন অন্যদের সাথে সদাচারণ করার জন্য।
১০৬. যদি তোমাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, একজন নেককার মুত্তাকি ও মুমিন ব্যক্তি কতক মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করে, যাদের কেউ মুমিন ও কেউ মুনাফিক, তবে তার ওপর আল্লাহর দয়া যে, তিনি কথার দ্বারাই মুনাফিকদের চিনতে পারেন। এতদ সত্বেও এ ব্যক্তি নেককার লোকদের ত্যাগ করে মুনাফিকদের গ্রহণ করে, তাদের হাতে নেতৃত্ব দেয় এবং নিজের জীবদ্দশায় মানুষেরে ওপর তাদেরকে আমির নিযুক্ত করে, বরং তাদেরকে নিকটে আনে, তাদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক কায়েম করে, অতঃপর তাদের ওপর সন্তুষ্টি অবস্থায় মারা যায়, এ ব্যক্তির ব্যাপারে আপনি কী বলবেন?!
এ নেককার ব্যক্তিই তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, শী‘আরা তার ব্যাপারে এমন ধারণাই পোষণ করে!
১০৭. শী‘আদের আলিম হুর আল-আমেলী আবু জাফর থেকে নিম্নের আয়াতের ব্যাখ্যায় বর্ণনা করেন:
﴿وَلَا تُمۡسِكُواْ بِعِصَمِ ٱلۡكَوَافِرِ﴾ [ الممتحنة : ١٠ ]
“আর তোমরা কাফির নারীদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক বজায় রেখ না”। [সূরা আল-মুমতাহিনাহ, আয়াত: ১০]
তিনি বলেন, যার নিকট কাফির স্ত্রী রয়েছে, অথচ সে মুসলিম, তার উচিৎ স্ত্রীর নিকট ইসলাম পেশ করা, যদি সে ইসলাম কবুল করে, তাহলে সে তার স্ত্রী, অন্যথায় তার থেকে সে বিচ্ছিন্ন ও আলাদা। আল্লাহ তাকে রাখতে নিষেধ করেছেন”। [“ওয়াসালেলুশ শী‘আহ”: (২০/৫৪২)]
অতএব, উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা যদি কাফির ও মুরতাদ হয়, যেমন শী‘আরা তার ব্যাপারে বলে, (আল্লাহর নিকট পানাহ চাই) তাহলে আল্লাহর কুরআন অনুযায়ী তাকে তালাক দেওয়া ওয়াজিব ছিল, তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিফাক ও মুরতাদ হওয়া সম্পর্কে জানতে পারেনি, কিন্তু শী‘আরা জেনেছে!
১০৮. শী‘আদের একটি দল খাত্তাবি গ্রুপ বলে, জাফর সাদেকের পর ইমাম হচ্ছে তার ছেলে ইসমাইল, শী‘আদের আলিম তার প্রতিবাদ করে বলেন, “আবু আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালামের পূর্বেই ইসমাইল মারা গেছে, আর মৃতরা জীবিতদের খলীফা হতে পারে না...” [“কামালুদ দীন ও তামামুম নি‘মাহ”: (পৃ. ১০৫)]
অতএব, শী‘আদের প্রতি প্রশ্ন: তোমরা আলীর ইমামতির দলীল হিসেবে পেশ কর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিম্নের বাণী:
«أنت مني بمنـزلة هارون من موسى»
“তুমি আমার নিকট সেরূপ, যেরূপ ছিল হারুন মূসার নিকট”। আর আমরা জানি যে, হারুন আলাইহিস সালাম মূসা আলাইহিস সালামের পূর্বে মারা গেছেন। তোমাদের স্বীকৃতি মোতাবেকই মৃতরা জীবিত ব্যক্তিদের খলিফা হতে পারে না!
১০৯. শী‘আরা তাদের বারো ইমামের দলীল হিসেবে নিম্নের হাদীস পেশ করে:
«لا يزال الأمر عزيزاً إلى اثني عشر خليفة كلهم من قريش» وفي رواية «يكون اثنا عشر أميراً» وفي رواية «لا يزال أمر الناس ماضياً ما وليهم اثنا عشر رجلا» .
“বারো খলিফা পর্যন্ত এ দীন সম্মানিতই থাকবে, যাদের প্রত্যেকেই হবে কুরাইশ বংশের। অন্য বর্ণনায় আছে: “বারো জন আমির হবে”। অন্য বর্ণনায় আছে: “বারোজন ইমাম পর্যন্ত মানুষের কর্মকাণ্ড যথাযথ চলবে”। [সহীহ বুখারী ও মুসলিম।]
আমরা বলব: হাদীস সহীহ সন্দেহ নেই, এ বারোজন মানুষের খলিফা ও আমির হবে, তবে আমরা সবাই জানি যে, শী‘আদের ইমামদের মধ্যে আলী ও হাসান ব্যতীত কেউ খলিফা হন নি। অতএব, হাদীসের অর্থ এক প্রান্তে আর শী‘আরা হচ্ছে অন্য প্রান্তে! আর এসব বর্ণনায় বারো খলিফার কারো নাম উল্লেখ করা হয় নি...!
১১০. শী‘আরা দাবি করে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর অল্প কয়েক জন ব্যতীত সকলে মুরতাদ হয়ে গেছে। তাদেরকে বলব: মানুষ মুরতাদ হয় হয়তো সন্দেহের কারণে অথবা প্রবৃত্তি ও নফসের কারণে।
আর সর্বজনবিদীত যে, ইসলামের শুরুতে সন্দেহ থাকার যথেষ্ট কারণ ছিল, কিন্তু ইসলামের দুর্বল অবস্থায় যার ঈমান পাহাড়ের ন্যায় মজবুত ও কঠিন ছিল, তাদের ঈমান ইসলামের প্রকাশ ও প্রচারের পর কীভাবে দুর্বল হলো?!
আর নফস ও প্রবৃত্তির ব্যাপার: আল্লাহর মহব্বতে যারা নিজেদের দেশ ও সম্পদ ত্যাগ করেছে, ত্যাগ করেছে নিজেদের সম্মান ও ইজ্জত, একেবারেই স্বেচ্ছায়, তাদের ব্যাপারে কীভাবে ধারণা করা হয় যে, তারা প্রবৃত্তি ও নফসের জন্য মুরতাদ হয়ে ইসলাম ত্যাগ করেছে?! উল্লেখ্য সাহাবাদের মুরতাদ জ্ঞান করা শী‘আদের নিকট ঈমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ রুকন, অর্থাৎ ইমামিয়্যাহদের নিকট।
১১১. শী‘আরা সাহাবাদের আমানতদারী বিশ্বাস করে না, কিন্তু আমরা তাদের কিতাবে কতক বর্ণনা দেখি, যা নিঃসন্দেহে সাহাবাদের আমানতদারীর প্রমাণ করে! যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত, তিনি বিদায় হজে এ বলে ভাষণ দিয়েছেন:
«نضّر الله عبداً سمع مقالتي فوعاها، ثم بلغها إلى من لم يسمعها ..»
“আল্লাহ তা‘আলা সে বান্দাকে তরতাজা রাখুন, যে আমার কথা শোনে সংরক্ষণ করেছে, অতঃপর যে শোনেনি তার নিকট পৌঁছে দিয়েছে...” [“আল-খেসাল: (পৃ. ১৪৯-১৫০), হাদীস নং ১৮২)] যদি সাহাবায়ে কেরাম আমানতদার না হয়, তাহলে কীভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে হাদীস পৌঁছানোর দায়িত্ব প্রদান করেন, যারা শোনে নি তাদের নিকট?!
১১২. কোনো শী‘আকে বলা হয়েছিল: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি আমাদেরকে নেককার স্ত্রী ও উত্তম লোকদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক কায়েম করার নির্দেশ প্রদান করেন নি?
সে বলল: অবশ্যই, কোনো সন্দেহ নেই।
তাকে বলা হলো: তুমি কি যেনার সন্তানের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক কায়েম পছন্দ কর?!
সে বলল: আল্লাহর নিকট পানাহ চাই!
তাকে বলা হলো: তোমরা (মিথ্যা) দাবি কর যে, উমার ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিল যিনাকারীনীর সন্তান, যার নাম ছিল সাহহাক! [“আল-কাশকুল লিল বাহরানি”: (৩/২১২); “লাকাদ শাইয়্যাআনিল হুসাইন”: (পৃ. ১৭৭)]
তোমাদের আলিম নিআমাতুল্লাহ আল-জাযায়েরি খুব নির্লজ্জভাবে দাবি করে যে, উমার পুরুষের পানি গ্রহণ করা ব্যতীত ক্ষান্ত হতো না, [“আল-আন ওয়ারুন নুমানিয়াহ”: (১/৬৩)] (আল্লাহর নিকট পানাহ চাই)।
তোমরা আরো দাবি কর যে, উমারের মেয়ে হাফসাও ছিল তাদের পিতার ন্যায় মুনাফিক ও বদ, বরং কাফির!
তোমরা কি মনে কর রাসূলুল্লাহ যেনার সন্তানের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক কায়েম করেছেন?!
অথবা তিনি নিজের জন্য খারাপ ও মুনাফিক নারী পছন্দ করেছেন?!
আল্লাহর শপথ, তোমরা আল্লাহ ও তার সাহাবাদেরে ওপর মিথ্যা অপবাদ আরোপ কর, তোমরা নিজেদের জন্য যা পছন্দ কর না, তাদের ওপর তাই চাপিয়ে দাও।
১১৩. যদি সাহাবাদের মধ্যেই মুনাফিক ও মুরতাদ অধিক হারে থাকে, তাহলে কীভাবে ইসলাম প্রসার ও প্রচার লাভ করল?! কীভাবে পারস্য ও রুম ইসলামের অধীনে আসল এবং কীভাবে বায়তুল মাকদিস স্বাধীন হলো?!
১১৪. শী‘আদের আলিম ‘মুহাম্মাদ কাশেফ আলুল গেতা’ আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন:
«وحين رأى أن الخليفتين قبله ـ أي أبا بكر وعمر ـ بذلا أقصى الجهد في نشر كلمة التوحيد، وتجهيز الجيوش، وتوسيع الفتوح، ولم يستأثرا ولم يستبدا، بايع وسالم» .
“যখন তিনি দেখলেন যে, তার পূর্বের দুই খলিফা (আবু বকর ও উমার) তাওহিদের কালিমা প্রচার করা, মুসলিম মুজাহিদ তৈরি করা ও দেশে দেশে ইসলামকে বিজয় করার জন্য তাদের সর্বাত্মক চেষ্টা ব্যয় করেছেন, কোনো বিষয়ে তারা নিজেদেরকে প্রধান্য দেন নি, কাউকে দাসে পরিণত করেন নি, তাই আলী তাদের হাতে বাই‘আত করেন ও তাদেরকে মেনে নেন। [“আসলুশ শী‘আহ ও উসুলুহা”: (পৃ. ৪৯)]
অতএব, বুঝা গেল: তারা তাওহীদের কালেমা প্রচার করেছেন, আল্লাহর রাস্তায় সৈন্যবাহিনী তৈরি করেছেন এবং তারা উভয়ে বহু দেশ জয় করেছেন, (এটা শী‘আদের বড় এক আলিমের স্বীকৃতি)। তাহলে কেন তাদেরকে অপবাদ দেওয়া হয় যে, তারা ছিল কাফির, মুনাফিক ও মুরতাদদের সরদার?! এটা কি বৈপরিত্ব নয়?!
১১৫. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর সাহাবায়ে কেরাম মুরতাদ হয়ে গেছেন, শী‘আরা তাদের এ দাবির স্বপক্ষে নিম্নের হাদীস পেশ করে:
«يرد علي رجال أعرفهم ويعرفونني، فيذادون عن الحوض، فأقول : أصحابي، أصحابي ! ، فيقال : إنك لا تدري ما أحدثوا بعدك» .
“আমার নিকট এমন অনেক মানুষ আগমন করবে, আমি যাদেরকে চিনব এবং যারা আমাকে চিনবে, অতঃপর তাদেরকে হাউস থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে, আমি বলব: এরা তো আমার সাথী, এরা তো আমার সাথী! আমাকে বলা হবে: তুমি জান না এরা তোমার পরে কি সৃষ্টি করেছে”! [বুখারি।]
শী‘আদের প্রতি আমাদের পশ্ন: এ হাদীস ব্যাপক, এখানে কারো নাম উল্লেখ করা হয় নি, এ থেকে আম্মার ইবন ইয়াসার, মিকদাদ ইবন আসওয়াদ, আবু জর, সালমান ফারসি কাউকেই বাদ দেওয়া হয় নি, যারা তোমাদের দৃষ্টিতে মুরতাদ নয়! বরং আলী ইবন আবু তালিবকেও বাদ দেওয়া হয় নি! অতএব, তোমরা কী হিসেবে এ হাদীসকে কারো সাথে খাস কর, আর কাউকে এর থেকে বাদ রাখ?! এও বলা সম্ভব যে, যাদের অন্তরে সাহাবাদের ব্যাপারে সামান্য বিদ্বেষ রয়েছে, তারাই এর অন্তর্ভুক্ত! এ হাদীস তাদের ব্যাপারেই সংবাদ দিচ্ছে! তাহলে এ হাদীস দ্বারা তোমাদের মুখোশই খসে পড়ে!
১১৬. আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর বড় এক শিষ্য মালেক ইবন আসতার বলেন, যাকে শী‘আরাও সম্মান করে:
«أيها الناس، إن الله تبارك وتعالى بعث فيكم رسوله محمداً صلى الله عليه وسلم بشيراً ونذيراً، وأنزل عليه الكتاب فيه الحلال والحرام والفرائض والسنن، ثم قبضه إليه وقد أدى ما كان عليه، ثم استخلف على الناس أبا بكر فسار بسيرته واستن بسنته، واستخلف أبو بكر عمر فاستن بمثل تلك السنّة»
“হে লোক সকল, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের মধ্যে তার রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারী হিসেবে প্রেরণ করেছেন, এবং তার ওপর কিতাব নাযিল করেছেন, যাতে রয়েছে হালাল-হারাম, ফারায়েয ও সুনান, অতঃপর আল্লাহ তাকে উঠিয়ে নিয়েছেন, যখন তিনি তার দায়িত্ব আদায় করেছেন, অতঃপর আবু বকর মানুষের ওপর খলিফা নিযুক্ত হন, তিনিও তার অনুসরণ করেন ও তার সুন্নাত মোতাবেক জীবন যাপন করেন, অতঃপর আবু বকর উমারকে খলিফা নিযুক্ত করেন, তিনিও তার ন্যায় পরিচালনা করেন”। [“মালেক ইব্নুল আশতার-খুতবাতুহু ও আরাউহু: (পৃ. ৮৯), “আল-ফুতুহ” লি ইবন আসম: (১/৩৯৬)]
তিনি আবু বকর ও উমারের প্রশংসা করছেন, যে প্রশংসার তারা উপযুক্ত, এতদ সত্বেও শী‘আরা এসব প্রশংসা ভুলে যায়, তাদের মজলিসে ও হুসাইনিয়াতে এর আলোচনা করে না, বরং সেখানে তারা তাদের বদনাম ও কুৎসা রটনা করে! আল্লাহ তাদের হিদায়াত দান করুন। কী জন্য তোমরা এমন কর?!
১১৭. ইবন হাজম রহ. শী‘আদের প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন,
«بايع أبا بكر بعد ستة شهور تأخر فيها عن بيعته ( وهذا ) لا يخلو ضرره من أحد وجهين : إما أن يكون مصيباً في تأخره، فقد أخطأ إذ بايع . أو يكون مصيباً في بيعته، فقد أخطأ إذ تأخر عنها» !
“আলি আবু বকরের হাতে বাই‘য়াত করেছেন ছয় মাস পরে, তিনি তার বাই‘য়াত থেকে ছয় মাস পর্যন্ত বিরত থেকেছেন, এখানে দু’টি খারাপির একটি অবশ্যই নিশ্চিত: হয়তো তিনি বিলম্ব করে ঠিক করেছেন, তাহলে তিনি বাই‘য়াত করে ভুল করেছেন অথবা বাই‘য়াত করে ঠিক করেছেন, তাহলে বিলম্ব করে ভুল করেছেন! [“আল-ফেসাল ফিল মিলাল ওয়াল আহওয়াল ওয়াননিহাল”: (৪/২৩৫)]
১১৮. যদি শী‘আদের বলা হয়: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু কেন খিলাফতের ব্যাপারে নিশ্চুপ ছিলেন, অথচ তোমাদের দাবি মোতাবেক তিনিই খিলাফতের ওসি ও আদিষ্ট। তারা বলে: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছিলেন তার মৃত্যুর পর ফিতনার জন্ম দেবে না এবং তলোয়ার উম্মুক্ত করবে না! তাদেরকে বলব: তাহলে তিনি কেন জামাল ও সিফফিন যুদ্ধে তলোয়ার উম্মুক্ত করেছিলেন?! অথচ সে যুদ্ধে হাজার হাজার মুসলিম মারা গেছে?! কোনো তলোয়ার উত্তোলন করা উচিৎ ছিল: প্রথম যালিমের সময়, না চতুর্থ যালিমের সময়, না দশম যালিমের সময়...?!
১১৯. শী‘আদের নিকট নবী ও তাদের ইমামদের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই, এমনকি তাদের শাইখ মাজলিসী ইমামদের সম্পর্কে বলেন,
«ولا نعرف جهة لعدم اتصافهم بالنبوة إلا رعاية خاتم الأنبياء . ولا يصل إلى عقولنا فرق بين النبوة والإمامة» .
“আমরা ইমামদেরকে নবুওয়াত দ্বারা ভূষিত না করার কোনো কারণ দেখি না, শেষ নবীর সাথে সৌজন্য বোধ ব্যতীত, আমাদের বিবেকে নবুওয়াত ও ইমামতির মধ্যে কোনো পার্থক্য ধরা পরে না”। [“বিহারুল আনওয়ার”: (২৬/২৮)]
আমাদের প্রশ্ন: তাহলে শেষ নবীর আকীদার গুরুত্ব কিসে?! রাসূলকে শেষ নবী মানার অর্থ কী?! কারণ, নবীদেরকে অন্যান্য মানুষের বিপরীতে যেসব বৈশিষ্ট্য দ্বারা ভূষিত করা হয়েছিল, যেমন তারা নিষ্পাপ, তারা আল্লাহর বার্তাবাহক, তারা মু‘জিযা ও অলৌকিক ঘটনার ধারক ইত্যাদি যদি শেষ নবীর মৃত্যুর পর বন্ধ না হয়, বরং বারো ইমাম পর্যন্ত চালু থাকে, তাহলে তার শেষ হওয়ার অর্থ কি?!
১২০. শী‘আদের ধারণা ইমাম নির্ধারণ করা হয় ‘আল্লাহর অনুগ্রহ’ [অর্থাৎ ইমামত তাদের নিকট নবুওয়াতের মতো। অতএব, প্রত্যেক যুগে নবীর প্রতিনিধি ইমাম থাকা জরুরি, যার দায়িত্ব হচ্ছে মানুষকে হিদায়াত করা, তাদেরকে সৎ পথ দেখানো এবং তাদের জাগতিক ও পার্থিব কার্যাদি পরিকল্পনা করা...। দেখুন: “আল-ইমামাত ওয়াননাস” লিল উস্তাদ ফায়সাল নুর: (পৃ. ২৯০)] নীতির ওপর। আশ্চর্য হলেও সত্য যে, তাদের বারোতম ইমাম শৈশব থেকে আজ পর্যন্ত আত্মগোপন করে আছেন! অতএব, পলাতক ও আত্মগোপনকারীকে ইমাম নিযুক্ত করার মধ্যে কোনো ধরণের অনুগ্রহ?!
১২১. শী‘আদের দাবি তাদের ইমামরা মাসুম [“তাদের নিকট ইসমাত হচ্ছে যে, “ইমাম সগিরা ও কাবিরা গুনা থেকে নিষ্পাপ, তিনি ফতোয়া প্রদান ও উত্তর দেয়ার ব্যাপারে কখনো ভুল করেন না, কখনো তার বিচ্যুতি ঘটে না, তিনি ভুলেন না এবং দুনিয়াবী কোনো বিষয় নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করেন না”। “কামাল ফি মিজানিল হিকমাহ”: (১/১৭৪); “আকায়েদুল ইমামিয়্যাহ”: (পৃ. ৫১); “বিহারুল আনওয়ার”: (২৫/৩৫০-৩৫১)] তথা নিষ্পাপ, অথচ শী‘আ-সু্ন্নী সকলের বর্ণনা মতে এর বিপরীত চিত্রই ফুটে উঠে, উদাহরণ:
এক. উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর হত্যার বিচার প্রার্থীদের সাথে যুদ্ধের ব্যাপারে হাসান রাদিয়াল্লাহু আনহু বরাবরই তার পিতার সাথে বিরোধ করতেন। সন্দেহ নেই, এদের একজন ছিল সঠিক পথে, আর অপর জন ছিল ভুল পথে। অথচ তারা উভয়েই শী‘আদের নিকট নিষ্পাপ ইমাম!
দুই. মুয়াবিয়ার সাথে সন্ধি করার ঘটনায় হুসাইন তার ভাই হাসানের সাথে মত বিরোধ করেন। এতে সন্দেহ, তাদের দুই জনের একজন ছিল সঠিক পথে, অপর ছিল ভুল পথে। অথচ এরা উভয়েই শী‘আদের নিকট নিষ্পাপ!
তিন. শী‘আদের কোনো কোনো কিতাবে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত:
«لا تكفوا عن مقالة بحق، أو مشورة بعدل، فإني لست آمن أن أخطئ» .
“তোমরা সত্য কথা অথবা ইনসাফের পরামর্শ থেকে বিরত থাকবে না। কারণ, আমি ভুল থেকে উর্ধ্বে নয়”। [“আল-কাফি”: (৮/২৫৬); “বিহারুল আনওয়ার”: (২৭/২৫৩)]
১২২. শী‘আরা পবিত্র ভূমি মক্কা ও মদিনার আলিমদের সম্পর্কে চরম ধৃষ্টতার পরিচয় দেয়। তারা ফাতওয়া দেয় প্রয়োজনের খাতিরে মুরতাদদের সাথে যুদ্ধের জন্য কাফির থেকে সাহায্য গ্রহণ করা যায়। অতঃপর আমরা দেখি তাদের প্রসিদ্ধ শাইখ ইবন মুতাহহার আল-হুলী তার কিতাবে লেখেন:
إجماع الشيعة ـ ما عدا شيخهم الطوسي ـ على جواز الاستعانة «بأهل الذمة على حرب أهل البغي» !!
“শাইখ আত-তুসি ব্যতীত সকল শী‘আ একমত যে, বিদ্রোহীদের সাথে যুদ্ধের জন্য জিম্মিদের থেকে সাহায্য নেওয়া বৈধ!! [“মুনতাহাত তালাব ফি তাহকিল মাজহাব”: (২/৯৮৫)] এটা কি বৈপরীত্য নয়?!
১২৩. শী‘আদের মূলনীতি: ইমামতির মালিক সেই হবে, আহলে বাইত থেকে যে ইমামতির দাবি করবে এবং তার সত্যতার স্বপক্ষে অলৌকিক দলীল পেশ করবে। তা সত্বেও দেখি তারা জায়দ ইবন আলীকে ইমাম মানে না, অথচ তিনি ইমামতির দাবি করেছিলেন। অপর দিকে তাদের অদৃশ্য মাহদীকে ইমাম বলে, যে কখনো ইমামতি দাবি করে নি। ছোট ও শৈশবে ছিল বলে তার থেকে অলৌকিক ঘটনাও প্রকাশ পায়নি, (যেমন তাদের ধারণা)।
১২৪. যখন এ আয়াত নাযিল হয়:
﴿إِنَّ ٱللَّهَ يَأۡمُرُكُمۡ أَن تُؤَدُّواْ ٱلۡأَمَٰنَٰتِ إِلَىٰٓ أَهۡلِهَا﴾ [ النساء : ٥٨ ]
“নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ দিচ্ছেন আমানতসমূহ তার হকদারদের কাছে পৌঁছে দিতে”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৫৮]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনী শায়বাদের ডেকে তাদের হাতে কাবার চাবি প্রদান করেন এবং বলেন,
«خذوها يا بني طلحة خالدة مخلدة فيكم إلى يوم القيامة، لا ينـزعها منكم إلا ظالم»
“হে বনু তালহা, এ চাবি গ্রহণ কর, কিয়ামত পর্যন্ত এ চাবি তোমাদের মধ্যেই থাকবে, কোনো অত্যাচারী ব্যতীত এ চাবি তোমাদের থেকে কেউ নেবে না”। [তাবরানি ফিল কাবির এবং তাবরানি ফিল আওসাত: মাজমাউজ জাওয়াদে: (৩/২৮৫)] কাবার একটা সামান্য চাবির ব্যাপারে যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা বলেন, তাহলে আলীর খিলাফত সম্পর্কে কেন তিনি এ কথা বলেননি, অথচ আলীর খিলাফতের বিষয়টি সকল মুসলিমের সাথে সংশ্লিষ্ট এবং তার ওপর নির্ভর করে অনেক কিছু?!
১২৫. শী‘আরা একটি হাদীস তৈরি করেছে, তারা বলে:
«لعن الله من تخلف عن جيش أسامة»
“উসামার বাহিনী থেকে যে বিরত থেকেছে, আল্লাহর তার ওপর লা‘নত করুন”। [দেখুন: “আল-মুহাজ্জাব” লি ইব্নুল বারাজ: (১/১৩); “আল-ঈজাহ” লি ইবন শাজান: (পৃ. ৪৫৪); “উসুলুল আখবার” লিল আমেলি: (পৃ. ৬৮)] এর পশ্চাতে শী‘আরা উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুকে লা‘নত করে!
এখানে তাদের ওপর দু’টি প্রশ্ন উত্থাপিত হয়:
এক. আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু উসামার বাহিনী থেকে পিছু থাকেনি। এটা আবু বকরের ইমামতি মেনে নেওয়ার আলামত। কারণ, আলী রাদিয়াল্লাহ আনহু আবু বকরের নিযুক্ত উসামার বাহিনীতে যোগ দিয়েছেন! উসামার নেতৃত্ব ঠিক হলে আবু বকরের নেতৃত্বও ঠিক, উসামার নেতৃত্ব মেনে নেওয়া মানে আবু বকরের নেতৃত্ব মেনে নেওয়া।
দুই. অথবা আলী উসামার দলে যোগ দেননি, তাহলে তাদের মিথ্যা হাদীস আলীর ওপরও বর্তায়!
১২৬. শী‘আদের ধারণা, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিকট কুরআনের এক কপি আছে, যা কুরআন নাযিলের ক্রম হিসেবে সংরক্ষণ করা! আমাদের প্রশ্ন: উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর পর আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু খিলাফত পেয়েছিলেন, তখন কেন তিনি এ কুরআন বের করেন নি?! অথচ আমাদের কুরআন তো আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকেও বর্ণিত, যেখানে নাযিল হওয়ার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয় নি।
১২৭. শী‘আরা আহলে বাইত ও নবী পরিবারের মহব্বতের দাবি করে, কিন্তু তাদের নিকট এ দাবির বিপরীতও আমরা দেখতে পাই। যেমন, কতক আহলে বাইতের বংশই তারা অস্বীকার করে, যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুই মেয়ে রুকাইয়া ও উম্মে কুলসুম! রাসূলের চাচা আব্বাস ও তার সকল সন্তানদের এবং জুবাইয়ের ইবন সাফিয়্যাহ, যিনি ছিলেন রাসূলের ফুফু। বরং তারা ফাতেমারও অনেক সন্তানকে অস্বীকার করে, যেমন জায়েদ ইবন আলি, এবং তার ছেলে ইয়াহইয়া, এবং মূসা কাজেমের সন্তান ইবরাহিম ও জাফর, শী‘আরা তাদের ইমাম হাসান আসকারির ভাই জাফর ইবন আলীকে গালাগাল করে। তাদের বিশ্বাস হাসান ইব্নুল হাসান (আল-মুসান্না), তার ছেলে আব্দুল্লাহ (আল-মাহাদ), তার ছেলে মুহাম্মাদ (নফস জাকিয়্যাহ) মুরতাদ হয়ে গেছে! অনুরূপ তারা বিশ্বাস করে ইবরাহিম ইবন আব্দুল্লাহ, জাকারিয়া ইবন মুহাম্মাদ আল-বাকের, মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল্লাহ ইবন হুসাইন ইবন হাসান, মুহাম্মাদ ইবনুল কাসেম ইবনুল হুসাইন ও ইয়াহইয়াহ ইবন উমার সম্পর্কে...। অতএব, আহলে বাইতের মহব্বতের দাবি কোথায়?!
বরং তাদের কেউ বলেছে:
«إن سائر بني الحسن بن علي كانت لهم أفعال شنيعة ولا تحمل على التقية» !
“হাসান ইবন আলীর সকল সন্তানের মধ্যে এমন কিছু নিকৃষ্ট কর্মকাণ্ড আছে, যা ‘তাকইয়া’র বিচারে আসে না! বরং এর চেয়ে জঘন্য কথা হচ্ছে:
১২৮. শী‘আরা প্রথম যুগের সকল আহলে বাইতকে কাফির বলে!! যেমন তাদের মূল কিতাবসমূহে এসেছে:
أن الناس بعد رسول الله صلى الله عليه وسلم ارتدوا إلا ثلاثة ( سلمان وأبو ذر والمقداد، وبعضهم يوصلهم إلى 7 ، وليس فيهم واحد من أهل البيت ).
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর সকলেই মুরতাদ হয়ে গিয়েছিল মাত্র তিনজন ব্যতীত, (সালমান, আবু যর ও মিকদাদ), কেউ বলেন সাতজন, যাদের মধ্যে একজন আহলে বাইতও নেই”। [দেখুন: সালিম ইবন কায়েস” লিল আমেরি: (পৃ. ৯২); “আর-রাওজাতু মিনাল কাফি”: (৮/২৪৫) এবং “হায়াতুল কুলুব” লিল মাজলিসি –ফারসি: (২/৬৪০)] অতএব, তারা তো সকলের ব্যাপারে কাফির ও মুরতাদ হওয়ার ঘোষণা দিল। (আল্লাহর নিকট পানাহ চাই)।
১২৯. হাসান রাদিয়াল্লাহু আনহুর বিপুল সংখ্যক সাথী ও সৈন্যবাহিনী সত্বেও মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাতে খিলাফত হস্তান্তর করেন। অথচ তার ভাই হুসাইন সামান্য লোকবল নিয়ে ইয়াজিদ ইবন মুয়াবিয়ার সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন, তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন, অথচ এরা উভয়েই শী‘আদের নিকট ইমাম! আমাদের প্রশ্ন: বিপুল সৈন্য ও সাথী-সঙ্গী থাকা সত্বেও যদি মুয়াবিয়ার হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হাসানের সঠিক হয়, তাহলে সাথী-সঙ্গীহীন হুসাইনের বিদ্রোহ ঘোষণা করা ছিল ভুল অথবা তার বিপরীত সঠিক! বরং তারা নির্দিষ্টভাবে আহলে বাইতের কতককে কাফির বলে: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচা আব্বাস, শী‘আদের দাবি তার ব্যাপারে কুরআনের নিম্নের আয়াত নাযিল হয়েছে:
﴿وَمَن كَانَ فِي هَٰذِهِۦٓ أَعۡمَىٰ فَهُوَ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ أَعۡمَىٰ وَأَضَلُّ سَبِيلٗا ٧٢﴾ [ الاسراء : ٧٢ ]
“আর যে ব্যক্তি এখানে অন্ধ, সে আখিরাতেও অন্ধ এবং অধিকতর পথভ্রষ্ট”। [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৭২] [“রিজালুল কাশি”: (পৃ. ৫৩)]
অনুরূপ তার ছেলে, এ উম্মতের বিজ্ঞ জ্ঞানী, বিশিষ্ট সাহাবী, কুরআনের ভাষ্যকার আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস সম্পর্কে শী‘আদের গ্রন্থ আল-কাফির বর্ণনাও আহলে বাইতের এ সদস্যকে কাফির বলার শামিল, সেখানে তাকে মূর্খ ও বিবেকহীন বলা হয়েছে! [“উসুলুল কাফি”: (১/২৪৭)]
রিজালুল কাশি গ্রন্থে এসেছে:
«اللهم العن ابني فلان وأعم أبصارهما، كما عميت قلوبهما ..»!
“হে আল্লাহ তুমি তার দুই সন্তানের ওপর লা‘নত কর, তাদের চোখ অন্ধ করে দাও, যেমন তাদের অন্তর অন্ধ করে দিয়েছে..”! [“রিজালুল কাশি”: (পৃ. ৫৩); মুজামু রিজালিল হাদীস” লিল খুইয়ি: (১২/৮১)] এর ব্যাখ্যায় তাদের শাইখ হাসান মুস্তাফি উল্লেখ করেন: “এরা হচ্ছে আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস ও উবাইদুল্লাহ ইবন আব্বাস”। [“রিজালুল কাশি”: (পৃ. ৫৩); মুজামু রিজালিল হাদীস” লিল খুইয়ি: (১২/৮১)]
বরং ফাতেমা ব্যতীত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্যান্য মেয়েরা পর্যন্ত শী‘আদের হিংসা ও বিদ্বেষের শিকার হয়েছেন, বরং তাদের কতকের ব্যাপারে নবীর পরিচয়কেই অস্বীকার করেছে! এটাই কি তাদের নবী পরিবারের প্রতি ভালোবাসা?!
১৩০. আবু বকরের খিলাফতের যমনায় আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুও মুরতাদদের যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন, তিনি বনু হানিফার বন্দীদের থেকে এক দাসীকে পর্যন্ত গ্রহণ করেন, যার থেকে তার এক সন্তান হয়, যার নাম মুহাম্মাদ ইবনুল হানাফিয়্যাহ। এর দ্বারাও প্রমাণিত হয় যে, আলী আবু বকরের খিলাফতকে অবৈধ মনে করতেন না। কারণ তার খিলাফত বাতিল হলে আলীর যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করাও ছিল বাতিল।
১৩১. বিভিন্ন মাসআলার মধ্যে জাফর থেকে বর্ণিত বাণীতেও বিস্তর পার্থক্য দেখা যায়। এমন মাসআলা প্রায় দুষ্কর যেখানে তার একাধিক মতামত নেই। যেমন, যে কূপে নাপাক পড়েছে তার সম্পর্কে তিনি একবার বলেন, “এটা সমুদ্র, কোনো জিনিস একে নাপাক করে না”। আবার বলেন, “এ কূপের সব পানি বের করতে হবে”। আবার বলেন, “সাত বা ছয় বালতি পানি উঠালেই যথেষ্ট”। যখন কোনো শী‘আ আলিমকে জিজ্ঞাসা করা হলো, এ মতদ্বৈতা থেকে বের হওয়ার পথ কি? তিনি বললেন: মুজতাহিদ (গবেষক) এসব মতামতের মধ্যে কোনো একটিকে প্রধান্য দেবে। অতঃপর অন্যান্য মতামতের ব্যাপারে বলবে এগুলো ‘তাকইয়া’! তাকে বলা হলো: যদি আরেক মুজতাহিদ অপর মতকে প্রধান্য দেয়, তখন এ মতের ব্যাপারে কি বলবেন? তিনি বললেন: একই কথা বলব, এগুলো ছিল ‘তাকইয়া’। তাকে বলা হলো: তাহলে তো জাফরের মাযহাবই বিনষ্ট হয়ে যায়!! কারণ যে মাসআলাকেই তার সাথে সম্পৃক্ত করা হবে, তার ব্যাপারেই বলা হবে যে, এটা ছিল ‘তাকইয়া’, কারণ মূল মাসআলা ও ‘তাকইয়া’র মধ্যে পার্থক্যকারী কোনো মাপকাঠি নেই!!
১৩২. হাদীসের ব্যাপারে শী‘আদের নিকট গ্রহণযোগ্য কিতাব হচ্ছে:
এক. «الوسائل» للحر العاملي المتوفى سنة 1104 هـ
দুই. «البحار» للمجلسي المتوفى سنة 1111 هـ
তিন. «مستدرك الوسائل» للطبرسي المتوفى سنة 1320 هـ
এসব কিতাব অনেক পরে রচিত! যদি তারা এগুলোর সনদ ও বর্ণনার ভিত্তিতে জমা করে থাকেন, তাহলে কোনো বিবেকবান এর ওপর আস্থা রাখতে পারেন, যা প্রায় এগারো শতাব্দী অথবা তের শতাব্দী পর্যন্ত লিপিবদ্ধ ছিল না?!
১৩৩. শী‘আদের কিতাবে অনেক বর্ণনা ও হাদীস রয়েছে, যা আহলে সুন্নাতের বর্ণনার সাথে মিলে যায়, আকীদার ব্যাপারে অথবা বিদ‘আত প্রত্যাখ্যানের ব্যাপারে অথবা অন্য কোনো বিষয়ে; কিন্তু শী‘আরা তার বাহ্যিক অর্থ প্রত্যাখ্যান করে অন্য অর্থ নেয় ‘তাকইয়া’র আশ্রয়ে। কারণ, বাহ্যিক অর্থ তাদের প্রবৃত্তির সমর্থন করে না!
১৩৪. নাহজুল বালাগার লেখক আলী থেকে আবু বকর ও উমার সম্পর্কে প্রশংসা নকল করেছেন। যেমন, আবু বকর সম্পর্কে তিনি বলেন,
«ذهب نقي الثوب قليل العيب، أصاب خيرها وسبق شرها، أدى إلى الله طاعته، واتقاه بحقه» .
“চলে গেলেন পবিত্র পোশাকধারী ও নির্দোষ ব্যক্তি, যিনি কল্যাণ উপার্জন করেছেন, অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থেকেছেন, আল্লাহর আনুগত্য করেছেন এবং যথাযথ তার তাকওয়ার অধিকারী ছিলেন”। [নাহজুল বালাগাহ: পৃ. ৩৫০), তাহকিক: সাবিহি আস-সালেহ।]
শী‘আরা এ ধরণের প্রশংসা দেখে হতভম্ব হয়, যা তাদের আকীদা তথা সাহাবীদের সাথে বিদ্বেষ পোষণ করার সম্পূর্ণ বিপরীত, ফলে এগুলো তারা ‘তাকইয়া’ বলে আখ্যা দেয়!! তাদেরকে সন্তুষ্ট করা ও তাদের অন্তরকে নিজের প্রতি নমনীয় করার জন্য আলী এসব বলেছেন। অতএব, যারা আবু বকর ও উমারের খিলাফতকে সঠিক জানত, আলী তাদেরকে এভাবে ধোঁকা দিয়েছেন! অথবা বলতে হয়, আলী ছিল ভীরু ও মুনাফিক, মুখে তাই উচ্চারণ করেছেন অন্তরে যা ছিল না। শী‘আরা আলীর যে বীরত্ব ও বাহাদুরি উল্লেখ করে, এটা তার বিপরীত নয়!?
১৩৫. শী‘আরা তাদের ইমামদের মাসূম তথা নিষ্পাপ দাবি করে, যা সবার নিকট প্রসিদ্ধ, এ নীতির কারণেই তারা অনেকটা কোণঠাসা। কারণ তাদের নিকটই এমন অনেক বর্ণনা রয়েছে, যার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, তাদের ইমামরা অন্যান্য লোকের ন্যায় মানুষ ছিল, তাদের যেমন ভুল-ভ্রান্তি হয়, এদেরও তেমন ভুল-ভ্রান্তি হয়েছে। এমনকি শী‘আদের আলিম মাজলিসী স্বীকার করেছেন:
«المسألة في غاية الإشكال؛ لدلالة كثير من الأخبار والآيات على صدور السهو عنهم ..».
“এ বিষয় খুবই জটিল, কারণ অনেক বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, তাদের থেকে ভুল-ভ্রান্তি প্রকাশ পেয়েছে”। [“বিহারুল আনওয়ার”: (২৫/৩৫১)]
১৩৬. শী‘আদের এগারোতম ইমাম হাসান আসকারী কোনো সন্তান না রেখেই মারা যান, কিন্তু পরবর্তীতে শী‘আদের এক লোক ‘উসমান ইবন সায়িদ’ দাবি করে যে, হাসান আসকারির এক সন্তান ছিল, যে চার বছর বয়সেই আত্ম গোপন করে, সে-ই হাসান আসকারীর প্রতিনিধি।
শী‘আদের কাণ্ড দেখে অবাক লাগে! তারা দাবি করে যে, তারা মাসুমদের ব্যতীত কারো কথা গ্রহণ করে না, আবার তারাই তাদের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ‘ইমামিয়্যাহ আকীদা’ সম্পর্কে এমন ব্যক্তির কথা গ্রহণ করে, যে মাসুম নয়!!
১৩৭. শী‘আরা মারওয়ান ইবনুল হাকাম সম্পর্কে সব ধরণের কটাক্ষ করে, আবার তারাই বর্ণনা করে যে, হাসান ও হুসাইন মারওয়ান ইবনুল হাকামের পিছনে সালাত আদায় করত! [“বিহারুল আনওয়ার”: (১০/১৩৯); আন-নাওয়াদের” লিল রাওয়েন্দি: (পৃ. ১৬৩)]
আরো আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে মারওয়ানের ছেলে মুয়াবিয়াহ আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর মেয়ে রমলাকে বিয়ে করেন!! [“নাসাবু কুরাইশ” লি মুসআব জাবিরি: (পৃ. ৪৫) এবং “জামহারাতু আনসাবিল আরব” লি ইবন হাজম: (পৃ. ৮৭)] অনুরূপ জয়নব বিনতে হাসান (আল-মুসান্না) মারওয়ানের নাতি ওলিদ ইবন আব্দুল মালিকের সাথে বিবাহিত ছিলেন। [“নাসাবু কুরাইশ” লি মুসআব জাবিরি: (পৃ. ৫২) এবং “জামহারাতু আনসাবিল আরব” লি ইবন হাজম: (পৃ. ১০৮)] অনুরূপ ওলিদ বিয়ে করেছেন নাফিসা বিনতে জায়েদ ইবনুল হাসান ইবন আলীকে। [“উমদাতু ফি আনসাবে আলে আবি তালেব” লি ইবন আনবাহ আশশিয়ি: (পৃ. ১১১); “তাবকাত ইবন সাদ”: (৫/৩৪)]
১৩৮. শী‘আরা তাদের অদৃশ্য ইমাম মাহদীর জন্মের ঘটনা সম্পর্কে বলে:
«نزلت عليه طيور من السماء تمسح أجنحتها على رأسه ووجهه وسائر جسده ثم تطير ! فلما قيل لأبيه ضحك وقال : تلك ملائكة السماء نزلت للتبرك بهذا المولود، وهي أنصاره إذا خرج» !
“তার ওপর আসমান থেকে পাখি অবতরণ করে, ডানা দ্বারা তার মাথা, চেহারা ও সমস্ত শরীর মাসেহ করে অতঃপর উড়ে যায়! যখন তার পিতাকে বলা হলো, তিনি হাসলেন আর বললেন: এরা হচ্ছে আসমানের ফিরিশতা, এরা এ নবজাতক থেকে বরকত হাসিল করার জন্য নাযিল হয়েছে। যখন সে বের হবে, তখন এরা তাকে সাহায্য করবে”! [“রাওজাতুল ওয়াজেনি”: (পৃ. ২৬০)]
আমাদের প্রশ্ন: যদি ফিরিশতারা তার সাহায্যকারী হয়, তাহলে কেন তার ভয়, কেন তিনি ভয়ে গর্তে ঢকে যান?!
১৩৯. শী‘আরা তাদের ইমামের জন্য কতগুলো শর্ত নির্ধারণ করেছে:
এক. ইমাম পিতার বড় ছেলে হবেন।
দুই. তাকে একমাত্র ইমামই গোসল দেবে।
তিন. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বর্ম তার গায়ে যথাযথভাবে লাগবে।
চার. তিনি সবচেয়ে জ্ঞানী হবেন।
পাঁচ. তিনি গায়েব জানবেন! ইত্যাদি।
কিন্তু পরবর্তীতে তারা এসব শর্ত নিয়ে মুসীবতে পড়েছে!! কারণ, আমরা দেখি যে, তাদের কতক ইমাম পিতার বড় সন্তান ছিল না, যেমন মূসা কাজেম ও হাসান আসকারি এবং কতককে কোনো ইমাম গোসল দেয় নি, যেমন আলী রেজা, তাকে তার ছেলে জাওয়াদ গোসল দেয় নি। কারণ, তখন তার বয়স আটও অতিক্রম করে নি, অনুরূপ মূসা কাজেমকে তার ছেলে আলী রেজা গোসল দেয় নি। কারণ, তখন তিনি অনুপস্থিত ছিলেন, বরং হুসাইন ইবন আলীকে তার ছেলে জয়নুল আবেদিন গোসল দেয় নি। কারণ, তখন তিনি বিছানায় শোয়া এবং ইবন জিয়াদের সৈন্যবাহিনী প্রতিবন্ধক হয়েছিল।
তাদের কোনো ইমাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বর্ম সমান ছিল না, যেমন মুহাম্মাদ আল-জাওয়াদ, তিনি নিজ পিতার মৃত্যুর সময় আট বছর অতিক্রম করেন নি। অনরূপ তার ছেলে আলী ইবন মুহাম্মাদ তার শৈশবেই মারা যান।
তাদের অনেকে সবার চেয়ে জ্ঞানী ছিল না, যেমন যারা ছোট ছিল। তাদের কোনো কোনো ইমামের ব্যাপারে শী‘আদের বর্ণনায় আছে যে, তাদের স্বপ্নদোষ হত এবং তারা নাপাক হতেন। যেমন, আলী ও তার দুই ছেলে হাসান ও হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুম। যেমন, তারাই বর্ণনা করেছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেছেন:
«لا يحل لأحد أن يجنب في هذا المسجد إلا أنا وعلي وفاطمة والحسن والحسين» .
“কারো জন্য বৈধ নয় এ মসজিদে নাপাক হওয়া, তবে আমি, আলি, ফাতেমা, হাসান ও হুসাইন ব্যতীত”। [“উয়ূনু আখবারির রিজা”: (২/৬০)]
অবশিষ্ট রইল গায়েব জানা, এটাও একটা নিরেট মিথ্যা, আল্লাহ কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে তা খণ্ডন করেছেন।
১৪০. শী‘আরা দাবি করে যে, ইমামের ব্যাপারে নস বা সরাসরি নির্দেশ থাকা জরুরী। বাস্তব যদি এমনই হতো, তাহলে তাদের বিভিন্ন দল ও উপদলে ইমামতির ব্যাপারে এতো মতভেদ দেখা যেত না। প্রত্যেক দলই তাদের ইমামের ব্যাপারে নস বা সরাসরি নির্দেশের দাবি করে! অতএব, তাহলে কোনো দলিলের ভিত্তিতে একদল অপর দল থেকে উত্তম?! যেমন, কাইসানিয়ারা দাবি করে যে, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর পর ইমাম হচ্ছে তার ছেলে মুহাম্মাদ ইবনুল হানাফিয়াহ, অনুরূপ অন্যান্য দল।
১৪১. কতক শী‘আ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে অপবাদ দেয়, যেমন অপবাদ দিয়েছে ইফকের ঘটনা সৃষ্টিকারীরা, (আল্লাহর নিকট পানাহ চাই), পূর্বে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে।
তাদের প্রতি প্রশ্ন: যদি বিষয়টি এমনই হয় যেমন তোমরা বল, তাহলে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ওপর হদ কয়েম কেন করেন নি, অথচ তিনিই বলেছেন:
«والله لو سرقت فاطمة بنت محمد لقطعت يدها»؟ !
“আল্লাহর শপথ, যদি ফাতেমা বিনতে মুহাম্মাদ চুরি করত, তাহলে তারও হাত কাটা হত”। [সহীহ বুখারী।] আলী কেন তার ওপর হদ কায়েম করে নি, যিনি আল্লাহর বিধানের ব্যাপারে কাউকে ভয় করেন না?! তার ওপর কেন হদ কায়েম করে নি হাসান, যখন সে খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে?!
১৪২. শী‘আদের ধারণা ইমামদের নিকট ইলম গচ্ছিত, তারা এমন কিতাব ও ইলমের উত্তরাধিকার হয়েছেন, যা অন্য কেউ হয় নি, যেমন তাদের নিকট বিদ্যমান:
এক. صحيفة الجامعة (সাহীফাতুল জামে)
দুই. كتاب علي (কিতাবু আলী)
তিন. العبيطة (আল-আবতিয়াহ)
চার. ديوان الشيعة (দিওয়ানুশ শী‘আহ)
পাঁচ. الجفر (আল-জাফর)
তাদের এসব কিতাব ধারণা প্রসূত, তারা বলে এতে মানুষের প্রয়োজনীয় যাবতীয় বিষয় রয়েছে, তাহলে এসব কিতাব উহ্য কেন, এতে মানুষের ফায়দা কিসের, মাহদীর অদৃশ্যের (কাল্পনিক) ঘটনা থেকে কেন তা আজ পর্যন্ত গোপন?!
তাদের প্রতি আরো প্রশ্ন: এখন এসব কিতাব কোথায়? তাদের অপেক্ষার মাহদী কিসের অপেক্ষা করছে, এসব কিতাব নিয়ে মানুষের সামনে কেন উপস্থিত হয় না? হিদায়াতের মূল উৎস এসব কিতাব থেকে কেন জগতবাসী এগার শতক থেকে বঞ্চিত?! কোনো অপরাধের কারণে প্রজন্মের পর প্রজন্ম এর থেকে মাহরুম হচ্ছে?! আর এতে যদি জগতবাসীর কোনো ফায়দা না থাকে, তাহলে এসব দাবি কেন করা হয়? শী‘আদেরকে হিদায়াতের আসল উৎস তথা কুরআন ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত থেকে কেন বিভ্রান্ত করা হয়?!
১৪৩. শী‘আরা তাদের কিতাবে উল্লেখ করে যে, হুসাইনের কুফায় যাত্রা করা, অতঃপর সেখানে লাঞ্ছনা ও হত্যার শিকার হওয়ার কারণ ছিল তিন জন ব্যতীত সকলের মুরতাদ হয়ে যাওয়া। যদি হুসাইন গায়েব জানতেন (যেমন শী‘আদের ধারণা) তাহলে কখনো তিনি কুফায় যাত্রা করতেন না।
১৪৪. শী‘আরা দাবি করে যে, তাদের বারোতম ইমামের অদৃশ্য হওয়ার কারণ হচ্ছে হত্যার ভয়।
আমাদের প্রশ্ন: তার পূর্বের ইমামদের কেন হত্যা করা হয় নি?! অথচ তারা খিলাফতের যুগে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতেন, তারা ছিল প্রাপ্ত বয়স্ক, তাদেরকেই যখন হত্যা করা হয় নি, তাহলে এ ছোট বাচ্চাকে কেন হত্যা করা হবে, এর কিসের হত্যার ভয়?!
১৪৫. শী‘আরা দাবি করে যে, তারা সেসব হাদীসই মানে, যা আহলে বাইতের সূত্রে বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত। [“উসুলুশ শী‘আহ ও উসুলুহা” লি মুহাম্মাদ হুসাইন আলে কাশেফুল গিতা: (পৃ. ৮৩)] এখানেই তারা মানুষকে বিভ্রান্তিতে নিক্ষেপ করে ও ধোঁকা দেয়। কারণ, তাদের বিশ্বাস তাদের ইমামগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মতোই জ্ঞানী, তারা কেউ মনগড়া কথা বলে না। ইমামের কথা আল্লাহ ও রাসূলের কথার ন্যায়। আর এ জন্যই তাদের কিতাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী খুব কম। কারণ, তারা তাদের ইমামদের কথাকেই যথেষ্ট মনে করে। দ্বিতীয়তঃ তাদের এ কথাও সঠিক নয় যে, তারা আহলে বাইতের সব সদস্যের সূত্রে প্রমাণিত হাদীস গ্রহণ করে, বরং তারা শুধু তাদের ইমামদের কথা গ্রহণ করে। যেমন তারা হাসানের সন্তানদের ওপর আস্থা রাখে না।
১৪৬. তাদের প্রতি আরো প্রশ্ন: তোমরা তোমাদের ইমামদের থেকে প্রমাণিত হাদীস গ্রহণ কর, কিন্তু আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু ব্যতীত কেউ তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রান্ত বয়সে দেখে নি, তাহলে আলী একাই রাসূলের সকল সুন্নত পরবর্তী সকল উম্মতের নিকট পৌঁছানোর জন্য যথেষ্ট?! এটা কীভাবে সম্ভব: অথচ তোমাদের স্বীকৃতি দ্বারাই প্রমাণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো তাকে মদিনায় রেখে যেতেন, আবার কখনো তাকে অভিযানে প্রেরণ করতেন?! অতএব, প্রমাণিত হলো আলী সব সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে থাকতেন না।
অধিকন্তু আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘরের সংবাদ কীভাবে নকল করবেন, যা একমাত্র তার স্ত্রীদের সাথেই খাস?!
অতএব, প্রমাণিত হলো, আলী একাই তোমাদের নিকট সকল হাদীস পৌঁছাই নি!
১৪৭. শী‘আদের প্রতি প্রশ্ন: অধিকাংশ ইসলামী দেশে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইলম পৌঁছছে আলী ব্যতীত অন্য সাহাবীদের দ্বারা, বরং আহলে বাইতের সদস্য ব্যতীত অন্যদের মাধ্যমেই সাধারণত পৃথিবীর আনাচে-কানাচে ইসলাম পৌঁছেছে! যেমন, ইসলাম, কুরআন ও দীনি শিক্ষা দেওয়ার জন্য মদিনায় আসআদ ইবন জুরারাকে প্রেরণ করেন। বাহরাইন ও তার আশ-পাশের এলাকায় আলা-ইবন হাজরামীকে প্রেরণ করেন। মুয়াজ ও আবু মূসাকে প্রেরণ করেছেন ইয়ামানে, ইতাব ইবন উসাইদকে প্রেরণ করেছেন মক্কায়। তাহলে শী‘আদের দাবির সত্যতা কোথায় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইলম আলী বা আহলে বাইত ব্যতীত পৌঁছতে পারে না?!
১৪৮. শী‘আদের প্রতি প্রশ্ন: শী‘আরা স্বীকার করে যে, তাদের নিকট হালাল-হারাম ও হজের ইলম পৌঁছছে আবু জাফর আল-বাকেরের মাধ্যমে। এর অর্থ হচ্ছে আলীর মাধ্যমে এ ইলম তাদের নিকট পৌঁছে নি! শী‘আদের কিতাবের বক্তব্য:
«كانت الشيعة قبل أن يكون أبو جعفر وهم لا يعرفون مناسك حجهم وحلالهم وحرامهم، حتى كان أبو جعفر ففتح لهم وبين لهم مناسك حجهم وحلالهم وحرامهم، حتى صار الناس يحتاجون إليه من بعد ما كانوا يحتاجون إلى الناس» .
“শী‘আরা আবু জাফরের পূর্বে হালাল-হারাম ও হজের বিধান জানত না, অবশেষে আবু জাফর তাদের ইলমের দরজা উম্মুক্ত করেন এবং তাদেরকে হালাল-হারাম ও হজের বিধান শিক্ষা দেন। অতঃপর মানুষেরা সবাইকে ত্যাগ করে, তার দিকেই প্রত্যাবর্তন করে”। [“উসুলুল কাফি”: (২/২০); “তাফসীরুল আইয়াশি”: (১/২৫২-২৫৩); “আল-বুরহান”: (১/৩৮৬); “রিজালুল কাশি”: (পৃ. ৪২৫)] অতএব, শী‘আরা বাকেরের পূর্বে কীভাবে আল্লাহর ইবাদাত করত?!
১৪৯. শী‘আরা নিজেদের ইখতিলাফের সময় এমন ব্যক্তিকে ফয়সালাকারী বানায়, যার ব্যাপারে তাদের ধারণা হয় যে, তিনি অপেক্ষার অদৃশ্য মাহদীকে দেখেছেন, তাকেই তারা সত্যবাদী ও ইনসাফপূর্ণ মনে করে। তাদের শাইখ মামকানী বলেন,
«تشرف الرجل برؤية الحجة ـ عجل الله فرجه وجعلنا من كل مكروه فداه ! ـ بعد غيبته، فنستشهد بذلك على كونه في مرتبة أعلى من مرتبة العدالة ضرورة» .
“কোন ব্যক্তি যদি হুজ্জতকে দেখে সৌভাগ্যবান হয়, আমরা এ কারণে তার ব্যাপারে সাক্ষ্য দেই যে, তিনি ইনসাফের সর্বোচ্ছ শিখরে”। [“তানকিহুল মাকাল”: (১/২১১)]
আমাদের প্রশ্ন: যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছেন, তাদের ব্যাপারে কেন তোমরা এটা বল না?! অথচ তিনি তোমাদের হুজ্জত থেকে উত্তম ও উৎকৃষ্ট?!
১৫০. শী‘আদের দ্বিমুখী আচরণ হচ্ছে যে, যারা তাদের কোনো ইমামকে অস্বীকার করে, তারা তাদের বর্ণনা পরিত্যাগ করে, যে কারণে তারা সাহাবীদের বর্ণনা ত্যাগ করেছে। অতঃপর আমরা দেখি যে, শী‘আদের কতক মুরুব্বি, যারা তাদের কতক ইমামকে অস্বীকার করেছেন, তাদের সাথে তারা এ আচরণ করে না! যেমন তাদের শাইখ হুর আল-আমেলি এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যে, ইমামিয়ারা “আল-ফাতহিয়্যাহ”, [আতবাউ আব্দুল্লাহ “আল-আফতাহ” ইবন জাফর সাদেক।] “আল-ওয়াকেফিয়্যাহ” [এরা ইমামতের ধারা মূসা ইবন জাফর পর্যন্ত শেষ করে, তার পরে কারো ইমামত স্বীকৃতি দেয় না।] এবং “আন-নাউসিয়্যাহ” [এরা নাউস অথবা ইবন নাউস নামক ব্যক্তির অনুসারী, তারা বলে জাফর ইবন মুহাম্মদ তথা মাহদি মারা যায় নি।] সম্প্রদায়ের হাদীস অনুযায়ী আমল করে। অথচ এ তিন জামা‘আতের সবাই বারো ইমামিদের কতক ইমামকে অস্বীকার করে। এতদ সত্বেও তাদের অনেক ব্যক্তিকে তারা নির্ভরযোগ্য গণ্য করে। [উদাহরণত দেখুন: “রিজালুল কাশি”: (পৃ. ৫৬৩, ৫৬৫, ৫৭০, ৫১২, ৬১৬, ৫৯৭, ৬১৫)] কিন্তু তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের সাথে এমনটি করে না!
১৫১. শী‘আদের আলিমদের বড় একটি জামা‘আত স্বীকার করে যে, আল-কুলাইনি রচিত তাদের কিতাব ‘আল-কাফি’তে সহীহ, দুর্বল ও বানোয়াট হাদীস রয়েছে, অথচ শী‘আদের নিকট স্বীকৃত যে, এ কিতাব তাদের অদৃশ্য ইমামের নিকট পেশ করা হয়েছিল, (যেমন তাদের ধারণা) অতঃপর তিনি বলেন, এ কিতাবই আমাদের শী‘আ গ্রুপের জন্য যথেষ্ট। [“মুকাদ্দামতুল কাফি” লি হুসাইন আলী: (পৃ. ২৫); “রাওজাতুল জান্নাত লিল খাওয়ানাসারি”: (৬/১০৯); “আশ-শিয়াহ”: লি মুহাম্মদ সাদেক আস-সাদর: (পৃ. ১২২)]
আমাদের প্রশ্ন: মাহদী কেন এর ভেতরকার বানোয়াট বর্ণনা সম্পর্কে সর্তক করেন নি?!
১৫২. শী‘আদের শাইখ হামদানী ‘মিসবাহুল ফকিহ’ গ্রন্থে বলেন,
«إن المدار على حجية الإجماع على ما استقر عليه رأي المتأخرين ليس على اتفاق الكل، بل ولا على اتفاقهم في عصر واحد، بل على استكشاف رأي المعصوم بطريق الحدس ..»
“ইজমার শর্ত হচ্ছে পরবর্তী আলিমদের চূড়ান্ত অভিমত, সবার ঐক্যমত জরুরী নয়, বরং একযুগের সবার ঐক্যমতও জরুরী নয়, বরং অনুমান দ্বারা যদি মাসুম ইমামের সিদ্ধান্ত জানা যায়, তাহলেই যথেষ্ট...” [“মিসবাহুল ফাকিহ”: (পৃ. ৪৩৬); “আল-ইজতিহাদ ও তাকলিদ”: (পৃ. ১৭)] তারা ইজমার স্বপক্ষে অনুমান দ্বারা অদৃশ্য ইমামের মতামত জানাই যথেষ্ট মনে করে, যেখানে ভুলের সম্ভাবনা রয়েছে, অথচ তারা পঞ্চইন্দ্রিয় দ্বারা প্রমাণিত নির্ভুল ইজমা গ্রহণ করে না! এ বৈপরিত্বের সুরাহা কোথায়!
১৫৩. শী‘আরা স্বীকার করে যে, তাদের একজন বড় আলিম, অর্থাৎ ‘ইবন বাবুইয়া আল-কুম্মি’ যিনি শী‘আদের নিকট গ্রহণযোগ্য চার কিতাবের একটি من لا يحضره الفقيه এর লেখক, তার ব্যাপারে তারা বলে:
«يدعي الإجماع في مسألة ويدعي إجماعاً آخر على خلافها»
“তিনি এক মাসআলায় ইজমার দাবি করেন, আবার বিপরীত মাসআলায় অপর ইজমার দাবি করেন”। [“জামেউল মাকাল ফি-মা ইয়াতাআল্লাকু বি আহওয়ালিল হাদীস ওয়ার রিজাল” লিত তারিহি: (পৃ. ১৫)] যার পরিপেক্ষিতে তাদেরই একজন আলিম বলেছেন:
«ومن هذه طريقته في دعوى الإجماع كيف يتم الاعتماد عليه والوثوق بنقله» .
“ইজমার দাবির ব্যাপারে এটা যার নীতি, তার কথা ও বর্ণনার ওপর কীভাবে আস্থা রাখা যায়”!? [“জামেউল মাকাল ফি-মা ইয়াতাআল্লাকু বি আহওয়ালিল হাদীস ওয়ার রিজাল” লিত তারিহি: (পৃ. ১৫)]
১৫৪. শী‘আদের একটি আশ্চর্য বিষয় যে, তাদের কিতাবে কোনো মাসআলায় যদি একাধিক মত বা বিরোধ থাকে, এক মতের বক্তা সম্পর্কে যদি জানায়, আর অপর মতের বক্তাকে যদি জানা না যায়, তাহলে যে মতের বক্তাকে জানা যায় নি, সেটাকেই তারা প্রধান্য দেয়! কারণ তাদের ধারণা হয়তো এটাই তাদের মাসুম ইমামের বাণী! এমনকি তাদেরই এক শাইখ ‘হুর আল-আমেলী’ এতে আশ্চর্য বোধ ও এ নীতির সমালোচনা করে বলেছেন:
«وقولهم باشتراط دخول مجهول النسب فيهم أعجب وأغرب، وأي دليل عليه؟ وكيف يحصل مع ذلك العلم بكونه هو المعصوم أو الظن به» .
“তারা যে বলেছে: অপরিচিত লোকের মতই গ্রহণযোগ্য, এটা আশ্চর্য ও অদ্ভুদ বিষয়, এর দলীল কি? কীভাবে জানা যাবে যে, এর বক্তাই মাসুম ইমাম অথবা তার সম্পর্কে কীভাবে ধারণা জন্মাবে”? [“মুকতাবাসুল আসার”: (৩/৬৩)]
১৫৫. শী‘আদের শাইখ মাজলিযী বলেছেন:
«إن استقبال القبر أمر لازم وإن لم يكن موافقاً للقبلة»
“কবরের দিকে মুখ করা জরুরী, যদিও কিবলা মোতাবিক না হয়”। [বিহারুল আনওয়ার”: (১০১/৩৬৯)] অর্থাৎ তাদের মাজার ও পবিত্র স্থানসমূহ যিয়ারতকালে দুই রাকাত সালাত আদায়ের সময় কিবলামুখী না হলেও কবরমুখী হওয়া জরুরি!!
আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে তাদের কিতাবেই আহলে বাইতের ইমামদের থেকে আছে যে, কবরসমূহ মসজিদ ও কিবলা হিসেবে গ্রহণ কর না, কিন্তু এসব যেহেতু তাদের প্রবৃত্তি মোতাবিক নয়, তাই তারা এগুলোকে ‘তাকইয়া’ হিসেবে গণ্য করে, এর ওপর আমল পরিত্যাগ করে!
১৫৬. শী‘আরা “গাদিরে খুম” এর হাদীস এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিম্নের বাণী খুব বেশি উল্লেখ করে:
«أذكركم الله في أهل بيتي»
“আমার পরিবারের ব্যাপারে তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি”।
“অথচ তারা ভুলে যায়, তারাই সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ ওসিয়তের প্রত্যাখ্যান করে, যার প্রমাণ আহলে বাইতের বৃহৎ একটি জামা‘আতের সাথে তাদের শত্রুতা পোষণ করা!
১৫৭. শী‘আদের প্রতি প্রশ্ন: সাহাবায়ে কেরাম যদি আলীর খিলাফতের হাদীস গোপন করত, তাহলে তারা আলীর অন্যান্য ফযীলতের হাদীসগুলোও গোপন করত, তার ফযীলতের কোনো হাদীসই দ্বারা বর্ণনা করত না, অথচ তা বাস্তবতার বিপরীত, অতএব, প্রমাণিত হলো যে, খিলাফতের ব্যাপারে যদি আলী সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো ওসিয়ত থাকত, তাহলে সাহাবায়ে কেরাম অবশ্যই বর্ণনা করতেন। কারণ, খিলাফতের বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যার প্রচার ও প্রসার ছিল ওয়াজিব, আর এ ওয়াজিব আদায় হলে আলীর বিপক্ষের ও স্বপক্ষের সকলে তা জানত।
১৫৮. শী‘আরা বর্ণনা করে, হাসান আল-আসকারি তাদের অপেক্ষার ইমাম মাহদীর পিতা, তিনি নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি ব্যতীত কারো কথার ভিত্তিতে “অপেক্ষার মাহদী”র সংবাদ প্রকাশ করা থেকে নিষেধ করেছেন। অতঃপর তারাই এ নীতি লঙ্ঘন করে বলে, যে ইমামকে চিনবে না, সে গায়রুল্লাহকে চিনে এবং তারই ইবাদত করে! আর এ অবস্থায় মারা গেলে সে কুফর ও নিফাকি অবস্থায় মারা গেল! [“উসুলুল কাফি”: (১/১৮১, ১৮৪)]
আমাদের প্রশ্ন: কেন তার পিতার এ সতর্কতা, অথচ তাকে না জেনে মারা যাওয়া শী‘আদের নিকট মহা অরাধ?!
১৫৯. শী‘আদের প্রতি প্রশ্ন: যারা ধারণা করে যে, আল্লাহ তা‘আলা তাদের “অপেক্ষার মাহদী”র হায়াত দুই শত বছর বৃদ্ধি করেছেন, মানুষের প্রয়োজনের স্বার্থে, বরং পুরো জগতের স্বার্থে! আল্লাহ যদি মানুষের স্বার্থে কারো হায়াত দীর্ঘ করেন, তাহলে অবশ্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হায়াত দীর্ঘ করা উচিৎ ছিল।
১৬০. শী‘আরা তাদের অদৃশ্য ইমামের পিতা হাসান আসকারি সম্পর্কে হাসান আসকারির ভাই জাফরের কথা বিশ্বাস বা গ্রহণ করে না, যিনি বলেছেন যে, আমার ভাই হাসান আসকারীর কোনো সন্তান ছিল না, কারণ তিনি হচ্ছে তাদের নীতি অনুসারে গায়রে মাসুম বা নিষ্পাপ নন। [দেখুন: “আল-গায়বাহ”: (পৃ. ১০৬-১০৭)] অতঃপর দেখি যে, হাসান আসকারীর সন্তানের ব্যাপারে উসমান ইবন সায়িদের কথা তারা বিশ্বাস করে, অথচ সেও গায়রে মাসুম বা নিষ্পাপ নন! এ বৈপরীত্য কেন?! গায়রে মাসূম বলে যদি আপন ভাইয়ের কথা প্রত্যাখ্যান করতে পার, তাহলে অপর গায়রে মাসূমের কথা নিজের ভাই সম্পর্কে কীভাবে গ্রহণ কর?!
১৬১. শী‘আদের প্রসিদ্ধ আকীদা হচ্ছে عقيدة الطينة “আকিদায়ে তিনাহ”। এর সারাংশ হচ্ছে: আল্লাহ তা‘আলা শী‘আদের সৃষ্টি করেছেন এক মাটি থেকে, সুন্নিদের সৃষ্টি করেছেন অপর মাটি থেকে! অতঃপর এক নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে উভয় মাটির মধ্যে সংমিশ্রন ঘটে। অতএব, শী‘আদের মধ্যে যে খারাপি ও অপরাধ রয়েছে, তা মূলতঃ সুন্নীদের মাটির প্রভাব! আর সুন্নীদের মধ্যে যে ভালো ও আমানতদারী রয়েছে, তা শী‘আদের মাটির প্রভাব! যখন কিয়ামত সংগঠিত হবে, তখন শী‘আদের পাপ ও অপরাধ জমা করে সুন্নিদের কাঁধে রাখা হবে! আর সুন্নিদের ভালো ও নেক জমা করে শী‘আদের পাল্লায় রাখা হবে!
অথচ শী‘আরা জানে না, তাদের মনগড়া এ আকীদা তাকদীর ও বান্দার আমলের ব্যাপারে তাদের মাযহাবেরই বিপরীত! কারণ, এ আকীদার দাবি হচ্ছে মাটির প্রভাবে বান্দা আমল করতে বাধ্য, তার কোনো স্বাধীনতা নেই, কারণ তার জন্ম ও কর্ম হচ্ছে “তিনা”র ভিত্তিতে। অথচ তাদের মাযহাব বলে বান্দারা তাদের কর্মের স্রষ্টা, যেমন মু‘তাজিলাদের মাযহাব!
১৬২. শী‘আরা প্রায় উল্লেখ করে যে, আনসারগণ আলীকে ভালোবাসতেন, এবং সিফ্ফিন যুদ্ধে যুদ্ধে আলীর পক্ষে তাদের সংখ্যাই বেশি ছিল। তাদের প্রতি প্রশ্ন: বাস্তবতা যদি এমনই হয়, তাহলে কেন তারা খিলাফতের ভার আলীকে না দিয়ে আবু বকরকে দিল?! এর কোনো সন্তোষজনক উত্তর আছে কি?
নিশ্চয় আনসার ও মুহাজিরদের দৃষ্টি আমাদের চেয়ে সঠিক ছিল, তারা খিলাফত ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বংশের ভালোবাসা এক পাল্লায় রাখেন নি।
এ জন্য আমরা শী‘আদের কিতাবে দেখি, যেখানে সিফ্ফিন যুদ্ধে আলীর পক্ষে থাকার কারণে আনসারদের প্রশংসা করা হয়েছে, একই কিতাবে ‘সকিফা’র ঘটনার কারণে আনসারদের মুরতাদ ও কাফির বলে!
সাহাবীদের মূল্যায়ন করার এটাই মাপকাঠি শী‘আদের নিকট: তারা যদি কোনো বিষয়ে আলীর সাথে থাকে, তাহলে তারা সর্বোত্তম মানুষ, আর যদি তাদের ভূমিকা হয় আলীর বিপক্ষে অথবা বলতে পার আলীর মতের বিপক্ষে, তাহলে তারা মুরতাদ, স্বার্থপর ও মুনাফিক!
তারা যদি বলে: সাহাবীদের কাফির ও মুরতাদ বলার কারণ হচ্ছে যে, তারা আলীর খিলাফতের নস তথা রাসূলের নির্দেশ অস্বীকার করেছে। তাহলে আমাদের প্রশ্ন: বারো ইমামিয়াহ শী‘আরা কি বলে না যে, ‘হাদীসে গাদির’ মুতাওয়াতির সূত্রে প্রমাণিত, শত শত সাহাবায়ে কেরাম তা বর্ণনা করেছেন? তাহলে সাবায়ে কেরাম কীভাবে অস্বীকার করল?
আমি যখন নিজের মুখেই স্বীকার করি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ( من كنت مولاه فعلي مولاه ) “আলি যার অভিভাবক, আমিও তার অভিভাবক”। তাহলে কীভাবে আমি অস্বীকার করলাম?!
যদি বলা হয়: অর্থ অস্বীকার করেছে! তাদেরকে বলব: তোমরা হাদীসের যে ব্যাখ্যা কর, তাই যে সত্য তার প্রমাণ কি?! তোমরা কি সেসব সাহাবীদের চেয়ে বেশি বুঝ ও অধিক বিবেকবান, যারা সে সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিল, যারা নিজ কানে তা শ্রবণ করেছে?! অথবা তোমরা তাদের চেয়ে আরবি বেশি বুঝ, যে কারণে তারা যা বুঝে নি তোমরা তা বুঝেছ?! [“সুম্মা আবসারতুল হাকিকাহ” মুহাম্মদ সালেম আল-খিজির: (পৃ. ২৯১-২৯২)]
১৬৩. আমাদের সামনে দু’টি দল: একদল আল্লাহর কিতাবের ব্যাপারে বিষোদগার করে, তাতে পরিবর্তন ও বিকৃতির দাবি তুলে। এদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘আন-নূরী আত-তাবরিসী’। যিনি ‘আল-মুসতাদরাক’ গ্রন্থের লেখক। যা শী‘আ বারো ইমামিয়াদের নিকট হাদীসের মূল কিতাবের একটি। তার আরো একটি কিতাব হচ্ছে: ( فصل الخطاب في إثبات تحريف كتاب رب الأرباب ) এ বইয়ে তিনি কুরআনের বিকৃতি প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন। তিনি কুরআন সম্পর্কে বলেন,
ومن الأدلة على تحريفه فصاحته في بعض الفقرات البالغة حد الإعجاز وسخافة بعضها الآخر !
“কুরআনের বিকৃতির প্রমাণ হচ্ছে যে, কোনো কোনো জায়গায় উচ্চতরের সাহিত্য ও ভাষার প্রাঞ্জলতা রয়েছে, আবার কোথায়ও নিম্নমানের ভাষা ও শব্দের ব্যবহার”! [“ফাসলুল খিতাব ফি ইসবাতি তাহরিফি কিতাবি রাব্বিল আরবাব”: (পৃ. ২১১)]
সাইয়েদ আদনান আল-বাহরানি বলেন,
الأخبار التي لا تحصى كثرة وقد تجاوزت حد التواتر ولا في نقلها كثير فائدة بعد شيوع القول بالتحريف والتغيير بين الفريقين، وكونه من المسلمات عند الصحابة والتابعين بل وإجماع الفرقة المحقة وكونه من ضروريات مذهبهم وبه تضافرت أخبارهم .
“কুরআনের মধ্যে পরিবর্তন ও বিকৃতির বিষয়টি উভয় দলে সমানভাবে আলোচিত, যা অস্বীকার করার কোনো জো নেই, যা বর্ণনা করার মধ্যে কোনো ফায়দাও নেই; বরং এটা সাহাবী ও তাবেঈদের নিকট স্বীকৃত ছিল। হকপন্থীদের এ ব্যাপারে ইজমা সংগঠিত হয়েছে। এটা (শী‘আ) মাযহাবের একটি গুরুত্বপূর্ণ আকীদা, এ বিষয়ে অনেক বাণী রয়েছে।”। [“মাশারেকুশ সামুসুদ দারিয়্যাহ”: (পৃ. ১২৬)]
ইউসুফ বাহরানী বলেন,
لا يخفى ما في هذه الأخبار من الدلالة الصريحة والمقالة الفصيحة على ما اخترناه ووضوح ما قلنا، ولو تطرق الطعن إلى هذه الأخبار على كثرتها وانتشارها لأمكن الطعن إلى أخبار الشريعة كلها، كما لا يخفى؛ إذ الأصول واحدة وكذا الطرق والرواة والمشايخ والنقلة، ولعمري إن القول بعدم التغيير والتبديل لا يخرج من حسن الظن بأئمة الجور وأنهم لم يخونوا في الإمامة الكبرى مع ظهور خيانتهم في الأمانة الأخرى التي هي أشد ضرراً على الدين .
“এসব সংবাদে যে স্পষ্ট বার্তা রয়েছে, তা কারো নিকট অস্পষ্ট থাকার কথা নয়, যা আমাদের কথা ও মতের বিশুদ্ধতার প্রমাণ, যদি এতে কোনো সন্দেহের সৃষ্টি হয়, বা কোনো দুর্বলতা থাকে, তাহলে শরী‘আতের সব বিষয়েই সন্দেহের অবকাশ থাকা স্বাভাবিক, যা কারো নিকট অস্পষ্ট নেই। কারণ, মূলনীতি একটিই, অনুরূপ বর্ণনা এবং মাশাইখও এক। আমার জীবনের শপথ, যদি কুরআনের ব্যাপারে পরিবর্তন ও বিকৃতির আকীদা পোষণ না করা হয়, তাহলে যালিম ইমামদের ব্যাপারে সুধারণাই পোষণ করা হবে, আরো প্রমাণিত হবে যে, বড় ইমামতির ব্যাপারে তারা খিয়ানত করেন নি, অথচ তাদের খিয়ানত প্রকাশ পেয়েছে, তা দীনের জন্য খুব বেশি ক্ষতিকর”। [“আদ-দুরারুন নাজফিয়্যাহ” লি ইউসুফ আল-বাহরানি, মুয়াসসিস আলুল বাইত লি ইহইয়াউত তুরাস”: (পৃ. ২৯৮)]
এরা স্পষ্টভাবে কুরআন সম্পর্কে বিষোদগার করছে, তাদের বিশ্বাস কুরআনে বিকৃতি ঘটেছে!
অপর দল: তারা হচ্ছে ‘রাসূলের সাথী সাহাবায়ে কেরাম’ তাদের বড় অপরাধ হচ্ছে তারা আলীর পরিবর্তে আবু বকরের হাতে খিলাফতের ভার অর্পণ করেছে, যে অপরাধ শী‘আ ইমামিয়ারা কখনো ক্ষমা করবে না!
প্রথম দল: যারা আল্লাহর কিতাবের ব্যাপারে বিষোদগার করে, তাতে বিকৃতির আকীদা পোষণ করে, শী‘আ বারো ইমামিয়াহ আলিমরা তাদের সম্পর্কে বলে, ‘তারা ভুল করেছে’, ‘তারা ইজতেহাদ করেছে, তাবিল বা ব্যাখ্যা করেছে, আমরা তাদের সাথে একমত নই’। শী‘আদের কতক আলিম তাদের ব্যাপারে এ মন্তব্যই করে।
আফসোস! কুরআনের হিফাযতের বিষয় বা তাতে বিকৃতির বিষয় কি ইজতেহাদ ও গবেষণার অপেক্ষা রাখে?! এ কোনো ধরণের জঘন্য গবেষণা বা ইজতেহাদ যে, কুরআনের মধ্যে নিকৃষ্ট আয়াত রয়েছে! নিশ্চয় এটা বড় কিয়ামত বৈ কিছু নয়!
এখানে তারা এ কথা বলে, আবার তাদের (কুরআনে বিকৃতি সমর্থনকারীদের) সমর্থন করে, তারা কি বলে একটু লক্ষ্য করুন:
শী‘আ বারো ইমামিয়াহর বড় আলিম সায়্যেদ আলী আল-মিলানী তার ( عدم تحريف القرآن ص 34) নামক গ্রন্থে, মির্জা নূরী আত-তাবরাসীর (যিনি কুরআনে বিকৃতি বিশ্বাস করে) সমর্থন করে বলেন,
الميرزا نوري من كبار المحدثين، إننا نحترم الميرزا النوري، الميرزا نوري رجل من كبار علمائنا، ولا نتمكن من الاعتداء عليه بأقل شيء، ولا يجوز، وهذا حرام، إنه محدّث كبير من علمائنا !!
“মির্জা নূরী বড় মহাদ্দিস, আমরা অবশ্যই মির্জা নূরীকে সম্মান করি, তিনি আমাদের বড় আলিমদের একজন, তার ওপর সামান্য বাক্য ব্যয় করেও আমরা সীমালঙ্ঘন করতে পারি না, বৈধও নয়। এটা হারাম, নিশ্চয় তিনি একজন বড় মুহাদ্দিস”!! [“সুম্মা আবসারতুল হাকিকাহ”: (পৃ. ২৯৪)] তাদের বৈপরীত্য লক্ষ্য করুন।
১৬৪. আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ٱتَّبِعُواْ مَآ أُنزِلَ إِلَيۡكُم مِّن رَّبِّكُمۡ وَلَا تَتَّبِعُواْ مِن دُونِهِۦٓ أَوۡلِيَآءَۗ﴾ [ الاعراف : ٣ ]
“তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা নাযিল করা হয়েছে, তা অনুসরণ কর এবং তাকে ছাড়া অন্য অভিভাবকের অনুসরণ করো না”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৩]
কুরআনের এ আয়াতই প্রমাণ করে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত কারো অনুসরণ করা যাবে না, ইমাম যদি নির্বাচন করতেই হয়, তা শুধু আল্লাহর বাণী পৌঁছানোর জন্য, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে দীন পৌঁছে দিয়েছেন, তার বিপরীতে আজগুবি কোনো কিছু প্রচার করার জন্য নয়। আমরা দেখি যে, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে যখন কুরআনের ফয়সালার দিকে আহ্বান করা হয়েছিল, তিনি তার ডাকে সারা দিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন কুরআনকে ফয়সালাকারী মানাই যথাযথ। এ কথায় আলী যদি সঠিক থাকেন, তাহলে আমাদের কথাও তাই। আর তিনি যদি বাতিলের ডাকে সাড়া দিয়ে থাকেন, তাহলে আমরা বলব এটা তার পক্ষে কখনোই সম্ভব নয়। ইমামের উপস্থিতিতে কুরআনকে ফয়সালাকারী মানা নাজায়েয হতো, তাহলে আলী বলতেন: “তোমরা কীভাবে কুরআনের ফয়সালা তবল কর, অথচ রাসূলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দূত আমি তোমাদের মাঝে বিদ্যমান?
তারা যদি বলে: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু মারা গেছেন, তাই দীন প্রচারকারী ইমাম প্রয়োজন।
আমরা বলব: এটা একটা প্রতারণা, দলীল বিহীন দাবি ও যুক্তিহীন কথা। মানুষের প্রয়োজন শুধু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দীন ও তার ব্যাখ্যা। হোক না সে রাসূলের দরবারের উপস্থিত বা অনুপস্থিত বা পরবর্তীতে আগুন্তক কেউ।
দ্বিতীয়তঃ তারা যদি বলে সব যুগে ইমামের উপস্থিতি অবশ্যক, তাহলে যারা ইমাম থেকে দূরে অবস্থান করছে, তাদের দ্বারা এ আকীদা বিনষ্ট হয়ে যায়। কারণ, দুনিয়ার সব জায়গায় উপস্থিতি অসম্ভব। পৃথিবীর আনাচে-কানাচে বিদ্যমান গরীব, দুর্বল, নারী, অসুস্থ ও ব্যস্ত সকলের নিকট তার পৌঁছা অসম্ভব। অথচ (শী‘আদের মতে) এরা যদি ইমাম থেকে গাফেল থাকে, তাহলে তাদের ধ্বংস অনিবার্য, অতএব, তাদের নিকট ইমামের পৌঁছানো জরুরি। আর এটা সর্বজন স্বীকৃত যে, তাদের সকলের নিকট ইমামের পৌঁছানো কখনো ভাবেই সম্ভব নয়, তাই তার বাণী পৌঁছানো জরুরি, এটা সম্ভব।
আর আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, যদি মানুষের নিকট কিছু পৌঁছাতে হয়, তাহলে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী পৌঁছাব, তার বাণী পৌঁছানোই অধিকতর শ্রেয়, এতে কারো দ্বিমত পোষণ করার সুযোগ নেই। [“আল-ফিসাল ফিল মিলাল ওয়াল আহওয়া ওয়াননিহাল”: (৪/১৫৯-১৬০)] ইমামের বাণী কেন পৌঁছাব!
১৬৫. ইমামদের থেকে নির্ভরযোগ্য সনদে বর্ণিত শী‘আদের কিতাবে কতক বাণী রয়েছে, যেখানে এমন কিছু লোককে অভিশাপ দেওয়া ও মিথ্যাবাদী বলা হয়েছে, যেসব লোকদের কথা ও বর্ণনার ওপর শী‘আ মাযহাবের ভিত্তি। (অর্থাৎ ইমামগণ যাদের মিথ্যাবাদী বলেছেন এবং যাদেরকে অভিশাপ দিয়েছেন, শী‘আ মাযহাবের বাণী তারাই!!!) কিন্তু শী‘আ আলিমরা ইমামদের সেসব বর্ণনা গ্রহণ করে না। (কারণ, তাহলে তারা আহলে সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে এবং তাদের মিথ্যাচারের মুখোশ খসে পড়বে), তারা এগুলোর জাওয়াব দেওয়ার জন্য ‘তাকইয়া’র আশ্রয় গ্রহণ করে। মূলতঃ এভাবে তারা তাদের ইমামদের কথাই প্রত্যাখ্যান করে। অতএব, আমরা বলি, যদি ইমামের দলীল অস্বীকার কারণে শী‘আ মাযহাবে কেউ কাফির হয়, তাহলে তারা সবার আগে কাফির!, তাদের কথার বিচারে।
শী‘আদের বড় আলিম, মুহাম্মাদ রশিদ রেজা নিজে স্বীকার করেছেন: “আমাদের মাযহাবের যারা বর্ণনাকারী, ইমামরা নিজেরাই তাদের দোষ ও খারাপি বর্ণনা করেছেন, শী‘আদের কিতাবে যা উল্লেখও আছে। তিনি হিশাম ইবন সালেম জাওয়ালেকির দোষ সম্পর্কে বলেন,
«وجاءت فيه مطاعن، كما جاءت في غيره من أجلة أنصار أهل البيت وأصحابهم الثقات والجواب عنها عامة مفهوم»
“তার ব্যাপারে অনেক দোষ বর্ণনা করা হয়েছে, যেরূপ বর্ণনা করা হয়েছে আহলে বাইতের অন্যান্য আনসার ও বিশ্বস্ত সাথীদের ব্যাপারে, এর উত্তর সবার জানা”। [“আল-ইমাম আস্সাদেক” লি মুহাম্মদ হুসাইন আল-মুজাফ্ফর: (পৃ. ১৭৮)] অর্থাৎ তাদের নিকট এর প্রচলিত উত্তর হচ্ছে ‘তাকইয়া’। [আল-ইমাম আস্সাদেক” লি মুহাম্মদ হুসাইন আল-মুজাফ্ফর: (পৃ. ১৭৮)] অতঃপর তিনি বলেন,
«وكيف يصح في أمثال هؤلاء الأعاظم قدح؟ وهل قام دين الحق وظهر أمر أهل البيت إلا بصوارم حججهم» .
“এ ধরণের মহান ব্যক্তিদের মধ্যে দোষ থাকা কীভাবে সম্ভব? এদের বাগ্মীর মাধ্যমেই তো আহলে বাইতের দীন প্রচার ও প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে”। [আল-ইমাম আস্সাদেক” লি মুহাম্মদ হুসাইন আল-মুজাফ্ফর: (পৃ. ১৭৮)]
দেখুন নিজেদের ব্যাপারে তারা কীভাবে পক্ষপাতিত্ব করে: আহলে বাইত যাদের বদনাম ও দোষ বর্ণনা করেছে, তাদেরকেই তারা রক্ষা করতে চায়। তারা এ পাপিষ্ঠ ও অভিশপ্তদের রক্ষার জন্য আহলে বাইতের বর্ণনা পর্যন্ত ত্যাগ করে। যেসব বর্ণনায় তাদের আলিমদের মিথ্যারোপ করা হয়েছে ও তাদের থেকে সতর্ক করা হয়েছে। এসব বর্ণনা খোদ শী‘আদের কিতাবই বর্ণনা করে। এর দ্বারা তারা মূলতঃ আহলে বাইতকে মিথ্যারোপ করে। আর এসব মিথ্যাবাদীরা যা বলেছে, তাদেরকে তারা সত্য মনে করে, তাদের ব্যাপারে ইমামদের সতর্ক বাণী ও উপদেশকে তারা ‘তাকইয়া’ বলে চালিয়ে দেয়। তারা তাদের ইমামদের যেসব বর্ণনা গ্রহণ করে না, যা মুসলিম উম্মাহর সাথে মিলে যায়। বরং তারা তাদের ইমামদের শত্রুদের অনুসরণ করে, তাদের কথা গ্রহণ করে এবং ইমামদের বাণী প্রত্যাখ্যান করার জন্য ‘তাকইয়া’র আশ্রয় নেয়! এ হচ্ছে শী‘আ!
১৬৬. এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে আবু বকর, উমার ও উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুমের সম্পর্ক অধিক ঘনিষ্ঠ ছিল, তারাই তার সর্বাধিক নৈকট্যের অধিকারী ছিলেন। তিনি তাদের সকলের সাথেই বৈবাহিক সম্পর্ক কায়েম করেছেন। তিনি তাদের মহব্বত করতেন এবং তাদের প্রশংসা করতেন। অতএব,
আমাদের প্রশ্ন: তারা কি প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য উভয়ভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলেন অথবা এর বিপরীত ছিলেন তারা। যদি তারা এত নৈকট্যপ্রাপ্ত ও ঘনিষ্ঠ হওয়ার পরও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে আন্তরিক না থাকেন, তাহলে দুই অবস্থার যে কোনো একটি অবশ্যই জরুরি: হয়তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের ব্যাপারে জানতেন না অথবা তিনি তাদের সাথে তোষামোদ ও চাটুকারিতা করেছেন! আমরা যেটাই মানি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর বড় অপবাদ, যেমন কেউ বলেছেন:
فإن كنت لا تدري فتلك مصيبة
وإن كنت تدري فالمصيبة أعظم
“যদি তুমি না জান, তাহলে এটা এক ধরণের মুসীবত,
আর যদি জান, তাহলে মুসীবত এর চেয়েও বড়”।
আর যদি তারা রাসূলের মৃত্যুর পর বিচ্যুত হয়, তাহলে এটা কি আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূলকে হেয় ও অপমান করা নয় যে, তার বিশিষ্ট সাহাবী ও প্রধান সঙ্গীরাই তার দীন ত্যাগ করেছে!? আশ্চর্য! আল্লাহ যে নবীর দীনকে সব দীনের ওপর জয়ী করবেন ঘোষণা দিয়েছেন, তার সাথীরা কীভাবে মুরতাদ হয়? এভাবেই শী‘আরা রাসূলের ওপর বড় বড় অপবাদ আরোপ করে।
যেমন আবু জুরআ রাজি বলেছেন: এদের উদ্দেশ্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অপবাদ দেওয়া ও তার ব্যাপারে বিষোদগার করা, যেন লোকেরা বলে: মুহাম্মাদ ছিল একজন নিকৃষ্ট লোক, আর তার সাথীরাও ছিল নিকৃষ্ট। যদি সে ভালো লোক হত, তাহলে তার সাথীরাও ভালো হতো।
১৬৭. শী‘আরা বলে:
«الإمامة واجبة لأن الإمام نائب عن النبي صلى الله عليه وسلم في حفظ الشرع الإسلامي وتيسير المسلمين على طريقه القويم، وفي حفظ وحراسة الأحكام عن الزيادة والنقصان»
“ইমামতি ওয়াজিব। কারণ, ইমাম হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিনিধি, যার দায়িত্ব ইসলামী শরী‘আত হিফাযত করা, মুসলিমদের এ দীনের পথে চলতে সাহায্য করা এবং ইসলামী বিধানকে সংযোজন ও বিয়োজন থেকে সংরক্ষণ করা”। [“আশ-শিয়াহ ফিত তারিখ”: (পৃ. ৪৪-৪৫)] তারা আরো বলে:
«لابد من إمام منصوب من الله تعالى وحاجة العالم داعية إليه، ولا مفسدة فيه، فيجب نصبه ...»
“আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন নির্দিষ্ট ইমাম থাকা অবশ্য জরুরী, জগতবাসী ইমামের মুখাপেক্ষী, তাহলে জগতে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে না। অতএব, নির্দিষ্ট ইমাম ওয়াজিব...” [“মিনহাজুল কারামাহ”: (পৃ. ৭২-৭৩)] তারা আরো বলে:
«إنما وجبت لأنها لطف .. وإنما كانت لطفاً؛ لأن الناس إذا كان لهم رئيس مطاع مرشد يردع الظالم عن ظلمه، ويحملهم على الخير، ويردعهم عن الشر، كانوا أقرب إلى الصلاح، وأبعد عن الفساد، وهو اللطف» .
“ইমামতি এ জন্যও প্রয়োজন যে, ইমামতি হচ্ছে আল্লাহর অনুগ্রহ, আর অনুগ্রহ এ জন্য যে, মানুষের জন্য যদি সঠিক দিকনিদের্শনা প্রদানকারী একজন সর্বজন নেতা থাকা জরুরি, যিনি যালিমকে যুলুম থেকে বিরত রাখবেন, মানুষদের ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ করবেন ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখবেন, তাহলে তারা সংশোধন হবে ও অনিষ্ট থেকে দূরে থাকবে, আর এটাই হচ্ছে অনুগ্রহ”। [“আইয়ানুশ শী‘আহ”: (পৃ. ৬)]
আমাদের পশ্ন: শুধু আলী রাদিয়াল্লাহ আনহু ব্যতীত তোমাদের বারো ইমামের কেউ দীনি ও দুনিয়াবী শাসনের সর্বময় ক্ষমতা লাভ করে নি। তারা যালিমকে যুলুম থেকে বিরত রাখতে পারেনি, মানুষদের কল্যাণে অগ্রগামী করতে পারেনি, অনুরূপ পারে নি তাদেরকে খারাপি থেকে বিরত রাখতে! অতএব, তোমরা তোমাদের ইমামদের ব্যাপারে এসব ধারণ প্রসূত বাজে আকীদা কীভাবে পোষণ কর, যা কখনো বাস্তবে পরিণত হয় নি?! বরং তোমাদের এসব আকীদাই প্রমাণ করে যে, তারা ইমাম ছিল না। কারণ, তাদের থেকে মানুষ এ ধরণের অনুগ্রহ কখনো লাভ করে নি।
১৬৮. নাহজুল বালাগায় রয়েছে, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু নিম্নের দো‘আ দ্বারা আল্লাহর নিকট মোনাজাত করতেন:
«اللهم اغفر لي ما أنت أعلم به مني، فإن عدت فعد عليّ بالمغفرة، اللهم اغفر لي ما وأيت من نفسي ( وأيت : أي وعدت، والوأي : الوعد ) ولم تجد له وفاء عندي، اللهم اغفر لي ما تقربت به إليك بلساني ثم ألفه قلبي، اللهم اغفر لي رمزات الألحاظ وسقطات الألفاظ، وسهوات الجنان وهفوات اللسان» .
“হে আল্লাহ, তুমি আমার যেসব অপরাধ জান তা ক্ষমা কর, যদি আমি পুনরায় অপরাধ করি, পুনরায় আমাকে ক্ষমা কর। হে আল্লাহ তুমি আমাকে যে ওয়াদা দিয়েছ, কিন্তু আমি তা আদায় করতে পারেনি, সে ব্যাপারেও আমাকে ক্ষমা কর। হে আল্লাহ তুমি আমাকে ক্ষমা কর, যার মাধ্যমে আমি তোমার নৈকট্য অর্জন করেছি, অতঃপর আমার অন্তর তার আবৃত্তি করেছে। হে আল্লাহ আমার কু-দৃষ্টি, বদ-জবানী, অন্তরে কু-মন্ত্রণা ও মুখের বাচালতাকে ক্ষমা করুন”। [“নাহজুল বালাগাহ” শারহু ইবন আবিল হাদিদ: (৬/১৭৬)]
আমরা দেখছি আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছেন, যেন আল্লাহ তার ভুল-চুক ইত্যাদি পাপগুলো ক্ষমা ও মার্জনা করে দেন, এটা কি ইমামদের নিষ্পাপতা বিরোধী নয়, শী‘আরা যেমন ধারণা করে!
১৬৯. শী‘আদের দাবি যে, এমন কোনো নবী নেই যিনি আলীর ইমামতির দিকে আহ্বান করেন নি! [দেখুন: “বিহারুল আনওয়ার”: (১১/৬০), “আল-মাআলেমুল জুলফা”: (পৃ. ৩০৩)] আল্লাহ তা‘আলা সকল নবীদের থেকে আলীর ইমামতির অঙ্গীকার নিয়েছেন! [“আল-মাআলেমুল জুলফা”: (পৃ. ৩০৩)] বরং আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর ব্যাপারে শী‘আদের বাড়াবাড়ি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তাদের শাইখ ‘তিহরানী’ দাবি করেন:
«عُرضت على جميع الأشياء، فما قبل صلح، وما لم يقبل فسد» !
“আলীর ইমামতি সকল জিনিসের ওপর পেশ করা হয়েছিল, যারা কবুল করেছে তারা ঠিক আছে, আর যারা কুবল করে নি তারা বিনষ্ট হয়ে গেছে”। [“ওয়াদায়েউন নবুয়াহ” লিত তিহরানি: (পৃ. ১৫৫)]
আমাদের প্রশ্ন: নবীগণ আল্লাহর তাওহিদ ও একমাত্র তার ইবাদাতের দাওয়াত দিয়েছেন, আলীর ইমামতির দাওয়াত তারা দেন নি, যেমন তোমরা ধারণা কর। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمَآ أَرۡسَلۡنَا مِن قَبۡلِكَ مِن رَّسُولٍ إِلَّا نُوحِيٓ إِلَيۡهِ أَنَّهُۥ لَآ إِلَٰهَ إِلَّآ أَنَا۠ فَٱعۡبُدُونِ ٢٥﴾ [ الانبياء : ٢٥ ]
“আর তোমার পূর্বে এমন কোনো রাসূল আমরা পাঠাই নি যার প্রতি আমরা এই অহী নাযিল করি নি যে, ‘আমি ছাড়া কোনো কোনো (সত্য) ইলাহ নেই। সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদত কর”। সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ২৫)
শী‘আদের দাবি, আলীর ইমামতি সকল নবীর কিতাবে লিখিত ছিল, তাহলে একথা কেন শুধু শী‘আরাই জানে, অন্য কেউ কেন জানে না?! অন্যান্য ধর্মের লোকেরা কেন তা জানে না?! অন্য ধর্মের অনেকেই তো ইসলাম গ্রহণ করেছে, তারা তো কখনো এটা বলে নি?! কুরআনের কোথাও কেন এর উল্লেখ নেই, যে কুরআন সকল কিতাবের সাক্ষী ও সত্যতার প্রমাণ?!
১৭০. ইমামগণ কি ‘মুতআ’ বিয়ে করেছেন?! যদি করেন তাদের ‘মুতআ’র সন্তান কারা?!
১৭১. শী‘আরা বলে: ইমামগণ জানে আগে কি ছিল ও পরে কি হবে, তাদের নিকট কোনো কিছু গোপন নেই। আর আলী ইবন আবু তালিব ছিলেন ইলমের দরজা।
আমাদের প্রশ্ন: তাহলে তিনি কীভাবে ‘মজি’র হুকুম সম্পর্কে অজ্ঞ থাকেন, যা জানার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট অন্য কাউকে প্রেরণ করেন?!
১৭২. শী‘আদের নিকট সাহাবীদের সবচেয়ে বড় অপরাধ হচ্ছে, তারা আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর ইমামতি থেকে বিচ্যুত হয়েছেন, (যেমন তাদের দাবি), আর তার নিকট খিলাফত সোপর্দ না করা। এ কারণে শী‘আরা তাদের নির্ভরযোগ্য মনে করে না, কিন্তু শী‘আদের অন্যান্য গ্রুপ, যারা তাদের কতক ইমামকে অস্বীকার করে, যেমন الفطحية والواقفة ইত্যাদি?! তাদের কেন শী‘আরা অনির্ভরযোগ্য মনে করে না?! বরং দেখি তাদের লোকদের দলীল দেয়, তাদেরকে নির্ভরযোগ্য মনে করে? এ বৈপরিত্ব কেন?!
১৭৩. শী‘আদের সকল কিতাব এ ব্যাপারে একমত যে, তাদের ইমাম ও অন্যরা ‘তাকইয়া’ ব্যাবহার করেন, (যেমন পূর্বে বলা হয়েছে), অর্থাৎ তাদের অন্তরে যা নেই মুখে তাই বলেন, এভাবে তিনি কখনো মিথ্যাও বলেন! আর যে ‘তাকইয়া’ ব্যবহার করে, সে অবশ্যই মিথ্যা বলে, আর মিথ্যা বলা পাপ!
১৭৪. কুলাইনী বর্ণনা করেন, আলীর পূর্বের খলিফাগণ যে বিকৃতি করেছে, তার কতক সাথী সে বিষয়গুলো তাকে সংশোধন করতে বলেছিল, কিন্তু তিনি তা এ বলে পরিহার করেন যে, তার সাথীরা তার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। অথচ তারা তিন খলিফা (আবু বকর, উমার ও উসমান) সম্পর্কে অপবাদ দেয় যে, তারা কুরআন ও সুন্নাহের মধ্যে বিকৃতি করেছেন। তাহলে আলী সেসব বিকৃতি কেন রেখে দিলেন, এটা কি তার নিষ্পাপ হওয়ার দাবি, যেমন তোমরা বল?!
১৭৫. উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু তার মৃত্যুর পর পরামর্শের জন্য ছয়জন লোক নির্বাচন করেন। অতঃপর তিনজন অব্যহতি নেন। অতঃপর অব্যহতি নেন আব্দুর রহমান ইবন আউফ। অতঃপর অবশিষ্ট থাকে শুধু উসমান ও আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুমা। তখন আলী কেন বলল না আমিই খিলাফতের হকদার, খিলাফতের ওসিয়ত আমার জন্যই করা হয়েছে?! উমারের পরেও কি আলী কাউকে ভয় করতেন?!
১৭৬. শী‘আদের অদ্ভুত কাণ্ডের একটি হচ্ছে কিছু জাল হাদীস তৈরি করা, যাতে তাদের ইমামদের ক্রমানুসারে নাম রয়েছে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তাদের মাহদী পর্যন্ত। এতদসত্বেও বর্তমান যুগে তাদের অনেক মৌলিক গ্রন্থ সেসব নামের উল্লেখ অস্বীকার করে! যেমন, তাদের শাইখ ‘খুইয়ি’ বলেন,
«الروايات المتواترة الواصلة إلينا من طريق العامة والخاصة قد حددت الأئمة عليهم السلام باثني عشر من الناحية العددية ، ولم تحددهم بأسمائهم عليهم السلام واحدًا بعد واحد» .
“বিশেষ ব্যক্তি ও সাধারণ লোক থেকে তাওয়াতুর তথা একাধিক সনদে আমাদের নিকট পৌঁছেছে যে, ইমামদের নির্দিষ্ট সংখ্যা বারোজন, কিন্তু তাদের এক একজনের নাম নির্দিষ্ট নেই”। [“সিরাতুন নাজাত”: (২/৪৫২); “আল-ইমামাহ ওয়ান-নাস” লিল উস্তাদ ফায়সাল নুর: (পৃ. ৩০৬)]
১৭৭. শী‘আরা ধারণা করে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর অধিকাংশ সাহাবীই মুরতাদ হয়ে গেছেন, -যেমন তাদের নিকট প্রসিদ্ধ-, অতঃপর দেখি তারা নিজেরাই এর বিপরীত করে। যদি তাদের বলা হয়: যেহেতু আলীর সম্পর্কে খিলাফতের নস-দলীল রয়েছে, তাহলে কেন তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর খিলাফতের দাবি করেন নি? তারা বলে, সাহাবারা মুরতাদ হয়ে যাবে তাই!! যেমন, ‘আল-কাফি’ গ্রন্থে তাদের ইমাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন:
«إن الناس لما صنعوا ما صنعوا إذ بايعوا أبابكر لم يمنع أمير المؤمنين من أن يدعو لنفسه إلا نظره للناس ، وتخوفًا عليهم أن يرتدوا عن الإسلام فيعبدوا الأوثان» .
“মানুষেরা যখন আবু বকরের হাতে বাই‘আতে করে ফেলেছে, তখন আমিরুল মুমিনীন তাদের দিকে তাকিয়ে নিজের খিলাফতের দাবি করেন নি, পাছে তারা ইসলাম ত্যাগ করে মূর্তি পূজায় মগ্ন হবে”। [“আল-কাফি”: (৮/২৯৫); “বিহারুল আনওয়ার”: (২৮/২৫৫); “আমালিত তুসি”: (পৃ. ২৩৪)]
১৭৮. শী‘আরা দাবি করে যে, তাদের ইমামদের ব্যাপারে নস তথা দলীল রয়েছে। কিন্তু আমরা তাদের কিতাবে অনেক বর্ণনা দেখি, যা তাদের এ নীতি বিরুদ্ধ, উস্তাদ ফয়সাল নুর তার الإمامة والنص গ্রন্থে এসব বর্ণনা জমা করেছেন, অধিক জানার মূল কিতাব দেখুন।
সর্বশেষ আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করছি, তিনি এ কিতাব দ্বারা শী‘আ যুবক শ্রেণিকে উপকৃত করুন, এ কিতাবকে তিনি তাদের হিদায়াত ও সত্য পথের দিশারী হিসেবে কবুল করুন। তারা যেন সত্যকে আঁকড়ে ধরে, সত্য পথে ফিরে এবং সত্যের ব্যাপারে কোনো তিরষ্কার ও ধিক্কারকে পরোয়া না করে। আমীন।
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন