HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

কতিপয় প্রশ্ন যা শী‘আ যুবকদের সত্যের দিকে ধাবিত করেছে

লেখকঃ সুলাইমান ইবন সালেহ আল-খারাশি

অনুবাদকের কথা
ইসলামের দাবীদার শী‘আ সম্প্রদায় সম্পর্কে আমাদের দেশের লোকেরা জানে না বললেই চলে, এক সময় আমি নিজেও তাদের সম্পর্কে জানতাম না, তাদেরকে মুসলিম মনে করতাম। কিন্তু তাদের সম্পর্কে যখন জানার সুযোগ হয়, তাদের আকীদা-বিশ্বাস ও কর্মনীতি ব্যাপক পড়াশোনা করি, তাদের মৌলিক গ্রন্থগুলো দেখার সুযোগ হয়, তখন থেকেই আমার নিকট স্পষ্ট হয় যে, এরা ইসলামের অন্তর্ভুক্ত বা মুসলিম নয়। এদের মধ্যে স্পষ্ট শির্ক, বিদ‘আত, কুসংষ্কার এবং বৈপরিত্য বিদ্যমান, যার সাথে ইসলামের দূরতমও কোনো সম্পর্ক নেই। এরা ইসলামের নামে নিজেদের মধ্যে ইয়াহূদী, খৃস্টান, অগ্নিপূজক ও পৌত্তলিক সবার আকীদা লালন করে। আরো আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এরা চরম মুসলিম ও আরব বিদ্বেষী, যা আমাদের অনেকেরই অজানা, তাই এদের সম্পর্কে পাঠকবর্গের অবগতির জন্য শী‘আদের ইতিহাস নিয়ে সামান্য আলোচনা করলাম।

ইসলামের শুরু থেকেই মুশরিকরা তার বিরোধিতা আরম্ভ করে। বিশেষ করে আরব উপদ্বীপের ইয়াহূদী, ইরানের মাজুসী তথা অগ্নিপূজক ও ভারত উপদেশের মূর্তিপুজকদের গা জ্বালার অন্ত থাকে না। তারা ইসলামকে চিরতরে মুছে দেওয়ার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে ইয়াহূদী বংশদ্ভুত আব্দুল্লাহ ইবন সাবা। আল্লাহ সত্যিই বলেছেন:

﴿لَتَجِدَنَّ أَشَدَّ ٱلنَّاسِ عَدَٰوَةٗ لِّلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱلۡيَهُودَ وَٱلَّذِينَ أَشۡرَكُواْۖ﴾ [ المائ‍دة : ٨٢ ]

“তুমি অবশ্যই মমিনদের জন্য মানুষের মধ্যে শত্রুতায় অধিক কঠোর পাবে ইয়াহূদীদেরকে এবং যারা শির্ক করেছে তাদেরকে”। [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৮২]

আব্দুল্লাহ ইবন সাবা অন্তরে নিফাক নিয়ে প্রকাশ্যে ইসলাম গ্রহণ করে। কারণ সে নিশ্চিত জানত, সম্মুখ যুদ্ধে মুসলিমদের হারানো কঠিন। তাদের পূর্বপুরুষ বনু কুরাইযা, বনু নজির ও বনু কায়নুকা ইসলামের মোকাবিলায় সফল হয় নি। তাই ইসলামের ভেতরে প্রবেশ করে ইসলামের ক্ষতি সাধন করার অন্যান্য কৌশল গ্রহণ করে সে।

আব্দুল্লাহ ইবন সাবা ও তার পরিচয়:

আব্দুল্লাহ ইবন সাবা ছিল ইয়াহূদী, ইয়ামানের জনপদ সান‘আর অধিবাসী, হিমইয়ার অথবা হামদান বংশে তার জন্ম। [তারিখে তাবারি: (৪/৩৪০)] উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর খিলাফতকালে মুসলিমদের গোমরাহ করার লক্ষ্যে সে ইসলামি ভূ-খণ্ড চষে বেড়ায়। প্রথমে হিজায (মদিনায়), অতঃপর বসরা, অতঃপর কুফা অতঃপর শাম গমন করে, কিন্তু কোথাও তেমন সুবিধা করতে পারে নি। অতঃপর সে মিসর এসে অবস্থান করে এবং সেখানেই তার আকীদা ‘ওসিয়াত’ ও ‘রাজ‘আত’ প্রচার করে। এখানে সে কতক অনুসারী লাভ করে। [তারিখে তাবারি: (৪/৩৪০); কামেল লি ইবন আসির: (৩/৭৭); বিদায়ান ও নিহায়া লি ইবন কাসির: (৭/১৬৭); তারিখে দিমাশক লি ইবন আসাকির: (২৯/৭-৮) ও অন্যান্য কিতাবে (৩৫ হিজরী) ঘটনাসমূহ দেখুন।]

শী‘আ ঐতিহাসিক “রাওজাতুস সাফা” গ্রন্থে বলেন, “আব্দুল্লাহ ইবন সাবা যখন জানতে পারেন যে, মিসরে উসমান বিরোধীদের সংখ্যা অধিক, তিনি সেখানে চলেন যান। তিনি ইলম ও তাকওয়ার বেশ ধারণ করেন। অবশেষে মানুষ তার দ্বারা প্রতারিত হয়। তাদের মাঝে সে গভীর আস্থা ও বিশ্বাস সৃষ্টি করে নিজের মাযহাব ও মতবাদ প্রচার আরম্ভ করে। যেমন, প্রত্যেক নবীর ওসি ও খলিফা রয়েছে, আর রাসূলুল্লাহর ওসি ও খলিফা হচ্ছে একমাত্র আলী। তিনি ইলম ও ফাতওয়ার মালিক, তার রয়েছে সম্মান ও বীরত্ব। তিনি আমানত ও তাকওয়ার অধিকারী। সে আরো বলে: উম্মত আলীর ওপর যুলুম করেছে, তারা তার খিলাফত ও ইমামতির অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে। এখন আমাদের সবার উচিৎ তাকে সাহায্য করা ও উসমানের বাই‘আত ত্যাগ করা। তার কথার দ্বারা অনেকে প্রতারিত হয়ে খলিফা উসমানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ঘোষণা করে”। [ফারসি ভাষায়: “রাওজাতুস সাফা”: (পৃ. ২৯২); শী‘আ ও সুন্নাহ কিতাব: (পৃ. ১৫-২০); ইহসান ইলাহি জহির।]

ঐতিহাসিকগণ বলেন, ইয়ামানের যেখানে আব্দুল্লাহ ইবন সাবা বেড়ে উঠেছে, সেখানে তাওরাত ও ইঞ্জীলের শিক্ষা, আদর্শ ও মতবাদ বিদ্যমান ছিল। তবে তাওরাতের শিক্ষা অনেকটাই ইঞ্জীলের সাথে মিশে গিয়েছিল। সে উভয় গ্রন্থ থেকে তার আকীদা গ্রহণ করে। [“তারিখুল আরব কাবলাল ইসলাম” লি জাওয়াদ আলি: (৬/৩৪)]

আব্দুল্লাহ সাবার প্রচারিত কতক আকীদা:

আব্দুল্লাহ ইবন সাবা মদিনা থেকে তার বিষ ছড়ানো আরম্ভ করে। তখন মদিনায় আলিম-উলামায় ভরপুর ছিল। যখন সে কোনো সন্দেহ পেশ করত, তারা তার প্রতিবাদ করতেন। যেমন, সে ইয়াহূদী আকীদা রাজ‘আত তথা পুনর্জনম পেশ করে।

ইবন সাবা বলে: “আমি তাদের প্রতি আশ্চর্য বোধ করি, যারা বলে ঈসা ফিরে আসবে কিন্তু মুহাম্মাদ ফিরে আসবে না। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿إِنَّ ٱلَّذِي فَرَضَ عَلَيۡكَ ٱلۡقُرۡءَانَ لَرَآدُّكَ إِلَىٰ مَعَادٖۚ﴾ [ القصص : ٨٥ ]

“নিশ্চয় যিনি আপনার ওপর কুরআনকে বিধানস্বরূপ দিয়েছেন, অবশ্যই তিনি তোমাকে প্রত্যাবতনস্থালে ফিরিয়ে নেবেন”। [সুরা আল-কাসাস, আয়াত: ৮৫]

অতএব, ঈসার তুলনায় মুহাম্মাদ ফিরে আসার বেশি হকদার। এক হাজার নবী ও এক হাজার ওসি ছিল, আলী হচ্ছে মুহাম্মাদের ওসি। অতঃপর সে বলে: মুহাম্মাদ সর্বশেষ নবী আর আলী সর্বশেষ ওসি”। [“তারিখে তাবারি”: (৪/৩৪০)]

ইবন কাসীর রহ. এ আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে কতক আলিমের বাণী উল্লেখ করেন। যেমন, “আল্লাহ আপনাকে কিয়ামতে উপস্থিত করবেন, অতঃপর তিনি তোমাকে দেওয়া নবুওয়াতের দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন”। কেউ বলেছেন: আল্লাহ আপনাকে জান্নাতে নিয়ে যাবেন অথবা তোমাকে মৃত্যু দেবেন অথবা তোমাকে মক্কায় নিয়ে যাবেন। মক্কায় নিয়ে যাওয়ার বাণী ইমাম বুখারী ইবন আব্বাস থেকে বর্ণনা করেন। [সহীহ বুখারী-ফাতহ: ৮/৩৬৯); তাবারি ফিত তাফসীর: (১০/৮০-৮১)] কিন্তু ইবন সাবা এ আয়াতের অর্থ বিকৃত করে তার রাজ‘আত তথা পুনরাগমনবাদের মত ভ্রান্ত মতবাদ প্রচার করে।

মালাতী (মৃত: ৩৭৭ হি.) উল্লেখ করেন: “সাবায়িরা আলীর নিকট এসে বলে: আপনি আপনি!! তিনি বললেন: আমি কে? তারা বলল: আপনি সৃষ্টিকারী। আলী তাদেরকে তিরষ্কার করেন, কিন্তু তারা কোনোভাবে এ মত ত্যাগ করবে না, আলী আগুনের কুণ্ডলী তৈরি করে তাদেরকে সেখানে জ্বালিয়ে দেন”। [“আত-তানবীহ ওয়ার রাদ আলা আহলিল আহওয়া ওয়াল বিদা”: (পৃ. ১৮)]

আবু হাফস ইবন শাহিন (মৃত ৩৮৫ হি.) উল্লেখ করেন: “আলী শী‘আদের একটি জামা‘আত জ্বালিয়ে দিয়েছেন, অপর একটি গ্রুপকে তিনি নির্বাসনে পাঠান। যাদেরকে তিনি নির্বাসনে পাঠান, তাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবন সাবাও ছিল”। [“মিনহাজুস সুন্নাহ” লি ইবন তাইমিয়াহ: (১/৭)]

শী‘আ প্রখ্যাত আলিম কুম্মি (মৃত: ৩০১ হি.) উল্লেখ করেন: “আব্দুল্লাহ ইবন সাবা সর্বপ্রথম আবু বকর, উমার, উসমান ও সাহাবীদের সম্পর্কে বিষোদগার এবং তাদের ওপর অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে। আর দাবি করে যে, আলী তাকে এর নির্দেশ দিয়েছে। আলীর মৃত্যু সংবাদ বহনকারীকে সাবায়িরা বলে: “হে আল্লাহর শত্রু তুমি মিথ্যা বলেছ, যদি তুমি তার মস্তকের খুলি নিয়ে আস, আর তার স্বপক্ষে সত্তরজন সত্য সাক্ষী পেশ কর, তবুও আমরা তা বিশ্বাস করব না। আমরা বিশ্বাস করি যে, তিনি মারা যাননি, তাকে হত্যা করা হয় নি, যতক্ষণ না তিনি আরবদের লাঠি দ্বারা পরিচালনা করবেন ও পুরো দুনিয়ার মালিক হবেন ততক্ষণ তিনি মারা যাবেন না, অতঃপর তারা চলে যায়”। [“আল-মাকালাত ওয়াল ফিরাক”: (পৃ. ২০), প্রকাশ: ১৯৬৩ই.]

শী‘আদের বড় আলিম ও বিখ্যাত ঐতিহাসিকগণ স্বীকার করেছেন: “কতক আহলে ইলম উল্লেখ করেছেন যে, আব্দুল্লাহ ইবন সাবা ইয়াহূদী থেকে ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি আলী আলাইহিস সালামের পক্ষ নেন। তিনি ইয়াহূদী থাকাবস্থায় বলতেন ইউশা ইবন নূন হচ্ছে মূসার ওসি, এটা ছিল তার বাড়াবাড়ি। তিনি ইসলাম গ্রহণ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর আলীর ব্যাপারে অনুরূপ আকীদা প্রচার করেন। তিনি সর্বপ্রথম বলেন আলীর ইমামতি ফরয। তিনি আলীর শত্রুদের সাথে বিচ্ছেদ ঘোষণা করেন, তার বিরোধীদের তিনি অপছন্দ করেন ও তাদেরকে কাফির বলেন। এখান থেকেই যারা শী‘আ নয়, তারা বলেন শী‘আ ও রাফেযীর মূল হচ্ছে ইয়াহূদী”। [“রিজালুল কাশি”: (পৃ. ১০১), প্রকাশক: মুয়াসসাসাতুল ইলমি বি কারবালা, ইরাক। এ কিতাবের ভূমিকায় তারা বলেছে: রিজাল শাস্ত্রের চারটি কিতাব মূল। এগুলো নির্ভরযোগ্য কিতাব। এর তার মধ্যে প্রধান ও অগ্রগামী হচ্ছে معرفة الناقلين عن الأئمة الصادقين যা برجال الكشي নামে প্রসিদ্ধ। ভূমিকা দেখুন।]

শী‘আদের তৃতীয় শতাব্দির বিখ্যাত পণ্ডিত আল-হাসান ইবন মূসা আবু মুহাম্মাদ আন-নাওবাখতী বলেন, “আব্দুল্লাহ ইবন সাবা আবু বকর, উমার, উসমান ও সাহাবীদের বিষোদগার করেন, তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেন এবং বলেন, আলী তাকে এর নির্দেশ দিয়েছেন। আলী তাকে গ্রেফতার করে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন, সে তা স্বীকার করে। আলী তাকে হত্যার নির্দেশ দেন। তখন আশ-পাশের লোকজন চিৎকার করে উঠল, হে আমিরুল মুমিন! এমন ব্যক্তিকে হত্যা করবেন, যে মানুষদেরকে আহলে বাইত ও আপনাদের মহব্বত এবং আপনাদের নেতৃত্বের দিকে আহ্বান করে ও আপনাদের শত্রুদের থেকে বিচ্ছেদ ঘোষণা করে! আলী তাকে মাদায়েন (তৎকালীন পারস্যের রাজধানী) পাঠিয়ে দেন”। [“ফিরাকুশ শী‘আ” লি নওবখতি: (পৃ. ৪৩-৪৪); মাকতাবাহ হায়দারিয়া ইবন নাজাফ, ইরাক, ১৩৭৯ হিজরী ও ১৯৫৯ ইং।]

আব্দুল্লাহ ইবন সাবা এভাবে মুসলিমদের মধ্যে একটি ভ্রান্ত জামা‘আত তৈরিতে সক্ষম হয়, যারা ছিল ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী। তারা এমন কিছু আকীদা প্রচার করে, যার সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। সে নিজেকে আলীর পক্ষের ঘোষণা করলেও আলীর সাথে তার কোনো সম্পর্ক ছিল না। আলী তাদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি তাদেরকে কঠিন শাস্তি দিয়েছেন। তার সন্তানেরাও তাদেরকে অপছন্দ করত। তাদের ওপর লা‘নত করেছে, তাদেরকে দূরে ঠেলে দিয়েছে। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে সেসব বাস্তবতা চাপা পড়ে যায়, মুসলিমরা ভুলতে আরম্ভ করে তাদের ইতিহাস।

শী‘আদের বিপক্ষে তাদের ইমামদের সাক্ষী ও সতর্কবাণী:

শী‘আরা আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাতে বাই‘আত করে, তার আনুগত্য এবং তার পক্ষ নেওয়ার শপথ করেও বিভিন্ন যুদ্ধে তার পক্ষ ত্যাগ করে, তাকে অসম্মান করে। বস্তুত তারা আলীর নামের আড়ালে আশ্রয় গ্রহণ করে। যখন তাদেরকে ডাকা হত, তারা নানা অযুহাত দেখাত, কখনো কোনো অযুহাত ছাড়াই বিরত থাকে। এক সময় তিনি তাদের ওপর বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, “হে পুরুষ আকৃতির লোকেরা, তোমরা তো পুরুষ নও!!! বাচ্চাদের স্বপ্ন লালনকারী, নারীদের ন্যায় বিবেকের অধিকারী, আফসোস! আমি যদি তোমাদের না দেখতাম! তোমাদের সাথে আমার যদি কোনো পরিচয় না হত! আল্লাহর শপথ আমি অনুতাপ নিয়ে চলছি, পিছনে কুয়াশা রেখে যাচ্ছি... আল্লাহ তোমাদের ধ্বংস করুন। তোমরা আমার অন্তরকে পুঁজে ভরে দিয়েছ, গোস্বায় আমার হৃদয় পূর্ণ করে দিয়েছ, তোমরা আমার প্রতি নিঃশ্বাসে অপবাদ গলাধঃকরণ করিয়েছ। তোমরা অবাধ্য হয়ে আমার সিদ্ধান্ত বিনষ্ট করেছ। এমনকি কুরাইশরা বলতে বাধ্য হয়েছে: “আলী ইবন আবু তালিব বাহাদুর ঠিক, কিন্তু তার মধ্যে যুদ্ধ বিদ্যা নেই। বস্তুত যে আনুগত্য করে না, তার কোনো সিদ্ধান্তই নেই...” [নাহজুল বালাগাহ: ৮৮-৯১, প্রকাশক: মাকতাবাতুল আলফাইন। আরো দেখুন: নাহজুল বালাগাহ: ৭০-৭১, বইরুত প্রকাশনী।] অন্যত্র তিনি বলেন, “সিফফীন যুদ্ধে শী‘আদের অপমানের স্বীকার হয়ে তিনি বলেন, আমার আশা যদি মুয়াবিয়া আমার সাথে তোমাদের নিয়ে কেনাবেচা করত, যেমন টাকার বিনিয়ে জিনিসের কেনাবেচা হয়, আর তোমাদের দশজন গ্রহণ করে যদি তাদের একজন আমাকে দেয়!!!? [নাহজুল বালাগাহ: পৃ. ২২৪।]

শী‘আদের সম্পর্কে হাসান ইবন আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,

হাসান ইবন আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু ছুরিকাঘাতে আহত হয়ে তার শী‘আ গ্রুপের বর্ণনা দিয়ে বলেন, “আল্লাহর শপথ, আমি দেখছি এদের চেয়ে মুয়াবিয়া আমার জন্য অধিক ভালো, যারা বলে তারা আমার লোক। তারা আামাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছে, আমার মূলধন ছিনিয়ে নিয়েছে, আমার সম্পদ আত্মসাৎ করেছে। আল্লাহর শপথ আমি যদি মুয়াবিয়ার অধীনে থাকতাম, তাহলে আমি আমার জীবন রক্ষা করতে পারতাম, আমার পরিবারের নিরাপত্তা পেতাম। এটাই আমার জন্য ভালো ছিল, তাদের দ্বারা হত্যার শিকার হওয়া ও আমার পরিবারের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের চেয়ে”!? [দেখুন: আল-ইহতিজাজ লিত তাবরাসি: (খৃ. ২, পৃ. ২৯০)]

শী‘আদের সম্পর্কে হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,

হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু শী‘আদের সম্মোধন করে বলেন, “হে লোকেরা তোমরা ধ্বংস হও, আফসোস, তোমরা আমাদেরকে ডেকেছ, আমরা তোমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছি। তোমরা আমাদের হাত থেকে হাতিয়ার নিয়ে আমাদের ওপরই উম্মোচন করেছ। সে আগুনই তোমরা আমাদের ওপর প্রজ্বলিত করেছ, যা আমরা তোমাদের শত্রু ও আমাদের শত্রুর মোকাবেলায় প্রজ্বলিত করেছিলাম। তোমরা তোমাদের পূর্বপুরুষদের সাথে একাত্ম হয়েছ। তোমরা তোমাদের শত্রুদের শক্তি বৃদ্ধি করেছ। আমি মনে করি না, সেখান তোমরা কোনো স্বার্থ উদ্ধার করতে পারবে, অথচ আমরা তোমাদের সাথে কোনো অপরাধ করে নি। তোমরা কেন ধ্বংস হও না...। [আল-ইহতিজাজ লিত তাবরিসি: (খ.২পৃ. ৩০০)]

শী‘আদের সম্পর্কে তাদের পঞ্চম ইমাম বাকের বলেন,

বারো ইমামিয়া শী‘আদের পঞ্চম ইমাম মুহাম্মাদ আল-বাকের তার অনুসারী ও শী‘আদের সম্পর্কে বলেন, “যদি সবাই আমাদের দলভুক্ত হয়ে যায়, চারভাগের তিনভাগ আমাদের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করবে, আর চতূর্থভাগ হবে আহমক”!! [দেখুন: রিজালুল কাশি: (পৃ. ১৭৯)]

শী‘আদের ইমাম মূসা ইবন জাফর বলেন,

সপ্তম ইমাম মূসা ইবন জাফর প্রকৃত মুরতাদ সম্পর্কে বলেন, “যদি আমি আমার দল পৃথক করি, তাহলে তাদের শুধু তোষামোদকারী পাব, আর যদি তাদের পরীক্ষা করি, তাহলে তাদেরকে দেখব মুরতাদ(!!!), আর যদি তাদের যাচাই-বাছাই করি, তাহলে এক হাজারের মধ্যে একজনও খালেস (!?) বের হবে না। আর যদি আমি তাদেরকে চালুনি দ্বারা ছাঁকি, তাহলে তাদের কেউ অবশিষ্ট থাকবে না, আসনে হেলানদাতা ব্যতীত। তারা বলে: আমরা আলীর দল, অথচ আলীর দলের লোক তারাই, যাদের কথা ও কাজ এক”। [আর-রওজাতু মিনাল কাফি: খ. ৮পৃ. ১৯১, হাদীস নং ২৯০।]

এই যদি হয় আলী ও তার সন্তানদের ভক্তরা, তাহলে আল্লাহই ভালো জানেন সর্বশেষ ইমাম মাহদীর অনুসারীরা কেমন হবে, যে সাবালকই হয় নি? আলী শী‘আদের সম্পর্কে সত্যিই বলেছেন: “তোমরা বাতেল যেভাবে জান, হক সে রকম জান না। তোমরা হককে যেভাবে প্রত্যাখ্যান কর, বাতিলকে সেভাবে প্রত্যাখ্যান কর না।

মুসলিমদের বিরুদ্ধে শী‘আ ও কাফির একাত্মতা:

ইব্‌নুল ‘আল-কামি ও নাসিরুত-তুসি ইমাম আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর দল রক্ষার অযুহাতে খিলাফতে আব্বাসিয়ার ধ্বংসের জন্য কাফিরদের সাথে যোগ দিয়েছে। উল্লেখ্য শী‘আরা ‘তুসি’-কে ‘মানব জাতির শিক্ষক’, ‘এগারতম শতাব্দির বিবেক’, গবেষক, পণ্ডিত ও তর্কবিদদের শিরোমণি ইত্যাদি উপাধিতে ভূষিত করে।

সকল ঐতিহাসিকগণ অভিন্নভাবে খিলাফতে আব্বাসিয়ার শেষ মুহূর্তগুলো সম্পর্কে বলেন, বাগদাদের পতন, নজিরবিহীন মুসলিম গণহত্যা, ইসলামী কিতাবসমূহ দাজলা নদীতে নিক্ষেপ করাসহ সব ব্যাপারে ইবন আল-কামি ও তুসি সহযোগী ছিল হালাকু খানের। ইবন আল-কামি ছিল তখনকার আব্বাসিয় খলিফা মুতাসিমের উযীর ও পরামর্শদাতা, সে গোপনে হালাকু খানের সাথে আঁতাত করে আব্বাসিয় খিলাফতের পতন ঘটায়, আর তুসি ছিল হালাকুর উপদেষ্টা। উল্লেখ্য ইবনুল আল-কামি এবং তুসি উভয় ছিল ইরানী ও কালো পাগড়ীওয়ালাদের দলভুক্ত।

এতদ সত্বেও ইরানের খুমিনি বলে:

খাজা নাসিরুদ্দিন তুসির মতো লোক না থাকার কারণে মানুষের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে, যারা ইসলামের মহান খেদমত আঞ্জাম দিয়েছে। আমরা এ পাপিষ্ঠকে জিজ্ঞাসা করতে চাই সে হত্যা ও ধ্বংস ব্যতীত ইসলাম ও মুসলিমদের কি উপকার করেছে? হ্যাঁ সে যদি হালাকুকে সাহায্য করার ইসলামী খিদমত বলে, তাহলে এর ব্যাখ্যা ভিন্ন। কারণ তাদের মূল উদ্দেশ্য আহলে সুন্নাহ’র বিরুদ্ধে কাফিরদের সাহায্য করা।

পারস্যের অগ্নিপুজকদের সাথে শী‘আদের যোগসূত্র:

আরবদের প্রতি শী‘আদের অন্তহীন বিষোদগার: শী‘আ আলিম ইহকাকি বলেন, “বিশ্বের দুই মহান রাষ্ট পারস্য (ইরান) ও রোমের লোকেরা যেসব কষ্ট ও দুর্দশার সম্মুখীন হয়েছে তার মূল কারণ হচ্ছে আরব ও তাদের পূর্বপুরুষদের অভিযান পরিচালনা করা, যাদের অন্তরে মহান ইসলামের কোনো জ্ঞান ছিল না, তারা ছিল বেদুইন ও ইতর লোক, যাদের স্বভাবে ছিল নিষ্ঠুরতা ও নির্মমতা। এসব প্রবৃত্তি পুজারী (সাহাবী) দ্বারা এ দুই দেশ এবং পূর্ব-পশ্চিমের অধিকাংশ শহর-নগর ধ্বংস ও ক্ষতির সন্মুখীন হয়েছে। তারা দুই মহান রাষ্টের সৌন্দর্য বিনষ্ট করেছে”। [দেখুন: রিসালাতুল ঈমান: (পৃ. ৩২৩) মির্জা হাসান হায়েরি আল-ইহকাকি, প্রকাশক: মাকতাবাতুস সাদেক, কুয়েত, ১৪১২ হিজরী।]

হে মুসলিম ভাই, ইহকাকির কথায় একটু চিন্তা করুন, সে সাহাবীদের বলে ইতর, বেদুইন, প্রবৃত্তি পূজারী এবং পারস্যের পবিত্রতা বিনষ্টকারী, আমরা জানি না পারস্যের পবিত্রতা কি, অথচ তারা তো মাহরাম নারীদের বিয়ে করা বৈধ মনে করে! কোনো মুসলিম কি এ কথা বলতে পারে?

তারা উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুকে অপছন্দ করে। কারণ, তার হাতে পারস্য পরাস্ত হয়েছিল। ইরানের কাশান শহরে অগ্নিপূজক আবু লুলুর মাজার রয়েছে, যে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুকে শহীদ করেছে। তারা আবু লুলুকে “বাবা সুজাউদ্দিন” বলে। তার মৃত্যুবার্ষিকীতে তারা মাতম ও শোক পালন করে। আবু লুলুকে তারা দু’টি কারণে বাবা সুজাউদ্দিন বলে। প্রথমতঃ সে অগ্নিপুজক (শী‘আ)দের রুহানি পিতা। দ্বিতীয়তঃ অগ্নিপুজকদের ধর্ম মূলতঃ শী‘আদের ধর্ম। অতএব, রাফেযী বা শী‘আ মাযহাব মূলত অগ্নিপুজকদের একটি মাযহাব!

একই কারণে তারা হুসাইনের সেসব সন্তানদের সম্মান করে, যারা হুসাইনের ইরানী স্ত্রী শাহেরবানু বিনতে ইয়াজদাজারদ এর বংশের সন্তান। [দেখুন: বিহারুল আনওয়ার: (৪৫/৩২৯) লিল মাজলিসি, প্রকাশক: মুয়াসসাহ আল-ওফাত, বইরুত, ১৪০৩ হিজরী।]

ফ্রান্স প্রবাসী ইরানের শী‘আ গবেষক মুহাম্মাদ আমির আলী মাজি উল্লেখ করেন: “জারাদাস্তিয়া (প্রাচীন মতবাদ) চিন্তাধারা শী‘আদের মধ্যে প্রবেশ করে। বিশেষ করে আমাদের সরদার হুসাইন যখন পারস্যের সর্বশেষ সম্রাট সাসান বংশের মেয়ে বিয়ে করেন, তখন প্রাচীন ইরানের সাথে শী‘আদের একটি যোগসূত্র সৃষ্টি হয়। এ যুবতীই শী‘আদের সকল ইমামের মাতা হিসেবে গণ্য হন। এর মাধ্যমে প্রাচীন যুগের অগ্নিপুজক ও শী‘আদের যোগসূত্র কায়েম হয়”। এ হচ্ছে শী‘আদের ভেতরকার এক ব্যক্তির সাক্ষী।

লোকেরা শোনে আশ্চর্য হবে যে, শী‘আরা কেন শুধু হুসাইনের মৃত্যুর কারণে ক্রন্দন করে, কিন্তু তারা হুসাইনের ভাই আবু বকর, অনুরূপ তার সন্তান আবু বকরের জন্য ক্রন্দন করে না, অথচ এরাও তার সাথেই মারা গেছেন। এরা কি আহলে বাইতের সদস্য ছিলেন না অথবা তারা এমন দু’টি নাম বহন করে, শী‘আরা যা সাধারণ শী‘আদের মধ্যে প্রচার করা পছন্দ করে না, যেন আহলে বাইত ও সাহাবীদের মাঝে মহব্বতের বাস্তবতা তাদের সামনে প্রকাশ না পায়। বিশেষ করে আবু বকর ও উমারের সাথে আহলে বাইতের সখ্যতা, বন্ধুত্ব ও মহব্বত।

একই কারণে তারা অন্যান্য সাহাবীদের ব্যতিক্রম সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে সম্মান করে, এমনকি অনেকে বলেছে তার নিকট ওহি আসে, তার কারণ তিনি পারস্যের। [দেখুন: রিজালুলকাশি: (২১)]

তারা আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে কিসরা তথা খসরু পারভেজ সম্পর্কে তাদের কিতাবে বর্ণনা করে: “নিশ্চয় আল্লাহ তাকে জাহান্নামের আযাব থেকে মুক্ত করেছেন, আগুন তার ওপর হারাম”। [দেখুন: বিহারুল আনওয়ার: (১৪/৪১)]

এ হচ্ছে পারস্য তথা ইরানের আরব বিদ্বেষের কারণ। এটা পুরনো ইতিহাস। তাদের ষড়যন্ত্রের মোকাবিলায় আল্লাহ আমাদের জন্য যথেষ্ট।

ইরান ও ইয়াহূদী সম্পর্ক:

ইরান বাহ্যিকভাবে আমেরিকার সাথে শত্রুতা পোষণ করলেও, বস্তুতঃ সে দ্বিমুখি নীতিই অবলম্বন করে আমেরিকার সাথে। যা আরবদের জন্য খুব দুঃখজনক। ইরানের রাফেযীরা যতই ইসলামের দোহাই দিক না কেন, মূলত তারা ইসলামের শত্রু এবং তারা ইসলাম নিঃশেষ করার জন্য ইয়াহূদী ও নাসারাদের সাথে হাত মেলাতে কসুর করবে না।

মোদ্দাকথাঃ শী‘আরা এমন জাতি, যাদের উৎপত্তি ইয়াহূদীদের থেকে, অতঃপর এদের সাথে সংমিশ্রণ ঘটেছে অগ্নিপুজকদের। এরা ইয়াহূদীদের ন্যায় নিজেদের মধ্যে সব ধরণের খারাপি লালন করে, যেমন মিথ্যা বলা, ধোঁকা দেওয়া, প্রতারণা এবং আরব ও ইসলাম বিদ্বেষ। আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু ও আহলে বাইতের মহব্বতের অন্তরালে পুরো ইসলামকে তারা ত্যাগ করে, সাহাবাদের গালমন্দ করে, কুরআনে বিকৃতির বিশ্বাস করে, আহলে বাইতের অনেক সদস্যকে কাফির বলে। এরা বাহ্যত ইয়াহূদী ও আমেরিকা বিদ্বেষ প্রচার করলেও গোপনে তাদের সাথেই সখ্যতা কায়েম করে। ইসলাম ও মুসলিমদের বিপক্ষে তাদের সাথে তারা হাত মিলায়। আল্লাহ এদের ষড়যন্ত্র থেকে ইসলাম ও মুসলিমদের হিফাযত করুন। এদের আকীদা-বিশ্বাসে এমন বৈপরীত্য, যা অনেকটা হাস্যকর, গোড়ামি, বরং পাগলামী ও বিবেক শূন্যতা, কোনো বিবেকী লোক এমন বৈপরীত্য সমর্থন কিংবা বিশ্বাস করতে পারে না। এ বইয়ের সংকলক এমনি কতগুলো বৈপরীত্য একত্র করেছেন, যার গুরুত্ব অনুধাবন করে আমরা তা অনুবাদ করে বাংলাভাষাভাষী ভাইদের জন্য পেশ করছি, আশা করি মুসলিম ভাইয়েরা এর থেকে উপকৃত হবেন এবং বিবেকবান শী‘আ যুবকদেরকে এ বই নতুন করে ভাবতে ও সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করবে।

অনুবাদক

সানাউল্লাহ নজির আহমদ

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন