HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
আল্লাহর (দ্বীনকে) রক্ষা কর, তিনি তোমাকে রক্ষা করবেন
লেখকঃ সিরাজুল ইসলাম আলী আকবর
৪
বিধি-মালা ও উপকারিতা :উক্ত হাদিসটি, নি:সন্দেহে বলা যায় একটি আকর হাদিস ; উম্মাহর জন্য তাতে একই সাথে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা ও দ্বীনের ক্ষেত্রে খুবই প্রণিধানযোগ্য মৌলিক সার্বিক নীতিমালা। জনৈক আলেম হাদিসটি প্রসঙ্গে বলেন :
تدبرت هذا الحديث فأدهشني، وكدت أطيش، فوا أسفا من الجهل بهذا الحديث وقلة الفهم لمعناه .
আমি যখনই হাদিসটি নিয়ে গভীরভাবে ভেবেছি, আমাকে তা বাকশূন্য করে দিয়েছে, কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে আমি ভেবেছি—হাদিসটির ব্যাপারে অজ্ঞতা ও তার মর্ম উপলব্ধি করতে না পারা আমাদের জন্য খুবই আফসোসের কারণ হবে। [প্রাগুক্ত : ১২]
হাদিসটি প্রমাণ করে, নবী সা. উম্মাহর প্রতি ছিলেন সদা নিবেদিত ; তার চিন্তার সবটুকু জুড়ে ছিল উম্মার সাফল্য-পরিণতি, তিনি সচেষ্ট ছিলেন তাদের মাঝে বিশুদ্ধ বিশ্বাসের সঞ্চারে, চারত্রিক গুণাবলির বিস্তার ও সত্য-সঠিক পথের অনুসরণের উদ্যম গড়ে তোলায়। তাই, নিতান্ত বালক ইবনে আববাস যখন একই উটের পিঠে তার পশ্চাতে আরোহণ করলেন,—আমরা দেখতে পাই, তিনি তাকে শিক্ষা দিচ্ছেন সংক্ষিপ্ত শব্দ অথচ ব্যাপক অর্থময় কিছু বচন, যা তার ঐহিক ও পারত্রিক জীবনে খুবই প্রভাব বিস্তার করবে।
পিতা, দায়ী, শিক্ষক—যে-ই মুরবিব-অভিভাবক হন, সে তাঁর গুরু-দায়িত্ব আদায়ে উপযুক্ত সময়-সুযোগের সদ্ব্যবহার করবে। অধিকন্তু, দিক-নির্দেশনামূলক উপস্থাপনার ক্ষেত্রে শ্রোতৃমন্ডলীর দৃষ্টি তথা মনোযোগ আকর্ষণের যে বিবিধ প্রারম্ভিক পদ্ধতি রয়েছে, তা অবশ্যই প্রয়োগ করবে। হাদিসটি এ ব্যাপারে আমাদের জন্য উত্তম দিক-নির্দেশক।
প্রত্যেক ঈমানদার ব্যক্তির উপর বিরাট দায়িত্ব রয়েছে, যা তাকে অবশ্যই পালন করতে হবে এই ঐহিক জীবনে। তা এই যে, সে আল্লাহর যাবতীয় আদেশ পালন করবে। বর্জন করবে নিষিদ্ধ সমস্ত বিষয়। তাঁর নির্ধারিত শরয়ি সীমাসমূহ রক্ষা করবে এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রাসূল সা. নির্দেশিত পন্থাকে আমৃত্যু অনুসরণ করে চলবে।
ইসলামি শরিয়ায় কিছু সুনির্দিষ্ট কর্ম রয়েছে যেগুলোর প্রতি যত্নবান হতে আল্লাহ কখনো নির্দেশ প্রদান করেছেন, কখনো দিয়েছেন উৎসাহ, সঞ্চার করেছেন উদ্দীপনা। যথা :—
(ক) নামাজ সম্বন্ধে আল্লাহ তাআলা বলেন :—
حَافِظُوا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلَاةِ الْوُسْطَى وَقُومُوا لِلَّهِ قَانِتِينَ ( البقرة : ২৩৮)
‘সমস্ত নামাজের প্রতি যত্নবান হও বিশেষ করে মধ্যবর্তী নামাজের (আসর) ব্যাপারে। আর আল্লাহর সামনে একান্ত আদবের সঙ্গে দাঁড়াও। [সূরা বাকারা : ২৩৮]
(খ) পাক-পবিত্রতা ও ওজু। এ বিষয়ে সাওবান রা. থেকে বর্ণিত—
وعن ثوبان رضي الله عنه قال : قال رسول الله صلي الله عليه وسلم : استقيموا ولن تحصوه، واعلموا أن خير أعمالكم الصلاة، ولن يحافظ علي الوضوء إلا مؤمن .
তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন : তোমরা দ্বীনের উপর অবিচল থাক, এবং তা গণনা কর না। (আমল যতই অব্যাহত থাকুক, এবং সংখ্যায় বিপুল হোক, তা গণনার আশ্রয় নিও না) আর জেনে রেখো ! তোমাদের আমল সমূহের মাঝে সর্বোত্তম আমল হলো সালাত। মোমিন মাত্রই ওজুর প্রতি যত্নবান। [ইবনে মাজা : ২৭৩]
(গ) শপথ : যথা আল্লাহ তাআলা বলেন : وَاحْفَظُوا أَيْمَانَكُمْ ‘তোমরা স্বীয় শপথসমূহ রক্ষা কর’ অর্থাৎ, শপথ ভঙ্গ করো না।
(ঘ) অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের হেফাজত। যথা : জিহবা ও গুপ্তাঙ্গের হেফাজত।
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন—
من حفظ ما بين لحييه، وما بين رجليه، أضمن له الجنة .
যে ব্যক্তি জিহবা ও গুপ্তাঙ্গের হেফাজত করবে, আমি তার জন্য জান্নাতের জামিন হয়ে যাব। [বোখারি- ৬৪৭৪, মুসলিম- ৬৪]
হাদিসটি প্রমাণ করে, যে ব্যক্তি আল্লাহর দ্বীনের প্রতি যত্নশীল হবে, পালন করবে তার বিধি-বিধান জীবনের যাবতীয় অনুসঙ্গে, আল্লাহ তাআলা তার পার্থিব যাবতীয় বিষয়ের রক্ষা করবেন—দৈহিক, পারিবারিক ও বিষয়-সম্পত্তি—সর্বক্ষেত্রে তার রক্ষাণাবেক্ষণ বিস্তৃত থাকবে। এমননিভাবে, যে তার শৈশব-কৈশোর ও যৌবনের দুর্দান্ত সময়গুলোতে আল্লাহর দ্বীন ও হুকুম-আহকামের প্রতি যত্ন নিবে, বার্ধক্যের বিষণ্ণ-ভঙ্গুর দিনগুলোতে আল্লাহ তার পাশে থাকবেন, সতেজ রাখবেন তাকে শারীরিক ও মানসিক শক্তিতে। এমনিভাবে, তাকে রক্ষা করবেন দ্বীনের ক্ষেত্রে বিভ্রান্তিকর সংশয় থেকে—যা বান্দাকে সঠিক-শুদ্ধ পথ থেকে হটিয়ে নিপতিত করে বিভ্রান্ত পথের ঘোর অমানিশায়। শয়তান নিষিদ্ধ প্রবৃত্তির যে সৌন্দর্য বিস্তার ঘটায়, প্রতিমুহূর্তে তৎপর থাকে বান্দাকে তাতে আপতিত করতে—সে ব্যাপারেও আল্লাহ হবেন তার উত্তম রক্ষাকারী।
দুনিয়াতে আল্লাহ তাআলা কর্তৃক বান্দার হেফাজতের অন্যতম ফলশ্রুতি এই যে, মহান আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাকে মৃত্যুকালে সত্য-ভ্রষ্টতার ধ্বংসাত্মক থাবা থেকে সুরক্ষা করেন। ফলে তার মৃত্যু-ক্ষণে এই শাশ্বত মহা-সত্যের সাক্ষ্য দানের পরম ও চরম সৌভাগ্য নসিব হয় যে—
لا اله إلا الله محمد رسول الله
‘আল্লাহ ছাড়া এবাদতের উপযুক্ত আর কোন ইলাহ নেই ; মোহাম্মদ সা. আল্লাহর প্রেরিত রাসূল।’
এ মহান সৌভাগ্য যে অর্জন করে, তার সর্বশেষ আবাস ও পরিণতি জান্নাত। যেমন রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন :—
ما من عبد قال : لا إله إلا الله ثم مات علي ذالك إلا دخل الجنة .
‘যে কোন বান্দা এই কথার সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ভিন্ন অন্য কোন মাবুদ নেই, অত:পর এই প্রদত্ত সাক্ষ্যের উপর মৃত্যুবরণ করবে, নি:সন্দেহে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ [বোখারি- ৬৫০২]
অনুরূপভাবে, দ্বীনের হেফাজতকারী বান্দা কবর, হাশরসহ পর জীবনের সর্বত্র ভয়ানক মুহূর্তে মহান আল্লাহর হেফাজতে থাকার সৌভাগ্য অর্জন করবে। অতএব, আল্লাহর দ্বীনকে হেফাজতকারী হও, তবে তিনি তোমার হেফাজত করবেন। তুমি তার দ্বীন ও বিধানের যথাযোগ্য সংরক্ষণ কর, তাহলে তাঁকে কঠিন মুহূর্তে সামনে পাবে সহায় হিসেবে। আল্লাহ তাআলা বলেন—
وَأُزْلِفَتِ الْجَنَّةُ لِلْمُتَّقِينَ غَيْرَ بَعِيدٍ . هَذَا مَا تُوعَدُونَ لِكُلِّ أَوَّابٍ حَفِيظٍ . (ق: ৩১-৩২)
‘জান্নাতকে উপস্থিত করা হবে আল্লাহভীরুদের অদূরে। তোমাদের প্রত্যেক অনুরাগী ও স্মরণকারীকে এরই প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল।’ [ক্বাফ : ৩১-৩২]
আল্লাহর হেফাজতের আরেক সুফল হলো : দুনিয়া-আখেরাতের সব ভয়-ভীতি থেকে নিরাপত্তা লাভ। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন :—
الَّذِينَ آَمَنُوا وَلَمْ يَلْبِسُوا إِيمَانَهُمْ بِظُلْمٍ أُولَئِكَ لَهُمُ الْأَمْنُ وَهُمْ مُهْتَدُونَ . ( الأنعام :৮২)
‘যারা ঈমান-বিশ্বাসকে শিরকের সাথে মিশ্রিত করে না, তাদের জন্যেই শান্তি এবং তাঁরাই সুপথগামী।’ [আনআম : ৮২]
আল্লাহ তাআলা মূসা ও হারুন আ.-কে লক্ষ করে বলেছেন :—
َ لَا تَخَافَا إِنَّنِي مَعَكُمَا أَسْمَعُ وَأَرَى ( طه : ৪৬)
‘তোমরা ভয় করো না, আমি তোমাদের সাথে আছি, আমি দেখি ও শুনি।’ [ত্বোয়া-হা : ৪৬]
এমনিভাবে নবী করিম সা. আবু বকর রা.-কে বললেন : যখন উভয়ে মদিনা অভিমুখে হিজরতকালে সাওর গুহায় অবস্থান করছিলেন :—
ما ظنك باثنين الله ثالثهما، لا تحزن إن الله معنا .
দু ব্যক্তি সম্পর্কে তোমার ধারণা কি যাদের তৃতীয় জন হলেন আল্লাহ ? তুমি ভয় করো না আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন। [বোখারি : ৪২৯৫]
পার্থিব জীবনে মানুষ সর্বদা একই অবস্থায় যাপন করে না ; নানা পরিস্থিতি ও অবস্থায় তার আবর্তন ঘটে প্রতি মুহূর্তে, প্রতিক্ষণে। কখনো সে সুখী, কখনো দু:খী ; কখনো আর্থিক প্রাচুর্য ঘিরে থাকে তাকে, সীমাহীন ভোগ-বিলাসের সামর্থ্য যেন লুটিয়ে পড়ে তার পদতলে। কখনো সে আক্রান্ত হয় দারিদ্রে্যর বিপুল যন্ত্রণায়, বিদ্ধ হয় নানাবিধ সংকটের তীরে। কখনো সতেজ সু-স্বাস্থ্যবান, কখনো দুর্বল-রুগ্ন। দীর্ঘ একটা সময় যৌবনের দৃপ্ততায় কাটানোর পর সে ম্রিয়মান হয় বার্ধক্যের কষাঘাতে। তুমি তোমার প্রাচুর্যে, সুস্বাস্থ্যে, যৌবনের দুর্দান্ত শক্তিময়তায় আল্লাহর সাথে থাক,—দারিদ্র্য, অসুস্থতা ও বার্ধক্যের দৌর্বল্যে তিনি তোমার পাশে থাকবেন।
আল্লাহ তাআলার হেফাজত লাভের কতিপয় উপকরণ :—
(ক) বাধ্যতামূলক বিধি-নিষেধগুলোকে পরিপূর্ণ রূপে মেনে চলা। যথা: মসজিদে এসে জামাতসহ সঠিক ওয়াক্তে নামাজ আদায় করা।
(খ) নফল বা ঐচ্ছিক এবাদত-বন্দেগির মধ্য দিয়ে আল্লাহ তাআলার সান্নিধ্য লাভে এগিয়ে আসা। যেমন : সুন্নতে মুয়াক্কাদা, বিতর, এবং শরিয়ত-সিদ্ধ মাসিক ও বার্ষিক রোজা পালনে যত্নবান হওয়া।
(গ) দ্বীন ও দুনিয়া সংশ্লিষ্ট সার্বক্ষণিক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে দিন-রাত দোয়া ও প্রার্থনা করা।
(ঘ) এরূপ নেককারগণের সংস্পর্শ বা সংশ্রব লাভ করা যারা তোমাকে তোমার মাওলা আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছে দিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে। তোমাকে বন্দেগীময় জীবন যাপনে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করবে এবং তোমার দ্বীন- ইসলামের হেফাজতের গুরু দায়িত্ব-ভার গ্রহণ করবে।
(ঙ) এমন উপকারী জ্ঞান অন্বেষণে আত্মনিমগ্ন হওয়া যা তোমাকে প্রভু, স্রষ্টা, সম্বন্ধে জ্ঞান দানের পাশাপাশি তার আদেশ-নিষেধাবলীর পরিচয় তুলে ধরবে।
(১১) উপরোক্ত হাদিসের অন্যতম শিক্ষা এই যে, দোয়া একটি প্রণিধানযোগ্য মৌলিক এবাদত। আল্লাহ তাআলা নিম্নোক্ত আয়াতে দ্ব্যর্থহীন ভাবে আহবান জানিয়েছেন—
وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ .( غافر : ৬০)
‘এবং তোমার প্রভু বলেন : তোমরা আমাকে ডাক, আমি সাড়া দেব। [সূরা গাফের : আয়াত ৬০] তিনি আরো বলেন :—
وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ . ( البقرة : ৮৬)
‘আর আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে, বস্ত্তত: আমি রয়েছি সন্নিকটে। আমি প্রার্থীর প্রার্থনা কবুল করি, যখন আমার কাছে প্রার্থনা করে। [বাক্বারা : ৮৬]
আল্লাহর নিকট প্রার্থনার কতিপয় শুভ ফলাফল :
(ক) স্বীয় লাঞ্ছনা, অবমাননা, ও চরম মুখাপেক্ষিতার বহি:প্রকাশ।
(খ) উপকার সাধন ও অপকার অপসারণের মতো পরম চাওয়া-পাওয়া।
(গ) এতে রয়েছে বিপুল প্রতিদান ও পুরস্কার। এর মাধ্যমে মার্জিত হয় পাপাচার ও অনাচার।
(ঘ) নিরাপত্তা ও অনুকম্পাসহ আল্লাহ তার সাথেই আছেন—এরূপ একটি সঙ্গবোধ অন্তরের গভীরে জাগ্রত হয় এর মাধ্যমে।
(ঙ) আল্লাহ তাআলার নিম্ন উদ্ধৃত আয়াতকে বাস্তবে রূপ দান করা হয়। তিনি বলেন :—
إياك نعبد وإياك نستعين ( الفاتحة : ৪)
‘শুধু তোমারই এবাদত করি এবং তোমারই নিকট প্রার্থনা জানাই।’ [সূরা ফাতেহা : আয়াত ৪]
(চ) আল্লাহ তাআলার ক্রোধ থেকে দূরত্ব বজায় রাখার এটিও অন্যতম উত্তম পথ ও পন্থা। যেমন : নবী করিম সা. বলেছেন : যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে দোয়া করে না তার উপর তাঁর ক্রোধ নিপতিত হয়।
(১২) এ মহান হাদিস থেকে শিক্ষণীয় বিষয়টিও পরিস্ফুটিত হয় যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে এমন বিষয়ে—যা তিনি ব্যতীত আর কেউ পারে না—সাহায্য, আশ্রয়সহ কিছুই চাওয়া যাবে না। আল্লাহ ব্যতীত অন্য যেই হোক না কেন কারোরই জন্যে কোন প্রকার এবাদত করা যাবে না। এই ঐকান্তিক ও নিষ্ঠাপূর্ণ এবাদতের পথ ব্যতীত এবাদতের গ্রহণযোগ্যতা ও দ্বীন-দুনিয়ার সফলতা বা মূল লক্ষ্য-উদ্দেশ্য অর্জন আদৌ সম্ভব নয়।
(১৩) অত্র অধ্যায়ে আলোচ্য হাদিস থেকে এ বিষয়টিও সাব্যস্ত হয় যে, বান্দা এই জড় জগতে ভাল-মন্দ, লাভ-লোকসান যাই প্রাপ্ত হোক না কেন তা সবই তার পূর্ব লিখিত ও নিরূপিত ভাগ্য অনুযায়ীই হয়ে থাকে। সৃষ্টিকুলের সমগ্র সৃষ্টিই যদি একযোগে কোন বিষয়ে প্রভূত চেষ্টা তদবির চালিয়ে যায়, তবে পরিণাম তাই হয় যা পূর্বে লিখিত ও নির্ধারিত। বিন্দু বা অনু পরিমাণও তার বিপরীত ঘটে না এবং ঘটতে পারে না। আল্লাহ তাআলা বলেন :—
قُلْ لَنْ يُصِيبَنَا إِلَّا مَا كَتَبَ اللَّهُ لَنَا . ( التوبة :৫১)
‘আপনি বলুন আমাদের কিছুই পৌঁছোবে না কিন্তু যা আল্লাহ আমাদের জন্য লিখে রেখেছেন।’ [আত-তাওবাহ : আয়াত ৫৮] তিনি আরো বলেন :—
مَا أَصَابَ مِنْ مُصِيبَةٍ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي أَنْفُسِكُمْ إِلَّا فِي كِتَابٍ مِنْ قَبْلِ أَنْ نَبْرَأَهَا . ( الحديد : ২২)
‘পৃথিবীতে এবং ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের উপর কোন বিপদ আসে না কিন্তু (যা আসে) তা জগৎ সৃষ্টির পূর্বেই কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে।’ [আল হাদীদ : ২২]
(১৪) আল্লাহ তাআলার ফয়সালা ও নির্ধারিত ভাগ্য-লিপির প্রতি বিশ্বাস, এর শেকড় দৃঢ়ভাবে আত্মস্থ করাও ঈমানের অন্যতম স্তম্ভ। এর উদ্দেশ্য আদৌ এ নয় যে, কেউ আমল ছেড়ে দিয়ে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকবে। কেননা, যিনি তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ও ভাগ্যলিপির প্রতি ঈমান আনয়নের নির্দেশ প্রদান করেছেন, তিনিই তো আবার সুফল বয়ে আনে এমন কর্মতৎপরতার প্রয়াস-প্রক্রিয়ায় সক্রিয় থাকারও আদেশ করেছেন। যেমন : ইমাম মুসলিম রহ. তার কিতাব মুসলিম শরীফে বর্ণনা করেন—
اعملوا فكل ميسر لما خلق له .
‘তোমরা কর্ম করে যাও। কারণ, প্রত্যেককে যে জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে তা সহজ করে দেয়া হয়েছে।’ [বোখারি : ৬৯৯৬]
সমাপ্ত
تدبرت هذا الحديث فأدهشني، وكدت أطيش، فوا أسفا من الجهل بهذا الحديث وقلة الفهم لمعناه .
আমি যখনই হাদিসটি নিয়ে গভীরভাবে ভেবেছি, আমাকে তা বাকশূন্য করে দিয়েছে, কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে আমি ভেবেছি—হাদিসটির ব্যাপারে অজ্ঞতা ও তার মর্ম উপলব্ধি করতে না পারা আমাদের জন্য খুবই আফসোসের কারণ হবে। [প্রাগুক্ত : ১২]
হাদিসটি প্রমাণ করে, নবী সা. উম্মাহর প্রতি ছিলেন সদা নিবেদিত ; তার চিন্তার সবটুকু জুড়ে ছিল উম্মার সাফল্য-পরিণতি, তিনি সচেষ্ট ছিলেন তাদের মাঝে বিশুদ্ধ বিশ্বাসের সঞ্চারে, চারত্রিক গুণাবলির বিস্তার ও সত্য-সঠিক পথের অনুসরণের উদ্যম গড়ে তোলায়। তাই, নিতান্ত বালক ইবনে আববাস যখন একই উটের পিঠে তার পশ্চাতে আরোহণ করলেন,—আমরা দেখতে পাই, তিনি তাকে শিক্ষা দিচ্ছেন সংক্ষিপ্ত শব্দ অথচ ব্যাপক অর্থময় কিছু বচন, যা তার ঐহিক ও পারত্রিক জীবনে খুবই প্রভাব বিস্তার করবে।
পিতা, দায়ী, শিক্ষক—যে-ই মুরবিব-অভিভাবক হন, সে তাঁর গুরু-দায়িত্ব আদায়ে উপযুক্ত সময়-সুযোগের সদ্ব্যবহার করবে। অধিকন্তু, দিক-নির্দেশনামূলক উপস্থাপনার ক্ষেত্রে শ্রোতৃমন্ডলীর দৃষ্টি তথা মনোযোগ আকর্ষণের যে বিবিধ প্রারম্ভিক পদ্ধতি রয়েছে, তা অবশ্যই প্রয়োগ করবে। হাদিসটি এ ব্যাপারে আমাদের জন্য উত্তম দিক-নির্দেশক।
প্রত্যেক ঈমানদার ব্যক্তির উপর বিরাট দায়িত্ব রয়েছে, যা তাকে অবশ্যই পালন করতে হবে এই ঐহিক জীবনে। তা এই যে, সে আল্লাহর যাবতীয় আদেশ পালন করবে। বর্জন করবে নিষিদ্ধ সমস্ত বিষয়। তাঁর নির্ধারিত শরয়ি সীমাসমূহ রক্ষা করবে এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রাসূল সা. নির্দেশিত পন্থাকে আমৃত্যু অনুসরণ করে চলবে।
ইসলামি শরিয়ায় কিছু সুনির্দিষ্ট কর্ম রয়েছে যেগুলোর প্রতি যত্নবান হতে আল্লাহ কখনো নির্দেশ প্রদান করেছেন, কখনো দিয়েছেন উৎসাহ, সঞ্চার করেছেন উদ্দীপনা। যথা :—
(ক) নামাজ সম্বন্ধে আল্লাহ তাআলা বলেন :—
حَافِظُوا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلَاةِ الْوُسْطَى وَقُومُوا لِلَّهِ قَانِتِينَ ( البقرة : ২৩৮)
‘সমস্ত নামাজের প্রতি যত্নবান হও বিশেষ করে মধ্যবর্তী নামাজের (আসর) ব্যাপারে। আর আল্লাহর সামনে একান্ত আদবের সঙ্গে দাঁড়াও। [সূরা বাকারা : ২৩৮]
(খ) পাক-পবিত্রতা ও ওজু। এ বিষয়ে সাওবান রা. থেকে বর্ণিত—
وعن ثوبان رضي الله عنه قال : قال رسول الله صلي الله عليه وسلم : استقيموا ولن تحصوه، واعلموا أن خير أعمالكم الصلاة، ولن يحافظ علي الوضوء إلا مؤمن .
তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন : তোমরা দ্বীনের উপর অবিচল থাক, এবং তা গণনা কর না। (আমল যতই অব্যাহত থাকুক, এবং সংখ্যায় বিপুল হোক, তা গণনার আশ্রয় নিও না) আর জেনে রেখো ! তোমাদের আমল সমূহের মাঝে সর্বোত্তম আমল হলো সালাত। মোমিন মাত্রই ওজুর প্রতি যত্নবান। [ইবনে মাজা : ২৭৩]
(গ) শপথ : যথা আল্লাহ তাআলা বলেন : وَاحْفَظُوا أَيْمَانَكُمْ ‘তোমরা স্বীয় শপথসমূহ রক্ষা কর’ অর্থাৎ, শপথ ভঙ্গ করো না।
(ঘ) অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের হেফাজত। যথা : জিহবা ও গুপ্তাঙ্গের হেফাজত।
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন—
من حفظ ما بين لحييه، وما بين رجليه، أضمن له الجنة .
যে ব্যক্তি জিহবা ও গুপ্তাঙ্গের হেফাজত করবে, আমি তার জন্য জান্নাতের জামিন হয়ে যাব। [বোখারি- ৬৪৭৪, মুসলিম- ৬৪]
হাদিসটি প্রমাণ করে, যে ব্যক্তি আল্লাহর দ্বীনের প্রতি যত্নশীল হবে, পালন করবে তার বিধি-বিধান জীবনের যাবতীয় অনুসঙ্গে, আল্লাহ তাআলা তার পার্থিব যাবতীয় বিষয়ের রক্ষা করবেন—দৈহিক, পারিবারিক ও বিষয়-সম্পত্তি—সর্বক্ষেত্রে তার রক্ষাণাবেক্ষণ বিস্তৃত থাকবে। এমননিভাবে, যে তার শৈশব-কৈশোর ও যৌবনের দুর্দান্ত সময়গুলোতে আল্লাহর দ্বীন ও হুকুম-আহকামের প্রতি যত্ন নিবে, বার্ধক্যের বিষণ্ণ-ভঙ্গুর দিনগুলোতে আল্লাহ তার পাশে থাকবেন, সতেজ রাখবেন তাকে শারীরিক ও মানসিক শক্তিতে। এমনিভাবে, তাকে রক্ষা করবেন দ্বীনের ক্ষেত্রে বিভ্রান্তিকর সংশয় থেকে—যা বান্দাকে সঠিক-শুদ্ধ পথ থেকে হটিয়ে নিপতিত করে বিভ্রান্ত পথের ঘোর অমানিশায়। শয়তান নিষিদ্ধ প্রবৃত্তির যে সৌন্দর্য বিস্তার ঘটায়, প্রতিমুহূর্তে তৎপর থাকে বান্দাকে তাতে আপতিত করতে—সে ব্যাপারেও আল্লাহ হবেন তার উত্তম রক্ষাকারী।
দুনিয়াতে আল্লাহ তাআলা কর্তৃক বান্দার হেফাজতের অন্যতম ফলশ্রুতি এই যে, মহান আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাকে মৃত্যুকালে সত্য-ভ্রষ্টতার ধ্বংসাত্মক থাবা থেকে সুরক্ষা করেন। ফলে তার মৃত্যু-ক্ষণে এই শাশ্বত মহা-সত্যের সাক্ষ্য দানের পরম ও চরম সৌভাগ্য নসিব হয় যে—
لا اله إلا الله محمد رسول الله
‘আল্লাহ ছাড়া এবাদতের উপযুক্ত আর কোন ইলাহ নেই ; মোহাম্মদ সা. আল্লাহর প্রেরিত রাসূল।’
এ মহান সৌভাগ্য যে অর্জন করে, তার সর্বশেষ আবাস ও পরিণতি জান্নাত। যেমন রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন :—
ما من عبد قال : لا إله إلا الله ثم مات علي ذالك إلا دخل الجنة .
‘যে কোন বান্দা এই কথার সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ভিন্ন অন্য কোন মাবুদ নেই, অত:পর এই প্রদত্ত সাক্ষ্যের উপর মৃত্যুবরণ করবে, নি:সন্দেহে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ [বোখারি- ৬৫০২]
অনুরূপভাবে, দ্বীনের হেফাজতকারী বান্দা কবর, হাশরসহ পর জীবনের সর্বত্র ভয়ানক মুহূর্তে মহান আল্লাহর হেফাজতে থাকার সৌভাগ্য অর্জন করবে। অতএব, আল্লাহর দ্বীনকে হেফাজতকারী হও, তবে তিনি তোমার হেফাজত করবেন। তুমি তার দ্বীন ও বিধানের যথাযোগ্য সংরক্ষণ কর, তাহলে তাঁকে কঠিন মুহূর্তে সামনে পাবে সহায় হিসেবে। আল্লাহ তাআলা বলেন—
وَأُزْلِفَتِ الْجَنَّةُ لِلْمُتَّقِينَ غَيْرَ بَعِيدٍ . هَذَا مَا تُوعَدُونَ لِكُلِّ أَوَّابٍ حَفِيظٍ . (ق: ৩১-৩২)
‘জান্নাতকে উপস্থিত করা হবে আল্লাহভীরুদের অদূরে। তোমাদের প্রত্যেক অনুরাগী ও স্মরণকারীকে এরই প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল।’ [ক্বাফ : ৩১-৩২]
আল্লাহর হেফাজতের আরেক সুফল হলো : দুনিয়া-আখেরাতের সব ভয়-ভীতি থেকে নিরাপত্তা লাভ। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন :—
الَّذِينَ آَمَنُوا وَلَمْ يَلْبِسُوا إِيمَانَهُمْ بِظُلْمٍ أُولَئِكَ لَهُمُ الْأَمْنُ وَهُمْ مُهْتَدُونَ . ( الأنعام :৮২)
‘যারা ঈমান-বিশ্বাসকে শিরকের সাথে মিশ্রিত করে না, তাদের জন্যেই শান্তি এবং তাঁরাই সুপথগামী।’ [আনআম : ৮২]
আল্লাহ তাআলা মূসা ও হারুন আ.-কে লক্ষ করে বলেছেন :—
َ لَا تَخَافَا إِنَّنِي مَعَكُمَا أَسْمَعُ وَأَرَى ( طه : ৪৬)
‘তোমরা ভয় করো না, আমি তোমাদের সাথে আছি, আমি দেখি ও শুনি।’ [ত্বোয়া-হা : ৪৬]
এমনিভাবে নবী করিম সা. আবু বকর রা.-কে বললেন : যখন উভয়ে মদিনা অভিমুখে হিজরতকালে সাওর গুহায় অবস্থান করছিলেন :—
ما ظنك باثنين الله ثالثهما، لا تحزن إن الله معنا .
দু ব্যক্তি সম্পর্কে তোমার ধারণা কি যাদের তৃতীয় জন হলেন আল্লাহ ? তুমি ভয় করো না আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন। [বোখারি : ৪২৯৫]
পার্থিব জীবনে মানুষ সর্বদা একই অবস্থায় যাপন করে না ; নানা পরিস্থিতি ও অবস্থায় তার আবর্তন ঘটে প্রতি মুহূর্তে, প্রতিক্ষণে। কখনো সে সুখী, কখনো দু:খী ; কখনো আর্থিক প্রাচুর্য ঘিরে থাকে তাকে, সীমাহীন ভোগ-বিলাসের সামর্থ্য যেন লুটিয়ে পড়ে তার পদতলে। কখনো সে আক্রান্ত হয় দারিদ্রে্যর বিপুল যন্ত্রণায়, বিদ্ধ হয় নানাবিধ সংকটের তীরে। কখনো সতেজ সু-স্বাস্থ্যবান, কখনো দুর্বল-রুগ্ন। দীর্ঘ একটা সময় যৌবনের দৃপ্ততায় কাটানোর পর সে ম্রিয়মান হয় বার্ধক্যের কষাঘাতে। তুমি তোমার প্রাচুর্যে, সুস্বাস্থ্যে, যৌবনের দুর্দান্ত শক্তিময়তায় আল্লাহর সাথে থাক,—দারিদ্র্য, অসুস্থতা ও বার্ধক্যের দৌর্বল্যে তিনি তোমার পাশে থাকবেন।
আল্লাহ তাআলার হেফাজত লাভের কতিপয় উপকরণ :—
(ক) বাধ্যতামূলক বিধি-নিষেধগুলোকে পরিপূর্ণ রূপে মেনে চলা। যথা: মসজিদে এসে জামাতসহ সঠিক ওয়াক্তে নামাজ আদায় করা।
(খ) নফল বা ঐচ্ছিক এবাদত-বন্দেগির মধ্য দিয়ে আল্লাহ তাআলার সান্নিধ্য লাভে এগিয়ে আসা। যেমন : সুন্নতে মুয়াক্কাদা, বিতর, এবং শরিয়ত-সিদ্ধ মাসিক ও বার্ষিক রোজা পালনে যত্নবান হওয়া।
(গ) দ্বীন ও দুনিয়া সংশ্লিষ্ট সার্বক্ষণিক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে দিন-রাত দোয়া ও প্রার্থনা করা।
(ঘ) এরূপ নেককারগণের সংস্পর্শ বা সংশ্রব লাভ করা যারা তোমাকে তোমার মাওলা আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছে দিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে। তোমাকে বন্দেগীময় জীবন যাপনে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করবে এবং তোমার দ্বীন- ইসলামের হেফাজতের গুরু দায়িত্ব-ভার গ্রহণ করবে।
(ঙ) এমন উপকারী জ্ঞান অন্বেষণে আত্মনিমগ্ন হওয়া যা তোমাকে প্রভু, স্রষ্টা, সম্বন্ধে জ্ঞান দানের পাশাপাশি তার আদেশ-নিষেধাবলীর পরিচয় তুলে ধরবে।
(১১) উপরোক্ত হাদিসের অন্যতম শিক্ষা এই যে, দোয়া একটি প্রণিধানযোগ্য মৌলিক এবাদত। আল্লাহ তাআলা নিম্নোক্ত আয়াতে দ্ব্যর্থহীন ভাবে আহবান জানিয়েছেন—
وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ .( غافر : ৬০)
‘এবং তোমার প্রভু বলেন : তোমরা আমাকে ডাক, আমি সাড়া দেব। [সূরা গাফের : আয়াত ৬০] তিনি আরো বলেন :—
وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ . ( البقرة : ৮৬)
‘আর আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে, বস্ত্তত: আমি রয়েছি সন্নিকটে। আমি প্রার্থীর প্রার্থনা কবুল করি, যখন আমার কাছে প্রার্থনা করে। [বাক্বারা : ৮৬]
আল্লাহর নিকট প্রার্থনার কতিপয় শুভ ফলাফল :
(ক) স্বীয় লাঞ্ছনা, অবমাননা, ও চরম মুখাপেক্ষিতার বহি:প্রকাশ।
(খ) উপকার সাধন ও অপকার অপসারণের মতো পরম চাওয়া-পাওয়া।
(গ) এতে রয়েছে বিপুল প্রতিদান ও পুরস্কার। এর মাধ্যমে মার্জিত হয় পাপাচার ও অনাচার।
(ঘ) নিরাপত্তা ও অনুকম্পাসহ আল্লাহ তার সাথেই আছেন—এরূপ একটি সঙ্গবোধ অন্তরের গভীরে জাগ্রত হয় এর মাধ্যমে।
(ঙ) আল্লাহ তাআলার নিম্ন উদ্ধৃত আয়াতকে বাস্তবে রূপ দান করা হয়। তিনি বলেন :—
إياك نعبد وإياك نستعين ( الفاتحة : ৪)
‘শুধু তোমারই এবাদত করি এবং তোমারই নিকট প্রার্থনা জানাই।’ [সূরা ফাতেহা : আয়াত ৪]
(চ) আল্লাহ তাআলার ক্রোধ থেকে দূরত্ব বজায় রাখার এটিও অন্যতম উত্তম পথ ও পন্থা। যেমন : নবী করিম সা. বলেছেন : যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে দোয়া করে না তার উপর তাঁর ক্রোধ নিপতিত হয়।
(১২) এ মহান হাদিস থেকে শিক্ষণীয় বিষয়টিও পরিস্ফুটিত হয় যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে এমন বিষয়ে—যা তিনি ব্যতীত আর কেউ পারে না—সাহায্য, আশ্রয়সহ কিছুই চাওয়া যাবে না। আল্লাহ ব্যতীত অন্য যেই হোক না কেন কারোরই জন্যে কোন প্রকার এবাদত করা যাবে না। এই ঐকান্তিক ও নিষ্ঠাপূর্ণ এবাদতের পথ ব্যতীত এবাদতের গ্রহণযোগ্যতা ও দ্বীন-দুনিয়ার সফলতা বা মূল লক্ষ্য-উদ্দেশ্য অর্জন আদৌ সম্ভব নয়।
(১৩) অত্র অধ্যায়ে আলোচ্য হাদিস থেকে এ বিষয়টিও সাব্যস্ত হয় যে, বান্দা এই জড় জগতে ভাল-মন্দ, লাভ-লোকসান যাই প্রাপ্ত হোক না কেন তা সবই তার পূর্ব লিখিত ও নিরূপিত ভাগ্য অনুযায়ীই হয়ে থাকে। সৃষ্টিকুলের সমগ্র সৃষ্টিই যদি একযোগে কোন বিষয়ে প্রভূত চেষ্টা তদবির চালিয়ে যায়, তবে পরিণাম তাই হয় যা পূর্বে লিখিত ও নির্ধারিত। বিন্দু বা অনু পরিমাণও তার বিপরীত ঘটে না এবং ঘটতে পারে না। আল্লাহ তাআলা বলেন :—
قُلْ لَنْ يُصِيبَنَا إِلَّا مَا كَتَبَ اللَّهُ لَنَا . ( التوبة :৫১)
‘আপনি বলুন আমাদের কিছুই পৌঁছোবে না কিন্তু যা আল্লাহ আমাদের জন্য লিখে রেখেছেন।’ [আত-তাওবাহ : আয়াত ৫৮] তিনি আরো বলেন :—
مَا أَصَابَ مِنْ مُصِيبَةٍ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي أَنْفُسِكُمْ إِلَّا فِي كِتَابٍ مِنْ قَبْلِ أَنْ نَبْرَأَهَا . ( الحديد : ২২)
‘পৃথিবীতে এবং ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের উপর কোন বিপদ আসে না কিন্তু (যা আসে) তা জগৎ সৃষ্টির পূর্বেই কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে।’ [আল হাদীদ : ২২]
(১৪) আল্লাহ তাআলার ফয়সালা ও নির্ধারিত ভাগ্য-লিপির প্রতি বিশ্বাস, এর শেকড় দৃঢ়ভাবে আত্মস্থ করাও ঈমানের অন্যতম স্তম্ভ। এর উদ্দেশ্য আদৌ এ নয় যে, কেউ আমল ছেড়ে দিয়ে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকবে। কেননা, যিনি তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ও ভাগ্যলিপির প্রতি ঈমান আনয়নের নির্দেশ প্রদান করেছেন, তিনিই তো আবার সুফল বয়ে আনে এমন কর্মতৎপরতার প্রয়াস-প্রক্রিয়ায় সক্রিয় থাকারও আদেশ করেছেন। যেমন : ইমাম মুসলিম রহ. তার কিতাব মুসলিম শরীফে বর্ণনা করেন—
اعملوا فكل ميسر لما خلق له .
‘তোমরা কর্ম করে যাও। কারণ, প্রত্যেককে যে জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে তা সহজ করে দেয়া হয়েছে।’ [বোখারি : ৬৯৯৬]
সমাপ্ত
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন