HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
আশুরাকে ঘিরে ইসলামী আদর্শ ও জাহিলি কীর্তিকলাপ
লেখকঃ আব্দুল আযীয ইবন মারযুক তারিফী
৩
আশুরাকে ঘিরে ইসলামী আদর্শ ও জাহিলি কীর্তিকলাপসকল প্রশংসা আল্লাহর জন্যই, আমি তার যথাযোগ্য প্রশংসা করছি এবং সালাত ও সালাম প্রেরণ করছি তার বান্দা ও নবীর ওপর। অতঃপর,
আশুরার দিনটি ইসলামে মহাসম্মানিত একটি দিন। এই দিনে হিজরতের পূর্বে ও পরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিয়াম পালন করতেন। তার সিয়াম ছিল আল্লাহ তা‘আলার নি‘আমতের শুকরিয়াস্বরূপ। কারণ, আল্লাহ এই দিনে মূসা আলাইহিস সালামকে ফির‘আউনের কবল থেকে মুক্তি দিয়েছেন। এটিই আশুরার শ্রেষ্ঠত্বের গোড়ার ঘটনা। এ কারণেই অন্যান্য দিনের ওপর তার মর্যাদা।
ইসলাম উত্তর জাহিলি যুগে এই দিনটিতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিয়াম রাখতেন, মক্কায় কুরাইশরা এবং মদিনার ইয়াহূদীরাও সিয়াম রাখত। ‘সহীহ বুখারী’ ও ‘সহীহ মুসলিম’ গ্রন্থে ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় এসে আশুরার দিনে ইয়াহূদীদের সিয়াম রাখতে দেখেন, তিনি বলেন: ‘এটি কোন দিন, তোমরা যার সিয়াম রাখ?’ তারা বলল: ‘এটি মহাসম্মানিত দিন, এই দিনে মূসা ও তার কাওমকে আল্লাহ নাজাত দিয়েছেন এবং ফির‘আউন ও তার কাওমকে ডুবিয়ে মেরেছেন। ফলে, মূসা তার শুকরিয়াস্বরূপ সিয়াম রেখেছেন, আমরাও তার সিয়াম রাখি’। তিনি বললেন: ‘তোমাদের চাইতে আমরাই মূসার অধিক ঘনিষ্ঠ ও যোগ্য অনুসারী’। তারপর থেকে তিনি তাতে সিয়াম রাখেন ও তার সিয়াম রাখার নির্দেশ দেন এবং অধিক গুরুত্ব হেতু তার সিয়াম রাখা তিনি ফরয করেন, যা রমযানের সিয়াম ফরয হওয়ার আগেকার ঘটনা, পরবর্তীতে যখন রমযানের সিয়াম ফরয হয়, তার বিধান রহিত হয়ে যায়, তবে কয়েকটি কারণে আজও তার ফযীলত অন্যান্য সিয়ামের ওপর বহাল আছে:
১. একাধিক নবী যুগযুগ ধরে আশুরার সিয়াম রেখেছেন। উল্লেখ্য যে, ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল এর ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে একটি বর্ণনা এসেছে, যার অর্থ হচ্ছে, ‘মূসার পূর্বেকার যুগেও আশুরার সিয়াম রাখা হত’ সেটি বিশুদ্ধ নয়।
জ্ঞাতব্য যে, বনী ইসরাঈলের জন্য ঈসা আলাইহিস সালামকে প্রেরণ করা হয়েছিল, মূসার কাওম তথা ইয়াহূদী সম্প্রদায় থেকে যে তার অনুসরণ করে নি ও তার প্রতি ঈমান আনে নি সে কাফির। যেমন, আব্দুল্লাহ ইবন সালাম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসার আগে কাফির ছিল। কারণ, সে ঈসা আলাইহিস সালামের অনুসরণ করে নি। ‘সহীহ মুসলিম’ গ্রন্থে ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
«حِينَ صَامَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ قَالُوا : يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّهُ يَوْمٌ تُعَظِّمُهُ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «فَإِذَا كَانَ الْعَامُ الْمُقْبِلُ إِنْ شَاءَ اللهُ صُمْنَا الْيَوْمَ التَّاسِعَ» قَالَ : فَلَمْ يَأْتِ الْعَامُ الْمُقْبِلُ، حَتَّى تُوُفِّيَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ» .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আশুরার সিয়াম রাখেন ও তার সিয়াম রাখার নির্দেশ দেন, তখন সাহাবীগণ বললেন: ‘হে আল্লাহর রাসূল, এই দিনটিকে তো ইয়াহূদী ও নাসারারা সম্মান করে’! তিনি বললেন: ‘যখন আগামী বছর হবে, ইনশাআল্লাহ আমরা নবম দিনেও সিয়াম রাখবো’। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন: ‘আগামী বছর আসতে পারে নি, তার আগেই তিনি মারা গেছেন”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৩৪।]
২. রমযানের পূর্বে আশুরার সিয়াম ফরয ছিল। এই বৈশিষ্ট্য আশুরার সিয়াম ছাড়া কোনো সিয়ামের নেই, তবে যখন রমযান মাসের সিয়াম ফরয হয়, তিনি সাহাবীদের আশুরার সিয়াম রাখার নির্দেশ করা ত্যাগ করেন, যদিও সিয়ামের প্রতি তার গুরুত্ব ও আগ্রহ ছিল। ‘সহীহ বুখারীতে ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«صَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَاشُورَاءَ، وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ فَلَمَّا فُرِضَ رَمَضَانُ تُرِكَ ذلك»
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশুরার দিন সিয়াম রাখেন ও তার সিয়াম রাখার নির্দেশ দেন, কিন্তু যখন রমযান ফরয হয়, তিনি সেটি ত্যাগ করেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৯২।] এই হাদীস বলে, আশুরার ফরয বিধান রহিত, তবে তার মুস্তাহাব বিধান এখনো বাকি আছে।
৩. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষদেরকে আশুরার সিয়াম রাখার ঘোষণা দিতে লোক পাঠিয়েছেন। আশুরা ও রমযান ব্যতীত ফরয বা নফল কোনো সিয়ামের জন্যেই তিনি এরূপ করেন নি। ‘সহীহ বুখারী’ ও ‘সহীহ মুসলিম’ গ্রন্থদ্বয়ে রুবাইয়্যে‘ তনয়া মুআউওয়্যিয থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ আশুরার সকালে আনসারদের পল্লীতে, যারা মদিনার আশেপাশে ছিল, সংবাদ পাঠালেন যে,
«مَنْ كَانَ أَصْبَحَ مِنْكُمْ صَائِمًا فَلْيُتِمَّ صَوْمَهُ، وَمَنْ كَانَ أَصْبَحَ مِنْكُمْ مفطراً فَلْيُتِمَّ بَقِيَّةَ يَوْمِهِ»
“তোমাদের থেকে যে সিয়াম অবস্থায় ভোর করেছে সে যেন তার সিয়াম পূর্ণ করে, আর যে সিয়াম না রাখা অবস্থায় ভোর করেছে সে যেন তার অবশিষ্ট দিন পূর্ণ করে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৩৬।]
তারপর থেকে আমরা সিয়াম রাখি ও আমাদের ছোট বাচ্চাদের দ্বারা সিয়াম অনুষ্ঠান করি। আমরা তুলা দিয়ে খেলনা বানিয়ে বাচ্চাদের জন্য মসজিদে রেখে দিতাম। যখন তাদের কেউ খাবারের জন্য কাঁদত, তাকে সেই খেলনা দিয়ে ভুলিয়ে রাখতাম যতক্ষণ না সে ইফতারে উপনীত হত। অপর বর্ণনায় এসেছে,
«فَإِذَا سَأَلُونَا الطَّعَامَ، أَعْطَيْنَاهُمُ اللُّعْبَةَ تُلْهِيهِمْ حَتَّى يُتِمُّوا صَوْمَهُمْ» .
“যখন তারা আমাদের কাছে খাবার চাইত, আমরা তাদের খেলনা দিয়ে ভুলিয়ে রাখতাম যতক্ষণ না তারা তাদের সিয়াম পূর্ণ করত”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৩৬।]
আশুরার সিয়ামের ফযীলত:
আশুরার সিয়ামের ফলে বিগত এক বছরের পাপ মোচন হয়। ইমাম মুসলিম তার ‘সহীহ মুসলিম’ গ্রন্থে আবূ কাতাদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন: জনৈক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আশুরার সিয়াম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল, তিনি বললেন:
«أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ»
“আল্লাহর নিকট আশা করছি যে, তিনি পূর্বেকার এক বছরের গুনাহ মাফ করবেন”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৬২।]
‘আরাফার সিয়াম ছাড়া আশুরার সমতুল্য কোনো নফল সিয়াম নেই। ‘আরাফার সিয়াম পূর্বেকার ও পরবর্তী বছরের পাপের কাফফারা। যে ‘আরাফা ও আশুরার সিয়াম রাখল, সে বিগত বছরের পাপ মোচন করার দু’টি উপকরণ জমা করল, তাই সে অন্যদের চেয়ে বেশিই পাপ মোচন নিশ্চিত করল। আর সিয়ামে অনুষ্ঠেয় খোদ আমলের সাওয়াব তো আছেই, যেমন ইস্তেগফার করা, যা সিয়ামের ধারক তুলনামুলক বেশিই আঞ্জাম দেয়, যদিও সত্যিকার তাওবা একবার ইস্তেগফার দ্বারাই কবুল হয়। কিন্তু শরী‘আত প্রণেতা ইস্তেগফার, ‘আরাফা ও আশুরার সিয়ামের পাপ মোচন করার ভূমিকা একটু বেশি স্পষ্ট করেছেন, তাদের অন্যান্য ফযীলত সেরূপ স্পষ্ট করেন নি, কারণ পাপ কল্যাণকে দূরে ঠেলে দেয় ও বিপদকে কাছে টেনে আনে। যেমন কতক মনীষী বলেছেন: “কোনো মুসীবতই পাপ ছাড়া আসে নি”। অতএব, যখন বান্দা থেকে পাপ দূর হবে তখন অমনি তার অনিষ্ট ও কু-প্রভাব দূর হবে। পাপের অনিষ্ট দূর হলে তার জায়গায় প্রতিস্থাপন হবে কল্যাণ ও বরকত। এই জন্যে শরী‘আত উপকরণ যথা সিয়ামের দিকে বেশি নজর দিয়েছে, যেরূপ নজর দেয় নি তার ফল ও সাওয়াবের দিকে, কারণ সিয়াম রাখা হলে সেটি হাসিল হবেই। শরী‘আতের সকল অধ্যায় থেকে এই নীতি স্পষ্ট হয়।
৪. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যান্য সিয়াম থেকে আশুরার সিয়ামে মনোযোগ বেশি দিয়েছেন, বরং তিনি আশুরা ও রমযানকে সমান গুরুত্ব দিয়ে অন্বেষণ করেছেন, যেমন সহীহ বুখারীতে ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
«ما رَأَيْتُ النَّبِي - صلى الله عليه وسلم - يَتَحرَّى صِيام يَومٍ فَضَّلَهُ على غَيرهِ إِلا هذَا اليوم يومَ عَاشُوراءَ وَهذا الشهرَ يعنِي شَهْرَ رَمضانَ» .
“আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখি নি ফযীলত বর্ণনা করার পরও আশুরা ও রমযানের ন্যায় কোনো সিয়াম অন্বেষণ করেছেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০০৬।] অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশুরা ও রমযানের ন্যায় অনেক সিয়ামের ফযীলত বর্ণনা করেছেন, তবে গুরুত্ব দিয়ে অন্বেষণ করেছেন আশুরা ও রমযানের সিয়াম।
৫. সাহাবীগণ আশুরার সিয়ামে বেশি আগ্রহী ছিলেন, তার নির্দেশ করতেন ও ছুটে যাওয়ার আশঙ্কায় থাকতেন, যেমন ইবন জারির তার “তাহযিব” গ্রন্থে আসওয়াদ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন:
«ما أدركت أحداً من أصحاب رسول الله - صلى الله عليه وسلم - كان آمر بصوم عاشوراء من علي وأبي موسى» .
“আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের মধ্য থেকে আলী ও আবূ মুসার ন্যায় কাউকে আশুরার সিয়াম রাখার নির্দেশ করতে দেখি নি”। [ইবন জারীর, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং ২৯৫১৬।]
আব্দুর রহমান ইবন আউফ সম্পর্কে বর্ণিত, তিনি দিনের প্রথম প্রহরে উপনীত হয়েও আশুরা জানতে পারেন নি, অতঃপর জেনে ঘাবড়ে যান! তিনি সিয়ামের নিয়ত করেন ও আমাদের সিয়াম রাখার নির্দেশ দেন”।
সাহাবী ও তাবেঈদের উল্লিখিত বাণী ও ঘটনাবলি সহীহ সূত্রে বর্ণিত।
আশুরা ও তার পূর্বের দিন সিয়াম রাখা সুন্নত, যেন ইয়াহূদী ও নাসারাদের সাথে সামঞ্জস্য না হয়। কারণ, তারা শুধু আশুরায় তথা দশ তারিখে সিয়াম রাখে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও প্রথম দশ তারিখে সিয়াম রাখতেন, অতঃপর তাদের সামঞ্জস্য পরিহার করার জন্যে তার পূর্বের দিনও সিয়াম রাখার নির্দেশ দেন, যেমন সহীহ গ্রন্থে হাকাম ইবন আ‘রাজ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
«انْتَهَيْتُ إِلَى ابْنِ عَبَّاسٍ- رَضِيَ اللهً عَنْهُمَا - وَهُوَ مُتَوَسِّدٌ رِدَاءَهُ فِي زَمْزَمَ فَقُلْتُ لَهُ : أَخْبِرْنِي عَنْ صَوْمِ عَاشُورَاءَ ! فَقَالَ : إِذَا رَأَيْتَ هِلَالَ الْمُحَرَّمِ فَاعْدُدْ وَأَصْبِحْ يَوْمَ التَّاسِعِ صَائِمًا . قُلْتُ : هَكَذَا كَانَ رَسُولُ اللهِ - صلى الله عليه وسلم - يَصُومُهُ؟ قَالَ : نَعَمْ»
“আমি ইবন আব্বাসের নিকট গিয়ে পৌঁছলাম, তখন তিনি যমযমের পাশে চাদর জড়িয়ে ছিলেন, আমি বললাম: আমাকে আশুরার সিয়াম সম্পর্কে বলুন। তিনি বললেন: ‘যখন তুমি মুহররামের চাঁদ দেখ হিসেব কর ও নবম তারিখ সিয়াম রাখ’। আমি বললাম: ‘এভাবেই কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিয়াম রাখতেন’? তিনি বললেন: ‘হ্যাঁ”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৩৩।]
এই হাদীস থেকে স্পষ্ট হলো যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই নয় ও দশ তারিখের সিয়াম অনুমোদন দিয়েছেন। কারণ, দশ তারিখকে “আশুরা” বলা হয়, নয় তারিখকে বলা হয় ‘তাসু‘আ’। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা নয় তারিখ সিয়াম রাখার নির্দেশ দিয়েছেন, কারণ আশুরার সিয়াম প্রশ্নকর্তার জানা ছিল।
সাহাবী ও অন্যান্য পূর্বসূরি আশুরা ও তার পূর্বের দিন সিয়াম রাখতেন। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা, ইবন সিরিন প্রমুখ থেকে এরূপ বর্ণিত। মুহাম্মদ ইবন সিরিন শুধু দশ তারিখে সিয়াম রাখতেন, পরে যখন তার নিকট পৌঁছল যে, ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা নয় ও দশ তারিখ সিয়াম রাখেন, তিনিও নয় ও দশ তারিখ সিয়াম রাখা আরম্ভ করেন।
আব্দুর রায্যাক তার ‘মুসান্নাফ’ গ্রন্থে এবং ইমাম বায়হাকি প্রমুখ তাদের স্বস্ব গ্রন্থে ইবন জুরাইজ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: “আমাকে ‘আতা বলেছেন, তিনি ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমাকে আশুরার দিন বলতে শুনেছেন:
«خَالِفُوا الْيَهُودَ وَصُومُوا التَّاسِعَ وَالْعَاشِرَ» .
“তোমরা ইয়াহূদীদের বিরোধিতা কর এবং নয় ও দশ তারিখ সিয়াম রাখ”। [মুসান্নাফে আবদুর রায্যাক, হাদীস নং ৭৮৩৯।]
আশুরা, আশুরার আগে ও পরে তিন দিন সিয়াম রাখার কোনো সহীহ দলীল নেই। অধিকন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু সামঞ্জস্য ত্যাগ করার ইচ্ছা করেছেন, সেটি নয় তারিখের সিয়াম দ্বারাই পূর্ণ হয়। কোনো সাহাবী থেকে প্রমাণিত নয় যে, তিনি এগারো তারিখও সিয়াম রেখেছেন, তবে পরবর্তী কতক মনীষী থেকে বর্ণিত আছে, যেমন তাউস ইবন কায়সান প্রমুখ। ইবন আবূ শায়বাহ বর্ণনা করেন: তাউস ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে আশুরা, আশুরার আগে ও পরে তিন দিন সিয়াম রাখতেন।
যদি কেউ শুধু দশ তারিখে সিয়াম রাখে, তার আগে ও পরে সিয়াম না রাখে, কোনো সমস্যা নেই, হ্যাঁ সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও এরূপ করা অনুত্তম। কারণ, এভাবে রাসূলের ইত্তেবা অপূর্ণাঙ্গ হয়, তবে পাপ মোচনের জন্য এতটুকু যথেষ্ট, কিন্তু কাফিরদের সামঞ্জস্য পরিহার করার সাওয়াব পাবে না। কতক মনীষী থেকে শুধু আশুরার সিয়াম রাখার প্রমাণ আছে, যেমন আব্দুর রায্যাক তার ‘মুসান্নাফ’ গ্রন্থে আবূ বকর ইবন আব্দুর রহমান ইবন হারিস থেকে বর্ণনা করেন: উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু আশুরার রাতে আব্দুর রহমান ইবন হারিসের নিকট সংবাদ পাঠান যে, “সাহরী খাও ও সিয়াম রাখ, ফলে তিনি সিয়াম রাখেন”।
আশুরার দিনটি ইসলামে মহাসম্মানিত একটি দিন। এই দিনে হিজরতের পূর্বে ও পরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিয়াম পালন করতেন। তার সিয়াম ছিল আল্লাহ তা‘আলার নি‘আমতের শুকরিয়াস্বরূপ। কারণ, আল্লাহ এই দিনে মূসা আলাইহিস সালামকে ফির‘আউনের কবল থেকে মুক্তি দিয়েছেন। এটিই আশুরার শ্রেষ্ঠত্বের গোড়ার ঘটনা। এ কারণেই অন্যান্য দিনের ওপর তার মর্যাদা।
ইসলাম উত্তর জাহিলি যুগে এই দিনটিতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিয়াম রাখতেন, মক্কায় কুরাইশরা এবং মদিনার ইয়াহূদীরাও সিয়াম রাখত। ‘সহীহ বুখারী’ ও ‘সহীহ মুসলিম’ গ্রন্থে ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় এসে আশুরার দিনে ইয়াহূদীদের সিয়াম রাখতে দেখেন, তিনি বলেন: ‘এটি কোন দিন, তোমরা যার সিয়াম রাখ?’ তারা বলল: ‘এটি মহাসম্মানিত দিন, এই দিনে মূসা ও তার কাওমকে আল্লাহ নাজাত দিয়েছেন এবং ফির‘আউন ও তার কাওমকে ডুবিয়ে মেরেছেন। ফলে, মূসা তার শুকরিয়াস্বরূপ সিয়াম রেখেছেন, আমরাও তার সিয়াম রাখি’। তিনি বললেন: ‘তোমাদের চাইতে আমরাই মূসার অধিক ঘনিষ্ঠ ও যোগ্য অনুসারী’। তারপর থেকে তিনি তাতে সিয়াম রাখেন ও তার সিয়াম রাখার নির্দেশ দেন এবং অধিক গুরুত্ব হেতু তার সিয়াম রাখা তিনি ফরয করেন, যা রমযানের সিয়াম ফরয হওয়ার আগেকার ঘটনা, পরবর্তীতে যখন রমযানের সিয়াম ফরয হয়, তার বিধান রহিত হয়ে যায়, তবে কয়েকটি কারণে আজও তার ফযীলত অন্যান্য সিয়ামের ওপর বহাল আছে:
১. একাধিক নবী যুগযুগ ধরে আশুরার সিয়াম রেখেছেন। উল্লেখ্য যে, ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল এর ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে একটি বর্ণনা এসেছে, যার অর্থ হচ্ছে, ‘মূসার পূর্বেকার যুগেও আশুরার সিয়াম রাখা হত’ সেটি বিশুদ্ধ নয়।
জ্ঞাতব্য যে, বনী ইসরাঈলের জন্য ঈসা আলাইহিস সালামকে প্রেরণ করা হয়েছিল, মূসার কাওম তথা ইয়াহূদী সম্প্রদায় থেকে যে তার অনুসরণ করে নি ও তার প্রতি ঈমান আনে নি সে কাফির। যেমন, আব্দুল্লাহ ইবন সালাম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসার আগে কাফির ছিল। কারণ, সে ঈসা আলাইহিস সালামের অনুসরণ করে নি। ‘সহীহ মুসলিম’ গ্রন্থে ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
«حِينَ صَامَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ قَالُوا : يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّهُ يَوْمٌ تُعَظِّمُهُ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «فَإِذَا كَانَ الْعَامُ الْمُقْبِلُ إِنْ شَاءَ اللهُ صُمْنَا الْيَوْمَ التَّاسِعَ» قَالَ : فَلَمْ يَأْتِ الْعَامُ الْمُقْبِلُ، حَتَّى تُوُفِّيَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ» .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আশুরার সিয়াম রাখেন ও তার সিয়াম রাখার নির্দেশ দেন, তখন সাহাবীগণ বললেন: ‘হে আল্লাহর রাসূল, এই দিনটিকে তো ইয়াহূদী ও নাসারারা সম্মান করে’! তিনি বললেন: ‘যখন আগামী বছর হবে, ইনশাআল্লাহ আমরা নবম দিনেও সিয়াম রাখবো’। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন: ‘আগামী বছর আসতে পারে নি, তার আগেই তিনি মারা গেছেন”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৩৪।]
২. রমযানের পূর্বে আশুরার সিয়াম ফরয ছিল। এই বৈশিষ্ট্য আশুরার সিয়াম ছাড়া কোনো সিয়ামের নেই, তবে যখন রমযান মাসের সিয়াম ফরয হয়, তিনি সাহাবীদের আশুরার সিয়াম রাখার নির্দেশ করা ত্যাগ করেন, যদিও সিয়ামের প্রতি তার গুরুত্ব ও আগ্রহ ছিল। ‘সহীহ বুখারীতে ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«صَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَاشُورَاءَ، وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ فَلَمَّا فُرِضَ رَمَضَانُ تُرِكَ ذلك»
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশুরার দিন সিয়াম রাখেন ও তার সিয়াম রাখার নির্দেশ দেন, কিন্তু যখন রমযান ফরয হয়, তিনি সেটি ত্যাগ করেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৯২।] এই হাদীস বলে, আশুরার ফরয বিধান রহিত, তবে তার মুস্তাহাব বিধান এখনো বাকি আছে।
৩. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষদেরকে আশুরার সিয়াম রাখার ঘোষণা দিতে লোক পাঠিয়েছেন। আশুরা ও রমযান ব্যতীত ফরয বা নফল কোনো সিয়ামের জন্যেই তিনি এরূপ করেন নি। ‘সহীহ বুখারী’ ও ‘সহীহ মুসলিম’ গ্রন্থদ্বয়ে রুবাইয়্যে‘ তনয়া মুআউওয়্যিয থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ আশুরার সকালে আনসারদের পল্লীতে, যারা মদিনার আশেপাশে ছিল, সংবাদ পাঠালেন যে,
«مَنْ كَانَ أَصْبَحَ مِنْكُمْ صَائِمًا فَلْيُتِمَّ صَوْمَهُ، وَمَنْ كَانَ أَصْبَحَ مِنْكُمْ مفطراً فَلْيُتِمَّ بَقِيَّةَ يَوْمِهِ»
“তোমাদের থেকে যে সিয়াম অবস্থায় ভোর করেছে সে যেন তার সিয়াম পূর্ণ করে, আর যে সিয়াম না রাখা অবস্থায় ভোর করেছে সে যেন তার অবশিষ্ট দিন পূর্ণ করে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৩৬।]
তারপর থেকে আমরা সিয়াম রাখি ও আমাদের ছোট বাচ্চাদের দ্বারা সিয়াম অনুষ্ঠান করি। আমরা তুলা দিয়ে খেলনা বানিয়ে বাচ্চাদের জন্য মসজিদে রেখে দিতাম। যখন তাদের কেউ খাবারের জন্য কাঁদত, তাকে সেই খেলনা দিয়ে ভুলিয়ে রাখতাম যতক্ষণ না সে ইফতারে উপনীত হত। অপর বর্ণনায় এসেছে,
«فَإِذَا سَأَلُونَا الطَّعَامَ، أَعْطَيْنَاهُمُ اللُّعْبَةَ تُلْهِيهِمْ حَتَّى يُتِمُّوا صَوْمَهُمْ» .
“যখন তারা আমাদের কাছে খাবার চাইত, আমরা তাদের খেলনা দিয়ে ভুলিয়ে রাখতাম যতক্ষণ না তারা তাদের সিয়াম পূর্ণ করত”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৩৬।]
আশুরার সিয়ামের ফযীলত:
আশুরার সিয়ামের ফলে বিগত এক বছরের পাপ মোচন হয়। ইমাম মুসলিম তার ‘সহীহ মুসলিম’ গ্রন্থে আবূ কাতাদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন: জনৈক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আশুরার সিয়াম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল, তিনি বললেন:
«أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ»
“আল্লাহর নিকট আশা করছি যে, তিনি পূর্বেকার এক বছরের গুনাহ মাফ করবেন”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৬২।]
‘আরাফার সিয়াম ছাড়া আশুরার সমতুল্য কোনো নফল সিয়াম নেই। ‘আরাফার সিয়াম পূর্বেকার ও পরবর্তী বছরের পাপের কাফফারা। যে ‘আরাফা ও আশুরার সিয়াম রাখল, সে বিগত বছরের পাপ মোচন করার দু’টি উপকরণ জমা করল, তাই সে অন্যদের চেয়ে বেশিই পাপ মোচন নিশ্চিত করল। আর সিয়ামে অনুষ্ঠেয় খোদ আমলের সাওয়াব তো আছেই, যেমন ইস্তেগফার করা, যা সিয়ামের ধারক তুলনামুলক বেশিই আঞ্জাম দেয়, যদিও সত্যিকার তাওবা একবার ইস্তেগফার দ্বারাই কবুল হয়। কিন্তু শরী‘আত প্রণেতা ইস্তেগফার, ‘আরাফা ও আশুরার সিয়ামের পাপ মোচন করার ভূমিকা একটু বেশি স্পষ্ট করেছেন, তাদের অন্যান্য ফযীলত সেরূপ স্পষ্ট করেন নি, কারণ পাপ কল্যাণকে দূরে ঠেলে দেয় ও বিপদকে কাছে টেনে আনে। যেমন কতক মনীষী বলেছেন: “কোনো মুসীবতই পাপ ছাড়া আসে নি”। অতএব, যখন বান্দা থেকে পাপ দূর হবে তখন অমনি তার অনিষ্ট ও কু-প্রভাব দূর হবে। পাপের অনিষ্ট দূর হলে তার জায়গায় প্রতিস্থাপন হবে কল্যাণ ও বরকত। এই জন্যে শরী‘আত উপকরণ যথা সিয়ামের দিকে বেশি নজর দিয়েছে, যেরূপ নজর দেয় নি তার ফল ও সাওয়াবের দিকে, কারণ সিয়াম রাখা হলে সেটি হাসিল হবেই। শরী‘আতের সকল অধ্যায় থেকে এই নীতি স্পষ্ট হয়।
৪. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যান্য সিয়াম থেকে আশুরার সিয়ামে মনোযোগ বেশি দিয়েছেন, বরং তিনি আশুরা ও রমযানকে সমান গুরুত্ব দিয়ে অন্বেষণ করেছেন, যেমন সহীহ বুখারীতে ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
«ما رَأَيْتُ النَّبِي - صلى الله عليه وسلم - يَتَحرَّى صِيام يَومٍ فَضَّلَهُ على غَيرهِ إِلا هذَا اليوم يومَ عَاشُوراءَ وَهذا الشهرَ يعنِي شَهْرَ رَمضانَ» .
“আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখি নি ফযীলত বর্ণনা করার পরও আশুরা ও রমযানের ন্যায় কোনো সিয়াম অন্বেষণ করেছেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০০৬।] অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশুরা ও রমযানের ন্যায় অনেক সিয়ামের ফযীলত বর্ণনা করেছেন, তবে গুরুত্ব দিয়ে অন্বেষণ করেছেন আশুরা ও রমযানের সিয়াম।
৫. সাহাবীগণ আশুরার সিয়ামে বেশি আগ্রহী ছিলেন, তার নির্দেশ করতেন ও ছুটে যাওয়ার আশঙ্কায় থাকতেন, যেমন ইবন জারির তার “তাহযিব” গ্রন্থে আসওয়াদ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন:
«ما أدركت أحداً من أصحاب رسول الله - صلى الله عليه وسلم - كان آمر بصوم عاشوراء من علي وأبي موسى» .
“আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের মধ্য থেকে আলী ও আবূ মুসার ন্যায় কাউকে আশুরার সিয়াম রাখার নির্দেশ করতে দেখি নি”। [ইবন জারীর, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং ২৯৫১৬।]
আব্দুর রহমান ইবন আউফ সম্পর্কে বর্ণিত, তিনি দিনের প্রথম প্রহরে উপনীত হয়েও আশুরা জানতে পারেন নি, অতঃপর জেনে ঘাবড়ে যান! তিনি সিয়ামের নিয়ত করেন ও আমাদের সিয়াম রাখার নির্দেশ দেন”।
সাহাবী ও তাবেঈদের উল্লিখিত বাণী ও ঘটনাবলি সহীহ সূত্রে বর্ণিত।
আশুরা ও তার পূর্বের দিন সিয়াম রাখা সুন্নত, যেন ইয়াহূদী ও নাসারাদের সাথে সামঞ্জস্য না হয়। কারণ, তারা শুধু আশুরায় তথা দশ তারিখে সিয়াম রাখে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও প্রথম দশ তারিখে সিয়াম রাখতেন, অতঃপর তাদের সামঞ্জস্য পরিহার করার জন্যে তার পূর্বের দিনও সিয়াম রাখার নির্দেশ দেন, যেমন সহীহ গ্রন্থে হাকাম ইবন আ‘রাজ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
«انْتَهَيْتُ إِلَى ابْنِ عَبَّاسٍ- رَضِيَ اللهً عَنْهُمَا - وَهُوَ مُتَوَسِّدٌ رِدَاءَهُ فِي زَمْزَمَ فَقُلْتُ لَهُ : أَخْبِرْنِي عَنْ صَوْمِ عَاشُورَاءَ ! فَقَالَ : إِذَا رَأَيْتَ هِلَالَ الْمُحَرَّمِ فَاعْدُدْ وَأَصْبِحْ يَوْمَ التَّاسِعِ صَائِمًا . قُلْتُ : هَكَذَا كَانَ رَسُولُ اللهِ - صلى الله عليه وسلم - يَصُومُهُ؟ قَالَ : نَعَمْ»
“আমি ইবন আব্বাসের নিকট গিয়ে পৌঁছলাম, তখন তিনি যমযমের পাশে চাদর জড়িয়ে ছিলেন, আমি বললাম: আমাকে আশুরার সিয়াম সম্পর্কে বলুন। তিনি বললেন: ‘যখন তুমি মুহররামের চাঁদ দেখ হিসেব কর ও নবম তারিখ সিয়াম রাখ’। আমি বললাম: ‘এভাবেই কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিয়াম রাখতেন’? তিনি বললেন: ‘হ্যাঁ”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৩৩।]
এই হাদীস থেকে স্পষ্ট হলো যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই নয় ও দশ তারিখের সিয়াম অনুমোদন দিয়েছেন। কারণ, দশ তারিখকে “আশুরা” বলা হয়, নয় তারিখকে বলা হয় ‘তাসু‘আ’। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা নয় তারিখ সিয়াম রাখার নির্দেশ দিয়েছেন, কারণ আশুরার সিয়াম প্রশ্নকর্তার জানা ছিল।
সাহাবী ও অন্যান্য পূর্বসূরি আশুরা ও তার পূর্বের দিন সিয়াম রাখতেন। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা, ইবন সিরিন প্রমুখ থেকে এরূপ বর্ণিত। মুহাম্মদ ইবন সিরিন শুধু দশ তারিখে সিয়াম রাখতেন, পরে যখন তার নিকট পৌঁছল যে, ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা নয় ও দশ তারিখ সিয়াম রাখেন, তিনিও নয় ও দশ তারিখ সিয়াম রাখা আরম্ভ করেন।
আব্দুর রায্যাক তার ‘মুসান্নাফ’ গ্রন্থে এবং ইমাম বায়হাকি প্রমুখ তাদের স্বস্ব গ্রন্থে ইবন জুরাইজ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: “আমাকে ‘আতা বলেছেন, তিনি ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমাকে আশুরার দিন বলতে শুনেছেন:
«خَالِفُوا الْيَهُودَ وَصُومُوا التَّاسِعَ وَالْعَاشِرَ» .
“তোমরা ইয়াহূদীদের বিরোধিতা কর এবং নয় ও দশ তারিখ সিয়াম রাখ”। [মুসান্নাফে আবদুর রায্যাক, হাদীস নং ৭৮৩৯।]
আশুরা, আশুরার আগে ও পরে তিন দিন সিয়াম রাখার কোনো সহীহ দলীল নেই। অধিকন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু সামঞ্জস্য ত্যাগ করার ইচ্ছা করেছেন, সেটি নয় তারিখের সিয়াম দ্বারাই পূর্ণ হয়। কোনো সাহাবী থেকে প্রমাণিত নয় যে, তিনি এগারো তারিখও সিয়াম রেখেছেন, তবে পরবর্তী কতক মনীষী থেকে বর্ণিত আছে, যেমন তাউস ইবন কায়সান প্রমুখ। ইবন আবূ শায়বাহ বর্ণনা করেন: তাউস ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে আশুরা, আশুরার আগে ও পরে তিন দিন সিয়াম রাখতেন।
যদি কেউ শুধু দশ তারিখে সিয়াম রাখে, তার আগে ও পরে সিয়াম না রাখে, কোনো সমস্যা নেই, হ্যাঁ সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও এরূপ করা অনুত্তম। কারণ, এভাবে রাসূলের ইত্তেবা অপূর্ণাঙ্গ হয়, তবে পাপ মোচনের জন্য এতটুকু যথেষ্ট, কিন্তু কাফিরদের সামঞ্জস্য পরিহার করার সাওয়াব পাবে না। কতক মনীষী থেকে শুধু আশুরার সিয়াম রাখার প্রমাণ আছে, যেমন আব্দুর রায্যাক তার ‘মুসান্নাফ’ গ্রন্থে আবূ বকর ইবন আব্দুর রহমান ইবন হারিস থেকে বর্ণনা করেন: উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু আশুরার রাতে আব্দুর রহমান ইবন হারিসের নিকট সংবাদ পাঠান যে, “সাহরী খাও ও সিয়াম রাখ, ফলে তিনি সিয়াম রাখেন”।
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন