HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
আশুরাকে ঘিরে ইসলামী আদর্শ ও জাহিলি কীর্তিকলাপ
লেখকঃ আব্দুল আযীয ইবন মারযুক তারিফী
৪
আশুরার দিন জাহিলি কীর্তিকলাপআশুরার দিন মাতম ও শোক করা, যেমন শিয়া-রাফেযীরা করে, খুব নিন্দনীয় কাজ। এটি ইসলাম সম্পর্কে তাদের কঠিন মূর্খতা ও বিবেক বর্জিত আচরণ কয়েকটি কারণে:
প্রথমতঃ আশুরার দিন এসব অনুষ্ঠান করা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শের বিপরীত, বরং আশুরা পেয়ে খুশি হওয়া, তার আগমনে গৌরব বোধ করা, তাকে অভ্যর্থনা জানানো ও তার সিয়াম রেখে আল্লাহর শোকর আদায় করা তার সুন্নত; পক্ষান্তরে দুঃখ ও গোস্বার বহিঃপ্রকাশ, তাজিয়া মিছিল ও দেহ রক্তাক্ত করার ন্যায় কীর্তিকলাপ নি‘আমতের না শোকর ও দীনের ভেতর জঘন্য বিদ‘আত চর্চার নামান্তর, বরং শয়তানের নিকট বিবেক বিকানো ও মূর্খদের নিকট মাথা ধার দেওয়ার ন্যায় চরম বোকামি।
শিয়ারা এই দিন যে কীর্তিকলাপ করে তা অন্য সাধারণ দিনেও বৈধ নয়, বরং কোনো মুসিবতেই বৈধ নয়; উপরন্তু ইবাদত ও নি‘আমতের শোকর করার দিনে, আসমান কর্তৃক নির্দিষ্ট দিনে কীভাবে বৈধ হবে, যার ওপর চলে আসছে সকল ধর্মের অনুসারী, কি কিতাবি কি ইসলামী?
উল্লেখ্য যে, শাখা-প্রশাখাগত বিধানের ক্ষেত্রে ইসলাম অন্যান্য আসমানী ধর্ম থেকে পৃথক বৈশিষ্ট্যের হলেও আশুরার ক্ষেত্রে কিন্তু সেরূপ নয়, যা আশুরার মহত্ত্ব ও সম্মানের প্রতীক দ্বিধা নেই, হয়তো এই কারণে নবীগণ ও তাদের অনুসারী কর্তৃক পরম্পরায় সম্মানিত হয়ে আসছে আশুরা এবং কিয়ামত পর্যন্ত হবে। আশুরার আরো একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য যে, যদিও আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لَوْ كَانَ مُوسَى حَيًّا مَا وَسِعَهُ إِلَّا اتِّبَاعِي»
“যদি মূসা বেঁচে থাকত আমার অনুসরণ ব্যতীত তার কোনো গত্যন্তর ছিল না” [বাইহাকী, হাদীস নং ১৭৬।], আশুরার ক্ষেত্রে কিন্তু সেরূপ ঘটে নি, বরং আশুরার ক্ষেত্রে আমাদের নবী মূসার অনুসারী। অথচ শেষ জমানায় ঈসা আলাইহিস সালাম আসবেন, তাকেও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শরী‘আত মানতে হবে। এ থেকে শিয়াদের কর্তৃক একটি চূড়ান্ত আদর্শকে, মূসা, ঈসা ও আমাদের নবীর আদর্শকে লঙ্ঘন করার চিত্র স্পষ্ট হয়!
অধিকন্তু তাদের কীর্তিকলাপ সুস্থ বোধ ও সহীহ রুচি বিরোধী, যা মুক্ত চিন্তার বাহক ও বাস্তবধর্মী সবার সামনে স্পষ্ট হয় কয়েকভাবে:
প্রথমতঃ সেই আদম আলাইহিস সালামের অবতরণ ও জমিনে অবস্থান করা থেকে অদ্যাবধি কেউ জানে না যে, মানব জাতির কোনো সম্প্রদায় তাদের বড় ও অনুসৃত ব্যক্তির মৃত্যুকে ঘিরে, তার মর্তবা তাদের নিকট যত মহান ও মহত্তর হোক, বুক চাপড়ায়, রক্তাক্ত হয় ও তাজিয়া বের করে শোকাহত হয়, যেমন রাফিযীরা করে! বরং ইতিহাস তো প্রমাণ করে, এমন লোকও বিগত হয়েছেন যিনি হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকেও উত্তম ও শ্রেষ্ঠ ছিলেন, যেমন নবী ও রাসূলগণ। তাদের কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছে যেমন ইয়াহইয়া। কাউকে শূলে চড়ানোর দাবি করে তার উম্মত যেমন ঈসা। তাদের ছাড়াও আছে অনেক বিখ্যাত রাজা-বাদশা, প্রথিতযশা মনীষী ও পথিকৃৎ ব্যক্তিবর্গ, সত্যের অনুসারী বা মিথ্যার অনুগামী যাই হোক, তাদের মৃত্যুকে ঘিরে ভক্তবৃন্দের এরূপ করার নজির নেই! বস্তুত বিবেকের তাড়না থেকে এক জাতি অপর জাতির অনুসরণ করে, এবং নিজেদের আমলকে অপরের আমল দ্বারা যাচাই করে, যদিও সেটি সবক্ষেত্রে নয়, এই মানদণ্ডেও বক ধার্মিক শিয়ারা তাদের আমল কদাচ মেপে দেখে নি কোনো দিন। বিবেক অসমর্থিত পদ্ধতিতে শোক প্রকাশের জন্যে তো ধর্মীয় স্বীকৃতি প্রয়োজন, অথচ ধর্মই উল্টো তার থেকে নিষেধ করেছে কঠোরভাবে!
দ্বিতীয়তঃ মুশরিকেরা অন্যসব বস্তু থেকে তাদের উপাস্যের সাথে বেশিই জুড়ে থাকে, তাদের জীবন-মৃত্যু ও যাওয়া-আসা উপাস্যকে কেন্দ্র করেই সংঘটিত হয়, যেমন ছিল ইবরাহিম ও আমাদের নবীর কওমের অবস্থা। তারা উভয় মুশরিকদের উপাস্যকে ভেঙ্গে-চুরমার করে দিয়েছেন, তথাপি কোনো মুশরিক তাদের উপাস্যের জন্য সেরূপ মাতম করে না, হুসাইনের জন্যে শিয়ারা যেরূপ মাতম করে! আল্লাহ মুশরিকদের সম্পর্কে বলেছেন,
﴿يُحِبُّونَهُمۡ كَحُبِّ ٱللَّهِۖ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَشَدُّ حُبّٗا لِّلَّهِۗ ١٦٥﴾ [ البقرة : ١٦٥ ]
“তারা তাদের উপাস্যকে মহব্বত করে আল্লাহকে মহব্বত করার ন্যায়, বস্তুত যারা ঈমান এনেছে তারা আল্লাহকে বেশি মহব্বতকারী”। [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৬৫]
আমরা নিশ্চিত জানি যে, আল্লাহ যে সংবাদ দিয়েছেন তা চিরসত্য, যদিও প্রত্যেক সংবাদ সত্য-মিথ্যার সম্ভাবনা রাখে, কিন্তু এখানে সেই সম্ভাবনা নেই। কারণ, এটি গায়েবী সংবাদ হলেও তার সূত্র অহী বিধায় চূড়ান্ত সত্য; অর্থাৎ সত্যিই মুশরিকেরা তাদের উপাস্যকে আল্লাহর চাইতে বেশি মহব্বত করে, তথাপি আমরা দেখি তাদের উপাস্য ধ্বংস করার দিন তারা সেরূপ কীর্তিকলাপ করে না হুসাইনের মৃত্যুর দিন শিয়ারা যেরূপ করে! এখন ভেবে দেখতে হয়, তারা কি আসলেই সত্যবাদী, যার পশ্চাতে হুসাইনের মহব্বতকে তারা উদ্দীপকভাবে, যদিও বিবেকের নিকট তাদের ভাবনা প্রত্যাখ্যাত; না তাদের কীর্তিকলাপ বাস্তবতা শূন্য মহব্বতের মিথ্যা দাবির ওপর প্রতিষ্ঠিত? বাহ্যত প্রতিয়মান যে, তাদের মহব্বত মিথ্যা, তারা প্রবৃত্তি কর্তৃক প্রতারিত, যা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। এভাবে তারা প্রতিপক্ষকে ক্ষেপীয়ে তুলতে চায়, ইতোপূর্বে কেউ তার বিপক্ষকে যেভাবে ক্ষেপায় নি, যদিও তার দাবি ও কারণ তখনো ছিল।
অথবা বলতে হবে, শিয়াদের হুসাইনপ্রীতি আয়াতে উল্লিখিত মুশরিকদের উপাস্যপ্রীতি অপেক্ষা বেশি, যদি তাই সত্য হয়, তাহলে তো এটাই মহব্বতের শির্ক এবং স্পষ্ট কুফরি! বরং মুশরিকদের চেয়েও বড় কুফুরী!!
তৃতীয়তঃ ইসলামে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর স্থান ও মর্যাদা অনেক বেশি, বরং পরবর্তী শিয়াদের নিকট তো তিনি সকল সাহাবী থেকে উত্তম, হাসান ও হুসাইন থেকেও উত্তম, তাকেও অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়, যা ইসলামের অনুসারী সবার নিকট স্বীকৃত। আব্দুর রহমান ইবন মুলজিম আততায়ী কর্তৃক তিনি ৪০ হিজরিতে শহাদাত বরণ করেন, তবুও দেখি তার মৃত্যুর দিনে তার সাথী, সহপাঠী সাহাবী, এমন কি হাসান-হুসাইনও সেরূপ করে নি, হুসাইনের মৃত্যুর দিনে শিয়ারা যেরূপ করে, অথচ হুসাইন তারপর ২১ বছর বেঁচে ছিলেন। তিনি তার বাবার মৃত্যুর দিনক্ষণ সম্পর্কে বেশি অবগত ছিলেন, বাবার অতি নিকটবর্তীও ছিলেন তিনি, তবুও নিজের বাবার মৃত্যুর দিন তিনি এসব কীর্তিকলাপ করেন নি। বরং ৪৮ হিজরিতে তার জীবদ্দশায় সহোদর হাসান ইবন আলী মারা যান, হুসাইন তার মৃত্যুতেও এর কিছুই করেন নি, অধিকন্তু হাসানের জানাযার জন্য অপরকে যেতে বললে সায়ীদ ইবনুল আস এগিয়ে যান এবং তার জানাযার সালাত পড়ান। কারণ, তাদের উভয়ের মাঝে গভীর সখ্যতা ও নিখাদ ভালোবাসা ছিল। আব্দুর রাযযাক তার “মুসাননাফ” গ্রন্থে সুফিয়ান থেকে, তিনি সালিম থেকে, তিনি আবূ হাযিম থেকে বর্ণনা করেন, আবূ হাযিম বলেন: হাসান যে দিন মারা যান সেদিন আমি উপস্থিত ছিলাম, আমি হুসাইনকে দেখেছি সাঈদ ইবন আসকে বলছেন ও ঘাড়ে টোকা দিচ্ছেন: “তুমি এগিয়ে যাও, এটা যদি সুন্নাত না হত তোমাকে এগিয়ে দিতাম না”।
উল্লেখ্য, হাসান ও হুসাইন উভয় জান্নাতের সরদার।
চতুর্থতঃ তর্কের খাতিরে যদি মেনে নেই যে, হুসাইনের মৃত্যুর দিন শিয়াদের রক্তাক্ত হওয়া, মিছিল ও তাজিয়া বের করা, চেহারা ক্ষতবিক্ষত করা, সমবেত হওয়া প্রভৃতি বিবেক ও শরী‘আতের দৃষ্টিতে বৈধ, তাহলে তাকে মানদণ্ড করে আরো মানতে হয় যে, প্রত্যেক ইসলামি দলের তার মযলুম নেতার জন্যে এরূপ করা বৈধ, যাকে অন্যায়ভাবে মারা হয়েছে। যদি এটাকে মেনে নেই, তাহলে তো বছরের প্রতিটি দিন রক্তাক্তের দিনে, মিছিল ও বিলাপের দিনে পরিণত হবে, এবং তাতে প্রত্যেক দল তার অনুসারীদের আহ্বান করবে। সন্দেহ নেই এটিই সত্য থেকে বিচ্যুতি, আল্লাহর রাস্তা থেকে পদস্খলন এবং দীন-দুনিয়ার কল্যাণ থেকে নিজেকে বঞ্চিত করা বৈ কিছু নয়, যা সামান্য বিবেকেও বুঝতে সক্ষম।
কীভাবে সম্ভব, কোনো দল যদি এটাকে দীনের অংশ ও ধর্মীয় কর্ম মনে করে, তবে তো প্রত্যেকের জন্যই মাতম করা বৈধ, যে ইসলাম গ্রহণ করেছে, কারণ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবার নবী। আর যদি কতক আলেমের ভাষ্য মোতাবেক মেনে নেই যে, দীনের শাখা-প্রশাখার ক্ষেত্রে কাফিররাও আদিষ্ট, তবে কীভাবে সম্ভব তাদেরকে মাতম করার নির্দেশ করা?
বস্তুত শিয়াদের এসব ভ্রান্তি প্রত্যাখ্যান করার জন্যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি বাণীই যথেষ্ট, যেখানে তিনি বলেছেন:
«مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ» .
“আমাদের এই দীনে যে এমন কিছু উদ্ভাবন করল, যা তার অন্তর্ভুক্ত নয় তা প্রত্যাখ্যাত”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭১৮; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৪।]
অনুরূপভাবে কতক আলেম যে বলেন, ‘এই দিনে পরিবারে সচ্ছলতা দান করুন’, তাও সহীহ সূত্রে প্রমাণিত নয়। ইমাম আহমদ প্রমুখ তার জোরালো প্রতিবাদ করেছেন।
অনুরূপভাবে আশুরার দিন গোসল করা, পরিচ্ছন্ন হওয়া, সুগন্ধি ব্যবহার করা, সুরমা লাগানো, দাড়িতে খেজাব করা প্রভৃতি ভিত্তিহীন। আদর্শ কোনো মনীষী এগুলো মোস্তাহাব বলেন নি। আল্লাহ ভালো জানেন।
প্রথমতঃ আশুরার দিন এসব অনুষ্ঠান করা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শের বিপরীত, বরং আশুরা পেয়ে খুশি হওয়া, তার আগমনে গৌরব বোধ করা, তাকে অভ্যর্থনা জানানো ও তার সিয়াম রেখে আল্লাহর শোকর আদায় করা তার সুন্নত; পক্ষান্তরে দুঃখ ও গোস্বার বহিঃপ্রকাশ, তাজিয়া মিছিল ও দেহ রক্তাক্ত করার ন্যায় কীর্তিকলাপ নি‘আমতের না শোকর ও দীনের ভেতর জঘন্য বিদ‘আত চর্চার নামান্তর, বরং শয়তানের নিকট বিবেক বিকানো ও মূর্খদের নিকট মাথা ধার দেওয়ার ন্যায় চরম বোকামি।
শিয়ারা এই দিন যে কীর্তিকলাপ করে তা অন্য সাধারণ দিনেও বৈধ নয়, বরং কোনো মুসিবতেই বৈধ নয়; উপরন্তু ইবাদত ও নি‘আমতের শোকর করার দিনে, আসমান কর্তৃক নির্দিষ্ট দিনে কীভাবে বৈধ হবে, যার ওপর চলে আসছে সকল ধর্মের অনুসারী, কি কিতাবি কি ইসলামী?
উল্লেখ্য যে, শাখা-প্রশাখাগত বিধানের ক্ষেত্রে ইসলাম অন্যান্য আসমানী ধর্ম থেকে পৃথক বৈশিষ্ট্যের হলেও আশুরার ক্ষেত্রে কিন্তু সেরূপ নয়, যা আশুরার মহত্ত্ব ও সম্মানের প্রতীক দ্বিধা নেই, হয়তো এই কারণে নবীগণ ও তাদের অনুসারী কর্তৃক পরম্পরায় সম্মানিত হয়ে আসছে আশুরা এবং কিয়ামত পর্যন্ত হবে। আশুরার আরো একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য যে, যদিও আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لَوْ كَانَ مُوسَى حَيًّا مَا وَسِعَهُ إِلَّا اتِّبَاعِي»
“যদি মূসা বেঁচে থাকত আমার অনুসরণ ব্যতীত তার কোনো গত্যন্তর ছিল না” [বাইহাকী, হাদীস নং ১৭৬।], আশুরার ক্ষেত্রে কিন্তু সেরূপ ঘটে নি, বরং আশুরার ক্ষেত্রে আমাদের নবী মূসার অনুসারী। অথচ শেষ জমানায় ঈসা আলাইহিস সালাম আসবেন, তাকেও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শরী‘আত মানতে হবে। এ থেকে শিয়াদের কর্তৃক একটি চূড়ান্ত আদর্শকে, মূসা, ঈসা ও আমাদের নবীর আদর্শকে লঙ্ঘন করার চিত্র স্পষ্ট হয়!
অধিকন্তু তাদের কীর্তিকলাপ সুস্থ বোধ ও সহীহ রুচি বিরোধী, যা মুক্ত চিন্তার বাহক ও বাস্তবধর্মী সবার সামনে স্পষ্ট হয় কয়েকভাবে:
প্রথমতঃ সেই আদম আলাইহিস সালামের অবতরণ ও জমিনে অবস্থান করা থেকে অদ্যাবধি কেউ জানে না যে, মানব জাতির কোনো সম্প্রদায় তাদের বড় ও অনুসৃত ব্যক্তির মৃত্যুকে ঘিরে, তার মর্তবা তাদের নিকট যত মহান ও মহত্তর হোক, বুক চাপড়ায়, রক্তাক্ত হয় ও তাজিয়া বের করে শোকাহত হয়, যেমন রাফিযীরা করে! বরং ইতিহাস তো প্রমাণ করে, এমন লোকও বিগত হয়েছেন যিনি হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকেও উত্তম ও শ্রেষ্ঠ ছিলেন, যেমন নবী ও রাসূলগণ। তাদের কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছে যেমন ইয়াহইয়া। কাউকে শূলে চড়ানোর দাবি করে তার উম্মত যেমন ঈসা। তাদের ছাড়াও আছে অনেক বিখ্যাত রাজা-বাদশা, প্রথিতযশা মনীষী ও পথিকৃৎ ব্যক্তিবর্গ, সত্যের অনুসারী বা মিথ্যার অনুগামী যাই হোক, তাদের মৃত্যুকে ঘিরে ভক্তবৃন্দের এরূপ করার নজির নেই! বস্তুত বিবেকের তাড়না থেকে এক জাতি অপর জাতির অনুসরণ করে, এবং নিজেদের আমলকে অপরের আমল দ্বারা যাচাই করে, যদিও সেটি সবক্ষেত্রে নয়, এই মানদণ্ডেও বক ধার্মিক শিয়ারা তাদের আমল কদাচ মেপে দেখে নি কোনো দিন। বিবেক অসমর্থিত পদ্ধতিতে শোক প্রকাশের জন্যে তো ধর্মীয় স্বীকৃতি প্রয়োজন, অথচ ধর্মই উল্টো তার থেকে নিষেধ করেছে কঠোরভাবে!
দ্বিতীয়তঃ মুশরিকেরা অন্যসব বস্তু থেকে তাদের উপাস্যের সাথে বেশিই জুড়ে থাকে, তাদের জীবন-মৃত্যু ও যাওয়া-আসা উপাস্যকে কেন্দ্র করেই সংঘটিত হয়, যেমন ছিল ইবরাহিম ও আমাদের নবীর কওমের অবস্থা। তারা উভয় মুশরিকদের উপাস্যকে ভেঙ্গে-চুরমার করে দিয়েছেন, তথাপি কোনো মুশরিক তাদের উপাস্যের জন্য সেরূপ মাতম করে না, হুসাইনের জন্যে শিয়ারা যেরূপ মাতম করে! আল্লাহ মুশরিকদের সম্পর্কে বলেছেন,
﴿يُحِبُّونَهُمۡ كَحُبِّ ٱللَّهِۖ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَشَدُّ حُبّٗا لِّلَّهِۗ ١٦٥﴾ [ البقرة : ١٦٥ ]
“তারা তাদের উপাস্যকে মহব্বত করে আল্লাহকে মহব্বত করার ন্যায়, বস্তুত যারা ঈমান এনেছে তারা আল্লাহকে বেশি মহব্বতকারী”। [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৬৫]
আমরা নিশ্চিত জানি যে, আল্লাহ যে সংবাদ দিয়েছেন তা চিরসত্য, যদিও প্রত্যেক সংবাদ সত্য-মিথ্যার সম্ভাবনা রাখে, কিন্তু এখানে সেই সম্ভাবনা নেই। কারণ, এটি গায়েবী সংবাদ হলেও তার সূত্র অহী বিধায় চূড়ান্ত সত্য; অর্থাৎ সত্যিই মুশরিকেরা তাদের উপাস্যকে আল্লাহর চাইতে বেশি মহব্বত করে, তথাপি আমরা দেখি তাদের উপাস্য ধ্বংস করার দিন তারা সেরূপ কীর্তিকলাপ করে না হুসাইনের মৃত্যুর দিন শিয়ারা যেরূপ করে! এখন ভেবে দেখতে হয়, তারা কি আসলেই সত্যবাদী, যার পশ্চাতে হুসাইনের মহব্বতকে তারা উদ্দীপকভাবে, যদিও বিবেকের নিকট তাদের ভাবনা প্রত্যাখ্যাত; না তাদের কীর্তিকলাপ বাস্তবতা শূন্য মহব্বতের মিথ্যা দাবির ওপর প্রতিষ্ঠিত? বাহ্যত প্রতিয়মান যে, তাদের মহব্বত মিথ্যা, তারা প্রবৃত্তি কর্তৃক প্রতারিত, যা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। এভাবে তারা প্রতিপক্ষকে ক্ষেপীয়ে তুলতে চায়, ইতোপূর্বে কেউ তার বিপক্ষকে যেভাবে ক্ষেপায় নি, যদিও তার দাবি ও কারণ তখনো ছিল।
অথবা বলতে হবে, শিয়াদের হুসাইনপ্রীতি আয়াতে উল্লিখিত মুশরিকদের উপাস্যপ্রীতি অপেক্ষা বেশি, যদি তাই সত্য হয়, তাহলে তো এটাই মহব্বতের শির্ক এবং স্পষ্ট কুফরি! বরং মুশরিকদের চেয়েও বড় কুফুরী!!
তৃতীয়তঃ ইসলামে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর স্থান ও মর্যাদা অনেক বেশি, বরং পরবর্তী শিয়াদের নিকট তো তিনি সকল সাহাবী থেকে উত্তম, হাসান ও হুসাইন থেকেও উত্তম, তাকেও অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়, যা ইসলামের অনুসারী সবার নিকট স্বীকৃত। আব্দুর রহমান ইবন মুলজিম আততায়ী কর্তৃক তিনি ৪০ হিজরিতে শহাদাত বরণ করেন, তবুও দেখি তার মৃত্যুর দিনে তার সাথী, সহপাঠী সাহাবী, এমন কি হাসান-হুসাইনও সেরূপ করে নি, হুসাইনের মৃত্যুর দিনে শিয়ারা যেরূপ করে, অথচ হুসাইন তারপর ২১ বছর বেঁচে ছিলেন। তিনি তার বাবার মৃত্যুর দিনক্ষণ সম্পর্কে বেশি অবগত ছিলেন, বাবার অতি নিকটবর্তীও ছিলেন তিনি, তবুও নিজের বাবার মৃত্যুর দিন তিনি এসব কীর্তিকলাপ করেন নি। বরং ৪৮ হিজরিতে তার জীবদ্দশায় সহোদর হাসান ইবন আলী মারা যান, হুসাইন তার মৃত্যুতেও এর কিছুই করেন নি, অধিকন্তু হাসানের জানাযার জন্য অপরকে যেতে বললে সায়ীদ ইবনুল আস এগিয়ে যান এবং তার জানাযার সালাত পড়ান। কারণ, তাদের উভয়ের মাঝে গভীর সখ্যতা ও নিখাদ ভালোবাসা ছিল। আব্দুর রাযযাক তার “মুসাননাফ” গ্রন্থে সুফিয়ান থেকে, তিনি সালিম থেকে, তিনি আবূ হাযিম থেকে বর্ণনা করেন, আবূ হাযিম বলেন: হাসান যে দিন মারা যান সেদিন আমি উপস্থিত ছিলাম, আমি হুসাইনকে দেখেছি সাঈদ ইবন আসকে বলছেন ও ঘাড়ে টোকা দিচ্ছেন: “তুমি এগিয়ে যাও, এটা যদি সুন্নাত না হত তোমাকে এগিয়ে দিতাম না”।
উল্লেখ্য, হাসান ও হুসাইন উভয় জান্নাতের সরদার।
চতুর্থতঃ তর্কের খাতিরে যদি মেনে নেই যে, হুসাইনের মৃত্যুর দিন শিয়াদের রক্তাক্ত হওয়া, মিছিল ও তাজিয়া বের করা, চেহারা ক্ষতবিক্ষত করা, সমবেত হওয়া প্রভৃতি বিবেক ও শরী‘আতের দৃষ্টিতে বৈধ, তাহলে তাকে মানদণ্ড করে আরো মানতে হয় যে, প্রত্যেক ইসলামি দলের তার মযলুম নেতার জন্যে এরূপ করা বৈধ, যাকে অন্যায়ভাবে মারা হয়েছে। যদি এটাকে মেনে নেই, তাহলে তো বছরের প্রতিটি দিন রক্তাক্তের দিনে, মিছিল ও বিলাপের দিনে পরিণত হবে, এবং তাতে প্রত্যেক দল তার অনুসারীদের আহ্বান করবে। সন্দেহ নেই এটিই সত্য থেকে বিচ্যুতি, আল্লাহর রাস্তা থেকে পদস্খলন এবং দীন-দুনিয়ার কল্যাণ থেকে নিজেকে বঞ্চিত করা বৈ কিছু নয়, যা সামান্য বিবেকেও বুঝতে সক্ষম।
কীভাবে সম্ভব, কোনো দল যদি এটাকে দীনের অংশ ও ধর্মীয় কর্ম মনে করে, তবে তো প্রত্যেকের জন্যই মাতম করা বৈধ, যে ইসলাম গ্রহণ করেছে, কারণ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবার নবী। আর যদি কতক আলেমের ভাষ্য মোতাবেক মেনে নেই যে, দীনের শাখা-প্রশাখার ক্ষেত্রে কাফিররাও আদিষ্ট, তবে কীভাবে সম্ভব তাদেরকে মাতম করার নির্দেশ করা?
বস্তুত শিয়াদের এসব ভ্রান্তি প্রত্যাখ্যান করার জন্যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি বাণীই যথেষ্ট, যেখানে তিনি বলেছেন:
«مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ» .
“আমাদের এই দীনে যে এমন কিছু উদ্ভাবন করল, যা তার অন্তর্ভুক্ত নয় তা প্রত্যাখ্যাত”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭১৮; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৪।]
অনুরূপভাবে কতক আলেম যে বলেন, ‘এই দিনে পরিবারে সচ্ছলতা দান করুন’, তাও সহীহ সূত্রে প্রমাণিত নয়। ইমাম আহমদ প্রমুখ তার জোরালো প্রতিবাদ করেছেন।
অনুরূপভাবে আশুরার দিন গোসল করা, পরিচ্ছন্ন হওয়া, সুগন্ধি ব্যবহার করা, সুরমা লাগানো, দাড়িতে খেজাব করা প্রভৃতি ভিত্তিহীন। আদর্শ কোনো মনীষী এগুলো মোস্তাহাব বলেন নি। আল্লাহ ভালো জানেন।
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন