HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

খেলাধুলা ও শরীরচর্চায় ইসলামী মূলনীতি

লেখকঃ আলী হাসান তৈয়ব

৬. প্রতিযোগিতার জয়-পরাজয়ে শত্রুতা-মিত্রতা সৃষ্টি না হওয়া:
খেলাধুলাকে শত্রুতা-মিত্রতার মাপকাঠি বানালে সে খেলাটি তার স্বাভাবিক বৈধতা হারায়। ভালো খেলার কারণে অতিভক্তি বা খারাপ খেলার কারণে অতি ভক্তি বা অতি অভক্তি কোনোটাই ইসলামে কাম্য নয়। ফুটবলে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার সমর্থক কিংবা ক্রিকেটে ভারত-পাকিস্তানের সমর্থকদের মধ্যে নিজেদের সমর্থিত দল নিয়ে মারামারি, হানাহানি ও শত্রুতা তৈরির ঘটনা পত্র-পত্রিকা প্রায়ই চোখে পড়ে। গত বছর মিসরে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে মারামারির ঘটনায় প্রায় দশজন মানুষকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। যা আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার করা হয়। দেখুন মানুষকে শয়তানের এসব দুরভিসন্ধিমূলক ঘটনার হাত থেকে বাঁচাতে আল্লাহ তা‘আলার পরিষ্কার ঘোষণা :

﴿إِنَّمَا يُرِيدُ ٱلشَّيۡطَٰنُ أَن يُوقِعَ بَيۡنَكُمُ ٱلۡعَدَٰوَةَ وَٱلۡبَغۡضَآءَ فِي ٱلۡخَمۡرِ وَٱلۡمَيۡسِرِ وَيَصُدَّكُمۡ عَن ذِكۡرِ ٱللَّهِ وَعَنِ ٱلصَّلَوٰةِۖ فَهَلۡ أَنتُم مُّنتَهُونَ ٩١﴾ [ المائ‍دة : ٩١ ]

“নিশ্চয় শয়তান শুধু মদ ও জুয়া (সব ধরনের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাই জুয়াবহুল) দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চার করতে চায়। আর (চায়) আল্লাহর স্মরণ ও সালাত থেকে তোমাদের বাধা দিতে। অতএব, তোমরা কি বিরত হবে না?” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত : ৯১]

তাছাড়া ইসলামে শত্রুতা-মিত্রতার মাপকাঠি কেবল আল্লাহর ভালোবাসা। আল্লাহর জন্যই ভালোবাসা এবং আল্লাহর জন্যই ভালোবাসা ত্যাগ ঈমানের অংশ এবং ইসলামে একান্ত কাম্য বিষয়। আল্লাহ বলেন,

﴿وَٱلۡمُؤۡمِنُونَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتُ بَعۡضُهُمۡ أَوۡلِيَآءُ بَعۡضٖۚ يَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَيُقِيمُونَ ٱلصَّلَوٰةَ وَيُؤۡتُونَ ٱلزَّكَوٰةَ وَيُطِيعُونَ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥٓۚ أُوْلَٰٓئِكَ سَيَرۡحَمُهُمُ ٱللَّهُۗ إِنَّ ٱللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٞ ٧١ ﴾ [ التوبة : ٧١ ]

“আর মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীরা একে অপরের বন্ধু, তারা ভালো কাজের আদেশ দেয় আর অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করে, আর তারা সালাত কায়েম করে, জাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে। এদেরকে আল্লাহ শীঘ্রই দয়া করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৭১]

তাফসীরবিদ ইমাম কুরতুবী রহ. বলেন, ‘একে অপরের বন্ধু অর্থ ভালোবাসা, সম্প্রীতি ও আন্তরিকতায় তারা অভিন্ন।’ [তাফসীরে কুরতুবী : (৮/২০৩)।]

মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতের বৈশিষ্ট হলো তারা আল্লাহর জন্য পরস্পরকে ভালোবাসাবে। পার্থিব কোনো কারণে একে অপরের সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করবে না। আল্লাহর শত্রুরাই কেবল তাদের শত্রু। আল্লাহ জাল্লা শানুহু বলেন,

﴿مُّحَمَّدٞ رَّسُولُ ٱللَّهِۚ وَٱلَّذِينَ مَعَهُۥٓ أَشِدَّآءُ عَلَى ٱلۡكُفَّارِ رُحَمَآءُ بَيۡنَهُمۡۖ ﴾ [ الفتح : ٢٩ ]

“মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল এবং তার সাথে যারা আছে তারা কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর; পরস্পরের প্রতি সদয় (ভালোবাসা পরায়ণ)।” [সূরা আল-ফাতহ, আয়াত: ২৯]

হাদীসে আল্লাহর জন্য মিত্রতা-বৈরিতাকে ঈমানের পূর্ণতার নিদর্শন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যেমন, আবূ উমামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَنْ أَحَبَّ لِلَّهِ وَأَبْغَضَ لِلَّهِ وَأَعْطَى لِلَّهِ وَمَنَعَ لِلَّهِ فَقَدِ اسْتَكْمَلَ الإِيمَانَ» .

“যে কেউ আল্লাহর জন্যই ভালোবাসে এবং আল্লাহর জন্যই ঘৃণা করে এবং (কাউকে কিছু) দিয়ে থাকে আল্লাহর জন্যই এবং (কাউকে কিছু) দেওয়া থেকে বিরত থাকেও আল্লাহরই জন্য; তাহলে তার ঈমান পরিপূর্ণ হলো।” [আবূ দাউদ, হাদীস নং ৪৬৮১।]

এতো গেল সরাসরি খেলার দিক। খেলা দেখার দিকটিও এখানে প্রাসঙ্গিক। অধুনাকালে খেলাধুলার নানা শাখা-প্রশাখার বিস্তৃতি ঘটেছে। খেলার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আনুষঙ্গিক বহু বিষয়। খেলার বৈধতা-অবৈধতার ক্ষেত্রে এসব বিষয়ও বিবেচ্য। যেমন, এখন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সব খেলার প্রাণ দর্শক-শ্রোতা। দর্শকরাই খেলাধুলার মাধ্যমে আয়ের প্রধান উৎস। দর্শক না এলে বিশ্বফুটবলের নিয়ন্ত্রক ফিফা কিংবা বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির গুরুচণ্ডালি মাঠে মারা যাবে। এ দর্শকদের কারণেই খেলাধুলা নিয়ে মিডিয়া ও পুঁজিপতিদের যত আগ্রহ। গ্লোবাল ভিলেজের যুগে খেলাধুলায়ও গ্লোবালাইজেশনের ছোঁয়া লেগেছে। শুধু তাই নয়, খেলা এখন সংস্কৃতি ও মানুষের চিন্তা-চেতনা পরিবর্তনে বড় ভূমিকা রাখছে।

স্যাটেলাইন চ্যানেলগুলো জনপ্রিয় খেলা সম্প্রচার করে কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ আয় করছে। যে আয়ের ভাগ গিয়ে পড়ছে ওই খেলার আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা, সংশ্লিষ্ট দেশের বোর্ড এবং প্রতিটি খেলোয়াড় পর্যায়ে। আর টিভি চ্যানেলগুলোর প্রধান উৎস অবশ্যই বিজ্ঞাপন। বল্গাহীন পুঁজিবাদী ও নৈতাকতাহীন অর্থলোভীরা তাদের সব ধরনের বিজ্ঞাপন হজম করাচ্ছে সব জাতি ও দেশকে। অথচ এসব বিজ্ঞাপনের অধিকাংশই বহু দেশ ও জাতি বিশেষত মুসলিম রাষ্ট্র ও উম্মাহর চেতনা ও সংস্কৃতির সঙ্গে মানানসই নয়। কেউ টিভিতে খেলা দেখবেন অথচ অশ্লীল বিজ্ঞাপন তার চোখে পড়বে না, এটা এখন আর সম্ভব নয়। তাই এসব দেখা ও এর মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ কোনোটাই যে অবৈধতামুক্ত নয়, তা বলাবাহুল্য।

খেলা দেখায় বিজ্ঞাপন মতো আরেক সমস্যা প্রমিলা দর্শক। স্টেডিয়ামে নারীদের উপস্থিতি এখন অপরিহার্য। যাদের অধিকাংশের বেশভূষাই শুধু ইসলামের দৃষ্টিতে নয়, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর স্থানীয় সংস্কৃতির দৃষ্টিকোণেও সমর্থনযোগ্য নয়। মিডিয়া ও পুঁজিবাদীরা নিজেদের স্বার্থে বরাবরই এদের পালে হাওয়া দিয়ে আসছে। অমুসলিম দেশগুলোয় স্টেডিয়ামে মেয়েদের খোলামেলা উপস্থিতি দেখে অতি দ্রুত মুসলিম মেয়েরা তাদের অনুসরণ করছে। আপনি খেলা দেখতে চাইলে বিজ্ঞাপনের মতো এদেরও না দেখে উপায় নেই। এবার আপনিই সিদ্ধান্ত নিন কিভাবে খেলা দেখবেন।

সমস্যা আরও আছে। মুসলিম সংখ্যাগুরু এশিয়া মহাদেশে বিশেষত ভারতীয় উপমহাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ইংরেজ হাতে জন্ম নেওয়া ভদ্র লোকের খেলা হিসেবে খ্যাত ক্রিকেট। ক্রিকেট খেলার সংক্ষিপ্ততম ভার্সন টি-২০ এর অপরিহার্য বানানো হয়েছে চরম দৃষ্টিকটু অরুচিকর চিয়ার্সলেডিদের নাচ। মাঠের দুই পাশে সবার চোখে পড়ার মতো জায়গায় উঁচু মঞ্চে অশ্লীল পোশাকধারী এই মেয়েগুলো দাঁড়িয়ে থাকে। এদের গায়ে কাপড় বলতে বুকে ও কোমরের নিচে এক চিলতে পাতলা বস্ত্রখণ্ড। চার-ছক্কার উদ্দেশ্যে বল গড়িয়ে মাঠের বাইরে যেতে লাগলে এরা বেখাপ্পা হাসি দিয়ে বিশ্রীভাবে নেচে দর্শকদের নজর কাড়ার চেষ্টা করে। অশ্লীলতার এমন জোয়ার পৃথিবী কখনো দেখেছে কিনা আল্লাহ জানেন।

এ ছাড়া যে কোনো জাতীয় বা আন্তর্জাতিক ক্রিড়া প্রতিযোগিতা উদ্বোধনীর অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ এখন সাংস্কৃতিক প্রদর্শনী। থিম সং, জাতীয় সংস্কৃতি চিত্রায়ণসহ নানা নামে অশ্লীলতার কত নান্দনিক উপস্থাপনা। যার সিংহভাগজুড়েই থাকে অশ্লীল নাচ-গান। কদিন আগে লাতিন আমেরিকার ব্রাজিলে উদ্বোধন হলো ২০১৪ বিশ্বকাপ। পরেরদিন জাতীয় দৈনিকগুলোয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের নাচ-গানের যে গুটিকয় ছবি ছাপা হয়েছে তা দেখে আঁতকে উঠেছি। এই স্বল্পবসনা ললনাদের পারফরম্যান্স মানুষ সরাসরি টিভিতে কিভাবে দেখেছে ভেবে বিস্মিত হতে হয়। এর আগের বিশ্বকাপ হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকায়। সেখানেও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিল অশ্লীলতার ছড়াছড়ি। অলিম্পিক আসরেও এসব অপরিহার্য। ফলে খেলাধুলার উত্তম ব্যাপারটি এখন নানা কারণে তার উত্তমত্ব হারিয়ে ফেলেছে। অশ্লীলতার এতসব আয়োজন সত্ত্বেও এসব খেলায় অংশগ্রহণ বা দর্শক হিসেবে উপভোগ যে বৈধতা হারিয়েছে বহু আগেই তা বুঝতে মুফতি সাহেবের কাছে যাবার প্রয়োজন আছে?

অতএব, দেশ ও জাতির স্বার্থে খেলাকে খেলার জায়গায় রেখে আমাদের শরীরচর্চার প্রশংসনীয় কাজ করে যেতে হবে। খেলাকে অবিবেচক স্বার্থান্ধ অর্থলোভী এবং চরিত্র বিনাশীদের অশুভ হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। সর্বোপরি সুস্থ বিনোদন ও ক্রিড়াচর্চার মাধ্যমে তরুণ ও যুবসমাজের সুষ্ঠু বিকাশ নিশ্চিত করতে হবে। আজকের তরুণরা সুস্থ বিনোদন ও বৈধ খেলা ছেড়ে ছুটছে অবৈধ ও চরিত্রবিধ্বংসী আয়োজনের দিকে। যৌনতা ও অশ্লীলতার জোয়ার তাদের ভেসে নিয়ে যাচ্ছে। জেনা-ব্যভিচারের প্লাবনে ভেসে দেশ ও উম্মাহর এ সম্পদ ও শক্তি। দেশ ও জাতির অন্ধকার ভবিষ্যত কল্পনা করে তাই চিন্তাশীল, দূরদর্শী ব্যক্তিমাত্রেই আজ উদ্বিগ্ন উৎকণ্ঠিত।

এ জগত ও জীবনের নিরাপত্তা ও অস্তিত্বের স্বার্থে আজ আমাদের এতসব অবৈধ আয়োজনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। খেলাধুলা ও শরীরচর্চার বৈধ ও বিকল্প উপায় মানুষের সামনে তুলে ধরে তাদেরকে আত্মধ্বংসী এসব তৎপরতা থেকে ফেরাতে হবে। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দিন। দয়াময় আমাদের সহায় হোন। আমীন!

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন