কুতাইবা ইব্নু সা’ঈদ (রহঃ) আবূ কিলাবা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
একবার ‘উমর ইব্নু আবদুল ‘আযীয (রহঃ) তাঁর সিংহাসন মানুষদেরকে দেখানোর জন্য বের করলেন। তারপর লোকদেরকে তাঁর নিকট আসার অনুমতি প্রদান করলেন। তারা প্রবেশ করল। তারপর বললেন, তোমরা কাসামার ব্যাপারে কি মত পোষণ কর? তারা বলল, আমাদের মতে কাসামার ভিত্তিতে কিসাস গ্রহণ করা বৈধ। খলীফাগণ এর ভিত্তিতে কিসাস কার্যকর করেছেন। তিনি আমাকে বললেন, হে আবূ কিলাবা ! তুমি কী বল? তিনি আমাকে লোকদের সামনে দাঁড় করালেন। আমি বললাম, হে আমীরুল মু’মিনীন! আপনার কাছে সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থগণ ও আরব নেতাগণ আছেন, বলুন তো ! যদি তাদের থেকে পঞ্চাশ ব্যাক্তি দামেশ্কের একজন বিবাহিত ব্যাক্তির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয় যে সে যিনা করেছে , অথচ তারা তাকে দেখেনি, তাহলে আপনি তাকে রজম করবেন কি? তিনি বললেন, না। আমি বললাম, বলুন তো ! যদি তাদের মধ্য থেকে পঞ্চাশ জন হিম্স নিবাসী এক ব্যাক্তির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয় যে সে চুরি করেছে অথচ তারা তাকে দেখেনি, তাহলে কি আপনি তার হাত কাটবেন? তিনি বললেন, না। আমি বললাম , আল্লাহ্র কসম ! রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিন কারণের কোন একটি ছাড়া কাউকে হত্যা করেননি। (যথাঃ) (অন্যায় ভাবে ) কাউকে হত্যা করলে তাকে হত্যা করা হবে। অথবা যে ব্যাক্তি বিয়ের পর যিনা করে, অথবা যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে ও ইসলাম থেকে ফিরে মুরতাদ হয়ে যায়। তখন লোকেরা বলল, আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) কি বর্ণনা করেননি যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চুরির ব্যাপারে হাত কেটেছেন , লৌহশলাকা দ্বারা চক্ষু ফুঁড়ে দিয়েছেন, তারপর তাদেরকে উত্তপ্ত রৌদ্রে ফেলে রেখেছেন। তখন আমি বললাম, আমি তোমাদেরকে আনাস (রাঃ)-এর হাদীস বর্ণনা করছি। আমাকে আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, উক্ল গোত্রের আটজন লোক রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এল। তারা তাঁর হাতে ইসলামের বায়’আত গ্রহণ করল। কিন্তু সে এলাকার আবহাওয়া তাদের অনুকূলে হল না এবং তারা অসুস্থ হয়ে পড়ল। তারা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এর অভিযোগ করল। তিনি তাদেরকে বললেন, তোমরা কি আমার রাখালের সঙ্গে তার উটপালের কাছে গিয়ে সেগুলোর দুধ ও পেশাব পান করবেনা? তারা বলল, হ্যাঁ। তারপর তারা সেখানে গিয়ে সেগুলোর দুধ ও পেশাব পান করল। ফলে তারা সুস্থ হয়ে গেল। এরপর তারা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর রাখালকে হত্যা করে উটগুলো হাঁকিয়ে নিয়ে চলল। এ সংবাদ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কানে পৌঁছলে তিনি তাদের পেছনে ধাওয়া করার জন্য লোক পাঠালেন। তারা ধরা পরল এবং তাদেরকে নিয়ে আসা হল। তাদের ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হল। তাদের হাত-পা কাটা হল, লৌহশলাকা দিয়ে তাদের চোখ ফুঁড়ে দেয়া হল। এরপর তপ্ত রোদে তাদেরকে ফেলে রাখা হল। অবশেষে তারা মারা গেল। আমি বললাম, তারা যা করেছে এর চেয়ে জঘন্য আর কী হতে পারে? তারা ইসলাম থেকে মুরতাদ্ হল, হত্যা করল, চুরি করল। তখন আম্বাসা ইব্নু সা’ঈদ বললেন, আল্লাহ্র শপথ! আজকের মত আমি আর কখনো শুনিনি। আমি বললাম , হে আম্বাসা! তাহলে তুমি আমার বর্ণিত হাদীসটি প্রত্যখান করছ কি? তিনি বললেন, না, তুমি হাদীসটি সঠিকভাবে বর্ণনা করেছ। আল্লাহ্র কসম! এ লোকগুলো কল্যাণের উপর থাকবে যতদিন এ শায়খ (বুযর্গ) তাদের মধ্যে উপস্থিত থাকবেন। আমি বললাম, এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে একটা নিয়ম আছে। আনসারদের একটি দল তাঁর কাছে আসল। তারা তাঁর কাছে আলোচনা করছিল। ইতিমধ্যে তাদের সামনে তাদের এক লোক বেরিয়ে গেল এবং নিহত হল। তারপর তারা বের হল। তারা তাদের সাথী কে দেখতে পেল যে, রক্তের মাঝে নড়াচড়া করছে। তারা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে ফিরে এল এবং বলল, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমাদের সাথী যে আমাদের সাথে আলোচনা করছিল এবং সে আমাদের সামনেই বের হয়ে গিয়েছিল, আমরা এখন তাকে রক্তের মাঝে নড়াচড়া করতে দেখতে পাচ্ছি। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বেরিয়ে গেলেন এবং বললেনঃ তাকে হত্যা করার ব্যাপারে কাদের সম্বন্ধে তোমাদের ধারণা? তারা বলল, আমরা মনে করি, ইয়াহূদীরা তাকে হত্যা করেছে। তিনি ইয়াহূদীদেরকে ডেকে পাঠালেন। এরপর তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা ওকে হত্যা করেছ? তারা বলল, না। তিনি আনসারদেরকে বললেন, তোমরা কি এতে রাযী আছ যে, ইয়াহূদীদের পঞ্চাশ জন লোক শপথ করে বলবে যে, তারা তাকে হত্যা করেনি। আনসাররা বলল, তারা এতে পরওয়া করবেনা, তারা আমাদের সকলকে হত্যা করার পরও শপথ করে নিতে পারবে। তিনি বললেনঃ তাহলে তোমরা কি এজন্য প্রস্তুত আছ যে, তোমাদের থেকে পঞ্চাশজনের শপথের মাধ্যমে তোমরা দীয়াতের অধিকারী হবে? তারা বলল, আমরা শপথ করব না। তখন তিনি নিজের পক্ষ থেকে দীয়াত প্রদান করে দেন। (রাবী আবূ কালাবা বলেন) আমি বললাম, হুযায়ল গোত্র জাহিলী যুগে তাদের গোত্রের লোকেরা এক ব্যাক্তিকে সকল প্রকার দায়-দায়িত্ব গ্রহণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল। এক রাতে সে লোক বাহ্হা নামক স্থানে ইয়ামনের এক পরিবারের উপর হঠাৎ হামলা চালায়। কিন্তু সে পরিবারের এক লোক তা টের পেয়ে যায় এবং তার প্রতি তরবারী নিক্ষেপ করে তাকে হত্যা করে ফেলে। অতঃপর হুযায়ল গোত্রের লোকেরা এসে ইয়ামনী গোত্রের ব্যাক্তিটিকে ধরে ফেলে এবং (হজ্জের) মৌসুমে ‘উমর (রাঃ)-এর কাছে তাকে নিয়ে পেশ করে। আর বলে সে আমাদের এক সঙ্গী কে হত্যা করেছে। ইয়ামনী লোকটি বলল, তারা কিন্তু ওকে সকল প্রকার দায়-দায়িত্ব গ্রহণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। তখন তিনি বললেন, হুযায়ল গোত্রের পঞ্চাশ জন লোক এ মর্মে শপথ করবে যে তারা ওকে সকল দায়-দায়িত্ব গ্রহণ থেকে বিচ্ছিন্ন করেনি। বর্ণনাকারী বলেন, তাদের মধ্যে থেকে ঊনপঞ্চাশ জন লোক শপথ করে নিল, অতঃপর তাদের একজন সিরিয়া থেকে এলো, তারা তাকে শপথ করতে বলল। কিন্তু সে এক হাজার দিরহামের বিনিময়ে শপথ থেকে তাদের সঙ্গে আপোস করে নিল। তখন তারা তার স্থলে অপর একজন কে যোগ করে নিল। তারা তাকে নিহত ব্যাক্তির ভাইয়ের কাছে পেশ করল। তারা উভয়েই করমর্দন করল। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা এবং ঐ পঞ্চাশ জন লোক, যারা শপথ করেছে, চললাম। যখন তারা নাখ্লা নামক স্থানে পৌঁছল, তাদের উপর বৃষ্টি নেমে এল। তখন তারা পর্বতের এক গুহায় প্রবেশ করল। কিন্তু গুহা এ পঞ্চাশজন শপথকারীর উপর ভেঙ্গে পড়ল? এতে তারা সকলেই মারা গেল। তবে করমর্দনকারী দু’জন বেঁচে গেল। কিন্তু একটি পাথর তাদের উভয়ের প্রতি নিক্ষিপ্ত হল এবং নিহত লোকের ভাইয়ের পা ভেঙ্গে ফেলল। আর সে এক বছর জীবিত থাকার পর মারা গেল। (রাবী বলেন) আমি বললাম, আবদুল মালিক ইব্নু মারওয়ান (এক সময়) কাসামার ভিত্তিতে এক ব্যাক্তির কিসাস গ্রহণ করেন। এরপর আপন কৃতকর্মের উপর তিনি লজ্জিত হন এবং ঐ পঞ্চাশ জন লোক সম্পর্কে নির্দেশ দিলেন যারা শপথ করেছিল, তাদেরকে রেজিস্ট্রার থেকে খারিজ করে দিয়ে সিরিয়ায় নির্বাসন দিলেন।[২৩৩; মুসলিম ২৮/২, হাঃ ১৬৭১, আহমাদ ১২৯৩৫] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪২০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৩২)