মালিক ইবনু সা‘সা‘আ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
মালিক ইবনু সা‘সা‘আ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমি কা‘বা ঘরের নিকট নিদ্রা ও জাগরণ- এ দু’অবস্থার মাঝামাঝি অবস্থায় ছিলাম। অতঃপর তিনি দু’ব্যক্তির মাঝে অপর এক ব্যক্তি অর্থাৎ নিজের অবস্থা উল্লেখ করে বললেন, আমার নিকট সোনার একটি পেয়ালা নিয়ে আসা হল- যা হিকমত ও ঈমানে ভরা ছিল। অতঃপর আমার বুক হতে পেটের নীচ পর্যন্ত চিরে ফেলা হল। অতঃপর আমার পেট যমযমের পানি দিয়ে ধোয়া হল। অতঃপর তা হিকমত ও ঈমানে পূর্ণ করা হল এবং আমার নিকট সাদা রঙের চতুষ্পদ জন্তু আনা হল, যা খচ্চর হতে ছোট আর গাধা হতে বড় অর্থাৎ বোরাক। অতঃপর তাতে চড়ে আমি জিব্রাঈল (‘আ.) সহ চলতে চলতে পৃথিবীর নিকটতম আসমানে গিয়ে পৌঁছলাম। জিজ্ঞেস করা হল, এ কে? উত্তরে বলা হল, জিব্রাঈল। জিজ্ঞেস করা হল, আপনার সঙ্গে আর কে? উত্তর দেয়া হল, মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। প্রশ্ন করা হল তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল, তাঁকে মারহাবা, তাঁর আগমন কতই না উত্তম! অতঃপর আমি আদাম (‘আ.)-এর নিকট গেলাম। তাঁকে সালাম করলাম। তিনি বললেন, পুত্র ও নাবী! তোমার প্রতি মারহাবা। অতঃপর আমরা দ্বিতীয় আসমানে গেলাম। জিজ্ঞেস করা হল, এ কে? তিনি বললেন, আমি জিব্রাঈল। জিজ্ঞেস করা হল, আপনার সঙ্গে আর কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। প্রশ্ন করা হল, তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল, তাঁকে মারহাবা আর তাঁর আগমন কতই না উত্তম! অতঃপর আমি ‘ঈসা ও ইয়াহইয়া (‘আ.)-এর নিকট আসলাম। তাঁরা উভয়ে বললেন, ভাই ও নাবী! আপনার প্রতি মারহাবা। অতঃপর আমরা তৃতীয় আসমানে পৌঁছলাম। জিজ্ঞেস করা হল, এ কে? উত্তরে বলা হল, আমি জিব্রাঈল। প্রশ্ন করা হল, আপনার সঙ্গে কে? বলা হল, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। জিজ্ঞেস করা হল, তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল, তাঁকে মারহাবা আর তাঁর আগমন কতই না উত্তম! অতঃপর আমি ইউসুফ (‘আ.)-এর নিকট গেলাম। তাঁকে আমি সালাম করলাম। তিনি বললেন, ভাই ও নাবী! আপনাকে মারহাবা। অতঃপর আমরা চতুর্থ আসমানে পৌঁছলাম। প্রশ্ন করা হল, এ কে? তিনি বললেন, আমি জিবরাঈল। জিজ্ঞেস করা হল, আপনার সঙ্গে কে? বলা হল, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। প্রশ্ন করা হল, তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? জবাবে বলা হল, হ্যাঁ। বলা হল, তাঁকে মারহাবা আর তাঁর আগমন কতই না উত্তম! অতঃপর আমি ইদ্রীস (‘আ.)-এর নিকট গেলাম। আমি তাঁকে সালাম করলাম। তিনি বললেন, ভাই ও নাবী! আপনাকে মারহাবা। এরপর আমরা পঞ্চম আসমানে পৌঁছলাম। জিজ্ঞেস করা হল, এ কে? বলা হল আমি জিব্রাঈল। প্রশ্ন হল আপনার সঙ্গে আর কে? বলা হল, মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। প্রশ্ন করা হল, তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? বলা হল, হ্যাঁ। বললেন, তাঁকে মারহাবা আর তাঁর আগমন কতই না উত্তম! অতঃপর আমরা হারুন (‘আ.)-এর নিকট গেলাম। আমি তাকে সালাম করলাম। তিনি বললেন, ভাই ও নাবী! আপনাকে মারহাবা। অতঃপর আমরা ষষ্ঠ আসমানে পৌঁছলাম। জিজ্ঞেস করা হল, এ কে? বলা হল, আমি জিব্রাঈল। প্রশ্ন করা হল, আপনার সঙ্গে কে? বলা হল, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। বলা হল, তাঁকে আনার জন্য পাঠানো হয়েছে? তাঁকে মারহাবা আর তাঁর আগমন কতই না উত্তম। অতঃপর আমি মূসা (‘আ.)-এর নিকট গেলাম। আমি তাঁকে সালাম করলাম। তিনি বললেন, ভাই ও নাবী আপনাকে মারহাবা। অতঃপর আমি যখন তাঁর কাছ দিয়ে গেলাম, তখন তিনি কেঁদে ফেললেন। তাঁকে বলা হল, আপনি কাঁদছেন কেন? তিনি বললেন, হে রব! এ ব্যক্তি যে আমার পরে প্রেরিত, তাঁর উম্মাত আমার উম্মাতের চেয়ে অধিক পরিমাণে বেহেশতে যাবে। অতঃপর আমরা সপ্তম আকাশে পৌঁছলাম। প্রশ্ন করা হল, এ কে? বলা হল, আমি জিব্রাঈল। জিজ্ঞেস করা হল, আপনার সঙ্গে কে? বলা হল, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। বলা হল, তাঁকে আনার জন্য পাঠানো হয়েছে? তাঁকে মারহাবা। তাঁর আগমন কতই না উত্তম! অতঃপর আমি ইব্রাহীম (‘আ.)-এর নিকট গেলাম। তাঁকে সালাম করলাম। তিনি বললেন, হে পুত্র ও নাবী! আপনাকে মারহাবা। অতঃপর বায়তুল মা’মূরকে আমার সামনে প্রকাশ করা হল। আমি জিব্রাঈল (‘আ.)-কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, এটি বায়তুল মা’মূর। প্রতিদিন এখানে সত্তর হাজার ফেরেশতা সলাত আদায় করেন। এরা এখান হতে একবার বাহির হলে দ্বিতীয় বার ফিরে আসেন না। এটাই তাদের শেষ প্রবেশ। অতঃপর আমাকে ‘সিদ্রাতুল মুনতাহা’ দেখানো হল। দেখলাম, এর ফল যেন হাজারা নামক জায়গার মটকার মত। আর তার পাতা যেন হাতীর কান। তার উৎসমূলে চারটি ঝরণা প্রবাহিত। দু’টি ভিতরে আর দু’টি বাইরে। এ সম্পর্কে আমি জিব্রাঈলকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, ভিতরের দু’টি জান্নাতে অবস্থিত। আর বাইরের দু’টির একটি হল ফুরাত আর অপরটি হল (মিশরের) নীল নদ। অতঃপর আমার প্রতি পঞ্চাশ ওয়াক্ত সলাত ফারয করা হয়। আমি তা গ্রহণ করে মূসা (‘আ.)-এর নিকট ফিরে এলাম। তিনি বললেন, কী করে এলেন? আমি বললাম, আমার প্রতি পঞ্চাশ ওয়াক্ত সলাত ফারয করা হয়েছে। তিনি বললেন, আমি আপনার চেয়ে মানুষ সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত আছি। আমি বানী ইসরাঈলের রোগ সারানোর যথেষ্ট চেষ্টা করেছি। আপনার উম্মাত এত আদায়ে সমর্থ হবে না। অতএব আপনার রবের নিকট ফিরে যান এবং তা কমানোর আবেদন করুন। আমি ফিরে গেলাম এবং তাঁর নিকট আবেদন করলাম। তিনি সলাত চল্লিশ ওয়াক্ত করে দিলেন। আবার তেমন ঘটল। সলাত ত্রিশ ওয়াক্ত করে দেয়া হল। আবার তেমন ঘটলে তিনি সলাত বিশ ওয়াক্ত করে দিলেন। আবার তেমন ঘটল। তিনি সলাতকে দশ ওয়াক্ত করে দিলেন। অতঃপর আমি মূসা (‘আ.)-এর নিকট আসলাম। তিনি আগের মত বললেন, এবার আল্লাহ সলাতকে পাঁচ ওয়াক্ত ফারয করে দিলেন। আমি মূসার নিকট আসলাম। তিনি বললেন, কী করে আসলেন? আমি বললাম, আল্লাহ পাঁচ ওয়াক্ত ফারয করে দিয়েছেন। এবারও তিনি আগের মত বললেন, আমি বললাম, আমি তা মেনে নিয়েছি। তখন আওয়াজ এল, আমি আমার ফারয জারি করে দিয়েছি। আর আমার বান্দাদের হতে হালকা করেও দিয়েছি। আমি প্রতিটি নেকির বদলে দশগুণ সওয়াব দিব। (বুখারী পর্ব ৫৯ : /৬ হাঃ ৩২০৭, মুসলিম ১/৭৪ হাঃ ১৬৪)